বৈধ ও অবৈধ অসীলা

বৈধ ও অবৈধ অসীলা। এটি এমন এক কিতাব যেখানে লেখক জাহেলী যুগের লোকদের কর্ম-কাণ্ড সম্পর্কে আলোচনা করেছেন এবং নবী-রাসূলগণ যে সব বিষয়ে সতর্ক ও নিষেধ করেছেন যেমন, মৃতদের সুপারিশ ধরা ও তাদের ব্যক্তিসত্ত্বার অসীলা প্রদান এবং তাদের জন্য ইবাদত করা ইত্যাদি শরী‘আতনিষিদ্ধ রুসম-রেওয়াজ ও ভ্রান্ত আকীদা বিশ্বাসের ব্যাপারে কুরআন ও সুন্নাহর মতামত তুলে ধরেছেন।

 

বৈধ ও অবৈধ অসীলা
التوسل المشروع والممنوع

< بنغالي >


        
আব্দুল আযীয ইবন আব্দুল্লাহ আল জুহানী





অনুবাদক: ড. মোঃ আবদুল কাদের
সম্পাদক: ড. আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া
 


التوسل المشروع والممنوع

        

عبد العزيز بن عبد الله الجهني




 

ترجمة: د/ محمد عبد القادر
مراجعة: د/ أبو بكر محمد زكريا

সূচিপত্র

ক্রম    বিষয়    পৃষ্ঠা
1.        ভূমিকা    
2.        রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রেরণের সময় আরবরা ধর্মীয় দিক থেকে এবং তাদের ওপর তাঁর পক্ষ থেকে উত্থাপিত অভিযোগসমূহ    
3.        শাফা‘আত সত্য    
4.        জাহেলী যুগের ঐ সব মুর্খ ব্যক্তি এবং বর্তমান যুগে যারা মৃত ওলী, সৎকর্মশীল অথবা অনুপস্থিত লোকদের কাছে প্রার্থনা করে তাদের মধ্যে পাথর্ক্য কি?    
5.        রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওফাতের পর সাহাবীগণ কিরূপে শরী‘আতসম্মত অসীলাকে বাস্তবায়ন করেছেন?    
6.        আল্লাহ তা‘আলা ব্যতীত ওলীগণের কাছে চাওয়া বড় শিরক হওয়ার সম্পর্কে দলীল সমূহ    
7.        শরী‘আহসম্মত অসীলা    
8.        আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ব্যতীত কারো অনুসরণ-অনুকরণ করি না    
9.            আল্লাহ তা‘আলা ব্যতীত অন্যের কাছে চাওয়া সকল নেক আমলকে ধ্বংস করে)    
10.            শির্কের মাধ্যমসমূহ    
11.        সেসব সন্দেহ বাতিলপন্থীরা প্রচার-প্রসার করে থাকে    


ভূমিকা

পরম করুণাময় অসীম দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু করছি।
সমস্ত প্রশংসা বিশ্বজাহানের রব মহান আল্লাহর জন্য। দুরুদ ও সালাম রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তাঁর পরিবার-পরিজন এবং সমস্ত সাহাবীদের প্রতি। অতঃপর….
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সীরাত পাঠকারীগণ জানেন যে, নিশ্চয় তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এমন এক সম্প্রদায়ের নিকট প্রেরিত হয়েছিলেন যারা মৃত সৎকর্মশীলগণের ভালোবাসায় অনেক বাড়াবাড়ি করতো। তারা তাদেরকে তাদের আদি পিতা ইবরাহীম আলাইহিস সালাম এর দীন থেকে বের করে নিয়েছিল। আর এটা স্পষ্ট যে, মিল্লাতে ইবরাহীম মানুষকে এক আল্লাহর ইবাদতের প্রতি আহ্বান জানাতো। আরো প্রকাশমান যে, নিশ্চয় ইবাদত কয়েক ভাগে বিভক্ত। যেমন, ঈমান, ইসলাম, ইহসান, সালাত, যাকাত ও ইসলামের। দো‘আ, যবেহ, মান্নত, সাহায্য প্রার্থনা, আশ্রয় প্রার্থনা, ভয়, প্রত্যাশা, আগ্রহ উদ্দীপনা ও ভীতি।
(রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রেরণের সময় আরবরা ধর্মীয় দিক থেকে এবং তাদের ওপর তাঁর পক্ষ থেকে উত্থাপিত অভিযোগসমূহ)
অতঃপর জাহেলীরা ইবাদতের উপর্যুক্ত কিছু প্রকারকে মহান আল্লাহ ব্যতীত অন্যের প্রতি প্রদান করত। তাদের বিশ্বাস ছিল যে, নিশ্চয় এসব ওলীগণ, তাদের সত্তা এবং তাদের মর্যাদা আল্লাহর কাছে অনেক উর্ধ্বে। আর জাহেলী লোকদের ধারণামতে এ ওলীগণ তাদের প্রয়োজনসমূহ আল্লাহর কাছে উপস্থাপন করবে। সেসব ওলীগণের উদাহরণ যেমন, তায়েফে লাত নামক প্রতীমাকে ডাকা হতো আল্লাহকে বাদ দিয়ে আর লাত মৃত্যুর পূর্বে মানুষের জন্য উপকারী ছিল বিশেষত হাজীদের জন্য। ফলে তিনি ছাতু জাতীয় খাবার পরিবেশন করতেন। এটি আরবদের নিকট পরিচিত এক ধরণের খাবার, সেটাকে হাজীদের নিকট পেশ করত। অতঃপর যখন সে মারা গেল তখন তার অবস্থা হলো তাদের মতো যাদের সম্পর্কে মানুষ বিশ্বাস করত যে, তাদের মধ্যে অনেক ভালো সৎকর্ম ছিল। ফলে সে যুগের মানুষেরা দুঃখ পেল এবং তারা তার কবরের দিকে ঘুরা ফেরা করতে লাগল। তারপর তারা সেখানে স্থাপনা নির্মাণ করল। অতঃপর তাকে তাদের অসীলা হিসাবে বানাল এবং তার কবরে তাওয়াফ করতে লাগল। আর তাদের বিভিন্ন প্রয়োজন পূরণ ও দুঃখ কষ্ট লাঘবে তার নিকট প্রার্থনা করতে লাগল। অনুরূপভাবে তারা উযযা ও মানাত থেকেও চাইতো। যেমনিভাবে আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿أَفَرَءَيۡتُمُ ٱللَّٰتَ وَٱلۡعُزَّىٰ ١٩ وَمَنَوٰةَ ٱلثَّالِثَةَ ٱلۡأُخۡرَىٰٓ ٢٠ أَلَكُمُ ٱلذَّكَرُ وَلَهُ ٱلۡأُنثَىٰ ٢١ تِلۡكَ إِذٗا قِسۡمَةٞ ضِيزَىٰٓ ٢٢ إِنۡ هِيَ إِلَّآ أَسۡمَآءٞ سَمَّيۡتُمُوهَآ أَنتُمۡ وَءَابَآؤُكُم مَّآ أَنزَلَ ٱللَّهُ بِهَا مِن سُلۡطَٰنٍۚ ٢٣﴾ [النجم: ١٩،  ٢٣]  
“তোমরা লাত ও উযযা সম্পর্কে আমাকে বল? আর মানাত সম্পর্কে, যা তৃতীয় আরেকটি? তোমাদের জন্য কি পুত্র আর আল্লাহর জন্য কন্যা? এটাতো তাহলে এক অসম বন্টন। এগুলো কেবল কতিপয় নাম, যে নামগুলো তোমরা ও তোমাদের পিতৃপুরুষেরা রেখেছ। এ ব্যাপারে আল্লাহ কোনো দলীল প্রমাণ নাযিল করেন নি।” [সূরা আন-নাজম, আয়াত: ১৯-২৩]
এতদসত্বেও তারা জানত যে, যাদেরকে তারা ডাকছে তারা এ জগতে কোনো কিছু সৃষ্টি করে নি। আর তারা রিযিক, জীবন-মৃত্যু ও অন্যন্য কোনো কিছুর মালিক নয়। আল্লাহ তা‘আলা মুশরিকদের সম্পর্কে বলেন,
﴿قُلۡ مَن يَرۡزُقُكُم مِّنَ ٱلسَّمَآءِ وَٱلۡأَرۡضِ أَمَّن يَمۡلِكُ ٱلسَّمۡعَ وَٱلۡأَبۡصَٰرَ وَمَن يُخۡرِجُ ٱلۡحَيَّ مِنَ ٱلۡمَيِّتِ وَيُخۡرِجُ ٱلۡمَيِّتَ مِنَ ٱلۡحَيِّ وَمَن يُدَبِّرُ ٱلۡأَمۡرَۚ فَسَيَقُولُونَ ٱللَّهُۚ فَقُلۡ أَفَلَا تَتَّقُونَ ٣١﴾ [يونس: ٣١]  
“বল, আসমান ও জমিন থেকে কে তোমাদের রিযিক দেন? অথবা কে শ্রবণ ও দৃষ্টিসমূহের মালিক? আর কে মৃত থেকে জীবিতদের বের করেন আর জীবিত থেকে মৃতকে বের করেন? কে সব বিষয় পরিচালনা করেন? তখন তারা অবশ্যই বলবে, ‘আল্লাহ’। সুতরাং তুমি বল, ‘তারপরও কি তোমরা তাকওয়া অবলম্বন করবে না’?” [সূরা ইউনুছ, আয়াত: ৩১]
অর্থাৎ যখন তোমরা জানলে যে, এসবের কর্তা একমাত্র আল্লাহ তা‘আলা তাহলে কি তোমরা আল্লাহর তাকওয়া অবলম্বন করবে না, ফলে দো‘আর ক্ষেত্রেও তোমরা তাকে অনুরুপভাবে একক হিসাবে মনে কর যেভাবে সৃষ্টির বিষয়ে তাকে একক জান?
অতএব, এ থেকে বুঝা যায় যে, কাফিররা ঐ সকল নেককার ব্যক্তিবর্গের কাছ থেকে যা আশা করে তাহলো তারা যেন তাদেরকে মহান আল্লাহর নিকটবর্তী করে দেন। তাদের ধারণা মতে আল্লাহ ঐসব মৃত নেককার ব্যক্তিদের দো‘আ কবুল করেন। ফলে তিনি সাহায্য প্রার্থনাকারীদের প্রয়োজন পূর্ণ করবেন। আর এটাই হলো সত্য ইলাহের ব্যাপারে তাদের নিকৃষ্ট অপমান। তার কারণ হলো, মহান রব আল্লাহ কোনো মানুষের মতো নন যে, তার নিকট কোনো কিছু চাইতে কোনো মন্ত্রী অথবা সাহায্যকারী অথবা অন্য কোনো কিছুর প্রয়োজন। যেমনিভাবে মানুষের অবস্থা, যেহেতু সকল বিষয়ে তাদের পরিবেষ্টনে নয়। এখানে কুরআনুল কারীম থেকে আমরা জানতে পারি যে, যে কেউ আল্লাহ ব্যতীত কোনো মৃত ও অন্যান্যকে ডাকবে এমন ব্যাপারে যা সিদ্ধ করতে একমাত্র আল্লাহ ব্যতীত কেউ সক্ষম নয়, সে মুশরিক ও আল্লাহর অস্বীকারকারী। মহান আল্লাহ তা‘আলা তাদের সন্দেহ সংশয় স্পষ্ট করতে গিয়ে বলেন,
﴿إِنَّ ٱلَّذِينَ تَدۡعُونَ مِن دُونِ ٱللَّهِ عِبَادٌ أَمۡثَالُكُمۡۖ فَٱدۡعُوهُمۡ فَلۡيَسۡتَجِيبُواْ لَكُمۡ إِن كُنتُمۡ صَٰدِقِينَ ١٩٤﴾ [الاعراف: ١٩٤]  
“আল্লাহ ছাড়া যাদেরকে তোমরা ডাক তারা তোমাদের মতো বান্দা। সুতরাং তোমরা তাদেরকে ডাক। অতঃপর তারা যেন তোমাদের ডাকে সাড়া দেয়, যদি তোমরা সত্যবাদী হও।”  [সূরা আল-আ‘রাফ, আয়াত: ১৯৪]
আর আল্লাহ তা‘আলা দলিল বর্ণনা করেছেন যে, নিশ্চয় তারা যাদের ডাকে তারা তাদের ডাক শুনে না। যদিও বির্তকের খাতিরে মেনে নেওয়া হয় তথাপিও কখনো তারা তাদের ডাকে সাড়া দিবে না। আর তারা কিয়ামতের ময়দানে তাদের এসব কর্মকে অস্বীকার করবে। তাদের এসব কর্মকে কুরআনে দলীল দ্বারা শির্ক নামকরণ করা হয়েছে। আর তা হলো সূরা ফাতিরে আল্লাহর বাণী:
﴿إِن تَدۡعُوهُمۡ لَا يَسۡمَعُواْ دُعَآءَكُمۡ وَلَوۡ سَمِعُواْ مَا ٱسۡتَجَابُواْ لَكُمۡۖ وَيَوۡمَ ٱلۡقِيَٰمَةِ يَكۡفُرُونَ بِشِرۡكِكُمۡۚ وَلَا يُنَبِّئُكَ مِثۡلُ خَبِيرٖ ١٤﴾ [فاطر: ١٤]  
“যদি তোমরা তাদেরকে ডাক, তারা তোমাদের ডাক শুনবে না; আর শুনতে পেলেও তোমাদের ডাকে সাড়া দেবে না এবং কিয়ামতের দিন তারা তোমাদের শরীক করাকে অস্বীকার করবে। আর সর্বজান্তা আল্লাহর ন্যায় কেউ তোমাকে অবহিত করবে না।” [সূরা ফাতির, আয়াত: ১৪]
সুতরাং আল্লাহ ব্যতীত প্রত্যেক মৃত যাদের ডাকা হয় তারা শুনতে পায় না। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿إِنَّكَ لَا تُسۡمِعُ ٱلۡمَوۡتَىٰ ٨٠ ﴾ [النمل: ٨٠]
‘‘নিশ্চয় আপনি মৃতদেরকে কথা শুনাতে পারেন না’’ [সূরা আন-নামল, আয়াত: ৮০]
আল্লাহ তা‘আলা অন্যত্র বলেন,
﴿وَمَآ أَنتَ بِمُسۡمِعٖ مَّن فِي ٱلۡقُبُورِ ٢٢﴾ [فاطر: ٢٢]   
‘‘কিন্তু যে ব্যাক্তি কবরে আছে তাকে আপনি শুনাতে পারবেন না।’’ [সূরা ফাতির, আয়াত: ২২]
আর তারা গায়েব সম্পর্কে জানে না। যেহেতু রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামও গায়েব সম্পর্কে জানেন না। যেমন সূরা আল-আ‘রাফে বর্ণিত হয়েছে,
﴿ قُل لَّآ أَمۡلِكُ لِنَفۡسِي نَفۡعٗا وَلَا ضَرًّا إِلَّا مَا شَآءَ ٱللَّهُۚ وَلَوۡ كُنتُ أَعۡلَمُ ٱلۡغَيۡبَ لَٱسۡتَكۡثَرۡتُ مِنَ ٱلۡخَيۡرِ وَمَا مَسَّنِيَ ٱلسُّوٓءُۚ  ﴾ [الاعراف: ١٨٨]  
“বল, ‘আমি আমার নিজের কোনো উপকার ও ক্ষতির ক্ষমতা রাখি না, তবে আল্লাহ যা চান। আর আমি যদি গায়েব জানতাম তাহলে অধিক কল্যাণ লাভ করতাম এবং আমাকে কোনো ক্ষতি স্পর্শ করত না।” [সূরা আল-আ‘রাফ, আয়াত: ১৮৮]
তাহলে কীভাবে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিচুস্তরের কোনো মানুষের পক্ষে গায়েব জানা সম্ভব হতে পারে? ফলে কোনো ব্যক্তি কবরের নিকট গিয়ে কোনো কিছু চাইলে তার পক্ষে কিছু জানা সম্ভব নয়; বরং তারা অস্তিত্বহীনের কাছেই কোনো কিছু চাচ্ছে। আর তাদের জন্য আল্লাহর নিকট (ওলীগণের) সত্ত্বার মাধ্যমে কোনো শাফা‘আত চাওয়াও শুদ্ধ নয়। কারণ মহান আল্লাহ আরবদেরকে মৃত ব্যক্তির নিকট চাওয়ার কারণে কাফির বলেছেন, যদিও তাদের বক্তব্য ছিল
﴿مَا نَعۡبُدُهُمۡ إِلَّا لِيُقَرِّبُونَآ إِلَى ٱللَّهِ زُلۡفَىٰٓ ﴾ [الزمر: ٣]  
“আমরা কেবল এজন্যই তাদের ইবাদত করি যে, তারা আমাদেরকে আল্লাহর নিকটবর্তী করে দেবে।” [সূরা আয-যুমার, আয়াত: ৩]
অর্থাৎ আমরা তাদেরকে ডাকি না। কেননা ডাকাই হচ্ছে ইবাদত, অচিরেই এই সম্পর্কে বর্ণনা করা হবে। বস্তুত তাদের নিকট শাফা‘আত প্রার্থনা করা অনেক বড় ভুল। কেননা আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿مَن ذَا ٱلَّذِي يَشۡفَعُ عِندَهُۥٓ إِلَّا بِإِذۡنِهِ ٢٥٥﴾ [البقرة: ٢٥٥]  
“কে আছে যে তাঁর (আল্লাহর) নিকট সুপারিশ করবে তাঁর অনুমতি ছাড়া?” [সূরা আল-বাকারাহ, আয়াত: ২৫৫]
﴿وَلَا يَشۡفَعُونَ إِلَّا لِمَنِ ٱرۡتَضَىٰ ٢٨﴾ [الانبياء: ٢٨]  
“আর তারা শুধু তাদের জন্য সুপারিশ করে যাদের প্রতি তিনি সন্তুষ্ট।” [সূরা আল-আম্বিয়া, আয়াত: ২৮]
তিনি (সুবহানাহু) পবিত্রময় সত্ত্বা, মৃতদের কাছ থেকে শাফা‘আত চাওয়া পছন্দ করেন না। কেননা মৃতের কোনো জীবন নেই এবং কোনো ক্ষমতা নেই। তাহলে কীভাবে অস্তিত্বহীনের কাছে চাইবে? তার কাছেই তো চাওয়া যায়, যার ক্ষমতা আছে আর তিনি হলেন আল্লাহ তা‘আলা।
(শাফা‘আত সত্য)
অতঃপর আমরা আমাদের অভিভাবক আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করি তিনি যেন তাঁর অনুগ্রহ ও দয়ায় কিয়ামত দিবসে সৎকর্মশীলদের শাফা‘আত নসীব করেন। চাই সেটা এমন ব্যক্তির জন্য, যে জাহান্নামের উপযোগী হয়ে গেছে (আমরা তা থেকে আল্লাহর নিকট আশ্রয় চাই) অথবা জান্নাতে আমাদের মর্যাদা উচ্চ করার জন্য বা অনুরূপ দান করার জন্য। কেননা কোনো সুপারিশকারীর পক্ষেই আল্লাহর অনুমতি ব্যতীত সুপারিশ করা সম্ভব নয়। যদিও বা তিনি কোনো নৈকট্যশীল ফেরেশতা হন বা প্রেরিত নবী হন, তাহলে ঐসব ব্যক্তির চেয়েও নিম্নস্তরের অন্য মানুষের পক্ষে কীভাবে তা সম্ভব হতে পারে? আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿وَكَم مِّن مَّلَكٖ فِي ٱلسَّمَٰوَٰتِ لَا تُغۡنِي شَفَٰعَتُهُمۡ شَيۡ‍ًٔا إِلَّا مِنۢ بَعۡدِ أَن يَأۡذَنَ ٱللَّهُ لِمَن يَشَآءُ وَيَرۡضَىٰٓ ٢٦﴾ [النجم: ٢٦]
“আর আসমানসমূহে অনেক ফিরিশতা রয়েছে, তাদের সুপারিশ কোনোই কাজে আসবে না। তবে আল্লাহ যাকে ইচ্ছা করেন এবং যার প্রতি তিনি সন্তুষ্ট, তার ব্যাপারে অনুমতি দেওয়ার পর।” [সূরা আন-নাজম, আয়াত: ২৬]
আল্লাহ আরো বলেন,
﴿مَن ذَا ٱلَّذِي يَشۡفَعُ عِندَهُۥٓ إِلَّا بِإِذۡنِهِۦ ٢٥٥﴾ [البقرة: ٢٥٥]
“কে সে যে তার নিকট সুপারিশ করবে তার অনুমতি ছাড়া?” [সূরা আল-বাকারাহ, আয়াত: ২৫৫]
আল্লাহ আরো বলেন,
﴿وَلَا يَشۡفَعُونَ إِلَّا لِمَنِ ٱرۡتَضَىٰ ٢٨﴾ [الانبياء: ٢٨]
 “আর তারা শুধু তাদের জন্য সুপারিশ করে যাদের প্রতি তিনি সন্তুষ্ট।” [সূরা আল-আম্বিয়া, আয়াত: ২৮]
উপর্যুক্ত বিষয়ের ওপর ভিত্তি করে বলা যায় যে, শাফা‘আত দু ধরনের:
প্রথমত ইতিবাচক শাফা‘আত: এটা বিশেষভাবে একনিষ্ঠদের জন্য, আর এটা আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারো নিকট চাওয়া যাবে না। কেননা একটু আগে এই সম্পর্কিত বর্ণনা শেষ হয়েছে যে, আল্লাহর অনুমতি ও তার সন্তুষ্টি ব্যতীত কেউ কারো জন্য কোনো সুপারিশ করবে না। আর সুপারিশকৃত ব্যক্তির উপরেও তার সন্তুষ্টি থাকতে হবে। অতঃপর যখন সুপারিশকৃত তাওহীদপন্থী হবে, তখন আল্লাহর অনুমতিতে শাফা‘আতকারীগণের শাফা‘আত উপকারে আসবে। চাই তা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অথবা অন্যান্য নবীগণ অথবা সিদ্দীকগণ বা ওলী ও সৎকর্মশীলগণের সুপারিশ হোক।
দ্বিতীয়ত নেতিবাচক শাফা‘আত: এটা এমন শাফা‘আত যা আল্লাহ ব্যতীত অন্যের নিকট চাওয়া হয়। যেমন, মৃত ব্যক্তির নিকট অথবা অনুপস্থিতের নিকট অথবা জ্বীনের নিকট যা চাওয়া হয়। কেননা সেটা এমন ব্যক্তির নিকট চাওয়া হয় যার অধিকারী তারা নয়। যেমন মৃতব্যক্তি, যার সম্পর্কে কুরআনে এসেছে, যা ইতোপূর্বে বর্ণিত হয়েছে যে, সে নিশ্চয় তারা শুনতে পায় না আর অনুপস্থিত ব্যক্তি গায়েবও জানে না। অনুরূপভাবে ওলী ও সৎকর্মশীল মৃতগণ জানে না যে, কে তাদের কবরের নিকট আসল এবং মুক্তি প্রার্থনা করল অথবা সাহায্য চাইল অথবা তাদের দ্বারা সুপারিশ কামনা করল। এর ওপর ভিত্তি করে বলা যায় যে, কোনো কাফির, মুশরিক ও যে আল্লাহ ব্যতীত অন্য কাউকে ডাকে অথবা অন্যের নামে যবেহ করে অথবা মান্নত করে তাদের জন্য কোনো সুপারিশ করা হবে না।
আর শাফা‘আত কিয়ামত দিবসে নবীগণ, ওলীগণ ও সৎকর্মশীল ব্যক্তিগণ যাদেরকে আল্লাহ তা‘আলা অনুমতি দিবেন তাদের কাছেই কেবল চাওয়া যাবে, এই ব্যাপারে দলীল হচ্ছে মহান আল্লাহ তা‘আলার বাণী:
﴿يَوۡمَئِذٖ لَّا تَنفَعُ ٱلشَّفَٰعَةُ إِلَّا مَنۡ أَذِنَ لَهُ ٱلرَّحۡمَٰنُ وَرَضِيَ لَهُۥ قَوۡلٗا ١٠٩﴾ [طه: ١٠٩]  

“সে দিন পরম করুণাময় যাকে অনুমতি দিবেন আর যার কথায় তিনি সন্তুষ্ট হবেন তার সুপারিশ ছাড়া কারো সুপারিশ কোনো কাজে আসবে না।” [সূরা ত্বহা, আয়াত: ১০৯]
অন্যদিকে জীবিত ওলীগণ ও নেককার ব্যক্তিবর্গের নিকট দো‘আ চাওয়া যাবে যেমনিভাবে সাহাবায়ে কেরাম রাদিয়াল্লাহু আনহুম বিভিন্ন সাহায্যের প্রয়োজনে ও শত্রুর ওপর বিজয় লাভ এবং অনুরূপ প্রয়োজনে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট সাহায্য কামনা করতেন।
হে বিচক্ষণ পাঠক! মহান আল্লাহ বলেন,
﴿وَٱلَّذِينَ يَدۡعُونَ مِن دُونِ ٱللَّهِ لَا يَخۡلُقُونَ شَيۡ‍ٔٗا وَهُمۡ يُخۡلَقُونَ ٢٠ أَمۡوَٰتٌ غَيۡرُ أَحۡيَآءٖۖ وَمَا يَشۡعُرُونَ أَيَّانَ يُبۡعَثُونَ ٢١﴾ [النحل: ٢٠،  ٢١]  
“আর তারা আল্লাহ ছাড়া যাদেরকে ডাকে, তারা কিছু সৃষ্টি করতে পারে না; বরং তাদেরকেই সৃষ্টি করা হয়। (তারা) মৃত, জীবিত নয় এবং তারা জানে না কখন তাদেরকে পুনরুজ্জীবিত করা হবে।” [সূরা আন-নাহল, আযাত: ২০-২১]
অর্থাৎ ঐ সব ওলী ও সৎকর্মশীল ব্যক্তিবর্গ মৃত, তারা জীবিত নয়। সুতরাং যারা এদের কাছে শাফা‘আত চায় তারা এর দ্বারা মৃত ব্যক্তির কাছে এমন কিছু চাইলো যা দেওয়ার অধিকারী তারা নয়। অন্যদিকে যখন কোনো সৎকর্মশীল ব্যক্তি জীবিত অবস্থায় থাকেন তাহলে তার কাছে চাওয়া জায়েয, যে বিষয়ে সে ক্ষমতা রাখে। যেমন তুমি তাকে বলবে হে শায়খ! তুমি আল্লাহর নিকট আমার জন্য অমুক অমুক প্রার্থনা কর অথবা হে অমুক আমাকে আমার ঋণ পরিশোধে সহযোগিতা কর অথবা সওয়ারীর উপর আমার আসবাব পত্র আরোহণে এবং অনুরূপ অন্যান্য বিষয়ে সাহায্য কর, যাতে সে ক্ষমতা রাখে।
আরবের জাহেলী যুগের লোক যাদের সাথে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর নির্দেশে যুদ্ধ করেছেন তাদের উপর্যুক্ত অবস্থা বর্ণনা করার পর বর্তমানে বহু মুসলিম সন্তানদের মধ্যে যা বাস্তবে প্রচলিত রয়েছে তাদের ব্যাপারে এ প্রশ্নের অবতারণা হয় যে,   
(জাহেলী যুগের ঐ সব মুর্খ ব্যক্তি এবং বর্তমান যুগে যারা মৃত ওলী, সৎকর্মশীল অথবা অনুপস্থিত লোকদের কাছে প্রার্থনা করে তাদের মধ্যে পাথর্ক্য কি?)
উত্তর: নিশ্চয় এখানে কোনো পার্থক্য নেই। আর তা বিভিন্ন দিক থেকে সাব্যস্ত হতে পারে:
প্রথমত: তারা বিশ্বাস করত না যে, আল্লাহ ব্যতীত তারা যাদেরকে ডাকছে আল্লাহর রাজত্ব থেকে তারা কোনো কিছুর মালিক নন, অনুরূপভাবে বর্তমান যুগেও যারা ওলীগণ ও সৎকর্মশীলগণের কবরে যায় এবং তাদের কাছে দো‘আ করে তারা একই বিশ্বাস পোষণ করে থাকে হুসাইন ইবন আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু, আব্দুল কাদের জিলানী ও সাইয়্যেদ বাদাওয়ী রহ. ও অন্যান্য সালেহীনগণের ব্যাপারে।
দ্বিতীয়ত: নিশ্চয় জাহেলী যুগের কাফিররা বিশ্বাস করত যে, ঐ সব মৃত নেককার ব্যক্তিবর্গের আল্লাহর নিকট বড় মর্যাদা রয়েছে, ফলে তারা তাদের প্রয়োজনসমূহ আল্লাহর নিকট উত্থাপন করবে, এ ধারণায় যে নিশ্চয় তারা তাদেরকে আল্লাহর নিকটবর্তী করে দিবে। তা সত্বেও আমাদের রব মহান আল্লাহ তাদের এই বক্তব্যকে কুফুরী সাব্যস্ত করেছেন, যদিও তারা বলতো,
﴿ هَٰٓؤُلَآءِ شُفَعَٰٓؤُنَا عِندَ ٱللَّهِۚ  ١٨ ﴾ [يونس: ١٨]  
“এরা আল্লাহর নিকট আমাদের সুপারিশকারী।” [সূরা ইউনুছ, আয়াত: ১৮] তারা আরও বলতো,
﴿ مَا نَعۡبُدُهُمۡ إِلَّا لِيُقَرِّبُونَآ إِلَى ٱللَّهِ زُلۡفَىٰٓ ﴾ [الزمر: ٣]  
“আমরা কেবল এজন্যই তাদের ইবাদত করি যে, তারা আমাদেরকে সুপারিশ করে আল্লাহর নিকটবর্তী করে দিবে।” [সূরা আয-যুমার, আয়াত: ৩]
আর অনুরূপভাবে বর্তমান যুগে কবরে গমণকারীরা একই বিশ্বাস পোষণ করে থাকে তাদের নেতা ও ওলীগণের ব্যাপারে।
আর দো‘আ ইবাদাতের অংশ, যখন আল্লাহ তা‘আলা দো‘আকে ইবাদাতের অংশ হিসাবে নামকরণ করেছেন, তিনি বলেন,
﴿ وَقَالَ رَبُّكُمُ ٱدۡعُونِيٓ أَسۡتَجِبۡ لَكُمۡۚ إِنَّ ٱلَّذِينَ يَسۡتَكۡبِرُونَ عَنۡ عِبَادَتِي سَيَدۡخُلُونَ جَهَنَّمَ دَاخِرِينَ ٦٠ ﴾ [غافر: ٦٠]  
“আর তোমাদের রব বলেছেন, ‘তোমরা আমাকে ডাক, আমি তোমাদের জন্য সাড়া দেব। নিশ্চয় যারা অহঙ্কারবশতঃ আল্লাহর ইবাদত থেকে বিমুখ থাকে, তারা অচিরেই লাঞ্ছিত অবস্থায় জাহান্নামে প্রবেশ করবে।” [সূরা গাফির, আযাত: ৬০]
সুতরাং এখানে আল্লাহ তা‘আলা দো‘আকে ইবাদত হিসেবে ব্যাখ্যা করেছেন। বরং রাসূলুল্লাহ  সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বক্তব্য আরো স্পষ্টভাবে এসেছে, ইমাম আহমদ, আবু দাউদ, তিরমিযী, নাসাঈ, ইবন মাজাহ, ইবন আবি হাতেম, ইবন জারীর ও হাকেম রহ. হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
«إن الدعاء هو العبادة»
“নিশ্চয় দো‘আ হলো ইবাদত।”
ইমাম আহমদ আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণনা করেছেন যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,     
 «من لم يدع الله عز وجل يغضب عليه»
 “যে ব্যক্তি আল্লাহকে ডাকে না তিনি তাঁর ওপর রাগান্বিত হন।”

(রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওফাতের পর সাহাবীগণ কিরূপে শরী‘আতসম্মত অসীলাকে বাস্তবায়ন করেছেন?)
সাহাবায়ে কেরাম রাদিয়াল্লাহু আনহুম অসীলা-এর প্রকৃত অর্থ বুঝতে পেরেছিলেন। আর তারা এটাও বুঝতে পেরেছিলেন যে, যে ব্যক্তি আল্লাহ ব্যতীত অন্য কাউকে ডাকে সে হলো মুশরিক ও কাফির, যদিও সে নৈকিট্যশীল কোনো ফিরিশতাকে ডাকুক অথবা প্রেরিত নবীকে। এজন্য সাহাবায়ে কেরাম রাদিয়াল্লাহু আনহুম কঠিনতম পরিস্থিতিতেও এই কাজ করতেন না। এ ব্যাপারে উদহারণস্বরূপ উল্লেখ করা যায় যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওফাতের পর সাহাবীগণের জীবদ্দশায় উমার রাদিয়াল্লাহু আনহুর খিলাফতকালে দূর্ভিক্ষ দেখা দিল, তখন লোকেরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের চাচা আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুর কাছে বৃষ্টির জন্য দো‘আ করতে বললেন। এমনকি উমার রাদিয়াল্লাহু আনহু সালাতের স্থানে দাঁড়িয়ে বলেন,
اللهم إنا كنا نتوسل إليك بنبينا فتسقينا ، وإنا نتوسل إليك بعم نبينا فاسقنا ، قال: فيسقون
“হে আল্লাহ নিশ্চয় আমরা তোমার কাছে আমাদের নবীর অসীলা করতাম, ফলে তুমি বৃষ্টি বর্ষণ করতে আর আমরা এখন তোমার কাছে নবীজির চাচার অসীলা করছি তুমি বৃষ্টি বর্ষণ কর, ফলে বৃষ্টি বর্ষণ করা হয়।”
তখন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু দো‘আ করছিলেন আর অন্যান্য সাহাবীগণ আমীন বলছিলেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সেসব সাহাবীগণ কেন তা করেন নি যা আমাদের বর্তমান যুগে কিছু মানুষ করে থাকে, তারা মুক্তি প্রার্থনা করে অথবা শাফা‘আত চায়। অথচ সাহাবীগণ হালাল এবং হারাম সম্পর্কে সর্বাধিক জ্ঞাত ছিলেন, তারা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পিছনে সালাত আদায় করেছিলেন, তাঁর সাথে থেকে যুদ্ধ করেছেন, তাঁর সাথে হজ করেছেন, তাঁর মসজিদে বসেছেন, তাঁর খুৎবা শ্রবণ করেছেন, তাঁর শিষ্টাচারে শিষ্টাচারিত হয়েছেন এবং তাঁর থেকে শিক্ষা গ্রহণ করেছেন।
অনুরূপভাবে কোনো নবী বা ওলী ও অন্যান্য কবরের উদ্দেশ্যে সফর করা জায়েয নয়, কেননা এসব অসীলা শির্কের দিকে ধাবিতকারী অসীলাসমূহের অন্যতম। আর অসীলাসমূহের বিধি-বিধান মূল জিনিসের অন্তর্ভুক্ত। এ কারণে আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে পাই যে, তিনি তা হারাম ঘোষণা করেছেন। অতঃপর তিনি বলেন,
 «لا تشد الرحال إلا إلى ثلاثة مساجد: المسجد الحرام، ومسجد الرسول صلى الله عليه وسلم، ومسجد الأقصى»  
“তোমরা তিন মসজিদ ব্যতীত সফর করবে না, মসজিদে হারাম, আমার এই মসজিদ ও মসজিদে আকসা।”
আর এর দ্বারা উদ্দেশ্য হলো কোনো নেককার ব্যক্তির কবর অথবা ওলীর মাযার ও অন্যান্য ব্যাপারে সফর সংগঠিত করা যাবে না। আর আমরা আমাদের জীবন, পিতা-মাতা, সন্তান-সন্ততি, পরিবার-পরিজন ও ধর্ম সম্পদের চেয়েও রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে অধিক ভালোবাসি। আর আমরা সাহাবা রাদিয়াল্লাহু আনহুমকে ভালোবাসি, আমরা সৎকর্মশীল ওলীগণকে ভালোবাসি আর যারা ওলীগণের সাথে বন্ধুত্ব করে আমরা তাদের সাথে বন্ধুত্ব করি আর যারা ওলীগণের সাথে শত্রুতা করে আমরা তাদের সাথে শত্রুতা পোষণ করি। আমরা জানি, যে কেউ আল্লাহর ওলীর সাথে শত্রুতা পোষণ করে নিশ্চয় আল্লাহ তা‘আলা তার বিরুদ্ধে যুদ্ধের ঘোষণা করেছেন। কিন্তু তুমি আমাকে তোমার রবের শপথ করে বল, এসব ভালোবাসা এবং তাদের ভালোবাসা আমাদেরকে আল্লাহ ব্যতীত অন্যের ইবাদত করার, আল্লাহর সাথে শরীক স্থাপন করার, তাদের (নবীগণ ও ওলীগণ) অসীলা করার, তাদের কবরসমূহ প্রদক্ষিণ করার, তাদের জন্য মান্নত করার এবং তাদের নৈকট্যশীলতার জন্য তাদের উদ্দেশ্যে কুরবানী করার দাবী রাখে কি?
এ থেকে বুঝা যায় যে, আল্লাহ ব্যতীত অন্য কোনো সৃষ্টিকে আহ্বান করা, যে বিষয়ে আল্লাহ ব্যতীত তারা ক্ষমতাবান নন, তা মহান আল্লাহর সাথে শির্ক হিসেবে গণ্য। আর এমনিভাবে যে কেউ কোনো ওলী ও সৎকর্মশীলগণের কবরের কাছে আসে অতঃপর বিভিন্ন প্রয়োজন তাদের কাছে চায় যেমন রোগমুক্তির জন্য, অনুপস্থিত ফেরত পাওয়ার জন্য, বন্ধান্ত দুরীকরণের জন্য তাদের দ্বারস্থ হয় সেটাও একই হুকুম রাখে। যদিও তারা বলে যে আমরা বিশ্বাস করি সবকিছু পবিত্রতম মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে হয়। আর এটা তা-ই যা ইতোপূর্বে জাহেলী যুগের লোকদের শির্ক সম্পর্কে বর্ণনা করা হয়েছে। যাদের নিকট রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রেরিত হয়েছেন আর এটাই হলো বড় শির্ক।
(আল্লাহ তা‘আলা ব্যতীত ওলীগণের কাছে চাওয়া বড় শিরক হওয়ার সম্পর্কে দলীল সমূহ)
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿فَلَا تَدۡعُواْ مَعَ ٱللَّهِ أَحَدٗا ١٨﴾ [الجن: ١٨]  
“কাজেই তোমরা আল্লাহর সাথে অন্য কাউকে ডেকো না।” [সূরা আল-জিন্ন, আয়াত: ১৮]
এখানে ‘আহাদান’ শব্দটি ‘নাকেরা’ না বাচক এর স্থানে ব্যবহৃত হওয়ায় সার্বজনীন এর অর্থ দেয়। অর্থাৎ এক আল্লাহ ব্যতীত কাউকে ডাকা হবে না। আর আল্লাহ ব্যতীত অন্যকে ডাকা বড় শির্ক যা ব্যক্তির সব আমলকে ধ্বংস করে দেয়। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿ وَقَدِمۡنَآ إِلَىٰ مَا عَمِلُواْ مِنۡ عَمَلٖ فَجَعَلۡنَٰهُ هَبَآءٗ مَّنثُورًا ٢٣ ﴾ [الفرقان: ٢٢]  
“আর তারা যে কাজ করেছে আমি সে দিকে অগ্রসর হব। অতঃপর তাকে বিক্ষিপ্ত ধুলিকণায় পরিণত করে দেবো।” [সূরা আল-ফুরকান, আয়াত: ২৩]
এ বিষয়ে আরো দলীল হল সূরা আল-আ‘রাফের শেষে আল্লাহ তা‘আলার বাণী:
﴿أَيُشۡرِكُونَ مَا لَا يَخۡلُقُ شَيۡ‍ٔٗا وَهُمۡ يُخۡلَقُونَ ١٩١ وَلَا يَسۡتَطِيعُونَ لَهُمۡ نَصۡرٗا وَلَآ أَنفُسَهُمۡ يَنصُرُونَ ١٩٢ وَإِن تَدۡعُوهُمۡ إِلَى ٱلۡهُدَىٰ لَا يَتَّبِعُوكُمۡۚ سَوَآءٌ عَلَيۡكُمۡ أَدَعَوۡتُمُوهُمۡ أَمۡ أَنتُمۡ صَٰمِتُونَ ١٩٣ إِنَّ ٱلَّذِينَ تَدۡعُونَ مِن دُونِ ٱللَّهِ عِبَادٌ أَمۡثَالُكُمۡۖ فَٱدۡعُوهُمۡ فَلۡيَسۡتَجِيبُواْ لَكُمۡ إِن كُنتُمۡ صَٰدِقِينَ ١٩٤ أَلَهُمۡ أَرۡجُلٞ يَمۡشُونَ بِهَآۖ أَمۡ لَهُمۡ أَيۡدٖ يَبۡطِشُونَ بِهَآۖ أَمۡ لَهُمۡ أَعۡيُنٞ يُبۡصِرُونَ بِهَآۖ أَمۡ لَهُمۡ ءَاذَانٞ يَسۡمَعُونَ بِهَاۗ قُلِ ٱدۡعُواْ شُرَكَآءَكُمۡ ثُمَّ كِيدُونِ فَلَا تُنظِرُونِ ١٩٥ إِنَّ وَلِـِّۧيَ ٱللَّهُ ٱلَّذِي نَزَّلَ ٱلۡكِتَٰبَۖ وَهُوَ يَتَوَلَّى ٱلصَّٰلِحِينَ ١٩٦ وَٱلَّذِينَ تَدۡعُونَ مِن دُونِهِۦ لَا يَسۡتَطِيعُونَ نَصۡرَكُمۡ وَلَآ أَنفُسَهُمۡ يَنصُرُونَ ١٩٧﴾ [الاعراف: ١٩١،  ١٩٧]  
“তারা কি এমন বস্তুকে শরীক করে যারা কিছুই সৃষ্টি করে না? বরং ওরা নিজেরাই সৃষ্ট, ওরা না তাদেরকে সাহায্য করতে পারে আর না নিজেদেরকে সাহায্য করতে পারে। আর তোমরা তাদেরকে সৎপথে ডাকলেও তারা তোমাদেরকে অনুসরণ করবে না; তোমরা ওদেরকে ডাক বা চুপ থাক, তোমাদের জন্য উভয়ই সমান। আল্লাহ ছাড়া তোমরা যাদেরকে আহ্বান কর তারা তো তোমাদেরই মতো বান্দা; সুতরাং তোমরা তাদেরকে ডাক, অতঃপর তারা যেন তোমাদের ডাকে সাড়া দেয়, যদি তোমরা সত্যবাদী হও। তাদের কি পা আছে যা দিয়ে ওরা চলে? তাদের কি হাত আছে যা দিয়ে ওরা ধরে? তাদের কি চোখ আছে যা দিয়ে ওরা দেখে? কিংবা তাদের কি কান আছে যা দিয়ে ওরা শুনে? বলুন, ‘তোমরা যাদেরকে আল্লাহর শরীক করেছ তাদেরকে ডাক তারপর আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র কর এবং আমাকে অবকাশ দিও না’। আর আল্লাহ ছাড়া তোমরা যাদেরকে ডাক তারা তো তোমাদেরকে সাহায্য করতে পারে না এবং তারা তাদের নিজেদেরকেও সাহায্য করতে পারে না।” [সূরা আল-আ‘রাফ: ১৯১-১৯৭]
এ আয়াতসমূহ সুস্পষ্ট দলীল যে, আল্লাহ ব্যতীত অন্যের কাছে দো‘আ করা বড় শির্ক এবং মুসলিম মিল্লাত থেকে বহিষ্কারকারী।
(শরী‘আহসম্মত অসীলা)
আর তা হলো, আল্লাহ তা‘আলার সত্ত্বার অসীলা করা। যেমন তোমার বলা ‘হে আল্লাহ’ অথবা তাঁর যে কোনো নাম যেমন তুমি বলবে ‘হে রহমান, হে রাহীম, ও চিরঞ্জীব, হে চিরস্থায়ী’ অথবা তাঁর যে কোনো গুণবাচক নাম, যেমন তুমি বলবে ‘হে আল্লাহ তোমার রহমত দ্বারা আমি সাহায্য প্রার্থনা করি’ অথবা জীবিত সৎ ব্যক্তির দো‘আর মাধ্যমে আহ্বান করা, যেমন তুমি বলবে ‘শায়খ! আমার জন্য আল্লাহর নিকট দো‘আ করুন’। যেমন সাহাবা রাদিয়াল্লাহু আনহুম বৃষ্টির জন্য রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর অসীলা করেছেন। গুহাবাসীগণের কাহিনীতে সৎকর্মের দ্বারা অসীলা করা হয়েছে, যাদের ওপর পাথর চেপে বসেছিল। অতঃপর তারা আল্লাহ তা‘আলার নিকট তাদের সৎকর্ম দ্বারা প্রার্থনা করেছেন, ফলে আল্লাহ তাদের থেকে তা দূর করে দিয়েছেন এবং তারা হেঁটে বের হয়েছিল।
এক্ষেত্রে তুমি বলবে, হে আল্লাহ আমি তোমার কাছে তোমার নবীর ভালোবাসা, তোমার একত্ববাদে ও তোমার আনুগত্য ও তোমার রাসূলের মাধ্যমে চাচ্ছি যে, তুমি আমাকে অমুক অমুক ব্যবস্থা করে দাও।
কিন্তু নবীর সত্ত্বা ও ওলীর সত্ত্বা অথবা আল্লাহর কোনো অংশের সত্ত্বার মাধ্যমে আল্লাহ তা‘আলার কাছে তোমাদের চাওয়া এমন এক বিদ‘আত যা শির্কের দিকে ধাবিত করে। ফলে তা হারাম যদিও তা শির্কের পর্যায় না পৌঁছে। কেননা এখানে প্রার্থনাকারী এক আল্লাহর কাছে চেয়েছে। পক্ষান্তরে মৃত অথবা অনুপস্থিত কোনো ব্যক্তির নিকট তোমার সরাসরি কোনো কিছু চাওয়া বড় শির্ক।
আর পবিত্র আল্লাহ তার বান্দাদেরকে একমাত্র তার কাছে চাইতে নির্দেশ দিয়েছেন। তারা তিনি ব্যতীত অন্যের কাছে চাইবে না, তিনি তাদের প্রার্থনা কবুল করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। যদিও তা কিছু সময় অতিবাহিত হবার পর হয়। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿وَإِذَا سَأَلَكَ عِبَادِي عَنِّي فَإِنِّي قَرِيبٌۖ أُجِيبُ دَعۡوَةَ ٱلدَّاعِ إِذَا دَعَانِۖ فَلۡيَسۡتَجِيبُواْ لِي وَلۡيُؤۡمِنُواْ بِي لَعَلَّهُمۡ يَرۡشُدُونَ ١٨٦﴾ [البقرة: ١٨٦]
“আর যখন আমার বান্দাগণ তোমাকে আমার সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করবে, আমি তো নিকটবর্তী। আমি আহ্বানকারীর ডাকে সাড়া দেই, যখন সে আমাকে ডাকে। সুতরাং তারা যেন আমার ডাকে সাড়া দেয় এবং আমার প্রতি ঈমান আনে। আশা করা যায় তারা সঠিক পথে চলবে।” [সূরা আল-বাকারাহ, আযাত: ১৮৬]
﴿ٱدۡعُونِي أَسۡتَجِبۡ لَكُمۡۚ ٦٠﴾ [غافر: ٦٠]  
“তোমরা আমাকে ডাক, আমি তোমাদের জন্য সাড়া দেবো।” [সূরা গাফির, আয়াত: ৬০]
আরো নিদের্শ দিয়েছেন যে, আমরা যেন তিনি ব্যতীত আর কারো কাছে সাহায্য প্রার্থনা না করি। অতএব, আমরা প্রত্যেক রাকা‘আতে বলি ‘‘আমরা একমাত্র তোমারই কাছে প্রার্থনা করি এবং তোমারই সাহায্য চাই।’’
এতদসত্ত্বেও তুমি অনেক সালাত আদায়কারীকে দেখতে পাবে তাদের কোনো উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে বিলম্ব হলে কবরসমূহ ও মাযারের কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করে। অথচ আল্লাহ তা‘আলা তাৎক্ষনিকভাবে তাদের প্রার্থনার জবাব দিতে সক্ষম; কিন্তু বান্দাকে পরীক্ষা ও পর্যবেক্ষণের জন্যই তিনি কবূল করতে দেরী করে থাকেন। আল্লাহ তা‘আলার হেকমত হচ্ছে, তিনি বান্দাদের পরীক্ষা করতে চান। ফলে অধিকাংশ সময়ে চাওয়া ব্যক্তির জবাব বিলম্বিত হওয়ার উদ্দেশ্য হলো যেন তার সততা সম্পর্কে জানা যায়। তিনি যদি সত্য হন তবে অনেক কঠিন পরিস্থিতিতে অবিচল থাকবেন। অতএব, তিনি আল্লাহ ব্যতীত কারো দিকে ধাবিত হবেন না। তিনি ব্যতীত কারো নিকট কোনো কিছু যাচ্ঞা করবেন না। যদিও তার মাথার উপর পাহাড় চাপিয়ে দেওয়া হয় অথবা তার জন্য জমিন বিদীর্ণ করা হয় যেন তাকে গিলে ফেলে। আর এটা হলো আল্লাহ তা‘আলার বিষয়ে সর্বোচ্চ দৃঢ়তা, শক্তিশালী সাহায্য প্রার্থনা ও তার ওপর ভরসা করা। সুতরাং তার দো‘আ কবুল হওয়ার বেশি উপযোগী।  
অনুরূপ আরেকজনকে দেখবে সে ফিতনা-পরীক্ষায় নিপতিত। পরীক্ষার সময়ে তার ঈমান দুর্বল হয়ে পড়ে এবং সে আল্লাহ তা‘আলার সাহায্যের দিকে ধাবিত হয় না। তখন শয়তান তার নিকট তার প্রয়োজন পূরণে মাযার ও কবরসমূহকে সুসজ্জিত করে তুলে; যেন সে তাকে দীন থেকে বের করে নিয়ে যেতে পারে এবং সে তার শপথের পূর্ণতা দিতে পারে, যে শপথ সে নিজের ওপর গ্রহণ করে বলেছিল,
﴿قَالَ فَبِعِزَّتِكَ لَأُغۡوِيَنَّهُمۡ أَجۡمَعِينَ ٨٢ إِلَّا عِبَادَكَ مِنۡهُمُ ٱلۡمُخۡلَصِينَ ٨٣﴾ [ص: ٨٢،  ٨٣]  
“সে বলল, আপনার ইজ্জতের কসম, আমি তাদের সকলকেই বিপথগামী করে ছাড়ব। তাদের মধ্য থেকে আপনার একনিষ্ঠ বান্দারা ছাড়া।” [সূরা সাদ, আয়াত: ৮২-৮৩]
আর আল্লাহ তা‘আলা যে বান্দাকে পরীক্ষা করার ইচ্ছা করেন তার সত্যতা হচ্ছে আল্লাহর বাণীতে, তিনি বলেন,
﴿أَحَسِبَ ٱلنَّاسُ أَن يُتۡرَكُوٓاْ أَن يَقُولُوٓاْ ءَامَنَّا وَهُمۡ لَا يُفۡتَنُونَ ٢ وَلَقَدۡ فَتَنَّا ٱلَّذِينَ مِن قَبۡلِهِمۡۖ فَلَيَعۡلَمَنَّ ٱللَّهُ ٱلَّذِينَ صَدَقُواْ وَلَيَعۡلَمَنَّ ٱلۡكَٰذِبِينَ ٣﴾ [العنكبوت: ٢،  ٣]  
“মানুষ কি মনে করে যে, ‘আমরা ঈমান এনেছি’ বললেই ছেড়ে দেওয়া হবে আর তাদের পরীক্ষা করা হবে না? আর আমি তো তাদের পূর্ববর্তীদের পরীক্ষা করেছি। ফলে আল্লাহ অবশ্যই জেনে নেবেন যে, কারা সত্য বলে এবং অবশ্যই তিনি জেনে নেবেন, কারা মিথ্যাবাদী।” [সূরা আল-‘আনকাবূত, আয়াত: ২-৩]
অনুরূপভাবে মহান আল্লাহ আরও বলেন,
﴿أَوَلَا يَرَوۡنَ أَنَّهُمۡ يُفۡتَنُونَ فِي كُلِّ عَامٖ مَّرَّةً أَوۡ مَرَّتَيۡنِ ثُمَّ لَا يَتُوبُونَ وَلَا هُمۡ يَذَّكَّرُونَ ١٢٦﴾ [التوبة: ١٢٦]  
“তারা কি দেখে না যে, তারা প্রতি বছর একবার কিংবা দু’বার বিপথগ্রস্ত হয়? এর পরও তারা তাওবা করে না এবং উপদেশ গ্রহণ করে না।” [সূরা আত-তাওবাহ, আয়াত: ১২৬]

(আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ব্যতীত কারো অনুসরণ-অনুকরণ করি না)
অনুরূপ আরও ফিতনা হচ্ছে, তুমি দেখতে পাবে বিভিন্ন জাতি, গোত্র ও মানুষ, যাদেরকে ধনবান, মর্যাদাবান ও ক্ষমতার অধিকারী মনে করা হয়ে থাকে অথবা তারা মানুষের নিকট বাহ্যিক দিক থেকে জ্ঞানী বলে মনে করা হয়ে থাকে, তাদেরকে তুমি দেখবে যে, তারা কবরের নিকট তাই করছে যা করতো পূর্ববর্তী জাহেলরা। আবার কখনো কখনো মানুষ তাদেরকে এ কাজের হুকুম সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তারা এসব কাজ নিষিদ্ধ শির্ক এর পর্যায়ে পড়ে না বলে অভিমত ব্যক্ত করে থাকে। ফলে মানুষ এ ব্যাপারে তাদের অনুসরণ করে; কিন্তু জ্ঞানীরা এমনটি করে না। তারা বলে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও সাহাবায়ে কেরাম রাদিয়াল্লাহু আনহুমদের রেখে যাওয়া নীতি কি আমাদের জন্য যথেষ্ট নয়? (অর্থাৎ রাসূল ও সাহাবীগণ তো এমন কাজ কখনও করেন নি। সুতরাং আমাদের জন্য তাদের অনুসরণ-অনুকরণই যথেষ্ট।)
সুতরাং যেহেতু রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার সারা জীবনে আল্লাহ ব্যতীত কাউকে ডাকেন নি, শান্তিতে কিংবা যুদ্ধের ময়দানে, গোপনে কিংবা প্রকাশ্যে তাঁর থেকে এমন কোনো কিছু প্রকাশ পায় নি; বরং নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে প্রমাণিত হয়েছে যে, যখন তিনি কোনো বিপর্যয়ে পতিত হতেন অথবা তার ওপর কোনো বিপদ আসতো তখন তিনি বেলাল রাদিয়াল্লাহু আনহুকে বলতেন,
«يا بلال أرحنا بها»
“হে বেলাল, সালাতের মাধ্যমে আমাকে প্রশান্তি দাও।’’  
আর প্রত্যেক সালাতে আমরা পড়ে থাকি,
    ﴿ إِيَّاكَ نَعۡبُدُ وَإِيَّاكَ نَسۡتَعِينُ ٥ ﴾ [الفاتحة: ٥]  
‘‘আমরা তোমারই ইবাদত করি আর তোমারই কাছে সাহায্য প্রার্থনা করি।” [সূরা আল-ফাতিহা, আয়াত: ৫]
অর্থাৎ আমরা তুমি ব্যতীত কারো ইবাদত করি না এবং তুমি ব্যতীত অন্য কারো কাছে সাহায্য প্রার্থনা করি না। আর মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনে বলেছেন,
﴿لَّقَدۡ كَانَ لَكُمۡ فِي رَسُولِ ٱللَّهِ أُسۡوَةٌ حَسَنَةٞ  ٢١﴾ [الاحزاب: ٢١]  
‘‘নিশ্চয়ই তোমাদের জন্য রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর জীবনে রয়েছে উত্তম আদর্শ’’ [সূরা আল-আহযাব, আয়াত: ২১]
তিনি এ কথা বলেন নি যে, নিশ্চয় তোমাদের জন্য তোমাদের যুগের লোকদের মধ্যেই রয়েছে উত্তম আদর্শ। আর বনী ইসরাঈলের দিকে লক্ষ্য কর, যখন তারা আল্লাহ তা‘আলার অবাধ্যতায় তাদের দরবেশ ও ‘আলেমদের আনুগত্য করল তখন তাদের সম্পর্কে আল্লাহ তা‘আলা কী বললেন?  
﴿ ٱتَّخَذُوٓاْ أَحۡبَارَهُمۡ وَرُهۡبَٰنَهُمۡ أَرۡبَابٗا مِّن دُونِ ٱللَّهِ  ٣١ ﴾ [التوبة: ٣١]  
“তারা আল্লাহকে ছেড়ে তাদের পণ্ডিত ও সংসারবিরাগীদের রব হিসেবে গ্রহণ করে।” [সূরা আত-তাওবাহ, আয়াত: ৩১] অতঃপর যখন আদী ইবনে হাতেম রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু উপর্যুক্ত বিষয় শুনলেন তিনি বললেন, হে আল্লাহর রাসূল, আমরা তো ইসলাম গ্রহণ করার পূর্বে যখন  খ্রিস্টান ছিলাম তখন তাদের ইবাদত করি নি, তখন তাকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন,  
«أليس يحرمون ما أحل الله فتحرمونه ويحلون ما حرم الله فتحلونه » ، قال : بلى . قال : فتلك عبادتهم»
“আল্লাহ তা‘আলা যা হারাম করেছেন তারা কি তা হালাল করে না? ফলে তোমরাও তা বৈধ করে নিয়েছ। আর আল্লাহ যা বৈধ করেছেন তারা তা হারাম করে নিয়েছে। ফলে তোমরা তা হারাম করে নাও নি? তখন সে বলল নিশ্চয়। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন এটাই হলো তাদের ইবাদত।  
হে আমার ভাই...
কী পার্থক্য ঐ ব্যক্তির মধ্যে যে বলে, ঈসা আল্লাহর পুত্র আর তার কাছে রয়েছে উলুহিয়্যাতের কিছু অংশ যেমনটি খ্রিস্টানরা মনে করে থাকে এবং ঐ ব্যক্তির মধ্যে যে আল্লাহ ব্যতীত অন্যকে ডাকে এই বিশ্বাসে যে, নিশ্চয় তিনি তাদের প্রার্থনা কবূল করবেন? আর এটা খ্রিস্টানদের পক্ষ থেকে দোষারূপ যা তারা বর্তমান যুগের ইসলামের সাথে সম্পর্কযুক্তদের ওপর আরোপ করে থাকে। আর বিদ‘আতীরা তাদের এসব কর্মকাণ্ড মুসলিমদের বলে চালিয়ে দেয় অথচ তারা মুসলিমদের অন্তর্ভুক্ত নয়। কারণ তাদের মৃতগণ, ওলীগণ ও সালেহীনের অসীলা ধরার মাধ্যমে বিদ‘আতী শির্কে লিপ্ত।
অত্যন্ত আফসোসের বিষয় যে, কতিপয় খ্রিস্টান যারা আমাদের পূর্বপুরুষ জাহেলী লোকদের জীবনী সম্পর্কে অধ্যয়ন করে তারা বলে, এরা (বিদ‘আতী ওসিলা ধারণকারীরা) তাদের পূর্বপুরুষ মূর্তিপূজার দিকে ধাবিত হয়েছে। অথচ এসব খ্রিস্টান ভুলে গেছে অথবা ভুলার ভান করছে যে, তারা এদের চেয়ে অনেক বড় বিষয়ে পতিত হয়েছে যখন তারা আল্লাহ তা‘আলার জন্য সন্তান সাব্যস্ত করেছে অথচ আল্লাহ কারো কাছ থেকে জন্ম নেওয়া অথবা কাউকে জন্ম দেওয়া থেকে অনেক পবিত্র। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿ۚلَيۡسَ كَمِثۡلِهِۦ شَيۡءٞۖ وَهُوَ ٱلسَّمِيعُ ٱلۡبَصِيرُ ١١﴾ [الشورى: ١١]  
‘‘তার সমকক্ষ কেউ নেই। তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বশ্রেষ্ঠ।” [সূরা আশ-শূরা, আয়াত: ১১]
আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন,
﴿وَقَالُواْ ٱتَّخَذَ ٱلرَّحۡمَٰنُ وَلَدٗا ٨٨ لَّقَدۡ جِئۡتُمۡ شَيۡ‍ًٔا إِدّٗا ٨٩ تَكَادُ ٱلسَّمَٰوَٰتُ يَتَفَطَّرۡنَ مِنۡهُ وَتَنشَقُّ ٱلۡأَرۡضُ وَتَخِرُّ ٱلۡجِبَالُ هَدًّا ٩٠ أَن دَعَوۡاْ لِلرَّحۡمَٰنِ وَلَدٗا ٩١ وَمَا يَنۢبَغِي لِلرَّحۡمَٰنِ أَن يَتَّخِذَ وَلَدًا ٩٢﴾ [مريم: ٨٨،  ٩٢]  
“আর তারা বলে, পরম করুণাময় সন্তান গ্রহণ করেছেন। অবশ্যই তোমরা এক জঘন্য বিষয়ের অবতারণা করেছ। এতে আসমানসমূহ ফেটে পড়ার, জমিন বিদীর্ণ হওয়ার এবং পাহাড়সমূহ চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে পড়ে যাওয়ার উপক্রম হবে। কারণ তারা পরম করুণাময়ের সন্তান আছে বলে দাবী করে। অথচ সন্তান গ্রহণ করা পরম করুণাময়ের জন্য শোভণীয় নয়।” [সূরা মারইয়াম, আয়াত: ৮৮-৯২]
(আল্লাহ তা‘আলা ব্যতীত অন্যের কাছে চাওয়া সকল নেক আমলকে ধ্বংস করে)
হে ভাই! কোনো সন্দেহ নেই যে, আল্লাহ তা‘আলা ব্যতীত অন্যকে ডাকাই মূলত পথভ্রষ্টতা। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿وَمَنۡ أَضَلُّ مِمَّن يَدۡعُواْ مِن دُونِ ٱللَّهِ مَن لَّا يَسۡتَجِيبُ لَهُۥٓ إِلَىٰ يَوۡمِ ٱلۡقِيَٰمَةِ وَهُمۡ عَن دُعَآئِهِمۡ غَٰفِلُونَ ٥﴾ [الاحقاف: ٥]  
“তার চেয়ে অধিক পথভ্রষ্ট আর কে, যে আল্লাহর পরিবর্তে এমন কাউকে ডাকে যে কিয়ামত দিবস পর্যন্তও তার ডাকে সাড়া দেবে না। আর তারা তাদের আহ্বান সম্পর্কে উদাসীন।” [সূরা আল-আহকাফ, আয়াত: ৫]
আর যখন ফিরিশতাগণ তাদের মৃত্যু দান করেন তখন যা বলা হয় তা শোন, আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿حَتَّىٰٓ إِذَا جَآءَتۡهُمۡ رُسُلُنَا يَتَوَفَّوۡنَهُمۡ قَالُوٓاْ أَيۡنَ مَا كُنتُمۡ تَدۡعُونَ مِن دُونِ ٱللَّهِۖ قَالُواْ ضَلُّواْ عَنَّا وَشَهِدُواْ عَلَىٰٓ أَنفُسِهِمۡ أَنَّهُمۡ كَانُواْ كَٰفِرِينَ ٣٧﴾ [الاعراف: ٣٧]  
“অবশেষে যখন আমার ফিরিশতারা তাদের নিকট আসবে তাদের জান কবজ করতে, তখন তারা বলবে, ‘তারা কোথায়, আল্লাহ ছাড়া যাদেরকে তোমরা ডাকতে’? তারা বলবে, ‘তারা আমাদের থেকে হারিয়ে গেছে এবং তারা নিজেদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেবে যে, তারা ছিল কাফির।” [সূরা আল-আ‘রাফ, আয়াত: ৩৭]।
আর কাফিররা তাদের ‘আমল বিনষ্টকারী। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿وَقَدِمۡنَآ إِلَىٰ مَا عَمِلُواْ مِنۡ عَمَلٖ فَجَعَلۡنَٰهُ هَبَآءٗ مَّنثُورًا ٢٣﴾ [الفرقان: ٢٢]  
“আর আমরা তাদের কৃতকর্মের প্রতি অগ্রসর হয়ে সেগুলোকে বিক্ষিপ্ত ধূলিকণায় পরিণত করব।” [সূরা আল-ফুরকান, আয়াত: ২২]
আর এটা এ কারণে যে, সে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের নির্দেশের বিরোধিতা করেছে। কারণ আল্লাহ তা‘আলার আদেশের বিরোধিতা করা যেমনটি পূর্বের আয়াতে বর্ণিত হয়েছে, অনুরূপভাবে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আদেশের বিপরীত চলার মধ্যে অবাধ্যতা লুকিয়ে রয়েছে। কেননা তিনি আদেশ করেছেন আল্লাহ তা‘আলা ব্যতীত কারো কাছে প্রার্থনা না করতে, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম বলেন,
«إذا سألت فاسأل الله وإذا استعنت فاستعن بالله»
“যখন তুমি কোনো কিছু চাইবে তখন আল্লাহর কাছেই চাইবে আর যখন কোনো সাহায্য চাইবে তখনও আল্লাহর কাছেই চাইবে।”
আর শির্ক কোনো অবস্থাতেই গ্রহণযোগ্য নয়। এটা সমস্ত নেক কর্মসমূহ নষ্ট করে দেয়। যেমন, সালাত, সাওম, হজ। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿وَلَقَدۡ أُوحِيَ إِلَيۡكَ وَإِلَى ٱلَّذِينَ مِن قَبۡلِكَ لَئِنۡ أَشۡرَكۡتَ لَيَحۡبَطَنَّ عَمَلُكَ  ٦٥﴾ [الزمر: ٦٥]  
“আর অবশ্যই তোমার কাছে এবং তোমার পূর্ববর্তীদের কাছে ওহী পাঠানো হয়েছে যে, তুমি শির্ক করলে তোমার কর্ম নিষ্ফল হবেই।” [সূরা আয-যুমার, আয়াত: ৬৫]
আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন:
﴿إِنَّهُۥ مَن يُشۡرِكۡ بِٱللَّهِ فَقَدۡ حَرَّمَ ٱللَّهُ عَلَيۡهِ ٱلۡجَنَّةَ وَمَأۡوَىٰهُ ٱلنَّارُۖ وَمَا لِلظَّٰلِمِينَ مِنۡ أَنصَارٖ ٧٢﴾ [المائ‍دة: ٧٢]  
‘‘যে আল্লাহ তা‘আলার সাথে শির্ক করে, আল্লাহ তার জন্য জান্নাতকে হারাম করে দেন এবং তার ঠিকানা হলো জাহান্নাম।” [সূরা আল-মায়েদাহ, আয়াত: ৭২]
অতঃপর হে মুসলিম ভাইসব..
শির্ক ও শির্কের মাধ্যমসমূহ থেকে সর্তক হও। যেমন কবরের উপর মসজিদ বা অনুরূপ স্থাপনা নির্মাণ অথবা সেসব কবরের উদ্দেশ্য করা থেকেও সাবধান হও, যেসব কবরের কাছে আল্লাহ তা‘আলা ব্যতীত অন্য কারো কাছে চাওয়া হয় অথবা সেসব কবরবাসীদের জন্য যবেহ করা হয়। আমাদের পিতা ইবরাহীম আলাইহিস সালাম তার নিজের ব্যাপারেও শির্কের অশংকা করেছেন। ইবরাহীম আলাইহিস সালামের কথা কুরআনে মাজীদে আল্লাহ তা‘আলা বর্ণনা করেছেন এভাবে যে,
﴿وَٱجۡنُبۡنِي وَبَنِيَّ أَن نَّعۡبُدَ ٱلۡأَصۡنَامَ ٣٥﴾ [ابراهيم: ٣٥]  
“আমাকে ও আমার সন্তানদেরকে মূর্তিপূজা হতে দূরে রাখুন।” [সূরা ইবরাহীম, আয়াত: ৩৫]
অর্থাৎ হে আমাদের রব, আপনি ব্যতীত তাদেরকে ডাকা থেকে আমাদের দূরে রাখুন। আর মূর্তিসমূহ জানে নিশ্চয় তারা জড় পদার্থ; কিন্তু বস্তুত তারা হচ্ছে পূর্ববর্তী নেককার ব্যক্তিদের প্রতিকৃতি।
ইবরাহীম আত-তাইমী বলেন, [ইবরাহীমের পরে (মূর্তিপূজার) পরীক্ষায় নিপতিত হওয়ার থেকে নিরাপদ কে হতে পারে?]
হে আমার মুসলিম ভাই,
তোমাদের কর্তব্য হলো মানুষকে এসব নির্বুদ্ধিতা, অভ্যাস ও জাহেলী যুগের শির্ক যা প্রথম জাহেলিয়াতের সময় ছিল তা থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানান। আর আল্লাহ তা‘আলার জন্যই একনিষ্ঠভাবে দো‘আ করবে আর মহান স্রষ্টার ডাকে সাড়া দিবে। কারণ আল্লাহ বলেন,
﴿ٱدۡعُونِيٓ أَسۡتَجِبۡ لَكُمۡۚ ﴾ [غافر: ٦٠]  
“তোমরা আমাকে ডাক আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দেব।” [সূরা গাফির, আয়াত: ৬০]
আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন:
﴿وَإِذَا سَأَلَكَ عِبَادِي عَنِّي فَإِنِّي قَرِيبٌۖ أُجِيبُ دَعۡوَةَ ٱلدَّاعِ إِذَا دَعَانِۖ فَلۡيَسۡتَجِيبُواْ لِي ١٨٦﴾ [البقرة: ١٨٦]  
“আর যখন আমার বান্দাগণ তোমাকে আমার সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করবে, (তাদেরকে বলবে) আমি তো নিকটই। আমি আহ্বানকারীর ডাকে সাড়া দেই, যখন সে আমাকে ডাকে। সুতরাং তারা যেন আমার ডাকে সাড়া দেয়।” [সূরা আল-বাকারাহ, আয়াত: ১৮৬]
(শির্কের মাধ্যমসমূহ)
আর অবশ্যই আমরা জানি যে, শির্কের মাধ্যমসমূহের অন্যতম হলো এমন মসজিদে সালাত আদায় করা যেখানে কবর রয়েছে আর সেখানে সালাত আদায় বাতিল বলে গণ্য হবে। কেননা রাসূলুল্লাহ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
«لعن الله اليهود والنصارى اتخذوا قبور أنبيائهم مساجد»
“আল্লাহ তা‘আলা ইয়াহূদী ও খ্রিস্টানদের অভিসম্পাত দিয়েছেন। (কারণ) তারা তাদের নবীগণের কবরসমূহকে মসজিদ বানিয়েছে।” ইমাম বুখারী ও মুসলিম রহ. আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা হতে তা বর্ণনা করেছেন।
আর তাদের জন্য রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কবরকে দলিল মনে করা যাবে না। কেননা তাঁকে (রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে) তাঁর গৃহে দাফন করা হয়েছে। আর তার গৃহ মসজিদের অন্তর্ভুক্ত নয়। কেননা তাঁকে তাঁর গৃহের সে স্থানে দাফন করা হয়েছে যে স্থানে তাঁর মৃত্যু হয়েছে আর প্রত্যেক নবী যেখানে মারা যান সেখানে তাকে দাফন করতে হয়। যেমনটি সহীহ হাদীসেসমুহে বর্ণিত হয়েছে। আর অনুরূপভাবে আবু বকর, উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমাকে আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহার কক্ষে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে দাফন করা হয়েছে। তাই উচিৎ হলো এই সন্দেহ-সংশয় থেকে সাবধান থাকা। কেননা তা অন্তরে সংশয়ের সৃষ্টি করে।

(সেসব সন্দেহ বাতিলপন্থীরা প্রচার-প্রসার করে থাকে)
তাদের বক্তব্য: কেন আমরা ওলীদের কাছে সাহায্য প্রার্থনা করব না অথচ আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿أَلَآ إِنَّ أَوۡلِيَآءَ ٱللَّهِ لَا خَوۡفٌ عَلَيۡهِمۡ وَلَا هُمۡ يَحۡزَنُونَ ٦٢ ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ وَكَانُواْ يَتَّقُونَ ٦٣﴾ [يونس: ٦٢،  ٦٣]  
“শুনে রাখ, নিশ্চয় আল্লাহর ওলীদের কোনো ভয় নেই আর তারা পেরেশানও হবে না। যারা ঈমান এনেছে এবং তাকওয়া অবলম্বন করেছে।” [সূরা ইউনুস, আয়াত: ২২-২৩]
সুতরাং আমরা আল্লাহর কাছে তাদের জন্য থাকা মর্যাদাকে কাজে লাগাতে চাই। কেননা নেককার লোকদের আল্লাহর কাছে ব্যক্তিত্ব ও মর্যাদা রয়েছে। আমরা তো তাদের কাছে তা-ই চাই যা আল্লাহ তাদের দিয়েছেন।
আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আতের তাওহীদপন্থী ‘আলেমগণ এ সন্দেহের জবাবে বলেন, তোমরা যে আয়াত দিয়ে দলিল উপস্থাপন করেছ সে আয়াতটির পূর্ণাঙ্গ অংশ তুলে ধর, কারণ আয়াতটির শেষাংশে এসেছে,
﴿ ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ وَكَانُواْ يَتَّقُونَ ٦٣ ﴾ [يونس: ٦٣]  
“যারা ঈমান এনেছে এবং তাকওয়া অবলম্বন করেছে।” [সূরা ইউনুস, আয়াত: ৬৩]
ফলে তিনি এ (ওলীর) সংজ্ঞায় তাঁর ওলীগণ বলতে বুঝিয়েছেন, ‘যারা আল্লাহর ওপর ঈমান এনেছে এবং আল্লাহ অসন্তুষ্ট হন ও অপছন্দ করেন এমন কাজ থেকে বেচে থাকেন।’ আর (যেসব কাজ আল্লাহ অসন্তুষ্ট ও অপছন্দ করেন) সেসবের মধ্যে সবচেয়ে বড় হচ্ছে শির্ক এবং আল্লাহ তা‘আলা ব্যতীত অন্যের অসীলা করা। তাহলে কীভাবে তারা অন্যদের জন্য তাদের দ্বারা অসীলা গ্রহণে সন্তুষ্ট হতে পারেন? বরং কিয়ামত দিবসে আল্লাহ ওলীগণকে উদ্দেশ্য করে বলবেন,
﴿أَهَٰٓؤُلَآءِ إِيَّاكُمۡ كَانُواْ يَعۡبُدُونَ ٤٠ قَالُواْ سُبۡحَٰنَكَ أَنتَ وَلِيُّنَا مِن دُونِهِمۖ بَلۡ كَانُواْ يَعۡبُدُونَ ٱلۡجِنَّۖ أَكۡثَرُهُم بِهِم مُّؤۡمِنُونَ ٤١﴾ [سبا: ٤٠،  ٤١]  
“এরা কি তোমাদেরই পূজা করত? তারা বলবে, ‘আপনি পবিত্র মহান, আপনিই আমাদের অভিভাবক, তারা নয়। তারা তো জিন্নদের পূজা করত। এদের অধিকাংশই তাদের প্রতি ঈমান রাখত।” [সূরা সাবা, আয়াত: ৪০-৪১]
অথচ আরবের মুশরিকরা তাওহীদুর রুবুবিয়্যাতের স্বীকৃতি প্রদান করা সত্ত্বেও রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের সাথে যুদ্ধ করেছেন। অর্থ্যাৎ তারা স্বীকৃতি দিত যে, আল্লাহ সৃষ্টিকর্তা, রিযিকদাতা, আকাশ ও জমিনে কার্যক্রম পরিচালনাকারী, তথাপিও তিনি সেসব মুশরিকদের সাথে যুদ্ধ করেছেন। যদিও তারা বলত:
﴿هَٰٓؤُلَآءِ شُفَعَٰٓؤُنَا عِندَ ٱللَّهِۚ  ١٨﴾ [يونس: ١٨]  
“তারা আল্লাহর নিকট আমাদের জন্য সুপারিশকারী।” [সূরা ইউনুস, আয়াত: ১৮]
সে অবস্থায়  মৃত নেককার ও অন্যদের সুপারিশ তাদের কোনো কাজে লাগে নি।
পরিশেষে মহান আল্লাহ যেন আমার, আপনার ও সকল মুসলিমের জন্য যা তিনি পছন্দ করেন এবং যাতে তিনি সন্তুষ্ট হন তা করার তৌফিক দেন। আর আমাদেরকে আল্লাহ তা‘আলার সাথে সাক্ষাৎ হওয়া অবধি কোনো প্রকার ফিতনা ও বঞ্চিত হওয়া ব্যতীত আমাদের জাতির পিতা ইবরাহীম আলাইহিস সালামের মিল্লাত ও আমাদের নিরক্ষর ও বিশ্বস্ত নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দীনের ওপর প্রতিষ্ঠিত রাখেন।
আমাদের সর্বশেষ আহ্বান হবে, সমস্ত প্রশংসা সৃষ্টিকুলের রব আল্লাহর জন্য আর দুরুদ ও সালাম আমাদের নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর প্রতি।