সাহাবীগণের হক ও ফযীলত সম্পর্কে যথাযথ করণীয়

লেখক বলেন, সাহাবীগণ এখন কবরে, স্বীয় রবের প্রতিদান ভোগ করছেন। তাদের সম্পর্কে গোস্বা প্রকাশ, হিংসার বীজ বপন ও তাদের সম্মান নষ্ট করে কাফিরদের অনুসারী মুনাফিক বা যিন্দিক ব্যতীত কেউ প্রশান্তি পেতে পারে না। তাদের প্রতিবাদ করার উদ্দেশ্যেই সাহাবীগণকে নিয়ে সংক্ষিপ্ত পুস্তিকা লিখছি, যেন আমার ওপর থাকা তাদের হক কিছুটা হলেও আদায় হয় এবং উম্মত তার সঠিক নির্দেশনা খুঁজে পায়... ... আমার আরেক উদ্দেশ্য, ভুলে যাওয়া মুসলিমদেরকে সাহাবীগণের মর্যাদা স্মরণ করানো ও তাদের প্রতি বিদ্বেষ পোষণকারীদের রাগিয়ে তোলা।


সাহাবীগণের হক ও ফযীলত সম্পর্কে যথাযথ করণীয়
[ بنغالي –  Bengali – বাংলা ]
        

আব্দুল্লাহ ইবন সালিহ আল-কুসাইর


অনুবাদ: সানাউল্লাহ নজির আহমদ
সম্পাদনা:  ড. মোহাম্মদ মানজুরে ইলাহী
الإصابة في فضائل وحقوق الصحابة رضي الله عنهم

    
عبد الله بن صالح القصير

 





ترجمة: ثناء الله نذير أحمد
مراجعة: د/ محمد منظور إلهي
 
সূচীপত্র

الصفحة    العنوان    م
    ভূমিকা    ১
    এক. সাহাবীর সংজ্ঞা    ২
    দুই: সাহাবীগণের ফযীলত ও জীবন চরিত আলোচনা করার উদ্দেশ্য এবং তাদের সম্পর্কে আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আতের আকিদা।    ৩
    তিন. উম্মতের ভেতর সাহাবীগণের অবস্থান    ৪
    চার: সাহাবীগণের মর্যাদা ও ফযীলত    ৫
    পাঁচ: ফযীলত ও মর্যাদা ক্ষেত্রে সাহাবীগণের শ্রেণিভাগ।    ৬
    বদরী সাহাবীগণ সাহাবীগণ অন্যান্য সাহাবী থেকে উত্তম    ৭
    বাই‘আতে রিদওয়ানের সাহাবীগণের ফযীলত    ৮
    জান্নাতের সুসংবাদপ্রাপ্ত দশজন সাহাবীর ফযীলত    ৯
    দশজন ব্যতীত নির্দিষ্ট কতক সাহাবীর ফযীলত    ১০
    হিদায়াতের ওপর পরিচালিত খলিফাদের ফযীলত ও সিরিয়াল    ১১
    ছয়: মুসলিম উম্মাহর ওপর সাহাবীগণের হক    ১২
    সাত: সাহাবীগণের আদালত ও বিশ্বস্ততা    ১৩
    সাহাবীগণকে বিভিন্ন প্রকার গাল-মন্দ ও তার হুকুম    ১৪
    আট: সাহাবীগণের ব্যাপারে আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আতের মাযহাব    ১৫
    জরুরি জ্ঞাতব্য    ১৬
    ফায়দা: কাউকে জান্নাতী বা জাহান্নামী বলে সাক্ষী প্রদান করা    ১৭
    জান্নাত ও জাহান্নামের সাক্ষী দু’প্রকার    ১৮

    ভূমিকা

সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য, যিনি দু’জাহানের রব। মুত্তাকিদের জন্য তিনি শেষ ফল চূড়ান্ত করেছেন, আর অত্যাচারী ব্যতীত কাউকে তিনি শাস্তি দিবেন না। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া কোনো ইলাহ নেই, তিনি এক, তাঁর কোনো শরীক নেই। তিনি প্রকাশ্য সত্য, একচ্ছত্র মালিক। আমি আরও সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মাদ তাঁর বান্দা ও রাসূল, সত্যবাদী, একান্ত বিশ্বস্ত ও উম্মতের জন্য স্পষ্ট হিতাকাঙ্ক্ষী। কিয়ামতের আগে তাকে সত্যসহ প্রেরণ করা হয়েছে। তিনি জগতবাসীকে সুসংবাদ দাতা ও সাবধানকারী। মুমিনদের জন্য রহমত এবং জিন ও মানবের জন্য তাওহীদের প্রমাণ। আল্লাহ তার উপর, তার পরিবার ও সকল সাহাবীর ওপর সালাত ও সালাম নাযিল করুন, যারা তার ওপর ঈমান এনে তাকে সাহায্য ও শক্তিশালী করেছে এবং তাঁর সাথে প্রেরিত আলোকবর্তিকার অনুসরণ করেছে, বস্তুত তারাই সফলকাম।
সাহাবীগণ অনেক বৈশিষ্ট্যের অধিকারী, তাদের ওপর আল্লাহর সন্তুষ্টি নাযিল হোক, যেমন আল্লাহ তাদেরকে শেষ নবী, সকল নবীর সরদার মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথী হিসেবে নির্বাচন করেছেন। অতএব, তারা শ্রেষ্ঠ উম্মত, ইসলামের শিরোমনি, পরবর্তীদের জন্য শরী‘আতের সেতু বন্ধন এবং ইলম ও আমলের পথিকৃৎ ইমাম। তাদের আরেকটি বড় বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, তারা আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করেছেন। নিম্নে তাদের আরও কিছু বৈশিষ্ট্য, ফযীলত ও মর্যাদার দলীল পেশ করছি:
১. আল্লাহ তা‘আলা কুরআনুল কারীমে সাহাবীগণের প্রশংসা করেছেন। তারা ইসলাম, ঈমান ও ইহসানের ধারক বলে তিনি সাক্ষী দিয়েছেন। তাদের জন্য তিনি নিজের নৈকট্য ও সন্তুষ্টির সুসংবাদ দিয়েছেন। তাদের জন্য রয়েছে জান্নাতের আরও অনেক নি‘আমতের প্রতিশ্রুতি, যা আল্লাহ ইবাদতকারীদের জন্য তৈরি করেছেন, তার হকদার তারাই সবার আগে।
২. সাহাবীগণ সম্পর্কে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তারা জান্নাতি, সকল জাতি থেকে সেরা ও শ্রেষ্ঠ। তাদের জন্য এ ছাড়া আরও অনেক সুসংবাদ রয়েছে কুরআনুল কারীম ও সহীহ সুন্নাহতে।
৩. আহলে ইলম সবাই একমত যে, মুসলিম উম্মাহর ভেতর সাহাবীগণ সবচেয়ে বেশি ফযীলত, মর্যাদা ও শ্রেষ্ঠত্বের অধিকারী।
ইনসাফপন্থী কেউ এতে দ্বিধা করে না যে, সাহাবীগণ সর্বশ্রেষ্ঠ ও সবচেয়ে বেশি মর্যাদার অধিকারী, তবে বর্তমান যুগে কতক লোকের জন্ম হয়েছে, যারা সাহাবীগণের সমালোচনা ও তাদের দোষ-ত্রুটি অন্বেষণ করছে, যার পশ্চাতে তাদের উদ্দেশ্য নির্দিষ্ট কতক সাহাবীকে কলুষিত করা অথবা সকল সাহাবীর মর্যাদা বিনষ্ট করা। এর গভীরে তাদের ষড়যন্ত্র হচ্ছে, আল্লাহকে মিথ্যারোপ ও নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নবুওয়াতে কালিমা লেপন করা, যিনি নিজের পক্ষ থেকে কোনো কথা বলেন না। তাদের আরেক উদ্দেশ্য হচ্ছে, শরী‘আতের সেতু বন্ধনকে দোষারোপ, ইসলামে স্বীকৃত ও আদর্শ ব্যক্তিবর্গ সম্পর্কে সন্দেহ সৃষ্টি ও মুসলিম উম্মাহর যুবকদের পথভ্রষ্ট করা, বদ-দীন-যিন্দিকদের পক্ষ গ্রহণ ও ইসলামের শত্রুদের খুশি করা। বস্তুত এ জাতীয় কর্ম গণ্ডমূর্খ ও নিফাকে পূর্ণ ব্যক্তি ব্যতীত কারও থেকে প্রকাশ পেতে পারে না। এ শ্রেণির লোকেরা মূলত বাতেনী চিন্তাধারা, ধর্মহীনতা ও নিফাক ছড়ানোর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত; কিন্তু সেটা গোপন করার জন্য সে এসব নাপাক কর্ম-কাণ্ডের নাম দিয়েছে গবেষণা ও অনুসন্ধান। এ ব্যক্তি যদি তাওবা ছাড়া মারা যায়, নিজ ব্যতীত কারও ক্ষতি করবে না। সে তার খারাপ লিখনি ও বিষাক্ত বাক্য দিয়ে নিজের ভেতর লুকানো বিদ্বেষ ছড়াচ্ছে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿وَٱللَّهُ يَعۡلَمُ ٱلۡمُفۡسِدَ مِنَ ٱلۡمُصۡلِحِۚ ٢٢٠﴾ [البقرة: 220]
“আল্লাহ জানেন কে ফাসাদকারী, আর কে সংশোধনকারী”। [সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ২২০]
অন্য আয়াতে তিনি বলেন:
﴿إِنَّ ٱللَّهَ لَا يُصۡلِحُ عَمَلَ ٱلۡمُفۡسِدِينَ ٨١﴾ [يونس: 81]
“নিশ্চয় আল্লাহ ফাসাদকারীদের আমল পরিশুদ্ধ করেন না”। [সূরা ইউনুস, আয়াত: ৮১]
অপর আয়াতে তিনি বলেন,
﴿إِنَّ ٱلَّذِينَ يُلۡحِدُونَ فِيٓ ءَايَٰتِنَا لَا يَخۡفَوۡنَ عَلَيۡنَآۗ أَفَمَن يُلۡقَىٰ فِي ٱلنَّارِ خَيۡرٌ أَم مَّن يَأۡتِيٓ ءَامِنٗا يَوۡمَ ٱلۡقِيَٰمَةِۚ ٱعۡمَلُواْ مَا شِئۡتُمۡ إِنَّهُۥ بِمَا تَعۡمَلُونَ بَصِيرٌ ٤٠﴾ [فصلت: 40]
“নিশ্চয় যারা আমার আয়াতসমূহ বিকৃত করে তারা আমার অগোচরে নয়। যে অগ্নিতে নিক্ষিপ্ত হবে সে কি উত্তম, না যে কিয়ামত দিবসে নিরাপদভাবে উপস্থিত হবে? তোমাদের যা ইচ্ছা আমল কর, নিশ্চয় তোমরা যা আমল কর তিনি তার সম্যক দ্রষ্টা”। [সূরা ফুসসিলাত, আয়াত: ৪০]
এসব লোকদের জানা উচিৎ যে, সাহাবীগণ হলেন আসমানের তারকা স্বরূপ, যার দ্বারা জ্ঞানীরাই পথ পায়, কুকুরের ঘেউ ঘেউ তাদের কোনোও ক্ষতি করতে পারে না। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿إِنَّ ٱللَّهَ يُدَٰفِعُ عَنِ ٱلَّذِينَ ءَامَنُوٓاْۗ إِنَّ ٱللَّهَ لَا يُحِبُّ كُلَّ خَوَّانٖ كَفُورٍ ٣٨﴾ [حج: 38]
“নিশ্চয় আল্লাহ মুমিনদের রক্ষা করেন, এবং কোনো বিশ্বাসঘাতক, অকৃতজ্ঞকে পছন্দ করেন না”। [সূরা হাজ, আয়াত: ৩৮]
অত্র আয়াতে মুমিন দ্বারা প্রথম উদ্দেশ্য সাহাবীগণ। অতএব, আল্লাহ যাদের পক্ষ অবলম্বন করেন তাদের ক্ষতি করার সাধ্য কারও নেই। অন্যত্র তিনি বলেন:
﴿ لِيَغِيظَ بِهِمُ ٱلۡكُفَّارَۗ ٢٩﴾ [محمد: 29]
“যাতে তিনি তাদের দ্বারা কাফিরদের রাগান্বিত করতে পারেন”। [সূরা আল-ফাতহ, আয়াত: ২৯]
এ আয়াতেরও প্রথম উদ্দেশ্য সাহাবীগণ। আল্লাহ তাদের দ্বারা কাফিরদের রাগিয়েছেন।
সাহাবীগণ এখন কবরে, স্বীয় রবের প্রতিদান ভোগ করছেন। তাদের সম্পর্কে গোস্বা প্রকাশ, হিংসার বীজ বপন ও তাদের সম্মান নষ্ট করে কাফিরদের অনুসারী মুনাফিক বা যিন্দিক ব্যতীত কেউ প্রশান্তি পেতে পারে না। তাদের প্রতিবাদ করার উদ্দেশ্যেই সাহাবীগণের নিয়ে সংক্ষিপ্ত পুস্তিকা লিখছি, যেন আমার ওপর থাকা তাদের হক কিছুটা হলেও আদায় হয় এবং উম্মত তার সঠিক নির্দেশনা খুঁজে পায়। আরও উদ্দেশ্য সাহাবীগণের ফযীলত বর্ণনা করা এবং তাদের সম্পর্কে যারা সন্দেহে পতিত তাদেরকে সঠিক পথ দেখানো। অতিরিক্ত আরও সংযোজন করেছি সাহাবীর সংজ্ঞা, তাদের মর্যাদা, ফযীলত, উম্মতের ওপর তাদের হক এবং তাদের ব্যাপারে আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আতের আকিদা। আমার আরেক উদ্দেশ্য, ভুলে যাওয়া মুসলিমদের সাহাবীগণের মর্যাদা স্মরণ করানো ও তাদের প্রতি বিদ্বেষ পোষণকারীদের রাগিয়ে তোলা। আল্লাহ সঠিক পথের হিদায়াত দানকারী।
আব্দুল্লাহ ইবন সালিহ আল-কুসাইর
১০/০৪/১৪২৪ হি.

এক: সাহাবীর সংজ্ঞা
সাহাবাহ (صحابة) বহুবচন, একবচন হচ্ছে সাহাবি (صحابي) ও সাহিব (صاحب) অর্থ সাথী। ঈমানের সাথে যিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে দেখেছেন ও ঈমানের সাথে মারা গিয়েছেন পরিভাষায় তাকে সাহাবী বলা হয়। ইমাম বুখারী রহ. বলেন: “যিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সঙ্গ গ্রহণ করেছেন বা যে মুসলিম তাকে দেখেছেন তিনি সাহাবী”।
উল্লেখ্য, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সঙ্গ দু’প্রকার।
১. বিশেষ সঙ্গ বা সোহবত,
২. সাধারণ সঙ্গ বা সোহবত। যারা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে ঈমানের সাথে দেখেছে, তারা সবাই সাধারণ সঙ্গ বা সোহবতের অন্তর্ভুক্ত। এ জন্য সাহাবীগণের মর্যাদা ও গুরুত্ব নির্ণয় করার ক্ষেত্রে বলা হয়, এক বছরের সোহবত, এক মাসের সোহবত ও এক ঘণ্টার সোহবত ইত্যাদি। যদি কোনো  সাহাবীর বিশেষ বৈশিষ্ট্য থাকে, যা অন্য কারও নেই, তাহলে সে সাহাবীকে তার বিশেষ বৈশিষ্ট্য দ্বারা স্মরণ করাই শ্রেয়।
একাধিক আহলে-ইলম বলেছেন: যারা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সোহবত গ্রহণ করেছেন, তারা সবাই উত্তম যারা সোহবত গ্রহণ করে নি তাদের থেকে। কারণ, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সোহবত দ্বারা যে মর্তবা হাসিল হয়, সেটা ইলম ও আমল দিয়ে হাসিল করা মর্যাদা থেকে অনেক বেশি। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সোহবত যারা পায়নি, তারা কেউ সোহবতপ্রাপ্ত সাহাবীগণের স্তরে পৌঁছতে পারবে না।
জ্ঞাতব্য: সাধারণত বলা হয়, সাহাবীগণের সংখ্যা এক লাখ চব্বিশ হাজার। সর্বশেষ যে সাহাবী মারা গেছেন তার নাম আবু তুফাইল আমের ইবন ওয়াসিলাহ লাইসি। ইমাম মুসলিম নিশ্চিতভাবে এ কথা বলেছেন। তার মৃত্যু হয় ১০০ হি., কেউ বলেছেন ১১০ হি.।

দুই: সাহাবীগণের ফযীলত ও জীবন চরিত আলোচনা করার উদ্দেশ্য এবং তাদের সম্পর্কে আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আতের আকিদা।
উসমান রাদিয়াল্লাহু আনহুর মৃত্যুর পর খারেজী, রাফেযী ও নাসেবীদের বিদ‘আত প্রকাশ পায়। খারেজীরা আলী, মুয়াবিয়া ও আমর ইবনুল আস রাদিয়াল্লাহু আনহুমকে কাফির বলে। কারণ, তারা আবু মুসা আশআরি ও আমর ইবনুল আসকে বিচারক নির্বাচন করেছিল। এ দিকে রাফেজিরা আলি, আলির পরিবার ও কয়েকজন সাহাবীর ক্ষেত্রে অতিভক্তি, সীমালঙ্ঘন ও বাড়াবাড়িতে লিপ্ত হয়। তাদেরকে ছাড়া সকল সাহাবীকে কাফির বলে এবং তাদের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করার ঘোষণা দেয়। আবার খারেজী, রাফেযী ও অন্যান্য কতক শ্রেণি থেকে আরেকটি ভ্রান্তদল আত্মপ্রকাশ করে, তাদেরকে বলা হয় নাসেবী। নাসেবীরা সকল সাহাবীকে নিন্দা ও গাল-মন্দ করে, তাদের ইসলামকে অপবাদ দেয় ও তাদের দীনদারি সম্পর্কে সন্দেহ পোষণ করে, যে দীন তাদেরকে শিখিয়েছেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। এভাবে তারা সাহাবীগণের ফযীলত অস্বীকার করে, উল্টো দাবি করে সাহাবীগণ দীনের বিপরীত ও দীনকে ধ্বংসকারী কাজে লিপ্ত হয়েছেন। এ অজুহাতে তারা সাহাবীগণের কাফির ঘোষণা দিয়ে তাদের সাথে যুদ্ধে লিপ্ত হয় এবং তাদের রক্ত ও সম্পদকে হালাল মনে করে। আহলুস সুন্নাহ এসব ফিতনার মোকাবিলা করেন দু’ভাবে:
১. কুরআন ও হাদীসের দৃষ্টিতে সাহাবীগণের ফজিলত, দীনের ভেতর তাদের মর্যাদা ও উম্মতের ভেতর তাদের শ্রেষ্ঠত্ব বর্ণনা করেন। খারেজী, রাফেযী ও অন্যান্য বিদ‘আতীরা যেসব অপবাদ তাদের ওপর আরোপ করেছিল, তার থেকে তাদেরকে মুক্ত, পবিত্র ও নিরাপদ প্রমাণ করেন।
২. সাহাবীগণের মাঝে সৃষ্ট যুদ্ধ-বিগ্রহ সম্পর্কে কী করণীয় সেটি তারা বলেন ও বিদ‘আতীদের প্রতিবাদ করেন।

তিন. উম্মতের ভেতর সাহাবীগণের অবস্থান
ক. নবুওয়াতের পর সাহাবীগণের মর্যাদা সবচেয়ে বেশি। আল্লাহ তাদেরকে নিজের শ্রেষ্ঠ রাসূল ও সর্বশেষ নবীর সাথী হওয়ার তাওফীক দিয়েছেন এবং ইসলামকে সাহায্য করার জন্য বাছাই করেছেন।
খ. নবীদের যত সাথী ও সাহাবী রয়েছে তাদের ভেতর শেষ নবীর সাহাবীগণ সর্বশ্রেষ্ঠ। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “আমার যুগের মানুষেরাই সর্বশ্রেষ্ঠ”।
গ. সকল উম্মত একমত যে, সাহাবীগণ তাদের পরবর্তী উম্মত অপেক্ষা ইলম, আমল, রাসূলকে সত্য জানা ও প্রত্যেক ভালো কাজে প্রতিযোগিতার ক্ষেত্রে সবার চেয়ে এগিয়ে ও সবার থেকে শ্রেষ্ঠ ছিলেন। প্রতিযোগিতামূলক আমল ও অভীষ্ট লক্ষ্য অর্জন করে তারা মর্যাদা, কল্যাণ, ইলম ও অন্যান্য নেকির ক্ষেত্রে যে চূড়ায় পৌঁছেছেন, সেখানে কেউ পৌঁছে নি, পরবর্তীতে কারও পক্ষে পৌঁছা সম্ভব নয়।
ঘ. সাহাবীগণ কল্যাণময় সকল ক্ষেত্রে সবার থেকে অগ্রগামী, তার কারণ সবার আগে তারাই আল্লাহ ও তার রাসূলের প্রতি ঈমান এনেছেন। দীনের জন্য হিজরত ও নুসরত করেছেন। আল্লাহর দিকে দাওয়াত দিয়েছেন, তার রাস্তায় জিহাদ করেছেন, যখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নবুওয়াতের স্পষ্ট প্রমাণসমূহ দুনিয়া জুড়ে ছড়িয়ে পড়েনি, তার দাওয়াতের বিকাশ ঘটেনি, তার সাথী ও সাহায্যকারীগণ শক্তিশালী হয় নি। কারণ, তার অনুসরণকারী মুমিনের সংখ্যা কম ছিল, তাকে মিথ্যারোপকারী কিতাবি ও মুশরিকদের সংখ্যা ছিল বেশি। সেই কঠিন মুহূর্তে সাহাবীগণ পৃথিবীবাসীর শত্রুতাকে চ্যালেঞ্জ করে রাসূলের বন্ধুত্বকে গ্রহণ করেছেন, তাকে সত্য বলেছেন এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য নিজের সম্পদ ও নফস ত্যাগ করে যে পরিমাণ নেকি ও সাওয়াব অর্জন তারা করেছেন, তা পরবর্তী কারও পক্ষে অর্জন করা সম্ভব নয়। সহীহ গ্রন্থে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
«لاتسبوا أصحابي فوالذي نفسي بيده لو أن أحدكم أنفق مثل أحد ذهبا ما بلغ مد أحدهم ولانصيفه».
“তোমরা আমার সাহাবীগণকে গাল-মন্দ কর না। সে সত্তার কসম, যার হাতে আমার নফস, যদি তোমাদের কেউ উহুদ পরিমাণ স্বর্ণ সদকা করে, তাদের কারও এক মুদ বা তার অর্ধ মুদ পর্যন্তও পৌঁছবে না”।
ঙ. অতএব, ভাগ্যবান তারাই, যারা সাহাবীগণের পথে চলে ও তাদের পদাঙ্ক অনুসরণ করে। আল্লাহর কসম, সাহাবীগণ দীনকে সাহায্য করেছেন। তাদের দ্বারা আল্লাহ দীনের শিখর পৃথিবীর বুকে প্রোথিত করেছেন। তারা মানুষের অন্তর ও দেশ থেকে বিদেশ জয় করেছেন। যেরূপ জিহাদ প্রয়োজন ছিল তারা আল্লাহর রাস্তায় যেরূপ জিহাদই করেছেন। তাদের সবার ওপর আল্লাহ সন্তুষ্ট হোন ও তাদের সবাইকে সন্তুষ্ট করুন।
চার: সাহাবীগণের মর্যাদা ও ফযীলত
সাহাবীগণ তাদের পরবর্তী উম্মত থেকে অনেক দিক থেকেই এগিয়ে। যেমন, নবুওয়াতের শুরুতে ইসলাম গ্রহণ করেছেন, ইসলামকে বিজয়ী ও পরবর্তী উম্মতের নিকট পৌঁছানোর জন্য জিহাদ করেছেন। সর্বপ্রথম আল্লাহ ও তার রাসূলের প্রতি ঈমান এনেছেন, যখন লোক সংখ্যা কম ছিল, সেই কঠিন অবস্থায় জিহাদ করেছেন। আল্লাহর দিকে হিকমতের সাথে আহ্বান করেছন, নিজের নফস ও মূল্যবান বস্তু বিসর্জন দিয়েছেন, আত্মীয় ও অনাত্মীয় সবার শত্রুতায় ধৈর্য ধারণ করেছেন, এসব দিক বিবেচনায় তারা অনেক ফযীলত ও মর্যাদার অধিকারী, যেমন:
১. ইসলাম গ্রহণে অগ্রগামী।
২. কঠিন অবস্থায় সবর করা।
৩. নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সোহবত গ্রহণ করা।
৪. হিজরত করা ও নবীকে আশ্রয় দেওয়া।
৫. নবীকে সাহায্য করা ও দীনের জন্য জিহাদ করা।
৬. ইলম ও আমলের ক্ষেত্রে পথিকৃৎ ইমামের মর্যাদা লাভ করা।
৭. দীন প্রচার করা।
সাহাবীগণের ফযীলত ও মর্যাদা সংক্রান্ত আরও অনেক দলীল রয়েছে, যেমন:
১. আল্লাহ তা‘আলা কুরআনুল কারীমের একাধিক আয়াতে সাহাবীগণের আমল ও সুন্দর আচরণের প্রশংসা করেছেন। তাদেরকে তিনি মহান সফলতা ও নিজের সন্তুষ্টির ওয়াদা দিয়েছেন। যেমন তিনি বলেছেন:
﴿مُّحَمَّدٞ رَّسُولُ ٱللَّهِۚ وَٱلَّذِينَ مَعَهُۥٓ أَشِدَّآءُ عَلَى ٱلۡكُفَّارِ رُحَمَآءُ بَيۡنَهُمۡۖ تَرَىٰهُمۡ رُكَّعٗا سُجَّدٗا يَبۡتَغُونَ فَضۡلٗا مِّنَ ٱللَّهِ وَرِضۡوَٰنٗاۖ سِيمَاهُمۡ فِي وُجُوهِهِم مِّنۡ أَثَرِ ٱلسُّجُودِۚ ذَٰلِكَ مَثَلُهُمۡ فِي ٱلتَّوۡرَىٰةِۚ وَمَثَلُهُمۡ فِي ٱلۡإِنجِيلِ كَزَرۡعٍ أَخۡرَجَ شَطۡ‍َٔهُۥ فَ‍َٔازَرَهُۥ فَٱسۡتَغۡلَظَ فَٱسۡتَوَىٰ عَلَىٰ سُوقِهِۦ يُعۡجِبُ ٱلزُّرَّاعَ لِيَغِيظَ بِهِمُ ٱلۡكُفَّارَۗ وَعَدَ ٱللَّهُ ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ وَعَمِلُواْ ٱلصَّٰلِحَٰتِ مِنۡهُم مَّغۡفِرَةٗ وَأَجۡرًا عَظِيمَۢا ٢٩﴾ [الفتح: 29]
“মুহাম্মাদ আল্লাহর রাসূল এবং তার সাথে যারা আছে তারা কাফিরদের প্রতি অত্যন্ত কঠোর, পরস্পরের প্রতি সদয়, তুমি তাদেরকে রুকুকারী ও সাজদাহকারী অবস্থায় দেখতে পাবে। তারা আল্লাহর করুণা ও সন্তুষ্টি অনুসন্ধান করছে। তাদের আলামত হচ্ছে, তাদের চেহারায় সাজদাহ’র চিহ্ন থাকে। এটাই তাওরাতে তাদের দৃষ্টান্ত। আর ইঞ্জিলে তাদের দৃষ্টান্ত হলো একটি চারাগাছের মতো, যে তার কঁচিপাতা উদগত ও শক্ত করেছে, অতঃপর তা পুষ্ট হয়ে স্বীয় কাণ্ডের উপর মজবুতভাবে দাঁড়িয়েছে, যা চাষিকে আনন্দ দেয়। যাতে তিনি তাদের দ্বারা কাফিরদেরকে ক্রোধান্বিত করতে পারেন। তাদের মধ্যে যারা ঈমান আনে ও সৎকর্ম করে, আল্লাহ তাদের জন্য ক্ষমা ও মহা প্রতিদানের ওয়াদা করেছেন”। [সূরা আল-ফাতহ, আয়াত: ২৯]
অপর আয়াতে তিনি বলেন:
﴿وَٱلَّذِينَ تَبَوَّءُو ٱلدَّارَ وَٱلۡإِيمَٰنَ مِن قَبۡلِهِمۡ يُحِبُّونَ مَنۡ هَاجَرَ إِلَيۡهِمۡ وَلَا يَجِدُونَ فِي صُدُورِهِمۡ حَاجَةٗ مِّمَّآ أُوتُواْ وَيُؤۡثِرُونَ عَلَىٰٓ أَنفُسِهِمۡ وَلَوۡ كَانَ بِهِمۡ خَصَاصَةٞۚ وَمَن يُوقَ شُحَّ نَفۡسِهِۦ فَأُوْلَٰٓئِكَ هُمُ ٱلۡمُفۡلِحُونَ ٩﴾ [الحشر: 9]
“আর মুহাজিরদের আগমনের পূর্বে যারা মদিনাকে নিবাস হিসেবে গ্রহণ করেছিল ও ঈমান এনেছিল (তাদের জন্যও এ সম্পদে অংশ রয়েছে), আর যারা তাদের কাছে হিজরত করে এসেছে তাদেরকে ভালোবাসে। মুহাজিরদেরকে যা প্রদান করা হয়েছে তার জন্য এরা তাদের অন্তর কোনো ঈর্ষা অনুভব করে না। নিজেদের অভাব থাকা সত্ত্বেও নিজেরদের ওপর তাদেরকে অগ্রাধিকার দেয়। যাদেরকে মনের কার্পণ্য থেকে রক্ষা করা হয়েছে, তারাই সফলকাম”। [সূরা আল-হাশর, আয়াত: ৯]
অপর আয়াতে তিনি বলেন:
﴿وَٱلسَّٰبِقُونَ ٱلۡأَوَّلُونَ مِنَ ٱلۡمُهَٰجِرِينَ وَٱلۡأَنصَارِ وَٱلَّذِينَ ٱتَّبَعُوهُم بِإِحۡسَٰنٖ رَّضِيَ ٱللَّهُ عَنۡهُمۡ وَرَضُواْ عَنۡهُ وَأَعَدَّ لَهُمۡ جَنَّٰتٖ تَجۡرِي تَحۡتَهَا ٱلۡأَنۡهَٰرُ خَٰلِدِينَ فِيهَآ أَبَدٗاۚ ذَٰلِكَ ٱلۡفَوۡزُ ٱلۡعَظِيمُ ١٠٠﴾ [التوبة: 100]
“মুহাজির ও আনসারদের মধ্যে যারা প্রথম অগ্রগামী এবং যারা তাদেরকে অনুসরণ করেছে সুন্দরভাবে, আল্লাহ তাদের প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছেন আর তারাও আল্লাহর প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছে। তিনি তাদের জন্য প্রস্তুত করেছেন জান্নাতসমূহ, যার তলদেশে নদী প্রবাহিত, তারা সেখানে চিরস্থায়ী হবে। এটাই মহাসাফল্য”। [সূরা আত-তাওবাহ, আয়াত: ১০০]
যে সাহাবীগণের জন্য আল্লাহ তা‘আলা এসব ওয়াদা করেছেন, তাদের পূর্বাপর আমল সম্পর্কে তিনি জানতেন। তিনি জানতেন তারা কখনো দীন ত্যাগ করবে না, বরং দীনের ওপর মারা যাবে। অধিকন্তু তারা যেসব পাপ করবে, তাতেও তারা অটল থাকবে না, বরং তার থেকে তাওবা করবে এবং আল্লাহ তাদের তাওবা কবুল করবেন। কারণ, তাদের তাওবা সত্যিকার অর্থের তাওবা হবে, উপরন্তু তাদের রয়েছে পাপ মোচনকারী অনেক নেকি ও উঁচু মর্যাদা।
২. একাধিক হাদীসে সহাবীগেণের ফযীলত এসেছে। যেমন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«لاتسبوا أصحابي فوالذي نفسي بيده لو أن أحدكم أنفق مثل أحد ذهبا ما بلغ مد أحدهم ولانصيفه».
“তোমরা সাহাবীগণকে গাল-মন্দ কর না। কারণ, তোমাদের কেউ যদি উহুদ পরিমাণ স্বর্ণ সদকা করে, তাদের কারও এক মুদ বা তার অর্ধেকেও পৌঁছবে না”।
অপর হাদীসে তিনি বলেছেন:
«خير القرون قرني الذين بعثت فيهم ... ».
“সর্বোত্তম যুগ আমার যুগ, যাদের মাঝে আমি প্রেরিত হয়েছি”।
৩. মোটকথা আল্লাহ তা‘আলা কুরআনুল কারীমে যেসব মুত্তাকি, মুমিন ও মুহসিনদের প্রশংসা ও গুণাবলি বর্ণনা করেছন এবং যাদের জন্য তিনি ইহকাল ও পরকালের পুরস্কার ঘোষণা দিয়েছেন, সবার আগে তার অধিকারী হলেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহাবিগণ। তাদের জন্য রয়েছে সফলতা ও সৌভাগ্য।
৪. কুরআন ও সুন্নাহতে সাহাবীগণের যেসব ফযীলত, মর্যাদা, গুণাবলি ও উঁচু মর্তবার সাক্ষী রয়েছে তা সূর্যের ন্যায় স্পষ্ট। তার বিপরীতে রাফেযী, খারেজী, মু‘তাজেলা ও তাদের ন্যায় অন্যান্য পথভ্রষ্টদের মিথ্যা রচনার কোনোও মূল্য নেই।

পাঁচ: ফযীলত ও মর্যাদা ক্ষেত্রে সাহাবীগণের শ্রেণিভাগ।
আহলে ইলমদের নিকট প্রমাণিত যে, সাহাবীগণ সবাই সমমর্যাদার নয়, বরং তাদের প্রত্যেকের আলাদা মর্যাদা রয়েছে। আর কতক মর্যাদা রয়েছে সামষ্টিক। যেমন, আগে ইসলাম গ্রহণ করা, দীনের জন্য হিজরত করা, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আশ্রয় দেওয়া, জিহাদ ও সাহায্য করা। দীন ও নবীর স্বার্থে তারা আরও অনেক আমল আঞ্জাম দিয়েছেন।
১. হুদাইবিয়ার সন্ধির পূর্বে যেসব সাহাবী সদকা ও জিহাদে অংশ নিয়েছেন তারা হুদাইবিয়ার পর সদকা ও জিহাদে অংশগ্রহণকারী সাহাবীগণ থেকে উত্তম। আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন:
﴿لَا يَسۡتَوِي مِنكُم مَّنۡ أَنفَقَ مِن قَبۡلِ ٱلۡفَتۡحِ وَقَٰتَلَۚ أُوْلَٰٓئِكَ أَعۡظَمُ دَرَجَةٗ مِّنَ ٱلَّذِينَ أَنفَقُواْ مِنۢ بَعۡدُ وَقَٰتَلُواْۚ وَكُلّٗا وَعَدَ ٱللَّهُ ٱلۡحُسۡنَىٰۚ وَٱللَّهُ بِمَا تَعۡمَلُونَ خَبِيرٞ ١٠﴾ [الحديد: 10]
“তোমাদের ভেতর যারা মক্কা বিজয়ের পূর্বে ব্যয় ও যুদ্ধ করেছে তারা সমান নয়। তারা মর্যাদায় তাদের চেয়ে শ্রেষ্ঠ, যারা পরে ব্যয় ও যুদ্ধ করেছে, তবে আল্লাহ প্রত্যেকের জন্যই কল্যাণের ওয়াদা করেছেন”। [সূরা আল-হাদীদ, আয়াত: ১০] তারা সবাই হলেন অগ্রবর্তী মুহাজির ও আনসার।
২. কুরআনুল কারীম প্রমাণ করে, সাধারণ নীতিতে মুহাজিরগণ আনসারদের থেকে উত্তম। যেমন, আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন:
﴿لَّقَد تَّابَ ٱللَّهُ عَلَى ٱلنَّبِيِّ وَٱلۡمُهَٰجِرِينَ وَٱلۡأَنصَارِ ١١٧﴾ [التوبة:117]
“নিশ্চয় আল্লাহ নবী, মুহাজির ও আনসারদের তাওবা কবুল করেছেন”। [সূরা আত-তাওবাহ, আয়াত: ১১৭]
অপর আয়াতে তিনি গণিমতের সম্পদের হকদার সম্পর্কে বলেন:
﴿وَٱلَّذِينَ تَبَوَّءُو ٱلدَّارَ وَٱلۡإِيمَٰنَ مِن قَبۡلِهِمۡ يُحِبُّونَ مَنۡ هَاجَرَ إِلَيۡهِمۡ وَلَا يَجِدُونَ فِي صُدُورِهِمۡ حَاجَةٗ مِّمَّآ أُوتُواْ وَيُؤۡثِرُونَ عَلَىٰٓ أَنفُسِهِمۡ وَلَوۡ كَانَ بِهِمۡ خَصَاصَةٞۚ وَمَن يُوقَ شُحَّ نَفۡسِهِۦ فَأُوْلَٰٓئِكَ هُمُ ٱلۡمُفۡلِحُونَ ٩﴾ [الحشر: 9]
“মুহাজিরদের আগমনের পূর্বে যারা মদিনাকে নিবাস হিসেবে গ্রহণ করেছিল ও ঈমান এনেছিল (তাদের জন্যও এ সম্পদে অংশ রয়েছে), আর যারা তাদের কাছে হিজরত করে এসেছে তাদেরকে ভালবাসে। মুহাজিরদেরকে যা প্রদান করা হয়েছে তার জন্য এরা তাদের অন্তরে কোনো ঈর্ষা অনুভব করে না, এবং নিজেদের অভাব থাকা সত্ত্বেও নিজেদের ওপর তাদেরকে অগ্রাধিকার দেয়। যাদেরকে মনের কার্পণ্য থেকে রক্ষা করা হয়েছে তারাই সফলকাম”। [সূরা আল-হাশর, আয়াত: ৯]
এসব আয়াতে আল্লাহ সকল সাহাবীর প্রশংসা করেছেন, তবে আনসারদের পূর্বে মুহাজিরদের উল্লেখ করা প্রমাণ করে তাদের মর্যাদা ও ফযীলত বেশি। আল্লাহ তাদের সবার ওপর সন্তুষ্ট হোন। মুহাজিরগণ নিজেদের মাতৃভূমি, সম্পদ, পরিবার ও সন্তান ছেড়ে আল্লাহ ও তার রাসূলকে সাহায্য করা, তার রাস্তায় জিহাদ ও তার কালেমাকে বুলন্দ করার উদ্দেশ্যে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের নিকট হিজরত করেছেন।
বদরী সাহাবীগণ অন্যান্য সাহাবী থেকে উত্তম:
বদর যুদ্ধে অংশ গ্রহণকারী মুহাজির ও আনসারদের পূর্বাপর আমল কি হবে জেনেই আল্লাহ বলেছেন: «اعملوا ما شئتم فقد غفرت لكم». “তোমরা যা ইচ্ছা আমল কর, আমি তোমাদেরকে ক্ষমা করে দিয়েছি”। বুখারী ও মুসলিমের বর্ণনা থেকে স্পষ্ট, বদর যুদ্ধে তিনশত দশজন থেকে অল্প বেশি সাহাবী অংশ গ্রহণ করেছেন। শাইখুল ইসলাম ইবন তাইমিয়াহ রহ. বলেন: “নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কথা বলার অর্থ, আল্লাহ জেনেছেন তারা দীন থেকে বিচ্ছুত হবেন না; বরং দীনের ঈমানসহ মারা যাবেন। তাদের থেকে যেসব পাপ সংঘটিত হবে। যেমন, অন্যান্য মানুষ থেকে হয়, আল্লাহ তার জন্য তাদেরকে তাওবা ও ইস্তেগফার করার তাওফীক দিবেন। আর পাপ মোচনকারী নেকি তো আছেই, যে কারণে তারা আল্লাহর ক্ষমা পাবেন”।
৩. উহুদ, আহযাব এবং অন্যান্য পরীক্ষা, জিহাদ ও ধৈর্যে অংশ গ্রহণকারীগণ তাদের পরবর্তীদের থেকে অনেক বেশি অগ্রগামী, যারা সেসব যুদ্ধে হাজির হতে পারে নি। আল্লাহর অনুগ্রহ অনেক বড়।
বাই‘আতে রিদওয়ানের সাহাবীগণের ফযীলত:
হুদাইবিয়ায় সংঘটিত বাই‘আতে রিদওয়ানে যেসব মুহাজির ও আনসার উপস্থিত ছিলেন, আল্লাহ তাদের সবার ওপর সন্তুষ্ট হয়েছেন। হুদাইবিয়ার মাঠে গাছের নিচে যারা বাই‘আত করেছে তাদের কেউ জাহান্নামে যাবে না। তারা ছিলেন এক হাজার চারশত লোকের বেশি। এ ঘোষণা কুরআনুল কারীমে স্পষ্ট এসেছে, আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿لَّقَدۡ رَضِيَ ٱللَّهُ عَنِ ٱلۡمُؤۡمِنِينَ إِذۡ يُبَايِعُونَكَ تَحۡتَ ٱلشَّجَرَةِ ١٨﴾ [الفتح: 18]
“অবশ্যই আল্লাহ মুমিনদের ওপর সন্তুষ্ট হয়েছেন, যখন তারা গাছের নিচে আপনার হাতে বাই‘আত গ্রহণ করেছিল”। [সূরা আল-ফাতহ, আয়াত: ১৮]
 সহীহ মুসলিমে জাবির রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, নবী  সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«لايدخل النار أحد بايع تحت الشجرة».
“গাছের নিচে বাই‘আতকারী কেউ জাহান্নামে প্রবেশ করবে না”।
অতএব, আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আতের আকিদা, বদরী ও বাই‘আতে রিদওয়ানে অংশ গ্রহণকারী সাহাবীগণের জন্য খাসভাবে এবং অন্যান্য সাহাবীগণের জন্য ব্যাপকভাবে জান্নাতের সাক্ষী প্রদান করা। যেমন, আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন: ﴿وَكُلّٗا وَعَدَ ٱللَّهُ ٱلۡحُسۡنَىٰۚ ﴾ [الحديد: 10] “সবার জন্যই আল্লাহ কল্যাণের ওয়াদা করেছেন”। [সূরা আল-হাদীদ, আয়াত: ১০]
জান্নাতের সুসংবাদ প্রাপ্ত দশজন সাহাবীর ফযীলত:
সবচেয়ে বড় ফযীলত দশজন সাহাবীর ভাগ্যে জুটেছে। যাদেরকে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিশেষভাবে জান্নাতের সুসংবাদ প্রদান করেছেন, তারা হলেন: ১. আবু বকর, ২. উমার, ৩. উসমান, ৪. আলী, ৫. তালহা ইবন উবায়দুল্লাহ, ৬. যুবায়ের ইবনুল আওয়াম, ৭. সা‘দ ইবন আবি ওয়াক্কাস, ৮. সাঈদ ইবন যায়েদ, ৯. আব্দুর রহমান ইবন আউফ, ও ১০. আবু উবায়দাহ আমির ইবন জাররাহ।
দশজন ব্যতীত নির্দিষ্ট কতক সাহাবীর ফযীলত:
দশজন ব্যতীত অন্যান্য সাহাবীকেও নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জান্নাতের সুসংবাদ দিয়েছেন। যেমন, সাবিত ইবন কায়িস ইবন সাম্মাস, উক্কাশাহ ইবন মিহসান, আব্দুল্লাহ ইবন সালাম, হাসান ও হুসাইন এবং মুমিনদের মায়েরা। আল্লাহ তাদের সবার ওপর সন্তুষ্ট হোন। নবী  সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কর্তৃক তাদেরকে জান্নাতের সুসংবাদ প্রদান করা তাদের জন্য অনেক বড় সৌভাগ্য, যা অন্যান্যদের ভাগ্যে হয় নি।
নির্দিষ্টভাবে তাদেরকে জান্নাতের সুসংবাদ প্রদান করা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নবুওয়াতের একটি দলীল। কারণ, তিনি যাদের ব্যাপারে জান্নাতের সুসংবাদ দিয়েছেন, তারা সবাই আজীবন দীনের প্রতিষ্ঠিত ছিলেন, তাই আল্লাহ তাদের জন্য যে মর্যাদা নির্ধারণ করেছেন স্বাভাবিকভাবে সেখানে তারা পৌঁছতে সক্ষম হয়েছে। আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আত তাদের সবার জন্য জান্নাতের সাক্ষী প্রদান করে। কারণ, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে নির্দিষ্টভাবে জান্নাতের সুসংবাদ দিয়েছেন। দ্বিতীয়ত কারও জন্য জান্নাত কিংবা জাহান্নামের সাক্ষী দেওয়া বিবেকের কাজ নয়, বরং সেটি সম্পূর্ণভাবে শরী‘আতের  ওপর নির্ভরশীল। শরী‘আত তাদের পক্ষে জান্নাতের সাক্ষী দিয়েছে, তাই আমরাও জান্নাতের সাক্ষী দিব। নবী  সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যাকে জান্নাতী বলে সাক্ষী দেন নি, আমরা তাকে জান্নাতী হিসেবে সাক্ষী দিব না। কারণ, তাহলে আল্লাহর ওপর কথা বলা হবে যা মস্তবড় অন্যায়। তবে আমরা ভালো মুসলিমের জন্য জান্নাতের আশা করি, আর অপরাধী মুসলিমের ওপর শাস্তির আশঙ্কা করি।
হিদায়াতের ওপর পরিচালিত খলিফাদের ফযীলত ও সিরিয়াল:
আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাত একমত যে, পরিপূর্ণ হিদায়াতের ওপর পরিচালিত খলিফা চারজন, তারা সবাই শ্রেষ্ঠ মুহাজির ছিলেন। উম্মতের ভেতর নবীর পর তারাই অধিক মর্যাদার অধিকারী। তারা সবাই বিবাহ সূত্রে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আত্মীয়। তাদের প্রত্যেকের এমন কতক ফযীলত রয়েছে, যে স্তরে উম্মত থেকে অন্য কেউ পৌঁছতে পারে নি। আল্লাহ তাদের সবার ওপর সন্তুষ্ট হোন।
আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু ও অন্যান্য সাহাবীর বর্ণনার ওপর ভিত্তি করে আহলুস সুন্নাহ একমত যে, নবীর পর সর্বশ্রেষ্ঠ আবু বকর, অতঃপর উমার, তবে উসমান ও আলীর ব্যাপারে দ্বিমত রয়েছে কে উত্তম? কেউ উসমানকে অগ্রগামী করে চুপ থেকেছেন এবং চার নাম্বারে আলীর কথা বলেছেন। কেউ আলীকে অগ্রগামী করেছেন, আর একদল নীরবতা অবলম্বন করেছেন। শাইখুল ইসলাম ইবন তাইমিয়াহ রহ. প্রথম সিদ্ধান্তকে, অর্থাৎ উসমানকে আলীর ওপর প্রাধান্য দেওয়ার মতকে কয়েকটি কারণে সুপ্রযুক্ত বলেছেন। যেমন,
১. উসমান সম্পর্কে ফযীলতের হাদীসসমূহ।
২. সাহাবীগণ আলীর আগে উসমানকে খলিফা হিসেবে নির্বাচন করেছেন। এ সিদ্ধান্ত প্রমাণ করে তাদের নিকট উসমান আলী থেকে উত্তম ছিলেন।  ইমাম বুখারী রহ.  ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণনা করেন:
«كنا نخير بين الناس في زمن النبي صلى الله عليه وسلم فنخير».
“আমরা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যুগে মানুষের ভেতর প্রাধান্য দিতাম কে উত্তম, তাই প্রাধান্য দিতাম”।
আবু দাউদের বর্ণনায় এসেছে: আমরা রাসূলুল্লাহ  সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জীবিত অবস্থায় বলতাম:
«أفضل أمة النبي صلى الله عليه وسلم أبو بكر ثم عمر بن الخطاب ثم عثمان».
“নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উম্মতের ভেতর সর্বোত্তম আবু বকর, অতঃপর উমার ইবনুল খাত্তাব, অতঃপর উসমান”।
৩. আহলুস সুন্নাহর নিকট সার্বিক বিবেচনায় আলী থেকে উসমান অগ্রগামী, সাহাবীগণ যেভাবে তাকে বাই‘আতের ক্ষেত্রে অগ্রগামী করেছেন। আব্দুর রহমান ইবন আউফ বলেন, “আমি মানুষের মতামত যাচাই করেছি, তারা কাউকে উসমানের সমান জানে না”। একাধিক সালাফ (আদর্শ পুরুষ) বলেছেন: “যে উসমানকে আলীর ওপর প্রাধান্য দিল না, সে মুহাজির ও আনসারদের সিদ্ধান্তকে অবজ্ঞা করল”। এসব কথা প্রমাণ করে আলি থেকে উসমান শ্রেষ্ঠ ও উত্তম। কারণ, সাহাবীগণ পরামর্শ করার পরেই তাকে প্রাধান্য দিয়েছেন। আলি নিজেও তার হাতে বাই‘আত করেছেন। উসমান তার সামনে আল্লাহর বিধান বাস্তবায়ন করতেন।
উসমানকে আলীর ওপর প্রাধান্য দেওয়ার ঐকমত্য প্রমাণ করে উসমানের পর আলীই সর্বোত্তম ও খিলাফতের অধিক হকদার। কারণ, আলীর যুগে আলীই ছিলেন সর্বশ্রেষ্ঠ। আবার খলিফা হয়েছেনও তিনি। সকল প্রশংসা আল্লাহর জন্য, যিনি দু’জাহানের রব।
সাধারণভাবে সকল সাহাবীর শ্রেষ্ঠত্ব ও ফযীলত স্বীকার করার পর আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আত সবাই একমত যে, সাহাবীগণের ভেতর সর্বোত্তম হলেন আবু বকর সিদ্দিক, অতঃপর উমার ফারুক, অতঃপর উসমান যিন-নূরাইন, অতঃপর আলী মুরতাযা। অতঃপর জান্নাতের সুসংবাদ প্রাপ্ত অবশিষ্ট দশজন সাহাবী, অতঃপর বদরে অংশগ্রহণকারী সাহাবীগণ, অতঃপর বাই‘আতে রিদওয়ানে উপস্থিত সাহাবীগণ, অতঃপর অন্যান্য সাহাবী যারা ফাতহে মক্কার আগে ইসলাম গ্রহণ করেছেন, অতঃপর যারা ফাতহে মক্কার পর ইসলাম গ্রহণ করেছেন ও জিহাদে অংশ নিয়েছেন।

ছয়: মুসলিম উম্মাহর ওপর সাহাবীগণের হক
উম্মতের ওপর যেসব হক ও গুরু দায়িত্ব রয়েছে, সাহাবীগণের হক আদায় করা তার একটি। যেমন,
১. সাহাবীগণের মর্যাদা ও ফযীলত স্বীকার করা, তাদের প্রতি বিদ্বেষ অথবা হিংসা ও ঈর্ষা থেকে নিজের অন্তরকে পবিত্র রাখা।
২. সাহাবীগণের মহব্বত অন্তরে ধারণ করা ও মুখে তাদের প্রশংসা করা। তারা অগ্রগামী উম্মত, তাদের ফযীলত কুরআন ও সুন্নাহতে প্রমাণিত। ইসলামের জন্য তারা অনেক ত্যাগ ও কুরবানি করেছেন, তাই উম্মতের ভেতর তাদের মহব্বত সৃষ্টি ও তাদেরকে সবার নিকট প্রিয় করা ঈমানের অংশ।
৩. ইলম, আমল, দাওয়াত, সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজের নিষেধ, অমুসলিমদের সাথে বন্ধুত্ব ও শত্রুতার ক্ষেত্রে সাহাবীগণের নীতি গ্রহণ করা ও তাদেরকে আদর্শ হিসেবে জানা। কুরআন ও হাদীসের অর্থ তারাই বেশি জানতেন। তার ওপর আমল করার তাওফীক তারাই সবচেয়ে বেশি পেয়েছেন। তারাই সবচেয়ে হিতাকাঙ্ক্ষী ছিলেন উম্মতের ওপর। আবার বিদ‘আত ও প্রবৃত্তি থেকে অনেক দূরত্বে অবস্থান করেছেন তারাই।
৪. সাহাবীগণের জন্য ইস্তেগফার ও রহমতের দো‘আ করা, যেরূপ আল্লাহ তা‘আলা নিম্নের আয়াতে শিক্ষা দিয়েছেন:
﴿وَٱلَّذِينَ جَآءُو مِنۢ بَعۡدِهِمۡ يَقُولُونَ رَبَّنَا ٱغۡفِرۡ لَنَا وَلِإِخۡوَٰنِنَا ٱلَّذِينَ سَبَقُونَا بِٱلۡإِيمَٰنِ ١٠﴾ [الحشر: 10]
“আর যারা তাদের পরে এসেছে, তারা বলে: হে আমাদের রব, আমাদেরকে ও আমাদের ভাই যারা ঈমান নিয়ে আমাদের পূর্বে অতিক্রান্ত হয়েছে তাদেরকে ক্ষমা করুন”। [সূরা আল-হাশর, আয়াত: ৭-১০]
৫. সাহাবীগণের মাঝে সংঘটিত যুদ্ধ-বিগ্রহ ও ইখতিলাফ ঘাটাঘাটি থেকে বিরত থাকা এবং বিশ্বাস করা যে, ইখতিলাফের ক্ষেত্রে তারা সাওয়াবের অধিকারী মুজতাহিদ ছিলেন, যে সঠিক ইজতিহাদ করেছেন তার দু’টি সাওয়াব, আর যে ভুল ইজতিহাদ করেছেন তার একটি সাওয়াব, তার ভুলটি মাফ ইজতিহাদের কারণে।
৬. কতক সাহাবীর ওপর যেসব দোষ চাপানো হয়, সেগুলো প্রচার করা থেকে বিরত থাকা। কারণ তার অধিকাংশ প্রবৃত্তির অনুসরণ, সীমালঙ্ঘন ও সাম্প্রদায়িকতা থেকে সৃষ্ট ও তৈরি করা মিথ্যা। বাহ্যত কখনো একটি ঘটনা প্রমাণিত হলেও তার ভেতরের বিষয় জানা যায় না, তাই সেগুলো প্রচার করার অর্থ সাহাবীগণের হিংসায় অন্তর কলুষিত থাকার বহিঃপ্রকাশ, তাদের থেকে প্রতিশোধ নেওয়া, তাদের অপছন্দ করা ও তাদেরকে অপবাদ দেওয়ার শামিল, যা কবিরা গুনাহ ও আল্লাহর গোস্বায় পতিত হওয়ার কারণ।
৭. বিশ্বাস করা যে, সকল সাহাবী বা কোনোও একজন সাহাবীকে গাল-মন্দ করা হারাম, লা‘নত করা আরও কঠিন হারাম। কারণ, তাদেরকে লা‘নত করলে আল্লাহকে মিথ্যারোপ করা হয়, যেহেতু তিনি তাদের পবিত্রতা বর্ণনা ও প্রশংসা করেছেন, তাদের জন্য জান্নাতের ওয়াদা দিয়েছেন। দ্বিতীয়ত নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথেও দৃষ্টতা দেখানো হয়। কারণ, তিনি তাদের গাল-মন্দ করতে নিষেধ করেছেন। এতে সাহাবীগণের ওপর যুলুম ও সীমালঙ্ঘন তো আছেই, যদিও নবী ও রাসূলদের পর তারাই আল্লাহর একান্ত বান্দা ও খাস অলী। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿وَٱلَّذِينَ يُؤۡذُونَ ٱلۡمُؤۡمِنِينَ وَٱلۡمُؤۡمِنَٰتِ بِغَيۡرِ مَا ٱكۡتَسَبُواْ فَقَدِ ٱحۡتَمَلُواْ بُهۡتَٰنٗا وَإِثۡمٗا مُّبِينٗا ٥٨﴾ [الأحزاب: 58]
“যারা মুমিন পুরুষ ও মুমিন নারীদেরকে তাদের কৃত কোনো অন্যায় ছাড়াই কষ্ট দেয়, নিশ্চয় তারা বহন করবে অপবাদ ও সুস্পষ্ট পাপ”। [সূরা আল-আহযাব, আয়াত: ৫৮]
একটি সহীহ হাদীসে কুদসিতে এসেছে, আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
«من عادى لي وليا فقد آذنته بالحرب... ».
“যে আমার কোনো অলীর সাথে শত্রুতা করবে, আমি তার সাথে যুদ্ধের ঘোষণা দিলাম...”।

সাত: সাহাবীগণের আদালত ও বিশ্বস্ততা
সাহাবীগণ আল্লাহ তা‘আলার নিম্নের বাণীর প্রথম উদ্দেশ্য:
﴿كُنتُمۡ خَيۡرَ أُمَّةٍ أُخۡرِجَتۡ لِلنَّاسِ ١١٠﴾ [آل عمران:110]
“তোমরা সর্বোত্তম উম্মত, মানুষের জন্য বের করা হয়েছে”। [সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ১১০]
অপর আয়াতে তিনি বলেন:
﴿وَكَذَٰلِكَ جَعَلۡنَٰكُمۡ أُمَّةٗ وَسَطٗا لِّتَكُونُواْ شُهَدَآءَ عَلَى ٱلنَّاسِ ١٤٣﴾ [البقرة: 143]
“এভাবেই আমরা তোমাদেরকে মধ্যপন্থী উম্মত বানিয়েছি, যাতে তোমরা মানুষের ওপর সাক্ষী হও”। [সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ১৪৩]
এ আয়াতের সম্বোধনে যারা উদ্দেশ্য, তাদের ভেতর সর্বপ্রথম, সর্বোত্তম ও শ্রেষ্ঠ সদস্য হলেন সাহাবীগণ। অপর এক সহীহ হাদীসে এসেছে, নবী  সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
«أنهم خير قرون هذه الأمة، وأنهم خير الناس، وأنهم يوم القيامة يوفون سبعين أمة، هم خيرها وأكرمها على الله عزوجل».
“সাহাবীগণ এ উম্মতের সর্বোত্তম ব্যক্তিবর্গ, সকল মানুষ থেকে তারাই শ্রেষ্ঠ, কিয়ামতের দিন তারা সত্তর উম্মতের বরাবর হবে। আল্লাহর নিকট তারাই সর্বোত্তম ও সর্বশ্রেষ্ঠ”।
কুরআনুল কারীম ও সহীহ সুন্নাহতে সাহাবীগণের এ ছাড়া আরও অনেক ফযীলত, প্রশংসা, সাওয়াবের প্রতিশ্রুতি ও প্রতিদানের ওয়াদা রয়েছে যা গুণে শেষ করা যাবে না।
সাহাবীগণের জীবন চরিত যে দেখবে, তাদের অবস্থা ও ফযীলত সম্পর্কে বর্ণিত হাদীসগুলো যে পাঠ করবে, আল্লাহর রাস্তায় তাদের দাওয়াত ও জিহাদ, আল্লাহর কালেমাকে বুলন্দ করার জন্য তাদের সকল প্রকার ত্যাগ, তার রাসূলকে সাহায্য ও তার দীনকে বিজয়ী করার তাদের প্রচেষ্টা এবং তাদের ঈমান, আল্লাহর সাথে তাদের সততা, নেকি, উপকারী ইলম, নেক আমল ও অন্যান্য কল্যাণকর ক্ষেত্রে তাদের প্রতিযোগিতা দেখবে ও ভাববে, সে অবশ্যই বিশ্বাস করবে নবী ও রাসূলদের পর সাহাবীগণ সর্বোত্তম। তারাই উম্মতের ভেতর ইলম, জ্ঞান ও দীনের ক্ষেত্রে সর্বশ্রেষ্ঠ এবং যথাযথভাবে সঠিক পথের অনুসারী তারাই ছিলেন। তাদের যে বৈশিষ্ট্য ও ফযীলত ছিল, সেরূপ বৈশিষ্ট্য ও ফযীলত পূর্বে কারও ছিল না, ভবিষ্যতে কারও হবে না, কখনো হবে না। আল্লাহ তাদের সবার ওপর সন্তুষ্ট হোন।
এ জন্য আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আত সবাই একমত যে, সাহাবীগণ সবাই নির্ভরযোগ্য, তাদের কারও বিশ্বস্ততা যাচাইয়ের জন্য তথ্য অনুসন্ধান করার প্রয়োজন নেই, কারণ কুরআন ও সুন্নাহতে তাদের বিশ্বস্ততা ও প্রশংসার বর্ণনা এবং তারা উত্তম, মধ্যপন্থার অনুসারী ও সত্যবাদী সম্পর্কে যেসব তথ্য ও উপাদান রয়েছে, সেগুলো তাদের গ্রহণযোগ্যতা ও নির্ভরযোগ্যতা প্রকাশ করার জন্য যথেষ্ট। কুরআন ও সুন্নাহতে কাউকে নির্ভরযোগ্য ঘোষণা করার পর তাতে কারও সন্দেহ প্রকাশ করার ফলে তা বাতিল হয় না, বরং সন্দেহ প্রকাশকারী প্রত্যাখ্যাত হয়, এসব সন্দেহ সৃষ্টিকারীরা মূলত প্রবৃত্তি পূজারি মূর্খ, রাফেযী ও ইসলামের শত্রু। সাহাবীগণের দোষ চর্চাকারীরা যেসব বর্ণনা পেশ করেন, সেগুলোর বাস্তবতা নিম্নরূপ:
১. তাদের পেশ করা কতক বর্ণনা আগা-গোঁড়া মিথ্যা।
২. কতক বর্ণনায় বিকৃতি, হ্রাস ও বৃদ্ধি ঘটেছে, যে কারণে প্রকৃত ঘটনা বদমান ও অপবাদের রূপ নিয়েছে।
৩. সাহাবীগণের যুদ্ধ-বিগ্রহের মূল কারণ ইজতিহাদ। যিনি ইজতিহাদ করে ঠিক করেছেন তার দু’টি সাওয়াব, আর যিনি ভুল করেছেন তার একটি সাওয়াব, ভুলটি মাফ। তাদের বিচ্যুতি ইজতিহাদ থেকে সৃষ্টি। ইজতিহাদের ক্ষেত্রে তারা অপারগ ছিলেন, তাই ঠিক হোক বা বেঠিক হোক উভয় অবস্থায় তারা সাওয়াবের অধিকারী।
আহলে হক সবাই একমত যে, সাহাবীগণের বর্ণনা ও সাক্ষী গ্রহণযোগ্য এবং তাদের ন্যায়পরায়ণতা সাব্যস্ত। তাদের সবাইকে বিশ্বস্ত বলে জানা জরুরি এবং তাদের ছিদ্রান্বেষণ করা হারাম। বিশ্বাস করা ওয়াজিব যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পর তারাই সর্বশ্রেষ্ঠ উম্মত। আবু যুরআহ রহ. বলেন: “তুমি যখন কাউকে দেখ রাসূলুল্লাহ  সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কোনো সাহাবীকে হেয় করছে জেনে নাও সে জিন্দিক”। কারণ, কুরআন হক, রাসূল হক এবং রাসূল যা নিয়ে এসেছেন সেটাও হক, আর এ হকগুলো আমাদের নিকট পৌঁছিয়েছেন সাহাবীগণ। অতএব, যে তাদের দোষারোপ করল সে মূলত কিতাব ও সুন্নাহকে বাতিল প্রমাণ করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হল।

সাহাবীগণকে বিভিন্ন প্রকার গাল-মন্দ ও তার হুকুম:
১. নির্দিষ্ট সাহাবীকে গাল-মন্দ করার বিধান: যে সাহাবীর পবিত্রতা বর্ণনা করে কুরআনুল কারীমের আয়াত নাযিল হয়েছে অথবা যার ফযীলত সম্পর্কে বিশুদ্ধ হাদীস রয়েছে অথবা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে যার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। যেমন, আবু বকর, উমার, আয়েশা ও মুমিনদের অন্যান্য মায়েরা, আল্লাহ তাদের সবার ওপর সন্তুষ্ট হোন। এরূপ ব্যক্তিবর্গকে গাল-মন্দ করা কুফুরী, বরং নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের রিসালাতকে মিথ্যারোপ করার শামিল, যার দাবি হচ্ছে গাল-মন্দকারী ইসলাম থেকে খারিজ ও মুরতাদ। এ বিধান স্পষ্ট, এতে কারও দ্বিমত নেই, যদি সে তার অবস্থানে অনড় থাকে তাকে হত্যা করা ওয়াজিব।
২. ঢালাওভাবে সাহাবীগণের গালমন্দ করার বিধান: যে গাল-মন্দ অধিকাংশ সাহাবীর কুফুরী অথবা ফাসেকিকে বুঝায়, শিয়া-রাফেযীরা যে গাল-মন্দ করে, সে গালমন্দ কুফরি। এ জাতীয় গালমন্দ করার উদ্দেশ্য আল্লাহ ও তার রাসূলকে মিথ্যারোপ করা, কারণ তাঁরা সাহাবীগণের প্রশংসা ও তাদের ওপর সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন, বরং এ জাতীয় ব্যক্তির কুফুরীতে যে সন্দেহ পোষণ করে সেও নিশ্চিত কাফির। রাফেজিদের কথা হিসেবে কিতাব ও সুন্নাহর বর্ণনাকারী সকল সাহাবী কাফির ও ফাসিক। অতএব, তারাই ভ্রান্ত ও বাতিল।
৩. সাহাবীগণের লা‘নত ও ভর্ৎসনা জাতীয় গালমন্দ করার বিধান: এ জাতীয় গাল-মন্দকারীর কুফুরীর সম্পর্কে আহলে ইলমগণ দু’টি মত পোষণ করেছেন। একপক্ষ বলেন, এরূপ ব্যক্তি কাফির নয়, তবে তাকে উত্তম-মাধ্যম করা অথবা তাকে বন্দি করে রাখা জরুরি, যতক্ষণ না তার মৃত্যু হয় কিংবা নিজের অবস্থান ত্যাগ করে মিথ্যা ও অপরাধ স্বীকার করে নেয়।
৪. সাহাবীগণের যদি এমনভাবে গাল-মন্দ করা হয়, যার দ্বারা তাদের দীনদারী ক্ষতিগ্রস্ত হয় না, যেমন তাদের কৃপণ ও কাপুরুষ বলা। এরূপ কথার ব্যক্তিকে কাফির বলব না, তবে তাকে শাস্তি দেওয়া জরুরি, যেন এরূপ ব্যক্তি ও তার ন্যায় অন্যরা এ জাতীয় কথাবার্তা থেকে ফিরে আসে। শাইখুল ইসলাম ইবন তাইমিয়াহ রহ. এরূপ বলেছেন। তিনি ইমাম আহমদ থেকে বর্ণনা করেন: “সাহাবীগণের দোষ চর্চা করা কিংবা দোষ-ত্রুটি উল্লেখ করে তাদেরকে অপবাদ দেওয়া কারও পক্ষেই বৈধ নয়, যে এরূপ করবে তাকে শাস্তি দিতে হবে, যদি তাওবা করে ভালো, অন্যথায় ফিরে আসা পর্যন্ত বন্দী করে রাখা জরুরি।

আট: সাহাবীগণের ব্যাপারে আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আতের মাযহাব।
ক. সাহাবীগণের মহব্বত করা ঈমানের নিদর্শন, আর তাদের সাথে বিদ্বেষ পোষণ করা নিফাকের নিদর্শন। সহীহ হাদীসে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত, তিনি বলেছেন,
«آية الإيمان حب الأنصار وآية النفاق بغض الأنصار».
“আনসারদের মহব্বত করা ঈমানের আলামত ও তাদের সাথে বিদ্বেষ পোষণ করা নিফাকের আলামত”।
অপর হাদীসে তিনি বলেছেন,
«لايحبهم إلا مؤمن ولايبغضهم إلا منافق».
“মুমিন ব্যতীত কেউ তাদের মহব্বত করবে না এবং মুনাফিক ব্যতীত কেউ তাদের সাথে বিদ্বেষ পোষণ করবে না”।
এ ফযীলত যদি আনসারদের হয়, মুহাজিরদের ফযীলত তার চেয়ে বেশি। কারণ, মোটের ওপর তারাই শ্রেষ্ঠ উম্মত। সর্বপ্রথম মুহাজিররা ইসলাম গ্রহণ করেছেন এবং দীনকে সাহায্য ও দীনের জন্য হিজরত করেছেন। যেসব আয়াতে মুহাজির ও আনসারদের ফযীলত, আল্লাহর সন্তুষ্টি, সাওয়াব ও প্রতিদানের আলোচনা এসেছে, তাতে আনসারদের আগে মুহাজিরদের নাম রয়েছে, যার অর্থ মুহাজিরগণ শ্রেষ্ঠ।
খ. সাহাবীগণের সম্পর্কে কোনও প্রকার বিদ্বেষ ও হিংসা অন্তরে রাখা যাবে না, যেমন আল্লাহ তা‘আলা নির্দেশ দিয়েছেন:
﴿وَٱلَّذِينَ جَآءُو مِنۢ بَعۡدِهِمۡ يَقُولُونَ رَبَّنَا ٱغۡفِرۡ لَنَا وَلِإِخۡوَٰنِنَا ٱلَّذِينَ سَبَقُونَا بِٱلۡإِيمَٰنِ وَلَا تَجۡعَلۡ فِي قُلُوبِنَا غِلّٗا لِّلَّذِينَ ءَامَنُواْ رَبَّنَآ إِنَّكَ رَءُوفٞ رَّحِيمٌ ١٠﴾ [الحشر: 10]
“যারা তাদের পরে এসেছে, তারা বলে: হে আমাদের রব, আমাদেরকে ও আমাদের ভাই যারা ঈমান নিয়ে আমাদের পূর্বে অতিক্রান্ত হয়েছে তাদেরকে ক্ষমা করুন”। [সূরা আল-হাশর, আয়াত: ৭-১০]
গ. সাহাবীগণের সমালোচনা থেকে জবানকে নিরাপদ রাখা। কোনও সাহাবীকে খারাপ বিশেষণসহ উল্লেখ করা যাবে না, বরং প্রশংসা ও কল্যাণের সাথে স্মরণ করা জরুরি। কারণ, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের সম্মানকে সুরক্ষা দিয়েছেন। যেমন, তিনি বলেছেন,
«لاتسبوا أصحابي، فوالذي نفسي بيده لو أنفق أحدكم مثل أحد ذهبا ما بلغ مد أحدهم ولا نصيفه».
“তোমরা আমার সাহাবীগণের গাল-মন্দ কর না, সে সত্ত্বার কসম, যার হাতে আমার নফস, তোমাদের কেউ যদি উহুদ পরিমাণ স্বর্ণ সদকা করে, তাদের কারও এক মুদ বা তার অর্ধেকেও পৌঁছবে না”। এ হাদীস থেকে স্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয়, সাহাবীগণের গালমন্দ করা হারাম, লা‘নত করা তার চেয়েও বড় পাপ। অতএব, সেটা আরও মারাত্মক হারাম। যদিও উভয় পাপ কবিরা গুনাহ। একটি সহীহ হাদীসে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
«لعن المؤمن كقتله».
“মুমিনকে লা‘নত করা তাকে হত্যা করার মতো”।
অপর হাদীসে তিনি বলেছেন,
«الله الله في أصحابي، لاتتخذوهم غرضا ومن آذاهم فقد آذاني ومن آذاني فقد آذى الله، ومن آذى الله فيوشك أن يأخذه».
“আমার সাহাবীগণের ব্যাপারে আল্লাহকে ভয় কর, আল্লাহকে ভয় কর, তাদেরকে তোমরা লক্ষ্য বস্তুতে পরিণত কর না, যে তাদেরকে কষ্ট দিল সে আমাকে কষ্ট দিল, আর যে আমাকে কষ্ট দিল সে আল্লাহকে কষ্ট দিল। আর যে আল্লাহকে কষ্ট দেয়, অবশ্যই আল্লাহ তাকে পাকড়াও করবেন”।
অতএব, উম্মতের ওপর সাহাবীগণের হক, একটি বড় হক। উম্মতের ভেতর সাহাবীগণ সর্বশ্রেষ্ঠ, বরং নবী ও রাসূলদের পর সকল মানুষ থেকে তারা শ্রেষ্ঠ, আল্লাহ তাদের সবার ওপর সন্তুষ্ট হোন।
ঘ. আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আতের বিশ্বাস কোনোও সাহাবী নিষ্পাপ নয়, হোক সে নবী  সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট আত্মীয় বা অগ্রগামী কোনোও সাহাবী; বরং আহলুস সুন্নাহর নিকট সাহাবীগণের থেকে পাপ প্রকাশ পাওয়া সম্ভব, হোক সেটা কবিরা কিংবা ছগিরা পাপ, তবে কিছু বৈশিষ্ট্যের জন্য আল্লাহ তাদের সেসব পাপ ক্ষমা করবেন, যার তাওফিক তাদেরকে তিনিই দিয়েছেন। যেমন,
১. পাপ সংঘটিত হলে তাওবা করার তাওফীক, আর সত্যিকার তাওবা দ্বারা পূর্বাপেক্ষা মর্যাদা বর্ধিত হয়।
২. পাপ মোচনকারী নেকির তাওফীক। যেমন, আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿وَٱلَّذِي جَآءَ بِٱلصِّدۡقِ وَصَدَّقَ بِهِۦٓ أُوْلَٰٓئِكَ هُمُ ٱلۡمُتَّقُونَ ٣٣ لَهُم مَّا يَشَآءُونَ عِندَ رَبِّهِمۡۚ ذَٰلِكَ جَزَآءُ ٱلۡمُحۡسِنِينَ ٣٤﴾ [الزمر: 33-34]
“আর যে সত্যসহ এসেছে এবং যে তা সত্য বলে মেনে নিয়েছে, তারাই হল মুত্তাকি। তাদের জন্য তাদের রবের কাছে তাই রয়েছে যা তারা চাইবে। এটাই মুমিনদের পুরস্কার”। [সূরা আয-যুমার, আয়াত: ৩৩-৩৪]
আল্লাহ ও তার রাসূলের প্রতি সাহাবীগণ সত্যিকার অর্থে ঈমান এনেছেন, তাদের এমন অনেক নেকি ও ফযীলত রয়েছে, যা তাদের পাপকে নিঃশেষ করে দেয়, যদি তাদের থেকে কখনো পাপ সংঘটিত হয়। আল্লাহ তাদের সবার ওপর সন্তুষ্ট হোন।
৩. সাহাবীগণের যে পরিমাণ পাপ ক্ষমা করা হবে, সে পরিমাণ পাপ পরবর্তী কারও ক্ষমা হবে না, যদিও তাদের কারো থেকে সেরূপ পাপ সংঘটিত হয়, তবে সেরূপ পাপ সংঘটিত হয় নি। কীভাবেই হবে, যেখানে তাদের যুগ সম্পর্কে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, সহীহ সনদে প্রমাণিত: “সাহাবীগণের যুগ সর্বশ্রেষ্ঠ যুগ। তাদের কারও এক মুদ সদকা, তাদের পরবর্তীদের পাহাড় পরিমাণ সদকা থেকে উত্তম”।
৪. যদি কোনোও সাহাবী থেকে পাপ প্রকাশ পায়, তাহলে সে পাপ থেকে তিনি তাওবা করেছেন এটাই স্বাভাবিক। কারণ, তাদের ভেতর আল্লাহর ভয় সবার অপেক্ষা বেশি ছিল। তাওবা ও মাগফিরাত প্রার্থনা করার ক্ষেত্রে তারা সবার থেকে অগ্রগামী ছিলেন, তারা কোনোও পাপ বারবার করেন নি।
৫. অধিকন্তু সবার আগে ইসলাম গ্রহণ করার ফযীলত, পাপ মোচনকারী অনেক নেকি এবং আরও অনেক বৈশিষ্ট্য সাহাবীগণের রয়েছে, যা একমাত্র আল্লাহ তাদেরকেই দান করেছেন। দ্বিতীয়ত আল্লাহ তাদেরকে অনেক মুসিবত দিয়ে পরীক্ষা করেছেন, যা তাদের পাপকে মোচন করে দিয়েছে স্বাভাবিক।
৬. সাহাবীগণই নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুপারিশের বেশি হকদার। এ ছাড়া আরও অনেক নেকি তাদের রয়েছে।
যদি সাহাবীগণের আসলেই পাপ সংঘটিত হয়, তাহলে এসব কারণে তাদের পাপ মোচন হবে ও তারা মুক্তি পাবেন। আর যদি বিষয়টা হয় ইজতিহাদের, তাহলে তারা সাওয়াবের অধিকারী হবেন। যদি ইজতিহাদ সঠিক হয় দু’টি সাওয়াব পাবেন: একটি ইজতিহাদ ও অপরটি সঠিক সিদ্ধান্তে পৌঁছার সাওয়াব। যদি ইজতিহাদ ভুল হয় একটি সাওয়াব পাবেন অর্থাৎ ইজতিহাদ করার সাওয়াব, আর ভুলটি মাপ।
ঘ. আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আত সবাই একমত যে, উসমান রাদিয়াল্লাহু আনহুর মৃত্যুর পর সাহাবীগণের মাঝে যে ফিতনার সৃষ্টি হয়েছে তার ব্যাপারে চুপ থাকাই নিরাপদ। এসব বিষয় আল্লাহর ওপর সোপর্দ করে উভয় পক্ষের মৃতদের জন্য ইস্তেগফার ও রহমতের দো‘আ করা। জনৈক সালাফকে সাহাবীগণের মাঝে সৃষ্ট যুদ্ধ-বিগ্রহ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, তিনি উত্তর দেন: “আল্লাহ যে রক্ত থেকে আমাদের হাত পাক রেখেছেন, সে রক্ত দিয়ে আমরা আমাদের জবানকে নাপাক করতে চাই না, অতঃপর তিনি পাঠ করেন:
﴿تِلۡكَ أُمَّةٞ قَدۡ خَلَتۡۖ لَهَا مَا كَسَبَتۡ وَلَكُم مَّا كَسَبۡتُمۡۖ وَلَا تُسۡ‍َٔلُونَ عَمَّا كَانُواْ يَعۡمَلُونَ ١٤١﴾ [البقرة: 141]
“সেটা ছিল একটি উম্মত, যারা বিগত হয়েছে। তারা যা অর্জন করেছে তা তাদের জন্য আর তোমরা যা অর্জন করেছ তা তোমাদের জন্য। আর তারা যা করেছে সে সম্পর্কে তোমাদেরকে জিজ্ঞেস করা হবে না”। [সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ১৪১]
সাহাবীগণের সম্পর্কে আমাদের করণীয় হচ্ছে তাদের মর্যাদা সংরক্ষণ করা। তাদের অগ্রগামীতা স্বীকার করা ও তাদের ফযীলত প্রচার করা। আর বিশ্বাস করা যে, তাদের প্রত্যেকের ইজতিহাদ করার যোগ্যতা রয়েছে, তারা কেউ ইচ্ছা করে ভুল করেননি। যিনি ঠিক করেছেন তার জন্য দু’টি সাওয়াব, যিনি ভুল করেছেন তার জন্য দু’টি সাওয়াব, আর ভুলটি মাফ। সাহাবীগণের দুর্নাম করে যা বর্ণনা করা হয়, তার অধিকাংশ মিথ্যা ও বানোয়াট। কতক ঘটনা হ্রাস-বৃদ্ধির কারণে মূল বক্তব্য হারিয়েছে। ইজতিহাদের ক্ষেত্রে সাহাবীগণ মা‘জুর ছিলেন এ কথাই সঠিক। তারা কেউ ইচ্ছে করে ভুল করে নি। অতঃপর তাদের যে কাজগুলোয় আপত্তি করা হয় তার পরিমাণও খুব কম তাদের নেকি ও ফযীলত অপেক্ষা। যেমন, আল্লাহ ও তার রাসূলের প্রতি ঈমান আনা, দীনের জন্য হিজরত ও রাসূলকে সাহায্য করা; আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করা, ইলমে নাফি ও নেক আমল করা। যে জ্ঞান ও বিবেক দিয়ে সাহাবীগণের জীবন চরিত ও তাদের ফযীলত দেখবে, সে অবশ্যই জানবে নবী ও রাসূলদের পর তারাই সর্বশ্রেষ্ঠ, তাদের মত কেউ ছিল না, ভবিষ্যতেও হবে না। তারা মুসলিম উম্মাহর খাঁটি ও নির্ভেজাল সদস্য এবং সর্বোত্তম উম্মত ও আল্লাহর নিকট সবচেয়ে সম্মানিত ব্যক্তিত্ব।
জরুরি জ্ঞাতব্য:
শরী‘আতের বিধি-বিধানের ক্ষেত্রে যে সাহাবী ভুল করেছেন, সেটা প্রকাশ করা তার দুর্নাম করার অন্তর্ভুক্ত নয়, বরং এরূপ ভুল প্রকাশ করা ওয়াজিব ও উম্মতের প্রতি কল্যাণ কামনার শামিল। আহলে-ইলম ও ঈমানদারগণ কাউকে নিষ্পাপ বা পাপী বলে না, তবে প্রবৃত্তির অনুসারী ও বিদ‘আতীরা ভুল হলেই পাপী হওয়া আবশ্যক বলে। এ থেকে স্পষ্ট হয় আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাত সাহাবীগণের ক্ষেত্রে মধ্যপন্থার অবলম্বী। তারা একদল বিদ‘আতীর ন্যায় কতক সাহাবীকে নিষ্পাপ বলে না, আবার অপর দল বিদ‘আতীর ন্যায় ভুল হলেই সাহাবীগণকে পাপী ও বিদ্রোহী বলে না।
ফায়দা: কাউকে জান্নাতী বা জাহান্নামী বলে সাক্ষী প্রদান করা
আহলুস সুন্নাহ নির্দিষ্ট কতক সাহাবি ও বিশেষ জামা‘আতকে জান্নাতী বলে সাক্ষী দেয়, আর সকল সাহাবীকে অন্যদের ওপর মর্যাদা দেয়। কারণ, কুরআন ও সুন্নাহ তাদের ফযীলত সম্পর্কে সাক্ষী দিয়েছে। তারা এমন কারও জন্য জান্নাত বা জাহান্নামের সাক্ষী দেয় না, যাদের ব্যাপারে আল্লাহ কিংবা তার রাসূল জান্নাত বা জাহান্নামের সাক্ষী দেননি। কারণ কারও পক্ষে জান্নাত বা জাহান্নামের সাক্ষী দেওয়া বিবেকের কাজ নয়, বরং গায়েবী বিষয়, যা নির্ভুল অহী ব্যতীত সম্ভব নয়, অহী দ্বারা যে জান্নাতী প্রমাণিত মুসলিমগণ তাকে জান্নাতী সাক্ষী দেয়। অহী দ্বারা যে জান্নাতী নয়, মুসলিমরা তাকে জান্নাতি বলে না। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন কারও জান্নাত বা জাহান্নাম সম্পর্কে সাক্ষী প্রদান করেন, সেটি আল্লাহর পক্ষ থেকে অহী। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿وَمَا يَنطِقُ عَنِ ٱلۡهَوَىٰٓ ٣ إِنۡ هُوَ إِلَّا وَحۡيٞ يُوحَىٰ ٤﴾ [الحج: 4]
“সে মনগড়া কথা বলে না, তাতো কেবল অহী, যা তার প্রতি অহী-রূপে প্রেরণ করা হয়”। [সূরা আন-নাজম, আয়াত: ২-৩]
যে মুসলিম নেক আমল করে তার জন্য সাওয়াবের আশা করা এবং যে অপরাধ করে তার ওপর শাস্তির আশঙ্কা করা আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আতের আকীদা।

জান্নাত ও জাহান্নামের সাক্ষী দু’প্রকার:
১. বিশেষ সাক্ষী, যে সাক্ষী নির্দিষ্ট ব্যক্তির সাথে সম্পৃক্ত। যেমন, অমুক জান্নাতী বা জাহান্নামী। এসব ক্ষেত্রে আল্লাহ ও তাঁর রাসূল যাকে নির্দিষ্ট করেন, তাকে ব্যতীত কাউকে নির্দিষ্ট করা বৈধ নয়।
২. সাধারণ সাক্ষী, যে সাক্ষী নির্দিষ্ট ব্যক্তির সাথে সম্পৃক্ত নয়, বরং নির্দিষ্ট গুণ ও বিশেষণের সাথে সম্পৃক্ত, যেমন বলা হয় প্রত্যেক ইমানদার জান্নাতী ও প্রত্যেক কাফির জাহান্নামী। অনুরূপ জান্নাত বা জাহান্নামের আমলকে কেন্দ্র করে অনির্দিষ্ট কাউকে জান্নাতী বা জাহান্নামী বলা। যেমন, বলা হক-পন্থী জান্নাতী ও বাতিল-পন্থী জাহান্নামী।
শিয়া-রাফেযী ও তাদের অনুসারীরা এমন লোকদের জাহান্নামী বলে, যাদের ব্যাপারে আল্লাহ ও তার রাসূল জান্নাতের সাক্ষী দিয়েছেন। অনুরূপভাবে তারা কতক লোককে নির্দিষ্টভাবে জান্নাতী বলে, যাদের ব্যাপারে আল্লাহ ও তার রাসূল জান্নাতের সাক্ষী দেন নি। এটা তাদের অন্তরের নাপাকী ও গোমরাহীর প্রমাণ। আল্লাহ ও রাসূল যাদের প্রশংসা করেছেন, তাদেরকে নিন্দা করে তারা কুরআন ও হাদিসকে মিথ্যা বলছে। আল্লাহ ও তার রাসূল যাদের বদনাম করেন নি, তারা তাদের বদনাম করে। রাসূলের সাথী, সর্বোত্তম ব্যক্তি ও উম্মতের শ্রেষ্ঠ সদস্যদের তারা নিকৃষ্ট বলে, তারা মুখ দিয়ে খুব মারাত্মক কথাই বের করে, যা মিথ্যা ব্যতীত কিছুই নয়। নবী মুহাম্মাদ, তাঁর পরিবার ও সকল সাহাবীর ওপর আল্লাহ সালাত ও সালাম প্রেরণ করুন।
১০/৪/১৪২৪ হি.
আব্দুল্লাহ ইবন সালিহ আল-কুসাইর


লেখক বলেন, সাহাবীগণ এখন কবরে, স্বীয় রবের প্রতিদান ভোগ করছেন। তাদের সম্পর্কে গোস্বা প্রকাশ, হিংসার বীজ বপন ও তাদের সম্মান নষ্ট করে কাফিরদের অনুসারী মুনাফিক বা যিন্দিক ব্যতীত কেউ প্রশান্তি পেতে পারে না। তাদের প্রতিবাদ করার উদ্দেশ্যেই সাহাবীগণকে নিয়ে সংক্ষিপ্ত পুস্তিকা লিখছি, যেন আমার উপর থাকা তাদের হক কিছুটা হলেও আদায় হয় এবং উম্মত তার সঠিক নির্দেশনা খুঁজে পায়...... আমার আরেক উদ্দেশ্য, ভুলে যাওয়া মুসলিমদেরকে সাহাবীগণের মর্যাদা স্মরণ করানো ও তাদের প্রতি বিদ্বেষ পোষণকারীদের রাগিয়ে তোলা।