নির্বাচিত হাদীস পঞ্চম খণ্ড

এই বইটির মধ্যে 90টি হাদীসের মূল্যবান শিক্ষণীয় বিষয় এবং বর্ণনাকারী সাহাবীর সংক্ষিপ্ত পরিচয় রয়েছে। মুসলিম সমাজের প্রয়োজন মোতাবেক এই নির্বাচিত হাদীসগুলির যোগাযোগ রয়েছে তিনটি বিষয়ের সাথে:
1- সঠিক আকীদা বা ইসলামী মতবাদ।
2- সঠিক আকীদা বা ইসলামী মতবাদ মোতাবেক আমল বা কার্য সম্পাদনের প্রতি উৎসাহ প্রদান।
3- ইসলামের প্রকৃত আদর্শ মোতাবেক চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য বজায় রাখার প্রতি লক্ষ্য রাখা।

مختارات من السنة
الجزء الخامس

নির্বাচিত হাদীস
পঞ্চম খণ্ড
90 টি হাদীসের বর্ণনাকারী সাহাবীর সংক্ষিপ্ত পরিচয় ও মূল্যবান শিক্ষণীয় বিষয়

মূল আরবী ভাষায় প্রণীত:
ডক্টর মুহাম্মাদ মর্তুজা বিন আয়েশ মুহাম্মাদ
বাংলা অনুবাদ   

ডক্টর মুহাম্মাদ মর্তুজা বিন আয়েশ মুহাম্মাদ

 


অনুপ্রাণনা ও ব্যবস্থাপণায়:
দাওয়া ও প্রবাসী শিক্ষা বিভাগ
রাবওয়া দাওয়া, এরশাদ ও প্রবাসীদের মাঝে ইসলামী জ্ঞানদান কার্যালয়, রিয়াদ, সৌদি আরব

 

 

 

مختارات من السنة
مع تراجم الرواة والفوائد العلمية لتسعين حديثا
الجزء الخامس

تأليف الأصل باللغة العربية
للدكتور/ محمد مرتضى بن عائش محمد

الترجمة باللغة البنغالية
للدكتور/ محمد مرتضى بن عائش محمد

 

 

 

 

جميع الحقوق محفوظة للمؤلف
الطبعة الأولى عام 1438هـ - 2016 م

الإشراف والمتابعة والنشر
قسم دعوة وتوعية الجاليات
المكتب التعاوني للدعوة وتوعية الجاليات بالربوة في الرياض المملكة العربية السعودية

 

 

 


প্রথম সংস্করণ
সন 1438 হিজরী {2016 খ্রিস্টাব্দ }


সর্বস্বত্ব গ্রন্থকার কর্তৃক সংরক্ষিত  

প্রকাশনায়:
দাওয়া ও প্রবাসী শিক্ষা বিভাগ
রাবওয়া দাওয়া, এরশাদ ও প্রবাসীদের মাঝে ইসলামী জ্ঞানদান কার্যালয়, রিয়াদ, সৌদি আরব

بسم الله الرحمن الرحيم
ভূমিকা
الحمد لله رب العالمين، والعاقبة للمتقين، والصلاة والسلام، على سيد الأنبياء والمرسلين، وعلى آله وأصحابه وأتباعه إلى يوم الدين، أما بعد:
অর্থ:  সকল প্রশংসা সব জগতের প্রকৃত প্রভু মহান আল্লাহর জন্য, এবং যিনি নাবী ও রাসূলগণের সর্দার, তাঁর জন্য এবং তাঁর পরিবার-পরিজন, সাহাবীগণ ও তাঁর অনুসরণকারীগণের জন্য কিয়ামত পর্যন্ত অতিশয় সম্মান এবং শান্তি অবতীর্ণ হোক।  
অতঃপর প্রকৃত ইসলাম ধর্মে আল্লাহর রাসূলের হাদীসের বড়োই গুরুত্ব রয়েছে। কেননা পবিত্র কুরআনের পর প্রকৃত ইসলাম ধর্মের দ্বিতীয় উৎস হলো আল্লাহর রাসূলের হাদীস। সুতরাং এই হাদীসের প্রচারে ও প্রসারে ইসলামের শিক্ষা মোতাবেক বহুমুখী কার্যকর মাধ্যম এবং পদ্ধতি অবলম্বন করা মুসলিম জাতির অপরিহার্য একটি কর্তব্য। তাই আমি মহান আল্লাহর সাহায্যে এই বইটিতে 90টি হাদীস চয়ন করে একত্রিত করেছি। এই হাদীসগুলির যোগাযোগ রয়েছে  তিনটি বিষয়ের সাথে:
1-  সঠিক আকীদা বা ইসলামী মতবাদ।
2- সঠিক আকীদা বা ইসলামী মতবাদ মোতাবেক আমল বা কার্য সম্পাদনের প্রতি উৎসাহ প্রদান।
3- ইসলামের প্রকৃত আদর্শ মোতাবেক চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য বজায় রাখার প্রতি লক্ষ্য রাখা।
এই হাদীসগুলি হতে শিক্ষণীয় বিষয়গুলিও তুলে ধরেছি। যাতে মুসলিম সমাজ আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর শ্রদ্ধান্বিত ভালোবাসার সহিত প্রকৃত নিষ্ঠাবান হয়ে তাঁর অনুসরণ করে ইহকাল ও পরকালে মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ করতে সক্ষম হয়।
উক্ত হাদীসগুলির শিক্ষণীয় বিষয়গুলি উপস্থাপন করার সময় আমার নিজেস্ব প্রচেষ্টার সাথে সাথে ওই সমস্ত ওলামায়ে ইসলামের মতামত অনেক সময় সামনে রেখেছি, যে সমস্ত ওলামায়ে ইসলামের ইসলামী বিধি-বিধানের বিশদ বিবরণ বা ব্যাখ্যা দানে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রয়েছে। যেমন:- আল্লামা ইয়াহইয়া বিন শারাফ আন্নাওয়বী, আল্লামা হাফেজ আহমাদ বিন আলী বিন হাজার আলআসকালানী এবং অন্যান্য আরো ওলামায়ে ইসলাম। আল্লাহ তাঁদের সকলকে উত্তম প্রতিদান প্রদান করুন।
আল্লাহর সাহায্যে আমি এই নির্বাচিত হাদীস - পঞ্চম  খণ্ড বইটির পূর্বে আরো নির্বাচিত হাদীসের চারটি খণ্ড লিখেছি,  যা এই ক্ষেত্রের সকল মনোযোগী ও আগ্রহীব্যক্তিগণের চিত্তাকর্ষক সাব্যস্ত হয়েছে। আমি মহান আল্লাহর নিকটে প্রার্থনা করি, তিনি যেন এই বইটিকে তাঁর অনুগ্রহ ও দয়ায় কবুল করেন।
হাদীস বর্ণনার নিয়মকে লক্ষ্য রেখে এখানে একটি বিষয় উল্লেখ করা উচিত মনে করছি, আর সে বিষয়টি হলো এই যে, সহীহ বুখারী কিংবা সহীহ মুসলিম গ্রন্থের হাদীস উল্লেখ করার সময় হাদীসের হুকুম সহীহ অথবা হাসান (সঠিক বা সুন্দর) বলে বিবৃতি দেওয়ার প্রয়োজন হয় নি। যেহেতু ইসলামী উম্মতের সকল ওলামা উক্ত দুইটি গ্রন্থের সমস্ত হাদীসকে সঠিক ও নির্ভরযোগ্য হিসেবে মেনে নিয়েছেন। কিন্তু সুনান আবু দাউদ, জামে তিরমিযী, সুনান নাসায়ী এবং সুনান ইবনু মাজাহ গ্রন্থগুলির হাদীস উল্লেখ করার সময় আল্লামা নাসেরুদ্দিন আল আলবাণীর মতামত সামনে রেখে হাদীসের মান নির্ণয় করেছি । এবং প্রয়োজনে ইমাম তিরমিযীর বিবৃতিগুলিও তুলে ধরেছি। যেহেতু তিনি তো হলেন এই বিদ্যার বিরাট নিপুণ ইমাম। আল্লাহ তাঁদের সকলের প্রতি করুণা করুন। তবে হ্যাঁ এখানে একটি কথা অবশ্য জেনে রাখা দরকার যে, হাদীসের সংরক্ষণের জন্য মুহাদ্দিসগণ ও মনীষীগণ অক্লান্ত পরিশ্রম ও যুক্তির মাধ্যমে যে সমস্ত মানগত স্তর এবং নিয়মাবলি নির্ধারণ করেছেন, সে সমস্ত মানগত স্তর এবং নিয়মাবলির আলোকে হাদীসকে সঠিক ও নির্ভরযোগ্য বলা হয় কিংবা দুর্বল অথবা জাল বলা হয়। কিন্তু কোনো কোনো হাদীসের ক্ষেত্রে তাঁদের মধ্যে হাদীসের মান নির্ধারণ করার কার্যক্রমে সম্মতি- অসম্মতিসূচক মনোভাব প্রকাশ পেয়েছে। এবং তাঁদের মতামতের মধ্যে তফাত বা পার্থক্য সৃষ্টি হয়েছ।
সবশেষে কৃতজ্ঞতা স্বীকারের পালা:
রাবওয়া দাওয়া,এরশাদ ও প্রবাসীদের মাঝে ইসলামী জ্ঞানদান কার্যালয় (রাবওয়া ইসলামিক সেন্টার) রিয়াদ এর প্রধান পরিচালক মাননীয় শাইখ খালেদ বিন আলী আবালখ্যাইল সাহেব। অনুরূপভাবে এই কার্যালয়ের দাওয়া ও প্রবাসী শিক্ষা বিভাগের পরিচালক মাননীয় শাইখ নাসের বিন মুহাম্মাদ আলহোওয়াশ সাহেবকেও শ্রদ্ধাসহকারে আমি ধন্যবাদ জানাই। কেননা  তাঁরা তো মানব সমাজে আল্লাহর রাসূলের হাদীস প্রচার ও প্রসারের জন্য হলেন বড়োই আগ্রহী ও উদ্যোগী।
তদ্রূপ আমি যে সমস্ত লোকের নিষ্ঠিত পরামর্শ অথবা মতামত কিংবা প্রচেষ্টার দ্বারা উপকৃত হয়েছি, তাঁদের সকলের প্রতি আমার  আন্তরিক কৃতজ্ঞতা রইলো। তবে তাঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন:
উক্ত কার্যালয় (রাবওয়া ইসলামিক সেন্টারের) এর দাওয়া ও প্রবাসী শিক্ষা বিভাগের সকল ওলামায়ে কেরাম। আল্লাহ তাঁদের সকলকে দুনিয়া ও পরকালে ইসলাম এবং মুসলিমগণের পক্ষ হতে উত্তম প্রতিদান প্রদান করুন।
মূল আরবী ভাষায় ভূমিকার কথা এখানেই শেষ হয়ে গেলো। তবে এই বইয়ের বাংলা তরজমা বা অনুবাদ আমাকেই করতে হয়েছে। তাই এখানে অনুবাদের পদ্ধতির বিষয়ে একটি কথা বলতে চাই; আর তা হলো এই যে,
অনুবাদের পদ্ধতি
এই বইটির অনুবাদ পদ্ধতি একটু আলাদা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে; কেননা অত্র বইটিতে আরবি ভাষার ভাবার্থের অনুবাদ বাংলা ভাষার ভাবার্থের দ্বারা করা হয়েছে। তাই কোনো সম্মানিত পাঠকের মনে অনুবাদ সম্পর্কে কোনো প্রকার সংশয় জেগে উঠলে, ওলামায়ে  ইসলামের বিশদ বিবরণ বা ব্যাখ্যা আরবী ভাষায় একটু গভীরতার সহিত দেখে নিলে সর্ব প্রকার সংশয় দূর হয়ে যাবে। এবং এই বইটির বাংলা অনুবাদ নির্ভরযোগ্য সাব্যস্ত হবে বলেই আশা করি ইনশা আল্লাহ। তবে এই বইটির দোষ-ত্রুটি, অসম্পূর্ণতা এবং মুদ্রণ প্রমাদ প্রভৃতি একেবারেই নেই, এই দাবি আমি করছি না। তাই এই বইটি সম্পর্কে যখন কোনো গঠনমূলক শিক্ষণীয়, সাহিত্যিক, সাংস্কৃতিক, বানান ও লিখনপদ্ধতি এবং মতবাদের ব্যাপারে সুচিন্তিত মতামত আমার দৃষ্টিগোচর হবে, তখন তা আমার নিকটে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতার সাথে আগ্রহের সহিত যত্নসহকারে সাদরে গৃহীত হবে ইনশা আল্লাহ।
وصلى الله وسلم على نبينا محمد، وعلى آله وأصحابه، وأتباعه، والحمد لله رب العالمين.
 অর্থ:  আল্লাহ আমাদের নাবী মুহাম্মাদ এবং তাঁর পরিবার-পরিজন, সাহাবীগণ এবং কিয়ামত পর্যন্ত তাঁর অনুসরণকারীগণকে অতিশয় সম্মান ও শান্তি প্রদান করুন। সকল প্রশংসা সব জগতের প্রকৃত প্রভু মহান আল্লাহর জন্য।
প্রণয়নকারী
ডক্টর মুহাম্মাদ মর্তুজা বিন আয়েশ মুহাম্মাদ
তাং 17/2/1438 হিজরী {17/11/2016 খ্রিস্টাব্দ}
                 [email protected]

 

 

 


     فضل الصدقة من الكسب الحلال الطيب
বৈধ ও পবিত্র উপায়ে উপার্জিত মাল দান প্রদানের মর্যাদা
1 -عَنْ أَبيْ هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ، قَالَ:  قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ:  "مَنْ تَصَدَّقَ بِعَدْلِ تَمْرَةٍ مِنْ كَسْبٍ طَيِّبٍ، وَلاَ يَقْبَلُ اللهُ إِلاَّ الطَّيِّبَ؛ فَإِنَّ اللهَ يَتَقَبَّلُهَا بِيَمِينِهِ، ثُمَّ يُرَبِّيهَا لِصَاحِبِهِ، كَمَا يُرَبِّيْ أَحَدُكُمْ فَلُوَّهُ حَتَّى تَكُوْنَ مِثْلَ الْجَبَلِ".
(صحيح البخاري، رقم الحديث 1410، واللفظ له، وصحيح مسلم، رقم الحديث 63 - (1014)،).
1 - অর্থ: আবু হুরায়রা [রাদিয়াল্লাহু আনহু] হতে বর্ণিত, তিনি বলেন যে, আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলেছেন: “যে ব্যক্তি প্রকৃত ইসলামের শিক্ষা মেতাবেক বৈধ ও পবিত্র উপায়ের হালাল ও পবিত্র উপার্জন থেকে একটি খেজুর পরিমাণ বস্তু দান প্রদান করবে,  (এবং মহান আল্লাহ বৈধ পবিত্র হালাল উপার্জনের মাল ছাড়া অবৈধ মালের দান প্রদান কবুল করেন না।) মহান আল্লাহ তাঁর ডান হাত দ্বারা তা অত্যন্ত সমাদরের সহিত কবুল করবেন। অতঃপর আল্লাহ উক্ত দান প্রদানকারীর কল্যাণার্থে তা প্রতিপালন করবেন। যেমন তোমাদের মধ্যে থেকে কোনো ব্যক্তি অশ্বশাবক বা ঘোড়ার বাচ্চা কিংবা উট অথবা গরুর দুধ ছাড়ানো বাচ্চার প্রতিপালন করে থাকে, অবশেষে সেই দানটি বিশাল একটি পাহাড় সমতুল্য হয়ে যাবে”।
[সহীহ বুখারী, হাদীস নং 1410 এবং সহীহ মুসলিম, হাদীস নং 63 -(1014), তবে হাদীসের শব্দগুলি সহীহ বুখারী থেকে নেওয়া হয়েছে]।
* এই হাদীস বর্ণনাকারী সাহাবীর পরিচয়:
আবু হুরায়রা আব্দুর রহমান বিন সাখার আদ্‌দাওসী আল ইয়ামানী [রাদিয়াল্লাহু আনহু] । তিনি আল্লাহর রাসূলের সর্বাধিক হাদীস বর্ণনাকারী সাহাবী। তাঁর কুনিয়াত (ডাকনাম) আবু হুরায়রা হিসেবে বিখ্যাত। এর কারণ হলো যে, তিনি বিড়াল নিয়ে খেলা করতেন ও কতকগুলি লোকের ছাগল চরাতেন। সপ্তম হিজরীতে খায়বার বিজয়ের সময় তিনি ইসলাম গ্রহণ করেন। অতঃপর তিনি 4 বছর পর্যন্ত নাবী কারীম [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর সান্নিধ্যে অতিবাহিত করেন, তাই আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] যেখানে অবস্থান করতেন তিনিও সেখানে থাকতেন। আবু হুরায়রা [রাদিয়াল্লাহু আনহু]  হাদীসের জ্ঞান লাভ করার জন্য বিশেষভাবে গুরুত্ব দিয়ে অসাধারণ চেষ্টা চালিয়েছিলেন। এই কারণে তিনি নাবী কারীম [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর কাছ থেকে প্রচুর জ্ঞানার্জন করে, সাহাবীগণের মধ্যে সবচাইতে বেশী হাদীস বর্ণনাকারী সাহাবীর উপাধি লাভ করেছেন। তাঁর বর্ণিত হাদীসের সংখ্যা হলো 5374 টি। সন 57 হিজরীতে তিনি মৃত্যুবরণ করেন এবং মাদীনার প্রসিদ্ধ কবরস্থান আল বাকীতে তাঁকে দাফন করা হয় [রাদিয়াল্লাহু আনহু] ।

* এই হাদীস হতে শিক্ষণীয় বিষয়:
1। সকল প্রকারের ইবাদত উপাসনার মতই নিষ্ঠাবান হয়ে যে কোনো দান প্রদানের প্রধান উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য স্থির করতে হবে মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ। এবং তাতে যেন কুপ্রবৃত্তির কোনো প্রকার প্রভাব না থাকে তার খেয়াল রাখা অপরিহার্য।
2। মুসলিম ব্যক্তির উচিত যে,  সে যেন অবৈধ ও হারাম মাল উপার্জন করা হতে নিজেকে রক্ষা করে। কেননা অবৈধ ও হারাম মাল উপার্জন করার মাধ্যমে উপস্থিত হয় মহান আল্লাহর ক্রোধানল এবং মানুষের মানসিক মহারোগ। যেমন মনের মধ্যে প্রবল লোভ বিরাজ করা,  কোনো জিনিসকে পাওয়ার জন্য অন্তরে তীব্র বাসনা সৃষ্টি হওয়া,  আত্যন্তিক আত্মম্ভরিতা, স্বার্থপরতা, অতৃপ্ত ও বাসনা অপূর্ণ থাকায় অশান্ত হওয়া, কৃপণতা, কষ্ট, অস্বস্তি এবং অশান্তির অনুভূতি সৃষ্টি  হওয়া।
3। এই হাদীসটির মধ্যে মহান আল্লাহর পবিত্র ডান হাতের কথা উল্লিখিত হয়েছে; কেননা ডান হাতের দ্বারাই কল্যাণময় জিনিস সাধারণ ভাবে গ্রহণ করা হয়। পবিত্র কুরআন এবং নির্ভরযোগ্য হাদীসের আলোকে মহান আল্লাহর নাম ও গুণাবলির প্রতি সঠিক ভাবে অন্তরে ঈমান স্থাপন করা অপরিহার্য। এবং তাতে কোনো প্রকার বিকৃত, পরিবর্তন, পরিবর্ধন,  অস্বীকার বা প্রত্যাখ্যান, সাদৃশ্য বর্ণনা বা দৃষ্টান্ত স্থাপন করা এবং স্বরূপ নির্ধারণ করা চলবে না।

 

 

الإسلام دين اليسر
প্রকৃত ইসলাম একটি সহজ ধর্ম
2- عَنْ عَبْدِ اللهِ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، قَالَ: قَالَ: النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: "‏الْجَنَّةُ أَقْرَبُ إِلَى أَحَدِكُمْ مِنْ شِرَاكِ نَعْلِهِ، وَالنَّارُ مِثْلُ ذَلِكَ".
(صحيح البخاري، رقم الحديث 6488)، ).
2 -  অর্থ:  আব্দুল্লাহ [রাদিয়াল্লাহু আনহু] থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন যে, নাবী কারীম [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলেছেন: “জান্নাত হলো তোমাদের জুতার ফিতা থেকেও সন্নিকটে অবস্থিত। আর জাহান্নামও অনুরূপ নিকটবর্তী”।  [ সহীহ বুখারী, হাদীস নং 6488]।
* এই হাদীস বর্ণনাকারী সাহাবীর পরিচয়:
আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ [রাদিয়াল্লাহু আনহু] হলেন ওই সমস্ত সাহাবীদের মধ্যে একজন, যাঁরা ইসলামের  প্রাথমিক যুগে ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন। তিনি সাহাবীগণের মধ্যে মর্যাদা সম্পন্ন ও ফাকীহ এবং কুরআন তেলাওয়াতে সর্বোত্তম কারী ছিলেন। তাঁর বর্ণিত হাদীসের সংখ্যা 848 টি। আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর সাথে সমস্ত যুদ্ধে তিনি যোগদান করেছেন।
আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর মৃত্যুবরণের পর শামদেশে ইয়ারমূকের যুদ্ধেও তিনি অংশ গ্রহণ করেছিলেন। ওমার [রাদিয়াল্লাহু আনহু] তাঁকে ইসলাম ধর্মের শিক্ষা প্রদানের জন্য কুফা শহরে প্রেরণ করেছিলেন। ওসমান বিন আফফান [রাদিয়াল্লাহু আনহু] তাঁকে সেখানে আমীর নিযুক্ত করেছিলেন। ওসমান বিন আফফান তাঁকে আবার মাদীনায় আসতে নির্দেশ প্রদান করেছিলেন। তিনি মাদীনায় সন 32 হিজরীতে 60 বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন। এবং মাদীনার বিখ্যাত আলবাকী কবরস্থানে তাঁকে দাফন করা হয় [রাদিয়াল্লাহু আনহু] ।
* এই হাদীস হতে শিক্ষণীয় বিষয়:
1। এই হাদীসটির মধ্যে شِرَاكُ النَّعْلِ শব্দ দুটির ভাবার্থ হলো:  জুতার  ফিতা, এই ফিতাটি মানুষের অতি সন্নিকটে অবস্থিত। অতি নিকটবর্তীর বস্তুকে বুঝানোর জন্য এই শব্দ দুটি প্রবাদ বাক্য হিসেবে ব্যবহার করা হয়।
2। প্রকৃত ইসলাম ধর্ম একটি সহজসাধ্যতা এবং স্বচ্ছন্দতার ধর্ম; সুতরাং এই ধর্মের আকীদা বা মতবাদ অতি সহজ; তাই তাতে কোনো প্রকারের অস্পষ্টতা ও জটিলতা নেই। এই ধর্মের ইবাদত বা উপাসনার নিয়ম পদ্ধতিও খুব সহজ; তাই তাতেও কোনো প্রকারের কষ্টদায়ক এবং শ্রান্তি-ক্লান্তির বিষয় নেই। এই ধর্মের চারিত্রিক দিকটিও উন্নত মানের; অতএব এতে কোনো কিছু অস্বাভাবিক বস্তু নেই এবং সূক্ষ্ম সঠিক বুদ্ধির পরিপন্থী ও উত্তম রীতির বিপরীত কোনো বস্তুর স্থান নেই।
3। এই হাদীসটির দ্বারা প্রমাণিত হয় যে,  প্রকৃত ইসলামের আলোকে সৎ উদ্দেশ্য এবং সৎ কর্মের মাধ্যমে জান্নাত লাভ করা অতি সহজ। অনুরূপভাবে পাপ ও কুপ্রবৃত্তির অনুসরণের মাধ্যমে জাহান্নামের আগুনে প্রবেশ করাও অতি সহজ। তাই সৎ কর্মের ক্ষুদ্রতম অংশকেও তুচ্ছ জ্ঞান করা উচিত  নয়। তদ্রুপভাবে পাপ এবং কুপ্রবৃত্তির অণু পরিমাণ অংশকেও হেয় জ্ঞান করা উচিত নয়। কেননা মানুষ তো জানে না যে, তার কোন্ সৎ কর্মটির মাধ্যমে মহান আল্লাহ তার প্রতি দয়া করবেন। এবং তার কোন্ পাপ এবং কুপ্রবৃত্তিটির মাধ্যমে মহান আল্লাহ তার প্রতি রাগান্বিত হয়ে যাবেন।

 

 

 

من أحكام الأضاحي
কুরবানির কতকগুলি  বিধিবিধান
3- عَنْ أَنَسٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ،  قَالَ: ضَحَّى النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِكَبْشَيْنِ أَمْلَحَيْنِ أَقْرَنَيْنِ، ذَبَحَهُمَا بِيَدِهِ، وَسَمَّى وَكَبَّرَ، وَوَضَعَ رِجْلَهُ عَلَى صِفَاحِهِمَا.
(صحيح البخاري، رقم الحديث 5565، وصحيح مسلم، رقم الحديث 17 - (1966)،).
3 -  অর্থ: আনাস [রাদিয়াল্লাহু আনহু] থেকে বর্ণিত,  তিনি বলেন: নাবী কারীম [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] সাদা অথবা সাদাকালো রঙয়ের শিং ওয়ালা দুইটি পুরুষ মেষ কিংবা দুইটি খাসির কুরবানি দিয়েছিলেন। তিনি নিজের পা উক্ত দুইটি পুরুষ মেষ বা দুইটি খাসির ঘাড়ের ডান পাশে রেখে বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার বলে নিজ হাতে জবাই করেছিলেন। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং 5565 এবং সহীহ মুসলিম, হাদীস নং 17 -(1966) ]।
* এই হাদীস বর্ণনাকারী সাহাবীর পরিচয়:
আবু হামজা আনাস বিন মালিক আল আনসারী [রাদিয়াল্লাহু আনহু] একজন বিশিষ্ট সাহাবী। হিজরতের 10 বছর পূর্বে মাদীনাতে তাঁর জন্ম হয়, ছোটকালে নাবালক অবস্থাতেই  তিনি ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন। নাবী কারীম [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর সান্নিধ্যে ধারাবাহিক ভাবে 10 বছর যাবৎ থেকে তাঁর খাদেম-সেবক হিসেবে সর্বোত্তম উপাধি লাভ করেন। এবং আল্লাহর রাসূলের মৃত্যু পর্যন্ত তিনি তাঁর দেখমতে রত থাকেন। অতঃপর দামেশকে চলে যান, সেখান থেকে বাসরায় গমন করেন। তিনি অনেক হাদীস বর্ণনা করেছেন, তার বর্ণিত হাদীসের সংখ্যা 2285 টি। তিনি বাসরা শহরে একশত বা তার অধিক বয়স প্রাপ্ত হয়ে সন 93 হিজরীতে মৃত্যুবরণ করেন [রাদিয়াল্লাহু আনহু] ।
* এই হাদীস হতে শিক্ষণীয় বিষয়:
1। এই হাদীসটির মধ্যে (اَلْأَمْلَح) শব্দটির ভাবার্থ হলো:  বিশুদ্ধ সাদা, তবে আরবী ভাষার কতকগুলি ভাষাবিদ বলেছেন: সাদা এবং কিছু কালো ডোরাকাটা বর্ণের রেখাযুক্তকে আল আমলাহ (اَلْأَمْلَح) বলে। তবে এই বিষয়ে অন্য উক্তিও রয়েছে।
2। যে ব্যক্তি কুরবানির পশু বা অন্য চতুষ্পদ জন্তু জবাই করবে, সে যেন জবাই করার সময় বিসমিল্লাহ বলে জবাই করে। এবং বিসমিল্লাহ বলার সাথে সাথে আল্লাহু আকবার বলাও উত্তম।
3। কুরবানির শর্তাবলির মধ্যে এই বিষয়টি রয়েছে যে, কুরবানির জন্তু  যেন গৃহপালিত চতুষ্পদ জন্তুর অন্তর্ভুক্ত হয়। যেমন:- উট, গরু এবং ছাগল। তবে ছাগলের মধ্যে পড়ছে: ভেড়া বা মেষ ও দুম্বা।
কুরবানির পশু অথবা প্রাণীসমূহ যেন ওই সমস্ত দোষ কিংবা খুঁত হতে মুক্ত হয়, যে সমস্ত দোষ কিংবা খুঁতের কারণে সেই পশু অথবা প্রাণীসমূহের কুরবানি করা বৈধ বা যথেষ্ট হবে না।  
সুতরাং কুরবানির গৃহপালিত পশু অথবা প্রাণীসমূহ যেন স্পষ্ট কানা, স্পষ্ট রোগী, স্পষ্ট খোঁড়া এবং অত্যান্ত দুর্বল ও এমন ছিপছিপে পাতলা বা মিহি, যার গায়ে হাড় ছাড়া গোস্ত মাংস কিছুই নেই্ এমন না হয়।
كيفية متابعة الإمام في الصلاة
নামাজে ইমামের অনুসরণ করার পদ্ধতি
4- عَنِ الْبَرَاءِ بْنِ عَازِبٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا قَالَ: كَانَ رَسُوْلُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا قَالَ: "سَمِعَ اللَّهُ لِمَنْ حَمِدَهُ" لَمْ يَحْنِ أَحَدٌ مِنَّا ظَهْرَهُ، حَتَّى يَقَعَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ سَاجِدًا، ثُمَّ نَقَعُ سُجُوْدًا بَعْدَهُ.
(صحيح البخاري، رقم الحديث 690، واللفظ له، وصحيح مسلم، رقم الحديث 198- (474)، ).
4 -  অর্থ: আলবারা বিন আযেব [রাদিয়াল্লাহু আনহুমা] থেকে বর্ণিত,  তিনি বলেন: আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম]
"سَمِعَ اللَّهُ لِمَنْ حَمِدَهُ"
( অর্থ: “আল্লাহ সেই ব্যক্তির দোয়া কবুল করেন, যে ব্যক্তি তাঁর প্রশংসা করে”। )
বলার পর যতক্ষণ পর্যন্ত তিনি সিজদায় সঠিক পন্থায় স্থাপন না হতেন, ততক্ষণণ পর্যন্ত আমাদের মধ্যে থেকে কোনো ব্যক্তি সিজদায় স্থাপন হওয়ার জন্য তার পিঠ হেলাতেন না বা ঝোঁকাতেন না। সুতরাং তিনি যখন সিজদায় সঠিক পন্থায় স্থাপিত হয়ে যেতেন, তখন আমরা সিজদায় স্থাপিত হতাম।
[সহীহ বুখারী, হাদীস নং 690 এবং সহীহ মুসলিম, হাদীস নং 198 -(474), তবে হাদীসের শব্দগুলি সহীহ বুখারী থেকে নেওয়া হয়েছে]।
* এই হাদীস বর্ণনাকারী সাহাবীর পরিচয়:
তিনি আবু আমারাহ আল বারা বিন আযেব বিন হারেস আল আনসারী, এক জন মহা সম্মানিত সাহাবী এবং মহা সম্মানিত বিদ্বান ও ফাকীহ ছিলেন। তাঁর পিতাও এক জন সাহাবী ছিলেন। সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিম গ্রন্থে আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] থেকে তাঁর 305 টি হাদীস বর্ণিত হয়েছে।
আল্লাহর নাবী [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর সঙ্গে এবং তাঁর পরেও তিনি অনেক যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করেন। অতঃপর তিনি কুফায় গিয়ে স্থায়ী ভাবে বসবাস করেন আর কুফা শহরেই তিনি 80 বা তার অধিক বয়স প্রাপ্ত হয়ে সন 72 হিজরীতে মৃত্যুবরণ করেন [রাদিয়াল্লাহু আনহু]। তাঁর মৃত্যুবরণ করার তারিখ সম্পর্কে অন্য মতও উল্লেখ আছে।
* এই হাদীস হতে শিক্ষণীয় বিষয়:
1। ইমাম যতক্ষণ পর্যন্ত নামাজের কোনো রুকুনে সঠিক পন্থায় স্থাপিত না হয়ে যাবে, ততক্ষণ পর্যন্ত কোনো মুক্তাদী সেই রুকুনে সঠিক পন্থায় স্থাপিত হওয়ার কাজ শুরু করবে না। সুতরাং ইমাম যতক্ষণ পর্যন্ত নামাজের সিজদায় সঠিক পন্থায় স্থাপিত হয়ে তার কপাল মাটির উপরে না রাখবে, ততক্ষণণ পর্যন্ত কোনো মুক্তাদী সিজদায় সঠিক পন্থায় স্থাপিত হওয়ার জন্য তার পিঠ হেলাবে না অথবা ঝোঁকাবে না। ইমামের সাথে সাথে কোনো মুক্তাদী নামাজের কোনো রুকুনের কাজ আরম্ভ করবে না। তাই ইমামের আওয়াজ যতক্ষণ পর্যন্ত বন্ধ না হবে, ততক্ষণণ পর্যন্ত কোনো মুক্তাদী কোনো নামাজের কোনো রুকুনের কোনো কাজ আরম্ভ করবে না। অতএব নামাজের মধ্যে মুক্তাদীর যে কোনো কাজ ইমামের যে কোনো কাজের একটু পরে সম্পাদিত হওয়া অপরিহার্য।
2। যে কোনো নামাজে ইমামের ইহরামের তাকবীরের আওয়াজ সম্পূর্ণ রূপে শেষ না হওয়া পর্যন্ত কোনো মুক্তাদী ইহরামের তাকবীর পাঠ করবে না।
3- যে কোনো নামাজে ইমামের দুই দিকে: ডান দিকে ও বাম দিকে দুই সালাম ফেরানোর পর মুক্তাদী সালাম ফেরাবে।
كيفية السلام للتحلل من الصلاة
নামাজ হতে বের হওয়ার জন্য সালাম ফিরানোর পদ্ধতি
5- عَنْ سَعْدِ بْنِ أَبِيْ وَقَّاصٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، قَالَ: كُنْتُ أَرَى رَسُوْلَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُسَلِّمُ عَنْ يَمِيْنِهِ وَعَنْ يَسَارِهِ، حَتَّى أَرَى بَيَاضَ خَدِّهِ.
(صحيح مسلم، رقم الحديث 199 - (582)، ).
5 - অর্থ: সায়াদ বিন আবু ওয়াক্কাস [রাদিয়াল্লাহু আনহু] থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেন: আমি আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] কে দেখতাম, তিনি নামাজের কাজ শেষ করে নামাজ হতে বের হওয়ার জন্য ডান দিকে এবং বাম দিকে এমন পদ্ধতিতে সালাম ফিরাতেন যে, আমি তাঁর গালের সাদা ঝলক দেখতে পেতাম।
 [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং 199 - (582) ]।
* এই হাদীস বর্ণনাকারী সাহাবীর পরিচয়:
আবু ইসহাক সায়াদ বিন আবু অক্কাস আজ জহরী আল কুরাশী একজন মহাবিখ্যাত সাহাবী [রাদিয়াল্লাহু আনহু] । তিনি আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর হিজরতের 23 বছর পূর্বে মাক্কা মহানগরীতে জন্ম গ্রহণ করেন। এবং সেখানেই তিনি প্রতিপালিত হন ও বড়ো হন। তিনি ইসলাম ধর্ম আবির্ভূত হওয়ার প্রথম দিকেই ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন। যে দশজন সাহাবীকে দুনিয়াতেই জান্নাতের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে, সেই দশজন সাহাবীগণের মধ্যে হলেন তিনি একজন। ওমার [রাদিয়াল্লাহু আনহু] যে ছয়জন সাহাবীগণের মধ্যে থেকে একজনকে তাঁর উত্তরাধিকারী হিসেবে মুসলিম জাহানের খালীফা ও শ্রেষ্ঠনৃপতি নিযুক্ত করার জন্য একটি পরিষদ বা সভা গঠন করেছিলেন, সেই ছয়জন সাহাবীগণের মধ্যে সায়াদ বিন আবু ওয়াক্কাস [রাদিয়াল্লাহু আনহু] ছিলেন অন্যতম একজন মহাসাহাবী।
তিনি মাদীনায় হিজরত করেন। এবং বদরের যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। অতঃপর তিনি আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর সাথে আরো সমস্ত যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন।
তিনি নাবী কারীম [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর মায়ের পিতৃব্যপুত্র ছিলেন। তাই আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] তাঁকে মামা বলেই ডাকতেন। অর্থাৎ তিনি ছিলেন তাঁর মামাদের অন্তর্ভুক্ত যদিও তিনি আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর মায়ের সহোদর ভাই ছিলেন না।
সায়াদ বিন আবু ওয়াক্কাস ছিলেন একজন বিরাট সাহসী ও যোদ্ধা সাহাবী। এবং আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর বড়ো বড়ো নেতাদের অন্তর্গতই ছিলেন তিনি। আবু বাকর ও ওমার [রাদিয়াল্লাহু আনহুমা] দুই খালীফার আমলে রাষ্ট্র পরিচালনার কার্যক্রমে তাঁর মহা অবদান রয়েছে। ওমার এবং ওসমান [রাদিয়াল্লাহু আনহুমা] এর আমলে তাঁকে কুফা শহরের আমির বা শাসক নিযুক্ত করা হয়েছিল।  
সায়াদ বিন আবু ওয়াক্কাস [রাদিয়াল্লাহু আনহু] পারস্য এবং ইরাক সাম্রাজ্যের যুদ্ধে মুসলিম সেনাবাহিনীর প্রধান নেতা ও সেনাপতি ছিলেন। এবং আল্লাহর করুণায় তিনি কাদসিয়ার যুদ্ধে পারস্য এবং ইরাক সাম্রাজ্যের সেনাবাহিনীকে পরাজিত ও পরাস্ত করে জয়লাভ করেন। মাদায়েনের যুদ্ধেও তিনি জয়লাভ করেন। তিনি মহান আল্লাহর কাছে এমন পবিত্র মানুষ ছিলেন যে, আল্লাহ  তাঁর দোয়া কবুল করে নিতেন। তাঁর মহামর্যাদার সমস্ত কথা এখানে উল্লেখ করার সুযোগ নেই বলে এই বিষয়টিকে অধিক দীর্ঘ করলাম না।
অতঃপর সাহাবীগণের মধ্যে যখন ফেতনা এবং অমঙ্গল সৃষ্টি হয়, তখন তিনি রাজনীতির কাজ এবং রাষ্ট্র পরিচালনার কার্যক্রম পরিত্যাগ করে মাদীনা শহর থেকে দূরবর্তী স্থানে গিয়ে অবস্থান করেন। এবং নিজের স্ত্রী ও সন্তানদেরকে আদেশ প্রদান করেন যে, তারা যেন সাহাবীগণের মধ্যে যে ফেতনা এবং অমঙ্গল সৃষ্টি হবে, সেই ফেতনা এবং অমঙ্গলের কোনো সংবাদ বা রাষ্ট্রীয় কোনো খবর তাঁর কাছে না পৌঁছায়।
 হাদীস গ্রন্থে তাঁর কাছ থেকে বর্ণিত 270 টি হাদীস পাওয়া যায়।
তিনি একজন বেঁটে আকারের মানুষ ছিলেন। তিনি মাদীনা শহর থেকে সাত মাইল দূরে আকীক নামক জায়গাতে তাঁর প্রাসাদে সন 55 হিজরীতে মৃত্যুবরণ করেন। সেখান থেকে তাঁর দেহ মাদীনা শহরে নিয়ে আসা হয় এবং মাদীনা শহরের শাসক মারওয়ান ইবনুল হাকাম তাঁর জানাজার নামাজ পড়ান। এবং তাঁকে মাদীনার আল বাকী কবরস্থানে সমাহিত করা হয়। হিজরতকারী সাহাবীগণের মধ্যে তিনিই সব শেষে মৃত্যুবরণ করেছেন।
* এই হাদীস হতে শিক্ষণীয় বিষয়:
1। এই হাদীসটির দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, নামাজ আদায়কারী মুসলিম ব্যক্তি বা মুসাল্লি নামাজের কাজ শেষ করে নামাজ হতে বের হওয়ার জন্য প্রথমে ডান দিকে এবং পরে বাম দিকে এমন পদ্ধতিতে সালাম ফিরাবে যে, তার পাশে নামাজ আদায়কারী মুসলিম ব্যক্তি বা মুসাল্লি তার গাল দেখতে পায়।
2- নামাজ আদায়কারী মুসলিম ব্যক্তি বা মুসাল্লি নামাজের কাজ শেষ করে নামাজ হতে বের হওয়ার জন্য প্রথমে ডান দিকে এবং পরে বাম দিকে বলবে:  
اَلسَّلاَمُ عَلَيْكُمْ وَرَحْمَةُ اللَّهِ
 “আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ”
(অর্থ: “আপনাদের প্রতি সর্ব প্রকার শান্তি, আল্লাহর  করুণা ও তাঁর কল্যাণ অবতীর্ণ হোক”।)
কেননা এই পদ্ধতিটি আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] থেকে প্রমাণিত হয়েছে। তাই তিনি ডান দিকে সালাম ফিরানোর সময় এমন পদ্ধতিতে বলতেন:  
اَلسَّلاَمُ عَلَيْكُمْ وَرَحْمَةُ اللَّهِ
 “আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ”
 যে তাঁর গালের সাদা ঝলক ডান দিক থেকে দেখা যেতো।
অনুরূপভাবে তিনি বাম দিকে সালাম ফিরানোর সময় এমন পদ্ধতিতে বলতেন:  
اَلسَّلاَمُ عَلَيْكُمْ وَرَحْمَةُ اللَّهِ
 “আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ”
 যে তাঁর গালের সাদা ঝলক বাম দিকে থেকে দেখা যেতো।
[সুনান নাসায়ী, হাদীস নং 1325, সুনান আবু দাউদ, হাদীস নং 996, জামে তিরমিযী, হাদীস নং 295, এবং সুনান ইবনু মাজাহ, হাদীস নং 914, তবে হাদীসের শব্দগুলি সুনান নাসায়ী থেকে নেওয়া হয়েছে। ইমাম তিরমিযী হাদীসটিকে হাসান এবং সহীহ (সঠিক) বলেছেন। আল্লামা নাসেরুদ্দিন আল্ আলবাণী হাদীসটিকে সহীহ (সঠিক) বলেছেন]।
3- নামাজ আদায়কারী মুসলিম ব্যক্তি বা মুসাল্লি নামাজের কাজ শেষ করে নামাজ হতে বের হওয়ার জন্য ডান দিকে এবং বাম দিকে সালাম ফিরানোর বিষয়টি হলো নামাজের একটি গুরুত্বপূর্ণ রুকুন। এই রুকুন পালন না করলে নামাজ সঠিক বলে বিবেচিত হবে না। এটাই হলো  সাহাবীগণ [রাদিয়াল্লাহু আনহুম] এবং অধিকাংশ ওলামায়ে ইসলাম ও পণ্ডিতগণের অভিমত। তাই নামাজ আদায়কারী মুসলিম ব্যক্তি বা মুসাল্লি নামাজের কাজ শেষ করে নামাজ হতে বের হওয়ার জন্য সালাম ফিরানোর বিষয়টি প্রকৃত ইসলাম ধর্মে সাব্যস্ত রয়েছে। এবং নাবী কারীম [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর আমল সারা জীবন এই পন্থার উপরেই অটল ছিলো। কিন্তু কতকগুলি ওলামায়ে ইসলাম [রাহিমাহুমুল্লাহ] এই সালাম ফিরানোর বিষয়টিকে একটি গুরুত্বপূর্ণ রুকুন না বলে সুন্নাত বলেছেন।
التحذير من الرياء والسمعة
মানব সমাজকে দেখানো ও শুনানোর উদ্দেশ্যে
 সৎ কর্ম সম্পাদন করা হতে সতর্কীকরণ
6- عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَبَّاسٍ  رَضِيَ اللهُ عَنْهُماَ، قَالَ: قَالَ رَسُوْلُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: "مَنْ سَمََّعَ، سَمََّعَ اللَّهُ بِهِ، وَمَنْ رَاءَى، رَاءَى اللَّهُ بِهِ".  
(صحيح مسلم، رقم الحديث 47 - (2986)، واللفظ  له، وصحيح البخاري، رقم الحديث 6499).
6 - অর্থ:  আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস [রাদিয়াল্লাহু আনহুমা] থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন যে, আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলেছেন: “যে ব্যক্তি একনিষ্ঠতা বর্জন করে মানব সমাজকে শুনানোর জন্য কোনো সৎ কর্ম সম্পাদন করবে, তার সৎ কর্মের প্রতিদান হিসেবে মহান আল্লাহ পরকালে অন্যদেরকে শুনিয়ে দিবেন যে, এই লোকটি শুধু মানব সমাজকে শুনানোর জন্যই সৎ কর্ম সম্পাদন করতো। এবং যে ব্যক্তি একনিষ্ঠতা বর্জন করে মানব সমাজকে দেখানোর জন্য কোনো সৎ কর্ম সম্পাদন করবে, তার সৎ কর্মের প্রতিদান হিসেবে মহান আল্লাহ পরকালে অন্যদেরকে দেখিয়ে দিবেন যে, এই লোকটি শুধু মানব সমাজকে দেখানোর জন্যই সৎ কর্ম সম্পাদন করতো”।
[সহীহ মুসলিম, হাদীস নং  47 -(2986) এবং সহীহ বুখারী, হাদীস নং 6499 তবে হাদীসের শব্দগুলি সহীহ মুসলিম থেকে নেওয়া হয়েছে]।
* এই হাদীস বর্ণনাকারী সাহাবীর পরিচয়:
আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস [রাদিয়াল্লাহু আনহুমা] একজন বিশিষ্ট ও প্রসিদ্ধ সাহাবী। তাঁর কুনিয়াত (ডাকনাম) আবুল আব্বাস। ইমামুত্‌ তাফসীর হিসেবে তিনি উপাধি লাভ করেছেন। তিনি আল্লাহর রাসূলের চাচাতো ভাই। হিজরতের তিন বছর পূর্বে তিনি মাক্কাতে শেবে আবু তালেব নামক স্থানে জন্ম গ্রহণ করেন, হাশিম বংশের লোকেরা উক্ত স্থান থেকে বেরিয়ে আসার আগেই। অতঃপর নাবী কারীম [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর সান্নিধ্যে থেকে জ্ঞানার্জন করেন। তাঁর বর্ণিত হাদীসের সংখ্যা হলো 1660 টি। আল্লাহর রাসূলের মৃত্যুবরণের সময় তাঁর বয়স ছিল 13 বছর। আলী বিন আবু তালেব [রাদিয়াল্লাহু আনহুমা] তাঁকে বাসরা শহরের আমীর নিযুক্ত করেছিলেন। তিনি সন 68 হিজরীতে তায়েফ শহরে 70 বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন, এই বিষয়ে অন্য উক্তিও রয়েছে। [রাদিয়াল্লাহু আনহু]
* এই হাদীস হতে শিক্ষণীয় বিষয়:
1। কোনো মুসলিম ব্যক্তির একনিষ্ঠতা বর্জন করে, আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের লক্ষ্যটিকে ত্যাগ করে মানব সমাজের সন্তুষ্টি ও প্রশংসা লাভের উদ্দেশ্যে কোনো সৎ কর্ম সম্পাদন করাকে রিয়া বা প্রদর্শনী বলা হয়, অর্থাৎ মানব সমাজকে দেখানো।
কোনো মুসলিম ব্যক্তির একনিষ্ঠতার সহিত আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের লক্ষ্যটিকে সামনে রেখে কোনো সৎ কর্ম সম্পাদন করার পর, আবার মানব সমাজের সম্মান ও প্রশংসা লাভের উদ্দেশ্যে লোকের সামনে তার কোনো সৎ কর্ম সম্পাদন করার বিষয়টিকে প্রকাশ করার নাম হলো সুময়া, অর্থাৎ মানব সমাজকে শুনানো।
2- এই হাদীসটি মানব সমাজকে দেখানো ও শুনানোর উদ্দেশ্যে কোনো সৎ কর্ম সম্পাদন করা হতে সতর্ক করে। তাই মুসলিম ব্যক্তির জন্য সৎ কর্ম একনিষ্ঠতার সহিত আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের লক্ষ্যে সম্পাদন করা অপরিহার্য। সুতরাং কোনো মুসলিম ব্যক্তি যেন সৎ কর্ম সম্পাদন করার দ্বারা মানব সমাজের সন্তুষ্টি ও প্রশংসা লাভের উদ্দেশ্যটিকে তার অন্তরে স্থাপন না করে।  
3- মানব সমাজকে দেখানো অথবা মানব সমাজকে শুনানোর বিষয়টির দ্বারা মহান আল্লাহর কাছে সমস্ত প্রকারের সৎ কর্ম নিষ্ফল ও নষ্ট হয়ে যায়।
আর সব চেয়ে বেশি ঘৃণিত রিয়া বা প্রদর্শনীর বিষয় হলো আসল ঈমানের ক্ষেত্রে, যেমন মোনাফেকদের অবস্থা। এই রিয়া বা প্রদর্শনীর বিষয়টির পরের স্থান হলো সৎ কর্ম সম্পাদন করার বিষয়ে রিয়া বা প্রদর্শনীর বিষয় যেমন, ফরজ ইবাদত উপাসনার বিষয়ে রিয়া বা প্রদর্শনী। যেমন কতকগুলি এমন লোক আছে যে, তারা নিরিবিলিতে কিংবা নির্জনে সৎ কর্ম সম্পাদন করার বিষয়টিকে অথবা ফরজ ইবাদত উপাসনার বিষয়টিকে পরিত্যাগ করবে এবং মানুষের সামনে সৎ কর্ম সম্পাদন করার বিষয়টিকে অথবা ফরজ ইবাদত উপাসনার বিষয়টিকে পালন করবে এবং মেনে চলবে, যাতে মানুষের সামনে তাদের বদনাম ও দুর্নাম না হয়।
       من علامات المسيح الدجال
দাজ্জালের বিবরণ
7- عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، قَالَ:  قَالَ رَسُوْلُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: "الدَّجَّالُ مَمْسُوحُ الْعَيْنِ، مَكْتُوْبٌ بَيْنَ عَيْنَيْهِ كَافِرٌ"، ثُمَّ تَهَجَّاهَا: ك، ف، ر، "يَقْرَؤُهُ كُلُّ مُسْلِمٍ".
(صحيح مسلم، رقم الحديث 103 - (2933)، واللفظ  له، وصحيح البخاري، رقم الحديث 7408).
7 -  অর্থ: আনাস বিন মালিক [রাদিয়াল্লাহু আনহু] থেকে বর্ণিত,  তিনি বলেন: আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলেছেন: “দাজ্জালের একটি চোখ মুছে ফেলা হবে,  আর তার দুই চোখের মাঝখানে কাফির كَافِرٌ  (অমুসলিম) শব্দটি লিপিবদ্ধ করা থাকবে। অতঃপর  আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] সেই শব্দটির বর্ণগুলি কাফ, ফা, এবং রা উচ্চারণ করেছিলেন, সমস্ত ঈমানদার মুসলিম ব্যক্তি তা পড়তে সক্ষম হবে”।
[সহীহ মুসলিম, হাদীস নং  103 -(2933) এবং সহীহ বুখারী, হাদীস নং 7408 তবে হাদীসের শব্দগুলি সহীহ মুসলিম থেকে নেওয়া হয়েছে]।
* এই হাদীস বর্ণনাকারী সাহাবীর পরিচয় পূর্বে 3 নং হাদীসে উল্লেখ করা হয়েছে।
* এই হাদীস হতে শিক্ষণীয় বিষয়:
1। ঈমানদার মুসলিম ব্যক্তির মাসীহ দাজ্জালের বিষয়ে তার অন্তরে এই ভাবে ঈমান স্থাপন করা অপরিহার্য যে, কিয়ামত সংঘটিত হওয়ার পূর্বে মাসীহ  দাজ্জাল আত্মপ্রকাশ করবে। এবং তাকে ঈসা ইবনে মারইয়াম (আলাইহিস সালাম ) শাম অঞ্চলে সিরিয়া দেশে দামেস্কের নিকটে তেল আভিভ শহরের কাছে লুদ্দ এলাকার দ্বারপ্রান্তে হত্যা করবেন।
2। দাজ্জালের নিদর্শনের বিবরণ হলো এই যে, তার দুই চোখেই খুঁত থাকবে। তাই একটি বর্ণনা মোতাবেক তার ডান চোখ অথবা অন্য বর্ণনা মোতাবেক তার বাম চোখ দুষিত হবে। তবে প্রকৃতপক্ষে তার দুটি চোখের মধ্যে একটি চোখ সম্পূর্ণরূপে মুছে ফেলে দেওয়ার মত হবে। এবং সেই চোখটির উপরে মোটা চামড়ার একটি আবরণ থাকবে। তার কপালে কাফের كَافِرٌ)) লিখা থাকবে। তার মুখের ও চেহারার আকৃতি খুব কুৎসিত হবে। কেননা তার তো একটি মাত্র চোখ থাকবে, তবুও সেই চোখটি খুব বিকৃত ও অস্বাভবিক হবে। সুতরাং সেটি যেন গুচ্ছ আঙ্গুর থেকে ভেসে ওঠা একটি আঙ্গুর। মোটকথা দাজ্জালের একটি মাত্র কুৎসিত চোখ থাকবে, সেই চোখটির দ্বারা সে দেখতে পাবে। [এই বিষয়ে দেখতে পারা যায় সহীহ বুখারী, হাদীস নং 5902 এবং সহীহ মুসলিম, হাদীস নং 273 -(169), 104 -(2934) এবং  105 -(2934)] । আর মহান আল্লাহই সব চেয়ে বেশি জানেন।
3। দাজ্জালের কপালে কাফের শব্দটি লিখা থাকার বিষয়টি হলো একটি সত্য বিষয়। মহান আল্লাহ এই বিষয়টির দ্বারা তাকে মিথ্যুক, কাফের ও বাতিল সাব্যস্ত করার জন্য একটি অকাট্য নিদর্শন নির্ধারণ করে দিয়েছেন। এবং তার কপালে যে কাফের শব্দটি লিখা থাকবে, সেই শব্দটিকে সমস্ত ঈমানদার মুসলিম শিক্ষিত এবং অশিক্ষিত ব্যক্তি পড়তে পারবে।
            مِنْ آدَابِ سِقَايَةِ القَوْمِ
লোকজনকে পানীয় দ্রব্য পরিবেশন করার আদবকায়দা
8- عَنْ أَبيْ قَتَادَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قَالَ: "سَاقِيُ الْقَوْمِ آخِرُهُمْ شُرْبًا".
(جامع الترمذي، رقم الحديث 1894، واللفظ له، وصحيح مسلم، جزء من رقم الحديث 311 - (681)، وقال الإمام الترمذي عن هذا الحديث بأنه: حسن صحيح، وصححه الألباني).
8 -  অর্থ:  আবু কাতাদা [রাদিয়াল্লাহু আনহু] হতে বর্ণিত, তিনি নাবী কারীম [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] থেকে বর্ণনা করেছেন, নাবী কারীম [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলেছেন: “লোকদেরকে পানীয় দ্রব্য পরিবেশনকারী ব্যক্তি সবার পান করার শেষে পান করবে”।
[জামে তিরমিযী, হাদীস নং 1894 এবং সহীহ মুসলিম, হাদীস নং 311 -(681) এর অংশবিশেষ। তবে হাদীসের শব্দগুলি জামে তিরমিযী থেকে নেওয়া হয়েছে। ইমাম তিরমিযী এই হাদীসটিকে হাসান সহীহ (সঠিক) বলেছেন। আল্লামা নাসেরুদ্দিন আল্ আলবাণী হাদীসটিকে সহীহ (সঠিক) বলেছেন]।
* এই হাদীস বর্ণনাকারী সাহাবীর পরিচয়:
আবু কাতাদাহ বিন রিব্‌য়ী আল আনসারী [রাদিয়াল্লাহু আনহু]  একজন মহাগৌরবময় সাহাবী। তিনি ইসলামের বড়ো বড়ো যুদ্ধ ও অভিযানে অংশ গ্রহণ করেন এবং নাবী কারীম [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর রক্ষণাবেক্ষণের জন্য নিজে পাহারা দিতেন ও তত্ত্বাবধান করতেন। ওমার [রাদিয়াল্লাহু আনহু]  তাঁকে পারস্যের যুদ্ধের জন্য সেনাপতি নিযুক্ত করেছিলেন। তিনি সেই দেশের বাদশাহকে নিজ হাতে হত্যা করতে সক্ষম হয়েছিলেন। তাঁর মৃত্যুর স্থান ও তারিখের বিষয়ে মতানৈক্য রয়েছে। বলা হয়েছে যে তিনি সন 38 হিজরীতে কুফা শহরে মৃত্যুবরণ করেন এবং আলী [রাদিয়াল্লাহু আনহু] তাঁর জানাজার নামাজ পড়ান। আবার একথাও বলা হয়েছে যে, তিনি মাদীনায় সন 54 হিজরীতে মৃত্যুবরণ করেন [রাদিয়াল্লাহু আনহু] । এই বিষয়ে অন্য উক্তিও রয়েছে।


* এই হাদীস হতে শিক্ষণীয় বিষয়:
1। ইসলামি আদবকায়দার মধ্যে এই বিষয়টি রয়েছে যে, যে ব্যক্তি কোনো সমাজের মধ্যে লোকজনকে পানীয় দ্রব্য পরিবেশন করবে, সে যেন সমাজের লোকজনের মধ্যে যে ব্যক্তি সব থেকে বেশি শ্রেষ্ঠ ও সম্মানিত ব্যক্তি থাকবেন তাকেই সর্ব প্রথমে পানীয় দ্রব্য প্রদান করবে। কিংবা যে ব্যক্তি তার ডান পাশে থাকবে তাকেই সর্ব প্রথমে পানীয় দ্রব্য প্রদান করবে। আর সমস্ত লোকজনকে পানীয় দ্রব্য পরিবেশন করার পর সবার শেষে নিজে পরিবেশনকারী ব্যক্তি পানীয় দ্রব্য পান করবে।
2। অনুরূপভাবে খাদ্যদ্রব্য, পানীয় দ্রব্য, দুধ ও অন্যান্য বস্তু যেমন মাংস এবং ফলমূল ইত্যাদি সমস্ত লোকজনকে পরিবেশন ও বেতরণ করার পর সবার শেষে পরিবেশনকারী ব্যক্তি নিজের অংশ নিজেই নিবে।
3। লোকজনকে পরিবেশন করার এই হাদীসটির মধ্যে এবং যে হাদীসেটির মধ্যে বলা হয়েছে: “প্রথমে তুমি নিজের প্রাপ্য বা অংশ নিয়ে নিবে”। [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং 41 -(997) এর অংশবিশেষ দেখতে পারা যায়]। এই হাদীসটির মধ্যে কোনো প্রকারের বিরোধিতা নেই। যেহেতু পরিবেশন করার হাদীসটি উক্ত সাধারণ হাদীসটির ব্যাপকতার মধ্যে পড়ছে না। তাই এই হাদীসটি তাতে থেকে ব্যতিক্রমী ও অসাধারণ বিধান হিসেবে গনণীয় হাদীস।


من آداب الشرب
পানীয় দ্রব্য পান করার আদবকায়দা
9- عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، قَالَ:  قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: "إِذَا شَرِبَ أَحَدُكُمْ فَلاَ يَتَنَفَّسْ فِي الْإِنَاءِ؛ فَإِذَا أَرَادَ أَنْ يَعُوْدَ؛ فَلْيُنَحِّ الْإِنَاءَ، ثُمَّ لِيَعُدْ إِنْ كَانَ يُرِيدُ".
(سنن ابن ماجه، رقم الحديث 3427، وصححه الألباني).
9 - অর্থ: আবু হুরায়রা [রাদিয়াল্লাহু আনহু] হতে বর্ণিত, তিনি বলেন যে, আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলেছেন: “তোমাদের মধ্যে থেকে যখন কোনো ব্যক্তি পানীয় দ্রব্য পান করবে, তখন সে যেন পানপাত্রের মধ্যে নিঃশ্বাস ত্যাগ না করে। সুতরাং সে যখন একাধিকবার পানীয় দ্রব্য পান করার ইচ্ছা করবে, তখন সে পানপাত্রকে মুখ থেকে দূরে সরাবে। অতঃপর সে যদি পুনরায় পানীয় দ্রব্য পান করার  ইচ্ছা করে, তাহলে সে পুনরায় পান করবে”।
[সুনান ইবনু মাজাহ, হাদীস নং 3427, আল্লামা নাসেরুদ্দিন আল্ আলবাণী হাদীসটিকে সহীহ (সঠিক) বলেছেন]।
* এই হাদীস বর্ণনাকারী সাহাবীর পরিচয় পূর্বে 1 নং হাদীসে উল্লেখ করা হয়েছে।
* এই হাদীস হতে শিক্ষণীয় বিষয়:
1। পানীয় দ্রব্য পান করার সময় পানপাত্রের মধ্যে নিঃশ্বাস ত্যাগ না করার এই হাদীসটির মধ্যে এবং যে হাদীসটির মধ্যে বলা হয়েছে: যে আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] পানীয় দ্রব্য পান করার সময় পানপাত্রের মধ্যে তিনবার নিঃশ্বাস ত্যাগ করতেন। [ দেখা যেতে পারে সহীহ মুসলিম, হাদীস নং  122 - (2028) এবং সহীহ বুখারী, হাদীস নং 5631 তবে হাদীসের শব্দগুলি সহীহ মুসলিম থেকে নেওয়া হয়েছে]। প্রাথমিকভাবে এই দুইটি হাদীসের মধ্যে মনে হচ্ছে বিরোধিতা রয়েছে। কেননা প্রথম হাদীসটির দ্বারা পানীয় দ্রব্য পান করার সময় পানপাত্রের মধ্যে নিঃশ্বাস ত্যাগ করতে নিষেধ করা হয়েছে। এবং দ্বিতীয় হাদীসটির দ্বারা পানীয় দ্রব্য পান করার সময় পানপাত্রের মধ্যে নিঃশ্বাস ত্যাগ করা বাহ্যিকভাবে বৈধ মনে হচ্ছে। তাই এই দুইটি হাদীসকে এই ভাবে সম্মিলিত করা যায় যে, প্রথম হাদীসটির দ্বারা পানীয় দ্রব্য পান করার সময় পানপাত্রের মধ্যে নিঃশ্বাস ত্যাগ করতে প্রকাশ্যভাবেই নিষেধ করা হয়েছে। সুতরাং পানীয় দ্রব্য পান করার সময় পানপাত্রের মধ্যে নিঃশ্বাস ত্যাগ করা প্রকাশ্যভাবেই নিষিদ্ধ। আর এটাই হলো প্রকৃত ইসলামের শিক্ষা সম্মত পন্থা। আর দ্বিতীয় হাদীসটির অর্থ হলো এই যে, আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] যখন পানীয় দ্রব্য পান করতেন, তখন পানপাত্রের বাইরে তিনি তিনবার নিঃশ্বাস ত্যাগ করতেন। আর পানীয় দ্রব্য পান করার সময় পানপাত্রের বাইরে নিঃশ্বাস ত্যাগ করার বিষয়টি হলো প্রকৃত ইসলামের শিক্ষা সম্মত নিয়ম। তাই এই ব্যাখ্যার দ্বারা প্রতিভাত হয়ে গেলো যে, প্রকৃতপক্ষে এই দুইটি হাদীসের মধ্যে কোনো প্রকারের বিরোধিতা নেই।
2- এই হাদীসটিতে পানপাত্রের মধ্যে পানকারীকে নিঃশ্বাস ত্যাগ করতে নিষেধ করা হয়েছে। সেই পানপাত্রে পানীয় দ্রব্য পানকারী একাই পান করুক অথবা তার সাথে অন্য কোনো ব্যক্তিও পান করুক। কোনো অবস্থাতেই  পানপাত্রে নিঃশ্বাস ত্যাগ করা বৈধ নয়। আর এই বিষয়টি হলো ইসলাম ধর্মের সচ্চরিত্রের অন্তর্ভুক্ত একটি উচ্চ পর্যায়ের সামাজিক সুন্দর আচরণ; যাতে পানীয় দ্রব্য পান করার সময় পরিচ্ছনতা ও স্বাস্থ্যরক্ষার বিধিবিধান বজায় থাকে। যেহেতু পানীয় দ্রব্য পান করার সময় পানপাত্রে নিঃশ্বাস ত্যাগ করলে নিঃশ্বাসের সাথে থুতু কিংবা নাকের ময়লা বা পোঁটা বের হতে পারে অথবা পানপাত্র দুর্গন্ধযুক্ত হয়ে যেতে পারে।
من المنهيات في الإسلام
প্রকৃত ইসলাম ধর্মে কতকগুলি নিষিদ্ধ বস্তু
10-عَنْ أَبيْ جُحَيْفَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ، أَنَّهُ اشْتَرَى غُلاَمًا حَجَّامًا؛ فَقَالَ: "إِنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ نَهَى عَنْ ثَمَنِ الدَّمِ، وَثَمَنِ الْكَلْبِ، وَكَسْبِ الْبَغِيِّ، وَلَعَنَ آكِلَ الرِّبَا وَمُوكِلَهُ، وَالْوَاشِمَةَ وَالْمُسْتَوْشِمَةَ وَالْمُصَوِّرَ".
 (صحيح البخاري، رقم الحديث 5962).
10 - অর্থ: আবু জুহ্যায়ফা [রাদিয়াল্লাহু আনহু] হতে বর্ণিত, তিনি এমন একটি দাস ক্রয় করেছিলেন যে, সেই দাসটির পেশা ছিলো চুঙ্গি লাগানো। তাই তিনি তাকে বলেছিলেন: নিশ্চয় নাবী কারীম [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] নিষেধ করেছেন রক্ত বিক্রয় করে তার মূল্য নিতে, কুকুর বিক্রয় করে তার মূল্য নিতে, ব্যভিচার অথবা অবৈধ যৌনসম্পর্ক স্থাপন করার দ্বারা কোনো সম্পদ বা মাল উপার্জন করতে। আর তিনি সুদ গ্রহীতা, সুদদাতা এবং উল্কিকারিণী ও উল্কি প্রার্থিনী মহিলা এবং জীবজগতের বা জীবজন্তুর ছবি বা মূর্তি নির্মাতাদেরকে অভিশাপ দিয়েছেন।  [সহীহ বুখারী, হাদীস নং 5962]।
* এই হাদীস বর্ণনাকারী সাহাবীর পরিচয়:
আবু জুহ্যায়ফা একজন গৌরবময় সাহাবী, তাঁর নাম: ওয়াহাব বিন আব্দুল্লাহ আসসুয়ায়ী আলকূফী, তিনি ওয়াহাবুলখাইর (وَهْبُ الْخَيْر) “মঙ্গলদায়ক” নামে অভিহিত ছিলেন। নাবী কারীম [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর মৃত্যুবরণের কালে তিনি একজন কিশোর ছিলেন। হাদীস গ্রন্থে তাঁর কাছ থেকে বর্ণিত হাদীসের সংখ্যা 45 টি পাওয়া যায়।
অবশেষে তিনি কুফা শহরে অবস্থান করেন এবং সেখানেই সন 74 হিজরীতে মৃত্যুবরণ করেন। তাঁর মৃত্যুবরণের তারিখ সম্পর্কে অন্য উক্তিও রয়েছে; সুতরাং এই সম্পর্কে সঠিক বিষয়টি আল্লাহই অধিক জানেন।

* এই হাদীস হতে শিক্ষণীয় বিষয়:
1। মুসলিম ব্যক্তির প্রতি একটি অপরিহার্য কর্তব্য হলো এই যে, সে যেন সদা সর্বদা নিরিবিলিতে এবং প্রকাশ্যভাবে মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্য সজাগ ও সতর্ক থাকে। এবং প্রকৃত ইসলাম ধর্মের শিক্ষা মোতাবেক নিজেকে পরিচালিত করে। এই ধর্মের নিষিদ্ধ ও হারাম বিষয়গুলি বর্জন করে। এটাই হলো ইহকাল ও পরকালে সুখময় জীবন লাভের একটি নিদর্শন।
2। প্রকৃত ইসলাম ধর্ম মানুষের জন্য পবিত্র ও হালাল মাল এবং সম্পদ উপার্জন করার সমস্ত পথ খুলে দেওয়ার প্রতি অতি আগ্রহী। তাই সমস্ত বৈধ পন্থায় যেমন, ব্যবসা-বাণিজ্য, কৃষিকর্ম এবং শিল্পের মাধ্যমে মাল উপার্জন করার প্রতি মানুষকে উৎসাহ প্রদান করে। এবং অবৈধ বা হারাম উপায়ে মাল উপার্জন করা অবৈধ ও হারাম ঘোষণা করে। সুতরাং রক্ত বিক্রয় করে তার মূল্য নেওয়া, কুকুর বিক্রি করে তার মূল্য গ্রহণ করা এবং ব্যভিচার অথবা অবৈধ যৌনসম্পর্ক স্থাপন করার মাধ্যমে অথবা সুদ ইত্যাদি লেনদেনের মাধ্যমে সম্পদ বা মাল উপার্জন করা নিষিদ্ধ ঘোষণা করে।
3। এই হাদীসটির দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, প্রকৃত ইসলাম ধর্মে শরীরের কোনো অঙ্গে উল্কি করা এবং জীবজগতের ছবি বা মূর্তি তৈরি করা নিষিদ্ধ ও হারাম কর্ম।


وجوب تلبية الدعوة
ওয়ালিমা অথবা অন্য কোনো পবিত্র ভোজের নিমন্ত্রণ গ্রহণ করা অপরিহার্য
11- عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عُمَرَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا، قَالَ: قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللَّه عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: "مَنْ دُعِيَ إِلَى عُرْسٍ أَوْ نَحْوِهِ فَلْيُجِبْ".
(صحيح مسلم، رقم الحديث 101 - (1429)، ).
11 - অর্থ:  আব্দুল্লাহ বিন ওমার [রাদিয়াল্লাহু আনহুমা] থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন যে, আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলেছেন:  “তোমাদের মধ্যে থেকে কোনো ব্যক্তিকে বিবাহের ওয়ালিমা অথবা অন্য কোনো পবিত্র ভোজের নিমন্ত্রণ জানানো হলে; সে যেন তা অবশ্যই গ্রহণ করে”। [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং 101 - (1429) ]।
* এই হাদীস বর্ণনাকারী সাহাবীর পরিচয়:
আব্দুল্লাহ বিন ওমার ইবনুল খাত্তাব একজন সম্মানিত সাহাবী। তিনি নাবালক অবস্থাতেই তাঁর পিতা দ্বিতীয় খালীফা ওমার ইবনুল খাত্তাব [রাদিয়াল্লাহু আনহু] যখন ইসলাম গ্রহণ করেন, তখনই ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন। তাঁর পিতার পূর্বেই তিনি মাদীনায় হিজরত করেন। তিনি সর্ব প্রথমে খন্দকের যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন, অতঃপর রাসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর সাথে আরো সমস্ত যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। তিনি মিশর, শামদেশ, ইরাক, বাসরা ও পারস্যের বিজয়েও অংশগ্রহণ করেছিলেন। তিনি সুদর্শন, সাহসী ও সত্য প্রকাশকারী সাহাবীগণের মধ্যে জ্ঞানী এবং বিদ্বান বা বিদ্যাবান হিসেবে প্রসিদ্ধ ছিলেন। তাঁর কাছ থেকে 2630 টি হাদীস বর্ণিত হয়েছে। তিনি ইবাদত ও পরহেজগারিতায় ছিলেন অনুকরণীয় সাহাবী। তিনি সন 73 হিজরীতে 86 বছর বয়সে মাক্কায় মৃত্যুবরণ করেন।
* এই হাদীস হতে শিক্ষণীয় বিষয়:
1। এই হাদীসটির দাবি মোতাবেক এটা প্রমাণিত হয় যে, যে ব্যক্তিকে বিবাহের ওয়ালিমায় আমন্ত্রিত করা হবে, সে ব্যক্তির প্রতি বিবাহের ওয়ালিমার নিমন্ত্রণ গ্রহণ করা ওয়াজেব ও অপরিহার্য হয়ে যাবে। যেহেতু ওয়ালিমার নিমন্ত্রণ গ্রহণ করার মাধ্যমে বরকন্যা বা পাত্র পাত্রীর গুরুত্ব ও  সম্মান প্রকাশ করা হয়, তাদেরকে আনন্দিত করা হয় এবং তাদের মনকে প্রফুল্লিত করা হয়। আরবী ভাষায় বিবাহের ওয়ালিমার নিমন্ত্রণকে আল উর্স (العُرْسُ ) বলা হয়।
2।  প্রকৃত ইসলাম হলো সচ্চরিত্র ও ভাল আচরণ এবং পরিষ্কার হৃদয়ের উপর প্রতিষ্ঠিত থাকার ধর্ম। যাতে পরিবার ও সমাজের লোকদের মধ্যে পরস্পর ঘৃণা ও অমঙ্গলের প্রভাব প্রকাশ না পায়। তাই যে ওয়ালিমার মধ্যে প্রকৃত ইসলামের শিক্ষার বিপরীত বা উলটো কোনো আচরণ থাকবে না, সেই ওয়ালিমার নিমন্ত্রণ গ্রহণ করা ওয়াজেব ও অপরিহার্য হয়ে পড়বে।
 
3। মুসলিম ব্যক্তির জন্য এটা বৈধ বা জায়েজ নয় যে, সে ওয়ালিমার অনুষ্ঠানে অথবা অন্য কোনো পানাহারের অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়ে খুঁজে খুঁজে খাবার জিনিসের বা খাদ্যদ্রব্যের খুঁত বা দোষ বের করবে। সুতরাং আহার্য ও খাবার জিনিসের বা খাদ্যদ্রব্য তার পছন্দমাফিক ও মনের মত হলে খাবে আর মনের মত না হলে খাবে না।
فضل صلاة العشاء والصبح في الجماعة
এশা এবং ফজরের নামাজ জামাআতের সহিত পড়ার মর্যাদা
12- عَنْ عُثمَانَ بنِ عَفَّانَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، قَالَ: سَمِعتُ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، يَقُوْلُ: "مَنْ صَلَّى العِشَاءَ فِيْ جَمَاعَةٍ؛ فَكَأنَّمَا قَامَ نِصْفَ اللَّيْلِ، وَمَنْ صَلَّى الصُّبْحَ فِيْ جَمَاعَةٍ؛ فَكَأنَّمَا صَلَّى اللَّيْلَ كُلَّهُ".
(صحيح مسلم، رقم الحديث 260 - (656)، ).
12 - অর্থ:  ওসমান বিন আফফান [রাদিয়াল্লাহু আনহু] থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন যে, আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] কে আমি বলতে শুনেছি, তিনি বলেছেন: “যে ব্যক্তি জামাতের সহিত এশার নামাজ পড়বে, সে যেন অর্ধেক রাত পর্যন্ত ইবাদত উপাসনাতেই রতো থাকা হিসেবে বিবেচিত হবে। আর যে ব্যক্তি ফজরের নামাজ জামাতের সহিত পড়বে, সে যেন সারা রাত নামাজ পড়াতেই রতো থাকা হিসেবে বিবেচিত হবে”। [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং 260 - (656) ]।
* এই হাদীস বর্ণনাকারী সাহাবীর পরিচয়:
ওসমান বিন আফফান বিন আবুল আস আলকুরাশী। হস্তী বাহিনীর ছয় বছর পর তিনি মাক্কা শহরে জন্ম গ্রহণ করেন। আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম]  নবুওয়াত প্রাপ্ত হওয়ার পরে পরেই  তিনি ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন। তিনি হলেন আমীরুল মুমিনীন এবং খোলাফায়ে রাশেদীনের মধ্যে তৃতীয় খালীফা। তিনি নিজ স্ত্রী আল্লাহর রাসূলের মেয়ে রোকাইয়্যাকে সঙ্গে করে সর্ব প্রথমে আবুসিনিয়ায় বা ইথিওপিয়া দেশে হিজরত করেন। তিনি নিজের জান ও মাল দ্বারা ইসলামের সাহায্য করেন। তিনি তাবুক যুদ্ধে সৈন্য বাহিনী তৈরির জন্য 950টি উষ্ট্র এবং 50 টি ঘোড়া প্রদান করেন। 20 হাজার দিরহাম মুদ্রা দিয়ে মাদীনায় রোমা কুয়া ক্রয় করে মুসলমানদের জন্য তিনি সাদাকা জারিয়া হিসেবে দান করে দেন। মাসজিদে নবাবী প্রশস্ত করণেও তিনি 25 হাজার দিরহাম মুদ্রা দান করেন। ওমার [রাদিয়াল্লাহু আনহু] এর মৃত্যুর পর মুসলিম জাহানের তিনি তৃতীয় খালীফা নিযুক্ত হন। তিনি পবিত্র কুরআন একত্রিত করার কাজ সম্পন্ন করেন। তাঁর খেলাফতের সময় এশিয়া মহাদেশ ও আফ্রিকা মহাদেশে মহা বিজয়ের র্কাযক্রম সম্পাদিত হয়। তাঁর বর্ণিত হাদীসের সংখ্যা হচ্ছে 146 টি। তিনি মাদীনায় স্বীয় বাসভবনে দুষ্কৃতিকারী পাপাচারীদের হাতে সন 35 হিজরীতে 80 অথবা 90 বছর বয়সে শাহাদাত বরণ করেন [রাদিয়াল্লাহু আনহু] ।

* এই হাদীস হতে শিক্ষণীয় বিষয়:
1। যত্নসহকারে ফজর এবং এশার নামাজ জামাআতের সহিত পড়ার প্রতি প্রকৃত ইসলাম ধর্ম উৎসাহ প্রদান করে, যেমন অন্যান্য ফরজ নামাজ জামাআতের সহিত পড়ার প্রতিও প্রকৃত ইসলাম ধর্ম উৎসাহ প্রদান করে।
2। এই হাদীসটি যত্নসহকারে ফজর এবং এশার নামাজ জামাআতের সহিত পড়ার মহা মর্যাদার বিবরণ পেশ করে। সুতরাং যে ব্যক্তি জামাতের সহিত ফজর এবং এশার নামাজ পড়বে, সে ব্যক্তি যেন সারা রাত ইবাদত উপাসনার মাধ্যমেই অতিবাহিত করার মত বিবেচিত হবে। আর যে ব্যক্তি জামাতের সহিত উক্ত দুইটি নামাজের মধ্যে থেকে একটি নামাজ জামাতের সহিত পড়বে, সে ব্যক্তি যেন অর্ধেক রাত পর্যন্ত ইবাদত উপাসনার মাধ্যমেই অতিবাহিত করার মত বিবেচিত হবে।
الإسلام يُحَرِّمُ التصوير
প্রকৃত ইসলাম ধর্মে প্রাণীর ছবি অঙ্কন করা অবৈধ
13- عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَبَّاسِ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا قَالَ: سَمِعْتُ مُحَمَّدًا صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، يَقُوْلُ:  "مَنْ صَوَّرَ صُوْرةً في الدُّنيا، كُلِّفَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ أَنْ يَنْفُخَ فِيْهَا الرُّوْحَ، وَلَيْسَ بِنَافِخٍ".
(صحيح البخاري، رقم الحديث 5963، واللفظ  له، وصحيح مسلم، رقم الحديث 100- (2110)،).
13 - অর্থ: আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস [রাদিয়াল্লাহু আনহুমা] থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন যে, আমি আল্লাহর রাসূল মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেছেন: “যে ব্যক্তি দুনিয়াতে কোনো প্রাণীর ছবি অঙ্কন করবে, কেয়ামতের দিবসে তাকে তাতে প্রাণ সঞ্চারনের দায়িত্ব দেওয়া হবে। আর সে তাতে অক্ষম সাব্যস্ত হবে”।
[সহীহ বুখারী, হাদীস নং 5963 এবং সহীহ মুসলিম, হাদীস নং 100- (2110), তবে হাদীসের শব্দগুলি সহীহ বুখারী থেকে নেওয়া হয়েছে]।
* এই হাদীস বর্ণনাকারী সাহাবীর পরিচয় পূর্বে 6 নং হাদীসে উল্লেখ করা হয়েছে।
* এই হাদীস হতে শিক্ষণীয় বিষয়:
1। প্রকৃত ইসলাম ধর্মে জীবজগতের বা জীবজন্তুর মূর্তি বা ছবি তৈরি করা ও বিক্রয় করা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ ও হারাম করা হয়েছে। তবে জীবজগৎ বা জীবজন্তু ছাড়া অন্যান্য জিনিসের মূর্তি বা ছবি তৈরি করা বৈধ। সুতরাং বৃক্ষ, নদী, পাহাড়-পর্বত এবং ভবন ইত্যাদির মূর্তি বা ছবি তৈরি করা সদাসর্বদা বৈধ।
2। প্রকৃত ইসলাম ধর্মে কাল্পনিক প্রাণীর মূর্তি খোদাই করা অথবা নির্মান করা কিংবা ছবি তৈরি করাও কঠোরভাবে নিষিদ্ধ ও হারাম করা হয়েছে। কেননা এইগুলি তো স্বভাবিকভাবে আকৃতির দিক দিয়ে প্রকৃত জীবজগৎ  বা জীবজন্তুর মতই যদিও সেগুলির সমতুল্য প্রকৃতপক্ষে পৃথিবীতে কোনো জীবজন্তুর অস্তিত্ব নেই।  
من آداب الأكل
খাবার খাওয়ার আদবকায়দা
14- عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُماَ، أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قَالَ: "إِنَّ الْبَرَكَةَ تَنْزِلُ وَسَطَ الطَّعَامِ؛  فَكُلُوْا مِنْ حَافَّتَيْهِ، وَلاَ تَأْكُلُوْا مِنْ وَسَطِهِ".
(جامع الترمذي، رقم الحديث 1805، واللفظ له،  وسنن أبي داود، رقم الحديث 3772، وسنن ابن ماجه، رقم الحديث 3277، وقال الإمام الترمذي عن هذا الحديث بأنه:  حسن صحيح، وصححه الألباني).
14 - অর্থ: আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস [রাদিয়াল্লাহু আনহুমা] থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন যে, নিশ্চয় আল্লাহর নাবী [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলেছেন: খাদ্যের মাঝখানে অধিকতর কল্যাণ অবতীর্ণ হয়। অতএব তোমরা খাদ্যের কিনারা হতে খাবে, মাঝখান হতে খাবে না।
[জামে তিরমিযী, হাদীস নং 1805,  এবং সুনান আবু দাউদ, হাদীস নং 3772 এবং সুনান ইবনু মাজাহ, হাদীস নং 3277, তবে হাদীসের শব্দগুলি জামে তিরমিযী থেকে নেওয়া হয়েছে। ইমাম তিরমিযী হাদীসটিকে হাসান ও সহীহ বলেছেন। আল্লামা নাসেরুদ্দিন আল্ আলবাণী হাদীসটিকে সহীহ (সঠিক) বলেছেন]।
* এই হাদীস বর্ণনাকারী সাহাবীর পরিচয় পূর্বে 6 নং হাদীসে উল্লেখ করা হয়েছে।
* এই হাদীস হতে শিক্ষণীয় বিষয়:
1। এই হাদীসটির দাবি মোতাবেক এটা প্রমাণিত হয় যে, মুসলিম ব্যক্তি যেন খাদ্যদ্রব্যের মাঝখান হতে খাওয়া শুরু না করে বরং নিজের পাশ থেকে খাওয়া শুরু করে। আর খাওয়ার সময় নিজের হাত যেন অন্য লোকদের প্রতিও প্রসারিত না করে। এবং খাবারের মাঝখান থেকেও খবার  খেতে শুরু না করে। কিন্তু যখন বিভিন্ন প্রকারের খাবার বিভিন্ন দিকে ছড়িয়ে থাকবে অথবা মাঝখানে থাকবে, তখন ইচ্ছা অনুযায়ী যে কোনো দিক থেকে কিংবা মাঝখান থেকেও খাবার নিয়ে খাওয়া বৈধ। এবং এই অবস্থায় বিভিন্ন দিক থেকে অথবা মাঝখান থেকে খাবার খেলে কোনো সমস্যা নেই। (এই বিধানটি ওই সময়ে উপযোগী যখন একটি বড়ো ডিশ বা বড়ো রেকাবি অথবা বড়ো প্লেটে কয়েক জন ব্যক্তি এক সাথে খেতে বসবে)।
2। এই হাদীসটির মধ্যে (আলবারাকা - الْبَرَكَةُ) শব্দটির ভাবার্থ হলো: অধিকতর কল্যাণ ও মঙ্গল। আর অধিকতর কল্যাণ ও মঙ্গলের নিদর্শন হলো: স্বাস্থ্য, সুখ, সুস্থতা, তৃপ্তি এবং মনের মধ্যে নিরাপত্তা, আরাম ও    শান্তি অনুভব করা আর ভয় ও উদ্বেগ হতে নিরাপদ উপলব্ধি করা। এবং অকল্যাণ ও অমঙ্গলের নিদর্শন হলো: অন্তরের মধ্যে প্রবল লোভ, তীব্র লালসা, স্বার্থপরায়ণতা, অতৃপ্ত থাকা, আত্যন্তিক আত্মম্ভরিতা, অত্যধিক মতলবী হওয়া, বিদ্বেষ ও অমঙ্গল, দরিদ্র্যতা বা দীনতা, উদ্বেগ ও অস্বস্তিকর অবস্থা এবং অশান্ত মনোভাব বিরাজ করা।
من صفات الوضوء
ওজু করার পদ্ধতি
15- عَنْ حُمْرَانَ رحمه الله، مَوْلَى عُثمَانَ بْنِ عَفَّانَ أَنَّهُ رَأَى عُثمَانَ بْنَ عَفَّانَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ دَعَا بِوَضُوْءٍ؛ فَأَفْرَغَ عَلَى يَدَيْهِ مِنْ إِنَائِهِ؛ فَغَسَلَهُمَا ثَلاَثَ مَرَّاتٍ، ثُمَّ أَدْخَلَ يَمِيْنَهُ فِي الْوَضُوْءِ، ثُمَّ تَمَضْمَضَ وَاسْتَنْشَقَ وَاسْتَنْثَرَ، ثُمَّ غَسَلَ وَجْهَهُ ثَلاَثًا، وَيَدَيْهِ إِلَى المِرْفَقَيْنِ ثَلاَثًا، ثُمَّ مَسَحَ بِرَأْسِهِ، ثُمَّ غَسَلَ كُلَّ رِجْلٍ ثَلاَثًا، ثُمَّ قَالَ: رَأَيْتُ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَتَوَضَّأُ نَحْوَ وُضُوْئِيْ هَذَا، وَقَالَ: "مَنْ تَوَضَّأَ نَحْوَ وُضُوْئِيْ هَذَا، ثُمَّ صَلَّى رَكْعَتَيْنِ لاَ يُحَدِّثُ فِيْهِمَا نَفْسَهُ، غَفَرَ اللَّهُ لَهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِهِ".
(صحيح البخاري، رقم الحديث 164، واللفظ له، وصحيح مسلم، رقم الحديث 3 - (226)،).
15 -  অর্থ: ওসমান বিন আফফান [রাদিয়াল্লাহু আনহু] এর স্বাধীনকৃত দাস হোমরান [রাহিমাহুল্লাহ] হতে বর্ণিত, তিনি বলেন যে, সে স্বয়ং ওসমান বিন আফফান [রাদিয়াল্লাহু আনহু] কে দেখেছেন যে, তিনি পানি আনালেন। অতঃপর তিনি সেই পানির পাত্র হতে পানি নিয়ে উভয় হাত তিনবার ধৌত করলেন। অতঃপর তিনি তাঁর ডান হাত দ্বারা ওজুর সেই পানির পাত্র হতে পানি গ্রহণ করলেন। এবং সেই পানির দ্বারা কুলি করলেন আর নাকে পানি দিয়ে নাক ঝাড়লেন। অতঃপর তিনি তাঁর মুখমণ্ডল এবং উভয় হাত কনুই পর্যন্ত তিনবার করে ধৌত করলেন। তারপর তিনি তাঁর মাথা মাসাহ করলেন। এবং  উভয় পা তিনবার করে ধৌত করার পর বললেন: আমি  আল্লাহর নাবী [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম]  কে আমার এই ওজুর ন্যায় ওজু করতে দেখেছি। অতঃপর আল্লাহর নাবী [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলেছেন: “যে ব্যক্তি আমার এই ওজুর ন্যায় ওজু করবে এবং বিনয়নম্রতা ও একাগ্রতার সহিত দুই রাকাআত নামাজ পড়বে এবং সেই নামাজ দুই রাকাআতের মধ্যে জাগতিক বিষয়ে কোনো চিন্তা মনের মধ্যে স্থাপন করবে না, মহান আল্লাহ্ তার পূর্বকৃত সকল প্রকারের পাপ ক্ষমা করে দিবেন”।
 [সহীহ বুখারী, হাদীস নং 164 এবং সহীহ মুসলিম, হাদীস নং 3- (226), তবে হাদীসের শব্দগুলি সহীহ বুখারী থেকে নেওয়া হয়েছে]।
* এই হাদীস বর্ণনাকারী সাহাবীর পরিচয় পূর্বে 12 নং হাদীসে উল্লেখ করা হয়েছে।
তবে ওসমান বিন আফফান [রাদিয়াল্লাহু আনহু] এর স্বাধীনকৃত দাস হোমরান [রাহিমাহুল্লাহ] হলেন মাদিনা শহরের একজন মহা সম্মানিত বিদ্বান, মহা জ্ঞানী, বিখ্যাত এবং প্রসিদ্ধ ব্যক্তি। ওসমান বিন আফফান [রাদিয়াল্লাহু আনহু] উনাকে দাসত্ব থেকে মুক্ত করেছিলেন। হোমরান [রাহিমাহুল্লাহ] সন 75 হিজরীতে মৃত্যুবরণ করেন। তাঁর মৃত্যুবরণের তারিখ সম্পর্কে অন্য উক্তিও রয়েছে।
* এই হাদীস হতে শিক্ষণীয় বিষয়:
1। এটি একটি মহাহাদীস, এর মধ্যে সন্নিবেশিত হয়েছে প্রকৃত ইসলাম ধর্মে ওজু করার মৌলিক বিবরণ। তাই সমস্ত মুসলিম ব্যক্তির উচিত, তারা যেন ওজু করার এই মৌলিক বিবরণটির জ্ঞান লাভ করে ও যত্ন করে। তবে জেনে রাখা দরকার যে, একবার মাত্র মাথা মাসাহ করার সাথে সাথে দুই কানেরও মাসাহ করতে হবে। কেননা কান দুইটি তো হলো মাথারই অংশ।   
2। ওজু এবং নামাজ হলো মহান আল্লাহর ক্ষমা ও জান্নাত লাভের মাধ্যম। তাই যে ব্যক্তি ওজু করবে, তার উচিত যে, সে যেন ওজু করার পর দুই রাকাআত নামাজ পড়ে।
3। মুসলিম ব্যক্তির উচিত যে, সে যেন ওজু করার শেষে এই দোয়াটি পাঠ করে।
"أَشْهَدُ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ، وَأَنََّ مُحَمَّدًا عَبْدُ اللَّهِ وَرَسُولُهُ".
অর্থ: আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া অন্য কোনো সত্য উপাস্য নেই। আমি আরও সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, অব্যশই মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] আল্লাহর অতি প্রিয় মানুষ ও দূত।
যেহেতু আল্লাহর নাবী [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলেছেন: "তোমাদের মধ্যে থেকে যখন কোনো ব্যক্তি যত্নসহকারে সম্পূর্ণরূপে অথবা উত্তম রূপে ওজু করবে এবং বলবে:
"أَشْهَدُ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ، وَأَنََّ مُحَمَّدًا عَبْدُ اللَّهِ وَرَسُولُهُ".
(অর্থ: আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া অন্য কোনো সত্য উপাস্য নেই। আমি আরও সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, অব্যশই মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] আল্লাহর অতি প্রিয় মানুষ ও দূত।)
তার জন্য জান্নাতের আটটি দরজা খুলে দেওয়া হবে, সে যে দরজা দিয়ে ইচ্ছে করবে, সেই দরজা দিয়ে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে”।
[দেখতে পারা যায় সহীহ মুসলিম, হাদীস নং 17 – (224) ]।
الفرق بين الملائكة والجن
ফেরেশতাদের মধ্যে এবং জিনদের মধ্যে পার্থক্য
16- عَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهَا، قَالَتْ: قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللَّه عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: "خُلِقَتِ المَلاَئِكَةُ مِنْ نُوْرٍ، وَخُلِقَ الجَانُّ مِنْ مَارِجٍ مِنْ نَارٍ، وَخُلِقَ آدَمُ مِمَّا وُصِفَ لَكُمْ".
(صحيح مسلم، رقم الحديث 60 - (2996)، ).
16 - অর্থ:  নাবী কারীম [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর প্রিয়তমা আয়েশা উম্মুলমুমেনীন [রাদিয়াল্লাহু আনহা] থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন: আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলেছেন: “ফেরেশতাদেরকে জ্যোতি থেকে সৃষ্টি করা হয়েছে এবং জিনদেরকে আগুনের তীব্র শিখা থেকে সৃষ্টি করা হয়েছে। আর মানবজাতির আদি পিতা আদমকে যে বস্তু থেকে সৃষ্টি করা হয়েছে, সেই বস্তুটির বিবরণ পবিত্র কুরআনে তোমাদেরকে প্রদান করা হয়েছে।  অর্থাৎ মানব জাতির প্রথম পিতা আদমকে মাটি থেকে সৃষ্টি করা হয়েছে”।
 [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং 60- (2996)]।
* এই হাদীস বর্ণনাকারিণী  সাহাবীয়ার পরিচয়:
উম্মুল মুমেনীন আয়েশা বিনতে আবু বাক্‌র আসসিদ্দীক [রাদিয়াল্লাহু আনহা] হিজরতের পূর্বে নাবী কারীম [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। তিনি মাদীনায় হিজরত করার পর নয় বছর বয়সে আল্লাহর রাসূলের সঙ্গে সংসার আরম্ভ করেন। আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] যখন মৃত্যুবরণ করেন তখন তাঁর বয়স ছিল 18 বছর। তিনি সাহাবীগণের মধ্যে অধিক বুদ্ধিমতি, জ্ঞান এবং রায় প্রদানের ক্ষেত্রে ছিলেন সর্বোত্তম ব্যক্তি। দানশীলতা ও উদারতায় তাকে উত্তম নমুনা হিসেবে উল্লেখ করা হতো। তিনি অনেক হাদীস বর্ণনা করেছেন, তাঁর বর্ণিত হাদীসের সংখ্যা 2210 টি। তিনি রমাজান বা শাওয়াল মাসের 17 তারিখে মাদীনাতে সন 57 হিজরীতে রোজ মঙ্গলবার মৃত্যুবরণ করেন। আবু হুরায়রা [রাদিয়াল্লাহু আনহু] তাঁর জানাজার নামাজ পড়িয়েছিলেন এবং তাঁকে আল বাকী কবরস্থানে দাফন করা হয় [রাদিয়াল্লাহু আনহা] ।
* এই হাদীস হতে শিক্ষণীয় বিষয়:
1। এই হাদীসটির দ্বারা সাব্যস্ত হয় যে, ফেরেশতাদেরকে সৃষ্টি করার মধ্যে এবং জিনদেরকে সৃষ্টি করার মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। সুতরাং ফেরেশতাদেরকে সৃষ্টি করা হয়েছে জ্যোতির দ্বারা। আর জ্যোতির অর্থ হলো: কিরণ, কিরণের দ্বারা আলোক ছড়িয়ে পড়ে এবং বিভিন্ন দিক জ্যোতির্ময় হয় আর উজ্জ্বল হয়।
আর জিনদেরকে সৃষ্টি করা হয়েছে আগুনের তীব্র শিখা দ্বারা। অর্থাৎ জিনদের প্রথম পিতা ইবলীসকে সৃষ্টি করা হয়েছে আগুনের তীব্র শিখা দ্বারা। কিন্ত এই বিষয়ে অন্য উক্তিও রয়েছে।   
2। আমাদের উপর জিন ও শয়তানের অস্তিত্বের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করা অপরিহার্য। তারা হলো মহান আল্লাহর সৃষ্টি জগতের অন্তর্ভুক্ত। তারা মৃত্যুবরণ করে থাকে যেমন সমস্ত মানুষও মৃত্যুবরণ করে।
3। ঈমানের ছয়টি মূল ভিত্তি রয়েছে, সেই ছয়টি মূল ভিত্তির মধ্যে রয়েছে ফেরেশতাদের প্রতি ঈমান স্থাপন করা। ফেরেশতাগণ মহান আল্লাহর সৃষ্টি জগতের অন্তর্ভুক্ত একটি অতি সম্মানিত সৃষ্টি জগৎ। তাদেরকে সৃষ্টি করা হয়েছে জ্যোতি থেকে। ফেরেশতাগণ সদাসর্বদা দিবানিশি মহান আল্লাহর পবিত্রতা বর্ণনা করেন।
আর প্রকৃত ইসলামের শিক্ষা মোতাবেক মানবজাতির প্রথম ব্যক্তি হলেন   আদম [আলাইহিস্সালাম]। উনাকে মহান আল্লাহ সৃষ্টি করেছেন কাদামাটি বা পাঁক হতে। তবে মহান আল্লাহ উনাকে শুধু মাত্র কাদামাটি বা পাঁক হতেই সৃষ্টি করেছেন তা নয়। বরং তিনি তাঁকে সৃষ্টি করেছেন জীবন্ত সত্তা হিসেবে। সুতরাং তাঁর মধ্যে রয়েছে আত্মা, বুদ্ধি, শিরা, স্নায়ু, মাংস, হাড় এবং রক্ত ইত্যাদি।


فضل الصلاة في مسجدِ قُباءٍ
কুবা মাসজিদে নামাজ পড়ার মর্যাদা
17- عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عُمَرَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا، قَالَ: كَانَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَأْتِي مَسْجِدَ قُبَاءٍ رَاكِبًا وَمَاشِيًا؛ فَيُصَلِّيْ فِيْهِ رَكْعَتَيْنِ.
(صحيح مسلم، رقم الحديث 516- (1399)، واللفظ له وصحيح البخاري، رقم الحديث 1194).
17 - অর্থ:  আব্দুল্লাহ বিন ওমার [রাদিয়াল্লাহু আনহুমা] থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন যে, আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] আরোহী হয়ে অথবা পায়ে হেঁটে কুবা মাসজিদে আসতেন। এবং সেই মাসজিদে দুই রাকাআত নামাজ পড়তেন।
[সহীহ মুসলিম, হাদীস নং 516- (1399) এবং সহীহ বুখারী, হাদীস নং 1194 তবে হাদীসের শব্দগুলি সহীহ মুসলিম থেকে নেওয়া হয়েছে]।
* এই হাদীস বর্ণনাকারী সাহাবীর পরিচয় পূর্বে 11 নং হাদীসে উল্লেখ করা হয়েছে।

* এই হাদীস হতে শিক্ষণীয় বিষয়:
1। এই হাদীসটির দ্বারা প্রতিমান হয় যে, কুবা মাসজিদের পরিদর্শন করা  এবং সেখানে পায়ে হেঁটে অথবা আরোহণ করে যাওয়ার বিষয়টি ইসলামের বিধান মোতাবেক একটি বৈধ কর্ম। কেননা আল্লাহর নাবী [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] প্রতি শনিবারে সেই কুবা মাসজিদে পায়ে হেঁটে অথবা আরোহী হয়ে আসতেন।
[দেখতে পারা যায় সহীহ মুসলিম, হাদীস নং 520 - (1399)]।
2। কুবা মাসজিদে নামাজ পড়ার মর্যাদা সম্পর্কে কতকগুলি হাদীস বর্ণিত হয়েছে। উক্ত হাদীসগুলির মধ্যে থেকে এখানে দুইটি হাদীস উল্লেখ করা হলো:
প্রথম হাদীসটিতে আল্লাহর নাবী [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলেছেন: “কুবা মাসজিদে নামাজ পড়ার মর্যাদা হলো উমরা পালন করার সমতুল্য”।
[জামে তিরমিযী, হাদীস নং 324 এবং সুনান ইবনু মাজাহ, হাদীস নং 1411, তবে হাদীসের শব্দগুলি জামে তিরমিযী থেকে নেওয়া হয়েছে। ইমাম তিরমিযী হাদীসটিকে হাসান ও গারীব বলেছেন। আল্লামা নাসেরুদ্দিন আল্ আলবাণী হাদীসটিকে সহীহ (সঠিক) বলেছেন]।
দ্বিতীয় হাদীসটিতে আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলেছেন: “যে ব্যক্তি তার নিজের বাড়িতে পবিত্রতার্জন করবে, অতঃপর মাসজিদে কুবায় এসে নামাজ পড়বে। তার জন্য উমরা পালন করার সমতুল্য পুণ্য লাভ হবে”।
[সুনান ইবনু মাজাহ, হাদীস নং 1412 এবং সুনান নাসায়ী, হাদীস নং   699, তবে হাদীসের শব্দগুলি সুনান ইবনু মাজাহ থেকে নেওয়া হয়েছে। আল্লামা নাসেরুদ্দিন আল্ আলবাণী হাদীসটিকে সহীহ (সঠিক) বলেছেন]।
الإسلام يدعو إلى العناية بالفقراء
দরিদ্র লোকজনের সেবা করার প্রতি ইসলামের আহ্বান
18- عَنْ مُصْعَبِ بْنِ سَعْدٍ رحمه الله قَالَ: رَأَى سَعْدٌ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ أَنَّ لَهُ فَضْلاً عَلَى مَنْ دُونَهُ؛ فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ:  "هَلْ تُنْصَرُوْنَ وَتُرْزَقُوْنَ إِلاَّ بِضُعَفَائِكُمْ".
(صحيح البخاري، رقم الحديث 2896).
18 - অর্থ:  মুসআব বিন সায়াদ [রাহিমাহুল্লাহ] হতে বর্ণিত তিনি বলেন: সায়াদ [রাদিয়াল্লাহু আনহু] মনে করতেন যে, গরিবগুরবো বা দরিদ্র লোকজনের  উপর তাঁর মর্যাদা আছে। তাই আল্লাহর নাবী [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বললেন: “তোমরা আল্লাহর সাহায্য ও জীবিকা বা রুজি প্রাপ্ত হয়ে থাকো তোমাদের মধ্যে যারা গরিবগুরবো বা দরিদ্র লোকজন আছে  তাদের মাধ্যমে”।
 [সহীহ বুখারী, হাদীস নং 2896]।
* এই হাদীস বর্ণনাকারীর পরিচয়:
মুসআব বিন সায়াদ [রাহিমাহুল্লাহ] একজন বিশিষ্ট তাবেয়ী। তিনি হলেন সায়াদ বিন আবু অক্কাস আজ জহরী। তিনি কুফা শহরে স্থায়ীভাবে অবস্থান করেছিলেন। এবং সেখানেই তিনি সন 103 হিজরীতে মৃত্যুবরণ করেছেন।
* এই হাদীস বর্ণনাকারী সাহাবী সায়াদ বিন আবু অক্কাস এর পরিচয় পূর্বে 5 নং হাদীসে উল্লেখ করা হয়েছে।
* এই হাদীস হতে শিক্ষণীয় বিষয়:
1। প্রকৃত ইসলাম ধর্ম সাধারণভাবে মুসলিম জাতির মধ্যে পারস্পরিক সুসম্পর্ক ও সহযোগিতার নীতি এবং পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও সম্মান করার বিধান স্থাপন করা এবং তা মেনে চলার প্রতি উৎসাহ প্রদান করে।  
2। প্রকৃত ইসলাম ধর্ম গরীবদের যত্ন ও সাহায্য সহযোগিতা করার প্রতি আহ্বান জানায়।
3। এই হাদীসটির দ্বারা সাব্যস্ত হয় যে, গরীবদের মাধ্যমে দুশমনদেরকে দমন করা যায় ও তাদের অমঙ্গল হতে রক্ষা পাওয়া যায় এবং ধনীদের জীবিকার সম্প্রসারণ হয়। তাই গরীবদের সম্মান করা উচিত। আর অহংকার করে তাদেরকে অগ্রাহ্য করা উচিত নয়। অতএব তাদেরকে কোনো সময় তুচ্ছতাচ্ছিল্য করা বৈধ নয়।   


الإسلام يحث على إظهار الحب في الله
আল্লাহর জন্য নিবেদিত ভালোবাসাকে প্রতিভাত করার প্রতি ইসলাম ধর্ম উৎসাহ প্রদান করে
19- عَنْ مِقْدَامِ بْنِ مَعْدِيْكَرِبَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ،  000 عَنِ النَّبيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قَالَ: "إِذَا أحَبَّ الرَّجُلُ أَخَاهُ فَلْيُخْبِرْهُ أنَّهُ يُحِبُّهُ".
(سنن أبي داود، رقم الحديث 5124، واللفظ له، وجامع الترمذي، رقم الحديث 2391، قال الإمام الترمذي عن هذا الحديث بأنه:  حسن صحيح غريب، وصححه الألباني).
19 - অর্থ: মিকদাম বিন মাদীকারেব [রাদিয়াল্লাহু আনহু] থেকে বর্ণিত, তিনি আল্লাহর নাবী [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] থেকে বর্ণনা করেন: আল্লাহর নাবী [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলেছেন: “কোনো মানুষ যখন তার কোনো ভাইকে ভালোবাসবে, তখন সে যেন তাকে অবহিত করে যে, সে তাকে ভালোবাসে” ।
[সুনান আবু দাউদ, হাদীস নং 5124 এবং জামে তিরমিযী, হাদীস নং 2391, তবে হাদীসের শব্দগুলি জামে তিরমিযী থেকে নেওয়া হয়েছে। ইমাম তিরমিযী হাদীসটিকে হাসান সহীহ (সঠিক) এবং গারীব (এক পন্থায় বর্ণিত) বলেছেন। আল্লামা নাসেরুদ্দিন আল্ আলবাণী হাদীসটিকে সহীহ (সঠিক) বলেছেন]।
* GB nv`xm eY©bvKvix mvnvexi cwiPq:
আবু কারীমা মিকদাম বিন মাদীকারেব বিন আমর্ আলকিন্দি [রাদিয়াল্লাহু আনহু] একজন অন্যতম সাহাবী। তিনি শামদেশের হিমস্ শহরে অবস্থান করেছিলেন। আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর কাছে যে সমস্ত প্রতিনিধিদল ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করার জন্য আগমন করেছিলেন, সেই সমস্ত প্রতিনিধিদলের সঙ্গে তিনি উপস্থিত হয়ে ছিলেন।
তিনি ইসলামী বিজয়ের সমস্ত যুদ্ধে যোগদান করেছিলেন। শামদেশ ও ইরাক বিজয়ের যুদ্ধেও তিনি অংশগ্রহণ করেন। ইয়ারমুক এবং কাদেসিয়ার যুদ্ধেও তিনি অংশগ্রহণ করেছিলেন। আর ইসলামের অনিষ্টকারীদের বিরুদ্ধে তিনি কোনো একটি যুদ্ধেও অংশগ্রহণ করা হতে বিরত থাকেন নি। তাঁর বর্ণিত হাদীসের সংখ্যা 43টি। তাঁকে শামদেশী হিসেবেই গণ্য করা হয়। এবং শামদেশেই তিনি সন 87 হিজরীতে 91 বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন। [রাদিয়াল্লাহু আনহু]।
* এই হাদীস হতে শিক্ষণীয় বিষয়:
1। প্রকৃত ইসলাম ধর্ম মহান আল্লাহর নৈকট্য লাভের উদ্দেশ্যে মানুষকে ভালোবাসার প্রতি আহ্বান জানায়। ভালোবাসা হলো: মানবিক অনুভূতি এবং আবেগকেন্দ্রিক একটি বিষয়। সুতরাং যে ব্যক্তির মধ্যে ভালোবাসার উপাদান পাওয়া যাবে, সে ব্যক্তির প্রতি মনের অতি সুন্দর অনুভূতিকে ভালোবাসা বলে। আর মহান আল্লাহর নৈকট্য লাভের উদ্দেশ্যে মানুষকে ভালোবাসার উপাদানের মধ্যে রয়েছে: মহান আল্লাহর আনুগত্য করা, তাঁর উপদেশ মেনে চলা, তাঁর বারণকৃত বিষয় থেকে বিরত থাকা। এবং মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ করার জন্য তৎপর থাকা।  
2। মহান আল্লাহর নৈকট্য লাভের উদ্দেশ্যে মানুষকে ভালোবাসার বিষয়টিকে প্রতিভাত করার প্রতি প্রকৃত ইসলাম ধর্ম উৎসাহ প্রদান করে। সুতরাং কোনো ব্যক্তি যখন অন্য কোনো ব্যক্তিকে অন্তর থেকে ভালবাসবে, তখন তার উচিত হবে যে, সে যেন তাকে অবহিত করে যে, সে তাকে ভালোবাসে। যেন সেও তাকে নিঃস্বার্থে ভালোবাসে এবং তার অন্তরে তার প্রতি ভালোবাসার সুন্দর অনুভূতি সৃষ্টি হয়।
3। কোনো ব্যক্তি যদি অন্য কোনো ব্যক্তিকে জাগতিক ফয়দা লোটার জন্য  ভালবাসে, তাহলে সে যেন এই ধরণের ভালোবাসা থেকে নিজেকে রক্ষা করে। এবং নিজের ভালোবাসাকে মহান আল্লাহর নৈকট্য লাভের উদ্দেশ্যে  নিবেদিত করে। যাতে সে তার পবিত্র ভালোবাসার মাধ্যমে মহান আল্লাহর  কাছে মহাপুণ্য ও মর্যাদা লাভ করতে পারে। কেননা যে ব্যক্তি প্রকৃতপক্ষে মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে কোনো ব্যক্তিকে ভালোবাসবে, সে ব্যক্তি সেই সাত প্রকারের লোকের অন্তর্ভুক্ত হতে পারবে, যে সাত প্রকারের সমস্ত লোক কিয়ামতের দিন সকল প্রকারের শাস্তি থেকে পরিত্রাণ পাবে এবং মহান আল্লাহর শান্তিদায়ক ছায়ার তলে স্থান লাভ করবে। মহান আল্লাহর শান্তিদায়ক ছায়া ছাড়া সে দিন আর কোনো ছায়া থাকবে না।

انتهاز نعمة الفراغ والصحة للخير
ভালো স্বাস্থ্য এবং সচ্ছলতা কল্যাণদায়ক কাজে ব্যবহার করা উচিত
20- عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا، قَالَ:  قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: "نِعْمَتَانِ مَغْبُوْنٌ فِيْهِمَا كَثِيْرٌ مِنَ النَّاسِ: الصِّحَّةُ وَالْفَرَاغُ".
(صحيح البخاري، رقم الحديث 6412).
20 - অর্থ:  আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস [রাদিয়াল্লাহু আনহুমা] থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন যে, আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলেছেন: “দুইটি এমন নেয়ামত রয়েছে, যে সেই দুইটি নেয়ামতে অনেক মানুষ ধোঁকায় পতিত হয়। সেই নেয়ামত দুইটি হলো: রোগহীন শরীরের ভালো স্বাস্থ্য এবং আনন্দদায়ক সচ্ছলতা”। [ সহীহ বুখারী, হাদীস নং 6412]।
* এই হাদীস বর্ণনাকারী সাহাবীর পরিচয় পূর্বে 6 নং হাদীসে উল্লেখ করা হয়েছে।

 

* এই হাদীস হতে শিক্ষণীয় বিষয়:
1। যে কোনো মুসলিম ব্যক্তির উচিত সে, যেন তার ভালো স্বাস্থ্য এবং সচ্ছলতা প্রকৃত ইসলাম ধর্মের শিক্ষা অনুযায়ী কল্যাণদায়ক এবং বৈধ ও হালাল রুজি উপার্জনের কাজে ব্যবহার করে।
2। যে কোনো মুসলিম ব্যক্তির উচিত সে, যখন রোগহীন শরীরের ভালো স্বাস্থ্য এবং আনন্দদায়ক সচ্ছলতার নেয়ামত লাভ করবে, তখন সে যেন   মহান আল্লাহর কৃকজ্ঞতা প্রকাশ করে। মহান আল্লাহর কৃতজ্ঞ ব্যক্তি হওয়ার নিদর্শন হলো: মহান আল্লাহর নির্দেশগুলি মেনে চলা, তাঁর বারণকৃত বিষয়গুলি হতে বিরত থাকা। আর এই বিষয়ে যে, ব্যক্তি অবহেলা করবে, সেই ব্যক্তি প্রকৃতপক্ষে ধোঁকায় পতিত হবে এবং ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
3। প্রকৃতপক্ষে ধোঁকায় পতিত হওয়ার অর্থ হলো:  হতাশ হওয়া, ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া এবং দুর্ভাগা হওয়া। সুতরাং যে ব্যক্তি রোগহীন শরীর ও ভালো স্বাস্থ্য পাবে এবং আনন্দদায়ক সচ্ছলতার মহানেয়ামত লাভ করবে। অতঃপর এই মহানেয়ামত নষ্ট করবে এবং তার দ্বারা উপকৃত হবে না। আর সেই মহানেয়ামত প্রাপ্ত হওয়ার কারণে মহান আল্লাহর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করবে না,  সে নিজেই হতাশ হবে, ক্ষতিগ্রস্ত হবে এবং প্রতারিত হয়ে   দুর্ভাগা হবে।

 

الإسلام دين حماية الحقوق
প্রকৃত ইসলাম জনগণের অধিকার সংরক্ষণের ধর্ম
21- عَنْ مَعْقِلَ بْنَ يَسَارٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، قَالَ: سَمِعْتُ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُوْلُ:  "مَا مِنْ عَبْدٍ اسْتَرْعَاهُ اللَّهُ رَعِيَّةً؛ فَلَمْ يَحُطْهَا بِنَصِيحَةٍ إِلاَّ لَمْ يَجِدْ رَائِحَةَ الْجَنَّةِ".
(صحيح البخاري، رقم الحديث7150، واللفظ له، وصحيح مسلم، رقم الحديث 227 - (142)،).
21 - অর্থ: মাকেল বিন ইয়াসার [রাদিয়াল্লাহু আনহু] থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন: আমি আল্লাহর নাবী [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] কে বলতে শুনেছি তিনি বলেছেন: “মহান আল্লাহ যে ব্যক্তিকে জনগণের নেতৃত্ব প্রদান করবেন আর সে তাদের জন্য আন্তরিকতার সহিত কল্যাণদায়ক কর্ম সম্পাদন করবে না,  তাহলে সে ব্যক্তি জান্নাতের ঘ্রাণও পাবে না”।
[সহীহ বুখারী, হাদীস নং 7150 এবং সহীহ মুসলিম, হাদীস নং 227 - (142), তবে হাদীসের শব্দগুলি সহীহ বুখারী থেকে নেওয়া হয়েছে]।
* এই হাদীস বর্ণনাকারী সাহাবীর পরিচয়:
মাকেল বিন ইয়াসার আল্‌ মুজানী [রাদিয়াল্লাহু আনহু] শামদেশ থেকে আল্লাহর নাবী [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর কাছে আগমন করেছিলেন। এবং হুদায়বীয়ার সন্ধির ঘটনা সংঘটিত হওয়ার পূর্বেই তিনি ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছিলেন। এবং তিনি আল্লাহর নাবী [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর কাছে বৃক্ষের নীচে আনুগত্যের শপথও গ্রহণ করেছিলেন। আর আল্লাহর নাবী [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] যখন বৃক্ষের নীচে আনুগত্যের শপথ গ্রহণ করছিলেন, তখন তিনি বৃক্ষের ডাল আল্লাহর নাবী [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর পবিত্র চেহারা হতে উপরে উঠিয়ে রেখেছিলেন। তাঁর বর্ণিত হাদীসের সংখ্যা 34 টি।
আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর মৃত্যুবরণের পর রিদ্দার যুদ্ধ খালিফা আবু বাকার [রাদিয়াল্লাহু আনহু] এর শাসনামলে সংঘটিত হয়, সেই যুদ্ধে তিনি অংশগ্রহণ করেন। আর পারস্য বিজয়ের যুদ্ধেও তিনি  মুসলিম সেনাবাহিনীর সাথে অংশগ্রহণ করেন।
খালিফা ওমার [রাযিয়াল্লাহু আনহু] তাঁকে বাসরা শহরে আমীর নিযুক্ত করেছিলেন। সেখানে তিনি খালিফা ওমার [রাযিয়াল্লাহু আনহু] এর উপদেশ অনুযায়ী মাটি খনন করে একটি নদী তৈরি করেছিলেন। আর সেই বাসরা শহরে তিনি স্থায়ীভাবে বসবাস করার জন্য একটি বাড়ি নির্মাণ করেছিলেন। এবং সেখানেই তিনি বসবাস করতে করতে সন 65 হিজরীতে অথবা 60 হিজরীতে মৃত্যুবরণ করেন [রাদিয়াল্লাহু আনহু] । এই বিষয়ে অন্য উক্তিও রয়েছে ।
* এই হাদীস হতে শিক্ষণীয় বিষয়:
1। এই হাদীসটি ভয়ানক সতর্কবার্তা বহন করে ওই সমস্ত কর্মকর্তার জন্য যারা লোকজনের কাজে তাদেরকে প্রতারিত করে এবং তাদের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করে। সেই সমস্ত কর্মকর্তা রাষ্ট্রীয় কার্যক্রমের হোক কিংবা রাষ্ট্রীয় পর্যায়ের কোনো কার্যালয়ের হোক অথবা কোনো প্রতিষ্ঠান,  সংগঠন, পারিবাকি বা ব্যক্তিগত বিষয়ের হোক। সকলের জন্য এই হাদীসে রয়েছে সতর্ক বাণী। সুতরাং যে সমস্ত কর্মকর্তা বিশ্বাসঘাতকতা করবে, সে সমস্ত কর্মকর্তার জন্য পরম সুখময় স্থান জান্নাত হারাম হয়ে যাবে। এবং তাদের জন্য অতি কষ্টদায়ক স্থান আগুনের জাহান্নাম নির্ধারিত হয়ে যাবে।
2। এই হাদীসটি ভয়ানক সতর্ক বাণী বহন করে প্রতারণাকারী ও বিশ্বাসভঙ্গকারী কর্মকর্তা ও দায়িত্বশীলদের জন্য। কেননা এতে তারা জাহান্নামে প্রবেশ করার দুঃসংবাদ রয়েছে। আর প্রকৃত ইসলামের একটি বিধান হলো এই যে, জাহান্নামে প্রবেশ করার দুঃসংবাদসমূহ জান্নাত লাভের সুসংবাদসমূহের সাথে যুক্ত করা অপরিহার্য। যেহেতু জাহান্নামে প্রবেশ করার দুঃসংবাদসমূহ কার্যকর হতেও পারে আবার নাও হতে পারে।    কেননা মহান আল্লাহ জাহান্নামে প্রবেশ করার দুঃসংবাদগুলিকে কার্যকর না করার কতকগুলি উপাদান নির্ধারণ করে রেখেছেন। উক্ত উপাদানগুলির মধ্যে রয়েছে:  মহান আল্লাহর কাছে সুপারিশ, ইসলামের শিক্ষা অনুযায়ী পাপ মোচনকারী সৎকর্ম এবং যারা সর্বশক্তিমান মহান আল্লাহর সাথে কাউকে শরীক করে নি, তাদের জন্য সর্বশক্তিমান মহান আল্লাহর ইচ্ছানুসারে ক্ষমা প্রদান। এই কারণে জান্নাত লাভের সুসংবাদ ও জাহান্নামে প্রবেশ করার দুঃসংবাদসমূহকে আরবী ভাষায় বলা হয়:
) اَلْوَعْدُ وَالْوَعِيْدُ(
অর্থ: জান্নাত লাভের সুসংবাদ ও জাহান্নামে প্রবেশ করার দুঃসংবাদ।
3। ইসলাম হলো সকল আমানতকারীদের আমানত সঠিকভাবে ফেরত দেওয়ার ধর্ম। অনুরূপভাবে ইসলাম হলো ব্যক্তি, দল ও সম্প্রদায়ের সমস্ত অধিকার সংরক্ষণের ধর্ম।
للوالد أخذ مال ابنه قدر الحاجة
পিতা প্রয়োজন অনুযায়ী ছেলের সম্পদ নিতে পারবে
22- عَنْ جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا، أَنَّ رَجُلاً قَالَ:  ياَ رَسُوْلَ اللهِ! إن لِيْ مَالاً وَوَلَداً، وَإِنَّ أَبِيْ يُرِيْدُ أَنْ يَجْتَاحَ مَالِي؛ فَقَالَ: "أَنْتَ وَمَالُكَ لِأَبِيْكَ".
(سنن ابن ماجه، رقم الحديث 2291، وصححه الألباني).
22 - অর্থ: জাবের বিন আব্দুল্লাহ [রাদিয়াল্লাহু আনহুমা] থেকে বর্ণিত। এক ব্যক্তি বলেছিলো: হে আল্লাহর রাসূল! আমার সম্পদ আছে, সন্তানও আছে। আমার পিতা আমার সমস্ত সম্পদ শেষ করে দিতে চান। তিনি বললেন: “তুমি ও তোমার সম্পদ সবই তোমার পিতার উপকারের জন্য”।
[সুনান ইবনু মাজাহ, হাদীস নং 2291, আল্লামা নাসেরুদ্দিন আল্ আলবাণী হাদীসটিকে সহীহ (সঠিক) বলেছেন]।
* এই হাদীস বর্ণনাকারী সাহাবীর পরিচয়:
জাবের বিন আব্দুল্লাহ আল্‌ আন্‌সারী একজন বিখ্যাত সাহাবী। তিনি তার পিতাসহ আকাবার রাতে আল্লাহর নাবী [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর সাথে বাইয়াত গ্রহণ করেছিলেন। এবং বাইয়াতে রিজওয়ানেও তিনি উপস্থিত (শামিল) ছিলেন। তিনি বেশী হাদীস বর্ণনাকারী সাহাবীগণের অন্তর্ভুক্ত। তার বর্ণিত হাদীসের সংখ্যা হলো 1540 টি। তিনি সন 73 হিজরীতে মৃত্যুবরণ করেন। এই বিষয়ে অন্য উক্তিও রয়েছে।
* এই হাদীস হতে শিক্ষণীয় বিষয়:
1। এই হাদীসটির দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, সন্তানের উপার্জিত মাল হতে পিতা ভক্ষণ করতে পারে; কেননা প্রকৃত ইসলামের শিক্ষার আলোকে সন্তানের উপার্জিত মাল পিতার পবিত্র উপার্জিত মালের অন্তর্ভুক্ত সম্পদ বলেই বিবেচিত। তবে জেনে রাখতে হবে যে, ছেলের উপার্জিত মালের প্রকৃত মালিক তার পিতাকে করা হয় নি। যেহেতু ছেলের উপার্জিত মালের প্রকৃত মালিক হলো স্বয়ং ছেলে নিজেই। তাই তাকেই তার মালের জাকাতও প্রদান করতে হবে এবং সে মৃত্যুবরণ করলে তার ত্যাজ্য সম্পত্তি তার উত্তরাধিকারীদের মধ্যে বন্টন করতে হবে। অতএব এই হাদীসটি ওই সমস্ত পিতামাতার প্রতি প্রযোজ্য, যে সমস্ত পিতামাতা প্রকৃতপক্ষে বিত্তহীন   বা অভাবগ্রস্ত। তাই বিত্তহীন পিতামাতার ভরণপোষণ বহন করা সন্তানের অপরিহার্য একটি কর্তব্য।
2। সন্তানের প্রয়োজনীয় সম্পদ পিতার জন্য নেওয়া জায়েজ নয়। কিংবা ছেলের ওই সমস্ত সম্পদ পিতা নিতে পারবে না, যে সমস্ত সম্পদ নিলে ছেলে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়বে। অনুরূপভাবে পিতা একটি ছেলের সম্পদ নিয়ে অকারণে অন্য আরেকটি ছেলেকে প্রদান করতে পারে না। তাই মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনের মধ্যে বলেছেন:
(وَلِأَبَوَيْهِ لِكُلِّ وَاحِدٍ مِنْهُمَا السُّدُسُ مِمَّا تَرَكَ إِنْ كَانَ لَهُ وَلَدٌ؛ فَإِنْ لَمْ يَكُنْ لَهُ وَلَدٌ وَوَرِثَهُ أَبَوَاهُ فَلِأُمِّهِ الثُّلُثُ) ...، سورة النساء، جزء من الآية 11.
ভাবার্থের অনুবাদ: “মৃতের পিতামাতার মধ্য থেকে প্রত্যেকের জন্য ত্যাজ্য সম্পত্তির মধ্যে মাত্র ছয় ভাগের এক ভাগ রয়েছে, যদি মৃতের পুত্র থাকে তবেই। তাই যদি মৃতের পুত্র না থাকে এবং পিতামাতাই ওয়ারিস ও উত্তরাধিকারী হয়, তাহলে মাতা পাবে মাত্র তিন ভাগের এক ভাগ”। ...
 (সূরা সুরা আন্নিসা, আয়াত নং 11 এর অংশবিশেষ)।
সুতরাং এই আয়াতটির দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, ছেলের উপার্জিত মালের প্রকৃত মালিক স্বয়ং ছেলে নিজেই, তার পিতা তার মালের প্রকৃত মালিক নয়। আর উত্তরাধিকারী হিসেবে পিতা সেই পরিমাণে ছেলের ত্যাজ্য মালের অধিকারী হতে পারবে, যেই পরিমাণের কথা এই আয়াতের মধ্যে নির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। এই নির্দিষ্ট অংশ ছাড়া পিতার জন্য অন্য কোনো অংশ নেই। তাই এই হাদীসটির ভাবার্থ হলো এই যে, পিতা যদি বৈভবশালী না হয়, তাহলে সে তার ছেলের মাল থেকে প্রয়োজন মত কিছু মাল নিতে পারে এমন একটি পদ্ধতিতে, যেই পদ্ধতিতে ছেলের ক্ষতি সাধন হবে না।   
3। এই হাদীসটির মধ্যে যে লাম অক্ষরটি ব্যবহার করা হয়েছে  " لأبيك" শব্দটির মধ্যে, সেই লাম অক্ষরটি পিতাকে তার ছেলের মালের মালিকানা প্রদান করার জন্য ব্যবহার করা হয় নি। কিন্তু ছেলের মালের দ্বারা পিতাকে তার প্রয়োজন বোধে এমন পদ্ধতিতে উপকৃত হওয়ার অধিকার প্রদান করা হয়েছে, যেই পদ্ধতিতে ছেলের কোনো প্রকারের ক্ষতি সাধন হবে না। এর প্রমাণ হলো এই যে, ছেলে যখন মৃত্যুবরণ করবে, তখন তার উত্তরাধিকারী হবে তার সন্তানসন্ততি, তার স্ত্রী, তার মাতা এবং তার পিতা । তাই এখানে বলা যায় যে, যদি ছেলের মালের মালিক তার পিতাই হতো, তাহলে তার পিতা ছাড়া অন্য কোনো মানুষ তার মালের উত্তরাধিকারী হতে পারতো না, সমস্ত মালের মালিক কেবল তার পিতাই হয়ে যেত, কিন্তু তা হয় নি বরং তার উত্তরাধিকারী হিসেবে অন্য লোকও নির্দিষ্ট রয়েছে।    
لا يجوز وضع اليد على الخاصرة في الصلاة
কোমরে হাত রেখে নামাজ পড়া জায়েজ নয়
23- عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، قَالَ: "نَهَى النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنْ يُصَلِّيَ الرَّجُلُ مُخْتَصِرًا".
(صحيح البخاري، رقم الحديث 1220، واللفظ له، وصحيح مسلم، رقم الحديث 46 - (545)،).
23 - অর্থ:  আবু হুরায়রা [রাদিয়াল্লাহু আনহু] হতে বর্ণিত, তিনি বলেন: নাবী কারীম [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] কোমরে হাত রেখে নামাজ পড়তে নিষেধ করেছেন।
[সহীহ বুখারী, হাদীস নং 1220 এবং সহীহ মুসলিম, হাদীস নং 46 - (545), তবে হাদীসের শব্দগুলি সহীহ বুখারী থেকে নেওয়া হয়েছে]।
* এই হাদীস বর্ণনাকারী সাহাবীর পরিচয় পূর্বে 1 নং হাদীসে উল্লেখ করা হয়েছে।
* এই হাদীস হতে শিক্ষণীয় বিষয়:
1। আরবী ভাষায় নামাজের মধ্যে কোমরের উপরে এক হাত কিংবা দুই হাত রেখে নামাজ পড়াকে (اَلْاِخْتِصَار) আল ইখতিসার বলা হয়। তবে এই বিষয়ে অন্য উক্তিও রয়েছে।
2। মুসলিম ব্যক্তির উচিত যে, সে যেন নামাজে প্রবেশ করে সব চেয়ে সুন্দর অবস্থায়।
3। এই হাদীসটির দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, কোমরে হাত রেখে নামাজ পড়া জায়েজ নয়।

 

جواز الشرب والأكل قائما
দণ্ডায়মান অবস্থায় পানাহার করা বৈধ
24- عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عُمَرَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا، قَالَ: كُنَّا نَأْكُلُ عَلَى عَهْدِ رَسُوْلِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَنَحْنُ نَمْشِي، وَنَشْرَبُ وَنَحْنُ قِيَامٌ.
(جامع الترمذي، رقم الحديث 1880، واللفظ له،  وسنن ابن ماجه، رقم الحديث 3301، وقال الإمام الترمذي عن هذا الحديث بأنه:  حسن صحيح غريب، وصححه الألباني).
24 - অর্থ:  আব্দুল্লাহ বিন ওমার [রাদিয়াল্লাহু আনহুমা] থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন যে, আমরা আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর আমলে হাঁটতে হাঁটতে খাদ্যদ্রব্য খেতাম এবং দণ্ডায়মান অবস্থায় পানীয় দ্রব্য পান করতাম।
[জামে তিরমিযী, হাদীস নং 1880 এবং সুনান ইবনু মাজাহ, হাদীস নং 3301, তবে হাদীসের শব্দগুলি জামে তিরমিযী থেকে নেওয়া হয়েছে। ইমাম তিরমিযী হাদীসটিকে হাসান ও সহীহ গারীব বলেছেন। আল্লামা নাসেরুদ্দিন আল্ আলবাণী হাদীসটিকে সহীহ (সঠিক) বলেছেন]।
* এই হাদীস বর্ণনাকারী সাহাবীর পরিচয় পূর্বে 11 নং হাদীসে উল্লেখ করা হয়েছে।
* এই হাদীস হতে শিক্ষণীয় বিষয়:
1। এই হাদীসটির দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, দণ্ডায়মান অবস্থায় খাদ্যদ্রব্য খাওয়া এবং পানীয় দ্রব্য পান করা বৈধ। এই বিষয়টির সমর্থনে আল্লাহর নাবী [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] থেকে বর্ণিত একটি হাদীসও রয়েছে। আর সেই হাদীসটি হলো এই যে, আল্লাহর নাবী [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] দণ্ডায়মান অবস্থায় এবং বসে বসে পানীয় দ্রব্য পান করেছেন। [জামে তিরমিযী, হাদীস নং 1883, ইমাম তিরমিযী হাদীসটিকে হাসান ও সহীহ বলেছেন। আল্লামা নাসেরুদ্দিন আল্ আলবাণী হাদীসটিকে হাসান (সুন্দর) বলেছেন]।
 2। যে হাদীসের মধ্যে দণ্ডায়মান অবস্থায় পানীয় দ্রব্য পান করতে নিষেধ করা হয়েছে, সেই হাদীসটির মধ্যে এই সম্ভাবনা রয়েছে যে, সেই হাদীসটির ওই ব্যক্তির জন্য প্রযোজ্য যে ব্যক্তি লোকজনের জন্য পানীয় দ্রব্য পরিবেশন করে। সুতরাং যে ব্যক্তি লোকজনের জন্য পানীয় দ্রব্য পরিবেশন করবে, তার জন্য উচিত নয় যে, সে পানীয় দ্রব্য পরিবেশন করতে করতে মাঝে মাঝে পরিবেশন কাজে রত থাকতে থাকতে স্বয়ং নিজেই দণ্ডায়মান অবস্থায় পানীয় দ্রব্য পান করতে শুরু করবে। কেননা পানীয় দ্রব্য পরিবেশনকারীর কর্তব্য হলো এই যে, সে সকলের জন্য      পানীয় দ্রব্য বেতরণ ও পরিবেশন কাজ শেষ করার পর সব শেষে নিজে পান করবে। তাই হাদীসের মধ্যে এসেছে: আল্লাহর নাবী [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলেছেন: “লোকদেরকে পানীয় দ্রব্য পরিবেশনকারী সবশেষে পান করবে”।
[জামে তিরমিযী, হাদীস নং 1894 এবং সহীহ মুসলিম, হাদীস নং 311 - (681) এর অংশবিশেষ। তবে হাদীসের শব্দগুলি জামে তিরমিযী থেকে নেওয়া হয়েছে। ইমাম তিরমিযী এই হাদীসটিকে হাসান সহীহ (সঠিক) বলেছেন। আল্লামা নাসেরুদ্দিন আল্ আলবাণী হাদীসটিকে সহীহ (সঠিক) বলেছেন]। এই বিষয়ে মহান আল্লাহই সবচেয়ে বেশি জানেন।
فضل سورة الإخلاص
সূরা ইখলাসের মর্যাদা
25- عَنْ أَبِيْ الدَّرْدَاءِ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قَالَ: "أَيَعْجِزُ أَحَدُكُمْ أَنْ يَقْرَأَ فِيْ لَيْلَةٍ ثُلُثَ الْقُرْآنِ؟ قَالُوْا: وَكَيْفَ يَقْرَأْ ثُلُثَ الْقُرْآنِ؟ قَالَ: "(قُلْ هُوَ اللَّهُ أَحَدٌ) تَعْدِلُ ثُلُثَ الْقُرْآنِ".
(صحيح مسلم، رقم الحديث 259- (811)، ).
অর্থ:  আবুদ্দারদা [রাদিয়াল্লাহু আনহু] থেকে বর্ণিত। তিনি আল্লাহর নাবী [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] থেকে বর্ণনা করেছেন: নাবী কারীম [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলেছেন: “তোমাদের মধ্যে থেকে কোনো ব্যক্তি রাত্রিকালে পবিত্র কুরআনের এক তৃতীয়াংশ তিলাওয়াত করতে ক্ষমতা রাখেনা কি? তারা বললেন: পবিত্র কুরআনের এক তৃতীয়াংশ কিভাবে পড়া সম্ভব হবে? তিনি বললেন:
(قُلْ هُوَ اللَّهُ أَحَدٌ)
অর্থাৎ “সূরা ইখলাস হলো পবিত্র কুরআনের এক তৃতীয়াংশের সমতুল্য”।
 [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং 259 - (811) ]।
* এই হাদীস বর্ণনাকারী সাহাবীর পরিচয়:
আবুদ্দারদা, তিনি ওয়াইমের বিন কাইস আল্‌ খাজরাজী আল আনসারী, একজন বিখ্যাত সাহাবী। বদরের যুদ্ধের দিন তিনি ইসলাম গ্রহণ করেন। এই উম্মতের একজন বিশিষ্ট বিচক্ষণ ব্যক্তি (حكيم هذه الأمة) হিসেবে তিনি উপাধি লাভ করেছেন। দামেশকে তিনি বিচারপতি ও পবিত্র কুরআনের কারীগণের মধ্যে প্রধান ব্যক্তি হিসেবে প্রসিদ্ধ ছিলেন। তিনি আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর জীবদ্দশাতে পবিত্র কুরআনের একত্রিকরণ, সংরক্ষণ সংক্রান্ত এবং মুখস্থকরণের কাজে নিয়োজিত ছিলেন [রাদিয়াল্লাহু আনহু] ।
হাদীস গ্রন্থে তাঁর কাছ থেকে বর্ণিত 179 টি হাদীস পাওয়া যায়। তিনি সন 32 হিজরীতে অথবা 31 হিজরীতে 72 বছর বয়সে তৃতীয় খালীফা ওসমান বিন আফ্‌ফানের শাহাদতবরণের তিন বছর পূর্বে মৃত্যুবরণ করেন।

 

* এই হাদীস হতে শিক্ষণীয় বিষয়:
1। এই হাদীসটি এই কল্যাণময় সূরাটির  মর্যাদার বিবরণ পেশ করে, এই সূরাটির নাম হলো সূরা ইখলাস। এই সূরাটির তিলাওয়াত করার মর্যাদা হলো পবিত্র কুরআনের এক তৃতীয়াংশের তিলাওয়াত করার মর্যাদার সমান। এবং মহান আল্লাহর কৃপায় এই সূরাটির তিলাওয়াত করার পুণ্য হলো পবিত্র কুরআনের এক তৃতীয়াংশের তিলাওয়াত করার পুণ্যের সমান।  
2। মুসলিম ব্যক্তির উচিত যে, সে যেন সূরা ইখলাসের সাথে সাথে সম্পূর্ণ কুরআন তিলাওয়াত করার প্রতি গুরুত্ব প্রদান করে। কেননা তার জন্য তাতে তো মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে ইহকাল ও পরকালের সুখময় জীবন লাভ করার পথ প্রদর্শন করা হয়েছে।
حث الشباب على الزواج
যুবক সমাজকে বিবাহ করার প্রতি উৎসাহ প্রদান করা  
26- عَنْ عَبْدِ اللَّهِ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ, قَالَ: قَالَ لَنَا رَسُوْلُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: "يَا مَعْشَرَ الشَّبَابِ! مَنِ اسْتَطَاعَ منكُم الْبَاءَةَ؛ فَلْيَتَزَوََّجْ؛ فَإِنََّهُ أَغَضُُ لِلْبَصَرِ، وَأَحْصَنُ لِلْفَرْجِ، وَمَنْ لَمْ يَسْتَطِعْ؛ فَعَلَيْهِ بِالصََّوَْمِ؛ فَإِنََّهُ لَهُ وِجَاءٌ".
(صحيح مسلم، رقم الحديث 3 - (1400)، واللفظ له، وصحيح البخاري، رقم الحديث 5066).
26 - অর্থ: আব্দুল্লাহদ বিন মাসউদ [রাদিয়াল্লাহু আনহু] হতে বর্ণিত। তিনি বলেন যে, আমরা নাবী কারীম [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর সাথে অসহায় অবস্থায় ছিলাম; তাই তিনি আমাদেরকে লক্ষ্য করে বললেন: “হে যুবক সমাজ! তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি বিবাহ করার সামর্থ্য রাখবে, সে ব্যক্তি  বিবাহ করবে। যেহেতু বিবাহ হলো দৃষ্টিক্ষুধার মহানিয়ন্ত্রণকারী এবং সতীত্ব সংরক্ষণের মহাসম্বল। আর যে ব্যক্তি বিবাহ করার সামর্থ্য রাখবে না, সে ব্যক্তি রোজা রাখবে। কেননা এই রোজা তাকে তার যৌন উত্তেজনার অমঙ্গল হতে রক্ষা করবে”।
[সহীহ মুসলিম, হাদীস নং  3 -(1400) এবং সহীহ বুখারী, হাদীস নং 5066 তবে হাদীসের শব্দগুলি সহীহ মুসলিম থেকে নেওয়া হয়েছে]।
* এই হাদীস বর্ণনাকারী সাহাবীর পরিচয় পূর্বে 2 নং হাদীসে উল্লেখ করা হয়েছে।
* এই হাদীস হতে শিক্ষণীয় বিষয়:
1- এই হাদীসটির মধ্যে (الْبَاءَة) শব্দটি ভরণপোষণের অর্থ নেওয়া হয়েছে। সুতরাং যে ব্যক্তি নিজের স্ত্রীর ভরণপোষণের ক্ষমতা রাখবে সে ব্যক্তি বিবাহ করবে। আর যে ব্যক্তি বিবাহ করার সামর্থ্য রাখবে না, সে ব্যক্তি রোজা রাখবে। আর যে ব্যক্তির মধ্যে যৌন ক্ষমতা বা সংগমের ক্ষমতা নেই সে ব্যক্তির রোজা রাখার প্রয়োজন নেই। যেহেতু তার যৌন ক্ষমতা দমন করার দরকার নেই। এই ক্ষেত্রে (الْبَاءَة) শব্দটির ভরণপোষণের অর্থে নেওয়া অপরিহার্য হয়ে যাবে। তবে ইসলাম ধর্মের কতকগুলি বিদ্বান (আল্লাহ তাঁদের প্রতি দয়া করুন) বলেছেন: বিবাহ করার সামর্থ্য বলতে দুইটি বিষয় বুঝানো হয়:
প্রথম বিষযটি হলো: বিবাহ করার সামর্থ্য এবং নিজের স্ত্রীর ভরণপোষণের ক্ষমতা। দ্বিতীয় বিষযটি হলো: যৌন ক্ষমতা বা সংগমের ক্ষমতা।
সুতরাং যে ব্যক্তি নিজের স্ত্রীর ভরণপোষণের ক্ষমতা রাখবে এবং যৌন ক্ষমতা বা সংগমের ক্ষমতা রাখবে, সে ব্যক্তি বিবাহ করবে।
এই হাদীসটির মধ্যে (وِجَاءٌ) শব্দটির দ্বারা যৌন ক্ষমতা দমন ও যৌন কুপ্রবৃত্তির অমঙ্গল এবং অশালীন কর্ম নিয়ন্ত্রণ করার অর্থ নেওয়া হয়েছে।
2- যে ব্যক্তি নিজের স্ত্রীর ভরণপোষণের ক্ষমতা রাখবে এবং যৌন ক্ষমতা বা সংগমের ক্ষমতা রাখবে, সে ব্যক্তি যেন বিবাহ করে, তার প্রতি এই হাদীসটি গভীরভাবে উৎসাহ প্রদান করে।  
3- মানব জীবনে বিবাহের প্রভাব অতি গভীর; তাই এর দ্বারা লজ্জাস্থান এবং দৃষ্টির অমঙ্গল হতে সুন্দর ও সঠিক পন্থায় রক্ষা পাওয়া যায়। আর আত্মসংযম ও আত্মশুদ্ধির চর্চা হয় এবং যৌন কুপ্রবৃত্তির অমঙ্গল হতে পরিত্রাণও পাওয়া যায়।
من خصائص النَّبِيِّ مُحَمَّدٍ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ
বিশ্বনাবী মুহাম্মদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর কতকগুলি বৈশিষ্ট্য
27-عَنْ جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: "أُعْطِيْتُ خَمْسًا لَمْ يُعْطَهُنَّ أَحَدٌ مِنَ الْأَنْبِيَاءِ قَبْلِيْ: نُصِرْتُ بِالرُّعْبِ مَسِيرَةَ شَهْرٍ، وَجُعِلَتْ  لِيَ الْأَرْضُ مَسْجِدًا وَطَهُوْرًا، وَأَيُّمَا رَجُلٍ مِنْ أُمَّتِي أَدْرَكَتْهُ الصَّلَاةُ؛ فَلْيُصَلِّ، وَأُحِلَّتْ لِيَ الْغَنَائِمُ، وَكَانَ النَّبِيُّ يُبْعَثُ إِلَى قَوْمِهِ خَاصَّةً، وَبُعِثتُ إِلَى النَّاسِ كَافَّةً، وَأُعْطِيْتُ الشَّفَاعَةَ".
(صحيح البخاري، رقم الحديث 438، واللفظ له،  وصحيح مسلم، رقم الحديث 3 - (521)،).
27 - অর্থ: জাবের বিন আব্দুল্লাহ [রাদিয়াল্লাহু আনহুমা] থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন যে, আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলেছেন:  “আমাকে এমন পাঁচটি বিষয় প্রদান করা হয়েছে, যে বিষয় পাঁচটি আমার পূর্বে কোনো নাবীকে প্রদান করা হয় নি। উক্ত পাঁচটি বিষয় হলা:
 (১) -  আমাকে আমার অনিষ্টকারীদের ভীতিগ্রস্ত করার জন্য এমন একটি প্রভাব প্রদানের দ্বারা সাহায্য করা হয়েছে যা একমাসের দূরত্ব স্থান থেকেই অনুভব করা যায়।
 (২) -  সমস্ত জমিন আমার জন্য নামাজ পড়ার স্থান ও পবিত্রতার্জনের উপায় করা হয়েছে। কাজেই আমার উম্মতের যে কোনো ব্যক্তি যেখানেই নামাজের সময় পেয়ে যাবে, সেখানেই যেন সে নামাজ পড়ে।
 (৩) -  আমার জন্য গানীমাতের মাল (ইসলামের শিক্ষা মোতাবেক যুদ্ধলব্ধ সম্পদ) হালাল ও বৈধ করে দেওয়া হয়েছে।
 (৪) -  পূর্ববর্তী নাবীগণ কোনো বিশেষ জাতির জন্য প্রেরিত হয়েছিলেন। আর আমি সকল জাতির মানব সমাজের জন্য প্রেরিত হয়েছি।
 (৫) -  মানুষের মঙ্গলার্থে মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে  আমাকে ব্যাপকভিত্তিক পরকালে সুপারিশের ক্ষমতা প্রদান করা হয়েছে”।
[সহীহ বুখারী, হাদীস নং 438 এবং সহীহ মুসলিম, হাদীস নং 3 - (521), তবে হাদীসের শব্দগুলি সহীহ বুখারী থেকে নেওয়া হয়েছে]।
* এই হাদীস বর্ণনাকারী সাহাবীর পরিচয় পূর্বে 22 নং হাদীসে উল্লেখ করা হয়েছে।
* এই হাদীস হতে শিক্ষণীয় বিষয়:
1- নিশ্চয় মহান আল্লাহ তাঁর রাসূল মুহাম্মদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] কে কতকগুলি বৈশিষ্ট্য প্রদান করেছেন। উক্ত বৈশিষ্ট্যগুলির মধ্যে থেকে এখানে কয়েকটি বৈশিষ্ট্যের কথা উল্লেখ করা হলো:
ক। ভীতিগ্রস্ত হওয়ার প্রভাব: ভয় লাগা, ডর করা, আশঙ্কা করা। সুতরাং মহান আল্লাহ তাঁর রাসূল মুহাম্মদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর অনিষ্টকারীদের অন্তরে নিক্ষেপ করেন ভয় ভীতি। তাই আল্লাহর রাসূল মুহাম্মদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর মধ্যে এবং তাঁর অনিষ্টকারীদের মধ্যে এক মাসের রাস্তা অতিক্রম করার দূরত্ব ও ব্যবধান থাকলেও তারা তাঁর ভয়ে ভীতিগ্রস্ত হয়ে পড়ে। এই বিষয়টি আল্লাহর রাসূল মুহাম্মদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর মৃত্যুবরণ করার পর তাঁর অনুসারী উম্মতের জন্য নির্ধারিত রয়েছে।
খ। মহান আল্লাহ তাঁর রাসূল মুহাম্মদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] কে অন্য একটি বৈশিষ্ট্য প্রদান করেছেন। আর সেই বৈশিষ্ট্যটি হলো প্রকৃতপক্ষে সকল জাতির মানব সমাজের মধ্যে আল্লাহর রাসূল মুহাম্মদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর মুসলিম উম্মতের জন্য। সুতরাং মুসলিম জাতির জন্য জমিনকে নামাজ পড়ার স্থান ও পবিত্রতার্জনের উপায় করা হয়েছে। তাই কোনো মুসলিম ব্যক্তির যখন নামাজ পড়ার সময় হয়ে যাবে,  তখন সে পানি না পেলে তায়াম্মুম করে নিবে এবং যে স্থানে থাকবে সেই স্থানেই সে নামাজ পড়ে নিবে। কেননা সেই স্থানই তার নামাজ পড়ার জায়গা। তবে যে সব জায়গাতে নামাজ পড়া জায়েজ নয়, সেই সব জায়গাতে নামাজ পড়া চলবে না, যেমন:- অপবিত্র জায়গা, কবরস্থান, রাস্তা, আবর্জনা নিক্ষেপ করার স্থান, জীবজন্তু জবাই করার স্থান ইত্যাদি; কেননা এই সব জায়গাতে তো নামাজ পড়া নিষিদ্ধ করা হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে নামাজ জামাআতের সহিত পড়ার বিধানটি নির্ধারিত রয়েছে। কিন্তু সফরের কারণে কিংবা অসুস্থতা বা বৃষ্টির কারণে অথবা অন্য কোনো বৈধ অজুহাতের কারণে মানুষ যে স্থানে থাকবে সেই স্থানেই নামাজ পড়ে নিবে।
গ। মহান আল্লাহ মহা অনুগ্রহ করে মুসলিম জাতির জন্য ইসলামের শিক্ষা মোতাবেক গানীমাতের মাল (যুদ্ধলব্ধ সম্পদ) হালাল ও বৈধ করেছেন।
ঘ। মহান আল্লাহ তাঁর রাসূল মুহাম্মদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] কে সকল জাতির মানব সমাজের প্রতি প্রেরণ করেছেন। সুতরাং প্রকৃত ইসলামের একটি বৈশিষ্ট্য হলো এই যে, ইসলামের বার্তা সার্বজনীন বিশ্বধর্মের বার্তা; অতএব এই পৃথিবীর বুকে কেয়ামত বা মহা প্রলয় সংঘটিত হওয়া পর্যন্ত প্রকৃত ইসলামই হলো একটি আন্তর্জাতিক বিশ্বধর্ম। এবং এই ধর্ম সমস্ত প্রকারের মানুষের জন্য প্রযোজ্য আর সকল যুগের জন্য উপযোগী । তাই এই ধর্ম হলো একটি যুগোপযোগী ধর্ম।
ঙ। পরকালে সমস্ত মানুষের মঙ্গলার্থে মহান আল্লাহ তাঁর রাসূল মুহাম্মদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] কে ব্যাপকভাবে সুপারিশ করার বৈশিষ্ট্য প্রদান করেছেন। সেই কেয়ামতের দিনে হাশরের ময়দানে প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত সমস্ত মানুষকে মহান আল্লাহ একই স্থানে একত্রিত করবেন। সমস্ত মানুষ যখন সেই কঠিন ভয়ানক দিনে এবং ভীষণ সমস্যার স্থানে অত্যন্ত আতঙ্কিত হয়ে অশান্তির মধ্যে থাকবে, তখন আল্লাহর রাসূল মুহাম্মদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] সকল মানুষের নিষ্পত্তি ও ফয়সালার জন্য মহান আল্লাহর কাছে মহা সুপারিশ করবেন। এবং যেই স্থানে আল্লাহর রাসূল মুহাম্মদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] মহান আল্লাহর কাছে এই মহা সুপারিশ করবেন, সেই স্থানের নামটি হলো মাকাম মাহমূদ। এই পবিত্র মাকাম মাহমূদ স্থানের প্রতিশ্রুতি মহান আল্লাহ তাঁর রাসূল মুহাম্মদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] কে প্রদান করেছেন।
2- বিশ্বনাবী মুহাম্মদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] কে এবং মুসলিম জাতিকে মহান আল্লাহ উল্লিখিত বৈশিষ্ট্যগুলি প্রদান করেছেন; তাই মুসলিম ব্যক্তির প্রতি একটি অপরিহার্য বিষয় হলো এই যে, সে যেন পরাক্রমশালী মহান আল্লাহর কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করে।
  من أوصاف الجنة
জান্নাতের বিবরণ
28- عَنْ أَبيْ مُوْسَى الْأَشْعَرِيِّ عَبْدِ اللهِ بْنِ قَيْسٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ، أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قَالَ: "إِنَّ فِي الْجَنَّةِ خَيْمَةً مِنْ لُؤْلُؤَةٍ  مُجَوَّفَةٍ، عَرْضُهَا سِتُّونَ مِيْلاً، فِيْ كُلِّ زَاوِيَةٍ مِنْهَا أَهْلٌ، مَا يَرَوْنَ الْآخَرِيْنَ، يَطُوْفُ عَلَيْهِمُ الْمُؤْمِنُ".
(صحيح مسلم، رقم الحديث 24 - (2838)، واللفظ له،  وصحيح البخاري، رقم الحديث 4879).
28 - অর্থ: আবু মুসা আল আশআরী [রাদিয়াল্লাহু আনহু] হতে বর্ণিত যে,  নিশ্চয় আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলেছেন: “অবশ্যই জান্নাতের মধ্যে সুশোভিত মোতির গোলাকার তাঁবু রয়েছে, যার প্রস্থ ষাট মাইল। তাঁবুগুলির প্রতিটি কোণে কিছু লোক রয়েছে, তার এক কোণে যারা থাকবে তারা অপর কোণের লোকদেরকে দেখতে পাবে না। প্রকৃত ঈমানদার মুসলিম ব্যক্তি তাদের সকলের কাছে ঘুরে বেড়াবে” ।
[সহীহ মুসলিম, হাদীস নং 24-(2838) এবং সহীহ বুখারী, হাদীস নং 4879, তবে হাদীসের শব্দগুলি সহীহ মুসলিম থেকে নেওয়া হয়েছে]।
* এই হাদীস বর্ণনাকারী সাহাবীর পরিচয়:
আবু মুসা আব্দুল্লাহ বিন ক্যাইস বিন সোল্যাইম আল আশয়ারী আল ইয়ামানী [রাদিয়াল্লাহু আনহু]। তিনি মাক্কায় উপস্থিত হয়ে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন। অত:পর আবার ইয়ামানে ফিরে গিয়ে আবুসিনিয়া (অথবা ইথিওপিয়া আফ্রিকার একটি দেশ) অভিমুখে যাত্রা করেন। খাইবার বিজয়ের পর তিনি আবার মাদীনায় আসেন এবং বিভিন্ন যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করেন। তিনি সাহাবীগণের মধ্যে সকলের চেয়ে অতি সুন্দর কন্ঠে কুরআন তেলাওয়াত করতে পারতেন। এবং তিনি ইবাদতের ক্ষেত্রে, জ্ঞান ও পাণ্ডিত্যের বিষয়ে এবং পরহেজগারীতায় প্রসিদ্ধ সাহাবী ছিলেন। তিনি কুফা শহরে অথবা মাদীনায় সন 44 হিজরীতে মৃত্যুবরণ করেন [রাদিয়াল্লাহু আনহু] । এই বিষয়ে অন্য উক্তিও রয়েছে।
* এই হাদীস হতে শিক্ষণীয় বিষয়:
1। এই হাদীসটির দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, পরকালে প্রকৃত ঈমানদার মুসলিমগণের বাসস্থান জান্নাত এবং জান্নাতের নেয়ামতের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করা একটি অপরিহার্য বিষয়।
2। জান্নাত হলো পরকালের চিরস্থায়ীর সুখময় স্থান, মহান আল্লাহ তাঁর অনুগত ঈমানদার মুসলিম ব্যক্তিদের জন্য এই জান্নাতকে প্রস্তুত করেছেন। সুতরাং পরকালের এই জান্নাত হলো প্রকৃতপক্ষে তাদের বাসস্থান। সেই জান্নাতে রয়েছে অনেক নদী, অনেক ফল, অনেক সম্পদ এবং অনেক গাছ। সেখানে আরো রয়েছে ইচ্ছামত পানাহার ও আরামের সুব্যবস্থা এবং সুখশান্তিপূর্ণ জীবনের সমস্ত উপাদান। তাই সেখানে কোনো প্রকারের ক্লান্তি কিংবা অসুস্থতা ও অশান্তি অথবা কষ্ট নেই।
3।  প্রকৃত ইসলামের শিক্ষা মেতাবেক মহান আল্লাহর প্রতি সঠিক ঈমান এবং সৎ কর্মই হলো জান্নাত লাভের প্রকৃত উপাদান। তাই প্রকৃত মুসলিম ব্যক্তির উচিত যে, সে যেন প্রকৃত ইসলামের শিক্ষা অনুযায়ী সৎ লোকদের নিয়ম মেতাবেক মহান আল্লাহ ও তদীয় রাসূল মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর আনুগত্য করে এবং মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ করে তাঁর কৃপায় ও অনুগ্রহে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারে।

 

 

 

جواز الاشتراك في الهدي والأضحية
হজ্জের হাদয়ী ও কুরবানির পশুতে অংশ গ্রহণ করা বৈধ
29- عَنْ جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا، أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ:  "الْبَقَرَةُ عَنْ سَبْعَةٍ، وَالْجَزُوْرُ عَنْ سَبْعَةٍ".  
(سنن أبي داود، رقم الحديث 2808، وصححه الألباني).
29 - অর্থ: জাবের বিন আব্দুল্লাহ [রাদিয়াল্লাহু আনহুমা] থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন যে, নিশ্চয় আল্লাহর নাবী [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলেছেন:  “একটি গরু সাত জনের পক্ষ থেকে এবং একটি উট সাত জনের পক্ষ থেকে কুরবানি করতে পারা যায়”।
[সুনান আবু দাউদ, হাদীস নং 2808, আল্লামা নাসেরুদ্দিন আল্ আলবাণী হাদীসটিকে সহীহ (সঠিক) বলেছেন]।
* এই হাদীস বর্ণনাকারী সাহাবীর পরিচয় পূর্বে 22 নং হাদীসে উল্লেখ করা হয়েছে।
* এই হাদীস হতে শিক্ষণীয় বিষয়:
1- হজ্জের হাদয়ী ও কুরবানির উটে কত জন লোক অংশ গ্রহণ করতে পারবে, এই বিষয়টিকে লক্ষ্য করে ওলামায়ে ইসলামের মধ্যে এবং ইসলাম ধর্মের বিদ্বানগণের মধ্যে একটু মতভেদ রয়েছে। তবে ইসলামের বেশির ভাগ পণ্ডিতগণের নিকটে হজ্জের হাদয়ী ও কুরবানির একটি উটে সাত জন লোক অংশ গ্রহণ করতে পারবে। এবং ইসলামের কতকগুলি পণ্ডিতগণের নিকটে হজ্জের হাদয়ী ও কুরবানির একটি উটে দশ জন লোক অংশ গ্রহণ করতে পারবে।
2- আবার কতকগুলি ওলামায়ে ইসলামের মতে কুরবানির একটি উটে দশ জন লোক অংশ গ্রহণ করতে পারবে। তাঁদের দলিল হলো এই যে,  আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস [রাদিয়াল্লাহু আনহুমা] থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন যে, আমরা আল্লাহর নাবী [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর সাথে এক সফরে ছিলাম। এমতাবস্থায় কুরবানির ঈদ উপস্থিত হলো। তখন আমরা সাত জন লোক একটি গরুতে অংশ গ্রহণ করলাম এবং দশ জন লোক একটি উটে অংশ গ্রহণ করলাম।
[জামে তিরমিযী, হাদীস নং 905,  এবং সুনান নাসায়ী, হাদীস নং 4392 এবং সুনান ইবনু মাজাহ, হাদীস নং 3131, তবে হাদীসের শব্দগুলি জামে তিরমিযী থেকে নেওয়া হয়েছে। ইমাম তিরমিযী হাদীসটিকে হাসান গারীব বলেছেন। আল্লামা নাসেরুদ্দিন আল্ আলবাণী হাদীসটিকে সহীহ (সঠিক) বলেছেন]। তাই হজ্জের হাদয়ীর একটি উটে দশ জন লোক অংশ গ্রহণ করতে পারে না। কিন্তু হজ্জের হাদয়ীর একটি গরুতে এবং কুরবানির একটি গরুতে সাত জন লোক অংশ গ্রহণ করতে পারবে।
3। এই হাদীসটির দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, হজ্জের হাদয়ী ও কুরবানির একটি উটে অথবা একটি গরুতে সাত জন লোকের অংশ গ্রহণ করা জায়েজ। তাই সাত জন লোক একটি উটে অথবা একটি গরুতে অংশ গ্রহণ করতে পারবে। কিন্তু একটি ছাগলে এক জন ছাড়া অন্য কোনো লোক অংশ গ্রহণ করতে পারবে না। তবে এখানে একটি বিষয় জেনে রাখা দরকার যে, হজ্জের হাদয়ী ও কুরবানির জন্য যেহেতু একটি গরুতে সাত জন লোকের অংশ গ্রহণ করা জায়েজ। সেহেতু সাত জন লোক একটি গরুতে অংশ গ্রহণ না করে, যদি তার চেয়ে কম সংখ্যার লোকে একটি গরু কুরবানি করে, তাহলে তা উত্তম পন্থায় জায়েজ হবে। যেমন:-  শুধু এক জন লোক যদি একটি গরু কুরবানি করে তাহলে তা বৈধ, যদিও তার জন্য একটি ছাগল কুরবানি করাই হলো যথেষ্ট বিষয়। তাই এই বিষয়টির জায়েজ হওয়ার মধ্যে কোনো প্রকারের সন্দেহ নেই যে, একটি গরুতে কিংবা একটি উটে যদি সাত জনের পূর্ণ সংখ্যা না হয় তবুও তা জায়েজ হবে এবং অবৈধ হবে না। সুতরাং একটি গরুতে অথবা একটি উটে যদি দুই জন অথবা তিন জন কিংবা চার জন বা পাঁচ জন বা ছয় জন মিলে কুরবানি করে, তাহলে তা জায়েজ বলেই বিবেচিত হবে। কেননা যদি সাত ভাগের এক ভাগের দ্বারা কুরবানি করা জায়েজ হয়, তাহলে এর চেয়ে বেশি অংশের দ্বারা কুরবানি করলে তা উত্তম পন্থায় জায়েজ হবে। এতে যদি অংশীদারের ভাগ সমান হয় কিংবা কম বেশি হয় তাহলে তাতে কোনো সমস্যা নেই বা জটিলতা নেই। অতএব হাদয়ী বা কুরবানির জন্য কোনো ব্যক্তি যদি একটি গরুর অর্ধেক অংশ নিতে চায় এবং অন্য কোনো ব্যক্তি যদি একটি গরুর তৃতীয়াংশ নিতে চায়। আবার আরেক জন লোক যদি একটি গরুর ষষ্ঠাংশ নিতে চায়। তাহলে তাতেও কোনো সমস্যা নেই বা জটিলতা নেই। তাই এই বিষয়ের সারাংশ হলো এই যে, কোনো এক জন ব্যক্তি একটি গরুর অথবা একটি উটের সপ্তমাংশের কম অংশের দ্বারা হজ্জের হাদয়ী বা কুরবানি করতে পারে না। কিন্তু একটি গরুর অথবা একটি উটের সপ্তমাংশের বেশি অংশের দ্বারা কুরবানি করলে বা হাদয়ী  প্রদান করলে তা উত্তম পন্থায় জায়েজ হবে।
تفاوت عذاب أهل جهنم
জাহান্নামবাসীদের শাস্তির মধ্যে ব্যবধান
30- عَنْ سَمُرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ أَنَّهُ سَمِعَ نَبِيََّ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: "إِنََّ مِنْهُمْ مَنْ تَأْخُذُهُ النَّارُ إِلَى كَعْبَيْهِ، وَمِنْهُمْ مَنْ تَأْخُذُهُ إِلَى حُجْزَتِهِ، وَمِنْهُمْ مَنْ تَأْخُذُهُ إِلَى عُنُقِهِ".
 (صحيح مسلم، رقم الحديث 32 - (2845)، ).
30 - অর্থ: সামুরা [রাদিয়াল্লাহু আনহু] থেকে বর্ণিত। তিনি আল্লাহর নাবী [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] কে এই কথাটি বলতে শুনেছেন: আল্লাহর নাবী [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলেছেন: “জাহান্নামীদের মধ্যে থেকে কোনো ব্যক্তিকে জাহান্নামের অগ্নি তার উভয় টাখনু পর্যন্ত গ্রাস করবে। আবার কোনো ব্যক্তিকে তার কোমর পর্যন্ত গ্রাস করবে এবং কোনো ব্যক্তিকে তার গর্দান পর্যন্ত গ্রাস করবে”।
[সহীহ মুসলিম, হাদীস নং 32 - (2845) ]।
* এই হাদীস বর্ণনাকারী সাহাবীর পরিচয়:
সামুরা বিন জুনদুব আলফাজাজী [রাদিয়াল্লাহু আনহু] হলেন এক জন বিখ্যাত সাহাবী। তিনি জাহেলিয়াতের যুগ দেখতে পাননি। কেননা তিনি আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর সাথে সাক্ষাৎ করেছিলেন শিশু অবস্থায়। তিনি তাঁর পিতার মৃত্যুবরণ করার পর এতিম ও অনাথ অবস্থায় সৎবাবার কাছে লালিতপালিত হয়েছেন। পরে তিনি আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর সাথে একাধিক  যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। তিনি একজন সৌজন্যশীল, সাহসী, যোদ্ধা সাহাবী ছিলেন। কিন্তু তিনি রাষ্ট্রনীতির বিষয়ে অসহিষ্ণুতার মধ্যে থাকতেন। সুতরাং তিনি রাষ্ট্রীয় বিরোধীদের সাথে অত্যন্ত কঠোরতা অবলম্বন করতেন। তাঁর বর্ণিত হাদীসের সংখ্যা হলো 100 টি।
 সামুরা বিন জুনদুব আলফাজাজী [রাদিয়াল্লাহু আনহু] বাসরা শহরে গিয়ে স্থায়ীভাবে অবস্থান করেন। তাঁর আমলে কুফা শহর এবং বাসরা শহরের আমির বা রাষ্ট্রীয় শাসক ও পরিচালক ছিলেন জিয়াদ। তাই জিয়াদ যখন কুফা শহরে থাকতেন তখন তিনি তাঁকে বাসরা শহরের আমির বা রাষ্ট্রীয় শাসক নিযুক্ত করতেন। আর তিনি যখন বাসরা শহরে থাকতেন তখন তিনি তাঁকে কুফা শহরের আমির ও রাষ্ট্রীয় শাসক নিযুক্ত করতেন। সুতরাং তিনি কুফা শহরে এবং বাসরা শহরে ছয় মাস করে থাকতেন। তিনি রাষ্ট্রীয় বিরোধী খাওয়ারেজ দলের সাথে অত্যন্ত কঠোরতা অবলম্বন করতেন। কেননা ওই খাওয়ারেজ দলের লোকেরা সাধারণভাবে মুসলিমদেরকে কাফের ও অমুসলিম হিসেবে পরিগণিত করতো। এবং সাধারণ মুসলিমদের প্রাণনাশ করতো। তাই সামুরা বিন জুনদুব আলফাজাজী [রাদিয়াল্লাহু আনহু] এর কাছে ওই খাওয়ারেজ দলের কোনো ব্যক্তিকে হাজির করা হলে তাকে তিনি হত্যা করতেন।         
তিনি অতি গরম পানির হাঁড়িতে পড়ে গিয়ে মৃত্যুবরণ করেন। তিনি সন 58 হিজরীতে মৃত্যুবরণ করেন। তবে এই বিষয়ে অন্য উক্তিও রয়েছে। [রাদিয়াল্লাহু আনহু]
* এই হাদীস হতে শিক্ষণীয় বিষয়:
1- এই হাদীসটির দ্বারা একটি বিষয় সাব্যস্ত হয়, আর সেই বিষয়টি হলো এই যে, জাহান্নামবাসীদের শাস্তির মধ্যে অনেক তফাৎ থাকবে। এবং অমুসলিম ও পাপাচারী মুসলিমদের জাহান্নামের শাস্তির মধ্যে তাদের পাপ কর্ম হিসেবে অনেক পার্থক্য থাকবে। সুতরাং যারা মহা পাপ করেছে তাদের শাস্তির মধ্যে এবং যারা ছোটো পাপ করেছে তাদের শাস্তির মধ্যে অনেক ব্যবধান থাকবে। কেননা ছোটো বড়ো পাপের মধ্যে যেমন ব্যবধান রয়েছে, তেমনি জাহান্নামের ভিতরে ছোটো বড়ো পাপের শাস্তির মধ্যেও ব্যবধান ও পার্থক্য রয়েছে।  
2- জাহান্নামে যাওয়ার বা জাহান্নামে প্রবেশ করার উপাদানে লিপ্ত হওয়া থেকে এই হাদীসটি সতর্ক করে। জাহান্নামে প্রবেশ করার উপাদান এমন কতকগুলি বিষয় আছে যে, সেই বিষয়গুলি যে ব্যক্তির মধ্যে থাকবে সে ব্যক্তি চিরস্থায়ীর জন্য জাহান্নামবাসী হয়ে যাবে। যেমন:-  মহান আল্লাহর সাথে শির্ক ও কুফুরী করা। আবার জাহান্নামে প্রবেশ করার উপাদান এমনও কতকগুলি বিষয় আছে যে, সেই বিষয়গুলি যে ব্যক্তির মধ্যে থাকবে সে ব্যক্তি পাপাচারী বলে বিবেচিত হবে। এবং সে তার পাপাচারের কারণে জাহান্নামবাসী হয়ে যাবে কিন্তু সে চিরস্থায়ীর জন্য জাহান্নামবাসী হবে না। যেমন:- যেমন ব্যভিচার করা, সমকাম, সমমৈথুন বা পুরুষের সাথে পুরুষের যৌনমিলন করা এবং চুরি করা ইত্যাদি।  
أيام عيد الأضحى
কুরবানির ঈদের দিনের সংখ্যা
31- عَنْ عُقْبَةَ بْنِ عَامِرٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ، قَالَ: قَالَ رَسُوْلُ اللَّهِ صَلَّى اللَّه عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: "يَوْمُ عَرَفَةَ، وَيَوْمُ النَّحْرِ، وَأَيَّامُ التَّشْرِيْقِ، عِيْدُنَا أَهْلَ الإِسْلاَمِ، وَهِيَ أَيَّامُ أَكْلٍ وَشُرْبٍ".
(سنن أبي داود، رقم الحديث 2419، وجامع الترمذي، رقم الحديث 773، واللفظ لهما، وسنن النسائي، رقم الحديث 3004، وقال الإمام الترمذي عن هذا الحديث بأنه:  حسن صحيح، وصححه الألباني).
31 - অর্থ: ওক্‌বা বিন আমের [রাদিয়াল্লাহু আনহু] থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন: আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলেছেন: “আরাফার দিন, কুরবানির দিন এবং আইয়ামে তাশরীকের দিন (কুরবানির দিনের পর আরো তিন দিন) এই দিনগুলি আমাদের ঈমানদার মুসলিম জাতির জন্য ঈদের দিন হিসেবেই পরিগণিত। আর এই দিনগুলি হলো পানাহার করার দিন”।
 [সুনান আবু দাউদ, হাদীস নং 2419, জামে তিরমিযী, হাদীস নং 773 এবং সুনান নাসায়ী, হাদীস নং 3004, তবে হাদীসের শব্দগুলি সুনান আবু দাউদ এবং জামে তিরমিযী থেকে নেওয়া হয়েছে। ইমাম তিরমিযী হাদীসটিকে হাসান ও সহীহ বলেছেন। আল্লামা নাসেরুদ্দিন আল্ আলবাণী হাদীসটিকে সহীহ (সঠিক) বলেছেন]।
* এই হাদীস বর্ণনাকারী সাহাবীর পরিচয়:
ওক্‌বা বিন আমের বিন আবস আলজুহানী [রাদিয়াল্লাহু আনহু] একজন বিশিষ্ট সম্মানিত সাহাবী। তিনি সাহাবীগণের মধ্যে মর্যাদা সম্পন্ন কারী, ফিক্‌হশাস্ত্রবিদ (আইনশাস্ত্রে জ্ঞানী), ফারায়েজের (সম্পত্তির অংশ বন্টনের) বিদ্বান এবং বিখ্যাত বাচন ভঙ্গি বিশিষ্ট কবি ও ইসলামী বিজয়ের সেনাপতি ছিলেন।
ওক্‌বা কুরআন তেলাওয়াতে সর্বোত্তম কণ্ঠ সুরের কারী ছিলেন। তাঁর কুরআন তেলাওয়াত শুনে সাহাবীগণের হৃদয় মুগ্ধ হয়ে যেতো ও তাঁদের অন্তরে বিনয় নম্রতা সৃষ্টি হতো। এবং আল্লাহর ভক্তিভরা ভয়ে তাঁদের চোখ থেকে অশ্রু উদ্বেলিত হতো। তিনি আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম]  এর সাথে সর্বপ্রথমে উহুদের যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন, অতঃপর আরোও সমস্ত যুদ্ধে তিনি অংশগ্রহণ করেন।
তিনি মিশর বিজয়ের সেনাবাহিনীর একজন নেতা ছিলেন। তাই আমীরুল মুসলেমীন মোয়াবিয়া (রাযিয়াল্লাহু আনহু) তাঁর এই কৃতিত্বের পুরস্কার হিসেবে তাঁকে তিন বছরের জন্য মিশরের আমীর নিযুক্ত করেছিলেন। অতঃপর তাঁকে (গ্রীস দেশের) ভূমধ্য সাগরের রোডস দ্বীপ জয় করার উদ্দেশ্যে আক্রমণ করার নির্দেশ দিয়েছিলেন।
তার বর্ণিত হাদীসের সংখ্যা 55 টি। তিনি সন 58 ‍হিজরীতে মৃত্যুবরণ করেন এবং মিশরের বিখ্যাত রাজধানী কায়রো শহরে তাঁকে দাফন করা হয়। (রাযিয়াল্লাহু আনহু)
* এই হাদীস হতে শিক্ষণীয় বিষয়:
1- এই হাদীসটির দ্বারা একটি বিষয় সাব্যস্ত হয়, আর সেই বিষয়টি হলো এই যে, আরাফার দিন, কুরবানির দিন এবং কুরবানির দিনের পর আইয়ামে তাশরীকের আরো তিন দিন ধরে কুরবানির ঈদের দিনের সংখ্যা হলো সর্ব মোট পাঁচ দিন। তবে কুরবানি ও হাদয়ী জবাই করা শুরু হয় ইয়াওমুন্নাহারের দিন। এবং সেই দিনটি হয় জুলহিজ্জা মাসের দশ তারিখের দিন। তাই কুরবানি ও হাদয়ী জবাই করা চলতে থাকবে কুরবানির দিনের পর আইয়ামে তাশরীকের আরো তিন পর্যন্ত অর্থাৎ কুরবানির দিনের পরেও আরো তিন দিন। সুতরাং জুলহিজ্জা মাসের দশ তারিখ থেকে তেরো তারিখ পর্যন্ত কুরবানি ও হজ্জের হাদয়ী জবাই করার কাজ চালু রাখা বৈধ হবে।  
2- আরাফার দিন, কুরবানির দিন এবং কুরবানির দিনের পর আইয়ামে তাশরীকের আরো তিন দিন কুরবানির ঈদের দিনগুলির অন্তর্ভুক্ত। তাই কুরবানির ঈদের দিনের সর্ব মোট সংখ্যা হলো পাঁচ দিন। এই পাঁচ দিন হলো পানাহার করার দিন। কিন্তু যে ব্যক্তি কিরান অথবা তামাত্তু হজ্জ পালন করবে এবং হজ্জ পালন করার হাদয়ী জবাই করার ক্ষমতা রাখবে না, সে ব্যক্তির জন্য আইয়ামে তাশরীকের (কুরবানির দিনের পর তিন দিন) দিনগুলিতে রোজা রাখা বৈধ। অনুরূপভাবে যারা হজ্জ পালন করার কাজে লিপ্ত হবে না, তাদের জন্য আরাফার দিনে রোজা রাখার মহা মর্যদার বিষয়টিও নির্ধারিত রয়েছে।
3। প্রকৃত ইসলাম ধর্মে ঈদের আসল অর্থ, লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হলো এই যে, ঈদের সময় সমস্ত মুসলমান সেই মহান আল্লাহর কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করবে। যেই মহান আল্লাহ তাদেরকে তাঁর ইবাদত উপাসনা করার শক্তি ও সুযোগ প্রদান করেছেন।
4। প্রকৃত ইসলাম ধর্মে সারা বছরের মধ্যে কুরবানির দিনগুলির মধ্যে  ইয়াওমুন্নাহারের দিন জুলহিজ্জা মাসের দশ তারিখের দিনটি সব চেয়ে বশি মর্যাদাপূর্ণ দিন। তাই এই কুরবানির ঈদের দিনটি হলো সবচেয়ে মহান এবং সর্ব শ্রেষ্ঠ দিন আর এই ইদুলআদহা হলো ইদুল ফিতেরের চেয়েও অনেক বড়ো ও উত্তম ঈদ।
الصَّوْمُ والأضحية وصلاة العيد مع الناس
রোজা, কুরবানি এবং ঈদের নামাজের ক্ষেত্রে মুসলিম সমাজে ঐক্য বজায় রাখা অপরিহার্য
32- عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ، أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قَالَ: "الصَّوْمُ يَوْمَ تَصُوْمُوْنَ، وَالفِطْرُ يَوْمَ تُفْطِرُوْنَ، وَالْأَضْحَى يَوْمَ تُضَحُّونَ".
 (جامع الترمذي، رقم الحديث 697، واللفظ له، وسنن أبي داود، رقم الحديث 2324 وسنن ابن ماجه، رقم الحديث 1660، وقال الإمام الترمذي عن هذا الحديث بأنه:  حسن غريب، وصححه الألباني).
32 - অর্থ:  আবু হুরায়রা [রাদিয়াল্লাহু আনহু] হতে বর্ণিত, তিনি বলেন: যে, নাবী কারীম [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] নিশ্চয় বলেছেন: “যে দিন তোমরা রোজা পালন করতে শুরু করবে, সেই দিন হতেই রোজা পালন করার দিন হিসেবেই বিবেচিত হবে। এবং যে দিন তোমরা ঈদুল ফেতর পালন করার জন্য রোজা রাখা ভঙ্গ করবে, সেই দিন রোজা রাখা ভঙ্গ করে ঈদুল ফেতর পালন করার দিন হিসেবেই বিবেচিত হবে। আর যে দিন তোমরা ঈদুল আদহা হিসেবে কুরবানি জবাই করবে, সেই দিন ঈদুল আদহার দিন হিসেবেই বিবেচিত হবে”।
 [জামে তিরমিযী, হাদীস নং 697, এবং সুনান আবু দাউদ, হাদীস নং 2324। সুনান ইবনু মাজাহ, হাদীস নং 1660। তবে হাদীসের শব্দগুলি জামে তিরমিযী থেকে নেওয়া হয়েছে। ইমাম তিরমিযী হাদীসটিকে হাসান এবং গারীব (এক পন্থায় বর্ণিত) বলেছেন। আল্লামা নাসেরুদ্দিন আল্ আলবাণী হাদীসটিকে সহীহ (সঠিক) বলেছেন]।
* এই হাদীস বর্ণনাকারী সাহাবীর পরিচয় পূর্বে 1 নং হাদীসে উল্লেখ করা হয়েছে।

* এই হাদীস হতে শিক্ষণীয় বিষয়:
1। এই হাদীসটির দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, যে কোনো ঈমানদার মুসলিম ব্যক্তি যে কোনো মুসলিম সমাজে মুসলিমগণের সাথেই রোজা পালন করতে শুরু করবে, এবং তাদের সাথেই ঈদুল ফেতর পালন করার জন্য রোজা রাখা ভঙ্গ করবে। তদ্রূপ তাদের সাথেই ঈদুল আদহার কুরবানি জবাই করবে। এবং তাদের সাথেই ঈদ পালন করবে। আর কোনো ঈমানদার মুসলিম ব্যক্তির জন্য এটা জায়েজ নয় যে, সে যে কোনো মুসলিম সমাজে মুসলিমগণকে বাদ দিয়ে নিজে একাই একতরফাভাবে রোজা পালন করবে অথবা ঈদ পালন করবে কিংবা ঈদুল আদহার কুরবানি জবাই করবে। কেননা যে কোনো মুসলিম সমাজে মুসলিমগণের মধ্যে ঐক্য বজায় রাখা অপরিহার্য এবং তাদের মধ্যে থেকে অনৈক্য, পার্থক্য এবং দ্বন্দ্ব দূরে রাখাও একটি অনিবার্য বিষয়।
2। এই হাদীসটির দাবি অনুযায়ী এই বিষয়টি প্রমাণিত হয় যে, প্রকৃত ইসলামের বিধিবিধানের একটি লক্ষ্য হলো মুসলিম সমাজের মধ্যে ঐক্যের বন্ধন রক্ষা করা, মুসলিমগণকে একত্রিত করে রাখা, তাদেরকে ঐক্য বদ্ধ করে রাখা। বিশেষ করে মুসলিম সমাজে মুসলিমগণকে ইবাদত উপাসনা, রোজা, কুরবানি এবং ঈদের নামাজের বিষয়ে একত্রিত করা ও তাদের মধ্যে ঐক্য বজায় রাখা অপরিহার্য। তাই এই সমস্ত ক্ষেত্রে ব্যক্তিগত মতামতের কোনো মূল্য নেই। যদিও প্রকৃতপক্ষে সেই ব্যক্তিগত মতামতগুলি বিশেষভাবে কোনো দিক দিয়ে সত্য ও সঠিক বলে মনে হয়।

 

التحذير من كبائر الذنوب
মহাপাপে লিপ্ত হওয়া থেকে সতর্কীকরণ
33- عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عُمَرَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا، قَالَ: قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللَّه عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: "ثَلاَثَةٌ لاَ يَنْظُرُ اللَّهُ عَزَّ وَجَلَّ إِلَيْهِمْ يَوْمَ الْقِيَامَةِ: الْعَاقُّ لِوَالِدَيْهِ، وَالْمَرْأَةُ الْمُتَرَجِّلَةُ، وَالدَّيُّوْثُ، وَثَلاَثَةٌ لاَ يَدْخُلُوْنَ الْجَنَّةَ: الْعَاقُّ لِوَالِدَيْهِ، وَالْمُدْمِنُ عَلَى الْخَمْرِ، وَالْمَنَّانُ بِمَا أَعْطَى".
 (سنن النسائي، رقم الحديث 2562، وَحسنه الألباني وصححه).
33 - অর্থ:  আব্দুল্লাহ বিন ওমার [রাদিয়াল্লাহু আনহুমা] থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন যে, আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলেছেন:  “তিন ব্যক্তির দিকে আল্লাহ কিয়ামতের দিন রহমতের দৃষ্টিতে তাকাবেন না। পিতামাতার অবাধ্য সন্তান, পুরুষের বেশ ধারণকারিণী মহিলা এবং দাইয়ূস। আর  তিন ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না। পিতামাতার অবাধ্য সন্তান, অভ্যস্ত মাদকসেবী বা মদ্যাসক্তি, দান করে বা উপকার করে তার খোঁটা প্রদান কারী বা নিন্দুক”।
[সুনান নাসায়ী, হাদীস নং 2562, আল্লামা নাসেরুদ্দিন আল্ আলবাণী হাদীসটিকে সহীহ (সঠিক) বলেছেন]।
* এই হাদীস বর্ণনাকারী সাহাবীর পরিচয় পূর্বে 11 নং হাদীসে উল্লেখ করা হয়েছে।
* এই হাদীস হতে শিক্ষণীয় বিষয়:
1। মহান আল্লাহ তাঁর পবিত্র গ্রন্থ আল কুরআনের মধ্যে যে ভাবে নিজের বিবরণ প্রদান করেছেন এবং আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] তাঁর নির্ভরযোগ্য হাদীসের মধ্যে যে ভাবে মহান আল্লাহর বিবরণ প্রদান করেছেন সেই ভাবেই মহান আল্লাহর প্রতি ঈমান স্থাপন করা অপরিহার্য। এবং তাতে কোনো প্রকার বিকৃত, পরিবর্তন, পরিবর্ধন, অস্বীকার বা প্রত্যাখ্যান, সাদৃশ্য বর্ণনা বা দৃষ্টান্ত স্থাপন করা এবং ধরণ, গঠন ও পদ্ধতি নির্ধারণ করা চলবে না। তাই মহান আল্লাহর দৃষ্টিপাত করা বা তাকানো অথবা দেখার বিষয়টি তাঁর জন্য সাব্যস্ত রয়েছে। সুতরাং মহান আল্লাহ যেমনভাবে দৃষ্টিপাত করা বা তাকানো অথবা দেখার উপযোগী তেমনিভাবেই তিনি দৃষ্টিপাত করেন বা তাকান অথবা দেখেন। আর মহান আল্লাহর এই দৃষ্টিপাত করা বা দেখার গুণ ও বৈশিষ্ট্যটি তাঁর ক্রিয়া সম্পাদন এবং কার্যপরম্পরার গুণাবলির অন্তর্ভুক্ত রয়েছে সুতরাং এই গুণ ও বৈশিষ্ট্যটি তাঁর ইচ্ছা ও ক্ষমতার সঙ্গে জড়িত আছে।
2। পুরুষের বেশ ধারণকারিণী নারী বা মহিলা তাকেই বলা যেতে পারে, যে নারী পুরুষের পোষাক, অবস্থা, গুণ ও বৈশিষ্ট্য অবলম্বন করে। আর ওই ব্যক্তিকে দাইয়ূস বলা হয়: যে ব্যক্তি তার পরিবারের অশ্লীলতা, কুকর্ম এবং ব্যভিচারকে সমর্থন করে। তাই দাইয়ূস তার পরিবারের লোকজনকে ব্যভিচারের কাজে অথবা ব্যভিচারের উপকরণের মধ্যে নির্জন জায়গায় এবং নিরিবিলিতে অশালীন কর্মে দেখতে পেলে, সে তাদের প্রতিবাদ করবে না এবং আপত্তিজ্ঞাপন করবে না। আর মদ্যাসক্তি হলো: সেই মাদকাসক্তি ব্যক্তি যে, ব্যক্তি মাদক দ্রব্যের প্রতি প্রবল অনুরাগী এবং তওবা না করেই সে মৃত্যুবরণ করে।
3। খোঁটাদানকারী সেই ব্যক্তিকে বলা হয়: যে ব্যক্তি কোনো লোকের উপকার করার পরে তাকে খোঁটা প্রদান করে। এবং নিজেকে মহানুভবতার উচ্চস্তরের লোক মনে করে। আর পিতামাতার অবাধ্য হওয়া একটি মহা পাপ। আর যে ব্যক্তি উল্লিখিত পাপে পতিত হয়েছে, সে যেন মহান আল্লাহর শাস্তি আসার পূর্বেই অতি সত্তর তওবা করে।


 
تحريم النَّجْش
কোনো জিনিসের মূল্য বৃদ্ধি করার উদ্দেশ্যে বেশি দাম বলা অবৈধ   
34- عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عُمَرَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا، قَالَ: نَهَى النََّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَنِ النََّجْشِ.
(صحيح البخاري، رقم الحديث 2142، واللفظ له،  وصحيح مسلم، رقم الحديث 13 - (1516)،).
34 - অর্থ: আব্দুল্লাহ বিন ওমার [রাদিয়াল্লাহু আনহুমা] থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন: আল্লাহর নাবী [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] কোনো জিনিস ক্রয় করার উদ্দেশ্য না রেখেই সেই জিনিসের মূল্য বৃদ্ধি করার ইচ্ছায় বেশি দাম বলা থেকে নিষেধ করেছেন।
[সহীহ বুখারী, হাদীস নং 2142 এবং সহীহ মুসলিম, হাদীস নং 13 - (1516), তবে হাদীসের শব্দগুলি সহীহ বুখারী থেকে নেওয়া হয়েছে]।
* এই হাদীস বর্ণনাকারী সাহাবীর পরিচয় পূর্বে 11 নং হাদীসে উল্লেখ করা হয়েছে।


* এই হাদীস হতে শিক্ষণীয় বিষয়:
1। এই হাদীসটির দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, প্রকৃত ইসলামের আলোকে কোনো জিনিস ক্রয় করার উদ্দেশ্য না রেখেই সেই জিনিসের মূল্য বৃদ্ধি করার উদ্দেশ্যে বেশি দাম বলা হারাম। তাই ইসলামী পরিভাষায় বাইউন্নাজাশ বলা হয়: সেই ক্রয়বিক্রয়কে যেই ক্রয়বিক্রয়ে দ্রব্যের মূল্য বৃদ্ধি করে দেওয়া হয় ওই ব্যক্তির পক্ষ থেকে যে ব্যক্তি সেই দ্রব্যটি প্রকৃতপক্ষে ক্রয় করতে চায় না। কিন্তু সে অন্য লোককে প্রতারিত করার জন্য সেই দ্রব্যটির বেশি মূল্য বলে থাকে।
2। প্রকৃত ইসলাম ধর্ম মানুষের কল্যাণ এবং মঙ্গলের উদ্দেশ্যে ক্রয়বিক্রয় ও কেনাবেচাকে বৈধ ও হালাল করেছে। তবে যে দ্রব্যের ক্রয়বিক্রয়ের মধ্যে অজ্ঞতা এবং অস্পষ্টতা থাকবে। আর যে ক্রয়বিক্রয়ের মাধ্যমে বাজারের লোকজনের ক্ষতি সাধন হবে, সেই ক্রয়বিক্রয়কে হারাম করেছে। যাতে সমাজের লোকজনের মধ্যে অমঙ্গল, ঘৃণা, বিদ্বেষ, ঝগড়া ও দ্বন্দ্ব সৃষ্টি না হয়।  
3 । প্রকৃত ইসলাম ধর্মের শিক্ষা মোতাবেক কোনো জিনিস ক্রয় করার উদ্দেশ্য না রেখেই সেই জিনিসের মূল্য বৃদ্ধি করার ইচ্ছায় বেশি দাম বলা হারাম ও অবৈধ। এবং যে ব্যক্তি এই কাজ করবে সে পাপাচারী বলে বিবেচিত হবে। আর ক্রয়বিক্রয় সঠিক হয়েছে বলেই পরিগণিত হবে। আর যে ব্যক্তি কোনো জিনিসের শুধু মাত্র মূল্য বৃদ্ধি করার ইচ্ছায় বেশি দাম বলবে সে ব্যক্তিই পাপাচারী বলে বিবেচিত হবে। এবং তার সাথে যদি বিক্রয়কারী মত দেয় এবং সমর্থন করে তাহলে সেই বিক্রয়কারীও পাপাচারী বলে বিবেচিত হবে।
الذكر بعد الْفَرَاغِ مِنَ الصَّلاَةِ
ফরজ নামাজের সালাম ফিরানোর পর পঠনীয় জিকির
35- كَتَبَ الْمُغِيْرَةُ بْنُ شُعْبَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ أَنَّ رَسُوْلَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ إِذَا فَرَغَ مِنَ الصَّلاَةِ وَسَلَّمَ، قَالَ: "لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وَحْدَهُ لاَ شَرِيكَ لَهُ، لَهُ الْمُلْكُ، وَلَهُ الْحَمْدُ، وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيْرٌ، اَللَّهُمَّ! لاَ مَانِعَ لِمَا أَعْطَيْتَ، وَلاَ مُعْطِيَ لِمَا مَنَعْتَ، وَلاَ يَنْفَعُ ذَا الْجَدِّ مِنْكَ الْجَدُّ".
(صحيح مسلم، رقم الحديث 137- (593)، واللفظ له، وصحيح البخاري، رقم الحديث 844).
35 - অর্থ: মুগীরা বিন শুবা [রাদিয়াল্লাহু আনহু] থেকে বর্ণিত। তিনি লিখেছিলেন যে, নিশ্চয় আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] যখন  নামাজ শেষ করতেন তখন বলতেন:
"لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وَحْدَهُ لاَ شَرِيكَ لَهُ، لَهُ الْمُلْكُ، وَلَهُ الْحَمْدُ، وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيْرٌ، اَللَّهُمَّ! لاَ مَانِعَ لِمَا أَعْطَيْتَ، وَلاَ مُعْطِيَ لِمَا مَنَعْتَ، وَلاَ يَنْفَعُ ذَا الْجَدِّ مِنْكَ الْجَدُّ".
অর্থ: “এক আল্লাহ ব্যতীত অন্য কোনো সত্য উপাস্য নেই, তিনি একক ও শরীকবিহীন, সার্বভৌমত্ব একমাত্র তাঁরই জন্য, সমস্ত প্রশংসা তাঁরই জন্য, তিনি সর্ব বিষয়ে ক্ষমতাবান। হে আল্লাহ! আপনি যা প্রদান করেন তা রোধ করাব কেউ নেই, আর আপনি যা রোধ করেন তা প্রদান করার কেউ নেই। আপনার কাছে প্রকৃত ইসলামের শিক্ষা মোতাবেক সৎকর্ম ছাড়া কোনো সম্পদশালীর সম্পদ উপকারে আসবে না”।
[সহীহ মুসলিম, হাদীস নং 137 - (593) এবং সহীহ বুখারী, হাদীস নং 844, তবে হাদীসের শব্দগুলি সহীহ মুসলিম থেকে নেওয়া হয়েছে]।
* GB nv`xm eY©bvKvix mvnvexi cwiPq:
আবু আব্দুল্লাহ মুগীরা বিন শুবা আস্সাকাফী [রাদিয়াল্লাহু আনহু] তায়েফ শহরে জন্ম গ্রহণ করেন এবং সেখানেই তিনি লালিতপালিত ও বড়ো হন। তিনি অতি ভ্রমণকারী পর্যটক ব্যক্তি হিসেবে বিখ্যাত এবং প্রসিদ্ধ ছিলেন। খন্দক বা পরিখা অথবা আহজাব ও জোটের যুদ্ধের সময় তিনি ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন। অতঃপর তিনি হোদায়বিয়ার সন্ধি সম্পন্ন হওয়ার ঘটনায় উপস্থিত ছিলেন। আবু বাকর এবং ওমার [রাদিয়াল্লাহু আনহুমা] এর আমলে মুসলিমদের পারস্যের অভিযানের মহা বিজয়েও তিনি অংশগ্রহণ করেন। এছাড়াও তিনি ইয়ামামা, ইয়ারমুক এবং কাদেসিয়ার মহা যুদ্ধেও উপস্থিত ছিলেন। ওমার এবং মুয়াবিয়া  [রাদিয়াল্লাহু আনহুমা] উভয়েই তাঁদের আমলে ও শাসন কালে তাঁকে কুফা শহরের আমির বা রাষ্ট্রীয় শাসক নিযুক্ত করেছিলেন। সুতরাং তিনি কুফা শহরের আমির বা রাষ্ট্রীয় শাসক হিসেবে থাকতে থাকতেই কুফা শহরে মৃত্যুবরণ করেন।
মুগীরা বিন শুবা [রাদিয়াল্লাহু আনহু] অতি তীক্ষ্ণবুদ্ধিসম্পন্ন, সাহিত্যিক, বিবেকী এবং অতিশয় বিচক্ষণ ব্যক্তি ছিলেন। তাঁর বর্ণিত হাদীসের সংখ্যা 136 টি।
মুগীরা বিন শুবা [রাদিয়াল্লাহু আনহু] কুফা শহরে সন 50 হিজরীতে 70 বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন। [রাদিয়াল্লাহু আনহু]
* এই হাদীস হতে শিক্ষণীয় বিষয়:
1। এই হাদীসটির দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] ফরজ  নামাজ শেষ করার পর এই জিকিরটি পাঠ করতেন:
"لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وَحْدَهُ لاَ شَرِيكَ لَهُ، لَهُ الْمُلْكُ، وَلَهُ الْحَمْدُ، وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيْرٌ، اَللَّهُمَّ! لاَ مَانِعَ لِمَا أَعْطَيْتَ، وَلاَ مُعْطِيَ لِمَا مَنَعْتَ، وَلاَ يَنْفَعُ ذَا الْجَدِّ مِنْكَ الْجَدُّ".
2। এই মহা জিকিরটির মধ্যে প্রকৃত ইসলাম ধর্মের মহা মতবাদ তাওহীদ ও একত্ববাদের ঘোষণা রয়েছে। সুতরাং মহান আল্লাহ তাঁর সত্তা, বৈশিষ্ট্যপূর্ণ অস্তিত্ব, নাম, গুণাবলী এবং কর্মের দিক দিয়ে এক এবং একক। নিশ্চয় তিনি সমস্ত উপাসনার সত্য অধিকারী। আর তিনিই কেবল সকল সৃষ্টি জগতের সার্বিক নিয়ন্ত্রণ ও পরিচালন ক্রিয়া সম্পাদন করেন।    
3।  এই হাদীসটির মধ্যে এসেছে  
"لاَ يَنْفَعُ ذَا الْجَدِّ مِنْكَ الْجَدُّ".
এর অর্থ হলো: হে আল্লাহ! আপনার কাছে প্রকৃত ইসলামের শিক্ষা মোতাবেক সৎকর্ম ছাড়া কোনো সম্পদশালীর সম্পদ উপকারে আসবে না। সুতরাং মানুষ যত বড়োই ধনবান হোক আর যত বড়োই পদাধিকারী হোক, সে সদা সর্বদা সমস্ত বিষয়ে মহান আল্লাহর মুখাপেক্ষী।
من أذكار المساء
সন্ধ্যার সময় মহান আল্লাহর পঠনীয় জিকির
36- عَنْ عَبْدِ اللهِ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ،  قَالَ كان رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا أَمْسَى قَالَ: "أَمْسَيْـنَا وَأَمْسَـى الْمُـلْكُ لِلَّهِ، وَالحَمْدُ لِلَّهِ، لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللهُ وَحْدَهُ، لاَ شَرِيْكَ لَهُ، اَللَّهُمََّ! إِنِّيْ أَسْأَلُكَ مِنْ خَيْرِ هَذِهِ اللَّيْلَةِ وخَـيْرِ مَا فِيْهَا، وَأَعـوْذُ بِكَ مِنْ شَـرِّها وَشَرِّ مَا  فِيْهَـا، اَللَّهُمََّ! إِنِّيْ أَعُوْذُ بِكَ مِنَ الْكَسَلِ، وَالْهَرَمِ، وَسُوْءِ الْكِبَرِ، وَفِتْنَةِ الدُّنْيَا، وَعَذَابِ الْقَبْرِ".
(صحيح مسلم، رقم الحديث 76 - (2723)، ).
36 - অর্থ:  আব্দুল্লাহ [রাদিয়াল্লাহু আনহু] থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন যে, আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] যখন সন্ধ্যায় উপনীত হতেন তখন বলতেন:
"أَمْسَيْـنَا وَأَمْسَـى الْمُـلْكُ لِلَّهِ، وَالحَمْدُ لِلَّهِ، لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللهُ وَحْدَهُ، لاَ شَرِيْكَ لَهُ، اَللَّهُمََّ! إِنِّيْ أَسْأَلُكَ مِنْ خَيْرِ هَذِهِ اللَّيْلَةِ وخَـيْرِ مَا فِيْهَا، وَأَعـوْذُ بِكَ مِنْ شَـرِّها وَشَرِّ مَا  فِيْهَـا، اَللَّهُمََّ! إِنِّيْ أَعُوْذُ بِكَ مِنَ الْكَسَلِ، وَالْهَرَمِ، وَسُوْءِ الْكِبَرِ، وَفِتْنَةِ الدُّنْيَا، وَعَذَابِ الْقَبْرِ".
অর্থ: “আমরা মহান আল্লাহর জন্য ও তাঁর নিয়ন্ত্রণে সন্ধ্যায় উপনীত হলাম। এবং মহান আল্লাহর রাজত্বের সকল বিষয় তাঁর জন্য ও তাঁর নিয়ন্ত্রণে সন্ধ্যায় উপনীত হলো। আর সমস্ত প্রশংসা আল্লাহরই জন্য, আল্লাহ ছাড়া কোনো সত্য উপাস্য নেই। তিনি এক, তাঁর কোনো শরীক নেই। হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে প্রার্থনা করি এই রাতের কল্যাণ এবং এই রাতের মধ্যে যা কিছু কল্যাণ আছে সেই কল্যাণও আমি আপনার কাছে প্রার্থনা করি। আর আমি আপনার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করি এই রাতের অমঙ্গল থেকে এবং এই রাতে যা কিছু অমঙ্গল আছে তাতে থেকেও আমি আপনার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করি। হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে আরো আশ্রয় প্রার্থনা করি আলস্য, বার্ধক্যের অমঙ্গল, ভীমরতি, দুনিয়ার অকল্যাণ এবং কবরের আজাব থেকে”।
[সহীহ মুসলিম, হাদীস নং 76 - (2723)]।
* এই হাদীস বর্ণনাকারী সাহাবীর পরিচয় পূর্বে 2 নং হাদীসে উল্লেখ করা হয়েছে।
* এই হাদীস হতে শিক্ষণীয় বিষয়:
1। মুসলিম ব্যক্তির উচিত যে, সে যেন রাত এবং দিনে উপনীত হয় আল্লাহর জিকিরের মাধ্যমে। এবং সে যেন রাত এবং দিন শেষও করে আল্লাহর জিকিরের মাধ্যমে। কেননা এরই উপর নির্ভর করে মানুষের  স্বাস্থ্য, সুখ, শান্তি এবং অনাময় ও সুস্থতা। তাই মুসলিম ব্যক্তি যেন প্রতিদিন সকাল এবং সন্ধ্যার সময় পঠনীয় জিকিরগুলি পাঠ করে।
2। সন্ধ্যার পঠনীয় জিকিরগুলি সন্ধ্যার সময় পাঠ করতে হয়। আর সকালের পঠনীয় জিকিরগুলি প্রভাতে পাঠ করতে হয়।
3। সন্ধাবেলায় পঠনীয় জিকিরগুলি পাঠ করার সময়ের ব্যাপারে কতকগুলি উক্তি রয়েছে। সেই উক্তিগুলির মধ্যে থেকে একটি উক্তি হলো এই যে, সন্ধাবেলায় পঠনীয় জিকিরগুলি পাঠ করার সময় হলো সূর্যাস্তের পর। মনে হচ্ছে এই উক্তিটিই বেশি সঠিক যেহেতু উল্লিখিত জিকিরটির মধ্যে বলা হয়েছে “এই রাতের” কথা। অর্থাৎ
 هَذِهِ اللَّيْلَةِ  
বলা হয়েছে: এই রাতের, সুতরাং “এই ” শব্দটি নির্দেশকারী বা নির্দেশক সর্বনাম। “এই ” শব্দটির দ্বারা একটি নির্দিষ্ট বস্তুর প্রতি ইঙ্গিত করা হয়। কেননা নির্দেশকারী বা নির্দেশক সর্বনামের দ্বারা কোনো একটি নির্দিষ্ট বস্তুর প্রতি ইঙ্গিত করা হয়। এবং সেই বস্তুটি বর্তমানে উপস্থিত আছে বলে তার অবস্থা উল্লেখ করা হয়। যেমন বলা হয়: এটি আল্লাহর উষ্ট্রী। এই ব্যাকরণটির মাধ্যমে বুঝা যায় যে, উল্লিখিত জিকিরটি ওই সময় পাঠ করতে হবে, যে সময় সন্ধাবেলার সূচনা হয়ে যাবে বা দিবাভাগ শেষ হয়ে যাবে এবং রাত্রি শুরু হয়ে যাবে ও উপস্থিত হয়ে যাবে। এই অর্থের সমর্থনে একটি বর্ণনায় এসেছে আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] একজন সাহাবীকে বলেছেন: “তুমি যখন রমাজান মাসে উপস্থিত হয়ে যাবে, তখন রোজা রাখবে। এবং যখন সন্ধাবেলায় উপনীত হয়ে যাবে তখন রোজা ইফতার করবে। [দেখতে পারা যায় আল্লামা আল হাজিমির কিতাব: আল ইতিবার ফী আন নাসিখি ওয়াল মানসূখি মিনাল আসার, রোজার অধ্যায়, সুবহু সদিকের পর সাহারী খাওয়ার পরিচ্ছেদ]। উক্ত হাদীসে সন্ধাবেলায় উপনীত হওয়ার পর রোজা ইফতার করার উপদেশ এসেছে। তাই এর দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, সন্ধা বলা হয় ওই সময়কে যে সময়ে সূর্যাস্তের পরে রাত্রির আরম্ভ হয়। এই বিষয়ে মহান আল্লাহই অধিক জানেন।

 

 

من علامات أفضل الناس
সৎলোকদের নিদর্শন
37-عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عَمْرٍو رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا، قَالَ:  قِيْلَ لِرَسُوْلِ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: أَيُّ النَّاسِ أَفْضَلُ؟  قَالَ: "كُلُّ مَخْمُوْمِ الْقَلْبِ صَدُوْقِ اللِّسَانِ"، قَالُوْا: صَدُوْقُ اللِّسَانِ نَعْرِفُهُ، فَمَا مَخْمُوْمُ الْقَلْبِ؟  قَالَ: " هُوَ التَّقِيُّ النَّقِيُّ، لاَ إِثمَ فِيْهِ، وَلاَ بَغْيَ، وَلاَ غِلَّ،  وَلاَ حَسَدَ".
(سنن ابن ماجه، رقم الحديث 4216، وصححه الألباني).
37 - অর্থ: আব্দুল্লাহ বিন আমর [রাদিয়াল্লাহু আনহু] থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিলো যে, সর্বশ্রেষ্ঠ মানুষ কাকে বলা হয়? আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] উত্তর দিয়ে বলেছিলেন: “প্রত্যেক শুদ্ধহৃদয় ও সত্যভাষী ব্যক্তি”। কতকগুলি সাহাবী বললেন: সত্যভাষীর অর্থ আমরা জানি। কিন্তু শুদ্ধহৃদয় ব্যক্তি কাকে বলে তা তো আমরা জানি না। তাই আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] জবাবে বললেন:  “সে হলো আল্লাহর প্রকৃত অনুগত ও বিশুদ্ধ অন্তরের সজ্জন, তার মধ্যে কোনো পাপ থাকবে না, কোনো অন্যায় থাকবে না, কোনো অনিষ্টাচরণের ইচ্ছা বা বিদ্বেষ থাকবে না এবং কোনো  হিংসাও থাকবে না”।
[সুনান ইবনু মাজাহ, হাদীস নং 4216, আল্লামা নাসেরুদ্দিন আল্ আলবাণী হাদীসটিকে সহীহ (সঠিক) বলেছেন]।
* এই হাদীস বর্ণনাকারী সাহাবীর পরিচয়:
আব্দুল্লাহ বিন আমর ইবনুল আস আল কোরাশী আসসাহমী একজন সম্মানিত সাহাবী, তিনি তাঁর পিতা আমর ইবনুল আস [রাযিয়াল্লাহু আনহু] এর পূর্বেই ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন। তিনি সাহাবীগণের মধ্যে প্রসিদ্ধ আলেম এবং ইবাদত ও পরহেজগারিতায় ছিলেন অনুকরণীয় সাহাবী। তাঁর বর্ণিত হাদীসের সংখ্যা হলো 700 টি।
তিনি আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর সাথে অনেক যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করেন। রাষ্ট্রপরিচালনার দিক দিয়ে এবং প্রশাসনিক কার্যক্রমের ক্ষেত্রেও তিনি বিশেষ দক্ষতা রাখতেন; তাই মোয়াবিয়া [রাযিয়াল্লাহু আনহু] তাঁকে কুফা শহরের আমীর নিযুক্ত করেছিলেন একটি নির্দিষ্ট কালের জন্য।
তিনি মিশর দেশের জামে আল্‌ ফুস্‌তাতে আমর ইবনুল আস মাসজিদে, আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] হতে হাদীস বর্ণনা করতেন; তাই তাঁর কাছ থেকে মিশর, শামদেশ এবং মাক্কা-মাদীনার বহু শিষ্য হাদীসের জ্ঞানার্জন করেছেন।
তিনি মিশরে সন 65 হিজরীতে মৃত্যুবরণ করেন এবং বিপজ্জনক পরিস্থিতির কারণে তাঁর ঘরেই তাঁকে দাফন করা হয়। এই বিষয়ে অন্য উক্তিও রয়েছে। সুতরাং বলা হয়েছে যে, তিনি শামদেশে অথবা মাক্কা শহরে মৃত্যুবরণ করেছেন।
* এই হাদীস হতে শিক্ষণীয় বিষয়:
1। এই হাদীসটির দ্বারা এই বিষয়টি প্রমাণিত হয় যে, বিশুদ্ধ অন্তর ও প্রশান্তচিত্তের কতকগুলি উপকরণ রয়েছে, সেই উপকরণগুলির অন্তর্ভুক্ত বিষয় হলা: ভক্তিসহকারে মহান আল্লাহর অনুগত ভক্ত হওয়া, সদাসর্বদা সততা অবলম্বন করা, পাপাচার পরিত্যাগ করা, অন্যায়, অত্যাচার, ঘৃণা  এবং হিংসা পরিহার করা।
2। তাকওয়া বা আল্লাহকে ভক্তিসহকারে ভয় করে তাঁর সঠিক অনুগত ভক্ত হওয়ার ভাবার্থ হলো এই যে, মহান আল্লাহর ভয়, ভালোবাসা এবং অতিশয় শ্রদ্ধাসহকারে তাঁর আনুগত্য করা, তাঁর জন্য সতর্ক থাকা এবং তাঁর অবাধ্যতা থেকে বিরত থাকা।
3। প্রকৃত ইসলামের শিক্ষা মোতাবেক মহান আল্লাহর প্রতি প্রকৃত ঈমান মানুষকে সৎলোক করে দেয়; সুতরাং তার গুণাবলি হয় ভালো, তার কর্ম হয় কল্যাণদায়ক, তার কথা হয় মঙ্গলদায়ক অতঃপর সে নিজেও হয়ে যায় সর্বোত্তম মানুষ।

 

 
تَحْرِيْمُ غَصْبِ حقوق الآخرين
অপরের অধিকার মেরে দেওয়া হারাম
38- عَنْ أَبِيْ أُمَامَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ، أَنَّ رَسُوْلَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قَالَ:  "مَنِ اقْتَطَعَ حَقَّ امْرِئٍ مُسْلِمٍ بِيَمِيْنِهِ؛ فَقَدْ أَوْجَبَ اللَّهُ لَهُ النَّارَ، وَحَرَّمَ عَلَيْهِ الْجَنَّةَ" ؛ فَقَالَ لَهُ رَجُلٌ: وَإِنْ كَانَ شَيْئًا يَسِيْرًا يَا رَسُوْلَ اللَّهِ؟ قَالَ: "وَإِنْ قَضِيْبًا مِنْ أَرَاكٍ".
(صحيح مسلم، رقم الحديث 218 - (137)، ).
38 - অর্থ: আবু উমামা আল্ বাহেলী [রাদিয়াল্লাহু আনহু] থেকে বর্ণিত যে, নিশ্চয় আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলেছেন: “যে ব্যক্তি মিথ্যা শপথের দ্বারা কোনো মুসলিম ব্যক্তির কোনো প্রাপ্য বা অধিকার মেরে দিবে বা আত্মসাৎ করবে, সেই ব্যক্তির জন্য মহান আল্লাহ জাহান্নাম অপরিহার্য করে দিবেন এবং জান্নাত হারাম করে দিবেন”। তাই একজন সাহাবী বললেন: হে আল্লাহর রাসূল! সেই প্রাপ্য বা অধিকারটি যদি অতিসামান্য পরিমিত বস্তু হয়, তাহলে কি হবে? তিনি বললেন: যদিও তা আরাক গাছের (এই গাছের দাঁতন ব্যবহার করা হয় ) একটি কর্তিত ডালও এভাবে গ্রহণ করা হয় তাহলে এই শাস্তি নির্ধারিত রয়েছে।
[সহীহ মুসলিম, হাদীস নং 218 - (137)]।

* এই হাদীস বর্ণনাকারী সাহাবীর পরিচয়:
আবু উমামা সুদায় বিন আজলান বিন অহাব্‌ আলবাহেলী [রাদিয়াল্লাহু আনহু] একজন সম্মানিত ধর্মপরায়ণ সাহাবী। সাহাবীগণের মধ্যে তিনি একজন বড়ো যোদ্ধা ছিলেন; জেহাদ করতে তিনি খুব ভালো বাসতেন; তাই তিনি আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর সাথে থেকে সমস্ত যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। তবে তাঁর বৃদ্ধা মাতার সেবা যত্নের জন্য তিনি আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর উপদেশ অনুসারে শুধুমাত্র বদরের যুদ্ধে অংশগ্রহণ করতে পারেন নি।
তিনি খোলাফায়ে রাশেদীনের সঙ্গে থেকেও তাঁদের যুগে সমস্ত যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছেন। তার বর্ণিত হাদীসের সংখ্যা 205 টি। তিনি শামদেশে স্থায়ীভাবে বসবাস করতেন এবং শামদেশের মাটিতেই তিনি হিম্‌স্‌ শহরে সন 81 হিজরীতে মৃত্যুবরণ করেন [রাদিয়াল্লাহু আনহু] ।
* এই হাদীস হতে শিক্ষণীয় বিষয়:
1। অত্যাচার বা জুলুম হলো সমস্ত অমঙ্গলের উৎস, ন্যায় বিচার থেকে এবং সমস্ত কল্যাণ হতে মানুষকে দূরে রাখে। যখন কোনো জাতির মধ্যে অত্যাচার বা জুলুম প্রবেশ করবে, তখন সে জাতি ধ্বংস হয়ে যাবে। আর যখন কোনো গ্রামে অথবা শহরে অত্যাচার বা জুলুম প্রবেশ করবে, তখন সেই গ্রাম অথবা শহর নষ্ট হয়ে যাবে। তাই প্রকৃত ইসলাম ধর্ম লোকের অধিকার মেরে দেওয়া হারাম করে দিয়েছে।
2। প্রকৃত ইসলাম ধর্ম লোকের অধিকার মেরে দেওয়া হতে এবং অন্যায়  অত্যাচার এবং জুলুম করা হতে সতর্ক করে। অপরের অধিকার নষ্ট করা হতেও সতর্ক করে। যদিও অত্যাচারিত ব্যক্তির কাছে দলিল প্রমাণ কিছূ না থাকে। অত্যাচারিত ব্যক্তির কাছে তার অধিকারের দলিল প্রমাণ কিছূ না থাকার কারণে তার প্রতি জুলুম করে তার অধিকার নষ্ট করা বৈধ নয়। কেননা মহান আল্লাহর কাছে কোনো ব্যক্তির অধিকারের দলিল প্রমাণ কিছূ না থাকার কারণে তার অীধকার নষ্ট হয় না। প্রকৃত ইসলাম ধর্ম সকল জাতির মানুষের অধিকারগুলির সংরক্ষণ করে, এবং এতে ধর্মের কারণে অথবা বর্ণের কারণে কোনো পার্থক্য করেনা। এই বিষয়টির দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, প্রকৃত ইসলাম ধর্ম সকল জাতির মানুষের অধিকারগুলির সংরক্ষণ করে। এই বিষয়টি প্রকৃত ইসলাম ধর্মের একটি মহা বৈশিষ্ট্য।
3। আরাক গাছের কর্তিত ডালের দ্বারা দাঁতন করা হয়।
الصبر عند المصائب
বিপদাপদে ধৈর্যধারণ করার মর্যাদা
39- عَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهَا، زَوْجِ النَّبيِّ صَلَّى اللَّه عَلَيْهِ وَسَلَّمَ  قَالَتْ: قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللَّه عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: "مَا مِنْ مُصِيْبَةٍ تُصِيْبُ الْمُسْلِمَ إِلاَّ كَفَّرَ اللَّهُ عَنْهُ بِهَا حَتَّى الشَّوْكَةِ يُشَاكُهَا".
صحيح البخاري، رقم الحديث 5640، واللفظ له، وصحيح مسلم، رقم الحديث 50 - (2572)،).
39 - অর্থ:  নাবী কারীম [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর প্রিয়তমা আয়েশা উম্মুলমুমেনীন [রাদিয়াল্লাহু আনহা] থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন: আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলেছেন: “কোনো মুসলিম ব্যক্তি বিপদাপদে পতিত হলে, তার বিনিময়ে মহান আল্লাহ  তার পাপ মোচন করে দেন। এমন কি শরীরে একটি কাঁটা বিধলেও তার বিনিময়ে পাপ মোচন করা হয়”।
[সহীহ বুখারী, হাদীস নং 5640 এবং সহীহ মুসলিম, হাদীস নং 50 -(2572), তবে হাদীসের শব্দগুলি সহীহ বুখারী থেকে নেওয়া হয়েছে]।
* এই হাদীস বর্ণনাকারিণী সাহাবীয়ার পরিচয় পূর্বে 16  নং হাদীসে উল্লেখ করা হয়েছে।
* এই হাদীস হতে শিক্ষণীয় বিষয়:
1। এই হাদীসটি বিপদাপদে ধৈর্যধারণ করার প্রতি উৎসাহ প্রদান করে। সুতরাং প্রকৃত মুসলিম ব্যক্তির সামনে যতই তীব্রতর পরিস্থিতি ও অবস্থা আসুক না কেনো, সে যেন সদা সর্বদা ধৈর্যধারণ করে।
2। প্রকৃত মুসলিম ব্যক্তির উপরে দুনিয়াতে বিপদাপদ আসে তার পাপের কারণে অথবা তার মর্যাদা উচ্চ করার জন্য এবং তার পাপ মচন করার জন্য; তাই মহান আল্লাহ তার জন্য যে সমস্ত বিপদ নির্ধারণ করবেন, তাতেই তাকে রাজি ও সন্তুষ্ট থাকতে হবে। এবং জেনে রাখতে হবে যে, এই বিপদের মধ্যেই তার জন্য দুনিয়া ও পরকালের কল্যাণ নিহিত রয়েছে।

الْحَجْرُ الْأَسْوَدُ مِنَ الجنَّةِ
হাজরে আসওয়াদ একটি জান্নাতের পাথর
40- عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا، قَالَ: قَالَ رَسُوْلُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: "نَزَلَ الْحَجْرُ الْأَسْوَدُ مِنَ الجنَّةِ وَهُوَ أشدُّ بَيَاضًا مِنَ اللَّبَنِ؛ فَسََوَّدَتْهُ خَطَايَا بَنِيْ آدَمَ".
(جامع الترمذي، رقم الحديث 877، قال الإمام الترمذي عن هذا الحديث بأنه:  حسن صحيح، وصححه الألباني).
40 - অর্থ:  আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস [রাদিয়াল্লাহু আনহুমা] থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন যে, আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলেছেন: “কাবা ঘরের হাজরে আসওয়াদ জান্নাত থেকে এমন অবস্থায় নেমে এসেছে যে তার রং ছিলো শুরুতে  দুধের চেয়েও সাদা। পরে আদমসন্তানের পাপ তাকে কালো করে দিয়েছে”।
[জামে তিরমিযী, হাদীস নং 877, ইমাম তিরমিযী এই হাদীসটিকে হাসান সহীহ (সুন্দর সঠিক) বলেছেন। আল্লামা নাসেরুদ্দিন আল্ আলবাণী হাদীসটিকে সহীহ (সঠিক) বলেছেন]।
* এই হাদীস বর্ণনাকারী সাহাবীর পরিচয় পূর্বে 6 নং হাদীসে উল্লেখ করা হয়েছে।
* এই হাদীস হতে শিক্ষণীয় বিষয়:
1। পাপের প্রভাব যখন কঠিন শক্ত কালো শিলা হাজরে আসওয়াদ পাথরের উপরে পড়ে পাথরকে প্রভাবিত করতে পারে, তাহলে তার প্রভাব হৃদয়ের উপরে পড়ে হৃদয়কে তো আরো বেশি প্রভাবিত করতে পারবে।
2। হাজরে আসওয়াদ: কাবাঘরের দক্ষিণ-পূর্ব কর্নারে সিনা বরাবর দেড় মিটার উঁচুতে দেওয়ালের কোনো রূপার বৃত্তে গাঁথা কালো পাথরকে হাজরে আসওয়াদ  বলে। কাবা ঘরের সাতবার চক্কর বা তাওয়াফ দেওয়ার কাজ এই হাজরে আসওয়াদ থেকেই  শুরু করা হয়।
3। প্রকৃত মুসলিম ব্যক্তির এই বিষয়টি জেনে নেওয়া অপরিহার্য যে,  পাথরের দ্বারা কোনো উপকার কিংবা অপকার হয় না। কিন্তু কাবা ঘরের হাজরে আসওয়াদ পাথরটিতে চুম্বন দেওয়া ইসলামের শিক্ষা সম্মত একটি কাজ। তবে তার ইবাদত উপাসনা করা বৈধ নয়। তাই মানুষকে কষ্ট না দিয়ে তাতে চুম্বন দেওয়ার সুযোগ পাওয়া গেলে চুম্বন দেওয়া সুন্নাত।

 
جواز الصيام والإفطار في السفر
সফরে থাকার সময় রোজা পালন করা এবং রোজা ভঙ্গ করা বৈধ
41-عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ،  قَالَ: كُنَّا نُسَافِرُ مَعَ النَّبيِّ صَلَّى اللَّه عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ؛ فَلَمْ يَعِبِ الصَّائِمُ عَلَى الْمُفْطِرِ، وَلاَ الْمُفْطِرُ عَلَى الصَّائِمِ.
(صحيح البخاري، رقم الحديث 1947، واللفظ له، وصحيح مسلم، رقم الحديث 98 - (1118)،).
41 - অর্থ: আনাস বিন মালিক [রাদিয়াল্লাহু আনহু] থেকে বর্ণিত,  তিনি বলেন: রমাজান মাসে আমরা আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর সাথে সফর করেছি। সেই সময় রোজা পালনকারী ব্যক্তি রোজা ভঙ্গকারী ব্যক্তির কোনো নিন্দা করেনি। এবং রোজা ভঙ্গকাকারী ব্যক্তিও রোজা পালনকারীর কোনো নিন্দা করেনি।
[সহীহ বুখারী, হাদীস নং 1947 এবং সহীহ মুসলিম, হাদীস নং 98 -(1118), তবে হাদীসের শব্দগুলি সহীহ বুখারী থেকে নেওয়া হয়েছে]।

* এই হাদীস বর্ণনাকারী সাহাবীর পরিচয় পূর্বে 3 নং হাদীসে উল্লেখ করা হয়েছে।
* এই হাদীস হতে শিক্ষণীয় বিষয়:
1। এই হাদীসটির দ্বারা এটা প্রমাণিত হয় যে, রমাজান মাসে সফরে রোজা পালন করা এবং রোজা ভঙ্গ করা বৈধ।
2। এই হাদীসটির দ্বারা এটা প্রমাণিত হয় যে, প্রকৃত ইসলাম উদারপন্থা ও নমনীয়তার ধর্ম। তাই রমাজান মাসে সফরের অবস্থায় রোজা পালন করার বিষয়ে কাঠিন্য বা কঠোরতা অবলম্বন করা হয় নি। সুতরাং যে ব্যক্তি রমাজান মাসে সফরের অবস্থায় থাকবে, সে ব্যক্তি ইচ্ছা করলে রোজা পালন করবে, ইচ্ছা করলে রোজা ভঙ্গ করে অন্য সময় রোজা পালন করে নিবে।

 

 

 

 

 
الجماع في الدبر حرام في الإسلام
প্রকৃত ইসলাম ধর্মে মলদ্বারে বা পায়ু পথে সঙ্গম করা হারাম
42- عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: "لاَ يَنْظُرُ اللَّهُ إِلَى رَجُلٍ جَامَعَ امْرَأَتَهُ فِي دُبُرِهَا".
(سنن ابن ماجه، رقم الحديث 1923، وصححه الألباني).
42 - অর্থ: আবু হুরায়রা [রাদিয়াল্লাহু আনহু] হতে বর্ণিত, তিনি নাবী কারীম [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] থেকে বর্ণনা করেছেন, নাবী কারীম [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলেছেন: “যে ব্যক্তি তার স্ত্রীর মলদ্বারে বা পায়ু পথে সঙ্গম করবে, মহান আল্লাহ তার দিকে দয়ার দৃষ্টিতে তাকাবেন না”।
[সুনান ইবনু মাজাহ, হাদীস নং 1923, আল্লামা নাসেরুদ্দিন আল্ আলবাণী হাদীসটিকে সহীহ (সঠিক) বলেছেন]।
* এই হাদীস বর্ণনাকারী সাহাবীর পরিচয় পূর্বে 1 নং হাদীসে উল্লেখ করা হয়েছে।


* এই হাদীস হতে শিক্ষণীয় বিষয়:
1। প্রকৃত ইসলাম ধর্ম মলদ্বারে বা পায়ু পথে সঙ্গম করা হারাম করে দিয়েছে। যেহেতু এই কর্মটি মহান আল্লাহ মানুষকে যে সুন্দর স্বাভাবিক নিয়মে সৃষ্টি করেছেন তার  বিপরীত পন্থা। অতঃপর এই কুকর্মটি হলো অনেক রোগের কষ্টদায়ক উপাদান। আর এর চেয়ে বড়ো কথা হলো এই যে, এই কুকর্মটি হলো মহান আল্লাহর ঘৃণা, শাস্তি, ক্রোধ এবং অভিশাপ লাভের উপকরণ।
2। এই হাদীসটির দ্বারা এটা প্রমাণিত হয় যে, যে ব্যক্তি তার স্ত্রীর মলদ্বারে বা পায়ু পথে সঙ্গম করবে, সে ব্যক্তি মহা পাপাচারী বলে পরিগণিত হবে। এবং সে তার নিজের জীবনকে মহান আল্লাহর মহা ক্রোধে নিক্ষেপ করবে। তাই তার প্রতি এই মহা পাপ থেকে অনুতপ্ত হয়ে আন্তরিকভাবে তওবা করা অপরিহার্য।
3। প্রকৃত মুসলিম ব্যক্তির জন্য এই বিষয়টি বৈধ যে, সে তার স্ত্রীর যোনিতেই সঙ্গম করবে তার সামনের দিক থেকে অথবা তার পিছন দিক থেকে। কিন্তু তার মলদ্বার বা পায়ু পথ সঙ্গম করার স্থান নয়। তার যোনিই হলো সঙ্গম করার স্থান, যেই স্থান দিয়ে সন্তানের জন্ম হয়। তাই নিজের স্ত্রীর যোনিতেই শুধু তার সামনের দিক থেকে অথবা তার পিছন দিক থেকে সঙ্গম করা জায়েজ।
ماذا يفعل المتيمم إذا وجد الماء في الوقت بعد الفراغ من الصلاة
পানি না পাওয়ার কারণে তায়াম্মুম করে নামাজ পড়ার পর পানি প্রাপ্ত হলে কি করা উচিত?
43- عَنْ أَبِيْ سَعِيْدٍ اَلْخُدْرِيِّ  رَضِيَ اللهُ عَنْهُ،  قَالَ: خَرَجَ رَجُلاَنِ فِيْ سَفَرٍ؛ فَحَضَرَتِ الصَّلاَةُ وَلَيْسَ مَعهُمَا مَاءٌ؛  فَتَيَمَّمَا صَعِيْداً طَيِّباً؛ فَصَلَّيَا، ثُمَّ وَجَدَا الْماءَ فِي الْوقْتِ؛ فَأَعَادَ أحَدُهُمَا الصَّلاَةَ وَالوُضُوْءَ، وَلَمْ يُعِدِ الآخَرُ، ثُمَّ أتَيَا رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ؛ فَذَكَرَا ذَلِكَ لَـهُ؛ فَقَالَ لِلَّذِيْ لَمْ يُعِدْ: "أصَبْتَ السُّنَّةَ وَأَجْزأَتْكَ صَلاَتُكَ"، وقَالَ لِلآخَرِ: "لَكَ الأجْرُ مَرَّتَيْنِ".
 (سنن أبي داود، رقم الحديث 338، واللفظ له، وسنن النسائي، رقم الحديث 433، وصححه الألباني).
43 -  অর্থ: আবু সাঈদ আলখুদরী [রাদিয়াল্লাহু আনহু] থেকে বর্ণিত। তিনি  বলেন: একদা দুই ব্যক্তি সফরে বের হয়। পথের মধ্যে নামাজের সময় উপনীত হয়। তারা পানি না পাওয়ার কারণে তায়াম্মুম করে নামাজ পড়েছিলো। অতঃপর উক্ত নামাজের সময়ের মধ্যেই তারা পানি প্রাপ্ত হওয়ায় তাদের একজন ওজু করে পুনরায় নামাজ পড়ে। এবং অন্য ব্যক্তি ওজু করে পুনরায় নামাজ পড়া হতে বিরত থাকে। অতঃপর উভয়েই আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর কাছে হাজির হয়ে এই ঘটনা বর্ণনা করে। আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] ওই ব্যক্তিকে বলেন, যে ব্যক্তি পুনরায় ওজু করে নামাজ পড়েনি: “তুমি প্রকৃত ইসলামের নিয়ম মোতাবেক সঠিক কাজ করেছো এবং এটাই তোমার জন্য যথেষ্ট”। আর যে ব্যক্তি ওজু করে পুনরায় নামাজ পড়েছে তার বিষয়ে বলেন: “তুমি দ্বিগুণ পুণ্যের অধিকারী হয়েছো”।
[সুনান আবু দাউদ, হাদীস নং 338 এবং সুনান নাসায়ী, হাদীস নং 433, তবে হাদীসের শব্দগুলি সুনান আবু দাউদ থেকে নেওয়া হয়েছে। আল্লামা নাসেরুদ্দিন আল্ আলবাণী এই হাদীসটিকে সহীহ (সঠিক) বলেছেন]।
* এই হাদীস বর্ণনাকারী সাহাবীর পরিচয়:
আবু সাঈদ আল্‌ খুদরী হলেন সায়াদ বিন মালেক বিন সিনান আল্‌ খাজরাজী আল্‌ আনসারী। তিনি একজন মহাবিখ্যাত সাহাবী। খন্দকের যুদ্ধে তিনি সর্ব প্রথমে অংশগ্রহণ করেন। আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর সাথে তিনি 12টি যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন।  তাঁর বর্ণিত হাদীসের সংখ্যা হলো 1170 টি।
আবু সাঈদ আল্‌ খুদরী [রাদিয়াল্লাহু আনহু] মাদীনায় সন 74 হিজরীতে 86 বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন, এই বিষয়ে অন্য উক্তিও রয়েছে। তাঁকে আল বাকী কবরস্থানে দাফন করা হয়।
* এই হাদীস হতে শিক্ষণীয় বিষয়:
1। প্রকৃত ইসলাম হলো সুখদায়ক এবং উদারপন্থার ধর্ম। তাই এই ধর্মে কোনো প্রকারের জটিলতা নেই। সুতরাং যখন কোনো জটিলতা দেখা দিবে, তখনই মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে সহজ বিষয় পাওয়া যাবে, যাতে মহান আল্লাহর ইবাদত উপাসনার সমস্ত বিষয় সহজ হয়ে যায়। আর মুসলিম ব্যক্তি আনন্দের সহিত সন্তুষ্টচিত্তে ইবাদত উপাসনার কাজ সম্পাদন করতে পারে।
2। এই হাদীসটির দ্বারা এটা প্রমাণিত হয় যে, যে ব্যক্তি নামাজের প্রথম সময়ে পানি না পাওয়ার কারণে পবিত্র মাটির দ্বারা তায়াম্মুম করে নামাজ পড়বে। অতঃপর নামাজ পড়ে নেওয়ার পর যদি সে নামাজের সময়ের মধ্যেই পানি প্রাপ্ত হয়, তাহলে ওজু করে পুনরায় নামাজ পড়া তার প্রতি অপরিহার্য বিষয় নয়। তবে প্রথম সময়ে পানি না পাওয়ার কারণে পবিত্র মাটির দ্বারা তায়াম্মুম করে নামাজ পড়ার অবস্থায় যদি সে পানি প্রাপ্ত হয়, তাহলে সেই পানির দ্বারা ওজু করেই নামাজ পড়ে নিবে। এটাই তার প্রতি অপরিহার্য বিষয়। যেহেতু মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনের মধ্যে বলেছেন:   
(فَلَمْ تَجِدُواْ مَاء فَتَيَمَّمُواْ صَعِيداً طَيِّباً )، (سورة المائدة، جزء من الآية 6).
ভাবার্থের অনুবাদ: “অতঃপর তোমরা যদি পানি না পাও, তাহলে পবিত্র মাটি দ্বারা তায়াম্মুম করে নিবে  অর্থাৎ, স্বীয় মুখমণ্ডল ও হস্তদ্বয় মাটি দ্বারা মুছে নিবে”। (সূরা আল মায়িদা, আয়াত নং 6 এর অংশবিশেষ)।
فضل العناية بالبنات
কন্যা সন্তানদেরকে যত্নসহকারে প্রতিপালন করার মর্যাদা
44-عَنْ أَنَسٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ،  قَالَ: قَالَ رَسُوْلُ اللَّهِ صَلَّى اللَّه عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: "مَنْ عَالَ جَارِيَتَيْنِ دَخَلْتُ أَنَا وَهُوَ الْجَنَّةَ كَهَاتَيْنِ وَأَشَارَ بِإِصْبَعَيْهِ".
(جامع الترمذي، رقم الحديث 1914، واللفظ له، وصحيح مسلم، رقم الحديث 149 -(2631)، وقال الإمام الترمذي عن هذا الحديث بأنه:  حسن غريب، وصححه الألباني).
44 - অর্থ: আনাস [রাদিয়াল্লাহু আনহু] থেকে বর্ণিত,  তিনি বলেন: আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলেছেন: “যে ব্যক্তি দুইটি কন্যাকে যত্নসহকারে প্রতিপালন করবে, আমি ও সেই ব্যক্তি জান্নাতে এই দুইটির মত থাকবো। আর তিনি স্বীয় দুইটি আঙ্গুল দ্বারা ইশারা করলেন”।
[জামে তিরমিযী, হাদীস নং 1914 এবং সহীহ মুসলিম, হাদীস নং 149 - (2631), তবে হাদীসের শব্দগুলি জামে তিরমিযী থেকে নেওয়া হয়েছে। ইমাম তিরমিযী হাদীসটিকে হাসান গারীব বলেছেন। এবং আল্লামা নাসেরুদ্দিন আল আলবাণী হাদীসটিকে সহীহ (সঠিক) বলেছেন]।
* এই হাদীস বর্ণনাকারী সাহাবীর পরিচয় পূর্বে 3 নং হাদীসে উল্লেখ করা হয়েছে।
* এই হাদীস হতে শিক্ষণীয় বিষয়:
1। এই হাদীসটির দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, কন্যা সন্তান প্রাপ্ত হওয়ার বিষয়টি হলো মহান আল্লাহর কাছ থেকে কল্যাণ লাভ করার উপাদান। এবং কন্যা সন্তানদেরকে যত্নসহকারে প্রতিপালন করা হলো একটি সহজ বিষয়। আর তাদের প্রতি একনিষ্ঠতার সহিত আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে অনুগ্রহ করলে জান্নাত পাওয়া যায়।
2। এই হাদীসটি কন্যা সন্তানদেরকে যত্নসহকারে প্রতিপালন করার প্রতি, এবং আন্তরিকভাবে তাদের ভরণপোষণ বহন করার প্রতি উৎসাহ প্রদান করে।

دعاء دخول المسجد والخروج منه
মাসজিদে প্রবেশ ও মাসজিদ থেকে বের হওয়ার দোয়া
45- عَنْ أَبِيْ حُمَيْدٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ 000 قَالَ:  قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: "إِذَا دَخَلَ أحَدُكُمُ المَسْجِدَ؛ فَلْيَقُلْ: اَللَّهُمَّ! افْتَحْ لِيْ أبْوَابَ رَحْمَتِكَ، وَإِذَا خَرَجَ، فَلْيَقُلْ: اَللَّهمَّ! إِنِّيْ أسْألُكَ مِنْ فَضْلِكَ".
(صحيح مسلم، رقم الحديث 68 - (713)، ).
45 -  অর্থ: আবু হুমাঈদ [রাদিয়াল্লাহু আনহু] হতে বর্ণিত যে, তিনি বলেন: আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলেছেন:
“তোমাদের মধ্যে থেকে কোনো ব্যক্তি যখন মাসজিদে প্রবেশ করবে, তখন সে এই দোয়াটি পাঠ করবে”:  
"اَللَّهمَّ افْتَحْ لِيْ أَبْوَابَ رَحْمتِكَ".
অর্থ: “হে আল্লাহ! আপনি আমার জন্য আপনার করুণার দরজাগুলি খুলে দিন”।
“আর যখন সে মাসজিদ থেকে বের হবে, তখন সে এই দোয়াটি পাঠ করবে”:
اَللَّهمَّ إنِّيْ أَسْألُكَ مِنْ فَضْلِكَ".
অর্থ: “হে আল্লাহ! আমি আপনার অনুগ্রহ প্রার্থনা করছি”।
 [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং 68 -(713)]।
* এই হাদীস বর্ণনাকারী সাহাবীর পরিচয়:
আবু হুমাঈদ আসসায়েদী আল আনসারী, তাঁর উপনাম বা কুনিয়াত ও ডাকনামে বিখ্যাত সাহাবী। তাঁর প্রকৃত নামের বিষয়ে মতভেদ রয়েছে। তাই তাঁর নামের বিষয়ে বলা হয়েছে:  তিনি হলেন আব্দুর রহমান বিন সায়াদ ইবনুল মুনজির। আবার এটাও বলা হয়েছে যে, তিনি হলেন আল মুনজির বিন সায়াদ। তিনি আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর সাহাবীগণের মধ্যে ছিলেন প্রকৃত ইসলামের বিধিবিধানের একজন পণ্ডিত ও বিশেষজ্ঞ বা আইনজ্ঞ।
আবু হুমাঈদ [রাদিয়াল্লাহু আনহু] মাদীনায় সন 60 হিজরীতে মৃত্যুবরণ করেন, এই বিষয়ে অন্য উক্তিও রয়েছে।
* এই হাদীস হতে শিক্ষণীয় বিষয়:
1। মাসজিদে প্রবেশ করার সময় এবং মাসজিদ থেকে বের হওয়ার সময়ের একাধিক দোয়া হাদীসের মধ্যে পাওয়া যায়। তবে মাসজিদে প্রবেশ করার সময় এবং মাসজিদ থেকে বের হওয়ার সময় মুসলিম ব্যক্তির এটা উচিত যে, সে আল্লাহর নাবী [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর প্রতি দরূদ ও সালাম পাঠ করবে,  অতঃপর মাসজিদে প্রবেশ করার সময় বলবে:
"اَللَّهُمَّ افْتَحْ لِيْ أَبْوَابَ رَحْمَتِكَ".
অর্থ: “হে আল্লাহ! আপনি আমার জন্য আপনার কৃপার দরজাগুলি উম্মুক্ত করে দাও”। এবং মাসজিদ থেকে বের হওয়ার সময় বলবে:
"اَللَّهُمَّ إِنِّيْ أَسْأَلُكَ مِنْ فَضْلِكَ".
অর্থ: “হে আল্লাহ! আমি আপনার অনুগ্রহ প্রার্থনা করছি”।
[দেখতে পারা যায়: সুনান আবু দাউদ, হাদীস নং 465, জামে তিরমিযী, হাদীস নং 314 এবং সুনান ইবনু মাজাহ, হাদীস নং 773, ইমাম তিরমিযী হাদীসটিকে হাসান বলেছেন। আল্লামা নাসেরুদ্দিন আল্ আলবাণী হাদীসটিকে সহীহ (সঠিক) বলেছেন]।
2। মাসজিদে প্রবেশ করার সময় যে দোয়াটি পাঠ করা হয়, সেই দোয়াটিতে মহান আল্লাহর কাছে তাঁর কৃপা প্রার্থনা করা হয়েছে। এবং মাসজিদ থেকে বের হওয়ার সময় যে দোয়াটি পাঠ করা হয়, সেই দোয়াটিতে মহান আল্লাহর কাছে তাঁর অনুগ্রহ প্রার্থনা করা হয়েছে। এর মধ্যে গুপ্ত তাৎপর্য বা রহস্য এটা থাকতে পারে যে, যে ব্যক্তি মাসজিদে প্রবেশ করে, সে এমন কাজে রত হয় যে, সেই কাজটির মাধ্যমে মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি ও নৈকট্য এবং জান্নাত লাভ করা যায়। সুতরাং এই কাজের জন্য মহান আল্লাহর কাছে তাঁর কৃপা প্রার্থনা করার বিষয়টি বেশি প্রযোজ্য। তাই তাঁর কাছে তাঁর কৃপা প্রার্থনা করা হয়।  এবং যে ব্যক্তি মাসজিদ থেকে বের হয়, সে ব্যক্তি বৈধ পন্থায় রুজিরোজগারের কাজে রত হয়, তাই সেই কাজটির জন্য মহান আল্লাহর কাছে তাঁর অনুগ্রহ প্রার্থনা করার বিষয়টি বেশি প্রযোজ্য হয়। তাই এই কাজটির জন্য মহান আল্লাহর কাছে তাঁর অনুগ্রহ প্রার্থনা করা হয়। এই রহস্যের বিষয়ে মহান আল্লাহই অধিক জানেন।  
الصلاة والسلام علَى النَّبيِّ عند الدخول في المسجد والخروج منه
মাসজিদে প্রবেশ ও মাসজিদ থেকে বের হওয়ার
সময় আল্লাহর নাবীর প্রতি দরূদ ও সালাম পাঠ করার বিধান
46- عَنْ فَاطِمَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهَا قَالَتْ: كَانَ رَسُوْلُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا دَخَلَ المَسْجِدَ صَلَّى عَلَى مُحَمَّدٍ وَسَلَّمَ، وَقَالَ: "رَبِّ اغْفِرْ لِيْ ذُنُوبِيْ، وَافْتَحْ لِيْ أَبْوَابَ رَحْمَتِكَ"، وَإِذَا خَرَجَ صَلَّى عَلَى مُحَمَّدٍ وَسَلَّمَ، وَقَالَ: "رَبِّ اغْفِرْ لِيْ ذُنُوبِيْ، وَافْتَحْ لِيْ أَبْوَابَ فَضْلِكَ".
(جامع الترمذي، رقم الحديث 314، واللفظ له، وسنن ابن ماجه، رقم الحديث 771، وقال الإمام الترمذي عن هذا الحديث بأنه:  حسن، وصححه الألباني).
46 - অর্থ: ফাতেমা বিনতু মুহাম্মাদ [রাদিয়াল্লাহু আনহা] হতে বর্ণিত, তিনি বলেন: আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] যখন মাসজিদে প্রবেশ করতেন, তখন মুহাম্মাদের প্রতি দরূদ ও সালাম পাঠ করতেন এবং বলতেন:
"رَبِّ اغْفِرْ لِيْ ذُنُوبِيْ، وَافْتَحْ لِيْ أَبْوَابَ رَحْمَتِكَ".
অর্থ: “হে আমার প্রভু! আপনি আমার পাপগুলি ক্ষমা করুন এবং আমার জন্য আপনার করুণার দরজাগুলি খুলে দিন”।
আর আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] যখন মাসজিদ থেকে বের হতেন, তখন মুহাম্মাদের প্রতি দরূদ ও সালাম পাঠ করতেন এবং বলতেন:
" رَبِّ اغْفِرْ لِيْ ذُنُوبِيْ، وَافْتَحْ لِيْ أَبْوَابَ فَضْلِكَ".
অর্থ: “হে আমার প্রভু! আপনি আমার পাপগুলি ক্ষমা করুন এবং আমার জন্য আপনার অনুগ্রহের দরজাগুলি খুলে দিন”।
[জামে তিরমিযী, হাদীস নং 314 এবং সুনান ইবনু মাজাহ, হাদীস নং 771, তবে হাদীসের শব্দগুলি জামে তিরমিযী থেকে নেওয়া হয়েছে। ইমাম তিরমিযী হাদীসটিকে হাসান বলেছেন। এবং আল্লামা নাসেরুদ্দিন আল আলবাণী হাদীসটিকে সহীহ (সঠিক) বলেছেন]।


* এই হাদীস বর্ণনাকারিণী  সাহাবীয়ার পরিচয়:
ফাতেমা [রাদিয়াল্লাহু আনহা] এর পিতা মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এবং তাঁর মাতা খাদীজা বিনতে খুওয়াইলিদ [রাদিয়াল্লাহু আনহা]। ফাতেমা [রাদিয়াল্লাহু আনহা] আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর সর্ব কনিষ্ঠা সন্তান। তিনি জন্মগ্রহণ করেন মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] আল্লাহর পক্ষ থেকে পয়গম্বর বা দূত নির্ধারিত হওয়ার পূর্বেই। তিনি একজন পবিত্রা এবং উচ্চ মর্যাদাশীল  ব্যক্তিত্বের অধিকারিণী ছিলেন। তিনি ব্যক্তিগতভাবেই ছিলেন আত্মিক এবং চারিত্রিক উৎকৃষ্ট গুণাবলির কারণে মহা মর্যাদার অধিকারিণী। আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] কে তিনি নিজের জীবনের উত্তম আদর্শ হিসেবে গ্রহণ করেছিলেন। তাই তিনি ছিলেন ধৈর্যশালিনী, ধর্মপরায়ণা, ন্যায়পরায়ণা, সর্বোত্তম আদবকায়দায় সুসজ্জিতা,  আল্লাহর প্রতি সন্তুষ্টা এবং তাঁর কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপনকারিণী আলোকোজ্জ্বল অস্তিত্বের মহীয়সী নারী।
ফাতেমা [রাদিয়াল্লাহু আনহা] এর মর্যাদা ও গুণাবলির অনেক কথা রয়েছে, তার মধ্যে থেকে এখানে কয়েকটি কথা উল্লেখ করা হলো:  আল্লাহর নাবী [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলেছেন:  “একজন ফেরেশতা যিনি আজকের এই রাতের আগে কখনও পৃথিবীতে অবতরণ করেন নি। তিনি আমাকে সালাম দেওয়ার জন্য এবং আমার জন্য এই সুখবর বহন করে আনার জন্য মহান আল্লাহর কাছে অনুমতি চেয়েছেন: ফাতিমা জান্নাতের নারীদের নেত্রী এবং হাসান ও হুসাইন জান্নাতের যুবকদের নেতা”।  
 [জামে তিরমিযী, হাদীস নং 3781, ইমাম তিরমিযী হাদীসটিকে হাসান  এবং গারীব (এক পন্থায় বর্ণিত) বলেছেন। আল্লামা নাসেরুদ্দিন আল্ আলবাণী হাদীসটিকে সহীহ (সঠিক) বলেছেন]।
অপরিসীম গুণের আধার ফাতেমা যখন 15 বছর 5 মাস বয়সে উপনীত হন, তখন আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] তাঁর বিয়ে আলী [রাদিয়াল্লাহু আনহু] এর সঙ্গে দেন।
ফাতেমা [রাদিয়াল্লাহু আনহা] আল্লাহর নাবী [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর অতি আদরিণী অত্যাধিক স্নেহের পাত্রী ছিলেন।  
ফাতেমা [রাদিয়াল্লাহু আনহা] আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর মৃত্যুবরণ করার ছয় মাস পর রমাজান মাসের 3 তারিখে সন 11 হিজরীতে মৃত্যুবরণ করেন। এবং তাঁকে রাত্রি বেলায় আল বাকী কবরস্থানে দাফন করা হয় [রাদিয়াল্লাহু আনহা] ।
* এই হাদীস হতে শিক্ষণীয় বিষয়:
1। এই হাদীসটির দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, মাসজিদে প্রবেশ করার সময় আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর প্রতি দরূদ ও সালাম পাঠ করার পর এই দোয়াটি পড়া উচিত।
"رَبِّ اغْفِرْ لِيْ ذُنُوبِيْ، وَافْتَحْ لِيْ أَبْوَابَ رَحْمَتِكَ"
অর্থ: “হে আমার প্রভু! আপনি আমার পাপগুলি ক্ষমা করুন এবং আমার জন্য আপনার অনুগ্রহের দরজাগুলি খুলে দিন”।
তাই আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] তাঁর সাহাবীগণকে যে পদ্ধতিতে তাঁর প্রতি দরূদ পাঠ করার নিয়ম শিক্ষা দিয়েছেন, সেই পদ্ধতিতেই তাঁর প্রতি দরূদ পাঠ করা উচিত। তাই তাঁর প্রতি দরূদ পাঠ করার উত্তম নিয়ম ও পদ্ধতি  হলো নিম্নরূপ:  
أ - "اَللَّهُمَّ صَلِّ عَلَى مُحَمَّدٍ وَعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ، كَمَا صَلَّيْتَ عَلَى إِبْرَاهِيْمَ، وَعَلَى آلِ إِبْرَاهِيْمَ، إِنَّكَ حَمِيْدٌ مَجِيْدٌ، اَللَّهُمَّ بَارِكْ عَلَى مُحَمَّدٍ وَعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ، كَمَا بَارَكْتَ عَلَى إِبْرَاهِيْمَ، وَعَلَى آلِ إِبْرَاهِيْمَ، إِنَّكَ حَمِيْدٌ مَجِيْدٌ ".
(صحيح البخاري, رقم الحديث 3370، وصحيح مسلم، رقم الحديث 66 - (406)، واللفظ للبخاري).
ক -  অর্থ: হে আল্লাহ! আপনি মুহাম্মাদকে ও তাঁর পরিবারবর্গকে এবং তাঁর অনুসরণকারীগণকে এমনভাবে সম্মানিত করুন, যেমনভাবে ইবরাহীম ও তাঁর পরিবারবর্গকে এবং তাঁর অনুসরণকারীগণকে সম্মানিত করেছেন। নিশ্চয় আপনি প্রশংসিত মহিমান্বিত।
হে আল্লাহ! আপনি মুহাম্মাদকে ও তাঁর পরিবারবর্গকে এবং তাঁর অনুসরণকারীগণকে যে সম্মান বা মর্যাদা প্রদান করেছেন, সে সম্মান বা মর্যাদা এমনভাবে বলবৎ রাখুন, যেমনভাবে ইবরাহীম ও তাঁর পরিবারবর্গের সম্মান বা মর্যাদা বলবৎ রেখেছেন। নিশ্চয় আপনি প্রশংসিত মহিমান্বিত।
[সহীহ বুখারী, হাদীস নং 3370 এবং সহীহ মুসলিম, হাদীস নং 66 -(406), তবে হাদীসের শব্দগুলি সহীহ বুখারী থেকে নেওয়া হয়েছে]।
ب -"الَّلهُمَّ صَلِّ عَلَى مُحَمَّدٍ عَبْدِكَ وَرَسُوْلِكَ، كَمَا صَلَّيْتَ عَلَى إِبْرَاهِيْمَ، وَبَارِكْ عَلَى مُحَمَّدٍ، وَعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ، كَمَا بَارَكْتَ عَلَى إِبْرَاهِيْمَ وَآلِ إِبْرَاهِيْمَ ".  
(صحيح البخاري, رقم الحديث 6358).
খ - অর্থ: “হে আল্লাহ! আপনি আপনার অনুগত প্রিয়পাত্র ও রাসূল মুহাম্মাদকে এমনভাবে সম্মানিত করুন, যেমনভাবে ইবরাহীমকে সম্মানিত করেছেন।
হে আল্লাহ! আপনি মুহাম্মাদকে ও তাঁর পরিবারবর্গকে এবং তাঁর অনুসরণকারীগণকে যে সম্মান বা মর্যাদা প্রদান করেছেন, সে সম্মান বা মর্যাদা এমনভাবে বলবৎ রাখুন, যেমনভাবে ইবরাহীম ও তাঁর পরিবারবর্গের সম্মান বা মর্যাদা বলবৎ রেখেছেন”।
[সহীহ বুখারী, হাদীস নং 6358]।
ج - "اَلَّلهُمَّ صَلِّ عَلَى مُحَمَّدٍ وَأَزْوَاجِهِ وَذُرِّيَتِهِ، كَمَا صَلَّيْتَ عَلَى آلِ إِبْرَاهِيْمَ، وَبَارِكْ عَلَى مُحَمَّدٍ وَأَزْوَاجِهِ وَذُرِّيَتِهِ، كَمَا بَارَكْتَ عَلَى آلِ إِبْرَاهِيْمَ؛ إِنَّكَ حَمِيْدٌ مَجِيْدٌ".
(صحيح البخاري، رقم الحديث 3369، وصحيح مسلم، رقم الحديث 69 - (407)، واللفظ للبخاري).
গ - অর্থ: “হে আল্লাহ! আপনি মুহাম্মাদ এবং তাঁর পত্নীগণ ও তাঁর সন্তানদেরকে এমনভাবে সম্মানিত করুন, যেমনভাবে আপনি ইবরাহীমের পরিবারবর্গকে এবং তাঁর অনুসরণকারীগণকে সম্মানিত করেছেন।
হে আল্লাহ!  আপনি মুহাম্মাদ এবং তাঁর পত্নীগণ ও তাঁর সন্তানদেরকে যে সম্মান বা মর্যাদা প্রদান করেছেন, সে সম্মান বা মর্যাদা এমনভাবে বলবৎ রাখুন, যেমনভাবে ইবরাহীমের পরিবারবর্গের সম্মান বা মর্যাদা বলবৎ রেখেছেন”।
[সহীহ বুখারী, হাদীস নং 3369 এবং সহীহ মুসলিম, হাদীস নং 69 -(407), তবে হাদীসের শব্দগুলি সহীহ বুখারী থেকে নেওয়া হয়েছে]।
د - "اَلَّلهُمَّ صَلِّ عَلَى مُحَمَّدٍ وَعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ".
(سنن النسائي، رقم الحديث 1292، وصححه الألباني).
ঘ - অর্থ: “হে আল্লাহ! আপনি মুহাম্মাদকে ও তাঁর পরিবারবর্গকে এবং তাঁর অনুসরণকারীগণকে অতিশয় সম্ভ্রম বা সম্মান ও মর্যাদা প্রদান করুন”।
[সুনান নাসায়ী, হাদীস নং 1292। আল্লামা নাসেরুদ্দিন আল আলবাণী হাদীসটিকে সহীহ ( সঠিক ) বলেছেন]।
2। আল্লাহর রাসূল মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর প্রতি আল্লাহর সালাত বা দরূদ এর  অর্থ:   
معنى صلاة الله على الرسول: تعظيم الله للرسول، وثناؤه عليه.
এর অর্থ  হলো: আল্লাহর পক্ষ থেকে তাঁর রাসূল মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] কে অতিশয় সম্মানিত ও গৌরবান্বিত করা। এবং
معنى اَللَّهُمَّ صَلِّ عَلَى مُحَمَّدٍ: اَللَّهُمَّ عَظِّمْهُ في الدنيا والآخرة بما يليق به.
এর অর্থ হলো: হে আল্লাহ! আপনি মুহাম্মাদকে তাঁর উপযুক্ত সম্মান দুনিয়াতে এবং পরকালে প্রদান করুন।
3। আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর প্রতি সালাম প্রেরণ করার নিয়মটি হলো এই যে,
اَلسَّلاَمُ عَلَيْكَ أيُّهَا النَّبِيُّ وَرَحْمَةُ اللهِ وَبَرَكَاتُهُ
অর্থ:   “হে নাবী আপনার প্রতি সর্ব প্রকার শান্তি, আল্লাহর  করুণা ও তাঁর কল্যাণ অবতীর্ণ হোক”।
পাঠ করা।
অথবা
اَلسَّلاَمُ عَلَيْكَ يَا رَسُوْلَ اللهِ.
অর্থ:   “হে আল্লাহর রাসূল! আপনার প্রতি সর্ব প্রকার শান্তি অবতীর্ণ হোক”।
বলে আল্লাহর রাসূলের প্রতি সালাম পেশ করা।
কিংবা
اَلسَّلاَمُ عَلَيْكَ يَا نَبِيَّ اللهِ.
 অর্থ:   “হে আল্লাহর নাবী! আপনার প্রতি সর্ব প্রকার শান্তি অবতীর্ণ হোক”।
পাঠ করে আল্লাহর রাসূলের প্রতি সালাম পেশ করা উচিত। কেননা এটাই তো হচ্ছে প্রকৃত ইসলাম ধর্মের পবিত্র অভিবাদন পদ্ধতি।
[দেখতে পারা যায় সহীহ বুখারী, হাদীস নং 3326 এবং সহীহ মুসলিম, হাদীস নং  28 -(2841) এবং  132 -(2473)]।
নচেৎ
اَلسَّلاَمُ عَلَى النَّبِيِّ
অর্থ: “আল্লাহর নাবীর প্রতি সর্ব প্রকার শান্তি অবতীর্ণ হোক”।
উচ্চারণ করেও আল্লাহর রাসূলের প্রতি সালাম পেশ করা যেতে পারে।
পৃথিবীর যে কোনো স্থান থেকে আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর নিকটে সকল মুসলিম নর-নারীর সালাম পৌঁছে দেওয়ার জন্য মহান আল্লাহ কতকগুলি ফেরেশতা নিযুক্ত করে রেখেছেন। (দেখতে পারা যায় সুনান নাসায়ী, হাদীস নং 1282, আল্লামা নাসেরুদ্দিন আল আলবাণী হাদীসটিকে সহীহ (সঠিক) বলেছেন ।
এবং পৃথিবীর যে কোনো স্থান থেকে আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর নিকটে সকল মুসলিম নর-নারীর দরূদ পৌঁছে দেওয়া হয়। (দেখতে পারা যায় সুনান আবু দাউদ, হাদীস নং 2042, আল্লামা নাসেরুদ্দিন আল্ আলবাণী এই হাদীসটিকে সহীহ (সঠিক) বলেছেন)।
من آداب دخول المسجد
মাসজিদে প্রবেশ করার আদবকায়দা
47-عَنْ جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قَالَ000: "مَنْ أَكَلَ الْبَصَلَ وَالثُّوْمَ وَالْكُرَّاثَ؛ فَلاَ يَقْرَبَنَّ مَسْجِدَنَا؛ فَإِنَّ الْمَلائِكَةَ تَتَأَذَّى مِمَّا يَتَأَذَّى مِنْهُ بَنُو آدَمَ".
(صحيح مسلم، رقم الحديث 74 - (564)، واللفظ له،  وصحيح البخاري، رقم الحديث 854).
47 - অর্থ: জাবের বিন আব্দুল্লাহ [রাদিয়াল্লাহু আনহুমা] থেকে বর্ণিত। তিনি নাবী কারীম [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] থেকে বর্ণনা করেছেন, নাবী কারীম [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলেছেন: “যে ব্যক্তি কাঁচা পিঁয়াজ, রশুন ও রশুনের গাছ অথবা রশুনের মতো উগ্রগন্ধী বা দুর্গন্ধ জাতীয় কোনো জিনিস খাবে, সে যেন আমাদের মাসজিদের নিকটবর্তী না হয়; কেননা, ফেরেশতাগণ সেই সব জিনিসের দ্বারা কষ্ট পেয়ে থাকেন, যেই সব জিনিসের দ্বারা আদম-সন্তান কষ্ট পেয়ে থাকে”।
[সহীহ মুসলিম, হাদীস নং 74-(564) এবং সহীহ বুখারী, হাদীস নং 854, তবে হাদীসের শব্দগুলি সহীহ মুসলিম থেকে নেওয়া হয়েছে]।
* এই হাদীস বর্ণনাকারী সাহাবীর পরিচয় পূর্বে 22 নং হাদীসে উল্লেখ করা হয়েছে।
* এই হাদীস হতে শিক্ষণীয় বিষয়:
1। মাসজিদে প্রবেশ করার পূর্বে যে ব্যক্তি কাঁচা পেঁয়াজ, কাঁচা রসুন, ইত্যাদি দুর্গন্ধ জাতীয় কিছু খাবে, সে ব্যক্তির জন্য মাসজিদে প্রবেশ করা কঠোরতার সহিত নিষিদ্ধ করা হয়েছে। যাতে সে তার দুর্গন্ধের দ্বারা অন্য মুসল্লিদেরকে কষ্ট না দেয়। কেননা যে ব্যক্তি নিজের দুর্গন্ধের দ্বারা মুসল্লিদেরকে কষ্ট দেয়, সে ব্যক্তি প্রকৃতপক্ষে ফেরেশতাগণকেই কষ্ট দিয়ে থাকে।
2। যে ব্যক্তির শরীরের দুর্গন্ধের দ্বারা মুসল্লিদের কষ্ট হবে, সে ব্যক্তির জন্য মাসজিদে প্রবেশ করা জায়েজ নয়। সুতরাং দৃষ্টান্তস্বরূপ বলা যেতে পারে যে, যে ব্যক্তির শরীরের মধ্যে ধুমপান অথবা বিড়ি, সিগারেট, তামাক ইত্যাদির দুর্গন্ধ থাকবে অথবা তার শরীরের পোশাক, জামাকাপড়, কিংবা পায়ের মোজা দুর্গন্ধযুক্ত  হবে, সে ব্যক্তি মাসজিদে প্রবেশ করবে না। তাই মুসল্লি ব্যক্তি যেন মাসজিদে প্রবেশ করার পূর্বে নিজের শরীর, শরীরের পোশাক, জামাকাপড় ইত্যাতি ভালোভাবে দেখে নেয় বা পরিদর্শন নেয়। যাতে সে মাসজিদে প্রবেশ করে মুসল্লিদেরকে এবং ফেরেশতাগণকে কষ্ট না দেয়। আর পুণ্যের বদলে পাপকারী না হয়ে যায়।
3। এই হাদীসটি মুসলিম ব্যক্তিকে এই বিষয়টির প্রতি উৎসাহ প্রদান করে যে, সে যেন মাসজিদের পবিত্রতা রক্ষা করার গুরুত্ব অনুভব করে এবং মাসজিদে উপস্থিত হওয়ার সময় এবং নামাজ পড়ার সময় সুসজ্জিত হয়ে মাসজিদে প্রবেশ করে। সুতরাং সে মাসজিদে যাওয়ার পূর্বে পবিত্রতার্জন করবে, বিশুদ্ধতা বজায় রাখবে, দরকারে যত্নসহকারে ওজু ও গোসল বা স্নান করবে, সুগন্ধি ব্যবহার করবে, প্রসাধন করবে এবং সুসজ্জিত হয়ে পরিষ্কার ও সুন্দর কাপড় পরিধান করবে। অতঃপর মাসজিদে প্রবেশ করবে।

 

 

لا يجوز إنشاد الضالة في المساجد
মাসজিদের মধ্যে হারানো বস্তুর ঘোষণা দেওয়া জায়েজ নয়
48- عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، يَقُوْلُ:  قَالَ رَسُوْلُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: "مَنْ سَمِعَ رَجُلاً يَنْشُدُ ضَالَّةً فِي الْمَسْجِدِ؛ فَلْيَقُلْ: لاَ رَدََّهَا اللَّهُ عَلَيْكَ؛ فَإِنََّ الْمَسَاجِدَ لَمْ تُبْنَ لِهَذَا"،    (صحيح مسلم، رقم الحديث 79 -(568)، ).
48 - অর্থ:  আবু হুরায়রা [রাদিয়াল্লাহু আনহু] হতে বর্ণিত, তিনি বলেন যে, আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলেছেন: “যে ব্যক্তি কোনো লোককে মাসজিদে হারানো বস্তুর ঘোষণা দিতে শুনবে, সে তার জন্য বলবে, আল্লাহ তোমাকে তা ফিরিয়ে না দেন। কেননা মাসজিদ এই কাজের জন্য তৈরি করা হয় নি”।
[সহীহ মুসলিম, হাদীস নং 79 -(568) ]।
* এই হাদীস বর্ণনাকারী সাহাবীর পরিচয় পূর্বে 1 নং হাদীসে উল্লেখ করা হয়েছে।


* এই হাদীস হতে শিক্ষণীয় বিষয়:
1। আল্লাহর নিকটে সবচেয়ে বেশি উৎকৃষ্ট ও পছন্দনীয় স্থান হলো মাসজিদ। সুতরাং প্রকৃত ইসলাম ধর্মে মাসজিদের মহামর্যাদা এবং মহাসম্মান রয়েছে। আর এই মহামর্যাদা এবং মহাসম্মান রক্ষা করা অপরিহার্য।
2। মাসজিদের মধ্যে হারানো বস্তু বা সম্পদের বিজ্ঞপ্তি দেওয়া জায়েজ নয়। অনুরূপভাবে কোনো হারানো বস্তুর ঘোষণা দেওয়াও বৈধ নয়। যেহেতু এই কাজের জন্য মাসজিদ নির্মিত হয়নি। কেননা, পৃথিবীর মধ্যে মাসজিদ নির্মিত হয়েছে আল্লাহর জিকির, ইবাদত উপাসনা প্রতিষ্ঠিত করার জন্য এবং প্রকৃত ইসলামের জ্ঞান প্রচার করার জন্য। তবে মাসজিদের বাইরের দেওয়াল বা প্রাচীরের বাইরের দিকে কিংবা দরজার বাইরের দিকে কোনো হারানো বস্তু বা সম্পদের বিজ্ঞপ্তি দেওয়া জায়েজ আছে। এবং তাতে কোনো জটিলতা নেই।  
3। মাসজিদ নির্মিত হয়েছে আল্লাহর ইবাদত বা উপাসনা প্রতিষ্ঠিত করার জন্য। তাই কোনো মাসজিদের মধ্যে মহান আল্লাহর ইবাদত উপাসনা ব্যতীত অন্য কোনো বস্তুর ইবাদত উপাসনা করা জায়েজ নয়। অনুরূপভাবে কোনো মাসজিদের মধ্যে মহান আল্লাহ ব্যতীত অন্য কাউকে প্রার্থনা করার জন্য ডাকা জায়েজ নয়। সুতরাং যে ব্যক্তি মাসজিদে প্রবেশ করবে, সে ব্যক্তি নিষ্ঠাবান হয়ে মহান আল্লাহর উপাসনা করবে। তাই মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনের মধ্যে বলেছেন:  
 (وَأَنَّ الْمَسَاجِدَ لِلَّهِ فَلَا تَدْعُوا مَعَ اللَّهِ أَحَدًا)، سورة الجن، الآية 18.
ভাবার্থের অনুবাদ: “মাসজিদসমূহ মহান আল্লাহর একত্ববাদ, উপাসনা এবং স্মরণ প্রতিষ্ঠিত করার জন্য। অতএব, তোমরা মহান আল্লাহর অংশীদার স্থাপন করে তাঁর সাথে কাউকে ডাকবে না”।
 (সূরা আল জিন, আয়াত নং 18)।
সুতরাং মাসজিদের মধ্যে হারানো বস্তু বা সম্পদের বিজ্ঞপ্তি অথবা ঘোষণা দেওয়া জায়েজ নয়। তাই যে ব্যক্তি কোনো লোককে মাসজিদে হারানো বস্তুর বিজ্ঞপ্তি অথবা ঘোষণা দিতে শুনবে, সে তার জন্য বদদোয়া করবে এবং বলবে, আল্লাহ তোমাকে তোমার হারানো বস্তু বা সম্পদ ফিরিয়ে না দেন। যাতে সে তার হারানো বস্তু বা সম্পদ না পায়। যেহেতু সে প্রকৃত ইসলামের শিক্ষা মোতাবেক মাসজিদের সম্মান রক্ষা করার আদবকায়দার বিপরীত কাজ সম্পাদন করেছে। তারই শাস্তিস্বরূপ এসেছে এই বদ দোয়াটি।

 

 

 

دعاء القنوت في صلاة الوتر
বেতর নামাজে কুনূতের দোয়া
49- عَنِ الْحَسَنِ بْنِ عَلِيٍّ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا، قَالَ: عَلَّمَنِيْ رَسُوْلُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَلِمَاتٍ أَقُوْلُهُنَّ فِيْ قُنُوْتِ الْوِتْرِ: "اَللَّهُمَّ اهْدِنِيْ فِيْمَنْ هَدَيْتَ، وَعَافِنِيْ فِيْمَنْ عَافَيْتَ، وَتَوَلَّنِيْ فِيْمَنْ تَوَلَّيْتَ، وَبَارِكْ لِيْ فِيْمَا أَعْطَيْتَ، وَقِنِيْ شَرَّمَا قْضَيْتَ؛ إِنَّكَ تَقْضِىْ وَلاَ يُقْضَى عَلَيْكَ، وَإنَّهُ لاَ يَذِلُّ مَنْ وَّالَيْتَ، وَلاَ يَعِزُّ مَنْ عَادَيْتَ، تَبَارَكْتَ رَبَّنَا وَتَعَالَيْتَ".
(سنن أبي داود، رقم الحديث 1425، واللفظ له، وجامع الترمذي، رقم الحديث 464، وسنن النسائي، رقم الحديث 1745، وسنن ابن ماجه، رقم الحديث  1178، قال الإمام الترمذي عن هذا الحديث بأنه:  حسن، وصححه الألباني).
49 - অর্থ: আল হাসান বিন আলী [রাদিয়াল্লাহু আনহুমা] হতে বর্ণিত,  তিনি বলেন যে, আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] আমাকে বেতর নামাজের কুনূতে পাঠ করার জন্য এই দোয়াটি শিখিয়ে দিয়েছেন:
"اَللَّهُمَّ اهْدِنِيْ فِيْمَنْ هَدَيْتَ، وَعَافِنِيْ فِيْمَنْ عَافَيْتَ، وَتَوَلَّنِيْ فِيْمَنْ تَوَلَّيْتَ، وَبَارِكْ لِيْ فِيْمَا أَعْطَيْتَ، وَقِنِيْ شَرَّمَا قْضَيْتَ؛ إِنَّكَ تَقْضِىْ وَلاَ يُقْضَى عَلَيْكَ، وَإنَّهُ لاَ يَذِلُّ مَنْ وَّالَيْتَ، وَلاَ يَعِزُّ مَنْ عَادَيْتَ، تَبَارَكْتَ رَبَّنَا وَتَعَالَيْتَ".
অর্থ: “হে আল্লাহ! আপনি যাদেরকে সুখদায়ক সৎ পথ প্রকৃত ইসলামের অনুগামী করেছেন, আমাকেও তাদের অন্তর্ভুক্ত করুন। আপনি যাদেরকে সুখশান্তিপূর্ণ মঙ্গলময় জীবন প্রদান করেছেন, আমাকেও তাদের অন্তর্ভুক্ত করুন। আপনি যাদেরকে সর্ব প্রকার কল্যাণ প্রদানের সহিত সাহায্য করেছেন, আমাকেও তাদের অন্তর্ভুক্ত করুন। আপনি আমাকে যে সমস্ত মঙ্গলদায়ক জিনিস প্রদান করেছেন, সেগুলিকে আমার জন্য অধিকতর মঙ্গলদায়ক করুন। আপনি যে ফয়সালা করেছেন, তার অমঙ্গল হতে আমাকে রক্ষা করুন। কেননা সব জগতের সঠিক পরিচালনার জন্য যে ফয়সালা আপনি করেছেন, সেটাই সঠিক ফয়সালা। তাই আপনার ফয়সালার উপরে আর কোনো প্রকারের সঠিক ফয়সালা নেই। আপনি যাকে ভালো বাসবেন, সে কোনো দিন অপমানিত হতে পারে না। আর আপনি যার জন্য অমঙ্গল নির্ধারণ করবেন, সে কোনো দিন শক্তিশালী হতে পারবে না। হে আমাদের প্রতিপালক! আপনি মহাকল্যাণময় এবং মহামহিমান্বিত”।
 [সুনান আবু দাউদ, হাদীস নং 1425, জামে তিরমিযী, হাদীস নং 464, সুনান নাসায়ী, হাদীস নং 1745 এবং সুনান ইবনু মাজাহ, হাদীস নং 1178।  ইমাম তিরমিযী হাদীসটিকে হাসান বলেছেন। এবং আল্লামা নাসেরুদ্দিন আল্ আলবাণী হাদীসটিকে সহীহ (সঠিক) বলেছেন]।
* এই হাদীস বর্ণনাকারী সাহাবীর পরিচয়:
আল হাসান বিন আলী [রাদিয়াল্লাহু আনহুমা] হলেন আবু মুহাম্মাদ আল কুরাশী আল্‌ হাশিমী, আল্লাহর রাসূল মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর প্রিয় নাতি, ফাতিমাতু জ্জাহরা [রাদিয়াল্লাহু আনহা] এর প্রথম সন্তান। তিনি ৩য় হিজরীর রমাজান মাসের ১৫ তারিখে জন্ম গ্রহণ করেন। আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] তার জন্মের সময় তাকে নিজের পবিত্র মুখে খেজুর ফল চর্বণ করে তাকে খাইয়েছিলেন। হাদীস গ্রন্থে তাঁর কাছ থেকে বর্ণিত 13টি হাদীস পাওয়া যায়।
আল হাসান বিন আলী [রাদিয়াল্লাহু আনহুমা] ছিলেন তাঁর মাতা-পিতার সর্ব প্রথম সন্তান। তিনি ছিলেন অত্যন্ত বুদ্ধিমান ও সহনশীল। সেই সময় মুসলিম জাহানে ঐক্য স্থাপনের জন্য তিনি নিজের জীবনকে নিবেদিত করেছিলেন। যাতে মুসলিম সমাজে মানুষের রক্ত না ঝরে। এর স্পষ্ট প্রমাণ হলো এই যে, তিনি সন 41 হিজরীতে রাজনীতির কাজ এবং রাষ্ট্র পরিচালনার কার্যক্রম পরিত্যাগ করে মুয়াবিয়া [রাদিয়াল্লাহু আনহু] কে রাষ্ট্রিয় সমস্ত ক্ষমতা হস্তান্তর করেছিলেন। এই কারণে মুসলিম জাহানে একজন খালীফা এবং রাষ্ট্রিয় শাসক ও নৃপতি মুয়াবিয়া [রাদিয়াল্লাহু আনহু] এর প্রশাসন ব্যবস্থা চালু হয় এবং সারা মুসলিম জাহানে ঐক্য, শান্তি ও নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠিত হয়।
আল হাসান বিন আলী [রাদিয়াল্লাহু আনহুমা] এর মর্যাদার অনেক বিবরণ অনেক হাদীসে বর্ণিত হয়েছে, উক্ত হাদীসগুলির মধ্যে থেকে এখানে একটি হাদীস উল্লেখ করলাম:
আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] হতে বর্ণিত, তিনি বলেছেন:
"الحَسَنُ وَالحُسَيْنُ سَيِّدَا شَبَابِ أَهْلِ الجَنَّةِ".
(جامع الترمذي، رقم الحديث 3768، قال الإمام الترمذي عن هذا الحديث بأنه:  حسن صحيح، وصححه الألباني).
অর্থ: “হাসান এবং হোসাইন জান্নাতবাসী যুবকদের সর্দার”।
[জামে তিরমিযী, হাদীস নং 3768, ইমাম তিরমিযী হাদীসটিকে হাসান, সহীহ বলেছেন। আল্লামা নাসেরুদ্দিন আল আলবাণীও হাদীসটিকে সহীহ (সঠিক) বলেছেন]।
তিনি তাঁর 47 বছর বয়সে সন 49 অথবা 50 হিজরীতে মৃত্যুবরণ করেন। এবং মাদীনা শহরের আল বাকী কবরস্থানে তাঁকে তাঁর মাতা ফাতিমাতু জ্জাহরা [রাদিয়াল্লাহু আনহা] এর কবরের পার্শ্বে সমাহিত করা হয়।
* এই হাদীস হতে শিক্ষণীয় বিষয়:
1। নামাজের মধ্যে দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থায় একটি নির্দিষ্ট সময়ে ও স্থানে দোয়া পাঠ করাকে কুনূতের দোয়া বলা হয়। বেতর নামাজে কুনূতের দোয়া পাঠ করার বিষয়টি আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] থেকে নির্ভরযোগ্য পন্থায় সাব্যস্ত হয় নি। তবে তিনি আল হাসান বিন আলী [রাদিয়াল্লাহু আনহুমা] কে বেতর নামাজের কুনূতে পাঠ করার জন্য এই দোয়াটি শিখিয়ে দিয়েছেন। তাই মুসলিম ব্যক্তির উচিত যে, সে যেন বেতর নামাজে কুনূতের এই দোয়াটি কোনো কোনো সময় পাঠ করে।  
2। বেতর নামাজের শেষ রাকাতে রুকূর পূর্বে অথবা রুকূ থেকে উঠার পর, উভয় অবস্থায় কুনূতের দোয়া পাঠ করা জায়েজ। কুনূতের দোয়াটি হলো এই যে,
"اَللَّهُمَّ اهْدِنِيْ فِيْمَنْ هَدَيْتَ، وَعَافِنِيْ فِيْمَنْ عَافَيْتَ، وَتَوَلَّنِيْ فِيْمَنْ تَوَلَّيْتَ، وَبَارِكْ لِيْ فِيْمَا أَعْطَيْتَ، وَقِنِيْ شَرَّمَا قْضَيْتَ؛ إِنَّكَ تَقْضِىْ وَلاَ يُقْضَى عَلَيْكَ، وَإنَّهُ لاَ يَذِلُّ مَنْ وَّالَيْتَ، وَلاَ يَعِزُّ مَنْ عَادَيْتَ، تَبَارَكْتَ رَبَّنَا وَتَعَالَيْتَ".
حكم قضاء صلاة الوتر
বেতরের  নামাজ কাজা করার বিধান
50- عَنْ أَبِيْ سَعِيْدٍ اَلْخُدْرِيِّ  رَضِيَ اللهُ عَنْهُ،  قَالَ: قَالَ رَسُوْلُ اللَّهِ صَلَّى اللَّه عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: "مَنْ نَامَ عَنِ الْوِتْرِ أَوْ نَسِيَهُ؛ فَلْيُصَلِّ إِذَا ذَكَرَ وَإِذاَ اسْتَيْقَظَ".
(جامع الترمذي، رقم الحديث 465، واللفظ له، وسنن أبي داود، رقم الحديث 1431، وسنن ابن ماجه، رقم الحديث 1188، وصححه الألباني).
50 -  অর্থ: আবু সাঈদ আলখুদরী [রাদিয়াল্লাহু আনহু] থেকে বর্ণিত। তিনি  বলেন: আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলেছেন: “যে ব্যক্তি বেতরের  নামাজ না পড়ে শুয়ে যাবে অথবা বেতরের  নামাজ পড়তে ভুলে যাবে, সে ব্যক্তি যখনই তা স্মরণ করবে কিংবা নিদ্রা থেকে জেগে উঠবে, তখনই বেতরের  নামাজ পড়ে নিবে”।
[জামে তিরমিযী, হাদীস নং 465,  এবং সুনান আবু দাউদ, হাদীস নং 1431 এবং সুনান ইবনু মাজাহ, হাদীস নং 1188, তবে হাদীসের শব্দগুলি জামে তিরমিযী থেকে নেওয়া হয়েছে। আল্লামা নাসেরুদ্দিন আল্ আলবাণী হাদীসটিকে সহীহ (সঠিক) বলেছেন]।
* এই হাদীস বর্ণনাকারী সাহাবীর পরিচয় পূর্বে 43 নং হাদীসে উল্লেখ করা হয়েছে।
* এই হাদীস হতে শিক্ষণীয় বিষয়:
1। এই হাদীসটির বাহ্যিক অবস্থার দ্বারা এটা প্রতিমান হয় যে,  যে ব্যক্তি বেতরের  নামাজ ছেড়ে দিয়েছে শুয়ে যাওয়ার কারণে অথবা ভুলে যাওয়ার কারণে, সে ব্যক্তি যখনই তা স্মরণ করবে কিংবা নিদ্রা থেকে জেগে উঠবে, রাত্রিবেলায় অথবা দিনের বেলায়, তখনই সে বেতরের  নামাজ পড়ে নিবে। যেহেতু আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলেছেন: “কোনো ব্যক্তি কোনো নামাজ ভুলে গেলে কিংবা কোনো ব্যক্তির ঘুমের কারণে নামাজ ছুটে গেলে তার কাফফারা হলো এই যে, সে উক্ত নামাজের কথা স্মরণ করলেই সাথে সাথে সেই নামাজ পড়ে নিবে”।  [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং 315 - (684) ]।  
2। প্রকৃত ইসলাম ধর্মের কতকগুলি পণ্ডিত বলেছেন: যে ব্যক্তি ঘুমের কারণে বেতরের  নামাজ ছেড়ে দিয়েছে। সে ব্যক্তি বেতরের  নামাজ পড়বে চাশতের নামাজের সময়ে। তবে সে বেতরের  নামাজ বিজোড় ও অযুগ্ম পড়বে না বরং যুগ্ম করে পড়বে। যেহেতু আল্লাহর নাবী [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর প্রিয়তমা আয়েশা উম্মুলমুমেনীন [রাদিয়াল্লাহু আনহা] থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন: আল্লাহর নাবী [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] যখন কোনো নফল নামাজ পড়তেন, তখন তিনি তা নিয়মিতভাবেই পড়তে পছন্দ করতেন। তবে যদি তাঁর উপর ঘুম প্রবল হতো অথবা তাঁর কোনো প্রকার কষ্ট হতো, তাহলে তিনি দিনে বারো রাকাআত নফল নামাজ পড়তেন। [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং 139 - (746) ]।
3। প্রকৃত মুসলিম ব্যক্তি বেতরের  নামাজ কাজা করার বিষয়ে উল্লিখিত দুইটি মতের মধ্যে থেকে যে মতটি তার পছন্দ হবে সে মতটি সে গ্রহণ করবে, তবে প্রথম মতটি বেশি প্রাধান্য দেওয়ার উপযোগী।  আর এই বিষয়ে মহান আল্লাহই বেশি জানেন।  
من أحكام صلاة الوتر
বেতরের  নামাজ পড়ার বিধান
51- عَنْ جَابِرٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ،  قَالَ: قَالَ رَسُوْلُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: "مَنْ خَافَ أَنْ لاَ يَقُوْمَ مِنْ آخِرِ اللَّيْلِ؛ فَلْيُوْتِرْ أَوَّلَهُ، وَمَنْ طَمِعَ أَنْ يَقُوْمَ آخِرَهُ؛ فَلْيُوْتِرْ آخِرَ اللَّيْلِ؛ فَإِنَّ صَلاَةَ آخِرِ اللَّيْلِ مَشْهُوْدَةٌ، وَذَلِكَ أَفْضَلُ".
(صحيح مسلم، رقم الحديث 162 -(755)، ).
51 -  অর্থ: জাবের [রাদিয়াল্লাহু আনহু] থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন: আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলেছেন: “যে ব্যক্তি ভয় করবে যে, সে শেষ রাত্রে উঠতে পারবে না, সে যেন প্রথম রাত্রেই বেতরের  নামাজ পড়ে। আর যে ব্যক্তি আশা করতে পারবে যে, সে শেষ রাত্রে উঠতে পারবে, তাহলে সে শেষ রাত্রেই বেতরের  নামাজ পড়বে। কেননা, শেষ রাত্রের নামাজে ফেরেশতাগণ উপস্থিত হন। আর এটাই উত্তম”। [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং 162 - (755) ]।
* এই হাদীস বর্ণনাকারী সাহাবীর পরিচয় পূর্বে 22 নং হাদীসে উল্লেখ করা হয়েছে।
* এই হাদীস হতে শিক্ষণীয় বিষয়:
1। এই হাদীসটির বাহ্যিক অবস্থার দ্বারা এটা প্রতিমান হয় যে, যে ব্যক্তি শেষ রাত্রে উঠতে পারবে,  সে ব্যক্তির জন্য শেষ রাত্রেই বেতরের  নামাজ পড়া বেশি উত্তম। আর যে ব্যক্তি শেষ রাত্রে উঠতে পারবে না, সে ব্যক্তির জন্য প্রথম রাত্রেই বেতরের  নামাজ পড়া বেশি উত্তম।
2। যে ব্যক্তি প্রথম রাত্রেই বেতরের  নামাজ পড়েছে। অতঃপর সে যদি আবার শেষ রাত্রে নামাজ পড়ার ইচ্ছা করে, তাহলে সে নিজের ইচ্ছা মত যত পারবে দুই দুই রাকাআত করে নামাজ পড়বে। আর শেষ রাত্রে বেতরের  নামাজ পুনরায় পড়ার দরকার নেই।
3। বেতরের  নামাজের সময় হলো, এশার নামাজ পড়ে নেওয়ার পর থেকে নিয়ে ফজর উদিত হওয়া পর্যন্ত। যেহেতু আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলেছেন: “ফজর হওয়ার পূর্বে তোমরা বেতরের  নামাজ পড়ে নিবে”। [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং 160 - (754) ]।
আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] আরো বলেছেন: “ফজর উদিত হয়ে গেলে রাতের সকল নামাজ এবং বেতর নামাজের সময় শেষ হয়ে যায়। অতএব তোমরা ফজরের পূর্বেই বেতরের  নামাজ পড়ে নিবে”।
[জামে তিরমিযী, হাদীস নং 469,  আল্লামা নাসেরুদ্দিন আল্ আলবাণী হাদীসটিকে সহীহ (সঠিক) বলেছেন]।
التحذير مِنَ الْمُجَاهَرَةِ بالمعصية
প্রকাশ্যভাবে পাপ করা থেকে সতর্কীকরণ  
52- عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، يَقُوْلُ: سَمِعْتُ رَسُوْلَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُوْلُ: "كُلُّ أُمَّتِي مُعَافًى إِلاَّ الْمُجَاهِرِينَ، وَإِنَّ مِنَ الْمُجَاهَرَةِ أَنْ يَعْمَلَ الرَّجُلُ بِاللَّيْلِ عَمَلاً، ثُمَّ يُصْبِحُ وَقَدْ سَتَرَهُ اللَّهُ؛ فَيَقُوْلُ:  يَا فُلاَنُ، عَمِلْتُ الْبَارِحَةَ كَذَا وَكَذَا، وَقَدْ بَاتَ يَسْتُرُهُ رَبُّهُ، وَيُصْبِحُ يَكْشِفُ سِتْرَ اللَّهِ عَنْهُ ".
(صحيح البخاري، رقم الحديث 6069، واللفظ له، وصحيح مسلم، رقم الحديث 52 - (2990)،).
52 - অর্থ: আবু হুরায়রা [রাদিয়াল্লাহু আনহু] হতে বর্ণিত, তিনি বলেন:  আমি আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] কে বলতে শুনেছি তিনি বলেছেন: মহান আল্লাহ আমার উম্মতের সকলের পাপ ক্ষমা করে দিবেন। কিন্তু ওই সমস্ত লোকের পাপ ক্ষমা করবেন না, যারা প্রকাশ্যভাবে পাপ করে থাকে। আর প্রকাশ্যভাবে পাপ করার অন্তর্ভুক্ত একটি বিষয় হলো এই যে, কোনো ব্যক্তি রাতের বেলায় কোনো পাপ কাজ করে, অথচ মহান আল্লাহ সেই ব্যক্তির পাপগুলিকে গোপন করে রেখেছিলেন। কিন্তু সে নিজেই তার পাপগুলিকে প্রকাশ করার জন্য বলে: হে অমুক লোক! আমি রাতের বেলায় এই এই পাপ কাজ করেছি। আর নিশ্চয় মহান আল্লাহ সেই ব্যক্তির পাপগুলিকে গোপন করে রেখেছিলেন। আর সেই ব্যক্তি আল্লাহর গোপন করে রাখা বস্তুকে নিজেই প্রকাশ করে দিচ্ছে”।
[সহীহ বুখারী, হাদীস নং 6069 এবং সহীহ মুসলিম, হাদীস নং 52 -(2990), তবে হাদীসের শব্দগুলি সহীহ বুখারী থেকে নেওয়া হয়েছে]।
* এই হাদীস বর্ণনাকারী সাহাবীর পরিচয় পূর্বে 1 নং হাদীসে উল্লেখ করা হয়েছে।
* এই হাদীস হতে শিক্ষণীয় বিষয়:
1। মহান আল্লাহ অনুগ্রহ করে মুসলিম ব্যক্তির অনেক পাপ লুকিয়ে রাখেন। তাই প্রকৃত ইসলাম ধর্মের শিক্ষা হলো এই যে, মুসলিম ব্যক্তি যেন তার পাপগুলিকে সর্বদা গোপন রাখে মহান আল্লাহর গোপন রাখার সাথে সাথে। এবং সে যেন মহান আল্লাহর কৃতজ্ঞতার সহিত প্রশংসা করে; এই জন্য যে তিনি তাকে সুস্থতা এবং নিরাপত্তা প্রদান করেছেন। আর সে যেন মহান আল্লাহর কাছে অনুতপ্ত হয়ে ভবিষ্যতে পাপ না করার জন্য প্রতিজ্ঞা করে তওবা করে। কেননা যে ব্যক্তি আন্তরিকতার সহিত তওবা করবে, মহান আল্লাহ তার তওবা গ্রহণ করবেন এবং ইহকালে ও পরকালে তাকে ক্ষমা করবেন।
2। যে কোনো মুসলিম ব্যক্তির উচিত কাজ হলো এই যে, সে যেন নিজের পাপগুলিকে লুকিয়ে রাখে এবং অন্য কোনো লোকের কাছে বা কোনো শাসকের কাছে অথবা কোনো আদালতের বিচারক কিংবা বিচারপতির কাছে তার কোনো পাপের কথা স্বীকার না করে। কিন্তু সে নিজের অন্তরের মধ্যে সমস্ত পাপকে ঘৃণা করে আল্লাহর কাছে অনুতপ্ত হয়ে ভবিষ্যতে পাপ না করার জন্য দৃঢ়ভাবে সত্য প্রতিজ্ঞা করে তওবা করবে এবং তাতে অটল থাকবে। আর পাপের কথা স্বীকার না করে এটাই পন্থা অবলম্বন করবে। কেননা, এটাই পন্থা অবলম্বন করা তার জন্য বেশি ভালো। যেহেতু সত্য পন্থায় অনুতপ্ত হয়ে ভবিষ্যতে পাপ না করার জন্য মহান আল্লাহর কাছে নিষ্ঠাবান হয়ে তওবা করলে তিনি অবশ্যই তওবা কবুল করবেন।
3। মহান আল্লাহ যে ব্যক্তিকে সুস্থতা এবং নিরাপত্তা প্রদান করেছেন, সেই ব্যক্তি অমঙ্গল থেকে রক্ষা পাবে এবং সুখময় জীবন লাভ করবে। আর  প্রকাশ্যভাবে পাপাচারী ব্যক্তি তাকেই বলা যেতে পারে, যে ব্যক্তি নিজের পাপগুলিকে নিজেই প্রকাশ করে এবং লোকের সামনে গর্বের সহিত তার  বিবরণ পেশ করে। আর মহান আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্ব ও মহিমাকে নিয়ে বিদ্রুপ করে ও উপহাস করে। তাই জেনে রাখা দরকার যে, যে ব্যক্তি প্রকাশ্যভাবে পাপ কাজ করে, সে ব্যক্তি প্রকৃতপক্ষে মহান আল্লাহ ও তদীয় রাসূলকে অবজ্ঞা করে এবং তুচ্ছজ্ঞান করে। কিন্তু সে জানেনা যে, তার নিজের পাপগুলিকে লুকিয়ে রাখলে সে অমঙ্গল থেকে রক্ষা পাবে এবং নিরাপত্তা লাভ করবে।
حق الأم في البر أعظم
মাতার সাথে ন্যায়পরায়ণতার অধিকার সর্বশ্রেষ্ঠ
53-عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، قَالَ: جَاءَ رَجُلٌ إِلَى رَسُوْلِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ؛ فَقَالَ:  يَا رَسُوْلَ اللَّهِ! مَنْ أحَقُّ النَّاسِ بِحُسْنِ صَحَابَتِي؟ قَالَ: "أُمُّكَ" قَالَ: ثُمَّ مَنْ؟ قَالَ: "ثُمَّ أُمُّكَ"، قَالَ: ثُمَّ مَنْ؟ قَالَ: "ثُمَّ أُمُّكَ"، قَالَ: ثُمَّ مَنْ؟ قَالَ: "ثُمَّ أَبُوْكَ".
(صحيح البخاري، رقم الحديث 5971، وأيضاً صحيح مسلم، رقم الحديث 1 - (2548)،).
53 - অর্থ: আবু হুরায়রা [রাদিয়াল্লাহু আনহু] হতে বর্ণিত,  তিনি বলেন যে, এক ব্যক্তি আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর নিকটে এসে বললো: হে আল্লাহর রাসূল! আমার ন্যায়পরায়ণতার অধিকতর অধিকারী কে? আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বললেন: “তোমার মাতা” । সেই লোকটি বললো:  তারপর কে? তিনি বললেন: “তারপর তোমার মাতা” সেই লোকটি আবার জিজ্ঞাসা করলো: তারপর কে? তিনি বললেন: “তাপরও তোমার মাতা” তারপর সেই লোকটি আবার বললো: তারপর কে? তখন আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বললেন: “তারপর তোমার পিতা”।
[সহীহ বুখারী, হাদীস নং 5971 এবং সহীহ মুসলিম, হাদীস নং 1 -(2548)]।
* এই হাদীস বর্ণনাকারী সাহাবীর পরিচয় পূর্বে 1 নং হাদীসে উল্লেখ করা হয়েছে।
* এই হাদীস হতে শিক্ষণীয় বিষয়:
1। এই হাদীসটির মধ্যে  (اَلصَّحَابَة) শব্দটির অর্থ হলা: ন্যায়পরায়ণতার সহিত সুসম্পর্ক স্থাপন করা এবং সদাচরণ।  
2। এই হাদীসটির মধ্যে ন্যায়পরায়ণতার অধিকতর অধিকারী মাতাকেই সাব্যস্ত করা হয়েছে, তার কারণ হলো এই যে, সন্তানের জন্য মাতাকেই সব চেয়ে বেশি কষ্ট ভোগ করতে হয়। সন্তানের জন্য মাতাকেই সব চেয়ে বেশি দয়া, স্নেহ এবং যত্ন করতে হয়। আবার সন্তানকে দুধ পান ও লালন-পালন করার সমস্ত কষ্ট মাতাকেই সহ্য করতে হয়। সন্তানের অসুখের সময় মাতাকেই সজাগ থাকতে হয়। এই রকমভাবে সন্তানের সব ক্ষেত্রে ও  সর্বাবস্থায় বেদনা ও কষ্ট  মাতাকেই সহ্য করতে হয়। তাই প্রকৃত ইসলাম ধর্মে মাতার সাথে ন্যায়পরায়ণতার অধিকার সর্বশ্রেষ্ঠ পন্থায় সাব্যস্ত করা হয়েছে।
3। মানুষের মধ্যে ন্যায়পরায়ণতার সহিত সর্বশ্রেষ্ঠ আচার-ব্যবহারের   অধিকারী হলেন মাতা। সুতরাং তাঁর সাথে ন্যায়পরায়ণতার সহিত সুসম্পর্ক স্থাপন করার মাধ্যম হলো: তাঁর সাহায্য ও সেবাযত্ন করা,  তাঁর পানাহারের প্রয়োজন পূরণ করা, তাঁর সাথে নম্রভাবে বিনয়ীর সুরে কথা বলা, তাঁর প্রয়োজন ও পছন্দ মত তাঁকে উপহার প্রদান করা, তাঁর প্রতি শ্রদ্বা নিবেদন করা, তিনি দূরে থাকলে তাঁর সাথে মাঝে মধ্যে সাক্ষাৎ করা, তাঁর সাথে সদাসর্বদা সুসম্পর্ক স্থাপন করে রাখা, তাই তাঁর সাথে কোনো দিন সুসম্পর্ক ছিন্ন করা বৈধ নয়, তবে তাঁর সাথে বেশি সাক্ষাৎ করে তাঁকে কষ্ট দেওয়া অথবা তাঁকে বিরক্ত করা বা অসন্তুষ্ট করা উচিত নয়। তিনি অসুস্থ বা পীড়িত হলে তাঁর আরাম ও শান্তি লাভের ব্যবস্থা করার জন্য সজাগ থাকা, তাঁর জন্য দোয়া করা; কেননা সমস্ত জাগতিক বিষয়ে তাঁর সাথে ন্যায়পরায়ণতার সহিত সদাচরণ ও সুসম্পর্ক স্থাপন করে রাখাই হলো তাঁর  অধিকার, যদিও তিনি মহা পাপে এবং আল্লাহর সাথে শির্ক ও অংশীদার স্থাপনের কাজে লিপ্ত থাকেন। কিন্তু মাতা যখন সঠিক পন্থায় প্রকৃত ইসলামের শিক্ষা মোতাবেক অত্যন্ত ধার্মিকী হয়ে মহান আল্লাহ ও তদীয় রাসূলকে মেনে চলবেন, তখন তাঁর অধিকার সর্বশ্রেষ্ঠ এবং সব চেয়ে বেশি বড়ো হয়ে যাবে।
عُقُوقُ الوالد من كبائر الذنوب
পিতার অবাধ্য হওয়া একটি মহা পাপ
54- عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بنِ عَمْرٍو رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُما، عَنِ النَّبِيِّ  صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ, قالَ: "رِضَا الرَّبِّ فِيْ رِضَا الْوَالِدِ، وَسَخَطُ الرَّبِّ فِيْ سَخَطِ الْوَالِدِ".
(جامع الترمذي، رقم الحديث 1899، وَصححه الألباني).
54 - অর্থ: আব্দুল্লাহ বিন আমর [রাদিয়াল্লাহু আনহুমা] হতে বর্ণিত, তিনি নাবী কারীম [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] হতে বর্ণনা করেছেন, নাবী কারীম [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলেছেন: “প্রতিপালকের সন্তুষ্টি লাভ হবে পিতার সন্তুষ্টির লাভের মাধ্যমে এবং প্রতিপালক ক্রোধান্বিত হবেন পিতার ক্রোধান্বিত হওয়ার মাধ্যমে”।
[জামে তিরমিযী, হাদীস নং 1899,  আল্লামা নাসেরুদ্দিন আল আলবাণী হাদীসটিকে সহীহ (সঠিক) বলেছেন]।
* এই হাদীস বর্ণনাকারী সাহাবীর পরিচয় পূর্বে 38 নং হাদীসে উল্লেখ করা হয়েছে।

* এই হাদীস হতে শিক্ষণীয় বিষয়:
1। এই হাদীসটির দাবি মোতাবেক এই বিষয়টি প্রমাণিত হয় যে,  নিজের পিতার আনুগত্য করা ও সম্মান করা অপরিহার্য। সুতরাং যে ব্যক্তি নিজের পিতার আনুগত্য করতে পারবে, সে ব্যক্তি মহান আল্লাহর আনুগত্য করতে পারবে। আর যে ব্যক্তি নিজের পিতাকে ক্রোধান্বিত করবে, সে ব্যক্তি    মহান আল্লাহকে ক্রোধান্বিত করবে। এই বিধানটি নিজের মাতার ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য।  
2। এই হাদীসটির দ্বারা এই বিষয়টিও সাব্যস্ত হয় যে, পিতা-মাতার সাথে অসৎ আচরণ করা এবং তাদেরকে অসন্তুষ্ট করা একটি মহা পাপ।

 

 

 

الحث على الكسب الحلال الطيب
বৈধ এবং পবিত্র রুজিরোজগারের প্রতি উৎসাহ প্রদান করা
55- عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، يَقُوْلُ:  قَالَ رَسُوْلُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: "لأَنْ يَحْتَزِمَ أَحَدُكُمْ حُزْمَةً مِنْ حَطَبٍ؛ فَيَحْمِلَهَا عَلَى ظَهْرِهِ؛ فَيَبِيْعَهَا؛ خَيْرٌ لَهُ مِنْ أَنْ يَسْأَلَ رَجُلاً يُعْطِيْهِ أَوْ يَمْنَعُهُ".
(صحيح مسلم، رقم الحديث 107 - (1042)، واللفظ له،  وصحيح البخاري، رقم الحديث 2074).
48 - অর্থ:  আবু হুরায়রা [রাদিয়াল্লাহু আনহু] হতে বর্ণিত, তিনি বলেন যে, আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলেছেন: “তোমাদের মধ্যে থেকে কোনো ব্যক্তি লকড়ি বা জ্বালানি কাঠের বোঝা বেঁধে পিঠের উপর বহন করবে এবং তা বিক্রি করে পয়সা উপার্জন করবে। এই কাজটি কোনো ব্যক্তির কাছে কিছু চাওয়ার চেয়ে বেশি উত্তম। কেননা সে তাকে কিছু দিতেও পারে, আবার নাও দিতে পারে”।   
[সহীহ মুসলিম, হাদীস নং  107 -(1042) এবং সহীহ বুখারী, হাদীস নং 2074, তবে হাদীসের শব্দগুলি সহীহ মুসলিম থেকে নেওয়া হয়েছে]।
* এই হাদীস বর্ণনাকারী সাহাবীর পরিচয় পূর্বে 1 নং হাদীসে উল্লেখ করা হয়েছে।
* এই হাদীস হতে শিক্ষণীয় বিষয়:
1। প্রকৃত ইসলাম হলো বৈধ এবং পবিত্র রুজিরোজগারের মাধ্যমে মানুষের জীবনকে সুখী করার একটি সত্য সঠিক ধর্ম। তাই এই ধর্মটি মানুষকে অপরের অর্থ, সম্পদ বা অন্য কোনো জিনিস যাচন করতে নিষেধ করেছে। কেননা তাতে মানুষের মান সম্মান এবং শক্তি নষ্ট হয়ে যায় আর তার জীবনে লোভ ও আলস্য বৃদ্ধি পায় ও বেড়ে উঠে।
2। যে ব্যক্তি আল্লাহর উপর আস্থা রেখে বৈধ ও পবিত্র রুজিরোজগার এবং জীবিকার্জন করবে, প্রকৃত ইসলাম ধর্মে তার মহাসম্মান রয়েছে। আর যে কোনো বৈধ ও পবিত্র কর্মের মাধ্যমে রুজিরোজগারের মহামর্যাদাও রয়েছে। যদি সেই কর্মটিকে সঠিকভাবে উন্নত পন্থায় বৈধ পদ্ধতিতে সম্পাদন করা হয় এবং হারাম বস্তু থেকে তাকে রক্ষা করা হয়।  
3। মুসলিম ব্যক্তি যেন নিজের এবং নিজের স্ত্রী ও শিশুসন্তানসন্ততিদের ভরণপোষণ ও খোরপোশের সমস্ত খরচ সঠিক পন্থায় বহন করার উদ্দেশ্যে বৈধ ও পবিত্র রুজিরোজগার এবং জীবিকার্জন করে, তার প্রতি তাকে প্রকৃত ইসলাম ধর্ম উৎসাহ প্রদান করে। অনুরূপভাবে সে যেন সুখে শান্তিতে সম্মানের সহিত জীবনযাপন করতে পারে, তার উপযুক্ত উপায় অবলম্বন করার প্রতিও তাকে প্রকৃত ইসলাম ধর্ম উৎসাহ প্রদান করে। কেননা বেকারত্ব ও আলস্য এবং অকর্মা বা কর্মহীন হয়ে বসে থাকার বিষয়টিকে প্রকৃত ইসলাম ধর্ম ঘৃণা করে।
وجوب إكرام اللحية وإعفائها
দাড়ির সম্মান করা এবং তা ছেড়ে দেওয়া অপরিহার্য
56- عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عُمَرَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا، عَنِ النَّبيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ،  قَالَ: "أَحْفُوْا الشَّوَارِبَ وَأَعْفُوْا اللِّحَى".
(صحيح مسلم، رقم الحديث 52- (259)، واللفظ له، وصحيح البخاري، رقم الحديث 5893،).
56 - অর্থ:  আব্দুল্লাহ বিন ওমার [রাদিয়াল্লাহু আনহুমা] থেকে বর্ণিত।  তিনি নাবী কারীম [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] থেকে বর্ণনা করেছেন, নাবী কারীম [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলেছেন: “তোমরা গোঁফ বা মোচ কেটে ফেলে দিবে এবং দাড়ি ছেড়ে দিবে”।
[সহীহ মুসলিম, হাদীস নং  52 -(259) এবং সহীহ বুখারী, হাদীস নং 5893, তবে হাদীসের শব্দগুলি সহীহ মুসলিম থেকে নেওয়া হয়েছে]।
* এই হাদীস বর্ণনাকারী সাহাবীর পরিচয় পূর্বে 11 নং হাদীসে উল্লেখ করা হয়েছে।
* এই হাদীস হতে শিক্ষণীয় বিষয়:
1। এই হাদীসটির দাবি মোতাবেক এটা প্রতিমান হয় যে, দাড়ির সম্মান ও যত্ন করা এবং তা ছেড়ে দেওয়া ওয়াজেব ও অপরিহার্য। তাই দাড়ি মুণ্ডন করা বা কামানো এবং তুলে ফেলা ও ছাঁটা বৈধ নয়।
2। থুতনির উপরে এবং ঠোঁটের নীচের চুলগুলি দাড়ির মধ্যেই পড়ছে।
3। এই হাদীসটির দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, মোচ কেটে ফেলে দেওয়ার বিষয়টি প্রকৃত ইসলামের শিক্ষা সম্মত একটি কাজ। তাই মুসলিম ব্যক্তির জন্য  সম্পূর্ণ মোচ কিংবা তার দুই দিক ছেড়ে দেওয়া জায়েজ নয়। সুতরাং তার জন্য এটাই উচিত যে, সে যেন তার মোচ ছেঁটে ফেলে অথবা মুণ্ডন করে।

 

 

 

 


أهمية احتساب الأجر في النفقة
পোষ্যবর্গের খোরপোশের জন্য টাকাপয়সা ব্যয় করার কাজে আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের আশা করার মর্যাদা
57- عَنْ سَعْدِ بْنِ أَبِيْ وَقَّاصٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، أَنَّ رَسُوْلَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قَالَ: "إِنَّكَ لَنْ تُنْفِقَ نَفَقَةً تَبْتَغِيْ بِهَا وَجْهَ اللَّهِ إِلاَّ أُجِرْتَ عَلَيْهَا، حَتَّى مَا تَجْعَلُ فِيْ فَمِ امْرَأَتِكَ".
(صحيح البخاري، رقم الحديث 56، واللفظ له، وصحيح مسلم، جزء من رقم الحديث 5 - (1628)،).
57 - অর্থ: সায়াদ বিন আবু ওয়াক্কাস [রাদিয়াল্লাহু আনহু] থেকে বর্ণিত  যে, নিশ্চয় আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলেছেন: “আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে তুমি যে সম্পদই ব্যয় করবে, সেই সম্পদের মাধ্যমে তুমি পুণ্য প্রাপ্ত হবে। এমনকি যে খাবার তুমি তোমার নিজের স্ত্রীর মুখে তুলে দিবে তার মাধ্যমেও তুমি পুণ্য লাভ করতে পারবে”।
[সহীহ বুখারী, হাদীস নং 56 এবং সহীহ মুসলিম, হাদীস নং 5 -(1628), তবে হাদীসের শব্দগুলি সহীহ বুখারী থেকে নেওয়া হয়েছে]।
* এই হাদীস বর্ণনাকারী সাহাবীর পরিচয় পূর্বে 5 নং হাদীসে উল্লেখ করা হয়েছে।
* এই হাদীস হতে শিক্ষণীয় বিষয়:
1। এই হাদীসটির দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, নিজের স্ত্রী ও শিশুসন্তানসন্ততিদের খোরপোশ জোগানোর সুব্যবস্থা করার জন্য টাকাপয়সা ও ধনসম্পদ ব্যয় করার মধ্যে যে ব্যক্তি মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি ও পুণ্য লাভের আশা পোষণ করবে না, সে ব্যক্তি মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি ও পুণ্য লাভ করতে পারবে না।
2। এই হাদীসটির দ্বারা এটা প্রতিমান হয় যে, প্রকৃত ইসলামের শিক্ষা অনুযায়ী মহান আল্লাহর উপাসনার অর্থ হলো বৃহত্তর ও ব্যাপক বিষয়; তাই মানুষ যখন সাধারণ জায়েজ বস্তুগুলি নিজে উপভোগ করার জন্য ব্যবহার করবে এবং তার জরুরি বিষয়গুলি পালন করবে, তখন সে যদি তাতে মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি ও পুণ্য লাভের আশা পোষণ করে, তাহলে সে নিশ্চয় তার সেই সাধারণ জায়েজ বস্তুগুলি এবং জরুরি বিষয়গুলি পালন করার মাধ্যমে মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি ও পুণ্য লাভ করতে পারবে।
3। স্বামী-স্ত্রীর মনের ইচ্ছা যৌন পূরণ করার জন্য তাদের মধ্যে যে সম্পর্ক স্থাপন হবে, তাতেও তারা মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি ও অনেক পুণ্য লাভ করতে পারবে, যদি তারা তাদের সম্পর্ক স্থাপন করার মাধ্যমে মহান আল্লাহর নৈকট্য লাভ করার ইচ্ছা পোষণ করে।


أحكام الإحداد
শোক ভোগ করার বিধান
58- عَنْ أُمِّ عَطِيَّةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهَا، قَالَتْ: قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: "لاَ يَحِلُّ لِامْرَأَةٍ تُؤْمِنُ بِاللَّهِ وَاليَوْمِ الآخِرِ، أَنْ تُحِدَّ فَوْقَ ثَلاَثٍ إِلاَّ عَلَى زَوْجٍ؛ فَإِنَّهَا لاَ تَكْتَحِلُ وَلاَ تَلْبَسُ ثَوْبًا مَصْبُوغًا، إِلاَّ ثَوْبَ عَصْبٍ".
(صحيح البخاري، رقم الحديث 5342).
58 - অর্থ:  উম্মু আতিয়া [রাদিয়াল্লাহু আনহা] থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন: আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলেছেন: “যে মহিলা আল্লাহ ও পরকালের প্রতি ঈমান ও বিশ্বাস স্থাপন করে,  সে যেন তার স্বামী ছাড়া অন্য কোনো ব্যক্তির মৃত্যুতে তিন দিনের বেশি শোক ভোগ না করে। তাই সে তার স্বামীর মৃত্যুবরণ করার পর শোক ভোগ করার সময় সুরমা ব্যবহার করবে না। এবং এই শোক ভোগ করার সময় কোনো  রঙিন  কাপড়  পরিধান  করবে  না,  শুধু মাত্র এমন এক সাদা  কাপড় পরবে, যে কাপড়টিকে সুন্দরতা প্রকাশ করার জন্য তৈরি করা হয় নি”।  [সহীহ বুখারী, হাদীস নং 5342]।
* এই হাদীস বর্ণনাকারিণী  সাহাবীয়ার পরিচয়:
নুসাইবা বিনতুল হারিস আল আনসারী সাহাবীয়া, তাঁর ডাক নাম উম্মু আতিয়া [রাদিয়াল্লাহু আনহা]। তিনি ওই সমস্ত মহিলা সাহাবীদের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন, যাঁরা মহান আল্লাহর পথে বিভিন্ন যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করেছিলেন। তাই তিনি তাঁর ডাক নামেই বেশি প্রসিদ্ধা ছিলেন। এবং তাঁর প্রকৃত নাম সম্পর্কে বলা হয়েছে: নুসাইবা বিনতুল হারিস, আবার এটাও বলা হয়েছে যে, তাঁর প্রকৃত নাম হলো নুসাইবা বিনতু কায়াব।
নুসাইবা বিনতুল হারিস যেহেতু ওই সমস্ত মহিলা সাহাবীদের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন, যাঁরা মহান আল্লাহর পথে বিভিন্ন যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করেছেন। আর আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর সাথে তিনি সাতটি যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করেছেন। তাই তিনি আহতদের চিকিৎসা করতেন এবং রোগীদের সেবা-শুশ্রুষা ও দেখা-শুনা করতেন। আর মৃত ব্যক্তিদের মৃতদেহগুলিকে মাদীনা মুনাওয়ারা নিয়ে যেতেন। সুতরাং হাদীসের মধ্যে এসেছে:
عَنْ أُمِّ عَطِيَّةَ الْأَنْصَارِيَّةِ رَضِيَ اللهُ عَنْهَا، قَالَتْ: غَزَوْتُ مَعَ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ سَبْعَ غَزَوَاتٍ،
أَخْلُفُهُمْ فِي رِحَالِهِمْ؛ فَأَصْنَعُ لَهُمُ الطَّعَامَ، وَأُدَاوِي الْجَرْحَى، وَأَقُوْمُ عَلَى الْمَرْضَى.
(صحيح مسلم، رقم الحديث 142 - (1812)، ).
অর্থ:  উম্মু আতিয়া আল আনসারী সাহাবীয়া [রাদিয়াল্লাহু আনহা] থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন: আমি আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর সঙ্গে সাতটি যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছি। আমি তাঁদের আবাসে বা থাকার জায়গাতে ও বাসস্থানে অবস্থান করতাম। তাদের খাবার তৈরি করতাম, আহতদের চিকিৎসা করতাম এবং রোগীদের সেবা-শুশ্রুষা ও দেখা-শুনা করতাম। [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং 142 -(1812) ]।
উম্মু আতিয়া ছিলেন একজন প্রসিদ্ধা বিচক্ষণা বুদ্ধিমতী মহাসম্মানিতা মহিলা সাহাবীয়া। তিনি আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর সঙ্গে থেকে আল্লাহর পথে যুদ্ধ করার মহা মর্যাদা লাভ করেছেন। অনুরূপভাবে মুসলমানদের মধ্যে তিনি প্রকৃত ইসলামের শিক্ষা ও আইনশাস্ত্র প্রচারের মহা মর্যাদাও লাভ করেছেন। এই মহা মর্যাদা খুব কম সংখ্যক মহিলা লাভ করতে পেরেছেন। আর আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর কন্যা জায়নাবের মৃত্যুবরণ করার পর তাঁকে তিনিই গোসল দিয়েছিলেন।
আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] মৃত্যুবরণ করার পর তিনি তাঁর জীবনের শেষ দিকে বাসরা শহর চলে যান। সেই বাসরা শহরে অনেক সাহাবী, তাবেয়ী এবং বিভিন্ন প্রকারের লোকজন তাঁর মাধ্যমে প্রকৃত ইসলামের শিক্ষা ও বিধিবিধানের জ্ঞান লাভ করেন। বিশেষভাবে তাঁরা তাঁর কাছ থেকে জানাজার নামাজের নিয়ম এবং মৃত ব্যক্তিদেরকে গোসল দেওয়ার প্রণালীর বিষয়ে বিশিষ্টভাবে জ্ঞান লাভ করেন। তাঁর বর্ণিত হাদীসের সংখ্যা 40 টি।
তিনি প্রায় সন 70 হিজরী পর্যন্ত জীবিত ছিলেন। [রাদিয়াল্লাহু আনহা ওয়া আরদাহা] ।  
* এই হাদীস হতে শিক্ষণীয় বিষয়:
1। শোক ভোগ করার অর্থ হলো: স্বামীর মৃত্যুবরণ করার কারণে স্ত্রীর মনে মানসিক যন্ত্রণা বা দুঃখ সৃষ্টি হওয়ার ফলে তার বিধবা হওয়ার পর ইদ্দতের মধ্যে (নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে) সে নিজের শরীরে এবং কাপড়ে সমস্ত প্রকারের সাজ সজ্জা বর্জন করবে। সুতরাং উদাহরণস্বরূপ বলা যেতে পারে যে, সে তার ইদ্দতের মধ্যে সৌন্দর্য বৃদ্ধি করার জন্য সুরমা কাজল, রং এবং পাউডার ব্যবহার করতে পারে না; যেহেতু এই সমস্ত জিনিস সাধারণভাবে নারী তার স্বামীর জন্য ব্যবহার করে থাকে। অনুরূপভাবে সে সকল প্রকারের সুগন্ধি, পারফিউম, গয়না,  উজ্জ্বল কাপড়-চোপড় ব্যবহার করতে পারে না। তবে জেনে রাখা উচিত যে, শোক ভোগ করার জন্য বিশেষ কোনো রং এর বিশিষ্ট কোনো কাপড় নেই।
2। যে মহিলার স্বামী মৃত্যুবরণ করেছে, সে মহিলা তার স্বামীর মৃত্যুতে চার মাস দশ দিন শোক পালন করবে। কিন্তু সে যদি গর্ভবতী বা অন্তঃসত্বা হয়, তাহলে তার শোক ভোগ করার সময় হলো সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার সময় পর্যন্ত। সুতরাং যে মহিলার যখনই সন্তান ভূমিষ্ঠ হবে, সে মহিলার তখনই ইদ্দত (নির্দিষ্ট সময়) পালনের সময় সীমা শেষ হয়ে যাবে। সেই ইদ্দত (নির্দিষ্ট সময়) পালন স্বামীর মৃত্যুবরণের কারণে হোক অথবা স্বামীর  কাছ থেকে তালাক পাওয়ার কারণে হোক। যখনই গর্ভবতী মহিলার সন্তান ভূমিষ্ঠ হয়ে যাবে তখনই তার ইদ্দত (নির্দিষ্ট সময়) শেষ হয়ে যাবে। যদিও তার সন্তান ভূমিষ্ঠ হয় নয় মাস গর্ভধারণ করার পূর্বে।
3। অনুরূপভাবে যে মহিলার স্বামী মৃত্যুবরণ করবে, সে মহিলা তার স্বামীর মৃত্যুবরণ করার কারণে চার মাস দশ দিন শোক পালন করবে। যদিও ইসলামী বিধান অনুসারে তাদের বৈধভাবে বিবাহ হওয়ার পর তাদের  মধ্যে শারীরিক সম্পর্ক ও যৌনমিলন সংঘটিত হয়নি।
4। মহিলার স্বামী ছাড়া অন্য কোনো লোক মৃত্যুবরণ করলে, তার জন্য শোক পালন করা বৈধ রয়েছে, তবে ওয়াজেব বা অপরিহার্য নয়। কিন্তু এই ক্ষেত্রে তিন দিনের বেশি তার জন্য শোক পালন করা বৈধ নয়। সুতরাং কোনো মহিলার কোনো সন্তান মৃত্যুবরণ করলে, তার জন্য মাত্র তিন দিন শোক পালন করা বৈধ রয়েছে। তবে এই ক্ষেত্রে শোক ভোগ করার উদ্দেশ্যে কোনো মহিলার প্রতি তার নিজের শরীরে এবং কাপড়ে কোনো প্রকারের সাজ সজ্জা বর্জন করা এবং বাইরে না যাওয়া ওয়াজেব ও অপরিহার্য নয়।
5। পুরুষ ব্যক্তির প্রতি কোনো অবস্থাতে শোক পালন করার কোনো বিধান নেই।  
الإسلام دين الرحمة
প্রকৃত ইসলাম হলো সদয় আচরণের ধর্ম
59- عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عُمَرَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا: أَنَّ رَسُوْلَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: "عُذِّبَتِ امْرَأَةٌ فِيْ هِرَّةٍ رَبَطَتْهَا، حَتَّى مَاتَتْ؛ فَدَخَلَتْ فِيهَا النَّارَ، لاَ هِيَ أطعمَتْها وَسَقَتْها؛ إذْ حَبَسَتْها، وَلاَ هِيَ تَرَكَتْها؛ تَأْكُلُ مِنْ خَشَاشِ الأرْضِ".
(صحيح البخاري، رقم الحديث 3482، واللفظ له، وصحيح مسلم، جزء من رقم الحديث 151 - (2242)،).
59 - অর্থ: আব্দুল্লাহ বিন ওমার [রাদিয়াল্লাহু আনহুমা] থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন যে, আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] নিশ্চয় বলেছেন: “একজন মহিলাকে একটি বিড়ালের কারণে জাহান্নামের শাস্তি ভোগ করতে হয়েছে। কেননা, সেই মহিলাটি একটি বিড়ালকে বেঁধে রেখেছিলো। তাই সেই বিড়ালটির মৃত্যু ঘটেছিলো। এই কারণে সেই মহিলাটিকে জাহান্নামের আগুনে প্রবেশ করতে হয়েছে। মহিলাটি যখন সেই বিড়ালটিকে বেঁধে রেখেছিলো তখন তাকে কিছু খেতেও দেয়নি এবং পান করতেও দেয়নি। অথচ সেই বিড়ালটিকে সে ছেড়েও দেয়নি যে, সেই বিড়ালটি মাটির কীটপতঙ্গ অথবা জমির পোকামাকড় খেয়ে তার জীবন রক্ষা করবে”।
[সহীহ বুখারী, হাদীস নং 3482 এবং সহীহ মুসলিম, হাদীস নং 151 -(2242), তবে হাদীসের শব্দগুলি সহীহ বুখারী থেকে নেওয়া হয়েছে]।
* এই হাদীস বর্ণনাকারী সাহাবীর পরিচয় পূর্বে 11 নং হাদীসে উল্লেখ করা হয়েছে।
* এই হাদীস হতে শিক্ষণীয় বিষয়:
1। কোনো প্রাণীকে অকারণে বেঁধে রাখা এবং তাকে তার খাবার ও পান করার দ্রব্য থেকে বিরত রাখা নিষ্ঠুর ও কঠোর হৃদয়ের মানুষ হওয়ার প্রমাণ বহন করে। এবং এর সাথে সাথে সে খারাপ আচরণ এবং অভদ্রতার মানুষ হওয়ার প্রমাণ বহন করে।
2। এই হাদীসটির দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, অকারণে কোনো জীবজন্তু বা প্রাণীকে কোনো রকমভাবে কষ্ট দেওয়া, তার প্রতি অন্যায় করা এবং তাকে প্রহার করা ও হত্যা করা একটি মহা পাপ। তাই এই হাদীসের উল্লিখিত মহিলাটিকে জাহান্নামের আগুনে প্রবেশ করতে হয়েছে; এই জন্য যে, সে একটি বিড়ালকে বেঁধে রেখে হত্যা করেছে।
3। মানুষ ওই সময় কোনো জীবজন্তুকে বেঁধে রাখতে পারবে, যখন সে তাকে তার খাবার ও পান করার দ্রব্য এবং জরুরি ঔষধ প্রদান করবে, আর প্রদান করবে তাকে তার জীবন রক্ষার সঠিক উপাদান। এই নিয়ম মোতাবেক মানুষ কোনো বিড়াল এবং পাখি ইত্যাদি প্রাণীকে বেঁধে রাখতে পারবে।
4। প্রকৃত ইসলামের শিক্ষা মোতাবেক যে প্রাণীকে হত্যা করার অনুমতি নেই, সেই প্রাণীকে যে ব্যক্তি কষ্ট দিবে অথবা হত্যা করবে, সেই ব্যক্তিকে পরকালে কঠোর শাস্তি ভোগ করতে হবে।
هذا دُعاَءٌ أَفْضَلُ
এটি একটি সর্বোত্তম দোয়া
60- عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، قَالَ: قَالَ رَسُوْلُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ:  "مَا مِنْ دَعْوَةٍ يَدْعُو بِهَا الْعَبْدُ أَفْضَلَ مِنْ: اَللَّهُمَّ إِنِّيْ أَسْأَلُكَ الْمُعَافَاةَ فِي الدُّنْيَا وَالْآخِرَةِ".
(سنن ابن ماجه، رقم الحديث 3851، وصححه الألباني).
60 - অর্থ: আবু হুরায়রা [রাদিয়াল্লাহু আনহু] হতে বর্ণিত, তিনি বলেন যে, আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলেছেন: “মানুষ যত রকম দোয়া করে, তার মধ্যে থেকে এই দোয়ার চেয়ে আর উত্তম কোনো দোয়া নেই”।
اَللَّهُمَّ إِنِّيْ أَسْأَلُكَ الْمُعَافَاةَ فِي الدُّنْيَا وَالْآخِرَةِ"
অর্থ: “হে আল্লাহ আমি আপনার নিকটে দুনিয়া ও পরকালের সার্বিক নিরাপত্তা, সফলতা এবং পরিত্রাণ প্রার্থনা করি”।
[সুনান ইবনু মাজাহ, হাদীস নং 3851, আল্লামা নাসেরুদ্দিন আল্ আলবাণী হাদীসটিকে সহীহ (সঠিক) বলেছেন]।
* এই হাদীস বর্ণনাকারী সাহাবীর পরিচয় পূর্বে 1 নং হাদীসে উল্লেখ করা হয়েছে।
* এই হাদীস হতে শিক্ষণীয় বিষয়:
1। প্রকৃত ইসলামের শিক্ষার আলোকে এই দোয়াটির মাধ্যমে মহান আল্লাহর কাছে অধিকতর প্রার্থনা করা একটি সৎকর্ম। তাই আন্তরিকতার সহিত বিনয়ী, অনুতপ্ত ও অবনত মস্তকে এবং অকপট হৃদয়ে এই দোয়াটি সদা সর্বদা পাঠ করা উচিত। কেননা মহান আল্লাহর প্রতি মানুষের ভালো ধারণা ও আশা সঠিক পন্থায় স্থাপিত হলে, সেই ভালো ধারণা ও আশাকে মহান আল্লাহ কোনো সময় নষ্ট করেন না। তাই এই রকম ভাবে মানুষ মহান আল্লাহর কাছে অধিকতর প্রার্থনা করলে নিরাপত্তা ও সুস্থতা, শান্তি, নিশ্চিন্ততা এবং সুখ লাভ করতে পারবে।
2। এই মহা দোয়াটিকে সদা সর্বদা পাঠ করার প্রতি এই হাদীসটি মুসলিম ব্যক্তিকে উৎসাহ প্রদান করে। যাতে তাকে মহান আল্লাহ সকল প্রকারের বিপদ, ফ্যাসাদ, কষ্ট, বিভ্রম, শয়তানের কুমন্ত্রণা এবং অন্যান্য ক্ষতিকর জিনিস থেকে রক্ষা করেন।
3। দুনিয়া ও পরকালের সার্বিক নিরাপত্তা, সফলতা এবং পরিত্রাণ লাভ করার অর্থ হলো এই যে, মানুষ মহান আল্লাহর কাছ থেকে লাভ করবে সংরক্ষণ, শান্তি, যত্ন ও রক্ষণাবেক্ষণ। তাই সুরক্ষিত ব্যক্তি তাকেই বলা যাবে, যে ব্যক্তি সংরক্ষিত হবে সুস্থতা, শান্তি ও নিরাপত্তা এবং সুখ লাভের মাধ্যমে। আর এই ভাবে সংরক্ষিত হওয়ার বিষয়টি প্রকৃতপক্ষে মানুষ লাভ করতে পারে কল্যাণদায়ক মহান আল্লাহর সংরক্ষণে থেকে। কেননা মহান আল্লাহ তাকে ওই সমস্ত ক্ষতিকর জিনিস থেকে রক্ষা করেন, যে সমস্ত জিনিসকে সে অপছন্দ করে বা ঘৃণা করে, আর যে সমস্ত জিনিস তার ধর্মের এবং দুনিয়া ও পরকালের ক্ষতি সাধন করে।

 

 

 

وجوب رَدْع المعتدي
আক্রমণকারীকে দমন করা অপরিহার্য
61-عَنْ سَعِيْدِ بْنِ زَيْدٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قَالَ: "مَنْ قُتِلَ دُوْنَ مَالِهِ؛ فَهُوَ شَهِيْدٌ، وَمَنْ قُتِلَ دُوْنَ أَهْلِهِ، أو دُوْنَ دَمِهِ، أو دُوْنَ دِيْنِهِ؛ فَهُوَ شَهِيْدٌ".
(سنن أبي داود، رقم الحديث 4772، واللفظ له، وجامع الترمذي، رقم الحديث 1421، وسنن النسائي، رقم الحديث 4095، وسنن ابن ماجه، رقم الحديث 2580، وقال الإمام الترمذي عن هذا الحديث بأنه:  حسن صحيح، وصححه الألباني).
61 -  অর্থ:  সাঈদ বিন জ্যাইদ [রাদিয়াল্লাহু আনহু] থেকে বর্ণিত, তিনি নাবী কারীম [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] থেকে বর্ণনা করেছেন, নাবী কারীম [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলেছেন: “যে ব্যক্তি নিজের সম্পত্তি রক্ষা করার কারণে নিহত হবে, সে শাহীদ বলেই বিবেচিত হবে। যে ব্যক্তি নিজের পরিবার রক্ষার কারণে নিহত হবে সেও শাহীদ বলেই বিবেচিত হবে। অথবা যে ব্যক্তি নিজের প্রাণ রক্ষার কারণে কিংবা নিজের সত্য সঠিক ধর্ম ইসলাম রক্ষার কারণে নিহত হবে সেও শাহীদ বলেই বিবেচিত হবে”।
[সুনান আবু দাউদ, হাদীস নং 4772 এবং জামে তিরমিযী, হাদীস নং 1421, সুনান নাসায়ী, হাদীস নং 4095 এবং সুনান ইবনু মাজাহ, হাদীস নং 2580, তবে হাদীসের শব্দগুলি সুনান আবু দাউদ থেকে নেওয়া হয়েছে। ইমাম তিরমিযী হাদীসটিকে হাসান সহীহ (সুন্দর সঠিক) বলেছেন। আল্লামা নাসেরুদ্দিন আল্ আলবাণী হাদীসটিকে সহীহ (সঠিক) বলেছেন]।
* এই হাদীস বর্ণনাকারী সাহাবীর পরিচয়:
আবুল আওয়ার সাঈদ বিন জ্যাইদ আলআদাভী আলকুরাশী একজন মহাবিখ্যাত সাহাবী [রাদিয়াল্লাহু আনহু] তিনি আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর হিজরতের 22 বছর পূর্বে মাক্কা মহানগরীতে জন্ম গ্রহণ করেন। তিনি মাদীনায় হিজরত করেন। এবং বদরের যুদ্ধ ছাড়া  আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর সাথে সমস্ত যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। বদরের যুদ্ধে তিনি এই জন্য অংশগ্রহণ করতে পারেন নি যে, আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] তাঁকে কুরাইশ বংশের বাণিজ্যিক যাত্রিদলের সংবাদ সংগ্রহ করার উদ্দেশ্যে শাম দেশের রাজপথের দিকে গুপ্তচর হিসেবে প্রেরণ করেছিলেন।
যে দশজন সাহাবীকে দুনিয়াতেই জান্নাতের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে, সেই দশজন সাহাবীগণের মধ্যে হলেন তিনি একজন। ইসলাম ধর্ম আবির্ভূত হওয়ার প্রথম দিকেই তিনি এবং তাঁর স্ত্রী ও সহধর্মিণী উম্মু জামীল ফাতিমা বিনতুল খাত্তাবসহ এক সাথে ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন।  
আবুল আওয়ার সাঈদ বিন জ্যাইদ [রাদিয়াল্লাহু আনহু] মাদীনায় হিজরত করেন। এবং ওহুদের যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। আর আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর সাথে আরো সমস্ত যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। যেহেতু তিনি বদরের যুদ্ধের সময় মাদীনায় ছিলেন না, সেহেতু তিনি বদরের যুদ্ধে অংশগ্রহণ করতে পারেন নি। তবুও আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] তাঁকে বদরের যুদ্ধের গানীমাতের মাল (ইসলামের শিক্ষা মোতাবেক যুদ্ধলব্ধ সম্পদ) এর একটি অংশ প্রদান করেছিলেন। কেননা তিনি তাঁকে গুপ্তচর হিসেবে কুরাইশ বংশের বাণিজ্যিক যাত্রিদলের সংবাদ সংগ্রহ করার উদ্দেশ্যে শাম দেশের রাজপথের দিকে প্রেরণ করেছিলেন।
হাদীস গ্রন্থে তাঁর কাছ থেকে বর্ণিত 48  টি হাদীস পাওয়া যায়।
তিনি একজন বেঁটে আকারের মানুষ ছিলেন। তিনি মাদীনা শহরের বাইরে সাত মাইল দূরে আকীক নামক জায়গাতে সন 51 হিজরীতে মৃত্যুবরণ করেন। আবার এটাও বলা হয়েছে যে, তিনি সন 52 হিজরীতে মৃত্যুবরণ করেছেন। অতঃপর সেই আকীক নামক জায়গা থেকে মানুষের কাঁধে করে তাঁর দেহ মাদীনা শহরে নিয়ে আসা হয়।  [রাদিয়াল্লাহু আনহু]।


* এই হাদীস হতে শিক্ষণীয় বিষয়:
1। প্রকৃত মুসলিম ব্যক্তির প্রতি একটি ওয়াজেব ও অপরিহার্য কাজ হলো এই যে, সে যেন নিজেকে, নিজের পরিবারকে এবং নিজের মহিলাদেরকে যেমন:- উদাহরণস্বরূপ বলা যেতে পারে,  নিজের মা, মেয়ে, বোন ও স্ত্রীকে বা নিজের সম্পদকে অত্যাচারীর অত্যাচার থেকে বা আক্রমণকারীর আক্রমণ থেকে রক্ষা করবে। সুতরাং আক্রমণকারীকে প্রথমে সহজ পদ্ধতিতে দমন করার জন্য দমননীতি অবলম্বন করবে। তাতে কাজ না হলে তাকে হনন করবে। আর এই হননের কোনো কেসাস বা শাস্তি নেই, ক্ষতিপূরণ অথবা দিয়াত নেই এবং কোনো প্রায়শ্চিত্ত কিংবা কাফ্ফারাও নেই; যেহেতু এই বিষয়ে প্রকৃত ইসলামের এটাই বিধান। আর হননীয় আক্রমণকারী বা নির্যাতনকারীকে জাহান্নামী ব্যক্তি বলে সতর্ক করা হয়েছে। আর নির্যাতিত ব্যক্তিকে হত্যা করা হলে সে শাহীদ বলেই গণ্য করা হয়েছে।
2। এই হাদীসটির দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, প্রকৃত মুসলিম ব্যক্তির সত্তা, ধর্ম, সম্পদ এবং পরিবারের লোকজনের সম্মান রক্ষা করার বিষয়টি নির্ধারিত রয়েছে। সুতরাং এই নির্ধারিত বিষয়টির প্রতি যে ব্যক্তি আক্রমণ বা হামলা করবে, তাকে কঠোর ভাবে দমন করতে হবে। তাই আক্রমণকারীকে  দমন করতে গিয়ে যে ব্যক্তি মৃত্যুবরণ করবে, সে ব্যক্তি শাহীদ হওয়ার মর্যাদা লাভ করবে।
3। এই হাদীসটির সারাংশ হলো এই যে, যে ব্যক্তি আক্রমণকারীর হাত থেকে নিজের সম্পদ, নিজের পরিবারের লোকজন, নিজের মা, মেয়ে, বোন ও স্ত্রী, নিজের জীবন এবং নিজের প্রকৃত ধর্ম ইসলামকে রক্ষা করতে যাওয়ার কারণে আক্রমণকারীর হাতে মৃত্যুবরণ করবে, সে ব্যক্তি শাহীদ বলেই গণ্য করা হবে এবং পরকালে সে শাহীদের পুণ্য ও মর্যাদা লাভ করবে।
غَصْبُ الْأَرْضِ حرام في الإسلام
ইসলাম ধর্মে বলপূর্বকভাবে লোকের ভূমি ও সম্পত্তি দখল করা হারাম
62- عَنْ سَعِيْدِ بْنِ زَيْدٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، قَالَ سَمِعْتُ رَسُوْلَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُوْلُ: "مَنْ ظَلَمَ مِنَ الْأَرْضِ شَيْئًا طُوِّقَهُ مِنْ سَبْعِ أَرَضِينَ".
(صحيح البخاري، رقم الحديث 2452، واللفظ له،  وصحيح مسلم، رقم الحديث 137 - (1610)،).
62 -  অর্থ:  সাঈদ বিন জ্যাইদ [রাদিয়াল্লাহু আনহু] থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন: আমি আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] কে বলতে শুনেছি তিনি বলেছেন: “যে ব্যক্তি কারো জমির কোনো অংশ জুলুম করে দাবিয়ে নিবে, কিয়ামতের দিন এর সাত স্তর জমিন তার গলায় ঝুলিয়ে দিয়ে তাকে শাস্তি দেওয়া হবে”।
[সহীহ বুখারী, হাদীস নং 2452 এবং সহীহ মুসলিম, হাদীস নং 137 -(1610), তবে হাদীসের শব্দগুলি সহীহ বুখারী থেকে নেওয়া হয়েছে]।
* এই হাদীস বর্ণনাকারী সাহাবীর পরিচয় পূর্বে 61 নং হাদীসে উল্লেখ করা হয়েছে।
* এই হাদীস হতে শিক্ষণীয় বিষয়:
1। প্রকৃত ইসলাম ধর্ম সমস্ত প্রকারের অধিকার ও সম্পত্তি রক্ষা করার জন্য সুব্যবস্থা নেওয়ার প্রতি আহ্বান জানায়। এবং বলপূর্বক পদ্ধতিতে অন্য লোকের ভূমি ও সম্পত্তি দখল করা কঠোরভাবে হারাম ঘোষণা করে।
2। এই হাদীসটির দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, যে ব্যক্তি কোনো জমির মালিক হবে, সে ব্যক্তি জমির ভিতরে বা নীচে যা কিছু বস্তু থাকবে তারও সে মালিক হবে। সুতরাং জমির ভিতরে বা নীচে যে সমস্ত পাথর, ভবন   এবং মূল্যবান ধাতু প্রভৃতি থাকবে, সে সমস্ত জিনিসের প্রকৃত মালিক হবে সেই বাক্তি, যে ব্যক্তি হবে জমির মালিক। এবং জমির মালিক তার জমি খনন করে তার ইচ্ছা মত জমির নীচে যেতে পারবে, যদি তাতে তার প্রতিবেশীর ক্ষতি না হয়।  
3। মুসলিম ব্যক্তির প্রতি প্রকৃত ইসলাম ধর্মের শিক্ষা মেনে চলা অপরিহার্য। তাই তার জন্য অন্য কোনো লোকের সম্পত্তি চুরি করে বা বলপ্রয়োগ করে অথবা জালিয়াতি করে কিংবা প্রতারণা করে অথবা ঘুষ দিয়ে নেওয়া জায়েজ নয়।
4। এই হাদীসটির সারাংশ হলো এই যে, যে ব্যক্তি কোনো ব্যক্তির জমির কোনো অংশ জুলুম জবরদস্তি করে দাবিয়ে নিবে, তাকে পরকালে কেয়ামতের দিন দায়িত্ব দেওয়া হবে যে, সে যেন জমির ওই অংশটি পুনরুত্থিত হওয়ার স্থানে হাশরের ময়দানে বহন করে নিয়ে যায়, যে অংশটি সে দুনিয়াতে অন্য লোকের কাছ থেকে জুলুম জবরদস্তি করে দাবিয়ে নিবে। তাই উক্ত জমির অংশটি তার গলায় ঝুলিয়ে দেওয়া হবে গলা বন্ধের ফিতা বা দড়ির মত। সুতরাং এখানে এটাও বলা যেতে পারে যে, উক্ত জমির অংশটি তার গলায় তাকে ঝুলিয়ে রাখার দায়িত্ব দেওয়া হবে কিন্তু সে তা করতে পারবে না। অতএব তাকে এই দায়িত্ব দেওয়ার মাধ্যমে মহা শাস্তি প্রদান করা হবে। আর এটাও অর্থ হতে পারে যে, কোনো ব্যক্তির জমির কোনো অংশ জুলুম জবরদস্তি করে যে ব্যক্তি দাবিয়ে নিবে, তার গলায় তার পাপকে দড়ির মত করে ঝুলিয়ে রাখা হবে। সুতরাং তার পাপ তার গলায় ঝুলতে থাকবে। আবার  এটাও অর্থ বলা হয়েছে যে,  যে ব্যক্তি কোনো জমির অংশ জুলুম জবরদস্তি করে দাবিয়ে নিবে, সেই জমিসহ তাকে ভূমিতে ধ্বসিয়ে দেওয়া হবে, এবং সেই জমি তার গলায় হারের মত হয়ে থাকবে। এবং তার গলাকে এতই লম্বা চওড়া করা হবে যে, সেই জমি যেন তার গলায় সঠিকভাবে স্থাপিত হয়ে যায়।
التحذير من الافتتان بالمال
মালের প্রতি সম্মোহিত হওয়া থেকে সতর্কীকরণ
63- عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ  رَضِيَ اللهُ عَنْهُ،  قَالَ: قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: "يَكْبُرُ ابْنُ آدَمَ، وَيَكْبُرُ مَعَهُ اثْنَتَانِ: حُبُّ الْمَالِ، وَطُوْلُ الْعُمْرِ".
(صحيح البخاري، رقم الحديث 6421، واللفظ له، وصحيح مسلم، رقم الحديث 115 - (1047)،).
63  -  অর্থ: আনাস বিন মালিক [রাদিয়াল্লাহু আনহু] থেকে বর্ণিত,  তিনি বলেন: আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলেছেন:    “আদম সন্তানের বয়স বাড়ে আর তার সাথে দুটি জিনিসও বৃদ্ধি পায়; ধন-সম্পদের মহব্বত ও দীর্ঘায়ুর আকাঙ্খা”।
[সহীহ বুখারী, হাদীস নং 6421 এবং সহীহ মুসলিম, হাদীস নং 115 -(1047), তবে হাদীসের শব্দগুলি সহীহ বুখারী থেকে নেওয়া হয়েছে]।
* এই হাদীস বর্ণনাকারী সাহাবীর পরিচয় পূর্বে 3 নং হাদীসে উল্লেখ করা হয়েছে।

* এই হাদীস হতে শিক্ষণীয় বিষয়:
1। প্রকৃত ইসলাম ধর্মে মালের মহা মর্যাদা রয়েছ এবং মহান আল্লাহ এমন কতকগুলি ইবাদত উপাসনা নির্ধারিত করেছেন, যেই ইবাদত উপাসনাগুলি নির্ভর করে মালের উপর, যেমন:- উদাহরণস্বরূপ বলা যেতে পারে:   জাকাত প্রদান করা, হজ্জ পালন করা এবং মহান আল্লাহর পথে জেহাদ করা ইত্যাদি। এবং সমস্ত মানুষের জীবনধারণের উপায় এবং তাদের জীবনরক্ষার প্রয়োজনীয় জিনিস অর্জন করার মাধ্যম হলো মাল। এই কারণেই প্রকৃত ইসলাম ধর্ম মাল বর্জন করার উপদেশ প্রদান করে নি, কিন্তু মালের প্রতি সম্মোহিত হয়ে আল্লাহর ইবাদত উপাসনা থেকে বিমুখ হওয়া থেকে সতর্ক করেছে। অনুরূপভাবে প্রকৃত ইসলাম ধর্ম মালের প্রতি অত্যধিক লোভ করা এবং মালের প্রতি ভীষণ আকৃষ্ট হওয়া ঘৃণা করেছে।
2। মহান আল্লাহর ইবাদত উপাসনাতে মানুষের বয়স যতো লম্বা হবে, ততোই সে মহান আল্লাহর সান্নিধ্য লাভ করতে পারবে। এবং পরকালে তার মর্যাদা অতি উচ্চ হবে। কেননা বশি লম্বা বয়স ধরে সৎ কর্ম সম্পাদন করলে সেই সৎ কর্মের মাধ্যমে মহান আল্লাহর নৈকট্য লাভ হয়।
3। সৎ কর্ম ছাড়া শুধু লম্বা বয়স মানুষের জন্য কল্যাণদায়ক হয় না। তবে  প্রকৃত ইসলাম ধর্মের শিক্ষা মেনে চলার সাথে সাথে লম্বা বয়স মানুষের জন্য কল্যাণদায়ক হয়। তাই সৎ কর্ম ছাড়া শুধু লম্বা বয়স প্রাপ্ত হওয়ার বিষয়টিকে প্রকৃত ইসলাম ধর্ম ঘৃণা করেছে। কিন্তু যে ব্যক্তি সৎ কর্ম সম্পাদন করার উদ্দেশ্যে লম্বা বয়স প্রাপ্ত হওয়ার আশা করবে এবং নিজের জীবনকে সৎ কর্মে, মঙ্গলদায়ক কাজে নিয়োজিত করবে আর মানুষের উপকার করার জন্য নিজেকে নিবেদিত করবে, তার লম্বা বয়স প্রাপ্ত হওয়ার আশা করার বিষয়টি উত্তম কর্ম হিসেবেই গণ্য করা হবে।
من الأذكار عقب الصلوات المكتوبة
ফরজ নামাজের সালাম ফিরানোর পর পঠনীয় জিকির
64- عَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا، قَالَتْ: كَانَ النََّبِيُُ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا سَلَّمَ، لَمْ يَقْعُدْ، إِلاَّ مِقْدَارَ مَا يَقُوْلُ: "اَللَّهُمََّ أَنْتَ السََّّلاَمُ وَمِنْكَ السََّّلامُ، تَبَارَكْتَ يَا ذَا الْجَلالِ وَالاِكْرَامِ".
(صحيح مسلم، رقم الحديث 136 - (592)، ).
64 - অর্থ:  নাবী কারীম [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর প্রিয়তমা আয়েশা উম্মুলমুমেনীন [রাদিয়াল্লাহু আনহা] থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন: আল্লাহর নাবী [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] নামাজের সালাম ফিরিয়ে শুধু নিম্নের জিকিরটি বলা পর্যন্ত বসতেন:
"اَللَّهُمََّ أَنْتَ السََّّلاَمُ وَمِنْكَ السََّّلامُ، تَبَارَكْتَ يَا ذَا الْجَلالِ وَالاِكْرَامِ".
অর্থ:  “হে আল্লাহ, আপনি প্রশান্তি দাতা, আর আপনার কাছেই রয়েছে সকল প্রকারের শান্তি, আপনি অধিকতর কল্যাণময়, হে মর্যাদাবান এবং মহানুভব মহিমান্বিত”। [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং 136 - (592) ]।
* এই হাদীস বর্ণনাকারিণী সাহাবীয়ার পরিচয় পূর্বে 16  নং হাদীসে উল্লেখ করা হয়েছে।
* এই হাদীস হতে শিক্ষণীয় বিষয়:
1। এই হাদীসটির দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, ইমাম জামাআতের সহিত নামাজ শেষ করে সালাম ফিরানোর পর তার নামাজ পড়ার স্থান থেকে অন্য দিকে চলে যেতে পারে। কেননা, এই হাদীসটির দ্বারা সাধারণভাবে এটাই প্রমাণিত হয় যে, আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] তাঁর নামাজ পড়ার স্থানে নামাজের সালাম ফিরিয়ে শুধু উক্ত জিকিরটি বলা পর্যন্ত বসতেন। এবং অতি সত্বর সেই স্থান থেকে অন্য স্থানে চলে যেতেন নফল নামাজ পড়ার জন্য। কিন্তু ইসলাম ধর্মের পণ্ডিতগণের মধ্যে থেকে কতকগুলি পণ্ডিত বলেছেন যে,  আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] নামাজের সালাম ফিরিয়ে শুধু উক্ত জিকিরটি বলা পর্যন্ত কেবলামুখী হয়ে বসতেন, তার পর নামাজের জামাআতের লোকের দিকে মুখ ফিরিয়ে বসতেন। এই বিষয়ে মহান আল্লাহই অধিক জানেন।
2। ফরজ নামাজের সালাম ফিরানোর পর অনেক পঠনীয় জিকিরের কথা আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] থেকে বিভিন্ন অবস্থায় এবং বিভিন্ন সময় বর্ণিত হয়েছে। উক্ত জিকিরগুলির মধ্যে রয়েছে এই জিকিরটি:
"اَللَّهُمََّ أَنْتَ السََّّلاَمُ وَمِنْكَ السََّّلامُ، تَبَارَكْتَ يَا ذَا الْجَلالِ وَالاِكْرَامِ".
অর্থ: “হে আল্লাহ, আপনি প্রশান্তি দাতা, আর আপনার কাছেই রয়েছে সকল প্রকারের শান্তি, আপনি অধিকতর কল্যাণময়, হে মর্যাদাবান এবং মহানুভব মহিমান্বিত”।
আবার এটাও সঠিক হাদীসের মধ্যে উল্লিখিত হয়েছে যে, আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] নামাজের সালাম ফিরানোর পর তিনবার পাঠ করতেন:
"أَسْتَغْفِرُ اللهَ".
 অর্থ:“ আমি আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করছি”।
 অতঃপর বলতেন:
"اَللَّهُمََّ أَنْتَ السََّّلاَمُ وَمِنْكَ السََّّلامُ، تَبَارَكْتَ يَا ذَا الْجَلالِ وَالاِكْرَامِ".
( দেখতে পারা যায় সহীহ মুসলিম, হাদীস নং 135 - (591) ।
 
3। উক্ত জিকিরের মধ্যে রয়েছে:
"اَللَّهُمََّ أَنْتَ السََّّلاَمُ"  
আস্সালাম শব্দটি এখানে মহান আল্লাহর একটি নাম হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে। এর অর্থ হলো:  “হে আল্লাহ! আপনি সমস্ত দোষ ত্রুটি এবং অসম্পূর্ণতা হতে সম্পূর্ণ মুক্ত।  এবং যে সমস্ত বস্তুর আপনি উপযোগী নন, সেই সমস্ত বস্তু হতে আপনার পবিত্রতা ও মহা উৎকৃষ্টতার ঘোষণা করছি।
এবং مِنْكَ السََّّلامُ এর অর্থ  হলো:  হে আল্লাহ আপনি শান্তি প্রদান কারী, আপনার কাছেই রয়েছে সকল প্রকারের শান্তি।
এবং يَا ذَا الْجَلالِ وَالاِكْرَامِ এর অর্থ হলো: “হে আল্লাহ! আপনি মর্যাদাবান এবং মহানুভব মহিমান্বিত”।

 


إقبال الإمام على المأمومين بعد الصلاة
সালাম ফিরানোর পর ইমামের জন্য মুসাল্লিগণের দিকে মুখ ফিরিয়ে বসা উচিত
65- عَنْ سَمُرَةَ بْنِ جُنْدَبٍ قَالَ: كَانَ النََّبِيُُ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا صَلَّى صَلاَةً أَقْبَل عَلَيْنَا بِوَجْهِهِ.
(صحيح البخاري، رقم الحديث 845، واللفظ له، وصحيح مسلم، جزء من رقم الحديث 23 - (2275)،).
65 - অর্থ: সামুরা [রাদিয়াল্লাহু আনহু] থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আল্লাহর নাবী [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] যখনই জামাআতের সহিত কোনো নামাজ আদায় করতেন, তখনই সালাম ফিরানোর পর তিনি আমাদের দিকে মুখ করে বসতেন।
[সহীহ বুখারী, হাদীস নং 845 এবং সহীহ মুসলিম, হাদীস নং 23 -(2275), তবে হাদীসের শব্দগুলি সহীহ বুখারী থেকে নেওয়া হয়েছে]।
* এই হাদীস বর্ণনাকারী সাহাবীর পরিচয় পূর্বে 30 নং হাদীসে উল্লেখ করা হয়েছে।

 

* এই হাদীস হতে শিক্ষণীয় বিষয়:
1। সালাম ফিরানোর পর ইমামের জন্য মুসাল্লিগণের দিকে মুখ ফিরিয়ে বসা ইসলামের শিক্ষা সম্মত একটি উত্তম কাজ। তাই সালাম ফিরানোর পর তিনবার
"أَسْتَغْفِرُ اللهَ".
 অর্থ:“ আমি আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করছি”।
পাঠ করার পর এই জিকিরটি পাঠ করা উচিত:
"اَللَّهُمََّ أَنْتَ السََّّلاَمُ وَمِنْكَ السََّّلامُ، تَبَارَكْتَ يَا ذَا الْجَلالِ وَالاِكْرَامِ".
অর্থ: “হে আল্লাহ, আপনি প্রশান্তি দাতা, আর আপনার কাছেই রয়েছে সকল প্রকারের শান্তি, আপনি অধিকতর কল্যাণময়, হে মর্যাদাবান এবং মহানুভব মহিমান্বিত”।
 (দেখদতে পারা যায় সহীহ মুসলিম, হাদীস নং 135 - (591) ।
অতঃপর ইমামের জন্য মুসাল্লিগণের দিকে মুখ ফিরিয়ে বসা উচিত।
2। ইসলাম ধর্মের পণ্ডিতগণের মধ্যে থেকে কতকগুলি পণ্ডিত বলেছেন যে, ফরজ নামাজের সালাম ফিরানোর পর ইমামের জন্য মুসাল্লিগণের দিকে মুখ ফিরিয়ে বসা ইসলামের শিক্ষা সম্মত একটি উত্তম কাজ। তাই সালাম ফিরানোর পর মুসাল্লিগণকে পিছনে রেখে মেহরাবে ইমামের জন্য বসে থাকার বিষয়টি ইসলামের শিক্ষা সম্মত কাজ নয় বরং তা ঘৃণিত ও অপছন্দনীয় কাজ। তাই সালাম ফিরানোর পর ইমামের জন্য মুসাল্লিগণের দিকে মুখ ফিরিয়ে বসাই হলো ইসলামের শিক্ষা সম্মত একটি উত্তম কাজ।
3। জামাআতের সহিত নামাজ পড়ার সময় ইমাম মুসাল্লিগণকে পিছনে রেখে নামাজ পড়ার বিষয়টি ইসলামের শিক্ষা সম্মত একটি বিধান। সুতরাং  জামাআতের সহিত নামাজ পড়ার কাজ শেষ হয়ে যাওয়ার পর এই বিধানটির প্রতি আমল করার কাজ শেষ হয়ে যায়। তাই নামাজের সালাম ফিরানোর পর ইমামের জন্য মুসাল্লিগণের দিকে মুখ ফিরিয়ে বসার নিয়মটিই হলো ইসলামের শিক্ষা সম্মত নিয়ম। যাতে মুসাল্লিগণ তাদের প্রয়োজন মোতাবেক ইসলাম ধর্মের বিষয়ে অথবা জাগতিক বিষয়ে ইমামকে সহজে কোনো প্রশ্ন করতে পারে।
جواز خروج النساء إلى المساجدِ
মহিলাদের জন্য মাসজিদে গিয়ে নামাজ পড়া বৈধ
66- عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عُمَرَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا، أَنَّ رَسُوْلَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ:  "لاَ تَمْنَعُوا إِمَاءَ اللَّهِ  مَسَاجِدَ اللَّهِ".
 (صحيح مسلم، رقم الحديث 136 - (442)، واللفظ له، وصحيح البخاري، رقم الحديث 900).
66 - অর্থ: আব্দুল্লাহ বিন ওমার [রাদিয়াল্লাহু আনহুমা] থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন যে, আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] নিশ্চয় বলেছেন: “তোমরা আল্লাহর দাসী নারীদেরকে মাসজিদে যেতে নিষেধ করবে না”।
 [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং 136 - (442) এবং সহীহ বুখারী, হাদীস নং 900, তবে হাদীসের শব্দগুলি সহীহ মুসলিম থেকে নেওয়া হয়েছে]।
* এই হাদীস বর্ণনাকারী সাহাবীর পরিচয় পূর্বে 11 নং হাদীসে উল্লেখ করা হয়েছে।
* এই হাদীস হতে শিক্ষণীয় বিষয়:
1। এই হাদীসটির দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, মহিলাদের জন্য মাসজিদে গিয়ে জামাআতের সহিত নামাজ পড়ার বিষয়টি ইসলামের শিক্ষা সম্মত একটি বিষয়। যদিও তাদের বাড়ির ভিতরে নামাজ পড়া বেশি উত্তম। যেহেতু আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলেছেন: “তোমরা তোমাদের মহিলাদেরকে মাসজিদে যেতে নিষেধ করবে না, তবে তাদের জন্য তাদের বাড়িতেই নামাজ পড়া বেশি উত্তম”। [ দেখতে পারা যায় সুনান আবু দাউদ, হাদীস নং 567, আল্লামা নাসেরুদ্দিন আল্ আলবাণী হাদীসটিকে সহীহ (সঠিক) বলেছেন ]।
2। এই হাদীসটির দ্বারা এটাও প্রমাণিত হয় যে, কোনো মহিলা যখন মাসজিদে গিয়ে নামাজ পড়ার জন্য তার স্বামীর কাছে অনুমতি প্রার্থনা করবে, তখন বিপদমুক্ত পরিবেশ থাকলে তার স্বামী যেন তাকে অনুমতি প্রদান করে।
3। কোনো মহিলার জন্য এটা জায়েজ নয় যে, সে সুসজ্জিতা হয়ে আতর বা সুগন্ধি মেখে মাসজিদে গিয়ে নামাজ পড়বে। কেননা, আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলেছেন: “তোমাদের মধ্যে থেকে যখন কোনো মহিলা কোনো মাসজিদে প্রবেশ করবে, তখন যেন সে আতর বা সুগন্ধি ব্যবহার না করে”। [এই বিষয়ে দেখতে পারা যায় সহীহ মুসলিম, হাদীস নং 142 - (443)]।
من أحكام المسح على الخفين
মোজার উপরে মাসাহ করার বিধান
67- عَنِ المُغِيْرَةِ بْنِ شُعْبَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، قَالَ:  كُنْتُ مَعَ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِيْ سَفَرٍ؛ فَأَهْوَيْتُ لِأَنْزِعَ خُفَّيْهِ؛ فَقَالَ: "دَعْهُمَا؛ فَإِنِّيْ أَدْخَلْتُهُمَا طَاهِرَتَيْنِ"؛  فمَسَحَ عَلَيْهِمَا.
(صحيح البخاري، رقم الحديث 206، واللفظ له، وصحيح مسلم، رقم الحديث 80 - (274)،).
67- অর্থ: আল মুগীরা বিন শুবা [রাদিয়াল্লাহু আনহু] হতে বর্ণিত, তিনি বলেন: আমি নাবী কারীম [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর সাথে কোনো এক সময়ে সফরে ছিলাম। তাই ওজু করার সময় আমি তাঁর মোজা দুইটি খুলতে চাইলে তিনি বলেন: “ওই দুইটি থাক, আমি পবিত্র অবস্থায় ওই দুইটি পরিধান করেছি”। এই বলে তিনি মোজা দুইটি উপর মাসাহ করলেন।
[সহীহ বুখারী, হাদীস নং 206 এবং সহীহ মুসলিম, হাদীস নং 80 - (274), তবে হাদীসের শব্দগুলি সহীহ বুখারী থেকে নেওয়া হয়েছে]।
* এই হাদীস বর্ণনাকারী সাহাবীর পরিচয় পূর্বে 35  নং হাদীসে উল্লেখ করা হয়েছে।
* এই হাদীস হতে শিক্ষণীয় বিষয়:
1। আরবী ভাষায় চামড়া অথবা অন্য কোনো বস্তুর  তৈরি পায়ের আবরণকে মোজা বা খুফ বলা হয়।
2। এই হাদীসটির দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, চামড়া অথবা অন্য কোনো বস্তুর তৈরি পায়ের আবরণ বা মোজার উপরে মাসাহ করা প্রকৃত ইসলামের শিক্ষা সম্মত একটি বিধান। তাই এই ধরণের পায়ের আবরণ বা মোজার উপরে বাসস্থানে বাস করার অবস্থায় এবং মুসাফির অবস্থায় গ্রীষ্মকালে এবং শীতকালে মাসাহ করা বৈধ।  চামড়া অথবা অন্য কোনো বস্তুর তৈরি পায়ের আবরণ বা মোজার উপরে মাসাহ করার শর্ত হলো: পরিপূর্ণ পবিত্র অবস্থায় ওজু অথবা গোসল করার পর চামড়া অথবা অন্য কোনো বস্তুর তৈরি পায়ের আবরণ বা মোজার উপর মাসাহ করা। সুতরাং এই পদ্ধতিতে পায়ের আবরণ বা মোজা পরিধান করার পর ওজু চলে গেলে উক্ত মোজার বা অবরণের উপরে মুসলিম ব্যক্তির জন্য মাসাহ করা বৈধ। আর এটাই হলো অধিকাংশ ইমাম ও পণ্ডিতদের অভিমত। মহান আল্লাহ তাঁদের প্রতি দয়া করুন।
3। চামড়া অথবা অন্য কোনো বস্তুর তৈরি পায়ের আবরণ বা মোজার উপরে মাসাহ করার সময় শুরু হবে ওজু ভেঙ্গে যাওয়ার পর প্রথম মাসাহ করা থেকে। সুতরাং বাসস্থানে বাস করা অবস্থায় প্রথম মাসাহ থেকে একদিন একরাত এবং মুসাফির অবস্থায় তিনদিন তিনরাত মাসাহ করা বৈধ।
من أحكام المسح على الجَوْرَبَيْنِ
পায়ের আবরণ বা মোজার উপরে মাসাহ করার বিধান
68- عَنِ المُغِيْرَةِ بْنِ شُعْبَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، قَالَ:  تَوَضَّأَ النَّبِيُّ صَلَّى الله عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَمَسَحَ عَلَى الجَوْرَبَيْنِ والنَّعلينِ.
(جامع الترمذي، رقم الحديث 99، واللفظ له، وسنن أبي داود، رقم الحديث 159، وسنن النسائي، رقم الحديث 125( م)، وسنن ابن ماجه، رقم الحديث  559، قال الإمام الترمذي عن هذا الحديث بأنه:  حسن صحيح، وصححه الألباني).
68- অর্থ: আল মুগীরা বিন শুবা [রাদিয়াল্লাহু আনহু] হতে বর্ণিত, তিনি বলেন: আল্লাহর নাবী [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] ওজু করেছেন এবং সুতো বা কাপড়ের তৈরি মোজার (জাওরাবের) উপরে ও জুতোর উপরে মাসাহ করেছেন।
[জামে তিরমিযী, হাদীস নং 99, সুনান আবু দাউদ, হাদীস নং 159, সুনান নাসায়ী, হাদীস নং 125 এবং সুনান ইবনু মাজাহ, হাদীস নং 559, তবে হাদীসের শব্দগুলি জামে তিরমিযী থেকে নেওয়া হয়েছে। ইমাম তিরমিযী হাদীসটিকে হাসান ও সহীহ বলেছেন। আল্লামা নাসেরুদ্দিন আল্ আলবাণী হাদীসটিকে সহীহ (সঠিক) বলেছেন]।
* এই হাদীস বর্ণনাকারী সাহাবীর পরিচয় পূর্বে 35  নং হাদীসে উল্লেখ করা হয়েছে।
* এই হাদীস হতে শিক্ষণীয় বিষয়:
1। আরবী ভাষায় সুতো বা কাপড় কিংবা কার্পাসের তৈরি পায়ের আবরণকে বা মোজাকে (জাওরাব)  বলা হয়।
2। এই হাদীসটির দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, সুতো বা কাপড় কিংবা কার্পাসের তৈরি পায়ের আবরণ  বা মোজার উপরে মাসাহ করা প্রকৃত ইসলামের শিক্ষা সম্মত একটি বিধান। তাই এই ধরণের পায়ের আবরণ বা মোজার উপরে বাসস্থানে বাস করার অবস্থায় এবং মুসাফির অবস্থায় গ্রীষ্মকালে এবং শীতকালে মাসাহ করা বৈধ। তবে এই ধরণের পায়ের আবরণ বা মোজা যেন পুরু হয়, ঘন সুতা দিয়ে তৈরি করা হয়, যাতে উপর থেকে পায়ের চামড়া প্রকাশ না পায়, এবং পায়ের উপরে সঠিকভাবে স্থাপিত হয়, বেঁধে রাখার প্রয়োজন না হয়। তাই বলা যেতে পারে যে, উল্লিখিত দুই প্রকারের পায়ের আবরণ বা মোজার মধ্যে খুব বেশি তফাত নেই। কেননা দুই প্রকারের পায়ের আবরণের মধ্যে মোজা বা খুফ এর অর্থ পাওয়া যায়। তাই সুতো বা কাপড় কিংবা কার্পাসের তৈরি পায়ের আবরণ বা মোজার উপরে মাসাহ করার শর্ত হলো এই যে, কার্পাসের তৈরি পায়ের আবরণ বা মোজা যেন পুরু হয়, ঘন সুতা দিয়ে তৈরি করা হয়, যাতে উপর থেকে পায়ের চামড়া প্রকাশ না পায়, এবং পায়ের উপরে সঠিকভাবে স্থাপিত হয়, বেঁধে রাখার প্রয়োজন না হয়। তাই উক্ত পায়ের আবরণ বা মোজা যদি পাতলা হয় পায়ের চাম আবৃত না করে, তাহলে তার উপরে মাসাহ করা বৈধ নয়। কেননা এই অবস্থায় পা যেন অনাবৃতই   রয়েছে, আর অনাবৃত পায়ের উপরে মাসাহ করা বৈধ নয়। সুতো বা কাপড় কিংবা কার্পাসের তৈরি পায়ের আবরণ বা মোজার উপরে মাসাহ করার অন্য একটি শর্ত হলো: পরিপূর্ণ পবিত্র অবস্থায় ওজু অথবা গোসল করার পর পায়ের আবরণ বা মোজার উপর মাসাহ করা। আর এটাই হলো অধিকাংশ ইমাম ও পণ্ডিতদের অভিমত। মহান আল্লাহ তাঁদের প্রতি দয়া করুন।
3। সুতো বা কাপড় কিংবা কার্পাসের তৈরি পায়ের আবরণ (জাওরাব)  বা মোজার উপরে মাসাহ করার সময় শুরু হবে ওজু ভেঙ্গে যাওয়ার পর প্রথম মাসাহ করা থেকে। সুতরাং বাসস্থানে বাস করা অবস্থায় প্রথম মাসাহ থেকে একদিন একরাত এবং মুসাফির অবস্থায় প্রথম মাসাহ থেকে তিনদিন তিনরাত মাসাহ করা বৈধ।

 

 

النهي عن التقاط لقطة من أحرم بالحج
যারা হজ্জ পালনে রত থাকবে, তাদের হারানো বস্তু কুড়িয়ে নেওয়া নিষিদ্ধ  
69- عَنْ عَبْدِ الرَّحْمَنِ بْنِ عُثْمَانَ التََّيْمِيِّ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ، أَنَّ رَسُوْلَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ نَهَى عَنْ لُقَطَةِ الْحَاجِّ.
(صحيح مسلم، رقم الحديث 11 - (1724)، ).
69 - অর্থ: আব্দুর রহমান বিন ওসমান আত্তাইমী [রাদিয়াল্লাহু আনহু] থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন যে, যারা হজ্জ পালন করতে এসেছে, তাদের হারানো বস্তু কুড়িয়ে নিতে আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম]  অবশ্যই নিষেধ করেছেন। [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং 11 - (1724)]।
* এই হাদীস বর্ণনাকারী সাহাবীর পরিচয়:
আব্দুর রহমান বিন ওসমান আল কুরাশী আত্তাইমী [রাদিয়াল্লাহু আনহু] এক জন সম্মানিত সাহাবী। তিনি হুদাইবীয়ার সন্ধি সংঘটিত হওযার সময় ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছেন এবং আল্লাহর নাবী [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর কাছে বৃক্ষের নীচে আনুগত্যের শপথও গ্রহণ করেছেন। আবার এটাও বলা হয়েছে যে, তিনি মাক্কা বিজয়ের সময় ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছেন। তিনি ওমরাতুল কাজার অনুষ্ঠানে সর্ব প্রথমে অংশ গ্রহণ করেন অতঃপর তিনি ইয়ারমূকের যুদ্ধেও অংশ গ্রহণ করেন। সন 73 হিজরীতে মাক্কা শহরে তাঁকে হত্যা করা হয়। [রাদিয়াল্লাহু আনহু]।
* এই হাদীস হতে শিক্ষণীয় বিষয়:
1। ইসলামী পরিভাষায় লুকতা বলা হয়: এমন কোনো মূল্যবান পড়ে থাকা হারানো বস্তু, যার  মালিক অজ্ঞাত। কিংবা  লুকতা বলা হয়:  সংরক্ষিত মূল্যবান হারানো সম্পদকে। আবার এই বিষয়ে অন্য উক্তিও রয়েছে।
2। পৃথিবীর মধ্যে লুকতার ইসলামী বিধান মাত্র একটি। কিন্তু মাক্কা শহরের হারাম ও সম্মানিত এলাকার লুকতার বিধানটি হলো  আলাদা। তাই পৃথিবীর মধ্যে মাক্কা শহরের হারাম ও সম্মানিত এলাকা ছাড়া যে কোনো স্থানে সংরক্ষিত মূল্যবান হারানো সম্পদ কুড়িয়ে পাওয়া গেলে, সেই সম্পদ তার মালিকের নিকটে পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে এক বছর ধরে তার ঘোষণা করার বিধান নির্ধারিত রয়েছে। তাই সেই সম্পদ তার মালিকের নিকটে পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে এক বছর ধরে ঘোষণা করার পর যদি তার মালিকের সন্ধান পাওয়া না যায়, তাহলে যে ব্যক্তি উক্ত সম্পদ কুড়িয়ে পেয়েছে, সেই ব্যক্তি উক্ত কুড়িয়ে পাওয়া সম্পদের দ্বারা উপকৃত হতে পারবে। আর দেশের প্রথা অনুযায়ী কুড়িয়ে পাওয়া সম্পদ যদি অতি অল্প ও নগণ্য হয় কিংবা সংরক্ষণের যোগ্য না হয়, তাহলে তার মালিকের সন্ধানের জন্য এক বছর ধরে ঘোষণা করার প্রয়োজন নেই।
3। মাক্কা শহরের হারাম ও সম্মানিত ( বা হারাম ) এলাকার লুকতার বিধানটি হলো এই যে, এই এলাকার কোনো স্থানে সংরক্ষিত মূল্যবান হারানো সম্পদ কুড়িয়ে নেওয়া জায়েজ নয়। কিন্তু এই ক্ষেত্রে তা জায়েজ হবে, যে ক্ষেত্রে সে কুড়িয়ে না নিলে উক্ত সম্পদটি নষ্ট হয়ে যেতে পারে বা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। তাই এই ক্ষেত্রে উক্ত সম্পদ কুড়িয়ে নেওয়ার পর সে মাক্কা শহরে যতো দিন থাকবে, ততো দিন সেই সম্পদের ঘোষণা দিতে থাকবে তার মালিকের সন্ধানের জন্য। এবং মাক্কা শহর থেকে যখন তার চলে যাওয়ার সময় হয়ে যাবে, তখন সে উক্ত কুড়িয়ে পাওয়া লুকতা বা সম্পদ, লুকতা বিভাগের সরকারি কর্মকর্তাদেরকে দিয়ে চলে যাবে। কেননা, সে তো উক্ত সম্পদের কোনো দিন কোনো অবস্থাতে মালিক হতে পারবে না। তাই সেই সম্পদটি কোনো ব্যক্তির জন্য কুড়িয়ে নেওয়া জায়েজ নয়। কিন্তু শুধু ওই ব্যক্তির জন্য কুড়িয়ে নেওয়া জায়েজ হবে, যে ব্যক্তি উক্ত সম্পদ কুড়িয়ে নেওয়ার পর সে মাক্কা শহরে যতো দিন থাকবে, ততো দিন সেই সম্পদের ঘোষণা দিতে থাকবে এবং তার মালিকের সন্ধানে থাকবে। যেহেতু আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম]  বলেছেন: “মাক্কা শহরের হারাম ও সম্মানিত এলাকায় কোনো স্থানে সংরক্ষিত মূল্যবান হারানো সম্পদ পড়ে থাকলে কুড়িয়ে নেওয়া চলবে না,  কিন্তু এই ক্ষেত্রে কুড়িয়ে নেওয়া চলবে যে, তার মালিকের সন্ধান করে সেই হারানো সম্পদ তার মালিককে প্রদান করবে। [এই বিষয়ে দেখতে পারা যায় সহীহ বুখারী, হাদীস নং 1834] ।
من أوصاف أهل النار
জাহান্নামীদের বিবরণ
70- عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ، قَالَ: قَالَ رَسُوْلُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: "ضِرْسُ الْكَافِرِ أَوْ نَابُ الْكَافِرِ مِثْلُ أُحُدٍ، وَغِلَظُ جِلْدِهِ مَسِيرَةُ ثَلاَثٍ".
(صحيح مسلم، رقم الحديث 44 - (2851)، ).
70 - অর্থ: আবু হুরায়রা [রাদিয়াল্লাহু আনহু] হতে বর্ণিত, তিনি বলেন যে, আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলেছেন: “অমুসলিম জাহান্নামী ব্যক্তির মাড়ির দাঁত অথবা কর্তনদন্ত হবে ওহুদ পাহাড়ের মত, এবং তার চামড়ার পুরুত্ব হবে তিন দিনের ভ্রমন পথের দূরত্বের মত”।
[সহীহ মুসলিম, হাদীস নং 44 - (2851)]।
* এই হাদীস বর্ণনাকারী সাহাবীর পরিচয় পূর্বে 1 নং হাদীসে উল্লেখ করা হয়েছে।
* এই হাদীস হতে শিক্ষণীয় বিষয়:
1। মহান আল্লাহ জাহান্নামীদের জন্য জাহান্নামের আগুনে সমস্ত প্রকারের শাস্তি ও কষ্টদায়ক বস্তু রেখেছেন। আর মহান আল্লাহ জাহান্নামের আগুন সৃষ্টি করেছেন অমুসলিমদের জন্য, মোনাফেকদের জন্য এবং মুসলিম পাপাচারীদের জন্য। আমি মহান আল্লাহর কাছে জাহান্নামের শাস্তি ও কষ্টদায়ক বস্তু থেকে শান্তি ও নিরাপত্তা প্রার্থনা করছি।
2। জাহান্নামীদের দৈহিক অবস্থা পরকালে পরিবর্তিত হয়ে যাবে। সুতরাং তাদের এই দুনিয়ার দৈহিক অবস্থা পরকালে থাকবে না। কেননা তাদের দেহ বিশাল হয়ে যাবে, তাদেরকে অনেক লম্বাচওড়া করে দেওয়া হবে। তাই তাদের দৈহিক আকারও খুব বড়ো হয়ে যাবে। সুতরাং একজন জাহান্নামী ব্যক্তির শারীরিক আকার হবে উঁচু উঁচু পাহাড়ের চেয়েও বেশি বড়ো। অনুরূপভাবে জাহান্নামীদের মাথা এবং দাঁত হবে খুব বড়ো বড়ো এবং তাদের দেহের চামড়াও হবে খুব  মোটা মোটা। যেন তারা জাহান্নামের গুরুতর শাস্তি ভোগ করতে পারে।  
3। অমুসলিমদের জন্য জাহান্নামের গুরুতর শাস্তি কোনো দিন শেষ হবে না এবং কোনো দিন সেই শাস্তিকে তাদের জন্য হালকা বা কম করা হবে না। তাদের কাছে সব দিক থেকে মরণ আসবে কিন্তু তারা মৃত্যুহীন হয়ে যাবে। সুতরাং তাদের কোনো দিন মরণও হবে না যে, তারা শাস্তি ভোগ করা থেকে কোনো দিন পরিত্রাণ পাবে।

 

 

من أوصاف جهنم
জাহান্নামের বিবরণ
71- عَنْ عَبْدِ اللَّهِ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ، قَالَ: قَالَ رَسُوْلُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ:  "يُؤْتَى بِجَهَنَّمَ يَوْمَئِذٍ لَهَا سَبْعُوْنَ أَلْفَ زِمَامٍ، مَعَ كُلِّ زِمَامٍ سَبْعُوْنَ أَلْفَ مَلَكٍ يَجُرُّوْنَهَا".
(صحيح مسلم، رقم الحديث 29 - (2842)، ).
71 - অর্থ: আব্দুল্লাহ [রাদিয়াল্লাহু আনহু] থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলেছেন: “কিয়ামতের দিন জাহান্নামকে আনা হবে। সেই দিন এতে সত্তর হাজার লাগাম থাকবে। প্রতিটি লাগামের সাথে থাকবে সত্তর হাজার ফিরিশতা। তারা তা টেনে নিয়ে যাবে”।
[সহীহ মুসলিম, হাদীস নং 29 - (2842)]।
* এই হাদীস বর্ণনাকারী সাহাবীর পরিচয় পূর্বে 2 নং হাদীসে উল্লেখ করা হয়েছে।

 

* এই হাদীস হতে শিক্ষণীয় বিষয়:
1। এই হাদীসটির দ্বারা প্রমাণিত হয় যে,  জাহান্নাম এমন একটি সৃষ্টি জগৎ, যা হবে প্রকাণ্ড, সুবিশাল এবং ভীষণ আকারের ভয়ানক মহাবস্তু।
2। অবশ্যই মহান আল্লাহ জাহান্নামকে সৃষ্টি করেছেন ওই সমস্ত অমুসলিম, পাপাচারী এবং অন্যায়কারী লোকের জন্য, যারা প্রকৃত ইসলাম ধর্ম ও তার শিক্ষার বিরুদ্ধাচরণ করে। মহান আল্লাহ জাহান্নামকে সুবিশাল এবং ভীষণ আকারে তাঁর রাগ, ক্রোধ এবং বিভিন্ন রকম শাস্তির দ্বারা পরিপূর্ণ করে রেখেছেন।
3। এই হাদীসটি জান্নাত লাভের সঠিক উপাদান অবলম্বন করার প্রতি উৎসাহ প্রদান করে। এবং জাহান্নামে প্রবেশ করার সমস্ত উপকরণ বর্জন করার প্রতিও উৎসাহ প্রদান করে। আর জেনে রাখা দরকার যে, জাহান্নামে প্রবেশ করার উপকরণ হলো: প্রকৃত ইসলাম ধর্ম ও তার শিক্ষা থেকে দূরে থাকা।

 

 


الإيمان بالبعث بعد الموت
পরকালে পুনরুজ্জীবিত হওয়ার প্রতি ঈমান স্থাপন করা অপরিহার্য
72- عَنْ جَابِرٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ، قَالَ:  سَمِعْتُ النََّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُوْلُ: "يُبْعَثُ كُلُّ عَبْدٍ عَلَى مَا مَاتَ عَلَيْهِ".
(صحيح مسلم، رقم الحديث 83 - (2878)، ).
72 -  অর্থ: জাবের [রাদিয়াল্লাহু আনহু] থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন: আমি আল্লাহর নাবী [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেছেন: “পরকালে কিয়ামতের দিন প্রত্যেক ব্যক্তিকে তার ওই ঈমান বা ধর্মীয় বিশ্বাস, কর্ম এবং আচরণসহ পুনরুত্থিত করা হবে, যেই ঈমান বা ধর্মীয় বিশ্বাস, কর্ম এবং আচরণসহ দুনিয়াতে তার মৃত্যু ঘটবে”।  
 [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং 83 - (2878)]।
* এই হাদীস বর্ণনাকারী সাহাবীর পরিচয় পূর্বে 22 নং হাদীসে উল্লেখ করা হয়েছে।
* এই হাদীস হতে শিক্ষণীয় বিষয়:
1। এই বিষয়ে মনের মধ্যে ঈমান বা বিশ্বাস স্থাপন করা অপরিহার্য যে, মানুষ এই দুনিয়াতে যে সমস্ত সৎ কর্ম অথবা কুকর্ম সম্পাদন করবে, তার কর্মের ফলাফল পেয়ে যাবে। এবং পরকালে প্রত্যেক মানুষ আপন আপন কর্ম হিসেবে ফল ভোগ করবে।
2। মানুষ যেন নিজের পাপকে সদা সর্বদা ভয় করে, কেননা দুনিয়াতে এবং পরকালে মানুষের পাপই হলো তার ক্ষতিকর বস্তু।
3। পরকালে কিয়ামতের দিন প্রত্যেক ব্যক্তিকে তার ওই ঈমান বা ধর্মীয় বিশ্বাস, কর্ম এবং আচরণসহ পুনরুত্থিত করা হবে, যেই ঈমান বা ধর্মীয় বিশ্বাস, কর্ম এবং আচরণসহ দুনিয়াতে তার মৃত্যু ঘটবে।
نفي الجوعِ عمن يتناول التمر
যে খেজুর খেতে থাকবে সে ক্ষুধার্ত হবে না
73- عَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا، أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ، قَالَ: "لاَ يَجُوْعُ أَهْلُ بَيْتٍ عِنْدَهُمُ التَّمْرُ".
(صحيح مسلم، رقم الحديث 152 - (2046)، ).
73 - অর্থ:  নাবী কারীম [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর প্রিয়তমা আয়েশা উম্মুলমুমেনীন [রাদিয়াল্লাহু আনহা] থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন: নিশ্চয় আল্লাহর নাবী [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলেছেন: “যে সমস্ত লোকের বাড়িতে খেজুর থাকবে, সে সমস্ত বাড়ির লোক অনাহারে থাকবে না”।  [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং 152 - (2046)]।
* এই হাদীস বর্ণনাকারিণী সাহাবীয়ার পরিচয় পূর্বে 16  নং হাদীসে উল্লেখ করা হয়েছে।
* এই হাদীস হতে শিক্ষণীয় বিষয়:
1। এই হাদীসটি প্রতিটি মানুষকে তার বাড়িতে নিজের জন্য এবং নিজের পোষ্যবর্গের জীবনযাত্রার জন্য খেজুর জমা করে রাখার প্রতি উৎসাহ প্রদান করে।
2। এই হাদীসটির দ্বারা প্রমাণিত হয় যে,  যে বাড়ির লোকজন খেজুর খেতে থাকবে, সে বাড়ির লোকজন ক্ষুধার্ত হবে না।
3। ইসলাম ধর্মের পণ্ডিতগণের মধ্যে থেকে কতকগুলি পণ্ডিত (মহান আল্লাহ তাঁদের প্রতি দয়া করুন) বলেছেন: যখন কোনো সমাজের লোকজনের অবস্থা পরিবর্তিত হবে, আর সেই সমাজের প্রয়োজনীয় বিষয় এবং খাদ্যদ্রব্য খেজুর ব্যতীত অন্য কোনো জিনিস থাকবে, তখন সেই সমাজের জন্য এই হাদীসটি প্রযোজ্য নয়। যেহেতু আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এই উপদেশটি মাদীনাবাসীকে প্রদান করছিলেন এবং বলেছিলেন যে, “তাদের কাছে খেজুর না থাকলে তারা ক্ষুধার্ত অবস্থায় থাকবে”। কেননা তারা তো সেই সময়ে খেজুর খাওয়ার অভ্যাসে অভ্যাসিত ছিলো। এবং খেজুরই তাদের সমাজে প্রধান খাদ্যদ্রব্য হিসেবে গণ্য করা হতো। এই পদ্ধতিতে তাঁরা এই হাদীসটির ব্যাখ্যা প্রদান করেছেন। কিন্তু এই ব্যাখ্যারটির দ্বারা মনের মধ্যে তৃপ্তি আসছে না। কেননা এই ব্যাখ্যার দ্বারা খেজুরের সমস্ত বৈশিষ্ট্য নষ্ট হয়ে যায়। আর খেজুরকে পৃথিবীর যে কোনো সাধারণ খাদ্যদ্রব্য হিসেবে গণ্য করা হয়। এই বিষয়ে মহান আল্লাহই অধিক জানেন।
 
المبادرة إلى التوبة
তওবা করার জন্য তৎপর থাকা অপরিহার্য
74- عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ، قَالَ: قَالَ رَسُوْلُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: "مَنْ تَابَ قَبْلَ أَنْ تَطْلُعَ الشَّمْسُ مِنْ مَغْرِبِهَا، تَابَ اللَّهُ عَلَيْه".
(صحيح مسلم، رقم الحديث 43 - (2703)، ).
74 - অর্থ: আবু হুরায়রা [রাদিয়াল্লাহু আনহু] হতে বর্ণিত, তিনি বলেন: আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলেছেন: “যে ব্যক্তি পশ্চিম দিক থেকে সূর্যোদয়ের পূর্বে তওবা করবে, আল্লাহ তার তওবা কবুল করবেন”। [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং 43 - (2703)]।
* এই হাদীস বর্ণনাকারী সাহাবীর পরিচয় পূর্বে 1 নং হাদীসে উল্লেখ করা হয়েছে।
* এই হাদীস হতে শিক্ষণীয় বিষয়:
1।  প্রকৃত ইসলাম ধর্মে তওবার পারিভাষিক সংজ্ঞা:
তওবা  হলো: প্রকৃত ইসলাম ধর্মের বিধান অনুযায়ী কতকগুলি নির্দিষ্ট নিয়ম মোতাবেক যে কোনো পাপ থেকে আল্লাহর আনুগত্যের দিকে প্রত্যাবর্তন করার নাম।
এই হাদীসটি প্রতিটি মানুষকে সমস্ত প্রকারের পাপ ত্যাগ করে মহান আল্লাহর বিরুদ্ধাচরণ করা থেকে তাঁর আনুগত্যের দিকে প্রত্যাবর্তন করার প্রতি উৎসাহ প্রদান করে।
তবে আল্লাহর নিকটে তওবা কবুল হওয়ার কতকগুলি শর্ত বা আনুষঙ্গিক  বিষয় রয়েছে, সেই বিষয়গুলি যেন প্রত্যেক ব্যক্তির তওবাতে পাওয়া যায়, উক্ত বিষয়গুলি নিম্নরূপ:
1। তওবা শুধু মাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টিলাভের উদ্দেশ্যে হতে হবে, পার্থিব জগতের উদ্দেশ্যে বা মানুষের প্রশংসালাভের নিমিত্তে হওয়া বৈধ নয়।
2। পাপ সম্পূর্ণরূপে বর্জন করতে হবে।
3। পাপ সংঘটিত হওয়ার কারণে অনুতপ্ত বা লজ্জিত হতে হবে।
4। যে পাপ থেকে তওবা করা হচ্ছে, সেই পাপের দিকে পুনরায় না যাওয়ার দৃঢ় সংকল্প স্থির করতে হবে।
5। পাপ যদি অন্যের অধিকারের সাথে সম্পৃক্ত হয়, তাহলে  সেই অধিকার তাকে ফেরত দিতে হবে।
6। তওবা কেয়ামতের পূর্বে পশ্চিম দিক থেকে সূর্যোদয় হওয়ার পূর্বে হতে হবে।
7। তওবা মৃত্যুবরণের নিদর্শন প্রকাশ পাওয়ার আগেই করতে হবে।
2। যে ব্যক্তির দ্বারা কোনো পাপ সংঘটিত হয়ে যাবে, সে ব্যক্তির জন্য পাপ ত্যাগ করে আল্লাহর আনুগত্যের দিকে ফিরে আসা ওয়াজেব বা অপরিহার্য হয়ে যাবে। যদিও তার দ্বারা পাপ বারবার সংঘটিত হয়ে থাকে। কেননা যে ব্যক্তি সঠিকভাবে সমস্ত পাপ থেকে তওবা করে মহান আল্লাহর দিকে প্রত্যাবর্তন করবে, মহান আল্লাহ তার তওবা অবশ্যই গ্রহণ করবেন।
3। পশ্চিম দিক থেকে সূর্যোদয়ের বিষয়টি হলো মহান আল্লাহর অনেক নিদর্শনের মধ্যে থেকে একটি মহা নিদর্শন। এই নিদর্শনটির দ্বারা এটা সাব্যস্ত হয় যে, মহান আল্লাহ নিশ্চয় সর্ববিষয়ে সর্বশক্তিমান। আর পশ্চিম দিক থেকে সূর্যোদয়ের বিষয়টি হলো মহা প্রলয় বা কেয়ামত সংঘটিত হওয়ারও একটি মহা নিদর্শন। আর এই বিষয়টি পৃথিবীর আবর্তনের প্রভাবের কারণে নয়, যেমনকি কতকগুলি লোক এই ধারণাটি তাদের মনের মধ্যে পোষণ করে থাকে।          
النهي عن الحلف في البيع
ক্রয় বিক্রয় সংক্রান্তে কসম খাওয়া নিষিদ্ধ
75- عَنْ أَبِيْ قَتَادَةَ الْأَنْصَارِيِّ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ، أَنَّهُ سَمِعَ رَسُوْلَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: يَقُوْلُ: "إِيَّاكُمْ وَكَثرَةَ الْحَلِفِ فِي الْبَيْعِ؛ فَإِنَّهُ يُنَفِّقُ ثُمََّ يَمْحَقُ".
(صحيح مسلم، رقم الحديث 132 - (1607)، ).
75 -  অর্থ:  আবু কাতাদা [রাদিয়াল্লাহু আনহু] থেকে বর্ণিত, তিনি নিশ্চয় আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] কে বলতে শুনেছেন,   আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলেন: “ব্যবসার কাজে অধিক কসম খাওয়া হতে বিরত থাকবে। ব্যবসার কাজে অধিক কসম খাওয়ার মাধ্যমে মাল বেশী বিক্রি হয়, কিন্তু তাতে কল্যাণ বিনষ্ট হয়ে যায়”।
[সহীহ মুসলিম, হাদীস নং 132 - (1607)]।
* এই হাদীস বর্ণনাকারী সাহাবীর পরিচয় পূর্বে 8 নং হাদীসে উল্লেখ করা হয়েছে।
* এই হাদীস হতে শিক্ষণীয় বিষয়:
1। এই হাদীসটির দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, ক্রয় বিক্রয় সংক্রান্তে অকারণে ও বিনা প্রয়োজনে কসম খাওয়া অবৈধ বা হারাম।
2। মুসলিম ব্যবসায়ীর অবশ্য কর্তব্য হলো এই যে, সে সদা সর্বদা বৈধ পবিত্র রুজিরোজগার করবে প্রকৃত ইসলামের শিক্ষা সম্মত নিয়ম পন্থা অনুযায়ী। আর নিজেকে অমঙ্গল থেকে রক্ষা করার জন্য আল্লাহকে ভক্তিসহকারে ভয় করবে এবং বেশি কসম খাওয়া থেকে নিজেকে দূরে রাখবে।
تحريم الحلف بغير الله
আল্লাহ ছাড়া অন্যের নামে শপথ করা হারাম
76- عَنْ عَبْدِ الرَّحْمَنِ بْنِ سَمُرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ، قَالَ: قَالَ رَسُوْلُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: "لاَ تَحْلِفُوْا بِالطَّوَاغِيْ، وَلاَ بِآبَائِكُمْ".
(صحيح مسلم، رقم الحديث 6 - (1648)، ).
76 - অর্থ:  আব্দুর রহমান বিন সামুরা [রাদিয়াল্লাহু আনহু] থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন: আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলেছেন: “মহান আল্লাহ ছাড়া যার উপাসনা করা হয় তার নামে এবং তোমাদের বাপ-দাদার নামে তোমরা কোনো সময় শপথ করবে না”।
[সহীহ মুসলিম, হাদীস নং 6 - (1648)]।
* এই হাদীস বর্ণনাকারী সাহাবীর পরিচয়:
আবু সায়ীদ আব্দুর রহমান বিন সামুরা আল কুরাশী [রাদিয়াল্লাহু আনহু]  হলেন এক জন আমির এবং রাষ্ট্রীয় শাসকগণের অন্তর্ভুক্ত বিখ্যাত সাহাবী। তিনি মাক্কা বিজয়ের সময় ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন। তিনি সিজিস্তান এবং কাবুল ইত্যাতি এলাকায় যুদ্ধ করে জয়ী হন। এবং সেখানে তিনি রাষ্ট্রীয় নেতা ও বিশিষ্ট শাসক নিযুক্ত হন। অতঃপর খোরাসানে যুদ্ধ করে তিনি সেখানে জয় লাভ করেন। পরে তিনি বাসরা শহরে ফিরে আসেন। তাঁর মূতা যুদ্ধেও অংশগ্রহণ করার বিষয়টি একটি বিখ্যাত ঘটনা। তাঁর বর্ণিত হাদীসের সংখ্যা হলো 14 টি।
অতঃপর তিনি বাসরা শহরে স্থায়ীভাবে বসবাস করতে থাকেন এবং সেখানেই তিনি সন 50 হিজরীতে মৃত্যুবরণ করেন। তবে এই বিষয়ে অন্য উক্তিও রয়েছে। [রাদিয়াল্লাহু আনহু]
* এই হাদীস হতে শিক্ষণীয় বিষয়:
1। এই হাদীসটির দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, সৃষ্টি জগতের কোনো বস্তুর বা ব্যক্তির কসম খাওয়া হারাম। তবে আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] ওই ব্যক্তিকে লক্ষ্য করে বলেছিলেন, যে ব্যক্তি তাঁর কাছে ইসলামের বিধি বিধান জানতে চেয়েছিলেন: “তাঁর পিতার শপথ সে যদি সত্য কথা বলে থাকে, তাহলে সে নিশ্চয় জাহান্নাম থেকে পরিত্রাণ প্রাপ্ত ব্যক্তি”। [দেখতে পারা যায় সহীহ মুসলিম, হাদীস নং 9 - (11)] ।
এই হাদীসটির উত্তর হলো এই যে, আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] উক্ত সাহাবীর পিতার শপথ করেছেন ওই সময়ে, যে সময়ে আল্লাহ ছাড়া অন্যের নামে শপথ করার বিষয়টি হারাম করা হয় নি। পরে যখন সেই বিষয়টি মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে হারাম করা হয়, তখন তিনি তা বর্জন করেন। তাই এক ও অদ্বিতীয় আল্লাহ,  তাঁর নাম এবং তাঁর গুণাবলির শপথ ছাড়া অন্যের নামে শপথ করা হারাম ও অবৈধ। এই ক্ষেত্রে আরো অনেক উক্তি  রয়েছে কিন্তু এই বিষয়টি লম্বা না করার উদ্দেশ্যে উক্ত উক্তিগুলিকে এখানে উল্লেখ করলাম না।  
2। মহান আল্লাহ ছাড়া যে সমস্ত বতিল উপাস্য ও মূর্তি রয়েছে, সেই সমস্ত বতিল উপাস্য ও মূর্তিকে (الطَّوَاغِيْ) বলা হয়।  (الطَّوَاغِيْ) হলো বহু বচন এবং (الطاغية) হলো এক বচন। আবার (الطَّوَاغِيْ) ওই সমস্ত লোককেও বলা হয়, যারা আল্লাহকে বিশ্বাস করে না আর কুকর্মে সীমালঙ্ঘন করে।

 

فضل السواك
দাঁতন করার মর্যাদা
77- عَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ، قَالَ: "السِّوَاكُ مَطْهَرَةٌ لِلْفَمِ، مَرْضَاةٌ لِلرَّبِّ".
(سنن النسائي، رقم الحديث 5، وصححه الألباني).
77 - অর্থ:  নাবী কারীম [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর প্রিয়তমা আয়েশা উম্মুলমুমেনীন [রাদিয়াল্লাহু আনহা] থেকে বর্ণিত। তিনি নাবী কারীম [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] থেকে বর্ণনা করেছেন, নাবী কারীম [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলেছেন: “দাঁতন মুখ পবিত্র রাখার ও প্রকৃত প্রভু আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের একটি উপকরণ”।
[সুনান নাসায়ী, হাদীস নং 5, আল্লামা নাসেরুদ্দিন আল্ আলবাণী হাদীসটিকে সহীহ (সঠিক) বলেছেন]।
* এই হাদীস বর্ণনাকারিণী সাহাবীয়ার পরিচয় পূর্বে 16 নং হাদীসে উল্লেখ করা হয়েছে।
* এই হাদীস হতে শিক্ষণীয় বিষয়:
1। এই হাদীসটি প্রতিটি মানুষকে তাদের মুখে দাঁতন ব্যবহার করার প্রতি আহ্বান জানায়। যেহেতু দাঁতন ব্যবহার করার মাধ্যমে মুখ পবিত্র ও পরিষ্কার হয় এবং মুখ দুর্গন্ধমুক্ত হয়। তাই দাঁতন ব্যবহার করার মাধ্যমে মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ হয়। যেহেতু হাদীসের মধ্যে এসেছে:
"إِنَّ اللهَ جَمِيلٌ يُحِبُّ الْجَمَالَ".
 (صحيح مسلم، رقم الحديث 147 - (91)، ).
অর্থ: “নিশ্চয় মহান আল্লাহ স্বয়ং সুন্দর; তাই তিনি সৌন্দর্য ভালবাসেন”।  [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং 147 - (91)]।
2। দাঁতন ও গাছের ডালের সাথে সাথে আধুনিক ব্রাশ ইত্যাদি দাঁতনের মতই দাঁত পরিষ্কার করার জন্য ব্যবহার করতে পারা যায়। যেহেতু ব্রাশ ইত্যাদির দ্বারাও দাঁত পরিষ্কার করা যায় এবং মুখ দুর্গন্ধমুক্ত করা যায়। তবে অঙ্গুলির দ্বারা দাঁত পরিষ্কার হয় না। আর অঙ্গুলির দ্বারা দাঁতন করা প্রকৃত ইসলামের শিক্ষা সম্মত নিয়ম নয়। এবং দাঁতন ব্যবহার করে যেমন মুখ পবিত্র ও পরিষ্কার হয়, তেমনি
অঙ্গুলির দ্বারা দাঁত পরিষ্কার ও পবিত্র হয় না।
3। দাঁতন ব্যবহার করার কতকগুলি আদবকায়দা:
1। মানুষের সভা সমাবেশে বসে সকলের সামনে দাঁতন করা উচিত নয়। যেহেতু এটা মানবিকতার বিপরীত আচরণ।
2। নিজের দাঁতন লোকজনের সামনে রাখা উচিত নয়। যেহেতু এই আচরণটি মানুষের নিকটে একটি ঘৃণিত আচরণ।
3। নিজের দাঁতন পরিষ্কার করে নিয়ে লোকজনের কাছ থেকে দূরে রাখা দরকার।
إكرام النساء في الإسلام
প্রকৃত ইসলাম ধর্মে নারীর মর্যাদা
78- عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ زَمْعَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قَالَ: "لا يَجْلِدُ أَحَدُكُمْ امْرَأَتَهُ جَلْدَ الْعَبْدِ ثُمَّ يُجَامِعُهَا فِيْ آخِرِ الْيَوْمِ".
(صحيح البخاري، رقم الحديث 5204، واللفظ له، وصحيح مسلم، رقم الحديث 49 - (2855)،).
78- অর্থ: আব্দুল্লাহ বিন জাময়া  [রাদিয়াল্লাহু আনহু]  থেকে বর্ণিত। তিনি নাবী কারীম [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] হতে বর্ণনা করেছেন, নাবী কারীম [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলেছেন: “তোমাদের মধ্যে থেকে কোনো ব্যক্তি যেন তার নিজের স্ত্রীকে ক্রীতদাসের মত প্রহার না করে, অতঃপর যেহেতু দিনের শেষে তার সাথে সহবাসে লিপ্ত হবে”।
[সহীহ বুখারী, হাদীস নং 5204 এবং সহীহ মুসলিম, হাদীস নং 49 -(2855), তবে হাদীসের শব্দগুলি সহীহ বুখারী থেকে নেওয়া হয়েছে]।
* এই হাদীস বর্ণনাকারী সাহাবীর পরিচয়:
আব্দুল্লাহ বিন জাময়া আল কুরাশী আল আসাদী [রাদিয়াল্লাহু আনহু]  হলেন এক জন সাহাবী। ওসমান বিন আফ্‌ফান [রাদিয়াল্লাহু আনহু] এর শাহাদাত বরণ করার সময় যে ফ্যাসাদ ঘটেছিলো, সেই ফ্যাসাদের সময় সন 35 হিজরীতে তাঁকে হত্যা করা হয়েছিলো। আবার এটাও বলা হয়েছে যে, মাদীনা মুনাওয়ারাতে যখন ইওমুল হার্রাতে ফ্যাসাদ ঘটেছিলো, সেই ফ্যাসাদের সময় সন 63 হিজরীতে তাঁকে হত্যা করা হয়েছিলো। এই বিষয়ে মহান আল্লাহই অধিক জানেন।  [রাদিয়াল্লাহু আনহু]
* এই হাদীস হতে শিক্ষণীয় বিষয়:
1। প্রকৃত ইসলাম ধর্ম নারীদেরকে সম্মান ও মর্যাদা প্রদান করার প্রতি আহ্বান জানায়। এবং তাদের সাথে সুন্দর পন্থায় নম্রতা এবং ভদ্রতা বজায় রেখে ধৈর্যের সহিত জীবনযাপন করার প্রতিও আহ্বান জানায়। যেহেতু তাদের প্রতি ধৈর্যধারণ করা এবং তাদেরকে দৈহিক কষ্ট না দেওয়াই হলো সর্বোত্তম আচরণ।
2। প্রকৃত ইসলাম ধর্ম মানুষকে সুন্দরভাবে ভালোবাসার সহিত এবং উদারতার সহিত সদাচরণ বজায় রেখে জীবনযাপন করার প্রতি উৎসাহ প্রদান করে। তাই এই হাদীসটির দ্বারা এটা প্রমাণিত হয় যে, নিজের স্ত্রীকে প্রহার করা এবং তাকে দৈহিক কষ্ট দেওয়া হারাম ও অবৈধ।  
3। স্বামী এবং স্ত্রীর মধ্যে শারীরিক সম্পর্ক ও যৌনমিলন ও সংসর্গ ওই সময় সুখদায়ক হয়, যখন তাদের মধ্যে গভীর ভালোবাসা বিরাজ করে। কিন্তু নিজের স্ত্রীকে প্রহার করা বা তাকে দৈহিক কষ্ট দেওয়া স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে মধুর মিলন এবং যৌন সংসর্গকে নষ্ট করে দেয়। তাই এই হাদীসটির মধ্যে নিজের স্ত্রীকে প্রহার করার বিষয়টিকে কঠোরভাবে ঘৃণা করা হয়েছে।
الحث على اختيار صُحبة الصالحين
সৎ সঙ্গ গ্রহণ করার প্রতি উৎসাহ প্রদান
79- عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَمْرٍو قَالَ: قَالَ رَسُوْلُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: "خَيْرُ الْأَصْحَابِ عِنْدَ اللَّهِ خَيْرُهُمْ لِصَاحِبِهِ، وَخَيْرُ الْجِيرَْانِ عِنْدَ اللَّهِ خَيْرُهُمْ لِجَارِهِ".
(جامع الترمذي، رقم الحديث 1944، قال الإمام الترمذي عن هذا الحديث بأنه:  حسن غريب، وصححه الألباني).
79 - অর্থ: আব্দুল্লাহ বিন আমর [রাদিয়াল্লাহু আনহু] থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলেছেন: “সাথীদের মধ্যে সেই সাথী আল্লাহর নিকটে সর্বোত্তম  যে, তার স্বীয় সাথীর নিকটে সর্বোত্তম সাথী বলে গণ্য করা হয়। আর প্রতিবেশীদের মধ্যে সেই প্রতিবেশী আল্লাহর নিকটে সর্বোত্তম যে, তার স্বীয় প্রতিবেশীর নিকটে সর্বোত্তম প্রতিবেশী বলে গণ্য করা হয়”।
[জামে তিরমিযী, হাদীস নং 1944, ইমাম তিরমিযী হাদীসটিকে হাসান গারীব বলেছেন। আল্লামা নাসেরুদ্দিন আল্ আলবাণী হাদীসটিকে সহীহ (সঠিক) বলেছেন]।
* এই হাদীস বর্ণনাকারী সাহাবীর পরিচয় পূর্বে 37 নং হাদীসে উল্লেখ করা হয়েছে।
* এই হাদীস হতে শিক্ষণীয় বিষয়:
1। এই হাদীসটির দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, যে ব্যক্তি স্বীয় সাথী এবং স্বীয় প্রতিবেশীর বেশি উপকার করতে পারবে, সেই ব্যক্তি মহান আল্লাহর নিকটে বেশি মর্যাদাবান ও পুণ্যের অধিকারী হতে পারবে।
2। মুসলিম ব্যক্তির জন্য একটি উত্তম বিষয় হলো এই যে, সে সদা সর্বদা নিজের জন্য এমন ভালো সাথি ও সৎ সঙ্গ চয়ন করবে যে, সেই সাথি সঠিক নিয়মে প্রকৃত ইসলামের শিক্ষা মোতাবেক নিজের জীবন পরিচালিত করে। যাতে কেয়ামতের দিন তার সাথে পুনরুত্থিত হতে পারে। আর মুসলিম ব্যক্তির জন্য এটাও একটি উত্তম বিষয় যে, সে নিজের জন্য খারাপ ও পাপাচারী সাথি ও সঙ্গ সদা সর্বদা বর্জন করবে।  
دعاء الولد من أسباب رفع درجات الوالدين
সন্তানের দোয়ার মাধ্যমে মাতা-পিতার সমুন্নত মর্যাদা লাভ হয়
80- عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ،  قَالَ: قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: "إِنَّ الرَّجُلَ لَتُرْفَعُ دَرَجَتُهُ فِي الْجَنَّةِ؛ فَيَقُوْلُ: أَنَّى لِيْ هَذَا؟ فَيُقَالُ:  بِاسْتِغْفَارِ وَلَدِكَ لَكَ".
(سنن ابن ماجه، رقم الحديث 3660، وحسنه الألباني).
80 - অর্থ: আবু হুরায়রা [রাদিয়াল্লাহু আনহু] হতে বর্ণিত, তিনি বলেন যে, আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলেছেন: “পরকালে জান্নাতের মধ্যে প্রকৃত মুসলিম ব্যক্তির মর্যাদাকে নিশ্চিতভাবে অতি সমুন্নত করে দেওয়া হবে। তাই সে বলবে: এই সমুন্নত মর্যাদা আমার কিভাবে লাভ হলো? তখন তাকে বলা হবে: এই সমুন্নত মর্যাদা তুমি লাভ করেছো এই জন্য যে, তোমার সন্তান মহান আল্লাহর নিকটে তোমার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করেছে”।
[সুনান ইবনু মাজাহ, হাদীস নং 3660, আল্লামা নাসেরুদ্দিন আল আলবাণী হাদীসটিকে হাসান (সুন্দর) বলেছেন]।
* এই হাদীস বর্ণনাকারী সাহাবীর পরিচয় পূর্বে 1 নং হাদীসে উল্লেখ করা হয়েছে।

* এই হাদীস হতে শিক্ষণীয় বিষয়:
1। এই হাদীসটির দাবি মোতাবেক প্রকৃত ইসলামের সঠিক আকীদা বা মতবাদ, বিধি-বিধান এবং সুনীতি ও চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যগুলির আলোকে সন্তানসন্ততির সুন্দরভাবে শিক্ষা প্রদান করা অপরিহার্য। কেননা যে সন্তান মাতা-পিতার জন্য মহান আল্লাহর নিকটে ক্ষমা প্রার্থনা করে, সে যেন প্রকৃত ইসলামের শিক্ষা মোতাবেক নিজে সজ্জনদের অন্তর্ভুক্ত হয়। কিন্তু যে সন্তান নিজেই সজ্জনদের অন্তর্ভুক্ত নয়, সে নিজের জন্য অথবা নিজের মাতা-পিতার জন্য কিংবা অন্য কোনো লোকের জন্য মহান আল্লাহর নিকটে ক্ষমা প্রার্থনা করতে পারবে না।
2। প্রত্যেক মুসলিম সুসন্তানের উচিত যে, সে যেন, তার মাতা-পিতার জন্য মহান আল্লাহর কাছে ক্ষমা ও করুণা প্রার্থনা করে এবং তাঁদের পক্ষ থেকে তাঁদের মঙ্গলের জন্য দান প্রদান করে।
3। প্রত্যেক মুসলিম সুসন্তানের দোয়ার মাধ্যমে মহান আল্লাহর কাছে তার মাতা-পিতার সমুন্নত মর্যাদা লাভ হয়।

 

 

 
من أحكام الجُنُبِ والجَنَابةِ
জুনুবী এবং অপবিত্র অবস্থায় থাকার বিধান
81- عَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهَا، قَالَتْ: كَانَ رَسُوْلُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا كَانَ جُنُبًا؛ فَأَرَادَ أَنْ يَأْكُلَ أَوْ يَنَامَ؛ تَوَضََّأَ وُضُوءَهُ لِلصََّلاَةِ.
(صحيح مسلم، رقم الحديث 22 -(305)، ).
81 - অর্থ:  নাবী কারীম [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর প্রিয়তমা আয়েশা উম্মুলমুমেনীন [রাদিয়াল্লাহু আনহা] থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন: আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] যখন জুনুবী অবস্থায় থাকতেন এবং কোনো কিছু খাওয়া অথবা ঘুমাবার ইচ্ছা করতেন, তখন তিনি নামাজের জন্য ওজু করার ন্যায় ওজু করতেন।
[সহীহ মুসলিম, হাদীস নং 22 - (305)]।
* এই হাদীস বর্ণনাকারিণী সাহাবীয়ার পরিচয় পূর্বে 16 নং হাদীসে উল্লেখ করা হয়েছে।
* এই হাদীস হতে শিক্ষণীয় বিষয়:
1। জুনুবী ব্যক্তি তাকেই বলা যেতে পারে, যে ব্যক্তি যৌনকর্ম বা যৌন সংসর্গ করবে যদিও তাতে বীর্যপাত না ঘটে। কিংবা যে ব্যক্তি বীর্যপাত করবে যদিও তাতে যৌনমিলন না ঘটে। এই বিষয়ে নারী পুরুষের মধ্যে কোনো তফাত নেই। আর জুনুবী ব্যক্তির জন্য গোসল করার পূর্বে পানাহার করা এবং পুনরায় শারীরিক সম্পর্ক ও যৌনমিলন করা জায়েজ।
2। জুনুবী অবস্থায় নারীদের জন্য রান্না করা, বাড়ির সেবা করা, সন্তানদেরকে দেখাশুনা ও তত্ত্বাবধান করা এবং তাদের নিজেদের প্রয়োজন পূরণ করা বৈধ।
3। জুনুবী ব্যক্তি যখন পানাহার করার ইচ্ছা করবে অথবা ঘুমানোর ইচ্ছা করবে কিংবা পুনরায় যৌনমিলন বা সহবাস করার ইচ্ছা করবে, তখন তার জন্য নামাজের ওজুর ন্যায় ওজু করে নেওয়া ভালো আর গোসল করে নেওয়া অধিকতর ভালো। কেননা গোসলের মাধ্যমে শরীরে ফুর্তি, উৎসাহ, আনন্দ এবং শক্তি আসে এবং বীর্যপাত হওয়ার কারণে   শরীরের মধ্যে থেকে যে শক্তি ও তৎপরতা কমে যায়, সেই শক্তি ও তৎপরতা গোসলের মাধ্যমে ফিরে আসে এবং অধিকতর তৃপ্তি লাভ হয়।
ذِكر الله يطرد الشيطان
আল্লাহর স্মরণ শয়তানকে বিতাড়িত করে
82- عَنْ جَابِرِ بْنِ عَبْدِاللهِ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا أَنّهُ سَمِعَ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، يَقُوْلُ: "إِذَا دَخَلَ الرّجُلُ بَيْتَهُ؛ فَذَكَرَ اللهَ عِنْدَ دُخُوْلِهِ، وَعِنْدَ طَعَامِهِ؛ قَالَ الشّيْطَانُ: لاَ مَبِيْتَ لَكُمْ وَلاَ عَشَاءَ، وَإِذَا دَخَلَ؛ فَلَمْ يَذْكُرِ اللهَ عِنْدَ دُخُولِهِ؛ قَالَ الشّيْطَانُ: أَدْرَكْتُمُ المَبِيْتَ، وَإِذَا لَمْ يَذْكُرِ اللهَ عِنْدَ طَعَامِهِ، قَالَ: أَدْرَكْتُمُ المَبِيتَ وَالعَشَاءَ".
(صحيح مسلم، رقم الحديث 103 - (2018)، ).
82 - অর্থ: জাবের বিন আব্দুল্লাহ [রাদিয়াল্লাহু আনহুমা] থেকে বর্ণিত। তিনি আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] কে বলতে শুনেছেন, তিনি বলেছেন: “যখন কোনো ব্যক্তি তার বাড়িতে প্রবেশ করার সময় এবং খাবার খাওয়ার সময় আল্লাহকে স্মরণ করে, তখন শয়তান তার অনুচরদেরকে বলে: আজ এখানে তোমাদের রাত্রিযাপন এবং নৈশ ভোজের কোনো সুযোগ নেই। অন্যথা যখন সে তার বাড়িতে প্রবেশ কালে আল্লাহকে স্মরণ করে না তখন শয়তান তার অনুচরদেরকে বলে: তোমরা রাত্রি যাপন করার সুযোগ পেয়েছো। আর যখন সে আহার কালেও আল্লাহকে স্মরণ করে না, তখন সেই শয়তান তার অনুচরদেরকে বলে: তোমরা নৈশভোজেরও সুযোগ পেয়েছো”।
[সহীহ মুসলিম, হাদীস নং 103 - (2018)]।
* এই হাদীস বর্ণনাকারী সাহাবীর পরিচয় পূর্বে 22 নং হাদীসে উল্লেখ করা হয়েছে।
* এই হাদীস হতে শিক্ষণীয় বিষয়:
1। বাড়িতে প্রবেশ করার সময় এবং খাবার খাওয়ার সময় আল্লাহকে স্মরণ করার প্রতি এই হাদীসটি উৎসাহ প্রদান করে। সুতরাং মুসলিম ব্যক্তির উচিত যে, সে যেন তার বাড়িতে প্রবেশ করার সময় এবং খাবার খাওয়ার সময় আল্লাহকে স্মরণ করার কথাটি ভুলে না যায়।
2। শয়তান এবং তার অনুচরগুলি সেই সব বাড়িতে প্রবেশ করে, যে সব বাড়ির লোকজন আল্লাহকে স্মরণ করে না। সুতরাং শয়তান এবং তার অনুচরগুলি তাদের সাথে তাদের বাড়িতে বসবাস করে এবং পানাহার করে।
3। মহান আল্লাহর স্মরণ শয়তানকে বিতাড়িত করে, অনন্ত করুণাময় আল্লাহকে রাজি রাখে, উদ্বিগ্নতা, দুশ্চিন্তা এবং দুঃখ কষ্টকে দূরে রাখে। আর খুশি, আনন্দ, সুখ ও শান্তি নিয়ে আসে। এবং অন্তরে সৃষ্টি করে আল্লাহর ভালোবাসা এবং আল্লাহর জন্য সচেতন থাকার অভ্যাস।          অতঃপর মুসলিম ব্যক্তি নিষ্ঠাবান হয়ে অতি সুন্দর পন্থায় মহান আল্লাহর উপাসনার গণ্ডিতে প্রবেশ করে আর এমন পদ্ধতিতে মহান আল্লাহর উপাসনা করতে থাকে যে, সে যেন মহান আল্লাহকে দেখতে পাচ্ছে। আরো জেনে রাখা দরকার যে, মহান আল্লাহর স্মরণের দ্বারা মানুষ আল্লাহর দিকে অধিকতর অগ্রসর হতে পারে এবং তাঁর নৈকট্য লাভ করতে সক্ষম হয়।

 

 


الحث على الدعاء في السجود
সিজদার অবস্থায় দোয়া করার প্রতি উৎসাহ প্রদান
83- عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ، أَنََّ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قَالَ: "أَقْرَبُ مَا يَكُوْنُ الْعَبْدُ مِن رِّبِّهِ وَهُوَ سَاجِدٌ؛ فَأَكْثِرُوْا الدُّعَاءَ".
 (صحيح مسلم، رقم الحديث 215 -(482)، ).
83 - অর্থ: আবু হুরায়রা [রাদিয়াল্লাহু আনহু] হতে বর্ণিত, তিনি বলেন যে, আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলেছেন: “যখন মুসলিম ব্যক্তি সিজদা অবস্থায় থাকে, তখন সে তার প্রতিপালক মহান আল্লাহর অধিকতর নিকটবর্তী হয়ে যায়। অতএব এই অবস্থায় তোমরা বেশি বেশি দোয়া করবে”।
 [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং 215 - (482)]।
* এই হাদীস বর্ণনাকারী সাহাবীর পরিচয় পূর্বে 1 নং হাদীসে উল্লেখ করা হয়েছে।
* এই হাদীস হতে শিক্ষণীয় বিষয়:
1। এই হাদীসটির দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, সিজদা হলো মহান আল্লাহর বড়ো ইবাদতের অন্তর্ভুক্ত এমন একটি ইবাদত, যে এই ইবাদতটির মাধ্যমে মুসলিম ব্যক্তি মহান আল্লাহর নৈকট্য, করুণা এবং অনুগ্রহ লাভ করে।
2। মুসলিম ব্যক্তির জন্য এটা প্রকৃত ইসলামের শিক্ষা মোতাবেক বৈধ কর্ম যে, সে নফল বা ফরজ নামাজের মধ্যে তার প্রতিপালক মহান আল্লাহর কাছে বেশি বেশি দোয়া করবে। তবে নামাজের মধ্যে সিজদার অবস্থায় দোয়া করা বেশি উত্তম।
3। মুসলিম ব্যক্তির জন্য এটা একটি উত্তম কাজ যে,  সে পবিত্র কুরআন এবং নির্ভরযোগ্য হাদীসের মধ্যে যে সমস্ত দোয়া উল্লিখিত হয়েছে, সেই সমস্ত দোয়ার প্রতি যত্নবান হবে এবং সেই দোয়াগুলি মুখস্ত করবে। কেননা সেই দোয়াগুলি তার জন্য, তার পরিবার-পরিজনের জন্য এবং তার সন্তানদের জন্য ইসলাম ধর্মের বিষয়ে এবং দুনিয়া ও পরকালের কল্যাণ লাভের বিষয়ে সব চেয়ে বেশি উপকারী।
تحريم تجصيص القبر
কবর পাকা করা হারাম
84- عَنْ جَابِرٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، قَالَ: نَهَى رَسُوْلُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنْ يُجَصََّصَ الْقَبْرُ، وَأَنْ يُقْعَدَ عَلَيْهِ، وَأَنْ يُبْنَى عَلَيْهِ.
(صحيح مسلم، رقم الحديث 94 -(970)، ).
51 - অর্থ: জাবের [রাদিয়াল্লাহু আনহু] থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন: আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] কবরকে পাকা করতে, তার উপরে বসতে এবং তার উপরে প্রাসাদ নির্মাণ করতে নিষেধ করেছেন।   [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং 94 - (970)]।
* এই হাদীস বর্ণনাকারী সাহাবীর পরিচয় পূর্বে 22 নং হাদীসে উল্লেখ করা হয়েছে।
* এই হাদীস হতে শিক্ষণীয় বিষয়:
1। এই হাদীসটির দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, কবরকে পাকা করা, তার উপরে প্রাসাদ প্রস্তুত করা অথবা গুম্বজ বা মিনার ও কক্ষ কিংবা মাসজিদ ইত্যাদি নির্মাণ করা হারাম ও অবৈধ। কেননা মৃত ব্যক্তি এই সব জিনিসের দ্বারা উপকৃত হবে না এবং এই সব জিনিসের তার কোনো প্রয়োজনও নেই।
2। এই হাদীসটির মধ্যে পাকা প্রাসাদ বা বাড়ি এবং ঘর নির্মাণ করার উপকরণের দ্বারা কবর পাকা করার কথাটি উল্লিখিত হয়েছে। যাকে  (اَلْجَصُّ) বলা হয়। এর দ্বারা ঘর প্রাসাদ বা বাড়ি ও পাথর সুন্দর করা হয়। তাই কবরকে এই সব জিনিসের দ্বারা সুন্দর করলে, সাধারণ মানুষের জন্য এই ধরণের পাকা কবর আকর্ষণীয় স্থানে পরিণত হবে। এবং সাধারণ লোকজন মনে করবে যে, এই ধরণের কবরগুলির কোনো আলাদা বৈশিষ্ট্য রয়েছে; সুতরাং এই ধরণের কবরগুলিকে নিয়ে তারা অতিরঞ্জিত করবে অথবা সেখানে এমন কতকগুলি কাজ করবে, যেই কাজগুলি করা প্রকৃত ইসলাম ধর্মে জায়েজ নয়। আবার এটাও জেনে রাখা দরকার যে, কবরকে পাকা করা, তার উপরে প্রাসাদ প্রস্তুত করা অথবা গুম্বজ বা মিনার ও কক্ষ কিংবা মাসজিদ ইত্যাদি নির্মাণ করার কারণে কবরের কাছে প্রকৃত ইসলামের বিপরীত ও সীমালঙ্ঘনের কাজ হয়। এবং মহান আল্লাহর সাথে অংশীদার স্থাপন করার উপাদান নির্ধারণ করা হয়। তাই এই হাদীসে   কবরকে পাকা করতে নিষেধ করা হয়েছে।
3। এই হাদীসটির দ্বারা এটা প্রতিমান হয় যে, কবরের উপরে বসা, হেলান দেওয়া এবং ভর দেওয়া একটি হারাম কাজ। কেননা এর দ্বারা সমাহিত বা দাফনকৃত ব্যক্তির সম্মান নষ্ট করা হয়। তাই যেমন সমাহিত ব্যক্তির সম্মান রক্ষা করা উচিত, তেমনি তার কবরেরও সম্মান রক্ষা করা উচিত।
التحذير من فاحشة اللواط
পুংমৈথুন করা থেকে সতর্কীকরণ
85- عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا، قَالَ: قَالَ رَسُوْلُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: "مَنْ وَجَدْتُمُوْهُ يَعْمَلُ عَمَلَ قَوْمِ لُوطٍ؛ فَاقْتُلُوا الْفَاعِلَ وَالْمَفْعُوْلَ بِهِ".
(سنن أبي داود، رقم الحديث 4462، وجامع الترمذي، رقم الحديث 1456، واللفظ لهما، وسنن ابن ماجه، رقم الحديث 2561، وقد حسنه الألباني وصححه).
85 - অর্থ: আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস [রাদিয়াল্লাহু আনহুমা] থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন: আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলেছেন: “তোমরা লূতের সম্প্রদায়ের ন্যায় পুংমৈথুনের কাজ কাউকে করতে দেখলে মৈথুনকারী ব্যক্তিকে এবং মৈথুনকৃত ব্যক্তিকে হত্যা করবে”।
[সুনান আবু দাউদ, হাদীস নং 4462, জামে তিরমিযী, হাদীস নং 1456, এবং সুনান ইবনু মাজাহ, হাদীস নং 2561, তবে হাদীসের শব্দগুলি জামে তিরমিযী এবং সুনান আবু দাউদ থেকে নেওয়া হয়েছে। আল্লামা নাসেরুদ্দিন আল্ আলবাণী হাদীসটিকে হাসান সহীহ (সঠিক) বলেছেন]।
* এই হাদীস বর্ণনাকারী সাহাবীর পরিচয় পূর্বে 6 নং হাদীসে উল্লেখ করা হয়েছে।
* এই হাদীস হতে শিক্ষণীয় বিষয়:
1। পুংমৈথুনের অর্থ হলো: সমকামিতা ও পুরুষের সাথে পুরুষের রতিক্রিয়ায় লিপ্ত হওয়া। এই কুকর্ম ঘটে থাকে তাদের মধ্যে যাদের মধ্যে জ্ঞান বুদ্ধির অভাব রয়েছে এবং যাদের মধ্যে ধর্মের প্রভাব কম রয়েছে। পুরুষের সাথে পুরুষের রতিক্রিয়ায় লিপ্ত হওয়ার মধ্যে কুফলও খুব বেশি রয়েছে। তাই এই ঘৃণিত কুকর্মের কারণে সৃষ্টি হয় রোগ, ব্যাধি এবং  মহামারী। এবং এর মাধ্যমে চারিত্রিক, সামাজিক এবং দৈহিক ক্ষতির প্রভাবও খুব কম নয়। তাই সর্বদিক দিয়ে এই অপকর্মটিকে নিকৃষ্ট, ঘৃণিত এবং স্বাভাবিক মানবতা বিরোধী অশ্লীল আচরণ বলেই প্রকৃত ইসলাম ধর্মে গণ্য করা হয়। তাই লূতের সম্প্রদায়ের মধ্যে এই অশ্লীল যৌনসঙ্গম ছড়িয়ে পড়ার কারণে মহান আল্লাহ তাদেরকে ধ্বংস করে দিয়েছেন। তাই মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনের মধ্যে বলেছেন:
(فَلَمَّا جَاءَ أَمْرُنَا جَعَلْنَا عَالِيَهَا سَافِلَهَا وَأَمْطَرْنَا عَلَيْهَا حِجَارَةً مِنْ سِجِّيلٍ مَنْضُودٍ)، ( سورة هود، الآية 82 ).
ভাবার্থের অনুবাদ: “অতঃপর যখন পুংমৈথুনকারীদেরকে শাস্তি দেওয়ার জন্য আমার আদেশ এসেছিলো, তখন আমি তাদের জনপদের উপরকে নীচে উল্টে দিয়েছিলাম এবং ক্রমাগত তাদের উপরে পাথুরে মাটি বর্ষণ করেছিলাম”। (সূরা হূদ, আয়াত নং 82)।
2। পুংমৈথুনকারী ও মৈথুনকৃত ব্যক্তি উভয়কেই প্রকৃত ইসলাম ধর্ম একই প্রকারের পাপী বলে গণ্য করে। তাই উভয়েরই একই শাস্তি, আর তা হলো  উভয়কে হত্যা করা। এই বিষয়ে সমস্ত সাহাবী এক মত, তাই এই বিষয়ে তাঁদের মধ্যে কোনো মতভেদ নেই। তবে কি পদ্ধতিতে তাদেরকে হত্যা করতে হবে, এই বিষয়ে মুসলিম শাসক বা তাঁর প্রতিনিধি যে পদ্ধতি অবলম্বন করবেন সেই পদ্ধতি গ্রহণযোগ্য। সুতরাং তিনি উভয়কেই তরবারীর আঘাতে তাদের শিরচ্ছেদ করতে পারেন। অথবা তাদের উভয়ের প্রতি পাথর নিক্ষেপ করে তাদেরকে হত্যা করতে পারেন। কিংবা তাদেরকে উঁচু জায়গা থেকে ফেলে দিয়েও তাদেরকে হত্যা করতে পারেন। অথবা তাদের উপরে দেয়াল ইত্যাদি ফেলে দিয়েও তাদেরকে হত্যা করতে পারেন।
তবে যে ব্যক্তিকে বলপূর্বক পুরুষের সাথে পুরুষের রতিক্রিয়ায় লিপ্ত করা হবে, সে ব্যক্তিকে কোনো প্রকারের শাস্তি প্রদান করা হবে না। অনুরূপভাবে পাগল ও নাবালকদেরকেও পুংমৈথুন করার কারণে কোনো প্রকারের শাস্তি প্রদান করা হবে না। কিন্তু পাগল ও নাবালকদেরকে পুংমৈথুন করার কারণে কঠোরভাবে সতর্ক করতে হবে এবং তাদেরকে প্রকৃত ইসলামের আদবকায়দা শিক্ষা দিতে হবে।       
3। পুংমৈথুন করা হলো একটি ঘৃণিত কুকর্ম। তাই যে ব্যক্তি এই ঘৃণিত কুকর্মে লিপ্ত হয়েছে, সে যেন এই কুকর্মের কথা আল্লাহর গোপন করার সাথে সাথে সে নিজেও গোপনে রাখে এবং প্রকাশ না করে। আর নিজেকে অপমানিত না করে। এবং তাকে তার পুংমৈথুন করার শাস্তি প্রদান করার উদ্দেশ্যে সে যেন তার পুংমৈথুন করার কথা কোনো বিচারক কিংবা শাসক বা তাঁর প্রতিনিধির সামনে স্বীকার না করে। বরং সে তার মনের মধ্যে এই মহা পাপ থেকে অনুতপ্ত বা লজ্জিত হয়ে আন্তরিকভাবে তওবা করবে এবং সেই পাপের দিকে পুনরায় না যাওয়ার জন্য দৃঢ় সংকল্প স্থির করবে। আর পুংমৈথুনের বা পুরুষের সাথে পুরুষের রতিক্রিয়ায় লিপ্ত হওয়ার সমস্ত লোকজন ও উপকরণ থেকে দূরে থাকবে। এবং সঠিকভাবে সত্যতা বজায় রেখে তওবা করলে মহান আল্লাহ তওবা কবুল করবেন আর সমস্ত পাপ ক্ষমা করবেন।  
ما ينتفع به الميت
যে সমস্ত আমলের মাধ্যমে মৃত ব্যক্তি উপকৃত হতে পারবে
86- عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، أَنَّ رَسُوْلَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: "إِذَا مَاتَ الْإِنْسَانُ انْقَطَعَ عَنْهُ عَمَلُهُ إِلاَّ مِنْ ثَلاثَةٍ: إِلاَّ مِنْ صَدَقَةٍ جَارِيَةٍ، أَوْ عِلْمٍ يُنْتَفَعُ بِهِ، أَوْ وَلَدٍ صَالِحٍ يَدْعُوْ لَهُ".  
(صحيح مسلم، رقم الحديث 14 -(1631)، ).
86 - অর্থ: আবু হুরায়রা [রাদিয়াল্লাহু আনহু] হতে বর্ণিত, তিনি বলেন যে, আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলেছেন: “মানুষ যখন মৃত্যুবরণ করে, তখন তিনটি বিষয় ছাড়া তার সমস্ত আমলের মাধ্যমে উপকৃত হওয়ার বিষয়টি বন্ধ হয়ে যায়। উক্ত তিনটি বিষয় হলো এই যে, প্রবহমান দান খয়রাত প্রদান কিংবা এমন জ্ঞান, যে জ্ঞানের দ্বারা উপকৃত হওয়া যায় অথবা এমন সুসন্তান যে সুসন্তান তার জন্য দোয়া করে”। [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং 14 -  (1631) ]।
* এই হাদীস বর্ণনাকারী সাহাবীর পরিচয় পূর্বে 1 নং হাদীসে উল্লেখ করা হয়েছে।
* এই হাদীস হতে শিক্ষণীয় বিষয়:
1। এই হাদীসটির দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, মানুষের মৃত্যুবরণ করার সাথে সাথে তার সমস্ত কর্ম বন্ধ হয়ে যায়। তবে সে মৃত্যুবরণ করার পরেও তার উল্লিখিত তিনটি কর্মের দ্বারা সে উপকৃত হতে থাকে। কেননা প্রকৃতপক্ষে  উল্লিখিত তিনটি কর্মের প্রকৃত উপাদান ও মাধ্যম সে নিজেই। সুতরাং তার সন্তান তার মাধ্যমেই এই পৃথিবীতে এসেছে, বই লিখার মাধ্যমে অথবা শিক্ষা প্রদানের মাধ্যমে জ্ঞান প্রচারের বিষয়টিও তার উপার্জিত রত্ন, অনুরূপভাবে প্রবহমান দান খয়রাত প্রদান করার বিষয়টিও তার উপার্জিত  সম্পদ এবং আল্লাহর নামে তারই ওয়াকফ।  
2। এই হাদীসটির দ্বারা এই বিষয়টি সাব্যস্ত হয় যে, মৃত ব্যক্তির জন্য পবিত্র কুরআন পাঠ করে তাকে তার পুণ্য দান করা বৈধ নয়। তাই আল্লাহর নাবী [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] থেকে এই বিষয়টি প্রমাণিত হয় নি যে, তিনি তাঁর পরিবার-পরিজনের কোনো ব্যক্তির জন্য কিংবা অন্য কোনো ব্যক্তির জন্য পবিত্র কুরআন পাঠ করে তার পুণ্য তাকে দান করেছেন। আর যদি পবিত্র কুরআন পাঠ করে তার পুণ্যের দ্বারা মৃত ব্যক্তিদেরকে পুরস্কৃত করা সম্ভব হতো, তাহলে তিনি এই কাজে আগ্রহ প্রকাশ করতেন। এবং এই বিষয়টির প্রতি তিনি মুসলিম জাতিকে উৎসাহিত করতেন। কেননা তার মাধ্যমে মুসলিমগণ তাদের মৃত ব্যক্তিদেরকে এই কাজটির মাধ্যমে উপকৃত করতে সক্ষম হতো। কেননা আল্লাহর নাবী [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] তো মুসলিম জাতির প্রতি অত্যন্ত দয়াবান ও করুণাময়। অতঃপর এই বিষয়টি প্রকৃত ইসলামের প্রথম চার খালীফা এবং সাহাবীগণ [রাদিয়াল্লাহু আনহুম] আল্লাহর নাবী [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর পন্থা অবলম্বন করেছিলেন। তাই তাঁদের মধ্যে থেকেও কোনো সাহাবী পবিত্র কুরআন পাঠ করে তার পুণ্যের দ্বারা কোনো মৃত ব্যক্তিকে পুরস্কৃত করেছেন, এই বিষয়টি প্রমাণিত হয় নি।
3।  এই হাদীসটির দ্বারা এই বিষয়টি সাব্যস্ত হয় যে, বিবাহ করার প্রতি মুসলিম ব্যক্তিকে উৎসাহিত করা উচিত। যেহেতু এই বিবাহের মাধ্যমেই   ধর্মপরায়ণ সন্তান জন্ম গ্রহণ করার সুযোগ রয়েছে।

 

 


فضل تفطير الصائمين
রোজাদারকে ইফতার করানোর মর্যাদা
87- عَنْ زَيْدِ بْنِ خَالِدٍ الْجُهَنِيِّ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ، قَالَ:  قَالَ رَسُوْلُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: "مَنْ فَطَّرَ صَائِمًا كَانَ لَهُ مِثْلُ أَجْرِهِ غَيْرَ أَنَّهُ لاَ يَنْقُصُ مِنْ أَجْرِ الصَّائِمِ شَيْئًا".
(جامع الترمذي، رقم الحديث 807، واللفظ له،  وسنن ابن ماجه، رقم الحديث 1746، وقال الإمام الترمذي عن هذا الحديث بأنه:  حسن صحيح، وصححه الألباني).
87 - অর্থ: জ্যাইদ বিন খালেদ আলজুহানী [রাদিয়াল্লাহু আনহু] থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন: আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলেছেন: “যে ব্যক্তি রোজাদারকে ইফতার করাবে সে রোজাদারের সমান সওয়াব পাবে এবং রোজাদারের সওয়াবও কোনো ক্ষেত্রে কম হবে না”।
[জামে তিরমিযী, হাদীস নং 807, এবং সুনান ইবনু মাজাহ, হাদীস নং 1746, তবে হাদীসের শব্দগুলি জামে তিরমিযী থেকে নেওয়া হয়েছে। ইমাম তিরমিযী এই হাদীসটিকে হাসান সহীহ (সঠিক) বলেছেন। আর আল্লামা নাসেরুদ্দিন আল্ আলবাণী হাদীসটিকে সহীহ (সঠিক) বলেছেন]।

* এই হাদীস বর্ণনাকারী সাহাবীর পরিচয়:
আবু আব্দুর রহমান জ্যাইদ বিন খালেদ আলজুহানী [রাদিয়াল্লাহু আনহু] হলেন এক জন সাহাবী। হুদায়বীয়ার সন্ধির ঘটনা সংঘটিত হওয়ার সময় তিনি আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন। এবং তিনি মাক্কা বিজয়ের সময় আলজুহানী বংশের ঝাণ্ডা বহন করেছিলেন। তাঁর বর্ণিত হাদীসের সংখ্যা হলো 81 টি।
তিনি মাদীনায় সন 78 হিজরীতে মৃত্যুবরণ করেন। আবার এটাও বলা হয় যে, তিনি মিশরে মৃত্যুবরণ করেছেন। আর এটাও বলা হয় যে, তিনি কূফা শহরে মৃত্যুবরণ করেছেন। মৃত্যুবরণ করার সময় তাঁর বয়স 85 বছর হয়েছিলো। এই বিষয়ে অন্য উক্তিও রয়েছে। এই বিষয়ের সঠিক জ্ঞান  মহান আল্লাহ অধিক জানেন।   [রাদিয়াল্লাহু আনহু] ।
* এই হাদীস হতে শিক্ষণীয় বিষয়:
1। নিশ্চয় রোজাদার ব্যক্তিদেরকে ইফতার করানো একটি উত্তম কর্ম এবং সৎ কর্ম। আর এই সৎ কর্মে মানুষের জন্য অনেক মঙ্গল নিহিত রয়েছে, তার মধ্যে হলো: মুসলিমদের মধ্যে ভালোবাসা বৃদ্ধি পায় যদিও তাদের স্থান ও দেশগুলি দূর দূরান্তে ছড়িয়ে রয়েছে। তাই এই হাদীসটি রোজাদার ব্যক্তিদেরকে ইফতার করানোর প্রতি উৎসাহ প্রদান করে। আর রোজাদার ব্যক্তিদেরকে ইফতার করানোর পূণ্য ও মর্যাদা বর্ণনা করে।
2। নিকটের আত্মীয়-স্বজন রোজাদার ব্যক্তিদেরকে ইফতার করানো বেশি পুণ্যের কাজ। কেননা এর দ্বারা রোজাদার ব্যক্তিদেরকে ইফতার করানো হয় এবং নিজের আত্মীয়তার বন্ধন রক্ষা করা হয়। তবে যদি দেখা যায় যে, নিকটের আত্মীয়-স্বজন চেয়ে অন্য লোক বেশি অভাবগ্রস্ত, এবং সে রোজা ইফতার করার কিছু পাচ্ছে না, তাহলে এই অবস্থায় নিকটের আত্মীয়- স্বজন ছাড়া অন্য রোজাদার ব্যক্তিকে ইফতার করানোই হবে বেশি পুণ্যের কাজ। যেহেতু এর দ্বারা তার অভাব দূর করা হবে এবং তার প্রয়োজন পূরণ করা হবে।   
3। মুসলিম ব্যক্তির জন্য এটা উচিত যে, সে নিজের ক্ষমতা অনুযায়ী রোজাদার ব্যক্তিদেরকে রোজা ইফতার করাবে। বিশেষভাবে ওই সব রোজাদার ব্যক্তিদেরকে রোজা ইফতার করাবে, যারা রোজা ইফতার করার জন্য কোনো খাদ্যদ্রব্য পাচ্ছেনা। এবং তাদেরকে রোজা ইফতার করার জন্য কেউ কিছু দিচ্ছে না।

 

 

 


من فضائل شهر رمضان
পবিত্র রমাজান মাসের মর্যাদা
88- عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ،  قَالَ دَخَلَ رَمَضَانُ؛ فَقَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: "إِنَّ هَذَا الشَّهْرَ قَدْ حَضَرَكُمْ، وَفِيْهِ لَيْلَةٌ خَيْرٌ مِنْ أَلْفِ شَهْرٍ، مَنْ حُرِمَهَا؛ فَقَدْ حُرِمَ الْخَيْرَ كُلَّهُ، وَلاَ يُحْرَمُ خَيْرَهَا إِلاَّ مَحْرُوْمٌ".
(سنن ابن ماجه، رقم الحديث 1644، وحسنه الألباني وصححه).
88 - অর্থ:  আনাস বিন মালিক [রাদিয়াল্লাহু আনহু] থেকে বর্ণিত,  তিনি বলেন: একদা রমাজান মাসের আগমন ঘটলো, তখন আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বললেন: “তোমাদের নিকটে এই মাস সমাগত হয়েছে, তাতে এমন একটি রাত রয়েছে, যা এক হাজার মাসের চেয়েও বেশি উত্তম। যে ব্যক্তি এই রাতের কল্যাণ থেকে বঞ্চিত হবে, সে প্রকৃতপক্ষে সকল কল্যাণ থেকে বঞ্চিত হয়ে যাবে। আর একমাত্র সর্বহারা দুর্ভাগা ব্যক্তিই এই রাতের কল্যাণ থেকে বঞ্চিত হবে”।
[সুনান ইবনু মাজাহ, হাদীস নং 1644, আল্লামা নাসেরুদ্দিন আল্ আলবাণী হাদীসটিকে হাসান সহীহ (সঠিক) বলেছেন]।
* এই হাদীস বর্ণনাকারী সাহাবীর পরিচয় পূর্বে 3 নং হাদীসে উল্লেখ করা হয়েছে।
* এই হাদীস হতে শিক্ষণীয় বিষয়:
1। রমাজান মাস হলো ধৈর্যধারণ, রোজা পালন, নামাজ, উপাসনা, জিকির, পবিত্র কুরআন তেলাওয়াত এবং জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্তি লাভ করার মাস। এই মাসে একটি পবিত্র ও মর্যাদাপূর্ণ রজনী আছে। সেই একটি রজনীতে সৎ কর্ম সম্পাদন করলে, সেই সৎ কর্মের মান হবে এক হাজার মাসে সৎকর্ম সম্পাদন করার চেয়ে বেশি উত্তম। তাই যে ব্যক্তি এই মর্যাদা থেকে দূরে থাকবে, সেই ব্যক্তি প্রকৃতপক্ষে সমস্ত কল্যাণ থেকে   বঞ্চিত থাকবে।
2। এই হাদীসটির দ্বারা এই বিষয়টি সাব্যস্ত হয় যে, মুসলিম ব্যক্তির উচিত যে, সে যেন এই কল্যাণময় রমাজান মাসে বেশি বেশি সৎ কর্ম সম্পাদন করার মাধ্যমে মহান আল্লাহর নৈকট্য ও সন্তুষ্টি লাভ করে। যাতে মহান আল্লাহ তাকে পুণ্য দান করেন এবং তার পাপ ক্ষমা করে দেন।

 

 
من أهم علامات المنافقين
মোনাফেকদের কতকগুলি নিদর্শন
89- عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قَالَ: "آيَةُ الْمُنَافِقِ ثَلاَثٌ: إِذَا حَدَّثَ كَذَبَ، وَإِذَا وَعَدَ أَخْلَفَ، وَإِذَا اؤْتُمِنَ خَانَ".
(صحيح البخاري، رقم الحديث 33، واللفظ له، وصحيح مسلم، رقم الحديث 107 - (59)،).
89 - অর্থ: আবু হুরায়রা [রাদিয়াল্লাহু আনহু] থেকে বর্ণিত, তিনি নাবী কারীম [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] হতে বর্ণনা করেছেন, নাবী কারীম [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলেছেন: “মুনাফেকের নিদর্শন হলো তিনটি: যখন সে কথা বলবে, তখন সে মিথ্যা কথা বলবে। আর যখন সে ওয়াদা করবে, তখন সে ওয়াদা ভঙ্গ করবে। এবং তার কাছে যখন আমানত রাখা হবে, তখন সে আমানতের খেয়ানত করবে”।
[সহীহ বুখারী, হাদীস নং 33 এবং সহীহ মুসলিম, হাদীস নং 107 -(59), তবে হাদীসের শব্দগুলি সহীহ বুখারী থেকে নেওয়া হয়েছে]।
* এই হাদীস বর্ণনাকারী সাহাবীর পরিচয় পূর্বে 1 নং হাদীসে উল্লেখ করা হয়েছে।

* এই হাদীস হতে শিক্ষণীয় বিষয়:
1। এই হাদীসটি মুসলিম ব্যক্তিকে সতর্ক করে ওয়াদা ভঙ্গ করা হতে,  মিথ্যা কথা ও সংবাদ প্রচার করা হতে এবং আমানতের খেয়ানত করা হতে।
2- মোনাফেক বলা হয় সেই ব্যক্তিকে, যে ব্যক্তি নিজের অন্তরে কিছূ খারাপ বস্তু গোপন করবে। আর কপটতা করে ভালো বস্তুটিকে সে প্রকাশ করবে। তাই প্রকৃতপক্ষে সে তার অন্তরে প্রকৃত ইসলাম ধর্মকে ঘৃণা করে ও অবিশ্বাস করে, কিন্তু প্রকাশ্যভাবে সে নিজেকে মুসলিম ব্যক্তি হিসেবে পরিগণিত করে।
3- এই হাদীসটির সারাংশ হলো এই যে, উল্লিখিত বিষয়গুলি কপটতা ও ভণ্ডামির নিদর্শন। তাই যে ব্যক্তির মধ্যে এই হাদীসটির উল্লিখিত বিষয়গুলি  বিরাজ করবে, সে ব্যক্তি মোনাফেকদের অভ্যাসে অভ্যাসিত হবে।

 

 

 

إكرام حامل القرآن
পবিত্র কুরআনের ধারক বাহকের সম্মান করা অপরিহার্য
90- عَنْ أَبِيْ مُوْسَى الْأَشْعَرِيِّ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، قَالَ: قَالَ رَسُوْلُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: "إِنَّ مِنْ إِجْلَالِ اللَّهِ: إِكْرَامَ ذِي الشَّيْبَةِ الْمُسْلِمِ، وَحَامِلَ الْقُرْآنِ غَيْرَ الْغَالِيْ فِيْهِ وَالْجَافِيْ عَنْهُ، وَإِكْرَامَ ذِي السُّلْطَانِ الْمُقْسِطِ".
(سنن أبي داود، رقم الحديث 4843، وحسنه الألباني).
90 -  অর্থ: আবু মুসা আল আশআরী [রাদিয়াল্লাহু আনহু] হতে বর্ণিত। তিনি বলেন: আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলেছেন:   “অধিক বয়স্ক মুসলিম ব্যক্তিকে সম্মান করা, পবিত্র কুরআনের সীমালঙ্ঘনকারী নয় এবং তা পরিত্যাগকারীও নয় এমন পবিত্র কুরআনের ধারক বাহক ব্যক্তিগণের [হাফেজ, কারী, বিদ্বান, সুশিক্ষিত জ্ঞানি, মুফাসসির, মুফতী ইত্যাদি লোকদের] সম্মান করা, এবং ন্যায়পরায়ণ বাদশার সম্মান করা, মহান আল্লাহরই সম্মান করার অন্তর্ভুক্ত বিষয়।
[সুনান আবু দাউদ, হাদীস নং 4843, আল্লামা নাসেরুদ্দিন আল্ আলবাণী হাদীসটিকে হাসান (সুন্দর) বলেছেন]।
* এই হাদীস বর্ণনাকারী সাহাবীর পরিচয় পূর্বে 28 নং হাদীসে উল্লেখ করা হয়েছে।
* এই হাদীস হতে শিক্ষণীয় বিষয়:
1। প্রকৃত ইসলাম ধর্ম আহ্বান জানায় অধিক বয়স্ক মুসলিম ব্যক্তিকে সম্মান করার প্রতি। তাই তিনি কোনো সভার মধ্যে থাকলে তাঁকে অন্তর থেকে শ্রদ্ধা করা, তাঁর সাথে ভদ্রতা, নম্রতা বজায় রাখা এবং তাঁর প্রতি দয়া করা ইত্যাদি এই সমস্ত বিষয়গুলি মহান আল্লাহরই সম্মান করার নামান্তর।
2- এই হাদীসটির দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, যে ব্যক্তি পবিত্র কুরআনের প্রকৃত ধারক, বাহক, কারী, বিদ্বান, সুশিক্ষিত জ্ঞানি, মুফাসসির এবং তার অবলম্বনকারীর সম্মান করা, মহান আল্লাহরই সম্মান করার অন্তর্ভুক্ত বিষয়।
والحمد لله الذي بنعمته تتم الصالحات، والصلاة والسلام على رسولنا محمد، وعلى آله وصحبه أجمعين.
 অর্থ: এবং সকল প্রশংসা আল্লাহর জন্য, যাঁর অনুগ্রহে সমস্ত সৎকর্ম সম্পন্ন হয়। আমাদের প্রিয় রাসূল মুহাম্মাদ এবং তাঁর পরিবার-পরিজন এবং সাহাবীগণের প্রতি অতিশয় সম্মান ও শান্তি অবতীর্ণ হোক।

 

 

 

সূচীপত্র
ক্রমিক
নম্বর    বিষয়    পৃষ্ঠা
1    ভূমিকা     6
2    সবশেষে কৃতজ্ঞতা স্বীকারের পালা     9
3    অনুবাদের পদ্ধতি    10
4    বৈধ ও পবিত্র উপায়ে উপার্জিত মাল দান প্রদানের মর্যাদা     12
5    প্রকৃত ইসলাম একটি সহজ ধর্ম     15
6    কুরবানির কতকগুলি  বিধিবিধান    17
7    নামাজে ইমামের অনুসরণ করার পদ্ধতি    19
8    নামাজ হতে বের হওয়ার জন্য সালাম ফিরানোর পদ্ধতি
    22
9    মানব সমাজকে দেখানো ও শুনানোর উদ্দেশ্যে সৎ কর্ম সম্পাদন করা হতে সতর্কীকরণ    27
10    দাজ্জালের বিবরণ    30
11    লোকজনকে পানীয় দ্রব্য পরিবেশন করার আদবকায়দা    32
12    পানীয় দ্রব্য পান করার আদবকায়দ    35
13    প্রকৃত ইসলাম ধর্মে কতকগুলি নিষিদ্ধ বস্তু     37
14    ওয়ালিমা অথবা অন্য কোনো পবিত্র ভোজের নিমন্ত্রণ গ্রহণ করা অপরিহার্য    40
15    এশা এবং ফজরের নামাজ জামাআতের সহিত পড়ার মর্যাদা     42
16    প্রকৃত ইসলাম ধর্মে প্রাণীর ছবি অঙ্কন করা অবৈধ    44
17    খাবার খাওয়ার আদবকায়দা    46
18    ওজু করার পদ্ধতি     48
19    ফেরেশতাদের মধ্যে এবং জিনদের মধ্যে পার্থক্য    51
20    কুবা মাসজিদে নামাজ পড়ার মর্যাদা    54
21    দরিদ্র লোকজনের সেবা করার প্রতি ইসলামের আহ্বান    56
22    আল্লাহর জন্য নিবেদিত ভালোবাসাকে প্রতিভাত করার প্রতি ইসলাম ধর্ম উৎসাহ প্রদান করে    58
23    ভালো স্বাস্থ্য এবং সচ্ছলতা কল্যাণদায়ক কাজে ব্যবহার করা উচিত    61
24    প্রকৃত ইসলাম জনগণের অধিকার সংরক্ষণের ধর্ম    63
25    পিতা প্রয়োজন অনুযায়ী ছেলের সম্পদ নিতে পারবে    66
26    কোমরে হাত রেখে নামাজ পড়া জায়েজ নয়    69
27    দণ্ডায়মান অবস্থায় পানাহার করা বৈধ    71
28    সূরা ইখলাসের মর্যাদা     73
29    যুবক সমাজকে বিবাহ করার প্রতি উৎসাহ প্রদান করা      75
30    বিশ্বনাবী মুহাম্মদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর কতকগুলি বৈশিষ্ট্য    78
31    জান্নাতের বিবরণ    82
32    হজ্জের হাদয়ী ও কুরবানির পশুতে অংশ গ্রহণ করা বৈধ    85
33    জাহান্নামবাসীদের শাস্তির মধ্যে ব্যবধান    88
34    কুরবানির ঈদের দিনের সংখ্যা     91
35    রোজা, কুরবানি এবং ঈদের নামাজের ক্ষেত্রে মুসলিম সমাজে ঐক্য বজায় রাখা অপরিহার্য     94
36    মহাপাপে লিপ্ত হওয়া থেকে সতর্কীকরণ    97
37    কোনো জিনিসের মূল্য বৃদ্ধি করার উদ্দেশ্যে বেশি দাম বলা অবৈধ       100
38    ফরজ নামাজের সালাম ফিরানোর পর পঠনীয় জিকির    102
39    সন্ধ্যার সময় মহান আল্লাহর পঠনীয় জিকির    105
40    সৎলোকদের নিদর্শন     109
41    অপরের অধিকার মেরে দেওয়া হারাম    112
42    বিপদাপদে ধৈর্যধারণ করার মর্যাদা    114
43    হাজরে আসওয়াদ একটি জান্নাতের পাথর    116
44    সফরে থাকার সময় রোজা পালন করা এবং রোজা ভঙ্গ করা বৈধ    118
45    প্রকৃত ইসলাম ধর্মে মলদ্বারে বা পায়ু পথে সঙ্গম করা হারাম    120
46    পানি না পাওয়ার কারণে তায়াম্মুম করে নামাজ পড়ার পর পানি প্রাপ্ত হলে কি করা উচিত?    122
47    কন্যা সন্তানদেরকে যত্নসহকারে প্রতিপালন করার মর্যাদা    125
48    মাসজিদে প্রবেশ ও মাসজিদ থেকে বের হওয়ার দোয়া    127
49    মাসজিদে প্রবেশ ও মাসজিদ থেকে বের হওয়ার সময় আল্লাহর নাবীর প্রতি দরূদ ও সালাম পাঠ করার বিধান    130
50    মাসজিদে প্রবেশ করার আদবকায়দা    139
51    মাসজিদের মধ্যে হারানো বস্তুর ঘোষণা দেওয়া জায়েজ নয়    142
52    বেতর নামাজে কুনূতের দোয়া    145
53    বেতরের  নামাজ কাজা করার বিধান    149
54    বেতরের  নামাজ পড়ার বিধান    151
55    প্রকাশ্যভাবে পাপ করা থেকে সতর্কীকরণ      153
56    মাতার সাথে ন্যায়পরায়ণতার অধিকার সর্বশ্রেষ্ঠ    156
57    পিতার অবাধ্য হওয়া একটি মহা পাপ    159
58    বৈধ এবং পবিত্র রুজিরোজগারের প্রতি উৎসাহ প্রদান করা    161
59    দাড়ির সম্মান করা এবং তা ছেড়ে দেওয়া অপরিহার্য    163
60    পোষ্যবর্গের খোরপোশের জন্য টাকাপয়সা ব্যয় করার কাজে আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের আশা করার মর্যাদা    165
61    শোক ভোগ করার বিধান    167
62    প্রকৃত ইসলাম হলো সদয় আচরণের ধর্ম    171
63    এটি একটি সর্বোত্তম দোয়া    173
64    আক্রমণকারীকে দমন করা অপরিহার্য    176
65    ইসলাম ধর্মে বলপূর্বকভাবে লোকের ভূমি ও সম্পত্তি দখল করা হারাম    180
66    মালের প্রতি সম্মোহিত হওয়া থেকে সতর্কীকরণ    183
67    ফরজ নামাজের সালাম ফিরানোর পর পঠনীয় জিকির    185
68    সালাম ফিরানোর পর ইমামের জন্য মুসাল্লিগণের দিকে মুখ ফিরিয়ে বসা উচিত    188
69    মহিলাদের জন্য মাসজিদে গিয়ে নামাজ পড়া বৈধ    190
70    মোজার উপরে মাসাহ করার বিধান    192
71    পায়ের আবরণ বা মোজার উপরে মাসাহ করার বিধান    194
72    যারা হজ্জ পালনে রত থাকবে, তাদের হারানো বস্তু কুড়িয়ে নেওয়া নিষিদ্ধ      197
73    জাহান্নামীদের বিবরণ    200
74    জাহান্নামের বিবরণ     202
75    পরকালে পুনরুজ্জীবিত হওয়ার প্রতি ঈমান স্থাপন করা অপরিহার্য    204
76    যে খেজুর খেতে থাকবে সে ক্ষুধার্ত হবে না     205
77    তওবা করার জন্য তৎপর থাকা অপরিহার্য    207
78    ক্রয় বিক্রয় সংক্রান্তে কসম খাওয়া নিষিদ্ধ    209
79    আল্লাহ ছাড়া অন্যের নামে শপথ করা হারাম    210
80    দাঁতন করার মর্যাদা    213
81    প্রকৃত ইসলাম ধর্মে নারীর মর্যাদা    215
82    সৎ সঙ্গ গ্রহণ করার প্রতি উৎসাহ প্রদান    217
83    সন্তানের দোয়ার মাধ্যমে মাতা-পিতার সমুন্নত মর্যাদা লাভ হয়    219
84    জুনুবী এবং অপবিত্র অবস্থায় থাকার বিধান     221
85    আল্লাহর স্মরণ শয়তানকে বিতাড়িত করে    222
86    সিজদার অবস্থায় দোয়া করার প্রতি উৎসাহ প্রদান    225
87    কবর পাকা করা হারাম    226
88    পুংমৈথুন করা থেকে সতর্কীকরণ    228
89    যে সমস্ত আমলের মাধ্যমে মৃত ব্যক্তি উপকৃত হতে পারবে    231
90    রোজাদারকে ইফতার করানোর মর্যাদা    234
91    পবিত্র রমাজান মাসের মর্যাদা    237
92    মোনাফেকদের কতকগুলি নিদর্শন    239
93    পবিত্র কুরআনের ধারক বাহকের সম্মান করা অপরিহার্য    241
94    সূচীপত্র    243

 

 

নির্বাচিত হাদীস পঞ্চম খণ্ড

বই সম্পর্কে

লেখক :

محمد مرتضى بن عائش محمد

প্রকাশক :

www.islamland.com