মুমিন নারীদের বিশেষ বিধান

"নারীদের প্রকৃত মর্যাদা প্রদানকারী দীন একমাত্র ইসলাম। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কখনো কখনো শুধু নারীদের উদ্দেশ্য করেই উপদেশ প্রদান করতেন। ‘আরাফার ময়দানে তিনি নারীদের ওপর পুরুষদের হিতাকাঙ্ক্ষী হতে বলেন, যা প্রমাণ করে নারীরা বিশেষ যত্নের দাবিদার। বিশেষভাবে বর্তমান যখন মুসলিম নারীদের সম্মান হরণ ও মর্যাদাপূর্ণ স্থান থেকে বিচ্যুত করার নিমিত্তে তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। অতএব, তাদের সচেতন করা ও তাদের সামনে মুক্তির নির্দেশনা স্পষ্ট করার বিকল্প নেই।
বক্ষ্যমাণ গ্রন্থ মুসলিম নারীদের সামনে সে নির্দেশনা স্পষ্ট করবে আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস।"


মুমিন নারীদের বিশেষ বিধান

تنبيهات على أحكام تختص بالمؤمنات

<بنغالي >
        
ড. সালেহ ইবন ফাওযান আল-ফাওযান



অনুবাদক: সানাউল্লাহ নজির আহমদ
সম্পাদক: ড. আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া  

تنبيهات على أحكام تختص بالمؤمنات

        

الشيخ د. صالح بن فوزان الفوزان





ترجمة: ثناء الله نذير أحمد
مراجعة: د/ أبو بكر محمد زكريا
সূচীপত্র

الصفحة    العنوان    م
    ভূমিকা    ১
    প্রথম পরিচ্ছেদ: সাধারণ বিধান    ২
    ইসলাম পূর্ব নারীর মর্যাদা    ৩
    ইসলামে নারীর মর্যাদা    ৪
    ইসলামের শত্রু ও তার দোসররা নারীর ইজ্জত হরণ করে কী চায়?    ৫
    কতিপয় শর্ত সাপেক্ষে ঘরের বাইরে নারীর কাজ করা বৈধ    ৬
    দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ: নারীর শারীরিক সৌন্দর্য গ্রহণ করার বিধান    ৭
    নারীরা তাদের শরীর ও নারীত্বের সাথে মুনাসিব সৌন্দর্য গ্রহণ করবে    ৮
    নারীর মাথার চুল, চোখের ভ্রু, খেজাব ও রঙ ব্যবহার করার বিধান    ৯
    তৃতীয় পরিচ্ছেদ: হায়েয, ইস্তেহাযাহ ও নিফাস সংক্রান্ত বিধান    ১০
    হায়েযের সংজ্ঞা    ১১
    হায়েযের বয়স    ১২
    হায়েযের বিধান    ১৩
    হায়েয শেষে ঋতুমতী নারীর করণীয়    ১৪
    দ্বিতীয়ত: ইস্তেহাযাহ    ১৫
    ইস্তেহাযার হুকুম    ১৬
    মুস্তাহাযাহ নারীর পবিত্র অবস্থায় করণীয়    ১৭
    তৃতীয়ত: নিফাস    ১৮
    নিফাসের সংজ্ঞা ও সময়    ১৯
    নিফাস সংক্রান্ত বিধান    ২০
    চল্লিশ দিনের পূর্বে যখন নিফাসের রক্ত বন্ধ হয়    ২১
    নিফাসের রক্তের উপলক্ষ সন্তান প্রসব, ইস্তেহাযার রক্ত রোগের ন্যায় সাময়িক, আর হায়েযের রক্ত নারীর স্বভাবজাত রক্ত    ২২
    চতুর্থ পরিচ্ছেদ: পোশাক ও পর্দা সংক্রান্ত বিধান    ২৩
    প্রথমত: মুসলিম নারীর শর‘ঈ পোশাক    ২৪
    দ্বিতীয়ত: পর্দার অর্থ, দলীল ও উপকারিতা    ২৫
    পঞ্চম পরিচ্ছেদ: নারীদের সালাত সংক্রান্ত বিশেষ হুকুম    ২৬
    নারীদের সালাতে আযান ও ইকামত নেই    ২৭
    সালাতের সময় নারীর চেহারা ব্যতীত পূর্ণ শরীর সতর    ২৮
    রুকু ও সাজদায় নারী শরীর গুটিয়ে রাখবে    ২৯
    নারীদের জামা‘আত তাদের কারো ইমামতিতে দ্বিমত রয়েছে    ৩০
    নারীদের মসজিদে সালাত আদায়ের জন্য ঘর থেকে বের হওয়া বৈধ    ৩১
    ষষ্ঠ পরিচ্ছেদ: জানাযা সংক্রান্ত নারীদের বিশেষ বিধান    ৩২
    মৃত নারীকে গোসল দেওয়ার দায়িত্ব নারীর গ্রহণ করা ওয়াজিব    ৩৩
    পাঁচটি কাপড়ে নারীদের কাফন দেওয়া মুস্তাহাব    ৩৪
    মৃত নারীর চুলের ব্যাপারে করণীয়    ৩৫
    নারীদের জানাযার পশ্চাতে চলার বিধান    ৩৬
    নারীদের কবর যিয়ারত করা হারাম    ৩৭
    মাতম করা হারাম    ৩৮
    সপ্তম পরিচ্ছেদ: সিয়াম সংক্রান্ত নারীদের বিধান    ৩৯
    কার ওপর রমযান ওয়াজিব?    ৪০
    বিশেষ কিছু অপারগতার কারণে রমযানে নারীর পানাহার করা বৈধ    ৪১
    কয়েকটি জ্ঞাতব্য    ৪২
    অষ্টম পরিচ্ছেদ: হজ ও উমরায় নারীর বিশেষ বিধান    ৪৩
    হজ সংক্রান্ত নারীর বিশেষ বিধান    ৪৪
    মুহরিম    ৪৫
    স্ত্রীর হজ যদি নফল হয় স্বামীর অনুমতি প্রয়োজন    ৪৬
    নারীর পক্ষে কারো প্রতিনিধি হয়ে হজ ও উমরা করা দুরস্ত    ৪৭
    হজের সফরে নারীর ঋতু বা নিফাস হলে সফর অব্যাহত রাখবে    ৪৮
    ইহরামের সময় নারীর করণীয়    ৪৯
    ইহরামের নিয়ত করার সময় বোরকা ও নেকাব খুলে ফেলবে    ৫০
    ইহরাম অবস্থায় নারীর পোশাক    ৫১
    নারীর ইহরামের পর নিজেকে শুনিয়ে তালবিয়া পড়া সুন্নত    ৫২
    তাওয়াফের সময় নারীর পরিপূর্ণ পর্দা করা ওয়াজিব    ৫৩
    নারীর তাওয়াফ ও সাঈ পুরোটাই হাঁটা    ৫৪
    ঋতুমতী নারীর পবিত্র হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত করণীয় ও বর্জনীয়    ৫৫
    জ্ঞাতব্য    ৫৬
    নারীদের দুর্বলদের সাথে মুযদালিফা ত্যাগ করা বৈধ চাঁদ অদৃশ্য হলে    ৫৭
    নারী হজ ও উমরায় আঙ্গুলের অগ্রভাগ পরিমাণ মাথার চুল ছোট করবে    ৫৮
    ঋতুমতী নারী জামরাহ আকাবায় কঙ্কর নিক্ষেপ শেষে মাথার চুল ছোট করলে ইহরাম থেকে হালাল হবে    ৫৯
    তাওয়াফে ইফাদার পর ঋতুমতী হলে বিদায়ী তাওয়াফ রহিত হয়    ৬০
    নারীর জন্য মসজিদে নাওয়াওয়ী যিয়ারত করা মুস্তাহাব    ৬১
    নবম পরিচ্ছেদ: বিয়ে ও তালাক সংক্রান্ত    ৬২
    বিয়ের ক্ষেত্রে নারীর অনুমতি গ্রহণ করা    ৬৩
    নারীর বিয়েতে অভিভাবক শর্ত ও তার হিকমত    ৬৪
    বিয়ের ঘোষণার জন্য নারীদের দফ বাজানোর হুকুম
নারীর স্বামীর আনুগত্য করা ওয়াজিব, অবাধ্য হওয়া হারাম    ৬৫
    প্রশ্ন: যদি নারী স্বামীর মধ্যে তার প্রতি আগ্রহ না দেখে; কিন্তু সে তার সাথে থাকতে চায়, তাহলে কী করবে?    ৬৬
    প্রশ্ন: নারী যদি স্বামীকে অপছন্দ করে ও তার সংসার করতে না চায় কী করবে?    ৬৭
    প্রশ্ন: কোনো কারণ ছাড়া তালাক তলবকারী নারীর শাস্তি কী?    ৬৮
    দাম্পত্য সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন হলে নারীর করণীয়    ৬৯
    ইদ্দত চার প্রকার    ৭০
    প্রথম প্রকার: গর্ভবতীর ইদ্দত    ৭১
    দ্বিতীয় প্রকার: ঋতু হয় তালাক প্রাপ্তা নারীর ইদ্দত    ৭২
    তৃতীয় প্রকার: ঋতু হয় না তালাক প্রাপ্তা নারীর ইদ্দত    ৭৩
    চতুর্থ প্রকার: স্বামী-মৃত বা বিধবা নারীর ইদ্দত    ৭৪
    ইদ্দত পালনকারী নারীর জন্য যা হারাম    ৭৫
    ইদ্দত পালনকারী নারীকে বিয়ের প্রস্তাব দেওয়ার হুকুম    ৭৬
    অপরের ইদ্দত পালনকারী নারীকে বিয়ে করা হারাম    ৭৭
    দু’টি জ্ঞাতব্য    ৭৮
    বিধবা নারীর ইদ্দতে পাঁচটি বস্তু হারাম, যার আরবি নাম হিদাদ    ৭৯
    দশম পরিচ্ছেদ: নারীর সম্মান ও পবিত্রতা রক্ষাকারী বিধান    ৮০
    লজ্জাস্থান হিফাযত ও চোখ অবনত রাখার ক্ষেত্রে নারীও পুরুষের ন্যায় আদিষ্ট    ৮১
    লজ্জাস্থান হিফাযত করার অংশ:
গান-বাদ্য না শোনা    ৮২
    লজ্জাস্থান হিফাযত করার অংশ:
মাহরাম ব্যতীত নারীর সফর না করা    ৮৩
    লজ্জাস্থান হিফাযত করার অংশ:
নারী এমন পুরুষের সাথে নির্জন সাক্ষাত করবে না, যে তার মাহরাম নয়    ৮৪
    পরিসমাপ্তি: নারীর পর-পুরুষের সাথে সাক্ষাত করা হারাম    ৮৫
    সর্বশেষ    ৮৬


ভূমিকা

সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ তা‘আলার জন্য, যিনি পরিকল্পনা করেন ও সঠিক পথের হিদায়াত দেন এবং মাতৃগর্ভে নিক্ষিপ্ত শুক্র বিন্দু থেকে নারী-পুরুষ যুগল সৃষ্টি করেন। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, একমাত্র আল্লাহ ব্যতীত কোনো হক্ব ইলাহ নেই, তার কোনো শরীক নেই। সূচনা ও সমাপ্তিতে তার জন্যই সকল প্রশংসা। আমি আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মাদ আল্লাহর বান্দা ও রাসূল। তাকে যখন আসমানে নিয়ে যাওয়া হয় তিনি স্বীয় রবের বড় বড় অনেক নিদর্শন প্রত্যক্ষ করেন। সালাত ও সালাম প্রেরিত হোক বিশেষ গুণ ও বৈশিষ্ট্যের ধারক তার পরিবার ও সাহাবীগণের ওপর।
অতঃপর... নারীদের প্রকৃত মর্যাদা প্রদানকারী দীন একমাত্র ইসলাম। ইসলাম তাদের অনেক বিষয়কে বিশেষ গুরুত্বসহ গ্রহণ করেছে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কখনো কখনো শুধু নারীদের উদ্দেশ্য করেই উপদেশ প্রদান করতেন। ‘আরাফার ময়দানে তিনি নারীদের ওপর পুরুষদের হিতাকাঙ্ক্ষী হতে বলেন, যা প্রমাণ করে নারীরা বিশেষ যত্নের দাবিদার। বিশেষভাবে বর্তমানে যখন মুসলিম নারীদের সম্মান হরণ ও মর্যাদাপূর্ণ স্থান থেকে বিচ্যুত করার নিমিত্তে তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। অতএব, তাদের সচেতন করা ও তাদের সামনে মুক্তির নির্দেশনা স্পষ্ট করার বিকল্প নেই।
বক্ষ্যমাণ গ্রন্থ মুসলিম নারীদের সামনে সে নির্দেশনা স্পষ্ট করবে আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস। গ্রন্থখানা ক্ষুদ্র প্রয়াস ও দুর্বল ব্যক্তির পক্ষ থেকে সামান্য প্রচেষ্টা মাত্র, আল্লাহ স্বীয় কুদরত মোতাবেক তার দ্বারা মুসলিম উম্মাহর কল্যাণ সাধন করবেন একান্ত আশা। এ ময়দানে এটিই প্রথম পদক্ষেপ, আশা করা যায় পরবর্তীতে আরো ব্যাপক ও বৃহৎ পদক্ষেপ করা হবে, যা হবে আরো সুন্দর ও আরো পরিপূর্ণ। আমি এখানে যা পেশ করছি তার পরিচ্ছেদসমূহ নিম্নরূপ:
১. প্রথম পরিচ্ছেদ: সাধারণ বিধান।
২. দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ: নারীর শারীরিক সাজ-সজ্জা সংক্রান্ত বিধান।
৩. তৃতীয় পরিচ্ছেদ: হায়েয, ইস্তেহাযাহ ও নিফাস সংক্রান্ত বিধান।
৪. চতুর্থ পরিচ্ছেদ: পোশাক ও পর্দা সংক্রান্ত বিধান।
৫. পঞ্চম পরিচ্ছেদ: নারীর সালাত সংক্রান্ত বিধান।
৬. ষষ্ঠ পরিচ্ছেদ: নারীর জানাযাহ সংক্রান্ত বিধান।
৭. সপ্তম পরিচ্ছেদ: নারীর সিয়াম সংক্রান্ত বিধান।
৮. অষ্টম পরিচ্ছেদ: নারীর হজ ও উমরাহ সংক্রান্ত বিধান।
৯. নবম পরিচ্ছেদ: দাম্পত্য জীবন ও বিচ্ছেদ সংক্রান্ত বিধান।
১০. দশম পরিচ্ছেদ: নারীর সম্মান ও পবিত্রতা রক্ষা সংক্রান্ত বিধান।

লেখক

প্রথম পরিচ্ছেদ: সাধারণ বিধান
১. ইসলাম-পূর্ব নারীর মর্যাদা:
ইসলাম-পূর্ব যুগ দ্বারা উদ্দেশ্য জাহেলী যুগ, যা বিশেষভাবে আরববাসী এবং সাধারণভাবে পুরো জগতবাসী যাপন করছিল, কারণ সেটা ছিল রাসূলদের বিরতি ও পূর্বের হিদায়াত বিস্মৃতির যুগ। হাদীসের ভাষা মতে “আল্লাহ তাদের দিকে দৃষ্টি দিলেন এবং আরব ও অনারব সবার ওপর তিনি গোস্বা করলেন, তবে অবশিষ্ট কতক আহলে কিতাব ব্যতীত”।  এ সময় নারীরা বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ও সাধারণভাবে খুব কঠিন অবস্থার সম্মুখীন ছিল। বিশেষত আরব সমাজে। আরবরা কন্যা সন্তানের জন্মকে অপছন্দ করত। তাদের কেউ মেয়েকে জ্যান্ত দাফন করত যেন মাটির নিচে তার মৃত্যু ঘটে। আবার কেউ অসম্মান ও লাঞ্ছনার জীবন-যাপনে মেয়েকে বাধ্য করত। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿وَإِذَا بُشِّرَ أَحَدُهُم بِٱلۡأُنثَىٰ ظَلَّ وَجۡهُهُۥ مُسۡوَدّٗا وَهُوَ كَظِيمٞ ٥٨ يَتَوَٰرَىٰ مِنَ ٱلۡقَوۡمِ مِن سُوٓءِ مَا بُشِّرَ بِهِۦٓۚ أَيُمۡسِكُهُۥ عَلَىٰ هُونٍ أَمۡ يَدُسُّهُۥ فِي ٱلتُّرَابِۗ أَلَا سَآءَ مَا يَحۡكُمُونَ ٥٩﴾ [النحل: ٥٨،  ٥٩]
“আর যখন তাদের কাউকে কন্যা সন্তানের সুসংবাদ দেওয়া হত, তখন তার চেহারা কালো হয়ে যায়, আর সে থাকে দুঃখ ভারাক্রান্ত। তাকে যে সংবাদ দেওয়া হয়েছে সে দুঃখে সে কওম থেকে আত্মগোপন করে। অপমান সত্ত্বেও কি একে রেখে দেবে, না মাটিতে পুঁতে ফেলবে? জেনে রাখ, তারা যা ফয়সালা করে তা কতই না মন্দ”! [সূরা আন-নাহল, আয়াত: (৫৮-৫৯]
অন্যত্র তিনি বলেন:
﴿وَإِذَا ٱلۡمَوۡءُۥدَةُ سُئِلَتۡ ٨ بِأَيِّ ذَنۢبٖ قُتِلَتۡ ٩﴾ [التكوير: ٨،  ٩]
 “আর যখন জীবন্ত কবরস্থ কন্যাকে জিজ্ঞাসা করা হবে, কী অপরাধে তাকে হত্যা করা হয়েছে”? [সূরা আত-তাকওয়ীর, আয়াত: ৮-৯]
‘মাওউদাতু’ সে মেয়েকে বলা হয়, যাকে জীবিত দাফন করা হয় যেন মাটির নীচে মারা যায়। কোনো কন্যা যদিও জ্যান্ত দাফন থেকে নিষ্কৃতি পেত, কিন্তু লাঞ্ছনার জীবন থেকে মুক্তি পেত না। নারীর ঘনিষ্ঠ আত্মীয়ের সম্পদ যদিও প্রচুর হত, কিন্তু তার মৃত্যুর পর নারী কখনো মিরাসের অধিকারী হত না, যদিও সে হত অভাবী ও খুব সংকটাপন্ন! কারণ তাদের নিকট পুরুষদের জন্য মিরাস খাস ছিল, নারীদের তাতে কোনো অংশ ছিল না, বরং নারীরা মৃত স্বামীর সম্পদের ন্যায় মিরাসে পরিণত হত। ফলশ্রুতিতে এক পুরুষের অধীন অনেক নারী আবদ্ধ হত, যার নির্ধারিত কোনো সংখ্যা ছিল না। একাধিক সপত্নী বা সতীন থাকার কারণে নারীরা যে সংকীর্ণতা, যুলম ও কোণঠাসা অবস্থার সম্মুখীন হত -সেটাও তাদের অনেকের নিকট বিবেচ্য ছিল না।
২. ইসলামে নারীর মর্যাদা:
ইসলাম এসে নারীর ওপর থেকে এসব যুলম দূরীভূত করেছে, তাকে ফিরিয়ে দিয়েছে পুরুষদের ন্যায় মনুষ্য অধিকার। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿يَٰٓأَيُّهَا ٱلنَّاسُ إِنَّا خَلَقۡنَٰكُم مِّن ذَكَرٖ وَأُنثَىٰ﴾ [الحجرات: ١٣]  
“হে মানব জাতি, নিশ্চয় আমরা তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছি পুরুষ ও নারী থেকে”। [সূরা আল-হুজুরাত, আয়াত: ১৩]
এখানে আল্লাহ বলেছেন যে, মানব সৃষ্টির শুরু থেকে নারী পুরুষের সঙ্গী, যেমন সে পুরুষের সঙ্গী নেকি প্রাপ্তি ও শাস্তির ক্ষেত্রে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿مَنۡ عَمِلَ صَٰلِحٗا مِّن ذَكَرٍ أَوۡ أُنثَىٰ وَهُوَ مُؤۡمِنٞ فَلَنُحۡيِيَنَّهُۥ حَيَوٰةٗ طَيِّبَةٗۖ وَلَنَجۡزِيَنَّهُمۡ أَجۡرَهُم بِأَحۡسَنِ مَا كَانُواْ يَعۡمَلُونَ ٩٧﴾ [النحل: ٩٧]  
“যে মুমিন অবস্থায় নেক আমল করবে, পুরুষ হোক বা নারী, আমরা তাকে পবিত্র জীবন দান করব এবং তারা যা করত তার তুলনায় অবশ্যই আমরা তাদেরকে উত্তম প্রতিদান দেব”। [সূরা আন-নাহাল, আয়াত: ৯৭]
অপর আয়াতে তিনি বলেন:
﴿لِّيُعَذِّبَ ٱللَّهُ ٱلۡمُنَٰفِقِينَ وَٱلۡمُنَٰفِقَٰتِ وَٱلۡمُشۡرِكِينَ وَٱلۡمُشۡرِكَٰتِ﴾ [الاحزاب: ٧٣]    
“যাতে আল্লাহ মুনাফিক পুরুষ ও মুনাফিক নারী এবং মুশরিক পুরুষ ও মুশরিক নারীদের ‘আযাব দেন। আর মুমিন পুরুষ ও মুমিন নারীদের ক্ষমা করে দেন। আল্লাহ অত্যন্ত ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু”। [সূরা আল-আহযাব, আয়াত: ৭৩]
আল্লাহ তা‘আলা মৃত ব্যক্তির সম্পদের ন্যায় নারীকে পরিত্যক্ত মিরাস গণ্য করা হারাম করেন। যেমন তিনি বলেন:
﴿يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ لَا يَحِلُّ لَكُمۡ أَن تَرِثُواْ ٱلنِّسَآءَ كَرۡهٗاۖ ﴾ [النساء: ١٩]  
“হে মুমিনগণ, তোমাদের জন্য হালাল নয় যে, তোমরা জোর করে নারীদের ওয়ারিশ হবে”। [সূরা আন-নিসা, আয়াত: ১৯]
এভাবে ইসলাম নারীর ব্যক্তি স্বাধীনতা পুনরুদ্ধার করে তাকে ওয়ারিশ ঘোষণা দেয়। কারণ, সে পরিত্যক্ত সম্পদ নয়। মৃত নিকট আত্মীয়ের পরিত্যক্ত সম্পদ থেকে মিরাসের হক প্রদান করে তাকে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿لِّلرِّجَالِ نَصِيبٞ مِّمَّا تَرَكَ ٱلۡوَٰلِدَانِ وَٱلۡأَقۡرَبُونَ وَلِلنِّسَآءِ نَصِيبٞ مِّمَّا تَرَكَ ٱلۡوَٰلِدَانِ وَٱلۡأَقۡرَبُونَ مِمَّا قَلَّ مِنۡهُ أَوۡ كَثُرَۚ نَصِيبٗا مَّفۡرُوضٗا ٧﴾ [النساء: ٧]  
“পুরুষদের জন্য মাতা পিতা ও নিকট আত্মীয়রা যা রেখে গিয়েছে তা থেকে একটি অংশ রয়েছে। আর নারীদের জন্য রয়েছে মাতা পিতা ও নিকট আত্মীয়রা যা রেখে গিয়েছে তা থেকে একটি অংশ, তা কম হোক বা বেশি  হোক, নির্ধারিত হারে”। [সূরা আন-নিসা, আয়াত: ৭]
অপর আয়াতে তিনি বলেন:
﴿يُوصِيكُمُ ٱللَّهُ فِيٓ أَوۡلَٰدِكُمۡۖ لِلذَّكَرِ مِثۡلُ حَظِّ ٱلۡأُنثَيَيۡنِۚ فَإِن كُنَّ نِسَآءٗ فَوۡقَ ٱثۡنَتَيۡنِ فَلَهُنَّ ثُلُثَا مَا تَرَكَۖ وَإِن كَانَتۡ وَٰحِدَةٗ فَلَهَا ٱلنِّصۡفُۚ ﴾ [النساء: ١١]  
“আল্লাহ তোমাদেরকে তোমাদের সন্তানদেরকে ক্ষেত্রে নির্দেশ দিচ্ছেন, এক ছেলের জন্য দুই মেয়ের অংশের সমপরিমাণ। তবে যদি তারা দুইয়ের অধিক মেয়ে হয়, তাহলে তাদের জন্য হবে, যা সে রেখে গছে তার তিন ভাগের দুই ভাগ, আর যদি একজন মেয়ে হয় তখন তার জন্য অর্ধেক ...”। [সূরা আন-নিসা, আয়াত: ১১]
এভাবে আল্লাহ একজন নারীকে মা, মেয়ে, বোন ও স্ত্রী হিসেবে মিরাস দান করেন।
আর বিবাহের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ চারজন স্ত্রী রাখার অনুমতি প্রদান করেন, শর্ত হচ্ছে নারীদের মাঝে ইনসাফ প্রতিষ্ঠা ও তাদের সাথে প্রচলিত রেওয়াজ মোতাবেক আচরণ করতে হবে। তিনি বলেন:
﴿وَعَاشِرُوهُنَّ بِٱلۡمَعۡرُوفِۚ﴾ [النساء: ١٩]  
“আর তাদের সাথে সদ্ভাবে আচরণ কর”। [সূরা আন-নিসা, আয়াত: ১৯]
অধিকন্তু নারীর জন্য পুরুষের ওপর দেন-মোহর অবধারিত করে তাকে তা পরিপূর্ণ প্রদান করার নির্দেশ দেন, তবে নারী যদি স্বেচ্ছায় ও পূর্ণ সন্তুষ্টিতে কিছু হক ত্যাগ করে সেটা পুরুষের জন্য বৈধ। তিনি বলেন:
﴿وَءَاتُواْ ٱلنِّسَآءَ صَدُقَٰتِهِنَّ نِحۡلَةٗۚ فَإِن طِبۡنَ لَكُمۡ عَن شَيۡءٖ مِّنۡهُ نَفۡسٗا فَكُلُوهُ هَنِيٓ‍ٔٗا مَّرِيٓ‍ٔٗا ٤ ﴾ [النساء: ٤]
“আর তোমরা নারীদেরকে সন্তুষ্টচিত্তে তাদের মোহর দিয়ে দাও, অতঃপর যদি তারা তোমাদের জন্য তা থেকে খুশি হয়ে কিছু ছাড় দেয়, তাহলে তোমরা তা সানন্দে তৃপ্তিসহ খাও”। [সূরা আন-নিসা, আয়াত: ৪]
ইসলাম নারীকে তার স্বামীর ঘরে আদেশ ও নিষেধকারী জিম্মাদার এবং স্বীয় সন্তানের ওপর কর্তৃত্বকারী অভিভাবক বানিয়েছে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
«وَالْمَرْأَةُ رَاعِيَةٌ فِي بَيْتِ زَوْجِهَا وَمَسْئُولَةٌ عَنْ رَعِيَّتِهَا»
“নারী তার স্বামীর ঘরে জিম্মাদার এবং তার জিম্মাদারি সম্পর্কে তাকে জিজ্ঞাসা করা হবে”।  
রেওয়াজ মোতাবেক নারীর খরচ ও পোশাক-পরিচ্ছদ প্রদান করা স্বামীর ওপর ওয়াজিব করেছেন।
৩. ইসলামের শত্রু ও তার দোসররা নারীর ইজ্জত-সম্মান হরণ করে কী চায়?
সন্দেহ নেই, ইসলামের শত্রু বরং মানব জাতির শত্রু কাফির, মুনাফিক ও যাদের অন্তরে ব্যাধি রয়েছে, ইসলাম কর্তৃক প্রদত্ত নারীর ইজ্জত, সম্মান ও নিরাপত্তা তাদেরকে ক্ষেপিয়ে তুলেছে। কারণ এসব কাফির ও মুনাফিকরা চায় নারীরা দুর্বল ঈমান ও প্রবৃত্তির অনুসারীদের শিকার করা বস্তু ও ধ্বংসের হাতিয়ার হোক। আর তাদের সমাজের নারীদের থেকে তারা নিজেরা প্রবৃত্তি পূর্ণ করে নিয়েছে সন্দেহ নেই। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿وَيُرِيدُ ٱلَّذِينَ يَتَّبِعُونَ ٱلشَّهَوَٰتِ أَن تَمِيلُواْ مَيۡلًا عَظِيمٗا﴾ [النساء: ٢٧]  
“আর যারা প্রবৃত্তির অনুসরণ করে তারা চায় যে, তোমরা প্রবলভাবে (সত্য থেকে) বিচ্যুত হও”। [সূরা আন-নিসা, আয়াত: ২৭]
বস্তুত যেসব মুসলিমদের অন্তরে রোগ ও ব্যাধি রয়েছে, তারা চায় নারীরা তাদের প্রবৃত্তি পূরণ ও শয়তানি কর্ম-কাণ্ডে সস্তাপণ্য হোক। তাদের সামনে উন্মুক্ত পণ্য হয়ে থাক, যেন তার সৌন্দর্য দেখে তারা মুগ্ধ হয় অথবা তার থেকে আরো ঘৃণিত উদ্দেশ্য হাসিল করতে সক্ষম হয়। এ জন্য তারা প্রলুব্ধ করে যেন কাজের জন্য নারী ঘর থেকে বের হয় ও তাদের পাশা-পাশি কাজ করে অথবা নার্স সেজে পুরুষদের সেবা দেয় অথবা বিমান বালা হয় অথবা সহশিক্ষায় ছাত্রী কিংবা শিক্ষিকা হয়। অথবা সিনেমায় অভিনেত্রী ও গায়িকা হয় অথবা বিভিন্ন মিডিয়ার বিজ্ঞাপনে মডেল হয়। উন্মুক্ত ঘোরাফেরা এবং কণ্ঠ ও সৌন্দর্য প্রদর্শন করে ফেতনার জন্ম দেয়। ম্যাগাজিনগুলো অধিক প্রচার ও বাজার হাসিল করার উদ্দেশ্যে উলঙ্গ-আবেদনময়ী নারীদের অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করে। কতক অসাধু ব্যবসায়ী তাদের পণ্য প্রচারের জন্য এসব ছবিকে হাতিয়ার হিসেবে নিয়েছে, তাদের উৎপাদিত পণ্য ও শো-রোমসমূহে এসব ছবি তারা সাঁটিয়ে দেয়। এ জাতীয় পদক্ষেপ ও কর্মকাণ্ডের কারণে অধিকাংশ নারী তাদের ঘরের প্রকৃত দায়িত্ব ত্যাগ করেছে, যে কারণে তাদের স্বামীরা ঘর গুছানো ও সন্তান লালন-পালন করার জন্য বাধ্য হয়ে বাহির থেকে খাদ্দামাহ ও সেবিকা ভাড়া  করছে, যা অনেক ফিতনা ও অনিষ্টের জন্ম দিচ্ছে দিন দিন।
৪. কতিপয় শর্ত সাপেক্ষে ঘরের বাইরে নারীর কাজ করা বৈধ:
১. নারী যদি কাজের মুখাপেক্ষী হয় অথবা সমাজ তার সেবার প্রয়োজন বোধ করে এবং তার সেবা দানকারী বিকল্প কোনো পুরুষ না পাওয়া যায়।
২. নারীর মূল দায়িত্ব বাড়ির কাজ শেষে অন্য কাজ করা।
৩. নারীদের পরিবেশে কাজ করা, যেমন পুরুষ থেকে পৃথক পরিবেশে নারীদের শিক্ষা দান করা অথবা নারীদের সেবা ও চিকিৎসা প্রদান করা। এ তিনটি শর্তে নারীর পক্ষে ঘরের বাইরে কাজ করা বৈধ।
৪. অনুরূপ নারীর পক্ষে দীনি ইলম শিখা ও শিখানো দোষ নয় বরং জরুরি, তবে নারীদের পরিবেশে হতে হবে। অনুরূপ মসজিদ ও মসজিদের মতো পরিবেশে ধর্মীয় মজলিসে অংশ গ্রহণ করা তার পক্ষে দোষণীয় নয়। অবশ্যই পুরুষ থেকে পৃথক ও পর্দানশীন থাকা জরুরি, যেভাবে ইসলামের শুরু যুগে নারীরা কাজ আঞ্জাম দিত, দীন শিক্ষা করত ও মসজিদে হাজির হত।

 
দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ
নারীর শারীরিক সৌন্দর্য গ্রহণ করার বিধান
১. নারীরা তাদের শরীর ও নারীত্বের সাথে উপযোগী সৌন্দর্য গ্রহণ করবে:
যেমন, নখ কাটা বরং নিয়মিত নখ কাটা সকল আহলে ইলমের ঐকমত্যে বিশুদ্ধ সুন্নত এবং  হাদীসে বর্ণিত মনুষ্য স্বভাবের দাবি এটিই। অধিকন্তু নখ কাটা সৌন্দর্য ও পরিচ্ছন্নতা এবং নখ না-কাটা বিকৃতি ও হিংস্র প্রাণীর সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। অনেক সময় লম্বা নখের অভ্যন্তরে ময়লা জমে তাই সেখানে পানি পৌঁছায় না। কতক মুসলিম নারী কাফেরদের অনুকরণ ও সুন্নত না-জানার কারণে নখ লম্বা রাখার অভ্যাস গড়ে তুলেছে যা অবশ্যই পরিত্যাজ্য।
নারীর বগল ও নাভির নিচের পশম দূর করা সুন্নত। কারণ, হাদীসে তার নির্দেশ রয়েছে, এতেই তাদের সৌন্দর্য। তবে উত্তম হচ্ছে প্রতি সপ্তাহ পরিচ্ছন্ন হওয়া, অন্যথায় চল্লিশ দিনের ভেতর অবশ্যই পরিচ্ছন্ন হওয়া।
২. নারীর মাথার চুল, চোখের ভ্রু, খেযাব ও রঙ ব্যবহার করার বিধান:
ক. মুসলিম নারীর মাথার চুল বড় করা ইসলামের দাবি, বিনা প্রয়োজনে মাথা মুণ্ডন করা হারাম।
সৌদি আরবের মুফতি শাইখ মুহাম্মাদ ইবন ইবরাহীম রহ. বলেন: “নারীর চুল কাটা বৈধ নয়। কারণ, আলী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে ইমাম নাসাঈ স্বীয় সুনান গ্রন্থে, উসমান রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে ইমাম বাযযার স্বীয় মুসনাদ গ্রন্থে এবং ইকরিমাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে ইবন জারির তাবারি স্বীয় তাফসীর গ্রন্থে বর্ণনা করেন: “নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নারীকে মাথা মুণ্ডন করতে নিষেধ করেছেন”।  নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে নিষেধাজ্ঞার অর্থ হারাম, যদি তার বিপরীত দলীল না থাকে।
মোল্লা আলী ক্বারী মিশকাতের ব্যাখ্যা গ্রন্থ ‘মিরকাত’-এ বলেন: “নারীর মাথা মুণ্ডনের ওপর নিষেধাজ্ঞার কারণ: পুরুষের পুরুষত্ব ও সৌন্দর্যের জন্য দাঁড়ি যেরূপ নারীর নারীত্ব ও সৌন্দর্যের জন্য চুল/মাথার বেণী সেরূপ”।
মাথার চুল কাঁটা যদি সৌন্দর্য ছাড়া কোনো প্রয়োজনে হয়, যেমন চুল বহন করা কঠিন ঠেকে অথবা বেশি বড় হওয়ার কারণে পরিচর্যা করা কষ্টকর হয়, তাহলে প্রয়োজন মোতাবেক কাটা সমস্যা নয়। যেমন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মৃত্যুর পর তার কতক স্ত্রী চুল ছোট করতেন। কারণ, তার মৃত্যুর পর তারা সৌন্দর্য পরিহার করতেন, তাই চুল বড় রাখা তাদের প্রয়োজন ছিল না।
নারীর চুল কাটার উদ্দেশ্য যদি হয় কাফির ও ফাসিক নারী বা পুরুষদের সাথে সামঞ্জস্য গ্রহণ করা, তাহলে নিঃসন্দেহে তা হারাম। কারণ, কাফিরদের সামঞ্জস্য গ্রহণ না করাই ইসলামের সাধারণ নির্দেশ। অনুরূপ নারীদের জন্য পুরুষদের সামঞ্জস্য গ্রহণ করা হারাম, যদি সৌন্দর্যের উদ্দেশ্য গ্রহণ করা হয় তবুও হারাম।
আমাদের শাইখ মুহাম্মাদ আমীন শানকিতি রহ. ‘আদওয়াউল বায়ান’ গ্রন্থে বলেন: “অনেক দেশে নারীরা মাথার কাছ থেকে চুল কাঁটার যে অভ্যাস গড়ে নিয়েছে -তা পশ্চিমা ও ইউরোপীয় রীতি। এ স্বভাব ইসলাম ও ইসলাম পূর্ব যুগে আরবদের নারীদের ছিল না। উম্মতের মাঝে ধর্মীয়, চারিত্রিক ও বৈশিষ্ট্যে সেসব বিকৃতি ও পদস্খলন মহামারির আকার ধারণ করেছে এটা তারই অংশ। অতঃপর তিনি নিম্নোক্ত হাদীস সম্পর্কে বলেন:
»أن أزواج النبي صلى الله عليه وسلم يأخذن من رؤوسهن حنى تكون كالوفرة«
“নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের স্ত্রীগণ কানের লতি পর্যন্ত তাদের মাথার চুল কর্তন করতেন”।  এরূপ করেছেন তারা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মৃত্যুর পর, তার জীবিতাবস্থায় তারা সৌন্দর্য গ্রহণ করতেন, যার অন্যতম অংশ ছিল চুল। কিন্তু তার মৃত্যুর পর তাদের জন্য বিশেষ বিধান হয়, যে বিধানে পৃথিবীর কোনো নারী তাদের শরীক নয়। সেটা হচ্ছে বিবাহের আশা তাদের একেবারেই ত্যাগ করা। এমনভাবে ত্যাগ করা যে, কোনো অবস্থায় বিবাহ সম্ভব নয়। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মৃত্যুর পর তারা আমৃত্যু ইদ্দত পালনকারী নারীর মত ছিলেন। ইদ্দত পালনকারী নারীর মতো তাদের পক্ষে বিবাহ করা বৈধ ছিল না। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿وَمَا كَانَ لَكُمۡ أَن تُؤۡذُواْ رَسُولَ ٱللَّهِ وَلَآ أَن تَنكِحُوٓاْ أَزۡوَٰجَهُۥ مِنۢ بَعۡدِهِۦٓ أَبَدًاۚ إِنَّ ذَٰلِكُمۡ كَانَ عِندَ ٱللَّهِ عَظِيمًا﴾ [الاحزاب: ٥٣]  
“আল্লাহর রাসূলকে কষ্ট দেওয়া এবং তার মৃত্যুর পর তার স্ত্রীদেরকে বিয়ে করা কখনো তোমাদের জন্য সঙ্গত নয়। নিশ্চয় এটি আল্লাহর কাছে গুরুতর পাপ”। [সূরা আল-আহযাব, আয়াত: ৫৩]
অতএব, একেবারে পুরুষদের সঙ্ঘ থেকে নিরাশ হওয়ার ফলে সৌন্দর্য গ্রহণ করার ক্ষেত্রে তাদের কিছুটা ছাড় রয়েছে, যেভাবে নিরাশ হওয়া অন্যান্য নারীদের জন্য বৈধ নয়।
তাই নারীর ওপর কর্তব্য হচ্ছে, মাথার চুল সংরক্ষণ করা, চুলের যত্ন নেওয়া ও লম্বা বেণী বানিয়ে রাখা, মাথার ওপর বা ঘাড়ে জমা করে রাখা নিষেধ।
শাইখুল শাইখুল ইসলাম ইবন তাইমিয়া রহ. বলেন: “কতক অসৎ নারী দুই কাঁধের মাঝে চুলের একটি খোঁপা বা বেণী বানিয়ে ঝুলিয়ে রাখে”।
সৌদি আরবের মুফতি শাইখ মুহাম্মাদ ইবন ইবরাহীম রহ. বলেন: “এ যুগে কতক মুসলিম নারী, মাথার চুলকে যেভাবে একপাশে নিয়ে ঘাড়ের নিকট খোপা বানিয়ে রাখে অথবা মাথার ওপর স্তূপ করে রাখে, যেরূপ পশ্চিমা ও ইউরোপীয় নারীরা করে তা বৈধ নয়। কারণ, এতে কাফিরদের নারীদের সাথে সামঞ্জস্য হয়। আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত একটি লম্বা হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
»صِنْفَانِ مِنْ أَهْلِ النَّارِ، لَمْ أَرَهُمَا قَوْمٌ مَعَهُمْ سِيَاطٌ كَأَذْنَابِ الْبَقَرِ يَضْرِبُونَ بِهَا النَّاسَ، وَنِسَاءٌ كَاسِيَاتٌ عَارِيَاتٌ مُمِيلَاتٌ مَائِلَاتٌ، رُءُوسُهُنَّ كَأَسْنِمَةِ الْبُخْتِ الْمَائِلَةِ، لَا يَدْخُلْنَ الْجَنَّةَ وَلَا يَجِدْنَ رِيحَهَا، وَإِنَّ رِيحَهَا لَيُوجَدُ مِنْ مَسِيرَةِ كَذَا وَكَذَا«
“দু’প্রকার জাহান্নামী লোক যাদের আমি এখনো দেখি নি: এক প্রকার লোকের সাথে গরুর লেজের ন্যায় লাঠি থাকবে, তা দিয়ে তারা মানুষদের পেটাবে। আর পোশাক পরিহিত বিবস্ত্র নারী, তারা নিজেরা ধাবিত হয় ও অপরকে ধাবিত করে। তাদের মাথা উটের ঝুঁকে পড়া কুজের ন্যায়। তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে না এবং তার গন্ধও পাবে না, যদিও তার গন্ধ এত এত দূরত্ব থেকে পাওয়া যায়”।
“ধাবিত হয় ও ধাবিত করে” কথার ব্যাখ্যায় কতক আলেম বলেন: “তারা নিজেরা এমনভাবে চিরুনি করে যা আবেদনময়ী ও অপরকে আকৃষ্টকারী এবং অপরকেও তারা সেভাবে চিরুনি করে দেয়, যা নষ্ট নারীদের চিরুনি করার রীতি। পশ্চিমা নারী এবং তাদের অনুসারী বিপথগামী মুসলিম নারীদের চিরুনি করার এটিই রীতি।
যেরূপ নিষেধ বিনা প্রয়োজনে মুসলিম নারীর মাথার চুল কর্তন অথবা ছোট করা, সেরূপ নিষেধ তার চুলের সাথে অপরের চুল যুক্ত করা ও অপরের চুল দ্বারা তার চুল বর্ধিত করা। কারণ, সহীহ বুখারী বুখারী ও মুসলিমে এসেছে:
»لعن رسول الله صلى الله عليه وسلم الواصلة والمستوصلة«
“রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ওয়াসিলাহ ও মুসতাওসিলাহকে অভিসম্পাত করেছেন”।  
‘ওয়াসিলাহ’ সে নারীকে বলা হয়, যে নিজের চুলের সাথে অপরের চুল যোগ করে, আর যে নারী চুল যোগ করার কাজ করে তাকে বলা হয় মুসতাওসিলাহ। এ কাজ ও পেশায় মিথ্যার আশ্রয় গ্রহণ করা হয় তাই হারাম। চুল যোগ করার পর্যায়ে পড়ে বারুকা তথা ‘পরচুলা’ পরিধান করা। বুখারী, মুসলিম ও অন্যান্য মুহাদ্দিসগণ বর্ণনা করেন: মু‘আবিয়া রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু মদিনায় এসে খুৎবা প্রদান করেন, তখন তিনি চুলের একটি খোঁপা অথবা চুলের কিছু অংশ বের করেন এবং বলেন: তোমাদের নারীদের কী হলো, তারা তাদের মাথা এরূপ করে? আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি:
»مَا مِنِ امْرَأَةٍ تَجْعَلُ فِي رَأْسِهَا شَعْرًا مِنْ شَعْرِ غَيْرِهَا، إِلا كَانَ زُورًا«
“যে কোনো নারী নিজের মাথায় অপরের চুল রাখবে সে মিথ্যার আশ্রয় গ্রহণকারী”।
‘বারুকা’ বা ‘পরচুলা’ একপ্রকার কৃত্রিম চুল, যা দেখতে মাথার চুলের ন্যায়। এগুলো পরিধান করাও মিথ্যার আশ্রয় গ্রহণ করার শামিল।
খ. চেঁছে অথবা ছেঁটে অথবা লোম নাশক দ্রব্য ব্যবহার করে ভ্রুর পশম সম্পূর্ণ বা আংশিক দূর করা মুসলিম নারীর জন্য হারাম। কারণ, এটাকে আরবিতে ‘নামস’ বলে, যা থেকে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বারণ করেছেন। ইমাম নাসাঈ বর্ণনা করেন:
»لعن صلى الله عليه وسلم النامصة والمتنمصة«
“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নামিসাহ ও মুতানাম্মিসাহকে লা‘নত করেছেন”।  
‘নামিসাহ’ সে নারীকে বলা হয়, যে নিজের ধারণায় সৌন্দর্য চর্চা করতে গিয়ে পূর্ণ ভ্রু বা আংশিক ভ্রু ফেলে দেয়। আর যে এ কাজ করে তাকে ‘মুতানাম্মিসাহ’ বলা হয়। এ জাতীয় কাজ আল্লাহর সৃষ্টিতে পরিবর্তন আনার শামিল, যা থেকে ইসলাম কঠোরভাবে নিষেধ করেছে, আর শয়তান বনী আদমকে দিয়ে এ নিষেধাজ্ঞা ভঙ্গ করার প্রতিজ্ঞা করে এসেছে। যেমন, আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿وَلَأٓمُرَنَّهُمۡ فَلَيُغَيِّرُنَّ خَلۡقَ ٱللَّهِۚ﴾ [النساء: ١١٩]  
“আমরা অবশ্যই তাদেরকে নির্দেশ করব, যেন তারা আল্লাহর সৃষ্টিকে পরিবর্তন করে”। [সূরা আন-নিসা, আয়াত: ১১৯]
অনুরূপ সহীহ বুখারী ও মুসলিমে ইবন মাসউদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন:
»لعن الله الواشمات والمستوشمات والنامصات والمتنمصات والمتفلجات للحسن، المغيرات خلق الله«
“আল্লাহ তা‘আলা লা‘নত করেছেন উল্কি গ্রহণকারী ও উল্কি অঙ্কনকারী। কৃত্রিম চুল সংযোগকারী ও কৃত্রিম চুল সংযোজন পেশায় নিয়োজিত নারীকে এবং যারা সৌন্দর্যের জন্য দাঁত ফাঁক করে, আল্লাহর সৃষ্টি পরিবর্তন করে”।  
অতঃপর ইবন মা‘সউদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যাদেরকে লা‘নত করেছেন আমি কি তাদেরকে লা‘নত করব না অথচ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আনুগত্য করার নির্দেশ আল্লাহর কিতাবে রয়েছে?! আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
 ﴿وَمَآ ءَاتَىٰكُمُ ٱلرَّسُولُ فَخُذُوهُ وَمَا نَهَىٰكُمۡ عَنۡهُ فَٱنتَهُواْ﴾ [الحشر: ٧]  
“আর রাসূল যা তোমাদেরকে দিয়েছে তা গ্রহণ কর এবং যা থেকে তিনি তোমাদেরকে নিষেধ করেছেন, তোমরা (তা থেকে) বিরত থাক”। [সূরা আল-হাশর, আয়াত: ৭]
ইবন কাসির রহ. স্বীয় তাফসীর গ্রন্থে এ আলোচনা করেছেন।
বর্তমান যুগে বিপদজনক এ কবিরাহ গুনাহতে অনেক নারীই লিপ্ত, কৃত্রিম চুল সংযোজন করা তাদের নিত্যদিনের সাজ-সজ্জার অন্তর্ভুক্ত। অথচ এ জাতীয় কর্মের নির্দেশ যদি স্বামী করে, তবুও তার অনুসরণ করা বৈধ নয়। কারণ, এটা পাপ।
গ. সৌন্দর্যের জন্য মুসলিম নারীর দাঁত ফাঁক করা হারাম। যেমন, সুন্দর করার উদ্দেশ্যে রেত দিয়ে ঘষা, যাতে দাঁত সামান্য ফাঁক হয়। হ্যাঁ, দাঁত যদি বক্র হয় ও তাতে বিকৃতি থাকে, তবে অপারেশন দ্বারা ঠিক করা বৈধ। অথবা দাঁতে পোকা হলে দূর করা দুরস্ত আছে। কারণ, এটা চিকিৎসা ও বিকৃতি দূর করার শামিল, যা দন্ত চিকিৎসকের কাজ।
ঘ. শরীরে উল্কি আঁকা নারীর জন্য হারাম। কারণ, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উল্কি গ্রহণকারী ও উল্কি অঙ্কনকারী উভয়কে লা‘নত করেছেন। হাদীসে অভিশপ্ত الواشمة ‘ওয়াশিমা’ ঐ নারীকে বলা হয়, যে সুঁই দ্বারা হাত অথবা চেহারা ছিদ্র করে, অতঃপর তা সুরমা বা কালি দিয়ে ভরাট বা ফিলিং করে দেয়, আর অভিশপ্ত المستوشمة ঐ নারীকে বলা হয়, যার সাথে এসব করা হয়। এ জাতীয় কাজ হারাম ও কবিরা গুনাহ। এসব গ্রহণকারী ও সম্পাদনকারী উভয়কে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লা‘নত করেছেন, আর কবিরা গুনাহ ব্যতীত কোনো গুনাহর জন্য লা‘নত করা হয় না।
ঙ. নারীদের চুল রঙিন করা এবং স্বর্ণ ও খেজাব ব্যবহার করার বিধান:
১. খেযাব বা মেহেদির ব্যবহার: ইমাম নাওয়াওয়ী রহ. বলেন: “বিবাহিত নারীর দুই হাত ও দুই পা মেহেদী দ্বারা খেযাব করা মুস্তাহাব। কারণ, এ মর্মে অনেক প্রসিদ্ধ হাদীস রয়েছে”।  প্রসিদ্ধ হাদীস দ্বারা তিনি আবু দাউদে বর্ণিত হাদীসের দিকে ইঙ্গিত করেছেন:
»أن امرأة سألت عائشة رضي الله عنها عن خضاب الحناء، فقالت: لا بأس به، ولكني أكرهه، كان حبيبي رسول الله صلى الله عليه وسلم يكره ريحه«
“জনৈকা নারী আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহাকে মেহেদীর খেজাব সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেন, তিনি বলেন: এতে সমস্যা নেই, তবে আমি তা পছন্দ করি না। কারণ আমার হাবীব সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা পছন্দ করতেন না”।  
আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা ‘আনহা থেকে আরো বর্ণিত, তিনি বলেন:
»أومأت امرأة من وراء ستر - بيدها كتاب - إلى رسول الله صلى الله عليه وسلم فقبض النبي صلى الله عليه وسلم يده وقال: ما أدري أيد رجل أم يد امرأة ؟ قالت: بل يد امرأة: قال: لو كنت امرأة لغيرت أظفارك - يعني: بالحناء«
“জনৈকা নারী হাতে কিতাব নিয়ে পর্দার আড়াল থেকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দিকে ইশারা করেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর নিজের হাত গুটিয়ে নিয়ে বলেন: আমি জানি না এটা পুরুষের হাত না নারীর হাত? সে বলল: বরং নারীর হাত। তিনি বলেন: তুমি নারী হলে অবশ্যই তোমার নখ পরিবর্তন করতে- অর্থাৎ মেহেদী দিয়ে”।  তবে এমন বস্তু দিয়ে রঙ করবে না, যা জমে যায় ও পবিত্রতা অর্জনে বাঁধা হয়।
২. নারীর চুল রঙ্গিন করার বিধান:
নারী যদি বৃদ্ধা হয়, তাহলে কালো ব্যতীত যে কোনো রঙ্গ দ্বারা তার চুল রঙ্গিন করা বৈধ। কারণ, কালো রঙ ব্যবহার করা থেকে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ব্যাপক নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।
ইমাম নাওয়াওয়ী রহ. ‘রিয়াদুস সালিহীন’ গ্রন্থে একটি অধ্যায় রচনা করেছেন, যার শিরোনাম: “নারী ও পুরুষের চুলে কালো খেযাব ব্যবহার করা নিষেধ”।  তিনি আল-মাজমু‘ গ্রন্থে বলেন: “নারী ও পুরুষ উভয়ের জন্য কালো খেযাব ব্যবহার করা নিষেধ, এতে কোনো পার্থক্য নেই। এটিই আমাদের মাযহাব”।
যুবতী নারীর কালো চুল অন্য রঙ দ্বারা রঙ্গিন করা আমার দৃষ্টিতে বৈধ নয়, তার কোনো প্রয়োজনও নেই। কারণ, চুলের ক্ষেত্রে কালোই সৌন্দর্য। চুলের কালো রঙ বিকৃতি নয় যে, পরিবর্তন করতে হবে। দ্বিতীয়ত এতে কাফির নারীদের সাথে সামঞ্জস্য হয়।
৩. স্বর্ণ ও রূপার ব্যবহার:
সমাজে প্রচলিত রীতি মোতাবেক স্বর্ণ ও রূপা দ্বারা নারীর সৌন্দর্য গ্রহণ করা বৈধ। এটা আলেমদের ঐকমত্যে। তবে পর-পুরুষের জন্য তার অলঙ্কার প্রকাশ করা বৈধ নয়, তাদের থেকে আড়ালে রাখবে, বিশেষভাবে যখন সে ঘর থেকে বের হয় ও পুরুষদের দৃষ্টির নাগালে থাকে। কারণ, এতে ফিতনার আশঙ্কা রয়েছে। এ জন্য নারীর পায়ের নিচে কাপড়ের আড়ালে থাকা অলঙ্কারের আওয়াজও পুরুষকে শুনাতে নিষেধ করা হয়েছে।  অতএব, প্রকাশ্য অলঙ্কারের হুকুম সহজে অনুমেয়?

 

তৃতীয় পরিচ্ছেদ
হায়েয, ইস্তেহাযাহ ও নিফাস সংক্রান্ত বিধান
১. হায়েযের সংজ্ঞা:
হায়েযের আভিধানিক অর্থ প্রবাহিত হওয়া। শরী‘আতের পরিভাষায় নির্দিষ্ট সময় নারীর রেহেমের গভীর থেকে কোনো অসুখ ও আঘাত ব্যতীত যে রক্ত প্রবাহিত হয় তা-ই হায়েয। হায়েয মনুষ্য স্বভাব ও প্রকৃতি, যার ওপর আল্লাহ আদমের মেয়েদের সৃষ্টি করেছেন। তাদের গর্ভাশয়ে আল্লাহ এ রক্ত সৃষ্টি করেন যেন গর্ভে থাকা বাচ্চা তা খাবার হিসেবে গ্রহণ করে। প্রসবের পর এ রক্তই দুধ হিসেবে রূপান্তর হয়। নারী গর্ভবতী বা দুগ্ধ দানকারীনী না হলে গর্ভাশয়ে সৃষ্ট রক্ত ব্যবহৃত হওয়ার কোনো স্থান থাকে না, তাই তা নির্দিষ্ট সময় জরায়ু দিয়ে নির্গত হয়, যার নাম ঋতু, রজঃস্রাব, মাসিক ও পিরিয়ড ইত্যাদি।
২. হায়েযের বয়স:
নারীরা ন্যূনতম নয় বছরে ঋতুমতী হয়, পঞ্চাশ বছর পর্যন্ত তা অব্যাহত থাকে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿وَٱلَّٰٓـِٔي يَئِسۡنَ مِنَ ٱلۡمَحِيضِ مِن نِّسَآئِكُمۡ إِنِ ٱرۡتَبۡتُمۡ فَعِدَّتُهُنَّ ثَلَٰثَةُ أَشۡهُرٖ وَٱلَّٰٓـِٔي لَمۡ يَحِضۡنَۚ﴾ [الطلاق: ٤]  
“তোমাদের স্ত্রীদের মধ্যে যারা ঋতুমতী হওয়ার ফলে কাল অতিক্রম করে গেছে, তাদের ইদ্দত সম্পর্কে তোমরা যদি সংশয়ে থাক এবং যারা এখনও ঋতুর বয়সে পৌঁছে নি তাদের ইদ্দত কালও হবে তিন মাস”। [সূরা আত-ত্বালাক, আয়াত:৪]
এখানে ঋতুমতীর ইদ্দতকাল অতিক্রম করার অর্থ পঞ্চাশ বছরে উপনীত হওয়া। আর ঋতুর বয়সে পৌঁছে নি অর্থ যে মেয়েরা এখনো ছোট, নয় বছরও হয় নি যাদের।
৩. হায়েযের বিধান:
ক. হায়েয অবস্থায় সামনের রাস্তা দিয়ে স্ত্রীগমন করা হারাম:
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿ وَيَسۡ‍َٔلُونَكَ عَنِ ٱلۡمَحِيضِۖ قُلۡ هُوَ أَذٗى فَٱعۡتَزِلُواْ ٱلنِّسَآءَ فِي ٱلۡمَحِيضِ وَلَا تَقۡرَبُوهُنَّ حَتَّىٰ يَطۡهُرۡنَۖ فَإِذَا تَطَهَّرۡنَ فَأۡتُوهُنَّ مِنۡ حَيۡثُ أَمَرَكُمُ ٱللَّهُۚ إِنَّ ٱللَّهَ يُحِبُّ ٱلتَّوَّٰبِينَ وَيُحِبُّ ٱلۡمُتَطَهِّرِينَ ٢٢٢ ﴾ [البقرة: ٢٢٢]  
“আর তারা তোমাকে হায়েয সম্পর্কে প্রশ্ন করে। বল, তা অপরিচ্ছন্নতা। সুতরাং তোমরা হায়েয কালে স্ত্রীদের থেকে দূরে থাক এবং তারা পবিত্র না হওয়া পর্যন্ত তাদের নিকটবর্তী হয়ো না। অতঃপর যখন তারা পবিত্র হবে তখন তাদের নিকট আস, যেভাবে আল্লাহ তোমাদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন। নিশ্চয় আল্লাহ তওবাকারীদের ভালোবাসেন এবং ভালোবাসেন অধিক পবিত্রতা অর্জনকারীদের”। [সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ২২২]
নারীর রক্ত বন্ধ হওয়া ও তার গোসল করার আগ পর্যন্ত স্ত্রীগমনের নিষেধাজ্ঞা বহাল থাকে। কারণ, আল্লাহ বলেছেন:
﴿وَلَا تَقۡرَبُوهُنَّ حَتَّىٰ يَطۡهُرۡنَۖ فَإِذَا تَطَهَّرۡنَ فَأۡتُوهُنَّ مِنۡ حَيۡثُ أَمَرَكُمُ ٱللَّهُۚ ﴾ [البقرة: ٢٢٢]  
“তারা পবিত্র না হওয়া পর্যন্ত তাদের নিকটবর্তী হয়ো না। অতঃপর যখন তারা পবিত্র হবে তখন তাদের নিকট আস, যেভাবে আল্লাহ তোমাদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন”। [সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ২২২]
ঋতুমতীর স্বামী সামনের রাস্তা ব্যতীত যেভাবে ইচ্ছা তার থেকে উপকৃত হবে। কারণ, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
»اصنعوا كل شيء إلا النكاح«
“স্ত্রীগমন ব্যতীত সব কিছু কর”।
খ. ঋতুমতী ঋতুকালীন সময় সালাত ও সিয়াম ত্যাগ করবে:
ঋতুমতীর পক্ষে সালাত পড়া ও সিয়াম রাখা হারাম, তাদের সালাত ও সিয়াম শুদ্ধ নয়। কারণ, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
»أليس إذا حاضت المرأة لم تصل ولم تصم؟«
“এমন কি নয় যে, ঋতুকালীন সময়ে নারী সালাত পড়ে না ও সিয়াম রাখে না”?  
ঋতুমতী নারী পাক হলে শুধু সিয়াম কাযা করবে, সালাত কাযা করবে না। কারণ, আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা বলেন:
»كنا نحيض على عهد رسول الله صلى الله عليه وسلم فكنا نؤمر بقضاء الصوم، ولا نؤمر بقضاء الصلاة«
“আমরা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যুগে ঋতুমতী হতাম, আমাদেরকে তখন সিয়াম কাযা করার নির্দেশ প্রদান করা হত; কিন্তু সালাত কাযা করার নির্দেশ প্রদান করা হত না”।
কী কারণে সিয়াম কাযা করবে, সালাত কাযা করবে না -তা আল্লাহ ভালো জানেন, তবে আমাদের মনে হয় সালাত কাযা করা নারীর জন্য কষ্টকর। কারণ, প্রতিদিন তা বারবার আসে, যে কষ্ট সিয়ামে নেই, তাই সিয়াম কাযা করার নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে, সালাত কাযা করার নির্দেশ প্রদান করা হয় নি।
গ. ঋতুমতী নারীর পক্ষে পর্দা ব্যতীত মুসহাফ/কুরআন স্পর্শ করা হারাম:
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿لَّايَمَسُّهُۥٓإِلَّاٱلۡمُطَهَّرُونَ٧٩﴾ [الواقعة: ٧٩]  
“পবিত্রগণ ব্যতীত কেউ তা স্পর্শ করবে না”। [সূরা আল-ওয়াকি‘আহ, আয়াত: ৭৯]
দ্বিতীয়ত: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমর ইবন হাযমকে যে পত্র লিখেছেন, তাতে ছিল:
»لا يمس المصحف إلا طاهر«
“পবিত্র ব্যতীত কেউ মুসহাফ স্পর্শ করবে না”।  হাদীসটি মুতাওয়াতির মর্তবার, কারণ সবাই তা মেনে নিয়েছে। শাইখুল ইসলাম ইবন তাইমিয়্যাহ  রহ. বলেন: চার ইমামের মাযহাব হচ্ছে পবিত্রতা অর্জন করা ব্যতীত কেউ মুসহাফ স্পর্শ করবে না।
ঋতুমতী নারী কুরআনুল কারীম তিলাওয়াত করবে কি-না আহলে ইলমদের মাঝে মতবিরোধ রয়েছে। প্রয়োজন ব্যতীত তিলাওয়াত না করাই সতর্কতা। যেমন, ভুলে যাওয়ার আশঙ্কা একটি প্রয়োজন। আল্লাহ তা‘আলা ভালো জানেন।
ঘ. ঋতুমতী নারীর বায়তুল্লাহ তাওয়াফ করা হারাম:
কারণ, আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা যখন ঋতুমতী হন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বলেন:
»افعلي ما يفعل الحاج، غير ألا تطوفي بالبيت حتى تطهري«
“হাজীগণ যা করে তুমি তাই কর, তবে পবিত্র হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত বায়তুল্লাহ তাওয়াফ করো না”।
ঙ. ঋতুমতী নারীর মসজিদে অবস্থান করা হারাম:
ঋতুমতীর মসজিদে অবস্থান করা হারাম, কারণ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
»إني لا أحل المسجد لحائض ولا لجنب«
“আমি ঋতুমতী নারী ও জুনুব তথা গোসল ফরয হওয়া ব্যক্তির জন্য মসজিদ হালাল করি না”।  
অপর বর্ণনায় তিনি বলেন:
»إن المسجد لا يحل لحائض ولا جنب«
“ঋতুমতী ও জুনুবি ব্যক্তির জন্য মসজিদ হালাল নয়”।
তবে অবস্থান করা ব্যতীত মসজিদ দিয়ে অতিক্রম করা ঋতুমতীর জন্য বৈধ। কারণ, আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, মসজিদ থেকে আমাকে বিছানাটি দাও, আমি বললাম: আমি ঋতুমতী, তিনি বললেন: তোমার হাতে তোমার ঋতু নয়”।
ঋতুমতী নারী শর‘ঈ যিকিরগুলো সম্পাদন করবে। যেমন, লা-ইলা-হা ইল্লাল্লাহ, আল্লাহু আকবার, সুবহানাল্লাহ ও অন্যান্য দো‘আ। অনুরূপ সকাল-সন্ধ্যা এবং ঘুমানো ও ঘুম থেকে উঠার মাসনুন দো‘আগুলো পড়া কোনো সমস্যা নয়। অনুরূপ তাফসীর, হাদীস ও ফিকহের কিতাব পড়াতে দোষ নেই।
হলুদ ও মেটে বর্ণের রক্তের হুকুম:
‘সুফরাহ’ বা হলুদ বর্ণ: সুফরাহ হচ্ছে নারীর রেহেম থেকে নির্গত পুঁজের ন্যায় তরল পদার্থ, যার উপর হলুদ বর্ণ অধিক প্রতিভাত হয়। আর ‘কুদরাহ’ হচ্ছে নারীর রেহেম থেকে নির্গত মেটে বর্ণের ন্যায় তরল পদার্থ। ঋতুকালীন সময় নারীর রেহেম থেকে সুফরাহ অথবা কুদরাহ বের হলে হায়েয গণ্য হবে এবং তার জন্য হায়েযের হুকুম প্রযোজ্য হবে। এ জাতীয় পদার্থ ঋতুকালীন সময় ব্যতীত অন্য সময় বের হলে হায়েয গণ্য হবে না, বরং তখন নারী নিজেকে পবিত্র জ্ঞান করবে। কারণ, উম্মে ‘আতিয়্যাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা বলেন: “আমরা পবিত্র হওয়ার পর ‘সুফরাহ’ ও ‘কুদরাহ’কে কিছুই গণ্য করতাম না”। হাদীসটি আবু দাউদ বর্ণনা করেছেন। ইমাম বুখারীও বর্ণনা করেছেন, তবে তিনি (পবিত্র হওয়ার পর) বাক্যটি বর্ণনা করেন নি। এ জাতীয় হাদীসকে মারফু‘ হাদীস বলা হয়। কারণ, এতে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সমর্থন বুঝা যায়। উম্মে ‘আতিয়্যার কথার অর্থ হায়েয অবস্থায় বা হায়েযের নির্দিষ্ট সময় যদি সুফরাহ বা কুদরাহ নির্গত হয় হায়েয হিসেবে গণ্য হবে এবং তার বিধানও হবে হায়েযের বিধান।
প্রশ্ন: নারী কীভাবে জানবে তার হায়েয শেষ?
উত্তর: রক্ত বন্ধ হলেই বুঝবে হায়েয শেষ। এর দু’টি আলামত:
প্রথম আলামত: হায়েযের পর সাদা পানি বের হওয়া, যা সাধারণত হায়েযের পরই বের হয়, অনেকটা চুনের পানির মত। কখনো তার রঙ হয় না, আবার নারীদের স্বভাব অনুসারে তার রঙ বিভিন্ন হয়।
দ্বিতীয় আলামত: শুষ্ক পদ্ধতি, অর্থাৎ নারী তার যোনি পথে কাপড়ের টুকরো অথবা তুলা দাখিল করবে, অতঃপর বের করলে যদি শুষ্ক বের হয়, তার উপর রক্ত, কুদরাহ ও সুফরার আলামত না থাকে, বুঝবে হায়েয শেষ।
৪. হায়েয শেষে ঋতুমতী নারীর করণীয়:
ঋতুমতী নারীর ঋতু শেষে গোসল করা জরুরি, অর্থাৎ পবিত্র হওয়ার নিয়তে সমস্ত শরীরে পানি প্রবাহিত করা। কারণ, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
»فإذا أقبلت حيضتك فدعي الصلاة، وإذا أدبرت فاغتسلي وصلي«
“যখন তোমার রজঃস্রাব শুরু হয় তখন সালাত ত্যাগ কর, আর যখন বিদায় নেয় গোসল কর ও সালাত পড়”।
ফরয গোসল করার নিয়ম: নাপাক দূর করা অথবা সালাত বা এ জাতীয় ইবাদতের নিয়ত করে ‘বিসমিল্লাহ’ বলে সমস্ত শরীরে পানি পৌঁছানো। বিশেষভাবে মাথার চুলের গোঁড়ায় পানি পৌঁছানো, চুলে খোঁপা বাঁধা থাকলে খোলা জরুরি নয়, তবে চুলের গোঁড়ায় অবশ্যই পানি পৌঁছানো জরুরি, যদি বড়ই অথবা পরিচ্ছন্নকারী কোনো বস্তু যেমন, সাবান ইত্যাদি ব্যবহার করা হয় খুব ভালো। গোসলের পর সুগন্ধি জাতীয় তুলা অথবা কোনো সুগন্ধি বস্তু যোনীতে ব্যবহার করা মুস্তাহাব। কারণ, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আসমা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহাকে অনুরূপ নির্দেশ প্রদান করেছেন। [মুসলিম]
সাবধানতা: ঋতু বা নিফাস থেকে সূর্যাস্তের পূর্বে পবিত্র হলে করণীয়:
নারী যদি সূর্যাস্তের পূর্বে ঋতু থেকে পবিত্র হয়, তার ওপর যোহর ও আসর সালাত পড়া জরুরি, আর যে সুবহে সাদিকের পূর্বে পবিত্র হবে তার ওপর মাগরিব ও এশার সালাত পড়া জরুরি। কারণ, অপারগতার সময় পরবর্তী সালাতের সময়কে পূর্ববর্তী সালাতের সময় গণ্য করা হয়। অর্থাৎ আসরের সময়কে যোহরের সময় ও এশার সময়কে মাগরিবের সময় গণ্য করা হয়।
শাইখুল ইসলাম ইবন তাইমিয়্যাহ  রহ. বলেন: “এ জন্যই জমহুর আলেম যেমন মালিক,শাফে‘ঈ শাফে‘ঈ ও আহমদ রহ. বলেন, ঋতুমতী নারী যদি দিনের শেষে পবিত্র হয় তখন যোহর ও আসর উভয় সালাত পড়বে, আর যদি রাতের শেষে পবিত্র তাহলে হয় মাগরিব ও এশা উভয় সালাত পড়বে। আব্দুর রহমান ইবন ‘আউফ, আবু হুরায়রা ও ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুম থেকে এরূপ বর্ণিত। কারণ, অপারগতার সময় আসর যোহরের ওয়াক্তকে এবং এশা মাগরিবের ওয়াক্তকে শামিল করে। অতএব, যদি দিনের শেষে সূর্যাস্তের পূর্বে পাক হয় তাহলে যোহরের সময় বাকি আছে, সুতরাং আসরের পূর্বে তা পড়ে নিবে। আর যদি রাতের শেষে পাক হয়, তাহলে মাগরিবের সময় বাকি আছে, সুতরাং এশার পূর্বে তা পড়ে নিবে। কারণ, এটা অপারগতার মুহূর্ত”।
আর যদি নারীর সালাতের ওয়াক্ত শুরু হয়েছে কিন্তু এখনো সে সালাত আদায় করে নি এমতাবস্থায় যদি তার ঋতু বা নিফাস আরম্ভ হয় তাহলে বিশুদ্ধ মতে উক্ত সালাত তার কাযা করতে হবে না।
শাইখুল ইসলাম ইবন তাইমিয়্যাহ রহ. বলেন: “আবু হানিফা ও মালিকের মাযহাব হচ্ছে এ জাতীয় নারীর তাদের সালাত কাযা করতে হবে না, দলীলের বিবেচনায় এটিই মজবুত। কারণ, কাযা ওয়াজিব হয় নতুনভাবে ওয়াজিব হওয়ার কারণ পাওয়া গেলে, এখানে সে কারণ নেই। দ্বিতীয়ত ঋতুমতী যদিও কিছু সময় বিলম্ব করেছে তবে সেটা ছিল তার বৈধ সময়ের মধ্যে তাই সে সীমালঙ্ঘনকারী নয়। অনুরূপ ঘুমন্ত ও বিস্মৃত ব্যক্তি সীমালঙ্ঘনকারী নয়, তবে তাদের সালাত কাযা হিসেবে নয় আদায় হিসেবে ধর্তব্য হবে, কারণ তারা যখন জাগ্রত হয় ও যখন তাদের স্মরণ হয় তখন তাদের সালাতের ওয়াক্ত হয়”।  সমাপ্ত।
দ্বিতীয়ত: ইস্তেহাযাহ:
১. ইস্তেহাযার হুকুম:
ইস্তেহাযার সংজ্ঞা: মাসিক আসার নির্দিষ্ট সময় ছাড়া ‘আযেল’ নামক কোনো রগ থেকে যে রক্তক্ষরণ হয় তাই ইস্তেহাযাহ। ইস্তেহাযার বিষয়টি জটিল, কারণ হায়েযের রক্তের সাথে তার রক্ত সাদৃশ্যপূর্ণ।
যদি নারীর লাগাতার অথবা অধিকাংশ সময় রক্ত প্রবাহিত হয় তাহলে কতটুকু হায়েয হিসেবে ধরা হবে আর কতটুকু ইস্তেহাযা হিসেবে ধরা হবে যার সাথে সিয়াম ও সালাত আদায় করা ছাড়া যাবে না, তা জানা জরুরি। কারণ, মুস্তাহাযাহ নারী স্বাভাবিক নারীর মতো পবিত্র।
মুস্তাহাযাহ নারীর তিনটি অবস্থা:
প্রথম অবস্থা: ইস্তেহাযায় আক্রান্ত হওয়ার পূর্বে তার নির্দিষ্ট অভ্যাস থাকবে, যেমন ইস্তেহাযার পূর্বে মাসের শুরুতে অথবা মাঝখানে পাঁচ দিন অথবা আট দিন রীতিমত হায়েয আসা। এ জাতীয় নারী ইস্তেহাযায় আক্রান্ত হলে তাদের ঋতুস্রাবের দিন-সংখ্যা ও সময় জানা সহজ, সে তার পূর্বের অভ্যাস মোতাবেক হায়েযের দিনগুলোতে বিরতি নিবে ও সালাত, সিয়াম ত্যাগ করবে। এ সময়টা তার হায়েয। হায়েয শেষে গোসল করে সালাত আদায় করবে এবং অবশিষ্ট রক্তকে ইস্তেহাযার রক্ত গণনা করবে। কারণ, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উম্মে হাবিবাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহাকে বলেন:
»امكثي قدر ما كانت تحبسك حيضتك، ثم اغتسلي وصلي«
“পূর্বে তোমার হায়েয যত দিন তোমাকে বিরত রাখত সে পরিমাণ তুমি বিরতি নাও, অতঃপর গোসল কর ও সালাত পড়”।  
অধিকন্তু নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফাতিমা বিনতে আবী হুবাইশকে বলেন:
»إنما ذلك عرق، وليس بحيض، فإذا أقبلت حيضتك فدعي الصلاة«
“সেটি রক্তক্ষরণ, হায়েয নয়, যখন তোমার হায়েয আসে সালাত ত্যাগ কর”।
দ্বিতীয় অবস্থা: ঋতুমতী নারীর নির্দিষ্ট অভ্যাস নেই তবে তার হায়েযের রক্ত বুঝা ও চেনা যায়। যেমন, ঋতুমতীর কিছু রক্ত হায়েযের রক্তের ন্যায় কালো অথবা ঘন অথবা বিশেষ গন্ধযুক্ত, যা ঋতু বা হায়েয হিসেবে সহজে চিহ্নিত করা যায়, কিন্তু তার অবশিষ্ট রক্ত এরূপ নয়, উদাহরণত লাল কোনো গন্ধ নেই, ঘনও নয়। এ অবস্থায় যে ক’দিন তার হায়েযের মতো রক্ত আসে সে ক’দিন সে বিরতি নিবে এবং সালাত ও সিয়াম ত্যাগ করবে, অবশিষ্ট রক্তকে ইস্তেহাযাহ গণনা করবে। হায়েযের আলামত যুক্ত রক্ত বন্ধ হলে গোসল করে সালাত ও সিয়াম আদায় করবে। এখন সে পবিত্র। কারণ, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফাতিমা বিনতে আবী হুবাইশকে বলেন:
»إذا كان الحيض فإنه أسود يعرف، فأمسكي عن الصلاة، فإذا كان الآخر فتوضئي وصلي«
“যদি হায়েয হয় অবশ্যই কালো হবে যা চিনা যায়। অতএব, সালাত থেকে বিরত থাক। অতঃপর যখন অন্য রক্ত শুরু হয় অযু কর ও সালাত আদায় কর”।  
এ থেকে জানা যায় যে, মুস্তাহাযা নারী রক্তের নির্দিষ্ট অবস্থাকে আলামত হিসেবে গণ্য করবে এবং তার ভিত্তিতে হায়েয ও ইস্তেহাযাহ চিহ্নিত করবে।
তৃতীয় অবস্থা: মুস্তাহাযাহ নারীর যদি নির্দিষ্ট অভ্যাস এবং হায়েযকে ইস্তেহাযা থেকে পৃথক করার বিশেষ আলামত না থাকে, তাহলে সে প্রতি মাস হায়েযের সাধারণ সংখ্যা ছয় অথবা সাত দিন বিরতি নিবে। কারণ, এটিই নারীদের ঋতুস্রাবের সাধারণ নিয়ম। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হামনাহ বিনতে জাহাশকে বলেন:
»إنما هي ركضة من الشيطان، فتحيضي ستة أيام أو سبعة أيام، ثم اغتسلي، فإذا استنقأت فصلي أربعة وعشرين أو ثلاثة وعشرين، وصومي وصلي، فإن ذلك يجزئك، وكذلك فافعلي كما تحيض النساء«
“এটা শয়তানের আঘাত, তুমি ছয় অথবা সাত দিন হায়েয গণনা কর, অতঃপর গোসল কর, যখন তুমি পাক হবে চব্বিশ অথবা তেইশ দিন সালাত পড়, সিয়াম রাখ ও সালাত পড়। কারণ, তোমার জন্য এটিই যথেষ্ট। সাধারণ নারীরা যেরূপ ঋতুমতী হয় তুমি সেরূপ কর”।
পূর্বের আলোচনার সারাংশ: যে মুস্তাহাযা নারীর অভ্যাস আছে সে তার অভ্যাস মোতাবেক হায়েয গণনা করবে। আর যার অভ্যাস নেই, কিন্তু তার হায়েযের রক্তের নির্দিষ্ট আলামত রয়েছে সে আলামত মোতাবেক হায়েয গণনা করবে। আর যার দু’টি থেকে কোনো আলামত নেই সে প্রতি মাসে ছয় অথবা সাত দিন হায়েয গণনা করবে। এ ব্যাখ্যা মোতাবেক মুস্তাহাযা নারীর জন্য বর্ণিত নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের তিনটি হাদীসের মাঝে সমন্বয় হয়।
শাইখুল ইসলাম ইবন তাইমিয়্যাহ রহ. বলেন: মুস্তাহাযাহ নারীর ছয়টি আলামত বলা হয়:
১. অভ্যাস: এটিই শক্ত ও মজবুত আলামত। কারণ, তার সুস্থাবস্থায় এ সময়টায় হায়েয আসত, তাই এগুলো তার হায়েযের নির্ধারিত দিনক্ষণ ব্যতীত কিছু নয়।
২. রক্তের নির্দিষ্ট আলামত: কারণ হায়েযের রক্ত কালো, ঘন ও দুর্গন্ধযুক্ত বেশি হয়, সাধারণত লাল হয় না।
৩. স্বাভাবিক নারীদের সাধারণ অভ্যাস: কারণ মুস্তাহাযাহ নারীর ব্যতিক্রম অভ্যাসকে অপরাপর নারীর সাধারণ অভ্যাসের সাথে তুলনা করাই যুক্তিযুক্ত। মুস্তাহাযাহ নারীর হায়েয চিহ্নিত করার এ তিনটি আলামত সুন্নত দ্বারা প্রমাণিত। অতঃপর তিনি অন্যান্য আলামত উল্লেখ করেন। শেষে বলেন সঠিক মত হচ্ছে হাদীসের আলামত গ্রহণ করা ও অন্যান্য আলামত ত্যাগ করা”।
২. মুস্তাহাযাহ নারীর পবিত্র অবস্থায় করণীয়:
ক. পূর্বের বর্ণনা মোতাবেক মুস্তাহাযাহ নারীর হায়েয শেষে গোসল করা ওয়াজিব।
খ. প্রত্যেক সালাতের সময় যোনিপথ থেকে নির্গত ময়লা দূরীভূত করার জন্য লজ্জাস্থান ধৌত করা। নির্গত রক্ত যেন বাহিরে প্রবাহিত না হয় বা গড়িয়ে না পড়ে সে জন্য যোনি পথের বহির্মুখে তুলা বা অনুরূপ বস্তু ব্যবহার করবে এবং তা বেঁধে দিবে যেন খসে না পড়ে। অতঃপর প্রত্যেক সালাতের সময় ওযু করবে। কারণ, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুস্তাহাযা নারীর ক্ষেত্রে বলেন:
»تدع الصلاة أيام أقرائها، ثم تغتسل وتتوضأ عند كل صلاة«
“মুস্তাহাযাহ নারী তার হায়েযের দিনগুলোয় সালাত ত্যাগ করবে, অতঃপর গোসল করবে ও প্রত্যেক সালাতের জন্য ওযু করবে”।  
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেন:
»أنعت لك الكرسف تحشين به المكان«
“তুমি নিজের জন্য কুরসুফ (সুতি কাপড়) বানিয়ে নাও এবং তার দ্বারা স্থানটি ঢেকে নাও”।  
ডাক্তারি গবেষণায় তৈরি ন্যাপকিন ব্যবহার করাও বৈধ।
তৃতীয়ত: নিফাস:
১. নিফাসের সংজ্ঞা ও সময়:
বাচ্চা প্রসবের সময় ও তার পরবর্তীতে রেহেম থেকে যে রক্ত বের হয় তাই নিফাস। এগুলো মূলত গর্ভকালীন সময় গর্ভাশয়ে স্তূপ হওয়া রক্ত, বাচ্চা প্রসব হলে অল্পঅল্প তা বের হয়। প্রসবের আলামত শুরু হওয়ার পর যে রক্ত বের হয় তাও নিফাস, যদিও প্রসব বিলম্বে হয়। ফকিহগণ বলেন, প্রসবের দুই দিন বা তিন দিন পূর্বে হলে নিফাস অন্যথায় নিফাস নয়। নিফাসের রক্ত সাধারণত প্রসবের সাথে আরম্ভ হয়। প্রসবের জন্য পরিপূর্ণ বাচ্চা ভূমিষ্ঠ হওয়া জরুরি, তার পরবর্তী রক্ত নিফাস হিসেবে গণ্য হবে। মায়ের পেটে সর্বনিম্ন একাশি দিন সম্পন্ন হলে বাচ্চার শরীরের গঠন আকৃতি পূর্ণ হয়, যদি তার পূর্বে রেহেম থেকে জমাট বাঁধা কিছু বের হয় এবং সাথে রক্তও আসে, তাহলে তা নিফাস হিসেবে গণ্য হবে না, সালাত ও সিয়াম যথারীতি আদায় করবে, কারণ তা দূষিত রক্ত ও রক্তক্ষরণ হিসেবে নির্গত, তার বিধান মুস্তাহাযা নারীর বিধান।
নিফাসের সর্বাধিক সময় চল্লিশ দিন, যার সূচনা হয় প্রসব থেকে অথবা তার দুই বা তিনদিন পূর্ব থেকে, যা পূর্বে বর্ণিত হয়ে‍ছে। উম্মে সালামা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহার হাদীসে এসেছে:
»كانت النفساء تجلس على عهد رسول الله صلى الله عليه وسلم أربعين يوما«
“নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যুগে নিফাসের নারীরা চল্লিশ দিন বিরতি নিত”।
নিফাসের সর্বোচ্চ মেয়াদ চল্লিশ দিন। এ বিষয়ে সকল আহলে ইলম একমত। ইমাম তিরমিযী প্রমুখগণ আলেমদের এরূপ ঐকমত্য নকল করেছেন। আর যে চল্লিশ দিনের পূর্বে পবিত্র হলো, যেমন তার রক্ত বন্ধ হলো, সে গোসল করবে ও সালাত আদায় করবে। নিফাসের সর্বনিম্ন কোনো মেয়াদ নেই। কারণ তার নির্দিষ্ট মেয়াদ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত হয় নি। যদি চল্লিশ দিন পূর্ণ হওয়ার পরও রক্ত বন্ধ না হয়, তাহলে সেটা যদি হায়েযের সময় হয় হায়েয গণ্য হবে, যদি হায়েযের সময় না হয় ইস্তেহাযাহ গণ্য হবে, তাই চল্লিশ দিন পার হলে ইবাদত ত্যাগ করবে না। যদি রক্ত আসার সময়কাল চল্লিশ দিনের বেশি  হয়, কিন্তু বিরতি দিয়ে দিয়ে রক্ত আসে, যার সাথে হায়েযের অভ্যাসের মিল নেই, এটিই ইখতিলাফের বিষয়।
খ. নিফাস সংক্রান্ত বিধান:
নিম্নের অবস্থায় নিফাসের বিধান হায়েযের বিধানের মত:
১. নিফাসের নারীদের সাথে সঙ্গম করা হারাম। যেমন হায়েযের নারীদের সাথে সঙ্গম করা হারাম, তবে সঙ্গম ব্যতীত অন্যান্য পদ্ধতিতে ভোগ করা বৈধ।
২. হায়েযা নারীর ন্যায় নিফাসের নারীদের জন্যও সিয়াম রাখা, সালাত পড়া ও বায়তুল্লাহর তাওয়াফ করা হারাম।
৩. নিফাসের নারীদের জন্য কুরআন তিলাওয়াত ও স্পর্শ করা হারাম, তবে ভুলে যাওয়ার আশঙ্কা হলে বৈধ। যেমন, হায়েযা নারী।
৪. হায়েযা নারীর মতো নিফাসের নারীর ছুটে যাওয়া সিয়াম কাযা করা ওয়াজিব।
৫ হায়েযা নারীর মতো নিফাসের নারীর নিফাস শেষে গোসল করা ওয়াজিব। দলীল:
১. উম্মে সালামাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন:
»كانت النفساء تجلس على عهد رسول الله صلى الله عليه وسلم أربعين يوما«
“নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যুগে নিফাসের নারীরা চল্লিশ দিন বিরতি নিত”।  
‘মুনতাকা’ গ্রন্থে মাজদ ইবন তাইমিয়্যাহ  রহ. বলেন: “হাদীসের অর্থ হচ্ছে তাদেরকে চল্লিশ দিন বিরতি নেওয়ার নির্দেশ প্রদান করা হতো। এটিই চূড়ান্ত অর্থ, তাদের সবার নিফাস চল্লিশ দিন পর্যন্ত বিলম্ব হত এ অর্থ কখনো নয়; বরং এ অর্থ করলে বাস্তবতার ক্ষেত্রে হাদীসটি মিথ্যা প্রমাণিত হবে, যেহেতু কোনো যুগে হায়েয বা নিফাসের সময়সীমা সব নারীদের এক হওয়া সম্ভব নয়”।
২. উম্মে সালামাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন:
»كانت المرأة من نساء النبي  تقعد في النفاس أربعين ليلة لا يأمرها النبي  بقضاء صلاة النفاس«
“নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কতক স্ত্রী নিফাস হলে চল্লিশ দিন বিরতি নিতেন, তিনি তাকে নিফাসের সালাত কাযা করার নির্দেশ দিতেন না”।
চল্লিশ দিনের পূর্বে যদি নিফাসের রক্ত বন্ধ হয়:
জ্ঞাতব্য-১: যদি নিফাসের নারীর চল্লিশ দিন পূর্বে রক্ত বন্ধ হয় এবং সে গোসল শেষে সালাত আদায় করে ও সিয়াম রাখে, অতঃপর চল্লিশ দিন শেষ না হতে পুনরায় রক্ত আসা শুরু হয়, তাহলে বিশুদ্ধ মতে এ সময়কেও নিফাস গণ্য করবে ও বিরতি নিবে। মধ্যবর্তী ইবাদত শুদ্ধ হয়েছে কাযা করার প্রয়োজন নেই।  
নিফাসের রক্তের উপলক্ষ সন্তান প্রসব, ইস্তেহাযার রক্ত রোগের ন্যায় সাময়িক, আর হায়েযের রক্ত নারীর স্বভাবজাত রক্ত:
জ্ঞাতব্য-২: শাইখ আব্দুর রহমান ইবন সাদি বলেন: পূর্বের আলোচনা থেকে স্পষ্ট হলো যে, সন্তান প্রসবের কারণে নিফাসের রক্ত প্রবাহিত হয়। আর ইস্তেহাযার রক্ত অসুখ-বিসুখ জনিত হয় যা সাময়িক। হায়েযের রক্ত নারীর নারীত্বের স্বভাবজত প্রকৃত রক্ত। আল্লাহ ভালো জানেন।
বড়ি ব্যবহার করা: শারীরিক ক্ষতি না হলে হায়েয বন্ধকারী বড়ি ব্যবহার করা দোষণীয় নয়। বড়ি ব্যবহারের ফলে রক্ত বন্ধ হলে সিয়াম রাখবে, সালাত পড়বে ও তাওয়াফ করবে। এ সময় তার সকল ইবাদত দুরস্ত, যেমন অন্যান্য পবিত্র নারীদের ইবাদত দুরস্ত।
গর্ভপাত করার হুকুম: হে মুমিন নারী, আল্লাহ তোমার রেহেমে যা সৃষ্টি করেন তার ব্যাপারে তুমি আমানতদার। অতএব, তুমি আমানত গোপন করো না। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿وَلَا يَحِلُّ لَهُنَّ أَن يَكۡتُمۡنَ مَا خَلَقَ ٱللَّهُ فِيٓ أَرۡحَامِهِنَّ إِن كُنَّ يُؤۡمِنَّ بِٱللَّهِ وَٱلۡيَوۡمِ ٱلۡأٓخِرِۚ﴾ [البقرة: ٢٢٨]  
“এবং তাদের জন্য হালাল হবে না যে, আল্লাহ তাদের গর্ভে যা সৃষ্টি করেছেন, তা তারা গোপন করবে, যদি তারা আল্লাহ ও শেষ দিনের প্রতি বিশ্বাস রাখে”। [সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ২২৮]
গর্ভপাত ঘটানো বা যেভাবে হোক তার থেকে নিষ্কৃতি পেতে বাহানা করো না। কারণ, আল্লাহ তোমার জন্য রমযানের পানাহার বৈধ করেছেন যদি সিয়াম তোমার জন্য ক্ষতিকর হয়। যদি গর্ভের বাচ্চায় রূহ সঞ্চার করা হয় এবং গর্ভপাত ঘটানোর ফলে মারা যায়, তাহলে এটা অন্যায় হত্যার শামিল, যা আল্লাহ হারাম করেছেন। গর্ভের বাচ্চা হত্যাকারীকে ক্ষতিপূরণ দিতে হয়, যদিও তার পরিমাণ ব্যাখ্যা সাপেক্ষ। কতক আহলে ইলম বলেন, কাফফারা দেওয়া ওয়াজিব। অর্থাৎ মুমিন দাসী মুক্ত করা, যদি মুমিন দাসী পাওয়া না যায় লাগাতার দু’মাস সিয়াম রাখবে। কতক আহলে ইলম গর্ভের বাচ্চা হত্যাকে এক প্রকার জ্যান্ত দাফন গণ্য করেছেন। শাইখ মুহাম্মাদ ইবরাহীম রহ. বলেন: “গর্ভে থাকা বাচ্চা ফেলে দেওয়া হালাল নয়, যদি তার মৃত্যু নিশ্চিত না হয়, মৃত্যু নিশ্চিত হলে ফেলে দিবে”।
‘বড় আলেমদের সংস্থা’র সভায়  গর্ভপাত ঘটানোর ব্যাপারে নিম্নরূপ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়:
১. শর‘ঈ দু একটি কারণ ব্যতীত গর্ভের কোনো পর্যায়ে বাচ্চা ফেলা বৈধ নয়।
২. গর্ভ যদি প্রথম পর্যায়ে থাকে, যার বয়স চল্লিশ দিন, আর গর্ভপাত করার কারণ যদি হয় সন্তান লালন-পালন করার কষ্ট অথবা তাদের ভরণ-পোষণ করার দুশ্চিন্তা অথবা ভবিষ্যৎ গড়ার চিন্তা অথবা যে সন্তান আছে তাদেরকে যথেষ্ট জ্ঞান করা, তাহলে বৈধ নয়।
৩. জমাট বাঁধা রক্ত অথবা গোশতের টুকরা থাকা অবস্থায় গর্ভপাত ঘটানো বৈধ নয়, হ্যাঁ যদি নির্ভরযোগ্য ডাক্তারি টিম বলে যে, গর্ভ থাকলে মায়ের জীবনের আশঙ্কা আছে তাহলে বৈধ, তবে এটা অবশ্যই গর্ভধারী মাকে শঙ্কামুক্ত করার সকল প্রচেষ্টা প্রয়োগ শেষে হতে হবে।
৪. গর্ভ যদি তৃতীয় স্তর পার করে ও তার চার মাস পূর্ণ হয়, তাহলে গর্ভপাত করা বৈধ নয়, তবে একদল বিশেষজ্ঞ নির্ভরযোগ্য ডাক্তার যদি বলে যে, পেটে বাচ্চা থাকলে মায়ের মৃত্যুর সমূহ আশঙ্কা রয়েছে তাহলে বৈধ। আর অবশ্যই এটা হতে হবে বাচ্চার জীবন রক্ষা করার সকল প্রচেষ্টা ব্যয় শেষে। এ সুযোগ প্রদান করা হয়েছে দু’টি ক্ষতি থেকে ছোট ক্ষতি দূর করা ও দু’টি কল্যাণ থেকে বড় কল্যাণ অর্জন করার স্বার্থে।
আলেমগণ সভায় এ সিদ্ধান্ত গ্রহণ শেষে আল্লাহর তাকওয়া ও বিষয়টি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করার উপদেশ দিয়েছেন। আল্লাহ একমাত্র তাওফিক দাতা। আমাদের নবী মুহাম্মাদ, তার পরিবার ও সাথীদের ওপর আল্লাহ সালাত ও সালাম প্রেরণ করুন।
‘নারীদের স্বাভাবিক ঋতু সংক্রান্ত পুস্তিকায়’: (পৃ. ৬০) শাইখ মুহাম্মাদ উসাইমীন রহ. বলেন: “যদি গর্ভের বাচ্চায় রূহ আসার পর গর্ভপাত করে সন্তান নষ্ট করা হয় তাহলে নিঃসন্দেহে হারাম। কারণ এটা অন্যায়ভাবে প্রাণ হত্যার শামিল, নির্দোষ প্রাণকে হত্যা করা কুরআন, সুন্নাহ ও উম্মতের ঐকমত্যে হারাম”।
ইবনুল জাওযী রহ. “আহকামুন নিসা”: (পৃ. ১০৮ ও ১০৯) গ্রন্থে বলেন: “বিবাহের উদ্দেশ্য যখন সন্তান হাসিল করা, আর এটাও সত্য যে সকল বীর্য থেকে সন্তান হয় না, অতএব স্ত্রীর পেটে সন্তান আসলে বিবাহের উদ্দেশ্য হাসিল হলো, তারপর গর্ভপাত ঘটানো বিবাহের হিকমত পরিপন্থী। গর্ভপাত যদি গর্ভের বাচ্চায় রূহ সঞ্চার করার পূর্বে হয় বড় পাপ, আর যদি রূহ সঞ্চার করার পর গর্ভপাত করা হয় সেটা হবে মুমিন নফসকে হত্যা করার মতো। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿وَإِذَا ٱلۡمَوۡءُۥدَةُ سُئِلَتۡ ٨ بِأَيِّ ذَنۢبٖ قُتِلَتۡ ٩﴾ [التكوير: ٨،  ٩]  
“আর যখন জ্যান্ত দাফনকৃত কন্যাকে জিজ্ঞাসা করা হবে, কোন অপরাধে হত্যা করা হয়েছে”। [সূরা আত-তাকওয়ীর, আয়াত: ৮-৯] সমাপ্ত
অতএব, হে মুসলিম নারী আল্লাহকে ভয় কর, যে কোনো উদ্দেশ্যই হোক এ জাতীয় অপরাধে অগ্রসর হয়ো না। পথভ্রষ্টদের প্রচারণা ও পাপাচারীদের অনুসরণ করে ধোঁকায় পতিত হয়ো না, তাদের কর্মের সাথে বিবেক ও দীনের কোনো সম্পর্ক নেই।

 

চতুর্থ পরিচ্ছেদ
পোশাক ও পর্দা সংক্রান্ত বিধান
প্রথমত: মুসলিম নারীর শর‘ঈ পোশাক:
১. মুসলিম নারীর পোশাক ব্যাপক প্রশস্ত হওয়া জরুরি, যেন তার সমস্ত শরীর পর-পুরুষ থেকে আচ্ছাদিত থাকে, যারা তার মাহরাম নয়। মাহরামের সামনে সে পরিমানই খুলবে যতটুকু খোলা রাখার রীতি রয়েছে, যেমন তার চেহারা, দুই হাতের কব্জি ও দুই পা।
২. পোশাক তার চারপাশ আচ্ছাদনকারী হওয়া চাই। এরূপ স্পষ্ট নয় যা তার চামড়ার রঙ প্রকাশ করে দেয়।
৩. এত সংকীর্ণ নয় যা তার অঙ্গের পরিমাণ স্পষ্ট করে দেয়। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
»صنفان من أهل النار لم أرهما: قوم معهم سياط كأذناب البقر يضربون بها الناس، ونساء كاسيات عاريات، مائلات مميلات، رؤوسهن كأسنمة البخت المائلة، لا يدخلن الجنة، ولا يجدن ريحها، وإن ريحها ليوجد من مسيرة كذا وكذا«
“জাহান্নামের দু’প্রকার লোক রয়েছে যাদের আমি এখনো দেখি নি: এক সম্প্রদায়, তাদের সাথে গুরুর লেজের মত চাবুক থাকবে, তা দিয়ে তারা মানুষদের আঘাত করবে। আর বস্ত্র পরিহীত উলঙ্গ নারী, নিজেরা ধাবিত হয় ও অপরকে ধাবিত করে। উটের ঝুঁকে পড়া কুজের ন্যায় তাদের মাথা। তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে না এবং তার ঘ্রাণও পাবে না, যদিও তার ঘ্রাণ এতো এতো দূরত্ব থেকে পাওয়া যায়”।
শাইখুল ইসলাম ইবন তাইমিয়্যাহ বলেন: “বস্ত্র পরিহিত উলঙ্গ নারী”র ব্যাখ্যায় বলা হয়, সে এমন পোশাক পড়বে যা তার শরীর ঢাকবে না। সে বস্ত্র পরিহিত হলেও প্রকৃতপক্ষে উলঙ্গ। যেমন, পাতলা কাপড় পরিধানকারী, যা তার শরীরের চামড়া প্রকাশ করে দেয় অথবা খুব সংকীর্ণ, যা তার শরীরের ভাঁজ প্রকাশ করে দেয়, যেমন নিতম্ব ও হাতের বাহুর ভাঁজ ইত্যাদি। নারীর পোশাক হবে প্রশস্ত ও মোটা, যা তাকে ঢেকে নেয় এবং তার শরীরের কোনো অংশ ও আকৃতি প্রকাশ করে না”।  সমাপ্ত
৪. পোশাকের ক্ষেত্রে পুরুষের সামঞ্জস্য গ্রহণ না করা। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পুরুষের সামঞ্জস্য গ্রহণকারী নারীর ওপর লা‘নত করেছেন। অনুরূপ লা‘নত করেছেন পুরুষের অঙ্গ-ভঙ্গী গ্রহণকারী নারীদের ওপর। পুরুষের সাথে নারীর সামঞ্জস্য গ্রহণ করার অর্থ প্রত্যেক সমাজে যেসব পোশাক পুরুষদের সাথে সেগুলো নারীদের পরিধান করা।
শাইখুল ইসলাম ইবন তাইমিয়্যাহ  রহ. বলেন: “পুরুষ ও নারীর পোশাকে ব্যবধান সৃষ্টিকারী বস্তু তা-ই যা তাদের প্রত্যেকের সাথে যথাযথ ও সামঞ্জস্য। পুরুষের জন্য শোভনীয় পোশাক পুরুষরা পরিধান করবে এবং নারীদের জন্য শোভনীয় পোশাক নারীরা পরিধান করবে এটিই শরী‘আতের নির্দেশ। নারীদের প্রতি নির্দেশ রয়েছে তারা ঢেকে থাকবে ও পর্দা করবে, প্রকাশ্যে আশা ও সৌন্দর্য প্রকাশ করা তাদের পক্ষে বৈধ নয়। এ জন্য আযান, তালবিয়া, সাফা ও মারওয়ায় উঠার সময় তাদের প্রতি আওয়াজ বুলন্দ করার নির্দেশ নেই। ইহরামে তারা সেরূপ কাপড় খুলবে না যেরূপ পুরুষরা খুলে। কারণ পুরুষদের নির্দেশ করা হয়েছে মাথা খোলা রাখতে, সাধারণ কাপড় পরিধান না করতে, সাধারণ কাপড় বলতে শরীরের মাপে তৈরি পোশাককে বুঝায়, যেমন জামা, পায়জামা, কোর্ট ও মোজা... নারীদেরকে কোনো পোশাক থেকে নিষেধ করা হয় নি। কারণ সে আদিষ্ট ঢেকে থাকা ও পর্দার, তার খিলাফ করা তার পক্ষে বৈধ নয়। কিন্তু তাকে নেকাব ও হাত মোজা থেকে নিষেধ করা হয়েছে। কারণ, এগুলো শরীরের মাপ মতো তৈরি করা, যা তার প্রয়োজন নেই... অতঃপর তিনি বলেন: নারী এগুলো ছাড়াই স্বীয় চেহারা পুরুষদের আড়াল করবে... অতঃপর তিনি বলেন: ‘নিহায়াহ’ গ্রন্থে রয়েছে: পুরুষ ও নারীর পোশাকে পার্থক্য থাকা জরুরি, যার দ্বারা পুরুষরা নারীদের থেকে পৃথকভাবে চিহ্নিত হয়। নারীদের পোশাকে যদি আড়াল করা ও পর্দার বিষয়টি গুরুত্ব পায় তাহলে পর্দার আসল উদ্দেশ্য হাসিল হবে। পোশাক যদি পুরুষদের সাধারণ পোশাক হয়, তাহলে সেটা থেকে নারীদের নিষেধ করা হবে... অতঃপর তিনি বলেন: যদি পোশাকে পর্দা কম হয় ও পুরুষের সাথে সামঞ্জস্য থাকে, তাহলে দু’টি বিবেচনায় তার থেকে নারীদের নিষেধ করা হবে”।  সমাপ্ত।
৫. নারী ঘর থেকে বের হওয়ার সময় দৃষ্টি আকর্ষণকারী সৌন্দর্য গ্রহণ করবে না, তাহলে (নিষিদ্ধ) সৌন্দর্য প্রকাশকারী নারীদের অন্তর্ভুক্ত হবে।
দ্বিতীয়ত: পর্দার অর্থ, দলীল ও উপকারিতা:
পর্দার অর্থ নারী স্বীয় শরীরকে পর-পুরুষ থেকে ঢেকে রাখা, যারা তার মাহরাম নয়। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿وَلَا يُبۡدِينَ زِينَتَهُنَّ إِلَّا مَا ظَهَرَ مِنۡهَاۖ وَلۡيَضۡرِبۡنَ بِخُمُرِهِنَّ عَلَىٰ جُيُوبِهِنَّۖ وَلَا يُبۡدِينَ زِينَتَهُنَّ إِلَّا لِبُعُولَتِهِنَّ أَوۡ ءَابَآئِهِنَّ أَوۡ ءَابَآءِ بُعُولَتِهِنَّ أَوۡ أَبۡنَآئِهِنَّ أَوۡ أَبۡنَآءِ بُعُولَتِهِنَّ أَوۡ إِخۡوَٰنِهِنَّ﴾ [النور: ٣١]  
“আর যা সাধারণত প্রকাশ পায় তাছাড়া তাদের সৌন্দর্য তারা প্রকাশ করবে না। তারা যেন তাদের ওড়না দিয়ে বক্ষদেশকে আবৃত করে রাখে। আর তারা তাদের স্বামী, পিতা, শ্বশুর, নিজদের ছেলে, স্বামীর ছেলে, ভাই ব্যতীত সৌন্দর্য প্রকাশ করবে না”। [সূরা আন-নূর, আয়াত: ৩১]
অন্যত্র তিনি বলেন:
﴿وَإِذَا سَأَلۡتُمُوهُنَّ مَتَٰعٗا فَسۡ‍َٔلُوهُنَّ مِن وَرَآءِ حِجَابٖۚ﴾ [الاحزاب: ٥٣]  
“আর যখন তোমরা তাদের নিকট কিছু প্রার্থনা কর, তবে পর্দার আড়াল থেকে তাদের কাছে চাও”। [সূরা আল-আহযাব, আয়াত: ৫৩]
এখানে পর্দার উদ্দেশ্য নারীকে আড়ালকারী দেয়াল অথবা দরজা অথবা পোশাক। আয়াতটি যদিও নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের স্ত্রীদের উদ্দেশ্য করে নাযিল হয়েছে; কিন্তু তাতে সকল মুমিন নারীই প্রবেশ করবে; যেহেতু এখানে আল্লাহ তার কারণ বলেছেন:
﴿ذَٰلِكُمۡ أَطۡهَرُ لِقُلُوبِكُمۡ وَقُلُوبِهِنَّۚ﴾ [الاحزاب: ٥٣]  
“এটিই তোমাদের ও তাদের অন্তরের জন্য অধিক পবিত্রতা”। [সূরা আল-আহযাব, আয়াত: ৫৩] আর অন্তরের পবিত্রতা সবার প্রয়োজন, তাই এ হুকুম সবার জন্য ব্যাপক। আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন:
﴿يَٰٓأَيُّهَا ٱلنَّبِيُّ قُل لِّأَزۡوَٰجِكَ وَبَنَاتِكَ وَنِسَآءِ ٱلۡمُؤۡمِنِينَ يُدۡنِينَ عَلَيۡهِنَّ مِن جَلَٰبِيبِهِنَّۚ﴾ [الاحزاب: ٥٩]  
“হে নবী, আপনি আপনার স্ত্রী, কন্যা ও মুমিন নারীদেরকে বলে দিন, ‘তারা যেন তাদের জিলবাবের কিছু অংশ নিজেদের উপর ঝুলিয়ে দেয়”। [সূরা আল-আহযাব, আয়াত: ৫৯]
শাইখুল ইসলাম ইবন তাইমিয়্যাহ  রহ. বলেন: “জিলবাব অর্থ হচ্ছে অবগুণ্ঠন ও বোরকা। ইবন মাস‘উদ এটিকেই চাদর বলেছেন। আর সাধারণরা এটাকে বলে: ইযার। বড় ইযার মাথা ও সারা শরীর ঢেকে নেয়। আবু উবায়দাহ প্রমুখ বলেন: ইযার মাথার উপর থেকে নিচের দিকে ঝুলিয়ে দেওয়া হয়, যার ফলে চোখ ব্যতীত কিছু দেখা যায় না। ঘোমটা ইযার বা চাদর থেকেই হয়। সমাপ্ত ।
মাহরাম ব্যতীত পরপুরুষ থেকে নারীদের চেহারা ঢাকার হাদীস। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা বলেন:
»كان الركبان يمرون بنا ونحن مع رسول الله صلى الله عليه وسلم محرمات، فإذا حاذوا بنا سدلت إحدانا جلبابها من رأسها على وجهها، فإذا جاوزنا كشفناه«
“আমরা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে মুহরিম ছিলাম, আরোহীগণ আমাদের পাশ দিয়ে অতিক্রম করত। যখন তারা আমাদের বরাবর হত, আমরা প্রত্যেকে জিলবাব মাথার উপর থেকে চেহারার উপর ঝুলিয়ে দিতাম, যখন তারা আমাদের ছাড়িয়ে যেত আমরা তা খুলে ফেলতাম”।
মাহরাম ব্যতীত অন্যান্য পুরুষদের থেকে নারীদের চেহারা ঢাকার দলীল কুরআন ও সুন্নায় অনেক রয়েছে, এ জন্য মুসলিম বোন হিসেবে আমি তোমাকে কয়েকটি কিতাব অধ্যয়ণের নির্দেশ দিচ্ছি: শাইখুল ইসলাম ইবন তাইমিয়্যাহ রচিত حجاب المرأة ولباسها في الصلاة শাইখ আব্দুল আযীয ইবন আব্দুল্লাহ ইবন বায রচিত حكم السفور والحجاب হামুদ ইবন আব্দুল্লাহ তুওয়াইজুরি রচিতالصارم المشهور على المفتونين بالسفور এবং শাইখ মুহাম্মাদ ইবন সালেহ আল-উসাইমিন রচিত رسالة الحجاب কিতাবগুলো পড়ার পরামর্শ দিচ্ছি। এ কিতাবসমূহে যা রয়েছে তাই যথেষ্ট।
হে মুসলিম বোন, যেসব আলেম বলেন তোমার চেহারা খোলা বৈধ, যদিও তাদের কথা দুর্বল, তবুও তারা নিরাপত্তার শর্তারোপ করেছেন। আর ফেতনার কোনো নিরাপত্তা নেই, বিশেষ করে এ যুগে, যখন নারী ও পুরুষের মাঝে দীন সুরক্ষার প্রেরণা কমে গেছে, কমে গেছে লজ্জা। পক্ষান্তরে ফিতনার দিকে আহ্বানকারীর সংখ্যা বেড়ে গেছে। আর নারীরা চেহারায়  বিভিন্নভাবে সৌন্দর্য গ্রহণ করে, যা মূলত ফিতনার দিকেই আহ্বান করছে।
হে মুসলিম বোন, তুমি তা থেকে বিরত থাক, ফিতনা থেকে সুরক্ষাদানকারী হিজাব ব্যবহার কর। পূর্বাপর কোনো আলেম বর্তমান যুগে নারীরা যে ফিতনায় পতিত হয়েছে তার বৈধতা দেন নি। আর মুসলিম নারীরা লোক দেখানো যে পর্দা পরিধান করে তারও কেউ অনুমোদন দেন নি। পর্দার সমাজে থাকলে পর্দা করে পর্দাহীন পরিবেশে গেলে পর্দা ত্যাগ করে। আর কতক নারী পাবলিক স্থানে পর্দা করে; কিন্তু যখন মার্কেটে অথবা হাসপাতালে যায় অথবা কোনো স্বর্ণকারের সাথে কথা বলে অথবা কোনো দর্জির সাথে কথা বলে, তখন সে চেহারা ও বাহু খুলে ফেলে যেন স্বামী অথবা কোনো মাহরামের সাথেই কথা বলছে। এ জাতীয় কর্মে লিপ্ত নারীরা আল্লাহকে ভয় কর। বাহির থেকে আগত আমরা কতক নারীকে দেখি প্লেন যখন দেশের মাটিতে ল্যান্ড করে তখন তারা হিজাব পরে, যেন হিজাব পরা একটি দেশীয় কালচার, শর‘ঈ কোনো বিষয় নয়।
হে মুসলিম নারী, ব্যাধিতে আক্রান্ত অন্তর ও কুকুর শ্রেণীর মানুষ থেকে পর্দা তোমাকে সুরক্ষা দিবে। তারা তোমার থেকে নিরাশ হবে। অতএব, তুমি পর্দাকে জরুরি কর ও তাকে আকড়ে ধর। তুমি অপ্রচারের শিকার হয়ো না, যারা পর্দার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে অথবা নারীকে তার মর্যাদার আসন থেকে বিচ্যুত করছে, কারণ তারা তোমার অনিষ্ট চায়। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿وَيُرِيدُ ٱلَّذِينَ يَتَّبِعُونَ ٱلشَّهَوَٰتِ أَن تَمِيلُواْ مَيۡلًا عَظِيمٗا﴾ [النساء: ٢٧]
“আর যারা প্রবৃত্তির অনুসরণ করে তারা চায় যে, তোমরা প্রবলভাবে (সত্য থেকে) বিচ্যুত হও”। [সূরা আন-নিসা, আয়াত: ২৭]


পঞ্চম পরিচ্ছেদ
নারীদের সালাত সংক্রান্ত বিশেষ হুকুম
হে মুসলিম নারী, সালাতের সকল শর্ত, রুকন ও ওয়াজিবসহ উত্তম সময়ে সালাত আদায় কর। আল্লাহ তা‘আলা মুমিনদের মায়েদের উদ্দেশ্যে বলেন:
﴿وَأَقِمۡنَ ٱلصَّلَوٰةَ وَءَاتِينَ ٱلزَّكَوٰةَ وَأَطِعۡنَ ٱللَّهَ وَرَسُولَهُ﴾ [الاحزاب: ٣٣]  
“আর তোমরা সালাত কায়েম কর, যাকাত প্রদান কর এবং আল্লাহ ও তার রাসূলের আনুগত্য কর”। [সূরা আল-আহযাব, আয়াত: ৩৩]      
এ নির্দেশ সকল মুসলিম নারীর জন্য সমানভাবে প্রযোজ্য। কারণ, সালাত ইসলামের দ্বিতীয় রুকন, ইসলামের প্রধান স্তম্ব। সালাত ত্যাগ করা কুফরী, যা মানুষকে ইসলাম থেকে বের করে দেয়। যার সালাত নেই সে নারী হোক বা পুরুষ হোক দীন ও ইসলামে তার কোনো অংশ নেই। শর‘ঈ কারণ ব্যতীত সালাত বিলম্ব করা সালাত বিনষ্ট করার শামিল। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿فَخَلَفَ مِنۢ بَعۡدِهِمۡ خَلۡفٌ أَضَاعُواْ ٱلصَّلَوٰةَ وَٱتَّبَعُواْ ٱلشَّهَوَٰتِۖ فَسَوۡفَ يَلۡقَوۡنَ غَيًّا ٥٩ إِلَّا مَن تَابَ وَءَامَنَ وَعَمِلَ صَٰلِحٗا فَأُوْلَٰٓئِكَ يَدۡخُلُونَ ٱلۡجَنَّةَ وَلَا يُظۡلَمُونَ شَيۡ‍ٔٗا ٦٠﴾ [مريم: ٥٩،  ٦٠]  
“তাদের পরে আসল এমন এক অসৎ বংশধর যারা সালাত বিনষ্ট করল এবং কুপ্রবৃত্তির অনুসরণ করল। সুতরাং শীঘ্রই তারা জাহান্নামের শাস্তি প্রত্যক্ষ করবে, তবে তারা নয় যারা তওবা করেছে, ঈমান এনেছে এবং সৎকর্ম করেছে। তারাই জান্নাতে প্রবেশ করবে এবং তাদের প্রতি কোন যুলুম করা হবে না”। [সূরা মারইয়াম, আয়াত: ৫৯-৬০]
হাফিয ইবন কাসির রহ. মুফাসসিরদের এক জামা‘আত থেকে বর্ণনা করেন: সালাত বিনষ্ট করার অর্থ, সালাতের সময় নষ্ট করা, যেমন সময় শেষে সালাত পড়া। আর আয়াতের ‘গাঈ’ শব্দের অর্থ করেছেন লোকসান ও ক্ষতিগ্রস্ততা। কেউ তার ব্যাখ্যা করেছেন: জাহান্নামের একটি স্থান। (সালাত বিনষ্টকারীরা অতিসত্বর তাতে পৌছবে)।
নারীর সালাতের কতক বিধান পুরুষের সালাত থেকে ভিন্ন, যা নিম্নরূপ:
১. নারীদের সালাতে আযান ও ইকামত নেই:
আযানের জন্য উচ্চস্বর জরুরি, নারীদের উচ্চস্বর করা জায়েয নয় তাই তাদের আযান ও ইকামত বৈধ নেই। তারা আযান ও ইকামত দিলেও বিশুদ্ধ হবে না। ‘মুগনিতে’: (২/৬৮) (ইবন কুদামাহ) বলেন: “আমরা জানি না এ বিষয়ে কারো দ্বিমত রয়েছে”।
২. সালাতের সময় নারীর চেহারা ব্যতীত পূর্ণ শরীর সতর:
সালাতে নারীর চেহারা ব্যতীত পূর্ণ শরীর সতর, তবে হাত ও পায়ের ব্যাপারে দ্বিমত রয়েছে যদি পর-পুরুষ তাকে না দেখে। গায়রে মাহরাম বা পর-পুরুষের দেখার সম্ভাবনা থাকলে চেহারা, হাত ও পা ঢাকা ওয়াজিব। যেমন, সালাতের বাইরেও এসব অঙ্গ পুরুষের আড়ালে রাখা ওয়াজিব। অতএব, সালাতের সময় মাথা, গর্দান ও সমস্ত শরীর পায়ের পাতা পর্যন্ত ঢাকা জরুরি। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
»لا يقبل الله صلاة حائض - يعني: من بلغت الحيض - إلا بخمار«
“হায়েযা (ঋতুমতী) নারীর সালাত উড়না ব্যতীত গ্রহণ করা হয় না”।  অর্থাৎ ঋতু আরম্ভ হয়েছে এমন প্রাপ্তবয়স্কা নারীর সালাত। উড়না দ্বারা উদ্দেশ্য মথা ও গর্দান আচ্ছাদনকারী কাপড়। উম্মে সালামাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞাসা করেন, নারী কি জামা ও উড়নায় সালাত পড়তে পারে নিচের কাপড় ছাড়া? তিনি বলেন:
»إذا كان الدرع سابغا يغطي ظهور قدميها«
“যদি জামা পর্যাপ্ত হয় যা তার পায়ের পাতা ঢেকে নেয়”।  উড়না ও জামা দ্বারাই সালাত বিশুদ্ধ।
এ দু’টি হাদীস প্রমাণ করে যে, সালাতে নারীর মাথা ও গর্দান ঢেকে রাখা জরুরি, যা আয়েশা থেকে বর্ণিত হাদীসের দাবি। তার পায়ের বহিরাংশ (পাতা) পর্যন্ত শরীরের অংশও ঢেকে রাখা জরুরি, যা উম্মে সালামার হাদীসের দাবি। যদি পর-পুরুষ না দেখে চেহারা উন্মুক্ত রাখা বৈধ, এ ব্যাপারে সকল আহলে ইলম একমত।
শাইখুল ইসলাম ইবন তাইমিয়্যাহ বলেন: “কারণ নারী একাকী সালাত পড়লে উড়না ব্যবহার করার নির্দেশ রয়েছে, সালাত ব্যতীত অন্যান্য সময় নিজ ঘরে মাথা উন্মুক্ত রাখা বৈধ। অতএব, সালাতে পোশাক গ্রহণ করা আল্লাহর হক। কোনো ব্যক্তির পক্ষে উলঙ্গাবস্থায় কা‘বা তাওয়াফ করা বৈধ নয়, যদিও সে রাতের অন্ধকারে একাকী হয়। অনুরূপ একাকী হলেও উলঙ্গ সালাত পড়া দুরস্ত নয়... অতঃপর তিনি বলেন: সালাতে সতর ঢাকার বিষয়টি দৃষ্টির সাথে সম্পৃক্ত নয়, না দৃষ্টি রোধ করার সাথে, আর না দৃষ্টি আকর্ষণ করার সাথে”।  সমাপ্ত।
‘মুগনি’ কিতাবে: (২/৩২৮) ইবন কুদামাহ বলেছেন: “স্বাধীন নারীর পুরো শরীর সালাতে ঢেকে রাখা জরুরি, যদি তার কোনো অংশ খুলে যায় সালাত শুদ্ধ হবে না, তবে কম হলে সমস্যা নয়। এ কথাই বলেছেন ইমাম মালিক, আওযা‘ঈ ও শাফে‘ঈ।
৩. রুকু ও সাজদায় নারী শরীর গুটিয়ে রাখবে:
‘মুগনিতে’: (২/২৫৮) ইবন কুদামাহ বলেন: “রুকু ও সাজদায় নারী তার শরীর গুটিয়ে রাখবে, এক অঙ্গ থেকে অপর অঙ্গ পৃথক রাখবে না, আসন করে বসবে অথবা তার দু’পা ডান পাশ দিয়ে বের করে দিবে, ‘তাওয়াররুক’ তথা বাম পায়ের উপর বসে ডান পা খাড়া রাখা অথবা বাম পা বিছিয়ে তাতে বসার পরিবর্তে, কারণ এতেই তার অধিক আচ্ছাদন হয়”।
নববী রহ. ‘আল-মাজমু’: (৩/৪৫৫) গ্রন্থে বলেন: “শাফে‘ঈ  রহ. আল-মুখতাসার গ্রন্থে বলেছেন: সালাতের কর্মসমূহে নারী ও পুরুষের মাঝে কোনো পার্থক্য নেই, তবে নারীর এক অঙ্গ অপর অঙ্গের সাথে মিলিয়ে রাখা মুস্তাহাব। অথবা সাজদায় তার পেট রানের সাথে মিলিয়ে রাখবে যেভাবে অধিক পর্দা হয়, এটিই আমি তার জন্য পছন্দ করি রুকুতে ও পূর্ণ সালাতে”। সমাপ্ত।
৪. নারীর ইমামতিতে নারীদের জামা‘আত করা:
নারীদের জামা‘আত তাদের কারো ইমামতিতে বৈধ কি বৈধ নয় দ্বিমত রয়েছে, কতক আলেম বৈধ বলেন, কতক আলেম বলেন অবৈধ। অধিকাংশ আলেম বলেন এতে কোনো সমস্যা নেই। কারণ, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উম্মে ওরাকাকে তার ঘরের লোকদের ইমামতি করার নির্দেশ দিয়েছেন। কেউ বলেন, নারীর ইমামতি মুস্তাহাব ও পছন্দনীয় নয়, কেউ বলেন মাকরূহ। কেউ বলেন নারীদের ইমামত নফল সালাতে বৈধ, কিন্তু ফরয সালাতে বৈধ নয়। তাদের জামাত মুস্তাহাব এটিই হয়তো বিশুদ্ধ মত।
আর পর-পুরুষ না শুনলে নারী উচ্চস্বরে কিরাত পড়বে।
৫. নারীদের মসজিদে সালাত আদায়ের জন্য ঘর থেকে বের হওয়া বৈধ:
মসজিদে পুরুষদের সাথে সালাত আদায়ের জন্য নারীদের ঘর থেকে বের হওয়া বৈধ, তবে তাদের সালাত তাদের ঘরেই উত্তম। ইমাম মুসলিম তার সহীহ গ্রন্থে বর্ণনা করেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
»لا تمنعوا إماء الله مساجد الله«
“তোমরা আল্লাহর বান্দিদেরকে আল্লাহর মসজিদ থেকে নিষেধ করো না”।  
অপর হাদীসে তিনি বলেন:
»لا تمنعوا النساء أن يخرجن إلى المساجد، وبيوتهن خير لهن«
“নারীরা মসজিদে যাবে তোমরা নিষেধ করো না, তবে তাদের জন্য তাদের ঘরই উত্তম”।  
উল্লেখ্য পর্দার জন্য নারীদের ঘরে অবস্থান ও তাতে সালাত আদায় করাই তাদের জন্য উত্তম।
সালাতের জন্য মসজিদে যাওয়ার সময় নিম্নোক্ত আদবগুলো মেনে চলবে:
•    নারী স্বীয় কাপড় ও পরিপূর্ণ পর্দা দ্বারা আচ্ছাদিত থাকবে, আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা বলেন:
»كان النساء يصلين مع رسول الله صلى الله عليه وسلم ثم ينصرفن متلفعات بمروطهن ما يعرفن من الغلس«
“নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে নারীরা সালাত পড়ত, অতঃপর তারা তাদের চাদর দিয়ে আচ্ছাদিত হয়ে ফিরে যেত, অন্ধকারের জন্য তাদেরকে চেনা যেত না”।
•    সুগন্ধি ব্যবহার করবে না: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
»لا تمنعوا إماء الله مساجد الله، وليخرجن تفلات«
“আল্লাহর বান্দিদের আল্লাহর মসজিদে নিষেধ করো না, আর অবশ্যই তারা সুগন্ধি ত্যাগ করে বের হবে”।  
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
»أيما امرأة أصابت بخورا فلا تشهدن معنا العشاء الآخرة«
“যে নারী সুগন্ধি স্পর্শ করেছে, সে আমাদের সাথে এশায় উপস্থিত হবে না”।  
ইমাম মুসলিম রহ. বর্ণনা করেন, ইবন মাস‘উদের স্ত্রী যায়নাব বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে বলেছেন:
»إذا شهدت إحداكن المسجد فلا تمس طيبا«
“তোমাদের কেউ যখন মসজিদে উপস্থিত হয়, সুগন্ধি স্পর্শ করবে না”।
ইমাম শাওকানী রহ. ‘নাইলুল আওতার’: (৩/১৪০ ও ১৪১) গ্রন্থে বলেন: এসব দলীল প্রমাণ করে, নারীদের মসজিদে যাওয়া বৈধ যদি তার সাথে ফিতনা ও ফিতনাকে জাগ্রতকারী বস্তু না থাকে, যেমন সুগন্ধি জাতীয় বস্তু ইত্যাদি। তিনি আরো বলেন: হাদীস প্রমাণ করে যে, পুরুষরা নারীদেরকে তখন অনুমতি দিবে যখন তাদের বের হওয়ার মধ্যে ফিতনার আশঙ্কা নেই। যেমন সুগন্ধি অথবা অলঙ্কার অথবা সৌন্দর্যহীন অবস্থায়”। সমাপ্ত।
•    নারীরা কাপড় ও অলঙ্কার দ্বারা সুসজ্জিত হয়ে বের হবে না: আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা বলেন:
«لَوْ أَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ رَأَى مِنَ النِّسَاءِ مَا رَأَيْنَا، لَمَنَعَهُنَّ مِنَ الْمَسَاجِدِ، كَمَا مَنَعَتْ بَنُو إِسْرَائِيلَ نِسَاءَهَا»
“নারীরা যা আবিস্কার করেছে বলে আমরা দেখছি তা যদি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দেখতে পেতেন তাহলে অবশ্যই তাদেরকে মসজিদ থেকে নিষেধ করতেন। যেমন বনু ইসরাইলরা তাদের নারীদের নিষেধ করেছে”।  [বুখারী ও মুসলিম তবে এটি মুসনাদে আহমাদের শব্দ]
ইমাম শাওকানী রহ. ‘নাইলুল আওতার’ গ্রন্থে আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহার কথা (নারীরা যা আবিস্কার করেছে বলে আমরা দেখছি তা যদি রাসূলুল্লহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দেখতে পেতেন) প্রসঙ্গে বলেন: অর্থাৎ সুন্দর পোশাক, সুগন্ধি, সৌন্দর্য চর্চা ও বেপর্দা। বস্তুত নবী যুগে নারীরা বের হত উড়না, কাপড় ও মোটা চাদর পেঁচিয়ে”।
ইমাম ইবনুল জাওযী রহ. বলেন: “নারীদের উচিত যথাসম্ভব ঘর থেকে বের না হওয়া, যদিও সে নিজের ব্যাপারে নিরাপদ হয়, কিন্তু মানুষেরা তার থেকে নিরাপদ নয়। যদি বের হওয়ার একান্ত প্রয়োজন হয়, তাহলে স্বামীর অনুমতি নিয়ে অপরিচ্ছন্ন পোশাকে বের হবে। আর খালি জায়গা দিয়ে হাঁটবে, প্রধান সড়ক ও বাজার দিয়ে হাঁটবে না, কণ্ঠস্বর যেন কেউ না শুনে সতর্ক থাকবে, রাস্তার পাশ দিয়ে হাঁটবে মাঝখান দিয়ে নয়”।  সমাপ্ত।
৬. কাতারে নারীর অবস্থান ও অন্যান্য মাসআলা:
•    নারী একা হলে পুরুষদের পিছনে একাই কাতার করবে। কারণ, আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের নিয়ে সালাত পড়লেন, তিনি বলেন: আমি এবং এক ইয়াতীম তার পিছনে দাঁড়ালাম, আর বৃদ্ধা আমাদের পিছনে দাঁড়িয়েছে”।
তার থেকে আরো বর্ণিত, আমাদের বাড়িতে আমি ও ইয়াতীম নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পিছনে সালাত পড়েছি, আর আমার মা উম্মে সুলাইম আমাদের পিছনে ছিল”।
যদি উপস্থিত নারীদের সংখ্যা বেশি হয়, তাহলে তারা পুরুষদের পিছনে এক বা একাধিক কাতার করে দাঁড়াবে। কারণ, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বাচ্চাদের সম্মুখে পুরুষদের দাঁড় করাতেন, বাচ্চারা পুরুষদের পিছনে দাঁড়াত, আর নারীরা দাঁড়াত বাচ্চাদের পিছনে। এ জাতীয় হাদীস ইমাম আহমদ বর্ণনা করেছেন। আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
»خير صفوف الرجال أولها، وشرها آخرها، وخير صفوف النساء آخرها، وشرها أولها«
“পুরুষদের সর্বোত্তম কাতার প্রথম কাতার, নিম্নমানের কাতার শেষেরটা, আর নারীদের সর্বোত্তম কাতার শেষেরটা, নিম্নমানের কাতার শুরুরটা”।
এ দু’টি হাদীস প্রমাণ করে নারীরা পুরুষদের পিছনে কাতারবদ্ধ দাঁড়াবে, তাদের পিছনে বিচ্ছিন্নভাবে সালাত পড়বে না, হোক সেটা ফরয সালাত অথবা তারাবীহের সালাত।
•    ইমাম সালাতে ভুল করলে নারীরা তাকে সতর্ক করবে ডান হাতের কব্জি দিয়ে বাম হাতের পৃষ্ঠদেশে থাপ্পড় মেরে বা আঘাত করে। কারণ, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
»إذا نابكم في الصلاة شيء فليسبح الرجال، وليصفق النساء«
“যখন সালাতে তোমাদের কোনো সমস্যা হয়, তখন পুরুষরা যেন তাসবীহ বলে এবং নারীরা যেন তাসফীক করে (হাতকে হাতের উপর মারে)”। সালাতে কোনো সমস্যা হলে নারীদের জন্য তাসফীক করা বৈধ। সমস্যার এক উদাহরণ: ইমামের ভুল করা, কারণ নারীর শব্দ পুরুষের জন্য ফিতনার কারণ হয়, তাই তাকে হাতে তাসফীক করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, কথা বলার নয়।
•    ইমাম সালাম ফিরালে নারীরা দ্রুত মসজিদ ত্যাগ করবে, পুরুষরা বসে থাকবে, যেন পুরুষরা তাদের সাক্ষাত না পায়। কারণ, উম্মে সালামাহ বর্ণনা করেন,
«أَنَّ النِّسَاءَ فِي عَهْدِ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كُنَّ إِذَا سَلَّمْنَ مِنَ المَكْتُوبَةِ، قُمْنَ وَثَبَتَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَمَنْ صَلَّى مِنَ الرِّجَالِ مَا شَاءَ اللَّهُ، فَإِذَا قَامَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَامَ الرِّجَالُ».
“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যুগে ফরযের সালাম শেষে নারীরা দাঁড়িয়ে যেত আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও যেসব পুরুষ তার সাথে সালাত পড়েছে বসে থাকত, যতক্ষণ আল্লাহ চাইতেন। যখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উঠতেন তারাও উঠত।”
ইমাম যুহরী রহ. বলেন: “আল্লাহ ভালো জানেন, তবে আমরা তার কারণ হিসেবে মনে করি নারীরা যাতে বাড়ি চলে যেতে সক্ষম হয়”।
আর ইমাম শাওকানী তাঁর নাইলুল আওত্বার গ্রন্থে (২/৩২৬) বলেন, এ হাদীস থেকে বুঝা যায়, ইমামের জন্য মুস্তাহাব হচ্ছে মুক্তাদীদের অবস্থা খেয়াল রাখা, অন্যায় বা হারামে পতিত হওয়ার সম্ভাবনা থাকলে তা থেকে সাবধানতা অবলম্বন করা, সন্দেহমূলক কিছু ঘটার সম্ভাবনা থাকলে তা থেকে দূরে থাকা, ঘর তো দূরের কথা রাস্তা-ঘাটেও নারী-পুরুষের মধ্যে মেলামেশা হওয়ার বিষয়টি অপছন্দনীয় হিসেবে বিবেচনা করা।
ইমাম নাওয়াওয়ী তাঁর আল-মাজমূ‘ গ্রন্থে (৩/৪৫৫) বলেন, আর মহিলারা জামাতে সালাত আদায়ের ক্ষেত্রে কয়েকটি বিষয়ে পুরুষদের থেকে ভিন্ন:
এক. পুরুষদের মত জামাতে সালাত আদায় করা তাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ নয়।
দুই. তাদের মহিলা ইমাম তাদের মাঝ বরাবর দাঁড়াবে (সামনে নয়)
তিন. মহিলা যদি একজন হয় তবে সে পুরুষের পিছনে দাঁড়াবে, পুরুষের পাশে নয়, যা পুরুষের বিধান থেকে ভিন্নতর।
চার. যখন মহিলারা পুরুষদের সাথে সালাত আদায় করবে তখন তাদের শেষ কাতার প্রথম কাতার থেকে উত্তম।’... শেষ।
এ সব কিছু থেকে জানা গেল যে, নারী-পুরুষদের মেলামেশা হারাম।      
৭. ঈদের সালাতে নারীদের বের হওয়ার বিধান:
উম্মে ‘আতিয়্যাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন:
»أمرنا رسول الله صلى الله عليه وسلم أن نخرجهن في الفطر والأضحى: العواتق، والحيض، وذوات الخدور، فأما الحيض فيعتزلن الصلاة - وفي لفظ: المصلى - ويشهدن الخير، ودعوة المسلمين«
“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে নির্দেশ করেছেন, যেন আমরা ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহায় ঋতুমতী, যুবতী ও অবিবাহিতা নারীদের বের করি, তবে ঋতুমতী নারীরা সালাত থেকে বিরত থাকবে, অপর বর্ণনায় আছে: মুসল্লীদের থেকে দূরে থাকবে এবং কল্যাণ ও মুসলিমদের দো‘আয় অংশ গ্রহণ করবে”।
শাওকানী রহ. বলেন: “এ হাদীস ও এ জাতীয় অন্যান্য হাদীস স্পষ্টভাবে প্রমাণ করে যে, দুই ঈদের দিন নারীদের ঈদগাহ যাওয়া বৈধ, এতে কুমারী, বিধবা, যুবতী, বৃদ্ধা, ঋতুমতী ও অন্যদের মাঝে কোনো পার্থক্য নেই, তবে যদি সে যদি ইদ্দত পালনকারী হয় অথবা তার বের হওয়ায় ফেতনার আশঙ্কা থাকে অথবা কোনো সমস্যা হলে বের হবে না”।  সমাপ্ত।
শাইখুল ইসলাম ইবন তাইমিয়া ‘মাজমু‘ ফাতাওয়ায়’: (৬/৪৫৮ ও ৪৫৯) বলেন: “মুমিন নারীদের বলা হয়েছে যে, জামা‘আত ও জুমআয় উপস্থিত হওয়া অপেক্ষা ঘরে সালাত পড়াই তাদের জন্য অধিক উত্তম তবে ঈদ ব্যতীত। ঈদে তাদের উপস্থিতির আদেশ রয়েছে, কয়েকটি কারণে, আল্লাহ ভালো জানেন:
এক. ঈদ বছরে মাত্র দু’বার, তাই তাদের উপস্থিতি গ্রহণযোগ্য পক্ষান্তরে জুমু‘আ ও জামা‘আত এরূপ নয়।
দুই. ঈদের সালাতের কোনো বিকল্প নেই, পক্ষান্তরে জুমু‘আ ও জামা‘আতের বিকল্প আছে, কারণ ঘরে জোহর আদায় করাই নারীর জন্য জুমু‘আ আদায় করা।
তিন. ঈদের সালাতের জন্য বের হওয়া মূলত আল্লাহর যিকিরের জন্য ময়দানে বের হওয়া, যা কয়েক বিবেচনায় হজের সাথে মিল রাখে। এ জন্য হাজীদের সাথে মিল রেখে হজের মৌসুমেই বড় ঈদ হয়। সমাপ্ত।
শাফে‘ঈগণ বলেন: সাধারণ নারীরা যাবে, বিশেষ মর্যাদার অধিকারী নারীরা যাবে না।
ইমাম নাওয়াওয়ী ‘আল-মাজমু’: (৫/১৩) গ্রন্থে বলেন: শাফে‘ঈ ও তার সাথীগণ বলেছেন: সাধারণ নারীদের ঈদের সালাতে হাযির হওয়া মুস্তাহাব, সম্ভ্রান্ত ও বিশেষ মর্যাদার অধিকারী নারীদের সালাতে বের হওয়া মাকরূহ... অতঃপর বলেন: তারা যখন বের হবে নিম্নমানের কাপড় পরিধান করে বের হবে, আবেদনময়ী কাপড় পরিধান করে বের হবে না, তাদের জন্য পানি দ্বারা পরিচ্ছন্ন হওয়া মুস্তাহাব, তবে সুগন্ধি ব্যবহার করা মাকরূহ। এ বিধান বৃদ্ধা ও তাদের ন্যায় নারীদের জন্য যারা বিবাহের ইচ্ছা রাখে না, তবে যুবতী, সুন্দরী এবং বিবাহের ইচ্ছা রাখে এরূপ নারীদের উপস্থিত হওয়া মাকরূহ। কারণ, এতে তাদের ওপর ও তাদের দ্বারা অন্যদের ফিতনার আশঙ্কা থাকে। যদি বলা হয়, এ বিধান উল্লিখিত উম্মে আতিয়্যার হাদীসের বিপরীত, আমরা বলব: আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা থেকে সহীহ বুখারী ও মুসলিমে এসেছে, তিনি বলেছেন: “নারীরা যা করছে তা যদি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দেখতেন অবশ্যই তাদেরকে নিষেধ করতেন, যেরূপ বনু ইসরাঈলের নারীদের নিষেধ করা হয়েছে।” দ্বিতীয়ত প্রথম যুগের তুলনায় বর্তমান যুগে ফিতনার উপকরণ অনেক বেশি। আল্লাহ তা‘আলা ভালো জানেন। সমাপ্ত
আমি বলি: আমাদের যুগে ফিতনা আরো মারাত্মক।
ইমাম ইবনুল জাওযী ‘আহকামুন নিসা’: (পৃ. ৩৮) গ্রন্থে বলেন: আমরা বর্ণনা করেছি যে, নারীদের বের হওয়া বৈধ; কিন্তু যদি তাদের নিজেদের কিংবা তাদের দ্বারা অন্যদের ফিতনার আশঙ্কা হয় তাহলে বের না হওয়াই উত্তম। কারণ, প্রথম যুগের নারীরা যেভাবে লালিত-পালিত হয়েছে সেভাবে এ যুগের নারীরা হয় নি, পুরুষদের অবস্থাও তথৈবচ”। সমাপ্ত। অর্থাৎ তারা অনেক তাকওয়ার ওপর প্রতিষ্ঠিত ছিল।
হে মুসলিম বোন, এসব উদ্ধৃতি থেকে জান যে, ঈদের সালাতের জন্য তোমার বের হওয়া শরী‘আতের দৃষ্টিতে বৈধ, তবে শর্ত হচ্ছে পর্দা ও সম্ভ্রমকে সংরক্ষণ করে এবং আল্লাহর নৈকট্য লাভ, মুসলিমদের দো‘আয় অংশ গ্রহণ ও ইসলামের নিদর্শনকে বুলন্দ করার ইচ্ছায়, তার উদ্দেশ্য কখনো সৌন্দর্য চর্চা ও ফিতনার মুখোমুখি হওয়া নয়।


ষষ্ঠ পরিচ্ছেদ
জানাযা সংক্রান্ত নারীদের বিশেষ বিধান
আল্লাহ তা‘আলা প্রত্যেক নফসের জন্যই মৃত্যুকে অবধারিত করে দিয়েছেন। স্থায়িত্ব একমাত্র তার নিজের জন্যই সংরক্ষিত। তিনি বলেন:
﴿وَيَبۡقَىٰ وَجۡهُ رَبِّكَ ذُو ٱلۡجَلَٰلِ وَٱلۡإِكۡرَامِ ٢٧﴾ [الرحمن: ٢٧]
“আর থেকে যাবে শুধু মহামহিম ও মহানুভব তোমার রবের চেহারা”। [সূরা আর-রহমান, আয়াত: ২৭]
বনু আদমের জানাযার সাথে কিছু বিধান রয়েছে, যা বাস্তবায়ন করা জীবিতদের ওপর জরুরি। তন্মধ্যে এখানে আমরা শুধু নারীদের সাথে খাস জরুরি কতক বিধান উল্লেখ করব।
১. মৃত নারীকে গোসল দেওয়ার দায়িত্ব কোনো নারীর গ্রহণ করা ওয়াজিব:
মৃত নারীকে গোসল নারীই দিবে, পুরুষের পক্ষে তাকে গোসল দেওয়া বৈধ নয় স্বামী ব্যতীত, স্বামীর পক্ষে স্ত্রীকে গোসল দেওয়া বৈধ। অনুরূপ পুরুষকে গোসল করানোর দায়িত্ব পুরুষ গ্রহণ করবে, নারীর পক্ষে তাকে গোসল দেওয়া বৈধ নয় স্ত্রী ব্যতীত, স্ত্রীর পক্ষে নিজ স্বামীকে গোসল দেওয়া বৈধ। কারণ, আলী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু নিজ স্ত্রী ফাতিমা বিনতে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে গোসল দিয়েছেন, অনুরূপ আসমা বিনতে উমাইস নিজ স্বামী আবু বকর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুকে গোসল দিয়েছেন।
২. নারীদের পাঁচটি সাদা কাপড়ে কাফন দেওয়া মুস্তাহাব:
ইযার, যা দিয়ে তার নিম্নাংশ আবৃত করা হয়। উড়না হবে মাথার উপর। জামা হবে তার শরীরের উপর। আর দু’টি লেফাফা দিয়ে তার পূর্ণ শরীরকে ঢেকে দেওয়া হবে। কারণ, লায়লা সাকাফিয়্যাহ বর্ণনা করেন:
»كنت فيمن غسل أم كلثوم بنت رسول الله صلى الله عليه وسلم عند وفاتها،  وكان أول ما أعطانا رسول الله  الحقى، ثم الدرع، ثم الخمار، ثم الملحفة، ثم أدرجت بعد ذلك في الثوب الآخر«
“উম্মে কুলসুম বিনতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মারা গেলে যারা তাকে গোসল দেয়, আমি তাদের একজন ছিলাম। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে প্রথম যা দিয়ে ছিলেন, তা ছিল ইযার, অতঃপর জামা, অতঃপর উড়না, অতঃপর লেফাফা, অতঃপর এগুলোকে আরেকটি কাপড় দিয়ে আচ্ছাদিত করে দেই”।
ইমাম শাওকানী রহ. বলেন: হাদীস প্রমাণ করে যে, নারীর কাফনের জন্য বিধান হচ্ছে ইযার, জামা, উড়না, চাদর ও লেফাফা”।  সমাপ্ত।
৩. মৃত নারীর চুলের ব্যাপারে করণীয়:
নারীর চুল তিনটি বেণী করে পিছনে ফেলে রাখবে। কারণ, উম্মে ‘আতিয়্যাহ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মেয়ের গোসলের বর্ণনা দিয়ে বলেন:
»فضفرنا شعرها ثلاثة قرون، وألقيناه خلفها«
“আমরা তার চুলকে সমান তিনটি বেণী বানিয়ে পিছনে রেখে দিয়েছি”।
৪. নারীদের জানাযার পশ্চাতে চলার বিধান:
উম্মে ‘আতিয়্যাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন:
»نهينا عن اتباع الجنائز، ولم يعزم علينا«
“আমাদেরকে জানাযার অনুসরণ করতে নিষেধ করা হয়েছে তবে কঠোরভাবে নিষেধ করা হয় নি”।
হাদীসের বাহ্যিক ভাষা নারীদের জন্য জানাযার পিছনে চলা হারাম বুঝায়। আর উম্মে ‘আতিয়্যাহ-এর কথা “আমাদেরকে কঠোরভাবে নিষেধ করা হয় নি” সম্পর্কে শাইখুল ইসলাম ইবন তাইমিয়্যাহ বলেন: “মনে হয় তার উদ্দেশ্য, নিষেধ করার বিষয়টিতে তাকীদ দেওয়া হয় নি”। এ কথা জানাযার অনুসরণ করা হারাম হওয়ার পরিপন্থী নয়। হয়তো তিনি ধারণা করেছে এ নিষেধাজ্ঞা হারাম নয়। এটা তার বুঝ, দলীল তার বুঝ নয়, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কথাই দলীল”।
৫. নারীদের কবর যিয়ারত করা হারাম:
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত:
»أن رسول الله صلى الله عليه وسلم لعن زوارات القبور«           
“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কবর যিয়ারতকারীদের ওপর লা‘নত করেছেন”।
শাইখুল ইসলাম ইবন তাইমিয়্যাহ রহ. বলেন: “যদি নারীকে যিয়ারত করার সুযোগ দেওয়া হয়, সে অস্থিরতা, বিলাপ ও মাতম শুরু করবে, কারণ তার মধ্যে রয়েছে দুর্বলতা, অধিক অস্থিরতা ও কম ধৈর্য। দ্বিতীয়ত তার এসব কর্ম মৃত ব্যক্তির জন্য কষ্টের কারণ। তৃতীয়ত তার চেহারা ও আওয়াজ দ্বারা পুরুষদের ফিতনা হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে। অপর এক হাদীসে এসেছে:
»فإنكن تفتن الحي وتؤذين الميت«
“কারণ তোমরা জীবিতদের ফিতনায় ফেল এবং মৃতদের কষ্ট দাও”।
অতএব নারীদের কবর যিয়ারত ফেতনার কারণ, যা তাদের ও পুরুষদের মাঝে কিছু হারাম বিষয়কে জন্ম দেয়। এতে যিয়ারত করার হিকমতও সুনিশ্চিত নয়, কারণ যিয়ারতের এমন কোনো সীমা নির্ধারণ করা সম্ভব নয় যা এসব অপরাধ জন্ম দিবে না। আবার এক যিয়ারতকে অপর যিয়ারত থেকে পৃথক করাও সম্ভব নয় যে, একটি জায়েয বলব। শরী‘আতের একটি নীতি হচ্ছে যদি কোনো বিধানের হিকমত গোপন হয় অথবা সচরাচর না হয়, তাহলে তার সম্ভাব্য হিকমতের সাথে হুকুম সম্পৃক্ত হয়। অতএব, হারাম কর্মের পথ বন্ধ করার স্বার্থে যিয়ারত নিষিদ্ধ করাই শ্রেয়। যেমন, গোপন সৌন্দর্যের দিকে দৃষ্টি দেওয়া হারাম। কারণ, সেটা ফিতনার কারণ। অনুরূপ অপরিচিত নারীর সাথে একান্ত মিলন ও তার দিকে দৃষ্টি ইত্যাদি হারাম। নারীর যিয়ারতে এমন কিছু নেই যা এসব ফ্যাসাদ মোকাবেলায় সক্ষম। কারণ, যিয়ারতে মৃত ব্যক্তির জন্য দো‘আ ব্যতীত কিছু নেই যা ঘরে বসেই সম্ভব”।  সমাপ্ত।
৬. মাতম করা হারাম:
মাতম হচ্ছে মৃত ব্যক্তির ওপর অস্থিরতা প্রকাশ করে উচ্চস্বরে বিলাপ করা, কাপড় ছিঁড়ে ফেলা, গাল থাপড়ানো, চুল উঠিয়ে ফেলা, চেহারা কালো করা ও খামচানো, ধ্বংসকে আহ্বান করা ইত্যাদি, যা আল্লাহর সিদ্ধান্ত ও তাকদীরের ওপর অসন্তুষ্টি ও অধৈর্যতা প্রমাণ করে। এসব আচরণ হারাম ও কবিরা গুনাহ। সহীহ বুখারী ও মুসলিমে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
»ليس منا من لطم الخدود، وشق الجيوب، ودعا بدعوى الجاهلية«
“যে গালে আঘাত করে, কাপড় ছিঁড়ে ফেলে ও জাহেলী পরিভাষায় চিল্লাফাল্লা করে সে আমাদের অন্তর্ভুক্ত নয়”।  সহীহ বুখারী ও মুসলিমে আরো রয়েছে:
»أنه صلى الله عليه وسلم بريء من الصالقة والحالقة والشاقة«
“নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালিকাহ, হালিকাহ ও শাক্কাহ থেকে বিমুক্ত”।
সালিকাহ: সে নারী, যে মুসীবতের সময় উচ্চস্বরে আওয়াজ করে। হালিকাহ: সে নারী, যে মুসীবতের সময় চুল ছিঁড়ে ফেলে। শাক্কাহ: সে নারী, যে মুসীবতের সময় কাপড় ছিড়ে ফেলে। সহীহ মুসলিমে বর্ণিত,
»أنه صلى الله عليه وسلم لعن النائحة والمستمعة«
“নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মাতমকারী ও মাতম শ্রবণকারীকে লা‘নত করেছেন”।  অর্থাৎ যে স্বেচ্ছায় মাতম শুনে ও তা পছন্দ করে।
হে মুসলিম বোন, মুসীবতের সময় এসব হারাম কাজ থেকে বিরত থাকা একান্ত জরুরি, তুমি ধৈর্য ধারণ কর ও সাওয়াবের আশা রাখ, যেন মুসীবত তোমার পাপের কাফফারা ও নেকি বৃদ্ধির কারণ হয়। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿وَلَنَبۡلُوَنَّكُم بِشَيۡءٖ مِّنَ ٱلۡخَوۡفِ وَٱلۡجُوعِ وَنَقۡصٖ مِّنَ ٱلۡأَمۡوَٰلِ وَٱلۡأَنفُسِ وَٱلثَّمَرَٰتِۗ وَبَشِّرِ ٱلصَّٰبِرِينَ ١٥٥ ٱلَّذِينَ إِذَآ أَصَٰبَتۡهُم مُّصِيبَةٞ قَالُوٓاْ إِنَّا لِلَّهِ وَإِنَّآ إِلَيۡهِ رَٰجِعُونَ ١٥٦ أُوْلَٰٓئِكَ عَلَيۡهِمۡ صَلَوَٰتٞ مِّن رَّبِّهِمۡ وَرَحۡمَةٞۖ وَأُوْلَٰٓئِكَ هُمُ ٱلۡمُهۡتَدُونَ ١٥٧﴾ [البقرة: ١٥٥،  ١٥٧]  
“আর আমরা অবশ্যই তোমাদেরকে পরীক্ষা করব কিছু ভয়, ক্ষুধা এবং জান-মাল ও ফল-ফলাদির স্বল্পতার মাধ্যমে। আর তুমি ধৈর্যশীলদের সুসংবাদ দাও। যারা, তাদেরকে যখন বিপদ আক্রান্ত করে তখন বলে, নিশ্চয় আমরা আল্লাহর জন্য এবং নিশ্চয় আমরা তার দিকে প্রত্যাবর্তনকারী। তাদের ওপরই রয়েছে তাদের রবের পক্ষ থেকে মাগফিরাত ও রহমত এবং তারাই হিদায়াত প্রাপ্ত”। [সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ১৫৫-১৫৭]
হ্যাঁ, তোমার জন্য কাঁদা বৈধ যদি মাতম, হারাম কর্ম এবং আল্লাহর ফয়সালা ও কুদরতের ওপর অসন্তুষ্টি প্রকাশ না হয়। কারণ, ক্রন্দন মৃত ব্যক্তির প্রতি রহমত ও অন্তরে নম্রতার আলামত। দ্বিতীয়ত এটাকে প্রতিহত করাও সম্ভব নয়, তাই ক্রন্দন করা বৈধ, বরং মুস্তাহাব। আল্লাহই সাহায্যকারী।

 

সপ্তম পরিচ্ছেদ
সিয়াম সংক্রান্ত নারীদের বিধান
রমযান মাসের সিয়াম প্রত্যেক মুসলিম নারী ও পুরুষের ওপর ফরয। সিয়াম ইসলামের একটি রুকন ও মহান এক স্তম্ভ। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ كُتِبَ عَلَيۡكُمُ ٱلصِّيَامُ كَمَا كُتِبَ عَلَى ٱلَّذِينَ مِن قَبۡلِكُمۡ لَعَلَّكُمۡ تَتَّقُونَ ١٨٣﴾ [البقرة: ١٨٣]  
“হে মুমিনগণ, তোমাদের ওপর সিয়াম ফরয করা হয়েছে, যেভাবে ফরয করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর, যাতে তোমরা তাকওয়া অবলম্বন কর”। [সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ১৮৩]
এখানেكُتِبَ  অর্থ ফরয করা হয়েছে। কিশোরীর মাঝে সালাবক হওয়ার কোনো একটি নিদর্শন স্পষ্ট হলে ফরয বিধান পালন করার বয়সে উপনীত হয়, তখন থেকে সে ফরয সিয়াম রাখা শুরু করবে। সাবালক হওয়ার একটি নিদর্শন ঋতু বা হায়েয। ঋতু কখনো নয় বছরে শুরু হয়; কিন্তু কতক কিশোরী বিধান না জানার কারণে সিয়াম রাখে না, তার ধারণা সে ছোট। পরিবারও তাকে সিয়াম রাখার নির্দেশ করে না, ইসলামের একটি রুকনের ক্ষেত্রে এটি বড় ধরণের গাফলতি। এরূপ যার ক্ষেত্রে ঘটেছে তাকে অবশ্যই ঋতু তথা হায়েযের শুরু থেকে সিয়াম কাযা করতে হবে, যদিও অনেক দীর্ঘ হয়, কারণ তার জিম্মায় সিয়াম বাকি রয়েছে।
কার ওপর রমযান ওয়াজিব?
রমযান মাস প্রবেশ করলে সালাবক, সুস্থ ও নিবাসস্থলে অবস্থানকারী প্রত্যেক মুসলিম নারী ও পুরুষের ওপর সিয়াম রাখা ওয়াজিব হয়। কেউ যদি রমযানের মাঝে অসুস্থ হয় অথবা মুসাফির হয়, সে পানাহার করবে এবং তার সংখ্যা মোতাবেক অন্য সময় কাযা করবে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿فَمَن شَهِدَ مِنكُمُ ٱلشَّهۡرَ فَلۡيَصُمۡهُۖ وَمَن كَانَ مَرِيضًا أَوۡ عَلَىٰ سَفَرٖ فَعِدَّةٞ مِّنۡ أَيَّامٍ أُخَرَۗ﴾ [البقرة: ١٨٥]  
“সুতরাং তোমাদের মাঝে যে মাসটিতে উপস্থিত হবে সে যেন তাতে সিয়াম পালন করে। আর যে অসুস্থ হবে অথবা সফরে থাকবে তবে অন্যান্য দিবসে সংখ্যা পূরণ করবে”। [সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ১৮৫]
অনুরূপ যার নিকট রমযান উপস্থিত হয় এমন অবস্থায় যে, সে জরাগ্রস্ত, সিয়াম রাখতে সক্ষম নয় অথবা স্থায়ীভাবে অসুস্থ যা কোনো সময় সেরে উঠার কোনো সম্ভাবনা নেই, হোক সে নারী কিংবা পুরুষ পানাহার করবে এবং প্রত্যেক দিনের পরিবর্তে একজন মিসকীনকে আধা সা  দেশীয় খাবার দিবে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿وَعَلَى ٱلَّذِينَ يُطِيقُونَهُۥ فِدۡيَةٞ طَعَامُ مِسۡكِينٖۖ﴾ [البقرة: ١٨٤]  
“আর যাদের জন্য তা কষ্টকর হবে, তাদের কর্তব্য ফিদিয়া -একজন দরিদ্রকে খাবার প্রদান করা”। [সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ১৮৪]
আব্দুল্লাহ ইবন আব্বাস বলেন, এ বিধান এমন বুড়োর জন্য যার সুস্থ হয়ে উঠার সম্ভাবনা নেই। এ কথা ইমাম বুখারী বর্ণনা করেছেন। অনুরূপ যার রোগ থেকে সেরে উঠার সম্ভাবনা নেই সেও বুড়োর মত, তাদের ওপর কাযা নেই যেহেতু তাদের পক্ষে কাযা সম্ভবও নয়।
বিশেষ কিছু অপারগতার কারণে রমযানে নারীর পানাহার করা বৈধ:
নারীর কিছু অপারগতা রয়েছে, যে কারণে রমযানে পানাহার করা তার পক্ষে বৈধ, তবে ছেড়ে দেওয়া সিয়ামগুলো পরে কাযা করবে অবশ্যই।
নারীর অপারগতাগুলো নিম্নরূপ:
১. হায়েয ও নিফাস: হায়েয ও নিফাসের সময় সিয়াম রাখা হারাম, পরে তা কাযা করা ওয়াজিব। কারণ, আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা থেকে বুখারী ও মুসলিম বর্ণনা করেন:
»كنا نؤمر بقضاء الصوم، ولا نؤمر بقضاء الصلاة«
“আমাদেরকে সিয়ামের কাযা করার নির্দেশ দেওয়া হত, কিন্তু সালাতের কাযা করার নির্দেশ দেওয়া হত না”।  
এর কারণ, একদা জনৈক নারী আয়েশাকে প্রশ্ন করেন: ঋতুমতী নারীরা সিয়াম কাযা করবে, কিন্তু সালাত কাযা করবে না কারণ কী? উত্তরে তিনি বলেন: এসব বিষয় অহী নির্ভর, এতে অহীর অনুসরণ করাই মূল কথা।
ঋতু অবস্থায় সিয়াম ত্যাগ করার হিকমত:
শাইখুল ইসলাম ইবন তাইমিয়্যাহ রহ. ‘মাজমুউল ফতোয়ায়’: (২৫/২৫১) বলেন: “ঋতুতে যে রক্ত নির্গত হয় সেটা এক প্রকার রক্তক্ষরণ, যা তার স্বাভাবিক সুস্থতার বিপরীত। ঋতুমতী নারী স্বাভাবিক অবস্থায় সিয়াম রাখতে সক্ষম যখন তার রক্ত নির্গত হয় না। অতএব, ঋতুমতী নারী যদি স্বাভাবিক অবস্থায় সিয়াম রাখে যখন তার শরীর থেকে শক্তিশালী উপাদান (রক্ত) বের হওয়া বন্ধ থাকে তার সিয়ামটা স্বাভাবিক হয়। পক্ষান্তরে যদি ঋতু অবস্থায় সিয়াম রাখে যখন তার থেকে শরীরের নির্যাস রক্ত বের হয়, যা শরীরকে ক্ষয় ও দুর্বল করে, তখন তার সিয়ামও হবে অস্বাভাবিক (দুর্বল)। এ জন্য নারীদের ঋতু শেষে সিয়াম কাযা করার নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে। সমাপ্ত।
২. গর্ভ ও দুগ্ধপান: গর্ভ ও দুগ্ধপান করানো অবস্থায় সিয়াম দ্বারা যদি নারী অথবা সন্তান অথবা তারা উভয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তাহলে গর্ভ ও দুগ্ধপান করানো অবস্থায় পানাহার করবে। অতঃপর যে ক্ষতির আশঙ্কায় পানাহার করেছে সেটা যদি বাচ্চা সংশ্লিষ্ট হয়, মায়ের সাথে সম্পৃক্ত না হয়, তাহলে পানাহার করা দিনের কাযা করবে এবং প্রত্যেক দিনের মোকাবিলায় একজন মিসকিনকে খাবার দিবে। আর যদি ক্ষতি নারীর সাথে সংশ্লিষ্ট হয়, তাহলে শুধু তার কাযা করলে যথেষ্ট হবে। কারণ, গর্ভবতী ও দুগ্ধদানকারী উভয় আল্লাহর বাণীর অন্তর্ভুক্ত। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿وَعَلَى ٱلَّذِينَ يُطِيقُونَهُۥ فِدۡيَةٞ طَعَامُ مِسۡكِينٖۖ﴾ [البقرة: ١٨٤]  
“আর যাদের জন্য তা কষ্টকর হবে, তাদের কর্তব্য ফিদিয়া -একজন দরিদ্রকে খাবার প্রদান করা”। [সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ১৮৪]
হাফেয ইবন কাসির রহ. স্বীয় তাফসীর: (১/৩৭৯) গ্রন্থে বলেন: “আয়াতের অর্থে গর্ভবতী ও দুগ্ধদানকারী অন্তর্ভুক্ত হয়, যদি তারা তাদের নিজের নফসের অথবা সন্তানের ওপর আশঙ্কা করে”। সমাপ্ত।
শাইখুল ইসলাম ইবন তাইমিয়্যাহ রহ. বলেন: যদি গর্ভবতী তার বাচ্চার ওপর আশঙ্কা করে, তাহলে পানাহার করবে ও প্রত্যেক দিনের কাযা করবে এবং প্রত্যেক দিনের মোকাবেলায় মিসকীনকে এক রতল  রুটি দিবে”।  সমাপ্ত।
কয়েকটি জ্ঞাতব্য:
১. মুস্তাহাযাহ নারী: যে নারীর হায়েয ব্যতীত কোনো কারণে রক্ত নির্গত হয়, যার আলোচনা আমরা পূর্বে করেছি, তার উপর সিয়াম রাখা জরুরি। ইস্তেহাযার কারণে পানাহার করা তার পক্ষে বৈধ নয়।
শাইখুল ইসলাম ইবন তাইমিয়্যাহ রহ. ঋতুমতী নারীর পানাহার করার আলোচনা শেষে বলেন: ইস্তেহাযা এর বিপরীত, কারণ ইস্তেহাযা দীর্ঘ সময়কে ঘিরে থাকে, তার এমন কোনো সময় নেই যেখানে তাকে সিয়ামের নির্দেশ দেওয়া হবে। আবার ইস্তেহাযাহ থেকে তার বাচারও উপায় নেই। ইস্তেহাযার রক্ত হচ্ছে সামান্য বমি, আঘাতের কারণে বা পায়খানার রাস্তা দিয়ে রক্ত বের হওয়া ও স্বপ্ন দোষ ইত্যাদির মত, যার কোনো নির্দিষ্ট সময় নেই, যার থেকে নিরাপদ থাকা অসম্ভব। অতএব, এগুলো হায়েযের রক্তের ন্যায় সিয়ামের পথে বাঁধা নয়”।  সমাপ্ত।
২. ঋতুমতী, গর্ভবতী ও দুগ্ধদানকারী নারী যদি পানাহার করে, তাহলে তাদের ওপর ফরয হচ্ছে, যে রমযানে পানাহার করেছে তার পর থেকে আগামী রমযানের আগে কাযা করা, তবে দ্রুত কাযা করা মুস্তাহাব। যদি যে পরিমাণ তার ওপর কাযা ফরয, পরবর্তী রমযান আসার সে ক’টি দিন বাকি থাকে, তাহলে এ দিনগুলোতে তার কাযা করা ফরয, যেন পিছনের রমযানের কাযা থাকাবস্থায় তার ওপর নতুন রমযান আগমন না করে। যদি পেছনের রমযানের কাযা না করে, এভাবেই পরবর্তী রমযান এসে যায়, বিলম্ব করার কোনো কারণও নেই, তাহলে তার ওপর কাযা করা ও প্রত্যেক দিনের বিনিময়ে মিসকীনকে খাবার দেওয়া ফরয, আর যদি তার পশ্চাতে সঙ্গত কারণ থাকে তাহলে শুধু কাযা করা ওয়াজিব। অনুরূপভাবে যার ওপর কাযা ছিল রোগ অথবা সফরের কারণে, তার হুকুমও ঋতুমতী নারীর মতো উপরোক্ত ব্যাখ্যাসহ।
৩. স্বামীর উপস্থিত থাকাবস্থায় নারীর নফল সিয়াম রাখা জায়েয নয়। কারণ, ইমাম বুখারী ও মুসলিম প্রমুখগণ আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণনা করেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
»لا يحل لامرأة أن تصوم وزوجها شاهد إلا بإذنه«
“কোনো নারীর পক্ষে জায়েয নয় স্বামীর উপস্থিতিতে সিয়াম রাখা তার অনুমতি ব্যতীত”।  আহমদ ও আবু দাউদের কতক বর্ণনায় আছে, তবে রমযান ব্যতীত।
অবশ্য যদি স্বামী নফল সিয়াম রাখার অনুমতি দেয় অথবা তার স্বামী উপস্থিত না থাকে অথবা তার স্বামীই নেই, তার পক্ষে নফল সিয়াম রাখা মুস্তাহাব। বিশেষভাবে যে দিনগুলোকে সিয়াম রাখা মুস্তাহাব, যেমন সোমবার, বৃহস্পতিবার ও প্রত্যেক মাসে তিনটি সিয়াম, শাওয়াল মাসের ছয় সিয়াম, জিল হজ মাসের দশ দিনের সিয়াম, আরাফার সিয়াম এবং আশুরার দিন সিয়াম রাখা আগে বা পরে একদিন মিলিয়ে। হ্যাঁ, রমযানের কাযা যিম্মাদারিতে থাকাবস্থায় যতক্ষণ না ফরয সাওম পালন শেষ করছে ততক্ষণ নফল সিয়াম রাখা যথাযথ নয়। আল্লাহ ভালো জানেন।
৪. ঋতুমতী নারী যদি রমযান মাসে দিনের মধ্যবর্তী সময় পাক হয়, তাহলে সে অবশিষ্ট দিন বিরত থাকবে এবং পরবর্তীতে কাযা করবে। সময়ের প্রতি সম্মান জানিয়ে অবশিষ্ট দিন তার বিরত থাকা আবশ্যক।

অষ্টম পরিচ্ছেদ
হজ ও উমরায় নারীর বিশেষ বিধান
প্রতি বছর আল্লাহর সম্মানিত ঘর বায়তুল্লার হজ করা পুরো উম্মতের ওপর ওয়াজিব কিফায়া, অর্থাৎ সবার ওপর ওয়াজিব, তবে কতক সংখ্যক আদায় করলে বাকিদের থেকে আদায় হয়ে যায়। যেসব মুসলিমের মাঝে হজের সকল শর্ত বিদ্যমান, তাদের ওপর জীবনে একবার হজ করা ফরয, তার অতিরিক্ত হজ নফল। হজ ইসলামের এক গুরুত্বপূর্ণ রুকন। নারীর জন্য হজ জিহাদ সমতুল্য। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন:
»يا رسول الله، هل على النساء جهاد ؟ قال: نعم، عليهن جهاد لا قتال فيه: الحج والعمرة«
“হে আল্লাহর রাসূল, নারীদের ওপর কি জিহাদ আছে? তিনি বললেন: হ্যাঁ, তাদের ওপর এমন জিহাদ আছে যেখানে মারামারি নেই: (অর্থাৎ) হজ ও উমরাহ”।  আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা থেকে ইমাম বুখারী আরো বর্ণনা করেন, তিনি বলেছেন:
»يا رسول الله، نرى الجهاد أفضل العمل، أفلا نجاهد ؟ قال: لكن أفضل الجهاد حج مبرور «
“হে আল্লাহর রাসূল, আমরা জিহাদকে সর্বোত্তম আমল মনে করি, আমরা কি জিহাদ করব না? তিনি বলেন: তোমাদের জন্য সর্বোত্তম জিহাদ মাবরুর হজ”।
 
হজ সংক্রান্ত নারীর বিশেষ বিধান
১. মুহরিম:
হজে নারী-পুরুষ সবার জন্য কিছু বিধান রয়েছে সাধারণ, যেখানে কোনো ভিন্নতা নেই, সমানভাবে সবার জন্যই তা প্রযোজ্য, যেমন ইসলাম, বিবেক, স্বাধীনতা, সাবালক ও অর্থনৈতিক সামর্থ্য।
তবে নারীর জন্য অতিরিক্ত শর্ত হচ্ছে মাহরাম থাকা, যার সাথে সে হজের সফর করবে। মাহরাম যেমন স্বামী অথবা রক্তের সম্পর্কের কারণে নারীর ওপর চির দিন হারাম এমন পুরুষ, যেমন বাবা, সন্তান ও ভাই। অথবা রক্ত-সম্পর্ক ব্যতীত মাহরাম, যেমন দুধ ভাই অথবা মায়ের (পূর্ববর্তী বা পরবর্তী) স্বামী অথবা স্বামীর (অপর স্ত্রীর) ছেলে।
মাহরাম শর্ত হওয়ার দলীল: ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা বর্ণনা করেন, তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে খুৎবায় বলতে শোনেন:
»لا يخلون رجل بامرأة إلا ومعها ذو محرم، ولا تسافر المرأة إلا مع ذي محرم، فقام رجل فقال: يا رسول الله إن امرأتي خرجت حاجة، وإني اكتتبت في غزوة كذا وكذا، قال: فانطلق فحج مع امرأتك«
“মাহরাম ব্যতীত কোনো নারী পুরুষের সাথে একান্তে থাকবে না, অনুরূপ মাহরাম ব্যতীত নারী সফর করবে না। এক ব্যক্তি দাঁড়িয়ে বলল, হে আল্লাহর রাসূল, আমার স্ত্রী হজের উদ্দেশ্যে বের হয়েছে, আর আমিও অমুক অমুক যুদ্ধে নাম লিখিয়েছি। তিনি বললেন: যাও, তোমার স্ত্রীর সাথে হজ কর”।  ইবন ওমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
»لا تسافر المرأة ثلاثا، إلا معها ذو محرم«
“কোনো নারী মাহরাম ব্যতীত তিন দিন সফর করবে না”।  
এ জাতীয় অর্থ প্রদানকারী অনেক হাদীস রয়েছে, যা নারীকে হজ ও অন্যান্য প্রয়োজনে একাকী সফর থেকে নিষেধ করে। কারণ, নারী দুর্বল, সফরে সে এমন সমস্যা ও কষ্টের সম্মুখীন হয়, যা পুরুষ ব্যতীত কেউ সমাধান করতে পারে না। দ্বিতীয়ত নারী ফাসিক পুরুষদের লালসার বস্তু, অতএব তার জন্য অবশ্যই মাহরাম জরুরি, যে তাকে সুরক্ষা দিবে ও তাদের কষ্ট থেকে তাকে নিরাপদ রাখবে।
নারীর হজের মাহরামকে অবশ্যই সাবালক, মুসলিম ও বিবেকী হওয়া জরুরি। কারণ, মাহরাম হিসেবে কাফের বিশ্বাসযোগ্য নয়, যদি তার মাহরাম যোগাড় না হয়, কাউকে প্রতিনিধি করবে, যে তার পক্ষে হজ করবে।
২. স্ত্রীর হজ যদি নফল হয় স্বামীর অনুমতি প্রয়োজন:
স্ত্রী নফল হজ করতে চাইলে স্বামীর অনুমতি প্রয়োজন। কারণ, স্ত্রী নফল হজে বের হলে তার ওপর স্বামীর যে হক রয়েছে তা বিনষ্ট হয়। ইবন কুদামাহ রহ. ‘আল-মুগনি’: (৩/২৪০) গ্রন্থে বলেন: “স্ত্রীকে নফল হজ থেকে নিষেধ করার অধিকার স্বামীর রয়েছে। ইবনুল মুনযির বলেন: যেসব আলেমের ইলম আমার নিকট রয়েছে, তারা সবাই একমত যে স্ত্রীকে নফল হজ থেকে বারণ করার ইখতিয়ার স্বামীর রয়েছে, তার কারণ স্বামীর হক তার ওপর ওয়াজিব, অতএব নফল ইবাদতের জন্য ওয়াজিব নষ্ট করার সুযোগ স্ত্রীর নেই, যেমন মনিব ও গোলামের পরস্পর হক”। সমাপ্ত।
৩. নারীর পক্ষে কারো প্রতিনিধি হয়ে হজ ও উমরা করা দুরস্ত:
শাইখুল ইসলাম ইবন তাইমিয়্যাহ  রহ. ‘মাজমুউল ফতোয়ায়’: (২৬/১৩) বলেন: “আলেমদের ঐক্যমত্যে নারীর জন্য বৈধ অপর নারীর পক্ষ থেকে হজ করা, হোক সে তার মেয়ে অথবা অন্য কেউ। অনুরূপ চার ইমাম ও জমহুর আলেমদের নিকট পুরুষের পক্ষ থেকেও নারীর হজ করা বৈধ, যেমন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খাসআমিয়াহ নারীকে তার বাবার পক্ষ থেকে হজ করার নির্দেশ দিয়েছেন, যখন সে বলেছিল:
»يا رسول الله إن فريضة الله في الحج على عباده أدركت أبي وهو شيخ كبير، فأمرها النبي صلى الله عليه وسلم أن تحج عن أبيها، مع أن إحرام الرجل أكمل من إحرامها«.  
“হে আল্লাহর রাসূল, বান্দার ওপর আল্লাহর ফরজ বিধান হজ আমার বাবাকে বার্ধক্য অবস্থায় পেয়েছে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে তার বাবার পক্ষ থেকে হজ করার নির্দেশ দেন, যদিও নারীর তুলনায় পুরুষের ইহরাম অধিক পরিপূর্ণ”।  সমাপ্ত।
৪. হজের সফরে নারীর ঋতু বা নিফাস হলে সফর অব্যাহত রাখবে:
ইহরামের সময় যদি নারীর ঋতু বা নিফাস হয়, অন্যান্য পবিত্র নারীর মতো সেও ইহরাম বাঁধবে। কারণ, ইহরামের জন্য পবিত্রতা শর্ত নয়। ইবন কুদামাহ রহ. ‘আল-মুগনি’: (৩/২৯৩ ও ২৯৪) গ্রন্থে বলেন: ইহরামের সময় নারীর গোসল করার বিধান রয়েছে, যেমন রয়েছে পুরুষের। ইহরাম হজের অংশ, তাই হায়েয ও নিফাসের নারীদের ক্ষেত্রে গোসল বেশি  গুরুত্বপূর্ণ, যেহেতু তাদের ব্যাপারে হাদীস রয়েছে, জাবির রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন:
»حتى أتينا ذا الحليفة فولدت أسماء بنت عميس محمد بن أبي بكر، فأرسلت إلى رسول الله صلى الله عليه وسلم كيف أصنع ؟ قال: اغتسلي، واستثفري بثوب، وأحرمي«  
“আমরা যখন যুল হুলাইফা আসি তখন আসমা বিনতে উমাইস মুহাম্মাদ ইবন আবু বকরকে প্রসব করেন। তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট জানতে চেয়ে প্রেরণ করল, কীভাবে করবে? তিনি বললেন: গোসল কর, একটি কাপড় পেঁচিয়ে নাও ও ইহরাম বাঁধ”।
ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
»النفساء والحائض إذا أتيا على الوقت يحرمان ويقضيان المناسك كلها غير الطواف بالبيت«
“নিফাস ও ঋতুমতী নারী মিকাতে পৌঁছে ইহরাম বাঁধবে ও হজের সকল ইবাদত আঞ্জাম দিবে শুধু তাওয়াফ ব্যতীত”।  
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আয়েশাকে হায়েয অবস্থায় হজের তালবিয়ার জন্য গোসল করার নির্দেশ দিয়েছেন”। সমাপ্ত।
ঋতুমতী ও নিফাসের নারীর ইহরামের পূর্বে গোসল করার হিকমত পবিত্রতা অর্জন করা, দুর্গন্ধ দূর করা যেন মানুষ জড়ো হলে তার থেকে কষ্ট না পায়। যদি ইহরাম অবস্থায় তাদের হায়েয ও নিফাস শুরু হয়, তবুও গোসল করবে নাপাক হালকা করার জন্য, তাদের ইহরামের কোনো সমস্যা হবে না। তারা ইহরাম অবস্থায় থাকবে ও গোসল করবে। অতঃপর ‘আরাফার দিন চলে আসার পরও যদি পবিত্র না হয়, তাহলে যদি উমরা শেষে হজ করার ইচ্ছায় ইহরাম বেঁধে থাকে, এখন হজের ইহরাম বাঁধবে এবং হজকে উমরার সাথে মিলিয়ে ঋতুমতী ও নিফাসী উভয় কারিন হয়ে যাবে অর্থাৎ কিরান হজ আদায়কারী হবে।
এ মাস’আলার দলীল: আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা ঋতুমতী হন, তার পূর্বে তিনি উমরার ইহরাম বেঁধেছিলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার নিকট গেলে তাকে কাঁদতে দেখেন, তিনি বলেন: তুমি কাঁদ কেন, হয়তো তোমার ঋতু শুরু হয়েছে? সে বলল: হ্যাঁ, তিনি বললেন: এটা এমন এক বস্তু, যা আল্লাহ আদমের মেয়েদের ওপর অবধারিত করে দিয়েছেন। হাজীগণ যা করে তুমিও তাই কর, তবে তাওয়াফ করো না”।  
জাবির রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত হাদীসে এসেছে:
»ثم دخل النبي صلى الله عليه وسلم على عائشة فوجدها تبكي، فقال: ما شأنك ؟ قالت: شأني أني قد حضت، وقد حل الناس ولم أحلل ولم أطف بالبيت، والناس يذهبون إلى الحج الآن، فقال: إن هذا أمر قد كتبه الله على بنات آدم، فاغتسلي، ثم أهلي ففعلت ووقفت المواقف كلها، حتى إذا طهرت طافت بالكعبة وبالصفا والمروة، ثم قال: قد حللت من حجك وعمرتك جميعا«
“অতঃপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আয়েশার নিকট এসে তাকে কাঁদতে দেখেন। তিনি বললেন: তোমার কী হয়েছে? সে বলল: আমার অবস্থা, আমি ঋতুমতী হয়ে গেছি, অথচ মানুষেরা হালাল হয়ে গেছে আমি এখনো হালাল হয় নি এবং তওয়াফও করি নি, মানুষেরা এখন হজে যাচ্ছে। তিনি বললেন: এটা এমন বস্তু, যা আল্লাহ আদমের মেয়েদের ওপর অবধারিত করে দিয়েছেন। অতএব, তুমি গোসল কর, অতঃপর তালবিয়াহ পাঠ কর। তিনি তাই করলেন এবং হজের প্রত্যেক স্থানে অবস্থান করলেন, যখন পবিত্র হলেন তখন কা‘বা ও সাফা-মারওয়া প্রদক্ষিণ করলেন। অতঃপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন: তুমি তোমার হজ ও উমরা উভয়টা থেকে পবিত্র হয়ে গেছো”।
আল্লামা ইবনুল কাইয়্যিম ‘তাহযীবুস সুনান’: (২/৩০৩) গ্রন্থে বলেন: সহীহ ও স্পষ্ট অর্থ প্রদানকারী হাদীস থেকে প্রমাণিত যে, আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা প্রথম উমরার ইহরাম বাঁধেন, অতঃপর যখন তিনি ঋতুমতী হন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে হজের ইহরাম বাঁধার নির্দেশ দেন, এভাবে তিনি কারিন হন, (অর্থাৎ কেরান হজ আদায়কারী)। এ জন্য নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বলেছেন: “হজ ও উমরার জন্য তোমার (একবার) কাবার তাওয়াফ ও সাফা-মারওয়া প্রদক্ষিণ করাই যথেষ্ট”।  সমাপ্ত।
৫. ইহরামের সময় নারীর করণীয়:
ইহরামের সময় পুরুষরা যা করে নারীরাও তাই করবে, যেমন গোসল করা, চুল ও নখ কাঁটা এবং দুর্গন্ধ দূর করে পরিচ্ছন্ন হওয়া, যেন ইহরামে প্রবেশের পর এসবের প্রয়োজন না হয়। কারণ, ইহরামে তা নিষিদ্ধ। যদি ইহরামের সময় এ জাতীয় পরিচ্ছন্নতার প্রয়োজন না হয়, তাহলে তা জরুরি নয়। কারণ, এগুলো ইহরামের বৈশিষ্ট্য নয়। শরীরে সুগন্ধি ব্যবহার করা বৈধ, যদি তার সুভাস ও সুগন্ধি প্রকট না হয়। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা থেকে বর্ণিত,
»كنا نخرج مع رسول الله صلى الله عليه وسلم فنضمد جباهنا بالمسك عند الإحرام، فإذا عرقت إحدانا سال على وجهها، فيراها النبي  فلا ينهانا«
“আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে বের হওয়ার সময় আমাদের কপালে মিসকের প্রলেপ দিতাম, যখন আমাদের কেউ ঘর্মাক্ত হত, মিসক তার চেহারায় গড়িয়ে পড়ত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা দেখতেন, কিন্তু আমাদের নিষেধ করতেন না”।
শাওকানী  রহ. ‘নাওলুল আওতার’: (৫/১২) গ্রন্থে বলেন: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের চুপ থাকা বৈধতা প্রমাণ করে। কারণ, তিনি না জায়েযের ওপর চুপ থাকেন না”। সমাপ্ত।
৬. ইহরামের নিয়ত করার সময় বোরকা ও নেকাব খুলে ফেলবে:
যদি নারী ইহরামের পূর্বে বোরকা ও নিকাব পরিহিতা থাকে তাহলে ইহরামের সময় তা খুলে ফেলবে। বোরকা ও নিকাব নারীর চেহারার এক জাতীয় পর্দা, তাতে চোখ বরাবর দু’টি ছিদ্র থাকে, তা দিয়ে সে দেখে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
»لا تنتقب المحرمة«
“মুহরিম নারী নিকাব পরবে না”।  
বোরকা নিকাবের চেয়ে অধিক আচ্ছাদনকারী। অনুরূপ যদি ইহরামের পূর্বে হাতমোজা পরিহিতা থাকে তাও খুলে ফেলবে। বোরকা ও নিকাব ছাড়া নারী স্বীয় চেহারা ঢেকে রাখবে। যেমন, পর-পুরুষ দেখার সময় চেহারার ওপর উড়না বা কাপড় ছেড়ে দেওয়া, অনুরূপভাবে হাতমোজা ছাড়াই পুরুষের দৃষ্টি থেকে হাত ঢেকে রাখা, যেমন হাতের ওপর উড়না বা চাদর ফেলে রাখা। কারণ, চেহারা ও হাত সতর, যা ইহরামের ভেতর ও বাইরে পর-পুরুষ থেকে ঢেকে রাখা ওয়াজিব।
শাইখুল ইসলাম ইবন তাইমিয়্যাহ  রহ. বলেন: “নারী পুরোটাই সতর, তাই ইহরাম অবস্থায় শরীর আচ্ছাদনকারী কাপড় পরিধান করা তার পক্ষে বৈধ, আরো বৈধ পালকি/বাহনের ছায়া গ্রহণ করা, তবে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নারীকে নিকাব ও মোজা পরিধান করতে নিষেধ করেছেন। যদি নারী এমন বস্তু দ্বারা চেহারা আবৃত করে, যা তার চেহারাকে স্পর্শ করে না তাহলে সবার নিকট বৈধ, যদি স্পর্শ করে তবুও বিশুদ্ধ মতে সহীহ। তবে নারী স্বীয় চেহারা থেকে নেকাব বা আচ্ছাদনের কাপড় পৃথক রাখার জন্য কোনো বস্তুর সাহায্য গ্রহণ করবে না, যেমন কাঠ, হাত বা এ জাতীয় বস্তু দ্বারা পৃথক রাখবে না। কারণ, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পর্দার ক্ষেত্রে হাত ও চেহারাকে বরাবর গণ্য করেছেন। নারীর হাত ও চেহারা পুরুষের শরীরের মতো, মাথার মতো নয় যা সর্বদা খোলা রাখা জরুরি। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের স্ত্রীগণ তাদের চেহারার ওপর মাথার কাপড় ছেড়ে দিতেন, চেহারা তা স্পর্শ করছে না বিচ্ছিন্ন আছে ভ্রুক্ষেপ করতেন না। ‘নারীর ইহরাম তার চেহারায়’ এ কথা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে প্রমাণিত নেই। এটি কোনো পূর্বসূরির কথা”। সমাপ্ত।
আল্লামা ইবনুল কাইয়্যিম  রহ. ‘তাহযীবুস সুনান’: (২/৩৫০) গ্রন্থে বলেন: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে একটি হরফও বর্ণিত নেই, যা প্রমাণ করে ইহরামের সময় নারীর চেহারা খুলে রাখা ফরয, শুধু চেহারায় নিকাব ব্যবহার করার নিষেধাজ্ঞা ব্যতীত... অতঃপর তিনি বলেন: আসমা থেকে বর্ণিত, ইহরাম অবস্থায় তিনি স্বীয় চেহারা ঢেকে রাখতেন। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা বলেন:
»كان الركبان يمرون بنا ونحن مع رسول الله صلى الله عليه وسلم محرمات، فإذا حاذوا بنا سدلت إحدانا جلبابها من رأسها على وجهها؛ فإذا جاوزنا كشفناه«
“আমরা যখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে ইহরাম অবস্থায় ছিলাম আরোহীরা আমাদের পাশ দিয়ে অতিক্রম করত, যখন তারা আমাদের বরবার হত আমাদের প্রত্যেকে তার আঁচল মাথার ওপর থেকে চেহারার ওপর ঝুলিয়ে দিত, যখন তারা আমাদের অতিক্রম করে যেত আমরা তা চেহারা থেকে সরিয়ে ফেলতাম”।  সমাপ্ত।
হে মুহরিম মুসলিম নারী, তুমি জেনে রাখ যে, এমন কাপড় দিয়ে চেহারা ঢাকা নিষেধ, যা একমাত্র শরীর ঢাকার জন্য সেলাই করে তৈরি করা, যেমন নিকাব ও হাতমোজা। এ ছাড়া তোমার চেহারা ও হাত উড়না, কাপড় ও এ জাতীয় বস্তু দ্বারা পর-পুরুষ থেকে ঢেকে রাখা ওয়াজিব। কাপড় যেন চেহারা স্পর্শ না করে এ জন্য মুখের ওপর (খাঁচা জাতীয়) কোনো বস্তু রাখার ভিত্তি নেই, না লাকড়ি, না পাগড়ি, না কোনো বস্তু।
৭. ইহরাম অবস্থায় নারীর পোশাক:
নারীদের জন্য ইহরাম অবস্থায় যাবতীয় মেয়েলী পোশাক পরা বৈধ, যাতে সৌন্দর্য চর্চা ও পুরুষের পোশাকের সাথে সামঞ্জস্য নেই। এমন সংকীর্ণ হবে না যা তার শরীরের পরিমাণ বলে দেয় এবং এমন স্বচ্ছও হবে না যা তার ভেতর অংশ প্রকাশ করে দেয়। আবার এমন ছোটও হবে না, যা তার পা ও হাতের জন্য যথেষ্ট নয়, বরং পর্যাপ্ত, মোটা ও প্রশস্ত হওয়া জরুরি।
ইবনুল মুনযির বলেন: আহলে ইলমগণ একমত যে, মুহরিম নারীর জন্য জামা, চাদর, পায়জামা, উড়না ও পায়ের মোজা পরিধান করা বৈধ।  সমাপ্ত।
নারীর জন্য নির্দিষ্ট রঙের কাপড় পরিধান করা জরুরি নয়। যেমন সবুজ রঙ, বরং নারীদের সাথে সম্পৃক্ত লাল, সবুজ ও কালো যে রঙের ইচ্ছা কাপড় পরিধান করা বৈধ, যখন ইচ্ছা রঙ পরিবর্তন করতে বাধা নেই।
৮. ইহরামের পর নিজেকে শুনিয়ে নারীর তালবিয়া পড়া সুন্নত:
ইবনু আব্দুল বারর বলেন: আহলে ইলমগণ একমত যে, নারীর ক্ষেত্রে সুন্নত হচ্ছে তালবিয়ার সময় আওয়াজ উঁচু না করা, সে শুধু নিজেকে শুনিয়ে বলবে। ফিতনার আশঙ্কার কারণে তার আওয়াজ উঁচু করা মাকরূহ। এ জন্য তার পক্ষে আযান ও ইকামত সুন্নত নয়, অনুরূপ সালাতের মধ্যে সতর্ক করার জন্য সে শুধু তাসফিক তথা হাতে আওয়াজ করবে, মুখে তাসবীহ বলবে না”।  সমাপ্ত।
৯. তাওয়াফের সময় নারীর পরিপূর্ণ পর্দা করা ওয়াজিব:
তওয়াফের সময় নারী পরিপূর্ণ পর্দা করবে, আওয়াজ নিচু ও চোখ অবনত রাখবে, পুরুষদের সাথে ভিড় করবে না, বিশেষভাবে হজরে আসওয়াদ ও রুকনে ইয়ামানীর নিকট। নারীর জন্য পুরুষের ভিড় ঠেলে কা‘বার নিকট দিয়ে তাওয়াফ করা অপেক্ষা তাদের ভিড় এড়িয়ে মাতাফের শেষ প্রান্ত দিয়ে তাওয়াফ করা উত্তম। কারণ, এতে ফিতনার আশঙ্কা রয়েছে। হ্যাঁ, যদি সহজ হয় কা‘বার নিকট দিয়ে তাওয়াফ করা ও হাজরে আসওয়াদ চুমু দেওয়া দু’টি সুন্নত, তবে সুন্নতের জন্য হারামে লিপ্ত হওয়া যাবে না, বরং ভিড়ে সুন্নতও নয়। তখন সুন্নত হচ্ছে হাজরে আসওয়াদের বরাবর হলে হাত দিয়ে ইশারা করা।
ইমাম নাওয়াওয়ী রহ. ‘আল-মাজমু’: (৮/৩৭) গ্রন্থে বলেন: আমাদের সাথীগণ বলেছেন: নারীদের জন্য রাত কিংবা অন্য কোনো সময় খালি মাতাফ ব্যতীত হাজরে আসওয়াদ চুমু খাওয়া কিংবা স্পর্শ করা মুস্তাহাব নয়। কারণ, এতে তাদের ও অন্যদের ফিতনার আশঙ্কা রয়েছে। সমাপ্ত।
ইবন কুদামাহ রহ. ‘মুগনি’: (৩/৩৩১) গ্রন্থে বলেন: নারীর জন্য রাতে তাওয়াফ করা মুস্তাহাব। কারণ, এটা তার পর্দার সহায়ক এবং ভিড়ও তাতে কম হয়। এ সময় কাবার নিকট যাওয়া ও হাজরে আসওয়াদ চুমু খাওয়া তার পক্ষে সম্ভব। সমাপ্ত।
১০. নারীর তাওয়াফ ও সা‘ঈ পুরোটাই হাঁটা:
ইবন কুদামাহ ‘আল-মুগনি’: (৩/৩৯৪) গ্রন্থে বলেন: নারীর তাওয়াফ ও সা‘ঈ সবটাই হাঁটা। ইবনুল মুনযির বলেন: আহলে-ইলম সবাই একমত যে, নারীদের জন্য কা‘বার তাওয়াফ ও সাফা-মারওয়ার সা‘ঈতে রমল ও ইদ্বতেবা নেই। কারণ, এর উদ্দেশ্য শক্তিমত্তা ও বীরত্ব প্রকাশ করা, যা নারীদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। অধিকন্তু নারীদের ক্ষেত্রে পর্দা রক্ষা করা মূল বিষয়, রমল ও ইদ্বতেবায় পর্দা বিগ্ন হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে। সমাপ্ত।
১১. ঋতুমতী নারীর পবিত্র হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত করণীয় ও বর্জনীয়:
ঋতুমতী নারী হজের সকল কর্ম আঞ্জাম দিবে, যেমন ইহরাম, আরাফায় অবস্থান করা, মুযদালিফায় রাত যাপন করা, পাথর নিক্ষেপ করা, তবে পবিত্র হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত কা‘বার তাওয়াফ করবে না। কারণ, আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা ঋতুমতী হলে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বলেন:
»افعلي ما يفعل الحاج، غير أن لا تطوفي بالبيت حتى تطهري«
“হাজীগণ যা করে তুমি তাই কর, তবে পাক হওয়ার আগ পর্যন্ত কা‘বা তাওয়াফ করো না”।  
মুসলিমের বর্ণনা এসেছে:
»فاقضي ما يقضي الحاج، غير أن لا تطوفي بالبيت حتى تغتسلي«
“হাজীগণ যা করে তুমিও তাই কর, তবে গোসল করার আগ পর্যন্ত তাওয়াফ করো না”।
শাওকানী  রহ. ‘নাইলুল আওতার’: (৫/৪৯) গ্রন্থে বলেন: হাদীস স্পষ্ট বলছে যে, ঋতুমতী নারীর রক্ত বন্ধ হওয়া ও গোসল করার আগ পর্যন্ত তাওয়াফ করবে না, আর নিষেধাজ্ঞার দাবি হচ্ছে বাতিল হওয়া, অর্থাৎ ঋতুমতী নারীর তাওয়াফ বাতিল, শুদ্ধই হবে না। এটিই আলেমদের ঐকমত্য। সমাপ্ত।
ঋতুমতী নারী সাফা-মারওয়ায় সা‘ঈও করবে না। কারণ সা‘ঈ করতে হয় তাওয়াফের তাওয়াফের পর, তাওয়াফ ব্যতীত সা‘ঈ শুদ্ধ নয়। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাওয়াফ করে পরে সা‘ঈ করেছেন।
ইমাম নাওয়াওয়ী রহ. ‘আল-মাজমু’: (৮/৮২) গ্রন্থে বলেন: যদি হাজী তাওয়াফের পূর্বে সা‘ঈ করে আমাদের নিকট তার সা‘ঈ শুদ্ধ হবে না -এটিই বলেছেন জমহুর আলেমগণ। আমরা পূর্বে বলেছি যে, মাওয়ারদী এ মাস’আলায় ইজমা‘ নকল করেছেন। এটিই মালিক, আবু হানিফা ও আহমদ রহ. প্রমুখ ইমামদের মাযহাব। ইবনুল মুনযির রহ. আতা ও কতক আহলে হাদীসের কথা বলেন: সা‘ঈ বিশুদ্ধ হবে। আমাদের সাথীগণ আতা ও দাউদ থেকে এ মত বর্ণনা করেছেন।
আমাদের দলীল, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাওয়াফের পর সা‘ঈ করেন এবং তিনি বলেন:
»لتأخذوا عني مناسكم«
“তোমরা আমার থেকে তোমাদের হজ গ্রহণ কর”।  
পক্ষান্তরে ইবন শারিক সাহাবীর হাদীস, যেখানে তিনি বলেছেন:
»خرجت مع رسول الله صلى الله عليه وسلم حاجا، فكان الناس يأتونه، فمن قائل: يا رسول الله سعيت قبل أن أطوف أو أخرت شيئا، أو قدمت شيئا، فكان يقول: لا حرج إلا على رجل اقترض من عرض رجل مسلم وهو ظالم، فذلك الذي هلك وحرج«
“আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথী হয়ে হজের জন্য বের হয়েছি। তখন লোকেরা তার নিকট আসছিল: কেউ বলছে: হে আল্লাহর রাসূল, আমি তাওয়াফের পূর্বে সা‘ঈ করেছি অথবা আমি কিছু পরে করেছি অথবা আমি কিছু আগে করেছি, আর তিনি বলতে ছিলেন: কোনো সমস্যা নেই, তবে তার সম্পর্কে এ কথা বলেন নি, যে অন্যায়ভাবে কোনো মুসলিম ব্যক্তির সম্পদ ঋণ নিয়েছে, সে ধ্বংস ও সমস্যায় পড়েছে”।
হাদীসটি আবু দাউদ সহীহ সনদে বর্ণনা করেছেন। হাদীসের সকল রাবী সহীহ গ্রন্থের রাবী, তবে উসামাহ ইবন শারীক সাহাবী ব্যতীত। এ হাদীসের যে অর্থ খাত্তাবী প্রমুখ বর্ণনা করেছেন সেটিই যথাযথ, অর্থাৎ তাওয়াফের পূর্বে সা‘ঈ করেছি অর্থ, তাওয়াফে কুদুমের পর ও তাওয়াফে ইফাদার পূর্বে। সমাপ্ত।
আমাদের শাইখ মুহাম্মাদ আমীন শানকিতি রহ. তার তাফসীর ‘আদওয়াউল বায়ান’: (৫/২৫২) গ্রন্থে বলেন: জেনে রাখ যে, জমহুর আলেমদের নিকট তাওয়াফ ব্যতীত সা‘ঈ শুদ্ধ নয়, তাওয়াফের পূর্বে সা‘ঈ করলে জমহুর আলেমদের নিকট বিশুদ্ধ হবে না, তাদের মধ্যে রয়েছেন চার ইমাম। মাওয়ারদি ও অন্যান্য আহলে-ইলম এ ক্ষেত্রে উম্মতের ঐকমত্য বর্ণনা করেছেন। অতঃপর তিনি ইমাম নাওয়াওয়ীর কথা বর্ণনা করেন, যা আমরা ইতোপূর্বে বর্ণনা করেছি। শারীকের হাদীস সম্পর্কে কথা হচ্ছে: “তাওয়াফের পূর্বে” অর্থ তাওয়াফে তাওয়াফে ইফাদার পূর্বে সা‘ঈ করেছি, যা হজের একটি রুকন। এ কথার অর্থ তাওয়াফে কুদুমের পর সা‘ঈ করেছি যা রুকন নয়”। সমাপ্ত।
ইবন কুদামাহ ‘আল-মুগনি’: (৫/২৪৫) গ্রন্থে বলেন: সা‘ঈ তাওয়াফের অনুগামী, তাওয়াফ ব্যতীত সা‘ঈ শুদ্ধ নয়, তাওয়াফের পূর্বে সা‘ঈ করলে শুদ্ধ হবে না। এ কথাই বলেছেন ইমাম মালিক, শাফে‘ঈ ও আসহাবে রায়গণ। আতা বলেছেন: যথেষ্ট হবে। আহমদ থেকে বর্ণিত, ভুলে তাওয়াফের আগে সা‘ঈ করলে যথেষ্ট হবে, ইচ্ছাকৃতভাবে হলে যথেষ্ট হবে না। কারণ, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে যখন ভুল ও অজ্ঞতায় হজ-কর্ম অগ্র-পশ্চাৎ করা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হয়, তিনি বলেন: কোনো সমস্যা নেই। প্রথম কথার দলীল হচ্ছে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাওয়াফের পর সা‘ঈ করেছেন এবং বলেছেন:
»لتأخذوا عني مناسككم«
“তোমরা আমার কাছ থেকে তোমাদের হজ গ্রহণ কর”।  সমাপ্ত।
পূর্বের আলোচনা থেকে জানা গেল যে, যারা বলেন তাওয়াফের পূর্বে সা‘ঈ বিশুদ্ধ, হাদীসে তাদের কথার সমর্থন নেই। কারণ, হাদীসের অর্থ দু’টির একটি:
(ক) তাওয়াফে ইফাদার পূর্বে সা‘ঈ করেছি, তবে তাওয়াফে তাওয়াফে কুদুমের পর, অতএব তার সা‘ঈ তাওয়াফের পর সংঘটিত হয়েছে।
(খ) হাদীসটি হজের বিধান সম্পর্কে অজ্ঞ বা ভুলে হজ-কর্ম অগ্র-পশ্চাতকারী হাজী সম্পর্কে বর্ণিত, ইচ্ছাকৃতভাবে অগ্র-পশ্চাতকারী সম্পর্কে নয়। এ মাসআলাটি একটু বেশিই বিস্তারিত বললাম। কারণ, বর্তমান এমন কতক লোকের আবির্ভাব ঘটেছে, যারা সাধারণ অবস্থায় তাওয়াফের পূর্বে সা‘ঈ বৈধ ফতোয়া প্রদান করে। ‘আল্লাহ সহায়।’
জ্ঞাতব্য:
যদি নারী তাওয়াফ করে এবং তাওয়াফ শেষে দেখে যে, তার ঋতু শুরু হয়েছে, তাহলে সে এ অবস্থায় সা‘ঈ করে যাবে। কারণ সা‘ঈর জন্য পবিত্রতা শর্ত নয়। ইবন কুদামাহ ‘আল-মুগনি’: (৫/২৪৬) গ্রন্থে বলেন: অধিকাংশ আহলে ইলম বলেন সাফা ও মারওয়ার মাঝে সা‘ঈ করার জন্য পবিত্রতা শর্ত নয়, যেমন আতা, মালিক, শাফে‘ঈ, আবু সাউর ও আসহাবে রায়গণ... অতঃপর তিনি বলেন: আবু দাউদ বলেন: আমি আহমদকে বলতে শুনেছি: যদি নারী কা‘বা তাওয়াফ করে অতঃপর ঋতুমতী হয়, তাহলে সে সাফা ও মারওয়ার মাঝে সা‘ঈ করবে, অতঃপর বাড়ি রওয়ানা করবে। আয়েশা ও উম্মে সালামাহ থেকে বর্ণিত, তারা উভয়ে বলেছেন: নারী যদি কা‘বা তাওয়াফ ও দু’রাকা‘আত সালাত আদায় করে, অতঃপর ঋতুমতী হয়, তাহলে সে যেন সাফা ও মারওয়ার সা‘ঈ করে নেয়। আসরাম হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। সমাপ্ত।
১২. নারীদের জন্য বৈধ যে, তারা চাঁদ অদৃশ্য হলে দুর্বলদের সাথে মুযদালিফা ত্যাগ করবে:
নারীরা ভিড় এড়ানোর জন্য মিনায় পৌঁছে জামরাহ আকাবায় কঙ্কর নিক্ষেপ করবে। ইবন কুদামাহ ‘আল-মুগনি’: (৫/২৮৬) গ্রন্থে বলেন: নারী ও দুর্বলদের মিনায় আগে পাঠিয়ে দেওয়া দোষণীয় নয়। আব্দুর রহমান ইবন ‘আউফ ও ‘আয়েশা দুর্বলদের আগে পাঠিয়ে দিতেন। এ কথাই বলেছেন: ‘আতা, সাউর, শাফে‘ঈ, আবু সউর ও আসহাবে রায়গণ। এ মাস‘আলায় আমরা কোনো দ্বিমত জানি না। দ্বিতীয়ত এভাবে তাদের ওপর সহানুভূতি হয়, তাদের থেকে ভিড়ের কষ্ট দূর করা হয় ও তাদের নবীর আনুগত্য হয়। সমাপ্ত।
ইমাম শাওকানী  রহ. ‘নাইলুল আওতার’: (৫/৭০) গ্রন্থে বলেন: দলীলের দাবি হচ্ছে, যাদের ছাড় নেই তাদের কঙ্কর নিক্ষেপ করার সময় সূর্য উদিত হওয়ার পর, যাদের ছাড় রয়েছে যেমন নারী ও অন্যান্য দুর্বল, তাদের জন্য সূর্য উদয়ের পূর্বে কঙ্কর নিক্ষেপ করা বৈধ”। সমাপ্ত।
ইমাম নাওয়াওয়ী রহ. ‘আল-মাজমু’: (৮/১২৫) গ্রন্থে বলেন: শাফে‘ঈ ও তার সাথীগণ বলেছেন: নারী ও অন্যান্য দুর্বলদের অর্ধ রাতের পর ও সূর্য উদিত হওয়ার পূর্বে মিনায় পাঠিয়ে দেওয়া সুন্নত, যেন তারা ভিড়ের আগেই কঙ্কর নিক্ষেপ করতে সক্ষম হয়। অতঃপর তিনি এ কথার স্বপক্ষে একাধিক হাদীস উল্লেখ করেন।
১৩. নারী হজ ও উমরায় আঙ্গুলের অগ্রভাগ পরিমাণ মাথার চুল ছোট করবে:
হজ ও উমরায় নারীর মাথা মুণ্ডন জায়েয নয়, সে আঙ্গুলের অগ্রভাগ পরিমাণ চুল ছোট করবে। অগ্রভাগ দ্বারা উদ্দেশ্য আঙ্গুলের এক তৃতীয়াংশ।
ইবন কুদামাহ ‘আল-মুগনি’: (৫/৩১০) গ্রন্থে বলেন: নারীর বিধান হচ্ছে চুল ছোট করা, মুণ্ডন করা নয়, এতে কারো দ্বিমত নেই। ইবনুল মুনযির বলেন: এ মাস‘আলায় আহলে-ইলমগণ ঐকমত্য পোষণ করেছেন। কারণ নারীদের ক্ষেত্রে মাথা মুণ্ডন করা এক প্রকার বিকৃতি। ইবন আব্বাস থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
»ليس على النساء حلق، إنما على النساء التقصير«
“নারীদের কাজ মাথা মুণ্ডন করা নয়, তাদের কাজ হচ্ছে ছোট করা”।  আলী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন:
»نهى رسول الله صلى الله عليه وسلم أن تحلق المرأة رأسها«
“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নারীকে মাথা মুণ্ডন করতে নিষেধ করেছেন”।  
ইমাম আহমদ বলতেন: প্রত্যেক পার্শ্ব থেকে আঙ্গুল পরিমাণ চুল ছোট করবে। এ কথা বলেছেন ইবন ‘ওমর, শাফে‘ঈ, ইসহাক ও আবু সউর। আবু দাউদ বলেন: আমি আহমদকে শুনেছি, যখন তাকে এমন এক নারী সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, যে সারা মাথা থেকে চুল ছোট করে। তিনি বলেন: হ্যাঁ, চুলগুলো মাথার সামনে এনে জমা করে সবপার্শ্ব থেকে আঙ্গুলের অগ্রভাগ পরিমাণ কর্তন করবে”। সমাপ্ত।
ইমাম নাওয়াওয়ী ‘আল-মাজমু’: (৮/১৫০ ও ১৫৪) গ্রন্থে বলেন: সকল আলেম একমত যে, নারীকে মাথা মুণ্ডন করার নির্দেশ প্রদান করা যাবে না; বরং তার কাজ হচ্ছে মাথার চুল ছোট করা... মাথা মুণ্ডন করা তাদের পক্ষে বিদ‘আত ও বিকৃতি।
১৪. ঋতুমতী নারী জামরাহ আকাবায় কঙ্কর নিক্ষেপ শেষে মাথার চুল ছোট করলে ইহরাম থেকে হালাল হবে:
জামরাহ আকাবায় কঙ্কর নিক্ষেপ ও চুল ছোট করার পর ইহরাম অবস্থায় নারীর জন্য যা হারাম ছিল হালাল হয়, তবে সে স্বামীর জন্য হালাল হয় না। তাই সে স্বামীকে সহবাসের সুযোগ দিবে না যতক্ষণ না তাওয়াফে ইফাদাহ আদায় করে। যদি এ সময় স্বামী তার সাথে মিলিত হয়, স্ত্রীর ওপর ফিদিয়া ওয়াজিব হবে, অর্থাৎ একটি বকরি যবেহ করে মক্কার মিসকীনদের মাঝে বণ্টন করবে। কারণ, তা প্রথম হালালের পর ঘটেছে, (যা দ্বিতীয় হালালের পর ছিল)।
১৫. তাওয়াফে ইফাদার পর ঋতুমতী হলে বিদায়ী তাওয়াফ রহিত হয়:
নারী যদি তাওয়াফে ইফাদার পর ঋতুমতী হয়, তাহলে যখন ইচ্ছা সে বাড়ি ফেরার উদ্দেশ্যে সফর করবে, তার থেকে বিদায়ী তাওয়াফ রহিত। কারণ, আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা বলেন:
»حاضت صفية بنت حيي بعدما أفاضت، قالت: فذكرت ذلك لرسول الله صلى الله عليه وسلم، فقال: أحابستنا هي ؟ قلت: يا رسول الله إنها قد أفاضت وطافت بالبيت، ثم حاضت بعد الإفاضة، قال: فلتنفر إذن«
“সাফিয়া বিনতে হুয়াই তাওয়াফে ইফাদার পর ঋতুমতী হলো, তিনি বলেন: আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বিষয়টা জানালাম, তিনি শুনে বললেন: সে কি আমাদেরকে আটকে রাখবে? আমি বললাম: হে আল্লাহর রাসূল, সে তাওয়াফে ইফাদাহ করেছে তারপর ঋতুমতী হয়েছে, তিনি বলেন: তাহলে যাত্রা করুক”।
ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন:
»أمر الناس أن يكون آخر عهدهم بالبيت إلا أنه خفف عن المرأة الحائض«          
“মানুষদেরকে নির্দেশ প্রদান করা হলো যেন তাদের সর্বশেষ কাজ হয় বিদায়ী তওয়াফ, তবে এটা তিনি ঋতুমতী নারী থেকে শিথিল করেন”।  
তার থেকে আরো বর্ণিত:
»أن النبي صلى الله عليه وسلم رخص للحائض أن تصدر قبل أن تطوف بالبيت إذا كانت قد طافت في الإفاضة«
“নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঋতুমতী নারীকে ছাড় দিয়েছেন বিদায়ী তাওয়াফ ছাড়াই সে বাড়ি ফিরবে, যদি তাওয়াফে ইফাদাহ সম্পন্ন করে”।
ইমাম নাওয়াওয়ী রহ. ‘আল-মাজমু’: (৮/২৮১) গ্রন্থে বলেন: ইবনুল মুনযির বলেন: সাধারণ আহলে ইলমগণ এ কথাই বলেছেন, যেমন মালিক, আওযা‘ঈ, সাউরি, আহমদ, ইসহাক, আবু সাউর ও আবু হানিফা প্রমুখ। সমাপ্ত।
ইবন কুদামাহ ‘আল-মুগনি’: (৩/৪৬১) গ্রন্থে বলেন: এটা সমকালীন সকল ফকিহর অভিমত। তিনি আরো বলেন: নিফাসের নারীদের বিধান ঋতুমতী নারীদের মতো। কারণ, কোনো বিধান রহিত ও ওয়াজিব হওয়ার ক্ষেত্রে হায়েযের নারী নিফাসের নারীর মতো। সমাপ্ত।
১৬. নারীর জন্য মসজিদে নববী যিয়ারত করা মুস্তাহাব:
সালাত আদায় ও দো‘আ করার উদ্দেশ্যে নারীর মসজিদে নববী যিয়ারত করা মুস্তাহাব, তবে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কবর যিয়ারত করা তার পক্ষে জায়েয নয়। কারণ, কবর যিয়ারত থেকে তাকে নিষেধ করা হয়েছে।
শাইখ মুহাম্মাদ ইবন ইবরাহীম স্বীয় ফতোয়া সমগ্রে: (৩/২৩৯) বলেন: নারীদেরকে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কবর যিয়ারত থেকে বারণ করাই বিশুদ্ধ মত। দু’টি কারণে:
প্রথমত: নিষেধাজ্ঞার দলীল ব্যাপক, দলীল ব্যাপক হলে বিনা দলীলে কাউকে তার থেকে খাস করা জায়েয নয়।
দ্বিতীয়ত: নিষেধ করার হিকমত এখানেও বিদ্যমান। সমাপ্ত।
শাইখ আব্দুল আযীয ইবন বায রহ. বলেন: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কবর যিয়ারত শুধু পুরুষদের জন্য খাস, নারীদের জন্য কোনো কবর যিয়ারত বৈধ নয়। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যিয়ারতকারীনী মহিলাদেরকে লা‘নত করেছেন:
»لعن زوارات القبور من النساء، والمتخذين عليها المساجد والسرج«
“তিনি কবর যিয়ারতকারী নারীদের লা‘নত করেছেন এবং যারা কবরের ওপর মসজিদ তৈরি করে ও বাতি জ্বালায়”।
সালাত ও দো‘আর জন্য নারীদের মসজিদে নববীতে যাওয়া বৈধ, অন্যান্য ইবাদতের জন্যও যাওয়া বৈধ, যা সকল মসজিদে সবার জন্য বৈধ। সমাপ্ত।


নবম পরিচ্ছেদ: বিয়ে ও তালাক সংক্রান্ত
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿وَمِنۡ ءَايَٰتِهِۦٓ أَنۡ خَلَقَ لَكُم مِّنۡ أَنفُسِكُمۡ أَزۡوَٰجٗا لِّتَسۡكُنُوٓاْ إِلَيۡهَا وَجَعَلَ بَيۡنَكُم مَّوَدَّةٗ وَرَحۡمَةًۚ إِنَّ فِي ذَٰلِكَ لَأٓيَٰتٖ لِّقَوۡمٖ يَتَفَكَّرُونَ ٢١﴾ [الروم: ٢١]
 “আর তার নিদর্শনাবলীর মধ্যে রয়েছে যে, তিনি তোমাদের জন্য তোমাদের থেকেই স্ত্রীদের সৃষ্টি করেছেন, যাতে তোমরা তাদের কাছে প্রশান্তি পাও। আর তিনি তোমাদের মধ্যে ভালোবাসা ও দয়া সৃষ্টি করেছেন। নিশ্চয় এর মধ্যে নিদর্শনাবলী রয়েছে সে কওমের জন্য যারা চিন্তা করে”। [সূরা আর-রূম, আয়াত: ২১]
অপর আয়াতে তিনি বলেন:
﴿وَأَنكِحُواْ ٱلۡأَيَٰمَىٰ مِنكُمۡ وَٱلصَّٰلِحِينَ مِنۡ عِبَادِكُمۡ وَإِمَآئِكُمۡۚ إِن يَكُونُواْ فُقَرَآءَ يُغۡنِهِمُ ٱللَّهُ مِن فَضۡلِهِۦۗ وَٱللَّهُ وَٰسِعٌ عَلِيمٞ ٣٢﴾ [النور: ٣٢]  
“আর তোমরা তোমাদের মধ্যকার অবিবাহিত নারী-পুরুষ ও সৎকর্মশীল দাস দাসীদের বিবাহ দাও। তারা অভাবী হলে আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে তাদেরকে অভাবমুক্ত করে দেবেন। আল্লাহ প্রাচুর্যময় ও মহাজ্ঞানী”। [সূরা আন-নূর, আয়াত: ৩২]
ইবন কাসির রহ. বলেন: এ আয়াত বিবাহ করার নির্দেশ প্রদান করছে। কতক আলেম বলেন: যাদের বিয়ে করার সামর্থ্য রয়েছে তাদের বিয়ে করা ওয়াজিব। দলীল হিসেবে তারা নিম্নোক্ত হাদীসের বাহ্যিক অর্থকে পেশ করেন:
»يا معشر الشباب، من استطاع منكم الباءة فليتزوج، فإنه أغض للبصر وأحصن للفرج، ومن لم يستطع فعليه بالصوم، فإنه له وجاء«
“হে যুবকের দল, তোমাদের থেকে যে বিবাহের সামর্থ্য রাখে সে যেন বিয়ে করে। কারণ, তা চোখকে অবনত ও লজ্জাস্থানকে পবিত্র রাখার উপকরণ। যার সামর্থ্য নেই সে যেন সিয়ামকে আবশ্যক করে নেয়। কারণ, সিয়াম যৌবনকে কর্তনকারী”।  
অতঃপর তিনি বলেন: বিয়ে ধনী হওয়ার একটি উপকরণ। দলীল আল্লাহর বাণী:
﴿إِن يَكُونُواْ فُقَرَآءَ يُغۡنِهِمُ ٱللَّهُ مِن فَضۡلِهِ﴾ [النور: ٣٢]  
“যদি তারা অভাবী হয় আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে তাদেরকে অভাবমুক্ত করে দেবেন”। [সূরা আন-নূর, আয়াত: ৩২]
আবু বকর সিদ্দীক রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে উল্লেখ করা হয়, তিনি বলেছেন: আল্লাহ তোমাদেরকে বিয়ে করার যে নির্দেশ দিয়েছেন তা তোমরা বাস্তবায়ন কর, তিনি তোমাদেরকে সচ্ছলতার যে ওয়াদা করেছেন তা পূর্ণ করবেন। আল্লাহ বলেন:
﴿إِن يَكُونُواْ فُقَرَآءَ يُغۡنِهِمُ ٱللَّهُ مِن فَضۡلِهِۦۗ﴾ [النور: ٣٢]  
“যদি তারা অভাবী হয় আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে তাদেরকে অভাবমুক্ত করে দেবেন। আল্লাহ প্রাচুর্যময় ও মহাজ্ঞানী”। [সূরা আন-নূর, আয়াত: ৩২]
ইবন মাস‘উদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, তোমরা বিবাহ দ্বারা প্রাচুর্য অন্বেষণ কর। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿إِن يَكُونُواْ فُقَرَآءَ يُغۡنِهِمُ ٱللَّهُ مِن فَضۡلِهِۦۗ وَٱللَّهُ وَٰسِعٌ عَلِيمٞ﴾ [النور: ٣٢]  
“যদি তারা অভাবী হয় আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে তাদেরকে অভাবমুক্ত করে দেবেন। আল্লাহ প্রাচুর্যময় ও মহাজ্ঞানী”। [সূরা আন-নূর, আয়াত: ৩২]
বাণীটি ইবন জারির উল্লেখ করেছেন। অনুরূপ কথা বগভী উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকেও বর্ণনা করেছেন। ইবন কাসির: (৫/৯৪,৯৫) এর আলোচনা সমাপ্ত।
শাইখুল ইসলাম ইবন তাইমিয়্যাহ  রহ. ‘মাজমুউল ফতোয়ায়’: (৩২/৯০) বলেন: আল্লাহ তা‘আলা মুমিনদের জন্য বিবাহ করা, তালাক দেওয়া এবং তালাকপ্রাপ্তা নারীকেও বিবাহ করা হালাল করেছেন অপর স্বামীর বিয়ে থেকে তালাক প্রাপ্তা হওয়ার পর। খ্রিস্টানরা তাদের বিশেষ ব্যক্তিবর্গের ওপর বিয়ে হারাম করেছে, আবার যার জন্য বিয়ে হালাল করেছে তাকে তারা তালাক দেওয়ার অনুমতি দেয় নি। ইয়াহূদীরা তালাককে বৈধ বলে, তবে তালাকপ্রাপ্তা নারী অপর স্বামীকে বিয়ে করলে প্রথম স্বামীর জন্য স্থায়ীভাবে হারাম হয়ে যায়। মুদ্দাকথা খ্রিস্টানদের নিকট তালাক নেই; ইয়াহূদীদের নিকট অপর স্বামীর নিকট বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হলে ফিরে আসার সুযোগ নেই। আর আল্লাহ মুমিনদের জন্য তালাক ও ফিরিয়ে আনা উভয় হালাল করেছেন। সমাপ্ত।
ইবনুল কাইয়্যিম রহ. ‘আল-হাদইউন নববী’: (৩/১৪৯) গ্রন্থে দাম্পত্য জীবনের এক বিশেষ উদ্দেশ্য সহবাসের উপকারিতা বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন: “মূলত তিনটি কারণে স্ত্রীগমন বৈধ, যা সহবাসের মূল উদ্দেশ্য:
এক. বংশ সংরক্ষণ করা ও মানব জাতির পরম্পরা অব্যাহত রাখা, যতক্ষণ না এ জগতে তাদের সংখ্যা পূর্ণ হয় যাদেরকে আল্লাহ সৃষ্টি করতে চান।
দুই. বীর্য বের করে দেওয়া, যা জমিয়ে রাখা পুরো শরীরের জন্য ক্ষতিকর।
তিন. যৌন চাহিদা পূর্ণ করা, আনন্দ উপভোগ ও নি‘আমত আস্বাদন করা।” সমাপ্ত।
বিয়ের অনেক উপকারিতা রয়েছে, সবচেয়ে বড় উপকার যিনা থেকে সুরক্ষা ও হারাম থেকে দৃষ্টিকে অবনত রাখা।
আরেকটি হচ্ছে: সন্তান লাভ করা ও মানব প্রজন্ম সংরক্ষণ করা।
আরেকটি হচ্ছে: স্বামী-স্ত্রীর মাঝে প্রশান্তি ও মানসিক প্রশস্তি লাভ করা।
আরেকটি হচ্ছে: একটি ভালো পরিবার গড়ার নিমিত্তে স্বামী-স্ত্রীর পরস্পর একযোগে কাজ করা, যা মুসলিম সমাজের এক মজবুত বুনিয়াদ।
আরেকটি হচ্ছে: স্বামীর নিজ স্কন্ধে স্ত্রীর দায়ভার ও নিরাপত্তার দায়িত্ব গ্রহণ করা; স্ত্রীর স্বামীর ঘরের কাজ আঞ্জাম দেওয়া এবং তার শরীর ও প্রকৃতির সাথে মানানসই কাজগুলো সুচারুরূপে সম্পন্ন করা। সমাজ ও নারী জাতির শত্রুরা যেরূপ দাবি করে কাজের ক্ষেত্রে নারী পুরুষের সঙ্গী সেটি নয়। তারা নারীকে ঘর থেকে বের করে তার সঠিক দায়িত্ব থেকে বিচ্ছিন্ন করেছে। নারীর স্কন্ধে পুরুষের কাজ আর নারীর কাজ তারা পুরুষের স্কন্ধে চাপিয়েছে। যার পরিণতিতে পরিবার বিনষ্ট হচ্ছে ও স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কের মাঝে টানাপোড়ন দেখা দিচ্ছে, যে কারণে তারা কখনো বিচ্ছিন্ন হতে বাধ্য হয় কিংবা কষ্টের মাঝে দুর্বিসহ জীবন বয়ে বেড়ায় আমৃত্যু।
আমাদের শাইখ মুহাম্মাদ আমীন আশ-শানকিতী রহ. স্বীয় তাফসীর ‘আদওয়াউল বায়ান’: (৩/৪২২) এ বলেন: “জেনে রাখ, আল্লাহ আমাকে ও তোমাকে তার সন্তুষ্টি ও পছন্দের বিষয় গ্রহণ করার তাওফীক দান করুন।, সকল নিয়ম-কানুন ও কর্মক্ষেত্রের সকল ময়দানে নারী-পুরুষকে সমান করার ভ্রান্ত অশুভ ও কুফুরী চিন্তাধারা সুস্থবোধ, বিবেক, আসমানি অহি ও আল্লাহ তা‘আলার শরী‘আত পরিপন্থী, মনুষ্য সমাজে যার কুফল, বিশৃঙ্খলা ও ফ্যাসাদ কারো নিকট অস্পষ্ট নেই, তবে আল্লাহ যার দৃষ্টি হরণ করেছেন সে ব্যতীত। কারণ, আল্লাহ তা‘আলা সমাজ বিনির্মাণের অংশ গ্রহণ হিসেবে নারীকে তার বৈশিষ্ট্য ও স্বাতন্ত্র্যের কারণে এমন কিছু কাজের উপযুক্ত করেছেন, যা সে ব্যতীত কারো পক্ষে সম্ভব নয়। যেমন গর্ভধারণ, বাচ্চা প্রসব, দুগ্ধপান, বাচ্চাদের লালন-পালন, ঘরের দেখভাল ও সাংসারিক যাবতীয় কাজ-কর্ম আঞ্জাম দেওয়া। যেমন রান্না করা, রুটি তৈরি করা ও ঘর ঝাড়ুসহ ইত্যাদি। নারীরা ঘরের ভেতর পর্দা, নিরাপত্তা ও পবিত্রতার মর্যাদাপূর্ণ পরিবেশে বাস করে ও মনুষ্য মূল্যবোধের অধীন থেকে সুশৃঙ্খল সমাজ গঠনে যে খেদমত আঞ্জাম দেয়, তা কোনো অংশে পুরুষের অর্থ উপার্জন অপেক্ষা কম নয়। কাফের মূর্খ অথর্ব জনগোষ্ঠী ও তার অনুসারীরা দাবি করে নারীরা ঘরের বাইরে কাজ করবে যেমন পুরুষরা করে। এটি তাদের অধিকার! যদিও মাসিক ঋতু ও বাচ্চা প্রসব পরবর্তী সময় নারী কষ্টকর কোনো কাজ করতে সক্ষম নয়, বাহ্যত আমরা তাই দেখি। যখন স্বামী ও স্ত্রী ঘর থেকে বের হয়, ঘর সম্পূর্ণ অরক্ষিত থেকে যায়, যেমন ছোট বাচ্চাদের লালন-পালন, দুগ্ধপান ও স্বামী ঘরে ফিরে আসার পর তার পানাহার প্রস্তুত করা ইত্যাদি। যদি স্ত্রীর কাজগুলো আঞ্জাম দেওয়ার জন্য কাউকে ভাড়া করা হয়, ভাড়াটে (সেবক-সেবিকা) তার ঘরে বড় সমস্যার সৃষ্টি করে, যা দূর করার জন্য সে ঘর থেকে বের হয়েছে, পরিণতি হিতে বিপরীত হয়। অধিকন্তু নারীদের ঘর ত্যাগ করা ও শ্রম বিক্রির মাঝে দীন নষ্ট ও সম্মানকে ছুড়ে মারা ব্যতীত কিছুই নেই”। সমাপ্ত।
হে মুসলিম বোন, আল্লাহকে ভয় কর, প্রতারণামূলক এসব কথায় ধোঁকা খেয়ো না, যারা তাদের কথায় প্রতারিত হয়েছে তাদের বিফলতা ও বিষণ্ণতার বাস্তবতাই যথেষ্ট। অভিজ্ঞতা সবচেয়ে বড় দলীল।
হে মুসলিম বোন, যতক্ষণ তোমার মাঝে যৌবন বিদ্যমান, তুমি পুরুষদের চাহিদার পাত্র দ্রুত বিয়ের প্রতি অগ্রসর হও। পড়া-শুনা চালিয়ে যাওয়া কিংবা চাকরির পাওয়ার আশায় কখনো বিয়ে বিলম্ব কর না। কারণ, উপযুক্ত বিয়েতে তোমার কল্যাণ ও প্রশান্তি। এটিই তোমার যে কোনো শিক্ষা ও চাকরির উত্তম বিনিময়, তোমার চাকরি ও পড়া-শোনা যতই হোক কখনো বিয়ের সমান নয়।
তুমি তোমার ঘরের কাজ ও সন্তান লালন-পালন করার দায়িত্ব আঞ্জাম দাও। এটিই তোমার মূল কাজ। যার দ্বারা তোমার জীবন সাফল্যমণ্ডিত হবে সেটিই গ্রহণ কর, তার বিকল্প অনুসন্ধান করো না। কারণ, তার বিকল্প নেই। দীনদার পুরুষের বিয়ের প্রস্তাবকে কখনো হাত ছাড়া কর না। নবী  সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
»إذا جاءكم من ترضون دينه وخلقه فأنكحوه، إلا تفعلوا تكن فتنة في الأرض وفساد«
“যখন তোমাদের কাছে এমন কেউ আসে, যার দীন ও চরিত্র তোমরা পছন্দ কর, তাকে বিয়ে করিয়ে দাও, যদি না কর জমিনে ফিতনা ও ফাসাদ হবে”।
বিয়ের ক্ষেত্রে নারীর অনুমতি গ্রহণ করা
বিয়ের উপযুক্ত নারী তিন প্রকার:
ক. নাবালিকা অবিবাহিত কিশোরী।
খ. সাবালিকা অবিবাহিত নারী।
গ. বিবাহিতা নারী।
প্রত্যেক প্রকার নারীর জন্য রয়েছে পৃথক বিধান।
১. নাবালিকা ছোট বাচ্চাকে বাবা তার অনুমতি ছাড়াই বিয়ে দিবে, এতে কারো দ্বিমত নেই। কারণ, সে এখনো অনুমতির মালিক হয় নি। দ্বিতীয়ত আবু বকর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু নিজের ছোট মেয়ে আয়েশাকে রালূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট বিয়ে দিয়েছেন, যখন তার বয়স ছিল মাত্র ছয় বছর, নয় বছর পূর্ণ হলে তাকে বাসর ঘরে প্রেরণ করেন।
ইমাম শাওকানী রহ. ‘নাইলুল আওতার’: (৬/১২৮, ১২৯) গ্রন্থে বলেন: “এ হাদীস প্রমাণ করে যে, বাবার জন্য নিজের মেয়েকে সাবালক হওয়ার পূর্বেই বিয়ে দেওয়া জায়েয। তিনি আরো বলেন: এ হাদীস প্রমাণ করে ছোট মেয়েকে বড়দের সাথে বিয়ে দেওয়া বৈধ। ইমাম বুখারী এ মাস‘আলার জন্য একটি অধ্যায় রচনা করে তাতে তিনি আয়েশার হাদীস উল্লেখ করেছেন। ইবন হাজার আসকালানী রহ. ‘ফাতহুল বারী’তে এ মাস‘আলায় উম্মতের ঐকমত্য বর্ণনা করেছেন।” সমাপ্ত।
ইবন কুদামাহ ‘আল-মুগনি’: (৬/৪৮৭) গ্রন্থে বলেন: ইবনুল মুনযির বলেছেন: যাদের ইলম আমরা অর্জন করেছি, তারা সবাই একমত যে, বাবার জন্য নিজের ছোট মেয়েকে বিয়ে দেওয়া বৈধ, যদি সমমর্যাদা সম্পন্ন পুরুষের নিকট বিয়ে দেওয়া হয়”। সমাপ্ত।
আমি (গ্রন্থকার) বলছি: আবু বকর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু নিজের ছোট মেয়ে আয়েশাকে মাত্র ছয় বছর বয়সে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট বিয়ে দেন, এ ঘটনা তাদেরকে আস্তাকুড়ে নিক্ষেপ করে, যারা বড় ছেলের নিকট ছোট মেয়ের বিয়েকে অস্বীকার করে, বিভ্রান্তি ছড়ায় এবং অপরাধ গণ্য করে। এটি হয়তো তাদের মূর্খতা কিংবা তারা স্বার্থান্বেষী ও বিজাতীয় ষড়যন্ত্রের একটা অংশ।
২. সাবালিকা অবিবাহিত নারীকে তার অনুমতি ব্যতীত বিয়ে দেওয়া যাবে না, তবে চুপ থাকাই তার অনুমতি। কারণ, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
»ولا تنكح البكر حتى تستأذن، قالوا: يا رسول الله فكيف إذنها ؟ قال: أن تسكت«
“বাকেরা (অর্থাৎ সাবালিকা অবিবাহিতা) মেয়েকে তার অনুমতি ব্যতীত বিয়ে দেওয়া যাবে না, তারা বলল: হে আল্লাহর রাসূল, তার অনুমতির পদ্ধতি কী? তিনি বলেন: তার চুপ থাকা”।  
অতএব, বিয়েতে তার অনুমতি নেওয়া প্রয়োজন, যদিও তাকে বিয়ে দেয় তার বাবা, আলেমদের দু’টি মত থেকে এটিই অধিক বিশুদ্ধ।
ইবনুল কাইয়্যিম  রহ. ‘আল-হাদইউন নববী’: (৫/৯৬) গ্রন্থে বলেন: “জমহুর সালাফের অভিমত এটিই। ইমাম আবু হানিফার মাযহাব ও ইমাম আহমদের একটি মত এরূপ। এ অভিমত মোতাবেক আমরা আল্লাহর ইবাদত আঞ্জাম দেই, তার বিপরীত বিশ্বাস করি না। এটিই নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আদেশ ও নির্দেশ মোতাবেক ফয়সালা”। সমাপ্ত।
৩. বিবাহিতা নারী স্বামীশূণ্যা হলে তাকে তার অনুমতি ব্যতীত বিয়ে দেওয়া যাবে না, তার অনুমতির প্রকাশ হবে কথার দ্বারা, যা অবিবাহিতা নারীর বিপরীত, কারণ অবিবাহিতা নারীর অনুমতির প্রমাণ হচ্ছে চুপ থাকা।
ইবন কুদামাহ ‘আল-মুগনি’: (৬/৪৯৩) গ্রন্থে বলেন: তবে বিবাহিতা নারীর অনুমতির প্রকাশ হবে কথার মাধ্যমে, এতে আলেমদের দ্বিমত আছে বলে আমাদের জানা নেই। দ্বিতীয়ত মুখ দ্বারা মানুষ তার অন্তরের অভিব্যক্তি প্রকাশ করে। অতএব, যেখানে অনুমতির প্রয়োজন সেখানে মুখের কথার সমতুল্য কিছু নেই। সমাপ্ত।
শাইখুল ইসলাম ইবন তাইমিয়্যাহ রহ. ‘মাজমুউল ফতোয়া’য়: (৩২/৩৯ ও ৪০) বলেন: “নারীকে তার অনুমতি ব্যতীত কারো পক্ষেই বিয়ে দেওয়া বৈধ নয়, যদি সে নারাজ থাকে বিয়ের জন্য তাকে বাধ্য করবে না, তবে ছোট অবিবাহিত মেয়ে ব্যতীত। কারণ, তার বাবা তাকে বিয়ে দিবে, তার কোনো অনুমতি নেই। আর বিবাহিতা সাবালিকা নারীকে তার অনুমতি ব্যতীত বাবা কিংবা কারো জন্য বিয়ে দেওয়া বৈধ নয়, এটিই মুসলিমদের ঐকমত্যে প্রতিষ্ঠিত মাস‘আলা। অনুরূপ সাবালিকা অবিবাহিতা নারীকে তার অনুমতি ব্যতীত বাবা ও দাদা ছাড়া কারো জন্য বিয়ে দেওয়া বৈধ নয় মুসলিমদের ঐকমত্যে, তবে বাবা কিংবা দাদার উচিৎ তাদের থেকে অনুমতি গ্রহণ করা।
সাবালিকা অবিবাহিতা নারীর অনুমতি ওয়াজিব না মুস্তাহাব দ্বিমত রয়েছে:
বিশুদ্ধ মতে তার অনুমতি নেওয়া ওয়াজিব। মেয়ের অভিভাবকের উচিৎ আল্লাহকে ভয় করা। মেয়েকে কেমন ছেলের সাথে বিয়ে দিচ্ছে, ছেলে তার সমকক্ষ কি না বিবেচনা করা, কারণ বাবা মেয়েকে বিয়ে দিবে মেয়ের স্বার্থে, নিজের স্বার্থে নয়।” সমাপ্ত।
নারীর বিয়েতে অভিভাবক শর্ত ও তার হিকমত:
নারীকে তার উপযুক্ত স্বামী গ্রহণ করার অর্থ তাকে মুক্ত স্বাধীন ছেড়ে দেওয়া নয় যে, যাকে ইচ্ছা সে স্বামী হিসেবে গ্রহণ করবে, যার বিয়ের খারাপ প্রভাব পড়ে তার আত্মীয় ও পরিবারের ওপর। নারী অভিভাবকের সাথে সম্পৃক্ত, অভিভাবক তার ইচ্ছাকে দেখবে এবং তাকে সঠিক পথ বাতলাবে, তার বিবাহের দায়িত্ব নিবে, সে নিজে নিজের আকদ সম্পন্ন করবে না, যদি সে নিজের আকদ নিজে সম্পন্ন করে বাতিল বলে গণ্য হবে। কারণ, আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা থেকে বর্ণিত হাদীসে এসেছে:
»أيما امرأة نكحت نفسها بغير إذن وليها فنكاحها باطل، فنكاحها باطل، فنكاحها باطل«
“যে নারী তার অভিভাবকের অনুমতি ব্যতীত বিয়ে করল, তার বিয়ে বাতিল, তার বিয়ে বাতিল, তার বিয়ে বাতিল”।  
ইমাম তিরমিযী বলেন: হাদীসটি হাসান। অন্যান্য সুনান গ্রন্থে রয়েছে:
»لا نكاح إلا بولي«
“অভিভাবক ব্যতীত কোনো বিয়ে নেই”।  
এ দু’টি হাদীস ও এ জাতীয় অন্যান্য হাদীস প্রমাণ করে যে, অভিভাবক ব্যতীত নারীর বিয়ে বৈধ নয়। বিয়ে নেই অর্থ বিয়ে শুদ্ধ নয়। ইমাম তিরমিযী বলেন: আহলে ইলমগণ এ হাদীসের ওপর আমল করেন। যেমন উমার, আলী, ইবন আব্বাস ও আবু হুরায়রা প্রমুখগণ। ফহীহ তাবে‘ঈদের থেকেও অনুরূপ বর্ণিত। তারা বলেছেন: অভিভাবক ব্যতীত কোনো বিয়ে নেই। এটিই ইমাম শাফেঈ, আহমদ ও ইসহাকদের কথা”।
বিয়ের ঘোষণার জন্য নারীদের দফ বাজানোর হুকুম:
নারীদের জন্য দফ বা এক পার্শ্বস্থ ঢোল বাজানো মুস্তাহাব, যেন বিয়ে প্রচার হয় ও মানুষ জেনে যায়। নারীরা নিজেদের মাঝে দফ বাজাবে বাদ্য-যন্ত্র ও সুরেলা সঙ্গীত ব্যতীত। বিয়ে উপলক্ষে নারীদের কবিতা ও গজল আবৃতি করা দোষণীয় নয়, যদি পুরুষরা না শুনে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
»فصل ما بين الحلال والحرام الدف والصوت في النكاح«
“হালাল ও হারাম বিয়ের পার্থক্য হচ্ছে দফ বাজানো ও আওয়াজ করা”।
শাওকানী ‘নাইলুল আওতার’: (৬/২০০) গ্রন্থে বলেন: “হাদীস প্রমাণ করে যে, বিয়ের অনুষ্ঠানে দফ বাজানো ও কবিতা ইত্যাদি আবৃতি করা বৈধ, যেমন أتيناكم أتيناكم জাতীয় কবিতা, তবে প্রবৃত্তকে উসকে দেয় এমন গান নিষিদ্ধ, যেখানে সৌন্দর্যের বর্ণনা, অশ্লীলতার প্রকাশ ও মদের প্রতি আসক্তি রয়েছে। যা বিবাহ এবং বিবাহের বাইরে সর্বদাই হারাম, অনুরূপ অন্যান্য হারাম গান-বাদ্যও হারাম।” সমাপ্ত।
হে মুসলিম নারী, বিয়ে উপলক্ষে অলঙ্কার ও পোশাক-পরিচ্ছদ ক্রয় করে অপচয় করো না। অতিরিক্ত পোশাক ও অলঙ্কার অপচয়ের অন্তর্ভুক্ত, যার থেকে আল্লাহ নিষেধ করেছেন। কুরআনুল কারীমে এসেছে, তিনি অপচয়কারীকে ভালোবাসেন না। যেমন,
﴿ وَلَا تُسۡرِفُوٓاْۚ إِنَّهُۥ لَا يُحِبُّ ٱلۡمُسۡرِفِينَ ٣١ ﴾ [الاعراف: ٣١]  
“আর তোমরা অপচয় কর না, নিশ্চয় তিনি অপচয়কারীকে পছন্দ করেন না”। [সূরা আল-আ‘রাফ, আয়াত: ৩১]
সুতরাং তুমি মধ্যপন্থা অবলম্বন কর এবং কেনা-কাটার প্রতিযোগিতা ত্যাগ কর।
নারীর স্বামীর আনুগত্য করা ওয়াজিব, অবাধ্য হওয়া হারাম:
হে মুসলিম নারী, রেওয়াজ মোতাবেক স্বামীর আনুগত্য করা তোমার ওপর ওয়াজিব। আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
»إذا صلت المرأة خمسها، وصامت شهرها، وحصنت فرجها، وأطاعت بعلها دخلت من أي أبواب الجنة شاءت«  
“নারী যদি তার পাঁচ ওয়াক্ত সালাত পড়ে, রমযান মাসের সিয়াম রাখে, স্বীয় লজ্জাস্থান হিফাযত করে এবং নিজ স্বামীর আনুগত্য করে, তাহলে জান্নাতের যে দরজা দিয়ে ইচ্ছা প্রবেশ করবে”।  
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে আরো বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
»لا يحل لامرأة أن تصوم وزوجها شاهد إلا بإذنه، ولا تأذن في بيته إلا بإذنه«
“কোনো নারীর পক্ষে বৈধ নয় স্বামীর উপস্থিতিতে অনুমতি ব্যতীত সিয়াম রাখা এবং স্বামীর অনুমতি ব্যতীত কাউকে তার ঘরে প্রবেশাধিকার দেওয়া।”  
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
»إذا دعا الرجل امرأته إلى فراشه، فلم تأته، فبات غضبان عليها لعنتها الملائكة حتى تصبح«
“স্বামী যখন তার স্ত্রীকে বিছানায় আহ্বান করে, কিন্তু সে ডাকে সাড়া না দেয়, ফলে সে তার ওপর গোস্বা নিয়ে রাত যাপন করে, তাহলে সকাল পর্যন্ত ফিরিশতারা নারীর ওপর লা‘নত করে”।
বুখারী ও মুসলিমের অপর বর্ণনায় এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
»والذي نفسي بيده ما من رجل يدعو امرأته إلى فراشه، فتأبى عليه إلا كان الذي في السماء ساخطا عليها حتى يرضى عنها«
“যার হাতে আমার নফস সে সত্ত্বার কসম, যে কোনো পুরুষ তার স্ত্রীকে বিছানায় আহ্বান করে, কিন্তু সে প্রত্যাখ্যান করে, তাহলে আসমানে বিদ্যমান সত্ত্বা (অর্থাৎ আল্লাহ) অবশ্যই তার ওপর রাগান্বিত থাকেন, যতক্ষণ না স্বামী তার স্ত্রীর ওপর সন্তুষ্ট হয়”।
স্ত্রীর ওপর স্বামীর একটি হক হচ্ছে, তার ঘর দেখাশুনা করা এবং তার অনুমতি ব্যতীত তার ঘর থেকে বের না হওয়া। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
»والمرأة راعية في بيت زوجها ومسؤولة عن رعيتها«
“নারী তার স্বামীর ঘরের দায়িত্বশীলা এবং তাকে সে বিষয়ে জবাবদিহি করা হবে”।  
স্ত্রীর ওপর স্বামীর আরো একটি হক হচ্ছে, ঘরের কাজগুলো আঞ্জাম দেওয়া এবং তাকে সেবিকা আনতে বাধ্য না করা, যা তার জন্য কষ্টকর এবং যার ফলে সে নিজে বা তার সন্তান-সন্ততিরা ফেতনার সম্মুখীন হতে হয়।
শাইখুল ইসলাম ইবন তাইমিয়্যাহ রহ. ‘মাজমুউল ফতোয়া’য়: (৩২/২৬০ ও ২৬১) বলেন: “আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন:
﴿فَٱلصَّٰلِحَٰتُ قَٰنِتَٰتٌ حَٰفِظَٰتٞ لِّلۡغَيۡبِ بِمَا حَفِظَ ٱللَّهُۚ﴾ [النساء: ٣٤]  
 “সুতরাং পুণ্যবতী নারীরা অনুগত, তারা লোকচক্ষুর অন্তরালে হিফাযতকারিনী ঐ বিষয়ে যা আল্লাহ হিফাযত করেছেন”। [সূরা আন-নিসা, আয়াত: ৩৪] এ আয়াতের দাবি অনুযায়ী স্ত্রীর ওপর স্বামীর আনুগত্য করা ওয়াজিব, সেটি তার সাথে সফর হোক, তার সাথে আনন্দ করার সুযোগ দেওয়ার বিষয় হোক বা অন্য যে কোনো চাহিদা হোক। এ কথা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নাতও প্রমাণ করে।” সমাপ্ত।
ইবনুল কাইয়্যিম রহ. ‘হাদইউন নববী’: (৫/১৮৮ ও ১৮৯) গ্রন্থে বলেন: “যেসব ইমামদের নিকট স্ত্রীর ওপর স্বামীর খিদমত করা ওয়াজিব, তারা বলেন, যাদের (অর্থাৎ যে আরবদের) ভাষায় আল্লাহ তা‘আলা সম্বোধন করেছেন তাদের নিকট খিদমত একটি মা‘রূফ (অর্থাৎ প্রচলিত নিয়ম মোতাবেক) হক। পক্ষান্তরে স্ত্রীকে বিনোদন প্রদান করা, তার খিদমত স্বামীর আঞ্জাম দেওয়া, স্বামীর ঝাড়ু দেওয়া, রুটি তৈরি করা, আটার খামির বানানো, ধোয়া, বিছানা করা ও বাড়ির খিদমত আঞ্জাম দেওয়া ইত্যাদি মুনকার (অর্থাৎ প্রচলিত নিয়ম বহির্ভূত) কাজ। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿وَلَهُنَّ مِثۡلُ ٱلَّذِي عَلَيۡهِنَّ بِٱلۡمَعۡرُوفِۚ﴾ [البقرة: ٢٢٨]
“আর নারীদের জন্য রয়েছে বিধি মোতাবেক অধিকার, যেমন আছে তাদের ওপর (পুরুষদের) অধিকার”। [সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ২২৮]
অপর আয়াতে তিনি বলেন:
﴿ٱلرِّجَالُ قَوَّٰمُونَ عَلَى ٱلنِّسَآءِ﴾ [النساء: ٣٤]
“পুরুষরা নারীদের তত্ত্বাবধায়ক”। [সূরা আন-নিসা, আয়াত: ৩৪]
যদি নারী পুরুষের সেবা না করে, বরং পুরুষ নারীর সেবা করে, তাহলে নারী তত্ত্বাবধায়ক হবে পুরুষের উপর... অতঃপর বলেন: সন্দেহ নেই আল্লাহ স্বামীর ওপর স্ত্রীর খরচ, পোশাক ও বাসস্থানের দায়িত্ব অর্পণ করেছেন, তাকে ভোগ করা, তার খিদমত গ্রহণ করা ও বিধি মোতাবেক তার সেবার বিনিময়ে।
অধিকন্তু মানুষের সাধারণ লেনদেন ও চুক্তিগুলো সমাজে প্রচলিত বিধি ও নীতির ওপর ভিত্তি করেই হয়, (অতএব, বিয়ে পরবর্তী স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কও সে নীতি মোতাবেক হবে এটিই স্বাভাবিক)। প্রচলিত নীতি হচ্ছে স্ত্রী কর্তৃক স্বামীর খিদমত করা ও তার ঘরের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট কাজগুলো আঞ্জাম দেওয়া। তিনি আরো বলেন: এ ক্ষেত্রে সম্ভ্রান্ত ও সাধারণ, ধনী ও গরীবের মাঝে বিভাজন করা দুরস্ত নয়। এই দেখ দুনিয়ার সবচেয়ে উত্তম নারী ফাতিমা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা স্বামীর খিদমত করতেন, সে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট এসে সাংসারিক কাজের অভিযোগ করেন, তিনি তার অভিযোগ আমলে নেন নি।” সমাপ্ত।
প্রশ্ন: যদি নারী স্বামীর মধ্যে তার প্রতি আগ্রহ না দেখে; কিন্তু সে তার সাথে থাকতে চায়, তাহলে কী করবে?
উত্তর: আল্লাহ তা‘আলা বলেন:     
﴿وَإِنِ ٱمۡرَأَةٌ خَافَتۡ مِنۢ بَعۡلِهَا نُشُوزًا أَوۡ إِعۡرَاضٗا فَلَا جُنَاحَ عَلَيۡهِمَآ أَن يُصۡلِحَا بَيۡنَهُمَا صُلۡحٗاۚ وَٱلصُّلۡحُ خَيۡرٞۗ وَأُحۡضِرَتِ ٱلۡأَنفُسُ ٱلشُّحَّۚ وَإِن تُحۡسِنُواْ وَتَتَّقُواْ فَإِنَّ ٱللَّهَ كَانَ بِمَا تَعۡمَلُونَ خَبِيرٗا ١٢٨﴾ [النساء: ١٢٨]  
“আর যদি কোনো নারী তার স্বামীর পক্ষ থেকে কোনো দুর্ব্যবহার কিংবা উপেক্ষার আশঙ্কা করে, তাহলে তারা উভয়ে কোনো মীমাংসা করলে তাদের কোনো অপরাধ নেই। আর মীমাংসা কল্যাণকর এবং মানুষের মধ্যে কৃপণতা বিদ্যমান রয়েছে। আর যদি তোমরা সৎকর্ম কর এবং তাকওয়া অবলম্বন কর তবে আল্লাহ তোমরা যা কর সে বিষয়ে সম্যক অবগত”। [সূরা আন-নিসা, আয়াত: ১২৮]
হাফেয ইবন কাসির রহ. বলেন: যদি নারী আশঙ্কা করে স্বামী তাকে পছন্দ করছে না, বা তাকে উপেক্ষা করছে, তাহলে স্ত্রী স্বামীর ওপর থেকে সকল হক বা কিছু হক হ্রাস করতে পারে, যেমন তার ব্যয়ভার অথবা পোশাক, রাতের অংশ অথবা অন্য কোনো হক। স্বামীর পক্ষেও স্ত্রীর ছাড় গ্রহণ করা বৈধ, স্বামীর জন্য স্ত্রীর ত্যাগ করা কোনো সমস্যা নয় এবং স্ত্রী থেকে স্বামীর গ্রহণ করাও সমস্যা নয়। আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন:
﴿ فَلَا جُنَاحَ عَلَيۡهِمَآ أَن يُصۡلِحَا بَيۡنَهُمَا صُلۡحٗاۚ وَٱلصُّلۡحُ خَيۡرٞۗ ١٢٨ ﴾ [النساء : ١٢٨]  
“তাহলে তারা উভয়ে কোনো মীমাংসা করলে তাদের কোনো অপরাধ নেই। আর মীমাংসা কল্যাণকর”। [সূরা আন-নিসা, আয়াত: ১২৮]
অর্থাৎ বিচ্ছিন্ন হওয়া থেকে উত্তম... অতঃপর তিনি সাওদাহ বিনতে যাম‘আহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহার ঘটনা উল্লেখ করেন। যখন তিনি বৃদ্ধা হয়ে যান এবং নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামও তাকে ছেড়ে দেওয়ার ইচ্ছা পোষণ করেন, তখন তিনি থাকার জন্য মীমাংসা করেন এবং তার দিনগুলো তিনি আয়েশার জন্য ছেড়ে দেন, তিনিও তার ছাড় গ্রহণ করেন এবং এভাবে তাকে রেখে দেন”।  সমাপ্ত।
প্রশ্ন: নারী যদি স্বামীকে অপছন্দ করে ও তার সংসার করতে না চায় কী করবে?
উত্তর: আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿فَإِنۡ خِفۡتُمۡ أَلَّا يُقِيمَا حُدُودَ ٱللَّهِ فَلَا جُنَاحَ عَلَيۡهِمَا فِيمَا ٱفۡتَدَتۡ بِهِۦۗ﴾ [البقرة: ٢٢٩]  
“সুতরাং যদি তোমরা আশঙ্কা কর যে, তারা আল্লাহর সীমারেখা কায়েম রাখতে পারবে না, তাহলে স্ত্রী যা দিয়ে নিজকে মুক্ত করে নেবে -তাতে কোনো সমস্যা নেই”। [সূরা আল-বাকারা, আায়াত: ২২৯]
হাফেয ইবন কাসির রহ. তার ‘তাফসীর’: (১/৪৮৩) গ্রন্থে বলেন: “স্বামী ও স্ত্রী যদি ঝগড়ায় জড়ায়, স্ত্রী স্বামীর হক আদায় না করে অথবা স্বামীকে অসন্তুষ্ট রাখে ও তার সাথে থাকতে অসম্মতি জানায়, তাহলে স্ত্রীর সুযোগ আছে স্বামী তাকে যা (মাহর) দিয়েছে তা ফেরত দিয়ে বিচ্ছিন্ন হওয়া। স্বামীকে তা ফেরত দেওয়া স্ত্রীর জন্য দোষণীয় নয়, আবার স্ত্রী থেকে তা গ্রহণ করা স্বামীর জন্য দোষণীয় নয়।” সমাপ্ত। এভাবে বিচ্ছিন্ন হওয়াকে খোলা (তালাক) বলা হয়।
প্রশ্ন: কোনো কারণ ছাড়া তালাক তলবকারী নারীর শাস্তি কী?
উত্তর: সাওবান রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
»أيما امرأة سألت زوجها طلاقها من غير ما بأس فحرام عليها رائحة الجنة«
“যে কোনো নারী কোনো কারণ ছাড়াই স্বামীর নিকট তালাক তলব করল, তার ওপর জান্নাতের সুগন্ধি হারাম”।  
কারণ, আল্লাহর নিকট সবচেয়ে অপছন্দীয় হালাল হচ্ছে তালাক, প্রয়োজন হলেই তার স্মরণাপন্ন হবে, অন্যথায় তলব করা মাকরূহ। কারণ, তার পশ্চাতে সৃষ্ট ক্ষতি কারো নিকট অস্পষ্ট নেই। প্রয়োজনের তালাক, যেমন স্বামীর হক আদায়ে স্ত্রীর অস্বীকৃতি জানানো, যার ফলে স্বামী স্ত্রী দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿فَإِمۡسَاكُۢ بِمَعۡرُوفٍ أَوۡ تَسۡرِيحُۢ بِإِحۡسَٰنٖۗ﴾ [البقرة: ٢٢٩]  
“অতঃপর বিধি মোতাবেক রেখে দেবে কিংবা সুন্দরভাবে ছেড়ে দেবে”। [সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ২২৯]
অপর আয়াতে বলেন:
﴿لِّلَّذِينَ يُؤۡلُونَ مِن نِّسَآئِهِمۡ تَرَبُّصُ أَرۡبَعَةِ أَشۡهُرٖۖ فَإِن فَآءُو فَإِنَّ ٱللَّهَ غَفُورٞ رَّحِيمٞ ٢٢٦ وَإِنۡ عَزَمُواْ ٱلطَّلَٰقَ فَإِنَّ ٱللَّهَ سَمِيعٌ عَلِيمٞ ٢٢٧﴾ [البقرة: ٢٢٦،  ٢٢٧]  
“যারা তাদের স্ত্রীদের সাথে মিলিত না হওয়ার শপথ করবে তারা চার মাস অপেক্ষা করবে। অতঃপর তারা যদি ফিরিয়ে নেয়, তবে নিশ্চয় আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। আর যদি তারা তালাকের দৃঢ় ইচ্ছা করে নেয়, তবে নিশ্চয় আল্লাহ সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ”। [সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ২২৬-২২৭]
দাম্পত্য সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন হলে নারীর করণীয়:
স্বামী ও স্ত্রীর মাঝে বিচ্ছেদ দু’প্রকার:
ক. জীবিত অবস্থায় বিচ্ছিন্ন হওয়া।
খ. মৃত্যু দ্বারা বিচ্ছিন্ন হওয়া।
উভয় অবস্থাতেই নারীর ওপর ইদ্দত ওয়াজিব, অর্থাৎ নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত অপেক্ষা করা।
ইদ্দতের হিকমত: একটি পরিপূর্ণ বিয়ে ভাঙ্গার পর তার শেষ সীমা নির্ধারণ করাই ইদ্দতের হিকমত। দ্বিতীয়ত গর্ভ থেকে রেহেম মুক্ত করা, যেন বিবাহ বিচ্ছিন্নকারী ব্যতীত অন্য কারও সহবাসের বিষয়টি তার সাথে সম্পৃক্ত না থাকে, যদি এটা না করা হয় তবে গর্ভের সন্তানে মিশ্রণ ঘটবে ও বংশ বিনষ্ট হবে। ইদ্দত দ্বারা স্ত্রী সাবেক বিয়ে-বন্ধনের প্রতি সম্মান প্রদর্শনসহ, তালাকদাতা স্বামীর হকের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন ও বিচ্ছেদের কারণে শোক প্রকাশ করে।
ইদ্দত চার প্রকার:
প্রথম প্রকার: গর্ভবতীর ইদ্দত। গর্ভবতী নারী সন্তান প্রসব করলে ইদ্দত শেষ হবে, তালাকে বায়েন প্রাপ্তা হোক বা তালাকে রাজ‘ঈ প্রাপ্তা হোক। জীবিত অবস্থায় বিচ্ছিন্ন হোক বা মৃত্যুর কারণে বিচ্ছিন্ন হোক। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿وَأُوْلَٰتُ ٱلۡأَحۡمَالِ أَجَلُهُنَّ أَن يَضَعۡنَ حَمۡلَهُنَّۚ﴾ [الطلاق: ٤]  
“আর গর্ভধারিণীদের ইদ্দতকাল সন্তান প্রসব পর্যন্ত”। [সূরা আত-ত্বালাক, আয়াত: ৪]
দ্বিতীয় প্রকার: ঋতু হয় তালাক প্রাপ্তা নারীর ইদ্দত। এ জাতীয় নারীর ইদ্দত তিন কুরু। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿وَٱلۡمُطَلَّقَٰتُ يَتَرَبَّصۡنَ بِأَنفُسِهِنَّ ثَلَٰثَةَ قُرُوٓءٖۚ﴾ [البقرة: ٢٢٨]  
“আর তালাকপ্রাপ্তা নারীরা তিন কুরু পর্যন্ত অপেক্ষায় থাকবে”। [সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ২২৮] অর্থাৎ তিন ঋতু বা হায়েয পর্যন্ত।
তৃতীয় প্রকার: ঋতু তথা হায়েয হয় না এমন তালাক প্রাপ্তা নারীর ইদ্দত। এরা দু’প্রকার: ছোট যার ঋতু আরম্ভ হয় নি এবং বড় যার ঋতু আশার সম্ভাবনা নেই। আল্লাহ তা‘আলা উভয়ের ইদ্দত সম্পর্কে বলেন:
﴿وَٱلَّٰٓـِٔي يَئِسۡنَ مِنَ ٱلۡمَحِيضِ مِن نِّسَآئِكُمۡ إِنِ ٱرۡتَبۡتُمۡ فَعِدَّتُهُنَّ ثَلَٰثَةُ أَشۡهُرٖ وَٱلَّٰٓـِٔي لَمۡ يَحِضۡنَۚ﴾ [الطلاق: ٤]  
“তোমাদের স্ত্রীদের মধ্যে যারা ঋতুমতী হওয়ার কাল অতিক্রম করে গেছে, তাদের ইদ্দত সম্পর্কে তোমরা যদি সংশয়ে থাক এবং এখনও ঋতুর বয়সে পৌঁছে নি তাদের ইদ্দকালও হবে তিন মাস”। [সূরা আত-ত্বালাক, আয়াত: ৪] অর্থাৎ এটিই তাদের ইদ্দত।
চতুর্থ প্রকার: স্বামী-মৃত বা বিধবা নারীর ইদ্দত। আল্লাহ তা‘আলা তার ইদ্দত সম্পর্কে বলেন:
﴿وَٱلَّذِينَ يُتَوَفَّوۡنَ مِنكُمۡ وَيَذَرُونَ أَزۡوَٰجٗا يَتَرَبَّصۡنَ بِأَنفُسِهِنَّ أَرۡبَعَةَ أَشۡهُرٖ وَعَشۡرٗاۖ﴾ [البقرة: ٢٣٤]  
“আর তোমাদের মধ্য থেকে যারা মারা যাবে এবং স্ত্রীদেরকে রেখে যাবে, তাদের স্ত্রীগণ চার মাস দশ দিন অপেক্ষায় থাকবে”। [সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ২৩৪]
বিয়ের পর স্ত্রীগমন করুক বা না করুক, স্ত্রী ছোট হোক বা বড় হোক সকল প্রকার বিধবা নারী (যাদের স্বামী মারা গেছে), এ আয়াতের অন্তর্ভুক্ত, তবে গর্ভবতী বিধবা নারী এর অন্তর্ভুক্ত নয়। কারণ, তার বিধান নিম্নোক্ত আয়াতে পৃথকভাবে বর্ণনা করা হয়েছে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿وَأُوْلَٰتُ ٱلۡأَحۡمَالِ أَجَلُهُنَّ أَن يَضَعۡنَ حَمۡلَهُنَّۚ﴾ [الطلاق: ٤]  
“আর গর্ভধারিণীদের ইদ্দতকাল সন্তান প্রসব পর্যন্ত”। [সূরা আত-ত্বালাক, আয়াত: ৪]
ইবনুল কাইয়্যিম রচিত ‘আল-হাদইউন নববী’: (৫/৫৯৪ ও ৫৯৫) গ্রন্থ থেকে উদ্ধৃতি সমাপ্ত হলো।

ইদ্দত পালনকারী নারীর জন্য যা হারাম:
১. ইদ্দত পালনকারী নারীকে বিয়ের প্রস্তাব দেওয়ার হুকুম:
ক. রজ‘ঈ ইদ্দত পালনকারী। এ জাতীয় নারীকে স্পষ্ট বা ইঙ্গিতে বিয়ের প্রস্তাব দেওয়া হারাম। কারণ, সে এখনো সাবেক স্বামীর স্ত্রীর হুকুমে, তাই তাকে প্রস্তাব দেওয়া কারো জন্য বৈধ নয়, এখনো সে স্বামীর নিরাপত্তায় রয়েছে।
খ. রজ‘ঈ ব্যতীত অন্য কোনো ইদ্দত পালনকারী। এ জাতীয় নারীকে স্পষ্টভাবে বিয়ের প্রস্তাব দেওয়া হারাম, তবে ইশারা ইঙ্গিতে প্রস্তাব দেওয়া হারাম নয়। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿وَلَا جُنَاحَ عَلَيۡكُمۡ فِيمَا عَرَّضۡتُم بِهِۦ مِنۡ خِطۡبَةِ ٱلنِّسَآءِ﴾ [البقرة: ٢٣٥]  
“আর এতে তোমাদের কোনো পাপ নেই যে, তোমরা নারীদেরকে ইশারায় যে প্রস্তাব করবে”। [সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ২৩৫]
স্পষ্ট প্রস্তাব অর্থ তাকে বিয়ে করার আগ্রহ প্রকাশ করা, যেমন বলা: আমি তোমাকে বিয়ে করতে চাই। কারণ, এমন হলে হয়তো বিয়ের আগ্রহ থেকে নারী ইদ্দত শেষ হওয়ার আগে বলবে আমার ইদ্দত শেষ, যদিও বাস্তবে ইদ্দত শেষ হয় নি। ইশারা-ইঙ্গিতের প্রস্তাব এরূপ নয়, কারণ তার দ্বারা বিয়ে করার স্পষ্ট বার্তা প্রদান করা হয় না, তাই তাতে ক্ষতির সম্ভাবনা নেই। দ্বিতীয়ত আয়াত যেহেতু তার অনুমতি প্রদান করেছে তাই তা বৈধ।
ইশারা-ইঙ্গিতের উদাহরণ: তোমার মতো নারীর আমি খুব প্রয়োজন বোধ করি। রাজ‘ঈ ইদ্দত ব্যতীত অন্য কোনো ইদ্দত পালনকারী নারীর পক্ষে ইঙ্গিত দাতার প্রস্তাবের উত্তর ইঙ্গিতের মাধ্যমে প্রদান করা বৈধ, তবে স্পষ্টভাবে সাড়া দেওয়া বৈধ নয়। রাজ‘ঈ ইদ্দত পালনকারী নারীর পক্ষে ইশারা বা স্পষ্ট কোনো ভাবেই বিয়ের প্রস্তাবে সাড়া দেওয়া বৈধ নয়।
২. অপরের ইদ্দত পালনকারী নারীকে বিয়ে করা হারাম:
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿وَلَا تَعۡزِمُواْ عُقۡدَةَ ٱلنِّكَاحِ حَتَّىٰ يَبۡلُغَ ٱلۡكِتَٰبُ أَجَلَهُۥۚ﴾ [البقرة: ٢٣٥]  
“আর আল্লাহর নির্দেশ (ইদ্দত) তার সময় পূর্ণ করার পূর্বে বিবাহ বন্ধনের সংকল্প করো না”।  [সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ২৩৫]
ইবন কাসির রহ. তার ‘তাফসীর’: (১/৫০৯) গ্রন্থে বলেন: “অর্থাৎ বিয়ের আকদ কর না যতক্ষণ না ইদ্দত শেষ হয়। আলেমগণ একমত যে, ইদ্দতের সময় বিয়ের আকদ দুরস্ত নয়।” সমাপ্ত।
দু’টি জ্ঞাতব্য:
এক. যে নারীকে বিয়ের পর সহবাসের পূর্বে তালাক দেওয়া হয় তার ওপর কোনো ইদ্দত নেই। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُوٓاْ إِذَا نَكَحۡتُمُ ٱلۡمُؤۡمِنَٰتِ ثُمَّ طَلَّقۡتُمُوهُنَّ مِن قَبۡلِ أَن تَمَسُّوهُنَّ فَمَا لَكُمۡ عَلَيۡهِنَّ مِنۡ عِدَّةٖ تَعۡتَدُّونَهَاۖ﴾ [الاحزاب: ٤٩]
“হে মুমিনগণ, যখন তোমরা মুমিন নারীদেরকে বিবাহ করবে অতঃপর তাদেরকে স্পর্শ করার পূর্বেই তালাক দিয়ে দেবে, তাহলে তোমাদের জন্য তাদের কোনো ইদ্দত নেই যা তোমরা গণনা করবে”। [সূরা আল-আহযাব, আয়াত: ৪৯]
ইবন কাসির রহ. তার তাফসীর: (৫/৪৭৯) গ্রন্থে বলেন: এ মাস’আলার ক্ষেত্রে সকল আলেম একমত, অর্থাৎ নারীকে যদি সহবাসের পূর্বে তালাক দেওয়া হয়, তাহলে তার ওপর কোনো ইদ্দত নেই, সে তালাকের পর তৎক্ষণাৎ যার সাথে ইচ্ছা বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে পারবে।
দুই. বিয়ের পর সহবাসের পূর্বে তালাক প্রাপ্তা নারীর জন্য যদি মাহর নির্ধারণ করা হয়, তাহলে তাকে অর্ধেক মাহর দিবে, আর যার মাহর নির্ধারণ করা হয় নি তাকে মুত‘আহ অর্থাৎ স্বামীর সাধ্য মোতাবেক পোশাক ইত্যাদি প্রদান করবে।
সহবাসের পর যাকে তালাক দেওয়া হয়, সে অবশ্যই মাহরের হকদার। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿لَّا جُنَاحَ عَلَيۡكُمۡ إِن طَلَّقۡتُمُ ٱلنِّسَآءَ مَا لَمۡ تَمَسُّوهُنَّ أَوۡ تَفۡرِضُواْ لَهُنَّ فَرِيضَةٗۚ وَمَتِّعُوهُنَّ عَلَى ٱلۡمُوسِعِ قَدَرُهُۥ وَعَلَى ٱلۡمُقۡتِرِ قَدَرُهُۥ مَتَٰعَۢا بِٱلۡمَعۡرُوفِۖ حَقًّا عَلَى ٱلۡمُحۡسِنِينَ ٢٣٦ وَإِن طَلَّقۡتُمُوهُنَّ مِن قَبۡلِ أَن تَمَسُّوهُنَّ وَقَدۡ فَرَضۡتُمۡ لَهُنَّ فَرِيضَةٗ فَنِصۡفُ مَا فَرَضۡتُمۡ ﴾ [البقرة: ٢٣٦،  ٢٣٧]  
“তোমাদের কোনো অপরাধ নেই যদি তোমরা স্ত্রীদেরকে তালাক দাও এমন অবস্থায় যে, তোমরা তাদেরকে স্পর্শ কর নি কিংবা তাদের জন্য কোনো মাহর নির্ধারণ কর নি। আর উত্তমভাবে তাদেরকে ভোগ-উপকরণ দিয়ে দাও, ধনীর ওপর তার সাধ্যানুসারে এবং সংকটাপন্নের ওপর তার সাধ্যানুসারে। সু-কর্মশীলদের ওপর এটি আবশ্যক। আর যদি তোমরা তাদেরকে তালাক দাও, তাদেরকে স্পর্শ করার পূর্বে এবং তাদের জন্য কিছু মাহর নির্ধারণ করে থাক, তাহলে যা নির্ধারণ করেছে, তার অর্ধেক (দিয়ে দাও)”। [সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ২৩৬-২৩৭]
অর্থাৎ স্বামীদের স্পর্শ ও মাহর নির্ধারণ করার পূর্বে তালাক দেওয়া কোনো সমস্যা নয়, এতে যদিও নারী মনক্ষুণ্য হয়, মুত‘আহ তার মনক্ষুণ্যতা লাঘব করবে। প্রত্যেক স্বামী স্বীয় স্বচ্ছলতা ও অস্বচ্ছলতার ভিত্তিতে সাধ্য ও সমাজে প্রচলন মোতাবেক মুত‘আহ দিবে। অতঃপর যার মাহর নির্ধারিত, তাকে অর্ধেক দেওয়ার নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে।
হাফেয ইবন কাসির রহ. স্বীয় ‘তাফসীর’: (১/৫১২) গ্রন্থে বলেন: “এ জাতীয় নারীকে অর্ধেক মাহর প্রদান করা সর্বসম্মত মত। এতে কোনো আলেম দ্বিমত পোষণ করেন নি”। সমাপ্ত।
৩. বিধবা নারীর ইদ্দতে পাঁচটি বস্তু হারাম, যার আরবি নাম হিদাদ:
এক. সকল প্রকার সুগন্ধি: বিধবা নারী নিজের শরীরে কিংবা কাপড়ে সুগন্ধি ব্যবহার করবে না, অনুরূপ সুগন্ধি যুক্ত বস্তুও ব্যবহার করবে না। কারণ, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
»ولا تمس طيبا«
“কোনো সুগন্ধি স্পর্শ করবে না”।
দুই. শারীরিক সাজসজ্জা গ্রহণ করা: বিধবা নারীর সাজসজ্জা গ্রহণ করা, যেমন খিযাব ও অন্যান্য রূপচর্চার বস্তু সুরমা, শরীরের তক রঙ্গিনকারী বিভিন্ন প্রকার রঙ ব্যবহার করা হারাম। ওষুধ হিসেবে সুরমা ব্যবহার করা বৈধ, যদি প্রয়োজন হয়, সৌন্দর্যের অংশ হিসেবে নয়, সুরমা শুধু রাতে ব্যবহার করবে, দিনে মুছে ফেলবে। সুরমা ব্যতীত অন্যান্য বস্তু দ্বারা চোখের চিকিৎসা করাও বৈধ, যাতে সৌন্দর্য নেই।
তিন. সাজসজ্জার কাপড় পরিধান করা: বিধবা নারীর জন্য সাজসজ্জার কাপড় পরিধান করা হারাম। সাধারণ কাপড় পড়বে, এ সময় নির্দিষ্ট রঙের কাপড় পরিধান করার কোনো ভিত্তি নেই, সমাজে যার প্রচলন রয়েছে।
চার. অলঙ্কার: বিধবা নারীর জন্য সকল প্রকার অলঙ্কার পরিধান করা হারাম, এমন কি আঙ্কটি পর্যন্ত।
পাঁচ. স্ত্রী যে ঘরে থাকাবস্থায় স্বামী মারা যায় সে ঘর ব্যতীত কোথাও রাত-যাপন করা: শর‘ঈ কোনো কারণ ব্যতীত বিধবা নারীর জন্য ঘর পরিবর্তন করা জায়েয নয়। সে কোনো রোগী কিংবা কোনো বন্ধু কিংবা কোনো নিকট আত্মীয়কে দেখতে যাবে না, একান্ত প্রয়োজনে দিনে বের হওয়া বৈধ। এ পাঁচটি বস্তু ব্যতীত কোনো জিনিস থেকে তাকে বারণ করা যাবে না, আল্লাহ তার জন্য যা হালাল করেছেন।
ইমাম ইবনুল কাইয়্যিম রহ. ‘আল-হাদইউন নববী’: (৫/৫০৭) গ্রন্থে বলেন: “বিধবা নারীকে নখ কাঁটা, বগলের পশম উপড়ে ফেলা, যে চুল ফেলে দেওয়া মুস্তাহাব তা ফেলে দেওয়া, বড়ই পাতা দিয়ে গোসল করা ও চুল আঁচড়ানো থেকে বারণ করা যাবে না।” সমাপ্ত।
শাইখুল ইসলাম ইবন তাইমিয়্যাহ ‘মাজমুউল ফতোয়ায়’: (২৪/২৭ ও ২৮) বলেন: “বিধবা নারীর জন্য সব কিছু খাওয়া বৈধ, যা আল্লাহ তার জন্য হালাল করেছেন। যেমন, ফল ও গোশত ইত্যাদি। অনুরূপ বৈধ সকল পানীয় পান করা... অতঃপর তিনি বলেন: বৈধ কোনো কাজে ব্যস্ত থাকা তার জন্য হারাম নয়। যেমন, নকশা, সেলাই ও কাপড় বুনা ইত্যাদি, যা নারীদের স্বভাব সূলভ কাজ। অনুরূপ ইদ্দতের বাইরে সেসব কাজ করা তার জন্য বৈধ ইদ্দতের ভেতরও তা বৈধ। যেমন, প্রয়োজনে পুরুষদের সাথে কথা বলা, তবে পর্দার আড়াল থেকে অবশ্যই। আমি যা উল্লেখ করলাম তা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নত, যা সাহাবীগণের নারীগণ সম্পাদন করতেন তাদের স্বামীদের মৃত্যুর পর।” সমাপ্ত।
সাধারণ মানুষ যা বলে, চাঁদ থেকে বিধবা নারী চেহারা ঢেকে রাখবে, ঘরের ছাদে উঠবে না, পুরুষের সাথে কথা বলবে না, মাহরামদের থেকেও চেহারা ঢেকে রাখবে, আরো অনেক কিছু তার কোনো ভিত্তি নেই। আল্লাহ তা‘আলা ভালো জানেন।


দশম পরিচ্ছেদ
নারীর সম্মান ও পবিত্রতা রক্ষাকারী বিধান
১. লজ্জাস্থান হিফাযত ও চোখ অবনত রাখার ক্ষেত্রে নারীও পুরুষের ন্যায় আদিষ্ট। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿قُل لِّلۡمُؤۡمِنِينَ يَغُضُّواْ مِنۡ أَبۡصَٰرِهِمۡ وَيَحۡفَظُواْ فُرُوجَهُمۡۚ ذَٰلِكَ أَزۡكَىٰ لَهُمۡۚ إِنَّ ٱللَّهَ خَبِيرُۢ بِمَا يَصۡنَعُونَ ٣٠ وَقُل لِّلۡمُؤۡمِنَٰتِ يَغۡضُضۡنَ مِنۡ أَبۡصَٰرِهِنَّ وَيَحۡفَظۡنَ فُرُوجَهُنَّ﴾ [النور: ٣٠،  ٣١]  
“(হে নবী আপনি) মুমিন পুরুষদেরকে বলে দিন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে সংযত রাখে এবং তাদের লজ্জাস্থানকে হিফাযত করে। এটিই তাদের জন্য অধিক পবিত্র। নিশ্চয় তারা যা করে সে সম্পর্কে আল্লাহ সম্যক অবহিত। আর মুমিন নারীদেরকে বলে দিন, যেন তারা তাদের দৃষ্টিকে সংযত রাখে এবং তাদের লজ্জাস্থানের হিফাযত করে”। [সূরা আন-নূর, আয়াত: ৩০-৩১]
আমাদের শাইখ আমিন শানকিতী রহ. স্বীয় তাফসীর ‘আদওয়াউল বায়ান’: (৬/১৮৬ ও ১৮৭) গ্রন্থে বলেন: “আল্লাহ তা‘আলা মুমিন নারী ও পুরুষদের চোখ অবনত ও লজ্জাস্থান হিফাযত করার নির্দেশ দিয়েছেন। লজ্জাস্থান হিফাযত করার একটি অংশ যেনা, সমকামিতা, মানুষের সামনে উলঙ্গ হওয়া ও তাদের সামনে গুপ্তাঙ্গ প্রকাশ করা থেকে বিরত থাকা... অতঃপর তিনি বলেন: নারী ও পুরুষ যারাই এ আয়াতে বর্ণিত আল্লাহর নিদের্শসমূহ পালন করবে তাদের জন্য তিনি মাগফিরাত ও সাওয়াবের ঘোষণা দিয়েছেন, যদি তারা এর সাথে সূরা আহযাবের নিম্নোক্ত আয়াতে বর্ণিত সিফাতগুলো বাস্তবায়ন করে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿إِنَّ ٱلۡمُسۡلِمِينَ وَٱلۡمُسۡلِمَٰتِ وَٱلۡمُؤۡمِنِينَ وَٱلۡمُؤۡمِنَٰتِ وَٱلۡقَٰنِتِينَ وَٱلۡقَٰنِتَٰتِ وَٱلصَّٰدِقِينَ وَٱلصَّٰدِقَٰتِ وَٱلصَّٰبِرِينَ وَٱلصَّٰبِرَٰتِ وَٱلۡخَٰشِعِينَ وَٱلۡخَٰشِعَٰتِ وَٱلۡمُتَصَدِّقِينَ وَٱلۡمُتَصَدِّقَٰتِ وَٱلصَّٰٓئِمِينَ وَٱلصَّٰٓئِمَٰتِ وَٱلۡحَٰفِظِينَ فُرُوجَهُمۡ وَٱلۡحَٰفِظَٰتِ وَٱلذَّٰكِرِينَ ٱللَّهَ كَثِيرٗا وَٱلذَّٰكِرَٰتِ أَعَدَّ ٱللَّهُ لَهُم مَّغۡفِرَةٗ وَأَجۡرًا عَظِيمٗا ٣٥﴾ [الاحزاب: ٣٥]  
“নিশ্চয় মুসলিম পুরুষ ও নারী, মুমিন পুরুষ ও নারী, অনুগত পুরুষ ও নারী, সত্যবাদী পুরুষ ও নারী, ধৈর্যশীল পুরুষ ও নারী, বিনয়াবনত পুরুষ ও নারী, দানশীল পুরুষ ও নারী, সিয়ামপালনকারী পুরুষ ও নারী, নিজদের লজ্জাস্থানের হিফাযতকারী পুরুষ ও নারী, আল্লাহকে অধিক স্মরণকারী পুরুষ ও নারী, তাদের জন্য আল্লাহ মাগফিরাত ও মহান প্রতিদান প্রস্তুত রেখেছেন”। [সূরা আল-আহযাব, আয়াত: ৩৫]” ‘আদওয়াউল বায়ান’ থেকে উদ্ধৃতি সমাপ্ত হলো।
নারী-নারী পরস্পর শরীর ঘর্ষণ করে যৌনকামনা হাসিল করা বড় গুনাহ। এতে লিপ্ত নারীরা কঠিন শাস্তির যোগ্য।
ইবন কুদামাহ রহ. ‘আল-মুগনি’: (৮/১৯৮) গ্রন্থে বলেন: যদি দু’জন নারী পরস্পর শরীর ঘর্ষণ করে তারা উভয় অভিশপ্ত ও যিনাকারী। কারণ, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
»إذا أتت المرأة المرأة فهما زانيتان«
“যদি নারী নারীগমন করে তারা উভয়ে যিনাকারিনী”।
তাদেরকে বিচারক সমুচিত শাস্তি দিবে। কারণ, এটা এমন যিনা যার জন্য শরী‘আত নির্ধারিত শাস্তি নেই।  সমাপ্ত।
অতএব নারীদের বিশেষ করে যুবতীদের এসব ঘৃণ্য অপকর্ম থেকে সাবধান থাকা জরুরি।
চোখ সংযত রাখা সম্পর্কে ইবনুল কাইয়্যিম  রহ. ‘আল-জাওয়াবুল কাফি’: (পৃ.১২৯ ও ১৩৫) গ্রন্থে বলেন: চোখের চাহনি হচ্ছে প্রবৃত্তির অগ্রদূত ও বার্তাবহ, তাকে সংযত করাই লজ্জাস্থান সংরক্ষণ করার মূলমন্ত্র। যে তার দৃষ্টিকে উন্মুক্ত ছেড়ে দিল, সে তার নফসকে ধ্বংসের ঘাটে দাঁড় করাল। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
»يا علي، لا تتبع النظرة النظرة فإنما لك الأولى«   
“হে আলী, দৃষ্টির পশ্চাতে দৃষ্টি দিয়ো না, প্রথম দৃষ্টিটি তোমার”।  প্রথম দৃষ্টি দ্বারা উদ্দেশ্য হঠাৎ দৃষ্টি যা অনিচ্ছায় পতিত হয়। তিনি বলেন: ‘মুসনাদ’ গ্রন্থে আলী থেকে আরো বর্ণিত:
»النظر سهم مسموم من سهام إبليس«
“দৃষ্টি হচ্ছে ইবলিসের তীরসমূহ থেকে একটি বিষাক্ত তীর”
... অতঃপর তিনি বলেন: মানুষ যেসব মুসীবতে গ্রেফতার হয় তার মূল হচ্ছে দৃষ্টি। দৃষ্টি চাহিদা সৃষ্টি করে, চাহিদা চিন্তাকে জন্ম দেয়, অতঃপর চিন্তা প্রবৃত্তিকে জন্ম দেয়, অতঃপর প্রবৃত্তি ইচ্ছাকে জন্ম দেয়। অতঃপর ইচ্ছা ধীরে ধীরে চূড়ান্ত দৃঢ়তায় রূপ নেয়, এভাবেই কার্য বাস্তবায়িত হয় যদি কোনো বাধা প্রতিবন্ধক না হয়। এ জন্য বলা হয়: চোখ অবনত রাখার কষ্ট সহ্য করা তার পরবর্তী দুঃখকে সহ্য করার চেয়ে অনেক সহজ।” সমাপ্ত।
হে মুসলিম বোন, তুমি পুরুষদের থেকে তোমার দৃষ্টি অবনত রাখ। ফিতনা সৃষ্টিকারী ছবির দিকে তাকিয়ো না, যা প্রকাশ করা হয় কতক পত্রিকায় অথবা টেলিভিশনের পর্দায় অথবা ভিডিওতে, তাহলে তুমি খারাপ পরিণতি থেকে হিফাযতে থাকবে। কত দৃষ্টি যে ব্যক্তির জন্য অনুশোচনার কারণ হয়েছে তার হিসেব নেই। সত্যিই ছোট স্ফুলিঙ্গ থেকে বৃহৎ আগুন দাউ দাউ করে জ্বলে উঠে।
২. লজ্জাস্থান হিফাযত করার অংশ: গান-বাদ্য না শোনা:
ইমাম ইবনুল কাইয়্যিম  রহ. ‘ইগাসাতুল লাহফান’: (১/২৪২, ২৪৮, ২৬৪ ও ২৬৫) গ্রন্থে বলেন: “শয়তানের একটি ষড়যন্ত্র, যার দ্বারা সে দুর্বল দীনদার, সামান্য বিবেক ও অল্প ইলমের ধারকদের ষড়যন্ত্রের জালে আবদ্ধ করে, মূর্খ ও বাতিলপন্থীদের অন্তর শিকার করে, তন্মধ্যে অন্যতম হচ্ছে, মুখের শীষ, হাততালি ও হারাম বাদ্য-যন্ত্রসহ গান, যা অন্তরকে কুরআন থেকে বিমুখ করে পাপাচার ও অপরাধে জড়িত করে। এগুলো মূলত শয়তানের কুরআন ও রহমান থেকে কঠিন অন্তরায়, যিনা ও সমকামিতার মন্ত্র। এসব দ্বারা পাপাচারী আশেক তার প্রেমিকা থেকে চূড়ান্ত উদ্দেশ্য হাসিল করে... অতঃপর তিনি বলেন: নারী ও কিশোরদের কণ্ঠ থেকে এসব শ্রবণ করা আরো হারাম ও দীনকে কঠিনভাবে ধ্বংসকারী... অতঃপর বলেন: এতে সন্দেহ নেই যে, আত্মসম্মানী লোক স্বীয় পরিবারকে গান থেকে দূরে রাখে, যেমন তাদেরকে দূরে রাখে সন্দেহপূর্ণ বস্তু থেকে। তিনি আরো বলেন: প্রেমিক ও আশেক মহলে প্রচলিত যে, তাদের জন্য নারীকে হাসিল করা কঠিন হলে তারা নারীকে গান শোনাতে চেষ্টা করে, তখন সে বিগলিত হয়। কারণ, নারীরা আওয়াজ দ্বারা দ্রুত প্রভাবিত হয়। গানের আওয়াজ তাদের অনুভূতি শক্তিকে দু’ভাবে ক্রিয়াশীল করে: শব্দ ও অর্থ উভয় দিক থেকে। তিনি বলেন: এসবের সাথে যদি দফ, যুবতী ও নাচ সঙ্গী হয়, তাহলে তো জাদুমন্ত্রের মতো কাজ করে। যদি নারীরা গান দ্বারা গর্ভবতী হত, তবে অবশ্যই এসব গান তার উপযুক্ত ছিল। আল্লাহর কসম, গানের কারণে বহু সম্ভ্রান্ত নারী পতিতা হয়েছে!!” সমাপ্ত।
হে মুসলিম নারী তুমি আল্লাহকে ভয় কর, চরিত্র বিনষ্টকারী রোগ অর্থাৎ গান শ্রবণ থেকে দূরে থাক, যা মুসলিম সমাজে বিভিন্ন পদ্ধতি ও উপায়ে ব্যাপকভাবে প্রসারিত হচ্ছে, আর মূর্খ নারীরা তা সংগ্রহ করে নিজেদের মাঝে আদান-প্রদান করছে।
৩. লজ্জাস্থান হিফাযত করার অংশ: মাহরাম ব্যতীত নারীর সফর না করা
লজ্জাস্থান হিফাযত করার অংশ নারীকে মাহরাম ব্যতীত সফর করতে না দেওয়া, যে মাহরাম তাকে লোলুপ ও পাপাচারীদের থেকে সংরক্ষণ করবে ও নিরাপত্তা দিবে।
বিশুদ্ধ হাদীসে নারীকে মাহরাম ব্যতীত সফর করতে নিষেধ করা হয়েছে। যেমন ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
»لا تسافر المرأة ثلاثة أيام إلا مع ذي محرم«   
“নারী তিন দিনের সফর মাহরাম ব্যতীত করবে না”।  
আবু সাঈদ খুদরি রাদিয়াল্লাহ ‘আনহু থেকে বর্ণিত,
»أن النبي صلى الله عليه وسلم  نهى أن تسافر المرأة مسيرة يومين أو ليلتين إلا ومعها زوجها، أو ذو محرم«    
“নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নারীর দু’দিন অথবা দু’রাতের সফরকে নিষেধ করেছেন, যদি তার সাথে স্বামী অথবা মাহরাম না থাকে”।  
অনুরূপ আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
»لا يحل لامرأة تؤمن بالله واليوم الآخر تسافر مسيرة يوم ولبلة إلا مع ذي محرم عليها«
“কোনো নারীর জন্য বৈধ নয়, যে আল্লাহ ও আখিরাতের প্রতি ঈমান রাখে মাহরাম ব্যতীত এক দিন ও এক রাতের দূরত্ব সফর করা”।
এসব হাদীসে তিন দিন, দু’দিন ও এক দিন এক রাত সফর না করার যে পরিমাণ এসেছে তা মূলত সে সময় সফর করার প্রচলিত রেওয়াজের ভিত্ততে। তখন মানুষ পায়ে হেঁটে ও বাহনে চড়ে এক দিন, দু’দিন ও তিন দিন সফর করত। হাদীসে উল্লেখিত তিন দিন, দু’দিন ও এক দিন এক রাত দ্বারা হাদীসের বাহ্যিক অর্থ উদ্দেশ্য নয়, বরং উদ্দেশ্য হচ্ছে যার নাম সফর সেটাই মাহরাম ব্যতীত নারীদের জন্য নিষেধ।
ইমাম নাওয়াওয়ী রহ. ‘সহিহ মুসলিমের ব্যাখ্যায়’: (৯/১০৩) বলেন: “মুদ্দাকথা: যার নাম সফর তার থেকে নারীকে বারণ করা হবে স্বামী অথবা মাহরাম ব্যতীত, হোক সেটা তিন দিন অথবা দু’দিন অথবা এক দিন এক রাত অথবা এক সকাল অথবা অন্য কিছু। কারণ, ইবন আব্বাস থেকে বর্ণিত নিষেধাজ্ঞার হাদীসটি ব্যাপক, তাতে নির্দিষ্ট কোনো সময়ের উল্লেখ নেই, যা মুসলিমের অত্র অধ্যায়ের সর্বশেষ হাদিস:
»لا تسافر امرأة إلا مع ذي محرم«
“মাহরাম ব্যতীত নারী সফর করবে না”।  এ হাদীস সকল প্রকার সফরকে অন্তর্ভুক্ত করে, যার নাম সফর।” আল্লাহ ভালো জানেন।
নারীদের গ্রুপের সাথে যারা নারীকে ওয়াজিব হজের অনুমতি প্রদান করেছে তারা সুন্নত পরিপন্থী সিদ্ধান্ত দিয়েছে। ইমাম খাত্তাবী রহ. বলেন: “নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নারীকে মাহরাম ব্যতীত সফর করতে নিষেধ করেছেন, অতএব শর্ত ব্যতীত তাকে হজের সফরে বের হওয়ার অনুমতি প্রদান করা সুন্নত পরিপন্থী, যে সুন্নত নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বাস্তবায়ন করেছেন। মাহরাম ব্যতীত নারীর সফর পাপ তাই তার ওপর হজ ওয়াজিব বলা দুরস্ত নয়। এ আদেশ মানুষকে পাপের দিকে ধাবিত করবে”। সমাপ্ত।
আমি (গ্রন্থকার) বলছি: যারা নারীকে গ্রপের সাথে বের হওয়ার অনুমতি দিয়েছে তারাও নারীকে মাহরাম ব্যতীত যে কোনো সফরের জন্য অনুমতি প্রদান করেন নি, তারা অনুমতি দিয়েছেন শুধু ওয়াজিব হজের জন্য।
ইমাম নাওয়াওয়ী রহ. ‘আল-মাজমু’: (৮/২৪৯) গ্রন্থে বলেন: “নফল ইবাদত, ব্যবসা, যিয়ারত ও এ জাতীয় সফর মাহরাম ব্যতীত বৈধ নয়।” সমাপ্ত।
অতএব, এ যুগে যারা মাহরাম ব্যতীত নারীর প্রত্যেক সফরের ক্ষেত্রে শিথিলতা করেন তাদের কথার সাথে গ্রহণযোগ্য কোনো আলেম নেই।
তারা বলেন: এক মাহরাম প্লেনে উঠিয়ে দেন, অতঃপর অপর মাহরাম ইয়ারপোর্ট থেকে তাকে নিয়ে যান যখন প্লেন সেখানে পৌঁছে। তাদের ধারণায় বহু নারী পুরুষ একসাথে থাকার কারণে প্লেন নিরাপদ।
আমরা তাদেরকে বলি: এ জাতীয় সফর কখনো নিরাপদ নয়, প্লেন অন্যান্য যানবাহন থেকে বেশি  ঝুঁকিপূর্ণ। কারণ, এতে যাত্রীদের সিট পাশাপাশি, হয়তো নারী কোনো পুরুষের পাশে বসবে অথবা এমন কোনো সমস্যা প্লেনে হতে পারে, যদ্দরূন তা গতিপথ পরিবর্তন করে অন্য কোনো এয়ারপোর্টে ল্যান্ড করবে, যেখানে তাকে গ্রহণকারী কেউ নেই, ফলে ফিতনার সম্মুখীন হবে। নারীর যে দেশ চেনা নেই এবং যেখানে তাকে গ্রহণকারী কোনো মাহরাম নেই, সেখানে তার অবস্থা কী হতে পারে?
৪. লজ্জাস্থান হিফাযত করার অংশ: নারী এমন পুরুষের সাথে নির্জন সাক্ষাত করবে না, যে তার মাহরাম নয়।
নারীকে মাহরাম ব্যতীত পর-পুরুষের সাথে নির্জন সাক্ষাত থেকে বিরত রাখা লজ্জাস্থান হিফাযত করার একটি অংশ। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
»من كان يؤمن بالله واليوم الآخر فلا يخلون بامرأة ليس معها ذو محرم منها، فإن ثالثهما الشيطان«
“যে আল্লাহ ও পরকাল দিবসের প্রতি ঈমান রাখে সে এমন নারীর সাথে নির্জন সাক্ষাত করবে না যার সাথে মাহরাম নেই। কারণ, তাদের তৃতীয়জন হচ্ছে শয়তান”।  
আমের ইবন রাবি‘আহ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: “রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
»ألا لا يخلون رجل بامرأة لا تحل له، فإن ثالثهما الشيطان، إلا محرم«         
“জেনে রেখ, কোনো পুরুষ এমন নারীর সাথে একান্ত সাক্ষাত করবে না, যে তার জন্য হালাল নয়। কারণ, তাদের তৃতীয়জন হয় শয়তান, যদি না সে পুরুষটি হয় মাহরাম”।  
ইমাম মাজদ ইবন তাইমিয়্যাহ ‘মুনতাকা’ গ্রন্থে বলেন: ইমাম আহমদ উপর্যুক্ত হাদীস দু’টি বর্ণনা করেছেন, তবে এ হাদীসের ভাবার্থ বুখারী ও মুসলিমের হাদীসে রয়েছে, যা ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা থেকে বর্ণিত।
ইমাম শাওকানী ‘নাইলুল আওতার’: (৬/১২০) গ্রন্থে বলেন: “পর-নারীর সাথে নির্জন সাক্ষাত ঐকমত্যে হারাম। অনুরূপ ঐক্যমত্য নকল করেছেন হাফেয ইবন হাজার ‘ফাতহুল বারী’ গ্রন্থে। হারাম হওয়ার কারণ তাদের তৃতীয়জন শয়তান, যা হাদীসেই স্পষ্ট। শয়তানের উপস্থিতি তাদেরকে হারাম লিপ্ত করবে, তবে মাহরামসহ সাক্ষাত বৈধ। কারণ, তার উপস্থিতিতে পাপ সংঘটিত হওয়ার সম্ভাবনা নেই।” সমাপ্ত।
কতক নারী ও তাদের অভিভাবক বেশ কিছু নির্জন সাক্ষাত সম্পর্কে শিথিলতা করেন:
ক. স্বামীর নিকটাত্মীয়দের সাথে নির্জন সাক্ষাত করা ও তাদের সামনে চেহারা উন্মুক্ত রাখা। বস্তুত তাদের সাথে নির্জন সাক্ষাত অন্যান্য সাক্ষাত থেকে বেশি  ক্ষতিকর। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:   
»إياكم والدخول على النساء، فقال رجل من الأنصار: يا رسول الله أفرأيت الحمو ؟ قال: الحمو: الموت«
“খবরদার, তোমরা নারীদের নিকট প্রবেশ করবে না, তখন এক আনসারী ব্যক্তি বলল: হে আল্লাহর রাসূল, حمو বা দেবর সম্পর্কে কী বলেন? তিনি বললেন: দেবর হচ্ছে মৃত্যু”। আরবিতে স্বামীর ভাইকে الحمو বলা হয়। তিনি দেবরের সাথে নির্জন সাক্ষাতকে মৃত্যুর মতো অপছন্দ করেছেন।
হাফেয ইবন হাজার রহ. ‘ফাতহুল বারী’: (৯/৩৩১) গ্রন্থে বলেন: ইমাম নাওয়াওয়ী বলেছেন: “ভাষাবিদগণ সবাই একমত যে, الحمو অর্থ স্বামীর নিকটাত্মীয়, যেমন স্বামীর বাবা, স্বামীর চাচা, স্বামীর ভাই, স্বামীর ভাইয়ের ছেলে ও স্বামীর চাচার ছেলে প্রমুখগণ।” তিনি আরো বলেন: “হাদীসে স্বামীর নিকটাত্মীয় দ্বারা উদ্দেশ্য স্বামীর বাবা ও স্বামীর সন্তান ব্যতীত অন্যান্য পুরুষ, কারণ তারা স্ত্রীর জন্য মাহরাম, তাদের সাথে একান্ত সাক্ষাত বৈধ। তাদেরকে মৃত্যু বলা যাবে না।” তিনি বলেন: “ভাইয়ের স্ত্রী তথা ভাবীর সাথে নির্জন সাক্ষাত করার বিষয়টি মানুষ সচরাচর শিথিলভাবে দেখে অথচ তার উদাহরণ হচ্ছে মৃত্যু। সে-ই সর্বাধিক নিষেধাজ্ঞার পাত্র।” সমাপ্ত।
শাওকানী ‘নাইলুল আওতার’: (৬/১২২) গ্রন্থে বলেন: “الحمو: الموت এ কথার অর্থ হচ্ছে অন্যদের অপেক্ষা তার থেকে অনিষ্টের আশঙ্কা বেশি, যেমন অন্যান্য ভীতিকর বস্তু থেকে মৃত্যু সবচেয়ে বেশি ভীতিজনক।” সমাপ্ত।
হে মুসলিম বোন! আল্লাহকে ভয় কর, এ বিষয়ে শিথিলতা করো না, যদিও মানুষেরা শিথিলতা করে। কারণ, শরী‘আতের নির্দেশ উপদেশ হিসেবে উত্তম মানুষের অভ্যাস নয়।
খ. কতক নারী ও তাদের অভিভাবক মাহরাম ছাড়া ড্রাইভারের সাথে একাকী চলাফেরার ক্ষেত্রে শিথিলতা করে অথচ এটাও হারাম নির্জনতা।
সৌদি আরবের মুফতি শাইখ মুহাম্মাদ ইবরাহীম রহ. ‘মাজমুউল ফতোয়া’য়: (১০/৫২) বলেন: বর্তমান এতে কোনো সন্দেহ নেই যে, অপরের গাড়িতে মাহরাম ব্যতীত পর-নারীর একাকী চড়া অনেক অনিষ্টের সঙ্গী হয়। এতে বহু অনিষ্ট রয়েছে যার ব্যাপারে শিথিলতা করা কখনো সমীচীন নয়। হোক সে লজ্জাশীল নারী কিংবা বেশি বয়সের পবিত্রা নারী, যে সাধারণত পুরুষের সাথে কথা বলে থাকে। যে ব্যক্তি তার মাহরাম নারীর জন্য এ জাতীয় আচরণ পছন্দ করে তার দীনদারী দুর্বল, সে পুরুষত্বহীন ও আত্মমর্যাদাবোধশূন্য। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
»لا يخلون رجل بامرأة إلا كان ثالثهما الشيطان«           
“কোনো পুরুষ নারীর সাথে নির্জনে মিলিত হবে না, হলে অবশ্যই তাদের তৃতীয়জন হয় শয়তান”।  
পর-পুরুষের সাথে গাড়িতে চড়া ঘর ও ঘরের ন্যায় নির্জন সাক্ষাতের চেয়ে বেশি  ক্ষতিকর। এতে যে অনিষ্ট রয়েছে তা নির্জন সাক্ষাতেও নেই।” সমাপ্ত।
মাহরামকে অবশ্যই বড় হওয়া জরুরি, যার উপস্থিতিতে নির্জন সাক্ষাত হয় না, বাচ্চা সাথে থাকাই যথেষ্ট নয়। কতক নারী মনে করে ছোট বাচ্চা থাকলেই নির্জনতা চলে যায় -ভুল ধারণা।
ইমাম নাওয়াওয়ী রহ. বলেন: যদি পর-পুরুষ পর-নারীর সাথে তৃতীয় ব্যক্তি ব্যতীত নির্জনে সাক্ষাত করে তবে তা সবার নিকট হারাম। অনুরূপ যদি তার সাথে ছোট কেউ থাকে যার উপস্থিতিতে লজ্জা হয় না বয়স কম হওয়ার কারণে, এরূপ বাচ্চা দ্বারা হারাম নির্জনতা ভঙ্গ হয় না।
গ. কতক নারী ও তার অভিভাবক চিকিৎসার নামে ডাক্তারের সাক্ষাত সম্পর্কে শিথিলতা করেন, এটাও বড় অপরাধ। এতে রয়েছে বড় অনিষ্ট যা মেনে নেওয়া ও যার ওপর চুপ থাকা জায়েয নেই।
শায়খ মুহাম্মাদ ইবরাহীম রহ. ‘মাজমু‘উল ফতোয়া’য়: (১০/১৩) বলেন: “যাই হোক পর-নারীর সাথে নির্জন সাক্ষাত শরী‘আতের দৃষ্টিতে হারাম, চিকিৎসক ডাক্তারের জন্যও হারাম। কারণ, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
»لا يخلون رجل بامرأة إلا كان ثالثهما الشيطان«
“কোনো পুরুষ নারীর সাথে নির্জনে মিলিত হবে না, হলে অবশ্যই তাদের তৃতীয়জন হয় শয়তান”।  
অবশ্যই নারীর সাথে কারো থাকা জরুরি, হোক সে তার স্বামী কিংবা কোনো মাহরাম পুরুষ। যদি পুরুষ না পাওয়া যায় অবশ্যই তার নিকট আত্মীয় নারী থাকা জরুরি। যদি উল্লিখিত কাউকে পাওয়া না যায়, এ দিকে অসুখও কঠিন হয় যে বিলম্ব করা সম্ভব নয়, তাহলে অবশ্যই রোগীর সাথে সেবিকা বা তার ন্যায় কাউকে উপস্থিত থাকা জরুরি, যেন নিষিদ্ধ নির্জনতা না হয়।” সমাপ্ত।
অনুরূপ ডাক্তারের পক্ষে কোনো পর-নারীর সাথে সাক্ষাত করা জায়েয নেই, হোক পর-নারী রোগী বা তার ডাক্তারি পেশার সঙ্গী অথবা নার্স। অনুরূপ অন্ধ শিক্ষকের সাথে ছাত্রীর নির্জন সাক্ষাত বৈধ নয়। অনুরূপ পর-পুরুষের সাথে বিমানে বিমানবালার নির্জন সাক্ষাত বৈধ নয়। পশ্চিমা সভ্যতা ও কাফেরদের অন্ধ অনুকরণের নামে মানুষ তার ব্যাপারে শিথিলতা করছে। কারণ, দীনী বিধানের প্রতি তাদের ভ্রুক্ষেপ নেই। লা-হাওলা ওয়ালা কুউওয়াতা ইল্লা-বিল্লাহ।
অনুরূপ খাদেমার সাথে নির্জন সাক্ষাতও বৈধ নয়, যে তার বাড়িতে কাজ করে। অনুরূপ গৃহিনীর পক্ষে বৈধ নয় খাদেমের সাথে নির্জন সাক্ষাত করা। সেবক-সেবিকা ও খাদেম-খাদ্দামার সমস্যাটি বর্তমান যুগে বিরাট আকার ধারণ করেছে। কারণ, নারীরা পড়াশুনা ও ঘরের বাইরের কাজে ব্যস্ত। তাই মুমিন নারী ও পুরুষদের খুব সতর্ক হওয়া জরুরি। সাবধানতামূলক উপকরণ গ্রহণ করা, কখনো বদ অভ্যাসের সাথে জড়িত না হওয়া।

পরিসমাপ্তি: নারীর পর-পুরুষের সাথে সাক্ষাত করা হারাম।
শাইখ আব্দুল আযীয ইবন বায রহ. বলেন: পর-পুরুষের সাথে নারীদের মুসাফা করা কোনো অবস্থাতেই বৈধ নয়। হোক তারা যুবতী কিংবা বুড়ো, যুবক কিংবা বৃদ্ধ। কারণ, এতে উভয়ের অনিষ্টের আশঙ্কা রয়েছে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বিশুদ্ধ সনদে প্রমাণিত, তিনি বলেছেন:
»إني لا أصافح النساء«
“আমি নারীদের সাথে মুসাফাহা করি না”।  
আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা বলেন:
»ما مست يد رسول الله صلى الله عليه وسلم  يد امرأة قط، ما كان يبايعهن إلا بالكلام«
“রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাত কখনো কোনো নারীর হাত স্পর্শ করে নি, তিনি তাদেরকে শুধু কথার দ্বারাই বায়‘আত করতেন”।  
পর্দার আড়াল কিংবা পর্দা ছাড়া মুসাফাহার মাঝে কোনো পার্থক্য নেই। কারণ, দলীল কাউকে বাদ দেয় নি। ফিতনার সুড়ঙ্গ পথ বন্ধ করার স্বার্থে সবাইকে নিষেধ করাই শ্রেয়”। সমাপ্ত।
শাইখ মুহাম্মাদ আমীন শানকিতী রহ. স্বীয় তাফসীর ‘আদ-ওয়াউল বায়ান’: (৬/৬০২) গ্রন্থে বলেন: জেনে রাখ যে, পুরুষের পর-নারীর সাথে মুসাফাহা করা বৈধ নয়। নারীর কোনো অঙ্গ পুরুষের কোনো অঙ্গকে স্পর্শ করা বৈধ নয়। দলীল:
এক. নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে প্রমাণিত, তিনি বলেছেন:
» إني لا أصافح النساء«
“আমি নারীদের সাথে মুসাফাহা করি না”।  
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿لَّقَدۡ كَانَ لَكُمۡ فِي رَسُولِ ٱللَّهِ أُسۡوَةٌ حَسَنَة﴾ [الاحزاب: ٢١]  
“অবশ্যই তোমাদের জন্য রাসূলুল্লাহর মধ্যে রয়েছে উত্তম আদর্শ”। [সূরা আল- আহযাব, আয়াত: ২১]
অতএব, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে অনুসরণ করে নারীদের সাথে মুসাফা না করাই আমাদের কর্তব্য। (পূর্বে আমরা “ইহরাম ও গায়রে ইহরাম কোনো অবস্থায় পুরুষের জন্য জাফরানি রঙ দ্বারা রঙিন করা কাপড় পরিধান করা যাবে না” আলোচনার অধীন সূরা হজে উল্লিখিত হাদীসের ব্যাখ্যা প্রদান করেছি এবং সূরা আহযাবের পর্দা সংক্রান্ত আয়াতের ব্যাখ্যায়ও বিস্তারিত আলোচনা করেছি। ) বায়‘আতের সময় নারীদের সাথে মুসাফাহা না করা স্পষ্টভাবে প্রমাণ করে যে, পুরুষ কখনো নারীর সাথে মুসাফাহা করবে না। পুরুষের শরীরের কোনো অংশ নারীর শরীরকে স্পর্শ করবে না। মুসাফাহা অপেক্ষাকৃত হালকা স্পর্শ। বায়‘আতের মুহূর্তেও যখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নারীদের সাথে মুসাফাহা করেন নি, এটিই প্রমাণ করে যে, তাদের সাথে মুসাফাহা করা বৈধ নয়। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অবাধ্য হওয়ার সুযোগ নেই, তিনি স্বীয় কথা, কাজ ও সমর্থন দ্বারা উম্মতকে করণীয় বাতলে দিয়েছেন।
দুই. আমরা পূর্বে বলেছি যে, নারী পুরোটাই সতর, তাই পর্দা করা তার জন্য জরুরি। ফিতনার আশঙ্কায় চোখ অবনত রাখার নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে। এতে সন্দেহ নেই যে, শরীরের সাথে শরীরের স্পর্শ প্রবৃত্তিকে জাগিয়ে তোলে, যা চোখের দৃষ্টির চেয়েও অধিক ক্ষতিকর। এ বিষয়গুলো কম-বেশি  সবাই জানে।
তিন. তাকওয়ার অনুপস্থিতি, আমানতদারী না থাকা ও সন্দেহপূর্ণ স্থান পরিহার না করার দরুন পর-নারীর শরীরের স্পর্শই এক প্রকার ভোগ। আমাদের কানে একাধিকবার এসেছে যে, কতক পুরুষ স্বীয় স্ত্রীর বোনের মুখের উপর মুখ রেখে চুমু খায়, যা তাদের নিকট সালামের চুমু হিসেবে খ্যাত। তারা বলে: সালাম করেছে অর্থাৎ চুমু খেয়েছে। সত্যি কথা, যাতে কোনো সন্দেহ নেই, সকল প্রকার ফিতনা, সন্দেহ ও তার উপকরণের পথ বন্ধ করা জরুরি, যার অন্যতম হচ্ছে নারীর শরীরের কোনো অংশকে পুরুষের স্পর্শ করা। হারামের পথ বন্ধ করা ওয়াজিব...”। সমাপ্ত।

সর্বশেষ:
হে মুমিন পুরুষ ও মুমিন নারী, তোমাদেরকে আল্লাহর উপদেশ স্মরণ করিয়ে দিচ্ছি, তিনি বলেন:
﴿قُل لِّلۡمُؤۡمِنِينَ يَغُضُّواْ مِنۡ أَبۡصَٰرِهِمۡ وَيَحۡفَظُواْ فُرُوجَهُمۡۚ ذَٰلِكَ أَزۡكَىٰ لَهُمۡۚ إِنَّ ٱللَّهَ خَبِيرُۢ بِمَا يَصۡنَعُونَ ٣٠ وَقُل لِّلۡمُؤۡمِنَٰتِ يَغۡضُضۡنَ مِنۡ أَبۡصَٰرِهِنَّ وَيَحۡفَظۡنَ فُرُوجَهُنَّ وَلَا يُبۡدِينَ زِينَتَهُنَّ إِلَّا مَا ظَهَرَ مِنۡهَاۖ وَلۡيَضۡرِبۡنَ بِخُمُرِهِنَّ عَلَىٰ جُيُوبِهِنَّۖ وَلَا يُبۡدِينَ زِينَتَهُنَّ إِلَّا لِبُعُولَتِهِنَّ أَوۡ ءَابَآئِهِنَّ أَوۡ ءَابَآءِ بُعُولَتِهِنَّ أَوۡ أَبۡنَآئِهِنَّ أَوۡ أَبۡنَآءِ بُعُولَتِهِنَّ أَوۡ إِخۡوَٰنِهِنَّ أَوۡ بَنِيٓ إِخۡوَٰنِهِنَّ أَوۡ بَنِيٓ أَخَوَٰتِهِنَّ أَوۡ نِسَآئِهِنَّ أَوۡ مَا مَلَكَتۡ أَيۡمَٰنُهُنَّ أَوِ ٱلتَّٰبِعِينَ غَيۡرِ أُوْلِي ٱلۡإِرۡبَةِ مِنَ ٱلرِّجَالِ أَوِ ٱلطِّفۡلِ ٱلَّذِينَ لَمۡ يَظۡهَرُواْ عَلَىٰ عَوۡرَٰتِ ٱلنِّسَآءِۖ وَلَا يَضۡرِبۡنَ بِأَرۡجُلِهِنَّ لِيُعۡلَمَ مَا يُخۡفِينَ مِن زِينَتِهِنَّۚ وَتُوبُوٓاْ إِلَى ٱللَّهِ جَمِيعًا أَيُّهَ ٱلۡمُؤۡمِنُونَ لَعَلَّكُمۡ تُفۡلِحُونَ ٣١﴾ [النور: ٣٠،  ٣١]  
“(হে নবী আপনি) মুমিন পুরুষদেরকে বলে দিন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে সংযত রাখে এবং তাদের লজ্জাস্থানের হিফাযত করে। এটিই তাদের জন্য অধিক পবিত্র। নিশ্চয় তারা যা করে সে সম্পর্কে আল্লাহ সম্যক অবহিত। আর মুমিন নারীদেরকে বলে দিন, যেন তারা তাদের দৃষ্টিকে সংযত রাখে এবং তাদের লজ্জাস্থানের হিফাযত করে। আর যা সাধারণত প্রকাশ পায় তা ছাড়া তাদের সৌন্দর্য তারা প্রকাশ করবে না। তারা যেন তাদের ওড়না দিয়ে বক্ষদেশকে আবৃত করে রাখে। আর তারা যেন তাদের স্বামী, পিতা, শ্বশুর, নিজদের ছেলে, স্বামীর ছেলে, ভাই, ভাই এর ছেলে, বোনের ছেলে, আপন নারীগণ, তাদের ডান হাত যার মালিক হয়েছে, অধীনস্থ যৌনকামনা মুক্ত পুরুষ অথবা নারীদের গোপান অঙ্গ সম্পর্কে অজ্ঞ বালক ছাড়া কারো কাছে নিজদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে। আর তারা যেন নিজদের গোপন সৌন্দর্য প্রকাশ করার জন্য সজোরে পদচারণা না করে। হে মুমিনগণ, তোমরা সকলেই আল্লাহর নিকট তাওবা কর, যাতে তোমরা সফলকাম হতে পার”। [সূরা আন-নূর, আয়াত: ৩০-৩১]

সমাপ্ত