স্বর্ণ ক্রয়-বিক্রয় সংক্রান্ত বিবিধ প্রশ্ন-উত্তর

স্বর্ণ ও রৌপ্য এমন ছয়টি বস্তুর অন্তর্ভুক্ত যাতে সুদের বিধান সরাসরি জড়িত। তাই শরী‘আত তা বিক্রির সময় কিছু নিয়ম-নীতি নির্ধারণ করে দিয়েছে; যার প্রতি গুরুত্ব দেওয়া একান্ত কর্তব্য। এ ছোট্ট গ্রন্থটিতে শাইখ মুহাম্মাদ ইবন সালেহ উসাইমীন রাহিমাহুল্লাহ স্বর্ণ ও রৌপ্যের বিক্রয় সংক্রান্ত বিবিধ প্রশ্নের উত্তর প্রদান করেছেন।

اسم الكتاب: مفهوم السيادة العليا في الإسلام


تأليف: محمد عبد القادر


نبذة مختصرة: كتاب باللغة البنغالية يبين أن السيادة العليا في الإسلام لله عز وجل، وهو الرب، والمالك، والحاكم، سيادته سبحانه وتعالى لا تقبل التجزئة ولا التفرقة، كل ما سوى الله تحت ربوبيته وقهره، ملكه سبحانه عام على الجميع ونافذ بلا استثناء، وهو من توحيد الربوبية، فمن أعطى بعض أجزاء التوحيد لغير الله فقد أشرك في الله شركاً أكبر.وفى هذا الكتاب يتناول الأدلة والبراهين على هذه السيادة العليا وأثبتت أنها حق الله سبحانه وحده، ليس للشعب ولا للحاكم ولا لمجالس الشورى التدخل في هذه السيادة.

স্বর্ণ ক্রয়-বিক্রয় সংক্রান্ত বিবিধ প্রশ্ন-উত্তর
[ বাংলা – Bengali – بنغالي ]

শাইখ মুহাম্মদ ইবন সালেহ আল-‘উসাইমীন


অনুবাদ : মোঃ আমিনুল ইসলাম

সম্পাদনা : ড. আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া



 

 

2014 - 1435
 
 
﴿ مجموعة أسئلة في بيع وشراء الذهب﴾
« باللغة البنغالية »

الشيخ محمد بن صالح العثيمين


ترجمة: محمد أمين الإسلام

مراجعة: د/ أبو بكر محمد زكريا



2014 - 1435
 

 
 স্বর্ণ ক্রয়-বিক্রয় সংক্রান্ত বিবিধ প্রশ্ন-উত্তর
নিশ্চয়ই সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য; আমরা তাঁর প্রশংসা করি, তাঁর নিকট সাহায্য প্রার্থনা করি এবং তাঁর নিকট তাওবা করি; আর আমাদের নফসের জন্য ক্ষতিকর এমন সকল খারাপি এবং আমাদের সকল প্রকার মন্দ আমল থেকে আল্লাহর নিকট আশ্রয় চাই। আর আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই, তিনি একক, তাঁর কোন শরীক নেই এবং আমি আরও সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর বান্দা ও রাসূল।

অতঃপর
আল্লাহ তা‘আলা তাঁর বান্দাদের জন্য লেনদেনের ব্যাপারে ন্যায় ও ইনসাফ ভিত্তিক সুস্পষ্ট পরিপূর্ণ নিয়ম-পদ্ধতি বিধিবদ্ধ করে দিয়েছেন, অন্য কোন ব্যবস্থা বা পদ্ধতিই তার সমকক্ষ হবে না; আর লেনদেনের ক্ষেত্রে যদি তা সুদের সাথে সম্পৃক্ত হয়, তাহলে তা হবে যুলুম এবং ন্যায় ও সঠিক পথ থেকে দূরে সরে যাওয়ার অন্তর্ভুক্ত; যে সুদ থেকে আল্লাহ তা‘আলা তাঁর কিতাবের মধ্যে এবং তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের ভাষায় সতর্ক করে দিয়েছেন; আর সকল মুসলিম তা হারাম হওয়ার ব্যাপারে ঐক্যবদ্ধ হয়েছেন।

আল্লাহ তা‘আলা তাঁর যেই কিতাবটি মানবজাতির প্রতি অবতীর্ণ করেছেন যাতে তারা তাকে তাদের মধ্যকার বিরোধ মীমাংসার ব্যাপারে ফায়সালাকারীরূপে গ্রহণ করে, সেই কিতাবটির মধ্যে বলেছেন:
﴿ يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ ٱتَّقُواْ ٱللَّهَ وَذَرُواْ مَا بَقِيَ مِنَ ٱلرِّبَوٰٓاْ إِن كُنتُم مُّؤۡمِنِينَ ٢٧٨ فَإِن لَّمۡ تَفۡعَلُواْ فَأۡذَنُواْ بِحَرۡبٖ مِّنَ ٱللَّهِ وَرَسُولِهِۦۖ وَإِن تُبۡتُمۡ فَلَكُمۡ رُءُوسُ أَمۡوَٰلِكُمۡ لَا تَظۡلِمُونَ وَلَا تُظۡلَمُونَ ٢٧٩ ﴾ [البقرة: ٢٧٨،  ٢٧٩]                                “হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহর তাকওয়া অবলম্বন কর এবং সুদের যা বকেয়া আছে তা ছেড়ে দাও যদি তোমরা মুমিন হও। অতঃপর যদি তোমরা না কর, তবে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের পক্ষ থেকে যুদ্ধের ঘোষণা নাও। আর যদি তোমরা তাওবা কর, তবে তোমাদের মূলধন তোমাদেরই; তোমরা যুলুম করবে না এবং তোমাদের উপরও যুলুম করা হবে না।”  তিনি আরও বলেন:
﴿ يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ لَا تَأۡكُلُواْ ٱلرِّبَوٰٓاْ أَضۡعَٰفٗا مُّضَٰعَفَةٗۖ وَٱتَّقُواْ ٱللَّهَ لَعَلَّكُمۡ تُفۡلِحُونَ ١٣٠ وَٱتَّقُواْ ٱلنَّارَ ٱلَّتِيٓ أُعِدَّتۡ لِلۡكَٰفِرِينَ ١٣١ وَأَطِيعُواْ ٱللَّهَ وَٱلرَّسُولَ لَعَلَّكُمۡ تُرۡحَمُونَ ١٣٢ ﴾ [ال عمران: ١٣٠،  ١٣٢]                                                   
“হে মুমিনগণ! তোমরা চক্রবৃদ্ধিহারে সুদ খেয়ো না এবং আল্লাহর তাকওয়া অবলম্বন কর, যাতে তোমরা সফলকাম হতে পার। আর তোমরা সে আগুন থেকে বেঁচে থাক, যা কাফেরদের জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে। আর তোমরা আল্লাহর ও রাসূলের আনুগত্য কর, যাতে তোমরা কৃপা লাভ করতে পার।”  আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন:
﴿ ٱلَّذِينَ يَأۡكُلُونَ ٱلرِّبَوٰاْ لَا يَقُومُونَ إِلَّا كَمَا يَقُومُ ٱلَّذِي يَتَخَبَّطُهُ ٱلشَّيۡطَٰنُ مِنَ ٱلۡمَسِّۚ ذَٰلِكَ بِأَنَّهُمۡ قَالُوٓاْ إِنَّمَا ٱلۡبَيۡعُ مِثۡلُ ٱلرِّبَوٰاْۗ وَأَحَلَّ ٱللَّهُ ٱلۡبَيۡعَ وَحَرَّمَ ٱلرِّبَوٰاْۚ فَمَن جَآءَهُۥ مَوۡعِظَةٞ مِّن رَّبِّهِۦ فَٱنتَهَىٰ فَلَهُۥ مَا سَلَفَ وَأَمۡرُهُۥٓ إِلَى ٱللَّهِۖ وَمَنۡ عَادَ فَأُوْلَٰٓئِكَ أَصۡحَٰبُ ٱلنَّارِۖ هُمۡ فِيهَا خَٰلِدُونَ ٢٧٥ يَمۡحَقُ ٱللَّهُ ٱلرِّبَوٰاْ وَيُرۡبِي ٱلصَّدَقَٰتِۗ وَٱللَّهُ لَا يُحِبُّ كُلَّ كَفَّارٍ أَثِيمٍ ٢٧٦ ﴾ [البقرة: ٢٧٥،  ٢٧٦]                                                                                                                                                 
“যারা সুদ খায় তারা তার ন্যায় দাঁড়াবে, যাকে শয়তান স্পর্শ দ্বারা পাগল করে। এটা এ জন্য যে, তারা বলে, ‘ক্রয়-বিক্রয় তো সূদেরই মত’। অথচ আল্লাহ ক্রয়-বিক্রয়কে হালাল ও সুদকে হারাম করেছেন। অতএব, যার নিকট তার রব-এর পক্ষ হতে উপদেশ আসার পর সে বিরত হল, তাহলে অতীতে যা হয়েছে তা তারই; এবং তার ব্যাপার আল্লাহর ইখতিয়ারে। আর যারা পুনরায় আরম্ভ করবে তারাই আগুনের অধিবাসী, সেখানে তারা স্থায়ী হবে। আল্লাহ সুদকে নিশ্চিহ্ন করেন এবং দানকে বর্ধিত করেন। আর আল্লাহ অধিক কুফরকারী কোন পাপী ব্যক্তিকে ভালবাসেন না।” 
আর সহীহ মুসলিমের মধ্যে হাদিস বর্ণিত আছে, জাবির রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন:
« لَعَنَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم آكِلَ الرِّبَا , وَمُوكِلَهُ , وَكَاتِبَهُ , وَشَاهِدَيْهِ , وَقَالَ : هُمْ سَوَاءٌ » . ( رواه مسلم ) .
“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম সুদ গ্রহিতা, সুদ দাতা, সুদের লেখক এবং সুদের সাক্ষীদ্বয়ের উপর অভিশাপ দিয়েছেন এবং তিনি বলেছেন: তারা সকলেই সমান (অপরাধী)।”  আর ‘লানত’ (অভিশাপ) মানে: আল্লাহর রহমত থেকে বিতাড়িত করা ও দূরে সরিয়ে রাখা; আল্লাহ তা‘আলা জিন ও মানুষ সৃষ্টি করেছেন এবং তাদের মধ্যে বিবেক-বুদ্ধি ও বোধশক্তি দিয়েছেন; আর তিনি তাদের মাঝে পাঠিয়েছেন রাসূলগণকে এবং তাদের মধ্যে ছড়িয়ে দিয়েছেন ভয়-ভীতি, যাতে তারা তাঁর দাসত্ব করতে পারে এবং তাদের প্রবৃত্তির দাবিকে উপেক্ষা করে তাঁর ও তাঁর রাসূলের আদেশ-নির্দেশকে প্রাধান্য দিয়ে নিজেদেরকে তাঁর আনুগত্যের অধীন করে নেয়; কারণ, এটাই হল আল্লাহ ‘ইবাদত তথা দাসত্বের বাস্তব চিত্র এবং আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলার প্রতি ঈমানের দাবি; যেমনটি আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন:
﴿ وَمَا كَانَ لِمُؤۡمِنٖ وَلَا مُؤۡمِنَةٍ إِذَا قَضَى ٱللَّهُ وَرَسُولُهُۥٓ أَمۡرًا أَن يَكُونَ لَهُمُ ٱلۡخِيَرَةُ مِنۡ أَمۡرِهِمۡۗ وَمَن يَعۡصِ ٱللَّهَ وَرَسُولَهُۥ فَقَدۡ ضَلَّ ضَلَٰلٗا مُّبِينٗا ٣٦ ﴾ [الاحزاب: ٣٦]                                                                                          
“আর আল্লাহ ও তাঁর রাসূল কোন বিষয়ের ফয়সালা দিলে কোন মুমিন পুরুষ কিংবা মুমিন নারীর জন্য সে বিষয়ে তাদের কোন (ভিন্ন সিদ্ধান্তের) ইখতিয়ার সংগত নয়। আর যে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে অমান্য করল, সে স্পষ্টভাবে পথভ্রষ্ট হলো।”
সুতরাং যে বিষয়ে আল্লাহ ও তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম সিদ্ধান্ত দিয়েছেন, সে বিষয়ে কোনো সত্যিকার মুমিনের জন্য মানা না মানার ইখতিয়ার বা স্বাধীনতা নেই এবং তার সামনে তা সন্তুষ্ট চিত্তে পরিপূর্ণভাবে মেনে নেয়া ছাড়া ভিন্ন কোন পথও নেই, চাই তা তার প্রবৃত্তির চাহিদা মাফিক হউক, অথবা তা তার প্রবৃত্তির বিরুদ্ধে যাক; এর ব্যতিক্রম হলে সে মুমিন নয়; যেমনটি আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন: 
﴿ فَلَا وَرَبِّكَ لَا يُؤۡمِنُونَ حَتَّىٰ يُحَكِّمُوكَ فِيمَا شَجَرَ بَيۡنَهُمۡ ثُمَّ لَا يَجِدُواْ فِيٓ أَنفُسِهِمۡ حَرَجٗا مِّمَّا قَضَيۡتَ وَيُسَلِّمُواْ تَسۡلِيمٗا ٦٥ ﴾ [النساء: ٦٥]                                                                                                                           
“কিন্তু না, আপনার রবের শপথ! তারা মুমিন হবে না যতক্ষণ পর্যন্ত তারা নিজেদের বিবাদ-বিসম্বাদের বিচার ভার আপনার উপর অর্পণ না করে; অতঃপর আপনার মীমাংসা সম্পর্কে তাদের মনে কোন দ্বিধা না থাকে এবং সর্বান্তকরণে তা মেনে নেয়।”
যখন এ বিষয়টি পরিষ্কার হয়ে গেল, তখন জেনে রাখুন যে, আল্লাহ তা‘আলার নির্দেশসমূহ দুই ভাগে বিভক্ত:
এক প্রকার নির্দেশ, আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলার সাথে সম্পর্ক ও আচার-আচরণ সংশ্লিষ্ট, যেমন: পবিত্রতা অর্জন করা, সালাত, সাওম ও হাজ্জ; আর এগুলোর মাধ্যমে আল্লাহ তা‘আলার ‘ইবাদত হওয়ার ব্যাপারে কেউ সন্দেহ প্রকাশ করে না; আর অপর প্রকার নির্দেশটি সৃষ্টির সাথে সম্পর্ক ও আচার-আচরণ সংশ্লিষ্ট; আর তা হল তাদের মধ্যকার প্রচলিত ক্রয়, বিক্রয়, ইজারা, বন্ধক ইত্যাদি ধরনের লেনদেনসমূহ। আর যেমনিভাবে প্রথম প্রকারের ক্ষেত্রে আল্লাহ তা‘আলার নির্দেশসমূহ বাস্তবায়ন করা এবং তাঁর শরী‘য়তকে যথাযথরূপে গ্রহণ করা প্রত্যেকের জন্য একটি আবশ্যকীয় সর্বজনবিদিত বিষয়; ঠিক অনুরূপভাবে দ্বিতীয় প্রকারের ক্ষেত্রেও তাঁর নির্দেশসমূহ বাস্তবায়ন করা এবং তাঁর শরী‘য়তকে যথাযথরূপে গ্রহণ করা একটি আবশ্যকীয় (ফরয) বিষয়; কারণ, প্রত্যেকটিই আল্লাহ তা‘আলার বান্দাগণের প্রতি তাঁর হুকুম বা নির্দেশ; সুতরাং এ ক্ষেত্রে এবং ঐ ক্ষেত্রে— সকল ক্ষেত্রেই আল্লাহ তা‘আলার হুকুম বাস্তবায়ন ও তাঁর শরী‘য়তকে যথাযথরূপে গ্রহণ করা প্রত্যেক মুমিনের উপর আবশ্যক।
অতঃপর...,
এগুলো হচ্ছে স্বর্ণ  বিক্রয়, ক্রয় ও ব্যবহারের বিষয়ে আমাদের শাইখ মুহাম্মদ ইবন সালেহ আল-‘উসাইমীনের নিকট করা কিছু প্রশ্ন, তিনি এগুলোর জওয়াব দিয়েছেন আল্লাহ তা‘আলার নিকট এ প্রত্যাশা যে, যে ব্যক্তি তা পাঠ করে অথবা তা শ্রবণ করে, তিনি যেন তাকে উপকৃত করেন এবং যিনি তা লেখেন অথবা মুদ্রণ করেন অথবা প্রকাশ করেন অথবা তার সাথে সংশ্লিষ্ট কোন কাজ করেন, তিনি যেন তাকে বড় ধরনের পুরস্কার ও সাওয়াব দান করেন; আর তিনিই আমাদের জন্য যথেষ্ট এবং উত্তম অভিভাবক। 
* * *
প্রথম প্রশ্ন:
অনেক স্বর্ণের দোকানদার ব্যবহৃত (ভাঙ্গাচূরা) স্বর্ণ ক্রয়ের কারবার করে, অতঃপর তা নিয়ে স্বর্ণ ব্যবসায়ীর নিকটে যায় এবং সমাস সমান ওজনে তৈরি করা নতুন স্বর্ণের দ্বারা তা পরিবর্তন করে নেয়, আর সাথে তারা নতুন স্বর্ণের জন্য তৈরি বাবদ বাড়তি পারিশ্রমিক গ্রহণ করে— এমতাবস্থায় এর বিধান কী হবে?
উত্তর:
بسم الله الرحمن الرحيم و الحمد لله رب العالمين  و الصلاة و السلام على نبينا محمد  و على آله و أصحابه أجمعين .
(রহমান, রহীম আল্লাহর নামে; আর সকল প্রশংসা জগতসমূহের প্রতিপালক আল্লাহর জন্য; আর সালাত ও সালাম আমাদের নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি এবং তাঁর পরিবার-পরিজন ও সকল সাহাবীর প্রতি)।
নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাদিস বর্ণিত আছে যে, তিনি বলেছেন:
« الذَّهَبُ بِالذَّهَبِ وَالْفِضَّةُ بِالْفِضَّةِ وَالْبُرُّ بِالْبُرِّ وَالشَّعِيرُ بِالشَّعِيرِ وَالتَّمْرُ بِالتَّمْرِ وَالْمِلْحُ بِالْمِلْحِ مِثْلاً بِمِثْلٍ سَوَاءً بِسَوَاءٍ يَدًا بِيَدٍ » . ( رواه مسلم ) .
“স্বর্ণ স্বর্ণের বিনিময়ে, রৌপ্য রৌপ্যের বিনিময়ে, গম গমের বিনিময়ে, যব যবের বিনিময়ে, খেজুর খেজুরের বিনিময়ে এবং লবন লবনের বিনিময়ে লেনদেন সমান সমান ও নগদ নগদ হতে হবে।”  রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে আরও বর্ণিত আছে, তিনি বলেন:
« مَنْ زَادَ أَوِ اسْتَزَادَ فَقَدْ أَرْبَى » . ( رواه مسلم ) .
“যে ব্যক্তি তার অতিরিক্ত কিছু দিবে অথবা অতিরিক্ত কিছু গ্রহণ করবে, তবে তা সুদ হবে।”  নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও হাদিস বর্ণিত আছে যে, তাঁর নিকট উৎকৃষ্ট মানের খেজুর নিয়ে আসা হলে তিনি সেই ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করেন, তখন জবাবে সাহাবীগণ বলেন: “আমরা দুই সা‘ খেজুরের বিনিময়ে এ উৎকৃষ্ট মানের এক সা‘ এবং তিন সা‘য়ের বিনিময়ে দুই সা‘ খেজুর ক্রয় করে থাকি।” তখন নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ ধরেনের কেনাবেচাকে পরিহার করার নির্দেশ দিলেন এবং বললেন এ ধরনের ক্রয়-বিক্রয় নির্ভেজাল সুদ। অতঃপর তিনি তাঁদেরকে নির্দেশনা প্রদান করে বলেন, তাঁরা যেন নিম্ন মানের খেজুর বিক্রয় করে দেয়, তারপর সেই বিক্রয়লব্ধ দিরহাম দিয়ে উৎকৃষ্ট মানের খেজুর ক্রয় করে।”
এসব হাদিস থেকে আমরা এটা গ্রহণ করতে পারি যে, স্বর্ণের বিনিময়ে স্বর্ণ পরিবর্তনের পর যে কোনো একটির সাথে (গহনা বানানো বাবদ) অতিরিক্ত মজুরি ধার্য করার ব্যাপারে প্রশ্নকর্তা যা উল্লেখ করেছেন, তা একটি হারাম লেনদেন তথা অবৈধ এবং সুদের অন্তর্ভুক্ত, যা থেকে নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিষেধ করেছেন।
তাই এ ব্যাপারে সঠিক পদ্ধতি হল: কোনো প্রকার পূর্ব চুক্তি ব্যতীত ভিন্ন জাতের কোনো মুদ্রার মূল্যের বিনিময়ে ভাঙ্গাচুরা পুরাতন স্বর্ণ বিক্রয় করা এবং স্বর্ণের মালিক কর্তৃক মূল্য গ্রহণ করার পর নতুন জিনিস ক্রয় করা। আর সবচেয়ে উত্তম হল অন্য দোকানে গিয়ে নতুন জিনিস অনুসন্ধান করা; তারপর যদি তা না পাওয়া যায়, তাহলে যার নিকট সে স্বর্ণ বিক্রয় করেছিল তার নিকট ফিরে আসবে এবং দিরহাম তথা প্রচলিত মুদ্রার মাধ্যমে তা ক্রয় করবে; আর এ অবস্থায় যদি দিরহামের পরিমাণ বেশি হয়, তাহলে স্বর্ণের বিনিময়ে স্বর্ণের লেনদেন না হওয়ার কারণে তাতে কোনও প্রকার সমস্যা নেই; আর যদি দোকানদার নিজেই স্বর্ণকার হয়, তাহলে তার (বিক্রেতার) জন্য এ কথা বলার সুযোগ রয়েছে যে, তুমি এ স্বর্ণ গ্রহণ কর এবং তা দিয়ে আমার জন্য পছন্দসই অলংকার তৈরি করে দাও; আর যখন অলংকার তৈরির কাজ শেষ হবে, তখন আমি তোমাকে তার পারিশ্রমিক দিয়ে দেব; আর তাতেও কোনো প্রকার অসুবিধা নেই।   
* * *

দ্বিতীয় প্রশ্ন:
কোনো কোনো স্বর্ণের দোকানদার যারা তাদের নিকট থেকে ক্রয় করতে আগ্রহী এমন গ্রাহকের নিকট থেকে ব্যবহৃত স্বর্ণের বিনিমেয়ে তাদের নিকট রক্ষিত নতুন স্বর্ণের বদ-বদল করে থাকেন এবং তার উপর তৈরি বাবদ বাড়তি পারিশ্রমিক গ্রহণ করেন— এ ব্যাপারে আপনার মতামত কী? 
উত্তর:
আমার নিকট এ প্রশ্ন এবং তার পূর্বের প্রশ্নের মধ্যে আলাদা কোনো পার্থক্য আছে বলে মনে হয় না; সুতরাং উভয় প্রশ্নের ব্যাপারে একই হুকুম।
* * *
তৃতীয় প্রশ্ন:
কোনো কোনো স্বর্ণের দোকানদার বাকিতে স্বর্ণ ক্রয় করে এমন বিশ্বাসে যে, এটা বৈধ এবং তাদের যুক্তি হল— এটা ব্যবসার পণ্যসামগ্রীর অন্তর্ভুক্ত, অথচ এ ব্যাপারে তাদের বড় বড় ব্যবসায়ীদের সাথে যখন পেশ করা হলো যে, এ ধরনের কারবার বৈধ নয়; তখন তারা বলে যে, এ ধরনের লেনদেন বা কারবারের ব্যাপারে আলেমগণের জানা নেই।
উত্তর:
নিশ্চয় এটি অর্থাৎ দিরহাম তথা মুদ্রার বিনিময়ে বাকিতে স্বর্ণ ক্রয়-বিক্রয় করা সর্বসম্মতিক্রমে হারাম; কারণ, তা ‘রিবায়ে নাসিয়া’ বা বিলম্বজনিত সুদ; আর ‘উবাদা ইবন সামিত রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু কর্তৃক বর্ণিত হাদিসের মধ্যে নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: 
« الذَّهَبُ بِالذَّهَبِ , وَالْفِضَّةُ بِالْفِضَّةِ , وَالْبُرُّ بِالْبُرِّ , وَالشَّعِيرُ بِالشَّعِيرِ , وَالتَّمْرُ بِالتَّمْرِ , وَالْمِلْحُ بِالْمِلْحِ مِثْلاً بِمِثْلٍ سَوَاءً بِسَوَاءٍ يَدًا بِيَدٍ , فَإِذَا اخْتَلَفَتْ هَذِهِ الأَصْنَافُ فَبِيعُوا كَيْفَ شِئْتُمْ إِذَا كَانَ يَدًا بِيَدٍ  » . ( رواه مسلم ) .
“স্বর্ণ স্বর্ণের বিনিময়ে, রৌপ্য রৌপ্যের বিনিময়ে, গম গমের বিনিময়ে, যব যবের বিনিময়ে, খেজুর খেজুরের বিনিময়ে এবং লবন লবনের বিনিময়ে লেনদেন সমান সমান ও নগদ নগদ হতে হবে; তবে এ জাতীয় দ্রব্যগুলোর বিনিময় যখন একটা অপরটার সাথে হবে (অর্থাৎ পণ্য যখন এক জাতীয় না হয়ে ভিন্ন রকমের হবে), তখন তোমরা যেভাবে খুশি বিক্রয় করতে পারবে, যদি তা হাতে হাতে তথা নগদ নগদ হয়।”  এভাবে নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম নির্দেশ দিয়েছেন।
‘আলেমগণ এ ব্যাপারে জানে না’— তার এ উক্তিটি আলেমগণের উপর এক প্রকার অপবাদ ছাড়া আর কিছুই নয়; কারণ, ঐ ব্যক্তি তো নিজেই আলেমদেরকে ‘আহলুল ‘ইলম’ ( أهل العلم ) তথা ‘বিজ্ঞজন’ বলে আখ্যায়িত করেছে; আর ‘ইলম ( العلم ) তথা জ্ঞান শব্দটি ‘জাহল’ ( الجهل ) তথা মূর্খতা শব্দের বিপরীত; সুতরাং তারা যদি না জানেন, তাহলে তাদেরকে ‘আহলুল ‘ইলম’ ( أهل العلم ) বলে নামকরণ করাটা শুদ্ধ হয় না; অথচ তাঁরা আল্লাহ তা‘আলা কর্তৃক তাঁর রাসূলের উপর নাযিল করা বিধানের সীমা-পরিসীমা সম্পর্কে জ্ঞান রাখেন এবং তারা জানেন ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে এ ধরনের কারবার একটি নিষিদ্ধ কারবার, যা হারাম হওয়ার ব্যাপারে শরী‘য়তের স্পষ্ট বক্তব্য রয়েছে।
* * *
চতুর্থ প্রশ্ন:
কোন কোন স্বর্ণের দোকানদার ব্যবহৃত স্বর্ণের বিক্রেতার উপর তার নিকট থেকে নতুন স্বর্ণ ক্রয় করার জন্য শর্তারোপ করে— এ ক্ষেত্রে হুকুম কী?
উত্তর:
এই ধরনের শর্তারোপ করাও বৈধ নয়; কারণ, এটা কম-বেশি করে স্বর্ণের বিনিময়ে স্বর্ণের ক্রয়-বিক্রয় করার একটা হীন কৌশল; আর এ ধরনের অপকৌশল ইসলামী শরী‘য়তে নিষিদ্ধ; কেননা, তা এক ধরনের প্রতারণা এবং আল্লাহ তা‘আলার বিধানাবলীর সাথে খেল-তামাশা করা।
* * *
পঞ্চম প্রশ্ন:
কোনো স্বর্ণকার অপর কোনো স্বর্ণকারের কাছ থেকে বিক্রির জন্য স্বর্ণ নিয়ে আসলে সেখানে কি তাকে শব্দ উচ্চারণ করে ওকীল বানাতে হবে? নাকি তাদের মধ্যে প্রচলিত নিয়মে এটা থাকাই যথেষ্ট যে লোকটি তার কাছ থেকে যা গ্রহণ করেছে তা জানা দরেই বিক্রয় করবে? 
উত্তর:
ওকীল বা প্রতিনিধি বানানো এমন একটি চুক্তি যা বুঝা যায় এমন প্রত্যেক কথা ও কাজ দ্বারা সংঘটিত হয়। সুতরাং যখন দোকানদারগণের মাঝে স্বাভাবিকভাবে প্রচলন থাকে যে, যখন তাদের কারও নিকট ক্রেতা গিয়ে দাঁড়ায় এবং তার নিকট কাঙ্খিত পণ্যটি পাওয়া না যায়, তখন সে তার পাশের দোকানে যায় এবং তার নিকট থেকে পণ্যটি এ শর্তে গ্রহণ করে যে, সে তার পণ্যটি বিক্রয় করে দিবে, আর এমতাবস্থায় গৃহীত পণ্যটির মূল্য নির্ধারণ করা থাকবে এবং সে পণ্যের মালিকের পক্ষে তা উভয়ের মধ্যকার নির্ধারণ করা মূল্যে বিক্রয় করে দিল; সুতরাং এ ধরনের চুক্তিতে কোনো অসুবিধা নেই। কারণ, ওকীল বা প্রতিনিধি বানানোর ব্যাপারে আলেমগণ বলেন যে, এটি এমন একটি চুক্তি যা বুঝা যায় এমন প্রত্যেক কথা ও কাজ দ্বারা সংঘটিত হয়।
* * *
ষষ্ঠ প্রশ্ন:
সেই ক্ষেত্রে কী বিধান হবে— যখন কোনো ক্রেতা এসে (কোনো দোকান থেকে) স্বর্ণের পণ্যদ্রব্য ক্রয় করে, অতঃপর শর্ত করে যে, যদি তা ভালো না হয়, তাহলে সে পরিবর্তন করার জন্য অথবা তার মূল্য ফেরত নেওয়ার জন্য তা দোকানে ফিরিয়ে দিবে? আর এ ধরনের পরিস্থিতিতে শরী‘য়তসম্মত পদ্ধতি কী হবে— যেখানে কোনো কোনো ব্যক্তি শহর থেকে অনেক দূরে অবস্থান করার কারণে তার পক্ষে ঐ দিনে অথবা দ্বিতীয় দিনে দোকানে পুনরায় ফিরে আসা অসম্ভব হয়ে উঠে? 
উত্তর:
এইরূপ পরিস্থিতিতে তার জন্য সবচেয়ে উত্তম ও সুন্দর পদ্ধতি হল চুক্তি সম্পন্ন করার আগেই স্বর্ণের পণ্যদ্রব্য নিয়ে তার পরিবারের নিকট চলে যাওয়া; অতঃপর যদি তা পছন্দ হয়, তাহলে সে দোকানদারের নিকট ফিরে আসবে এবং তার সাথে নতুন করে ক্রয়-বিক্রয় সম্পন্ন করবে, আর এটাই হল সবচেয়ে উত্তম।
তবে যখন সে দোকানদারের নিকট থেকে তা ক্রয় করে এবং চুক্তি সম্পন্ন করে, তারপর সে তার জন্য ‘খিয়ার’ (পছন্দের স্বাধীনতা)-এর শর্ত করল, যদি তা তার পরিবারের পছন্দসই হয়, তাহলে তো কোনো সমস্যাই নেই; আর যদি পছন্দ না হয়, তাহলে তা ফেরত দিবে— তখন এ ব্যাপারে আলেমদের মাঝে মতবিরোধ দেখা যায়; তাঁদের কেউ কেউ এটাকে বৈধ মনে করেন এবং তার পক্ষে যুক্তি দিয়ে বলেন, ‘নিশ্চয় মুসলিমগণ তাদের শর্ত অনুযায়ী কাজ-কারবার করবে’। আবার তাঁদের কেউ কেউ এটাকে অবৈধ মনে করেন এবং তার পক্ষে যুক্তি দিয়ে বলেন, এটা এমন শর্ত যা হারামকে হালাল করে দেয়, আর তা হলো, চুক্তি সম্পন্ন হওয়ার পূর্বেই অনিবার্যভাবে (ক্রেতা-বিক্রেতার মধ্যে) পৃথকীকরণ করা। প্রথম মতটি শাইখুল ইসলাম ইবনু তাইমিয়্যার মত বলে সাধারণভাবে প্রতীয়মান হয়। পক্ষান্তরে দ্বিতীয় মতটি হাম্বলী মাযহাবের মত হিসেবে প্রসিদ্ধ। কারণ তাদের নিকট এমন প্রত্যেকটি চুক্তি, যার মধ্যে পারস্পরিক কবজাকরণ বা দখল নেয়ার শর্ত রয়েছে তাতে ‘খিয়ার’ (পছন্দের স্বাধীনতা)-এর শর্ত করা ঠিক নয়।
আর এর উপর ভিত্তি করে বলা যায় যে, যে ব্যক্তি নিজেকে নিরাপদ ও দায়মুক্ত রাখতে চাইবে সে যেন প্রথম পদ্ধতিটি অনুসরণ করে— অর্থাৎ সে তা গ্রহণ করবে এবং চুক্তি সম্পন্ন হওয়ার পূর্বেই তার ব্যাপারে পরামর্শ করবে।
* ‘চুক্তি সম্পন্ন হওয়ার পূর্বে’ এর অর্থ কী?
অর্থাৎ সে তাদেরকে বন্ধক হিসেবে কিছু মুদ্রা প্রদান করবে অথবা তার পক্ষ থেকে এমন কোনো পণ্য হস্তান্তর করবে, যাতে তারা এর মাধ্যমে তাকে (সম্পদ ফেরৎপাওয়ার ব্যাপারে) বিশ্বাস করতে পারে,  এ অর্থে নয় যে, সে যা প্রদান করছে তা ঐ স্বর্ণের মূল্য, যা সে ক্রয় করতে যাচ্ছে।
* * *
সপ্তম প্রশ্ন:
সেই ক্ষেত্রে কী বিধান হবে— কোনো কোনো স্বর্ণের দোকানদার ব্যবহার করা সোনা চকচকে থাকলে তা ক্রয় করার পর নতুন সোনার মূল্যে বিক্রি করার জন্য পেশ করে। এ জাতীয় বিক্রয় বৈধ হবে কি; নাকি ক্রেতাকে তা ব্যবহৃত বলে জানিয়ে দেওয়াটা জরুরি হবে; কিংবা তাকে অবহিত করার প্রয়োজন হবে না। কারণ ক্রেতাদের কেউ কেউ এ কথা জিজ্ঞাসা করে না যে, সেটা নতুন না পুরাতন?
উত্তর:
এ অবস্থায় বিক্রেতার জন্য আবশ্যক হলো, কল্যাণকামী হওয়া এবং নিজের জন্য যা ভাল মনে করে তার ভাইয়ের জন্যও তাই ভাল মনে করা। আর এটা সর্বজন বিদিত যে, যদি কোনো ব্যক্তি তোমার নিকট এমন কোনো জিনিস বিক্রি করল, যা হালকাভাবে ব্যবহার করা হয়েছে এবং তাতে ব্যবহারের কোন চিহ্ন পড়েনি, আর সে তোমার কাছে তা নতুন বলে বিক্রি করেছে, তাহলে তুমি নিঃসন্দেহে এটাকে তার পক্ষ থেকে প্রতারণা ও ধোকাবাজি বলে গণ্য করবে; সুতরাং তুমি যখন পছন্দ কর না যে, জনগণ তোমার সাথে এ ধরনের আচরণ করুক, তখন কিভাবে তোমার জন্য মানানসই হবে যে, তুমি অন্যের সাথে এ ধরনের (প্রতারণামূলক) আচরণ করবে; আর এর উপর ভিত্তি করেই কোনো মানুষের জন্য এ ধরনের কাজ করা ততক্ষণ পর্যন্ত বৈধ হবে না, যতক্ষণ না সে ক্রেতাকে বিষয়টি স্পষ্ট না করবে এবং তাকে বলে দিবে যে, এ জিনিসটি হালকা ব্যবহার করা হয়েছে অথবা এ ধরনের কিছু।  
* * *
অষ্টম প্রশ্ন:
কোন ব্যক্তি স্বর্ণের কারখানায় গহনা তৈরির জন্য তার স্বর্ণ হস্তান্তর করে, তারপর কখনও কখনও কারখানায় স্বর্ণ গলানোর সময় তার স্বর্ণ অন্যের স্বর্ণের সাথে মিশে যায়, কিন্তু কারখানা থেকে মালিকপক্ষ তার নিকট তা (গহনা) হস্তান্তর করার সময় তার দেয়া স্বর্ণের সম ওজনেই হস্তান্তর করে— এমতাবস্থায় তার বিধান কী হবে? 
উত্তর:
কারখানার কারিগরের উপর আবশ্যকীয় কর্তব্য হল মানুষের সম্পদসমূহের ক্ষেত্রে একজনের সম্পদ অপরজনের সম্পদের সাথে মিশ্রিত না করা, যখন স্বর্ণের মান বিভিন্ন রকম হয়, তখন প্রত্যেকটিকে পৃথক পৃথক করে রাখা। আর যখন যখন স্বর্ণের মান বিভিন্ন রকম না হয়ে একই মানের হয়, তখন এ ধরনের মিশ্রণে কোন সমস্যা নেই; কেননা, তাতে সে ক্ষতিগ্রস্ত হবে না।
প্রশ্ন: স্বর্ণ হস্তান্তর করার সময় গহনা তৈরির মজুরি দিয়ে দেওয়া কি জরুরি, নাকি আমরা চলমান প্রক্রিয়ায় পরেও তা আদায় করতে পারব?
উত্তর: মজুরি তখনই দিয়ে দেওয়া জরুরি নয়; কারণ, এ পারিশ্রমিক তো কাজের উপর নির্ভর করবে (স্বর্ণের সাথে নয়)। সুতরাং মজুরি যদি গহনা গ্রহণ করার সময় প্রদান করে, তাহলে তা ভালো, নতুবা পরবর্তীতে প্রদান করলেও তা শুদ্ধ হবে।  
* * *

নবম প্রশ্ন:
যখন কোন কোন স্বর্ণ ক্রয়কারী ব্যক্তি নতুন স্বর্ণের মূল্য সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করে, অতঃপর যখন তার মূল্য সম্পর্কে জানতে পারে, তখন দাঁড়িয়ে তার নিকটে থাকা ব্যবহৃত স্বর্ণ বের করে এবং তা বিক্রি করে দেয়; আর তাকে দিরহাম বা প্রচলিত মুদ্রায় তার মূল্য পরিশোধ করে দেয়ার সময় সে দাঁড়িয়ে যায় এবং নতুন সামগ্রী ক্রয় করে— এ ব্যাপারে আপনার অভিমত কী?
উত্তর:
এটা দোষনীয় নয়, যখন সেখানে পূর্ব থেকেই কোন প্রকার সমঝোতা ও বুঝাপড়া না থাকে; তবে ইমাম আহমদ র. এর মতে, এ ধরনের পরিস্থিতিতে সে চলে যাবে এবং অন্য জায়গায় অনুসন্ধান করবে, তারপর সেখান থেকে ক্রয় করবে; আর এটা যদি সহজ না হয়, তাহলে সে যার নিকট প্রথমে বিক্রয় করেছে, তার নিকট ফিরে আসবে এবং তার নিকট থেকে ক্রয় করবে, এইভাবে তার অপকৌশল গ্রহণ করার সন্দেহ থেকে বেঁচে থাকা হবে।
* * *
দশম প্রশ্ন:
কোনো ব্যক্তি দোকানদারের নিকট স্বর্ণ বিক্রি করল (কিন্তু অর্থ গ্রহণ করেনি), অতঃপর সে দোকানদারের নিকট থেকে অন্য স্বর্ণ ক্রয় করল প্রায় সেই পরিমাণ, যেই পরিমাণ সে তার কাছে বিক্রি করেছে। অতঃপর ক্রেতা ক্রয়কৃত স্বর্ণের মূল্য ঐ অর্থ থেকে পরিশোধ করল যা সে দোকানদারের নিকট বিক্রি করেছিল কিন্তু উক্ত মূল্য গ্রহণ না করে দোকানদারের কাছে রেখে দিয়েছিল। — এমতাবস্থায় তার বিধান কী হবে? 
উত্তর:
এই ধরনের ক্রয়-বিক্রয় জায়েয নয়; কেননা, যখন কেউ কোনো জিনিস এমন কোনো মূল্যে বিক্রি করে যে মূল্য ক্রেতা থেকে বিক্রেতা নিজের আয়ত্বে নিয়ে আসে নি, আর সে ঐ মূল্যের বিনিময়ে বিক্রেতার নিকট থেকে এমন কিছু ক্রয় করতে চাচ্ছে যা বাকিতে বিক্রয় করা বৈধ নয়, তখন ইসলামী আইনশাস্ত্রবিদগণের সুস্পষ্ট বক্তব্য হল— এমন করাটা হারাম; কারণ হতে পারে সে এভাবে মূল্য কবজা করার পূর্বেই অন্য কিছু ক্রয় করে সেটাকে অপকৌশল করে এমন জিনিস বিক্রি করতে চায় যা বাকীতে বিক্রয় করা জায়েয নয়। আর যখন তা একই শ্রেণীভুক্ত হবে, তখন তো অপকৌশলটি হবে (দু’ কারণে নিষিদ্ধ, তা হচ্ছে) ‘অতিরিক্ত গ্রহণ জনিত সুদ’ ( ربا الفضل )  এবং ‘বাকি তথা বিলম্ব জনিত সুদ’ ( ربا النسيئة )  ভিত্তিক।
* * *
একাদশ প্রশ্ন:
যে ব্যক্তি স্বর্ণ ক্রয় করল কিন্তু তার কিছু মূল্য বাকী রাখল এবং বলল: যখন সম্ভব হবে, তখন আমি তোমার মূল্য পরিশোধ করে দিব— এমতাবস্থায় তার বিধান কী হবে? 
উত্তর:
এই কাজ বৈধ নয়; আর যখন এ ধরনের কাজ করবে, তখন যেটুকুর বিনিময় গ্রহণ করা হয়েছে ততটুকুর ক্রয়-বিক্রয় শুদ্ধ হবে; আর যেটুকুর বিনিময় গ্রহণ করা হয়নি ততটুকুতে ক্রয়-বিক্রয় বাতিল বলে গণ্য হবে। কারণ, নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: 
« ... بِيعُوا كَيْفَ شِئْتُمْ إِذَا كَانَ يَدًا بِيَدٍ  » . ( رواه مسلم ) .
“ ... তোমরা যেভাবে খুশি বিক্রয় কর, যদি তা হাতে হাতে তথা নগদ নগদ হয়।”
* * *
দ্বাদশ প্রশ্ন:
সেই ক্ষেত্রে বিধান কী হবে— যে ব্যক্তি স্বর্ণ ক্রয় করল এবং তার উপরই ক্রয়-বিক্রয় শেষ করল, অতঃপর মূল্য পরিশোধ করল এবং মোট মূল্যের কিছু অংশ বাকি থাকল; ফলে সে কি বাকী মূল্য নিয়ে আসার জন্য যে কোনো জায়গায় (যেমন— গাড়ি কিংবা ব্যাংক থেকে নিয়ে আসার জন্য) যাওয়া জায়েয হবে? আর এ ক্ষেত্রে সে কি বাকি মূল্য নিয়ে আসার পরেই স্বর্ণ গ্রহণ করবে? এ ধরনের কাজ ঠিক হবে কিনা, নাকি বাকি মূল্য নিয়ে আসার পরে পুনরায় চুক্তি নবায়ন করা আবশ্যক হবে?   
উত্তর:
সবচেয়ে উত্তম হল বাকি মূল্য নিয়ে আসার পরে চুক্তি নবায়ন করা এবং এতে কোন ক্ষতি নেই, যা চুক্তি সম্পাদনের জন্য নির্ধারিত শব্দগুলোর পুনরাবৃত্তি ছাড়া আর কিছুই নয়; তবে দামের হেরফের হলে তারও খেয়াল রাখতে হবে। এমতাবস্থায় যদি পূর্বের মূল্যেই চুক্তি সম্পাদন করে তাতে কোনো দোষ নেই। আর যদি বাকি মূল্য নিয়ে আসা পর্যন্ত চুক্তির বিষয়টি বর্জন করে, তাহলে সেটি আরও উত্তম; কেননা, মূল্য হাযির করার পূর্বে চুক্তি সম্পাদনের কোনো যুক্তি নেই; (আর আল্লাহই হলেন সঠিক উত্তর দানের তাওফীক দানকারী)।
* * *
ত্রয়োদশ প্রশ্ন:
কোন কোন স্বর্ণের দোকানদার স্বর্ণের ব্যবসায়ীর নিকট যায় এবং তার নিকট থেকে কিলোগ্রাম বা অনুরূপ ওজনে নতুন স্বর্ণ গ্রহণ করে, আর এ স্বর্ণের সাথে মূল্যবান পাথরের মিশ্রণ থাকে, চাই সেই পাথর হউক আলমাস নামক দামী পাথর, অথবা যারাকুন বা অন্য কোন পাথর; আর ক্রেতা তাকে (দোকানদারকে) এ কিলোগ্রামের বিনিময়ে সমপরিমাণ ওজনে খাঁটি সোনা প্রদান করে যাতে কোনো প্রকার পাথর নেই; অতঃপর বিক্রেতা গহনা তৈরির পারিশ্রমিকের নামে (ক্রেতার নিকট থেকে) আরও অতিরিক্ত অর্থ গ্রহণ করে।
এভাবে বিক্রেতার নিকট দু’টি বাড়তি বস্তু হয়ে গেল; একটি হল পাথরের ওজনের বিপরীতে অতিরিক্ত স্বর্ণ; আর দ্বিতীয়টি হল গহনা তৈরির পারিশ্রমিক বাবত অতিরিক্ত অর্থ; কারণ, সে হল স্বর্ণ ব্যবসায়ী, স্বর্ণকার নয়।
অতএব, এ ধরনের কাজের বিধান কী হবে (আল্লাহ আপনাকে তাওফীক দিন)? 
উত্তর:
এ ধরনের কাজ হারাম; কেননা, তা সুদি কারবারের অন্তর্ভুক্ত; আর প্রশ্নকর্তার বক্তব্যের আলোকে তাতে দুই কারণে সুদ হয়। প্রথম কারণ: বাড়তি স্বর্ণ, যেহেতু এখানে মূল্যবান পাথর বা অনুরূপ কিছুর পরিবর্তে স্বর্ণের বিনিময় হয়েছে; আর তা ঐ হার বা নেকলেসের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ, যা ফুদালা ইবন ‘উবাইদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু কর্তৃক বর্ণিত হাদিসে আলোচনা করা হয়েছে, যেমন তিনি বলেন: 
« اشْتَرَيْتُ يَوْمَ خَيْبَرَ قِلاَدَةً بِاثْنَىْ عَشَرَ دِينَارًا فِيهَا ذَهَبٌ وَخَرَزٌ , فَفَصَّلْتُهَا فَوَجَدْتُ فِيهَا أَكْثَرَ مِنِ اثْنَىْ عَشَرَ دِينَارًا فَذَكَرْتُ ذَلِكَ لِلنَّبِىِّ صلى الله عليه وسلم , فَقَالَ : « لاَ تُبَاعُ حَتَّى تُفَصَّلَ » . ( رواه مسلم ) .
“খাইবার বিজয়ের দিন আমি বারো দীনার (স্বর্ণমুদ্রা) দিয়ে একটি হার ক্রয় করি, যাতে স্বর্ণ ও মুক্তা ছিল; অতঃপর আমি স্বর্ণ ও মুক্তা আলাদা করে দেখলাম যে, তাতে বারো দীনারের বেশি স্বর্ণ আছে; তখন আমি নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বিষয়টি জানালাম; তিনি বললেন: স্বর্ণ ও মুক্তা পৃথক না করে তা বিক্রয় করা যাবে না।”
আর দ্বিতীয় কারণ: আর দ্বিতীয় বাড়তি হল গহনা তৈরি করার পারিশ্রমিকের নামে বাড়তি কিছু গ্রহণ; কেননা, বিশুদ্ধ মতে- (বানানো গহনা ক্রয়ের সময়) পারিশ্রমিকের নামে বাড়তি কিছু গ্রহণ করা বৈধ নয়; কারণ, তৈরির বিষয়টি যদিও ব্যক্তি বিশেষের কাজ, কিন্তু তা সুদের প্রাসঙ্গিক বিষয়ে একটি অতিরিক্ত গুণ, যা আল্লাহ তা‘আলার সৃষ্টির বিশেষ বাড়তি গুণের সাথে তুলনীয়; আর নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিম্নমানের দুই সা‘ খেজুরের বিনিময়ে উৎকৃষ্ট মানের এক সা‘ খেজুর ক্রয় করতে নিষেধ করেছেন। 
আর মুসলিম ব্যক্তির উপর ওয়াজিব হল সুদের বিষয়ে সতর্ক হওয়া এবং তা থেকে দূরে থাকা; কেননা, সুদ মহাপাপসমূহের অন্যতম একটি।
* * *
চতুর্দশ প্রশ্ন:
ঐসব স্বর্ণের দোকানের মালিকদের অধীনে কাজ করার বিধান কী, যারা শরী‘য়ত পরিপন্থী পদ্ধতিতে লেনদেন করে, চাই তা সুদের ভিত্তিতে হউক, অথবা অবৈধ আপকৌশলের মাধ্যমে হউক, অথবা হউক তা প্রতারণার মাধ্যম, অথবা এর বাইরে শরী‘য়ত পরিপন্থী অন্য যে কোন প্রকারের লেনদেন হউক না কেন?
উত্তর:
ঐসব মালিকদের অধীনে কাজ করা হারাম, যারা সুদের ভিত্তিতে অথবা প্রতারণার মাধ্যম অথবা অনুরূপ যে কোনো প্রকার হারাম পন্থায় লেনদেন করে; কেননা, আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿ وَلَا تَعَاوَنُواْ عَلَى ٱلۡإِثۡمِ وَٱلۡعُدۡوَٰنِۚ ﴾ [المائ‍دة: ٢]
“আর তোমরা পাপকাজ ও সীমালংঘনে একে অন্যের সাহায্য করবে না।”  তাছাড়া আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন:
﴿ وَقَدۡ نَزَّلَ عَلَيۡكُمۡ فِي ٱلۡكِتَٰبِ أَنۡ إِذَا سَمِعۡتُمۡ ءَايَٰتِ ٱللَّهِ يُكۡفَرُ بِهَا وَيُسۡتَهۡزَأُ بِهَا فَلَا تَقۡعُدُواْ مَعَهُمۡ حَتَّىٰ يَخُوضُواْ فِي حَدِيثٍ غَيۡرِهِۦٓ إِنَّكُمۡ إِذٗا مِّثۡلُهُمۡۗ ﴾ [النساء: ١٤٠]                                                                                                     
“কিতাবে তোমাদের প্রতি তিনি তো নাযিল করেছেন যে, যখন তোমরা শুনবে আল্লাহর আয়াত প্রত্যাখ্যাত হচ্ছে এবং তা নিয়ে বিদ্রূপ করা হচ্ছে, তখন যে পর্যন্ত তারা অন্য প্রসংগে লিপ্ত না হবে তোমরা তাদের সাথে বসো না, নয়তো তোমরাও তাদের মত হবে।”
আর নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: 
« مَنْ رَأَى مِنْكُمْ مُنْكَرًا فَلْيُغَيِّرْهُ بِيَدِهِ , فَإِنْ لَمْ يَسْتَطِعْ فَبِلِسَانِهِ , فَإِنْ لَمْ يَسْتَطِعْ فَبِقَلْبِهِ » . ( رواه مسلم ) .
“তোমাদের কেউ যখন কোন খারাপ কাজ হতে দেখে, তখন সে যেন তা হাত দিয়ে (শক্তি প্রয়োগে) বন্ধ করে দেয়; যদি সে এ ক্ষমতা না রাখে, তবে যেন মুখের দ্বারা (জনমত গঠন করে) তা বন্ধ করে দেয়; আর যদি সে এ ক্ষমতাটুকুও না রাখে, তবে যেন সে অন্তরের দ্বারা (পরিকল্পিত উপায়ে) তা বন্ধ করার চেষ্টা করে বা এর প্রতি ঘৃণা পোষণ করে।”  আর কর্মচারী তাদের নিকটে থেকে তার হাত, মুখ ও অন্তর- কোনটা দ্বারাই তা বন্ধ করতে পারবে না; ফলে সে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের অবাধ্য বলে বিবেচিত হবে।
* * *
পঞ্চদশ প্রশ্ন:
স্বর্ণ ক্রয়-বিক্রয়ের ক্ষেত্রে চেকের মাধ্যমে লেনদেনের বিধান কী হবে, যখন চেকটি ক্রয়-বিক্রয়ের সময় সঠিক ও যথাপোযুক্ত হবে; যেহেতু কোনো কোনো স্বর্ণের মালিক নিজের জীবনের ব্যাপারে আশংকার কারণে ও তার থেকে তার দিরহাম চুরি হয়ে যাওয়ার ভয়ে চেকের মাধ্যমে লেনদেন করে?
উত্তর:
স্বর্ণ অথবা রৌপ্য ক্রয়-বিক্রয়ের ক্ষেত্রে চেকের মাধ্যমে লেনদেন করা বৈধ নয়; আর এটা এ জন্য যে, চেক গ্রহণের দ্বারা প্রকৃত অর্থে হস্তগত বা দখলকরণ হয় না, বরং তা শুধু একটি নির্ভরযোগ্য বিনিময়পত্র মাত্র; এর যুক্তি হল, যে ব্যক্তি চেক গ্রহণ করল তার নিকট থেকে যদি তা বিনষ্ট হয়ে যায়, তাহলে সে তার দাবি নিয়ে আবার ঐ ব্যক্তির নিকট ফিরে আসবে, যে তাকে তা দিয়েছে; আর অপরদিকে যদি তা হস্তগত বা দখল বলে গণ্য হত, তাহলে সে তার নিকট দাবি নিয়ে ফিরে আসত না।
এর বিবরণ হল, কোনো ব্যক্তি যদি দিরহামের বিনিময়ে স্বর্ণ ক্রয় করে এবং বিক্রেতাকে দিরহাম প্রদান করে, আর বিক্রেতা তা নিয়ে তার দোকানে চলে গেল, তারপর তার নিকট থেকে তা নষ্ট হয়ে গেল, তাহলে সে ক্রেতার নিকট তার দাবি নিয়ে ফিরে যেতে পারবে না; পক্ষান্তরে যদি সে ক্রেতার নিকট থেকে চেক গ্রহণ করে, তারপর ব্যাংক থেকে উত্তোলনের জন্য তা নিয়ে যায়, তারপর তার নিকট থেকে তা নষ্ট হয়ে যায়, তাহলে সে ক্রেতার নিকট তার স্বর্ণের মূল্যের দাবি নিয়ে ফিরে যেতে পারবে; আর এটাই হল প্রমাণ যে, চেক মানে হস্তগত বা দখল নয়; আর চেক যখন হস্তগত বা দখলকরণ বলে গণ্য হয় না, তখন ক্রয়-বিক্রয়ও শুদ্ধ হবে না; কেননা, নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্বর্ণ ও রৌপ্য নগদ মূল্যে বিক্রয় করার নির্দেশ দিয়েছেন।
তবে চেক যখন ব্যাংক কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে সত্যায়িত হয় এবং ব্যাংকের সাথে বিক্রেতার কথাবার্তা অনুষ্ঠিত হয়, আর বিক্রেতা ব্যাংক কর্তৃপক্ষকে বলে: আপনার নিকট আমার দিরহামগুলো আমানত হিসেবে রেখে দিন, তখন এ ক্ষেত্রে হয়ত সে সুযোগ (চেকের মাধ্যমে লেন-দেন করার অনুমতি) দেওয়া যেতে পারে। আর আল্লাহই সবচেয়ে বেশি জানে।
* * *
ষোড়শ প্রশ্ন:
যে স্বর্ণের মধ্যে কোন প্রতীক থাকে অথবা প্রজাপতি বা সাপের মাথা অথবা এ ধরনের কোন ছবি থাকে, সেই স্বর্ণ ক্রয়-বিক্রয়ের বিধান কী?
উত্তর:
প্রাণীর ছবিসহ তৈরি স্বর্ণ ও রৌপ্যের অলঙ্কার বিক্রয়, ক্রয় ও পরিধান করা হারাম এবং তা গ্রহণ করাও হারাম; আর এটা এ জন্য যে, মুসলিম ব্যক্তির উপর ওয়াজিব হল ছবি নিশ্চিহ্ন ও অপসারণ করা; যেমনটি সহীহ মুসলিমে বর্ণিত হাদিসের মধ্যে আছে, আবূল হাইয়্যাজ আল-আসাদী রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: 
« قَالَ لِى عَلِىُّ بْنُ أَبِى طَالِبٍ : أَلاَّ أَبْعَثُكَ عَلَى مَا بَعَثَنِى عَلَيْهِ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم أَنْ لاَ تَدَعَ تِمْثَالاً إِلاَّ طَمَسْتَهُ , وَلاَ قَبْرًا مُشْرِفًا إِلاَّ سَوَّيْتَهُ » . ( رواه مسلم ) .
“আলী ইবন আবি তালিব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু আমাকে বলেন, আমি কি তোমাকে এমন এক কাজে প্রেরণ করব না, যে কাজে আমাকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রেরণ করেছিলেন— তুমি কোনো মূর্তি বা ভাস্কর্য মূলোৎপাটন না করে ছাড়বে না; আর উঁচু কবর মাত্রই ভেঙ্গে মাটির সমান করে দিবে।”  আর আবদুল্লাহ ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত অপর এক হাদিসে রয়েছে, নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: 
« إِنَّ الْمَلاَئِكَةَ لاَ تَدْخُلُ بَيْتًا فِيهِ صُورَةٌ » . ( متفق عليه ) .
“যে ঘরে (প্রাণীর) ছবি থাকে, সে ঘরে ফিরিশ্তা প্রবেশ করে না।”  আর এসব দলীল-প্রমাণের উপর ভিত্তি করে বলা যায় যে, মুসলিম ব্যক্তিবর্গের উপর আবশ্যক হল এ ধরনের অলঙ্কার ব্যবহার ও ক্রয়-বিক্রয় পরিহার করে চলা।
* * *
সপ্তদশ প্রশ্ন:
স্বর্ণ আটক করা বা বুকিং (booking) দেয়ার বিধান কী?— আর এ বুকিং (booking) মানে হল, মূল্যের কিছু অংশ পরিশোধ করে পুরা মূল্য পরিশোধ করে দেয়া পর্যন্ত ব্যবসায়ীর নিকট তা আমানত হিসেবে রেখে দেওয়া।
উত্তর:
এটা বৈধ নয়; কারণ, যখন সে তা বিক্রয় করবে, তখন ক্রয়-বিক্রয়ের চাহিদা বা দাবি হল বিক্রেতার কাছ থেকে তার মালিকানা ক্রেতার নিকট স্থানান্তরিত হওয়া; সুতরাং এ ধরনের বুকিং (booking) পদ্ধতি হারাম ও অবৈধ, বরং জরুরি হল বিক্রেতা কর্তৃক পুরা মূল্য গ্রহণ করা; অতঃপর ক্রেতা ইচ্ছা করলে তা বিক্রেতার নিকট রেখে দিবে, আর ইচ্ছা করলে তা গ্রহণ করবে; তবে হ্যাঁ, যদি সে                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                       তার পক্ষ থেকে দাম বলে এবং বিক্রেতা সে দামে বিক্রি না করে, তারপর সে (ক্রেতা) চলে যায় এবং বাকি মূল্য নিয়ে আসে, অতঃপর চুক্তি সম্পন্ন হয় এবং এর পরে তা গ্রহণ করে, তাহলে এটা বৈধ হবে; কারণ, (এখানে) মূল্য উপস্থিত করার পরেই চুক্তি সম্পন্ন হয়েছে। 
* * *
অষ্টাদশ প্রশ্ন:
মূল্য গ্রহণ করার পূর্বে স্বর্ণ বের কেরে দেয়ার বিধান কী হবে— যখন সে নিকটতম কেউ হওয়ার কারণে আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন হওয়ার আশঙ্কায় এরূপ করে, অথচ তার পূর্ণ আস্থা আছে যে, সে অচিরেই তার মূল্য পরিশোধ করে দিবে, যদিও কিছু সময় বিলম্ব হবে?
উত্তর:
তোমার সাধারণ নিয়ম জেনে রাখা আবশ্যক যে, পুরাপুরি মূল্য গ্রহণ করা ব্যতীত মুদ্রার বিনিময়ে স্বর্ণ বিক্রয় করা কখনও বৈধ হবে না, এ ক্ষেত্রে নিকটতম ও দূরতম সম্পর্কের মাঝে কোনো পার্থক্য নেই; কেননা, আল্লাহর দীন এ ব্যাপারে কারও পক্ষপাতিত্ব করে না। আর যখন আল্লাহ তা‘আলার আনুগত্য করার কারণে কোনো নিকটতম ব্যক্তি ক্ষুব্ধ হয়, তাহলে সে ক্ষুব্ধ হউক; কেননা, সে জালিম, অপরাধী পাপী, যে নাকি তোমার কাছে আবদার করে যে, তুমি আল্লাহর অবাধ্যতায় জড়িয়ে যাও। আর বাস্তবে তুমি মুক্ত হয়ে গিয়েছ, যখন তুমি তাকে তোমার সাথে হারাম বা অবৈধ লেনদেন করতে নিষেধ করে দিয়েছ; সুতরাং সে যখন এ কারণে তোমার প্রতি ক্ষুব্ধ হবে, তখন সে হবে পাপী, তোমার উপর তার পাপের কিছুই বর্তাবে না।
* * *
ঊনবিংশ প্রশ্ন:
এর বিধান কী হবে— ক্রেতা কর্তৃক পরামর্শ করার উদ্দেশ্যে নেয়া স্বর্ণের বিপরীতে কোনো ব্যবসায়ী (ক্রেতা থেকে) স্বর্ণ গ্রহণ করল; আর ব্যবসায়ীর কাছ থেকে ক্রেতা যা গ্রহণ করেছে ক্রেতা কর্তৃক তা ফেরত দেয়া পর্যন্ত ব্যবসায় এ স্বর্ণটি বন্ধক হিসেবে গ্রহণ করেছে, অথচ এটা নিশ্চিত জানা কথা যে, ক্রেতা কর্তৃক গৃহীত স্বর্ণ ও ব্যবসায়ী কর্তৃক বন্ধক হিসেবে গৃহীত স্বর্ণের মাঝে ওজনের ক্ষেত্রে তারতম্য রয়েছে?
উত্তর:
এতে কোনো সমস্যা নেই; কেননা সে তা তার নিকট বিক্রি করেনি; সে তো শুধু বলেছে: এ স্বর্ণটা আপনার কাছে বন্ধক হিসেবে রাখুন, আর আমি (আপনার দেওয়া স্বর্ণ নিয়ে) যাব এবং তার বিষয়ে পরামর্শ করব, অতঃপর আমি আপনার নিকট ফিরে আসব এবং আমরা নতুন করে ক্রয়-বিক্রয় করব; অতঃপর যখন আমরা উভয়ে বেচাকেনার কাজ শেষ করব, তখন ক্রেতা বিক্রেতাকে পুরাপুরি মূল্য পরিশোধ করে দিবে এবং ক্রেতা তা গ্রহণ করে নিবে, যা সে বিক্রেতার কাছে বন্ধক হিসেবে দিয়েছিল।
* * *
বিংশ প্রশ্ন:
কোনো ব্যক্তি এক টুকরা স্বর্ণ দুইশত দিনার মূল্যে ক্রয় করল এবং স্বর্ণের দাম কয়েক গুণ বৃদ্ধি হওয়া পর্যন্ত সময় ধরে তা সংরক্ষণ করল, অতঃপর তা তিন হাজার দিনারের বিনিময়ে বিক্রি করল— সুতরাং এ ধরনের বৃদ্ধির বিধান কী হবে?
উত্তর:
এই ধরনের বৃদ্ধিতে কোন প্রকার সমস্যা বা অসুবিধা নেই; আর মুসলিমগণ তো তাদের ক্রয় ও বিক্রয়ের ক্ষেত্রে সর্বদা এরূপ করেই থাকে, তারা পণ্যদ্রব্য ক্রয় করে এবং মূল্য বৃদ্ধির জন্য অপেক্ষা করে; আবার কখনও কখনও তারা নিজেদের ব্যবহারের জন্য পণ্যসামগ্রী ক্রয় করে, অতঃপর যখন তার দাম অধিক হারে বৃদ্ধি পায় এবং তা বিক্রয়ের সুযোগ পেয়ে যায়, তখন তারা তা বিক্রি করে দেয়, যদিও ইতিপূর্বে তা বিক্রি করার কোনো পরিকল্পনা তাদের ছিল না।
আর তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হল, মূল্য বৃদ্ধি যখন বাজারের অনুগামী, তখন তাতে কোনো ধরনের অসুবিধা নেই, যদিও বৃদ্ধির পরিমাণটা অনেক গুণ বেশি হয়ে যায়। কিন্তু যদি বৃদ্ধির বিষয়টি একটি স্বর্ণের বিনিময়ে অপর আরেকটি স্বর্ণের ক্ষেত্রে হয় এবং অপর স্বর্ণের বেলায় অতিরিক্ত গ্রহণ করা হত, তাহলে তা হারাম হবে। কারণ, স্বর্ণের বিনিময়ে স্বর্ণের ক্রয়-বিক্রয় ওজনে সমান সমান এবং নগদ নগদ না হলে বৈধ হবে না, যা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত হাদিস দ্বারা সাব্যস্ত। সুতরাং তুমি যখন স্বর্ণকে স্বর্ণের বিনিময়ে বিক্রি করবে, যদিও তা মানের দিক থেকে ভিন্ন রকম (অর্থাৎ একটি অপরটির চেয়ে উৎকৃষ্ট), তখন সে ক্রয়-বিক্রয় বৈধ হবে না, যতক্ষণ তা ওজনে সমান সমান এবং হাতে হাতে বা নগদ নগদ না হবে। অতএব, তুমি যদি ১৮ কেরেটের দুই মিসকাল স্বর্ণ ২৪ কেরেটের দেড় মিসকাল স্বর্ণের বিনিময়ে গ্রহণ কর, তাহলে তা হারাম ও অবৈধ হবে; কেননা, এ ক্ষেত্রে সমপরিমাণ হওয়া আবশ্যক; আর তুমি যদি দুই মিসকাল স্বর্ণের বিনিময়ে দুই মিসকাল স্বর্ণ গ্রহণ কর, কিন্তু দু’টির যে কোনো একটি গ্রহণে বিলম্ব বা বাকি কর, তাহলে এ ক্রয়-বিক্রয়ও বৈধ হবে না; কেননা, চুক্তি সম্পাদনের মাজলিসেই লেনদেন সম্পন্ন হওয়া জরুরি। আর একই বিধান প্রযোজ্য হবে প্রচলিত কাগজি মুদ্রার বিনিময়ে স্বর্ণ ক্রয়-বিক্রয়ের ক্ষেত্রে (অর্থাৎ বিনিময় নগদ নগদ হতে হবে)। সুতরাং মানুষ যখন কোনো ব্যবসায়ী অথবা স্বর্ণকারের নিকট থেকে কাগজি মুদ্রার বিনিময়ে স্বর্ণ ক্রয় করে, তখন তার জন্য বিক্রেতাকে পুরা মূল্য পরিশোধ না করে তার নিকট থেকে বিচ্ছন্ন হওয়া বৈধ নয়; কেননা, এসব কাগজি মুদ্রা রৌপ্যের মুদ্রার মতই; আর রৌপ্যের বিনিময়ে স্বর্ণ ক্রয়-বিক্রয়ের ক্ষেত্রে চুক্তি সম্পাদনের মাজলিসে বিচ্ছিন্ন হওয়ার পূর্বে পারস্পরিক লেনদেন সম্পন্ন করা আবশ্যক; কেননা, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: 
« إِذَا اخْتَلَفَتْ هَذِهِ الأَصْنَافُ فَبِيعُوا كَيْفَ شِئْتُمْ إِذَا كَانَ يَدًا بِيَدٍ  » . ( رواه مسلم ) .
“এই জাতীয় দ্রব্যগুলো যখন এক জাতীয় না হয়ে ভিন্ন রকমের হবে, তখন তোমরা যেভাবে খুশি বিক্রয় করতে পারবে, যদি তা হাতে হাতে তথা নগদ নগদ হয়।”
* * *
একবিংশ প্রশ্ন:
পুরুষের পরিধানের জন্য তৈরি করা স্বর্ণের বিশেষ আংটি বিক্রয়ের বিধান কী হবে, যখন ব্যবসায়ী নিশ্চিত যে, ক্রেতা অচিরেই তা পরিধান করবে?
উত্তর:
পুরুষের জন্য তৈরি করা স্বর্ণের আংটি বিক্রয় করা হারাম, যখন বিক্রেতা জানতে পারবে যে, ক্রেতা অচিরেই তা পরিধান করবে অথবা তার প্রবল ধারণা মতে সে তা পরিধান করার সম্ভাবনা থাকবে; কারণ, এ উম্মতের পুরুষ ব্যক্তিদের উপর স্বর্ণ ব্যবহার করা হারাম; সুতরাং সে যখন তা এমন ব্যক্তির নিকট বিক্রয় করবে, যার ব্যাপারে সে জানে অথবা তার প্রবল ধারণা হয় যে, সে তা পরিধান করবে, তখন সে অন্যায় কাজে সহযোগিতা করল; অথচ আল্লাহ তা‘আলা অন্যায় ও সীমালংঘনের কাজে সহযোগিতা করতে নিষেধ করেছেন; আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿ ۘ وَتَعَاوَنُواْ عَلَى ٱلۡبِرِّ وَٱلتَّقۡوَىٰۖ وَلَا تَعَاوَنُواْ عَلَى ٱلۡإِثۡمِ وَٱلۡعُدۡوَٰنِۚ ﴾ [المائ‍دة: ٢] 
“আর নেককাজ ও তাক্ওয়ায় তোমরা পরস্পর সাহায্য করবে এবং পাপ ও সীমালংঘনে একে অন্যের সাহায্য করবে না।”  আর পুরুষ ব্যক্তিদের পরিধানের জন্য স্বর্ণকার কর্তৃক স্বর্ণের আংটি তৈরি করা বৈধ নয়।
* * *
দ্বাবিংশ প্রশ্ন:
পুরুষদের জন্য স্বর্ণ পরিধান করা নিষিদ্ধকরণের কারণটি কী? কেননা, আমরা জানি যে, দীন ইসলাম মুসলিম ব্যক্তির উপর শুধু ঐসব বস্তুই হারাম করে, যাতে তার জন্য ক্ষতিকারক দিক রয়েছে— সুতরাং স্বর্ণের তৈরি অলংকার পরিধান করার মধ্যে পুরুষদের জন্য কী ক্ষতি রয়েছে?
উত্তর:
হে প্রশ্নকর্তা! আপনি জেনে রাখুন এবং যারা এ প্রোগ্রাম  বা অনুষ্ঠান শুনছেন তারা সকলেই জেনে রাখবেন যে, প্রত্যেক মুমিনের জন্য শরী‘য়তের বিধিবিধানের ক্ষেত্রে অন্যতম প্রধান কারণ হল আল্লাহ তা‘আলা ও তাঁর রসূলের বাণী বা বক্তব্য; কেননা, আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন:
﴿ وَمَا كَانَ لِمُؤۡمِنٖ وَلَا مُؤۡمِنَةٍ إِذَا قَضَى ٱللَّهُ وَرَسُولُهُۥٓ أَمۡرًا أَن يَكُونَ لَهُمُ ٱلۡخِيَرَةُ مِنۡ أَمۡرِهِمۡۗ ﴾ [الاحزاب: ٣٦]
“আর আল্লাহ ও তাঁর রাসূল কোন বিষয়ের ফয়সালা দিলে কোন মুমিন পুরুষ কিংবা মুমিন নারীর জন্য সে বিষয়ে তাদের কোন (ভিন্ন সিদ্ধান্তের) ইখতিয়ার সংগত নয়।”
সুতরাং যে কেউ আমাদেরকে কোনো বস্তু ওয়াজিবকরণ অথবা নিষিদ্ধকরণের ব্যাপারে আল-কুরআন ও আস-সুন্নাহ’র হিকমত ও তাৎপর্য সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করবে, তার উত্তরে আমরা বলব: এ ব্যাপারে অন্যতম প্রধান কারণ হল আল্লাহ তা‘আলা ও তাঁর রসূলের বাণী বা বক্তব্য; আর এ কারণটিই প্রত্যেক মুমিনের জন্য যথেষ্ট; আর এ জন্যই যখন আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহাকে জিজ্ঞেস করা হল, ঋতুবর্তী নারীর কি অবস্থা— সে সাওমের কাযা আদায় করবে, অথচ সালাতের কাযা আদায় করবে না? তখন জবাবে তিনি বলেন:
« كَانَ يُصِيبُنَا ذَلِكَ فَنُؤْمَرُ بِقَضَاءِ الصَّوْمِ وَلاَ نُؤْمَرُ بِقَضَاءِ الصَّلاَةِ » . ( متفق عليه ) .
“আমরা এ পরিস্থিতির শিকার হয়েছিলাম; তখন আমাদেরকে সাওমের কাযা আদায় করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে; সালাতের কাযা আদায় করার নির্দেশ দেয়া হয়নি।”  কেননা, আল্লাহর কিতাব অথবা তাঁর রাসূলের সুন্নাহ’র অন্তর্ভুক্ত ‘নস’ তথা বক্তব্য প্রত্যেক মুমিনের জন্য শরী‘য়ত সাব্যস্ত হওয়ার আবশ্যকীয় ‘ইল্লাত বা কারণ; কিন্তু জনগণ কর্তৃক আল্লাহর বিধানসমূহের হিকমত ও তাৎপর্য অনুসন্ধান করাটা দোষের নয়; কারণ, এটা তার আস্থা ও বিশ্বাস বাড়িয়ে দেয়, তাছাড়া এটা ইসলামী শরী‘য়তের মর্যাদা বর্ণনা করে, যেহেতু বিধিবিধানসমূহ তার হেতু বা যৌক্তিকতার সাথে সংযুক্ত; আর তাছাড়া এর দ্বারা কিয়াসের ক্ষেত্র তৈরি হয়, যখন শরী‘য়তের বক্তব্য দ্বারা নির্ধারিত এ বিধানটির ‘ইল্লত বা কারণ অপর কোনো বিষয়ের মধ্যে বিদ্যমান থাকে, যার ব্যাপারে শরী‘য়তের কোনো ‘নস’ বা স্পষ্ট বক্তব্য নেই। সুতরাং শর‘য়ী হিকমত ও তাৎপর্য সম্পর্কে জানার এ তিনটি উপকারিতা রয়েছে।
এগুলোর পর ভাইয়ের প্রশ্নের জবাবে আমরা বলতে চাই যে, নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের পক্ষ থেকে স্বর্ণ পরিধান করা নিষিদ্ধ হওয়ার বিষয়টি সাব্যস্ত হয়েছে পুরুষদের জন্য, নারীদের জন্য নয়; আর এর কারণ হল, স্বর্ণ হল সবচেয়ে উৎকৃষ্ট মানের বস্তু, যার দ্বারা মানুষ সুসজ্জিত হয় এবং সুন্দর রূপ ধারণ করে; সুতরাং এটা হল সৌন্দর্য ও অলঙ্কার; আর পুরুষের উদ্দেশ্য এসব বিষয় নয়, অর্থাৎ সেই পুরুষ (পরিপূর্ণ) মানুষ নয়, যে অন্যের দ্বারা পরিপূর্ণতা অর্জন করে, বরং পুরুষ সেই, যে নিজেই স্বয়ংসম্পূর্ণ; কেননা, তার মধ্যে পুরুষত্ব আছে; তাছাড়া অপর ব্যক্তিকে তার প্রতি আকৃষ্ট করার জন্য সুন্দর সাজ গ্রহণ করা পুরুষের কোনো প্রয়োজন নেই; তবে নারীর বিষয়টি তার বিপরীত; কেননা, নারী অসম্পূর্ণ, তার সৌন্দর্যের পরিপূর্ণতা বিধানের প্রয়োজন রয়েছে; তাছাড়া সর্বোচ্চ মানের অলঙ্কার দ্বারা তার সৌন্দর্য বৃদ্ধির প্রয়োজন রয়েছে, এমনকি তার ও তার স্বামীর মাঝে বন্ধুত্ব ও ঘনিষ্ঠতার জন্য এ ধরনের সুসজ্জিত হওয়ার বিষয়টি দাবি করে; সুতরাং এ কারণেই নারীর জন্য স্বর্ণের অলঙ্কার পরিধান করার বিষয়টি বৈধ করে দেওয়া হয়েছে, পুরুষের জন্য নয়; আল্লাহ তা‘আলা নারীর গুণ বা বৈশিষ্ট্য বর্ণনা প্রসঙ্গে বলেন:
﴿ أَوَ مَن يُنَشَّؤُاْ فِي ٱلۡحِلۡيَةِ وَهُوَ فِي ٱلۡخِصَامِ غَيۡرُ مُبِينٖ ١٨ ﴾ [الزخرف: ١٨]
“আর যে অলঙ্কারে লালিত-পালিত হয় এবং সে বিতর্ককালে স্পষ্ট বক্তব্যে অসমর্থ, সে কি? (আল্লাহর জন্য সাব্যস্ত হবে?)।”  আর এরই মাধ্যমে পুরুষদের উপর স্বর্ণ পরিধান করা নিষিদ্ধকরণের মধ্যকার শর‘য়ী হিকমত ও তাৎপর্য স্পষ্ট হয়ে যায়। তাই এ প্রসঙ্গে আমি আপনাদের মনোযোগ আকর্ষণ করছি ঐসব পুরুষদের নসিহত করার জন্য, যারা স্বর্ণের অলঙ্কার পরিধান করে বিপথগামী হয়েছে; কেননা, তারা এর দ্বারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের অবাধ্য হয়ে গেছে এবং তারা নিজেদেরকে নারীদের সাথে সম্পৃক্ত করেছে; আর তারা অলঙ্কার হিসেবে পরিধানের জন্য আগুনের জ্বলন্ত অঙ্গার তাদের হাতে তুলে নিয়েছে, যা নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে প্রমাণিত। সুতরাং তাদের জন্য জরুরি হল আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা’র নিকট তাওবা করা; আর যদি তারা শরী‘য়তের সীমারেখার মধ্যে থেকে রৌপ্যের অলঙ্কার পরিধান করতে চায়, তাহলে এতে কোনো অসুবিধা নেই; অনুরূপভাবে স্বর্ণ ব্যতীত অন্যান্য খনিজ পদার্থ থেকে তৈরি আংটি পরিধান করতেও তাদের জন্য দোষের কিছু হবে না, যদি তা অপচয় বা ফিতনার পর্যায়ে না পৌঁছায়। 
* * *

স্বর্ণ ক্রয়-বিক্রয় সংক্রান্ত বিবিধ প্রশ্ন-উত্তর

Download

About the book