নারী-পুরুষে দেখাদেখি, নির্জনে অবস্থান ও সহাবস্থান সংক্রান্ত বিবিধ ফাতওয়া

ইসলামী শরী‘আত আদৌ নারী ও পুরুষে সহাবস্থানের দিকে আহ্বান করে নি; বরং শরী‘আত এটাকে নিষেধ করে এবং এ ব্যাপারে কঠোরতা আরোপ করে। আল্লাহ বলেন, “আর তোমরা নিজ ঘরে অবস্থান করবে এবং প্রাচীন জাহেলী যুগের প্রদর্শনীর মতো নিজেদেরকে প্রদর্শন করে বেড়াবে না”।
এ বইটিতে নারী-পুরুষে দেখাদেখি, নির্জনে অবস্থান ও সহাবস্থানের বিধিবিধান সংক্রান্ত বিষয়ে কতিপয় গুরুত্বপূর্ণ ফতোয়া সংযোজন করা হয়েছে, আর এ ফতোয়াগুলো ‘ইসলামী ফতোয়াসমগ্র’ (مجموع الفتاوى الإسلامية) -এর তৃতীয় খণ্ডে ‘বিবাহ অধ্যায়’ (كتاب النكاح)-এর মধ্যে একটি স্বতন্ত্র পরিচ্ছেদে পূর্বে প্রকাশ করা হয়েছে। আর এগুলোকে স্বতন্ত্রভাবে প্রকাশ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে তার গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তার দাবি এবং এ প্রসঙ্গে বেশি বেশি প্রশ্নের কারণে, বিশেষ করে আরবী ও ইসলামী দেশ এবং দূর দেশের আমাদের ভাইদের পক্ষ থেকে বেশি বেশি প্রশ্ন আসার কারণে। আল্লাহ তা‘আলার নিকট আবেদন, যাতে তিনি এর দ্বারা আমাদেরকে উপকৃত করেন।

اسم الكتاب: فتاوى النظر والخلوة والاختلاط


تأليف: اللجنة الدائمة للبحوث العلمية والإفتاء والدعوة والإرشاد - عبد العزيز بن عبد الله بن باز - عبد الله بن عبد الرحمن الجبرين - محمد بن صالح العثيمين


نبذة مختصرة: هذه بعض الفتاوى المهمة في أحكام النظر والاختلاط والخلوة مترجمة إلى اللغة البنغالية، وقد سبق نشرها في باب مستقل في الجزء الثالث من مجموع الفتاوى الإسلامية في كتاب النكاح، وقد رأينا إفرادها بالنشر لأهميتها ودعاء الحاجة إليها، وكثرة السؤال فيها، لاسيما من قبل إخواننا في البلاد العربية والإسلامية، وفي بلاد الغرب.


নারী-পুরুষে দেখাদেখি, নির্জনে অবস্থান ও সহাবস্থান সংক্রান্ত বিবিধ ফাতওয়া

فتاوى  النظر والخلوة والاختلاط

< بنغالي >
        
শাইখ আবদুল ‘আযীয ইবন আবদিল্লাহ ইবন বায
শাইখ মুহাম্মাদ ইবন সালেহ আল-‘উসাইমীন
শাইখ আবদুল্লাহ ইবন আবদির রহমান আল-জিবরীন
এবং
স্থায়ী ফতোয়া বোর্ডের ফতোয়া

অনুবাদক: ড. মো: আমিনুল ইসলাম
সম্পাদক: ড. আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া
 
فتاوى النظر والخلوة والاختلاط

        
الشيخ عبد العزيز بن عبد الله بن باز
الشيخ محمد بن صالح العثيمين
الشيخ عبد الله بن عبد الرحمن الجبرين
واللجنة الدائمة



ترجمة: د/محمد أمين الإسلام
مراجعة: د/ أبو بكر محمد زكريا

সূচিপত্র

ক্রম    বিষয়    পৃষ্ঠা
1.        ভূমিকা    
2.        শিক্ষার ক্ষেত্রে নারী-পুরুষে সহাবস্থানের বিধান    
3.        স্কুল, মাদরাসা ও বিশ্ববিদ্যালয়সমূহে ছেলে-মেয়ের মাঝে মেলামেশার ভয়াবহ ঝুঁকি    
4.        নারী-পুরুষ সম্মিলিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে লেখাপড়ার বিধান    
5.        নারী ও পুরুষে সহশিক্ষার ক্ষেত্রে ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি    
6.        আল্লাহর দিকে আহ্বানের উদ্দেশ্যে নারী-পুরুষ সম্মিলিত বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়ার বিধান    
7.        নারী-পুরুষ সম্মিলিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষকতার বিধান    
8.        প্রাথমিক স্তরে নারী শিক্ষক কর্তৃক ছেলে সন্তানদেরকে পাঠদানের ভয়াবহ ক্ষতি    
9.        নারীদের ফিতনা থেকে বাঁচার নিরাপদ উপায়    
10.        দেবর খুবই বিপজ্জনক    
11.        নিয়ত ভালোর যুক্তি দেখিয়ে নারীদের সাথে উঠাবসা করার বিধান    
12.        পারিবারিক ড্রাইবার ও নারীগণ    
13.        নারী পুরুষে সহাবস্থান হারাম    
14.        পুরুষ ডাক্তার কর্তৃক অপরিচিত নারীকে ডাক্তারি পরীক্ষা করার বিধান    
15.        যানবাহনে নারী পুরুষে মেলামেশার বিধান    
16.        নারী-পুরুষ সম্মিলিত বাজারে প্রবেশের বিধান    
17.        শিল্প-কারখানা ও অফিস-আদালতে নারী-পুরুষে সহাবস্থানের বিধান    
18.        নারী-পুরুষ সহাবস্থানে নারী’র কাজ করার বিধান    
19.        ভাবির চেহারার দিকে দৃষ্টি দেওয়ার বিধান    
20.        নারীদের চেহারার দিকে তাকানোর বিধান    
21.        যৌন কামনা ব্যতীত হারাম শরীফে নারীদের দিকে তাকানো    
22.        ইচ্ছাকৃতভাবে হারাম শরীফে নারীদের দিকে তাকানোর বিধান    
23.        ছাত্র কর্তৃক ছাত্রীকে সালাম দেওয়ার বিধান    
24.        টেলিভিশনে সৌন্দর্য প্রদর্শনকারিনী নারীদেরকে দেখার বিধান    
25.        টেলিভিশনে নারীদের দিকে তাকানোর বিধান    
26.        পত্রিকা ও ম্যাগাজিনে নারীদের ছবির দিকে তাকানোর বিধান    
27.        এসব ধারাবাহিক (নাটকীয়) অনুষ্ঠান দেখা হারাম    
28.        পত্রিকা ও ম্যাগাজিনে নারীদের দিকে তাকানোর বিধান    
29.        অশ্লীল ম্যাগাজিন পাঠ করার বিধান    
30.        নারীদের ছবি সংগ্রহ করার বিধান    
31.        বিভিন্ন প্রকার প্রচার মাধ্যমে নারীদের দিকে তাকানোর বিধান    
32.        টেলিফোনে নারী পুরুষে কথা বলার বিধান    
33.        নারী ও পুরুষের মাঝে চিঠি আদান-প্রদান করার বিধান    
34.        অপরিচিত বা পরনারীর সাথে নির্জনে অবস্থান করা হারাম    
35.        বিবাহপূর্ব সম্পর্কের বিধান    
36.        মাহরাম পুরুষ সঙ্গী ছাড়া কোনো নারী সফর করবে না    
37.        মাহরাম পুরুষ ব্যতীত ভিন্ন এলাকা বা বিদেশ থেকে কাজের মেয়ে নিয়ে আসার বিধান    
38.        মাহরাম পুরুষ ব্যতীত ভিন্ন শহরে নারীর অবস্থান করার বিধান    
39.        শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্রীদেরকে বিভিন্ন প্রদর্শনীতে ব্যবহার করার বিধান সম্পর্কে ফতোয়া    
40.        আমার শ্যালিকারা খোলামেলা থাকাবস্থায় আমি তাদেরকে গাড়িতে করে গন্তব্যস্থানে পৌঁছায়ে দেই    
41.        ভগিনীপতি বা দুলাভাই মাহরামদের কেউ নন    
42.        পুরুষদের সাথে পর্দা পরিহিতা নারীর বসার বিধান    
43.        অপরিচিত বা পরনারীদের সাথে মুসাফাহ (করমর্দন) করা নিষিদ্ধকরণের কারণ    
44.        ভাবির সাথে মুসাফাহ (করমর্দন) করার বিধান    
45.        মাহরাম নন এমন নারীদের সাথে মুসাফাহ (করমর্দন) করার বিধান    
46.        অপরিচিত নারীর সাথে কৌশলে আড়াল করে মুসাফাহ করার বিধান    
47.        বৃদ্ধা রমনীর সাথে মুসাফাহ (করমর্দন) করার বিধান    
48.        মাহরাম নন এমন আত্মীয়স্বজন ও অন্যান্যদের সাথে মুসাফাহ করা এবং তাদেরকে চুম্বন করার বিধান    
49.        মাহরাম নন এমন নারীদের সাথে বসার বিধান    
50.        পুরুষ ব্যক্তি কর্তৃক তার কন্যাকে চুম্বন করা বৈধ    
 
ভূমিকা
সমস্ত প্রশংসা এক আল্লাহর জন্য। সালাত ও সালাম নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি, যাঁর পরে আর কোনো নবী নেই।
অতঃপর:
এগুলো হলো নারী-পুরুষে দেখাদেখি, নির্জনে অবস্থান ও সহাবস্থানের বিধিবিধান সংক্রান্ত বিষয়ে কতিপয় গুরুত্বপূর্ণ ফতোয়া, আর এ ফতোয়াগুলো ‘ইসলামী ফতোয়াসমগ্র’ (مجموع الفتاوى الإسلامية) -এর তৃতীয় খণ্ডে ‘বিবাহ অধ্যায়’ (كتاب النكاح)-এর মধ্যে একটি স্বতন্ত্র পরিচ্ছেদে পূর্বে প্রকাশ করা হয়েছে। আর আমি এগুলোকে স্বতন্ত্রভাবে প্রকাশ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি তার গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তার দাবি এবং এ প্রসঙ্গে বেশি বেশি প্রশ্নের কারণে, বিশেষ করে আরবী ও ইসলামী দেশ এবং দূর দেশের আমাদের ভাইদের পক্ষ থেকে বেশি বেশি প্রশ্ন আসার কারণেই আমরা এ সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমাদের মাওলা আল্লাহ তা‘আলার নিকট আবেদন করছি, যাতে তিনি এর দ্বারা আমাদেরকে উপকৃত করেন, নিশ্চয়  তিনি শুনেন, আবেদন নিবেদন কবুল করেন, আর তাওফীক দানের মালিক তো আল্লাহই।
মুহাম্মাদ ইবন আবদিল ‘আযীয আল-মুসনাদ
রিয়াদ, ১১৪৯১, পোস্টবক্স- ৪২২৪

শিক্ষার ক্ষেত্রে নারী-পুরুষে সহাবস্থানের বিধান
আল-হামদুলিল্লাহ, সকল প্রশংসা আল্লাহর জন্য আর সালাত ও সালাম রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি। অতঃপর....
আমি ২৪/০৭/১৪০৪ হি. তারিখে প্রকাশিত রাজনৈতিক সংবাদপত্রের ৫৬৪৪ সংখ্যায় সান‘আ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধানের সাথে সম্পর্কিত একটি লেখার ব্যাপারে অবগত হয়েছি, যাতে তিনি বর্ণনা করেছেন, ছাত্রদের থেকে ছাত্রীদেরকে আলাদা করার দাবি উত্থাপন করাটা শরী‘আত বিরোধী, আর তিনি নারী-পুরুষ একসাথ হয়ে সহশিক্ষার বৈধতার ব্যাপারে দলীল পেশ করে বলেন যে, মুসলিমগণ পুরুষ ও নারী রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের যুগে একই মসজিদে সালাত আদায় করতেন এবং তিনি বলেন: (আর এ জন্যই শিক্ষার কাজটি একই জায়গায় হওয়া আবশ্যক)। আর একটি ইসলামী দেশের একটি ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধানের পক্ষ থেকে এ ধরনের বক্তব্য প্রকাশকে আমার কাছে উদ্ভট মনে হয়েছে, যার কাছ থেকে নারী ও পুরুষ নির্বিশেষে তার জাতি এমন দিকনির্দেশনা আশা করে, যাতে দুনিয়া ও আখিরাতে তাদের সৌভাগ্য ও মুক্তির ব্যবস্থা থাকবে; সুতরাং «إنَّا للّهِ وإِنا إليه راجعون ولا حول ولا قوة إلا بالله» “আমরা তো আল্লাহরই, আর নিশ্চয় আমরা তাঁর দিকেই প্রত্যাবর্তনকারী, আর আল্লাহর সাহায্য ছাড়া পাপ কাজ থেকে বেঁচে থাকার এবং সৎকাজ করার কেনো ক্ষমতা আমাদের নেই”।
আর কোনো সন্দেহ নেই যে, এ কথার মধ্যে ইসলামী শরী‘আতের ওপর বড় ধরনের অপবাদ আরোপ করা হয়েছে। কারণ, ইসলামী শরী‘আত আদৌ নারী ও পুরুষে সহাবস্থানের দিকে আহ্বান করে নি; বরং শরী‘আত এটাকে নিষেধ করে এবং এ ব্যাপারে কঠোরতা আরোপ করে। যেমন, আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿وَقَرۡنَ فِي بُيُوتِكُنَّ وَلَا تَبَرَّجۡنَ تَبَرُّجَ ٱلۡجَٰهِلِيَّةِ ٱلۡأُولَىٰۖ ﴾ [الاحزاب: ٣٣]
“আর তোমরা নিজ ঘরে অবস্থান করবে এবং প্রাচীন জাহেলী যুগের প্রদর্শনীর মতো নিজেদেরকে প্রদর্শন করে বেড়াবে না”। [সূরা আল-আহযাব, আয়াত: ৩৩]
আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন:
﴿يَٰٓأَيُّهَا ٱلنَّبِيُّ قُل لِّأَزۡوَٰجِكَ وَبَنَاتِكَ وَنِسَآءِ ٱلۡمُؤۡمِنِينَ يُدۡنِينَ عَلَيۡهِنَّ مِن جَلَٰبِيبِهِنَّۚ ذَٰلِكَ أَدۡنَىٰٓ أَن يُعۡرَفۡنَ فَلَا يُؤۡذَيۡنَۗ وَكَانَ ٱللَّهُ غَفُورٗا رَّحِيمٗا ٥٩﴾ [الاحزاب: ٥٩]                                                                                                              
“হে নবী! আপনি আপনার স্ত্রীদেরকে, কন্যাদেরকে ও মুমিনদের নারীগণকে বলুন, তারা যেন তাদের চাদরের কিছু অংশ নিজেদের উপর টেনে দেয়। এতে তাদেরকে চেনা সহজতর হবে, ফলে তাদেরকে উত্যক্ত করা হবে না। আর আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু”। [সূরা আল-আহযাব, আয়াত: ৫৯]
আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন:
﴿وَقُل لِّلۡمُؤۡمِنَٰتِ يَغۡضُضۡنَ مِنۡ أَبۡصَٰرِهِنَّ وَيَحۡفَظۡنَ فُرُوجَهُنَّ وَلَا يُبۡدِينَ زِينَتَهُنَّ إِلَّا مَا ظَهَرَ مِنۡهَاۖ وَلۡيَضۡرِبۡنَ بِخُمُرِهِنَّ عَلَىٰ جُيُوبِهِنَّۖ وَلَا يُبۡدِينَ زِينَتَهُنَّ إِلَّا لِبُعُولَتِهِنَّ أَوۡ ءَابَآئِهِنَّ أَوۡ ءَابَآءِ بُعُولَتِهِنَّ أَوۡ أَبۡنَآئِهِنَّ أَوۡ أَبۡنَآءِ بُعُولَتِهِنَّ أَوۡ إِخۡوَٰنِهِنَّ أَوۡ بَنِيٓ إِخۡوَٰنِهِنَّ أَوۡ بَنِيٓ أَخَوَٰتِهِنَّ أَوۡ نِسَآئِهِنَّ أَوۡ مَا مَلَكَتۡ أَيۡمَٰنُهُنَّ﴾ [النور: ٣١]                                                                  
“আর মুমিন নারীদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে সংযত করে এবং তাদের লজ্জাস্থানের হিফাযত করে, আর তারা যেন তাদের সৌন্দর্য প্রদর্শন না করে, তবে যা সাধারণত প্রকাশ থাকে। আর তারা তাদের গলা ও বুক যেন মাথার কাপড় দ্বারা ঢেকে রাখে। আর তারা যেন তাদের স্বামী, পিতা, শ্বশুর, পুত্র, স্বামীর পুত্র, ভাই, ভাইয়ের ছেলে, বোনের ছেলে, আপন নারীরা ও তাদের মালিকানাধীন দাসী ছাড়া কারো কাছে তাদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে”। [সূরা আন-নূর, আয়াত: ৩১]
আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন:
﴿وَإِذَا سَأَلۡتُمُوهُنَّ مَتَٰعٗا فَسۡ‍َٔلُوهُنَّ مِن وَرَآءِ حِجَابٖۚ ذَٰلِكُمۡ أَطۡهَرُ لِقُلُوبِكُمۡ وَقُلُوبِهِنَّۚ﴾ [الاحزاب: ٥٣]
“তোমরা তার পত্নীদের কাছ থেকে কিছু চাইলে পর্দার আড়াল থেকে চাইবে। এ বিধান তোমাদের ও তাদের হৃদয়ের জন্য বেশি পবিত্র”। [সূরা আল-আহযাব, আয়াত: ৫৩]
আর এসব আয়াতে সুস্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে নারীদেরকে সার্বক্ষণিক তাদের ঘরের মধ্যে অবস্থান করার বিধানের ব্যাপারে। অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা জাহেলী যুগের প্রদর্শনীর মতো তাদের নিজেদেরকে প্রদর্শন করে বেড়ানোর ব্যাপারে সতর্ক করে দিয়েছেন, আর জাহেলী যুগের প্রদর্শনী মানে পুরুষদের মাঝে তাদের সৌন্দর্য ও আকর্ষণীয় অঙ্গ-প্রত্যঙ্গসমূহ প্রকাশ করে বেড়ানো। অথচ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বিশুদ্ধভাবে বর্ণিত আছে, তিনি বলেছেন:
« مَا تَرَكْتُ بَعْدِى فِى النَّاسِ فِتْنَةً أَضَرَّ عَلَى الرِّجَالِ مِنَ النِّسَاءِ»
“আমি আমার পর জনগণের মাঝে পুরুষদের জন্য মেয়েদের চেয়ে বেশি ক্ষতিকর আর কোনো ফিতনা ছেড়ে যাচ্ছি না।”  
হাদীসটি ইমাম বুখারী ও মুসলিম রহ. উসামা ইবন যায়েদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণনা করেছেন। আর ইমাম মুসলিম রহ. তাঁর ‘আস-সহীহ’ গ্রন্থে হাদীসটি উসামা ইবন যায়েদ ও সা‘ঈদ ইবন যায়েদ ইবন ‘আমর ইবন নুফাইল রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা থেকে বর্ণনা করেছেন। আর সহীহ মুসলিমে আবু সা‘ঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেন:
«إِنَّ الدُّنْيَا حُلْوَةٌ خَضِرةٌ، وإنَّ اللهَ مُسْتَخْلِفُكُمْ فِيهَا فَيَنْظُرَ كَيفَ تَعْمَلُونَ، فَاتَّقُوا الدُّنْيَا وَاتَّقُوا النِّسَاء؛ فإنَّ أَوَّلَ فِتْنَةِ بَنِي إسرائيلَ كَانَتْ في النِّسَاءِ»
“নিশ্চয় দুনিয়া মিষ্ট ও আকর্ষণীয়, আল্লাহ তোমাদেরকে দুনিয়ায় তাঁর প্রতিনিধি করেছেন, যাতে তিনি দেখে নিতে পারেন তোমরা কেমন কাজ কর। কাজেই দুনিয়া থেকে বাঁচো এবং নারীদের (ফিতনা) থেকেও বাঁচো। কারণ, বনী ইসরাঈলদের প্রথম ফিতনা নারীদের মধ্যেই সৃষ্টি হয়েছিল।”  
আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম সত্যিই বলেছেন। কারণ, তাদের কারণেই বড় ধরনের ফিতনা হয়ে থাকে বিশেষ করে এ যুগে, যখন অধিকাংশ নারী পর্দা খুলে ফেলেছে এবং জাহেলী যুগের প্রদর্শনীর মতো নিজেদেরকে প্রদর্শন করে বেড়াচ্ছে, আর এর কারণে অশ্লীলতা ও খারাপি বহুগুণে বেড়ে গেছে, আর বহু দেশে অনেক যুবক ও যুবতী আল্লাহ তা‘আলা কর্তৃক শরী‘আতের বিধিবদ্ধ করে দেওয়া বিবাহ থেকে বিরত থাকছে। আর আল্লাহ তা‘আলা পরিষ্কারভাবে বর্ণনা করে দিয়েছেন যে, ‘পর্দা ব্যবস্থাপনা নারী পুরুষ নির্বিশেষে সকলের হৃদয়ের জন্য বেশি পবিত্র।’ সুতরাং এটা নির্দেশনা প্রদান করে যে, পর্দার বিধান ধ্বংস হয়ে যাওয়াটা তাদের সকলের হৃদয় কলুষিত হওয়ার এবং সত্যের পথ থেকে বিচ্যুত হওয়ার সম্ভাব্যতর একটি উপায়, আর সর্বজনবিদিত যে, লেখাপড়ার আসনে ছাত্রের সাথে ছাত্রীর বসাটা ফিতনার অন্যতম বড় ধরনের একটি কারণ এবং সাথে সাথে পর্দাকে বর্জন করারও একটি জ্বলন্ত উদাহরণ, যে পর্দাকে আল্লাহ তা‘আলা মুমিন নারীগণের জন্য শরী‘আতের বিধিবদ্ধ করে দিয়েছেন এবং আল্লাহ তা‘আলা সূরা আন-নূরের পূর্বে উল্লিখিত আয়াতে যাদের বর্ণনা দিয়েছেন তারা ভিন্ন অন্যান্য পরপুরুষের জন্য তাদের সৌন্দর্য প্রকাশ করতে তাদেরকে নিষেধ করেছেন, আর যে ব্যক্তি বলে যে, পর্দার নির্দেশটি ‘উম্মুহাতুল মুমিনীন’ তথা মুমিনজননীগণের জন্য খাস বা নির্দিষ্ট, সে ব্যক্তি বাস্তবতা থেকে দূরে সরে গেল এবং এমন বহু দলীল-প্রমাণের বিপরীতে অবস্থান নিল, যেসব দলীল ব্যাপকভাবে সকল যুগের সকল নারীকে (পর্দার বাধ্যতামূলক বিধানের) অন্তর্ভুক্ত করে; এমনকি সে আল্লাহ তা‘আলার নিম্নোক্ত বাণীর পরিপন্থী কথা বলল, যাতে তিনি বলেছেন:
﴿ذَٰلِكُمۡ أَطۡهَرُ لِقُلُوبِكُمۡ وَقُلُوبِهِنَّۚ﴾ [الاحزاب: ٥٣]
“এ বিধান তোমাদের ও তাদের হৃদয়ের জন্য বেশি পবিত্র”। [সূরা আল-আ‘রাফ, আয়াত: ১৫৮]
সুতরাং এ কথা বলা বৈধ হবে না যে, “পর্দা মুমিনজননীগণ ও পুরুষ সাহাবীগণের হৃদয়ের জন্য বেশি পবিত্র, তাদের পরবর্তীদের জন্য নয়।” বরং কোনো সন্দেহ নেই যে, ‘উম্মুহাতুল মুমিনীন’ তথা মুমিনজননীগণ ও পুরুষ সাহাবী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমের চেয়ে তাদের পরবর্তী প্রজন্মের লোকজনের জন্য পর্দা মেনে চলার প্রয়োজন অনেক বেশি। কারণ, ঈমানের শক্তি ও সত্য উপলব্ধির ক্ষমতার ব্যাপারে তাদেরকে সেরা প্রজন্মের অন্তর্ভুক্ত বলে ঘোষণা করা হয়েছে। কেননা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের ভাষায় উম্মুহাতুল মুমিনীনসহ সকল পুরুষ ও মহিলা সাহাবী রাদিয়াল্লাহু তা‘আলা ‘আনহুম হলেন নবীগণের পর সর্বশ্রেষ্ঠ মানুষ ও সর্বোত্তম প্রজন্ম, যা সহীহ বুখারী ও মুসলিমে বর্ণিত হয়েছে। সুতরাং পর্দা যখন তাদের হৃদয়ের জন্য বেশি পবিত্র, তখন তাদের পরবর্তীগণের জন্য এ পবিত্রতার প্রয়োজন আরও অনেক বেশি এবং তারা তাদের পূর্ববর্তীগণের চেয়ে পবিত্রতার অনেক বেশি অভাব বোধ করে। তাছাড়া কুরআন ও সুন্নাহ’র মধ্যে বর্ণিত বক্তব্যগুলোর দ্বারা সাব্যস্ত কোনো বিধানকে, নির্দিষ্টকরণের বিষয়টিকে প্রমাণ করে এমন কোনে সহীহ দলীল ব্যতীত, উম্মাতের কোনো একজনের জন্য নির্দিষ্ট করা বৈধ নয়। সুতরাং এ বক্তব্যগুলো ব্যাপকভাবে যেমন নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের যুগের উম্মতের জন্য প্রযোজ্য, ঠিক তেমনিভাবে তাঁর পরবর্তীতে কিয়ামত পর্যন্ত সকল উম্মতের জন্যও সমানভাবে প্রযোজ্য। কারণ, আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামকে তাঁর যুগের ও তাঁর পরবর্তী কিয়ামত পর্যন্ত সকল যুগের ও কালের মানুষ ও জিন্ন জাতির নিকট প্রেরণ করেছেন। যেমন, আল্লাহ তা‘আলা বলেন:        
﴿قُلۡ يَٰٓأَيُّهَا ٱلنَّاسُ إِنِّي رَسُولُ ٱللَّهِ إِلَيۡكُمۡ جَمِيعًا﴾ [الاعراف: ١٥٨]
“বলুন, হে মানুষ! নিশ্চয় আমি তোমাদের সবার প্রতি আল্লাহর রাসূল”। [সূরা সাবা, আয়াত: ২৮]  
আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন:
﴿وَمَآ أَرۡسَلۡنَٰكَ إِلَّا كَآفَّةٗ لِّلنَّاسِ بَشِيرٗا وَنَذِيرٗا﴾ [سبا: ٢٨]
“আর আমরা তো আপনাকে সমগ্র মানুষের জন্যই সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারীরূপে প্রেরণ করেছি”। [সূরা সাবা, আয়াত: ২৮]
অনুরূপভাবে আল-কুরআনুল কারীমও শুধু নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের যুগের মানুষের জন্য নাযিল হয় নি, বরং তা তাদের জন্য ও তাদের পরবর্তী এমন প্রত্যেক ব্যক্তির জন্যই নাযিল হয়েছে, যার নিকট (কিয়ামত পর্যন্ত) আল্লাহর কিতাব পৌঁছবে, যেমনটি আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন:
﴿هَٰذَا بَلَٰغٞ لِّلنَّاسِ وَلِيُنذَرُواْ بِهِۦ وَلِيَعۡلَمُوٓاْ أَنَّمَا هُوَ إِلَٰهٞ وَٰحِدٞ وَلِيَذَّكَّرَ أُوْلُواْ ٱلۡأَلۡبَٰبِ ٥٢﴾ [ابراهيم: ٥٢]
“এটা মানুষের জন্য এক বার্তা, আর যাতে এটা দ্বারা তাদেরকে সতর্ক করা হয় এবং তারা জানতে পারে যে, তিনিই কেবল এক সত্য ইলাহ, আর যাতে বুদ্ধিমানগণ উপদেশ গ্রহণ করে”। [সূরা ইবরাহীম, আয়াত: ৫২]
আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন:
﴿وَأُوحِيَ إِلَيَّ هَٰذَا ٱلۡقُرۡءَانُ لِأُنذِرَكُم بِهِۦ وَمَنۢ بَلَغَۚ ﴾ [الانعام: ١٩]
“আর এ কুরআন আমার নিকট অহী করা হয়েছে যেন তোমাদেরকে এবং যার নিকট তা পৌঁছবে তাদেরকে এর দ্বারা সতর্ক করতে পারি”। [সূরা আল-আন‘আম, আয়াত: ১৯]
নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের যুগে নারীগণ পুরুষদের সাথে সহাবাস্থান করতেন না, মসজিদেও না, আর বাজারেও না, যেমন সহাবস্থান করার প্রশ্নে সংশোধনকারীগণ নিষেধ করেন এবং আল-কুরআন, সুন্নাহ ও জাতির আলেম সমাজ যার ফিতনা থেকে সতর্ক ও সাবধান করেন; বরং নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের মসজিদে নারীরা পুরুষদের পেছনে পুরুষদের শেষ কাতারের পরের কাতারে সালাত আদায় করতেন এবং তিনি নারীদের প্রথম সারি বা কাতারের সাথে পুরুষদের শেষ কাতারের ফিতনার আশঙ্কা থেকে সতর্ক করার জন্য বলতেন:
«خَيْرُ صُفُوفِ النِّسَاءِ آخِرُهَا، وَشَرُّهَا أَوَّلُهَا. وَخَيْرُ صُفُوفِ الرِّجَالِ أَوَّلُهَا، وَشَرُّهَا آخِرُهَا»
“নারীদের সর্বোত্তম সারি বা কাতার হলো শেষ কাতার এবং সবচেয়ে মন্দ কাতার হলো তাদের প্রথম কাতার, আর পুরুষদের সর্বোত্তম কাতার হলো প্রথম কাতার এবং সবচেয়ে মন্দ কাতার হলো তাদের শেষ কাতার।”  
আর নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের যুগে পুরুষদেরকে (মসজিদ থেকে) প্রস্থানের সময় বিলম্ব করার জন্য নির্দেশ দেওয়া হত, যাতে নারীগণ প্রস্থান করতে পারে এবং মসজিদ থেকে তারা এমনভাবে বের হতে পারে যাতে মসজিদের দরজায় তাদের সাথে পুরুষগণ মিশতে না পারে, অথচ তাঁরা পরুষ ও নারী নির্বিশেষে সকলে ঈমান ও তাকওয়ার যে মানে প্রতিষ্ঠিত ছিলেন, সে হিসেবে তাদের পরবর্তীগণের অবস্থা কেমন হওয়া উচিত? আর পুরুষদের সাথে ঘষাঘষি এবং রাস্তায় পথ চলার সময় পাস্পরের মাঝে সংস্পর্শের দ্বারা ফিতনার আশঙ্কা থেকে সাবধান ও সতর্ক করার জন্য নারীদেরকে রাস্তাজুড়ে চলতে নিষেধ করা হতো এবং রাস্তার প্রান্তসীমায় চলার জন্য নির্দেশ দেওয়া হতো, আর ফিতনার আশঙ্কা থেকে সতর্ক করার জন্য আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা মুমিন নারীদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন যে, তারা যেন তাদের চাদরের কিছু অংশ নিজেদের উপর টেনে দেয়; যাতে তার দ্বারা তারা তাদের সৌন্দর্যকে ঢেকে রাখতে পারে এবং তিনি তাদেরকে ঐসব ব্যক্তি ব্যতীত অন্যসব পরপুরুষের উদ্দেশ্য তাদের সৌন্দর্য প্রকাশ করতে নিষেধ করেছেন, যাদের নাম আল্লাহ তা‘আলা তাঁর মহান গ্রন্থ আল-কুরআনে উল্লেখ করেছেন, যাতে ফিতনার কারণগুলোকে নির্মূল করা যায়, আর উৎসাহিত করা যায় পবিত্রতা ও সততার উপায় অবলম্বন করার ব্যাপারে এবং আরও উৎসাহিত করা যায় ফ্যাসাদ ও নারী-পুরুষের সহাবস্থানের বাহ্যিক দৃশ্য থেকে দূরে থাকার ব্যাপারে। সুতরাং কীভাবে সান‘আ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধানের (আল্লাহ তাকে হিদায়াত করুন এবং এসব কিছুর পরেও তাকে তাঁর সঠিক পথের দিশা দিন) জন্য নারী-পুরুষের সহাবস্থানের দিকে আহ্বান করা বৈধ হবে এবং কীভাবে বৈধ হবে এ দাবি করা যে, ইসলাম নারী-পুরুষের সহাবস্থানের দিকে আহ্বান করে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস মসজিদের মতো, আর লেখাপড়ার সময়গুলো সালাতের সময়ের মত?! আর ঐ ব্যক্তির নিকট এটা জানা কথা যে, (পুরুষের পেছনে নারীদের সালাত আদায়ের বিষয়টির সাথে তাদের একই সাথে শিক্ষার বিষয়টির তুলনা করার মধ্যে) পার্থক্য অনেক বড় এবং ব্যবধান ও দূরত্ব অনেক বেশি, যে ব্যক্তি আল্লাহর আদেশ ও নিষেধের ব্যাপারে সঠিকভাবে উপলব্ধি করে এবং আল্লাহ তা‘আলার হিকমত সম্পর্কে জানে। আর কীভাবে একজন মুমিনের জন্য এ কথা বলা বৈধ হবে যে, লেখাপড়ার আসনে ছাত্রের বরাবর ছাত্রীর বসাটা পুরষের পেছনে তার বোনদের সারিতে তাদের সাথে বসার মতই; এ কথা এমন কোনো ব্যক্তি বলতে পারে না, যার সামান্য পরিমাণ ঈমান আছে এবং যা বলে তা বুঝার মতো যার ন্যূনতম বুদ্ধি বা উপলব্ধি আছে। আর আমরা যদি শরী‘আতসম্মত পর্দার অস্তিত্ব বা বাস্তবতাকে স্বীকার করি, তাহলে কেমন লাগে, যখন লেখাপড়ার আসনে ছাত্রের সাথে একজন প্রদর্শনকারিনী ছাত্রী বসে পড়ে? ‘লা-হাওলা ওয়া লা-কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ’ (لا حول ولا قوة إلا بالله)। আর আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿فَإِنَّهَا لَا تَعۡمَى ٱلۡأَبۡصَٰرُ وَلَٰكِن تَعۡمَى ٱلۡقُلُوبُ ٱلَّتِي فِي ٱلصُّدُورِ ٤٦﴾ [الحج: ٤٦]
“বস্তুত চোখ তো অন্ধ নয়, বরং অন্ধ হচ্ছে বুকের মধ্যে অবস্থিত হৃদয়” [সূরা আল-হজ, আয়াত: ৪৬]
আর তার (সান‘আ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধানের) কথা: (আর বাস্তবতা হলো মুসলিমগণ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের যুগ থেকে একই মসজিদে পুরুষ ও নারী সালাত আদায় করে আসছে, আর এ জন্যই শিক্ষার কাজটি একই জায়গায় হওয়া আবশ্যক) এর জবাব হলো: এ কথা বলাটা সহীহ; কিন্তু নারীগণ মসজিদের পেছনের অংশে পর্দাসহকারে ফিতনার যাবতীয় কারণ থেকে সতর্কতা ও সাবধানতা অবলম্বন করে অবস্থান করতেন এবং পুরুষগণ অবস্থান করতেন মসজিদের সামনের অংশে; অতঃপর তারা (নারীরা) উপদেশ ও খুতবা শুনতেন, সালাতে অংশগ্রহণ করতেন এবং তারা যা শুনতেন ও দেখতেন, তা থেকে তারা তাদের দীনের বিধিবিধানসমূহ শিখে নিতেন। আর নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঈদের দিনে পুরুষদেরকে ওয়াজ নসীহত করার পর নারীদের নিকট যেতেন, অতঃপর তাঁর খুতবা শোনা থেকে তাদের দূরে থাকার কারণে তিনি তাদেরকে (পৃথকভাবে) ওয়াজ নসীহত করতেন ও উপদেশ দিতেন। আর এসব কিছুর মধ্যে কোনো সমস্যা নেই এবং কোনো অসুবিধাও নেই; বরং শুধু সমস্যা হলো সান‘আ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধানের (আল্লাহ তাকে হিদায়াত করুন, তার হৃদয়কে পরিশুদ্ধ করে দিন এবং তাকে তাঁর দীনের সঠিক বুঝ দান করুন) এ উক্তির মধ্যে, যাতে তিনি বলেছেন: “(আর এ জন্যই শিক্ষার কাজটি একই জায়গায় হওয়া আবশ্যক)।” তার জন্য কীভাবে বৈধ হবে আমাদের বর্তমান যুগে একই মসজিদে পুরুষদের পেছনে নারীগণের সালাত আদায় করার সাথে শিক্ষার বিষয়টিকে তুলনা করা, অথচ আজকের দিনে বিদ্যমান প্রচলিত শিক্ষার মধ্যে এবং নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের যুগে পুরুষদের পেছনে নারীগণের সালাত আদায় করার ঘটনার মধ্যে অনেক পার্থক্য ও ব্যবধান রয়েছে, আর এ জন্যেই সংস্কারপন্থীগণ শিক্ষাব্যবস্থায় পুরুষদের থেকে নারীদেরকে আলাদা করার দিকে আহ্বান করেন, যাতে তারা (নারীরা) আলাদা থাকবে এবং যুবকরাও আলাদা থাকবে, এমনকি নারীগণ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে কোনো প্রকার পর্দা ও অসুবিধা ছাড়া একেবারে আরামে ও অনায়াসে শিক্ষা অর্জন করতে সক্ষম হবে। কারণ, সালাতের সময়কালের বিপরীতে শিক্ষার সময়কাল হলো অনেক লম্বা। কেননা একটি বিশেষ স্থানে অবস্থান করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে জ্ঞান অর্জন করা তাদের (নারীদের) সকলের জন্য নিরাপদ, যাবতীয় ফিতনা থেকে অনেক দূরে নিশ্চিন্ত অবস্থান এবং তাদের দ্বারা ফিতনার শিকার হওয়া থেকে যুবকদের জন্যেও সবচেয়ে নিরাপদ; তাছাড়া শিক্ষাব্যবস্থায় যুবকদেরকে যুবতীদের থেকে আলাদা করে দেওয়াটা তাদের জন্য নিরাপদ হওয়ার সাথে সাথে লেখাপড়ার প্রতি তাদের মনোযোগ, নিবিড় মনোনিবেশ করা এবং শিক্ষকগণের নিকট থেকে ভালোভাবে শ্রবণ করা ও তাদের থেকে জ্ঞান অর্জন করার সবচেয়ে সহায়ক শক্তি হিসেবে কাজ করবে, আর সাথে সাথে তারা দূরে থাকবে যুবতীদের প্রতি দৃষ্টি দেওয়া ও তাদের নিয়ে ব্যস্ত থাকা থেকে এবং দূরে থাকবে তাদের পরস্পরের প্রতি বিষাক্ত নজর বা কুদৃষ্টি দেওয়া থেকে ও পাপাচারের দিকে ধাবিত করে এমন কথাবার্তা বলা থেকে।
আর তার (আল্লাহ তাকে সংশোধন করে দিন) চিন্তাধারা ও দাবি “ছাত্রদের থেকে ছাত্রীদেরকে আলাদা করার দিকে আহ্বান করাটা গোঁড়ামি ও শরী‘আত বিরোধী” এটা একটা অযৌক্তিক দাবি; বরং এ ধরনের আহ্বান করাটা প্রকৃতপক্ষে আল্লাহরই উপদেশ, তাঁর বান্দাগণের কল্যাণ কামনা করা, তাঁর দীনের সংরক্ষণ করা এবং পূর্বে উল্লিখিত আল-কুরআনের আয়াতসমষ্টি ও হাদীস শরীফদ্বয়ের প্রতি আমল করা। আর সান‘আ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধানের প্রতি আমার উপদেশ হলো তিনি যেন আল্লাহ তা‘আলাকে ভয় করেন এবং তিনি যে বক্তব্য দিয়েছেন তার জন্য আল্লাহ তা‘আলার নিকট তাওবা করেন, আর ফিরে আসেন সঠিক ও সত্যের দিকে। কারণ, এ দিকে ফিরে আসাটাই হলো প্রকৃতপক্ষে মর্যাদার বিষয় এবং জ্ঞান অনুসন্ধানকারী যে সত্য ও ন্যায়ের চিন্তা করে তার একটা চমকপ্রদ দলীল। আর আল্লাহ তা‘আলার নিকট সবিনয় নিবেদন হলো তিনি যেন আমাদের সকলকে সঠিক সরল পথ প্রদর্শন করেন এবং আমাদেরকে ও সকল মুসলিমকে তাঁর ব্যাপারে না জেনে কথা বলা থেকে রক্ষা করেন, আরও রক্ষা করেন ফিতনার ভ্রষ্টতা ও শয়তানের প্ররোচনা থেকে, অনুরূপভাবে আল্লাহ তা‘আলার নিকট আবেদন করছি, তিনি যেন মুসলিম সমাজের আলেমগণ ও প্রতিটি স্থানের নেতৃবৃন্দকে দেশ ও জাতির ইহকাল ও পরকালের মঙ্গল হয় এমন চিন্তা-চেতনা ও সিদ্ধান্ত দেওয়ার তাওফীক দান করেন এবং সকলকে তাঁর সরল সঠিক পথে পরিচালিত করেন, তিনি হলেন দানশীল, মহানুভব।
صلى الله على نبينا محمد و على آله و صحبه و التابعين لهم بإحسان إلى يوم الدين
(আল্লাহ সালাত পেশ করুন আমাদের নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর এবং তাঁর পরিবার-পরিজন, সকল সাহাবী এবং কিয়ামতের দিন পর্যন্ত তাদের যথাযথ অনুসরণকারীগণের উপর)।
শাইখ আবদুল ‘আযীয ইবন আবদিল্লাহ ইবন বায
শিক্ষা-গবেষণা, ফতোয়া ও দা‘ওয়া ব্যবস্থাপনার মহাপরিচালক।

স্কুল, মাদরাসা ও বিশ্ববিদ্যালয়সমূহে ছেলে-মেয়ের মাঝে মেলামেশার ভয়াবহ ঝুঁকি
প্রশ্ন: এক যুবক বলে: সে ধনী পরিবারের সন্তান, লেখাপড়া করে একটা নারী-পুরুষ সহাবস্থান করা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে, যার সুবাদে একটা মেয়ের সাথে তার খারাপ সম্পর্ক গড়ে উঠে এবং সে পাপচারের মধ্যে ডুবে যায়। সুতরাং সে তা পরিত্যাগ করার জন্য এখন কী করবে? আর তার জন্য তাওবার সুযোগ আছে কি? আর এ তাওবার জন্য শর্তগুলো কী কী?
উত্তর: এ প্রশ্নে দু’টি মাসআলা:
প্রথমত: আমাদের জন্য উচিত হলো ইসলামী রাষ্ট্রগুলোর শাসকবর্গের মনোযোগ আকর্ষণ করা এ জন্য যে, তারা তাদের নাগরিকগণের জন্য শিক্ষার ব্যবস্থা করেছেন নারী ও পুরুষের সহাবস্থানে গড়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে। কারণ, এ অবস্থাটি ইসলামী শরী‘আতের বিরোধী এবং তার ওপর বিদ্যমান থাকাটা মুসলিমগণের জন্য উচিত নয়।
নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«خَيْرُ صُفُوفِ النِّسَاءِ آخِرُهَا، وَشَرُّهَا أَوَّلُهَا»
“নারীদের সর্বোত্তম সারি বা কাতার হলো শেষ কাতার এবং সবচেয়ে মন্দ কাতার হলো তাদের প্রথম কাতার।”  
এটা এ জন্য যে, তাদের প্রথম সারি পুরুষদের একবারে নিকটবর্তী সারি, আর শেষ সারি পুরুষদের থেকে দূরবর্তী সারি। সুতরাং যখন সালাতের মতো ‘ইবাদাতের স্থানে নারী ও পুরুষদের মাঝে দূরত্ব বজায় রাখার ও তাদের মাঝে সহাবস্থান না করার জন্য উৎসাহিত করা হয়, যেখানে মুসল্লি (সালাত আদায়কারী ব্যক্তি) অনুভব করে যে, সে দুনিয়া সংশ্লিষ্ট সবকিছু থেকে দূরে থেকে তার রবের সামনে উপস্থিত, তখন আপনার অবস্থাটা কী হওয়া উচিত যখন নারী ও পুরুষে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে সহাবস্থানের মতো পরিবেশ সৃষ্টি হবে? তখন কি তার থেকে দূরুত্ব বজায় রাখা ও সহাবস্থানের বিষয়টি বর্জন করাটা আরও অধিক উত্তম হবে না? নারীদের সাথে পুরুষদের মেলামেশা ও উঠাবসার বিষয়টি একটি বড় ধরনের ফিতনা, যাকে আমাদের শত্রুগণ রংচং লাগিয়ে আকর্ষণীয় করে দিয়েছে, শেষ পর্যন্ত আমাদের অনেকে সে ফিতনার শিকার হয়েছে।
সহীহ বুখারীতে উম্মু সালামা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন:
«كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا سَلَّمَ قَامَ النِّسَاءُ حِينَ يَقْضِي تَسْلِيمَهُ وَيَمْكُثُ هُوَ فِي مَقَامِهِ يَسِيرًا قَبْلَ أَنْ يَقُومَ قَالَتْ : نَرَى وَاللَّهُ أَعْلَمُ أَنَّ ذَلِكَ كَانَ لِكَيْ يَنْصَرِفَ النِّسَاءُ قَبْلَ أَنْ يُدْرِكَهُنَّ أَحَدٌ مِنْ الرِّجَالِ»
“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন (সালাতে) সালাম ফিরাতেন, তখন তাঁর সালাম ফিরানোর কাজটি শেষ হওয়ার সাথে সাথে নারীগণ দাঁড়িয়ে যেত এবং তিনি দাঁড়ানোর আগে তাঁর অবস্থানে কিছু সময় অবস্থান করতেন। তিনি (বর্ণনাকারিনী) বলেন: আমরা মনে করতাম, (আর আল্লাহই ভালো জানেন) এর উদ্দেশ্য হলো, যাতে পুরুষদের মধ্য থেকে কেউ নারীদেরকে নাগাল পাওয়ার আগেই তারা চলে যেতে পারে।”
ইসলামী রাষ্ট্রগুলোর দায়িত্বশীল ব্যক্তিবর্গের জন্য আবশ্যকীয় কর্তব্য হলো, তারা এ বিষয়টিকে তাদের দেখাশুনার দায়িত্ব হিসেবে গ্রহণ করা এবং তাদের নাগরিকগণকে যাবতীয় খারাপি ও ফিতনার উপায়-উপকরণ বা উপলক্ষ্য থেকে রক্ষা করা। কারণ, তাদেরকে যে দায়িত্ব বা ক্ষমতা প্রদান করা হয়েছে, অচিরেই আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে তাদের কর্তব্য সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করবেন। আর তাদের জেনে রাখা উচিত যে, তারা যখন আল্লাহ তা‘আলার আনুগত্য করবে এবং কম হউক বেশি হউক তাদের সকল কাজে তাঁর শরী‘আত অনুযায়ী শাসনব্যবস্থা পরিচালনা করবে, তখন আল্লাহ তা‘আলা অবশ্যই তাদের হৃদয়গুলোকে ঐক্যবদ্ধ করে দেবেন এবং ভালোবাসা ও পারস্পরিক কল্যাণ কামনায় তাদের মনগুলো ভরে দেবেন, আর তাদের জন্য তাদের কাজসমূহ সহজ করে দেবেন এবং তাদের প্রতি তাদের নাগরিকগণ বন্ধুত্ব ও আনুগত্যের পরকাষ্ঠা প্রদর্শন করবেন।
নারী ও পুরুষের এ ধরনের সহাবস্থানের মাঝে যেসব খারাপি ও ফিতনা-ফ্যাসাদের সৃষ্টি হয়, সেসব ব্যাপারে মুসলিম মিল্লাতের শাসক ও সাধারণ নাগরিকগণের চিন্তাভাবনা করা উচিত, আর এর উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত ও সবচেয়ে বড় প্রমাণ হলো এ প্রশ্নকর্তা খারাপ সম্পর্কের ব্যাপারে যা উল্লেখ করেছে, যার কু-প্রভাব ও পাপসমূহ থেকে এখন সে পরিত্রাণ পাওয়ার চেষ্টা করছে।
বস্তুত নারী-পুরুষে সহাবস্থানের মতো ফিতনাটিকে সঠিক পরিকল্পনা ও সংস্কারের ব্যাপারে দৃঢ় সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার দ্বারা নির্মূল করা সম্ভব, আর এটা হবে কতগুলো বিশেষ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান তথা স্কুল, কলেজ, মাদরাসা ও বিশ্ববিদ্যালয় তৈরি করার মাধ্যমে, যেগুলোতে শুধু নারীরাই পড়াশুনা করবে এবং তাদের সাথে সেখানে পুরুষদের অংশগ্রহণ থাকবে না।
আর যখন নারীগণ পুরুষগণের সহোদর হয়, তখন তাদের (নারীদের) জন্য অধিকার আছে তাদের (পুরুষদের) কাছ থেকে উপকারী জ্ঞান অর্জন করার, যেমনিভাবে অধিকার আছে পুরুষদেরও; কিন্তু তাদের (নারীদের) জন্য আমাদের পুরুষদের আবশ্যকীয় করণীয় হলো তাদেরকে শিক্ষা দেওয়ার ক্যাম্পাসটি পুরুষদের শিক্ষার ক্যাম্পাস থেকে আলাদা করার ব্যবস্থা করা। সহীহ বুখারীতে আবূ সা‘ঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন:
«جَاءَتِ امْرَأَة إِلَى رَسُولِ اللهِ صلى الله عليه وسلم، فَقَالَتْ: يَا رَسُولَ اللهِ ذَهَبَ الرِّجَالُ بِحَدِيثِكَ، فَاجْعَلْ لَنَا مِنْ نَفْسِكَ يَوْمًا نَأْتِيكَ فِيهِ، تُعَلِّمُنَا مِمَّا عَلَّمَكَ اللهُ فَقَالَ: اجْتَمِعْنَ فِي يَوْمِ كَذَا وَكَذَا، فِي مَكَانِ كَذَا وَكَذَا. فَاجْتَمَعْنَ، فَأَتَاهُنَّ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم، فَعَلَّمَهُنَّ مِمَّا عَلَّمَهُ اللهُ  ...»
“জনৈকা মহিলা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে এসে বলল: হে আল্লাহর রাসূল! আপনার হাদীস তো শুধু পুরুষ লোকেরাই শুনতে পায়। সুতরাং আপনার পক্ষ থেকে আমাদের জন্য একটি দিন নির্দিষ্ট করে দিন, যে দিন আমরা আপনার নিকট আসব, আল্লাহ আপনাকে যা কিছু শিক্ষা দিয়েছেন, তা থেকে আপনি আমাদের শিক্ষা দেবেন। তখন তিনি বললেন, তোমরা অমুক অমুক দিন অমুক অমুক স্থানে সমবেত হবে। তারপর (নির্দিষ্ট দিনে) তাঁরা সমবেত হলেন এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের কাছে এলেন এবং আল্লাহ তাঁকে যা শিক্ষা দিয়েছেন, তা থেকে তাদের শিক্ষা দিলেন....”।  
আর এটা হলো শিক্ষার জন্য নারীদেরকে বিশেষ কোনো স্থানে আলাদা করে নেওয়ার ব্যাপারে সুস্পষ্ট বক্তব্য। কেননা তিনি (নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাদেরকে বলেন নি যে, তোমরা পুরুষদের সাথে উপস্থিত হতে পার না?! আল্লাহ তা‘আলার নিকট প্রর্থনা করছি যে, তিনি যেন সকল মুসলিমকে নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তাঁর সাহাবীগণের সুন্নাতের উপর চলার তাওফীক দান করুন, যাতে তারা এর দ্বারা দুনিয়া ও আখিরাতে ইয্যত ও সম্মান লাভ করতে পারে।
দ্বিতীয় মাসআলা: প্রশ্নকর্তার প্রশ্ন, যা সে নিজ সম্পর্কে অবতারণা করেছে- তা হলো, সে একটা মেয়ের সাথে তার খারাপ সম্পর্ক স্থাপন করার মাধ্যমে পাপাচারে নিমজ্জিত হয়ে গেছে, এখন সে কী করবে? তার জন্য তাওবার সুযোগ আছে কি? থাকলে তার শর্তগুলো কী কী?
জবাবে আমি তাকে সুসংবাদ দিচ্ছি যে, প্রত্যেক তাওবাকারীর জন্যই তাওবার দরজা খোলা আছে, আর আল্লাহ তাওবাকারীগণকে ভালোবাসেন এবং যে ব্যক্তি গুনাহ্ থেকে তাওবা করে, তিনি তার সকল গুনাহ্ ক্ষমা করে দেন।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿وَٱلَّذِينَ لَا يَدۡعُونَ مَعَ ٱللَّهِ إِلَٰهًا ءَاخَرَ وَلَا يَقۡتُلُونَ ٱلنَّفۡسَ ٱلَّتِي حَرَّمَ ٱللَّهُ إِلَّا بِٱلۡحَقِّ وَلَا يَزۡنُونَۚ وَمَن يَفۡعَلۡ ذَٰلِكَ يَلۡقَ أَثَامٗا ٦٨ يُضَٰعَفۡ لَهُ ٱلۡعَذَابُ يَوۡمَ ٱلۡقِيَٰمَةِ وَيَخۡلُدۡ فِيهِۦ مُهَانًا ٦٩ إِلَّا مَن تَابَ وَءَامَنَ وَعَمِلَ عَمَلٗا صَٰلِحٗا فَأُوْلَٰٓئِكَ يُبَدِّلُ ٱللَّهُ سَيِّ‍َٔاتِهِمۡ حَسَنَٰتٖۗ وَكَانَ ٱللَّهُ غَفُورٗا رَّحِيمٗا ٧٠ وَمَن تَابَ وَعَمِلَ صَٰلِحٗا فَإِنَّهُۥ يَتُوبُ إِلَى ٱللَّهِ مَتَابٗا ٧١﴾ [الفرقان: ٦٧،  ٧١]                                                                                                                                                                  
“এবং তারা আল্লাহর সাথে কোনো ইলাহ-কে ডাকে না। আর আল্লাহ যার হত্যা নিষেধ করেছেন, যথার্থ কারণ ছাড়া তাকে হত্যা করে না। আর তারা ব্যভিচার করে না, যে এগুলো করে সে শাস্তি ভোগ করবে। কিয়ামতের দিন তার শাস্তি বর্ধিতভাবে প্রদান করা হবে এবং সেখানে সে স্থায়ী হবে হীন অবস্থায়, তবে যে তাওবা করে, ঈমান আনে ও সৎকাজ করে, আল্লাহ তাদের গুণাহসমূহ নেক দ্বারা পরিবর্তন করে দেবেন। আর আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। আর যে তাওবা করে ও সৎকাজ করে, সে তো সম্পূর্ণরূপে আল্লাহর অভিমুখী হয়”। [সূরা আল-ফুরকান, আয়াত: ৬৭-৭১]
তাওবার শর্ত পাঁচটি:
প্রথম শর্ত: তাওবা হতে হবে খালেস তথা নির্ভেজালভাবে আল্লাহ তা‘আলার উদ্দেশ্যে, যাতে কোনো প্রকার প্রদর্শনী ও কোনো সৃষ্টিকে ভয় করার মত কোনো বিষয় থাকবে না; বরং তা হবে আল্লাহ তা‘আলার সন্তুষ্টি অর্জনের জন্যে। কারণ, মানুষ তার রবের উদ্দেশ্য একনিষ্ঠ না হয়ে তাঁর নৈকট্য হাসিলের জন্য যে আমলই করুক না কেন, তা অর্থহীন ও বাতিল বলে গণ্য হবে। আল্লাহ তা‘আলা হাদীসে কুদসীতে বলেন:
«أنَا أغْنَى الشُّرَكَاءِ عَنِ الشِّرْكِ ، مَنْ عَمِلَ عَمَلاً أشْرَكَ فِيهِ مَعِي غَيْرِي تَرَكْتُهُ وَشِرْكَهُ»
“আমি শির্ককারীদের (মুশরিকদের) আরোপিত শির্ক বা অংশ থেকে মুক্ত। যে ব্যক্তি এমন কোনো কাজ করল যার মধ্যে আমার সাথে অন্য কাউকে শরীক করল, আমি তাকে এবং তার শির্ককে প্রত্যাখ্যান করি।”   
দ্বিতীয় শর্ত: সে যে গুনাহের কাজ করেছে, তার জন্য অনুতপ্ত ও লজ্জিত হওয়া এবং এ ব্যাপারে নিজেকে অপরাধী মনে করা, এমনকি আল্লাহ তা‘আলার কাছ থেকে ক্ষমা ও মার্জনা পাওয়ার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করা।  
তৃতীয় শর্ত: যদি গুনাহের কাজের সাথে লিপ্ত থাকে, তাহলে তা পরিত্যাগ করা। কারণ, গুনাহের কাজ অব্যাহত রাখলে কোনো তাওবাই গ্রহণযোগ্য হবে না। সুতরাং গুনাহগার ব্যক্তি যদি বলে: আমি গুনাহ থেকে তাওবা করলাম অথচ সে তা অব্যাহতভাবে সে অপরাধ করেই যাচ্ছে, তাহলে এটা আল্লাহ তা‘আলার সাথে ঠাট্টা-বিদ্রূপ বলে গণ্য হবে। যেমন, তুমি যদি কাউকে উদ্দেশ্য করে বল, আপনার সাথে আমি যে বেয়াদবি করেছি আমি তার জন্য লজ্জিত ও অনুতপ্ত, অথচ তুমি তখনও তার সাথে বেয়াদবি করেই যাচ্ছ, তাহলে মনে হবে যেন তুমি তার সাথে ঠাট্টা-বিদ্রূপ করছ, আর মহান রব আল্লাহ তা‘আলা তার চেয়ে অনেক বেশি মহামহিয়ান ও গৌরবময় যে, তুমি দাবি করবে, তুমি তাঁর অবাধ্য হওয়া থেকে তাওবা করেছ, অথচ তুমি তা অব্যাহতভাবে চালিয়ে যাচ্ছ।
চতুর্থ শর্ত: ভবিষ্যতে এ ধরনের অপরাধ পুনরায় আর করবে না বলে দৃঢ় সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা।
পঞ্চম শর্ত: তাওবাটি তার সময়মতো হওয়া, যে সময়ে তাওবা করলে তাওবাকারীর তাওবা গ্রহণ করা হয় অর্থাৎ তাওবাটি হতে হবে মানুষের মৃত্যুর ঘন্টা বেজে যাওয়ার আগে এবং সূর্য পশ্চিম দিক থেকে উদয় হওয়ার পূর্বে। কেননা, সূর্য পশ্চিম দিক থেকে উদয় হওয়ার পরে তাওবা করলে সে তাওবা কোনো উপকারে লাগবে না। কারণ, আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন:
﴿هَلۡ يَنظُرُونَ إِلَّآ أَن تَأۡتِيَهُمُ ٱلۡمَلَٰٓئِكَةُ أَوۡ يَأۡتِيَ رَبُّكَ أَوۡ يَأۡتِيَ بَعۡضُ ءَايَٰتِ رَبِّكَۗ يَوۡمَ يَأۡتِي بَعۡضُ ءَايَٰتِ رَبِّكَ لَا يَنفَعُ نَفۡسًا إِيمَٰنُهَا لَمۡ تَكُنۡ ءَامَنَتۡ مِن قَبۡلُ أَوۡ كَسَبَتۡ فِيٓ إِيمَٰنِهَا خَيۡرٗاۗ قُلِ ٱنتَظِرُوٓاْ إِنَّا مُنتَظِرُونَ ١٥٨﴾ [الانعام: ١٥٨]          
“তারা কি শুধু এরই প্রতীক্ষা করে যে, তাদের কাছে ফিরিশতা আসবে কিংবা আপনার রব আসবেন কিংবা আপনার রবের কোনো নিদর্শন আসবে? যেদিন আপনার রবের কোনো নিদর্শন আসবে, সেদিন তার ঈমান কোন কাজে আসবে না, যে পূর্বে ঈমান আনে নি অথবা যে ব্যক্তি ঈমানের মাধ্যমে কল্যাণ লাভ করে নি। বলুন, ‘তোমরা প্রতীক্ষা কর, আমরাও প্রতীক্ষায় রইলাম’।” [সূরা আল-আন‘আম, আয়াত: ১৫৮]
আর সে কোনো নিদর্শন মানেই সূর্য তার অস্ত যাওয়ার স্থান (পশ্চিম দিক) থেকে উদয় হওয়া, অনুরূপভাবে আরেকটি নিদর্শন মৃত্যু উপস্থিত হওয়ার সময়টিও তাওবা কবুল না হওয়ার সময়। কেননা, আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন:
﴿وَلَيۡسَتِ ٱلتَّوۡبَةُ لِلَّذِينَ يَعۡمَلُونَ ٱلسَّيِّ‍َٔاتِ حَتَّىٰٓ إِذَا حَضَرَ أَحَدَهُمُ ٱلۡمَوۡتُ قَالَ إِنِّي تُبۡتُ ٱلۡـَٰٔنَ وَلَا ٱلَّذِينَ يَمُوتُونَ وَهُمۡ كُفَّارٌۚ أُوْلَٰٓئِكَ أَعۡتَدۡنَا لَهُمۡ عَذَابًا أَلِيمٗا ١٨﴾ [النساء: ١٨]                                                                                         
“তাওবা তাদের জন্য নয়, যারা আজীবন মন্দ কাজ করে, অবশেষে তাদের কারো মৃত্যু উপস্থিত হলে সে বলে, ‘আমি এখন তাওবা করছি’ এবং তাদের জন্যও নয়, যাদের মৃত্যু হয় কাফের অবস্থায়। এরাই তারা যাদের জন্য আমরা কষ্টদায়ক শাস্তির ব্যবস্থা করেছি”। [সূরা আন-নিসা, আয়াত: ১৮]
সুতরাং এ পাঁচটি শর্ত যদি আপনার মধ্যে যথাযথভাবে বাস্তবায়িত থাকে, তাহলে আপনার তাওবা গ্রহণযোগ্য হবে ইনশা-আল্লাহ।
শাইখ মুহাম্মাদ ইবন সালেহ আল-‘উসাইমীন

নারী-পুরুষ সম্মিলিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে লেখাপড়া করার বিধান
প্রশ্ন: আমি বিদেশে পড়ুয়া একজন ছাত্র এবং সেখানকার বিশ্ববিদ্যালয়টি নারী-পুরুষ সম্মিলিত, আমার প্রশ্ন হলো: এ বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া করাটা আমার জন্য বৈধ হবে কিনা?
উত্তর: যে মুসিলম ব্যক্তি নিজের মুক্তি চায় আমরা তাকে উপদেশ দিচ্ছি যে, সে যেন অনিষ্টতা ও ফিতনার যাবতীয় কারণ ও উপায়-উপকরণ থেকে দূরে থাকে, আর কোনো সন্দেহ নেই যে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যুবতীদের সাথে মেলামেশা করাটা ফিতনা-ফ্যাসাদ সংঘটিত হওয়ার এবং যিনা-ব্যভিচার ছড়িয়ে যাওয়ার অন্যতম কারণ। আর কোনো ব্যক্তি যদি নিজেকে হিফাযত করার উদ্যোগ গ্রহণ করে, তার জন্য আবশ্যক হলো কঠিনভাবে সাধনা করা; কিন্তু ব্যক্তি যখন এর দ্বারা পরীক্ষার সম্মুখীন হবে, তখন তার জন্য আবশ্যকীয় করণীয় হচ্ছে সতর্ক হওয়া, এর থেকে দূরে সরে থাকা, দৃষ্টিকে অবনমিত রাখা, লজ্জাস্থানকে হিফাযত করা এবং নারীদের নিকটবর্তী না হওয়ার জন্য সাধ্যানুসারে চেষ্টা করবে, আর আল্লাহই সবচেয়ে ভালো জানেন।
শাইখ আবদুল্লাহ ইবন আবদির রহমান আল-জিবরীন

নারী ও পুরুষে সহশিক্ষার ক্ষেত্রে ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি
প্রশ্ন: কিছু সংখ্যক ইসলামী রাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষার ব্যাপারে ইসলামের অবস্থান বা দৃষ্টিভঙ্গি কী, যেখানে বেশি বেশি অপরাধ, পাপাচার ও কুফুরী পরিলক্ষিত হয়। কারণ, সেখানে যুবতীরা প্রায় উলঙ্গ এবং যুবকরা বিপথগামী পথভ্রষ্ট, আর নারী ও পুরুষে খোলাখুলি সহাবস্থান এবং লজ্জাকর ও অশালীন পরিবেশকে ইসলাম পছন্দ করে না; বরং ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে লেখাপড়ার সুষ্ঠু সুন্দর পরিবেশের ব্যাপারে উৎসাহিত করে অথচ এ বিশ্ববিদ্যালগুলোর কোনো কোনো অনুষদে এক আল্লাহ তা‘আলাকে সাজদাহ করার জন্য একটি মসজিদ পর্যন্ত পাওয়া যায় না, আর ইউনিফর্ম বা প্রাতিষ্ঠানিক পোশাক হিসেবে যে পোশাক নির্ধারণ করা হয় তা হলো ইউরোপীয় মুশরিকদের পোশাক এবং এ নির্ধারিত পোশাক পরিধান করা ব্যতীত জামা (কামিজ) ও পাগড়ীর মত পোশাক পরিধান করে কোনো ছাত্র পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করার সুযোগ পায় না। কেননা এটা তাদের নিকট সেকেলে ও মূর্খতা। সুতরাং এমতাবস্থায় এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে লেখাপড়া করার বিধান কী হবে?   
উত্তর: প্রথমত: উপকারী ও জনকল্যাণমূলক জ্ঞান-বিজ্ঞানের শাখা প্রশাখায় জ্ঞান অর্জন ফরযে কিফায়া । সুতরাং মুসলিম জাতির ওপর, বিশেষ করে তাদের শাসকশ্রেণির ওপর আবশ্যক হলো, তার জাতির মধ্য থেকে নারী ও পুরুষদের সমন্বয়ে বিজ্ঞানের বিভিন্ন প্রকার প্রয়োজনীয় ও জরুরি বিষয়গুলোর জ্ঞান অর্জনের জন্য একটি গোষ্ঠীকে তৈরি করবে এবং তাদের জন্য সে জ্ঞান অর্জনের পথকে সহজ করে দেবে, যাতে জাতি তার সভ্যতা ও সংস্কৃতিকে সংরক্ষণ করতে, অসুস্থদের চিকিৎসাসেবা দিতে এবং বিপজ্জনক সময় বা স্থানগুলো এড়িয়ে চলতে সক্ষম হয়। সুতরাং যদি এ কাজটি সম্পন্ন হয়, তাহলে গোটা জাতি দায়িত্বমুক্ত হবে এবং সাওয়াবের আশা করতে পারবে নতুবা দুর্যোগের সম্মুখীন হওয়ার আশঙ্কা থাকবে এবং শাস্তির বাণী অবশ্যাম্ভাবী হয়ে যাবে।
দ্বিতীয়ত: শিক্ষাব্যবস্থায় ছাত্রীদের সাথে ছাত্রদের এবং শিক্ষিকাদের সাথে শিক্ষকদের সহাবস্থান করা হারাম। কেননা তা ফিতনা, যৌন উস্কানি ও অশ্লীলতায় নিমজ্জিত হওয়ার দিকে ধাবিত করে, আর অপরাধ বহুগুণে বৃদ্ধি পাবে এবং বড় বড় অন্যায় সংঘটিত হবে, যখন শিক্ষিকাগণ বা ছাত্রীগণ তাদের শরীরের গোপনীয় বিষয়গুলোর কোনো কিছু প্রকাশ করে, অথবা তারা এমন পাতলা পোশাক পরিধান করে যার কারণে ভিতরের সবকিছু দেখা যায়, অথবা সংকীর্ণ বা টাইটপিট পোশাক পরিধান করে, যা তাদের অঙ্গগুলোর দৈর্ঘ্য, প্রস্থ ও উচ্চতা সবকিছু বুঝিয়ে দেয়, অথবা তারা ছাত্র বা শিক্ষকবৃন্দের সাথে হাসি, রসিকতা, কৌতক করে, অথবা এ ধরনের এমন কোনো আচরণ করে, যা সম্মানহানি, ধর্ষণ ও নৈরাজ্যের দিকে ধাবিত করে।
সুতরাং রাষ্ট্রীয় প্রশাসনযন্ত্রের দায়িত্ব হলো সম্মানহানি, ধর্ষণ এবং জাতীয় জীবনে নৈরাজ্য ও বিশৃঙ্খলা রোধ করার জন্য ছাত্রদের জন্য পৃথক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, স্কুল, কলেজ, মাদরাসা ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবস্থা করা এবং অনুরূপভাবে ছাত্রীদের জন্য পৃথক প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থা করা, আর এর মাধ্যমে আত্মমর্যাদাসম্পন্ন ও দীনদার ব্যক্তিবর্গের পক্ষে কোনো রকম সংকট বা জটিলতা ছাড়াই শিক্ষাদান ও শিক্ষাগ্রহণের কাজটি অত্যন্ত সুচারুরূপে সম্পন্ন করা সম্ভব হবে। আর প্রশাসনিক দায়িত্বশীলগণ যখন তাদের দায়িত্ব পালন না করেন এবং শিক্ষাব্যবস্থায় মেয়েদের থেকে ছেলেদেরকে আলাদা করতে ব্যর্থ হন, তখন ঐসব ব্যক্তিবর্গের চালচলনের সাথে যোগদান করা বা সংহতি প্রকাশ করা বৈধ হবে না, তবে ব্যক্তি যখন নিজ উদ্যোগে উপদেশ প্রদান এবং এ ব্যাপারে তার বন্ধু-বান্ধব ও শিক্ষকগণের সহযোগিতার মাধ্যমে অশ্লীলতা ও খারাপি কমাতে সক্ষম হবে বলে মনে করবে এবং ফিতনা থেকে নিজেকে নিরাপদ মনে করবে, তখন ভিন্ন কথা (অর্থাৎ তখন তাদের সাথে যোগদান করা বৈধ হবে)।
স্থায়ী ফতোয়া বোর্ড

আল্লাহর দিকে আহ্বানের উদ্দেশ্যে নারী-পুরুষ সম্মিলিত বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়ার বিধান
প্রশ্ন: পুরুষ ব্যক্তির জন্য এমন বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া করা বৈধ হবে কিনা, যেখানে একই কক্ষে নারী ও পুরুষ সহাবস্থান করে, আপনার জ্ঞাতার্থে বলছি যে সেখানে আল্লাহর দিকে আহ্বান করার ব্যাপারে ছাত্রের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে?    
উত্তর: আমার মতে কোনো মানুষের জন্য এমন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে লেখাপড়া করা বৈধ নয়, যেখানে নারী ও পুরুষ সহাবস্থান করে, চাই সে পুরুষ হউক অথবা নারী হউক। কারণ, তাতে তার সচ্চরিত্রতা, সততা ও নৈতিকতার ব্যাপারে প্রচণ্ড রকমের বিপদ রয়েছে। কেননা মানুষ যতই পবিত্রতা, সততা ও নৈতিকতাসম্পন্ন হউক না কেন, যখন সে তার চেয়ারের পাশের চেয়ারে কোনো নারীকে দেখতে পাবে, বিশেষ করে সে যদি রূপসী ও সৌন্দর্য প্রদর্শনকারিনী হয়, তখন ফিতনা ও মন্দ থেকে নিরাপদ থাকা তার পক্ষে কষ্টকর হয়ে যাবে। আর এমন প্রত্যেক বিষয় বা বস্তুই হারাম ও অবৈধ বলে গণ্য হবে, যা ফিতনা ও খারাপির দিকে নিয়ে যায়। সুতরাং আমরা আল্লাহ তা‘আলার নিকট আমাদের মুসলিম ভাইদের জন্য প্রার্থনা করি, তিনি যেন তাদেরকে এ ধরনের বিষয়াদি থেকে মুক্ত রাখেন, যা তাদের যুবকদের জন্য শুধু অকল্যাণ, ফিতনা ও বিপর্যয়... নিয়ে আসে এমনকি এ বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়া যদি অন্য কাঙ্খিত বিশ্ববিদ্যালয় পাওয়া না যায়, তাহলে লেখাপড়া ছেড়ে দিয়ে অন্য শহরে গিয়ে লেখাপড়া করতে হবে, যেখানে এ ধরনের সহাবস্থান নেই। অতএব, আমি এটাকে জায়েয মনে করি না; হয়তো আমি ছাড়া কেউ কেউ ভিন্ন মতও পোষণ করতে পারেন।
শাইখ মুহাম্মাদ ইবন সালেহ আল-‘উসাইমীন  
নারী-পুরুষ সম্মিলিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষকতার বিধান
প্রশ্ন: যে শিক্ষক ছেলে ও মেয়ে সম্মিলিত ক্লাসে পাঠদান করেন অথবা পাঠদান করেন শুধু মেয়েদের ক্লাসে, যারা বয়ঃসন্ধিতে উপনীত, তিনি যখন তাদের দিকে তাকান, তখন গুনাহগার হবেন কি?
উত্তর: পুরুষ ব্যক্তির জন্য আবশ্যক হলো নারীদের দিকে তাকানো থেকে নিজ দৃষ্টিকে সংযত রাখা। আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন:
﴿قُل لِّلۡمُؤۡمِنِينَ يَغُضُّواْ مِنۡ أَبۡصَٰرِهِمۡ وَيَحۡفَظُواْ فُرُوجَهُمۡۚ ذَٰلِكَ أَزۡكَىٰ لَهُمۡۚ إِنَّ ٱللَّهَ خَبِيرُۢ بِمَا يَصۡنَعُونَ ٣٠﴾ [النور: ٣٠ ]
“মুমিনদের বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে সংযত করে এবং তাদের লজ্জাস্থানের হিফাযত করে। এটিই তাদের জন্য অধিক পবিত্র। তারা যা করে নিশ্চয় আল্লাহ সে বিষয়ে সম্যক অবহিত”। [সূরা আন-নূর, আয়াত: ৩০]
আর ইমাম মুসলিম ও আবু দাউদ রহ. প্রমুখ জারির ইবন আবদিল্লাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে হাদীস বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেন:
«سألت رسول الله صلى الله عليه وسلم  عن نَظَرِ الفَجْأَةِ , فَقَالَ : اصْرِفْ نَظرَكَ».
“আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামকে (অপরিচিত নারীর দিকে) হঠাৎ করে দৃষ্টি পড়ার  বিষয়ে প্রশ্ন করলাম। জবাবে তিনি বললেন: তুমি তোমার দৃষ্টিকে ফিরিয়ে নাও।” এ হাদীসের শব্দগুলো ইমাম আবু দাউদ রহ.-এর। আর শিক্ষার ক্ষেত্রে নারী ও পুরুষের মাঝে সহাবস্থান বৈধ নয়। কেননা এটা তাদের মাঝে অশ্লীল কাজ সংঘটিত হওয়ার অন্যতম উপায় ও মাধ্যম।

প্রাথমিক স্তরে নারী শিক্ষক কর্তৃক ছেলে সন্তানদেরকে পাঠদানের ভয়াবহ ক্ষতি
শাইখ আবদুল আযীয ইবন বায
সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য, যিনি একক, আর সালাত (দুরূদ) ও সালাম নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি, যার পরে আর কোনো নবী নেই। অতঃপর.... ৩০/০২/১৩৯৭ হি. তারিখে প্রকাশিত ‘আল-মাদীনা’ সংবাদপত্রের ৩৮৯৮তম সংখ্যায় ‘জীবন জীবনের জন্য’/‘হৃদয় হৃদয়ের জন্য’ (وجها لوجه) শিরোনামে ‘নূরাহ বিনতে...’-এর লেখাটি সম্পর্কে অবগত হয়েছি এবং মূলকথা হলো উল্লিখিত নূরাহ জেদ্দায় শিক্ষা-বিষয়ক অনুষদের ডিন ফায়েযা আদ-দিবাগের উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত একটি বৈঠকে যোগ দেন এবং এক পর্যায়ে উল্লিখিত নূরাহ প্রাথমিক স্তরে (যদিও তা পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত) আমাদের ছেলে সন্তানদেরকে শিক্ষাদানের কাজে নারী শিক্ষক না থাকার কারণে ফায়েযাকে অদ্ভুত নারী বলে সম্বোধন করেছেন, আর উক্ত নূরাহ তার বক্তব্যে এর কতগুলো কারণও উল্লেখ করেছেন। আর ফায়েযা, নূরা ও তার সহকর্মীগণ কর্তৃক আমাদের ছোট ছোট সন্তানদের শিক্ষাদানের বিষয়ে গুরুত্বারোপ এবং শিশুদের কল্যাণমূলক ও স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়ে উদ্বুদ্ধ করার জন্য তাদের প্রতি আমার পক্ষ থেকে ধন্যবাদসহ এ প্রস্তাবিত বিষয়ের মধ্যে যেসব ক্ষতি ও খারাপ পরিণতি রয়েছে সেসব বিষয়ে সতর্ক করা আমার আবশ্যকীয় কর্তব্য বলে মনে করছি, আর এটা হলো নারীগণ কর্তৃক প্রাথমিক স্তরে শিশুদের শিক্ষাদনের দায়িত্ব গ্রহণ করাটা তাদের সাথে বয়ঃসন্ধিতে উপনিত হওয়া ছেলে বা পরিপক্ক বয়সের ছেলেদের সাথে মেলামেশা ও উঠাবসার মতো পরিবেশের দিকে নিয়ে যায়। কারণ, কিছু কিছু ছেলে প্রাথমিক স্তরের ছাত্র হিসেবে ভর্তি হয় বয়ঃসন্ধিতে উপনীত হওয়া বয়সে এবং কখনও কখনও তাদের কেউ কেউ বালেগও (প্রাপ্তবয়স্ক) হয়ে যায়। কেননা শিশুর বয়স যখন দশ বছরে উপনীত হয়, তখন তাকে বয়ঃসন্ধিকালে উপনীত বলে গণ্য করা হয় এবং তার স্বভাব তখন নারীদের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে যায়। কারণ, এমন বয়সের ছেলে বিয়ে করতে সক্ষম এবং অন্যান্য পুরুষগণ যা করে, সেও তা করতে পারে, আর সেখানে আরেকটি বিষয় হলো, নারীগণ কর্তৃক প্রাথমিক স্তরে ছেলে শিশুদের শিক্ষাদনের বিষয়টি নারী-পুরুষে সহাবস্থান করার পরিবেশের দিকে ধাবিত করে, অতঃপর এ প্রথাটি শিক্ষার অপরাপর স্তরসমূহে চলতে থাকে। কারণ, নিঃসন্দেহে এটা শিক্ষার সকল স্তরে নারী-পুরুষে সহাবস্থান করার দরজা উন্মুক্ত করার একটা অন্যতম প্রক্রিয়া। আর নারী-পুরুষ মিলেমিশে সহাবস্থানমূলক শিক্ষাব্যবস্থা থেকে উদ্ভূত অসংখ্য খারাপ কাজের বিষয়টি সর্বজন বিদিত এবং এর অশুভ পরিণতি সম্পর্কে এমন প্রত্যেকে জানে, যে বা যারা বিভিন্ন দেশে এ ধরনের শিক্ষাব্যবস্থা চালু করেছে। সুতরাং ইসলামী বিশেষজ্ঞগণের মধ্য থেকে এমন প্রত্যেকেই আমাদের ছেলে ও মেয়েদের এ অবস্থা সম্পর্কে নিঃসন্দেহে অবগত আছেন, যার ন্যূনতম জ্ঞান আছে শরী‘আতের দলীল-প্রমাণ সম্পর্কে এবং এ যুগের উম্মতের বাস্তবতা সম্পর্কে। আর আমি বিশ্বাস করি যে, এ প্রস্তাবটি এমন প্রস্তাবের অন্তর্ভুক্ত যা শয়তান অথবা তার প্রতিনিধিদের কেউ কেউ পেশ করেছে উপরিউক্ত ফায়েযা ও নূরাহ’র ভাষায় এবং কোনো সন্দেহ নেই এটা এমন এক প্রস্তাব, যা খুশি করেছে আমাদের ও ইসলামের শত্রুদেরকে এবং এটা এমন এক প্রস্তাব, যে দিকে তারা গোপনে ও প্রকাশ্যে আহ্বান করে।
আর এ জন্য আমি মনে করি যে, আমাদের আবশ্যকীয় কর্তব্য হলো এ দরজাটিকে চূড়ান্তভাবে তালাবদ্ধ করে রাখা এবং আমাদের ছেলে সন্তানদেরকে সকল স্তরে পুরুষ শিক্ষকদের পাঠদানের আওতায় অবশিষ্ট রাখা, যেমনিভাবে আবশ্যক হলো মেয়ে সন্তানদেরকে সকল স্তরে মহিলা শিক্ষকদের পাঠদানের আওতায় বহাল রাখা। আর এর মাধ্যমে আমরা আমাদের দীন, ছেলে ও মেয়েদের ব্যাপারে সতর্কতা অবলম্বন করতে পারব এবং আমাদের শত্রুদের লাভজনক পরিকল্পনার গতিরোধ করতে সক্ষম হব, আর আমরা সম্মানিত মহিলা শিক্ষকগণের নিকট আশা করি যে, তাঁরা শতভাগ নিষ্ঠা, সততা ও ধৈর্যের সাথে সকল স্তরে আমাদের মেয়েদেরকে শিক্ষাদানের জন্য তাদের সকল চেষ্টা ও শ্রম বিনোয়োগ করবেন। আর এটা সর্বজনবিদিত যে, শিক্ষার সকল স্তরে ছেলেদেরকে শিক্ষাদানের ক্ষেত্রে মহিলা শিক্ষকগণের চেয়ে পুরুষ শিক্ষকগণ অধিক ধৈর্যশীল, শক্তিশালী ও বেশি যত্নবান, অনুরূপভাবে এটাও সর্বজন বিদিত যে, শিক্ষার প্রাথমিক স্তরে এবং তার উপরের অন্যান্য স্তরে ছেলেরা মহিলা শিক্ষকের চেয়ে পুরুষ শিক্ষককে অনেক বেশি সমীহ ও সম্মান করে এবং তার কাথা ভালোভাবে মনোযোগ দিয়ে শ্রবণ করে এবং এসবের সাথে সাথে শিক্ষার এ স্তরে তারা পুরুষ শিক্ষকদের নৈতিক চরিত্র, বিচক্ষণতা, মহত্ব, ধৈর্য, শক্তি ও উদ্যমের প্রশিক্ষণ লাভ করে, আর নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে তো সহীহভাবে হাদীস বর্ণিত হয়েছে, তিনি বলেছেন:
«مُرُوا أَوْلاَدَكُمْ بِالصَّلاَةِ وَهُمْ أَبْنَاءُ سَبْعِ سِنِينَ, وَاضْرِبُوهُمْ عَلَيْهَا وَهُمْ أَبْنَاءُ عَشْرِ سِنِينَ , وَفَرِّقُوا بَيْنَهُمْ فِى الْمَضَاجِعِ».
“তোমরা তোমাদের সন্তানদেরকে সালাতে জন্য নির্দেশ দাও, যখন তারা সাত বছর বয়সে উপনীত হয়, আর তাদেরকে সালাতের জন্য প্রহার কর, যখন তারা দশ বছর বয়সে উপনীত হয় এবং তাদের শোয়ার স্থান পৃথক করে দাও।”
শিক্ষার সকল স্তরে ছেলে ও মেয়েদের সহাবস্থানের মধ্যে যে ভয়াবহ বিপদের কথা আমরা আলোচনা করেছি, এ হাদীসটি তার প্রমাণ বহন করে। তাছাড়া এর উপর কুরআন, সুন্নাহ ও উম্মাতের বাস্তবতা থেকে বহু দলীল-প্রমাণ রয়েছে, সংক্ষেপ করার চিন্তা থেকেই এখানে সেগুলোর উল্লেখ করার প্রয়োজন মনে করি নি। আমাদের সরকার, মহামান্য শিক্ষামন্ত্রী ও নারী শিক্ষাবিষয়ক সম্মানিত মহাপরিচালক -সকলকে আল্লাহ তা‘আলা জ্ঞান ও প্রজ্ঞা দান করেছেন এবং তাদেরকে তিনি এ ব্যাপারে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়ার তাওফীক দান করেছেন। আর আমি মহান আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করছি যে, তিনি যেন আমাদেরকে এমন সব সিদ্ধান্ত নেওয়ার তাওফীক দান করেন, যাতে রয়েছে জাতির কল্যাণ ও মুক্তি এবং সাথে আছে আমাদের ও আমাদের যুবক ও যুবতীগণের দুনিয়া ও আখিরাতের কল্যাণ ও সৌভাগ্য, তিনি তো সব শুনেন এবং আমাদের অতি আপনজন।              
و صلى الله على نبينا محمد و على آله و صحبه.
(আল্লাহ সালাত ও সালাম প্রেরণ করুন আমাদের নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওপর এবং তাঁর পরিবার-পরিজন, সকল সাহাবীর ওপর)।
শাইখ আবদুল আযীয ইবন আবদিল্লাহ ইবন বায


নারীদের ফিতনা থেকে বাঁচার নিরাপদ উপায়
প্রশ্ন: আমি ঊনিশ বছর বয়সের অবিবাহিত যুবক এবং নারীর সৌন্দর্যে আমি প্রভাবিত হয়ে যাই, এখন আমি কী করব, এমনকি আমি নারী থেকে দূরত্ব বজায় রেখে চলি (তারপরও সমস্যা), কেননা সে তার প্রতি আমার মনোযোগ এমনভাবে আকর্ষণ করে ফেলেছে, যা আমাকে তার ব্যপারে সবসময় চিন্তায় ফেলে রাখে?
উত্তর: তোমার জন্য আবশ্যকীয় করণীয় হলো তুমি তোমার চক্ষুকে নারীদের প্রতি দৃষ্টি দেওয়া থেকে অবনমিত রাখবে এবং তাদের ব্যাপারে তোমার চিন্তা করা বন্ধ করবে, আর আল্লাহ তা‘আলা নিষ্পাপ পবিত্র বান্দাগণের জন্য যা প্রস্তুত করেছেন তা স্মরণ করবে এবং হারাম থেকে দূরে থাকবে, আর তোমার জন্য আরও আবশ্যক করণীয় হলো দ্রুত বিয়ের কাজ সম্পন্ন করবে। কারণ, তা দৃষ্টিকে সবচেয়ে বেশি সংযত রাখে এবং লজ্জাস্থানকে হিফাযত করে, আর তা চিন্তা দূর করে এবং নিজেকে বৈধ ও হালালের ওপর সীমাবদ্ধ রাখে। আর আল্লাহই সবচেয়ে বেশি জানেন।
শাইখ আবদুল্লাহ ইবন আবদির রহমান আল-জিবরীন

দেবর খুবই বিপজ্জনক
প্রশ্ন: আমি ও আমার ভাইসব একই বাসায় বসবাস করি, আর আমরা ‘আল-হামদুলিল্লাহ’ আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের নির্দেশসমূহ পালন করে থাকি; কিন্তু আমরা কষ্ট অনুভব করি আমাদের মাঝে প্রচলিত একটি প্রথার কারণে, যা আমরা উত্তরাধিকারসূত্রে আমাদের বাপ-দাদাদের নিকট থেকে পেয়েছি, আর তা হলো পুরুষগণ সরাসরি নারীদের সাথে বসে অর্থাৎ ভাইগণ তাদের স্ত্রীদের সাথে সবাই মিলেমিশে বসে যায়, আর আল্লাহর দীনের ব্যাপারে আত্মসমানবোধসম্পন্ন ব্যক্তিবর্গের কেউ কেউ আমাদেরকে উপদেশ দিয়েছেন, কিন্তু আমরা তাতে সাড়া দেই নি। কারণ, দীনের অনুসরণের দিক থেকে আমরা নতুন, আর কোনো একদিন আমি আমার পিতার সাথে আলাপ আলোচনা করলাম এবং তাঁকে উদ্দেশ্য করে বললাম: আমাদের জন্য এ মন্দ কাজটির উপর বদ্ধমূল না থাকাই আবশ্যক; বরং আমাদের জন্য আবশ্যক হলো তা বর্জন করা, তখন আমার বাবা বললেন: আল্লাহর কসম! যদি তোমরা এ কাজ কর, তাহলে অচিরেই আমি তোমাদের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবো এবং আর কখনও তোমাদের সাথে বসব না, আর অনুরূপভাবে আমার ভাইগণের মধ্যে কোনো কোনো ভাই এ ব্যাপারে আমার পিতার সাথে একমত পোষণ করেন। সুতরাং আপনাদের নিকট এ ব্যাপারে দৃষ্টিভঙ্গি ও উপদেশ কামনা করছি, আর আমার অবস্থানের ব্যাপারে আমি কি সঠিক পথে আছি?
উত্তর: হ্যাঁ, শরী‘আতের বক্তব্যসমূহের পরিপন্থী এ মন্দ প্রথা থেকে নিষেধ করার প্রশ্নে আপনি সঠিক পথেই আছেন। কারণ, স্ত্রীগণের জন্য আবশ্যক হলো তারা তাদের স্বামীর ভাই তথা দেবরদের থেকে পর্দা করবে এবং তাদের জন্য তাদের দেবরগণের সামনে তাদের চেহারা খোলা রাখা বৈধ নয়, যেমনিভাবে বৈধ নয় বাজারে বা অন্য কোথাও পরপরুষগণের সামনে তাদের চেহারা উন্মুক্ত রাখা; বরং দেবরগণের সামনে তাদের চেহারা খোলা রাখা আরও বেশি বিপজ্জনক। কারণ, স্বামীর ভাই তথা দেবর ঘরের মধ্যেই থাকে, হয় বসবাসকারী হিসেবে, নতুবা আগত মেহমান হিসেবে অথবা অনুরূপ অন্য কেনোভাবে, আর যখন সে ঘরে প্রবেশ করে অনুমোদিত পন্থায় ও যৌক্তিকভাবে, তখন তার পক্ষ থেকে বিপদের আশঙ্কাটাও অনেক বড় ধরনের।
আর এ জন্যই নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম নারীদের নিকট অনুপ্রবেশ করা থেকে (পুরুষদেরকে) সতর্ক করেছেন; তিনি বলেন:
«إيَّاكُمْ وَالدُّخُولَ عَلَى النِّسَاءِ . قَالُوا : يَا رَسُولَ اللَّهِ , أَرَأَيْتَ الْحَمْوَ ؟ قَالَ : الْحَمْوُ الْمَوْتُ».
“তোমরা পরনারীদের নিকট অনুপ্রবেশ করা থেকে বিরত থাক। সাহাবীগণ বললেন: হে আল্লাহর রাসূল! দেবরের (অনুপ্রবেশের) ব্যাপারে আপনার মতামত কী? জবাবে তিনি বললেন: দেবর তো মৃত্যুর মতো ভয়ঙ্কর।”
অর্থাৎ তার থেকে এমনভাবে পালিয়ে বেড়ানো উচিত, যেমনিভাবে মানুষ মৃত্যু থেকে পলায়ন করে।
আর এ কথাটি, অর্থাৎ নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের বাণী: «الْحَمْوُ الْمَوْتُ» (দেবর তো মৃত্যুর মতো ভয়ঙ্কর) হলো সবচেয়ে বড় ধরনের সতর্কবার্তা, এ জন্য আমি বলি: আপনার কাজটি সঠিক অর্থাৎ যে কাজে (অনৈতিকভাবে) জনগণ অভ্যস্ত হয়ে গেছে, সে কাজ থেকে আপনার নিষেধ করাটা যথাযথ হয়েছে। আর আপনার পিতার উক্তি: ‘যদি তোমরা এ কাজ কর’ অর্থাৎ যদি তোমরা নারীদের মধ্যে তাদের স্বামীর ভাই তথা দেবরদের থেকে পর্দা করার বিষয়টি প্রতিষ্ঠিত কর, তাহলে আমি তোমাদের সাথে থাকব না।’ আমি তাঁর নিকট উপদেশ প্রেরণ করছি, আর তা হলো- তিনি তো সত্যের অনুসারী হবেন, সত্যের বিপরীত কোনো রীতিনীতি ও প্রথাকে পাত্তা দেবেন না, তাঁর জন্য আবশ্যক হলো আল্লাহ তা‘আলাকে ভয় করা এবং তিনিই হবেন (পরিবারের) প্রথম ব্যক্তি, যিনি এ কাজের নির্দেশ দিবেন, অর্থাৎ মাহরাম নন এমন পুরুষদের থেকে নারীদেরকে পর্দা করার নির্দেশ দিবেন, এমনকি তিনি এ ব্যাপারে যথাযথ দায়িত্বশীলের ভূমিকা পালন করবেন। কারণ, পুরুষ ব্যক্তি হলেন তার ঘরের ব্যাপারে দায়িত্বশীল এবং তাকে তার দায়িত্বের ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করা হবে।
শাইখ মুহাম্মাদ ইবন সালেহ আল-‘উসাইমীন

নিয়ত ভালোর যুক্তি দেখিয়ে নারীদের সাথে উঠাবসা করার বিধান
প্রশ্ন: আমাদের মাঝে একটি খারাপ প্রথা দেখতে পাওয়া যায়, আর তা হলো নারীদের সাথে পুরুষদের অবাধ মেলামেশা। কারণ হলো আমরা তাদের সাথে অধিকাংশ কাজ করি এবং তাদের দিকে তাকাই, আর তারাও তাদের কাজসমূহ করে চেহারা খোলা রাখা অবস্থায়, আর আমরা বলি যে, আমাদের নিয়ত ভালো, আর আমাদের মধ্যে কোনো কোনো ব্যক্তি তার সহোদর ভাইয়ের স্ত্রী’র দিকে তাকায় এবং তাকে (ভাইয়ের বউকে) তার মাহরাম সহোদর বোনের মতো মনে করে, আর তার প্রতিবেশীগণের স্ত্রীদেরকে (যাদের সাথে বিবাহ হারাম এমন পর্যায়ের) মাহরামদের মতো বলে গণ্য করে; সুতরাং আমাদের মাঝে এমন পুরুষ ব্যক্তি আছেন, যিনি তার সহোদর ভাইয়ের সাথে, তার চাচাতো ভাইয়ের সাথে এবং তার শ্রেণীভুক্ত লোকজনের সাথে বসবাস করেন, আর তারা পুরুষ ও নারীগণ একসাথে পানাহার করেন। অতএব, এর বিধান কী হবে?
উত্তর: এ কাজগুলো প্রথম শ্রেণির জাহেলী প্রথার অন্তর্ভুক্ত, আর শরী‘আত সম্মতভাবে আবশ্যক হলো নারী কর্তৃক তার মাহরাম পুরুষের সামনে ব্যতীত অন্য কারও সামনে তার মুখমণ্ডল বা চেহারা খোলা না রাখা, ঠিক অনুরূপভাবে নারীর জন্য বাধ্যতামূলক হলো চেহারা খোলা অবস্থায় সে অপরিচিত বা পরপুরুষের সাথে উঠাবসা করবে না এবং তার ওপর আরও ওয়াজিব হলো এমন কোনো স্থানে সে পরপুরুষের সাথে একান্ত নির্জনে সাক্ষাৎ করবে না, যেখানে তার কোনো মাহরাম পুরুষের উপস্থিতি নেই। কেননা এর কারণে অগণিত ফিতনা-ফ্যাসাদের সৃষ্টি হতে পারে। আর আল্লাহই হলেন তাওফীক দানের একমাত্র মালিক।
শাইখ আবদুল আযীয ইবন আবদিল্লাহ ইবন বায
পারিবারিক ড্রাইবার ও নারীগণ
প্রশ্ন: পারিবারিক ড্রাইবারের সাথে সে পরিবারের নারী ও যুবতীদের সহাবস্থান করা এবং তাদের সাথে তার বিভিন্ন বাজার ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের উদ্দেশ্যে বের হওয়ার বিধান কী?
উত্তর: হাদীসে বর্ণিত আছে, নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«لاَ يَخْلُوَنَّ رَجُلٌ بِامْرَأَةٍ إِلَّا كَانَ ثَالِثَهُمَا الشَّيْطَانُ».
“কোনো ব্যক্তি কখনও কোনো মহিলার সাথে একান্তে নির্জনে সাক্ষাৎ করবে না, তবে জেনে রাখবে এমতাবস্থায় তাদের সাথে তৃতীয় জন হলো শয়তান।”
সুতরাং ‘একান্তে নির্জনে সাক্ষাৎ’-এর বিষয়টি ব্যাপক অর্থবোধক, যা বাড়িতে, গাড়িতে, বাজারে, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে ও অনুরূপ যে কোনো স্থানের বেলায় সমভাবে প্রযোজ্য, আর তারা একান্ত নির্জনে নিরাপদ নয়। কেননা তাদের কথাটাও লজ্জার বস্তুর মধ্যে গণ্য এবং যা কামভাবকে উস্কিয়ে দেয়। তাছাড়া কোনো কোনো নারী অথবা পুরুষকে পাওয়া যায়, যারা আল্লাহকে ভয় করেন এবং পাপাচারিতা ও খিয়ানত করাকে অপছন্দ করেন, তাদের মাঝেও শয়তান অনুপ্রবেশ করে, তাদের জন্য গুনাহের কাজটিকে হালকা করে দেখায় এবং তাদের জন্য কুটকৌশলের দরজাগুলো খুলে দেয়; সুতরাং এর থেকে দূরে থাকাটাই সবচেয়ে নিরাপদ।
শাইখ আবদুল্লাহ ইবন আবদির রহমান আল-জিবরীন   

নারী পুরুষে সহাবস্থান হারাম
প্রশ্ন: ব্রিটেনে কোনো কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্র-ছাত্রীদের অভিভাবকদের নিয়ে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয় এবং তাতে পুরুষ ও মহিলারা উপস্থিত হয়; সুতরাং মুসলিম নারীর জন্য মাহরাম পুরুষ ব্যতীত এ সমাবেশে পুরুষদের পাশাপাশি উপস্থিত হওয়া জায়েয হবে কিনা? আপনার জানার জন্য বলছি যে, এক ভাই এটাকে জায়েয বলেছেন এবং তিনি সহীহ বুখারী ও মুসলিমে বর্ণিত আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত হাদীসকে এর পক্ষে দলীল হিসেবে পেশ করেছেন, তাতে আছে- জনৈক ব্যক্তি নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট আসলেন, তারপর তিনি অনুসন্ধান করলেন, কে তার মেহমানদারি করবে, তারপর আনসারদের মধ্য থেকে জনৈক ব্যক্তি তাকে মেহমান হিসেবে দাওয়াত করলেন এবং তিনি উল্লেখ করেন যে, আনসার সাহাবী ও তাঁর স্ত্রী ঐ পুরুষ ব্যক্তিটির বসলেন এবং তার কাছে এমনভাব প্রকাশ করলেন যে, তাঁরা দু’জন খাচ্ছেন; আমরা এ মাসআলাটির প্রকৃত ব্যাখ্যা আশা করছি?
উত্তর: প্রশ্ন থেকে এ বিষয়টি স্পষ্ট হয় যে, তাতে পুরুষ ও নারীদের মাঝে মেলামেশা বা সহাবস্থানের বিষয় রয়েছে, আর পুরুষ ও নারীদের মাঝে মেলামেশা বা সহাবস্থানের বিষয়টি ফিতনা ও অশ্লীলতার দিকে নিয়ে যায়, আর এটাকে আমি অবৈধ মনে করি; কিন্তু যখন জরুরি প্রয়োজন দাবি করে পুরষদের সাথে নারীদের উপস্থিত হওয়ার বিষয়টি, তখন আবশ্যকীয় কর্তব্য হলো নারীদেরকে এক পাশে বসার ব্যবস্থা করা এবং অপর পাশে পুরুষদের জন্য বসার ব্যবস্থা করা, আর নারীগণ কর্তৃক শরী‘আত নির্ধারিত পর্দা পরিপূর্ণভাবে মেনে চলা, যেখানে নারী তার চেহারাসহ পুরো শরীর ঢেকে রাখবে।
আর যে হাদীসের দিকে প্রশ্নকর্তা ইঙ্গিত করেছেন, তাতে নারী-পুরুষে সহাবস্থান ছিল না; বরং আনসার সাহাবী ও তার স্ত্রী তার ঘরের এক পাশে ছিলেন, আর মেহমান ছিলেন আতিথিয়তা তথা মেহমানদারির জায়গায়। তাছাড়া পর্দার বিষয়টির ব্যাপারে যেমন সর্বজন বিদিত যে, শরী‘আতের প্রথম দিকে পর্দার বিষয়টি বাধ্যতামূলক ছিল না। কারণ, পর্দার বিষয়টিকে নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের হিজরতের প্রায় পাঁচ বা ছয় বছর পরে শরী‘আতে বাধ্যতামূলক করা হয়, আর যেসব হাদীসে পর্দা না করার বিষয়টি স্পষ্টভাবে বর্ণিত হয়েছে, সেসব হাদীস পর্দার আয়াতসমূহ নাযিল হওয়ার পূর্বের বর্ণনা বলে ধরে নিতে হবে।
শাইখ মুহাম্মাদ ইবন সালেহ আল-‘উসাইমীন

পুরুষ ডাক্তার কর্তৃক অপরিচিত নারীকে ডাক্তারি পরীক্ষা করার বিধান
প্রশ্ন: পাঁচ বছরের বেশি সময় ধরে আমি একজন বিবাহিত পুরুষ অথচ আমার স্ত্রী সন্তান জন্ম দেয় নি। এমতাবস্থায় আমরা ডাক্তারের নিকট যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলাম, তারপর ডাক্তার প্রথমে আমাকে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করলেন এবং তার ফলাফল হলো আমি সুস্থ ত্রুটিমুক্ত, আর পরীক্ষার বাকি থাকল আমার স্ত্রী। সুতরাং এমতাবস্থায় আমি যদি তাকে পরীক্ষা করানোর উদ্দেশ্যে (পুরুষ) ডাক্তারের নিকট পেশ করি, তাহলে আমি কি গুনাহগার হব?
উত্তর: পুরুষ ব্যক্তির জন্য নারীর সেসব ডাক্তারি পরীক্ষা করা বৈধ নয়, যা লজ্জা বা লজ্জাস্থানের সাথে সংশ্লিষ্ট, তবে জরুরি মুহূর্তে ও সংকটময় অবস্থায় বৈধ, আর এখানে এ রকম জরুরি কোনো ব্যাপার নেই। কারণ, এখানে নারীদের বিষয়ে অভিজ্ঞ মহিলা ডাক্তার পাওয়া পর্যন্ত পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার কাজটি বিলম্বিত করা সম্ভব, আর দেশে ও বিদেশে এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞ বহু মহিলা ডাক্তার রয়েছে।
শাইখ আবদুল্লাহ ইবন আবদির রহমান আল-জিবরীন

যানবাহনে নারী পুরুষে মেলামেশার বিধান
প্রশ্ন: আমাদের শহরে পরিবহণগুলো গণপরিবহণ এবং নারী-পুরুষ সম্মিলিত, আবার কখনও কখনও অনিচ্ছাকৃতভাবে অথবা কোনো প্রকার আকাঙ্খা ছাড়াই কোনো কোনো নারীর সাথে সংস্পর্শ হয়ে যায়, যা মূলত ভিড়ের কারণেই হয়ে থাকে। সুতরাং এমতাবস্থায় আমরা গুনাহগার হব কিনা? আমরা কী করব, আর আমাদের তো এসব পরিবহণ ছাড়া চলাচল করার ক্ষমতা বা উপায়ও নেই?  
উত্তর: এ অবস্থায় পুরুষ ব্যক্তির জন্য আবশ্যক হলো নারীদের সংস্পর্শ এবং এমন ভিড়ের মধ্য থেকে দূরে থাকা, যেখানে তার শরীর তাদের শরীরের সাথে মিলে যায়, যদিও তা পরিহিত পোশাকের আড়াল থেকে হউক না কেন। কারণ, এটা ফিতনার সুড়সুড়ি দেয়, আর মানুষ নিষ্পাপ নয়, কখনও কখনও সে মনে করে যে, সে এ কাজ থেকে নিজেকে রক্ষা করে চলছে এবং এর দ্বারা সে প্রভাবিত নয়, কিন্তু শয়তান তো বনী আদমের রক্ত সঞ্চালনের শিরায় শিরায় চলাচল করে, ফলে কখনও কখনও তার থেকে এমন উত্তেজনা সৃষ্টি হতে পারে, যা তার স্বাভাবিক কাজকে বিপর্যস্ত করবে। সুতরাং মানুষ যখন নিরোপায় হয়ে এ কাজে বাধ্য হয় এবং এর দ্বারা প্রভাবিত হবে না বলে মনে করে, তখন আশা করি এতে তার গুনাহ হবে না। কিন্তু আমার ধারণা মতে তার জন্য এ ধরনের নিরোপায় অবস্থাও উত্তরণ করা অসম্ভব নয়। কেননা তার পক্ষে এমন একটি স্থান খুঁজে নেওয়া সম্ভব, যেখানে তার নারীর সাথে সংস্পর্শ হবে না, এমনকি যদি সে দাঁড়িয়েও থাকে, আর এর দ্বারা সে এ কাজ থেকে বাঁচতে পারে, যা ফিতনাকে অপিরহার্য করে তুলে। আর পুরুষ ব্যক্তির জন্য আবশ্যক হলো— সে সাধ্যানুসারে আল্লাহ তা‘আলাকে ভয় করবে এবং এসব কাজ বা বিষয়কে তুচ্ছ ও সহজ মনে করবে না।
শাইখ মুহাম্মাদ ইবন সালেহ আল-‘উসাইমীন

নারী-পুরুষ সম্মিলিত বাজারে প্রবেশের বিধান
প্রশ্ন: মুসলিম ব্যক্তি জানে যে, বাজারে এমন কিছুসংখ্যক নারী রয়েছে, যারা নগ্ন অর্ধনগ্ন পোশাক পরিহিত অবস্থায় থাকে এবং তাতে নারী-পুরুষে এমনভাবে মেলামেশা বা সহাবস্থানের ব্যবস্থা রয়েছে, যা আল্লাহ তা‘আলা পছন্দ করেন না, এমতাবস্থায় মুসলিম ব্যক্তির জন্য বাণিজ্যিক বাজারে প্রবেশ করা বৈধ হবে কি?
উত্তর: এ ধরনের বাজারে প্রবেশ করা উচিৎ নয়, তবে যিনি সৎকাজের নির্দেশ দেন এবং অসৎকাজে নিষেধ করেন, তিনি প্রবেশ করতে পারেন অথবা প্রচণ্ড প্রয়োজনের কারণে দৃষ্টিকে অবনমিত রাখার সাথে প্রবেশ করতে পারবে এবং সাথে সাথে ফিতনার যাবতীয় কারণ ও উপলক্ষ থেকে সতর্ক থাকতে হবে যাতে এর থেকে তার মান-সম্মান ও দীনকে নিরাপদ রাখা যায় এবং যাবতীয় মন্দের উপায়-উপকরণ থেকে দূরে থাকা যায়; কিন্তু মর্যাদাবান ব্যক্তিবর্গ ও প্রত্যেক ক্ষমতাবান ব্যক্তির জন্য আবশ্যক হলো এ ধরনের বাজারে চলমান অশ্লীলতার প্রতিবাদ করার জন্য তাতে প্রবেশ করা, যাতে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলার বাণীর প্রতি আমল হয়ে যায়, যাতে আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন:
﴿وَٱلۡمُؤۡمِنُونَ وَٱلۡمُؤۡمِنَٰتُ بَعۡضُهُمۡ أَوۡلِيَآءُ بَعۡضٖۚ يَأۡمُرُونَ بِٱلۡمَعۡرُوفِ وَيَنۡهَوۡنَ عَنِ ٱلۡمُنكَرِ﴾ [التوبة: ٧١]
“আর মুমিন পুরুষ ও মুমিন নারী একে অপরের বন্ধু, তারা সৎকাজের নির্দেশ দেয় ও অসৎকাজে নিষেধ করে”। [সূরা আত-তাওবা, আয়াত: ৭১]
আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেছেন:
﴿وَلۡتَكُن مِّنكُمۡ أُمَّةٞ يَدۡعُونَ إِلَى ٱلۡخَيۡرِ وَيَأۡمُرُونَ بِٱلۡمَعۡرُوفِ وَيَنۡهَوۡنَ عَنِ ٱلۡمُنكَرِۚ وَأُوْلَٰٓئِكَ هُمُ ٱلۡمُفۡلِحُونَ ١٠٤﴾ [ال عمران: ١٠٤]                                                                                                                                                           
“আর তোমাদের মধ্যে এমন একটি দল যেন থাকে যারা কল্যাণের দিকে আহ্বান করবে এবং সৎকাজের নির্দেশ দেবে ও অসৎকাজে নিষেধ করবে, আর তারাই সফলকাম”। [সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ১০৪] এ অর্থে আরও অনেক আয়াত রয়েছে। তাছাড়া নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
«إِنَّ النَّاسَ إِذَا رَأَوْا الْمُنْكَرَ ، فَلَمْ يُغَيِّرُوهُ ، أَوْشَكَ أَنْ يَعُمَّهُمْ اللَّهُ بِعِقَابِهِ».
“মানুষ যখন অশ্লীল কাজ দেখবে, অথচ প্রতিরোধ করবে না, তখন অতি শীঘ্রই আল্লাহ তা‘আলা গণহারে তাদেরকে তাঁর শাস্তি দিবেন।”  হাদীসটি ইমাম আহমাদ রহ. এবং কোনো কোনো ‘সুনান’ সংকলক আবু বকর সিদ্দীক রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে সহীহ সনদে বর্ণনা করেছেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেন:
«مَنْ رَأَى مِنْكُمْ مُنْكَرًا فَلْيُغَيِّرْهُ بِيَدِهِ، فَإِنْ لَمْ يَسْتَطِعْ فَبِلِسَانِهِ، فَإِنْ لَمْ يَسْتَطِعْ فَبِقَلْبِهِ، وَذَلِكَ أَضْعَفُ الإِيمَانِ» .
“তোমাদের কেউ যখন কোন অন্যায় কাজ হতে দেখে, তখন সে যেন তা হাত দ্বারা (শক্তি প্রয়োগে) বন্ধ করে দেয়, আর যদি সে এ ক্ষমতা না রাখে, তবে যেন মুখের (কথার) দ্বারা (জনমত গঠন করে) তা বন্ধ করে দেয়, আর যদি সে এ ক্ষমতাটুকুও না রাখে, তবে যেন অন্তরের দ্বারা (পরিকল্পিত উপায়ে) তা বন্ধ করার চেষ্টা করে বা এর প্রতি ঘৃণা পোষণ করে। আর এটা হল ঈমানের সবচেয়ে দুর্বলতম স্তর।”  ইমাম মুসলিম রহ. হাদীসটি তাঁর ‘আস-সহীহ’ গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন, আর এ অর্থে আরও অনেক হাদীস বর্ণিত আছে, আর আল্লাহই হলেন তাওফীক দানের একমাত্র মালিক।
শাইখ আবদুল আযীয ইবন আবদিল্লাহ ইবন বায
শিল্প-কারখানা ও অফিস-আদালতে নারী-পুরুষে সহাবস্থানের বিধান
প্রশ্ন: শিল্প-কারখানায় অথবা অনিসলামিক অফিসসমূহে পুরুষদের মতো করে নারীদের কাজকারবার ও লেনদেনের বিধান কী? আর ঐ জীবনের বিধান কী হবে, যে ভয়াবহ রোগের কারণে ধ্বংসের মুখোমুখি হয়েছে, উল্লিখিত এ পরিস্থিতিতে সে রোগের চিকিৎসার বিষয়টি মুসলিম নারীকে বেপর্দা করার দিকে নিয়ে যায়, যদিও ইসলামী তথা মুসলিম দেশসমূহের ডাক্তারগণ সবই পুরুষ?  
উত্তর: অমুসলিমদের দেশে অমুসলিম পুরুষদের সাথে অমুসিলম নারীদের মেলামেশা বা সহাবস্থানের বিধানের ব্যাপারে কথা হলো, তা অবৈধ, বরং তাদের জন্য এর চেয়ে আরও বড় অপরাধ হলো আল্লাহ তা‘আলাকে অস্বীকার করা। সুতরাং তাদের মাঝে এ ধরনের অশ্লীল কাজ সংঘটিত হওয়ার বিষয়টিকে অযৌক্তিক ভাবার কিছু নেই। আর ইসলামী দেশে মুসলিম পুরুষদের সাথে মুসিলম নারীদের মেলামেশা বা সহাবস্থানের বিষয়টি একেবারেই হারাম এবং যেখানে এ ধরনের সহাবস্থান পরিলক্ষিত হবে, সেখানকার প্রশাসন বা দায়িত্বশীলগণের জন্য আবশ্যকীয় করণীয় হলো, তারা নারী ও পুরুষদেরকে আলাদা আলাদা বিভাগে কাজ করাবেন। কেননা নারী ও পুরুষের মাঝে মেলামেশা ও সহাবস্থানের মধ্যে নৈতিক ও চারিত্রিক বিপর্যয়ের অন্যতম কারণ, যা ন্যূনতম বুদ্ধি ও বিবেকবান ব্যক্তির নিকটও অস্পষ্ট নয়। আর চিকিৎসার জন্য পুরুষ কর্তৃক মুসলিম নারীকে জরুরি প্রয়োজনে (শরীরের কোনো অঙ্গ) নগ্ন করতে হয় এবং এমতাবস্থায় পুরুষ ব্যতীত কোনো নারী চিকিৎসক পাওয়া না যায়, তখন এটা বৈধ হবে, কিন্তু সম্ভব হলে তা হতে হবে তার স্বামীর উপস্থিতিতে এবং তার শরীর থেকে ততটুকু পরিমাণ জায়গাই বস্ত্রমুক্ত করবে, যতটুকু নগ্ন করা চিকিৎসার প্রয়োজনে জরুরি হয়, আর এটা বৈধ হওয়ার ক্ষেত্রে মূলনীতি হলো এমন কতগুলো দলীল, যা জরুরি মুহূর্তে উম্মতের জন্য শরী‘আতকে শিথিল করে দিয়েছে এবং সংকট দূর করেছে। যেমন, আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿مَا يُرِيدُ ٱللَّهُ لِيَجۡعَلَ عَلَيۡكُم مِّنۡ حَرَجٖ﴾ [المائ‍دة: ٦]
“আর আল্লাহ তোমাদের ওপর কোনো সংকীর্ণতা করতে চান না”। [সূরা আল-মায়েদা, আয়াত: ৬]
আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন:
﴿وَمَا جَعَلَ عَلَيۡكُمۡ فِي ٱلدِّينِ مِنۡ حَرَجٖۚ﴾ [الحج: ٧٨]
“আর তিনি দ্বীনের ব্যাপারে তোমাদের উপর কোন সংকীর্ণতা রাখেন নি”। [সূরা আল-হজ, আয়াত: ৭৮]
স্থায়ী ফতোয়া বোর্ড

নারী-পুরুষ সহাবস্থানে নারী’র কাজ করার বিধান
প্রশ্ন: কোনো যুবতীর জন্য পুরুষদের সাথে সহাবস্থানে থেকে কোনো জায়গায় কাজ করা জায়েয হবে কি, জেনে রাখা ভালো যে, সে জায়গায় সে ছাড়া আরও অন্যান্য মেয়েরাও কাজ করে?
উত্তর: আমার মতে নারী ও পুরুষ সম্মিলিতভাবে কোনো সরকারী কাজ করা, অথবা কোনো বিশেষ ক্ষেত্র বা এলাকায় কাজ করা, অথবা কোনো সরকারী বা বেসরকারী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কাজ করা বৈধ নয়। কারণ, নারী-পুরুষ সহাবস্থানে অনেক ফিতনা-ফ্যাসাদ সৃষ্টি হয়, আর তাতে নারীর লজ্জা-শরমের অবসান ঘটে এবং পুরুষদের ব্যাপরে শ্রদ্ধামিশ্রিত ভয় বা আতঙ্কের ব্যাপারটি বিলুপ্ত হয়ে যায়। কেননা যখন পুরুষ ও নারীদের সংমিশ্রণ ঘটে, তখন অবস্থা এমন হয়ে যায় যে, পুরুষদের নিকট নারীদের থেকে ভয়ের কোনো বিষয় থাকে না এবং নারীদের নিকট পুরুষদের ব্যাপারে লজ্জা করার কোনো ব্যাপার থাকে না, আর এটা (অর্থাৎ নারী ও পুরুষদের মাঝে অবাধ মেলামেশা) ইসলামী শরী‘আত যা দাবি করে, তার সম্পূর্ণ বিপরীত এবং পূর্ববর্তী সৎ ব্যক্তিগণ যে নীতির ওপর প্রতিষ্ঠিত ছিলেন, তারও পরিপন্থী; আপনি কি জানেন না যে, যখন মহিলারা ঈদগাহের উদ্দেশ্যে বের হতেন, তখন নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের জন্য একটি বিশেষ স্থান নির্ধারণ করে দিতেন, যাতে তারা পুরুষদের সাথে মিশে না যায়; যেমন সহীহ হাদীসের মধ্যে এসেছে, নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম পুরুষদের মাঝে ভাষণ দেওয়ার সময় (তাদের মাঝে) অবস্থান করতেন এবং পরে নারীদের উদ্দেশ্যে চলে যেতেন, তারপর তাদেরকে ওয়াজ নসীহত করতেন, এটি প্রমাণ করে যে, তারা নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের খুতবা (ভাষণ) শুনতে পেতেন না অথবা শুনতে পেলেও রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে তারা যা শুনতেন, তা সম্পূর্ণভাবে হৃদয়ঙ্গম করতে পারতেন না। তারপর আপনি কি জানেন না যে, নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«خَيْرُ صُفُوفِ النِّسَاءِ آخِرُهَا، وَشَرُّهَا أَوَّلُهَا. وَخَيْرُ صُفُوفِ الرِّجَالِ أَوَّلُهَا، وَشَرُّهَا آخِرُهَا».
“নারীদের সর্বোত্তম সারি বা কাতার হলো শেষ কাতার এবং সবচেয়ে মন্দ কাতার হলো তাদের প্রথম কাতার, আর পুরুষদের সর্বোত্তম কাতার হলো প্রথম কাতার এবং সবচেয়ে মন্দ কাতার হলো তাদের শেষ কাতার।”  
আর নারীদের প্রথম সারিটি শুধু পুরুষদের থেকে নিকটবর্তী হওয়ার কারণেই তা নিকৃষ্ট সারি হয়ে গেল এবং নারীদের সর্বশেষ সারিটি শুধু পুরুষদের থেকে দূরবর্তী হওয়ার কারণেই তা উৎকৃষ্ট সারি হয়ে গেল, আর যখন এ রকম অবস্থা যৌথভাবে ‘ইবাদত করার ক্ষেত্রে হয়, তখন ‘ইবাদত ভিন্ন অন্য ক্ষেত্রে আপনার অবস্থাটা কেমন হওয়া দরকার! আবার সকলেরই জানা আছে যে, মানুষ ‘ইবাদত করা অবস্থায় লিঙ্গ বা শ্রেণীগত স্বভাব-প্রকৃতির সাথে সংশ্লিষ্ট বিষয়াদি থেকে অনেক দূরে থাকে। সুতরাং যখন ইবাদাত ভিন্ন অন্য ক্ষেত্রে নারী-পুরুষের সহাবস্থান হবে, তখন অবস্থাটি কেমন হবে?! কারণ, শয়তান তো বনী আদমের রক্ত সঞ্চালনের শিরায় শিরায় চলাচল করে সুতরাং সে তো এ ধরনের সহাবস্থানের মধ্যে ফিতনা সৃষ্টি ও বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটানোর ব্যাপারে দূরে দূরে থাকবে না, আর আমি আমাদের ভাইদেরকে যে দিকে আহ্বান করব, তা হলো তারা যেন নারীদের সাথে সহাবস্থান করা থেকে দূরে থাকে এবং তারা যেন জেনে রাখে যে, পুরুষদের জন্য তা খুবই ক্ষতিকর ও বিপজ্জনক, যেমনটি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«مَا تَرَكْتُ بَعْدِى فِى النَّاسِ فِتْنَةً أَضَرَّ عَلَى الرِّجَالِ مِنَ النِّسَاءِ».
“আমি আমার পর জনগণের মাঝে পুরুষদের জন্য মহিলাদের চেয়ে বেশি ক্ষতিকর আর কোনো ফিতনা ছেড়ে যাচ্ছি না।”
সুতরাং আমরা আল-হামদুলিল্লাহ! আমরা মুসলিম, আমাদের একটা বিশেষ বৈশিষ্ট্য আছে- আমাদের জন্য আবশ্যক হলো আমরা সে বৈশিষ্ট্যের দ্বারা অন্যদের থেকে স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য নিয়ে থাকব, আর আমাদের জেনে রাখা আবশ্যক যে, প্রজ্ঞাময় মহান আল্লাহর শরী‘আতের অনুসারী, যিনি বান্দা ও রাষ্ট্রের জন্য কল্যাণকর বিষয় সম্পর্কে জানেন এবং আমাদের আরও জেনে রাখা উচিৎ যে, যারা আল্লাহ তা‘আলার রাস্তা ও শরী‘য়ত থেকে দূরে থাকবে, তারা পথভ্রষ্ট এবং তাদের কর্মকাণ্ড বিশৃঙ্খলা ও বিপর্যয়ের পরিণতি লাভ করে, আর এ জন্য আমরা শুনতে পাই, যেসব জাতির নারীরা পুরুষদের সাথে মিশে একাকার হয়ে গেছে, তারা এখন যথাসাধ্য চেষ্টা করছে এ পরিস্থিতি থেকে মুক্তিলাভ করার জন্য, কিন্তু তারা এতো দূর থেকে কীভাবে সে কাঙ্খিত মুক্তিলাভ করবে। আল্লাহ তা‘আলার নিকট আমাদের আবেদন, তিনি যেন আমাদের দেশ ও মুসলিম অধ্যূষিত দেশসমূহকে যাবতীয় মন্দ, খারাপি ও ফিতনা থেকে রক্ষা করেন।
শাইখ মুহাম্মাদ ইবন সালেহ আল-‘উসাইমীন

ভাবির চেহারার দিকে দৃষ্টি দেওয়ার বিধান
প্রশ্ন: এখানে আধুনিক সভ্যতার দাবিদারগণের কেউ কেউ ভাবির (ভাইয়ের বউ’র) চেহারার দিকে তাকানোকে বৈধ বলে প্রচার করেন এবং এর সপক্ষে কিছু বিশুদ্ধ দলীলও (তাদের দৃষ্টিতে) পেশ করেন। এর জবাবে আপনাদের মতামত কীভাবে ব্যক্ত করবেন, সবিনয়ে জানতে চাই?
উত্তর: ভাইয়ের বউ তথা ভাবি অন্যান্য নারীর মতো-ই অপরিচিত বা পরনারীদের অন্তর্ভুক্ত। সুতরাং তার ভাইয়ের জন্য তার (ভাবির) দিকে তাকানো বৈধ নয়, যেমনিভাবে বৈধ নয় চাচী, মামী ও তাদের মত নারীদের দিকে তাকানো। আর তার জন্য বৈধ নয় সকল অপরিচিত নারীদের মত তাদের কোনো একজনের সাথে একান্ত নির্জনে সাক্ষাৎ করা, আর তাদেরও কারো জন্য বৈধ নয় তার স্বামীর ভাই তথা দেবরের সামনে বা তার (দেবরের) চাচা বা মামার সামনে বেপর্দা অবস্থায় চলাফেরা করা অথবা তাকে নিয়ে সফর করা বা একান্ত নির্জনে অবস্থান বা সাক্ষাৎ করা। কারণ, আল্লাহ তা‘আলা সাধারণভাবে বলেন:
﴿وَإِذَا سَأَلۡتُمُوهُنَّ مَتَٰعٗا فَسۡ‍َٔلُوهُنَّ مِن وَرَآءِ حِجَابٖۚ ذَٰلِكُمۡ أَطۡهَرُ لِقُلُوبِكُمۡ وَقُلُوبِهِنَّۚ﴾ [الاحزاب: ٥٣]
“তোমরা তার পত্নীদের কাছ থেকে কিছু চাইলে পর্দার আড়াল থেকে চাইবে। এ বিধান তোমাদের ও তাদের হৃদয়ের জন্য বেশি পবিত্র”।[সূরা আল-আহযাব, আয়াত: ৫৩]
আহলুল ইলমের বিশুদ্ধ মতে এ আয়াতটি সাধারণভাবে নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের স্ত্রীগণ ও অন্যান্য নারীদের বেলায় সমানভাবে প্রযোজ্য। তাছাড়া আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেছেন:
﴿قُل لِّلۡمُؤۡمِنِينَ يَغُضُّواْ مِنۡ أَبۡصَٰرِهِمۡ وَيَحۡفَظُواْ فُرُوجَهُمۡۚ ذَٰلِكَ أَزۡكَىٰ لَهُمۡۚ إِنَّ ٱللَّهَ خَبِيرُۢ بِمَا يَصۡنَعُونَ ٣٠﴾ [النور: ٣٠ ]
“মুমিনদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে সংযত করে এবং তাদের লজ্জাস্থানের হিফাযত করে। এটিই তাদের জন্য অধিক পবিত্র। তারা যা করে নিশ্চয় আল্লাহ সে বিষয়ে সম্যক অবহিত”। [সূরা আন-নূর, আয়াত: ৩০]
আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন:
﴿يَٰٓأَيُّهَا ٱلنَّبِيُّ قُل لِّأَزۡوَٰجِكَ وَبَنَاتِكَ وَنِسَآءِ ٱلۡمُؤۡمِنِينَ يُدۡنِينَ عَلَيۡهِنَّ مِن جَلَٰبِيبِهِنَّۚ ذَٰلِكَ أَدۡنَىٰٓ أَن يُعۡرَفۡنَ فَلَا يُؤۡذَيۡنَۗ﴾ [الاحزاب: ٥٩]                                                                                                                                                        
“হে নবী! আপনি আপনার স্ত্রীদেরকে, কন্যাদেরকে ও মুমিনদের নারীগণকে বলুন, তারা যেন তাদের চাদরের কিছু অংশ নিজেদের উপর টেনে দেয়। এতে তাদেরকে চেনা সহজতর হবে, ফলে তাদেরকে উত্যক্ত করা হবে না”। [সূরা আল-আহযাব, আয়াত: ৫৯]
আর নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
«لاَ تُسَافِرُ المَرْأةُ إِلاَّ مَعَ ذِي مَحْرَمٍ».
“কোনো মাহরাম পুরুষের সাথে ছাড়া কোনো নারী সফর করবে না।”  
নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেছেন:
«لاَ يَخْلُوَنَّ رَجُلٌ بِامْرَأَةٍ إِلَّا كَانَ ثَالِثَهُمَا الشَّيْطَانُ».
“কোনো ব্যক্তি কখনও কোনো মহিলার সাথে একান্তে সাক্ষাৎ করবে না। তবে জেনে রাখবে এমতাবস্থায় তাদের সাথে তৃতীয় জন হলো শয়তান।”
তাছাড়া তার দেবর বা অনুরূপ কোনো পুরুষের সামনে বেপর্দা অবস্থায় চলার মধ্যে এবং ঐ পুরুষ কর্তৃক তার চেহারার দিকে তাকানোর মধ্যে ফিতনার অনেক কারণ নিহিত রয়েছে এবং আল্লাহ তা‘আলা কর্তৃক নিষিদ্ধ কাজে জড়িয়ে যাওয়ার সম্ভাবনাও অনেক। আল্লাহই ভালো জানেন- এসব বিষয়ই হলো পর্দার বিষয়টি বাধ্যতামূলক হওয়ার, তাদের দিকে দৃষ্টি দেওয়া ও তার সাথে একান্ত নির্জনে সাক্ষাৎ করাটা নিষিদ্ধ ঘোষণার অন্যতম হিকমত। কেননা চেহারা হলো সৌন্দর্যের মূল কেন্দ্রবিন্দু। আর আল্লাহই হলেন তাওফীক দানের একমাত্র মালিক।
শাইখ আবদুল আযীয ইবন আবদিল্লাহ ইবন বায

নারীদের চেহারার দিকে তাকানোর বিধান
প্রশ্ন: পুরুষ ব্যক্তির জন্য অপরিচিত নারীর দিকে আকস্মিক এক নজরের চেয়ে বেশি বার তাকানো বৈধ কিনা? আর যদি তা বৈধ না হয়, তাহলে পুরুষ ছাত্রদের জন্য শিক্ষাগ্রহণের যুক্তি দেখিয়ে এমন বক্তব্যের অনুষ্ঠানে হাযির হওয়া বৈধ হবে কি, যেখানে বক্তব্য পেশ করেন একজন সৌন্দর্য প্রদর্শনকারিনী নারী অথবা শরীরের সাথে লেগে থাকা আঁটসাঁট পোশাক পরিহিতা নারী?
উত্তর: পুরুষ ব্যক্তির জন্য অপরিচিত নারীর দিকে আকস্মিক এক নজরের চেয়ে বেশি বার তাকানো জায়েয হবে না; কিন্তু ডুবে যাওয়া থেকে, অথবা আগুনে পোড়া থেকে অথবা ধ্বংসস্তুপ থেকে অথবা অনুরূপ কোনো বিপদ থেকে উদ্ধার করার মতো জরুরি অবস্থায় অথবা ডাক্তারি পরীক্ষা করা অথবা রোগের চিকিৎসা করানোর মত জরুরি অবস্থায় যখন এ দায়িত্ব পালন করার মত কোনো নারীকে পাওয়া সহজ না হয়, তখন বিশেষ প্রয়োজনের কারণে পুরুষ ব্যক্তির জন্য আক্রান্ত নারীর দিকে একাধিকবার তাকানো বৈধ হবে।                
و صلى الله على نبينا محمد و على آله و صحبه و سلم .
(আল্লাহ সালাত ও সালাম প্রেরণ করুন আমাদের নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওপর এবং তাঁর পরিবার-পরিজন ও সকল সাহাবীর ওপর)।
স্থায়ী ফতোয়া বোর্ড

যৌন কামনা ব্যতীত হারাম শরীফে নারীদের দিকে তাকানো
প্রশ্ন: হারাম শরীফে যৌন কামনা ব্যতীত কোনো পুরুষ নারীদের দিকে তাকালে তাকে শরী‘আতের দৃষ্টিতে দোষী সাব্যস্ত করা হবে কিনা, জেনে রাখা দরকার যে, নারীরাই তাদের দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করে?
উত্তর: বাস্তব কথা হলো হারাম শরীফে নারীদের সমস্যাটি একটি বড় ধরনের সমস্যা। কারণ, নারীদের মধ্যে যারা ইবাদাত ও আনুগত্যের এ স্থানটিতে হাযির হন, তারা এমন চেহারা নিয়ে হাযির হন, যাতে কেউ ফিতনার শিকার না হয়, আবার কোনো কোনো নারী আসে সৌন্দর্য প্রদর্শন করে সুগন্ধি লাগিয়ে এবং কখনও কখনও তার চালচলন থেকে এমন ভাব প্রকাশ পায় যে, সে পুরুষদের সাথে প্রেমালাপ করছে, আর এ কাজটি মসজিদে হারাম ছাড়া অন্য যে কোনো জায়গাতেও অন্যায় ও অপরাধ। সুতরাং তা মসজিদে হারামে কীভাবে বৈধ হতে পারে?! আর তাদের মধ্য থেকে যারা শুনেন ও পাঠ করেন, তাদের প্রতি আমার নসীহত বা উপদেশ হলো, তারা যেন তাদের নিজেদের ব্যাপারে আল্লাহ তা‘আলাকে ভয় করেন এবং যে কেনো অপরাধ সংঘটিত হওয়া থেকে ‘বাইতুল্লাহ’ তথা আল্লাহ তা‘আলার ঘরকে সম্মান করেন। আর পুরুষগণের দায়িত্ব হলো, যখন তারা কোনো নারীকে অশালীন চেহারায় দেখতে পাবে, তখন তাদের কর্তব্য হলো তাকে উপদেশ দেওয়া, ধমক দেওয়া অথবা যিনি তাকে নিষেধ করতে ও ধমক দিতে পারেন, তার সম্পর্কে তাকে জানিয়ে দেওয়া, আর আল-হামদুলিল্লাহ, (সেখানকার) মানুষগুলোর মধ্যে ভালো গুণ রয়েছে।
কিন্তু এটা সত্ত্বেও আমরা বলব: অবশ্যই পুরুষ ব্যক্তির দায়িত্ব হলো সাধ্য অনুযায়ী তার দৃষ্টিকে অবনমিত রাখা, যেমনটি আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন:
﴿قُل لِّلۡمُؤۡمِنِينَ يَغُضُّواْ مِنۡ أَبۡصَٰرِهِمۡ وَيَحۡفَظُواْ فُرُوجَهُمۡۚ﴾ [النور: ٣٠ ]
“মুমিনদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে সংযত করে এবং তাদের লজ্জাস্থানের হিফাযত করে।”  
সুতরাং তার আবশ্যকীয় দায়িত্ব হলো তার দৃষ্টিকে সাধ্যানুসারে অবনমিত রাখা, বিশেষ করে যখন সে নিজেকে দেখবে মজা পাওয়ার জন্য মন আনচান করে, তখন তার জন্য ওয়াজিব হলো বেশি বেশি করে নিচের দিকে তাকানো, আর এ বিষয়ে জনগণের মধ্যে বহু রকম-ফের রয়েছে।
শাইখ মুহাম্মাদ ইবন সালেহ আল-‘উসাইমীন

ইচ্ছাকৃতভাবে হারাম শরীফে নারীদের দিকে তাকানোর বিধান
প্রশ্ন: যখন পুরুষ ব্যক্তি মসজিদে হারামে (জুমু‘আর) সালাত আদায়ের উদ্দেশ্যে বের হয় এবং নারীদের স্থানের খুব কাছাকাছি সালাত আদায় করে, আর কয়েক বার তাদের চেহারার দিকে তাকানো হয়ে যায়, এমতাবস্থায় এর বিধান কী হবে?
উত্তর: হাদীসে সালাতের মধ্যে পুরুষগণ কর্তৃক নারীদের নিকটবর্তী স্থানে অবস্থানের ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। কারণ, পুরুষদের সর্বোত্তম সারি বা কাতার হলো প্রথম কাতার এবং সবচেয়ে মন্দ কাতার হলো তাদের শেষ কাতার। কেননা শেষ কাতারটি নারীদের নিকটবর্তী হওয়ার কারণেই মন্দ কাতার, আর নারীদের সর্বোত্তম সারি বা কাতার হলো শেষ কাতার এবং সবচেয়ে মন্দ কাতার হলো তাদের প্রথম কাতার। কেননা প্রথম কাতারটি পুরুষদের নিকটবর্তী হওয়ার কারণেই মন্দ কাতার। সুতরাং পুরুষের জন্য মসজিদে ইচ্ছকৃতভাবে নারীদের দিকে তাকানো হারাম এবং নারীর আবশ্যকীয় কাজ হলো সে মসজিদে পর্দা পালন করবে এবং এমন জায়গায় প্রবেশ করবে, যেখানে সাধারণত পুরুষগণ প্রবেশ করে না। এটি হলো, সে যদি মসজিদে সালাত আদায় করতে চায়, তবে সালাত আদায়ের জন্য তার নিজস্ব ঘরই উত্তম স্থান।
শাইখ আবদুল্লাহ ইবন আবদির রহমান আল-জিবরীন

ছাত্র কর্তৃক ছাত্রীকে সালাম দেওয়ার বিধান
প্রশ্ন: আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র, কোনো কোনো সময় আমি মেয়েদেরকে সালাম দেই। আমার প্রশ্ন হলো ছাত্র কর্তৃক তার সহপাঠী বান্ধবীদেরকে স্কুল-কলেজে সালাম দেয় কী বৈধ, নাকি অবৈধ?
উত্তর: প্রথমত মেয়েদের সাথে একই জায়গায় একই প্রতিষ্ঠানে লেখাপড়া করাটাই বৈধ নয়। কেননা এটা হলো ফিতনার অন্যতম বড় একটি কারণ। সুতরাং কোনো ছাত্র ও ছাত্রীর জন্য এ ধরনের যৌথ অংশগ্রহণমূলক কোনো কর্মকাণ্ড বৈধ নয়, যেহেতু তার মধ্যে ফিতনার আশঙ্কা রয়েছে। আর সালামের বিষয়টি হলো যে সালামের মধ্যে ফিতনার কোনো কারণ প্রদর্শিত হয় না ছাত্র কর্তৃক ছাত্রীকে এমন শরী‘আত সম্মত সালাম প্রদান করাতে কোনো অসুবিধা নেই এবং ছাত্রী কর্তৃক ছাত্রকে সালাম দেওয়াতেও কোনো সমস্যা নেই, তবে কোনো অবস্থাতেই তারা মুসাফাহা (করমর্দন) করবে না। কারণ, অপরিচিত নারী পুরুষে মুসাফাহা করা বৈধ নয়; বরং সালাম হবে পর্দা রক্ষা করে দূর থেকে এবং সাথে ফিতনার উপলক্ষসমূহ থেকেও দূরে থাকতে হবে, আর কোনো অবস্থাতেই একান্ত নির্জনে এ ধরনের সালাম চলবে না। কারণ, শরী‘আতসম্মত সালামের মধ্যে কোনো ফিতনা না থাকাতে তাতে কোনো দোষ নেই। তবে ছাত্র কর্তৃক ছাত্রীকে অথবা ছাত্রী কর্তৃক ছাত্রকে সালাম দেওয়ার সময় যখন এমন কোনো মানসিকতা থাকে, যা ফিতনার কারণ হিসেবে গণ্য (অর্থাৎ কামভাবের সাথে ও আল্লাহ তা‘আলা কর্তৃক নিষিদ্ধ কোনো উদ্দীপনা নিয়ে সালাম দেওয়া), তখন এ সালাম শরী‘আতের নিয়মানুযায়ী নিষিদ্ধ। আর তাওফীক দানের মালিক হলেন আল্লাহ।
শাইখ আবদুল আযীয ইবন আবদিল্লাহ ইবন বায
 
টেলিভিশনে সৌন্দর্য প্রদর্শনকারিনী নারীদেরকে দেখার বিধান
প্রশ্ন: আপনার নিকট প্রশ্ন হলো টেলিভিশনে সৌন্দর্য প্রদর্শনকারিনী নারীদেরকে দেখার বিধান কী?
উত্তর: উলঙ্গ অথবা অর্ধ উলঙ্গ অথবা বে-পর্দা নারীদেরকে দেখা বৈধ নয়। অনুরূপভাবে এমন পুরুষ লোকদেরকেও দেখা বৈধ নয়, যারা তাদের উরুকে উন্মুক্ত করে রাখে। এ দৃশ্য দেখা কোনো অবস্থাতেই বৈধ নয়, চাই টেলিভিশনে হউক অথবা ভিডিও বা সিনেমাতে হউক অথবা অন্য কোথাও; বরং এ ক্ষেত্রে আবশ্যক হলে চক্ষুকে অবনমিত রাখা এবং দৃষ্টিকে ফিরিয়ে রাখা। কারণ, এটা একটা ফিতনা এবং হৃদয় মনকে নষ্ট করার ও হিদায়াতের পথ থেকে বিচ্যুতির অন্যতম কারণ। কেননা আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿قُل لِّلۡمُؤۡمِنِينَ يَغُضُّواْ مِنۡ أَبۡصَٰرِهِمۡ وَيَحۡفَظُواْ فُرُوجَهُمۡۚ ذَٰلِكَ أَزۡكَىٰ لَهُمۡۚ إِنَّ ٱللَّهَ خَبِيرُۢ بِمَا يَصۡنَعُونَ ٣٠ وَقُل لِّلۡمُؤۡمِنَٰتِ يَغۡضُضۡنَ مِنۡ أَبۡصَٰرِهِنَّ وَيَحۡفَظۡنَ فُرُوجَهُنَّ وَلَا يُبۡدِينَ زِينَتَهُنَّ إِلَّا مَا ظَهَرَ مِنۡهَاۖ وَلۡيَضۡرِبۡنَ بِخُمُرِهِنَّ عَلَىٰ جُيُوبِهِنَّۖ﴾ [النور: ٣٠،  ٣١]                                                                                                                                                        
“মুমিনদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে সংযত করে এবং তাদের লজ্জাস্থানের হিফাযত করে। এটিই তাদের জন্য অধিক পবিত্র। তারা যা করে নিশ্চয় আল্লাহ সে বিষয়ে সম্যক অবহিত। আর মুমিন নারীদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে সংযত করে এবং তাদের লজ্জাস্থানের হিফাযত করে, আর তারা যেন তাদের সৌন্দর্য প্রদর্শন না করে, তবে যা সাধারণত প্রকাশ থাকে। আর তারা তাদের গলা ও বুক যেন মাথার কাপড় দ্বারা ঢেকে রাখে”। [সূরা আন-নূর, আয়াত: ৩০–৩১]
আর রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
«النظرة سهم من سهام إبليس».
“দৃষ্টি হলো ইবলিসের (বিষাক্ত) তীরসমূহের অন্যতম একটি তীর।”
সুতরাং দৃষ্টির বিষয়টি ভয়াবহ বিপজ্জনক, ফলে তার থেকে সাবধান হওয়া উচিৎ এবং প্রতিটি মানুষের উচিৎ এর থেকে নিজেকে রক্ষা করা। আর টেলিভিশন ও অন্যান্য প্রচার মাধ্যমে শুধু তাই দেখা যাবে, যাতে উপকার আছে। যেমন, দীনী (ধর্মীয়) বা শিক্ষা বিষয়ক সভা-সমাবেশ বা সেমিনার, অথবা শিল্পসংক্রান্ত বা এ জতীয় অন্য কোনো অনুষ্ঠান দেখা বৈধ, যা থেকে দর্শক উপকৃত হয়; কিন্তু হারাম কিছু দেখা বৈধ নয়।
শাইখ আবদুল ‘আযীয ইবন আবদিল্লাহ ইবন বায

টেলিভিশনে নারীদের দিকে তাকানোর বিধান
প্রশ্ন: টেলিভিশনের দৃশ্য দেখার মাঝে নারী কর্তৃক অপরিচিত পুরুষকে এবং পুরুষ কর্তৃক অপরিচিত নারীকে দেখার বিধান কী?
উত্তর: বৈধ নয়। কারণ, অধিকাংশ ক্ষেত্রে টেলিভিশনে নারীদের মধ্য থেকে যা প্রকাশ পায়, তা হলো সৌন্দর্য প্রদর্শন ও তাদের কিছু সংবেদনশীল গোপন অঙ্গ, আর পুরুষদের মধ্য থেকেও অনুরূপ সৌন্দর্য ও সাজগোজ প্রকাশ হয়, এটা অধিকাংশ সময় ফিতনাও ফ্যাসাদের উস্কানিদাতা।
স্থায়ী ফতোয়া বোর্ড

পত্রিকা ও ম্যাগাজিনে নারীদের ছবির দিকে তাকানোর বিধান
প্রশ্ন: পত্রিকা, ম্যাগাজিন ও অন্য কোথাও নারীদের ছবির দিকে তাকানোর বিধান কী?
উত্তর: মুসলিম ব্যক্তির জন্য নারীদের চেহারার দিকে এবং তাদের অভ্যন্তরীণ কোনো কিছুর দিকে তাকোনোর (শরী‘আত সম্মত) কোনো সুযোগ নেই -এ ধরনের সুযোগ পত্র-পত্রিকা ও ম্যাগাজিনে যেমন নেই, ঠিক সে সুযোগ অন্য কোথাও নেই। কারণ, এতে ফিতনার যাবতীয় কারণ বিদ্যমান রয়েছে; বরং তার জন্য আবশ্যক হলো তার দৃষ্টিকে এর থেকে অবনমিত করা, যাতে এর থেকে বারণকারী শরী‘আতের দলীলসমূহের ব্যাপক ভিত্তিক আমল হয় এবং সাথে ফিতনার আশঙ্কাটিও মনে থাকে, অনুরূপভাবে সে তাদের থেকে রাস্তা-ঘাটে ও অন্যান্য জায়গায়ও তার দৃষ্টিকে অবনমিত রাখবে, আর আল্লাহর কাছেই তাওফীক চাই।
শাইখ আবদুল ‘আযীয ইবন আবদিল্লাহ ইবন বায

এসব ধারাবাহিক (নাটক) অনুষ্ঠান দেখা হারাম
প্রশ্ন: গান-বাদ্য শুনার বিধান কী? আর যেসব ধারাবাহিক নাটক অনুষ্ঠানে নারীরা সৌন্দর্য প্রদর্শন করে, সেসব অনুষ্ঠান দেখার বিধান কী?
উত্তর: এসব ধারাবাহিক নাটক বা অনুষ্ঠান হারাম ও নিষিদ্ধ। কারণ, এর মধ্যে আল্লাহর পথে বাধা ও অন্তর ব্যাধিগ্রস্ত হওয়ার বিষয় রয়েছে এবং ঝুঁকি রয়েছে এমন সব অশ্লীল কাজে জড়িয়ে যাওয়ার, যা আল্লাহ তা‘আলা হারাম ঘোষণা করেছেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿وَمِنَ ٱلنَّاسِ مَن يَشۡتَرِي لَهۡوَ ٱلۡحَدِيثِ لِيُضِلَّ عَن سَبِيلِ ٱللَّهِ بِغَيۡرِ عِلۡمٖ وَيَتَّخِذَهَا هُزُوًاۚ أُوْلَٰٓئِكَ لَهُمۡ عَذَابٞ مُّهِينٞ ٦ وَإِذَا تُتۡلَىٰ عَلَيۡهِ ءَايَٰتُنَا وَلَّىٰ مُسۡتَكۡبِرٗا كَأَن لَّمۡ يَسۡمَعۡهَا كَأَنَّ فِيٓ أُذُنَيۡهِ وَقۡرٗاۖ فَبَشِّرۡهُ بِعَذَابٍ أَلِيمٍ ٧﴾ [لقمان: ٦،  ٧]
“আর মানুষের মধ্যে কেউ কেউ আল্লাহর পথ থেকে বিচ্যুত করার জন্য অসার বাক্য কিনে নেয় কোনো জ্ঞান ছাড়াই এবং আল্লাহ দেখানো পথ নিয়ে ঠাট্টা-বিদ্রূপ করে। তাদের জন্য রয়েছে অবমাননাকর শাস্তি। আর যখন তার কাছে আমাদের আয়াতসমূহ তিলাওয়াত করা হয়, তখন সে অহংকারে মুখ ফিরিয়ে নেয় যেন সে এটা শুনতে পায় নি, যেন তার কান দুটো বধির। অতএব, তাকে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তির সংবাদ দিন”। [সূরা লোকমান, আয়াত: ৬-৭]
সুতরাং এ আয়াত দু’টিতে পরিষ্কার নির্দেশনা রয়েছে যে, বাদ্যযন্ত্র ও গান শুনাটা আল্লাহর পথ থেকে বিচ্যুতি, আল্লাহর আয়াতসমূহকে ঠাট্টা-বিদ্রূপের বস্তু হিসেবে গ্রহণ এবং আল্লাহর আয়াতসমূহ শুনার ব্যাপারে অহঙ্কার প্রদর্শনের অন্যতম কারণ হিসেবে গণ্য।
আর যে ব্যক্তি এ কাজ করবে, আল্লাহ তা‘আলা তাকে অবমাননাকর শাস্তি ও যন্ত্রণাদায়ক শাস্তির হুমকি দিয়েছেন। আর অধিকাংশ আলেম আয়াতে উল্লিখিত  لَهۡوَ ٱلۡحَدِيث(অসার বাক্য)-এর ব্যাখ্যা করেছেন ‘গান ও বাদ্যযন্ত্র’ এর দ্বারা এবং এমন প্রতিটি শব্দ বা সুর, যা আল্লাহর পথে চলতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। আর সহীহ বুখারীতে বর্ণিত আছে, নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«ليكونَنَّ من أمتي أَقْوَامٌ يَسْتَحِلُّون الحِرَ، والحريرَ، والخمرَ، والمعازفَ».
“আমার উম্মতের মধ্যে অবশ্যই এমন কতগুলো দলের সৃষ্টি হবে, যারা ব্যভিচার, রেশমি কাপড়, মদ ও বাদ্যযন্ত্রকে হালাল মনে করবে।”  
হাদীসে উল্লিখিত الحِرَ শব্দের অর্থالزنا  (ব্যভিচার), আর শব্দের الحرير অর্থ  রেশমি কাপড়,الحرير  শব্দটি (রেশমি কাপড় যা) সর্বজনবিদিত, আর তা পুরুষদের জন্য হারাম, আর الخمر (মদ) শব্দটি সর্বজন পরিচিত, আর তা হলো প্রত্যেক নেশা জাতীয় বা মাতালকারী বস্তু, আর এটা সকলের জন্য হারাম, আর المعازف শব্দের অর্থ খেল-তামাশা বা বিনোদনযন্ত্র। যেমন, বাঁশি, সেতারা, তবলা, তাম্বুরা ইত্যাদি।
সুতরাং মুসলিম নারী ও পুরুষ সকলের জন্য এসব অশ্লীলতা থেকে দূরে থাকা এবং তা থেকে সতর্কতা অবলম্বন করা ওয়াজিব, আর অনুরূপভাবে যেসব ধারাবাহিক নাটকীয় দৃশ্যে নারীদের সৌন্দর্য প্রদর্শনের বিষয় অন্তর্ভুক্ত রয়েছে সেগুলো দেখাও হারাম। কারণ, এর মধ্যে তার দর্শকের জন্য  মহাবিপদ রয়েছে। যেমন, তার অন্তর ব্যাধিগ্রস্ত হওয়া, ব্যক্তিত্ব নষ্ট হওয়া এবং কখনও কখনও এটা তাকে এমন কাজে জড়িয়ে যেতে আকর্ষণ করে, যা আল্লাহ তা‘আলা হারাম ঘোষণা করেছেন, চাই সে দর্শক পুরুষ হউক অথবা নারী। আল্লাহ তা‘আলা সকলকে এমন কাজের তাওফীক দিন, যাতে তাঁর সন্তুষ্টি ও অনুমোদন রয়েছে এবং সকলকে তাঁর ক্রোধের যাবতীয় কারণ ও উপায়-উপকরণ থেকে নিরাপদে রাখুন।
শাইখ আবদুল ‘আযীয ইবন আবদিল্লাহ ইবন বায

পত্রিকা ও ম্যাগাজিনে নারীদের দিকে তাকানোর বিধান
প্রশ্ন: মুসলিম পুরুষের জন্য পত্রিকা বা ম্যাগাজিনে ছাপানো নারীদের ছবির দিকে তাকানো বৈধ হবে কি? আর নারীর প্রতি দৃষ্টি দেওয়া হারাম হওয়ার মাত্রাটা কি একই রকম হবে- চাই তার দিকে সরাসরি দৃষ্টি দেওয়া হউক অথবা ম্যাগাজিনে ছাপানো তার ছবির দিকে তাকানো হউক? আমাদেরকে বুঝিয়ে বলবেন।
উত্তর: কোনো সন্দেহ নেই যে, সৌন্দর্য প্রদর্শনকারিনী নারীদের দিকে তাকানো এমন একটি মারাত্মক বিষয়, যা ফিতনার কারণ বা উপলক্ষ তৈরি করে এবং অশ্লীল কাজের দিকে আহ্বান করে। এ জন্য আল্লাহ তা‘আলা নারীদেরকে পর্দা অবলম্বন করার নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেন:
﴿وَلۡيَضۡرِبۡنَ بِخُمُرِهِنَّ عَلَىٰ جُيُوبِهِنَّۖ﴾ [النور:  ٣١]
“আর তারা তাদের গলা ও বুক যেন মাথার কাপড় দ্বারা ঢেকে রাখে”। [সূরা আন-নূর, আয়াত: ৩১]
আর কোনো সন্দেহ নেই যে, উলঙ্গ বা অর্ধ-উলঙ্গ নারীর ছবির দিকে তাকানোর বিষয়টি তার সাথে ফিতনায় জড়িয়ে যাওয়ার অন্যতম একটি কারণ, আর এর ওপর ভিত্তি করে সিনেমাতে, পত্রিকায়, ম্যাগাজিনে ও অন্য যে কোনো খানে প্রদর্শিত এমন প্রতিটি ছবির দিকে তাকানোই হারাম বলে বিবেচিত হবে, যা বিপর্যয়ের কারণ সৃষ্টি করবে অথবা ফিতনার দিকে আকর্ষণ করবে।
শাইখ আবদুল্লাহ ইবন আবদির রহমান আল-জিবরীন

অশ্লীল ম্যাগাজিন পাঠ করার বিধান
প্রশ্ন: যেসব ম্যাগাজিনে নারীদের প্রায় উলঙ্গ ছবি প্রকাশ করা হয়, সেসব ম্যাগাজিন পাঠ করা এবং ঐসব ছবি দেখার বিধান কী হবে?
উত্তর: আমরা প্রত্যেক মুসলিমকে যাবতীয় ফিতনা ও তার সকল উপায় উপকরণ থেকে দূরে থাকার জন্য উপদেশ দিচ্ছি, যাতে সে তার দীনকে হিফাযত করতে পারে, যে দীন তার কর্মকাণ্ডের সংরক্ষক, আর কোনো সন্দেহ নেই যে, সুন্দরী নারীদের নগ্ন বা প্রায় উলঙ্গ ছবি দেখার বিষয়টি যেনা-ব্যভিচারের দিকে ধাবিত করার এবং অশ্লীল কাজে প্রলুব্ধ করার সবচেয়ে শক্তিশালী হাতিয়ার। কারণ, তা মনের অভিপ্রায় বা আগ্রহকে জাগ্রত করে ঐসব নারীদের সাথে অথবা তাদের মতো অপরাপর নারীদের সাথে মিলিত হওয়ার উদ্যোগ গ্রহণ করতে এবং এ লক্ষ্য অর্জনের পথে সকল উপায় ও সর্বশক্তি নিয়োগ করতে।
সুতরাং স্বীয় নাফসের কল্যাণকামী মুসলিম ব্যক্তির জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত ও মানানসই দিক হলো সে নিজেকে এমন সব বস্তু ও বিষয় থেকে রক্ষা করবে, যা তার চরিত্রকে কলুষিত করে।
শাইখ আবদুল্লাহ ইবন আবদির রহমান আল-জিবরীন

নারীদের ছবি সংগ্রহ করার বিধান
প্রশ্ন: কোনো মানুষ অপরিচিত নারীদের ছবি সংগ্রহ করে এবং তার দিকে তাকায়, আর এর দ্বারা মজা উপভোগ করে এ যুক্তি দেখিয়ে যে, এসব তো ছবি, আসল নয়। সুতরাং এ ব্যাপারে শরী‘আতের বিধান কী?
উত্তর: এটা খুব মারাত্মক ধরনের ঘৃণ্য কাজ, আর এটা হলো মানুষ যখন নারীর দিকে তাকায়, চাই এটা দর্শনযোগ্য প্রচার মাধ্যমের দ্বারা হউক অথবা পত্র-পত্রিকার মাধ্যমে হউক অথবা এগুলো ছাড়া অন্য যে কোনোভাবেই হউক, তখন অবশ্যই এর থেকে পুরুষের অন্তরে ফিতনার সৃষ্টি হয়, যা তাকে আকর্ষণ করে সরাসরি নারীর দিকে তাকানোর সিদ্ধান্ত বা পরিকল্পনা গ্রহণের জন্য, আর এটা হলো একটা দেখা জিনিস। আর আমাদের নিকট খবর আছে যে, কোনো কোনো যুবক সুন্দরী নারীদের ছবি সংগ্রহ করে তাদের দিকে তাকিয়ে আনন্দ পাওয়ার জন্য অথবা তাদের দিকে তাকিয়ে মজা উপভোগ করার জন্য, আর এটি প্রমাণ করে যে, এসব ছবি দর্শনের মধ্যে বড় ধরনের ফিতনা নিহিত রয়েছে। সুতরাং কোনো মানুষের জন্য এসব ছবি দেখা বৈধ নয়, চাই তা কেনো ম্যাগাজিনে হউক অথবা কোনো পত্রিকার মধ্যে হউক অথবা অন্য কোনো খানে। কারণ, এর মধ্যে এমন ফিতনা রয়েছে, যা তার দীনকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে এবং তার অন্তরকে নারীদের দিকে তাকাতে আসক্ত ও অনুরক্ত করবে, ফলে সে সব সময় সরাসরি নারীদের দিকে তাকিয়ে থাকবে, আর আল্লাহই সবকিছু ভালো জানেন।
শাইখ মুহাম্মাদ ইবন সালেহ আল-‘উসাইমীন

বিভিন্ন প্রকার প্রচার মাধ্যমে নারীদের দিকে তাকানোর বিধান
প্রশ্ন: পুরুষদের পক্ষ থেকে টেলিভিশন অথবা সিনেমা বা ভিডিওর পর্দায় প্রদর্শিত অভিনেত্রী বা শিল্পী নারীদের চেহারা ও শরীররে দিকে তাকানো অথবা পত্রিকার পাতায় ছাপানো নারীদের ছবির দিকে তাকানোর বিধান কী?   
উত্তর: তাদের দিকে তাকানো হারাম। কারণ, এগুলো থেকে ফিতনা সৃষ্টি হওয়ার সমূহ আশঙ্কা রয়েছে, তাছাড়া আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿قُل لِّلۡمُؤۡمِنِينَ يَغُضُّواْ مِنۡ أَبۡصَٰرِهِمۡ وَيَحۡفَظُواْ فُرُوجَهُمۡۚ ذَٰلِكَ أَزۡكَىٰ لَهُمۡۚ إِنَّ ٱللَّهَ خَبِيرُۢ بِمَا يَصۡنَعُونَ ٣٠﴾ [النور: ٣٠ ]
“মুমিনদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে সংযত করে এবং তাদের লজ্জাস্থানের হিফাযত করে। এটিই তাদের জন্য অধিক পবিত্র। তারা যা করে নিশ্চয় আল্লাহ সে বিষয়ে সম্যক অবহিত”। [সূরা আন-নূর, আয়াত: ৩০]
নারীদের থেকে দৃষ্টি সংযত রাখার বিষয়টি ব্যাপক, চাই সরাসরি নারী হোক অথবা ছবিতে নারী, চাই তারা পত্রিকার পাতায় থাকুক অথবা টেলিভিশনের পর্দায় অথবা অন্য কোথাও।
শাইখ আবদুল ‘আযীয ইবন আবদিল্লাহ ইবন বায

টেলিফোনে নারী পুরুষে কথা বলার বিধান
প্রশ্ন: যদি অবিবাহিত যুবক অবিবাহিতা যুবতীর সাথে টেলিফোনে কথা বলে, তাহলে সে ক্ষেত্রে এর বিধান কী হবে?
উত্তর: অপরিচিত নারীর সাথে এমন আলাপ করা বৈধ নয়, যা যৌনতাকে উস্কে দেয়। যেমন, প্রেমালাপ করা, আদর সোহাগ জাতীয় কথা বলা এবং কোমল কণ্ঠে কথা বলা ইত্যাদি, চাই সে কথা বলাটা টেলিফোনে হউক অথবা অন্য যে কোনোভাবেই হউক (তা বৈধ হবে না)। কারণ, আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন:
﴿فَلَا تَخۡضَعۡنَ بِٱلۡقَوۡلِ فَيَطۡمَعَ ٱلَّذِي فِي قَلۡبِهِۦ مَرَضٞ﴾ [الاحزاب: ٣٢]
“সুতরাং পর-পুরুষের সাথে কোমল কন্ঠে এমনভাবে কথা বলো না। কারণ, এতে যার অন্তরে ব্যাধি আছে, সে প্রলুব্ধ হয়”। [সূরা আল-আহযাব, আয়াত: ৩২]
তবে কোনো প্রয়োজনের কারণে সাময়িকভাবে কথা বলাতে কোনো অসুবিধা নেই, যখন সে ফিতনা-ফ্যাসাদের আশঙ্কা থেকে মুক্ত হয়ে কথা বলে; কিন্তু সে কথা হবে প্রয়োজন পরিমাণ, তার বেশি নয়।
শাইখ আবদুল্লাহ ইবন আবদির রহমান আল-জিবরীন

নারী ও পুরুষের মাঝে চিঠি আদান-প্রদান করার বিধান
প্রশ্ন: যখন পুরুষ ব্যক্তি অপরিচিত নারীর সাথে পরস্পরের মাঝে চিঠিপত্র আদান-প্রদানের কাজ করে এবং এক পর্যায়ে তারা উভয়ে প্রেমিক প্রেমিকা হয়ে যায়, তখন এ কাজটি কি হারাম বলে বিবেচিত হবে?
উত্তর: এ ধরনের কাজ বৈধ নয়। কারণ, তা উভয়ের মাঝে যৌনতাকে উস্কে দেয় এবং স্বভাব-প্রকৃতিকে ঠেলে দেয় তাদের মাঝে দেখা-সাক্ষাৎ ও মিলনের পথ খুঁজে বেড়াতে, আর পারস্পরিক এ প্রেমালাপ ও চিঠি চালাচালি অনেক ফিতনার জন্ম দেয় এবং মনের মধ্যে যেনা-ব্যভিচারের আসক্তি ও আকাঙ্খার বীজ বপন করে, যা অশ্লীলতার মধ্যে নিক্ষেপ করে অথবা অনাচারের ক্ষেত্র তৈরি করে; সুতরাং যে ব্যক্তি তার নাফসের কল্যাণ ও প্রতিরক্ষা কামনা করে, আমরা তাকে উপদেশ দিচ্ছি তার দীন ও মান-সম্মানকে হিফাযত করার জন্য এ ধরনের চিঠি চালাচালি, কথপোকথন ইত্যাদি থেকে নিরাপদ দূরত্বে থাকার জন্য। আর আল্লাহ হলেন তাওফীক দানকারী।
শাইখ আবদুল্লাহ ইবন আবদির রহমান আল-জিবরীন

অপরিচিত বা পরনারীর সাথে নির্জনে অবস্থান করা হারাম
প্রশ্ন: এখানে কোনো কোনো মানুষ অপরিচিত বা পরনারীর সাথে কথা বলার ব্যাপারটিকে খুবই স্বাভাবিক মনে করে, উদাহরণস্বরূপ ধরে নিন- যখন কোনো পুরুষ ব্যক্তি তার বন্ধুর বাড়িতে আসে এবং তাকে না পায়, তখন তার স্ত্রী আগন্তুক এ পুরুষের (তার স্বামীর বন্ধুর) সাথে কথা বলে, বৈঠকখানা খুলে দেয় এবং তার জন্য চা ও কফি সরবরাহ করে। সুতরাং এটা কি বৈধ হবে? জেনে রাখা দরকার যে, ঘরের মধ্যে এ স্ত্রী লোকটি ছাড়া আর কেউ নেই।  
উত্তর: কোনো নারীর জন্য তার স্বামীর অনুপস্থিতিতে তার স্বামীর ঘরে কোনো পরপুরুষকে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া বৈধ নয়, যদিও সে পুরুষ লোকটি তার স্বামীর বন্ধু হয় এবং যদিও সে কোনো বিশ্বস্ত বা নির্ভরযোগ্য ব্যক্তি হয়। কারণ, এর মধ্যে অপরিচিত বা পরনারীর সাথে একান্ত নির্জনে অবস্থান করার ব্যাপার রয়েছে, অথচ হাদীসের মধ্যে বর্ণিত হয়েছে, নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«لاَ يَخْلُوَنَّ رَجُلٌ بِامْرَأَةٍ إِلَّا كَانَ ثَالِثَهُمَا الشَّيْطَانُ».
“কোনো ব্যক্তি কখনও কোনো মহিলার সাথে একান্তে সাক্ষাৎ করবে না, তবে জেনে রাখবে এমতাবস্থায় তাদের সাথে তৃতীয় জন হলো শয়তান।”
অনুরূপভাবে পুরুষ ব্যক্তির জন্য হারাম হলো তার বন্ধুর স্ত্রীকে তার নিকট প্রবেশ করতে বলা এবং তার খেদমত করতে বলা, যদিও সে আমানতদারীতা ও দীনদারীর কারণে নিজের ব্যাপারে আস্থাবান হয়ে থাকে এ আশঙ্কায় যে, শয়তান তাকে কুমন্ত্রণা দিবে এবং তাদের মাঝে অনুপ্রবেশ করবে।
আর স্বামীর উপর আবশ্যকীয় কতৃব্য হলো অপরিচিত কোনো পুরুষ ব্যক্তি ঘরের মধ্যে প্রবেশ করানো থেকে তার স্ত্রীকে সাবধান ও সতর্ক করা, যদিও সে পুরুষ ব্যক্তিটি তার নিকটাত্মীয়দের কেউ হয়। কারণ, নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«إيَّاكُمْ وَالدُّخُولَ عَلَى النِّسَاءِ . قَالُوا : يَا رَسُولَ اللَّهِ , أَرَأَيْتَ الْحَمْوَ ؟ قَالَ : الْحَمْوُ الْمَوْتُ».
“তোমরা পরনারীদের নিকট অনুপ্রবেশ করা থেকে বিরত থাক। সাহাবীগণ বললেন: হে আল্লাহর রাসূল! দেবরের (অনুপ্রবেশের) ব্যাপারে আপনার মতামত কী? জবাবে তিনি বললেন: দেবর তো মৃত্যুর মতো ভয়ঙ্কর।”
আর ‘দেবর’ হচ্ছে স্বামীর ভাই অথবা তার নিকটতম আত্মীয়। সুতরাং সে (দেবর) ভিন্ন অন্যের অনুপ্রবেশ তো আরো উত্তমভাবেই অগ্রহণযোগ্য।
শাইখ আবদুল্লাহ ইবন আবদির রহমান আল-জিবরীন

বিবাহপূর্ব সম্পর্কের বিধান
প্রশ্ন: এ ধরনের সম্পর্কের বিধান কী?
উত্তর: প্রশ্নকর্তার ‘বিবাহপূর্ব’ কথার দ্বারা যদি উদ্দেশ্য হয় ‘সহবাসের পূর্বে এবং বিবাহচুক্তি সম্পাদনের পর’ তাহলে এ ধরনের সম্পর্কে কোনো সমস্যা নেই। কারণ, ‘আকদ’ তথা বিবাহ সম্পাদনের দ্বারা সে তার স্ত্রী হয়ে গেছে, যদিও তথাকথিত বাসর অনুষ্ঠান সম্পন্ন হয় নি, আর যদি এ ধরনের সম্পর্ক ‘আকদ’ সম্পন্ন হওয়ার পূর্বে প্রস্তাব চলাকালীন সময়ের মাঝে হয় অথবা এরও পূর্বে হয়, তাহলে তা হারাম ও অবৈধ। কারণ, কোনো পুরুষ মানুষের জন্য বৈধ নয় যে, সে অপরিচিত নারীর সাথে কথা বলার মাধ্যমে অথবা তার প্রতি দৃষ্টি দেওয়ার মাধ্যমে অথবা একান্ত নির্জনে বসে মজা উপভোগ করবে। কেননা, নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে হাদীস বর্ণিত আছে যে, তিনি বলেন:
«لاَ يَخْلُوَنَّ رَجُلٌ بِامْرَأَةٍ إِلاَّ وَمَعَهَا ذُو مَحْرَمٍ، وَلاَ تُسَافِرُ المَرْأةُ إِلاَّ مَعَ ذِي مَحْرَمٍ».
“কোনো মাহরাম পুরুষ সাথী ছাড়া কোনো ব্যক্তি কখনও কোনো মহিলার সাথে একান্তে সাক্ষাৎ করবে না, আর কোনো মাহরাম পুরুষের সাথে ছাড়া কোনো নারী সফর করবে না।”  
মোটকথা: যখন এ ধরনের মেলামেশা ‘আকদ’ সম্পন্ন হওয়ার পরে হয়, তাহলে তাতে কোনো দোষ নেই, আর যদি ‘আকদ’ সম্পন্ন হওয়ার পূর্বে হয়, যদিও তা প্রস্তাবের পরে ও কবুলের আগে হয়, তবুও তা বৈধ হবে না এবং তার জন্য এটা হারাম হবে। কেননা বিবাহচুক্তি সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত তার জন্য সে অপরিচিত নারী।
শাইখ মুহাম্মাদ ইবন সালেহ আল-‘উসাইমীন
মাহরাম পুরুষ সঙ্গী ছাড়া কোনো নারী সফর করবে না
প্রশ্ন: মাহরাম পুরুষ সঙ্গী ছাড়া কাজের মেয়ের আগমনের ব্যাপারে শরী‘আতের বিধান কী? তার নিজ শহর থেকে মাহরাম পুরুষ ব্যতীত আগমন করা অথবা যে ঘরে কাজ করবে সেখানে তার সাথে মাহরাম পুরুষের উপস্থিতি ছাড়া তার একাকি অবস্থান করাটা কি হারাম?
উত্তর: মাহরাম পুরুষ সঙ্গী ছাড়া কোনো নারীর সফর করা বৈধ নয়, চাই সে কাজের মেয়ে হউক অথবা অন্য যে কোনো নারী। কেননা নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
«لاَ تُسَافِرُ المَرْأةُ إِلاَّ مَعَ ذِي مَحْرَمٍ».
“কোনো মাহরাম পুরুষের সাথে ছাড়া কোনো নারী সফর করবে না।”
তবে মহিলার জন্য ঘরে অবস্থান করার জন্য মাহরাম পুরুষের উপস্থিতি বা অবস্থানের প্রয়োজন নেই; কিন্তু অপরিচিত বা পরপুরুষের জন্য কোনো নারীকে নিয়ে একান্তে অবস্থান করার কোনো সুযোগ (ইসলামে) নেই। কারণ, নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
«لَا يَخْلُوَنَّ رَجُلٌ بِامْرَأَةٍ إِلَّا مَعَ ذِي مَحْرَمٍ».
“কোনো মাহরাম পুরুষ সাথী ছাড়া কোনো ব্যক্তি কখনও কোনো মহিলার সাথে একান্তে সাক্ষাৎ করবে না।”  
তিনি আরও বলেন:
«لاَ يَخْلُوَنَّ رَجُلٌ بِامْرَأَةٍ ، فَإِنَّ ثَالِثَهُمَا الشَّيْطَانُ».
“কোনো ব্যক্তি কখনও কোনো মহিলার সাথে একান্তে সাক্ষাৎ করবে না। কারণ, তাদের সাথে তৃতীয় জন হলো শয়তান।” ইমাম আহমাদ ইবন হাম্বল রহ. হাদীসটি সহীহ সনদে উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণনা করেছেন।
শাইখ আবদুল ‘আযীয ইবন আবদিল্লাহ ইবন বায

মাহরাম পুরুষ ব্যতীত ভিন্ন এলাকা বা বিদেশ থেকে কাজের মেয়ে নিয়ে আসার বিধান
প্রশ্ন: বিদেশ থেকে মাহরাম পুরুষ ছাড়া কাজের মেয়ে নিয়ে আসার বিধান কী, যখন সে মেয়েটি মুসলিম হয়? যেমন এ কাজটি অনেক মানুষ করে থাকে, বিশেষ করে ছাত্রগণ। আর তারা যুক্তি দেখান যে, তারা বাধ্য হয়ে এটা করেন, আবার তাদের কেউ কেউ যুক্তি পেশ করেন যে, মাহরাম পুরুষ ছাড়া সফর করার যে গুনাহ এটা তার (কাজের মেয়ের) ওপরই বর্তাবে অথবা কাজের মেয়ে নিয়ে আসার দায়িত্বে নিয়োজিত অফিস কর্তৃপক্ষের উপর বর্তাবে? আশা করি আপনি এ বিষয়টি পরিষ্কার করে বর্ণনা করবেন। আল্লাহ আপনাদেরকে হিফাযত করুন এবং উত্তম পুরস্কার দান করুন।  
উত্তর: মাহরাম পুরুষ ছাড়া কাজের মেয়ে নিয়ে আসার কাজটি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের অবাধ্যতার শামিল। কেননা তাঁর নিকট থেকে সহীহ বর্ণনা এসেছে, তিনি বলেন:
«لاَ تُسَافِرُ المَرْأةُ إِلاَّ مَعَ ذِي مَحْرَمٍ».
“কোনো মাহরাম পুরুষের সাথে ছাড়া কোনো নারী সফর করবে না।”
তাছাড়া মাহরাম পুরুষের সাথে ছাড়া তার আগমন করাটা কখনও কখনও তার পক্ষ থেকে অথবা তার সাথে ফিতনার কারণ হতে পারে, আর ফিতনার সকল কারণ বা উপলক্ষ ইসলামী শরী‘আতে নিষিদ্ধ। কেননা যা হারামের দিকে ধাবিত করে, তাও হারাম বলে গণ্য।
আর কোনো কোনো মানুষ কর্তৃক এ ব্যাপারে শৈথিল্য প্রদর্শন করাটা বিপজ্জনক, আর যারা বলেন: ‘বিষয়টি খুবই জরুরি বিষয় (হওয়াতে তা না করার উপায় নেই)’, তাদের এ কথার কেনো নির্ভরযোগ্য ভিত্তি ও দলীল নেই। কারণ, আমরা যদি কাজের মেয়ের আবশ্যকতার বিষয়টি জরুরি বলে মেনেও নেই, তাহলে এটা জরুরি নয় যে, তাকে মাহরাম পুরুষ সঙ্গী ছাড়াই আসতে হবে। অনুরূপভাবে কোনো কোনো মানুষের এ কথারও কোনো নির্ভরযোগ্য ভিত্তি ও দলীল নেই, যারা বলে: ‘মাহরাম পুরুষ ছাড়া সফর করার যে গুনাহ এটা তার (কাজের মেয়ের) উপরই বর্তাবে অথবা কাজের মেয়ে নিয়ে আসার দায়িত্বে নিয়োজিত অফিস কর্তৃপক্ষের উপর বর্তাবে।’ কারণ, যে ব্যক্তি হারাম কাজের কর্তার জন্য দরজা উন্মুক্ত করে দেবে, সে ব্যক্তি গুনাহের সহযোগিতা করার কারণে সে ক্ষেত্রে তার অংশীদার হবে। আর আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿وَلَا يَجۡرِمَنَّكُمۡ شَنَ‍َٔانُ قَوۡمٍ أَن صَدُّوكُمۡ عَنِ ٱلۡمَسۡجِدِ ٱلۡحَرَامِ أَن تَعۡتَدُواْۘ وَتَعَاوَنُواْ عَلَى ٱلۡبِرِّ وَٱلتَّقۡوَىٰۖ وَلَا تَعَاوَنُواْ عَلَى ٱلۡإِثۡمِ وَٱلۡعُدۡوَٰنِۚ وَٱتَّقُواْ ٱللَّهَۖ إِنَّ ٱللَّهَ شَدِيدُ ٱلۡعِقَابِ ٢﴾ [المائ‍دة: ٢]  
“তোমাদেরকে মসজিদুল হারামে প্রবেশে বাধা দেওয়ার কারণে কোনো সম্প্রদায়ের প্রতি বিদ্বেষ তোমাদেরকে যেন কখনই সীমালঙ্ঘনে প্ররোচিত না করে। নেককাজ ও তাকওয়ায় তোমরা পরস্পর সাহায্য করবে এবং পাপ ও সীমালংঘনে একে অন্যের সাহায্য করবে না। আর আল্লাহর তাকওয়া অবলম্বন কর। নিশ্চয় আল্লাহ শাস্তিদানে কঠোর”। [সূরা আল-মায়িদা, আয়াত: ২]
আর আল্লাহ তা‘আলা ও তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম নির্দেশ দিয়েছেন সৎকাজে আদেশ ও অসৎকাজে নিষেধ করার জন্য, আর মাহরাম পুরুষ ছাড়া কাজের মেয়ে নিয়ে আসার মানেই হলো অসৎকাজের স্বীকৃতি প্রদান করা, প্রতিবাদ করা নয়।
আল্লাহ তা‘আলার নিকট আবেদন করছি, তিনি যেন আমাদের সকলকে তাঁর সঠিক পথ তথা সিরাতুল মুস্তাকীমের পথ দেখান- তাদের পথ, যাদেরকে তিনি পুরস্কৃত করেছেন, তাঁরা হলেন নবীগণ, চরম সত্যবাদী ও শহীদগণ এবং সৎকর্মশীল ব্যক্তিগণ।
শাইখ মুহাম্মাদ ইবন সালেহ আল-‘উসাইমীন

মাহরাম পুরুষ ব্যতীত ভিন্ন শহরে নারীর অবস্থান করার বিধান
প্রশ্ন: আমার প্রশ্ন, নারীর কাজ করা এবং মাহরাম পুরুষ ব্যতীত ভিন্ন শহরে তার অবস্থান করার বিধান প্রসঙ্গে, জেনে রাখা দরকার যে, আমি বর্তমানে এমন এক রাজ্যে এমন এক স্থানে কাজ করি যেখানে সবাই নারী এবং আমি কর্মক্ষেত্রের সাথেই সংশ্লিষ্ট অভ্যন্তরীণ বিভাগে বসবাস করি, আর সেখানের সবাইও নারী। ‘আল-হামদুলিল্লাহ’ আল্লাহর শুকরিয়া যে, এখানে নারী-পুরুষে মেশামেশি বা আল্লাহ তা‘আলার অসন্তুষ্টির কোনো কারণ বিদ্যমান নেই, চাই সেটা কর্মক্ষেত্রে হউক অথবা বসবাসের ক্ষেত্রেই হউক, আর আমি শরী‘আতসম্মত মাহরাম পুরুষ হিসেবে আমার ভাইকে নিয়ে আসার উদ্যোগ নিয়েছি; কিন্তু আমি তাতে সক্ষম হই নি। সুতরাং বর্তমানে আমার এ অবস্থা এবং মাহরাম পুরুষ ব্যতীত এখনে আমার অবস্থানের ব্যাপারে শরী‘আতের বিধান কী? জেনে রাখা দরকার যে, প্রথমত: আমি এখানে হাযির হওয়ার পূর্বে আল্লাহ তা‘আলার নিকট বহুবার ‘ইস্তিখারা’  করেছি এবং অনুভব করেছি যে, আল্লাহ অনেক কাজ আমার জন্য সহজ করে দেবেন। দ্বিতীয়ত: কর্মক্ষেত্রে আমার শহরে নারী-পুরুষে মেশামেশি ও মন্দ চরিত্রের দিক থেকে অবস্থা এমন যে, কোনো সভ্য মুসলিম সেখানে তার কর্মকাণ্ড চালিয়ে যেতে উৎসাহবোধ করে না। অতএব, আমি যা বললাম তার আলোকে আপনাদের অভিমত কী?
উত্তর: আমরা আল্লাহর নিকট আমাদের ও আপনার জন্য তাওফীক ও উত্তম পরিবেশ প্রার্থনা করছি, আর আপনি এই যে অবস্থান করছেন তাতে কোনো অসুবিধা নেই। কেননা কোনো শহরে মাহরাম পুরুষ ব্যতীত নারীর অবস্থান করাটা শরী‘আতের দৃষ্টিকোণ থেকে কোনো দোষের নয় এবং তাতে কোনো সমস্যাও নেই, বিশেষ করে এটা যখন সমজাতীয়দের ব্যাপার তখন তাতে বিপদ বা ঝুঁকি নেই। তাছাড়া পুরুষদের থেকে নিরাপদ দূরত্বে থেকে নারীদের মাঝে কাজ করাটা আল্লাহ তা‘আলা কর্তৃক বৈধ করা পেশার অন্তর্ভুক্ত অথবা নারীদের মাঝে অভ্যন্তরীণ বিভাগে অবস্থান করাটাও কোনো সমস্যা নয়; কিন্তু আপনার জন্য নিষিদ্ধ হলো একাকি অবস্থায় সফর করা। সুতরাং আপনি মাহরাম পুরুষ ছাড়া সফর করবেন না এবং মাহরাম পুরুষ ছাড়া কর্মস্থলে আগমন করবেন না। আর যখন আপনার দেশ বা শহর থেকে মাহরাম পুরুষ ছাড়া আগমন করে ফেলেছেন, তখন আপনার জন্য আবশ্যক হলো আল্লাহ তা‘আলার নিকট তাওবা ও ক্ষমা প্রার্থনা করা এবং এ ধরনের ভুলের পুনরাবৃত্তি না করা, আর যখন সফর করার ইচ্ছা করবেন, তখন আপনার জন্য অপরিহার্য হলো মাহরাম পুরুষ সঙ্গী থাকা। সুতরাং মাহরাম পুরুষ আসা পর্যন্ত ধৈর্যধারণ করবেন। কেননা নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«لاَ تُسَافِرُ المَرْأةُ إِلاَّ مَعَ ذِي مَحْرَمٍ».
“কোনো মাহরাম পুরুষের সাথে ছাড়া কোনো নারী সফর করবে না।”
আর যদি নিকটাত্মীয়দের মধ্য থেকে কোনো মাহরাম পুরুষের পক্ষে এ দায়িত্ব পালন করাটা সহজ হয় ভালো, নতুবা বিয়ের মাধ্যমে সে অভাব পূরণ করতে হবে, ফলে আপনার জন্য স্বামীই মাহরাম পুরুষের ভূমিকায় সফরের সাথী হতে পারবে। সুতরাং বিষয়টি আল্লাহর হাতে ছেড়ে দিন, আর সফরের সময় আপনার দায়িত্ব হলো আপনার সাধ্যানুসারে কাজ করা, দেখবেন শেষ পর্যন্ত মাহরাম পুরুষের অভাব পূরণ হয়ে গেছে। আর নারীদের মাঝে আপনার এখনকার অবস্থান এবং বৈধ কর্মে নিয়োজিত থাকার মধ্যে কোনো সমস্যা নেই, আল-হামদুলিল্লাহ।
আর কোনো সন্দেহ নেই যে, মাহরাম পুরুষ সাথে ছাড়া নারীর সফর খুবই বিপজ্জনক এবং তাতে ঝুঁকি ও ফিতনার সমূহ আশঙ্কা রয়েছে, আর এ জন্যই আমরা আমাদের দীনী বোনদেরকে উপদেশ দিচ্ছি এর থেকে সতর্ক হওয়ার জন্য এবং তারা যেন মাহরাম পুরুষ ছাড়া কোনো অবস্থাতেই সফর না করেন। আমরা তাদেরকে আরও উপদেশ দিচ্ছি পুরুষদের সাথে মেশার অথবা পুরুষের সাথে কাজ করার অথবা পুরুষদের সাথে নির্জনে অবস্থান করার প্রশ্নে সর্বোচ্চ সতর্ক হওয়ার জন্য -এ সবগুলো ব্যাপারে অবশ্যই সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে, চাই তা হাসপাতালেই হউক অথবা অন্য যে কোনো জায়গাতেই হউক। আর সকলের জন্য আমার উপদেশ হলো, তারা যেন কোনো নারীকে তার মাহরাম পুরুষ ছাড়া আসতে না বলেন, নারী যেন মাহরাম পুরুষ সঙ্গী ছাড়া সফর না করে, পুরুষের সাথে কাজ না করে এবং তার মাহরাম নন এমন কোনো পুরুষের সাথে একান্ত নির্জনে অবস্থান না করে। কেননা তা ফিতনার মহাসড়ক, আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এটা নিষেধ করেছেন এবং তাকে হারাম ঘোষণা করেছেন, তিনি বলেন:
«لاَ يَخْلُوَنَّ رَجُلٌ بِامْرَأَةٍ ، فَإِنَّ ثَالِثَهُمَا الشَّيْطَانُ».
“কোনো ব্যক্তি কখনও কোনো মহিলার সাথে একান্তে সাক্ষাৎ করবে না। কারণ, তাদের সাথে তৃতীয় জন হলো শয়তান।”
আর এ হাদীসের উদ্দেশ্য হলো, আবশ্যকীয়ভাবে নারী ও তার অভিভাবকদেরকে সম্মান রক্ষার জন্য উদ্বুদ্ধ করা এবং ফিতনার যাবতীয় কারণ ও উপলক্ষ থেকে নিরাপদ দূরত্বে অবস্থান করা, আর নারী কর্তৃক কাজ করার ব্যাপারে কথা হলো, বৈধ কাজে নারী নারীদের মাঝে কাজ করাতে কোনো অসুবিধা নেই, তাতে তার দীনের ক্ষতি হবে না এবং পুরুষদের সাথে ফিতানার কোনো কারণও তৈরি হবে না।
শাইখ আবদুল ‘আযীয ইবন আবদিল্লাহ ইবন বায

জাতীয় বা অনুরূপ অনুষ্ঠানে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্রীদেরকে বাদ্যের তালে তালে নৃত্য প্রদর্শনীতে ব্যবহার করা এবং এ কাজে তাদেরকে বাধ্য করার বিধান সম্পর্কে ফতোয়া
প্রশ্ন: উচ্চ মাধ্যমিক, মাধ্যমিক ও প্রাথমিক স্তরের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্রীদেরকে বাদ্যের তালে তালে কুচকাওয়াজ, সুরসঙ্গীত ও নৃত্যের কাজে ব্যবহার করা বৈধ হবে কি, অথচ এসব ছাত্রী এমন সংকীর্ণ টাইটপিট পাজামা পরিধান করে, যা শরীরের প্রতিটি অঙ্গ ও যৌন-সম্মোহনী বস্তুগুলো পরিমাপসহ প্রকাশ করে দেয় এবং পরিধান করে দুই বিগত পরিমাণ লম্বা পোশাক?
উত্তর: এটা বৈধ নয়। কারণ, তাতে তাদের গোপন অঙ্গসমূহ উন্মুক্ত হয়ে যায় এবং সংক্ষিপ্ত (ছোট) ও সংকীর্ণ পোশাক পরিধান করার কারণে তাদের দেহের যৌন-সম্মোহনী বস্তুগুলো প্রকাশ পেয়ে যায়, তাছাড়া তাতে বাদ্যের তালে তালে নৃত্য ও সুর-সঙ্গীতের মত আমোদ-প্রমোদের ব্যাপারে রয়েছে এবং এ দু’টি জিনিসই অত্যন্ত খারাপ উত্তেজক, যা উপস্থিত দর্শকদের যৌনতাকে উস্কে দেয় এবং তাতে অশ্লীলতা, অন্যায় ও নৈতিক অবক্ষয়ের উপায়-উপকরণসমূহ সক্রিয় হয়ে উঠে, আর এ জন্য শারিরীক কুচকাওয়াজের আগের পরের সকল কাজই অবৈধ, আর তার জন্য কতগুলো প্রাথমিক প্রস্তুতি রয়েছে, তা হলো এসব ছাত্রীদেরকে আপত্তিকর পোশাক পরিধান করে কুচকাওয়াজের জন্য প্রস্তুতিমূলক বাদ্যের তালে তালে নৃত্য ও সুর-সঙ্গীতের প্রশিক্ষণ দেওয়া, যাতে তারা এ ঘৃণিত বিষয়ে দক্ষ ও পারদর্শী হয়ে উঠে এবং উপস্থিত দর্শকদের আনন্দ দেওয়ার দ্বারা খারাপির ক্ষেত্রে সফলতার গ্যারান্টি ও নিশ্চয়তা বিধান করতে পারে, আর তার (কুচকাওয়াজের) পরপর আরও কতগুলো নিকৃষ্ট কর্ম আছে যেগুলোর দ্বারা অথবা যেগুলোর অধিকাংশের দ্বারা তার আনুষ্ঠানিকতা শেষ হয়, আর সেগুলো হলো— যার উপর তারা প্রশিক্ষণ নিয়েছে এবং যে ক্ষেত্রে তারা প্রদর্শনী করেছে, তার জন্য তাদেরকে দেওয়া পুরস্কার গ্রহণ করা, ফলে তারা তার থেকে পঙ্কিলতা উপার্জন করল, যার দ্বারা তারা দুনিয়ার আমোদ-প্রমোদ ও রঙ্গ-তামাশা অর্জন করবে।  
প্রশ্ন: এ ধরনের অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করার সুযোগ দানের জন্য কি ছাত্রীর অভিভাবক গুনাহগার হবেন?
উত্তর: এমন প্রত্যেক ব্যক্তিকেই তার দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে, যাকে আল্লাহ তা‘আলা কোনো দায়িত্ব দিয়েছেন। সুতরাং ছাত্রীর অভিভাবক পিতা বা তার পক্ষ থেকে অভিভাবকের দায়িত্ব পালনকারীকে তার দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে। অতএব, তিনি যদি ইসলামের আদব বা শিষ্টাচারগুলো তাকে সুন্দরভাবে শিক্ষা দেন এবং তাকে খারাপ ও অন্যায় কাজের পিচ্ছিল জায়গাসমূহ থেকে রক্ষা করেন, তাহলে আল্লাহ তাকে পুরস্কার ও সাওয়াব দান করবেন এবং তার মর্যাদা ও মানসম্মান রক্ষা ও সংরক্ষণ করবেন, আর যদি তিনি তাকে খারাপ শিক্ষায় প্রশিক্ষিত করেন অথবা যথাযথ শিক্ষা দানের কাজে অবহেলা করেন অথবা তাকে ফিতনার জায়গাগুলোতে ও খেল-তামাশার ময়দানে ঠেলে দেন, তাহলে তার অপরাধের কারণে তিনি অপরাধি ও গুনাহগার হবেন, যার অভিভাবকের দায়িত্ব তাকে আল্লাহ দিয়েছেন এবং তার শেষ পরিণতিও শুভ হবে না। কারণ, তিনি তার দায়িত্বের অপব্যবহার করার কারণে তার দুনিয়ার জীবনে ব্যর্থতা ও হতাশার ফল ভোগ করবেন এবং পরকালীন জীবনে শাস্তি ভোগ করবেন, যদি আল্লাহ তা‘আলা তাঁর রহমত দ্বারা তাকে ক্ষমা না করেন।
প্রশ্ন: সরকারী কর্তৃপক্ষের জন্য জাতীয় বা রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানের নামে ছাত্রীদেরকে এ কাজে বাধ্য করা সঠিক ও যথাযথ হবে কিনা?
উত্তর: এমন প্রশাসন ব্যতীত জাতির সৌভাগ্য, উন্নতি, সকল বিষয়ে সুশৃঙ্খলা এবং তার অস্তিত্ব রক্ষা করা সম্ভব হবে না, যারা আল্লাহ তা‘আলার পক্ষ থেকে পাওয়া তাওফীকের মাধ্যমে আকিদা-বিশ্বাসে, কথায়, কাজে ও তাদের মধ্যকার উদ্ভূত সমস্যার সমাধানে তাদেরকে শাসন ও পরিচালনা করবে আল্লাহ তা‘আলার কিতাব ও তাঁর রাসূল মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নাহ’র (কর্মপদ্ধিতির) আলোকে এবং তাদেরকে নেতৃত্ব দেবে সুন্দর ও সুচারুরূপে।
আর কোনো শাসক শ্রেণি ও প্রশাসনের পক্ষে স্থায়িত্ব, গ্রহণযোগ্যতা ও গৌরব অর্জন করা সম্ভব নয় এমন এক জাতির উপস্থিতি ব্যতীত, যার অবস্থা জীবনের সকল দিক ও বিভাগে দীন, সততা, সরলতা, শিক্ষা, সংস্কৃতি, শিল্প, কৃষি, শক্তি ও সামর্থসহ সকল ক্ষেত্রে এমন না হয়, যার দ্বারা জাতি প্রতিষ্ঠিত হয় এবং তার ভিত মজবুত ও শক্তিশালী হয়, এমনকি তা সর্বোচ্চ দৃষ্টান্তে পরিণত হয়, যার প্রতি মুগ্ধ হয়ে বুদ্ধিজীবীগণ তার দিকে তাদের দৃষ্টি উত্থাপন করে এবং তার অবস্থা সম্পর্কে যিনি অবগত হন, তিনি তাকে সম্মান ও সমীহ করেন।
সুতরাং শাসকশ্রেণী তাদের জাতি ও নাগরিকগণের জন্য যে পরিমাণ ভালো সেবা, প্রাপ্য অধিকার ও সুশাসন উপহার দিতে পরবে, তারা শক্তি, সম্মান, গৌরব ও উচ্চমর্যাদার মতো ফল ভোগ করতে পারবে, আর জনগণও যে পরিমাণে তাদের কল্যাণকামী প্রশাসন কর্তৃক তাদেরকে যে ভালো কাজের দিকে আহ্বান করা হয়, সে আহ্বানে সাড়া দেবে এবং তা বাস্তবায়নের জন্য তাদেরকে সহযোগিতা করবে, তারাও সে পরিমাণে উন্নতি, কল্যাণ, সমৃদ্ধি, সুখ-শান্তি ইত্যাদি লাভ করতে পারবে।
সুতরাং মুসলিম সমাজের শাসকবর্গ ও প্রশাসকশ্রেণীর জন্য আবশ্যক হলো, তারা তাদের প্রজাদেরকে ইসলমী শাসননীতির ভিত্তিতে পরিচালিত করবেন এবং এ ক্ষেত্রে তারা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের যথাযথ অনুকরণ করবেন, আর সাথে সাথে তারা তাঁর হিদায়াতের পথে চলবেন এবং তাঁর খোলাফায়ে রাশেদীনের পদাঙ্ক অনুসরণ করবেন, যাতে তারা সৌভাগ্যবান হন এবং তাদের নাগরিকগণও সৌভাগ্যবান হয়, আর তাদের ইহকালীন ও পরকালীন পরিণতি যাতে প্রশংসনীয় হয়, আর যাতে ইসলমী শরী‘য়ত ও তার মজবুত নিয়ম-নীতির বিরুদ্ধাচরণ করা থেকে সতর্কতা অবলম্বন করতে পারে। কারণ, তাদের প্রজাগণের শাসন করার ক্ষেত্রে, তাদের আচার অনুষ্ঠান ও চারিত্রিক বিচ্যুতির ক্ষেত্রে এবং তাদের সভ্যতা-সংস্কৃতি ও শিক্ষাব্যবস্থায় খেল-তামাশা, আমোদ-প্রমোদ ও রঙ্গ-তামাশার অনুপ্রবেশ ঘটানোর মাধ্যমে এবং সেখানে নারী ও পুরুষে সহাবস্থানের পরিবেশ সৃষ্টি করার মাধ্যমে এবং এ ধরনের নানান রকমের অন্যায় ও খারাপির প্রথা চালু করার ব্যাপারে তারা তাদের প্রবৃত্তির খেয়াল খুশির অনুরসরণ করলে এবং নাস্তিক্যবাদী রাষ্ট্রসমূহের অনুকরণ করলে তারা তাদের স্বহস্তে নিজেদেরকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দেবে। সুতরাং তারা যদি এ কাজ করেন, তাহলে তাদের বন্ধন ছিন্ন হয়ে যাবে এবং ক্ষমতা দুর্বল হয়ে যাবে, আর যদি তারা আল্লাহকে তুচ্ছজ্ঞান করে, তাহলে তিনি তাদেরকে লাঞ্ছিত করবেন এবং তাদের জন্য শাস্তির ঘোষণা সত্যে পরিণত হবে, আর এটাই হলো বিশৃঙ্খলা ও বিপর্যয় সৃষ্টিকারীদের যথাযথ পুরস্কার।
আর পরিশেষে বলতে হয়, প্রজ্ঞাপূর্ণ বক্তব্য ও গভীর অর্থবোধক বাণীর অধিকারী নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের নির্দেশ ও উপদেশ থেকে এত বেশি সুন্দর, পরিপূর্ণ, সুস্পষ্ট ও ব্যাপক অর্থবোধক কথা অন্য কেনো মানুষের কথার মধ্যে পাওয়া যায় না। কেননা তিনি বলেছেন:
«ألا كُلُّكُمْ راعٍ، وكُلُّكُمْ مَسؤولٌ عن رَعِيَّتِهِ، فالإمامُ الذي على النَّاسِ راعٍ، وهو مَسؤولٌ عن رَعِيَّتِهِ، والرجلُ راعٍ على أَهل بيتِهِ، وهو مَسؤولٌ عن رَعِيَّتِهِ ، والمرأةُ رَاعِيَةٌ على أَهْلِ بَيْتِ زوجها، وولدِهِ، وهي مسؤولَةٌ عنهم، وَعَبدُ الرَّجل راعٍ على مال سيِّدِهِ، وهو مَسْؤولٌ عنه، ألا كُلُّكُمْ رَاعٍ، وكُلُّكُمْ مَسؤولٌ عن رَعِيَّتِهِ».
“জেনে রেখো! তোমাদের প্রত্যেকেই একজন দায়িত্বশীল, আর তোমরা প্রত্যেকেই নিজ অধীনস্থদের সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে। অতএব, ইমাম, যিনি জনগণের দায়িত্বশীল, তিনি তার অধীনস্থদের সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবেন; পুরুষ গৃহকর্তা তার পরিবারের দায়িত্বশীল, সে তার অধীনস্থদের সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে। নারী তার স্বামীর পরিবার ও সন্তান-সন্ততির ওপর দায়িত্বশীল, সে তাদের সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে। কোনো ব্যক্তির গোলাম স্বীয় মালিকের সম্পদের দায়িত্বশীল, সে এ সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে। সাবধান! তোমাদের প্রত্যেকেই দায়িত্বশীল, আর তোমরা প্রত্যেকেই নিজ নিজ দায়িত্বাধীন বিষয় সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে।”  
তিনি আরও বলেন:
«مَا مِنْ عَبْدٍ يَستَرْعِيهِ اللهُ رَعِيَّةً ، فَلَمْ يَحُطْهَا بِنُصْحِهِ إلاَّ لَمْ يَجِدْ رَائِحَةَ الجَنَّة».
“কোনো বান্দাকে যদি আল্লাহ তা‘আলা জনগণের নেতৃত্ব প্রদান করেন, আর সে কল্যাণকামিতার সাথে তাদের তত্ত্বাবধান না করে, তাহলে সে জান্নাতের ঘ্রাণও পাবে না।”  
অপর এক বর্ণনায় এসেছে:
«مَا مِنْ وَالٍ يَلِي رَعِيَّةً مِنْ الْمُسْلِمِينَ فَيَمُوتُ وَهُوَ غَاشٌّ لَهُمْ إِلَّا حَرَّمَ اللَّهُ عَلَيْهِ الْجَنَّةَ».
“যদি কোনো দায়িত্বশীল ব্যক্তি মুসলিম জনগণের দায়িত্ব লাভ করল এবং তার মৃত্যু হল এ অবস্থায় যে, সে ছিল খিয়ানতকারী, তাহলে আল্লাহ তা‘আলা তার জন্য জান্নাত হারাম করে দেবেন।”
সুতরাং প্রত্যেক দায়িত্বশীল বা প্রশাসক যেন সেসব ব্যক্তির ব্যাপারে আল্লাহকে ভয় করে, যাদের নেতৃত্ব আল্লাহ তাকে প্রদান করেছেন, আর তিনি যেন তাদের কল্যাণ কামনা করেন এবং তাদের মধ্যে সত্য ও ন্যায়বিচার করেন। কারণ, তিনি তাদের ব্যাপারে জিজ্ঞাসিত হবেন।
আল্লাহ হলেন তাওফীক দাতা।                  
و صلى الله على نبينا محمد و على آله و صحبه و سلم .
(আল্লাহ সালাত ও সালাম প্রেরণ করুন আমাদের নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওপর এবং তাঁর পরিবার-পরিজন ও সকল সাহাবীর ওপর)।
শিক্ষা গবেষণা ও ফতোয়োর স্থায়ী বোর্ড

আমার শ্যালিকারা খোলামেলা থাকাবস্থায় আমি তাদেরকে গাড়িতে করে গন্তব্য স্থানে পৌঁছায়ে দেই
প্রশ্ন: আপনাদের জ্ঞাতার্থে সবিনয়ে বলতে চাই যে, আমি এমন এক কন্যাকে বিয়ে করেছি, যার ছোট আরও তিন বোন রয়েছে, আর আমি আমার শশুরের সাথেই বসবাস করি তার বিভিন্ন কাজে তাকে সহযোগিতা করার জন্য। কিন্তু সমস্যা হলো ঘরের মধ্যে এবং আমার শ্যালিকাদের বিভিন্ন দায়িত্ব পালনকালে তাদের সাথে আমার অনেক বেশি মেশামেশি হয়ে যায়, তবে শ্যালিকাদের মাথা ঢাকা থাকে এবং চেহারা খোলা থাকে, আবার কখনও কখনও আমাকে তাদের কাউকে মাদরাসা বা কলেজে বা অফিসে পৌঁছানোর দায়িত্ব পালন করতে হয়। সুতরাং এ ব্যাপারে শরী‘আতের বিধান কী?
উত্তর: উল্লিখিত কারণে আপনার শশুরের সাথে বসবাস করাতে কোনো অসুবিধা নেই -পারিশ্রমিকের বিনিময়ে অথবা অন্য কোনো কারণে তার সাথে বসবাস করাটা বৈধ ব্যাপার। তবে আপনার শ্যালিকাদের জন্য আবশ্যক হলো তারা আপনার থেকে পর্দা করবে এবং তাদের চেহারা ঢেকে রাখবে। কারণ, চেহারা হলো সবচেয়ে সৌন্দর্যপূর্ণ বস্তু। আল্লাহ তা‘আলা সূরা আন-নূরে বলেন:
﴿وَلَا يُبۡدِينَ زِينَتَهُنَّ إِلَّا لِبُعُولَتِهِنَّ أَوۡ ءَابَآئِهِنَّ أَوۡ ءَابَآءِ بُعُولَتِهِنَّ ...﴾ [النور: ٣١]
“আর তারা যেন তাদের স্বামী, পিতা, শ্বশুর ....ছাড়া কারো কাছে তাদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে”। [সূরা আন-নূর, আয়াত: ৩১]
আর আপনার জন্য তাদের কোনো একজনকে নিয়ে নির্জনে অবস্থান করা এবং একাকিনী অবস্থায় তাকে নিয়ে স্কুল-কলেজ বা অফিসে যাওয়া বৈধ নয়। কারণ, নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
«لَا يَخْلُوَنَّ رَجُلٌ بِامْرَأَةٍ إِلَّا وَمَعَهَا ذُو مَحْرَمٍ».
“কোনো মাহরাম পুরুষ সাথী ছাড়া কোনো ব্যক্তি কখনও কোনো মহিলার সাথে একান্তে সাক্ষাৎ করবে না।”  
তিনি আরও বলেন:
«لاَ يَخْلُوَنَّ رَجُلٌ بِامْرَأَةٍ ، فَإِنَّ ثَالِثَهُمَا الشَّيْطَانُ».
“কোনো ব্যক্তি কখনও কোনো মহিলার সাথে একান্তে সাক্ষাৎ করবে না। কারণ, তাদের সাথে তৃতীয় জন হলো শয়তান।”
সুতরাং যখন আপনি তাদের কাউকে নিয়ে স্কুল-মাদরাসায় যাবেন, তখন আপনার জন্য আবশ্যক হলো আপনাদের সাথে তৃতীয় আরেক জনকে সাথে নেওয়া, যাতে তার দ্বারা একান্ত নির্জনতার সমস্যা দূর হয়ে যায় এবং তার উপস্থিতিতে নিরাপদ হওয়া যায় সতর্ক করা শয়তানের কুমন্ত্রণা বা প্ররোচনা থেকে। আল্লাহ আমাদেরকে এবং আপনাদেরকে তার প্ররোচনা থেকে রক্ষা করুন।
শাইখ আবদুল ‘আযীয ইবন আবদিল্লাহ ইবন বায

ভগিনীপতি বা দুলাভাই মাহরামদের কেউ নন
প্রশ্ন: আমার বোনের জন্য কি তার চাচার ছেলে তথা চাচাতো ভাই থেকে পর্দা করা আবশ্যক, যিনি আমাদের আত্মীয় হবেন অর্থাৎ তার (চাচার) কন্যাকে অচিরেই আমার ভাইয়ের নিকট বিয়ে দেবেন, তবে জেনে রাখা দরকার যে, এখন পর্যন্ত বিয়ের কাজ সম্পন্ন হয় নি। আশা করি আমাদেরকে বিষয়টি বুঝিয়ে বলবেন?
উত্তর: আপনার বোনের জন্য অপরিহার্য হলো তার চাচার ছেলে তথা চাচাতো ভাই থেকে পর্দা করা, যিনি তার মাহরামদের অন্তর্ভুক্ত কেউ নন, যদিও তিনি আত্মীয় হন এবং যদিও তার (চাচার) কন্যাকে তার ভাইয়ের নিকট বিয়ে দেওয়া হয়। কারণ, বোনের স্বামী তথা দুলাভাই হলেন পরপরুষ আর অনুরূপভাবে ভাবির পিতা এবং তাদের মত করে অন্যরাও তার জন্য পরপুরুষ বলে গণ্য হবে।
শাইখ আবদুল্লাহ ইবন আবদির রহমান আল-জিবরীন

পুরুষদের সাথে পর্দা পরিহিতা নারীর বসার বিধান
প্রশ্ন: আমার এক বান্ধবী বলে যে, সে তার সমাজের মাহরাম নন এমন কিছু পুরুষের সাথে বসতে বাধ্য হয়, অথচ সে পরিপূর্ণভাবে পর্দা মেনে চলে। তারপর তারা তাকে ও তার সন্তান-সন্ততিকে সালাম প্রদান করে এমতাবস্থায় যে, তার স্বামী সেখানে অনুপস্থিত থাকে এবং সে এ ব্যাপারে জানে, কিন্তু সে (আমার বান্ধবী) এ অবস্থা বা প্রথাকে মেনে নিতে পারে না, তবে পরিস্থিতি তাকে বাধ্য করেছে, (এমতাবস্থায় তার করণীয় কী)?  
উত্তর: আমরা ঐ নারীকে উপদেশ দিচ্ছি যে, তিনি যেন ঐসব পরপুরুষের সাথে না বসেন, যদিও তারা তার সমাজের অন্তর্ভুক্ত কেউ হয়ে থাকে, এমনকি যদিও তিনি তার চেহারা অন্যান্য অঙ্গ ঢেকে রাখেন। ক্ষমারযোগ্য হবে যখন দেয়ালের পেছন থেকে অথবা পর্দার আড়াল থেকে অথবা নারীদের মাঝে তাদের পক্ষ থেকে শুধু সালাম দেওয়া হবে, অতঃপর ঐ একসাথে বসা ও সামাজিকতার ক্ষেত্রে স্বামীর সম্মতি (শরী‘আত কর্তৃক) সমর্থনযোগ্য বলে বিবেচিত হবে না; তবে এ বিষয়টি একান্ত নির্জনে একসাথে বসা এবং বেপর্দা অবস্থায় খোলামেলাভাবে একসাথে বসার চেয়ে লঘু অপরাধ, আর এর থেকে দূরে থাকাটাই উত্তম, আর নারীর জন্য সবচেয়ে উত্তম হলো এমন নিরাপদ দূরত্বে অবস্থান করা, যাতে সে পুরুষদেরকে না দেখে এবং তারাও তাকে না দেখে। আর একমাত্র আল্লাহই আমার সাহায্যস্থল।
শাইখ আবদুল্লাহ ইবন আবদির রহমান আল-জিবরীন

অপরিচিত নারীদের সাথে মুসাফাহ (করমর্দন) করা নিষিদ্ধকরণের কারণ
প্রশ্ন: কেন ইসলাম মাহরাম নন এমন পুরুষের সঙ্গে নারীদেরকে মুসাফাহ করতে নিষেধ করেছে? আর যে ব্যক্তি কামভাব ব্যতিরেকে (তার স্ত্রীর সাথে) মুসাফাহ করে তার অযু ভঙ্গ হয়ে যাবে কিনা?
উত্তর: ইসলাম এটাকে নিষিদ্ধ করেছে। কারণ, এটা একটা বড় ধরনের ফিতনা যে, একজন পুরুষ তার মাহরাম নন এমন একজন নারীর শরীর স্পর্শ করবে, আর ফিতনার উপলক্ষ বা কারণ এমন প্রতিটি বস্তু বা বিষয়কে ইসলাম নিষেধ করেছে, আর এ জন্যই শরী‘আত এ ফ্যাসাদ সৃষ্টিকারী কাজটিকে প্রতিরোধ করার জন্য দৃষ্টিকে অবনমিত রাখার জন্য নির্দেশ দিয়েছে। আর যে ব্যক্তি তার স্ত্রীকে স্পর্শ করবে, তার সে স্পর্শ দ্বারা তার অযু নষ্ট হবে না, এমনকি যদিও তার স্পর্শ করার কাজটি কামভাবসহ হয়ে থাকে; তবে যখন এ স্পর্শের কারণে মযী (বীর্যের মতো পাতলা পানি) অথবা মনী (বীর্য) বের হয়ে যায়, তখন মনী (বীর্য) হলে গোসল করা আবশ্যক হয়ে যাবে এবং ‘মযী’ হলে যৌনাঙ্গ ধৌত করার সাথে সাথে অযু করা আবশ্যক হবে।
শাইখ মুহাম্মাদ ইবন সালেহ আল-‘উসাইমীন

ভাবির সাথে মুসাফাহ (করমর্দন) করার বিধান
প্রশ্ন: স্বামীর ভাইদের জন্য তাদের ভাইয়ের বউ তথা ভাবির সাথে স্বাভাবিক পরিবেশে মুসাফাহ (করমর্দন) করা বৈধ হবে কি, আর এটা সাধারণত হয়ে থাকে পিতামাতা ও ভাই-বোনের উপস্থিতিতে ঈদ বা অনুরূপ কোনো অনুষ্ঠানকে উপলক্ষ করে?
উত্তর: স্বামীর ভাই অথবা তার চাচা অথবা মামা অথবা তার চাচার ছেলেদের জন্য তাদের ভাইয়ের বউ (ভাবি) অথবা তাদের মামী বা চাচীসহ সকল অপরিচিত মহিলার সাথে মুসাফাহ করা বৈধ নয়। কারণ, ভাই তার ভাবির জন্য মাহরাম নন, অনুরূপভাবে চাচা তার ভাতিজা বউয়ের জন্য মাহরাম নন, অনুরূপভাবে মামা তার ভাগিনা বউয়ের জন্য মাহরাম নন, অনুরূপভাবে চাচার ছেলেরা তাদের চাচাতো ভাইয়ের বউয়ের জন্য মাহরাম নয়। আর তাদের সাথে করমর্দন বৈধ না হওয়ার কারণ হলো নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের বাণী, তিনি বলেন:
«إِنِّي لَا أُصَافِحُ النِّسَاءَ».
“আমি নারীদের সাথে মুসাফাহা (করমর্দন) করি না।”  
আর আয়েশা রাদিয়াল্লাহ ‘আনহা বলেন:
«مَا مَسَّتْ يَدُ رسول اللّه صلى الله عليه وسلم يَدَ امْرَأَةٍ قَطُّ، مَا كَانَ يُبَايِعُهُنَّ إلاَّ بِالْكَلاَمِ».
“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাত কখনও কোনো নারীর হাত স্পর্শ করে নি, তিনি শুধু কথা বলার মাধ্যমেই তাদেরকে ‘বায়‘আত’ করাতেন।”  
তাছাড়া অপরিচিত নারীদের সাথে মুসাফাহ করাটা কখনও কখনও তাদের প্রতি দৃষ্টি দেওয়ার মতো বা আরও প্রকটভাবে তাদের সাথে ফিতনা সৃষ্টির কারণ হিসেবে ভূমিকা পালন করে। তবে তারা যদি বোন, ফুফু, পিতার স্ত্রী (সৎ মা), পুত্রবধুর মতো মাহরাম কেউ হন, তাহলে তাদের সাথে মুসাফাহা করাটা দোষের নয়। আর সঠিক ফতোয়া দেওয়ার তাওফীক দানের মালিক হলেন আল্লাহ তা‘আলা।
শাইখ আবদুল ‘আযীয ইবন আবদিল্লাহ ইবন বায

মাহরাম নন এমন নারীদের সাথে মুসাফাহ (করমর্দন) করার বিধান
প্রশ্ন: কোনো কোনো পুরুষ কোনো কোনো নিকটাত্মীয় নারীর সাথে মুসাফাহ করতে বাধ্য হয়, অথচ তারা ঐ পুরুষ ব্যক্তির মাহরাম কেউ নন, বরং আত্মীয় ও প্রতিবেশী হওয়ার সুবাদে এরূপ করে থাকে; সুতরাং এর বিধান কী হবে? এ এক্ষত্রে পর্দা করার উদ্দেশ্যে নারী যদি তার হাতের উপর কাপড়ের টুকরা রাখে তাহলে তা যথেষ্ট হবে কি?
উত্তর: পুরুষ কর্তৃক অপরিচিত বা মাহরাম নন এমন নারীর সাথে মুসাফাহা করা বৈধ নয়, যদিও মুসাফাহা করার সময় সে নারীর হাতের উপর কাপড়ের টুকরা রাখা হউক না কেন।
و صلى الله على نبينا محمد و على آله و صحبه و سلم .
(আল্লাহ সালাত ও সালাম প্রেরণ করুন আমাদের নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওপর এবং তাঁর পরিবার-পরিজন ও সকল সাহাবীর ওপর)।
স্থায়ী ফতোয়া বোর্ড

অপরিচিত বা পরনারীর সাথে কৌশলে আড়াল করে মুসাফাহ করার বিধান
প্রশ্ন: যথাযথ দলীল ও প্রমাণসহ জানতে চাই যে, আমার জন্য অপরিচিত বা পরনারীর সাথে মুসাফাহা (করমর্দন) করা বৈধ হবে কিনা, যখন আমি তার হাতের ওপর কোনো কিছু রেখে আড়াল করি? আর এ ক্ষেত্রে কম বয়স্কা নারীর বিধানের মতো-ই কি বেশি বয়স্কা নারীর বিধান হবে?
উত্তর: কোনো পুরুষ মানুষের জন্য এমন অপরিচিত নারীর সাথে মুসাফাহা করা বৈধ হবে না, যে নারী তার মাহরাম কেউ নন, চাই সে মুসাফাহা বা করমর্দন সরাসরি হউক অথবা কৌশলে কোনো কিছু দ্বারা আড়াল করার মাধ্যমেই হউক। কারণ, এটা ফিতনা বা বিপর্যয়ের অন্যতম কারণ, আর আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿وَلَا تَقۡرَبُواْ ٱلزِّنَىٰٓۖ إِنَّهُۥ كَانَ فَٰحِشَةٗ وَسَآءَ سَبِيلٗا ٣٢﴾ [الاسراء: ٣٢]
“তোমরা ব্যভিচারের ধারে কাছেও যেয়ো না, নিঃসন্দেহে এ হচ্ছে একটি অশ্লীল কাজ এবং নিকৃষ্ট পথ”। [সূরা আল-ইসরা, আয়াত: ৩২]
আর এ আয়াতটি নির্দেশ করে যে, এমন প্রত্যেকটি জিনিস আমাদের জন্য পরিহার করা আবশ্যক, যা যেনা ব্যভিচার পর্যন্ত পৌঁছিয়ে দেয়, চাই তা যৌনাঙ্গের ব্যভিচার হউক (আর এটা সবচেয়ে বড় যেনা), অথবা অন্য কোনো পর্যায়ের ব্যভিচার হউক। আর কোনো সন্দেহ নেই যে, পুরুষ কর্তৃক অপরিচিত নারীর হাত স্পর্শ করার ব্যাপারটি যৌনতাকে উস্কে দেয়, আর এ প্রসঙ্গে অনেক হাদীস বর্ণিত আছে, যাতে ঐ ব্যক্তির ব্যাপারে কঠিনভাবে হুমকি রয়েছে, যে ব্যক্তি এমন নারীর সাথে মুসাফাহা করে, যে নারী তার মাহরাম নন, আর এ ব্যাপারে যুবতী ও বৃদ্ধার মাঝে কোনো পার্থক্য নেই। কারণ, যেমন বলা হয়ে থাকে: (প্রত্যেক পতিত বস্তুরই সংগ্রহকারী রয়েছে)। তাছাড়া বৃদ্ধা থেকে যুবতীর সীমারেখা বা পরিচয়ের বিষয়টি আপেক্ষিক, তাতে উপলব্ধির বিষয়টি বিভিন্ন রকমের হয়ে থাকে। কেননা একজন মনে করে যে, এ তো বৃদ্ধা। আবার অন্যজন মনে করে যে, এ তো যুবতী।
শাইখ মুহাম্মাদ ইবন সালেহ আল-‘উসাইমীন

বৃদ্ধা নারীর সাথে মুসাফাহা (করমর্দন) করার বিধান
প্রশ্ন: অপরিচিত নারীর সাথে মুসাফাহা (করমর্দন) করার বিধান কী, যখন সে বৃদ্ধা হয়? অনুরূপভাবে আরেকটি প্রশ্ন হলো যখন সে তার (বৃদ্ধার) হাতের উপরে কাপড় বা অনুরূপ কোনো পর্দা রাখে, তখন তার বিধান কী হবে?
উত্তর: মাহরাম নন এমন অপরিচিত নারীদের সাথে মুসাফাহা (করমর্দন) করা সাধারণভাবে অবৈধ, চাই তারা যুবতী হউক অথবা বৃদ্ধা হউক, চাই মুসাফাহাকারী ব্যক্তি যুবক হউক, অথবা হউক অতি বৃদ্ধ। কেননা এর মধ্যে উভয় গ্রুপের প্রত্যেকের পক্ষ থেকেই ফিতনার আশঙ্কা রয়েছে। আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে সহীহভাবে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন:
«إِنِّي لَا أُصَافِحُ النِّسَاءَ».
“আমি নারীদের সাথে মুসাফাহা (করমর্দন) করি না।”  
আর আয়েশা রাদিয়াল্লাহ ‘আনহা বলেন:
«مَا مَسَّتْ يَدُ رسول اللّه صلى الله عليه وسلم يَدَ امْرَأَةٍ قَطُّ، مَا كَانَ يُبَايِعُهُنَّ إلاَّ بِالْكَلاَمِ»
“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাত কখনও কোনো নারীর হাত স্পর্শ করেনি; তিনি শুধু কথা বলার মাধ্যমেই তাদেরকে ‘বায়‘আত’ করাতেন।”
আর কোনো প্রতিবন্ধকতা বা আড়াল করার মাধ্যমে অথবা আড়াল না করে মুসাফাহা করার মাধ্যমে কোনো পার্থক্য নেই; বরং উভয়ের বিধান একই। কারণ, দলীলগুলো সাধারণ ও নিঃশর্তভাবে বর্ণিত, তাছাড়া ফিতনার দিকে নিয়ে যায় এমন সব পথ বন্ধ করার নিমিত্তেই এ ধরনের আড়াল করার মাধ্যমে মুসাফাহা করার কোনো অনুমোদন নেই। আর তাওফীক দানের মালিক তো আল্লাহই।
শাইখ আবদুল ‘আযীয ইবন আবদিল্লাহ ইবন বায

মাহরাম নন এমন আত্মীয়স্বজন ও অন্যান্যদের সাথে মুসাফাহা করা এবং তাদেরকে চুম্বন করার বিধান
প্রশ্ন: আমি আমার পরিবার-পরিজন ও আত্মীয়স্বজন থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার পর কখনও ছয় মাস পর, আবার কখনও পূর্ণ এক বছর পর তাদের সাথে সক্ষাৎ করি। আর যখনই আমি বাড়িতে পৌঁছাই, তখন মহিলারা (ছোট ও বড়) আমাকে অভ্যর্থনা জানায় এবং তারা আমাকে এমনভাবে চুম্বন করে যে, আমি তাতে লজ্জাবোধ করি, আর বাস্তব কথা বলতে কি এ প্রথাটি আমাদের মাঝে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে আছে এবং আমার বংশের লোকজন এটাকে কিছুই মনে করে না। কারণ, তাদের ধারণা মতে এটা হারাম কিছু নয়; কিন্তু আমি ইসলামী শিক্ষা অর্জন করেছি আল-হামদুলিল্লাহ; এ ব্যাপারে আমি একটা কিংকর্তব্যবিমুঢ় ও দ্বিধাগ্রস্ত অবস্থার মধ্যে আছি। আমার প্রশ্ন হলো কীভাবে আমি নারীদের চুম্বন করার বিষয়টি সংশোধন বা প্রতিকার করতে সক্ষম হব? তবে জেনে রাখা দরকার যে, আমি যদি তাদের সাথে মুসাফাহা (করমর্দন) করি, তাহলে তারা আমার প্রতি ভীষণভাবে ক্ষুব্ধ হন এবং বলেন: সে আমাদেরকে সম্মান বা শ্রদ্ধা করে না, আমাদেরকে অপছন্দ করে এবং আমাদেরকে ভালোবাসে না (ভালোবাসা বলতে ব্যক্তিগত পর্যায়ে গড়ে উঠা সম্পর্ক। যুবক ও যুবতীর মাঝে গড়ে উঠা সম্পর্কের ভালোবাসা নয়) ইত্যাদি ইত্যাদি, আর এমতাবস্থায় আমি যখন তাদেরকে চুম্বন করব, তখন কি আমি গুনাহের কাজে জড়িয়ে যাব না? জেনে রাখা দরকার যে, এ প্রতিকুল মন্দ অবস্থার ব্যাপারে আমার কোনো নিয়ন্ত্রণও নেই?      
উত্তর: একজন মুসলিম ব্যক্তির জন্য তার স্ত্রী ও মাহরাম ছাড়া অন্য কারও সাথে মুসাফাহা করা বা কাউকে চুম্বন করা বৈধ নয়; বরং এগুলো হারাম কাজের অন্তর্ভুক্ত এবং ফিতনার অন্যতম কারণ ও অশ্লীলতার বহিঃপ্রকাশ, আর নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে দলীল সাব্যস্ত আছে। তিনি বলেন:
«إِنِّي لَا أُصَافِحُ النِّسَاءَ».
“আমি নারীদের সাথে মুসাফাহা (করমর্দন) করি না।”  
আর আয়েশা রাদিয়াল্লাহ ‘আনহা বলেন:
«مَا مَسَّتْ يَدُ رسول اللّه صلى الله عليه وسلم يَدَ امْرَأَةٍ قَطُّ حِيْنَ الْبَيْعَة، إنَّمَا كَانَ يُبَايِعُهُنَّ  بِالْكَلاَمِ».
“বায়‘আত গ্রহণের সময় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাত কখনও কোনো নারীর হাত স্পর্শ করে নি। তিনি শুধু কথা বলার মাধ্যমেই তাদেরকে ‘বায়‘আত’ করাতেন।”  
আর মাহরাম নন এমন নারীদের সাথে মুসাফাহা করা ও তাদেরকে চুম্বন করা খুবই নিকৃষ্ট কাজ, হউক তারা চাচাতো বোন অথবা মামাতো বোন, অথবা প্রতিবেশীদের কেউ অথবা যে কোনো সম্প্রদায়ের কেউ- মুসলিমগণের ইজমা বা সর্বসম্মত সিদ্ধান্তের ভিত্তিতেই এসব হারাম এবং নিষিদ্ধ ঘোষিত অশ্লীল কাজে জড়িয়ে যাওয়ার অন্যতম মাধ্যম। সুতরাং মুসলিম ব্যক্তির আবশ্যকীয় কর্তব্য হলো এ ব্যাপরে সতর্ক হওয়া এবং এ অভ্যাসে অভ্যস্ত মহিলা আত্মীয়স্বজন ও অন্যান্য সকল নারীকে অনুরোধ করে বুঝানো যে, এটা হারাম কাজ, যদিও মানুষ তাতে অভ্যস্ত হয়ে গেছে, আর কোনো মুসলিম পুরুষ ও নারীর জন্য এটা করা বৈধ নয়, যদিও তাদের আত্মীয়স্বজন অথবা তাদের এলাকার অধিবাসীগণ তাতে অভ্যস্ত হয়ে গেছে; বরং তাদের জন্য ওয়াজিব হলো এটাকে প্রত্যাখ্যান করা এবং সমাজকে এর থেকে সাবধান ও সতর্ক করা, আর মুসাফাহ ও চুম্বন না করে মৌখিকভাবে সালাম দেওয়াটাই যথেষ্ট।
শাইখ আবদুল ‘আযীয ইবন আবদিল্লাহ ইবন বায

মাহরাম নন এমন নারীদের সাথে বসার বিধান
প্রশ্ন: আমি বর্তমানে রিয়াদ শহরে বাস করি এবং সেখানে আমার নিকটাত্মীয়রাও অবস্থান করেন, আমার এবং তাদের মধ্যে আত্মীয়তার দিক থেকে খুবই ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক, তাদের মাঝে আছেন আমার খালাতো বোন, চাচীসব ও চাচাতো বোনেরা, আর যখনই আমি তাদের সাথে সাক্ষাৎ করতে যাই, তখন আমি তাদেরকে সালাম জানাই এবং চুম্বন করি, আর তারাও আমার সাথে খোলামেলাভাবে বসে, অথচ আমি এ প্রথায় অস্বস্তি বোধ করি; আপনাদের জ্ঞাতার্থে বলছি যে, এ প্রথা দক্ষিণাঞ্চেলের অধিকাংশ জেলায় ব্যাপকভাবে প্রচলিত। সুতরাং এ প্রথার ব্যাপারে আপনাদের বক্তব্য কী এবং আমি কী করব? অনুগ্রহ করে আমাকে এ ব্যাপারে অবহিত করবেন। আল্লাহ আপনাদেরকে উত্তম পুরষ্কার দান করুন।   
উত্তর: এ প্রথাটি অত্যন্ত খারাপ একটি প্রথা বা রীতিনীতি, যা পবিত্র শরী‘য়ত বিরোধী। আর আপনার জন্য তাদেরকে চুম্বন করা এবং তাদের সাথে মুসাফাহা (করমর্দন) করা বৈধ নয়। কারণ, আপনার চাচীগণ, চাচাতো বোন, মামাতো বোন, খালাতো বোন প্রমুখ আপনার জন্য ‘মাহরাম’ নন। সুতরাং তাদের জন্য আবশ্যক হলো আপনার থেকে পর্দা করা এবং আপনার উদ্দেশ্যে তাদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করা। কেননা আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿وَإِذَا سَأَلۡتُمُوهُنَّ مَتَٰعٗا فَسۡ‍َٔلُوهُنَّ مِن وَرَآءِ حِجَابٖۚ ذَٰلِكُمۡ أَطۡهَرُ لِقُلُوبِكُمۡ وَقُلُوبِهِنَّۚ﴾ [الاحزاب: ٥٣]
“তোমরা তার পত্নীদের কাছ থেকে কিছু চাইলে পর্দার আড়াল থেকে চাইবে। এ বিধান তোমাদের ও তাদের হৃদয়ের জন্য বেশি পবিত্র”। [সূরা আল-আহযাব, আয়াত: ৫৩]
আর এ আয়াতটি ব্যাপক অর্থবোধক, যার বিধান আলেমগণের বিশুদ্ধ মতে নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের সম্মানিত স্ত্রীগণ ও তাঁরা ভিন্ন অন্য সকল (মাহরাম নন এমন) নারীদের জন্য সামানভাবে প্রযোজ্য, আর যে ব্যক্তি বলে যে, এ আয়াতের বিধান শুধু নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের সম্মানিত স্ত্রীগণের জন্য বিশেষভাবে প্রযোজ্য, তার কথা বাতিল অগ্রহণযোগ্য, যার কোনো গ্রহণযোগ্য ভিত্তি ও দলিল নেই। আর আল্লাহ তা‘আলা সূরা আন-নূরে বলেন:
﴿وَلَا يُبۡدِينَ زِينَتَهُنَّ إِلَّا لِبُعُولَتِهِنَّ أَوۡ ءَابَآئِهِنَّ أَوۡ ءَابَآءِ بُعُولَتِهِنَّ.....﴾ [النور: ٣١]
“আর তারা যেন তাদের স্বামী, পিতা, শ্বশুর....ছাড়া কারো কাছে তাদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে”। [সূরা আন-নূর, আয়াত: ৩১]
আর পর্দার এ আয়াতের বিধান থেকে যাদেরকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে, আপনি তো তাদের অন্তর্ভুক্ত কেউ নন; বরং আপনার চাচী, চাচাতো বোন, মামাতো বোন, খালাতো বোন প্রমুখের মাঝে আপনি হলেন সম্পূর্ণ এক অপরিচিত পর পুরুষ, অর্থাৎ আপনি তাদের মাহরাম কেউ নন, এমতাবস্থায় আপনার আবশ্যকীয় কর্তব্য হলো আমরা যা আলোচনা করলাম, তা তাদেরকে জানিয়ে দেওয়া এবং তাদের নিকট এ ফতোয়া পাঠ করে শুনানো, যাতে তারা আপনাকে ক্ষমা করে বা অভিযোগ থেকে মুক্তি দেয় এবং এ ব্যাপারে শরী‘আতের বিধান সম্পর্কে জানতে পারে। আর কোনো প্রকার চুম্বন অথবা মুসাফাহা ছাড়া তাদেরকে সালাম দেওয়াটাই আপনার জন্য যথেষ্ট, যার কারণটি আমরা আয়াত থেকে উল্লেখ করেছি।
তাছাড়া কোনো এক নারী নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে মুসাফাহা করতে চাইলে তিনি বলেন:
«إِنِّي لَا أُصَافِحُ النِّسَاءَ».
“আমি নারীদের সাথে মুসাফাহা (করমর্দন) করি না।”  
আর আয়েশা রাদিয়াল্লাহ ‘আনহা বলেন:
«مَا مَسَّتْ يَدُ رسول اللّه صلى الله عليه وسلم يَدَ امْرَأَةٍ قَطُّ، مَا كَانَ يُبَايِعُهُنَّ إلاَّ بِالْكَلاَمِ».
“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাত কখনও কোনো নারীর হাত স্পর্শ করে নি। তিনি শুধু কথা বলার মাধ্যমেই তাদেরকে ‘বায়‘আত’ করাতেন।”  
আর সহীহ মুসলিমে আয়েশা রাদিয়াল্লাহ ‘আনহা থেকে ইফকের কাহিনী প্রসঙ্গে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন:
« لما سمعت صوت صفوان بن المعطل،  خمَّرتُ وجهي وكان قد رآني قبل الحجاب»
“যখন আমি সাফওয়ান ইবন মু‘য়াত্তালের কণ্ঠ শুনতে পেলাম, তখন আমি আমার চেহারা ঢেকে ফেললাম, আর সে আমাকে পর্দার আয়াত নাযিল হওয়ার পূর্বে দেখেছিল”।
সুতরাং এটা প্রমাণ করে যে, পর্দার আয়াত নাযিল হওয়ার পর নারীগণ তাদের চেহারা ঢেকে রাখতেন। আল্লাহ মুসলিম সমাজের অবস্থার সংস্কার ও সংশোধন করে দিন এবং তাদেরকে দীনের সঠিক বুঝ দান করুন। আর তাওফীক দানের মালিক তো আল্লাহই।
শাইখ আবদুল ‘আযীয ইবন আবদিল্লাহ ইবন বায

পুরুষ ব্যক্তি কর্তৃক তার কন্যাকে চুম্বন করা বৈধ
প্রশ্ন: পুরুষ ব্যক্তি কর্তৃক তার কন্যাকে চুম্বন করা বৈধ কিনা, যখন সে বড় হয়ে যায় এবং তার বয়স প্রাপ্তবয়স্কের পর্যায়ে উপনীত হয়, চাই সে বিবাহিতা হউক অথবা অবিবাহিতা, চাই সে চুম্বন হউক তার গালে বা মুখে বা অনুরূপ কোনো স্থানে, আর যখন মেয়ে তার পিতার ঐসব স্থানে চুম্বন করে, তখন তার বিধানই বা কী হবে?  
উত্তর: পুরুষ ব্যক্তি কর্তৃক বিনা কামুক দৃষ্টিতে তার বয়স্ক কন্যা বা কম বয়সের কন্যাকে চুম্বন করাতে কোনো অসুবিধা নেই, তবে শর্ত হলো মেয়ে বড় হলে চুম্বন হতে হবে তার গালের মধ্যে। কেননা আবূ বকর সিদ্দীক রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে সাব্যস্ত আছে যে, তিনি তাঁর কন্যা আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহাকে তাঁর গালে চুম্বন দিয়েছেন।
আর মুখের উপর চুম্বন করার বিষয়টি কখনও কখনও জাতিগত কামভাবকে উস্কিয়ে দেওয়ার সম্ভাবনা রাখে, যার ফলে তা বর্জন করাটাই বেশি উত্তম এবং অধিক সাবধানতা। আর অনুরূপভাবে মেয়ের জন্যও তার পিতার নাকে বা মাথায় বিনা কামুক দৃষ্টিতে চুম্বন করা বৈধ। আর ফিতনা নির্মূল করার উদ্দেশ্য এবং অশ্লীলতার সকল পথ বন্ধ করার জন্য কামভাবসহ এ ধরনের চুম্বন করাটা সকলের জন্যই হারাম বলে গণ্য হবে।
শাইখ আবদুল আযীয ইবন আবদিল্লাহ ইবন বায