মসজিদে গমন: শিষ্টাচার ও প্রভাব

এটি হলো মসজিদসমূহে গমনের আদাব বা শিষ্টাচার সম্পর্কের একটি সংক্ষিপ্ত বক্তব্য। এতে মসজিদে গমনের পথে, মসজিদে প্রবেশ, সালাতের পদ্ধতি ও যিকিরসহ মসজিদ সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।

اسم الكتاب: المشي إلى المساجد آداب وآثار


تأليف: صالح بن حامد الرفاعي


الناشر: المكتب التعاوني للدعوة وتوعية الجاليات بالربوة


نبذة مختصرة: كتاب مترجم إلى اللغة البنغالية، فيه بيان آداب المشي إلى المساجد وآثاره، وقد بين المؤلف بعض الآداب التي تراعي قبل الذهاب إلى المسجد وفي طريق المسجد وبعد الدخول في المسجد، كما ذكر ما ينبغي أن يفعله المصلي بعد قضاء الفريضة من الالتزام بالأذكار الواردة عن النبي - صلى الله عليه وسلم -.


মসজিদে গমন: শিষ্টাচার ও প্রভাব
المشي إلى المساجد آداب وآثار

< بنغالي- Bengal - বাঙালি>


        
সালেহ ইবন হামেদ আর-রিফা‘ঈ



অনুবাদক: ড. মোঃ আবদুল কাদের
সম্পাদক: ড. আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া

 

المشي إلى المساجد آداب وآثار

        

صالح بن حامد الرفاعي




ترجمة: د/ محمد عبد القادر
مراجعة: د/ أبو بكر محمد زكريا

সূচিপত্র

ক্রম    বিষয়    পৃষ্ঠা
1.        ভূমিকা    
2.        মসজিদসমূহের গুরুত্বের বিষয়ে ভূমিকা    
3.        প্রথমত: বের হবার পূর্বে গৃহের অভ্যন্তরে    
4.        ১. আল্লাহ তা‘আলার জন্য খালেস নিয়ত    
5.        ২. শরীর ও কাপড় পরিচ্চন্ন রাখার ব্যাপারে উৎসাহদান    
6.        ৩. শালীন পোষাক পরিধান    
7.        দ্বিতীয়ত: মসজিদে গমনের পথে    
8.        ১. ঘর থেকে বের হবার  দো‘আ    
9.        ২. শান্তিপূর্ণ ও ধীরস্থিরভাবে মসজিদে গমন    
10.        তৃতীয়ত: মসজিদে প্রবেশ    
11.        ১. মসজিদে প্রবেশের  দো‘আ এবং প্রথমে ডান পা দেওয়া    
12.        ২. প্রথম কাতারে সালাত আদায়ে উৎসাহ দান    
13.        ৩. তাহিয়্যাতুল মসজিদ    
14.        ৪. আল্লাহ তা‘আলার যিকির ও উপকারী ইলমে মশগুল হওয়া    
15.        ৫. মসজিদে বসার ফযীলত    
16.        ৬. কাতার সোজা করা    
17.        ৭. প্রথম কাতারে যাওয়ার প্রতিযোগিতার শিষ্টাচার হতে    
18.        ৮. তোমরা সালাত আদায় কর যেভাবে আমাকে সালাতে দেখেছো    
19.        ৯. সালাতের পর যিকিরসমূহের ফযীলত    


ভূমিকা


পরম করুণাময় আল্লাহর নামে শুরু করছি।
নিশ্চয় সকল প্রশংসা মহান আল্লাহর জন্য। আমরা তার প্রশংসা করি, তার সাহায্য প্রার্থনা করি এবং তার নিকট ক্ষমা চাই। আমাদের নিজেদের অনিষ্ট ও খারাপ কৃতকর্মসমূহ থেকে আল্লাহর নিকট আশ্রয় চাই। তিনি যাকে হিদায়াত করেন তাকে কেউ পথভ্রষ্ট করতে পারে না। আর যাকে তিনি পথভ্রষ্ট করেন তার কোনো হিদায়াতকারী  নেই। আরও আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর বান্দা ও রাসূল। তাঁর প্রতি ও তাঁর সাহাবীগণের ওপর অসংখ্য সালাত ও সালাম।
অতঃপর, এটা হলো মসজিদসমূহে গমনের আদাব বা শিষ্টাচার সম্পর্কের সংক্ষিপ্ত বক্তব্য। আমি এটি নিজের ও আমার মুসলিম ভাইদের স্মরণার্থে লিপিবদ্ধ করেছি। কারণ, আল্লাহ তা‘আলা বলেন:        
﴿ وَذَكِّرۡ فَإِنَّ ٱلذِّكۡرَىٰ تَنفَعُ ٱلۡمُؤۡمِنِينَ ٥٥ ﴾ [الذاريات: ٥٥]  
‘‘আর উপদেশ দাও! নিশ্চয় উপদেশ মুমিনদের উপকারে আসবে” আর তার নামকরণ করেছি,
المشي إلى المساجد آداب وآثار
“মসজিদে গমন, শিষ্টাচার ও প্রভাব”।
তবে এখানে প্রভাব দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে, সে সব উত্তম চরিত্র এবং দুনিয়া-আখিরাতের উত্তম পরিণতি যা ঐ সব শিষ্টাচারসমূহের যথাযথ প্রতিপালনের কারণে অর্জিত হবে।
আর আল্লাহ তা‘আলার নিকট এর দ্বারা সার্বজনীন কল্যাণ কামনা করছি। তিনি যেন এটাকে সর্বোত্তম উপায়ে কবুল করেন। নিশ্চয় তিনি সর্বশ্রোতা, সাড়াদানকারী। আর তিনি সঠিক পথের পথপ্রদর্শক।
সালেহ ইবন হামেদ আর- রিফা‘ঈ
মদিনা: ২৩-৮-১৪১৮ হিজরী

মসজিদসমূহের গুরুত্বের বিষয়ে ভূমিকা
মসজিদসমূহের গুরুত্ব ও তার উত্তম মর্যাদা আমার মুসলিম ভাইদের কাছে অস্পষ্ট নয়। যেহেতু তা আল্লাহর ঘর। যে ব্যাপারে মহান আল্লাহ বলেন:
﴿فِي بُيُوتٍ أَذِنَ ٱللَّهُ أَن تُرۡفَعَ وَيُذۡكَرَ فِيهَا ٱسۡمُهُۥ يُسَبِّحُ لَهُۥ فِيهَا بِٱلۡغُدُوِّ وَٱلۡأٓصَالِ ٣٦ رِجَالٞ لَّا تُلۡهِيهِمۡ تِجَٰرَةٞ وَلَا بَيۡعٌ عَن ذِكۡرِ ٱللَّهِ وَإِقَامِ ٱلصَّلَوٰةِ وَإِيتَآءِ ٱلزَّكَوٰةِ يَخَافُونَ يَوۡمٗا تَتَقَلَّبُ فِيهِ ٱلۡقُلُوبُ وَٱلۡأَبۡصَٰرُ ٣٧ لِيَجۡزِيَهُمُ ٱللَّهُ أَحۡسَنَ مَا عَمِلُواْ وَيَزِيدَهُم مِّن فَضۡلِهِۦۗ وَٱللَّهُ يَرۡزُقُ مَن يَشَآءُ بِغَيۡرِ حِسَابٖ ٣٨﴾ [النور: ٣٦،  ٣٨]
“সেসব ঘরে যাকে সমুন্নত করতে এবং যাতে তাঁর নাম স্মরণ করতে আল্লাহ নির্দেশ দিয়েছেন, সকাল- সন্ধ্যায় তাঁর পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করে, সেসব লোক, যাদেরকে ব্যবসা-বানিজ্য ও ক্রয়-বিক্রয় কোনোটিই আল্লাহর স্মরণ থেকে এবং সালাত কায়েম ও যাকাত প্রদান থেকে বিরত রাখে না, তারা ভয় করে সে দিনকে যেদিন অনেক অন্তর ও দৃষ্টিসমূহ উল্টে যাবে। যাতে তারা যে উত্তম কাজ করে তার জন্য আল্লাহ তাদেরকে পুরস্কার দেন এবং তিনি নিজ অনুগ্রহে তাদের প্রাপ্যের বেশি দেন। আর আল্লাহ যাকে ইচ্ছে অপরিমিত জীবিকা দান করেন। [সূরা আন-নূর, আয়াত: ৩৬-৩৮]
আল্লাহ আরো বলেন:
﴿وَأَنَّ ٱلۡمَسَٰجِدَ لِلَّهِ فَلَا تَدۡعُواْ مَعَ ٱللَّهِ أَحَدٗا ١٨﴾ [الجن: ١٨]
 “আর নিশ্চয় মসজিদসমূহ আল্লাহরই জন্য। কাজেই আল্লাহ্‌র সাথে তোমরা অন্য কাউকে ডেকো না।” [সূরা আল-জিন্ন, আয়াত: ১৮]
আরো অন্যান্য আয়াতসমূহ যা মসজিদসমূহের মর্যাদা নির্দেশ করে এবং ইসলামে তার সুউচ্চ অবস্থান নির্ধারণ করে।
আরও যা তার গুরুত্ব বর্ণনায় এসেছে যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন মদিনা আগমণ করেন মুহাজির হিসেবে তখন তার সর্বপ্রথম কাজ যা তিনি করেছেন তা হলো মসজিদ নির্মাণ। আর এ সম্পর্কে অসংখ্য হাদীসে মসজিদসমূহের গুরুত্ব সম্পর্কে বর্ণিত আছে। এ স্থানে সেসব বর্ণনা করলে আলোচনা অনেক দীর্ঘ হয়ে যাবে। তন্মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো যেমন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
«أَحَبُّ الْبِلَادِ إِلَى اللهِ مَسَاجِدُهَا »
‘‘আল্লাহর নিকট সর্বোকৃষ্ট স্থান হলো মসজিদসমূহ”।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেন,
«مَنْ بَنَى مَسْجِدًا لِلَّهِ تَعَالَى - قَالَ بُكَيْرٌ: حَسِبْتُ أَنَّهُ قَالَ: يَبْتَغِي بِهِ وَجْهَ اللهِ - بَنَى اللهُ لَهُ بَيْتًا فِي الْجَنَّةِ»
“যে ব্যক্তি আল্লাহর উদ্দেশ্যে একটি মসজিদ নির্মাণ করে, মহান আল্লাহ তার জন্য জান্নাতে একটি বাড়ী নির্মাণ করেন।”
অতঃপর, হে আমার মুসলিম ভাই, তোমার উচিৎ হলো, মসজিদসমূহের মর্যাদা সম্পর্কে জানা, আর সেটাকে যথার্থ সম্মান করা। আর এটা এভাবে যে, তার আবাদ করা আল্লাহ তা‘আলার স্মরণের মাধ্যমে এবং সেখানে প্রশংসনীয় শিষ্টাচার প্রদর্শন করা, যা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের জন্য প্রবর্তন করেছেন। আর আমাদেরকে সার্বিকভাবে মসজিদসমূহে তা ধারণ করার ব্যাপারে উৎসাহ দিয়েছেন এবং সেখানে সর্বাগ্রে থাকবে দু’টি দু’টি পবিত্র মর্যাদাবান মসজিদ: মসজিদে হারাম ও মসজিদে নববী। যেগুলোকে মহান আল্লাহ মার্যাদাবান করেছেন এবং এ উভয়টির মধ্যে অনেক মর্যাদা ও বৈশিষ্ট্য দিয়েছেন যা অন্য মসজিদসমূহে পাওয়া যায় না।
সুতরাং হে আমার মুসলিম ভাই, আপনার কর্তব্য হলো: যে ব্যক্তির জন্য মহান আল্লাহ উক্ত দু’টি মসজিদে পৌঁছা সহজ করেছেন এবং সেখানে সালাত আদায়ের তাওফীক দিয়েছেন সে যেন এ দু’টি মসজিদের অধিকার সম্পর্কে জানে এবং তার আঙিনায় উত্তম শিষ্টাচার অবলম্বন করে।
﴿ذَٰلِكَۖ وَمَن يُعَظِّمۡ شَعَٰٓئِرَ ٱللَّهِ فَإِنَّهَا مِن تَقۡوَى ٱلۡقُلُوبِ ٣٢﴾ [الحج: ٣٢]  
“এটাই আল্লাহর বিধান এবং কেউ আল্লাহর নিদর্শনাবলীকে সম্মান করলে এ তো তার হৃদয়ের তাকওয়া প্রসূত।” [সূরা আল-হাজ, আয়াত: ৩২]
আর এসব শিষ্টাচারসমূহের কিছু অংশ এমন রয়েছে যা গৃহে করণীয়, কিছু অংশ মসজিদের উদ্দেশ্যে বের হওয়ার প্রস্তুতির সাথে সংশ্লিষ্ট, কিছু অংশ মসজিদে গমনের রাস্তার সাথে সম্পৃক্ত এবং কিছু অংশ মসজিদে প্রবেশ ও সেখানে অবস্থানের সাথে সংযুক্ত। যার বিস্তারিত বর্ণনা নিম্নরূপ:

প্রথমত: বের হবার পূর্বে গৃহের অভ্যন্তরে
১. আল্লাহ তা‘আলার জন্য একনিষ্ঠতার নিয়ত করা: যেহেতু নিয়তের ওপর আমলসমূহ কবুল হওয়া নির্ভর করে এবং একে কেন্দ্র করেই সাওয়াব ও শাস্তি নির্ধারিত হয়। আর এ সম্পর্কে সহীহ হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«ِنَّمَا الأَعْمَال بِالنِّيَّاتِ وَإِنَّمَا لكُل امْرِئٍ مَا نَوَى»
“প্রত্যেক কাজ নিয়তের ওপর নির্ভরশীল। আর প্রত্যেকে যা নিয়ত করে তা পায়।”
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেন:
«مَنْ أَتَى الْمَسْجِدَ لِشَيْءٍ فَهُوَ حَظُّهُ»
‘‘যে ব্যক্তি মসজিদে কোনো কিছু অর্জনের জন্য আসে, তখন সে সেটারই অংশীদার হয়”। ইমাম আবু দাউদ হাসান সনদে হাদীসটি বর্ণনা করেছেন।
অতএব, হে ভাই! তুমি তোমার নিজের জন্য মসজিদের উদ্দেশ্যে বের হওয়াটাকে মহান আল্লাহর আদেশের অনুকুলে এবং তাঁর নিকট থেকে প্রতিদান ও সাওয়াবের প্রত্যাশায় স্থির কর। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সে বক্তব্যকে মনে হাযির কর যাতে তিনি বলেন,
«صلاة الرجل في الجماعة تضعف على صلاته في بيته وفي سوقه خمساً وعشرين ضعفاً، وذلك أنه إذا توضأ فأحسن الوضوء، ثم خرج إلى المسجد لا يخرجه إلا الصلاة لم يخط خطوة إلا رفع له بها درجة وحط عنه بها خطيئة»
“জামা‘আতবদ্ধভাবে সালাত আদায় করা বাড়ীতে এবং বাজারে সালাত আদায়ের পঁচিশ গুণ বেশী। আর তা এভাবে যে, যখন সে অযু করে এবং উত্তমরূপে অযু করে, অতঃপর মসজিদের দিকে বের হয়, আর তা শুধুমাত্র সালাত আদায়ের জন্যই হয়। তখন তার প্রত্যেক পদাঙ্কে একটি মর্যাদা বৃদ্ধি করা হয় এবং তার একটি অপরাধ মার্জনা করা হয়”।
বরং উচিৎ হলো, তোমার আকাঙ্খাকে উন্নতির  চরম পূর্ণতার দিকে নিয়ে যাবে। আর তাহলো তুমি যে দিন মহান আল্লাহর ছায়া ব্যতীত অন্য কোনো ছায়া থাকবে না সেদিন যে সাত ব্যক্তি ছায়া পাবে তাদের অন্তর্ভুক্ত হওয়ার জন্য প্রচেষ্টা চালাবে। যাদের বিষয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জানিয়েছেন,  আর তিনি তাদের মধ্যে ঐ ব্যক্তিকে উল্লেখ করেছেন,  
«ورجل قلبه معلق بالمسجد»
‘‘আর এমন ব্যক্তি যার অন্তর মসজিদের সাথে ঝুলন্ত থাকে” রহ.।  
আর তার অর্থ হলো: মসজিদের জন্য অত্যধিক ভালোবাসা থাকা এবং সেখানে জামা‘আতের সাথে সালাত আদায়কে অত্যাবশ্যক করে নেওয়া।
২. শরীর ও পরিধেয় বস্ত্রের পবিত্রতার ব্যাপারে যত্নবান হওয়া। এ ব্যাপারে মূল বক্তব্য হলো, আল্লাহ তা‘আলার বাণী,
﴿يَٰبَنِيٓ ءَادَمَ خُذُواْ زِينَتَكُمۡ عِندَ كُلِّ مَسۡجِدٖ وَكُلُواْ وَٱشۡرَبُواْ وَلَا تُسۡرِفُوٓاْۚ إِنَّهُۥ لَا يُحِبُّ ٱلۡمُسۡرِفِينَ ٣١﴾ [الاعراف: ٣١]   
 “হে আদম সন্তানেরা! তোমাদের বেশভূষা গ্রহণ করো প্রত্যেক সাজদাহস্থলে, আর খাও ও পান করো কিন্তু অপচয় করো না। নিশ্চয় তিনি অপব্যয়কারীদের পছন্দ করেন না। [সূরা আল-আ‘রাফ, আয়াত: ৩১]
ইবন কাসীর রহ. বলেন, ‘‘এ আয়াত এবং রাসূলের সুন্নাতে অনুরূপ যা এসেছে তা দ্বারা বুঝা যায় যে, সালাতের সময় সৌন্দর্য অবলম্বন মুস্তাহাব। আর বিশেষতঃ জুম‘আর দিন ও ঈদের দিন। আর সুগন্ধি গ্রহণ; কেননা তাও সৌন্দর্যের অন্তর্ভুক্ত এবং মিসওয়াক করা; কেননা এটিও সৌন্দর্যের পূর্ণতা প্রদানকারী”  
অনুরূপভাবে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কষ্টদায়ক দুর্গন্ধযুক্ত কিছু থেকে মসজিদসমূহকে সংরক্ষণ করার আদেশ করেছেন। তিনি বলেন,
«من أكل البصل والثوم والكرات فلا يقربن مسجدنا؛ فإن الملائكة تتأذى مما تتأذى منه بنو آدم»
“যে ব্যক্তি পিঁয়াজ ও রসুন এবং পিয়াজ জাতীয় সবজি খেয়েছে তাদের কেউ যেন আমার মসজিদের নিকটবর্তী না হয়। কেননা আদম সন্তান যাতে কষ্ট পায় ফিরিশতারাও তাতে কষ্ট পায়”।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেন যে,
«من أكل من هذه البقلة فلا يقربن مسجدنا حتى يذهب ريحها يعني الثوم»
 “যে এ জাতীয় তরকারী খায় সে তার গন্ধ দুরীভূত হওয়ার আগে যেন আমাদের মসজিদসমূহের নিকটবর্তী না হয়।” অর্থাৎ রসুন।  
আর এর ওপর কিয়াস করে বলা যায় যে, প্রত্যেক কষ্টদায়ক গন্ধ যা মুসল্লীদের কষ্ট দেয়ও তার এ নিষেধাজ্ঞার অন্তর্ভুক্ত, যেমন ধুমপান ও অন্যান্য।
অতএব, মুসলিমের ওপর কর্তব্য হলো, সে তার শরীর ও কাপড় পবিত্র রাখবে এবং সকল অপছন্দনীয় দুর্গন্ধ দুর করবে। বিশেষ করে ঘুম থেকে উঠার পর এবং যেসব জিনিষ দুর্গন্ধময় তা গ্রহণ ও ব্যবহার করার সময় যেমন, পেঁয়াজ ও অনুরূপ অন্যান্য। আর এগুলো দুর করতে সুগন্ধি ও মিসওয়াক ব্যবহার বিশেষ সহায়ক ভূমিকা পালন করে থাকে।
৩. পরিপূর্ণ সৌন্দর্যের মধ্যে অন্যতম হলো মুসলিম আচ্ছাদানকারী শালীন পোষাক পরিধান করবে। যা কাফির, ফাসিক ও চপলবুদ্ধিসম্পন্ন লোকদের কর্মকাণ্ড ও পোষাক-আশাকের অন্তর্ভুক্ত নয়। বিশেষ করে ছাত্ররা, যারা ইলম অন্বেষণকারী, যাদেরকে মহান আল্লাহ শরী‘আতের জ্ঞান অন্বেষণের রাস্তায় থাকার কারণে সম্মানিত করেছেন। কেননা তাদের দায়িত্ব হলো তারা হবে পোষাক পরিচ্ছেদ ও চলা-ফেরায় মানুষের জন্য আদর্শ এবং তাদের অন্যান্য সকল কাজ কর্মেও তারা হবে আদর্শ ও অনুপম দৃষ্টান্ত।
৪. বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিত ভাইদের যারা এমন ধরেনর পেশায় নিয়োজিত আছেন যাতে তার পোষাক-পরিচ্ছেদ ময়লা আবর্জনা লেগে যায় তাদের উদ্দেশ্যে আমি অন্তর থেকে একটি অনুরোধ পেশ করছি যে, তারা যেন একটি নির্দিষ্ট পোষাক বানান যা সালাতে যাওয়ার সময় পরিধান করবেন। আর এটা হলো মহান আল্লাহর আদেশকে পালন করার জন্য। যেহেতু তিনি প্রত্যেক সালাতের সময় সৌন্দর্য অবলম্বন করতে নির্দেশ দিয়েছেন এবং সালাতের মধ্যে অন্যান্য ভাইদের কষ্ট দেওয়া থেকে বেঁচে থাকার জন্য।
৫. পূন্যে উৎসাহী প্রত্যেক মুসলিমের উচিৎ হলো, সালাতের জন্য প্রস্তুতি নেওয়া, তার জন্য পূর্ব থেকেই অযু করা এবং সালাতের সময় হওয়ার পূর্বে সালাতের প্রস্তুতি সম্পন্ন করা। ফলে যখনই সময় হবে তখনই যেন দ্রুত সালাতের উদ্দেশ্যে বের হয়ে যেতে পারে।

দ্বিতীয়ত: মসজিদের রাস্তায়
১. হে আমার মুসলিম ভাই, আপনার জন্য মুস্তাহাব হলো, যখন আপনি সালাত ও অন্যান্য উদ্দেশ্যে ঘর থেকে বের হবেন তখন মহান আল্লাহকে  সে সব প্রামান্য দো‘আ (মাছুরা) দ্বারা আহ্বান করবেন যা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে সাব্যস্ত হয়েছে। যেমন ইমাম তিরমিযী ও অন্যান্যরা আনাস ইবন মালিক রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
«من قال إذا خرج من بيته:بسم الله توكلت على الله ولا حول ولا قوة إلا بالله يقال له:كفيت ووقيت وتنحى عنه الشيطان»
“যে বলবে অর্থাৎ যে ঘর থেকে বের হওয়ার সময় বলবে بسم الله توكلت على الله لاحول ولا قوة إلا بالله “বিসমিল্লাহি তাওয়াক্কালতু আলাল্লাহি, লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহি”“আল্লাহ তা‘আলার নামে বের হচ্ছি এবং আল্লাহর ওপর পূর্ণ ভরসা করছি। তিনি ব্যতীত কোনো শক্তি ও সামর্থ্য নেই” তখন তাকে বলা হবে তোমার রক্ষণাবেক্ষণের জন্য আল্লাহ যথেষ্ট এবং তার কাছ থেকে শয়তান অনেক দুরে সরে যায়।” (ইমাম তিরমিযী বলেন, হাদীসটি হাসান সহীহ ও গরীব।)
উম্মে সালামাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমার গৃহ থেকে সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কখনো তাঁর দৃষ্টি আকাশের দিকে উত্তোলন ব্যতীত বের হতেন না। তারপর তিনি বলতেন,
«اللهم إني أعوذ بك أن أضل أو اُضل أو أزل أو اُزل ، أو أظلم أو اُظلم ، أو أجهل أو يُجهل علي»
‘‘হে আল্লাহ আমি তোমার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি গোমরাহী থেকে অথবা গোমরাহকারী থেকে, অথবা পদস্খলন করা থেকে অথবা পদস্খলিত হওয়া থেকে অথবা যুলুম করা থেকে অথবা মযলুম হওয়া থেকে অথবা জাহিল হওয়া থেকে অথবা আমাকে জাহেল মনে করা থেকে।” তিরমিযি বলেন, হাদীসটি হাসান ও সহীহ।  
অতএব, হে আমার ভাই! উপর্যুক্ত  দো‘আসমূহ পড়তে যত্নবান হও। মহান আল্লাহ তোমাকে হিফাযত করবেন এবং তোমাকে বাঁচিয়ে রাখবেন। আর তোমার থেকে শয়তানকে দুরে সরে রাখবেন। কেননা  দো‘আ হলো সকল কল্যাণের চাবিকাঠি।
২. মুসলিমের উচিৎ হলো, শান্তি ও ধীরস্থিরভাবে সালাতের উদ্দেশ্যে মসজিদে গমন করা।  সে মধ্যম পন্থায় হাঁটবে, দৃষ্টি অবনত রাখবে, হারাম থেকে তার অঙ্গ-প্রত্যঙ্গকে সংরক্ষণ করবে এবং আঙ্গুলগুলো একটার ভিতরে অপরটি না ঢুকিয়ে চলবে। সে পথ চলতে চলতে মনে করবে যে সে সালাতের মধ্যে আছে। আর নিশ্চয় তার পদাঙ্কের হিসাব তার নেকের পাল্লায় তার জন্য সংরক্ষিত থাকবে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«إذا ثُوِّبَ للصلاةِ فلا تأتوها وأنتم تَسْعَوْنَ وائتوها وعليكم السَّكِينَةُ فما أدركتم فصلوا وما فاتكم فأتمُّوا فإن أحدَكم إذا كان يَعْمِدُ إلى الصلاةِ فهو فى صلاةٍ»
“যখন কেউ সালাতের জন্য ডাকা হয় , অর্থাৎ ইক্বামত হয়ে যায়, তখন তোমরা তাতে দৌড়ে এসো না, বরং তোমরা এমনভাবে আস যে তোমাদের ওপর বজায় থাকে প্রশান্তি- ধীরস্থিরতা।‌ অতঃপর তোমাদের কেউ যতটুকু সালাত ইমামের সাথে পাবে ততটুকু পড়বে, আর যা ছুটে যাবে তা পূর্ণ করবে। কেননা তোমাদের কেউ যখন সালাতের উদ্দেশ্যে বের হয় তখন সে সালাতের মধ্যেই থাকে”। ইমাম মুসলিম এটি বর্ণনা করেছেন।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেন,
«أَلَا أَدُلُّكُمْ عَلَى مَا يَمْحُو اللهُ بِهِ الْخَطَايَا، وَيَرْفَعُ بِهِ الدَّرَجَاتِ؟» قَالُوا بَلَى يَا رَسُولَ اللهِ قَالَ: «إِسْبَاغُ الْوُضُوءِ عَلَى الْمَكَارِهِ، وَكَثْرَةُ الْخُطَا إِلَى الْمَسَاجِدِ، وَانْتِظَارُ الصَّلَاةِ بَعْدَ الصَّلَاةِ، فَذَلِكُمُ الرِّبَاطُ»
“আমি কি তোমাদের জানিয়ে দিব না, কোন জিনিস দ্বারা আল্লাহ গুনাহসমূহ মিটিয়ে দেন এবং মর্যাদা বাড়িয়ে দেন? তখন সাহাবীগণ বললেন: নিশ্চয়! হে আল্লাহর রাসূল। তিনি বললেন, কষ্টের সময়েও পূর্ণরূপে অযু করা এবং মসজিদে বেশি বেশি গমন করা। আর এক সালাতের পর পুনরায় অপর সালাতের জন্য অপেক্ষা করা। আর এটাই হলো রিবাত্ব বা সীমান্ত প্রহরা দেওয়া”। ইমাম মুসলিম এটা বর্ণনা করেন।
ইমাম মুসলিম আবু কাতাদাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে আরো বর্ণনা করেন, তিনি বলেন:
بَيْنَمَا نَحْنُ نُصَلِّي مَعَ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَسَمِعَ جَلَبَةً، فَقَالَ: «مَا شَأْنُكُمْ؟» قَالُوا: اسْتَعْجَلْنَا إِلَى الصَّلَاةِ، قَالَ: «فَلَا تَفْعَلُوا، إِذَا أَتَيْتُمُ الصَّلَاةَ فَعَلَيْكُمُ السَّكِينَةُ، فَمَا أَدْرَكْتُمْ فَصَلُّوا، وَمَا سَبَقَكُمْ فَأَتِمُّوا»
 
“আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে সালাত আদায় করতে যাচ্ছিলাম তখন তিনি শোরগোল শুনতে পেলেন।  তিনি বললেন: তোমাদের কী হয়েছে? তারা বলল: আমরা তাড়াতাড়ি সালাতের দিকে ধাবিত হচ্ছি । তিনি বলেন: তোমরা এমনটি করবে না, যখন সালাত আদায় করতে আসবে তখন তোমাদের ওপর কর্তব্য হলো প্রশান্তি ও ধীরস্থিরতা অবলম্বন করা। অতঃপর তোমরা যা পাবে তা পড়বে এবং যা অতিবাহিত হয়ে গেছে সেটা পূর্ণ করবে।”  
অনুরূপভাবে ইবন খুযাইমা ও হাকেম রহ. আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণনা করেছেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
"إِذَا تَوَضَّأَ أَحَدُكُمْ فِي بَيْتِهِ، ثُمَّ أَتَى الْمَسْجِدَ كَانَ فِي صَلَاةٍ حَتَّى يَرْجِعَ، فَلَا يَقُلْ هَكَذَا -وَشَبَّكَ بَيْنَ أَصَابِعِهِ-"
‘‘যখন তোমাদের কেউ তার গৃহে অযু করে, অতঃপর মসজিদে আসে সে ফিরে যাওয়া পর্যন্ত সালাতের মধ্যেই থাকে, সুতরাং তুমি এরূপ করবে না। আর তিনি তার আঙ্গুলসমূহ জড়ালেন”।
ইমাম হাকেম বলেন: শাইখাইনের শর্তানুযায়ী হাদীসটি সহীহ। আর তারা তা তাখরীজ করেন নি। ইমাম যাহাবী ও নাসিরুদ্দীন আলবানী একই মত পোষণ করেছেন।
৩. সালাতে শান্তির সাথে গমন করাকে যা সাহায্য করে তার মধ্যে অন্যতম হলো অগ্রে সেদিকে গমন করা। কেননা মানুষ যখন অগ্রে গমন করে তখন তার অন্তর প্রশান্ত থাকে, অবস্থা স্থির থাকে। আবেগবর্জিত থাকে যা অস্থিরতা থেকে দুরে রাখে।
পক্ষান্তরে যখন সে বিলম্বে বের হয় তখন সে তার কাজে তাড়াহুড়া করে। অস্থিরমতি থাক, অপ্রশান্ত আত্মা, দ্রুত ক্রোধান্বিত হওয়ার অবস্থায় থাকে, তার চলাফরায় ভারসাম্যহীনতায় ভুগতে থাকে, তারপরও তার সালাতের অনেক অংশ ছুটে যায়।  আর যা পায় তাতেও সে দ্রুত শ্বাস-প্রশ্বাসগ্রহণকারী অবস্থায় থাকে, তাতে না থেকে বিনয়, না থাকে প্রশান্তি।
অগ্রে সালাতের জন্য বের হওয়ার মধ্যে রয়েছে অন্যান্য বড় উপকারিতা: যেমন,
ক. প্রথম কাতারে সালাতে শামিল হতে সক্ষম হওয়া।
খ. মসজিদে বসে থাকাকালীন অবস্থায় ফিরিশতাগণের দো‘আ দ্বারা  লাভবান হওয়া। কারণ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
«الملائكة تصلي على أحدكم ما دام في مصلاه الذي صلى فيه ما لم يحدث: اللهم اغفر له، اللهم ارحمه»
“ফিরিশতাগণ মুসল্লীদের জন্য দো‘আ করতে থাকেন যতক্ষণ তারা সালাতের স্থানে থাকে পবিত্র অবস্থায়। বলতে থাকে, হে আল্লাহ! তাকে ক্ষমা কর, হে আল্লাহ তার প্রতি রহম কর।” ইমাম বুখারী রহ. ও মুসলিম রহ. হাদীসখানা বর্ণনা করেছেন।  
গ. সর্বাগ্রে সালাতে গমন করার কারণে মহান প্রতিদান অর্জিত হওয়া। কারণ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«وَلَوْ يَعْلَمُونَ مَا فِي التَّهْجِيرِ لاسْتَبَقُوا إِلَيْهِ»
‘‘যদি তারা জানতো যে অগ্রে গমনের সাওয়াব কী? তবে  অবশ্যই তারা তাতে প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হতো”।”‘‘ইমাম মুসলিম বর্ণনা করেছেন।
হাদীসে বর্ণিত, تهجير শব্দের শাব্দিক অর্থ: প্রত্যেক বিষয়ে অগ্রে গমন করা এবং দ্রুত সেদিকে ধাবিত হওয়া। আর এখানে উদ্দেশ্য হলো সালাতের দিকে দ্রুত বের হওয়া।
আর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জুমু‘আর দিনে অগ্রে সালাতে উপস্থিত হওয়ার প্রতিদানের বিভিন্নতা নিরূপন করে বলেন:
«من اغتسل يوم الجمعة غسل الجنابة، ثم راح فكأنما قرب بدنة، ومن راح في الساعة الثانية فكأنما قرب بقرة، ومن راح في الساعة الثالثة، فكأنما قرب كبشاً أقرن، ومن راح في الساعة الرابعة، فكأنما قرب دجاجة، ومن راح في الساعة الخامسة، فكأنما قرب بيضة فإذا خرج الإمام حضرت الملائكة يسمعون الذكر»
“যে ব্যক্তি জুমু‘আর দিন অপবিত্রতার গোসল করে জুম‘আর সালাতের উদ্দেশ্যে মসজিদে গমন করে সে একটি উট কোরবানীর সাওয়াব পাবে। আর যে তারপর যাবে সে একটি গরু কোরবানীর সওয়াব পাবে। তারপর যে তারপর আসবে সে একটি ভেড়া কোরবানীর সওয়াব পাবে। তারপর চতুর্থ বারে যে আসবে সে মুরগী কোরবানীর সওয়াব পাবে। আর যে পঞ্চমবার আসবে সে ডিম কোরবনীর সওয়াব পাবে। অতঃপর ইমাম যখন (খুতবা দিতে দাঁড়ায়) দাঁড়ায় তখন ফিরিশতারা উপস্থিত হয় এবং তারা যিকির শুনতে থাকে”।
এভাবে মহান আল্লাহ তাঁর নৈকট্য লাভের পথকে সুগম করেছেন এবং এ কারণে মহা প্রতিদান দিয়েছেন।  সুতরাং তার জন্য সকল প্রশংসা ও গুণগান।  কিন্তু কিছু মানুষ আছে যারা এ ধরনের সওয়াব অর্জনের মহা সুযোগ হারিয়ে ফেলে। ফলে তারা ইকামাত শোনা ব্যতিত সালাতের উদ্দেশ্যে বের হয় না। আর কেউ কেউ খুব অগ্রে বের হয়। কিন্তু তারা মসজিদে প্রবেশ করে না; রবং মসজিদের বাহিরে অবস্থান করে পারস্পরিক কথা-বার্তা চালিয়ে যেতে থাকে সালাত কায়েম হওয়া পর্যন্ত। ফলে তারা নিজেদেরকে বিরাট প্রতিদান থেকে বঞ্চিত করে। অতএব, আল্লাহ ব্যতীত কোনো ইখতিয়ার ও শক্তি নেই।

তৃতীয়ত: মসজিদে প্রবেশ
১. হে আমার মুসলিম ভাই যখন আপনি মসজিদে পৌঁছবেন তখন  আপনি আপনার ডান পা দিয়ে প্রবেশ করবেন  এবং মসজিদে প্রবেশের  দো‘আ পড়তে যত্নবান হবেন এবং বলুন:
«بسم الله والصلاة والسلام على رسول الله ، اللهم اغفر لي ذنوبي وافتح لي أبواب رحمتك»
‘‘আল্লাহর নামে শুরু করছি, সালাত ও সালাম রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি। হে আল্লাহ, আমার পাপকে ক্ষমা করে দাও। আর আমার জন্য তোমার রহমাতের দ্বার খুলে দাও”।
এটি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বেশ কয়েকটি হাদীসে বর্ণিত হয়েছে।  
তাছাড়া রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন মসজিদে প্রবেশ করতেন তখন আরও বলতেন,
«أَعُوذُ بِاللَّهِ الْعَظِيمِ وَبِوَجْهِهِ الْكَرِيمِ وَسُلْطَانِهِ الْقَدِيمِ مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيمِ»
‘‘আমি মহান আল্লাহর নিকট তার পবিত্র চেহারা দ্বারা এবং তার প্রাচীন ক্ষমতা দ্বারা বিতাড়িত শয়তানের কাছ থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করছি।” আবু দাউদ বর্ণনা করেছেন।
২. অতঃপর  সম্মুখভাগের কাতারের দিকে অগ্রসর হবে এবং প্রথম কাতারে ইমামের পেছেনে ডান পাশে অবস্থান করতে যত্নবান হবে।  কেননা এ জন্য মহান আল্লাহর নিকট বিরাট প্রতিদান রয়েছে। এ বিষয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বাণীতে নির্দেশনা রয়েছে। তিনি বলেন,
«لَوْ يَعْلَمُ النَّاسُ مَا فِي النِّدَاءِ وَالصَّفِّ الاوَّلِ ثُمَّ لَمْ يَجِدُوا إِلا أَنْ يَسْتَهِمُوا عَلَيْهِ لاسْتَهَمُوا»
‘‘যদি মানুষ জানত আযান ও প্রথম কাতারে কী আছে তা সম্পর্কে, তারপর লটারী ব্যতীত তা নির্ধারণ করা সম্ভব না হতো, তবে তারা তা অর্জনের জন্য লটারী করতো”। ।ইমাম বুখারী ও মুসলিম এটি বর্ণনা করেছেন।  
আশ্চর্য হলো, কিছু মানুষ আছে যারা এ বিরাট প্রতিদানকে অবহেলা করে চলেছে।  তুমি তাদেরকে দেখবে যে তারা খুব আগেই মসজিদে আসে কিন্তু তারা মসজিদের মাঝখানে অথবা শেষে বসে পড়ে। প্রথম কাতারে যাওয়ার জন্য চেষ্টা করা ছেড়ে দেয়। অথচ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«خَيْرُ صُفُوفِ الرِّجَالِ أَوَّلُهَا وَشَرُّهَا آخِرُهَا وَخَيْرُ صُفُوفِ النِّسَاءِ آخِرُهَا وَشَرُّهَا أَوَّلُهَا»
“পুরুষদের উত্তম সারি হলো প্রথম সারি এবং সর্বনিকৃষ্ট সারি হলো শেষ সারি । আর মহিলাদের উত্তম সারি হলো শেষটি এবং নিকৃষ্ট হলো প্রথমটি”। ইমাম মুসলিম এটি বর্ণনা করেছেন।  
অনুরূপভাবে আবু সাঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন:
«رأى رسول الله صلى الله عليه وسلم قوماً في مؤخر المسجد فقال لهم تقدموا فأئتموا بي وليأتم بكم من بعدكم ولا يزال قومٌ يتأخرون حتى يؤخرهم الله»
“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোনো একদল লোককে মাসজিদের পিছনে অবস্থান করতে দেখে বললেন, বললেন: তোমরা এগিয়ে আস এবং আমার অনুকরণ করো। আর তোমাদের পরে যারা আছে তারা তোমাদের অনুকরণ করবে। কোনো গোষ্ঠী যখন পিছনে অবস্থান করতে থাকলে আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে পিছনেই রেখে দিবেন”। ইমাম মুসলিম হাদীস টি বর্ণনা করেছেন।
আশংকা করা হয় যে, ঐসব লোকদের ব্যপারে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিম্নোক্ত বক্তব্য প্রযোজ্য হয়ে যাবে, তিনি বলেন,
«لايَزَالُ قَوْمٌ يَتَاخَّرُونَ عَنِ الصَّفِّ الاوَّلِ حَتَّى يُؤَخِّرَهُمُ الله فِي النَّارِ»
‘‘কোনো সম্প্রদায় যখন প্রথম কাতারে প্রবেশ করা থেকে বিলম্ব করবে তখন আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে জাহান্নামের আগুন থেকে বের করতে বিলম্ব করবেন”।[ইমাম আবু দাউদ (রহ.) আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা থেকে বর্ণনা করেছেন।]  
আর অধিক অবহেলাকারী হচ্ছে ঐসব লোক, যারা সালাত আদায়ের জন্য মসজিদে হারাম ও মসজিদে নববীর ভেতরে প্রশস্ত শূন্য জায়গা থাকা সত্বেও বাইরের প্রশস্ত স্থানে বসে থাকে। এভাবে তারা নিজেদেরকে বিরাট প্রতিদান থেকে বঞ্চিত করে; বরং কতিপয় আলেম ব্যক্তির মতে তাদের দ্বারা ইমামের ইকতেদা বা অনুসরণ-অনুকরণ করার বিষয়টি প্রশ্নবিদ্ধ বিষয়। তাদের কারণেই মসজিদে প্রবেশের স্থান সংকীর্ণ হয়ে পড়ে এবং অনেকের মনে এ ধারণা হয়ে যায় যে, মসজিদ পূর্ণ হয়ে গেছে।
৩. অতঃপর যখন তুমি মসজিদে প্রবেশ করবে তখন দুই রাকাত ‘তাহিয়্যাতুল মাসজিদ’ সালাত আদায় না করে বসবে না। কেননা রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«إِذَا دَخَلَ أَحَدُكُمُ الْمَسْجِدَ فَلاَ يَجْلِسْ حَتَّى يُصَلِّىَ رَكْعَتَيْنِ»
‘‘যখন তোমাদের কেউ মসজিদে প্রবেশ করে তখন সে দুই রাকাত সালাত আদায় ব্যতিত বসবে না”।এটি ইমাম বুখারী (রাহ.) ও মুসলিম (রাহ.) বর্ণনা করেছেন।  
৪. যখন তুমি ‘তাহায়্যিাতুল মাসজিদ’ সালাত আদায় করবে, তারপর মহান আল্লাহর স্মরণ ও কুরআন তিলাওয়াত অথবা কোনো উপকারী ইলম শিক্ষাগ্রহণ ও শিক্ষা দেওয়ার কাজে মশগুল হবে, যেহেতু এর জন্য রয়েছে অনেক প্রতিদান । ইমাম মুসলিম রহ. উকবা ইবন আমের রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণনা করেছেন , তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের কাছে বের হয়ে আসলেন, আমরা সুফফার  স্থানে অবস্থান করছিলাম, তখন তিনি বলেন,
« أيّكم يحب أن يغدو كل يوم إلى بطحان أو العقيق، فيأتي بناقتين كوماوين في غير إثم ولا قطع رحم»؟ فقلنا : يا رسول الله كلنا نحب ذلك . قال: « أفلا يغدو أحدكم إلى المسجد، فيعلم أو يقرأ آيتين من كتاب الله خير له من ناقتين ، وثلاث خير له من ثلاث ، وأربع خير له من أربع ، ومن أعدادهن من الإبل».
‘‘তোমাদের মধ্যে কে পছন্দ করে যে, প্রত্যেক দিন প্রত্যহ সকালে ‘বুতহান অথবা ‘আকীক’  নামক স্থানের দিকে বের হতে, তারপর সেখান থেকে কোনো প্রকার গুনাহ কিংবা আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করা ব্যতীত দু’টি উঁচু কুঁজ বিশিষ্ট উষ্ট্রী নিয়ে আসবে?”  আমরা বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আমরা এটা পছন্দ করি। তিনি বললেন ‘‘তোমাদের কেউ সকালে মসজিদে বের হবে অতঃপর মহান আল্লাহর কিতাব থেকে দু‘টি আয়াত শিক্ষা করবে অথবা পড়বে তার জন্য তা দু‘টি ঊষ্ট্রি থেকে উত্তম। আর তিনটি আয়াত তিনটি উষ্ট্রি থেকে উত্তম। আর চারটি আয়াত চারটি থেকে উত্তম। এভাবে প্রতি সংখ্যার আয়াত শিক্ষা করা বা পাঠ করা সে সংখ্যার উটের থেকে উত্তম।”  
আবু উমামা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেছেন যে, তিনি বলেছেন:
 «من غدا إلى المسجد لا يريد إلا أن يتعلَّم خيراً أو يعلمه كان له كأجر حاجٍ تاماً حجته»
‘‘যে ব্যক্তি সকালে মসজিদে কেবল কোনো ভালো কিছু শিক্ষা গ্রহণের জন্য অথবা শিক্ষা দেওয়ার জন্য গমন করে তার জন্য একটি পরিপূর্ণ হজের সমপরিমাণ প্রতিদান রয়েছে”।
মুনযেরী বলেন: ‘‘হাদীসটি ইমাম ত্বাবারানী তাঁর মু‘জামুল কাবীরে সমস্যাহীন সনদে বর্ণনা করেছেন।  
৫. মানুষের সাথে বেহুদা  কথা বলা থেকে বিরত থাকুন। আর জেনে রাখুন যে, সালাতের অপেক্ষায় মসজিদে আপনার বসে থাকার অর্থই হচ্ছে আপনি সালাতের মধ্যেই আছেন। অর্থাৎ আপনার জন্য রয়েছে তেমনি প্রতিদান ও সওয়াব যেমনিভাবে আপনি সালাতে দাঁড়ালে সাওয়াব ও প্রতিদান রয়েছে। আর ফিরিশতারা আপনার জন্য  দো‘আ করতে থাকেন এবং ক্ষমা প্রার্থনা করেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«الملائكة تصلي على أحدكم ما دام في مصلاه ما لم يُحدث: اللهم اغفر له، اللهم ارحمْه. لا يزال أحدكم في صلاة ما دامت الصلاة تحبسه، لا يمنعه أن ينقلب إلى أهله إلا الصلاة»
“ফিরিশতাফিরিশতাগণ তোমাদের কারও ওপরসালাত পাঠ করেন, যতক্ষণ সে পবিত্র অবস্থায় সালাতের স্থানে অবস্থান করতে থাকে। (তারা এই বলে দো‘আ করে) হে আল্লাহ, তাকে ক্ষমা কর, তার প্রতি দয়া করো। তোমাদের কেউ সালাতেই আছে বিবেচিত হবে যতক্ষণ সালাতের কারণে আটকে থাকে আর সালাত ব্যতীত কোনো কিছুই তাকে তার পরিবারের কাছে ফিরে যেতে বাধা না দেয়”।[ইমাম বুখারী (রাহ.) বর্ণনা করেছেন।]  
অন্য বর্ণনায় অতিরিক্ত এসেছে: ‘‘যতক্ষণ অন্য কাউকে কষ্ট না দেয় ”
যদি কোনো মানুষ এ অর্থগুলো অনুধাবন করত তাহলে অবশ্যই তার অন্তর ঈমান দ্বারা পরিপূর্ণ হতো। আর তার জিহ্বা আল্লাহর হামদ বর্ণনা ও তার ইহসান ও দয়ার বদৌলতে কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করত। আর তার অঙ্গ প্রত্যঙ্গ মহান আল্লাহর সামনে লজ্জায় অবশ্যই অবনত হতো যে তার থেকে মহান আল্লাহ অসন্তুষ্ট হন এমন কোনো কিছু প্রকাশ পেতো না।
৬. অতঃপর যখন সালাতের ইকামত হয়ে যাবে, তখন অবশ্যই কাতার সোজা রাখা, ফাকা স্থান বন্ধ করা, প্রথমে প্রথম কাতার পূর্ণ করার ব্যাপারে যত্নবান হবে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
«سَوُّوا صَفُوفَكمْ فَإِنَّ تَسْوِيَةَ الصُّفوفِ مِنْ إِقَامَةِ الصَّلاَةِ»
‘‘তোমরা তোমাদের কাতারসমূহ সোজা করো, কেননা কাতার সোজা করা সালাত আদায়ের অংশ”।[ইমাম বুখারী (রাহ.) ও মুসলিম (রাহ.) এটি বর্ণনা করেছেন।]  
ইমাম বুখারী রহ. আনাস ইবন মালেক রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন,
«وكان أحدنا يُلزق منكبه بمنكب صاحبه وقدمه بقدمه»
‘‘আমাদের কেউ তার কাধ অন্য সঙ্গির কাঁধের সাথে ও তার পা সঙ্গির পায়ের সাথে মিলিয়ে রাখতো”।
ইমাম মুসলিম রহ. জাবির ইবন সামুরাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণনা করেন, আমাদের কাছে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বের হয়ে আসলেন। অতঃপর বললেন:
«ألا تصفون كما تصف الملائكة عند ربها ؟ فقلنا : يا رسول الله وكيف تصف الملائكة عند ربها ؟ قال : يتمون الصفوف الأوَل ويتراصون في الصف»
“‘ফিরিশতাগণ যেভাবে তাদের রবের সামনে সারিবদ্ধ হয় তোমরা কি সেভাবে সারিবদ্ধ হবে না?” তারা বলল, হে আল্লাহর রাসূল! ফিরিশতাগণ তাদের রবের কাছে সারিবদ্ধ হয় কীভাবে? তিনি বলেন: তারা আগের কাতার পূর্ণ করে এবং কাতারের মধ্যে মিলিত হয়ে দাড়ায়”।
আর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কাতার সোজা করা থেকে বিঘ্ন সৃষ্টি করার ব্যাপারে কঠোর সতর্কতা প্রদান করে বলেন:
 «لتُسَوُّنَّ صفوفكم أو لَيخالِفَنّ اللهُ بين وجوهكم»
‘‘অবশ্যই অবশ্যই তোমরা তোমাদের কাতার সোজা করবে নয়তো অবশ্যই অবশ্যই আল্লাহ তোমাদের চেহারার মধ্যে পরিবর্তন করে দিবেন”।[ইমাম বুখারী (রাহ.) ও ইমাম মুসলিম (রাহ.) এটি বর্ণনা করেছেন।]
আর এটি বিরাট ধমক ও হুমকি, এ কারণে কাতার সোজা করা ওয়াজিব। আর এতে অবহেলা করা হারাম।
 অতঃপর যে ব্যক্তি এ বিষয়টি জানতে পারলো, তার কর্তব্য হলো, সে তার মুসলিম ভাইদের জন্য আদর্শ হবে এবং কাতার সোজা করা ও আগের কাতার পূর্ণ করা, কাতার থেকে শূন্যস্থান পূরণ করা যেন শয়তান কাতারের শূন্যস্থানে প্রবেশ করতে না পারে সে ব্যাপারে তার ভাইদের সহযোগী হবে। আর হে আমার মুসলিম ভাই! এসব উপকারী বক্তব্য শ্রবণ করার জন্য তোমার কান, চোখ ও অন্তরকে খুলে রাখো; কারণ তা এমন ব্যক্তির কাছ থেকে এসেছে যার  গুণ বর্ণনা করে মহান আল্লাহ বলেন,  
﴿بِٱلۡمُؤۡمِنِينَ رَءُوفٞ رَّحِيمٞ١٢٨﴾ [التوبة: ١٢٨]
“মুমিনদের ব্যাপারে অতিশয় দয়াপরববশ ও দয়ালু।”
বস্তুত তাঁর সকল বক্তব্যই অনুরূপ। আমার পিতা-মাতা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জন্য কোরবান হোক যে, তিনি বলেন:
«أقيموا الصفوف و حاذوا بين المناكب و سدوا الخلل و لينوا بأيدي إخوانكم و لا تذروا فرجات للشيطان و من وصل صفا وصله الله و من قطع صفا قطعه الله»
‘‘তোমরা তোমাদের কাতার সোজা কর। আর কাঁধে কাঁধ মিলাও ও ফাঁকা স্থান বন্ধ করো এবং তোমাদের ভাইদের হাতে নরম হয়ে যাও, (টানতে বা ঠিক করতে চাইলে তার আহ্বানে সাড়া দাও)। আর শয়তান প্রবেশে সুযোগ রাখবে না। আর যে কেউ কোনো কাতার মিলিয়ে দেয় আল্লাহ তার সাথে সম্পর্ক রাখবেন, আর যে তা নষ্ট করে আল্লাহ তা‘আলা তার সাথে সম্পর্ক নষ্ট করবেন”।[ইমাম আবু দাউদ রহ. বর্ণনা করেছেন।]  
৭. প্রিয় মুসলিম ভাই, প্রথম কাতারে সালাত আদায় করার দ্বারা ফযীলত লাভের ব্যাপারে যা তুমি জানতে পেরেছো তা যেন তোমাকে অন্যের অধিকারে সীমালঙ্ঘন করার উৎসাহি না করে। ফলে কখনো কখনো তুমি বিলম্বে এসে দ্বিতীয় কাতারে তোমার যেসব ভাই বসেছে তাদের অধিকারের প্রতি লক্ষ্য না রেখে প্রথম কাতারে লাফিয়ে পড়বে। অথচ দ্বিতীয় রাকা‘আতে যারা আছে তারা প্রথম কাতারে সালাত আদায়ের ব্যাপারে তোমার মতই অথবা আরও অধিক উৎসাহী। প্রথম কাতারে অবস্থানকৃত তোমার ভাইদের ওপর সঙ্কীর্ণ হওয়ার ভয় ব্যতীত অন্য কোনো কিছুই তাদেরকে সামনে অগ্রসর হওয়া থেকে নিষেধ করে না। নিঃসন্দেহ তোমার এ কাজ তাদেরকে কষ্ট দেয় এবং তাদের অন্তরে ঘৃণা জন্মায়। আর এজন্য তোমার ওপর প্রতিদানের চেয়ে অধিক অপরাধ লিপিবদ্ধ করা হবে।”
তোমার সাথে অন্য কেউ এরূপ করলে তা কেমন হতো -এ ব্যাপারে তুলনা করে দেখো। অথচ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«لا يؤمن أحدكم حتى يحب لأخيه ما يحب لنفسه».
‘‘তোমাদের কেউ ততক্ষণ পর্যন্ত ঈমানদার হতে পারবে না যতক্ষণ না সে নিজের জন্য যা পছন্দ করে তা অপরের জন্য পছন্দ করবে”। [ইমাম বুখারী রহ. এটি বর্ণনা করেছেন।]  
আর মানুষের মধ্যে এমন কিছু মানুষ আছে যারা কাতারে আসে এবং তা এমন পরিপূর্ণ যে সেখানে কোনো ফাঁকা স্থান নেই। অতঃপর সে জোর করে প্রবেশ করে, ফলে সে ডান ও বাম দিকের মুসল্লীদের কষ্ট দেয় এবং তাদেরকে সংকীর্ণ করে এবং তাদের সালাতের খুশু‘ নষ্ট করে দেয়।
অতএব, ভালো কাজে উৎসাহি মুসলিমের উচিৎ হলো এসব কাজ থেকে বিরত থাকা যাতে ফিরে যাওয়ার মাধ্যমে তার ও অন্যের ক্ষতি সাধিত হয়।
৮. আমার মুসলিম ভাই! তোমার সালাত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আদেশের অনুকরণে আদায় করতে উৎসাহী হও। যেমন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
«صلوا كما رأيتموني أصلي»
“ তোমরা সালাত পড় যেমনটি আমাকে পড়তে দেখেছ”।  
আর এটি মহান আল্লাহ তোমার জন্য সহজ করেছেন। সেহেতু কিছু জ্ঞানী ব্যক্তিত্ব সহীহ দলীলের ভিত্তিতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সালাতের পদ্ধতি নিয়ে সহজ পদ্ধতিতে স্বতন্ত্র গ্রন্থ রচনা করেছেন। তন্মধ্যে আল্লামা শাইখ আব্দুল আযীয ইবন আবদুল্লাহ ইবন বায রহ. "كيفية صلاة النبى আল্লামা শাইখ নাসিরুদ্দীন আলবানী রহ.-এর صفة صلاة النبى صلى الله عليه وسلم" "من التكبير إلى التسليم كأنك تراها  অন্যতম। আর এটাকে আরো সংক্ষিপ্তাকারে مختصرصفة صلاة النبى صلى الله عليه وسلم নামে রচনা করেন আল্লামা শাইখ মুহাম্মাদ ইবন সালেহ ইবন উসাইমীন রহ। অনুরূপভাবে শাইখ ইবন উসাইমীনের নিজেও এ বিষয়ে একটি সংক্ষিপ্ত পুস্তিকা রচনা করেছেন। তাছাড়া অন্যান্যরাও অনুরূপ গ্রন্থ রচনা করেছেন।
৯. সালাত সমাপ্ত হওয়ার পর পরই মসজিদ ত্যাগ করতে শয়তান যেন প্রলুব্ধ করতে না পারে যেমনটি কিছু মানুষের অবস্থা দাঁড়িয়েছে। ঐসব লোক তাদের তাড়াহুড়োর কারণে কত বড় মহান প্রতিদান থেকে বঞ্চিত হয়। যেহেতু তারা সালাত আদায়ের পরে  বর্ণিত দো‘আসমূহ পাঠে অবহেলা করে থাকে।
হে মুসলিম ভাই, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এ প্রজ্ঞাপূর্ণ নির্দেশনা ও সাহাবায়ে কিরামের প্রবল উৎসাহের ব্যাপারটি তুমি গভীর চিন্তা-ভাবনা করলে কল্যাণমূলক কাজে তাদের গভীর আগ্রহ ও সে ব্যাপারে আমাদের অবহেলার বিষটি প্রকট আকারে তোমার কাছে প্রতিভাত হবে।  কারণ ইমাম মুসলিম রহ. আবু সালেহ-এর সূত্রে বর্ণনা করেছন। তিনি আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণনা করেন,
«أن فقراء المهاجرين أتَوْا رسول الله ـ صلى الله عليه وسلم ـ فقالوا: ذهب أهل الدُّثور بالدرجات العُلَى والنعيم المقيم! قال: "وما ذلك؟" قالوا: يصلون كما نصلي، ويصومون كما نصوم، ويتصدقون ولا نتصدق، ويُعتِقون ولا نُعتِق. فقال رسول الله: "ألا أعلمكم شيئًا تُدرِكون به مَن سبَقكم وتَسبِقون به مَن بعدكم، إلاّ من صنع مثل صنيعكم؟" قالوا: بلى يا رسول الله! قال: "تُسبِّحون وتُكبِّرون وتَحمَدون ثلاثًا وثلاثين مرة دُبُرَ كل صلاة" قال أبو صالح: فرجع فقراء المهاجرين إلى رسول الله فقالوا: سمع إخواننا أهل الأموال بما فعلنا ففعلوا مثله ـ فقال رسول الله: "ذلك فضلُ الله يؤتيه من يشاء».
“মুহাজিরদের মধ্যে কতিপয় অভাবী লোক রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট এসে বলল, ধনীরা উচ্চ মর্যাদা ও স্থায়ী বিরাট নি‘আমত লাভ করেছে। তিনি বললেন, সেটা কী? তারা বলল:  আমরা যেভাবে সালাত আদায় করি ধনীরাও সেভাবে আদায় করে আমরা যেভাবে সাওম পালন করি, ধনীরাও সেভাবে সাওম পালন করে, তবে তারা সাদকাহ করতে পারে কিন্তু আমরা সাদকাহ করতে পারি না। তারা গোলাম আযাদ করে, কিন্তু আমরা আযাদ করতে পারি না। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন “আমি কি তোমাদেরকে এমন বিষয়ে জানিয়ে দিব না, যাতে তোমরা তোমাদের পূর্ববর্তীদের অগ্রে চলে যেতে পারবে এবং তোমাদের পরবর্তীদেরও অগ্রগামী হবে। আর তোমাদের থেকে কেউ উত্তম হবে না যদি না তোমরা যা করেছো সে তা করতে পারে?” তারা বলল, নিশ্চয় হে আল্লাহর রাসূল! তিনি বললেন, তোমরা প্রত্যেক সালাতের পর তেত্রিশবার তাসবীহ (সুবহা-নাল্লাহ) পাঠ করবে, তেত্রিশবার তাকবীর (আল্লাহু আকবার) পড়বে এবং তেত্রিশবার হামদ (আল-হামদুলিল্লাহ) পড়বে । আবু সালেহ বলেন, অতঃপর অভাবী মুহাজিরদের দলটি রাসূলের কাছে ফিরে গেল এবং তারা বলল: আমাদের ধনীরা আমরা যা করছি এ ব্যাপারে জানতে পেরে গিয়েছে। আর তারাও আমাদের অনুরূপ করছে। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এটা হলো আল্লাহ তা‘আলার অনুগ্রহ, তিনি যাকে ইচ্ছা তাকে দান করেন”  
ইমাম মুসলিম আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর মাধ্যমে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে আরো বর্ণনা করেন যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
«من سبح الله في دبر كل صلاة ثلاثا وثلاثين مرة، وحمد الله ثلاثا وثلاثين مرة، وكبر الله ثلاثا وثلاثين مرة فتلك تسع وتسعون، وقال تمام المائة: لا إله إلا الله وحده لا شريك له له الملك وله الحمد وهو على كل شيء قدير غفرت خطاياه وإن كانت مثل زبد البحر»
‘‘যে ব্যক্তি প্রত্যেক সালাতের পর তেত্রিশবার তাসবীহ পাঠ করে, তেত্রিশ বার হামদ পেশ করে, তেত্রিশ বার তাকবীর পাঠ করে, আর তা মোট নিরানব্বই বার এবং একশ পূর্ণ করার সময় বলে,
لا إله إلا الله وحده لا شريك له له الملك وله الحمد وهو على كل شيء قدير (একমাত্র আল্লাহ ব্যতীত কোনো হক্ব ইলাহ নেই, তাঁর জন্যই রাজত্ব, তাঁর জন্যই সকল প্রশংসা আর তিনি সকল বিষয়ে ক্ষমতাবান) তার গুনাহসমূহ ক্ষমা করা হয়, যদিও তা সমুদ্রের ফেনা পরিমাণ হোক।”  
অতএব, লক্ষ্য কর! মহান আল্লাহ তা‘আলার পক্ষ থেকে বিরাট প্রতিদানের বিষয়টি। সুতরাং তাঁর জন্যই সকল প্রশংসা ও তাঁর অনুগ্রহের জন্য যাবতীয় কৃতজ্ঞতা।
আর যখন তুমি জানতে পারলে যে, সালাতের পর উপর্যুক্ত যিকির পাঠে কয়েক মিনিটির বেশী সময় লাগে না, তখন এ মহাপ্রতিদানে অবহেলা করা যে বিশাল ক্ষতিকর বিষয় তা তুমি সহজেই বুঝতে পারলে।
অতএব, এসব যিকিরসমূহ যা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে সাব্যস্ত রয়েছে, তা আমল করার ব্যাপারে তুমি যথাযথ যত্নবান হও, তাহলে তোমরা দুনিয়া ও আখিরাত সফলকাম হবে।
আর আমি মহান আল্লাহ, মহান ‘আরশের রবের দরবারে আমার ও তোমার জন্য  তিনি যা পছন্দ করেন ও সন্তুষ্ট হন এমন সকল কাজের তাওফীক। আর আমাদের সকলকে তার যিকির, শোকর ও উত্তম ইবাদাত করার সামর্থ দিন।
আর সালাত ও সালাম আমাদের নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের  ওপর এবং তাঁর সাহাবীগণ ও পরিবার-পরিজনের ওপর।
سبحانك اللهم وبحمدك أشهد أن لا إله إلا انت استعفرك وأتوب إليك
বুধবার, ২৮/১০/১৪১৮ হিজরী
পূনরায় দৃষ্টিদান ১৪২২ হিজরী
সকল প্রশংসা সে মহান আল্লাহর জন্য, যার নেয়ামতের বদৌলতে সৎকর্মসমূহ সম্পাদিত হয়ে থাকে।
 

 

 

মসজিদে গমন: শিষ্টাচার ও প্রভাব

বই সম্পর্কে

লেখক :

صالح بن حامد الرفاعي

প্রকাশক :

www.islamhouse.com

বিভাগ :

Morals & Ethics