সহীহ হাদীসের আলোকে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নবুওয়তের প্রমাণ

এ গ্রন্থে শাইখ মুকবিল ইবন হাদী আল-ওয়াদে‘য়ী সহীহ হাদীসে আগত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের নবুওয়তের প্রমাণসমূহ একত্র করেছেন এবং সুবিন্যস্ত করেছেন। সাথে সাথে তিনি নবীদের অলৌককতা এবং অন্যান্যদের অলৌকিক কর্মকাণ্ডের মধ্যে পার্থক্য তুলে ধরেছেন। বিশেষ করে এখানে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আত এবং মু‘তাযিলা, আশায়েরা ও মাতুরিদিয়াদের মধ্যকার পার্থক্য তুলে ধরেছেন। বিদ‘আতীদের বিবিধ সন্দেহের অপনোদনও তিনি করেছেন।

সহীহ হাদীসের আলোকে

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নবুওয়তের প্রমাণ

 [ বাংলা – Bengali – بنغالي ]

 

 

 

 

 

শাইখ মুকবিল ইবন হাদী আল ওয়াদি‘য়ী

 

 

 

অনুবাদ : আব্দুল্লাহ আল মামুন আল-আযহারী

 

সম্পাদনা : ড. আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া 

 

 

2014 - 1435

 


﴿الصحيح المسند من دلائل النبوة﴾

« باللغة البنغالية » 

 

 

 

 

الشيخ مقبل بن هادي الوادعي

 

 

 

ترجمة: عبد الله المأمون الأزهري

مراجعة: د/ أبو بكر محمد زكريا

 

 

 

 

 

2014 - 1435

 
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيمِ

 

ভূমিকা

﴿ ٱلۡحَمۡدُ لِلَّهِ ٱلَّذِيٓ أَنزَلَ عَلَىٰ عَبۡدِهِ ٱلۡكِتَٰبَ وَلَمۡ يَجۡعَل لَّهُۥ عِوَجَاۜ ١ قَيِّمٗا لِّيُنذِرَ بَأۡسٗا شَدِيدٗا مِّن لَّدُنۡهُ وَيُبَشِّرَ ٱلۡمُؤۡمِنِينَ ٱلَّذِينَ يَعۡمَلُونَ ٱلصَّٰلِحَٰتِ أَنَّ لَهُمۡ أَجۡرًا حَسَنٗا ٢ ﴾ [الكهف: ١، ٢]

“সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর, যিনি তাঁর বান্দার উপর কিতাব নাযিল করেছেন এবং তাতে রাখেন নি কোনো বক্রতা। সরলরূপে, যাতে সে তাঁর পক্ষ থেকে কঠিন আযাব সম্পর্কে সতর্ক করে এবং সুসংবাদ দেয়, সেসব মুমিনকে, যারা সৎকর্ম করে, নিশ্চয় তাদের জন্য রয়েছে উত্তম প্রতিদান”। [সূরা আল-কাহফ: ২]

﴿ ٱلۡحَمۡدُ لِلَّهِ ٱلَّذِي خَلَقَ ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَٱلۡأَرۡضَ وَجَعَلَ ٱلظُّلُمَٰتِ وَٱلنُّورَۖ ثُمَّ ٱلَّذِينَ كَفَرُواْ بِرَبِّهِمۡ يَعۡدِلُونَ ١ ﴾ [الانعام: ١]

“সকল প্রশংসা আল্লাহর জন্য যিনি সৃষ্টি করেছেন আসমান ও যমীন এবং সৃষ্টি করেছেন অন্ধকার ও আলো। তারপর কাফিররা তাদের রবের সমতুল্য স্থির করে”। [সূরা আল-আন‘আম: ১]

        হে আল্লাহ আপনি আপনার নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর সালাত ও সালাম নাযিল করুন, যাকে আপনি সৃষ্টিকুলের জন্য রহমতস্বরূপ প্রেরণ করেছেন। তাঁর পরিবার পরিজন ও সাহাবীদের উপর রহমত বর্ষণ করুন। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, একমাত্র আল্লাহ ছাড়া কোনো সত্য ইলাহ নেই, তাঁর কোনো শরিক নেই। তিনি তাঁর ওয়াদা পূরণ করেছেন, তাঁর বান্দাহ মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সাহায্য করেছেন এবং শত্রুদলকে পরাজিত করেছেন। আমি আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর বান্দাহ ও রাসূল। আল্লাহ তাকে মু‘জিযা দিয়ে সাহায্য করেছেন।

﴿ وَتَمَّتۡ كَلِمَتُ رَبِّكَ صِدۡقٗا وَعَدۡلٗاۚ ١١٥ ﴾ [الانعام: ١١٥]

“আর তোমার রবের বাণী সত্য ও ন্যায়পরায়ণতার দিক থেকে পরিপূর্ণ হয়েছে। তাঁর বাণীসমূহের কোনো পরিবর্তনকারী নেই”। [সূরা আল-আন‘আম: ১১৫]

        ফলে তিনি মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে তাঁর রাসূল হিসেবে মনোনীত করেছেন।

﴿ ٱللَّهُ أَعۡلَمُ حَيۡثُ يَجۡعَلُ رِسَالَتَهُ ١٢٤ ﴾ [الانعام: ١٢٤]

“আল্লাহ ভালো জানেন, তিনি কোথায় তাঁর রিসালাত অর্পণ করবেন”। [সূরা আল-আন‘আম: ১২৪]

তিনি তাঁর সত্যতার প্রমাণে অকাট্য দলিল প্রমাণ দিয়ে সাহায্য করেছেন। যেমন আল্লাহ বলেছেন,

﴿ وَلَا يَأۡتُونَكَ بِمَثَلٍ إِلَّا جِئۡنَٰكَ بِٱلۡحَقِّ وَأَحۡسَنَ تَفۡسِيرًا ٣٣ ﴾ [الفرقان: ٣٢]

“আর তারা তোমার কাছে যে কোনো বিষয়ই নিয়ে আসুক না কেন, আমি এর সঠিক সমাধান ও সুন্দর ব্যাখ্যা তোমার কাছে নিয়ে এসেছি”। [সূরা আল-ফুরকান: ৩২]

        অতঃপর কথা হচ্ছে, দালায়েলুন নুবুওয়্যাহ তথা নবুওয়তের দলিল প্রমাণ নিয়ে অধ্যয়ন ও গবেষণা করলে মু’মিনদের ঈমান বৃদ্ধি পায়, আল্লাহ যার কল্যাণ চান তার জন্য কখনও তা ইসলাম গ্রহণের কারণ হয়।

        নাস্তিক ও অবাধ্যদের ক্ষেত্রে: তাদেরকে সব ধরণের দলিল প্রমাণ ও নিদর্শন পেশ করার পরে তাদের জন্য তা অন্ধত্ব ও ভ্রষ্টতাই বৃদ্ধি করবে। যেমন আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতা‘আলা বলেছেন,

﴿وَلَوۡ فَتَحۡنَا عَلَيۡهِم بَابٗا مِّنَ ٱلسَّمَآءِ فَظَلُّواْ فِيهِ يَعۡرُجُونَ ١٤ لَقَالُوٓاْ إِنَّمَا سُكِّرَتۡ أَبۡصَٰرُنَا بَلۡ نَحۡنُ قَوۡمٞ مَّسۡحُورُونَ ١٥ ﴾ [الحجر: ١٤، ١٥]

“আর যদি আমি তাদের জন্য আসমানের কোনো দরজা খুলে দিতাম, অতঃপর তারা তাতে আরোহণ করতে থাকত, তবুও তারা বলত, নিশ্চয় আমাদের দৃষ্টি কেড়ে নেওয়া হয়েছে, বরং আমরা তো জাদুগ্রস্ত সম্প্রদায়”। [সূরা: আল-হিজর: ১৪-১৫]

        মূসা আলাইহিস সালামের নবুওয়ত অস্বীকারকারীদের সম্পর্কে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতা‘আলা বলেছেন,

﴿ وَقَالُواْ مَهۡمَا تَأۡتِنَا بِهِۦ مِنۡ ءَايَةٖ لِّتَسۡحَرَنَا بِهَا فَمَا نَحۡنُ لَكَ بِمُؤۡمِنِينَ ١٣٢ ﴾ [الاعراف: ١٣٢]

“আর তারা বলল, ‘তুমি আমাদেরকে জাদু করার জন্য যে কোনো নিদর্শন আমাদের কাছে নিয়ে আস না কেন আমরা তো তোমার প্রতি ঈমান আনব না”। [সূরা আল-আ‘রাফ: ১৩২]

অনুরূপভাবে আল্লাহ তা‘আলা কুরাইশদের সম্পর্কে বলেছেন,

﴿ وَقَالُواْ لَن نُّؤۡمِنَ لَكَ حَتَّىٰ تَفۡجُرَ لَنَا مِنَ ٱلۡأَرۡضِ يَنۢبُوعًا ٩٠ أَوۡ تَكُونَ لَكَ جَنَّةٞ مِّن نَّخِيلٖ وَعِنَبٖ فَتُفَجِّرَ ٱلۡأَنۡهَٰرَ خِلَٰلَهَا تَفۡجِيرًا ٩١ أَوۡ تُسۡقِطَ ٱلسَّمَآءَ كَمَا زَعَمۡتَ عَلَيۡنَا كِسَفًا أَوۡ تَأۡتِيَ بِٱللَّهِ وَٱلۡمَلَٰٓئِكَةِ قَبِيلًا ٩٢ أَوۡ يَكُونَ لَكَ بَيۡتٞ مِّن زُخۡرُفٍ أَوۡ تَرۡقَىٰ فِي ٱلسَّمَآءِ وَلَن نُّؤۡمِنَ لِرُقِيِّكَ حَتَّىٰ تُنَزِّلَ عَلَيۡنَا كِتَٰبٗا نَّقۡرَؤُهُۥۗ قُلۡ سُبۡحَانَ رَبِّي هَلۡ كُنتُ إِلَّا بَشَرٗا رَّسُولٗا ٩٣ ﴾ [الاسراء: ٩٠، ٩٣]

“আর তারা বলে, ‘আমরা তোমার প্রতি কখনো ঈমান আনব না, যতক্ষণ না তুমি আমাদের জন্য যমীন থেকে একটি ঝর্ণাধারা উৎসারিত করবে’। ‘অথবা তোমার জন্য খেজুর ও আঙ্গুরের একটি বাগান হবে, অতঃপর তুমি তার মধ্যে প্রবাহিত করবে নদী-নালা’। অথবা তুমি যেমনটি ধারণা কর, সে অনুযায়ী আসমানকে খণ্ড খণ্ড করে আমাদের উপরে ফেলবে, অথবা আল্লাহ ও ফেরেশ্তাদেরকে আমাদের মুখোমুখি নিয়ে আসবে’। অথবা তোমার জন্য স্বর্ণের একটি ঘর হবে অথবা তুমি আসমানে উঠবে, কিন্তু তোমার উঠাতেও আমরা ঈমান আনব না, যতক্ষণ না তুমি আমাদের প্রতি এক কিতাব নাযিল করবে যা আমরা পাঠ করব। বল, পবিত্র মহান আমার রব! আমি তো একজন মানব-রাসূল ছাড়া কিছু নই?” [সূরা আল-ইসরা : ৯০-৯৩]

আল্লাহ তা‘আলা তাদের সম্পর্কে আরো বলেছেন,

﴿ وَأَقۡسَمُواْ بِٱللَّهِ جَهۡدَ أَيۡمَٰنِهِمۡ لَئِن جَآءَتۡهُمۡ ءَايَةٞ لَّيُؤۡمِنُنَّ بِهَاۚ قُلۡ إِنَّمَا ٱلۡأٓيَٰتُ عِندَ ٱللَّهِۖ وَمَا يُشۡعِرُكُمۡ أَنَّهَآ إِذَا جَآءَتۡ لَا يُؤۡمِنُونَ ١٠٩ وَنُقَلِّبُ أَفۡ‍ِٔدَتَهُمۡ وَأَبۡصَٰرَهُمۡ كَمَا لَمۡ يُؤۡمِنُواْ بِهِۦٓ أَوَّلَ مَرَّةٖ وَنَذَرُهُمۡ فِي طُغۡيَٰنِهِمۡ يَعۡمَهُونَ ١١٠ ۞وَلَوۡ أَنَّنَا نَزَّلۡنَآ إِلَيۡهِمُ ٱلۡمَلَٰٓئِكَةَ وَكَلَّمَهُمُ ٱلۡمَوۡتَىٰ وَحَشَرۡنَا عَلَيۡهِمۡ كُلَّ شَيۡءٖ قُبُلٗا مَّا كَانُواْ لِيُؤۡمِنُوٓاْ إِلَّآ أَن يَشَآءَ ٱللَّهُ وَلَٰكِنَّ أَكۡثَرَهُمۡ يَجۡهَلُونَ ١١١ ﴾ [الانعام: ١٠٩، ١١١]

“আর তারা আল্লাহর নামে কঠিন কসম করেছে, যদি তাদের কাছে কোনো নিদর্শন আসে, তবে তারা অবশ্যই তার প্রতি ঈমান আনবে। বল, ‘সমস্ত নিদর্শন তো কেবল আল্লাহর কাছে। আর কিসে তোমাদের উপলব্ধি ঘটাবে যে, যখন তা এসে যাবে, তারা ঈমান আনবে না? আর আমি তাদের অন্তর ও দৃষ্টিসমূহ পালটে দেব যেমন তারা কুরআনের প্রতি প্রথমবার ঈমান আনে নি এবং আমি তাদেরকে তাদের অবাধ্যতায় ঘুরপাক খাওয়া অবস্থায় ছেড়ে দেব। আর যদি আমি তাদের নিকট ফেরেশ্তা নাযিল করতাম এবং মৃতরা তাদের সাথে কথা বলত, আর সবকিছু সরাসরি তাদের সামনে সমবেত করতাম, তাহলেও তারা ঈমান আনত না, যদি না আল্লাহ চাইতেন; কিন্তু তাদের অধিকাংশই মূর্খ”। [সূরা আল-আন‘আম: ১০৯-১১১]

আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেছেন,

﴿ وَلَوۡ نَزَّلۡنَا عَلَيۡكَ كِتَٰبٗا فِي قِرۡطَاسٖ فَلَمَسُوهُ بِأَيۡدِيهِمۡ لَقَالَ ٱلَّذِينَ كَفَرُوٓاْ إِنۡ هَٰذَآ إِلَّا سِحۡرٞ مُّبِينٞ ٧ ﴾ [الانعام: ٧]

“আর যদি আমি কাগজে লিখিত কিতাব তোমার উপর নাযিল করতাম অতঃপর তারা তা হাত দিয়ে স্পর্শ করত তবুও যারা কুফরী করেছে তারা বলত, ‘এ তো প্রকাশ্য জাদু ছাড়া কিছু না”। [সূরা আল-আন‘আম: ৭]

        এ সব মু‘জিযা মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর নবী হওয়ার সর্বোৎকৃষ্ট প্রমাণ। কেননা আল্লাহ মিথ্যাবাদীকে সাহায্য করেন না।

যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,

﴿ فَلَآ أُقۡسِمُ بِمَا تُبۡصِرُونَ ٣٨ وَمَا لَا تُبۡصِرُونَ ٣٩ إِنَّهُۥ لَقَوۡلُ رَسُولٖ كَرِيمٖ ٤٠ وَمَا هُوَ بِقَوۡلِ شَاعِرٖۚ قَلِيلٗا مَّا تُؤۡمِنُونَ ٤١ وَلَا بِقَوۡلِ كَاهِنٖۚ قَلِيلٗا مَّا تَذَكَّرُونَ ٤٢ تَنزِيلٞ مِّن رَّبِّ ٱلۡعَٰلَمِينَ ٤٣ وَلَوۡ تَقَوَّلَ عَلَيۡنَا بَعۡضَ ٱلۡأَقَاوِيلِ ٤٤ لَأَخَذۡنَا مِنۡهُ بِٱلۡيَمِينِ ٤٥ ثُمَّ لَقَطَعۡنَا مِنۡهُ ٱلۡوَتِينَ ٤٦ فَمَا مِنكُم مِّنۡ أَحَدٍ عَنۡهُ حَٰجِزِينَ ٤٧ ﴾ [الحاقة: ٣٨، ٤٧]

“অতএব তোমরা যা দেখছ, আমি তার কসম করছি। আর যা তোমরা দেখছ না তারও, নিশ্চয়ই এটি এক সম্মানিত রাসূলের বাণী। আর এটি কোনো কবির কথা নয়। তোমরা কমই বিশ্বাস কর। আর কোনো গণকের কথাও নয়। তোমরা কমই উপদেশ গ্রহণ কর। এটি সৃষ্টিকুলের রবের পক্ষ থেকে নাযিলকৃত। যদি সে আমার নামে কোনো মিথ্যা রচনা করত, তবে আমি তার ডান হাত পাকড়াও করতাম। তারপর অবশ্যই আমি তার হৃদপিন্ডের শিরা কেটে ফেলতাম। অতঃপর তোমাদের মধ্যে কেউই তাকে রক্ষা করার থাকত না”। [সূরা আল্-হাক্কাহ: ৩৮-৪৭]

আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেছেন,

﴿ وَإِن كَادُواْ لَيَفۡتِنُونَكَ عَنِ ٱلَّذِيٓ أَوۡحَيۡنَآ إِلَيۡكَ لِتَفۡتَرِيَ عَلَيۡنَا غَيۡرَهُۥۖ وَإِذٗا لَّٱتَّخَذُوكَ خَلِيلٗا ٧٣ وَلَوۡلَآ أَن ثَبَّتۡنَٰكَ لَقَدۡ كِدتَّ تَرۡكَنُ إِلَيۡهِمۡ شَيۡ‍ٔٗا قَلِيلًا ٧٤ إِذٗا لَّأَذَقۡنَٰكَ ضِعۡفَ ٱلۡحَيَوٰةِ وَضِعۡفَ ٱلۡمَمَاتِ ثُمَّ لَا تَجِدُ لَكَ عَلَيۡنَا نَصِيرٗا ٧٥ ﴾ [الاسراء: ٧٣، ٧٥]

“আর তাদের অবস্থা এমন ছিল যে, আমি তোমাকে যে ওহী দিয়েছি, তা থেকে তারা তোমাকে প্রায় ফিতনায় ফেলে দিয়েছিল, যাতে তুমি আমার নামে এর বিপরীত মিথ্যা রটাতে পার এবং তখন তারা অবশ্যই তোমাকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করত। আর আমি যদি তোমাকে অবিচল না রাখতাম, তবে অবশ্যই তুমি তাদের দিকে কিছুটা ঝুঁকে পড়তে, তখন আমি অবশ্যই তোমাকে আস্বাদন করাতাম জীবনের দ্বিগুণ ও মরণের দ্বিগুণ আযাব।[1] তারপর তুমি তোমার জন্য আমার বিরুদ্ধে কোনো সাহায্যকারী পাবে না”। [সূরা আল-ইসরা: ৭৩-৭৫]

আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন,

﴿ أَمۡ يَقُولُونَ ٱفۡتَرَىٰ عَلَى ٱللَّهِ كَذِبٗاۖ فَإِن يَشَإِ ٱللَّهُ يَخۡتِمۡ عَلَىٰ قَلۡبِكَۗ وَيَمۡحُ ٱللَّهُ ٱلۡبَٰطِلَ وَيُحِقُّ ٱلۡحَقَّ بِكَلِمَٰتِهِۦٓۚ إِنَّهُۥ عَلِيمُۢ بِذَاتِ ٱلصُّدُورِ ٢٤ ﴾ [الشورى: ٢٤]

“তারা কি একথা বলে যে, সে আল্লাহ সম্পর্কে মিথ্যা উদ্ভাবন করেছে? অথচ যদি আল্লাহ চাইতেন তোমার হৃদয়ে মোহর মেরে দিতেন। আর আল্লাহ মিথ্যাকে মুছে দেন এবং নিজ বাণী দ্বারা সত্যকে প্রতিষ্ঠিত করেন। নিশ্চয় তিনি অন্তরসমূহে যা আছে, সে সম্পর্কে সবিশেষ অবহিত”। [সূরা আশ্-শূরা: ২৪]

﴿ وَمَنۡ أَظۡلَمُ مِمَّنِ ٱفۡتَرَىٰ عَلَى ٱللَّهِ كَذِبًا أَوۡ قَالَ أُوحِيَ إِلَيَّ وَلَمۡ يُوحَ إِلَيۡهِ شَيۡءٞ وَمَن قَالَ سَأُنزِلُ مِثۡلَ مَآ أَنزَلَ ٱللَّهُۗ ٩٣ ﴾ [الانعام: ٩٣]

“আর তার চেয়ে বড় যালিম কে, যে আল্লাহর উপর মিথ্যা রটনা করে, অথবা বলে, ‘আমার উপর ওহী প্রেরণ করা হয়েছে’, অথচ তার প্রতি কোনো কিছুই প্রেরণ করা হয়নি? এবং যে বলে ‘আমি অচিরেই নাযিল করব, যেরূপ আল্লাহ নাযিল করেছেন”। [সূরা আল-আন‘আম: ৯৩]

এজন্যই যারা নবুওয়তের মিথ্যাদাবীদার তারা অপমানিত ও লাঞ্ছিত হয়, যেমন মুসাইলামাতুল কাযযাব, আল-আসওয়াদ আল-‘আনসী, এদের পরবর্তীতে মুখতার ইবন আবী উবাইদ আস-সাকাফী প্রভৃতি যারা নবুওয়তের মিথ্যাদাবী করেছিল।

মুজিযার উপর ঈমান না আনলে দুনিয়া ও আখিরাতে শাস্তিপ্রাপ্ত হবে:

আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতা‘আলা বলেছেন,

﴿ إِذۡ قَالَ ٱلۡحَوَارِيُّونَ يَٰعِيسَى ٱبۡنَ مَرۡيَمَ هَلۡ يَسۡتَطِيعُ رَبُّكَ أَن يُنَزِّلَ عَلَيۡنَا مَآئِدَةٗ مِّنَ ٱلسَّمَآءِۖ قَالَ ٱتَّقُواْ ٱللَّهَ إِن كُنتُم مُّؤۡمِنِينَ ١١٢ قَالُواْ نُرِيدُ أَن نَّأۡكُلَ مِنۡهَا وَتَطۡمَئِنَّ قُلُوبُنَا وَنَعۡلَمَ أَن قَدۡ صَدَقۡتَنَا وَنَكُونَ عَلَيۡهَا مِنَ ٱلشَّٰهِدِينَ ١١٣ قَالَ عِيسَى ٱبۡنُ مَرۡيَمَ ٱللَّهُمَّ رَبَّنَآ أَنزِلۡ عَلَيۡنَا مَآئِدَةٗ مِّنَ ٱلسَّمَآءِ تَكُونُ لَنَا عِيدٗا لِّأَوَّلِنَا وَءَاخِرِنَا وَءَايَةٗ مِّنكَۖ وَٱرۡزُقۡنَا وَأَنتَ خَيۡرُ ٱلرَّٰزِقِينَ ١١٤ قَالَ ٱللَّهُ إِنِّي مُنَزِّلُهَا عَلَيۡكُمۡۖ فَمَن يَكۡفُرۡ بَعۡدُ مِنكُمۡ فَإِنِّيٓ أُعَذِّبُهُۥ عَذَابٗا لَّآ أُعَذِّبُهُۥٓ أَحَدٗا مِّنَ ٱلۡعَٰلَمِينَ ١١٥ ﴾ [المائ‍دة: ١١٢، ١١٥]

“যখন হাওয়ারীগণ বলেছিল, ‘হে মারইয়ামের পুত্র ঈসা, তোমার রব কি পারে আমাদের উপর আসমান থেকে খাবারপূর্ণ দস্তরখান নাযিল করতে?’ সে বলেছিল, ‘আল্লাহর তাকওয়া অবলম্বন কর, যদি তোমরা মুমিন হও’। তারা বলল, ‘আমরা তা থেকে খেতে চাই। আর আমাদের হৃদয় প্রশান্ত হবে এবং আমরা জানব যে, তুমি আমাদেরকে সত্যই বলেছ, আর আমরা এ ব্যাপারে সাক্ষীদের অন্তর্ভুক্ত হব।’ মারইয়ামের পুত্র ঈসা বলল, ‘হে আল্লাহ, হে আমাদের রব, আসমান থেকে আমাদের প্রতি খাবারপূর্ণ দস্তরখান নাযিল করুন; এটা আমাদের জন্য ঈদ হবে। আমাদের পূর্ববর্তী ও পরবর্তীদের জন্য। আর আপনার পক্ষ থেকে এক নিদর্শন হবে। আর আমাদেরকে রিযিক দান করুন, আপনিই শ্রেষ্ঠ রিযিকদাতা’। আল্লাহ বললেন, ‘নিশ্চয় আমি তোমাদের প্রতি তা নাযিল করব; কিন্তু এরপর তোমাদের মধ্যে যে কুফরী করবে তাকে নিশ্চয় আমি এমন আযাব দেব, যে আযাব সৃষ্টিকুলের কাউকে দেব না”। [আল-মায়েদা: ১১২-১১৫]

        রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে যে উত্তম আখলাক দান করা হয়েছে তা স্বত্বেও নবুওয়তের প্রমাণসমুহ তাঁর নবী হওয়ার সত্যতার উপর অকাট্য দলিল। কেননা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নবুওয়তের স্পষ্ট নিদর্শন ও দলিল প্রমাণ দেখে অনেকের অন্তর ঈমান না আনার কারণে সংকীর্ণ হয়ে গিয়েছিল। যেমন আল্লাহ তা‘আলা তাদের সম্পর্কে বলেছেন,

﴿ ٱقۡتَرَبَتِ ٱلسَّاعَةُ وَٱنشَقَّ ٱلۡقَمَرُ ١ وَإِن يَرَوۡاْ ءَايَةٗ يُعۡرِضُواْ وَيَقُولُواْ سِحۡرٞ مُّسۡتَمِرّٞ ٢ وَكَذَّبُواْ وَٱتَّبَعُوٓاْ أَهۡوَآءَهُمۡۚ وَكُلُّ أَمۡرٖ مُّسۡتَقِرّٞ ٣ ﴾ [القمر: ١، ٣]

“কিয়ামত নিকটবর্তী হয়েছে এবং চাঁদ বিদীর্ণ হয়েছে। আর তারা কোনো নিদর্শন দেখলে মুখ ফিরিয়ে নেয় এবং বলে, ‘চলমান জাদু’। আর তারা অস্বীকার করে এবং নিজ নিজ প্রবৃত্তির অনুসরণ করে। অথচ প্রতিটি বিষয় (শেষ সীমায়) স্থির হবে”। [সূরা আল্-কামার: ১-৩] এটা মক্কার কুরাইশ কাফিরদের অবস্থা ছিল।

অন্যদিকে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যুগে মুসলিমগণ: 

তারা শরি‘য়তের সব বিধিবিধানই আমাদের নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নবুওয়তের সত্যতার প্রমাণ হিসেবে মনে করতেন, কেননা এতে অনেক আর্শ্চয্যজনক রহস্য ও পূর্ণ প্রজ্ঞা রয়েছে। এমনিভাবে সাহাবীদেরকে একনিষ্ঠার সাথে অনুসরণকারী তাবে‘য়ীগণও শরি‘য়তের সব বিধিবিধানকে মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নবুওয়তের সত্যতার প্রমাণ হিসেবে মনে করতেন। এরপরে মু‘তাযিলার দল এলো, তারা কুরআন ও হাদীসকে ছেড়ে তাদের ভ্রান্ত খাম-খেয়ালীপনার অনুসরণ করতে লাগল। তারা মনে করত যে, তারা তাদের আক্বলের উপর নির্ভর করছে কিন্তু বাস্তবে তারা তাদের ভ্রান্ত খাম-খেয়ালীপনার অনুসরণ করত। কেননা সঠিক আক্বল কখনও কুরআন ও বিশুদ্ধ হাদীসের বিরোধী হয় না। ফলে কিছু মু‘জিযা তাদের অন্তরকে সংকুচিত করে ফলে তারা সেগুলোর তা’বীল তথা অপব্যাখ্যা দিতে লাগল। এতে তারা সেগুলোকে দুর্বল মনে করল। কিন্তু আল্লাহ তা‘আলা হককে বাস্তবায়ন ও মিথ্যাকে ধ্বংস করতে চান। বর্তমানে মু‘তাযিলাদের মাযহাব লুপ্ত প্রায়।

পরবর্তী যমানায় একদল প্রবৃত্তির অনুসারীদের আগমন ঘটে: তারা মুতাযিলাদের পক্ষ্যে মোকাবিলা করতে চাইল, ফলে তারা ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়েছে যেমনিভাবে তাদের পূর্বসূরীরা ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়েছে। এ সব ধ্বংসপ্রাপ্তরা কেউ কেউ দিশেহারা, কেউ আবার মুতাযিলাদের পক্ষ্যে বদলাগ্রহণকারী, এমনকি তাদের কেউ কেউ নাস্তিকতার বিপ্লবী।[2]

১- জামালুদ্দীন আল-আফগানী আশ-শিয়া আর-রাফেদী আল-ইরানী।

২- মুহাম্মদ আব্দুহ আল-মিসরী।

৩- মুহাম্মদ রশীদ রিদা। তবে তিনি ভ্রষ্টতার বিচারে পূর্ববর্তীদের মত নন।

৪- মাহমুদ শালতুত।[3]

৫- ত্বহা হুসাইন।

৬- আহমদ আমীন, ফাজরুল ইসলাম, দ্বুহাল ইসলাম ও যুহরুল ইসলাম কিতাবের প্রণেতা।

৭- আবু রাইয়্যাহ।

৮- মুহাম্মদ আল-গাযালী। তার অধিকাংশ কিতাবে আহলে সুন্নত ওয়াল জামা‘আতকে অবজ্ঞা ও সুন্নতের উপর আমলকে হেয় করা হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ:

“দসতুরুল ওয়াহদাতিস সাক্বাফিয়া বাইনাল মুসলিমিন”, “হুমুমু দাঈয়াহ”। মুহাম্মদ আল-গাযালী একজন মন গলানো মানুষ। যদিও তিনি ভ্রষ্টতার দিক দিয়ে পূর্বল্লিখিতদের মত নন।

তাদের অন্যান্যরা সুন্নতের উপর আক্রমণ করেছেন এবং মু‘তাযিলাদেরকে বিজয়ী করেছেন। তাদের কেউ কেউ রাফেদীদেরকে বিজয়ী করেছেন। মিসরে তাদের গ্রহণযোগ্যতা ও প্রত্যাখ্যানের ব্যাপারে মানুষের মাঝে একধরণের খেলা চলছিল। আল্লাহ যথার্থই বলেছেন,

﴿ ۞يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُوٓاْ إِنَّ كَثِيرٗا مِّنَ ٱلۡأَحۡبَارِ وَٱلرُّهۡبَانِ لَيَأۡكُلُونَ أَمۡوَٰلَ ٱلنَّاسِ بِٱلۡبَٰطِلِ وَيَصُدُّونَ عَن سَبِيلِ ٱللَّهِۗ﴾ [التوبة: ٣٤]

“হে ঈমানদারগণ, নিশ্চয় পণ্ডিত ও সংসার বিরাগীদের অনেকেই মানুষের ধন-সম্পদ অন্যায়ভাবে ভক্ষণ করে, আর তারা আল্লাহর পথে বাধা দেয়”। [আত্-তাওবা: ৩৪]

﴿ وَٱتۡلُ عَلَيۡهِمۡ نَبَأَ ٱلَّذِيٓ ءَاتَيۡنَٰهُ ءَايَٰتِنَا فَٱنسَلَخَ مِنۡهَا فَأَتۡبَعَهُ ٱلشَّيۡطَٰنُ فَكَانَ مِنَ ٱلۡغَاوِينَ ١٧٥ وَلَوۡ شِئۡنَالَرَفَعۡنَٰهُ بِهَا وَلَٰكِنَّهُۥٓ أَخۡلَدَ إِلَى ٱلۡأَرۡضِ وَٱتَّبَعَ هَوَىٰهُۚ فَمَثَلُهُۥ كَمَثَلِ ٱلۡكَلۡبِ إِن تَحۡمِلۡ عَلَيۡهِ يَلۡهَثۡ أَوۡ تَتۡرُكۡهُ يَلۡهَثۚ ذَّٰلِكَ مَثَلُ ٱلۡقَوۡمِ ٱلَّذِينَ كَذَّبُواْ بِ‍َٔايَٰتِنَاۚ ١٧٦ ﴾ [الاعراف: ١٧٥، ١٧٦]

“আর তুমি তাদের উপর সে ব্যক্তির সংবাদ পাঠ কর, যাকে আমি আমার আয়াতসমূহ দিয়েছিলাম। অতঃপর সে তা হতে বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছিল এবং শয়তান তার পেছনে লেগেছিল। ফলে সে বিপথগামীদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে গিয়েছিল। আর আমি ইচ্ছা করলে উক্ত নিদর্শনাবলীর মাধ্যমে তাকে অবশ্যই উচ্চ মর্যাদা দিতাম, কিন্তু সে পৃথিবীর প্রতি ঝুঁকে পড়েছে এবং নিজ প্রবৃত্তির অনুসরণ করেছে। সুতরাং তার দৃষ্টান্ত হচ্ছে কুকুরের মত। যদি তার উপর বোঝা চাপিয়ে দাও তাহলে সে জিহবা বের করে হাঁপাবে অথবা যদি তাকে ছেড়ে দাও তাহলেও সে জিহবা বের করে হাঁপাবে। এটি হচ্ছে সে কওমের দৃষ্টান্ত যারা আমার আয়াতসমূহকে অস্বীকার করেছে”। [সূরা আল-আ‘রাফ: ১৭৫-১৭৬]

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যথার্থই বলেছেন,

عَنْ عُمَرَ بْنِ الْخَطَّابِ، أَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قَالَ: " إِنَّ أَخْوَفَ مَا أَخَافُ عَلَى أُمَّتِي كُلُّ مُنَافِقٍ عَلِيمِ اللِّسَانِ ".

“‘উমর ইবন খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আমার উম্মতের জন্য সবচেয়ে ভয়ংকর হলো বাকপটু বিজ্ঞ মুনাফিক”। [4]

عَنْ ثَوْبَانَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِنَّمَا أَخَافُ عَلَى أُمَّتِي الأَئِمَّةَ المُضِلِّينَ».

“সাওবান রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আমার উম্মতের জন্য ভয়ঙ্কর হলো পথভ্রষ্ট ইমামগণ”। [5]

এদের অধিকাংশই শিয়া-রাফেদী, তারা সুন্নতের শত্রু।[6] কিন্তু আল্লাহ তা‘আলা তাদের ষড়যন্ত্রকে নস্যাৎ করে সুন্নতকে বিজয়ী করেছেন। আল্লাহদ্রোহীরা অপছন্দ করলেও আল্লাহ তাঁর দীনকে বিজয়ী করবেন। ইসলামী বিশ্বে সর্বত্র মুসলিম যুবকগণ জাগ্রত হয়েছে। তাদের কণ্ঠে ধ্বনিত হচ্ছে ‘আল্লাহ বলেছেন’, ‘রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন’ ইত্যাদি ধ্বনি। সুতরাং সুন্নতের শত্রুদের জন্য চির লাঞ্ছনা ও অপমান।

ইতোপূর্বে জামালুদ্দীন আফগানী ও মুহাম্মদ আব্দুহ সংস্কারক ইমাম হিসেবে পরিচিত ছিলেন, কিন্তু বর্তমানে তারা ‘মাসূণী’ হিসেবে খ্যাত।

﴿ رَبَّنَا لَا تُزِغۡ قُلُوبَنَا بَعۡدَ إِذۡ هَدَيۡتَنَا وَهَبۡ لَنَا مِن لَّدُنكَ رَحۡمَةًۚ إِنَّكَ أَنتَ ٱلۡوَهَّابُ ٨ ﴾ [ال عمران: ٨]

“হে আমাদের রব, আপনি হিদায়াত দেওয়ার পর আমাদের অন্তরসমূহ বক্র করবেন না এবং আপনার পক্ষ থেকে আমাদেরকে রহমত দান করুন। নিশ্চয় আপনি মহাদাতা”। [আলে ইমরান: ৮]

এরা দিকভ্রান্ত পথভ্রষ্ট:

এদের মধ্যে কেউ কুরআনের কাহিনীর ব্যাপারে অপবাদ দেওয়ার দুঃসাহস দেখিয়েছে।

কেউ আবার নবী আলাইহিমুস সালামদের মু‘জিযার ব্যাপারে অপবাদ দিয়েছে।

কেউ কেউ আমাদের নিকট দীন বর্ণনাকারী সাহাবীদেরকে অপবাদ দিয়েছে।

কেউ আবার দীনের কিছু বিধানকে খারাপ বলার ধৃষ্টতা দেখিয়েছে। তারা নতুন কিছু বিধান ও জঘন্য কিছু নিয়ম-পদ্ধতি তাদের গ্রন্থে প্রচলন করেছে, যা শিয়া-রাফেদী ও নাস্তিকদের দ্বারা স্বীকৃত হতে দেখা যায়।

আল্লাহর শুকরিয়া, এ সব ভ্রান্ত মতবাদের জবাবে আহলে সুন্নত ওয়ালজামা‘আতের ভাইয়েরা এমন দাঁতভাঙ্গা জবাব দিয়েছেন যা তাদের চোখ জুড়িয়ে দিয়েছে। যারা এর মুকাবিলা করার জন্য নিজেদের শক্তি ও শ্রম ব্যয় করেছেন আল্লাহ তাদেরকে উত্তম প্রতিদান প্রদান করুন। আমীন।

পূর্ববর্তী ও পরবর্তী এসব বিভ্রান্ত মু‘তাযিলাদের বিপরীতে কতিপয় কিচ্ছা কাহিনীকারদের আবির্ভাব ঘটেছে, যারা মানুষের মাঝে ভালো-মন্দ, হক বাতিলের কোনো পার্থক্য ছাড়াই খামখেয়ালীমত হাদীস বর্ণনা করেন। এদের কাউকে আবার জাল হাদীস রচনায় অন্ধ গোড়ামী পেয়ে বসেছে। যেমন, আমি ‘আলী আল-‘ইজরী’ রচিত ‘নসীহাত আওলাদিস সিবত্বাইন ওয়ামান তাবি‘আহুম মিনাল মু’মিনীনা ফিত তামাসসুকি বিমাযহাবিল হাদী ইলাল হাক্কি ইয়াহিয়া ইবন আল হুসাইন’ কিতাবে দেখেছি লেখক যায়েদ ইবন আলী ও আলহাদীর মর্যাদা বর্ণনায় অসংখ্য মিথ্যা ও জাল হাদীস বর্ণনা করেছেন। লেখক হয়ত নিজে এ সব মিথ্যা অপবাদ দেননি, তবে তিনি হাদীসের ইলম সম্পর্কে অজ্ঞ থাকায় ও তাঁর পূর্বপুরুষদের ব্যাপারে গোড়া পক্ষপাতিত্ব থাকায় এ সব জাল হাদীস বর্ণনা করেছেন। এমনিভাবে কতিপয় আব্বাসী খলিফাদের মর্যাদায় অনেক জাল হাদীস রচিত হয়েছে, যেমন ইবন আল-জাওযী রচিত ‘আল-‘ইলাল আল-মুতানাহিয়া’ কিতাবে দৃশ্যমান হয়।  

অন্য আরেক দল আছে যারা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নবুওয়তের প্রমাণসমূহকে এমনসব অর্থে ব্যবহার করেছেন যা কখনও তার অর্থ নয়। এ সব ভ্রান্ত কিতাবের মধ্যে একটি হলো, ‘মুতাবাকাতুল ইখতিরা‘আতিল ‘আসরিয়া লিমা আখবারা বিহি সাইয়্যেদুল বারিয়্যাহ’। এ কিতাবে লেখক অনেক দলীল প্রমাণকে বিকৃত করেছেন এবং নিজের ইচ্ছামত অন্যান্য দলীল দিয়ে অপাত্রে দলিল দিয়েছেন। ‘শাইখ হুমুদ আত-তুয়াইজিরী’ তার ‘ইদাহুল মুহাজ্জাহ ফির রদ্দি ‘আলা সাহিবি ত্বনযাহ’ গ্রন্থে এ সব অপবাদের জবাব দিয়েছেন।      

  • ·এসব কারণে আল্লাহর সাহায্য সহযোগিতায় আমার জন্য যা সহজ হয়েছে তা নিয়ে নবুওয়তের সহীহ প্রমাণাদি একত্রিত করতে ইচ্ছা করেছি এবং এর নামরকণ করেছি

আস-সহীহ আল-মুসনাদ মিন দালায়েলুন নবুওয়াহ’ বা ‘সহীহ হাদীসের আলোকে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নবুওয়তের প্রমাণ’  

বিশুদ্ধ হাদীসের কিতাব থেকে এগুলো জমা করেছি।

  • ·এতে নবীগণের কিচ্ছা নামে একটি অধ্যায় উল্লেখ করেছি। কারণ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এসব কাহিনী বর্ণনা করেছেন এবং আহলে কিতাবরা এগুলো অস্বীকার করে নি। এতে প্রমাণ হয় যে, এ ঘটনাবলী ঘটেছে এবং তা যথাযথ সত্য।

এছাড়াও এসব ঘটনা গায়েবের সংবাদের অন্তর্ভুক্ত। যেমন, আল্লাহ তা‘আলা ইউসুফ আলাইহিস সালামের ঘটনা বর্ণনা করে বলেন,

﴿ ذَٰلِكَ مِنۡ أَنۢبَآءِ ٱلۡغَيۡبِ نُوحِيهِ إِلَيۡكَۖ وَمَا كُنتَ لَدَيۡهِمۡ إِذۡ أَجۡمَعُوٓاْ أَمۡرَهُمۡ وَهُمۡ يَمۡكُرُونَ ١٠٢ ﴾ [يوسف: ١٠٢]

“এগুলো গায়েবের সংবাদ, যা আমরা তোমার কাছে ওহী করছি। তুমি তো তাদের নিকট ছিলে না যখন তারা তাদের সিদ্ধান্তে একমত হয়েছিল অথচ তারা ষড়যন্ত্র করছিল”। [সূরা ইউসুফ: ১০২]

তাছাড়া নবীগণের ঘটনাবলীর ব্যাপারে মানুষ তিন শ্রেণীতে বিভক্ত, কেউ কেউ ইসরাইলী[7] রেওয়ায়েতের উপর নির্ভর করেছেন। আবার কেউ কেউ নবীগণের ঘটনাবলীর উপর অন্যায় হস্তক্ষেপ করে সেগুলোকে বিকৃত করেছে। নাজ্জার রচিত ‘কাসাসুল আম্বিয়া’ কিতাবখানা আমি পড়েছি। এতে নবীগণের কোনো মু‘জিযাকে বিকৃতি ও অস্বীকার করা হয়েছে[8]। তন্মধ্যে তারাই এ ব্যাপারে মধ্যপন্থা অবলম্বন করেছেন যারা কুরআন ও সহীহ হাদীসে উল্লেখিত যে সব ঘটনাবলী এসেছে সেগুলোর প্রতি ঈমান এনেছেন।

  • ·আর এ কিতাবে আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে ভবিষ্যৎ সম্পর্কে যে সব হাদীস এসেছে তা উল্লেখ করেছি। তবে এতে আমি দলিল প্রমাণগুলো উল্লেখ করার পর সেগুলোকে যথাযথ অবস্থায় রেখে দিয়েছি, সেগুলো দ্বারা কোনো ব্যক্তি বিশেষ তথা অমুক বা অমুক উদ্দেশ্য এমন কথা বলিনি। কারণ আমার আশঙ্কা হয় যে হয়তো আমি এগুলো দ্বারা কোনো কিছুকে উদ্দেশ্য নেওয়া হয়েছে বলে দেব, আর ভবিষ্যতে তার থেকেও স্পষ্ট কোনো কিছুর উপর সেগুলো প্রমাণবহ হবে। তন্মধ্যে আবার এমন কিছু হাদীসও আছে যা ঘটে গেছে, আর তা-ই অত্যধিক। যেগুলো এখনো ঘটেনি তা সাধারণত আমি উল্লেখ করি নি, যদি না কোনো হাদীসের বাক্যে তার উল্লেখ চলে আসে, এমতাবস্থায় আমি সে হাদীসকে কর্তন করে কিছু অংশ উল্লেখ করা ভালো মনে করিনি। যদিও ইলমে হাদীসের পরিভাষা নিয়ে লেখা গ্রন্থসমূহে শর্ত অনুযায়ী হলে এ ধরনের কর্তন জায়েয বলা হয়েছে। আর আমি শুধু সহীহ হাদীসই উল্লেখ করেছি। কখনো কখনো আমি সহীহ হাদীস ছাড়াও অন্য হাদীসও উল্লেখ করেছি, তবে সে ক্ষেত্রে আমি গবেষণার পরে তাতে দোষ অনুসন্ধান করে পাওয়ার হয়তো তা মুছে ফেলেছি নতুবা ইল্লত বর্ণনাসহকারে হাদীসটি রেখে দিয়েছি, কেননা এতে পাঠকের জন্য বাড়তি কিছু ফায়েদা রয়েছে।
  • ·আর আমি হাদীসের তাখরীজ তথা তথ্যসূত্র বর্ণনায় বেশি করিনি, এমনকি দেখা গেছে হাদীসটি মুত্তাফাকুন আলাইহি, তথা বুখারী ও মুসলিমে বর্ণিত হয়েছে, অথচ আমি কখনো কখনো শুধু মুসলিম আবার কখনো শুধু বুখারী থেকে উল্লেখ করেছি। কেননা আমি হাদীসটি সনদসহকারে নির্ভরযোগ্য হাদীসের কিতাব থেকে উল্লেখ করেছি। সর্বাবস্থায় আলহামদু লিল্লাহ। আল্লাহর কাছে দো‘আ করছি তিনি যেন আমার এ কাজটি কবুল করেন এবং এটি যেন একমাত্র তাঁর সন্তুষ্ট অর্জনের উদ্দেশ্যেই হয় এবং এর লেখকের দ্বারা ইসলাম ও মুসলমানের উপকারে সাধন হয়। আমীন।

সতর্কতা: আল্লাহ তা‘আলা নবীগণের দ্বারা যে সব মু‘জিযা সংঘটিত করান তা তাদের ইচ্ছায় হয় না এবং এগুলো তাদের সাধ্যের মধ্যেও নয়। কিন্তু তাদের নবুওয়তের সত্যতায় আল্লাহ তাদের দ্বারা এগুলো সংঘটিত করান। এব্যাপারে এজন্য সতর্ক করলাম যেহেতু কতিপয় সীমালঙ্ঘনকারী এগুলোকে নবীগণের ক্ষমতার অন্তর্ভুক্ত মনে করে বসে।

আরেকটি সতর্কতা: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উত্তম চরিত্র, তাঁর জাওয়ামেউল কালেম (তথা পূর্ণ অর্থবহ সংক্ষিপ্ত বাক্য) এবং তাঁর দ্বারা প্রচারিত শরী‘আতের বিধি-বিধান অত্যন্ত সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ন বিষয় ও তাৎপর্যপূর্ণ ব্যাপার সংবলিত হওয়া রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নবুওয়তের প্রমাণসমূহের অন্তর্ভুক্ত। আল্লাহ যাকে ঈমান, অন্তর্দৃষ্টি ও দীনের সঠিক বুঝ দিয়েছেন তারা বুঝতে পারেন যে এগুলো রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নবুওয়তের প্রমাণ তথা (দালায়েলুন নবুওয়াহ) এর অন্তর্ভুক্ত। আল্লাহ বলেছেন,

﴿قُلۡ هُوَ لِلَّذِينَ ءَامَنُواْ هُدٗى وَشِفَآءٞۚ وَٱلَّذِينَ لَا يُؤۡمِنُونَ فِيٓ ءَاذَانِهِمۡ وَقۡرٞ وَهُوَ عَلَيۡهِمۡ عَمًىۚ أُوْلَٰٓئِكَ يُنَادَوۡنَ مِن مَّكَانِۢ بَعِيدٖ ٤٤ ﴾ [فصلت: ٤٤]  

বল, ‘এটি মুমিনদের জন্য হিদায়াত ও প্রতিষেধক। আর যারা ঈমান আনে না তাদের কানে রয়েছে বধিরতা আর কুরআন তাদের জন্য হবে অন্ধত্ব। তাদেরকেই ডাকা হবে দূরবর্তী স্থান থেকে”। [সূরা ফুস্-সিলাত: ৪৪]

আরেকটি সতর্কতা: আগের ও বর্তমান কিছু ভ্রান্ত লোকেরা দালায়েলুন নুবুওয়াহ ও কারামাতুল আওলিয়ার ব্যাপারে মিথ্যা অপবাদ দিয়েছে, এ কারণে যে জাদুকর ও গণকদের দ্বারাও কিছু আশ্চর্যজনক ঘটনা প্রকাশিত হয়।

শাইখুল ইসলাম ইবন তাইমিয়া রহ. দালায়েলুন নুবুওয়াহ ও জাদুকর ও গণকদের কর্তৃক আশ্চর্যকর ঘটনার মধ্যেকর পার্থক্য বর্ণনা করেছেন। ফলে আমি শাইখুল ইসলামের কিতাব ‘আন-নুবুওয়াত’ থেকে যতটুকু সহজ হয় চয়ন করব; যাতে এদুয়ের মাঝে পার্থক্য স্পষ্ট হয় এবং ব্যাপারটি এমন হয় যেমনটি আল্লাহ বলেছেন,

﴿ لِّيَهۡلِكَ مَنۡ هَلَكَ عَنۢ بَيِّنَةٖ وَيَحۡيَىٰ مَنۡ حَيَّ عَنۢ بَيِّنَةٖۗ ٤٢ ﴾ [الانفال: ٤٢]

“যে ধ্বংস হওয়ার সে যাতে সুস্পষ্ট প্রমাণ পাওয়ার পর ধ্বংস হয়, আর যে জীবিত থাকার সে যাতে সুস্পষ্ট প্রমাণ পাওয়ার পর বেঁচে থাকে”। [সূরা আল- আনফাল: ৪২]

ইমাম ইবন তাইমিয়্যাহ রহ. বলেন, (পৃ. ১৬) অলৌকিক ঘটনা তিন প্রকার:

প্রথম প্রকার: ব্যক্তিকে এসব অলৌকিক ঘটনা দ্বারা ভালো ও আল্লাহর তাকওয়ার কাজে সাহায্য করা হবে। এটা আমাদের নবী ও তাঁর অনুসারীদের অবস্থা। তাদের অলৌকিক ঘটনা দীনের পক্ষে প্রমাণ পেশের জন্য অথবা মুসলিমদের প্রয়োজন পূরণের জন্য হয়ে থাকে।

দ্বিতীয় প্রকার: এ সব অলৌকিক ঘটনা দ্বারা বৈধ কাজে সাহায্য নেওয়া, যেমন প্রয়োজনীয় জায়েয কাজে জিনদের দ্বারা সাহায্য নেওয়া। এটা মধ্যম ধরণের অলৌকিক ঘটনা। এ অলৌকিকতা দ্বারা ব্যক্তির মর্যাদা বাড়ে বা কমে না। এটা নবী সুলাইমান আলাইহিস সালাম কর্তৃক জিন জাতিকে কাজে লাগানোর সাদৃশ।

প্রথম প্রকারের উদাহরণের অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে, আমাদের নবীকে জিনদের কাছে প্রেরণ তাদের নিকট ঈমানের দাওয়াত দেওয়ার জন্য। এটা জায়েয কাজে জিনদেরকে ব্যবহার করার চেয়েও উত্তম। যেমন জায়েয কাজে ব্যবহার করেছিলেন সুলাইমান আলাইহিস সালাম। তিনি জিনদেরকে প্রাসাদ, ভাস্কর্য, সুবিশাল হাউযের মত বড় পাত্র ও স্থির হাড়ি ইত্যাদি তৈরি করায় ব্যবহার করতেন। আল্লাহ বলেন,

﴿ يَعۡمَلُونَ لَهُۥ مَا يَشَآءُ مِن مَّحَٰرِيبَ وَتَمَٰثِيلَ وَجِفَانٖ كَٱلۡجَوَابِ وَقُدُورٖ رَّاسِيَٰتٍۚ ٱعۡمَلُوٓاْ ءَالَ دَاوُۥدَ شُكۡرٗاۚ وَقَلِيلٞ مِّنۡ عِبَادِيَ ٱلشَّكُورُ ١٣ ﴾ [سبا: ١٣]

“তারা তৈরী করত সুলাইমানের ইচ্ছানুযায়ী তার জন্য প্রাসাদ, ভাস্কর্য, সুবিশাল হাউযের মত বড় পাত্র ও স্থির হাড়ি। ‘হে দাঊদ পরিবার, তোমরা কৃতজ্ঞতাস্বরূপ আমল করে যাও এবং আমার বান্দাদের মধ্যে অল্পই কৃতজ্ঞ’’। [সূরা সাবা : ১৩]

আল্লাহ আরো বলেছেন,

﴿ وَمَن يَزِغۡ مِنۡهُمۡ عَنۡ أَمۡرِنَا نُذِقۡهُ مِنۡ عَذَابِ ٱلسَّعِيرِ ١٢ ﴾ [سبا: ١٢]

“তাদের মধ্যে যে আমার নির্দেশ থেকে বিচ্যুত হয় তাকে আমরা জ্বলন্ত আগুনের আযাব আস্বাদন করাব”। [সূরা সাবা : ১২]

আমাদের নবীকে জিনদের নিকট ঈমান ও আল্লাহর ইবাদাতের দাওয়াত সহকারে প্রেরণ করা হয়েছিল, যেমনিভাবে তিনি মানুষের কাছে প্রেরিত হয়েছিলেন। অতঃপর যারাই তাঁর অনুসরণ করেছে তারাই সুখী ও সৌভাগ্যবান হয়েছেন। এটা সুলাইমান আলাইহিস সালামের চেয়েও মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পূর্ণাঙ্গতার উপর প্রমাণ। যেমনিভাবে আল্লাহর বান্দা ও রাসূল গুণ নবী ও বাদশাহ গুণের চেয়ে বেশি পূর্ণাঙ্গ। ইউসুফ, দাউদ ও সুলাইমান আলাইহিমুস সালামগণ নবী ও বাদশাহ ছিলেন, আর মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহিস সালাম আল্লাহর বান্দা ও রাসূল ছিলেন, যেমন ইবরাহীম, মূসা ও ঈসা আলাইহিমুস সালামগণ আল্লাহর বান্দা ও রাসূল ছিলেন। বান্দাহ ও রাসূল হওয়ার এগুণ বেশি মর্যাদাবান এবং তাদের উম্মতগণও বেশি মর্যাদাবান।

তৃতীয় প্রকার হলো: হারাম কাজ যেমন, অশ্লীল কর্মকাণ্ড, যুলুম, শির্ক, মিথ্যাকথা ইত্যাদি কাজে অলৌকিক কর্মকাণ্ড ব্যবহার করা। এগুলো জাদুকর, গণক, কাফের ও পাপাচারীদের কাজের সমগোত্রীয় কাজ। যেমন বিদ‘আতী রেফা‘ঈ সম্প্রদায়, তারা মানুষকে শির্ক, অন্যায়ভাবে হত্যা ও পাপাচারের কাজে কিছু অলৌকিক ঘটনার সাহায্য নিয়ে থাকে। আর এ তিনটি কাজই আল্লাহ তা‘আলা হারাম ঘোষণা করেছেন তাঁর নিম্নোক্ত বাণীতে,

﴿ وَٱلَّذِينَ لَا يَدۡعُونَ مَعَ ٱللَّهِ إِلَٰهًا ءَاخَرَ وَلَا يَقۡتُلُونَ ٱلنَّفۡسَ ٱلَّتِي حَرَّمَ ٱللَّهُ إِلَّا بِٱلۡحَقِّ وَلَا يَزۡنُونَۚ وَمَن يَفۡعَلۡ ذَٰلِكَ يَلۡقَ أَثَامٗا ٦٨ ﴾ [الفرقان: ٦٧]

“আর যারা আল্লাহর সাথে অন্য ইলাহকে ডাকে না এবং যারা আল্লাহ যে নফসকে হত্যা করা নিষেধ করেছেন যথার্থ কারণ ছাড়া তাকে হত্যা করে না। আর যারা ব্যভিচার করে না। আর যে তা করবে সে আযাবপ্রাপ্ত হবে”। [সূরা আল-ফুরকান: ৬৭]

আর এজন্যই তাদের এসব কাজ গণক, কবি ও পাগলের কর্মপদ্ধতির সমগোত্রীয়। আর আল্লাহ তাঁর নবীকে পাগল, কবি ও গণক হওয়া থেকে পবিত্র ঘোষণা করেছেন। কারণ তারা যে সব গায়েবী বিষয়ের সংবাদ প্রদান করে তা তো কেবল তাদের উপর সওয়ার হওয়া শয়তানদের মাধ্যমেই প্রাপ্ত হয়ে থাকে। তাদের মধ্যে যারা শয়তানদেরকে মা‘বুদ হিসেবে গ্রহণ করে তারা শয়তানদের থেকে আরও বেশি শক্তিশালী অলৌকিক অবস্থা পেতে সক্ষম হয়। বস্তুত তারা পাগলদের অন্তর্ভুক্ত। তাই তো তাদের এক শাইখ বলেছেন, তাদের সঙ্গী সাথী যারা এ ধরনের অলৌকিক ঘটনা ঘটায় তারা বেঈমান হয়ে মারা যায়। আর তাদের সামা তথা ভক্তিমূলক গান ও তাদের ওয়াজদ তথা আবেগ-উচ্ছাস তা তো কবিদের কবিতার মতই। এজন্যই তাদেরকে যারা দেখেছেন তারা তাদেরকে ভারতের মূর্তিপূজারী মুশরিকদের সাথে তুলনা করেছেন।  

 


 

অলৌকিক ঘটনার ব্যাপারে মুতাযিলাদের মতামত বিশ্লেষণ

ইমাম ইবন তাইমিয়্যাহ রহ. বলেছেন, (আন-নুবূওয়াত: ১৫০)

তাদের (আশায়েরা-মাতুরিদিয়াদের) পূর্বে মু‘তাযিলারা বলত, স্বাভাবিক ঘটনার বিপরীত অলৌকিক কোনো কিছু ঘটা রাসূলদের নবুওয়তের প্রমাণ। অতঃএব, নবী ছাড়া কারো থেকে অলৌকিক কিছু ঘটা জায়েয নয়। তাদের এ মতামতের কারণে তারা জাদুর দ্বারা অস্বাভাবিক কিছু ঘটানোকে অস্বীকার করত। যেমন, কোনো কিছুর সাহায্য ছাড়া কারো মৃত্যু ও রোগমুক্তি দান করা। তাদের এ মতের কারণে তারা গণকবাজিকেও অস্বীকার করত। আরও অস্বীকার করতো জিনদের দ্বারা কিছু গায়েবের সংবাদ প্রদান করাকে। অনুরূপভাবে তারা অলীদের কারামতকেও অস্বীকার করত। অতঃপর এরা (আশায়েরা ও মাতুরিদিয়ারা) আসলো এবং ফুকাহা ও হাদীসবিদগণের মত তারাও জাদু, গণনাবিদ্যা ও কারামতের ব্যাপারসমূহের বাস্তবতা স্বীকার করে নিলো।

কিন্তু তাদেরকে (আশায়েরা-মাতুরিদিয়াদেরকে) প্রশ্ন করে বলা হলো, তোমরা এ অলৌকিক কর্মকাণ্ড এবং মু‘জিযার মধ্যে কীভাবে পার্থক্য কর?

তখন তারা বললো, মু‘জিযা ও অলৌকিক ঘটনার মাঝে ধরণগত কোনো পার্থক্য নেই। তারা আরও বলল, আল্লাহ নবীগণকে এমন বিশেষ কোনো অলৌকিক শক্তি দান করেন না যা অন্যদের সাধ্য নেই বরং সব অলৌকিক শক্তিই একই ধরণের। এ অলৌকিক ঘটনা শুধু অলৌকিকতার কারণে দলিল নয়, বরং যখন তা নবুওয়তের দাবীর সাথে যুক্ত হবে এবং রাসূল যখন সেটার অনুরূপ কিছু নিয়ে আসার আহ্বান জানানোর পর তাদের পক্ষ থেকে তা মোকাবিলা করা থেকে নিরাপদ হবে কেবল তখনই তা দলিল হিসেবে বিবেচিত হবে। সুতরাং অলৌকিক কর্ম সংঘটিত করা স্বয়ং সেটা বা সে ধরনের কিছু দলীল হিসেবে ধর্তব্য হবে না। যতক্ষণ না তখনই তা দলীল হিসেবে ধর্তব্য হবে যখন নবুওয়তের দাবীদার সেটাকে দলীল হিসেবে পেশ করবে। অন্যথায় তা নবুওয়তের দলীল হবে না। তাই নবুওয়তের দলীল-প্রমাণ হওয়ার জন্য তাদের নিকট শর্ত হচ্ছে এ অলৌকিকতার মুকাবিলা করা থেকে নিরাপদ থাকা। অর্থাৎ তারা সেরূপ আনতে ব্যর্থ হবে। তাই আশায়েরা ও মাতুরিদিয়াদের নিকট এটাই হচ্ছে নবীদের মু‘জিযা ও অন্যান্যদের অলৌকিক কর্মকাণ্ডের মধ্যে পার্থক্য করার সর্বশেষ সীমা। সুতরাং যখন নবওয়তের দাবীদার ব্যক্তি বলবে যে তোমরা এ নিদর্শনের মত কিছু নিয়ে আস, ফলে তারা তা আনয়ন করতে অপারগ হয়ে যাবে তখন তা সেটা উক্ত নবীর বিশেষ মু‘জিযা হিসেবে বিবেচিত হবে। নতুবা তাদের মতে জাদুকর ও গণকদের দ্বারা সংঘটিত কোনো অলৌকিক কর্মকাণ্ডের অনুরূপ কর্মকাণ্ড নবীর মু‘জিযা হিসেবে বিবেচিত হতে পারে, যদি নবী অনুরূপ কিছুকে তার নবুওয়তের সত্যতার উপর দলীল হিসেবে পেশ করে।

সুতরাং তাদের (আশায়েরা ও মাতুরিদিয়াদের) নিকট নবুওয়তের দলীল হচ্ছে নবুওয়তের দাবী এবং অলৌকিকতা এ দু’টির সমন্বিত রূপ। শুধু অলৌকিকতা নবুওয়তের প্রমাণ নয়। আর সেটা গ্রহণযোগ্য তখনই হবে যখন সেটা মুকাবিলা করা থেকে নিরাপদ হবে অর্থাৎ সেটার মুকাবিলা করা কারও পক্ষে সম্ভব না হবে। বরং কখনও কখনও তারা অলৌকিকতাও শর্ত করেন না বরং শর্ত করেন যে এটার অনুরূপ আনার চ্যালেঞ্জের মুকাবিলা করা থেকে মুক্ত হতে হবে এবং সেটার বিপরীত কিছু নিয়ে আসা মানুষের পক্ষে অসম্ভব হয়ে উঠবে যদিও সেটা মানুষের মধ্যে সচরাচর ঘটে থাকে অলৌকিক নয়। সুতরাং বুঝা গেল যে, তাদের (আশায়েরা ও মাতুরিদিয়াদের) নিকট নবুওয়তের প্রমাণ তখনই গ্রহণযোগ্য হবে যখন তা দু’টি বিষয়ের সাথে সম্পৃক্ত হবে: নবুওয়তের দাবীর সাথে সম্পৃক্ততা এবং যাদেরকে অনুরূপ আনার চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেওয়া হয়েছে তাদের পক্ষে অনুরূপ কিছু আনতে অক্ষম হওয়া।

তারা (আশায়েরা ও মাতুরিদিয়ারা) আরও বলে থাকেন যে, নবীদের অলৌকিক ঘটনা জাদুকর, গনক এবং নেককার বান্দাদের দ্বারা সংঘটিত হওয়া সম্ভব তবে তা তাদের নবুওয়তের উপর প্রমাণবহ হবে না কারণ তারা তো নবুওয়তের দাবী করে তা পেশ করে নি।

তারা (আশায়েরা ও মাতুরিদিয়ারা) আরও বলে থাকেন যে, কেউ এসব অলৌকিক ঘটনার সাথে নবুওয়তের মিথ্যাদাবীদার হলে আল্লাহর দায়িত্ব হয়ে যায় তাকে অক্ষম করে দেওয়া এবং এ অলৌকিক কাজকে ব্যর্থ করে দেওয়ার জন্য এমন কাউকে নিয়োজিত করা যার মাধ্যমে নবুওয়তের মিথ্যাদাবীদারের দাবীর সপক্ষে পেশ করা দলীল-প্রমাণাদি বাতিল ও অসার হয়ে যাবে।

আর যখন তাদেরকে বলা হলো, আল্লাহর এমন এমন করা উচিত’ কেন? অথচ তোমাদের মতে, আল্লাহর জন্য সব কাজ করা জায়েয, কোনো কাজ করা তার উপর ওয়াজিব নয়। তখন তারা বলে, কেননা আল্লাহ যদি এরূপ না করেন, বা কাউকে এর মোকাবিলা করতে নিয়োজিত না করেন তবে নবীগণের মু‘জিযা বাতিল হয়ে যাবে।

আবার যখন তাদেরকে বলা হলো, তোমাদের নীতি অনুযায়ী তো এটা বৈধ যে আল্লাহ সেটার দলিল হওয়াই বাতিল করে দিবেন; কারণ তোমাদের মতে, আল্লাহর জন্য সব কাজ করা জায়েয। তখন তারা তাদের পূর্ববর্তী দু’টি উত্তর প্রদান করে থাকে, হয় তাদেরকে এটা মেনে নিতে হয় আল্লাহ এর উপর ক্ষমতাবান নয়, নতুবা এটা বলতে হয় যে দলীল হওয়ার বিষয়টি অত্যাবশ্যকভাবে জানা বিষয়। অথচ এ উভয় উত্তরই যে দুর্বল এটা সর্বজন বিদিত।

এখানে আরেকটি বিষয় তাদের (আশায়েরা ও মাতুরিদিয়াদের) উপর এসে পড়ে, তা হচ্ছে, তোমরা কেন একথা বলো যে, নবীগণের সত্যতা প্রমাণে পেশ করা তাদের মু‘জিযাকে অবশ্যই নবুওয়তের দাবীসহকারে অলৌকিক হতে হবে এবং এর মোকাবিলা করতে অক্ষম হওয়া হতে হবে। কারণ তোমাদের এ কথাটি নিন্মোক্ত কারণে বাতিল বলে গণ্য হবে:

প্রথম কারণ: নবী যা নিয়ে আসেন তা যদি জাদুকর ও গণকও নিয়ে আসেন তাহলে অবস্থা এমন দাঁড়ায় যে, জাদুকর ও গণকের মুকাবিলা করা যাবে কিন্তু নবীর মুকাবিলা করা যাবে না। সুতরাং বুঝা যাচ্ছে যে, এ ব্যাপারে (নবী ও জাদুকর-গণকের মধ্যে) পার্থক্য নির্ণয়কারী বিষয় হচ্ছে মুকাবিলা করতে সক্ষম না হওয়া।

সুতরাং তোমরা এটা বলো যে: যে কেউ নবুওয়তের দাবী করবে এবং বলবে, আমার মু‘জিযা হলো অনুরূপ দাবী কেউ করবে না তাহলে সে সত্যবাদী, অথবা কেউ এর অনুরূপ দাবী করতে সক্ষম হবে না তাহলে সে সত্যবাদী। অথবা তিনি (নবী) স্বাভাবিক কোনো কাজই যেমন খাওয়া, পান করা ও পোশাক পরিধান করা ইত্যাদি করবেন এবং বলবেন, আমার মু‘জিযা হলো অনুরূপ কাজ কেউ করবে না বা কেউ অনুরূপ কাজ করতে পারবে না, তাহলে সে সত্যবাদী। ফলে তারা এভাবে অত্যাবশ্যকীয় করে নিল। আর তারা বিবেচিত হবেন। বস্তুত আশায়েরাগণ এটা নিজেদের উপর আবশ্যকও করে নিয়েছেন এবং তারা এ কারণে (নবীর পক্ষ থেকে দাবী করা) অস্বাভাবিক কাজ নিয়ে আসা অন্যদের থেকে অসম্ভব বলে থাকে তেমনিভাবে (নবীর পক্ষ থেকে দাবী করা) স্বাভাবিক কাজও অন্যদের থেকে নিয়ে আসা অসম্ভব মনে করে থাকে। এর উপর ভিত্তি করে বলা যায় (আশায়েরা-মাতুরিদিয়াদের মতে) কোনো রাসূল যদি বলেন, আমার মু‘জিযা হলো আমি গাধায় বা ঘোড়ায় আরোহণ করতে পারি বা এ খাদ্য খেতে পারি বা এ পোশাক পরিধান করতে পারি বা ঐ স্থানে যেতে পারি বা অনুরূপ কিছু করতে পারি কিন্তু অন্যরা এসব করতে পারে না। তাহলে এগুলো তার দাবীর সত্যতার পক্ষে প্রমাণ হিসেবে ধর্তব্য হবে।

বস্তুত এভাবে বলার কোনো নির্দিষ্ট নিয়মকানুন নেই। কেননা কোনো সম্প্রদায় যা করতে পারে আর কোনো সম্প্রদায় যা করতে পারে না তা নির্দিষ্ট কোনো ছকে বাঁধা নয়। তবে এটা ঐ লোকদের দেওয়া মু‘জিযার ব্যাখ্যাকে বাদ দেয় যারা মু‘জিযা বলতে অলৌকিক কাজ বুঝে। (অর্থাৎ আশায়েরাদের) কেননা লৌকিক বিষয়সমূহ নানা রকম হতে পারে।

অবশ্য তারা (মু‘তাযিলা ও আশায়েরাগণ) তা উল্লেখ করেছেন। তারা বলেন, প্রত্যেক জাতির জন্য তা-ই মু‘জিযা হবে যা সে জাতির জন্য অলৌকিক তথা অস্বাভাবিক হবে। তারা আরও বলেন, মু‘জিযাকে অবশ্যই সে লোকদের কাছে অস্বাভাবিক কাজ হিসেবে বিবেচিত হতে হবে যাদেরকে নবী তার প্রতি ঈমানের দাওয়াত দিচ্ছেন। যদিও অন্যদের কাছে তা স্বাভাবিক মনে হতে পারে। তারা আরও বলেন, নবওয়াতের দাবীকারী যদি মিথ্যাবাদী হন তবে আল্লাহ তা‘আলা সে পেশার অনুরূপ কাউকে নিয়োজিত করবেন যে তার মোকাবিলা করতে সক্ষম হবেন অথবা সে তাকে উক্ত মু‘জিযা আনয়ন করতে বাধা দিবেন।

বস্তুত এটাই হচ্ছে দ্বিতীয় কারণ যা তাদের সে মূলনীতি অসার হওয়ার উপর প্রমাণ বহন করে যা আশায়েরা ও মু‘তাযিলারা প্রণয়ন করেছিল।

তৃতীয় কারণ: ‘অনুরূপ কিছু দ্বারা মুকাবিলা’ বলতে বুঝায়, নবী যে দলিল নিয়ে এসেছেন তারাও অনুরূপ দলিল নিয়ে আসবেন। আর তাদের মতে, নবীর নবুওয়তের দলিল হলো, নবুওয়তের দাবী ও অলৌকিক ঘটনা। সুতরাং তাদের এ কথা দ্বারা এটা অত্যাবশ্যকীয় হয়ে পড়ে যে, অনুরূপ কিছু দ্বারা মুকাবিলা করা দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে, নবী ছাড়া অন্যরাও নবুওয়তের দাবী করবে ও অলৌকিক কিছু নিয়ে আসবে। তাদের এ কথার উপর ভিত্তি করে বলা যায় যে, (তাদের নিকট) কুরআনের অনুরূপ বা দশ সূরা বা অনুরূপ একটি সূরা আনয়ন করা নবীর মোকাবিলা বুঝায় না। যেমন তাদের (মুকাবিলাকারীদের) কেউ নবুওয়তের দাবী করবে আর তা (অলৌকিক কর্মকাণ্ড) করতে সক্ষম হবে। তাদের এ কথা স্পষ্ট বিবেক (আকল) ও বিশুদ্ধ বর্ণনা উভয়ের বিপরীত। কারণ রাসূল যদি কুরাইশদেরকে বলতেন, তোমাদের কেউ নবী হওয়ার দাবী করে কুরআনের অনুরূপ একটি কিতাব আনতে পারবে না, কেবল তখনই সেটা নবুওয়তের আলামত বলে বিবেচিত হবে। কেননা, (তাদের নিকট) শুধু কুরআনের তিলাওয়াত কোনো দলিল-প্রমাণ হতে পারে না; কারণ কেউ তা অন্যের থেকে শিখেও পড়তে পারে। তাই শুধু তিলাওয়াত দলিল হতে পারে না। কেননা সেটার সাথে নবুওয়তের দাবী সংশ্লিষ্ট করা হয় নি। আর যদি সে নবুওয়তের দাবী করেও ফেলত তবে আল্লাহ তাকে অলৌকিক কিছু করতে ভুলিয়ে দিতেন বা অন্য কাউকে নিয়োজিত করতেন যিনি সেটার মুকাবিলা করতে পারে- যেমনটি তোমরা বলে থাকো, তাহলে কুরাইশ ও অন্যান্য আলেমরা জানত যে এটা একটা বাতিল কথা।

চতুর্থ কারণ: কখনো কখনো মিথ্যাবাদীরা নবুওয়তের দাবী করতে পারে এবং তারা জাদু ও গণনার সাহায্যে এমন কিছু নিদর্শন পেশ করতে পারে যার মোকাবিলা কেউ করতে সক্ষম হয় না। অথচ তারা আসলেই মিথ্যাবাদী। এক্ষেত্রে মু‘তাযিলাদের দাবী অসার প্রমাণিত হলো। যেমন, ইয়ামেনের আসাদ আল-উনসী রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জীবদ্দশায় নবুওয়তের দাবী করেছিল, সে শয়তানের সাহায্যে কিছু গায়েবের সংবাদও দিয়েছিল, কেউ তার মোকাবিলা করেননি। তার মিথ্যাচার নানা ভাবে জানা গেছে। আল্লাহ বলেন,

﴿ هَلۡ أُنَبِّئُكُمۡ عَلَىٰ مَن تَنَزَّلُ ٱلشَّيَٰطِينُ ٢٢١ تَنَزَّلُ عَلَىٰ كُلِّ أَفَّاكٍ أَثِيمٖ ٢٢٢ ﴾ [الشعراء: ٢٢١، ٢٢٢]

‘আমি কি তোমাদেরকে সংবাদ দেব, কার নিকট শয়তানরা অবতীর্ণ হয়’? তারা অবতীর্ণ হয় প্রত্যেক চরম মিথ্যাবাদী ও পাপীর নিকট। [সূরা আশ-শু‘আরা: ২২১-২২২]

এমনিভাবে মুসাইলামাতুল কাযযাব, হারিস আল-দামেশকী, মাকহুল আল-হালাবী, বাবা রূমী-আল্লাহ এদের উপর লানত বর্ষণ করুন- এরা সকলেই নবুওয়তের মিথ্যাদাবীদার এবং শয়তানের সাহায্যে কিছু অলৌকিক সংবাদও দিত।

পঞ্চম কারণ: বস্তুত নবীগণের আলামতের শর্ত এটা নয় যে, এটা দ্বারা নবী দলিল পেশ করবে এবং এর অনুরূপ কিছু আনতে চ্যালেঞ্জ করবে। বরং এটা নবীর নবুওয়তের আলামত, যদিও এটা উক্ত দু’শর্ত থেকে খালি থাকে। যেমন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পূর্ববর্তীদের সম্পর্কে নানা সংবাদ দিয়েছেন, কিন্তু এটা দ্বারা তিনি তার নবুওয়তের দলিল পেশ করেননি। এমনিভাবে আল্লাহ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর দ্বারা অনেক মু‘জিযা সংঘটিত করিয়েছেন, যেমন অল্প খাবার ও পানীয় বেশি হওয়া, দু’আঙ্গুলের মাঝ থেকে পানি বের হওয়া, সামান্য খাদ্য প্রয়োজনীয় সংখ্যক সকলের অন্য যথেষ্ট হওয়া ইত্যাদি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নবুওয়তের প্রমাণ ছিল, কিন্তু তিনি এগুলো দ্বারা দলিল পেশ করেনি এবং এর অনুরূপ কেউ মোকাবিলাও করেননি। বরং এটা মুসলমানের প্রয়োজনে ছিল। এমনিভাবে ইবরাহীম আলাইহিস সালাম নবুওয়ত প্রাপ্তির পরে অগ্নিতে নিক্ষেপিত হয়েছিল এবং এটা দ্বারা তিনি মানুষকে তাওহীদের দিকে আহ্বান করেছিলেন।       

ষষ্ঠ কারণ: মু‘তাযিলা ও অন্যান্যরা যেমন ইবন হাযম রহ. যা উল্লেখ করেছেন যে, নবীগণের আলামত তাদের জন্যই খাস হতে হবে এটা সহীহ কথা। কিন্তু অলীদের কারামতও দালায়েলুন নুবুওয়াহ, যা সত্যিকার নবীর অনুসারী ছাড়া অন্যদের কাছে পাওয়া যাবে না। অন্যদিকে জাদুকর ও গণকরা যে সব আশ্চর্যকর জিনিস নিয়ে আসে তা নবী ও তাদের অনুসারী ছাড়া অন্যদের কাছে স্বাভাবিক ব্যাপার মাত্র। বরং এটা মিথ্যা ও পাপাচারের অন্তর্ভুক্ত। এটা ঐ পেশার মানুষ ছাড়া অন্যদের কাছে অস্বাভাবিক ব্যাপার মনে হয়। প্রত্যেক শিল্পই অন্যান্য অদক্ষ লোকের নিকট একটু অস্বাভাবিক ব্যাপারই মনে হয়। কিন্তু এটা নবুওয়তের আলামত হতে পারে না। নবীগণের আলামত নবী ছাড়া অন্য সকলের কাছেই অলৌকিক ব্যাপার, যদিও নবীগণের কাছে স্বাভাবিক ব্যাপার মাত্র।

সপ্তম কারণ: নবীগণের আলামত তিনি যাদের কাছে প্রেরিত তাদের কাছে অস্বাভাবিক হতে হবে, তারা হলেন মানুষ ও জিন। তাই মানুষ ও জিন কেউ নবীর আলামতের মত আলামত আনতে পারবে না। যেমন আল্লাহ বলেছেন,

﴿ قُل لَّئِنِ ٱجۡتَمَعَتِ ٱلۡإِنسُ وَٱلۡجِنُّ عَلَىٰٓ أَن يَأۡتُواْ بِمِثۡلِ هَٰذَا ٱلۡقُرۡءَانِ لَا يَأۡتُونَ بِمِثۡلِهِۦ وَلَوۡ كَانَ بَعۡضُهُمۡ لِبَعۡضٖ ظَهِيرٗا ٨٨ ﴾ [الاسراء: ٨٨]

“বলুন, ‘যদি মানুষ ও জিন এ কুরআনের অনুরূপ হাযির করার জন্য একত্রিত হয়, তবুও তারা এর অনুরূপ হাযির করতে পারবে না যদিও তারা একে অপরের সাহায্যকারী হয়’’। [সূরা আল-ইসরা: ৮৮]

অন্যদিকে ফিরিশতারা এর মোকাবিলা করতে সক্ষম হলে এতে কোনো অসুবিধে নেই। কেননা ফিরিশতারা নবীগণের উপর আল্লাহর আয়াত নাযিল করেন। তারা জাদুকর ও গণকের কাছে নাযিল হন না, যেমনিভাবে শয়তান নবীগণের কাছে নাযিল হয় না। ফিরিশতারা আল্লাহর ব্যাপারে মিথ্যারোপ করেন না। ফিরিশতাদের কাজ যেমন, আল্লাহর পক্ষ থেকে নবীর কাছে গায়েবের সংবাদ বহন করে নিয়ে আসা, শত্রুর উপর বিজয় লাভ করা, তাদেরকে ধ্বংস করে দেওয়া ইত্যাদি নবীগণের স্বাভাবিক কাজের বহির্ভূত। বরং এগুলো নবী ছাড়া অন্যদের দ্বারা সম্ভব নয়। এতে উক্ত কাজটি নকস কমতি হয়ে যায় না। বরং কাজটি অলৌকিকই থেকে যায়। [9]

আল-কুরআন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর অবতীর্ণ হওয়া থেকে সর্বযুগেই রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের চিরন্তন মু‘জিযা, এর আয়াতসমূহ সকলের জন্যই চ্যালেঞ্জ। যেমন আল্লাহ বলেছেন,

﴿ فَلۡيَأۡتُواْ بِحَدِيثٖ مِّثۡلِهِۦٓ إِن كَانُواْ صَٰدِقِينَ ٣٤ ﴾ [الطور: ٣٤]

“অতএব, তারা যদি সত্যবাদী হয় তবে তার অনুরূপ বাণী নিয়ে আসুক”। [সূরা আত্-তূর: ৩৪]

আল্লাহ আরো বলেছেন,

﴿ أَمۡ يَقُولُونَ ٱفۡتَرَىٰهُۖ قُلۡ فَأۡتُواْ بِعَشۡرِ سُوَرٖ مِّثۡلِهِۦ مُفۡتَرَيَٰتٖ وَٱدۡعُواْ مَنِ ٱسۡتَطَعۡتُم مِّن دُونِ ٱللَّهِ إِن كُنتُمۡ صَٰدِقِينَ ١٣ ﴾ [هود: ١٣]

“নাকি তারা বলে, ‘সে এটা রটনা করেছে’? বল, ‘তাহলে তোমরা এর অনুরূপ দশটি সূরা বানিয়ে নিয়ে আস এবং আল্লাহ ছাড়া যাকে পার ডেকে আন, যদি তোমরা সত্যবাদী হও”। [সূরা: হূদ: ১৩]

আল্লাহ আরো বলেছেন,

﴿ أَمۡ يَقُولُونَ ٱفۡتَرَىٰهُۖ قُلۡ فَأۡتُواْ بِسُورَةٖ مِّثۡلِهِۦ وَٱدۡعُواْ مَنِ ٱسۡتَطَعۡتُم مِّن دُونِ ٱللَّهِ إِن كُنتُمۡ صَٰدِقِينَ ٣٨ ﴾ [يونس: ٣٨]

“নাকি তারা বলে, ‘সে তা বানিয়েছে’? বল, ‘তবে তোমরা তার মত একটি সূরা (বানিয়ে) নিয়ে আস এবং আল্লাহ ছাড়া যাকে পারো ডাক, যদি তোমরা সত্যবাদী হও”। [সূরা ইউনুস: ৩৮]

আল্লাহ আরো বলেছেন,

﴿ قُل لَّئِنِ ٱجۡتَمَعَتِ ٱلۡإِنسُ وَٱلۡجِنُّ عَلَىٰٓ أَن يَأۡتُواْ بِمِثۡلِ هَٰذَا ٱلۡقُرۡءَانِ لَا يَأۡتُونَ بِمِثۡلِهِۦ وَلَوۡ كَانَ بَعۡضُهُمۡ لِبَعۡضٖ ظَهِيرٗا ٨٨ ﴾ [الاسراء: ٨٨]

“বলুন, ‘যদি মানুষ ও জিন এ কুরআনের অনুরূপ হাযির করার জন্য একত্রিত হয়, তবুও তারা এর অনুরূপ হাযির করতে পারবে না যদিও তারা একে অপরের সাহায্যকারী হয়’’। [সূরা আল-ইসরা: ৮৮]

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শুরুতে তাদেরকে এ সংবাদ দিয়েছেন। জিন ও ইনসান কেউ এর মোকাবিলা করতে সক্ষম হয়নি। তারা সকলেই অক্ষম হয়েছিল। তাই এরূপ হওয়া নবী ছাড়া কারো পক্ষে সম্ভব নয়। কালের পরিক্রমায় আরব অনারব, কুরআনের পক্ষের ও বিরোধী বহু জাতি কুরআনের অনুরূপ কিছু আনায়ন করতে আপ্রান চেষ্টা করেছিল, কিন্তু পরিশেষে তারা ব্যর্থ হয়েছে। একথা সকলেই জানে।

একথা সকলেই জানে যে, কুরআনের আয়াত, ছন্দমালা, গায়েব সম্পর্কে সংবাদ, এর আদেশ, নিষেধ, ধমক, ওয়াদা, মহৎ, মানুষের অন্তরে এর স্থান ইত্যাদি মু‘জিযা। কুরআন যখন অন্য ভষায় অনুবাদ করা হয় তখন এর অর্থ মু‘জিযা হিসেবে থাকে। কেননা এর অনুরূপ কিছু পৃথিবীতে পাওয়া যায় না।

যখন বলা হবে, তাওরাত, ইঞ্জিল ও যাবুরেরও তো অনুরূপ কোনো গ্রন্থ পৃথিবীতে নেই, তখন আমরা বলব, অন্যান্য নবীগণের মু‘জিযা তাদের জন্যই খাস, যদিও একই ধরণের মু‘জিযা পাওয়া যায়। যেমন, গায়েব সম্পর্কে সংবাদ দেওয়া, এগুলো উভয়ের জন্য প্রযোজ্য। এছাড়াও মৃত্যু ব্যক্তিকে জীবিত করা অনেক নবীরই মু‘জিযা ছিল। যেমন মূসা ও ঈসা আলাইহিস সালাম এটা করেছেন।

এখানে এক নবীকে অন্য নবীর উপর প্রধান্য দেওয়া আমাদের উদ্দেশ্য নয়, বরং আমাদের উদ্দেশ্য হলো এক এক নবী তার মু‘জিযা নিয়ে অন্যদের থেকে আলাদা ও বৈশিষ্ট্যময় ছিলেন। তাদের এ সব আলামত নবী ছাড়া অন্যদের মাঝে ছিল না। তবে একই ধরণের আলামত যদি একাধিক নবীর মাঝে পাওয়া যায় তবে তা আরো মজবুত করে এবং একথা জোরদার করে যে এগুলো শুধু নবীগণের মু‘জিযা। কেননা এক নবী অন্য নবীকে সত্যায়ন করে। এক নবীর মুজিযা সমস্ত নবীগণেরই মুজিযার শামিল। এমনিভাবে তাদের অনুসারীদের আলামতও তাদেরই মুজিযা। কেননা তারা একে অন্যের সত্যায়ন করেন। অতএব, জাদুকর, গণক ইত্যাদি লোকের অলৌকিকতা একে অন্যের বিরোধিতা করে।

মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যা নিয়ে এসেছেন তা তাঁর নবুওয়তের প্রমাণ এবং সেগুলো সাধারণভাবে সকল নবীগণেরও নবুওয়তের প্রমাণ, বিশেষ করে কুরআনে যেসব নবীর নাম উল্লেখ আছে এবং মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর পক্ষ থেকে যাদের সম্পর্কে সংবাদ দিয়েছেন। অতএব, যখন ধরে নেওয়া হবে যে, তাওরাত, ইঞ্জিল ও যাবুরে যেসব ইলম, গায়েবের সংবাদ, আদেশ, নিষেধ ইত্যাদি রয়েছে এগুলো মুজিযা এতে কোনো অসুবিধে নেই, বরং এটা সেসব নবীগণের নবুওয়তের প্রমাণ এবং তাদের নবুওয়তের প্রমাণ যাদের সম্পর্কে এসব কিতাব সুসংবাদ দিয়েছে। আর যারা বলেন, এসব কিতাব মুজিযা নয়, তাহলে হয়তো কুরআনের মত শব্দ, ছন্দ ইত্যাদি হিসেবে মুজিযা নয় বলে ধরা হবে। এটা মূলত ভাষাবিদ ও ইবরানী ভাষা বিশেষজ্ঞদের ব্যাপার।

অন্যদিকে অর্থের বিচারে তাওরাত মু‘জিযা, কেননা এতে গায়েবের সংবাদ, আদেশ, নিষেধ রয়েছে। এ ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই। এতে প্রমাণিত হয় যে, সব নবীগণের কিতাবসমূহ মুজিযা, কেননা এতে মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আগমনের সুসংবাদ ছিল। তবে একথা গণকদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে না, কেননা তারা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আগমনের কিছুদিন পূর্বে শয়তানের মাধ্যমে তাঁর আগমনের সংবাদ দিয়েছিল। এমনিভাবে কোনো কিতাবের দ্বিতীয় নবী যদি প্রথম নবীর কিতাবের মধ্যে যা আছে তার সংবাদ দেন তবে তা মু‘জিযা হিসেবে গণ্য হবে না। কেননা এভাবে আলেমগণ করতে পারেন। তবে দ্বিতীয় নবী যদি প্রথম নবীর চেয়ে অতিরিক্ত কোনো সংবাদ দেন তবে তা মুজিযা হিসেবে গণ্য হবে। যেমন আশ‘য়াআ ও দাউদ আলাইহিস সালামের কিতাব, এতে মূসা আলাইহিস সালামের তাওতের চেয়ে অতিরিক্ত কিছু সংবাদ ছিল। তাই এ কিতাব উক্ত নবীগণের মু‘জিযা, কেননা এতে গায়েবের এমন কিছু সংবাদ ছিল যা নবী ছাড়া কেউ জানতেন না। এমনিভাবে এতে আদেশ, নিষেধ, অঙ্গিকার ও ধমক ছিল, যা নবী ছাড়া অন্য কেউ আনায়ন করতে পারেন না, বা নবীর অনুসারী ছাড়া কেউ আনায়ন করতে পারেন না। নবীর অনুসারী নবীর আদেশের মতই আদেশ নিষেধ, ওয়াদা ও ধমক দিয়ে থাকবেন, এগুলো মূলত নবীরই বৈশিষ্ট্য। তবে মিথ্যাবাদী নবীর দাবীদার নবীর আদেশ নিষেধের মত সব কিছু আদেশ নিষেধ করবে না। কেননা এতে তার উদ্দেশ্য সাধিত হবে না।

এসব মিথ্যাবাদীরা নবীগণের মত আদেশ নিষেধ করার কল্পনাও করতে পারবে না। কেননা এভাবে করা তাদের উদ্দেশ্যের পরিপন্থী, বরং যদিও প্রাথমিক দিকে কিছু কিছু ভাল কাজের আদেশ দিয়ে থাকে তবে তা মানুষকে ধোঁকা ও প্রতারণা করার মানসে করে থাকে। অবশেষে তাদের কাজের মধ্যে বৈপরীত্য দেখা দিবেই। কেউ প্রকাশ্যভাবে নবীর সাদৃশ কাজ করলেও অভ্যন্তরে আসলে সে মুনাফিক, যেমন কিছু নাস্তিক যারা প্রকাশ্যে ইসলাম দেখিয়েছে কিন্তু অন্তরে শির্ক, পাপাচার ও জুলুম পোষণ করেছিল। তারা সালাত, সাওম ও শরী‘য়াতের অন্যান্য আদেশ সঠিকভাবে পালন করত না। যারা প্রকাশ্যে ইসলাম দেখায় ও গোপনে নাস্তিকতা ও কুফুরী পোষণ করে তাদের কথা ও কাজে বৈপরীত্য দেখা দিবেই।

 

 

নবীগণের সত্যতার উপর প্রমাণবাহী নিদর্শনসমূহ

আমরা ইতোপূর্বে আলোচনা করেছি যে, নবীগণের সত্যতার উপর প্রমাণবাহী নিদর্শনসমূহের সংখ্যা অনেক। একজন সত্যবাদী নবী সর্বোত্তম মানুষ, আর আল্লাহর ব্যাপারে মিথ্যাবাদী একজন ভণ্ড সর্বনিকৃষ্ট মানুষ। এদু’য়ের মাঝে এতো বিস্তর পার্থক্য রয়েছে যে তা আল্লাহ ছাড়া কেউ গণনা করে শেষ করতে পারবে না। সুতরাং নবীগণের সততার নিদর্শন কিভাবে অন্যান্য জাদুকর ও গণকদের নিদর্শনের সাথে সন্দেহে নিক্ষেপ করবে? আর তাই জাদুকর ও গণকদের মিথ্যা হওয়ার প্রমাণসমূহ এতই অগণিত অসংখ্য যে তা বলে শেষ করা যাবে না। সুতরাং যে কেউ নবীদের সত্যবাদিতার প্রমাণ কোনো সংখ্যায় নির্ধারণ করবে সে অবশ্যই ভুল করবে। বরং নবীগণের সত্যতার নিদর্শনসমূহ প্রকৃতপক্ষে আল্লাহ তা‘আলার এমন নিদর্শন যা তাঁর আদেশ, নিষেধ, অঙ্গিকার ও ধমক ইত্যাদির উপর প্রমাণ বহন করে। আর আল্লাহ তা‘আলার নিদর্শনসমূহ অসংখ্য ও নানা ধরণের, যেমন আল্লাহর অস্তিত্ব, এককত্ব, (ওয়াহদানিয়াত), ইলম, কুদরত, হিকমত ও রহমতের উপর প্রমাণবাহী নিদর্শনসমূহ।

আল-কুরআন আল্লাহর নিদর্শন, এর উদাহরণে ভরপুর। কুরআন সেগুলোকে আয়াত তথা নিদর্শন ও বুরহান তথা দলিল নামে নামকরণ করেছে। ...

বস্তুত: জাদুকর, গণক, অসৎ লোক ও নবীর অনুসারী ছাড়া অন্যান্যরা যেসব আশ্চর্যকর জিনিস নিয়ে আসে তা জিন ও ইনসানের সাধ্যের বাইরে নয়। মানুষ যা করতে পারে তা জিনের সাধ্যের মধ্যে আবার জিন যা করে তা মানুষের সাধ্যের বাইরে নয়। পার্থক্য শুধু পদ্ধতিগত। যেমন একজন জাদুকর জাদুর সাহায্যে কাউকে হত্যা করা, কাউকে অসুস্থ করা, কারো জ্ঞান শূন্য করে দেওয়া বা কারো চলাফেরা বা কথা বন্ধ করে দেওয়া ইত্যাদি। এসব কিছুই মানুষের সাধ্যের মধ্যে, অন্য মানুষও এগুলো করতে পারে, তবে অন্য পন্থায় করতে সক্ষম হয়। জিনেরা হাওয়া ও পানিতে ভাসতে পারে এবং অনেক ভারী জিনিস বহন করে নিয়ে আসতে পারে যেমনটি সুলাইমান আলাইহিস সালামের জন্য ইফরিত জিন করেছিল।

﴿ قَالَ عِفۡرِيتٞ مِّنَ ٱلۡجِنِّ أَنَا۠ ءَاتِيكَ بِهِۦ قَبۡلَ أَن تَقُومَ مِن مَّقَامِكَۖ وَإِنِّي عَلَيۡهِ لَقَوِيٌّ أَمِينٞ ٣٩ ﴾ [النمل: ٣٩]

“এক শক্তিশালী জিন বলল, ‘আপনি আপনার স্থান থেকে উঠার পূর্বেই আমি তা এনে দেব। আমি নিশ্চয়ই এই ব্যাপারে শক্তিমান, বিশ্বস্ত”। [সূরা আন্-নামাল: ৩৯]

এ ধরণের কাজ অন্য জিন ও মানুষ করতে পারে। এজন্যই এ ধরণের কাজ নবীর মু‘জিযা হতে পারে না। অনেক মানুষই জিন হাসিল করে বাতাসে উড়ে, এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যায়। যেমন ইফরিত বিলকিসের সিংহাসন ইয়ামেন থেকে অনেক দূরে নিয়ে যেতো।  

আমরা ঐ সব ভণ্ডদের কথা জানি যারা আল্লাহর নেককার বান্দাহ নয় বরং তাদের মধ্যে কাফির, মুনাফিক, ফাসিক ও অজ্ঞ লোক রয়েছে যারা শরি‘য়াতের কিছুই জানে না, শয়তান তাদেরকে উড়িয়ে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে নিয়ে যায়, তাদেরকে আরাফাতের ময়দানে নিয়ে যায়, ফলে তারা ইহরাম ও তালবিয়্যাহ ছাড়াই আরাফাতের ময়দানে উপস্থিত হয়। আর এসব কাজ করা হারাম।

অজ্ঞলোকেরা মনে করেন এগুলো অলীদের কারামত। তারা জিন হাসিল করে এসব কাজ করে অজ্ঞলোকদেরকে ধোঁকা দেয়, যদিও তাদের অনেক অধ্যবসায় ও ইবাদত বন্দেগী রয়েছে। এমনিভাবে জিনেরা মানুষের কাছে অন্যের সম্পদ চুরি করে নিয়ে আসে, যেমনিভাবে মানুষ মানুষের সম্পদ চুরি করে, তবে জিনেরা অচেনা স্থান থেকে খাদ্য, পানীয় নিয়ে আসতে পারে। এজন্যই এধরণের কাজ নবীর সত্যতার নিদর্শন হতে পারে না। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পানির মধ্যে হাত দিলে তাঁর আঙ্গুলের মধ্য দিয়ে পানি নির্গত হয়েছিল, এটা তাঁর নবুওয়তের সত্যতার নিদর্শন ছিল। এ ধরণের কাজ জিন ইনসান কেউ করতে সক্ষম হয়নি। এমনিভাবে সামান্য খাবার বেশি হয়ে যাওয়া, এ কাজও মানুষ ও জিন কেউ করতে সক্ষম নয়। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম গায়েব থেকে কখনও খাদ্য ও পানীয় নিয়ে আসেননি। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহাবী খুবাইব ইবন আদী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর সাথে এ ধরণের ঘটনা ঘটেছিল, যখন তাকে মক্কায় বন্দি করে রাখা হয়েছিল তখন তিনি আঙ্গুর প্রাপ্ত হয়েছিলেন। সুতরাং এধরণের কাজ নবীগণের বৈশিষ্ট্য নয়। যেমন, মারইয়াম আলাইহিস সালাম যদিও নবী ছিলেন না কিন্তু তাঁর জন্য খাবার নিয়ে আসা হতো। যদি তা হালাল খাদ্য থেকে নিয়ে আসা হতো তবে তা কারামত হিসেবে হয়ত কোনো ফিরিশতা বা মুসলিম জিন তা নিয়ে আসত। আবার কখনও তা হারাম খাদ্য থেকেও আসতে পারে। তাই নবীগণের সব আলামত অলীদের কারামত হতে পারে না। কিন্তু মু‘তাযিলা, আশায়েরা ও মাতুরিদিয়ারা এখানে দু’টির মধ্যে পার্থক্য না করে সমান করে দিয়েছে। তারা বলেছেন, নবীর নিদর্শন ও অন্যান্যদের কর্মকাণ্ডের মধ্যে পার্থক্য হলো তিনি নবুওয়তের দাবীদার হবেন এবং অনুরূপ আনতে চ্যালেঞ্জ করবেন। এটা মারাত্মক ভুল। কারণ নবীগণের নবুওয়তের প্রমাণ করে এমন নিদর্শনসমূহ সেসব বিষয় থেকে উর্ধ্বে যাতে নবী ও তাদের অনুসারীরা অংশীদার। যেমন: কুরআনের অনুরূপ কুরআন নিয়ে আসা, পূর্ববর্তী নবী ও তাদের উম্মতের সংবাদ দেওয়া, কিয়ামতের দিন যা হবে সে সম্পর্কে সংবাদ দেওয়া, কিয়ামতের আলামত, যমীন থেকে উষ্ট্রী বের করা, লাঠি সাপে পরিণত হওয়া, সমুদ্র দু’ভাগ হয়ে যাওয়া, মাটি দ্বারা পাখি তৈরি করে তা আল্লাহর আদেশে ফুঁৎকার দিয়ে জীবন্ত পাখি সৃষ্টি হওয়া, সুলাইমান আলাইহিস সালাম কর্তৃক জিনদের উপর কর্তৃত্ব বিস্তার ইত্যাদি নবী ছাড়া অন্যদের মধ্যে ছিল না।

কিন্তু মু’মিন জিন মু’মিনদেরকে সাহায্য করে থাকে এবং কাফির, ফাসিক জিন খারাপ কাজে তাদেরকে সাহায্য করে, যেমনিভাবে মানুষ মানুষকে ভাল ও খারাপ কাজে সাহায্য করে। কিন্তু জিনদের এমন আনুগত্য যা সুলাইমান আলাইহিস সালামের জন্য ছিল  তা তিনি ছাড়া অন্য কারোর জন্য ছিল না। মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সুলাইমান আলাইহিস সালামকে যা দেওয়া হয়েছে তাঁর চেয়েও অধিক দান করা হয়েছে। তিনি জিনদেরকে তাদের সম্প্রদায়ের কাছে প্রেরণ করেছিলেন, তাদেরকে আদেশ করেছেন আল্লাহর উপর ঈমান আনতে ও তাঁর আনুগত্য করতে। তিনি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিনদেরকে আল্লাহর ইবাদতের দিকে আহ্বান করেছেন, নিজের কোনো প্রয়োজন বা খিদমতে তাদেরকে কাজে লাগান নি, যেমনটি করেছিলেন নবী সুলাইমান আলাইহিস সালাম। তিনি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে শক্তি দ্বারা জোর করেন নি, যেমনটি সুলাইমান আলাইহিস সালাম জিনদের সাথে করেছিলেন। বরং তিনি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিনদের সাথে মানুষের আচরণের মতই আচরণ করেছিলেন। ফলে মু’মিন জিনেরা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে জিহাদে শরিক হয়েছিলেন, তাদের মধ্যে তিনি আল্লাহর বিধানের শাস্তির ব্যবস্থাও করেছিলেন। ফলে তিনি তাদের সাথে আল্লাহর বান্দা ও রাসূল সুলভ আচরণ করেছিলেন, নবী ও বাদশাহ সুলভ আচরণ করেন নি, যেমনটি নবী সুলাইমান আলাইহিস সালাম করেছিলেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সালেহীন উম্মতেরাও তাঁরই অনুসরণ করে, তিনি যেভাবে জিন ও ইনসানকে আদেশ দিয়েছেন তারাও সেভাবেই করে থাকেন। তবে কিছু লোকেরা এর বিপরীতও আছেন, যারা কিছু জিনকে হালাল কাজে ব্যবহার করেন, যেমন তারা মানুষকে ব্যবহার করেন। এতে করে এ ধরণের লোকদের দীনদারীতার কমতি দেখা দেয়, বিশেষ করে তারা যখন জিনদেরকে অবৈধ কাজে ব্যবহার করেন। আবার কিছু লোক এর চেয়েও খারাপ, তারা জিনদেরকে জুলুম নির্যাতন, অশ্লীল ইত্যাদি হারাম কাজে ব্যবহার করেন। ফলে তারা অন্যায়ভাবে মানুষকে হত্যা করেন এবং অশ্লীল কাজে জিনদের সাহায্য নেয়, যেমন তারা তাদের জন্য নারী বা শিশু হাজির করান বা তাদের চাহিদার জিনিস হাজির করান। আবার আরেকদল তাদেরকে কুফুরী কাজেও ব্যবহার করেন। এ ধরণের কাজ অলীদের কারামত হতে পারে না। কেননা সালেহীনদের কারামত ঈমান ও আল্লাহর তাকওয়ার কারণে হয়ে থাকে, কুফুরী, ফাসেকী ও অবাধ্যতার কারণে নয়। তাছাড়া পূর্ববর্তী সালেহীনগণ আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য ছাড়া অন্য কাজে জিনদেরকে ব্যবহার করেন নি। তাদের চেয়ে নিম্ন পর্যায়ের যারা তাদের কেউ কেউ বৈধ কাজে জিনদেরকে ব্যবহার করেছেন। অন্যদিকে জিনদেরকে হারাম কাজে ব্যবহার করা হারাম। তাদেরকে অবৈধ কাজে ব্যবহার করলে ব্যক্তি গুনাহগার হবেন।

এদের অনেকের থেকেই এ নি‘আমত উঠিয়ে নিয়ে নেওয়া হয়, অতঃপর তাদের আনুগত্যও উঠিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়, ফলে ব্যক্তি ফাসিক হয়ে যায়, অনেক সময় দীন ইসলাম থেকে দূরে সরেও যায় অর্থাৎ মুরতাদ হয়ে যায়। মানুষের আনুগত্যের চেয়ে জিনের আনুগত্য অবশ্যই উত্তম নয়। বরং মানুষ বেশি সম্মানিত, মর্যাদাবান ও উত্তম, তাদের আনুগত্যও বেশি উপকারী ও ফায়েদাবান। মানুষ যখন আল্লাহর আনুগত্য করে তখন সে প্রশংসিত ও সাওয়াবের অধিকারী হয়, আর যখন আল্লাহর অবাধ্য হয় তখন সে নিন্দনীয় ও গুনাহগার হয়।

এমনিভাবে জিনদের আনুগত্য, যারা মানুষের আনুগত্য করে তারা হয়ত ভাল ও দীনের কাজে সহযোগিতা ও আনুগত্য করবে বা মন্দ ও অসৎ কাজে সহযোগিতা ও আনুগত্য করবে। তারা যদি ভাল কাজে আনুগত্য করে তবে তারাও প্রশংসিত ও সাওয়াবের অধিকারী হবেন, আর মন্দ ও খারাপ কাজে সহযোগিতা ও আনুগত্য করলে নিন্দনীয় ও গুনাহের অধিকারী হবেন। জিনদের উপর কেউ জুলুম করলে অনেক সময় তারা সে ব্যক্তিকে হত্যা করে ফেলে। এ সব কিছু আমরা বাস্তবতা থেকে জানি, তাই এখানে বেশি দীর্ঘ করার প্রয়োজন নেই। নবীগণের আলামত এ ধরণের হতে পারে না।

আমাদের নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে যখন মসজিদুল হারাম থেকে মসজিদুল আকসা পর্যন্ত রাতে ভ্রমণ করানো হয়েছিল তা তাঁর রবের নিদর্শন দেখানোর উদ্দেশ্যে ছিল। এটা তাঁর বৈশিষ্ট্য ছিল। আল্লাহ বলেছেন,

﴿ أَفَتُمَٰرُونَهُۥ عَلَىٰ مَا يَرَىٰ ١٢ وَلَقَدۡ رَءَاهُ نَزۡلَةً أُخۡرَىٰ ١٣ عِندَ سِدۡرَةِ ٱلۡمُنتَهَىٰ ١٤ عِندَهَا جَنَّةُ ٱلۡمَأۡوَىٰٓ ١٥ ﴾ [النجم: ١٢، ١٥]

“সে যা দেখেছে, সে সম্পর্কে তোমরা কি তার সাথে বিতর্ক করবে? আর সে তো তাকে আরেকবার দেখেছিল। সিদরাতুল মুনতাহার নিকট। যার কাছে জান্নাতুল মা’ওয়া অবস্থিত”। [সূরা আন্-নাজম: ১২-১৫]

আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেছেন,

﴿ وَمَا جَعَلۡنَا ٱلرُّءۡيَا ٱلَّتِيٓ أَرَيۡنَٰكَ إِلَّا فِتۡنَةٗ لِّلنَّاسِ ٦٠ ﴾ [الاسراء: ٦٠]

“আর যে ‘দৃশ্য’ আমি তোমাকে দেখিয়েছি তা এবং কুরআনে বর্ণিত অভিশপ্ত বৃক্ষ কেবল মানুষের পরীক্ষাস্বরূপ নির্ধারণ করেছি”। [সূরা আল-ইসরা: ৬০]

ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, মিরাজের রাতে রাসূলুল্লাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে যেসব নিদর্শন দেখানো হয়েছিল সেসব দৃশ্যই এখানে উদ্দেশ্য। এটা ছিল রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বৈশিষ্ট্য ও তাঁর নবুওয়তের নিদর্শন। নতুবা শুধু দীর্ঘ পথ অতিক্রম করা জিনদের মাধ্যমে যারা কাজ আদায় করা তাদের দ্বারাও হাসিল হতে পারে। কারণ ইফরিত জিন সুলাইমান আলাইহিস সালামকে বলেছিল,

﴿ قَالَ عِفۡرِيتٞ مِّنَ ٱلۡجِنِّ أَنَا۠ ءَاتِيكَ بِهِۦ قَبۡلَ أَن تَقُومَ مِن مَّقَامِكَۖ وَإِنِّي عَلَيۡهِ لَقَوِيٌّ أَمِينٞ ٣٩ ﴾ [النمل: ٣٩]

“এক শক্তিশালী জিন বলল, ‘আপনি আপনার স্থান থেকে উঠার পূর্বেই আমি তা এনে দেব। আমি নিশ্চয়ই এই ব্যাপারে শক্তিমান, বিশ্বস্ত”। [সূরা আন্-নামাল: ৩৯] ইয়ামেনের রাজপ্রসাদ থেকে রানীর সিংহাসন শামে নিয়ে আসা মসজিদুল হারাম থেকে আকসা পর্যন্ত ভ্রমণ করার চেয়ে কঠিন কাজ। আর

﴿ قَالَ ٱلَّذِي عِندَهُۥ عِلۡمٞ مِّنَ ٱلۡكِتَٰبِ أَنَا۠ ءَاتِيكَ بِهِۦ قَبۡلَ أَن يَرۡتَدَّ إِلَيۡكَ طَرۡفُكَۚ فَلَمَّا رَءَاهُ مُسۡتَقِرًّا عِندَهُۥ قَالَ هَٰذَا مِن فَضۡلِ رَبِّي لِيَبۡلُوَنِيٓ ءَأَشۡكُرُ أَمۡ أَكۡفُرُۖ وَمَن شَكَرَ فَإِنَّمَا يَشۡكُرُ لِنَفۡسِهِۦۖ وَمَن كَفَرَ فَإِنَّ رَبِّي غَنِيّٞ كَرِيمٞ ٤٠ ﴾ [النمل: ٤٠]

“যার কাছে কিতাবের এক বিশেষ জ্ঞান ছিল সে বলল, ‘আমি চোখের পলক পড়ার পূর্বেই তা আপনার কাছে নিয়ে আসব’। অতঃপর যখন সুলাইমান তা তার সামনে স্থির দেখতে পেল, তখন বলল, ‘এটি আমার রবের অনুগ্রহ, যাতে তিনি আমাকে পরীক্ষা করেন যে, আমি কি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করি না কি অকৃতজ্ঞতা প্রকাশ করি। আর যে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে সে তো তার নিজের কল্যাণেই তা করে, আর যে কেউ অকৃতজ্ঞ হবে, তবে নিশ্চয় আমার রব অভাবমুক্ত, অধিক দাতা”। [সূরা আন্-নামাল: ৪০] মসজিদুল হারাম থেকে আকসা পর্যন্ত ভ্রমণ করার চেয়ে জিনের এ কাজটি অধিক কঠিন ছিল। (সুতরাং বুঝা গেল যে, শুধু মাসজিদুল হারাম থেকে মাসজিদুল আকসায় ভ্রমন নয় বরং সেখানে ও তৎপরবর্তী বিভিন্ন নিদর্শন দেখাই মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের নবুওয়তের প্রমাণ)

যার কাছে কিতাবের এক বিশেষ জ্ঞান ছিল সে ও সুলাইমান আলাইহিস সালামের চেয়ে মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শ্রেষ্ঠ ও মর্যাদাবান। আর তাই বলা যায় যে, আল্লাহ তা‘আলা মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে যেসব জিনিস দিয়ে শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছেন তা ঐ সব নেয়ামতের চেয়ে উত্তম। আর তা হলো আল্লাহ তাকে মিরাজের রাতে আল্লাহর নিদর্শন দেখাতে  সফর করিয়েছেন। সুতরাং রাসূলের বিশেষত্ব তো এই যে ইসরা ও মিরাজ ছিল তাঁকে আল্লাহর নিদর্শনসমূহের কিছু নিদর্শন দেখানো। যেমনিভাবে তিনি জিবরীলকে অন্যবার দেখেছেন, সিদরাতুল মুন্তাহার নিকটে, যার কাছে রয়েছে জান্নাতুল মাওয়া, যখন সে গাছটিকে ঢেকে রাখে যা ঢেকে রাখার, তাঁর দৃষ্টি বিভ্রমও হয়নি এবং সীমালঙ্ঘনও করে নি।

আর এটি অর্থাৎ উক্তত নিদর্শনসমূহ দেখা সুলাইমান আলাইহিস সালাম ও অন্য কারো অর্জিত হয়নি। জিনেরা যদিও মানুষকে বাতাসে উড়াতে পারে তবে তারা আসমানে আরোহণ করতে পারে না এবং রবের নিদর্শন অবলোকন করতে পারে না। তাই মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে যা দান করা হয়েছে তা মানুষ ও জিনের ক্ষমতার বাইরে। মিরাজের রজনীতে জিবরীল আলাইহিস সাআলামকে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথী করা হয়েছিল, কেননা আল্লাহ তাকে তাঁর রিসালা মানুষের কাছে পৌঁছানোর জন্য নির্বাচিত করেছেন, আর আল্লাহ ফিরিশতা ও মানুষের মধ্য থেকে রাসূল নির্বাচিত করেন। ইসরার উদ্দেশ্য ছিল আল্লাহর বড় বড় নিদর্শন অবলোকন করা ও তা মানুষকে সংবাদ দেওয়া।

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন মানুষকে এ সংবাদ দিয়েছেন তখন মুশরিকেরা মিথ্যারোপ করল আর আবু বকর সিদ্দিক রাদিয়াল্লাহু আনহু ও অন্যান্য মু’মিনেরা বিশ্বাস করল। এটা মানুষের জন্য পরীক্ষা ছিল। আল্লাহ বলেছেন,

﴿ وَمَا جَعَلۡنَا ٱلرُّءۡيَا ٱلَّتِيٓ أَرَيۡنَٰكَ إِلَّا فِتۡنَةٗ لِّلنَّاسِ ٦٠ ﴾ [الاسراء: ٦٠]

“আর যে ‘দৃশ্য’ আমি তোমাকে দেখিয়েছি তা এবং কুরআনে বর্ণিত অভিশপ্ত বৃক্ষ কেবল মানুষের পরীক্ষাস্বরূপ নির্ধারণ করেছি”। [সূরা আল-ইসরা: ৬০] অর্থাৎ বিপদ ও পরীক্ষা হিসেবে মানুষের জন্য নির্ধারণ করেছি যাতে করে তাদের মধ্যকার কাফের ও ঈমানদারের মধ্যে পার্থক্য সূচিত হয়ে যায়। যেমন আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেছেন,

﴿ وَإِذۡ قُلۡنَا لَكَ إِنَّ رَبَّكَ أَحَاطَ بِٱلنَّاسِۚ وَمَا جَعَلۡنَا ٱلرُّءۡيَا ٱلَّتِيٓ أَرَيۡنَٰكَ إِلَّا فِتۡنَةٗ لِّلنَّاسِ وَٱلشَّجَرَةَ ٱلۡمَلۡعُونَةَ فِي ٱلۡقُرۡءَانِۚ وَنُخَوِّفُهُمۡ فَمَا يَزِيدُهُمۡ إِلَّا طُغۡيَٰنٗا كَبِيرٗا ٦٠ ﴾ [الاسراء: ٦٠]

“আর স্মরণ কর, যখন আমি তোমাকে বললাম, ‘নিশ্চয় তোমার রব মানুষকে ঘিরে রেখেছেন। আর যে ‘দৃশ্য’ আমি তোমাকে দেখিয়েছি তা এবং কুরআনে বর্ণিত অভিশপ্ত বৃক্ষ[10] কেবল মানুষের পরীক্ষাস্বরূপ নির্ধারণ করেছি’। আমি তাদের ভয় দেখাই; কিন্তু তা কেবল তাদের চরম অবাধ্যতা বাড়িয়ে দেয়”। [সূরা আল-ইসরা: ৬০]

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন মানুষকে ইসরার সংবাদ দেন তখন তারা তা অস্বীকার করেছিল, কিন্তু যখন তারা মসজিদুল আকসার বর্ণনা জিজ্ঞাসা করেছে তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে বর্ণনা করেছেন। তারা জানত যে, তিনি মসজিদুল আকসা কখনও দেখেনি, তাই তিনি যখন তার বর্ণনা দিলেন তখন তাদের মধ্যে যারা মসজিদুল আকসা দেখেছে তারা তাঁকে বিশ্বাস করেছিল। এভাবে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ইসরার দলিল প্রমাণিত হয়েছে। ফলে তারা আর মিথ্যারোপ করতে পারেনি।

আর এটা উল্লেখ করা হয় যে, তিনি তাঁর রবের বড় বড় নিদর্শন দেখেছেন। তিনি জিবরীল আলাইহিস সালামকে স্বচক্ষে তাঁর আসলী সূরতে দেখেছেন। কেননা জিবরীল আলাইহিস সালামের দর্শন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নবুওয়তের পূর্ণতা ছিল, এতে স্পষ্ট হয়েছে যে, যে ব্যক্তি তাঁর কাছে কুরআন নিয়ে আসেন তিনি একজন ফিরিশতা, সে শয়তান নয়। যেমন আল্লাহ বলেছেন,

﴿ إِنَّهُۥ لَقَوۡلُ رَسُولٖ كَرِيمٖ ١٩ ذِي قُوَّةٍ عِندَ ذِي ٱلۡعَرۡشِ مَكِينٖ ٢٠ مُّطَاعٖ ثَمَّ أَمِينٖ ٢١ ﴾ [التكوير: ١٩، ٢١]

“নিশ্চয় এ কুরআন সম্মানিত রাসূলের[11] আনিত বাণী। যে শক্তিশালী, আরশের মালিকের নিকট মর্যাদাসম্পন্ন। মান্যবর, সেখানে সে বিশ্বস্ত”। [সূরা আত্-তাকওয়ীর: ১৯-২১]

﴿ وَمَا صَاحِبُكُم بِمَجۡنُونٖ ٢٢ وَلَقَدۡ رَءَاهُ بِٱلۡأُفُقِ ٱلۡمُبِينِ ٢٣ وَمَا هُوَ عَلَى ٱلۡغَيۡبِ بِضَنِينٖ ٢٤ وَمَا هُوَ بِقَوۡلِ شَيۡطَٰنٖ رَّجِيمٖ ٢٥ فَأَيۡنَ تَذۡهَبُونَ ٢٦ إِنۡ هُوَ إِلَّا ذِكۡرٞ لِّلۡعَٰلَمِينَ ٢٧ ﴾ [التكوير: ٢٢، ٢٧]

“আর তোমাদের সাথী [12] পাগল নয়। আর সে [13] তাকে [14] সুস্পষ্ট দিগন্তে দেখেছে। আর সে তো গায়েব সম্পর্কে কৃপণ নয়। আর তা কোনো অভিশপ্ত শয়তানের উক্তি নয়। সুতরাং তোমরা কোথায় যাচ্ছ? এটাতো সৃষ্টিকুলের জন্য উপদেশমাত্র”। [সূরা আত্-তাকওয়ীর: ২২-২৭]

 

 

ইমাম ইবন তাইমিয়্যাহ রহ. অন্যত্র বলেন,

নবীগণের মু‘জিযা আর জাদুকর ও গণকদের অলৌকিক ঘটনার মধ্যে পার্থক্য হলো:

প্রথমত: নবী কিতাব থেকে যা বলেন তা সত্য, কখনও মিথ্যা হতে পারে না। অন্যদিকে জাদুকর ও গণকেরা সে সত্যের বিরুদ্ধে যা বলে তা অবশ্যই মিথ্যা হতে বাধ্য। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,

﴿ هَلۡ أُنَبِّئُكُمۡ عَلَىٰ مَن تَنَزَّلُ ٱلشَّيَٰطِينُ ٢٢١ تَنَزَّلُ عَلَىٰ كُلِّ أَفَّاكٍ أَثِيمٖ ٢٢٢ ﴾ [الشعراء: ٢٢١، ٢٢٢]

‘আমি কি তোমাদেরকে সংবাদ দেব, কার নিকট শয়তানরা অবতীর্ণ হয়’? তারা অবতীর্ণ হয় প্রত্যেক চরম মিথ্যাবাদী ও পাপীর নিকট। [সূরা আশ-শু‘আরা: ২২১-২২২]

দ্বিতীয়ত: নবী যা নির্দেশ দেয় ও করে আর নবী ব্যতীত অন্যান্যরা যা নির্দেশ দেয় ও করে এর মাধ্যমেও পার্থক্য সূচিত হয়ে যায়; কারণ আদেশ ও কাজের দিক বিবেচনায়, নবীগণ ন্যায়পরায়নতা, আখেরাতের কামনা, আল্লাহর ইবাদত, কল্যাণ ও তাকওয়ার কাজের আদেশ দেন, পক্ষান্তরে তাদের বিরোধীরা শির্ক, জুলুম, দুনিয়া অর্জন, অসৎ ও অন্যায় কাজের আদেশ দিয়ে থাকে।

তৃতীয়ত: জাদুকর ও গণকদের কাজ হলো সাধারণ কাজ যা সে পেশার বিশেষজ্ঞদের কাছে পরিচিত, সেগুলো আসলে অস্বাভাবিক ব্যাপার নয়, পক্ষান্তরে নবীগণের সত্যতার নিদর্শন তারা ও তাদের অনুসারী ছাড়া অন্য কারো মধ্যে পাওয়া যায় না।

চতুর্থত: জাদু ও গণকবিদ্যা মানুষ শিক্ষার মাধ্যমে অর্জন করতে পারে। কিন্তু নবুওয়ত কেউ ইচ্ছা করে অর্জন করতে পারে না।

পঞ্চমত: যদি ধরে নেওয়া হয় যে, নবুওয়ত অর্জন করা যায় তবে তা সৎ কাজ, সততা, ন্যায়পরায়ণতা, তাওহীদ ইত্যাদির মাধ্যমে অর্জিত হতো, এটা আল্লাহ ব্যতীত অন্যের সাথে মিথ্যাচার তো দূরের কথা স্বয়ং আল্লাহর সাথে মিথ্যাচারের মাধ্যমে অর্জন করা সম্ভব নয়। নবুওয়ত যদি অর্জন করা যেতো তবে তা আল্লাহর সাথে সত্যবাদিতার মাধ্যমেই অর্জিত হতো।

ষষ্ঠত: জাদুকর ও গণকেরা যা করে তা মানুষ ও জিনের সাধ্যের বাইরে নয়। আর এরা সকলেই রাসূলের অনুগত্য করতে আদিষ্ট। অন্যদিকে রাসূলগণের নিদর্শনসমূহ মানুষ ও জিনের সাধ্যের বাইরে, বরং রাসূলগণ যাদের কাছে প্রেরিত হয়েছে তাদের কাছে এগুলো অলৌকিক ঘটনা। আল্লাহ বলেছেন,

﴿ قُل لَّئِنِ ٱجۡتَمَعَتِ ٱلۡإِنسُ وَٱلۡجِنُّ عَلَىٰٓ أَن يَأۡتُواْ بِمِثۡلِ هَٰذَا ٱلۡقُرۡءَانِ لَا يَأۡتُونَ بِمِثۡلِهِۦ وَلَوۡ كَانَ بَعۡضُهُمۡ لِبَعۡضٖ ظَهِيرٗا ٨٨ ﴾ [الاسراء: ٨٨]

“বলুন, ‘যদি মানুষ ও জিন এ কুরআনের অনুরূপ হাযির করার জন্য একত্রিত হয়, তবুও তারা এর অনুরূপ হাযির করতে পারবে না যদিও তারা একে অপরের সাহায্যকারী হয়’’। [সূরা আল-ইসরা: ৮৮]

সপ্তমত: জাদুকর ও গণকদের অলৌকিক ঘটনাগুলোকে অন্যরা অন্য কিছু দিয়ে মুকাবিলা করতে সক্ষম, কিন্তু নবীগণের আলামত কখনও অনুরূপ কিছু দিয়ে মুকাবিলা করা যায় না।

অষ্টমত: জাদুকর ও গণকদের আনা জিনিসগুলো বনী আদমের সাধ্যের বাইরের বিষয় নয়, বরং এগুলো অন্য সাধারণ মানুষের কাছে স্বাভাবিক ব্যাপার, কিন্তু নবীগণের নিদর্শনসমূহ বিশ্বাসী ও অবিশ্বাসী সকলের নিকটই অস্বাভাবিক ও অলৌকিক।

নবমত: নবীগণের এসব অলৌকিক কাজ সব মাখলুকাতের কাছেই সাধ্যের বাইরে, এমনকি ফিরিশতাদেরও সাধ্যের বাইরে। যেমন: কুরআন নাযিল করা, আল্লাহর সাথে মূসা আলাইহিস সালামের কথা বলা ইত্যাদি। পক্ষান্তরে অন্যান্যদের কর্মকাণ্ড জিন ও শয়তানের সাধ্যের মধ্যেই।

দশমত: যদি কিছু আলামত ফিরিশতাদের সাধ্যের মধ্যেও হয়, তবে সেক্ষেত্রে এটা জানা আবশ্যক যে ফিরিশতারা আল্লাহর ব্যাপারে কখনও মিথ্যা কথা বলে না, তারা মানুষকে কখনও মিথ্যা কথা বলেন না যে আল্লাহ তাঁকে রাসূল হিসেবে পাঠিয়েছেন। মূলত শয়তানরা এ কাজ করে থাকে। আর আমাদের ও আমাদের পূর্বের সৎলোকদের কারামত নানা ধরণের। এগুলো নেককারদের কাছে অলৌকিক নয়, পক্ষান্তরে নবীগণের নিদর্শন নেককারদের কাছেই অস্বাভাবিক ও অলৌকিক। নেককারদের কারামত দো‘আ ও ইবাদতের মাধ্যমে লাভ করা যায়; কিন্তু নবীগণ তা সেভাবে লাভ করতে পারেন না, যদিও মানুষ নবীদের কাছে তা চায়, যতক্ষণ না আল্লাহ তা সংঘটিত হওয়ার অনুমতি দেন। যেমন আল্লাহ বলেছেন,

﴿ وَقَالُواْ لَوۡلَآ أُنزِلَ عَلَيۡهِ ءَايَٰتٞ مِّن رَّبِّهِۦۚ قُلۡ إِنَّمَا ٱلۡأٓيَٰتُ عِندَ ٱللَّهِ وَإِنَّمَآ أَنَا۠ نَذِيرٞ مُّبِينٌ ٥٠ ﴾ [العنكبوت: ٥٠]

“আর তারা বলে, ‘তার কাছে তার রবের পক্ষ থেকে নিদর্শনসমূহ নাযিল হয় না কেন’? বল, ‘নিদর্শনসমূহ তো আল্লাহর কাছে, আর আমি তো কেবল একজন প্রকাশ্য সতর্ককারী”। [সূরা আল্-আনকাবূত: ৫০]

আল্লাহ আরো বলেছেন,

﴿ وَقَالُواْ لَوۡلَا نُزِّلَ عَلَيۡهِ ءَايَةٞ مِّن رَّبِّهِۦۚ قُلۡ إِنَّ ٱللَّهَ قَادِرٌ عَلَىٰٓ أَن يُنَزِّلَ ءَايَةٗ وَلَٰكِنَّ أَكۡثَرَهُمۡ لَا يَعۡلَمُونَ ٣٧ ﴾ [الانعام: ٣٧]

“আর তারা বলে, ‘কেন তার উপর তার রবের পক্ষ থেকে কোনো নিদর্শন নাযিল করা হয়নি’? বল, ‘নিশ্চয় আল্লাহ যে কোনো নিদর্শন নাযিল করতে সক্ষম। কিন্তু তাদের অধিকাংশ জানে না”। [সূরা আল-আন‘আম: ৩৭]

একাদশতম: নবীর পূর্বেও অন্যান্য নবী অতিবাহিত হয়েছেন, তিনি কেবল এমন জিনিসেরই আদেশ নিষেধ করেন পূর্ববর্তী নবীগণ সাধারণত সেসব বিষয়ের আদেশ নিষেধ করতেন সুতরাং তাঁর অনেক উদাহরণ রয়েছে যাদের থেকে মানুষ শিক্ষা গ্রহণ করে (নবীর সততার ব্যাপারে) সিদ্ধান্ত নিতে পারে। যেমনিভাবে জাদুকর ও গণকরা তাদেরও অনুরূপ লোক আছে যাদের দেখে লোকেরা শিক্ষা গ্রহণ করে সিদ্ধান্ত নিতে পারে।

দ্বাদশতম: নবীগণ মানুষকে দুনিয়া ও আখেরাতের কল্যাণের আদেশ নিষেধ করে থাকেন। ফলে তারা তাওহীদ, ইখলাস, সততা, ইত্যাদির আদেশ দেন এবং শির্ক, মিথ্যা, জুলুম ইত্যাদি থেকে নিষেধ করেন। তাদের কাজ কর্ম মানুষের আকল ও স্বভাবের সামাঞ্জস্যপূর্ণ। তারা যা নিয়ে আসেন তা সুস্থ বিবেক ও সহীহ রেওয়ায়েত সত্যায়ন করে। আল্লাহই অধিক জ্ঞাত।

 

ভূমিকা সমাপ্ত হলো

শাইখুল ইসলাম ইবন তাইমিয়্যাহ রহ. থেকে বেশি উদ্ধৃত করা হয়েছে। কেননা তিনি ইসলামের দুশমনের সংশয় অপনোদন করেছেন। আল্লাহ তাঁকে ইসলামের পক্ষ থেকে উত্তম প্রতিদান প্রদান করুন।

        এখন মূল অধ্যয় শুরু করব ইনশাআল্লাহ। আল্লাহর কাছে সাহায্য ও তাওফিক কামনা করছি। তিনি আমাদের জন্য যথেষ্ট, উত্তম অকীল। লা হাওলা ওয়ালা কুয়্যাতা ইল্লা বিল্লাহ।

 

 

প্রথম পরিচ্ছেদ

আল কুরআনের মু‘জিযা বা অপারগকারী হওয়া মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নবুওয়তের প্রমাণ

ইমাম বুখারী রহ. বলেন,

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ: قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَا مِنَ الأَنْبِيَاءِ نَبِيٌّ إِلَّا أُعْطِيَ مَا مِثْلهُ آمَنَ عَلَيْهِ البَشَرُ، وَإِنَّمَا كَانَ الَّذِي أُوتِيتُ وَحْيًا أَوْحَاهُ اللَّهُ إِلَيَّ، فَأَرْجُو أَنْ أَكُونَ أَكْثَرَهُمْ تَابِعًا يَوْمَ القِيَامَةِ».

আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “প্রত্যেক নবীকে তার যুগের চাহিদা মুতাবিক কিছু মুজিযা দান করতে হয়েছে, যা দেখে লোকেরা তাঁর প্রতি ঈমান এনেছে। আমাকে যে মুজিযা দেওয়া হয়েছে তা হচ্ছে, অহী- যা আল্লাহ আমার প্রতি অবতীর্ণ করেছেন। সুতরাং আমি আশা করি, কিয়ামতের দিন তাদের অনুসারীদের তুলনায় আমার অনুসারীদের সংখ্যা অনেক বেশি হবে”। [15]

অতঃএব, আল কুরআন হলো রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সর্বশ্রেষ্ঠ মু‘জিযা। এখানে কুরআন ও হাদীস দ্বারা প্রমাণিত অন্যান্য মু‘জিযাকে অস্বীকার করা উদ্দেশ্য নয়। আল্লাহ তা‘আলা আরবের বিশুদ্ধ সাহিত্যিক ও জ্ঞানীদেরকে কুরআনের অনুরূপ একটি কিতাব রচনা করতে চ্যালেঞ্জ করেন। আল্লাহ বলেছেন,

﴿ قُل لَّئِنِ ٱجۡتَمَعَتِ ٱلۡإِنسُ وَٱلۡجِنُّ عَلَىٰٓ أَن يَأۡتُواْ بِمِثۡلِ هَٰذَا ٱلۡقُرۡءَانِ لَا يَأۡتُونَ بِمِثۡلِهِۦ وَلَوۡ كَانَ بَعۡضُهُمۡ لِبَعۡضٖ ظَهِيرٗا ٨٨ ﴾ [الاسراء: ٨٨]

“বল, ‘যদি মানুষ ও জিন এ কুরআনের অনুরূপ হাযির করার জন্য একত্রিত হয়, তবুও তারা এর অনুরূপ হাযির করতে পারবে না যদিও তারা একে অপরের সাহায্যকারী হয়”। [সূরা আল-ইসরা: ৮৮]

আল্লাহ আরো বলেছেন,

﴿ أَمۡ يَقُولُونَ تَقَوَّلَهُۥۚ بَل لَّا يُؤۡمِنُونَ ٣٣ فَلۡيَأۡتُواْ بِحَدِيثٖ مِّثۡلِهِۦٓ إِن كَانُواْ صَٰدِقِينَ ٣٤ ﴾ [الطور: ٣٣، ٣٤]

“তারা কি বলে, ‘সে এটা বানিয়ে বলছে?’ বরং তারা ঈমান আনে না।  অতএব, তারা যদি সত্যবাদী হয় তবে তার অনুরূপ বাণী নিয়ে আসুক”। [সূরা আত্-তূর: ৩৩-৩৪]

তাদেরকে কুরআনের অনুরূপ মাত্র দশটি আয়াত আনতে চ্যালেঞ্জ করেন। আল্লাহ বলেন,

﴿ أَمۡ يَقُولُونَ ٱفۡتَرَىٰهُۖ قُلۡ فَأۡتُواْ بِعَشۡرِ سُوَرٖ مِّثۡلِهِۦ مُفۡتَرَيَٰتٖ وَٱدۡعُواْ مَنِ ٱسۡتَطَعۡتُم مِّن دُونِ ٱللَّهِ إِن كُنتُمۡ صَٰدِقِينَ ١٣ فَإِلَّمۡ يَسۡتَجِيبُواْ لَكُمۡ فَٱعۡلَمُوٓاْ أَنَّمَآ أُنزِلَ بِعِلۡمِ ٱللَّهِ وَأَن لَّآ إِلَٰهَ إِلَّا هُوَۖ فَهَلۡ أَنتُم مُّسۡلِمُونَ ١٤ ﴾ [هود: ١٣، ١٤]

“নাকি তারা বলে, ‘সে এটা রটনা করেছে’? বল, ‘তাহলে তোমরা এর অনুরূপ দশটি সূরা বানিয়ে নিয়ে আস এবং আল্লাহ ছাড়া যাকে পার ডেকে আন, যদি তোমরা সত্যবাদী হও’। অতঃপর তারা যদি তোমাদের আহবানে সাড়া না দেয়, তাহলে জেনে রাখ, এটা আল্লাহর জ্ঞান অনুসারেই নাযিল করা হয়েছে এবং তিনি ছাড়া কোনো (সত্য) ইলাহ্ নেই। অতঃপর তোমরা কি অনুগত হবে?” [সূরা: হূদ: ১৩-১৪]

তাদেরকে কুরআনের অনুরূপ একটি সূরা আনতে চ্যালেঞ্জ করেন। আল্লাহ বলেন,

﴿ وَمَا كَانَ هَٰذَا ٱلۡقُرۡءَانُ أَن يُفۡتَرَىٰ مِن دُونِ ٱللَّهِ وَلَٰكِن تَصۡدِيقَ ٱلَّذِي بَيۡنَ يَدَيۡهِ وَتَفۡصِيلَ ٱلۡكِتَٰبِ لَا رَيۡبَ فِيهِ مِن رَّبِّ ٱلۡعَٰلَمِينَ ٣٧ أَمۡ يَقُولُونَ ٱفۡتَرَىٰهُۖ قُلۡ فَأۡتُواْ بِسُورَةٖ مِّثۡلِهِۦ وَٱدۡعُواْ مَنِ ٱسۡتَطَعۡتُم مِّن دُونِ ٱللَّهِ إِن كُنتُمۡ صَٰدِقِينَ ٣٨ بَلۡ كَذَّبُواْ بِمَا لَمۡ يُحِيطُواْ بِعِلۡمِهِۦ وَلَمَّا يَأۡتِهِمۡ تَأۡوِيلُهُۥۚ كَذَٰلِكَ كَذَّبَ ٱلَّذِينَ مِن قَبۡلِهِمۡۖ فَٱنظُرۡ كَيۡفَ كَانَ عَٰقِبَةُ ٱلظَّٰلِمِينَ ٣٩ ﴾ [يونس: ٣٧، ٣٩]

“এ কুরআন তো এমন নয় যে, আল্লাহ ছাড়া কেউ তা রচনা করতে পারবে; বরং এটি যা তার সামনে রয়েছে, তার সত্যায়ন এবং কিতাবের বিস্তারিত ব্যাখ্যা, যাতে কোনো সন্দেহ নেই, যা সৃষ্টিকুলের রবের পক্ষ থেকে। নাকি তারা বলে, ‘সে তা বানিয়েছে’? বল, ‘তবে তোমরা তার মত একটি সূরা (বানিয়ে) নিয়ে আস এবং আল্লাহ ছাড়া যাকে পারো ডাক, যদি তোমরা সত্যবাদী হও’। বরং তারা যে ব্যাপারে পূর্ণ জ্ঞান লাভ করেনি, তা তারা অস্বীকার করেছে এবং এখনও তার পরিণতি তাদের কাছে আসেনি। এভাবেই তারা অস্বীকার করেছিল, যারা ছিল তাদের পূর্বে। সুতরাং তুমি লক্ষ্য কর, কেমন ছিল যালিমদের পরিণাম”। [সূরা ইউনুস: ৩৭-৩৯]

আল্লাহ আরো বলেন,

﴿ وَإِن كُنتُمۡ فِي رَيۡبٖ مِّمَّا نَزَّلۡنَا عَلَىٰ عَبۡدِنَا فَأۡتُواْ بِسُورَةٖ مِّن مِّثۡلِهِۦ وَٱدۡعُواْ شُهَدَآءَكُم مِّن دُونِ ٱللَّهِ إِن كُنتُمۡ صَٰدِقِينَ ٢٣ فَإِن لَّمۡ تَفۡعَلُواْ وَلَن تَفۡعَلُواْ فَٱتَّقُواْ ٱلنَّارَ ٱلَّتِي وَقُودُهَا ٱلنَّاسُ وَٱلۡحِجَارَةُۖ أُعِدَّتۡ لِلۡكَٰفِرِينَ ٢٤ ﴾ [البقرة: ٢٣، ٢٤]

“আর আমি আমার বান্দার উপর যা নাযিল করেছি, যদি তোমরা সে সম্পর্কে সন্দেহে থাক, তবে তোমরা তার মত একটি সূরা নিয়ে আস এবং আল্লাহ ছাড়া তোমাদের সাক্ষীসমূহকে ডাক; যদি তোমরা সত্যবাদী হও। অতএব যদি তোমরা তা না কর- আর কখনো তোমরা তা করবে না- তাহলে আগুনকে ভয় কর যার জ্বালানী হবে মানুষ ও পাথর, যা প্রস্তুত করা হয়েছে কাফিরদের জন্য”। [সূরা আল-বাকারা: ২৩-২৪]

আল্লাহ তাদেরকে চ্যালেঞ্জ করেছেন, কিন্তু তারা মোকাবিলা করতে ব্যর্থ হয়েছে, ফলে তারা সীমালঙ্ঘন ও একগুঁয়েমীর আশ্রয় নিল। তাদের কেউ কেউ বলত:

﴿ وَقَالَ ٱلَّذِينَ كَفَرُواْ لَا تَسۡمَعُواْ لِهَٰذَا ٱلۡقُرۡءَانِ وَٱلۡغَوۡاْ فِيهِ لَعَلَّكُمۡ تَغۡلِبُونَ ٢٦ ﴾ [فصلت: ٢٦]

“আর কাফিররা বলে, ‘তোমরা এ কুরআনের নির্দেশ শুন না এবং এর আবৃত্তি কালে শোরগোল সৃষ্টি কর, যেন তোমরা জয়ী হতে পার”। [সূরা ফুস্-সিলাত: ২৬]

তারা আরো বলত,

﴿ وَقَالُواْ قُلُوبُنَا فِيٓ أَكِنَّةٖ مِّمَّا تَدۡعُونَآ إِلَيۡهِ وَفِيٓ ءَاذَانِنَا وَقۡرٞ وَمِنۢ بَيۡنِنَا وَبَيۡنِكَ حِجَابٞ ٥ ﴾ [فصلت: ٥]

“আর তারা বলে, ‘তুমি আমাদেরকে যার প্রতি আহবান করছ সে বিষয়ে আমাদের অন্তরসমূহ আচ্ছাদিত, আমাদের কানের মধ্যে রয়েছে বধিরতা আর তোমার ও আমাদের মধ্যে রয়েছে অন্তরায়”। [সূরা ফুস্-সিলাত: ৫]

অন্যদিকে আল্লাহ তাদের কারো কারো যে সব কথা বর্ণনা করেছেন তা তাদের অবাধ্যতা, অহংকার ও তাদের দুর্বল জ্ঞানের অধিকারী অনুসারীদেরকে সংশয় ও ধোঁকায় ফেলানোর উদ্দেশ্য। যেমন আল্লাহ তাদের কথা উল্লেখ করে বলেছেন,

﴿ وَإِذَا تُتۡلَىٰ عَلَيۡهِمۡ ءَايَٰتُنَا قَالُواْ قَدۡ سَمِعۡنَا لَوۡ نَشَآءُ لَقُلۡنَا مِثۡلَ هَٰذَآ إِنۡ هَٰذَآ إِلَّآ أَسَٰطِيرُ ٱلۡأَوَّلِينَ ٣١ ﴾ [الانفال: ٣١]

“আর তাদের উপর যখন আমার আয়াতসমূহ পাঠ করা হয় তখন তারা বলে, শুনলাম তো। যদি আমরা চাই, তাহলে এর অনুরূপ আমরাও বলতে পারি। এতো পিতৃ-পুরুষদের কল্প-কাহিনী ছাড়া কিছু না”। [সূরা আল- আনফাল: ৩১]

এমনিভাবে তাদের কথা:

﴿ وَقَالُوٓاْ أَسَٰطِيرُ ٱلۡأَوَّلِينَ ٱكۡتَتَبَهَا فَهِيَ تُمۡلَىٰ عَلَيۡهِ بُكۡرَةٗ وَأَصِيلٗا ٥ ﴾ [الفرقان: ٥]

“তারা বলে, ‘এটি প্রাচীনকালের উপকথা যা সে লিখিয়ে নিয়েছে; এগুলো সকাল-সন্ধ্যায় তার কাছে পাঠ করা হয়”। [সূরা আল-ফুরকান: ৫]


পরিচ্ছেদ

  • ·কুরআনের মু‘জিযার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে,

কুরআনের বিস্ময়ের মধ্যে আরেকটি হলো পূর্ববর্তী উম্মত সম্পর্কে একজন নিরক্ষর নবী কর্তৃক সংবাদ দেওয়া যিনি আক্ষরিক লেখা পড়া জানতেন না। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,

﴿ وَمَا كُنتَ بِجَانِبِ ٱلطُّورِ إِذۡ نَادَيۡنَا وَلَٰكِن رَّحۡمَةٗ مِّن رَّبِّكَ لِتُنذِرَ قَوۡمٗا مَّآ أَتَىٰهُم مِّن نَّذِيرٖ مِّن قَبۡلِكَ لَعَلَّهُمۡ يَتَذَكَّرُونَ ٤٦ ﴾ [القصص: ٤٦]

“আর যখন আমি (মূসাকে) ডেকেছিলাম তখন তুমি তূর পর্বতের পাশে উপস্থিত ছিলে না। কিন্তু তোমার রবের পক্ষ থেকে রহমতস্বরূপ জানানো হয়েছে, যাতে তুমি এমন কওমকে সতর্ক করতে পার, যাদের কাছে তোমার পূর্বে কোনো সতর্ককারী আসেনি। সম্ভবত তারা উপদেশ গ্রহণ করবে”। [সূরা আল্-কাসাস: ৪৬]

আল্লাহ আরো তা‘আলা বলেছেন,

﴿ وَمَا كُنتَ لَدَيۡهِمۡ إِذۡ يُلۡقُونَ أَقۡلَٰمَهُمۡ أَيُّهُمۡ يَكۡفُلُ مَرۡيَمَ وَمَا كُنتَ لَدَيۡهِمۡ إِذۡ يَخۡتَصِمُونَ ٤٤ ﴾ [ال عمران: ٤٤]

“আর তুমি তাদের নিকট ছিলে না, যখন তারা তাদের কলম নিক্ষেপ করছিল, তাদের মধ্যে কে মারইয়ামের দায়িত্ব নেবে? আর তুমি তাদের নিকট ছিলে না, যখন তারা বিতর্ক করছিল”। [আলে ইমরান: ৪৪]

আল্লাহ আরো তা‘আলা বলেছেন,

﴿ ذَٰلِكَ مِنۡ أَنۢبَآءِ ٱلۡغَيۡبِ نُوحِيهِ إِلَيۡكَۖ وَمَا كُنتَ لَدَيۡهِمۡ إِذۡ أَجۡمَعُوٓاْ أَمۡرَهُمۡ وَهُمۡ يَمۡكُرُونَ ١٠٢ ﴾ [يوسف: ١٠٢]

“এগুলো গায়েবের সংবাদ, যা আমি তোমার কাছে ওহী করছি। তুমি তো তাদের নিকট ছিলে না যখন তারা তাদের সিদ্ধান্তে একমত হয়েছিল অথচ তারা ষড়যন্ত্র করছিল”। [সূরা: ইউসুফ: ১০২]

আল্লাহ আরো তা‘আলা বলেছেন,

﴿ لَقَدۡ كَانَ فِي قَصَصِهِمۡ عِبۡرَةٞ لِّأُوْلِي ٱلۡأَلۡبَٰبِۗ ١١١ ﴾ [يوسف: ١١١]

“তাদের এ কাহিনীগুলোতে অবশ্যই বুদ্ধিমানদের জন্য রয়েছে শিক্ষা”। [সূরা: ইউসুফ: ১১১]

এমনিভাবে আদম আলাইহিস সালামের সৃষ্টি, শয়তানের সাথে তার ঘটনা, স্বজাতির সাথে নবীগণের ঘটনা, মূসা আলাইহিস সালামের ঘটনা, খিজির, আসহাবে কাহাফ, জুল ক্বারনাইন, লুকমান আলাইহিস সালাম ও তার ছেলের ঘটনা ও তাওরাতের নানা বিধিবিধান সম্পর্কে সংবাদ দেওয়া ইত্যাদি সম্পর্কে আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে চ্যালেঞ্জ করেছেন। আল্লাহ বলেছেন,

﴿ قُلۡ فَأۡتُواْ بِٱلتَّوۡرَىٰةِ فَٱتۡلُوهَآ إِن كُنتُمۡ صَٰدِقِينَ ٩٣ ﴾ [ال عمران: ٩٣]

“বলুন, ‘তাহলে তোমরা তাওরাত নিয়ে আস, অতঃপর তা তিলাওয়াত কর, যদি তোমরা সত্যবাদী হও”। [আলে ইমরান: ৯৩]

আল্লাহ আরো বলেছেন,

﴿ يَٰٓأَهۡلَ ٱلۡكِتَٰبِ قَدۡ جَآءَكُمۡ رَسُولُنَا يُبَيِّنُ لَكُمۡ كَثِيرٗا مِّمَّا كُنتُمۡ تُخۡفُونَ مِنَ ٱلۡكِتَٰبِ وَيَعۡفُواْ عَن كَثِيرٖۚ ١٥ ﴾ [المائ‍دة: ١٥]

“হে কিতাবীগণ, তোমাদের নিকট আমার রাসূল এসেছে, কিতাব থেকে যা তোমরা গোপন করতে, তার অনেক কিছু তোমাদের নিকট সে প্রকাশ করছে এবং অনেক কিছু ছেড়ে দিয়েছে”। [আল-মায়েদা: ১৫]

বরং আহলে কিতাবদের মধ্যে যাদেরকে আল্লাহ হিদায়েত দিয়েছেন তাদের সম্পর্কে তিনি বলেছেন,

﴿ وَشَهِدَ شَاهِدٞ مِّنۢ بَنِيٓ إِسۡرَٰٓءِيلَ عَلَىٰ مِثۡلِهِۦ فَ‍َٔامَنَ وَٱسۡتَكۡبَرۡتُمۡۚ ١٠ ﴾ [الاحقاف: ١٠]

“অথচ বনী ইসরাঈলের একজন সাক্ষী এ ব্যাপারে অনুরূপ সাক্ষ্য দিল। অতঃপর সে ঈমান আনল আর তোমরা অহঙ্কার করলে”। [সূরা আল্-আহকাফ: ১০]

এ উম্মী নবী তাদেরকে চ্যালেঞ্জ করেন, কিন্তু তারা এর জবাব দিতে পারে নি। যেমন আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতা‘আলা বলেছেন,

﴿ وَمَا كُنتَ تَتۡلُواْ مِن قَبۡلِهِۦ مِن كِتَٰبٖ وَلَا تَخُطُّهُۥ بِيَمِينِكَۖ إِذٗا لَّٱرۡتَابَ ٱلۡمُبۡطِلُونَ ٤٨ ﴾ [العنكبوت: ٤٨]

“আর তুমি তো এর পূর্বে কোনো কিতাব তিলাওয়াত করনি এবং তোমার নিজের হাতে তা লিখনি যে, বাতিলপন্থীরা এতে সন্দেহ পোষণ করবে”। [সূরা আল্-আনকাবূত: ৪৮]

আল্লাহ আরো বলেছেন,

﴿ ٱلَّذِينَ يَتَّبِعُونَ ٱلرَّسُولَ ٱلنَّبِيَّ ٱلۡأُمِّيَّ ٱلَّذِي يَجِدُونَهُۥ مَكۡتُوبًا عِندَهُمۡ فِي ٱلتَّوۡرَىٰةِ وَٱلۡإِنجِيلِ يَأۡمُرُهُم بِٱلۡمَعۡرُوفِ وَيَنۡهَىٰهُمۡ عَنِ ٱلۡمُنكَرِ وَيُحِلُّ لَهُمُ ٱلطَّيِّبَٰتِ وَيُحَرِّمُ عَلَيۡهِمُ ٱلۡخَبَٰٓئِثَ وَيَضَعُ عَنۡهُمۡ إِصۡرَهُمۡ وَٱلۡأَغۡلَٰلَ ٱلَّتِي كَانَتۡ عَلَيۡهِمۡۚ فَٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ بِهِۦ وَعَزَّرُوهُ وَنَصَرُوهُ وَٱتَّبَعُواْ ٱلنُّورَ ٱلَّذِيٓ أُنزِلَ مَعَهُۥٓ أُوْلَٰٓئِكَ هُمُ ٱلۡمُفۡلِحُونَ ١٥٧ قُلۡ يَٰٓأَيُّهَا ٱلنَّاسُ إِنِّي رَسُولُ ٱللَّهِ إِلَيۡكُمۡ جَمِيعًا ٱلَّذِي لَهُۥ مُلۡكُ ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَٱلۡأَرۡضِۖ لَآ إِلَٰهَ إِلَّا هُوَ يُحۡيِۦ وَيُمِيتُۖ فَ‍َٔامِنُواْ بِٱللَّهِ وَرَسُولِهِ ٱلنَّبِيِّ ٱلۡأُمِّيِّ ٱلَّذِي يُؤۡمِنُ بِٱللَّهِ وَكَلِمَٰتِهِۦ وَٱتَّبِعُوهُ لَعَلَّكُمۡ تَهۡتَدُونَ ١٥٨ ﴾ [الاعراف: ١٥٧، ١٥٨]

“যারা অনুসরণ করে রাসূলের, যে উম্মী নবী; যার গুণাবলী তারা নিজদের কাছে তাওরাত ও ইঞ্জিলে লিখিত পায়, যে তাদেরকে সৎ কাজের আদেশ দেয় ও বারণ করে অসৎ কাজ থেকে এবং তাদের জন্য পবিত্র বস্তু হালাল করে আর অপবিত্র বস্তু হারাম করে। আর তাদের থেকে বোঝা ও শৃংখল- যা তাদের উপরে ছিল- অপসারণ করে। সুতরাং যারা তার প্রতি ঈমান আনে, তাকে সম্মান করে, তাকে সাহায্য করে এবং তার সাথে যে নূর নাযিল করা হয়েছে তা অনুসরণ করে তারাই সফলকাম। বল, ‘হে মানুষ, আমি তোমাদের সবার প্রতি আল্লাহর রাসূল, যার রয়েছে আসমানসমূহ ও যমীনের রাজত্ব। তিনি ছাড়া কোনো (সত্য) ইলাহ নেই। তিনি জীবন দান করেন ও মৃত্যু দেন। সুতরাং তোমরা আল্লাহর প্রতি ঈমান আন ও তাঁর প্রেরিত উম্মী নবীর প্রতি, যে আল্লাহ ও তাঁর বাণীসমূহের প্রতি ঈমান রাখে। আর তোমরা তার অনুসরণ কর, আশা করা যায়, তোমরা হিদায়াত লাভ করবে”। [সূরা আল-আ‘রাফ: ১৫৭-১৫৮]

  • ·কুরআনের মু‘জিযার মধ্যে আরেকটি হলো ভবিষ্যৎকালের নানা বিষয়ে সংবাদ দিয়েছে এবং আল্লাহ যেভাবে বলেছেন তা সেভাবেই সংঘটিত হয়েছে। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতা‘আলা বলেছেন,

﴿لَتَدۡخُلُنَّ ٱلۡمَسۡجِدَ ٱلۡحَرَامَ إِن شَآءَ ٱللَّهُ ءَامِنِينَ ٢٧ ﴾ [الفتح: ٢٧]

“তোমরা ইনশাআল্লাহ নিরাপদে নির্ভয়ে আল-মাসজিদুল হারামে অবশ্যই প্রবেশ করবে”। [সূরা আল-ফাতহ: ২৭]

﴿ عَلِمَ أَن سَيَكُونُ مِنكُم مَّرۡضَىٰ وَءَاخَرُونَ يَضۡرِبُونَ فِي ٱلۡأَرۡضِ يَبۡتَغُونَ مِن فَضۡلِ ٱللَّهِ وَءَاخَرُونَ يُقَٰتِلُونَ فِي سَبِيلِ ٱللَّهِۖ ٢٠ ﴾ [المزمل: ٢٠]

“তিনি জানেন তোমাদের মধ্যে কেউ কেউ অসুস্থ হয়ে পড়বে। আর কেউ কেউ আল্লাহর অনুগ্রহ সন্ধানে পৃথিবীতে ভ্রমণ করবে, আর কেউ কেউ আল্লাহর পথে লড়াই করবে”। [সূরা আল্-মুয্যাম্মিল: ২০]

এটা ছিল জিহাদ ফরয হওয়ার আগে। কেননা এটি মক্কী সূরা। আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,

﴿ سَيُهۡزَمُ ٱلۡجَمۡعُ وَيُوَلُّونَ ٱلدُّبُرَ ٤٥ ﴾ [القمر: ٤٥]

“সংঘবদ্ধ দলটি শীঘ্রই পরাজিত হবে এবং পিঠ দেখিয়ে পালাবে”। [সূরা আল্-কামার: ৪৫]

কাফিররা বদরের দিনে পরাজিত হয়েছিল।

﴿ إِنَّا نَحۡنُ نَزَّلۡنَا ٱلذِّكۡرَ وَإِنَّا لَهُۥ لَحَٰفِظُونَ ٩ ﴾ [الحجر: ٩]

“নিশ্চয় আমি কুরআন নাযিল করেছি, আর আমিই তার হেফাযতকারী”। [সূরা: আল-হিজর: ৯]

কত নাস্তিকেরা কুরআনকে পরিবর্তন করতে চেষ্টা করেছে কিন্তু তারা ব্যর্থ হয়েছে। তারা কখনও সফল হবে না। কেননা স্বয়ং মহান আল্লাহ কুরআন সংরক্ষণের দায়িত্ব নিয়েছেন। কুরআনের সম্মুখ ও পশ্চাৎ দিয়ে বাতিল আসতে পারবে না, এটা প্রজ্ঞাময় ও প্রশংসিত মহান আল্লাহর তরফ থেকে নাযিলকৃত।

  • ·কুরআনের আরেক মু‘জিযা হলো শ্রবণকারীর মধ্যে প্রভাব ফেলা। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতা‘আলা বলেছেন,

﴿ لَوۡ أَنزَلۡنَا هَٰذَا ٱلۡقُرۡءَانَ عَلَىٰ جَبَلٖ لَّرَأَيۡتَهُۥ خَٰشِعٗا مُّتَصَدِّعٗا مِّنۡ خَشۡيَةِ ٱللَّهِۚ ٢١ ﴾ [الحشر: ٢١]

“এ কুরআনকে যদি আমি পাহাড়ের ওপর নাযিল করতাম তবে তুমি অবশ্যই তাকে দেখতে, আল্লাহর ভয়ে বিনীত ও বিদীর্ণ”। [সূরা আল্-হাশর: ২১]

আল্লাহ আরো বলেছেন,

﴿ تَقۡشَعِرُّ مِنۡهُ جُلُودُ ٱلَّذِينَ يَخۡشَوۡنَ رَبَّهُمۡ ثُمَّ تَلِينُ جُلُودُهُمۡ وَقُلُوبُهُمۡ إِلَىٰ ذِكۡرِ ٱللَّهِۚ ٢٣ ﴾ [الزمر: ٢٣]

“যারা তাদের রবকে ভয় করে, তাদের গা এতে শিহরিত হয়, তারপর তাদের দেহ ও মন আল্লাহর স্মরণে বিনম্র হয়ে যায়”। [সূরা আয্-যুমার: ২৩]

কুরআন শ্রবণ জিনজাতির মাঝে যে প্রভাব ফেলে সে সম্পর্কে আল্লাহ বলেন,

﴿ قُلۡ أُوحِيَ إِلَيَّ أَنَّهُ ٱسۡتَمَعَ نَفَرٞ مِّنَ ٱلۡجِنِّ فَقَالُوٓاْ إِنَّا سَمِعۡنَا قُرۡءَانًا عَجَبٗا ١ يَهۡدِيٓ إِلَى ٱلرُّشۡدِ فَ‍َٔامَنَّا بِهِۦۖ وَلَن نُّشۡرِكَ بِرَبِّنَآ أَحَدٗا ٢ ﴾ [الجن: ١، ٢]

“বল, ‘আমার প্রতি ওহী করা হয়েছে যে, নিশ্চয় জিনদের একটি দল মনোযোগ সহকারে শুনেছে। অতঃপর বলেছে, ‘আমরা তো এক বিস্ময়কর কুরআন শুনেছি, যা সত্যের দিকে হিদায়াত করে; অতঃপর আমরা তাতে ঈমান এনেছি। আর আমরা কখনো আমাদের রবের সাথে কাউকে শরীক করব না”। [সূরা আল্-জিন: ১-২]

বুখারী রহ. বলেছেন,

عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا، قَالَ: " انْطَلَقَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي طَائِفَةٍ مِنْ أَصْحَابِهِ عَامِدِينَ إِلَى سُوقِ عُكَاظٍ، وَقَدْ حِيلَ بَيْنَ الشَّيَاطِينِ وَبَيْنَ خَبَرِ السَّمَاءِ، وَأُرْسِلَتْ عَلَيْهِمُ الشُّهُبُ، فَرَجَعَتِ الشَّيَاطِينُ إِلَى قَوْمِهِمْ، فَقَالُوا: مَا لَكُمْ؟ فَقَالُوا: حِيلَ بَيْنَنَا وَبَيْنَ خَبَرِ السَّمَاءِ، وَأُرْسِلَتْ عَلَيْنَا الشُّهُبُ، قَالُوا: مَا حَالَ بَيْنَكُمْ وَبَيْنَ خَبَرِ السَّمَاءِ إِلَّا شَيْءٌ حَدَثَ، فَاضْرِبُوا مَشَارِقَ الأَرْضِ وَمَغَارِبَهَا، فَانْظُرُوا مَا هَذَا الَّذِي حَالَ بَيْنَكُمْ وَبَيْنَ خَبَرِ السَّمَاءِ، فَانْصَرَفَ أُولَئِكَ الَّذِينَ تَوَجَّهُوا نَحْوَ تِهَامَةَ إِلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَهُوَ بِنَخْلَةَ عَامِدِينَ إِلَى سُوقِ عُكَاظٍ، وَهُوَ يُصَلِّي بِأَصْحَابِهِ صَلاَةَ الفَجْرِ، فَلَمَّا سَمِعُوا القُرْآنَ اسْتَمَعُوا لَهُ، فَقَالُوا: هَذَا وَاللَّهِ الَّذِي حَالَ بَيْنَكُمْ وَبَيْنَ خَبَرِ السَّمَاءِ، فَهُنَالِكَ حِينَ رَجَعُوا إِلَى قَوْمِهِمْ، وَقَالُوا: يَا قَوْمَنَا: {إِنَّا سَمِعْنَا قُرْآنًا عَجَبًا، يَهْدِي إِلَى الرُّشْدِ، فَآمَنَّا بِهِ وَلَنْ نُشْرِكَ بِرَبِّنَا أَحَدًا} [الجن: 2]، فَأَنْزَلَ اللَّهُ عَلَى نَبِيِّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: {قُلْ أُوحِيَ إِلَيَّ أَنَّهُ اسْتَمَعَ نَفَرٌ مِنَ الجِنِّ} [الجن: 1] وَإِنَّمَا أُوحِيَ إِلَيْهِ قَوْلُ الجِنِّ ".

ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, “নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কয়েকজন সাহাবীকে সঙ্গে নিয়ে উকায বাজারের উদ্দেশ্যে রওয়ানা করেন। আর দুষ্ট জিনদের উর্ধলোকের সংবাদ সংগ্রহের পথে প্রতিবন্ধকতা দেখা দেয় এবং তাদের দিকে অগ্নিপিন্ড নিক্ষিপ্ত হয়। কাজেই শয়তানরা তাদের সম্প্রদায়ের নিকট ফিরে আসে। তারা জিজ্ঞাসা করল, তোমাদের কি হয়েছে? তারা বলল, আমাদের এবং আকাশের সংবাদ সংগ্রহের মধ্যে প্রতিবন্ধকতা দেখা দিয়েছে এবং আমাদের দিকে অগ্নিপিন্ড ছুঁড়ে মারা হয়েছে। তখন তারা বলল, নিশ্চয়ই গুরুত্বপূর্ণ একটা কিছু ঘটছে বলেই তোমাদের এবং আকাশের সংবাদ সংগ্রহের মধ্যে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হয়েছে। কাজেই, পৃথিবীর পূর্ব এবং পশ্চিম অঞ্চল পর্যন্ত বিচরণ করে দেখ, কি কারণে তোমাদের ও আকাশের সংবাদ সংগ্রহরে মধ্যে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়েছে? তাই তাদের যে দলটি তিহামার দিকে গিয়েছিল, তারা রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দিকে অগ্রসর হল। তিনি তখন উকায বাজারের পথে ‘নাখলা’ নামক স্থানে সাহাবীগণকে নিয়ে ফজরের সালাত আদায় করছিলেন। তারা যখন কুরআন শুনতে পেল, তখন সেদিকে মনোনিবেশ করল। তারপর তারা বলে উঠল, আল্লাহর শপথ! এটিই তোমাদের ও আকাশের সংবাদ সংগ্রহের মধ্যে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছে। এমন সময় যখন তারা সম্প্রদায়ের নিকট ফিরে আসল এবং বলল যে,

إِنَّا سَمِعۡنَا قُرۡءَانًا عَجَبٗا ١ يَهۡدِيٓ إِلَى ٱلرُّشۡدِ فَ‍َٔامَنَّا بِهِۦۖ وَلَن نُّشۡرِكَ بِرَبِّنَآ أَحَدٗا ٢ ﴾ [الجن: ١، ٢]

“বল, ‘আমার প্রতি ওহী করা হয়েছে যে, নিশ্চয় জিনদের একটি দল মনোযোগ সহকারে শুনেছে। অতঃপর বলেছে, ‘আমরা তো এক বিস্ময়কর কুরআন শুনেছি, যা সত্যের দিকে হিদায়াত করে; অতঃপর আমরা তাতে ঈমান এনেছি। আর আমরা কখনো আমাদের রবের সাথে কাউকে শরীক করব না”। [সূরা আল্-জিন: ১-২] এ প্রসঙ্গে আল্লাহ্ তা‘আলা তাঁর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর প্রতি সূরা নাযিল করেন,

قُلۡ أُوحِيَ إِلَيَّ أَنَّهُ ٱسۡتَمَعَ نَفَرٞ مِّنَ ٱلۡجِنِّ

“বল, ‘আমার প্রতি ওহী করা হয়েছে যে, নিশ্চয় জিনদের একটি দল মনোযোগ সহকারে শুনেছে”।[সূরা আল্-জিন: ১] মূলত তাঁর নিকট জিনদের বক্তব্যই ওহীরূপে নাযিল করা হয়েছে”।[16]

আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,

﴿ وَإِذۡ صَرَفۡنَآ إِلَيۡكَ نَفَرٗا مِّنَ ٱلۡجِنِّ يَسۡتَمِعُونَ ٱلۡقُرۡءَانَ فَلَمَّا حَضَرُوهُ قَالُوٓاْ أَنصِتُواْۖ فَلَمَّا قُضِيَ وَلَّوۡاْ إِلَىٰ قَوۡمِهِم مُّنذِرِينَ ٢٩ قَالُواْ يَٰقَوۡمَنَآ إِنَّا سَمِعۡنَا كِتَٰبًا أُنزِلَ مِنۢ بَعۡدِ مُوسَىٰ مُصَدِّقٗا لِّمَا بَيۡنَ يَدَيۡهِ يَهۡدِيٓ إِلَى ٱلۡحَقِّ وَإِلَىٰ طَرِيقٖ مُّسۡتَقِيمٖ ٣٠ يَٰقَوۡمَنَآ أَجِيبُواْ دَاعِيَ ٱللَّهِ وَءَامِنُواْ بِهِۦ يَغۡفِرۡ لَكُم مِّن ذُنُوبِكُمۡ وَيُجِرۡكُم مِّنۡ عَذَابٍ أَلِيمٖ ٣١ وَمَن لَّا يُجِبۡ دَاعِيَ ٱللَّهِ فَلَيۡسَ بِمُعۡجِزٖ فِي ٱلۡأَرۡضِ وَلَيۡسَ لَهُۥ مِن دُونِهِۦٓ أَوۡلِيَآءُۚ أُوْلَٰٓئِكَ فِي ضَلَٰلٖ مُّبِينٍ ٣٢ ﴾ [الاحقاف: ٢٩، ٣٢]

“আর স্মরণ কর, যখন আমি জিনদের একটি দলকে তোমার কাছে ফিরিয়ে দিয়েছিলাম। তারা কুরআন পাঠ শুনছিল। যখন তারা তার কাছে উপস্থিত হল, তখণ তারা বলল, ‘চুপ করে শোন। তারপর যখন পাঠ শেষ হল তখন তারা তাদের কওমের কাছে সতর্ককারী হিসেবে ফিরে গেল। তারা বলল, ‘হে আমাদের কওম, আমরা তো এক কিতাবের বাণী শুনেছি, যা মূসার পরে নাযিল করা হয়েছে। যা পূর্ববর্তী কিতাবকে সত্যায়ন করে আর সত্য ও সরল পথের প্রতি হিদায়াত করে’। হে আমাদের কওম, আল্লাহর দিকে আহবানকারীর প্রতি সাড়া দাও এবং তার প্রতি ঈমান আন, আল্লাহ তোমাদের পাপসমূহ ক্ষমা করবেন। আর তোমাদেরকে যন্ত্রণাদায়ক আযাব থেকে রক্ষা করবেন’। আর যে আল্লাহর দিকে আহবানকারীর ডাকে সাড়া দেবে না সে যমীনে তাকে অপারগকারী নয়। আর আল্লাহ ছাড়া তার কোনো অভিভাবক নেই। এরাই স্পষ্ট বিভ্রান্তির মধ্যে রয়েছে”। [সূরা আল্-আহকাফ: ২৯-৩২]

ইমাম হাকিম রহ. বলেন,

عَنْ عَبْدِ اللَّهِ، قَالَ: " هَبَطُوا عَلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَهُوَ يَقْرَأُ الْقُرْآنَ بِبَطْنِ نَخْلَةَ فَلَمَّا سَمِعُوهُ قَالُوا: أَنْصِتُوا. قَالُوا: صَهٍ. وَكَانُوا تِسْعَةً أَحَدُهُمْ زَوْبَعَةُ فَأَنْزَلَ اللَّهُ عَزَّ وَجَلَّ { وَإِذۡ صَرَفۡنَآ إِلَيۡكَ نَفَرٗا مِّنَ ٱلۡجِنِّ يَسۡتَمِعُونَ ٱلۡقُرۡءَانَ فَلَمَّا حَضَرُوهُ قَالُوٓاْ أَنصِتُواْۖ} [الأحقاف: 29] الْآيَةُ إِلَى { ضَلَٰلٖ مُّبِينٍ }.

আব্দুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, “জিনেরা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট আসল, তখন তিনি ‘নাখলা’ নামক স্থানে কুরআন তিলাওয়াত করছিলেন। তারা যখন কুরআন শ্রবণ করল তখন বলল, তোমরা চুপ করো, মনোযোগ সহকারে শোন। তারা নয়জন ছিল। তাদের একজন ছিল ‘ঝাওবা‘আহ’ বা ঘূর্ণিঝড়। তখন মহান আল্লাহ নাযিল করেন,

{ وَإِذۡ صَرَفۡنَآ إِلَيۡكَ نَفَرٗا مِّنَ ٱلۡجِنِّ يَسۡتَمِعُونَ ٱلۡقُرۡءَانَ فَلَمَّا حَضَرُوهُ قَالُوٓاْ أَنصِتُواْۖ}

“আর স্মরণ কর, যখন আমি জিনদের একটি দলকে তোমার কাছে ফিরিয়ে দিয়েছিলাম। তারা কুরআন পাঠ শুনছিল। যখন তারা তার কাছে উপস্থিত হল, তখণ তারা বলল, ‘চুপ করে শোন”। থেকে ضَلَٰلٖ مُّبِينٍ পর্যন্ত নাযিল হয়”। [সূরা আল্-আহকাফ: ২৯-৩২][17]

অনুরূপভাবে নাসারাদেরকে আল-কুরআন প্রভাবান্বিত করেছে। এর উদাহরণ হলো আল্লাহর বাণী:

﴿ وَإِذَا سَمِعُواْ مَآ أُنزِلَ إِلَى ٱلرَّسُولِ تَرَىٰٓ أَعۡيُنَهُمۡ تَفِيضُ مِنَ ٱلدَّمۡعِ مِمَّا عَرَفُواْ مِنَ ٱلۡحَقِّۖ يَقُولُونَ رَبَّنَآ ءَامَنَّا فَٱكۡتُبۡنَا مَعَ ٱلشَّٰهِدِينَ ٨٣ وَمَا لَنَا لَا نُؤۡمِنُ بِٱللَّهِ وَمَا جَآءَنَا مِنَ ٱلۡحَقِّ وَنَطۡمَعُ أَن يُدۡخِلَنَا رَبُّنَا مَعَ ٱلۡقَوۡمِ ٱلصَّٰلِحِينَ ٨٤ فَأَثَٰبَهُمُ ٱللَّهُ بِمَا قَالُواْ جَنَّٰتٖ تَجۡرِي مِن تَحۡتِهَا ٱلۡأَنۡهَٰرُ خَٰلِدِينَ فِيهَاۚ وَذَٰلِكَ جَزَآءُ ٱلۡمُحۡسِنِينَ ٨٥ ﴾ [المائ‍دة: ٨٣، ٨٥]

“আর রাসূলের প্রতি যা নাযিল করা হয়েছে যখন তারা তা শুনে, তুমি দেখবে তাদের চক্ষু অশ্রুতে ভেসে যাচ্ছে, কারণ তারা সত্য হতে জেনেছে। তারা বলে, ‘হে আমাদের রব, আমরা ঈমান এনেছি। সুতরাং আপনি আমাদেরকে সাক্ষ্য দানকারীদের সঙ্গে লিপিবদ্ধ করুন’। আর আমাদের কী হয়েছে যে, আমরা আল্লাহর প্রতি এবং যে সত্য আমাদের কাছে এসেছে তার প্রতি ঈমান আনব না? আর আমরা আশা করব না যে, আমাদের রব আমাদেরকে প্রবেশ করাবেন নেককার সম্প্রদায়ের সাথে’। সুতরাং তারা যা বলেছে এর কারণে আল্লাহ তাদেরকে পুরস্কার দেবেন জান্নাতসমূহ, যার নীচে নদীসমূহ প্রবাহিত হয়, তারা সেখানে স্থায়ী হবে। আর এটা হল সৎকর্মপরায়ণদের প্রতিদান”। [আল-মায়েদা: ৮৩-৮৫]

তদ্রূপ কুরাইশ কাফিরদেরকে কুরআন যে প্রভাবান্বিত করেছে এর উদাহরণ হলো, বুখারীতে আছে,

عَنْ مُحَمَّدِ بْنِ جُبَيْرِ بْنِ مُطْعِمٍ، عَنْ أَبِيهِ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، قَالَ: " سَمِعْتُ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقْرَأُ فِي المَغْرِبِ بِالطُّورِ، فَلَمَّا بَلَغَ هَذِهِ الآيَةَ: ﴿ أَمۡ خُلِقُواْ مِنۡ غَيۡرِ شَيۡءٍ أَمۡ هُمُ ٱلۡخَٰلِقُونَ ٣٥ أَمۡ خَلَقُواْ ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَٱلۡأَرۡضَۚ بَل لَّا يُوقِنُونَ ٣٦ أَمۡ عِندَهُمۡ خَزَآئِنُ رَبِّكَ أَمۡ هُمُ ٱلۡمُصَۜيۡطِرُونَ ٣٧ ﴾ [الطور: ٣٥، ٣٧] " قَالَ: كَادَ قَلْبِي أَنْ يَطِيرَ، قَالَ سُفْيَانُ: فَأَمَّا أَنَا، فَإِنَّمَا سَمِعْتُ الزُّهْرِيَّ يُحَدِّثُ، عَنْ مُحَمَّدِ بْنِ جُبَيْرِ بْنِ مُطْعِمٍ، عَنْ أَبِيهِ، سَمِعْتُ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، يَقْرَأُ فِي المَغْرِبِ بِالطُّورِ وَلَمْ أَسْمَعْهُ زَادَ الَّذِي قَالُوا لِي.

জুবায়র ইবন মুত’ইম রহ. তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে মাগরিবে সূরা তূর পাঠ করতে শুনেছি। যখন তিনি এ আয়াত পর্যন্ত পৌছেন:

﴿ أَمۡ خُلِقُواْ مِنۡ غَيۡرِ شَيۡءٍ أَمۡ هُمُ ٱلۡخَٰلِقُونَ ٣٥ أَمۡ خَلَقُواْ ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَٱلۡأَرۡضَۚ بَل لَّا يُوقِنُونَ ٣٦ أَمۡ عِندَهُمۡ خَزَآئِنُ رَبِّكَ أَمۡ هُمُ ٱلۡمُصَۜيۡطِرُونَ ٣٧ ﴾ [الطور: ٣٥، ٣٧]

“তারা কি স্রষ্টা ব্যতীত সৃষ্টি হয়েছে, না তারা নিজেরাই স্রষ্টা ? আসমান-যমীন কি তারাই সৃষ্টি করেছে? আসলে তারা অবিশ্বাসী। আমার প্রতিপালকের ধনভাণ্ডার কি তাদের কাছে রয়েছে, না তারাই এ সমুদয়ের নিয়ন্ত্রা?” [সূরা আত্বতূর : ৩৫-৩৭] তখন আমার অন্তর প্রায় উড়ে যাবার অবস্থা হয়েছিল। সুফিয়ান (রহ) বলেন, আমি যুহরীকে মুহাম্মদ ইবন জুবায়ির ইবন মুত’ইমকে তার পিতার বর্ণনা করতে শুনেছি, যা আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে মাগরিবে সূরা তূর পাঠ করতে শুনেছি। কিন্তু এর অতিরিক্ত আমি শুনেনি, যা তাঁরা আমার কাছে বর্ণনা করেছেন। [18]

ইমাম বুখারী আল-মাগাযী অধ্যয়ে বদরের যুদ্ধ সম্পর্কে মা‘মার হতে ঝুহরী রহ. এর সনদে অনুরূপ বর্ণনা করেছেন। বা এতে আরো আছে “আর তা-ই আমার অন্তরে প্রথম ঈমানের সঞ্চার করলো’’।

  • ·অনুরূপভাবে কুরআনের আরও মু‘জিযা হচ্ছে, আল্লাহর নিন্মোক্ত বাণীতে:

﴿ وَعَدَ ٱللَّهُ ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ مِنكُمۡ وَعَمِلُواْ ٱلصَّٰلِحَٰتِ لَيَسۡتَخۡلِفَنَّهُمۡ فِي ٱلۡأَرۡضِ كَمَا ٱسۡتَخۡلَفَ ٱلَّذِينَ مِن قَبۡلِهِمۡ وَلَيُمَكِّنَنَّ لَهُمۡ دِينَهُمُ ٱلَّذِي ٱرۡتَضَىٰ لَهُمۡ وَلَيُبَدِّلَنَّهُم مِّنۢ بَعۡدِ خَوۡفِهِمۡ أَمۡنٗاۚ يَعۡبُدُونَنِي لَا يُشۡرِكُونَ بِي شَيۡ‍ٔٗاۚ وَمَن كَفَرَ بَعۡدَ ذَٰلِكَ فَأُوْلَٰٓئِكَ هُمُ ٱلۡفَٰسِقُونَ ٥٥ ﴾ [النور: ٥٥]

“তোমাদের মধ্যে যারা ঈমান আনে এবং সৎকর্ম করে আল্লাহ তাদেরকে এ মর্মে ওয়াদা দিয়েছেন যে, তিনি নিশ্চিতভাবে তাদেরকে যমীনের প্রতিনিধিত্ব প্রদান করবেন, যেমন তিনি প্রতিনিধিত্ব প্রদান করেছিলেন তাদের পূর্ববর্তীদেরকে এবং তিনি অবশ্যই তাদের জন্য শক্তিশালী ও সুপ্রতিষ্ঠিত করবেন তাদের দীনকে, যা তিনি তাদের জন্য পছন্দ করেছেন এবং তিনি তাদের ভয়-ভীতি শান্তি-নিরাপত্তায় পরিবর্তিত করে দেবেন। তারা আমারই ইবাদাত করবে, আমার সাথে কোনো কিছুকে শরীক করবে না। আর এরপর যারা কুফরী করবে তারাই ফাসিক”। [সূরা আন্-নূর: ৫৫]

কারণ উম্মতের অবস্থা ততক্ষণ সঠিক ছিল যতক্ষণ তাদের মধ্যে শির্ক, মৃত ব্যক্তির কবরে গম্বুজ তৈরি, কবরকে সজ্জিত করা ও পাকা করা, গম্বুজ তৈরী করা ইত্যাদির প্রসার না ঘটেছিল; বস্তুত এর মাধ্যমে শির্ককে সহযোগিতা করা হয়েছিল। এমনকি এমন কিছু গনক ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়েছে যারা মনে করে যে, তারা গায়েব সম্পর্কে অবগত। পূর্বের অনেক রাজা বাদশাহরা গনকদের উপর নির্ভর করত।

এসব কুসংস্কার অনেকের কাছে পুরাতন হলেও বর্তমানে এক নতুন শির্কের আবিস্কার হয়েছে, আর তা হলো গণতন্ত্র, যার অর্থ হলো জনগণের দ্বারা জনগনের শাসন। অর্থাৎ জনগণ নিজেরাই নিজেদের শাসন করবে। এমনিভাবে ইসলামের শত্রুদের থেকে কুরআন হাদীস বিরোধী আইন আমদানি করা। এ সব আইনের দ্বারা শাসন কার্য পরিচালনা করা শির্ক। আল্লাহ বলেন,

﴿ أَمۡ لَهُمۡ شُرَكَٰٓؤُاْ شَرَعُواْ لَهُم مِّنَ ٱلدِّينِ مَا لَمۡ يَأۡذَنۢ بِهِ ٱللَّهُۚ ٢١ ﴾ [الشورى: ٢١]

“তাদের জন্য কি এমন কিছু শরীক আছে, যারা তাদের জন্য দীনের বিধান দিয়েছে, যার অনুমতি আল্লাহ দেননি?” [সূরা আশ্-শূরা: ২১]

এর চেয়েও মারাত্মক হলো বর্তমানের মুসলিমগণ দুটি শিবিরে বিভক্ত, একভাগ রাশিয়ার অনুসারী, আরেকভাগ আমেরিকার অনুসারী।

বরং এর চেয়েও মারাত্মক অবস্থা হলো মুসলিম শাসকেরা আমেরিকা ও রাশিয়ার তাবেদার হয়ে তাদের মিশন বাস্তবায়ন করেন। কিন্তু আল্লহর রহমতে কিছু মুসলিম শাসক ও সাধারণ মুসলিম এ সব ভয়ঙ্কর মিশন সম্পর্কে জানতে পেরেছেন। মুসলিম যুবকেরা উপকারী ইলম ও ঈমানী শক্তি নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছেন। তারা কুরআন ও সুন্নহের দিকে ফিরে আসছে। তারা তাদের সে সব শাসকদেরকে ইসলামের শত্রুদের সাথে সম্পর্কে ছিন্ন করতে জোর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন যারা মনে করেন তাদের ভাগ্য আমেরিকা ও রাশিয়ার হাতে, অথচ তারা নিজেরাই ব্যর্থ ও নানা সমস্যায় জর্জরিত, যেমনটি ছিল সমাজতন্ত্রের অবস্থা। আলহামদু লিল্লাহ রাব্বিল ‘আলামিন।

 

 

 

পরিচ্ছেদ 

নবুওয়তের পূর্বাভাষ 

عَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا، قَالَتْ: «كَانَ يَوْمُ بُعَاثَ، يَوْمًا قَدَّمَهُ اللَّهُ لِرَسُولِهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَقَدِمَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَقَدِ افْتَرَقَ مَلَؤُهُمْ، وَقُتِلَتْ سَرَوَاتُهُمْ وَجُرِّحُوا، فَقَدَّمَهُ اللَّهُ لِرَسُولِهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي دُخُولِهِمْ فِي الإِسْلاَمِ».

আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, বু‘আস যুদ্ধ[19] এমন একটি যুদ্ধ ছিল, যা আল্লাহ তা‘আলা (মদীনার পরিবেশকে) তাঁর (রাসূলের অনুকূল করার জন্য) মদীনা আগমনের পূর্বেই ঘটিয়েছিলেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন মদীনায় আগমন করলেন তখন সেখানকার সম্ভ্রান্ত ও নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিবর্গ নানা দলে উপদলে বিভক্ত হয়ে পড়েছিল। তাদের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিগণ এ যুদ্ধে নিহত ও আহত হয়েছিল। তাদের ইসলাম গ্রহণকে আল্লাহ্ তা‘আলা তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জন্য অনুকূল করে দিয়েছিলেন।[20]

عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ أَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَتَاهُ جِبْرِيلُ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَهُوَ يَلْعَبُ مَعَ الْغِلْمَانِ، فَأَخَذَهُ فَصَرَعَهُ، فَشَقَّ عَنْ قَلْبِهِ، فَاسْتَخْرَجَ الْقَلْبَ، فَاسْتَخْرَجَ مِنْهُ عَلَقَةً، فَقَالَ: هَذَا حَظُّ الشَّيْطَانِ مِنْكَ، ثُمَّ غَسَلَهُ فِي طَسْتٍ مِنْ ذَهَبٍ بِمَاءِ زَمْزَمَ، ثُمَّ لَأَمَهُ، ثُمَّ أَعَادَهُ فِي مَكَانِهِ، وَجَاءَ الْغِلْمَانُ يَسْعَوْنَ إِلَى أُمِّهِ - يَعْنِي ظِئْرَهُ - فَقَالُوا: إِنَّ مُحَمَّدًا قَدْ قُتِلَ، فَاسْتَقْبَلُوهُ وَهُوَ مُنْتَقِعُ اللَّوْنِ "، قَالَ أَنَسٌ: «وَقَدْ كُنْتُ أَرَى أَثَرَ ذَلِكَ الْمِخْيَطِ فِي صَدْرِهِ».

আনাস ইবন মালিক রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে জিবরীল আলাইহিস সালাম এলেন, তখন তিনি শিশুদের সাথে খেলছিলেন। তিনি তাঁকে ধরে শোয়ালেন এবং বক্ষ বিদীর্ণ করে তাঁর হৎপিশুটি বের করে আনলেন। তারপর তিনি তাঁর বক্ষ থেকে একটি রক্তপিশু বের করলেন এবং বললেন এ অংশটি শয়তানের। এরপর হৎপিশুটিকে একটি স্বর্ণের পাত্রে রেখে যমযমের পানি দিয়ে ধৌত করলেন এবং তার অংশগুলো জড়ো করে আবার তা যথাস্থানে পূনঃস্থাপন করলেন। তখন ঐ শিশুরা দৌড়ে তাঁর দুধমায়ের কাছে গেল এবং বলল, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে হত্যা করা হয়েছে। কথাটি শুনে সবাই সেদিকে এগিয়ে গিয়ে দেখল তিনি ভয়ে বিবর্ণ হয়ে আছেন! আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বক্ষে সে সেলাই-এর চিহ্ন দেখেছি।[21]

 

 

পরিচ্ছেদ 

অহী নাযিলের ধরণ ও প্রকার 

عَنْ أَبِي سَعِيدٍ الخُدْرِيِّ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِنَّ أَكْثَرَ مَا أَخَافُ عَلَيْكُمْ مَا يُخْرِجُ اللَّهُ لَكُمْ مِنْ بَرَكَاتِ الأَرْضِ» قِيلَ: وَمَا بَرَكَاتُ الأَرْضِ؟ قَالَ: «زَهْرَةُ الدُّنْيَا» فَقَالَ لَهُ رَجُلٌ: هَلْ يَأْتِي الخَيْرُ بِالشَّرِّ؟ فَصَمَتَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ حَتَّى ظَنَنَّا أَنَّهُ يُنْزَلُ عَلَيْهِ، ثُمَّ جَعَلَ يَمْسَحُ عَنْ جَبِينِهِ، فَقَالَ: «أَيْنَ السَّائِلُ؟» قَالَ: أَنَا - قَالَ أَبُو سَعِيدٍ: لَقَدْ حَمِدْنَاهُ حِينَ طَلَعَ ذَلِكَ - قَالَ: «لاَ يَأْتِي الخَيْرُ إِلَّا بِالخَيْرِ، إِنَّ هَذَا المَالَ خَضِرَةٌ حُلْوَةٌ، وَإِنَّ كُلَّ مَا أَنْبَتَ الرَّبِيعُ يَقْتُلُ حَبَطًا أَوْ يُلِمُّ، إِلَّا آكِلَةَ الخَضِرَةِ، أَكَلَتْ حَتَّى إِذَا امْتَدَّتْ خَاصِرَتَاهَا، اسْتَقْبَلَتِ الشَّمْسَ، فَاجْتَرَّتْ وَثَلَطَتْ وَبَالَتْ، ثُمَّ عَادَتْ فَأَكَلَتْ. وَإِنَّ هَذَا المَالَ حُلْوَةٌ، مَنْ أَخَذَهُ بِحَقِّهِ، وَوَضَعَهُ فِي حَقِّهِ، فَنِعْمَ المَعُونَةُ هُوَ، وَمَنْ أَخَذَهُ بِغَيْرِ حَقِّهِ كَانَ كَالَّذِي يَأْكُلُ وَلاَ يَشْبَعُ».

আবূ সাঈদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আল্লাহ তা‘আলা তোমাদের জন্যে যমীনের বরকতসমূহ প্রকাশিত করে দেবেন, আমি তোমাদের জন্যে এ ব্যাপারেই সর্বাধিক আশংকা করছি। জিজ্ঞাসা করা হলো, যমীনের বরকতসমূহ কি? তিনি বললেন, দুনিয়ার ঝাঁকজমক। তখন এক ব্যক্তি তার কাছে বললেন, ভালো কি মন্দ নিয়ে আসবে? তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কিছুক্ষন নীরব থাকলেন, যদ্দরুন আমরা ধারণা করলাম যে, এখন তার উপর অহী নাযিল হচ্ছে। এরপর তিনি তার কপাল থেকে ঘাম মুছে জিজ্ঞাসা করলেন, প্রশ্নকারী কোথায়? সে বলল, আমি এখানে। -আবূ সাঈদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, যখন এটি প্রকাশ পেল, তখন আমরা প্রশ্নকারীর প্রশংসা করলাম-। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ভালো একমাত্র ভালোকেই বয়ে আনে। নিশ্চয়ই এ ধন-দৌলত সবুজ শ্যামল সুমিষ্ট। অবশ্য বসন্ত যে সবজি উৎপাদন করে, তা ভক্ষনকারী পশুকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেয় অথবা মৃত্যুর নিকটে করে দেয়, তবে যে প্রাণী পেট ভরে খেয়ে সূর্য মুখী হয়ে জাবর কাটে (চর্বণ করে), মল-মূত্র ত্যাগ করে এবং পুনরায় খায় (এর অবস্থা ভিন্ন)। এ পৃথিবীর ধন-দৌলত তদ্রুপ সুমিষ্ট। যে ব্যক্তি তা সৎভাবে গ্রহণ করবে এবং সৎকাজে ব্যয় করবে, তা তার খুবই সাহায্যকারী হবে, আর যে তা অন্যায়ভাবে গ্রহন করবে, তার অবস্থা হবে ঔ ব্যক্তির মত যে খেতে থাকে আর পরিতৃপ্ত হয় না।[22]

عَنْ عَائِشَةَ أُمِّ المُؤْمِنِينَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا، أَنَّ الحَارِثَ بْنَ هِشَامٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ سَأَلَ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ: يَا رَسُولَ اللَّهِ، كَيْفَ يَأْتِيكَ الوَحْيُ؟ فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «أَحْيَانًا يَأْتِينِي مِثْلَ صَلْصَلَةِ الجَرَسِ، وَهُوَ أَشَدُّهُ عَلَيَّ، فَيُفْصَمُ عَنِّي وَقَدْ وَعَيْتُ عَنْهُ مَا قَالَ، وَأَحْيَانًا يَتَمَثَّلُ لِيَ المَلَكُ رَجُلًا فَيُكَلِّمُنِي فَأَعِي مَا يَقُولُ» قَالَتْ عَائِشَةُ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا: وَلَقَدْ رَأَيْتُهُ يَنْزِلُ عَلَيْهِ الوَحْيُ فِي اليَوْمِ الشَّدِيدِ البَرْدِ، فَيَفْصِمُ عَنْهُ وَإِنَّ جَبِينَهُ لَيَتَفَصَّدُ عَرَقًا.

‘আয়িশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা থেকে বর্ণিত, হারিস ইবন হিশাম রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘ইয়া রাসূলুল্লাহ্! সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আপনার প্রতি অহী কিভাবে আসে? রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, কোনো সময় তা ঘন্টাধ্বনির ন্যায় আমার নিকট অহী আসে, আর এটিই আমার উপর সবচাইতে কষ্টদায়ক হয় এবং তা সমাপ্ত হতেই ফিরিশতা যা বলেন আমি তা মুখস্থ করে নেই। আবার কখনো ফিরিশতা মানুষের আকৃতিতে আমার সঙ্গে কথা বলে। তিনি যা বলেন আমি তা মুখস্থ করে ফেলি। আয়িশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা বলেন, আমি প্রচণ্ড শীতের দিনে ওহী নাযিলরত অবস্থায় তাঁকে দেখেছি। অহী শেষ হলেই তাঁর কপাল থেকে ঘাম ঝরে পড়ত।[23]

عَنْ عَائِشَةَ أُمِّ المُؤْمِنِينَ أَنَّهَا قَالَتْ: أَوَّلُ مَا بُدِئَ بِهِ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مِنَ الوَحْيِ الرُّؤْيَا الصَّالِحَةُ فِي النَّوْمِ، فَكَانَ لاَ يَرَى رُؤْيَا إِلَّا جَاءَتْ مِثْلَ فَلَقِ الصُّبْحِ، ثُمَّ حُبِّبَ إِلَيْهِ الخَلاَءُ، وَكَانَ يَخْلُو بِغَارِ حِرَاءٍ فَيَتَحَنَّثُ فِيهِ - وَهُوَ التَّعَبُّدُ - اللَّيَالِيَ ذَوَاتِ العَدَدِ قَبْلَ أَنْ يَنْزِعَ إِلَى أَهْلِهِ، وَيَتَزَوَّدُ لِذَلِكَ، ثُمَّ يَرْجِعُ إِلَى خَدِيجَةَ فَيَتَزَوَّدُ لِمِثْلِهَا، حَتَّى جَاءَهُ الحَقُّ وَهُوَ فِي غَارِ حِرَاءٍ، فَجَاءَهُ المَلَكُ فَقَالَ: اقْرَأْ، قَالَ: «مَا أَنَا بِقَارِئٍ»، قَالَ: " فَأَخَذَنِي فَغَطَّنِي حَتَّى بَلَغَ مِنِّي الجَهْدَ ثُمَّ أَرْسَلَنِي، فَقَالَ: اقْرَأْ، قُلْتُ: مَا أَنَا بِقَارِئٍ، فَأَخَذَنِي فَغَطَّنِي الثَّانِيَةَ حَتَّى بَلَغَ مِنِّي الجَهْدَ ثُمَّ أَرْسَلَنِي، فَقَالَ: اقْرَأْ، فَقُلْتُ: مَا أَنَا بِقَارِئٍ، فَأَخَذَنِي فَغَطَّنِي الثَّالِثَةَ ثُمَّ أَرْسَلَنِي، فَقَالَ: ﴿ ٱقۡرَأۡ بِٱسۡمِ رَبِّكَ ٱلَّذِي خَلَقَ ١ خَلَقَ ٱلۡإِنسَٰنَ مِنۡ عَلَقٍ ٢ ٱقۡرَأۡ وَرَبُّكَ ٱلۡأَكۡرَمُ ٣ ﴾ [العلق: ١، ٣] فَرَجَعَ بِهَا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَرْجُفُ فُؤَادُهُ، فَدَخَلَ عَلَى خَدِيجَةَ بِنْتِ خُوَيْلِدٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا، فَقَالَ: «زَمِّلُونِي زَمِّلُونِي» فَزَمَّلُوهُ حَتَّى ذَهَبَ عَنْهُ الرَّوْعُ، فَقَالَ لِخَدِيجَةَ وَأَخْبَرَهَا الخَبَرَ: «لَقَدْ خَشِيتُ عَلَى نَفْسِي» فَقَالَتْ خَدِيجَةُ: كَلَّا وَاللَّهِ مَا يُخْزِيكَ اللَّهُ أَبَدًا، إِنَّكَ لَتَصِلُ الرَّحِمَ، وَتَحْمِلُ الكَلَّ، وَتَكْسِبُ المَعْدُومَ، وَتَقْرِي الضَّيْفَ، وَتُعِينُ عَلَى نَوَائِبِ الحَقِّ، فَانْطَلَقَتْ بِهِ خَدِيجَةُ حَتَّى أَتَتْ بِهِ وَرَقَةَ بْنَ نَوْفَلِ بْنِ أَسَدِ بْنِ عَبْدِ العُزَّى ابْنَ عَمِّ خَدِيجَةَ وَكَانَ امْرَأً تَنَصَّرَ فِي الجَاهِلِيَّةِ، وَكَانَ يَكْتُبُ الكِتَابَ العِبْرَانِيَّ، فَيَكْتُبُ مِنَ الإِنْجِيلِ بِالعِبْرَانِيَّةِ مَا شَاءَ اللَّهُ أَنْ يَكْتُبَ، وَكَانَ شَيْخًا كَبِيرًا قَدْ عَمِيَ، فَقَالَتْ لَهُ خَدِيجَةُ: يَا ابْنَ عَمِّ، اسْمَعْ مِنَ ابْنِ أَخِيكَ، فَقَالَ لَهُ وَرَقَةُ: يَا ابْنَ أَخِي مَاذَا تَرَى؟ فَأَخْبَرَهُ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ خَبَرَ مَا رَأَى، فَقَالَ لَهُ وَرَقَةُ: هَذَا النَّامُوسُ الَّذِي نَزَّلَ اللَّهُ عَلَى مُوسَى، يَا لَيْتَنِي فِيهَا جَذَعًا، لَيْتَنِي أَكُونُ حَيًّا إِذْ يُخْرِجُكَ قَوْمُكَ، فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «أَوَ مُخْرِجِيَّ هُمْ»، قَالَ: نَعَمْ، لَمْ يَأْتِ رَجُلٌ قَطُّ بِمِثْلِ مَا جِئْتَ بِهِ إِلَّا عُودِيَ، وَإِنْ يُدْرِكْنِي يَوْمُكَ أَنْصُرْكَ نَصْرًا مُؤَزَّرًا. ثُمَّ لَمْ يَنْشَبْ وَرَقَةُ أَنْ تُوُفِّيَ، وَفَتَرَ الوَحْي.

‘আয়িশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি সর্বপ্রথম যে অহী আসে, তা ছিল ঘুমের মধ্যে সত্য স্বপ্নরূপে। যে স্বপ্নই তিনি দেখতেন তা একেবারে ভোরের আলোর ন্যায় প্রকাশ পেত। তারপর তাঁর কাছে নির্জনতা প্রিয় হয়ে পড়ে এবং তিনি ‘হেরা’ গুহায় নির্জনে থাকতেন। আপন পরিবারের কাছে ফিরে আসা এবং কিছু খাদ্যসামগ্রী সঙ্গে নিয়ে যাওয়া, এইভাবে সেখানে তিনি একাধারে বেশ কয়েক রাত ইবাদতে মগ্ন থাকতেন। তারপর খাদীজা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহার কাছে ফিরে এসে আবার অনুরূপ সময়ের জন্য কিছু খাদ্যসামগ্রী নিয়ে যেতেন। এমনিভাবে ‘হেরা’ গুহায় অবস্থানকালে একদিন তাঁর কাছে ওহী এলো। তাঁর কাছে ফিরিশতা এসে বললেন, ‘পড়ুন’। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বললেন, “আমি বললাম, ‘আমি পড়িনা’। তিনি বলেনঃ তারপর তিনি আমাকে জড়িয়ে ধরে এমন ভাবে চাপ দিলেন যে, আমার অত্যন্ত কষ্ট হলো। তারপর তিনি আমাকে ছেড়ে দিয়ে বললেন, ‘পড়ুন’। আমি বললাম, আমিতো পড়ি না। তিনি দ্বিতীয়বার আমাকে জড়িয়ে ধরে এমন ভাবে চাপ দিলেন যে, আমার অত্যন্ত কষ্ট হলো। এরপর তিনি আমাকে ছেড়ে দিয়ে বললেন, ‘পড়ুন’। আমি জবাব দিলাম, ‘আমিতো পড়ি না’। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বলেন, তারপর তৃতীয়বার তিনি আমাকে জড়িয়ে ধরে চাপ দিলেন। এরপর ছেড়ে দিয়ে বললেন, “পড়ুন আপনার রবের নামে যিনি সৃষ্টি করেছেন। সৃষ্টি করেছেন মানুষকে ‘আলাক (রক্তপিণ্ড) থেকে। পড়ুন আর আপনার রব্ মহামহিমান্বিত।” [সূরা আল্-আলাক: ১-৩]

তারপর এ আয়াত নিয়ে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ফিরে এলেন। তাঁর অন্তর তখন কাঁপছিল। তিনি খাদীজা বিন্‌ত খুওয়ালিদের কাছে এসে বললেন, ‘আমাকে চাদর দিয়ে ঢেকে দাও, আমাকে চাদর দিয়ে ঢেকে দাও।’ তাঁরা তাঁকে চাদর দিয়ে ঢেকে দিলেন। অবশেষে তাঁর ভয় দূর হলো। তখন তিনি খাদীজা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহার কাছে সকল ঘটনা জানিয়ে তাঁকে বললেন, আমি নিজের উপর আশংকা বোধ করছি। খাদীজা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা বললেন, আল্লাহ্‌র কসম, কখনো না। আল্লাহ্ আপনাকে কখনো অপমানিত করবেন না। আপনিতো আত্মীয়-স্বজনের সাথে সদ্ব্যবহার করেন, অসহায় দুর্বলের দায়িত্ব বহন করেন, নিঃস্বকে সাহায্য করেন, মেহমানের মেহমানদারী করেন এবং দুর্দশাগ্রস্তকে সাহায্য করেন। এরপর তাঁকে নিয়ে খাদীজা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা তাঁর চাচাতো ভাই ওয়ারাকা ইব্‌ন নাওফিল ইব্‌ন ‘আবদুল আসাদ ইব্‌ন ‘আবদুল ‘উযযার কাছে গেলেন, যিনি জাহিলী যুগে ‘ঈসা আলাইহিস সালামের’ ধর্ম গ্রহণ করেছিলেন। তিনি ইবরানী ভাষা লিখতে জানতেন এবং আল্লাহ্‌র তওফীক অনুযায়ী ইবরানী ভাষায় ইনজীল থেকে অনুবাদ করতেন। তিনি ছিলেন অত্যন্ত বয়োবৃদ্ধ এবং অন্ধ হয়ে গিয়েছিলেন। খাদীজা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা তাঁকে বললেন, ‘হে চাচাতো ভাই! আপনার ভাতিজার কথা শুনুন।’ ওয়ারাকা তাঁকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘ভাতিজা! তুমি কী দেখ?’ রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যা দেখেছিলেন, সবই খুলে বললেন। তখন ওয়ারাকা তাঁকে বললেন, ‘ইনি সে দূত যাঁকে আল্লাহ্ মূসা ‘আলাইহিস সালামের কাছে পাঠিয়েছিলেন। আফসোস! আমি যদি সেদিন যুবক থাকতাম। আফসোস! আমি যদি সেদিন জীবিত থাকতাম, যেদিন তোমার জাতি তোমাকে বের করে দেবে।’ রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বললেন, তাঁরা কি আমাকে বের করে দিবে? তিনি বললেন, ‘হ্যাঁ, অতীতে যিনিই তোমার মত কিছু নিয়ে এসেছেন তাঁর সঙ্গেই শত্রুতা করা হয়েছে। সেদিন যদি আমি থাকি, তবে তোমাকে প্রবলভাবে সাহায্য করব।’ এর কিছুদিন পর ওয়ারাকা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু মৃত্যুবরণ করেন। আর অহী কিছুদিন স্থগিত থাকে।[24]

عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ فِي قَوْلِهِ تَعَالَى: ﴿ لَا تُحَرِّكۡ بِهِۦ لِسَانَكَ لِتَعۡجَلَ بِهِۦٓ ١٦ ﴾ [القيامة: ١٦] قَالَ: كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُعَالِجُ مِنَ التَّنْزِيلِ شِدَّةً، وَكَانَ مِمَّا يُحَرِّكُ شَفَتَيْهِ - فَقَالَ ابْنُ عَبَّاسٍ: فَأَنَا أُحَرِّكُهُمَا لَكُمْ كَمَا كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُحَرِّكُهُمَا، وَقَالَ سَعِيدٌ: أَنَا أُحَرِّكُهُمَا كَمَا رَأَيْتُ ابْنَ عَبَّاسٍ يُحَرِّكُهُمَا، فَحَرَّكَ شَفَتَيْهِ - فَأَنْزَلَ اللَّهُ تَعَالَى: ﴿ لَا تُحَرِّكۡ بِهِۦ لِسَانَكَ لِتَعۡجَلَ بِهِۦٓ ١٦ إِنَّ عَلَيۡنَا جَمۡعَهُۥ وَقُرۡءَانَهُۥ ١٧ ﴾ [القيامة: ١٦، ١٧] قَالَ: جَمْعُهُ لَكَ فِي صَدْرِكَ وَتَقْرَأَهُ: ﴿ فَإِذَا قَرَأۡنَٰهُ فَٱتَّبِعۡ قُرۡءَانَهُۥ ١٨ ﴾ [القيامة: ١٨] قَالَ: فَاسْتَمِعْ لَهُ وَأَنْصِتْ: ﴿ ثُمَّ إِنَّ عَلَيۡنَا بَيَانَهُۥ ١٩ ﴾ [القيامة: ١٩] ثُمَّ إِنَّ عَلَيْنَا أَنْ تَقْرَأَهُ، فَكَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بَعْدَ ذَلِكَ إِذَا أَتَاهُ جِبْرِيلُ اسْتَمَعَ فَإِذَا انْطَلَقَ جِبْرِيلُ قَرَأَهُ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَمَا قَرَأَهُ.

ইব্‌ন ‘আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা থেকে বর্ণিত, মহান আল্লাহর বাণী: ‘তাড়াতাড়ি অহী আয়ত্ত করার জন্য আপনার জিহ্বা তার সাথে নাড়বেন না’ [সূরা আল-কিয়ামাহ : ১৬] এর ব্যাখ্যায় তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অহী নাযিলের সময় তা আয়ত্ত করতে বেশ কষ্ট স্বীকার করতেন এবং প্রায়ই তিনি তাঁর উভয় ঠোঁট নাড়তেন। ইব্‌ন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা বলেন, ‘আমি তোমাকে দেখানোর জন্য ঠোঁট দুটি নাড়ছি যেভাবে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নাড়তেন।’ সা’ঈদ রহ. (তাঁর শাগরিদদের) বললেন, ‘আমি ইব্‌ন ’আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমাকে যেভাবে তাঁর ঠোঁট দুটি নাড়তে দেখেছি, সেভাবেই আমার ঠোঁট দুটি নড়াচ্ছি।’ এই বলে তিনি তাঁর ঠোঁট দুটি নাড়ালেন। এ সম্পর্কে আল্লাহ্ তা‘আলা নাযিল করলেন, “তাড়াতাড়ি অহী আয়ত্ত করার জন্য আপনি আপনার জিহবা তার সাথে নাড়বেন না। এর সংরক্ষণ ও পাঠ করানোর দায়িত্ব আমারই।” [সূরা আল-কিয়ামাহ : ১৬-১৭] ইব্‌ন ‘আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা বলেন অর্থাৎ মনোযোগ সহকারে শুনুন এবং চুপ থাকুন। “এরপর এর বিশদ ব্যাখ্যার দায়িত্ব আমারই” [সূরা আল-কিয়ামাহ : ১৯] ।’ অর্থাৎ আপনি তা পাঠ করবেন এটাও আমার দায়িত্ব। তারপর যখন রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে জিবরীল আলাইহিস সালাম আসতেন, তখন তিনি মনোযোগ সহকারে কেবল শুনতেন। জিবরীল আলাইহিস সালাম চলে গেলে তিনি যেমন পড়েছিলেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও ঠিক তেমনি পড়তেন।[25]

عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ، قَالَ: «كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَجْوَدَ النَّاسِ، وَكَانَ أَجْوَدُ مَا يَكُونُ فِي رَمَضَانَ حِينَ يَلْقَاهُ جِبْرِيلُ، وَكَانَ يَلْقَاهُ فِي كُلِّ لَيْلَةٍ مِنْ رَمَضَانَ فَيُدَارِسُهُ القُرْآنَ، فَلَرَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَجْوَدُ بِالخَيْرِ مِنَ الرِّيحِ المُرْسَلَةِ».

ইব্‌ন ‘আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, “রাসূলুল্লাহ্ রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছিলেন সর্বশ্রেষ্ঠ দাতা। রমাদানে তিনি আরো বেশী দানশীল হতেন, যখন জিবরীল আলাইহিস সালাম তাঁর সাথে সাক্ষাৎ করতেন। আর রমাদানের প্রতি রাতেই জিবরীল আলাইহিস সালাম তাঁর সাথে সাক্ষাৎ করতেন এবং তাঁরা পরস্পর কুরআন তেলওয়াত করে শোনাতেন। নিশ্চয়ই রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রহমতের বাতাস থেকেও অধিক দানশীল ছিলেন”। [26]

عَنْ عُبَادَةَ بْنِ الصَّامِتِ، قَالَ: «كَانَ نَبِيُّ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا أُنْزِلَ عَلَيْهِ الْوَحْيُ كُرِبَ لِذَلِكَ وَتَرَبَّدَ وَجْهُهُ».

উবাদা ইবন সামিত রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, তিনি বলেন: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর যখন অহী আসতো তখন তাতে তাঁর খুব কষ্ট হতো এবং তার চেহারা মুবারক মলিন হয়ে যেতো ।[27]

عَنْ عُبَادَةَ بْنِ الصَّامِتِ، قَالَ: «كَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا أُنْزِلَ عَلَيْهِ الْوَحْيُ نَكَسَ رَأْسَهُ وَنَكَسَ أَصْحَابُهُ رُءُوسَهُمْ، فَلَمَّا أُتْلِيَ عَنْهُ رَفَعَ رَأْسَهُ».

উবাদা ইবন সামিত রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর যখন অহী নাযিল হতো তখন তিনি মাথা নিচু করে ফেলতেন এবং তাঁর সাহাবীরাও মাথা নিচু করতেন। তারপর যখন অহী শেষ হয়ে যেতো, তিনি তাঁর মাথা তুলতেন।[28]

حَدَّثَنَا أَبُو عُثْمَانَ، قَالَ: أُنْبِئْتُ أَنَّ جِبْرِيلَ عَلَيْهِ السَّلاَمُ أَتَى النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، وَعِنْدَهُ أُمُّ سَلَمَةَ، فَجَعَلَ يُحَدِّثُ ثُمَّ قَامَ، فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لِأُمِّ سَلَمَةَ: «مَنْ هَذَا؟» أَوْ كَمَا قَالَ، قَالَ: قَالَتْ: هَذَا دِحْيَةُ، قَالَتْ أُمُّ سَلَمَةَ: ايْمُ اللَّهِ مَا حَسِبْتُهُ إِلَّا إِيَّاهُ، حَتَّى سَمِعْتُ خُطْبَةَ نَبِيِّ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُخْبِرُ جِبْرِيلَ، أَوْ كَمَا قَالَ، قَالَ: فَقُلْتُ لِأَبِي عُثْمَانَ: مِمَّنْ سَمِعْتَ هَذَا؟ قَالَ: مِنْ أُسَامَةَ بْنِ زَيْدٍ.

আবু উসমান রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমাকে জানানো হল যে, একবার জিবরীল আলাইহিস সালাম নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট আসলেন। তখন উম্মে সালামা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা তার নিকট ছিলেন। তিনি এসে তাঁর সঙ্গে আলোচনা করলেন। তারপর উঠে গেলেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উম্মে সালামাকে জিজ্ঞাসা করলেন, লোকটিকে চিনতে পেরেছ কি? তিনি বললেন, এইতো দেহইয়া। উম্মে সালামা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা বলেন, আল্লাহ্‌র কসম। আমি ‘দেহইয়া’ বলেই বিশ্বাস করছিলাম, কিন্তু নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে তাঁর খুতবায় জিবরীল আলাইহিস সালামের আগমনের কথা বলতে শুনলাম। (সুলায়মান (রাবী) বলেন) আমি আবু উসমানকে জিজ্ঞাসা করলাম এ হাদীসটি আপনি কার কাছে শুনেছেন? তিনি বললেন, উসামা ইবন যায়েদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু এর নিকট শুনেছি।[29]

عَنِ الأَسْوَدِ بْنِ قَيْسٍ، قَالَ: سَمِعْتُ جُنْدَبًا، يَقُولُ: "اشْتَكَى النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَلَمْ يَقُمْ لَيْلَةً - أَوْ لَيْلَتَيْنِ - فَأَتَتْهُ امْرَأَةٌ، فَقَالَتْ: يَا مُحَمَّدُ مَا أُرَى شَيْطَانَكَ إِلَّا قَدْ تَرَكَكَ، فَأَنْزَلَ اللَّهُ عَزَّ وَجَلَّ: ﴿ وَٱلضُّحَىٰ ١ وَٱلَّيۡلِ إِذَا سَجَىٰ ٢ مَا وَدَّعَكَ رَبُّكَ وَمَا قَلَىٰ ٣ ﴾ [الضحا: ١، ٣] .

জুনদুব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেন, একবার রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অসুস্থ হয়ে পড়লেন। ফলে এক কি দু’রাত তিনি উঠতে পারেননি। জনৈকা মহিলা তাঁর কাছে এস বলল, হে মুহাম্মদ! আমার মনে হয়, তোমার শয়তান তোমাকে পরিত্যাগ করেছেন। তখন আল্লাহ নাযিল করলেন,

﴿ وَٱلضُّحَىٰ ١ وَٱلَّيۡلِ إِذَا سَجَىٰ ٢ مَا وَدَّعَكَ رَبُّكَ وَمَا قَلَىٰ ٣ ﴾ [الضحا: ١، ٣]

“শপথ পূর্বাহ্নের, শপথ রজনীর, যখন তা হয় নিঝুম। তোমার প্রতিপালক তোমাকে পরিত্যাগ করেননি এবং তোমার প্রতি বিরূপও হননি”। [সূরা দোহা: ১-৩] [30]

عن صَفْوَان بْن يَعْلَى بْنِ أُمَيَّةَ، أنه أَخْبَرَهُ: أَنَّ يَعْلَى كَانَ يَقُولُ: لَيْتَنِي أَرَى رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ حِينَ يُنْزَلُ عَلَيْهِ، قَالَ: فَبَيْنَا النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِالْجِعْرَانَةِ وَعَلَيْهِ ثَوْبٌ قَدْ أُظِلَّ بِهِ، مَعَهُ فِيهِ نَاسٌ مِنْ أَصْحَابِهِ، إِذْ جَاءَهُ أَعْرَابِيٌّ عَلَيْهِ جُبَّةٌ مُتَضَمِّخٌ بِطِيبٍ، فَقَالَ: يَا رَسُولَ اللَّهِ، كَيْفَ تَرَى فِي رَجُلٍ أَحْرَمَ بِعُمْرَةٍ فِي جُبَّةٍ بَعْدَمَا تَضَمَّخَ بِالطِّيبِ؟ فَأَشَارَ عُمَرُ إِلَى يَعْلَى بِيَدِهِ: أَنْ تَعَالَ، فَجَاءَ يَعْلَى فَأَدْخَلَ رَأْسَهُ، فَإِذَا النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مُحْمَرُّ الوَجْهِ، يَغِطُّ كَذَلِكَ سَاعَةً، ثُمَّ سُرِّيَ عَنْهُ، فَقَالَ: «أَيْنَ الَّذِي يَسْأَلُنِي عَنِ العُمْرَةِ آنِفًا» فَالْتُمِسَ الرَّجُلُ فَأُتِيَ بِهِ، فَقَالَ: «أَمَّا الطِّيبُ الَّذِي بِكَ فَاغْسِلْهُ ثَلاَثَ مَرَّاتٍ، وَأَمَّا الجُبَّةُ فَانْزِعْهَا، ثُمَّ اصْنَعْ فِي عُمْرَتِكَ كَمَا تَصْنَعُ فِي حَجِّكَ».

সাফওয়ান ইবন ইয়া‘লা ইবন উমাইয়া রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত যে, ইয়া‘লা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু (অনেক সময়) বলতেন যে, আহা! রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর অহী অবতীর্ণ হওয়ার মুহূর্তে যদি তাঁকে দেখতে পেতাম। ইয়া‘লা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, এরই মধ্যে একদা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জা‘রানা নামক স্থানে অবস্থান করছিলেন। তাঁর (মাথার) উপর একটি কাপড় টানিয়ে ছায়া করে দেওয়া হয়েছিল। আর সেখানে তাঁর সঙ্গে সাহাবীদের কয়েকজনও উপস্থিত ছিলেন। এমন সময় তাঁর কাছে এক বেদুঈন আসলো। তার গায়ে খুশবূ মাখানো ছিলো এবং পরনে ছিলো একটি জুব্বা। সে বললো, ইয়া রাসূলাল্লাহ্! ঐ ব্যক্তি সম্পর্কে আপনি কী মনে করেন যে গায়ে খুশবু মাখানোর পর জুব্বা পরিধান করা অবস্থায ‘উমরা আদায়ের জন্য ইহরাম বেঁধেছে? তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার দিকে কিছুক্ষণ তাকালেন আর তখনই তাঁর কাছে ওহী আসলো [প্রশ্নকারীর জবাব দেওয়ার পূর্বেই ‘উমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু দেখলেন রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের চেহারায় অহী অবতীর্ণ হওয়ার চিহৃ দেখা যাচ্ছে] তাই ‘উমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হাত দিয়ে ইশারা করে ইয়া‘লা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুকে আসতে বললেন। ইয়া‘লা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু এলে ‘উমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু তাঁর মাথাটি (ছায়ার নিচে) ঢুকিয়ে দিলেন। তখন তিনি (ইয়া‘লা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু) দেখতে পেলেন যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের চেহারা লাল বর্ণ হয়ে রয়েছে। আর ভিতরে শ্বাস দ্রুত যাতায়াত করছে। এ অবস্থা কিছুক্ষণ পর্যন্ত ছিল, তারপর স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে এলেন। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, সে লোকটি কোথায়, কিছুক্ষণ আগে যে আমাকে ‘উমরার বিষয়ে জিজ্ঞাসা করেছিল। এরপর লোকটিকে খুঁজে আনা হলে তিনি বললেন, তোমার গায়ে যে খুশবু রযেছে তা তুমি তিনবার ধুয়ে ফেল এবং জুব্বাটি খুলে ফেল। তারপর হজ্জ আদায়ে যা কিছু করে থাক ‘উমরাতেও সেগুলোই পালন কর।[31]

 

 

পরিচ্ছেদ

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের স্বপ্ন সম্পর্কে

নবীগণের স্বপ্ন অহীর অন্তর্ভুক্ত

আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতা‘আলা বলেছেন,

﴿ لَّقَدۡ صَدَقَ ٱللَّهُ رَسُولَهُ ٱلرُّءۡيَا بِٱلۡحَقِّۖ لَتَدۡخُلُنَّ ٱلۡمَسۡجِدَ ٱلۡحَرَامَ إِن شَآءَ ٱللَّهُ ءَامِنِينَ مُحَلِّقِينَ رُءُوسَكُمۡ وَمُقَصِّرِينَ لَا تَخَافُونَۖ فَعَلِمَ مَا لَمۡ تَعۡلَمُواْ فَجَعَلَ مِن دُونِ ذَٰلِكَ فَتۡحٗا قَرِيبًا ٢٧ ﴾ [الفتح: ٢٧]

“অবশ্যই আল্লাহ তাঁর রাসূলকে স্বপ্নটি যথাযথভাবে সত্যে পরিণত করে দিয়েছেন। তোমরা ইনশাআল্লাহ নিরাপদে তোমাদের মাথা মুন্ডন করে এবং চুল ছেঁটে নির্ভয়ে আল-মাসজিদুল হারামে অবশ্যই প্রবেশ করবে। অতঃপর আল্লাহ জেনেছেন যা তোমরা জানতে না। সুতরাং এ ছাড়াও তিনি দিলেন এক নিকটবর্তী বিজয়”। [সূরা আল-ফাতহ: ২৭]

عَنْ أَبِي سَلَمَةَ، قَالَ: انْطَلَقْتُ إِلَى أَبِي سَعِيدٍ الخُدْرِيِّ فَقُلْتُ: أَلاَ تَخْرُجُ بِنَا إِلَى النَّخْلِ نَتَحَدَّثُ، فَخَرَجَ، فَقَالَ: قُلْتُ: حَدِّثْنِي مَا سَمِعْتَ مِنَ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي لَيْلَةِ القَدْرِ، قَالَ: اعْتَكَفَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَشْرَ الأُوَلِ مِنْ رَمَضَانَ وَاعْتَكَفْنَا مَعَهُ، فَأَتَاهُ جِبْرِيلُ، فَقَالَ: إِنَّ الَّذِي تَطْلُبُ أَمَامَكَ، فَاعْتَكَفَ العَشْرَ الأَوْسَطَ، فَاعْتَكَفْنَا مَعَهُ فَأَتَاهُ جِبْرِيلُ فَقَالَ: إِنَّ الَّذِي تَطْلُبُ أَمَامَكَ، فَقَامَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ خَطِيبًا صَبِيحَةَ عِشْرِينَ مِنْ رَمَضَانَ فَقَالَ: «مَنْ كَانَ اعْتَكَفَ مَعَ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَلْيَرْجِعْ، فَإِنِّي أُرِيتُ لَيْلَةَ القَدْرِ، وَإِنِّي نُسِّيتُهَا، وَإِنَّهَا فِي العَشْرِ الأَوَاخِرِ، فِي وِتْرٍ، وَإِنِّي رَأَيْتُ كَأَنِّي أَسْجُدُ فِي طِينٍ وَمَاءٍ» وَكَانَ سَقْفُ المَسْجِدِ جَرِيدَ النَّخْلِ، وَمَا نَرَى فِي السَّمَاءِ شَيْئًا، فَجَاءَتْ قَزَعَةٌ، فَأُمْطِرْنَا، فَصَلَّى بِنَا النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ حَتَّى رَأَيْتُ أَثَرَ الطِّينِ وَالمَاءِ عَلَى جَبْهَةِ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَأَرْنَبَتِهِ تَصْدِيقَ رُؤْيَاهُ.

আবূ সালামা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি আবূ সায়ীদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর নিকট উপস্থিত হয়ে বললাম, আমাদের নিয়ে খেজুর বাগানে চলুন, (হাদীস সংক্রান্ত) আলাপ আলোচনা করব। তিনি বেরিয়ে আসলেন। আবূ সালামাহ্‌ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, আমি তাকে বললাম, ‘লাইলাতুল কাদর’ সম্পর্কে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে যা শুনেছেন তা আমার কাছে বর্ণনা করুন। তিনি বললেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রামাদানের প্রথম দশ দিন ই’তিকাফ করলেন। আমারও তাঁর সঙ্গে ই’তিকাফ করলাম। জিবরীল আলাইহিস সালাম এসে বললেন, আপনি যা তালাশ করছেন, তা আপনার সামনে রয়েছে। এরপর তিনি মধ্যবর্তী দশ দিন ই’তিকাফ করলেন, আমরাও তাঁর সঙ্গে ই’তিকাফ করলাম। পুনরায় জিবরীল আলাইহিস সালাম এসে বললেন, আপনি যা তালাশ করছেন, তা আপনার সামনে রয়েছে। এরপর রামদানের বিশ তারিখ সকালে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খুতবা দিতে দাঁড়িয়ে বললেন, যারা আল্লাহ্ নবীর সঙ্গে ই’তিকাফ করেছেন, তারা যেন ফিরে আসেন (আবার ই’তিকাফ করেন) কেননা, আমাকে স্বপ্নে ‘লাইলাতুল কাদর’ অবগত করানো হয়েছে। তবে আমাকে তা (নির্ধারিত তারিখটি) ভুলিয়ে দেওয়া হয়েছে। নিঃসন্দেহে তা শেষ দশ দিনের কোনো এক বেজোড় তারিখে। স্বপ্নে দেখলাম যেন আমি কাদা ও পানির উপর সিজদা করছি। তখন মসজিদের ছাদ খেজুরের ডাল দ্বারা নির্মিত ছিল। আমরা আকাশে কোনো কিছুই (মেঘ) দেখিনি, এক খণ্ড হালকা মেঘ আসল এবং আমাদের উপর (বৃষ্টি) বর্ষিত হল। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের নিয়ে সালাত আদায় করলেন। এমন কি আমি রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কপাল ও নাকের অগ্রভাগে পানি ও কাঁদার চিহ্ন দেখতে পেলাম। এভাবেই তাঁর স্বপ্ন সত্যে পরিণত হলো।[32]

عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ أُنَيْسٍ، أَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قَالَ: «أُرِيتُ لَيْلَةَ الْقَدْرِ، ثُمَّ أُنْسِيتُهَا، وَأَرَانِي صُبْحَهَا أَسْجُدُ فِي مَاءٍ وَطِينٍ» قَالَ: فَمُطِرْنَا لَيْلَةَ ثَلَاثٍ وَعِشْرِينَ، فَصَلَّى بِنَا رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَانْصَرَفَ وَإِنَّ أَثَرَ الْمَاءِ وَالطِّينِ عَلَى جَبْهَتِهِ وَأَنْفِهِ قَالَ: وَكَانَ عَبْدُ اللهِ بْنُ أُنَيْسٍ يَقُولُ: ثَلَاثٍ وَعِشْرِينَ.

আব্দুল্লাহ ইবন উনায়স রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আমাকে কদরের রাত দেখান হয়েছিল। অতঃপর তা ভুলিয়ে দেওয়া হয়েছে। আমাকে ঐ রাতের ভোর সম্পর্কে স্বপ্নে আরও দেখানো হয়েছে যে, আমি পানি ও কাদার মধ্যে সিজদা করছি। রাবী বলেন, অতএব তেইশতম রাতে বৃষ্টি হল এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের সাথে (ফজরের) সালাত আদায় করে যখন ফিরলেন, তখন আমরা তাঁর কপাল ও নাকের ডগায় কাদা ও পানির চিহ্ন দেখতে পেলাম। রাবী বলেন, আব্দুল্লাহ ইবন উনায়স রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলতেন, তা ছিল তেইশতম। [33]

عَنْ أَبِي مُوسَى، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «رَأَيْتُ فِي الْمَنَامِ أَنِّي أُهَاجِرُ مِنْ مَكَّةَ إِلَى أَرْضٍ بِهَا نَخْلٌ، فَذَهَبَ وَهْلِي إِلَى أَنَّهَا الْيَمَامَةُ أَوْ هَجَرُ، فَإِذَا هِيَ الْمَدِينَةُ يَثْرِبُ، وَرَأَيْتُ فِي رُؤْيَايَ هَذِهِ أَنِّي هَزَزْتُ سَيْفًا، فَانْقَطَعَ صَدْرُهُ، فَإِذَا هُوَ مَا أُصِيبَ مِنَ الْمُؤْمِنِينَ يَوْمَ أُحُدٍ، ثُمَّ هَزَزْتُهُ أُخْرَى فَعَادَ أَحْسَنَ مَا كَانَ، فَإِذَا هُوَ مَا جَاءَ اللهُ بِهِ مِنَ الْفَتْحِ وَاجْتِمَاعِ الْمُؤْمِنِينَ، وَرَأَيْتُ فِيهَا أَيْضًا بَقَرًا وَاللهُ خَيْرٌ، فَإِذَا هُمُ النَّفَرُ مِنَ الْمُؤْمِنِينَ يَوْمَ أُحُدٍ، وَإِذَا الْخَيْرُ مَا جَاءَ اللهُ بِهِ مِنَ الْخَيْرِ بَعْدُ، وَثَوَابُ الصِّدْقِ الَّذِي آتَانَا اللهُ بَعْدَ يَوْمِ بَدْرٍ».

আবু মুসা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু সূত্রে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণি, তিনি বলেন: আমি স্বপ্লে দেখলাম যে, আমি মক্কা থেকে এমন এক দেশে হিজরত করে যাচ্ছি যেখানে খেজুর গাছ রয়েছে। তাতে আমার কল্পনা এদিকে গেল যে, তা ইয়ামামা কিংবা হাজার (এলাকা) হবে। পরে (বাস্তবে) দেখি যে, তা হল মাদীনা (যার পূর্ব নাম) ইয়াসরিব। আমি আমার এ স্বপ্নে আরও দেখলাম যে, আমি একটি তরবারি নাড়াচাড়া করলাম, ফলে তার মধ্যখানে ভেংগে গেল। তা ছিল উহুদের দিনে, যা মু’মিনগণের উপর আপতিত হয়েছিল। পরে আমি আর একবার সেই তরবারি নাড়া দিলে তা আগের চাইতে উত্তম হয়ে গেল। মুলত তা হল সে বিজয় ও ঈমানদারদের সম্মিলন, যা আল্লাহ সংঘটিত করলেন (মক্কা বিজয়)। আমি তাতে একটি গরুও দেখলাম। আর আল্লাহ তা‘আলাই কল্যাণের অধিকারী। মূলত তা হল উহূদের যুদ্ধে (শাহাদাতপ্রাপ্ত) ঈমানদারগণের দলটি। আর কল্যাণ হল সে কল্যাণ, যা পরবর্তীতে আল্লাহ তা‘আলা দান করেছেন এবং সততা ও নিষ্ঠার সে সাওয়াব ও প্রতিদান যা আল্লাহ তা‘আলা আমাদের বদর যুদ্ধের পরে দিয়েছেন।[34]

عَنْ أَبِي مُوسَى، أُرَاهُ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قَالَ: «رَأَيْتُ فِي المَنَامِ أَنِّي أُهَاجِرُ مِنْ مَكَّةَ إِلَى أَرْضٍ بِهَا نَخْلٌ، فَذَهَبَ وَهَلِي إِلَى أَنَّهَا اليَمَامَةُ أَوْ هَجَرُ، فَإِذَا هِيَ المَدِينَةُ يَثْرِبُ، وَرَأَيْتُ فِي رُؤْيَايَ هَذِهِ أَنِّي هَزَزْتُ سَيْفًا، فَانْقَطَعَ صَدْرُهُ فَإِذَا هُوَ مَا أُصِيبَ مِنَ المُؤْمِنِينَ يَوْمَ أُحُدٍ، ثُمَّ هَزَزْتُهُ بِأُخْرَى فَعَادَ أَحْسَنَ مَا كَانَ فَإِذَا هُوَ مَا جَاءَ اللَّهُ بِهِ مِنَ الفَتْحِ، وَاجْتِمَاعِ المُؤْمِنِينَ وَرَأَيْتُ فِيهَا بَقَرًا، وَاللَّهُ خَيْرٌ فَإِذَا هُمُ المُؤْمِنُونَ يَوْمَ أُحُدٍ، وَإِذَا الخَيْرُ مَا جَاءَ اللَّهُ بِهِ مِنَ الخَيْرِ وَثَوَابِ الصِّدْقِ، الَّذِي آتَانَا اللَّهُ بَعْدَ يَوْمِ بَدْرٍ».

আবূ মূসা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আমি স্বপ্নে দেখতে পেলাম, আমি মক্কা থেকে হিজরত করে এমন এক স্থানে যাচ্ছি যেখানে প্রচুর খেজুর গাছ রয়েছে। তখন আমার ধারণা হল, এ স্থানটি ইয়ামামা অথবা হাজার হবে। পরে বুঝতে পেলাম, স্থানটি মদীনা ছিল। যার পূর্বনাম ইয়াসরিব। স্বপ্নে আমি আরো দেখতে পেলাম যে আমি একটি তরবারী হাতে নিয়ে নাড়াচাড়া করছি। হঠাৎ তার অগ্রভাগ ভেঙ্গে গেল। উহুদ যুদ্ধে মুসলিমদের যে বিপর্যয় ঘটেছিল এটা তা-ই। তারপর দ্বিতীয় বার তরবারীটি হাতে নিয়ে নাড়াচাড়া করলাম তখন তরবারীটি পূর্বাবস্থার চেয়েও অধিক উত্তম হয়ে গেল। এর তাৎপর্য হল যে, আল্লাহ মুসলিমগনকে বিজয়ী ও একত্রিত করে দেবেন। আমি স্বপ্নে আরো দেখতে পেলাম, একটি গরু (যা জবাই করা হচ্ছে) এবং শুনতে পেলাম আল্লাহ যা করেন সবই ভালো। এটাই হল উহুদ যুদ্ধে মুসলিমদের শাহাদাত বরণ। আর খায়ের হল আল্লাহ্‌র তরফ হতে আগত ঐ সকল কল্যাণই কল্যাণ এবং সত্যবাদিতার পুরষ্কার যা আল্লাহ আমাদেরকে বদর যুদ্ধের পর দান করেছেন।[35]

عَنْ هَمَّامِ بْنِ مُنَبِّهٍ، قَالَ: هَذَا مَا حَدَّثَنَا بِهِ أَبُو هُرَيْرَةَ، عَنْ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قَالَ: «نَحْنُ الآخِرُونَ السَّابِقُونَ».

আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: আমরা সর্বশেষ এবং সর্বপ্রথম। [36]

وَقَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: " بَيْنَا أَنَا نَائِمٌ أُتِيتُ خَزَائِنَ الْأَرْضِ فَوَضَعَ فِي يَدَيَّ أُسْوَارَيْنِ مِنْ ذَهَبٍ، فَكَبُرَا عَلَيَّ وَأَهَمَّانِي، فَأُوحِيَ إِلَيَّ أَنِ انْفُخْهُمَا فَنَفَخْتُهُمَا فَذَهَبَا، فَأَوَّلْتُهُمَا الْكَذَّابَيْنِ اللَّذَيْنِ أَنَا بَيْنَهُمَا: صَاحِبَ صَنْعَاءَ، وَصَاحِبَ الْيَمَامَةِ ".

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেন, আমি ঘুমন্ত ছিলাম, এমতাবস্থায় আমার কাছে পৃথিবীর ভাণ্ডারসমূহ নিয়ে আসা হল। তখন আমার হাতে দুটি সোনার কংকন রেখে দেওয়া হলে সে দুটি আমার জন্য বড় ভারী মনে হল এবং এগুলো আমাকে দুশ্চিন্তায় ফেলল। তখন আমার কাছে অহীর মাধ্যমে জানালো যে, আমি যেন সে দুটির উপরে ফুঁ দেই। তখন আমি ফু দিলে সে দুটির অন্তর্হিত হয়ে গেল। আমি সে দুটির ব্যাখ্যা করলাম সে হল মিথ্যুক ভণ্ড নবুওয়তের দাবীদারদ্বয় যারা আমার সামনে উত্থিত হয়েছে। (অর্থাৎ) সান‘আ অধিবাসী আসওয়াদ আল আনাসী এবং ইয়ামামার অধিবাসী মুসায়লামাতুল কাযযাব।[37]

عَنْ سَالِمِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ، عَنْ أَبِيهِ: أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قَالَ: «رَأَيْتُ كَأَنَّ امْرَأَةً سَوْدَاءَ ثَائِرَةَ الرَّأْسِ، خَرَجَتْ مِنَ المَدِينَةِ، حَتَّى قَامَتْ بِمَهْيَعَةَ - وَهِيَ الجُحْفَةُ - فَأَوَّلْتُ أَنَّ وَبَاءَ المَدِينَةِ نُقِلَ إِلَيْهَا».

সালিমের পিতা আবদুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: আমি দেখেছি যেন এলোমেলো কেশ বিশিষ্ট একজন কালো মহিলা মদীনা থেকে বের হয়ে মাহইয়া‘আ নামক স্থানে গিয়ে দাঁড়িয়েছে আর এটিকে ‘জুহফা’ বলা হয়। আমি এ স্বপ্নের ব্যাখ্যা এরুপ প্রদান করলাম যে, মদীনার মহামারী তথায় স্থানান্তরিত হল।[38]

عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «رَأَيْتُ ذَاتَ لَيْلَةٍ، فِيمَا يَرَى النَّائِمُ، كَأَنَّا فِي دَارِ عُقْبَةَ بْنِ رَافِعٍ، فَأُتِينَا بِرُطَبٍ مِنْ رُطَبِ ابْنِ طَابٍ، فَأَوَّلْتُ الرِّفْعَةَ لَنَا فِي الدُّنْيَا، وَالْعَاقِبَةَ فِي الْآخِرَةِ، وَأَنَّ دِينَنَا قَدْ طَابَ».

আনাস ইবন মালিক রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: এক রাতে আমি দেখলাম যেভাবে ঘুমন্ত ব্যক্তি দেখে (অর্থাৎ স্বপ্ন), যেন আমরা উকবা ইবন রাফি এর বাড়িতে রয়েছি। তখন আমাদের কাছে ইবন তাব (নামক) খেজুর হতে কিছু রুতাব তথা তাজা খেজুর নিয়ে আসা হল। তখন আমি এর ব্যাখ্যা করলাম, দুনিয়ার বুকে আমাদের জন্য উন্নতি এবং আখিরাতে শুভ পরিণতি। আর আমাদের দীন অবশ্যই উত্তম।[39]

عَنْ نَافِعٍ، أَنَّ عَبْدَ اللهِ بْنَ عُمَرَ، حَدَّثَهُ أَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: " أَرَانِي فِي الْمَنَامِ أَتَسَوَّكُ بِسِوَاكٍ، فَجَذَبَنِي رَجُلَانِ، أَحَدُهُمَا أَكْبَرُ مِنَ الْآخَرِ، فَنَاوَلْتُ السِّوَاكَ الْأَصْغَرَ مِنْهُمَا، فَقِيلَ لِي: كَبِّرْ، فَدَفَعْتُهُ إِلَى الْأَكْبَرِ ".

নাফি (রহ.) থেকে আব্দুল্লাহ ইবন ‘উমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু এ মর্মে বর্ণনা করেছেন যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আমি ঘুমের মাঝে আমাকে একটি মিসওয়াক দিয়ে মিসওয়াক করতে দেখলাম। তখন দু’ব্যক্তি আমাকে আকর্ষণ করল যাদের একজন অন্যজনের চাইতে বয়সে বড়। তখন আমি মিসওয়াকটি অল্প বয়স্ককে দিতে গেলে আমাকে বলা হলো, না বড়কে দিন- তাই তা আমি বয়স্ককে দিয়ে দিলাম। [40]

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، يَقُولُ: «بُعِثْتُ بِجَوَامِعِ الكَلِمِ، وَنُصِرْتُ بِالرُّعْبِ، وَبَيْنَا أَنَا نَائِمٌ أُتِيتُ بِمَفَاتِيحِ خَزَائِنِ الأَرْضِ فَوُضِعَتْ فِي يَدِي» قَالَ أَبُو عَبْدِ اللَّهِ: " وَبَلَغَنِي أَنَّ جَوَامِعَ الكَلِمِ: أَنَّ اللَّهَ يَجْمَعُ الأُمُورَ الكَثِيرَةَ، الَّتِي كَانَتْ تُكْتَبُ فِي الكُتُبِ قَبْلَهُ، فِي الأَمْرِ الوَاحِدِ، وَالأَمْرَيْنِ، أَوْ نَحْوَ ذَلِكَ ".

আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি যে, আমাকে সংক্ষিপ্ত অথচ বিশদ অর্থবহ বাণী সহকারে প্রেরণ করা হয়েছে এবং ভীতি উদ্রেককারী প্রভাব দ্বারা আমাকে সাহায্য করা হয়েছে। একদা আমি ঘুমিয়েছিলাম। আমার কাছে ভূ-পৃষ্ঠের ভাণ্ডারসমূহের চাবি পেশ করে আমার সামনে রাখা হল। (আবূ আবদুল্লাহ) মুহাম্মদ বুখারী (রহ.) বলেন, আমার কাছে এ কথা পৌছেছে যে, ‘সংক্ষিপ্ত অথচ বিশদ অর্থবহ বাণী’ এর অর্থ হল, আল্লাহর অনেক বিষয় যা পূর্ববর্তী কিতাবসমূহে লেখা হত – একটি অথবা দু’টি বিষয়ে সন্নিবেশিত করে দেন। অথবা এর অর্থ অনুরূপ কিছু। [41]

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ: أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «بُعِثْتُ بِجَوَامِعِ الكَلِمِ، وَنُصِرْتُ بِالرُّعْبِ، فَبَيْنَا أَنَا نَائِمٌ أُتِيتُ بِمَفَاتِيحِ خَزَائِنِ الأَرْضِ، فَوُضِعَتْ فِي يَدِي» قَالَ أَبُو هُرَيْرَةَ: وَقَدْ ذَهَبَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَأَنْتُمْ تَنْتَثِلُونَهَا.

আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, অল্প শব্দে ব্যাপক অর্থবোধক বাক্য বলার শক্তি সহ আমি প্রেরিত হয়েছি এবং শত্রুর মনে ভীতির সঞ্চারের মাধ্যমে আমাকে সাহায্য করা হয়েছে। একবার আমি নিদ্রায় ছিলাম, এমতাবস্থায় পৃথিবীর ধন-ভাণ্ডারসমূহের চাবি আমার হাতে অর্পণ করা হয়। আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তো চলে গেছেন আর তোমরা তা বের করছ। [42]

عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، أَنَّهُ سَمِعَهُ يَقُولُ: كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَدْخُلُ عَلَى أُمِّ حَرَامٍ بِنْتِ مِلْحَانَ فَتُطْعِمُهُ - وَكَانَتْ أُمُّ حَرَامٍ تَحْتَ عُبَادَةَ بْنِ الصَّامِتِ - فَدَخَلَ عَلَيْهَا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَأَطْعَمَتْهُ وَجَعَلَتْ تَفْلِي رَأْسَهُ، فَنَامَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، ثُمَّ اسْتَيْقَظَ وَهُوَ يَضْحَكُ، قَالَتْ: فَقُلْتُ: وَمَا يُضْحِكُكَ يَا رَسُولَ اللَّهِ؟ قَالَ: " نَاسٌ مِنْ أُمَّتِي عُرِضُوا عَلَيَّ غُزَاةً فِي سَبِيلِ اللَّهِ، يَرْكَبُونَ ثَبَجَ هَذَا البَحْرِ مُلُوكًا عَلَى الأَسِرَّةِ، أَوْ: مِثْلَ المُلُوكِ عَلَى الأَسِرَّةِ "، شَكَّ إِسْحَاقُ، قَالَتْ: فَقُلْتُ: يَا رَسُولَ اللَّهِ، ادْعُ اللَّهَ أَنْ يَجْعَلَنِي مِنْهمْ، فَدَعَا لَهَا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، ثُمَّ وَضَعَ رَأْسَهُ، ثُمَّ اسْتَيْقَظَ وَهُوَ يَضْحَكُ، فَقُلْتُ: وَمَا يُضْحِكُكَ يَا رَسُولَ اللَّهِ؟ قَالَ: «نَاسٌ مِنْ أُمَّتِي عُرِضُوا عَلَيَّ غُزَاةً فِي سَبِيلِ اللَّهِ» - كَمَا قَالَ فِي الأَوَّلِ - قَالَتْ: فَقُلْتُ: يَا رَسُولَ اللَّهِ ادْعُ اللَّهَ أَنْ يَجْعَلَنِي مِنْهُمْ، قَالَ: «أَنْتِ مِنَ الأَوَّلِينَ»، فَرَكِبَتِ البَحْرَ فِي زَمَانِ مُعَاوِيَةَ بْنِ أَبِي سُفْيَانَ، فَصُرِعَتْ عَنْ دَابَّتِهَا حِينَ خَرَجَتْ مِنَ البَحْرِ، فَهَلَكَتْ.

আনাস ইবন মালিক রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উম্মে হারাম বিন্‌ত মিলহান রাদিয়াল্লাহু ‘আনহার কাছে যাতায়াত করতেন এবং তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে খেতে দিতেন। উম্মে হারাম রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা ছিলেন, উবাদা ইবন সামিত রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর স্ত্রী। একদিন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার ঘরে তাশরীফ নিয়ে গেলে তিনি তাঁকে আহার করান এবং তাঁর মথার উকুন বাচতে থাকেন। এক সময় রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘুমিয়ে পড়েন। তিনি হাসতে হাসতে ঘুম থেকে জাগলেন। উম্মে হারাম রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা বলেন, আমি তাঁকে জিজ্ঞাস করলাম, ‘ইয়া রাসূলুল্লাহ! হাসির কারণ কি?’ তিনি বললেন, ‘আমার উম্মাতের কিছু লোককে আল্লাহর পথে জিহাদরত অবস্থায় আমার সামনে পেশ করা হয়। তারা এ সমুদ্রের মাঝে এমনভাবে আরোহী যেমন বাদশাহ সিংহাসনের উপর অথবা বলেছেন, বাদশাহর মত সিংহাসনে উপবিষ্ট।’ এ শব্দ বর্ণনায় ইসহাক (রহ.) সন্দেহ করেছেন। উম্মে হারাম রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা বলেন, আমি বললাম, ইয়া রাসূলুল্লাহ! আল্লাহর কাছে দো‘আ করুন যেন আমাকে তিনি তাদের অন্তর্ভুক্ত করেন।’ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার জন্য দো‘আ করলেন। এরপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবার মাথা রাখেন (ঘুমিয়ে পড়েন)। তারপর হাসতে হাসতে জেগে উঠলেন। আমি তাঁকে জিজ্ঞাসা করলাম, ‘ইয়া রাসূলুল্লাহ! আপনার হাসার কারণ কি?’ তিনি বললেন, আমার উম্মাতের মধ্যে থেকে আল্লাহর পথে জিহাদরত কিছু লোককে আমার সামনে পেশ করা হয়।’ পরবর্তী অংশ প্রথম উক্তির মত। উম্মে হারাম রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা বলেন, আমি বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আপনি আল্লাহর কাছে দো‘আ করুন, যেন আমাকে তিনি তাদের অন্তর্ভুক্ত করেন। তিনি বললেন, তুমি তো প্রথম দলের মধ্যেই আছ। তারপর মু‘আবিয়া ইবন আবূ সুফিয়ান রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর সময় উম্মে হারাম রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা জিহাদের উদ্দেশ্যে সামুদ্রিক সফরে যান এবং সমুদ্র থেকে যখন অবতরণ করেন তখন তিনি তাঁর সওয়ারী থেকে ছিটকে পড়েন। আর এতে তিনি শাহাদত বরণ করেন।[43]

 

 

দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দৈহিক ও চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য

এ পরিচ্ছেদটি আলাদা একটি পূর্ণ অধ্যায়, কিন্তু আমি এখানে কিছু নির্বাচিত হাদীস উল্লেখ করেছি, কেননা এটি নবুওয়তের আলামতের অন্তর্ভুক্ত।

عَنْ أَبِي إِسْحَاقَ، قَالَ: سَمِعْتُ البَرَاءَ، يَقُولُ: كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «أَحْسَنَ النَّاسِ وَجْهًا وَأَحْسَنَهُ خَلْقًا، لَيْسَ بِالطَّوِيلِ البَائِنِ، وَلاَ بِالقَصِيرِ».

বারা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের চেহারা মুবারক ছিল মানুষের মধ্যে সবচেয়ে সুন্দর এবং তিনি ছিলেন সর্বোত্তম চরিত্রের অধিকারী। তিনি অতিরিক্ত লম্বাও ছিলেন না এবং বেমানান বেঁটেও ছিলেন না। [44]

عَنِ البَرَاءِ بْنِ عَازِبٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا، قَالَ: كَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ «مَرْبُوعًا، بَعِيدَ مَا بَيْنَ المَنْكِبَيْنِ، لَهُ شَعَرٌ يَبْلُغُ شَحْمَةَ أُذُنِهِ، رَأَيْتُهُ فِي حُلَّةٍ حَمْرَاءَ، لَمْ أَرَ شَيْئًا قَطُّ أَحْسَنَ مِنْهُ» قَالَ يُوسُفُ بْنُ أَبِي إِسْحَاقَ، عَنْ أَبِيهِ: «إِلَى مَنْكِبَيْهِ».

বারা ইবন ‘আযিব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মাঝারি গড়নের ছিলেন। তাঁর উভয় কাঁধের মধ্যবর্তী স্থান প্রশস্ত ছিল। তাঁর মাথার চুল দুই কানের লতি পর্যন্ত প্রসারিত ছিল। আমি তাঁকে লাল ডোরাকাটা জোড় চাদর পরিহিত অবস্থায় দেখেছি। তাঁর চেয়ে অধিক সুন্দর কাউকে আমি কখনো দেখিনি। ইউসুফ ইবন আবূ ইসহাক তাঁর পিতা থেকে হাদীস বর্ণনায় বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মাথার চুল কাঁধ পর্যন্ত প্রসারিত ছিল।[45]

عَنْ أَبِي إِسْحَاقَ، قَالَ: سُئِلَ البَرَاءُ أَكَانَ وَجْهُ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، مِثْلَ السَّيْفِ؟ قَالَ: لاَ بَلْ مِثْلَ القَمَرِ ".

আবূ ইসহাক (রহ.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, বারা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুকে জিজ্ঞাসা করা হল, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লা্মের চেহারা মুবারক কি তরবারীর ন্যায় (চকচকে) ছিল? তিনি বলেন, না, বরং চাঁদের মত (স্নিগ্ধ ও মনোরম) ছিল। [46]

عَنِ الحَكَمِ، قَالَ: سَمِعْتُ أَبَا جُحَيْفَةَ، قَالَ: «خَرَجَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِالهَاجِرَةِ إِلَى البَطْحَاءِ، فَتَوَضَّأَ ثُمَّ صَلَّى الظُّهْرَ رَكْعَتَيْنِ، وَالعَصْرَ رَكْعَتَيْنِ، وَبَيْنَ يَدَيْهِ عَنَزَةٌ» قَالَ شُعْبَةُ وَزَادَ فِيهِ عَوْنٌ، عَنْ أَبِيهِ أَبِي جُحَيْفَةَ، قَالَ: «كَانَ يَمُرُّ مِنْ وَرَائِهَا المَرْأَةُ، وَقَامَ النَّاسُ فَجَعَلُوا يَأْخُذُونَ يَدَيْهِ فَيَمْسَحُونَ بِهَا وُجُوهَهُمْ، قَالَ فَأَخَذْتُ بِيَدِهِ فَوَضَعْتُهَا عَلَى وَجْهِي فَإِذَا هِيَ أَبْرَدُ مِنَ الثَّلْجِ وَأَطْيَبُ رَائِحَةً مِنَ المِسْكِ».

হাকাম রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন আমি আবূ জুহাইফা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুকে বলতে শুনেছি। তিনি বলেন, একদিন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দুপুর বেলায় বাতহার দিকে বেরিয়ে গেলেন। সে স্থানে অজু করে যোহরের দু’রাকাত ও আসরের দু’রাকাত সালাত আদায় করেন। তাঁর সম্মুখে একটি বর্শা পোতা ছিল। বর্শার বাহির দিক দিয়ে নারীগণ যাতায়াত করছিল। সালাত শেষে লোকজন দাঁড়িয়ে গেল এবং নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উভয় হাত ধরে তারা নিজেদের মাথা ও চেহারায় বুলাতে লাগলেন। আমিও নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাত মুবারক ধারণ করত, আমার চেহারায় বুলাতে লাগলাম। তাঁর হাত তুষার চেয়ে স্নিগ্ধ শীতল ও কস্তুরীর চেয়ে অধিক সুগন্ধ ছিল।[47]

حَدَّثَنَا مَالِكُ بْنُ مِغْوَلٍ، قَالَ: سَمِعْتُ عَوْنَ بْنَ أَبِي جُحَيْفَةَ، ذَكَرَ عَنْ أَبِيهِ، قَالَ: دُفِعْتُ إِلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَهُوَ بِالأَبْطَحِ فِي قُبَّةٍ كَانَ بِالهَاجِرَةِ، خَرَجَ بِلاَلٌ فَنَادَى بِالصَّلاَةِ ثُمَّ دَخَلَ، فَأَخْرَجَ فَضْلَ وَضُوءِ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَوَقَعَ النَّاسُ عَلَيْهِ يَأْخُذُونَ مِنْهُ، ثُمَّ دَخَلَ فَأَخْرَجَ العَنَزَةَ وَخَرَجَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ «كَأَنِّي أَنْظُرُ إِلَى وَبِيصِ سَاقَيْهِ، فَرَكَزَ العَنَزَةَ ثُمَّ صَلَّى الظُّهْرَ رَكْعَتَيْنِ، وَالعَصْرَ رَكْعَتَيْنِ، يَمُرُّ بَيْنَ يَدَيْهِ الحِمَارُ وَالمَرْأَةُ».

আবূ জুহাইফা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন যে, (একদা) আমাকে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দরবারে নেওয়া হল। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন আবতাহ নামক স্থানে দুপুর বেলায় একটি তাঁবুতে অবস্থান করছিলেন। বেলাল রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু তাঁবু থেকে বেরিয়ে এসে যোহরের সালাতের আযান দিলেন এবং (তাঁবুতে) পুনঃপ্রবেশ করে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অযুর অবশিষ্ট পানি নিয়ে বেরিয়ে এলেন। লোকজন তা নেওয়ার জন্য ঝাপিয়ে পড়ল। অতঃপর তিনি আবার তাঁবুতে ঢুকে একটি ছোট্ট বর্শা নিয়ে বেরিয়ে এলেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও (এবার) বেরিয়ে আসলেন। আমি যেন তাঁর পায়ের গোছার ঔজ্জ্বল্য এখনো দেখতে পাচ্ছি। বর্শাটি সম্মুখে পুতে রাখলেন। এরপর যোহরের দু’রাকাত এবং পরে আসরের দু’রাকাত সালাত আদায় করলেন। বর্শার বাহির দিয়ে গাধা ও মহিলা চলাফেরা করছিল। [48]

عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ، قَالَ: «كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَجْوَدَ النَّاسِ، وَكَانَ أَجْوَدُ مَا يَكُونُ فِي رَمَضَانَ حِينَ يَلْقَاهُ جِبْرِيلُ، وَكَانَ يَلْقَاهُ فِي كُلِّ لَيْلَةٍ مِنْ رَمَضَانَ فَيُدَارِسُهُ القُرْآنَ، فَلَرَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَجْوَدُ بِالخَيْرِ مِنَ الرِّيحِ المُرْسَلَةِ».

ইব্‌ন ‘আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, “রাসূলুল্লাহ্ রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছিলেন সর্বশ্রেষ্ঠ দাতা। রমাদানে তিনি আরো বেশী দানশীল হতেন, যখন জিবরীল আলাইহিস সালাম তাঁর সাথে সাক্ষাৎ করতেন। আর রমাদানের প্রতি রাতেই জিবরীল আলাইহিস সালাম তাঁর সাথে সাক্ষাৎ করতেন এবং তাঁরা পরস্পর কুরআন তেলওয়াত করে শোনাতেন। নিশ্চয়ই রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রহমতের বাতাস থেকেও অধিক দানশীল ছিলেন”। [49]

عَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ دَخَلَ عَلَيْهَا مَسْرُورًا، تَبْرُقُ أَسَارِيرُ وَجْهِهِ، فَقَالَ: " أَلَمْ تَسْمَعِي مَا قَالَ المُدْلِجِيُّ لِزَيْدٍ، وَأُسَامَةَ، وَرَأَى أَقْدَامَهُمَا: إِنَّ بَعْضَ هَذِهِ الأَقْدَامِ مِنْ بَعْضٍ ".

আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা থেকে বর্ণিত, একদিন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অত্যন্ত আনন্দিত ও প্রফুল্ল চিত্তে তাঁর কাছে প্রবেশ করলেন। খুশীর আমেজে তাঁর চেহারার খুশীর চিহ্ন ঝলমল করছিল। তিনি তখন আয়েশাকে বললেন, হে আয়েশা! তুমি শুননি, মুদলাজী ব্যক্তিটি (চেহারার ও আকৃতির গননায় পারদর্শী) যায়েদ ও উসামা সম্পর্কে কি বলেছে? পিতা-পুত্রের শুধু পা দেখে (শরীরের বাকী অংশ ঢাকা ছিল) বলল, এ পাগুলো একটা অন্যটির অংশ (অর্থাৎ তাদের সম্পর্ক পিতা-পুত্রের)।[50]

عَنْ عَبْدِ الرَّحْمَنِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ كَعْبٍ، أَنَّ عَبْدَ اللَّهِ بْنَ كَعْبٍ، قَالَ: سَمِعْتُ كَعْبَ بْنَ مَالِكٍ، يُحَدِّثُ حِينَ تَخَلَّفَ عَنْ تَبُوكَ، قَالَ: فَلَمَّا سَلَّمْتُ عَلَى رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَهُوَ يَبْرُقُ وَجْهُهُ مِنَ السُّرُورِ، وَكَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا سُرَّ اسْتَنَارَ وَجْهُهُ، حَتَّى كَأَنَّهُ قِطْعَةُ قَمَرٍ، وَكُنَّا نَعْرِفُ ذَلِكَ مِنْهُ ".

আবদুল্লাহ ইবন কা‘ব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি আমার পিতা কা’ব ইবন মালিক রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুকে তার তাবূক যুদ্ধে অংশগ্রহণ না করার ঘটনা বর্ণনা করতে শুনেছি। তিনি বলেন, আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সালাম করলাম, খুশী ও আনন্দে তাঁর চেহারা ঝলমল করে উঠলো। তাঁর চেহারা এমনিই খুশী ও আনন্দে ঝলমল করতো। মনে হতো যেন চাদেঁর একটি টুকরা। তাঁর চেহারা মুবারকের এ অবস্থা থেকে আমরা তা বুঝতে সক্ষম হতাম। [51]

عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَمْرٍو رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا، قَالَ: " لَمْ يَكُنِ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَاحِشًا وَلاَ مُتَفَحِّشًا، وَكَانَ يَقُولُ: «إِنَّ مِنْ خِيَارِكُمْ أَحْسَنَكُمْ أَخْلاَقًا».

আবদুল্লাহ ইবন্ আমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অশ্লীল ভাষী ও অসদাচারী ছিলেন না। তিনি বলতেন, তোমাদের মধ্যে সে ব্যক্তিই সর্বশ্রেষ্ঠ যে চরিত্রের দিক থেকে সর্বোত্তম। [52]

عَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا، أَنَّهَا قَالَتْ: «مَا خُيِّرَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بَيْنَ أَمْرَيْنِ إِلَّا أَخَذَ أَيْسَرَهُمَا، مَا لَمْ يَكُنْ إِثْمًا، فَإِنْ كَانَ إِثْمًا كَانَ أَبْعَدَ النَّاسِ مِنْهُ، وَمَا انْتَقَمَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لِنَفْسِهِ إِلَّا أَنْ تُنْتَهَكَ حُرْمَةُ اللَّهِ، فَيَنْتَقِمَ لِلَّهِ بِهَا».

আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে (জাগতিক বিষয়ে) যখনই দু’টি জিনিসের একটি গ্রহণের ইখতিয়ার দেওয়া হত, তখন তিনি সহজ সরলটি গ্রহণ করতেন যদি তা গোনাহ না হত। যদি গোনাহ হত তবে তা থেকে তিনি অনেক দূরে সরে থাকতেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ব্যক্তিগত কারণে কারো থেকে কখনো প্রতিশোধ গ্রহণ করেন নি। তবে আল্লাহর নির্ধারিত সীমারেখা লঙ্ঘন করা হলে আল্লাহকে রাযী ও সন্তুষ্ট করার মানসে প্রতিশোধ করতেন। [53]

عَنْ أَنَسٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، قَالَ: «مَا مَسِسْتُ حَرِيرًا وَلاَ دِيبَاجًا أَلْيَنَ مِنْ كَفِّ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ، وَلاَ شَمِمْتُ رِيحًا قَطُّ أَوْ عَرْفًا قَطُّ أَطْيَبَ مِنْ رِيحِ أَوْ عَرْفِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ».

আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাতের তালু অপেক্ষা মোলায়েম কোনো রেশম ও গরদকেও স্পর্শ করি নাই। আর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের শরীর মোবারকের খুশবু অপেক্ষা অধিকতর সুঘ্রাণ আমি কখনো পাই নি। [54]

عَنْ أَبِي سَعِيدٍ الخُدْرِيِّ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، قَالَ: كَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ «أَشَدَّ حَيَاءً مِنَ العَذْرَاءِ فِي خِدْرِهَا» حَدَّثَنِي مُحَمَّدُ بْنُ بَشَّارٍ، حَدَّثَنَا يَحْيَى، وَابْنُ مَهْدِيٍّ، قَالاَ: حَدَّثَنَا شُعْبَةُ مِثْلَهُ، وَإِذَا كَرِهَ شَيْئًا عُرِفَ فِي وَجْهِهِ.

আবূ সাইদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অন্তপুরবাসিনী পর্দানশীন কুমারীদের চেয়েও অধিক লজ্জাশীল ছিলেন।

শু‘বা (রহ.) থেকে অনুরূপ রেওয়ায়েত বর্ণিত হয়েছে (তবে এ বাক্যটি অতিরিক্ত রয়েছে যে,) যখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোনো কিছু অপছন্দ করতেন তখর তাঁর চেহারা মুবারকে তা (বিরক্তি ভাব) দেখা যেত। [55]

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، قَالَ: «مَا عَابَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ طَعَامًا قَطُّ، إِنِ اشْتَهَاهُ أَكَلَهُ وَإِلَّا تَرَكَهُ».

আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কখনো কোনো খাদ্যবস্তুকে মন্দ বলতেন না। রুচি হলে খেয়ে নিতেন নতুবা ত্যাগ করতেন। [56]

عَنْ أَبِي سَلَمَةَ بْنِ عَبْدِ الرَّحْمَنِ، أَنَّهُ سَأَلَ عَائِشَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا: كَيْفَ كَانَتْ صَلاَةُ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي رَمَضَانَ؟ قَالَتْ: مَا كَانَ يَزِيدُ فِي رَمَضَانَ وَلاَ فِي غَيْرِهِ عَلَى إِحْدَى عَشْرَةَ رَكْعَةً، يُصَلِّي أَرْبَعَ رَكَعَاتٍ، فَلاَ تَسْأَلْ عَنْ حُسْنِهِنَّ وَطُولِهِنَّ، ثُمَّ يُصَلِّي أَرْبَعًا، فَلاَ تَسْأَلْ عَنْ حُسْنِهِنَّ وَطُولِهِنَّ، ثُمَّ يُصَلِّي ثَلاَثًا، فَقُلْتُ: يَا رَسُولَ اللَّهِ تَنَامُ قَبْلَ أَنْ تُوتِرَ؟ قَالَ: «تَنَامُ عَيْنِي وَلاَ يَنَامُ قَلْبِي».

আবূ সালামাহ ইবন আবদুর রাহমান (রহ.) থেকে বর্ণিত যে, তিনি আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা জিজ্ঞাসা করলেন, রমাদান মাসে (রাতে) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সালাত কিভাবে ছিল? আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমাদান মাসে ও অন্যান্য সব মাসের রাতে এগারো রাক‘আতের বেশী সালাত আদায় করতেন না। প্রথমে চার রাক‘আত সালাত আদায় করতেন। এ চার রাক‘আত আদায়ের সৌন্দর্য ও দৈর্ঘের সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করো না (তা বর্ণনাতীত)। তারপর আরো চার রাক‘আত সালাত আদায় করতেন। তারপর তিন রাক‘আত (বিতর) আদায় করতেন। তখন আমি বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আপনি বিতর সালাত আদয়ের পূর্বে ঘুমিয়ে পড়েন? নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আমার চক্ষু ঘুমায় তবে আমার অন্তর ঘুমায় না।[57]

عَنْ طَارِقِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ الْمُحَارِبِيِّ، قَالَ: رَأَيْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي سُوقِ ذِي الْمَجَازِ وَعَلَيْهِ حُلَّةٌ حَمْرَاءُ، وَهُوَ يَقُولُ: «يَا أَيُّهَا النَّاسُ قُولُوا لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ تُفْلِحُوا» ، وَرَجُلٌ يَتْبَعُهُ يَرْمِيهِ بِالْحِجَارَةِ، وَقَدْ أَدْمَى عُرْقُوبَيْهِ وَكَعْبَيْهِ، وَهُوَ يَقُولُ: يَا أَيُّهَا النَّاسُ، لَا تُطِيعُوهُ، فَإِنَّهُ كَذَّابٌ، فَقُلْتُ: مَنْ هَذَا؟ قِيلَ: هَذَا غُلَامُ بَنِي عَبْدِ الْمُطَّلِبِ، قُلْتُ: فَمَنْ هَذَا الَّذِي يَتْبَعُهُ يَرْمِيهِ بِالْحِجَارَةِ؟ قَالَ: هَذَا عَبْدُ الْعُزَّى أَبُو لَهَبٍ قَالَ: فَلَمَّا ظَهَرَ الْإِسْلَامُ، خَرَجْنَا فِي ذَلِكَ حَتَّى نَزَلْنَا قَرِيبًا مِنَ الْمَدِينَةِ، وَمَعَنَا ظَعِينَةٌ لَنَا فَبَيْنَا نَحْنُ قُعُودٌ إِذْ أَتَانَا رَجُلٌ عَلَيْهِ ثَوْبَانِ أَبْيَضَانِ، فَسَلَّمَ، وَقَالَ: مِنْ أَيْنَ أَقْبَلَ الْقَوْمُ؟ قُلْنَا: مِنَ الرَّبَذَةِ، قَالَ: وَمَعَنَا جَمَلٌ، قَالَ: أَتَبِيعُونَ هَذَا الْجَمَلَ؟ قُلْنَا: نَعَمْ، قَالَ: بِكَمْ؟ قُلْنَا: بِكَذَا وَكَذَا صَاعًا مِنْ تَمْرٍ، قَالَ: فَأَخَذَهُ، وَلَمْ يَسْتَنْقِصْنَا، قَالَ: قَدْ أَخَذْتُهُ، ثُمَّ تَوَارَى بِحِيطَانِ الْمَدِينَةِ، فَتَلَاوَمْنَا فِيمَا بَيْنَنَا، فَقُلْنَا: أَعْطَيْتُمْ جَمَلَكُمْ رَجُلًا لَا تَعْرِفُونَهُ؟ قَالَ: فَقَالَتِ الظَّعِينَةُ: لَا تَلَاوَمُوا، فَإِنِّي رَأَيْتُ وَجْهَ رَجُلٍ لَمْ يَكُنْ لِيَحْقِرَكُمْ، مَا رَأَيْتُ شَيْئًا أَشْبَهَ بِالْقَمَرِ لَيْلَةَ الْبَدْرِ مِنْ وَجْهِهِ، قَالَ: فَلَمَّا كَانَ مِنَ الْعَشِيِّ أَتَانَا رَجُلٌ فَسَلَّمَ عَلَيْنَا، وَقَالَ: أَنَا رَسُولُ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: «إِنَّ لَكُمْ أَنْ تَأْكُلُوا حَتَّى تَشْبَعُوا، وَتَكْتَالُوا حَتَّى تَسْتَوْفُوا» قَالَ: فَأَكَلْنَا حَتَّى شَبِعْنَا وَاكْتَلْنَا حَتَّى اسْتَوْفَيْنَا، قَالَ: ثُمَّ قَدِمْنَا الْمَدِينَةَ مِنَ الْغَدِ، فَإِذَا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَائِمٌ يَخْطُبُ عَلَى الْمِنْبَرِ وَهُوَ يَقُولُ: «يَدُ الْمُعْطِي يَدُ الْعُلْيَا، وَابْدَأْ بِمَنْ تَعُولُ: أُمَّكَ وَأَبَاكَ، أُخْتَكَ وَأَخَاكَ، ثُمَّ أَدْنَاكَ أَدْنَاكَ» ، فَقَامَ رَجُلٌ، فَقَالَ: يَا رَسُولَ اللَّهِ، هَؤُلَاءِ بَنُو ثَعْلَبَةَ بْنِ يَرْبُوعٍ قَتَلُوا فُلَانًا فِي الْجَاهِلِيَّةِ، فَخُذْ لَنَا بِثَأْرِنَا مِنْهُ، فَرَفَعَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَدَيْهِ حَتَّى رَأَيْتُ بَيَاضَ إِبْطَيْهِ، وَقَالَ: «أَلَا لَا تَجْنِي أُمٌّ عَلَى وَلَدٍ، أَلَا لَا تَجْنِي أُمٌّ عَلَى وَلَدٍ»

তারিক ইবন আব্দুল্লাহ আল-মুহারেবী বলেন, “আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে যিল মাজায বাজারে দেখেছি, তার গায়ে ছিল লাল পোষাক, তিনি বলছিলেন, ‘হে মানুষগণ তোমরা বল, লা-ইলা-হা ইল্লাল্লাহ তথা আল্লাহ ব্যতীত সত্য কোনো মা‘বুদ নেই, এতে তোমরা সফলকাম হবে’। আর একজন ব্যক্তি তাকে অনুসরণ করে পাথর নিক্ষেপ করছে এবং এতে তার পায়ের গোড়ালি ও হাটুর পিছন দিক রক্তাক্ত হয়ে গেছে; সে বলছিল, ‘হে মানুষ, তোমরা তার অনুসরণ কর না; সে মিথ্যাবাদী। আমি বললাম: কে সে? বলা হলো, ‘এটি বনু আব্দুল মুত্তালিবের একজন ছেলে। আমি বললাম, ‘তবে যে লোকটি তাকে অনুসরণ করে পাথর নিক্ষেপ করছে সে কে? বলা হলো, ‘এটি তার চাচা আব্দুল উয্‌যা আবু লাহাব। অতঃপর যখন আল্লাহ ইসলামকে সমুন্নত করলেন তখন আমরা একটি যাত্রী দল হিসেবে বের হলাম এবং মদিনার নিকটবর্তী স্থানে নামলাম আর আমাদের সাথে ছিল এক আরোহী মহিলা। আমরা যখন বসা ছিলাম তখন আমাদের কাছে দুটি সাদা চাদর পরিহিত একজন লোক আসলেন এবং সালাম দিলেন ও বললেন, ‘কোথা থেকে সম্প্রদায়ের আগমন?’ আমরা বললাম, ‘রাবযা থেকে’। তিনি (বর্ণনাকারী) আরও বলেন, আমাদের সাথে ছিল একটি উট। তিনি বললেন, তোমরা কি এ উট বিক্রি করবে? আমরা বললাম, ‘হ্যাঁ’। তিনি বললেন, ‘কত দামে?’ আমরা বললাম, ‘এত এত সা‘ খেজুরের পরিবর্তে। তিনি বললেন, ‘তিনি তা নিলেন এবং আমাদেরকে কমালেন না। তিনি বললেন, ‘আমি নিয়েছি।’ এরপর তিনি মদিনার দেয়ালসমূহের পিছনে অদৃশ্য হয়ে গেলেন। তখন আমরা পরস্পরকে দোষারোপ করতে লাগলাম এবং বলতে লাগলাম যে এমন এক লোককে উট দিলে যাকে তোমরা কেউ চিন না? তখন আমাদের সে আরোহী বলতে লাগল ‘তোমরা পরস্পরকে দোষারোপ কর না কেননা আমি এমন ব্যক্তির মুখ দেখেছি যে তোমাদের সাথে ওয়াদা ভঙ্গ করবে না; পূর্ণিমার রাতের চাঁদের সাথে তার মুখের সাদৃশ্যের দিক থেকে আমি আর কাউকে বেশি দেখি নি। তিনি (রাবী) বলেন, অতঃপর যখন রাত হয়ে এলো তখন এক ব্যক্তি আমাদের কাছে এসে সালাম দিলেন এবং বললেন, ‘আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতিনিধি। তোমরা ক্ষুধা মেটা পর্যন্ত খাও এবং পূর্ণ না হওয়া পর্যন্ত মেপে নাও। তিনি (রাবী) বলেন, আমরা ক্ষুধা মেটা পর্যন্ত খেলাম এবং পূর্ণ না হওয়া পর্যন্ত মেপে নিলাম। অতঃপর আমরা মদিনায় পরের দিন আসলাম তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মিম্বরে দাঁড়িয়ে খুতবা দিচ্ছিলেন, ‘দানকারীর হাত উর্ধ্বে; আর আত্মীয়দের দ্বারা শুরু কর —তোমার মা, বাবা, বোন, ভাই অতঃপর তোমার নিকটজন। তখন একজন লোক দাঁড়িয়ে বললেন, ‘হে আল্লাহর রাসূল, এরা হলো বনু সা‘লাবা ইবন ইয়ারবু যারা জাহেলিয়াতে আমাদের লোকদের হত্যা করেছে; সুতরাং আপনি তাদের থেকে আমাদের জন্য প্রতিশোধ নিন। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর দু’হাত উপরে উঠালেন এমনটি আমরা তার দু’বগলের শুভ্রতা দেখতে পেলাম। তিনি বললেন, সাবধান! কোনো মা তার সন্তানের উপর অপরাধ করবে না, সাবধান! কোনো মা তার সন্তানের উপর অপরাধ করবে না”।

আর এ হাদীসটি হাসান।

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «هَلْ تَرَوْنَ قِبْلَتِي هَا هُنَا، فَوَاللَّهِ مَا يَخْفَى عَلَيَّ خُشُوعُكُمْ وَلاَ رُكُوعُكُمْ، إِنِّي لَأَرَاكُمْ مِنْ وَرَاءِ ظَهْرِي».

আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “তোমরা কি মনে কর যে, আল্লাহর দৃষ্টি কেবল কিবলার দিকে? আল্লাহর কসম! আমার কাছে তোমাদের খুশূ (বিনয়) ও রুকু কিছুই গোপন থাকে না। অবশ্যই আমি আমার পেছন থেকেও তোমাদের দেখি। [58]

عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: " أَقِيمُوا الرُّكُوعَ، وَالسُّجُودَ فَوَاللهِ، إِنِّي لَأَرَاكُمْ مِنْ بَعْدِي - وَرُبَّمَا قَالَ: مِنْ بَعْدِ ظَهْرِي - إِذَا رَكَعْتُمْ وَسَجَدْتُمْ ".

আনাস ইবন মালিক রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমরা তোমাদের রুকু এবং সিজদা যথাযথভাবে আদায় করবে। আল্লাহর শপথ! তোমরা যখন রুকু-সিজদা কর, তখন তা আমি পিছন দিক হতে (রাবী কখনও বলেছেন) আমি পৃষ্ঠদেশের দিক হতে দেখে থাকি।[59]

ইমাম নাওয়াওয়ী রহ. বলেন, আলেমগণ বলেছেন, এ হাদীসের অর্থ হলো আল্লাহ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পিঠে এমন শক্তি দিয়েছেন যে, তিনি তাঁর পিছনের দিক দেখতে পেতেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এর চেয়েও আশ্চর্যজনক মু‘জিযা আছে। এমনটা হওয়া বিবেক ও শরি‘য়াত নিষেধ করে না। বরং শরি‘য়াতে সরাসরি এটাকে সমর্থন করে, অতএব, এভাবেই বলা ওয়াজিব। কাদী ‘ইয়াদ রহ. বলেছেন, ইমাম আহমদ রহ. বলেন: জমহুর আলেম এ দেখাকে প্রকৃত চোখে দেখা বলেছেন।

عَنْ أَبِي إِسْحَاقَ، قَالَ رَجُلٌ لِلْبَرَاءِ بْنِ عَازِبٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا: أَفَرَرْتُمْ عَنْ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَوْمَ حُنَيْنٍ؟ قَالَ: لَكِنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَمْ يَفِرَّ ، إِنَّ هَوَازِنَ كَانُوا قَوْمًا رُمَاةً، وَإِنَّا لَمَّا لَقِينَاهُمْ حَمَلْنَا عَلَيْهِمْ، فَانْهَزَمُوا فَأَقْبَلَ المُسْلِمُونَ عَلَى الغَنَائِمِ، وَاسْتَقْبَلُونَا بِالسِّهَامِ، فَأَمَّا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَلَمْ يَفِرَّ، فَلَقَدْ رَأَيْتُهُ وَإِنَّهُ لَعَلَى بَغْلَتِهِ البَيْضَاءِ، وَإِنَّ أَبَا سُفْيَانَ آخِذٌ بِلِجَامِهَا، وَالنَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: «أَنَا النَّبِيُّ لاَ كَذِبْ، أَنَا ابْنُ عَبْدِ المُطَّلِبْ».

আবূ ইসহাক (রহ.) থেকে বর্ণিত যে, এক ব্যক্তি বারা ইবন আযিব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুকে বলল, আপনারা কি হুনাইনের যুদ্ধে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে ময়দানে রেখে পলায়ন করেছিলেন? বারা ইবন আযিব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, কিন্তু রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পলায়ন করেননি। হাওয়াযিনরা ছিল সুদক্ষ তীরন্দাজ। আমরা সামনা সামনি যুদ্ধে তাদেরকে পরাস্ত করলে তারা পালিয়ে যেতে লাগল। এমতাবস্থায় মুসলিমরা তাদের পিছু ধাওয়া না করে গনীমাতের মাল সংগ্রহে মনোনিবেশ করল। এই সুযোগ শত্রুরা তীর বর্ষনের মাধ্যমে আমাদের আক্রমন করে বসল। তবে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্থান ত্যাগ করেননি। আমি তাঁকে তাঁর সাদা খচ্চরটির উপর উপবিষ্ট অবস্থায় দেখেছি। আবূ সুফিয়ান তাঁর বাহনের লাগাম ধরে টানছেন; আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলছেন, ‘আমি নবী তা মিথ্যা নয়, আমি আব্দুল মুত্তালিবের বংশধর।[60]

قَالَ عَبَّاسٌ: شَهِدْتُ مَعَ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَوْمَ حُنَيْنٍ، فَلَزِمْتُ أَنَا وَأَبُو سُفْيَانَ بْنُ الْحَارِثِ بْنِ عَبْدِ الْمُطَّلِبِ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَلَمْ نُفَارِقْهُ، وَرَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَلَى بَغْلَةٍ لَهُ بَيْضَاءَ أَهْدَاهَا لَهُ فَرْوَةُ بْنُ نُفَاثَةَ الْجُذَامِيُّ، فَلَمَّا الْتَقَى الْمُسْلِمُونَ وَالْكُفَّارُ وَلَّى الْمُسْلِمُونَ مُدْبِرِينَ، فَطَفِقَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَرْكُضُ بَغْلَتَهُ قِبَلَ الْكُفَّارِ، قَالَ عَبَّاسٌ: وَأَنَا آخِذٌ بِلِجَامِ بَغْلَةِ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَكُفُّهَا إِرَادَةَ أَنْ لَا تُسْرِعَ، وَأَبُو سُفْيَانَ آخِذٌ بِرِكَابِ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «أَيْ عَبَّاسُ، نَادِ أَصْحَابَ السَّمُرَةِ»، فَقَالَ عَبَّاسٌ: وَكَانَ رَجُلًا صَيِّتًا، فَقُلْتُ بِأَعْلَى صَوْتِي: أَيْنَ أَصْحَابُ السَّمُرَةِ؟ قَالَ: فَوَاللهِ، لَكَأَنَّ عَطْفَتَهُمْ حِينَ سَمِعُوا صَوْتِي عَطْفَةُ الْبَقَرِ عَلَى أَوْلَادِهَا، فَقَالُوا: يَا لَبَّيْكَ، يَا لَبَّيْكَ، قَالَ: فَاقْتَتَلُوا وَالْكُفَّارَ، وَالدَّعْوَةُ فِي الْأَنْصَارِ يَقُولُونَ: يَا مَعْشَرَ الْأَنْصَارِ، يَا مَعْشَرَ الْأَنْصَارِ، قَالَ: ثُمَّ قُصِرَتِ الدَّعْوَةُ عَلَى بَنِي الْحَارِثِ بْنِ الْخَزْرَجِ، فَقَالُوا: يَا بَنِي الْحَارِثِ بْنِ الْخَزْرَجِ، يَا بَنِي الْحَارِثِ بْنِ الْخَزْرَجِ، فَنَظَرَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَهُوَ عَلَى بَغْلَتِهِ كَالْمُتَطَاوِلِ عَلَيْهَا إِلَى قِتَالِهِمْ، فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ «هَذَا حِينَ حَمِيَ الْوَطِيسُ» قَالَ: ثُمَّ أَخَذَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ حَصَيَاتٍ فَرَمَى بِهِنَّ وُجُوهَ الْكُفَّارِ، ثُمَّ قَالَ: «انْهَزَمُوا وَرَبِّ مُحَمَّدٍ» قَالَ: فَذَهَبْتُ أَنْظُرُ فَإِذَا الْقِتَالُ عَلَى هَيْئَتِهِ فِيمَا أَرَى، قَالَ: فَوَاللهِ، مَا هُوَ إِلَّا أَنْ رَمَاهُمْ بِحَصَيَاتِهِ فَمَا زِلْتُ أَرَى حَدَّهُمْ كَلِيلًا، وَأَمْرَهُمْ مُدْبِرًا.

আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি হুনাইনের যুদ্ধের দিন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সঙ্গে ছিলাম। আমি এবং আবু সুফিয়ান ইবন হারেস ইবন আবদুল মুত্তালিব রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের একেবারে সঙ্গেই ছিলাম। আমরা কখনও তাঁর থেকে পৃথক হইনি। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটি সাদা বর্ণের খচ্চরের উপর আরোহণ করেছিলেন। সে খচ্চরটি ফারওয়া ইবন নূফাসা আল-জুযামী তাঁকে হাদিয়াস্বরূপ দিয়েছিলেন। যখন মুসলিম এবং কাফির পরস্পর সম্মুখ যুদ্ধে লিপ্ত হল তখন মুসলিমগণ (যুদ্ধের এক পর্যায়ে) পশ্চাৎ-দিকে পলায়ন করতে লাগলেন। আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্বীয় পায়ের গোড়ালী দিয়ে নিজের খচ্চরকে আঘাত করে কাফিরদের দিকে ধাবিত করছিলেন। আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, আমি তার খচ্চরের লাগাম ধরে রেখেছিলাম এবং একে থামিয়ে রাখার চেষ্টা করছিলাম যেন দ্রুত গতিতে অগ্রসর হতে না পারে। আর আবু সুফিয়ান রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু তাঁর খচ্চরের ‘রেকাব’ (হাউদাজের বন্ধনের পটি) ধরে রেখেছিলেন। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হে আব্বাস! আসহাবে সামুরাকে (হুদায়বিয়ার গাছের নীচে বাই‘আতকারী লোকদেরকে) আহ্বান কর। আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, আর তিনি ছিলেন উচ্চ কণ্ঠের অধিকারী ব্যক্তি। তখন আমি উচ্চস্বরে আওয়াজ দিয়ে বললাম, হে আসহাবে সামুরা! তোমরা কোথায় যাচ্ছ? তিনি বলেন, আল্লাহর কসম! তা শোনামাত্র তাঁরা এমনভাবে প্রত্যাবর্তন করতে) শুরু করলেন যেমনভাবে গাভী তার বাচ্চার আওয়াজ শুনে দ্রুত দৌড়ে আসে এবং তারা বলতে লাগলো, আমরা আপনার নিকট হাযির, আমরা আপনার নিকট হাযির। রাবী বলেন, এরপর তারা কাফিরদের সাথে পুনরায় যুদ্ধে লিপ্ত হন। তিনি আনসারদেরকেও এমনিভাবে আহ্বান করলেন যে, হে আনসারগণ! রাবী বলেন, এরপর আহ্বান সমাপ্ত করা হল বনী হারেস ইবন খাযরাযের মাধ্যমে (তাঁরা আহ্বান করলেন, হে বনী হারেস ইবনুল খাযরাজ) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্বীয় খচ্চরের উপর আরোহণ অবস্থায় আপন গর্দান উচু করে তাদের যুদ্ধের অবস্থা অবলোকন করে। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এটাই হল যুদ্ধের উত্তেজনাপূর্ণ চরম মুহূর্ত। রাবী বলেন, এরপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কয়েকটি পাথরের টুকরা হাতে নিলেন এবং এগুলি তিনি বিধর্মীদের মুখের উপর ছুড়ে মারলেন। এরপর বললেন, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের রবের কসম! তারা পরাজিত হয়েছে। আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, আমি যুদ্ধক্ষেত্রে যুদ্ধের অবস্থান পরিদর্শন করতে গিয়ে দেখলাম যে, যথারীতি যুদ্ধ চলছে। এমন সময় তিনি পাথরের টুকরোগুলো নিক্ষেপ করলেন। আল্লাহর শপথ! তখন হঠাৎ দেখি যে, কাফিরদের শক্তি নিস্তেজ হয়ে গেল এবং তাদের যুদ্ধের মোড় ঘুরে গেল। [61]

عَنْ أَنَسٍ، قَالَ: كَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَحْسَنَ النَّاسِ، وَأَجْوَدَ النَّاسِ، وَأَشْجَعَ النَّاسِ، وَلَقَدْ فَزِعَ أَهْلُ المَدِينَةِ ذَاتَ لَيْلَةٍ، فَانْطَلَقَ النَّاسُ قِبَلَ الصَّوْتِ، فَاسْتَقْبَلَهُمُ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَدْ سَبَقَ النَّاسَ إِلَى الصَّوْتِ، وَهُوَ يَقُولُ: «لَنْ تُرَاعُوا لَنْ تُرَاعُوا» وَهُوَ عَلَى فَرَسٍ لِأَبِي طَلْحَةَ عُرْيٍ مَا عَلَيْهِ سَرْجٌ، فِي عُنُقِهِ سَيْفٌ، فَقَالَ: " لَقَدْ وَجَدْتُهُ بَحْرًا. أَوْ: إِنَّهُ لَبَحْرٌ ".

আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মানুষের মধ্যে সবচেয়ে সুন্দর, সবার চাইতে অধিক দানশীল এবং লোকদের মধ্যে সর্বাধিক সাহসী ছিলেন। একদা রাতের বেলায় (একটি বিকট আওয়ায শুনে) মদীনাবাসীরা ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে পড়ে। তাই লোকেরা সেই শব্দের দিকে রওয়ানা হয়। তখন তারা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সামনা সামনি পেলেন, তিনি সেই আওয়াযের দিকে লোকদের আগেই বের হয়ে গিয়েছিল। তিনি বলতে লাগলেন, তোমরা ঘাবড়িওনা, তোমরা ঘাবড়িওনা, (আমি দেখে এসেছি, কিছুই নেই)। এ সময় তিনি আবূ তালহা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর জিন বিহীন ঘোড়ার উপর সওয়ার ছিলেন। আর তাঁর কাঁধে একখানা তলোয়ার ঝুলছিল। এরপর তিনি বললেন, অবশ্য এ ঘোড়াটিকে আমি সমুদ্রের মত (দ্রুতগামী) পেয়েছি। অথবা বললেন, এ ঘোড়াটিতো একটি সমুদ্র।[62]

عَنْ أَنَسٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، قَالَ: كَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَحْسَنَ النَّاسِ، وَأَشْجَعَ النَّاسِ، وَلَقَدْ فَزِعَ أَهْلُ المَدِينَةِ لَيْلَةً، فَخَرَجُوا نَحْوَ الصَّوْتِ، فَاسْتَقْبَلَهُمُ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَقَدْ اسْتَبْرَأَ الخَبَرَ، وَهُوَ عَلَى فَرَسٍ لِأَبِي طَلْحَةَ عُرْيٍ، وَفِي عُنُقِهِ السَّيْفُ، وَهُوَ يَقُولُ: «لَمْ تُرَاعُوا، لَمْ تُرَاعُوا» ثُمَّ قَالَ: «وَجَدْنَاهُ بَحْرًا» أَوْ قَالَ: «إِنَّهُ لَبَحْرٌ».

আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সকল লোকের চাইতে সুন্দর ও সাহসী ছিলেন। একরাতে মদীনার লোকেরা আতংকিত হয়ে উত্থিত শব্দের দিকে বের হলো। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের সামনে এলেন এমন অবস্থায় যে, তিনি শব্দের যথার্থতা অন্বেষণ করে ফেলেছেন। তিনি আবূ তালহার জিনবিহীন ঘোড়ার পিঠে সাওযার ছিলেন এবং তার কাঁধে তরবারী ঝুলানো ছিল। তিনি বলছিলেন, তোমরা ভীত হয়ো না। তারপর তিনি বললেন, আমি ঘোড়াটিকে সমুদ্রের ন্যায় গতিশীল পেয়েছি, অথবা তিনি বললেন, এটি সমুদ্র অর্থাৎ অতি বেগবান।[63]

عَنْ سَهْلٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ: أَنَّهُ سُئِلَ عَنْ جُرْحِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَوْمَ أُحُدٍ، فَقَالَ: «جُرِحَ وَجْهُ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، وَكُسِرَتْ رَبَاعِيَتُهُ، وَهُشِمَتِ البَيْضَةُ عَلَى رَأْسِهِ، فَكَانَتْ فَاطِمَةُ عَلَيْهَا السَّلاَمُ، تَغْسِلُ الدَّمَ وَعَلِيٌّ يُمْسِكُ، فَلَمَّا رَأَتْ أَنَّ الدَّمَ لاَ يَزِيدُ إِلَّا كَثْرَةً، أَخَذَتْ حَصِيرًا فَأَحْرَقَتْهُ حَتَّى صَارَ رَمَادًا، ثُمَّ أَلْزَقَتْهُ فَاسْتَمْسَكَ الدَّمُ».

সাহল রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত যে, তাকে উহুদের দিনে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আঘাত সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলো। তিনি বললেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মূখমন্ডল আহত হল এবং তাঁর সামনের দু’টি দাঁত ভেঙ্গে গেল, তাঁর মাথার শিরস্ত্রাণ ভেঙ্গে গেল। ফাতিমা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা রক্ত ধুইতে ছিলেন আর আলী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু পানি ঢেলে দিচ্ছিলেন। তিনি যখন দেখতে পেলেন যে, রক্তক্ষরণ বাড়ছেই, তখন একটি চাটাই নিয়ে তা পুড়িয়ে ছাই করলেন এবং তা ক্ষত স্থানে লাগিয়ে দিলেন। তারপর রক্তক্ষরণ বন্ধ হল।[64]

عَنْ طَارِقِ بْنِ شِهَابٍ، قَالَ: سَمِعْتُ ابْنَ مَسْعُودٍ، يَقُولُ: شَهِدْتُ مِنَ المِقْدَادِ بْنِ الأَسْوَدِ مَشْهَدًا، لَأَنْ أَكُونَ صَاحِبَهُ أَحَبُّ إِلَيَّ مِمَّا عُدِلَ بِهِ، أَتَى النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَهُوَ يَدْعُو عَلَى المُشْرِكِينَ، فَقَالَ: لاَ نَقُولُ كَمَا قَالَ قَوْمُ مُوسَى: ﴿ فَٱذۡهَبۡ أَنتَ وَرَبُّكَ فَقَٰتِلَآ ٢٤ ﴾ [المائ‍دة: ٢٤] ، وَلَكِنَّا نُقَاتِلُ عَنْ يَمِينِكَ، وَعَنْ شِمَالِكَ، وَبَيْنَ يَدَيْكَ وَخَلْفَكَ «فَرَأَيْتُ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَشْرَقَ وَجْهُهُ وَسَرَّهُ» يَعْنِي: قَوْلَهُ.

ইবন মাস‘উদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি মিকদাদ ইবন আসওয়াদকে এমন একটি ভূমিকায় পেয়েছি যে, সে ভূমিকায় যদি আমি হতাম, তবে যা দুনিয়ার সব কিছুর তুলনায় আমার নিকট প্রিয় হত। তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে আসলেন, তখন তিনি মুশরিকদের বিরুদ্ধে দু’আ করছিলেন। এতে তিনি (মিকদাদ ইবন আসওয়াদ) বললেন, মূসা আলাইহিস সালামের কাওম যেমন বলেছিল যে,

﴿ فَٱذۡهَبۡ أَنتَ وَرَبُّكَ فَقَٰتِلَآ ٢٤ ﴾ [المائ‍دة: ٢٤]  

 “তুমি (মূসা) আর তোমার প্রতিপালক যাও এবং যুদ্ধ কর”। [সূরা মায়েদা : ২৪] আমরা তেমন বলব না, বরং আমরাতো আপনার ডানে, বামে, সম্মুখে, পেছনে সর্বদিক থেকে যুদ্ধ করব। ইবন মাসউদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, আমি দেখলাম, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মুখমন্ডল উজ্জ্বল হয়ে উঠল এবং (একথা) তাঁকে খুব আনন্দিত করল। [65]

عَنْ أَنَس بْن مَالِكٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، يَقُولُ: جَاءَ ثَلاَثَةُ رَهْطٍ إِلَى بُيُوتِ أَزْوَاجِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، يَسْأَلُونَ عَنْ عِبَادَةِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَلَمَّا أُخْبِرُوا كَأَنَّهُمْ تَقَالُّوهَا، فَقَالُوا: وَأَيْنَ نَحْنُ مِنَ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ؟ قَدْ غُفِرَ لَهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِهِ وَمَا تَأَخَّرَ، قَالَ أَحَدُهُمْ: أَمَّا أَنَا فَإِنِّي أُصَلِّي اللَّيْلَ أَبَدًا، وَقَالَ آخَرُ: أَنَا أَصُومُ الدَّهْرَ وَلاَ أُفْطِرُ، وَقَالَ آخَرُ: أَنَا أَعْتَزِلُ النِّسَاءَ فَلاَ أَتَزَوَّجُ أَبَدًا، فَجَاءَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِلَيْهِمْ، فَقَالَ: «أَنْتُمُ الَّذِينَ قُلْتُمْ كَذَا وَكَذَا، أَمَا وَاللَّهِ إِنِّي لَأَخْشَاكُمْ لِلَّهِ وَأَتْقَاكُمْ لَهُ، لَكِنِّي أَصُومُ وَأُفْطِرُ، وَأُصَلِّي وَأَرْقُدُ، وَأَتَزَوَّجُ النِّسَاءَ، فَمَنْ رَغِبَ عَنْ سُنَّتِي فَلَيْسَ مِنِّي».

আনাস ইবন মালিক রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, তিনজনের একটি দল রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ইবাদত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করার জন্য রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বিবিগণের গৃহে আগমন করল। যখন তাঁদেরকে এ সম্পর্কে অবহিত করা হলো, তখন তারা এ ইবাদতের পরিমাণ যেন কম মনে করল এবং বলল, আমরা রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সমকক্ষ হতে পারি না। কারণ, তার আগে ও পরের সব গুনাহ্ মাফ করে দেওয়া হয়েছে। এমন সময় তাদের মধ্য থেকে একজন বলল, আমি সারা জীবন রাতে সালাত আদায় করতে থাকব। অপর একজন বলল, আমি সারা বছর সাওম পালন করব এবং কখনও বিরতি দিব না। অপরজন বলল, আমি নারী বিবর্জিত থাকব-কখনও শাদী করব না। এরপর রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের নিকট এলেন এবং বললেন, “তোমরা ঐ সকল ব্যক্তি যারা এরূপ কথাবার্তা বলেছ? আল্লাহর কসম! আমি আল্লাহকে তোমাদের চেয়ে বেশী ভয় করি এবং তোমাদের চেয়ে তাঁর প্রতি আমি বেশ আনুগত্যশীল; অথচ আমি সাওম পালন করি, আবার সাওম থেকে বিরতও থাকি। সালাত আদায় করি এবং ঘুমাই ও বিয়ে-শাদী করি। সুতরাং যারা আমার সুন্নতের প্রতি বিরাগ ভাব পোষণ করবে, তারা আমার দলভুক্ত নয়। [66]

عَنِ ابْنِ شِهَابٍ، قَالَ: أَخْبَرَنِي عُمَرُ بْنُ مُحَمَّدِ بْنِ جُبَيْرِ بْنِ مُطْعِمٍ، أَنَّ مُحَمَّدَ بْنَ جُبَيْرٍ، قَالَ: أَخْبَرَنِي جُبَيْرُ بْنُ مُطْعِمٍ، أَنَّهُ بَيْنَا هُوَ مَعَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَمَعَهُ النَّاسُ، مُقْبِلًا مِنْ حُنَيْنٍ، عَلِقَتْ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الأَعْرَابُ يَسْأَلُونَهُ حَتَّى اضْطَرُّوهُ إِلَى سَمُرَةٍ، فَخَطِفَتْ رِدَاءَهُ، فَوَقَفَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ: «أَعْطُونِي رِدَائِي، فَلَوْ كَانَ عَدَدُ هَذِهِ العِضَاهِ نَعَمًا، لَقَسَمْتُهُ بَيْنَكُمْ، ثُمَّ لاَ تَجِدُونِي بَخِيلًا، وَلاَ كَذُوبًا، وَلاَ جَبَانًا».

জুবাইর ইবন মুত‘য়ীম রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত যে, তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সঙ্গে ছিলেন, আর তখন তাঁর সঙ্গে আরো লোক ছিল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন হুনাইন থেকে আসছিলেন। বেদুঈন লোকেরা তাঁর কাছে গনীমতের মাল চাইতে এসে তাঁকে আঁকড়ে ধরল। এমনকি তারা তাঁকে একটি বাবলা গাছের সাথে ঠেকিয়ে দিল এবং কাঁটা তার চাঁদরটাকে ধরল। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থামলেন। তারপর বললেন, ‘আমার চাঁদরখানি দাও। আমার নিকট যদি এ সব কাঁটাদার বন্য বৃক্ষের সমপরিমাণ পশু থাকত, তবে সেগুলো তোমাদের মধ্যে বণ্টন করে দিতাম। এরপরও আমাকে তোমরা কখনো কৃপণ, মিথ্যাবাদী এবং দুর্বল চিত্ত পাবে না।’ [67]

عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، قَالَ: كُنْتُ أَمْشِي مَعَ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَعَلَيْهِ بُرْدٌ نَجْرَانِيٌّ غَلِيظُ الحَاشِيَةِ، فَأَدْرَكَهُ أَعْرَابِيٌّ فَجَذَبَهُ جَذْبَةً شَدِيدَةً، حَتَّى نَظَرْتُ إِلَى صَفْحَةِ عَاتِقِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَدْ أَثَّرَتْ بِهِ حَاشِيَةُ الرِّدَاءِ مِنْ شِدَّةِ جَذْبَتِهِ، ثُمَّ قَالَ: مُرْ لِي مِنْ مَالِ اللَّهِ الَّذِي عِنْدَكَ، فَالْتَفَتَ إِلَيْهِ فَضَحِكَ، ثُمَّ «أَمَرَ لَهُ بِعَطَاءٍ».

আনাস ইবন মালিক রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সঙ্গে রাস্তায় চলছিলাম। তখন তিনি মোটা পাড়ের নাজরানে প্রস্তুত চাঁদর পরিহিত ছিলেন। এক বেদুঈন তাঁকে পেয়ে খুব জোড়ে টেনে ধরল। অবশেষে আমি লক্ষ্য করলাম, তার জোরে টানার কারণে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাঁধে চাঁদরের পাড়ের দাগ বসে গেছে। তারপর বেদুঈন বলল, ‘আল্লাহর যে সম্পদ আপনার নিকট রয়েছে তা থেকে আমাকে কিছু দেওয়ার নির্দেশ দিন।’ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার দিকে তাকিয়ে একটি মুচকি হাসি দিলেন, আর তাকে কিছু দেওয়ার নির্দেশ দিলেন। [68]

عَنْ أَبِي وَائِلٍ، عَنْ عَبْدِ اللَّهِ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، قَالَ: لَمَّا كَانَ يَوْمُ حُنَيْنٍ، آثَرَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أُنَاسًا فِي القِسْمَةِ، فَأَعْطَى الأَقْرَعَ بْنَ حَابِسٍ مِائَةً مِنَ الإِبِلِ، وَأَعْطَى عُيَيْنَةَ مِثْلَ ذَلِكَ، وَأَعْطَى أُنَاسًا مِنْ أَشْرَافِ العَرَبِ فَآثَرَهُمْ يَوْمَئِذٍ فِي القِسْمَةِ، قَالَ رَجُلٌ: وَاللَّهِ إِنَّ هَذِهِ القِسْمَةَ مَا عُدِلَ فِيهَا، وَمَا أُرِيدَ بِهَا وَجْهُ اللَّهِ، فَقُلْتُ: وَاللَّهِ لَأُخْبِرَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَأَتَيْتُهُ، فَأَخْبَرْتُهُ، فَقَالَ: «فَمَنْ يَعْدِلُ إِذَا لَمْ يَعْدِلِ اللَّهُ وَرَسُولُهُ، رَحِمَ اللَّهُ مُوسَى قَدْ أُوذِيَ بِأَكْثَرَ مِنْ هَذَا فَصَبَرَ».

আব্দুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, হুনাইনের দিনে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোনো কোন লোককে বন্টনে অন্যদের উপর প্রাধান্য দেন। তিনি আকরা‘ ইবন হাসিবকে একশ’ উট দিলেন। উয়াইনাকেও এ পরিমাণ দেন। সম্ভ্রান্ত আরব ব্যক্তিদের দিলেন। এক ব্যক্তি বলল, আল্লাহর কসম। এখানে সুবিচার করা হয়নি। অথবা সে বলল, এতে আল্লাহ তা‘আলার সন্তুষ্টির প্রতি লক্ষ্য রাখা হয়নি। (রাবী বলেন), তখন আমি বললাম, আল্লাহর কসম! আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে অবশ্যই জানিয়ে দিব। তখন আমি তাঁর কাছে এলাম এবং তাঁকে একথা জানিয়ে দিলাম। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘আল্লাহ তা‘আলা ও তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যদি সুবিচার না করেন, তবে কে সুবিচার করবে? আল্লাহ তা‘আলা মূসা (আলাইহিস সালাম)-এর প্রতি রহমত নাযিল করুন, তাঁকে এর চাইতেও অধিক কষ্ট দেওয়া হয়েছিল, কিন্তু তিনি সবর করেছেন।’ [69]

عَنْ سَلْمَانَ بْنِ رَبِيعَةَ، قَالَ: قَالَ عُمَرُ بْنُ الْخَطَّابِ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ: قَسَمَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَسْمًا، فَقُلْتُ: وَاللهِ يَا رَسُولَ اللهِ، لَغَيْرُ هَؤُلَاءِ كَانَ أَحَقَّ بِهِ مِنْهُمْ، قَالَ: «إِنَّهُمْ خَيَّرُونِي أَنْ يَسْأَلُونِي بِالْفُحْشِ أَوْ يُبَخِّلُونِي، فَلَسْتُ بِبَاخِلٍ».

সালমান ইবন রাবি‘আহ রহ. থেকে বর্ণিত, উমর ইবনুল খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিশেষ ক্ষেত্রে বন্টন করলেন। তখন আমি বললাম, ইয়া রাসুলুল্লাহ! এদের ছাড়া অন্যেরা এদের চাইতে অধিক হকদার ছিল। তিনি বললেন, এরা দু’টি কাজের একটির মধ্যে পতিত হতে আমাকে বাধ্য করেছে। এরা হয় খারাপ শব্দ প্রয়োগ করে আমার কাছে চাইবে অথবা আমার প্রতি কৃপণতার অভিযোগ আনবে। অথচ আমি কৃপণ হতে রাজী নই। [70]

عَنْ زِيَادٍ، قَالَ: سَمِعْتُ المُغِيرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، يَقُولُ: إِنْ كَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَيَقُومُ لِيُصَلِّيَ حَتَّى تَرِمُ قَدَمَاهُ - أَوْ سَاقَاهُ - فَيُقَالُ لَهُ فَيَقُولُ: «أَفَلاَ أَكُونُ عَبْدًا شَكُورًا».

মুগীরা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাত্রি জাগরণ করতেন অথবা রাবী বলেছেন, সালাত আদায় করতেন; এমনকি তাঁর পদযুগল অথবা তাঁর দু’পায়ের গোছা ফুলে যেত। তখন এ ব্যাপারে তাঁকে বলা হল, এত কষ্ট কেন করছেন? তিনি বলতেন, তাই বলে আমি কি একজন শুকর আদায়কারী বান্দা হব না? [71]

عَنْ عُقْبَةَ بْنِ عَامِرٍ، قَالَ: صَلَّى رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَلَى قَتْلَى أُحُدٍ بَعْدَ ثَمَانِي سِنِينَ، كَالْمُوَدِّعِ لِلْأَحْيَاءِ وَالأَمْوَاتِ، ثُمَّ طَلَعَ المِنْبَرَ فَقَالَ: «إِنِّي بَيْنَ أَيْدِيكُمْ فَرَطٌ، وَأَنَا عَلَيْكُمْ شَهِيدٌ، وَإِنَّ مَوْعِدَكُمُ الحَوْضُ، وَإِنِّي لَأَنْظُرُ إِلَيْهِ مِنْ مَقَامِي هَذَا، وَإِنِّي لَسْتُ أَخْشَى عَلَيْكُمْ أَنْ تُشْرِكُوا، وَلَكِنِّي أَخْشَى عَلَيْكُمُ الدُّنْيَا أَنْ تَنَافَسُوهَا»، قَالَ: فَكَانَتْ آخِرَ نَظْرَةٍ نَظَرْتُهَا إِلَى رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ.

‘উকবা ইবন ‘আমির রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আট বছর পর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উহুদ যুদ্ধের শহীদদের জন্য (কবরস্থানে গিয়ে) এমনভাবে দো‘আ করলেন যেমন কোনো বিদায় গ্রহনকারী জীবিত ও মৃতদের জন্য দো‘আ করেন। তারপর তিনি (সেখান থেকে ফিরে এসে) মিম্বরে উঠে বললেন, আমি তোমাদের অগ্রে প্রেরিত এবং আমিই তোমাদের সাক্ষীদাতা। এরপর হাউযে কাউসারের পাড়ে তোমাদের সাথে আমার সাক্ষাৎ হবে। আমার এ জায়গা থেকেই আমি হাউযের স্থান দেখতে পাচ্ছি। তোমরা শির্কে লিপ্ত হয়ে যাবে আমি এ আশংকা করি না। তবে আমার আশংকা হয় যে, তোমরা দুনিয়াদার হবে, তাতে প্রতিযোহগিতায় লিপ্ত হবে।

বর্ণনাকারী বলেন, আমার এ দেখাই ছিল রাসুলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে শেষবারের মত দেখা। [72]

عَنْ زُرَارَةَ، أَنَّ سَعْدَ بْنَ هِشَامِ بْنِ عَامِرٍ، أَرَادَ أَنْ يَغْزُوَ فِي سَبِيلِ اللهِ، فَقَدِمَ الْمَدِينَةَ، فَأَرَادَ أَنْ يَبِيعَ عَقَارًا لَهُ بِهَا فَيَجْعَلَهُ فِي السِّلَاحِ وَالْكُرَاعِ، وَيُجَاهِدَ الرُّومَ حَتَّى يَمُوتَ، فَلَمَّا قَدِمَ الْمَدِينَةَ لَقِيَ أُنَاسًا مِنْ أَهْلِ الْمَدِينَةِ، فَنَهَوْهُ عَنْ ذَلِكَ، وَأَخْبَرُوهُ أَنَّ رَهْطًا سِتَّةً أَرَادُوا ذَلِكَ فِي حَيَاةِ نَبِيِّ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَنَهَاهُمْ نَبِيُّ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، وَقَالَ: «أَلَيْسَ لَكُمْ فِيَّ أُسْوَةٌ؟» فَلَمَّا حَدَّثُوهُ بِذَلِكَ رَاجَعَ امْرَأَتَهُ، وَقَدْ كَانَ طَلَّقَهَا وَأَشْهَدَ عَلَى رَجْعَتِهَا، فَأَتَى ابْنَ عَبَّاسٍ، فَسَأَلَهُ عَنْ وِتْرِ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَقَالَ ابْنُ عَبَّاسٍ: أَلَا أَدُلُّكَ عَلَى أَعْلَمِ أَهْلِ الْأَرْضِ بِوِتْرِ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ؟ قَالَ: مَنْ؟ قَالَ: عَائِشَةُ، فَأْتِهَا، فَاسْأَلْهَا، ثُمَّ ائْتِنِي فَأَخْبِرْنِي بِرَدِّهَا عَلَيْكَ، فَانْطَلَقْتُ إِلَيْهَا، فَأَتَيْتُ عَلَى حَكِيمِ بْنِ أَفْلَحَ، فَاسْتَلْحَقْتُهُ إِلَيْهَا، فَقَالَ: مَا أَنَا بِقَارِبِهَا، لِأَنِّي نَهَيْتُهَا أَنْ تَقُولَ فِي هَاتَيْنِ الشِّيعَتَيْنِ شَيْئًا، فَأَبَتْ فِيهِمَا إِلَّا مُضِيًّا، قَالَ: فَأَقْسَمْتُ عَلَيْهِ، فَجَاءَ فَانْطَلَقْنَا إِلَى عَائِشَةَ، فَاسْتَأْذَنَّا عَلَيْهَا، فَأَذِنَتْ لَنَا، فَدَخَلْنَا عَلَيْهَا، فَقَالَتْ: «أَحَكِيمٌ؟» فَعَرَفَتْهُ، فَقَالَ: نَعَمْ، فَقَالَتْ: «مَنْ مَعَكَ؟» قَالَ: سَعْدُ بْنُ هِشَامٍ، قَالَتْ: «مَنْ هِشَامٌ؟» قَالَ: ابْنُ عَامِرٍ، فَتَرَحَّمَتْ عَلَيْهِ، وَقَالَتْ خَيْرًا - قَالَ قَتَادَةُ: وَكَانَ أُصِيبَ يَوْمَ أُحُدٍ - فَقُلْتُ: يَا أُمَّ الْمُؤْمِنِينَ أَنْبِئِينِي عَنْ خُلُقِ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قَالَتْ: «أَلَسْتَ تَقْرَأُ الْقُرْآنَ؟» قُلْتُ: بَلَى، قَالَتْ: «فَإِنَّ خُلُقَ نَبِيِّ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ الْقُرْآنَ»، قَالَ: فَهَمَمْتُ أَنْ أَقُومَ وَلَا أَسْأَلَ أَحَدًا عَنْ شَيْءٍ حَتَّى أَمُوتَ، ثُمَّ بَدَا لِي، فَقُلْتُ: أَنْبِئِينِي عَنْ قِيَامِ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَقَالَتْ: «أَلَسْتَ تَقْرَأُ يَا أَيُّهَا الْمُزَّمِّلُ؟» قُلْتُ: بَلَى، قَالَتْ: «فَإِنَّ اللهَ عَزَّ وَجَلَّ افْتَرَضَ قِيَامَ اللَّيْلِ فِي أَوَّلِ هَذِهِ السُّورَةِ، فَقَامَ نَبِيُّ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَأَصْحَابُهُ حَوْلًا، وَأَمْسَكَ اللهُ خَاتِمَتَهَا اثْنَيْ عَشَرَ شَهْرًا فِي السَّمَاءِ، حَتَّى أَنْزَلَ اللهُ فِي آخِرِ هَذِهِ السُّورَةِ التَّخْفِيفَ، فَصَارَ قِيَامُ اللَّيْلِ تَطَوُّعًا بَعْدَ فَرِيضَةٍ» قَالَ: قُلْتُ: يَا أُمَّ الْمُؤْمِنِينَ أَنْبِئِينِي عَنْ وِتْرِ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَقَالَتْ: " كُنَّا نُعِدُّ لَهُ سِوَاكَهُ وَطَهُورَهُ، فَيَبْعَثُهُ اللهُ مَا شَاءَ أَنْ يَبْعَثَهُ مِنَ اللَّيْلِ، فَيَتَسَوَّكُ، وَيَتَوَضَّأُ، وَيُصَلِّي تِسْعَ رَكَعَاتٍ لَا يَجْلِسُ فِيهَا إِلَّا فِي الثَّامِنَةِ، فَيَذْكُرُ اللهَ وَيَحْمَدُهُ وَيَدْعُوهُ، ثُمَّ يَنْهَضُ وَلَا يُسَلِّمُ، ثُمَّ يَقُومُ فَيُصَلِّ التَّاسِعَةَ، ثُمَّ يَقْعُدُ فَيَذْكُرُ اللهَ وَيَحْمَدُهُ وَيَدْعُوهُ، ثُمَّ يُسَلِّمُ تَسْلِيمًا يُسْمِعُنَا، ثُمَّ يُصَلِّي رَكْعَتَيْنِ بَعْدَ مَا يُسَلِّمُ وَهُوَ قَاعِدٌ، فَتِلْكَ إِحْدَى عَشْرَةَ رَكْعَةً يَا بُنَيَّ، فَلَمَّا أَسَنَّ نَبِيُّ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، وَأَخَذَهُ اللَّحْمُ أَوْتَرَ بِسَبْعٍ، وَصَنَعَ فِي الرَّكْعَتَيْنِ مِثْلَ صَنِيعِهِ الْأَوَّلِ، فَتِلْكَ تِسْعٌ يَا بُنَيَّ، وَكَانَ نَبِيُّ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا صَلَّى صَلَاةً أَحَبَّ أَنْ يُدَاوِمَ عَلَيْهَا، وَكَانَ إِذَا غَلَبَهُ نَوْمٌ، أَوْ وَجَعٌ عَنْ قِيَامِ اللَّيْلِ صَلَّى مِنَ النَّهَارِ ثِنْتَيْ عَشْرَةَ رَكْعَةً، وَلَا أَعْلَمُ نَبِيَّ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَرَأَ الْقُرْآنَ كُلَّهُ فِي لَيْلَةٍ، وَلَا صَلَّى لَيْلَةً إِلَى الصُّبْحِ، وَلَا صَامَ شَهْرًا كَامِلًا غَيْرَ رَمَضَانَ، قَالَ: فَانْطَلَقْتُ إِلَى ابْنِ عَبَّاسٍ فَحَدَّثْتُهُ بِحَدِيثِهَا، فَقَالَ: صَدَقَتْ لَوْ كُنْتُ أَقْرَبُهَا، أَوْ أَدْخُلُ عَلَيْهَا لَأَتَيْتُهَا حَتَّى تُشَافِهَنِي بِهِ، قَالَ: قُلْتُ لَوْ عَلِمْتُ أَنَّكَ لَا تَدْخُلُ عَلَيْهَا مَا حَدَّثْتُكَ حَدِيثَهَا.

যুরারা (রহ.) সুত্রে বর্ণনা করেন যে, সা‘দ ইবন হিশাম ইবন আমির রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করার ইচ্ছা করে মদীনায় এলেন এবং সেখানে তাঁর একটি সম্পত্তি বিক্রি করে তা যুদ্ধাস্ত্র ও ঘোড়া সংগ্রহে ব্যয় করার এবং মৃত্যু পর্যন্ত রোমানদের বিরুদ্ধে জিহাদে আত্মনিয়োগ করার সংকল্প করলেন। মদীনায় আসার পর মদীনাবাসী কিছু লোকের সাথে সাক্ষাৎ হলে তাঁরা ঐ কাজ করতে নিষেধ করলেন এবং তাঁকে জানালেন যে, ছয় জনের একটি দল নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জীবদ্দশায় এরূপ ইচ্ছা করেছিল। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের নিষেধ করেন এবং বলেন, “আমার মধ্যে তোমাদের জন্য কি কোনো আদর্শ নেই”? মদীনাবাসীরা তাঁকে এ ঘটনা বর্ণনা করলে তিনি নিজের স্ত্রীর সাথে রাজ‘আত (পুনরায় স্ত্রীকে বরণ) করলেন। কেননা তিনি তাঁকে তালাক দিয়েছিলেন এবং তিনি তাঁর এ রাজ‘আতের ব্যাপারে সাক্ষীও রাখলেন। এরপর তিনি ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর কাছে গিয়ে তাঁকে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওয়িতর সালাত সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলেন। ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বললেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওয়িতর সম্পর্কে পৃথিবীর মধ্যে সর্বাধিক বিজ্ঞ ব্যক্তি সম্পর্কে কি তোমাকে বলে দিব না? তিনি বললেন, তিনি কে? ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বললেন, তিনি আয়িশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা, তাঁর কাছে গিয়ে তুমি তাঁকে জিজ্ঞাসা করবে পরে আমার কাছে এসে তোমাকে দেওয়া তার জবাব সম্পর্কে অবহিত করবে। আমি তখন তাঁর কাছে রওয়ানা হলাম। আর হাকীম ইবন আফলাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর কাছে গিয়ে আমার সঙ্গে আয়িশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহার কাছে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করলাম। তিনি বললেন, আমি তো তাঁর নিকট যাই না। কেননা (বিবাদমান) দু’দল সম্পর্কে কোনো মন্তব্য করতে আমি তাকে নিষেধ করেছিলাম, কিন্তু তিনি তাতে অংশগ্রহণ করা থেকে বিরত থাকতে অস্বীকার করেন। সা‘আদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, তখন আমি তাঁকে কসম দিলাম। তখন তিনি তৈয়ার হলেন। আমরা আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহার উদ্দেশ্যে চললাম এবং তাঁর কাছে গিয়ে অনুমতি চাইলাম। তিনি আমাদের অনুমতি দিলেন। আমরা তাঁর ঘরে প্রবেশ করলে তিনি বললেন, হাকীম না কি? তিনি তাঁকে চিনে ফেলেছিলেন। উত্তরে হাকীম রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বললেন, হ্যাঁ। আয়িশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা বললেন, তোমার সঙ্গে কে? হাকীম রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বললেন, সা‘দ ইবন হিশাম। আয়িশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা বললেন, কোন হিশাম? হাকীম রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বললেন, ইবন আমির। তখন আয়িশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা তাঁর জন্য রহমতের দো‘আ করলেন এবং তাঁর সম্পর্কে ভাল মন্তব্য করলেন। রাবী কাতাদা (রহ.) বলেছেন, আমির রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু উহুদের যুদ্ধে শহীদ হয়েছিলেন। আমি (সা‘দ) বললাম, হে, উম্মুল মু’মিনীন! আমাকে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আখলাক সস্পর্কে অবহিত করুন! তিনি বললেন, তুমি কি কুরআন পাঠ কর না? আমি বললাম, হ্যাঁ। তিনি বললেন, আল্লাহর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের চরিত্র তো ছিল আল-কুরআনই। সা‘দ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, তখন আমার ইচ্ছে ছিল যে, উঠে যাই এবং মৃত্যু পর্যন্ত কাউকে কোনো বিষয় জিজ্ঞাসা করব না। পরে আবার মনে হল (আরো কিছু জিজ্ঞাসা করি) তাই আমি বললাম, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের রাতের ইবাদত সম্পর্কে আমাকে অবহিত করুন! তিনি বললেন, তুমি কি সূরা “ইয়া আয়্যুহাল মুযযামিল পড় না? আমি বললাম, হ্যাঁ। তিনি বললেন, মহান আল্লাহ এ সূরার প্রথমাংশ (ইবাদত) রাত্রি জাগরণ ফরয করে দিয়েছিলেন। তখন আল্লাহর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং তাঁর সাহাবীগণ এক বছর যাবত (তাহাজ্জুদের জন্য) রাত্রি জাগরণ করলেন। আর আল্লাহ তা‘আলা এ সূরার শেষ অংশ বার মাস পর্যন্ত আসমানে রুখে রাখেন। অবশেষে এ সূরার শেষ অংশ নাযিল করে সহজ করে দিলেন। ফলে রাত্রি জাগরণ ফরয হওয়ার পরে নফলে পরিণত হয়। সা‘দ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, আমি বললাম, হে উম্মুল মুমিনীন! আমাকে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওয়িতর সালাত সম্পর্কে অবহিত করুন! তিনি বললেন, আমরা তাঁর জন্য তাঁর মিসওয়াক ও অযুর পানি প্রস্তুত রাখতাম। রাতের যে সময় আল্লাহর ইচ্ছা হত তাকে জাগিয়ে দিতেন। তিনি তখন মিসওয়াক ও অযু করতেন এবং নয় রাক‘আত সালাত আদায় করতেন। তিনি এর মাঝে আর বসতেন না, অষ্টম রাক‘আত ব্যতীত। তখন তিনি আল্লাহর যিকর করতেন, তাঁর হামদ করতেন এবং তাঁর কাছে দো‘আ করতেন। তারপর সালাম না করেই উঠে পড়তেন এবং নবম রাক‘আত আদায় করে বসতেন এবং আল্লাহর যিকির ও তাঁর হামদ ও তাঁর কাছে দো‘আ করতেন। পরে এমনভাবে সালাম করতেন যা আমরা শুনতে পেতাম। সালাম করার পরে বসে দু’রাক‘আত সালাত আদায় করতেন। বৎস, এ হল মোট এগার রাক‘আত। পরে যখন আল্লাহর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বয়োঃবৃদ্ধ হয়ে গেলেন এবং তিনি স্থুলদেহী হয়ে গেলেন, তখন সাত রাক‘আত দিয়ে বিতর আদায় করতেন। আর শেষ দু’ রাক‘আতে তাঁর আগের আমলের অনুরূপ আমল করতেন। বৎস, এভাবে হল নয় রাক‘আত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন কোনো সালাত আদায় করতেন তখন তাতে স্থায়িত্ব রক্ষা করা পছন্দ করতেন। আর কখনো নিদ্রা বা কোন ব্যাধি তাঁর রাত জেগে ইবাদতের ব্যাপারে তাঁকে সংঘাত ঘটালে দিনের বেলা বার রাক‘আত সালাত আদায় করে নিতেন। আর আল্লাহর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একই রাতে পূর্ণ কুরআন পড়েছেন বলে আমার জানা নেই এবং তিনি ভোর পর্যন্ত সারা রাত সালাত আদায় করেন নি এবং রমাদান ব্যতীত অন্য কোনো পূর্ণ মাস সাওম পালন করেন নি। সা‘দ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, পরে আমি ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর কাছে গেলাম এবং আয়িশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহার বর্ণিত হাদীস তাঁর কাছে বর্ণনা করলাম। তিনি বললেন, ঠিকই বলেছেন। আমি যদি তাঁর নিকটবর্তী হতাম, অথবা বললেন, আমি যদি তাঁর সঙ্গে যেতাম তাহলে অবশ্যই আমি তাঁর কাছে গিয়ে সরাসরি তার মুখে এ হাদীস শুনতাম। সা‘দ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, আমি বললাম, আমি যদি জানতাম যে, তাঁর কাছে যান না, তবে তাঁর হাদীস আমি আপনাকে শোনাতাম না। [73]

عَنْ أَبِي الزُّبَيْرِ، أَنَّهُ حَدَّثَهُ جَابِرُ بْنُ عَبْدِ اللهِ، أَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَبِثَ عَشْرَ سِنِينَ يَتَّبِعُ الْحَاجَّ فِي مَنَازِلِهِمْ فِي الْمَوْسِمِ وَبِمَجَنَّةٍ وَبِعُكَاظٍ، وَبِمَنَازِلِهِمْ بِمِنًى يَقُولُ: " مَنْ يُؤْوِينِي، مَنْ يَنْصُرُنِي حَتَّى أُبَلِّغَ رِسَالَاتِ رَبِّي وَلَهُ الْجَنَّةُ؟ "، فَلَا يَجِدُ أَحَدًا يَنْصُرُهُ وَيُؤْوِيهِ، حَتَّى إِنَّ الرَّجُلَ يَرْحَلُ مِنْ مُضَرَ، أَوْ مِنَ الْيَمَنِ، إِلَى ذِي رَحِمِهِ، فَيَأْتِيهِ قَوْمُهُ، فَيَقُولُونَ: احْذَرْ غُلَامَ قُرَيْشٍ لَا يَفْتِنُكَ، وَيَمْشِي بَيْنَ رِحَالِهِمْ يَدْعُوهُمْ إِلَى اللهِ عَزَّ وَجَلَّ يُشِيرُونَ إِلَيْهِ بِالْأَصَابِعِ، حَتَّى بَعَثَنَا اللهُ عَزَّ وَجَلَّ لَهُ مِنْ يَثْرِبَ، فَيَأْتِيهِ الرَّجُلُ فَيُؤْمِنُ بِهِ، فَيُقْرِئُهُ الْقُرْآنَ، فَيَنْقَلِبُ إِلَى أَهْلِهِ، فَيُسْلِمُونَ بِإِسْلَامِهِ، حَتَّى لَمْ يَبْقَ دَارٌ مِنْ دُورِ يَثْرِبَ إِلَّا فِيهَا رَهْطٌ مِنَ الْمُسْلِمِينَ يُظْهِرُونَ الْإِسْلَامَ، ثُمَّ بَعَثَنَا اللهُ عَزَّ وَجَلَّ، فَأْتَمَرْنَا، وَاجْتَمَعْنَا سَبْعُونَ رَجُلًا مِنَّا، فَقُلْنَا: حَتَّى مَتَى نَذَرُ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُطْرَدُ فِي جِبَالِ مَكَّةَ، وَيَخَافُ، فَرَحَلْنَا حَتَّى قَدِمْنَا عَلَيْهِ فِي الْمَوْسِمِ، فَوَاعَدْنَاهُ شِعْبَ الْعَقَبَةِ، فَقَالَ عَمُّهُ الْعَبَّاسُ: يَا ابْنَ أَخِي، إِنِّي لَا أَدْرِي مَا هَؤُلَاءِ الْقَوْمُ الَّذِينَ جَاءُوكَ؟ إِنِّي ذُو مَعْرِفَةٍ بِأَهْلِ يَثْرِبَ، فَاجْتَمَعْنَا عِنْدَهُ مِنْ رَجُلٍ وَرَجُلَيْنِ، فَلَمَّا نَظَرَ الْعَبَّاسُ فِي وُجُوهِنَا، قَالَ: هَؤُلَاءِ قَوْمٌ لَا أَعْرِفُهُمْ، هَؤُلَاءِ أَحْدَاثٌ، فَقُلْنَا: يَا رَسُولَ اللهِ، عَلَامَ نُبَايِعُكَ؟ قَالَ: " تُبَايِعُونِي عَلَى السَّمْعِ وَالطَّاعَةِ فِي النَّشَاطِ وَالْكَسَلِ، وَعَلَى النَّفَقَةِ فِي الْعُسْرِ وَالْيُسْرِ، وَعَلَى الْأَمْرِ بِالْمَعْرُوفِ، وَالنَّهْيِ عَنِ الْمُنْكَرِ، وَعَلَى أَنْ تَقُولُوا فِي اللهِ لَا تَأْخُذُكُمْ فِيهِ لَوْمَةُ لَائِمٍ، وَعَلَى أَنْ تَنْصُرُونِي إِذَا قَدِمْتُ يَثْرِبَ، فَتَمْنَعُونِي مِمَّا تَمْنَعُونَ مِنْهُ أَنْفُسَكُمْ وَأَزْوَاجَكُمْ وَأَبْنَاءَكُمْ وَلَكُمُ الْجَنَّةُ "، فَقُمْنَا نُبَايِعُهُ، فَأَخَذَ بِيَدِهِ أَسْعَدُ بْنُ زُرَارَةَ وَهُوَ أَصْغَرُ السَّبْعِينَ، فَقَالَ: رُوَيْدًا يَا أَهْلَ يَثْرِبَ، إِنَّا لَمْ نَضْرِبْ إِلَيْهِ أَكْبَادَ الْمَطِيِّ إِلَّا وَنَحْنُ نَعْلَمُ أَنَّهُ رَسُولُ اللهِ.

আবু যোবায়ের রহ. থেকে বর্ণিত, জাবির ইবন আব্দুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু তাকে এ হাদীসখানা বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দশ বছর মক্কায় হজ্জের মৌসুমে মক্কার অলিতে গলিতে, ওকাযমেলা ও মিনায় হাজীদের সাথে দেখা করতেন এবং তাদেরকে বলতেন, কে আমাকে সাহায্য করবে? কে আমাকে সহযোগিতা করবে যাতে আমি আমার রবের রিসালাত পৌঁছাতে পারি, বিনিময়ে তাঁর জন্য রয়েছে জান্নাত। তিনি কাউকেই তাঁর সাহায্যকারী পাননি। এমনকি মুদার, ইয়ামেন ও যুর সামাদ প্রভৃতি অঞ্চল থেকে লোকজন আসত তারা জাতির কাছে ফিরে গিয়ে বলত, তোমরা কুরাইশের এক যুবক থেকে সাবধান হও, তাঁর দিকে ফিরেও তাকাবে না। তিনি হজ্জযাত্রীদের মাঝে ঘুরে বেড়াতেন ও তাদেরকে আল্লাহর দিকে দাওয়াত দিতেন, কিন্তু লোকজন তাঁর দিকে আঙ্গুল দিয়ে ইশারা করে উপহাস করত। পরে আল্লাহ ইয়াসরিব (মদিনা) থেকে আমাদেরকে পাঠালেন, ফলে তার কাছে মদীনার কোনো লোক আসত এবং ইসলাম গ্রহণ করতো। তাকে কুরআন পড়ে শোনানো হতো, সে তার জাতির কাছে গিয়ে ইসলামের দাওয়াত দিত, তারা তার ইসলামের কারণে ইসলাম গ্রহণ করে নিতো, ফলে অবস্থা এমন দাঁড়ায় যে, মদীনায় এমন কোনো ঘর বাকী ছিল না যেখানে একদল ইসলাম গ্রহণ করে নি (অর্থাৎ বিরাট সংখ্যক লোক ইসলাম গ্রহণ করল)। অতঃপর আমাদেরকে আল্লাহ পাঠালেন, আমরা পরস্পর পরামর্শ করলাম, আর আমাদের মধ্য থেকে সত্তরজন লোক শি‘আবে ‘আকাবাতে একত্রিত হলাম এবং বললাম, আর কতদিন আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে মক্কার মানুষদের দ্বারা তাদের পাহাড়সমূহে নিগৃহীত হতে ও ভীত-সন্ত্রস্ত অবস্থায় ছেড়ে রাখব? সুতরাং আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে প্রবেশ করলাম, হজ মওসুমে তাই আমরা তার কাছে আসলাম। তাকে আমরা আকাবার পাহাড়ে পেলাম। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের চাচা আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, হে ভাতিজা আমি জানিনা কারা তোমার কাছে এসেছে? আমি তো ইয়াসরিবের লোকদেরকে জানি। ফলে আমরা একজন দু’জন করে একত্রিত হলাম। অতঃপর আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু আমাদের দেখে বললেন, এদেরকে আমি চিনি না। এরা নতুন লোক। আমরা বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ আমরা কিসের উপর বাই‘আত গ্রহণ করব? তিনি বললেন, তোমরা বাই‘আত গ্রহণ করবে যে, সর্বাবস্থায় আমার কথা শোনবে, আনুগত্য করবে, সুখে দুঃখে আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় করবে, সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজের নিষেধ করবে, আল্লাহর ব্যাপারে নিন্দুকের নিন্দার ভয় করবে না এবং আমি ইয়াসরেবে আগমন করলে আমাকে সাহায্য করবে, আমার পক্ষ থেকে প্রতিরোধ করবে যেভাবে তোমাদের পরিবার-পরিজন থেকে প্রতিরোধ করে থাক। বিনিময়ে তোমাদের জন্য জান্নাত থাকবে। তখন আমরা তাঁর হাত ধরলাম বাই‘আত করার জন্য, তখন আমাদের সত্তরজনের মধ্যকার ছোটজন আস‘আদ ইবন যুরারা তাঁর হাত ধরলেন এবং বললেন, থাম, হে ইয়াসরিববাসী আমরা উট চালিয়ে এখানে এসেছে এটা ভালো করেই জেনে যে তিনি আল্লাহর রাসূল। আজ তাকে নিয়ে বের হয়ে আসার অর্থ হচ্ছে তোমাদের সকল আরবদের বিরুদ্ধে অবস্থান গ্রহণ, তাদের উত্তম লোকদের হত্যা করা, আর তোমরা তরবারীর দ্বারা কর্তিত হওয়া। এমতাবস্থায় হয় তোমরা যখন তরবারীর সম্মুখীন হবে তখন তাতে ধৈর্য ধারণ করবে, তোমাদের উত্তম লোকদের মৃত্যু মেনে নিবে, সকল আরবদের বিপক্ষে দাঁড়াবে, সুতরাং সেটা তোমরা গ্রহণ করতে পার, আর তার প্রতিদান তোমরা আল্লাহর কাছে পাবে, নতুবা তোমরা নিজেদের ব্যাপারে ভীত এক জাতিতে পরিণত হয়ে তাকে ছেড়ে দিতে পার, আর তা আল্লাহর কাছে ওযর পেশ করার সুযোগ হিসেবে গ্রহণীয় হবে। তখন তার সাথীরা বলল, হে আস‘আদ ইবন যুরারা, তোমার হাত সরাও, আল্লাহর শপথ, আমরা এ বাই‘আত কখনো পরিত্যাগ করবো না, তা থেকে মুক্তিও চাইবো না, তখন আমরা একজন একজন করে আব্বাসের পাহারায় তার হাতে বাই‘আত নিয়েছলাম আর তিনি তার জন্য আমাদের জান্নাত দিচ্ছিলেন[74]

 

তৃতীয় পরিচ্ছেদ

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নবুওয়তের অন্যতম প্রমাণ হচ্ছে তার নবুওয়তের ব্যাপারে পূর্ববর্তীদের প্রদত্ত সুসংবাদ

عَنْ عَائِشَةَ أُمِّ المُؤْمِنِينَ أَنَّهَا قَالَتْ: أَوَّلُ مَا بُدِئَ بِهِ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مِنَ الوَحْيِ الرُّؤْيَا الصَّالِحَةُ فِي النَّوْمِ، فَكَانَ لاَ يَرَى رُؤْيَا إِلَّا جَاءَتْ مِثْلَ فَلَقِ الصُّبْحِ، ثُمَّ حُبِّبَ إِلَيْهِ الخَلاَءُ، وَكَانَ يَخْلُو بِغَارِ حِرَاءٍ فَيَتَحَنَّثُ فِيهِ - وَهُوَ التَّعَبُّدُ - اللَّيَالِيَ ذَوَاتِ العَدَدِ قَبْلَ أَنْ يَنْزِعَ إِلَى أَهْلِهِ، وَيَتَزَوَّدُ لِذَلِكَ، ثُمَّ يَرْجِعُ إِلَى خَدِيجَةَ فَيَتَزَوَّدُ لِمِثْلِهَا، حَتَّى جَاءَهُ الحَقُّ وَهُوَ فِي غَارِ حِرَاءٍ، فَجَاءَهُ المَلَكُ فَقَالَ: اقْرَأْ، قَالَ: «مَا أَنَا بِقَارِئٍ»، قَالَ: " فَأَخَذَنِي فَغَطَّنِي حَتَّى بَلَغَ مِنِّي الجَهْدَ ثُمَّ أَرْسَلَنِي، فَقَالَ: اقْرَأْ، قُلْتُ: مَا أَنَا بِقَارِئٍ، فَأَخَذَنِي فَغَطَّنِي الثَّانِيَةَ حَتَّى بَلَغَ مِنِّي الجَهْدَ ثُمَّ أَرْسَلَنِي، فَقَالَ: اقْرَأْ، فَقُلْتُ: مَا أَنَا بِقَارِئٍ، فَأَخَذَنِي فَغَطَّنِي الثَّالِثَةَ ثُمَّ أَرْسَلَنِي، فَقَالَ: ﴿ ٱقۡرَأۡ بِٱسۡمِ رَبِّكَ ٱلَّذِي خَلَقَ ١ خَلَقَ ٱلۡإِنسَٰنَ مِنۡ عَلَقٍ ٢ ٱقۡرَأۡ وَرَبُّكَ ٱلۡأَكۡرَمُ ٣ ﴾ [العلق: ١، ٣] فَرَجَعَ بِهَا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَرْجُفُ فُؤَادُهُ، فَدَخَلَ عَلَى خَدِيجَةَ بِنْتِ خُوَيْلِدٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا، فَقَالَ: «زَمِّلُونِي زَمِّلُونِي» فَزَمَّلُوهُ حَتَّى ذَهَبَ عَنْهُ الرَّوْعُ، فَقَالَ لِخَدِيجَةَ وَأَخْبَرَهَا الخَبَرَ: «لَقَدْ خَشِيتُ عَلَى نَفْسِي» فَقَالَتْ خَدِيجَةُ: كَلَّا وَاللَّهِ مَا يُخْزِيكَ اللَّهُ أَبَدًا، إِنَّكَ لَتَصِلُ الرَّحِمَ، وَتَحْمِلُ الكَلَّ، وَتَكْسِبُ المَعْدُومَ، وَتَقْرِي الضَّيْفَ، وَتُعِينُ عَلَى نَوَائِبِ الحَقِّ، فَانْطَلَقَتْ بِهِ خَدِيجَةُ حَتَّى أَتَتْ بِهِ وَرَقَةَ بْنَ نَوْفَلِ بْنِ أَسَدِ بْنِ عَبْدِ العُزَّى ابْنَ عَمِّ خَدِيجَةَ وَكَانَ امْرَأً تَنَصَّرَ فِي الجَاهِلِيَّةِ، وَكَانَ يَكْتُبُ الكِتَابَ العِبْرَانِيَّ، فَيَكْتُبُ مِنَ الإِنْجِيلِ بِالعِبْرَانِيَّةِ مَا شَاءَ اللَّهُ أَنْ يَكْتُبَ، وَكَانَ شَيْخًا كَبِيرًا قَدْ عَمِيَ، فَقَالَتْ لَهُ خَدِيجَةُ: يَا ابْنَ عَمِّ، اسْمَعْ مِنَ ابْنِ أَخِيكَ، فَقَالَ لَهُ وَرَقَةُ: يَا ابْنَ أَخِي مَاذَا تَرَى؟ فَأَخْبَرَهُ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ خَبَرَ مَا رَأَى، فَقَالَ لَهُ وَرَقَةُ: هَذَا النَّامُوسُ الَّذِي نَزَّلَ اللَّهُ عَلَى مُوسَى، يَا لَيْتَنِي فِيهَا جَذَعًا، لَيْتَنِي أَكُونُ حَيًّا إِذْ يُخْرِجُكَ قَوْمُكَ، فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «أَوَ مُخْرِجِيَّ هُمْ»، قَالَ: نَعَمْ، لَمْ يَأْتِ رَجُلٌ قَطُّ بِمِثْلِ مَا جِئْتَ بِهِ إِلَّا عُودِيَ، وَإِنْ يُدْرِكْنِي يَوْمُكَ أَنْصُرْكَ نَصْرًا مُؤَزَّرًا. ثُمَّ لَمْ يَنْشَبْ وَرَقَةُ أَنْ تُوُفِّيَ، وَفَتَرَ الوَحْي.

‘আয়িশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি সর্বপ্রথম যে অহী আসে, তা ছিল ঘুমের মধ্যে সত্য স্বপ্নরূপে। যে স্বপ্নই তিনি দেখতেন তা একেবারে ভোরের আলোর ন্যায় প্রকাশ পেত। তারপর তাঁর কাছে নির্জনতা প্রিয় হয়ে পড়ে এবং তিনি ‘হেরা’ গুহায় নির্জনে থাকতেন। আপন পরিবারের কাছে ফিরে আসা এবং কিছু খাদ্যসামগ্রী সঙ্গে নিয়ে যাওয়া, এইভাবে সেখানে তিনি একাধারে বেশ কয়েক রাত ইবাদতে মগ্ন থাকতেন। তারপর খাদীজা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহার কাছে ফিরে এসে আবার অনুরূপ সময়ের জন্য কিছু খাদ্যসামগ্রী নিয়ে যেতেন। এমনিভাবে ‘হেরা’ গুহায় অবস্থানকালে একদিন তাঁর কাছে ওহী এলো। তাঁর কাছে ফিরিশতা এসে বললেন, ‘পড়ুন’। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বললেন, “আমি বললাম, ‘আমি পড়িনা’। তিনি বলেনঃ তারপর তিনি আমাকে জড়িয়ে ধরে এমন ভাবে চাপ দিলেন যে, আমার অত্যন্ত কষ্ট হলো। তারপর তিনি আমাকে ছেড়ে দিয়ে বললেন, ‘পড়ুন’। আমি বললাম, আমিতো পড়ি না। তিনি দ্বিতীয়বার আমাকে জড়িয়ে ধরে এমন ভাবে চাপ দিলেন যে, আমার অত্যন্ত কষ্ট হলো। এরপর তিনি আমাকে ছেড়ে দিয়ে বললেন, ‘পড়ুন’। আমি জবাব দিলাম, ‘আমিতো পড়ি না’। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বলেন, তারপর তৃতীয়বার তিনি আমাকে জড়িয়ে ধরে চাপ দিলেন। এরপর ছেড়ে দিয়ে বললেন, “পড়ুন আপনার রবের নামে যিনি সৃষ্টি করেছেন। সৃষ্টি করেছেন মানুষকে ‘আলাক (রক্তপিণ্ড) থেকে। পড়ুন আর আপনার রব্ মহামহিমান্বিত।” [সূরা আল্-আলাক: ১-৩]

তারপর এ আয়াত নিয়ে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ফিরে এলেন। তাঁর অন্তর তখন কাঁপছিল। তিনি খাদীজা বিন্‌ত খুওয়ালিদের কাছে এসে বললেন, ‘আমাকে চাদর দিয়ে ঢেকে দাও, আমাকে চাদর দিয়ে ঢেকে দাও।’ তাঁরা তাঁকে চাদর দিয়ে ঢেকে দিলেন। অবশেষে তাঁর ভয় দূর হলো। তখন তিনি খাদীজা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহার কাছে সকল ঘটনা জানিয়ে তাঁকে বললেন, আমি নিজের উপর আশংকা বোধ করছি। খাদীজা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা বললেন, আল্লাহ্‌র কসম, কখনো না। আল্লাহ্ আপনাকে কখনো অপমানিত করবেন না। আপনিতো আত্মীয়-স্বজনের সাথে সদ্ব্যবহার করেন, অসহায় দুর্বলের দায়িত্ব বহন করেন, নিঃস্বকে সাহায্য করেন, মেহমানের মেহমানদারী করেন এবং দুর্দশাগ্রস্তকে সাহায্য করেন। এরপর তাঁকে নিয়ে খাদীজা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা তাঁর চাচাতো ভাই ওয়ারাকা ইব্‌ন নাওফিল ইব্‌ন ‘আবদুল আসাদ ইব্‌ন ‘আবদুল ‘উযযার কাছে গেলেন, যিনি জাহিলী যুগে ‘ঈসা আলাইহিস সালামের’ ধর্ম গ্রহণ করেছিলেন। তিনি ইবরানী ভাষা লিখতে জানতেন এবং আল্লাহ্‌র তওফীক অনুযায়ী ইবরানী ভাষায় ইনজীল থেকে অনুবাদ করতেন। তিনি ছিলেন অত্যন্ত বয়োবৃদ্ধ এবং অন্ধ হয়ে গিয়েছিলেন। খাদীজা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা তাঁকে বললেন, ‘হে চাচাতো ভাই! আপনার ভাতিজার কথা শুনুন।’ ওয়ারাকা তাঁকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘ভাতিজা! তুমি কী দেখ?’ রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যা দেখেছিলেন, সবই খুলে বললেন। তখন ওয়ারাকা তাঁকে বললেন, ‘ইনি সে দূত যাঁকে আল্লাহ্ মূসা ‘আলাইহিস সালামের কাছে পাঠিয়েছিলেন। আফসোস! আমি যদি সেদিন যুবক থাকতাম। আফসোস! আমি যদি সেদিন জীবিত থাকতাম, যেদিন তোমার জাতি তোমাকে বের করে দেবে।’ রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বললেন, তাঁরা কি আমাকে বের করে দিবে? তিনি বললেন, ‘হ্যাঁ, অতীতে যিনিই তোমার মত কিছু নিয়ে এসেছেন তাঁর সঙ্গেই শত্রুতা করা হয়েছে। সেদিন যদি আমি থাকি, তবে তোমাকে প্রবলভাবে সাহায্য করব।’ এর কিছুদিন পর ওয়ারাকা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু মৃত্যুবরণ করেন। আর অহী কিছুদিন স্থগিত থাকে।[75]

عن عَبْد اللَّهِ بْن عَبَّاسٍ، أنه أَخْبَرَ أَنَّ أَبَا سُفْيَانَ بْنَ حَرْبٍ أَخْبَرَهُ: أَنَّ هِرَقْلَ أَرْسَلَ إِلَيْهِ فِي رَكْبٍ مِنْ قُرَيْشٍ، وَكَانُوا تُجَّارًا بِالشَّأْمِ فِي المُدَّةِ الَّتِي كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَادَّ فِيهَا أَبَا سُفْيَانَ وَكُفَّارَ قُرَيْشٍ، فَأَتَوْهُ وَهُمْ بِإِيلِيَاءَ، فَدَعَاهُمْ فِي مَجْلِسِهِ، وَحَوْلَهُ عُظَمَاءُ الرُّومِ، ثُمَّ دَعَاهُمْ وَدَعَا بِتَرْجُمَانِهِ، فَقَالَ: أَيُّكُمْ أَقْرَبُ نَسَبًا بِهَذَا الرَّجُلِ الَّذِي يَزْعُمُ أَنَّهُ نَبِيٌّ؟ فَقَالَ أَبُو سُفْيَانَ: فَقُلْتُ أَنَا أَقْرَبُهُمْ نَسَبًا، فَقَالَ: أَدْنُوهُ مِنِّي، وَقَرِّبُوا أَصْحَابَهُ فَاجْعَلُوهُمْ عِنْدَ ظَهْرِهِ، ثُمَّ قَالَ لِتَرْجُمَانِهِ: قُلْ لَهُمْ إِنِّي سَائِلٌ هَذَا عَنْ هَذَا الرَّجُلِ، فَإِنْ كَذَبَنِي فَكَذِّبُوهُ. فَوَاللَّهِ لَوْلاَ الحَيَاءُ مِنْ أَنْ يَأْثِرُوا عَلَيَّ كَذِبًا لَكَذَبْتُ عَنْهُ. ثُمَّ كَانَ أَوَّلَ مَا سَأَلَنِي عَنْهُ أَنْ قَالَ: كَيْفَ نَسَبُهُ فِيكُمْ؟ قُلْتُ: هُوَ فِينَا ذُو نَسَبٍ، قَالَ: فَهَلْ قَالَ هَذَا القَوْلَ مِنْكُمْ أَحَدٌ قَطُّ قَبْلَهُ؟ قُلْتُ: لاَ. قَالَ: فَهَلْ كَانَ مِنْ آبَائِهِ مِنْ مَلِكٍ؟ قُلْتُ: لاَ قَالَ: فَأَشْرَافُ النَّاسِ يَتَّبِعُونَهُ أَمْ ضُعَفَاؤُهُمْ؟ فَقُلْتُ بَلْ ضُعَفَاؤُهُمْ. قَالَ: أَيَزِيدُونَ أَمْ يَنْقُصُونَ؟ قُلْتُ: بَلْ يَزِيدُونَ. قَالَ: فَهَلْ يَرْتَدُّ أَحَدٌ مِنْهُمْ سَخْطَةً لِدِينِهِ بَعْدَ أَنْ يَدْخُلَ فِيهِ؟ قُلْتُ: لاَ. قَالَ: فَهَلْ كُنْتُمْ تَتَّهِمُونَهُ بِالكَذِبِ قَبْلَ أَنْ يَقُولَ مَا قَالَ؟ قُلْتُ: لاَ. قَالَ: فَهَلْ يَغْدِرُ؟ قُلْتُ: لاَ، وَنَحْنُ مِنْهُ فِي مُدَّةٍ لاَ نَدْرِي مَا هُوَ فَاعِلٌ فِيهَا، قَالَ: وَلَمْ تُمْكِنِّي كَلِمَةٌ أُدْخِلُ فِيهَا شَيْئًا غَيْرُ هَذِهِ الكَلِمَةِ، قَالَ: فَهَلْ قَاتَلْتُمُوهُ؟ قُلْتُ: نَعَمْ. قَالَ: فَكَيْفَ كَانَ قِتَالُكُمْ إِيَّاهُ؟ قُلْتُ: الحَرْبُ بَيْنَنَا وَبَيْنَهُ سِجَالٌ، يَنَالُ مِنَّا وَنَنَالُ مِنْهُ. قَالَ: مَاذَا يَأْمُرُكُمْ؟ قُلْتُ: يَقُولُ: اعْبُدُوا اللَّهَ وَحْدَهُ وَلاَ تُشْرِكُوا بِهِ شَيْئًا، وَاتْرُكُوا مَا يَقُولُ آبَاؤُكُمْ، وَيَأْمُرُنَا بِالصَّلاَةِ وَالزَّكَاةِ وَالصِّدْقِ وَالعَفَافِ وَالصِّلَةِ. فَقَالَ لِلتَّرْجُمَانِ: قُلْ لَهُ: سَأَلْتُكَ عَنْ نَسَبِهِ فَذَكَرْتَ أَنَّهُ فِيكُمْ ذُو نَسَبٍ، فَكَذَلِكَ الرُّسُلُ تُبْعَثُ فِي نَسَبِ قَوْمِهَا. وَسَأَلْتُكَ هَلْ قَالَ أَحَدٌ مِنْكُمْ هَذَا القَوْلَ، فَذَكَرْتَ أَنْ لاَ، فَقُلْتُ: لَوْ كَانَ أَحَدٌ قَالَ هَذَا القَوْلَ قَبْلَهُ، لَقُلْتُ رَجُلٌ يَأْتَسِي بِقَوْلٍ قِيلَ قَبْلَهُ. وَسَأَلْتُكَ هَلْ كَانَ مِنْ آبَائِهِ مِنْ مَلِكٍ، فَذَكَرْتَ أَنْ لاَ، قُلْتُ فَلَوْ كَانَ مِنْ آبَائِهِ مِنْ مَلِكٍ، قُلْتُ رَجُلٌ يَطْلُبُ مُلْكَ أَبِيهِ، وَسَأَلْتُكَ، هَلْ كُنْتُمْ تَتَّهِمُونَهُ بِالكَذِبِ قَبْلَ أَنْ يَقُولَ مَا قَالَ، فَذَكَرْتَ أَنْ لاَ، فَقَدْ أَعْرِفُ أَنَّهُ لَمْ يَكُنْ لِيَذَرَ الكَذِبَ عَلَى النَّاسِ وَيَكْذِبَ عَلَى اللَّهِ. وَسَأَلْتُكَ أَشْرَافُ النَّاسِ اتَّبَعُوهُ أَمْ ضُعَفَاؤُهُمْ، فَذَكَرْتَ أَنَّ ضُعَفَاءَهُمُ اتَّبَعُوهُ، وَهُمْ أَتْبَاعُ الرُّسُلِ. وَسَأَلْتُكَ أَيَزِيدُونَ أَمْ يَنْقُصُونَ، فَذَكَرْتَ أَنَّهُمْ يَزِيدُونَ، وَكَذَلِكَ أَمْرُ الإِيمَانِ حَتَّى يَتِمَّ. وَسَأَلْتُكَ أَيَرْتَدُّ أَحَدٌ سَخْطَةً لِدِينِهِ بَعْدَ أَنْ يَدْخُلَ فِيهِ، فَذَكَرْتَ أَنْ لاَ، وَكَذَلِكَ الإِيمَانُ حِينَ تُخَالِطُ بَشَاشَتُهُ القُلُوبَ. وَسَأَلْتُكَ هَلْ يَغْدِرُ، فَذَكَرْتَ أَنْ لاَ، وَكَذَلِكَ الرُّسُلُ لاَ تَغْدِرُ. وَسَأَلْتُكَ بِمَا يَأْمُرُكُمْ، فَذَكَرْتَ أَنَّهُ يَأْمُرُكُمْ أَنْ تَعْبُدُوا اللَّهَ وَلاَ تُشْرِكُوا بِهِ شَيْئًا، وَيَنْهَاكُمْ عَنْ عِبَادَةِ الأَوْثَانِ، وَيَأْمُرُكُمْ بِالصَّلاَةِ وَالصِّدْقِ وَالعَفَافِ، فَإِنْ كَانَ مَا تَقُولُ حَقًّا فَسَيَمْلِكُ مَوْضِعَ قَدَمَيَّ هَاتَيْنِ، وَقَدْ كُنْتُ أَعْلَمُ أَنَّهُ خَارِجٌ، لَمْ أَكُنْ أَظُنُّ أَنَّهُ مِنْكُمْ، فَلَوْ أَنِّي أَعْلَمُ أَنِّي أَخْلُصُ إِلَيْهِ لَتَجَشَّمْتُ لِقَاءَهُ، وَلَوْ كُنْتُ عِنْدَهُ لَغَسَلْتُ عَنْ قَدَمِهِ. ثُمَّ دَعَا بِكِتَابِ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الَّذِي بَعَثَ بِهِ دِحْيَةُ إِلَى عَظِيمِ بُصْرَى، فَدَفَعَهُ إِلَى هِرَقْلَ، فَقَرَأَهُ فَإِذَا فِيهِ " بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيمِ، مِنْ مُحَمَّدٍ عَبْدِ اللَّهِ وَرَسُولِهِ إِلَى هِرَقْلَ عَظِيمِ الرُّومِ: سَلاَمٌ عَلَى مَنِ اتَّبَعَ الهُدَى، أَمَّا بَعْدُ، فَإِنِّي أَدْعُوكَ بِدِعَايَةِ الإِسْلاَمِ، أَسْلِمْ تَسْلَمْ، يُؤْتِكَ اللَّهُ أَجْرَكَ مَرَّتَيْنِ، فَإِنْ تَوَلَّيْتَ فَإِنَّ عَلَيْكَ إِثْمَ الأَرِيسِيِّينَ " وَ ﴿ قُلۡ يَٰٓأَهۡلَ ٱلۡكِتَٰبِ تَعَالَوۡاْ إِلَىٰ كَلِمَةٖ سَوَآءِۢ بَيۡنَنَا وَبَيۡنَكُمۡ أَلَّا نَعۡبُدَ إِلَّا ٱللَّهَ وَلَا نُشۡرِكَ بِهِۦ شَيۡ‍ٔٗا وَلَا يَتَّخِذَ بَعۡضُنَا بَعۡضًا أَرۡبَابٗا مِّن دُونِ ٱللَّهِۚ فَإِن تَوَلَّوۡاْ فَقُولُواْ ٱشۡهَدُواْ بِأَنَّا مُسۡلِمُونَ ٦٤ ﴾ [ال عمران: ٦٤] قَالَ أَبُو سُفْيَانَ: فَلَمَّا قَالَ مَا قَالَ، وَفَرَغَ مِنْ قِرَاءَةِ الكِتَابِ، كَثُرَ عِنْدَهُ الصَّخَبُ وَارْتَفَعَتِ الأَصْوَاتُ وَأُخْرِجْنَا، فَقُلْتُ لِأَصْحَابِي حِينَ أُخْرِجْنَا: لَقَدْ أَمِرَ أَمْرُ ابْنِ أَبِي كَبْشَةَ، إِنَّهُ يَخَافُهُ مَلِكُ بَنِي الأَصْفَرِ. فَمَا زِلْتُ مُوقِنًا أَنَّهُ سَيَظْهَرُ حَتَّى أَدْخَلَ اللَّهُ عَلَيَّ الإِسْلاَمَ. وَكَانَ ابْنُ النَّاظُورِ، صَاحِبُ إِيلِيَاءَ وَهِرَقْلَ، سُقُفًّا عَلَى نَصَارَى الشَّأْمِ يُحَدِّثُ أَنَّ هِرَقْلَ حِينَ قَدِمَ إِيلِيَاءَ، أَصْبَحَ يَوْمًا خَبِيثَ النَّفْسِ، فَقَالَ بَعْضُ بَطَارِقَتِهِ: قَدِ اسْتَنْكَرْنَا هَيْئَتَكَ، قَالَ ابْنُ النَّاظُورِ: وَكَانَ هِرَقْلُ حَزَّاءً يَنْظُرُ فِي النُّجُومِ، فَقَالَ لَهُمْ حِينَ سَأَلُوهُ: إِنِّي رَأَيْتُ اللَّيْلَةَ حِينَ نَظَرْتُ فِي النُّجُومِ مَلِكَ الخِتَانِ قَدْ ظَهَرَ، فَمَنْ يَخْتَتِنُ مِنْ هَذِهِ الأُمَّةِ؟ قَالُوا: لَيْسَ يَخْتَتِنُ إِلَّا اليَهُودُ، فَلاَ يُهِمَّنَّكَ شَأْنُهُمْ، وَاكْتُبْ إِلَى مَدَايِنِ مُلْكِكَ، فَيَقْتُلُوا مَنْ فِيهِمْ مِنَ اليَهُودِ. فَبَيْنَمَا هُمْ عَلَى أَمْرِهِمْ، أُتِيَ هِرَقْلُ بِرَجُلٍ أَرْسَلَ بِهِ مَلِكُ غَسَّانَ يُخْبِرُ عَنْ خَبَرِ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَلَمَّا اسْتَخْبَرَهُ هِرَقْلُ قَالَ: اذْهَبُوا فَانْظُرُوا أَمُخْتَتِنٌ هُوَ أَمْ لاَ، فَنَظَرُوا إِلَيْهِ، فَحَدَّثُوهُ أَنَّهُ مُخْتَتِنٌ، وَسَأَلَهُ عَنِ العَرَبِ، فَقَالَ: هُمْ يَخْتَتِنُونَ، فَقَالَ هِرَقْلُ: هَذَا مُلْكُ هَذِهِ الأُمَّةِ قَدْ ظَهَرَ. ثُمَّ كَتَبَ هِرَقْلُ إِلَى صَاحِبٍ لَهُ بِرُومِيَةَ، وَكَانَ نَظِيرَهُ فِي العِلْمِ، وَسَارَ هِرَقْلُ إِلَى حِمْصَ، فَلَمْ يَرِمْ حِمْصَ حَتَّى أَتَاهُ كِتَابٌ مِنْ صَاحِبِهِ يُوَافِقُ رَأْيَ هِرَقْلَ عَلَى خُرُوجِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، وَأَنَّهُ نَبِيٌّ، فَأَذِنَ هِرَقْلُ لِعُظَمَاءِ الرُّومِ فِي دَسْكَرَةٍ لَهُ بِحِمْصَ، ثُمَّ أَمَرَ بِأَبْوَابِهَا فَغُلِّقَتْ، ثُمَّ اطَّلَعَ فَقَالَ: يَا مَعْشَرَ الرُّومِ، هَلْ لَكُمْ فِي الفَلاَحِ وَالرُّشْدِ، وَأَنْ يَثْبُتَ مُلْكُكُمْ، فَتُبَايِعُوا هَذَا النَّبِيَّ؟ فَحَاصُوا حَيْصَةَ حُمُرِ الوَحْشِ إِلَى الأَبْوَابِ، فَوَجَدُوهَا قَدْ غُلِّقَتْ، فَلَمَّا رَأَى هِرَقْلُ نَفْرَتَهُمْ، وَأَيِسَ مِنَ الإِيمَانِ، قَالَ: رُدُّوهُمْ عَلَيَّ، وَقَالَ: إِنِّي قُلْتُ مَقَالَتِي آنِفًا أَخْتَبِرُ بِهَا شِدَّتَكُمْ عَلَى دِينِكُمْ، فَقَدْ رَأَيْتُ، فَسَجَدُوا لَهُ وَرَضُوا عَنْهُ، فَكَانَ ذَلِكَ آخِرَ شَأْنِ هِرَقْلَ.

আবদুল্লাহ্ ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বর্ণনা করেন যে, আবূ সুফিয়ান ইবন হরব তাকে বলেছেন, বাদশাহ হিরাকল একবার তাঁর কাছে লোক পাঠালেন। তিনি কুরাইশদের কাফেলায় তখন ব্যবসা উপলক্ষে সিরিয়ায় ছিলেন। সে সময় রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবূ সুফিয়ান ও কুরাইশদের সাথে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য সন্ধিবদ্ধ ছিলেন। আবূ সুফিয়ান তার সঙ্গীদেরসহ হিরাকলের কাছে এলেন এবং তখন হিরাকল জেরুযালেমে অবস্থান করছিলেন। হিরাকল তাদেরকে তার দরবারে ডাকলেন। দোভাষীকে ডাকলেন। তারপর জিজ্ঞাসা করলেন, ‘এই যে ব্যক্তি নিজেকে নবী বলে দাবী করেন তোমাদের মধ্যে বংশের দিক দিয়ে তাঁর সবচেয়ে নিকটাত্মীয় কে?’ আবূ সুফিয়ান বললেন, ‘আমি বললাম, বংশের দিক দিয়ে আমিই তাঁর নিকটাত্মীয়।’ তিনি বললেন, ‘তাঁকে আমার খুব কাছে নিয়ে এসো এবং তাঁর সঙ্গীদেরও কাছে এনে পেছনে বসিয়ে দাও।’ এরপর তার দোভাষীকে বললেন, ‘তাদের বলে দাও, আমি এর কাছে সে ব্যক্তি সম্পর্কে কিছু জিজ্ঞাসা করবো, সে যদি আমার কাছে মিথ্যা বলে, তবে সাথে সাথে তোমরা তাকে মিথ্যাবাদী বলে প্রকাশ করবে।’ আবূ সুফিয়ান বলেন, ‘আল্লাহর কসম! তারা আমাকে মিথ্যাবাদী বলে প্রচার করবে এ লজ্জা যদি আমার না থাকত, তবে অবশ্যই আমি তাঁর সম্পর্কে মিথ্যা বলতাম।’ এরপর তিনি তাঁর সম্পর্কে আমাকে প্রথম প্রশ্ন করেন তা হচ্ছে, ‘তোমাদের মধ্যে তাঁর বংশমর্যাদা কেমন?’ আমি বললাম, ‘তিনি আমাদের মধ্যে অতি সম্ভ্রান্ত বংশের।’ তিনি বললেন, ‘তোমাদের মধ্যে এর আগে আর কখনো কি কেউ একথা বলেছে?’ আমি বললাম, ‘না।’ তিনি বললেন, ‘তাঁর বাপ-দাদাদের মধ্যে কি কেউ বাদশাহ ছিলেন?’ আমি বললাম, ‘না।’ তিনি বললেন, ‘তারা কি সংখ্যায় বাড়ছে, না কমছে?’ আমি বললাম, ‘তারা বেড়েই চলেছে।’ তিনি বললেন, ‘তাঁর দীন গ্রহণ করার পর কেউ কি নারায হয়ে তা পরিত্যাগ করে?’ আমি বললাম, ‘না।’ তিনি বললেন, ‘নবুওয়তের দাবীর আগে তোমরা কি কখনো তাঁকে মিথ্যার দায়ে অভিযুক্ত করেছ?’ আমি বললাম, ‘না।’ তিনি বললেন, ‘তিনি কি চুক্তি ভঙ্গ করেন?’ আমি বললাম, ‘না।’ তবে আমরা তাঁর সঙ্গে একটি নির্দিষ্ট সময়ের চুক্তিতে আবদ্ধ আছি। জানি না, এর মধ্যে তিনি কি করবেন।’ আবূ সুফিয়ান বলেন, এ কথাটুকু ছাড়া নিজের পক্ষ থেকে আর কোনো কথা সংযোজনের সুযোগই আমি পাইনি।’ তিনি বললেন, ‘তোমরা কি তাঁর সাথে কখনো যুদ্ধ করেছ?’ আমি বললাম, হ্যাঁ, তিনি বললেন, ‘তাঁর সঙ্গে তোমাদের যুদ্ধ কেমন হয়েছে?’ আমি বললাম, ‘তাঁর ও আমাদের মধ্যে যুদ্ধের ফলাফল উভয়ের পক্ষে আসে। কখনো তাঁর পক্ষে যায়, আবার কখনো আমাদের পক্ষে আসে।’ তিনি বললেন, ‘তিনি তোমাদের কিসের আদেশ দেন?’ আমি বললাম, ‘তিনি বলেন, তোমরা এক আল্লাহর ইবাদত কর, তাঁর সঙ্গে কোনো কিছুর শরীক করো না এবং তোমাদের বাপ-দাদার ভ্রান্ত মতবাদ ত্যাগ কর। আর তিনি আমাদের সালাত আদায় করার, সত্য কথা বলার, নিষ্কলুষ থাকার এবং আত্মীয়দের সাথে সদ্ব্যবহার করার আদেশ দেন।’ তারপর তিনি দোভাষীকে বললেন, ‘তুমি তাকে বল, আমি তোমার কাছে তাঁর বংশ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেছি। তুমি তার জওয়াবে উল্লেখ করেছ যে, তিনি তোমাদের মধ্যে সম্ভ্রান্ত বংশের। প্রকৃতপক্ষে রাসূলগণকে তাঁদের কওমের উচ্চ বংশেই প্রেরণ করা হয়ে থাকে। তোমাকে জিজ্ঞাসা করেছি, এ কথা তোমাদের মধ্যে ইতোপূর্বে আর কেউ বলেছে কিনা? তুমি বলেছ, ‘না।’ তাই আমি বলছি যে, আগে যদি কেউ এ কথা বলে থাকত, তবে অবশ্যই আমি বলতে পারতাম, এ এমন ব্যক্তি, যে তাঁর পূর্বসূরীর কথারই অনুসরণ করছে। আমি তোমাকে জিজ্ঞাসা করেছি, তাঁর পূর্বপুরুষের মধ্যে কোনো বাদশাহ ছিলেন কি না? তুমি তার জবাবে বলেছ, ‘না।’ তাই আমি বলছি যে, তাঁর পূর্বপুরুষের মধ্যে যদি কোনো বাদশাহ থাকতেন, তবে আমি বলতাম, ইনি এমন এক ব্যক্তি যিনি তাঁর বাপ-দাদার বাদশাহী ফিরে পেতে চান। আমি তোমাকে জিজ্ঞাসা করেছি- এর আগে কখনো তোমরা তাঁকে মিথ্যার দায়ে অভিযুক্ত করেছ কি না? তুমি বলেছ, ‘না।’ এতে আমি বুঝলাম, এমনটি হতে পারে না যে, কেউ মানুষের ব্যাপারে মিথ্যা ত্যাগ করবে অথচ আল্লাহর ব্যাপারে মিথ্যা কথা বলবে। আমি তোমাকে জিজ্ঞাসা করেছি, শরীফ লোক তাঁর অনুসরন করে, না সাধারণ লোক? তুমি বলেছ, সাধারণ লোকই তাঁর অনুসরণ করে। আর বাস্তবেও এরাই হন রাসূলগণের অনুসারী। আমি তোমাকে জিজ্ঞাসা করেছি, তারা সংখ্যায় বাড়ছে না কমছে? তুমি বলেছ বাড়ছে। প্রকৃতপক্ষে ঈমানে পূর্ণতা লাভ করার পর পর্যন্ত এ রকমই হয়ে থাকে। আমি তোমাকে জিজ্ঞাসা করেছি, তাঁরা দীনে দাখিল হওয়ার পর নারায হয়ে কেউ কি তা ত্যাগ করে? তুমি বলেছ, ‘না।’ ঈমানের স্নিগ্ধতা অন্তরের সাথে মিশে গেলে ঈমান এরূপই হয়। আমি তোমাকে জিজ্ঞাসা করেছি তিনি চুক্তি ভঙ্গ করেন কি না? তুমি বলেছ, ‘না।’ প্রকৃতপক্ষে রাসূলগণ এরূপই, চুক্তি ভঙ্গ করেন না। আমি তোমাকে জিজ্ঞাসা করেছি তিনি তোমাদের কিসের নির্দেশ দেন। তুমি বলেছ, তিনি তোমাদের এক আল্লাহর ইবাদত করা ও তাঁর সাথে অন্য কিছুকে শরীক না করার নির্দেশ দেন। তিনি তোমাদের নিষেধ করেন মূর্তিপূজা করতে আর তোমাদের আদেশ করেন সালাত আদায় করতে, সত্য কথা বলতে ও কলুষমুক্ত থাকতে। তুমি যা বলেছ তা যদি সত্য হয়, তবে শীঘ্রই তিনি আমার এ দু’পায়ের নীচের জায়গার মালিক হবেন (অর্থাৎ এ সম্রাজ্য জয় করবেন)। আমি নিশ্চিত জানতাম, তাঁর আবির্ভাব হবে; কিন্তু তিনি যে তোমাদের মধ্যে থেকে হবেন, এ কথা ভাবিনি। যদি জানতাম, আমি তাঁর কাছে পৌঁছাতে পারব, তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করার জন্য আমি যে কোনো কষ্ট স্বীকার করতাম। আর আমি যদি তাঁর কাছে থাকতাম তবে অবশ্যই তাঁর দু’খানা পা ধুয়ে দিতাম। এরপর তিনি রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সেই পত্রখানি আনতে বললেন, যা তিনি দিহইয়াতুল কালবীর মাধ্যমে বসরার শাসকের কাছে পাঠিয়েছিলেন। তিনি তা পাঠ করলেন। তাতে লেখা ছিল, ‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম (দয়াময় পরম দয়ালু আল্লাহর নামে)। আল্লাহর বান্দা ও তাঁর রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পক্ষ থেকে রোম সম্রাট হিরাকল এর প্রতি। শান্তি (বর্ষিত হোক) তার প্রতি, যে হিদায়াতের অনুসরণ করে। তারপর আমি আপনাকে ইসলামের দাওয়াত দিচ্ছি। ইসলাম গ্রহণ করুন, নিরাপদে থাকবেন। আল্লাহ আপনাকে দ্বিগুণ পুরষ্কার দান করবেন। আর যদি মুখ ফিরিয়ে নেন, তবে সব প্রজার পাপই আপনার উপর বর্তাবে।

﴿ قُلۡ يَٰٓأَهۡلَ ٱلۡكِتَٰبِ تَعَالَوۡاْ إِلَىٰ كَلِمَةٖ سَوَآءِۢ بَيۡنَنَا وَبَيۡنَكُمۡ أَلَّا نَعۡبُدَ إِلَّا ٱللَّهَ وَلَا نُشۡرِكَ بِهِۦ شَيۡ‍ٔٗا وَلَا يَتَّخِذَ بَعۡضُنَا بَعۡضًا أَرۡبَابٗا مِّن دُونِ ٱللَّهِۚ فَإِن تَوَلَّوۡاْ فَقُولُواْ ٱشۡهَدُواْ بِأَنَّا مُسۡلِمُونَ ٦٤ ﴾ [ال عمران: ٦٤]

“বল, ‘হে কিতাবীগণ, তোমরা এমন কথার দিকে আস, যেটি আমাদের মধ্যে ও তোমাদের মধ্যে সমান যে, আমরা একমাত্র আল্লাহ ছাড়া কারো ইবাদাত না করি। আর তার সাথে কোনো কিছুকে শরীক না করি এবং আমাদের কেউ কাউকে আল্লাহ ছাড়া রব হিসাবে গ্রহণ না করি’। তারপর যদি তারা বিমুখ হয় তবে বল, ‘তোমরা সাক্ষী থাক যে, নিশ্চয় আমরা মুসলিম”। [সূরা আলে ইমরান: ৬৪]

আবূ সুফিয়ান বলেন, ‘হিরাকল যখন তাঁর বক্তব্য শেষ করলেন এবং পত্র পাঠও শেষ করলেন, তখন সেখানে শোরগোল পড়ে গেল, চীৎকার ও হৈ-হল্লা তুঙ্গে উঠল এবং আমাদের বের করে দেওয়া হল। আমাদের বের করে দিলে আমি আমার সঙ্গীদের বললাম, আবূ কাবশার ছেলের বিষয়তো শক্তিশালী হয়ে উঠেছে, বনূ আসফার (রোম)-এর বাদশাহও তাকে ভয় পাচ্ছে। তখন থেকে আমি বিশ্বাস করতে লাগলাম, তিনি শীঘ্রই জয়ী হবেন। অবশেষে আল্লাহ তা‘আলা আমাকে ইসলাম গ্রহণের তওফীক দান করলেন।

ইবন নাতূর ছিলেন জেরুযালেমের শাসনকর্তা এবং হিরাকলের বন্ধু ও সিরিয়ার খৃষ্টানদের পাদ্রী। তিনি বলেন, ‘হিরাকল যখন জেরুযালেম আসেন, তখন একদিন তাঁকে বিমর্ষ দেখাচ্ছিল। তাঁর একজন বিশিষ্ট সহচর বলল, ‘আমরা আপনার চেহারা আজ বিবর্ণ দেখতে পাচ্ছি,’ ইবন নাতূর বলেন, হিরাকল ছিলেন জ্যোতিষী, জ্যোতির্বিদ্যায় তাঁর দক্ষতা ছিল। তারা জিজ্ঞাসা করলে তিনি তাদের বললেন, ‘আজ রাতে আমি তারকারাজির দিকে তাকিয়ে দেখতে পেলাম, খতনাকারীদের বাদশাহ আবির্ভূত হয়েছেন। বর্তমান যুগে কোনো জাতি খতনা করে?’ তারা বলল, ‘ইয়াহুদী ছাড়া কেউ খতনা করে না। কিন্তু তাদের ব্যাপার যেন আপনাকে মোটেই চিন্তিত না করে। আপনার রাজ্যের শহরগুলোতে লিখে পাঠান, তারা যেন সেখানকার সকল ইয়াহুদীকে হত্যা করে ফেলে।’ তারা যখন এ ব্যাপারে ব্যতিব্যস্ত ছিল, তখন হিরাকলের কাছে এক ব্যক্তিকে উপস্থিত করা হলো, যাকে গাসসানের শাসনকর্তা পাঠিয়েছিল। সে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সম্পর্কে খবর দিচ্ছিল। হিরাকল তার কাছ থেকে খবর জেনে নিয়ে বললেন, ‘তোমরা একে নিয়ে গিয়ে দেখ, তার খতনা হয়েছে কি-না।’ তারা তাকে নিয়ে দেখে এসে সংবাদ দিল, তার খতনা হয়েছে। হিরাকল তাকে আরবদের সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলেন। সে জওয়াব দিল, ‘তারা খতনা করে।’ তারপর হিরাকল তাদের বললেন, ‘ইনি রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! এ উম্মতের বাদশাহ। তিনি আবির্ভূত হয়েছেন।’ এরপর হিরাকল রোমে তাঁর বন্ধুর কাছে লিখলেন। তিনি জ্ঞানে তার সমকক্ষ ছিলেন। পরে হিরাকল হিমস চলে গেলেন। হিমসে থাকতেই তার কাছে তার বন্ধুর চিঠি এলো, যা রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আবির্ভাব এবং তিনিই যে প্রকৃত নবী, এ ব্যাপারে হিরাকলের মতকে সমর্থন করছিল। তারপর হিরাকল তাঁর হিমসের প্রাসাদে রোমের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিদের ডাকলেন এবং প্রাসাদের সব দরজা বন্ধ করে দেওয়ার নির্দেশ দলেন। দরজা বন্ধ করা হলো। তারপর তিনি সামনে এসে বললেন, ‘হে রোমবাসী! তোমরা কি কল্যাণ, হিদায়ত এবং তোমাদের রাষ্ট্রের স্থায়িত্ব চাও? তাহলে এই নবীর বাই‘আত গ্রহণ কর।’ এ কথা শুনে তারা জংলী গাধার মত ঊর্ধ্বশ্বাসে দরজার দিকে ছুটল, কিন্তু তারা তা বন্ধ অবস্থায় পেল। হিরাকল যখন তাদের অনীহা লক্ষ্য করলেন এবং তাদের ঈমান থেকে নিরাশ হয়ে গেলেন, তখন বললেন, ‘ওদের আমার কাছে ফিরিয়ে আন।’ তিনি বললেন, ‘আমি একটু আগে যে কথা বলেছি, তা দিয়ে তোমরা তোমাদের দীনের উপর কতটুকু অটল, কেবল তার পরীক্ষা করেছিলাম। এখন আমি তা দেখে নিলাম।’ একথা শুনে তারা তাঁকে সিজদা করল এবং তাঁর প্রতি সন্তুষ্ট হলো। এই ছিল হিরাকল এর শেষ অবস্থা। [76]

عَنْ عَطَاءِ بْنِ يَسَارٍ، عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَمْرِو بْنِ العَاصِ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا: " أَنَّ هَذِهِ الآيَةَ الَّتِي فِي القُرْآنِ: ﴿ يَٰٓأَيُّهَا ٱلنَّبِيُّ إِنَّآ أَرۡسَلۡنَٰكَ شَٰهِدٗا وَمُبَشِّرٗا وَنَذِيرٗا ٤٥ ﴾ [الاحزاب: ٤٥] ، قَالَ فِي التَّوْرَاةِ: يَا أَيُّهَا النَّبِيُّ إِنَّا أَرْسَلْنَاكَ شَاهِدًا وَمُبَشِّرًا وَحِرْزًا لِلْأُمِّيِّينَ، أَنْتَ عَبْدِي وَرَسُولِي، سَمَّيْتُكَ المُتَوَكِّلَ، لَيْسَ بِفَظٍّ وَلاَ غَلِيظٍ، وَلاَ سَخَّابٍ بِالأَسْوَاقِ، وَلاَ يَدْفَعُ السَّيِّئَةَ بِالسَّيِّئَةِ، وَلَكِنْ يَعْفُو وَيَصْفَحُ، وَلَنْ يَقْبِضَهُ اللَّهُ حَتَّى يُقِيمَ بِهِ المِلَّةَ العَوْجَاءَ، بِأَنْ يَقُولُوا: لاَ إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ فَيَفْتَحَ بِهَا أَعْيُنًا عُمْيًا، وَآذَانًا صُمًّا، وَقُلُوبًا غُلْفًا ".

আমর ইবন ‘আস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত যে, কুরআনের এ আয়াত, “আমি তোমাকে পাঠিয়েছি সাক্ষীরূপে, সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারীরূপে”। [সূরা আল-আহযাব : ৪৫] তাওরাতে আল্লাহ্ এভাবে বলেছেন, হে নবী আমি তোমাকে পাঠিয়েছি সাক্ষীরূপে, সুসংবাদবাদা ও উম্মী লোকদের মুক্তি দাতারূপে। তুমি আমার বান্দা ও রাসূল। আমি তোমার নাম নির্ভরকারী (মুতাওয়াক্কিল) রেখেছি যে রূঢ় ও কঠোর চিত্ত নয়, বাজারে শোরগোলকারী নয় এবং মন্দকে মন্দ দ্বারা প্রতিহতকারীও নয়; বরং তিনি ক্ষমা করবেন এবং উপেক্ষা করবেন। বক্র জাতিকে সোজা না করা পর্যন্ত আল্লাহ তার জান কবয করবেন না। তা এভাবে যে, তারা বলবে, আল্লাহ ছাড়া ইলাহ নেই। ফলে খুলে যাবে অন্ধ চোখ, বধির কান এবং পর্দায় ঢাকা অন্তরসমূহ। [77]

(এখানে সালমান ফারেসীর ইসলামগ্রহণের কাহিনী রয়েছে, যা যুক্ত হওয়া প্রয়োজন। সম্পাদক)।

 

 

 

চতুর্থ পরিচ্ছেদ 

গনক, জিন ও আহলে কিতাবদের থেকে যা বর্ণিত হয়েছে সেসব কিছুও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নবুওয়তের উপর প্রমাণ বহন করে

عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عُمَرَ، قَالَ: مَا سَمِعْتُ عُمَرَ، لِشَيْءٍ قَطُّ يَقُولُ: إِنِّي لَأَظُنُّهُ كَذَا إِلَّا كَانَ كَمَا يَظُنُّ " بَيْنَمَا عُمَرُ جَالِسٌ، إِذْ مَرَّ بِهِ رَجُلٌ جَمِيلٌ، فَقَالَ: لَقَدْ أَخْطَأَ ظَنِّي، أَوْ إِنَّ هَذَا عَلَى دِينِهِ فِي الجَاهِلِيَّةِ، أَوْ: لَقَدْ كَانَ كَاهِنَهُمْ، عَلَيَّ الرَّجُلَ، فَدُعِيَ لَهُ، فَقَالَ لَهُ ذَلِكَ، فَقَالَ: مَا رَأَيْتُ كَاليَوْمِ اسْتُقْبِلَ بِهِ رَجُلٌ مُسْلِمٌ، قَالَ: فَإِنِّي أَعْزِمُ عَلَيْكَ إِلَّا مَا أَخْبَرْتَنِي، قَالَ: كُنْتُ كَاهِنَهُمْ فِي الجَاهِلِيَّةِ، قَالَ: فَمَا أَعْجَبُ مَا جَاءَتْكَ بِهِ جِنِّيَّتُكَ، قَالَ: بَيْنَمَا أَنَا يَوْمًا فِي السُّوقِ، جَاءَتْنِي أَعْرِفُ فِيهَا الفَزَعَ، فَقَالَتْ: أَلَمْ تَرَ الجِنَّ وَإِبْلاَسَهَا؟ وَيَأْسَهَا مِنْ بَعْدِ إِنْكَاسِهَا، وَلُحُوقَهَا بِالقِلاَصِ، وَأَحْلاَسِهَا، قَالَ: عُمَرُ صَدَقَ بَيْنَمَا أَنَا نَائِمٌ، عِنْدَ آلِهَتِهِمْ إِذْ جَاءَ رَجُلٌ بِعِجْلٍ فَذَبَحَهُ، فَصَرَخَ بِهِ صَارِخٌ، لَمْ أَسْمَعْ صَارِخًا قَطُّ أَشَدَّ صَوْتًا مِنْهُ يَقُولُ: يَا جَلِيحْ، أَمْرٌ نَجِيحْ، رَجُلٌ فَصِيحْ، يَقُولُ: لاَ إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ، فَوَثَبَ القَوْمُ، قُلْتُ: لاَ أَبْرَحُ حَتَّى أَعْلَمَ مَا وَرَاءَ هَذَا، ثُمَّ نَادَى: يَا جَلِيحْ، أَمْرٌ نَجِيحْ، رَجُلٌ فَصِيحْ، يَقُولُ لاَ إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ، فَقُمْتُ، فَمَا نَشِبْنَا أَنْ قِيلَ: هَذَا نَبِيٌّ ".

আবদুল্লাহ ইবন উমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি যখনই উমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুকে কোনো ব্যাপারে একথা বলতে শুনেছি যে, আমার ধারণা হয় ব্যাপারটি এমন হবে, তবে তার ধারণা মত ব্যাপারটি সংঘটিত হয়েছে। একবার উমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বসা ছিলেন, এমন সময় একজন সুদর্শন ব্যক্তি তার পাশ দিয়ে যাচ্ছিল। উমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বললেন, আমার ধারণা ভুল ও হতে পারে তবে আমার মনে হয় লোকটি জাহেলী ধর্মাবলম্বী অথবা ভবিষ্যৎ গণনাকারীও হতে পারে। লোকটিকে আমর কাছে নিয়ে এস। তাকে তাঁর কাছে ডেকে আনা হল। উমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু তার ধারণার কথা তাকে শুনালেন। তখন সে বলল, একজন মুসলিমের পক্ষ থেকে বলা হল যা আজকার মত আর কোনো দিন দেখেনি। উমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বললেন, আমি তোমাকে কসম দিয়ে জিজ্ঞাসা করছি, তুমি আমাকে তোমার ব্যাপারটা খুলে বল। সে বলল, জাহেলী যুগে আমি তাদের ভবিষ্যৎ গণনাকারী ছিলাম। উমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বললেন, জ্বিনেরা তোমাকে যে সব কথাবার্তা বলেছে, তন্মধ্যে কোনো কথটি তোমার নিকট সর্বাধিক বিষ্ময়কর ছিল। সে বলল, আমি একদিন বাজারে অবস্থান করছিলাম। তখন একটি মহিলা জ্বিন আমার নিকট আসল। আমি তাকে ভীত-সন্ত্রস্ত দেখতে পেলাম। তখন সে বলল, তুমি কি জ্বিন জাতির অবস্থা দেখছনা, তারা কেমন দুর্বল হয়ে পড়ছে? তাদের মধ্যে হতাশা ও বিমূঢ় হওয়ার চিহ্ন পরিলক্ষিত হচ্ছে। তারা ক্রমশঃ উটওয়ালাদের এবং চাদর জুব্বা পরিধানকারীদের (আরববাসী) অনুগত হয়ে পড়ছে। উমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বললেন, সে সত্য কথা বলেছে। আমি একদিন তাদের দেবতাদের কাছে ঘুমন্ত ছিলাম। তখন এক ব্যক্তি একটি গরুর বাছুর নিয়ে হাযির হল এবং সেটা জবাই করে দিল। ঐ সময় এক ব্যক্তি এমন বিকট চীৎকার করে উঠল, যা আমি আর কখনও শুনিনি। সে চীৎকার করে বলছিল, হে জলীহ! একটি স্বাভাবিক কল্যাণময় ব্যাপার অচিরেই প্রকাশ লাভ করবে। তা হল, একজন বিশুদ্ধভাষী লোক বলবেন, (এ ঘোষণা শুনে উপস্থিত) লোকজন ছুটাছুটি করে পলায়ন করল। আমি বললাম, এ ঘোষণার রহস্য উদঘাটন অবশ্যই করব। তারপর আবার ঘোষণা দেওয়া হল। হে জলীহ! একটি স্বাভাবিক ও কল্যাণময় ব্যাপার অতি সত্বর প্রকাশ পাবে। তাহল একজন বাগ্মী ব্যক্তি এর প্রকাশ্যে ঘোষণা দিবে। তারপর আমি উঠে দাড়ালাম। এর কিছুদিন পরেই বলা হল যে, তিনিই নবী। [78]

عَنْ أَبِي بَكْرِ بْنِ أَبِي مُوسَى الْأَشْعَرِيِّ، عَنْ أَبِيهِ، قَالَ: «خَرَجَ أَبُو طَالِبٍ إِلَى الشَّامِ وَخَرَجَ مَعَهُ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي أَشْيَاخٍ مِنْ قُرَيْشٍ، فَلَمَّا أَشْرَفُوا عَلَى الرَّاهِبِ هَبَطُوا فَحَلُّوا رِحَالَهُمْ، فَخَرَجَ إِلَيْهِمُ الرَّاهِبُ وَكَانُوا قَبْلَ ذَلِكَ يَمُرُّونَ بِهِ فَلَا يَخْرُجُ إِلَيْهِمْ وَلَا يَلْتَفِتُ». قَالَ: " فَهُمْ يَحُلُّونَ رِحَالَهُمْ، فَجَعَلَ يَتَخَلَّلُهُمُ الرَّاهِبُ حَتَّى جَاءَ فَأَخَذَ بِيَدِ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَقَالَ: هَذَا سَيِّدُ العَالَمِينَ، هَذَا رَسُولُ رَبِّ العَالَمِينَ، يَبْعَثُهُ اللَّهُ رَحْمَةً لِلْعَالَمِينَ "، فَقَالَ لَهُ أَشْيَاخٌ مِنْ قُرَيْشٍ: مَا عِلْمُكَ، فَقَالَ: إِنَّكُمْ حِينَ أَشْرَفْتُمْ مِنَ العَقَبَةِ لَمْ يَبْقَ شَجَرٌ وَلَا حَجَرٌ إِلَّا خَرَّ سَاجِدًا وَلَا يَسْجُدَانِ إِلَّا لِنَبِيٍّ، وَإِنِّي أَعْرِفُهُ بِخَاتَمِ النُّبُوَّةِ أَسْفَلَ مِنْ غُضْرُوفِ كَتِفِهِ مِثْلَ التُّفَّاحَةِ، ثُمَّ رَجَعَ فَصَنَعَ لَهُمْ طَعَامًا، فَلَمَّا أَتَاهُمْ بِهِ وَكَانَ هُوَ فِي رِعْيَةِ الإِبِلِ، قَالَ: أَرْسِلُوا إِلَيْهِ، فَأَقْبَلَ وَعَلَيْهِ غَمَامَةٌ تُظِلُّهُ، فَلَمَّا دَنَا مِنَ القَوْمِ وَجَدَهُمْ قَدْ سَبَقُوهُ إِلَى فَيْءِ الشَّجَرَةِ، فَلَمَّا جَلَسَ مَالَ فَيْءُ الشَّجَرَةِ عَلَيْهِ، فَقَالَ: انْظُرُوا إِلَى فَيْءِ الشَّجَرَةِ مَالَ عَلَيْهِ، قَالَ: فَبَيْنَمَا هُوَ قَائِمٌ عَلَيْهِمْ وَهُوَ يُنَاشِدُهُمْ أَنْ لَا يَذْهَبُوا بِهِ إِلَى الرُّومِ، فَإِنَّ الرُّومَ إِنْ رَأَوْهُ عَرَفُوهُ بِالصِّفَةِ فَيَقْتُلُونَهُ، فَالتَفَتَ فَإِذَا بِسَبْعَةٍ قَدْ أَقْبَلُوا مِنَ الرُّومِ فَاسْتَقْبَلَهُمْ، فَقَالَ: مَا جَاءَ بِكُمْ؟ قَالُوا: جِئْنَا، إِنَّ هَذَا النَّبِيَّ خَارِجٌ فِي هَذَا الشَّهْرِ، فَلَمْ يَبْقَ طَرِيقٌ إِلَّا بُعِثَ إِلَيْهِ بِأُنَاسٍ وَإِنَّا قَدْ أُخْبِرْنَا خَبَرَهُ فَبُعِثْنَا إِلَى طَرِيقِكَ هَذَا، فَقَالَ: هَلْ خَلْفَكُمْ أَحَدٌ هُوَ خَيْرٌ مِنْكُمْ؟ قَالُوا: إِنَّمَا أُخْبِرْنَا خَبَرَهُ بِطَرِيقِكَ هَذَا. قَالَ: أَفَرَأَيْتُمْ أَمْرًا أَرَادَ اللَّهُ أَنْ يَقْضِيَهُ هَلْ يَسْتَطِيعُ أَحَدٌ مِنَ النَّاسِ رَدَّهُ؟ قَالُوا: لَا، قَالَ: فَبَايَعُوهُ وَأَقَامُوا مَعَهُ قَالَ: أَنْشُدُكُمْ بِاللَّهِ أَيُّكُمْ وَلِيُّهُ؟ قَالُوا: أَبُو طَالِبٍ، فَلَمْ يَزَلْ يُنَاشِدُهُ حَتَّى رَدَّهُ أَبُو طَالِبٍ وَبَعَثَ مَعَهُ أَبُو بَكْرٍ بِلَالًا وَزَوَّدَهُ الرَّاهِبُ مِنَ الكَعْكِ وَالزَّيْتِ ": «هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ غَرِيبٌ لَا نَعْرِفُهُ إِلَّا مِنْ هَذَا الوَجْهِ».

আবু মূসা আল-আশ‘আরী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আবু তালিব শামের উদ্দেশ্যে নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সঙ্গে করে রওয়ানা হলেন, তাঁর সাথে কুরাইশদের অনেক বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ ছিলেন। যখন তারা পাদ্রী বাহিরার নিকটবর্তী হলেন তখন যাত্রা বিরতি দিলেন। তাদের কাছে পাদ্রী আসলেনচ। কুরাইশ কাফেলা ইতোপূর্বে এ পথ দিয়ে অনেক বার আসা-যাওয়া করেছেন, কিন্তু তিনি তাদের সামনে বের হতেন না এবং কোনো কথা বার্তাও বলতেন না। তারা সেখানে যাত্রা বিরতি দিলেন এবং পাদ্রী তাদেরকে ঘুরে ঘুরে অবলোকন করছিলেন। তিনি মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাত ধরে বললেন, ইনি সাইয়্যেদুল আলামীন, ইনি রাসূলু রাব্বিল আলামীন। আল্লাহ তাঁকে বিশ্ববাসীর জন্য রহমতস্বরূপ প্রেরণ করবেন। তখন কুরাইশ প্রবীনরা বলল, আপনি কিভাবে তাঁকে চিনলেন? তিনি উত্তরে বললেন, তোমরা যখন মরুউপত্যাক্যা দিয়ে যাচ্ছিলে তখন সেখানকার সব গাছ ও পাথর তাঁকে সিজদা করছিল। আর নবী ছাড়া কাউকে গাছপালা ও পাথর সিজদা করেনা। আমি তাঁর পিঠের দু’স্কন্ধের মাঝে নবুওয়তের সীলমোহর দেখেছি তা আপেলের মত। অতঃপর পাদ্রী ফিরে গিয়ে খাদ্য তৈরি করে নিয়ে আসল। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উটের পালের কাছে ছিল। তিনি বললেন, তাঁকে ডেকে নিয়ে আসো। তিনি যখন আসছিলেন তখন মেঘ তাঁকে ছায়া দিচ্ছিল। তিনি যখন কাফেলার কাছে এলেন দেখলেন সবাই ছায়ায় গেছেন, ফলে তিনি রৌদ্রে বসলেন, কিন্তু তখন গাছের ছায়া তাঁর দিকে ঝুঁকে গেল। তখন পাদ্রী বললেন, দেখ গাছের ছায়া তাঁর দিকে ঝুঁকে গেছে। পাদ্রী তাঁকে নিয়ে রোমে যেতে বারবার নিষেধ করলেন। বললেন, সেখানকার লোকেরা তাঁকে চিনতে পারলে হত্যা করবে। তখন তিনি দেখতে পেলেন যে, রোম থেকে সাতজন আরোহী তাদের দিকে এগিয়ে আসছেন। তিনি তাদেরকে অভ্যর্থনা জানালেন। জিজ্ঞেস করলেন, তাদের আগমনের হেতু কি? তারা বললেন, একজন নবী এ মাসে এ পথ দিয়ে বের হয়েছেন। আমরা এমন কোনো পথ বাকি রাখিনি সেখানে লোক পাঠাইনি। আমরা তাঁর খবর সকলের কাছে পৌঁছে দিয়েছি। আমরা জানতে পেরেছি যে, তিনি এ পথ দিয়ে বের হয়েছেন। তিনি তাদেরকে জিজ্ঞেস করলেন, তোমাদের পশ্চাতে উত্তম কেউ আছেন? তারা বললেন, আমরা জানতে পেরেছি যে, তিনি এ পথ দিয়েই আসছেন। তিনি বললেন, আল্লাহ কোনো কিছু করতে চাইলে তা বাস্তবায়ন হবে, কোনো মানুষ কি তা ঠেকাতে পারবে? তারা বললেন, না। কুরাইশ কাফেলা সেখানে রাত্রি যাপন করলেন। পাদ্রী তাদেরকে জিজ্ঞেস করলেন, এ বালকের অবিভাভক কে? তারা বললেন, আবু তালিব। তিনি আবু তালিবকে বারবার বলতে লাগলেন যে, তাঁকে মক্কায় ফিরে যেতে। ফলে আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে  বিলাল রাদিয়াল্লাহু আনহুকে সাথে করে মক্কায় ফিরে যাওয়ার ব্যবস্থা করেন। পাদ্রী তাদের পথের খাবারের জন্য রুটি ও তেলের ব্যবস্থা করেন। [79]

قَالَ ابْنُ إسْحَاقَ: وَحَدَّثَنِي عَاصِمُ بْنُ عُمَرَ بْنِ قَتَادَةَ، عَنْ رِجَالٍ مِنْ قَوْمِهِ، قَالُوا: إنَّ مِمَّا دَعَانَا إلَى الْإِسْلَامِ، مَعَ رَحْمَةِ اللَّهِ تَعَالَى وَهَدَاهُ لَنَا، لَمَا كُنَّا نَسْمَعُ مِنْ رِجَالِ يَهُودَ، (وَ) كُنَّا أَهْلَ شِرْكٍ أَصْحَابَ أَوَثَانٍ، وَكَانُوا أَهْلَ كِتَابٍ، عِنْدَهُمْ عِلْمٌ لَيْسَ لَنَا، وَكَانَتْ لَا تَزَالُ بَيْنَنَا وَبَيْنَهُمْ شُرُورٌ، فَإِذَا نِلْنَا مِنْهُمْ بَعْضَ مَا يَكْرَهُونَ، قَالُوا لَنَا: إنَّهُ (قَدْ) تَقَارَبَ زَمَانُ نَبِيٍّ يُبْعَثُ الْآنَ نَقْتُلُكُمْ مَعَهُ قَتْلَ عَادٍ وَإِرَمٍ فَكُنَّا كَثِيرًا مَا نَسْمَعُ ذَلِكَ مِنْهُمْ. فَلَمَّا بَعَثَ اللَّهُ رَسُولَهُ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَجَبْنَاهُ، حِينَ دَعَانَا إلَى اللَّهِ تَعَالَى، وَعَرَفْنَا مَا كَانُوا يَتَوَعَّدُونَنَا بِهِ، فَبَادَرْنَاهُمْ إلَيْهِ، فَآمَنَّا بِهِ، وَكَفَرُوا بِهِ، فَفِينَا وَفِيهِمْ نَزَلَ هَؤُلَاءِ الْآيَاتُ مِنْ الْبَقَرَةِ: ﴿ وَلَمَّا جَآءَهُمۡ كِتَٰبٞ مِّنۡ عِندِ ٱللَّهِ مُصَدِّقٞ لِّمَا مَعَهُمۡ وَكَانُواْ مِن قَبۡلُ يَسۡتَفۡتِحُونَ عَلَى ٱلَّذِينَ كَفَرُواْ فَلَمَّا جَآءَهُم مَّا عَرَفُواْ كَفَرُواْ بِهِۦۚ فَلَعۡنَةُ ٱللَّهِ عَلَى ٱلۡكَٰفِرِينَ ٨٩ ﴾ [البقرة: ٨٩].

ইবন ইসহাক রহ. এর বর্ণনায় সিরাতে ইবন হিশামে এসেছে, আসেম ইবন ‘উমর ইবন কাতাদা তাঁর গোত্রের লোকের থেকে বর্ণনা করেন, তারা বলেন, আমাদেরকে ইসলামের দাওয়াত দেওয়া হয়েছিল, আল্লাহর রহমতে তিনি আমাদেরকে হিদায়েতও দান করেছেন। আমরা যখন ইয়াহুদিদের থেকে শুনতাম যে, –আমরা মুশরিক ছিলাম, আর তারা আহলে কিতাব- তাদের কাছে এমন ইলম আছে যা আমাদের কাছে নেই। ফলে আমাদের ও তাদের মাঝে ঝগড়া ও মতবিরোধ লেগেই থাকত। আমরা যখন তাদের কোনো প্রতিশোধ নিতাম যা তারা অপছন্দ করত তখন তারা বলত, শীঘ্রই একজন নবীর আগমন ঘটবে, আমরা তাঁর সাথে জিহাদ করে তোমাদেরকে হত্যা করব যেমনিভাবে ‘আদ ও ইরাম জাতিকে হত্যা করা হয়েছিল। আমরা প্রায়ই তাদের থেকে এ ধরণের কথা শুনতাম। আল্লাহ যখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে প্রেরণ করলেন আমরা তাঁর ডাকে সাড়া দিয়ে ইসলাম গ্রহণ করলাম। আর তখনই বুখতে পারলাম তারা কিসের ধমক দিত। আমরা দ্রুত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে গিয়ে ইসলাম গ্রহণ করলাম, কিন্তু তারা (ইয়াহুদিরা) রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে কুফুরী (অস্বীকার) করল। এদের সম্পর্কেই সূরা আল-বাকারাহর নিন্মোক্ত আয়াত নাযিল হয়, “আর যখন তাদের কাছে, তাদের সাথে যা আছে, আল্লাহর পক্ষ থেকে তার সত্যায়নকারী কিতাব এল, অথচ তারা পূর্বে কাফিরদের উপর বিজয় কামনা করত। সুতরাং যখন তাদের নিকট এল যা তারা চিনত, তখন তারা তা অস্বীকার করল। অতএব কাফিরদের উপর আল্লাহর লা‘নত”।[সূরা আল-বাকারা: ৮৯] [80]

عَنْ جَرِيرٍ، قَالَ: كُنْتُ بِاليَمَنِ، فَلَقِيتُ رَجُلَيْنِ مِنْ أَهْلِ اليَمَنِ، ذَا كَلاَعٍ، وَذَا عَمْرٍو، فَجَعَلْتُ أُحَدِّثُهُمْ عَنْ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَقَالَ لَهُ: ذُو عَمْرٍو: لَئِنْ كَانَ الَّذِي تَذْكُرُ مِنْ أَمْرِ صَاحِبِكَ، لَقَدْ مَرَّ عَلَى أَجَلِهِ مُنْذُ ثَلاَثٍ، وَأَقْبَلاَ مَعِي حَتَّى إِذَا كُنَّا فِي بَعْضِ الطَّرِيقِ، رُفِعَ لَنَا رَكْبٌ مِنْ قِبَلِ المَدِينَةِ فَسَأَلْنَاهُمْ، فَقَالُوا: " قُبِضَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، وَاسْتُخْلِفَ أَبُو بَكْرٍ، وَالنَّاسُ صَالِحُونَ، فَقَالاَ: أَخْبِرْ صَاحِبَكَ أَنَّا قَدْ جِئْنَا وَلَعَلَّنَا سَنَعُودُ إِنْ شَاءَ اللَّهُ، وَرَجَعَا إِلَى اليَمَنِ، فَأَخْبَرْتُ أَبَا بَكْرٍ بِحَدِيثِهِمْ، قَالَ: أَفَلاَ جِئْتَ بِهِمْ، فَلَمَّا كَانَ بَعْدُ قَالَ لِي ذُو عَمْرٍو: يَا جَرِيرُ إِنَّ بِكَ عَلَيَّ كَرَامَةً، وَإِنِّي مُخْبِرُكَ خَبَرًا: إِنَّكُمْ مَعْشَرَ العَرَبِ، لَنْ تَزَالُوا بِخَيْرٍ مَا كُنْتُمْ إِذَا هَلَكَ أَمِيرٌ تَأَمَّرْتُمْ فِي آخَرَ، فَإِذَا كَانَتْ بِالسَّيْفِ كَانُوا مُلُوكًا، يَغْضَبُونَ غَضَبَ المُلُوكِ وَيَرْضَوْنَ رِضَا المُلُوكِ ".

জারীর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি ইয়ামানে ছিলাম। এ সময়ে একদা যুকালা ও যু‘আমর নামে ইয়ামানের দু’ব্যক্তির সাথে আমার সাক্ষাৎ হলো। আমি তাদেরকে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাদীস শোনাতে লাগলাম। (বর্ণনাকারী বলেন) এমন সময়ে যু‘আমর, (রাবী) জারীর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুকে বললেন, তুমি যা বর্ণনা করছ তা যদি তোমার সাথীরই [রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের] কথা হয়ে থাকে তা হলে মনে রেখো যে, তিন দিন আগে তিনি মৃত্যু বরণ গেছেন। (জারীর বলেন, কথাটি শুনে আমি মদীনা অভিমুখে ছুটলাম)। তারা দু’জনেও আমার সাথে সম্মুখের দিকে চললেন। অবশেষে আমরা একটি রাস্তার ধারে পৌঁছলে মদীনার দিক থেকে আসা একদল সওয়ারীর সাক্ষাৎ পেলাম। আমরা তাদেরকে জিজ্ঞাসা করলে তারা বলল, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মৃত্যু হয়ে গেছে। মুসলিমদের সম্মতিক্রমে আবু বকর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু খলীফা নির্বাচিত হয়েছেন। তারপর তারা দু’জনে (আমাকে) বলল, (তুমি মদীনায় পৌঁছলে) তোমার সাথী (আবু বকর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু) কে বলবে যে, আমরা কিছুদূর পর্যন্ত এসেছিলাম। সম্ভবত আবার আসব ইনশাআল্লাহ্, এ কথা বলে তারা দু’জনে ইয়ামানের দিকে ফিরে গেল। এরপর আমি আবু বকর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুকে তাদের কথা জানালাম। তিনি (আমাকে) বললেন, তাদেরকে তুমি নিয়ে আসলে না কেন? পরে আরেক সময় (যু‘আমরের সাথে সাক্ষাৎ হলে) তিনি আমাকে বললেন, হে জারীর! তুমি আমার চেয়ে অধিক সম্মানী। তবুও আমি তোমাকে একটি কথা জানিয়ে দিচ্ছি যে, তোমরা আরব জাতি ততক্ষন পর্যন্ত কল্যান ও সাফল্যের মধ্যে অবস্থান করতে থাকবে যতক্ষন পর্যন্ত তোমরা একজন আমির মারা গেলে অপরজনকে (পরামর্শের মাধ্যম) আমির বানিয়ে নেবে। আর তা যদি তরবারির জোরে ফায়সালা হয়, তা হলে তোমাদের আমিরগন (জাগতিক) অন্যান্য রাজা বাদশাদের মতোই হয়ে যাবে। তারা রাজাসুলভ ক্রোধ, রাজাসুলভ সন্তুষ্টি প্রকাশ করবে। (খলীফা ও খিলাফত আর অবশিষ্ট থাকবে না।) [81]

হাফেয ইবন হাজার রহ. বলেন, যু‘আমর একথা পূর্ববর্তী কিতাব থেকে বলেছেন। কেননা ইয়ামেনে তখন অনেক ইয়াহুদী বাস করতেন, ফলে অনেক ইয়ামেনী ইয়াহুদী ধর্ম গ্রহণ করেন এবং তাদের থেকে সে ধর্ম শিক্ষালাভ করেন। এটা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বাণীর অন্তর্ভুক্ত তিনি যখন মু‘আয ইবন জাবাল রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুকে ইয়ামেনে পাঠিয়েছেন এবং তখন তাকে বলেছিলেন, তুমি আহলে কিতাবের এক সম্প্রদায়ের কাছে যাচ্ছ। [82]

عَنْ سَلَمَةَ بْنِ سَلَامَةَ بْنِ وَقْشٍ، وَكَانَ مِنْ أَصْحَابِ بَدْرٍ، قَالَ: كَانَ لَنَا جَارٌ مِنْ يَهُودَ فِي بَنِي عَبْدِ الْأَشْهَلِ، قَالَ: فَخَرَجَ عَلَيْنَا يَوْمًا مِنْ بَيْتِهِ قَبْلَ مَبْعَثِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِيَسِيرٍ، فَوَقَفَ عَلَى مَجْلِسِ بَنِي عَبْدِ الْأَشْهَلِ، قَالَ سَلَمَةُ: وَأَنَا يَوْمَئِذٍ أَحْدَثُ مَنْ فِيهِ سِنًّا، عَلَيَّ بُرْدَةٌ، مُضْطَجِعًا فِيهَا بِفِنَاءِ أَهْلِي، فَذَكَرَ الْبَعْثَ وَالْقِيَامَةَ وَالْحِسَابَ، وَالْمِيزَانَ، وَالْجَنَّةَ، وَالنَّارَ فَقَالَ: ذَلِكَ لِقَوْمٍ أَهْلِ شِرْكٍ، أَصْحَابِ أَوْثَانٍ، لَا يَرَوْنَ أَنَّ بَعْثًا كَائِنٌ بَعْدَ الْمَوْتِ، فَقَالُوا لَهُ: وَيْحَكَ يَا فُلَانُ تَرَى هَذَا كَائِنًا؟ إِنَّ النَّاسَ يُبْعَثُونَ بَعْدَ مَوْتِهِمْ إِلَى دَارٍ فِيهَا جَنَّةٌ، وَنَارٌ يُجْزَوْنَ فِيهَا بِأَعْمَالِهِمْ، قَالَ: نَعَمْ، وَالَّذِي يُحْلَفُ بِهِ لَوَدَّ أَنَّ لَهُ بِحَظِّهِ مِنْ تِلْكَ النَّارِ أَعْظَمَ تَنُّورٍ فِي الدُّنْيَا ، يُحَمُّونَهُ ثُمَّ يُدْخِلُونَهُ إِيَّاهُ فَيُطْبَقُ بِهِ عَلَيْهِ، وَأَنْ يَنْجُوَ مِنْ تِلْكَ النَّارِ غَدًا، قَالُوا لَهُ: وَيْحَكَ وَمَا آيَةُ ذَلِكَ؟ قَالَ: نَبِيٌّ يُبْعَثُ مِنْ نَحْوِ هَذِهِ الْبِلَادِ، وَأَشَارَ بِيَدِهِ نَحْوَ مَكَّةَ، وَالْيَمَنِ، قَالُوا: وَمَتَى تَرَاهُ؟ قَالَ: فَنَظَرَ إِلَيَّ وَأَنَا مِنْ أَحْدَثِهِمْ سِنًّا، فَقَالَ: إِنْ يَسْتَنْفِدْ هَذَا الْغُلَامُ عُمُرَهُ يُدْرِكْهُ، قَالَ سَلَمَةُ: فَوَاللهِ مَا ذَهَبَ اللَّيْلُ وَالنَّهَارُ حَتَّى " بَعَثَ اللهُ تَعَالَى رَسُولَهُ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، وَهُوَ حَيٌّ بَيْنَ أَظْهُرِنَا "، فَآمَنَّا بِهِ وَكَفَرَ بِهِ بَغْيًا وَحَسَدًا، فَقُلْنَا: وَيْلَكَ يَا فُلَانُ أَلَسْتَ بِالَّذِي قُلْتَ: لَنَا فِيهِ مَا قُلْتَ؟ قَالَ: بَلَى. وَلَيْسَ بِهِ.

সালামাহ ইবন সালামাহ ইবন ওয়াকশ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বদরের যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী সাহাবী ছিলেন। তিনি বলেন, বনী আব্দুল আশহাল গোত্রে আমাদের একজন ইয়াহুদী প্রতিবেশী ছিলেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আবির্ভাবের কিছুদিন আগে তিনি একদিন ঘর থেকে আমাদের মাঝে বের হলেন এবং বনী আব্দুল আশহালের মসলিশে উপস্থিত হলেন। সালামাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, তখনকার উপস্থিত সকলের মাঝে আমি খুব অল্প বয়সী ছিলাম, আমার পড়নে একখানা চাদর ছিল, আমার পরিবারের আঙ্গিনায় শুয়ে ছিলাম। তখন তিনি মৃত্যুর পরে জীবিতকরণ, কিয়ামাহ, হিসাব নিকাশ, মিযান, জান্নাত, জাহান্নাম ইত্যাদি সম্পর্কে ওয়াজ করছিল। তিনি বললেন, মুশরিকরা মনে করেন, মৃত্যুর পরে তাদের পুনরুত্থান হবেনা। তারা বলল, দুর্ভোগ, তারা মিথ্যা বলে। মৃত্যুর পরে মানুষ হয়তো জান্নাতের গৃহে যাবে অথবা তাদের আমলের ফলোস্বরূপ জাহান্নামে যাবে। তিনি বললেন, হ্যাঁ। আমি শপথ করে বলতে পারি, যে কারো জন্য দুনিয়ার চেয়েও বড় চুলা জাহান্নামে অপেক্ষা করতেছে, তাতে তারা প্রবেশ করবে, ইহা তাদেরকে রান্না করে ফেলবে, তবে আগামীতে তাদেরকে এ জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেওয়া হবে। তারা বলল, কিভাবে? এর নিদর্শন কি? তিনি বললেন, এই দেশ থেকে –তখন তিনি আঙ্গুল দিয়ে মক্কা ও ইয়ামেনের দিকে ইশারা করলেন- একজন নবীর আগমন ঘটবে। তারা বলল, কখন তাকে দেখা যাবে? তখন তিনি আমার দিকে তাকালেন, আর আমি তাদের মধ্যে সবচেয়ে ছোট ছিলাম। তিনি বললেন, যদি তিনি আবির্ভাব হন তবে এখন তাঁর বয়স এ ছেলের মতই হবে। সালামাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, আল্লাহর শপথ, রাত দিন অতিবাহিত হতে লাগল একসময় আল্লাহ তাকে রাসূল হিসেবে প্রেরণ করলেন। তিনি জীবিত, আমাদের আছেন। আমরা তাঁর প্রতি ঈমান আনলাম, আর সে ইয়াহুদি হিংসা ও বিদ্বেষবশত তাঁর কুফুরী করল। আমরা বললাম, হে অমুক! আপনার দুর্ভাগ্য, আপনি না সেদিন আমাদেরকে একথা বলেছেন? তিনি বললেন, হ্যাঁ, অবশ্যই বলেছি। কিন্তু ইনি সে লোক নন। [83]

عَنِ الْفَلْتَانِ بْنِ عَاصِمٍ، قَالَ: كُنَّا قُعُودًا مَعَ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي الْمَسْجِدِ، فَشَخَصَ بَصَرُهُ إِلَى رَجُلٍ يَمْشِي فِي الْمَسْجِدِ، فَقَالَ: «يَا فُلَانُ أَتَشْهَدُ أَنِّي رَسُولُ اللَّهِ؟» ، قَالَ: لَا، قَالَ: «أَتَقْرَأُ التَّوْرَاةَ؟» ، قَالَ: نَعَمْ، قَالَ: «وَالْإِنْجِيلَ؟» ، قَالَ: نَعَمْ، قَالَ: «وَالْقُرْآنَ» ، قَالَ: وَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ لَوْ أَشَاءُ لَقَرَأْتُهُ، قَالَ: ثُمَّ أُنْشِدَهُ، فَقَالَ: «تَجِدُنِي فِي التَّوْرَاةِ وَالْإِنْجِيلِ؟» ، قَالَ: نَجْدُ مِثْلَكَ، وَمَثَلَ أُمَّتِكَ، وَمَثَلَ مُخْرِجَكَ، وَكُنَّا نَرْجُو أَنْ تَكُونَ فِينَا، فَلَمَّا خَرَجْتَ تَخَوَّفْنَا أَنْ تَكُونَ أَنْتَ، فَنَظَرْنَا فَإِذَا لَيْسَ أَنْتَ هُوَ، قَالَ: «وَلِمَ ذَاكَ؟» قَالَ: إِنَّ مَعَهُ مِنْ أُمَّتِهِ سَبْعِينَ أَلْفًا، لَيْسَ عَلَيْهِمْ حِسَابٌ، وَلَا عِقَابَ، وَإِنَّ مَا مَعَكَ نَفَرٌ يَسِيرٌ، قَالَ: «فَوَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ لَأَنَا هُوَ، وَإِنَّهَا لَأُمَّتِي، وَإِنَّهُمْ لَأَكْثَرُ مِنْ سَبْعِينَ أَلْفًا وَسَبْعِينَ أَلْفًا وَسَبْعِينَ أَلْفًا.

ফালতান ইবন ‘আসিম রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একবার আমরা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে মসজিদে বসা ছিলাম। তখন তিনি এক ব্যক্তির দিকে তাকালেন, সে মসজিদের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে জিজ্ঞেস করলেন, হে অমুক, তুমি কি সাক্ষ্য দিবে যে আমি আল্লাহর রাসূল? সে বলল, না। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তুমি কি তাওরাত পড়? সে বলল, হ্যাঁ। তিনি বললেন, ইঞ্জিল পড়? উত্তরে বললেন, হ্যাঁ। বললেন, কুরআন পড়? বলল, আল্লাহর কসম, যার হাতে আমার জীবন যদি আমি চাই তবে কুরআন পড়তে পারি। তিনি বললেন, তুমি তা পড়। তুমি কি আমাকে তাওরাত ও ইঞ্জিলে পাওনি? সে বলল, আপনার, আপনার উম্মত ও জন্মের কথা সবই পেয়েছি। আমরা আশা করেছিলাম আপনি আমাদের গোত্র থেকে আবির্ভূত হবেন। কিন্তু আপনি যখন আবির্ভাব হলেন ভেবেছিলাম আপনিই সে নবী, কিন্তু দেখলাম আপনি সে নবী নন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, কেন তোমার এমন মনে হলো? সে বলল, আমরা পেয়েছি যে, তাঁর সাথে সত্তর হাজার উম্মত থাকবেন। তাদের কোনো হিসেব হবেনা ও তাদের কোনো আযাবও হবে না। অথচ আপনার সাথে গুঁটিকয়েক লোক দেখতে পাচ্ছি। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, যে আল্লাহর কুদরতি হাতে আমার জীবন তাঁর শপথ, আমিই সে নবী, এরাই আমার উম্মত, তারা সত্তর হাজারেরও অধিক, এরা সত্তর হাজারেরও বেশি, এরা সত্তর হাজারেরও বেশি।[84]

عَنْ أَبِي مُوسَى , قَالَ: أَمَرَنَا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنْ نَنْطَلِقَ مَعَ جَعْفَرِ بْنِ أَبِي طَالِبٍ إِلَى أَرْضِ النَّجَاشِيِّ , قَالَ: فَبَلَغَ ذَلِكَ قَوْمَنَا , فَبَعَثُوا عَمْرَو بْنَ الْعَاصِ وَعُمَارَةَ بْنَ الْوَلِيدِ , وَجَمَعُوا لِلنَّجَاشِيِّ هَدِيَّةً، فَقَدِمْنَا وَقَدِمَا عَلَى النَّجَاشِيِّ , فَأَتَوْهُ بِهَدِيَّتِهِ فَقَبِلَهَا , وَسَجَدُوا , ثُمَّ قَالَ لَهُ عَمْرُو بْنُ الْعَاصِ: إِنَّ قَوْمًا مِنَّا رَغِبُوا عَنْ دِينِنَا وَهُمْ فِي أَرْضِكَ , فَقَالَ لَهُمُ النَّجَاشِيُّ: فِي أَرْضِي؟ قَالُوا: نَعَمْ , فَبَعَثَ إِلَيْنَا، فَقَالَ لَنَا جَعْفَرٌ: لَا يَتَكَلَّمْ مِنْكُمْ أَحَدٌ , أَنَا خَطِيبُكُمُ الْيَوْمَ , قَالَ: فَانْتَهَيْنَا إِلَى النَّجَاشِيِّ وَهُوَ جَالِسٌ فِي مَجْلِسِهِ وَعَمْرُو بْنُ الْعَاصِ عَنْ يَمِينِهِ وَعُمَارَةُ عَنْ يَسَارِهِ , وَالْقِسِّيسُونَ وَالرُّهْبَانُ جُلُوسٌ سِمَاطَيْنِ , وَقَدْ قَالَ لَهُ عَمْرُو بْنُ الْعَاصِ وَعُمَارَةُ: إِنَّهُمْ لَا يَسْجُدُونَ لَكَ , قَالَ: فَلَمَّا انْتَهَيْنَا إِلَيْهِ زَبَرَنَا مَنْ عِنْدَهُ مِنَ الْقِسِّيسِينَ وَالرُّهْبَانِ: اسْجُدُوا لِلْمَلِكِ , فَقَالَ جَعْفَرٌ: لَا نَسْجُدُ إِلَّا لِلَّهِ , فَلَمَّا انْتَهَيْنَا إِلَى النَّجَاشِيِّ قَالَ , مَا يَمْنَعُكَ أَنْ تَسْجُدَ؟ قَالَ: لَا نَسْجُدُ إِلَّا لِلَّهِ , قَالَ لَهُ النَّجَاشِيُّ , وَمَا ذَاكَ؟ قَالَ: " إِنَّ اللَّهَ بَعَثَ فِينَا رَسُولَهُ , وَهُوَ الرَّسُولُ الَّذِي بَشَّرَ بِهِ عِيسَى ابْنُ مَرْيَمَ: {بِرَسُولٍ يَأْتِي مِنْ بَعْدِي اسْمُهُ أَحْمَدُ} [الصف: 6] فَأَمَرَنَا أَنْ نَعْبُدَ اللَّهَ وَلَا نُشْرِكَ بِهِ شَيْئًا , وَنُقِيمَ الصَّلَاةَ، وَنُؤْتِيَ الزَّكَاةَ , وَأَمَرَنَا بِالْمَعْرُوفِ وَنَهَانَا عَنِ الْمُنْكَرِ " , قَالَ: فَأَعْجَبَ النَّجَاشِيَّ قَوْلُهُ , فَلَمَّا رَأَى ذَلِكَ عَمْرُو بْنُ الْعَاصِ قَالَ: أَصْلَحَ اللَّهُ الْمَلِكَ , إِنَّهُمْ يُخَالِفُونَكَ فِي ابْنِ مَرْيَمَ؟ فَقَالَ النَّجَاشِيُّ لِجَعْفَرٍ: مَا يَقُولُ صَاحِبُكَ فِي ابْنِ مَرْيَمَ؟ قَالَ: يَقُولُ فِيهِ قَوْلَ اللَّهِ هُوَ «رُوحُ اللَّهِ» وَكَلِمَتُهُ أَخْرَجَهُ مِنَ الْبَتُولِ الْعَذْرَاءِ الَّتِي لَمْ يَقْرَبْهَا بَشَرٌ , قَالَ: فَتَنَاوَلَ النَّجَاشِيُّ عُودًا مِنَ الْأَرْضِ فَقَالَ: يَا مَعْشَرَ الْقِسِّيسِينَ وَالرُّهْبَانِ , مَا يَزِيدُ مَا يَقُولُ هَؤُلَاءِ عَلَى مَا تَقُولُونَ فِي ابْنِ مَرْيَمَ مَا يَزِنُ هَذِهِ , مَرْحَبًا بِكُمْ وَبِمَنْ جِئْتُمْ مِنْ عِنْدِهِ , فَأَنَا أَشْهَدُ أَنَّهُ رَسُولُ اللَّهِ وَالَّذِي بَشَّرَ بِهِ عِيسَى ابْنُ مَرْيَمَ , وَلَوْلَا مَا أَنَا فِيهِ مِنَ الْمُلْكِ لَأَتَيْتُهُ حَتَّى أَحْمِلَ نَعْلَيْهِ , امْكُثُوا فِي أَرْضِي مَا شِئْتُمْ , وَأَمَرَ لَنَا بِطَعَامٍ وَكِسْوَةٍ , وَقَالَ: رُدُّوا عَلَى هَذَيْنِ هَدِيَّتَهُمَا , قَالَ: وَكَانَ عَمْرُو بْنُ الْعَاصِ رَجُلًا قَصِيرًا , وَكَانَ عُمَارَةُ بْنُ الْوَلِيدِ رَجُلًا جَمِيلًا , قَالَ: فَأَقْبَلَا فِي الْبَحْرِ إِلَى النَّجَاشِيِّ , قَالَ: فَشَرِبُوا , قَالَ: وَمَعَ عَمْرِو بْنِ الْعَاصِ امْرَأَتُهُ , فَلَمَّا شَرِبُوا الْخَمْرَ قَالَ عُمَارَةُ لِعَمْرٍو: مُرِ امْرَأَتَكَ فَلْتُقَبِّلْنِي , فَقَالَ لَهُ عَمْرٌو: أَلَا تَسْتَحْيِي , فَأَخَذَهُ عُمَارَةُ فَرَمَى بِهِ فِي الْبَحْرِ فَجَعَلَ عَمْرٌو يُنَاشِدُهُ حَتَّى أَدْخَلَهُ السَّفِينَةَ , فَحَقَدَ عَلَيْهِ عَمْرٌو ذَلِكَ , فَقَالَ عَمْرٌو لِلنَّجَاشِيِّ: إِنَّكَ إِذَا خَرَجْتَ خَلَفَ عُمَارَةُ فِي أَهْلِكَ , قَالَ: فَدَعَا النَّجَاشِيُّ بِعُمَارَةَ فَنَفَخَ فِي إِحْلِيلِهِ فَصَارَ مَعَ الْوَحْشِ ".

আবূ মূসা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে জাফর ইবন আবী তালিব রাদিয়াল্লাহু আনহুর সাথে নাজ্জাশীর দেশে হিজরত করতে আদেশ করলেন। এ সংবাদ আমাদের গোত্রের লোকের কাছে পৌঁছে গেল। তারা ‘আমর ইবন ‘আস ও ‘উমারাহ ইবন ওয়ালিদকে অনেক উপঢৌকন সহকারে নাজ্জাশীর দরবারে পাঠালেন। আমরা নাজ্জাশীর দেশে আসলাম, তারা দু’জনও নাজ্জাশীর দেশে আসল। তারা নাজ্জাশীকে হাদিয়া পেশ করল, তিনি তা গ্রহণ করলেন এবং তারা তাকে সিজদা করল। অতঃপর ‘আমর ইবন ‘আস নাজ্জাশীকে বলল, আমাদের জাতির কিছু লোক নিজেদের ধর্ম ত্যাগ করে আপনার দেশে বসবাস করছে। তখন নাজ্জাশী বলল, তারা কি আমার দেশে আছে? তারা বলল হ্যাঁ। তখন নাজ্জাশী আমাদেরকে ডেকে পাঠালেন। জাফর রাদিয়াল্লাহু আনহু আমাদেরকে বললেন, তোমরা কেউ কোনো কথা বলবে না। আজকে আমি তোমাদের মুখপাত্র (বক্তা)। তিনি বললেন, আমরা নাজ্জাশীর কাছে আসলাম, তিনি তাঁর আসনে উপবিষ্ট ছিল। ‘আমর ইবন ‘আস তাঁর ডান পাশে ও ‘উমারাহ তাঁর বাম পাশে ছিল। কিসসীস ও রুহবানরা খাদ্য সামনে দস্তরখানে বসা ছিল। ‘আমর ইবন ‘আস ও ‘উমারাহ তাদেরকে বলল, তারা আপনাকে সিজদা করেনি। তখন যাজকেরা জোরপূর্বক সিজদা করানোর চেষ্টা করল। তারা বলল, তোমরা সম্রাটকে সিজদা কর। জাফর রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, আমরা আল্লাহ ছাড়া কাউকে সিজদা করি না। আমরা যখন নাজ্জাশীর কাছে পৌঁছলাম তিনি আমাদেরকে জিজ্ঞেস করলেন, তোমরা কেন আমাকে সিজদা করলে না? তিনি বললেন, আমরা একমাত্র আল্লাহকেই সিজদা করি। নাজ্জাশী তাদেরকে বললেন, তোমরা কি কর? তিনি (জাফর) বললেন, আল্লাহ আমাদের মাঝে একজন রাসূল প্রেরণ করেছেন, তিনি সে রাসূল যার সম্পর্কে ঈসা ইবন মারইয়াম আলাইহিস সালাম সুসংবাদ দিয়েছেন যে, “আমার পরে একজন রাসূল আসবেন যার নাম আহমদ”। [সূরা আস-সাফ: ৬] তিনি আমাদেরকে আল্লাহর ইবাদত করতে ও তাঁর সাথে কোনো শরীক না করতে আদেশ দেন। তিনি সালাত কায়েম, যাকাত আদায়, সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজের নিষেধ করতে নির্দেশ দেন। তিনি বলেন, একথা শুনে নাজ্জাশী আশ্চর্য হলেন। ‘আমর ইবন ‘আস যখন নাজ্জাশীর এ অবস্থা দেখল তখন সে বলল, আল্লাহ সম্রাটকে সংশোধন করুন। তারা ঈসা ইবন মারইয়ামের বিরোধীতা করে। তখন নাজ্জাশী জাফর রাদিয়াল্লাহু আনহুকে জিজ্ঞেস করলেন, তোমার সাথী ইবন মারইয়ামের ব্যাপারে কি বলেন? তিনি বললেন, তিনি তাঁর সম্পর্কে আল্লাহ যা বলেছেন তাই বলেন, তিনি রুহুল্লাহ, ও আল্লাহর কালিমা, সতীস্বাধ্বী রমনী মারইয়াম আলাইহিস সালাম যাকে কোনো মানুষ স্পর্শ করেনি তাঁর গর্ব থেকে তিনি ভুমিষ্ট হয়েছেন। একথা শুনে নাজ্জাশী মাটি থেকে একটি লাঠি নিয়ে বলতে লাগলেন, হে কিসসীস ও রুহবানের দল! তোমরা ইবন মারইয়ামের ব্যাপারে যা যা বল এরা এর বেশি কিছু বাড়িয়ে বলেনি। তোমাদেরকে স্বাগতম ও তোমরা যার কাছ থেকে এসেছ তাকেও স্বাগতম। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, তিনি আল্লাহর রাসূল। তাঁর সম্পর্কেই ঈসা ইবন মারইয়াম আলাইহিস সালাম সুসংবাদ দিয়েছেন। আমি যদি এ রাষ্ট্রের বাদশাহের স্থানে না হতাম তবে আমি তাঁর কাছে যেতাম এবং তাঁর জুতো বহন করতাম। তোমরা আমার দেশে যতদিন খুশী বসবাস কর। তিনি আমাদের জন্য খাদ্য ও পোশাকের নির্দেশ দেন। ‘আমর ইবন ‘আস ও ‘উমারাহর হাদিয়া ফেরত দিতে নির্দেশ দেন। তিনি বলেন, ‘আমর ইবন ‘আস খাটো আর ‘উমারাহ ইবন ওয়ালীদ সুদর্শন পুরুষ ছিল। তারা সমুদ্রে নাজ্জাশীর কাছে এলো। তিনি বলেন, তারা মদ্য পান করলেন। ‘আমর ইবন ‘আসের সাথে তার স্ত্রী ছিল। তারা যখন মদ পান করল তখন উমারাহ ‘আমরকে বলল, তোমার স্ত্রীকে আমাকে চুম্বন করতে বলো। ‘আমর তাকে বলল, তোমার লজ্জা করা উচিত। ফলে উমারাহ তাকে ধরে সাগরে ফেলে দেয়। ‘আমর অনেক কষ্ট করে নিজেকে সাগর থেকে উঠিয়ে নৌকায় তোলে। এতে ‘আমর তার উপর রাগান্বিত হয়। সে নাজ্জাশীকে বলল, আপনি যখন বের হয়েছেন ‘উমারাহ আপনার পিছনে আপনার পরিবারকে দেখেছে। ফলে নাজ্জাশী উমারাহকে ডাকলেন। তিনি তার মূত্রনালীতে ফুঁৎকার দিল, ফলে সে হিংস্র হয়ে গেল। [85]

عَنْ عَبْدِ اللَّهِ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، قَالَ: جَاءَ حَبْرٌ مِنَ الأَحْبَارِ إِلَى رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ: يَا مُحَمَّدُ إِنَّا نَجِدُ: أَنَّ اللَّهَ يَجْعَلُ السَّمَوَاتِ عَلَى إِصْبَعٍ وَالأَرَضِينَ عَلَى إِصْبَعٍ، وَالشَّجَرَ عَلَى إِصْبَعٍ، وَالمَاءَ وَالثَّرَى عَلَى إِصْبَعٍ، وَسَائِرَ الخَلاَئِقِ عَلَى إِصْبَعٍ، فَيَقُولُ أَنَا المَلِكُ، فَضَحِكَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ حَتَّى بَدَتْ نَوَاجِذُهُ تَصْدِيقًا لِقَوْلِ الحَبْرِ، ثُمَّ قَرَأَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: ﴿ وَمَا قَدَرُواْ ٱللَّهَ حَقَّ قَدۡرِهِۦ وَٱلۡأَرۡضُ جَمِيعٗا قَبۡضَتُهُۥ يَوۡمَ ٱلۡقِيَٰمَةِ وَٱلسَّمَٰوَٰتُ مَطۡوِيَّٰتُۢ بِيَمِينِهِۦۚ سُبۡحَٰنَهُۥ وَتَعَٰلَىٰ عَمَّا يُشۡرِكُونَ ٦٧ ﴾ [الزمر: ٦٧].

আবদুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ইয়াহুদী আলিমদের থেকে জনৈক আলিম রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে এসে বলল, হে মুহাম্মাদ! আমরা (তাওরাতে দেখতে) পাই যে, আল্লাহ তা‘আলা আকাশসমূহকে এক আঙ্গুলের উপর স্থাপন করবেন। যমীনকে এক আঙ্গুলের উপর, বৃক্ষসমূহকে এক আঙ্গুলের উপর, পানি এক আঙ্গুলের উপর, মাটি এক আঙ্গুলের উপর এবং অন্যান্য সৃষ্টি জগত এক আঙ্গুলের উপর স্থাপন করবেন। তারপর বলবেন, আমিই বাদশাহ্। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা সমর্থনে হেসে ফেললেন; এমনকি তাঁর সামনের দাঁত প্রকাশ হয়ে পড়ে। এরপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পাঠ করলেন,

﴿ وَمَا قَدَرُواْ ٱللَّهَ حَقَّ قَدۡرِهِۦ وَٱلۡأَرۡضُ جَمِيعٗا قَبۡضَتُهُۥ يَوۡمَ ٱلۡقِيَٰمَةِ وَٱلسَّمَٰوَٰتُ مَطۡوِيَّٰتُۢ بِيَمِينِهِۦۚ سُبۡحَٰنَهُۥ وَتَعَٰلَىٰ عَمَّا يُشۡرِكُونَ ٦٧ ﴾ [الزمر: ٦٧]

“আর তারা আল্লাহকে যথাযোগ্য মর্যাদা দেয়নি। অথচ কিয়ামতের দিন গোটা পৃথিবীই থাকবে তাঁর মুষ্টিতে এবং আকাশসমূহ তাঁর ডান হাতে ভাঁজ করা থাকবে। তিনি পবিত্র, তারা যাদেরকে শরীক করে তিনি তাদের ঊর্ধ্বে”। [সূরা আয্-যুমার: ৬৭] [86]

عَنْ أَبِي سَعِيدٍ الخُدْرِيِّ، قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «تَكُونُ الأَرْضُ يَوْمَ القِيَامَةِ خُبْزَةً وَاحِدَةً، يَتَكَفَّؤُهَا الجَبَّارُ بِيَدِهِ كَمَا يَكْفَأُ أَحَدُكُمْ خُبْزَتَهُ فِي السَّفَرِ، نُزُلًا لِأَهْلِ الجَنَّةِ» فَأَتَى رَجُلٌ مِنَ اليَهُودِ فَقَالَ: بَارَكَ الرَّحْمَنُ عَلَيْكَ يَا أَبَا القَاسِمِ، أَلاَ أُخْبِرُكَ بِنُزُلِ أَهْلِ الجَنَّةِ يَوْمَ القِيَامَةِ؟ قَالَ: «بَلَى» قَالَ: تَكُونُ الأَرْضُ خُبْزَةً وَاحِدَةً، كَمَا قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَنَظَرَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِلَيْنَا ثُمَّ ضَحِكَ حَتَّى بَدَتْ نَوَاجِذُهُ، ثُمَّ قَالَ: أَلاَ أُخْبِرُكَ بِإِدَامِهِمْ؟ قَالَ: إِدَامُهُمْ بَالاَمٌ وَنُونٌ، قَالُوا: وَمَا هَذَا؟ قَالَ: ثَوْرٌ وَنُونٌ، يَأْكُلُ مِنْ زَائِدَةِ كَبِدِهِمَا سَبْعُونَ أَلْفًا.

আবূ সাঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, কিয়ামতের দিন সমস্ত যমীন একটি রুটি হয়ে যাবে, আর আল্লাহ্ তা‘আলা জান্নাতীদের মেহমানদারীর জন্য তাকে স্বহস্তে তুলে নেবেন, যেমন তোমাদের মাঝে কেউ সফরের সময় তার রুটি হাতে তুলে নেয়। এমন সময় একজন ইয়াহুদী এলো এবং বলল, হে আবুল কাসিম! দয়াময় আপনাকে বরকত প্রদান করুন। কিয়ামতের দিন জান্নাতীদের অতিথেয়তা সম্পর্কে আপনাকে কি জানাব না? তিনি বললেন হ্যাঁ, লোকটি বলল, (সেই দিন) সমস্ত ভূ-মন্ডল একটি রুটি হয়ে যাবে। যেমন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, (লোকটিও সেইরূপই বলল)। এবার নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের দিকে তাকালেন এবং হাসলেন, এমনকি তাঁর চোয়ালের দাঁতসমূহ প্রকাশ পেল। এরপর তিনি বললেন। তবে কি আমি তোমাদেরকে (সেই রুটির) তরকারী সম্পর্কে বলব না? তিনি বললেন, তাদের তরকারী হবে বালাম এবং নুন, সাহাবীগণ বললেন, সে আবার কি? তিনি বললেন, ষাঁড় এবং মাছ। এদের কলিজার গুরদা থেকে সত্তর হাজার লোক খেতে পারবে। [87]

 

 

কতিপয় জিনের ইসলাম গ্রহণ

আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,

﴿ وَإِذۡ صَرَفۡنَآ إِلَيۡكَ نَفَرٗا مِّنَ ٱلۡجِنِّ يَسۡتَمِعُونَ ٱلۡقُرۡءَانَ فَلَمَّا حَضَرُوهُ قَالُوٓاْ أَنصِتُواْۖ فَلَمَّا قُضِيَ وَلَّوۡاْ إِلَىٰ قَوۡمِهِم مُّنذِرِينَ ٢٩ قَالُواْ يَٰقَوۡمَنَآ إِنَّا سَمِعۡنَا كِتَٰبًا أُنزِلَ مِنۢ بَعۡدِ مُوسَىٰ مُصَدِّقٗا لِّمَا بَيۡنَ يَدَيۡهِ يَهۡدِيٓ إِلَى ٱلۡحَقِّ وَإِلَىٰ طَرِيقٖ مُّسۡتَقِيمٖ ٣٠ يَٰقَوۡمَنَآ أَجِيبُواْ دَاعِيَ ٱللَّهِ وَءَامِنُواْ بِهِۦ يَغۡفِرۡ لَكُم مِّن ذُنُوبِكُمۡ وَيُجِرۡكُم مِّنۡ عَذَابٍ أَلِيمٖ ٣١ وَمَن لَّا يُجِبۡ دَاعِيَ ٱللَّهِ فَلَيۡسَ بِمُعۡجِزٖ فِي ٱلۡأَرۡضِ وَلَيۡسَ لَهُۥ مِن دُونِهِۦٓ أَوۡلِيَآءُۚ أُوْلَٰٓئِكَ فِي ضَلَٰلٖ مُّبِينٍ ٣٢ ﴾ [الاحقاف: ٢٩، ٣٢]

“আর স্মরণ কর, যখন আমি জিনদের একটি দলকে তোমার কাছে ফিরিয়ে দিয়েছিলাম। তারা কুরআন পাঠ শুনছিল। যখন তারা তার কাছে উপস্থিত হল, তখণ তারা বলল, ‘চুপ করে শোন। তারপর যখন পাঠ শেষ হল তখন তারা তাদের কওমের কাছে সতর্ককারী হিসেবে ফিরে গেল। তারা বলল, ‘হে আমাদের কওম, আমরা তো এক কিতাবের বাণী শুনেছি, যা মূসার পরে নাযিল করা হয়েছে। যা পূর্ববর্তী কিতাবকে সত্যায়ন করে আর সত্য ও সরল পথের প্রতি হিদায়াত করে’। ‘হে আমাদের কওম, আল্লাহর দিকে আহবানকারীর প্রতি সাড়া দাও এবং তার প্রতি ঈমান আন, আল্লাহ তোমাদের পাপসমূহ ক্ষমা করবেন। আর তোমাদেরকে যন্ত্রণাদায়ক আযাব থেকে রক্ষা করবেন’। আর যে আল্লাহর দিকে আহবানকারীর ডাকে সাড়া দেবে না সে যমীনে তাকে অপারগকারী নয়। আর আল্লাহ ছাড়া তার কোনো অভিভাবক নেই। এরাই স্পষ্ট বিভ্রান্তির মধ্যে রয়েছে”। [সূরা আল্-আহকাফ: ২৯-৩২]

আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেছেন,

﴿ قُلۡ أُوحِيَ إِلَيَّ أَنَّهُ ٱسۡتَمَعَ نَفَرٞ مِّنَ ٱلۡجِنِّ فَقَالُوٓاْ إِنَّا سَمِعۡنَا قُرۡءَانًا عَجَبٗا ١ يَهۡدِيٓ إِلَى ٱلرُّشۡدِ فَ‍َٔامَنَّا بِهِۦۖ وَلَن نُّشۡرِكَ بِرَبِّنَآ أَحَدٗا ٢ ﴾ [الجن: ١، ٢]

“বল, ‘আমার প্রতি ওহী করা হয়েছে যে, নিশ্চয় জিনদের একটি দল মনোযোগ সহকারে শুনেছে। অতঃপর বলেছে, ‘আমরা তো এক বিস্ময়কর কুরআন শুনেছি, যা সত্যের দিকে হিদায়াত করে; অতঃপর আমরা তাতে ঈমান এনেছি। আর আমরা কখনো আমাদের রবের সাথে কাউকে শরীক করব না”। [সূরা আল্-জিন: ১-২]

عَنْ عَبْدِ اللهِ، فِي قَوْلِهِ عَزَّ وَجَلَّ: ﴿ أُوْلَٰٓئِكَ ٱلَّذِينَ يَدۡعُونَ يَبۡتَغُونَ إِلَىٰ رَبِّهِمُ ٱلۡوَسِيلَةَ أَيُّهُمۡ أَقۡرَبُ ٥٧ ﴾ [الاسراء: ٥٧] قَالَ: «كَانَ نَفَرٌ مِنَ الْجِنِّ أَسْلَمُوا، وَكَانُوا يُعْبَدُونَ، فَبَقِيَ الَّذِينَ كَانُوا يَعْبُدُونَ عَلَى عِبَادَتِهِمْ، وَقَدْ أَسْلَمَ النَّفَرُ مِنَ الْجِنِّ».

আব্দুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি আল্লাহর নিন্মোক্ত বাণীর ব্যাখ্যায় বলেছেন,

﴿ أُوْلَٰٓئِكَ ٱلَّذِينَ يَدۡعُونَ يَبۡتَغُونَ إِلَىٰ رَبِّهِمُ ٱلۡوَسِيلَةَ أَيُّهُمۡ أَقۡرَبُ ٥٧ ﴾ [الاسراء: ٥٧]  

“তারা যাদেরকে ডাকে, তারা নিজেরাই তো তাদের রবের কাছে নৈকট্যের মাধ্যমে অনুসন্ধান করে যে, তাদের মধ্যে কে তাঁর নিকটতর? [সূরা আল-ইসরা: ৫৭] একদা একদল জ্বিন মুসলিম হলো। তাদের পূজা করা হতো। কিন্তু ইবাদতকারী এ লোকগুলো তাদের ইবাদতই আকড়ে থাকলো। অথচ জ্বিনেরা ইসলাম গ্রহণ করেছেন। [88]

عَنْ عَبْدِ اللهِ، ﴿ أُوْلَٰٓئِكَ ٱلَّذِينَ يَدۡعُونَ يَبۡتَغُونَ إِلَىٰ رَبِّهِمُ ٱلۡوَسِيلَةَ ٥٧ ﴾ [الاسراء: ٥٧] قَالَ: " كَانَ نَفَرٌ مِنَ الْإِنْسِ يَعْبُدُونَ نَفَرًا مِنَ الْجِنِّ، فَأَسْلَمَ النَّفَرُ مِنَ الْجِنِّ وَاسْتَمْسَكَ الْإِنْسُ بِعِبَادَتِهِمْ، فَنَزَلَتْ: ﴿ أُوْلَٰٓئِكَ ٱلَّذِينَ يَدۡعُونَ يَبۡتَغُونَ إِلَىٰ رَبِّهِمُ ٱلۡوَسِيلَةَ ٥٧ ﴾ [الاسراء: ٥٧] "

আব্দুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি আল্লাহর নিন্মোক্ত বাণীর ব্যাখ্যায় বলেছেন,

﴿ أُوْلَٰٓئِكَ ٱلَّذِينَ يَدۡعُونَ يَبۡتَغُونَ إِلَىٰ رَبِّهِمُ ٱلۡوَسِيلَةَ ٥٧ ﴾ [الاسراء: ٥٧]  

“তারা যাদেরকে ডাকে, তারা নিজেরাই তো তাদের রবের কাছে নৈকট্যের মাধ্যমে অনুসন্ধান করে”। [সূরা আল-ইসরা: ৫৭] একদল মানুষ কতিপয় জিনের পূজা করতো। অতঃপর জিনের দলটি ইসলাম গ্রহণ করলো। কিন্তু এ লোকগুলো তাদের ইবাদতের উপর আকড়ে থাকে। তখন নাযিল হয়েছে:

﴿ أُوْلَٰٓئِكَ ٱلَّذِينَ يَدۡعُونَ يَبۡتَغُونَ إِلَىٰ رَبِّهِمُ ٱلۡوَسِيلَةَ ٥٧ ﴾ [الاسراء: ٥٧]  

“তারা যাদেরকে ডাকে, তারা নিজেরাই তো তাদের রবের কাছে নৈকট্যের মাধ্যমে অনুসন্ধান করে”। [সূরা আল-ইসরা: ৫৭] [89]

عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ مَسْعُودٍ، ﴿ أُوْلَٰٓئِكَ ٱلَّذِينَ يَدۡعُونَ يَبۡتَغُونَ إِلَىٰ رَبِّهِمُ ٱلۡوَسِيلَةَ ٥٧ ﴾ [الاسراء: ٥٧] قَالَ: " نَزَلَتْ فِي نَفَرٍ مِنَ الْعَرَبِ كَانُوا يَعْبُدُونَ نَفَرًا مِنَ الْجِنِّ، فَأَسْلَمَ الْجِنِّيُّونَ وَالْإِنْسُ الَّذِينَ كَانُوا يَعْبُدُونَهُمْ لَا يَشْعُرُونَ، فَنَزَلَتْ: ﴿أُوْلَٰٓئِكَ ٱلَّذِينَ يَدۡعُونَ يَبۡتَغُونَ إِلَىٰ رَبِّهِمُ ٱلۡوَسِيلَةَ ٥٧ ﴾ [الاسراء: ٥٧]"

আব্দুল্লাহ ইবন মাসউদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি আল্লাহর নিন্মোক্ত বাণীর ব্যাখ্যায় বলেছেন,

﴿ أُوْلَٰٓئِكَ ٱلَّذِينَ يَدۡعُونَ يَبۡتَغُونَ إِلَىٰ رَبِّهِمُ ٱلۡوَسِيلَةَ أَيُّهُمۡ أَقۡرَبُ ٥٧ ﴾ [الاسراء: ٥٧]  

“তারা যাদেরকে ডাকে, তারা নিজেরাই তো তাদের রবের কাছে নৈকট্যের মাধ্যমে অনুসন্ধান করে যে, তাদের মধ্যে কে তাঁর নিকটতর? [সূরা আল-ইসরা: ৫৭] এ আয়াতটি আরবের এক দল লোক সম্পর্কে অবতীর্ণ হয়েছে। তারা কতিপয় জিনের পূজা করতো। অতঃপর জিনেরা তো মুসলিম হলো; কিন্তু তাদের ইবাদতকারী এ মানুষগুলো তা অনুধাবন করলো না। তখন নাযিল হলো,

﴿ أُوْلَٰٓئِكَ ٱلَّذِينَ يَدۡعُونَ يَبۡتَغُونَ إِلَىٰ رَبِّهِمُ ٱلۡوَسِيلَةَ ٥٧ ﴾ [الاسراء: ٥٧]

“তারা যাদেরকে ডাকে, তারা নিজেরাই তো তাদের রবের কাছে নৈকট্যের মাধ্যমে অনুসন্ধান করে”। [সূরা আল-ইসরা: ৫৭] [90]

عَنْ صَيْفِيٍّ - وَهُوَ عِنْدَنَا مَوْلَى ابْنِ أَفْلَحَ - أَخْبَرَنِي أَبُو السَّائِبِ، مَوْلَى هِشَامِ بْنِ زُهْرَةَ أَنَّهُ دَخَلَ عَلَى أَبِي سَعِيدٍ الْخُدْرِيِّ فِي بَيْتِهِ، قَالَ: فَوَجَدْتُهُ يُصَلِّي، فَجَلَسْتُ أَنْتَظِرُهُ حَتَّى يَقْضِيَ صَلَاتَهُ، فَسَمِعْتُ تَحْرِيكًا فِي عَرَاجِينَ فِي نَاحِيَةِ الْبَيْتِ، فَالْتَفَتُّ فَإِذَا حَيَّةٌ فَوَثَبْتُ لِأَقْتُلَهَا، فَأَشَارَ إِلَيَّ أَنِ اجْلِسْ فَجَلَسْتُ، فَلَمَّا انْصَرَفَ أَشَارَ إِلَى بَيْتٍ فِي الدَّارِ، فَقَالَ: أَتَرَى هَذَا الْبَيْتَ؟ فَقُلْتُ: نَعَمْ، قَالَ: كَانَ فِيهِ فَتًى مِنَّا حَدِيثُ عَهْدٍ بِعُرْسٍ، قَالَ: فَخَرَجْنَا مَعَ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِلَى الْخَنْدَقِ فَكَانَ ذَلِكَ الْفَتَى يَسْتَأْذِنُ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِأَنْصَافِ النَّهَارِ فَيَرْجِعُ إِلَى أَهْلِهِ، فَاسْتَأْذَنَهُ يَوْمًا، فَقَالَ لَهُ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ خُذْ عَلَيْكَ سِلَاحَكَ، فَإِنِّي أَخْشَى عَلَيْكَ قُرَيْظَةَ، فَأَخَذَ الرَّجُلُ سِلَاحَهُ، ثُمَّ رَجَعَ فَإِذَا امْرَأَتُهُ بَيْنَ الْبَابَيْنِ قَائِمَةً فَأَهْوَى إِلَيْهَا الرُّمْحَ لِيَطْعُنَهَا بِهِ وَأَصَابَتْهُ غَيْرَةٌ، فَقَالَتْ لَهُ: اكْفُفْ عَلَيْكَ رُمْحَكَ وَادْخُلِ الْبَيْتَ حَتَّى تَنْظُرَ مَا الَّذِي أَخْرَجَنِي، فَدَخَلَ فَإِذَا بِحَيَّةٍ عَظِيمَةٍ مُنْطَوِيَةٍ عَلَى الْفِرَاشِ فَأَهْوَى إِلَيْهَا بِالرُّمْحِ فَانْتَظَمَهَا بِهِ، ثُمَّ خَرَجَ فَرَكَزَهُ فِي الدَّارِ فَاضْطَرَبَتْ عَلَيْهِ، فَمَا يُدْرَى أَيُّهُمَا كَانَ أَسْرَعَ مَوْتًا الْحَيَّةُ أَمِ الْفَتَى، قَالَ: فَجِئْنَا إِلَى رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَذَكَرْنَا ذَلِكَ لَهُ وَقُلْنَا ادْعُ اللهَ يُحْيِيهِ لَنَا فَقَالَ: «اسْتَغْفِرُوا لِصَاحِبِكُمْ» ثُمَّ قَالَ: «إِنَّ بِالْمَدِينَةِ جِنًّا قَدْ أَسْلَمُوا، فَإِذَا رَأَيْتُمْ مِنْهُمْ شَيْئًا، فَآذِنُوهُ ثَلَاثَةَ أَيَّامٍ، فَإِنْ بَدَا لَكُمْ بَعْدَ ذَلِكَ، فَاقْتُلُوهُ، فَإِنَّمَا هُوَ شَيْطَانٌ».

হিশাম ইবন যুহরা (রহ.) এর আযাদকৃত গোলাম আবু সাইব (রহ.) সাইফী (রহ.) থেকে বর্ণিত যে, তিনি (একদিন) আবু সাঈদ খূদরী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর কাছে তাঁর ঘরে প্রবেশ করলেন। তিনি বলেন, আমি তখন তাঁকে সালাতরত অবস্থায় পেলাম এবং তাঁর সালাত সমাপ্ত করা পর্যন্ত তাঁর অপেক্ষায় বসে রইলাম। তখন ঘরের কোণে রাখা খেজুর ডালের স্তূপের মাঝে কোনো নড়াচড়ার আওয়াজ শুনতে পেলাম। লক্ষ্য করে দেখতে পেলাম যে এটি একটি সাপ। আমি সেটিকে মেরে ফেলার জন্য লাফ দিতে উদ্যত হলাম। তখন তিনি (সালাতে থেকেই) ইশারা করলেন যে, বসে থাক। সালাত শেষে বাড়ির একটি ঘরের দিকে ইংগিত করে বললেন, তুমি কি এ ঘরটি দেখতে পাচ্ছ? আমি বললাম, হ্যাঁ। তিনি বললেন, সেখানে নতুন বিয়ে করা আমাদের এক তকণ থাকত। রাবী বলেন, এরপর আমরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে খন্দক যুদ্ধে বেরিয়ে গেলাম। ঐ তরুণ দুপুরের দিকে রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে অনুমতি চেয়ে নিত এবং তার পরিবারের কাছে ফিরে যেত। একদিন সে (যথারীতি) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অনুমতি চাইলে তিনি তাকে বললেন, তোমার যুদ্ধাস্ত্র তোমার সাথে নিয়ে যাও। কেননা আমি তোমার উপরে বনূ কুরায়যা (ইয়াহুদীদের আক্রমণ)-এর আশংকা করছি। লোকটি তার হাতিয়ার নিয়ে (বাড়িতে) ফিরে গেল। সেখানে সে তার (নব পরিনীতা) স্ত্রীকে দু’দরজার মাঝে দাঁড়ানো অবস্থায় দেখতে পেল এবং (তার প্রতি সন্দিহান হয়ে) বল্লম দিয়ে তাকে যখম করে দেওয়ার উদ্দেশ্যে তা তার দিকে তাক করে ধরল। মর্যাদাবোধ তাকে পেয়ে বসেছিল। তখন সে (স্ত্রী) বলল, তোমার বল্লমটি নিজের কাছে থামিয়ে রাখ এবং ঘরে প্রবেশ কর। যাতে তুমি তা দেখতে পার, যা আমাকে বের করে দিয়েছে সে ঘরে ঢুকেই দেখতে পেল যে, এক বিরাটকায় সাপ বিছানার উপরে কুণ্ডলী পাকিয়ে রয়েছে। সে এর দিকে বল্লম তাক করে তার দ্বারা এটিকে গেথে ফেলল। তারপর বের হয়ে তা (বল্লমটি) বাড়ির মধ্যে গেঁড়ে রাখল। তখন সেটি নড়ে চড়ে তার দিকে ধাবিত হল এবং (মুহূর্তের মধ্যে) সাপ কিংবা তরুণ এ দু’জনের কে অধিক দ্রুত মৃত্যুবরণকারী ছিল, তা টের পাওয়া গেল না। রাবী আবু সাঈদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, আমরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট গিয়ে ব্যাপারটি বর্ণনা করলাম এবং তাঁকে বললাম, আপনি আল্লাহর দরবারে দো‘আ করুন, তিনি যেন আমাদের খাতিরে তাকে জীবিত করে দেন। তখন তিনি বললেন, তোমরা তোমাদের সাথীর জন্য ইসতিগফার কর। এরপর বললেন, মদীনায় কতক জিন রয়েছে, যারা ইসলাম কবুল করেছে, তাই (সাপ ইত্যাদি রূপে) তাদের কোনো কিছু তোমরা দেখতে পেলে তাকে তিন দিন সতর্ক সংকেত দিবে; এরপরেও তোমাদের সামনে (তা) প্রকাশ পেলে তাকে মেরে ফেলবে। কেননা সে একটি (অবাধ্য) শয়তান, (অর্থাৎ সে মুসলিম নয়)। [91]

عَنْ رَجُلٍ يُقَالُ لَهُ السَّائِبُ وَهُوَ عِنْدَنَا أَبُو السَّائِبِ، قَالَ: دَخَلْنَا عَلَى أَبِي سَعِيدٍ الْخُدْرِيِّ، فَبَيْنَمَا نَحْنُ جُلُوسٌ إِذْ سَمِعْنَا تَحْتَ سَرِيرِهِ حَرَكَةً، فَنَظَرْنَا فَإِذَا حَيَّةٌ، وَسَاقَ الْحَدِيثَ بِقِصَّتِهِ نَحْوَ حَدِيثِ مَالِكٍ عَنْ صَيْفِيٍّ، وَقَالَ فِيهِ، فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِنَّ لِهَذِهِ الْبُيُوتِ عَوَامِرَ، فَإِذَا رَأَيْتُمْ شَيْئًا مِنْهَا فَحَرِّجُوا عَلَيْهَا ثَلَاثًا، فَإِنْ ذَهَبَ، وَإِلَّا فَاقْتُلُوهُ، فَإِنَّهُ كَافِرٌ» وَقَالَ لَهُمْ: «اذْهَبُوا فَادْفِنُوا صَاحِبَكُمْ».

আবু সাইব (রহ.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা আবু সাঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর কাছে গেলাম। আমরা বসা ছিলাম, এমতাবস্থায় হঠাৎ তাঁর খাটের নীচে একটা নড়াচড়ার আওয়াজ শুনতে পেলাম। লক্ষ্য করে দেখি যে, সেটা একটা সাপ, কিসসাসহ হাদীসখানি পূর্বোল্লেখিত সায়ফী (রহ.) থেকে মালিক (রহ.) বর্ণিত হাদীসের অনুরূপ বিবৃত করেছেন। তবে এতে বলেছেন যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “এ সব বাড়ি-ঘরে আরও কতক বসবাসকারী রয়েছে। অতএব সে ধরনের কোনো কিছু তোমরা দেখতে পেলে তাদের প্রতি তিনবার সতর্ক সংকেত উচ্চারণ করবে। এতে যদি (তারা) চলে যায় তো উত্তম, অন্যথায় তাকে তোমরা মেরে ফেলবে। কেননা সে কাফির (অবাধ্য)। আর তিনি তাদের (মৃত ব্যক্তির অভিভাবকদের) বললেন, তোমরা চলে যাও এবং তোমাদের সাথীকে দাফন কর।[92]

عَنْ أَبِي سَعِيدٍ الْخُدْرِيِّ، قَالَ: سَمِعْتُهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِنَّ بِالْمَدِينَةِ نَفَرًا مِنَ الْجِنِّ قَدْ أَسْلَمُوا، فَمَنْ رَأَى شَيْئًا مِنْ هَذِهِ الْعَوَامِرِ فَلْيُؤْذِنْهُ ثَلَاثًا، فَإِنْ بَدَا لَهُ بَعْدُ فَلْيَقْتُلْهُ، فَإِنَّهُ شَيْطَانٌ». 

আবু সাঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, মদীনায় জিনদের একটি দল রয়েছে, যারা ইসলাম কবুল করেছে। তাই যে ব্যক্তি এ সব বাড়ি-ঘরে বসবাসকারীদের (সাপ ইত্যাদির রূপধারী) কোন কিছু দেখতে পায়, সে যেন তাকে তিনবার সতর্ক সংকেত দেয়; এরপরও যদি তার সামনে তা প্রকাশ পায়, তবে সে যেন তাকে মেরে ফেলে, কেননা সে একটা (অবাধ্য) শয়তান।[93]


 

পঞ্চম পরিচ্ছেদ

গাছ-পালা, পাথর ও পশু-পাখির সাথে কথোপকথন ও সেগুলোর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আনুগত্য

 عَنْ مَعْنِ بْنِ عَبْدِ الرَّحْمَنِ، قَالَ: سَمِعْتُ أَبِي، قَالَ: سَأَلْتُ مَسْرُوقًا: «مَنْ آذَنَ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِالْجِنِّ لَيْلَةَ اسْتَمَعُوا القُرْآنَ؟»، فَقَالَ: حَدَّثَنِي أَبُوكَ يَعْنِي عَبْدَ اللَّهِ أَنَّهُ «آذَنَتْ بِهِمْ شَجَرَةٌ».

আবদুর রহমান (রহ.) বলেন, আমি মাসরূক (রহ.) কে জিজ্ঞাসা করলাম, যে রাতে জ্বিনরা মনোযোগের সাথে কুরআন শ্রবণ করেছিল ঐ রাতে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে তাদের উপস্থিতি সম্পর্কে সংবাদটি কে দিয়েছিল? তিনি বলেন, তোমার পিতা আবদুল্লাহ (ইবন মাস‘উদ) রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু আমাকে বলেছেন যে, তাদের উপস্থিতির সংবাদ একটি বৃক্ষ দিয়েছিল। [94]

عَنْ جَابِرِ بْنِ سَمُرَةَ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِنِّي لَأَعْرِفُ حَجَرًا بِمَكَّةَ كَانَ يُسَلِّمُ عَلَيَّ قَبْلَ أَنْ أُبْعَثَ إِنِّي لَأَعْرِفُهُ الْآنَ».

জাবির ইবন সামুরা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “আমি মক্কায় একটি পাথরকে জানি, যে (নবীরূপে) প্রেরিত হওয়ার আগে আমাকে সালাম করত, আমি এখনও তাকে নিশ্চিতভাবে চিনতে পারি।[95]

عَنْ أَنَسٍ، قَالَ: جَاءَ جِبْرِيلُ عَلَيْهِ السَّلَامُ ذَاتَ يَوْمٍ إِلَى رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، وَهُوَ جَالِسٌ حَزِينٌ قَدْ خُضِّبَ بِالدِّمَاءِ، قَدْ ضَرَبَهُ بَعْضُ أَهْلِ مَكَّةَ، فَقَالَ: مَا لَكَ؟ فَقَالَ: «فَعَلَ بِي هَؤُلَاءِ، وَفَعَلُوا» ، قَالَ: أَتُحِبُّ أَنْ أُرِيَكَ آيَةً؟ قَالَ: «نَعَمْ، أَرِنِي» فَنَظَرَ إِلَى شَجَرَةٍ مِنْ وَرَاءِ الْوَادِي، قَالَ: ادْعُ تِلْكَ الشَّجَرَةَ، فَدَعَاهَا فَجَاءَتْ تَمْشِي، حَتَّى قَامَتْ بَيْنَ يَدَيْهِ، قَالَ: قُلْ لَهَا فَلْتَرْجِعْ، فَقَالَ لَهَا، فَرَجَعَتْ حَتَّى عَادَتْ إِلَى مَكَانِهَا، فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «حَسْبِي».

আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, “একবার জিবরীল আলাইহিস সালাম রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে আসলেন, তখন তিনি বিষণ্ণ অবস্থায় বসে ছিলেন, তাঁর শরীর থেকে অজস্র রক্ত ঝরছিল, কিছু মক্কাবাসীরা তাঁকে প্রহর করছিল। তিনি এসে বললেন, আপনার কি অবস্থা? তাঁরা আমার সাথে যা খুশী তাই করল। তিনি বললেন, আপনি কি কোনো নিদর্শন দেখবেন? তিনি বললেন, হ্যাঁ, দেখান। উপত্যকার পিছনে গাছের দিকে তাকালেন। জিবরীল বললেন, ঐ গাছটিকে ডাকুন। তিনি গাছটিকে ডাকলে তা হেঁটে এসে তাঁর সামনে দাঁড়ালো। তিনি বললেন, এবার গাছটিকে তার স্থানে চলে যেতে বলেন। তিনি ফিরে যেতে বললে তা যথাস্থানে ফিরে গেল। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, যথেষ্ট”। [96]

عَنِ ابْنِ عُمَرَ، رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا قَالَ: كُنَّا مَعَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فِي سَفَرٍ فَأَقْبَلَ أَعْرَابِيٌّ فَلَمَّا دَنَا مِنْهُ، قَالَ لَهُ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «أَيْنَ تُرِيدُ؟» قَالَ: إِلى أَهْلِي قَالَ: «هَلْ لَكَ فِي خَيْرٍ؟» قَالَ: وَمَا هُوَ؟ قَالَ: «تَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيكَ لَهُ، وَأَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُولُهُ» فَقَالَ: وَمَنْ يَشْهَدُ عَلَى مَا تَقُولُ؟ قَالَ: «هَذِهِ السَّلَمَةُ» فَدَعَاهَا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَهِيَ بِشَاطِئِ الْوَادِي فَأَقْبَلَتْ تَخُدُّ الْأَرْضَ خَدًّا حَتَّى قَامَتْ بَيْنَ يَدَيْهِ، فَاسْتَشْهَدَهَا ثَلَاثًا، فَشَهِدَتْ ثَلَاثًا أَنَّهُ كَمَا قَالَ، ثُمَّ رَجَعَتْ إِلَى مَنْبَتِهَا وَرَجَعَ الْأَعْرَابِيُّ إِلَى قَوْمِهِ، وَقَالَ: إِنِ اتَّبَعُونِي أَتَيْتُكَ بِهِمْ، وَإِلَّا رَجَعْتُ، فَكُنْتُ مَعَكَ.

ইবন উমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একবার আমরা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে এক সফরে ছিলাম। তখন এক বেদুঈন আসল। সে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে আসলে তিনি তাঁকে বললেন, কোথায় যাচ্ছ? সে বলল, আমার পরিবারের কাছে যাচ্ছি (বাড়ি যাচ্ছি)। তিনি বললেন, আমি কি তোমাকে এর চেয়েও উত্তম কিছু বলব? সে বলল, সেটা কি? রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তুমি সাক্ষ্য দিবে যে, আল্লাহ ছাড়া কোনো ইলাহ নেই, তাঁর কোনো শরীক নেই এবং মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর বান্দাহ ও রাসূল। সে বলল, আর কে এ সাক্ষ্য দেয়? রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এ গাছটি এ সাক্ষ্য দেয়। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উপত্যকার পাশে একটি গাছকে ডাকলেন, গাছটি যমীনের উপর ঝুঁকে ঝুঁকে সিজদা দিতে দিতে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সামনে আসল। তাকে তিনবার সাক্ষ্য দিতে বললে যেভাবে তাকে বলা হয়েছে ঠিক সেভাবে সে তিনবার সাক্ষ্য দিল। অতঃপর সে যথাস্থানে ফিরে গেল। বেদুঈন লোকটি (ঈমান আনার পরে) স্বজাতির কাছে ফিরে গেল, আর বলল, তারা যদি আমার অনুসরণ করে তবে তাদেরকে আপনার কাছে নিয়ে আসব, নতুবা তাদেরকে ছেড়ে আমি আপনার কাছে চলে আসব এবং আপনার সাথে থাকব।[97]

عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ، قَالَ: أَتَى النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ رَجُلٌ مِنْ بَنِي عَامِرٍ، فَقَالَ: يَا رَسُولَ اللهِ، أَرِنِي الْخَاتَمَ الَّذِي بَيْنَ كَتِفَيْكَ، فَإِنِّي مِنْ أَطَبِّ النَّاسِ. فَقَالَ لَهُ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: " أَلا أُرِيكَ آيَةً؟ " قَالَ: بَلَى، قَالَ: " فَنَظَرَ إِلَى نَخْلَةٍ "، فَقَالَ: " ادْعُ ذَلِكَ الْعِذْقَ "، قَالَ: فَدَعَاهُ، فَجَاءَ يَنْقُزُ، حَتَّى قَامَ بَيْنَ يَدَيْهِ، فَقَالَ لَهُ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: " ارْجِعْ "، فَرَجَعَ إِلَى مَكَانِهِ، فَقَالَ الْعَامِرِيُّ: يَا آلَ بَنِي عَامِرٍ، مَا رَأَيْتُ كَالْيَوْمِ رَجُلًا أَسْحَرَ.

ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, বনী ‘আমের গোত্রের একলোক নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে এলেন। তিনি বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আপনার পিছে যে নবুওয়তের সীল মোহর আছে তা আমাকে দেখান। কেননা আমি সম্ভ্রান্ত ব্যক্তি। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন, তোমাকে কি একটা নিদর্শন দেখাবো? তিনি বললেন, অবশ্যই। তখন তিনি একটা খেজুর গাছের দিকে তাকালেন। অতঃপর বললেন, তুমি খেজুরের কাঁদিকে এদিকে আসতে বলো। ফলে তিনি ডাকলে খেজুর কাঁদি হেলতে হেলতে তাঁর সামনে এসে দাঁড়ালো। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ফিরে যাও। ফলে সেটি যথাস্থানে ফিরে গেল। তখন ‘আমেরী বলল, হে বনী ‘আমের, আজকের মত এত বড় জাদুকর আমি জীবনে কখনও দেখিনি। [98]

 

 

ষষ্ঠ পরিচ্ছেদ 

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নবুওয়তের প্রমাণ: তাঁর সাথে জীব জন্তুর আচরণ 

عَنْ جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا، قَالَ: كُنْتُ مَعَ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي غَزَاةٍ، فَأَبْطَأَ بِي جَمَلِي وَأَعْيَا، فَأَتَى عَلَيَّ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ «جَابِرٌ»: فَقُلْتُ: نَعَمْ، قَالَ: «مَا شَأْنُكَ؟» قُلْتُ: أَبْطَأَ عَلَيَّ جَمَلِي وَأَعْيَا، فَتَخَلَّفْتُ، فَنَزَلَ يَحْجُنُهُ بِمِحْجَنِهِ ثُمَّ قَالَ: «ارْكَبْ»، فَرَكِبْتُ، فَلَقَدْ رَأَيْتُهُ أَكُفُّهُ عَنْ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قَالَ: «تَزَوَّجْتَ» قُلْتُ: نَعَمْ، قَالَ: «بِكْرًا أَمْ ثَيِّبًا» قُلْتُ: بَلْ ثَيِّبًا، قَالَ: «أَفَلاَ جَارِيَةً تُلاَعِبُهَا وَتُلاَعِبُكَ» قُلْتُ: إِنَّ لِي أَخَوَاتٍ، فَأَحْبَبْتُ أَنْ أَتَزَوَّجَ امْرَأَةً تَجْمَعُهُنَّ، وَتَمْشُطُهُنَّ، وَتَقُومُ عَلَيْهِنَّ، قَالَ: «أَمَّا إِنَّكَ قَادِمٌ، فَإِذَا قَدِمْتَ، فَالكَيْسَ الكَيْسَ»، ثُمَّ قَالَ: «أَتَبِيعُ جَمَلَكَ» قُلْتُ: نَعَمْ، فَاشْتَرَاهُ مِنِّي بِأُوقِيَّةٍ، ثُمَّ قَدِمَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَبْلِي، وَقَدِمْتُ بِالْغَدَاةِ، فَجِئْنَا إِلَى المَسْجِدِ فَوَجَدْتُهُ عَلَى بَابِ المَسْجِدِ، قَالَ: «آلْآنَ قَدِمْتَ» قُلْتُ: نَعَمْ، قَالَ: «فَدَعْ جَمَلَكَ، فَادْخُلْ، فَصَلِّ رَكْعَتَيْنِ»، فَدَخَلْتُ فَصَلَّيْتُ، فَأَمَرَ بِلاَلًا أَنْ يَزِنَ لَهُ أُوقِيَّةً، فَوَزَنَ لِي بِلاَلٌ، فَأَرْجَحَ لِي فِي المِيزَانِ، فَانْطَلَقْتُ حَتَّى وَلَّيْتُ، فَقَالَ: «ادْعُ لِي جَابِرًا» قُلْتُ: الآنَ يَرُدُّ عَلَيَّ الجَمَلَ، وَلَمْ يَكُنْ شَيْءٌ أَبْغَضَ إِلَيَّ مِنْهُ، قَالَ: «خُذْ جَمَلَكَ وَلَكَ ثَمَنُهُ».

জাবির ইবন আবদুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, এক যুদ্ধে আমি রাসূলূল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সঙ্গে ছিলাম। আমার উটটি অত্যন্ত ধীরে চলছিল বরং চলতে অক্ষম হয়ে পড়েছিল। এমতাবস্থায় রাসূলূল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার কাছে এলেন এবং বললেন, জাবির? আমি বললাম, জী। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, তোমার অবস্থা কি? আমি বললাম, আমার উট আমাকে নিয়ে অত্যন্ত ধীরে চলছে এবং অক্ষম হয়ে পড়ছে। ফলে আমি পিছনে পড়ে গেছি। তখন তিনি নেমে চাবুক দিয়ে উটটিকে আঘাত করতে লাগলেন। তারপর বললেন, এবার আরোহন কর। আমি আরোহন করলাম। এরপর অবশ্য আমি উটটিকে এমন পেলাম যে, রাসূলূল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে অগ্রসর হওয়ায় বাধা দিতে হয়েছিল। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, তুমি কি বিবাহ করেছ? আমি বললাম, হ্যাঁ। তিনি বললেন, কুমারী না বিবাহিতা? আমি বললাম, বিবাহিতা। তিনি বললেন, তরুনী বিবাহ করলেনা কেন? তুমি তার সাথে হাসি-তামাসা এবং সে তোমার সাথে পূর্নভাবে হাসি-তামাসা করত। আমি বললাম, আমার কয়েকটি বোন রয়েছে, ফলে আমি এমন মহিলাকে বিবাহ করতে পছন্দ করলাম, যে তাদেরকে মিল-মহব্বতে রাখতে, তাদের পরিচর্যা করতে এবং তাদের উপর উত্তমরুপে কর্তৃত্ব করতে সক্ষম হয়। তিনি বললেন, শোন, তুমি তো বাড়ীতে পৌঁছবে? যখন তুমি পৌঁছবে তখন তুমি বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দেবে। তিনি বললেন, তোমার উটটি বিক্রি করবে? আমি বললাম, হ্যাঁ। তিনি তা এক উকীয়ার বিনিময়ে আমার নিকট থেকে কিনে নিলেন। তারপর রাসূলূল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার আগে (মদীনায়) পৌঁছলেন এবং আমি (পরের দিন) ভোরে পৌঁছলাম। আমি মসজিদে নববীতে গিয়ে রাসূলূল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে দরজার সামনে পেলাম। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, এখন এলে? আমি বললাম, হ্যাঁ। তিনি বললেন, তোমার উটটি রাখ এবং মসজিদে প্রবেশ করে দু’রাকাত সালাত আদায় কর। আমি মসজিদে প্রবেশ করে সালাত আদায় করলাম। তারপর তিনি বিলাল রাদিয়াল্লাহু আনহুকে উকীয়া ওযন করে আমাকে দিতে বললেন। বিলাল রাদিয়াল্লাহু আনহু ওযন করে দিলেন এবং আমার পক্ষে ঝুঁকিয়ে দিলেন। আমি রওনা হলাম। যখন আমি পিছন ফিরেছি তখন তিনি বললেন, জাবিরকে আমার কাছে ডাক। আমি ভাবলাম, এখন হয়তো উটটি আমাকে ফিরিয়ে দেবেন। আর আমার কাছে এর চাইতে অপছন্দনীয় আর কিছুই ছিলোনা। তিনি বললেন তোমার উটটি নিয়ে যাও এবং তার মূল্যও তোমার।[99]

عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ جَعْفَرٍ، قَالَ: أَرْدَفَنِي رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، ذَاتَ يَوْمٍ خَلْفَهُ، فَأَسَرَّ إِلَيَّ حَدِيثًا لَا أُخْبِرُ بِهِ أَحَدًا وَكَانَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَحَبُّ مَا اسْتَتَرَ بِهِ فِي حَاجَتِهِ هَدَفٌ، أَوْ حَائِشُ نَخْلٍ، فَدَخَلَ يَوْمًا حَائِطًا مِنْ حِيطَانِ الْأَنْصَارِ، فَإِذَا جَمَلٌ قَدِ أتَاهُ فَجَرْجَرَ، وَذَرَفَتْ عَيْنَاهُ - قَالَ بَهْزٌ، وَعَفَّانُ: فَلَمَّا رَأَى النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ حَنَّ وَذَرَفَتْ عَيْنَاهُ - فَمَسَحَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ سَرَاتَهُ وَذِفْرَاهُ، فَسَكَنَ، فَقَالَ: " مَنْ صَاحِبُ الْجَمَلِ؟ " فَجَاءَ فَتًى مِنَ الْأَنْصَارِ، فَقَالَ: هُوَ لِي يَا رَسُولَ اللهِ، فَقَالَ: " أَمَا تَتَّقِي اللهَ فِي هَذِهِ الْبَهِيمَةِ الَّتِي مَلَّكَكَهَا اللهُ، إِنَّهُ شَكَا إِلَيَّ أَنَّكَ تُجِيعُهُ وَتُدْئِبُهُ ".

আব্দুল্লাহ ইবন ‘জাফর রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদিন রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে তাঁর খচ্চরের পিঠে তাঁর পেছনে বসালেন। তারপর তিনি আমাকে গোপন একটি কথা বললেন, এবং তিনি বললেন, কাউকেও বলবে না। প্রাকৃতিক প্রয়োজন পূরণের জন্য রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দু‘টি স্থান খুবই পছন্দনীয় ছিল, কোনো উঁচু স্থান অথবা গাছের ঝাড়। একবার তিনি একজন আনসারীর বাগানে প্রবেশ করলেন। তখন হঠাৎ একটি উট দেখা গেল। সেটি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে দেখার সঙ্গে হু হু শব্দে আওয়াজ করে কাঁদতে লাগলো। দু‘চোখ হতে অশ্রুধারা বইতে লাগলো। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার কাছে গেলেন এবং তার মাথার পেছন দিকে হাত রেখে দু‘কানের গোড়া পর্যন্ত মুছে দিলেন। তাতে সে চুপ তরে গেল। তারপর তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, এ উটটি কার? এর মালিক কে? আনসার সম্প্রদায়ের এক যুবক বের হয়ে এসে উত্তর দিল, ইয়া রাসূলুল্লাহ্! এটি আমার উট। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আল্লাহ যে তোমাকে এ চতুষ্পদ জন্তুটির মালিক করেছেন, তুমি কি এর তত্ত্বাবধানের ব্যাপারে আল্লাহকে ভয় করো না? সে আমার নিকট তোমার বিরূদ্ধে অভিযোগ করলো যে, তুমি তাকে অভূক্ত রাখ এবং তাকে কষ্ট দাও। [100]

 


 

সপ্তম পরিচ্ছেদ

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নবুওয়তের প্রমাণ:

অল্প খাবার বেশী হওয়া

ইমাম বুখারী রহ. বলেন,

عَنْ جَابِرٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، قَالَ: تُوُفِّيَ عَبْدُ اللَّهِ بْنُ عَمْرِو بْنِ حَرَامٍ وَعَلَيْهِ دَيْنٌ، فَاسْتَعَنْتُ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَلَى غُرَمَائِهِ أَنْ يَضَعُوا مِنْ دَيْنِهِ، فَطَلَبَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِلَيْهِمْ فَلَمْ يَفْعَلُوا، فَقَالَ لِي النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «اذْهَبْ فَصَنِّفْ تَمْرَكَ أَصْنَافًا، العَجْوَةَ عَلَى حِدَةٍ، وَعَذْقَ زَيْدٍ عَلَى حِدَةٍ، ثُمَّ أَرْسِلْ إِلَيَّ»، فَفَعَلْتُ، ثُمَّ أَرْسَلْتُ إِلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَجَاءَ فَجَلَسَ عَلَى أَعْلاَهُ، أَوْ فِي وَسَطِهِ، ثُمَّ قَالَ: «كِلْ لِلْقَوْمِ»، فَكِلْتُهُمْ حَتَّى أَوْفَيْتُهُمُ الَّذِي لَهُمْ وَبَقِيَ تَمْرِي كَأَنَّهُ لَمْ يَنْقُصْ مِنْهُ شَيْءٌ وَقَالَ فِرَاسٌ عَنِ الشَّعْبِيِّ، حَدَّثَنِي جَابِرٌ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «فَمَا زَالَ يَكِيلُ لَهُمْ حَتَّى أَدَّاهُ»، وَقَالَ هِشَامٌ: عَنْ وَهْبٍ، عَنْ جَابِرٍ، قَالَ: النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «جُذَّ لَهُ فَأَوْفِ لَهُ».

জাবির রাদিয়াল্লাহু আনহুর সূত্রে বর্ণিত, (আমার পিতা) আবদুল্লাহ ইবন আমর ইবন হারাম রাদিয়াল্লাহু আনহু ঋনী অবস্থায় মারা যান। পাওনাদারেরা যেন তাঁর কিছু ঋন ছেড়ে দেয়, এজন্য আমি রাসূলূল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে সাহায্য চাইলাম। রাসূলূল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের কাছে কিছু ঋন ছেড়ে দিতে বললে, তারা তা করলনা। তখন রাসূলূল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বললেন, যাও, তোমার প্রত্যেক ধরনের খেজুরকে আলাদা আলাদা কর রাখ। আজওয়া আলাদা এবং আযকা যায়দ আলাদা করে রাখ। পরে আমাকে খবর দিও। [জাবির রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন] আমি তা করে রাসূলূল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে খবর দিলাম। তিঁনি এসে খেজুরের (স্তুপ এর) উপরে বা তার মাঝখানে বসলেন। তারপর বললেন, পাওনাদারদের মেপে দাও। আমি তাদের মেপে দিতে লাগলাম, এমনকি তাদের পাওনা পুরোপুরী দিয়ে দিলাম। আর আমার খেজুর এরূপ থেকে গেল, যেন এ থেকে কিছুই কমেনি। ফিরাস (রহ.) শা’বী (রহ.) সূত্রে জাবির রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসূলূল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের এ পর্যন্ত মেপে দিতে থাকলেন যে, তাদের ঋন পরিশোধ করে দিলেন। হিশাম (রহ.) ওহাব (রহ.) সূত্রে জাবির রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসূলূল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছিলেন গাছ থেকে খেজুর কেটে নাও এবং পুরোপুরী আদায় করে দাও। [101]

عَنْ جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا، أَنَّهُ أَخْبَرَهُ: أَنَّ أَبَاهُ تُوُفِّيَ وَتَرَكَ عَلَيْهِ ثَلاَثِينَ وَسْقًا لِرَجُلٍ مِنَ اليَهُودِ، فَاسْتَنْظَرَهُ جَابِرٌ، فَأَبَى أَنْ يُنْظِرَهُ، فَكَلَّمَ جَابِرٌ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لِيَشْفَعَ لَهُ إِلَيْهِ، فَجَاءَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَكَلَّمَ اليَهُودِيَّ لِيَأْخُذَ ثَمَرَ نَخْلِهِ بِالَّذِي لَهُ، فَأَبَى، فَدَخَلَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ النَّخْلَ، فَمَشَى فِيهَا، ثُمَّ قَالَ لِجَابِرٍ: «جُدَّ لَهُ، فَأَوْفِ لَهُ الَّذِي لَهُ» فَجَدَّهُ بَعْدَمَا رَجَعَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَأَوْفَاهُ ثَلاَثِينَ وَسْقًا، وَفَضَلَتْ لَهُ سَبْعَةَ عَشَرَ وَسْقًا، فَجَاءَ جَابِرٌ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لِيُخْبِرَهُ بِالَّذِي كَانَ، فَوَجَدَهُ يُصَلِّي العَصْرَ، فَلَمَّا انْصَرَفَ أَخْبَرَهُ بِالفَضْلِ، فَقَالَ: «أَخْبِرْ ذَلِكَ ابْنَ الخَطَّابِ»، فَذَهَبَ جَابِرٌ إِلَى عُمَرَ فَأَخْبَرَهُ، فَقَالَ لَهُ عُمَرُ: لَقَدْ عَلِمْتُ حِينَ مَشَى فِيهَا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَيُبَارَكَنَّ فِيهَا.

জাবির ইবন আবদুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত যে, তাঁর পিতা একজন ইয়াহুদীর কাছে থেকে নেওয়া ত্রিশ ওসাক (খেজুর) ঋণ রেখে ইন্তিকাল করেন। জাবির রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু তার নিকট (ঋণ পরিশোধের জন্য) সময় চান। কিন্তু সে সময় দিতে অস্বীকার করে। জাবির ইব্ন আবদুল্লাহ্ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সঙ্গে কথা বললেন, যেন তিনি তার জন্য ইয়াহূদীর কাছে সুপারিশ করেন। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এলেন এবং ইয়াহূদীর সাথে কথা বলেন, ঋণের বদলে সে যেন তার খেজুর গাছের ফল নিয়ে নেয়। কিন্তু সে তা অস্বীকার করল। এরপর রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বাগানে প্রবেশ করে সেখানে গাছের (চারদিক) হাঁটা চলা করলেন। তারপর তিনি জাবির রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুকে বললেন, ফল পেড়ে তার সম্পূর্ণ প্রাপ্য আদায় করে দাও। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফিরে আসার পর তিনি ফল পাড়লেন এবং তাকে এরপর পূর্ণ ত্রিশ ওসাক (খেজুর) দিয়ে দিলেন এবং সতর ওসাক (খেজুর) অতিরিক্ত রয়ে গেল। জাবির রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বিষয়টি অবহিত করার জন্য আসলেন। তিনি তাঁকে আসরের সালাত আদায় করা অবস্থায় পেলেন। তিনি সালাত শেষ করলে তাঁকে অতিরিক্ত খেজুরের কথা অবহিত করলেন। তিনি বললেন- খবরটি ইবন খাত্তাব (উমর) কে পৌঁছাও। জাবির (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু উমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর কাছে গিয়ে খবরটি পৌঁছালেন। উমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু তাঁকে বললেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন বাগানে প্রবেশ করে হাঁটাচলা করলেন, তখনই আমি বুঝতে পারছিলাম যে, নিশ্চয় এতে বরকত দান করা হবে। [102]

عَنْ عَبْدِ الرَّحْمَنِ بْنِ أَبِي بَكْرٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا، قَالَ: كُنَّا مَعَ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ثَلاَثِينَ وَمِائَةً، فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «هَلْ مَعَ أَحَدٍ مِنْكُمْ طَعَامٌ؟»، فَإِذَا مَعَ رَجُلٍ صَاعٌ مِنْ طَعَامٍ أَوْ نَحْوُهُ، فَعُجِنَ، ثُمَّ جَاءَ رَجُلٌ مُشْرِكٌ، مُشْعَانٌّ طَوِيلٌ، بِغَنَمٍ يَسُوقُهَا، فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: " بَيْعًا أَمْ عَطِيَّةً، أَوْ قَالَ: أَمْ هِبَةً؟ "، قَالَ: لاَ بَلْ بَيْعٌ، فَاشْتَرَى مِنْهُ شَاةً، فَصُنِعَتْ، وَأَمَرَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِسَوَادِ البَطْنِ أَنْ يُشْوَى، وَايْمُ اللَّهِ، مَا فِي الثَّلاَثِينَ وَالمِائَةِ إِلَّا قَدْ حَزَّ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَهُ حُزَّةً مِنْ سَوَادِ بَطْنِهَا، إِنْ كَانَ شَاهِدًا أَعْطَاهَا إِيَّاهُ، وَإِنْ كَانَ غَائِبًا خَبَأَ لَهُ، فَجَعَلَ مِنْهَا قَصْعَتَيْنِ، فَأَكَلُوا أَجْمَعُونَ وَشَبِعْنَا، فَفَضَلَتِ القَصْعَتَانِ، فَحَمَلْنَاهُ عَلَى البَعِيرِ، أَوْ كَمَا قَالَ.

আব্দুর রহমান ইবন আবূ বকর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, (কোন এক সফরে) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে আমরা একশ ত্রিশজন লোক ছিলাম। সে সময় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিজ্ঞাসা করলেন, তোমাদের কারো সাথে কি খাবার আছে? দেখা গেল, এক ব্যক্তির সংগে এক সা কিংবা তার কমবেশী পরিমান খাদ্য (আটা) আছে। সে আটা গোলানো হল। তারপর দীর্ঘ দেহী এলোমেলো চুল বিশিষ্ট এক মুশরিক এক পাল বকরী হাকিয়ে নিয়ে এল। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিজ্ঞাসা করলেন। বিক্রি করবে, না, উপহার দিবে? সে বলল না, বরং বিক্রি করব। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা কাছ থেকে একটা বকরী কিনে নিলেন। একশ ত্রিশজনের প্রত্যেককে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেই কলিজার কিছু কিছু করে দিলেন। যে উপস্থিত ছিল, তাকে হাতে দিলেন; আর অনুপস্থিত ছিলো। তার জন্য তুলে রাখলেন। তারপর দু’টি পাত্রে তিন গোশত ভাগ করে রাখলেন। সবাই তৃপ্তির সাথে খেলেন। আর উভয় পাত্রে কিছু উদ্বৃত্ত থেকে গেল। সেগুলো আমরা উটের পিঠে উঠিয়ে নিলাম। অথবা রাবী যা বললেন। [103]

عَنْ أَنَس بْن مَالِكٍ، قَالَ: قَالَ أَبُو طَلْحَةَ لِأُمِّ سُلَيْمٍ لَقَدْ سَمِعْتُ صَوْتَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ضَعِيفًا، أَعْرِفُ فِيهِ الجُوعَ، فَهَلْ عِنْدَكِ مِنْ شَيْءٍ؟ قَالَتْ: نَعَمْ، فَأَخْرَجَتْ أَقْرَاصًا مِنْ شَعِيرٍ، ثُمَّ أَخْرَجَتْ خِمَارًا لَهَا، فَلَفَّتِ الخُبْزَ بِبَعْضِهِ، ثُمَّ دَسَّتْهُ تَحْتَ يَدِي وَلاَثَتْنِي بِبَعْضِهِ، ثُمَّ أَرْسَلَتْنِي إِلَى رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قَالَ: فَذَهَبْتُ بِهِ، فَوَجَدْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي المَسْجِدِ، وَمَعَهُ النَّاسُ، فَقُمْتُ عَلَيْهِمْ، فَقَالَ لِي رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «آرْسَلَكَ أَبُو طَلْحَةَ» فَقُلْتُ: نَعَمْ، قَالَ: «بِطَعَامٍ» فَقُلْتُ: نَعَمْ، فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لِمَنْ مَعَهُ: «قُومُوا» فَانْطَلَقَ وَانْطَلَقْتُ بَيْنَ أَيْدِيهِمْ، حَتَّى جِئْتُ أَبَا طَلْحَةَ فَأَخْبَرْتُهُ، فَقَالَ أَبُو طَلْحَةَ: يَا أُمَّ سُلَيْمٍ قَدْ جَاءَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِالنَّاسِ، وَلَيْسَ عِنْدَنَا مَا نُطْعِمُهُمْ؟ فَقَالَتْ: اللَّهُ وَرَسُولُهُ أَعْلَمُ، فَانْطَلَقَ أَبُو طَلْحَةَ حَتَّى لَقِيَ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَأَقْبَلَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَأَبُو طَلْحَةَ مَعَهُ، فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «هَلُمِّي يَا أُمَّ سُلَيْمٍ، مَا عِنْدَكِ» فَأَتَتْ بِذَلِكَ الخُبْزِ، فَأَمَرَ بِهِ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَفُتَّ، وَعَصَرَتْ أُمُّ سُلَيْمٍ عُكَّةً فَأَدَمَتْهُ، ثُمَّ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِيهِ مَا شَاءَ اللَّهُ أَنْ يَقُولَ، ثُمَّ قَالَ: «ائْذَنْ لِعَشَرَةٍ» فَأَذِنَ لَهُمْ، فَأَكَلُوا حَتَّى شَبِعُوا ثُمَّ خَرَجُوا، ثُمَّ قَالَ: «ائْذَنْ لِعَشَرَةٍ» فَأَذِنَ لَهُمْ، فَأَكَلُوا حَتَّى شَبِعُوا ثُمَّ خَرَجُوا، ثُمَّ قَالَ: «ائْذَنْ لِعَشَرَةٍ» فَأَذِنَ لَهُمْ، فَأَكَلُوا حَتَّى شَبِعُوا ثُمَّ خَرَجُوا، ثُمَّ قَالَ: «ائْذَنْ لِعَشَرَةٍ» فَأَكَلَ القَوْمُ كُلُّهُمْ وَشَبِعُوا، وَالقَوْمُ سَبْعُونَ أَوْ ثَمَانُونَ رَجُلًا ".

আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আবু তালহা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু তদীয় (পত্নী) উম্মে সুলাইমকে বললেন, আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কন্ঠস্বর দুর্বল শুনেছি। আমি তাঁর মধ্যে ক্ষুদা বুঝতে পেরেছি। তোমার নিকট খাবার কিছু আছে কি? তিনি বললেন, হ্যাঁ আছে। এই বলে তিনি কয়েকটা যবের রুটি বের করলেন। তারপর তাঁর একখানা ওড়না বের করে এর কিয়দংশ দিয়ে রুটিগুলো মুড়ে আমার হাতে গোপন করে রেখে দিলেন ও ওড়নার উপর অংশ আমার শরীর জড়িয়ে দিলেন এবং আমাকে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের খেদমতে পাঠালেন। রাবী আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, আমি তাঁর নিকট গেলাম। ঐ সময় তিনি কতিপয় লোকসহ মসজিদে অবস্থান করছিলেন। আমি গিয়ে তাদের সম্মুখে দাঁড়ালাম। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে দেখে বললেন, তোমাকে আবু তালহা পাঠিয়েছে? আমি বললাম, জি হ্যাঁ। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, খাওয়ার দাওয়াত দিয়ে পাঠিয়েছে? আমি বললাম, জি হ্যাঁ। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সঙ্গীদেরকে বললেন, চলো, আবু তালহা আমাদেরকে দাওয়াত করেছে। আমি তাঁদের আগেই চলে গিয়ে আবু তালহা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুকে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আগমন বার্তা শুনালাম। ইহা শুনে আবু তালহা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, হে উম্মে সুলাইম, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর সঙ্গী সাথীদেরকে নিয়ে আসছেন। তাঁদেরকে খাওয়ানোর মত কিছু আমাদের নিকট নেই। উম্মে সুলাইম রাদিয়াল্লাহু আনহা বললেন, আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূলই ভালো জানেন। আবু তালহা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু তাঁদেরকে অভ্যর্থনা জানানোর জন্য বাড়ী হতে কিছুদূর অগ্রসর হলেন এবং নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাক্ষাৎ করলেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবু তালহাকে সঙ্গে নিয়ে তাঁর ঘরে আসলেন, আর বললেন, হে উম্মে সুলাইম, তোমার নিকট যা কিছু আছে নিয়ে এসো। তিনি যবের ঐ রুটিগুলো হাযির করলেন এবং তাঁর নির্দেশে রুটিগুলো টুকরা টুকরা করা হল। উম্মে সুলাইম ঘিয়ের পাত্র ঝেড়ে মুছে কিছু ঘি বের করে তা তরকারী স্বরূপ পেশ করলেন। এরপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কিছু পাঠ করে তাতে ফুঁ দিলেন, এরপর দশজনকে নিয়ে আসতে বললেন। তাঁরা দশজন আসলেন এবং রুটি খেয়ে পরিতৃপ্ত হয়ে বেরিয়ে গেলেন। তারপর আরো দশজনকে আসতে বলা হল। তাঁরাও আসলেন এবং পেটভরে খেয়ে নিলেন। অনুরূপভাবে সমবেত সকলেই রুটি খেয়ে পরিতৃপ্ত হলেন। লোকজন সর্বমোট সত্তর বা আশিজন ছিলেন। [104]

عَنْ جَابِر رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، َقَالَ: إِنَّا يَوْمَ الخَنْدَقِ نَحْفِرُ، فَعَرَضَتْ كُدْيَةٌ شَدِيدَةٌ، فَجَاءُوا النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالُوا: هَذِهِ كُدْيَةٌ عَرَضَتْ فِي الخَنْدَقِ، فَقَالَ: «أَنَا نَازِلٌ». ثُمَّ قَامَ وَبَطْنُهُ مَعْصُوبٌ بِحَجَرٍ، وَلَبِثْنَا ثَلاَثَةَ أَيَّامٍ لاَ نَذُوقُ ذَوَاقًا، فَأَخَذَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ المِعْوَلَ فَضَرَبَ، فَعَادَ كَثِيبًا أَهْيَلَ، أَوْ أَهْيَمَ، فَقُلْتُ: يَا رَسُولَ اللَّهِ، ائْذَنْ لِي إِلَى البَيْتِ، فَقُلْتُ لِامْرَأَتِي: رَأَيْتُ بِالنَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ شَيْئًا مَا كَانَ فِي ذَلِكَ صَبْرٌ، فَعِنْدَكِ شَيْءٌ؟ قَالَتْ: عِنْدِي شَعِيرٌ وَعَنَاقٌ، فَذَبَحَتِ العَنَاقَ، وَطَحَنَتِ الشَّعِيرَ حَتَّى جَعَلْنَا اللَّحْمَ فِي البُرْمَةِ، ثُمَّ جِئْتُ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَالعَجِينُ قَدْ انْكَسَرَ، وَالبُرْمَةُ بَيْنَ الأَثَافِيِّ قَدْ كَادَتْ أَنْ تَنْضَجَ، فَقُلْتُ: طُعَيِّمٌ لِي، فَقُمْ أَنْتَ يَا رَسُولَ اللَّهِ وَرَجُلٌ أَوْ رَجُلاَنِ، قَالَ: «كَمْ هُوَ» فَذَكَرْتُ لَهُ، قَالَ: " كَثِيرٌ طَيِّبٌ، قَالَ: قُلْ لَهَا: لاَ تَنْزِعِ البُرْمَةَ، وَلاَ الخُبْزَ مِنَ التَّنُّورِ حَتَّى آتِيَ، فَقَالَ: قُومُوا " فَقَامَ المُهَاجِرُونَ، وَالأَنْصَارُ، فَلَمَّا دَخَلَ عَلَى امْرَأَتِهِ قَالَ: وَيْحَكِ جَاءَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِالْمُهَاجِرِينَ وَالأَنْصَارِ وَمَنْ مَعَهُمْ، قَالَتْ: هَلْ سَأَلَكَ؟ قُلْتُ: نَعَمْ، فَقَالَ: «ادْخُلُوا وَلاَ تَضَاغَطُوا» فَجَعَلَ يَكْسِرُ الخُبْزَ، وَيَجْعَلُ عَلَيْهِ اللَّحْمَ، وَيُخَمِّرُ البُرْمَةَ وَالتَّنُّورَ إِذَا أَخَذَ مِنْهُ، وَيُقَرِّبُ إِلَى أَصْحَابِهِ ثُمَّ يَنْزِعُ، فَلَمْ يَزَلْ يَكْسِرُ الخُبْزَ، وَيَغْرِفُ حَتَّى شَبِعُوا وَبَقِيَ بَقِيَّةٌ، قَالَ: «كُلِي هَذَا وَأَهْدِي، فَإِنَّ النَّاسَ أَصَابَتْهُمْ مَجَاعَةٌ».

আয়মান রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি জাবির রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর নিকট গেলে তিনি বললেন, খন্দক যুদ্ধের দিন আমরা পরিখা খনন করেছিলাম। এ সময় একখন্ড কঠিন পাথর বেরিয়ে আসলে (যা ভাঙ্গা যাচ্ছিল না) সকলেই নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে এসে বললেন, খন্দকের মাঝে একখন্ড শক্ত পাথর বেরিয়েছে (আমরা তা ভাংতে পারছি না)। এ কথা শুনে তিনি বললেন, আমি নিজে খন্দকে অবতরণ করব। এরপর তিনি দাঁড়ালেন। এ সময় তাঁর পেটে একটি পাথর বাঁধা ছিল। আর আমরাও তিন দিন পর্যন্ত অনাহারী ছিলাম। কোনো কিছুর স্বাদও গ্রহণ করিনি। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একখানা কোদাল হাতে নিয়ে প্রস্তরখন্ডে আঘাত করলেন। ফলে তৎক্ষণাৎ তা চূর্ণ হয়ে বালুকারাশিতে পরিণত হল। তখন আমি বললাম, ইয়া রাসূলুল্লাহ্! সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বাড়ি যাওয়ার জন্য অনুমতি দিন। (তিনি অনুমতি দিলে বাড়ি পৌঁছে) আমি আমার স্ত্রীকে বললাম, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মধ্যে আমি এমন কিছু দেখলাম যা আমি সহ্য করতে পারছি না। তোমার নিকট কোনো খাবার আছে কি? সে বলল, আমার কাছে কিছু যব ও একটি বকরীর বাচ্চা আছে। তখন বকরীর বাচ্চাটি আমি যবেহ করলাম। এবং সে (আমার স্ত্রী) যব পিষে দিল। এরপর গোশত ডেকচিতে দিয়ে আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে আসলাম। এ সময় আটা খামির হচ্ছিল এবং ডেকচি চুলার উপর ছিল ও গোশত প্রায় রান্না হয়ে আসছিল। তখন আমি বললাম, ইয়া রাসূলুল্লাহ্! সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার (বাড়িতে) সামান্য কিছু খাবার আছে। আপনি একজন বা দুইজন সাথে নিয়ে চলুন। তিনি বললেন, কি পরিমাণ খাবার আছে? আমি তার নিকট সব খুলে বললে তিনি বললেন, এ তো অনেক উত্তম। এরপর তিনি আমাকে ডেকে বললেন, তুমি তোমার স্ত্রীকে গিয়ে বল, সে যেন আমি না আসা পর্যন্ত উনান থেকে ডেকচি ও রুটি না নামায়। এরপর তিনি বললেন, উঠ! (জাবির তোমাদের খাবার দাওয়াত দিয়েছে) মুহাজিরগণ উঠলেন (এবং চলতে লাগলেন)। জাবির রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু তার স্ত্রীর নিকট গিয়ে বললেন, তোমার সর্বনাশ হোক! (এখন কি হবে?) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তো মুহাজির, আনসার এবং তাঁদের অন্য সাথীদের নিয়ে চলে আসছেন। তিনি (জাবিরের স্ত্রী) বললেন, তিনি কি আপনাকে জিজ্ঞেস করেছিলেন? আমি বললাম, হ্যাঁ। এরপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (উপস্থিত হয়ে) বললেন, তোমরা সকলেই প্রবেশ কর এবং ভিড় করোনা। এ বলে তিনি রুটি টুকরো করে এরপর গোশত তিনি সাহাবীগণের নিকট তা বিতরণ করতে শুরু করলেন। (এগুলো পরিবেশন করার সময়) তিনি ডেকচি এবং উনান ঢেকে রেখেছিলেন। এমনি করে তিনি রুটি টুকরো করে হাত ভরে বিতরণ করতে লাগলেন। এতে সকলে পেট ভরে খাবার পরেও কিছু বাকী রয়ে গেল। তাই তিনি (জাবিরের স্ত্রীকে) বললেন, এ তুমি খাও এবং অন্যকে হাদিয়া দাও। কেননা লোকদেরও ক্ষুধা পেয়েছে। [105]

عَنْ جَابِر بْن عَبْدِ اللَّهِ، رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا قَالَ: لَمَّا حُفِرَ الخَنْدَقُ رَأَيْتُ بِالنَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ خَمَصًا شَدِيدًا، فَانْكَفَأْتُ إِلَى امْرَأَتِي، فَقُلْتُ: هَلْ عِنْدَكِ شَيْءٌ؟ فَإِنِّي رَأَيْتُ بِرَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ خَمَصًا شَدِيدًا، فَأَخْرَجَتْ إِلَيَّ جِرَابًا فِيهِ صَاعٌ مِنْ شَعِيرٍ، وَلَنَا بُهَيْمَةٌ دَاجِنٌ فَذَبَحْتُهَا، وَطَحَنَتِ الشَّعِيرَ، فَفَرَغَتْ إِلَى فَرَاغِي، وَقَطَّعْتُهَا فِي بُرْمَتِهَا، ثُمَّ وَلَّيْتُ إِلَى رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَقَالَتْ: لاَ تَفْضَحْنِي بِرَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَبِمَنْ مَعَهُ، فَجِئْتُهُ فَسَارَرْتُهُ، فَقُلْتُ: يَا رَسُولَ اللَّهِ ذَبَحْنَا بُهَيْمَةً لَنَا وَطَحَنَّا صَاعًا مِنْ شَعِيرٍ كَانَ عِنْدَنَا، فَتَعَالَ أَنْتَ وَنَفَرٌ مَعَكَ، فَصَاحَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ: «يَا أَهْلَ الخَنْدَقِ، إِنَّ جَابِرًا قَدْ صَنَعَ سُورًا، فَحَيَّ هَلًا بِهَلّكُمْ» فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «لاَ تُنْزِلُنَّ بُرْمَتَكُمْ، وَلاَ تَخْبِزُنَّ عَجِينَكُمْ حَتَّى أَجِيءَ». فَجِئْتُ وَجَاءَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقْدُمُ النَّاسَ حَتَّى جِئْتُ امْرَأَتِي، فَقَالَتْ: بِكَ وَبِكَ، فَقُلْتُ: قَدْ فَعَلْتُ الَّذِي قُلْتِ، فَأَخْرَجَتْ لَهُ عَجِينًا فَبَصَقَ فِيهِ وَبَارَكَ، ثُمَّ عَمَدَ إِلَى بُرْمَتِنَا فَبَصَقَ وَبَارَكَ، ثُمَّ قَالَ: «ادْعُ خَابِزَةً فَلْتَخْبِزْ مَعِي، وَاقْدَحِي مِنْ بُرْمَتِكُمْ وَلاَ تُنْزِلُوهَا» وَهُمْ أَلْفٌ، فَأُقْسِمُ بِاللَّهِ لَقَدْ أَكَلُوا حَتَّى تَرَكُوهُ وَانْحَرَفُوا، وَإِنَّ بُرْمَتَنَا لَتَغِطُّ كَمَا هِيَ، وَإِنَّ عَجِينَنَا لَيُخْبَزُ كَمَا هُوَ.

জাবির ইবন আবদুল্লাহ্ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, যখন পরিখা খনন করা হচ্ছিল তখন আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে ভীষণ ক্ষুধার্ত অবস্থায় দেখতে পেলাম। তখন আমি আমার স্ত্রীর কাছে ফিরে গিয়ে জিজ্ঞেস করলাম, তোমার কাছে কোনো কিছু আছে কি? আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে দারুণ ক্ষুধার্ত দেখেছি। (এ কথা শুনে) তিনি একটি চামড়ার পাত্র এনে তা থেকে এক সা পরিমাণ যব বের করে দিলেন। আমাদের গৃহপালিত একটি বকরীর বাচ্চা ছিল। আমি সেটি যবেহ করলাম এবং গোশত কেটে কেটে ডেকচিতে ভরলাম। আর সে (আমার স্ত্রী) যব পিষে দিল। আমি আমার কাজ শেষ করে চললাম। তখন সে (স্ত্রী) বলল, আমাকে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তাঁর সাহাবীদের নিকট লজ্জিত করবেন না। এরপর আমি রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট গিয়ে চুপে চুপে বললাম, ইয়া রাসূলুল্লাহ্! সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমরা আমাদের একটি বকরীর বাচ্চা যবেহ করেছি এবং আমাদের ঘরে এক সা যব ছিল। তা আমার স্ত্রী পিষে দিয়েছে। আপনি আরো কয়েকজনকে সাথে নিয়ে আসুন। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উচ্চ স্বরে সবাইকে বললেন, হে পরিখা খননকারীগণ! জাবির খানার ব্যবস্থা করেছে। এসো, তোমরা সকলেই চল। এরপর রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আমার আসার পূর্বে তোমাদের ডেকচি নামাবে না এবং খামির থেকে রুটিও তৈরি করবে না। আমি (বাড়িতে) আসলাম এবং রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবীদেরকে নিয়ে আসলেন, এরপর আমি আমার স্ত্রীর নিকট আসলে সে বলল, আল্লাহ তোমার মঙ্গল করুন। (তুমি এ কি করলে? এতগুলো লোক নিয়ে আসলে? অথচ খাদ্য একেবারে নগন্য) আমি বললাম, তুমি যা বলেছ আমি তাই করেছি। এরপর সে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সামনে আটার খামির বের করে দিলে তিনি তাতে মুখের লালা মিশিয়ে দিলেন এবং বরকতের জন্য দো‘আ করলেন। এরপর তিনি ডেকচির দিকে এগিয়ে গেলেন এবং তাতে মুখের লালা মিশিয়ে এর জন্য বরকতের দো‘আ করলেন। তারপর বললেন, (হে জাবির) রুটি প্রস্তুতকারিনীকে ডাকো। সে আমার কাছে বসে রুটি প্রস্তুত করুক এবং ডেকচি থেকে পেয়ালা ভরে গোশত পরিবেশন করুক। তবে চুলা থেকে ডেকচি নামাবে না। তাঁরা (আগন্তুক সাহাবীরা) ছিলেন সংখ্যায় এক হাজার। আমি আল্লাহ্‌র কসম করে বলছি, তাঁরা সকলেই তৃপ্তিসহকারে খেয়ে অবশিষ্ট খাদ্য রেখে চলে গেলেন। অথচ আমাদের ডেকচি পূর্বের ন্যায় তখনও টগবগ করছিল এবং আমাদের আটার খামির থেকেও পূর্বের মত রুটি তৈরি হচ্ছিল। [106]

عن أبي عثمان واسمه الجعد، عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ، قَالَ: مَرَّ بِنَا فِي مَسْجِدِ بَنِي رِفَاعَةَ، فَسَمِعْتُهُ يَقُولُ: كَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا مَرَّ بِجَنَبَاتِ أُمِّ سُلَيْمٍ دَخَلَ عَلَيْهَا فَسَلَّمَ عَلَيْهَا، ثُمَّ قَالَ: كَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَرُوسًا بِزَيْنَبَ، فَقَالَتْ لِي أُمُّ سُلَيْمٍ: لَوْ أَهْدَيْنَا لِرَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ هَدِيَّةً، فَقُلْتُ لَهَا: افْعَلِي، فَعَمَدَتِ الى تَمْرٍ وَسَمْنٍ وَأَقِطٍ، فَاتَّخَذَتْ حَيْسَةً فِي بُرْمَةٍ، فَأَرْسَلَتْ بِهَا مَعِي إِلَيْهِ، فَانْطَلَقْتُ بِهَا إِلَيْهِ، فَقَالَ لِي: «ضَعْهَا» ثُمَّ أَمَرَنِي فَقَالَ: «ادْعُ لِي رِجَالًا - سَمَّاهُمْ - وَادْعُ لِي مَنْ لَقِيتَ» قَالَ: فَفَعَلْتُ الَّذِي أَمَرَنِي، فَرَجَعْتُ فَإِذَا البَيْتُ غَاصٌّ بِأَهْلِهِ، فَرَأَيْتُ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَضَعَ يَدَيْهِ عَلَى تِلْكَ الحَيْسَةِ وَتَكَلَّمَ بِهَا مَا شَاءَ اللَّهُ، ثُمَّ جَعَلَ يَدْعُو عَشَرَةً عَشَرَةً يَأْكُلُونَ مِنْهُ، وَيَقُولُ لَهُمْ: «اذْكُرُوا اسْمَ اللَّهِ، وَلْيَأْكُلْ كُلُّ رَجُلٍ مِمَّا يَلِيهِ» قَالَ: حَتَّى تَصَدَّعُوا كُلُّهُمْ عَنْهَا، فَخَرَجَ مِنْهُمْ مَنْ خَرَجَ، وَبَقِيَ نَفَرٌ يَتَحَدَّثُونَ، قَالَ: وَجَعَلْتُ أَغْتَمُّ، ثُمَّ خَرَجَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ نَحْوَ الحُجُرَاتِ وَخَرَجْتُ فِي إِثْرِهِ، فَقُلْتُ: إِنَّهُمْ قَدْ ذَهَبُوا، فَرَجَعَ فَدَخَلَ البَيْتَ، وَأَرْخَى السِّتْرَ وَإِنِّي لَفِي الحُجْرَةِ، وَهُوَ يَقُولُ: ﴿ يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ لَا تَدۡخُلُواْ بُيُوتَ ٱلنَّبِيِّ إِلَّآ أَن يُؤۡذَنَ لَكُمۡ إِلَىٰ طَعَامٍ غَيۡرَ نَٰظِرِينَ إِنَىٰهُ وَلَٰكِنۡ إِذَا دُعِيتُمۡ فَٱدۡخُلُواْ فَإِذَا طَعِمۡتُمۡ فَٱنتَشِرُواْ وَلَا مُسۡتَ‍ٔۡنِسِينَ لِحَدِيثٍۚ إِنَّ ذَٰلِكُمۡ كَانَ يُؤۡذِي ٱلنَّبِيَّ فَيَسۡتَحۡيِۦ مِنكُمۡۖ وَٱللَّهُ لَا يَسۡتَحۡيِۦ مِنَ ٱلۡحَقِّۚ ٥٣ ﴾ [الاحزاب: ٥٣] قَالَ أَبُو عُثْمَانَ: قَالَ أَنَسٌ: «إِنَّهُ خَدَمَ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَشْرَ سِنِينَ».

আবু উসমান রহ. বলেন, একদিন আনাস ইবন মালিক রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু আমাদের বনী রিফা‘আর মসজিদের নিকট গমনকালে তাকে এ কথা বলতে শুনেছি যে, যখনই উম্মে সুলাইমের নিকট দিয়ে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যেতেন, তাঁকে সালাম দিতেন। আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু আরো বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যখন যয়নাব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহার সাথে শাদী হয়, তখন উম্মে সুলাইম আমাকে বললেন, চল আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জন্য কিছু হাদীয়া পাঠাই। আমি তাকে বললাম, হ্যাঁ, এ ব্যবস্থা করুন। তখন তিনি খেজুর, মাখন ও পনির এক সাথে মিশিয়ে হালুয়া বানিয়ে একটি ডেকচিতে করে আমার মারফত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে পাঠালেন। আমি সেসব নিয়ে তাঁর খিদমতে উপস্থিত হলে তিনি এগুলো রেখে দিতে বলেন, এবং আমাকে কয়েকজন লোকের নাম উল্লেখ করে ডেকে আনার আদেশ করলেন। আরো বললেন, যার সাথে দেখা হয় তাকেও দাওয়াত দিবে। তিনি যেভাবে আমাকে হুকুম করলেন, আমি সেইভাবে কাজ করলাম। যখন আমি ফিরে এলাম, তখন ঘরে অনেক লোক দেখতে পেলাম। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন হালুয়া (হাইশা) পাত্রের মধ্যে হাত রাখা অবস্থায় ছিলেন এবং আল্লাহ তা‘আলার মর্জি মোতাবেক কিছু কথা বললেন। তারপর তিনি দশ দশ জন করে লোক খাবারের জন্য ডাকলেন এবং বললেন, তোমরা ‘বিসমিল্লাহ’ বলে খাওয়া শুরু কর এবং প্রত্যেকে পাত্রের নিজ নিজ দিক হতে খাও। যখন তাদের খাওয়া-দাওয়া শেষ হল তাদের মধ্য থেকে অনেকেই চলে গেল এবং কিছু সংখ্যক লোক কথাবার্তা বলতে থাকল। যা দেখে আমি বিরক্তি বোধ করলাম। তারপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেখান থেকে বের হয়ে অন্য ঘরে গেলেন। আমিও সেখান থেকে বেরিয়ে এলাম। যখন আমি বললাম, তারাও চলে গেছে তখন তিনি নিজের কক্ষে ফিরে এলেন এবং পর্দা ফেলে দিলেন। তিনি তাঁর কক্ষে থাকলেন এবং এই আয়াত পাঠ করলেন,

﴿ يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ لَا تَدۡخُلُواْ بُيُوتَ ٱلنَّبِيِّ إِلَّآ أَن يُؤۡذَنَ لَكُمۡ إِلَىٰ طَعَامٍ غَيۡرَ نَٰظِرِينَ إِنَىٰهُ وَلَٰكِنۡ إِذَا دُعِيتُمۡ فَٱدۡخُلُواْ فَإِذَا طَعِمۡتُمۡ فَٱنتَشِرُواْ وَلَا مُسۡتَ‍ٔۡنِسِينَ لِحَدِيثٍۚ إِنَّ ذَٰلِكُمۡ كَانَ يُؤۡذِي ٱلنَّبِيَّ فَيَسۡتَحۡيِۦ مِنكُمۡۖ وَٱللَّهُ لَا يَسۡتَحۡيِۦ مِنَ ٱلۡحَقِّۚ ٥٣ ﴾ [الاحزاب: ٥٣]

“হে মু’মিনগণ, তোমাদেরকে অনুমতি না দেওয়া হলে তোমরা খাবার তৈরির অপেক্ষা না করে নবীগৃহে খাবার জন্য প্রবেশ করো না। তবে যদি তোমাদেরকে ডাকা হয় তাহলে প্রবেশ কর এবং খাওয়া শেষ করে চলে যাবে। তোমরা কথাবার্তায় মশগুল হয়ে পড়ো না এবং তোমাদের এরূপ আচরণ নবীর মনে কষ্ট হয়। তিনি তোমাদেরকে উঠিয়ে দিতে সংকোচ বোধ করেন, কিন্তু আল্লাহ তা’আলা সত্য বলতে সংকোচ বোধ করেন না”। [সূরা আল-আহযাব: ৫৩]

আবু উসমান (রহ.) বলেন, আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেছেন যে, তিনি দশ বছর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের খেদমত করেছেন। [107]

حَدَّثَنَا مُجَاهِدٌ، أَنَّ أَبَا هُرَيْرَةَ، كَانَ يَقُولُ: أَللَّهِ الَّذِي لاَ إِلَهَ إِلَّا هُوَ، إِنْ كُنْتُ لَأَعْتَمِدُ بِكَبِدِي عَلَى الأَرْضِ مِنَ الجُوعِ، وَإِنْ كُنْتُ لَأَشُدُّ الحَجَرَ عَلَى بَطْنِي مِنَ الجُوعِ، وَلَقَدْ قَعَدْتُ يَوْمًا عَلَى طَرِيقِهِمُ الَّذِي يَخْرُجُونَ مِنْهُ، فَمَرَّ أَبُو بَكْرٍ، فَسَأَلْتُهُ عَنْ آيَةٍ مِنْ كِتَابِ اللَّهِ، مَا سَأَلْتُهُ إِلَّا لِيُشْبِعَنِي، فَمَرَّ وَلَمْ يَفْعَلْ، ثُمَّ مَرَّ بِي عُمَرُ، فَسَأَلْتُهُ عَنْ آيَةٍ مِنْ كِتَابِ اللَّهِ، مَا سَأَلْتُهُ إِلَّا لِيُشْبِعَنِي، فَمَرَّ فَلَمْ يَفْعَلْ، ثُمَّ مَرَّ بِي أَبُو القَاسِمِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَتَبَسَّمَ حِينَ رَآنِي، وَعَرَفَ مَا فِي نَفْسِي وَمَا فِي وَجْهِي، ثُمَّ قَالَ: «يَا أَبَا هِرٍّ» قُلْتُ: لَبَّيْكَ يَا رَسُولَ اللَّهِ، قَالَ: «الحَقْ» وَمَضَى فَتَبِعْتُهُ، فَدَخَلَ، فَاسْتَأْذَنَ، فَأَذِنَ لِي، فَدَخَلَ، فَوَجَدَ لَبَنًا فِي قَدَحٍ، فَقَالَ: «مِنْ أَيْنَ هَذَا اللَّبَنُ؟» قَالُوا: أَهْدَاهُ لَكَ فُلاَنٌ أَوْ فُلاَنَةُ، قَالَ: «أَبَا هِرٍّ» قُلْتُ: لَبَّيْكَ يَا رَسُولَ اللَّهِ، قَالَ: «الحَقْ إِلَى أَهْلِ الصُّفَّةِ فَادْعُهُمْ لِي» قَالَ: وَأَهْلُ الصُّفَّةِ أَضْيَافُ الإِسْلاَمِ، لاَ يَأْوُونَ إِلَى أَهْلٍ وَلاَ مَالٍ وَلاَ عَلَى أَحَدٍ، إِذَا أَتَتْهُ صَدَقَةٌ بَعَثَ بِهَا إِلَيْهِمْ وَلَمْ يَتَنَاوَلْ مِنْهَا شَيْئًا، وَإِذَا أَتَتْهُ هَدِيَّةٌ أَرْسَلَ إِلَيْهِمْ وَأَصَابَ مِنْهَا وَأَشْرَكَهُمْ فِيهَا، فَسَاءَنِي ذَلِكَ، فَقُلْتُ: وَمَا هَذَا اللَّبَنُ فِي أَهْلِ الصُّفَّةِ، كُنْتُ أَحَقُّ أَنَا أَنْ أُصِيبَ مِنْ هَذَا اللَّبَنِ شَرْبَةً أَتَقَوَّى بِهَا، فَإِذَا جَاءَ أَمَرَنِي، فَكُنْتُ أَنَا أُعْطِيهِمْ، وَمَا عَسَى أَنْ يَبْلُغَنِي مِنْ هَذَا اللَّبَنِ، وَلَمْ يَكُنْ مِنْ طَاعَةِ اللَّهِ وَطَاعَةِ رَسُولِهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بُدٌّ، فَأَتَيْتُهُمْ فَدَعَوْتُهُمْ فَأَقْبَلُوا، فَاسْتَأْذَنُوا فَأَذِنَ لَهُمْ، وَأَخَذُوا مَجَالِسَهُمْ مِنَ البَيْتِ، قَالَ: «يَا أَبَا هِرٍّ» قُلْتُ: لَبَّيْكَ يَا رَسُولَ اللَّهِ، قَالَ: «خُذْ فَأَعْطِهِمْ» قَالَ: فَأَخَذْتُ القَدَحَ، فَجَعَلْتُ أُعْطِيهِ الرَّجُلَ فَيَشْرَبُ حَتَّى يَرْوَى، ثُمَّ يَرُدُّ عَلَيَّ القَدَحَ، فَأُعْطِيهِ الرَّجُلَ فَيَشْرَبُ حَتَّى يَرْوَى، ثُمَّ يَرُدُّ عَلَيَّ القَدَحَ فَيَشْرَبُ حَتَّى يَرْوَى، ثُمَّ يَرُدُّ عَلَيَّ القَدَحَ، حَتَّى انْتَهَيْتُ إِلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَقَدْ رَوِيَ القَوْمُ كُلُّهُمْ، فَأَخَذَ القَدَحَ فَوَضَعَهُ عَلَى يَدِهِ، فَنَظَرَ إِلَيَّ فَتَبَسَّمَ، فَقَالَ: «أَبَا هِرٍّ» قُلْتُ: لَبَّيْكَ يَا رَسُولَ اللَّهِ، قَالَ: «بَقِيتُ أَنَا وَأَنْتَ» قُلْتُ: صَدَقْتَ يَا رَسُولَ اللَّهِ، قَالَ: «اقْعُدْ فَاشْرَبْ» فَقَعَدْتُ فَشَرِبْتُ، فَقَالَ: «اشْرَبْ» فَشَرِبْتُ، فَمَا زَالَ يَقُولُ: «اشْرَبْ» حَتَّى قُلْتُ: لاَ وَالَّذِي بَعَثَكَ بِالحَقِّ، مَا أَجِدُ لَهُ مَسْلَكًا، قَالَ: «فَأَرِنِي» فَأَعْطَيْتُهُ القَدَحَ، فَحَمِدَ اللَّهَ وَسَمَّى وَشَرِبَ الفَضْلَةَ.

আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলতেন, আল্লাহর কসম! যিনি ছাড়া আর কোনো মাবুদ নেই, আমি ক্ষুধার জ্বালায় আমার পেটকে মাটিতে রেখে উপুড় হয়ে পড়ে থাকতাম। আর কোনো সময় ক্ষুধার জ্বালায় আমার পেটে পাথর বেঁধে রাখতাম। একদিন আমি ক্ষুধার যন্ত্রনায় বাধ্য হয়ে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও সাহাবীগণের বের হওয়ার পথে বসে থাকলাম। আবূ বকর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু যেতে লাগলে আমি কুরআনের একটা আয়াত সম্পর্কে প্রশ্ন করলাম। আমি তাকে প্রশ্ন করলাম এই উদ্দেশ্যে যে, তিনি তাহলে আমাকে পরিতৃপ্ত করে কিছু খাওয়াবেন। কিন্তু তিনি চলে গেলেন, কিছু করলেন না, কিছুক্ষন পর উমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু যাচ্ছিলেন, আমি তাকে কুরআনের একটা আয়াত সম্বন্ধে প্রশ্ন করলাম। এই সময়ও আমি প্রশ্ন করলাম এই উদ্দেশ্যে যে, তিনি আমাকে পরিতৃপ্ত করে খাওয়াবেন, কিন্তু তিনি চলে গেলেন। আমার কোনো ব্যবস্থা করলেন না। তার পরক্ষনে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যাচ্ছিলেন। তিনি আমাকে দেখেই মুচকি হাসলেন এবং আমার প্রাণে কি অস্থিরতা বিরাজমান এবং আমার চেহারার অবস্থা থেকে তিনি তা আঁচ করতে পারলেন। তারপর বললেন, হে আবূ হির! আমি বললাম ইয়া রাসূলাল্লাহ্! সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমি হাযির আছি। তিনি বললেন, তুমি আমার সঙ্গে চল। এ বলে তিনি চললেন, আমি ও তার অনুসরন করলাম। তিনি ঘরে ঢুকবার অনুমতি চাইলেন এবং আমাকে ঢুকবার অনুমতি দিলেন। তারপর তিনি ঘরে প্রবেশ করে একটা পেয়ালার মধ্যে কিছু পরিমান দুধ পেলেন। তিনি বললেন, এ দুধ কোথা থেকে এসেছে? তাঁরা বললেন, এটা আপনাকে অমুক পুরুষ অথবা অমুক মহিলা হাদিয়া দিয়েছেন। তখন তিনি বললেন, হে আবূ হির! আমি বললাম লাব্বাইকা ইয়া রাসূলাল্লাহ্! তুমি সুফফাবাসীদের কাছে গিয়ে তাদেরকে আমার কাছে ডেকে নিয়ে এসো। রাবী বলেন, সুফফাবাসীরা ইসলামের মেহমান ছিলেন। তাদের কোনো পরিবার ছিল না এবং তাদের কোনো সম্পদ ছিল না এবং তাদের কারো উপর নির্ভরশীল হওয়ার ও সুযোগ ছিলনা। যখন কোনো সাদাকা আসত তখন তিনি তা তাদের কাছে পাঠিয়ে দিতেন। তিনি এর থেকে কিছুই গ্রহণ করতেন না। আর যখন কোনো হাদিয়া আসত, তখন তার কিছু অংশ তাদেরকে দিয়ে দিতেন এবং এর থেকে নিজেও কিছু রাখতেন, এর মধ্যে তাদেরকে শরীক করতেন। এ আদেশ শুনে আমার মনে কিছুটা হতাশা এল, মনে মনে ভাবলাম যে, এ সামান্য দুধ দ্বারা সুফফাবাসীদের কি হবে? এ সামান্য দুধ আমার জন্যই যথেষ্ট হতো। এটা পান করে আমি শরীরে কিছু শক্তি পেতাম। এরপর যখন তারা এসে গেলেন, তখন তিনি আমাকে নির্দেশ দিলেন যে, আমিই যেন তা তাদেরকে দেই, আর আমার আশা রইল না যে, এ দুধ থেকে আমি কিছু পাব, কিন্তু আল্লাহ্ ও রাসূলের নির্দেশ না মেনে কোনো উপায় নেই। তাই তাদের কাছে গিয়ে তাদেরকে ডেকে আনলাম। তাঁরা এসে ভেতরে প্রবেশ করার অনুমতি চাইলে তিনি তাদেরকে অনুমতি দিলেন। তারা এসে ঘরে আসন গ্রহণ করলেন। তিনি বললেন, হে আবূ হির! আমি বললাম আমি হাযির ইয়া রাসূলাল্লাহ্! তিনি বললেন তুমি পেয়ালাটি নাও আর তাদেরকে দাও। আমি পেয়ালা নিয়ে একজনকে দিলাম। তিনি তা পরিতৃপ্ত হয়ে পান করে পেয়ালাটি আমাকে ফেরত দিলেন। আমি আরেকজনকে পেয়ালাটি দিলাম। তিনিও পরিতৃপ্ত হয়ে পান করে পেয়ালাটি আমাকে ফিরিয়ে দিলেন। এমনকি আমি এরূপে দিতে দিতে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পর্যন্ত পৌছালাম। তাঁরা সবাই তৃপ্ত হয়েছিলেন। তারপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পেয়ালাটি নিজ হাতে নিয়ে রেখে আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলেন। আর বললেন, হে আবূ হির! আমি বললাম আমি হাযির ইয়া রাসূলাল্লাহ্! তিনি বললেন, এখন তো আমি আর তুমি আছি। আমি বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ্! আপনি ঠিক বলছেন। তিনি বললেন, এখন তুমি বসে পান কর। তখন আমি বসে কিছু পান করলাম। তিনি বললেন, তুমি আরও পান করো। আমি আরও পান করলাম। তিনি বারবার আমাকে পান করার নির্দেশ দিতে লাগলেন। এমন কি আমি বলতে বাধ্য হলাম যে, আর না। যে সত্তা আপনাকে সত্য ধর্মসহ পাঠিয়েছেন, তার কসম! (আমার পেটে) আর পান করার মতো জায়গা আমি পাচ্ছি না। তিনি বললেন, তাহলে আমাকে দাও। আমি পেয়ালাটি তাঁকে দিয়ে দিলাম। তিনি আলহামদুলিল্লাহ ও বিসমিল্লাহ্ বলে বাকীটা পান করলেন। [108]

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ: كُنَّا مَعَ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي مَسِيرٍ، قَالَ: فَنَفِدَتْ أَزْوَادُ الْقَوْمِ، قَالَ: حَتَّى هَمَّ بِنَحْرِ بَعْضِ حَمَائِلِهِمْ، قَالَ: فَقَالَ عُمَرُ: يَا رَسُولَ اللهِ، لَوْ جَمَعْتَ مَا بَقِيَ مِنْ أَزْوَادِ الْقَوْمِ، فَدَعَوْتَ اللهَ عَلَيْهَا، قَالَ: فَفَعَلَ، قَالَ: فَجَاءَ ذُو الْبُرِّ بِبُرِّهِ، وَذُو التَّمْرِ بِتَمْرِهِ، قَالَ: وَقَالَ مُجَاهِدٌ: وَذُو النَّوَاةِ بِنَوَاهُ، قُلْتُ: وَمَا كَانُوا يَصْنَعُونَ بِالنَّوَى؟ قَالَ: كَانُوا يَمُصُّونَهُ وَيَشْرَبُونَ عَلَيْهِ الْمَاءَ، قَالَ: فَدَعَا عَلَيْهَا قَالَ حَتَّى مَلَأَ الْقَوْمُ أَزْوِدَتَهُمْ، قَالَ: فَقَالَ عِنْدَ ذَلِكَ: «أَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ، وَأَنِّي رَسُولُ اللهِ، لَا يَلْقَى اللهَ بِهِمَا عَبْدٌ غَيْرَ شَاكٍّ فِيهِمَا، إِلَّا دَخَلَ الْجَنَّةَ».

আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, আমরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে একটি সফরে ছিলাম। এক পর্যায়ে দলের রসদপত্র নিঃশেষ হয়ে গেল। পরিশেষে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের কিছু সংখ্যক উট যবেহ করার মনস্থ করলেনত। রাবী বলেন যে, এতে উমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু আরয করলেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ! যদি আপনি সকলের রসদ সামগ্রী একত্র করে আল্লাহর কাছে দো‘আ করতেন, তবে ভাল হতো। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাই করলেন। যার কাছে গম ছিল সে গম এবং যার কাছে খেজুর ছিল সে খেজুর নিয়ে হাযির হলো, (তালহা ইবন মুসাররিফ বলেন) মুজাহিদ আরো বর্ণনা করেন যে, যার কাছে খেজুরের আটি ছিল, সে তাই নিয়ে হাযির হলো। আমি (তালহা) আরয করলাম, আটি দিয়ে কি করতেন? তিনি বললেন, তা চুষে পানি পান করতেন বর্ণনাকারী বললেন, তারপর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সংগৃহীত খাদ্য সামগ্রীর উপর দো‘আ করলেন। রাবী বলেন, অবশেষে লোকেরা রসদে নিজেদের পাত্র পূর্ণ করে নিল। রাবী বলেন যে, তখন রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি, আল্লাহ ছাড়া ইলাহ নেই এবং আমি আল্লাহর রাসুল। যে এ দুটি বিষয়ের প্রতি সন্দেহাতীত বিশ্বাস রেখে আল্লাহর সঙ্গে সাক্ষাৎ করবে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। [109]

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، أَوْ عَنْ أَبِي سَعِيدٍ - شَكَّ الْأَعْمَشُ - قَالَ: لَمَّا كَانَ غَزْوَةُ تَبُوكَ أَصَابَ النَّاسَ مَجَاعَةٌ، قَالُوا: يَا رَسُولَ اللهِ، لَوْ أَذِنْتَ لَنَا فَنَحَرْنَا نَوَاضِحَنَا، فَأَكَلْنَا وَادَّهَنَّا، فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «افْعَلُوا»، قَالَ: فَجَاءَ عُمَرُ، فَقَالَ: يَا رَسُولَ اللهِ، إِنْ فَعَلْتَ قَلَّ الظَّهْرُ، وَلَكِنْ ادْعُهُمْ بِفَضْلِ أَزْوَادِهِمْ، ثُمَّ ادْعُ اللهَ لَهُمْ عَلَيْهَا بِالْبَرَكَةِ، لَعَلَّ اللهَ أَنْ يَجْعَلَ فِي ذَلِكَ، فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «نَعَمْ»، قَالَ: فَدَعَا بِنِطَعٍ، فَبَسَطَهُ، ثُمَّ دَعَا بِفَضْلِ أَزْوَادِهِمْ، قَالَ: فَجَعَلَ الرَّجُلُ يَجِيءُ بِكَفِّ ذُرَةٍ، قَالَ: وَيَجِيءُ الْآخَرُ بِكَفِّ تَمْرٍ، قَالَ: وَيَجِيءُ الْآخَرُ بِكَسْرَةٍ حَتَّى اجْتَمَعَ عَلَى النِّطَعِ مِنْ ذَلِكَ شَيْءٌ يَسِيرٌ، قَالَ: فَدَعَا رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَلَيْهِ بِالْبَرَكَةِ، ثُمَّ قَالَ: «خُذُوا فِي أَوْعِيَتِكُمْ»، قَالَ: فَأَخَذُوا فِي أَوْعِيَتِهِمْ، حَتَّى مَا تَرَكُوا فِي الْعَسْكَرِ وِعَاءً إِلَّا مَلَئُوهُ، قَالَ: فَأَكَلُوا حَتَّى شَبِعُوا، وَفَضَلَتْ فَضْلَةٌ، فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «أَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ، وَأَنِّي رَسُولُ اللهِ، لَا يَلْقَى اللهَ بِهِمَا عَبْدٌ غَيْرَ شَاكٍّ، فَيُحْجَبَ عَنِ الْجَنَّةِ».

আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু অথবা আবু সাঈদ খূদরী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, (সন্দেহ রাবী ‘আমাশের) তাবুকের যুদ্ধের সময়ে লোকেরা দারুণ খাদ্যাভাবে পতিত হলো । তারা আরয করল, ইয়া রাসুলুল্লাহ! যদি আপনি অনুমতি দেন, তাহলে আমরা আমাদের উটগুলো যবেহ করে তার গোশত খাই এবং আর চর্বি ব্যবহার করি। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, যবেহ করতে পার। রাবী বলেন, ইত্যবসরে উমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু আসলেন এবং আরয করলেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ! যদি এরূপ করা হয়, তাহলে বাহন কমে যাবে বরং আপনি লোকদেরকে তাদের উদ্বৃত্ত রসদ নিয়ে উপস্হিত হতে বলুন, তাতে তাদের জন্য আল্লাহর দরবারে বরকতের দো‘আ করুন। আশা করা যায়, আল্লাহ তাতে বরকত দিবেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হ্যাঁ- ঠিক আছে। একটি দস্তরখান আনতে বললেন এবং তা বিছালেন, এরপর সকলের উদ্বৃত্ত রসদ চেয়ে পাঠালেন। রাবী বলেন, তখন কেউ একমুঠো গম নিয়ে হাযির হলো, কেউ একমুঠো খেজুর নিয়ে হাযির হলো, কেউ এক টুকরা রুটি নিয়ে আসল, এভাবে কিছু পরিমাণ রসদ-সামগ্রী দস্তরখানায় জমা হলো। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বরকতের দো‘আ করলেন। তারপর বললেন, তোমরা নিজ নিজ পাত্রে রসদপত্র ভর্তি করে নাও। সকলেই নিজ নিজ পাত্র ভরে নিল, এমনকি এ বাহিনীর কোনো পাত্রই আর অপূর্ণ রইল না। এরপর সকলে পরিতৃপ্ত হয়ে আহার করলেন। কিছু উদ্বৃত্তও রয়ে গেল। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া কোনো ইলাহ নেই এবং আমি আল্লাহর প্রেরিত রাসুল-যে ব্যক্তি সন্দেহাতীতভাবে এ কথা দু’টির উপর বিশ্বাস রেখে আল্লাহর কাছে উপস্থিত হবে, সে জান্নাত থেকে বঞ্চিত হবে না। [110]

حَدَّثَنِي عَبْدُ الرَّحْمَنِ بْنُ أَبِي عَمْرَةَ الْأَنْصَارِيُّ، حَدَّثَنِي أَبِي قَالَ: كُنَّا مَعَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي غَزَاةٍ، فَأَصَابَ النَّاسَ مَخْمَصَةٌ، فَاسْتَأْذَنَ النَّاسُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي نَحْرِ بَعْضِ ظُهُورِهِمْ، وَقَالُوا: يُبَلِّغُنَا اللَّهُ بِهِ، فَلَمَّا رَأَى عُمَرُ بْنُ الْخَطَّابِ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَدْ هَمَّ أَنْ يَأْذَنَ لَهُمْ فِي نَحْرِ بَعْضِ ظَهْرِهِمْ ، قَالَ: يَا رَسُولَ اللَّهِ، كَيْفَ بِنَا إِذَا نَحْنُ لَقِينَا الْقَوْمَ غَدًا جِيَاعًا رِجَالًا؟ وَلَكِنْ إِنْ رَأَيْتَ يَا رَسُولَ اللَّهِ أَنْ تَدْعُوَ لَنَا بِبَقَايَا أَزْوَادِهِمْ فَتَجْمَعَهَا، ثُمَّ تَدْعُوَ اللَّهَ فِيهَا بِالْبَرَكَةِ، فَإِنَّ اللَّهَ تَبَارَكَ وَتَعَالَى سَيُبَلِّغُنَا بِدَعْوَتِكَ - أَوْ قَالَ: سَيُبَارِكُ لَنَا فِي دَعْوَتِكَ - فَدَعَا النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِبَقَايَا أَزْوَادِهِمْ، فَجَعَلَ النَّاسُ يُجِيئُونَ بِالْحَثْيَةِ مِنَ الطَّعَامِ، وَفَوْقَ ذَلِكَ، وَكَانَ أَعْلَاهُمْ مَنْ جَاءَ بِصَاعٍ مِنْ تَمْرٍ، فَجَمَعَهَا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، ثُمَّ قَامَ فَدَعَا مَا شَاءَ اللَّهُ أَنْ يَدْعُوَ، ثُمَّ دَعَا الْجَيْشَ بِأَوْعِيَتِهِمْ، فَأَمَرَهُمْ أَنْ يَحْتَثُوا، فَمَا بَقِيَ فِي الْجَيْشِ وِعَاءٌ إِلَّا مَلَئُوهُ، وَبَقِيَ مِثْلُهُ، فَضَحِكَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ حَتَّى بَدَتْ نَوَاجِذُهُ، فَقَالَ: «أَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ، وَأَشْهَدُ أَنِّي رَسُولُ اللَّهِ، لَا يَلْقَى اللَّهَ عَبْدٌ مُؤْمِنٌ بِهَا إِلَّا حُجِبَتْ عَنْهُ النَّارُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ».

আব্দুর রহমান ইবন আবী ‘আমরাহ আল-আনসারী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু তাঁর পিতার থেকে বর্ণনা করেন, আমরা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে এক যুদ্ধে (তাবুকের যুদ্ধে) ছিলাম। তখন লোকেরা দারুণ খাদ্যাভাবে পতিত হলো। তারা আরয করল, ইয়া রাসুলুল্লাহ! যদি আপনি অনুমতি দেন, তাহলে আমরা আমাদের কিছু উটগুলো যবেহ করে তার গোশত খাই এবং আর চর্বি ব্যবহার করি। উমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু যখন দেখলেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে, যবেহ করতে অনুমতি দিতে ইচ্ছা পোষণ করেছেন, তখন তিনি আরয করলেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ! যদি এরূপ করা হয়, তাহলে বাহন কমে যাবে, আগামীকাল আমরা শত্রুর মোকাবলা করব ক্ষুধার্তাবস্থায় বরং আপনি লোকদেরকে তাদের উদ্বৃত্ত রসদ নিয়ে উপস্হিত হতে বলুন, তাতে তাদের জন্য আল্লাহর দরবারে বরকতের দো‘আ করুন। আশা করা যায়, আল্লাহ তাতে বরকত দিবেন। অথবা রাবী বলেন, অচিরেই আল্লাহ আপনার দু‘আর বরকতে আমাদেরকে বরকত দিবেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হ্যাঁ, ঠিক আছে। একটি দস্তরখান আনতে বললেন এবং তা বিছালেন, এরপর সকলের উদ্বৃত্ত রসদ চেয়ে পাঠালেন। রাবী বলেন, তখন কেউ একমুঠো গম নিয়ে হাযির হলো, কেউ একমুঠো খেজুর নিয়ে হাযির হলো, কেউ এক টুকরা রুটি নিয়ে আসল, এভাবে কিছু পরিমাণ রসদ-সামগ্রী দস্তরখানায় জমা হলো। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বরকতের দো‘আ করলেন। তারপর বললেন, তোমরা নিজ নিজ পাত্রে রসদপত্র ভর্তি করে নাও। সকলেই নিজ নিজ পাত্র ভরে নিল, এমনকি এ বাহিনীর কোনো পাত্রই আর অপূর্ণ রইল না। এরপর সকলে পরিতৃপ্ত হয়ে আহার করলেন। কিছু উদ্বৃত্তও রয়ে গেল। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাসলেন এবং তাঁর চোয়ালের দাঁত বের হয়েছিল। তিনি বললেন, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া কোনো ইলাহ নেই এবং আমি আল্লাহর প্রেরিত রাসুল-যে ব্যক্তি সন্দেহাতীতভাবে এ কথা দু’টির উপর বিশ্বাস রেখে আল্লাহর কাছে উপস্থিত হবে, কিয়ামতের দিন সে জাহান্নাম থেকে মুক্তি পাবে।[111]

عَنْ سَمُرَةَ بْنِ جُنْدَبٍ، قَالَ: كُنَّا مَعَ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ نَتَدَاوَلُ فِي قَصْعَةٍ مِنْ غُدْوَةٍ حَتَّى اللَّيْلِ يَقُومُ عَشَرَةٌ وَيَقْعُدُ عَشَرَةٌ، قُلْنَا: فَمَا كَانَتْ تُمَدُّ؟ قَالَ: مِنْ أَيِّ شَيْءٍ تَعْجَبُ ‍مَا كَانَتْ تُمَدُّ إِلاَّ مِنْ هَاهُنَا وَأَشَارَ بِيَدِهِ إِلَى السَّمَاءِ.

সামুরাহ ইবন জুনদুব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একবার আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে ছিলাম। আমরা সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত একটি পাত্র থেকে দশজন দশজন করে আহার করতাম। একদল উঠে গেলে আরেক দল এসে বসত। আমরা নিজেরা বললাম, এটা কখনও খালি হবে না। সাহাবী রাবীকে বলেন, তুমি কিসে আশ্চর্য হচ্ছ? সেটা খালি হলেই এখান থেকে পূর্ণ হয়ে যেত, তিনি তাঁর হাত দিয়ে আসমানের দিকে ইশারা করলেন। [112]


 

অষ্টম পরিচ্ছেদ

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নবুওয়তের প্রমাণ:

অল্প পানিতে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বরকত

حَدَّثَنَا أَنَسُ بْنُ مَالِكٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، قَالَ: " خَرَجَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي بَعْضِ مَخَارِجِهِ، وَمَعَهُ نَاسٌ مِنْ أَصْحَابِهِ، فَانْطَلَقُوا يَسِيرُونَ، فَحَضَرَتِ الصَّلاَةُ، فَلَمْ يَجِدُوا مَاءً يَتَوَضَّئُونَ، فَانْطَلَقَ رَجُلٌ مِنَ القَوْمِ، فَجَاءَ بِقَدَحٍ مِنْ مَاءٍ يَسِيرٍ، فَأَخَذَهُ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَتَوَضَّأَ، ثُمَّ مَدَّ أَصَابِعَهُ الأَرْبَعَ عَلَى القَدَحِ ثُمَّ قَالَ: «قُومُوا فَتَوَضَّئُوا» فَتَوَضَّأَ القَوْمُ حَتَّى بَلَغُوا فِيمَا يُرِيدُونَ مِنَ الوَضُوءِ، وَكَانُوا سَبْعِينَ أَوْ نَحْوَهُ ".

আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোনো এক সফরে বের হয়েছিলেন। তাঁর সাথে সাহাবীরাও ছিলেন। তাঁরা চলতে লাগলেন তখন সালাতের সময় হয়ে গেল কিন্তু অজু করার জন্য কোথাও পানি পাওয়া গেল না। কাফিলার এক ব্যক্তি (আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু নিজেই) সামান্য পানিসহ একটি পেয়ালা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট উপস্থিত করলেন। তিনি পেয়ালাটি হাতে নিয়ে তার-ই পানি দিয়ে অজু করলেন এবং তাঁর হাতের চারটি আঙ্গুল পেয়ালার মধ্যে সোজা করে ধরে রাখলেন। আর বললেন, উঠ তোমরা সকলে অজু কর। সকলেই ইচ্ছামত অজু করে নিল। তাদেঁর সংখ্যা সত্তর বা এর কাছাকাছি ছিল। [113]

عَنْ أَنَسٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، قَالَ: أُتِيَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِإِنَاءٍ، وَهُوَ بِالزَّوْرَاءِ، فَوَضَعَ يَدَهُ فِي الإِنَاءِ، «فَجَعَلَ المَاءُ يَنْبُعُ مِنْ بَيْنِ أَصَابِعِهِ، فَتَوَضَّأَ القَوْمُ» قَالَ قَتَادَةُ: قُلْتُ لِأَنَسٍ: كَمْ كُنْتُمْ؟ قَالَ: ثَلاَثَ مِائَةٍ، أَوْ زُهَاءَ ثَلاَثِ مِائَةٍ.

আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট একটি পানির পাত্র আনা হল, তখন তিনি (মদীনার নিকটবর্তী) যাওরা নামক স্থানে অবস্থান করছিলেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর হাত মোবারক ঐ পাত্রে রেখে দিলেন আর তখনই পানি আঙ্গলির ফাঁক দিয়ে উপচে পড়তে লাগল। ঐ পানি দিয়ে উপস্থিত সকলেই অজু করে নিলেন। কাতাদা (রহ.) বলেন, আমি আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুকে জিজ্ঞাসা করলাম, আপনাদের লোক সংখ্যা কত ছিল? আমরা তিন'শ অথবা তিন'শ এর কাছাকাছি ছিলাম। [114]

عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ أَنَّهُ قَالَ: رَأَيْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَحَانَتْ صَلاَةُ العَصْرِ، فَالْتَمَسَ النَّاسُ الوَضُوءَ فَلَمْ يَجِدُوهُ، فَأُتِيَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِوَضُوءٍ، فَوَضَعَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي ذَلِكَ الإِنَاءِ يَدَهُ، وَأَمَرَ النَّاسَ أَنْ يَتَوَضَّئُوا مِنْهُ قَالَ: «فَرَأَيْتُ المَاءَ يَنْبُعُ مِنْ تَحْتِ أَصَابِعِهِ حَتَّى تَوَضَّئُوا مِنْ عِنْدِ آخِرِهِمْ».

আনাস ইবন মালিক রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে দেখলাম, তখন আসরের সালাতের সময় হয়ে গিয়েছিল। আর লোকজন অযূর পানি তালশ করতে লাগল কিন্তু পেলনা। তারপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে কিছু পানি আনা হল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সে পাত্রে তাঁর হাত রাখলেন এবং লোকজনকে সে পাত্র থেকে অযু করতে বললেন। আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, সে সময় আমি দেখলাম, তাঁর আঙ্গুলের নীচ থেকে পানি উথলে উঠছে। এমনকি তাঁদের শেষ ব্যক্তি পর্যন্ত তা দেয়ে উযূ করল। [115]

عَنْ أَنَسٍ قَالَ: حَضَرَتِ الصَّلاَةُ، فَقَامَ مَنْ كَانَ قَرِيبَ الدَّارِ إِلَى أَهْلِهِ، وَبَقِيَ قَوْمٌ، «فَأُتِيَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِمِخْضَبٍ مِنْ حِجَارَةٍ فِيهِ مَاءٌ، فَصَغُرَ المِخْضَبُ أَنْ يَبْسُطَ فِيهِ كَفَّهُ، فَتَوَضَّأَ القَوْمُ كُلُّهُمْ» قُلْنَا: كَمْ كُنْتُمْ؟ قَالَ: «ثَمَانِينَ وَزِيَادَةً».

আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একবার সালাতের সময় উপস্থিত হলে যাঁদের বাড়ী নিকটে ছিল তাঁরা (অযু করার জন্য) বাড়ী চলে গেলেন। আর কিছু লোক রয়ে গেলেন (তাঁদের কোনো অযুর ব্যবস্থা ছিল না)। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জন্য একটি পাথরের পাত্রে পানি আনা হল। পাত্রটি এত ছোট ছিল যে, তার মধ্যে তাঁর উভয় হাত মেলে দেওয়া সম্ভব ছিল না। তা থেকেই কওমের সকল লোক অযু করলেন। আমরা জিজ্ঞাসা করলাম, ‘আপনারা কতজন ছিলেন?’ তিনি বললেন, ‘আশিজন বা আরো বেশী।[116]

عَنْ أَنَسٍ أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ «دَعَا بِإِنَاءٍ مِنْ مَاءٍ، فَأُتِيَ بِقَدَحٍ رَحْرَاحٍ، فِيهِ شَيْءٌ مِنْ مَاءٍ، فَوَضَعَ أَصَابِعَهُ فِيهِ» قَالَ أَنَسٌ: «فَجَعَلْتُ أَنْظُرُ إِلَى المَاءِ يَنْبُعُ مِنْ بَيْنِ أَصَابِعِهِ» قَالَ أَنَسٌ: فَحَزَرْتُ مَنْ تَوَضَّأَ، مَا بَيْنَ السَّبْعِينَ إِلَى الثَّمَانِينَ.

আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একপাত্র পানি চাইলেন। একটি বড় পাত্র তাঁর কাছে আনা হল, তাতে সামান্য পানি ছিল। তারপর তিনি তার মধ্যে তাঁর আঙ্গুল রাখলেন। আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, আমি পানির দিকে তাকাতে লাগলাম। তাঁর আঙ্গুলের ভেতর দিয়ে পানি উথলে উঠতে লাগল। আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, যারা অযু করেছিল, আমি অনুমান করলাম তাদের সংখ্যা ছিল ৭০ থেকে ৮০ জন। [117]

عَنْ عِمْرَانَ، قَالَ: كُنَّا فِي سَفَرٍ مَعَ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، وَإِنَّا أَسْرَيْنَا حَتَّى كُنَّا فِي آخِرِ اللَّيْلِ، وَقَعْنَا وَقْعَةً، وَلاَ وَقْعَةَ أَحْلَى عِنْدَ المُسَافِرِ مِنْهَا، فَمَا أَيْقَظَنَا إِلَّا حَرُّ الشَّمْسِ، وَكَانَ أَوَّلَ مَنِ اسْتَيْقَظَ فُلاَنٌ، ثُمَّ فُلاَنٌ، ثُمَّ فُلاَنٌ - يُسَمِّيهِمْ أَبُو رَجَاءٍ فَنَسِيَ عَوْفٌ ثُمَّ عُمَرُ بْنُ الخَطَّابِ الرَّابِعُ - وَكَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا نَامَ لَمْ يُوقَظْ حَتَّى يَكُونَ هُوَ يَسْتَيْقِظُ، لِأَنَّا لاَ نَدْرِي مَا يَحْدُثُ لَهُ فِي نَوْمِهِ، فَلَمَّا اسْتَيْقَظَ عُمَرُ وَرَأَى مَا أَصَابَ النَّاسَ وَكَانَ رَجُلًا جَلِيدًا، فَكَبَّرَ وَرَفَعَ صَوْتَهُ بِالتَّكْبِيرِ، فَمَا زَالَ يُكَبِّرُ وَيَرْفَعُ صَوْتَهُ بِالتَّكْبِيرِ حَتَّى اسْتَيْقَظَ بِصَوْتِهِ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَلَمَّا اسْتَيْقَظَ شَكَوْا إِلَيْهِ الَّذِي أَصَابَهُمْ، قَالَ: «لاَ ضَيْرَ - أَوْ لاَ يَضِيرُ - ارْتَحِلُوا»، فَارْتَحَلَ، فَسَارَ غَيْرَ بَعِيدٍ، ثُمَّ نَزَلَ فَدَعَا بِالوَضُوءِ، فَتَوَضَّأَ، وَنُودِيَ بِالصَّلاَةِ، فَصَلَّى بِالنَّاسِ، فَلَمَّا انْفَتَلَ مِنْ صَلاَتِهِ إِذَا هُوَ بِرَجُلٍ مُعْتَزِلٍ لَمْ يُصَلِّ مَعَ القَوْمِ، قَالَ: «مَا مَنَعَكَ يَا فُلاَنُ أَنْ تُصَلِّيَ مَعَ القَوْمِ؟» قَالَ: أَصَابَتْنِي جَنَابَةٌ وَلاَ مَاءَ، قَالَ: «عَلَيْكَ بِالصَّعِيدِ، فَإِنَّهُ يَكْفِيكَ»، ثُمَّ سَارَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَاشْتَكَى إِلَيْهِ النَّاسُ مِنَ العَطَشِ، فَنَزَلَ فَدَعَا فُلاَنًا - كَانَ يُسَمِّيهِ أَبُو رَجَاءٍ نَسِيَهُ عَوْفٌ - وَدَعَا عَلِيًّا فَقَالَ: «اذْهَبَا، فَابْتَغِيَا المَاءَ» فَانْطَلَقَا، فَتَلَقَّيَا امْرَأَةً بَيْنَ مَزَادَتَيْنِ - أَوْ سَطِيحَتَيْنِ - مِنْ مَاءٍ عَلَى بَعِيرٍ لَهَا، فَقَالاَ لَهَا: أَيْنَ المَاءُ؟ قَالَتْ: عَهْدِي بِالْمَاءِ أَمْسِ هَذِهِ السَّاعَةَ وَنَفَرُنَا خُلُوفٌ، قَالاَ لَهَا: انْطَلِقِي، إِذًا قَالَتْ: إِلَى أَيْنَ؟ قَالاَ: إِلَى رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قَالَتْ: الَّذِي يُقَالُ لَهُ الصَّابِئُ، قَالاَ: هُوَ الَّذِي تَعْنِينَ، فَانْطَلِقِي، فَجَاءَا بِهَا إِلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، وَحَدَّثَاهُ الحَدِيثَ، قَالَ: فَاسْتَنْزَلُوهَا عَنْ بَعِيرِهَا، وَدَعَا النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِإِنَاءٍ، فَفَرَّغَ فِيهِ مِنْ أَفْوَاهِ المَزَادَتَيْنِ - أَوْ سَطِيحَتَيْنِ - وَأَوْكَأَ أَفْوَاهَهُمَا وَأَطْلَقَ العَزَالِيَ، وَنُودِيَ فِي النَّاسِ اسْقُوا وَاسْتَقُوا، فَسَقَى مَنْ شَاءَ وَاسْتَقَى مَنْ شَاءَ وَكَانَ آخِرُ ذَاكَ أَنْ أَعْطَى الَّذِي أَصَابَتْهُ الجَنَابَةُ إِنَاءً مِنْ مَاءٍ، قَالَ: «اذْهَبْ فَأَفْرِغْهُ عَلَيْكَ»، وَهِيَ قَائِمَةٌ تَنْظُرُ إِلَى مَا يُفْعَلُ بِمَائِهَا، وَايْمُ اللَّهِ لَقَدْ أُقْلِعَ عَنْهَا، وَإِنَّهُ لَيُخَيَّلُ إِلَيْنَا أَنَّهَا أَشَدُّ مِلْأَةً مِنْهَا حِينَ ابْتَدَأَ فِيهَا، فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «اجْمَعُوا لَهَا» فَجَمَعُوا لَهَا مِنْ بَيْنِ عَجْوَةٍ وَدَقِيقَةٍ وَسَوِيقَةٍ حَتَّى جَمَعُوا لَهَا طَعَامًا، فَجَعَلُوهَا فِي ثَوْبٍ وَحَمَلُوهَا عَلَى بَعِيرِهَا وَوَضَعُوا الثَّوْبَ بَيْنَ يَدَيْهَا، قَالَ لَهَا: «تَعْلَمِينَ، مَا رَزِئْنَا مِنْ مَائِكِ شَيْئًا، وَلَكِنَّ اللَّهَ هُوَ الَّذِي أَسْقَانَا»، فَأَتَتْ أَهْلَهَا وَقَدِ احْتَبَسَتْ عَنْهُمْ، قَالُوا: مَا حَبَسَكِ يَا فُلاَنَةُ، قَالَتْ: العَجَبُ لَقِيَنِي رَجُلاَنِ، فَذَهَبَا بِي إِلَى هَذَا الَّذِي يُقَالُ لَهُ الصَّابِئُ فَفَعَلَ كَذَا وَكَذَا، فَوَاللَّهِ إِنَّهُ لَأَسْحَرُ النَّاسِ مِنْ بَيْنِ هَذِهِ وَهَذِهِ، وَقَالَتْ: بِإِصْبَعَيْهَا الوُسْطَى وَالسَّبَّابَةِ، فَرَفَعَتْهُمَا إِلَى السَّمَاءِ - تَعْنِي السَّمَاءَ وَالأَرْضَ - أَوْ إِنَّهُ لَرَسُولُ اللَّهِ حَقًّا، فَكَانَ المُسْلِمُونَ بَعْدَ ذَلِكَ يُغِيرُونَ عَلَى مَنْ حَوْلَهَا مِنَ المُشْرِكِينَ، وَلاَ يُصِيبُونَ الصِّرْمَ الَّذِي هِيَ مِنْهُ، فَقَالَتْ: يَوْمًا لِقَوْمِهَا مَا أُرَى أَنَّ هَؤُلاَءِ القَوْمَ يَدْعُونَكُمْ عَمْدًا، فَهَلْ لَكُمْ فِي الإِسْلاَمِ؟ فَأَطَاعُوهَا، فَدَخَلُوا فِي الإِسْلاَمِ.

‘ইমরান রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সঙ্গে এক সফরে ছিলাম। আমরা রাতে চলতে চলতে শেষরাতে এক স্থনে ঘুমিয়ে পড়লাম। মুসাফিরের জন্য এর চাইতে মধুর ঘুম আর হতে পারে না। (আমরা এমন ঘোর নিদ্রায় নিমগ্ন ছিলাম যে) সূর্যের তাপ ছাড়া অন্য কিছু আমাদের জাগাতে পারেনি। সরবপ্রথম জাগলেন অমুক, তারপর অমুক, তারপর অমুক। (রাবী) আবূ রাজা’ (রহ.) তাঁদের সবাইর নাম নিয়েছিলেন কিন্তু ‘আওফ (রহ.) তাঁদের নাম মনে রাখতে পারেন নি। চতুর্থবারে জেগে ওঠা ব্যক্তি ছিলেন ‘উমর ইবনুল খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘুমালে আমরা কেউ তাঁকে জাগাতাম না, যতখন তা তিনি নিজেই জেগে উঠতেন। কারণ নিদ্রাবস্থায় তাঁর উপর কি অবতীর্ণ হচ্ছে তা তো আমাদের জানা নেই। ‘উমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু জেগে যখন মানুষের অবস্থা দেখলেন, আর তিনি ছিলেন দৃঢ়চিত্ত ব্যক্তি—উচ্চস্বরে তাকবীর বলতে শুরু করলেন। তিনি ক্রমাগত উচ্চস্বরে তাকবীর বলতে লাগলেন। এমন কি তাঁর শব্দে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জেগে উঠলেন। তখন লোকেরা তাঁর কাছে ওজর পেশ করলো। তিনি বললেন, কোনো ক্ষতি নেই বা বললেন, কোনো ক্ষতি হবে না। এখান থেকে চল। তিনি চলতে লাগলেন। কিছু দূর গিয়ে থামলেন। অযুর পানি আনলেন এবং অযু করলেন। সালাতের আযান দেওয়া হল। তিনি লোকদের নিয়ে সালাত আদায় করলেন। সালাত শেষ করে দেখলেন, এক ব্যক্তি পৃথক দাড়িয়ে আছেন। তিনি লোকদের সাথে সালাত আদায় করেননি। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে জিজ্ঞাসা করলেন, হে অমুক! তোমাকে লোকদের সাথে সালাত আদায় করতে কিসে বাধা দিল? তিনি বললেন, আমার উপর গোসল ফরয হয়েছে। অথচ পানি নেই। তিনি বললেন, পবিত্র মাটি নাও (তায়াম্মুম কর), এটাই তোমার জন্য যথেষ্ট। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পুনরায় সফর শুরু করলেন। লোকেরা তাঁকে পিপাসার কষ্ট জানালো। তিনি অবতরণ করলেন, তারপর অমুক ব্যক্তি কে ডাকলেন। (রাবী) আবূ রাজা’ (রহ.) তাঁর নাম উল্লেখ করেছিলেন কিন্তু ‘আওফ (রহ.) তা ভুলে গিয়েছেন। তিনি ‘আলী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুকে ডাকলেন। তারপর উভয়কেই পানি খুঁজে আনতে বললেন। তাঁরা পানির খোঁজে বের হলেন। তাঁরা পথে এক মহিলাকে দুই মশক পানি উটের উপর করে নিতে দেখলেন। তাঁরা জিজ্ঞাসা করলেন, পানি কোথায়? সে বললো, গতকাল এ সময়ে আমি পানির নিকটে ছিলাম। আমার পাত্র পেছনে রয়ে গেছে। তাঁরা বললেন, এখন আমাদের সঙ্গে চলো। সে বললো, কোথায়? তাঁরা বললেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট। সেই লোকটির কাছে যাকে সাবি’ (ধর্ম পরিবর্তনকারী) বলা হয়? তাঁরা বললেন, হ্যাঁ, তোমরা যাকে এই বলে থাক। আচ্ছা এখন চল। তাঁরা তাকে নিয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে এলেন এবং সমস্ত ঘটনা খুলে বললেন। ‘ইমরান রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, লোকেরা স্ত্রীলোকটিকে তাঁর উট থেকে নামালেন। তারপর রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটি পাত্র আনতে বললেন এবং উভয় মশকের মুখ খুলে তাতে পানি ঢাললেন এবং সেগুলোর মুখ বন্ধ করে দিলেন। তারপর সে মশকের নীচের মুখ খুলে দিয়ে লোকদের মধ্যে পানি পান করার ও জন্তু-জানোয়ারকে পানি পান করানোর ঘোষণা দিলেন। তাঁদের মধ্যে যার ইচ্ছা পানি পান করলেন ও জন্তুকে পান করালেন। অবশেষে যে ব্যক্তির গোসলের দরকার ছিল, তাকে এক পাত্র পানি দিয়ে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এ পানি নিয়ে যাও এবং গোসল সার। ঐ মহিলা দাঁড়িয়ে দেখছিল যে তাঁর পানি নিয়ে কি করা হচ্ছে। আল্লাহর কসম! যখন তাঁর থেকে পানি নেওয়া শেষ হলো তখন আমাদের মনে হলো, মশকগুলো পুরবাপেক্ষা অধিক ভর্তি। তারপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, মহিলার জন্য কিছু একত্র কর। লোকেরা মহিলার জন্য আজওয়া (বিশেষ খেজুর), আটা ও ছাতু এনে একত্র করলেন। যখন তাঁরা উল্লেখযোগ্য পরিমাণ খাদ্যসামগ্রী জমা করলেন, তখন তা একটা কাপড়ে বেধে মহিলাকে উটের উপর সওয়ার করালেন এবং তাঁর সামনে কাপড়ে বাঁধা গাঁটরিটি রেখে দিলেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তুমি জান যে, আমরা তোমার পানি মোটেই কম করিনি; বরং আল্লাহ তা‘আলাই আমাদের পানি পান করিয়েছেন। এরপর সে তাঁর পরিজনের কাছে ফিরে গেল। তাঁর বেশ দেরি হয়েছিল। পরিবারের লোকজন তাঁকে জিজ্ঞেসা করল, হে অমুক! তোমার এত দেরি হল কেন? উত্তরে সে বললো একটা আশ্চার্যজনক ঘটনা! দু’জন লোকের সাথে আমার দেখা হয়েছিল। তাঁরা আমাকে সেই লোকটির কাছে নিয়ে গিয়েছিল, যকে সাবি’ বলা হয়। আর সেখানে সে এসব করল। এ বলে সে মধ্যমা ও তর্যনী আঙ্গুল দিয়ে আসমান ও যমীনের দিকে ইশারা করে বলল, আল্লাহর কসম! সে এ দু’টির সবচাইতে বড় জাদুকর, নয় তো সে বাস্তবিকই আল্লাহর রাসূল। এ ঘটনার পর মুসলিমরা ওই মহিলার গোত্রের আশেপাশের মুশরিকদের উপর হামলা করতেন কিন্তু মহিলার সাথে সম্পর্কযুক্ত গোত্রের কোনো ক্ষতি করতেন না। এসব দেখে কি তোমরা ইসলামের প্রতি আকৃষ্ট হবে না? তাঁরা সবাই মহিলাটির কথা মেনে নিল এবং ইসলামে দাখিল হয়ে গেল।[118]

عَنِ المِسْوَرِ بْنِ مَخْرَمَةَ، وَمَرْوَانَ، يُصَدِّقُ كُلُّ وَاحِدٍ مِنْهُمَا حَدِيثَ صَاحِبِهِ، قَالاَ: خَرَجَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ زَمَنَ الحُدَيْبِيَةِ حَتَّى إِذَا كَانُوا بِبَعْضِ الطَّرِيقِ، قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِنَّ خَالِدَ بْنَ الوَلِيدِ بِالْغَمِيمِ فِي خَيْلٍ لِقُرَيْشٍ طَلِيعَةٌ، فَخُذُوا ذَاتَ اليَمِينِ» فَوَاللَّهِ مَا شَعَرَ بِهِمْ خَالِدٌ حَتَّى إِذَا هُمْ بِقَتَرَةِ الجَيْشِ، فَانْطَلَقَ يَرْكُضُ نَذِيرًا لِقُرَيْشٍ، وَسَارَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ حَتَّى إِذَا كَانَ بِالثَّنِيَّةِ الَّتِي يُهْبَطُ عَلَيْهِمْ مِنْهَا بَرَكَتْ بِهِ رَاحِلَتُهُ، فَقَالَ النَّاسُ: حَلْ حَلْ فَأَلَحَّتْ، فَقَالُوا: خَلَأَتْ القَصْوَاءُ، خَلَأَتْ القَصْوَاءُ، فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَا خَلَأَتْ القَصْوَاءُ، وَمَا ذَاكَ لَهَا بِخُلُقٍ، وَلَكِنْ حَبَسَهَا حَابِسُ الفِيلِ»، ثُمَّ قَالَ: «وَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ، لاَ يَسْأَلُونِي خُطَّةً يُعَظِّمُونَ فِيهَا حُرُمَاتِ اللَّهِ إِلَّا أَعْطَيْتُهُمْ إِيَّاهَا»، ثُمَّ زَجَرَهَا فَوَثَبَتْ، قَالَ: فَعَدَلَ عَنْهُمْ حَتَّى نَزَلَ بِأَقْصَى الحُدَيْبِيَةِ عَلَى ثَمَدٍ قَلِيلِ المَاءِ، يَتَبَرَّضُهُ النَّاسُ تَبَرُّضًا، فَلَمْ يُلَبِّثْهُ النَّاسُ حَتَّى نَزَحُوهُ وَشُكِيَ إِلَى رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ العَطَشُ، فَانْتَزَعَ سَهْمًا مِنْ كِنَانَتِهِ، ثُمَّ أَمَرَهُمْ أَنْ يَجْعَلُوهُ فِيهِ، فَوَاللَّهِ مَا زَالَ يَجِيشُ لَهُمْ بِالرِّيِّ حَتَّى صَدَرُوا عَنْهُ، فَبَيْنَمَا هُمْ كَذَلِكَ إِذْ جَاءَ بُدَيْلُ بْنُ وَرْقَاءَ الخُزَاعِيُّ فِي نَفَرٍ مِنْ قَوْمِهِ مِنْ خُزَاعَةَ، وَكَانُوا عَيْبَةَ نُصْحِ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مِنْ أَهْلِ تِهَامَةَ، فَقَالَ: إِنِّي تَرَكْتُ كَعْبَ بْنَ لُؤَيٍّ، وَعَامِرَ بْنَ لُؤَيٍّ نَزَلُوا أَعْدَادَ مِيَاهِ الحُدَيْبِيَةِ، وَمَعَهُمُ العُوذُ المَطَافِيلُ، وَهُمْ مُقَاتِلُوكَ وَصَادُّوكَ عَنِ البَيْتِ، فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: " إِنَّا لَمْ نَجِئْ لِقِتَالِ أَحَدٍ، وَلَكِنَّا جِئْنَا مُعْتَمِرِينَ، وَإِنَّ قُرَيْشًا قَدْ نَهِكَتْهُمُ الحَرْبُ، وَأَضَرَّتْ بِهِمْ، فَإِنْ شَاءُوا مَادَدْتُهُمْ مُدَّةً، وَيُخَلُّوا بَيْنِي وَبَيْنَ النَّاسِ، فَإِنْ أَظْهَرْ: فَإِنْ شَاءُوا أَنْ يَدْخُلُوا فِيمَا دَخَلَ فِيهِ النَّاسُ فَعَلُوا، وَإِلَّا فَقَدْ جَمُّوا، وَإِنْ هُمْ أَبَوْا، فَوَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ لَأُقَاتِلَنَّهُمْ عَلَى أَمْرِي هَذَا حَتَّى تَنْفَرِدَ سَالِفَتِي، وَلَيُنْفِذَنَّ اللَّهُ أَمْرَهُ "، فَقَالَ بُدَيْلٌ: سَأُبَلِّغُهُمْ مَا تَقُولُ، قَالَ: فَانْطَلَقَ حَتَّى أَتَى قُرَيْشًا، قَالَ: إِنَّا قَدْ جِئْنَاكُمْ مِنْ هَذَا الرَّجُلِ وَسَمِعْنَاهُ يَقُولُ قَوْلًا، فَإِنْ شِئْتُمْ أَنْ نَعْرِضَهُ عَلَيْكُمْ فَعَلْنَا، فَقَالَ سُفَهَاؤُهُمْ: لاَ حَاجَةَ لَنَا أَنْ تُخْبِرَنَا عَنْهُ بِشَيْءٍ، وَقَالَ ذَوُو الرَّأْيِ مِنْهُمْ: هَاتِ مَا سَمِعْتَهُ يَقُولُ، قَالَ: سَمِعْتُهُ يَقُولُ كَذَا وَكَذَا، فَحَدَّثَهُمْ بِمَا قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَقَامَ عُرْوَةُ بْنُ مَسْعُودٍ فَقَالَ: أَيْ قَوْمِ، أَلَسْتُمْ بِالوَالِدِ؟ قَالُوا: بَلَى، قَالَ: أَوَلَسْتُ بِالوَلَدِ؟ قَالُوا: بَلَى، قَالَ: فَهَلْ تَتَّهِمُونِي؟ قَالُوا: لاَ، قَالَ: أَلَسْتُمْ تَعْلَمُونَ أَنِّي اسْتَنْفَرْتُ أَهْلَ عُكَاظَ، فَلَمَّا بَلَّحُوا عَلَيَّ جِئْتُكُمْ بِأَهْلِي وَوَلَدِي وَمَنْ أَطَاعَنِي؟ قَالُوا: بَلَى، قَالَ: فَإِنَّ هَذَا قَدْ عَرَضَ لَكُمْ خُطَّةَ رُشْدٍ، اقْبَلُوهَا وَدَعُونِي آتِيهِ، قَالُوا: ائْتِهِ، فَأَتَاهُ، فَجَعَلَ يُكَلِّمُ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ نَحْوًا مِنْ قَوْلِهِ لِبُدَيْلٍ، فَقَالَ عُرْوَةُ عِنْدَ ذَلِكَ: أَيْ مُحَمَّدُ أَرَأَيْتَ إِنِ اسْتَأْصَلْتَ أَمْرَ قَوْمِكَ، هَلْ سَمِعْتَ بِأَحَدٍ مِنَ العَرَبِ اجْتَاحَ أَهْلَهُ قَبْلَكَ، وَإِنْ تَكُنِ الأُخْرَى، فَإِنِّي وَاللَّهِ لَأَرَى وُجُوهًا، وَإِنِّي لَأَرَى أَوْشَابًا مِنَ النَّاسِ خَلِيقًا أَنْ يَفِرُّوا وَيَدَعُوكَ، فَقَالَ لَهُ أَبُو بَكْرٍ الصِّدِّيقُ: امْصُصْ بِبَظْرِ اللَّاتِ، أَنَحْنُ نَفِرُّ عَنْهُ وَنَدَعُهُ؟ فَقَالَ: مَنْ ذَا؟ قَالُوا: أَبُو بَكْرٍ، قَالَ: أَمَا وَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ، لَوْلاَ يَدٌ كَانَتْ لَكَ عِنْدِي لَمْ أَجْزِكَ بِهَا لَأَجَبْتُكَ، قَالَ: وَجَعَلَ يُكَلِّمُ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَكُلَّمَا تَكَلَّمَ أَخَذَ بِلِحْيَتِهِ، وَالمُغِيرَةُ بْنُ شُعْبَةَ قَائِمٌ عَلَى رَأْسِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، وَمَعَهُ السَّيْفُ وَعَلَيْهِ المِغْفَرُ، فَكُلَّمَا أَهْوَى عُرْوَةُ بِيَدِهِ إِلَى لِحْيَةِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ضَرَبَ يَدَهُ بِنَعْلِ السَّيْفِ، وَقَالَ لَهُ: أَخِّرْ يَدَكَ عَنْ لِحْيَةِ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَرَفَعَ عُرْوَةُ رَأْسَهُ، فَقَالَ: مَنْ هَذَا؟ قَالُوا: المُغِيرَةُ بْنُ شُعْبَةَ، فَقَالَ: أَيْ غُدَرُ، أَلَسْتُ أَسْعَى فِي غَدْرَتِكَ؟ وَكَانَ المُغِيرَةُ صَحِبَ قَوْمًا فِي الجَاهِلِيَّةِ فَقَتَلَهُمْ، وَأَخَذَ أَمْوَالَهُمْ، ثُمَّ جَاءَ فَأَسْلَمَ، فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «أَمَّا الإِسْلاَمَ فَأَقْبَلُ، وَأَمَّا المَالَ فَلَسْتُ مِنْهُ فِي شَيْءٍ»، ثُمَّ إِنَّ عُرْوَةَ جَعَلَ يَرْمُقُ أَصْحَابَ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِعَيْنَيْهِ، قَالَ: فَوَاللَّهِ مَا تَنَخَّمَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ نُخَامَةً إِلَّا وَقَعَتْ فِي كَفِّ رَجُلٍ مِنْهُمْ، فَدَلَكَ بِهَا وَجْهَهُ وَجِلْدَهُ، وَإِذَا أَمَرَهُمْ ابْتَدَرُوا أَمْرَهُ، وَإِذَا تَوَضَّأَ كَادُوا يَقْتَتِلُونَ عَلَى وَضُوئِهِ، وَإِذَا تَكَلَّمَ خَفَضُوا أَصْوَاتَهُمْ عِنْدَهُ، وَمَا يُحِدُّونَ إِلَيْهِ النَّظَرَ تَعْظِيمًا لَهُ، فَرَجَعَ عُرْوَةُ إِلَى أَصْحَابِهِ، فَقَالَ: أَيْ قَوْمِ، وَاللَّهِ لَقَدْ وَفَدْتُ عَلَى المُلُوكِ، وَوَفَدْتُ عَلَى قَيْصَرَ، وَكِسْرَى، وَالنَّجَاشِيِّ، وَاللَّهِ إِنْ رَأَيْتُ مَلِكًا قَطُّ يُعَظِّمُهُ أَصْحَابُهُ مَا يُعَظِّمُ أَصْحَابُ مُحَمَّدٍ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مُحَمَّدًا، وَاللَّهِ إِنْ تَنَخَّمَ نُخَامَةً إِلَّا وَقَعَتْ فِي كَفِّ رَجُلٍ مِنْهُمْ، فَدَلَكَ بِهَا وَجْهَهُ وَجِلْدَهُ، وَإِذَا أَمَرَهُمْ ابْتَدَرُوا أَمْرَهُ، وَإِذَا تَوَضَّأَ كَادُوا يَقْتَتِلُونَ عَلَى وَضُوئِهِ، وَإِذَا تَكَلَّمَ خَفَضُوا أَصْوَاتَهُمْ عِنْدَهُ، وَمَا يُحِدُّونَ إِلَيْهِ النَّظَرَ تَعْظِيمًا لَهُ، وَإِنَّهُ قَدْ عَرَضَ عَلَيْكُمْ خُطَّةَ رُشْدٍ فَاقْبَلُوهَا، فَقَالَ رَجُلٌ مِنْ بَنِي كِنَانَةَ: دَعُونِي آتِيهِ، فَقَالُوا: ائْتِهِ، فَلَمَّا أَشْرَفَ عَلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَأَصْحَابِهِ، قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «هَذَا فُلاَنٌ، وَهُوَ مِنْ قَوْمٍ يُعَظِّمُونَ البُدْنَ، فَابْعَثُوهَا لَهُ» فَبُعِثَتْ لَهُ، وَاسْتَقْبَلَهُ النَّاسُ يُلَبُّونَ، فَلَمَّا رَأَى ذَلِكَ قَالَ: سُبْحَانَ اللَّهِ، مَا يَنْبَغِي لِهَؤُلاَءِ أَنْ يُصَدُّوا عَنِ البَيْتِ، فَلَمَّا رَجَعَ إِلَى أَصْحَابِهِ، قَالَ: رَأَيْتُ البُدْنَ قَدْ قُلِّدَتْ وَأُشْعِرَتْ، فَمَا أَرَى أَنْ يُصَدُّوا عَنِ البَيْتِ، فَقَامَ رَجُلٌ مِنْهُمْ يُقَالُ لَهُ مِكْرَزُ بْنُ حَفْصٍ، فَقَالَ: دَعُونِي آتِيهِ، فَقَالُوا: ائْتِهِ، فَلَمَّا أَشْرَفَ عَلَيْهِمْ، قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «هَذَا مِكْرَزٌ، وَهُوَ رَجُلٌ فَاجِرٌ»، فَجَعَلَ يُكَلِّمُ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَبَيْنَمَا هُوَ يُكَلِّمُهُ إِذْ جَاءَ سُهَيْلُ بْنُ عَمْرٍو، قَالَ مَعْمَرٌ: فَأَخْبَرَنِي أَيُّوبُ، عَنْ عِكْرِمَةَ أَنَّهُ لَمَّا جَاءَ سُهَيْلُ بْنُ عَمْرٍو، قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «لَقَدْ سَهُلَ لَكُمْ مِنْ أَمْرِكُمْ» قَالَ مَعْمَرٌ: قَالَ الزُّهْرِيُّ فِي حَدِيثِهِ: فَجَاءَ سُهَيْلُ بْنُ عَمْرٍو فَقَالَ: هَاتِ اكْتُبْ بَيْنَنَا وَبَيْنَكُمْ كِتَابًا فَدَعَا النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الكَاتِبَ، فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيمِ»، قَالَ سُهَيْلٌ: أَمَّا الرَّحْمَنُ، فَوَاللَّهِ مَا أَدْرِي مَا هُوَ وَلَكِنِ اكْتُبْ بِاسْمِكَ اللَّهُمَّ كَمَا كُنْتَ تَكْتُبُ، فَقَالَ المُسْلِمُونَ: وَاللَّهِ لاَ نَكْتُبُهَا إِلَّا بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيمِ، فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «اكْتُبْ بِاسْمِكَ اللَّهُمَّ» ثُمَّ قَالَ: «هَذَا مَا قَاضَى عَلَيْهِ مُحَمَّدٌ رَسُولُ اللَّهِ»، فَقَالَ سُهَيْلٌ: وَاللَّهِ لَوْ كُنَّا نَعْلَمُ أَنَّكَ رَسُولُ اللَّهِ مَا صَدَدْنَاكَ عَنِ البَيْتِ، وَلاَ قَاتَلْنَاكَ، وَلَكِنِ اكْتُبْ مُحَمَّدُ بْنُ عَبْدِ اللَّهِ، فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «وَاللَّهِ إِنِّي لَرَسُولُ اللَّهِ، وَإِنْ كَذَّبْتُمُونِي، اكْتُبْ مُحَمَّدُ بْنُ عَبْدِ اللَّهِ» - قَالَ الزُّهْرِيُّ: وَذَلِكَ لِقَوْلِهِ: «لاَ يَسْأَلُونِي خُطَّةً يُعَظِّمُونَ فِيهَا حُرُمَاتِ اللَّهِ إِلَّا أَعْطَيْتُهُمْ إِيَّاهَا» - فَقَالَ لَهُ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «عَلَى أَنْ تُخَلُّوا بَيْنَنَا وَبَيْنَ البَيْتِ، فَنَطُوفَ بِهِ»، فَقَالَ سُهَيْلٌ: وَاللَّهِ لاَ تَتَحَدَّثُ العَرَبُ أَنَّا أُخِذْنَا ضُغْطَةً، وَلَكِنْ ذَلِكَ مِنَ العَامِ المُقْبِلِ، فَكَتَبَ، فَقَالَ سُهَيْلٌ: وَعَلَى أَنَّهُ لاَ يَأْتِيكَ مِنَّا رَجُلٌ وَإِنْ كَانَ عَلَى دِينِكَ إِلَّا رَدَدْتَهُ إِلَيْنَا، قَالَ المُسْلِمُونَ: سُبْحَانَ اللَّهِ، كَيْفَ يُرَدُّ إِلَى المُشْرِكِينَ وَقَدْ جَاءَ مُسْلِمًا؟ فَبَيْنَمَا هُمْ كَذَلِكَ إِذْ دَخَلَ أَبُو جَنْدَلِ بْنُ سُهَيْلِ بْنِ عَمْرٍو يَرْسُفُ فِي قُيُودِهِ، وَقَدْ خَرَجَ مِنْ أَسْفَلِ مَكَّةَ حَتَّى رَمَى بِنَفْسِهِ بَيْنَ أَظْهُرِ المُسْلِمِينَ، فَقَالَ سُهَيْلٌ: هَذَا يَا مُحَمَّدُ أَوَّلُ مَا أُقَاضِيكَ عَلَيْهِ أَنْ تَرُدَّهُ إِلَيَّ، فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِنَّا لَمْ نَقْضِ الكِتَابَ بَعْدُ»، قَالَ: فَوَاللَّهِ إِذًا لَمْ أُصَالِحْكَ عَلَى شَيْءٍ أَبَدًا، قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «فَأَجِزْهُ لِي»، قَالَ: مَا أَنَا بِمُجِيزِهِ لَكَ، قَالَ: «بَلَى فَافْعَلْ»، قَالَ: مَا أَنَا بِفَاعِلٍ، قَالَ مِكْرَزٌ: بَلْ قَدْ أَجَزْنَاهُ لَكَ، قَالَ أَبُو جَنْدَلٍ: أَيْ مَعْشَرَ المُسْلِمِينَ، أُرَدُّ إِلَى المُشْرِكِينَ وَقَدْ جِئْتُ مُسْلِمًا، أَلاَ تَرَوْنَ مَا قَدْ لَقِيتُ؟ وَكَانَ قَدْ عُذِّبَ عَذَابًا شَدِيدًا فِي اللَّهِ، قَالَ: فَقَالَ عُمَرُ بْنُ الخَطَّابِ: فَأَتَيْتُ نَبِيَّ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقُلْتُ: أَلَسْتَ نَبِيَّ اللَّهِ حَقًّا، قَالَ: «بَلَى»، قُلْتُ: أَلَسْنَا عَلَى الحَقِّ، وَعَدُوُّنَا عَلَى البَاطِلِ، قَالَ: «بَلَى»، قُلْتُ: فَلِمَ نُعْطِي الدَّنِيَّةَ فِي دِينِنَا إِذًا؟ قَالَ: «إِنِّي رَسُولُ اللَّهِ، وَلَسْتُ أَعْصِيهِ، وَهُوَ نَاصِرِي»، قُلْتُ: أَوَلَيْسَ كُنْتَ تُحَدِّثُنَا أَنَّا سَنَأْتِي البَيْتَ فَنَطُوفُ بِهِ؟ قَالَ: «بَلَى، فَأَخْبَرْتُكَ أَنَّا نَأْتِيهِ العَامَ»، قَالَ: قُلْتُ: لاَ، قَالَ: «فَإِنَّكَ آتِيهِ وَمُطَّوِّفٌ بِهِ»، قَالَ: فَأَتَيْتُ أَبَا بَكْرٍ فَقُلْتُ: يَا أَبَا بَكْرٍ أَلَيْسَ هَذَا نَبِيَّ اللَّهِ حَقًّا؟ قَالَ: بَلَى، قُلْتُ: أَلَسْنَا عَلَى الحَقِّ وَعَدُوُّنَا عَلَى البَاطِلِ؟ قَالَ: بَلَى، قُلْتُ: فَلِمَ نُعْطِي الدَّنِيَّةَ فِي دِينِنَا إِذًا؟ قَالَ: أَيُّهَا الرَّجُلُ إِنَّهُ لَرَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، وَلَيْسَ يَعْصِي رَبَّهُ، وَهُوَ نَاصِرُهُ، فَاسْتَمْسِكْ بِغَرْزِهِ، فَوَاللَّهِ إِنَّهُ عَلَى الحَقِّ، قُلْتُ: أَلَيْسَ كَانَ يُحَدِّثُنَا أَنَّا سَنَأْتِي البَيْتَ وَنَطُوفُ بِهِ؟ قَالَ: بَلَى، أَفَأَخْبَرَكَ أَنَّكَ تَأْتِيهِ العَامَ؟ قُلْتُ: لاَ، قَالَ: فَإِنَّكَ آتِيهِ وَمُطَّوِّفٌ بِهِ، - قَالَ الزُّهْرِيُّ: قَالَ عُمَرُ -: فَعَمِلْتُ لِذَلِكَ أَعْمَالًا، قَالَ: فَلَمَّا فَرَغَ مِنْ قَضِيَّةِ الكِتَابِ، قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لِأَصْحَابِهِ: «قُومُوا فَانْحَرُوا ثُمَّ احْلِقُوا»، قَالَ: فَوَاللَّهِ مَا قَامَ مِنْهُمْ رَجُلٌ حَتَّى قَالَ ذَلِكَ ثَلاَثَ مَرَّاتٍ، فَلَمَّا لَمْ يَقُمْ مِنْهُمْ أَحَدٌ دَخَلَ عَلَى أُمِّ سَلَمَةَ، فَذَكَرَ لَهَا مَا لَقِيَ مِنَ النَّاسِ، فَقَالَتْ أُمُّ سَلَمَةَ: يَا نَبِيَّ اللَّهِ، أَتُحِبُّ ذَلِكَ، اخْرُجْ ثُمَّ لاَ تُكَلِّمْ أَحَدًا مِنْهُمْ كَلِمَةً، حَتَّى تَنْحَرَ بُدْنَكَ، وَتَدْعُوَ حَالِقَكَ فَيَحْلِقَكَ، فَخَرَجَ فَلَمْ يُكَلِّمْ أَحَدًا مِنْهُمْ حَتَّى فَعَلَ ذَلِكَ نَحَرَ بُدْنَهُ، وَدَعَا حَالِقَهُ فَحَلَقَهُ، فَلَمَّا رَأَوْا ذَلِكَ قَامُوا، فَنَحَرُوا وَجَعَلَ بَعْضُهُمْ يَحْلِقُ بَعْضًا حَتَّى كَادَ بَعْضُهُمْ يَقْتُلُ بَعْضًا غَمًّا، ثُمَّ جَاءَهُ نِسْوَةٌ مُؤْمِنَاتٌ فَأَنْزَلَ اللَّهُ تَعَالَى: {يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِذَا جَاءَكُمُ المُؤْمِنَاتُ مُهَاجِرَاتٍ فَامْتَحِنُوهُنَّ} [الممتحنة: 10] حَتَّى بَلَغَ بِعِصَمِ الكَوَافِرِ فَطَلَّقَ عُمَرُ يَوْمَئِذٍ امْرَأَتَيْنِ، كَانَتَا لَهُ فِي الشِّرْكِ فَتَزَوَّجَ إِحْدَاهُمَا مُعَاوِيَةُ بْنُ أَبِي سُفْيَانَ، وَالأُخْرَى صَفْوَانُ بْنُ أُمَيَّةَ، ثُمَّ رَجَعَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِلَى المَدِينَةِ، فَجَاءَهُ أَبُو بَصِيرٍ رَجُلٌ مِنْ قُرَيْشٍ وَهُوَ مُسْلِمٌ، فَأَرْسَلُوا فِي طَلَبِهِ رَجُلَيْنِ، فَقَالُوا: العَهْدَ الَّذِي جَعَلْتَ لَنَا، فَدَفَعَهُ إِلَى الرَّجُلَيْنِ، فَخَرَجَا بِهِ حَتَّى بَلَغَا ذَا الحُلَيْفَةِ، فَنَزَلُوا يَأْكُلُونَ مِنْ تَمْرٍ لَهُمْ، فَقَالَ أَبُو بَصِيرٍ لِأَحَدِ الرَّجُلَيْنِ: وَاللَّهِ إِنِّي لَأَرَى سَيْفَكَ هَذَا يَا فُلاَنُ جَيِّدًا، فَاسْتَلَّهُ الآخَرُ، فَقَالَ: أَجَلْ، وَاللَّهِ إِنَّهُ لَجَيِّدٌ، لَقَدْ جَرَّبْتُ بِهِ، ثُمَّ جَرَّبْتُ، فَقَالَ أَبُو بَصِيرٍ: أَرِنِي أَنْظُرْ إِلَيْهِ، فَأَمْكَنَهُ مِنْهُ، فَضَرَبَهُ حَتَّى بَرَدَ، وَفَرَّ الآخَرُ حَتَّى أَتَى المَدِينَةَ، فَدَخَلَ المَسْجِدَ يَعْدُو، فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ حِينَ رَآهُ: «لَقَدْ رَأَى هَذَا ذُعْرًا» فَلَمَّا انْتَهَى إِلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: قُتِلَ وَاللَّهِ صَاحِبِي وَإِنِّي لَمَقْتُولٌ، فَجَاءَ أَبُو بَصِيرٍ فَقَالَ: يَا نَبِيَّ اللَّهِ، قَدْ وَاللَّهِ أَوْفَى اللَّهُ ذِمَّتَكَ، قَدْ رَدَدْتَنِي إِلَيْهِمْ، ثُمَّ أَنْجَانِي اللَّهُ مِنْهُمْ، قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «وَيْلُ أُمِّهِ مِسْعَرَ حَرْبٍ، لَوْ كَانَ لَهُ أَحَدٌ» فَلَمَّا سَمِعَ ذَلِكَ عَرَفَ أَنَّهُ سَيَرُدُّهُ إِلَيْهِمْ، فَخَرَجَ حَتَّى أَتَى سِيفَ البَحْرِ قَالَ: وَيَنْفَلِتُ مِنْهُمْ أَبُو جَنْدَلِ بْنُ سُهَيْلٍ، فَلَحِقَ بِأَبِي بَصِيرٍ، فَجَعَلَ لاَ يَخْرُجُ مِنْ قُرَيْشٍ رَجُلٌ قَدْ أَسْلَمَ إِلَّا لَحِقَ بِأَبِي بَصِيرٍ، حَتَّى اجْتَمَعَتْ مِنْهُمْ عِصَابَةٌ، فَوَاللَّهِ مَا يَسْمَعُونَ بِعِيرٍ خَرَجَتْ لِقُرَيْشٍ إِلَى الشَّأْمِ إِلَّا اعْتَرَضُوا لَهَا، فَقَتَلُوهُمْ وَأَخَذُوا أَمْوَالَهُمْ، فَأَرْسَلَتْ قُرَيْشٌ إِلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ تُنَاشِدُهُ بِاللَّهِ وَالرَّحِمِ، لَمَّا أَرْسَلَ، فَمَنْ أَتَاهُ فَهُوَ آمِنٌ، فَأَرْسَلَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِلَيْهِمْ، فَأَنْزَلَ اللَّهُ تَعَالَى: {وَهُوَ الَّذِي كَفَّ أَيْدِيَهُمْ عَنْكُمْ وَأَيْدِيَكُمْ عَنْهُمْ بِبَطْنِ مَكَّةَ مِنْ بَعْدِ أَنْ أَظْفَرَكُمْ عَلَيْهِمْ} [الفتح: 24] حَتَّى بَلَغَ {الحَمِيَّةَ حَمِيَّةَ الجَاهِلِيَّةِ} [الفتح: 26] وَكَانَتْ حَمِيَّتُهُمْ أَنَّهُمْ لَمْ يُقِرُّوا أَنَّهُ نَبِيُّ اللَّهِ، وَلَمْ يُقِرُّوا بِبِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيمِ، وَحَالُوا بَيْنَهُمْ وَبَيْنَ البَيْتِ".

মিসওয়ার ইবন মাখরামা ও মারওয়ান রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা থেকে বর্ণিত, তাদের উভয়ের একজনের বর্ণনা অপরজনের বর্ণনার সমর্থন করে, তারা বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হুদায়বিয়ার সময় বের হলেন। যখন সাহাবীগন রাস্তার এক জায়গায় এসে পৌঁছলেন, তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘খালিদ ইবন ওয়ালিদ কুরাইশদের অশ্বারোহী অগ্রগামী বাহিনী নিয়ে গামিম নামক স্থানে অবস্থান করছে। তোমরা ডান দিকে চল’ আল্লাহর কসম! খালিদ মুসলিমদের উপস্থিতি টেরও পেলো না, এমনকি যখন তারা মুসলিম সেনাবাহিনীর পশ্চাতে ধূলিরাশি দেখতে পেল, তখন সে কুরাইশদের সংবাদ দেওয়ার জন্য ঘোড়া দৌড়িয়ে চলে গেল। এদিকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অগ্রসর হয়ে যখন সেই গিরিপথে পৌঁছলেন, যেখান থেকে মক্কার সোজা পথ চলে গিয়েছে, তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উটনী বসে পড়ল। লোকজন তাকে (উঠাবার জন্য) ‘হাল-হাল’ বলল, কাসওয়া ক্লান্ত হয়ে পড়েছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘কাসওয়া ক্লান্ত হয়নি এবং তা তার স্বভাবও নয় বরং তাকে তিনিই আটকিয়েছেন যিনি হাতি বাহিনীকে আটকিয়েছিলেন।’ তারপর তিনি বললেন, ‘সেই সত্তার কসম, যাঁর হাততে আমার প্রাণ‘ কুরাইশরা আল্লাহর সম্মানিত বিষয়সমূহের মধ্যে যে কোনো বিষয়ের সম্মান প্রদর্শনার্থে কিছু চাইলে আমি তা পূরণ করব।’ এরপর তিনি তাঁর উষ্টিকে ধমক দিলে সে উঠে দাঁড়াল। রাবী বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের পথ ত্যাগ করে হুদায়বিয়ার শেষ প্রান্তে অল্প পানি বিশিষ্ট কূপের কাছে অবতরণ করেন। লোকজন তা থেকে অল্প-অল্প পানি নিচ্ছিল। এভাবে কিছুক্ষনের মধ্যেই লোকজন পানি শেষ করে ফেলল এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট পিপাসার অভিযোগ করা হলো। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর কোষ থেকে একটি তীর বের করলেন এবং সেই তীরটি সেই কূপে নিক্ষেপ করার নির্দেশ দেন। আল্লাহর কসম! তখন পানি উপচে উঠতে লাগল, এমনকি সকলেই তৃপ্তি সহকারে পানি পান করলেন। এমন সময় বুদাইল ইবন ওয়ারকা আল-খুযাঈ তার খুযা‘আ গোত্রের কিছু লোক নিয়ে এলো। তারা তিহামাবাসীদের মধ্যে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আন্তরিক হিতাকাঙ্খি ছিল। বুদাইল বলল, আমি কাব ইবন লুওহাই ও আমির ইবন লুওহাইকে রেখে এসেছি। তারা হুদায়বিয়ার প্রচুর পানির নিকট অবস্থান করছে। তাদের সঙ্গে রয়েছে সাবকসহ দুগ্ধবতী অনেক উষ্ট্রী। তারা আপনার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে ও বাইতুল্লাহ যিয়ারতে বাধা প্রদান করতে প্রস্তুত। রাসূরুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘আমি তো কারো সঙ্গে যুদ্ধ করতে আসিনি; বরং উমরা করতে এসেছি। যুদ্ধ নিঃসন্দেহে কুরাইশদের দূর্বল করে ফেলেছে, ফলে তারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তারা যদি চায়, তবে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য তাদের সঙ্গে সন্ধি করতে পারি আর তারা আমার ও কাফিরদের মধ্যকার বাধা তুলে নিবে। যদি আমি তাদের উপর জয়ী হয় তবে অন্যান্য লোক ইসলামে যেভাবে প্রবেশ করেছে, তারাও চাইলে তা করতে পারবে। আর না হয়, তারা এসময়টুকুতে শান্তিতে থাকবে। কিন্তু তারা যদি আমার প্রস্তাব অস্বীকার করে, তা হলে সেই সত্তার কসম, যাঁর হাতে আমার প্রাণ, আমার গর্দান বিচ্ছিন্ন না হওয়া পর্যন্ত আমরা এ ব্যাপারে তাদের যুদ্ধ করে যাব। আর নিশ্চয় আল্লাহ তা‘আলা তাঁর দীনকে প্রতিষ্ঠিত করবেন।’ বুদাইল বলল, ‘আমি আপনার বক্তব্য তাদের কাছে পৌঁছিয়ে দিব। এরপর বুদাইল কুরাইশদের কাছে এসে বলল, ‘তাঁর পক্ষ থেকে আমাদের কাছে তোমার কিছু বলার প্রয়োজন মনে করি না। কিন্তু তাদের বিবেকবান লোকেরা বলল, ‘তুমি তাঁকে যা বলতে শুনেছ, আমাদেরকে তা বল।’ তারপর বুদাইল, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যা বলেছিলেন, সব তাদের শুনাল। তারপর উরওয়া ইবন মাসউদ উটে দাঁড়িয়ে বলল, ‘হে লোকেরা! আমি কি তোমাদের পিতৃতুল্য নই? তারা বলল, ‘হ্যাঁ নিশ্চয়ই।’ উরওয়া বলল, ‘তোমরা কি আমার সন্তান তুল্য নও?’ তারা বলল, ‘হ্যাঁ অবশ্যই।’ উরওয়া বলল, আমার সম্বন্ধে তোমাদের কি কোনো অভিযোগ আছে? তারা বলল, না। উরওয়া বলল, তোমরা কি জান না যে, আমি তোমদের সাহায্যের জন্য উকাযবাসীদের কাছে আবেদন করেছিলাম এবং তারা আমাদের আহবানে সাড়া দিতে অস্বীকার করলে আমি আমার আত্মীয়-স্বজন, সন্তান-সন্তুতি ও আমার অনুগতদের নিয়ে তোমাদের কাছে এসেছিলাম? তারা বলল, হ্যাঁ, জানি। উরওয়া বলল, এই লোকটি তোমাদের কাছে একটি ভাল প্রস্তাব পেশ করেছেন। তোমরা তা মেনে নাও এবং আমাকে তাঁর কাছে যেতে দাও। তারা বলল, আপনি তাঁর কাছে যান। তারপর উরওয়া নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে এল এবং তাঁর সঙ্গে কথা বলতে শুরু করল। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার সঙ্গে কথা বললেন, যেমনিভাবে বুদাইলের সঙ্গে কথা বলেছিলেন। উরওয়া তখন বলল, হে মুহাম্মদ, আপনি কি চান যে, আপনার কওমকে নিশ্চিহৃ করে দিবেন, আপনি আপনার পূর্বের আরববাসীদের এমন কারো কথা শুনেছেন যে, সে নিজ কওমের মুলোৎপাটন করতে উদ্যত হয়েছিল? আর যদি অন্য রকম হয়, (তখন আপনার কি অবস্থা হবে?) আল্লাহর কসম! আমি কিছু চেহারা দেখছি এবং বিভিন্ন ধরণের লোক দেখতে পাচ্ছি যাঁরা পালিয়ে যাবে এবং আপনাকে পরিত্যাগ করবে। তখন আবূ বকর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু তাকে বললেন, তুমি লাত দেবীর লজ্জাস্থান চেটে খাও। আমরা কি তাঁকে ছেড়ে পালিয়ে যাব? উরওয়া বলল, সে কে? লোকজন বললেন, আবূ বকর। উরওয়া বললেন, যাঁর হাতে আমার প্রাণ, আমি তাঁর কসম করে বলছি, আমার যদি আপনার ইহসান না থাকত, যার প্রতিদান আমি দিতে পারিনি, তাহলে নিশ্চই আপনার কথার জবাব দিতাম। রাবী বললেন, উরওয়া পুনরায় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সঙ্গে কথা বলতে শুরু করলেন। কথা বলার ফাঁকে ফাঁকে সে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দাঁড়িতে হাত দিত। তখন মুগীরা ইবন ‘শুবা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের শিয়রে দাঁড়িয়ে ছিলেন এবং তাঁর সাথে ছির একটি তরবারী ও মাথায় ছিল লৌহ শিরস্ত্রা। উরওয়া যখনই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দাঁড়ির দিকে তার হাত বাড়াতো মুগীরা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু তাঁর তরবারীর হাতল দিয়ে তার হাতে আঘাত করতেন এবং বলতেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দাঁড়ি থেকে তোমার হাত হটাও। উরওয়া মাথা তুলে বলল, এ কে? লোকজন বললেন, মুগীরা ইবন ‘শুবা। উরওয়া বলল, হে গাদ্দার! আমি কি তোমার গাদ্দারীর পরিণতি থেকে তোমাকে উদ্ধারের চেষ্টা করিনি? মুগীরা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু জাহেলী যুগে কিছু লোকদের সা্থে ছিলেন। একদিন তাদের হত্যা করে তাদের সহায় সম্পদ ছিনিয়ে নিয়েছিলেন। তারপর তিনি ইসলাম গ্রহণ করেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আমি তোমার ইসলাম মেনে নিলাম, কিন্তু যে মাল তুমি নিয়েছ, তার সাথে আমার কোনো সর্ম্পক নেই। তারপর রউরওয়া চোখের কোনো দিয়ে সাহাবীদের দিকে তাকাতে লাগল। সে বলল, আল্লাহর কসম! রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কখনো থুথু ফেললে তা সাহাবীদের হাতে পড়তো এবং তা গায়ে মুখে মেখে ফেলতেন। তিনি তাঁদের কোনো আদেশ দিলে তা তাঁরা সঙ্গে সঙ্গে পালন করতেন। তিনি অযু করলে তাঁর অযুর পানির জন্য তাঁর সাহাবীদের মধ্যে প্রতিযোগিতা শুরু হতো। তিনি যখন কথা বলতেন, তখন নিরবে তা শুনতেন এবং তাঁর সম্মানার্থে সাহাবীগন তাঁর দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকাতেন না। তারপর উরওয়া তার সঙ্গীদের কাছে ফিরে গেল এবং বলল, হে আমার কওম, আল্লাহর কসম! আমি অনেক রাজা বাদশাহর দরবারে প্রতিনিধিত্ব করেছি। কায়সার (রোম) কিসরা (পারস্য) ও নাজ্জাশী (আবিসিনিয়ার) সম্রাটের দরবারে দূত হিসেবে গিয়েছি; কিন্তু আমি আল্লাহর কসম করে বলতে পারি যে, কোনো রাজা বাদশাহকেই তার অনুসরীদের ন্যায় এত সম্মান করতে দেখিনি, যেমন মুহাম্মদের অনুসারীরা তাঁকে করে থাকে। আল্লাহর কসম! রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যদি থুথু ফেলেন, তখন তা কোনো সাহাবীর হাতে পড়ে এবং সঙ্গে সঙ্গে তাঁরা তা তাদের গায়ে মুখে মেখে ফেলেন। তিনি কোনো আদেশ দিলে তারা তা সঙ্গে সঙ্গে পালন করেন; তিনি অযু করলে তাঁর অযুর পানি নিয়ে সাহাবীগণের মধ্যে প্রতিযোগিতা শুরু হয়; তিনি কথা বললে, সাহাবীগণ নিশ্চুপ হয়ে শুনেন। এমনকি তাঁর সম্মানার্থে তারা তাঁর চেহারার দিকেও তাকান না। তিনি তোমাদের কাছে একটি ভালো প্রস্তাব পাঠিয়েছেন, তোমরা তা মেনে নাও। তা শুনে কিনানা গোত্রের এক ব্যক্তি বলল, আমাকে তাঁর নিকট যেতে দাও। লোকেরা বলল, যাও। সে যখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও সাহাবীগণের কাছে এল তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এ হলো অমুক ব্যক্তি এবং এমন গোত্রের লোক, যারা কুরবানীর পশুকে সম্মান করে থাকে। তোমরা তার কাছে কুরবাণীর পশু নিয়ে আস। তারপর তার কাছে তা নিয়ে আসা হলো এবং লোকজন তালবিয়া পাঠ করতে করতে তার সামনে এলেন। তা দেখে লোকটি বলল, সুবাহান্নাল্লাহ! এমন সব লোকদেরকে কা‘বা যিয়ারত থেকে বাধা দেওয়া সঙ্গত নয়। তারপর সে তার সঙ্গীদের কাছে ফিরে গিয়ে বলল, আমি কুরবাণরি পশু দেখে এসেছি, সেগুলোকে কিলাদা পরানো হয়েছে ও চিহ্নিত করা হয়েছে। তাই তাদের কা‘বা যিয়ারত বাধা প্রদান সঙ্গত মনে করি না। তখন তাদের মধ্যে থেকে মিকরায ইবন হাফস নামক এক ব্যক্তি দাঁড়িয়ে বলল, আমাকে তাঁর কাছে যেতে দাও। তারা বলল, তাঁর কাছে যাও। তারপর সে যখন মুসলিমদের নিকটবর্তী হল, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এ হলো মিরকাজ, দুষ্ট প্রকৃতির লোক’। অতপর সে কথা বলতে লাগল, এমন সময় সুহাইল ইবন ‘আমর আসল। মা‘মার (রহ.) বলেন, সুহাইল ইবন আমর আসলে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘তোমাদের জন্য তোমাদের কাজ সহজ হয়ে গেল।’ মা’মার (রহ.) বলেন, যুহরী (রহ.) তার বর্ণিত হাদীসে বলেছেন যে, সুহাইল এসে বলল, আমাদের ও আপনার মাঝে চুক্তি লিখুন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন একজন লিখক ডাকলেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, লিখুন: ‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম’। তখন সুহাইল বলল, আল্লাহর কসম! রহমান কে-? আমরা তা জানিনা, বরং পূর্বে আপনি যেমন লিখতেন ‘বিসমিআল্লাহুম্মা’ সেভাবে লিখুন। মুসলিমগন বললেন, আল্লাহর কসম! আমরা ‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম’ ছাড়া আর কিছু লিখব না। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘বিসমিআল্লাহুম্মা’ লিখ। তারপর বললেন, এটা যার উপর চুক্তিবদ্ধ হয়েছে আল্লাহর রাসূল মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। তখন সুহাইল বলল, আল্লাহর কসম! আমরা যদি আপনাকে আল্লাহর রাসূল বলেই বিশ্বাস করতাম, তাহলে আপনাকে কা‘বা যিয়ারত দেখে বাধা দিতাম না এবং আপনাদের সঙ্গে যুদ্ধ করতে উদ্যত হতাম না। বরং আপনি লিখুন, আব্দুল্লাহ পুত্র মুহাম্মদ (এর পুত্র থেকে)। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘নিশ্চুই আমি আল্লাহর রাসূল; কিন্তু তোমরা যদি আমাকে অস্বীকার কর তবে লিখ, আব্দুল্লাহর পুত্র মুহাম্মদ।’ যুহরী (র) বলেন, এটি এ জন্য যে, তিনি বলেছিলেন, তারা যদি আল্লাহর পবিত্র বস্তুগুলোর সম্মান করার কোনো কথা দাবী করে তাহলে আমি তাদের সে দাবী মেনে নিব। তারপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এ চুক্তি কর যে, তারা আমাদের ও কা‘বা শরীফের মধ্যে কোনো প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করবে না, যাতে আমরা (নির্বিঘ্নে) তাওয়াফ করতে পারি। সুহাইল বলল, আল্লাহর কসম! আরববাসীরা যেন এ কথা বলার সুযোগ না পায় যে, এ প্রস্তাব গ্রহণে আমাদের বাধ্য করা হয়েছে। বরং আগামী বছর তা হতে পারে। তারপর লেখা হলো। সুহাইল বলল, এ-ও লিখা হোক যে, আমাদের কোনো লোক যদি আপনার কাছে চলে আসে এবং সে যদিও আপনার দীন গ্রহণ করে থাকে, তবুও তাকে আমাদের কাছে ফিরিয়ে দিবেন। মুসলিমগণ বললেন, সুবাহান্নাল্লাহ! যে ইসলাম গ্রহন করে আমাদের কাছে এসেছে, তাকে কেমন করে মুশরিকদের কাছে ফেরত দেওয়া যেতে পারে? এমন সময় আবূ জানদাল ইবন সুহাইল ইবন ‘আমর সেখানে এসে উপস্থি হলেন। তিনি বেরি পরিহিত অবস্থায় ধীরে ধীরে চলছিলেন। তিনি মক্কার নিম্নচল থেকে বের হয়ে এসে মুসলিমদের সামনে নিজেকে পেশ করলেন। সুহাইল বলল, হে মুহাম্মদ! আপনার সাথে আমার চুক্তি হয়েছে, সে অনুযায়ী প্রথম কাজ হলো তাকে আমার কাছে ফিরিয়ে দিবেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এখনো তো চুক্তি সম্পাদিত হয়নি। সুহাইল বলল, আল্লাহর কসম! তাহলে আমি আপনাদের সঙ্গে আর কখনো সন্ধি করব না। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, কেবল এ লোকটিকে আমার কাছে থাকার অনুমতি দাও। সে বলল, না। এ অনুমতি আমি দেবো না। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হ্যাঁ, তুমি এটা কর। সে বলল, আমি তা করব না। মিকরায বলল, আমরা তাকে আপনার কাছে থাকার অনুমতি দিলাম। আবু জানদাল রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বললেন, হে মুসলিম সমাজ, আমাকে মুশরিকদের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া হবে, অথচ আমি মুসলিম হয়ে এসেছি। আপনার কি দেখছেন না, আমি কত কষ্ট পাচ্ছি। আল্লাহর রাস্তায় তাকে অনেক নির্যাতিত করা হয়েছে। উমর ইবন খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বললেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে এলাম এবং বললাম, আপনি কি আল্লাহর সত্য নবী নন? তিনি বললেন, হ্যাঁ। আমি বললাম, আমরা কি হকের উপর নই? আর আমাদের দুশমনরা কি বাতিলের উপর নয়? তিনি বললেন, হ্যাঁ। আমি বললাম, তাহলে দীনের ব্যাপারে কেন আমরা হেয় হবো? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললাম, ‘আমি অবশ্যই রাসূল; অতএব আমি তার অবাধ্য হতে পারি না, অথচ তিনিই আমার সাহার্যকারী। আমি বললাম, আপনি কি আমাদের বলেন নাই যে, আমরা শীঘ্রই বায়তুল্লাহ যাব এবং তাওয়অফ করব। তিনি বললেন, হ্যাঁ, আমি কি এ বছরই আসার কথা বলেছি? আমি বললাম, না। তিনি বললেন, তুমি অবশ্যই কা‘বা গৃহে যাবে এবং তাওয়াফ করবে। উমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, তারপর আমি আবূ বকর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর কাছে গিয়ে বললাম, হে আবূ বকর। তিনি কি আল্লাহর সত্য নবী নন? আবূ বকর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বললেন, ‘অবশ্যই।’ আমি বললাম, আমরা কি সত্যের উপর নই এবং আমাদের দুশমনরা কি বাতিলের উপর নয়? আবু বকর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বললেন, নিশ্চয়ই। আমি বললাম, তবে কেন আমরা এখন আমাদের দীনের ব্যাপারে এত হীনতা স্বীকার করব? আবূ বকর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বললেন, ‘ওহে’ নিশ্চয়ই তিনি আল্লাহর রাসূল এবং তিনি তাঁর রবের নাফরমানী করতে পারেন না। তিনিই তাঁর সাহায্যকারী। তুমি তাঁর অনুসরণকে আকড়ে ধরো। আল্লাহর কসম! তিনি সত্যের উপর আছেন। আমি বললাম, তিনি কি বলেননি যে, আমরা অচিরেই বায়তুল্লাহ যাব এবং তার তাওয়াফ করব। আবু বকর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বললেন, অবশ্যই। কিন্তু তুমি এবারই যে যাবে তিনি এ কথা কি বলেছিলেন? আমি বললাম, না। আবু বকর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বললেন, তবে নিশ্চয়ই তুমি সেখানে যাবে এবং তার তাওয়াফ করবে। যুহরী (রহ.) বলেন যে, উমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেছিলেন, আমি এর জন্য (অর্থাৎ ধৈর্যহীনতার কাফফারা হিসাবে) অনেক নেক আমল করেছি। বর্ণনাকারী বলেন, সন্ধিপত্র লেখা শেষ হলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবাদেরকে বললেন, তোমরা উঠ এবং কুরবানী কর ও মাথা কামিয়ে ফেল। রাবী বলেন, আল্লাহর কসম! রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা তিনবার বলার পরও কেউ উঠলেন না। তাদের কাউকে উঠতে না দেখে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উম্মে সালামা রাদিয়াল্লাহু আনহার কাছে এসে লোকদের এ আচরণের কথা বলেন। উম্মে সালামা রাদিয়াল্লাহু আনহা বললেন, হে আল্লাহর নবী, আপনি যদি তাই চান, তাহলে আপনি বাইরে যান ও তাদের সাথে কোনো কথা না বলে আপনার উট আপনি কুরবানী করুন এবং ক্ষুরকার ডেকে মাথা মুড়িয়ে নিন। সেই অনুযায়ী রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বেরিয়ে গেলেন এবং কারো সাথে কোনো কথা না বলে নিজের পশু কুরবানী দিলেন এবং ক্ষুরকার ডেকে মাথা মুড়িয়ে নিলেন। তা দেকে সাহাবীগণ উঠে দাঁড়ালেন ও নিজ নিজ পশু কুরবানী দিলেন এবং একে অপরের মাথা কামিয়ে দিলেন। অবস্থা এমন হলো যে, ভীড়ের কারণে একে অপরের উপর পড়তে লাগলেন। তারপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে কয়েকজন মুসলিম মহিলা এলেন। তখন আল্লাহ তা‘আলা নাযিল করলেন, “হে মুমিনগণ! মুমিন মহিলারা তোমাদের কাছে হিযরত করে আসলে তাদেরকে পরীক্ষা করুন”। [সূরা আল-মুমতাহিনা: ১০] তখন উমরা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু তার দুস্ত্রীকে তালাক দিয়ে দেন, তারা মুশরিক ছিল। তাদের একজনকে মু‘আবিয়া ইবন আবূ সুফিয়ান এবং অপরজনকে সাফওয়ান ইবন উমাইয়া বিয়ে করেন। তারপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদীনায় ফিরে আসলেন। তখন আবু বাসীর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু নামক কোরাইশ গোত্রের এক ব্যক্তি ইসলাম গ্রহণ করে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে এলেন। মক্কার কুরাইশরা তাঁর তালাশে দু‘জন লোক পাঠাল। তারা (রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে এসে) বলল, আপনি আমাদের সাথে যে চুক্তি করেছেন (তা পূর্ণ করুন)। তিনি তাকে ঐ দুই ব্যক্তির হাওয়ালা করে দিলেন। তাঁরা তাকে নিয়ে বেরিয়ে গেল এবং যুল-হুলায়ফায় পৌছে অবতরণ করল আর তাদের সাথে যে খেজুর ছিল তা খেতে লাগল। আবু বাসীর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু তাদের একজনকে বললেন, আল্লাহর কসম! হে অমুক, তোমার তরবারীটি খুবই চমৎকার দেখছি। সে লোকটি তরবারীটি বের করে বলল, হ্যাঁ, আল্লাহর কসম! এটি একটি উৎকৃষ্ট তরবারী। আমি একাধিক বার তা পরীক্ষা করেছি। আবূ বাসীর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বললেন, তলোয়ারটি আমি দেখতে চাই তা আমাকে দেখাও। তারপর লোকটি আবূ বাসীরকে তলোয়ারটি দিল। আবূ বাসীর সেটি দ্বারা তাকে এমন আঘাত করলেন যে, তাতে সে মরে গেল। তার অপর সঙ্গী পালিয়ে মদীনায় এসে পৌছল এবং দাঁড়িয়ে মসজিদে প্রবেশ করল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে দেখে বললেন, এই লোকটি ভীতিজনক কিছু দেখে এসেছে। ইতিমধ্যে লোকটি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে পৌঁছে বলল, আল্লাহর কসম! আমার সঙ্গীকে হত্যা করা হয়েছে, আমিও নিহত হতাম। এমন সময় আবূ বাসীর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুও সেখানে এসে উপস্থিত হলেন এবং বললেন, ইয়া নবীআল্লাহ! আল্লাহর কসম! আল্লাহ আপনার দায়িত্ব সম্পূর্ণ করে দিয়েছেন। আমাকে তার কাছে ফেরত দিয়েছেন; এ ব্যাপারে আল্লাহ আমাকে তাদের কবল থেকে নাজাত দিয়েছেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, সর্বনাশ! এতো যুদ্ধের আগুন প্রজ্জলিতকারী, কেউ যদি তাকে বিরত রাখত। আবূ বাসীর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু যখন এ কথা শুনলেন, তখন বুঝতে পারলেন যে, তাকে তিনি আবার কাফিরদের কাছে ফেরত পাঠাবেন। তাই তিনি বেরিয়ে নদীর তীরে এসে পড়লেন। রাবী বলেন, এ দিকে আবু জানদার ইবন সুহাইল কাফিরদের কবল থেকে পালিয়ে এসে আবূ বাসীরের সঙ্গে মিলিত হলেন। এরপর থেকে কুরাইশ গোত্রের যে-ই ইসলাম গ্রহণ করত, সে-ই আবূ বাসীরের সঙ্গে এসে মিলিত হতো। এভাবে তাদের একটি দল হয়ে গেল। আল্লাহর কসম! তারা যখনই শুনতেন যে, কুরাইশদের কোনো বানিজ্য কাফিলা সিরিয়া যাবে, তখনই তারা তাদের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতেন আর তাদের হত্যা করতেন ও তাদের মাল সামান কেড়ে নিতেন তখন কুরাইশরা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে লোক পাঠাল। আল্লাহ ও আত্মীয়তার ওয়াসীলা দিয়ে আবেদন করল যে, আপনি আবূ বাসীরের কাছে এর থেকে বিরত থাকার জন্য নির্দেশ পাঠান। এখন থেকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে) কেউ এলে সে নিরাপদ থাকবে (কুরাইশদের কাছে ফেরত পাঠাতে হবে না)। তারপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের কাছে নির্দেশ পাঠালেন। এ সময় আল্লাহ তা‘আলা নাযিল করেন, “তিনি তাদের হাত তোমাদের থেকে এবং তোমাদের হাত হাত তাদের থেকে বিরত রেখেছেন.......জাহেলী যুগের অহমিকা”। পর্যন্ত [সূরা আল-ফাতহ: ২৬] তাদের অহমিকা এই ছিল যে, তারা মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আল্লাহর নবী বলে স্বীকার করেনি, ‘বিসমিল্লাহির রাহমানীর রাহীম’ বলে স্বীকার করেনি এবং বায়তুল্লাহ ও মুসলিমদের মধ্যে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছিল। [119]

عَنْ جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا، قَالَ: عَطِشَ النَّاسُ يَوْمَ الحُدَيْبِيَةِ وَالنَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بَيْنَ يَدَيْهِ رِكْوَةٌ فَتَوَضَّأَ، فَجَهِشَ النَّاسُ نَحْوَهُ، فَقَالَ: «مَا لَكُمْ؟» قَالُوا: لَيْسَ عِنْدَنَا مَاءٌ نَتَوَضَّأُ وَلاَ نَشْرَبُ إِلَّا مَا بَيْنَ يَدَيْكَ، فَوَضَعَ يَدَهُ فِي الرِّكْوَةِ، فَجَعَلَ المَاءُ يَثُورُ بَيْنَ أَصَابِعِهِ، كَأَمْثَالِ العُيُونِ، فَشَرِبْنَا وَتَوَضَّأْنَا قُلْتُ: كَمْ كُنْتُمْ؟ قَالَ: لَوْ كُنَّا مِائَةَ أَلْفٍ لَكَفَانَا، كُنَّا خَمْسَ عَشْرَةَ مِائَةً.

জাবির ইবন আবদুল্লাহ্ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, হুদাবিয়ায় অবস্থান কালে একদিন সাহাবায়ে কেরাম পানির পীপাসায় অত্যন্ত কাতর হয়ে পড়লেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সম্মুখে একটি (চামড়ার) পাত্রে অল্প পানি ছিল। তিনি অজু করলেন। তাঁর নিকট পানি আছে মনে করে সকলে ঐ দিকে ধাবিত হলেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন,তোমাদের কি হয়েছে? তাঁরা বললেন, আপনার সম্মুখস্থ পাত্রের সামান্য পানি ব্যতীত অজু ও পান করার মত পানি আমাদের নিকট নাই। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঐ পাত্রে তাঁর হাত রাখলেন। তখনই তাঁর হাত উপচিয়ে ঝর্ণা ধারার ন্যায় পানি ছুটিয়ে বের হতে লাগলো। আমরা সকলেই পানি পান করলাম আর অজু করলাম। সালিম (রহ.) (একজন রাবী) বলেন, আমি জাবির রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুকে জিজ্ঞাসা করলাম, আপনারা কতজন ছিলেন? আমরা যদি এক লক্ষও হতাম, তবুও আমারদের জন্য পানি যথেষ্ট হত। তবে আমরা ছিলাম মাত্র পনেরশ’। [120]

عَنْ جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا، هَذَا الحَدِيثَ قَالَ: قَدْ رَأَيْتُنِي مَعَ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَقَدْ حَضَرَتِ العَصْرُ، وَلَيْسَ مَعَنَا مَاءٌ غَيْرَ فَضْلَةٍ، فَجُعِلَ فِي إِنَاءٍ فَأُتِيَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِهِ، فَأَدْخَلَ يَدَهُ فِيهِ وَفَرَّجَ أَصَابِعَهُ، ثُمَّ قَالَ: «حَيَّ عَلَى أَهْلِ الوُضُوءِ، البَرَكَةُ مِنَ اللَّهِ» فَلَقَدْ رَأَيْتُ المَاءَ يَتَفَجَّرُ مِنْ بَيْنِ أَصَابِعِهِ، فَتَوَضَّأَ النَّاسُ وَشَرِبُوا، فَجَعَلْتُ لاَ آلُو مَا جَعَلْتُ فِي بَطْنِي مِنْهُ، فَعَلِمْتُ أَنَّهُ بَرَكَةٌ. قُلْتُ لِجَابِرٍ: كَمْ كُنْتُمْ يَوْمَئِذٍ؟ قَالَ: أَلْفًا وَأَرْبَعَ مِائَةٍ.

জাবির ইবন আবদুল্লাহ্ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সংগে ছিলাম, এ সময় আসরের সময় হয়ে গেল। অথচ আমাদের সংগে বেঁচে যাওয়া সামান্য পানি ব্যতীত কিছুই ছিল না। তখন সেটুকু একটি পাত্রে রেখে পাত্রটি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সামনে পেশ করা হল। তিনি পাত্রটির মধ্যে নিজের হাত ঢুকিয়ে দিলেন এবং আঙ্গলগুলো ছড়িয়ে দিলেন। এরপর বললেন, এস যাদের অযুর প্রয়োজন আছে। বরকত তো আসে আল্লাহ’র কাছ থেকে। জাবির রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, তখন আমি দেখলাম, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আঙ্গলগুলোর ফাঁক থেকে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। লোকজন অযূ করল এবং পানি পান করল। আমিও আমার উদরে যতটুকু সম্ভব ছিল ততটুকু পান করতে ত্রুটি করলাম না। কেননা, আমি জানতাম এটি বরকতে পানি। রাবী বলেন, আমি জাবির রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুকে বললাম, সে দিন আপনারা কত লোক ছিলেন? তিনি বললেন, এক হাজার চারশ জন।[121]

عَنِ البَرَاءِ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، قَالَ: كُنَّا يَوْمَ الحُدَيْبِيَةِ أَرْبَعَ عَشْرَةَ مِائَةً وَالحُدَيْبِيَةُ بِئْرٌ، فَنَزَحْنَاهَا، حَتَّى لَمْ نَتْرُكْ فِيهَا قَطْرَةً، فَجَلَسَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَلَى شَفِيرِ البِئْرِ «فَدَعَا بِمَاءٍ فَمَضْمَضَ وَمَجَّ فِي البِئْرِ» فَمَكَثْنَا غَيْرَ بَعِيدٍ ثُمَّ اسْتَقَيْنَا حَتَّى رَوِينَا، وَرَوَتْ، أَوْ صَدَرَتْ رَكَائِبُنَا.

বারা’আ ইবন আযির রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে হুদাবিয়ায় চৌদ্দশ লোক ছিলাম। হুদায়বিয়া একটি কুপ, আমরা তা হতে পানি এমন ভাবে উঠিয়ে নিলাম যে তাতে এক ফোঁটা পানিও বাকী থাকলো না। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কূপের কিনারায় বসে কিছু পানি আনার জন্য আদেশ করলেন। (সামান্য পানি আনা হলো) তিনি কুল্লি করে ঐ পানি কূপে নিক্ষেপ করলেন। কিছু সময় অপেক্ষা করলাম। তখন কূপটি পানিতে ভরে গেল। আমরা পান করে তৃপ্তি লাভ করলাম, আমাদের উটগুলোও পানি পানে তৃপ্ত হল। অথবা বলেছেন আমাদের উটগুলো পানি পান করে প্রত্যাবর্তন করল। [122]

عَنْ عَبْدِ اللَّهِ، قَالَ: كُنَّا نَعُدُّ الآيَاتِ بَرَكَةً، وَأَنْتُمْ تَعُدُّونَهَا تَخْوِيفًا، كُنَّا مَعَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي سَفَرٍ، فَقَلَّ المَاءُ، فَقَالَ: «اطْلُبُوا فَضْلَةً مِنْ مَاءٍ» فَجَاءُوا بِإِنَاءٍ فِيهِ مَاءٌ قَلِيلٌ فَأَدْخَلَ يَدَهُ فِي الإِنَاءِ، ثُمَّ قَالَ: «حَيَّ عَلَى الطَّهُورِ المُبَارَكِ، وَالبَرَكَةُ مِنَ اللَّهِ» فَلَقَدْ رَأَيْتُ المَاءَ يَنْبُعُ مِنْ بَيْنِ أَصَابِعِ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَلَقَدْ كُنَّا نَسْمَعُ تَسْبِيحَ الطَّعَامِ وَهُوَ يُؤْكَلُ.

আবদুল্লাহ ইবন মাস’উদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা (সাহাবাগণ) অলৌকিক ঘটনাসমূহকে বরকত ও কল্যাণকর মনে করতাম আর তোমরা (যারা সাহাবী নও) ঐ সব ঘটনাকে ভীতিকর মনে কর। আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে সফরে ছিলাম। আমাদের পানি কমিয়ে আসল। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, অতিরিক্ত পানি তালাশ কর। (তালাশের পর) সাহাবাগণ একটি পাত্র নিয়ে আসলেন যার ভেতর সামান্য পানি ছিল। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর হাত মোবারক ঐ পাত্রের ভেতর ঢুকিয়ে দিলেন এবং ঘোষণা করলেন, বরকতময় পানি নিতে সকলেই এসো। এ বরকত আল্লাহ তা‘আলার পক্ষ থেকে দেওয়া হয়েছে। তখন আমি দেখতে পেলাম রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আঙ্গুলের ফাঁক দিয়ে পানি উপচে পড়ছে। সময় বিশেষে আমরা খাদ্য-দ্রব্যের তাসবীহ পাঠ শুনতাম আর তা খাওয়া হতো।[123]

عَنْ إِيَاسُ بْنُ سَلَمَةَ، قَالَ حَدَّثَنِي أَبِي، قَالَ: قَدِمْنَا الْحُدَيْبِيَةَ مَعَ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَنَحْنُ أَرْبَعَ عَشْرَةَ مِائَةً، وَعَلَيْهَا خَمْسُونَ شَاةً لَا تُرْوِيهَا، قَالَ: فَقَعَدَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَلَى جَبَا الرَّكِيَّةِ، فَإِمَّا دَعَا، وَإِمَّا بَصَقَ فِيهَا، قَالَ: فَجَاشَتْ، فَسَقَيْنَا وَاسْتَقَيْنَا، قَالَ: ثُمَّ إِنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ دَعَانَا لِلْبَيْعَةِ فِي أَصْلِ الشَّجَرَةِ ، قَالَ: فَبَايَعْتُهُ أَوَّلَ النَّاسِ، ثُمَّ بَايَعَ، وَبَايَعَ، حَتَّى إِذَا كَانَ فِي وَسَطٍ مِنَ النَّاسِ، قَالَ: «بَايِعْ يَا سَلَمَةُ» قَالَ: قُلْتُ: قَدْ بَايَعْتُكَ يَا رَسُولَ اللهِ فِي أَوَّلِ النَّاسِ، قَالَ: «وَأَيْضًا»، .............قَالَ: فَضَرَبَ رَأْسَ مَرْحَبٍ فَقَتَلَهُ، ثُمَّ كَانَ الْفَتْحُ عَلَى يَدَيْهِ (الخ).

আয়াস ইবনে সালামা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, আমার পিতা (সালামা ইবনুল আকওয়া রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বর্ণনা করেছেন, আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সঙ্গে হুদায়বিয়ায় আগম করলাম। আমরা সংখ্যায় ছিলাম চৌদ্দশ’ এবং তাদের (মুসলিমদের) কাছে ছিলো এমন পঞ্চাশটি বকরী যাদের দুগ্ধ দোহন করা হতো না। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা) সংকীর্ণ একটি কুপের পাড়ে তাশরিফ রাখলেন। পরে তিনি দো‘আ করেছেন অথবা থুথু ফেলেছেন, (যা-ই হোক) ফলে কুপের পানি কানায় কানায় ভরতি হয়ে গেলো। আমরা সকলে নিজেরাও পান করলাম, আর আমাদের জানোয়ারগুলোকে পান করালাম। পরে তিনি আমাদেরকে একটি বৃক্ষের নীচে (বাবলা গাছ) বাই‘য়াত করার জন্য আহবান করলেন। তিনি (সালামা) বলেন, সকলের আগে আমিউ (তাঁর হাতে হাত রেখে) বাই‘য়াত করলাম। পরে লোকেরা একের পর এক বাইয়াত করলো। অবশেষে বাই‘য়াতের সিলসিলা মাঝামাঝি পর্যায়ে পৌঁছলে, তিনি আমাকে লক্ষ্য করে বললেন, হে সালামা! বাইয়াত করো। আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আমি তো সমস্ত লোকের আগেই বাইয়াত করেছি। তিনি বললেন, আবারও বাইয়াত করো। সুতরাং আমি দ্বিতীয়বার বাইয়াত করলাম। সালামা বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দেখলেন যে আমি নিরস্ত্র। অর্থাৎ আমার কাছে যুদ্ধের কোনো হাতিয়ার নেই। সুতরাং তিনি আমাকে একখানা ঢাল দিলেন (তিনি ‘হাজানা’ দিয়েছেন অথবা ‘দারাকা’, দুটির অর্থ প্রায় কাছাকাছি)। এরপর তিনি (লোকদেরকে) বাইয়াত করাতে থাকলেন। অবশেষে যখন বাইয়াত সিলসিলা প্রায় শেষ পর্যায়ে পৌঁছলো তখন তিনি আমাকে পুনরায় লক্ষ্য করে বললেন, হে সালামা! তুমি কি আমার হাতে বাইয়াত করবে না? আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আমি তো একবার সমস্ত লোকের পূর্বেই বাইয়াত করেছি। আবার মাঝখানেও একবার বাইয়াত করেছি। তিনি বললেন, আবারও করো। সালামা বলেন, পুনরায় তৃতীয়বার তাঁর হাতে বাইয়াত করলাম। পরে তিনি আমাকে বললেন, হে সালামা! আমি যে তোমাকে একখানা ঢাল দিয়েছিলাম, তা কি করলে? আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আমার চাচা আমেরের সাথে আমার সাক্ষাত হলে, দেখলাম, তিনি নিরস্ত্র তাঁর কাছে কোনো হাতিয়ার নেই। অতএব, আমি তা তাঁকে দিয়ে ফেলেছি। সালামা বলেন, আমার কথা শুনে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হেসে দিলেন এবং বললেন, তুমি তো ঐ ব্যক্তির মতো, সে সর্বপ্রথম বলে, হে আল্লাহ! আমাকে এমন একজন বন্ধু মিলিয়ে দাও, যে হবে আমার নিজের (দেহের) চাইতে আমার কাছে অধিক প্রিয়। সালামা বলেন, পরে মুশরিকরা আমার সাথে একটা সন্ধিচুক্তি করার জন্য দূত পাঠিয়ে যোগাযোগ স্থাপন করলো। পরে আমাদের মধ্যে বার বার হাঁটাহাঁটি করলে শেষ পর্যন্ত আমাদের সাথে একটা সন্ধি চুক্তি সম্পাদন হয়ে গেলো। সালামা বলেন, আমি ছিলাম, তালহা ইবনে উবাইদুল্লাহ্ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর খাদেম। আমি তাঁর ঘোড়াকে পানি পান করাতাম ও তার গায়েল ধুলাবালি পরিস্কার করতাম এবং তাঁর খেদমত করতাম, এর বিনিময়ে আমি তাঁর খাদ্য থেকেই খাওয়া দাওয়া করতাম। আর আমার পরিবার-পরিজন ও মাল-সম্পদ যা ছিলো তা আল্লাহ তা’আলা ও তাঁর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নামে ছেড়ে রাখলাম। সালামা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, মক্কাবাসীদের সাথে আমাদের সন্ধি-চুক্তি হয়ে গেলে, আমরা পরস্পর পরস্পরের সাথে মিলেমিশে চলতে লাগলাম। (ঠিক এ সময় একদিন) আমি একটি বৃক্ষের নীচে এসে গাছ তলার কাঁটা-কুটা পরিস্কার করে সেখানে শুয়ে পড়লাম। এমন সময় মক্কার মুশরিকদের চার ব্যক্তি আমার কাছে আসলো এবং তারা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সম্পর্কে নানা প্রকার অশোভন ও আপত্তিকর কথাবর্তা বললো। তাতে আমি তাদের ওপর ভীষণ ক্ষেপে গেলাম, পরে আমি অন্য আরেকটি গাছতলায় চলে গেলাম। এ সময় তারা তাদের হাতিয়ারগুলো গাছের সাথে ঝুলিয়ে রেখে সবাই শুয়ে পড়লো। ঠিক এমন সময় উপত্যকার নিম্ন প্রান্ত থেকে কোনো এক আহবানকারী চিৎকার করে এ আওয়াজ দিলো যে, “মুহাজিরীনরা কোথায়? ইবনে যুনাঈমকে হত্যা করা হয়েছে”। সালামা বলেন, এ আওয়াজ শোনার সাথে সাথেই আমি আমার তরবারী কোষমুক্ত করে ঐ চার ব্যক্তির ওপর ঝাঁপিয়ে পড়লাম। অথচ তারা সবাই তখনও শায়িত অবস্থায় ছিলো্ আমি গিয়ে তাদের হাতিয়ারগুলো নিয়ে সেগুলোকে আমার হাতে মধ্যে মুঠো করে বেঁধে নিলাম। সালামা বলেন, পরে আমি বললাম, সেই মহান সত্তার কসম! যিনি মুহাম্মাদ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মুখমন্ডলকে সবচেয়ে মর্যাদা দান করেছেন। সাবধান! তোমাদের কেউ মাথা তুলবে না। যদি কেউ মাথা ওঠাও, তবে চোখে যা দেখছো ওটার দ্বারা তাকে শেষ করে দেবো। সালামা বলেন, পরে আমি তাদেরকে হাঁকিয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে নিয়ে আসলাম। তিনি বলেন, এ সময় আমার চাচা আমের ও ‘আবালাহ্’ গোত্রের ‘মিকরায’ নামে এক ব্যক্তিবে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে ধরে নিয়ে আসলো। সে ছিলো সত্তরজন মুশরিকের মধ্যে একটি গাত্রাবৃত ঘোড়ার ওপর আরোহী। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বললেন, তোমরা এদের সবাইকে ছেড়ে দাও। অপরাধের সূচনা করা এবং বার বার অপরাধ করা তাদেরকেই মানায় (অর্থাৎ সন্ধিচুক্তির খেলাফ করাটা তাদেরকেই সাজে), এ বলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে মাফ করে দিলেন। এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে আল্লাহ নাযিল করলেন, “আমি মক্কা অঞ্চলে ওদের ওপর তোমাদেরকে বিজয়ী করার পর, তাদের হাত তোমাদের ওপর থেকে এবং তোমাদের হাত তাদের ওপর থেকে নিবারণ করেছি”। [সূরা আল-ফাতহ: ২৪] আয়াতটি সবটুকুই নাযিল করলেন। সালামা বলেন, অতঃপর আমরা মদীন অভিমুখে প্রত্যাবর্তন করলাম এবং আমরা এসে এক জায়ঘায় অবস্থান করলাম। এদিকে আমাদের ও ‘লাহ্ইয়ান’ গোত্রের মধ্যখানে একটি মাত্র পাহাড়ের ব্যবধান। আর তারা ছিলো মুশরিক। রাতের বেলায় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তাঁর সঙ্গীদের জন্য তাদের (মুশরিকদের) গোপন সংবাদ সরবরাহ করার জন্যে যে গুপ্তচর হিসেবে উক্ত পাহাড়ের ওপর আরোহণ করবে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার জন্যে আল্লাহর কাছে “ইস্তিগফার” করলেন। সালামা বলেন, আমি উক্ত রাতে দু’কি তিনবার সে পাহাড়ে আরোহণ করলাম। পরে আমি মদীনায় ফিরে আসলাম। এ সময় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর গোলাম ‘রাবাহ্’ কে তাঁর স্বীয় সওয়ারী জানোয়ার (আদ্বাহ) দিয়ে পাঠালেন এবং আমিও তার সঙ্গে ছিলাম। আর আমি বের হলাম তার সাথে তালহা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর ঘোড়া নিয়ে মুক্ত মাঠের পানে। যখন ভোর হলো হঠাৎ সংবাদ পেলাম আবদুর রহমান আল-কাযারী অতর্কিত আক্রমণ করে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জানোয়ারগুলো ছিনিয়ে নিয়ে গেছে এবং তাঁর রাখালকেও হত্যা করে ফেলেছে। সালামা বলেন, তখন আমি বললাম, হে রাবাহ! ধরো, এ ঘোড়াটি নিয়ে যাও এবং ওটা তালহা ইবনে উবাইদুল্লাহর কাছে পৌঁছিয়ে দাও, আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট এ সংবাদ জানিয়ে দাও যে, মুশরিকরা তাঁর পশুর পাল লুন্ঠন করে নিয়ে গেছে। সালামা বলেন, অতঃপর আমি একটি উঁচু টিলার ওপর দাঁড়িয়ে মদীনাকে সম্মুখে রেখে বলে সংকেত ধ্বনি উচ্চারণ করে তিনবার খুব জোরে চিৎকার দিলাম। অতঃপর আমি (মুশরিকদের) পিছু ধাওয়া করে তাদের প্রতি তীর নিক্ষেপ করতে করতে বেরিয়ে পড়লাম এবং এ শোক (কবিতা) আবৃত্তি করতে থাকলাম, আমি হলাম আক্ওয়ার সুযোগ্য সন্তান এবং আজকের দিনেই প্রমাণিত হবে, কার মা তাকে অধিক দুগ্ধ পাণ করিয়েছে”। পরে আমি তাদের একজনকে আয়ত্তে পেয়ে তার সওয়ারী লক্ষ্য করে তীর ছুড়লাম, শেষ পর্যন্ত তীরটি তার বাহু ছেদ করে চলে গেলো। সালামা বলেন, তখন আমি বললাম, লও হে এই পুরস্কার! আমাকে চিনো? আমি হলাম আক্ওয়ার সুযোগ্য পুত্র। আজই প্রমাণিত হবে নিকৃষ্ট ইতর কে? এবং কার মা তাকে দুগ্ধপাণ করিয়েছে। সালামা বলেন, আল্লাহর কসম! আমি অনবরত বিরামহীনভাবে তাদেরকে তীর নিক্ষেপ করতে থাকলাম এবং ওদের জখমী ও আহত করতে থাকলাম। পরে যখন তাদের অশ্বারোহী আমার কাছে ফিরে আসলো, তখন আমি একটি বৃক্ষের নীচে এসে বসে পড়লাম। অতঃপর আমি তাকে লক্ষ্য করে তীর নিক্ষেপ করে আহবান করে দিলাম। অবশেষে যখন তারা পাহাড়ের সরু পথের নিকটবর্তী হলো তখন তার মধ্যে ঢুকে গেলো। এ সময় আমি পাহাড়ের ওপরে উঠে গেলাম এবং ওপর থেকে তাদেরকে পাথর নিক্ষেপ করতে থাকলাম। সালামা বলেন, আমি সারাক্ষণ তাদের পিছু ধাওয়া করতেই থাকলাম। শেষ নাগাদ আল্লাহ সৃষ্ট রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যে কোনো উষ্ট্র সওয়ারীকে আমি আমার পেছনেই ফেলে দিলাম। ফলে আমার ও মুশরিকদের মাঝখানে আমিই রয়ে গেলাম। এরপর আমি তীর নিক্ষেপ করতে করতে তাদের পিছু ধাওয়া করলে শেষ পর্যন্ত তারা গায়ের বোঝা হালকা করার নিমিত্তে ত্রিশখানার বেশী চাদর ও ত্রিশটি তীর ফেলে গেলো। আর আমি তাদের ফেলে যাওয়া প্রত্যেকটি জিনিসের ওপর পাথর চাপা দিয়ে চিহ্ন রেখে যেতে লাগলাম, যেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তাঁর সঙ্গীরা দেখে চিনতে পারেন যে, ওগুলো আমার ছিনতাইকৃত জিনিস। অবশেষে তারা (মুশরিকরা) এক টিলার সংকীর্ণ স্থানে গিয়ে উপস্থিত হলো। এমন সময় হঠাৎ অমুক (আবদুর রহমান) ইবনে বাদরুল ফাযারী এসে তাদের কাছে উপস্থিত হলো। তখন তারা সকলে বসে দুপুরের খানা খাচ্ছিলো, আর আমি পাহাড়ের সর্বোচ্চ শৃঙ্গে বসা ছিলাম। এ সময় ফাযারী আমাকে দেখতে পেয়ে সঙ্গের লোকদেরকে জিজ্ঞেস করলো, ঐ যে ওপরে আমি দেখছি ওটা কি? তারা বললো, এই তো সে ব্যক্তি যে আমাদেরকে অস্থির করে তুলেছে। আল্লাহর শপথ! ঐ সাত-সকাল থেকেই সে আমাদের পিছু ধাওয়া করে আমাদেরকে তীরের মুখে রেখেছে। এমন কি শেষ নাগাদ আমাদের হাতে যা কিছু ছিলো সবকিছুই সে ছিনিয়ে নিয়ে গেছে। সালামা বলেন, তাদের কথা শুনে ইবনুল ফাযারী বললো, তোমাদের মধ্য থেকে চারজন লোক তার দিকে ওঠো। সালামা বলেন, অতঃপর তাদের থেকে চারজন পাহাড়ের মধ্যে আমার কাঠে উঠে আসলো। তিনি বলেন, যখন তারা আমার এতো নিকটে আসলো যে, এখন আমি তাদের সাথে কথাবার্তা বলতে পারি, তখন আমি বললাম, তোমরা কি আমাকে চিনো, আমি কে? তারা বললো, না এবং জিজ্ঞেস করলো, তুমি কে? উত্তরে বললাম, আমি সালামাহ ইবনুল আক্ওয়া। সেই মহান সত্তার কসম করে বলছি, যিনি মুহাম্মাদ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মুখমন্ডলকে মর্যাদাসম্পন্ন করেছেন, আমি তোমাদের কোনো ব্যক্তিকে ধরার সংকল্প করলে সে কখনো আমার নাগালের বাইরে যেতে পারবে না। এবং আমি তাকে ধরেই ফেলবো। কিন্তু তোমাদের কেউই আমাকে ধরতে বা কাবু করতে সক্ষম হবে না। এ সময় তাদের একজন আমার দাবীর সমর্থনে বললো, আমার ধারণাও তাই। সালামা বলেন, পরে তারা ফিরে চলে গেলো, কিন্তু আমি আমার জায়গা ত্যাগ করলাম না। অবশেষে এতক্ষণ পরে দেখলাম রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অশ্বারোহী সৈন্যরা বাগানের ভেতরে প্রবেশ করেছে। সালামা বলেন, দেখলাম তাঁদের সর্বপ্রথম লোকটি হলেন আল-আখরামুল আসাদী। তাঁর পেছনে আবু কাতাদাহ আনসারী এবং তাঁর পেছনে মিকদাদ ইবনুল আসওয়াদ কিন্দী। তিনি বলেন, তাঁরা এখানে আসলে, আমি আখরামের ঘোড়ার লাগাম ধরে থামিয়ে বললাম, ওরা (মুশরিকরা) সবাই পৃষ্ঠ প্রদর্শন করে পালিয়ে গেছে। আরো বললাম, হে আখরাম! ওদের থেকে হুঁশিয়ার থাকো। কেননা এমন যেন না হয়, তারা তোমাকে হত্যা করে ফেলে। ইত্যবসরে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তাঁর সঙ্গীরা এসে পৌঁছে গেলেন। তখন আখরাম আমাকে লক্ষ্য করে বললো, হে সালামা! যদি তুমি আল্লাহ ও শেষ দিনের প্রতি বিশ্বাস রাখো, আর এটাও জানো যে জান্নাত আছে, সত্য। জাহান্নাম আছে তাও সত্য- তাহলে আমার ও আমার শাহাদাতের মাঝখানে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করো না। সালামা বলেন, তার কথা শুনে আমি তার রাস্তা ছেড়ে দিলাম। অতঃপর তাঁর ও আবদুর রহমান ফাযারীর মধ্যে মোকাবিলা (লড়াই) চললো। ফলে আখরাম, আবদুর রহমানের ঘোড়ার পা কেটে ফেললো আর আবদুর রহমান তাকে (আখরামকে) শহীদ করে দিলো এবং সে ঘোড়া পরিবর্তন করে আখরামের ঘোড়ার ওপর চড়ে বসলো। এ অবস্থা দেখে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অশ্বারোহী সিপাহী আবু কাতাদাহ অগ্রসর হয়ে আবদুর রহমানকে বর্শা দ্বারা আঘাত করে হত্যা করে ফেললো। সালামা বলেন, সেই মহান সত্তার শপথ করে বলছি যিনি মুহাম্মদ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সর্বোচ্চ মর্যাদা দান করেছেন! আমি ওদের (শত্রুদের) পেছনে পদব্রজে এমনভাবে দৌড়ালাম যে, আমি আমার পেছনে তাকিয়ে মুহাম্মাদ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সঙ্গীদের কাউকে তো দেখলামই না, এমনকি তাদের ঘোড়ার পায়ের নীচের ধুলাবালি পর্যন্ত কিছুই উড়তেও দেখলাম না। (অর্থাৎ তারা আমার অনেক দূরে পেছনে পড়ে গেলা)। অবশেষে তারা (শত্রুরা) সূর্যাস্তের পূর্বে পাহাড়ের পাদদেশের দিকে অগ্রসর হলো। সেখানে পানি ছিলো। ওটাকে ‘যী-কারাদ’ বলা হয়। (এই কূপের নামানুসারেই উক্ত এলাকার নামকরণ হয়েছে)। তারা সেখানে পানি পান করার উদ্দেশ্যেই গিয়েছিলো। কেননা তারা সবাই ছিলো পিপাসার্ত। সালামা বলেন, যখন তারা পেছনে তাকিয়ে দেখলো যে, আমি তাদেরকে পেছন থেকে দৌড়াচ্ছি, তখন তারা সেখান থেকে পালিয়ে প্রাণ বাঁচালো। এভাবে আমি তাদেরকে ওখান থেকে বিতাড়িত করলাম এবং এক ফোঁটা পানিও পান করতে দিলাম না। তিনি বলেন, তারা ওখান থেকে বেরিয়ে দৌড়ে এক টিলার মধ্যে আশ্রয় নিলো। তিনি বলেন, তারা সবাই দৌড়ে পালারো বটে, কিন্তু আমি তাদের এক ব্যক্তিকে আয়ত্তের মধ্যে পেয়ে এমনভাবে তীর ছুড়লাম যে, তা তার বাহুকে ছিদ্র করে চলে গেলো। তখন আমি তাকে লক্ষ্য করে বললাম, ওহে, লও (পুরস্কার)! জেনে নাও, “আমি হলাম আকওয়ার সুযোগ্য পুত্র। আজই প্রমাণ হবে কার মা তাকে অধিক দুগ্ধপান করিয়েছে”। (তীর খেয়ে) সে হতচকিত হয়ে বললো, ওহে তোমার মা তোমাকে হারিয়ে ফেলুক! তুমি কি সেই আকওা! যে প্রাতঃভোর থেকে আমাদের পেছনে ধাওয়া করছো? তিনি বলেন, উত্তরে আমি বললাম, হে নিজের আত্মার দুশমন! হাঁ, আমিই সেই আকওয়াম, যে প্রাতঃভোর থেকে তোমাদেরকে তাড়িয়ে যাচ্ছি। তিনি বলেন, অতঃপর তারা টিলার ওপরে দু’টি ঘোড়া ফেলে রেখে ওখান থেকে পালিয়ে জান বাঁচালো। তিনি বলেন, অতঃপর আমি উক্ত ঘোড়া দু’টি হাঁকিয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট নিয়ে আসলাম। সালামা বলেন, এমন সময় আমেরের সাথে আমার সাক্ষাত হলো। তাঁর কাছে ছিলো চামড়ার একটি থলি, তার মধ্যে ছিলো সামান্য কিছু দুগ্ধ এবং আরেকটি পাত্রের মধ্যে কিছু পানি। সুতরাং আমি তা থেকে অযু করলাম এবং পানও করলাম। পরে আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে আসলাম। এ সময় তিনি পানির ঐ কূপের কাছেই ছিলেন যেখান থেকে আমি ওদেরেকে (শত্রুদেরকে) বিতাড়িত করেছিলাম। এসে দেখি, আমি মুশরিকদের থেকে উট, চাদর এবং তীর-বর্শা যা কিছু ছিনিয়ে নিয়েছিলাম সে সমস্ত প্রত্যেকটি জিনিসই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিয়ে নিয়েছেন এবং আরো দেখলাম, শত্রুদের থেকে আমার ছিনিয়ে নেওয়া উটগুলো থেকে বিলাল রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু একটি উট যবেহ করে নিয়েছে এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উদ্দেশ্যে তার কলিজি (যকৃৎ) ও মেরু দাঁড়ার গোস্ত ভাজা করছে। সালামা বলেন, এ সময় আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল আমাকে অনুমতি দিন, আমি সকলের মধ্য থেকে একশ জন লোক নির্বাচন করে, শত্রুদের পেছনে ধাওয়া করি। ফলে তাদের লোকদের কাছে সংবাদ পৌঁছানোর মত একজন লোককেও জ্যান্ত ছাড়বো না বরং সবাইকে হত্যা করে ফেলবো। তিনি বলেন, আমার সংকল্পের কথা শুনে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এমনভাবে হেসে দিলেন যে, আগুনের রৌশনীতে তাঁর মাড়ির দাঁত পর্যন্ত প্রকাশ হয়ে পড়লো। তখন তিনি বললেন, হে সালামা! তুমি স্বয়ং নিজেকে কি এরূপই মনে করো যে, তুমি এটা করতে সক্ষম? আমি বললাম, সেই সত্তার কসম! যিনি আপনাকে সম্মানিত করেছেন, হ্যাঁ পারবো। তখন তিনি বললেন, এতক্ষণে তারা নিশ্চয়ই ‘গাতফান’ ভূমিতে পৌঁছে গেছে। এমন সময় গাতফান থেকে এক ব্যক্তি এসে বললো, তাদের এ সমস্ত লোকদের জন্য অমুক ব্যক্তি একটি উট যবেহ করছে। যখন তারা উক্ত উটের চামড়া খুলে সবেমাত্র অবসর হয়েছে, এমন সময় তাকিয়ে দেখলো যে, ধুলাবালি আকাশে উড়ছে (অর্থাৎ মুসলিম সৈন্যরা এসে গেছে)। তখন মুসলিমরা তোমাদের কাছে এসে গেছে, বলে চিৎকার করে, তারা সবাই ওখান থেকে পালিয়ে গেলো। পরদিন ভোর হলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আমাদের আজকের উত্তম অশ্বারোহী ছিলেন আকু কাতাদাহ্ এবং উত্তম পদাতিক ছিলেন সালামা। সালামা বলেন, অতঃপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (যুদ্ধলব্ধ মাল থেকে) আমাকে দু’ভাগ দিলেন, একভাগ অশ্বারোহীর এবং আরেকভাগ পদাতিকের। তিনি উক্ত দুই ভাগ একত্রেই আমাকে দিলেন। পরে তিনি আমাকে তাঁর নিজস্ব সওয়ারী ‘আদবা’ ওপর তাঁর পেছনে বসিয়ে মদীনার দিকে প্রত্যাবর্তন করলেন। তিনি বলেন, আমরা মদীনার দিকে রওয়ানা করে যাচ্ছিলাম ঠিক এমন সময় আনসারী এক ব্যক্তি বললো, দৌড়ে কেউ আমার আগে যেতে পারবে না। সে আবার প্রতিযোগী আহ্বান করে বললো, আছে কেউ যে, আমার আগে মদীনার পৌঁছতে পারে? সে পুনরায় আহ্বান করলো, কে আছে এমন যে আমার আগে মদীনায় পৌঁছতে পারে? সে উক্ত কথাটি বার বার পুনরাবৃত্তি করতে থাকলো। আমি তার কথা শুনে বললাম, তুমি কি কোনো ভদ্র লোকের সম্মান করবে না এবং কোনো শরীফ-সম্ভ্রান্ত লোককে ভয় করবে না? সে বললো, না; তবে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যদি হন, তাঁকে সম্মানও করবো এবং ভয়ও করবো। সালামা বলেন, তখন আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আমার পিতামাতা আপনার জন্যে উৎসর্গ হোক। আমাকে ছেড়ে দিন (অর্থাৎ অনুমতি দিন), আমি ঐ লোকটির সাথে প্রতিযোগিতা করবো। তিনি বললেন, যদি ইচ্ছে হয় যেতে পারো। সালামা বলেন, তখন আমি বললাম, আমি তোমার কাছে যাবো। এ বলে আমি আমার পা চালাতে লাগলাম পরে দৌড়াতে আরম্ভ করলাম এবং একটি অথবা দুটি উঁচু ভূমি তাকে পেছনে ফেলে এক জায়গায় এসে আমি আমার শরীরকে বিশ্রাম দিলাম। অতঃপর আবার তার পেছনে দৌড়াতে লাগলাম। এবারও আমি তাকে একটি অথবা দুটি উঁচুভূমি পেছনে ফেরে দিলাম। পরে আমি তার কাছে গিয়ে তার দুবাহু ধরে নাড়া দিয়ে বললাম, আল্লাহর কসম! আমি তোমাকে হারিয়ে দিয়েছি। সে বললো, আমারও ধারণা যে, আমি হেরে গেছি। তিনি বলেন, সুতরাং আমি তার পূর্বেই মদীনায় পৌঁছে গেলাম।

সালামা বলেন, আল্লাহর কসম! উক্ত ঘটনার কেবলমাত্র তিন দিন পরেই আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সঙ্গে খাইবার অভিমুখে রওয়ানা করলাম। এ সময় আমার চাচা আমের লোকদের সাথে সুরেলা কন্ঠে গাইতে লাগলেন, আল্লাহর কসম! যদি আল্লাহ অনুগ্রহ না করতেন, আমরা হেদায়েতের পথ পেতাম না। দান-সাদকা করতাম না এবং সালাতও পড়তাম না এবং আমরা তোমার করুণা থেকে বিমুখ নই। অতএব শত্রু মোকাবিলায় আমাদেরকে দৃঢ়পদ রাখো, আর আমাদের ওপর প্রশান্তি নাযিল করো, কবিতা শুনে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিজ্ঞেস করলেন, এ গায়ক কে? তিনি উত্তর দিলেন, আমি আমের। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বললেন, আল্লাহ তোমাকে মাফ করুন। সালামা বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখনই কোনো ব্যক্তি জন্যে বিশেষভাবে ইসতিগফার করেছেন সে শহীদই হয়েছে। তখন উমার ইবনুল খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু তাঁর উটের ওপর বসা ছিলেন। তিনি উচ্চস্বরে বললেন, হে আল্লাহর নবী! যদি আমেরের সাথে আমাদেরকেও উপকৃত করতেন! (যদি আমাদের জন্যেও এরূপ বিশেষ দু’আ করতেন তাহলে খুবই ভালো হতো) সালামা বলেন, যখন আমরা খায়বার এলাকায় আগমন করলাম (যুদ্ধের ব্যুহ বচনা হলো এবং মোকাবিলার জন্যে প্রতিদ্বন্দ্বী আহবানের পালা আসলো) তখন খায়বারবাসীদের অধিপতি মারহাব তার তরবারী উঁচু করে বলতে লাগলো, খায়বার ভূমি খুব ভালো অবগত আছে যে, আমি হলাম মারহাব, আপাদমস্তক অস্ত্র-শস্ত্রে সজ্জিত একজন পরীক্ষিত বীর সেনানী। যখন যুদ্ধ সম্মুখে আসে তখন সে জ্বলন্ত অগ্নি। সালামা বলেন, আমার চাচা আমের তার মোকাবিলায় এসে দাঁড়ালেন এবং বললেন, খায়বার ভূমি অবশ্যই জানে আমি হলাম আমের। মজবুত অস্ত্রে সজ্জিত প্রচন্ড যুদ্ধে অপরাজেয় বীর। সালামা বলেন, এরপর তাদের দু’জনের আঘাত পরস্পরের মধ্যে ওলট-পালট হতে লাগলো। পরে মারহাবের তারবারির আঘাত এক সময় এসে আমার চাচা আমেরের ঢালের ওপর পড়লো। তখন আমের ঢালের নীচ দিয়ে তাকে আঘাত করতেই অতর্কিতভাবে তরবারী এসে তাঁর নিজ দেহের জোড়ার শাহরগটি কেটে দিলো, তাতেই তিনি ইনতিকাল করলেন। সালামা বলেন, আমি বের হয়ে দেখলাম লোকেরা বলাবলি করছে যে, আমেরের সমস্ত আমল বাতিল হয়ে গেছে। কেননা সে আত্মহত্যা করেছে। সালামা বলেন, আমি কাঁদতে কাঁদতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে আসলাম এবং বললাম, আল্লাহর রাসূল! আমেরের আমল তো বাতিল হয়ে গেছে। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এ কথা কে বলেছে? আমি বললাম, আপনার সঙ্গীদের কিছুসংখ্যক লোক বলেছে। তিনি বলেন, যে এ কথা বলেছে সে মিথ্যা বলেছে, বরং সে দ্বিগুন সওয়াবের অধিকারী হয়েছে। অতঃপর তিনি আমাকে আলী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর কাছে পাঠালেন। এ সময় তাঁর চোখ উঠেছে (চক্ষু রোগগ্রস্ত)। পরে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আমি ইসলামী পতাকা অবশ্যই এমন ব্যক্তির হাতে অর্পণ করবো যে আল্লাহ তা’আলা ও তাঁর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে ভালোবাসে। অথবা তিনি বলেছেন, যাকে আল্লাহ্ও তাঁর রাসূল ভালোবাসেন। সালামা বলেন, পরে আমি আলী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর কাছে আসলাম এবং তাঁকে ধরে ধরে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে নিয়ে আসলাম। এসময়ও তিনি চক্ষু রোগে ভুগছিলেন। শেষ নাগাদ আমি তাঁকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট নিয়ে আসলে তিনি তাঁর উভয় চক্ষুর মধ্যে থুথু লাগিয়ে দিলে তৎক্ষণাতই তা আরোগ্য হয়ে গেলা এবং ইসলামী পতাকা তাঁর হাতেই প্রদান করলেন। এ সময় মারহাব বেরিয়ে এসে প্রতিদ্বন্দী আহবান করে বললো, কায়বার ভালোভাবেই জানে আমি হলাম মারহাব, মজবুত অস্ত্রের অধিকারী অপরাজেয় রণবীর। যখন যুদ্ধ সম্মুখে আসে তখন প্রজ্জলিত অগ্নিকূন্ড। তার জবাবে আলী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বললেন, আমি সেই রণবীর, আমার মা আমার নাম রেখেছেন হায়দার। যেমন বিশাল জঙ্গলের কুৎসিত ভয়ঙ্কর সিংহ। যারা আমার কাছে আসে আমি তাদেরকে ‘সুন্দরার’ দাড়িপাল্লা দ্বারা কানায় কানায় ভরতি করে দিয়ে দেই। এ বলে মারহাবের মাথায় আঘাত করতেই সে নিহত হলো। অতঃপর তাঁর হাতেই খায়বার বিজয় হলো। [124]

عَنْ مُعَاذ بْن جَبَلٍ، قَالَ: خَرَجْنَا مَعَ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَامَ غَزْوَةِ تَبُوكَ، فَكَانَ يَجْمَعُ الصَّلَاةَ، فَصَلَّى الظُّهْرَ وَالْعَصْرَ جَمِيعًا، وَالْمَغْرِبَ وَالْعِشَاءَ جَمِيعًا، حَتَّى إِذَا كَانَ يَوْمًا أَخَّرَ الصَّلَاةَ، ثُمَّ خَرَجَ فَصَلَّى الظُّهْرَ وَالْعَصْرَ جَمِيعًا، ثُمَّ دَخَلَ، ثُمَّ خَرَجَ بَعْدَ ذَلِكَ، فَصَلَّى الْمَغْرِبَ وَالْعِشَاءَ جَمِيعًا، ثُمَّ قَالَ: «إِنَّكُمْ سَتَأْتُونَ غَدًا، إِنْ شَاءَ اللهُ، عَيْنَ تَبُوكَ، وَإِنَّكُمْ لَنْ تَأْتُوهَا حَتَّى يُضْحِيَ النَّهَارُ، فَمَنْ جَاءَهَا مِنْكُمْ فَلَا يَمَسَّ مِنْ مَائِهَا شَيْئًا حَتَّى آتِيَ» فَجِئْنَاهَا وَقَدْ سَبَقَنَا إِلَيْهَا رَجُلَانِ، وَالْعَيْنُ مِثْلُ الشِّرَاكِ تَبِضُّ بِشَيْءٍ مِنْ مَاءٍ، قَالَ فَسَأَلَهُمَا رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ «هَلْ مَسَسْتُمَا مِنْ مَائِهَا شَيْئًا؟» قَالَا: نَعَمْ، فَسَبَّهُمَا النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، وَقَالَ لَهُمَا مَا شَاءَ اللهُ أَنْ يَقُولَ. قَالَ: ثُمَّ غَرَفُوا بِأَيْدِيهِمْ مِنَ الْعَيْنِ قَلِيلًا قَلِيلًا، حَتَّى اجْتَمَعَ فِي شَيْءٍ، قَالَ وَغَسَلَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِيهِ يَدَيْهِ وَوَجْهَهُ، ثُمَّ أَعَادَهُ فِيهَا، " فَجَرَتِ الْعَيْنُ بِمَاءٍ مُنْهَمِرٍ أَوْ قَالَ: غَزِيرٍ - شَكَّ أَبُو عَلِيٍّ أَيُّهُمَا قَالَ - حَتَّى اسْتَقَى النَّاسُ، ثُمَّ قَالَ «يُوشِكُ، يَا مُعَاذُ إِنْ طَالَتْ بِكَ حَيَاةٌ، أَنْ تَرَى مَا هَاهُنَا قَدْ مُلِئَ جِنَانًا».

মুয়ায ইবন জাবাল রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: তাবুক যুদ্ধের বছর আমরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সঙ্গে (যুদ্ধে) বের হলাম। (এ সফরে) তিনি (দুই) সালাত একত্রে আদায় করতেন। অর্থাৎ যোহর ও আসর একত্রে আদায় করতেন আর মাগরিব ও ইশা একত্রে আদায় করতেন। অবশেষে এক দিন (এমন) হল যে, সালাত বিলম্বিত করলেন। তারপর বের হয়ে এসে যোহব ও আসর একত্রে আদায় করলেন, অতঃপর (তাঁবুতে) প্রবেশ করলেন। তারপর আবার বেরিয়ে এলেন এবং মাগরিব ও ইশা একত্রে আদায় করলেন। তারপর বললেন, ইনশা আল্লাহ তোমরা আগামীকাল তাবুক প্রস্রবণে পৌছবে আর চাশতের সময় না হওয়া পর্যন্ত তোমরা সেখানে পৌছতে পারবে না। তোমাদের মধ্যে যে সেখানে (প্রথমে) পৌছবে, সে যেন তার পানির কিছুই স্পর্শ না করে যতক্ষন না আমি এসে পৌছি। আমরা (যথাসময়ই) সেখানে পৌছলাম। (কিন্তু) ইতিমধ্যে দু’ব্যক্তি আমাদের আগে সেখানে পৌছে গিয়েছিল। আর প্রস্রবণটিতে জুতার ফিতার ন্যায় ক্ষীণ ধারায় কিছু সামান্য পানি প্রবাহিত হচ্ছিল। মু‘য়ায রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঐ দুজনকে জিজ্ঞাসা করলেন, তোমরা তার থেকে কিছু পানি স্পর্শ করেছ কি? তারা দু’জন বলল, হ্যাঁ। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের দুজনকে তিরস্কার করলেন। আর আল্লাহর যা ইচ্ছা, তাদের তাই বললেন। রাবী বলেন, তারপর লোকেরা তাদের হাত দিয়ে অঞ্জলী ভরে ভরে প্রস্রবণ থেকে অল্প অল্প করে (পানি) তুলল অবশেষে তা একটি পাত্রে কিছু পরিমাণ সঞ্চিত হল। রাবী বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার মধ্যে তাঁর দু’হাত এবং মুখ মুবারক ধুলেন এবং পরে তা (পানি) তাতে (প্রস্রবণে) উলটিয়ে (ঢেলে) দিলেন। ফলে প্রস্রবণটি প্রবল পানি ধারায় অথবা রাবী বলেছেন, প্রচুর পরিমাণে প্রবাহিত হতে লাগল। আবু আলী (রহ.) সন্দেহ করেছেন যে, রাবী এর মধ্যে কোনটি বলেছেন। এবার লোকেরা প্রয়োজনমত পানি পান করল। পরে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হে মু‘য়ায যদি তুমি দীর্ঘজিবী হও, তবে আশা করা যায় যে, তুমি দেখতে পাবে, প্রস্রবণের এ স্থানটি বাগানে ভরে গিয়েছে। [125]

 

 

নবম পরিচ্ছেদ

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বরকতে আল্লাহ যাদেরকে শিফা (আরোগ্য) দান করেছেন। বরকত মূলত আল্লাহর তরফ থেকে বা আল্লাহ তাতে বরকত দান করেছেন ও সৌন্দর্য করেছেন।

عَنِ البَرَاءِ بْنِ عَازِبٍ، قَالَ: بَعَثَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِلَى أَبِي رَافِعٍ اليَهُودِيِّ رِجَالًا مِنَ الأَنْصَارِ، فَأَمَّرَ عَلَيْهِمْ عَبْدَ اللَّهِ بْنَ عَتِيكٍ، وَكَانَ أَبُو رَافِعٍ يُؤْذِي رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَيُعِينُ عَلَيْهِ، وَكَانَ فِي حِصْنٍ لَهُ بِأَرْضِ الحِجَازِ، فَلَمَّا دَنَوْا مِنْهُ، وَقَدْ غَرَبَتِ الشَّمْسُ، وَرَاحَ النَّاسُ بِسَرْحِهِمْ، فَقَالَ عَبْدُ اللَّهِ لِأَصْحَابِهِ: اجْلِسُوا مَكَانَكُمْ، فَإِنِّي مُنْطَلِقٌ، وَمُتَلَطِّفٌ لِلْبَوَّابِ، لَعَلِّي أَنْ أَدْخُلَ، فَأَقْبَلَ حَتَّى دَنَا مِنَ البَابِ، ثُمَّ تَقَنَّعَ بِثَوْبِهِ كَأَنَّهُ يَقْضِي حَاجَةً، وَقَدْ دَخَلَ النَّاسُ، فَهَتَفَ بِهِ البَوَّابُ، يَا عَبْدَ اللَّهِ: إِنْ كُنْتَ تُرِيدُ أَنْ تَدْخُلَ فَادْخُلْ، فَإِنِّي أُرِيدُ أَنْ أُغْلِقَ البَابَ، فَدَخَلْتُ فَكَمَنْتُ، فَلَمَّا دَخَلَ النَّاسُ أَغْلَقَ البَابَ، ثُمَّ عَلَّقَ الأَغَالِيقَ عَلَى وَتَدٍ، قَالَ: فَقُمْتُ إِلَى الأَقَالِيدِ فَأَخَذْتُهَا، فَفَتَحْتُ البَابَ، وَكَانَ أَبُو رَافِعٍ يُسْمَرُ عِنْدَهُ، وَكَانَ فِي عَلاَلِيَّ لَهُ، فَلَمَّا ذَهَبَ عَنْهُ أَهْلُ سَمَرِهِ صَعِدْتُ إِلَيْهِ، فَجَعَلْتُ كُلَّمَا فَتَحْتُ بَابًا أَغْلَقْتُ عَلَيَّ مِنْ دَاخِلٍ، قُلْتُ: إِنِ القَوْمُ نَذِرُوا بِي لَمْ يَخْلُصُوا إِلَيَّ حَتَّى أَقْتُلَهُ، فَانْتَهَيْتُ إِلَيْهِ، فَإِذَا هُوَ فِي بَيْتٍ مُظْلِمٍ وَسْطَ عِيَالِهِ، لاَ أَدْرِي أَيْنَ هُوَ مِنَ البَيْتِ، فَقُلْتُ: يَا أَبَا رَافِعٍ، قَالَ: مَنْ هَذَا؟ فَأَهْوَيْتُ نَحْوَ الصَّوْتِ فَأَضْرِبُهُ ضَرْبَةً بِالسَّيْفِ وَأَنَا دَهِشٌ، فَمَا أَغْنَيْتُ شَيْئًا، وَصَاحَ، فَخَرَجْتُ مِنَ البَيْتِ، فَأَمْكُثُ غَيْرَ بَعِيدٍ، ثُمَّ دَخَلْتُ إِلَيْهِ، فَقُلْتُ: مَا هَذَا الصَّوْتُ يَا أَبَا رَافِعٍ؟ فَقَالَ: لِأُمِّكَ الوَيْلُ، إِنَّ رَجُلًا فِي البَيْتِ ضَرَبَنِي قَبْلُ بِالسَّيْفِ، قَالَ: فَأَضْرِبُهُ ضَرْبَةً أَثْخَنَتْهُ وَلَمْ أَقْتُلْهُ، ثُمَّ وَضَعْتُ ظِبَةَ السَّيْفِ فِي بَطْنِهِ حَتَّى أَخَذَ فِي ظَهْرِهِ، فَعَرَفْتُ أَنِّي قَتَلْتُهُ، فَجَعَلْتُ أَفْتَحُ الأَبْوَابَ بَابًا بَابًا، حَتَّى انْتَهَيْتُ إِلَى دَرَجَةٍ لَهُ، فَوَضَعْتُ رِجْلِي، وَأَنَا أُرَى أَنِّي قَدِ انْتَهَيْتُ إِلَى الأَرْضِ، فَوَقَعْتُ فِي لَيْلَةٍ مُقْمِرَةٍ، فَانْكَسَرَتْ سَاقِي فَعَصَبْتُهَا بِعِمَامَةٍ، ثُمَّ انْطَلَقْتُ حَتَّى جَلَسْتُ عَلَى البَابِ، فَقُلْتُ: لاَ أَخْرُجُ اللَّيْلَةَ حَتَّى أَعْلَمَ: أَقَتَلْتُهُ؟ فَلَمَّا صَاحَ الدِّيكُ قَامَ النَّاعِي عَلَى السُّورِ، فَقَالَ: أَنْعَى أَبَا رَافِعٍ تَاجِرَ أَهْلِ الحِجَازِ، فَانْطَلَقْتُ إِلَى أَصْحَابِي، فَقُلْتُ: النَّجَاءَ، فَقَدْ قَتَلَ اللَّهُ أَبَا رَافِعٍ، فَانْتَهَيْتُ إِلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَحَدَّثْتُهُ، فَقَالَ: «ابْسُطْ رِجْلَكَ» فَبَسَطْتُ رِجْلِي فَمَسَحَهَا، فَكَأَنَّهَا لَمْ أَشْتَكِهَا قَطُّ.

বারা ইবন ‘আযিব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবদুল্লাহ্ ইবন আতীক রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুকে আমীর বানিয়ে তার নেতৃত্বে আনসারদের কপিতয় সাহাবীকে ইয়াহূদী আবূ রাফির (হত্যার) উদ্দেশ্যে প্রেরণ করেন। আবূ রাফি রাসুলুল্লাহ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে কষ্ট দিত এবং এ ব্যাপারে লোকদের সাহায্য করত। হিজায ভূমিতে তার একটি দুর্গ ছিল। (সে সেখানে বসবাস করত) তারা যখন তার দুর্গের কাছে গিয়ে পৌঁছলেন তখন সূর্য ডুবে গিয়েছে এবং লোকজন নিজেদের পশু পাল নিয়ে রওয়ানা হয়েছে (নিজ নিজ বাড়ীর দিকে) আবদুল্লাহ (ইবন আতীক) রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু তার সাথীদেরকে বললেন, তোমরা তোমাদের স্থানে বসে থাক। আমি চললাম ভিতরে প্রবেশ করার জন্য দ্বার রক্ষীর সাথে আমি (কিছু) কৌশল প্রদর্শন করব। এরপর তিনি সামনের দিকে এগিয়ে গিয়ে দরজার কাছে পৌঁছলেন এবং কাপড় দ্বারা নিজেকে এমনভাবে ঢাকলেন যেন তিনি প্রাকৃতিক প্রয়োজনে রত আছেন। তখন সবাই ভিতরে প্রবেশ করলে দ্বাররক্ষী তাকে ডেকে বলল, হে আবদুল্লাহ ভিতরে প্রবেশ করতে চাইলে প্রবেশ কর। আমি এখনই দরজা বন্ধ করে দেব। আমি তখন ভিতরে প্রবেশ করলাম এবং আত্মগোপন করে রইলাম। সকলে ভিতরে প্রবেশ করার পর সে দরজা বন্ধ করে দিল এবং একটি পেরেকের সাথে চাবিটা লটকিয়ে রাখল। (আবদুল্লাহ ইবন আতীক রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন) এরপর আমি চাবিটার দিকে এগিয়ে গেলাম এবং চাবিটা নিয়ে দরজা খুললাম। আবূ রাফির নিকট রাতের বেলা গল্পের আসর জমতো, এ সময় সে তার উপর তলায় কামরায় অবস্থান করছিল। গল্পের আসরে আগত লোকজন চলে গেলে, আমি সিঁড়ি বেয়ে তার কাছে গিয়ে পৌঁছলাম। এসময় আমি একটি করে দরজা খুলছিলাম এবং ভিতর থেকে তা আবার বন্ধ করে দিয়ে যাচ্ছিলাম, যাতে লোকজন আমার (আগমন) সম্বন্ধে জানতে পারলেও হত্যা না করা পর্যন্ত আমার নিকট পৌছতে না পারে। আমি তার কাছে গিয়ে পৌঁছলাম। এ সময় সে একটি অন্ধকার কক্ষে ছেলেমেয়েদের মাঝে শুয়েছিল। কক্ষের কোনো অংশে সে শুয়ে আছে আমি তা বুঝতে পারছিলাম না। তাই আবূ রাফি‘ বলে ডাক দিলাম। সে বলল, কে আমাকে ডাকছ? আমি তখন আওয়াজটি লক্ষ্য করে এগিয়ে গিয়ে তরবারী দ্বারা প্রচন্ড জোরে আঘাত করলাম। আমি তখন কাঁপছিলাম এ আঘাতে আমি তাকে কিছুই করতে পারলাম না। সে চীৎকার করে উঠলে আমি কিছুক্ষণের জন্য বাইরে চলে আসলাম। এরপর পুনরায় ঘরে প্রবেশ করে (কন্ঠস্বর পরিবর্তন করতঃ তার আপন লোকের ন্যায়) জিজ্ঞেস করলাম, আবূ রাফি’ এ আওয়াজ হল কিসের? সে বলল, তোমার মায়ের সর্বনাশ হোক। কিছুক্ষণ পূর্বে ঘরের ভিতর কে যেন আমাকে তরবারি দ্বারা আঘাত করেছে। আবদুল্লাহ্ ইবন ‘আতীক রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, তখন আমি আবার তাকে ভীষণ আঘাত করলাম এবং মারাত্মকভাবে ক্ষত বিক্ষত করে ফেললাম। কিন্তু তাকে হত্যা করতে পারিনি। তাই তরবারির ধারালো দিকটি তার পেটের উপর চেপে ধরলাম এবং পিঠ পার করে দিলাম। এবার আমি নিশ্চিতরূপে অনুভব করলাম যে, এখন আমি তাকে হত্যা করতে সক্ষম হয়েছি। এরপর আমি এক এক দরজা খুলে নিচে নামতে শুরু করলাম নামতে নামতে সিঁড়ির শেষ প্রান্তে এসে পৌঁছলাম। পূর্ণিমার রাত্র ছিল। (চাঁদের আলোতে তাড়াহুড়ার মধ্যে সঠিকভাবে অনুধাবন করতে না পেরে) আমি মনে করলাম, (সিঁড়ির সকল ধাপ অতিক্রম করে) আমি মাটির নিকটে এসে পড়েছি। (কিন্তু তখনও একটি ধাপ অবশিষ্ট ছিল) তাই নিচে পা রাখতেই আমি (আঁছাড় খেয়ে) পড়ে গেলাম। অমনিই আমার পায়ের গোছার হাড় ভেঙ্গে গেল। (তাড়াহুড়া করে) আমি আমার মাথার পাগড়ী দ্বারা পা খানা বেঁধে নিলাম এবং একটু হেঁটে গিয়ে দরজা সোজা বসে রইলাম মনে মনে সিদ্ধান্ত করলাম, তার মৃত্যু সম্পর্কে নিশ্চিত অবগত না হয়ে আজ রাতে আমি এখান থেকে যাব না। ভোর রাতে মোরগের ডাক আরম্ভ হলে মৃত্যু ঘোষণাকারী প্রাচীরে উপর উঠে ঘোষণা করল, হিজায অধিবাসীদের অন্যতম ব্যবসায়ী আবূ রাফীর মৃত্যু সংবাদ গ্রহণ কর। তখন আমি আমার সাথীদের নিকট গিয়ে বললাম, দ্রুত চল, আল্লাহ্ আবূ রাফিকে হত্যা করেছেন। এরপর নবী সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট গেলাম এবং সমস্ত ঘটনা খুলে বললাম। তিনি বললেন, তোমার পা টি লম্বা করে দাও। আমি আমার পা টি লম্বা করে দিলে তিনি উহার উপর স্বীয় হাত বুলিয়ে দিলেন। (এতে আমার পা এমন সুস্থ হয়ে গেল) যেন তাতে কোনো আঘাতই পায়নি।[126]

عَنِ يَزِيد بْن أَبِي عُبَيْدٍ، قَالَ: رَأَيْتُ أَثَرَ ضَرْبَةٍ فِي سَاقِ سَلَمَةَ، فَقُلْتُ يَا أَبَا مُسْلِمٍ، مَا هَذِهِ الضَّرْبَةُ؟ فَقَالَ: هَذِهِ ضَرْبَةٌ أَصَابَتْنِي يَوْمَ خَيْبَرَ، فَقَالَ النَّاسُ: أُصِيبَ سَلَمَةُ، فَأَتَيْتُ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ «فَنَفَثَ فِيهِ ثَلاَثَ نَفَثَاتٍ، فَمَا اشْتَكَيْتُهَا حَتَّى السَّاعَةِ».

ইয়াযীদ ইবন আবূ উবায়দ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, আমি সালমা (ইবন আকওয়া) রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর পায়ের নলায় আঘাতের চিহ্ন দেখে তাঁকে জিজ্ঞেস করলাম, সে আবূ মুসলিম! এ আঘাতটি কিসের? তিনি বললেন, এটি খাইবার যুদ্ধে প্রাপ্ত আঘাত। (যুদ্ধক্ষেত্রে আমাকে আঘাতটি মারার পর) লোকজন বলাবলি শুরু করে দিল যে, সালমা মারা যাবে। কিন্তু এরপর আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে আসলাম। তিনি ক্ষতস্থানটিতে তিনবার ফুঁ দিয়ে দিলেন। ফলে আজ পর্যন্ত আমি এতে কোনো ব্যথা অনুভব করিনি।[127]

عَنْ عَامِرِ بْنِ سَعْدِ بْنِ أَبِي وَقَّاصٍ، عَنْ أَبِيهِ، قَالَ: أَمَرَ مُعَاوِيَةُ بْنُ أَبِي سُفْيَانَ سَعْدًا فَقَالَ: مَا مَنَعَكَ أَنْ تَسُبَّ أَبَا التُّرَابِ؟ فَقَالَ: أَمَّا مَا ذَكَرْتُ ثَلَاثًا قَالَهُنَّ لَهُ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَلَنْ أَسُبَّهُ، لَأَنْ تَكُونَ لِي وَاحِدَةٌ مِنْهُنَّ أَحَبُّ إِلَيَّ مِنْ حُمْرِ النَّعَمِ، سَمِعْتُ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ لَهُ، خَلَّفَهُ فِي بَعْضِ مَغَازِيهِ، فَقَالَ لَهُ عَلِيٌّ: يَا رَسُولَ اللهِ خَلَّفْتَنِي مَعَ النِّسَاءِ وَالصِّبْيَانِ؟ فَقَالَ لَهُ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «أَمَا تَرْضَى أَنْ تَكُونَ مِنِّي بِمَنْزِلَةِ هَارُونَ مِنْ مُوسَى؟ إِلَّا أَنَّهُ لَا نُبُوَّةَ بَعْدِي» وَسَمِعْتُهُ يَقُولُ يَوْمَ خَيْبَرَ «لَأُعْطِيَنَّ الرَّايَةَ رَجُلًا يُحِبُّ اللهَ وَرَسُولَهُ، وَيُحِبُّهُ اللهُ وَرَسُولُهُ» قَالَ فَتَطَاوَلْنَا لَهَا فَقَالَ: «ادْعُوا لِي عَلِيًّا» فَأُتِيَ بِهِ أَرْمَدَ، فَبَصَقَ فِي عَيْنِهِ وَدَفَعَ الرَّايَةَ إِلَيْهِ، فَفَتَحَ اللهُ عَلَيْهِ، وَلَمَّا نَزَلَتْ هَذِهِ الْآيَةُ: {فَقُلْ تَعَالَوْا نَدْعُ أَبْنَاءَنَا وَأَبْنَاءَكُمْ} [آل عمران: 61] دَعَا رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَلِيًّا وَفَاطِمَةَ وَحَسَنًا وَحُسَيْنًا فَقَالَ: «اللهُمَّ هَؤُلَاءِ أَهْلِي».

সা‘দ ইবন আবু ওয়াককাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত যে, মু‘আবিয়া ইবন আবু সুফিয়ান রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু সা‘দ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুকে আমীর বানালেন এবং বললেন, আপনি আলী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুকে কেন মন্দ বলেন না? সা‘দ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বললেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার সম্পর্কে যে তিনটি কথা বলেছেন, তা মনে করে এ কারণে আমি কখনও তাকে মন্দ বলবো না। ওসব কথার মধ্য হতে যদি একটিও আমি লাভ করতে পারতাম তাহলে তা আমার জন্য নাল উটের চেয়েও বেশি ভালো হতো। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আলী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর উদ্দেশ্যে বলতে শুনেছি, আলী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুকে কোনো যুদ্ধের সময় প্রতিনিধি বানিয়ে রেখে গেলে তিনি বললেন, মহিলা ও শিশুদের মাঝে আমাকে রেখে যাচ্ছে, ইয়া রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তুমি কি এতে আনন্দবোধ কর না যে, আমার কাছে তোমার মর্যাদা মুসা আলাইহিস সালামের কাছে হারুন আলাইহিস সালামের মতো। এ কথা ভিন্ন যে, আমার পর আর কোনো নবী নেই! খায়বারের যুদ্ধের দিন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামেরকে আমি বলতে শুনেছি, আমি এমন এক ব্যক্তিকে পতাকা দেবো যে আল্লাহ ও তার রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে ভালবাসে আর আল্লাহ ও তার রাসুলও তাকে ভালবাসেন। এ কথা শুনে আমরা অপেক্ষা করতে থাকলাম। তখন তিনি বললেন, আলীকে ডাকো। আলী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু আসলেন, তাঁর চোখ উঠেছিলো। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর চোখে লালা দিলেন এবং তাঁর হাতে পতাকা অর্পণ করলেন। পরিশেষে তার হাতেই বিজয় তুলে দিলেন আল্লাহ। আর যখন আয়াত, “আমরা আমাদের এবং তোমাদের সন্তান-সন্ততিকে ডাকি” [সূরা আলে ইমরান: ৬১] অবতীর্ণ হলো, তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আলী, ফাতিমা, হাসান ও হুসাইন রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুকে ডাকলেন। অতঃপর বললেন হে আল্লাহ! এরাই আমার পরিবার।[128]

عَنِ الجُعَيْدِ بْنِ عَبْدِ الرَّحْمَنِ، رَأَيْتُ السَّائِبَ بْنَ يَزِيدَ، ابْنَ أَرْبَعٍ وَتِسْعِينَ، جَلْدًا مُعْتَدِلًا، فَقَالَ: قَدْ عَلِمْتُ: مَا مُتِّعْتُ بِهِ سَمْعِي وَبَصَرِي إِلَّا بِدُعَاءِ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، إِنَّ خَالَتِي ذَهَبَتْ بِي إِلَيْهِ، فَقَالَتْ: يَا رَسُولَ اللَّهِ، إِنَّ ابْنَ أُخْتِي شَاكٍ، فَادْعُ اللَّهَ لَهُ، قَالَ: «فَدَعَا لِي».

জু‘আইদ ইবন আবদুর রাহমান রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, ইনি বলেন, আমি 'সাইব ইবন ইয়াযীদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুকে চুরানব্বই বছর বয়সে সুস্থ-সবল ও সুঠাম দেহের অধিকারী দেখেছি। তিনি বললেন, তুমি অবশ্যই অবগত আছ যে, আমি এখনও নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দু‘আর বরকতেই চক্ষু ও কর্ণ দ্বারা উপকৃত হচ্ছি। আমার খালা একদিন আমাকে নিয়ে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দরবারে গেলেন এবং বললেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ্, আমার ভাগিনাটি পীড়িত ও রোগাক্রান্ত। আপনি তার জন্য আল্লাহর দরবারে দো‘আ করুন। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার জন্য দো‘আ করলেন।[129]

عَنِ أَبِي الْعَلَاءِ بْنِ عُمَيْرٍ، قَالَ: كُنْتُ عِنْدَ قَتَادَةَ بْنِ مِلْحَانَ حِينَ حُضِرَ، فَمَرَّ رَجُلٌ فِي أَقْصَى الدَّارِ، قَالَ: فَأَبْصَرْتُهُ فِي وَجْهِ قَتَادَةَ، قَالَ: وَكُنْتُ إِذَا رَأَيْتُهُ كَأَنَّ عَلَى وَجْهِهِ الدِّهَانَ، قَالَ: " وَكَانَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَسَحَ عَلَى وَجْهِهِ ".

আবী আল-‘আলা ইবন উমাইর রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি কাতাদা ইবন মিলহান রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর মৃত্যুর সময় ঘনিয়ে আসলে তার কাছে উপস্থিত হলাম, তখন একলোক ঘরের পাশ দিয়ে যাচ্ছিল। তিনি বলেন, তখন আমি কাতাদা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর চেহারার দিকে তাকালাম। তিনি বলেন, আমি যখনই তার চেহারার দিকে তাকাই দেখি তার চেহারায় যেন চকচক করে। তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার চেহারা মাসেহ করে দিয়েছিলেন। [130]

عَنِ ابْنِ عُمَرَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا: أَنَّ عَبْدَ اللَّهِ بْنَ أُبَيٍّ لَمَّا تُوُفِّيَ، جَاءَ ابْنُهُ إِلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَقَالَ: يَا رَسُولَ اللَّهِ، أَعْطِنِي قَمِيصَكَ أُكَفِّنْهُ فِيهِ، وَصَلِّ عَلَيْهِ، وَاسْتَغْفِرْ لَهُ، فَأَعْطَاهُ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَمِيصَهُ، فَقَالَ: «آذِنِّي أُصَلِّي عَلَيْهِ»، فَآذَنَهُ، فَلَمَّا أَرَادَ أَنْ يُصَلِّيَ عَلَيْهِ جَذَبَهُ عُمَرُ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، فَقَالَ: أَلَيْسَ اللَّهُ نَهَاكَ أَنْ تُصَلِّيَ عَلَى المُنَافِقِينَ؟ فَقَالَ: " أَنَا بَيْنَ خِيَرَتَيْنِ، قَالَ: ﴿ ٱسۡتَغۡفِرۡ لَهُمۡ أَوۡ لَا تَسۡتَغۡفِرۡ لَهُمۡ إِن تَسۡتَغۡفِرۡ لَهُمۡ سَبۡعِينَ مَرَّةٗ فَلَن يَغۡفِرَ ٱللَّهُ لَهُمۡۚ ٨٠ ﴾ [التوبة: ٨٠] " فَصَلَّى عَلَيْهِ، فَنَزَلَتْ: ﴿ وَلَا تُصَلِّ عَلَىٰٓ أَحَدٖ مِّنۡهُم مَّاتَ أَبَدٗا وَلَا تَقُمۡ عَلَىٰ قَبۡرِهِۦٓۖ ٨٤ ﴾ [التوبة: ٨٤] .

আবদুল্লাহ ইবন ‘উমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, আবদুল্লাহ্ ইবন উবাই (মুনাফিক সর্দার) এর মৃত্যু হলে তার পুত্র (যিনি সাহাবী ছিলেন) রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে এসে বললেন, আপনার জামাটি আমাকে দদান করুন। আমি তা দিয়ে আমার পিতার কাফন পরাতে ইছা করি। আর আপনি তার জানাযা পড়াবেন এবং তার জন্য মাগফিরাত কামনা করবেন। রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজের জামাটি তাঁকে দিয়ে দিলেন এবং বললেন, আমাকে সংবাদ দিও, আমি তার জানাযা আদায় করব। তিনি তাঁকে সংবাদ দিলেন। যখন রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার জানাযা আদায়ের ইচ্ছা করলেন, তখন উমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু তাঁর দৃষ্টি আকর্ষণ করে বললেন, আল্লাহ কি আপনাকে মুনাফিকদের জানাযা আদায় করতে নিষেধ করেন নি? তিনি বললেন, আমাকে তো দু'টির মধ্যে কোনো একটি করার ইখিত্‌য়ার দেওয়া হয়েছে। (আল্লাহ্ তা‘আলা বলেছেন) “আপনি তাদের (মুনাফিকদের) জন্য মাগফিরাত কামনা করুন বা মাগফিরাত কামনা না-ই করুন (একই কথা) আপনি যদি সত্তর বারও তাদের জন্য মাগফিরাত কামনা করেন; কখনো আল্লাহ তাদের ক্ষমা করবেন না”। [সূরা আত-তাওবা: ৮০] কাজেই তিনি তার জানাযা পড়লেন, তারপর নাযিল হল "তাদের কেউ মারা গেলে কখনও আপনি তাদের জানাযা আদায় করবেন না।" [সূরা আত-তাওবা: ৮৪] [131]

عَنْ عَمْرٍو، سَمِعَ جَابِرًا رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، قَالَ: «أَتَى النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَبْدَ اللَّهِ بْنَ أُبَيٍّ بَعْدَ مَا دُفِنَ، فَأَخْرَجَهُ، فَنَفَثَ فِيهِ مِنْ رِيقِهِ، وَأَلْبَسَهُ قَمِيصَهُ».

জাবির রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আবদুল্লাহ্ ইবন উবাইকে দাফন করার পর রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার (কবরের) কাছে এলেন এবং তাকে বের করলেন। তারপর তার উপর থুথু দিলেন, এর নিজের জামাটি তাকে পরিয়ে দিলেন। [132]

 

 

দশম পরিচ্ছেদ

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নবুওয়তের প্রমাণ

গায়েবী বিষয়ে তাঁর সংবাদ দেওয়া এবং তিনি যেভাবে বলেছেন সেগুলো ঠিক সেভাবেই সংঘটিত হয়েছিল।

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ: «أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ نَعَى النَّجَاشِيَّ فِي اليَوْمِ الَّذِي مَاتَ فِيهِ خَرَجَ إِلَى المُصَلَّى، فَصَفَّ بِهِمْ وَكَبَّرَ أَرْبَعًا».

আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, নাজাশী যে দিন মারা যান সেদিন-ই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর মৃত্যু সংবাদ দেন এবং জানাযার স্থানে গিয়ে লোকদের কাতারবদ্ধ করে চার তাক্‌বির আদায় করলেন। [133]

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، قَالَ: نَعَى لَنَا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ النَّجَاشِيَّ صَاحِبَ الحَبَشَةِ، يَوْمَ الَّذِي مَاتَ فِيهِ، فَقَالَ: «اسْتَغْفِرُوا لِأَخِيكُمْ»

وَعَنْ ابْنِ شِهَابٍ، قَالَ: حَدَّثَنِي سَعِيدُ بْنُ المُسَيِّبِ: أَنَّ أَبَا هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، قَالَ: «إِنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ صَفَّ بِهِمْ بِالْمُصَلَّى فَكَبَّرَ عَلَيْهِ أَرْبَعًا».

আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (আবিসিনিয়ার বাদশাহ্) নাজাশীর মৃত্যুর দিনই আমাদের তার মৃত্যু সংবাদ জানান এবং বলেন: তোমরা তোমাদের ভাই-এর (নাজাশীর) জন্য ইস্তিগফার কর। আর ইবন শিহাব সা‘য়ীদ ইবন মুসায়্যাব (রহ.) সূত্রে আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের নিয়ে মুসাল্লায় কাতার করলেন, এরপর চার তাক্‌বীর আদায় করেন। [134]

عَنْ جَابِرٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ حِينَ مَاتَ النَّجَاشِيُّ: «مَاتَ اليَوْمَ رَجُلٌ صَالِحٌ، فَقُومُوا فَصَلُّوا عَلَى أَخِيكُمْ أَصْحَمَةَ».

জাবির রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, যখন নাজাশীর মৃত্যু হল তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আজ একজন সৎ ব্যক্তি মারা গেছেন। উঠো, এবং তোমাদের (ধর্মীয়) ভাই আসহামার জন্য জানাযার সালাত আদায় কর। [135]

عَنْ جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ الأَنْصَارِيِّ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا: أَنَّ نَبِيَّ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ «صَلَّى عَلَى أَصْحَمَةَ النَّجَاشِيِّ فَصَفَّنَا وَرَاءَهُ فَكُنْتُ فِي الصَّفِّ الثَّانِي أَوِ الثَّالِثِ».

জাবির ইবন আবদুল্লাহ আনসারী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নাজাশীর উপর জানাযার সালাত আদায় করেন। আমরাও তাঁর পিছনে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে গেলাম। আমি দ্বিতীয় কিংবা তৃতীয় কাতারে ছিলাম। [136]

عَنْ جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا، أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «صَلَّى عَلَى أَصْحَمَةَ النَّجَاشِيِّ، فَكَبَّرَ عَلَيْهِ أَرْبَعًا».

জাবির ইবন আবদুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আসহাম নাজাশীর উপর জানাযার সালাত আদায় করেন এবং চারবার তাকবির বলেন।[137]

عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، قَالَ: قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «أَخَذَ الرَّايَةَ زَيْدٌ فَأُصِيبَ، ثُمَّ أَخَذَهَا جَعْفَرٌ فَأُصِيبَ، ثُمَّ أَخَذَهَا عَبْدُ اللَّهِ بْنُ رَوَاحَةَ فَأُصِيبَ - وَإِنَّ عَيْنَيْ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَتَذْرِفَانِ - ثُمَّ أَخَذَهَا خَالِدُ بْنُ الوَلِيدِ مِنْ غَيْرِ إِمْرَةٍ فَفُتِحَ لَهُ».

আনাস ইবন মালিক রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (মূতা যুদ্ধের অবস্থা বর্ণনায়) বললেন, যায়েদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু পতাকা বহন করেছে তারপর শহীদ হয়েছে। তারপর জা‘ফর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু (পতাকা) হাতে নিয়েছে; সেও শহীদ হয়। তারপর আবদুল্লাহ্ ইবন রাওয়াহা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু (পতাকা) ধারন করে এবং সেও শহীদ হয়। এ সংবাদ বলেছিলেন এবং রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দু’চোখ থেকে অশ্রু প্রবাহিত হচ্ছিল। এরপর খালিদ ইবন ওয়ালিদ রাদিয়াল্লাহু আনহু পরামর্শ ছাড়াই (পতাকা) হাতে তুলে নেয় এবং তাঁর দ্বারা বিজয় সূচিত হয়। [138]

عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ جَعْفَرٍ، قَالَ: بَعَثَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ جَيْشًا، اسْتَعْمَلَ عَلَيْهِمْ زَيْدَ بْنَ حَارِثَةَ " فَإِنْ قُتِلَ زَيْدٌ - أَوِ اسْتُشْهِدَ - فَأَمِيرُكُمْ جَعْفَرٌ، فَإِنْ قُتِلَ - أَوِ اسْتُشْهِدَ - فَأَمِيرُكُمْ عَبْدُ اللهِ بْنُ رَوَاحَةَ " فَلَقُوا الْعَدُوَّ، فَأَخَذَ الرَّايَةَ زَيْدٌ فَقَاتَلَ حَتَّى قُتِلَ، ثُمَّ أَخَذَ الرَّايَةَ جَعْفَرٌ فَقَاتَلَ حَتَّى قُتِلَ، ثُمَّ أَخَذَهَا عَبْدُ اللهِ بْنُ رَوَاحَةَ فَقَاتَلَ حَتَّى قُتِلَ، ثُمَّ أَخَذَ الرَّايَةَ خَالِدُ بْنُ الْوَلِيدِ فَفَتَحَ اللهُ عَلَيْهِ، وَأَتَى خَبَرُهُمِ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَخَرَجَ إِلَى النَّاسِ، فَحَمِدَ اللهَ وَأَثْنَى عَلَيْهِ، وَقَالَ: " إِنَّ إِخْوَانَكُمْ لَقُوا الْعَدُوَّ، وَإِنَّ زَيْدًا أَخَذَ الرَّايَةَ، فَقَاتَلَ حَتَّى قُتِلَ - أَوِ اسْتُشْهِدَ - ثُمَّ أَخَذَ الرَّايَةَ بَعْدَهُ جَعْفَرُ بْنُ أَبِي طَالِبٍ فَقَاتَلَ حَتَّى قُتِلَ - أَوِ اسْتُشْهِدَ -، ثُمَّ أَخَذَ الرَّايَةَ عَبْدُ اللهِ بْنُ رَوَاحَةَ، فَقَاتَلَ حَتَّى قُتِلَ - أَوِ اسْتُشْهِدَ - ثُمَّ أَخَذَ الرَّايَةَ سَيْفٌ مِنْ سُيُوفِ اللهِ خَالِدُ بْنُ الْوَلِيدِ، فَفَتَحَ اللهُ عَلَيْهِ " فَأَمْهَلَ، ثُمَّ أَمْهَلَ آلَ جَعْفَرٍ - ثَلاثًا - أَنْ يَأْتِيَهُمْ، ثُمَّ أَتَاهُمْ فَقَالَ: " لَا تَبْكُوا عَلَى أَخِي بَعْدَ الْيَوْمِ ادْعُوا إلِي ابْنَيِ أخِي ".

আব্দুল্লাহ ইবন জা’ফর রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (মূতার যুদ্ধে) যায়েদ ইবন হারেসা রাদিয়াল্লাহু আনহুকে সেনাপতি করে সৈন্যবাহিনী প্রেরণ করেন। আর বলে দিলেন যে, যদি যায়েদ রাদিয়াল্লাহু আনহু শহীদ হন তবে তোমাদের আমীর হবেন জাফর রাদিয়াল্লাহু আনহু। তিনিও যদি শহীদ হন তবে তোমাদের আমীর হবেন আব্দুল্লাহ ইবন রাওয়াহাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু। যায়েদ রাদিয়াল্লাহু আনহু পতাকা বহন করেছেন তারপর এমনভাবে জিহাদ করেছেন যে, তিনি শহীদ হয়েছে। তারপর জা'ফর রাদিয়াল্লাহু আনহু (পতাকা) হাতে নিয়েছে; তিনিও এমনভাবে জিহাদ করেছেন যে, শহীদ হন তারপর আবদুল্লাহ্ ইবন রাওয়াহা রাদিয়াল্লাহু আনহু (পতাকা) ধারন করে এবং তিনিও এমনভাবে জিহাদ করেছেন যে, শহীদ হন। এরপর খালিদ ইবন ওয়ালিদ রাদিয়াল্লাহু আনহু পতাকা হাতে তুলে নেন এবং তাঁর দ্বারা বিজয় সূচিত হয়। তাদের সংবাদ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে আসলে তিনি লোকদের মাঝে নেমে আসেন। অতঃপর তিনি আল্লাহর হামদ ও সানা করেন। তিনি বলেন, তোমাদের ভাইয়ের শত্রুর মোকাবিলা করছে। যায়েদ রাদিয়াল্লাহু আনহু পতাকা বহন করেছে তারপর শহীদ হয়েছে। তারপর জা'ফর রাদিয়াল্লাহু আনহু (পতাকা) হাতে নিয়েছে; সেও শহীদ হয়। তারপর আবদুল্লাহ্ ইবন রাওয়াহা রাদিয়াল্লাহু আনহু (পতাকা) ধারন করে এবং সেও শহীদ হয়। অতঃপর আল্লাহর তরবারী খ্যাত খালিদ ইবন ওয়ালিদ রাদিয়াল্লাহু আনহু পতাকা বহন করেছে। আল্লাহ তাঁর দ্বারা বিজয় সূচিত করেছেন। জা’ফর পরিবারকে সুযোগ দাও তাদের জন্য শান্তনা। জা’ফর পরিবারকে সুযোগ দাও তাদের জন্য শান্তনা। অতপর তাদেরকে নিয়ে আসা হলো। তিনি বললেন, আজকের পরে তোমরা আমার ভাইয়ের জন্য কাঁদবে না, আমার ভাইয়ের ছেলের জন্য দো‘আ করো। [139]

عَنْ عُبَيْد اللَّهِ بْن أَبِي رَافِعٍ، قَالَ: سَمِعْتُ عَلِيًّا رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، يَقُولُ: بَعَثَنِي رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنَا وَالزُّبَيْرَ، وَالمِقْدَادَ بْنَ الأَسْوَدِ، قَالَ: «انْطَلِقُوا حَتَّى تَأْتُوا رَوْضَةَ خَاخٍ، فَإِنَّ بِهَا ظَعِينَةً، وَمَعَهَا كِتَابٌ فَخُذُوهُ مِنْهَا»، فَانْطَلَقْنَا تَعَادَى بِنَا خَيْلُنَا حَتَّى انْتَهَيْنَا إِلَى الرَّوْضَةِ، فَإِذَا نَحْنُ بِالظَّعِينَةِ، فَقُلْنَا أَخْرِجِي الكِتَابَ، فَقَالَتْ: مَا مَعِي مِنْ كِتَابٍ، فَقُلْنَا: لَتُخْرِجِنَّ الكِتَابَ أَوْ لَنُلْقِيَنَّ الثِّيَابَ، فَأَخْرَجَتْهُ مِنْ عِقَاصِهَا، فَأَتَيْنَا بِهِ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَإِذَا فِيهِ مِنْ حَاطِبِ بْنِ أَبِي بَلْتَعَةَ إِلَى أُنَاسٍ مِنَ المُشْرِكِينَ مِنْ أَهْلِ مَكَّةَ يُخْبِرُهُمْ بِبَعْضِ أَمْرِ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «يَا حَاطِبُ مَا هَذَا؟»، قَالَ: يَا رَسُولَ اللَّهِ، لاَ تَعْجَلْ عَلَيَّ إِنِّي كُنْتُ امْرَأً مُلْصَقًا فِي قُرَيْشٍ، وَلَمْ أَكُنْ مِنْ أَنْفُسِهَا، وَكَانَ مَنْ مَعَكَ مِنَ المُهَاجِرِينَ لَهُمْ قَرَابَاتٌ بِمَكَّةَ يَحْمُونَ بِهَا أَهْلِيهِمْ وَأَمْوَالَهُمْ، فَأَحْبَبْتُ إِذْ فَاتَنِي ذَلِكَ مِنَ النَّسَبِ فِيهِمْ، أَنْ أَتَّخِذَ عِنْدَهُمْ يَدًا يَحْمُونَ بِهَا قَرَابَتِي، وَمَا فَعَلْتُ كُفْرًا وَلاَ ارْتِدَادًا، وَلاَ رِضًا بِالكُفْرِ بَعْدَ الإِسْلاَمِ، فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «لَقَدْ صَدَقَكُمْ»، قَالَ عُمَرُ: يَا رَسُولَ اللَّهِ دَعْنِي أَضْرِبْ عُنُقَ هَذَا المُنَافِقِ، قَالَ: " إِنَّهُ قَدْ شَهِدَ بَدْرًا، وَمَا يُدْرِيكَ لَعَلَّ اللَّهَ أَنْ يَكُونَ قَدِ اطَّلَعَ عَلَى أَهْلِ بَدْرٍ فَقَالَ: اعْمَلُوا مَا شِئْتُمْ فَقَدْ غَفَرْتُ لَكُمْ "، - قَالَ سُفْيَانُ: وَأَيُّ إِسْنَادٍ هَذَا –.

আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে এবং যুবায়র ও মিকদাদ ইবন আসওয়াদ রাদিয়াল্লাহু আনহুকে পাঠিয়ে বললেন, ‘তোমরা খাখ্ বাগানে যাও। সেখানে তোমরা এক মহিলাকে দেখতে পাবে। তার নিকট একটি পত্র আছে, তোমরা তার কাছ থেকে তা নিয়ে আসবে’। তখন আমরা রওনা করলাম। আমাদের ঘোড়া আমাদের নিয়ে দ্রুত বেগে চলছিল। অবশেষে আমরা উক্ত খাখ্ নামক বাগানে পৌঁছলাম এবং সেখানে আমরা মহিলাটিকে দেখতে পেলাম। আমরা বললাম, ‘পত্র বাহির কর’। সে বলল, ‘আমার কাছে তো কোনো পত্র নেই’। আমরা বললাম, ‘তুমি অবশ্যই পত্র বের করে দিবে, নচেৎ তোমার কাপড় খুলতে হবে’। তখন সে তার চুলের খোঁপা থেকে পত্রটি বের করে দিল। আমরা তখন সে পত্রটি নিয়ে রাসূল্লাল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট উপস্থিত হলাম। দেখা গেল, তা হাতিব ইবন আবূ বালতাবা রাদিয়াল্লাহু আনহুর পক্ষ থেকে মক্কার কতিপয় মুশরিক ব্যক্তির নিকট লেখা হয়েছে। যাতে তাদেরকে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কোনো পদক্ষেপ সম্পর্কে সংবাদ দেওয়া হয়েছে। তখন রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘হে হাতিব! একি ব্যাপার?’ তিনি বললেন, ‘ইয়া রাসূলাল্লাহ্! আমার ব্যাপারে কোনো তড়িত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন না। মূলত আমি কুরাইশ বংশীয় লোক ছিলাম না। তবে তাদের সাথে সম্পৃক্ত ছিলাম। আর যারা আপনার সঙ্গে মুহাজিরগণ রয়েছেন, তাদের সকলেরই মক্কাবাসীদের সাথে আত্মীয়তার সম্পর্ক রয়েছে। যার কারণে তাঁদের পরিবার-পরিজন ও ধন-সম্পদ নিরাপদ। তাই আমি চেয়েছি, যেহেতু আমার বংশগতভাবে এ সম্পর্ক নেই, কাজেই আমি তাদের প্রতি এমন কিছু কুফরী কিংবা মুরতাদ হওয়ার উদ্দেশ্যে করিনি এবং ইসলাম গ্রহণের পর পুনঃ কুফরীতে প্রত্যাবর্তন করার প্রতি আকৃষ্ট হবার কারণেও নয়’। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘হাতিব তোমাদের নিকট সত্য কথা বলেছে’। তখন উমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, ‘ইয়া রাসূলাল্লাহ্! আমাকে অনুমতি দিন, আমি এই মুনাফিকের গর্দান উড়িয়ে দেই’। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘সে বদর যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছে। সম্ভবত তোমার হয়ত জানা নেই, আল্লাহ্ তা‘আলা বদর যুদ্ধে অংশগ্রহণকারীদের ব্যাপারে অবহিত আছেন। তাই তাদের উদ্দেশ্য করে বলেছেন, তোমরা যা ইচ্ছা আমল কর। আমি তোমাদেরকে ক্ষমা করে দিয়েছি’। সুফিয়ান (রহ.) বলেন এ সনদটি কতই না উত্তম।[140]

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ: وَفَدَتْ وُفُودٌ إِلَى مُعَاوِيَةَ وَذَلِكَ فِي رَمَضَانَ، فَكَانَ يَصْنَعُ بَعْضُنَا لِبَعْضٍ الطَّعَامَ، فَكَانَ أَبُو هُرَيْرَةَ مِمَّا يُكْثِرُ أَنْ يَدْعُوَنَا إِلَى رَحْلِهِ، فَقُلْتُ: أَلَا أَصْنَعُ طَعَامًا فَأَدْعُوَهُمْ إِلَى رَحْلِي؟ فَأَمَرْتُ بِطَعَامٍ يُصْنَعُ، ثُمَّ لَقِيتُ أَبَا هُرَيْرَةَ مِنَ الْعَشِيِّ، فَقُلْتُ: الدَّعْوَةُ عِنْدِي اللَّيْلَةَ، فَقَالَ: سَبَقْتَنِي، قُلْتُ: نَعَمْ، فَدَعَوْتُهُمْ، فَقَالَ أَبُو هُرَيْرَةَ: أَلَا أُعْلِمُكُمْ بِحَدِيثٍ مِنْ حَدِيثِكُمْ يَا مَعْشَرَ الْأَنْصَارِ، ثُمَّ ذَكَرَ فَتْحَ مَكَّةَ، فَقَالَ: أَقْبَلَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ حَتَّى قَدِمَ مَكَّةَ، فَبَعَثَ الزُّبَيْرَ عَلَى إِحْدَى الْمُجَنِّبَتَيْنِ، وَبَعَثَ خَالِدًا عَلَى الْمُجَنِّبَةِ الْأُخْرَى، وَبَعَثَ أَبَا عُبَيْدَةَ عَلَى الْحُسَّرِ، فَأَخَذُوا بَطْنَ الْوَادِي، وَرَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي كَتِيبَةٍ، قَالَ: فَنَظَرَ فَرَآنِي، فَقَالَ أَبُو هُرَيْرَةَ: قُلْتُ: لَبَّيْكَ يَا رَسُولَ اللهِ، فَقَالَ: «لَا يَأْتِينِي إِلَّا أَنْصَارِيٌّ» - زَادَ غَيْرُ شَيْبَانَ -، فَقَالَ: «اهْتِفْ لِي بِالْأَنْصَارِ»، قَالَ: فَأَطَافُوا بِهِ، وَوَبَّشَتْ قُرَيْشٌ أَوْبَاشًا لَهَا، وَأَتْبَاعًا، فَقَالُوا: نُقَدِّمُ هَؤُلَاءِ، فَإِنْ كَانَ لَهُمْ شَيْءٌ كُنَّا مَعَهُمْ، وَإِنْ أُصِيبُوا أَعْطَيْنَا الَّذِي سُئِلْنَا، فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «تَرَوْنَ إِلَى أَوْبَاشِ قُرَيْشٍ، وَأَتْبَاعِهِمْ»، ثُمَّ قَالَ بِيَدَيْهِ إِحْدَاهُمَا عَلَى الْأُخْرَى، ثُمَّ قَالَ: «حَتَّى تُوَافُونِي بِالصَّفَا»، قَالَ: فَانْطَلَقْنَا فَمَا شَاءَ أَحَدٌ مِنَّا أَنْ يَقْتُلَ أَحَدًا إِلَّا قَتَلَهُ، وَمَا أَحَدٌ مِنْهُمْ يُوَجِّهُ إِلَيْنَا شَيْئًا، قَالَ: فَجَاءَ أَبُو سُفْيَانَ، فَقَالَ: يَا رَسُولَ اللهِ، أُبِيحَتْ خَضْرَاءُ قُرَيْشٍ، لَا قُرَيْشَ بَعْدَ الْيَوْمِ، ثُمَّ قَالَ: «مَنْ دَخَلَ دَارَ أَبِي سُفْيَانَ فَهُوَ آمِنٌ»، فَقَالَتِ الْأَنْصَارُ بَعْضُهُمْ لِبَعْضٍ: أَمَّا الرَّجُلُ فَأَدْرَكَتْهُ رَغْبَةٌ فِي قَرْيَتِهِ، وَرَأْفَةٌ بِعَشِيرَتِهِ، قَالَ أَبُو هُرَيْرَةَ: وَجَاءَ الْوَحْيُ وَكَانَ إِذَا جَاءَ الْوَحْيُ لَا يَخْفَى عَلَيْنَا، فَإِذَا جَاءَ فَلَيْسَ أَحَدٌ يَرْفَعُ طَرْفَهُ إِلَى رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ حَتَّى يَنْقَضِيَ الْوَحْيُ، فَلَمَّا انْقَضَى الْوَحْيُ، قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «يَا مَعْشَرَ الْأَنْصَارِ» قَالُوا: لَبَّيْكَ يَا رَسُولَ اللهِ، قَالَ: " قُلْتُمْ: أَمَّا الرَّجُلُ فَأَدْرَكَتْهُ رَغْبَةٌ فِي قَرْيَتِهِ؟ " قَالُوا: قَدْ كَانَ ذَاكَ، قَالَ: «كَلَّا، إِنِّي عَبْدُ اللهِ وَرَسُولُهُ، هَاجَرْتُ إِلَى اللهِ وَإِلَيْكُمْ، وَالْمَحْيَا مَحْيَاكُمْ وَالْمَمَاتُ مَمَاتُكُمْ»، فَأَقْبَلُوا إِلَيْهِ يَبْكُونَ وَيَقُولُونَ: وَاللهِ، مَا قُلْنَا الَّذِي قُلْنَا إِلَّا الضِّنَّ بِاللهِ وَبِرَسُولِهِ، فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِنَّ اللهَ وَرَسُولَهُ يُصَدِّقَانِكُمْ، وَيَعْذِرَانِكُمْ»، قَالَ: فَأَقْبَلَ النَّاسُ إِلَى دَارِ أَبِي سُفْيَانَ، وَأَغْلَقَ النَّاسُ أَبْوَابَهُمْ، قَالَ: وَأَقْبَلَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ حَتَّى أَقْبَلَ إِلَى الْحَجَرِ، فَاسْتَلَمَهُ ثُمَّ طَافَ بِالْبَيْتِ، قَالَ: فَأَتَى عَلَى صَنَمٍ إِلَى جَنْبِ الْبَيْتِ كَانُوا يَعْبُدُونَهُ، قَالَ: وَفِي يَدِ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَوْسٌ وَهُوَ آخِذٌ بِسِيَةِ الْقَوْسِ، فَلَمَّا أَتَى عَلَى الصَّنَمِ جَعَلَ يَطْعُنُهُ فِي عَيْنِهِ، وَيَقُولُ: {جَاءَ الْحَقُّ وَزَهَقَ الْبَاطِلُ} [الإسراء: 81]، فَلَمَّا فَرَغَ مِنْ طَوَافِهِ أَتَى الصَّفَا، فَعَلَا عَلَيْهِ حَتَّى نَظَرَ إِلَى الْبَيْتِ، وَرَفَعَ يَدَيْهِ فَجَعَلَ يَحْمَدُ اللهَ وَيَدْعُو بِمَا شَاءَ أَنْ يَدْعُوَ.

আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, আব্দুল্লাহ ইবন আবু রাবা রহ. বলেন, আমি একটি প্রতিনিধি দলের সাথে (যার মধ্যে আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু ও ছিলেন) মুয়াবিয়া রাদিয়াল্লাহু আনহুর কাছে গেলাম। সেই সময় ছিল রামাযান মাস। তখন তাঁরা একে অন্যের জন্য খানা পাকাতেন। আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু অধিকাংশ সময় আমাদেরকে তাঁর বাসস্থানে দাওয়াত করতেন। সুতরাং একদিন আমি তাঁকে বললাম, আমিও খানা তৈয়ার করবো এবং সলকেই আমার বাসস্থানে-দাওয়াত করবো। আমি খানা তৈরীর নির্দেশ দিলাম। এরপর আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহুর সঙ্গে আমি বিকালে সাক্ষাত করলাম এবং বললাম, আজ রাতে আমার বাসায় আপনার দাওয়াত। আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, আপনি আজ আমার-পূর্বেই দাওয়াত দিয়ে দিলেন, আমি বললাম, হ্যাঁ। আমি সকলকেই দাওয়াত করলাম। তখন আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, হে আনসার- সম্প্রদায়! আমি কি তোমাদেরকে তোমাদের সম্পর্কে একটি হাদীস বর্ণনা করবে না? তারপর তিনি মক্কা বিজয়ের ঘটনা বর্ণনা করতে শুরু করলেন। তিনি বললেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কার দিকে অগ্রসর হলেন এবং পরিশেষে তিনি তথায় উপনীত হলেন। এরপর যুবাইরকে মক্কার একদিকে এবং খালিদ ইবন ওয়ালীদ রাদিয়াল্লাহু আনহুকে অপর দিকে প্রেরণ করলেন। আর আবু উবায়দা রাদিয়াল্লাহু আনহুকে সেইসব লোকদের উপর নেতা বানিয়ে পাঠালেন যাদের কাছে লৌহ বর্ম ছিলনা। তারা উপত্যকার ভিতরের পথ অবলম্বন করে চললেন। আর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছিলেন একটি ছোট সেনাদলের মধ্যে। তিনি তাকালেন এবং আমাকে দেখে বললেন, হে আবু হুরায়রা! আমি বললাম, ইয়া রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আমি উপস্থিত। এরপর তিনি বললেন, আমার নিকট আনসার ব্যতীত আর কেউ যেন না আসে। শাইবান ব্যতীত অন্য বর্ণনাকারী অতিরিক্ত বর্ণনা করেছেন যে, তারপর তিনি বললেন, আনসারদেরকে আহবান কর। বর্ণনাকারী বলেন, এরপর আনসারগণ তার চারপাশে জমায়েত হলেন। এদিকে কুরাইশগণও তাদের বিভিন্ন গোত্রের লোক এবং অনুগতদেরকে একত্রিত করলো। এরপর তারা বলল, আমরা তাদেরকে আগে প্রেরণ করব। যদি তাদের- ভাগে কিছু জুটে, তবে আমরাও তো তাদের সঙ্গেই আছি। আর যদি তারা বিপদের সম্মুখীন হয় তবে তারা আমাদের কাছে যা চাইবে, তাই দিয়ে দেব। এরপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবীগণকে বললেন, তোমরা কি কুরাইশের বিভিন্ন গোত্রের লোক এবং তাদের অনুগতদেরকে দেখতে পাচ্ছ। এরপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর এবং হাত আপন হাতের উপর রেখে ইঙ্গিত করলেন, (মক্কার পথে যারা তোমাদের বাধা দেয় তোমরা তাদের খতমঁ করে দিবে)। এরপর বললেন, অবশেষে সাফা পাহাড়ে তোমরা আমার সঙ্গে মিলিত হবে। বর্ণনাকারী বলেন, আমরা অগ্রসর হতে লাগলাম। আমাদের মধ্য হতে কেউ যাকে কতল করতে চেয়েছে তাকে কতল করেছে। তাই তাদের মধ্য হতে কেউই আমাদের উপর আক্রমণ করতে সাহস পায়নি। বর্ণনাকারী বলেন, তখন আবু সুফিয়ান এসে বললেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আজ কুরাইশ সম্প্রদায়ের রক্ত হালাল করে-দেওয়া হয়েছে। আজকের পরে আর কোনো কুরাইশের অস্তিত্ব থাকবেনা। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘোষণা দিলেন, যে ব্যক্তি আবু সুফিয়ানের ঘরে প্রবেশ করবে সে-নিরাপদ। সূতরাং আনসারগণ একে অপরের সাথে বলাবলি করতে লাগল যে, লোকটিকে (রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্বদেশের অনুপ্রেরণ এবং স্বদেশ প্রেমে পেয়ে বসেছে। আবু হুতায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন যে, তখনই অহী অবতীর্ণ হল। যখন অহী অবতীর্ণ হতো তখন তা আমাদের নিকট গোপন থাকত না। ঐ সময় কারো সাধ্য হতো না যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দিকে চোখ তোলে দেখে, যতক্ষননা অহী শেষ হতো। এরপর যখন অহী শেষ হল, তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হে আনসার সম্প্রদায়! তারা বলল, ইয়া রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আমরা আপনার কাছে উপস্থিত। তখন তিনি বললেন, তোমরা কি বলেছ, যে, লোকটিকে স্বদেশের অনুপ্রেরণায় পেয়ে বসেছে”। তখন তারা বললেন, এ রকম কিছু হয়েছে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, কখনও না। নিশ্চয়ই আমি আল্লাহর বান্দা এবং তার প্রেরিত রাসুল। আমি আল্লহর উদ্দেশ্যে স্বদেশ ত্যাগ করে তোমাদের কাছে গিয়েছি। আমার জীবন ও মরণ তোমাদের সাথে। তারা কাঁদতে কাদতে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দিকে অগ্রসর হলেন এবং কাঁদতে লাগলেন, আল্লাহর শপথ! আমরা যা বলেছিলাম, তা ছিল আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি আমাদের ভালবাসা ও দূর্বলতার কারণে। এরপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ ও তাঁর রাসুল তোমাদের বক্তব্য-বিশ্বাস করেন এবং তোমাদের ওযর গ্রহণ করলেন। বর্ণনাকারী বলেন, এরপর মক্কার জনগণ আবু সুফিয়ানের বাড়ীর দিকে চলে গেল- (জীবন রক্ষার জন্যে) আর অন্যান্য মানুষ আপন ঘরে দরজা লাগিয়ে বসে রইল এরপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ‘হজরে আসওয়াদ’ এর নিকটবর্তী হয়ে একে চুম্বন এবং বায়তুল্লাহ শরীফের তাওয়াফ করলেন। এরুপর তিনি বাইতুল্লাহর পাশ্বে রক্ষিত একটি মূর্তির নিকটবর্তী হলেন, যাকে তারা উপাসনা করতো। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাতে তখন একটি ধনুক ছিল, তিনি এর এক প্রান্তে ধরে রেখেছিলেন। যখন তিনি মূর্তিটির নিকটবর্তী হলেন তখন তিনি তা দ্বারা এর চোখে খুচাতে লাগলেন এবং বললেন, “সত্য আগমন করেছে এবং বাতিল (মিথ্যা) চলে গিয়েছে।” [সূরা ইসরা : ৮১] এরপর বায়তুল্লাহর তাওয়াফ শুরু শেষে তিনি সাফা পাহাড়ের দিকে গমন করলেন। এরপর তাতে আরোহণ করে বাইতুল্লাহর দিকে চেয়ে দেখলেন এবং দু’হাত উচু করে আল্লাহ তা‘আলার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করলেন এবং তার যা পার্থনা করার তাই প্রার্থনা করলেন। [141]

حَدَّثَنَا سُلَيْمَانُ بْنُ الْمُغِيرَةِ، بِهَذَا الْإِسْنَادِ وَزَادَ فِي الْحَدِيثِ، ثُمَّ قَالَ بِيَدَيْهِ إِحْدَاهُمَا عَلَى الْأُخْرَى «احْصُدُوهُمْ حَصْدًا»، وَقَالَ فِي الْحَدِيثِ: قَالُوا: قُلْنَا ذَاكَ يَا رَسُولَ اللهِ، قَالَ: " فَمَا اسْمِي إِذًا؟ كَلَّا إِنِّي عَبْدُ اللهِ وَرَسُولُهُ.

সুলাইমান ইবন মুগীরা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে উক্ত সনদে এই হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। তবে তার হাদীসে অতিরিক্ত কথা উল্লেখ রয়েছে যে, তারপর তিনি তার এক হাত অপর হাতের উপর রেখে ইশারা করে বললেন, তোমরা তাদেরকে খতম করে দাও। এতে আরো উল্লেখ রয়েছে সে, তখনঁ তারা বললেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আমরা এ রকম কিছু বলেছি। তখন তিনি বললেন, তাহলে আমার-নামের কী আর থাকবে। সুতরাং এমনটি কখনো হবে না। আমিতো আল্লাহর বান্দা ও রাসুল। [142]

عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ رَبَاحٍ، قَالَ: وَفَدْنَا إِلَى مُعَاوِيَةَ بْنِ أَبِي سُفْيَانَ، وَفِينَا أَبُو هُرَيْرَةَ، فَكَانَ كُلُّ رَجُلٍ مِنَّا يَصْنَعُ طَعَامًا يَوْمًا لِأَصْحَابِهِ، فَكَانَتْ نَوْبَتِي، فَقُلْتُ: يَا أَبَا هُرَيْرَةَ، الْيَوْمُ نَوْبَتِي، فَجَاءُوا إِلَى الْمَنْزِلِ وَلَمْ يُدْرِكْ طَعَامُنَا، فَقُلْتُ: يَا أَبَا هُرَيْرَةَ، لَوْ حَدَّثْتَنَا عَنْ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ حَتَّى يُدْرِكَ طَعَامُنَا، فَقَالَ: كُنَّا مَعَ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَوْمَ الْفَتْحِ، فَجَعَلَ خَالِدَ بْنَ الْوَلِيدِ عَلَى الْمُجَنِّبَةِ الْيُمْنَى، وَجَعَلَ الزُّبَيْرَ عَلَى الْمُجَنِّبَةِ الْيُسْرَى، وَجَعَلَ أَبَا عُبَيْدَةَ عَلَى الْبَيَاذِقَةِ، وَبَطْنِ الْوَادِي، فَقَالَ: «يَا أَبَا هُرَيْرَةَ، ادْعُ لِي الْأَنْصَارَ»، فَدَعَوْتُهُمْ، فَجَاءُوا يُهَرْوِلُونَ، فَقَالَ: «يَا مَعْشَرَ الْأَنْصَارِ، هَلْ تَرَوْنَ أَوْبَاشَ قُرَيْشٍ؟» قَالُوا: نَعَمْ، قَالَ: «انْظُرُوا، إِذَا لَقِيتُمُوهُمْ غَدًا أَنْ تَحْصُدُوهُمْ حَصْدًا»، وَأَخْفَى بِيَدِهِ وَوَضَعَ يَمِينَهُ عَلَى شِمَالِهِ، وَقَالَ: «مَوْعِدُكُمُ الصَّفَا»، قَالَ: فَمَا أَشْرَفَ يَوْمَئِذٍ لَهُمْ أَحَدٌ إِلَّا أَنَامُوهُ، قَالَ: وَصَعِدَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الصَّفَا، وَجَاءَتِ الْأَنْصَارُ فَأَطَافُوا بِالصَّفَا، فَجَاءَ أَبُو سُفْيَانَ، فَقَالَ: يَا رَسُولَ اللهِ، أُبِيدَتْ خَضْرَاءُ قُرَيْشٍ لَا قُرَيْشَ بَعْدَ الْيَوْمِ، قَالَ أَبُو سُفْيَانَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَنْ دَخَلَ دَارَ أَبِي سُفْيَانَ فَهُوَ آمِنٌ، وَمَنْ أَلْقَى السِّلَاحَ فَهُوَ آمِنٌ، وَمَنْ أَغْلَقَ بَابهُ فَهُوَ آمِنٌ»، فَقَالَتِ الْأَنْصَارُ: أَمَّا الرَّجُلُ فَقَدْ أَخَذَتْهُ رَأْفَةٌ بِعَشِيرَتِهِ، وَرَغْبَةٌ فِي قَرْيَتِهِ، وَنَزَلَ الْوَحْيُ عَلَى رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قَالَ: " قُلْتُمْ: أَمَّا الرَّجُلُ فَقَدْ أَخَذَتْهُ رَأْفَةٌ بِعَشِيرَتِهِ، وَرَغْبَةٌ فِي قَرْيَتِهِ، أَلَا فَمَا اسْمِي إِذًا؟ - ثَلَاثَ مَرَّاتٍ - أَنَا مُحَمَّدٌ عَبْدُ اللهِ وَرَسُولُهُ، هَاجَرْتُ إِلَى اللهِ وَإِلَيْكُمْ، فَالْمَحْيَا مَحْيَاكُمْ، وَالْمَمَاتُ مَمَاتُكُمْ " قَالُوا: وَاللهِ، مَا قُلْنَا إِلَّا ضَنًّا بِاللهِ وَرَسُولِهِ، قَالَ: «فَإِنَّ اللهَ وَرَسُولَهُ يُصَدِّقَانِكُمْ وَيَعْذِرَانِكُمْ».

আব্দুল্লাহ ইবন রাবাহ (রহ.) থেকে বর্ণনা করেন যে তিনি বলেন, আমরা ভ্রমন করে মুয়াবিয়া ইবন আবু সূফিয়ান রাদিয়াল্লাহু আনহুর নিকট গেলাম। আমাদের মধ্যে তখন আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু ও ছিলেন। প্রত্যেকেই এক দিন তার সাথীর জন্য খাবার তৈয়ার করতে হয় একদিন আমার পালা আসল। তখন আমি বললাম, হে আবু হুরায়রা! আজতো আমার পালা! অতএব, সকালেই আমার বাসস্থানে এলেন, “তখনও খানা পাকানো শেষ হয় নাই। তখন আমি বললাম, হে আবু হুরায়রা! আপনি যদি আমাদেরকে খানা পাকানোর পূর্ব পর্যন্ত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কোন হাদীস বর্ণনা করতেন! (তবে ভাল হতো) অতএব, বললেন, আমরা মক্কা বিজয়ের দিন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সঙ্গে ছিলাম। তখন খালিদ ইবন ওয়ালীদ রাদিয়াল্লাহু আনহুকে ডানদিকের বাহিনীর এবং যুবাইর রাদিয়াল্লাহু আনহুকে বাম দিকের বাহিনীর নেতৃত্ব প্রদান করলেন। আবু উবায়দা রাদিয়াল্লাহু আনহুকে পদাতিক বাহিনীর সর্বাধিনায়ক নিযুক্ত করলেন প্রান্তর অতিক্রম করার জন্য। এরপর তিনি বললেন, হে আবু হুরায়রা! আনসারদেরকে আমার কাছে আসার জন্য আহবান কর। অতএব আমি তাদেরকে আহবান করলাম। এরপর তাঁরা দ্রুত আসলেন। তখন তিনি বললেন, হে আনসারগণ! তোমরা কি কুরাইশের দলের লোক দেখতে পাচ্ছ। প্রতি উত্তরে তারা বললেন, হ্যাঁ। অতএব তিনি বললেন, আগামীকাল যখন তোমরা (যূদ্ধক্ষেত্রে) তাদের মোকাবিলা করবে তখন তাদেরকে সম্পুর্ন নির্মূল করে দেবে। তারপর তাঁর ডান হাত বাম হাতের উপর রেখে ইঙ্গিতে বললেন, তাদেরকে সমূলে বিনষ্ট করে দেবে। তারপর বললেন, আমার সাথে তোমাদের এক হবার স্থান সাফা পাহাড়। বর্ণনাকারী বলেন, সেদিন যে কোনো বিধর্মী আনসারদের লক্ষ্যস্হলে পড়েছে, তাকেই তারা নির্মুল করেছে। এরপরে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাফা পাহাড়ের উপর আরোহণ করলেন। যখন আনসারগণ তথীয় উপনীত হয়ে সাফা পাহাড় ঘিরে ফেললো, ইত্যবসরে আবু সুফিয়ান এলেন এবং বললেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! কুরাইশদেরকে ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে। আজ থেকে আর কোন কুরাইশের অস্তিত্ব থাকবেনা। এরপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, যে ব্যক্তি আবু সুফিয়ানের বাড়িতে প্রবেশ করবে সে নিরাপদ। যে অস্ত্র ফেলে দিবে সেও নিরাপদ এবং যে স্বীয় গৃহের দরজা বন্ধ করে রাখবে সেও নিরাপদ। তখন আনসারগণ বলাবলি করছিল যে, এ লোকটিকে (রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে) স্বীয় গোত্রের ভালবাসা এবং স্বদেশের অনুরাগে পেয়ে বসেছে। এমতাবস্হ্যয় রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর অহী নাযিল হল। এরপর তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, তোমরাই কি বলেছিলে যে, ‘এ লোকটিকে (হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে) স্বীয় গোত্রের ভালবাসা এবং স্বদেশের অনুরাগে পেছো বসেছে’। সাবধান! তোমরা কি জানা আমার নাম কি-! কথাটি তিনি তিনবার বলেছেন। আমি হলাম মুহাম্মাদ, আল্লাহর বান্দা এবং তাঁর রাসুল। আমি আল্লাহর নির্দেশেই তোমাদের কাছে হিজরত করেছি। আমার জীবন ও মরণ তোমাদের জীবনও মরণের সাথে সস্পৃক্ত। তখন তাঁরা বললো, আল্লাহর শপথ! আমরা একথা বলেছিলাম আল্লাহ ও তার রাসূলের প্রতি দুর্বলতার কারণে। (যেন তিনি আমাদেরকে ছেড়ে না যান)। নিশ্চয়ই আল্লাহ ও তাঁর রাসুল তোমাদের সত্য বলেছেন করেছেন এবং তোমাদের ওযর কবুল করেছেন। [143]

عَنْ أَبِي حُمَيْدٍ، قَالَ: خَرَجْنَا مَعَ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ غَزْوَةَ تَبُوكَ فَأَتَيْنَا وَادِيَ الْقُرَى عَلَى حَدِيقَةٍ لِامْرَأَةٍ فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «اخْرُصُوهَا» فَخَرَصْنَاهَا وَخَرَصَهَا رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَشَرَةَ أَوْسُقٍ، وَقَالَ: «أَحْصِيهَا حَتَّى نَرْجِعَ إِلَيْكِ، إِنْ شَاءَ اللهُ» وَانْطَلَقْنَا، حَتَّى قَدِمْنَا تَبُوكَ فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «سَتَهُبُّ عَلَيْكُمُ اللَّيْلَةَ رِيحٌ شَدِيدَةٌ، فَلَا يَقُمْ فِيهَا أَحَدٌ مِنْكُمْ فَمَنْ كَانَ لَهُ بَعِيرٌ فَلْيَشُدَّ عِقَالَهُ» فَهَبَّتْ رِيحٌ شَدِيدَةٌ، فَقَامَ رَجُلٌ فَحَمَلَتْهُ الرِّيحُ حَتَّى أَلْقَتْهُ بِجَبَلَيْ طَيِّئٍ، وَجَاءَ رَسُولُ ابْنِ الْعَلْمَاءِ، صَاحِبِ أَيْلَةَ، إِلَى رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِكِتَابٍ، وَأَهْدَى لَهُ بَغْلَةً بَيْضَاءَ، فَكَتَبَ إِلَيْهِ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، وَأَهْدَى لَهُ بُرْدًا، ثُمَّ أَقْبَلْنَا حَتَّى قَدِمْنَا وَادِيَ الْقُرَى، فَسَأَلَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الْمَرْأَةَ عَنْ حَدِيقَتِهَا «كَمْ بَلَغَ ثَمَرُهَا؟» فَقَالَتْ عَشَرَةَ أَوْسُقٍ، فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِنِّي مُسْرِعٌ فَمَنْ شَاءَ مِنْكُمْ فَلْيُسْرِعْ مَعِيَ، وَمَنْ شَاءَ فَلْيَمْكُثْ» فَخَرَجْنَا حَتَّى أَشْرَفْنَا عَلَى الْمَدِينَةِ، فَقَالَ: «هَذِهِ طَابَةُ، وَهَذَا أُحُدٌ وَهُوَ جَبَلٌ يُحِبُّنَا وَنُحِبُّهُ» ثُمَّ قَالَ: «إِنَّ خَيْرَ دُورِ الْأَنْصَارِ دَارُ بَنِي النَّجَّارِ، ثُمَّ دَارُ بَنِي عَبْدِ الْأَشْهَلِ، ثُمَّ دَارُ بَنِي عَبْدِ الْحَارِثِ بْنِ الْخَزْرَجِ، ثُمَّ دَارُ بَنِي سَاعِدَةَ، وَفِي كُلِّ دُورِ الْأَنْصَارِ خَيْرٌ» فَلَحِقَنَا سَعْدُ بْنُ عُبَادَةَ، فَقَالَ أَبُو أُسَيْدٍ: أَلَمْ تَرَ أَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ خَيَّرَ دُورَ الْأَنْصَارِ، فَجَعَلَنَا آخِرًا فَأَدْرَكَ سَعْدٌ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَقَالَ: يَا رَسُولَ اللهِ خَيَّرْتَ دُورَ الْأَنْصَارِ، فَجَعَلْتَنَا آخِرًا، فَقَالَ: «أَوَلَيْسَ بِحَسْبِكُمْ أَنْ تَكُونُوا مِنَ الْخِيَارِ».

আবু হুমাইদ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সঙ্গে তাবুক যুদ্ধের উদ্দেশ্যে বের হলাম। আমরা ‘ওয়াদিল কুরা’ এলাকায় এক মহিলার একটি বাগানের কাছে পৌছলে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমরা এর পরিমাণ অনুমান কর। আমরা এর পরিমাণ অনুমান করলাম। আর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দশ ওয়াসুক (প্রায় পঞ্চাশ মণ) পরিমাণ অনুমান করলেন এবং (স্ত্রীলোকটিকে) বললেন, আমরা ইনশা আল্লাহ তোমার এখানে ফিরে আসা পর্যন্ত এ পরিমাণ ধরে রাখ। পরে আমরা এগিয়ে চললাম এবং তাবুক পৌছে গেলাম। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন আজ রাতে প্রচণ্ড বায়ু প্রবাহ তোমাদের উপর দিয়ে বয়ে যাবে। তাই তোমাদের কেউ যেন তার মাঝে দাড়িয়ে না থাকে এবং যার উট আছে, সে যেন তার দড়ি শক্ত করে বেঁধে রাখে। সে রাতে প্রচণ্ড বাতাস প্রবাহিত হল। এক ব্যক্তি দাঁড়ালে বাতাস তাকে উঠিয়ে নিল। অবশেষে ‘তাই’ নামক পাহাড়ে ফেলে দিল। আর (ঐ সময় নিকটবর্তী) “আয়লার” এলাকা প্রধান (শাসক) ইবনুল আলমার দূত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে একটি চিঠি লিখে পাঠালেন এবং তাকে একটি চাদর হাদিয়া পাঠালেন। তারপর আমরা এগিয়ে চলতে চলতে “ওয়াদিল কুরা” পৌছলাম। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্ত্রীলোকটিকে (বাগানের মালিক) তার বাগান সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলেন যে, তার ফল কি পরিমাণে পৌছেছে? সে বলল, দশ ওয়াসক। তার পর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আমি দ্রুত যাচ্ছি। তোমাদের মধ্যে যার ইচ্ছা হয়, সে আমার সঙ্গে দ্রুত যেতে পারে। আর যার ইচ্ছা, সে অবস্থান করতে পারে। আমরা বের হয়ে পড়লাম। অবশেষে মদীনার কাছাকাছি পৌছলাম। তখন তিনি বললেন, এ (মদীনা) হল তোবা পবিত্র ও উত্তম স্থান। আর এ হল উহুদ। আর তা এমন পাহাড়, যে আমাদের ভালবাসে এবং আমরাও তাকে ভালবাসি। তারপর বললেন, আনসারীদের শ্রেষ্ঠ পরিবার বনূ-নাজ্জার, তারপর বনূ আব্দুল আশহাল, তারপর বনূ হারিস ইবন খাযরাজ, তারপর বনূ সাঈদা পরিবার। আর আনসারদের প্রতিটি গোত্রই উত্তম। সাদ ইবন উবাদা রাদিয়াল্লাহু আনহু আমাদের সাথে এসে মিলিত হলে (তাঁবু গোত্রের) আবু উসায়দ রাদিয়াল্লাহু আনহু তাকে বললেন, আপনি কি দেখেন নি যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আনসার গোত্রগুলির মাঝে ক্রমানূসারে শ্রেষ্ঠত্ব বর্ণনা করেছেন এবং আমাদের গোত্রকে তালিকার শেষে রেখেছেন। তখন সা‘দ রাদিয়াল্লাহু আনহু রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে খুঁজে পেলেন এবং বললেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আপনি আনসার গোত্রগুলির শ্রেষ্ঠত্ব বর্ণনা করেছেন এবং আমাদের শেষে রেখেছেন! তখন তিনি বললেন, শ্রেষ্ঠ তালিকাতে অন্যতম হওয়াও কি তোমাদের জন্য যথেষ্ট নয়? [144]

عن فَاطِمَةَ بِنْتَ قَيْسٍ، أُخْت الضَّحَّاكِ بْنِ قَيْسٍ - وَكَانَتْ مِنَ الْمُهَاجِرَاتِ الْأُوَلِ - فَقَالَ: حَدِّثِينِي حَدِيثًا سَمِعْتِيهِ مِنْ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، لَا تُسْنِدِيهِ إِلَى أَحَدٍ غَيْرِهِ، فَقَالَتْ: لَئِنْ شِئْتَ لَأَفْعَلَنَّ، فَقَالَ لَهَا: أَجَلْ حَدِّثِينِي فَقَالَتْ: نَكَحْتُ ابْنَ الْمُغِيرَةِ، وَهُوَ مِنْ خِيَارِ شَبَابِ قُرَيْشٍ يَوْمَئِذٍ، فَأُصِيبَ فِي أَوَّلِ الْجِهَادِ مَعَ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَلَمَّا تَأَيَّمْتُ خَطَبَنِي عَبْدُ الرَّحْمَنِ بْنُ عَوْفٍ فِي نَفَرٍ مِنْ أَصْحَابِ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، وَخَطَبَنِي رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَلَى مَوْلَاهُ أُسَامَةَ بْنِ زَيْدٍ، وَكُنْتُ قَدْ حُدِّثْتُ، أَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قَالَ: «مَنْ أَحَبَّنِي فَلْيُحِبَّ أُسَامَةَ» فَلَمَّا كَلَّمَنِي رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قُلْتُ: أَمْرِي بِيَدِكَ، فَأَنْكِحْنِي مَنْ شِئْتَ،..................................... الخ قَالَتْ: فَحَفِظْتُ هَذَا مِنْ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ.

আমির ইবন শারাহীল শাবী (রহ.) থেকে বর্ণিত, তিনি যাহহাক ইবন কায়সের বোন ফাতিমা বিনত কায়স রাদিয়াল্লাহু আনহাকে জিজ্ঞেস করলেন -যে সমন্ত মহিলাগণ প্রথমে হিজরত করেছিলেন, তিনি তাদের অন্যতম-। তিনি বলেন, আপনি, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে যে হাদীস শুনেছেন, অন্যের দিকে সম্বোধন করা ব্যতীরেকে, এমন একটি হাদীস আপনি আমার নিকট বর্ণনা করুন। তিনি বললেন, আচ্ছা, তুমি যদি শুনতে চাও, তবে অবশ্যই আমি বর্ণনা করবো। সে বলল, হ্যাঁ আপনি বর্ণনা করুন। তিনি বললেন, আমি ইবন মুগীরা রাদিয়াল্লাহু আনহুকে বিবাহ করেছি। তখন তিনি কুরাইশী যুবকদের উত্তম ব্যক্তি ছিলেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে প্রথম যুদ্ধে শরীক হয়েই তিনি শহীদ হয়ে যান। আমি বিধবা হয়ে যাবার পর আবদুল রহমান ইবন আউফ রাদিয়াল্লাহু আনহু আমার নিকট বিবাহের পয়গাম পাঠান। পয়গাম পাঠান রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আরো কতিপয় সাহাবী। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজেও তাঁর আযাদকৃত গোলাম উসামা ইবন যায়িদ রাদিয়াল্লাহু আনহুর জন্য পয়গাম পাঠান। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এ হাদীসটি আমি পূর্বেই শুনেছিলাম যে, তিনি বলেছেন, যে ব্যক্তি আমাকে ভালবাসে সে যেন উসামাকেও ভালবাসে। ফাতিমা রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ বিষয়ে আমার সাথে আলোচনা করার পর আমি তাকে বলেছি, আমার বিষয়টি আপনার ইখতিয়ারে ছেড়ে দিলাম। আপনি যার সাথে ইচ্ছা আমাকে বিয়ে দিয়ে দিন। অতঃপর তিনি বললেন, তুমি উম্মে শারীকের নিকট চলে যাও। উম্মে শারীক একজন আনসারী বিত্তশালী মহিলা। আল্লাহর পথে সে অধিক ব্যয় করে এবং তার নিকট অধিক অতিথি আসে। একথা শুনে আমি বললাম, আমি তাই করব। তখন তিনি বললেন, তুমি উম্মে শারীকের নিকট যেয়ো না। কেনানা উম্মে শারীক অধিক আপ্যায়নকারী মহিলা এবং আমি এটাও পছন্দ করিনা যে, তোমার ওড়না পড়ে যাক বা তোমার পায়ের গোছা হতে কাপড় খসে যাক আর লোকেরা তোমার শরীরের এমন স্থান দেখে নিক যা তুমি কখনো পসন্দ করনা। তবে তুমি তোমার চাচাতো ভাই আব্দুল্লাহ ইবন মাকতুম রাদিয়াল্লাহু আনহুর নিকট চলে যাও। তিনি বনী ফিহরের এক ব্যক্তি। ফিহর কুরাইশেরই একটি শাখা গোত্র। ফাতিমা যে খান্দানের লোক তিনিও সে খান্দানেরই মানুষ। আমি তার নিকট চলে গেলাম। অতঃপর আমার ইদ্দত সমাপ্ত হলে আমি জনৈক আহ্বানকারীর আওয়াজ শুনতে পেলাম। বস্তুতঃ তিনি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কর্তৃক নির্ধারিত আহ্বানকারী ছিলেন। তিনি এ মর্মে আহবান করছিলেন যে সালাতের উদ্দেশ্যে তোমরা একত্রিত হয়ে যাও। অতঃপর আমি মসজিদের দিকে রওয়ানা হলাম এবং রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে সালাত আদায় করলাম। তিনি বলেন, কাওমের পেছনে যে কাতারে মহিলাগণ ছিলেন আমি সে কাতারেই ছিলাম। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাতের শেষে হাসিমুখে মিম্বরে বসে গেলেন। অতপর বললেন, প্রত্যেকেই আপন আপন স্থানে বসে যাও। অতঃপর তিনি বললেন, তোমরা কি জান, আমি কি জন্য তোমাদেরকে একত্রিত করেছি? সাহাবায়ে কেরাম বললেন, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলই ভাল জানেন। তিনি বললেন, আল্লাহর কসম! আমি তোমাদেরকে কোন আশা বা ভীতি প্রদর্শনের জন্য একত্রিত করিনি। তবে আমি তোমাদেরকে কেবল এ জন্য একত্রিত করেছি যে, তামীমদারী রাদিয়াল্লাহু আনহু প্রথমে খ্রীষ্টান ছিল। সে আমার নিকট এসে বায়আত গ্রহণ করেছে এবং ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত হয়েছে। সে আমার কাছে এমন একটি কাহিনী বর্ণনা করেছে যদ্বারা আমার সেই বর্ণনার সত্যায়ন হয়ে যায়, যা আমি দাজ্জাল সম্পর্কে তোমাদের শ্রুতিগোচর করেছিলাম। সে আমাকে বলেছে যে, একবার সে লখম ও জুযাম গোত্রের ত্রিশজন লোকসহ একটি সামুদ্রিক নৌকায় আরোহণ করেছিল। সামুদ্রিক তুফান এক মাস পর্যন্ত তাদেরকে নিয়ে খেলা করতে থাকো অতঃপর সূর্যাস্তের সময় তারা সমুদ্রের এক দ্বীপে আশ্রয় গ্রহণ করে। এরপর তারা ছোট ছোট নৌকায় বসে ঐ দ্বীপে প্রবেশ করে। দ্বীপে নামতেই জন্তুর মত একটি জিনিস তাদের দৃষ্টিগোচর হল। তার সমগ্র দেহ লোমে আবৃত ছিল। লোমের কারণে তার আগা-পাছা চিনা যাচ্ছিল না। লোকেরা তাকে বলল, হতভাগা, তুই কে? সে বলল, আমি দাজ্জালের গুপ্তচর। লোকেরা বলল- গুপ্তচর আবার কি? সে বলল! লোক সকল! ঐযে গীর্জা দেখা যায় সেখানে চল। সেখানে এক ব্যক্তি অধীর আগ্রহে তোমাদের অপেক্ষা করয়ে তামীমদারী রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, তার মুখে এক ব্যক্তির কথা শুনে আমরা ভীত ছিলাম যে, সে আবার শয়তান তো নয়! আমরা দ্রুত হেটে গীর্জায় প্রবেশ করতঃ এক বিশালদেহী ব্যক্তিকে দেখতে পেলাম। ইতোপূর্বে এমন আমরা আর কখনো দেখিনি। লোহার শিকলে বাধা অবস্থায় দুই হ্যাইর মধ্য দিয়ে তার উভয় হাত ঘাড়ের সাথে মিলানো। আমরা তাকে বললাম, তোর সর্বনাশ হোক, তুই কে? সে বলল, তোমরা আমার সন্ধান কিছু না কিছু পেয়েই গেছ। এখন তোমরা বল, তোমাদের পরিচয় কি? তারা বলল, আমরা আরবের বাসিন্দা। আমরা সমুদ্রে নৌকায় চড়ে ভ্রমণ করছিলাম। আমরা সমূদ্রকে উত্তাল তরঙ্গে উদ্বেলিত অবস্থায় পেয়েছি। এক মাস পর্যন্ত ঝাড়ের কবলে থেকে আমরা তোমার এ দ্বীপে এসে পৌছেছি। অতঃপর ছোট ছোট নৌকায় আরোহণ করে এ দ্বীপে আমরা প্রবেশ করেছি। এখানে আমরা একটি সর্বাঙ্গ লোমে আবৃত জন্তুকে দেখতে পেয়েছি। লোমের আধিক্যের কারণে আমরা তার আগা-পাছা চিহ্নিত করতে পারছিলাম না। আমরা তাকে বলেছি, তোর সর্বনাশ হোক, তুই কে? সে বলেছে, সে নাকি দাজ্জালের গুপ্তচর। আমরা বললাম, গুপ্তচর আবার কি! তখন সে বলেছে, ঐ যে গীর্জা দেখা যায়, তোমরা সেখানে চল। সেখানে এক ব্যক্তি অধীর আগ্রহে তোমাদের অপেক্ষায় আছে। তাই আমরা দ্রুত তোর কাছে এসে গেছি। আমরা তার কথায় আতঙ্কিত হয়ে পড়েছি; না জানি এ আবার কোন জ্বীন ভূত কিনা? অতঃপর সে বলল, তোমরা আমাকে বাইসানের খেজুর বাগানের খবর বল। আমরা বললাম, এর কোনো বিষয়টি সস্পর্কে তুই সংবাদ জানতে চাচ্ছিস? সে বলল, বাইসানের খেজুর বাগানে ফল আসে কি না, এ সম্পর্কে আমি তোমাদেরকে জিজ্ঞেস করছি। তাকে আমরা বললাম, হ্যাঁ, আছে। সে বলল, সেদিন নিকটেই যেদিন এগুলোতে ফল ধরবে না। অতঃপর সে বলল, আচ্ছা, তিবরিয়া সমুদ্র সম্পর্কে আমাকে অবগত কর।” আমরা বললাম, এর কোনো বিষয় সম্পর্কে তুই আমাদের থেকে জানতে চাচ্ছিস! সে বলল, এর মধ্যে পানি আছে কি? তারা বলল,হ্যাঁ, সেখানে বহু পানি আছে। অতঃপর সে বলল, সেদিন বেশী দূরে নয়, যখন এ সাগরে পানি থাকবে না। সে আবার বলল, যুগার এর ঝর্ণা সম্পর্কে তোমরা আমাকে অবহিত কর। তারা বলল, তুই এর কি সম্পর্কে আমাদেরকে জিজ্ঞেস করতে চাচ্ছিস। সে বলল, এর ঝর্ণাতে পানি আছে কি? এবং এ জনপদের লোকেরা তাদের ক্ষেত্রে এ ঝর্ণার পানি দেয় কি! আমরা বললাম হ্যাঁ, এতে বহু পানি আছে এবং এ জনপদের লোকেরা এপানি দ্বারাই তাদের ক্ষেত সিক্ত করে। সে পুনরায় বলল, তোমরা আমাকে উম্মীদের নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সম্পর্কে সংবাদ দাও। সে এখন কি করছেই তারা বলল, তিনি মক্কা থেকে হিজরত করে মদীনায় চলে এসেছেন। সে জিজ্ঞেস করল, আরবের লোকেরা তার সাথে যুদ্ধ করছে কি! আমরা বললাম, হ্যাঁ, করেছে। সে বলল, সে তাদের সাথে কিরূপ আচরণ করেছে। আমরা তাকে সংবাদ দিলাম যে, তিনি আরবের পার্শবর্তী এলাকায় জয়ী হয়েছেন এবং তারা তার বশ্যতা স্বীকার করে নিয়েছে। সে বলল, এ কি হয়েই গেছে ? আমরা বললাম, হ্যাঁ। সে বলল, বশ্যতা স্বীকার করে নেওয়াই জনগণের জন্য মঙ্গলজনক ছিল। এখন আমি নিজের সম্পর্কে তোমাদেরকে বলছি, আমিই মাসীহ দাজ্জাল। অতি সত্ত্বরই আমি এখান থেকে বাইরে যাবার অনুমতি পেয়ে যাব। বাইরে যেয়ে আমি সমগ্র পৃথিবী প্রদক্ষিণ করবো। চল্লিশ দিনের ভেতর এমন কোনো জনপদ থাকবে না, যেখানে আমি প্রবেশ না করব। তবে মক্কা ও তায়্যিবা এ দু-টি স্থানে আমার প্রবেশ নিষিদ্ধ। যখন আমি এ দুটির কোনো একটিতে প্রবেশের ইচ্ছা করব, তখন এক ফিরিশতা উন্মুক্ত তরবারি হস্তে সামনে এসে আমাকে বাধা দিবে। এ দুটি স্থানের সকল রাস্তায় ফিরিশতাদের পাহারা থাকবে। বর্ণনাকারী বলেন, তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার ছড়ি দ্বারা মিম্বরে আঘাত করে বললেন, এই হচ্ছে তায়্যিবা, এই হচ্ছে তায়্যিবা, এই হচ্ছে তায়্যিবা। অর্থাৎ তায়্যিবা অর্থ এই মদীনায় সাবধান! আমি কি এ কথাটি ইতোপূর্বে তোমাদেরকে বলিনি? তখন লোকেরা বলল, হ্যাঁ, আপনি বলেছেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তামীমদারীর কথাটি আমার খুবই পছন্দ হয়েছে! যেহেতু তা সামঞ্জস্যপূর্ণ আমার ঐ বর্ণনার- যা আমি তোমাদেরকে দাজ্জাল, মাদীনা ও মক্কা সস্পর্কে ইতোপূর্বে বলেছি। তিনি আরো বললেন, সিরিয়া সাগরে অথবা ইয়ামান সাগরে বরং পূর্বদিকে রয়েছে, পূর্নদিকে রয়েছে, পূর্বদিকে রয়েছে। এসময় তিনি স্বীয় হাত দ্বারা পূর্ব দিকে ইশারাও করলেন। বর্ণনাকারী ফাতিমা বিনত কায়স রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেন, এ হাদীস আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে মুখস্থ করেছি। [145]

عَنْ أَنَسٍ، أَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ شَاوَرَ حِينَ بَلَغَهُ إِقْبَالُ أَبِي سُفْيَانَ، قَالَ: فَتَكَلَّمَ أَبُو بَكْرٍ، فَأَعْرَضَ عَنْهُ، ثُمَّ تَكَلَّمَ عُمَرُ، فَأَعْرَضَ عَنْهُ، فَقَامَ سَعْدُ بْنُ عُبَادَةَ، فَقَالَ: إِيَّانَا تُرِيدُ يَا رَسُولَ اللهِ؟ وَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ، لَوْ أَمَرْتَنَا أَنْ نُخِيضَهَا الْبَحْرَ لَأَخَضْنَاهَا، وَلَوْ أَمَرْتَنَا أَنْ نَضْرِبَ أَكْبَادَهَا إِلَى بَرْكِ الْغِمَادِ لَفَعَلْنَا، قَالَ: فَنَدَبَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ النَّاسَ، فَانْطَلَقُوا حَتَّى نَزَلُوا بَدْرًا، وَوَرَدَتْ عَلَيْهِمْ رَوَايَا قُرَيْشٍ، وَفِيهِمْ غُلَامٌ أَسْوَدُ لِبَنِي الْحَجَّاجِ، فَأَخَذُوهُ، فَكَانَ أَصْحَابُ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَسْأَلُونَهُ عَنْ أَبِي سُفْيَانَ، وَأَصْحَابِهِ، فَيَقُولُ: مَا لِي عِلْمٌ بِأَبِي سُفْيَانَ، وَلَكِنْ هَذَا أَبُو جَهْلٍ، وَعُتْبَةُ، وَشَيْبَةُ، وَأُمَيَّةُ بْنُ خَلَفٍ، فَإِذَا قَالَ ذَلِكَ ضَرَبُوهُ، فَقَالَ: نَعَمْ، أَنَا أُخْبِرُكُمْ، هَذَا أَبُو سُفْيَانَ، فَإِذَا تَرَكُوهُ فَسَأَلُوهُ، فَقَالَ مَا لِي بِأَبِي سُفْيَانَ عِلْمٌ، وَلَكِنْ هَذَا أَبُو جَهْلٍ، وَعُتْبَةُ، وَشَيْبَةُ، وَأُمَيَّةُ بْنُ خَلَفٍ، فِي النَّاسِ، فَإِذَا قَالَ هَذَا أَيْضًا ضَرَبُوهُ، وَرَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَائِمٌ يُصَلِّي، فَلَمَّا رَأَى ذَلِكَ انْصَرَفَ، قَالَ: «وَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ، لَتَضْرِبُوهُ إِذَا صَدَقَكُمْ، وَتَتْرُكُوهُ إِذَا كَذَبَكُمْ»، قَالَ، فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «هَذَا مَصْرَعُ فُلَانٍ»، قَالَ: وَيَضَعُ يَدَهُ عَلَى الْأَرْضِ «هَاهُنَا، هَاهُنَا»، قَالَ: فَمَا مَاطَ أَحَدُهُمْ عَنْ مَوْضِعِ يَدِ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ.

আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে যখন আবু সুফিয়ানের (মদীনায়) আগ্রাভিযানের সংবাদ পৌছল। তখন তিনি সাহাবীদের সাথে এ নিয়ে পরামর্শ করলেন। আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু এ ব্যাপারে কথা বললেন, কিন্তু তাঁর কথার উত্তর দিলেন না। এরপর উমর রাদিয়াল্লাহু আনহু কথা বললেন। তিনি তার কথারও কোনো উত্তর দিলেন না। পরিশেষে সা‘দ ইবন উবাদা রাদিয়াল্লাহু আনহু দন্ডায়মান হলেন। এরপর বললেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আপনি কি আমাদের জবাব প্রত্যাশা করেন? সে আল্লাহর শপথ! যার হাতে আমার জীবন, যদি আপনি আমাদেরকে আমাদের ঘোড়া নিয়ে সমুদ্রে ঝাঁপ দিতে বলেন, তবে নিশ্চয়ই আমরা যেখানে ঝাপ দিব। আর যদি আপনি আমাদেরকে নির্দেশ দেন, সাওয়ারী হাঁকিয়ে ‘বারকুল গামাদ’ পর্যন্ত পৌঁছার জন্য তবে আমরা তাই করবো। এরপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুসলিমদেরকে আহ্বান করলেন। তখন সকলে রওয়ানা হলেন এবং বদর নামক স্থানে সম্মিলীত হলেন। আর সাহাবীগণের সামনে সেখান কুরাইশের উটের পানিপানকারী সাকীগণও উপনীত হল। তাদের মধ্যে বনী হাজ্জাজের একজন কৃষ্ণকায় দাস ছিল। সাহাবীগণ তাকে পাকড়াও করলেন। তারপর তাকে আবু সুফিয়ান এবং তার সাথীদের সম্পর্কে তাঁরা জিজ্ঞাসাবাদ করলেন, তখন সে বলতে লাগলো, আবু সুফিয়ান সম্পর্কে আমার কোনো কিছু জানা নেই। তবে আবু জাহল, উতবা, শায়বা এবং উমাইয়া ইবন খালফ তো-উপাস্থিত আছে। যখন সে এরূপ বললো তখন তাঁরা তাকে প্রহার করতে লাগলেন। এমতাবস্থায় সে বলল, হ্যাঁ, আমি আবু সুফিয়ান সম্পর্কে খবর দিচ্ছি। তখন তাঁরা তাকে ছেড়ে দিলেন। এরপর যখন তারা পুনরায় আবু সুফিয়ান সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করলেন, তখন সে বলল, আবু সুফিয়ান জনগণের মাঝে উপস্তিত আছেন। যখন সে পুনরায় এ একই কথা বলল, তখন তাঁরা আবার তাকে প্রহার করতে লাগলেন। সে সময় রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাতে দন্ডায়মান ছিলেন। অতএব, যখন তিনি এ অবস্থা দেখলেন, তখন সালাত সমাপ্ত করার পর বললেন, সে আল্লাহর শপথ! যার হাতে আমার জান, যখন সে তোমাদের কাছে সত্য কথা বলে তখন তোমরা তাকে ছেড়ে দাও। এরপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ভূমির উপর স্বীয় হাত রেখে বললেন, এ স্থান অমুক বিধর্মীর ধরাশায়ী হওয়ার স্থান বা মৃত্যুস্হল। বর্ণনাকারী বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে স্থানে যে বিধর্মীর নাম নিয়ে হাত রেখেছিলেন, সেখানেই তার মৃত্যু হয়েছে, এর বিন্দুমাত্র ব্যতিক্রম হয়নি।[146]

عَنْ رَجُلٍ مِنَ الْأَنْصَارِ، قَالَ: خَرَجْنَا مَعَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي جَنَازَةٍ، فَرَأَيْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَهُوَ عَلَى الْقَبْرِ يُوصِي الْحَافِرَ: «أَوْسِعْ مِنْ قِبَلِ رِجْلَيْهِ، أَوْسِعْ مِنْ قِبَلِ رَأْسِهِ»، فَلَمَّا رَجَعَ اسْتَقْبَلَهُ دَاعِي امْرَأَةٍ فَجَاءَ وَجِيءَ بِالطَّعَامِ فَوَضَعَ يَدَهُ، ثُمَّ وَضَعَ الْقَوْمُ، فَأَكَلُوا، فَنَظَرَ آبَاؤُنَا رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَلُوكُ لُقْمَةً فِي فَمِهِ، ثُمَّ قَالَ: «أَجِدُ لَحْمَ شَاةٍ أُخِذَتْ بِغَيْرِ إِذْنِ أَهْلِهَا»، فَأَرْسَلَتِ الْمَرْأَةُ، قَالَتْ: يَا رَسُولَ اللَّهِ، إِنِّي أَرْسَلْتُ إِلَى الْبَقِيعِ يَشْتَرِي لِي شَاةً، فَلَمْ أَجِدْ فَأَرْسَلْتُ إِلَى جَارٍ لِي قَدِ اشْتَرَى شَاةً، أَنْ أَرْسِلْ إِلَيَّ بِهَا بِثَمَنِهَا، فَلَمْ يُوجَدْ، فَأَرْسَلْتُ إِلَى امْرَأَتِهِ فَأَرْسَلَتْ إِلَيَّ بِهَا، فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «أَطْعِمِيهِ الْأُسَارَى».

জনৈক আনসার সাহাবী থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: একবার আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সঙ্গে এক ব্যক্তির জানাযায় শরীক ছিলাম। এ সময় আমি দেখতে পাই যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কবরের কাছে দাঁড়িয়ে যারা কবর খুঁড়ছিল তাদের বলেন, পায়ের দিকে প্রশস্ত কর, মাথার দিকে চওড়া কর। এরপর তিনি সেখান থেকে ফিরতে উদ্যত হলে জনৈক মহিলার আহ্বনকারী নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে ডাকার জন্য সেখানে উপস্থিত হয়। তিনি সেখানে গেলে তাঁর জন্য খাদ্য উপস্থিত করা হয়। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খেতে শুরু করলে অন্যরাও খাওয়া শুরু করেন। তখন আমাদের মুরব্বীরা লক্ষ্য করেন যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক লোকমা মুখে দিয়ে কেবল তা চিবাচ্ছেন, কিন্তু তা গিলছেন না। এ সময় তিনি বলেন, আমার মনে হচ্ছে, এ গোশত এমন এক বকরীর, যা তার মালিকের বিনা অনুমতিতে নেওয়া হয়েছে। তখন সে মহিলা বলল, ইয়া রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আমি জনৈক ব্যক্তিকে বকরী খরিদ করার জন্য 'বাকী' নামক বাজারে পাঠিয়েছিলাম, সেখানে বকরী পাওয়া যায় নি। এরপর আমি আমার প্রতিবেশী, যিনি একটি বকরী খরিদ করেন, তাকে বলি যে, তিনি যেন তার বকরীটি ক্রয়মূল্যে আমাকে প্রদান করেন। কিন্তু তাকেও বাড়ীতে পাওয়া যায় নি। তখন আমি তার স্ত্রীর নিকট লোক পাঠাই, যিনি আমাকে বকরীটি দিয়েছেন। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, এ গোশত বন্দীদের খাইয়ে দাও। [147]

عَنْ سَهْل ابْن الْحَنْظَلِيَّةِ، أَنَّهُمْ سَارُوا مَعَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَوْمَ حُنَيْنٍ فَأَطْنَبُوا السَّيْرَ، حَتَّى كَانَتْ عَشِيَّةً فَحَضَرْتُ الصَّلَاةَ، عِنْدَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَجَاءَ رَجُلٌ فَارِسٌ، فَقَالَ: يَا رَسُولَ اللَّهِ، إِنِّي انْطَلَقْتُ بَيْنَ أَيْدِيكُمْ حَتَّى طَلَعْتُ جَبَلَ كَذَا وَكَذَا، فَإِذَا أَنَا بِهَوَازِنَ عَلَى بَكْرَةِ آبَائِهِمْ بِظُعُنِهِمْ، وَنَعَمِهِمْ، وَشَائِهِمْ، اجْتَمَعُوا إِلَى حُنَيْنٍ، فَتَبَسَّمَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَقَالَ: «تِلْكَ غَنِيمَةُ الْمُسْلِمِينَ غَدًا إِنْ شَاءَ اللَّهُ»، ثُمَّ، قَالَ: «مَنْ يَحْرُسُنَا اللَّيْلَةَ؟»، قَالَ أَنَسُ بْنُ أَبِي مَرْثَدٍ الْغَنَوِيُّ: أَنَا يَا رَسُولَ اللَّهِ، قَالَ: «فَارْكَبْ»، فَرَكِبَ فَرَسًا لَهُ فَجَاءَ إِلَى رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَقَالَ لَهُ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «اسْتَقْبِلْ هَذَا الشِّعْبَ حَتَّى تَكُونَ فِي أَعْلَاهُ، وَلَا نُغَرَّنَّ مِنْ قِبَلِكَ اللَّيْلَةَ»، فَلَمَّا أَصْبَحْنَا، خَرَجَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِلَى مُصَلَّاهُ، فَرَكَعَ رَكْعَتَيْنِ، ثُمَّ قَالَ: «هَلْ أَحْسَسْتُمْ فَارِسَكُمْ»، قَالُوا: يَا رَسُولَ اللَّهِ، مَا أَحْسَسْنَاهُ فَثُوِّبَ بِالصَّلَاةِ، فَجَعَلَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُصَلِّي، وَهُوَ يَلْتَفِتُ إِلَى الشِّعْبِ حَتَّى إِذَا قَضَى صَلَاتَهُ وَسَلَّمَ قَالَ: «أَبْشِرُوا فَقَدْ جَاءَكُمْ فَارِسُكُمْ»، فَجَعَلْنَا نَنْظُرُ إِلَى خِلَالِ الشَّجَرِ فِي الشِّعْبِ، فَإِذَا هُوَ قَدْ جَاءَ حَتَّى وَقَفَ عَلَى رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَسَلَّمَ فَقَالَ: إِنِّي انْطَلَقْتُ حَتَّى كُنْتُ فِي أَعْلَى هَذَا الشِّعْبِ حَيْثُ أَمَرَنِي رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَلَمَّا أَصْبَحْتُ اطَّلَعْتُ الشِّعْبَيْنِ كِلَيْهِمَا فَنَظَرْتُ، فَلَمْ أَرَ أَحَدًا، فَقَالَ لَهُ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «هَلْ نَزَلْتَ اللَّيْلَةَ؟» قَالَ: لَا، إِلَّا مُصَلِّيًا أَوْ قَاضِيًا حَاجَةً، فَقَالَ لَهُ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «قَدْ أَوْجَبْتَ فَلَا عَلَيْكَ أَنْ لَا تَعْمَلَ بَعْدَهَا».

সাহল ইবন হানযলিয়্যাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, তাঁরা হুনায়নের যুদ্ধের দিন রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সঙ্গে সফরে ছিলেন। তখন দ্রুতগতিতে উট চালিয়ে সন্ধ্যাকালে মাগরিবের সালাতের সময় রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট গিয়ে পৌঁছলেন। এমন সময় একজন অশ্বারোহী সৈনিক এসে তাঁকে বললেন, হে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আমি আপনাদের নিকট হতে আলাদা হয়ে ঐ সব পাহাড়ের উপর আরোহণ করে দেখতে পেলাম যে, হাওয়াযিন গোত্রের স্ত্রী-পুরুষ সকলেই তাদের উট, বকরি সবকিছু নিয়ে হুনায়নে একত্রিত হয়েছে। তা শুনে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুচকি হাসি দিয়ে বললেন, ঐ সকল বস্তু ইনশাআল্লাহ আগামীকাল মুসলিমদের গনীমতের সামগ্রীতে পরিণত হবে। এরপর তিনি বললেন, আজ রাতে আমাদেরকে কে পাহাড়া দিবে? আনাস ইবন আবূ মারসাদ আল্-গানাবী রাদিয়াল্লাহু আনহু উত্তর করলেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আমি পাহাড়া দেবো। তিনি বললেন, তাহলে তুমি ঘোড়ায় আরোহণ কর। তিনি তাঁর একটি ঘোড়ায় আরোহণ করে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট উপস্থিত হন। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে উদ্দেশ্য করে নির্দেশ দিলেন, যাও, এ দু‘পাহাড়ের মধ্যবর্তী উপত্যকার দিকে রওয়ানা হয়ে এর চূড়ায় পৌঁছে পাহারায় রত থাকো। আমরা যেন তোমার আসার আগে আজ রাতে কোনো ধোঁকায় না পড়ি। ভোরবেলায় রাসূলূল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার সালাতের স্থানে গিয়ে ফজরের দু‘রাক‘আত ( সুন্নাত) সালাত আদায় করলেন। তারপর জিজ্ঞাসা করলেন, তোমরা তোমাদের পাহাড়াদার অশ্বারোহী সৈনিকের কোনো সন্ধান পেয়েছ কী? সকলে উত্তর করল, ইয়া রাসূলুল্লাহ্! তিনি পাহাড়ায় রত আছেন বলে মনে হয় কিন্তু দেখতে পাইনি। এরপর ফজর সালাতের ইকামত দেওয়া হলে, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাত পড়াতে আরম্ভ করলেন। এমতাবস্থায় তিনি উপত্যকার দিকে লক্ষ্য রাখতে রাখতে সালাত শেষ করে সালাম ফিরালেন। এরপর তিনি বললেন, তোমরা সকলে সুসংবাদ নাও যে, তোমাদের পাহাড়াদার সৈনিক এসে পড়েছে। আমরা উপত্যকায় গাছের ফাঁকে দেখতে পেলাম যে, তিনি সত্যই এসে পড়েছেন। এমনকি তিনি রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সামনে দাঁড়িয়ে সালাম করলেন এবং বললেন, রাসূলূল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে যেভাবে নির্দেশ দিয়েছিলেন সেভাবে আমি এই উপত্যকার উপরাংশের শেষ মাথায় গিয়ে পৌঁছেছিলাম। সকাল হওয়ার পর আমি উভয় পাহাড়ের উপত্যকা দু’টির উপরে উঠে তাকালাম, কোনো শত্রুকেই দেখতে পেলাম না। তা শুনে রাসূলূল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে জিজ্ঞাসা করলেন, তুমি সারারাত কখনও কি ঘোড়ার পিঠ হতে নেমেছিলে? তিনি উত্তর করলেন, না, সালাত পড়ার জন্য অথবা পায়খানা-প্রসাবের প্রয়োজন ছাড়া কখনও ঘোড়ার পিঠ হতে নামিনি। তা শুনে রাসূলূল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে উদ্দেশ্য করে বললেন, তোমার জন্য জান্নাত অবধারিত হল। তোমার জীবনে আর কোনো অতিরিক্ত নেককাজ না করলেও চলবে। (অর্থাৎ সারারাত জাগ্রত থেকে পাহারায় রত থাকার মত বৃহৎ নেক কাজটি তোমার জান্নাতে প্রবেশের জন্য যথেষ্ট। অবশ্য ফরয-ওয়াজিব যথারীতি পালনের পর)। [148]

قَالَ جَرِيرٌ: لَمَّا دَنَوْتُ مِنَ الْمَدِينَةِ أَنَخْتُ رَاحِلَتِي، ثُمَّ حَلَلْتُ عَيْبَتِي، ثُمَّ لَبِسْتُ حُلَّتِي، ثُمَّ دَخَلْتُ الْمَسْجِدَ، فَإِذَا النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَخْطُبُ، فَرَمَانِي النَّاسُ بِالْحَدَقِ قَالَ: فَقُلْتُ لِجَلِيسِي: يَا عَبْدَ اللهِ، هَلْ ذَكَرَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مِنْ أَمْرِي شَيْئًا؟ قَالَ: نَعَمْ، ذَكَرَكَ بِأَحْسَنِ الذِّكْرِ، بَيْنَمَا هُوَ يَخْطُبُ إِذْ عَرَضَ لَهُ فِي خُطْبَتِهِ فَقَالَ: " إِنَّهُ سَيَدْخُلُ عَلَيْكُمْ مِنْ هَذَا الْفَجِّ مِنْ خَيْرِ ذِي يَمَنٍ، أَلَا وَإِنَّ عَلَى وَجْهِهِ مَسْحَةُ مَلَكٍ " قَالَ جَرِيرٌ: " فَحَمِدْتُ اللهَ عَزَّ وَجَلَّ ".

জারীর রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, আমি যখন মদীনার নিকটবর্তী হলাম তখন আমার উটকে বেঁধে (চুল, মোছ ও অন্যান্য পশম পরিস্কার করে) হালাল হলাম এবং বস্ত্র পরিধান করলাম। অতঃপর আমি মসজিদে প্রবেশ করলাম, দেখি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খুতবা দিচ্ছেন। লোকজন আমার দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকালো। আমি আমার পাশে বসা লোককে জিজ্ঞেস করলাম, হে আব্দুল্লাহ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কি আমার কথা উল্লেখ করেছেন? তিনি বললেন, হ্যাঁ, উত্তমভাবেই উল্লেখ করেছেন। তিনি যখন খুতবা দিচ্ছিলেন হঠাৎ তিনি বললেন, এ দরজা দিয়ে কিছুক্ষণের মধ্যেই ইয়ামেনের উত্তম ব্যক্তি প্রবেশ করবে। তাঁর চেহারায় থাকবে রাজা বাদশার চিহ্ন। জারীর রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, আল্লাহ আমাকে যে পরীক্ষা করেছেন সে জন্য আমি তাঁর প্রশংসা করি। [149]

 

 

একাদশ পরিচ্ছেদ 

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কর্তৃক আহলে কিতাব ও অন্যান্যদের প্রশ্নের জবাব যা তারা গোপন রাখত। 

عَنْ عَبْدِ اللَّهِ، قَالَ: بَيْنَا أَنَا أَمْشِي مَعَ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي خَرِبِ المَدِينَةِ، وَهُوَ يَتَوَكَّأُ عَلَى عَسِيبٍ مَعَهُ، فَمَرَّ بِنَفَرٍ مِنَ اليَهُودِ، فَقَالَ بَعْضُهُمْ لِبَعْضٍ: سَلُوهُ عَنِ الرُّوحِ؟ وَقَالَ بَعْضُهُمْ: لاَ تَسْأَلُوهُ، لاَ يَجِيءُ فِيهِ بِشَيْءٍ تَكْرَهُونَهُ، فَقَالَ بَعْضُهُمْ: لَنَسْأَلَنَّهُ، فَقَامَ رَجُلٌ مِنْهُمْ، فَقَالَ يَا أَبَا القَاسِمِ مَا الرُّوحُ؟ فَسَكَتَ، فَقُلْتُ: إِنَّهُ يُوحَى إِلَيْهِ، فَقُمْتُ، فَلَمَّا انْجَلَى عَنْهُ، قَالَ: ﴿وَيَسۡ‍َٔلُونَكَ عَنِ ٱلرُّوحِۖ قُلِ ٱلرُّوحُ مِنۡ أَمۡرِ رَبِّي وَمَآ أُوتِيتُم مِّنَ ٱلۡعِلۡمِ إِلَّا قَلِيلٗا ٨٥ ﴾ [الاسراء: ٨٥] . قَالَ الأَعْمَشُ: هَكَذَا فِي قِرَاءَتِنَا.

‘আবদুল্লাহ ইবন মাস‘ঊদ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একবার আমি রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সঙ্গে মদীনার বসতিহীন এলাকা দিয়ে চলছিলাম। তিনি একখানি খেজুরের ডালে ভর দিয়ে একদল ইয়াহুদীর কাছ দিয়ে যাচ্ছিলেন। তখন তারা একজন অন্যজনকে বলতে লাগল, ‘তাঁকে রূহ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা কর।’ আর একজন বলল, ‘তাঁকে কোনো প্রশ্ন করো না, হয়ত এমন কোনো জওয়াব দিবেন যা তোমার পছন্দ করো না।’ আবার তাদের কেউ কেউ বলল, ‘তাঁকে আমরা প্রশ্ন করবই।’ তারপর তাদের মধ্য থেকে এক ব্যক্তি দাঁড়িয়ে বলল, ‘হে আবুল কাসিম রূহ কী?’ রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম চুপ করে রইলেন, আমি মনে মনে বললাম, তাঁর প্রতি অহী নাযিল হচ্ছে। তাই আমি দাঁড়িয়ে রইলাম। তারপর যখন সে অবস্থা কেটে গেল তখন তিনি বললেন,

﴿ وَيَسۡ‍َٔلُونَكَ عَنِ ٱلرُّوحِۖ قُلِ ٱلرُّوحُ مِنۡ أَمۡرِ رَبِّي وَمَآ أُوتِيتُم مِّنَ ٱلۡعِلۡمِ إِلَّا قَلِيلٗا ٨٥ ﴾ [الاسراء: ٨٥]

“তারা তোমাকে রূহ সম্পর্কে প্রশ্ন করে। বল, রূহ আমার প্রতিপালকের আদেশঘটিত এবং তাদেরকে সামান্যই জ্ঞান দেওয়া হয়েছে।” [সূরা ইসরা: ৮৫]

‘আমাশ (রহ.) বলেন, এভাবেই আয়াতটিকে আমাদের কিরাআতে –এর স্থলে পড়া হয়েছে।[150]

عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ، قَالَ: " قَالَتْ قُرَيْشٌ لِليَهُودِ: أَعْطُونَا شَيْئًا نَسْأَلُ عَنْهُ هَذَا الرَّجُلَ، فَقَالُوا: سَلُوهُ عَنِ الرُّوحِ، فَسَأَلُوهُ، فَنَزَلَتْ: ﴿ وَيَسۡ‍َٔلُونَكَ عَنِ ٱلرُّوحِۖ قُلِ ٱلرُّوحُ مِنۡ أَمۡرِ رَبِّي وَمَآ أُوتِيتُم مِّنَ ٱلۡعِلۡمِ إِلَّا قَلِيلٗا ٨٥ ﴾ [الاسراء: ٨٥] ، قَالُوا: أُوتِينَا عِلْمًا كَثِيرًا، أُوتِينَا التَّوْرَاةَ، وَمَنْ أُوتِيَ التَّوْرَاةَ، فَقَدْ أُوتِيَ خَيْرًا كَثِيرًا "، قَالَ: فَأَنْزَلَ اللَّهُ عَزَّ وَجَلَّ: ﴿ قُل لَّوۡ كَانَ ٱلۡبَحۡرُ مِدَادٗا لِّكَلِمَٰتِ رَبِّي لَنَفِدَ ٱلۡبَحۡرُ قَبۡلَ أَن تَنفَدَ كَلِمَٰتُ رَبِّي ١٠٩ ﴾ [الكهف: ١٠٩]

ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, কুরাইশরা ইয়াহুদীদেরকে বলল, তোমরা আমাদেরকে কিছু প্রশ্ন দাও এ লোকটিকে জিজ্ঞেস করি। তারা বলল, তাকে রূহ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করো। তখন এ আয়াত নাযিল হয়,

﴿ وَيَسۡ‍َٔلُونَكَ عَنِ ٱلرُّوحِۖ قُلِ ٱلرُّوحُ مِنۡ أَمۡرِ رَبِّي وَمَآ أُوتِيتُم مِّنَ ٱلۡعِلۡمِ إِلَّا قَلِيلٗا ٨٥ ﴾ [الاسراء: ٨٥]

“তারা তোমাকে রূহ সম্পর্কে প্রশ্ন করে। বল, রূহ আমার প্রতিপালকের আদেশঘটিত এবং তাদেরকে সামান্যই জ্ঞান দেওয়া হয়েছে।” [সূরা ইসরা: ৮৫]

তারা বলল, আমাদেরকে অনেক ইলম দান করা হয়েছে। আমাদেরকে তাওরাত দান করা হয়েছে। আর যাকে তাওরাত দান করা হয়েছে মূলতঃ তাকে অনেক কল্যাণ দান করা হয়েছে। তখন আল্লাহ নাযিল করেন,

﴿ قُل لَّوۡ كَانَ ٱلۡبَحۡرُ مِدَادٗا لِّكَلِمَٰتِ رَبِّي لَنَفِدَ ٱلۡبَحۡرُ قَبۡلَ أَن تَنفَدَ كَلِمَٰتُ رَبِّي ١٠٩ ﴾ [الكهف: ١٠٩]

“বল, ‘আমার রবের কথা লেখার জন্য সমুদ্র যদি কালি হয়ে যায় তবে সমুদ্র নিঃশেষ হয়ে যাবে আমার রবের কথা শেষ হওয়ার আগেই”। [সূরা আল-কাহফ: ১০৯। [151]

عَنِ أَنَس بْن مَالِكٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ: أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ خَرَجَ حِينَ زَاغَتِ الشَّمْسُ فَصَلَّى الظُّهْرَ، فَلَمَّا سَلَّمَ قَامَ عَلَى المِنْبَرِ، فَذَكَرَ السَّاعَةَ، وَذَكَرَ أَنَّ بَيْنَ يَدَيْهَا أُمُورًا عِظَامًا، ثُمَّ قَالَ: «مَنْ أَحَبَّ أَنْ يَسْأَلَ عَنْ شَيْءٍ فَلْيَسْأَلْ عَنْهُ، فَوَاللَّهِ لاَ تَسْأَلُونِي عَنْ شَيْءٍ إِلَّا أَخْبَرْتُكُمْ بِهِ مَا دُمْتُ فِي مَقَامِي هَذَا»، قَالَ أَنَسٌ: فَأَكْثَرَ النَّاسُ البُكَاءَ، وَأَكْثَرَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنْ يَقُولَ: «سَلُونِي»، فَقَالَ أَنَسٌ: فَقَامَ إِلَيْهِ رَجُلٌ فَقَالَ: أَيْنَ مَدْخَلِي يَا رَسُولَ اللَّهِ؟ قَالَ: «النَّارُ»، فَقَامَ عَبْدُ اللَّهِ بْنُ حُذَافَةَ فَقَالَ: مَنْ أَبِي يَا رَسُولَ اللَّهِ؟ قَالَ: «أَبُوكَ حُذَافَةُ»، قَالَ: ثُمَّ أَكْثَرَ أَنْ يَقُولَ: «سَلُونِي سَلُونِي»، فَبَرَكَ عُمَرُ عَلَى رُكْبَتَيْهِ فَقَالَ: رَضِينَا بِاللَّهِ رَبًّا، وَبِالإِسْلاَمِ دِينًا، وَبِمُحَمَّدٍ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ رَسُولًا، قَالَ: فَسَكَتَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ حِينَ قَالَ عُمَرُ ذَلِكَ، ثُمَّ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «وَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ لَقَدْ عُرِضَتْ عَلَيَّ الجَنَّةُ وَالنَّارُ آنِفًا، فِي عُرْضِ هَذَا الحَائِطِ، وَأَنَا أُصَلِّي، فَلَمْ أَرَ كَاليَوْمِ فِي الخَيْرِ وَالشَّرِّ».

আনাস ইবন মালিক রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, দ্বিপ্রহরের পর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বেরিয়ে আসলেন এবং যোহরের সালাত আদায় করলেন। সালাম ফিরানোর পর তিনি মিম্বরে উঠে দাঁড়ালেন এবং কিয়ামত সম্পর্কে আলোচনা করলেন। তিনি উল্লেখ করলেন যে, কিয়ামতের পূর্বে অনেক বড় বড় ঘটনা সংঘটিত হবে। তারপর তিনি বললেন, কেউ যদি আমাকে কোনো বিষয়ে জিজ্ঞাসা করতে ভাল মনে করে, তাহলে সে তা করতে পারবে। আল্লাহর শপথ! আমি এখানে অবস্থান করা পর্যন্ত তোমরা আমাকে যে বিষয়েই জিজ্ঞাসা করবে, আমি তা তোমাদের অবহিত করব। আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, এতে লোকেরা খুব কাঁদতে থাকল। আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খুব বলতে থাকলেন। তোমরা আমার কাছে প্রশ্ন কর। আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, তখন এক ব্যক্তি দাঁড়িয়ে বলল, ইয়া রাসূলাল্লাহ্! আমার আশ্রয়স্থল কোথায়? তিনি বললেন, জাহান্নাম। তারপর আবদুল্লাহ্ ইবন হুযাফা রাদিয়াল্লাহু আনহু দাঁড়িয়ে বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমার পিতা কে? তিনি বললেন, তোমার পিতা হুযাফা। আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, তারপর তিনি বার বার বলতে থাকলেন, তোমরা আমার কাছে প্রশ্ন জিজ্ঞাসা কর। তোমরা আমার কাছে প্রশ্ন কর। এতে উমর রাদিয়াল্লাহু আনহু হাঁটু গেড়ে বসে পড়লেন এবং বললেন, আমরা আল্লাহকে রব হিসাবে মেনে, ইসলামকে দীন হিসাবে গ্রহণ করে এবং মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে রাসূল হিসাবে বিশ্বাস করে সন্তুষ্ট আছি। আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, উমর রাদিয়াল্লাহু আনহু যখন এ কথা বললেন, তখন রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নীরব হয়ে গেলেন। তারপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, যে সত্তার হাতে আমার প্রাণ তাঁর কসম করে বলছি, এইমাত্র আমি যখন সালাতে ছিলাম তখন এই দেওয়ালের প্রান্তে জান্নাত ও জাহান্নাম আমার সম্মুখে পেশ করা হয়েছিল। আজকের ন্যায় এমন কল্যাণ ও অকল্যাণ আমি আর দেখিনি।[152]

عَنِ ثَوْبَان مَوْلَى رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: كُنْتُ قَائِمًا عِنْدَ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَجَاءَ حِبْرٌ مِنْ أَحْبَارِ الْيَهُودِ فَقَالَ: السَّلَامُ عَلَيْكَ يَا مُحَمَّدُ فَدَفَعْتُهُ دَفْعَةً كَادَ يُصْرَعُ مِنْهَا فَقَالَ: لِمَ تَدْفَعُنِي؟ فَقُلْتُ: أَلَا تَقُولُ يَا رَسُولَ اللهِ، فَقَالَ الْيَهُودِيُّ: إِنَّمَا نَدْعُوهُ بِاسْمِهِ الَّذِي سَمَّاهُ بِهِ أَهْلُهُ. فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِنَّ اسْمِي مُحَمَّدٌ الَّذِي سَمَّانِي بِهِ أَهْلِي»، فَقَالَ الْيَهُودِيُّ: جِئْتُ أَسْأَلُكَ، فَقَالَ لَهُ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «أَيَنْفَعُكَ شَيْءٌ إِنْ حَدَّثْتُكَ؟» قَالَ: أَسْمَعُ بِأُذُنَيَّ، فَنَكَتَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِعُودٍ مَعَهُ، فَقَالَ: «سَلْ» فَقَالَ الْيَهُودِيُّ: أَيْنَ يَكُونُ النَّاسُ يَوْمَ تُبَدَّلُ الْأَرْضُ غَيْرَ الْأَرْضِ وَالسَّمَاوَاتُ؟ فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «هُمْ فِي الظُّلْمَةِ دُونَ الْجِسْرِ» قَالَ: فَمَنْ أَوَّلُ النَّاسِ إِجَازَةً؟ قَالَ: «فُقَرَاءُ الْمُهَاجِرِينَ» قَالَ الْيَهُودِيُّ: فَمَا تُحْفَتُهُمْ حِينَ يَدْخُلُونَ الْجَنَّةَ؟ قَالَ: «زِيَادَةُ كَبِدِ النُّونِ»، قَالَ: فَمَا غِذَاؤُهُمْ عَلَى إِثْرِهَا؟ قَالَ: «يُنْحَرُ لَهُمْ ثَوْرُ الْجَنَّةِ الَّذِي كَانَ يَأْكُلُ مِنْ أَطْرَافِهَا» قَالَ: فَمَا شَرَابُهُمْ عَلَيْهِ؟ قَالَ: «مِنْ عَيْنٍ فِيهَا تُسَمَّى سَلْسَبِيلًا» قَالَ: صَدَقْتَ. قَالَ: وَجِئْتُ أَسْأَلُكَ عَنْ شَيْءٍ لَا يَعْلَمُهُ أَحَدٌ مِنْ أَهْلِ الْأَرْضِ إِلَّا نَبِيٌّ أَوْ رَجُلٌ أَوْ رَجُلَانِ. قَالَ: «يَنْفَعُكَ إِنْ حَدَّثْتُكَ؟» قَالَ: أَسْمَعُ بِأُذُنَيَّ. قَالَ: جِئْتُ أَسْأَلُكَ عَنِ الْوَلَدِ؟ قَالَ: «مَاءُ الرَّجُلِ أَبْيَضُ، وَمَاءُ الْمَرْأَةِ أَصْفَرُ، فَإِذَا اجْتَمَعَا، فَعَلَا مَنِيُّ الرَّجُلِ مَنِيَّ الْمَرْأَةِ، أَذْكَرَا بِإِذْنِ اللهِ، وَإِذَا عَلَا مَنِيُّ الْمَرْأَةِ مَنِيَّ الرَّجُلِ، آنَثَا بِإِذْنِ اللهِ». قَالَ الْيَهُودِيُّ: لَقَدْ صَدَقْتَ، وَإِنَّكَ لَنَبِيٌّ، ثُمَّ انْصَرَفَ فَذَهَبَ. فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «لَقَدْ سَأَلَنِي هَذَا عَنِ الَّذِي سَأَلَنِي عَنْهُ، وَمَا لِي عِلْمٌ بِشَيْءٍ مِنْهُ، حَتَّى أَتَانِيَ اللهُ بِهِ».

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আযাদকৃত গোলাম সাওবান রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি একবার রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে দাঁড়িয়েছিলাম। ইতিমধ্যেই ইয়াহুদীদের এক পণ্ডিত ব্যক্তি এসে বলল, আসসালামুআলাইকা ইয়া মুহাম্মাদ! এরপর আমি তাকে এমন এক ধাক্কা মারলাম যে, সে প্রায় পড়েই গিয়েছিল আর কি! সে বলল, তুমি আমাকে ধাক্কা মারলে কেন? আমি বললাম, ‘ইয়া রাসুলুল্লাহ বলতে পার না। ইয়াহুদী বলল, আমরা তাঁকে তাঁর পরিবার পরিজন যে নাম রেখেছে সে নামেই ডাকি। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আমার নাম মুহাম্মাদ। আমার পরিবারের লোকই আমার এ নাম রেখেছে। এরপর ইয়াহুদী বলল, আমি আপনাকে (কয়েকটি কথা) জিজ্ঞাসা করতে এসেছি। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন, তোমার কি লাভ হবে, যদি আমি তোমাকে কিছু বলি? সে বলল, আমি আমার কান পেতে শুনব। এরপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর কাছে যে লাঠিটি ছিল তা দিয়ে মাটিতে আঁকা-ঝোকা করলেন। তারপর বললেন, জিজ্ঞাসা কর। ইয়াহুদী বলল, যেদিন এক যমীন ও আসমান পাল্টে গিয়ে কি অন্য যমীন ও আসমানে পরিণত হবে (অর্থাৎ কিয়ামাত হবে) সেদিন লোকজন কোথায় থাকবে? রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তারা সেদিন পুলসিরাতের কাছে অন্ধকারে থাকবে। সে বলল, কে সর্বপ্রথম (তা পার হবার) অনুমতি লাভ করবে? তিনি বললেন, দরিদ্র মুহাজিরগন। ইয়াহুদী বলল, জান্নাতে যখন তারা প্রবেশ করবে তখন তাদের তোহফা কি হবে? তিনি বললেন, মাছের কলিজার টুকরা। সে বলল, এরপর তাদের সকালের নাস্তা কি হবে? তিনি বললেন, তাদের জন্য জান্নাতের ষাড় যবেহ করা হবে যা জান্নাতের আশে পাশে চরে বেড়াত। সে বলল, এরপরে তাদের পানীয় কি হবে? তিনি বললেন, সেখানকার একটি ঝর্ণার পানি যার নাম ‘সালসাবীল’। সে বলল, আপনি ঠিক বলেছেন। সে আরো বলল যে, আমি আপনার কাছে এমন একটি বিষয় সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করতে এসেছি যা নবী ছাড়া পৃথিবীর কোন অধিবাসী জানে না অথবা একজন কি দুইজন লোক ছাড়া। তিনি বললেন, আমি, যদি তোমাকে তা বলে দিই তাতে তোমার কি কোনো উপকার হবে? সে বলল, আমি এ আমার কান পেতে শুনব। সে বলল, আমি আপনাকে সন্তান সম্পর্কে জিজ্ঞাস করতে এসেছি। তিনি বললেন, পুরুষের বীর্য সাদা এবং মেয়েলোকের বীর্য হলুদ। যখন উভয়টি একত্রিত হয়ে যায় এবং পুরুষের বীর্য মেয়েলোকের ডিম্বের ওপর প্রাধান্য বিস্তার করে তখন আল্লাহর হুকুমে পুত্র সন্তান হয়। আর যখন মেয়েলোকের ডিম্বপুরুষের বীর্যের ওপর প্রাধান্য বিস্তার করে তখন আল্লাহর হুকুমে কন্যা সন্তান হয়। ইয়াহুদী বলল, আপনি ঠিকই বলেছেন এবং নিশ্চয়ই আপনি নবী। এরপর সে চলে গেল। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এ লোক আমার কাছে যা জিজ্ঞাসা করেছে, ইতোপূর্বে আমার সে সম্পর্কে কোন জ্ঞানই ছিল না। আল্লাহ তা‘আলা এক্ষণে আমাকে তা জানিয়ে দিলেন।[153]

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، قَالَ: لَمَّا فُتِحَتْ خَيْبَرُ أُهْدِيَتْ لِلنَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ شَاةٌ فِيهَا سُمٌّ، فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «اجْمَعُوا إِلَيَّ مَنْ كَانَ هَا هُنَا مِنْ يَهُودَ» فَجُمِعُوا لَهُ، فَقَالَ: «إِنِّي سَائِلُكُمْ عَنْ شَيْءٍ، فَهَلْ أَنْتُمْ صَادِقِيَّ عَنْهُ؟»، فَقَالُوا: نَعَمْ، قَالَ لَهُمُ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَنْ أَبُوكُمْ؟»، قَالُوا: فُلاَنٌ، فَقَالَ: «كَذَبْتُمْ، بَلْ أَبُوكُمْ فُلاَنٌ»، قَالُوا: صَدَقْتَ، قَالَ: «فَهَلْ أَنْتُمْ صَادِقِيَّ عَنْ شَيْءٍ إِنْ سَأَلْتُ عَنْهُ؟»، فَقَالُوا: نَعَمْ يَا أَبَا القَاسِمِ، وَإِنْ كَذَبْنَا عَرَفْتَ كَذِبَنَا كَمَا عَرَفْتَهُ فِي أَبِينَا، فَقَالَ لَهُمْ: «مَنْ أَهْلُ النَّارِ؟»، قَالُوا: نَكُونُ فِيهَا يَسِيرًا، ثُمَّ تَخْلُفُونَا فِيهَا، فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «اخْسَئُوا فِيهَا، وَاللَّهِ لاَ نَخْلُفُكُمْ فِيهَا أَبَدًا»، ثُمَّ قَالَ: «هَلْ أَنْتُمْ صَادِقِيَّ عَنْ شَيْءٍ إِنْ سَأَلْتُكُمْ عَنْهُ؟»، فَقَالُوا: نَعَمْ يَا أَبَا القَاسِمِ، قَالَ: «هَلْ جَعَلْتُمْ فِي هَذِهِ الشَّاةِ سُمًّا؟»، قَالُوا: نَعَمْ، قَالَ: «مَا حَمَلَكُمْ عَلَى ذَلِكَ؟»، قَالُوا: أَرَدْنَا إِنْ كُنْتَ كَاذِبًا نَسْتَرِيحُ، وَإِنْ كُنْتَ نَبِيًّا لَمْ يَضُرَّكَ.

আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, যখন খায়বার বিজিত হয়, তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে একটি (ভুনা) বকরী হাদীয়া দেওয়া হয়; যাতে বিষ ছিল। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আদেশ দিলেন যে, এখানে যত ইয়াহূদী আছে, সকলকে একত্রিত কর্ তাদের সকলকে তাঁর সামনে একত্রিত করা হল। তখন তিনি বললেন, আমি তোমাদের একটি প্রশ্ন করব। তোমরা কি আমাকে তার সত্য উত্তর দিবে? তারা বলল, হ্যাঁ, সত্য উত্তর দিব, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিজ্ঞাসা করলেন, ‘তোমাদের পিতা কে? তারা বলল, অমুক।’ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘তোমরা মিথ্যা বলেছ, বরং তোমাদের পিতা অমুক।’ তারা বলল, ‘আপনিই সত্য বলেছেন।’ তখন তিনি বললেন, ‘আমি যদি তোমাদের একটি প্রশ্ন করি, তোমরা কি তার সঠিক উত্তর দিবে? তারা বলল, হ্যাঁ, দিব, হে আবুল কাসিম! আর যদি আমরা মিথ্যা বলি, তবে আপনি আমাদের মিথ্যা ধরে ফেলবেন, যেমন আমাদের পিতা সম্পর্কে আমাদের মিথ্যা ধরে ফেলেছেন।’ তখন তিনি তাদের জিজ্ঞাসা করলেন, ‘কারা দোযখবাসী?’ তারা বলল, আমরা তথায় অল্প কিছু দিন অবস্থান করব, তারপর আপনারা (মুসলিমরা) আমাদের পেছনে সেখানে থেকে যাবেন।’ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘দুর হও, তোমরাই তথাই থাকবে। আল্লাহর কসম। আমরা কখনো কখনো তাতে তোমাদের স্থলাভিষিক্ত হব না।’ তারপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘আমি যদি তোমাদের একটি প্রশ্ন করি, তোমরা কি তার সঠিক উত্তর দিবে? তারা বলল, হ্যাঁ, হে আবুল কাসিম!’ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিজ্ঞাসা করলেন, তোমরা কি এ বকরীটিতে বিষ মিশিয়েছ?’ তারা বলল, ‘হ্যাঁ।’ তিনি বললেন, ‘কিসে তোমাদের এ কাজে উদ্ধুদ্ধ করল?’ তারা বলল, ‘আমরা চেয়েছি আপনি যদি মিথ্যাবাদী হন, তবে আমরা আপনার থেকে মুক্তি পেয়ে শান্তি লাভ করব আর আপনি যদি নবী হন তবে তা আপনার কোনো ক্ষতি করবে না।’ [154]

عَنْ أَنَسٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، قَالَ: بَلَغَ عَبْدَ اللَّهِ بْنَ سَلاَمٍ مَقْدَمُ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ المَدِينَةَ فَأَتَاهُ، فَقَالَ: إِنِّي سَائِلُكَ عَنْ ثَلاَثٍ لاَ يَعْلَمُهُنَّ إِلَّا نَبِيٌّ قَالَ: مَا أَوَّلُ أَشْرَاطِ السَّاعَةِ؟ وَمَا أَوَّلُ طَعَامٍ يَأْكُلُهُ أَهْلُ الجَنَّةِ؟ وَمِنْ أَيِّ شَيْءٍ يَنْزِعُ الوَلَدُ إِلَى أَبِيهِ؟ وَمِنْ أَيِّ شَيْءٍ يَنْزِعُ إِلَى أَخْوَالِهِ؟ فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ «خَبَّرَنِي بِهِنَّ آنِفًا جِبْرِيلُ» قَالَ: فَقَالَ عَبْدُ اللَّهِ ذَاكَ عَدُوُّ اليَهُودِ مِنَ المَلاَئِكَةِ، فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: " أَمَّا أَوَّلُ أَشْرَاطِ السَّاعَةِ فَنَارٌ تَحْشُرُ النَّاسَ مِنَ المَشْرِقِ إِلَى المَغْرِبِ، وَأَمَّا أَوَّلُ طَعَامٍ يَأْكُلُهُ أَهْلُ الجَنَّةِ فَزِيَادَةُ كَبِدِ حُوتٍ، وَأَمَّا الشَّبَهُ فِي الوَلَدِ: فَإِنَّ الرَّجُلَ إِذَا غَشِيَ المَرْأَةَ فَسَبَقَهَا مَاؤُهُ كَانَ الشَّبَهُ لَهُ، وَإِذَا سَبَقَ مَاؤُهَا كَانَ الشَّبَهُ لَهَا " قَالَ: أَشْهَدُ أَنَّكَ رَسُولُ اللَّهِ، ثُمَّ قَالَ: يَا رَسُولَ اللَّهِ إِنَّ اليَهُودَ قَوْمٌ بُهُتٌ، إِنْ عَلِمُوا بِإِسْلاَمِي قَبْلَ أَنْ تَسْأَلَهُمْ بَهَتُونِي عِنْدَكَ، فَجَاءَتِ اليَهُودُ وَدَخَلَ عَبْدُ اللَّهِ البَيْتَ، فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ «أَيُّ رَجُلٍ فِيكُمْ عَبْدُ اللَّهِ بْنُ سَلاَمٍ» قَالُوا أَعْلَمُنَا، وَابْنُ أَعْلَمِنَا، وَأَخْيَرُنَا، وَابْنُ أَخْيَرِنَا، فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ «أَفَرَأَيْتُمْ إِنْ أَسْلَمَ عَبْدُ اللَّهِ» قَالُوا: أَعَاذَهُ اللَّهُ مِنْ ذَلِكَ، فَخَرَجَ عَبْدُ اللَّهِ إِلَيْهِمْ فَقَالَ: أَشْهَدُ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَأَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللَّهِ، فَقَالُوا: شَرُّنَا، وَابْنُ شَرِّنَا، وَوَقَعُوا فِيهِ.

আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আবদুল্লাহ ইবন সালামের কাছে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মদীনায় আগমনের খবর পৌঁছল, তখন তিনি তাঁর কাছে আসলেন। এরপর তিনি বলেছেন, আমি আপনাকে এমন তিনটি বিষয়ে জিজ্ঞাসা করতে চাই যার উত্তর নবী ছাড়া আর কেউ অবগত নয়। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, কিয়ামতের প্রথম নিদর্শন কি? আর সর্বপ্রথম খাবার কি, যা জান্নাতবাসী খাবে? আর কি কারণে সন্তান তার পিতার সাদৃশ্য লাভ করে? আর কিসের কারণে (কোন কোনো সময়) তার মামাদের সাদৃশ্য হয়? তখন রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এইমাত্র জিবরীল আলাইহিস সালাম আমাকে এ বিষয়ে অবহিত করেছেন। রাবি বলেন, তখন আবদুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, সে তো ফিরিশতাগণের মধ্যে ইয়াহূদীদের শত্রু। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, কিয়ামতের প্রথম নিদর্শন হলো আগুন যা মানুষকে পূর্ব থেকে পশ্চিম দিকে তাড়িয়ে নিয়ে একত্রিত করবে। আর প্রথম খাবার যা জান্নাতবাসীরা খাবেন তা হলো মাছের কলিজার অতিরিক্ত অংশ। আর সন্তান সদৃশ হওয়ার রহস্য এই যে পুরুষ যখন তার স্ত্রীর সাথে সহবাস করে তখন যদি পুরুষের বীর্যের পূর্বে স্খলিত হয় তখন সন্তান তার সাদৃশ্যতা লাভ করে। তিনি বললেন, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি-নিঃসন্দেহে আপনি আল্লাহর রাসুল। এরপর তিনি বললেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ! ইয়াহূদিরা অপবাদ ও কুৎসা রটনাকারী সম্প্রদায়। আপনি তাদেরকে আমার সম্বন্ধে জিজ্ঞাসা করার পূর্বে তারা যদি আমার ইসলাম গ্রহণের বিষয় জেনে ফেলে, তাহলে তারা আপনার কাছে আমার কুৎসা রতনা করবে। তারপর ইয়াহূদিরা এলো এবং আবদুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু ঘরে প্রবেশ করলেন। তখন রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের জিজ্ঞেস করলেন, তোমাদের মধ্যে আবদুল্লাহ ইবন সালাম কেমন লোক? তারা বলল, তিনি আমাদের মধ্যে সবচেয়ে বিজ্ঞ ব্যক্তি এবং সবচেয়ে বিজ্ঞ ব্যাক্তির পুত্র। তিনি আমাদের মধ্যে সর্বোত্তম ব্যক্তি এবং সর্বোত্তম ব্যক্তির পুত্র। তখন রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, যদি আবদুল্লাহ ইসলাম গ্রহন করে, এতে তোমাদের অভিমত কি হবে? তারা বলল, এর থেকে আল্লাহ তার তাঁকে রক্ষা করুক। এমন সময় আবদুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু তাদের সামনে বের হয়ে আসলেন এবং বললেন, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া কোনো ইলাহ নেই এবং আমি আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর রাসূল। তখন তারা বলতে লাগল, সে আমাদের মধ্যে সবচেয়ে নিকৃষ্ট ব্যক্তি এবং সবচেয়ে নিকৃষ্ট ব্যক্তির সন্তান এবং তারা তাঁর গীবত ও কুৎসা রটনায় লিপ্ত হয়ে গেল। [155] 

عَنِ الْبَرَاءِ بْنِ عَازِبٍ، قَالَ: مُرَّ عَلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِيَهُودِيٍّ مُحَمَّمًا مَجْلُودًا، فَدَعَاهُمْ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَقَالَ: «هَكَذَا تَجِدُونَ حَدَّ الزَّانِي فِي كِتَابِكُمْ؟»، قَالُوا: نَعَمْ، فَدَعَا رَجُلًا مِنْ عُلَمَائِهِمْ، فَقَالَ: «أَنْشُدُكَ بِاللهِ الَّذِي أَنْزَلَ التَّوْرَاةَ عَلَى مُوسَى، أَهَكَذَا تَجِدُونَ حَدَّ الزَّانِي فِي كِتَابِكُمْ» قَالَ: لَا، وَلَوْلَا أَنَّكَ نَشَدْتَنِي بِهَذَا لَمْ أُخْبِرْكَ، نَجِدُهُ الرَّجْمَ، وَلَكِنَّهُ كَثُرَ فِي أَشْرَافِنَا، فَكُنَّا إِذَا أَخَذْنَا الشَّرِيفَ تَرَكْنَاهُ، وَإِذَا أَخَذْنَا الضَّعِيفَ أَقَمْنَا عَلَيْهِ الْحَدَّ، قُلْنَا: تَعَالَوْا فَلْنَجْتَمِعْ عَلَى شَيْءٍ نُقِيمُهُ عَلَى الشَّرِيفِ وَالْوَضِيعِ، فَجَعَلْنَا التَّحْمِيمَ، وَالْجَلْدَ مَكَانَ الرَّجْمِ، فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «اللهُمَّ إِنِّي أَوَّلُ مَنْ أَحْيَا أَمْرَكَ إِذْ أَمَاتُوهُ»، فَأَمَرَ بِهِ فَرُجِمَ، فَأَنْزَلَ اللهُ عَزَّ وَجَلَّ: ﴿ ۞يَٰٓأَيُّهَا ٱلرَّسُولُ لَا يَحۡزُنكَ ٱلَّذِينَ يُسَٰرِعُونَ فِي ٱلۡكُفۡرِ ١ ﴾ [المائ‍دة: ٤١]  إِلَى قَوْلِهِ ﴿ إِنۡ أُوتِيتُمۡ هَٰذَا فَخُذُوهُ ٤١ ﴾ [المائ‍دة: ٤١] ، يَقُولُ: ائْتُوا مُحَمَّدًا صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَإِنْ أَمَرَكُمْ بِالتَّحْمِيمِ وَالْجَلْدِ فَخُذُوهُ، وَإِنْ أَفْتَاكُمْ بِالرَّجْمِ فَاحْذَرُوا، فَأَنْزَلَ اللهُ تَعَالَى﴿وَمَن لَّمۡ يَحۡكُم بِمَآ أَنزَلَ ٱللَّهُ فَأُوْلَٰٓئِكَ هُمُ ٱلۡكَٰفِرُونَ ٤٤ ﴾ [المائ‍دة: ٤٤] ﴿وَمَن لَّمۡ يَحۡكُم بِمَآ أَنزَلَ ٱللَّهُ فَأُوْلَٰٓئِكَ هُمُ ٱلظَّٰلِمُونَ ٤٥ ﴾ [المائ‍دة: ٤٥]  ﴿ وَمَن لَّمۡ يَحۡكُم بِمَآ أَنزَلَ ٱللَّهُ فَأُوْلَٰٓئِكَ هُمُ ٱلۡفَٰسِقُونَ ٤٧ ﴾ [المائ‍دة: ٤٧] فِي الْكُفَّارِ كُلُّهَا.

বারা ইবন আযিব রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একবার নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সম্মুখ একজন ইয়াহুদীকে কালি মাখা এবং বেত্রাঘাত কৃত অবস্থায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। তখন তিনি বলেন, তোমরা কি তোমাদের কিতাবে ব্যভিচারের শাস্তি এরূপই পেয়েছে? তারা বলল, হ্যাঁ। এরপর তাদের মধ্য হতে একজন আলিম (পাদরী) ব্যক্তিকে ডাকালেন এবং বললেন, তোমাকে সেই আল্লাহর কসম দিয়ে বলছি, যিনি মুসা আলাইহিস সালামের প্রতি তাওরাত কিতাব অবতীর্ণ করেছিলেন, তোমরা কি তোমাদের কিতাবে ব্যভিচারের শাস্তি এরূপই পেয়েছ? তখন ইয়াহুদী আলিম ব্যক্তি বললেন, না। তিনি আরো বললেন, আপনি যদি আমাকে আল্লাহর কসম দিয়ে এভাবে না বলতেন তবে আমি আপনাকে জানাতাম না যে, এর প্রকৃত শাস্তি রজম (পাথর নিক্ষেপ করা)। কিন্তু আমাদের সমাজের সম্মানীত ব্যক্তিদের মাঝে এর ব্যাপক প্রচলন হয়ে গেছে। অতএব, আমরা যখন এতে কোনো সম্ভ্রান্ত লোককে পেতাম, তখন তাকে ছেড়ে দিতাম এবং যখন কোনো দুর্বল ব্যক্তিকে পাকড়াও করতাম তখন তার উপর শরী‘য়তের প্রকৃত শাস্তি বাস্তবায়িত করতাম। পরিশেষে আমরা বললাম, তোমরা সকলেই এসো, আমরা সম্মিলিতভাবে এ ব্যাপারে একটি শাস্তি নির্ধারিত করে নেই, যা ভদ্র ও অভদ্র সকলের উপরই প্রযোজ্য হবে। সুতরাং আমরা ব্যভিচারের শাস্তি কালি লাগানো এবং বেত্রাঘাত করাকেই গ্রহন করে নিলাম, পাথর নিক্ষেপের পরিবর্তে। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: হে আল্লাহ! আমিই প্রথম ব্যক্তি, যে তোমার নির্দেশ ‘রজম’ বাস্তবায়িত করলাম যা তারা বাতিল করে ফেলেছিল। সুতরাং তিনি তা বাস্তবায়নের নির্দেশ দিলেন। অবশেষে ঐ ইয়াহুদীকে পাথর মারা হল। এরপর মহান আল্লাহ এই আয়াত নাযিল করেন, “হে রাসুল! যারা কাজে দ্রুতগামী তাদের কার্যকলাপ যেন আপনাকে চিন্তিত না করে”। “যদি তোমদেরকে তা প্রদত্ত করা হয়, তবে তা ধারণ কর” [সূরা আল-মায়েদা: ৪১] পর্যন্ত অবতীর্ণ করেন। তারা (ইয়াহুদীরা) বলতো যে, তোমরা মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট গমন করো, যদি তিনি তোমাদেরকে এ ব্যাপারে কালি লাগালো এবং বেত্রাঘাতের নির্দেশ প্রদান করেন, তবে তোমরা তা কার্যকর করবে; আর যদি তিনি রজমের নির্দেশ দেন তবে তা প্রত্যাখ্যান করবে। আল্লাহ তা‘আলা (এই মর্মে) আয়াত অবতীর্ণ করেন, “যারা আল্লাহর নাযিলকৃত আয়াত মুতাবিক বিচারকার্য পরিচালনা করে না তারাই হলো কাফির তথা অস্বীকারকারী সম্প্রদায়”। “আর যারা আল্লাহর নাযিলকৃত আয়াত অনুসারে বিচার করে না তারাই- হলো জালিম তথা অত্যাচারী দল”। “আর যারা আল্লাহর নাযিলকৃত আয়াত অনুযায়ী বিচার করে না তারাই হলো ফাসিক তথা সীমালঙ্ঘনকারী দল”। এই সবগুলো আয়াত কাফিরদের সম্পর্কেই অবতীর্ণ হয়। [156]

عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ، قَالَ: نُهِينَا أَنْ نَسْأَلَ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَنْ شَيْءٍ، فَكَانَ يُعْجِبُنَا أَنْ يَجِيءَ الرَّجُلُ مِنْ أَهْلِ الْبَادِيَةِ الْعَاقِلُ، فَيَسْأَلَهُ، وَنَحْنُ نَسْمَعُ، فَجَاءَ رَجُلٌ مِنْ أَهْلِ الْبَادِيَةِ، فَقَالَ: يَا مُحَمَّدُ، أَتَانَا رَسُولُكَ فَزَعَمَ لَنَا أَنَّكَ تَزْعُمُ أَنَّ اللهَ أَرْسَلَكَ، قَالَ: «صَدَقَ»، قَالَ: فَمَنْ خَلَقَ السَّمَاءَ؟ قَالَ: «اللهُ»، قَالَ: فَمَنْ خَلَقَ الْأَرْضَ؟ قَالَ: «اللهُ»، قَالَ: فَمَنْ نَصَبَ هَذِهِ الْجِبَالَ، وَجَعَلَ فِيهَا مَا جَعَلَ؟ قَالَ: «اللهُ»، قَالَ: فَبِالَّذِي خَلَقَ السَّمَاءَ، وَخَلَقَ الْأَرْضَ، وَنَصَبَ هَذِهِ الْجِبَالَ، آللَّهُ أَرْسَلَكَ؟ قَالَ: «نَعَمْ»، قَالَ: وَزَعَمَ رَسُولُكَ أَنَّ عَلَيْنَا خَمْسَ صَلَوَاتٍ فِي يَوْمِنَا، وَلَيْلَتِنَا، قَالَ: «صَدَقَ»، قَالَ: فَبِالَّذِي أَرْسَلَكَ، آللَّهُ أَمَرَكَ بِهَذَا؟ قَالَ: «نَعَمْ»، قَالَ: وَزَعَمَ رَسُولُكَ أَنَّ عَلَيْنَا زَكَاةً فِي أَمْوَالِنَا، قَالَ: «صَدَقَ»، قَالَ: فَبِالَّذِي أَرْسَلَكَ، آللَّهُ أَمَرَكَ بِهَذَا؟ قَالَ: «نَعَمْ»، قَالَ: وَزَعَمَ رَسُولُكَ أَنَّ عَلَيْنَا صَوْمَ شَهْرِ رَمَضَانَ فِي سَنَتِنَا، قَالَ: «صَدَقَ»، قَالَ: فَبِالَّذِي أَرْسَلَكَ، آللَّهُ أَمَرَكَ بِهَذَا؟ قَالَ: «نَعَمْ»، قَالَ: وَزَعَمَ رَسُولُكَ أَنَّ عَلَيْنَا حَجَّ الْبَيْتِ مَنِ اسْتَطَاعَ إِلَيْهِ سَبِيلًا، قَالَ: «صَدَقَ»، قَالَ: ثُمَّ وَلَّى، قَالَ: وَالَّذِي بَعَثَكَ بِالْحَقِّ، لَا أَزِيدُ عَلَيْهِنَّ، وَلَا أَنْقُصُ مِنْهُنَّ، فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «لَئِنْ صَدَقَ لَيَدْخُلَنَّ الْجَنَّةَ».

আনাস ইবন মালিক রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে কোনো বিষয়ে (অতিরিক্ত) প্রশ্ন করার ব্যাপারে আমাদের নিষেধ করা হয়েছিল। তাই আমরা চাইতাম যে, গ্রাম থেকে কোনো বুদ্ধিমান ব্যক্তি এসে তাঁকে প্রশ্ন করুক আর আমরা তা শুনি। তারপর একদিন গ্রাম থেকে এক ব্যক্তি এসে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলল, হে মুহাম্মাদ! আমাদের কাছে আপনার দূত এসে বলেছে, আপনি দাবি করেছেন যে, আল্লাহ আপনাকে রাসুল হিসাবে পাঠিয়েছেন। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, সত্যই বলেছে। আগন্তুক বলল, আসমান কে সৃষ্টি করেছেন? তিনি বললেন, আল্লাহ। আগন্তুক বলল, যমীন কে সৃষ্টি করেছেন? রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আল্লাহ। আগন্তুক বলল, এসব পর্বতমানা কে স্থাপন করেছেন এবং এর মধ্যে যা কিছু আছে তা কে সৃষ্টি করেছেন? রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আল্লাহ। আগন্তুক বলল, কসম সেই সত্তার! যিনি আসমান ও যমীন সৃষ্টি করেছেন এবং এসব পর্বতমালা স্থাপন করেছেন। আল্লাহই আপনাকে রাসুল হিসেবে পাঠিয়েছেন? রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হ্যাঁ। আগন্তুক বলল, আপনার দূত বলেছে যে, আমাদের উপর দিনে ও রাতে পাচ ওয়াক্ত সালাত ফরয। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, সত্যই বলেছে। আগন্তুক বলল, যিনি আপনাকে রাসুল হিসেবে পাঠিয়েছেন তাঁর কসম, আল্লাহ-ই কি আপনাকে এর নির্দেশ দিয়েছেন? রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হ্যাঁ। আগন্তুক বলল, আপনার দূত বলেছে যে, আমাদের উপর আমাদের মালের যাকাত দেওয়া ফরয। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ঠিকই বলেছো। আগন্তুক বলল, যিনি আপনাকে রাসুল হিসেবে পাঠিয়েছেন, তাঁর কসম, আল্লাহ-ই কি আপনাকে এর নির্দেশ দিয়েছেন? রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হ্যাঁ। আগন্তুক বলল, আপনার দূত বলেছে যে, প্রতি বছর রমাদান মাসের সাওম পালন করা আমাদের উপর ফরয। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, সত্যই বলেছে। আগন্তুক বলল, যিনি আপনাকে রাসুল হিসেবে পাঠিয়েছেন, তার কসম, আল্লাহ-ই কি আপনাকে এর নির্দেশ দিয়েছেন? রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হ্যাঁ। আগন্তুক বলল, আপনার দূত বলেছে যে, আমাদের মধ্যে যে বায়তুল্লায় যেতে সক্ষম তার উপর হজ্জ ফরয। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, সত্যি বলেছে। রাবী বলেন যে, তারপর আগন্তুক চলে যেতে যেতে বলল, যিনি আপনাকে সত্যসহ প্রেরণ করেছেন তার কসম, আমি এর অতিরিক্তও করব না এবং এর কমও করব না। এ কথা শুনে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, লোকটি সত্য বলে থাকলে অবশ্যই সে জান্নাতে যাবে। [157]

 

 

দ্বাদশ পরিচ্ছেদ

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নবুওয়তের প্রমাণের মধ্যে, একদল লোক সম্পর্কে তাঁর সংবাদ দেওয়া যে, তারা জান্নাতী। যাদের সম্পর্কে তিনি সংবাদ দিয়েছেন তাদের কেউ পরিবর্তন বা বেঈমান হয়েছে এমন কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।

عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ: أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ افْتَقَدَ ثَابِتَ بْنَ قَيْسٍ، فَقَالَ رَجُلٌ: يَا رَسُولَ اللَّهِ، أَنَا أَعْلَمُ لَكَ عِلْمَهُ، فَأَتَاهُ فَوَجَدَهُ جَالِسًا فِي بَيْتِهِ، مُنَكِّسًا رَأْسَهُ، فَقَالَ لَهُ: مَا شَأْنُكَ؟ فَقَالَ: شَرٌّ، كَانَ يَرْفَعُ صَوْتَهُ فَوْقَ صَوْتِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَقَدْ حَبِطَ عَمَلُهُ وَهُوَ مِنْ أَهْلِ النَّارِ، فَأَتَى الرَّجُلُ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَأَخْبَرَهُ أَنَّهُ قَالَ كَذَا وَكَذَا، فَقَالَ مُوسَى: فَرَجَعَ إِلَيْهِ المَرَّةَ الآخِرَةَ بِبِشَارَةٍ عَظِيمَةٍ، فَقَالَ: " اذْهَبْ إِلَيْهِ فَقُلْ لَهُ: إِنَّكَ لَسْتَ مِنْ أَهْلِ النَّارِ، وَلَكِنَّكَ مِنْ أَهْلِ الجَنَّةِ ".

আনাস ইবন মালিক রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাবিত ইবন কায়েস রাদিয়াল্লাহু আনহুকে (কয়েকদিন) তাঁর মজলিসে অনুপস্থিত পেলেন। তখন এক সাহাবী বললেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ! আমি তার সম্পর্কে জানি। তিনি গিয়ে দেখলেন সাবিত রাদিয়াল্লাহু আনহু তাঁর ঘরে নত মস্তকে (গভীর চিন্তায়মগ্ন অবস্থায়) বসে আছেন। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, হে সাবিত, কি অবস্থা তোমার? তিনি বললেন, অত্যন্ত করুণ। বস্তুতঃ তার গলার স্বর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের গলার স্বর থেকে উঁচু হয়েছিল। কাজেই (কোরআনের বর্ণনা অনুযায়ী) তাঁর সব নেক আমল বরবাদ হয়ে গেছে। সে জাহান্নামীদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে গেছে। ঐ ব্যক্তি ফিরে এসে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জানালেন সাবিত রাদিয়াল্লাহু আনহু এমন এমন বলেছে। মূসা ইবন আনাস (রহ.) (একজন রাবী) বলেন, ঐ সাহাবী পুনরায় এ মর্মে এক মহাসুসংবাদ নিয়ে হাজির হলেন (সাবিতের খেদমতে) যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তুমি যাও সাবিতকে বল, নিশ্চয়ই তুমি জাহান্নামীদের অন্তর্ভুক্ত নও বরং তুমি জান্নাতবাসীদের অন্তর্ভুক্ত। [158]

عن أبُى مُوسَى الأَشْعَرِي، أَنَّهُ تَوَضَّأَ فِي بَيْتِهِ، ثُمَّ خَرَجَ، فَقُلْتُ: لَأَلْزَمَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، وَلَأَكُونَنَّ مَعَهُ يَوْمِي هَذَا، قَالَ: فَجَاءَ المَسْجِدَ فَسَأَلَ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَقَالُوا: خَرَجَ وَوَجَّهَ هَا هُنَا، فَخَرَجْتُ عَلَى إِثْرِهِ أَسْأَلُ عَنْهُ حَتَّى دَخَلَ بِئْرَ أَرِيسٍ، فَجَلَسْتُ عِنْدَ البَابِ، وَبَابُهَا مِنْ جَرِيدٍ حَتَّى قَضَى رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ حَاجَتَهُ فَتَوَضَّأَ، فَقُمْتُ إِلَيْهِ فَإِذَا هُوَ جَالِسٌ عَلَى بِئْرِ أَرِيسٍ وَتَوَسَّطَ قُفَّهَا، وَكَشَفَ عَنْ سَاقَيْهِ وَدَلَّاهُمَا فِي البِئْرِ، فَسَلَّمْتُ عَلَيْهِ ثُمَّ انْصَرَفْتُ فَجَلَسْتُ عِنْدَ البَابِ، فَقُلْتُ لَأَكُونَنَّ بَوَّابَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اليَوْمَ، فَجَاءَ أَبُو بَكْرٍ فَدَفَعَ البَابَ، فَقُلْتُ: مَنْ هَذَا؟ فَقَالَ: أَبُو بَكْرٍ، فَقُلْتُ: عَلَى رِسْلِكَ ثُمَّ ذَهَبْتُ، فَقُلْتُ: يَا رَسُولَ اللَّهِ، هَذَا أَبُو بَكْرٍ يَسْتَأْذِنُ؟ فَقَالَ: «ائْذَنْ لَهُ وَبَشِّرْهُ بِالْجَنَّةِ». فَأَقْبَلْتُ حَتَّى قُلْتُ لِأَبِي بَكْرٍ: ادْخُلْ، وَرَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُبَشِّرُكَ بِالْجَنَّةِ، فَدَخَلَ أَبُو بَكْرٍ فَجَلَسَ عَنْ يَمِينِ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَعَهُ فِي القُفِّ، وَدَلَّى رِجْلَيْهِ فِي البِئْرِ كَمَا صَنَعَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، وَكَشَفَ عَنْ سَاقَيْهِ، ثُمَّ رَجَعْتُ فَجَلَسْتُ، وَقَدْ تَرَكْتُ أَخِي يَتَوَضَّأُ وَيَلْحَقُنِي، فَقُلْتُ: إِنْ يُرِدِ اللَّهُ بِفُلاَنٍ خَيْرًا - يُرِيدُ أَخَاهُ - يَأْتِ بِهِ، فَإِذَا إِنْسَانٌ يُحَرِّكُ البَابَ، فَقُلْتُ: مَنْ هَذَا؟ فَقَالَ: عُمَرُ بْنُ الخَطَّابِ، فَقُلْتُ عَلَى رِسْلِكَ، ثُمَّ جِئْتُ إِلَى رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَسَلَّمْتُ عَلَيْهِ، فَقُلْتُ: هَذَا عُمَرُ بْنُ الخَطَّابِ يَسْتَأْذِنُ؟ فَقَالَ: «ائْذَنْ لَهُ وَبَشِّرْهُ بِالْجَنَّةِ»، فَجِئْتُ فَقُلْتُ: ادْخُلْ، وَبَشَّرَكَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِالْجَنَّةِ، فَدَخَلَ فَجَلَسَ مَعَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي القُفِّ عَنْ يَسَارِهِ، وَدَلَّى رِجْلَيْهِ فِي البِئْرِ، ثُمَّ رَجَعْتُ فَجَلَسْتُ، فَقُلْتُ: إِنْ يُرِدِ اللَّهُ بِفُلاَنٍ خَيْرًا يَأْتِ بِهِ، فَجَاءَ إِنْسَانٌ يُحَرِّكُ البَابَ، فَقُلْتُ: مَنْ هَذَا؟ فَقَالَ: عُثْمَانُ بْنُ عَفَّانَ، فَقُلْتُ: عَلَى رِسْلِكَ، فَجِئْتُ إِلَى رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَأَخْبَرْتُهُ، فَقَالَ: «ائْذَنْ لَهُ وَبَشِّرْهُ بِالْجَنَّةِ، عَلَى بَلْوَى تُصِيبُهُ» فَجِئْتُهُ فَقُلْتُ لَهُ: ادْخُلْ، وَبَشَّرَكَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِالْجَنَّةِ عَلَى بَلْوَى تُصِيبُكَ، فَدَخَلَ فَوَجَدَ القُفَّ قَدْ مُلِئَ فَجَلَسَ وِجَاهَهُ مِنَ الشَّقِّ الآخَرِ قَالَ شَرِيكُ بْنُ عَبْدِ اللَّهِ، قَالَ سَعِيدُ بْنُ المُسَيِّبِ «فَأَوَّلْتُهَا قُبُورَهُمْ».

আবূ মূসা আশ‘আরী রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণিত যে, তিনি একদিন ঘরে অজু করে বের হলেন এবং (মনে মনে স্থির করলেন) আমি আজ সারাদিন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে কাটাব, তার থেকে পৃথক হব না। তিনি মসজিদে গিয়ে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের খবর নিলেন, সাহাবীগণ বললেন, তিনি এদিকে বেরিয়ে গেছেন। আমিও ঐ পথ ধরে তাঁর গমন করলাম। তাঁর খুঁজে জিজ্ঞাসাবাদ করতে থাকলাম। তিনি শেষ পর্যন্ত আরীস কূপের নিকট গিয়ে পৌছলেন। আমি (কূপে প্রবেশের) দরজার নিকট বসে পড়লাম। দরজাটি খেজুরের শাখা দিয়ে তৈরী ছিল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন তাঁর প্রয়োজন (ইস্তিঞ্জা) সেরে অযু করলেন। তখন আমি তাঁর নিকটে দাঁড়ালাম এবং দেখতে পেলাম তিনি আরীস কূপের কিনারার বাঁধের মাঝখানে বসে হাঁটু পর্যন্ত পা দু’টি খুলে কূপের ভিতরে ঝুলিয়ে রেখেছেন, আমি তাঁকে সালাম করলাম এবং ফিরে এসে দরজায় বসে রইলাম এবং মনে মনে স্থির করে নিলাম যে, আজ আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দারোয়ানরূপে (পাহারাদারের) দায়িত্ব পালন করব। এ সময় আবূ বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু এসে দরজায় ধাক্কা দিলেন। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, আপনি কে? তিনি বললেন, আবূ বকর! আমি বললাম থামুন, (আমি আপনার জন্য অনুমতি নিয়ে আসি) আমি গিয়ে বললাম, ইয়া সাসূলুল্লাহ! আবূ বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু ভিতরে আসার অনুমতি চাচ্ছেন। তিনি বললেন, ভিতরে আসার অনুমতি দাও এবং তাকে জান্নাতের সুসংবাদ দাও। আমি ফিরে এসে আবূ বকর রাদিয়াল্লাহু আনহুকে বললাম, ভিতরে আসুন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আপনাকে জান্নাতের সুসংবাদ দিচ্ছেন। আবূ বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু ভিতরে আসলেন এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ডানপাশে কূপের কিনারায় বসে দু’পায়ের কাপড় হাটু পর্যন্ত উঠায়ে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ন্যায় কূপের ভিতর ভাগে পা ঝুলিয়ে দিয়ে বসে পড়েন। আমি ফিরে এসে (দরজার পাশে) বসে পড়লাম। আমি (ঘর হতে বের হওয়ার সময়) আমার ভাইকে অযু করছে অবস্থায় রেখে এসেছিলাম। তারও আমার সাথে মিলিত হওয়ার কথা ছিল। তাই আমি (মনে মনে) বলতে লাগলাম, আল্লাহ যদি তার (ভাইয়ের) মঙ্গল চান তবে তাকে নিয়ে আসুন। এমন সময় এক ব্যক্তি দরজা নাড়তে লাগল। আমি বললাম, কে? তিনি বললেন, আমি উমর ইবন খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু আনহু। আমি বললাম, অপেক্ষা করুন, (আমি আপনার জন্য অনুমতি নিয়ে আসি)। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের খেদমতে সালাম পেশ করে আরয করলাম, ইয়া রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! উমর ইবন খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু আনহু (ভিতরে আসার) অনুমতি চাচ্ছেন। তিনি বললেন তাকে ভিতরে আসার অনুমতি দাও এবং তাকে জান্নাতের সুসংবাদ দাও। আমি এসে তাকে বললাম, ভিতরে আসুন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আপনাকে জান্নাতের সুসংবাদ দিচ্ছেন। তিনি ভিতরে আসলেন এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বামপাশে হাঁটু পর্যন্ত কাপড় উঠায়ে কূপের ভিতর দিকে পা ঝুলিয়ে দিয়ে বসে গেলেন। আমি আবার ফিরে আসলাম এবং বলতে থাকলাম আল্লাহ যদি আমার ভাইয়ের মঙ্গল চান, তবে যেন তাকে নিয়ে আসেন। এরপর আর এক ব্যক্তি এসে দরজা নাড়তে লাগল। আমি জিজ্ঞাসা করলাম কে? তিনি বললেন, আমি উসমান ইবন আফফান রাদিয়াল্লাহু আনহু। আমি বললাম, থামুন (আমি অনুমতি নিয়ে আসছি) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের খেদমতে দিয়ে জানালাম। তিনি বললেন, তাকে ভিতরে আসতে বল এবং তাকেও জান্নাতের সু-সংবাদ দিয়ে দাও। তবে (দুনিয়াতে তার উপর) কঠিন পরীক্ষা হবে। আমি এসে বললাম, ভিতরে আসুন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আপনাকে জান্নাতের সু-সংবাদ দিচ্ছেন; তবে কঠিন পরীক্ষার সম্মুখীন হবেন। তিনি ভিতরে এসে দেখলেন, কূপের কিনারায় খালি জায়গা নাই। তাই তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সম্মুখে অপর এক স্থানে বসে পড়লেন। শরীক (রহ.) বলেন, সাঈদ ইবন মুসাইয়্যাব (রহ.) বলেছেন, আমি এর দ্বারা (পরবর্তী কালে) তাদের কবর এরূপ হবে এই অর্থ করছি। [159]

عَنْ جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا، قَالَ: قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: " رَأَيْتُنِي دَخَلْتُ الجَنَّةَ، فَإِذَا أَنَا بِالرُّمَيْصَاءِ، امْرَأَةِ أَبِي طَلْحَةَ، وَسَمِعْتُ خَشَفَةً، فَقُلْتُ: مَنْ هَذَا؟ فَقَالَ: هَذَا بِلاَلٌ، وَرَأَيْتُ قَصْرًا بِفِنَائِهِ جَارِيَةٌ، فَقُلْتُ: لِمَنْ هَذَا؟ فَقَالَ: لِعُمَرَ، فَأَرَدْتُ أَنْ أَدْخُلَهُ فَأَنْظُرَ إِلَيْهِ، فَذَكَرْتُ غَيْرَتَكَ " فَقَالَ عُمَرُ: بِأَبِي وَأُمِّي يَا رَسُولَ اللَّهِ أَعَلَيْكَ أَغَارُ.

জাবির ইবন আবদুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আমি স্বপ্নে আমাকে দেখতে পেলাম যে, আমি জান্নাতে প্রবেশ করছি। হঠাৎ আবূ তালহা রাদিয়াল্লাহু আনহুর স্ত্রী রুমায়সাকে দেখতে পেলাম এবং আমি পদচারণার শব্দও শুনতে পেলাম। তখণ আমি বললা, এই ব্যক্তি কে? এক ব্যক্তি বলল, তিনি বিলাল রাদিয়াল্লাহু আনহু। আমি একটি প্রাসাদও দেখতে পেলাম যার আঙ্গিনায় এক মহিলা রয়েছে। আমি বললাম, ঐ প্রাসাদটি কার? এক ব্যক্তি বলল, প্রাসাদটি উমর ইবন খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু আনহুর। আমি প্রাসাদটিতে প্রবেশ করে (সব কিছু) দেখার ইচ্ছা করলাম। তখন তোমার (উমর রাদিয়াল্লাহু আনহুর) সূক্ষ্ম মর্যাদাবোধের কথা স্মরণ করলাম। উমর রাদিয়াল্লাহু আনহু (এ কথা শুনে) বললেন, আমার বাপ-মা আপনার উপর কুরবান, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আপনার কাছেও কি মর্যাদাবোধ প্রকাশ করতে পারি? [160]

عَنْ أَنَسٍ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قَالَ: " دَخَلْتُ الْجَنَّةَ فَسَمِعْتُ خَشْفَةً، فَقُلْتُ: مَنْ هَذَا؟ قَالُوا: هَذِهِ الْغُمَيْصَاءُ بِنْتُ مِلْحَانَ أُمُّ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ".

আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আমি জান্নাতে গেলাম, সেখানে আমি কারও চলার শব্দ পেলাম। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, কে? লোকেরা বললো, তিনি শুমায়সা বিনত মিলহান রাদিয়াল্লাহু আনহা, আনাস ইবন মালিক রাদিয়াল্লাহু আনহুর মা। [161]

عَنْ جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللهِ، أَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «أُرِيتُ الْجَنَّةَ فَرَأَيْتُ امْرَأَةَ أَبِي طَلْحَةَ، ثُمَّ سَمِعْتُ خَشْخَشَةً أَمَامِي فَإِذَا بِلَالٌ».

জাবির ইবন আব্দুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আমাকে জান্নাত দেখানো হয়েছে যে, আমি আবু তালহার স্ত্রীকে দেখলাম। অতঃপর আমার সামনে পদধ্বনি শুনতে পেলাম তাকিয়ে দেখি বিলাল। [162]

عَنْ أَنَس بْن مَالِكٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ صَعِدَ أُحُدًا، وَأَبُو بَكْرٍ، وَعُمَرُ، وَعُثْمَانُ فَرَجَفَ بِهِمْ، فَقَالَ: «اثْبُتْ أُحُدُ فَإِنَّمَا عَلَيْكَ نَبِيٌّ، وَصِدِّيقٌ، وَشَهِيدَانِ».

আনাস ইবন মালিক রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত যে, (একবার) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবু বকর, উমর, উসমান রাদিয়াল্লাহু আনহু ওহুদ পাহাড়ে আরোহণ করেন। পাহাড়টি (তাঁদেরকে ধারণ করে আনন্দে) নড়ে উঠল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, হে ওহুদ, স্থির হও। তোমার উপর একজন নবী, একজন সিদ্দীক ও দু’জন শহীদ রয়েছেন। [163] 

عَنْ أَبِي عَبْدِ الرَّحْمَنِ، أَنَّ عُثْمَانَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ حِينَ حُوصِرَ أَشْرَفَ عَلَيْهِمْ، وَقَالَ: أَنْشُدُكُمُ اللَّهَ، وَلاَ أَنْشُدُ إِلَّا أَصْحَابَ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، أَلَسْتُمْ تَعْلَمُونَ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «مَنْ حَفَرَ رُومَةَ فَلَهُ الجَنَّةُ»؟ فَحَفَرْتُهَا، أَلَسْتُمْ تَعْلَمُونَ أَنَّهُ قَالَ: «مَنْ جَهَّزَ جَيْشَ العُسْرَةِ فَلَهُ الجَنَّةُ»؟ فَجَهَّزْتُهُمْ، قَالَ: فَصَدَّقُوهُ بِمَا قَالَ وَقَالَ عُمَرُ فِي وَقْفِهِ: «لاَ جُنَاحَ عَلَى مَنْ وَلِيَهُ أَنْ يَأْكُلَ وَقَدْ يَلِيهِ الوَاقِفُ وَغَيْرُهُ فَهُوَ وَاسِعٌ لِكُلٍّ».

আব্দুর রহমান রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত যে, উসমান রাদিয়াল্লাহু আনহু অবরুদ্ধ হলে তিনি উপর থেকে সাহাবীদের প্রতি দৃষ্টি দিয়ে বললেন, আমি আপনাদের আল্লাহর কসম দিয়ে বলছি, আর আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহাবীদেরকেই আল্লাহর কসম দিয়ে বলছি, আপনারা কি জানেন না যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছিলেন, যে ব্যক্তি রূমার কূপটি খনন করে দিবে সে জান্নাতি এবং আমি তা খনন করে দিয়েছি। আপনারা কি জানেন না যে, তিনি বলেছিলেন, যে ব্যক্তি তাবুকের যুদ্ধে সেনাদের সামগ্রী ব্যবস্থা করে দিবে, সে জান্নাতি এবং আমি তা ব্যবস্থা করে দিয়েছিলাম। [164]

عَنْ عَامِرِ بْنِ سَعْدِ بْنِ أَبِي وَقَّاصٍ، عَنْ أَبِيهِ، قَالَ: " مَا سَمِعْتُ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، يَقُولُ: لِأَحَدٍ يَمْشِي عَلَى الأَرْضِ إِنَّهُ مِنْ أَهْلِ الجَنَّةِ، إِلَّا لِعَبْدِ اللَّهِ بْنِ سَلاَمٍ " قَالَ: وَفِيهِ نَزَلَتْ هَذِهِ الآيَةُ {وَشَهِدَ شَاهِدٌ مِنْ بَنِي إِسْرَائِيلَ عَلَى مِثْلِهِ} [الأحقاف: 10] الآيَةَ، قَالَ: «لاَ أَدْرِي قَالَ مَالِكٌ الآيَةَ أَوْ فِي الحَدِيثِ».

সা’দ ইবন আবূ ওয়াক্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আবদুল্লাহ ইবন সালাম রাদিয়াল্লাহু আনহু ব্যতীত ভূ-পৃষ্ঠে বিচরণকারী কারো সম্পর্কে একথাটি বলতে শুনিনি যে, ‘নিশ্চয়ই তিনি জান্নাতবাসী’। সা’দ রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, তাঁরই সম্পর্কে সূরা আহকাফের এ আয়াত নাযিল হয়েছে “এ বিষয়ে বনী ইসরাঈলের মধ্যে থেকেও একজন সাক্ষ্য প্রদান করেছে”। [সূরা আল-আহকাফ: ১০] [165]

عَنْ قَيْسِ بْنِ عُبَادٍ، قَالَ: كُنْتُ جَالِسًا فِي مَسْجِدِ المَدِينَةِ، فَدَخَلَ رَجُلٌ عَلَى وَجْهِهِ أَثَرُ الخُشُوعِ، فَقَالُوا: هَذَا رَجُلٌ مِنْ أَهْلِ الجَنَّةِ، فَصَلَّى رَكْعَتَيْنِ تَجَوَّزَ فِيهِمَا، ثُمَّ خَرَجَ، وَتَبِعْتُهُ، فَقُلْتُ: إِنَّكَ حِينَ دَخَلْتَ المَسْجِدَ قَالُوا: هَذَا رَجُلٌ مِنْ أَهْلِ الجَنَّةِ، قَالَ: وَاللَّهِ مَا يَنْبَغِي لِأَحَدٍ أَنْ يَقُولَ مَا لاَ يَعْلَمُ، وَسَأُحَدِّثُكَ لِمَ ذَاكَ: رَأَيْتُ رُؤْيَا عَلَى عَهْدِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَصَصْتُهَا عَلَيْهِ، وَرَأَيْتُ كَأَنِّي فِي رَوْضَةٍ - ذَكَرَ مِنْ سَعَتِهَا وَخُضْرَتِهَا - وَسْطَهَا عَمُودٌ مِنْ حَدِيدٍ، أَسْفَلُهُ فِي الأَرْضِ، وَأَعْلاَهُ فِي السَّمَاءِ، فِي أَعْلاَهُ عُرْوَةٌ، فَقِيلَ لِي: ارْقَ، قُلْتُ: لاَ أَسْتَطِيعُ، فَأَتَانِي مِنْصَفٌ، فَرَفَعَ ثِيَابِي مِنْ خَلْفِي، فَرَقِيتُ حَتَّى كُنْتُ فِي أَعْلاَهَا، فَأَخَذْتُ بِالعُرْوَةِ، فَقِيلَ لَهُ: اسْتَمْسِكْ فَاسْتَيْقَظْتُ، وَإِنَّهَا لَفِي يَدِي، فَقَصَصْتُهَا عَلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قَالَ: «تِلْكَ الرَّوْضَةُ الإِسْلاَمُ، وَذَلِكَ العَمُودُ عَمُودُ الإِسْلاَمِ، وَتِلْكَ العُرْوَةُ عُرْوَةُ الوُثْقَى، فَأَنْتَ عَلَى الإِسْلاَمِ حَتَّى تَمُوتَ» وَذَاكَ الرَّجُلُ عَبْدُ اللَّهِ بْنُ سَلاَمٍ.

কায়েস ইবন ‘উবাদ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি মদীনায় মসজিদে বসা ছিলাম। তখন এমন এক ব্যক্তি মসজিদে প্রবেশ করলেন যার চেহারায় বিনয় ও নম্রতার ছাপ ছিল। (তাঁকে দেখে) লোকজন বলতে লাগলেন, এই ব্যক্তি জান্নাতীগণের একজন। তিনি, সংক্ষিপ্তাকারে দু’রাকআত সালাত আদায় করে মসজিদ থেকে বেরিয়ে এলেন। আমি তাঁকে অনুসরণ করলাম এবং তাঁকে বললাম, আপনি যখন মসজিদে প্রবেশ করছিলেন তখন লোকজন বালাবলি করছিল যে, ইনি জান্নাতবাসীগণের একজন। তিনি বললেন, আল্লাহর কসম কারো জন্য এমন কথা বলা উচিৎ নয়, যা সে জানেনা। আমি তোমাকে প্রকৃত ঘটনাটি বলছি কেন ইহা বলা হয়। আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জীবদ্দশায় একটি স্বপ্ন দেখে তাঁর নিকট বর্ণনা করলাম। আমি দেখলাম যে, আমি একটি বাগানে অবস্থানরত; বাগানটি বেশ প্রশস্ত, সবুজ, (সুন্দর ও শোভাময়)। বাগানের মধ্যে একটি লোহার স্তম্ভ যার নিম্নভাগ মাটিতে এবং ঊর্ধ্বভাগ আকাশ স্পর্শ করেছে; স্তম্ভের ঊর্ধ্বে একটি শক্তকড়া সংযুক্ত রয়েছে। আমাকে বলা হল, উর্ধ্বে আরোহণ কর। আমি বললাম, ইহাতো আমার সামর্থের বাইরে। তখন একজন খাদিম এসে পিছন দিক থেকে আমার কাপড় সমেত চেপে ধরে আমাকে আরোহণে সাহায্য করলেন। আমি চড়তে লাগলাম এবং উপরে গিয়ে আংটাটি ধরলাম। তখন আমাকে বলা হল, শক্তভাবে আংটাটি আঁকড়ে ধর। তারপর কড়াটি আমার হাতের মোঠায় ধারণ অবস্থায় আমি জেগে গেলাম। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট স্বপ্নটি বললে, তিনি স্বপ্নটির (তা’বীর হিসাবে) বললেন, এ বাগান হল ইসলাম, আর স্তম্ভটি হল ইসলামের খুটিসমূহ (করনীয় মৌলিক বিষয়াদি) কড়াটি হল (কুরআনে উল্লেখিত) “উরুয়াতুল উস্কা” (শক্ত ও অটুট কড়া) এবং তুমি আজীবন ইসলামর উপর অটল থাকবে। (রাবী বলেন) এই ব্যক্তি হলেন, আবদুল্লাহ ইবন সালাম রাদিয়াল্লাহু আনহু। [166]

عَنْ عِمْرَانَ بْنِ حُصَيْنٍ، رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا قَالَ: لاَ رُقْيَةَ إِلَّا مِنْ عَيْنٍ أَوْ حُمَةٍ، فَذَكَرْتُهُ لِسَعِيدِ بْنِ جُبَيْرٍ، فَقَالَ: حَدَّثَنَا ابْنُ عَبَّاسٍ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: " عُرِضَتْ عَلَيَّ الأُمَمُ، فَجَعَلَ النَّبِيُّ وَالنَّبِيَّانِ يَمُرُّونَ مَعَهُمُ الرَّهْطُ، وَالنَّبِيُّ لَيْسَ مَعَهُ أَحَدٌ، حَتَّى رُفِعَ لِي سَوَادٌ عَظِيمٌ، قُلْتُ: مَا هَذَا؟ أُمَّتِي هَذِهِ؟ قِيلَ: بَلْ هَذَا مُوسَى وَقَوْمُهُ، قِيلَ: انْظُرْ إِلَى الأُفُقِ، فَإِذَا سَوَادٌ يَمْلَأُ الأُفُقَ، ثُمَّ قِيلَ لِي: انْظُرْ هَا هُنَا وَهَا هُنَا فِي آفَاقِ السَّمَاءِ، فَإِذَا سَوَادٌ قَدْ مَلَأَ الأُفُقَ، قِيلَ: هَذِهِ أُمَّتُكَ، وَيَدْخُلُ الجَنَّةَ مِنْ هَؤُلاَءِ سَبْعُونَ أَلْفًا بِغَيْرِ حِسَابٍ " ثُمَّ دَخَلَ وَلَمْ يُبَيِّنْ لَهُمْ، فَأَفَاضَ القَوْمُ، وَقَالُوا: نَحْنُ الَّذِينَ آمَنَّا بِاللَّهِ وَاتَّبَعْنَا رَسُولَهُ، فَنَحْنُ هُمْ، أَوْ أَوْلاَدُنَا الَّذِينَ وُلِدُوا فِي الإِسْلاَمِ، فَإِنَّا وُلِدْنَا فِي الجَاهِلِيَّةِ، فَبَلَغَ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَخَرَجَ، فَقَالَ: «هُمُ الَّذِينَ لاَ يَسْتَرْقُونَ، وَلاَ يَتَطَيَّرُونَ، وَلاَ يَكْتَوُونَ، وَعَلَى رَبِّهِمْ يَتَوَكَّلُونَ» فَقَالَ عُكَاشَةُ بْنُ مِحْصَنٍ: أَمِنْهُمْ أَنَا يَا رَسُولَ اللَّهِ؟ قَالَ: «نَعَمْ» فَقَامَ آخَرُ فَقَالَ: أَمِنْهُمْ أَنَا؟ قَالَ: «سَبَقَكَ بِهَا عُكَّاشَةُ».

‘ইমরান ইবন হুসাইন রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, বদ-নযর কিংবা বিষাক্ত দংশন ব্যতিরেকে অন্য কোনো ব্যাপারে ঝাড়ফুঁক নেই। বর্ণনাকারী বলেন, এরপর এ হাদীস আমি সাঈদ ইবন জুবাইর রাদিয়াল্লাহু আনহুর কাছে উল্লেখ করলে তিনি বললেন, আমাদের নিকট ইবন আববাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আমার সামনে সকল উম্মতকে পেশ করা হয়েছিল। (তখন আমি দেখেছি) দু’একজন নবী পথ অতিক্রম করতে লাগলেন এমতাবস্থায় যে, তাদের সঙ্গে রয়েছে লোক জনের ছোট ছোট দল। কোনো কোন নবী এমনও রয়েছেন যাঁর সঙ্গে একজনও নেই। অবশেষে আমার সামনে তুলে ধরা হল বিশাল সমাবেশ। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, এটা কি? এ কি আমার উম্মত? উত্তর দেওয়া হল, না, ইনি মূসা আলাইহিস সালামের সঙ্গে তাঁর কাওম। আমাকে বলা হল, আপনি উর্ধ্বাআকাশের দিকে তাকান। তখন দেখলাম, বিশাল একটি দল যা দিগমত্মকে ঢেকে রেখেছে। তারপর আমাকে বলা হল, আকাশের এদিক ওদিক দৃষ্টপাত করুন। তখন দেখলাম, বিশাল একটি দল, যা আকাশের দিগমত্মসমূহ ঢেকে দিয়েছে। তখন বলা হল, এরা হল আপনার উম্মত। আর তাদের মধ্যে থেকে সত্তর হাজার ব্যক্তি বিনা হিসাবে জান্নাতে প্রবেশ করবে। তারপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘরে চলে গেলেন। উপস্থিতদের কাছে কথাটির কোনো ব্যাখ্যা প্রদান করলেন না। (যে বিনা হিসাবের লোক কারা হবে?) ফলে উপস্থিত লোকদের মধ্যে তর্ক বিতর্ক শুরু হল। তারা বলল, আমরা আল্লাহর প্রত ঈমান এনেছি এবং তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অনুসরণ করে থাকি। সুতরাং আমরাই তাদের অমত্মর্ভুক্ত কিংবা তারা হল আমাদের সে সকল সমত্মান-সন্তুতি যারা ইসলামের জন্ম গ্রহণ করেছে। আর আমাদের জন্ম হয়েছে জাহেলী যুগে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে এ সংবাদ পৌছলে তিনি বেরিয়ে আসলেন এবং বললেন, তারা হলেন সে সব লোক যারা মন্ত্র পাঠ করে না, বদফালী গ্রহণ করে না এবং আগুনের সাহায্যে দাগ লাগায় না। বরং তারা তো তাদের রবের উপরই ভরসা করে থাকে। তখন উককাশা ইবন মিহশান রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ! তাদের মধ্যে কি আমি আছি? তিনি বললেন, হ্যাঁ। তখন আরেকজন দাঁড়িয়ে বলল, তাদের মধ্যে কি আমিও আছি? তিনি বললেন, উককাশা এ সুযোগ তোমার আগেই নিয়ে গেছে। [167]

عَنْ عَبْدِ الرَّحْمَنِ بْنِ الْأَخْنَسِ، أَنَّهُ كَانَ فِي الْمَسْجِدِ فَذَكَرَ رَجُلٌ عَلِيًّا عَلَيْهِ السَّلَام فَقَامَ سَعِيدُ بْنُ زَيْدٍ فَقَالَ: أَشْهَدُ عَلَى رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنِّي سَمِعْتُهُ وَهُوَ يَقُولُ: «عَشْرَةٌ فِي الْجَنَّةِ النَّبِيُّ فِي الْجَنَّةِ، وَأَبُو بَكْرٍ فِي الْجَنَّةِ، وَعُمَرُ فِي الْجَنَّةِ، وَعُثْمَانُ فِي الْجَنَّةِ، وَعَلِيٌّ فِي الْجَنَّةِ، وَطَلْحَةُ فِي الْجَنَّةِ، وَالزُّبَيْرُ بْنُ الْعَوَّامِ فِي الْجَنَّةِ، وَسَعْدُ بْنُ مَالِكٍ فِي الْجَنَّةِ، وَعَبْدُ الرَّحْمَنِ بْنُ عَوْفٍ فِي الْجَنَّةِ، وَلَوْ شِئْتُ لَسَمَّيْتُ الْعَاشِرَ» قَالَ: فَقَالُوا: مَنْ هُوَ؟ فَسَكَتَ. قَالَ: فَقَالُوا: مَنْ هُوَ؟ فَقَالَ: هُوَ «سَعِيدُ بْنُ زَيْدٍ».

আবদুর রহমান ইবন আখনাস রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা তিনি মসজিদে অবস্থানকালে এক ব্যক্তি আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু সম্পর্কে আলোচনা করলে, সাঈদ ইবন যায়দ রাদিয়াল্লাহু আনহু দাঁড়িয়ে বলেন, আমি এরূপ সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি যে, দশ ব্যক্তি বিনা হিসাবে বেহেশতে যাবে। তাঁরা হলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জান্নাতে যাবেন, আবূ বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু জান্নাতী, উমর রাদিয়াল্লাহু আনহু জান্নাতী, উসমান রাদিয়াল্লাহু আনহু জান্নাতী, আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু জান্নাতী, তালহা রাদিয়াল্লাহু আনহু জান্নাতী, যুবাইর ইবন ‘আওয়াম রাদিয়াল্লাহু আনহু জান্নাতী সা'আদ ইবন মালিক রাদিয়াল্লাহু আনহু জান্নাতী, আবদুর রহমান ইবন আওফ রাদিয়াল্লাহু আনহু জান্নাতী। তিনি বলেন, আমি ইচ্ছা করলে দশম ব্যক্তির নামও বলতে পারি। তখন লোকেরা তাকে জিজ্ঞাসা করলেন, সে লোকটি কে? তিনি কিছুক্ষণ চুপ থাকার পর বললেন, তিনি হলেন - সাঈদ ইবন যুবাইর রাদিয়াল্লাহু আনহু, অর্থাৎ তিনি নিজে। [168]

عَنْ عَائِشَةَ، رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا، قَالَتْ: «مَا غِرْتُ عَلَى امْرَأَةٍ لِلنَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، مَا غِرْتُ عَلَى خَدِيجَةَ، هَلَكَتْ قَبْلَ أَنْ يَتَزَوَّجَنِي، لِمَا كُنْتُ أَسْمَعُهُ يَذْكُرُهَا، وَأَمَرَهُ اللَّهُ أَنْ يُبَشِّرَهَا بِبَيْتٍ مِنْ قَصَبٍ، وَإِنْ كَانَ لَيَذْبَحُ الشَّاةَ فَيُهْدِي فِي خَلاَئِلِهَا مِنْهَا مَا يَسَعُهُنَّ».

‘আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কোনো সহধর্মিণীর প্রতি এতটুকু অভিমান প্রদর্শন করিনি; যতটুকু খাদীজা রাদিয়াল্লাহু আনহার প্রতি করেছি। কেননা, আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে তাঁর কথা বারবার আলোচনা করতে শুনেছি, অথচ আমাকে বিবাহ করার পূর্বেই তিনি ইন্তেকাল করেছিলেন। খাদীজা রাদিয়াল্লাহু আনহাকে জান্নাতে মণি-মুক্তা খচিত একটি প্রাসাদের সু-সংবাদ দেওয়ার জন্য আল্লাহ তা‘আলা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আদেশ করেন। কোনো দিন বকরী যবেহ হলে খাদীজা রাদিয়াল্লাহু আনহার বান্ধবীদের নিকট তাদের প্রত্যেকের আবশ্যক পরিমাণ গোস্ত নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাদীয়া স্বরূপ পাঠিয়ে দিতেন। [169]

عَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا، قَالَتْ: «مَا غِرْتُ عَلَى امْرَأَةٍ مَا غِرْتُ عَلَى خَدِيجَةَ مِنْ كَثْرَةِ ذِكْرِ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِيَّاهَا»، قَالَتْ: «وَتَزَوَّجَنِي بَعْدَهَا بِثَلاَثِ سِنِينَ، وَأَمَرَهُ رَبُّهُ عَزَّ وَجَلَّ أَوْ جِبْرِيلُ عَلَيْهِ السَّلاَمُ أَنْ يُبَشِّرَهَا بِبَيْتٍ فِي الجَنَّةِ مِنْ قَصَبٍ».

‘আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অন্য কোনো সহধর্মিণীর প্র্রতি এতটুকু ঈর্ষা প্রকাশ করিনি, যতটুকু খাদীজা রাদিয়াল্লাহু আনহার প্রতি করেছি। যেহেতু নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর আলোচনা অধিক করতেন। তিনি (আরো) বলেন, খাদীজা রাদিয়াল্লাহু আনহার (ইন্তেকালের) তিন বছর পর তিনি আমাকে বিবাহ করেন। আল্লাহ স্বয়ং অথবা জিবরীল আলাইহিস সালাম নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আদেশ করলেন যে, খাদীজা রাদিয়াল্লাহু আনহাকে জান্নাতে মণি-মুক্তা খচিত একটি প্রাসাদের সু-সংবাদ দিন। [170]

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، قَالَ: " أَتَى جِبْرِيلُ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَقَالَ: يَا رَسُولَ اللَّهِ: هَذِهِ خَدِيجَةُ قَدْ أَتَتْ مَعَهَا إِنَاءٌ فِيهِ إِدَامٌ، أَوْ طَعَامٌ أَوْ شَرَابٌ، فَإِذَا هِيَ أَتَتْكَ فَاقْرَأْ عَلَيْهَا السَّلاَمَ مِنْ رَبِّهَا وَمِنِّي وَبَشِّرْهَا بِبَيْتٍ فِي الجَنَّةِ مِنْ قَصَبٍ لاَ صَخَبَ فِيهِ، وَلاَ نَصَبَ ".

আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন যে, জিবরীল আলাইহিস সালাম নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের খেদমতে হাযির হয়ে বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! ঐ যে খাদীজা রাদিয়াল্লাহু আনহা একটি পাত্র হাতে নিয়ে আসছেন। ঐ পাত্রে তরকারী, অথবা খাবার দ্রব্য অথবা পানীয় ছিল। যখন তিনি পৌছে যাবেন তখন তাঁকে তাঁর রবের পক্ষ থেকে এবং আমার পক্ষ থেকেও সালাম জানাবেন আর তাঁকে জান্নাতের এমন একটি সুরম্য প্রাসারেদ সু-সংবাদ দিবেন যার ভিতরদেশ ফাঁকা-মুতি দ্বারা তৈরী করা হয়েছে। সেখানে থাকবে না কোনো প্রকার হট্টগোল, না কোনো প্রকার ক্লেশ ও ক্লান্তি। [171]

 

 

ত্রয়োদশ পরিচ্ছেদ

খাতামুন নুবুওয়াহ তথা নবুওয়তের সীলমোহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নবুওয়তের প্রমাণ

عَنِ السَّائِب بْن يَزِيد، قَالَ: ذَهَبَتْ بِي خَالَتِي إِلَى رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَقَالَتْ: يَا رَسُولَ اللَّهِ، إِنَّ ابْنَ أُخْتِي وَقَعَ فَمَسَحَ رَأْسِي وَدَعَا لِي بِالْبَرَكَةِ، وَتَوَضَّأَ فَشَرِبْتُ مِنْ وَضُوئِهِ، ثُمَّ قُمْتُ خَلْفَ ظَهْرِهِ، «فَنَظَرْتُ إِلَى خَاتِمٍ بَيْنَ كَتِفَيْهِ»، قَالَ: ابْنُ عُبَيْدِ اللَّهِ «الحُجْلَةُ مِنْ حُجَلِ الفَرَسِ الَّذِي بَيْنَ عَيْنَيْهِ»، قَالَ: إِبْرَاهِيمُ بْنُ حَمْزَةَ: مِثْلَ زِرِّ الحَجَلَةِ ".

সাইব ইবন ইয়াযীদ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমার খালা (একদিন) আমাকে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দরবারে নিয়ে গেলেন এবং বললেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ্, আমার ভাগিনা পীড়িত ও রোগাক্রান্ত। (আপনি তার জন্য আল্লাহর দরবারে দো‘আ করুন!) তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার মাথায় হাত বুলালেন এবং আমার জন্য বরকতের দো‘আ করলেন। তিনি অযু করলেন, তাঁর অযুর অবশিষ্ট পানি আমি পান করলাম। এরপর আমি তাঁর পিছন দিকে গিয়ে দাঁড়ালাম, তাঁর কাঁধের মধ্যবর্তী স্থানে "মোহরে নবুওয়্যাত" দেখলাম যা কবুতরের ডিমের ন্যায় অথবা বাসর ঘরের পর্দার বুতামের মত। ইবন উবায়দুল্লাহ বলেন, এর অর্থ অর্থ সাদা চিহ্ন, যা ঘোড়ার কপালের সাদা অংশ এর অর্থ থেকে গৃহীত। আর ইব্রাহীম ইবন হামযা বলেন, কবুতরের ডিমের মত। [172]

عَنْ أُمِّ خَالِدٍ بِنْتِ خَالِدِ بْنِ سَعِيدٍ، قَالَتْ: أَتَيْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَعَ أَبِي وَعَلَيَّ قَمِيصٌ أَصْفَرُ، قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «سَنَهْ سَنَهْ» - قَالَ عَبْدُ اللَّهِ: وَهِيَ بِالحَبَشِيَّةِ حَسَنَةٌ -، قَالَتْ: فَذَهَبْتُ أَلْعَبُ بِخَاتَمِ النُّبُوَّةِ، فَزَبَرَنِي أَبِي، قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «دَعْهَا»، ثُمَّ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «أَبْلِي وَأَخْلِفِي ثُمَّ، أَبْلِي وَأَخْلِفِي، ثُمَّ أَبْلِي وَأَخْلِفِي» قَالَ عَبْدُ اللَّهِ: فَبَقِيَتْ حَتَّى ذَكَرَ.

উম্মে খালিদ বিনতে খালিদ ইবন সাঈদ রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি আমার পিতার সঙ্গে হলুদ বর্ণের জামা পরে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে আসলাম। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, সান্না-সান্না। (রাবী) আব্দুল্লাহ রহ. বলেন, হাবশী ভাষায় তা সুন্দর অর্থে ব্যবহৃত। উম্মে খালিদ রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেন, এরপর আমি তাঁর মহরে নব্যুতের স্থান নিয়ে কৌতুক করতে লাগলাম। আমার পিতা আমাকে ধমক দিলেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ছোট মেয়ে তাকে করতে দাও।’ এরপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বললেন, এ কাপড় পরিধান কর আর পুরানো কর, আবার পরিধান কর, পুরানো কর, পুরানো কর, আবার পরিধান কর, পুরানো কর। (অর্থাৎ দীর্ঘ দিন পরিধান কর)। আব্দুল্লাহ (ইবন মুবারক) রহ. বলেন, উম্মে খালিদ রাদিয়াল্লাহু আনহা এতদিন জীবিত থাকেন যে, তাঁর আলোচনা চলতে থাকে। [173]

عَنْ سِمَاكٍ، أَنَّهُ سَمِعَ جَابِرَ بْنَ سَمُرَةَ، يَقُولُ: " كَانَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَدْ شَمِطَ مُقَدَّمُ رَأْسِهِ وَلِحْيَتِهِ، وَكَانَ إِذَا ادَّهَنَ لَمْ يَتَبَيَّنْ، وَإِذَا شَعِثَ رَأْسُهُ تَبَيَّنَ، وَكَانَ كَثِيرَ شَعْرِ اللِّحْيَةِ، فَقَالَ: رَجُلٌ وَجْهُهُ مِثْلُ السَّيْفِ؟ قَالَ: لَا، بَلْ كَانَ مِثْلَ الشَّمْسِ وَالْقَمَرِ، وَكَانَ مُسْتَدِيرًا وَرَأَيْتُ الْخَاتَمَ عِنْدَ كَتِفِهِ مِثْلَ بَيْضَةِ الْحَمَامَةِ يُشْبِهُ جَسَدَهُ ".

জাবির ইবন সামূরা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের চুল এবং দাঁড়ির সম্মুখভাগ সাদা হয়ে গিয়েছিল। যখন তিনি তেল দিতেন, তখন দেখা যেত না, আর যখন চুল এলোমেলো হতো, তখন (শুভ্রতা) দেখা যেতো। তাঁর চুল খুব ঘন ছিল। এক ব্যক্তি বললো, তাঁর চেহারা মুবারক ছিল তলোয়ারের মত। জাবির রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, না, তার চেহারা মুবারক ছিল সূর্য ও চন্দ্রের মত (উজ্জ্বল) গোলাকার। তাঁর কাঁধের উপর আমি কবুতরের ডিমের মত নবুওয়তের মোহর দেখেছি। এটির রং ছিল তাঁর শরীরের রংয়ের সদৃশ। [174]

عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ سَرْجِسَ، قَالَ: رَأَيْتُ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَأَكَلْتُ مَعَهُ خُبْزًا وَلَحْمًا، أَوْ قَالَ ثَرِيدًا، قَالَ فَقُلْتُ لَهُ: أَسْتَغْفَرَ لَكَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ؟ قَالَ: نَعَمْ، وَلَكَ، ثُمَّ تَلَا هَذِهِ الْآيَةَ {وَاسْتَغْفِرْ لِذَنْبِكَ وَلِلْمُؤْمِنِينَ وَالْمُؤْمِنَاتِ} [محمد: 19] قَالَ: ثُمَّ دُرْتُ خَلْفَهُ «فَنَظَرْتُ إِلَى خَاتَمِ النُّبُوَّةِ بَيْنَ كَتِفَيْهِ. عِنْدَ نَاغِضِ كَتِفِهِ الْيُسْرَى. جُمْعًا عَلَيْهِ خِيلَانٌ كَأَمْثَالِ الثَّآلِيلِ».

আব্দুল্লাহ ইবন সারজিস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে দেখেছি এবং তাঁর সঙ্গে গোশত ও কটি খেয়েছি অথবা বলেছেন সারীদ- (খেয়েছি) । তিনি বলেন যে, আমি তাঁকে বললাম, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কি আপনার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন? তিনি বললেন, হ্যাঁ। তোমার জন্যও। পরে এ আয়াতটি পাঠ করলেন, “ক্ষমা প্রার্থনা কর তোমার পাপের জন্য এবং মুমিন পুরুষ ও মুমিন নারীদের জন্য” [সূরা মুহাম্মদ : ৯]। আব্দুল্লাহ বলেন, তারপর আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পিছনে গেলাম আর মোহরে নবুওয়ত দেখলাম, দু-কাঁধের মাঝে বামপাশের বালুর হাড়ের কাছে অংগুলির মতো, যাতে তিলক ছিল। [175]

عَنْ أَبي زَيْدٍ، قَالَ: قَالَ لِي رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: " اقْتَرِبْ مِنِّي "، فَاقْتَرَبْتُ مِنْهُ، فَقَالَ: " أَدْخِلْ يَدَكَ فَامْسَحْ ظَهْرِي "، قَالَ: فَأَدْخَلْتُ يَدِي فِي قَمِيصِهِ، فَمَسَحْتُ ظَهْرَهُ، فَوَقَعَ خَاتَمُ النُّبُوَّةِ بَيْنَ إِصْبَعَيَّ، قَالَ: فَسُئِلَ عَنْ خَاتَمِ النُّبُوَّةِ، فَقَالَ: " شَعَرَاتٌ بَيْنَ كَتِفَيْهِ ".

আবু যায়িদ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়সাল্লাম আমাকে বললেন, আমার নিকটবর্তী হও। তাই আমি তাঁর নিকটবর্তী হলাম। তিনি বললেন, তুমি তোমার হাত আমার পিঠের ভিতর দাও এবং পিঠ মুছে দাও। তিনি বলেন, আমি আমার হাত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়সাল্লামের জামার ভিরত ঢুকালাম এবং পিঠ মুছে দিলাম, তখন ‘খাতিমুন নুবুওয়াহ’ আমার আঙ্গুলে লাগল। তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়সাল্লাম খাতিমুন নুবুওয়াহ সম্পর্কে আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, আমি বললাম, আপনার দু’ কাঁধের মাঝে তা আমি অনুভব করেছি। [176]

 

 

চতুর্দশ পরিচ্ছেদ

জাহেলী যুগের নানা অন্যায় কাজ থেকে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পুতঃপবিত্র ছিলেন।

عَنْ جَابِر بْن عَبْدِ اللَّهِ، يُحَدِّثُ «أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ يَنْقُلُ مَعَهُمُ الحِجَارَةَ لِلْكَعْبَةِ وَعَلَيْهِ إِزَارُهُ»، فَقَالَ لَهُ العَبَّاسُ عَمُّهُ: يَا ابْنَ أَخِي، لَوْ حَلَلْتَ إِزَارَكَ فَجَعَلْتَ عَلَى مَنْكِبَيْكَ دُونَ الحِجَارَةِ، قَالَ: «فَحَلَّهُ فَجَعَلَهُ عَلَى مَنْكِبَيْهِ، فَسَقَطَ مَغْشِيًّا عَلَيْهِ، فَمَا رُئِيَ بَعْدَ ذَلِكَ عُرْيَانًا صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ».

জাবির ইবন ‘আবদুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়সাল্লাম (নবুওয়াতের পূর্বে) কুরাইশদের সাথে কা’বার (মেরামতের) জন্য পাথর তুলে দিচ্ছিলেন। তাঁর পরনে ছিল লুঙ্গী। তাঁর চাচা ‘আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু তাঁকে বললেন; ভাতিজা! তুমি লুঙ্গী খুলে কাঁধে পাথরের নীচে রাখলে ভাল হ’ত। জাবির রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, তিনি লুঙ্গী খুলে কাঁধে রাখলেন এবং তৎক্ষণাত বেহুশ হয়ে পরলেন। এরপর তাঁকে আর কখনও বিবস্ত্র অবস্থাই দেখা যায়নি। [177]

عَنْ زَيْدِ بْنِ حَارِثَةَ، قَالَ: كَانَ صَنَمٌ مِنْ نُحَاسٍ يُقَالُ لَهُ: إِسَافٌ، أَوْ نَائِلَةُ، يَتَمَسَّحُ بِهِ الْمُشْرِكُونَ إِذَا طَافُوا. فَطَافَ رسول الله، صلى الله عليه وآله وَسَلَّمَ، فَطُفْتُ مَعَهُ، فَلَمَّا مَرَرْتُ مَسَحْتُ بِهِ، فَقَالَ رَسُولُ اللهِ، صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وآله وَسَلَّمَ: لَا تَمَسَّهُ! فَقَالَ زَيْدٌ: فَطُفْتُ فَقُلْتُ فِي نَفْسِي لَأَمَسَّنَّهُ حَتَّى أَنْظُرَ مَا يَكُونُ، فَمَسَحْتُهُ، فَقَالَ رَسُولُ اللهِ، صَلَّى الله عليه وآله وَسَلَّمَ، أَلَمْ تُنْهَ؟ قُلْتُ: زَادَ فِيهِ غَيْرُهُ عَنْ مُحَمَّدِ بْنِ عَمْرٍو بِإِسْنَادِهِ: قال زيد: فو الذي هُوَ أَكْرَمَهُ وَأَنْزَلَ عَلَيْهِ الْكِتَابَ مَا اسْتَلَمَ صَنَمًا حَتَّى أَكْرَمَهُ اللهُ بِالَّذِي أكرمه وأنزل عليه.

যায়েদ ইবন হারিসাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, কা’বা ঘরে ‘ইসাফ’ বা ‘নায়েলা’ মূর্তি ছিল। মুশরিকরা তাওয়াফের সময় তা স্পর্শ করত ও চুমো খেত। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কা’বা তাওয়াফ করলেন, আমিও তাঁর সাথে তাওয়াফ করলাম। আমি যখন উক্ত মূর্তির কাছ দিয়ে যেতাম তখন তা স্পর্শ করতাম। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বললেন, এটা স্পর্শ কর না। যায়েদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, আমি যখন তাওয়াফ করছিলাম তখন মনে মনে ভাবলাম, আমি মূর্তিটি স্পর্শ করব, দেখব রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কি বলেন। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমাকে মূর্তি স্পর্শ করতে নিষেধ করা হয়নি? মুহাম্মদ ইবন আমরের সনদে অন্যান্যরা আরো বলেছেন, যায়েদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, সেই সত্বার কসম, যিনি তাকে সম্মানিত করেছেন ও তাঁর উপর কিতাব নাযিল করেছেন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আল্লাহ সম্মানিত ও কুরআন নাযিলের পূররে তিনি কখনও মূর্তি স্পর্শ করেননি। [178]

 

 

পঞ্চদশ পরিচ্ছেদ

চাঁদ দ্বিখন্ডিত হওয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নবুওয়তের প্রমাণ

عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ مَسْعُودٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، قَالَ: انْشَقَّ القَمَرُ عَلَى عَهْدِ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ شِقَّتَيْنِ، فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «اشْهَدُوا».

আবদুল্লাহ ইবন মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যুগে চাঁদ দ্বিখণ্ডিত হয়েছিল। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমরা সাক্ষী থাক। [179]

عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، أَنَّهُ حَدَّثَهُمْ: أَنَّ أَهْلَ مَكَّةَ سَأَلُوا رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنْ يُرِيَهُمْ آيَةً «فَأَرَاهُمُ انْشِقَاقَ القَمَرِ».

আনাস ইবন মালিক রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত যে, মক্কাবাসী কাফিররা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট মু‘জিযা দেখানোর জন্য দাবী জানালেন তিনি তাদেরকে চাঁদ দ্বিখণ্ডিত করে দেখালেন। [180]

عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا، «أَنَّ القَمَرَ انْشَقَّ فِي زَمَانِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ».

ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যামানায় চাঁদ দ্বিখণ্ডিত হয়েছিল। [181]

 

 

ষোড়শ পরিচ্ছেদ

আল্লাহ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সব বিপাদাপদ থেকে রক্ষা করেছেন।

আল্লাহ বলেছেন, 

﴿ وَٱللَّهُ يَعۡصِمُكَ مِنَ ٱلنَّاسِۗ ﴾ [المائ‍دة: ٦٧]

আর আল্লাহ তোমাকে মানুষ থেকে রক্ষা করবেন। [সূরা মায়েদা: ৬৭]

عَنْ عَائِشَةَ، رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا قَالَتْ: سَحَرَ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ رَجُلٌ مِنْ بَنِي زُرَيْقٍ، يُقَالُ لَهُ لَبِيدُ بْنُ الأَعْصَمِ، حَتَّى كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُخَيَّلُ إِلَيْهِ أَنَّهُ كَانَ يَفْعَلُ الشَّيْءَ وَمَا فَعَلَهُ، حَتَّى إِذَا كَانَ ذَاتَ يَوْمٍ أَوْ ذَاتَ لَيْلَةٍ وَهُوَ عِنْدِي، لَكِنَّهُ دَعَا وَدَعَا، ثُمَّ قَالَ: " يَا عَائِشَةُ، أَشَعَرْتِ أَنَّ اللَّهَ أَفْتَانِي فِيمَا اسْتَفْتَيْتُهُ فِيهِ، أَتَانِي رَجُلاَنِ، فَقَعَدَ أَحَدُهُمَا عِنْدَ رَأْسِي، وَالآخَرُ عِنْدَ رِجْلَيَّ، فَقَالَ أَحَدُهُمَا لِصَاحِبِهِ: مَا وَجَعُ الرَّجُلِ؟ فَقَالَ: مَطْبُوبٌ، قَالَ: مَنْ طَبَّهُ؟ قَالَ: لَبِيدُ بْنُ الأَعْصَمِ، قَالَ: فِي أَيِّ شَيْءٍ؟ قَالَ: فِي مُشْطٍ وَمُشَاطَةٍ، وَجُفِّ طَلْعِ نَخْلَةٍ ذَكَرٍ. قَالَ: وَأَيْنَ هُوَ؟ قَالَ: فِي بِئْرِ ذَرْوَانَ " فَأَتَاهَا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي نَاسٍ مِنْ أَصْحَابِهِ، فَجَاءَ فَقَالَ: «يَا عَائِشَةُ، كَأَنَّ مَاءَهَا نُقَاعَةُ الحِنَّاءِ، أَوْ كَأَنَّ رُءُوسَ نَخْلِهَا رُءُوسُ الشَّيَاطِينِ» قُلْتُ: يَا رَسُولَ اللَّهِ: أَفَلاَ اسْتَخْرَجْتَهُ؟ قَالَ: «قَدْ عَافَانِي اللَّهُ، فَكَرِهْتُ أَنْ أُثَوِّرَ عَلَى النَّاسِ فِيهِ شَرًّا» فَأَمَرَ بِهَا فَدُفِنَتْ تَابَعَهُ أَبُو أُسَامَةَ، وَأَبُو ضَمْرَةَ، وَابْنُ أَبِي الزِّنَادِ، عَنْ هِشَامٍ، وَقَالَ: اللَّيْثُ، وَابْنُ عُيَيْنَةَ، عَنْ هِشَامٍ: «فِي مُشْطٍ وَمُشَاقَةٍ» يُقَالُ: المُشَاطَةُ: مَا يَخْرُجُ مِنَ الشَّعَرِ إِذَا مُشِطَ، وَالمُشَاقَةُ: مِنْ مُشَاقَةِ الكَتَّانِ.

‘আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, যুরাইক গোত্রের লাবীদ ইবন আ‘সাম নামক এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জাদু করে।। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের খেয়াল হতো তিনি একটি কাজ করছেন, অথচ তা তিনি করেন নি। একদিন বা এক রাত্রি তিনি আমার কাছে ছিলেন। তিনি বার বার দো‘আ করতে থাকেন। তারপর তিনি বলেন, হে ‘আয়েশা! তুমি কি উপলব্ধি করতে পেরেছ যে, আমি আল্লাহর কাছে যা জানতে চেয়েছিলাম, তিনি আমাকে তা জানিয়ে দিয়েছেন। (স্বপ্নে দেখি) আমার নিকট দু’জন লোক আসেন। তাদের একজন আমার মাথার কাছে এবং অপরজন দু’পায়ের কাছে বসেন। একজন তাঁর সঙ্গীকে বলেন, এ লোকটির কি ব্যথা (অসুখ)? তিনি বলেন, জাদু করা হয়েছে। প্রথম জন বলল, কে জাদু করেছে? দ্বিতীয় জন বলেন, লাবীদ ইন ‘আসাম। প্রথম জন জিজ্ঞাসা করেন, কিসের মধ্যে? দ্বিতীয়জন উত্তর দেন, চিরুনী, মাথা আচড়ানোর সময় উঠা চুল এবং এক পুং খেজুর গাছের ‘জুব’-এর মধ্যে। প্রথম জন বলেন, তা কোথায়? দ্বিতীয় জন বলেন, ‘যারওয়ান’ নামক কুপের মধ্যে। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কয়েকজন সাহাবী সঙ্গে নিয়ে তথায় যান। পরে ফিরে এসে বলেন, হে আয়েশা! সে কুপের পানি মেহেদী পানির মত (লাল) এবং তার পাড়ের খেজুর গাছের মাথাগুলো শয়তানের মাথার মত। আমি বললাম, ইয়া রাসূলুল্লাহ! আপনি কি এ কথা প্রকাশ করে দিবেন না? তিনি বললেন, আল্লাহ আমাকে আরোগ্য দান করেছেন, আমি মানুষকে এমন ব্যাপারে প্ররোচিত করতে পছন্দ করি না, যাতে অকল্যাণ রয়েছে। তারপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নির্দেশ দিলে সেগুলো মাটিতে পুঁতে ফেলা হয়। আবূ উসামা, আবূ দামরা, ও ইবন আবূ যিনাদ (রহ.) হিশাম থেকে অনুরূপ বর্ণনা করেছেন। লাইস ও ইবন উয়াইনা (রহ.) হিশাম থেকে বর্ণনা করেছেন, চিরুনী ও কাতানের টুকরায়। আবূ ‘আবদুল্লাহ (রহ.) বলেন, ‘আল-মুশাতা’ হল চিরুণী করার পর যে চুল বের হয়। ‘মুশাকা’ হল কাত্তান। [182]

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، أَنَّهُ قَالَ: لَمَّا فُتِحَتْ خَيْبَرُ، أُهْدِيَتْ لِرَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ شَاةٌ فِيهَا سَمٌّ، فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «اجْمَعُوا لِي مَنْ كَانَ هَا هُنَا مِنَ اليَهُودِ» فَجُمِعُوا لَهُ، فَقَالَ لَهُمْ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِنِّي سَائِلُكُمْ عَنْ شَيْءٍ، فَهَلْ أَنْتُمْ صَادِقِيَّ عَنْهُ». فَقَالُوا: نَعَمْ يَا أَبَا القَاسِمِ، فَقَالَ لَهُمْ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَنْ أَبُوكُمْ» قَالُوا: أَبُونَا فُلاَنٌ، فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «كَذَبْتُمْ، بَلْ أَبُوكُمْ فُلاَنٌ» فَقَالُوا: صَدَقْتَ وَبَرِرْتَ، فَقَالَ: «هَلْ أَنْتُمْ صَادِقِيَّ عَنْ شَيْءٍ إِنْ سَأَلْتُكُمْ عَنْهُ» فَقَالُوا: نَعَمْ يَا أَبَا القَاسِمِ، وَإِنْ كَذَبْنَاكَ عَرَفْتَ كَذِبَنَا كَمَا عَرَفْتَهُ فِي أَبِينَا، قَالَ لَهُمْ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَنْ أَهْلُ النَّارِ» فَقَالُوا: نَكُونُ فِيهَا يَسِيرًا، ثُمَّ تَخْلُفُونَنَا فِيهَا، فَقَالَ لَهُمْ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «اخْسَئُوا فِيهَا، وَاللَّهِ لاَ نَخْلُفُكُمْ فِيهَا أَبَدًا». ثُمَّ قَالَ لَهُمْ: «فَهَلْ أَنْتُمْ صَادِقِيَّ عَنْ شَيْءٍ إِنْ سَأَلْتُكُمْ عَنْهُ» قَالُوا: نَعَمْ، فَقَالَ: «هَلْ جَعَلْتُمْ فِي هَذِهِ الشَّاةِ سَمًّا؟» فَقَالُوا: نَعَمْ، فَقَالَ: «مَا حَمَلَكُمْ عَلَى ذَلِكَ» فَقَالُوا: أَرَدْنَا: إِنْ كُنْتَ كَذَّابًا نَسْتَرِيحُ مِنْكَ، وَإِنْ كُنْتَ نَبِيًّا لَمْ يَضُرَّكَ.

আবূ হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, খাইবার যখন বিজয় হয়, তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট হাদীয়া স্বরূপ একটি (ভুনা) বকরী প্রেরিত হয়। এর মধ্যে ছিল বিষ। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এখানে যত ইয়াহূদী আছে আমার কাছে তাদের জমায়েত করো। তাঁর কাছে সবাইকে জমায়েত করা হল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের সম্বোধন করে বললেন, আমি তোমাদের নিকট একটি বিষয়ে জানতে চাই, তোমরা কি সে বিষয়ে আমাকে সত্য কথা বলবে? তারা বলল, হ্যাঁ, হে আবুল কাসিম। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমাদের পিতা কে? তারা বলল, আমাদের পিতা অমুক। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমরা মিথ্যে বলেছ বরং তোমাদের পিতা অমুক। তারা বলল, আপনি সত্য বলেছেন ও সঠিক বলেছেন। এরপর তিনি বলেছেন, আমি যদি তোমাদের নিকট আর একটি প্রশ্ন করি, তাহলে কি তোমরা সে ব্যাপারে আমাকে সত্য কথা বলবে? তারা বলল, হ্যাঁ, হে আবুল কাসিম যদি আমরা মিথ্যে বলি তবে আপনি আমাদের মিথ্যে জেনে ফেলবেন, যেমনিভাবে জেনেছেন আমাদের পিতার ব্যাপারে। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের বললেন, জাহান্নামী কারা? তারা বলল, আমরা সেখাসে অল্প দিনের জন্য থাকবো। তারপর আপনারা আমাদের স্থলাবিষিক্ত হবেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমরাই সেখানে লাঞ্চিত হয়ে থাকো। আল্লাহর কসম! আমরা কখনোই সেখানে স্থলাবিষিক্ত হবো না। এরপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের বললেন, আমি যদি তোমাদের কাছে আর একটি বিষয়ে প্রশ্ন করি, তবে কি তোমরা সে ব্যাপারে আমার কাছে সত্য কথা বরবে? তারা বলল, হ্যাঁ। তখন তিনি বললেন, তোমরা কি এ বকরীর মধ্যে বিষ মিশ্রিত করেছ। তারা বলল, হ্যাঁ। তিনি বললেন, কিসে তোমাদের এ কাজে উদ্ধুদ্ধ করেছে? তারা বললো, আমরা চেয়েচি, যদি আপনি (নবুওয়তের দাবীতে) মিথ্যাবাদী হন, তবে আমরা আপনার থেকে মুক্তি পেয়ে যাব। আর যদি আপনি (সত্য) নবী হন, তবে এ বিষ আপনার কোনো ক্ষতি করবে না। [183]

عَنِ جَابِر بْن عَبْدِ اللَّهِ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا،أَنَّهُ غَزَا مَعَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قِبَلَ نَجْدٍ، فَلَمَّا قَفَلَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَفَلَ مَعَهُ، فَأَدْرَكَتْهُمُ القَائِلَةُ فِي وَادٍ كَثِيرِ العِضَاهِ، فَنَزَلَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَتَفَرَّقَ النَّاسُ يَسْتَظِلُّونَ بِالشَّجَرِ، فَنَزَلَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ تَحْتَ سَمُرَةٍ وَعَلَّقَ بِهَا سَيْفَهُ، وَنِمْنَا نَوْمَةً، فَإِذَا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَدْعُونَا، وَإِذَا عِنْدَهُ أَعْرَابِيٌّ، فَقَالَ: " إِنَّ هَذَا اخْتَرَطَ عَلَيَّ سَيْفِي، وَأَنَا نَائِمٌ، فَاسْتَيْقَظْتُ وَهُوَ فِي يَدِهِ صَلْتًا، فَقَالَ: مَنْ يَمْنَعُكَ مِنِّي؟ فَقُلْتُ: اللَّهُ، - ثَلاَثًا - " وَلَمْ يُعَاقِبْهُ وَجَلَسَ.

জাবির ইবন আবদুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত আছে যে, তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সঙ্গে নাজদের দিকে কোনো এক যুদ্ধে বের হয়েছিলেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রত্যাবর্তন করলে তিনিও তাঁর সঙ্গে প্রত্যাবর্তন করেন। তারা যখন কন্টকাকীর্ণ বৃক্ষরাজীতে ঢাকা এক উপত্যকায় উপস্থিত হলেন তখন তাঁদের দিবা বিশ্রামের সময় এলো। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেখানে অবতরণ করেন। লোকেরা ছায়ার আশ্রয়ে বিক্ষিপ্ত হয়ে পড়ল। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটি বাবলা গাছের নীচে অবতরণ করলেন এবং তাতে তাঁর তরবারী ঝুলিয়ে রাখলেন। তারপর আমরা সকলেই ঘুমিয়ে পড়লাম। হঠাৎ এক সময় রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের ডাকতে লাগলেন। দেখলাম তাঁর পার্শ্বে একজন গ্রাম্য আরব। তিনি বললেন, আমার নিদ্রাবস্থায় এই ব্যক্তি আমারই তরবারী আমারই উপর বের করে ধরেছে। জেগে উঠে দেখতে পেলাম যে, তার হাতে খোলা তরবারী। সে বলল, আমার থেকে তোমাকে কে রক্ষা করবে, আমি বললাম, আল্লাহ! আল্লাহ! তিনবার। এবং তার উপর তিনি কোনো প্রতিশোধ নেননি, অথচ সে সেখানে বসে আছে। [184]

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ: قَالَ أَبُو جَهْلٍ: هَلْ يُعَفِّرُ مُحَمَّدٌ وَجْهَهُ بَيْنَ أَظْهُرِكُمْ؟ قَالَ فَقِيلَ: نَعَمْ، فَقَالَ: وَاللَّاتِ وَالْعُزَّى لَئِنْ رَأَيْتُهُ يَفْعَلُ ذَلِكَ لَأَطَأَنَّ عَلَى رَقَبَتِهِ، أَوْ لَأُعَفِّرَنَّ وَجْهَهُ فِي التُّرَابِ، قَالَ: فَأَتَى رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَهُوَ يُصَلِّي، زَعَمَ لِيَطَأَ عَلَى رَقَبَتِهِ، قَالَ: فَمَا فَجِئَهُمْ مِنْهُ إِلَّا وَهُوَ يَنْكُصُ عَلَى عَقِبَيْهِ وَيَتَّقِي بِيَدَيْهِ، قَالَ: فَقِيلَ لَهُ: مَا لَكَ؟ فَقَالَ: إِنَّ بَيْنِي وَبَيْنَهُ لَخَنْدَقًا مِنْ نَارٍ وَهَوْلًا وَأَجْنِحَةً، فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «لَوْ دَنَا مِنِّي لَاخْتَطَفَتْهُ الْمَلَائِكَةُ عُضْوًا عُضْوًا» قَالَ: فَأَنْزَلَ اللهُ عَزَّ وَجَلَّ - لَا نَدْرِي فِي حَدِيثِ أَبِي هُرَيْرَةَ، أَوْ شَيْءٌ بَلَغَهُ -: ﴿ كَلَّآ إِنَّ ٱلۡإِنسَٰنَ لَيَطۡغَىٰٓ ٦ أَن رَّءَاهُ ٱسۡتَغۡنَىٰٓ ٧ إِنَّ إِلَىٰ رَبِّكَ ٱلرُّجۡعَىٰٓ ٨ أَرَءَيۡتَ ٱلَّذِي يَنۡهَىٰ ٩ عَبۡدًا إِذَا صَلَّىٰٓ ١٠ أَرَءَيۡتَ إِن كَانَ عَلَى ٱلۡهُدَىٰٓ ١١ أَوۡ أَمَرَ بِٱلتَّقۡوَىٰٓ ١٢ أَرَءَيۡتَ إِن كَذَّبَ وَتَوَلَّىٰٓ ١٣ ﴾ [العلق: ٦، ١٣] يَعْنِي أَبَا جَهْلٍ - ﴿ أَلَمۡ يَعۡلَم بِأَنَّ ٱللَّهَ يَرَىٰ ١٤ كَلَّا لَئِن لَّمۡ يَنتَهِ لَنَسۡفَعَۢا بِٱلنَّاصِيَةِ ١٥ نَاصِيَةٖ كَٰذِبَةٍ خَاطِئَةٖ ١٦ فَلۡيَدۡعُ نَادِيَهُۥ ١٧ سَنَدۡعُ ٱلزَّبَانِيَةَ ١٨ كَلَّا لَا تُطِعۡهُ ١٩ ﴾ [العلق: ١٤، ١٩] ، زَادَ عُبَيْدُ اللهِ فِي حَدِيثِهِ قَالَ: وَأَمَرَهُ بِمَا أَمَرَهُ بِهِ. وَزَادَ ابْنُ عَبْدِ الْأَعْلَى {فَلْيَدْعُ نَادِيَهُ} [العلق: 17]، يَعْنِي قَوْمَهُ.

আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আবু জাহল বলেছিল, মুহাম্মাদ কি তার মুখমন্ডল যমীনের উপর রাখছে? লোকেরা বলল, হ্যাঁ, রাখছে। তখন সে বলল, আমি লাত এবং উযযার কসম করে বলছি, আমি যদি তাকে এমন করতে দেখি তবে অবশ্যই আমি তার ঘাড় পদদলিত করবো। অথবা তার মুখমন্ডল আমি মাটিতে মেখে দিব। (নাউযু বিল্লাহ)...... অতঃপর একদা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাত আদায়ে মগ্ন ছিলেন। এমতাবস্থায় আবু জাহল রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ঘাড়কে পদদলিত করার লক্ষ্যে তার নিকট আসল। হঠাৎ করে লোকেরা দেখতে পেল যে, সে একা একা-স্বীয় হস্তদ্বয়ের দ্বারা কোনো কিছুকে প্রতিহত করা অবস্থায় পা পা করে পেছনের দিকে সরে আসছে। এ দেখে তাকে জিজ্ঞেস করা হল, তোমার কি হায়ছে? উত্তরে সে বলল, আমি দেখেছি যে, আমার এবং তাঁর মাঝে আশুণের একটি প্রকান্ড খাদক, ভয়াবহ অবস্থা এবং কতগুলো ডানা। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, সে যদি আমার নিকটে আসতো, তবে ফিরিশতাগণ তার অঙ্গ প্রত্যঙ্গ টুকরা টুকরা করে ছিঁড়ে নিয়ে যেতো। অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা নাযিল করলেন, (বর্ণনাকারী বলেন, আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহুর হাদীসের মধ্যে এ কথাটি আছে, না এ মর্মে তার নিকট সংবাদ পৌছেছে, এ বিষয়টি আমার জানা নেই !) কখনো নয়, নিশ্চয় মানুষ সীমালঙ্ঘন করে থাকে। কেননা সে নিজকে মনে করে স্বয়ংসম্পূর্ণ। অর্থাৎ তার সম্প্রদায়কে আহ্বান করুক। নিশ্চয় তোমার রবের দিকেই প্রত্যাবর্তন। তুমি কি তাকে দেখেছ যে নিষেধ করে। এক বান্দাকে, যখন সে সালাত আদায় করে? তুমি কি দেখেছ, যদি সে হিদায়াতের উপর থাকে, অথবা তাকওয়ার নির্দেশ দেয়? যদি সে মিথ্যারোপ করে এবং মুখ ফিরিয়ে নেয়? (অর্থাৎ আবু জেহেল) সে কি জানেনা যে, নিঃসন্দেহে আল্লাহ দেখেন? কখনো নয়, যদি সে বিরত না হয়, তবে আমি তাকে কপালের সম্মুখভাগের চুল ধরে টেনে- হিঁচড়ে নিয়ে যাব। মিথ্যাবাদী, পাপিষ্ঠ কপাল। অতএব, সে তার সভাসদদের আহবান করুক। অচিরেই আমি ডেকে নেব জাহান্নামের প্রহরীদেরকে। কখনো নয়, তুমি তার আনুগত্য করবে না”। [সূরা আল্-আলাক: ৬-১৯] উবাইদুল্লাহ রহ. তাঁর রেওয়ায়েতে আরো বলেছেন, তিনি বলেন, তাকে যা আদেশ দিয়েছেন তিনি তা আদেশ করেছেন। ইবন আব্দুল ‘আলা বলেছেন, فَلۡيَدۡعُ نَادِيَهُۥ তার সম্প্রদায়কে আহবান করুক।” [185]

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «أَلاَ تَعْجَبُونَ كَيْفَ يَصْرِفُ اللَّهُ عَنِّي شَتْمَ قُرَيْشٍ وَلَعْنَهُمْ، يَشْتِمُونَ مُذَمَّمًا، وَيَلْعَنُونَ مُذَمَّمًا وَأَنَا مُحَمَّدٌ».

আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আশ্চর্যান্বিত হওনা? (তোমরা কি দেখছনা) আমার প্রতি আরোপিত কুরাইশদের নিন্দা ও অভিশাপকে আল্লাহ তা‘আলা কি চমৎকারভাবে দূরীভূত করছেন? তারা আমাকে নিন্দিত মনে করে গালি দিচ্ছে, অভিশাপ করছে অথচ আমি মুহাম্মদ-চির প্রশংশিত। (কাজেই তাদের গাল-মন্দ আমার উপর পতিত হয় না) [186]

عَنْ سَعْدِ بْنِ أَبِي وَقَّاصٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، قَالَ: «رَأَيْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَوْمَ أُحُدٍ، وَمَعَهُ رَجُلاَنِ يُقَاتِلاَنِ عَنْهُ، عَلَيْهِمَا ثِيَابٌ بِيضٌ، كَأَشَدِّ القِتَالِ مَا رَأَيْتُهُمَا قَبْلُ وَلاَ بَعْدُ».

সা‘দ ইবন আবূ ওয়াক্কাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, উহুদ যুদ্ধের দিন রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে আমি আরো দুই ব্যক্তিকে দেখলাম, যারা সাদা পোশাক পরিহিত অবস্থায় রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পক্ষ হয়ে তুমুল লড়াই করেছে। আমি তাদেরকে পূর্বেও কোনোদিন দেখিনি এবং এর পরেও কোনোদিন দেখিনি। [187]

 

 

সপ্তদশ পরিচ্ছেদ

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নবুওয়তের প্রমাণ

খেজুর কাণ্ডের ক্রন্দন

عَنْ جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا: أَنَّ امْرَأَةً مِنَ الأَنْصَارِ قَالَتْ لِرَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: يَا رَسُولَ اللَّهِ أَلاَ أَجْعَلُ لَكَ شَيْئًا تَقْعُدُ عَلَيْهِ، فَإِنَّ لِي غُلاَمًا نَجَّارًا قَالَ: «إِنْ شِئْتِ»، قَالَ: فَعَمِلَتْ لَهُ المِنْبَرَ، فَلَمَّا كَانَ يَوْمُ الجُمُعَةِ قَعَدَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَلَى المِنْبَرِ الَّذِي صُنِعَ، فَصَاحَتِ النَّخْلَةُ الَّتِي كَانَ يَخْطُبُ عِنْدَهَا، حَتَّى كَادَتْ تَنْشَقُّ، فَنَزَلَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ حَتَّى أَخَذَهَا، فَضَمَّهَا إِلَيْهِ، فَجَعَلَتْ تَئِنُّ أَنِينَ الصَّبِيِّ الَّذِي يُسَكَّتُ، حَتَّى اسْتَقَرَّتْ، قَالَ: «بَكَتْ عَلَى مَا كَانَتْ تَسْمَعُ مِنَ الذِّكْرِ».

জাবির ইবন আবদুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, একজন আনসারী মহিলা রাসূলূল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বললেন, ইয়া রাসূলূল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, আমি কি আপনার জন্য এমন একটি জিনিস তৈরী করে দিবনা, যার উপর আপনি উপবেশন করবেন? কেননা, আমার একজন সূত্রধর গোলাম আছে। তিনি বললেন, যদি তুমি ইচ্ছা কর। বর্ণনাকারী বলেন, তারপর সে মহিলা রাসূলূল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জন্য মিম্বর বানিয়ে দিলেন। যখন জুম‘আর দিন হলো, রাসূলূল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেই মিম্বরের উপরে বসলেন। সে সময় যে খেঁজুর গাছের কান্ডের উপর ভর দিয়ে তিনি খুতবা দিতেন, সেটি এমনভাবে চিৎকার করে উঠল, যেন তা ফেটে পড়বে। রাসূলূল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নেমে এসে তাকে নিজের সঙ্গে জড়িয়ে ধরলেন। তখন সেটি ফোঁপাতে লাগল, যেমন ছোট শিশুকে চুপ করানোর সময় ফোঁপায়। অবশেষে তা স্থির হয়ে গেল। (রাবী বলেন) খেঁজুর কান্ডটি যে যিকির-নসীহত শুনত, তা হারানোর কারনে কেঁদেছিল।[188]

عَنْ جَابِر بْن عَبْدِ اللَّهِ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا، يَقُولُ: «كَانَ المَسْجِدُ مَسْقُوفًا عَلَى جُذُوعٍ مِنْ نَخْلٍ، فَكَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا خَطَبَ يَقُومُ إِلَى جِذْعٍ مِنْهَا، فَلَمَّا صُنِعَ لَهُ المِنْبَرُ وَكَانَ عَلَيْهِ، فَسَمِعْنَا لِذَلِكَ الجِذْعِ صَوْتًا كَصَوْتِ العِشَارِ، حَتَّى جَاءَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَوَضَعَ يَدَهُ عَلَيْهَا فَسَكَنَتْ».

জাবির ইবন আবদুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন যে, প্রথম দিকে খেজুরের কয়েকটি কাণ্ডের উপর মসজিদে নববীর ছাদ করা হয়েছিল। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখনই খুৎবা প্রদানের ইচ্ছা প্রদান করতেন, তখন একটি কান্ডে হেলান দিয়ে দাঁড়াতেন। অতঃপর তাঁর জন্য মিম্বার তৈরি করে দেওয়া হলে তিনি সেই মিম্বারে উঠে দাঁড়াতেন। ঐ সময় আমরা কাণ্ডটির ভেতর থেকে দশমাসের গর্ভবতী উষ্ট্রীর স্বরের ন্যায় কান্নার আওয়াজ শুনলাম। অবশেষে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর নিকটে এসে তাকে হাত বুলিয়ে সোহাগ করলেন। তারপর কান্ডটি শান্ত হল। [189]

عَنِ ابْنِ عُمَرَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا، كَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَخْطُبُ إِلَى جِذْعٍ، فَلَمَّا اتَّخَذَ المِنْبَرَ تَحَوَّلَ إِلَيْهِ فَحَنَّ الجِذْعُ فَأَتَاهُ فَمَسَحَ يَدَهُ عَلَيْهِ ".

ইবন উমর রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (মসজিদে) খেজুরের একটি কাণ্ডের সাথে (হেলান দিয়ে) খুৎবা প্রদান করতেন। যখন মিম্বার তৈরি করে দেওয়া হল, তখন তিনি মিম্বারে উঠে খুৎবা দিতে লাগলেন। কাণ্ডটি তখন (নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বিরহে) কাঁদতে শুরু করল। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কাণ্ডটির নিকটে গিয়ে হাত বুলাতে লাগলেন। (তখন স্তম্ভটি শান্ত হল)। [190]

 

 

অষ্টাদশ পরিচ্ছেদ

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কর্তৃক কাফিরদের মুখে বালু ও পাথর কণা নিক্ষেপ

قَالَ عَبَّاسٌ: شَهِدْتُ مَعَ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَوْمَ حُنَيْنٍ، فَلَزِمْتُ أَنَا وَأَبُو سُفْيَانَ بْنُ الْحَارِثِ بْنِ عَبْدِ الْمُطَّلِبِ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَلَمْ نُفَارِقْهُ، وَرَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَلَى بَغْلَةٍ لَهُ بَيْضَاءَ أَهْدَاهَا لَهُ فَرْوَةُ بْنُ نُفَاثَةَ الْجُذَامِيُّ، فَلَمَّا الْتَقَى الْمُسْلِمُونَ وَالْكُفَّارُ وَلَّى الْمُسْلِمُونَ مُدْبِرِينَ، فَطَفِقَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَرْكُضُ بَغْلَتَهُ قِبَلَ الْكُفَّارِ، قَالَ عَبَّاسٌ: وَأَنَا آخِذٌ بِلِجَامِ بَغْلَةِ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَكُفُّهَا إِرَادَةَ أَنْ لَا تُسْرِعَ، وَأَبُو سُفْيَانَ آخِذٌ بِرِكَابِ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «أَيْ عَبَّاسُ، نَادِ أَصْحَابَ السَّمُرَةِ»، فَقَالَ عَبَّاسٌ: وَكَانَ رَجُلًا صَيِّتًا، فَقُلْتُ بِأَعْلَى صَوْتِي: أَيْنَ أَصْحَابُ السَّمُرَةِ؟ قَالَ: فَوَاللهِ، لَكَأَنَّ عَطْفَتَهُمْ حِينَ سَمِعُوا صَوْتِي عَطْفَةُ الْبَقَرِ عَلَى أَوْلَادِهَا، فَقَالُوا: يَا لَبَّيْكَ، يَا لَبَّيْكَ، قَالَ: فَاقْتَتَلُوا وَالْكُفَّارَ، وَالدَّعْوَةُ فِي الْأَنْصَارِ يَقُولُونَ: يَا مَعْشَرَ الْأَنْصَارِ، يَا مَعْشَرَ الْأَنْصَارِ، قَالَ: ثُمَّ قُصِرَتِ الدَّعْوَةُ عَلَى بَنِي الْحَارِثِ بْنِ الْخَزْرَجِ، فَقَالُوا: يَا بَنِي الْحَارِثِ بْنِ الْخَزْرَجِ، يَا بَنِي الْحَارِثِ بْنِ الْخَزْرَجِ، فَنَظَرَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَهُوَ عَلَى بَغْلَتِهِ كَالْمُتَطَاوِلِ عَلَيْهَا إِلَى قِتَالِهِمْ، فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ «هَذَا حِينَ حَمِيَ الْوَطِيسُ» قَالَ: ثُمَّ أَخَذَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ حَصَيَاتٍ فَرَمَى بِهِنَّ وُجُوهَ الْكُفَّارِ، ثُمَّ قَالَ: «انْهَزَمُوا وَرَبِّ مُحَمَّدٍ» قَالَ: فَذَهَبْتُ أَنْظُرُ فَإِذَا الْقِتَالُ عَلَى هَيْئَتِهِ فِيمَا أَرَى، قَالَ: فَوَاللهِ، مَا هُوَ إِلَّا أَنْ رَمَاهُمْ بِحَصَيَاتِهِ فَمَا زِلْتُ أَرَى حَدَّهُمْ كَلِيلًا، وَأَمْرَهُمْ مُدْبِرًا.

আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি হুনাইনের যুদ্ধের দিন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সঙ্গে ছিলাম। আমি এবং আবু সুফিয়ান ইবন হারেস ইবন, আবদুল মুত্তালিব রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের একেবারে সঙ্গেই ছিলাম। আমরা কখনও তাঁর থেকে পৃথক হইনি। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটি সাদা বর্ণের খচ্চরের উপর আরোহণ করেছিলেন। সে খচ্চরটি ফারওয়া ইবন নূফাসা হুযামী তাঁকে হাদিয়া স্বরূপ দিয়েছিলেন। (উহাকে দ্যু-বুদুল নামে ডাকা হতো) যখন মুসলিম এবং কাফির পরস্পর সম্মূখ যুদ্ধে লিপ্ত হল তখন মুসলিমগণ (যুদ্ধের এক পর্যায়ে) পাশ্চাৎ-দিকে পলায়ন করতে লাগলেন। আর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্বীয় পায়ের গোড়ালী দিয়ে নিজের খচ্চরকে আঘাত করে কাফিরদের দিকে ধাবিত করছিলেন। আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, আমি তার খচ্চরের লাগাম ধরে রেখে ছিলাম এবং একে থামিয়ে রাখার চেষ্টা করছিলাম যেন দ্রুত গতিতে অগ্রসর হতে না পারে। আর আবু সুফিয়ান তাঁর খচ্চরের ‘রেকাব’ (হাউদাজের বন্ধনের পটি) ধরে রেখেছিলেন। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হে আব্বাস! আসহাবে সামুরাকে আহবান কর। আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, আর তিনি ছিলেন উচ্চ কণ্ঠের অধিকারী ব্যক্তি। তখন আমি উচ্চস্বরে আওয়াজ দিয়ে বললাম, হে আসহাবে সামুরা! তোমরা কোথায় যাচ্ছ? তিনি বলেন, আল্লাহর কসম! তা শোনামাত্র তাঁরা এমনভাবে প্রত্যাবর্তন করতে) শুরু করলেন যেমনভাবে গাভী তার বাচ্চার আওয়াজ শুনে দ্রুত দৌড়ে আসে। তারা বলতে লাগলো, আমরা আপনার নিকট হাযির, আমরা আপনার নিকট হাযির। রাবী বলেন, এরপর তারা কাফিরদের সাথে পুনরায় যুদ্ধে লিপ্ত হন। তিনি আনসারদেরকেও এমনিভাবে আহবান করলেন যে, হে আনসারগণ! রাবী বলেন, এরপর আহবান সমাপ্ত করা হল বনী হারেস ইবন খাযরাযের মাধ্যমে (তাঁরা আহবান করলেন, হে বনী হারেস ইবনুল খাযরাজ) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্বীয় খচ্চরের উপর আরোহণ অবস্থায় আপন গর্দান উচু করে তাদের যুদ্ধের অবস্থা অবলোকন করেন। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এটাই হল যুদ্ধের উত্তেজনাপূর্ণ চরম মুহূর্ত। রাবী বলেন, এরপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কয়েকটি পাথরের টুকরা হাতে নিলেন এবং এগুলি তিনি বিধর্মীদের মুখের উপর ছুড়ে মারলেন। এরপর বললেন, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের রবের কসম! তারা পরাজিত হয়েছে। আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, আমি যুদ্ধক্ষেত্রে যুদ্ধের অবস্থান পরিদর্শন করতে গিয়ে দেখলাম যে, যথারীতি যুদ্ধ চলছে। এমন সময় তিনি পাথরের টুকরোগুলো নিক্ষেপ করলেন। আল্লাহর শপথ! তখন হঠাৎ দেখি যে, কাফিরদের শক্তি নিস্তেজ হয়ে গেল এবং তাদের যুদ্ধের মোড় ঘুরে গেল।[191]

حَدَّثَنِي إِيَاسُ بْنُ سَلَمَةَ، حَدَّثَنِي أَبِي، قَالَ: غَزَوْنَا مَعَ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ حُنَيْنًا، فَلَمَّا وَاجَهْنَا الْعَدُوَّ تَقَدَّمْتُ فَأَعْلُو ثَنِيَّةً، فَاسْتَقْبَلَنِي رَجُلٌ مِنَ الْعَدُوِّ، فَأَرْمِيهِ بِسَهْمٍ فَتَوَارَى عَنِّي، فَمَا دَرَيْتُ مَا صَنَعَ، وَنَظَرْتُ إِلَى الْقَوْمِ فَإِذَا هُمْ قَدْ طَلَعُوا مِنْ ثَنِيَّةٍ أُخْرَى، فَالْتَقَوْا هُمْ وَصَحَابَةُ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَوَلَّى صَحَابَةُ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَأَرْجِعُ مُنْهَزِمًا، وَعَلَيَّ بُرْدَتَانِ مُتَّزِرًا بِإِحْدَاهُمَا مُرْتَدِيًا بِالْأُخْرَى، فَاسْتَطْلَقَ إِزَارِي فَجَمَعْتُهُمَا جَمِيعًا، وَمَرَرْتُ عَلَى رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مُنْهَزِمًا وَهُوَ عَلَى بَغْلَتِهِ الشَّهْبَاءِ، فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «لَقَدْ رَأَى ابْنُ الْأَكْوَعِ فَزَعًا»، فَلَمَّا غَشُوا رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ نَزَلَ عَنِ الْبَغْلَةِ، ثُمَّ قَبَضَ قَبْضَةً مِنْ تُرَابٍ مِنَ الْأَرْضِ، ثُمَّ اسْتَقْبَلَ بِهِ وُجُوهَهُمْ، فَقَالَ: «شَاهَتِ الْوُجُوهُ»، فَمَا خَلَقَ اللهُ مِنْهُمْ إِنْسَانًا إِلَّا مَلَأَ عَيْنَيْهِ تُرَابًا بِتِلْكَ الْقَبْضَةِ، فَوَلَّوْا مُدْبِرِينَ، فَهَزَمَهُمُ اللهُ عَزَّ وَجَلَّ، وَقَسَمَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ غَنَائِمَهُمْ بَيْنَ الْمُسْلِمِينَ.

সালামাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা হুনাইনের দিন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সঙ্গে থেকে যুদ্ধ করেছি। যখন আমরা শক্রদের সন্মুখীন হলাম, তখন এ পর্যায়ে আমি অগ্রসর হয়ে একটি টিলার উপর আরোহণ করলাম। তখন শক্রদলের এক ব্যক্তি আমারঁ-মোকাবিলায় অগ্রসর হল। আমিএকটি তীর নিক্ষেপ করলাম, তখন সে আমার থেকে আত্মগোপন করল। আমি তখন বুঝতে পারিনি তার ব্যাপারটি কী হয়েছে। তারপর যখন শক্রদলের প্রতি লক্ষ্য করলাম তখন দেখতে পেলাম যে, তারা অপর এক টিলায় আরোহণ করেছে। তারপর তারা এবং নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথীরা সামনাসামনি হলো। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহাবাগণ পিছনে সরে পড়তে লাগল। আমি পরাজিত অবস্থায় প্রত্যাবর্তন করলাম। তখন আমার পরিধানে ছিল দুটি চাদর। তম্মধ্যে একটি চাদর ছিল বাঁধা অবস্থায় এবং অপরটি ছিল খোলা। একপর্যায়ে আমার চাদর খুলে গেল। তখন আমি সে দুটি একত্র করলাম। এবং পরাজিত অবস্থায় রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছ দিয়ে গমন করলাম। আর তিনি তখন তাঁর সাদা রং এর খচ্চরের উপর আরোহিত ছিলেন। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ইবনুল আকওয়া সন্ত্রস্ত অবস্থায় প্রত্যাবর্তন করেছে। এরপর শক্ররা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে ঘিরে ফেললো। তখন তিনি স্বীয় খচ্চর থেকে অবতরণ করলেন। তারপর এক মুষ্টি মাটি যমিন থেকে তুলে নিলেন। এরপর তাদের মুখমন্ডলে তা নিক্ষেপ করলেন এবং বললেন, তাদের মুখমন্ডল বিকৃত হয়ে গেছে। এরপর তাদের সকল মানুষের, দু-চোখ-ই সে এক মুষ্টি মাটির ধুলায় ভরে গেল। তারা পাচাৎ দিকে পলায়ন করলো। আল্লাহ তা’আলা এ দ্বারাই তাদেরকে পরাস্ত করলেন। এরপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম গনীমতের সম্পদ মুসলিমদের মধ্যে বণ্টন করে দিলেন।[192]

 

 

ঊনবিংশ পরিচ্ছেদ

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে যে ধোঁকা দেয় তাঁর শাস্তি

عَنْ أَنَسٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، قَالَ: كَانَ رَجُلٌ نَصْرَانِيًّا فَأَسْلَمَ، وَقَرَأَ البَقَرَةَ وَآلَ عِمْرَانَ، فَكَانَ يَكْتُبُ لِلنَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَعَادَ نَصْرَانِيًّا، فَكَانَ يَقُولُ: مَا يَدْرِي مُحَمَّدٌ إِلَّا مَا كَتَبْتُ لَهُ فَأَمَاتَهُ اللَّهُ فَدَفَنُوهُ، فَأَصْبَحَ وَقَدْ لَفَظَتْهُ الأَرْضُ، فَقَالُوا: هَذَا فِعْلُ مُحَمَّدٍ وَأَصْحَابِهِ لَمَّا هَرَبَ مِنْهُمْ، نَبَشُوا عَنْ صَاحِبِنَا فَأَلْقَوْهُ، فَحَفَرُوا لَهُ فَأَعْمَقُوا، فَأَصْبَحَ وَقَدْ لَفَظَتْهُ الأَرْضُ، فَقَالُوا: هَذَا فِعْلُ مُحَمَّدٍ وَأَصْحَابِهِ، نَبَشُوا عَنْ صَاحِبِنَا لَمَّا هَرَبَ مِنْهُمْ فَأَلْقَوْهُ، فَحَفَرُوا لَهُ وَأَعْمَقُوا لَهُ فِي الأَرْضِ مَا اسْتَطَاعُوا، فَأَصْبَحَ وَقَدْ لَفَظَتْهُ الأَرْضُ، فَعَلِمُوا: أَنَّهُ لَيْسَ مِنَ النَّاسِ، فَأَلْقَوْهُ ".

আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, এক খৃস্টান ব্যক্তি মুসলিম হল এবং সূরা বাকারা ও সূরা আলে ইমরান শিখে নিল। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জন্য সে অহী লিপিবদ্ধ করত। তারপর সে পুনরায় খৃস্টান হয়ে গেল। সে বলতে লাগল, আমি মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে যা লিখতে দিতাম তার চেয়ে অধিক কিছু তিনি জানেন না। (নাউজুবিল্লাহ) কিছুদিন পর আল্লাহ্ তাঁকে মৃত্যু দিলেন। খৃস্টানরা তাকে যথারীতি দাফন করল। কিন্তু পরদিন সকালে দেখা গেল, কবরের মাটি তাকে বাইরে নিক্ষেপ করে দিয়েছে। তা দেখে খৃস্টানরা বলতে লাগল এটা মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তাঁর সাহাবীদের কাজ। যেহেতু আমাদের এ সাথী তাদের থেকে পালিয়ে এসেছিল। এ জন্যই তারা আমাদের সাথীকে কবর থেকে উঠিয়ে বাইরে ফেলে দিয়েছে। তাই যতদুর সম্ভব গভীর করে কবর খুঁড়ে তাতে তাকে দাফন করা হল। কিন্তু পরদিন সকালে দেখা গেল, কবরের মাটি তাঁকে (গ্রহণ না করে) আবার বাইরে ফেলে দিয়েছে। এবারও তারা বলল, এটা মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তাঁর সাহাবীদের কাণ্ড। তাদের নিকট থেকে পালিয়ে আসার কারণে তারা আমাদের সাথীকে কবর থেকে উঠিয়ে বাইরে ফেলে দিয়েছে। এবার আরো গভীর করে কবর খনন করে সমাহিত করল। পরদিন ভোরে দেখা গেল কবরের মাটি এবারও তাঁকে বাইরে নিক্ষেপ করেছে। তখন তারাও বুঝতে পারল, এটা মানুষের কাজ নয়। কাজেই তারা মৃত্যুদেহটি বাইরেই ফেলে রাখল।[193]

 

 

বিংশ পরিচ্ছেদ

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বিরূদ্ধে যারা বিদ্রোহ করে তাদের শাস্তি

عَنْ أَنَس، أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «بَعَثَ خَالَهُ، أَخٌ لِأُمِّ سُلَيْمٍ، فِي سَبْعِينَ رَاكِبًا» وَكَانَ رَئِيسَ المُشْرِكِينَ عَامِرُ بْنُ الطُّفَيْلِ، خَيَّرَ بَيْنَ ثَلاَثِ خِصَالٍ، فَقَالَ: يَكُونُ لَكَ أَهْلُ السَّهْلِ وَلِي أَهْلُ المَدَرِ، أَوْ أَكُونُ خَلِيفَتَكَ، أَوْ أَغْزُوكَ بِأَهْلِ غَطَفَانَ بِأَلْفٍ وَأَلْفٍ؟ فَطُعِنَ عَامِرٌ فِي بَيْتِ أُمِّ فُلاَنٍ، فَقَالَ: غُدَّةٌ كَغُدَّةِ البَكْرِ، فِي بَيْتِ امْرَأَةٍ مِنْ آلِ فُلاَنٍ، ائْتُونِي بِفَرَسِي، فَمَاتَ عَلَى ظَهْرِ فَرَسِهِ، فَانْطَلَقَ حَرَامٌ أَخُو أُمِّ سُلَيْمٍ وَهُوَ رَجُلٌ أَعْرَجُ، وَرَجُلٌ مِنْ بَنِي فُلاَنٍ، قَالَ: كُونَا قَرِيبًا حَتَّى آتِيَهُمْ فَإِنْ آمَنُونِي كُنْتُمْ، وَإِنْ قَتَلُونِي أَتَيْتُمْ أَصْحَابَكُمْ، فَقَالَ: أَتُؤْمِنُونِي أُبَلِّغْ رِسَالَةَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَجَعَلَ يُحَدِّثُهُمْ، وَأَوْمَئُوا إِلَى رَجُلٍ، فَأَتَاهُ مِنْ خَلْفِهِ فَطَعَنَهُ، - قَالَ هَمَّامٌ أَحْسِبُهُ - حَتَّى أَنْفَذَهُ بِالرُّمْحِ، قَالَ: اللَّهُ أَكْبَرُ، فُزْتُ وَرَبِّ الكَعْبَةِ، فَلُحِقَ الرَّجُلُ، فَقُتِلُوا كُلُّهُمْ غَيْرَ الأَعْرَجِ، كَانَ فِي رَأْسِ جَبَلٍ، فَأَنْزَلَ اللَّهُ عَلَيْنَا، ثُمَّ كَانَ مِنَ المَنْسُوخِ: إِنَّا قَدْ لَقِينَا رَبَّنَا فَرَضِيَ عَنَّا وَأَرْضَانَا «فَدَعَا النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَلَيْهِمْ ثَلاَثِينَ صَبَاحًا، عَلَى رِعْلٍ، وَذَكْوَانَ، وَبَنِي لَحْيَانَ، وَعُصَيَّةَ، الَّذِينَ عَصَوُا اللَّهَ وَرَسُولَهُ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ».

আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর মামা উম্মে সুলায়মানের (আনাসের মা) ভাই [হারাম ইবন মিলহান রাদিয়াল্লাহু আনহু] কে সত্তরজন অশ্বারোহীসহ (আমির ইবন তুফায়েলের নিকট) পাঠালেন। মুশরিকের দলপতি আমির ইবন তুফায়েল (পূর্বে) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে তিনটি বিষয়ের যেকোন একটি গ্রহণ করার জন্য প্রস্তাব দিয়েছিল। সে বলেছিল, পল্লী এলাকায় আপনার কর্তৃত্ব থাকবে এবং শহর এলাকায় আমার কর্তৃত্ব থাকবে। অথবা আমি আপনার খলীফা হব বা গাতফান গোত্রের দুই হাজার সৈন্য নিয়ে আমি আপনার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করব। এরপর আমির উম্মে ফুলানের গৃহে মহামারিতে আক্রান্ত হল। সে বলল, অমুক গোত্রের মহিলার বাড়িতে উটের যেমন ফোঁড়া হয় আমারও তেমন ফোঁড়া হয়েছে। তোমরা আমার ঘোড়া নিয়ে আস। তারপর (ঘোড়ায় আরোহণ করে) অশ্বপৃষ্ঠেই সে মৃত্যুবরণ করে। উম্মে সুলাইম রাদিয়াল্লাহু আনহার ভাই হারাম [ইবন মিলহান রাদিয়াল্লাহু আনহু] এক খোঁড়া ব্যক্তি ও কোনো এক গোত্রের অপর এক ব্যক্তি সহ সে এলাকার দিকে রওয়ানা করলেন। [হারাম ইবন মিলহান রাদিয়াল্লাহু আনহু] তার দুই সাথীকে লক্ষ্য করে বললেন, তোমরা নিকটেই অবস্থান কর। আমিই তাদের নিকট যাচ্ছি। তারা যদি আমাকে নিরাপত্তা দেয়, তাহলে তোমরা এখানেই থাকবে। আর যদি তারা আমাকে শহীদ করে দেয় তাহলে তোমরা তোমাদের নিজেদের সাথীর কাছে চলে যাবে। এরপর তিনি (তাদের নিকট গিয়ে) বললেন, তোমরা (আমাকে) নিরাপত্তা দিবে কি? দিলে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের একটি পয়গাম তোমাদের কাছে পৌঁছিয়ে দিতাম। তিনি তাদের সাথে এ ধরণের আলাপ-আলোচনা করছিলেন। এমতাবস্থায় তারা এক ব্যক্তিকে ইঙ্গিত করলে সে পেছন দিক থেকে এসে তাঁকে বর্ষা দ্বারা আঘাত করল। হাম্মাম (রহ.) বলেন, আমার মনে হয় আমার শায়খ [ইসহাক (রহ.)] বলেছিলেন যে, বর্শা দ্বারা আঘাত করে এপার ওপার করে দিয়েছিল। (আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে হারাম ইবন মিলহান রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, আল্লাহু আকবর, কাবার প্রভুর শপথ! আমি সফলকাম হয়েছি। এরপর উক্ত (হারামের সঙ্গী) লোকটি (অপেক্ষমান সাথীদের সাথে) মিলিত হলেন। তারা হারামের সংগীদের উপর আক্রমণ করলে খোঁড়া ব্যক্তি ব্যতীত সকলেই নিহত হলেন। খোঁড়া লোকটি ছিলেন পাহাড়ের চূড়ায়। এরপর আল্লাহ্তা’আলা আমাদের প্রতি (একখানা) আয়াত নাযিল করলেন যা পরে মনসূখ হয়ে যায়। আয়াতটি ছিল এই “ আমরা আমাদের প্রতিপালকের সান্নিধ্যে পৌঁছে গিয়েছি। তিনি আমাদের প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছেন এবং আমাদেরকেও সন্তুষ্ট করেছেন”। তাই নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ত্রিশ দিন পর্যন্ত ফজরের সালাতে রি’ল, যাকওয়ান, উসায়্যা এবং বনূ লিহইয়ান গোত্রের জন্য বদ-দু‘আ করেছেন, যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের অবাধ্য হয়েছিল। [194]

 

 

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বিরূদ্ধে যারা বিদ্রোহ করে ও আল্লাহকে নিয়ে উপহাস করে তাদের শাস্তি

عَن أَنَسٍ، قَالَ: بَعَثَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيه وَسَلَّم رَجُلًا مِنْ أَصْحَابِهِ إِلَى رَجُلٍ مِنْ عُظَمَاءِ الْجَاهِلِيَّةِ يَدْعُوهُ إِلَى اللَّهِ تَبَارَكَ وَتَعَالَى فَقَالَ: أَيْش رَبُّكَ الَّذِي تَدْعُو إِلَيْهِ؟ مِنْ نُحَاسٍ هُوَ؟ مِنْ حَدِيدٍ هُوَ؟ مِنْ فِضَّةٍ هُوَ؟ مِنْ ذَهَبٍ هُوَ؟ فَأَتَى النَّبِيّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيه وَسَلَّم فَأَخْبَرَهُ فَأَعَادَهُ النَّبِيّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيه وَسَلَّم الثَّانِيَةَ , فَقَالَ: مِثْلَ ذَلِكَ فَأَتَى النَّبِيّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيه وَسَلَّم فَأَخْبَرَهُ فَأَرْسَلَهُ إِلَيْهِ الثَّالِثة فَقَالَ: مِثْلَ ذَلِكَ فَأَتَى النَّبِيّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيه وَسَلَّم فَأَخْبَرَهُ فَأَرْسَلَ اللَّهُ تَبَارَكَ وَتَعَالَى عَلَيْهِ صَاعِقَةً فَأَحْرَقَتْهُ فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيه وَسَلَّم: إِنَّ اللَّهَ تَبَارَكَ وَتَعَالَى قَدْ أَرْسَلَ عَلَى صَاحِبِكَ صَاعِقَةً فَأَحْرَقَتْهُ فَنَزَلَتْ هَذِهِ الآيَةُ ﴿وَيُرۡسِلُ ٱلصَّوَٰعِقَ فَيُصِيبُ بِهَا مَن يَشَآءُ وَهُمۡ يُجَٰدِلُونَ فِي ٱللَّهِ وَهُوَ شَدِيدُ ٱلۡمِحَالِ ١٣ ﴾ [الرعد: ١٣] .

আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জাহেলী যুগের এক সর্দারের কাছে আল্লাহর দিকে দাওয়াত নিয়ে তাঁর একজন সাহাবী পাঠালেন। সে দম্ভ করে বলল, তোমরা যে রবের দিকে ডাকতেছ সে কিসের তৈরি? লোহা নাকি তামা, নাকি রুপা নাকি সোনার তৈরি? সাহাবী রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে ফিরে এসে সে লোকের কথা জানালো। তারপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে আবার পাঠালেন। সে আবার অনুরূপ কথা বলল। উক্ত সাহাবী রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে ফিরে এসে সে লোকের কথা জানালো। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে তৃতীয়বার পাঠালেন। সে আবার অনুরূপ কথা বলল। উক্ত সাহাবী রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে ফিরে এসে সে লোকের কথা জানালো। ফলে আল্লাহ তা‘আলা তার উপর বজ্র ফেলে আগুনে ভস্মীভূত করে দিলেন। অতঃপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আল্লাহ তা‘আলা উক্ত ব্যক্তির উপর বজ্র ফেলে আগুনে ভস্মীভূত করে দিয়েছেন। তখন এ আয়াত নাযিল হয়:

﴿ وَيُرۡسِلُ ٱلصَّوَٰعِقَ فَيُصِيبُ بِهَا مَن يَشَآءُ وَهُمۡ يُجَٰدِلُونَ فِي ٱللَّهِ وَهُوَ شَدِيدُ ٱلۡمِحَالِ ١٣ ﴾ [الرعد: ١٣]

“আর তিনি গর্জনকারী বজ্র পাঠান। অতঃপর যাকে ইচ্ছা তা দ্বারা আঘাত করেন এবং তারা আল্লাহ সম্বন্ধে ঝগড়া করতে থাকে। আর তিনি শক্তিতে প্রবল, শাস্তিতে কঠোর”। [সূরা আর-রা‘দ: ১৩][195]

 

 

একবিংশ পরিচ্ছেদ

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যুগে ও পরবর্তী যুগে যারা নবুওয়তের মিথ্যাদাবী করেছিল তাদের মিথ্যাচার তিনি উন্মুক্ত করেছেনএর দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রেরিত এবং আল্লাহ তাকে সাহায্য করেছেন ও তার নবুওয়তের স্বীকৃতি দিয়েছেন।

عَنِ ابْنِ عُمَرَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا، أَنَّهُ أَخْبَرَهُ: أَنَّ عُمَرَ انْطَلَقَ فِي رَهْطٍ مِنْ أَصْحَابِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَعَ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قِبَلَ ابْنِ صَيَّادٍ، حَتَّى وَجَدُوهُ يَلْعَبُ مَعَ الغِلْمَانِ، عِنْدَ أُطُمِ بَنِي مَغَالَةَ، وَقَدْ قَارَبَ يَوْمَئِذٍ ابْنُ صَيَّادٍ يَحْتَلِمُ، فَلَمْ يَشْعُرْ بِشَيْءٍ حَتَّى ضَرَبَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ظَهْرَهُ بِيَدِهِ، ثُمَّ قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «أَتَشْهَدُ أَنِّي رَسُولُ اللَّهِ؟»، فَنَظَرَ إِلَيْهِ ابْنُ صَيَّادٍ، فَقَالَ: أَشْهَدُ أَنَّكَ رَسُولُ الأُمِّيِّينَ، فَقَالَ ابْنُ صَيَّادٍ لِلنَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: أَتَشْهَدُ أَنِّي رَسُولُ اللَّهِ؟ قَالَ لَهُ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «آمَنْتُ بِاللَّهِ وَرُسُلِهِ»، قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَاذَا تَرَى؟» قَالَ ابْنُ صَيَّادٍ: يَأْتِينِي صَادِقٌ وَكَاذِبٌ، قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «خُلِطَ عَلَيْكَ الأَمْرُ؟» قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِنِّي قَدْ خَبَأْتُ لَكَ خَبِيئًا»، قَالَ ابْنُ صَيَّادٍ: هُوَ الدُّخُّ، قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «اخْسَأْ، فَلَنْ تَعْدُوَ قَدْرَكَ»، قَالَ عُمَرُ: يَا رَسُولَ اللَّهِ، ائْذَنْ لِي فِيهِ أَضْرِبْ عُنُقَهُ، قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِنْ يَكُنْهُ، فَلَنْ تُسَلَّطَ عَلَيْهِ، وَإِنْ لَمْ يَكُنْهُ، فَلاَ خَيْرَ لَكَ فِي قَتْلِهِ».

ইবন ‘উমর রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘উমর রাদিয়াল্লাহু আনহু কয়েকজন সাহাবীসহ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সঙ্গে ইবন সাইয়াদের কাছে যান। তাঁরা তাকে বনী মাগালার টিলার উপর ছেলে-পেলেদের সঙ্গে খেলা-ধুলা করতে দেখতে পান। আর এ সময় ইবন সাইয়াদ বালিগ হওয়ার নিকটবর্তী হয়েছিল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের (আগমন সম্পর্কে) সে কোনো কিছু টের না পেতেই নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার পিঠে হাত দিয়ে মৃদু আঘাত করলেন। এরপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, (হে ইবন সাইয়াদ!) তুমি কি সাক্ষ্য দাও যে, আমি আল্লাহর প্রেরিত রাসূল? তখন ইবন সাইয়াদ তাঁর প্রতি তাকিয়ে বলল, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আপনি উম্মি লোকদের রসূল। ইবন সাইয়াদ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলল, আপনি এ সাক্ষ্য দেন যে, আমি আল্লাহর রাসূল? নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন, আমি আল্লাহ্‌ তা‘আলা ও তাঁর সব রাসূলের প্রতি ঈমান এনেছি। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে প্রশ্ন করলেন, তুমি কি দেখ? ইবন সাইয়াদ বলল, আমার নিকট সত্য সংবাদ ও মিথ্যা সংবাদ সবই আসে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, প্রকৃত অবস্থা তোমার নিকট সত্য-মিথ্যা মিশ্রিত হয়ে আছে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বললেন, আচ্ছা! আমি আমার অন্তরে তোমার জন্য কিছু কথা গোপন রেখেছে (বলতো তা কি?) ইবন সাইয়াদ বলল, তা হচ্ছে ধুয়া। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আরে থাম, তুমি তোমার সীমার বাইরে যেতে পার না। উমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বলে উঠলেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আমাকে অনুমতি দিন, আমি তার গর্দান উড়িয়ে দেই। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, যদি সে প্রকৃত দাজ্জাল হয়, তবে তুমি তাকে কাবু করতে পারবে না, আর যদি সে দাজ্জাল না হয়, তবে তাকে হত্যা করে তোমার কোনো লাভ নেই। [196]

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قَالَ: «لاَ تَقُومُ السَّاعَةُ حَتَّى يَقْتَتِلَ فِئَتَانِ فَيَكُونَ بَيْنَهُمَا مَقْتَلَةٌ عَظِيمَةٌ، دَعْوَاهُمَا وَاحِدَةٌ، وَلاَ تَقُومُ السَّاعَةُ حَتَّى يُبْعَثَ دَجَّالُونَ كَذَّابُونَ، قَرِيبًا مِنْ ثَلاَثِينَ، كُلُّهُمْ يَزْعُمُ أَنَّهُ رَسُولُ اللَّهِ».

আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, কিয়ামতের সংঘটিত হবে না যে পর্যন্ত দুটি দলের মধ্যে যুদ্ধ না হবে। তাদের মধ্যে হবে এক রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ। তাদের দাবী হবে অভিন্ন। আর কিয়ামত কায়েম হবেনা যে পর্যন্ত প্রায় ত্রিশজন মিথ্যাবাদী দাজ্জালের আবির্ভাব না হবে। এরা সবাই নিজ নিজকে আল্লাহ্‌র রাসূল বলে দাবী করবে। [197]

عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا، قَالَ: قَدِمَ مُسَيْلِمَةُ الكَذَّابُ عَلَى عَهْدِ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَجَعَلَ يَقُولُ: إِنْ جَعَلَ لِي مُحَمَّدٌ الأَمْرَ مِنْ بَعْدِهِ تَبِعْتُهُ، وَقَدِمَهَا فِي بَشَرٍ كَثِيرٍ مِنْ قَوْمِهِ، فَأَقْبَلَ إِلَيْهِ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَمَعَهُ ثَابِتُ بْنُ قَيْسِ بْنِ شَمَّاسٍ وَفِي يَدِ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قِطْعَةُ جَرِيدٍ، حَتَّى وَقَفَ عَلَى مُسَيْلِمَةَ فِي أَصْحَابِهِ، فَقَالَ: «لَوْ سَأَلْتَنِي هَذِهِ القِطْعَةَ مَا أَعْطَيْتُكَهَا، وَلَنْ تَعْدُوَ أَمْرَ اللَّهِ فِيكَ، وَلَئِنْ أَدْبَرْتَ ليَعْقِرَنَّكَ اللَّهُ، وَإِنِّي لَأَرَاكَ الَّذِي أُرِيتُ فِيكَ مَا رَأَيْتُ».

فَأَخْبَرَنِي أَبُو هُرَيْرَةَ: أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قَالَ: " بَيْنَمَا أَنَا نَائِمٌ، رَأَيْتُ فِي يَدَيَّ سِوَارَيْنِ مِنْ ذَهَبٍ، فَأَهَمَّنِي شَأْنُهُمَا، فَأُوحِيَ إِلَيَّ فِي المَنَامِ: أَنِ انْفُخْهُمَا، فَنَفَخْتُهُمَا فَطَارَا، فَأَوَّلْتُهُمَا كَذَّابَيْنِ، يَخْرُجَانِ بَعْدِي " فَكَانَ أَحَدُهُمَا العَنْسِيَّ، وَالآخَرُ مُسَيْلِمَةَ الكَذَّابَ، صَاحِبَ اليَمَامَةِ.

ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যামানায় মুসায়লামাতুল কাযযাব আসল এবং (সাহাবীদের নিকট) বলতে লাগল, মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যদি তাঁর পর আমাকে তাঁর স্থলাভিষিক্ত করেন, তাহলে আমি তাঁর অনুসরণ করব। তার স্বজাতির এক বিরাট বাহিনী সঙ্গে নিয়ে সে এসেছিল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর নিকট আসলেন। আর তার সাথী ছিলেন সাবিত ইবন কায়েস ইবন শাম্মাস রাদিয়াল্লাহু আনহু। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাতে খেজুরের একটি ডাল ছিল। তিনি সাথী দ্বারা বেষ্টিত মুসায়লামার সামনে গিয়ে দাঁড়ালেন এবং বললেন, তুমি যদি আমার নিকট খেজুরের এই ডালটিও চাও, তবুও আমি তা তোমাকে দিবো না। তোমার সম্বন্ধে আল্লাহর যা ফায়সালা তা তুমি লঙ্ঘন করতে পারবেনা। যদি তুমি কিছু দিন বেঁচেও থাক তবুও আল্লাহ তোমাকে অবশ্যই ধ্বংস করে দিবেন। নিঃসন্দেহে তুমি ঐ ব্যক্তি যার সম্বন্ধে স্বপ্নে আমাকে সব কিছু দেখানে হয়েছে। (ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন) আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু আমাকে জানিয়েছেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, (একদিন) আমি ঘুমিয়েছিলাম। স্বপ্নে দেখতে পেলাম আমার দু’হাতে সোনার দু’টি বালা শোভা পাচ্ছে। বালা দু’টি আমাকে ভাবিয়ে তুলল। স্বপ্নেই আমার নিকট অহী এলো, আপনি ফুঁ দিন। আমি তাই করলাম। বালা দুটি উড়ে অদৃশ্য হয়ে গেল। আমি স্বপ্নের ব্যাখ্যা এভাবে করলাম, আমার পর দুজন কাযযাব (চরম মিথ্যাবাদী) আবির্ভূত হবে। এদের একজন আসওয়াদ আনসী, অপরজন ইয়ামামার বাসিন্দা মুসায়লামাতুল কাযযাব।[198]

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «لَا تَقُومُ السَّاعَةُ حَتَّى يَخْرُجَ ثَلَاثُونَ دَجَّالُونَ، كُلُّهُمْ يَزْعُمُ أَنَّهُ رَسُولُ اللَّهِ».

আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, কিয়ামত সে পর্যন্ত কায়েম হবেনা যে পর্যন্ত প্রায় ত্রিশজন মিথ্যাবাদী দাজ্জালের আবির্ভাব না হবে। এরা সবাই নিজ নিজকে আল্লাহ্‌র রাসূল বলে দাবী করবে। [199]

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «لَا تَقُومُ السَّاعَةُ حَتَّى يَخْرُجَ ثَلَاثُونَ كَذَّابًا دَجَّالًا، كُلُّهُمْ يَكْذِبُ عَلَى اللَّهِ، وَعَلَى رَسُولِهِ».

আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, কিয়ামত সে পর্যন্ত কায়েম হবেনা যে পর্যন্ত প্রায় ত্রিশজন মিথ্যাবাদী দাজ্জালের আবির্ভাব না হবে। এরা সবাই আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের ব্যাপারে মিথ্যা বলবে। [200]

 

 

দ্বাবিংশ পরিচ্ছেদ

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দোআ কবুল হওয়া তাঁর নবুওয়তের প্রমাণ

এ পরিচ্ছেদটি নবুওয়ত সাব্যস্ত করার জন্য যদিও যথেষ্ট নয়; কেননা সৎলোক ও মাযলুমের দু‘আও কবুল হয়, যদিও মাযলুম ব্যক্তি কাফির হয়। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামেরও সব দো‘আ কবুল হয়নি। যেমন, তিনি একদল কুরাইশের ব্যাপারে দো‘আ করেছিলেন, তখন আল্লাহ নাযিল করেন,

﴿ لَيۡسَ لَكَ مِنَ ٱلۡأَمۡرِ شَيۡءٌ أَوۡ يَتُوبَ عَلَيۡهِمۡ أَوۡ يُعَذِّبَهُمۡ فَإِنَّهُمۡ ظَٰلِمُونَ ١٢٨ ﴾ [ال عمران: ١٢٨]

“এ বিষয়ে তোমার কোনো অধিকার নেই- হয়তো তিনি তাদেরকে ক্ষমা করবেন অথবা তিনি তাদেরকে আযাব দেবেন। কারণ নিশ্চয় তারা যালিম”। [আলে ইমরান: ১২৮]

عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ: ضَمَّنِي رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَقَالَ: «اللَّهُمَّ عَلِّمْهُ الكِتَابَ».

ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একবার আমাকে জড়িয়ে ধরে বললেন: ‘হে আল্লাহ্! আপনি তাকে কিতাব (কুরআন) শিক্ষা দিন।’[201]

আল্লাহ তা‘আলা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দো‘আ কবুল করেছেন। ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু সাহাবীদের মধ্যে সর্বাধিক তাফসীরকারক ছিলেন।

عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ دَخَلَ الخَلاَءَ، فَوَضَعْتُ لَهُ وَضُوءًا قَالَ: «مَنْ وَضَعَ هَذَا فَأُخْبِرَ فَقَالَ اللَّهُمَّ فَقِّهْهُ فِي الدِّينِ».

ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, একবার রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শৌচাগারে গেলেন, তখন আমি তাঁর জন্য উযূর পানি রাখলাম। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, ‘এটা কে রেখেছে?’ তাঁকে জানানো হলে তিনি বলেন, ‘ইয়া আল্লাহ! আপনি তাকে দীনের জ্ঞান দান করুন।[202]

حَدَّثَنِي عَمْرُو بْنُ مَيْمُونٍ، أَنَّ عَبْدَ اللَّهِ بْنَ مَسْعُودٍ حَدَّثَهُ أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ يُصَلِّي عِنْدَ البَيْتِ، وَأَبُو جَهْلٍ وَأَصْحَابٌ لَهُ جُلُوسٌ، إِذْ قَالَ بَعْضُهُمْ لِبَعْضٍ: أَيُّكُمْ يَجِيءُ بِسَلَى جَزُورِ بَنِي فُلاَنٍ، فَيَضَعُهُ عَلَى ظَهْرِ مُحَمَّدٍ إِذَا سَجَدَ؟ فَانْبَعَثَ أَشْقَى القَوْمِ فَجَاءَ بِهِ، فَنَظَرَ حَتَّى سَجَدَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، وَضَعَهُ عَلَى ظَهْرِهِ بَيْنَ كَتِفَيْهِ، وَأَنَا أَنْظُرُ لاَ أُغْنِي شَيْئًا، لَوْ كَانَ لِي مَنَعَةٌ، قَالَ: فَجَعَلُوا يَضْحَكُونَ وَيُحِيلُ بَعْضُهُمْ عَلَى بَعْضٍ، وَرَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ سَاجِدٌ لاَ يَرْفَعُ رَأْسَهُ، حَتَّى جَاءَتْهُ فَاطِمَةُ، فَطَرَحَتْ عَنْ ظَهْرِهِ، فَرَفَعَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ رَأْسَهُ ثُمَّ قَالَ: «اللَّهُمَّ عَلَيْكَ بِقُرَيْشٍ». ثَلاَثَ مَرَّاتٍ، فَشَقَّ عَلَيْهِمْ إِذْ دَعَا عَلَيْهِمْ، قَالَ: وَكَانُوا يَرَوْنَ أَنَّ الدَّعْوَةَ فِي ذَلِكَ البَلَدِ مُسْتَجَابَةٌ، ثُمَّ سَمَّى: «اللَّهُمَّ عَلَيْكَ بِأَبِي جَهْلٍ، وَعَلَيْكَ بِعُتْبَةَ بْنِ رَبِيعَةَ، وَشَيْبَةَ بْنِ رَبِيعَةَ، وَالوَلِيدِ بْنِ عُتْبَةَ، وَأُمَيَّةَ بْنِ خَلَفٍ، وَعُقْبَةَ بْنِ أَبِي مُعَيْطٍ» - وَعَدَّ السَّابِعَ فَلَمْ يَحْفَظْ -، قَالَ: فَوَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ، لَقَدْ رَأَيْتُ الَّذِينَ عَدَّ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ صَرْعَى، فِي القَلِيبِ قَلِيبِ بَدْرٍ.

‘আবদুল্লাহ্ ইবন মাস্’উদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন যে, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একবার বায়তুল্লাহ্‌র পাশে সালাত আদায় করছিলেন এবং সেখানে আবূ জাহল ও আর সঙ্গীরা বসা ছিল। এমন সময় তাদের একজন অন্যজনকে বলে উঠল, ‘তোমাদের মধ্যে কে অমুক গোত্রের উটনীর নাড়ীভুঁড়ি এনে মুহাম্মদ যখন সিজদা করেন তখন তার পিঠের উপর রাকতে পারে?’ তখন কওমের বড় পাষন্ড (‘উকবা) তাড়াতাড়ি গিয়ে তা নিয়ে এল এবং তাঁর প্রতি নজর রাখল। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন সিজদায় গেলেন, তখন সে তাঁর পিঠের উপর দুই কাঁধের মাঝখানে তা রেখে দিল। ইবন মাস’উদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, আমি (এ দৃশ্য) দেখেছিলাম কিন্তু আমার কিছু করার ছিল না। হায়! আমার যদি কিছু প্রতিরোধ শক্তি থাকত! তিনি বলেন, তারা হাসতে লাগল এবং একে অন্যের উপর লুটিয়ে পড়তে লাগল। আর রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন সিজদায় থাকলেন, মাথা উঠালেন না। অবশেষে হযরত ফাতিমা রাদিয়াল্লাহু আনহা এলেন এবং সেটি তাঁর পিঠের উপর থেকে ফেলে দিলেন। তারপর রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মাথা উঠিয়ে বললেন, ইয়া আল্লাহ্! আপনি কুরায়শকে ধ্বংস করুন। এরূপ তিনবার বললেন। তিনি যখন তাদের বদ দো‘আ করেন তখন তা তাদের অন্তরে ভীতির সঞ্চার করল। বর্ণনাকারী বলেন, তারা জনত যে, এ শহরে দো‘আ কবূল হয়। এরপর তিনি নাম ধরে বললেন, ইয়া আল্লহ্! আবূ জাহলকে ধ্বংস করুন। এবং ‘উতবা ইবন রাবী’আ, শায়বা ইব্ন রবী’আ, ওয়ালীদ ইবন ‘উতবা, উময়্যা ইবন খালাফ ও ‘উকবা ইবন মু’আইতকে ধ্বংস করুন। রাবী বলেন, তিনি সপ্তম ব্যক্তির নামও বলেছিলেন কিন্তু তিনি স্মরণ রাখতে পারেন নি। ইবন মাস’উদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, সেই সত্তার কসম! যার হাতে আমার জান, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যাদের নাম উচ্চারণ করেছিলেন, তাদের আমি বদরের কূপের মধ্যে নিহত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখেছি।[203]

عَنْ عَبْدِ اللَّهِ قالَ: إِنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَمَّا رَأَى مِنَ النَّاسِ إِدْبَارًا، قَالَ: «اللَّهُمَّ سَبْعٌ كَسَبْعِ يُوسُفَ»، فَأَخَذَتْهُمْ سَنَةٌ حَصَّتْ كُلَّ شَيْءٍ، حَتَّى أَكَلُوا الجُلُودَ وَالمَيْتَةَ وَالجِيَفَ، وَيَنْظُرَ أَحَدُهُمْ إِلَى السَّمَاءِ، فَيَرَى الدُّخَانَ مِنَ الجُوعِ، فَأَتَاهُ أَبُو سُفْيَانَ، فَقَالَ: يَا مُحَمَّدُ، إِنَّكَ تَأْمُرُ بِطَاعَةِ اللَّهِ، وَبِصِلَةِ الرَّحِمِ، وَإِنَّ قَوْمَكَ قَدْ هَلَكُوا، فَادْعُ اللَّهَ لَهُمْ، قَالَ اللَّهُ تَعَالَى: ﴿ فَٱرۡتَقِبۡ يَوۡمَ تَأۡتِي ٱلسَّمَآءُ بِدُخَانٖ مُّبِينٖ ١٠ ﴾ [الدخان: ١٠] إِلَى قَوْلِهِ ﴿ إِنَّكُمۡ عَآئِدُونَ ١٥ يَوۡمَ نَبۡطِشُ ٱلۡبَطۡشَةَ ٱلۡكُبۡرَىٰٓ إِنَّا مُنتَقِمُونَ ١٦ ﴾ [الدخان: ١٥، ١٦] " فَالْبَطْشَةُ: يَوْمَ بَدْرٍ، وَقَدْ مَضَتِ الدُّخَانُ وَالبَطْشَةُ وَاللِّزَامُ وَآيَةُ الرُّومِ ".

আবদুল্লাহ ইবন মাস‘উদ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন লোকদেরকে ইসলাম বিমুখ ভুমিকায় দেখলেন, তখন দো‘আ করলেন, হে আল্লাহ্! ইউসুফ আলাইহিস সালামের যামানার সাত বছরের (দুর্ভিক্ষের) ন্যায় তাঁদের উপর সাতটি বছর দুর্ভিক্ষ দিন। ফলে তাঁদের উপর এমন দুর্ভিক্ষ আপতিত হল যে, তা সব কিছুই ধ্বংস করে দিল। এমনকি মানুষ তখন চামড়া, মৃতদেহ এবং পচা ও গলিত জানোয়ারও খেতে লাগলো। ক্ষুধার তাড়নায় অবস্থা এতদূর চরম আকার ধারণ করল যে, কেউ যখন আকাশের দিকে তাকাত তখন সে ধুঁয়া দেখতে পেত। এমতাবস্থায় আবু সুফিয়ান (ইসলাম গ্রহনের পূর্বে) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট এসে বলল, হে মুহাম্মদ! তুমি তো আল্লাহ্‌র আদেশ মেনে চল এবং আত্মীয়তার সম্পর্ক অক্ষুণ্ণ রাখার আদেশ দান কর। কিন্তু তোমার কাউমের লোকেরা তো মরে যাচ্ছে। তুমি তাঁদের জন্য আল্লাহ্‌র নিকট দো‘আ কর। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন: “আপনি সে দিনটির অপেক্ষায় থাকুন যখন আকাশ সুস্পষ্ট ধুঁয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে যাবে...... সেদিন আমি প্রবলভাবে তোমাদের পাকড়াও করব”। [সূরা দুখান, আয়াত: ১০-১৬] আবদুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, সে কঠিন আঘাত এর দিন ছিল বদরের যুদ্ধের দিন। ধুঁয়াও দেখা গেছে, আঘাতও এসেছে। আর মক্কার মুশরিকদের নিহত ও গ্রেফতারের যে ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়েছে, তাও সত্য হয়েছে। সত্য হয়েছে সুরা রুম-এর এ আয়াত ও (রুমবাসী দশ বছরের মধ্যে পারসিকদের উপর আবার বিজয় লাভ করবে)।[204]

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ: أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ إِذَا رَفَعَ رَأْسَهُ مِنَ الرَّكْعَةِ الآخِرَةِ، يَقُولُ: " اللَّهُمَّ أَنْجِ عَيَّاشَ بْنَ أَبِي رَبِيعَةَ، اللَّهُمَّ أَنْجِ سَلَمَةَ بْنَ هِشَامٍ، اللَّهُمَّ أَنْجِ الوَلِيدَ بْنَ الوَلِيدِ، اللَّهُمَّ أَنْجِ المُسْتَضْعَفِينَ مِنَ المُؤْمِنِينَ، اللَّهُمَّ اشْدُدْ وَطْأَتَكَ عَلَى مُضَرَ، اللَّهُمَّ اجْعَلْهَا سِنِينَ كَسِنِي يُوسُفَ: وَأَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: غِفَارُ غَفَرَ اللَّهُ لَهَا وَأَسْلَمُ سَالَمَهَا اللَّهُ " قَالَ ابْنُ أَبِي الزِّنَادِ: عَنْ أَبِيهِ، هَذَا كُلُّهُ فِي الصُّبْحِ.

আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন শেষ রাকা‘আত থেকে মাথা উঠালেন, তখন বললেন, হে আল্লাহ্! আইয়্যাশ ইবন আবু রাবী’আহকে মুক্তি দিন। হে আল্লাহ্! সালামা ইবন হিশামকে মুক্তি দিন। হে আল্লাহ্! ওয়ালীদ ইবন ওয়ালীদকে রক্ষা করুণ। হে আল্লাহ্! দুর্বল মু’মিনদেরকে মুক্তি দিন। হে আল্লাহ্! মুযার গোত্রের উপর আপনার শাস্তি কঠোর করে দিন। হে আল্লাহ্! ইউসুফ আলাইহিস সালামের যমানার দুর্ভিক্ষের বছরগুলোর ন্যায় (এদের উপর) কয়েক বছর দুর্ভিক্ষ দিন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বললেন, গিফার গোত্র, আল্লাহ তাদেরকে ক্ষমা করুন। আর আসলাম গোত্র, আল্লাহ তাদেরকে নিরাপদে রাখুন। ইবন আবু যিনাদ (রহ.) তাঁর পিতা থেকে বলেন, এ সমস্ত দো‘আ ফজরের সালাতে ছিল।[205]

حَدَّثَنَا شَرِيكُ بْنُ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ أَبِي نَمِرٍ، أَنَّهُ سَمِعَ أَنَسَ بْنَ مَالِكٍ، يَذْكُرُ أَنَّ رَجُلًا دَخَلَ يَوْمَ الجُمُعَةِ مِنْ بَابٍ كَانَ وِجَاهَ المِنْبَرِ، وَرَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَائِمٌ يَخْطُبُ، فَاسْتَقْبَلَ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَائِمًا، فَقَالَ: يَا رَسُولَ اللَّهِ: هَلَكَتِ المَوَاشِي، وَانْقَطَعَتِ السُّبُلُ، فَادْعُ اللَّهَ يُغِيثُنَا، قَالَ: فَرَفَعَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَدَيْهِ، فَقَالَ: «اللَّهُمَّ اسْقِنَا، اللَّهُمَّ اسْقِنَا، اللَّهُمَّ اسْقِنَا» قَالَ أَنَسُ: وَلاَ وَاللَّهِ مَا نَرَى فِي السَّمَاءِ مِنْ سَحَابٍ، وَلاَ قَزَعَةً وَلاَ شَيْئًا وَمَا بَيْنَنَا وَبَيْنَ سَلْعٍ مِنْ بَيْتٍ، وَلاَ دَارٍ قَالَ: فَطَلَعَتْ مِنْ وَرَائِهِ سَحَابَةٌ مِثْلُ التُّرْسِ، فَلَمَّا تَوَسَّطَتِ السَّمَاءَ، انْتَشَرَتْ ثُمَّ أَمْطَرَتْ، قَالَ: وَاللَّهِ مَا رَأَيْنَا الشَّمْسَ سِتًّا، ثُمَّ دَخَلَ رَجُلٌ مِنْ ذَلِكَ البَابِ فِي الجُمُعَةِ المُقْبِلَةِ، وَرَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَائِمٌ يَخْطُبُ، فَاسْتَقْبَلَهُ قَائِمًا، فَقَالَ: يَا رَسُولَ اللَّهِ: هَلَكَتِ الأَمْوَالُ وَانْقَطَعَتِ السُّبُلُ، فَادْعُ اللَّهَ يُمْسِكْهَا، قَالَ: فَرَفَعَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَدَيْهِ، ثُمَّ قَالَ: «اللَّهُمَّ حَوَالَيْنَا، وَلاَ عَلَيْنَا، اللَّهُمَّ عَلَى الآكَامِ وَالجِبَالِ وَالآجَامِ وَالظِّرَابِ وَالأَوْدِيَةِ وَمَنَابِتِ الشَّجَرِ» قَالَ: فَانْقَطَعَتْ، وَخَرَجْنَا نَمْشِي فِي الشَّمْسِ قَالَ شَرِيكٌ: فَسَأَلْتُ أَنَسَ بْنَ مَالِكٍ: أَهُوَ الرَّجُلُ الأَوَّلُ؟ قَالَ: «لاَ أَدْرِي».

আনাস ইবন মালিক রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, এক ব্যক্তি জুমু‘আর দিন মিম্বারের সোজাসোজি দরজা দিয়ে মসজিদে প্রবেশ করল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন দাঁড়িয়ে খুৎবা দিচ্ছিলেন। সে রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সম্মুখে দাঁড়িয়ে বলল, ইয়া রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! গবাদি পশু ধ্বংস হয়ে গেল এবং রাস্তাগুলোর চলাচল বন্ধ হয়ে গেল। সুতরাং আপনি আল্লাহর কাছে দো‘আ করুন, যেন তিনি আমাদের বৃষ্টি দেন। বর্ণনাকারী বলেন, রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন উভয় হাত তুলে দো‘আ করলেন, হে আল্লাহ্! বৃষ্টি দিন, হে আল্লাহ্! বৃষ্টি দিন, হে আল্লাহ্! বৃষ্টি দিন, আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, আল্লাহর কসম! আমরা তখন আকাশে মেঘমালা, মেঘের চিহ্ন বাঁ কিছুই দেখতে পাইনি। অথচ সাল’আ পর্বত ও আমাদের মধ্যে কোনো ঘর বাড়ী ছিল না। আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, হঠাৎ সাল’আ পর্বতের পেছন থেকে ঢালের মত মেঘ বেরিয়ে এল এবং তা মধ্য আকাশে পৌঁছে বিস্তৃত হয়ে পড়ল। তারপর বর্ষণ শুরু হল। তিনি বলেন, আল্লাহর কসম! আমরা ছয়দিন সুর্য দেখতে পাইনি। তারপর একব্যক্তি পরবর্তি জুমু’আর দিন সে দরজা দিয়ে প্রবেশ করল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন তখন দাঁড়িয়ে খুৎবা দিচ্ছিলেন। লোকটি দাঁড়িয়ে বলল, ইয়া রাসূলুল্লাহ! ধন-সম্পদ নষ্ট হয়ে গেল এবং রাস্তাঘাটও বিচ্ছিন্ন হয়ে গেল। কাজেই আপনি আল্লাহর নিকট বৃষ্টি বন্ধের জন্য দো‘আ করুন। আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর উভয় হাত তুলে দো‘আ করলেন, হে আল্লাহ্! আমাদের আশে পাশে, আমাদের উপর নয়, টিলা, পাহাড়, উচ্চভূমি, মালভূমি, উপত্যকা এবং বনাঞ্চলে বর্ষণ করুন। আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, এতে বৃষ্টি বন্ধ হয়ে গেল এবং আমরা (মসজিদ থেকে বেরিয়ে) রোদে চলতে লাগলাম। শরীক (রহ.) (বর্ণনাকারী) বলেন, আমি আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু কে জিজ্ঞাসা করলাম, এ লোকটি কি আগের সে লোক? তিনি বললেন, আমি জানিনা।[206]

حَدَّثَنِي عَبَّادُ بْنُ تَمِيمٍ، أَنَّ عَمَّهُ - وَكَانَ مِنْ أَصْحَابِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ - أَخْبَرَهُ: «أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ خَرَجَ بِالنَّاسِ يَسْتَسْقِي لَهُمْ، فَقَامَ فَدَعَا اللَّهَ قَائِمًا، ثُمَّ تَوَجَّهَ قِبَلَ القِبْلَةِ وَحَوَّلَ رِدَاءَهُ فَأُسْقُوا».

আব্বাদ ইবন তামীম রহ. তাঁর চাচার থেকে বর্ণনা করেন, তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহাবী ছিলেন। তিনি তাঁর কাছে বর্ণনা করেছেন যে রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবীগণকে নিয়ে তাঁদের জন্য বৃষ্টির দু‘আর উদ্দেশ্যে বের হলেন। তিনি দাঁড়ালেন এবং দাঁড়িয়েই আল্লাহ্‌র দরবারে দো‘আ করলেন। তারপর কিবলামুখী হয়ে নিজ চাঁদর উল্টিয়ে দিলেন। এরপর তাঁদের উপর বৃষ্টি বর্ষিত হল।[207]

عَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا، قَالَتْ: لَمَّا قَدِمَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ المَدِينَةَ، وُعِكَ أَبُو بَكْرٍ، وَبِلاَلٌ، فَكَانَ أَبُو بَكْرٍ إِذَا أَخَذَتْهُ الحُمَّى يَقُولُ:

كُلُّ امْرِئٍ مُصَبَّحٌ فِي أَهْلِهِ ... وَالمَوْتُ أَدْنَى مِنْ شِرَاكِ نَعْلِهِ

، وَكَانَ بِلاَلٌ إِذَا أُقْلِعَ عَنْهُ الحُمَّى يَرْفَعُ عَقِيرَتَهُ يَقُولُ:

أَلاَ لَيْتَ شِعْرِي هَلْ أَبِيتَنَّ لَيْلَةً ... بِوَادٍ وَحَوْلِي إِذْخِرٌ وَجَلِيلُ،

وَهَلْ أَرِدَنْ يَوْمًا مِيَاهَ مَجَنَّةٍ ... وَهَلْ يَبْدُوَنْ لِي شَامَةٌ وَطَفِيلُ،

قَالَ: اللَّهُمَّ العَنْ شَيْبَةَ بْنَ رَبِيعَةَ، وَعُتْبَةَ بْنَ رَبِيعَةَ، وَأُمَيَّةَ بْنَ خَلَفٍ كَمَا أَخْرَجُونَا مِنْ أَرْضِنَا إِلَى أَرْضِ الوَبَاءِ، ثُمَّ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «اللَّهُمَّ حَبِّبْ إِلَيْنَا المَدِينَةَ كَحُبِّنَا مَكَّةَ أَوْ أَشَدَّ، اللَّهُمَّ بَارِكْ لَنَا فِي صَاعِنَا وَفِي مُدِّنَا، وَصَحِّحْهَا لَنَا، وَانْقُلْ حُمَّاهَا إِلَى الجُحْفَةِ»، قَالَتْ: وَقَدِمْنَا المَدِينَةَ وَهِيَ أَوْبَأُ أَرْضِ اللَّهِ، قَالَتْ: فَكَانَ بُطْحَانُ يَجْرِي نَجْلًا تَعْنِي مَاءً آجِنًا.

‘আয়িশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদীনায় আগমন করলে আবূ বকর ও বিলাল রাদিয়াল্লাহু আনহুমা জ্বরাক্রান্ত হয়ে পড়লেন। আবূ বাকর রাদিয়াল্লাহু আনহু জ্বরাক্রান্ত হয়ে পড়লে তিনি এ কবিতা অংশটি আবৃত্তি করতেন,

“প্রত্যেক ব্যক্তিই তাঁর পরিবার ও স্বজনদের মাঝে দিন কাটাচ্ছেন, অথচ মৃত্যু তাঁর জূতার ফিতা চেয়েও অধিক নিকটবর্তী”।

আর বিলাল রাদিয়াল্লাহু আনহু জ্বর উপশম হলে উচ্চস্বরে এ কবিতা অংশ আবৃত্তি করতেন,

হায়, আমি যদি মক্কার প্রান্তরে একটি রাত কাটাতে পারতাম এমনভাবে যে, আমার চারদিকে থাকবে ইযখির এবং জালীল নামক ঘাস।

মাজান্না নামক ঝর্নার পানি কোনো দিন পান করার সুযোগ পাব কি? শামা এবং তাফীল পাহাড় আবার প্রকাশিত হবে কি?

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, হে আল্লাহ্! তুমি শায়বা ইবন রাবী’আ, ‘উতবা ইবন রাবী’আ এবং উমায়্যা ইবন খালফের প্রতি লা’নত বর্ষন কর; যেমনি ভাবে তাঁরা আমাদেরকে আমাদের মাতৃভূমি থেকে বের করে মহামারির দেশে ঠেলে দিয়েছে। এরপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দো‘আ করলেন, হে আল্লাহ! মদীনাকে আমাদের নিকট প্রিয় বানিয়ে দাও যেমন মক্কা আমাদের নিকট প্রিয় বা এর চেয়ে বেশী। হে আল্লাহ! আমাদের সা’ ও মুদে বরকত দান কর এবং মদীনাকে আমাদের জন্য স্বাস্থ্যকর বানিয়ে দাও। স্থানান্তরিত করে দাও জুহফাতে এর জ্বরের প্রকোপ বা মহামারীকে। ‘আয়িশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেন, আমরা যখন মদীনা এসেছিলাম তখন তা ছিল আল্লাহর যমীনে সর্বাপেক্ষা অধিক মহামারীর স্থান। তিনি আরো বলেন, সে সময় মদীনায় বুথান নামক একটি ঝর্না ছিল যার থেকে বিকৃত ও বর্ন স্বাদের পানি প্রবাহিত হত।[208]

عَنْ أَنَسٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، دَخَلَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، عَلَى أُمِّ سُلَيْمٍ، فَأَتَتْهُ بِتَمْرٍ وَسَمْنٍ، قَالَ: «أَعِيدُوا سَمْنَكُمْ فِي سِقَائِهِ، وَتَمْرَكُمْ فِي وِعَائِهِ، فَإِنِّي صَائِمٌ» ثُمَّ قَامَ إِلَى نَاحِيَةٍ مِنَ البَيْتِ، فَصَلَّى غَيْرَ المَكْتُوبَةِ، فَدَعَا لِأُمِّ سُلَيْمٍ وَأَهْلِ بَيْتِهَا، فَقَالَتْ أُمُّ سُلَيْمٍ: يَا رَسُولَ اللَّهِ، إِنَّ لِي خُوَيْصَّةً، قَالَ: «مَا هِيَ؟»، قَالَتْ: خَادِمُكَ أَنَسٌ، فَمَا تَرَكَ خَيْرَ آخِرَةٍ وَلاَ دُنْيَا إِلَّا دَعَا لِي بِهِ، قَالَ: «اللَّهُمَّ ارْزُقْهُ مَالًا وَوَلَدًا، وَبَارِكْ لَهُ فِيهِ»، فَإِنِّي لَمِنْ أَكْثَرِ الأَنْصَارِ مَالًا، وَحَدَّثَتْنِي ابْنَتِي أُمَيْنَةُ: أَنَّهُ دُفِنَ لِصُلْبِي مَقْدَمَ حَجَّاجٍ البَصْرَةَ بِضْعٌ وَعِشْرُونَ وَمِائَةٌ، حَدَّثَنَا ابْنُ أَبِي مَرْيَمَ، أَخْبَرَنَا يَحْيَى بْنُ أَيُّوبَ، قَالَ: حَدَّثَنِي حُمَيْدٌ، سَمِعَ أَنَسًا رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ.

আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (আমার মাতা) উম্মে সুলাইম রাদিয়াল্লাহু আনহার ঘরে আগমান করলেন। তিনি তাঁর সামনে খেজুর ও ঘি পেশ করলেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: তোমাদের ঘি মশকে এবং খেজুর তার বরতনে রেখে দাও। কারণ আমি সায়িম। এরপর তিনি ঘরের এক পাশে গিয়ে নফল সালাত আদায় করলেন এবং উম্মে সুলাইম রাদিয়াল্লাহু আনহা ও তাঁর পরিজনের জন্য দো‘আ করলেন। উম্মে সুলাইম রাদিয়াল্লাহু আনহা আরয করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমার একটি ছোট ছেলে আছে। তিনি বললেন: কে সে? উম্মে সুলাইম রাদিয়াল্লাহু আনহা বললেন, আপনার খাদেম আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার জন্য দুনিয়া ও আখেরাতের যাবতীয় কল্যানের দো‘আ করলেন। তিনি বললেন: হে আল্লাহ! তুমি তাকে মাল ও সন্তান-সন্ততি দান কর এবং তাকে বরকত দাও। আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, আমি আনসারগণের মধ্যে অধিক সম্পদশালীদের একজন। রাবী বলেন, আমার কন্যা উমাইনা আমাকে জানিয়েছে যে, হাজ্জাজ (ইবন ইউসুফ) - এর বসরায় আগমনের পূর্ব পর্যন্ত একশত বিশের অধিক আমার সন্তান মারা গেছে। ইবন আবূ মারইয়াম (রহ.) .....হুমায়দ (রহ.) এর সূত্রে আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহুকে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে হাদীস বর্ণনা করতে শুনেছেন।[209]

عَنْ سَلَمَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، قَالَ: خَفَّتْ أَزْوَادُ القَوْمِ، وَأَمْلَقُوا، فَأَتَوُا النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي نَحْرِ إِبِلِهِمْ، فَأَذِنَ لَهُمْ، فَلَقِيَهُمْ عُمَرُ، فَأَخْبَرُوهُ فَقَالَ: مَا بَقَاؤُكُمْ بَعْدَ إِبِلِكُمْ، فَدَخَلَ عَلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَقَالَ: يَا رَسُولَ اللَّهِ، مَا بَقَاؤُهُمْ بَعْدَ إِبِلِهِمْ، فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «نَادِ فِي النَّاسِ، فَيَأْتُونَ بِفَضْلِ أَزْوَادِهِمْ»، فَبُسِطَ لِذَلِكَ نِطَعٌ، وَجَعَلُوهُ عَلَى النِّطَعِ، فَقَامَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَدَعَا وَبَرَّكَ عَلَيْهِ، ثُمَّ دَعَاهُمْ بِأَوْعِيَتِهِمْ، فَاحْتَثَى النَّاسُ حَتَّى فَرَغُوا، ثُمَّ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «أَشْهَدُ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ، وَأَنِّي رَسُولُ اللَّهِ».

সালামা ইবন আকওয়া রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, কোনো এক সফরে লোকদের পাথেয় কমে গিয়েছিল এবং তারা অভাবগ্রস্থ হয়ে পড়লেন। তখন তারা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট তাদের উট যবেহ করার অনুমতি দেওয়ার জন্য এলেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের অনুমতি দিলেন। তারপরে তাদের সঙ্গে উমর রাদিয়াল্লাহু আনহুর সাক্ষাৎ হলে তারা তাঁকে এ খবর দিলেন। তিনি বললেন, উট শেষ হয়ে যাবার পর তোমাদের বাঁচার কি উপায় থাকবে? তারপর উমর রাদিয়াল্লাহু আনহু নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে এসে বললেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! উট শেষ হয়ে যাবার পর বাঁচার কি উপায় হবে? তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, লোকদের কাছে ঘোষণা করে দাও যে, যাদের কাছে অতিরিক্ত যে খাদ্য সামগ্রী আছে, তা যেন আমার কাছে নিয়ে আসে। এর জন্য একটা চামড়া বিছিয়ে দেওয়া হল। তারা সেই চামড়ার উপর তা রাখলেন। তারপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দাঁড়িয়ে তাতে বরকতের জন্য দো‘আ করলেন। এরপর তিনি তাদেরকে তাদের পাত্রগুলো নিয়ে আসতে বললেন, লোকেরা দু’হাত ভর্তি করে করে নিল। সবার নেওয়া শেষ হলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ব্যতীত কোনো ইলাহ নাই এবং নিশ্চয়ই আমি আল্লাহর রাসূল।[210]

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، أَوْ عَنْ أَبِي سَعِيدٍ - شَكَّ الْأَعْمَشُ - قَالَ: لَمَّا كَانَ غَزْوَةُ تَبُوكَ أَصَابَ النَّاسَ مَجَاعَةٌ، قَالُوا: يَا رَسُولَ اللهِ، لَوْ أَذِنْتَ لَنَا فَنَحَرْنَا نَوَاضِحَنَا، فَأَكَلْنَا وَادَّهَنَّا، فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «افْعَلُوا»، قَالَ: فَجَاءَ عُمَرُ، فَقَالَ: يَا رَسُولَ اللهِ، إِنْ فَعَلْتَ قَلَّ الظَّهْرُ، وَلَكِنْ ادْعُهُمْ بِفَضْلِ أَزْوَادِهِمْ، ثُمَّ ادْعُ اللهَ لَهُمْ عَلَيْهَا بِالْبَرَكَةِ، لَعَلَّ اللهَ أَنْ يَجْعَلَ فِي ذَلِكَ، فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «نَعَمْ»، قَالَ: فَدَعَا بِنِطَعٍ، فَبَسَطَهُ، ثُمَّ دَعَا بِفَضْلِ أَزْوَادِهِمْ، قَالَ: فَجَعَلَ الرَّجُلُ يَجِيءُ بِكَفِّ ذُرَةٍ، قَالَ: وَيَجِيءُ الْآخَرُ بِكَفِّ تَمْرٍ، قَالَ: وَيَجِيءُ الْآخَرُ بِكَسْرَةٍ حَتَّى اجْتَمَعَ عَلَى النِّطَعِ مِنْ ذَلِكَ شَيْءٌ يَسِيرٌ، قَالَ: فَدَعَا رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَلَيْهِ بِالْبَرَكَةِ، ثُمَّ قَالَ: «خُذُوا فِي أَوْعِيَتِكُمْ»، قَالَ: فَأَخَذُوا فِي أَوْعِيَتِهِمْ، حَتَّى مَا تَرَكُوا فِي الْعَسْكَرِ وِعَاءً إِلَّا مَلَئُوهُ، قَالَ: فَأَكَلُوا حَتَّى شَبِعُوا، وَفَضَلَتْ فَضْلَةٌ، فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «أَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ، وَأَنِّي رَسُولُ اللهِ، لَا يَلْقَى اللهَ بِهِمَا عَبْدٌ غَيْرَ شَاكٍّ، فَيُحْجَبَ عَنِ الْجَنَّةِ».

আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু অথবা আবু সাঈদ খূদরী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণনা করেন, (সন্দেহ রাবী ‘আমাশের) তাবুকের যুদ্ধের সময়ে লোকেরা দারুণ খাদ্যাভাবে পতিত হলো । তারা আরয করল, ইয়া রাসুলুল্লাহ! যদি আপনি অনুমতি দেন, তাহলে আমরা আমাদের উটগুলো যবেহ করে তার গোশত খাই এবং আর চর্বি ব্যবহার করি। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, যবেহ করতে পার। রাবী বলেন, ইত্যবসরে উমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু আসলেন এবং আরয করলেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ! যদি এরূপ করা হয়, তাহলে বাহন কমে যাবে বরং আপনি লোকদেরকে তাদের উদ্বৃত্ত রসদ নিয়ে উপস্হিত হতে বলুন, তাতে তাদের জন্য আল্লাহর দরবারে বরকতের দো‘আ করুন। আশা করা যায়, আল্লাহ তাতে বরকত দিবেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হ্যাঁ, ঠিক আছে। একটি দস্তরখান আনতে বললেন এবং তা বিছালেন, এরপর সকলের উদ্বৃত্ত রসদ চেয়ে পাঠালেন। রাবী বলেন, তখন কেউ একমুঠো গম নিয়ে হাযির হলো, কেউ একমুঠো খেজুর নিয়ে হাযির হলো, কেউ এক টুকরা রুটি নিয়ে আসল, এভাবে কিছু পরিমাণ রসদ-সামগ্রী দস্তরখানায় জমা হলো। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বরকতের দো‘আ করলেন। তারপর বললেন, তোমরা নিজ নিজ পাত্রে রসদপত্র ভর্তি করে নাও। সকলেই নিজ নিজ পাত্র ভরে নিল, এমনকি এ বাহিনীর কোনো পাত্রই আর অপূর্ণ রইল না। এরপর সকলে পরিতৃপ্ত হয়ে আহার করলেন। কিছু উদ্বৃত্তও রয়ে গেল। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া কোনো ইলাহ নেই এবং আমি আল্লাহর প্রেরিত রাসুল-যে ব্যক্তি সন্দেহাতীতভাবে এ কথা দু’টির উপর বিশ্বাস রেখে আল্লাহর কাছে উপস্থিত হবে, সে জান্নাত থেকে বঞ্চিত হবে না। [211]

عَنْ زُهْرَةَ بْنِ مَعْبَدٍ، عَنْ جَدِّهِ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ هِشَامٍ، وَكَانَ قَدْ أَدْرَكَ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، وَذَهَبَتْ بِهِ أُمُّهُ زَيْنَبُ بِنْتُ حُمَيْدٍ إِلَى رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَقَالَتْ: يَا رَسُولَ اللَّهِ بَايِعْهُ، فَقَالَ: «هُوَ صَغِيرٌ فَمَسَحَ رَأْسَهُ وَدَعَا لَهُ» وَعَنْ زُهْرَةَ بْنِ مَعْبَدٍ، أَنَّهُ كَانَ يَخْرُجُ بِهِ جَدُّهُ عَبْدُ اللَّهِ بْنُ هِشَامٍ إِلَى السُّوقِ، فَيَشْتَرِي الطَّعَامَ، فَيَلْقَاهُ ابْنُ عُمَرَ، وَابْنُ الزُّبَيْرِ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا، فَيَقُولاَنِ لَهُ: «أَشْرِكْنَا فَإِنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَدْ دَعَا لَكَ بِالْبَرَكَةِ»، فَيَشْرَكُهُمْ، فَرُبَّمَا أَصَابَ الرَّاحِلَةَ كَمَا هِيَ، فَيَبْعَثُ بِهَا إِلَى المَنْزِلِ.

আবদুল্লাহ ইবন হিশাম রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাক্ষাৎ পেয়েছিলেন। তার মা যায়নাব বিনতে হুমাইদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা একবার তাকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট নিয়ে গেলেন এবং বললেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! একে বাই‘আত করে নিন। তিনি বললেন যে তো ছোট। তখন তিনি তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন ও তাঁর জন্য দো‘আ করলেন। যুহরা ইবন ‘মাবাদ রহ. থেকে আরো বর্ণিত আছে যে, তার দাদা আবদুল্লাহ ইবন হিশাম রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু তাকে নিয়ে বাজারে যেতেন, খাদ্য সামগ্রী খরিদ করতেন। পথে ইবন উমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু ও ইবন যুবায়ের রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর সাথে দেখা হলে তারা তাকে বলতেন (আপনার সাথে ব্যবসায়) আমাদেরও শরীক করে নন। কেননা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আপনার জন্য বরকতের দো‘আ করেছেন। এ কথায় তিনি তাদের শরীক করে নিতেন। অনেক সময় (লভ্যাংশ হিসাবে) এক উট বোঝাই মাল তিনি ভাগে পেতেন আর তা বাড়ীতে পাঠিয়ে দিতেন।[212]

قَالَ أَبُو هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ: قَدِمَ طُفَيْلُ بْنُ عَمْرٍو الدَّوْسِيُّ وَأَصْحَابُهُ، عَلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَقَالُوا: يَا رَسُولَ اللَّهِ، إِنَّ دَوْسًا عَصَتْ وَأَبَتْ، فَادْعُ اللَّهَ عَلَيْهَا، فَقِيلَ: هَلَكَتْ دَوْسٌ، قَالَ: «اللَّهُمَّ اهْدِ دَوْسًا وَأْتِ بِهِمْ».

 

আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, তুফাইল ইবন আম্‌র দাওসী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু ও তাঁর সঙ্গীরা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে এস বলল, ‘ইয়া রাসূলাল্লাহ! দাওস গোত্রের লোকেরা ইসলাম গ্রহণে অবাধ্য হয়েছে ও অস্বীকার করেছে। আপনি তাদের বিরুদ্ধে দো‘আ করুন’। তারপর বলা হলো, দাওস গোত্র ধ্বংস হোক। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ইয়া আল্লাহ! আপনি দাওস গোত্রকে হিদায়াত করুন এবং তাদের (ইসলামে) নিয়ে আসুন’।[213]

عَنْ سَهْلِ بْنِ سَعْدٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، سَمِعَ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، يَقُولُ: يَوْمَ خَيْبَرَ: «لَأُعْطِيَنَّ الرَّايَةَ رَجُلًا يَفْتَحُ اللَّهُ عَلَى يَدَيْهِ»، فَقَامُوا يَرْجُونَ لِذَلِكَ أَيُّهُمْ يُعْطَى، فَغَدَوْا وَكُلُّهُمْ يَرْجُو أَنْ يُعْطَى، فَقَالَ: «أَيْنَ عَلِيٌّ؟»، فَقِيلَ: يَشْتَكِي عَيْنَيْهِ، فَأَمَرَ، فَدُعِيَ لَهُ، فَبَصَقَ فِي عَيْنَيْهِ، فَبَرَأَ مَكَانَهُ حَتَّى كَأَنَّهُ لَمْ يَكُنْ بِهِ شَيْءٌ، فَقَالَ: نُقَاتِلُهُمْ حَتَّى يَكُونُوا مِثْلَنَا؟ فَقَالَ: «عَلَى رِسْلِكَ، حَتَّى تَنْزِلَ بِسَاحَتِهِمْ، ثُمَّ ادْعُهُمْ إِلَى الإِسْلاَمِ، وَأَخْبِرْهُمْ بِمَا يَجِبُ عَلَيْهِمْ، فَوَاللَّهِ لَأَنْ يُهْدَى بِكَ رَجُلٌ وَاحِدٌ خَيْرٌ لَكَ مِنْ حُمْرِ النَّعَمِ».

সাহল রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খায়বর যুদ্ধের দিন বলেন, আগামীকাল আমি এমন এক ব্যক্তির হাতে পতাকা দিব, যার হাতে আল্লাহ তা‘আলা বিজয় দান করবেন। সে আল্লাহ ও তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে ভালবাসে, আর আল্লাহ তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে ভালবাসেন। লোকেরা এ চিন্তায় সারা রাত কাটিয়ে দেয় যে, কাকে এ পতাকা দেওয়া হয়? আর পর দিন সকালে প্রত্যেকেই তা পাওয়ার আকাঙ্খা পোষণ করে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আলী কোথায়? বলা হল, তাঁর চোখে অসুখ। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর চোখে মুখের লালা লাগিয়ে দিলেন এবং তাঁর জন্য দো‘আ করলেন। তাতে তিনি আরোগ্য লাভ করলেন। যেন আদৌ তাঁর চোখে কোনো রোগই ছিল না। তারপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর হাতে পতাকা দিলেন। আলী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু জিজ্ঞাসা করলেন, আমি তাদের সাথে ততক্ষণ যুদ্ধ চালিয়ে যাব যতক্ষণ না তারা আমাদেরও মত হয়ে যায়। তিনি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘তুমি স্বাভাবিকভাবে অগ্রসর হয়ে তাদেরও আঙ্গিনায় অবতরণ কর। তারপর তাদেরকে ইসলামের প্রতি আহবান কর এবং ইসলাম গ্রহণ করার পর তাদেও জন্য যা অপিরহার্য তা তাদেরকে জানিয়ে দাও। আল্লাহর কসম! আল্লাহ তা‘আলা যদি তোমার মাধ্যমে এক ব্যক্তিকে হেদায়েত দান করেন, তবে তা তোমার জন্য লালবর্ণের উটের মালিক হওয়া অপেক্ষা উত্তম।[214]

عَنْ جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا، قَالَ: غَزَوْتُ مَعَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قَالَ: فَتَلاَحَقَ بِيَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، وَأَنَا عَلَى نَاضِحٍ لَنَا، قَدْ أَعْيَا فَلاَ يَكَادُ يَسِيرُ، فَقَالَ لِي: «مَا لِبَعِيرِكَ؟»، قَالَ: قُلْتُ: عَيِيَ، قَالَ: فَتَخَلَّفَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَزَجَرَهُ، وَدَعَا لَهُ، فَمَا زَالَ بَيْنَ يَدَيِ الإِبِلِ قُدَّامَهَا يَسِيرُ، فَقَالَ لِي: «كَيْفَ تَرَى بَعِيرَكَ؟»، قَالَ: قُلْتُ: بِخَيْرٍ، قَدْ أَصَابَتْهُ بَرَكَتُكَ، قَالَ: «أَفَتَبِيعُنِيهِ؟» قَالَ: فَاسْتَحْيَيْتُ وَلَمْ يَكُنْ لَنَا نَاضِحٌ غَيْرُهُ، قَالَ: فَقُلْتُ: نَعَمْ، قَالَ: فَبِعْنِيهِ، فَبِعْتُهُ إِيَّاهُ عَلَى أَنَّ لِي فَقَارَ ظَهْرهِ، حَتَّى أَبْلُغَ المَدِينَةَ قَالَ: فَقُلْتُ: يَا رَسُولَ اللَّهِ إِنِّي عَرُوسٌ، فَاسْتَأْذَنْتُهُ، فَأَذِنَ لِي، فَتَقَدَّمْتُ النَّاسَ إِلَى المَدِينَةِ حَتَّى أَتَيْتُ المَدِينَةَ، فَلَقِيَنِي خَالِي، فَسَأَلَنِي عَنِ البَعِيرِ، فَأَخْبَرْتُهُ بِمَا صَنَعْتُ فِيهِ، فَلاَمَنِي قَالَ: وَقَدْ كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قَالَ لِي حِينَ اسْتَأْذَنْتُهُ: «هَلْ تَزَوَّجْتَ بِكْرًا أَمْ ثَيِّبًا؟»، فَقُلْتُ: تَزَوَّجْتُ ثَيِّبًا، فَقَالَ: «هَلَّا تَزَوَّجْتَ بِكْرًا تُلاَعِبُهَا وَتُلاَعِبُكَ»، قُلْتُ: يَا رَسُولَ اللَّهِ، تُوُفِّيَ وَالِدِي أَوِ اسْتُشْهِدَ وَلِي أَخَوَاتٌ صِغَارٌ فَكَرِهْتُ أَنْ أَتَزَوَّجَ مِثْلَهُنَّ، فَلاَ تُؤَدِّبُهُنَّ، وَلاَ تَقُومُ عَلَيْهِنَّ، فَتَزَوَّجْتُ ثَيِّبًا لِتَقُومَ عَلَيْهِنَّ وَتُؤَدِّبَهُنَّ، قَالَ: فَلَمَّا قَدِمَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ المَدِينَةَ غَدَوْتُ عَلَيْهِ بِالْبَعِيرِ، فَأَعْطَانِي ثَمَنَهُ وَرَدَّهُ عَلَيَّ قَالَ المُغِيرَةُ هَذَا فِي قَضَائِنَا حَسَنٌ لاَ نَرَى بِهِ بَأْسًا.

জাবির ইবন আবদুল্লাহ্ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সঙ্গে এক যুদ্ধে অংশগ্রহণ করি। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কিছুক্ষণ পরে এসে আমার সঙ্গে মিলিত হন; আমি তখন আমার পানি-সেচের উটনীর উপর আরোহী ছিলাম। উটনী ক্লান্ত হয়ে পড়েছিল; এটি মোটেই চলতে পারছিল না। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন, তোমার উটের কি হয়েছে? আমি বললাম, ক্লান্ত হয়ে পড়েছে। তখন রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উটনীটির পেছন দিক থেকে গিয়ে উটনী-টিকে হাঁকালেন এবং এটির জন্য দো‘আ করলেন। এরপর এটি সবক’টি উটের আগে আগে চলতে থাকে। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন, এখন তোমার উটনীটির কিরূপ মনে হচ্ছে? আমি বললাম, ভালই। এটি আপনার বরকত লাভ করেছে। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তুমি কি এটি আমার নিকট বিক্রয় করবে? তিনি বলেন, আমি মনে মনে লজ্জাবোধ করলাম। (কারণ) আমার নিকট এ উটটি ব্যতীত পানি বহনকারী অন্য কোনো উটনী ছিল না। আমি বললাম, হ্যাঁ (বিক্রয় করব)। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তাহলে আমার নিকট বিক্রয় কর। অনন্তর আমি উটনীটি তাঁর নিকট এ শর্তে বিক্রয় করলাম যে, মদীনায় পৌছা পর্যন্ত এর উপর আরোহন করব। আমি বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ্! আমি সদ্য বিবাহিত একজন পুরুষ। তারপর আমি তাঁর নিকট অনুমতি চাইলাম। তিনি আমাকে অনুমতি দিলেন। আমি লোকদের আগে আগে চললাম এবং মদীনায় পৌছে গেলাম। তখন আমার মামা আমার সঙ্গে সাক্ষাত করলেন। তিনি আমাকে উটনী সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলেন। আমি তাকে সে বিষয়ে অবহিত করলাম যা আমি করেছিলাম। তিনি আমাকে তিরস্কার করলেন। তিনি (রাবী) বলেন, আর যখন আমি রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট অনুমতি চেয়েছিলাম, তখন তিনি আমাকে প্রশ্ন করেছিলেন, তুমি কি কুমারী বিবাহ করেছ, না এমন মহিলাকে বিবাহ করেছ যার পূর্বে বিবাহ হয়েছিল? আমি বললাম, এমন মহিলাকে বিবাহ করেছি যার পূর্বে বিবাহ হয়েছে। তিনি বললেন, তুমি কুমারী বিবাহ করলে না কেন? তুমি তার সঙ্গে খেলাধূলা করতে এবং সেও তোমার সঙ্গে খেলাধূলা করত। আমি বললাম, ইয়া রাসূলুল্লাহ্! আমার পিতা শহীদ হয়েছেন। আমার কয়েকজন ছোট ছোট বোন রয়েছে। তাই আমি তাদের সমবয়সের কোনো মেয়ে বিবাহ করা পছন্দ করিনি; যে তাদেরকে আদব-আখলাক শিক্ষা দিতে পারবে না এবং তাদের দেখাশোনা করতে পারবে না। তাই আমি একজন পূর্ব বিবাহ হয়েছে এমন মহিলাকে বিবাহ করেছি; যাতে সে তাদের দেখাশুনা করতে পারে এবং তাদেরকে আদব-কায়দা শিক্ষা দিতে পারে। তিনি বলেন, যখন রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদীনায় আসেন, পরদিন আমি তাঁর নিকট উটনীটি নিয়ে উপস্থিত হলাম। তিনি আমাকে এর মূল্য দিলেন এবং উটটিও ফেরত দিলেন। মুগীরা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, আমাদের বিবেচনায় এটি উত্তম। আমরা এতে কোনো দোষ মনে করি না।[215]

عَنْ البَرَاء بْن عَازِبٍ، يَقُولُ: جَاءَ أَبُو بَكْرٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، إِلَى أَبِي فِي مَنْزِلِهِ، فَاشْتَرَى مِنْهُ رَحْلًا، فَقَالَ لِعَازِبٍ: ابْعَثِ ابْنَكَ يَحْمِلْهُ مَعِي، قَالَ: فَحَمَلْتُهُ مَعَهُ، وَخَرَجَ أَبِي يَنْتَقِدُ ثَمَنَهُ، فَقَالَ لَهُ أَبِي: يَا أَبَا بَكْرٍ، حَدِّثْنِي كَيْفَ صَنَعْتُمَا حِينَ سَرَيْتَ مَعَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قَالَ: نَعَمْ، أَسْرَيْنَا لَيْلَتَنَا وَمِنَ الغَدِ، حَتَّى قَامَ قَائِمُ الظَّهِيرَةِ وَخَلاَ الطَّرِيقُ لاَ يَمُرُّ فِيهِ أَحَدٌ، فَرُفِعَتْ لَنَا صَخْرَةٌ طَوِيلَةٌ لَهَا ظِلٌّ، لَمْ تَأْتِ عَلَيْهِ الشَّمْسُ، فَنَزَلْنَا عِنْدَهُ، وَسَوَّيْتُ لِلنَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَكَانًا بِيَدِي يَنَامُ عَلَيْهِ، وَبَسَطْتُ فِيهِ فَرْوَةً، وَقُلْتُ: نَمْ يَا رَسُولَ اللَّهِ وَأَنَا أَنْفُضُ لَكَ مَا حَوْلَكَ، فَنَامَ وَخَرَجْتُ أَنْفُضُ مَا حَوْلَهُ، فَإِذَا أَنَا بِرَاعٍ مُقْبِلٍ بِغَنَمِهِ إِلَى الصَّخْرَةِ، يُرِيدُ مِنْهَا مِثْلَ الَّذِي أَرَدْنَا، فَقُلْتُ لَهُ: لِمَنْ أَنْتَ يَا غُلاَمُ، فَقَالَ: لِرَجُلٍ مِنْ أَهْلِ المَدِينَةِ، أَوْ مَكَّةَ، قُلْتُ: أَفِي غَنَمِكَ لَبَنٌ؟ قَالَ: نَعَمْ، قُلْتُ: أَفَتَحْلُبُ، قَالَ: نَعَمْ، فَأَخَذَ شَاةً، فَقُلْتُ: انْفُضِ الضَّرْعَ مِنَ التُّرَابِ وَالشَّعَرِ وَالقَذَى، قَالَ: فَرَأَيْتُ البَرَاءَ يَضْرِبُ إِحْدَى يَدَيْهِ عَلَى الأُخْرَى يَنْفُضُ، فَحَلَبَ فِي قَعْبٍ كُثْبَةً مِنْ لَبَنٍ، وَمَعِي إِدَاوَةٌ حَمَلْتُهَا لِلنَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَرْتَوِي مِنْهَا، يَشْرَبُ وَيَتَوَضَّأُ، فَأَتَيْتُ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَكَرِهْتُ أَنْ أُوقِظَهُ، فَوَافَقْتُهُ حِينَ اسْتَيْقَظَ، فَصَبَبْتُ مِنَ المَاءِ عَلَى اللَّبَنِ حَتَّى بَرَدَ أَسْفَلُهُ، فَقُلْتُ: اشْرَبْ يَا رَسُولَ اللَّهِ، قَالَ: فَشَرِبَ حَتَّى رَضِيتُ، ثُمَّ قَالَ: «أَلَمْ يَأْنِ لِلرَّحِيلِ» قُلْتُ: بَلَى، قَالَ: فَارْتَحَلْنَا بَعْدَمَا مَالَتِ الشَّمْسُ، وَاتَّبَعَنَا سُرَاقَةُ بْنُ مَالِكٍ، فَقُلْتُ: أُتِينَا يَا رَسُولَ اللَّهِ، فَقَالَ: «لاَ تَحْزَنْ إِنَّ اللَّهَ مَعَنَا» فَدَعَا عَلَيْهِ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَارْتَطَمَتْ بِهِ فَرَسُهُ إِلَى بَطْنِهَا - أُرَى - فِي جَلَدٍ مِنَ الأَرْضِ، - شَكَّ زُهَيْرٌ - فَقَالَ: إِنِّي أُرَاكُمَا قَدْ دَعَوْتُمَا عَلَيَّ، فَادْعُوَا لِي، فَاللَّهُ لَكُمَا أَنْ أَرُدَّ عَنْكُمَا الطَّلَبَ، فَدَعَا لَهُ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَنَجَا، فَجَعَلَ لاَ يَلْقَى أَحَدًا إِلَّا قَالَ: قَدْ كَفَيْتُكُمْ مَا هُنَا، فَلاَ يَلْقَى أَحَدًا إِلَّا رَدَّهُ، قَالَ: وَوَفَى لَنَا.

বারা ইবন আযিব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদিন আবু বকর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু আমার পিতার নিকট আমাদের বাড়িতে আসলেন। তিনি আমার পিতার নিকট থেকে একটি হাওদা ক্রয় করলেন এবং আমার পিতাকে বললেন, তোমার ছেলে বারাকে আমার সাথে হাওদাটি বয়ে নিয়ে যেতে বল। আমি হাওদাটি বহন করে তাঁর সাথে চললাম। আমার পিতাও উহার মূল্য গ্রহণ করার জন্য আমাদের সঙ্গী হলেন। আমার পিতা তাঁকে বললেন, হে আবু বকর, দয়া করে আপনি আমাদেরকে বলুন, আপনারা কি করেছিলেন, যে রাতে (হিজরতের সময়) আপনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথী ছিলেন। তিনি বললেন, হ্যাঁ, অবশ্যই। আমরা (সাওর গুহা থেকে বের হয়ে) সারারাত চলে পরদিন দুপুর পর্যন্ত চললাম। যখন রাস্তাঘাট জনশূন্য হয়ে পড়ল, রাস্তায় কোনো মানুষের যাতায়াত ছিল না। হঠাৎ একটি লম্বা ও চওড়া পাথর আমাদের নযরে পড়লো, যার পতিত ছায়ায় সূর্যের তাপ প্রবেশ করছিল না। আমরা সেখানে গিয়ে অবতরণ করলাম। আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জন্য নিজ হাতে একটি জায়গা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে নিলাম, যাতে সেখানে তিনি ঘুমাতে পারেন। আমি ঐ স্থানে একটি চামড়ার বিছানা পেতে দিলাম এবং বললাম, ইয়া রাসূলুল্লাহ! আপনি শুয়ে পড়ুন। আমি আপনার নিরাপত্তার জন্য পাহারায় নিযুক্ত রইলাম। তিনি শুয়ে পড়লেন। আর আমি চারপাশের অবস্থা পর্যবেক্ষণের জন্য বেরিয়ে পড়লাম। হঠাৎ দেখতে পেলাম, একজন মেষ রাখাল তার মেষপাল নিয়ে পাথরের দিকে ছুটে আসছে। সেও আমাদের মত পাথরের ছায়ায় আশ্রয় নিতে চায়। আমি বললাম, হে যুবক, তুমি কার অধীনস্থ রাখাল? সে মদীনার কি মক্কার এক ব্যক্তির নাম বলল, আমি জিজ্ঞাসা করলাম, তোমার মেষপালে কি দুগ্ধবতী মেষ আছে? সে বলল, হ্যাঁ আছে। আমি বললাম, তুমি কি দোহন করে দিবে? সে বলল, হ্যাঁ। তারপর সে একটি বকরী ধরে নিয়ে এল। আমি বললাম, এর স্তন ধুলা-বালু, পশম ও ময়লা থেকে পরিষ্কার করে নাও। রাবী আবু ইসহাক (রহ.) বলেন, আমি বারা’কে দেখলাম এক হাত অপর হাতের উপর রেখে ঝাড়ছেন। তারপর ঐ যুবক একটি কাঠের বাটিতে কিছু দুধ দোহন করল। আমার সাথেও একটি চামড়ার পাত্র ছিল।আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অজুর পানি ও পান করার পানি রাখার জন্য নিয়েছিলাম। আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট আসলাম। (তিনি ঘুমিয়ে ছিলেন) তাঁকে জাগানো উচিৎ মনে করলাম না। কিছুক্ষণ পর তিনি জেগে উঠলেন। আমি দুধ নিয়ে হাজির হলাম। আমি দুধের মধ্যে সামান্য পানি ঢেলেছিলাম তাতে দুধের নীচ পর্যন্ত ঠান্ডা হয়ে গেল। আমি বললাম, ইয়া রাসূলুল্লাহ! আপনি দুধ পান করুন। তিনি পান করলেন, আমি তাতে সন্তুষ্ট হয়ে গেলাম। তারপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এখনও কি আমাদের যাত্রা শুরুর সময় হয়নি? আমি বললাম, হ্যাঁ হয়েছে। পুনরায় শুরু হল আমাদের যাত্রা। ততক্ষণে সূর্য পশ্চিম আকাশে ঢলে পড়েছে। সুরাকা ইবন মালিক (অশ্বারোহণে) আমাদের পশ্চাদ্ধাবন করছিল। আমি বললাম, ইয়া রাসূলুল্লাহ! আমাদের অনুধাবনে কে যেন আসছে। তিনি বললেন, চিন্তা করোনা, নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ আমাদের সাথে রয়েছেন। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর বিরুদ্ধে দো‘আ করলেন। তৎক্ষণাৎ আরোহীসহ ঘোড়া তাঁর পেট পর্যন্ত মাটিতে ধেবে গেল, শক্ত মাটিতে। রাবী যুহায়র এই শব্দটি সম্পর্কে সন্দেহ প্রকাশ করে বলেন, আমার ধারণা এরূপ শব্দ বলেছিলেন। সুরাকা বলল, আমার বিশ্বাস আপনারা আমার বিরুদ্ধে দো‘আ করেছেন। আমার (উদ্ধারের) জন্য আপনারা দোয়া করে দিন। আল্লাহর কসম আপনাদের আপনাদের অনুসন্ধানকারীদেরকে আমি ফিরিয়ে নিয়ে যাব। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার জন্য দো‘আ করলেন। সে রেহাই পেল। ফিরে যাওয়ার পথে যার সাথে তার সাক্ষাৎ হতো, সে বলত (এদিকে গিয়ে পশুশ্রম করো না।) আমি সব দেখে এসেছি। যাকেই পেয়েছে, ফিরিয়ে নিয়েছে। আবু বকর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, সে আমাদের সাথে কৃত অঙ্গীকার পূরণ করেছে।[216]

حَدَّثَنَا أَنَسُ بْنُ مَالِكٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، قَالَ: أَقْبَلَ نَبِيُّ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِلَى المَدِينَةِ وَهُوَ مُرْدِفٌ أَبَا بَكْرٍ، وَأَبُو بَكْرٍ شَيْخٌ يُعْرَفُ، وَنَبِيُّ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ شَابٌّ لاَ يُعْرَفُ، قَالَ: فَيَلْقَى الرَّجُلُ أَبَا بَكْرٍ فَيَقُولُ يَا أَبَا بَكْرٍ مَنْ هَذَا الرَّجُلُ الَّذِي بَيْنَ يَدَيْكَ؟ فَيَقُولُ: هَذَا الرَّجُلُ يَهْدِينِي السَّبِيلَ، قَالَ: فَيَحْسِبُ الحَاسِبُ أَنَّهُ إِنَّمَا يَعْنِي الطَّرِيقَ، وَإِنَّمَا يَعْنِي سَبِيلَ الخَيْرِ، فَالْتَفَتَ أَبُو بَكْرٍ فَإِذَا هُوَ بِفَارِسٍ قَدْ لَحِقَهُمْ، فَقَالَ: يَا رَسُولَ اللَّهِ، هَذَا فَارِسٌ قَدْ لَحِقَ بِنَا، فَالْتَفَتَ نَبِيُّ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَقَالَ: «اللَّهُمَّ اصْرَعْهُ». فَصَرَعَهُ الفَرَسُ، ثُمَّ قَامَتْ تُحَمْحِمُ، فَقَالَ: يَا نَبِيَّ اللَّهِ، مُرْنِي بِمَا شِئْتَ، قَالَ: «فَقِفْ مَكَانَكَ، لاَ تَتْرُكَنَّ أَحَدًا يَلْحَقُ بِنَا». قَالَ: " فَكَانَ أَوَّلَ النَّهَارِ جَاهِدًا عَلَى نَبِيِّ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، وَكَانَ آخِرَ النَّهَارِ مَسْلَحَةً لَهُ، فَنَزَلَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ جَانِبَ الحَرَّةِ، ثُمَّ بَعَثَ إِلَى الأَنْصَارِ فَجَاءُوا إِلَى نَبِيِّ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَأَبِي بَكْرٍ فَسَلَّمُوا عَلَيْهِمَا، وَقَالُوا: ارْكَبَا آمِنَيْنِ مُطَاعَيْنِ. فَرَكِبَ نَبِيُّ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَأَبُو بَكْرٍ، وَحَفُّوا دُونَهُمَا بِالسِّلاَحِ، فَقِيلَ فِي المَدِينَةِ: جَاءَ نَبِيُّ اللَّهِ، جَاءَ نَبِيُّ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَأَشْرَفُوا يَنْظُرُونَ وَيَقُولُونَ: جَاءَ نَبِيُّ اللَّهِ، جَاءَ نَبِيُّ اللَّهِ، فَأَقْبَلَ يَسِيرُ حَتَّى نَزَلَ جَانِبَ دَارِ أَبِي أَيُّوبَ، فَإِنَّهُ لَيُحَدِّثُ أَهْلَهُ إِذْ سَمِعَ بِهِ عَبْدُ اللَّهِ بْنُ سَلاَمٍ، وَهُوَ فِي نَخْلٍ لِأَهْلِهِ، يَخْتَرِفُ لَهُمْ، فَعَجِلَ أَنْ يَضَعَ الَّذِي يَخْتَرِفُ لَهُمْ فِيهَا، فَجَاءَ وَهِيَ مَعَهُ، فَسَمِعَ مِنْ نَبِيِّ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، ثُمَّ رَجَعَ إِلَى أَهْلِهِ، فَقَالَ نَبِيُّ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «أَيُّ بُيُوتِ أَهْلِنَا أَقْرَبُ». فَقَالَ أَبُو أَيُّوبَ: أَنَا يَا نَبِيَّ اللَّهِ، هَذِهِ دَارِي وَهَذَا بَابِي، قَالَ: «فَانْطَلِقْ فَهَيِّئْ لَنَا مَقِيلًا»، قَالَ: قُومَا عَلَى بَرَكَةِ اللَّهِ، فَلَمَّا جَاءَ نَبِيُّ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ جَاءَ عَبْدُ اللَّهِ بْنُ سَلاَمٍ فَقَالَ: أَشْهَدُ أَنَّكَ رَسُولُ اللَّهِ، وَأَنَّكَ جِئْتَ بِحَقٍّ، وَقَدْ عَلِمَتْ يَهُودُ أَنِّي سَيِّدُهُمْ وَابْنُ سَيِّدِهِمْ، وَأَعْلَمُهُمْ وَابْنُ أَعْلَمِهِمْ، فَادْعُهُمْ فَاسْأَلْهُمْ عَنِّي قَبْلَ أَنْ يَعْلَمُوا أَنِّي قَدْ أَسْلَمْتُ، فَإِنَّهُمْ إِنْ يَعْلَمُوا أَنِّي قَدْ أَسْلَمْتُ قَالُوا فِيَّ مَا لَيْسَ فِيَّ. فَأَرْسَلَ نَبِيُّ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَأَقْبَلُوا فَدَخَلُوا عَلَيْهِ، فَقَالَ لَهُمْ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «يَا مَعْشَرَ اليَهُودِ، وَيْلَكُمْ، اتَّقُوا اللَّهَ، فَوَاللَّهِ الَّذِي لاَ إِلَهَ إِلَّا هُوَ، إِنَّكُمْ لَتَعْلَمُونَ أَنِّي رَسُولُ اللَّهِ حَقًّا، وَأَنِّي جِئْتُكُمْ بِحَقٍّ، فَأَسْلِمُوا»، قَالُوا: مَا نَعْلَمُهُ، قَالُوا لِلنَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قَالَهَا ثَلاَثَ مِرَارٍ، قَالَ: «فَأَيُّ رَجُلٍ فِيكُمْ عَبْدُ اللَّهِ بْنُ سَلاَمٍ؟» قَالُوا: ذَاكَ سَيِّدُنَا وَابْنُ سَيِّدِنَا، وَأَعْلَمُنَا وَابْنُ أَعْلَمِنَا، قَالَ: «أَفَرَأَيْتُمْ إِنْ أَسْلَمَ؟»، قَالُوا: حَاشَى لِلَّهِ مَا كَانَ لِيُسْلِمَ، قَالَ: «أَفَرَأَيْتُمْ إِنْ أَسْلَمَ؟» قَالُوا: حَاشَى لِلَّهِ مَا كَانَ لِيُسْلِمَ، قَالَ: «أَفَرَأَيْتُمْ إِنْ أَسْلَمَ؟»، قَالُوا: حَاشَى لِلَّهِ مَا كَانَ لِيُسْلِمَ، قَالَ: «يَا ابْنَ سَلاَمٍ اخْرُجْ عَلَيْهِمْ»، فَخَرَجَ فَقَالَ: يَا مَعْشَرَ اليَهُودِ اتَّقُوا اللَّهَ، فَوَاللَّهِ الَّذِي لاَ إِلَهَ إِلَّا هُوَ، إِنَّكُمْ لَتَعْلَمُونَ أَنَّهُ رَسُولُ اللَّهِ، وَأَنَّهُ جَاءَ بِحَقٍّ، فَقَالُوا: كَذَبْتَ، فَأَخْرَجَهُمْ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ.

আনাস ইবন মালিক রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আল্লাহর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন মদীনায় এলেন তখন উঠের পিঠে আবূ বকর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু তাঁর পেছনে ছিলেন। আবূ বকর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু ছিলেন বয়োজ্যেষ্ঠ ও পরিচিত। আর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছিলেন (দেখতে) জাওয়ান ও অপরিচিত তখন বর্ণনাকারী বলেন, যখন আবূ বকরের সঙ্গে কারো সাক্ষাত হত, সে জিজ্ঞাসা করত হে আবু বকর, তোমার সম্মুখে বসা ঐ ব্যক্তি কে? আবূ বকর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলতেন তিনি আমার পথ প্রদর্শক। রাবী বলেন, প্রশ্নকারী সাধারণ পথ মনে করত এবং তিনি (আবূ বকর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু) সত্যপথ উদ্দেশ্যে করতেন। তারপর একবার আবূ বকর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু পিছনে তাকিয়ে হটাৎ দেখতে পেলেন একজন অশ্বারোহী তাঁদের প্রায় নিকটে এসে পড়েছে। তখন তিনি বললেন ইয়া রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! এই যে একজন অশ্বারোহী আমাদের পিছনে প্রায় নিকটে পৌঁছে গেছে। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পিছনের দিকে তাকিয়ে দো‘আ করলেন, ইয়া আল্লাহ! আপনি ওকে পাকড়াও করুন। তৎক্ষণাৎ ঘোড়াটি তাকে নীচে ফেলে দিয়ে দাঁড়িয়ে হরেষা রব করতে লাগল। তখন অশ্বারোহী বলল, ইয়া নবী আল্লাহ! আপনার যা ইচ্ছা আমাকে আদেশ করুন। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তুমি সেখানেই থেমে যাও। কেউ আমাদের দিকে আসতে চাইলে তুমি তাকে বাঁধা দিবে। বর্ণনাকারী বলেন, দিনের প্রথম ভাগে ছিল সে নবীর বিরুদ্ধে সংগ্রামকারী আর দিনের শেষ ভাগে হয়ে গেল তাঁর পক্ষ থেকে অস্ত্রধারণকারী। এরপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদীনার হারারায় একপাশে অবতরণ করলেন। এরপর আনসারদের সংবাদ দিলেন। তাঁরা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে এলেন এবং উভয়কে সালাম করে বললেন, আপনারা নিরাপদ এবং মান্য হিসেবে আরোহণ করুন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও আবূ বকর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু উটে আরোহণ করলেন আর আনসারগণ অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে তাঁদের বেষ্টন করে চলতে লাগলেন। মদীনায় লোকেরা বলতে লাগল, আল্লাহ্‌র নবী এসেছেন, আল্লাহ্‌র নবী এসেছেন, লোকজন উচু যায়গায় উঠে তাঁদের দেখতে লাগল। আর বলতে লাগল আল্লাহর নবী এসেছেন। তিনি সামনের দিকে চলতে লাগলেন। অবশেষে আবূ আইয়ুব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর বাড়ীর পাশে গিয়ে অবতরণ করলেন। আবূ আইয়ুব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু ঐ সময় তাঁর পরিবারের লোকদের সাথে কথাবার্তা বলছিলেন। ইতিমধ্যে আবদুল্লাহ ইবন সালাম তাঁর আগমনের কথা শুনলেন তখন তিনি তাঁর নিজের বাগানে খেজুর আহরণ করছিলেন। তখন তিনি তাড়াতাড়ি ফল আহরণ করা থেকে বিরত হলেন এবং আহরিত খেজুরসহ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের খেদমতে হাযির হলেন এবং নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কিছু কথাবার্তা শুনে নিজ গৃহে ফিরে গেলেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আমাদের লোকদের মধ্যে কার বাড়ী এখান থেকে সবচেয়ে নিকটবর্তী? আবূ আইয়ুব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বললেন, ইয়া নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই তো বাড়ী, এই যে তার দরজা। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তবে চল, আমাদের বিশ্রামের ব্যাবস্থা কর। তিনি বললেন আপনারা উভয়েই চলুন। আল্লাহ বরকত দানকারী। যখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর বাড়ী আসলেন। তখন আবদুল্লাহ ইবন সালাম রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু এসে হাযির হলেন এবং বললেন, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আপনি আল্লাহর রাসূল; আপনি সত্য নিয়ে এসেছেন। ইয়া রাসূলুল্লাহ! ইয়াহূদী সম্প্রদায় জানে যে আমি তাদের সর্দার এবং আমি তাঁদের সর্দারের পুত্র। আমি তাদের মধ্যে বেশী জ্ঞানী এবং তাদের বড় জ্ঞানীর সন্তান। আমি ইসলাম গ্রহণ করেছি একথাটা জানাজানি হওয়ার পূর্বে আপনি তাদের ডাকুন এবং আমার সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করুণ, আমার সম্পর্কে তাদের ধারণা অবগত হউন। কেননা তারা যদি জানতে পারে যে আমি ইসলাম গ্রহণ করেছি, তবে আমার সম্বন্ধে তারা এমন সব অলিক উক্তি করবে যে সব আমার মধ্যে নেই। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (ইয়াহূদী সম্প্রদায়কে) ডেকে পাঠালেন। তারা এসে তার কাছে হাযির হল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের বললেন, হে ইয়াহূদী সম্প্রদায়, তোমাদের উপর অভিশাপ! তোমরা সেই আল্লাহ্কে ভয় কর, তিনি ছাড়া ‘মাবুদ নেই। তোমরা নিচ্ছয়ই জান যে আমি সত্য রাসূল। সত্য নিয়েই তোমাদের নিকট এসেছি। সুতরাং তোমরা ইসলাম গ্রহণ কর। তারা উত্তর দিল, আমরা এসব জানিনা। তারা তিনবার একথা বলল। তারপর তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, তোমাদের মধ্যে আবদুল্লাহ ইবন সালাম রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু কেমন লোক? তারা উত্তর দিল, তিনি আমাদের নেতা এবং আমাদের নেতার সন্তান। তিনি আমাদের সর্বশ্রেষ্ঠ আলিম এবং সর্বশ্রেষ্ঠ আলিমের সন্তান। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তিনি যদি ইসলাম গ্রহণ করেন তবে তোমাদের মতামত কি হবে? তারা বলল, আল্লাহ হেফাজত করুন। তিনি ইসলাম গ্রহণ করবেন তা কিছুতেই হতে পারেনা। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবার বললেন, আচ্ছা বলতো, তিনি যদি মুসলিম হয়েই যান তবে তোমরা কী মনে করবে? তারা বলল, আল্লাহ্‌ রক্ষা করুন, তিনি মুসলিম হয়ে যাবেন ইহা কিছুতেই সম্ভব নয়। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হে ইবন সালাম, তুমি এদের সামনে বেরিয়ে আস। তিনি বেরিয়ে আসলেন এবং বললেন, হে ইয়াহূদী সম্প্রদায়! আল্লাহকে ভয় কর। ঐ আল্লাহ্‌র কসম, যিনি ব্যতীত কোনো মা’বুদ নেই। তোমরা নিশ্চয়ই জান তিনি সত্য রাসুল, হোক নিয়েই আগমন করেছেন। তখন তারা বলে উঠল, তুমি মিথ্যা বলছ। তারপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে বের করে দিলেন।[217]  

حَدَّثَنَا أَبُو زَيْدٍ الْأَنْصَارِيُّ، قَالَ: قَالَ لِي رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: " ادْنُ مِنِّي "، قَالَ: فَمَسَحَ بِيَدِهِ عَلَى رَأْسِهِ، وَلِحْيَتِهِ، قَالَ: ثُمَّ قَالَ: " اللهُمَّ جَمِّلْهُ، وَأَدِمْ جَمَالَهُ "، قَالَ: " فَلَقَدْ بَلَغَ بِضْعًا، وَمِائَةَ سَنَةٍ وَمَا فِي رَأْسِهِ وَلِحْيَتِهِ بَيَاضٌ، إِلَّا نَبْذٌ يَسِيرٌ، وَلَقَدْ كَانَ مُنْبَسِطَ الْوَجْهِ، وَلَمْ يَنْقَبِضْ وَجْهُهُ حَتَّى مَاتَ ".

আবু যায়েদ আনসারী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমাকে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আমার কাছে আস। তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর হাত দিয়ে তাঁর মাথা ও দাঁড়ি মাসেহ করলেন। অতঃপর বললেন, হে আল্লাহ তাকে সুন্দর করুন এবং তাঁর সৌন্দর্য স্থায়ী করুন। তিনি বলেন, তাঁর একশত বছরেরও বেশি বয়স হয়েছিল অথচ তাঁর মাথা ও দাঁড়ির চুল সামান্য পরিমাণ ছাড়া পাকেনি। তিনি প্রফুল্ল চেহারার অধিকারী ছিলেন। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তাঁর চেহারা কুঞ্চিত হয়নি। [218]

عَنْ سَلَمَةَ بْنِ الأَكْوَعِ، قَالَ: خَرَجْنَا مَعَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِلَى خَيْبَرَ، فَسِرْنَا لَيْلًا، فَقَالَ رَجُلٌ مِنَ القَوْمِ لِعَامِرِ بْنِ الأَكْوَعِ: أَلاَ تُسْمِعُنَا مِنْ هُنَيْهَاتِكَ؟ قَالَ: وَكَانَ عَامِرٌ رَجُلًا شَاعِرًا، فَنَزَلَ يَحْدُو بِالقَوْمِ يَقُولُ:

اللَّهُمَّ لَوْلاَ أَنْتَ مَا اهْتَدَيْنَا ... وَلاَ تَصَدَّقْنَا وَلاَ صَلَّيْنَا

فَاغْفِرْ فِدَاءٌ لَكَ مَا اقْتَفَيْنَا ... وَثَبِّتِ الأَقْدَامَ إِنْ لاَقَيْنَا

وَأَلْقِيَنْ سَكِينَةً عَلَيْنَا ... إِنَّا إِذَا صِيحَ بِنَا أَتَيْنَا

وَبِالصِّيَاحِ عَوَّلُوا عَلَيْنَا

فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَنْ هَذَا السَّائِقُ» قَالُوا: عَامِرُ بْنُ الأَكْوَعِ، فَقَالَ: «يَرْحَمُهُ اللَّهُ» فَقَالَ رَجُلٌ مِنَ القَوْمِ: وَجَبَتْ يَا نَبِيَّ اللَّهِ، لَوْلاَ أَمْتَعْتَنَا بِهِ، قَالَ: فَأَتَيْنَا خَيْبَرَ فَحَاصَرْنَاهُمْ، حَتَّى أَصَابَتْنَا مَخْمَصَةٌ شَدِيدَةٌ، ثُمَّ إِنَّ اللَّهَ فَتَحَهَا عَلَيْهِمْ، فَلَمَّا أَمْسَى النَّاسُ اليَوْمَ الَّذِي فُتِحَتْ عَلَيْهِمْ، أَوْقَدُوا نِيرَانًا كَثِيرَةً، فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَا هَذِهِ النِّيرَانُ، عَلَى أَيِّ شَيْءٍ تُوقِدُونَ» قَالُوا: عَلَى لَحْمٍ، قَالَ: «عَلَى أَيِّ لَحْمٍ؟» قَالُوا: عَلَى لَحْمِ حُمُرٍ إِنْسِيَّةٍ، فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «أَهْرِقُوهَا وَاكْسِرُوهَا» فَقَالَ رَجُلٌ: يَا رَسُولَ اللَّهِ أَوْ نُهَرِيقُهَا وَنَغْسِلُهَا؟ قَالَ: «أَوْ ذَاكَ» فَلَمَّا تَصَافَّ القَوْمُ، كَانَ سَيْفُ عَامِرٍ فِيهِ قِصَرٌ، فَتَنَاوَلَ بِهِ يَهُودِيًّا لِيَضْرِبَهُ، وَيَرْجِعُ ذُبَابُ سَيْفِهِ، فَأَصَابَ رُكْبَةَ عَامِرٍ فَمَاتَ مِنْهُ، فَلَمَّا قَفَلُوا قَالَ سَلَمَةُ: رَآنِي رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ شَاحِبًا، فَقَالَ لِي: «مَا لَكَ» فَقُلْتُ: فِدًى لَكَ أَبِي وَأُمِّي، زَعَمُوا أَنَّ عَامِرًا حَبِطَ عَمَلُهُ، قَالَ: «مَنْ قَالَهُ؟» قُلْتُ: قَالَهُ فُلاَنٌ وَفُلاَنٌ وَفُلاَنٌ وَأُسَيْدُ بْنُ الحُضَيْرِ الأَنْصَارِيُّ، فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «كَذَبَ مَنْ قَالَهُ، إِنَّ لَهُ لَأَجْرَيْنِ - وَجَمَعَ بَيْنَ إِصْبَعَيْهِ - إِنَّهُ لَجَاهِدٌ مُجَاهِدٌ، قَلَّ عَرَبِيٌّ نَشَأَ بِهَا مِثْلَهُ».

সালমা ইবন আকওয়া রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একবার আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সঙ্গে খায়বার অভিযানে বের হলাম। আমরা রাতের বেলায় চলছিলাম। দলের মধ্যে থেকে একজন ‘আমির ইবন আকওয়া রাদিয়াল্লাহু আনহুকে বলল যে, আপনি কি আপনার (ছোট) কবিতাগুলো থেকে কিছু পড়ে আমাদের শোনাবেন না? ‘আমির রাদিয়াল্লাহু আনহু ছিলেন একজন কবি। সুতরাং তিনি দলের লোকদের হুদী গেয়ে শোনাতে লাগলেন। ‘‘হে আল্লাহ! তুমি না হলে, আমরা হেদায়েত পেতাম না। আমরা সাদাকা দিতাম না, সালাত আদায় করতাম না। আমাদের আগেকার গুনাহ ক্ষমা করুন; যা আমরা করেছি। আমরা আপনার জন্য উৎসর্গিত। যদি আমরা শত্রুর সম্মুখীন হই, তখন আমাদের পদদ্বয় সুদৃঢ় রাখুন। আমাদের উপর শান্তি বর্ষণ করুন। শত্রুর ডাকের সময় আমরা যেন বীরের মত ধাবিত হই, যখন তারা হৈ-হুল্লোড় করে, আমাদের উপর আক্রমণ চালায়।’’ তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিজ্ঞাসা করলেন, এ উট চালক লোকটি কে? সে যে এ রকম উট চালিয়ে যাচ্ছে লোকেরা বললেন, তিনি ‘আমির ইবন আকওয়া। তিনি বললেন, আল্লাহ তার উপর রহম করুন। দলের একজন বললেন, ইয়া নবী আল্লাহ। তার জন্য তো শাহাদত নিদির্ষ্ট হয়ে গেল। হায়! যদি আমাদের এ সুযোগ দান করতেন। তারপর আমরা খায়বার পৌঁছে শত্রুদের অবরোধ করে ফেললাম। এ সময় আমরা অতিশয় ক্ষুধার্ত হয়ে পড়লাম। অবশেষে আল্লাহ (খায়বার যুদ্ধে) তাদের উপর আমাদের বিজয় দান করলেন। তারপর যেদিন খায়বার বিজিত হলো, সেদিন লোকেরা অনেক আগুন জালালো। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিজ্ঞাসা করলেন, তোমরা এত সব আগুন কি জন্য জ্বালাচ্ছ? লোকেরা বলল, গোশত রান্নার জন্য। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, কিসের গোশত? তারা বলল, গৃহপালিত গাধার গোশত। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এসব গোশত ফেলে দাও এবং হাড়িগুলো ভেঙ্গে ফেল। একব্যক্তি বলল, ইয়া রাসূলুল্লাহ! বরং গোশতগুলো ফেলে আমরা হাড়িগুলো ধুয়ে নি? তিনি বললেন, তবে তাই কর। রাবী বলেন, যখন লোকেরা যুদ্ধে সারিবদ্ধ হল। ‘আমির রাদিয়াল্লাহু আনহুর তলোয়ার খানা খাটো ছিল। তিনি এক ইয়াহূদীকে মারার উদ্দেশ্যে এটি দিয়ে তার উপর আক্রমণ করলেন। কিন্তু তার তলোয়ারের ধারালো অংশ ‘আমির রাদিয়াল্লাহু আনহুর হাটুতে এসে আঘাত করল। এতে তিনি মারা গেলেন। তারপর ফিরার সময় সবাই ফিরলেন। সালমা রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, আমার চেহারার রং পরিবর্তন দেখে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন, তোমার কি হয়েছে? আমি বললাম, আমার বাপ-মা আপনার উপর কোরবান হোক! লোকেরা বলছে যে, ‘আমিরের আমল সব বরবাদ হয়ে গেছে। তিনি বললেন, এ কথাটা কে বলেছে? আমি বললাম, অমুক, অমুক অমুক এবং উসায়দ ইবন হুয়াইর আনসারী রাদিয়াল্লাহু আনহু। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, যারা এ কথা বলেছে, তারা মিথ্যা বলেছে। তিনি বললেন, তাঁর দু’টি পুরস্কার রয়েছে, সে জাহিদ এবং মুজাহিদ। আরব ভূ-খন্ডে তাঁর মত লোক অল্পই জন্ম নিয়েছে।[219]

عَنْ جَرِيرٍ، قَالَ: قَالَ لِي رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «أَلاَ تُرِيحُنِي مِنْ ذِي الخَلَصَةِ» فَقُلْتُ: بَلَى، فَانْطَلَقْتُ فِي خَمْسِينَ وَمِائَةِ فَارِسٍ مِنْ أَحْمَسَ، وَكَانُوا أَصْحَابَ خَيْلٍ، وَكُنْتُ لاَ أَثْبُتُ عَلَى الخَيْلِ، فَذَكَرْتُ ذَلِكَ لِلنَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَضَرَبَ يَدَهُ عَلَى صَدْرِي حَتَّى رَأَيْتُ أَثَرَ يَدِهِ فِي صَدْرِي، وَقَالَ: «اللَّهُمَّ ثَبِّتْهُ، وَاجْعَلْهُ هَادِيًا مَهْدِيًّا» قَالَ: فَمَا وَقَعْتُ عَنْ فَرَسٍ بَعْدُ، قَالَ: وَكَانَ ذُو الخَلَصَةِ بَيْتًا بِاليَمَنِ لِخَثْعَمَ، وَبَجِيلَةَ، فِيهِ نُصُبٌ تُعْبَدُ، يُقَالُ لَهُ الكَعْبَةُ، قَالَ: فَأَتَاهَا فَحَرَّقَهَا بِالنَّارِ وَكَسَرَهَا، قَالَ: وَلَمَّا قَدِمَ جَرِيرٌ اليَمَنَ، كَانَ بِهَا رَجُلٌ يَسْتَقْسِمُ بِالأَزْلاَمِ، فَقِيلَ لَهُ: إِنَّ رَسُولَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ هَا هُنَا، فَإِنْ قَدَرَ عَلَيْكَ ضَرَبَ عُنُقَكَ، قَالَ: فَبَيْنَمَا هُوَ يَضْرِبُ بِهَا إِذْ وَقَفَ عَلَيْهِ جَرِيرٌ، فَقَالَ: لَتَكْسِرَنَّهَا وَلَتَشْهَدَنَّ: أَنْ لاَ إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ، أَوْ لَأَضْرِبَنَّ عُنُقَكَ؟ قَالَ: فَكَسَرَهَا وَشَهِدَ، ثُمَّ بَعَثَ جَرِيرٌ رَجُلًا مِنْ أَحْمَسَ يُكْنَى أَبَا أَرْطَاةَ إِلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُبَشِّرُهُ بِذَلِكَ، فَلَمَّا أَتَى النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: يَا رَسُولَ اللَّهِ وَالَّذِي بَعَثَكَ بِالحَقِّ، مَا جِئْتُ حَتَّى تَرَكْتُهَا كَأَنَّهَا جَمَلٌ أَجْرَبُ، قَالَ: فَبَرَّكَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَلَى خَيْلِ أَحْمَسَ وَرِجَالِهَا خَمْسَ مَرَّاتٍ.

জারীর রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমাকে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তুমি কি আমাকে যুল-খালাসার পেরেশানী থেকে স্বস্থি দেবেনা? আমি বললাম: অবশ্যই। এরপর আমি (আমাদের) আহমাস গোত্র থেকে একশত পঞ্চাশ জন অশ্বারোহী সৈনিক নিয়ে চললাম। তাদের সবাই ছিলো অশ্ব পরিচালনায় অভিজ্ঞ। কিন্তু আমি তখনো ঘোড়ার উপর স্থির হয়ে বসতে পারতাম না। তাই ব্যাপারটি রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জানালাম। তিনি তাঁর হাত দিয়ে আমার বুকের উপর আঘাত করলেন। এমনকি আমি আমার বুকে তাঁর হাতের চিহ্ন পর্যন্ত দেখতে পেলাম। তিনি দোয়া করলেন, ‘হে আল্লাহ্! একে স্থির হয়ে বসে থাকতে দিন এবং তাকে হেদায়েত দানকারী ও হেদায়েত লাভকারী বানিয়ে দিন’। জারীর রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, এরপরে আর কখনো আমি আমার ঘোড়া থেকে পড়ে যাইনি। তিনি আরো বলেছেন যে, যুল-খালাসা ছিলো ইয়ামানের অন্তর্গত খাসআম ও বাজীলা গোত্রের একটি (তীর্থ) ঘর। সেখানে কতগুলো মূর্তি স্থাপিত ছিলো। লোকেরা এগুলোর পূজা করত এবং এ ঘরটিকে বলা হতো কা’বা। রাবী বলেন, এরপর তিনি সেখানে গেলেন এবং ঘরটি আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দিলেন আর এর ভিটামাটিও চুরমার করে দিলেন। রাবী আরো বলেন, আর যখন জারীর রাদিয়াল্লাহু আনহু ইয়ামানে গিয়ে উঠলেন তখন সেখানে এক লোক থাকত, সে তীরের সাহায্যে ভাগ্য নির্নয় করত, তাকে বলা হল, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতিনিধি এখানে আছেন, তিনি যদি তোমাকে পাকড়াও করার সুযোগ পান তাহলে তোমার গর্দান উড়িয়ে দেবেন। রাবী বলেন, এরপর একদা সে ভাগ্য নির্নয়ের কাজে লিপ্ত ছিল, সেই মূহুর্তে জারীর রাদিয়াল্লাহু আনহু সেখানে পৌঁছে গেলেন। তিনি বললেন, তীরগুলো ভেঙ্গে ফেল এবং আল্লাহ্ ছাড়া অন্য কোনো উপাস্য নেই- এ কথার সাক্ষ্য দাও, অন্যথায় তোমার গর্দান উড়িয়ে দেব। লোকটি তখন তীরগুলো ভেঙ্গে ফেলল এবং (আল্লাহ্ ছাড়া কোনো ইলাহ নেই, এ কথার) সাক্ষ্য দিল। এরপর জারীর রাদিয়াল্লাহু আনহু আবু আরতাত নামক আহমাস গোত্রের এক ব্যক্তিকে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের খেদমতে পাঠালেন খোশখবরী শোনানোর জন্য। লোকটি রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে এসে বলল, ‘‘ইয়া রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! সে সত্তার (আল্লাহর) কসম করে বলছি, যিনি আপনাকে সত্য বাণী দিয়ে পাঠিয়েছেন, ঘরটিকে ঠিক খুজলি-পাঁচড়া আক্রান্ত উটের মতো কালো করে রেখে আমি এসেছি। বর্ণনাকারী বলেন, এ কথা শুনে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আহমাস গোত্রের অশ্বারোহী এবং পদাতিক সৈনিকদের সার্বিক কল্যাণ ও বরকতের জন্য পাঁচবার দোয়া করলেন।[220]

عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ، قَالَ: كَانَ ابْنٌ لِأَبِي طَلْحَةَ يَشْتَكِي، فَخَرَجَ أَبُو طَلْحَةَ، فَقُبِضَ الصَّبِيُّ، فَلَمَّا رَجَعَ أَبُو طَلْحَةَ قَالَ: مَا فَعَلَ ابْنِي؟ قَالَتْ أُمُّ سُلَيْمٍ: هُوَ أَسْكَنُ مِمَّا كَانَ، فَقَرَّبَتْ إِلَيْهِ الْعَشَاءَ فَتَعَشَّى، ثُمَّ أَصَابَ مِنْهَا، فَلَمَّا فَرَغَ قَالَتْ: وَارُوا الصَّبِيَّ، فَلَمَّا أَصْبَحَ أَبُو طَلْحَةَ أَتَى رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَأَخْبَرَهُ، فَقَالَ: «أَعْرَسْتُمُ اللَّيْلَةَ؟» قَالَ: نَعَمْ، قَالَ: «اللهُمَّ بَارِكْ لَهُمَا» فَوَلَدَتْ غُلَامًا، فَقَالَ لِي أَبُو طَلْحَةَ: احْمِلْهُ حَتَّى تَأْتِيَ بِهِ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَأَتَى بِهِ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، وَبَعَثَتْ مَعَهُ بِتَمَرَاتٍ، فَأَخَذَهُ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ: «أَمَعَهُ شَيْءٌ؟» قَالُوا: نَعَمْ، تَمَرَاتٌ، فَأَخَذَهَا النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَمَضَغَهَا، ثُمَّ أَخَذَهَا مِنْ فِيهِ، فَجَعَلَهَا فِي فِي الصَّبِيِّ ثُمَّ حَنَّكَهُ، وَسَمَّاهُ عَبْدَ اللهِ.

আনাস ইবন মালিক রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আবু তালহা রাদিয়াল্লাহু আনহুর এক ছেলে রোগে ভুগছিল। (একদিন) আবু তালহা রাদিয়াল্লাহু আনহু (তাঁর কাজে) বেরিয়ে যাওয়ার পর শিশুটি মারা যায়। যখন আবু তালহা রাদিয়াল্লাহু আনহু ফিরে এলেন, (স্ত্রীকে) জিজ্ঞাসা করলেন, আমার ছেলে কি করছে? স্ত্রী উম্মে সুলায়ম রাদিয়াল্লাহু আনহা বললেন, সে আগের চাইতে শান্ত আছে। এরপর তিনি তাঁকে রাতের খাবার দিলেন, তিনি তা খেলেন, তারপর তার সঙ্গে মিলিত হলেন। এরপর তিনি অবসর হলে উম্মে সুলায়ম রাদিয়াল্লাহু আনহা বললেন, শিশুটিকে দাফন করে এস। সকাল হলে আবু তালহা রাদিয়াল্লাহু আনহু রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের খিদমতে এসে তাঁকে (সব) ঘটনা বললেন। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, তোমরা কি আজ রাতে মিলিত হয়েছ? তিনি বললেন, হ্যাঁ। তিনি (দু‘আ করে) বললেন, ইয়া আল্লাহ। তাদের উভয়ের জন্য বরকত দিন। এরপর তার একটি ছেলে জন্ম গ্রহণ করে। তখন আবু তালহা রাদিয়াল্লাহু আনহু আমাকে বললেন, তাকে (কোলে) তুলে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের খিদমতে নিয়ে যাও। উম্মে সুলায়ম রাদিয়াল্লাহু আনহা তার সাথে কয়েকটি খেজুর দিলেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে (শিশুটিকে) হাতে নিয়ে জিজ্ঞাসা করলেন, তার সাথে কিছু আছে কি? তারা বললেন, হ্যাঁ, কয়েকটি খেজুর। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেগুলো নিয়ে চিবালেন। এরপর তা তাঁর মুখ থেকে নিয়ে শিশুটির মুখে দিলেন। তারপর তার জন্য বরকতের দো‘আ করলেন এবং তার নাম রাখলেন আব্দুল্লাহ।[221]

عَنْ أُمِّ خَالِدٍ بِنْتِ خَالِدِ بْنِ سَعِيدٍ، قَالَتْ: أَتَيْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَعَ أَبِي وَعَلَيَّ قَمِيصٌ أَصْفَرُ، قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «سَنَهْ سَنَهْ» - قَالَ عَبْدُ اللَّهِ: وَهِيَ بِالحَبَشِيَّةِ حَسَنَةٌ -، قَالَتْ: فَذَهَبْتُ أَلْعَبُ بِخَاتَمِ النُّبُوَّةِ، فَزَبَرَنِي أَبِي، قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «دَعْهَا»، ثُمَّ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «أَبْلِي وَأَخْلِفِي ثُمَّ، أَبْلِي وَأَخْلِفِي، ثُمَّ أَبْلِي وَأَخْلِفِي» قَالَ عَبْدُ اللَّهِ: فَبَقِيَتْ حَتَّى ذَكَرَ.

উম্মে খালিদ বিনতে খালিদ ইবন সাঈদ রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি আমার পিতার সঙ্গে হলুদ বর্ণের জামা পরে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে আসলাম। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, সান্না-সান্না। (রাবী) আব্দুল্লাহ রহ. বলেন, হাবশী ভাষায় তা সুন্দর অর্থে ব্যবহৃত। উম্মে খালিদ রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেন, এরপর আমি তাঁর মহরে নব্যুতের স্থান নিয়ে কৌতুক করতে লাগলাম। আমার পিতা আমাকে ধমক দিলেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ছোট মেয়ে তাকে করতে দাও।’ এরপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বললেন, এ কাপড় পরিধান কর আর পুরানো কর, আবার পরিধান কর, পুরানো কর, পুরানো কর, আবার পরিধান কর, পুরানো কর। (অর্থাৎ দীর্ঘ দিন পরিধান কর)। আব্দুল্লাহ (ইবন মুবারক) রহ. বলেন, উম্মে খালিদ রাদিয়াল্লাহু আনহা এতদিন জীবিত থাকেন যে, তাঁর আলোচনা চলতে থাকে। [222]

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ: أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ إِذَا رَفَعَ رَأْسَهُ مِنَ الرَّكْعَةِ الآخِرَةِ، يَقُولُ: " اللَّهُمَّ أَنْجِ عَيَّاشَ بْنَ أَبِي رَبِيعَةَ، اللَّهُمَّ أَنْجِ سَلَمَةَ بْنَ هِشَامٍ، اللَّهُمَّ أَنْجِ الوَلِيدَ بْنَ الوَلِيدِ، اللَّهُمَّ أَنْجِ المُسْتَضْعَفِينَ مِنَ المُؤْمِنِينَ، اللَّهُمَّ اشْدُدْ وَطْأَتَكَ عَلَى مُضَرَ، اللَّهُمَّ اجْعَلْهَا سِنِينَ كَسِنِي يُوسُفَ: وَأَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: غِفَارُ غَفَرَ اللَّهُ لَهَا وَأَسْلَمُ سَالَمَهَا اللَّهُ ".

আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন শেষ রাকা‘আত থেকে মাথা উঠালেন, তখন বললেন, হে আল্লাহ্! আইয়্যাশ ইবন আবু রাবী’আহকে মুক্তি দিন। হে আল্লাহ্! সালামা ইবন হিশামকে মুক্তি দিন। হে আল্লাহ্! ওয়ালীদ ইবন ওয়ালীদকে রক্ষা করুণ। হে আল্লাহ্! দুর্বল মু’মিনদেরকে মুক্তি দিন। হে আল্লাহ্! মুযার গোত্রের উপর আপনার শাস্তি কঠোর করে দিন। হে আল্লাহ্! ইউসুফ আলাইহিস সালামের যমানার দুর্ভিক্ষের বছরগুলোর ন্যায় (এদের উপর) কয়েক বছর দুর্ভিক্ষ দিন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বললেন, গিফার গোত্র, আল্লাহ তাদেরকে ক্ষমা করুন। আর আসলাম গোত্র, আল্লাহ তাদেরকে নিরাপদে রাখুন।[223]

عَنْ أَبِي كَثِيرٍ يَزِيدَ بْنِ عَبْدِ الرَّحْمَنِ، حَدَّثَنِي أَبُو هُرَيْرَةَ، قَالَ: كُنْتُ أَدْعُو أُمِّي إِلَى الْإِسْلَامِ وَهِيَ مُشْرِكَةٌ، فَدَعَوْتُهَا يَوْمًا فَأَسْمَعَتْنِي فِي رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَا أَكْرَهُ، فَأَتَيْتُ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَأَنَا أَبْكِي، قُلْتُ يَا رَسُولَ اللهِ إِنِّي كُنْتُ أَدْعُو أُمِّي إِلَى الْإِسْلَامِ فَتَأْبَى عَلَيَّ، فَدَعَوْتُهَا الْيَوْمَ فَأَسْمَعَتْنِي فِيكَ مَا أَكْرَهُ، فَادْعُ اللهَ أَنْ يَهْدِيَ أُمَّ أَبِي هُرَيْرَةَ فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «اللهُمَّ اهْدِ أُمَّ أَبِي هُرَيْرَةَ» فَخَرَجْتُ مُسْتَبْشِرًا بِدَعْوَةِ نَبِيِّ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَلَمَّا جِئْتُ فَصِرْتُ إِلَى الْبَابِ، فَإِذَا هُوَ مُجَافٌ، فَسَمِعَتْ أُمِّي خَشْفَ قَدَمَيَّ، فَقَالَتْ: مَكَانَكَ يَا أَبَا هُرَيْرَةَ وَسَمِعْتُ خَضْخَضَةَ الْمَاءِ، قَالَ: فَاغْتَسَلَتْ وَلَبِسَتْ دِرْعَهَا وَعَجِلَتْ عَنْ خِمَارِهَا، فَفَتَحَتِ الْبَابَ، ثُمَّ قَالَتْ: يَا أَبَا هُرَيْرَةَ أَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ، وَأَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُولُهُ، قَالَ فَرَجَعْتُ إِلَى رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَأَتَيْتُهُ وَأَنَا أَبْكِي مِنَ الْفَرَحِ، قَالَ: قُلْتُ: يَا رَسُولَ اللهِ أَبْشِرْ قَدِ اسْتَجَابَ اللهُ دَعْوَتَكَ وَهَدَى أُمَّ أَبِي هُرَيْرَةَ، فَحَمِدَ اللهَ وَأَثْنَى عَلَيْهِ وَقَالَ خَيْرًا، قَالَ قُلْتُ: يَا رَسُولَ اللهِ ادْعُ اللهَ أَنْ يُحَبِّبَنِي أَنَا وَأُمِّي إِلَى عِبَادِهِ الْمُؤْمِنِينَ، وَيُحَبِّبَهُمْ إِلَيْنَا، قَالَ: فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «اللهُمَّ حَبِّبْ عُبَيْدَكَ هَذَا - يَعْنِي أَبَا هُرَيْرَةَ - وَأُمَّهُ إِلَى عِبَادِكَ الْمُؤْمِنِينَ، وَحَبِّبْ إِلَيْهِمِ الْمُؤْمِنِينَ» فَمَا خُلِقَ مُؤْمِنٌ يَسْمَعُ بِي وَلَا يَرَانِي إِلَّا أَحَبَّنِي.

আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, আমি আমার মাকে ইসলামের দাওয়াত দিলাম। তিনি ছিলেন মুশরিক। একদিন আমি তাকে মুসলিম হতে বললাম। কিন্তু তিনি আমাকে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সম্পর্কে এমন একটি মন্তব্য করলেন যা ছিল আমার জন্য অসহনীয়। আমি কাঁদতে কাঁদতে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে এসে বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আমি আমার মাকে ইসলামের দাওয়াত দিয়ে আসছিলাম। কিন্তু তিনি আমার আহবান প্রত্যাখান করেই চলছেন। আজকেও আমি তাকে দাওয়াত দিলাম। কিন্তু তিনি আমাকে আপনার সম্পর্কে এমন কথা শুনিয়ে দিলেন যা অত্যন্ত আপত্তিকর। অতএব আপনি আল্লাহর কাছে দো‘আ করুন তিনি যেন আবু হুরায়রার মাকে হিদায়াত দান করেন। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হে আল্লাহ! আবু হুরায়রার মাকে হিদায়াত দান করুন। আমি রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দু‘আয় খুশি হয়ে বেরিয়ে পড়লাম। এসে দেখি আমাদের ঘরের দরজা ভিতর থেকে বন্ধ। আমার মা আমার পায়ের আওয়াজ শুনতে পেলেন এবং বলেন, অপেক্ষা কর। আমি বাইরে থেকে পানি পড়ার শব্দ শুনতে পাচ্ছিলাম। মা গোসল করেলন, জামা পড়লেন এবং ওড়না গায়ে দিলেন। অতঃপর দরজা খুলে দিয়ে বললেন, “হে হুরায়রা! আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি আল্লাহ ছাড়া কোনো ইলাহ নাই। আমি আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর বান্দাহ ও রাসূল”। আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, আমি খুশির চোটে কাঁদতে কাঁদতে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে ফিরে আসলাম। আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল। সুসংবাদ গ্রহণ করুন। আল্লাহ তা‘আলা আপনার দো‘আ কবুল করেছেন এবং আবু হুরায়রার মাকে হিদায়াত দান করেছেন। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর প্রশংসা ও গুণগাণ করলেন এবং ভাল কথা বললেন। আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আল্লাহর কাছে দো‘আ করুন- তিনি যেন মুসলিমদের অন্তরে আমার এবং আমার মায়ের জন্য ভালবাসা সৃষ্টি করে দেন এবং আমাদের মধ্যেও যেন তাদের জন্য ভালবাসা সৃষ্টি করে দেন। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হে আল্লাহ! আপনি আপনার এই বান্দাহ আবু হুরায়রা এবং তার মাকে মুমিনদের প্রিয়পাত্র করে দিন এবং মু’মিনদেরকেও তাদের প্রিয়পাত্র করে দিন। আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, অতঃপর এমন কোনো মুমিন পয়দা হয়নি- যে আমার কথা শুনেছে অথবা আমাকে দেখেছে- কিন্তু আমাকে ভালবাসেনি (প্রত্যেকেই আমাকে ভালবেসেছে)।[224]

عَنْ عَبْد اللَّهِ بْن عَبَّاسٍ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ " بَعَثَ بِكِتَابِهِ رَجُلًا وَأَمَرَهُ أَنْ يَدْفَعَهُ إِلَى عَظِيمِ البَحْرَيْنِ فَدَفَعَهُ عَظِيمُ البَحْرَيْنِ إِلَى كِسْرَى، فَلَمَّا قَرَأَهُ مَزَّقَهُ فَحَسِبْتُ أَنَّ ابْنَ المُسَيِّبِ قَالَ: فَدَعَا عَلَيْهِمْ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ «أَنْ يُمَزَّقُوا كُلَّ مُمَزَّقٍ».

আবদুল্লাহ্ ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক ব্যক্তিকে তাঁর চিঠি দিয়ে পাঠালেন এবং তাকে বাহরাইনের গভর্নরের কাছে তা পৌঁছে দিতে নির্দেশ দিলেন। এরপর বাহরাইনের গভর্নর তা কিসরা (পারস্য সম্রাট)-এর কাছে দিলেন। পত্রটি পড়ার পর সে ছিঁড়ে টুকরো টুকরো করে ফেলল। [বর্ণনাকারী ইবন শিহাব (রহ.) বলেন] আমার ধারনা ইবন মুসায়্যাব (রহ.) বলেছেন, (এ ঘটনার খবর পেয়ে) রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের জন্য বদ-দু’আ করেন যে, তাদেরকেও যেন সম্পূর্ণরূপে টুকরো টুকরো করে ফেলা হয়।[225]

عَنْ ابْنِ عُمَرَ، أَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: اللَّهُمَّ أَعِزَّ الإِسْلاَمَ بِأَحَبِّ هَذَيْنِ الرَّجُلَيْنِ إِلَيْكَ بِأَبِي جَهْلٍ أَوْ بِعُمَرَ بْنِ الخَطَّابِ قَالَ: وَكَانَ أَحَبَّهُمَا إِلَيْهِ عُمَرُ.

ইবন উমর রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দো‘আ করেছেন, হে আল্লাহ আপনি আবু জাহেল বা উমর ইবন খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু আনহুর মধ্যে যাকে পছন্দ করেন তাঁর ইসলাম গ্রহণের মাধ্যমে ইসলামকে শক্তিশালী করুন। ইবন উমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে উমর রাদিয়াল্লাহু আনহু অধিক প্রিয় ছিলেন। [226]

حَدَّثَنِي إِيَاسُ بْنُ سَلَمَةَ بْنِ الْأَكْوَعِ، أَنَّ أَبَاهُ، حَدَّثَهُ أَنَّ رَجُلًا أَكَلَ عِنْدَ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِشِمَالِهِ، فَقَالَ: «كُلْ بِيَمِينِكَ»، قَالَ: لَا أَسْتَطِيعُ، قَالَ: «لَا اسْتَطَعْتَ»، مَا مَنَعَهُ إِلَّا الْكِبْرُ، قَالَ: فَمَا رَفَعَهَا إِلَى فِيهِ.

সালামা ইবন আকওয়া রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত যে, জনৈক ব্যক্তি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে বাম হাতে আহার করছিল। তিনি বললেন, তুমি তোমার ডান হাতে আহার কর। সে বললো, আমি পারবো না। তিনি বললেন, তুমি যেন না-ই পার। একমাত্র অহঙ্কারই তাকে বাধা দিচ্ছে। সালামা রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, সে আর তার ডান হাত মুখের কাছে তুলতে পারেনি।[227]

عَنْ عَائِشَةَ بِنْتِ سَعْدٍ، أَنَّ أَبَاهَا، قَالَ: تَشَكَّيْتُ بِمَكَّةَ شَكْوًا شَدِيدًا، فَجَاءَنِي النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَعُودُنِي، فَقُلْتُ: يَا نَبِيَّ اللَّهِ، إِنِّي أَتْرُكُ مَالًا، وَإِنِّي لَمْ أَتْرُكْ إِلَّا ابْنَةً وَاحِدَةً، فَأُوصِي بِثُلُثَيْ مَالِي وَأَتْرُكُ الثُّلُثَ؟ فَقَالَ: «لاَ» قُلْتُ: فَأُوصِي بِالنِّصْفِ وَأَتْرُكُ النِّصْفَ؟ قَالَ: «لاَ» قُلْتُ: فَأُوصِي بِالثُّلُثِ وَأَتْرُكُ لَهَا الثُّلُثَيْنِ؟ قَالَ: «الثُّلُثُ، وَالثُّلُثُ كَثِيرٌ» ثُمَّ وَضَعَ يَدَهُ عَلَى جَبْهَتِهِ، ثُمَّ مَسَحَ يَدَهُ عَلَى وَجْهِي وَبَطْنِي، ثُمَّ قَالَ: «اللَّهُمَّ اشْفِ سَعْدًا، وَأَتْمِمْ لَهُ هِجْرَتَهُ» فَمَا زِلْتُ أَجِدُ بَرْدَهُ عَلَى كَبِدِي - فِيمَا يُخَالُ إِلَيَّ - حَتَّى السَّاعَةِ.

আয়েশা বিনত সাদ রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত যে, তার পিতা বলেছেন, আমি যখন মক্কায় কঠিনভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ি, তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে দেখার জন্য আসেন। আমি বললাম, হে আল্লার নবী! আমি সম্পদ রেখে যাচ্ছি। আর আমার একটি মাত্র কন্যা ছাড়া আর কেউ নেই। এ অবস্থায় আমি কি আমার দু’তৃতীয়াংশ সম্পদের ব্যাপারে অসীয়ত করে এক-তৃতীয়াংশ রেখে যাব? তিনি উত্তর দিলেন, না। আমি বললামঃ তা হলে অর্ধেক রেখে দিয়ে আর অর্ধেকের ব্যাপারে অসীয়ত করে যেতে পারি। তিনি বললেন, না। আমি বললাম, তাহলে দু’তৃতীয়াংশ রেখে দিয়ে এক-তৃতীয়াংশ এর ব্যাপারে অসীয়ত করে যেতে পারি? তিনি উত্তর দিলেন, এক-তৃতীয়াংশের পার, তবে এক-তৃতীয়াংশও অনেক। তারপর তিনি আমার কপালের উপর তাঁর হাত রাখলেন এবং আমার চেহারা ও পেটের উপর হাত বুলিয়ে বললেন, হে আল্লাহ, সা’দকে তুমি নিরাময় কর। তার হিজরত পুর্ন করতে দিন। আমি তার হাতের হিমেল পরশ এখনও পাচ্ছি এবং মনে করি আমি তা কিয়ামত পর্যন্ত পাব।[228]

عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ: أَنَّ عَبْدَ الرَّحْمَنِ بْنَ عَوْفٍ، جَاءَ إِلَى رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَبِهِ أَثَرُ صُفْرَةٍ، فَسَأَلَهُ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَأَخْبَرَهُ أَنَّهُ تَزَوَّجَ امْرَأَةً مِنَ الأَنْصَارِ، قَالَ: «كَمْ سُقْتَ إِلَيْهَا؟» قَالَ: زِنَةَ نَوَاةٍ مِنْ ذَهَبٍ، قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «أَوْلِمْ وَلَوْ بِشَاةٍ».

আনাস ইবন মালিক রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বণিত যে, আবদুর রহমান বিন আউফ রাদিয়াল্লাহু আনহু রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকটে এমন অবস্থায় এলেন যে, তার সুফরার চিহ্ন বিদ্যমান ছিল। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে চিহ্ন সম্পর্কে প্রশ্ন করলেন। আবদুর রহমান ইবন আউফ রাদিয়াল্লাহু আনহু তার উত্তরে বললেন, তিনি এক আনসারী নারীকে শাদী করেছেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিজ্ঞেস করলেন, তুমি তাকে কি পরিমাণ মোহরানা দিয়েছে? তিনি বললেন, আমি তাকে খেজুরের আঁটির সমপরিমাণ স্বর্ণ দিয়েছি। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ওয়ালীমার ব্যবস্থা কর যদি একটি বকরী দিয়েও হয়।[229]

আল্লাহ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দো‘আ কবুল করেছেন। আব্দুর রহমান ইবন আউফ রাদিয়াল্লাহু আনহু সাহাবীদের মধ্যে অধিক সম্পদশালী ছিলেন।

عَنْ عَائِشَةَ، رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا قَالَتْ: سَحَرَ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ رَجُلٌ مِنْ بَنِي زُرَيْقٍ، يُقَالُ لَهُ لَبِيدُ بْنُ الأَعْصَمِ، حَتَّى كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُخَيَّلُ إِلَيْهِ أَنَّهُ كَانَ يَفْعَلُ الشَّيْءَ وَمَا فَعَلَهُ، حَتَّى إِذَا كَانَ ذَاتَ يَوْمٍ أَوْ ذَاتَ لَيْلَةٍ وَهُوَ عِنْدِي، لَكِنَّهُ دَعَا وَدَعَا، ثُمَّ قَالَ: " يَا عَائِشَةُ، أَشَعَرْتِ أَنَّ اللَّهَ أَفْتَانِي فِيمَا اسْتَفْتَيْتُهُ فِيهِ، أَتَانِي رَجُلاَنِ، فَقَعَدَ أَحَدُهُمَا عِنْدَ رَأْسِي، وَالآخَرُ عِنْدَ رِجْلَيَّ، فَقَالَ أَحَدُهُمَا لِصَاحِبِهِ: مَا وَجَعُ الرَّجُلِ؟ فَقَالَ: مَطْبُوبٌ، قَالَ: مَنْ طَبَّهُ؟ قَالَ: لَبِيدُ بْنُ الأَعْصَمِ، قَالَ: فِي أَيِّ شَيْءٍ؟ قَالَ: فِي مُشْطٍ وَمُشَاطَةٍ، وَجُفِّ طَلْعِ نَخْلَةٍ ذَكَرٍ. قَالَ: وَأَيْنَ هُوَ؟ قَالَ: فِي بِئْرِ ذَرْوَانَ " فَأَتَاهَا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي نَاسٍ مِنْ أَصْحَابِهِ، فَجَاءَ فَقَالَ: «يَا عَائِشَةُ، كَأَنَّ مَاءَهَا نُقَاعَةُ الحِنَّاءِ، أَوْ كَأَنَّ رُءُوسَ نَخْلِهَا رُءُوسُ الشَّيَاطِينِ» قُلْتُ: يَا رَسُولَ اللَّهِ: أَفَلاَ اسْتَخْرَجْتَهُ؟ قَالَ: «قَدْ عَافَانِي اللَّهُ، فَكَرِهْتُ أَنْ أُثَوِّرَ عَلَى النَّاسِ فِيهِ شَرًّا» فَأَمَرَ بِهَا فَدُفِنَتْ.

‘আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, যুরাইক গোত্রের লাবীদ ইবন ‘আসাম নামক এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জাদু করে।। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের খেয়াল হতো তিনি একটি কাজ করছেন, অথচ তা তিনি করেন নি। একদিন বা এক রাত্রি তিনি আমার কাছে ছিলেন। তিনি বার বার দো‘আ করতে থাকেন। তারপর তিনি বলেন, হে ‘আয়েশা! তুমি কি উপলব্ধি করতে পেরেছ যে, আমি আল্লাহর কাছে যা জানতে চেয়েছিলাম, তিনি আমাকে তা জানিয়ে দিয়েছেন। (স্বপ্নে দেখি) আমার নিকট দু’জন লোক আসেন। তাদের একজন আমার মাথার কাছে এবং অপরজন দু‘পায়ের কাছে বসেন। একজন তাঁর সঙ্গীকে বলেন, এ লোকটির কি ব্যথা (অসুখ)? তিনি বলেন, জাদু করা হয়েছে। প্রথম জন বলল, কে জাদু করেছে? দ্বিতীয় জন বলেন, লাবীদ ইন আ‘সাম। প্রথম জন জিজ্ঞাসা করেন, কিসের মধ্যে? দ্বিতীয়জন উত্তর দেন, চিরুনী, মাথা আচড়ানোর সময় উঠা চুল এবং এক পুং খেজুর গাছের ‘জুব’-এর মধ্যে। প্রথম জন বলেন, তা কোথায়? দ্বিতীয় জন বলেন, ‘যারওয়ান’ নামক কুপের মধ্যে। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কয়েকজন সাহাবী সঙ্গে নিয়ে তথায় যান। পরে ফিরে এসে বলেন, হে আয়েশা! সে কুপের পানি মেহেদী পানির মত (লাল) এবং তার পাড়ের খেজুর গাছের মাথাগুলো শয়তানের মাথার মত। আমি বললাম, ইয়া রাসূলুল্লাহ! আপনি কি এ কথা প্রকাশ করে দিবেন না? তিনি বললেন, আল্লাহ আমাকে আরোগ্য দান করেছেন, আমি মানুষকে এমন ব্যাপারে প্ররোচিত করতে পছন্দ করি না, যাতে অকল্যাণ রয়েছে। তারপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নির্দেশ দিলে সেগুলো মাটিতে পুঁতে ফেলা হয়।[230]

عَنْ عَبْدَ اللَّهِ بْنَ أَبِي أَوْفَى رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا، يَقُولُ: دَعَا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَوْمَ الأَحْزَابِ عَلَى المُشْرِكِينَ، فَقَالَ: «اللَّهُمَّ مُنْزِلَ الكِتَابِ، سَرِيعَ الحِسَابِ، اللَّهُمَّ اهْزِمِ الأَحْزَابَ، اللَّهُمَّ اهْزِمْهُمْ وَزَلْزِلْهُمْ».

ইবন আওফা রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (খন্দকের যুদ্ধে) শত্রু বাহিনীর উপর বদ দো‘আ করেছেন, ইয়া আল্লাহ! হে কিতাব অবতীর্ণকারী! হে তরিৎ হিসাব গ্রহণকারী! আপনি শত্রু বাহিনীকে পরাজিত করুন। তাদের পরাজিত করুন এবং তাদের প্রকম্পিত করুন।[231]

আল্লাহ তা‘আলা তাঁর রাসূলের দো‘আ কবুল করেছেন। আল্লাহ বলেন:

﴿ يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ ٱذۡكُرُواْ نِعۡمَةَ ٱللَّهِ عَلَيۡكُمۡ إِذۡ جَآءَتۡكُمۡ جُنُودٞ فَأَرۡسَلۡنَا عَلَيۡهِمۡ رِيحٗا وَجُنُودٗا لَّمۡ تَرَوۡهَاۚ وَكَانَ ٱللَّهُ بِمَا تَعۡمَلُونَ بَصِيرًا ٩ إِذۡ جَآءُوكُم مِّن فَوۡقِكُمۡ وَمِنۡ أَسۡفَلَ مِنكُمۡ وَإِذۡ زَاغَتِ ٱلۡأَبۡصَٰرُ وَبَلَغَتِ ٱلۡقُلُوبُ ٱلۡحَنَاجِرَ وَتَظُنُّونَ بِٱللَّهِ ٱلظُّنُونَا۠ ١٠ ﴾ [الاحزاب: ٩، ١٠]

হে মুমিনগণ, তোমরা তোমাদের প্রতি আল্লাহর নিআমতকে স্মরণ কর, যখন সেনাবাহিনী তোমাদের কাছে এসে গিয়েছিল, তখন আমি তাদের উপর প্রবল বায়ু ও সেনাদল প্রেরণ করলাম যা তোমরা দেখনি। আর তোমরা যা কর আল্লাহ তার সম্যক দ্রষ্টা। যখন তারা তোমাদের কাছে এসেছিল তোমাদের উপরের দিক থেকে এবং তোমাদের নিচের দিক থেকে আর যখন চোখগুলো বাঁকা হয়ে পড়েছিল এবং প্রাণ কন্ঠ পর্যন্ত পৌঁছেছিল। আর তোমরা আল্লাহ সম্পর্কে নানা রকম ধারণা পোষণ করছিলে। [সূরা: আল্-আহযাব: ৯-১০] এ আয়াতগুলো থেকে নিন্মোক্ত আয়াত পর্যন্ত নাযিল করেন।

﴿ وَرَدَّ ٱللَّهُ ٱلَّذِينَ كَفَرُواْ بِغَيۡظِهِمۡ لَمۡ يَنَالُواْ خَيۡرٗاۚ وَكَفَى ٱللَّهُ ٱلۡمُؤۡمِنِينَ ٱلۡقِتَالَۚ وَكَانَ ٱللَّهُ قَوِيًّا عَزِيزٗا ٢٥ ﴾ [الاحزاب: ٢٥]

“আল্লাহ কাফিরদেরকে তাদের আক্রোশসহ ফিরিয়ে দিলেন, তারা কোনো কল্যাণ লাভ করেনি। যুদ্ধে মুমিনদের জন্য আল্লাহই যথেষ্ট। আল্লাহ প্রবল শক্তিমান, পরাক্রমশালী”। [সূরা: আল্-আহযাব: ২৫]

 

 

ত্রয়োবিংশ পরিচ্ছেদ

ইসরা ও ‘মিরাজের রাত্রিতে আল্লাহ তাঁর নবীকে যা দেখিয়েছেন তা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নবুওয়তের প্রমাণ

﴿ سُبۡحَٰنَ ٱلَّذِيٓ أَسۡرَىٰ بِعَبۡدِهِۦ لَيۡلٗا مِّنَ ٱلۡمَسۡجِدِ ٱلۡحَرَامِ إِلَى ٱلۡمَسۡجِدِ ٱلۡأَقۡصَا ٱلَّذِي بَٰرَكۡنَا حَوۡلَهُۥ لِنُرِيَهُۥ مِنۡ ءَايَٰتِنَآۚ إِنَّهُۥ هُوَ ٱلسَّمِيعُ ٱلۡبَصِيرُ ١ ﴾ [الاسراء: ١]

“পবিত্র মহান সে সত্তা, যিনি তাঁর বান্দাকে রাতে নিয়ে গিয়েছেন আল মাসজিদুল হারাম থেকে আল মাসজিদুল আকসা[232] পর্যন্ত, যার আশপাশে আমি বরকত দিয়েছি, যেন আমি তাকে আমার কিছু নিদর্শন দেখাতে পারি। তিনিই সর্বশ্রোতা, সর্বদ্রষ্টা”। [সূরা আল-ইসরা: ১]

﴿ وَلَقَدۡ رَءَاهُ نَزۡلَةً أُخۡرَىٰ ١٣ عِندَ سِدۡرَةِ ٱلۡمُنتَهَىٰ ١٤ عِندَهَا جَنَّةُ ٱلۡمَأۡوَىٰٓ ١٥ إِذۡ يَغۡشَى ٱلسِّدۡرَةَ مَا يَغۡشَىٰ ١٦ مَا زَاغَ ٱلۡبَصَرُ وَمَا طَغَىٰ ١٧ لَقَدۡ رَأَىٰ مِنۡ ءَايَٰتِ رَبِّهِ ٱلۡكُبۡرَىٰٓ ١٨ ﴾ [النجم: ١٣، ١٨]

“আর সে তো তাকে[233] আরেকবার[234] দেখেছিল। সিদরাতুল মুনতাহার[235] নিকট। যার কাছে জান্নাতুল মা’ওয়া[236] অবস্থিত। যখন কুল গাছটিকে যা আচ্ছাদিত করার তা আচ্ছাদিত করেছিল। তার দৃষ্টি এদিক-সেদিক যায়নি এবং সীমাও অতিক্রম করেনি। নিশ্চয় সে তার রবের বড় বড় নিদর্শনসমূহ থেকে দেখেছে”। [সূরা আন্-নাজম: ১৩-১৮]

عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ، قَالَ: كَانَ أَبُو ذَرٍّ يُحَدِّثُ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: " فُرِجَ عَنْ سَقْفِ بَيْتِي وَأَنَا بِمَكَّةَ، فَنَزَلَ جِبْرِيلُ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَفَرَجَ صَدْرِي، ثُمَّ غَسَلَهُ بِمَاءِ زَمْزَمَ، ثُمَّ جَاءَ بِطَسْتٍ مِنْ ذَهَبٍ مُمْتَلِئٍ حِكْمَةً وَإِيمَانًا، فَأَفْرَغَهُ فِي صَدْرِي، ثُمَّ أَطْبَقَهُ، ثُمَّ أَخَذَ بِيَدِي، فَعَرَجَ بِي إِلَى السَّمَاءِ الدُّنْيَا، فَلَمَّا جِئْتُ إِلَى السَّمَاءِ الدُّنْيَا، قَالَ جِبْرِيلُ: لِخَازِنِ السَّمَاءِ افْتَحْ، قَالَ: مَنْ هَذَا؟ قَالَ هَذَا جِبْرِيلُ، قَالَ: هَلْ مَعَكَ أَحَدٌ؟ قَالَ: نَعَمْ مَعِي مُحَمَّدٌ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَقَالَ: أُرْسِلَ إِلَيْهِ؟ قَالَ: نَعَمْ، فَلَمَّا فَتَحَ عَلَوْنَا السَّمَاءَ الدُّنْيَا، فَإِذَا رَجُلٌ قَاعِدٌ عَلَى يَمِينِهِ أَسْوِدَةٌ، وَعَلَى يَسَارِهِ أَسْوِدَةٌ، إِذَا نَظَرَ قِبَلَ يَمِينِهِ ضَحِكَ، وَإِذَا نَظَرَ قِبَلَ يَسَارِهِ بَكَى، فَقَالَ: مَرْحَبًا بِالنَّبِيِّ الصَّالِحِ وَالِابْنِ الصَّالِحِ، قُلْتُ لِجِبْرِيلَ: مَنْ هَذَا؟ قَالَ: هَذَا آدَمُ، وَهَذِهِ الأَسْوِدَةُ عَنْ يَمِينِهِ وَشِمَالِهِ نَسَمُ بَنِيهِ، فَأَهْلُ اليَمِينِ مِنْهُمْ أَهْلُ الجَنَّةِ، وَالأَسْوِدَةُ الَّتِي عَنْ شِمَالِهِ أَهْلُ النَّارِ، فَإِذَا نَظَرَ عَنْ يَمِينِهِ ضَحِكَ، وَإِذَا نَظَرَ قِبَلَ شِمَالِهِ بَكَى حَتَّى عَرَجَ بِي إِلَى السَّمَاءِ الثَّانِيَةِ، فَقَالَ لِخَازِنِهَا: افْتَحْ، فَقَالَ لَهُ خَازِنِهَا مِثْلَ مَا قَالَ الأَوَّلُ: فَفَتَحَ، - قَالَ أَنَسٌ: فَذَكَرَ أَنَّهُ وَجَدَ فِي السَّمَوَاتِ آدَمَ، وَإِدْرِيسَ، وَمُوسَى، وَعِيسَى، وَإِبْرَاهِيمَ صَلَوَاتُ اللَّهِ عَلَيْهِمْ، وَلَمْ يُثْبِتْ كَيْفَ مَنَازِلُهُمْ غَيْرَ أَنَّهُ ذَكَرَ أَنَّهُ وَجَدَ آدَمَ فِي السَّمَاءِ الدُّنْيَا وَإِبْرَاهِيمَ فِي السَّمَاءِ السَّادِسَةِ، قَالَ أَنَسٌ - فَلَمَّا مَرَّ جِبْرِيلُ بِالنَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِإِدْرِيسَ قَالَ: مَرْحَبًا بِالنَّبِيِّ الصَّالِحِ وَالأَخِ الصَّالِحِ، فَقُلْتُ مَنْ هَذَا؟ قَالَ: هَذَا إِدْرِيسُ، ثُمَّ مَرَرْتُ بِمُوسَى فَقَالَ: مَرْحَبًا بِالنَّبِيِّ الصَّالِحِ وَالأَخِ الصَّالِحِ، قُلْتُ: مَنْ هَذَا؟ قَالَ: هَذَا مُوسَى، ثُمَّ مَرَرْتُ بِعِيسَى فَقَالَ: مَرْحَبًا بِالأَخِ الصَّالِحِ وَالنَّبِيِّ الصَّالِحِ، قُلْتُ: مَنْ هَذَا؟ قَالَ: هَذَا عِيسَى، ثُمَّ مَرَرْتُ بِإِبْرَاهِيمَ، فَقَالَ: مَرْحَبًا بِالنَّبِيِّ الصَّالِحِ وَالِابْنِ الصَّالِحِ، قُلْتُ: مَنْ هَذَا؟ قَالَ: هَذَا إِبْرَاهِيمُ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ "، قَالَ ابْنُ شِهَابٍ: فَأَخْبَرَنِي ابْنُ حَزْمٍ، أَنَّ ابْنَ عَبَّاسٍ، وَأَبَا حَبَّةَ الأَنْصَارِيَّ، كَانَا يَقُولاَنِ: قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «ثُمَّ عُرِجَ بِي حَتَّى ظَهَرْتُ لِمُسْتَوَى أَسْمَعُ فِيهِ صَرِيفَ الأَقْلاَمِ»، قَالَ ابْنُ حَزْمٍ، وَأَنَسُ بْنُ مَالِكٍ: قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: " فَفَرَضَ اللَّهُ عَزَّ وَجَلَّ عَلَى أُمَّتِي خَمْسِينَ صَلاَةً، فَرَجَعْتُ بِذَلِكَ، حَتَّى مَرَرْتُ عَلَى مُوسَى، فَقَالَ: مَا فَرَضَ اللَّهُ لَكَ عَلَى أُمَّتِكَ؟ قُلْتُ: فَرَضَ خَمْسِينَ صَلاَةً، قَالَ: فَارْجِعْ إِلَى رَبِّكَ، فَإِنَّ أُمَّتَكَ لاَ تُطِيقُ ذَلِكَ، فَرَاجَعْتُ، فَوَضَعَ شَطْرَهَا، فَرَجَعْتُ إِلَى مُوسَى، قُلْتُ: وَضَعَ شَطْرَهَا، فَقَالَ: رَاجِعْ رَبَّكَ، فَإِنَّ أُمَّتَكَ لاَ تُطِيقُ، فَرَاجَعْتُ فَوَضَعَ شَطْرَهَا، فَرَجَعْتُ إِلَيْهِ، فَقَالَ: ارْجِعْ إِلَى رَبِّكَ، فَإِنَّ أُمَّتَكَ لاَ تُطِيقُ ذَلِكَ، فَرَاجَعْتُهُ، فَقَالَ: هِيَ خَمْسٌ، وَهِيَ خَمْسُونَ، لاَ يُبَدَّلُ القَوْلُ لَدَيَّ، فَرَجَعْتُ إِلَى مُوسَى، فَقَالَ: رَاجِعْ رَبَّكَ، فَقُلْتُ: اسْتَحْيَيْتُ مِنْ رَبِّي، ثُمَّ انْطَلَقَ بِي، حَتَّى انْتَهَى بِي إِلَى سِدْرَةِ المُنْتَهَى، وَغَشِيَهَا أَلْوَانٌ لاَ أَدْرِي مَا هِيَ؟ ثُمَّ أُدْخِلْتُ الجَنَّةَ، فَإِذَا فِيهَا حَبَايِلُ اللُّؤْلُؤِ وَإِذَا تُرَابُهَا المِسْكُ ".

আনাস ইবন মালিক রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আবূ যার রাদিয়াল্লাহু আনহু রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেছেন, আমার ঘরের ছাদ খুলে দেওয়া হল। তখন আমি মক্কায় ছিলাম। তারপর জিবরীল আলাইহিস সালাম এসে আমার বক্ষ বিদীর্ণ করলেন। আর তা যমযমের পানি দিয়ে ধুইলেন। এরপর হিকমত ও ঈমানে পরিপূর্ণ একটি সোনার পাত্র নিয়ে আসলেন এবং তা আমার বক্ষে ঢেলে দিয়ে বন্ধ করে দিলেন। তারপর হাত ধরে আমাকে দুনিয়ার আসমানের দিকে নিয়ে চললেন। যখন দুনিয়ার আসমানে পৌঁছালাম, তখন জিবরীল আলাইহিস সালাম আসমানের রক্ষক কে বললেন, দরজা খোল। তিনি বললেন, কে? উত্তর দিলেন, আমি জিবরীল, আবার জিজ্ঞাসা করলেন, আপনার সঙ্গে আর কেউ আছে কি? তিনি বললেন, হ্যাঁ, আমার সঙ্গে মুহাম্মদ। তিনি আবার বললেন, তাঁকে কি আহ্বান করা হয়েছে? তিনি উত্তরে বললেন, হ্যাঁ। তারপর আসমান খোলা হলে আমরা প্রথম আসমানে উঠলাম। সেখানে দেখলাম, এক লোক বসে আছেন এবং অনেকগুলো মানুষের আকৃতি তাঁর ডান পাশে রয়েছে এবং অনেকগুলো মানুষের আকৃতি বাম পাশেও রয়েছে। যখন তিনি ডান দিকে তাকাচ্ছেন, হাসছেন আর যখন তিনি বাম দিকে তাকাচ্ছেন, কাঁদছেন। তিনি বললেন, খোশ আমদেদ, হে পুণ্যবান নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! হে নেক সন্তান! আমি জিবরীল আলাইহিস সালামকে জিজ্ঞাসা করলাম, ইনি কে? তিনি বললেন, ইনি আদম আলাইহিস সালাম।। আর তাঁর ডানে ও বায়ে তাঁর সন্তানদের রুহ। ডান দিকের লোকেরা জান্নাতী আর বা দিকের লোকেরা জাহান্নামী। এজন্য তিনি ডান দিকে তাকালে হাসেন আর বাঁ দিকে তাকালে কাঁদেন। তারপর জিবরীল আলাইহিস সালাম আমাকে সঙ্গে নিয়ে দ্বিতীয় আকাশে উঠলেন। সেখানে উঠে রক্ষক কে বললেন, দরজা খোল। তখন রক্ষক প্রথম আসমানের রক্ষকের অনুরূপ প্রশ্ন করলেন। তারপর দরজা খুলে দিলেন। আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, এরপর আবূ যার রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, তিনি (নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আসমানসমূহে আদম আলাইহিস সালাম, ঈদরীস আলাইহিস সালাম, মূসা আলাইহিস সালাম, ‘ঈসা আলাইহিস সালাম, ও ইবরাহীম আলাইহিস সালামকে পেলেন। আবূ যার রাদিয়াল্লাহু আনহু তাঁদের অবস্থান নির্দিষ্ট ভাবে বলেন নি। কেবল এতটুকু বলেছেন যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আদম আলাইহিস সালামকে প্রথম আসমানে এবং ইবরাহীম আলাইহিস সালামকে ষষ্ঠ আসমানে পেয়েছেন। আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, যখন জিবরীল আলাইহিস সালাম রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে ইদরীস আলাইহিস সালামের পাশ দিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন, তখন ঈদরীস আলাইহিস সালাম বললেন, খোশ আমদেদ! পুণ্যবান নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও নেক ভাই! আমি জিজ্ঞাসা করলাম ইনি কে? জিবরীল আলাইহিস সালাম বললেন, ইনি ঈদরীস আলাইহিস সালাম। তারপর আমি মূসা আলাইহিস সালামের নিকট দিয়ে যাচ্ছিলাম। তিনি বললেন, খোশ আমদেদ! পুণ্যবান রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও নেক ভাই। আমি বললাম ইনি কে? জিবরীল আলাইহিস সালাম বললেন, মূসা আলাইহিস সালাম। তারপর আমি ঈসা আলাইহিস সালামের নিকট দিয়ে যাচ্ছিলাম। তিনি বললেন, খোশ আমদেদ! পুণ্যবান রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও নেক ভাই। আমি জিজ্ঞাসা করলাম ইনি কে? জিবরীল আলাইহিস সালাম বললেন, ইনি ঈসা আলাইহিস সালাম। তারপর ইবরাহীম আলাইহিস সালামের নিকট দিয়ে যাচ্ছিলাম। তিনি বললেন, খোশ আমদেদ! পুণ্যবান নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও নেক সন্তান। আমি জিজ্ঞাসা করলাম ইনি কে? জিবরীল আলাইহিস সালাম বললেন, ইনি ইবরাহীম আলাইহিস সালাম। ইবন শিহাব (রহ.) বলেন যে, ইবন হাযম আমাকে খবর দিয়েছেন ইবন ‘আব্বাস ও আবূ হাব্বা আনসারী রাদিয়াল্লাহুমা আনহুমা উভয়ে বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তারপর আমাকে আরো উপরে উঠানো হ’ল, আমি এমন এক সমতল স্থানে উপনীত হলাম, যেখান থেকে কলমের লেখার শব্দ শুনতে পেলাম। ইবন হাযম (রহ.) ও আনাস ইবন মালিক রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তারপর আল্লাহ তা‘আলা আমার উপর পঞ্চাশ ওয়াক্ত সালাত ফরয করে দিলেন। আমি এ নিয়ে প্রত্যাবর্তনকালে যখন মূসা আলাইহিস সালামের নিকট দিয়ে যাচ্ছিলাম, তখন মূসা আলাইহিস সালাম বললেন, আপনার উম্মতের উপর আল্লাহ কি ফরয করেছেন? আমি বললাম, পঞ্চাশ ওয়াক্ত সালাত ফরয করেছেন। তিনি বললেন, আপনি আপনার রবের কাছে ফিরে যান। কারণ আপনার উম্মত তা আদায় করতে সক্ষম হবে না। আমি ফিরে গেলাম। আল্লাহ পাক কিছু অংশ কমিয়ে দিলেন। আমি মূসা আলাইহিস সালামের কাছে আবার গেলাম আর বললাম, কিছু অংশ কমিয়ে দিয়েছেন। তিনি বললেন, আপনি আবার আপনার রবের কাছে যান। কারণ আপনার উম্মত এও আদায় করতে সক্ষম হবে না। আমি ফিরে গেলাম। তখন আরো কিছু অংশ কমিয়ে দেওয়া হল। আবার মূসা আলাইহিস সালামের কাছে গেলাম, এবারো তিনি বললেন, আপনি আবার আপনার রবের কাছে যান। কারণ আপনার উম্মত এও আদায় করতে সক্ষম হবে না। তখন আমি আবার গেলাম, তখন আল্লাহ বললেন, এই পাঁচই (সওয়াবের দিক দিয়ে) পঞ্চাশ (গণ্য হবে)। আমার কথার কোনো পরিবর্তন নেই। আমি আবার মূসা আলাইহিস সালামের কাছে আসলে তিনি আমাকে আবারো বললেন, আপনার রবের কাছে আবার যান। আমি বললাম, আবার আমার রবের কাছে যেতে আমি লজ্জাবোধ করছি। তারপর জিবরীল আলাইহিস সালাম আমাকে সিদরাতুল মুনতাহা পর্যন্ত নিয়ে গেলেন। আর তখন তা বিভিন্ন রঙে ঢাকা ছিল, যার তাৎপর্য আমার জানা ছিল না। তারপর আমাকে জান্নাতে নিয়ে যাওয়া হ’ল। আমি দেখলাম তাতে মুক্তার হার রয়েছে আর তাঁর মাটি কস্তুরি।[237]

عَنْ مَالِكِ بْنِ صَعْصَعَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا، قَالَ: قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: " بَيْنَا أَنَا عِنْدَ البَيْتِ بَيْنَ النَّائِمِ، وَاليَقْظَانِ - وَذَكَرَ: يَعْنِي رَجُلًا بَيْنَ الرَّجُلَيْنِ -، فَأُتِيتُ بِطَسْتٍ مِنْ ذَهَبٍ، مُلِئَ حِكْمَةً وَإِيمَانًا، فَشُقَّ مِنَ النَّحْرِ إِلَى مَرَاقِّ البَطْنِ، ثُمَّ غُسِلَ البَطْنُ بِمَاءِ زَمْزَمَ، ثُمَّ مُلِئَ حِكْمَةً وَإِيمَانًا، وَأُتِيتُ بِدَابَّةٍ أَبْيَضَ، دُونَ البَغْلِ وَفَوْقَ الحِمَارِ: البُرَاقُ، فَانْطَلَقْتُ مَعَ جِبْرِيلَ حَتَّى أَتَيْنَا السَّمَاءَ الدُّنْيَا، قِيلَ: مَنْ هَذَا؟ قَالَ جِبْرِيلُ: قِيلَ: مَنْ مَعَكَ؟ قَالَ: مُحَمَّدٌ، قِيلَ: وَقَدْ أُرْسِلَ إِلَيْهِ؟ قَالَ: نَعَمْ، قِيلَ: مَرْحَبًا بِهِ، وَلَنِعْمَ المَجِيءُ جَاءَ، فَأَتَيْتُ عَلَى آدَمَ، فَسَلَّمْتُ عَلَيْهِ، فَقَالَ: مَرْحَبًا بِكَ مِنَ ابْنٍ وَنَبِيٍّ، فَأَتَيْنَا السَّمَاءَ الثَّانِيَةَ، قِيلَ مَنْ هَذَا؟ قَالَ: جِبْرِيلُ، قِيلَ: مَنْ مَعَكَ؟ قَالَ: مُحَمَّدٌ، قِيلَ: أُرْسِلَ إِلَيْهِ، قَالَ: نَعَمْ، قِيلَ: مَرْحَبًا بِهِ، وَلَنِعْمَ المَجِيءُ جَاءَ، فَأَتَيْتُ عَلَى عِيسَى، وَيَحْيَى فَقَالاَ: مَرْحَبًا بِكَ مِنْ أَخٍ وَنَبِيٍّ، فَأَتَيْنَا السَّمَاءَ الثَّالِثَةَ، قِيلَ: مَنْ هَذَا؟ قِيلَ: جِبْرِيلُ، قِيلَ: مَنْ مَعَكَ؟ قِيلَ: مُحَمَّدٌ، قِيلَ: وَقَدْ أُرْسِلَ إِلَيْهِ؟ قَالَ: نَعَمْ، قِيلَ: مَرْحَبًا بِهِ، وَلَنِعْمَ المَجِيءُ جَاءَ، فَأَتَيْتُ عَلَى يُوسُفَ، فَسَلَّمْتُ عَلَيْهِ قَالَ: مَرْحَبًا بِكَ مِنْ أَخٍ وَنَبِيٍّ، فَأَتَيْنَا السَّمَاءَ الرَّابِعَةَ، قِيلَ: مَنْ هَذَا؟ قَالَ: جِبْرِيلُ، قِيلَ: مَنْ مَعَكَ؟ قِيلَ مُحَمَّدٌ، قِيلَ: وَقَدْ أُرْسِلَ إِلَيْهِ؟ قِيلَ: نَعَمْ، قِيلَ: مَرْحَبًا بِهِ وَلَنِعْمَ المَجِيءُ جَاءَ، فَأَتَيْتُ عَلَى إِدْرِيسَ، فَسَلَّمْتُ عَلَيْهِ، فَقَالَ: مَرْحَبًا بِكَ مِنْ أَخٍ وَنَبِيٍّ، فَأَتَيْنَا السَّمَاءَ الخَامِسَةَ، قِيلَ: مَنْ هَذَا؟ قَالَ: جِبْرِيلُ، قِيلَ: وَمَنْ مَعَكَ؟ قِيلَ: مُحَمَّدٌ، قِيلَ: وَقَدْ أُرْسِلَ إِلَيْهِ؟ قَالَ: نَعَمْ، قِيلَ: مَرْحَبًا بِهِ وَلَنِعْمَ المَجِيءُ جَاءَ، فَأَتَيْنَا عَلَى هَارُونَ فَسَلَّمْتُ عَلَيْهِ، فَقَالَ: مَرْحَبًا بِكَ مِنْ أَخٍ وَنَبِيٍّ، فَأَتَيْنَا عَلَى السَّمَاءِ السَّادِسَةِ، قِيلَ: مَنْ هَذَا؟ قِيلَ جِبْرِيلُ، قِيلَ: مَنْ مَعَكَ؟ قِيلَ: مُحَمَّدٌ، قِيلَ: وَقَدْ أُرْسِلَ إِلَيْهِ مَرْحَبًا بِهِ وَلَنِعْمَ المَجِيءُ جَاءَ، فَأَتَيْتُ عَلَى مُوسَى، فَسَلَّمْتُ عَلَيْهِ، فَقَالَ: مَرْحَبًا بِكَ مِنْ أَخٍ وَنَبِيٍّ، فَلَمَّا جَاوَزْتُ بَكَى، فَقِيلَ: مَا أَبْكَاكَ: قَالَ: يَا رَبِّ هَذَا الغُلاَمُ الَّذِي بُعِثَ بَعْدِي يَدْخُلُ الجَنَّةَ مِنْ أُمَّتِهِ أَفْضَلُ مِمَّا يَدْخُلُ مِنْ أُمَّتِي، فَأَتَيْنَا السَّمَاءَ السَّابِعَةَ، قِيلَ مَنْ هَذَا؟ قِيلَ: جِبْرِيلُ، قِيلَ مَنْ مَعَكَ؟ قِيلَ: مُحَمَّدٌ، قِيلَ: وَقَدْ أُرْسِلَ إِلَيْهِ، مَرْحَبًا بِهِ وَلَنِعْمَ المَجِيءُ جَاءَ، فَأَتَيْتُ عَلَى إِبْرَاهِيمَ فَسَلَّمْتُ عَلَيْهِ، فَقَالَ: مَرْحَبًا بِكَ مِنَ ابْنٍ وَنَبِيٍّ، فَرُفِعَ لِي البَيْتُ المَعْمُورُ، فَسَأَلْتُ جِبْرِيلَ، فَقَالَ: هَذَا البَيْتُ المَعْمُورُ يُصَلِّي فِيهِ كُلَّ يَوْمٍ سَبْعُونَ أَلْفَ مَلَكٍ، إِذَا خَرَجُوا لَمْ يَعُودُوا إِلَيْهِ آخِرَ مَا عَلَيْهِمْ، وَرُفِعَتْ لِي سِدْرَةُ المُنْتَهَى، فَإِذَا نَبِقُهَا كَأَنَّهُ قِلاَلُ هَجَرَ وَوَرَقُهَا، كَأَنَّهُ آذَانُ الفُيُولِ فِي أَصْلِهَا أَرْبَعَةُ أَنْهَارٍ نَهْرَانِ بَاطِنَانِ، وَنَهْرَانِ ظَاهِرَانِ، فَسَأَلْتُ جِبْرِيلَ، فَقَالَ: أَمَّا البَاطِنَانِ: فَفِي الجَنَّةِ، وَأَمَّا الظَّاهِرَانِ: النِّيلُ وَالفُرَاتُ، ثُمَّ فُرِضَتْ عَلَيَّ خَمْسُونَ صَلاَةً، فَأَقْبَلْتُ حَتَّى جِئْتُ مُوسَى، فَقَالَ: مَا صَنَعْتَ؟ قُلْتُ: فُرِضَتْ عَلَيَّ خَمْسُونَ صَلاَةً، قَالَ: أَنَا أَعْلَمُ بِالنَّاسِ مِنْكَ، عَالَجْتُ بَنِي إِسْرَائِيلَ أَشَدَّ المُعَالَجَةِ، وَإِنَّ أُمَّتَكَ لاَ تُطِيقُ، فَارْجِعْ إِلَى رَبِّكَ، فَسَلْهُ، فَرَجَعْتُ، فَسَأَلْتُهُ، فَجَعَلَهَا أَرْبَعِينَ، ثُمَّ مِثْلَهُ، ثُمَّ ثَلاَثِينَ، ثُمَّ مِثْلَهُ فَجَعَلَ عِشْرِينَ، ثُمَّ مِثْلَهُ فَجَعَلَ عَشْرًا، فَأَتَيْتُ مُوسَى، فَقَالَ: مِثْلَهُ، فَجَعَلَهَا خَمْسًا، فَأَتَيْتُ مُوسَى فَقَالَ: مَا صَنَعْتَ؟ قُلْتُ: جَعَلَهَا خَمْسًا، فَقَالَ مِثْلَهُ، قُلْتُ: سَلَّمْتُ بِخَيْرٍ، فَنُودِيَ إِنِّي قَدْ أَمْضَيْتُ فَرِيضَتِي، وَخَفَّفْتُ عَنْ عِبَادِي، وَأَجْزِي الحَسَنَةَ عَشْرًا.

মালিক ইবন সা‘সা‘আ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আমি কাবা ঘরের নিকট নিদ্রা ও জাগরণ-এ দু’ অবস্থার মাঝামাঝি অবস্থায় ছিলাম। এরপর তিনি দু’ ব্যক্তির মাঝে অপর এক ব্যক্তি অর্থাৎ নিজের অবস্থা উল্লেখ করে বললেন, আমার নিকট স্বর্ণের একটি তশতরী নিয়ে আসা হল-যা হিকমত ও ঈমানে পরিপূর্ণ ছিল। তাপর আমার বুক থেকে পেটের নীচ পর্যমত্ম বিদীর্ণ করা হল। এরপর আমার পেটে যমযমের পানি দ্বারা ধুয়ে ফেলা হল। তারপর হিকমত ও ঈমান পরিপূর্ণ করা হল এবং আমার নিকট সাদা চতুষ্পদ জন্তু আনা হল, যা খচ্চর হতে ছোট আর গাধা থেকে বড় অর্থাৎ বুরাক। এরপর তাতে আরোহণ করে আমি জিবরীল আলাইহিস সালামসহ চলতে চলতে পৃথিবীর নিকটতম আসমানে গিয়ে পৌঁছলাম। জিজ্ঞাসা হল, এ কে? উত্তরে বলা হল, জিবরীল। জিজ্ঞাসা করা হল, আপনার সঙ্গে আর কে? উত্তর দেওয়া হল মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। প্রশ্ন করা হল তাঁকে আনার জন্য কি পাঠানো হয়েছে? তিনি বললেন, হ্যাঁ। বলা হল, তাঁকে ধন্যবাদ, তাঁর শুভাগমন কতই না উত্তম। তারপর আমি আদম আলাইহিস সালামের কাছে গেলাম। তাঁকে সালাম করলাম। তিনি বললেন, পুত্র ও নবী! তোমার প্রতি ধন্যবাদ। এরপর আমরা দ্বিতীয় আসমানে গেলাম। জিজ্ঞাসা করা হল, এ কে? তিনি বললেন, আমি জিবরীল। জিজ্ঞাসা করা হল, আপনার সঙ্গে কে? তিনি বললেন, মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। প্রশ্ন করা হল তাঁকে আনার জন্য কি পাঠানো হয়েছে? তিনি বললেন, হ্যাঁ। বলা হল তাঁকে ধন্যবাদ আর তাঁর শুভাগমন কতই না উত্তম। তারপর আমি ঈসা ও ইয়াহইয়া আলাইহিস সালামের নিকট আসলাম। তাঁরা উভয়ে বললেন, ভাই ও নবী! আপনার প্রতি ধন্যবাদ। তারপর আমরা তৃতীয় আসমানে পৌঁছলাম। জিজ্ঞাসা করা হল, এ কে? তিনি বললেন, আমি জিবরীল। জিজ্ঞাসা করা হল, আপনার সঙ্গে কে? তিনি বললেন, মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। প্রশ্ন করা হল তাঁকে আনার জন্য কি পাঠানো হয়েছে? তিনি বললেন, হ্যাঁ। বলা হল তাঁকে ধন্যবাদ আর তাঁর শুভাগমন কতই না উত্তম। তারপর আমি ইউসুফ আলাইহিস সালামের নিকট গেলাম। তাঁকে আমি সালাম করলাম। তিনি বললেন, ভাই ও নবী! আপনাকে ধন্যবাদ। এরপর আমরা চতুর্থ আসমানে পৌঁছলাম। জিজ্ঞাসা করা হল, এ কে? তিনি বললেন, আমি জিবরীল। জিজ্ঞাসা করা হল, আপনার সঙ্গে কে? তিনি বললেন, মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। প্রশ্ন করা হল তাঁকে আনার জন্য কি পাঠানো হয়েছে? তিনি বললেন, হ্যাঁ। বলা হল তাঁকে ধন্যবাদ আর তাঁর শুভাগমন কতই না উত্তম। তারপর আমি ইদ্রিস আলাইহিস সালামের নিকট গেলাম। আমি তাঁকে সালাম করলাম। তিনি বললেন, ভাই ও নবী! আপনাকে ধন্যবাদ। এরপর আমরা পঞ্চম আসমানে পৌঁছলাম। জিজ্ঞাসা করা হল, এ কে? তিনি বললেন, আমি জিবরীল। জিজ্ঞাসা করা হল, আপনার সঙ্গে কে? তিনি বললেন, মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। প্রশ্ন করা হল তাঁকে আনার জন্য কি পাঠানো হয়েছে? তিনি বললেন, হ্যাঁ। বলা হল তাঁকে ধন্যবাদ আর তাঁর শুভাগমন কতই না উত্তম। তারপর আমরা হারুন আলাইহিস সালামের কাছে গেলাম। আমি তাঁকে সালাম করলাম। তিনি বললেন, ভাই ও নবী! আপনাকে ধন্যবাদ। তারপর ষষ্ঠ আসমানে পৌঁছলাম। জিজ্ঞাসা করা হল, এ কে? তিনি বললেন, আমি জিবরীল। জিজ্ঞাসা করা হল, আপনার সঙ্গে কে? তিনি বললেন, মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। প্রশ্ন করা হল তাঁকে আনার জন্য কি পাঠানো হয়েছে? তিনি বললেন, হ্যাঁ। বলা হল তাঁকে ধন্যবাদ আর তাঁর শুভাগমন কতই না উত্তম। তারপর আমি মূসা আলাইহিস সালামের কাছে গেলাম। আমি তাঁকে সালাম করলাম। তিনি বললেন, ভাই ও নবী আপনাকে ধন্যবাদ। তারপর আমি যখন তাঁর কাছ দিয়ে অতিক্রম করছিলাম, তখন তিনি কেঁদে ফেললেন। তাঁকে বলা হল, আপনি কাঁধছেন কেন? তিনি বলেছেন, হে রব! এ ব্যক্তি যে আমার পপপ্রেরিত, তাঁর উম্মাত আমার উম্মাতের চেয়ে অধিক পরিমাণে বেহেশতে যাবে। এরপর আমরা সপ্তম আকাশে পৌঁছলাম। জিজ্ঞাসা করা হল, এ কে? তিনি বললেন, আমি জিবরীল। জিজ্ঞাসা করা হল, আপনার সঙ্গে কে? তিনি বললেন, মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। প্রশ্ন করা হল তাঁকে আনার জন্য কি পাঠানো হয়েছে? তিনি বললেন, হ্যাঁ। বলা হল তাঁকে ধন্যবাদ আর তাঁর শুভাগমন কতই না উত্তম। তারপর আমি ইবরাহীম আলাইহিস সালামের কাছে গেলাম। আমি তাঁকে সালাম করলাম। তিনি বললেন, হে পুত্র ও নবী! আপনাকে ধন্যবাদ। এরপর বায়তুল মায়মারকে আমার সামনে প্রকাশ করা হল। আমি জিবরীল আলাইহিস সালামকে জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি বললেন, এটি বায়তুল মামুর। প্রতিদিন এখানে সত্তর হাজার ফিরিশতা সালাত আদায় করেন। এরা এখান থেকে একবার বের হলে দ্বিতীয় বার ফিরে আসে না। এটাই তাদের শেষ প্রবেশ। তারপর আমাকে সিদরাতুল মুনতাহা দেখানো হল। দেখলাম, এর ফল যেন, হাজার নামক স্থানের মটকার ন্যায়। আর তার পাতা যেন হাতীর কান। তার মূল দেশে চারটি ঝরনা প্রবাহিত।’ দু’টি অভ্যন্তরে আর দু’টি বাইরে। এ সম্পর্কে আমি জিবরাঈলকে জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি বললেন, অভ্যন্তরে দু’টি জান্নাতে অবস্থিত। আর বাইরের দু’টির একটি হল (ইরাকের) ফুরাত আর অপরটি হল (মিশরের) নীল নদ) তারপর আমি প্রতি পঞ্চাশ ওয়াক্ত সালাত ফরয করা হয়। আমি তা গ্রহণ করে মূসা আলাইহিস সালামের কাছে ফিরে এলাম। তিনি বললেন, কি করে এলেন? আমি বললাম, আমার প্রতি পঞ্চাশ ওয়াক্ত সালাত ফরয করা হয়েছে। তিনি বললেন, আমি আপনার চেয়ে মানুষ সম্পর্কে অধিক জ্ঞাত আছি। আমি বনী ইসরাঈলের চিকিৎসার জন্য যথেষ্ট চেষ্টা করেছি আর আপনার উম্মাত এত (সালাত আদায়ে) সমর্থ হবে না। অতএব আপনার রবের নিকট ফিরে যান এবং তা কমানোর অনুরোধ করুন। আমি ফিরে গেলাম এবং তাঁর নিকট আবেদন করলাম। তিনি সালাত চল্লিশ ওয়াক্ত করে দিলেন। পুনরায় অনুরূপ ঘটল। আর সালাতও ত্রিশ ওয়াক্ত করে দেওয়া হল। পুনরায় অনুরূপ ঘটলে তিনি সালাত বিশ ওয়াক্ত করে দিলেন। আবার অনুরূপ হল। তিনি সালাতকে দশ ওয়াক্ত করে দিলেন। এরপর আমি মূসা আলাইহিস সালামের কাছে আসলাম। তিনি পূর্বের ন্যায় বললেন, এবার আল্লাহ সালাতকে পাঁচ ওয়াক্ত ফরয করে দিলেন। আমি মূসা আলাইহিস সালামের নিকট আসলাম। তিনি বললেন, কি করে আসলেন? আমি বললাম, আল্লাহ পাঁচ ওয়াক্ত ফরয করে দিয়েছেন। এবারও তিনি পূর্বের ন্যায় বললেন, আমি বললাম, আমি তা মেনে নিয়েছে। তখন আওয়ায এল, আমি আমার ফরয জারি করে দিয়েছি। আর আমার বান্দাদের থেকে হালকা করে দিয়েছে। আর আমি প্রতিটি পূণ্যের জন্য দশ গুন সওয়াব দিব।[238]

 

 

চতুর্বিংশ পরিচ্ছেদ

মক্কায় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সামনে বাইতুল মুকাদ্দাস পেশ করা ও তা দেখে বাইতুল মুকাদ্দাসের বর্ণনা দেওয়া।

عَنِ جَابِر بْن عَبْدِ اللَّهِ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا، أَنَّهُ سَمِعَ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: «لَمَّا كَذَّبَتْنِي قُرَيْشٌ، قُمْتُ فِي الحِجْرِ، فَجَلاَ اللَّهُ لِي بَيْتَ المَقْدِسِ، فَطَفِقْتُ أُخْبِرُهُمْ عَنْ آيَاتِهِ وَأَنَا أَنْظُرُ إِلَيْهِ».

জাবির ইবন আবদুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছেন, যখন (মিরাজের ব্যাপারে) কুরাইশরা আমাকে অস্বীকার করল, তখন আমি কা’বা শরীফের হিজর অংশের দাঁড়ালাম। আল্লাহ তা‘আলা তখন আমার সম্মুখে বায়তুল মুকাদ্দাসকে প্রকাশ করে দিলেন, যার ফলে আমি দেখে দেখে বায়তুল মুকাদ্দাসেরসমূহ নিদর্শনগুলো তাদের কাছে বর্ণনা করছিলাম।[239]

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ: قَالَ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «لَقَدْ رَأَيْتُنِي فِي الْحِجْرِ وَقُرَيْشٌ تَسْأَلُنِي عَنْ مَسْرَايَ، فَسَأَلَتْنِي عَنْ أَشْيَاءَ مِنْ بَيْتِ الْمَقْدِسِ لَمْ أُثْبِتْهَا، فَكُرِبْتُ كُرْبَةً مَا كُرِبْتُ مِثْلَهُ قَطُّ»، قَالَ: " فَرَفَعَهُ اللهُ لِي أَنْظُرُ إِلَيْهِ، مَا يَسْأَلُونِي عَنْ شَيْءٍ إِلَّا أَنْبَأْتُهُمْ بِهِ، وَقَدْ رَأَيْتُنِي فِي جَمَاعَةٍ مِنَ الْأَنْبِيَاءِ، فَإِذَا مُوسَى قَائِمٌ يُصَلِّي، فَإِذَا رَجُلٌ ضَرْبٌ، جَعْدٌ كَأَنَّهُ مِنْ رِجَالِ شَنُوءَةَ، وَإِذَا عِيسَى ابْنُ مَرْيَمَ عَلَيْهِ السَّلَامُ قَائِمٌ يُصَلِّي، أَقْرَبُ النَّاسِ بِهِ شَبَهًا عُرْوَةُ بْنُ مَسْعُودٍ الثَّقَفِيُّ، وَإِذَا إِبْرَاهِيمُ عَلَيْهِ السَّلَامُ قَائِمٌ يُصَلِّي، أَشْبَهُ النَّاسِ بِهِ صَاحِبُكُمْ - يَعْنِي نَفْسَهُ - فَحَانَتِ الصَّلَاةُ فَأَمَمْتُهُمْ، فَلَمَّا فَرَغْتُ مِنَ الصَّلَاةِ قَالَ قَائِلٌ: يَا مُحَمَّدُ، هَذَا مَالِكٌ صَاحِبُ النَّارِ، فَسَلِّمْ عَلَيْهِ، فَالْتَفَتُّ إِلَيْهِ، فَبَدَأَنِي بِالسَّلَامِ ".

আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণনা করেছেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আমি হাজরে আসৃওয়াদের কাছে ছিলাম। এ সময় কুরায়শরা আমাকে আমার মিরাজ সম্পর্কে প্রশ্ন করতে শুরু করে। তারা আমাকে বায়তুল মুকাদ্দাসের এমন সব বিষয় সম্পর্কে জিজ্ঞেস করতে লাগল, যা আমি ভালভাবে দেখিনি। ফলে আমি খুবই চিন্তিত হয়ে পড়লাম। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, তারপর আল্লাহ তা‘আলা আমার সম্মুখে বায়তুল মুকাদ্দাসকে উদ্ভাসিত করে দিলেন এবং আমি তা দেখছিলাম। তারা আমাকে যে প্রশ্ন করছিল, তার জবাব দিতে লাগলাম। এরপর নবীগণের এক জামাতেও আমি নিজেকে উদ্ভাসিত দেখলাম। মূসা আলাইহিস সালামকে সালাতে দণ্ডায়মান দেখলাম। তিনি শানূয়া গোত্রের লোকদের মত মধ্যমাকৃতির। তাঁর চুল ছিল কোঁকড়ানো। হযরত ঈসা আলাইহিস সালামকেও সালাতে দাঁড়ানো দেখলাম। উরওয়া ইবন মাসঊদ আস-সাকাফী হচ্ছেন তাঁর নিকটতম সদৃশ। ইবরাহীম আলাইহিস সালামকেও সালাতে দাঁড়ান দেখলাম। তিনি তোমাদের এ সাথীরই সদৃশ। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, তারপর সালাতের সময় হলো, আমি তাঁদের ইমামতি করলাম। সালাত শেষে এক ব্যক্তি আমাকে বললেন, হে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, ইনি জাহান্নামের তত্ত্বাবধায়ক ‘মালিক’, ওকে সালাম করুন। আমি তাঁর দিকে তাকালাম। তিনি আমাকে আগেই সালাম করলেন। [240]

 

 

পঞ্চবিংশ পরিচ্ছেদ

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পোশাকের দ্বারা কিছু সাহাবী বরকত গ্রহণ করেছেন।

عَنْ سَهْلٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ: «أَنَّ امْرَأَةً جَاءَتِ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِبُرْدَةٍ مَنْسُوجَةٍ، فِيهَا حَاشِيَتُهَا»، أَتَدْرُونَ مَا البُرْدَةُ؟ قَالُوا: الشَّمْلَةُ، قَالَ: نَعَمْ، قَالَتْ: نَسَجْتُهَا بِيَدِي فَجِئْتُ لِأَكْسُوَكَهَا، «فَأَخَذَهَا النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مُحْتَاجًا إِلَيْهَا، فَخَرَجَ إِلَيْنَا وَإِنَّهَا إِزَارُهُ»، فَحَسَّنَهَا فُلاَنٌ، فَقَالَ: اكْسُنِيهَا، مَا أَحْسَنَهَا، قَالَ القَوْمُ: مَا أَحْسَنْتَ، لَبِسَهَا النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مُحْتَاجًا إِلَيْهَا، ثُمَّ سَأَلْتَهُ، وَعَلِمْتَ أَنَّهُ لاَ يَرُدُّ، قَالَ: إِنِّي وَاللَّهِ، مَا سَأَلْتُهُ لِأَلْبَسَهُ، إِنَّمَا سَأَلْتُهُ لِتَكُونَ كَفَنِي، قَالَ سَهْلٌ: فَكَانَتْ كَفَنَهُ.

সাহল রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, এক মহিলা রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে একখানা বুরদাহ (চাদর) নিয়ে এলেন যার সাথে ঝালর যুক্ত ছিল। সাহল রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, তোমরা জান, বুরদাহ কি? তারা বলল, চাদর। সাহল রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, ঠিকই। মহিলা বললেন, চাদরখানি আমি নিজ হাতে বুনেছি এবং তা আপনার পরিধানের জন্য নিয়ে এসেছি। রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা গ্রহণ করলেন এবং তাঁর চাদরের প্রয়োজনও ছিল। তারপর তিনি তাই যার রূপে পরিধান করে আমাদের সামনে তাশরীফ আনেন। তখন জনৈক ব্যক্তি তার সৌন্দর্য বর্ণনা করে বললেন, বাহ! এ যে কত সুন্দর। আমাকে তা পড়ার জন্য দান করুন। সাহাবীগণ বললেন, তুমি ভাল করনি। রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা তাঁর প্রয়োজনে পরেছেন; তবুও তুমি তা চেয়ে বসলে। অথচ তুমি জান যে, তিনি কাউকে বিমুখ করেন না। ঐ ব্যক্তি বলল, আল্লাহর কসম! আমি তা পাবার উদ্দেশ্যে চাইনি। আমার চাওয়ার একমাত্র উদ্দেশ্য যেন তা আমার কাফন হয়। সাহল রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, শেষ পর্যন্ত তা তাঁর কাফনই হয়েছিল।[241]

 

 

ষষ্ঠবিংশ পরিচ্ছেদ

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে ফিরিশতাগনের জিহাদে শরিক হওয়া।

عَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا، قَالَتْ: لَمَّا رَجَعَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مِنَ الخَنْدَقِ، وَوَضَعَ السِّلاَحَ وَاغْتَسَلَ، أَتَاهُ جِبْرِيلُ عَلَيْهِ السَّلاَمُ، فَقَالَ: " قَدْ وَضَعْتَ السِّلاَحَ؟ وَاللَّهِ مَا وَضَعْنَاهُ، فَاخْرُجْ إِلَيْهِمْ قَالَ: فَإِلَى أَيْنَ؟ قَالَ: هَا هُنَا، وَأَشَارَ إِلَى بَنِي قُرَيْظَةَ، فَخَرَجَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِلَيْهِمْ ".

আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খন্দক যুদ্ধ থেকে প্রত্যাবর্তন করে সমরাস্ত্র রেখে গোসল করেছেন মাত্র। এমতাবস্থায় তাঁর কাছে জিবরীল আলাইহিস সালাম এসে বললেন, আপনি তো অস্ত্রশস্ত্র (খুলে) রেখে দিয়েছেন। আল্লাহর কসম! আমরা এখনও তা খুলিনি। চলুন তাদের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিজ্ঞেস করলেন, কোথায় যেতে হবে? তিনি বনূ কুরায়যা গোত্রের প্রতি ইঙ্গিত করে বললেন, ঐদিকে। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের বিরুদ্ধে অভিযানে রওয়ানা হলেন।[242]

عَنْ أَنَسٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، قَالَ: «كَأَنِّي أَنْظُرُ إِلَى الغُبَارِ سَاطِعًا فِي زُقَاقِ بَنِي غَنْمٍ، مَوْكِبَ جِبْرِيلَ صَلَوَاتُ اللَّهِ عَلَيْهِ حِينَ سَارَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِلَى بَنِي قُرَيْظَةَ».

আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন বনূ কুরায়যার মহল্লার দিকে যাচ্ছিলেন তখন [জিবরীল আলাইহিস সালামের অধীন] ফেরেশতা বাহিনীও তাঁর সংগে যাচ্ছিলেন, এমনকি (পথিমধ্যে) বনূ গানম গোত্রের গলিতে জিবরীল আলাইহিস সালামের বাহিনীর গমনে ওড়া ধূলারাশি এখনো যেন আমি দেখতে পাচ্ছি।[243]

 

 

সপ্তবিংশ পরিচ্ছেদ

আল্লাহ তা‘আলা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বিশুদ্ধভাষা ও বাগ্মিতা দান করেছেন।

 عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ، أَنَّ ضِمَادًا، قَدِمَ مَكَّةَ وَكَانَ مِنْ أَزْدِ شَنُوءَةَ، وَكَانَ يَرْقِي مِنْ هَذِهِ الرِّيحِ، فَسَمِعَ سُفَهَاءَ مِنْ أَهْلِ مَكَّةَ، يَقُولُونَ: إِنَّ مُحَمَّدًا مَجْنُونٌ، فَقَالَ: لَوْ أَنِّي رَأَيْتُ هَذَا الرَّجُلَ لَعَلَّ اللهَ يَشْفِيهِ عَلَى يَدَيَّ، قَالَ فَلَقِيَهُ، فَقَالَ: يَا مُحَمَّدُ إِنِّي أَرْقِي مِنْ هَذِهِ الرِّيحِ، وَإِنَّ اللهَ يَشْفِي عَلَى يَدِي مَنْ شَاءَ، فَهَلْ لَكَ؟ فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِنَّ الْحَمْدَ لِلَّهِ، نَحْمَدُهُ وَنَسْتَعِينُهُ، مَنْ يَهْدِهِ اللهُ فَلَا مُضِلَّ لَهُ، وَمَنْ يُضْلِلْ فَلَا هَادِيَ لَهُ، وَأَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيكَ لَهُ، وَأَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُولُهُ، أَمَّا بَعْدُ» قَالَ: فَقَالَ: أَعِدْ عَلَيَّ كَلِمَاتِكَ هَؤُلَاءِ، فَأَعَادَهُنَّ عَلَيْهِ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، ثَلَاثَ مَرَّاتٍ، قَالَ: فَقَالَ: لَقَدْ سَمِعْتُ قَوْلَ الْكَهَنَةِ، وَقَوْلَ السَّحَرَةِ، وَقَوْلَ الشُّعَرَاءِ، فَمَا سَمِعْتُ مِثْلَ كَلِمَاتِكَ هَؤُلَاءِ، وَلَقَدْ بَلَغْنَ نَاعُوسَ الْبَحْرِ، قَالَ: فَقَالَ: هَاتِ يَدَكَ أُبَايِعْكَ عَلَى الْإِسْلَامِ، قَالَ: فَبَايَعَهُ، فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «وَعَلَى قَوْمِكَ»، قَالَ: وَعَلَى قَوْمِي، قَالَ: فَبَعَثَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ سَرِيَّةً، فَمَرُّوا بِقَوْمِهِ، فَقَالَ صَاحِبُ السَّرِيَّةِ لِلْجَيْشِ: هَلْ أَصَبْتُمْ مِنْ هَؤُلَاءِ شَيْئًا؟ فَقَالَ رَجُلٌ مِنَ الْقَوْمِ: أَصَبْتُ مِنْهُمْ مِطْهَرَةً، فَقَالَ: رُدُّوهَا، فَإِنَّ هَؤُلَاءِ قَوْمُ ضِمَادٍ.

ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। দিমাদ মক্কায় আগমন করলেন। তিনি আযদ শানুআ গোত্রের সদস্য। তিনি বাতাস লাগার ঝারফুঁক করতেন। তিনি মক্কার কতক নির্বোধকে বলতে শুনেছেন, মুহাম্মাদ নিশ্চয়ই উন্মাদ। দিমাদ বলেন, আমি যদি লোকটিকে দেখতাম তাহলে আল্লাহ হয়ত আমার হাতে তাকে আরোগ্য দান করতেন। রাবী বলেন, তিনি তাঁর সাথে সাক্ষাৎ করে বলেন, হে মুহাম্মাদ! আমি এসব বাতাস লাগার ঝাড়ফুঁক করি। আল্লাহ যাকে চান তাকে আমার হাতে আরোগ্য দান করেন। আপনি কি ঝড়ফুঁক করাতে চান? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, নিশ্চয়ই সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর। আমি তাঁর প্রশংসা করি, তাঁর সাহায্য প্রার্থনা করি। আল্লাহ যাকে হেদায়েত দান করেন, কেউ তাকে বিপথগামী করতে পারে না এবং তিনি যাকে বিপথগামী করেন, কেউ তাকে হেদায়েত দান করতে পারেন না। আমি সাক্ষ্য দেই যে, আল্লাহ ব্যতীত কোনো ইলাহ নাই, তিনি একক, তাঁর কোনো শরীক নাই এবং নিশ্চয়ই মুহাম্মাদ তাঁর বান্দা ও রাসূল। অতঃপর রাবী বলেন, দিমাদ বললেন, আপনার এই কথাগুলো আমাকে পুনরায় শুনান। অতএব, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেই কথাগুলো তাকে তিনবার পুনরাবৃত্তি করে শুনান। রাবী বলেন, দিমাদ বললো, আমি অনেক গণক ও জাদুকরের কথা শুনেছি, কিন্তু আপনার এই কথাগুলোর অনুরূপ কথা আমি শুনিনি। এই কথাগুলো সমুদ্রের গভীরে পৌঁছে গেছে। রাবী বলেন, দিমাদ বললেন, আপনার হাত প্রসারিত করুন, আমি আপনার নিকট ইসলামের বাই‘আত গ্রহণ করবো। তিনি তাকে বাই‘আত করালেন (ইসলাম গ্রহণ করালেন)। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমার সম্প্রদায়ের ক্ষেত্রেও কি (বাই‘আত প্রযোজ্য)? দিমাদ বলেন, আমার সম্প্রদায়ের ক্ষেত্রেও। রাবী বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটি ক্ষুদ্র সামরিক বাহিনী (সারিয়্যা) প্রেরণ করলে তারা তার সম্প্রদায়ের এলাকা দিয়ে অতিক্রম করে। তখন বাহিনী প্রধান সৈন্যবাহিনীকে বলেন, তোমরা কি এদের থেকে কিছু গ্রহণ করেছ? দলের একজন বললো, আমি তাদের থেকে একটি পানির পাত্র নিয়েছি। সেনানায়ক বলেন, তোমরা সেটি ফেরত দাও। কারণ তারা দিমাদের সম্প্রদায়। [244]

 

 

অষ্টাবিংশ পরিচ্ছেদ

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর যে রহমত নাযিল হয়েছে।

عَنِ الْمِقْدَادِ، قَالَ: أَقْبَلْتُ أَنَا وَصَاحِبَانِ لِي، وَقَدْ ذَهَبَتْ أَسْمَاعُنَا وَأَبْصَارُنَا مِنَ الْجَهْدِ، فَجَعَلْنَا نَعْرِضُ أَنْفُسَنَا عَلَى أَصْحَابِ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَلَيْسَ أَحَدٌ مِنْهُمْ يَقْبَلُنَا، فَأَتَيْنَا النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَانْطَلَقَ بِنَا إِلَى أَهْلِهِ، فَإِذَا ثَلَاثَةُ أَعْنُزٍ، فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «احْتَلِبُوا هَذَا اللَّبَنَ بَيْنَنَا»، قَالَ: فَكُنَّا نَحْتَلِبُ فَيَشْرَبُ كُلُّ إِنْسَانٍ مِنَّا نَصِيبَهُ، وَنَرْفَعُ لِلنَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ نَصِيبَهُ، قَالَ: فَيَجِيءُ مِنَ اللَّيْلِ فَيُسَلِّمُ تَسْلِيمًا لَا يُوقِظُ نَائِمًا، وَيُسْمِعُ الْيَقْظَانَ، قَالَ: ثُمَّ يَأْتِي الْمَسْجِدَ فَيُصَلِّي، ثُمَّ يَأْتِي شَرَابَهُ فَيَشْرَبُ، فَأَتَانِي الشَّيْطَانُ ذَاتَ لَيْلَةٍ وَقَدْ شَرِبْتُ نَصِيبِي، فَقَالَ: مُحَمَّدٌ يَأْتِي الْأَنْصَارَ فَيُتْحِفُونَهُ، وَيُصِيبُ عِنْدَهُمْ مَا بِهِ حَاجَةٌ إِلَى هَذِهِ الْجُرْعَةِ، فَأَتَيْتُهَا فَشَرِبْتُهَا، فَلَمَّا أَنْ وَغَلَتْ فِي بَطْنِي، وَعَلِمْتُ أَنَّهُ لَيْسَ إِلَيْهَا سَبِيلٌ، قَالَ: نَدَّمَنِي الشَّيْطَانُ، فَقَالَ: وَيْحَكَ، مَا صَنَعْتَ أَشَرِبْتَ شَرَابَ مُحَمَّدٍ، فَيَجِيءُ فَلَا يَجِدُهُ فَيَدْعُو عَلَيْكَ فَتَهْلِكُ فَتَذْهَبُ دُنْيَاكَ وَآخِرَتُكَ، وَعَلَيَّ شَمْلَةٌ إِذَا وَضَعْتُهَا عَلَى قَدَمَيَّ خَرَجَ رَأْسِي، وَإِذَا وَضَعْتُهَا عَلَى رَأْسِي خَرَجَ قَدَمَايَ، وَجَعَلَ لَا يَجِيئُنِي النَّوْمُ، وَأَمَّا صَاحِبَايَ فَنَامَا وَلَمْ يَصْنَعَا مَا صَنَعْتُ، قَالَ: فَجَاءَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَسَلَّمَ كَمَا كَانَ يُسَلِّمُ، ثُمَّ أَتَى الْمَسْجِدَ فَصَلَّى، ثُمَّ أَتَى شَرَابَهُ فَكَشَفَ عَنْهُ، فَلَمْ يَجِدْ فِيهِ شَيْئًا، فَرَفَعَ رَأْسَهُ إِلَى السَّمَاءِ، فَقُلْتُ: الْآنَ يَدْعُو عَلَيَّ فَأَهْلِكُ، فَقَالَ: «اللهُمَّ، أَطْعِمْ مَنْ أَطْعَمَنِي، وَأَسْقِ مَنْ أَسْقَانِي»، قَالَ: فَعَمَدْتُ إِلَى الشَّمْلَةِ فَشَدَدْتُهَا عَلَيَّ، وَأَخَذْتُ الشَّفْرَةَ فَانْطَلَقْتُ إِلَى الْأَعْنُزِ أَيُّهَا أَسْمَنُ، فَأَذْبَحُهَا لِرَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَإِذَا هِيَ حَافِلَةٌ، وَإِذَا هُنَّ حُفَّلٌ كُلُّهُنَّ، فَعَمَدْتُ إِلَى إِنَاءٍ لِآلِ مُحَمَّدٍ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَا كَانُوا يَطْمَعُونَ أَنْ يَحْتَلِبُوا فِيهِ، قَالَ: فَحَلَبْتُ فِيهِ حَتَّى عَلَتْهُ رَغْوَةٌ، فَجِئْتُ إِلَى رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَقَالَ: «أَشَرِبْتُمْ شَرَابَكُمُ اللَّيْلَةَ»، قَالَ: قُلْتُ: يَا رَسُولَ اللهِ، اشْرَبْ، فَشَرِبَ، ثُمَّ نَاوَلَنِي، فَقُلْتُ: يَا رَسُولَ اللهِ، اشْرَبْ، فَشَرِبَ، ثُمَّ نَاوَلَنِي، فَلَمَّا عَرَفْتُ أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَدْ رَوِيَ وَأَصَبْتُ دَعْوَتَهُ، ضَحِكْتُ حَتَّى أُلْقِيتُ إِلَى الْأَرْضِ، قَالَ: فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِحْدَى سَوْآتِكَ يَا مِقْدَادُ»، فَقُلْتُ: يَا رَسُولَ اللهِ، كَانَ مِنْ أَمْرِي كَذَا وَكَذَا وَفَعَلْتُ كَذَا، فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَا هَذِهِ إِلَّا رَحْمَةٌ مِنَ اللهِ، أَفَلَا كُنْتَ آذَنْتَنِي فَنُوقِظَ صَاحِبَيْنَا فَيُصِيبَانِ مِنْهَا»، قَالَ: فَقُلْتُ: وَالَّذِي بَعَثَكَ بِالْحَقِّ، مَا أُبَالِي إِذَا أَصَبْتَهَا وَأَصَبْتُهَا مَعَكَ مَنْ أَصَابَهَا مِنَ النَّاسِ.

মিক্বদাদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: আমি ও আমার দুই সাথী সামনে অগ্রসর হলাম এমন অবস্থায় প্রচণ্ড খাদ্যাভাবে আমার ও আমার দু সঙ্গীর দৃষ্টিশক্তি ও শ্রুতিশক্তি লোপ পাচ্ছিল। পরে আমরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহাবীদের কাছে নিজেদের পেশ করতে লাগলাম। কিন্তু তাঁদের কেউ আমাদেরকে গ্রহণ করলেন না। অবশেষে আমরা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে এলে তিনি আমাদের নিয়ে তাঁর পরিবারের কাছে গেলেন। সেখানে তিনটি মেষ ছিল। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমরা দুধ দোহন করবে। এ দুধ আমরা ভাগ করে পান করব। তিনি বলেন, এরপর থেকে আমরা দুধ দোহন করতাম। আমাদের প্রত্যেকে নিজ নিজ অংশ পান করতো। আর আমরা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জন্য তার অংশ তুলে রাখতাম। মিকদাদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রাতে আসতেন এবং এমনভাবে সালাম দিতেন যাতে ঘুমন্ত ব্যক্তি জাগ্রত না হয় আর জাগ্রত ব্যক্তি শুনতে পায়। রাবী বলেন, এরপর তিনি মসজিদে এসে সালাত আদায় করতেন ও ফিরে এসে দুধপান করতেন। এক রাতে আমার কাছে শয়তান আসলো। আমি তো আমার অংশ পান করে ফেলেছিলাম। সে বললো মুহাম্মাদ আননারীদের কাছে গেলে তারা তাঁকে তোহফা (উপটৌকন) দিবে এবং তাদের কাছে তাঁর এ সামান্য দুধের প্রয়োজনীয়তাও মিটে যাবে। এরপর আমি এসে সেটুকুও পান করে ফেললাম। দুধ যখন ভালভাবে আমার পেটে প্রবেশ করলো এবং আমি বুঝলাম, এ দুধ বের করার আর কোন উপায় নেই, তখন শয়তান আমার থেকে দূর সরে গিয়ে বললো, তোমার সর্বনাশ হোক তুমি কি কাণ্ড করলে! তুমি মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দুধপান করে ফেলেছ? তিনি এসে যখন তা পাবেন না, তখন তোমার উপর বদ-দু‘আ করবেন। তাতে তুমি ধ্বংস হয়ে যাবে এবং তোমার দুনিয়া ও আখিরাত বরবাদ হয়ে যাবে। আমার গায়ে ছিল একটা চাদর। যদি আমি তা আমার পদযুগলের উপর রাখি তাহলে আমার মাথা বের হয়ে পড়ে, আর যদি আমি তা আমার মাথার উপর রাখি তাহলে আমার পদযুগল বেরিয়ে পড়ে। আমার ঘুম আসছিলো না। আমার সঙ্গীদ্বয় তো ঘুমাচ্ছিল। তারা তো আমার মতো কাজ করেনি। তিনি বলেন, এরপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এসে যেভাবে সালাম দিতেন সেভাবেই সালাম দিলেন। তারপর তিনি মসজিদে এসে সালাত আদায় করলেন। এরপর দুধের কাছে এসে ঢাকনা খুলে সেখানে কিছুই পেলেন না। এরপর তিনি স্বীয় মাথা আসমানের দিকে তুললেন। আমি তখন (মনে মনে) বললাম, এখনই তিনি আমার ওপর বদ-দু‘আ করবেন, আর আমি ধ্বংস হয়ে যাব। তিনি বললেন, হে আল্লাহ! যে ব্যক্তি আমাকে আহার করায়, তাকে তুমি আহার করাও। আর যে আমাকে পান করায়, তাকে তুমি পান করাও। মিকদাদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, এ সময় আমি চাদরটি নিয়ে শরীরে বাধলাম, আর একটি ছুরি নিলাম, তারপর (এই ভেবে) মেষগুলির কাছে গেলাম যে, এগুলোর মাঝে যেটি সবচেয়ে বেশি মোটাতাজা, আমি সেটি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জন্য যবেহ করবো। গিয়ে দেখলাম, সেটি দুধে পরিপূর্ণ এবং অন্যান্য সব মেষও দুধে পরিপূর্ণ। এরপর আমি মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পরিবারের একটি পাত্র নিয়ে এলাম যাতে তাঁরা দুধ দোহাতেন না। তিনি মিকদাদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, আমি তাতেই দুধ দোহন করলাম, এমনকি পাত্রের উপরিভাগে ফেলা ভেসে উঠলো। এরপর আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে আসলাম। তিনি বললেন, তোমরা কি রাতের দুধ পান করেছেন? তিনি বলেন, আমি বললাম, ইয়া রাসুলুল্লাহ! আপনি পান করুন। তিনি পান করলেন, এরপর আমাকে দিলেন। আমি বললাম, ইয়া রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আপনি পান করুন। তিনি পান করে আবার আমাকে দিলেন। যখন আমি বুঝতে পারলাম যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পরিতৃপ্ত হয়ে গেছেন এবং আমি তাঁর দো‘আ পেয়ে গেছি, তখন আমি হাসতে হাসতে যমীনে পড়ে গেলাম। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হে মিকদাদ! তুমি কি কোনো অপকর্ম করেছেন? তখন আমি বললাম, ইয়া রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আমার এ ই কাণ্ড ঘটে গেছে। অথবা তিনি বলেছেন, আমি এরূপ কাজ করে ফেলেছি। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এটা একমাত্র আল্লাহর মেহেরবানী! তুমি কেন আমাকে অবহিত করলে না? আমরা আমাদের সাথীদ্বয়কে জাগ্রত করতাম, তাহলে তারাও এর ভাগ পেত! তিনি বলেন, আমি তখন বললাম, যে মহান স্বত্বা আপনাকে সত্য দীনসহ পাঠিয়েছেন, তাঁর শপথ! আপনি যখন পেয়েছেন, অথবা বলেছেন, আমি যখন আপনার সাথে ভাগ পেয়েছি, তখন অন্য কোন লোক পাওয়া না পাওয়ার আমি পরওয়া করি না।[245]

 

 

ঊনত্রিশতম পরিচ্ছেদ

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ব্যবহৃত পানি ও চুলের দ্বারা সাহাবীগণের বরকত লাভ।

عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ، قَالَ: «كَانَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا صَلَّى الْغَدَاةَ جَاءَ خَدَمُ الْمَدِينَةِ بِآنِيَتِهِمْ فِيهَا الْمَاءُ، فَمَا يُؤْتَى بِإِنَاءٍ إِلَّا غَمَسَ يَدَهُ فِيهَا، فَرُبَّمَا جَاءُوهُ فِي الْغَدَاةِ الْبَارِدَةِ، فَيَغْمِسُ يَدَهُ فِيهَا».

আনাস ইবন মালিক রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন ভোরের সালাত আদায় করতেন তখন মদীনার খাদিমরা তাদের পাত্রে করে পানি নিয়ে আসত। তাঁর কাছে কোনো পাত্র আনা হলে তিনি তাতে হাত ডুবিয়ে দিতেন। আর শীতের দিনেও কখনো কখনো তিনি হাত ডূবিয়ে দিতেন।[246]

عَنْ أَنَسٍ، قَالَ: لَقَدْ «رَأَيْتُ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَالْحَلَّاقُ يَحْلِقُهُ، وَأَطَافَ بِهِ أَصْحَابُهُ، فَمَا يُرِيدُونَ أَنْ تَقَعَ شَعْرَةٌ إِلَّا فِي يَدِ رَجُلٍ».

আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি দেখেছি ক্ষোরকার রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের চুল মুড়াচ্ছে আর সাহাবীরা তার চারপাশ ঘিরে রেখেছেন। তাঁরা চাইতেন যে, কোনো চুল যেন মাটিতে না পড়ে যায়, যেন কারো না কারো হাতে পড়ে।[247]

 

 

ত্রিশতম পরিচ্ছেদ

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ঘামের সুঘ্রাণ

عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ، قَالَ: دَخَلَ عَلَيْنَا النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ عِنْدَنَا، فَعَرِقَ، وَجَاءَتْ أُمِّي بِقَارُورَةٍ، فَجَعَلَتْ تَسْلِتُ الْعَرَقَ فِيهَا، فَاسْتَيْقَظَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ: «يَا أُمَّ سُلَيْمٍ مَا هَذَا الَّذِي تَصْنَعِينَ؟» قَالَتْ: هَذَا عَرَقُكَ نَجْعَلُهُ فِي طِيبِنَا، وَهُوَ مِنْ أَطْيَبِ الطِّيبِ.

আনাস ইবন মালিক রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের ঘরে আসলেন এবং বিশ্রাম নিলেন। তিনি ঘামছিলেন আর আমার মা একটি শিশি নিয়ে তা মুছে মুছে তাতে ভরতে লাগলেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জেগে গেলেন। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, হে উম্মে সুলাইম! একি করছ? আমার মা বললেন, এ আপনার ঘাম, যা আমরা সুগন্ধির সাথে মিশ্রিত করি, আর এ তো সব সুগন্ধির সেরা সুগন্ধি।[248]

عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ، قَالَ: كَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَدْخُلُ بَيْتَ أُمِّ سُلَيْمٍ فَيَنَامُ عَلَى فِرَاشِهَا، وَلَيْسَتْ فِيهِ، قَالَ: فَجَاءَ ذَاتَ يَوْمٍ فَنَامَ عَلَى فِرَاشِهَا، فَأُتِيَتْ فَقِيلَ لَهَا: هَذَا النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ نَامَ فِي بَيْتِكِ، عَلَى فِرَاشِكِ، قَالَ فَجَاءَتْ وَقَدْ عَرِقَ، وَاسْتَنْقَعَ عَرَقُهُ عَلَى قِطْعَةِ أَدِيمٍ، عَلَى الْفِرَاشِ، فَفَتَحَتْ عَتِيدَتَهَا فَجَعَلَتْ تُنَشِّفُ ذَلِكَ الْعَرَقَ فَتَعْصِرُهُ فِي قَوَارِيرِهَا، فَفَزِعَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ: «مَا تَصْنَعِينَ؟ يَا أُمَّ سُلَيْمٍ» فَقَالَتْ: يَا رَسُولَ اللهِ نَرْجُو بَرَكَتَهُ لِصِبْيَانِنَا، قَالَ: «أَصَبْتِ».

আনাস ইবন মালিক রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উম্মে সুলাইমের ঘরে যেতেন এবং তার বিছানায় ঘুমাতেন আর উম্মে সুলাইম তখন ঘরে থাকতেন না। আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, একদিন তিনি এলেন এবং তার বিছানায় ঘুমালেন। অতঃপর তিনি (উম্মে সুলাইম) এলে তাকে বলা হল, ইনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তোমার ঘরে, তোমার বিছানায় ঘুমিয়ে আছেন। আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, উম্মে সুলাইম ঘরে এলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন ঘেমেছিলেন, আর তাঁর ঘাম চামড়ার বিছানার উপর জমেছিল। উম্মে সুলাইম তার কৌটা খুললেন এবং সে ঘাম মুছে মুছে শিশিতে ভরতে লাগলেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘুম থেকে উঠে তাকে বললেন, তুমি কি করছ, হে উম্মে সুলাইম! তিনি বললেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ! আমাদের শিশুদের বরকতের উদ্দেশ্যে নিচ্ছি। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ভাল করেছ।[249]

عَنْ أُمِّ سُلَيْمٍ، أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ يَأْتِيهَا فَيَقِيلُ عِنْدَهَا فَتَبْسُطُ لَهُ نِطْعًا فَيَقِيلُ عَلَيْهِ، وَكَانَ كَثِيرَ الْعَرَقِ، فَكَانَتْ تَجْمَعُ عَرَقَهُ فَتَجْعَلُهُ فِي الطِّيبِ وَالْقَوَارِيرِ، فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «يَا أُمَّ سُلَيْمٍ مَا هَذَا؟» قَالَتْ: عَرَقُكَ أَدُوفُ بِهِ طِيبِي.

উম্মে সুলাইম রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার কাছে আসতেন এবং বিশ্রাম নিতেন। উম্মে সুলাইম তার জন্য একটা চামড়া বিছিয়ে দিলে তিনি তার উপর “কায়লুলা- করতেন। তিনি খুব ঘামতেন আর উম্মে সুলায়ম তা জমা করতেন এবং সুগন্ধির শিশিতে তা রাখতেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, হে উম্মে সুলাইম! এ কী করছ? তিনি বললেন, আপনার ঘাম, আমি তা সুগন্ধির সাথে মিশিয়ে রাখি।[250]

 

 

একত্রিশতম পরিচ্ছেদ

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ব্যবহৃত পানি দ্বারা বরকত হাসিল।

عَنْ أَبِي مُوسَى، قَالَ: كُنْتُ عِنْدَ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، وَهُوَ نَازِلٌ بِالْجِعْرَانَةِ بَيْنَ مَكَّةَ وَالْمَدِينَةِ، وَمَعَهُ بِلَالٌ، فَأَتَى رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، رَجُلٌ أَعْرَابِيٌّ، فَقَالَ: أَلَا تُنْجِزُ لِي، يَا مُحَمَّدُ مَا وَعَدْتَنِي؟ فَقَالَ لَهُ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ «أَبْشِرْ» فَقَالَ لَهُ الْأَعْرَابِيُّ: أَكْثَرْتَ عَلَيَّ مِنْ «أَبْشِرْ» فَأَقْبَلَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَلَى أَبِي مُوسَى وَبِلَالٍ، كَهَيْئَةِ الْغَضْبَانِ، فَقَالَ: «إِنَّ هَذَا قَدْ رَدَّ الْبُشْرَى، فَاقْبَلَا أَنْتُمَا» فَقَالَا: قَبِلْنَا، يَا رَسُولَ اللهِ ثُمَّ دَعَا رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِقَدَحٍ فِيهِ مَاءٌ، فَغَسَلَ يَدَيْهِ وَوَجْهَهُ فِيهِ، وَمَجَّ فِيهِ، ثُمَّ قَالَ: «اشْرَبَا مِنْهُ، وَأَفْرِغَا عَلَى وُجُوهِكُمَا وَنُحُورِكُمَا، وَأَبْشِرَا» فَأَخَذَا الْقَدَحَ، فَفَعَلَا مَا أَمَرَهُمَا بِهِ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَنَادَتْهُمَا أُمُّ سَلَمَةَ مِنْ وَرَاءِ السِّتْرِ: أَفْضِلَا لِأُمِّكُمَا مِمَّا فِي إِنَائِكُمَا فَأَفْضَلَا لَهَا مِنْهُ طَائِفَةً.

আবু মূসা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে ছিলাম। তিনি মক্কা ও মদীনার মাঝখানে জি’রানা নামক স্থানে অবস্থান করছিলেন। তাঁর সাথে বিলাল রাদিয়াল্লাহু আনহুও ছিল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে এক বেদুঈন এসে বলল, হে মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আপনি কি আপনার ওয়াদা পূর্ণ করবেন না? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন, সুসংবাদ গ্রহণ কর বা খুশি হয়ে যাও। বেদুঈন তাঁকে বলল, আপনি আমাকে বহুত বলেছেন খুশি হয়ে যাও। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাগান্বিত হয়ে আবু মূসা ও বিলালের রাদিয়াল্লাহু আনহুমার দিকে ফিরলেন। অতঃপর তিনি বললেন, এই লোকটি সুসংবাদ প্রত্যাখ্যান করেছে। তোমরা উভয়ে তা গ্রহণ কর। তারা উভয়ে বললেন, হে আল্লাহর রাসূল, আমরা গ্রহণ করলাম। অতঃপর তিনি এক পেয়ালা পানি নিয়ে ডাকলেন। তিনি তাতে দুই হাত ও মুখ ধুলেন এবং কুলি করলেন। অতঃপর তিনি বললেন, তোমরা উভয়ে এই পানি থেকে পান কর এবং নিজেদের মুখমন্ডল ও বক্ষদেশে তা প্রবাহিত কর এবং সুসংবাদ গ্রহণ কর। তারা উভয়ে পেয়ালা তুলে নিয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নির্দেশমত কাজ করলেন। পর্দার আড়াল থেকে উম্মু সালামা রাদিয়াল্লাহু আনহা তাদেরকে ডেকে বললেন, তোমাদের মায়ের জন্যও তোমাদের পাত্রের কিছু পানি লও। তারা তাকেও অবশিষ্ট পানির কিছু দিলেন। [251]

 

 

বত্রিশতম পরিচ্ছেদ

আল্লাহ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জন্য মানুষের শ্রবণশক্তি খুলে দেন, ফলে তারা অনেক দূরবর্তী স্থান থেকেও তাঁর কথা শুনতে পান।

عَنْ عَبْدِ الرَّحْمَنِ بْنِ مُعَاذٍ التَّيْمِيِّ، قَالَ: خَطَبَنَا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، وَنَحْنُ بِمِنًى فَفُتِحَتْ أَسْمَاعُنَا، حَتَّى كُنَّا نَسْمَعُ مَا يَقُولُ: وَنَحْنُ فِي مَنَازِلِنَا فَطَفِقَ يُعَلِّمُهُمْ مَنَاسِكَهُمْ حَتَّى بَلَغَ الْجِمَارَ فَوَضَعَ أُصْبُعَيْهِ السَّبَّابَتَيْنِ، ثُمَّ قَالَ: «بِحَصَى الْخَذْفِ» ثُمَّ أَمَرَ الْمُهَاجِرِينَ فَنَزَلُوا فِي مُقَدَّمِ الْمَسْجِدِ، وَأَمَرَ الْأَنْصَارَ فَنَزَلُوا مِنْ وَرَاءِ الْمَسْجِدِ، ثُمَّ نَزَلَ النَّاسَ بَعْدَ ذَلِكَ.

আবদুর রহমান ইবন মু‘আয আত-তায়মী রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা মিনাতে অবস্থানকালে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খুতবা প্রদান করেন। এসময় আমাদের শ্রবণ শক্তি প্রখর হয় এবং তাঁর বক্তব্য আমরা (স্পষ্টরূপে) শুনতে পাই। এ সময় আমরা আমাদের নির্দিষ্ট স্থানে ছিলাম। অতঃপর তিনি আমাদেরকে হজ্জের আহকাম সম্পর্কে শিক্ষা দেন এবং নিক্ষেপ করা পর্যন্ত পৌঁছান। তিনি তাঁর ‘হাতের শাহাদাত ও বৃদ্ধ অঙ্গুলীকে স্বীয় কান পর্যন্ত উঠান, অতঃপর কংকর নিক্ষেপের নিয়ম প্রদর্শন করেন। অতঃপর তিনি মুহাজিরদেকে তাদের জন্য নির্ধারিত স্থানে গমণ করতে বললে তারা মসজিদের পশ্চাতে আসন গ্রহণ করেন। এদের পর অন্য লোকেরা স্ব-স্ব স্থানে অবস্থান গ্রহণ করে। [252]

 

 

তেত্রিশতম পরিচ্ছেদ

আল্লাহ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দ্বারা আহলে কিতাবদের মুখোশ উম্মোচণ করেছেন।

عَنْ ابْنِ عُمَرَ، أَنَّهُ قَالَ: إِنَّ الْيَهُودَ جَاءُوا إِلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَذَكَرُوا لَهُ أَنَّ رَجُلًا مِنْهُمْ وَامْرَأَةً زَنَيَا، فَقَالَ لَهُمْ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ «مَا تَجِدُونَ فِي التَّوْرَاةِ فِي شَأْنِ الزِّنَا؟» فَقَالُوا: نَفْضَحُهُمْ وَيُجْلَدُونَ، فَقَالَ عَبْدُ اللَّهِ بْنُ سَلَامٍ: كَذَبْتُمْ، إِنَّ فِيهَا الرَّجْمَ، فَأَتَوْا بِالتَّوْرَاةِ، فَنَشَرُوهَا فَجَعَلَ أَحَدُهُمْ يَدَهُ عَلَى آيَةِ الرَّجْمِ، ثُمَّ جَعَلَ يَقْرَأُ مَا قَبْلَهَا وَمَا بَعْدَهَا، فَقَالَ لَهُ عَبْدُ اللَّهِ بْنُ سَلَامٍ: ارْفَعْ يَدَيْكَ، فَرَفَعَهَا فَإِذَا فِيهَا آيَةُ الرَّجْمِ، فَقَالُوا: صَدَقَ يَا مُحَمَّدُ، فِيهَا آيَةُ الرَّجْمِ،، فَأَمَرَ بِهِمَا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَرُجِمَا، قَالَ عَبْدُ اللَّهِ بْنُ عُمَرَ: فَرَأَيْتُ الرَّجُلَ يَحْنِي عَلَى الْمَرْأَةِ يَقِيهَا الْحِجَارَةَ.

আবদুল্লাহ্ ইবন উমর রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ইয়াহুদীগণ রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট এসে জানাল তাদের একজন পুরুষ ও একজন নারী যিনা করেছে। তখন রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে জিজ্ঞাসা করলেন যে, তোমরা তাওরাতে রজম সম্পর্কে কি পাচ্ছ? তারা বলল, তাদেরকে অপমান ও কশাঘাত করা হয়। আবদুল্লাহ্ ইবন সালাম রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, তোমার মিথ্যে বলেছ। তাওরাতে অবশ্যই রজমের উল্লেখ রয়েছে। তারা তাওরাত নিয়ে এল এবং তা খুলল। আর তাদের একজন রজমের আয়াতের ওপর হাত রেখে দিয়ে তার আগপিছ পাঠ করল। তখন আবদুল্লাহ্ ইবন সালাম রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, তোমার হাত উঠাও। সে তার হাত উঠালে দেখা গেল যে, তাতে রজমের আয়াত বিদ্যমান রয়েছে। তারা বলল, আবদুল্লাহ্ ইবন সালাম সত্যই বলেছেন। হে মুহাম্মদ! তাতে রজমের আয়াত সত্যই বিদ্যমান রয়েছে। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের উভয় সম্বন্ধে নির্দেশ করলেন এবং তাদের উভয়কে রজম করা হল। আমি দেখলাম, পুরুষটি নারীটির ওপর উপুড় হয়ে আছে। সে তাকে পাথরের আঘাত থেকে রক্ষা করছে।[253]

 

 

চৌত্রিশতম পরিচ্ছেদ

আল্লাহ তা‘আলা তাঁর নবীর মধ্যে যে বরকত দান করেছেন তা তাঁর নবুওয়তের প্রমাণ

عَنْ قَتَادَةَ، أَنَّ أَنَسَ بْنَ مَالِكٍ حَدَّثَهُمْ أَنَّ نَبِيَّ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ «يَطُوفُ عَلَى نِسَائِهِ، فِي اللَّيْلَةِ الوَاحِدَةِ، وَلَهُ يَوْمَئِذٍ تِسْعُ نِسْوَةٍ».

আনাস ইবন মালিক রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একই রাতে পর্যায়ক্রমে তাঁর স্ত্রীদের সঙ্গে মিলিত হতেন। তখন তাঁর নয়জন স্ত্রী ছিলেন।[254]

 

 

পয়ত্রিশতম পরিচ্ছেদ

কা‘ব ইবন মালিক রাদিয়াল্লাহু আনহু ও তাঁর সাথীদ্বয়ের তাওবার ঘটনা এবং এ থেকে শিক্ষা। এটা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নবুওয়তের প্রমাণ।

عَنْ عَبْدِ الرَّحْمَنِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ كَعْبِ بْنِ مَالِكٍ، أَنَّ عَبْدَ اللَّهِ بْنَ كَعْبِ بْنِ مَالِكٍ، وَكَانَ، قَائِدَ كَعْبٍ مِنْ بَنِيهِ، حِينَ عَمِيَ، قَالَ: سَمِعْتُ كَعْبَ بْنَ مَالِكٍ، يُحَدِّثُ حِينَ تَخَلَّفَ عَنْ قِصَّةِ، تَبُوكَ، قَالَ كَعْبٌ: لَمْ أَتَخَلَّفْ عَنْ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي غَزْوَةٍ غَزَاهَا إِلَّا فِي غَزْوَةِ تَبُوكَ، غَيْرَ أَنِّي كُنْتُ تَخَلَّفْتُ فِي غَزْوَةِ بَدْرٍ، وَلَمْ يُعَاتِبْ أَحَدًا تَخَلَّفَ عَنْهَا، إِنَّمَا خَرَجَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُرِيدُ عِيرَ قُرَيْشٍ، حَتَّى جَمَعَ اللَّهُ بَيْنَهُمْ وَبَيْنَ عَدُوِّهِمْ عَلَى غَيْرِ مِيعَادٍ، وَلَقَدْ شَهِدْتُ مَعَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَيْلَةَ العَقَبَةِ، حِينَ تَوَاثَقْنَا عَلَى الإِسْلاَمِ، وَمَا أُحِبُّ أَنَّ لِي بِهَا مَشْهَدَ بَدْرٍ، وَإِنْ كَانَتْ بَدْرٌ، أَذْكَرَ فِي النَّاسِ مِنْهَا، كَانَ مِنْ خَبَرِي: أَنِّي لَمْ أَكُنْ قَطُّ أَقْوَى وَلاَ أَيْسَرَ حِينَ تَخَلَّفْتُ عَنْهُ، فِي تِلْكَ الغَزَاةِ، وَاللَّهِ مَا اجْتَمَعَتْ عِنْدِي قَبْلَهُ رَاحِلَتَانِ قَطُّ، حَتَّى جَمَعْتُهُمَا فِي تِلْكَ الغَزْوَةِ، وَلَمْ يَكُنْ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُرِيدُ غَزْوَةً إِلَّا وَرَّى بِغَيْرِهَا.............. إلى آخر الحديث.. وَلَيْسَ الَّذِي ذَكَرَ اللَّهُ مِمَّا خُلِّفْنَا عَنِ الغَزْوِ، إِنَّمَا هُوَ تَخْلِيفُهُ إِيَّانَا، وَإِرْجَاؤُهُ أَمْرَنَا، عَمَّنْ حَلَفَ لَهُ وَاعْتَذَرَ إِلَيْهِ فَقَبِلَ مِنْهُ.

আবদুল্লাহ্ ইবন কা‘আব ইবন মালিক রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, কা‘আব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু অন্ধ হয়ে গেলে তাঁর সন্তানদের মধ্যে থেক যিনি তাঁর সাহায্যকারী ও পথ-প্রদর্শনকারী ছিলেন, তিনি (আবদুল্লাহ্) বলেন, আমি কা’আব ইবন মালিক রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুকে বলতে শুনেছি, যখন তাবুক যুদ্ধ থেকে তিনি পশ্চাতে থেকে যান তখনকার অবস্থা সম্পর্কে তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যতগুলো যুদ্ধে অংশগ্রহন করেন তার মধ্যে তাবুক যুদ্ধ ছাড়া আমি কোনো যুদ্ধ থেকে পেছনে থাকিনি। তবে আমি বদর যুদ্ধেও অংশগ্রহন করিনি। কিন্তু উক্ত যুদ্ধ থেকে যারা পেছনে পড়ে গেছেন, তাদের কাউকে ভৎসনা করা হয়নি। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কেবল কুরাইশ দলের সন্ধানে বের হয়েছিলেন। অবশেষে আল্লাহ্ তা’আলা তাঁদের এবং তাঁদের শত্রুবাহিনীর মধ্যে অঘোষিত যুদ্ধ সংঘটিত করেন। আর আকাবা রজনীতে যখন রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের থেকে ইসলামের উপর অঙ্গীকার গ্রহন করেন, আমি তখন তাঁর সঙ্গে ছিলাম। ফলে বদর প্রান্তরের উপস্থিতিকে আমি প্রিয়তর ও শ্রেষ্ঠতর বলে বিবেচনা করিনি। যদিও আকাবার ঘটনা অপেক্ষা লোকদের মধ্যে বদরের ঘটনা অধিক প্রসিদ্ধ ছিল। আর আমার অবস্থার বিবরন এই- তাবুক যুদ্ধ থেকে আমি যখন পেছনে থাকি তখন আমি এত অধিক সুস্থ, শক্তিশালী ও সচ্ছল ছিলাম যে আল্লাহর কসম, আমার কাছে কখনো ইতোপূর্বে কোনো যুদ্ধে একই সাথে দু’টো যানবাহন সংগ্রহ করা সম্ভব হয়নি, যা আমি এ যুদ্ধের সময় সংগ্রহ করেছিলাম। আর রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে অভিযান পরিচালনার সংকল্প গ্রহন করতেন, দৃশ্যত তার বিপরীত ভাব দেখাতেন। এ যুদ্ধ ছিল ভীষন উত্তাপের সময়, অতি দূরের সফর, বিশাল মরুভূমি এবং অধিক সংখ্যক শত্রুসেনার মুকাবিলা করার। কাজেই রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ অভিযানের অবস্থা মুসলিমদের কাছে প্রকাশ করে দেন যেন তারা যুদ্ধের প্রয়োজনীয় সম্বল সংগ্রহ করতে সক্ষম হয়। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সঙ্গী লোক সংখ্যা ছিল অধিক যাদের হিসাব কোনো রেজিষ্ট্রারে লিখিত ছিলনা। কা‘আব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, যার ফলে যেকোনো লোক যুদ্ধাভিযান থেকে বিরত থাকতে ইচ্ছা করলে তা সহজেই করতে পারত এবং অহী মারফত এ খবর পরিজ্ঞাত না করা পর্যন্ত তা সংগোপন থাকবে বলে সে ধারনা করত। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ অভিযান পরিচালনা করেছিলেন এমন সময় যখন ফল-ফলাদি পাকার ও গাছের ছায়ায় আরাম উপভোগের সময় ছিল। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্বয়ং এবং তাঁর সঙ্গী মুসলিম বাহিনী অভিযানে যাত্রার প্রস্তুতি গ্রহন করে ফেলেন। আমিও প্রতি সকালে তাঁদের সঙ্গে রওয়ানা হওয়ার প্রস্তুতি গ্রহন করতে থাকি। কিন্তু কোনো সিদ্ধান্তে উপনীত হতে পারিনি। মনে মনে ধারনা করতে থাকি, আমি তো যখন ইচ্ছা যেতে সক্ষম। এই দ্বিধা-দ্বন্দ্বে আমার সময় কেটে যেতে লাগল। এদিকে অন্য লোকেরা পুরাপুরি প্রস্তুতি সম্পন্ন করে ফেলল। ইতিমধ্যে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং তাঁর সাথী মুসলিমগন রওয়ানা করলেন অথচ আমি কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারলামনা। আমি মনে মনে ভাবলাম, আচ্ছা ঠিক আছে, এক দু’দিনের মধ্যে আমি প্রস্তুত হয়ে পরে তাঁদের সঙ্গে মিলিত হব। এভাবে আমি প্রতিদিন বাড়ি হতে প্রস্তুতিপর্ব সম্পন্ন করার মানসে বের হই, কিন্তু কিছু না করেই ফিরে আসি। আবার বের হই, আবার কিছু না করে ঘরে ফিরে আসি। ইত্যবসরে বাহিনী অগ্রসর হয়ে অনেক দূর চলে গেল। আর আমি রওয়ানা করে তাদের সাথে পথে মিলে যাবার ইচ্ছা পোষন করতে থাকলাম। আফসোস যদি আমি তাই করতাম! কিন্তু তা আমার ভাগ্যে জোটেনি। এরপর রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রওয়ানা হওয়ার পর আমি লোকদের মধ্যে বের হয়ে তাদের মাঝে বিচরন করতাম। একথা আমার মনকে পীড়া দিত যে, আমি তখন (মদীনায়) মুনাফিক এবং দুর্বল ও অক্ষম লোক ছাড়া অন্য কাউকে দেখতে পেতাম না। এদিকে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাবুক পৌঁছার পূর্ব পর্যন্ত আমার কথা আলোচনা করেননি। অনন্তর তাবুকে একথা জনতার মধ্যে উপবিষ্টাবস্থায় জিজ্ঞাসা করে বসলেন, কা’আব কি করল? বনী সালমা গোত্রের এক লোক বলল, ইয়া রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার ধন-সম্পদ ও আত্মগরিমা তাকে আসতে দেয়নি। একথা শুনে মু‘আয ইবন জাবাল রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বললেন, তুমি যা বললে তা ঠিক নয়। ইয়া রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর কসম, আমরা তাঁকে উত্তম ব্যক্তি বলে জানি। তখন রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নীরব রইলেন। কা‘আব ইবন মালিক রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন আমি যখন অবগত হলাম যে, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদীনার দিকে প্রত্যাবর্তন করেছেন, তখন আমি চিন্তাযুক্ত হয়ে পড়লাম এবং মিথ্যার বাহানা খুঁজতে থাকলাম। মনে স্থির করলাম, আগামীকাল এমন কথা বলব, যাতে করে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ক্রোধকে প্রশমিত করতে পারি। আর এ সম্পর্কে আমার পরিবারস্থ জ্ঞানীগুনীদের থেকে পরামর্শ গ্রহন করতে থাকি। এরপর যখন প্রচারিত হলো যে, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদীনায় এসে পৌঁছে যাচ্ছেন, তখন আমার অন্তর থেকে মিথ্যা তিরোহিত হয়ে গেল। আর মনে দৃঢ় প্রত্যয় জন্মালো যে, এমন কোনো পন্থা অবলম্বন করে আমি তাঁকে কখনো ক্রোধমুক্ত করতে সক্ষম হবোনা, যাতে মিথ্যার নামগন্ধ থাকে। অতএব আমি মনে মনে সিদ্ধান্ত গ্রহন করলাম যে, আমি সত্যই বলব। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রাতে মদীনায় পদার্পন করলেন। তিনি সফর থেকে প্রত্যাবর্তন করে প্রথমে মসজিদে গিয়ে দু’রাকাত সালাত আদায় করতেন, তারপর লোকদের সামনে বসতেন। যখন রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরূপ করলেন, তখন যারা পশ্চাদপদ ছিলেন তারা তাঁর কাছে এসে শপথ করে করে অক্ষমতা ও আপত্তি পেশ করতে লাগল। এরা সংখ্যায় আশির অধিক ছিল। অনন্তর রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বাহ্যিকভাবে তাদের ওযর-আপত্তি গ্রহন করলেন, তাদের বায়আত করলেন এবং তাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করলেন। কিন্তু তাদের অন্তর্নিহিত অবস্থা আল্লাহর হাওয়ালা করে দিলেন। [কা‘আব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন] আমিও এরপর রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খেদমতে উপস্থিত হলাম। আমি যখন তাঁকে সালাম দিলাম তখন তিনি রাগান্বিত চেহেরায় মুচকি হাসি হাসলেন। তারপর বললেন, এসো। আমি সে অনুসারে অগ্রসর হয়ে একেবারে তাঁর সম্মুখে বসে গেলাম। তখন তিনি আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন, কি কারনে তুমি অংশগ্রহন করলেনা? তুমি কি যানবাহন ক্রয় করনি? তখন আমি বললাম, হ্যাঁ, করেছি। আল্লাহর কসম, এ কথা সুনিশ্চিত যে, আমি যদি আপনি ছাড়া অন্য কোনো দুনিয়াদার ব্যক্তির সামনে বসতাম তাহলে আমি তাঁর অসন্তুষ্টিকে ওযর-আপত্তি উপস্থাপনের মাধ্যমে প্রশমিত করার প্রয়াস চালাতাম। আর আমি তর্কে সিদ্ধহস্ত। কিন্তু আল্লাহর কসম, আমি পরিজ্ঞাত যে, আজ যদি আমি আপনার কাছে মিথ্যা বলে আমার প্রতি আপনাকে রাযী করার চেষ্টা করি, তাহলেই অচিরেই মহান আল্লাহ্ তায়ালা আপনাকে আমার প্রতি অসন্তুষ্ট করে দিতে পারেন। আর যদি আপনার কাছে সত্য প্রকাশ করি, যাতে আপনি আমার প্রতি অসন্তুষ্ট হন, তবুও আমি এতে মহান আল্লাহ্ তা‘য়ালার ক্ষমা পাওয়ার নির্ঘাত আশা রাখি। না, আল্লাহর কসম, আমার কোনো ওযর ছিলনা। আল্লাহর কসম, সেই অভিযানে আপনার সাথে না যাওয়াকালীন সময় আমি সর্বাপেক্ষা শক্তিশালী ও সামর্থ্যবান ছিলাম। তখন রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, সে সত্য কথাই বলেছে। তুমি এখন চলে যাও, যতদিনে না তোমার সম্পর্কে আল্লাহ্ তা‘আলা ফায়সালা করে দেন। তাই আমি উঠে চলে গেলাম। তখন বনী সালিমার কতিপয় লোক আমার অনুসরণ করল। তারা আমাকে বলল, আল্লাহর কসম, তুমি ইতোপূর্বে কোনো গুনাহ্ করেছ বলে আমাদের জানা নেই। তুমি কি অন্যান্য পশ্চাদগামীর মতো তোমার অক্ষমতার একটি ওযর রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে পেশ করে দিতে পারতেনা? আর তোমার এ অপরাধের কারনে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের তোমার জন্য ক্ষমা প্রার্থনাই তো যথেষ্ট ছিল। আল্লাহর কসম, তারা আমাকে অনবরত কঠিনভাবে ভৎর্সনা করতে থাকে। ফলে আমি পূর্ব স্বীকারোক্তি থেকে প্রত্যাবর্তন করে মিথ্যা বলার বিষয়ে মনে মনে চিন্তা করতে থাকি। এরপর আমি তাদের বললাম, আমার মতো এ কাজ আর কেউ করেছে কি? তারা জওয়াব দিল, হ্যাঁ, আরও দু’জন তোমার মতো বলেছে। এবং তাদের ক্ষেত্রেও তোমার মতো একই রূপ ব্যাবস্থা গ্রহন করা হয়েছে। আমি তাদের জিজ্ঞাসা করলাম, তারা কে কে? তারা বললো, একজন মুরারা ইবন রবী আমরী এবং অপরজন হলেন হিলাল ইবন উমায়্যা ওয়াকিফী। এরপর তারা আমাকে অবহিত করল যে, তারা উভয়ে উত্তম মানুষ এবং তারা বদর যুদ্ধে অংশগ্রহন করেছেন। সেজন্য উভয়ে আদর্শবান। যখন তারা তাদের নাম উল্লেখ করল, তখন আমি পূর্ব মতের উপর অটল রইলাম এবং রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের মধ্যকার যে তিনজন তাবুকে অংশগ্রহন হতে বিরত ছিল তাদের সাথে কথা বলতে মুসলিমদের নিষেধ করে দিলেন। তদনুসারে মুসলিমরা আমাদের পরিহার করে চললো। আমাদের প্রতি তাদের আচরন পরিবর্তন করে নিল। এমনকি এদেশ যেন আমাদের কাছে অপরিচিত হয়ে গেল। এ অবস্থায় আমরা পঞ্চাশ রাত অতিবাহিত করলাম। আমার অপর দু’জন সাথী তো সংকট ও শোচনীয় অবস্থায় নিপতিত হলেন। তারা নিজেদের ঘরে বসে কাঁদতে থাকেন। আর আমি যেহেতু অধিকতর যুবক ও শক্তিশালী ছিলাম তাই বাইরে বের হয়ে আসতাম, মুসলিমদের জামাআতে সালাত আদায় করতাম। এবং বাজারে চলাফেরা করতাম কিন্তু কেউ আমার সাথে কথা বলতনা। আমি রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের খেদমতে হাযির হয়ে তাঁকে সালাম দিতাম। যখন তিনি সালাত শেষে মজলিসে বসতেন তখন আমি মনে মনে বলতাম ও লক্ষ করতাম, তিনি আমার সালামের জবাবে তাঁর ঠোঁটদ্বয় নেড়েছেন কিনা? তারপর আমি তাঁর নিকটবর্তী স্থানে সালাত আদায় করতাম এবং গোপন দৃষ্টিতে তাঁর দিকে দেখতাম যে, আমি যখন সালাতে মগ্ন হতাম তখন তিনি আমার প্রতি দৃষ্টি দিতেন, আর যখন আমি তাঁর দিকে তাকাতাম তখন তিনি দৃষ্টি ফিরিয়ে নিতেন। এভাবে আমার প্রতি লোকদের কঠোরতা ও এড়িয়ে চলার আচরন দীর্ঘকাল ধরে বিরাজমান থাকে। একদা আমি আমার চাচাত ভাই ও প্রিয় বন্ধু আবু কাতাদা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর বাগানের প্রাচীর টপকে প্রবেশ করে তাঁকে সালাম দেই। কিন্তু আল্লাহর কসম, তিনি আমার সালামের জওয়াব দিলেন না। আমি তখন বললাম, হে আবু কাতাদা, আপনাকে আমি আল্লাহর কসম দিয়ে জিজ্ঞাসা করছি, আপনি কি জানেন যে, আমি আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে ভালোবাসি? তখন তিনি নীরবতা পালন করলেন। আমি পুনরায় তাঁকে কসম দিয়ে জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি এবারও কোনো জবাব দিলেন না। আমি পুনরায় (তৃতীয়বারও) তাঁকে কসম দিয়ে জিজ্ঞাসা করলাম। তখন তিনি বললেন, আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামই ভালো জানেন। তখন আমার চক্ষুদ্বয় থেকে অশ্রু ঝরতে লাগল। অগত্যা আমি পুনরায় প্রাচীর টপকে ফিরে এলাম। কা‘আব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, একদা আমি মদীনার বাজারে বিচরন করছিলাম। এমতাবস্থায় সিরিয়ার এক কৃষক বনিক যে মদীনার বাজারে খাদ্যদ্রব্য বিক্রি করার উদ্দেশ্যে এসেছিল, সে বলছে, আমাকে কা’আব ইবন মালিককে কেউ পরিচয় করিয়ে দিতে পারে কি? তখন লোকেরা তাকে আমার প্রতি ইশারায় দেখাচ্ছিল। তখন সে এসে গাসসানি বাদশার একটি পত্র আমার কাছে হস্তান্তর করল। তাতে লেখা ছিল, পর সমাচার এই, আমি জানতে পারলাম যে, আপনার সাথী আপনার প্রতি জুলুম করেছে। আর আল্লাহ্ আপনাকে মর্যাদাহীন ও আশ্রয়হীন করে সৃষ্টি করেননি। আপনি আমাদের দেশে চলে আসুন, আমরা আপনাকে সাহায্য-সহানুভূতি করব। আমি যখন এ পত্র পড়লাম, তখন আমি বললাম, এটাও আর একটি পরীক্ষা। তখন আমি চুলা খোঁজ করে তার মধ্যে পত্রটি নিক্ষেপ করে জ্বালিয়ে দিলাম। এ সময় পঞ্চাশ দিনের চল্লিশ দিন অতিবাহিত হয়ে গেছে। এমতাবস্থায় রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পক্ষ থেকে এক সংবাদবাহক আমার কাছে এসে বলল, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নির্দেশ দিয়েছেন যে, আপনি আপনার স্ত্রী হতে পৃথক থাকবেন। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, আমি কি তাকে তালাক দিয়ে দিব, না অন্য কিছু করব? তিনি উত্তর দিলেন, তালাক দিতে হবে না বরং তার থেকে পৃথক থাকুন এবং তার নিকটবর্তী হবেননা। আমার অপর দু’জন সঙ্গীর প্রতি একই আদেশ পৌঁছালেন। তখন আমি আমার স্ত্রীকে বললাম, তুমি তোমার পিত্রালয়ে চলে যাও। আমার এ ব্যাপারে মহান আল্লাহর ফায়সালা না হওয়া পর্যন্ত তুমি তথায় অবস্থান কর। কা‘আব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, আমার সঙ্গী হিলাল ইবন উমায়্যার স্ত্রী রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের খেদমতে উপস্থিত হয়ে আরয করল, ইয়া রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, হিলাল ইবন উমায়্যা অতি বৃদ্ধ, এমন বৃদ্ধ যে, তাঁর কোনো খাদিম নেই। আমি তাঁর খেদমত করি, এটা কি অপছন্দ করেন? রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, না তবে সে তোমার বিছানায় আসতে পারবেনা। সে বলল, আল্লাহর কসম, এ সম্পর্কে তার কোনো অনুভূতিই নেই। আল্লাহর কসম, তিনি এ নির্দেশ পাওয়া অবধি সর্বদা কান্নাকাটি করছেন। [কা‘আব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন] আমার পরিবারের কেউ আমাকে পরামর্শ দিল যে, আপনিও যদি আপনার স্ত্রী সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে অনুমতি চাইতেন, যেমন রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হিলাল ইবন উমায়্যার স্ত্রীকে তাঁর (স্বামীর) খেদমত করার অনুমতি দিয়েছেন। আমি বললাম, আল্লাহর কসম আমি কখনো তার ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে অনুমতি চাইবো না। আমি যদি তার ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অনুমতি চাই, তবে তিনি কি বলবেন, তা আমার জানা নেই। আমি তো নিজেই আমার খেদমতে সক্ষম। এরপর আরও দশরাত অতিবাহিত করলাম। এভাবে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন থেকে আমাদের সাথে কথা বলতে নিষেধ করেন তখন থেকে পঞ্চাশ রাত পূর্ন হলো। এরপর আমি পঞ্চাশতম রাত শেষে ফজরের সালাত আদায় করলাম এবং আমাদের ঘরের ছাদে এমন অবস্থায় বসে ছিলাম যা আল্লাহ্ তা’আলা (কুরআনে) বর্ণনা করেছেন। আমার জান-প্রাণ দুর্বিষহ এবং গোটা জগতটা যেন আমার জন্য প্রশস্ত হওয়া সত্ত্বেও সংকীর্ন হয়ে গিয়েছিল। এমতাবস্থায় শুনতে পেলাম এক চীৎকার কারীর চীৎকার। সে সালা পাহাড়ের উপর চড়ে উচ্চস্বরে ঘোষনা করছে, হে কা’আব ইবন মালিক! সুসংবাদ গ্রহন করুন। কা‘আব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, এ শব্দ আমার কানে পৌঁছামাত্র আমি সিজদায় লুটে পড়লাম। আর আমি অনুভব করলাম যে, আমার সুদিন ও খুশীর খবর এসেছে। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফজরের সালাত আদায়ের পর আল্লাহ্ তায়ালার পক্ষ হতে আমাদের তাওবা কবুল হওয়ার সুসংবাদ প্রকাশ করেন। তখন লোকেরা আমার এবং আমার সঙ্গীদ্বয়ের কাছে সুসংবাদ পরিবেশন করতে থাকে। এবং তড়িঘড়ি একজন অশ্বারোহী লোক আমার কাছে আসে এবং আসলাম গোত্রের অপর এক ব্যক্তি দ্রুত আগমন করে পাহাড়ের উপর আরোহন করত চীৎকার দিতে থাকে। তার চীৎকারের শব্দ ঘোড়া অপেক্ষাও দ্রুত পৌঁছল। যার শব্দ আমি শুনেছিলাম সে যখন আমার কাছে সুসংবাদ প্রদান করতে আসল, আমি তখন আমার নিজের পরিধেয় দুটো কাপড় তাকে সুসংবাদ দেওয়ার জন্য দান করলাম। আর আমি আল্লাহর কসম করে বলছি যে, ঐ সময় সেই দুটো কাপড় ছাড়া আমার কাছে আর কোনো কাপড় ছিলোনা। আমি দুটো কাপড় ধার করে পরিধান করলাম এবং রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে রওয়ানা হলাম। লোকেরা দলে দলে আমাকে ধন্যবাদ জানাতে আসতে লাগল। তারা তাওবা কবুলের মুবারকবাদ জানাচ্ছিল। তারা বলছিল, তোমাকে মুবারকবাদ যে মহান আল্লাহ্ রাববুল আলামিন তোমার তাওবা কবুল করেছেন। কা‘আব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, অবশেষে আমি মসজিদে প্রবেশ করলাম। তখন রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেখানে বসা ছিলেন এবং তাঁর চতুস্পার্শ্বে জনতার সমাবেশ ছিল। তালহা ইবন উবায়দুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু দ্রুত উঠে এসে আমার সাথে মুসাফাহা করলেন ও মুবারকবাদ জানালেন। আল্লাহর কসম, তিনি ব্যতীত আর কোনো মুহাজির আমার জন্য দাঁড়াননি। আমি তালহার ব্যবহার ভুলতে পারবোনা। কা‘আব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, এরপর আমি যখন রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সালাম জানালাম, তখন তাঁর চেহারা আনন্দের আতিশয্যে ঝকঝক করছিল। তিনি আমাকে বললেন, তোমার মাতা তোমাকে জন্মদানের দিন হতে যতদিন তোমার উপর অতিবাহিত হয়েছে তার মধ্যে উৎকৃষ্ট ও উত্তম দিনের সুসংবাদ গ্রহন কর। কা‘আব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, আমি আরয করলাম, ইয়া রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এটা কি আপনার পক্ষ থেকে না আল্লাহর পক্ষ থেকে? তিনি বললেন, আমার পক্ষ থেকে নয় বরং আল্লাহর পক্ষ থেকে। আর রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন খুশী হতেন তখন তাঁর চেহারা মুবারক এতো উজ্জ্বল ও প্রোজ্জ্বল হতো যেন পূর্নিমার চাঁদের ফালি। এতে আমরা তাঁর সন্তুষ্টি বুঝতে পারতাম। আমি যখন তাঁর সম্মুখে বসলাম তখন আমি আরয করলাম, ইয়া রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, আমার তাওবা কবুলের শুকরিয়া স্বরূপ আমার ধন-সম্পদ আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পথে দান করতে চাই। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমার কিছু মাল তোমার কাছে রেখে দাও। তা তোমার জন্য উত্তম। আমি বললাম, খাইবরে অবস্থিত আমার অংশটি আমার জন্য রাখলাম। আমি আরয করলাম, ইয়া রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, মহান আল্লাহ্ তা‘আলা সত্য বলার কারনে আমাকে রক্ষা করেছেন, তাই আমার তাওবা কবুলের নিদর্শন অক্ষুন্ন রাখতে আমার অবশিষ্ট জীবনে সত্যই বলব। আল্লাহর কসম! যখন থেকে আমি এ সত্য বলার কথা রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে জানিয়েছি, তখন থেকে আজ পর্যন্ত আমার জানামতে কোনো মুসলিমকে সত্য কথার বিনিময়ে এরুপ নিয়ামত আল্লাহ্ দান করেননি যে নিয়ামত আমাকে দান করেছেন। [কা‘আব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন] যেদিন রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সম্মুখে সত্য কথা বলেছি সেদিন হতে আজ পর্যন্ত অন্তরে মিথ্যা বলার ইচ্ছাও করিনি। আমি আশা পোষন করি যে, বাকী জীবনও আল্লাহ্ তাআলা আমাকে মিথ্যা থেকে হিফাজত করবেন। এরপর আল্লাহ্ তাআলা, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর এই আয়াত নাযিল করেন, “আল্লাহ্ অনুগ্রহ পরায়ন হলেন রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রতি এবং মুহাজিরদের প্রতি...... এবং তোমরা সত্যবাদীদের অন্তর্ভুক্ত হও”। [সূরা আত-তাওবা: ১১১-১১৯]। [কা‘আব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন] আল্লাহর শপথ, ইসলাম গ্রহনের পর থেকে কখনো আমার উপর এতো উৎকৃষ্ট নিয়ামত আল্লাহ্ প্রদান করেননি যা আমার কাছে শ্রেষ্ঠতর, তা হলো রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে আমার সত্য বলা ও তাঁর সাথে মিথ্যা না বলা, যদি মিথ্যা বলতাম তবে মিথ্যাবাদীদের মতো আমিও ধ্বংস হয়ে যেতাম। সেই মিথ্যাবাদিদের সম্পর্কে যখন ওহী নাযিল হয়েছে তখন জঘন্য অন্তরের সেই লোকদের সম্পর্কে আল্লাহ্ তা‘আলা বলেছেন, “তোমরা তাদের নিকট ফিরে আসলে তারা আল্লাহর শপথ করবে............ আল্লাহ্ সত্যত্যাগী সম্প্রদায়ের প্রতি তুষ্ট হবেন না”। [সূরা আত-তাওবা: ৯৫-৯৬]। কা‘আব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, আমাদের তিনজনের তাওবা কবুল করতে বিলম্ব করা হয়েছে--- যাদের তাওবা রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কবুল করেছেন যখন তারা তাঁর কাছে শপথ করেছে, তিনি তাদের বাই‘আত গ্রহন করেছেন এবং তাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন। আমাদের বিষয়টি আল্লাহর ফায়সালা না হওয়া পর্যন্ত রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্থগিত রেখেছেন। এর প্রেক্ষাপটে আল্লাহ্ বলেন--- “সেই তিনজনের প্রতিও যাদের সম্পর্কে সিদ্ধান্ত স্থগিত রাখা হয়েছিল”। [সূরা তাওবা: ১১৮]। কুরআনের এই আয়াতে তাদের প্রতি ইঙ্গিত করা হয়নি যারা তাবুক যুদ্ধ থেকে পিছনে ছিল ও মিথ্যা কসম করে ওযর- আপত্তি পেশ করেছিল এবং রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তা গ্রহন করেছিলেন। বরং এই আয়াতে তাদের প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে আমরা যারা পেছনে ছিলাম এবং যাদের প্রতি সিদ্ধান্ত দেওয়া স্থগিত রাখা হয়েছিল।[255]

ছত্রিশতম পরিচ্ছেদ

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নবুওয়তের প্রমাণের মধ্যে আরেকটি হলো তিনি সালাতে তাঁর পিছনের দিকের অবস্থা দেখতে পেতেন।

عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ، قَالَ: صَلَّى بِنَا النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ صَلاَةً، ثُمَّ رَقِيَ المِنْبَرَ، فَقَالَ فِي الصَّلاَةِ وَفِي الرُّكُوعِ: «إِنِّي لَأَرَاكُمْ مِنْ وَرَائِي كَمَا أَرَاكُمْ».

আনাস ইবনে মালিক রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে নিয়ে সালাত আদায় করলেন। তারপর তিনি মিম্বরে উঠলেন এবং বললেন, “তোমাদের সালাতে রুকুতে আমি অবশ্যই তোমাদের আমার পেছন থেকে দেখি, যেমন এখন তোমাদের দেখছি”।[256]

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «هَلْ تَرَوْنَ قِبْلَتِي هَا هُنَا، فَوَاللَّهِ مَا يَخْفَى عَلَيَّ خُشُوعُكُمْ وَلاَ رُكُوعُكُمْ، إِنِّي لَأَرَاكُمْ مِنْ وَرَاءِ ظَهْرِي».

আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “তোমরা কি মনে কর যে, আমার দৃষ্টি কেবল কিবলার দিকে? আল্লাহর কসম! আমার কাছে তোমাদের খুশূ (বিনয়) ও রুকু কিছুই গোপন থাকে না। অবশ্যই আমি আমার পেছন থেকেও তোমাদের দেখি।”[257]

 

 

সাঁইত্রিশতম পরিচ্ছেদ

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অনুসারীদের কিছু কারামত তাঁর নবুওয়তের প্রমাণের মধ্যে অন্যতম।

এটা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নবুওয়তের প্রমাণ হিসেবে গণ্য করা হয়। কেননা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অনুসরণ ব্যতীত কাউকে কারামত দান করা হয় না। আর সবচেয়ে বড় কারামত হলো বান্দাহকে কিতাব ও সুন্নাহ মোতাবেক আমল করার তাওফিক দান করা ও শেষ পরিণাম ভাল হওয়া।

عَنِ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، قَالَ: «بَعَثَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَشَرَةَ رَهْطٍ سَرِيَّةً عَيْنًا، وَأَمَّرَ عَلَيْهِمْ عَاصِمَ بْنَ ثَابِتٍ الأَنْصَارِيَّ جَدَّ عَاصِمِ بْنِ عُمَرَ بْنِ الخَطَّابِ»، فَانْطَلَقُوا حَتَّى إِذَا كَانُوا بِالهَدَأَةِ، وَهُوَ بَيْنَ عُسْفَانَ وَمَكَّةَ، ذُكِرُوا لِحَيٍّ مِنْ هُذَيْلٍ، يُقَالُ لَهُمْ بَنُو لَحْيَانَ، فَنَفَرُوا لَهُمْ قَرِيبًا مِنْ مِائَتَيْ رَجُلٍ كُلُّهُمْ رَامٍ، فَاقْتَصُّوا آثَارَهُمْ حَتَّى وَجَدُوا مَأْكَلَهُمْ تَمْرًا تَزَوَّدُوهُ مِنَ المَدِينَةِ، فَقَالُوا: هَذَا تَمْرُ يَثْرِبَ فَاقْتَصُّوا آثَارَهُمْ، فَلَمَّا رَآهُمْ عَاصِمٌ وَأَصْحَابُهُ لَجَئُوا إِلَى فَدْفَدٍ وَأَحَاطَ بِهِمُ القَوْمُ، فَقَالُوا لَهُمْ: انْزِلُوا وَأَعْطُونَا بِأَيْدِيكُمْ، وَلَكُمُ العَهْدُ وَالمِيثَاقُ، وَلاَ نَقْتُلُ مِنْكُمْ أَحَدًا، قَالَ عَاصِمُ بْنُ ثَابِتٍ أَمِيرُ السَّرِيَّةِ: أَمَّا أَنَا فَوَاللَّهِ لاَ أَنْزِلُ اليَوْمَ فِي ذِمَّةِ كَافِرٍ، اللَّهُمَّ أَخْبِرْ عَنَّا نَبِيَّكَ، فَرَمَوْهُمْ بِالنَّبْلِ فَقَتَلُوا عَاصِمًا فِي سَبْعَةٍ، فَنَزَلَ إِلَيْهِمْ ثَلاَثَةُ رَهْطٍ بِالعَهْدِ وَالمِيثَاقِ، مِنْهُمْ خُبَيْبٌ الأَنْصَارِيُّ، وَابْنُ دَثِنَةَ، وَرَجُلٌ آخَرُ، فَلَمَّا اسْتَمْكَنُوا مِنْهُمْ أَطْلَقُوا أَوْتَارَ قِسِيِّهِمْ فَأَوْثَقُوهُمْ، فَقَالَ الرَّجُلُ الثَّالِثُ: هَذَا أَوَّلُ الغَدْرِ، وَاللَّهِ لاَ أَصْحَبُكُمْ إِنَّ لِي فِي هَؤُلاَءِ لَأُسْوَةً يُرِيدُ القَتْلَى، فَجَرَّرُوهُ وَعَالَجُوهُ عَلَى أَنْ يَصْحَبَهُمْ فَأَبَى فَقَتَلُوهُ، فَانْطَلَقُوا بِخُبَيْبٍ، وَابْنِ دَثِنَةَ حَتَّى بَاعُوهُمَا بِمَكَّةَ بَعْدَ وَقْعَةِ بَدْرٍ، فَابْتَاعَ خُبَيْبًا بَنُو الحَارِثِ بْنِ عَامِرِ بْنِ نَوْفَلِ بْنِ عَبْدِ مَنَافٍ، وَكَانَ خُبَيْبٌ هُوَ قَتَلَ الحَارِثَ بْنَ عَامِرٍ يَوْمَ بَدْرٍ، فَلَبِثَ خُبَيْبٌ عِنْدَهُمْ أَسِيرًا، فَأَخْبَرَنِي عُبَيْدُ اللَّهِ بْنُ عِيَاضٍ، أَنَّ بِنْتَ الحَارِثِ أَخْبَرَتْهُ: أَنَّهُمْ حِينَ اجْتَمَعُوا اسْتَعَارَ مِنْهَا مُوسَى يَسْتَحِدُّ بِهَا، فَأَعَارَتْهُ، فَأَخَذَ ابْنًا لِي وَأَنَا غَافِلَةٌ حِينَ أَتَاهُ قَالَتْ: فَوَجَدْتُهُ مُجْلِسَهُ عَلَى فَخِذِهِ وَالمُوسَى بِيَدِهِ، فَفَزِعْتُ فَزْعَةً عَرَفَهَا خُبَيْبٌ فِي وَجْهِي، فَقَالَ: تَخْشَيْنَ أَنْ أَقْتُلَهُ؟ مَا كُنْتُ لِأَفْعَلَ ذَلِكَ، وَاللَّهِ مَا رَأَيْتُ أَسِيرًا قَطُّ خَيْرًا مِنْ خُبَيْبٍ، وَاللَّهِ لَقَدْ وَجَدْتُهُ يَوْمًا يَأْكُلُ مِنْ قِطْفِ عِنَبٍ فِي يَدِهِ، وَإِنَّهُ لَمُوثَقٌ فِي الحَدِيدِ، وَمَا بِمَكَّةَ مِنْ ثَمَرٍ، وَكَانَتْ تَقُولُ: إِنَّهُ لَرِزْقٌ مِنَ اللَّهِ رَزَقَهُ خُبَيْبًا، فَلَمَّا خَرَجُوا مِنَ الحَرَمِ لِيَقْتُلُوهُ فِي الحِلِّ، قَالَ لَهُمْ خُبَيْبٌ: ذَرُونِي أَرْكَعْ رَكْعَتَيْنِ، فَتَرَكُوهُ، فَرَكَعَ رَكْعَتَيْنِ، ثُمَّ قَالَ: لَوْلاَ أَنْ تَظُنُّوا أَنَّ مَا بِي جَزَعٌ لَطَوَّلْتُهَا، اللَّهُمَّ أَحْصِهِمْ عَدَدًا،

مَا أُبَالِي حِينَ أُقْتَلُ مُسْلِمًا ... عَلَى أَيِّ شِقٍّ كَانَ لِلَّهِ مَصْرَعِي

وَذَلِكَ فِي ذَاتِ الإِلَهِ وَإِنْ يَشَأْ ... يُبَارِكْ عَلَى أَوْصَالِ شِلْوٍ مُمَزَّعِ

فَقَتَلَهُ ابْنُ الحَارِثِ فَكَانَ خُبَيْبٌ هُوَ سَنَّ الرَّكْعَتَيْنِ لِكُلِّ امْرِئٍ مُسْلِمٍ قُتِلَ صَبْرًا، فَاسْتَجَابَ اللَّهُ لِعَاصِمِ بْنِ ثَابِتٍ يَوْمَ أُصِيبَ، «فَأَخْبَرَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَصْحَابَهُ خَبَرَهُمْ، وَمَا أُصِيبُوا، وَبَعَثَ نَاسٌ مِنْ كُفَّارِ قُرَيْشٍ إِلَى عَاصِمٍ حِينَ حُدِّثُوا أَنَّهُ قُتِلَ، لِيُؤْتَوْا بِشَيْءٍ مِنْهُ يُعْرَفُ، وَكَانَ قَدْ قَتَلَ رَجُلًا مِنْ عُظَمَائِهِمْ يَوْمَ بَدْرٍ، فَبُعِثَ عَلَى عَاصِمٍ مِثْلُ الظُّلَّةِ مِنَ الدَّبْرِ، فَحَمَتْهُ مِنْ رَسُولِهِمْ، فَلَمْ يَقْدِرُوا عَلَى أَنْ يَقْطَعَ مِنْ لَحْمِهِ شَيْئًا».

আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দশ ব্যক্তিকে গোয়েন্দা হিসাবে সংবাদ সংগ্রহের জন্য প্রেরণ করেন এবং আসিম ইবন সাবিত আল-আনসারীকে তাদের দলপতি নিযুক্ত করেন। যিনি আসিম ইবন উমর ইবন খাত্তাবের মাতামহ ছিলেন। তাঁরা রওয়ানা হয়ে গেলেন, যখন তাঁরা উসফান ও মক্কার মধ্যবর্তী হাদআত নামক স্থানে পৌঁছেন, তখন হুযায়েল গোত্রের একটি প্রশাখা যাদেরকে লেহইয়ান বলা হয় তাদের কাছে তাদের সম্পর্কে আলোচনা করা হয়। তারা প্রায় দু’শত তীরন্দাজ ব্যক্তিকে তাদের পশ্চাদপনে প্রেরণ করে। এরা তাঁদের চিহৃ অনুসরণ করে চলতে থাকে। সাহাবীগণ মদীনা থেকে সাথে নিয়ে আসা খেজুর যেখানে বসে খেয়েছিলেন, অবশেষে এরা সে স্থানের সন্ধান পেয়ে গেল, তখন এরা বলল, ইয়াসরিবের খেজুর। এরপর এরা তাঁতের পদচিহৃ অনুসরণ করে চলতে লাগল। যখন আসিম ও এ সাথীগণ তাদের দেখলেন, তখন তাঁর একটি উচু স্থানে আশ্রয় গ্রহণ করলেন। আর কাফিরগণ তাঁদের ঘিরে ফেলল এবং তাঁদেরকে বলতে লাগল, তোমরা অবতরণ কর ও স্বেচ্ছায় বন্দীত্ব বরণ কর। আমরা তোমাদের অঙ্গীকার ও প্রতিশ্রুতি দিচ্ছিযে, তোমাদের মধ্য থেকে কাউকে আমরা হতা করব না। তখন গোয়েন্দা দলের নেতা আসিম ইবন সাবিত রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, ‘আল্লাহর কসম! আমি তো আজ কাফিরদের নিরাপত্তায় অবতরণ করবো না। হে আল্লাহ! আমাদের পক্ষআলতে আপনার নবীকে সংবাদ পৌঁছিয়ে দিন।’ অবশেষে কাফিরগণ তীর নিক্ষপ করতে শুরু করল আর তারা আসিম রাদিয়াল্লাহু আনহুসহ সাতজনকে শহীদ করল। এরপর অবশিষ্ট তিনজন খুবাইব আনসারী, যায়দ ইবন দাসিনা রাদিয়াল্লাহু আনহু ও অপর একজন তাদের দেয় প্রতিশ্রুতি ও অঙ্গীকারের উপর নির্ভর করে তাদের নিকট অবতরণ করলেন। যখন কাফিররা তাদেরকে আয়ত্বে নিয়ে নিল, তখন তারা তাদের ধনুকের রশি খুলে ফেলে (সেই রশি দিয়ে) তাঁদের বেধে ফেললো। তখন তৃতীয়জন বলে উঠলেন, ‘সূচনাতেই বিশ্বাসঘাতকতা! আল্লাহর কসম! আমি তোমাদের সাথে যাবো না, আমি তাদেরই পদাঙ্ক অনুসরণ করব, যারা শাহাদাত বরণ করেছে।’ কাফিরগণ তাঁকে তাদের সঙ্গে টেনে নিয়ে যেতে চেষ্টা করে। কিন্তু তিনি যেতে অস্বীকার করেন। তখন তারা তাঁকে শহীদ করে ফেলে এবং তারা খুবাই ও ইবন দাসিনাকে নিয়ে চলে যায়। অবশেষে তাদের উভয়কে মক্কায় বিক্রয় করে ফেলে। এ বদর যুদ্ধের পরবর্তী সময়ের কথা। তখন খুবাইবকে হারিস ইবন আমিরের পুত্রগণ ক্রয় করে নেয়। আর বদর যুদ্ধের দিন খুবাইব রাদিয়াল্লাহু আনহু হারিস ইবন আমিরকে হত্যা করেছিলেন। খুবাইব রাদিয়াল্লাহু আনহু কিছু দিন তাদের নিকট বন্দী থাকেন। ইবন শিহাব (রহ.) বলেন, আমাকে উবাইদুল্লাহ ইবন আয়ায অবহিত করেছেন, তাঁকে হারিসের কন্যা জানিয়ে যে, যখন হারিসের পুত্রগণ খুবাইব রাদিয়াল্লাহু আনহু।কে সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত নিল, তখন তিনি তাঁর নিকট থেকে ক্ষৌর কাট সম্পন্ন করার উদ্দেশ্যে একটা ক্ষুর ধার চাইলেন। তখন হারিসের কন্যা তাকে এক খানা ক্ষুর ধার দির। (সে বলেছে) সে সময় ঘটনাক্রমে আমার এক ছেলে আমার অজ্ঞাতে খুবাইবের নিকট চলে যায় এবং আমি দেখলাম যে, আমার ছেলে খুবাইবের উরুর উপর বসে রয়েছে এবং খুবাইবের হাতে রয়েছে ক্ষুর। আমি খুব ভয় পেয়ে গেলাম। খুবাইব আমার চেহেরা দেখে বুঝতে পারলেন যে, আমি ভয় পাচ্ছি। তখন তিনি বললেন, তুমি কি এ ভয় করো যে, আমি এ শিশুটিকে হত্যা করে ফেলব? কখনোমি তা করবো না। (হারিসের কন্যা বলল) আল্লাহর কসম! আমি খুবাইবের ন্যায় উত্তম বন্দী কখনো দেখিনি। আল্লাহর শপথ! আমি একদিন দেখলাম, তিনি লোহার শিকলে আবদ্ধ অবস্থায় আঙ্গুর ছড়া থেকে খাচ্ছেন, যা তার হাতেই ছিল। অথচ এ সময় মক্কায় কোনো ফলই পাওয়া যাচ্ছিল না। হারিসের কন্যা বলতো, এ তো ছিল আল্লাহ তা‘আলার পক্ষ হতে প্রদত্ত জীবিকা, যা তিনি খুবাইবকে দান করেছেন। এরপর তারা খুবাইবকে শহীদ করার উদ্দেশ্যে হেরেম থেকে হিল্লের দিকে নিয়ে বের হয়ে পড়ল, তখন খুবাইব রাদিয়াল্লাহু আনহু তাদের বললেন, আমাকে দু’রাকাআত সালাত আদায় করতে দাও। তারা তাঁকে সে অনুমতি দান করল। তিনি দু’রাকাআত সালাত আদায় করে নিলেন। তারপর তিনি বললেন, ‘তোমরা যদি ধারণা না করতে যে, আমি মৃত্যুর ভয়ে ভীত হয়ে পড়েছি তবে আমি সালাতকে দীর্ঘায়িত করতাম। হে আল্লাহ! তাদেরকে এক এক করে ধবংশ করুন।’ তারপর তিনি এ কবিতা দু’টি আবৃত্তি করলেন,

‘‘যখন আমি মুসলিম হিসাবে শহীদ হচ্ছি তখন আমি কোনরূপ ভয় করি না। আল্লাহর উদ্দেশ্যে আমাকে যেখানেই মাটিতে লুটিয়ে ফেলা হোক না কেন, (তাতে আমার কিছু যায় আসে না)। আমার এ মৃত্যু আল্লাহ তা‘আলার জন্যই হচ্ছে। তিনি যদি ইচ্ছা করেন, তবে আমার দেহের প্রতিটি খন্ডিত জোড়াসমূহে বরকত সৃষ্টি করে দিবেন।’’

অবশেষে হারিসের পুত্র তাঁকে শহীদ করে ফেলে। বস্তুত যে মুসলিম বন্দী অবস্থায় শহীদ করা হয় তার জন্য দু’রাকাত সালাত আদায়ের এ রীতি খুবাইব রাদিয়াল্লাহু আনহুই প্রবর্তন করে গেছেন। যেদিন আসিম রাদিয়াল্লাহু আনহু শাহাদাত বরণ করেছিলেন, সেদিন আল্লাহ তা‘আলা তাঁর দো‘আ কবুল করেছিলেন। সেদিনই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর সাহাবাগণকে তাঁদের সংবাদ ও তাঁদের উপর যা’ যা’ আপতিত হয়েছিল সবই অবহিত করেছিলেন। আর যখন কুরাইশ কাফিরদেরকে এ সংবাদ পৌঁছানে হয় যে, আসিম রাদিয়াল্লাহু আনহুকে শহীদ করা হয়েছে তখন তারা তাঁর নিকট এক ব্যক্তিকে প্রেরণ করে, যাতে সে ব্যক্তি তাঁর মরদেহ থেকে কিছু অংশ কেটে নিয়োসে। যেন তারা তা দেখে চিনতে পারে। কারণ, বদর যুদ্ধের দিন আসিম রাদিয়াল্লাহু আনহু কুরাইশদের জনৈক নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিকে হত্যা করেছিলেন। আসিমের মরদেহের (হেফাজতের জন্য) মৌমাছির ঝাঁক প্রেরিক হল (এই মৌমাছিরা) তাঁর দেহ আবৃত করে রেখে তাদের ষড়যন্ত্র থেকে হেফাজত করল। ফলে তারা তাঁর দেহে হতে কোনো এক টোকরা গোশত কেটে নিতে সক্ষম হয়নি।[258]

عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ الزُّبَيْرِ، قَالَ: لَمَّا وَقَفَ الزُّبَيْرُ يَوْمَ الجَمَلِ دَعَانِي، فَقُمْتُ إِلَى جَنْبِهِ فَقَالَ: " يَا بُنَيِّ، إِنَّهُ لاَ يُقْتَلُ اليَوْمَ إِلَّا ظَالِمٌ أَوْ مَظْلُومٌ، وَإِنِّي لاَ أُرَانِي إِلَّا سَأُقْتَلُ اليَوْمَ مَظْلُومًا، وَإِنَّ مِنْ أَكْبَرِ هَمِّي لَدَيْنِي، أَفَتُرَى يُبْقِي دَيْنُنَا مِنْ مَالِنَا شَيْئًا؟ فَقَالَ: يَا بُنَيِّ بِعْ مَالَنَا، فَاقْضِ دَيْنِي، وَأَوْصَى بِالثُّلُثِ، وَثُلُثِهِ لِبَنِيهِ - يَعْنِي بَنِي عَبْدِ اللَّهِ بْنِ الزُّبَيْرِ - يَقُولُ: ثُلُثُ الثُّلُثِ، فَإِنْ فَضَلَ مِنْ مَالِنَا فَضْلٌ بَعْدَ قَضَاءِ الدَّيْنِ شَيْءٌ، فَثُلُثُهُ لِوَلَدِكَ "، - قَالَ هِشَامٌ: وَكَانَ بَعْضُ وَلَدِ عَبْدِ اللَّهِ، قَدْ وَازَى بَعْضَ بَنِي الزُّبَيْرِ، خُبَيْبٌ، وَعَبَّادٌ وَلَهُ يَوْمَئِذٍ تِسْعَةُ بَنِينَ، وَتِسْعُ بَنَاتٍ -، قَالَ عَبْدُ اللَّهِ: فَجَعَلَ يُوصِينِي بِدَيْنِهِ، وَيَقُولُ: «يَا بُنَيِّ إِنْ عَجَزْتَ عَنْهُ فِي شَيْءٍ، فَاسْتَعِنْ عَلَيْهِ مَوْلاَيَ»، قَالَ: فَوَاللَّهِ مَا دَرَيْتُ مَا أَرَادَ حَتَّى قُلْتُ: يَا أَبَةِ مَنْ مَوْلاَكَ؟ قَالَ: «اللَّهُ»، قَالَ: فَوَاللَّهِ مَا وَقَعْتُ فِي كُرْبَةٍ مِنْ دَيْنِهِ، إِلَّا قُلْتُ: يَا مَوْلَى الزُّبَيْرِ اقْضِ عَنْهُ دَيْنَهُ، فَيَقْضِيهِ، فَقُتِلَ الزُّبَيْرُ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، وَلَمْ يَدَعْ دِينَارًا وَلاَ دِرْهَمًا إِلَّا أَرَضِينَ، مِنْهَا الغَابَةُ، وَإِحْدَى عَشْرَةَ دَارًا بِالْمَدِينَةِ، وَدَارَيْنِ بِالْبَصْرَةِ، وَدَارًا بِالكُوفَةِ، وَدَارًا بِمِصْرَ، قَالَ: وَإِنَّمَا كَانَ دَيْنُهُ الَّذِي عَلَيْهِ، أَنَّ الرَّجُلَ كَانَ يَأْتِيهِ بِالْمَالِ، فَيَسْتَوْدِعُهُ إِيَّاهُ، فَيَقُولُ الزُّبَيْرُ: «لاَ وَلَكِنَّهُ سَلَفٌ، فَإِنِّي أَخْشَى عَلَيْهِ الضَّيْعَةَ»، وَمَا وَلِيَ إِمَارَةً قَطُّ وَلاَ جِبَايَةَ خَرَاجٍ، وَلاَ شَيْئًا إِلَّا أَنْ يَكُونَ فِي غَزْوَةٍ مَعَ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، أَوْ مَعَ أَبِي بَكْرٍ، وَعُمَرَ، وَعُثْمَانَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمْ، قَالَ عَبْدُ اللَّهِ بْنُ الزُّبَيْرِ: فَحَسَبْتُ مَا عَلَيْهِ مِنَ الدَّيْنِ، فَوَجَدْتُهُ أَلْفَيْ أَلْفٍ وَمِائَتَيْ أَلْفٍ، قَالَ: فَلَقِيَ حَكِيمُ بْنُ حِزَامٍ عَبْدَ اللَّهِ بْنَ الزُّبَيْرِ، فَقَالَ: يَا ابْنَ أَخِي، كَمْ عَلَى أَخِي مِنَ الدَّيْنِ فَكَتَمَهُ؟ فَقَالَ: مِائَةُ أَلْفٍ، فَقَالَ حَكِيمٌ: وَاللَّهِ مَا أُرَى أَمْوَالَكُمْ تَسَعُ لِهَذِهِ، فَقَالَ لَهُ عَبْدُ اللَّهِ: أَفَرَأَيْتَكَ إِنْ كَانَتْ أَلْفَيْ أَلْفٍ وَمِائَتَيْ أَلْفٍ؟ قَالَ: مَا أُرَاكُمْ تُطِيقُونَ هَذَا، فَإِنْ عَجَزْتُمْ عَنْ شَيْءٍ مِنْهُ فَاسْتَعِينُوا بِي، قَالَ: وَكَانَ الزُّبَيْرُ اشْتَرَى الغَابَةَ بِسَبْعِينَ وَمِائَةِ أَلْفٍ، فَبَاعَهَا عَبْدُ اللَّهِ بِأَلْفِ أَلْفٍ وَسِتِّ مِائَةِ أَلْفٍ، ثُمَّ قَامَ: فَقَالَ مَنْ كَانَ لَهُ عَلَى الزُّبَيْرِ حَقٌّ، فَلْيُوَافِنَا بِالْغَابَةِ، فَأَتَاهُ عَبْدُ اللَّهِ بْنُ جَعْفَرٍ، وَكَانَ لَهُ عَلَى الزُّبَيْرِ أَرْبَعُ مِائَةِ أَلْفٍ، فَقَالَ لِعَبْدِ اللَّهِ: إِنْ شِئْتُمْ تَرَكْتُهَا لَكُمْ، قَالَ عَبْدُ اللَّهِ: لاَ، قَالَ: فَإِنْ شِئْتُمْ جَعَلْتُمُوهَا فِيمَا تُؤَخِّرُونَ إِنْ أَخَّرْتُمْ؟ فَقَالَ عَبْدُ اللَّهِ: لاَ، قَالَ: قَالَ: فَاقْطَعُوا لِي قِطْعَةً، فَقَالَ عَبْدُ اللَّهِ: لَكَ مِنْ هَاهُنَا إِلَى هَاهُنَا، قَالَ: فَبَاعَ مِنْهَا فَقَضَى دَيْنَهُ فَأَوْفَاهُ، وَبَقِيَ مِنْهَا أَرْبَعَةُ أَسْهُمٍ وَنِصْفٌ، فَقَدِمَ عَلَى مُعَاوِيَةَ، وَعِنْدَهُ عَمْرُو بْنُ عُثْمَانَ، وَالمُنْذِرُ بْنُ الزُّبَيْرِ، وَابْنُ زَمْعَةَ، فَقَالَ لَهُ مُعَاوِيَةُ: كَمْ قُوِّمَتِ الغَابَةُ؟ قَالَ: كُلُّ سَهْمٍ مِائَةَ أَلْفٍ، قَالَ: كَمْ بَقِيَ؟ قَالَ: أَرْبَعَةُ أَسْهُمٍ وَنِصْفٌ، قَالَ المُنْذِرُ بْنُ الزُّبَيْرِ: قَدْ أَخَذْتُ سَهْمًا بِمِائَةِ أَلْفٍ، قَالَ عَمْرُو بْنُ عُثْمَانَ: قَدْ أَخَذْتُ سَهْمًا بِمِائَةِ أَلْفٍ، وَقَالَ ابْنُ زَمْعَةَ: قَدْ أَخَذْتُ سَهْمًا بِمِائَةِ أَلْفٍ، فَقَالَ مُعَاوِيَةُ: كَمْ بَقِيَ؟ فَقَالَ: سَهْمٌ وَنِصْفٌ، قَالَ: قَدْ أَخَذْتُهُ بِخَمْسِينَ وَمِائَةِ أَلْفٍ، قَالَ: وَبَاعَ عَبْدُ اللَّهِ بْنُ جَعْفَرٍ نَصِيبَهُ مِنْ مُعَاوِيَةَ بِسِتِّ مِائَةِ أَلْفٍ، فَلَمَّا فَرَغَ ابْنُ الزُّبَيْرِ مِنْ قَضَاءِ دَيْنِهِ، قَالَ بَنُو الزُّبَيْرِ: اقْسِمْ بَيْنَنَا مِيرَاثَنَا، قَالَ: لاَ، وَاللَّهِ لاَ أَقْسِمُ بَيْنَكُمْ حَتَّى أُنَادِيَ بِالْمَوْسِمِ أَرْبَعَ سِنِينَ: أَلاَ مَنْ كَانَ لَهُ عَلَى الزُّبَيْرِ دَيْنٌ فَلْيَأْتِنَا فَلْنَقْضِهِ، قَالَ: فَجَعَلَ كُلَّ سَنَةٍ يُنَادِي بِالْمَوْسِمِ، فَلَمَّا مَضَى أَرْبَعُ سِنِينَ قَسَمَ بَيْنَهُمْ، قَالَ: فَكَانَ لِلزُّبَيْرِ أَرْبَعُ نِسْوَةٍ، وَرَفَعَ الثُّلُثَ، فَأَصَابَ كُلَّ امْرَأَةٍ أَلْفُ أَلْفٍ وَمِائَتَا أَلْفٍ، فَجَمِيعُ مَالِهِ خَمْسُونَ أَلْفَ أَلْفٍ، وَمِائَتَا أَلْفٍ.

আবদুল্লাহ ইবন যুবাইর রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, উষ্ট্রযুদ্ধের দিন যুবাইর রাদিয়াল্লাহু আনহু যুদ্ধক্ষেত্রে অবস্থান গ্রহণ করে আমাকে ডাকলেন। আমি তাঁর পাশে গিয়ে দাঁড়ালাম। তিনি আমাকে বললেন, হে পুত্র! আজকের দিন জালিম অথবা মাজলুম ব্যতীত কেউ নিহত হবে না। আমার মনে হয়, আমি আজ মাজলুম হিসেবে নিহত হব। আর আমি আমার ঋণ সম্পর্কে বেশি চিন্তিত। তুমি কি মনে কর যে, আমার ঋণ আদায় করার পর আমার সম্পদে কিছু অবশিষ্ট থাকবে? তারপর তিনি বললেন, হে পুত্র! আমার সম্পদ বিক্রয় করে আমার ঋন পরিশোধ করে দিও। তিনি এক তৃতীয়াংশের ওসীয়্যাত করেন। আর সেই এক তৃতীয়াংশের এক তৃতীয়াংশ ওসীয়াত করেন তাঁর (আবদুল্লাহ ইবন যুবায়রের) পুত্রদের জন্য তাঁর অর্থাৎ আবদুল্লাহ, তিনি বললেন, এক তৃতীয়াংশকে এক তৃতীয়াংশে বিভক্ত করবে ঋণ পরিশোধ করার পর যদি আমার সম্পদের কিছু উদ্ধৃত্ত থাকে, তবে তার এক তৃতীয়াংশ তোমার পুত্রদের জন্য। হিশাম (রহ.) বলেন, আবদুল্লাহ ইবন যুবাইর রাদিয়াল্লাহু আনহুর কোনো কোন পুত্র যুবাইর রাদিয়াল্লাহু আনহুর পুত্রদের সমবয়সী ছিলেন। যেমন খুবায়েদ ও আববাদ। আর মৃত্যুকালে তাঁর নয় পুত্র ও নয় কন্যা ছিল। আবদুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, তিনি আমাকে তাঁর ঋণ সম্পর্কে ওসীয়্যাত করেছিলেন এবং বলেীছলেন, হে পুত্র! যদি এ সবের কোনো বিষয়ে তুমি অক্ষম হও, তবে এ ব্যাপারে আমার মাওলার সাহায্য চাইবে। তিনি বলেন, আল্লাহর কসম! আমি বুঝে উঠতে পারি নি যে, তিনি মাওলা দ্বারা কাকে উদ্দেশ্য করেছেন। অবশেষে আমি তাঁকে জিজ্ঞাসা করলাম, হে পিতা! আপনার মাওলা কে? তিনি উত্তর দিলেন, আল্লাহ। আবদুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, আল্লাহর কসম! আমি যখনই তাঁর ঋণ আদায়ে কোনো সমস্যার সম্মুখীন হয়েছি, তখনই বলেছি, হে যুবাইরের মাওলা! তাঁর পক্ষ থেকে তাঁর ঋণ আদায় করে দিন। আর তাঁর করয শোধ হয়ে যেত। এরপর যুবাইর রাদিয়াল্লাহু আনহু শহীদ হলেন এভং তিনি নগদ কোনো দীনার রেখে যাননি আর না কোনো দিরহাম। তিনি কিছু জমি রেখে যান যার মধ্যে একটি হল গাবা। আরো রেখে যান মদীনায় এগারোটি বাড়ী, বসরায় দু’টি, কূফায় একটি ও মিসরে একটি। আবুদল্লাহ ইবন যুবাইর রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, যুবায়র রাদিয়াল্লাহু আনহুর ঋণ থাকার কারণ এই ছিল যে, তাঁর নিকট কেউ যখন কোনো মাল আমানত রাখতে আসতো তখন যুবাইর রাদিয়াল্লাহু আনহু বলতেন, না, এভাবে নয়’ তুমি তা আমার কাছে ঋণ হিসাবে রেখে যাও। কেননা, আমি ভয় করছি যে, তোমার মাল নষ্ট হয়ে যেতে পারে। যুবাইর রাদিয়াল্লাহু আনহু কখনো কোনো প্রশাসনিক ক্ষমতা বা কর আদায়কারী অথবা অন্য কোনো কাজের দায়িত্ব গ্রহণ করেননি। অবশ্যই তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সঙ্গী হয়ে অথবা আবূ বকর, উমর ও উসমান রাদিয়াল্লাহু আনহুমের সঙ্গী হয়ে যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করেছেন। আবদুল্লাহ ইবন যুবাইর রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, তারপর আমি তাঁর ঋণের পরিমাণ হিসাব করলাম এবং দেখলাম তাঁর ঋণের পরিমাণ বাইশ লাখ পেলাম। রাবী বলেন, সাহাবী হাকিম ইবন হিযাম রাদিয়াল্লাহু আনহু আবদুল্লাহ ইবন যুবাইর রাদিয়াল্লাহু আনহুর সঙ্গে সাক্ষাত করে বলেন, হে ভাতিজা। বল তো আমার ভাইয়ের কত ঋণ আছে? তিনি তা প্রকাশ না বললেন, এক লাখ। তখন হাকিম ইবন হিযাম রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, আল্লাহর কসম! এ সম্পদ দ্বারা এ পরিমাণ ঋণ শোধ হতে পারে, আমি এরূপ মনে করি না। তখন আবুদল্লাহ ইব্ন যুবাইর রাদিয়াল্লাহু আনহু তাকে বললেন, যদি ঋণের পরিমাণ বাইশ লাখ হয়, তবে কি ধারণা করেন? হাকীম ইবন হিযাম রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, আমি মনে করি না যে, তোমরা এ সামর্থ রাখ। যদি তোমরা এ বিষয়ে সক্ষম হও, তবে আমার সহযোগীতা গ্রহণ করবে। আবদুল্লাহ ইবন যুবাইর রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, যুবাইর রাদিয়াল্লাহু আনহু গাবাস্থিত ভূমিটি এক লাখ সত্তর হাজারে কিনেছিলেন। আবদুল্লাহ ইবন যুবাইর রাদিয়াল্লাহু আনহু তা ষোল লাখের বিনিময়ে বিক্রয় করেন। আর দাঁড়িয়ে ঘোষণা করেন, যুবাইর রাদিয়াল্লাহু আনহুর নিকট কারা পাওনাদার রয়েছে, তারা আমার সঙ্গে গাবায় এসে মিলিত হবে। তখন আবদুল্লাহ ইবন জাফর রাদিয়াল্লাহু আনহু তাঁর নিকট এলেন। যুবাইর রাদিয়াল্লাহু আনহুর নিকট তাঁর চার লাখ পাওনা ছিল। তিনি আবদুল্লাহ ইবন যুবাইর রাদিয়াল্লাহু আনহুকে বললেন, তোমরা চাইলে আমি তা তোমাদের জন্য ছেড়ে দিব। আব্দুল্লাহ ইবন যুবাইর রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, না। আবদুল্লাহ ইবন জাফর রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, যদি তোমরা তা পরে দিতে চাও, তবে তা পরে পরিশোধের অমত্মর্ভুক্ত করতে পার। আবদুল্লাহ ইবন যুবাইর রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, না। তখন আবদুল্লাহ ইবন জাফর রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, তবে আমাকে এক টুকরা ভূমি দাও। আবদুল্লাহ ইবন যুবাইর রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, এখান থেকে ওখান পর্যাপ্ত জমি আপনার। রাবী বলেন, তারপর আবদুল্লাহ ইবন যুবাইর রাদিয়াল্লাহু আনহু গাবার জমি থেকে বিক্রয় করে সম্পূর্ণ ঋণ পরিশোধ করেন। তখনও তাঁর নিকট গাবার জমির সাড়ে চার অংশ অবশিষ্ট থেকে যায়। তারপর তিনি মু‘আবিয়া রাদিয়াল্লাহু আনহুর কাছে এলেন। সে সময় তাঁর কাছে আমরা ইবন উসমান, মুনযির ইবন যুবাইর ও আবদুল্লাহ ইবন যাম‘আ রাদিয়াল্লাহু আনহুম উপস্থিত ছিলেন। মু‘আবিয়া রাদিয়াল্লাহু আনহু তাঁকে বললেন, গাবার মূল্য কত নির্ধারিত হয়েছে? তিনি বললেন, প্রত্যেক অংশ এক লাখ হারে। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, কত অবশিষ্ট আছে? আবদুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, সাড়ে চার অংশ। তখন মুনযির ইবন যুবাইর রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, আমি এক অংশ এক লাখে নিলাম। আমর ইবন উসমান রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, আমি একাংশ এক লাখে নিলাম। আর আবদুল্লাহ ইবন যাম‘আ রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, আমি একাংশ এক লাখে নিলাম। তখন মু‘আবিয়া রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, আর কি পরিমাণ অবশিষ্ট আছে? আবদুল্লাহ ইবন যুবাইর রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, দেড় অংশ অবশিষ্ট রয়েছে। মু‘আবিয়া রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, আমি তা দেড় লাখে নিলাম। রাবী বলেন, আবদুল্লাহ ইবন জাফর রাদিয়াল্লাহু আনহু তাঁর অংশ মু‘আবিয়া রাদিয়াল্লাহু আনহুর নিকট ছয় লাখে বিক্রয় করেন। তারপর যখন ইবন যুবাইর রাদিয়াল্লাহু আনহু তাঁর পিতার ঋণ পরিশোধ করে সারলেন, তখন যুবাইর রাদিয়াল্লাহু আনহুর পুত্ররা বললেন, আমাদের মীরাস ভাগ করে দিন। তখন আবদুল্লাহ ইবন যুবাইর রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, না, আল্লাহর কসম! আমি তোমাদের মাঝে ভাগ করব না, যতক্ষণ আমি চারটি হজ্জ মৌসুমে এ ঘোষণা প্রচার না করি যে, যদি কেউ যুবাইর রাদিয়াল্লাহু আনহুর কাছে ঋণ পাওনা থাকে, সে যেন আমাদের কাছে আসে, আমরা তা পরিশোধ করব। রাবী বলেন, তিনি প্রতি হজ্জের মৌসুমে ঘোষণা প্রচার করেন। তারপর যখন চার বছর অতিবাহিত হল, তখন তিনি তা তাদের মধ্যে ভাগ করে দিলেন। রাবী বলেন, যুবাইর রাদিয়াল্লাহু আনহুর চার স্ত্রী ছিলেন। এক তৃতীয়াংশ পৃথক করে রাখা হল। প্রত্যেক স্ত্রী বার লাখ করে পেলেন। আর যুবাইর রাদিয়াল্লাহু আনহুর মোট সম্পত্তি পাঁচ কোটি দু’লাখ ছিল।[259]

عَنْ أَبِي إِسْحَاقَ، سَمِعْتُ البَرَاءَ بْنَ عَازِبٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا، قَرَأَ رَجُلٌ الكَهْفَ، وَفِي الدَّارِ الدَّابَّةُ، فَجَعَلَتْ تَنْفِرُ، فَسَلَّمَ، فَإِذَا ضَبَابَةٌ، أَوْ سَحَابَةٌ غَشِيَتْهُ، فَذَكَرَهُ لِلنَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ: «اقْرَأْ فُلاَنُ، فَإِنَّهَا السَّكِينَةُ نَزَلَتْ لِلْقُرْآنِ، أَوْ تَنَزَّلَتْ لِلْقُرْآنِ»

বার’আ ইবন আযিব রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, এক সাহাবী (উসায়দ ইবন হুযায়ব রাদিয়াল্লাহু আনহু) (রাত্রি কালে) ‘সূরা আল-কাহফ’ তিলাওয়াত করছিলেন। তাঁর বাড়িতে একটি ঘোড়া বাঁধা ছিল। ঘোড়াটি তখন (আতঙ্কিত হয়ে) লাফালাফি করতে লাগল। তখন ঐ সাহাবী শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য আল্লাহ্‌র দরবারে দো‘আ করলেন। তারপর তিনি দেখতে পেলেন, একখন্ড মেঘ এসে তাকে ঢেকে ফেলেছে। তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দরবারে বিষয়টি আলোচনা করলেন। তিনি বললেন, হে অমুক! তুমি এভাবে তিলাওয়াত করতে থাকবে। ইহা তো সাকীনা (প্রশান্তি) ছিল, যা কুরআন তিলাওয়াতের কারণে নাযিল হয়েছিল।[260]

عَنْ عُمَرَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، قَالَ: «اللَّهُمَّ ارْزُقْنِي شَهَادَةً فِي سَبِيلِكَ، وَاجْعَلْ مَوْتِي فِي بَلَدِ رَسُولِكَ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ»، وَقَالَ ابْنُ زُرَيْعٍ، عَنْ رَوْحِ بْنِ القَاسِمِ، عَنْ زَيْدِ بْنِ أَسْلَمَ، عَنْ أَبِيهِ، عَنْ حَفْصَةَ بِنْتِ عُمَرَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا، قَالَتْ: سَمِعْتُ عُمَرَ نَحْوَهُ وَقَالَ هِشَامٌ، عَنْ زَيْدٍ، عَنْ أَبِيهِ، عَنْ حَفْصَةَ، سَمِعْتُ عُمَرَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ.

‘উমর রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি এ বলে দো‘আ করতেন, হে আল্লাহ! আমাকে তোমার পথে শাহাদাত বরন করার সুযোগ দান কর এবং আমার মৃত্যু তোমার রাসূলের শহরে দাও । ইবন যুরায়’ই (রহ.)... হাফসা বিনত উমর রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি ‘উমর রাদিয়াল্লাহু আনহুকে অনু্রূপ বর্ণনা করতে শুনেছি। হিশাম (রহ.) বলেন, যাইদ তাঁর পিতার সূত্রে হাফসা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, আমি ‘উমর রাদিয়াল্লাহু আনহুকে বলতে শুনেছি। [261]

عَنْ أَبِي سَعِيدٍ الخُدْرِيِّ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، قَالَ: لَمَّا نَزَلَتْ بَنُو قُرَيْظَةَ عَلَى حُكْمِ سَعْدٍ هُوَ ابْنُ مُعَاذٍ، بَعَثَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَكَانَ قَرِيبًا مِنْهُ، فَجَاءَ عَلَى حِمَارٍ، فَلَمَّا دَنَا قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «قُومُوا إِلَى سَيِّدِكُمْ» فَجَاءَ، فَجَلَسَ إِلَى رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَقَالَ لَهُ: إِنَّ هَؤُلاَءِ نَزَلُوا عَلَى حُكْمِكَ، قَالَ: فَإِنِّي أَحْكُمُ أَنْ تُقْتَلَ المُقَاتِلَةُ، وَأَنْ تُسْبَى الذُّرِّيَّةُ، قَالَ: «لَقَدْ حَكَمْتَ فِيهِمْ بِحُكْمِ المَلِكِ».

আবূ সাঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, যখন বনী কুরাইযার ইয়াহূদীরা সা‘দ ইবন মু‘আয রাদিয়াল্লাহু আনহুর মীমাংসায় দুর্গ থেকে বেরিয়ে আসে, তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে ডেকে পাঠান। আর তখন তিনি ঘটনাস্থলের নিকটই ছিলেন। তখন সা‘দ রাদিয়াল্লাহু আনহু একটি গাধার পিঠে আরোহণ করে আসলেন। যখন তিনি নিকটবর্তী হলেন, তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমরা, তোমাদের নেতার প্রতি দন্ডায়মান হও।’ তিনি এসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট বসলেন। তখন তাঁকে বললেন, ‘এরা তোমার মীমাংসায় সম্মত হয়েছে। (কাজেই তুমিই তাদের ব্যাপারে ফয়সালা কর)।’ সা‘দ রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, ‘আমি এই রায় ঘোষণা করছি যে, তাদের মধ্যে থেকে যুদ্ধ করতে সক্ষমদেরকে হত্যা করা হবে এবং মহিলা ও শিশুদের বন্দী করা হবে।’ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘তুমি তাদের ব্যাপারে আল্লাহ তা‘আলার ফয়সালার অনুরূপ ফয়সালাই করেছ।[262]

عَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا، قَالَتْ: أُصِيبَ سَعْدٌ يَوْمَ الخَنْدَقِ، رَمَاهُ رَجُلٌ مِنْ قُرَيْشٍ، يُقَالُ لَهُ حِبَّانُ بْنُ العَرِقَةِ وَهُوَ حِبَّانُ بْنُ قَيْسٍ، مِنْ بَنِي مَعِيصِ بْنِ عَامِرِ بْنِ لُؤَيٍّ رَمَاهُ فِي الأَكْحَلِ، فَضَرَبَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ خَيْمَةً فِي المَسْجِدِ لِيَعُودَهُ مِنْ قَرِيبٍ، فَلَمَّا رَجَعَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مِنَ الخَنْدَقِ وَضَعَ السِّلاَحَ وَاغْتَسَلَ، فَأَتَاهُ جِبْرِيلُ عَلَيْهِ السَّلاَمُ وَهُوَ يَنْفُضُ رَأْسَهُ مِنَ الغُبَارِ، فَقَالَ: " قَدْ وَضَعْتَ السِّلاَحَ، وَاللَّهِ مَا وَضَعْتُهُ، اخْرُجْ إِلَيْهِمْ، قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: فَأَيْنَ فَأَشَارَ إِلَى بَنِي قُرَيْظَةَ " فَأَتَاهُمْ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَنَزَلُوا عَلَى حُكْمِهِ، فَرَدَّ الحُكْمَ إِلَى سَعْدٍ، قَالَ: فَإِنِّي أَحْكُمُ فِيهِمْ: أَنْ تُقْتَلَ المُقَاتِلَةُ، وَأَنْ تُسْبَى النِّسَاءُ وَالذُّرِّيَّةُ، وَأَنْ تُقْسَمَ أَمْوَالُهُمْ قَالَ هِشَامٌ، فَأَخْبَرَنِي أَبِي، عَنْ عَائِشَةَ: " أَنَّ سَعْدًا قَالَ: اللَّهُمَّ إِنَّكَ تَعْلَمُ أَنَّهُ لَيْسَ أَحَدٌ أَحَبَّ إِلَيَّ أَنْ أُجَاهِدَهُمْ فِيكَ، مِنْ قَوْمٍ كَذَّبُوا رَسُولَكَ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَأَخْرَجُوهُ، اللَّهُمَّ فَإِنِّي أَظُنُّ أَنَّكَ قَدْ وَضَعْتَ الحَرْبَ بَيْنَنَا وَبَيْنَهُمْ، فَإِنْ كَانَ بَقِيَ مِنْ حَرْبِ قُرَيْشٍ شَيْءٌ فَأَبْقِنِي لَهُ، حَتَّى أُجَاهِدَهُمْ فِيكَ، وَإِنْ كُنْتَ وَضَعْتَ الحَرْبَ فَافْجُرْهَا وَاجْعَلْ مَوْتَتِي فِيهَا، فَانْفَجَرَتْ مِنْ لَبَّتِهِ فَلَمْ يَرُعْهُمْ، وَفِي المَسْجِدِ خَيْمَةٌ مِنْ بَنِي غِفَارٍ، إِلَّا الدَّمُ يَسِيلُ إِلَيْهِمْ، فَقَالُوا: يَا أَهْلَ الخَيْمَةِ، مَا هَذَا الَّذِي يَأْتِينَا مِنْ قِبَلِكُمْ؟ فَإِذَا سَعْدٌ يَغْذُو جُرْحُهُ دَمًا، فَمَاتَ مِنْهَا رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ ".

আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, খন্দকের যুদ্ধে সা’দ রাদিয়াল্লাহু আনহু আহত হয়েছিলেন। কুরাইশ গোত্রের হিব্বান ইবন ইরকা নামক এক ব্যক্তি তাঁর উভয় বাহুর মধ্যবর্তী রগে তীর বিদ্ধ করেছিল। কাছে থেকে তার শুশ্রূষা করার জন্য নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদে নববীতে একটি খিমা তৈরি করেছিলেন। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খন্দকের যুদ্ধ থেকে প্রত্যাবর্তন করে যখন হাতিয়ার রেখে গোসল সমাপন করলেন তখন জিবরীল আলাইহিস সালাম তাঁর মাথার ধূলোবালি ঝাড়তে ঝাড়তে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে উপস্থিত হলেন এবং বললেন, আপনি তো হাতিয়ার রেখে দিয়েছেন, কিন্তু আল্লাহর কসম! আমি এখনও তা রেখে দেই নি। চলুন তাঁদের প্রতি। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে জিজ্ঞাসা করলেন কোথায়? তিনি বনী কুরায়যা গোত্রের প্রতি ইঙ্গিত করলেন। তখন রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বনূ কুরায়যার মহল্লায় এলেন। পরিশেষে তারা রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ফয়সালা মেনে নিয়ে দুর্গ থেকে নিচে নেমে এল। কিন্তু তিনি ফয়সালার ভার সা’দ রাদিয়াল্লাহু আনহুর উপর অর্পণ করলেন। তখন সা’দ রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, তাদের ব্যাপারে আমি এই রায় দিচ্ছি যে, তাদের যোদ্ধাদেরকে হত্যা করা হবে, নারী ও সন্তানদেরকে বন্দী করা হবে এবং তাদের ধন-সম্পদ (মুসলিমদের মধ্যে) বন্টন করে দেওয়া হবে। বর্ণনাকারী হিশাম (রহ.) বলেন, আমার পিতা [উরওয়া রাদিয়াল্লাহু আনহু] আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে আমার কাছে বর্ণনা করেছেন যে, সা’দ রাদিয়াল্লাহু আনহু (বনূ কুরায়যার ঘটনার পর) আল্লাহর কাছে এ বলে দো‘আ করছিলেন, হে আল্লাহ্! আপনি তো জানেন, যে সম্প্রদায় আপনার রাসূলকে মিথ্যাবাদী বলেছে এবং দেশ থেকে বের করে দিয়েছে আপনার সন্তুষ্টির জন্য তাদের বিরুদ্ধে জিহাদ করার চেয়ে কোনো কিছুই আমার কাছে অধিক প্রিয় নয়। হে আল্লাহ্! আমি মনে করি (খন্দক যুদ্ধের পর) আপনি তো আমাদের ও তাদের মধ্যে যুদ্ধের অবসান ঘটিয়েছেন তবে এখনো যদি কুরাইশদের বিরুদ্ধে কোনো যুদ্ধ বাকী থেকে থাকে তাহলে আমাকে সে জন্য বাঁচিয়ে রাখুন, যেন আমি আপনার রাস্তায় তাদের বিরুদ্ধে জিহাদ করতে পারি। আর যদি যুদ্ধে অবসান ঘটিয়ে থাকেন তাহলে ক্ষতস্থান থেকে রক্ত প্রবাহিত করুন এবং এতেই আমার মৃত্যু ঘটান। এরপর তাঁর ক্ষত স্থান থেকে রক্তক্ষরণ হয়ে তা প্রবাহিত হতে লাগল। মসজিদে বনী গিফার গোত্রের একটি তাঁবু ছিল। তাদের দিকে রক্ত প্রবাহিত হয়ে আসতে দেখে তারা ভীত হয়ে বললেন, হে তাঁবুবাসীগণ আপনাদের দিক থেকে এসব কি আমাদের দিকে বয়ে আসছে? পরে তাঁরা দেখলেন যে, সা’দ রাদিয়াল্লাহু আনহুর ক্ষতস্থান থেকে রক্তক্ষরণ হচ্ছে। অবশেষে এ জখমের কারণেই মারা যান।[263]

حَدَّثَنِي عَبْدُ اللَّهِ بْنُ مُنِيرٍ، سَمِعَ عَبْدَ اللَّهِ بْنَ بَكْرٍ السَّهْمِيَّ، حَدَّثَنَا حُمَيْدٌ، عَنْ أَنَسٍ، أَنَّ الرُّبَيِّعَ عَمَّتَهُ كَسَرَتْ ثَنِيَّةَ جَارِيَةٍ، فَطَلَبُوا إِلَيْهَا العَفْوَ فَأَبَوْا، فَعَرَضُوا الأَرْشَ فَأَبَوْا، فَأَتَوْا رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَأَبَوْا، إِلَّا القِصَاصَ فَأَمَرَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِالقِصَاصِ، فَقَالَ أَنَسُ بْنُ النَّضْرِ: يَا رَسُولَ اللَّهِ أَتُكْسَرُ ثَنِيَّةُ الرُّبَيِّعِ؟ لاَ وَالَّذِي بَعَثَكَ بِالحَقِّ لاَ تُكْسَرُ ثَنِيَّتُهَا، فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «يَا أَنَسُ، كِتَابُ اللَّهِ القِصَاصُ». فَرَضِيَ القَوْمُ فَعَفَوْا، فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: إِنَّ مِنْ عِبَادِ اللَّهِ مَنْ لَوْ أَقْسَمَ عَلَى اللَّهِ لَأَبَرَّهُ ".

আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, আনাসের ফুফু রুবাঈ জনৈক বাঁদির সামনের দাঁত ভেঙ্গে ফেলে। এরপর বাঁদির কাছে রুবাঈয়ের লোকেরা ক্ষমা প্রার্থী হলে বাঁদির লোকেরা অস্বীকার করে। তখন তাদের কাছে দীয়াত পেশ করা হল, তখন তা তারা গ্রহণ করল না। অগত্যা তারা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সমীপে এসে ঘটনা জানাল। কিন্তু বাঁদির লোকেরা কিসাস ছাড়া অন্য কিছু গ্রহণ করতে অস্বীকার করল। রাসূরুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কিসাসের নির্দেশ দিলেন। তখন আনাস ইবন নযর রাদিয়াল্লাহু আনহু নিবেদন করল, ইয়া রাসূলুল্লাহ! রুবাঈয়ের সামনে দাঁত ভেঙ্গে দেওয়া হবে? না যে সত্তা আপনাকে সত্য ধর্ম দিয়ে প্রেরণ করেছেন তাঁর শপথ, তাঁর দাঁত ভাঙ্গা হবে না। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হে আনাস! আল্লাহর কিতাবই কিসাসের নির্দেশ দেয়। এরপর বাঁদির সম্প্রদায় রাযী হয়ে যায় এবং রুবাঈকে ক্ষমা করে দেয়। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আল্লাহর বান্দাদের মধ্যে এমন লোকও আছে যিনি আল্লাহর নামে শপথ করেন, আল্লাহ তা পূরণ করেন।[264]

عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ، أَنَّ عُمَرَ بْنَ الخَطَّابِ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، كَانَ إِذَا قَحَطُوا اسْتَسْقَى بِالعَبَّاسِ بْنِ عَبْدِ المُطَّلِبِ، فَقَالَ: «اللَّهُمَّ إِنَّا كُنَّا نَتَوَسَّلُ إِلَيْكَ بِنَبِيِّنَا فَتَسْقِينَا، وَإِنَّا نَتَوَسَّلُ إِلَيْكَ بِعَمِّ نَبِيِّنَا فَاسْقِنَا»، قَالَ: فَيُسْقَوْنَ.

আনাস ইবন মালিক রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, উমর ইবন খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু আনহু অনাবৃষ্টির সময় আব্বাস ইবন আবদুল মুত্তালিব রাদিয়াল্লাহু আনহুর উসিলা দিয়ে বৃষ্টির জন্য দো‘আ করতেন এবং বলতেন, হে আল্লাহ্! (প্রথমে) আমরা আমাদের রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উসিলা দিয়ে দো‘আ করতাম এবং আপনি বৃষ্টি দান করতেন। এখন আমরা আমাদের রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের চাচার উসিলা দিয়ে দো‘আ করছি, আপনি আমাদেরকে বৃষ্টি দান করুন। বর্ণনাকারী বলেন, দু‘আর সাথে সাথেই বৃষ্টি বর্ষিত হতো। [265]

عَنْ عَبْدِ الرَّحْمَنِ بْنِ أَبِي بَكْرٍ، أَنَّ أَصْحَابَ الصُّفَّةِ، كَانُوا أُنَاسًا فُقَرَاءَ وَأَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «مَنْ كَانَ عِنْدَهُ طَعَامُ اثْنَيْنِ فَلْيَذْهَبْ بِثَالِثٍ، وَإِنْ أَرْبَعٌ فَخَامِسٌ أَوْ سَادِسٌ» وَأَنَّ أَبَا بَكْرٍ جَاءَ بِثَلاَثَةٍ، فَانْطَلَقَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِعَشَرَةٍ، قَالَ: فَهُوَ أَنَا وَأَبِي وَأُمِّي - فَلاَ أَدْرِي قَالَ: وَامْرَأَتِي وَخَادِمٌ - بَيْنَنَا وَبَيْنَ بَيْتِ أَبِي بَكْرٍ، وَإِنَّ أَبَا بَكْرٍ تَعَشَّى عِنْدَ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، ثُمَّ لَبِثَ حَيْثُ صُلِّيَتِ العِشَاءُ، ثُمَّ رَجَعَ، فَلَبِثَ حَتَّى تَعَشَّى النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَجَاءَ بَعْدَ مَا مَضَى مِنَ اللَّيْلِ مَا شَاءَ اللَّهُ، قَالَتْ لَهُ امْرَأَتُهُ: وَمَا حَبَسَكَ عَنْ أَضْيَافِكَ - أَوْ قَالَتْ: ضَيْفِكَ - قَالَ: أَوَمَا عَشَّيْتِيهِمْ؟ قَالَتْ: أَبَوْا حَتَّى تَجِيءَ، قَدْ عُرِضُوا فَأَبَوْا، قَالَ: فَذَهَبْتُ أَنَا فَاخْتَبَأْتُ، فَقَالَ يَا غُنْثَرُ فَجَدَّعَ وَسَبَّ، وَقَالَ: كُلُوا لاَ هَنِيئًا، فَقَالَ: وَاللَّهِ لاَ أَطْعَمُهُ أَبَدًا، وَايْمُ اللَّهِ، مَا كُنَّا نَأْخُذُ مِنْ لُقْمَةٍ إِلَّا رَبَا مِنْ أَسْفَلِهَا أَكْثَرُ مِنْهَا - قَالَ: يَعْنِي حَتَّى شَبِعُوا - وَصَارَتْ أَكْثَرَ مِمَّا كَانَتْ قَبْلَ ذَلِكَ، فَنَظَرَ إِلَيْهَا أَبُو بَكْرٍ فَإِذَا هِيَ كَمَا هِيَ أَوْ أَكْثَرُ مِنْهَا، فَقَالَ لِامْرَأَتِهِ: يَا أُخْتَ بَنِي فِرَاسٍ مَا هَذَا؟ قَالَتْ: لاَ وَقُرَّةِ عَيْنِي، لَهِيَ الآنَ أَكْثَرُ مِنْهَا قَبْلَ ذَلِكَ بِثَلاَثِ مَرَّاتٍ، فَأَكَلَ مِنْهَا أَبُو بَكْرٍ، وَقَالَ: إِنَّمَا كَانَ ذَلِكَ مِنَ الشَّيْطَانِ - يَعْنِي يَمِينَهُ - ثُمَّ أَكَلَ مِنْهَا لُقْمَةً، ثُمَّ حَمَلَهَا إِلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَأَصْبَحَتْ عِنْدَهُ، وَكَانَ بَيْنَنَا وَبَيْنَ قَوْمٍ عَقْدٌ، فَمَضَى الأَجَلُ، فَفَرَّقَنَا اثْنَا عَشَرَ رَجُلًا، مَعَ كُلِّ رَجُلٍ مِنْهُمْ أُنَاسٌ، اللَّهُ أَعْلَمُ كَمْ مَعَ كُلِّ رَجُلٍ، فَأَكَلُوا مِنْهَا أَجْمَعُونَ، أَوْ كَمَا قَالَ.

আবদুর-রাহমান ইবন আবূ বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত যে, আসহাবে সুফফা ছিলেন খুবই দরিদ্র। (একদা) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, যার কাছে দু’জনের আহার আছে সে যেন (তাঁদের থেকে) তৃতীয়জনকে সঙ্গে করে নিয়ে যায়। আর যার কাছে চারজনের আহারের সংস্থান আছে, সে যেন পঞ্চম বা ষষ্ঠজন সঙ্গে নিয়ে যায়। আবূ বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু তিনজন সাথে নিয়ে আসেন এবং রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দশজন নিয়ে আসেন। আবদুর রাহমান রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, আমাদের ঘরে এবং আবূ বকর রাদিয়াল্লাহু আনহুর ঘরে আমি, আমার পিতা ও মাতা (এই তিনজন সদস্য) ছিলাম। রাবী বলেন, আমি জানি না, তিনি আমার স্ত্রী এবং খাদিম একথা বলেছিলেন কি না? আবূ বাকর রাদিয়াল্লাহু আনহু রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ঘরেই রাতের আহার করেন এবং ইশার সালাত পর্যন্ত সেখানে অবস্থান করেন। ইশার সালাতের পর তিনি আবার (রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ঘরে) ফিরে আসেন এবং রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের রাতের আহার শেষ করা পর্যন্ত সেখানেই অবস্থান করেন। আল্লাহ্‌র ইচ্ছায় কিছু সময় অতিবাহিত হওয়ার পর বাড়ী ফিরলে তাঁর স্ত্রী তাঁকে বললেন, মেহমানদের কাছে আসতে কিসে আপনাকে ব্যস্ত রেখেছিল? কিংবা তিনি বলেছিলেন, (বর্ণনাকারীর সন্দেহ) মেহমান থেকে। আবূ বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, এখনও তাদের খাবার দাওনি? তিনি বললেন, আপনি না আসা পর্যন্ত তারা খেতে অস্বীকার করেন। তাদের সামনে হাযির করা হয়েছিল, তবে তারা খেতে সম্মত হননি। তিনি (রাগান্বিত হয়ে) বললেন, ওরে বোকা এবং ভৎসনা করলেন। আর (মেহমানদের) বললেন, খেয়ে নিন। আপনারা অস্বস্তিতে ছিলেন। এরপর তিনি বললেন, আল্লাহ্‌র কসম! আমি এ কখনই খাব না। আবদুর রাহমান রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, আল্লাহর কসম! আমরা লুকমা উঠিয়ে নিতেই নীচ থেকে তা অধিক পরিমাণে বেড়ে যাচ্ছিল। তিনি বলেন, সকলেই পেট ভরে খেলেন। অথচ আগের চাইতে অধিক খাবার রয়ে গেল। আবূ বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু খাবারের দিকে তাকিয়ে দেখেতে পেলেন তা আগের সমপরিমাণ কিংবা তার চাইতেও বেশী। তিনি তাঁর স্ত্রীকে বললেন, হে বনূ ফিরাসের বোন। এ কি? তিনি বললেন, আমার চোখের প্রশান্তির কসম! এতো এখন আগের চাইতে তিনগুন বেশী! আবূ বকর রাদিয়াল্লাহু আনহুও তা থেকে আহার করলেন এবং বললেন, আমার সে শপথ শয়তানের পক্ষ থেকেই হয়েছিল। এরপর তিনি আরও লুকমা মুখে দিলেন এবং অবশিষ্ট খাবার নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দরবারে নিয়ে গেলেন। ভোর পর্যন্ত সে খাদ্য রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সেখানেই ছিল। এদিকে আমাদের ও অন্য একটি গোত্রের মাঝে সে সন্ধি ছিল তার সময়সীমা পূর্ন হয়ে যায়। (এবং তারা মদীনায় আসে) আমরা তাদের বারজনের নেতৃত্বে ভাগ করে দেই। তাদের প্রত্যকের সংগেই কিছু কিছু লোক ছিল। তবে প্রত্যকের সঙ্গে কতজন ছিল তা আল্লাহ্ই জানেন। তারা সকলেই সেই খাদ্য থেকে আহার করেন। (রাবী বলেন) কিংবা আবদুর রাহমান রাদিয়াল্লাহু আনহু যে ভাবে বর্ণনা করেছেন।[266]

عَنْ أَبِي عَبْدُ اللَّهِ بْنُ زَيْدٍ، قَالَ: لَمَّا أَمَرَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِالنَّاقُوسِ يُعْمَلُ لِيُضْرَبَ بِهِ لِلنَّاسِ لِجَمْعِ الصَّلَاةِ طَافَ بِي وَأَنَا نَائِمٌ رَجُلٌ يَحْمِلُ نَاقُوسًا فِي يَدِهِ، فَقُلْتُ: يَا عَبْدَ اللَّهِ أَتَبِيعُ النَّاقُوسَ؟ قَالَ: وَمَا تَصْنَعُ بِهِ؟ فَقُلْتُ: نَدْعُو بِهِ إِلَى الصَّلَاةِ، قَالَ: أَفَلَا أَدُلُّكَ عَلَى مَا هُوَ خَيْرٌ مِنْ ذَلِكَ؟ فَقُلْتُ لَهُ: بَلَى، قَالَ: فَقَالَ: تَقُولُ: اللَّهُ أَكْبَرُ، اللَّهُ أَكْبَرُ، اللَّهُ أَكْبَرُ، اللَّهُ أَكْبَرُ، أَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ، أَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ، أَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللَّهِ، أَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللَّهِ، حَيَّ عَلَى الصَّلَاةِ، حَيَّ عَلَى الصَّلَاةِ، حَيَّ عَلَى الْفَلَاحِ، حَيَّ عَلَى الْفَلَاحِ، اللَّهُ أَكْبَرُ، اللَّهُ أَكْبَرُ، لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ، قَالَ: ثُمَّ اسْتَأْخَرَ عَنِّي غَيْرَ بَعِيدٍ، ثُمَّ، قَالَ: وَتَقُولُ: إِذَا أَقَمْتَ الصَّلَاةَ، اللَّهُ أَكْبَرُ اللَّهُ أَكْبَرُ، أَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ، أَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللَّهِ، حَيَّ عَلَى الصَّلَاةِ، حَيَّ عَلَى الْفَلَاحِ، قَدْ قَامَتِ الصَّلَاةُ، قَدْ قَامَتِ الصَّلَاةُ، اللَّهُ أَكْبَرُ اللَّهُ أَكْبَرُ، لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ، فَلَمَّا أَصْبَحْتُ، أَتَيْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَأَخْبَرْتُهُ، بِمَا رَأَيْتُ فَقَالَ: «إِنَّهَا لَرُؤْيَا حَقٌّ إِنْ شَاءَ اللَّهُ، فَقُمْ مَعَ بِلَالٍ فَأَلْقِ عَلَيْهِ مَا رَأَيْتَ، فَلْيُؤَذِّنْ بِهِ، فَإِنَّهُ أَنْدَى صَوْتًا مِنْكَ» فَقُمْتُ مَعَ بِلَالٍ، فَجَعَلْتُ أُلْقِيهِ عَلَيْهِ، وَيُؤَذِّنُ بِهِ، قَالَ: فَسَمِعَ ذَلِكَ عُمَرُ بْنُ الْخَطَّابِ، وَهُوَ فِي بَيْتِهِ فَخَرَجَ يَجُرُّ رِدَاءَهُ، وَيَقُولُ: وَالَّذِي بَعَثَكَ بِالْحَقِّ يَا رَسُولَ اللَّهِ، لَقَدْ رَأَيْتُ مِثْلَ مَا رَأَى، فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «فَلِلَّهِ الْحَمْدُ» قَالَ أَبُو دَاوُدَ: هَكَذَا رِوَايَةُ الزُّهْرِيِّ، عَنْ سَعِيدِ بْنِ الْمُسَيِّبِ، عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ زَيْدٍ، وَقَالَ: فِيهِ ابْنُ إِسْحَاقَ، عَنِ الزُّهْرِيِّ: اللَّهُ أَكْبَرُ، اللَّهُ أَكْبَرُ، اللَّهُ أَكْبَرُ، اللَّهُ أَكْبَرُ، وَقَالَ مَعْمَرٌ، وَيُونُسُ، عَنِ الزُّهْرِيِّ فِيهِ: اللَّهُ أَكْبَرُ، اللَّهُ أَكْبَرُ، لَمْ يُثَنِّيَا.

আবু আব্দুল্লাহ ইবন যায়েদ রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, যখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম শিংগা ধ্বনি করে লোকদের সালাতের জন্য একত্র করার নির্দেশ প্রদান করেন। তখন একদা আমি স্বপ্নে দেখি যে, এক ব্যক্তি শিংগা হাতে নিয়ে যাচ্ছে। আমি তাকে বলি, হে আল্লাহর বান্দা! তুমি কি শিংগা বিক্রয় বরবে? সে বলে, তুমি শিংগা দিয়ে কি করবে? আমি বললাম, আমি তার সাহায্যে সালাতের জামা‘আতে লোকদের ডাকব। সে বলল, আমি কি এর চেয়ে উত্তম কোনো সন্ধান তোমাকে দেব না? আমি বললাম, হ্যাঁ। রাবী বলেন, তখন সে বলল, তুমি এইরূপ শব্দ উচ্চারণ করবে,

“আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার;

আশহাদু আল্লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ্, আশহাদু আল্লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ্;

আশহাদু আন্না মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ্, আশহাদু আন্না মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ্;

হাইয়া আলাসসালাহ, হাইয়া আলাসসালাহ,

হাইয়া আলাল-ফালাহ্, হাইয়া আলাল-ফালাহ্,

আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার;

লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ্।”

রাবী রলেন! অতঃপর ঐ স্থান হতে ঐ ব্যক্তি একটু দুরে সরে গিয়ে দাঁড়ায় এবং বলে- তুমি যখন সালাত পড়তে দাঁড়াবে তখন বলবে,

“আল্লাহু আকরার, আলাহু আকবার;

আশহাদু আল্লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ্; আশহাদু আন্না মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ্;

হাইয়া আলাসসালাহ; হাইয়া আলাল-ফালাহ্;

কাদ কামাতিসসালাহ; কাদ কামাতিসসালাহ,

আলাহু আকবার, আল্লাহু আকবার;

লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ্”।

অতঃপর ভোর বেলা আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের খিদমতে হাযির হয়ে তাঁর নিকট আমার স্বপ্নের বর্ণনা করি। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন এটা অবশ্যই সত্য স্বপ্ন। অতঃপর তিনি বলেন, তুমি বিলালকে ডেকে তোমার সাথে নাও এবং তুমি যেরূপ স্বপ্ন দেখেছ- তদ্রুপ তাকে শিক্ষা দাও যাতে সে (বিলাল) ঐরূপে-আযান দিতে পারে। কেননা তাঁর কন্ঠস্বর তোমার স্বরের চাইতে অধিক উচ্চ। অতঃপর আমি বিলাল রাদিয়াল্লাহু আনহুকে সঙ্গে নিয়ে দাঁড়াই এবং তাকে আযানের শব্দগুলি শিক্ষা দিতে থাকি এবং তিনি উচ্চারণ পূর্বক আযান দিতে থাকেন। বিলালের এই আযান ধ্বনি উমার ইবনুল খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু আনহু নিজ আবাসে বসে শুনতে পান। তা শুনে উমার রাদিয়াল্লাহু আনহু এত দ্রুত পদে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের খিদ্মতে আগমন করেন যে, তাঁর গায়ের চাদর মাটিতে হেচঁড়িয়ে যাচ্ছিলো। তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দরবারে উপস্হিত হয়ে বলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আল্লাহর শপথ! যে মহান সত্তা আপনাকে সত্য নবী হিসাবে প্রেরণ করেছেন, আমিও ঐরূপ স্বপ্ন দেখেছি যেরূপ অন্যরা দেখেছে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য- (ইবন মাজাহ, তিরমিযী, মুসলিম)।

ইমাম আবু দাউদ (রহঃ) বলেন, সাইদ ইবনুল মুসাইয়্যাব ও আবদুল্লাহ্ ইবন যায়েদের সূত্রে ইমাম যুহুরী (রহ.) হতেও এইরূপ হাদীস বর্ণিত আছে। যুহরী থেকে ইবন ইসহাকের সূত্রে “আল্লাহু আকবার, চারবার উল্লেখ আছ। যুহরী থেকে মা‘মার ও ইউনুসের সূত্রে “আল্লাহু আকবার” দুই বার উল্লেখ আছে, তাঁরা চারবার উল্লেখ করেননি।[267]

 

 

হকের উপর কায়েম থাকা সবচেয়ে বড় কারামত এটা অলীদের কারামতের মধ্যে শামিল করার কারণ।

 

عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عُمَرَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَنْ جَرَّ ثَوْبَهُ خُيَلاَءَ، لَمْ يَنْظُرِ اللَّهُ إِلَيْهِ يَوْمَ القِيَامَةِ» فَقَالَ أَبُو بَكْرٍ: إِنَّ أَحَدَ شِقَّيْ ثَوْبِي يَسْتَرْخِي، إِلَّا أَنْ أَتَعَاهَدَ ذَلِكَ مِنْهُ؟ فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِنَّكَ لَسْتَ تَصْنَعُ ذَلِكَ خُيَلاَءَ» قَالَ مُوسَى: فَقُلْتُ لِسَالِمٍ أَذَكَرَ عَبْدُ اللَّهِ " مَنْ جَرَّ إِزَارَهُ؟ قَالَ: لَمْ أَسْمَعْهُ ذَكَرَ إِلَّا ثَوْبَهُ ".

আবদুল্লাহ ইবন উমর রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি গর্বের সাথে পরিহিত কাপড় টাকনুর নিম্নভাগে ঝুলিয়ে চলাফিরা করে, কিয়ামতের দিন আল্লাহ্ তার প্রতি রহমতের নযর করবেন না। এ শুনে আবূ বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, আমার অজ্ঞাতসারে কাপড়ের একপাশ কোনো কোন সময় নীচে নেমে যায়। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, তুমি তো গর্বের সাথে তা করছ না। মূসা (রহ.) বলেন, আমি সালিমকে জিজ্ঞাসা করলাম, আবদুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু কি ‘যে ব্যক্তি তার লুঙ্গী ঝুলিয়ে চলল’ বলেছেন? সালিম (রহ.) বললেন, আমি তাকে শুধু কাপড়ের কথা উল্লেখ করতে শুনেছি।[268]

এটা আবূ বকর রাদিয়াল্লাহু আনহুর হকের উপর প্রতিষ্ঠিত থাকার কারামত।

عَنْ عَائِشَة رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا، زَوْجَ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَتْ: أَقْبَلَ أَبُو بَكْرٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ عَلَى فَرَسِهِ مِنْ مَسْكَنِهِ بِالسُّنْحِ حَتَّى نَزَلَ، فَدَخَلَ المَسْجِدَ، فَلَمْ يُكَلِّمِ النَّاسَ حَتَّى دَخَلَ عَلَى عَائِشَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا، فَتَيَمَّمَ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَهُوَ مُسَجًّى بِبُرْدِ حِبَرَةٍ، فَكَشَفَ عَنْ وَجْهِهِ، ثُمَّ أَكَبَّ عَلَيْهِ، فَقَبَّلَهُ، ثُمَّ بَكَى، فَقَالَ: «بِأَبِي أَنْتَ يَا نَبِيَّ اللَّهِ، لاَ يَجْمَعُ اللَّهُ عَلَيْكَ مَوْتَتَيْنِ، أَمَّا المَوْتَةُ الَّتِي كُتِبَتْ عَلَيْكَ فَقَدْ مُتَّهَا»

قَالَ أَبُو سَلَمَةَ: فَأَخْبَرَنِي ابْنُ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا: أَنَّ أَبَا بَكْرٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ خَرَجَ، وَعُمَرُ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ يُكَلِّمُ النَّاسَ، فَقَالَ: «اجْلِسْ»، فَأَبَى، فَقَالَ: «اجْلِسْ»، فَأَبَى، فَتَشَهَّدَ أَبُو بَكْرٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، فَمَالَ إِلَيْهِ النَّاسُ، وَتَرَكُوا عُمَرَ، فَقَالَ: " أَمَّا بَعْدُ، فَمَنْ كَانَ مِنْكُمْ يَعْبُدُ مُحَمَّدًا صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَإِنَّ مُحَمَّدًا صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَدْ مَاتَ، وَمَنْ كَانَ يَعْبُدُ اللَّهَ، فَإِنَّ اللَّهَ حَيٌّ لَا يَمُوتُ، قَالَ اللَّهُ تَعَالَى: {وَمَا مُحَمَّدٌ إِلَّا رَسُولٌ قَدْ خَلَتْ مِنْ قَبْلِهِ الرُّسُلُ} [آل عمران: 144] إِلَى {الشَّاكِرِينَ} [آل عمران: 144] " وَاللَّهِ لَكَأَنَّ النَّاسَ لَمْ يَكُونُوا يَعْلَمُونَ أَنَّ اللَّهَ أَنْزَلَهَا حَتَّى تَلَاهَا أَبُو بَكْرٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، فَتَلَقَّاهَا مِنْهُ النَّاسُ، فَمَا يُسْمَعُ بَشَرٌ إِلَّا يَتْلُوهَا.

আবূ সালামা (র.) বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সহধর্মিণী আয়িশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা আমাকে বলেছেন, [রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মৃত্যুর খবর পেয়ে] আবূ বক্‌র রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু 'সুন্‌হ'-এ অবস্থিত তাঁর বাড়ি থেকে ঘোড়ায় চড়ে চলে এলেন এবং নেমে মসজিদে প্রবেশ করলেন। সেখানে লোকদের সাথে কোনো কথা না বলে আয়িশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহার ঘরে প্রবেশ করে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দিকে অগ্রসর হলেন। তখন তিনি একখানি 'হিবারাহ' ইয়ামানী চাদর দ্বারা আবৃত ছিলেন। আবূ বক্‌র রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মুখমণ্ডল উম্মুক্ত করে তাঁর উপর ঝুকে পড়লেন এবং চুমু খেলেন, তারপর কাঁদতে লাগলেন এবং বললেন, ইয়া নবী আল্লাহ্! আমার পিতা আপনার জন্য কুরবান হোক। আল্লাহ্ আপনার জন্য দুই মৃত্যু একত্রিত করবেন না। তবে যে মৃত্যু আপনার জন্য নির্ধারিত ছিল তা তো আপনি কবুল করেছেন। আবূ সালামা (র.) বলেন, আবদুল্লাহ ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু আমাকে খবর দিয়েছেন যে, (তারপর) আবূ বক্‌র রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বেরিয়ে এলেন। তখন উমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু লোকদের সাথে কথা বলছিলেন। আবূ বক্‌র রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু তাঁকে বললেন, বসে পড়ুন। তিনি তা মানলেন না। আবূ বক্‌র রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু তাঁকে বললেন, বসে পড়ুন, তিনি তা মানলেন না। তখন আবূ বক্‌র রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু কালিমা-ই-শাহাদাতের দ্বারা (বক্তব্য) আরম্ভ করলেন। লোকেরা উমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুকে ছেড়ে তাঁর দিকে আকৃষ্ট হন। আবূ বক্‌র রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বললেন...... আম্‌মা বা'দু, তোমাদের মধ্যে যারা মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ইবাদত করতে, মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সত্যই ইন্তিকাল করেছেন। আর যারা মহান আল্লাহ্‌র ইবাদত করতে, নিশ্চয়ই আল্লাহ্‌ চিরঞ্জিব, অমর। মহান আল্লাহ্ ইরশাদ করেন, “মুহাম্মদ একজন রাসূল মাত্র.... শাকিরীন” পর্যন্ত। [সূরা আলে ইমরান: ১৪৪] আল্লাহ্‌র কসম, মনে হচ্ছিল যেন আবূ বক্‌র রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর তিলাওয়াত করার পূর্ব পর্যন্ত লোকদের জানাই ছিল না যে, আল্লাহ্ এ আয়াত নাযিল করেছেন। এখনই যেন লোকেরা আয়াতখানি তার কাছ থেকে পেলেন। প্রতিটি মানুষকেই তখন ঐ আয়াত তিলাওয়াত করতে শোনা গেল।[269]

عَنْ إِبْرَاهِيمَ التَّيْمِيِّ، عَنْ أَبِيهِ، قَالَ: كُنَّا عِنْدَ حُذَيْفَةَ، فَقَالَ رَجُلٌ: لَوْ أَدْرَكْتُ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَاتَلْتُ مَعَهُ وَأَبْلَيْتُ، فَقَالَ حُذَيْفَةُ: أَنْتَ كُنْتَ تَفْعَلُ ذَلِكَ؟ لَقَدْ رَأَيْتُنَا مَعَ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَيْلَةَ الْأَحْزَابِ، وَأَخَذَتْنَا رِيحٌ شَدِيدَةٌ وَقُرٌّ، فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «أَلَا رَجُلٌ يَأْتِينِي بِخَبَرِ الْقَوْمِ جَعَلَهُ اللهُ مَعِي يَوْمَ الْقِيَامَةِ؟» فَسَكَتْنَا فَلَمْ يُجِبْهُ مِنَّا أَحَدٌ، ثُمَّ قَالَ: «أَلَا رَجُلٌ يَأْتِينَا بِخَبَرِ الْقَوْمِ جَعَلَهُ اللهُ مَعِي يَوْمَ الْقِيَامَةِ؟» فَسَكَتْنَا فَلَمْ يُجِبْهُ مِنَّا أَحَدٌ، ثُمَّ قَالَ: «أَلَا رَجُلٌ يَأْتِينَا بِخَبَرِ الْقَوْمِ جَعَلَهُ اللهُ مَعِي يَوْمَ الْقِيَامَةِ؟»، فَسَكَتْنَا فَلَمْ يُجِبْهُ مِنَّا أَحَدٌ، فَقَالَ: «قُمْ يَا حُذَيْفَةُ، فَأْتِنَا بِخَبَرِ الْقَوْمِ»، فَلَمْ أَجِدْ بُدًّا إِذْ دَعَانِي بِاسْمِي أَنْ أَقُومَ، قَالَ: «اذْهَبْ فَأْتِنِي بِخَبَرِ الْقَوْمِ، وَلَا تَذْعَرْهُمْ عَلَيَّ»، فَلَمَّا وَلَّيْتُ مِنْ عِنْدِهِ جَعَلْتُ كَأَنَّمَا أَمْشِي فِي حَمَّامٍ حَتَّى أَتَيْتُهُمْ، فَرَأَيْتُ أَبَا سُفْيَانَ يَصْلِي ظَهْرَهُ بِالنَّارِ، فَوَضَعْتُ سَهْمًا فِي كَبِدِ الْقَوْسِ فَأَرَدْتُ أَنْ أَرْمِيَهُ، فَذَكَرْتُ قَوْلَ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «وَلَا تَذْعَرْهُمْ عَلَيَّ»، وَلَوْ رَمَيْتُهُ لَأَصَبْتُهُ فَرَجَعْتُ وَأَنَا أَمْشِي فِي مِثْلِ الْحَمَّامِ، فَلَمَّا أَتَيْتُهُ فَأَخْبَرْتُهُ بِخَبَرِ الْقَوْمِ، وَفَرَغْتُ قُرِرْتُ، فَأَلْبَسَنِي رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مِنْ فَضْلِ عَبَاءَةٍ كَانَتْ عَلَيْهِ يُصَلِّي فِيهَا، فَلَمْ أَزَلْ نَائِمًا حَتَّى أَصْبَحْتُ، فَلَمَّا أَصْبَحْتُ قَالَ: «قُمْ يَا نَوْمَانُ»,

ইবরাহীম তায়মী রহ. তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন: যে, আমরা হুযায়ফা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর কাছে ছিলাম। তখন এক ব্যক্তি বলে উঠলো, হায়, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে পেতাম, তবে তাঁর সঙ্গে মিলে একত্রে যুদ্ধ করতাম এবং-তাতে কোনরূপ পিছপা হতাম না।” হুযায়ফা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বললেন, হয়তো তা তুমি তাই করতে কিন্তু আমি তো আহযাবের রাতে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সঙ্গে ছিলাম। (-সে রাতে”) প্রচন্ড বায়ু ও তীব্র শীত আমাদের কাবু করে ফেলেছিল। এমনি সময় রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘোষণা করলেন, ও হে! এমন কেউ আছে কি? যে আমাকে শক্রর খবর এনে দেবে আল্লাহর তা‘আলা তাকে কিয়ামতের দিন আমার সঙ্গে (মর্যাদার আসনে) রাখবেন?- আমরা তখন চুপ করে রইলাম এবং আমাদের মধ্যে কেউ তার সে আহ্বানে সাড়া দেয়নি। তিনি আবার বললেন, “ও হে! এমন কোনো ব্যক্তি আছে কি” যে আমাকে শক্রপক্ষের খবর এনে দেবে, আল্লাহ তা‘আলা তাকে কিয়ামতের দিন আমার সঙ্গে রাখবেন” এবারও আমরা চুপ রইলাম আর আমাদের মধ্যে কেউ তাঁর আহ্বানে সাড়া দেয়নি। তিনি আবার ঘোষণা করলেন, ওহে! এমন কেউ আছে কি যে আমাকে শক্র পক্ষের খবর এনে দেবে , আল্লাহ তা‘আলা তাকে কিয়ামতের দিন তাকে আমার সঙ্গে রাখবেন এবারও আমরা চুপ করে রইলাম এবং আমাদের কেউ তাঁর আহ্বানে সাড়া দেয়নি। এবার তিনি বললেন, হে হুযায়ফা ওঠো এবং তুমি শক্র পক্ষের খবর আমাদের এনে দাও। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন এবারা আমার নাম ধরেই ডাক দিলেন, তাই উঠা ছাড়া আমার আর কোন উপায় ছিলনা। এবার তিনি বললেন, “শক্রপক্ষের খবর আমাকে এনে দাও, কিন্তু সাবধান তাদের আমার বিরুদ্ধে উত্তেজিত করোনা। তারপর আমি যখন তাঁর নিকট থেকে প্রস্থান করলাম, তখন মনে মনে আমি যেন উষ্ণ আবহাওয়ার মধ্য দিয়ে চলেছি। এভাবে আমি তাদের (শক্রপক্ষের) নিকটে পৌছে গেলাম। তখন আমি লক্ষ্য করলাম আবু সুফিয়ান আগুনের দ্বারা তাঁর পিঠে ছেক দিচ্ছেন। আমি তখন একটি তীর ভুলে ধনুকে সংযোজন করলাম এবং তা নিক্ষেপ করতে মনস্হ করলাম এমন সময় আমার মনে পড়ে গেল যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলে দিয়েছেন, “তাদেরকে আমার বিরুদ্ধে ক্ষেপিয়ে-তূলোনা।......আমি যদি তখন তীর নিক্ষেপ করতাম তবে তীর নির্ঘাৎ লক্ষ্যভেদ করতো। অগত্যা আমি ফিরে আসলাম এবং ফিরে আসার সময়ও উষ্ণতার মধ্য দিয়ে অতিক্রমের মতো উষ্ণতা “অনুভব করলাম। তারপর যখন ফিরে এলাম, তখন প্রতিপক্ষের খবর তাঁকে প্রদান করলাম। আমার দায়িত্ব পালন, করে অবসর হতেই আবার আমি শীতের তীব্রতা অনুভব করলাম। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর অতিরিক্ত একটি জামা দিয়ে আমাকে আবৃত করে দিলেন যা তিনি সাধারণত সালাত আদায়ের সময় গায়ে দিতেন। তারপর আমি ভোর পর্যন্ত একটানা নিদ্রায় আচ্ছন্ন রইলাম। যখন ভোর হল তখন তিনি বললেন, হে গভীর নিদ্রামগ্ন! এখন উঠে পড়ো।[270]

 

 

আটত্রিশতম পরিচ্ছেদ

সালেহীন তথা নেকবান্দাহদের স্বপ্ন

عَنْ عُبَادَةَ بْنِ الصَّامِتِ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قَالَ: «رُؤْيَا المُؤْمِنِ جُزْءٌ مِنْ سِتَّةٍ وَأَرْبَعِينَ جُزْءًا مِنَ النُّبُوَّةِ».

উবাদা ইবন সামিত রাদিয়াল্লাহু আনহু সূত্রে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত, তিনি বলেছেন: মু’মিনের স্বপ্ন নবুওয়তের ছেচল্লিশ ভাগের এক ভাগ। সাবিত, হুমাইদ, ইসহাক ইবন আবদুল্লাহ্ ও শুআইব (রহ.) আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু সূত্রে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে অনুরূপ বর্ণনা করেছেন।[271]

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ،: أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قَالَ: «رُؤْيَا المُؤْمِنِ جُزْءٌ مِنْ سِتَّةٍ وَأَرْبَعِينَ جُزْءًا مِنَ النُّبُوَّةِ» وَرَوَاهُ ثَابِتٌ، وَحُمَيْدٌ، وَإِسْحَاقُ بْنُ عَبْدِ اللَّهِ، وَشُعَيْبٌ، عَنْ أَنَسٍ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ.

আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বণিত, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, মু’মিনের স্বপ্ন নবুওয়তের ছেচল্লিশ ভাগের এক ভাগ।[272]

عَنْ أَبِي سَعِيدٍ الخُدْرِيِّ: أَنَّهُ سَمِعَ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، يَقُولُ: «الرُّؤْيَا الصَّالِحَةُ جُزْءٌ مِنْ سِتَّةٍ وَأَرْبَعِينَ جُزْءًا مِنَ النُّبُوَّةِ».

আবূ সাঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছেন, ভাল স্বপ্ন নবুওয়তের ছেচল্লিশ ভাগের এক ভাগ।[273]

عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قَالَ: «الرُّؤْيَا الحَسَنَةُ، مِنَ الرَّجُلِ الصَّالِحِ، جُزْءٌ مِنْ سِتَّةٍ وَأَرْبَعِينَ جُزْءًا مِنَ النُّبُوَّةِ».

আনাস ইবন মালিক রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, নেককার লোকের ভাল স্বপ্ন নবুওয়তের ছেচল্লিশ ভাগের এক ভাগ।[274]

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، قَالَ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، يَقُولُ: «لَمْ يَبْقَ مِنَ النُّبُوَّةِ إِلَّا المُبَشِّرَاتُ» قَالُوا: وَمَا المُبَشِّرَاتُ؟ قَالَ: «الرُّؤْيَا الصَّالِحَةُ».

আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, সু-সংবাদবাহী বিষয়াদি ছাড়া নবুওয়তের আর কিছু অবশিষ্ট নেই।। সাহাবাগণ জিজ্ঞাসা করলেন, সু-সংবাদবাহী বিষয়াদি কি? তিনি বললেন, ভাল স্বপ্ন।[275]

عَنْ حُذَيْفَةَ بْنِ الْيَمَانِ، أَنَّ رَجُلًا مِنَ الْمُسْلِمِينَ رَأَى فِي النَّوْمِ أَنَّهُ لَقِيَ رَجُلًا مِنْ أَهْلِ الْكِتَابِ، فَقَالَ: نِعْمَ الْقَوْمُ أَنْتُمْ لَوْلَا أَنَّكُمْ تُشْرِكُونَ، تَقُولُونَ: مَا شَاءَ اللَّهُ وَشَاءَ مُحَمَّدٌ، وَذَكَرَ ذَلِكَ لِلنَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَقَالَ: " أَمَا وَاللَّهِ، إِنْ كُنْتُ لَأَعْرِفُهَا لَكُمْ، قُولُوا: مَا شَاءَ اللَّهُ، ثُمَّ شَاءَ مُحَمَّدٌ ".

হুযাইফাহ্ ইবন ইয়ামান রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, এক মুসলিম ব্যক্তি স্বপ্ন দেখে যে, আহলে কিতাবের এক ব্যক্তির সাথে তার সাক্ষাৎ হলে সে বললো, তোমরা কতই না উত্তম জাতি, যদি তোমরা শির্ক না করতে। তোমরা বলে থাকো, ‘‘আল্লাহ্ যা ইচ্ছা করেন এবং মুহাম্মাদ যা ইচ্ছা করেন’’। অতঃপর সে স্বপ্নের কথাটি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট বর্ণনা করলো। তিনি বলেন: আল্লাহর শপথ! শোনো, আমি তো তোমাদের এরূপ কিছু বলতে শিখাইনি। তোমরা বলবে, ‘‘আল্লাহ্ যা ইচ্ছা করেন, এরপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যা চান’’।[276]

عَنْ زَيْدِ بْنِ ثَابِتٍ، قَالَ: أُمِرُوا أَنْ يُسَبِّحُوا دُبُرَ كُلِّ صَلَاةٍ ثَلَاثًا وَثَلَاثِينَ، وَيَحْمَدُوا ثَلَاثًا وَثَلَاثِينَ، وَيُكَبِّرُوا أَرْبَعًا وَثَلَاثِينَ، فَأُتِيَ رَجُلٌ مِنَ الْأَنْصَارِ فِي مَنَامِهِ، فَقِيلَ لَهُ: أَمَرَكُمْ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنْ تُسَبِّحُوا دُبُرَ كُلِّ صَلَاةٍ ثَلَاثًا وَثَلَاثِينَ، وَتَحْمَدُوا ثَلَاثًا وَثَلَاثِينَ، وَتُكَبِّرُوا أَرْبَعًا وَثَلَاثِينَ؟ قَالَ: نَعَمْ، قَالَ: فَاجْعَلُوهَا خَمْسًا وَعِشْرِينَ، وَاجْعَلُوا فِيهَا التَّهْلِيلَ، فَلَمَّا أَصْبَحَ أَتَى النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَذَكَرَ ذَلِكَ لَهُ، فَقَالَ: «اجْعَلُوهَا كَذَلِكَ».

যায়দ ইবন সাবিত রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, (একদা) সাহাবায়ে কেরামকে আদেশ করা হলো- তারা যেন প্রত্যেক সালাতের পর ৩৩ বার সুবহানাল্লাহ ৩৩ বার আলহামদুলিল্লাহ এবং ৩৪ বার আল্লাহু আকবার বলে। তারপর যায়দ ইবন সাবিত (রাঃ) এর স্বপ্লে এক আনসারী সাহাবী উপনীত হলে যায়দ রাদিয়াল্লাহু আনহুকে উদ্দেশ্য করে বলা হল, তোমাদের কি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আদেশ করেছেন যে, তোমরা প্রত্যেক সালাতের পর ৩৩ বার সুবহানাল্লাহ, ৩৩ বার আলহামদুলিল্লাহ এবং ৩৪ বার আল্লাহু আকবার বলবে? তিনি বললেন, হ্যাঁ। তখন ঐ আনসারী বললেন, তোমরা ঐ তাসবীহগুলোকে ২৫ বার করে পড়বে এবং তাতে লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ কেও অন্তর্ভুক্ত করে নিবে। যখন সকাল হল তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে এসে স্বপ্ন বৃত্তান্ত বর্ণনা করাতে তিনি বললেন, তোমরা তাসবীহগুলোকে অনুরূপভাবেই পড়বে।[277]

حَدَّثَنَا نَافِعٌ، أَنَّ ابْنَ عُمَرَ، قَالَ: إِنَّ رِجَالًا مِنْ أَصْحَابِ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، كَانُوا يَرَوْنَ الرُّؤْيَا عَلَى عَهْدِ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَيَقُصُّونَهَا عَلَى رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَيَقُولُ فِيهَا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَا شَاءَ اللَّهُ، وَأَنَا غُلاَمٌ حَدِيثُ السِّنِّ، وَبَيْتِي المَسْجِدُ قَبْلَ أَنْ أَنْكِحَ، فَقُلْتُ فِي نَفْسِي: لَوْ كَانَ فِيكَ خَيْرٌ لَرَأَيْتَ مِثْلَ مَا يَرَى هَؤُلاَءِ، فَلَمَّا اضْطَجَعْتُ ذَاتَ لَيْلَةٍ قُلْتُ: اللَّهُمَّ إِنْ كُنْتَ تَعْلَمُ فِيَّ خَيْرًا فَأَرِنِي رُؤْيَا، فَبَيْنَمَا أَنَا كَذَلِكَ إِذْ جَاءَنِي مَلَكَانِ، فِي يَدِ كُلِّ وَاحِدٍ مِنْهُمَا مِقْمَعَةٌ مِنْ حَدِيدٍ، يُقْبِلاَنِ بِي إِلَى جَهَنَّمَ، وَأَنَا بَيْنَهُمَا أَدْعُو اللَّهَ: اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنْ جَهَنَّمَ، ثُمَّ أُرَانِي لَقِيَنِي مَلَكٌ فِي يَدِهِ مِقْمَعَةٌ مِنْ حَدِيدٍ، فَقَالَ: لَنْ تُرَاعَ، نِعْمَ الرَّجُلُ أَنْتَ، لَوْ كُنْتَ تُكْثِرُ الصَّلاَةَ. فَانْطَلَقُوا بِي حَتَّى وَقَفُوا بِي عَلَى شَفِيرِ جَهَنَّمَ، فَإِذَا هِيَ مَطْوِيَّةٌ كَطَيِّ البِئْرِ، لَهُ قُرُونٌ كَقَرْنِ البِئْرِ، بَيْنَ كُلِّ قَرْنَيْنِ مَلَكٌ بِيَدِهِ مِقْمَعَةٌ مِنْ حَدِيدٍ، وَأَرَى فِيهَا رِجَالًا مُعَلَّقِينَ بِالسَّلاَسِلِ، رُءُوسُهُمْ أَسْفَلَهُمْ، عَرَفْتُ فِيهَا رِجَالًا مِنْ قُرَيْشٍ، فَانْصَرَفُوا بِي عَنْ ذَاتِ اليَمِينِ.

فَقَصَصْتُهَا عَلَى حَفْصَةَ، فَقَصَّتْهَا حَفْصَةُ، عَلَى رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِنَّ عَبْدَ اللَّهِ رَجُلٌ صَالِحٌ، لَوْ كَانَ يُصَلِّي مِنَ اللَّيْلِ» فَقَالَ نَافِعٌ: «فَلَمْ يَزَلْ بَعْدَ ذَلِكَ يُكْثِرُ الصَّلاَةَ».

ইবন উমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বেশ কয়েকজন সাহাবী রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যুগে স্বপ্ন দেখতেন। অত:পর তারা রাসূলুল্লাহর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে তা বর্ণনা করতেন। আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ব্যাখ্যা দিতেন যা আল্লাহ ইচ্ছা করতেন। আমি তখন অল্প বয়স্ক যুবক। আর বিয়ের আগে মসজিদই ছিল আমার ঘর। আমি মনে মনে নিজেকে সম্বোধন করে বললাম, যদি তোমার মধ্যে কল্যাণ থাকত তাহলে তুমি তাদের ন্যায় স্বপ্ন দেখতে। আমি এক রাতে বিছানায় শুয়ে শুয়ে বললাম, হে আল্লাহ! আপনি যদি জানেন যে, আমার মধ্যে কোনো কল্যাণ নিহিত আছে তাহলে আমাকে কোনো একটি স্বপ্ন দেখান। আমি ঐ অবস্থায়ই (ঘুমিয়ে) রইলাম। দেখলাম আমার কাছে দু’জন ফেরেশতা এসেছেন। তাদের প্রত্যেকের হাতেই লোহার একটি করে হাতুড়ি। তারা আমাকে নিয়ে (জাহান্নামের দিকে) অগ্রসর হচ্ছেন। আর আমি তাদের উভয়ের মাঝখানে থেকে আল্লাহর কাছে দোয়া করছি, হে আল্লাহ! আমি জাহান্নাম থেকে আপনার আশ্রয় প্রার্থনা করছি। এরপর আমাকে দেখান হল যে, একজন ফেরেশতা আমার কাছে এসেছেন। তাঁর হাতে লোহার একটি হাতুড়ি। সে আমাকে বলল, তোমার অবশ্যই কোনো ভয় নেই। তুমি খুবই ভালো লোক। যদি বেশীকরে সালাত আদায় করতে। তারা আমাকে নিয়ে চলল, অবশেষে তারা আমাকে জাহান্নামের (তীরে এনে) দাঁড় করাল, (যা দেখতে) কূপের ন্যায় গোলাকার। আর কূপের ন্যায় এরও রয়েছে অনেক শিং। আর দু’শিং এর মাঝখানে একজন ফেরেশতা, যার হাতে লোহার একটি হাতুড়ি। আর আমি এতে কিছু লোককে (জাহান্নামে) শিকল পরিহিত দেখলাম। তাদের মাথা ছিল নিচের দিকে। কুরাইশের কতক ব্যক্তিকে তথায় আমি চিনে ফেললাম। অত:পর তারা আমাকে ডানদিকে নিয়ে ফিরল। এ ঘটনা (স্বপ্ন) আমি হাফসা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহার নিকট বর্ণনা করলাম। আর হাফসা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা তা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট বর্ণনা করলেন: তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আবদুল্লাহ তো সত্কর্মপরায়ণ ব্যক্তি। নাফি (রহ.) বলেন, এরপর থেকে তিনি সর্বদা বেশী করে (নফল) সালাত আদায় করতেন।[278]

عَنِ ابْنِ عُمَرَ، قَالَ: كُنْتُ غُلاَمًا شَابًّا عَزَبًا فِي عَهْدِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، وَكُنْتُ أَبِيتُ فِي المَسْجِدِ، وَكَانَ مَنْ رَأَى مَنَامًا قَصَّهُ عَلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَقُلْتُ: اللَّهُمَّ إِنْ كَانَ لِي عِنْدكَ خَيْرٌ فَأَرِنِي مَنَامًا يُعَبِّرُهُ لِي رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَنِمْتُ، فَرَأَيْتُ مَلَكَيْنِ أَتَيَانِي، فَانْطَلَقَا بِي، فَلَقِيَهُمَا مَلَكٌ آخَرُ، فَقَالَ لِي: لَنْ تُرَاعَ، إِنَّكَ رَجُلٌ صَالِحٌ. فَانْطَلَقَا بِي إِلَى النَّارِ، فَإِذَا هِيَ مَطْوِيَّةٌ كَطَيِّ البِئْرِ، وَإِذَا فِيهَا نَاسٌ قَدْ عَرَفْتُ بَعْضَهُمْ، فَأَخَذَا بِي ذَاتَ اليَمِينِ. فَلَمَّا أَصْبَحْتُ ذَكَرْتُ ذَلِكَ لِحَفْصَةَ

فَزَعَمَتْ حَفْصَةُ، أَنَّهَا قَصَّتْهَا عَلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَقَالَ: «إِنَّ عَبْدَ اللَّهِ رَجُلٌ صَالِحٌ، لَوْ كَانَ يُكْثِرُ الصَّلاَةَ مِنَ اللَّيْلِ» قَالَ الزُّهْرِيُّ: «وَكَانَ عَبْدُ اللَّهِ بَعْدَ ذَلِكَ يُكْثِرُ الصَّلاَةَ مِنَ اللَّيْلِ».

ইবন উমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যুগে অবিবাহিত যুবক ছিলাম। আমি মজদিদেই রাত্রি যাপন করতাম। আর যারাই স্বপ্নে কিছু দেখত তারা তা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে বর্ণনা করত। আমি বললাম, হে আল্লাহ! যদি তোমার নিকট আমার জন্য কোনো কল্যাণ নিহিত থাকে, তাহলে আমাকে কোনো কল্যাণ নিহিত থাকে, তাহলে আমাকে কোনো স্বপ্ন দেখাও, যাতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার স্বপ্নের ব্যাখ্যা প্রদান করেন। আমি নিদ্রা গেলাম, তখন দেখতে পেলাম যে দু’জন ফেরেশতা আমার কাছে এসে আমাকে নিয়ে চলল, এরপর তাদের সাথে অপর একজন ফেরেশতার সাক্ষাত ঘটল। সে আমাকে বলল, তোমার কোনো ভয়ের কারণ নেই। তুমি তো একজন সত্কর্মপরায়ণ লোক। এরপর তারা আামকে জাহান্নামের দিকে নিয়ে চলল, যেন কূপের ন্যায় গোলাকার নির্মিত। আর এর মধ্যে বেশ কিছু লোক রয়েছে। এদের কতককে আমি চিনতে পারলাম। এরপর তারা আমাকে ডানদিকে নিয়ে চলল। যখন সকাল হল, আমি হাফসা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহার নিকট সব ঘটনা উল্লেখ করলাম। পরে হাফসা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা বললেন যে, তিনি তা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে বর্ণনা করেছেন। আর তিনি বলেছেন, আবদুল্লাহ সত্কর্মপরায়ণ লোক। (তিনি আরও বলেছেন) যদি সে রাতে বেশী করে সালাত আদায় করত। যুহরী (রহ.) বলেন, এরপর থেকে আবদুল্লাহ (ইবন উমর) রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু রাতে বেশী করে সালাত আদায় করতে লাগলেন।[279]

 

 

ঊনচল্লিশতম পরিচ্ছেদ

কাসাসুল আম্বিয়া তথা নবীগণের ঘটনা

এটা নবুওয়তের প্রমানের সাথে এজন্য সম্পৃক্ত যে, একজন উম্মী নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের সম্পর্কে সংবাদ দিতেন, তারা কেউ এর প্রতিবাদ বা প্রত্যাখ্যান করতে সক্ষম হয়নি।

কাসাসুল আম্বিয়া শুধু কুরআন ও হাদীসের থেকেই গ্রহণ করা হবে। হাদীসের তুলনায় কুরআনেই নবীগণের ঘটনা বেশি ও অধিক স্পষ্ট।

আমি এখানে নবীগণের ঘটনা সম্পৃক্ত কিছু আয়াত উল্লেখ করেছি যেগুলো দালায়েনুন নুবুওয়াহ এর সাথে সম্পৃক্ত, এগুলো আমাদের নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নবুওয়তের প্রমাণ বহন করে।

আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,

﴿ وَإِذۡ قَالَ عِيسَى ٱبۡنُ مَرۡيَمَ يَٰبَنِيٓ إِسۡرَٰٓءِيلَ إِنِّي رَسُولُ ٱللَّهِ إِلَيۡكُم مُّصَدِّقٗا لِّمَا بَيۡنَ يَدَيَّ مِنَ ٱلتَّوۡرَىٰةِ وَمُبَشِّرَۢا بِرَسُولٖ يَأۡتِي مِنۢ بَعۡدِي ٱسۡمُهُۥٓ أَحۡمَدُۖ فَلَمَّا جَآءَهُم بِٱلۡبَيِّنَٰتِ قَالُواْ هَٰذَا سِحۡرٞ مُّبِينٞ ٦ ﴾ [الصف: ٦]

“আর যখন মারইয়াম পুত্র ঈসা বলেছিল, ‘হে বনী ইসরাঈল, নিশ্চয় আমি তোমাদের নিকট আল্লাহর রাসূল। আমার পূর্ববর্তী তাওরাতের সত্যায়নকারী এবং একজন রাসূলের সুসংবাদদাতা যিনি আমার পরে আসবেন, যার নাম আহমদ’। অতঃপর সে যখন সুস্পষ্ট নিদর্শনসমূহ নিয়ে আগমন করল, তখন তারা বলল, ‘এটাতো স্পষ্ট জাদু”। [সূরা আস্-সাফ: ৬]

 

 

আদম ও হাওয়া আলাইহিমাস সালামের ঘটনা

আল্লাহ তা ‘আলা বলেছেন,

﴿ وَلَقَدۡ خَلَقۡنَا ٱلۡإِنسَٰنَ مِن صَلۡصَٰلٖ مِّنۡ حَمَإٖ مَّسۡنُونٖ ٢٦ وَٱلۡجَآنَّ خَلَقۡنَٰهُ مِن قَبۡلُ مِن نَّارِ ٱلسَّمُومِ ٢٧ وَإِذۡ قَالَ رَبُّكَ لِلۡمَلَٰٓئِكَةِ إِنِّي خَٰلِقُۢ بَشَرٗا مِّن صَلۡصَٰلٖ مِّنۡ حَمَإٖ مَّسۡنُونٖ ٢٨ فَإِذَا سَوَّيۡتُهُۥ وَنَفَخۡتُ فِيهِ مِن رُّوحِي فَقَعُواْ لَهُۥ سَٰجِدِينَ ٢٩ فَسَجَدَ ٱلۡمَلَٰٓئِكَةُ كُلُّهُمۡ أَجۡمَعُونَ ٣٠ إِلَّآ إِبۡلِيسَ أَبَىٰٓ أَن يَكُونَ مَعَ ٱلسَّٰجِدِينَ ٣١ قَالَ يَٰٓإِبۡلِيسُ مَا لَكَ أَلَّا تَكُونَ مَعَ ٱلسَّٰجِدِينَ ٣٢ قَالَ لَمۡ أَكُن لِّأَسۡجُدَ لِبَشَرٍ خَلَقۡتَهُۥ مِن صَلۡصَٰلٖ مِّنۡ حَمَإٖ مَّسۡنُونٖ ٣٣ ﴾ [الحجر: ٢٦، ٣٣]

“আর অবশ্যই আমি মানুষকে সৃষ্টি করেছি শুকনো ঠনঠনে, কালচে কাদামাটি থেকে। আর ইতঃপূর্বে জিনকে সৃষ্টি করেছি উত্তপ্ত অগ্নিশিখা থেকে। আর স্মরণ কর, যখন তোমার রব ফেরেশতাদের বললেন, ‘আমি একজন মানুষ সৃষ্টি করতে যাচ্ছি শুকনো ঠনঠনে কালচে মাটি থেকে’। ‘অতএব যখন আমি তাকে পূর্ণাঙ্গ রূপ দেব এবং তার মধ্যে আমার রূহ ফুঁকে দেব, তখন তোমরা তার জন্য সিজদাবনত হও’। অতঃপর, ফেরেশতারা সকলেই সিজদা করল। ইবলীস ছাড়া। সে সিজদাকারীদের সঙ্গী হতে অস্বীকার করল। তিনি বললেন, ‘হে ইবলীস, তোমার কী হল যে, তুমি সিজদাকারীদের সঙ্গী হলে না’? সে বলল, ‘আমি তো এমন নই যে, একজন মানুষকে আমি সিজদা করব, যাকে আপনি সৃষ্টি করেছেন শুকনো ঠনঠনে কালচে মাটি থেকে”। [সূরা: আল-হিজর: ২৬-৩৩]

তাই আমরা বিশ্বাস করি যে, আল্লাহ মানুষকে সৃষ্টি করেছি শুকনো ঠনঠনে, কালচে কাদামাটি থেকে। সুতরাং আমরা দারউইনের মতামত প্রত্যাখ্যান করি। যারা মানব জাতির আদি পিতা আদম আলাইহিস সালামের সৃষ্টির ব্যাপারে ভুল ব্যাখ্যা করে এবং কুরআনকে মিথ্যারোপ করে। অথচ অনেক মুসলিমই একথা জানে না।

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قَالَ: " خَلَقَ اللَّهُ آدَمَ وَطُولُهُ سِتُّونَ ذِرَاعًا، ثُمَّ قَالَ: اذْهَبْ فَسَلِّمْ عَلَى أُولَئِكَ مِنَ المَلاَئِكَةِ، فَاسْتَمِعْ مَا يُحَيُّونَكَ، تَحِيَّتُكَ وَتَحِيَّةُ ذُرِّيَّتِكَ، فَقَالَ السَّلاَمُ عَلَيْكُمْ، فَقَالُوا: السَّلاَمُ عَلَيْكَ وَرَحْمَةُ اللَّهِ، فَزَادُوهُ: وَرَحْمَةُ اللَّهِ، فَكُلُّ مَنْ يَدْخُلُ الجَنَّةَ عَلَى صُورَةِ آدَمَ، فَلَمْ يَزَلِ الخَلْقُ يَنْقُصُ حَتَّى الآنَ ".

আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আল্লাহ তা‘আলা আদম আলাইহিস সালামকে সৃষ্টি করেছেন, তাঁর দৈর্ঘ্য ছিল ষাট হাত। এরপর তিনি (আল্লাহ্) তাঁকে (আদমকে) বললেন, যাও ঐ ফিরিশতা দলের প্রতি সালাম কর এবং তাঁরা তোমার সালামের উত্তর কিরূপে দেয় তা মনোযোগ দিয়ে শোন। কেননা এটাই হবে তোমার এবং তোমার সন্তানদের সালামের রীতি। তারপর আদম আদম আলাইহিস সালাম (ফিরিশতাদের) বললেন, “আস্‌সালামু আলাইকুম”। ফিরিশতাগণ তার উত্তরে “আস্‌সালামু আলাইকা ওয়া রাহামাতুল্লাহ” বললেন। ফিরিশতারা সালামের জওয়াবে “ওয়া রাহ্‌মাতুল্লাহ” শব্দটি বাড়িয়ে বললেন। যারা জান্নাতে প্রবেশ করবেন তারা আদম আদম আলাইহিস সালামের আকৃতি বিশিষ্ট হবেন। তবে আদম সন্তানদের দেহের দৈর্ঘ্য সর্বদা কমতে কমতে বর্তমান পরিমাপ পর্যন্ত পোঁছেছে।[280]

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، نَحْوَهُ يَعْنِي «لَوْلاَ بَنُو إِسْرَائِيلَ لَمْ يَخْنَزِ اللَّحْمُ، وَلَوْلاَ حَوَّاءُ لَمْ تَخُنَّ أُنْثَى زَوْجَهَا».

আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু সূত্রে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে অনুরূপ বর্ণিত আছে। অর্থাৎ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, বনী ইসরাঈল যদি না হত তবে গোশত দুর্গন্ধযুক্ত হতো না। আর যদি হাওয়া আলাইহাস সালাম না হতেন তবে কোনো নারীই তাঁর স্বামীর খেয়ানত করত না।[281]

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ: أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أُتِيَ بِلَحْمٍ فَرُفِعَ إِلَيْهِ الذِّرَاعُ، وَكَانَتْ تُعْجِبُهُ فَنَهَشَ مِنْهَا نَهْشَةً، ثُمَّ قَالَ: " أَنَا سَيِّدُ النَّاسِ يَوْمَ القِيَامَةِ، وَهَلْ تَدْرُونَ مِمَّ ذَلِكَ؟ يَجْمَعُ اللَّهُ النَّاسَ الأَوَّلِينَ وَالآخِرِينَ فِي صَعِيدٍ وَاحِدٍ، يُسْمِعُهُمُ الدَّاعِي وَيَنْفُذُهُمُ البَصَرُ، وَتَدْنُو الشَّمْسُ، فَيَبْلُغُ النَّاسَ مِنَ الغَمِّ وَالكَرْبِ مَا لاَ يُطِيقُونَ وَلاَ يَحْتَمِلُونَ، فَيَقُولُ النَّاسُ: أَلاَ تَرَوْنَ مَا قَدْ بَلَغَكُمْ، أَلاَ تَنْظُرُونَ مَنْ يَشْفَعُ لَكُمْ إِلَى رَبِّكُمْ؟ فَيَقُولُ بَعْضُ النَّاسِ لِبَعْضٍ: عَلَيْكُمْ بِآدَمَ، فَيَأْتُونَ آدَمَ عَلَيْهِ السَّلاَمُ فَيَقُولُونَ لَهُ: أَنْتَ أَبُو البَشَرِ، خَلَقَكَ اللَّهُ بِيَدِهِ، وَنَفَخَ فِيكَ مِنْ رُوحِهِ، وَأَمَرَ المَلاَئِكَةَ فَسَجَدُوا لَكَ، اشْفَعْ لَنَا إِلَى رَبِّكَ، أَلاَ تَرَى إِلَى مَا نَحْنُ فِيهِ، أَلاَ تَرَى إِلَى مَا قَدْ بَلَغَنَا؟ فَيَقُولُ آدَمُ: إِنَّ رَبِّي قَدْ غَضِبَ اليَوْمَ غَضَبًا لَمْ يَغْضَبْ قَبْلَهُ مِثْلَهُ، وَلَنْ يَغْضَبَ بَعْدَهُ مِثْلَهُ، وَإِنَّهُ قَدْ نَهَانِي عَنِ الشَّجَرَةِ فَعَصَيْتُهُ، نَفْسِي نَفْسِي نَفْسِي، اذْهَبُوا إِلَى غَيْرِي، اذْهَبُوا إِلَى نُوحٍ، فَيَأْتُونَ نُوحًا فَيَقُولُونَ: يَا نُوحُ، إِنَّكَ أَنْتَ أَوَّلُ الرُّسُلِ إِلَى أَهْلِ الأَرْضِ، وَقَدْ سَمَّاكَ اللَّهُ عَبْدًا شَكُورًا، اشْفَعْ لَنَا إِلَى رَبِّكَ، أَلاَ تَرَى إِلَى مَا نَحْنُ فِيهِ؟ فَيَقُولُ: إِنَّ رَبِّي عَزَّ وَجَلَّ قَدْ غَضِبَ اليَوْمَ غَضَبًا لَمْ يَغْضَبْ قَبْلَهُ مِثْلَهُ، وَلَنْ يَغْضَبَ بَعْدَهُ مِثْلَهُ، وَإِنَّهُ قَدْ كَانَتْ لِي دَعْوَةٌ دَعَوْتُهَا عَلَى قَوْمِي، نَفْسِي نَفْسِي نَفْسِي، اذْهَبُوا إِلَى غَيْرِي، اذْهَبُوا إِلَى إِبْرَاهِيمَ، فَيَأْتُونَ إِبْرَاهِيمَ فَيَقُولُونَ: يَا إِبْرَاهِيمُ أَنْتَ نَبِيُّ اللَّهِ وَخَلِيلُهُ مِنْ أَهْلِ الأَرْضِ، اشْفَعْ لَنَا إِلَى رَبِّكَ أَلاَ تَرَى إِلَى مَا نَحْنُ فِيهِ، فَيَقُولُ لَهُمْ: إِنَّ رَبِّي قَدْ غَضِبَ اليَوْمَ غَضَبًا لَمْ يَغْضَبْ قَبْلَهُ مِثْلَهُ، وَلَنْ يَغْضَبَ بَعْدَهُ مِثْلَهُ، وَإِنِّي قَدْ كُنْتُ كَذَبْتُ ثَلاَثَ كَذِبَاتٍ - فَذَكَرَهُنَّ أَبُو حَيَّانَ فِي الحَدِيثِ - نَفْسِي نَفْسِي نَفْسِي، اذْهَبُوا إِلَى غَيْرِي، اذْهَبُوا إِلَى مُوسَى فَيَأْتُونَ، مُوسَى فَيَقُولُونَ: يَا مُوسَى أَنْتَ رَسُولُ اللَّهِ، فَضَّلَكَ اللَّهُ بِرِسَالَتِهِ وَبِكَلاَمِهِ عَلَى النَّاسِ، اشْفَعْ لَنَا إِلَى رَبِّكَ، أَلاَ تَرَى إِلَى مَا نَحْنُ فِيهِ؟ فَيَقُولُ: إِنَّ رَبِّي قَدْ غَضِبَ اليَوْمَ غَضَبًا لَمْ يَغْضَبْ قَبْلَهُ مِثْلَهُ، وَلَنْ يَغْضَبَ بَعْدَهُ مِثْلَهُ، وَإِنِّي قَدْ قَتَلْتُ نَفْسًا لَمْ أُومَرْ بِقَتْلِهَا، نَفْسِي نَفْسِي نَفْسِي، اذْهَبُوا إِلَى غَيْرِي، اذْهَبُوا إِلَى عِيسَى ابْنِ مَرْيَمَ، فَيَأْتُونَ عِيسَى، فَيَقُولُونَ: يَا عِيسَى أَنْتَ رَسُولُ اللَّهِ، وَكَلِمَتُهُ أَلْقَاهَا إِلَى مَرْيَمَ وَرُوحٌ مِنْهُ، وَكَلَّمْتَ النَّاسَ فِي المَهْدِ صَبِيًّا، اشْفَعْ لَنَا إِلَى رَبِّكَ أَلاَ تَرَى إِلَى مَا نَحْنُ فِيهِ؟ فَيَقُولُ عِيسَى: إِنَّ رَبِّي قَدْ غَضِبَ اليَوْمَ غَضَبًا لَمْ يَغْضَبْ قَبْلَهُ مِثْلَهُ قَطُّ، وَلَنْ يَغْضَبَ بَعْدَهُ مِثْلَهُ، وَلَمْ يَذْكُرْ ذَنْبًا، نَفْسِي نَفْسِي نَفْسِي اذْهَبُوا إِلَى غَيْرِي اذْهَبُوا إِلَى مُحَمَّدٍ، فَيَأْتُونَ مُحَمَّدًا فَيَقُولُونَ: يَا مُحَمَّدُ أَنْتَ رَسُولُ اللَّهِ وَخَاتِمُ الأَنْبِيَاءِ، وَقَدْ غَفَرَ اللَّهُ لَكَ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِكَ وَمَا تَأَخَّرَ، اشْفَعْ لَنَا إِلَى رَبِّكَ أَلاَ تَرَى إِلَى مَا نَحْنُ فِيهِ، فَأَنْطَلِقُ فَآتِي تَحْتَ العَرْشِ، فَأَقَعُ سَاجِدًا لِرَبِّي عَزَّ وَجَلَّ، ثُمَّ يَفْتَحُ اللَّهُ عَلَيَّ مِنْ مَحَامِدِهِ وَحُسْنِ الثَّنَاءِ عَلَيْهِ شَيْئًا، لَمْ يَفْتَحْهُ عَلَى أَحَدٍ قَبْلِي، ثُمَّ يُقَالُ: يَا مُحَمَّدُ ارْفَعْ رَأْسَكَ سَلْ تُعْطَهْ، وَاشْفَعْ تُشَفَّعْ فَأَرْفَعُ رَأْسِي، فَأَقُولُ: أُمَّتِي يَا رَبِّ، أُمَّتِي يَا رَبِّ، أُمَّتِي يَا رَبِّ، فَيُقَالُ: يَا مُحَمَّدُ أَدْخِلْ مِنْ أُمَّتِكَ مَنْ لاَ حِسَابَ عَلَيْهِمْ مِنَ البَابِ الأَيْمَنِ مِنْ أَبْوَابِ الجَنَّةِ، وَهُمْ شُرَكَاءُ النَّاسِ فِيمَا سِوَى ذَلِكَ مِنَ الأَبْوَابِ، ثُمَّ قَالَ: وَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ، إِنَّ مَا بَيْنَ المِصْرَاعَيْنِ مِنْ مَصَارِيعِ الجَنَّةِ، كَمَا بَيْنَ مَكَّةَ وَحِمْيَرَ - أَوْ كَمَا بَيْنَ مَكَّةَ وَبُصْرَى - ".

আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত , একদা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সামনে গোশত আনা হল এবং তাকে সামনের রান পরিবেশন করা হল। তিনি এটা পছন্দ করতেন। তিনি তার থেকে কামড় দিয়ে খেলেন। এরপর বললেন, আমি হব কিয়ামতের দিন মানবকুলের সরদার। তোমাদের কি জানা আছে তা কেন? কিয়ামতের দিন পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সব মানুষ এমন এক ময়দানে সমবেত হবে, যেখানে একজন আহ্বানকারীর আহবান সকলে শুনতে পাবে এবং সকলেই একসঙ্গে দৃষ্টিগোচর হবে। সূর্য নিকটে এসে যাবে। মানুষ এমনি কষ্ট ক্লেশের সম্মুখিন হবে যা অসহনীয় ও অসহ্যকর হয়ে পড়বে। তখন লোকেরা বলবে, তোমরা কি বিপদের সম্মুখীন হয়েছ তা কি দেখতে পাচ্ছনা? তোমরা কি এমন কাউকে খুঁজে বের করবেনা যিনি তোমাদের রবের কাছে তোমাদের জন্য সুপারিশকারি হবেন? কেউ কেউ অন্যদের বলবে যে, আদম আলাইহিস সালামের কাছে চল। তখন সকলে তার কাছে এসে তাকে বলবে, আপনি আবুল বাশার (মানবজাতির পিতা)। আল্লাহ তা‘আলা আপনাকে স্বীয় কুদরতি হাত দ্বারা সৃষ্টি করেছেন এবং তার রুহ আপনার মধ্যে ফুঁকে দিয়েছেন। ফেরেশতাদের নির্দেশ দিলে তারা আপনাকে সিজদা করেন। আপনি আপনার রবের কাছে আমাদের জন্য সুপারিশ করুন। আপনি কি দেখছেন না যে, আমরা কিসের মধ্যে আছি? আপনি কি দেখছেন না যে আমরা কি অবস্থায় পৌঁছেছি? তখন আদম আলাইহিস সালাম বলবেন, আজ আমার রব এত রাগান্বিত হয়েছেন যার আগে কনদিন এরূপ রাগান্বিত হননি, আর পরেও এরূপ রাগান্বিত হবেন না। তিনি আমাকে একটি বৃক্ষের কাছে যেতে নিষেধ করেছিলেন, কিন্তু আমি অমান্য করেছি। নফসি, নফসি, নফসি (আমি নিজেই সুপারিশ প্রার্থী), তোমরা অন্যের কাছে যাও। তোমরা নূহ আলাইহিস সালামের কাছে যাও। তখন সকলে নূহ আলাইহিস সালামের কাছে এসে বলবে, হে নূহ আলাইহিস সালাম! নিশ্চয়ই আপনি পৃথিবীর মানুষের জন্য প্রথম রাসুল। আর আল্লাহ তা‘আলা আপনাকে পরম কৃতজ্ঞ বান্দা হিসেবে অভিহিত করেছেন। সুতরাং আপনি আপনার রবের কাছে আমাদের জন্য সুপারিশ করুন। আপনি কি দেখছেন না যে আমরা কিসের মধ্যে আছি? তিনি বলবেন, আজ আমার রব এত রাগান্বিত হয়েছেন যার আগে কোনদিন এরূপ রাগান্বিত হন নি আর পরেও এরূপ রাগান্বিত হবেন না। আমার একটি গ্রহণীয় দো‘আ ছিল যা আমি আমার কওমের ব্যপারে করে ফেলেছি। (এখন) নফসি, নফসি, নফসি। তোমরা অন্যের কাছে যাও। যাও তোমরা ইব্রাহিম আলাইহিস সালামের কাছে। তখন তারা ইব্রাহিম আলাইহিস সালামের কাছে এসে বলবে, হে ইব্রাহিম আলাইহিস সালাম! আপনি আল্লাহর নবী এবং পৃথিবীর মানুষের মধ্যে আপনি আল্লাহর বন্ধু। আপনি আপনার রবের কাছে আমাদের জন্য সুপারিশ করুন। আপনি কি দেখছেন না যে আমরা কিসের মধ্যে আছি? তিনি বলবেন, আজ আমার রব এত রাগান্বিত হয়েছেন যার আগে কোনদিন এরূপ রাগান্বিত হননি আর পরেও এরূপ রাগান্বিত হবেন না। আর আমি তো তিনটি মিথ্যা বলে ফেলেছিলাম। রাবি আবু হাইয়ান তার বর্ণনায় এগুলোর উল্লেখ করেছেন। (এখন) নফসি, নফসি, নফসি। তোমরা অন্যের কাছে যাও। যাও তোমরা মূসা আলাইহিস সালামের কাছে। তারা মূসা আলাইহিস সালামের কাছে এসে বলবে, হে মুসা আলাইহিস সালাম! আপনি আল্লাহর রাসূল। আল্লাহ আপনাকে রিসালাত এর সম্মান দান করেন এবং আপনার সাথে কথা বলে সমগ্র মানব জাতির উপর মর্যাদা দান করেছেন। আপনি আপনার রবের কাছে আমাদের জন্য সুপারিশ করুন। আপনি কি দেখছেন না যে আমরা কিসের মধ্যে আছি? তিনি বলবেন, আজ আমার রব এত রাগান্বিত হয়েছেন যার আগে কনদিন এরূপ রাগান্বিত হননি আর পরেও এরূপ রাগান্বিত হবেন না। আর আমিতো এক ব্যক্তিকে হত্যা করে ফেলেছিলাম। যাকে হত্যা করার জন্য আমাকে নির্দেশ দেওয়া হয়নি। (এখন) নফসি, নফসি, নফসি। তোমরা অন্যের কাছে যাও। যাও তোমরা ঈসা আলাইহিস সালামের কাছে। তারা ঈসা আলাইহিস সালামের কাছে এসে বলবে, হে ঈসা আলাইহিস সালাম! আপনি আল্লাহর রাসুল এবং কালেমা, যা তিনি মরিয়ম আলাইহিস সালামের উপর ঢেলে দিয়েছিলেন। আপনি রূহ। আপনি দোলনায় থেকে মানুষের সাথে কথা বলেছেন। আজ আপনি আপনার রবের কাছে আমাদের জন্য সুপারিশ করুন। আপনি কি দেখছেন না যে আমরা কিসের মধ্যে আছি? তিনি বলবেন, আজ আমার রব এত রাগান্বিত হয়েছেন যার আগে কনদিন এরূপ রাগান্বিত হন নি আর পরেও এরূপ রাগান্বিত হবেন না। তিনি নিজের কন গুনাহের কথা বলবেন না। নফসি, নফসি, নফসি। তোমরা অন্যের কাছে যাও। যাও তোমরা মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে। তারা মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে এসে বলবে, হে মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আপনি আল্লাহর রাসুল ও শেষ নবী। আল্লাহ তা‘আলা আপনার আগের, পরের সব গুনাহ মাফ করে দিয়েছেন। আপনি আমাদের জন্য আপনার রবের কাছে সুপারিশ করুন। আপনি কি দেখছেন না আমরা কিসের মধ্যে আছি? তখন আমি আরশের নীচে এসে আমার রবের সামনে সিজদা দিয়ে পড়ব। তারপর আল্লাহ তা‘আলা তার প্রশংসা এবং গুণগানের এমন সুন্দর পদ্ধতি আমার সামনে খুলে দিবেন যা এর আগে অন্য কারও জন্য খুলেন নি। এরপর বলা হবে, হে মুহাম্মদ! তোমার মাথা উঠাও। তুমি যা চাও তোমাকে দেওয়া হবে। তুমি সুপারিশ কর, তোমার সুপারিশ কবুল করা হবে। এরপর আমি মাথা উঠিয়ে বলব, “হে আমার রব! আমার উম্মত! হে আমার রব! আমার উম্মত! হে আমার রব! আমার উম্মত! তখন বলা হবে, হে মুহাম্মদ! আপনার উম্মতের মধ্যে যাদের কোনো হিসাব নিকাশ হবেনা, তাদেরকে জান্নাতের দরজাসমূহের ডান পাশের দরজা দিয়ে প্রবেশ করিয়ে দিন। এ দরজা ছাড়া অন্যদের সাথে অন্য দরজায় ও তাদের প্রবেশের অধিকার থাকবে। তারপর তিনি বলবেন, যার হাতে আমার প্রান সে সত্তার শপথ! বেহেশতের এক দরজার দুই পাশের মধ্যবর্তী প্রশস্ততা যেমন মক্কা ও হামিরের মধ্যবর্তী দূরত্ব, অথবা মক্কা ও বসরার মাঝখানের দূরত্ব। [282]

عَنْ عَبْدِ اللهِ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «لَا تُقْتَلُ نَفْسٌ ظُلْمًا، إِلَّا كَانَ عَلَى ابْنِ آدَمَ الْأَوَّلِ كِفْلٌ مِنْ دَمِهَا، لِأَنَّهُ كَانَ أَوَّلَ مَنْ سَنَّ الْقَتْلَ».

আব্দুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যদি কোন ব্যক্তি অত্যাচারিত হয়ে নিহত হয়, তবে সেই খুনের একাংশ (পাপ) আদম আলাইহিস সালামের প্রথম পূত্র (কাবিল) এর উপর বর্তায়। কেননা, সেই সর্বপ্রথম খুনের প্রথা প্রচলন করেছিল।[283]

عَنْ أَنَسٍ، أَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «لَمَّا صَوَّرَ اللهُ آدَمَ فِي الْجَنَّةِ تَرَكَهُ مَا شَاءَ اللهُ أَنْ يَتْرُكَهُ، فَجَعَلَ إِبْلِيسُ يُطِيفُ بِهِ، يَنْظُرُ مَا هُوَ، فَلَمَّا رَآهُ أَجْوَفَ عَرَفَ أَنَّهُ خُلِقَ خَلْقًا لَا يَتَمَالَكُ».

আনাস ইবন মালিক রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আল্লাহ তা’আলা জান্নাতে যখন আদম আলাইহিস সালামের আকৃতি দান করেন তখন তিনি তাকে তাঁর ইচ্ছা ছেড়ে দিলেন। আর ইবলীস তার চতুর্দিকে ঘোরাফেরা করতে এবং দেখতে লাগল যে, জিনিসটি কি? সে যখন দেখতে পেল, তা শূন্য পাত্র তখন বুঝল যে, (আল্লাহ) তাকে এমন এক মাখলূক রূপে করেছেন, যে নিজেকে বশে রাখতে পারে না।[284]

 

 

নূহ আলাইহিস সালাম

আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,

﴿ لَقَدۡ أَرۡسَلۡنَا نُوحًا إِلَىٰ قَوۡمِهِۦ فَقَالَ يَٰقَوۡمِ ٱعۡبُدُواْ ٱللَّهَ مَا لَكُم مِّنۡ إِلَٰهٍ غَيۡرُهُۥٓ إِنِّيٓ أَخَافُ عَلَيۡكُمۡ عَذَابَ يَوۡمٍ عَظِيمٖ ٥٩ قَالَ ٱلۡمَلَأُ مِن قَوۡمِهِۦٓ إِنَّا لَنَرَىٰكَ فِي ضَلَٰلٖ مُّبِينٖ ٦٠ قَالَ يَٰقَوۡمِ لَيۡسَ بِي ضَلَٰلَةٞ وَلَٰكِنِّي رَسُولٞ مِّن رَّبِّ ٱلۡعَٰلَمِينَ ٦١ أُبَلِّغُكُمۡ رِسَٰلَٰتِ رَبِّي وَأَنصَحُ لَكُمۡ وَأَعۡلَمُ مِنَ ٱللَّهِ مَا لَا تَعۡلَمُونَ ٦٢ أَوَعَجِبۡتُمۡ أَن جَآءَكُمۡ ذِكۡرٞ مِّن رَّبِّكُمۡ عَلَىٰ رَجُلٖ مِّنكُمۡ لِيُنذِرَكُمۡ وَلِتَتَّقُواْ وَلَعَلَّكُمۡ تُرۡحَمُونَ ٦٣ فَكَذَّبُوهُ فَأَنجَيۡنَٰهُ وَٱلَّذِينَ مَعَهُۥ فِي ٱلۡفُلۡكِ وَأَغۡرَقۡنَا ٱلَّذِينَ كَذَّبُواْ بِ‍َٔايَٰتِنَآۚ إِنَّهُمۡ كَانُواْ قَوۡمًا عَمِينَ ٦٤ ﴾ [الاعراف: ٥٩، ٦٤]

“আমি তো নূহকে তার কওমের নিকট প্রেরণ করেছি। অতঃপর সে বলেছে, ‘হে আমার কওম, তোমরা আল্লাহর ইবাদাত কর। তিনি ছাড়া তোমাদের কোনো (সত্য) ইলাহ নেই। নিশ্চয় আমি তোমাদের মহাদিনের আযাবের ভয় করছি’। তার কওম থেকে নেতৃবর্গ বলল, ‘নিশ্চয় আমরা তোমাকে স্পষ্ট ভ্রান্তিতে দেখতে পাচ্ছি’। সে বলল, ‘হে আমার কওম, আমার মধ্যে কোনো ভ্রান্তি নেই; কিন্তু আমি সকল সৃষ্টির রবের পক্ষ থেকে রাসূল’। আমি তোমাদের নিকট পৌঁছাচ্ছি আমার রবের রিসালাতসমূহ এবং তোমাদের কল্যাণ কামনা করছি। আর আমি আল্লাহর কাছ থেকে এমন কিছু জানি, যা তোমরা জান না’।‘তোমরা কি আশ্চর্য হচ্ছো যে, তোমাদের রবের পক্ষ থেকে তোমাদের মধ্য থেকে এক ব্যক্তির নিকট উপদেশ এসেছে, যাতে সে তোমাদেরকে সতর্ক করে, আর যাতে তোমরা তাকওয়া অবলম্বন কর এবং যাতে তোমরা রহমতপ্রাপ্ত হও’? অতঃপর তারা তাকে মিথ্যাবাদী বলল। ফলে আমি তাকে ও তার সাথে নৌকায় যারা ছিল তাদেরকে রক্ষা করলাম; আর যারা আমার আয়াতসমূহকে অস্বীকার করেছিল তাদেরকে আমি ডুবিয়ে দিলাম। নিশ্চয় তারা ছিল অন্ধ কওম”। [সূরা আল-আ‘রাফ: ৫৯-৬৪]

আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেছেন,

﴿ وَأُوحِيَ إِلَىٰ نُوحٍ أَنَّهُۥ لَن يُؤۡمِنَ مِن قَوۡمِكَ إِلَّا مَن قَدۡ ءَامَنَ فَلَا تَبۡتَئِسۡ بِمَا كَانُواْ يَفۡعَلُونَ ٣٦ وَٱصۡنَعِ ٱلۡفُلۡكَ بِأَعۡيُنِنَا وَوَحۡيِنَا وَلَا تُخَٰطِبۡنِي فِي ٱلَّذِينَ ظَلَمُوٓاْ إِنَّهُم مُّغۡرَقُونَ ٣٧ وَيَصۡنَعُ ٱلۡفُلۡكَ وَكُلَّمَا مَرَّ عَلَيۡهِ مَلَأٞ مِّن قَوۡمِهِۦ سَخِرُواْ مِنۡهُۚ قَالَ إِن تَسۡخَرُواْ مِنَّا فَإِنَّا نَسۡخَرُ مِنكُمۡ كَمَا تَسۡخَرُونَ ٣٨ فَسَوۡفَ تَعۡلَمُونَ مَن يَأۡتِيهِ عَذَابٞ يُخۡزِيهِ وَيَحِلُّ عَلَيۡهِ عَذَابٞ مُّقِيمٌ ٣٩ حَتَّىٰٓ إِذَا جَآءَ أَمۡرُنَا وَفَارَ ٱلتَّنُّورُ قُلۡنَا ٱحۡمِلۡ فِيهَا مِن كُلّٖ زَوۡجَيۡنِ ٱثۡنَيۡنِ وَأَهۡلَكَ إِلَّا مَن سَبَقَ عَلَيۡهِ ٱلۡقَوۡلُ وَمَنۡ ءَامَنَۚ وَمَآ ءَامَنَ مَعَهُۥٓ إِلَّا قَلِيلٞ ٤٠ ۞وَقَالَ ٱرۡكَبُواْ فِيهَا بِسۡمِ ٱللَّهِ مَجۡرٜىٰهَا وَمُرۡسَىٰهَآۚ إِنَّ رَبِّي لَغَفُورٞ رَّحِيمٞ ٤١ وَهِيَ تَجۡرِي بِهِمۡ فِي مَوۡجٖ كَٱلۡجِبَالِ وَنَادَىٰ نُوحٌ ٱبۡنَهُۥ وَكَانَ فِي مَعۡزِلٖ يَٰبُنَيَّ ٱرۡكَب مَّعَنَا وَلَا تَكُن مَّعَ ٱلۡكَٰفِرِينَ ٤٢ قَالَ سَ‍َٔاوِيٓ إِلَىٰ جَبَلٖ يَعۡصِمُنِي مِنَ ٱلۡمَآءِۚ قَالَ لَا عَاصِمَ ٱلۡيَوۡمَ مِنۡ أَمۡرِ ٱللَّهِ إِلَّا مَن رَّحِمَۚ وَحَالَ بَيۡنَهُمَا ٱلۡمَوۡجُ فَكَانَ مِنَ ٱلۡمُغۡرَقِينَ ٤٣ وَقِيلَ يَٰٓأَرۡضُ ٱبۡلَعِي مَآءَكِ وَيَٰسَمَآءُ أَقۡلِعِي وَغِيضَ ٱلۡمَآءُ وَقُضِيَ ٱلۡأَمۡرُ وَٱسۡتَوَتۡ عَلَى ٱلۡجُودِيِّۖ وَقِيلَ بُعۡدٗا لِّلۡقَوۡمِ ٱلظَّٰلِمِينَ ٤٤ وَنَادَىٰ نُوحٞ رَّبَّهُۥ فَقَالَ رَبِّ إِنَّ ٱبۡنِي مِنۡ أَهۡلِي وَإِنَّ وَعۡدَكَ ٱلۡحَقُّ وَأَنتَ أَحۡكَمُ ٱلۡحَٰكِمِينَ ٤٥ قَالَ يَٰنُوحُ إِنَّهُۥ لَيۡسَ مِنۡ أَهۡلِكَۖ إِنَّهُۥ عَمَلٌ غَيۡرُ صَٰلِحٖۖ فَلَا تَسۡ‍َٔلۡنِ مَا لَيۡسَ لَكَ بِهِۦ عِلۡمٌۖ إِنِّيٓ أَعِظُكَ أَن تَكُونَ مِنَ ٱلۡجَٰهِلِينَ ٤٦ قَالَ رَبِّ إِنِّيٓ أَعُوذُ بِكَ أَنۡ أَسۡ‍َٔلَكَ مَا لَيۡسَ لِي بِهِۦ عِلۡمٞۖ وَإِلَّا تَغۡفِرۡ لِي وَتَرۡحَمۡنِيٓ أَكُن مِّنَ ٱلۡخَٰسِرِينَ ٤٧ قِيلَ يَٰنُوحُ ٱهۡبِطۡ بِسَلَٰمٖ مِّنَّا وَبَرَكَٰتٍ عَلَيۡكَ وَعَلَىٰٓ أُمَمٖ مِّمَّن مَّعَكَۚ وَأُمَمٞ سَنُمَتِّعُهُمۡ ثُمَّ يَمَسُّهُم مِّنَّا عَذَابٌ أَلِيمٞ ٤٨ تِلۡكَ مِنۡ أَنۢبَآءِ ٱلۡغَيۡبِ نُوحِيهَآ إِلَيۡكَۖ مَا كُنتَ تَعۡلَمُهَآ أَنتَ وَلَا قَوۡمُكَ مِن قَبۡلِ هَٰذَاۖ فَٱصۡبِرۡۖ إِنَّ ٱلۡعَٰقِبَةَ لِلۡمُتَّقِينَ ٤٩ ﴾ [هود: ٣٦، ٤٩]

“আর নূহের কাছে ওহী পাঠানো হল যে, ‘যারা ঈমান এনেছে, তারা ছাড়া তোমার কওমের আর কেউ ঈমান আনবে না। সুতরাং তারা যা করে সে জন্য তুমি দুঃখিত হয়ো না’।‘আর তুমি আমার চোখের সামনে ও আমার ওহী অনুসারে নৌকা তৈরী কর। আর যারা যুলম করেছে, তাদের ব্যাপারে তুমি আমার কাছে কোনো আবেদন করো না। নিশ্চয় তাদেরকে ডুবানো হবে’।আর সে নৌকা তৈরী করতে লাগল এবং যখনই তার কওমের নেতৃস্থানীয় কোনো ব্যক্তি তার পাশ দিয়ে যেত, তাকে নিয়ে উপহাস করত। সে বলল, ‘যদি তোমরা আমাদের নিয়ে উপহাস কর, তবে আমরাও তোমাদের নিয়ে উপহাস করব, যেমন তোমরা উপহাস করছ’। অতএব, শীঘ্রই তোমরা জানতে পারবে, কার উপর সে আযাব আসবে যা তাকে লাঞ্ছিত করবে এবং কার উপর আপতিত হবে স্থায়ী আযাব।অবশেষে যখন আমার আদেশ আসল এবং চুলা উথলে উঠল[285], আমি বললাম, ‘তুমি তাতে তুলে নাও প্রত্যেক শ্রেণী থেকে জোড়া জোড়া[286] এবং যাদের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হয়ে গিয়েছে তাদের ছাড়া তোমার পরিবারকে এবং যারা ঈমান এনেছে তাদেরকে। আর তার সাথে অল্পসংখ্যকই ঈমান এনেছিল। আর সে বলল, ‘তোমরা এতে আরোহণ কর। এর চলা ও থামা হবে আল্লাহর নামে। নিশ্চয় আমার রব অতি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। আর তা পাহাড়সম ঢেউয়ের মধ্যে তাদেরকে নিয়ে চলছিল এবং নূহ তার পুত্রকে ডাক দিল, আর সে ছিল আলাদা স্থানে- ‘হে আমার পুত্র, আমাদের সাথে আরোহণ কর এবং কাফিরদের সাথে থেকো না’।সে বলল, ‘অচিরেই আমি একটি পাহাড়ে আশ্রয় নেব, যা আমাকে পানি থেকে রক্ষা করবে’। সে (নূহ) বলল, ‘যার প্রতি আল্লাহ দয়া করেছেন সে ছাড়া আজ আল্লাহর আদেশ থেকে কোনো রক্ষাকারী নেই’। এরপর তাদের উভয়ের মধ্যে ঢেউ অন্তরায় হয়ে গেল। অতঃপর সে নিমজ্জিতদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে গেল । আর বলা হল, ‘হে যমীন, তুমি তোমার পানি চুষে নাও, আর হে আসমান, বিরত হও’। অতঃপর পানি কমে গেল এবং (আল্লাহর) সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত হল, আর নৌকা জুদী পর্বতের উপর উঠল এবং ঘোষণা করা হল, ‘ধ্বংস যালিম কওমের জন্য’। আর নূহ তার রবকে ডাকল এবং বলল, ‘হে আমার রব, নিশ্চয় আমার সন্তান আমার পরিবারভুক্ত এবং আপনার ওয়াদা নিশ্চয় সত্য। আর আপনি বিচারকদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ বিচারক’। তিনি বললেন, ‘হে নূহ, সে নিশ্চয় তোমার পরিবারভুক্ত নয়। সে অবশ্যই অসৎ কর্মপরায়ণ। সুতরাং যে বিষয়ে তোমার কোনো জ্ঞান নেই, আমার কাছে তা চেয়ো না। আমি তোমাকে উপদেশ দিচ্ছি, যেন মূর্খদের অন্তর্ভুক্ত না হও’। সে বলল, ‘হে আমার রব, যে বিষয়ে আমার জ্ঞান নেই তা চাওয়া থেকে আমি অবশ্যই আপনার আশ্রয় চাই। আর যদি আপনি আমাকে মাফ না করেন এবং আমার প্রতি দয়া না করেন, তবে আমি ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাব’।বলা হল, ‘হে নূহ, তোমার ও তোমার সাথে যে উম্মত রয়েছে তাদের উপর আমার পক্ষ থেকে শান্তি ও বরকতসহ অবতরণ কর। আর আরো অনেক উম্মতকে আমি জীবন উপভোগ করতে দেব, তারপর আমার পক্ষ থেকে তাদেরকে স্পর্শ করবে যন্ত্রণাদায়ক আযাব’। এগুলো গায়েবের সংবাদ, আমি তোমাকে ওহীর মাধ্যমে তা জানাচ্ছি। ইতঃপূর্বে তা না তুমি জানতে এবং না তোমার কওম। সুতরাং তুমি সবর কর। নিশ্চয় শুভ পরিণাম কেবল মুত্তাকীদের জন্য”। [সূরা: হূদ: ৩৬-৪৯]

قَالَ ابْنُ عُمَرَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا: قَامَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي النَّاسِ فَأَثْنَى عَلَى اللَّهِ بِمَا هُوَ أَهْلُهُ ثُمَّ ذَكَرَ الدَّجَّالَ فَقَالَ: " إِنِّي لَأُنْذِرُكُمُوهُ، وَمَا مِنْ نَبِيٍّ إِلَّا أَنْذَرَهُ قَوْمَهُ، لَقَدْ أَنْذَرَ نُوحٌ قَوْمَهُ، وَلَكِنِّي أَقُولُ لَكُمْ فِيهِ قَوْلًا لَمْ يَقُلْهُ نَبِيٌّ لِقَوْمِهِ: تَعْلَمُونَ أَنَّهُ أَعْوَرُ، وَأَنَّ اللَّهَ لَيْسَ بِأَعْوَرَ ".

ইবন উমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদা জনসমাবেশে দাঁড়ালেন এবং আল্লাহর যথোপযুক্ত প্রশংসা করলেন, তারপর দাজ্জালের উল্লখ করে বললেন, আমি তোমাদেরকে তার থেকে সতর্ক করছি আর প্রত্যেক নবীই নিজ নিজ সম্প্রদায়কে এ দাজ্জাল থেকে সতর্ক করে দিয়েছেন। নূহ আলাইহি সালাম ও নিজ সম্প্রদায়কে দাজ্জাল থেকে সতর্ক করেছেন। কিন্তু আমি তোমাদেরকে তার সম্বন্ধে এমন একটা কথা বলছি, যা কোনো নবী তাঁর সম্প্রদায়কে বলেননি। তা হলো তোমরা জেনে রেখ, নিশ্চয়ই দাজ্জাল কানা, আর আল্লাহ কানা নন।[287]

عَنْ أَبِي سَلَمَةَ، سَمِعْتُ أَبَا هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: " أَلاَ أُحَدِّثُكُمْ حَدِيثًا عَنِ الدَّجَّالِ، مَا حَدَّثَ بِهِ نَبِيٌّ قَوْمَهُ: إِنَّهُ أَعْوَرُ، وَإِنَّهُ يَجِيءُ مَعَهُ بِمِثَالِ الجَنَّةِ وَالنَّارِ، فَالَّتِي يَقُولُ إِنَّهَا الجَنَّةُ هِيَ النَّارُ، وَإِنِّي أُنْذِرُكُمْ كَمَا أَنْذَرَ بِهِ نُوحٌ قَوْمَهُ ".

আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আমি কি তোমাদেরকে দাজ্জাল সম্পর্কে এমন একটি কথা বলে দেব না, যা কোনো নবীই তাঁর সম্প্রদায়কে বলেন নি? তা হলো, নিশ্চয়ই সে হবে কানা, সে সাথে করে জান্নাত এবং জাহান্নামের দু’টি কৃত্রিম ছবি নিয়ে আসবে। অতএব যাকে সে বলবে যে এটি জান্নাত প্রকৃতপক্ষে সেটি হবে জাহান্নাম। আর আমি তার সম্পর্কে তোমাদের ঠিক তেমনি সতর্ক করছি, যেমন নূহ আলাইহিস সালাম তার সম্প্রদায়কে সে সম্পর্কে সতর্ক করেছেন।[288]

 

 

হূদ আলাইহিস সালাম ও তাঁর সম্প্রদায় ‘আদ

আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,

﴿ ۞وَإِلَىٰ عَادٍ أَخَاهُمۡ هُودٗاۚ قَالَ يَٰقَوۡمِ ٱعۡبُدُواْ ٱللَّهَ مَا لَكُم مِّنۡ إِلَٰهٍ غَيۡرُهُۥٓۚ أَفَلَا تَتَّقُونَ ٦٥ قَالَ ٱلۡمَلَأُ ٱلَّذِينَ كَفَرُواْ مِن قَوۡمِهِۦٓ إِنَّا لَنَرَىٰكَ فِي سَفَاهَةٖ وَإِنَّا لَنَظُنُّكَ مِنَ ٱلۡكَٰذِبِينَ ٦٦ قَالَ يَٰقَوۡمِ لَيۡسَ بِي سَفَاهَةٞ وَلَٰكِنِّي رَسُولٞ مِّن رَّبِّ ٱلۡعَٰلَمِينَ ٦٧ أُبَلِّغُكُمۡ رِسَٰلَٰتِ رَبِّي وَأَنَا۠ لَكُمۡ نَاصِحٌ أَمِينٌ ٦٨ أَوَعَجِبۡتُمۡ أَن جَآءَكُمۡ ذِكۡرٞ مِّن رَّبِّكُمۡ عَلَىٰ رَجُلٖ مِّنكُمۡ لِيُنذِرَكُمۡۚ وَٱذۡكُرُوٓاْ إِذۡ جَعَلَكُمۡ خُلَفَآءَ مِنۢ بَعۡدِ قَوۡمِ نُوحٖ وَزَادَكُمۡ فِي ٱلۡخَلۡقِ بَصۜۡطَةٗۖ فَٱذۡكُرُوٓاْ ءَالَآءَ ٱللَّهِ لَعَلَّكُمۡ تُفۡلِحُونَ ٦٩ قَالُوٓاْ أَجِئۡتَنَا لِنَعۡبُدَ ٱللَّهَ وَحۡدَهُۥ وَنَذَرَ مَا كَانَ يَعۡبُدُ ءَابَآؤُنَا فَأۡتِنَا بِمَا تَعِدُنَآ إِن كُنتَ مِنَ ٱلصَّٰدِقِينَ ٧٠ قَالَ قَدۡ وَقَعَ عَلَيۡكُم مِّن رَّبِّكُمۡ رِجۡسٞ وَغَضَبٌۖ أَتُجَٰدِلُونَنِي فِيٓ أَسۡمَآءٖ سَمَّيۡتُمُوهَآ أَنتُمۡ وَءَابَآؤُكُم مَّا نَزَّلَ ٱللَّهُ بِهَا مِن سُلۡطَٰنٖۚ فَٱنتَظِرُوٓاْ إِنِّي مَعَكُم مِّنَ ٱلۡمُنتَظِرِينَ ٧١ فَأَنجَيۡنَٰهُ وَٱلَّذِينَ مَعَهُۥ بِرَحۡمَةٖ مِّنَّا وَقَطَعۡنَا دَابِرَ ٱلَّذِينَ كَذَّبُواْ بِ‍َٔايَٰتِنَاۖ وَمَا كَانُواْ مُؤۡمِنِينَ ٧٢ ﴾ [الاعراف: ٦٥، ٧٢]

“আর (প্রেরণ করলাম) আদ জাতির নিকট তাদের ভাই হূদকে। সে বলল, ‘হে আমার কওম, তোমরা আল্লাহর ইবাদাত কর। তিনি ছাড়া তোমাদের কোনো (সত্য) ইলাহ নেই। তোমরা কি তাকওয়া অবলম্বন করবে না’? তার কওমের কাফির নেতৃবৃন্দ বলল, ‘নিশ্চয় আমরা তোমাকে নির্বুদ্ধিতায় দেখতে পাচ্ছি এবং আমরা অবশ্যই তোমাকে মিথ্যাবাদীদের অন্তর্ভুক্ত মনে করি’। সে বলল, ‘হে আমার কওম, আমার মধ্যে কোনো নির্বুদ্ধিতা নেই; কিন্তু আমি সকল সৃষ্টির রবের পক্ষ থেকে রাসূল’।‘আমি তোমাদের নিকট আমার রবের রিসালাতসমূহ পৌঁছাচ্ছি, আর আমি তোমাদের জন্য কল্যাণকামী বিশ্বস্ত’।‘তোমরা কি আশ্চর্য হচ্ছো যে, তোমাদের রবের পক্ষ থেকে তোমাদের মধ্য থেকে এক ব্যক্তির নিকট উপদেশ এসেছে, যাতে সে তোমাদেরকে সতর্ক করে? আর তোমরা স্মরণ কর, যখন তিনি তোমাদেরকে নূহের কওমের পর স্থলাভিষিক্ত করেছিলেন এবং সৃষ্টিতে তোমাদেরকে দৈহিক গঠন ও শক্তিতে সমৃদ্ধ করেছেন। সুতরাং তোমরা স্মরণ কর আল্লাহর নিআমতসমূহকে, যাতে তোমরা সফলকাম হও’।তারা বলল, ‘তুমি কি আমাদের নিকট এজন্য এসেছ যে, আমরা এক আল্লাহর ইবাদাত করি এবং ত্যাগ করি আমাদের পিতৃপুরুষগণ যার ইবাদাত করত? সুতরাং তুমি আমাদেরকে যে ওয়াদা দিচ্ছ, তা আমাদের কাছে নিয়ে এসো, যদি তুমি সত্যবাদী হও’। সে বলল, ‘নিশ্চয় তোমাদের উপর তোমাদের রবের পক্ষ থেকে আযাব ও ক্রোধ পতিত হয়েছে। তোমরা কি এমন নামসমূহের ব্যাপারে আমার সাথে বিবাদ করছ, যার নামকরণ করেছ তোমরা ও তোমাদের পিতৃপুরুষরা, যার ব্যাপারে আল্লাহ কোনো প্রমাণ নাযিল করেননি? সুতরাং তোমরা অপেক্ষা কর। আমিও তোমাদের সাথে অপেক্ষা করছি’। অতঃপর আমি তাকে ও তার সাথে যারা ছিল, তাদেরকে আমার পক্ষ থেকে রহমত দ্বারা রক্ষা করেছি এবং তাদের মূল কেটে দিয়েছি, যারা আমার আয়াতসমূহ অস্বীকার করেছিল। আর তারা মুমিন ছিল না”। [সূরা আল-আ‘রাফ: ৬৫-৭২]

আল্লাহ আরো বলেছেন,

﴿ ۞وَٱذۡكُرۡ أَخَا عَادٍ إِذۡ أَنذَرَ قَوۡمَهُۥ بِٱلۡأَحۡقَافِ وَقَدۡ خَلَتِ ٱلنُّذُرُ مِنۢ بَيۡنِ يَدَيۡهِ وَمِنۡ خَلۡفِهِۦٓ أَلَّا تَعۡبُدُوٓاْ إِلَّا ٱللَّهَ إِنِّيٓ أَخَافُ عَلَيۡكُمۡ عَذَابَ يَوۡمٍ عَظِيمٖ ٢١ قَالُوٓاْ أَجِئۡتَنَا لِتَأۡفِكَنَا عَنۡ ءَالِهَتِنَا فَأۡتِنَا بِمَا تَعِدُنَآ إِن كُنتَ مِنَ ٱلصَّٰدِقِينَ ٢٢ قَالَ إِنَّمَا ٱلۡعِلۡمُ عِندَ ٱللَّهِ وَأُبَلِّغُكُم مَّآ أُرۡسِلۡتُ بِهِۦ وَلَٰكِنِّيٓ أَرَىٰكُمۡ قَوۡمٗا تَجۡهَلُونَ ٢٣ فَلَمَّا رَأَوۡهُ عَارِضٗا مُّسۡتَقۡبِلَ أَوۡدِيَتِهِمۡ قَالُواْ هَٰذَا عَارِضٞ مُّمۡطِرُنَاۚ بَلۡ هُوَ مَا ٱسۡتَعۡجَلۡتُم بِهِۦۖ رِيحٞ فِيهَا عَذَابٌ أَلِيمٞ ٢٤ تُدَمِّرُ كُلَّ شَيۡءِۢ بِأَمۡرِ رَبِّهَا فَأَصۡبَحُواْ لَا يُرَىٰٓ إِلَّا مَسَٰكِنُهُمۡۚ كَذَٰلِكَ نَجۡزِي ٱلۡقَوۡمَ ٱلۡمُجۡرِمِينَ ٢٥ ﴾ [الاحقاف: ٢١، ٢٥]

আর স্মরণ কর ‘আ’দ সম্প্রদায়ের ভাইয়ের কথা, যখন সে আহকাফের স্বীয় সম্প্রদায়কে সতর্ক করেছিল। আর এমন সতর্ককারীরা তার পূর্বে এবং তার পরেও গত হয়েছে যে, ‘তোমরা আল্লাহ ছাড়া কারো ইবাদাত করো না। নিশ্চয় আমি তোমাদের উপর এক ভয়াবহ দিনের আযাবের আশঙ্কা করছি’। তারা বলল, ‘তুমি কি আমাদেরকে আমাদের উপাস্যদের থেকে নিবৃত্ত করতে আমাদের নিকট এসেছ? তুমি যদি সত্যবাদীদের অন্তর্ভুক্ত হও, তাহলে আমাদেরকে যার ভয় দেখাচ্ছ তা নিয়ে এসো’। সে বলল, ‘এ জ্ঞান একমাত্র আল্লাহর কাছে। আর যা দিয়ে আমাকে পাঠানো হয়েছে, আমি তোমাদের কাছে তা-ই প্রচার করি, কিন্তু আমি দেখছি, তোমরা এক মূর্খ সম্প্রদায়’। অতঃপর যখন তারা তাদের উপত্যকার দিকে মেঘমালা দেখল তখন তারা বলল, ‘এ মেঘমালা আমাদেরকে বৃষ্টি দেবে’। (হূদ বলল,) বরং এটি তা-ই যা তোমরা ত্বরান্বিত করতে চেয়েছিলে। এ এক ঝড়, যাতে যন্ত্রণাদায়ক আযাব রয়েছে’। এটা তার রবের নির্দেশে সব কিছু ধ্বংস করে দেবে’। ফলে তারা এমন (ধ্বংস) হয়ে গেল যে, তাদের আবাসস্থল ছাড়া আর কিছুই দেখা যাচ্ছিল না। এভাবেই আমি অপরাধী কওমকে প্রতিফল দিয়ে থাকি। [সূরা আল্-আহকাফ: ২১-২৫]

عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قَالَ: «نُصِرْتُ بِالصَّبَا، وَأُهْلِكَتْ عَادٌ بِالدَّبُورِ».

ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আমাকে ভোরের বায়ু (পুবালি বাতাস) দ্বারা সাহায্য করা হয়েছে আর ‘আদ জাতিকে দাবুর বা পশ্চিমের (এক প্রকার মারাত্মক) বায়ু দ্বারা ধংস করা হয়েছে।[289]

عَنْ عَائِشَةَ، زَوْجِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، أَنَّهَا قَالَتْ: كَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا عَصَفَتِ الرِّيحُ، قَالَ: «اللهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ خَيْرَهَا، وَخَيْرَ مَا فِيهَا، وَخَيْرَ مَا أُرْسِلَتْ بِهِ، وَأَعُوذُ بِكَ مِنْ شَرِّهَا، وَشَرِّ مَا فِيهَا، وَشَرِّ مَا أُرْسِلَتْ بِهِ»، قَالَتْ: وَإِذَا تَخَيَّلَتِ السَّمَاءُ، تَغَيَّرَ لَوْنُهُ، وَخَرَجَ وَدَخَلَ، وَأَقْبَلَ وَأَدْبَرَ، فَإِذَا مَطَرَتْ، سُرِّيَ عَنْهُ، فَعَرَفْتُ ذَلِكَ فِي وَجْهِهِ، قَالَتْ عَائِشَةُ: فَسَأَلْتُهُ، فَقَالَ: " لَعَلَّهُ، يَا عَائِشَةُ كَمَا قَالَ قَوْمُ عَادٍ: {فَلَمَّا رَأَوْهُ عَارِضًا مُسْتَقْبِلَ أَوْدِيَتِهِمْ قَالُوا هَذَا عَارِضٌ مُمْطِرُنَا} [الأحقاف: 24] ".

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সহধর্মিনী আয়িশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, যে দিন ঝড়ো হাওয়া প্রবাহিত হত সে দিন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলতেন, হে আল্লাহ! আমি মেঘের কল্যাণ কামনা করছি এবং এর মধ্যে যে সব কল্যাণ রয়েছে এবং যে কল্যাণের উদ্দেশ্যে প্রেরিত হয়েছে তাও এবং আশ্রয় প্রার্থনা করছি এর ক্ষতি, ধ্বংস থেকে এবং যে মন্দ কাজের জন্য পাঠান হয়েছে তা থেকে। আকাশে যখন বিজলী চমকায়, বজ্রের বিকট গর্জন হয়, তখন তাঁর চেহারা মুবারক বিবর্ণ হয়ে যেত, রং পরিবর্তন হয়ে যেত। তিনি পেরেশান হয়ে ঘরে প্রবেশ করতেন আবার বের হতেন এবং আগে বাড়তেন ও পিছনে হটে যেতেন। যখন বর্ষণ হয়ে যেত তখন তার চেহারায় আনন্দ ফূটে উঠত। আয়িশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা তা অনুভব করতে পেরে তাঁকে জিজ্ঞাসা করলেন, এতে তিনি উত্তর দিলেন হে আয়িশা! আমার আশংকা হয়, এমন হতে পারে যেমন হুদ আলাইহিস সালামের কাওম বলেছিল, যখন তারা মেঘমালাকে তাদের উপত্যকার দিকে আসতে দেখল, তখন তারা বলতে লাগল, এ প্রসারিত মেঘমালা, আমাদের উপর ভারি বর্ষণ করবে।[290]

عَنْ عَطَاءِ بْنِ أَبِي رَبَاحٍ، أَنَّهُ سَمِعَ عَائِشَةَ، زَوْجَ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، تَقُولُ: كَانَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا كَانَ يَوْمُ الرِّيحِ وَالْغَيْمِ، عُرِفَ ذَلِكَ فِي وَجْهِهِ، وَأَقْبَلَ وَأَدْبَرَ، فَإِذَا مَطَرَتْ سُرَّ بِهِ، وَذَهَبَ عَنْهُ ذَلِكَ، قَالَتْ عَائِشَةُ: فَسَأَلْتُهُ، فَقَالَ: «إِنِّي خَشِيتُ أَنْ يَكُونَ عَذَابًا سُلِّطَ عَلَى أُمَّتِي»، وَيَقُولُ، إِذَا رَأَى الْمَطَرَ: «رَحْمَةٌ». 

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সহধর্মিনী আয়িশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা বলেন, যে দিন আকাল মেঘাচ্ছন্ন থাকত, ঝড়ো হাওয়া প্রবাহিত হত তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের চেহারায় তা প্রকাশ পেত। তিনি পেরেশান হয়ে ঘরে আসতেন, বাহিরে যেতেন। যখন বর্ষণ হয়ে যেত তখন তার চেহরিায় আনন্দের আভা বয়ে যেত, চিন্তা ও পেরেশানী ভাব কেটে যেত। আয়িশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা বলেন, আমি তাঁকে এর কারণ জিজ্ঞেস করলাম, তিনি বললেন, আমার আশংকা হয়ে যেত, এতে আমার উম্মাতের উপর প্রেরিত কোনো আযাব রয়েছে এবং তিনি যখন বৃষ্টি দেখতেন তখন বলতেন, এত আল্লাহর রহমত।[291]

 

 

সালেহ আলাইহিস সালাম ও সামূদ জাতি

আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,

﴿ وإِلَىٰ ثَمُودَ أَخَاهُمۡ صَٰلِحٗاۚ قَالَ يَٰقَوۡمِ ٱعۡبُدُواْ ٱللَّهَ مَا لَكُم مِّنۡ إِلَٰهٍ غَيۡرُهُۥۖ قَدۡ جَآءَتۡكُم بَيِّنَةٞ مِّن رَّبِّكُمۡۖ هَٰذِهِۦ نَاقَةُ ٱللَّهِ لَكُمۡ ءَايَةٗۖ فَذَرُوهَا تَأۡكُلۡ فِيٓ أَرۡضِ ٱللَّهِۖ وَلَا تَمَسُّوهَا بِسُوٓءٖ فَيَأۡخُذَكُمۡ عَذَابٌ أَلِيمٞ ٧٣ وَٱذۡكُرُوٓاْ إِذۡ جَعَلَكُمۡ خُلَفَآءَ مِنۢ بَعۡدِ عَادٖ وَبَوَّأَكُمۡ فِي ٱلۡأَرۡضِ تَتَّخِذُونَ مِن سُهُولِهَا قُصُورٗا وَتَنۡحِتُونَ ٱلۡجِبَالَ بُيُوتٗاۖ فَٱذۡكُرُوٓاْ ءَالَآءَ ٱللَّهِ وَلَا تَعۡثَوۡاْ فِي ٱلۡأَرۡضِ مُفۡسِدِينَ ٧٤ قَالَ ٱلۡمَلَأُ ٱلَّذِينَ ٱسۡتَكۡبَرُواْ مِن قَوۡمِهِۦ لِلَّذِينَ ٱسۡتُضۡعِفُواْ لِمَنۡ ءَامَنَ مِنۡهُمۡ أَتَعۡلَمُونَ أَنَّ صَٰلِحٗا مُّرۡسَلٞ مِّن رَّبِّهِۦۚ قَالُوٓاْ إِنَّا بِمَآ أُرۡسِلَ بِهِۦ مُؤۡمِنُونَ ٧٥ قَالَ ٱلَّذِينَ ٱسۡتَكۡبَرُوٓاْ إِنَّا بِٱلَّذِيٓ ءَامَنتُم بِهِۦ كَٰفِرُونَ ٧٦ فَعَقَرُواْ ٱلنَّاقَةَ وَعَتَوۡاْ عَنۡ أَمۡرِ رَبِّهِمۡ وَقَالُواْ يَٰصَٰلِحُ ٱئۡتِنَا بِمَا تَعِدُنَآ إِن كُنتَ مِنَ ٱلۡمُرۡسَلِينَ ٧٧ فَأَخَذَتۡهُمُ ٱلرَّجۡفَةُ فَأَصۡبَحُواْ فِي دَارِهِمۡ جَٰثِمِينَ ٧٨ فَتَوَلَّىٰ عَنۡهُمۡ وَقَالَ يَٰقَوۡمِ لَقَدۡ أَبۡلَغۡتُكُمۡ رِسَالَةَ رَبِّي وَنَصَحۡتُ لَكُمۡ وَلَٰكِن لَّا تُحِبُّونَ ٱلنَّٰصِحِينَ ٧٩ ﴾ [الاعراف: ٧٣، ٧٩]

“আর সামূদের নিকট (প্রেরণ করেছি) তাদের ভাই সালিহকে। সে বলল, ‘হে আমার কওম, তোমরা আল্লাহর ইবাদাত কর। তিনি ছাড়া তোমাদের কোনো (সত্য) ইলাহ নেই। নিশ্চয় তোমাদের নিকট তোমাদের রবের পক্ষ থেকে স্পষ্ট প্রমাণ এসেছে। এটি আল্লাহর উষ্ট্রী, তোমাদের জন্য নিদর্শনস্বরূপ। সুতরাং তোমরা তাকে ছেড়ে দাও, সে আল্লাহর যমীনে আহার করুক। আর তোমরা তাকে মন্দ দ্বারা স্পর্শ করো না। তাহলে তোমাদেরকে যন্ত্রণাদায়ক আযাব পাকড়াও করবে’।আর স্মরণ কর, যখন আদ জাতির পর তিনি তোমাদেরকে স্থলাভিষিক্ত করলেন এবং তোমাদেরকে যমীনে আবাস দিলেন। তোমরা তার সমতল ভূমিতে প্রাসাদ নির্মাণ করছ এবং পাহাড় কেটে বাড়ি বানাচ্ছ। সুতরাং তোমরা আল্লাহর নিআমতসমূহকে স্মরণ কর এবং যমীনে ফাসাদকারীরূপে ঘুরে বেড়িয়ো না। তার কওমের অহঙ্কারী নেতৃবৃন্দ তাদের সেই মুমিনদেরকে বলল যাদেরকে দুর্বল মনে করা হত, ‘তোমরা কি জান যে, সালিহ তার রবের পক্ষ থেকে প্রেরিত’? তারা বলল, ‘নিশ্চয় সে যা নিয়ে প্রেরিত হয়েছে, আমরা তাতে বিশ্বাসী’। যারা অহঙ্কার করেছিল তারা বলল, ‘নিশ্চয় তোমরা যার প্রতি ঈমান এনেছ, আমরা তার প্রতি অস্বীকারকারী’। অতঃপর তারা উষ্ট্রীকে যবেহ করল এবং তাদের রবের আদেশ অমান্য করল। আর তারা বলল, ‘হে সালিহ, তুমি আমাদেরকে যে ওয়াদা দিয়েছ, তা আমাদের কাছে নিয়ে এসো, যদি তুমি রাসূলদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে থাক’। ফলে তাদেরকে ভূমিকম্প পাকড়াও করল, তাই সকালে তারা তাদের গৃহে উপুড় হয়ে মরে রইল। অতঃপর সে তাদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নিল এবং বলল, ‘হে আমার কওম, আমি তো তোমাদের নিকট আমার রবের রিসালাত পৌঁছে দিয়েছি এবং তোমাদের জন্য কল্যাণ কামনা করেছি; কিন্তু তোমরা কল্যাণকামীদেরকে পছন্দ কর না”। [সূরা আল-আ‘রাফ: ৭৩-৭৯]

আল্লাহ তাঁর নবী সালিহ আলাইহিস সালাম সম্পর্কে আরো বলেন,

﴿ وَيَٰقَوۡمِ هَٰذِهِۦ نَاقَةُ ٱللَّهِ لَكُمۡ ءَايَةٗۖ فَذَرُوهَا تَأۡكُلۡ فِيٓ أَرۡضِ ٱللَّهِۖ وَلَا تَمَسُّوهَا بِسُوٓءٖ فَيَأۡخُذَكُمۡ عَذَابٞ قَرِيبٞ ٦٤ فَعَقَرُوهَا فَقَالَ تَمَتَّعُواْ فِي دَارِكُمۡ ثَلَٰثَةَ أَيَّامٖۖ ذَٰلِكَ وَعۡدٌ غَيۡرُ مَكۡذُوبٖ ٦٥ فَلَمَّا جَآءَ أَمۡرُنَا نَجَّيۡنَا صَٰلِحٗا وَٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ مَعَهُۥ بِرَحۡمَةٖ مِّنَّا وَمِنۡ خِزۡيِ يَوۡمِئِذٍۚ إِنَّ رَبَّكَ هُوَ ٱلۡقَوِيُّ ٱلۡعَزِيزُ ٦٦ وَأَخَذَ ٱلَّذِينَ ظَلَمُواْ ٱلصَّيۡحَةُ فَأَصۡبَحُواْ فِي دِيَٰرِهِمۡ جَٰثِمِينَ ٦٧ كَأَن لَّمۡ يَغۡنَوۡاْ فِيهَآۗ أَلَآ إِنَّ ثَمُودَاْ كَفَرُواْ رَبَّهُمۡۗ أَلَا بُعۡدٗا لِّثَمُودَ ٦٨ ﴾ [هود: ٦٤، ٦٨]

‘আর হে আমার কওম, এটি আল্লাহর উট, তোমাদের জন্য নিদর্শনস্বরূপ। তাই তোমরা একে ছেড়ে দাও, সে আল্লাহর যমীনে (বিচরণ করে) খাবে এবং কোনরূপ মন্দভাবে তাকে স্পর্শ করো না, তাহলে তোমাদেরকে আশু আযাব পাকড়াও করবে’। অতঃপর তারা তাকে হত্যা করল। তাই সে বলল, ‘তোমরা তিন দিন নিজ নিজ গৃহে আনন্দে কাটাও। এ এমন এক ওয়াদা, যা মিথ্যা হবার নয়’। অতঃপর যখন আমার আদেশ এল, তখন সালিহ ও তার সাথে যারা ঈমান এনেছিল তাদেরকে আমার পক্ষ থেকে রহমত দ্বারা নাজাত দিলাম এবং (নাজাত দিলাম) সেই দিনের লাঞ্ছনা থেকে। নিশ্চয় তোমার রব, তিনি শক্তিশালী, পরাক্রমশালী। আর যারা যুলম করেছিল, বিকট আওয়াজ তাদেরকে পাকড়াও করল, ফলে তারা নিজদের গৃহে মুখ থুবড়ে পড়ে থাকল। যেন তারা সেগুলোতে বসবাসই করেনি। জেনে রাখ, নিশ্চয় সামূদ জাতি তাদের রবের সাথে কুফরী করেছে। জেনে রাখ, সামূদ জাতির জন্য রয়েছে ধ্বংস। [সূরা: হূদ: ৬৪-৬৮]

عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ زَمْعَةَ، قَالَ: سَمِعْتُ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، وَذَكَرَ الَّذِي عَقَرَ النَّاقَةَ، قَالَ: «انْتَدَبَ لَهَا رَجُلٌ ذُو عِزٍّ وَمَنَعَةٍ فِي قَوْمِهِ كَأَبِي زَمْعَةَ».

আবদুল্লাহ ইবন যাম‘আ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহিস সালাম থেকে শুনেছি এবং তিনি যে লোক (সালিহ আলাইহিস সালামের) উঠনী যখম করেছিল তাঁর উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেছেন, উটনীকে হত্যা করার জন্য এমন এক লোক তৈরি হয়েছিল যে তাঁর গোত্রের মধ্যে প্রবল ও শক্তিশালী ছিল, যেমন ছিল আবূ যাম‘আ।[292]

عَنْ عَبْد اللَّهِ بْن زَمْعَة، أَنَّهُ سَمِعَ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَخْطُبُ، وَذَكَرَ النَّاقَةَ وَالَّذِي عَقَرَ، فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: " {إِذِ انْبَعَثَ أَشْقَاهَا} [الشمس: 12] انْبَعَثَ لَهَا رَجُلٌ عَزِيزٌ عَارِمٌ، مَنِيعٌ فِي رَهْطِهِ، مِثْلُ أَبِي زَمْعَةَ " وَذَكَرَ النِّسَاءَ، فَقَالَ: «يَعْمِدُ أَحَدُكُمْ، فَيَجْلِدُ امْرَأَتَهُ جَلْدَ العَبْدِ، فَلَعَلَّهُ يُضَاجِعُهَا مِنْ آخِرِ يَوْمِهِ» ثُمَّ وَعَظَهُمْ فِي ضَحِكِهِمْ مِنَ الضَّرْطَةِ، وَقَالَ: «لِمَ يَضْحَكُ أَحَدُكُمْ مِمَّا يَفْعَلُ».

আব্দুল্লাহ ইবনে যাম‘আ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত, তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহিস সালাম কে খুতবা দিতে শুনেছেন, যেখানে তিনি সামূদ গোত্রের কাছে প্রেরিত উটনী ও তার পা কাটার কথা বললেন। তারপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহিস সালাম আল্লাহর এ বানী বলেন, “অতএব তাদের মধ্যে যে সর্বাধিক হতভাগা, সে যখন ক্ষিপ্ত হয়ে উঠলো” [সূরা শামস: আয়াত ১২] – এর ব্যাখ্যায় বললেন, ঐ উটনীটিকে হত্যা করার জন্য এক হতভাগা শক্তিশালী ব্যক্তি তৎপর হয়ে উঠলো যে সে সমাজের মধ্যে আবু যাম’আতের মত প্রভাবশালী ও অত্যন্ত শক্তিধর ছিল। এই খুতবায় তিনি মেয়েদের সম্পর্কেও আলোচনা করেছিলেন। তিনি বলেছেন, তোমাদের মধ্যে এমন লোকও আছে যে তার স্ত্রীকে ক্রীতদাসের মত মারে, কিন্তু ঐ দিন শেষেই সে আবার তার সাথে একই বিছানায় মিলিত হয়। এরপর তিনি বায়ু নিঃসরণের পর হাসি দেওয়া সম্পর্কে উপদেশ দিলেন, কোনো ব্যক্তি সেই কাজটির জন্য কেন হাসে যে কাজটি সে নিজেও করে?[293]

عَنْ نَافِعٍ، أَنَّ عَبْدَ اللَّهِ بْنَ عُمَرَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا، أَخْبَرَهُ أَنَّ النَّاسَ نَزَلُوا مَعَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَرْضَ ثَمُودَ، الحِجْرَ، فَاسْتَقَوْا مِنْ بِئْرِهَا، وَاعْتَجَنُوا بِهِ، فَأَمَرَهُمْ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ «أَنْ يُهَرِيقُوا مَا اسْتَقَوْا مِنْ بِئْرِهَا، وَأَنْ يَعْلِفُوا الإِبِلَ العَجِينَ، وَأَمَرَهُمْ أَنْ يَسْتَقُوا مِنَ البِئْرِ الَّتِي كَانَتْ تَرِدُهَا النَّاقَةُ» تَابَعَهُ أُسَامَةُ، عَنْ نَافِعٍ.

আবদুল্লাহ ইবন উমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, সাহাবীগণ রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহিস সালামের সংগে সামূদ জাতির আবাসস্থল ‘হিজর’ নামক স্থানে অবতরণ করলেন আর তখন তাঁরা এক কূপের পানি মশক ভরে রাখলেন এবং এ পানি দ্বারা আটা গুলে নিলেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহিস সালাম তাদের হুকুম দিলেন, তারা ঐ কূপ থেকে যে পানি ভরে রেখেছে, তা জেন ফেলে দেয় আর পানিতে গোলা আটা যেন উঠগুলোকে খাওয়ায় আর তিনি তাদের হুকুম করলেন তারা যেন ঐ কূপ থেকে মশক ভরে নেয় যেখান থেকে (সালিহ আলাইহিস সালামের উটনীটি পানি পান করত । উসামা (রহ.) নাফি (রহ.) থেকে হাদীস বর্ণনায় উবায়দুল্লাহ (রহ.)-এর অনুসরণ করেছেন।[294]   

عَنِ الزُّهْرِيِّ، قَالَ: أَخْبَرَنِي سَالِمُ بْنُ عَبْدِ اللَّهِ، عَنْ أَبِيهِ، رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمْ: أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَمَّا مَرَّ بِالحِجْرِ قَالَ: «لاَ تَدْخُلُوا مَسَاكِنَ الَّذِينَ ظَلَمُوا أَنْفُسَهُمْ إِلَّا أَنْ تَكُونُوا بَاكِينَ، أَنْ يُصِيبَكُمْ مَا أَصَابَهُمْ» ثُمَّ تَقَنَّعَ بِرِدَائِهِ وَهُوَ عَلَى الرَّحْلِ ".

আবদুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহিস সালাম (তাবুকের পথে) যখন ‘হিজর’ নামক স্থান অতিক্রম করলেন, তখন তিনি বললেন, তোমরা এমন লোকদের আবাসস্থলে প্রবেশ করো না যারা নিজেরাই নিজেদের উপর যুল্ম করেছে। তবে প্রবেশ করতে হলে, ক্রন্দনরত অবস্থায়, যেন তাদের প্রতি যে বিপদ এসেছিল তোমাদের প্রতি অনুরূপ বিপদ না আসে। তারপর রাসূলুল্ললাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহিস সালাম বাহনের উপর বসা অবস্থায় নিজ চাদর দিয়ে চেহারা মোবারক ঢেকে নিলেন।[295] 

عَنْ سَالِمٍ، أَنَّ ابْنَ عُمَرَ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «لاَ تَدْخُلُوا مَسَاكِنَ الَّذِينَ ظَلَمُوا أَنْفُسَهُمْ، إِلَّا أَنْ تَكُونُوا بَاكِينَ، أَنْ يُصِيبَكُمْ مِثْلُ مَا أَصَابَهُمْ».

ইবন উমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহিস সালাম (তাবুকের পথে সাহাবাদেরকে) নির্দেশ দিয়েছেন, তোমরা একমাত্র ক্রন্দনরত অবস্থায় এমন লোকদের আবাস্থালে প্রবেশ করবে যারা নিজেরাই নিজেদের উপর যুল্‌ম করেছে। তাদের উপর যে মুসিবত এসেছে তোমাদের উপরও যেন সে মুসীবত না আসে।[296] 

 

 

ইবরাহীম আলাহিস সালামের ঘটনা

আল্লাহ তা ‘আলা বলেছেন,

﴿ ۞وَلَقَدۡ ءَاتَيۡنَآ إِبۡرَٰهِيمَ رُشۡدَهُۥ مِن قَبۡلُ وَكُنَّا بِهِۦ عَٰلِمِينَ ٥١ إِذۡ قَالَ لِأَبِيهِ وَقَوۡمِهِۦ مَا هَٰذِهِ ٱلتَّمَاثِيلُ ٱلَّتِيٓ أَنتُمۡ لَهَا عَٰكِفُونَ ٥٢ قَالُواْ وَجَدۡنَآ ءَابَآءَنَا لَهَا عَٰبِدِينَ ٥٣ قَالَ لَقَدۡ كُنتُمۡ أَنتُمۡ وَءَابَآؤُكُمۡ فِي ضَلَٰلٖ مُّبِينٖ ٥٤ قَالُوٓاْ أَجِئۡتَنَا بِٱلۡحَقِّ أَمۡ أَنتَ مِنَ ٱللَّٰعِبِينَ ٥٥ قَالَ بَل رَّبُّكُمۡ رَبُّ ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَٱلۡأَرۡضِ ٱلَّذِي فَطَرَهُنَّ وَأَنَا۠ عَلَىٰ ذَٰلِكُم مِّنَ ٱلشَّٰهِدِينَ ٥٦ وَتَٱللَّهِ لَأَكِيدَنَّ أَصۡنَٰمَكُم بَعۡدَ أَن تُوَلُّواْ مُدۡبِرِينَ ٥٧ فَجَعَلَهُمۡ جُذَٰذًا إِلَّا كَبِيرٗا لَّهُمۡ لَعَلَّهُمۡ إِلَيۡهِ يَرۡجِعُونَ ٥٨ قَالُواْ مَن فَعَلَ هَٰذَا بِ‍َٔالِهَتِنَآ إِنَّهُۥ لَمِنَ ٱلظَّٰلِمِينَ ٥٩ قَالُواْ سَمِعۡنَا فَتٗى يَذۡكُرُهُمۡ يُقَالُ لَهُۥٓ إِبۡرَٰهِيمُ ٦٠ قَالُواْ فَأۡتُواْ بِهِۦ عَلَىٰٓ أَعۡيُنِ ٱلنَّاسِ لَعَلَّهُمۡ يَشۡهَدُونَ ٦١ قَالُوٓاْ ءَأَنتَ فَعَلۡتَ هَٰذَا بِ‍َٔالِهَتِنَا يَٰٓإِبۡرَٰهِيمُ ٦٢ قَالَ بَلۡ فَعَلَهُۥ كَبِيرُهُمۡ هَٰذَا فَسۡ‍َٔلُوهُمۡ إِن كَانُواْ يَنطِقُونَ ٦٣ فَرَجَعُوٓاْ إِلَىٰٓ أَنفُسِهِمۡ فَقَالُوٓاْ إِنَّكُمۡ أَنتُمُ ٱلظَّٰلِمُونَ ٦٤ ثُمَّ نُكِسُواْ عَلَىٰ رُءُوسِهِمۡ لَقَدۡ عَلِمۡتَ مَا هَٰٓؤُلَآءِ يَنطِقُونَ ٦٥ قَالَ أَفَتَعۡبُدُونَ مِن دُونِ ٱللَّهِ مَا لَا يَنفَعُكُمۡ شَيۡ‍ٔٗا وَلَا يَضُرُّكُمۡ ٦٦ أُفّٖ لَّكُمۡ وَلِمَا تَعۡبُدُونَ مِن دُونِ ٱللَّهِۚ أَفَلَا تَعۡقِلُونَ ٦٧ قَالُواْ حَرِّقُوهُ وَٱنصُرُوٓاْ ءَالِهَتَكُمۡ إِن كُنتُمۡ فَٰعِلِينَ ٦٨ قُلۡنَا يَٰنَارُ كُونِي بَرۡدٗا وَسَلَٰمًا عَلَىٰٓ إِبۡرَٰهِيمَ ٦٩ وَأَرَادُواْ بِهِۦ كَيۡدٗا فَجَعَلۡنَٰهُمُ ٱلۡأَخۡسَرِينَ ٧٠ ﴾ [الانبياء: ٥١، ٧٠]

“আর আমি তো ইতঃপূর্বে ইবরাহীমকে সঠিক পথের জ্ঞান দিয়েছিলাম এবং আমি তার সম্পর্কে ছিলাম সম্যক অবগত। যখন সে তার পিতা ও তার কওমকে বলল, ‘এ মূর্তিগুলো কী, যেগুলোর পূজায় তোমরা রত রয়েছ’? তারা বলল, ‘আমরা আমাদের পূর্বপুরুষদেরকে এদের পূজা করতে দেখেছি’। সে বলল, ‘তোমরা নিজেরা এবং তোমাদের পূর্বপুরুষরা সবাই রয়েছ স্পষ্ট বিভ্রান্তিতে’। তারা বলল, ‘তুমি কি আমাদের নিকট সত্য নিয়ে এসেছ, নাকি তুমি খেল-তামাশা করছ’? সে বলল, ‘না, বরং তোমাদের রব তো আসমানসমূহ ও যমীনের রব; যিনি এ সবকিছু সৃষ্টি করেছেন। আর এ বিষয়ে আমি অন্যতম সাক্ষী’। আর আল্লাহর কসম, তোমরা চলে যাওয়ার পর আমি তোমাদের মূর্তিগুলোর ব্যাপারে অবশ্যই কৌশল অবলম্বন করব’। অতঃপর সে মূর্তিগুলোকে চূর্ণ-বিচূর্ণ করে দিল তাদের বড়টি ছাড়া, যাতে তারা তাঁর দিকে ফিরে আসে। তারা বলল, ‘আমাদের দেবদেবীগুলোর সাথে কে এমনটি করল? নিশ্চয় সে যালিম’। তাদের কেউ কেউ বলল, ‘আমরা শুনেছি এক যুবক এই মূর্তিগুলোর সমালোচনা করে। তাকে বলা হয় ইবরাহীম’। তারা বলল, ‘তাহলে তাকে লোকজনের সামনে নিয়ে এসো, যাতে তারা দেখতে পারে’। তারা বলল, ‘হে ইবরাহীম, তুমিই কি আমাদের দেবদেবীগুলোর সাথে এরূপ করেছ’? সে বলল, ‘বরং তাদের এ বড়টিই একাজ করেছে। তাই এদেরকেই জিজ্ঞাসা কর, যদি এরা কথা বলতে পারে’। তখন তারা নিজদের দিকে ফিরে গেল[297] এবং একে অন্যকে বলতে লাগল, ‘তোমরাই তো যালিম’। অতঃপর তাদের মাথা অবনত হয়ে গেল এবং বলল, ‘তুমি তো জানই যে, এরা কথা বলতে পারে না’। সে (ইবরাহীম) বলল, ‘তাহলে কি তোমরা আল্লাহর পরিবর্তে এমন কিছুর ইবাদাত কর, যা তোমাদের কোনো উপকার করতে পারে না এবং কোনো ক্ষতিও করতে পারে না’? ‘ধিক তোমাদেরকে এবং আল্লাহর পরিবর্তে তোমরা যাদের ইবাদাত কর তাদেরকে! ‘তবুও কি তোমরা বুঝবে না’? তারা বলল, ‘তাকে আগুনে পুড়িয়ে দাও এবং তোমাদের দেবদেবীদেরকে সাহায্য কর, যদি তোমরা কিছু করতে চাও’। আমি বললাম, ‘হে আগুন, তুমি শীতল ও নিরাপদ হয়ে যাও ইবরাহীমের জন্য’ । আর তারা তার বিরুদ্ধে চক্রান্ত করেছিল, কিন্তু আমি তাদেরকে সবচেয়ে বেশী ক্ষতিগ্রস্ত করে দিলাম”। [সূরা আল-আম্বিয়া: ৫১-৭০]

﴿ ۞وَإِنَّ مِن شِيعَتِهِۦ لَإِبۡرَٰهِيمَ ٨٣ إِذۡ جَآءَ رَبَّهُۥ بِقَلۡبٖ سَلِيمٍ ٨٤ إِذۡ قَالَ لِأَبِيهِ وَقَوۡمِهِۦ مَاذَا تَعۡبُدُونَ ٨٥ أَئِفۡكًا ءَالِهَةٗ دُونَ ٱللَّهِ تُرِيدُونَ ٨٦ فَمَا ظَنُّكُم بِرَبِّ ٱلۡعَٰلَمِينَ ٨٧ فَنَظَرَ نَظۡرَةٗ فِي ٱلنُّجُومِ ٨٨ فَقَالَ إِنِّي سَقِيمٞ ٨٩ فَتَوَلَّوۡاْ عَنۡهُ مُدۡبِرِينَ ٩٠ فَرَاغَ إِلَىٰٓ ءَالِهَتِهِمۡ فَقَالَ أَلَا تَأۡكُلُونَ ٩١ مَا لَكُمۡ لَا تَنطِقُونَ ٩٢ فَرَاغَ عَلَيۡهِمۡ ضَرۡبَۢا بِٱلۡيَمِينِ ٩٣ فَأَقۡبَلُوٓاْ إِلَيۡهِ يَزِفُّونَ ٩٤ قَالَ أَتَعۡبُدُونَ مَا تَنۡحِتُونَ ٩٥ وَٱللَّهُ خَلَقَكُمۡ وَمَا تَعۡمَلُونَ ٩٦ قَالُواْ ٱبۡنُواْ لَهُۥ بُنۡيَٰنٗا فَأَلۡقُوهُ فِي ٱلۡجَحِيمِ ٩٧ فَأَرَادُواْ بِهِۦ كَيۡدٗا فَجَعَلۡنَٰهُمُ ٱلۡأَسۡفَلِينَ ٩٨ وَقَالَ إِنِّي ذَاهِبٌ إِلَىٰ رَبِّي سَيَهۡدِينِ ٩٩ رَبِّ هَبۡ لِي مِنَ ٱلصَّٰلِحِينَ ١٠٠ فَبَشَّرۡنَٰهُ بِغُلَٰمٍ حَلِيمٖ ١٠١ فَلَمَّا بَلَغَ مَعَهُ ٱلسَّعۡيَ قَالَ يَٰبُنَيَّ إِنِّيٓ أَرَىٰ فِي ٱلۡمَنَامِ أَنِّيٓ أَذۡبَحُكَ فَٱنظُرۡ مَاذَا تَرَىٰۚ قَالَ يَٰٓأَبَتِ ٱفۡعَلۡ مَا تُؤۡمَرُۖ سَتَجِدُنِيٓ إِن شَآءَ ٱللَّهُ مِنَ ٱلصَّٰبِرِينَ ١٠٢ فَلَمَّآ أَسۡلَمَا وَتَلَّهُۥ لِلۡجَبِينِ ١٠٣ وَنَٰدَيۡنَٰهُ أَن يَٰٓإِبۡرَٰهِيمُ ١٠٤ قَدۡ صَدَّقۡتَ ٱلرُّءۡيَآۚ إِنَّا كَذَٰلِكَ نَجۡزِي ٱلۡمُحۡسِنِينَ ١٠٥ إِنَّ هَٰذَا لَهُوَ ٱلۡبَلَٰٓؤُاْ ٱلۡمُبِينُ ١٠٦ وَفَدَيۡنَٰهُ بِذِبۡحٍ عَظِيمٖ ١٠٧ ﴾ [الصافات: ٨٣، ١٠٧]

“আর নিশ্চয় ইবরাহীম তার দীনের অনুসারীদের অন্তর্ভুক্ত। যখন সে বিশুদ্ধচিত্তে তার রবের নিকট উপস্থিত হয়েছিল। যখন সে তার পিতা ও তার কওমকে বলেছিল, ‘তোমরা কিসের ইবাদত কর’? তোমরা কি আল্লাহর পরিবর্তে মিথ্যা উপাস্যগুলোকে চাও’? ‘তাহলে সকল সৃষ্টির রব সম্পর্কে তোমাদের ধারণা কী’? অতঃপর সে তারকারাজির মধ্যে একবার দৃষ্টি দিল। তারপর বলল, ‘আমি তো অসুস্থ’। অতঃপর তারা পৃষ্ঠপ্রদর্শন করে তার কাছ থেকে চলে গেল। তারপর চুপে চুপে সে তাদের দেবতাদের কাছে গেল এবং বলল, ‘তোমরা কি খাবে না?’ তোমাদের কী হয়েছে যে, তোমরা কথা বলছ না’? অতঃপর সে তাদের উপর সজোরে আঘাত হানল। তখন লোকেরা তার দিকে ছুটে আসল। সে বলল, ‘তোমরা নিজেরা খোদাই করে যেগুলো বানাও, তোমরা কি সেগুলোর উপাসনা কর’, অথচ আল্লাহই তোমাদেরকে এবং তোমরা যা কর তা সৃষ্টি করেছেন’? তারা বলল, ‘তার জন্য একটি স্থাপনা তৈরী কর, তারপর তাকে জ্বলন্ত আগুনে নিক্ষেপ কর’। আর তারা তার ব্যাপারে একটা ষড়যন্ত্র করতে চেয়েছিল, কিন্তু আমি তাদেরকে সম্পূর্ণ পরাভূত করে দিলাম। আর সে বলল, ‘আমি আমার রবের দিকে যাচ্ছি, তিনি অবশ্যই আমাকে হিদায়াত করবেন।‘হে আমার রব, আমাকে সৎকর্মশীল সন্তান দান করুন’। অতঃপর তাকে আমি পরম ধৈর্যশীল একজন পুত্র সন্তানের সুসংবাদ দিলাম। অতঃপর যখন সে তার সাথে চলাফেরা করার বয়সে পৌঁছল, তখন সে বলল, ‘হে প্রিয় বৎস, আমি স্বপ্নে দেখেছি যে, আমি তোমাকে যবেহ করছি, অতএব দেখ তোমার কী অভিমত’; সে বলল, ‘হে আমার পিতা, আপনাকে যা আদেশ করা হয়েছে, আপনি তাই করুন। আমাকে ইনশাআল্লাহ আপনি অবশ্যই ধৈর্যশীলদের অন্তর্ভুক্ত পাবেন’। অতঃপর তারা উভয়ে যখন আত্মসমর্পণ করল এবং সে তাকে[298] কাত করে শুইয়ে দিল তখন আমি তাকে আহবান করে বললাম, ‘হে ইবরাহীম, তুমি তো স্বপ্নকে সত্যে পরিণত করেছ। নিশ্চয় আমি এভাবেই সৎকর্মশীলদের পুরস্কৃত করে থাকি’।‘নিশ্চয় এটা সুস্পষ্ট পরীক্ষা’। আর আমি এক মহান যবেহের[299] বিনিময়ে তাকে মুক্ত করলাম”। [সূরা আস্-সাফফাত: ৮৩-১০৭]

আল্লাহ আরো বলেছেন,

﴿ وَإِذۡ قَالَ إِبۡرَٰهِيمُ رَبِّ ٱجۡعَلۡ هَٰذَا ٱلۡبَلَدَ ءَامِنٗا وَٱجۡنُبۡنِي وَبَنِيَّ أَن نَّعۡبُدَ ٱلۡأَصۡنَامَ ٣٥ رَبِّ إِنَّهُنَّ أَضۡلَلۡنَ كَثِيرٗا مِّنَ ٱلنَّاسِۖ فَمَن تَبِعَنِي فَإِنَّهُۥ مِنِّيۖ وَمَنۡ عَصَانِي فَإِنَّكَ غَفُورٞ رَّحِيمٞ ٣٦ رَّبَّنَآ إِنِّيٓ أَسۡكَنتُ مِن ذُرِّيَّتِي بِوَادٍ غَيۡرِ ذِي زَرۡعٍ عِندَ بَيۡتِكَ ٱلۡمُحَرَّمِ رَبَّنَا لِيُقِيمُواْ ٱلصَّلَوٰةَ فَٱجۡعَلۡ أَفۡ‍ِٔدَةٗ مِّنَ ٱلنَّاسِ تَهۡوِيٓ إِلَيۡهِمۡ وَٱرۡزُقۡهُم مِّنَ ٱلثَّمَرَٰتِ لَعَلَّهُمۡ يَشۡكُرُونَ ٣٧ ﴾ [ابراهيم: ٣٥، ٣٧]

“আর স্মরণ কর ‘যখন ইবরাহীম বলল, ‘হে আমার রব, আপনি এ শহরকে নিরাপদ করে দিন এবং আমাকে ও আমার সন্তানদেরকে মূর্তি পূজা থেকে দূরে রাখুন’। হে আমার রব, নিশ্চয় এসব মূর্তি অনেক মানুষকে পথভ্রষ্ট করেছে, সুতরাং যে আমার অনুসরণ করেছে, নিশ্চয় সে আমার দলভুক্ত, আর যে আমার অবাধ্য হয়েছে, তবে নিশ্চয় আপনি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু’।হে আমাদের রব, নিশ্চয় আমি আমার কিছু বংশধরদেরকে ফসলহীন উপত্যকায় তোমার পবিত্র ঘরের নিকট বসতি স্থাপন করালাম, হে আমাদের রব, যাতে তারা সালাত কায়েম করে। সুতরাং কিছু মানুষের হৃদয় আপনি তাদের দিকে ঝুঁকিয়ে দিন এবং তাদেরকে রিযিক প্রদান করুন ফল-ফলাদি থেকে, আশা করা যায় তারা শুকরিয়া আদায় করবে”। [সূরা: ইবরাহীম: ৩৫-৩৭]

আল্লাহ আরো বলেছেন,

﴿ وَإِذۡ قَالَ إِبۡرَٰهِ‍ۧمُ رَبِّ أَرِنِي كَيۡفَ تُحۡيِ ٱلۡمَوۡتَىٰۖ قَالَ أَوَ لَمۡ تُؤۡمِنۖ قَالَ بَلَىٰ وَلَٰكِن لِّيَطۡمَئِنَّ قَلۡبِيۖ قَالَ فَخُذۡ أَرۡبَعَةٗ مِّنَ ٱلطَّيۡرِ فَصُرۡهُنَّ إِلَيۡكَ ثُمَّ ٱجۡعَلۡ عَلَىٰ كُلِّ جَبَلٖ مِّنۡهُنَّ جُزۡءٗا ثُمَّ ٱدۡعُهُنَّ يَأۡتِينَكَ سَعۡيٗاۚ وَٱعۡلَمۡ أَنَّ ٱللَّهَ عَزِيزٌ حَكِيمٞ ٢٦٠ ﴾ [البقرة: ٢٦٠]

“আর যখন ইবরাহীম বলল ‘হে, আমার রব, আমাকে দেখান, কিভাবে আপনি মৃতদেরকে জীবিত করেন। তিনি বললেন, তুমি কি বিশ্বাস করনি’? সে বলল, ‘অবশ্যই হ্যাঁ, কিন্তু আমার অন্তর যাতে প্রশান্ত হয়’। তিনি বললেন, ‘তাহলে তুমি চারটি পাখি নাও। তারপর সেগুলোকে তোমার প্রতি পোষ মানাও। অতঃপর প্রতিটি পাহাড়ে সেগুলোর টুকরো অংশ রেখে আস। তারপর সেগুলোকে ডাক, সেগুলো দৌড়ে আসবে তোমার নিকট। আর জেনে রাখ, নিশ্চয় আল্লাহ পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়”। [সূরা আল-বাকারা: ২৬০]

আল্লাহ আরো বলেছেন,

﴿ وَلَقَدۡ جَآءَتۡ رُسُلُنَآ إِبۡرَٰهِيمَ بِٱلۡبُشۡرَىٰ قَالُواْ سَلَٰمٗاۖ قَالَ سَلَٰمٞۖ فَمَا لَبِثَ أَن جَآءَ بِعِجۡلٍ حَنِيذٖ ٦٩ فَلَمَّا رَءَآ أَيۡدِيَهُمۡ لَا تَصِلُ إِلَيۡهِ نَكِرَهُمۡ وَأَوۡجَسَ مِنۡهُمۡ خِيفَةٗۚ قَالُواْ لَا تَخَفۡ إِنَّآ أُرۡسِلۡنَآ إِلَىٰ قَوۡمِ لُوطٖ ٧٠ وَٱمۡرَأَتُهُۥ قَآئِمَةٞ فَضَحِكَتۡ فَبَشَّرۡنَٰهَا بِإِسۡحَٰقَ وَمِن وَرَآءِ إِسۡحَٰقَ يَعۡقُوبَ ٧١ قَالَتۡ يَٰوَيۡلَتَىٰٓ ءَأَلِدُ وَأَنَا۠ عَجُوزٞ وَهَٰذَا بَعۡلِي شَيۡخًاۖ إِنَّ هَٰذَا لَشَيۡءٌ عَجِيبٞ ٧٢ قَالُوٓاْ أَتَعۡجَبِينَ مِنۡ أَمۡرِ ٱللَّهِۖ رَحۡمَتُ ٱللَّهِ وَبَرَكَٰتُهُۥ عَلَيۡكُمۡ أَهۡلَ ٱلۡبَيۡتِۚ إِنَّهُۥ حَمِيدٞ مَّجِيدٞ ٧٣ فَلَمَّا ذَهَبَ عَنۡ إِبۡرَٰهِيمَ ٱلرَّوۡعُ وَجَآءَتۡهُ ٱلۡبُشۡرَىٰ يُجَٰدِلُنَا فِي قَوۡمِ لُوطٍ ٧٤ إِنَّ إِبۡرَٰهِيمَ لَحَلِيمٌ أَوَّٰهٞ مُّنِيبٞ ٧٥ يَٰٓإِبۡرَٰهِيمُ أَعۡرِضۡ عَنۡ هَٰذَآۖ إِنَّهُۥ قَدۡ جَآءَ أَمۡرُ رَبِّكَۖ وَإِنَّهُمۡ ءَاتِيهِمۡ عَذَابٌ غَيۡرُ مَرۡدُودٖ ٧٦ ﴾ [هود: ٦٩، ٧٦]

“আর অবশ্যই আমার ফেরেশতারা সুসংবাদ নিয়ে ইবরাহীমের কাছে আসল, তারা বলল, ‘সালাম’। সেও বলল, ‘সালাম’। বিলম্ব না করে সে একটি ভুনা গো বাছুর নিয়ে আসল। অতঃপর যখন সে দেখতে পেল, তাদের হাত এর প্রতি পৌঁছছে না, তখন তাদেরকে অস্বাভাবিক মনে করল এবং সে তাদের থেকে ভীতি অনুভব করল। তারা বলল, ‘ভয় করো না, নিশ্চয় আমরা লূতের কওমের কাছে প্রেরিত হয়েছি’। আর তার স্ত্রী দাঁড়ানো ছিল, সে হেসে উঠল। অতঃপর আমি তাকে সুসংবাদ দিলাম ইসহাকের ও ইসহাকের পরে ইয়া‘কূবের। সে বলল, ‘হায়, কী আশ্চর্য! আমি সন্তান প্রসব করব, অথচ আমি বৃদ্ধা, আর এ আমার স্বামী, বৃদ্ধ? এটা তো অবশ্যই এক আশ্চর্যজনক ব্যাপার’! তারা বলল, ‘আল্লাহর সিদ্ধান্তে তুমি আশ্চর্য হচ্ছ? হে নবী পরিবার, তোমাদের উপর আল্লাহর রহমত ও তাঁর বরকত। নিশ্চয় তিনি প্রশংসিত সম্মানিত’। অতঃপর যখন ইবরাহীম থেকে ভয় দূর হল এবং তার কাছে সুসংবাদ এল, তখন সে লূতের কওম সম্পর্কে আমার সাথে বাদানুবাদ করতে লাগল। নিশ্চয় ইবরাহীম অত্যন্ত সহনশীল, অধিক অনুনয় বিনয়কারী, আল্লাহমুখী। হে ইবরাহীম, তুমি এ থেকে বিরত হও। নিশ্চয় তোমার রবের সিদ্ধান্ত এসে গেছে এবং নিশ্চয় তাদের উপর আসবে আযাব, যা প্রতিহত হবার নয়”। [সূরা: হূদ: ৬৯-৭৬]

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: لَيْلَةَ أُسْرِيَ بِهِ: " لَقِيتُ مُوسَى، قَالَ: فَنَعَتَهُ، فَإِذَا رَجُلٌ - حَسِبْتُهُ قَالَ - مُضْطَرِبٌ رَجِلُ الرَّأْسِ، كَأَنَّهُ مِنْ رِجَالِ شَنُوءَةَ، قَالَ: وَلَقِيتُ عِيسَى فَنَعَتَهُ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ: - رَبْعَةٌ أَحْمَرُ، كَأَنَّمَا خَرَجَ مِنْ دِيمَاسٍ - يَعْنِي الحَمَّامَ -، وَرَأَيْتُ إِبْرَاهِيمَ وَأَنَا أَشْبَهُ وَلَدِهِ بِهِ، قَالَ: وَأُتِيتُ بِإِنَاءَيْنِ، أَحَدُهُمَا لَبَنٌ وَالآخَرُ فِيهِ خَمْرٌ، فَقِيلَ لِي: خُذْ أَيَّهُمَا شِئْتَ، فَأَخَذْتُ اللَّبَنَ فَشَرِبْتُهُ، فَقِيلَ لِي: هُدِيتَ الفِطْرَةَ، أَوْ أَصَبْتَ الفِطْرَةَ، أَمَا إِنَّكَ لَوْ أَخَذْتَ الخَمْرَ غَوَتْ أُمَّتُكَ".

আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, মিরাজ রজনীতি আমি মূসা আলাইহিস সালামের দেখা পেয়েছি। আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মূসা আলাইহিস সালামের আকৃতি বর্ণনা করেছেন। মূসা আলাইহিস সালাম একজন দীর্ঘদেহী, মাথায় কোকড়ানো চুলবিশিষ্ট, যেন শানুআ গোত্রের একজন লোক। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আমি ঈসা আলাইহিস সালামের দেখা পেয়েছি। এরপর তিনি তাঁর আকৃতি বর্ণনা করে বলেছেন, তিনি হলেন মাঝারি গড়নের গৌর বর্ণবিশিষ্ট, যেন তিনি এই মাত্র হাম্মামখানা হত বেরিয়ে এসেছেন। আর আমি ইব্রাহীম আলাইহিস সালামকেও দেখেছি। তাঁর সন্তানদের মধ্যে আকৃতিতে আমিই তার বেশী সাদৃশ্যপূর্ণ। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, তারপর আমার সামনে দু’টি পেয়ালা আনা হল। একটিতে দুধ, অপরটিতে শরাব। আমাকে বলা হলো, আপনি যেটি ইচ্ছা গ্রহণ করতে পারেন। আমি দুধের পেয়ালাটি গ্রহণ করলাম এবং তা পান করলাম। তখন আমাকে বলা হলো, আপনি ফিত্রাত বা স্বাভাবিকেই গ্রহণ করে নিয়েছেন। দেখুন! আপনি যদি শরাব গ্রহণ করতেন, তাহলে আপনার উম্মত পথভ্রষ্ট হয়ে যেত। [300] 

عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قَالَ: " إِنَّكُمْ مَحْشُورُونَ حُفَاةً عُرَاةً غُرْلًا، ثُمَّ قَرَأَ: {كَمَا بَدَأْنَا أَوَّلَ خَلْقٍ نُعِيدُهُ وَعْدًا عَلَيْنَا إِنَّا كُنَّا فَاعِلِينَ} [الأنبياء: 104]، وَأَوَّلُ مَنْ يُكْسَى يَوْمَ القِيَامَةِ إِبْرَاهِيمُ، وَإِنَّ أُنَاسًا مِنْ أَصْحَابِي يُؤْخَذُ بِهِمْ ذَاتَ الشِّمَالِ، فَأَقُولُ أَصْحَابِي أَصْحَابِي، فَيَقُولُ: إِنَّهُمْ لَمْ يَزَالُوا مُرْتَدِّينَ عَلَى أَعْقَابِهِمْ مُنْذُ فَارَقْتَهُمْ، فَأَقُولُ كَمَا قَالَ العَبْدُ الصَّالِحُ ": {وَكُنْتُ عَلَيْهِمْ شَهِيدًا مَا دُمْتُ فِيهِمْ فَلَمَّا تَوَفَّيْتَنِي} [المائدة: 117]- إِلَى قَوْلِهِ - {العَزِيزُ الحَكِيمُ} [البقرة: 129].

ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, নিশ্চয়ই তোমাদের হাশর ময়দানে খালি পা, বিবস্ত্র এবং খাতনাবিহীন অবস্তায় উপস্থিত করা হবে। এরপর তিনি (এ কথার সমর্থনে) পবিত্র কুরআনের আয়াতটি তিলাওয়াত করলেন, “যে ভাবে আমি প্রথমে সৃষ্টির সুচনা করেছিলাম, সেভাবে পুনরায় সৃষ্টি করব। এটি আমার প্রতিশ্রুতি। এর বাস্তবায়ন আমি করবই”। [আম্বিয়া : ১০৪] আর কিয়ামতের দিন সর্বপ্রথম যাকে কাপর পরানো হবে তিনি হবেন ইব্রাহীম আলাইহিস সালাম। আর (সে দিন) আমার অনুসারীদের মধ্য হতে কয়েকজনকে পাকড়াও করে বাম দিকে অর্থাৎ জাহান্নামের দিকে নিয়ে যাওয়া হবে । তখন আমি বলব, এরা তো আমার অনুসারী, এরা তো আমার অনুসারী! এ সময় আল্লাহ্বলবেন, যখন আপনি এদের থেকে বিদায় নেন, তখন তারা পূর্ব ধর্মে ফিরে যায়। কাজেই তারা আপনার সাহাবী নয়। তখন আল্লাহ্‌র নেক বান্দা ঈসা আলাইহিস সালাম যেমন বলেছিলেন; তেমন আমি বলব, “হে আল্লাহ্! আমি যতদিন তাদের মাঝে ছিলাম, ততদিন আমি ছিলাম তাদের অবস্থার পর্যবেক্ষক। আপনি পরক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়”। [বাকারা: ১২৯][301]

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، قَالَ: قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: " هَاجَرَ إِبْرَاهِيمُ عَلَيْهِ السَّلاَمُ بِسَارَةَ، فَدَخَلَ بِهَا قَرْيَةً فِيهَا مَلِكٌ مِنَ المُلُوكِ، أَوْ جَبَّارٌ مِنَ الجَبَابِرَةِ، فَقِيلَ: دَخَلَ إِبْرَاهِيمُ بِامْرَأَةٍ هِيَ مِنْ أَحْسَنِ النِّسَاءِ، فَأَرْسَلَ إِلَيْهِ: أَنْ يَا إِبْرَاهِيمُ مَنْ هَذِهِ الَّتِي مَعَكَ؟ قَالَ: أُخْتِي، ثُمَّ رَجَعَ إِلَيْهَا فَقَالَ: لاَ تُكَذِّبِي حَدِيثِي، فَإِنِّي أَخْبَرْتُهُمْ أَنَّكِ أُخْتِي، وَاللَّهِ إِنْ عَلَى الأَرْضِ مُؤْمِنٌ غَيْرِي وَغَيْرُكِ، فَأَرْسَلَ بِهَا إِلَيْهِ فَقَامَ إِلَيْهَا، فَقَامَتْ تَوَضَّأُ وَتُصَلِّي، فَقَالَتْ: اللَّهُمَّ إِنْ كُنْتُ آمَنْتُ بِكَ وَبِرَسُولِكَ، وَأَحْصَنْتُ فَرْجِي، إِلَّا عَلَى زَوْجِي فَلاَ تُسَلِّطْ عَلَيَّ الكَافِرَ، فَغُطَّ حَتَّى رَكَضَ بِرِجْلِهِ "، قَالَ الأَعْرَجُ: قَالَ أَبُو سَلَمَةَ بْنُ عَبْدِ الرَّحْمَنِ: إِنَّ أَبَا هُرَيْرَةَ، قَالَ: " قَالَتْ: اللَّهُمَّ إِنْ يَمُتْ يُقَالُ هِيَ قَتَلَتْهُ، فَأُرْسِلَ ثُمَّ قَامَ إِلَيْهَا، فَقَامَتْ تَوَضَّأُ تُصَلِّي، وَتَقُولُ: اللَّهُمَّ إِنْ كُنْتُ آمَنْتُ بِكَ وَبِرَسُولِكَ وَأَحْصَنْتُ فَرْجِي إِلَّا عَلَى زَوْجِي، فَلاَ تُسَلِّطْ عَلَيَّ هَذَا الكَافِرَ، فَغُطَّ حَتَّى رَكَضَ بِرِجْلِهِ "، قَالَ عَبْدُ الرَّحْمَنِ، قَالَ أَبُو سَلَمَةَ: قَالَ أَبُو هُرَيْرَةَ: " فَقَالَتْ: اللَّهُمَّ إِنْ يَمُتْ فَيُقَالُ هِيَ قَتَلَتْهُ، فَأُرْسِلَ فِي الثَّانِيَةِ، أَوْ فِي الثَّالِثَةِ، فَقَالَ: وَاللَّهِ مَا أَرْسَلْتُمْ إِلَيَّ إِلَّا شَيْطَانًا، ارْجِعُوهَا إِلَى إِبْرَاهِيمَ، وَأَعْطُوهَا آجَرَ فَرَجَعَتْ إِلَى إِبْرَاهِيمَ عَلَيْهِ السَّلاَمُ، فَقَالَتْ: أَشَعَرْتَ أَنَّ اللَّهَ كَبَتَ الكَافِرَ وَأَخْدَمَ وَلِيدَةً ".

আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু সূত্রে বর্ণিত, রাসূলূল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম তাঁর স্ত্রী সারা’কে নিয়ে হিজরত করলেন এবং এমন এক জনপদে প্রবেশ করলেন, যেখানে এক বাদশাহ ছিল, অথবা বললেন, এক অত্যাচারী শাসক ছিল। তাকে বলা হলো যে, ইবরাহীম (নামক এক ব্যক্তি) এক পরমা সুন্দরী নারীকে নিয়ে (আমাদের এখানে) প্রবেশ করেছে। সে তখন তাঁর কাছে লোক পাঠিয়ে জিজ্ঞাসা করল, হে ইবরাহীম, তোমার সাথে এ নারী কে? তিনি বললেন, আমার বোন। তারপর তিনি সারা’র কাছে ফিরে এসে বললেন, তুমি আমার কথা মিথ্যা প্রতিপন্ন করোনা। আমি তাদেরকে বলেছি যে, তুমি আমার বোন। মহান আল্লাহ্ তা’আলার কসম. দুনিয়াতে (এখন) তুমি আর আমি ছাড়া আর কেউ মুমিন নেই। সুতরাং আমি ও তুমি দ্বীনী ভাই-বোন। এরপর ইবরাহীম আলাইহিস সালাম (বাদশাহর নির্দেশে) সারা’কে বাদশাহর কাছ পাঠিয়ে দিলেন। বাদশাহ তাঁর দিকে অগ্রসর হল। সারা উযু করে সালাত আদায়ে দাঁড়িয়ে গেলেন এবং এ দুআ করলেন, হে মহান আল্লাহ্ তা’আলা, আমিও তোমার উপর এবং তোমার রাসূলের উপর ঈমান এনেছি এবং আমার স্বামী ছাড়া সকল থেকে আমার লজ্জাস্থানের সংরক্ষন করেছি। তুমি এই কাফিরকে আমার উপর ক্ষমতা দিওনা। তখন বাদশাহ বেহুঁশ হয়ে পড়ে মাটিতে পায়ের আঘাত করতে লাগল। তখন সারা বললেন, আয় আল্লাহ্ রাব্বুল আলামিন, এ যদি মারা যায়, তবে লোকে বলবে, স্ত্রীলোকটি একে হত্যা করেছে। তখন সে সংজ্ঞা ফিরে পেল। এভাবে দুইবার বা তিনবারের পর বাদশাহ বলল, মহান আল্লাহ্ তা’আলার কসম, তোমরা আমার নিকট এক শয়তানকে পাঠিয়েছ। একে ইবরাহীমের কাছে ফিরিয়ে দাও এবং তার জন্য হাজেরাকে হাদীয়া স্বরুপ দান কর। সারা ইবরাহীম আলাইহিস সালামের নিকট ফিরে এসে বললেন, আপনি জানেন কি, মহান আল্লাহ্ তা’আলা কাফিরকে লজ্জিত ও নিরাশ করেছেন এবং সে এক বাঁদি হাদীয়া হিসাবে দেয়।[302]

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ: قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، ح حَدَّثَنَا سُلَيْمَانُ، عَنْ حَمَّادِ بْنِ زَيْدٍ، عَنْ أَيُّوبَ، عَنْ مُحَمَّدٍ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ: قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: " لَمْ يَكْذِبْ إِبْرَاهِيمُ إِلَّا ثَلاَثَ كَذَبَاتٍ: بَيْنَمَا إِبْرَاهِيمُ مَرَّ بِجَبَّارٍ وَمَعَهُ سَارَةُ فَذَكَرَ الحَدِيثَ، فَأَعْطَاهَا هَاجَرَ، قَالَتْ: كَفَّ اللَّهُ يَدَ الكَافِرِ وَأَخْدَمَنِي آجَرَ " قَالَ أَبُو هُرَيْرَةَ: «فَتِلْكَ أُمُّكُمْ يَا بَنِي مَاءِ السَّمَاءِ».

আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ইব্রাহীম আলাইহিস সালাম তিনবার ব্যতীত কোনো মিথ্যা কথা বলেন নি। অত্যাচারী বাদশাহর দেশে তাকে যেতে হয়েছিল এবং তার সাথে ‘সারা’ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা ছিলেন। এরপর রাবী পূর্ণ হাদীস বর্ণনা করেন। (সেই বাদশাহ) হাজেরাকে তাঁর সেবার জন্য তাঁকে দান করেন। তিনি ফিরে এসে বললেন, আলস্নাহ্ কাফের থেকে আমাকে নিরাপত্তা দান করেছেন এবং আমার খেদমতের জন্য আজেরা (হাজেরা)-কে দিয়েছেন। আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, ‘‘হে আকাশের পানির সমত্মানগণ (কুরাইশ)! এ হাজেরাই তোমাদের মা।’’[303]

عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا، قَالَ: دَخَلَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ البَيْتَ، فَوَجَدَ فِيهِ صُورَةَ إِبْرَاهِيمَ، وَصُورَةَ مَرْيَمَ، فَقَالَ «أَمَا لَهُمْ، فَقَدْ سَمِعُوا أَنَّ المَلاَئِكَةَ لاَ تَدْخُلُ بَيْتًا فِيهِ صُورَةٌ، هَذَا إِبْرَاهِيمُ مُصَوَّرٌ، فَمَا لَهُ يَسْتَقْسِمُ».

ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদা কা’বা ঘরে প্রবেশ করলেন। সেখানে তিনি ইব্রাহীম আলাইহিস সালাম ও মারইয়ামের ছবি দেখতে পেলেন। তখন তিনি বললেন, তাদের (কুরাইশদের) কি হল? অথচ তারা তো শুনতে পেয়েছে, যে ঘরে প্রাণীর ছবি থাকবে, সে ঘরে ফিরিশতাগণ প্রবেশ করেন না। এ যে ইব্রাহীমের ছবি বানানো হয়েছে, (ভাগ্য নিরধারক জুয়ার তীর নিক্ষেপরত অবস্থায়) তিনি কেন ভাগ্য নির্ধারক তীর নিক্ষেপ করবেন![304]

عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا، أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، لَمَّا رَأَى الصُّوَرَ فِي البَيْتِ لَمْ يَدْخُلْ حَتَّى أَمَرَ بِهَا فَمُحِيَتْ، وَرَأَى إِبْرَاهِيمَ وَإِسْمَاعِيلَ عَلَيْهِمَا السَّلاَمُ بِأَيْدِيهِمَا الأَزْلاَمُ، فَقَالَ «قَاتَلَهُمُ اللَّهُ، وَاللَّهِ إِنِ اسْتَقْسَمَا بِالأَزْلاَمِ قَطُّ».

ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন কা’বা ঘরে ছবিসমূহ দেকতে পেলেন, তখন যে পর্যন্ত তাঁর নির্দেশ তা মিটিয়ে ফেলা না হলো, সে পর্যন্ত তিনি তাতে প্রবেশ করলেন না। আর তিনি দেখতে পেলেন, ইব্রাহীম এবং ইসমাঈল আলাইহিস সালামের হাতে ভাগ্য নিরধারণের তীর। তখন তিনি বললেন, আল্লাহ তাদের (কুরাইশদের) অপর লানত বর্ষণ করুক। আল্লাহ্‌র কসম, তারা দু’জন কখনও ভাগ্য নির্ধারক তীর করেন নি।[305]

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قَالَ: " يَلْقَى إِبْرَاهِيمُ أَبَاهُ آزَرَ يَوْمَ القِيَامَةِ، وَعَلَى وَجْهِ آزَرَ قَتَرَةٌ وَغَبَرَةٌ، فَيَقُولُ لَهُ إِبْرَاهِيمُ: أَلَمْ أَقُلْ لَكَ لاَ تَعْصِنِي، فَيَقُولُ أَبُوهُ: فَاليَوْمَ لاَ أَعْصِيكَ، فَيَقُولُ إِبْرَاهِيمُ: يَا رَبِّ إِنَّكَ وَعَدْتَنِي أَنْ لاَ تُخْزِيَنِي يَوْمَ يُبْعَثُونَ، فَأَيُّ خِزْيٍ أَخْزَى مِنْ أَبِي الأَبْعَدِ؟ فَيَقُولُ اللَّهُ تَعَالَى: " إِنِّي حَرَّمْتُ الجَنَّةَ عَلَى الكَافِرِينَ، ثُمَّ يُقَالُ: يَا إِبْرَاهِيمُ، مَا تَحْتَ رِجْلَيْكَ؟ فَيَنْظُرُ، فَإِذَا هُوَ بِذِيخٍ مُلْتَطِخٍ، فَيُؤْخَذُ بِقَوَائِمِهِ فَيُلْقَى فِي النَّارِ ".

আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, কিয়ামতের দিন ইব্রাহীম আলাইহিস সালাম তাঁর পিতা আযরের দেখা পাবেন। আযরের মুখমণ্ডল কালিমা এবং ধুলাবালি থাকবে। তখন ইব্রাহীম আলাইহিস সালাম তাকে বলবেন, আমি কি পৃথিবীতে আপনাকে বলিনি যে, আমার অবাধ্যতা করবেন না? তখন তাঁর পিতা বলবে, আজ আর তোমার অবাধ্যতা করব না। এরপর ইব্রাহীম আলাইহিস সালাম (আল্লাহ্‌র কাছে) আবেদন করবেন, হে আমার রব! আপনি আমার সাথে ওয়াদা করেছিলেন যে, হাশরের দিন আপনি আমাকে লজ্জিত করবেন না। আমার পিতা রহমর থকে বঞ্চিত হওয়ার থেকে অধিক অপমান আমার জন্য আর কি হতে পারে? তখন আল্লাহ বলবেন, আমি কাফিরদের জন্য জান্নাত হারাম করে দিয়েছি। পুনরায় বলা হবে, হে ইব্রাহীম! তোমার পদতলে কি? তখন তিনি নিচের দিকে তাকাবেন। হঠাৎ দেখতে পাবেন তাঁর পিতার স্থানে সরবশরীরে রক্তমাখা আক্তি জানোয়ার পড়ে রয়েছে। এর চার পা বেঁধে জাহান্নামে ছুঁড়ে ফেলা হবে।[306]

عَنْ أَبِي سَعِيدٍ، مَوْلَى الْمَهْرِيِّ، أَنَّهُ أَصَابَهُمْ بِالْمَدِينَةِ جَهْدٌ وَشِدَّةٌ، وَأَنَّهُ أَتَى أَبَا سَعِيدٍ الْخُدْرِيَّ، فَقَالَ لَهُ: إِنِّي كَثِيرُ الْعِيَالِ، وَقَدْ أَصَابَتْنَا شِدَّةٌ، فَأَرَدْتُ أَنْ أَنْقُلَ عِيَالِي إِلَى بَعْضِ الرِّيفِ، فَقَالَ أَبُو سَعِيدٍ: لَا تَفْعَلْ، الْزَمِ الْمَدِينَةَ، فَإِنَّا خَرَجْنَا مَعَ نَبِيِّ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ - أَظُنُّ أَنَّهُ قَالَ - حَتَّى قَدِمْنَا عُسْفَانَ، فَأَقَامَ بِهَا لَيَالِيَ، فَقَالَ النَّاسُ: وَاللهِ مَا نَحْنُ هَا هُنَا فِي شَيْءٍ، وَإِنَّ عِيَالَنَا لَخُلُوفٌ مَا نَأْمَنُ عَلَيْهِمْ، فَبَلَغَ ذَلِكَ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَقَالَ: «مَا هَذَا الَّذِي بَلَغَنِي مِنْ حَدِيثِكُمْ؟» - مَا أَدْرِي كَيْفَ قَالَ - «وَالَّذِي أَحْلِفُ بِهِ - أَوْ وَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ - لَقَدْ هَمَمْتُ - أَوْ إِنْ شِئْتُمْ لَا أَدْرِي أَيَّتَهُمَا قَالَ - لَآمُرَنَّ بِنَاقَتِي تُرْحَلُ، ثُمَّ لَا أَحُلُّ لَهَا عُقْدَةً حَتَّى أَقْدَمَ الْمَدِينَةَ»، وَقَالَ: «اللهُمَّ إِنَّ إِبْرَاهِيمَ حَرَّمَ مَكَّةَ فَجَعَلَهَا حَرَمًا، وَإِنِّي حَرَّمْتُ الْمَدِينَةَ حَرَامًا مَا بَيْنَ مَأْزِمَيْهَا، أَنْ لَا يُهْرَاقَ فِيهَا دَمٌ، وَلَا يُحْمَلَ فِيهَا سِلَاحٌ لِقِتَالٍ، وَلَا تُخْبَطَ فِيهَا شَجَرَةٌ إِلَّا لِعَلْفٍ، اللهُمَّ بَارِكْ لَنَا فِي مَدِينَتِنَا، اللهُمَّ بَارِكْ لَنَا فِي صَاعِنَا، اللهُمَّ بَارِكْ لَنَا فِي مُدِّنَا، اللهُمَّ بَارِكْ لَنَا فِي صَاعِنَا، اللهُمَّ بَارِكْ لَنَا فِي مُدِّنَا، اللهُمَّ بَارِكْ لَنَا فِي مَدِينَتِنَا، اللهُمَّ اجْعَلْ مَعَ الْبَرَكَةِ بَرَكَتَيْنِ، وَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ، مَا مِنَ الْمَدِينَةِ شِعْبٌ، وَلَا نَقْبٌ إِلَّا عَلَيْهِ مَلَكَانِ يَحْرُسَانِهَا حَتَّى تَقْدَمُوا إِلَيْهَا»، ثُمَّ قَالَ لِلنَّاسِ: «ارْتَحِلُوا»، فَارْتَحَلْنَا، فَأَقْبَلْنَا إِلَى الْمَدِينَةِ، فَوَالَّذِي نَحْلِفُ بِهِ أَوْ يُحْلَفُ بِهِ - الشَّكُّ مِنْ حَمَّادٍ - مَا وَضَعْنَا رِحَالَنَا حِينَ دَخَلْنَا الْمَدِينَةَ حَتَّى أَغَارَ عَلَيْنَا بَنُو عَبْدِ اللهِ بْنِ غَطَفَانَ، وَمَا يَهِيجُهُمْ قَبْلَ ذَلِكَ شَيْءٌ.

আবু সাঈদ, মাওলা মাহরী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তারা মদীনায় কষ্ট ও দুঃখে পতিত হন। তিনি আবু সাঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর নিকট উপস্হিত হয়ে তাঁকে বললেন, আমার পরিবারের সদস্য সংখ্যনা অনেক এবং আমরা দুঃখ দুর্দশার সমুঙ্খীন হয়েছি। তাই আমি আমার পবিবারকে কোনো শস্য শ্যামল এলাকায় স্থানান্তরের মনস্হ করেছি। আবু সাঈদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বললেন, তা করো না বরং মদীনাকে আকড়ে থাক। কারণ, একদা আমরা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সঙ্গে বের হলাম, আমার মনে হয়, তিনি এও বলেছেন যে এবং উসফান পর্যন্ত পৌছলেন। এখানে তিনি কয়েক রাত অবস্থান করলেন। লোকেরা বলল, আল্লাহর কসম! আমরা এখানে অযথা সময় নষ্ট করছি। অথচ আমাদের পরিবার পরিজন আমাদের পশ্চাতে নিরাপত্তাহীন অবস্থায় রয়েছে এবং আমরা তাদের (নিরাপত্তার) ব্যাপারে নিশ্চিত হতে পারছি না। একথা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে পৌছলে তিনি বলেন, কি ব্যাপার, তোমাদের একথা আমার নিকটে পৌঁছেছে। রাবী বলেন, আবু সাঈদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু কথাটা কিভাবে পূর্বব্যক্ত করেছেন তা আমার মনে নেই। সেই সত্তার নামে শপথ অথবা সেই সত্তার শপথ, যার হাতে আমার প্রাণ! অবশ্য আমি মনস্হ করেছি, অথবা যদি তোমরা চাও রাবী বলেন, আবু সাঈদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু কোনটি বলেছেন, তা আমার সঠিক মনে নাই। তবে আমি নিশ্চিত আমার উষ্ট্রীকে অগ্রসর হওয়ার নির্দেশ দিব এবং মদীনায় পৌছা পর্যন্ত তার একটি গিটও খুলব না। (যাত্রা বিরতি করব না)। তারপর তিনি বললেন, হে আল্লাহ! নিশ্চয়ই ইবরাহীম আলাইহিস সালাম মক্কাকে হারাম ঘোষণা করেছেন এবং তা পবিত্র ও সন্মানিত হয়েছে। আর আমি মদীনাকে হারাম ঘোষণা করলাম যা দুই পাহাড়ের (আইর ও উহুদ) মধ্যস্হলে অবস্হিত। অতএব এখানে রক্তপাত করা যাবে না, এখানে যুদ্ধের উদ্দেশ্যে অস্ত্রবহন করা যাবে না এবং পশু খাদ্য হিসেবে ব্যবহারের উদ্দেশ্য ব্যতীত গাছপাথর পাতাও পাড়া যাবে না। হে আল্লাহ! আমাদের এই শহরে বরকত দান করুন হে আল্লাহ! আমাদের সা’- এ বকরত দান করুন। হে আল্লাহ! আমাদের মুদ্দ-এ বরকত দান করুন। হে আল্লাহ! বরকতের সাথে আমাদের আরো দুটি বরকত দান করুন। সেই সত্তার শপথ যার হাতে আমার প্রাণ! মদীনার এমন কোনো প্রবেশ পথ বা গিরি সংকট নেই যেখানে তোমাদের মদীনায় ফিরে আসা পর্যন্ত দু-জন করে ফিরিশতা পাহারায় নিযুক্ত নেই। পুনরায় তিনি লোকদের উদ্দেশ্যে বললেন, “তোমরা রওনা হও।” অতএব আমরা রওনা হলাম এবং মদীনায় এসে পৌছলাম । সেই সত্তার শপথ যার নামে আমরা শপথ করি অথবা যার নামে শপথ করা হয়- হাম্মাদ তার উধর্বতন রাবী কোনটি বলেছেন সে সমন্ধে সন্দেহে পড়েছেন। আমরা মদীনায় প্রবেশ করে বাহনের পিঠের হাওদা তখনও খুলিনি ইত্যাবসরে আবদুল্লাহ ইবন গাতফান গোত্রের লোকেরা আমাদের উপর অতর্কিতে আক্রমণ করে, অথচ এরূপ কিছু করার দুঃসাহস তাদের হয় নি।[307]

عَنْ جَابِرٍ، قَالَ: قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِنَّ إِبْرَاهِيمَ حَرَّمَ مَكَّةَ، وَإِنِّي حَرَّمْتُ الْمَدِينَةَ مَا بَيْنَ لَابَتَيْهَا، لَا يُقْطَعُ عِضَاهُهَا، وَلَا يُصَادُ صَيْدُهَا». 

জাবির রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, নিশ্চয় ইবরাহীম আলাইহিস সালাম মক্কার হারাম নির্ধারণ করেছেন, আর আমি মদীনাকে হারাম বলে ঘোষণা করছি- এর দুই প্রান্তের কঙ্করময় মাঠের মধ্যবর্তী অংশকে। অতএব এখানকার কোনো কাটাযূক্ত গাছও কাটা যাবে না এবং এখানকার জীবজন্তুও শিকার করা যাবে না।[308]

حَدَّثَنِي سَعِيدُ بْنُ عَبْدِ الرَّحْمَنِ بْنِ أَبِي سَعِيدٍ الْخُدْرِيِّ، أَنَّ عَبْدَ الرَّحْمَنِ، حَدَّثَهُ، عَنْ أَبِيهِ أَبِي سَعِيدٍ، أَنَّهُ سَمِعَ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، يَقُولُ: «إِنِّي حَرَّمْتُ مَا بَيْنَ لَابَتَيِ الْمَدِينَةِ كَمَا حَرَّمَ إِبْرَاهِيمُ مَكَّةَ»، قَالَ: ثُمَّ كَانَ أَبُو سَعِيدٍ يَأْخُذُ، وَقَالَ أَبُو بَكْرٍ: يَجِدُ أَحَدَنَا فِي يَدِهِ الطَّيْرُ، فَيَفُكُّهُ مِنْ يَدِهِ، ثُمَّ يُرْسِلُهُ.

আবু সাঈদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছেন, মদীনার দুই প্রাস্তের প্রস্তরময় ভূমির মধ্যবর্তী স্থানকে আমি হারাম ঘোষণা করছি, যেমন ইবরাহীম আলাইহিস সালাম মক্কাকে হারাম ঘোষণা করেছেন। (রাবী) আবদুর রহমান বলেন, অতঃপর আবু সাঈদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু যদি আমাদের কারও হাতে পাখি দেখতে পেতেন তবে তিনি তার হাত থেকে পাখিকে মুক্ত করে ছেড়ে দিতেন।[309]

 

 

আল্লাহর নবী শো‘আইব আলাইহিস সালাম ও তাঁর জাতির ঘটনা

আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,

﴿ وَإِلَىٰ مَدۡيَنَ أَخَاهُمۡ شُعَيۡبٗاۚ قَالَ يَٰقَوۡمِ ٱعۡبُدُواْ ٱللَّهَ مَا لَكُم مِّنۡ إِلَٰهٍ غَيۡرُهُۥۖ قَدۡ جَآءَتۡكُم بَيِّنَةٞ مِّن رَّبِّكُمۡۖ فَأَوۡفُواْ ٱلۡكَيۡلَ وَٱلۡمِيزَانَ وَلَا تَبۡخَسُواْ ٱلنَّاسَ أَشۡيَآءَهُمۡ وَلَا تُفۡسِدُواْ فِي ٱلۡأَرۡضِ بَعۡدَ إِصۡلَٰحِهَاۚ ذَٰلِكُمۡ خَيۡرٞ لَّكُمۡ إِن كُنتُم مُّؤۡمِنِينَ ٨٥ وَلَا تَقۡعُدُواْ بِكُلِّ صِرَٰطٖ تُوعِدُونَ وَتَصُدُّونَ عَن سَبِيلِ ٱللَّهِ مَنۡ ءَامَنَ بِهِۦ وَتَبۡغُونَهَا عِوَجٗاۚ وَٱذۡكُرُوٓاْ إِذۡ كُنتُمۡ قَلِيلٗا فَكَثَّرَكُمۡۖ وَٱنظُرُواْ كَيۡفَ كَانَ عَٰقِبَةُ ٱلۡمُفۡسِدِينَ ٨٦ وَإِن كَانَ طَآئِفَةٞ مِّنكُمۡ ءَامَنُواْ بِٱلَّذِيٓ أُرۡسِلۡتُ بِهِۦ وَطَآئِفَةٞ لَّمۡ يُؤۡمِنُواْ فَٱصۡبِرُواْ حَتَّىٰ يَحۡكُمَ ٱللَّهُ بَيۡنَنَاۚ وَهُوَ خَيۡرُ ٱلۡحَٰكِمِينَ ٨٧ ۞قَالَ ٱلۡمَلَأُ ٱلَّذِينَ ٱسۡتَكۡبَرُواْ مِن قَوۡمِهِۦ لَنُخۡرِجَنَّكَ يَٰشُعَيۡبُ وَٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ مَعَكَ مِن قَرۡيَتِنَآ أَوۡ لَتَعُودُنَّ فِي مِلَّتِنَاۚ قَالَ أَوَلَوۡ كُنَّا كَٰرِهِينَ ٨٨ قَدِ ٱفۡتَرَيۡنَا عَلَى ٱللَّهِ كَذِبًا إِنۡ عُدۡنَا فِي مِلَّتِكُم بَعۡدَ إِذۡ نَجَّىٰنَا ٱللَّهُ مِنۡهَاۚ وَمَا يَكُونُ لَنَآ أَن نَّعُودَ فِيهَآ إِلَّآ أَن يَشَآءَ ٱللَّهُ رَبُّنَاۚ وَسِعَ رَبُّنَا كُلَّ شَيۡءٍ عِلۡمًاۚ عَلَى ٱللَّهِ تَوَكَّلۡنَاۚ رَبَّنَا ٱفۡتَحۡ بَيۡنَنَا وَبَيۡنَ قَوۡمِنَا بِٱلۡحَقِّ وَأَنتَ خَيۡرُ ٱلۡفَٰتِحِينَ ٨٩ وَقَالَ ٱلۡمَلَأُ ٱلَّذِينَ كَفَرُواْ مِن قَوۡمِهِۦ لَئِنِ ٱتَّبَعۡتُمۡ شُعَيۡبًا إِنَّكُمۡ إِذٗا لَّخَٰسِرُونَ ٩٠ فَأَخَذَتۡهُمُ ٱلرَّجۡفَةُ فَأَصۡبَحُواْ فِي دَارِهِمۡ جَٰثِمِينَ ٩١ ٱلَّذِينَ كَذَّبُواْ شُعَيۡبٗا كَأَن لَّمۡ يَغۡنَوۡاْ فِيهَاۚ ٱلَّذِينَ كَذَّبُواْ شُعَيۡبٗا كَانُواْ هُمُ ٱلۡخَٰسِرِينَ ٩٢ فَتَوَلَّىٰ عَنۡهُمۡ وَقَالَ يَٰقَوۡمِ لَقَدۡ أَبۡلَغۡتُكُمۡ رِسَٰلَٰتِ رَبِّي وَنَصَحۡتُ لَكُمۡۖ فَكَيۡفَ ءَاسَىٰ عَلَىٰ قَوۡمٖ كَٰفِرِينَ ٩٣ ﴾ [الاعراف: ٨٥، ٩٣]

“আর মাদইয়ানে (প্রেরণ করেছিলাম) তাদের ভাই শু‘আইবকে। সে বলল, ‘হে আমার কওম, তোমরা আল্লাহর ইবাদাত কর। তিনি ছাড়া তোমাদের কোনো (সত্য) ইলাহ নেই। তোমাদের রবের পক্ষ থেকে তোমাদের নিকট স্পষ্ট প্রমাণ এসেছে। সুতরাং তোমরা পরিমাণে ও ওজনে পরিপূর্ণ দাও এবং মানুষকে তাদের পণ্যে কম দেবে না; আর তোমরা যমীনে ফাসাদ করবে না তা সংশোধনের পর। এগুলো তোমাদের জন্য উত্তম যদি তোমরা মুমিন হও’।আর যারা তাঁর প্রতি ঈমান এনেছে তাদেরকে ভয় দেখাতে, আল্লাহর পথ থেকে বাধা দিতে এবং তাতে বক্রতা অনুসন্ধান করতে তোমরা প্রতিটি পথে বসে থেকো না’। আর স্মরণ কর, যখন তোমরা ছিলে কম, অতঃপর তিনি তোমাদেরকে অধিক করেছেন এবং দেখ, কিরূপ হয়েছে ফাসাদকারীদের পরিণতি। আমি যা নিয়ে প্রেরিত হয়েছি, তার প্রতি যদি তোমাদের একটি দল ঈমান আনে আর অন্য দল ঈমান না আনে, তাহলে ধৈর্যধারণ কর, যতক্ষণ না আল্লাহ আমাদের মধ্যে ফয়সালা করেন। আর তিনি উত্তম ফয়সালাকারী। তার কওম থেকে যে নেতৃবৃন্দ অহঙ্কার করেছিল তারা বলল, ‘হে শু‘আইব, আমরা তোমাকে ও তোমার সাথে যারা ঈমান এনেছে তাদেরকে অবশ্যই আমাদের জনপদ থেকে বের করে দেব অথবা তোমরা আমাদের ধর্মে ফিরে আসবে।’ সে বলল, ‘যদিও আমরা তা অপছন্দ করি তবুও?’ আমরা তো আল্লাহর প্রতি মিথ্যারোপ করলাম যদি আমরা তোমাদের ধর্মে ফিরে যাই- সেই ধর্ম থেকে আল্লাহ আমাদেরকে নাজাত দেওয়ার পর। আর আমাদের জন্য উচিত হবে না তাতে ফিরে যাওয়া। তবে আমাদের রব আল্লাহ চাইলে (সেটা ভিন্ন কথা)। আমাদের রব জ্ঞান দ্বারা সব কিছু পরিব্যাপ্ত করে আছেন। আল্লাহরই উপর আমরা তাওয়াক্কুল করি। হে আমাদের রব, আমাদের ও আমাদের কওমের মধ্যে যথার্থ ফয়সালা করে দিন। আর আপনি শ্রেষ্ঠ ফয়সালাকারী। আর তার কওম থেকে যে নেতৃবৃন্দ কুফরী করেছিল তারা বলল, ‘যদি তোমরা শু‘আইবকে অনুসরণ কর তাহলে নিশ্চয় তোমরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে।’ অতঃপর ভূমিকম্প তাদের পাকড়াও করল। তারপর তারা তাদের গৃহে উপুড় হয়ে মরে রইল। যারা শু‘আইবকে মিথ্যাবাদী বলেছিল, মনে হয় যেন তারা সেখানে বসবাসই করেনি। যারা শু‘আইবকে মিথ্যাবাদী বলেছিল তারাই ছিল ক্ষতিগ্রস্ত। অতঃপর সে তাদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নিল এবং বলল, হে আমার কওম, আমি তো তোমাদের কাছে আমার রবের রিসালাতের দায়িত্ব পৌঁছে দিয়েছি এবং তোমাদের জন্য কল্যাণ কামনা করেছি। সুতরাং আমি কীভাবে কাফির জাতির ব্যাপারে দুঃখ করব”! [সূরা আল-আ'রাফ: ৮৫-৯৩]

আল্লাহ আরো বলেছেন,

﴿ ۞وَإِلَىٰ مَدۡيَنَ أَخَاهُمۡ شُعَيۡبٗاۚ قَالَ يَٰقَوۡمِ ٱعۡبُدُواْ ٱللَّهَ مَا لَكُم مِّنۡ إِلَٰهٍ غَيۡرُهُۥۖ وَلَا تَنقُصُواْ ٱلۡمِكۡيَالَ وَٱلۡمِيزَانَۖ إِنِّيٓ أَرَىٰكُم بِخَيۡرٖ وَإِنِّيٓ أَخَافُ عَلَيۡكُمۡ عَذَابَ يَوۡمٖ مُّحِيطٖ ٨٤ وَيَٰقَوۡمِ أَوۡفُواْ ٱلۡمِكۡيَالَ وَٱلۡمِيزَانَ بِٱلۡقِسۡطِۖ وَلَا تَبۡخَسُواْ ٱلنَّاسَ أَشۡيَآءَهُمۡ وَلَا تَعۡثَوۡاْ فِي ٱلۡأَرۡضِ مُفۡسِدِينَ ٨٥ بَقِيَّتُ ٱللَّهِ خَيۡرٞ لَّكُمۡ إِن كُنتُم مُّؤۡمِنِينَۚ وَمَآ أَنَا۠ عَلَيۡكُم بِحَفِيظٖ ٨٦ قَالُواْ يَٰشُعَيۡبُ أَصَلَوٰتُكَ تَأۡمُرُكَ أَن نَّتۡرُكَ مَا يَعۡبُدُ ءَابَآؤُنَآ أَوۡ أَن نَّفۡعَلَ فِيٓ أَمۡوَٰلِنَا مَا نَشَٰٓؤُاْۖ إِنَّكَ لَأَنتَ ٱلۡحَلِيمُ ٱلرَّشِيدُ ٨٧ قَالَ يَٰقَوۡمِ أَرَءَيۡتُمۡ إِن كُنتُ عَلَىٰ بَيِّنَةٖ مِّن رَّبِّي وَرَزَقَنِي مِنۡهُ رِزۡقًا حَسَنٗاۚ وَمَآ أُرِيدُ أَنۡ أُخَالِفَكُمۡ إِلَىٰ مَآ أَنۡهَىٰكُمۡ عَنۡهُۚ إِنۡ أُرِيدُ إِلَّا ٱلۡإِصۡلَٰحَ مَا ٱسۡتَطَعۡتُۚ وَمَا تَوۡفِيقِيٓ إِلَّا بِٱللَّهِۚ عَلَيۡهِ تَوَكَّلۡتُ وَإِلَيۡهِ أُنِيبُ ٨٨ وَيَٰقَوۡمِ لَا يَجۡرِمَنَّكُمۡ شِقَاقِيٓ أَن يُصِيبَكُم مِّثۡلُ مَآ أَصَابَ قَوۡمَ نُوحٍ أَوۡ قَوۡمَ هُودٍ أَوۡ قَوۡمَ صَٰلِحٖۚ وَمَا قَوۡمُ لُوطٖ مِّنكُم بِبَعِيدٖ ٨٩ وَٱسۡتَغۡفِرُواْ رَبَّكُمۡ ثُمَّ تُوبُوٓاْ إِلَيۡهِۚ إِنَّ رَبِّي رَحِيمٞ وَدُودٞ ٩٠ قَالُواْ يَٰشُعَيۡبُ مَا نَفۡقَهُ كَثِيرٗا مِّمَّا تَقُولُ وَإِنَّا لَنَرَىٰكَ فِينَا ضَعِيفٗاۖ وَلَوۡلَا رَهۡطُكَ لَرَجَمۡنَٰكَۖ وَمَآ أَنتَ عَلَيۡنَا بِعَزِيزٖ ٩١ قَالَ يَٰقَوۡمِ أَرَهۡطِيٓ أَعَزُّ عَلَيۡكُم مِّنَ ٱللَّهِ وَٱتَّخَذۡتُمُوهُ وَرَآءَكُمۡ ظِهۡرِيًّاۖ إِنَّ رَبِّي بِمَا تَعۡمَلُونَ مُحِيطٞ ٩٢ وَيَٰقَوۡمِ ٱعۡمَلُواْ عَلَىٰ مَكَانَتِكُمۡ إِنِّي عَٰمِلٞۖ سَوۡفَ تَعۡلَمُونَ مَن يَأۡتِيهِ عَذَابٞ يُخۡزِيهِ وَمَنۡ هُوَ كَٰذِبٞۖ وَٱرۡتَقِبُوٓاْ إِنِّي مَعَكُمۡ رَقِيبٞ ٩٣ وَلَمَّا جَآءَ أَمۡرُنَا نَجَّيۡنَا شُعَيۡبٗا وَٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ مَعَهُۥ بِرَحۡمَةٖ مِّنَّا وَأَخَذَتِ ٱلَّذِينَ ظَلَمُواْ ٱلصَّيۡحَةُ فَأَصۡبَحُواْ فِي دِيَٰرِهِمۡ جَٰثِمِينَ ٩٤ كَأَن لَّمۡ يَغۡنَوۡاْ فِيهَآۗ أَلَا بُعۡدٗا لِّمَدۡيَنَ كَمَا بَعِدَتۡ ثَمُودُ ٩٥ ﴾ [هود: ٨٤، ٩٥]

"আর মাদইয়ানে আমি (পাঠিয়েছিলাম) তাদের ভাই শু‘আইবকে। সে বলল, ‘হে আমার কওম, তোমরা আল্লাহর ইবাদাত কর, তিনি ছাড়া তোমাদের কোনো (সত্য) ইলাহ নেই এবং মাপ ও ওযন কম করো না; আমি তো তোমাদের প্রাচুর্যশীল দেখছি, কিন্তু আমি তোমাদের উপর এক সর্বগ্রাসী দিনের আযাবের ভয় করছি’। আর হে আমার কওম, মাপ ও ওযন পূর্ণ কর ইনসাফের সাথে এবং মানুষকে তাদের পণ্য কম দিও না; আর যমীনে ফাসাদ সৃষ্টি করে বেড়িও না, ‘আল্লাহর দেওয়া উদ্বৃত্ত লাভ তোমাদের জন্য কল্যাণকর, যদি তোমরা মুমিন হও। আর আমি তো তোমাদের হিফাযতকারী নই’। তারা বলল, ‘হে শু‘আইব, তোমার সালাত কি তোমাকে এই নির্দেশ প্রদান করে যে, আমাদের পিতৃপুরুষগণ যাদের ইবাদাত করত, আমরা তাদের ত্যাগ করি? অথবা আমাদের সম্পদে আমরা ইচ্ছামত যা করি তাও (ত্যাগ করি?) তুমি তো বেশ সহনশীল সুবোধ’! সে বলল, ‘হে আমার কওম, তোমরা কী মনে কর, আমি যদি আমার রবের পক্ষ থেকে স্পষ্ট প্রমাণের উপর থাকি এবং তিনি আমাকে তাঁর পক্ষ থেকে উত্তম রিযিক দান করে থাকেন (তাহলে কী করে আমি আমার দায়িত্ব পরিত্যাগ করব)! যে কাজ থেকে আমি তোমাদেরকে নিষেধ করছি, তোমাদের বিরোধিতা করে সে কাজটি আমি করতে চাই না। আমি আমার সাধ্যমত সংশোধন চাই। আল্লাহর সহায়তা ছাড়া আমার কোনো তওফীক নেই। আমি তাঁরই উপর তাওয়াক্কুল করেছি এবং তাঁরই কাছে ফিরে যাই’।‘আর হে আমার কওম, আমার সাথে বৈরিতা তোমাদেরকে যেন এমন কাজে প্ররোচিত না করে যার ফলে তোমাদের সেরূপ আযাব আসবে যেরূপ এসেছিল নূহের কওমের উপর অথবা হূদের কওমের উপর অথবা সালিহের কওমের উপর। আর লূতের কওম তো তোমাদের থেকে দূরে নয়’।‘আর তোমরা তোমাদের রবের কাছে ইস্তিগফার কর অতঃপর তাঁরই কাছে তাওবা কর। নিশ্চয় আমার রব পরম দয়ালু, অতীব ভালবাসা পোষণকারী’।তারা বলল, ‘হে শু‘আইব, তুমি যা বল, তার অনেক কিছুই আমরা বুঝি না। আর তোমাকে তো আমরা আমাদের মধ্যে দুর্বলই দেখতে পাচ্ছি। যদি তোমার আত্মীয়-স্বজন না থাকত, তবে আমরা তোমাকে অবশ্যই পাথর মেরে হত্যা করতাম। আর আমাদের উপর তুমি শক্তিশালী নও’। সে বলল, ‘হে আমার কওম! আমার স্বজনরা কি তোমাদের কাছে আল্লাহ অপেক্ষা অধিক সম্মানিত? আর তোমরা তাঁকে একেবারে পেছনে ঠেলে দিলে? তোমরা যা কর, নিশ্চয় আমার রব তা পরিবেষ্টন করে আছেন’।আর হে আমার কওম, তোমরা তোমাদের অবস্থানে কাজ করে যাও, আমিও কাজ করছি। অচিরেই তোমরা জানতে পারবে কার কাছে আসবে সে আযাব যা তাকে লাঞ্ছিত করবে এবং কে মিথ্যাবাদী। আর তোমরা অপেক্ষা কর, আমিও তোমাদের সাথে অপেক্ষমান।আর যখন আমার আদেশ আসল, তখন শু‘আইব ও তার সাথে যারা ঈমান এনেছে, তাদেরকে আমার পক্ষ থেকে রহমত দ্বারা নাজাত দিলাম এবং যারা যুলম করেছিল তাদেরকে পাকড়াও করল বিকট আওয়াজ। ফলে তারা নিজ নিজ গৃহে মুখ থুবড়ে পড়ে থাকল। যেন তারা সেখানে বসবাসই করেনি। জেনে রাখ, ধ্বংস মাদইয়ানের জন্য, যেরূপ ধ্বংস হয়েছে সামূদ জাতি"। [সূরা: হূদ: ৮৪-৯৫]

 

 

আল্লাহর নবী লূত আলাইহিস সালাম ও তাঁর জাতির ঘটনা

আল্লাহ বলেছেন, 

﴿ وَلُوطًا إِذۡ قَالَ لِقَوۡمِهِۦٓ أَتَأۡتُونَ ٱلۡفَٰحِشَةَ مَا سَبَقَكُم بِهَا مِنۡ أَحَدٖ مِّنَ ٱلۡعَٰلَمِينَ ٨٠ إِنَّكُمۡ لَتَأۡتُونَ ٱلرِّجَالَ شَهۡوَةٗ مِّن دُونِ ٱلنِّسَآءِۚ بَلۡ أَنتُمۡ قَوۡمٞ مُّسۡرِفُونَ ٨١ وَمَا كَانَ جَوَابَ قَوۡمِهِۦٓ إِلَّآ أَن قَالُوٓاْ أَخۡرِجُوهُم مِّن قَرۡيَتِكُمۡۖ إِنَّهُمۡ أُنَاسٞ يَتَطَهَّرُونَ ٨٢ فَأَنجَيۡنَٰهُ وَأَهۡلَهُۥٓ إِلَّا ٱمۡرَأَتَهُۥ كَانَتۡ مِنَ ٱلۡغَٰبِرِينَ ٨٣ وَأَمۡطَرۡنَا عَلَيۡهِم مَّطَرٗاۖ فَٱنظُرۡ كَيۡفَ كَانَ عَٰقِبَةُ ٱلۡمُجۡرِمِينَ ٨٤ ﴾ [الاعراف: ٨٠، ٨٤]

"আর (প্রেরণ করেছি) লূতকে। যখন সে তার কওমকে বলল, ‘তোমরা কি এমন অশালীন কাজ করছ, যা তোমাদের পূর্বে সৃষ্টিকুলের কেউ করেনি’? তোমরা তো নারীদের ছাড়া পুরুষদের সাথে কামনা পূর্ণ করছ, বরং তোমরা সীমালঙ্ঘনকারী কওম’। আর তার কওমের উত্তর কেবল এই ছিল যে, তারা বলল, ‘তাদেরকে তোমরা তোমাদের জনপদ থেকে বের করে দাও। নিশ্চয় তারা এমন লোক, যারা অতি পবিত্র হতে চায়’। তাই আমি তাকে ও তার পরিবারকে রক্ষা করলাম তার স্ত্রী ছাড়া। সে ছিল পেছনে থেকে যাওয়া লোকদের অন্তর্ভুক্ত। আর আমি তাদের উপর বর্ষণ করেছিলাম বৃষ্টি। সুতরাং দেখ, অপরাধীদের পরিণতি কিরূপ ছিল"। [সূরা আল-আ‘রাফ: ৮০-৮৪]

আল্লাহ আরো বলেছেন,

﴿ فَلَمَّا جَآءَ ءَالَ لُوطٍ ٱلۡمُرۡسَلُونَ ٦١ قَالَ إِنَّكُمۡ قَوۡمٞ مُّنكَرُونَ ٦٢ قَالُواْ بَلۡ جِئۡنَٰكَ بِمَا كَانُواْ فِيهِ يَمۡتَرُونَ ٦٣ وَأَتَيۡنَٰكَ بِٱلۡحَقِّ وَإِنَّا لَصَٰدِقُونَ ٦٤ فَأَسۡرِ بِأَهۡلِكَ بِقِطۡعٖ مِّنَ ٱلَّيۡلِ وَٱتَّبِعۡ أَدۡبَٰرَهُمۡ وَلَا يَلۡتَفِتۡ مِنكُمۡ أَحَدٞ وَٱمۡضُواْ حَيۡثُ تُؤۡمَرُونَ ٦٥ وَقَضَيۡنَآ إِلَيۡهِ ذَٰلِكَ ٱلۡأَمۡرَ أَنَّ دَابِرَ هَٰٓؤُلَآءِ مَقۡطُوعٞ مُّصۡبِحِينَ ٦٦ وَجَآءَ أَهۡلُ ٱلۡمَدِينَةِ يَسۡتَبۡشِرُونَ ٦٧ قَالَ إِنَّ هَٰٓؤُلَآءِ ضَيۡفِي فَلَا تَفۡضَحُونِ ٦٨ وَٱتَّقُواْ ٱللَّهَ وَلَا تُخۡزُونِ ٦٩ قَالُوٓاْ أَوَ لَمۡ نَنۡهَكَ عَنِ ٱلۡعَٰلَمِينَ ٧٠ قَالَ هَٰٓؤُلَآءِ بَنَاتِيٓ إِن كُنتُمۡ فَٰعِلِينَ ٧١ لَعَمۡرُكَ إِنَّهُمۡ لَفِي سَكۡرَتِهِمۡ يَعۡمَهُونَ ٧٢ فَأَخَذَتۡهُمُ ٱلصَّيۡحَةُ مُشۡرِقِينَ ٧٣ فَجَعَلۡنَا عَٰلِيَهَا سَافِلَهَا وَأَمۡطَرۡنَا عَلَيۡهِمۡ حِجَارَةٗ مِّن سِجِّيلٍ ٧٤ إِنَّ فِي ذَٰلِكَ لَأٓيَٰتٖ لِّلۡمُتَوَسِّمِينَ ٧٥ وَإِنَّهَا لَبِسَبِيلٖ مُّقِيمٍ ٧٦ إِنَّ فِي ذَٰلِكَ لَأٓيَةٗ لِّلۡمُؤۡمِنِينَ ٧٧ ﴾ [الحجر: ٦١، ٧٧]

"এরপর যখন ফেরেশতাগণ লূতের পরিবারের কাছে আসল, সে বলল, ‘তোমরা তো অপরিচিত লোক’। তারা বলল, ‘বরং আমরা তোমার কাছে এমন বিষয় নিয়ে এসেছি, যাতে তারা সন্দেহ করত’। আর আমরা তোমার নিকট সত্য নিয়ে এসেছি এবং আমরা অবশ্যই সত্যবাদী’। সুতরাং তুমি তোমার পরিবার নিয়ে বেরিয়ে পড় রাতের একাংশে, আর তুমি তাদের পেছনে চল, আর তোমাদের কেউ পেছনে ফিরে তাকাবে না এবং যেভাবে তোমাদের নির্দেশ করা হয়েছে সেভাবেই চলতে থাকবে’। আর আমি তাকে এ সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিয়েছিলাম যে, নিশ্চয় সকালে এদের শিকড় কেটে ফেলা হবে। আর শহরের অধিবাসীরা উৎফুল­ হয়ে হাযির হল। সে বলল, ‘নিশ্চয় এরা আমার মেহমান, সুতরাং আমাকে অপমানিত করো না’। তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং আমাকে লাঞ্ছিত করো না’। তারা বলল, ‘আমরা কি জগদ্বাসীর কারো মেহমানদারী করতে তোমাকে নিষেধ করিনি’? সে বলল, ‘ওরা আমার মেয়ে [310], যদি তোমরা করতেই চাও (তবে বিবাহের মাধ্যমে বৈধ উপায়ে কর)। তোমার জীবনের কসম, নিশ্চয় তারা তাদেরকে নেশায় ঘুরপাক খাচ্ছিল। অতএব সূর্যোদয়কালে বিকট আওয়াজ তাদের পেয়ে বসল। অতঃপর আমি তার (নগরীর) উপরকে নিচে উলটে দিলাম এবং তাদের উপর বর্ষণ করলাম পোড়া মাটির পাথর। নিশ্চয় এতে পর্যবেক্ষণকারীদের জন্য রয়েছে নিদর্শনমালা। আর নিশ্চয় তা পথের পাশেই বিদ্যমান[311] । নিশ্চয় এতে মুমিনদের জন্য রয়েছে নিদর্শন"। [সূরা: আল-হিজর: ৬১-৭৭]

আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেছেন,

﴿ وَلَمَّا جَآءَتۡ رُسُلُنَا لُوطٗا سِيٓءَ بِهِمۡ وَضَاقَ بِهِمۡ ذَرۡعٗا وَقَالَ هَٰذَا يَوۡمٌ عَصِيبٞ ٧٧ وَجَآءَهُۥ قَوۡمُهُۥ يُهۡرَعُونَ إِلَيۡهِ وَمِن قَبۡلُ كَانُواْيَعۡمَلُونَ ٱلسَّيِّ‍َٔاتِۚ قَالَ يَٰقَوۡمِ هَٰٓؤُلَآءِ بَنَاتِي هُنَّ أَطۡهَرُ لَكُمۡۖ فَٱتَّقُواْ ٱللَّهَ وَلَا تُخۡزُونِ فِي ضَيۡفِيٓۖ أَلَيۡسَ مِنكُمۡ رَجُلٞ رَّشِيدٞ ٧٨ قَالُواْ لَقَدۡ عَلِمۡتَ مَا لَنَا فِي بَنَاتِكَ مِنۡ حَقّٖ وَإِنَّكَ لَتَعۡلَمُ مَا نُرِيدُ ٧٩ قَالَ لَوۡ أَنَّ لِي بِكُمۡ قُوَّةً أَوۡ ءَاوِيٓ إِلَىٰ رُكۡنٖ شَدِيدٖ ٨٠ قَالُواْ يَٰلُوطُ إِنَّا رُسُلُ رَبِّكَ لَن يَصِلُوٓاْ إِلَيۡكَۖ فَأَسۡرِ بِأَهۡلِكَ بِقِطۡعٖ مِّنَ ٱلَّيۡلِ وَلَا يَلۡتَفِتۡ مِنكُمۡ أَحَدٌ إِلَّا ٱمۡرَأَتَكَۖ إِنَّهُۥ مُصِيبُهَا مَآ أَصَابَهُمۡۚ إِنَّ مَوۡعِدَهُمُ ٱلصُّبۡحُۚ أَلَيۡسَ ٱلصُّبۡحُ بِقَرِيبٖ ٨١ فَلَمَّا جَآءَ أَمۡرُنَا جَعَلۡنَا عَٰلِيَهَا سَافِلَهَا وَأَمۡطَرۡنَا عَلَيۡهَا حِجَارَةٗ مِّن سِجِّيلٖ مَّنضُودٖ ٨٢ مُّسَوَّمَةً عِندَ رَبِّكَۖ وَمَا هِيَ مِنَ ٱلظَّٰلِمِينَ بِبَعِيدٖ ٨٣ ﴾ [هود: ٧٧، ٨٣]

“আর যখন লূতের কাছে আমার ফেরেশতা আসল, তখন তাদের (আগমনের) কারণে তার অস্বস্তিবোধ হল এবং তার অন্তর খুব সঙ্কুচিত হয়ে গেল। আর সে বলল, ‘এ তো কঠিন দিন’। আর তার কওম তার কাছে ছুটে আসল এবং ইতঃপূর্বে তারা মন্দ কাজ করত। সে বলল, ‘হে আমার কওম, এরা আমার মেয়ে, তারা তোমাদের জন্য পবিত্র। সুতরাং তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং আমার মেহমানদের ব্যাপারে তোমরা আমাকে অপমানিত করো না। তোমাদের মধ্যে কি কোনো সুবোধ ব্যক্তি নেই’? তারা বলল, ‘তুমি অবশ্যই জান, তোমার মেয়েদের ব্যাপারে আমাদের কোনো প্রয়োজন নেই। আর আমরা কী চাই, তা তুমি নিশ্চয় জান’। সে বলল, ‘তোমাদের প্রতিরোধে যদি আমার কোনো শক্তি থাকত অথবা আমি কোনো সুদৃঢ় স্তম্ভের আশ্রয় নিতে পারতাম’[312]! তারা বলল, ‘হে লূত, আমরা তোমার রবের প্রেরিত ফেরেশতা, তারা কখনো তোমার কাছে পৌঁছতে পারবে না। সুতরাং তুমি তোমার পরিবার নিয়ে রাতের কোনো এক অংশে রওয়ানা হও, আর তোমাদের কেউ পিছে তাকাবে না। তবে তোমার স্ত্রী (রওয়ানা হবে না), কেননা তাকে তা-ই আক্রান্ত করবে যা তাদেরকে আক্রান্ত করবে। নিশ্চয় তাদের (আযাবের) নির্ধারিত সময় হচ্ছে সকাল। সকাল কি নিকটে নয়’? অতঃপর যখন আমার আদেশ এসে গেল, তখন আমি জনপদের উপরকে নীচে উল্টে দিলাম এবং ক্রমাগত পোড়ামাটির পাথর বর্ষণ করলাম, যা চি‎‎হ্নত ছিল তোমার রবের কাছে। আর তা যালিমদের থেকে দূরে নয়"। [সূরা: হূদ: ৭৭-৮৩]

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قَالَ: «يَغْفِرُ اللَّهُ لِلُوطٍ، إِنْ كَانَ لَيَأْوِي إِلَى رُكْنٍ شَدِيدٍ».

আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আল্লাহ লূত আলাইহিস সালামকে ক্ষমা করুন। তিনি একদা সুদৃঢ় খুঁটির আশ্রয় চেয়েছিলেন।[313]

 

 

ইসমাঈল আলাইহিস সালাম ও তাঁর মাতা হাজির আলাইহাস সালামের ঘটনা

قَالَ ابْنُ عَبَّاسٍ: أَوَّلَ مَا اتَّخَذَ النِّسَاءُ المِنْطَقَ مِنْ قِبَلِ أُمِّ إِسْمَاعِيلَ، اتَّخَذَتْ مِنْطَقًا لِتُعَفِّيَ أَثَرَهَا عَلَى سَارَةَ، ثُمَّ جَاءَ بِهَا إِبْرَاهِيمُ وَبِابْنِهَا إِسْمَاعِيلَ وَهِيَ تُرْضِعُهُ، حَتَّى وَضَعَهُمَا عِنْدَ البَيْتِ عِنْدَ دَوْحَةٍ، فَوْقَ زَمْزَمَ فِي أَعْلَى المَسْجِدِ، وَلَيْسَ بِمَكَّةَ يَوْمَئِذٍ أَحَدٌ، وَلَيْسَ بِهَا مَاءٌ، فَوَضَعَهُمَا هُنَالِكَ، وَوَضَعَ عِنْدَهُمَا جِرَابًا فِيهِ تَمْرٌ، وَسِقَاءً فِيهِ مَاءٌ، ثُمَّ قَفَّى إِبْرَاهِيمُ مُنْطَلِقًا، فَتَبِعَتْهُ أُمُّ إِسْمَاعِيلَ فَقَالَتْ: يَا إِبْرَاهِيمُ، أَيْنَ تَذْهَبُ وَتَتْرُكُنَا بِهَذَا الوَادِي، الَّذِي لَيْسَ فِيهِ إِنْسٌ وَلاَ شَيْءٌ؟ فَقَالَتْ لَهُ ذَلِكَ مِرَارًا، وَجَعَلَ لاَ يَلْتَفِتُ إِلَيْهَا، فَقَالَتْ لَهُ: آللَّهُ الَّذِي أَمَرَكَ بِهَذَا؟ قَالَ نَعَمْ، قَالَتْ: إِذَنْ لاَ يُضَيِّعُنَا، ثُمَّ رَجَعَتْ، فَانْطَلَقَ إِبْرَاهِيمُ حَتَّى إِذَا كَانَ عِنْدَ الثَّنِيَّةِ حَيْثُ لاَ يَرَوْنَهُ، اسْتَقْبَلَ بِوَجْهِهِ البَيْتَ، ثُمَّ دَعَا بِهَؤُلاَءِ الكَلِمَاتِ، وَرَفَعَ يَدَيْهِ فَقَالَ: رَبِّ {إِنِّي أَسْكَنْتُ مِنْ ذُرِّيَّتِي بِوَادٍ غَيْرِ ذِي زَرْعٍ عِنْدَ بَيْتِكَ المُحَرَّمِ} [إبراهيم: 37]- حَتَّى بَلَغَ - {يَشْكُرُونَ} [إبراهيم: 37] " وَجَعَلَتْ أُمُّ إِسْمَاعِيلَ تُرْضِعُ إِسْمَاعِيلَ وَتَشْرَبُ مِنْ ذَلِكَ المَاءِ، حَتَّى إِذَا نَفِدَ مَا فِي السِّقَاءِ عَطِشَتْ وَعَطِشَ ابْنُهَا، وَجَعَلَتْ تَنْظُرُ إِلَيْهِ يَتَلَوَّى، أَوْ قَالَ يَتَلَبَّطُ، فَانْطَلَقَتْ كَرَاهِيَةَ أَنْ تَنْظُرَ إِلَيْهِ، فَوَجَدَتِ الصَّفَا أَقْرَبَ جَبَلٍ فِي الأَرْضِ يَلِيهَا، فَقَامَتْ عَلَيْهِ، ثُمَّ اسْتَقْبَلَتِ الوَادِيَ تَنْظُرُ هَلْ تَرَى أَحَدًا فَلَمْ تَرَ أَحَدًا، فَهَبَطَتْ مِنَ الصَّفَا حَتَّى إِذَا بَلَغَتِ الوَادِيَ رَفَعَتْ طَرَفَ دِرْعِهَا، ثُمَّ سَعَتْ سَعْيَ الإِنْسَانِ المَجْهُودِ حَتَّى جَاوَزَتِ الوَادِيَ، ثُمَّ أَتَتِ المَرْوَةَ فَقَامَتْ عَلَيْهَا وَنَظَرَتْ هَلْ تَرَى أَحَدًا فَلَمْ تَرَ أَحَدًا، فَفَعَلَتْ ذَلِكَ سَبْعَ مَرَّاتٍ، قَالَ ابْنُ عَبَّاسٍ: قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «فَذَلِكَ سَعْيُ النَّاسِ بَيْنَهُمَا» فَلَمَّا أَشْرَفَتْ عَلَى المَرْوَةِ سَمِعَتْ صَوْتًا، فَقَالَتْ صَهٍ - تُرِيدُ نَفْسَهَا -، ثُمَّ تَسَمَّعَتْ، فَسَمِعَتْ أَيْضًا، فَقَالَتْ: قَدْ أَسْمَعْتَ إِنْ كَانَ عِنْدَكَ غِوَاثٌ، فَإِذَا هِيَ بِالْمَلَكِ عِنْدَ مَوْضِعِ زَمْزَمَ، فَبَحَثَ بِعَقِبِهِ، أَوْ قَالَ بِجَنَاحِهِ، حَتَّى ظَهَرَ المَاءُ، فَجَعَلَتْ تُحَوِّضُهُ وَتَقُولُ بِيَدِهَا هَكَذَا، وَجَعَلَتْ تَغْرِفُ مِنَ المَاءِ فِي سِقَائِهَا وَهُوَ يَفُورُ بَعْدَ مَا تَغْرِفُ. قَالَ ابْنُ عَبَّاسٍ: قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: " يَرْحَمُ اللَّهُ أُمَّ إِسْمَاعِيلَ، لَوْ تَرَكَتْ زَمْزَمَ - أَوْ قَالَ: لَوْ لَمْ تَغْرِفْ مِنَ المَاءِ -، لَكَانَتْ زَمْزَمُ عَيْنًا مَعِينًا " قَالَ: فَشَرِبَتْ وَأَرْضَعَتْ وَلَدَهَا، فَقَالَ لَهَا المَلَكُ: لاَ تَخَافُوا الضَّيْعَةَ، فَإِنَّ هَا هُنَا بَيْتَ اللَّهِ، يَبْنِي هَذَا الغُلاَمُ وَأَبُوهُ، وَإِنَّ اللَّهَ لاَ يُضِيعُ أَهْلَهُ، وَكَانَ البَيْتُ مُرْتَفِعًا مِنَ الأَرْضِ كَالرَّابِيَةِ، تَأْتِيهِ السُّيُولُ، فَتَأْخُذُ عَنْ يَمِينِهِ وَشِمَالِهِ، فَكَانَتْ كَذَلِكَ حَتَّى مَرَّتْ بِهِمْ رُفْقَةٌ مِنْ جُرْهُمَ، أَوْ أَهْلُ بَيْتٍ مِنْ جُرْهُمَ، مُقْبِلِينَ مِنْ طَرِيقِ كَدَاءٍ، فَنَزَلُوا فِي أَسْفَلِ مَكَّةَ فَرَأَوْا طَائِرًا عَائِفًا، فَقَالُوا: إِنَّ هَذَا الطَّائِرَ لَيَدُورُ عَلَى مَاءٍ، لَعَهْدُنَا بِهَذَا الوَادِي وَمَا فِيهِ مَاءٌ، فَأَرْسَلُوا جَرِيًّا أَوْ جَرِيَّيْنِ فَإِذَا هُمْ بِالْمَاءِ، فَرَجَعُوا فَأَخْبَرُوهُمْ بِالْمَاءِ فَأَقْبَلُوا، قَالَ: وَأُمُّ إِسْمَاعِيلَ عِنْدَ المَاءِ، فَقَالُوا: أَتَأْذَنِينَ لَنَا أَنْ نَنْزِلَ عِنْدَكِ؟ فَقَالَتْ: نَعَمْ، وَلَكِنْ لاَ حَقَّ لَكُمْ فِي المَاءِ، قَالُوا: نَعَمْ، قَالَ ابْنُ عَبَّاسٍ: قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «فَأَلْفَى ذَلِكَ أُمَّ إِسْمَاعِيلَ وَهِيَ تُحِبُّ الإِنْسَ» فَنَزَلُوا وَأَرْسَلُوا إِلَى أَهْلِيهِمْ فَنَزَلُوا مَعَهُمْ، حَتَّى إِذَا كَانَ بِهَا أَهْلُ أَبْيَاتٍ مِنْهُمْ، وَشَبَّ الغُلاَمُ وَتَعَلَّمَ العَرَبِيَّةَ مِنْهُمْ، وَأَنْفَسَهُمْ وَأَعْجَبَهُمْ حِينَ شَبَّ، فَلَمَّا أَدْرَكَ زَوَّجُوهُ امْرَأَةً مِنْهُمْ، وَمَاتَتْ أُمُّ إِسْمَاعِيلَ، فَجَاءَ إِبْرَاهِيمُ بَعْدَمَا تَزَوَّجَ إِسْمَاعِيلُ يُطَالِعُ تَرِكَتَهُ، فَلَمْ يَجِدْ إِسْمَاعِيلَ، فَسَأَلَ امْرَأَتَهُ عَنْهُ فَقَالَتْ: خَرَجَ يَبْتَغِي لَنَا، ثُمَّ سَأَلَهَا عَنْ عَيْشِهِمْ وَهَيْئَتِهِمْ، فَقَالَتْ نَحْنُ بِشَرٍّ، نَحْنُ فِي ضِيقٍ وَشِدَّةٍ، فَشَكَتْ إِلَيْهِ، قَالَ: فَإِذَا جَاءَ زَوْجُكِ فَاقْرَئِي عَلَيْهِ السَّلاَمَ، وَقُولِي لَهُ يُغَيِّرْ عَتَبَةَ بَابِهِ، فَلَمَّا جَاءَ إِسْمَاعِيلُ كَأَنَّهُ آنَسَ شَيْئًا، فَقَالَ: هَلْ جَاءَكُمْ مِنْ أَحَدٍ؟ قَالَتْ: نَعَمْ، جَاءَنَا شَيْخٌ كَذَا وَكَذَا، فَسَأَلَنَا عَنْكَ فَأَخْبَرْتُهُ، وَسَأَلَنِي كَيْفَ عَيْشُنَا، فَأَخْبَرْتُهُ أَنَّا فِي جَهْدٍ وَشِدَّةٍ، قَالَ: فَهَلْ أَوْصَاكِ بِشَيْءٍ؟ قَالَتْ: نَعَمْ، أَمَرَنِي أَنْ أَقْرَأَ عَلَيْكَ السَّلاَمَ، وَيَقُولُ غَيِّرْ عَتَبَةَ بَابِكَ، قَالَ: ذَاكِ أَبِي، وَقَدْ أَمَرَنِي أَنْ أُفَارِقَكِ، الحَقِي بِأَهْلِكِ، فَطَلَّقَهَا، وَتَزَوَّجَ مِنْهُمْ أُخْرَى، فَلَبِثَ عَنْهُمْ إِبْرَاهِيمُ مَا شَاءَ اللَّهُ، ثُمَّ أَتَاهُمْ بَعْدُ فَلَمْ يَجِدْهُ، فَدَخَلَ عَلَى امْرَأَتِهِ فَسَأَلَهَا عَنْهُ، فَقَالَتْ: خَرَجَ يَبْتَغِي لَنَا، قَالَ: كَيْفَ أَنْتُمْ؟ وَسَأَلَهَا عَنْ عَيْشِهِمْ وَهَيْئَتِهِمْ، فَقَالَتْ: نَحْنُ بِخَيْرٍ وَسَعَةٍ، وَأَثْنَتْ عَلَى اللَّهِ، فَقَالَ: مَا طَعَامُكُمْ؟ قَالَتِ اللَّحْمُ، قَالَ فَمَا شَرَابُكُمْ؟ قَالَتِ المَاءُ. قَالَ: اللَّهُمَّ بَارِكْ لَهُمْ فِي اللَّحْمِ وَالمَاءِ، قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «وَلَمْ يَكُنْ لَهُمْ يَوْمَئِذٍ حَبٌّ، وَلَوْ كَانَ لَهُمْ دَعَا لَهُمْ فِيهِ». قَالَ: فَهُمَا لاَ يَخْلُو عَلَيْهِمَا أَحَدٌ بِغَيْرِ مَكَّةَ إِلَّا لَمْ يُوَافِقَاهُ، قَالَ: فَإِذَا جَاءَ زَوْجُكِ فَاقْرَئِي عَلَيْهِ السَّلاَمَ، وَمُرِيهِ يُثْبِتُ عَتَبَةَ بَابِهِ، فَلَمَّا جَاءَ إِسْمَاعِيلُ قَالَ: هَلْ أَتَاكُمْ مِنْ أَحَدٍ؟ قَالَتْ: نَعَمْ، أَتَانَا شَيْخٌ حَسَنُ الهَيْئَةِ، وَأَثْنَتْ عَلَيْهِ، فَسَأَلَنِي عَنْكَ فَأَخْبَرْتُهُ، فَسَأَلَنِي كَيْفَ عَيْشُنَا فَأَخْبَرْتُهُ أَنَّا بِخَيْرٍ، قَالَ: فَأَوْصَاكِ بِشَيْءٍ، قَالَتْ: نَعَمْ، هُوَ يَقْرَأُ عَلَيْكَ السَّلاَمَ، وَيَأْمُرُكَ أَنْ تُثْبِتَ عَتَبَةَ بَابِكَ، قَالَ: ذَاكِ أَبِي وَأَنْتِ العَتَبَةُ، أَمَرَنِي أَنْ أُمْسِكَكِ، ثُمَّ لَبِثَ عَنْهُمْ مَا شَاءَ اللَّهُ، ثُمَّ جَاءَ بَعْدَ ذَلِكَ، وَإِسْمَاعِيلُ يَبْرِي نَبْلًا لَهُ تَحْتَ دَوْحَةٍ قَرِيبًا مِنْ زَمْزَمَ، فَلَمَّا رَآهُ قَامَ إِلَيْهِ، فَصَنَعَا كَمَا يَصْنَعُ الوَالِدُ بِالوَلَدِ وَالوَلَدُ بِالوَالِدِ، ثُمَّ قَالَ يَا إِسْمَاعِيلُ، إِنَّ اللَّهَ أَمَرَنِي بِأَمْرٍ، قَالَ: فَاصْنَعْ مَا أَمَرَكَ رَبُّكَ، قَالَ: وَتُعِينُنِي؟ قَالَ: وَأُعِينُكَ، قَالَ: فَإِنَّ اللَّهَ أَمَرَنِي أَنْ أَبْنِيَ هَا هُنَا بَيْتًا، وَأَشَارَ إِلَى أَكَمَةٍ مُرْتَفِعَةٍ عَلَى مَا حَوْلَهَا، قَالَ: فَعِنْدَ ذَلِكَ رَفَعَا القَوَاعِدَ مِنَ البَيْتِ، فَجَعَلَ إِسْمَاعِيلُ يَأْتِي بِالحِجَارَةِ وَإِبْرَاهِيمُ يَبْنِي، حَتَّى إِذَا ارْتَفَعَ البِنَاءُ، جَاءَ بِهَذَا الحَجَرِ فَوَضَعَهُ لَهُ فَقَامَ عَلَيْهِ، وَهُوَ يَبْنِي وَإِسْمَاعِيلُ يُنَاوِلُهُ الحِجَارَةَ، وَهُمَا يَقُولاَنِ: {رَبَّنَا تَقَبَّلْ مِنَّا إِنَّكَ أَنْتَ السَّمِيعُ العَلِيمُ} [البقرة: 127]، قَالَ: فَجَعَلاَ يَبْنِيَانِ حَتَّى يَدُورَا حَوْلَ البَيْتِ وَهُمَا يَقُولاَنِ: {رَبَّنَا تَقَبَّلْ مِنَّا إِنَّكَ أَنْتَ السَّمِيعُ العَلِيمُ} [البقرة: 127].

সাঈদ ইবন জুবায়র রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, নারী জাতি সর্বপ্রথম কোমরবন্দ বানানো শিখেছে ইসমাঈল আলাইহিস সালামের মায়ের (হাযেরা) নিকট থেকে। হাযেরা আলাইহাস সালামের কোমরবন্দ লাগাতেন সারাহ আলাইহাস সালামের থেকে নিজের মর্যাদা গোপন রাখার জন্য। তারপর (আল্লাহর হুকুমে) ইব্রাহীম আলাইহিস সালামের হাযেরা আলাইহাস সালামের এবং তাঁর শিশু ছেলে ইসমাঈল আলাইহিস সালামকে সাথে নিয়ে বের হলেন, এ অবস্থায় যে, হাযেরা আলাইহাস সালাম শিশুকে দুধ পান করাতেন। অবশেষে যেখানে কা‘বা ঘির অবস্থিত, ইব্রাহীম আলাইহিস সালামের তাঁদের উভয়কে সেখানে নিয়ে এসে মসজিদের উঁচু অংশে যমযম কূপের উপরে অবস্থিত একটি বিরাট গাছের নীচে তাদেরকে রাখলেন। তখন মক্কায় না ছিল কোনো মানুষ না ছিল কোনরূপ পানির ব্যবস্থা। পরে তিনি তাদেরকে সেখানেই রেখে গেলেন। আর এছাড়া তিনি তাদের কাছে রেখে গেলেন একটি থলের মধ্যে কিছু খেজুর এবং একটি মশকে কিছু পরিমাণ পানি। এরপর ইব্রাহীম আলাইহিস সালাম ফিরে চললেন। তখন ইসমাঈল আলাইহিস সালামের মা পিছু পিছু ছুটে আসলেন এবং বলতে লাগলেন, হে ইব্রাহীম! আপনি কোথায় চলে যাচ্ছেন? আমাদেরকে এমন এক ময়দানে রেখে যাচ্ছেন, যেখানে না আছে কোনো সাহায্যকারী আর না আছে (পানাহারের) ব্যবস্থা। তিনি একথা তাকে বারবার বললেন। কিন্তু ইব্রাহীম আলাইহিস সালাম তাঁর দিকে তাকালেন না। তখন হাযেরা আলাইহাস সালাম তাঁকে বললেন, এ (নির্বাসনের) আদেশ কি আপনাকে আল্লাহ দিয়েছেন? তিনি বললেন, হ্যাঁ। হাযেরা আলাইহাস সালাম বললেন, তাহলে আল্লাহ্ আমাদেরকে ধ্বংস করবেন না। তারপর তিনি ফিরে আসলেন। আর ইব্রাহীম আলাইহিস সালাম ও সামনে চললেন। চলতে চলতে যখন তিনি গিরিপথের বাঁকে পৌছলেন, যেখানে স্ত্রী ও সন্তান তাঁকে আর দেখতে পাচ্চেন না, তখন কা’বা ঘরের দিকে মুখ করে দাঁড়ালেন। তারপর তিনি দু’হাত তুলে এ দো‘আ করলেন, আর বললেন, ‘‘হে আমার প্রতিপালক! আমি আমার পরিবারকে কতকে আপনার সম্মানিত ঘরের নিকট এক অনুর্বর উপত্যকায় .........যাতে আপনার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে”। [সূরা ইবরাহীম: ৩৭] (এ দো‘আ করে ইব্রাহীম আলাইহিস সালাম চলে গেলেন) আর ইসমাঈল আলাইহিস সালামের মা ইসমাঈল আলাইহিস সালামকে স্বীয় স্তন্যের দুধ পান করাতেন এবং নিজে ঐ মশক থেকে পানি পান করতেন। অবশেষে মশকে যা পানি ছিল তা ফুরিয়ে গেল। তিনি নিজে পিপাসিত হলেন, এবং তাঁর (বুকের দুধ শুখিয়ে যাওয়ায়) শিশু পুত্রটি পিপাসায় কাতর হয়ে পড়ল। তিনি শিশুটির প্রতি দেখতে লাগলেন। পিপাসায় তার বুক ধরফড় করেছে অথবা রাবী বলেন, সে মাটিতে পড়ে ছটফট করছে। শিশুপুত্রের এ করুন অবস্থার প্রতি তাকানো অসহনীয় হয়ে পড়ায় তিনি সরে গেলেন আর তাঁর অবস্থানের সংলগ্ন পর্বত ‘সাফা’ কে একমাত্র তাঁর নিকটমত পর্বত হিসাবে পেলেন। এরপর তিনি তার উপর উঠে দাঁড়ালেন আর ময়দানের দিকে তাকালেন। এদিকে সেদিকে তাকিয়ে দেখলেন, কোথাও কাউকে দেখা যায় না? কিন্তু তিনি কাউকে দেখতে পেলেন না। তখন ‘সাফা’ পর্বত থেকে নেমে পড়লেন। এমন কি যখন তিনি নিচু ময়দান পর্যন্ত পৌছলেন, তখন তিনি তাঁর কামিজের এক প্রান্ত তুলে ধরে একজন শ্রান্ত-ক্লান্ত মানুষের ন্যায় ছুটে চললেন। অবশেষে ময়দানে অতিক্রম করে ‘মারওয়া’ পাহাড়ের নিকট এসে তার উপর উঠে দাঁড়ালেন। তারপর এদিকে সেদিকে তাকালেন, কাউকে দেখতে পান কিনা? কিন্তু কাউকেই দেখতে পেলেন না। এমনিভাবে সাতবার দৌড়াদৌড়ি করলেন। ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, এজন্যই মানুষ (হজ্জ বা উমরার সময়) এ পাহাড়দ্বয়ের মধ্যে সায়ী করে থাকে। এরপর এরপর তিনি যখন মারওয়া পাহাড়ে উঠলেন, তখন একটি শব্দ শুনতে পেলেন এবং তিনি নিজেকেই নিজে বললেন, একটু অপেক্ষা কর। (মনোযোগ দিয়ে শুনি)। তিনি একাগ্রচিত্তে শুনলেন। তখন তিনি বললেন, তুমি তো তোমার শব্দ শুনিয়েছ, আর আমিও শুনেছি)। যদি তোমার কাছে কোনো সাহায্যকারী থাকে (তাহলে আমাকে সাহায্য কর)। হঠাৎ যেখানে যমযম কূপ অবস্থিত সেখানে তিনি একজন ফিরিশ্তা দেখতে পেলেন। সেই ফিরিশতা আপন পায়ের গোড়ালি দ্বারা আঘাত করলেন অথবা তিনি বলছেন, আপন ডানা দ্বারা আঘাত করলেন। ফলে পানি বের হতে লাগল। তখন হাযেরা আলাইহাস সালামের চারপাশে নিজ হাতে বাঁধা দিয়ে এক হাউযের ন্যায় করে দিলেন এবং হাতের কোষভরে তাঁর মশকটিতে পানি ভরতে লাগলেন। তখনো পানি উপছে উঠতে থাকলো। ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ইসমাঈলের মাকে আল্লাহ রহম করুন। যদি তিনি বাঁধ না দিয়ে যমযমকে এভাবে ছেড়ে দিতেন কিংবা বলেছেন, যদি কোষে ভরে পানি মশকে জমা না করতেন, তাহলে যমযম একটি কূপ না হয়ে একটি প্রবাহমান ঝর্ণায় পরিণত হতো। রাবী বলেন, তারপর হাযেরা আলাইহাস সালাম পানি পান করলেন, আর শিশু পুত্রকেও দুধ পান করালেন, তখন ফিরিশতা তাঁকে বললেন, আপনি ধ্বংসের কোনো আশংকা করবেন না। কেননা এখানেই আল্লাহর ঘর রয়েছে। এ শিশুটি এবং তাঁর পিতা দু’জনে এখানে ঘর নির্মাণ করবে এবং আল্লাহ তার আপনজনকে কখনও ধ্বংস করেন না। ঐ সময় আল্লাহর ঘরের স্থানটি যমীন থেকে টিলার ন্যায় উঁচু ছিল। বন্যা আসার ফলে তাঁর দানে বামে ভেঙ্গে যাচ্ছিল। এরপর হাযেরা আলাইহাস সালাম এভাবেই দিন যাপন করছিলেন। অবশেষে (ইয়ামান দেশীয়) জুরহুম গোত্রের একদল লোক তাদের কাছ দিয়ে অতিক্রম করছিল। অথবা রাবী বলেন, জুরহুম পরিবারের কিছু লোক কাদা নামক উঁচু ভুমির পথ ধরে এদিক আসছিল। তারা মক্কার নিচু ভুমিতে অবতরণ করল এবং তারা দেখতে পেল একঝাঁক পাখি চক্রাকারে উড়ছে। তখন তারা বলল, নিশ্চয় এ পাখিগুলো পানির উপর উড়ছে। আমরা এ ময়দানের পথ হয়ে বহুবার অতিক্রম করেছি। কিন্তু এখানে কোনো পানি ছিল না। তখন তারা একজন কি দু’জন লোক সেখানে পাঠালো। তারা সেখানে গিয়েই পানি দেখতে পেল। তারা সেখান থেকে ফিরে এসে পানির সকলকে পানির সংবাদ দিল। সনবাদ শুনে সবাই সেদিকে অগ্রসর হল। রাবী বলেন, ইসমাঈল আলাইহিস সালামের মা পানির নিকট ছিলেন। তারা তাঁকে বলল, আমরা আপনার নিকটবর্তী স্থানে বসবাস করতে চাই। আপনি আমাদেরকে অনুমতি দিবেন কি? তিনি জবাব দিলেন, হ্যাঁ। তবে, এ পানির উপর তোমাদের কোনো অধিকার থাকবে না। তারা হাঁ, বলে তাদের মত প্রকাশ করল। ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, এ ঘটনা ইসমাঈলের মাকে একটি সুযোগ এনে দিল। আর তিনিও মানুষের সাহচর্য চেয়েছিলেন। এরপর তারা সেখানে বসতি স্থাপন করল এবং তাদের পরিবার –পরিজনের নিকটও সংবাদ পাঠাল। তারপর তারাও এসে তাদের সাথে বসবাস করতে লাগল। পরিশেষে সেখানে তাদের কয়েকটি পরিবারের বসতি স্থাপিত হল। আর ইসমাঈল আলাইহিস সালাম ও যৌবন উপনীত হলেন এবং তাদের থেকে আরবী ভাষা শিখলেন। যৌবনে পৌছে তিনি তাদের কাছে অধিক আকর্ষণীয় ও প্রিয়পাত্র হয়ে উঠলেন। এরপর যখন তিনি পূর্ণ যৌবন লাভ করলেন, তখন তারা তাঁর সঙ্গে তাদেরই একটি মেয়েকে বিবাহ দিল। এরই মধ্যে ইসমাঈলের মা হাযেরা আলাইহাস সালাম ইন্তেকাল করেন। ইসমাঈলের বিবাহের পর ইব্রাহীম আলাইহিস সালাম তাঁর পরিত্যক্ত পরিজনের অবস্থা দেখার জন্য এখানে আসলেন। কিন্তু তিনি ইসমাঈলকে পেলেন না। তিনি তাঁর স্ত্রীকে তাঁর সম্বন্ধে জিজ্ঞাসা করলেন। স্ত্রী বলল, তিনি আমাদের জীবিকার খোঁজে বেরিয়ে গেছেন। এরপর তিনি পুত্রবধুকে তাদের জীবন যাত্রা এবং অবস্থা সম্বন্ধে জিজ্ঞাসা করলেন। সে বলল, আমরা অতি দুরাবস্থায়, অতি টানাটানি ও খুব কষ্টে আছি। সে ইব্রাহীম আলাইহিস সালামের নিকট তাদের দুর্দশার অভিযোগ করল। তিনি বললেন, তোমার স্বামী বাড়ী আসলে, তাঁকে আমার সালাম জানিয়ে বলবে, সে যেন তার ঘরের দরজায় চৌকাঠ বদলিয়ে নেয়। এরপর যখন ইসমাঈল বাড়ী আসলেন, তখন তিনি যেন (তাঁর পিতা ইব্রাহীম আলাইহিস সালামের আগমনের) কিছুটা আভাস পেলেন। তখন তিনি তাঁর স্ত্রীকে জিজ্ঞাসা করলেন, তোমাদেরকে কাছে কেউ কি এসেছিল? স্ত্রী বলল, হ্যাঁ। এমন এমন আকৃতির একজন বৃদ্ধ লোক এসেছিলেন এবং আমাকে আপনার সম্বন্ধে জজ্ঞাসা করছিলেন। আমি তাঁকে আপনার সংবাদ দিলাম। তিনি আমাকে আমাদের জীবন যাত্রা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলেন, আমি তাঁকে জানালাম, আমরা খুব কষ্ট ও অভাবে আছি। ইসমাঈল আলাইহিস সালাম জিজ্ঞাসা করলেন, তিনি কি তোমাকে কোনো উপদেশ দিয়েছেন? স্ত্রী বলল, হ্যাঁ। তিনি আমাকে নির্দেশ দিয়েছেন, আমি যেন আপনাকে তাঁর সালাম পৌঁছাই এবং তিনি আরো বলেছেন, আপনি যেন আপনার ঘরের দরজায় চৌকাঠ বদলিয়ে ফেলেন। ইসমাঈল আলাইহিস সালাম বললেন, ইনি আমার পিতা। এ কথা দ্বারা তিনি আমাকে নির্দেশ দিয়ে গেছেন, আমি যেন তোমাকে পৃথক করে দেই। অতএব তুমি তোমার আপন জন্দের কাছে চলে যাও। এ কথা বলে, ইসমাঈল আলাইহিস সালাম তাকে তালাক দিয়ে দিলেন এবং ঐ লোকদের থেকে অপর একটি মেয়েকে বিবাহ করলেন। এরপর ইব্রাহীম আলাইহিস সালাম এদের থেকে দূরে রইলেন, আল্লাহ যতদিন চাইলেন। তারপর তিনি আবার এদের দেখতে আসলেন। কিন্তু এবারও তিনি ইসমাঈল আলাইহিস সালামের দেখা পেলেন না। তিনি ছেলের বউয়ের নিকট উপস্থিত হলেন এবং তাঁকে ইসমাঈল আলাইহিস সালাম সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলেন। সে বললো, তিনি আমাদের খাবারের খোঁজে বেরিয়ে গেছেন। ইব্রাহীম আলাইহিস সালাম জিজ্ঞাসা করলেন, তোমরা কেমন আছ? তিনি তাদের জীবনযাত্রা ও অবস্থা জানতে চাইলেন। তখন সে বলল, আমরা ভাল এবং স্বচ্ছলতার মধ্যেই আছি। আর সে আল্লাহর প্রশংসাও করলো। ইব্রাহীম আলাইহিস সালাম জিজ্ঞাসা করলেন, তোমাদের প্রধান খাদ্য কি? সে বলল, গোশত। তিনি আবার জানতে চাইলেন, তোমাদের পানীয় কি? সে বলল, পানি। ইব্রাহীম আলাইহিস সালাম দো‘আ করলেন, হে আল্লাহ্! তাদের গোশত ও পানিতে বরকত দিন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ঐ সময় তাদের সেখানে খাদ্যশস্য উৎপাদন হতো না। যদি হতো তাহলে ইব্রাহীম আলাইহিস সালাম সে বিষয়েও তাদের জন্য দো‘আ করতেন। বর্ণনাকারী বলেন, মক্কা ব্যতিত অন্য কোথাও কেউ শুধু গোসত ও পানি দ্বারা জীবন ধারণ করতে পারেনা। কেননা, শুধু গোসত ও পানি জীবনযাপনের অনুকূল হতে পারে না। ইব্রাহীম আলাইহিস সালাম বললেন, যখন তোমার স্বামী ফিরে আসবে, তখন তাঁকে আমার সালাম বলবে, আর তাঁকে আমার পক্ষ থেকে হুকুম করবে যে, সে যেন তার ঘরের দরজায় চৌকাঠ ঠিক রাখে। এরপর ইসমাঈল আলাইহিস সালাম যখন ফিরে আসলেন, তখন তিনি বললেন, তোমাদের নিকট কেউ এসেছিলেন কি? সে বলল, হ্যাঁ। একজন সুন্দর আকৃতিকে বৃদ্ধ লোক এসেছিলেন এবং সে তাঁর প্রশংসা করলো, (তারপর বললো) তিনি আমাএক আপনার সম্বন্ধে জিজ্ঞাসা করেছেন। আমি তাঁকে আপনার সংবাদ জানিয়েছি। এরপর তিনি আমাকে আপনার সম্বন্ধে জিজ্ঞাসা করেছেন। আমি তাঁকে আপনার সংবাদ জানিয়েছি। এরপর তিনি আমার নিকট আমাদের জীবনযাপন সম্পর্কে জানতে চেয়েছেন। আমি তাঁকে জানিয়েছি যে, আমরা ভাল আছি। ইসমাঈল আলাইহিস সালাম বললেন, তিনি কি তোমাকে আর কোনো কিচুর জন্য আদেশ করেছেন? সে বললো, হ্যাঁ। তিনি আপনার প্রতি সালাম জানিয়ে আপনাকে নির্দেশ দিয়েছেন যে, আপনি যেন আপনার ঘরের দরজায় চৌকাঠ ঠিক রাখেন। ইসমাঈল আলাইহিস সালাম বললেন, ইনিই আমার পিতা। আর তুমি হলে আমার ঘরের দরজার চৌকাঠ। একথার দ্বারা তিনি আমাকে নির্দেশ দিয়েছেন, আমি যেন তোমাকে স্ত্রী হিসাবে বহাল রাখি। এরপর ইব্রাহীম আলাইহিস সালাম এদের থেকে দূরে রইলেন, যদ্দিন আল্লাহ চাইলেন। এরপর তিনি আবার আসলেন। (দেখতে পেলেন) যমযম কূপের নিকটস্থ একটি বৃক্ষের নীচে বসে ইসমাঈল আলাইহিস সালাম তাঁর একটি তীর মেরামত করেছেন। যখন তিনি তাঁর পিতাকে দেখতে পেলেন, তিনি দাঁড়িয়ে তাঁর দিকে এগিয়ে গেলেন। এরপর একজন বাপ-বেটার সঙ্গে, একজন বেটা-বাপের সঙ্গে সাক্ষাৎ হলে যেরূপ করে থাকে তারা উভয়ে তাই করলেন। এরপর ইব্রাহীম আলাইহিস সালাম বললেন, হে ইসমাঈল। আল্লাহ্ আমাকে একটি কাজের নির্দেশ দিয়েছেন। ইসমাঈল আলাইহিস সালাম বললেন, আপনার রব ! আপনাকে যা আদেশ করেছেন, তা করুন। ইব্রাহীম আলাইহিস সালাম বললেন, আল্লাহ্ আমাকে এখানে একটি ঘর বানাতে নির্দেশ দিয়েছেন। এই বলে তিনি উঁচু টিলাটির দিকে ইশারা করলেন যে, এর চারপাশে ঘেরাও দিয়ে, তখনই তাঁরা উভয়ে কা’বা ঘরের দেওয়াল উঠাতে লেগে গেলেন। ইসমাঈল আলাইহিস সালাম পাথর আনতেন, আর ইব্রাহীম আলাইহিস সালাম নির্মাণ করতেন। পরিশেষে যখন দেওয়াল উঁচু হয়ে গেল, তখন ইসমাঈল আলাইহিস সালাম (মাকামে ইব্রাহীম নামে খ্যাত) পাথরটি আনলেন এবং ইব্রাহীম আলাইহিস সালামের জন্য তা যথাস্থানে রাখলেন। ইব্রাহীম আলাইহিস সালাম তার উপর দাঁড়িয়ে নির্মাণ কাজ করতে লাগলেন। আর ইসমাঈল আলাইহিস সালাম তাঁকে পাথর যোগান দিতে থাকেন। তখন তারা উভয়ে দো‘আ করতে থাকলেন, হে আমাদের রব। আমাদের থেকে (একাজ) কবুল করুন। নিশ্চয়ই আপনি সব কিছু শুনেন ও জানেন। তাঁরা উভয়ে আবার কা’বা ঘর তৈরি করতে থাকেন। এবং কা’বা ঘরের চার দিকে ঘুরে ঘুরে এ দো‘আ করতে থাকেন। ‘‘হে আমাদের রব! আমাদের থেকে (এ শ্রমটুকু) কবুল করে নিন। নিশ্চয়ই আপনি সব কিছু শুনেন ও জানেন।’’ [সূরা বাকারা : ১২৭][314]

عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا، قَالَ: لَمَّا كَانَ بَيْنَ إِبْرَاهِيمَ وَبَيْنَ أَهْلِهِ مَا كَانَ، خَرَجَ بِإِسْمَاعِيلَ وَأُمِّ إِسْمَاعِيلَ، وَمَعَهُمْ شَنَّةٌ فِيهَا مَاءٌ، فَجَعَلَتْ أُمُّ إِسْمَاعِيلَ تَشْرَبُ مِنَ الشَّنَّةِ، فَيَدِرُّ لَبَنُهَا عَلَى صَبِيِّهَا، حَتَّى قَدِمَ مَكَّةَ فَوَضَعَهَا تَحْتَ دَوْحَةٍ، ثُمَّ رَجَعَ إِبْرَاهِيمُ إِلَى أَهْلِهِ، فَاتَّبَعَتْهُ أُمُّ إِسْمَاعِيلَ، حَتَّى لَمَّا بَلَغُوا كَدَاءً نَادَتْهُ مِنْ وَرَائِهِ: يَا إِبْرَاهِيمُ إِلَى مَنْ تَتْرُكُنَا؟ قَالَ: إِلَى اللَّهِ، قَالَتْ: رَضِيتُ بِاللَّهِ، قَالَ: فَرَجَعَتْ فَجَعَلَتْ تَشْرَبُ مِنَ الشَّنَّةِ وَيَدِرُّ لَبَنُهَا عَلَى صَبِيِّهَا، حَتَّى لَمَّا فَنِيَ المَاءُ، قَالَتْ: لَوْ ذَهَبْتُ فَنَظَرْتُ لَعَلِّي أُحِسُّ أَحَدًا، قَالَ فَذَهَبَتْ فَصَعِدَتِ الصَّفَا فَنَظَرَتْ، وَنَظَرَتْ هَلْ تُحِسُّ أَحَدًا، فَلَمْ تُحِسَّ أَحَدًا، فَلَمَّا بَلَغَتِ الوَادِيَ سَعَتْ وَأَتَتِ المَرْوَةَ، فَفَعَلَتْ ذَلِكَ أَشْوَاطًا، ثُمَّ قَالَتْ: لَوْ ذَهَبْتُ فَنَظَرْتُ مَا فَعَلَ، تَعْنِي الصَّبِيَّ، فَذَهَبَتْ فَنَظَرَتْ فَإِذَا هُوَ عَلَى حَالِهِ كَأَنَّهُ يَنْشَغُ لِلْمَوْتِ، فَلَمْ تُقِرَّهَا نَفْسُهَا، فَقَالَتْ: لَوْ ذَهَبْتُ فَنَظَرْتُ، لَعَلِّي أُحِسُّ أَحَدًا، فَذَهَبَتْ فَصَعِدَتِ الصَّفَا، فَنَظَرَتْ وَنَظَرَتْ فَلَمْ تُحِسَّ أَحَدًا، حَتَّى أَتَمَّتْ سَبْعًا، ثُمَّ قَالَتْ: لَوْ ذَهَبْتُ فَنَظَرْتُ مَا فَعَلَ، فَإِذَا هِيَ بِصَوْتٍ، فَقَالَتْ: أَغِثْ إِنْ كَانَ عِنْدَكَ خَيْرٌ، فَإِذَا جِبْرِيلُ، قَالَ: فَقَالَ بِعَقِبِهِ هَكَذَا، وَغَمَزَ عَقِبَهُ عَلَى الأَرْضِ، قَالَ: فَانْبَثَقَ المَاءُ، فَدَهَشَتْ أُمُّ إِسْمَاعِيلَ، فَجَعَلَتْ تَحْفِزُ، قَالَ: فَقَالَ أَبُو القَاسِمِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «لَوْ تَرَكَتْهُ كَانَ المَاءُ ظَاهِرًا». قَالَ: فَجَعَلَتْ تَشْرَبُ مِنَ المَاءِ وَيَدِرُّ لَبَنُهَا عَلَى صَبِيِّهَا، قَالَ: فَمَرَّ نَاسٌ مِنْ جُرْهُمَ بِبَطْنِ الوَادِي، فَإِذَا هُمْ بِطَيْرٍ، كَأَنَّهُمْ أَنْكَرُوا ذَاكَ، وَقَالُوا: مَا يَكُونُ الطَّيْرُ إِلَّا عَلَى مَاءٍ، فَبَعَثُوا رَسُولَهُمْ فَنَظَرَ فَإِذَا هُمْ بِالْمَاءِ، فَأَتَاهُمْ فَأَخْبَرَهُمْ، فَأَتَوْا إِلَيْهَا فَقَالُوا: يَا أُمَّ إِسْمَاعِيلَ، أَتَأْذَنِينَ لَنَا أَنْ نَكُونَ مَعَكِ، أَوْ نَسْكُنَ مَعَكِ، فَبَلَغَ ابْنُهَا فَنَكَحَ فِيهِمُ امْرَأَةً، قَالَ: ثُمَّ إِنَّهُ بَدَا لِإِبْرَاهِيمَ، فَقَالَ لِأَهْلِهِ: إِنِّي مُطَّلِعٌ تَرِكَتِي، قَالَ: فَجَاءَ فَسَلَّمَ، فَقَالَ: أَيْنَ إِسْمَاعِيلُ؟ فَقَالَتِ امْرَأَتُهُ: ذَهَبَ يَصِيدُ، قَالَ: قُولِي لَهُ إِذَا جَاءَ غَيِّرْ عَتَبَةَ بَابِكَ، فَلَمَّا جَاءَ أَخْبَرَتْهُ، قَالَ: أَنْتِ ذَاكِ، فَاذْهَبِي إِلَى أَهْلِكِ، قَالَ: ثُمَّ إِنَّهُ بَدَا لِإِبْرَاهِيمَ، فَقَالَ لِأَهْلِهِ: إِنِّي مُطَّلِعٌ تَرِكَتِي، قَالَ: فَجَاءَ، فَقَالَ: أَيْنَ إِسْمَاعِيلُ؟ فَقَالَتِ امْرَأَتُهُ: ذَهَبَ يَصِيدُ، فَقَالَتْ: أَلاَ تَنْزِلُ فَتَطْعَمَ وَتَشْرَبَ، فَقَالَ: وَمَا طَعَامُكُمْ وَمَا شَرَابُكُمْ؟ قَالَتْ: طَعَامُنَا اللَّحْمُ وَشَرَابُنَا المَاءُ، قَالَ: اللَّهُمَّ بَارِكْ لَهُمْ فِي طَعَامِهِمْ وَشَرَابِهِمْ، قَالَ: فَقَالَ أَبُو القَاسِمِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «بَرَكَةٌ بِدَعْوَةِ إِبْرَاهِيمَ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِمَا وَسَلَّمَ» قَالَ: ثُمَّ إِنَّهُ بَدَا لِإِبْرَاهِيمَ، فَقَالَ لِأَهْلِهِ: إِنِّي مُطَّلِعٌ تَرِكَتِي، فَجَاءَ فَوَافَقَ إِسْمَاعِيلَ مِنْ وَرَاءِ زَمْزَمَ يُصْلِحُ نَبْلًا لَهُ، فَقَالَ: يَا إِسْمَاعِيلُ، إِنَّ رَبَّكَ أَمَرَنِي أَنْ أَبْنِيَ لَهُ بَيْتًا، قَالَ: أَطِعْ رَبَّكَ، قَالَ: إِنَّهُ قَدْ أَمَرَنِي أَنْ تُعِينَنِي عَلَيْهِ، قَالَ: إِذَنْ أَفْعَلَ، أَوْ كَمَا قَالَ: قَالَ فَقَامَا فَجَعَلَ إِبْرَاهِيمُ يَبْنِي، وَإِسْمَاعِيلُ يُنَاوِلُهُ الحِجَارَةَ وَيَقُولاَنِ: {رَبَّنَا تَقَبَّلْ مِنَّا إِنَّكَ أَنْتَ السَّمِيعُ العَلِيمُ} [البقرة: 127]. قَالَ: حَتَّى ارْتَفَعَ البِنَاءُ، وَضَعُفَ الشَّيْخُ عَنْ نَقْلِ الحِجَارَةِ، فَقَامَ عَلَى حَجَرِ المَقَامِ، فَجَعَلَ يُنَاوِلُهُ الحِجَارَةَ وَيَقُولاَنِ: {رَبَّنَا تَقَبَّلْ مِنَّا إِنَّكَ أَنْتَ السَّمِيعُ العَلِيمُ} [البقرة: 127].

ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, যখন ইব্রাহীম আলাইহিস সালাম ও তাঁর স্ত্রী (সারার) মাঝে যা হওয়ার হয়ে গেল, তখন ইব্রাহীম আলাইহিস সালাম (শিশুপুত্র) ইসমাঈল আলাইহিস সালাম এবং তাঁর মাকে নিয়ে বের হলেন। তাদের সাথে একটি থলে ছিল, যাতে পানি ছিল। ইসমাঈল আলাইহিস সালামের মা মশক থেকে পানি পান করতেন। ফলে শিশুর জন্য তাঁর স্তন্যে দুধ বাড়তে থাকে। অবশেষে ইব্রাহীম আলাইহিস সালাম মক্কায় পৌছে হাযেরকে (শিশুপুত্র ইসমাঈল আলাইহিস সালামসহ) একটি বিরাট বৃক্ষের নীচে থাকার ব্যবস্থা করে দিলেন। এরপর ইব্রাহীম আলাইহিস সালাম আপন পরিবার (সারার) নিকট ফিরে চললেন। তখন ইসমাঈল আলাইহিস সালামের মা কিছু দূর পর্যন্ত তাঁর অনুসরণ করলেন। অবশেষে যখন কাদা নামক স্থানে পৌছলেন, তখন তিনি পিছনে থেকে ডেকে বললেন, হে ইব্রাহীম! আপনি আমাদেরকে কার কাছে রেখে যাচ্ছেন? ইব্রাহীম আলাইহিস সালাম বললেন, আল্লাহর কাছে। হাযেরা আলাইহিস সালাম বললেন, আমি আল্লাহর প্রতি সন্তুষ্ট। রাবী (ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, এরপর হাযেরা আলাইহিস সালাম ফিরে আসলেন, তিনি মশক থেকে পানি পান করতেন আর শিশুর জন্য (তাঁর স্তন্যের) দুধ বাড়ত। অবশেষে যখন পানি শেষ হয়ে গেল। তখন ইসমাঈল আলাইহিস সালামের মা বললেন, আমি যদি গিয়ে এদিকে সেদিকে তাকাতাম! তাহলে হয়ত কোনো মানুষ দেখতে পেতাম। রাবী (ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু) বলেন, এরপর ইসমাঈল আলাইহিস সালামের মা গেলেন এবং সাফা পাহাড়ে উঠলেন আর এদিকে ওদিকে তাকালেন এবং কাউকে দেখেন কিনা এজন্য বিশেষভাবে তাকিয়ে দেখলেন। কিন্তু কাউকেও দেখতে পেলেন না। (এরপর যখন নীচু ভূমিতে পৌছলেন) তখন দ্রুত বেগে মারওয়া পাহাড়ে এসে গেলেন। এবং এভাবে তিনি কয়েক চক্কর দিলেন। পুনরায় তিনি (মনে মনে) বললেন, যদি গিয়ে দেখতাম যে শিশুটি কি করছে। এরপর তিনি গেলেন এবং দেখতে পেলেন যে সে তার অবস্থায়ই আছে। সে যেন মরণাপন্ন হয়ে গেছে। এতে তাঁর মন স্বস্তি পাচ্ছিল না। তখন তিনি বললেন, যদি সেখানে (আবার) যেতাম এবং এদিকে সেদিকে তাকিয়ে দেখতাম। সম্ভবতঃ কাউকে দেখতে পেতাম। এরপর তিনি গেলেন, সাফা পাহাড়ের উপর উঠলেন এবং এদিক সেদিক দেখলেন এবং গভীরভাবে তাকিয়ে দেখলেন। কিন্তূ কাউকে দেখতে পেলেন না। এমনকি তিনি সাতটি চক্কর পূর্ণ করলেন। এরপর তিনি মনে মনে বললেন, যদি যেতাম তখন দেখতাম যে সে কি করছে। হঠাৎ তিনি একটি শব্দ শুনতে পেলেন। তখন তিনি বললেন, যদি আপনার কোনো সাহায্য করার থাকে তবে আমাকে সাহায্য করুন। হঠাৎ তিনি জিবরীল আলাইহিস সালামকে দেখতে পেলেন। রাবী (ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, তখন তিনি (জিবরীল) তাঁর পায়ের গোড়ালি দ্বারা এরূপ করলেন অর্থাৎ গোড়ালি দ্বারা যমীনের উপর আঘাত করলেন। রাবী (ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, তখনই পানি বেরিয়ে আসল। এ দেখে ইসমাঈল আলাইহিস সালামের মা অস্থির হয়ে গেলেন এবং গর্ত খনন করতে লাগলেন। রাবী (ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, এ প্রসঙ্গে আবুল কাসিম (রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, হাযেরা আলাইহাস সালাম যদি একে তার অবস্থায় উপর ছেড়ে দিতেন তাহলে পানি বিস্তৃত হয়ে যেত। রাবী (ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, তখন হাযেরা আলাইহাস সালাম পানি পান করতে লাগলেন এবং তাঁর সন্তানের জন্য তাঁর দুধ বাড়তে থাকে। রাবী (ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, এরপর জুরহুম গোত্রের (ইয়ামান দেশীয়) একদল লোক উপত্যকার নীচু ভূমি দিয়ে অতিক্রম করচিল। হঠাৎ তারা দেখল কিছু পাখি উড়ছে। তারা যেন তা বিশ্বাসই করতে পারছিল না আর তারা বলতে লাগল এসব পাখি তো পানি ছাড়া কোথাও থাকতে পারে না। তখন তারা সেখানে তাদের একজন দুত পাঠাল। সে সেখানে গিয়ে দেখল, সেখানে পানি মাওজুদ আছে। তখন সে তার দলের লোকদের কাছে ফিরে আসল এবং তাদেরকে সংবাদ দিল। এরপর তারা হাযেরা আলাইহাস সালামের কাছে এসে বলল, হে ইসমাঈলের মা। আপনি কি আমাদেরকে আপনার কাছে থাকা অথবা (রাবী বলেছেন), আপনার কাছে বসবাস করার অনুমতি দিবেন? (হাযেরা আলাইহাস সালাম তাদেরকে বসবাসের অনুমতি দিলেন এবং এভাবে অনেক দিন কেতে গেল)। এরপর তাঁর ছেলে বয়ঃপ্রাপ্ত হল। তখন তিনি (ইসমাঈল আলাইহিস সালাম) জুরহুম গোত্রেরই একটি মেয়ে বিয়ে করলেন। রাবী (ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, পুনরায় ইব্রাহীম আলাইহিস সালামের মনে জাগল (ইসমাঈল আলাইহিস সালাম এবং তাঁর মা হাযেরার কথা) তখন তিনি তাঁর স্ত্রীকে (সারা) বললেন, আমি আমার পরিত্যক্ত পরিজনের অবস্থা সম্পর্কে খবর নিতে চাই রাবী (ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, এরপর তিনি (তাদের কাছে) আসলেন এবং সালাম দিলেন। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, ইসমাঈল কোথায়? ইসমাঈল আলাইহিস সালামের স্ত্রী বলল, তিনি শিকারে গিয়েছেন। ইব্রাহীম আলাইহিস সালাম বললেন, সে যখন আসবে তখন তুমি তাঁকে আমার এ নির্দেশের কথা বলবে, ‘‘তুমি ঘরের চৌকাঠখানা বদলিয়ে ফেলবে। ইসমাঈল আলাইহিস সালাম যখন আসলেন, তখন স্ত্রী তাঁকে খবরটি জানালেন, তখন তিনি স্ত্রীকে বললেন, তুমি সেই চৌকাঠ। অতএব তুমি তোমার পিতামাতার কাছে চলে যাও। রাবী (ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, অতঃপর (তাদের কথা) ইব্রাহীম আলাইহিস সালামের আবার মনে পড়ল। তখন তিনি তাঁর স্ত্রী (সারা) কে বললেন, আমি আমার নির্বাসিত পরিবারের খবর নিতে চাই। এরপর তিনি সেখানে আসলেন, এবং (পুত্রবধূকে) জিজ্ঞাসা করলেন, ইসমাঈল কোথায়? ইসমাঈল আলাইহিস সালামের স্ত্রী বলল, তিনি শিকারে গিয়েছেন। পুত্রবধু তাঁকে বললেন, আপনি কি আমাদের এখানে অবস্থান করবেন না? কিছু পানাহার করবেন না? তখন ইব্রাহীম আলাইহিস সালাম বললেন, তোমাদের খাদ্য এবং পানীয় কি? স্ত্রী বলল, আমাদের খাদ্য হল গোশত আর পানীয় হল পানি। তখন ইবরাহীম আলাইহিস সালাম দো‘আ করলেন, ‘‘হে আল্লাহ্! তাদের খাদ্য হল গোশত আর পানীয় হল পানি। তখন ইব্রাহীম আলাইহিস সালাম দো‘আ করলেন, ‘‘হে আল্লাহ্! তাদের খাদ্য এবং পানীয় দ্রব্যের মধ্যে বরকত দিন।’’ রাবী (ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, আবুল কাসিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ইব্রাহীম আলাইহিস সালামের দু‘আর কারণেই (মক্কার খাদ্য ও পানীয় দ্রব্যের মধ্যে) বরকত রয়েছে। রাবী (ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, আবার কিছুদিন পর ইব্রাহীম আলাইহিস সালামের মনে তাঁর নির্বাসিত পরিজনের কথা জাগল। তখন তিনি তাঁর স্ত্রী (সারা)-কে বললেন, আমি আমার পরিত্যক্ত পরিজনের খবর নিতে চাই। এরপর তিনি আলেন এবং ইসমাঈলের দেখা পেলেন, তিনি যমযম কূপের পিছনে বসে তাঁর একটি তীর মেরামত করেছেন। তখন ইব্রাহীম আলাইহিস সালাম ডেকে বললেন, হে ইসমাঈল! তোমার রব তাঁর জন্য একখানা ঘর নির্মাণ করতে আমাকে নির্দেশ দিয়েছেন। ইসমাঈল আলাইহিস সালাম বললেন, আপনার রবের নির্দেশ পালন করুন। ইব্রাহিম আলাইহিস সালাম বললেন, তাহলে আমি তা করব অথবা তিনি অনুরূপ কিছু বলেছিলেন। এরপর উভয়ে উঠে দাঁড়ালেন। ইব্রাহীম আলাইহিস সালাম ইমারাত বানাতে লাগলেন আর ইসমাঈল আলাইহিস সালাম তাঁকে পাথর এনে দিতে লাগলেন আর তাঁরা উভয়ে এ দো‘আ করছিলেন, হে আমাদের রব! আপনি আমাদের এ কাজ কবুল করুন। আপনি তো সব কিছু শুনেন এবং জানেন রাবী বলেন, এরই মধ্যে প্রাচীর উঁচু হয়ে গেল আর বৃদ্ধ ইব্রাহীম আলাইহিস সালাম এতটা উঠতে দুর্বল হয়ে পড়লেন। তখন তিনি (মাকামে ইব্রাহীমের) পাথরের উপর দাঁড়ালেন। ইসমাঈল আলাইহিস সালাম তাঁকে পাতজর এগিয়ে দিতে লাগলেন আর উভয়ে এ দো‘আ পড়তে লাগলেন, হে আমাদের রব! আপনি আমাদের এ কাজটুকু কবূল করুন। নিঃসন্দেহে আপনি সবকিছু শুনেন ও জানেন। [সূরা বাকারা: ১২৭][315]

عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قَالَ: «يَرْحَمُ اللَّهُ أُمَّ إِسْمَاعِيلَ، لَوْلاَ أَنَّهَا عَجِلَتْ، لَكَانَ زَمْزَمُ عَيْنًا مَعِينًا».

ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ইসলামাঈলের মায়ের প্রতি আল্লাহ্ রহম করুন। যদি তিনি তাড়াতাড়ি না করতেন, তবে যমযম একটির প্রবহমান ঝরণায় পরিণত হত।[316]

عَنْ سَلَمَةَ بْنِ الأَكْوَعِ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، قَالَ: مَرَّ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَلَى نَفَرٍ مِنْ أَسْلَمَ يَنْتَضِلُونَ، فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «ارْمُوا بَنِي إِسْمَاعِيلَ، فَإِنَّ أَبَاكُمْ كَانَ رَامِيًا ارْمُوا، وَأَنَا مَعَ بَنِي فُلاَنٍ» قَالَ: فَأَمْسَكَ أَحَدُ الفَرِيقَيْنِ بِأَيْدِيهِمْ، فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَا لَكُمْ لاَ تَرْمُونَ». فَقَالُوا: يَا رَسُولَ اللَّهِ نَرْمِي وَأَنْتَ مَعَهُمْ، قَالَ: «ارْمُوا وَأَنَا مَعَكُمْ كُلِّكُمْ».

সালামা ইবন আকওয়া রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (ইয়ামানের) আসলাম গোত্রের একদল লোকের কাছ দিয়ে অতিক্রম করছিলেন। এ সময় তাঁরা তীরন্দাজীর প্রতিযোগিতা করছিল। তখন রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হে বনী ইসমাঈল! তোমরা তীরন্দাজী করে যাও। কেননা তোমাদের পূর্বপুরুষ ইসমাঈল আলাইহিস সালাম তীরন্দাজ ছিলেন। সুতরাং তোমরাও তীরন্দাজী করে যাও আর আমি অমুক গোত্রের লোকদের সাথে আছি। রাবী বলন, (এ কথা শুনে) তাদের এক পক্ষ হাত চালনা থেকে বিরত হয়ে গেল। তখন রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমাদের কি হল, তোমরা যে তীরন্দাজী করছ না? তখন তারা বলল, ইয়া রাসূলুল্লাহ! আমরা কিভাবে তীর ছুঁড়তে পারি, অথচ আপনি তো তাদের সাথে রয়েছেন। তখন তিনি বললেন, তোমরা তীর ছুঁড়তে থাক, আমি তোমাদের সবার সাথেই আছি।[317]  

 

 

আল্লাহর নবী ইউসুফ আলাইহিস সালামের ঘটনা

আল্লাহ বলেছেন,

﴿ إِذۡ قَالَ يُوسُفُ لِأَبِيهِ يَٰٓأَبَتِ إِنِّي رَأَيۡتُ أَحَدَ عَشَرَ كَوۡكَبٗا وَٱلشَّمۡسَ وَٱلۡقَمَرَ رَأَيۡتُهُمۡ لِي سَٰجِدِينَ ٤ قَالَ يَٰبُنَيَّ لَا تَقۡصُصۡ رُءۡيَاكَ عَلَىٰٓ إِخۡوَتِكَ فَيَكِيدُواْ لَكَ كَيۡدًاۖ إِنَّ ٱلشَّيۡطَٰنَ لِلۡإِنسَٰنِ عَدُوّٞ مُّبِينٞ ٥ وَكَذَٰلِكَ يَجۡتَبِيكَ رَبُّكَ وَيُعَلِّمُكَ مِن تَأۡوِيلِ ٱلۡأَحَادِيثِ وَيُتِمُّ نِعۡمَتَهُۥ عَلَيۡكَ وَعَلَىٰٓ ءَالِ يَعۡقُوبَ كَمَآ أَتَمَّهَا عَلَىٰٓ أَبَوَيۡكَ مِن قَبۡلُ إِبۡرَٰهِيمَ وَإِسۡحَٰقَۚ إِنَّ رَبَّكَ عَلِيمٌ حَكِيمٞ ٦ ﴾ [يوسف: ٤، ٦]

"যখন ইউসুফ তার পিতাকে বলল, ‘হে আমার পিতা, আমি দেখেছি এগারটি নক্ষত্র, সূর্য ও চাঁদকে, আমি দেখেছি তাদেরকে আমার প্রতি সিজদাবনত অবস্থায়’। সে বলল, ‘হে আমার পুত্র, তুমি তোমার ভাইদের নিকট তোমার স্বপ্নের বর্ণনা দিও না, তাহলে তারা তোমার বিরুদ্ধে গভীর ষড়যন্ত্র করবে। নিশ্চয় শয়তান মানুষের প্রকাশ্য দুশমন’। আর এভাবে তোমার রব তোমাকে মনোনীত করবেন এবং তোমাকে স্বপ্নের ব্যাখ্যা শিক্ষা দেবেন। আর তোমার উপর ও ইয়াকূবের পরিবারের উপর তাঁর নিআমত পূর্ণ করবেন যেভাবে তিনি তা পূর্বে পূর্ণ করেছিলেন তোমার পিতৃপুরুষ ইবরাহীম ও ইসহাকের উপর, নিশ্চয় তোমার রব সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়"। [সূরা: ইউসুফ: ৪-৬]

﴿ وَلَقَدۡ هَمَّتۡ بِهِۦۖ وَهَمَّ بِهَا لَوۡلَآ أَن رَّءَا بُرۡهَٰنَ رَبِّهِۦۚ كَذَٰلِكَ لِنَصۡرِفَ عَنۡهُ ٱلسُّوٓءَ وَٱلۡفَحۡشَآءَۚ إِنَّهُۥ مِنۡ عِبَادِنَا ٱلۡمُخۡلَصِينَ ٢٤ وَٱسۡتَبَقَا ٱلۡبَابَ وَقَدَّتۡ قَمِيصَهُۥ مِن دُبُرٖ وَأَلۡفَيَا سَيِّدَهَا لَدَا ٱلۡبَابِۚ قَالَتۡ مَا جَزَآءُ مَنۡ أَرَادَ بِأَهۡلِكَ سُوٓءًا إِلَّآ أَن يُسۡجَنَ أَوۡ عَذَابٌ أَلِيمٞ ٢٥ قَالَ هِيَ رَٰوَدَتۡنِي عَن نَّفۡسِيۚ وَشَهِدَ شَاهِدٞ مِّنۡ أَهۡلِهَآ إِن كَانَ قَمِيصُهُۥ قُدَّ مِن قُبُلٖ فَصَدَقَتۡ وَهُوَ مِنَ ٱلۡكَٰذِبِينَ ٢٦ وَإِن كَانَ قَمِيصُهُۥ قُدَّ مِن دُبُرٖ فَكَذَبَتۡ وَهُوَ مِنَ ٱلصَّٰدِقِينَ ٢٧ فَلَمَّا رَءَا قَمِيصَهُۥ قُدَّ مِن دُبُرٖ قَالَ إِنَّهُۥ مِن كَيۡدِكُنَّۖ إِنَّ كَيۡدَكُنَّ عَظِيمٞ ٢٨ يُوسُفُ أَعۡرِضۡ عَنۡ هَٰذَاۚ وَٱسۡتَغۡفِرِي لِذَنۢبِكِۖ إِنَّكِ كُنتِ مِنَ ٱلۡخَاطِ‍ِٔينَ ٢٩ ۞وَقَالَ نِسۡوَةٞ فِي ٱلۡمَدِينَةِ ٱمۡرَأَتُ ٱلۡعَزِيزِ تُرَٰوِدُ فَتَىٰهَا عَن نَّفۡسِهِۦۖ قَدۡ شَغَفَهَا حُبًّاۖ إِنَّا لَنَرَىٰهَا فِي ضَلَٰلٖ مُّبِينٖ ٣٠ فَلَمَّا سَمِعَتۡ بِمَكۡرِهِنَّ أَرۡسَلَتۡ إِلَيۡهِنَّ وَأَعۡتَدَتۡ لَهُنَّ مُتَّكَ‍ٔٗا وَءَاتَتۡ كُلَّ وَٰحِدَةٖ مِّنۡهُنَّ سِكِّينٗا وَقَالَتِ ٱخۡرُجۡ عَلَيۡهِنَّۖ فَلَمَّا رَأَيۡنَهُۥٓ أَكۡبَرۡنَهُۥ وَقَطَّعۡنَ أَيۡدِيَهُنَّ وَقُلۡنَ حَٰشَ لِلَّهِ مَا هَٰذَا بَشَرًا إِنۡ هَٰذَآ إِلَّا مَلَكٞ كَرِيمٞ ٣١ قَالَتۡ فَذَٰلِكُنَّ ٱلَّذِي لُمۡتُنَّنِي فِيهِۖ وَلَقَدۡ رَٰوَدتُّهُۥ عَن نَّفۡسِهِۦ فَٱسۡتَعۡصَمَۖ وَلَئِن لَّمۡ يَفۡعَلۡ مَآ ءَامُرُهُۥ لَيُسۡجَنَنَّ وَلَيَكُونٗا مِّنَ ٱلصَّٰغِرِينَ ٣٢ ﴾ [يوسف: ٢٤، ٣٢]

"আর সে মহিলা তার প্রতি আসক্ত হল, আর সেও তার প্রতি আসক্ত হত, যদি না তার রবের স্পষ্ট প্রমাণ[318] প্রত্যক্ষ করত। এভাবেই, যাতে আমি তার থেকে অনিষ্ট ও অশ্লীলতা দূর করে দেই। নিশ্চয় সে আমার খালেস বান্দাদের অন্তর্ভুক্ত। আর তারা উভয়ে দরজার দিকে দৌড়ে গেল এবং মহিলা পেছন হতে তার জামা ছিঁড়ে ফেলল। আর তারা মহিলার স্বামীকে দরজার কাছে পেল। মহিলা বলল, ‘যে লোক তোমার পরিবারের সাথে মন্দকর্ম করতে চেয়েছে, তাকে কারাবন্দি করা বা যন্ত্রনাদায়ক শাস্তি দেওয়া ছাড়া তার আর কী দন্ড হতে পারে’? সে বলল, ‘সে-ই আমাকে কুপ্ররোচনা দিয়েছে’। আর মহিলার পরিবার থেকে এক সাক্ষ্যদাতা সাক্ষ্য প্রদান করল, ‘যদি তার জামা সামনের দিক থেকে ছেঁড়া হয় তাহলে সে (মহিলা) সত্য বলেছে এবং সে (পুরুষ) মিথ্যাবাদীদের অন্তর্ভুক্ত’। আর তার জামা যদি পেছন থেকে ছেঁড়া হয় তাহলে সে (মহিলা) মিথ্যা বলেছে এবং সে (পুরুষ) হচ্ছে সত্যবাদীদের অন্তর্ভুক্ত’। অতঃপর যখন সে দেখল, তার জামা পেছন থেকে ছেঁড়া তখন বলল, ‘নিশ্চয় এটি তোমাদের ষড়যন্ত্র। নিশ্চয় তোমাদের ষড়যন্ত্র ভয়ানক’।‘ইউসুফ, তুমি এ প্রসঙ্গ এড়িয়ে যাও, আর (হে নারী) তুমি তোমার পাপের জন্য ইস্তেগফার কর। নিশ্চয় তুমিই পাপীদের অন্তর্ভূক্ত’। আর নগরীতে মহিলারা বলাবলি করল, ‘আযীয পত্নী স্বীয় যুবককে কুপ্ররোচনা দিচ্ছে। (যুবকের প্রতি) গভীর প্রেম তাকে আসক্ত করে ফেলেছে, নিশ্চয় আমরা তাকে প্রকাশ্য ভ্রান্তিতে দেখতে পাচ্ছি’। অতঃপর যখন সে তাদের কূটকৌশলের কথা শুনতে পেল, তখন তাদেরকে ডেকে পাঠাল এবং তাদের জন্য আসন প্রস্তুত করল, আর তাদের প্রত্যেককে একটি করে ছুরি প্রদান করল এবং ইউসুফকে বলল, ‘তাদের সামনে বেরিয়ে আস’। অতঃপর তারা যখন তাকে দেখল, তখন তাকে বিশাল সৌন্দর্যের অধিকারী মনে করল এবং তারা নিজদের হাত কেটে ফেলল আর বলল, ‘মহিমা আল্লাহর, এতো মানুষ নয়। এ তো এক সম্মানিত ফেরেশতা’।সে বলল, ‘এ-ই সে, যার ব্যাপারে তোমরা আমাকে ভৎর্সনা করেছিলে। আর আমিই তাকে কুপ্ররোচনা দিয়েছি; কিন্তু সে বিরত থেকেছে এবং আমি তাকে যা আদেশ করছি সে যদি তা না করে তবে অবশ্যই সে কারারুদ্ধ হবে এবং নিশ্চয় সে অপদস্থদের অন্তর্ভুক্ত হবে"। [সূরা: ইউসুফ: ২৪-৩২]

﴿ وَدَخَلَ مَعَهُ ٱلسِّجۡنَ فَتَيَانِۖ قَالَ أَحَدُهُمَآ إِنِّيٓ أَرَىٰنِيٓ أَعۡصِرُ خَمۡرٗاۖ وَقَالَ ٱلۡأٓخَرُ إِنِّيٓ أَرَىٰنِيٓ أَحۡمِلُ فَوۡقَ رَأۡسِي خُبۡزٗا تَأۡكُلُ ٱلطَّيۡرُ مِنۡهُۖ نَبِّئۡنَا بِتَأۡوِيلِهِۦٓۖ إِنَّا نَرَىٰكَ مِنَ ٱلۡمُحۡسِنِينَ ٣٦ قَالَ لَا يَأۡتِيكُمَا طَعَامٞ تُرۡزَقَانِهِۦٓ إِلَّا نَبَّأۡتُكُمَا بِتَأۡوِيلِهِۦ قَبۡلَ أَن يَأۡتِيَكُمَاۚ ذَٰلِكُمَا مِمَّا عَلَّمَنِي رَبِّيٓۚ إِنِّي تَرَكۡتُ مِلَّةَ قَوۡمٖ لَّا يُؤۡمِنُونَ بِٱللَّهِ وَهُم بِٱلۡأٓخِرَةِ هُمۡ كَٰفِرُونَ ٣٧ وَٱتَّبَعۡتُ مِلَّةَ ءَابَآءِيٓ إِبۡرَٰهِيمَ وَإِسۡحَٰقَ وَيَعۡقُوبَۚ مَا كَانَ لَنَآ أَن نُّشۡرِكَ بِٱللَّهِ مِن شَيۡءٖۚ ذَٰلِكَ مِن فَضۡلِ ٱللَّهِ عَلَيۡنَا وَعَلَى ٱلنَّاسِ وَلَٰكِنَّ أَكۡثَرَ ٱلنَّاسِ لَا يَشۡكُرُونَ ٣٨ يَٰصَٰحِبَيِ ٱلسِّجۡنِ ءَأَرۡبَابٞ مُّتَفَرِّقُونَ خَيۡرٌ أَمِ ٱللَّهُ ٱلۡوَٰحِدُ ٱلۡقَهَّارُ ٣٩ مَا تَعۡبُدُونَ مِن دُونِهِۦٓ إِلَّآ أَسۡمَآءٗ سَمَّيۡتُمُوهَآ أَنتُمۡ وَءَابَآؤُكُم مَّآ أَنزَلَ ٱللَّهُ بِهَا مِن سُلۡطَٰنٍۚ إِنِ ٱلۡحُكۡمُ إِلَّا لِلَّهِ أَمَرَ أَلَّا تَعۡبُدُوٓاْ إِلَّآ إِيَّاهُۚ ذَٰلِكَ ٱلدِّينُ ٱلۡقَيِّمُ وَلَٰكِنَّ أَكۡثَرَ ٱلنَّاسِ لَا يَعۡلَمُونَ ٤٠ يَٰصَٰحِبَيِ ٱلسِّجۡنِ أَمَّآ أَحَدُكُمَا فَيَسۡقِي رَبَّهُۥ خَمۡرٗاۖ وَأَمَّا ٱلۡأٓخَرُ فَيُصۡلَبُ فَتَأۡكُلُ ٱلطَّيۡرُ مِن رَّأۡسِهِۦۚ قُضِيَ ٱلۡأَمۡرُ ٱلَّذِي فِيهِ تَسۡتَفۡتِيَانِ ٤١ ﴾ [يوسف: ٣٦، ٤١]

"আর কারাগারে তার সাথে প্রবেশ করল দু’জন যুবক। তাদের একজন বলল, ‘আমি স্বপ্নে আমাকে দেখতে পেলাম যে, আমি মদ নিংড়াচ্ছি’। আর অপর জন বলল, ‘আমি স্বপ্নে আমাকে দেখেছি যে, আমি আমার মাথার উপর রুটি বহন করছি তা থেকে পাখি খাচ্ছে। আপনি আমাদেরকে এর ব্যাখ্যা অবহিত করুন। নিশ্চয় আমরা আপনাকে ইহসানকারীদের অন্তর্ভুক্ত দেখতে পাচ্ছি’। সে বলল, ‘তোমাদেরকে যে খাদ্য দেওয়া হয় তা তোমাদের কাছে আসার পূর্বেই আমি তোমাদেরকে স্বপ্নের ব্যাখ্যা জানিয়ে দেব। সেটি এমন জ্ঞান থেকেই বলব যা আমার রব আমাকে শিক্ষা দিয়েছেন। নিশ্চয়ই আমি পরিত্যাগ করেছি সে কওমের ধর্ম যারা আল্লাহর প্রতি ঈমান আনে না এবং যারা আখিরাতকে অস্বীকারকারী’।‘আর আমি অনুসরণ করেছি আমার পিতৃপুরুষ ইবরাহীম, ইসহাক ও ইয়াকূবের ধর্ম। আল্লাহর সাথে কোনো কিছুকে শরীক করা আমাদের জন্য সঙ্গত নয়। এটি আমাদের ও সকল মানুষের উপর আল্লাহর অনুগ্রহ। কিন্তু অধিকাংশ মানুষই কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে না’। হে আমার কারা সঙ্গীদ্বয়, বহু সংখ্যক ভিন্ন ভিন্ন রব ভাল নাকি মহাপরাক্রমশালী এক আল্লাহ’? তোমরা তাঁকে বাদ দিয়ে নিছক কতগুলো নামের ইবাদাত করছ, যাদের নামকরণ তোমরা ও তোমাদের পিতৃপুরুষরা করেছ, যাদের ব্যাপারে আল্লাহ প্রমাণ নাযিল করেননি। বিধান একমাত্র আল্লাহরই। তিনি নির্দেশ দিয়েছেন যে, ‘তাঁকে ছাড়া আর কারো ইবাদাত করো না’। এটিই সঠিক দীন, কিন্তু অধিকাংশ লোক জানে না’।‘হে আমার কারা সঙ্গীদ্বয়, তোমাদের একজন স্বীয় মনিবকে মদপান করাবে। আর অন্যজনকে শূলে চড়ানো হবে, অতঃপর পাখি তার মাথা থেকে আহার করবে। যে বিষয়ে তোমরা জানতে চাচ্ছ তার সিদ্ধান্ত হয়ে গিয়েছে"। [সূরা: ইউসুফ: ৩৬-৪১]

﴿ وَقَالَ ٱلۡمَلِكُ إِنِّيٓ أَرَىٰ سَبۡعَ بَقَرَٰتٖ سِمَانٖ يَأۡكُلُهُنَّ سَبۡعٌ عِجَافٞ وَسَبۡعَ سُنۢبُلَٰتٍ خُضۡرٖ وَأُخَرَ يَابِسَٰتٖۖ يَٰٓأَيُّهَا ٱلۡمَلَأُ أَفۡتُونِي فِي رُءۡيَٰيَ إِن كُنتُمۡ لِلرُّءۡيَا تَعۡبُرُونَ ٤٣ قَالُوٓاْ أَضۡغَٰثُ أَحۡلَٰمٖۖ وَمَا نَحۡنُ بِتَأۡوِيلِ ٱلۡأَحۡلَٰمِ بِعَٰلِمِينَ ٤٤ وَقَالَ ٱلَّذِي نَجَا مِنۡهُمَا وَٱدَّكَرَ بَعۡدَ أُمَّةٍ أَنَا۠ أُنَبِّئُكُم بِتَأۡوِيلِهِۦ فَأَرۡسِلُونِ ٤٥ يُوسُفُ أَيُّهَا ٱلصِّدِّيقُ أَفۡتِنَا فِي سَبۡعِ بَقَرَٰتٖ سِمَانٖ يَأۡكُلُهُنَّ سَبۡعٌ عِجَافٞ وَسَبۡعِ سُنۢبُلَٰتٍ خُضۡرٖ وَأُخَرَ يَابِسَٰتٖ لَّعَلِّيٓ أَرۡجِعُ إِلَى ٱلنَّاسِ لَعَلَّهُمۡ يَعۡلَمُونَ ٤٦ قَالَ تَزۡرَعُونَ سَبۡعَ سِنِينَ دَأَبٗا فَمَا حَصَدتُّمۡ فَذَرُوهُ فِي سُنۢبُلِهِۦٓ إِلَّا قَلِيلٗا مِّمَّا تَأۡكُلُونَ ٤٧ ثُمَّ يَأۡتِي مِنۢ بَعۡدِ ذَٰلِكَ سَبۡعٞ شِدَادٞ يَأۡكُلۡنَ مَا قَدَّمۡتُمۡ لَهُنَّ إِلَّا قَلِيلٗا مِّمَّا تُحۡصِنُونَ ٤٨ ثُمَّ يَأۡتِي مِنۢ بَعۡدِ ذَٰلِكَ عَامٞ فِيهِ يُغَاثُ ٱلنَّاسُ وَفِيهِ يَعۡصِرُونَ ٤٩ ﴾ [يوسف: ٤٣، ٤٩]

"আর বাদশাহ বলল, ‘আমি স্বপ্নে দেখছি, সাতটি মোটা তাজা গাভী, তাদের খেয়ে ফেলছে সাতটি ক্ষীণকায় গাভী এবং সাতটি সবুজ শীষ ও অপর সাতটি শুষ্ক। হে পারিষদবর্গ, তোমরা আমাকে আমার স্বপ্ন সম্বন্ধে ব্যাখ্যা দাও যদি তোমরা স্বপ্নের ব্যাখ্যা দিয়ে থাক’। তারা বলল, ‘এটি এলোমেলো অলীক স্বপ্ন। আর আমরা এরূপ স্বপ্ন ব্যাখ্যায় জ্ঞানী নই’। আর সে দু’জনের মধ্যে যে মুক্তি পেয়েছিল, সে বলল এবং দীর্ঘ দিন পর তার স্মরণ হল, ‘আমি তোমাদেরকে এর ব্যাখ্যা জানিয়ে দিচ্ছি, অতএব তোমরা আমাকে পাঠিয়ে দাও’।হে ইউসুফ, হে সত্যবাদী, আপনি আমাদের ব্যাখ্যা দিন, সাতটি মোটা তাজা গাভী সম্বন্ধে, যাদের খাচ্ছে সাতটি ক্ষীণকায় গাভী এবং সাতটি সবুজ শীষ ও অপর সাতটি শুষ্ক শীষ সম্পর্কে, যাতে আমি লোকদের কাছে ফিরে যেতে পারি যেন তারা জানতে পারে’। সে বলল, ‘তোমরা সাত বছর একাধারে চাষাবাদ করবে অতঃপর যে শস্য কেটে ঘরে তুলবে তার মধ্য থেকে যে সামান্য পরিমাণ খাবে সেগুলো ছাড়া সব শীষের মধ্যে রেখে দেবে’। তারপর আসবে সাতটি কঠিন বছর। এর জন্য তোমরা পূর্বে যা সঞ্চয় করে রেখে দেবে এরা (ঐ সময়ের লোকেরা) সেগুলো খেয়ে ফেলবে, সামান্য কিছু ছাড়া যা তোমরা সংরক্ষণ করে রাখবে’।‘এরপর আসবে এমন এক বছর যাতে মানুষ বৃষ্টি সিক্ত হবে এবং যাতে তারা (ফলের ও যয়তুনের) রস নিংড়াবে"। [সূরা: ইউসুফ: ৪৩-৪৯]

﴿ ٱذۡهَبُواْ بِقَمِيصِي هَٰذَا فَأَلۡقُوهُ عَلَىٰ وَجۡهِ أَبِي يَأۡتِ بَصِيرٗا وَأۡتُونِي بِأَهۡلِكُمۡ أَجۡمَعِينَ ٩٣ وَلَمَّا فَصَلَتِ ٱلۡعِيرُ قَالَ أَبُوهُمۡ إِنِّي لَأَجِدُ رِيحَ يُوسُفَۖ لَوۡلَآ أَن تُفَنِّدُونِ ٩٤ قَالُواْ تَٱللَّهِ إِنَّكَ لَفِي ضَلَٰلِكَ ٱلۡقَدِيمِ ٩٥ فَلَمَّآ أَن جَآءَ ٱلۡبَشِيرُ أَلۡقَىٰهُ عَلَىٰ وَجۡهِهِۦ فَٱرۡتَدَّ بَصِيرٗاۖ قَالَ أَلَمۡ أَقُل لَّكُمۡ إِنِّيٓ أَعۡلَمُ مِنَ ٱللَّهِ مَا لَا تَعۡلَمُونَ ٩٦ قَالُواْ يَٰٓأَبَانَا ٱسۡتَغۡفِرۡ لَنَا ذُنُوبَنَآ إِنَّا كُنَّا خَٰطِ‍ِٔينَ ٩٧ قَالَ سَوۡفَ أَسۡتَغۡفِرُ لَكُمۡ رَبِّيٓۖ إِنَّهُۥ هُوَ ٱلۡغَفُورُ ٱلرَّحِيمُ ٩٨ فَلَمَّا دَخَلُواْ عَلَىٰ يُوسُفَ ءَاوَىٰٓ إِلَيۡهِ أَبَوَيۡهِ وَقَالَ ٱدۡخُلُواْ مِصۡرَ إِن شَآءَ ٱللَّهُ ءَامِنِينَ ٩٩ وَرَفَعَ أَبَوَيۡهِ عَلَى ٱلۡعَرۡشِ وَخَرُّواْ لَهُۥ سُجَّدٗاۖ وَقَالَ يَٰٓأَبَتِ هَٰذَا تَأۡوِيلُ رُءۡيَٰيَ مِن قَبۡلُ قَدۡ جَعَلَهَا رَبِّي حَقّٗاۖ وَقَدۡ أَحۡسَنَ بِيٓ إِذۡ أَخۡرَجَنِي مِنَ ٱلسِّجۡنِ وَجَآءَ بِكُم مِّنَ ٱلۡبَدۡوِ مِنۢ بَعۡدِ أَن نَّزَغَ ٱلشَّيۡطَٰنُ بَيۡنِي وَبَيۡنَ إِخۡوَتِيٓۚ إِنَّ رَبِّي لَطِيفٞ لِّمَا يَشَآءُۚ إِنَّهُۥ هُوَ ٱلۡعَلِيمُ ٱلۡحَكِيمُ ١٠٠ ۞رَبِّ قَدۡ ءَاتَيۡتَنِي مِنَ ٱلۡمُلۡكِ وَعَلَّمۡتَنِي مِن تَأۡوِيلِ ٱلۡأَحَادِيثِۚ فَاطِرَ ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَٱلۡأَرۡضِ أَنتَ وَلِيِّۦ فِي ٱلدُّنۡيَا وَٱلۡأٓخِرَةِۖ تَوَفَّنِي مُسۡلِمٗا وَأَلۡحِقۡنِي بِٱلصَّٰلِحِينَ ١٠١ ذَٰلِكَ مِنۡ أَنۢبَآءِ ٱلۡغَيۡبِ نُوحِيهِ إِلَيۡكَۖ وَمَا كُنتَ لَدَيۡهِمۡ إِذۡ أَجۡمَعُوٓاْ أَمۡرَهُمۡ وَهُمۡ يَمۡكُرُونَ ١٠٢ ﴾ [يوسف: ٩٣، ١٠٢]

“তোমরা আমার এ জামাটি নিয়ে যাও, অতঃপর সেটি আমার পিতার চেহারায় ফেল। এতে তিনি দৃষ্টিশক্তি ফিরে পাবেন। আর তোমরা তোমাদের পরিবারের সকলকে নিয়ে আমার কাছে চলে আস’। আর যখন কাফেলা বের হল, তাদের পিতা বলল, ‘নিশ্চয় আমি ইউসুফের ঘ্রাণ পাচ্ছি, যদি তোমরা আমাকে নির্বোধবৃদ্ধ মনে না কর’। তারা বলল, ‘আল্লাহর কসম, আপনি তো সেই পুরোন ভ্রান্তিতেই আছেন’। অতঃপর যখন সুসংবাদদাতা এল, তখন সে জামাটি তার চেহারায় ফেলল। এতে সে দৃষ্টিশক্তি ফিরে পেল, বলল, ‘আমি কি তোমাদেরকে বলিনি, নিশ্চয় আমি আল্লাহ্র পক্ষ থেকে যা জানি তোমরা তা জান না’। তারা বলল, ‘হে আমাদের পিতা, আপনি আমাদের পাপ মোচনের জন্য ক্ষমা চান। নিশ্চয় আমরা ছিলাম অপরাধী’। সে বলল, ‘অচিরেই আমি তোমাদের জন্য আমার রবের নিকট ক্ষমা চাইব, নিশ্চয় তিনি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু’। অতঃপর যখন তারা ইউসুফের নিকট প্রবেশ করল, তখন সে তার পিতামাতাকে নিজের কাছে স্থান করে দিল এবং বলল, ‘আল্লাহর ইচ্ছায় আপনারা নিরাপদে মিসরে প্রবেশ করুন’।আর সে তার পিতামাতাকে রাজাসনে উঠাল এবং তারা সকলে তার সামনে সেজদায় লুটিয়ে পড়ল এবং সে বলল, ‘হে আমার পিতা, এই হল আমার ইতঃপূর্বের স্বপ্নের ব্যাখ্যা, আমার রব তা বাস্তবে পরিণত করেছেন আর তিনি আমার উপর এহসান করেছেন, যখন আমাকে জেলখানা থেকে বের করেছেন এবং তোমাদেরকে গ্রাম থেকে নিয়ে এসেছেন, শয়তান আমার ও আমার ভাইদের মধ্যে সম্পর্ক নষ্ট করার পর। নিশ্চয় আমার রব যা ইচ্ছা করেন, তা বাস্তবায়নে তিনি সূক্ষ্মদর্শী। নিশ্চয় তিনি সম্যক জ্ঞানী, প্রজ্ঞাময়’।‘হে আমার রব, আপনি আমাকে কিছু রাজত্ব দান করেছেন এবং স্বপ্নের কিছু ব্যাখ্যা শিখিয়েছেন। হে আসমানসমূহ ও যমীনের স্রষ্টা, দুনিয়া ও আখিরাতে আপনিই আমার অভিভাবক, আমাকে মুসলিম অবস্থায় মৃত্যু দিন এবং নেককারদের সাথে আমাকে যুক্ত করুন’। এগুলো গায়েবের সংবাদ, যা আমি তোমার কাছে ওহী করছি। তুমি তো তাদের নিকট ছিলে না যখন তারা তাদের সিদ্ধান্তে একমত হয়েছিল অথচ তারা ষড়যন্ত্র করছিল"। [সূরা: ইউসুফ: ৯৩-১০২]

حَدَّثَنِي سَعِيدُ بْنُ أَبِي سَعِيدٍ، عَنْ أَبِيهِ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ: قِيلَ يَا رَسُولَ اللَّهِ: مَنْ أَكْرَمُ النَّاسِ؟ قَالَ: «أَتْقَاهُمْ» فَقَالُوا: لَيْسَ عَنْ هَذَا نَسْأَلُكَ، قَالَ: «فَيُوسُفُ نَبِيُّ اللَّهِ، ابْنُ نَبِيِّ اللَّهِ، ابْنِ نَبِيِّ اللَّهِ، ابْنِ خَلِيلِ اللَّهِ» قَالُوا: لَيْسَ عَنْ هَذَا نَسْأَلُكَ، قَالَ: «فَعَنْ مَعَادِنِ العَرَبِ تَسْأَلُونِ؟ خِيَارُهُمْ فِي الجَاهِلِيَّةِ خِيَارُهُمْ فِي الإِسْلاَمِ، إِذَا فَقُهُوا» قَالَ: أَبُو أُسَامَةَ، وَمُعْتَمِرٌ، عَنْ عُبَيْدِ اللَّهِ، عَنْ سَعِيدٍ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ.

আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ্! মানুষের মধ্যে সবচেয়ে সম্মানিত ব্যাক্তি কে? তিনি বলেন, তাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি মুত্তাকী। তখন তারা বলল, আমরা তো আপনাকে এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করিনি। তিনি বললেন, তা হলে (সবচেয়ে সম্মানিত ব্যাক্তি) আল্লাহর নবী ইউসুফ আলাইহিস সালাম, যিনি আল্লাহর নবী (ইয়াকুব আলাইহিস সালাম)-এর পুত্র, আল্লাহ্‌র নবী (ইসহাক আলাইহিস সালাম)-এর পৌত্র, এবং আল্লাহর খলিল (ইব্রাহীম আলাইহিস সালাম)-এর প্রপৌত্র। তারা বলল, আমরা আপনাকে এ সম্বন্ধেও জিজ্ঞাসা করিনি। তিনি বললেন, তাহলে কি তোমরা আরবের মূল্যবান গোত্রসমুহ সম্বন্ধে জিজ্ঞাসা করছ? জাহিলী জুগে তাদের মধ্যে যারা সর্বোত্তম ব্যাক্তি ছিলেন, ইসলামেও তাঁরা সর্বোত্তম ব্যাক্তি যদি তাঁরা ইসলামী জ্ঞানার্জন করেন। আবূ উসামা ও মু’তামির (রহ.) আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু সূত্রে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত।[319]

আল্লাহর নবী আইয়ুব আলাইহিস সালাম

আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,

﴿ ۞وَأَيُّوبَ إِذۡ نَادَىٰ رَبَّهُۥٓ أَنِّي مَسَّنِيَ ٱلضُّرُّ وَأَنتَ أَرۡحَمُ ٱلرَّٰحِمِينَ ٨٣ فَٱسۡتَجَبۡنَا لَهُۥ فَكَشَفۡنَا مَا بِهِۦ مِن ضُرّٖۖ وَءَاتَيۡنَٰهُ أَهۡلَهُۥ وَمِثۡلَهُم مَّعَهُمۡ رَحۡمَةٗ مِّنۡ عِندِنَا وَذِكۡرَىٰ لِلۡعَٰبِدِينَ ٨٤ ﴾ [الانبياء: ٨٣، ٨٤]

“আর স্মরণ কর আইউবের কথা, যখন সে তার রবকে আহবান করে বলেছিল, ‘আমি দুঃখ-কষ্টে পতিত হয়েছি। আর আপনি তো সর্বশ্রেষ্ঠ দয়ালু’। তখন আমি তার ডাকে সাড়া দিলাম। আর তার যত দুঃখ-কষ্ট ছিল তা দূর করে দিলাম এবং তার পরিবার-পরিজন তাকে দিয়ে দিলাম। আর তাদের সাথে তাদের মত আরো দিলাম আমার পক্ষ থেকে রহমত এবং ইবাদাতকারীদের জন্য উপদেশস্বরূপ”। [সূরা আল-আম্বিয়া: ৮৩-৮৪]

﴿ وَٱذۡكُرۡ عَبۡدَنَآ أَيُّوبَ إِذۡ نَادَىٰ رَبَّهُۥٓ أَنِّي مَسَّنِيَ ٱلشَّيۡطَٰنُ بِنُصۡبٖ وَعَذَابٍ ٤١ ٱرۡكُضۡ بِرِجۡلِكَۖ هَٰذَا مُغۡتَسَلُۢ بَارِدٞ وَشَرَابٞ ٤٢ وَوَهَبۡنَا لَهُۥٓ أَهۡلَهُۥ وَمِثۡلَهُم مَّعَهُمۡ رَحۡمَةٗ مِّنَّا وَذِكۡرَىٰ لِأُوْلِي ٱلۡأَلۡبَٰبِ ٤٣ وَخُذۡ بِيَدِكَ ضِغۡثٗا فَٱضۡرِب بِّهِۦ وَلَا تَحۡنَثۡۗ إِنَّا وَجَدۡنَٰهُ صَابِرٗاۚ نِّعۡمَ ٱلۡعَبۡدُ إِنَّهُۥٓ أَوَّابٞ ٤٤ ﴾ [ص: ٤١، ٤٤]

“আর স্মরণ কর আমার বান্দা আইউবকে, যখন সে তার রবকে ডেকে বলেছিল, ‘শয়তান তো আমাকে কষ্ট ও আযাবের ছোঁয়া দিয়েছে’।[আমি বললাম], ‘তুমি তোমার পা দিয়ে (ভূমিতে) আঘাত কর, এ হচ্ছে গোসলের সুশীতল পানি আর পানীয়’। আর আমার পক্ষ থেকে রহমতস্বরূপ ও বুদ্ধিমানদের জন্য উপদেশস্বরূপ আমি তাকে দান করলাম তার পরিবার-পরিজন ও তাদের সাথে তাদের অনুরূপ অনেককে। আর তুমি তোমার হাতে এক মুঠো তৃণলতা নাও এবং তা দিয়ে আঘাত কর। আর কসম ভংগ করো না। নিশ্চয় আমি তাকে ধৈর্যশীল পেয়েছি। সে কতই না উত্তম বান্দা! নিশ্চয়ই সে ছিল আমার অভিমুখী”। [সূরা সোয়াদ: ৪১-৪৪]

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قَالَ: «بَيْنَمَا أَيُّوبُ يَغْتَسِلُ عُرْيَانًا، خَرَّ عَلَيْهِ رِجْلُ جَرَادٍ مِنْ ذَهَبٍ، فَجَعَلَ يَحْثِي فِي ثَوْبِهِ، فَنَادَاهُ رَبُّهُ يَا أَيُّوبُ أَلَمْ أَكُنْ أَغْنَيْتُكَ عَمَّا تَرَى، قَالَ بَلَى يَا رَبِّ، وَلَكِنْ لاَ غِنَى لِي عَنْ بَرَكَتِكَ».

আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, একদা আইয়্যুব আলাইহিস সালাম নগ্ন দেহে গোসল করেছিলেন। এমন সময় তাঁর উপর স্বর্ণের এক ঝাঁক পঙ্গপাল পতিত হল। তিনি সেগুলো দু’হাতে কাপড়ে রাখতে লাগলেন। তখন তাঁর রব তাঁকে ডেকে বললেন, হে আইয়্যুব! তুমি যা দেখতে পাচ্ছ, তা থেকে কি আমি তোমাকে মুখাপেক্ষীহীন করে দেই নি? তিনি উত্তর দিলেন, হ্যাঁ, হে রব! কিন্তু আমি আপনার বরকতের অমুখাপেক্ষী নই। [320]

 

 

আল্লাহর নবী মূসা আলাইহিস সালাম ও তাঁর জাতি

আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,

﴿ وَأَوۡحَيۡنَآ إِلَىٰٓ أُمِّ مُوسَىٰٓ أَنۡ أَرۡضِعِيهِۖ فَإِذَا خِفۡتِ عَلَيۡهِ فَأَلۡقِيهِ فِي ٱلۡيَمِّ وَلَا تَخَافِي وَلَا تَحۡزَنِيٓۖ إِنَّا رَآدُّوهُ إِلَيۡكِ وَجَاعِلُوهُ مِنَ ٱلۡمُرۡسَلِينَ ٧ فَٱلۡتَقَطَهُۥٓ ءَالُ فِرۡعَوۡنَ لِيَكُونَ لَهُمۡ عَدُوّٗا وَحَزَنًاۗ إِنَّ فِرۡعَوۡنَ وَهَٰمَٰنَ وَجُنُودَهُمَا كَانُواْ خَٰطِ‍ِٔينَ ٨ وَقَالَتِ ٱمۡرَأَتُ فِرۡعَوۡنَ قُرَّتُ عَيۡنٖ لِّي وَلَكَۖ لَا تَقۡتُلُوهُ عَسَىٰٓ أَن يَنفَعَنَآ أَوۡ نَتَّخِذَهُۥ وَلَدٗا وَهُمۡ لَا يَشۡعُرُونَ ٩ وَأَصۡبَحَ فُؤَادُ أُمِّ مُوسَىٰ فَٰرِغًاۖ إِن كَادَتۡ لَتُبۡدِي بِهِۦ لَوۡلَآ أَن رَّبَطۡنَا عَلَىٰ قَلۡبِهَا لِتَكُونَ مِنَ ٱلۡمُؤۡمِنِينَ ١٠ وَقَالَتۡ لِأُخۡتِهِۦ قُصِّيهِۖ فَبَصُرَتۡ بِهِۦ عَن جُنُبٖ وَهُمۡ لَا يَشۡعُرُونَ ١١ ۞وَحَرَّمۡنَا عَلَيۡهِ ٱلۡمَرَاضِعَ مِن قَبۡلُ فَقَالَتۡ هَلۡ أَدُلُّكُمۡ عَلَىٰٓ أَهۡلِ بَيۡتٖ يَكۡفُلُونَهُۥ لَكُمۡ وَهُمۡ لَهُۥ نَٰصِحُونَ ١٢ فَرَدَدۡنَٰهُ إِلَىٰٓ أُمِّهِۦ كَيۡ تَقَرَّ عَيۡنُهَا وَلَا تَحۡزَنَ وَلِتَعۡلَمَ أَنَّ وَعۡدَ ٱللَّهِ حَقّٞ وَلَٰكِنَّ أَكۡثَرَهُمۡ لَا يَعۡلَمُونَ ١٣ ﴾ [القصص: ٧، ١٣]

“আর আমি মূসার মায়ের প্রতি নির্দেশ পাঠালাম, ‘তুমি তাকে দুধ পান করাও। অতঃপর যখন তুমি তার ব্যাপারে আশঙ্কা করবে, তখন তাকে দরিয়ায় নিক্ষেপ করবে। আর তুমি ভয় করবে না এবং চিন্তা করবে না। নিশ্চয় আমি তাকে তোমার কাছে ফিরিয়ে দেব এবং তাকে রাসূলদের অন্তর্ভুক্ত করব’। অতঃপর ফির‘আউন পরিবার তাকে উঠিয়ে নিল, পরিণামে সে তাদের শত্রু ও দুঃশ্চিন্তার কারণ হবে। নিশ্চয় ফির‘আউন, হামান ও তাদের সৈন্যরা ছিল অপরাধী। আর ফির‘আউনের স্ত্রী বলল, ‘এ শিশুটি আমার ও তোমার চক্ষু শীতলকারী, তাকে হত্যা করো না। আশা করা যায়, সে আমাদের কোনো উপকারে আসবে। অথবা আমরা তাকে সন্তান হিসেবে গ্রহণ করতে পারি’। অথচ তারা উপলব্ধি করতে পারেনি। আর মূসার মায়ের অন্তর বিচলিত হয়ে উঠেছিল। সে তো তার পরিচয় প্রকাশ করেই দিত, যদি আমি তার অন্তরকে দৃঢ় করে না দিতাম, যাতে সে আস্থাশীলদের অন্তর্ভুক্ত হয়। আর সে মূসার বোনকে বলল, ‘এর পিছনে পিছনে যাও’। সে দূর থেকে তাকে দেখছিল, কিন্তু তারা টের পায়নি।আর আমি তার জন্য পূর্ব থেকেই ধাত্রী (স্তন্য পান) নিষিদ্ধ করে দিয়েছিলাম। তারপর মূসার বোন এসে বলল, ‘আমি কি তোমাদেরকে এমন একটি পরিবারের সন্ধান দেব, যারা এ শিশুটিকে তোমাদের পক্ষে লালন পালন করবে এবং তারা তার শুভাকাঙ্ক্ষী হবে’। অতঃপর আমি তাকে তার মায়ের কাছে ফিরিয়ে দিলাম, যাতে তার চোখ জুড়ায় এবং সে যেন কোনো দুশ্চিন্তা না করে। আর সে যেন জানতে পারে যে, নিশ্চয় আল্লাহর ওয়াদা সত্য। কিন্তু তাদের অধিকাংশই তা জানে না”। [সূরা আল্-কাসাস: ৭-১৩]

আল্লাহ আরো বলেন,

﴿ ثُمَّ بَعَثۡنَا مِنۢ بَعۡدِهِم مُّوسَىٰ بِ‍َٔايَٰتِنَآ إِلَىٰ فِرۡعَوۡنَ وَمَلَإِيْهِۦ فَظَلَمُواْ بِهَاۖ فَٱنظُرۡ كَيۡفَ كَانَ عَٰقِبَةُ ٱلۡمُفۡسِدِينَ ١٠٣ وَقَالَ مُوسَىٰ يَٰفِرۡعَوۡنُ إِنِّي رَسُولٞ مِّن رَّبِّ ٱلۡعَٰلَمِينَ ١٠٤ حَقِيقٌ عَلَىٰٓ أَن لَّآ أَقُولَ عَلَى ٱللَّهِ إِلَّا ٱلۡحَقَّۚ قَدۡ جِئۡتُكُم بِبَيِّنَةٖ مِّن رَّبِّكُمۡ فَأَرۡسِلۡ مَعِيَ بَنِيٓ إِسۡرَٰٓءِيلَ ١٠٥ قَالَ إِن كُنتَ جِئۡتَ بِ‍َٔايَةٖ فَأۡتِ بِهَآ إِن كُنتَ مِنَ ٱلصَّٰدِقِينَ ١٠٦ فَأَلۡقَىٰ عَصَاهُ فَإِذَا هِيَ ثُعۡبَانٞ مُّبِينٞ ١٠٧ وَنَزَعَ يَدَهُۥ فَإِذَا هِيَ بَيۡضَآءُ لِلنَّٰظِرِينَ ١٠٨ قَالَ ٱلۡمَلَأُ مِن قَوۡمِ فِرۡعَوۡنَ إِنَّ هَٰذَا لَسَٰحِرٌ عَلِيمٞ ١٠٩ يُرِيدُ أَن يُخۡرِجَكُم مِّنۡ أَرۡضِكُمۡۖ فَمَاذَا تَأۡمُرُونَ ١١٠ قَالُوٓاْ أَرۡجِهۡ وَأَخَاهُ وَأَرۡسِلۡ فِي ٱلۡمَدَآئِنِ حَٰشِرِينَ ١١١ يَأۡتُوكَ بِكُلِّ سَٰحِرٍ عَلِيمٖ ١١٢ وَجَآءَ ٱلسَّحَرَةُ فِرۡعَوۡنَ قَالُوٓاْ إِنَّ لَنَا لَأَجۡرًا إِن كُنَّا نَحۡنُ ٱلۡغَٰلِبِينَ ١١٣ قَالَ نَعَمۡ وَإِنَّكُمۡ لَمِنَ ٱلۡمُقَرَّبِينَ ١١٤ قَالُواْ يَٰمُوسَىٰٓ إِمَّآ أَن تُلۡقِيَ وَإِمَّآ أَن نَّكُونَ نَحۡنُ ٱلۡمُلۡقِينَ ١١٥ قَالَ أَلۡقُواْۖ فَلَمَّآ أَلۡقَوۡاْ سَحَرُوٓاْ أَعۡيُنَ ٱلنَّاسِ وَٱسۡتَرۡهَبُوهُمۡ وَجَآءُو بِسِحۡرٍ عَظِيمٖ ١١٦ ۞وَأَوۡحَيۡنَآ إِلَىٰ مُوسَىٰٓ أَنۡ أَلۡقِ عَصَاكَۖ فَإِذَا هِيَ تَلۡقَفُ مَا يَأۡفِكُونَ ١١٧ فَوَقَعَ ٱلۡحَقُّ وَبَطَلَ مَا كَانُواْ يَعۡمَلُونَ ١١٨ فَغُلِبُواْ هُنَالِكَ وَٱنقَلَبُواْ صَٰغِرِينَ ١١٩ وَأُلۡقِيَ ٱلسَّحَرَةُ سَٰجِدِينَ ١٢٠ قَالُوٓاْ ءَامَنَّا بِرَبِّ ٱلۡعَٰلَمِينَ ١٢١ رَبِّ مُوسَىٰ وَهَٰرُونَ ١٢٢ قَالَ فِرۡعَوۡنُ ءَامَنتُم بِهِۦ قَبۡلَ أَنۡ ءَاذَنَ لَكُمۡۖ إِنَّ هَٰذَا لَمَكۡرٞ مَّكَرۡتُمُوهُ فِي ٱلۡمَدِينَةِ لِتُخۡرِجُواْ مِنۡهَآ أَهۡلَهَاۖ فَسَوۡفَ تَعۡلَمُونَ ١٢٣ لَأُقَطِّعَنَّ أَيۡدِيَكُمۡ وَأَرۡجُلَكُم مِّنۡ خِلَٰفٖ ثُمَّ لَأُصَلِّبَنَّكُمۡ أَجۡمَعِينَ ١٢٤ قَالُوٓاْ إِنَّآ إِلَىٰ رَبِّنَا مُنقَلِبُونَ ١٢٥ وَمَا تَنقِمُ مِنَّآ إِلَّآ أَنۡ ءَامَنَّا بِ‍َٔايَٰتِ رَبِّنَا لَمَّا جَآءَتۡنَاۚ رَبَّنَآ أَفۡرِغۡ عَلَيۡنَا صَبۡرٗا وَتَوَفَّنَا مُسۡلِمِينَ ١٢٦ ﴾ [الاعراف: ١٠٣، ١٢٦]

“অতঃপর তাদের পরে আমি মূসাকে আমার আয়াতসমূহ সহকারে ফির‘আউন ও তার সভাসদদের কাছে পাঠিয়েছি। অতঃপর তারা এর সাথে যুলম করেছে। সুতরাং লক্ষ্য কর, ফাসাদকারীদের পরিণাম কীরূপ হয়েছিল। মূসা বলল, ‘হে ফির‘আউন, আমি তো সকল সৃষ্টির রবের পক্ষ থেকে রাসূল।’ সমীচীন যে, আমি আল্লাহ সম্পর্কে সত্য ছাড়া বলব না। আমি তোমাদের রবের নিকট থেকে স্পষ্ট প্রমাণ নিয়ে তোমাদের কাছে এসেছি। সুতরাং তুমি বনী ইসরাঈলকে আমার সাথে পাঠিয়ে দাও।’ সে বলল, ‘তুমি যদি কোনো আয়াত নিয়ে আস তবে তা পেশ কর, যদি তুমি সত্যবাদীদের অন্তর্ভুক্ত হও।’ তখন সে ছেড়ে দিল তার লাঠি। তৎক্ষণাৎ তা এক স্পষ্ট অজগর হয়ে গেল। আর সে বের করল তার হাত, তৎক্ষণাৎ তা দর্শকদের কাছে ধবধবে সাদা (দেখাচ্ছিল)। ফির‘আউনের কওমের সভাসদরা বলল, ‘নিশ্চয় এ হল বিজ্ঞ জাদুকর।’‘সে তোমাদেরকে তোমাদের দেশ থেকে বের করতে চায়, সুতরাং তোমরা কী নির্দেশ দেবে?’ তারা বলল, ‘আপনি তাকে ও তার ভাইকে সুযোগ দিন এবং শহরগুলোতে সংগ্রহকারী পাঠিয়ে দিন।’‘তারা আপনার কাছে সকল বিজ্ঞ জাদুকরকে নিয়ে আসবে।’ আর জাদুকররা ফির‘আউনের কাছে আসল। তারা বলল, ‘নিশ্চয় আমাদের জন্য পারিশ্রমিক আছে, যদি আমরা বিজয়ী হই?’ সে বলল, ‘হ্যাঁ, আর অবশ্যই তোমরা আমার ঘনিষ্ঠ লোকদের অন্তর্ভুক্ত হবে।’ তারা বলল, ‘হে মূসা, হয় তুমি নিক্ষেপ করবে, নয়তো আমরাই নিক্ষেপ করব।’ সে বলল, ‘তোমরা নিক্ষেপ কর।’ অতঃপর যখন তারা নিক্ষেপ করল তখন তারা লোকদের চোখে জাদু করল এবং তাদেরকে ভীত করে তুলল। তারা বড় জাদু প্রদর্শন করল। আর আমি মূসার প্রতি ওহী পাঠালাম যে, ‘তুমি তোমার লাঠি ছেড়ে দাও’ তৎক্ষণাৎ সে গিলতে লাগল সেগুলিকে যে অলীক বস্তু তারা বানিয়েছিল। ফলে সত্য প্রকাশ হয়ে গেল এবং তারা যা কিছু করছিল তা বাতিল হয়ে গেল। তাই সেখানে তারা পরাজিত হল এবং লাঞ্ছিত হয়ে গেল। আর জাদুকররা সিজদায় পড়ে গেল। তারা বলল, ‘আমরা সকল সৃষ্টির রবের প্রতি ঈমান আনলাম, মূসা ও হারূনের রবের প্রতি।’ ফির‘আউন বলল, ‘আমি তোমাদেরকে অনুমতি দেওয়ার আগে তোমরা তার প্রতি ঈমান আনলে! নিশ্চয় এটা এমন এক চক্রান্ত যা তোমরা শহরে করেছ সেখান থেকে তার অধিবাসীদেরকে বের করার জন্য। সুতরাং তোমরা অচিরেই জানতে পারবে।’ আমি অবশ্যই তোমাদের হাত ও পা বিপরীত দিক থেকে কেটে দেব। তারপর অবশ্যই তোমাদের সবাইকে শূলে চড়াব।’ তারা বলল, ‘নিশ্চয় আমরা আমাদের রবের কাছে প্রত্যাবর্তন করব। আর তুমি আমাদের থেকে প্রতিশোধ গ্রহণ করছ শুধু এ কারণে যে, আমরা আমাদের রবের আয়াতসমূহের প্রতি ঈমান এনেছি, যখন তা আমাদের কাছে এসেছে। হে আমাদের রব, আমাদেরকে পরিপূর্ণ ধৈর্য দান করুন এবং মুসলিম হিসাবে আমাদেরকে মৃত্যু দান করুন”। [সূরা আল-আ‘রাফ: ১০৩-১২৬]

আল্লাহ আরো বলেছেন,

﴿ وَهَلۡ أَتَىٰكَ حَدِيثُ مُوسَىٰٓ ٩ إِذۡ رَءَا نَارٗا فَقَالَ لِأَهۡلِهِ ٱمۡكُثُوٓاْ إِنِّيٓ ءَانَسۡتُ نَارٗا لَّعَلِّيٓ ءَاتِيكُم مِّنۡهَا بِقَبَسٍ أَوۡ أَجِدُ عَلَى ٱلنَّارِ هُدٗى ١٠ فَلَمَّآ أَتَىٰهَا نُودِيَ يَٰمُوسَىٰٓ ١١ إِنِّيٓ أَنَا۠ رَبُّكَ فَٱخۡلَعۡ نَعۡلَيۡكَ إِنَّكَ بِٱلۡوَادِ ٱلۡمُقَدَّسِ طُوٗى ١٢ وَأَنَا ٱخۡتَرۡتُكَ فَٱسۡتَمِعۡ لِمَا يُوحَىٰٓ ١٣ إِنَّنِيٓ أَنَا ٱللَّهُ لَآ إِلَٰهَ إِلَّآ أَنَا۠ فَٱعۡبُدۡنِي وَأَقِمِ ٱلصَّلَوٰةَ لِذِكۡرِيٓ ١٤ إِنَّ ٱلسَّاعَةَ ءَاتِيَةٌ أَكَادُ أُخۡفِيهَا لِتُجۡزَىٰ كُلُّ نَفۡسِۢ بِمَا تَسۡعَىٰ ١٥ فَلَا يَصُدَّنَّكَ عَنۡهَا مَن لَّا يُؤۡمِنُ بِهَا وَٱتَّبَعَ هَوَىٰهُ فَتَرۡدَىٰ ١٦ وَمَا تِلۡكَ بِيَمِينِكَ يَٰمُوسَىٰ ١٧ قَالَ هِيَ عَصَايَ أَتَوَكَّؤُاْ عَلَيۡهَا وَأَهُشُّ بِهَا عَلَىٰ غَنَمِي وَلِيَ فِيهَا مَ‍َٔارِبُ أُخۡرَىٰ ١٨ قَالَ أَلۡقِهَا يَٰمُوسَىٰ ١٩ فَأَلۡقَىٰهَا فَإِذَا هِيَ حَيَّةٞ تَسۡعَىٰ ٢٠ قَالَ خُذۡهَا وَلَا تَخَفۡۖ سَنُعِيدُهَا سِيرَتَهَا ٱلۡأُولَىٰ ٢١ وَٱضۡمُمۡ يَدَكَ إِلَىٰ جَنَاحِكَ تَخۡرُجۡ بَيۡضَآءَ مِنۡ غَيۡرِ سُوٓءٍ ءَايَةً أُخۡرَىٰ ٢٢ لِنُرِيَكَ مِنۡ ءَايَٰتِنَا ٱلۡكُبۡرَى ٢٣ ٱذۡهَبۡ إِلَىٰ فِرۡعَوۡنَ إِنَّهُۥ طَغَىٰ ٢٤ قَالَ رَبِّ ٱشۡرَحۡ لِي صَدۡرِي ٢٥ وَيَسِّرۡ لِيٓ أَمۡرِي ٢٦ وَٱحۡلُلۡ عُقۡدَةٗ مِّن لِّسَانِي ٢٧ يَفۡقَهُواْ قَوۡلِي ٢٨ وَٱجۡعَل لِّي وَزِيرٗا مِّنۡ أَهۡلِي ٢٩ هَٰرُونَ أَخِي ٣٠ ٱشۡدُدۡ بِهِۦٓ أَزۡرِي ٣١ وَأَشۡرِكۡهُ فِيٓ أَمۡرِي ٣٢ كَيۡ نُسَبِّحَكَ كَثِيرٗا ٣٣ وَنَذۡكُرَكَ كَثِيرًا ٣٤ إِنَّكَ كُنتَ بِنَا بَصِيرٗا ٣٥ قَالَ قَدۡ أُوتِيتَ سُؤۡلَكَ يَٰمُوسَىٰ ٣٦ وَلَقَدۡ مَنَنَّا عَلَيۡكَ مَرَّةً أُخۡرَىٰٓ ٣٧ إِذۡ أَوۡحَيۡنَآ إِلَىٰٓ أُمِّكَ مَا يُوحَىٰٓ ٣٨ أَنِ ٱقۡذِفِيهِ فِي ٱلتَّابُوتِ فَٱقۡذِفِيهِ فِي ٱلۡيَمِّ فَلۡيُلۡقِهِ ٱلۡيَمُّ بِٱلسَّاحِلِ يَأۡخُذۡهُ عَدُوّٞ لِّي وَعَدُوّٞ لَّهُۥۚ وَأَلۡقَيۡتُ عَلَيۡكَ مَحَبَّةٗ مِّنِّي وَلِتُصۡنَعَ عَلَىٰ عَيۡنِيٓ ٣٩ إِذۡ تَمۡشِيٓ أُخۡتُكَ فَتَقُولُ هَلۡ أَدُلُّكُمۡ عَلَىٰ مَن يَكۡفُلُهُۥۖ فَرَجَعۡنَٰكَ إِلَىٰٓ أُمِّكَ كَيۡ تَقَرَّ عَيۡنُهَا وَلَا تَحۡزَنَۚ وَقَتَلۡتَ نَفۡسٗا فَنَجَّيۡنَٰكَ مِنَ ٱلۡغَمِّ وَفَتَنَّٰكَ فُتُونٗاۚ فَلَبِثۡتَ سِنِينَ فِيٓ أَهۡلِ مَدۡيَنَ ثُمَّ جِئۡتَ عَلَىٰ قَدَرٖ يَٰمُوسَىٰ ٤٠ ﴾ [طه: ٩، ٤٠]

“আর তোমার কাছে কি মূসার কথা পৌঁছেছে? যখন সে আগুন দেখল, তখন নিজ পরিবারকে বলল, ‘তোমরা অপেক্ষা কর, আমি আগুন দেখতে পেয়েছি, আশা করি আমি তোমাদের জন্য তা থেকে কিছু জ্বলন্ত আঙ্গার নিয়ে আসতে পারব অথবা আগুনের নিকট পথনির্দেশ পাব।’  যখন সে আগুনের কাছে আসল তখন তাকে আহবান করা হল, ‘হে মূসা’ নিশ্চয় আমি তোমার রব; সুতরাং তোমার জুতা জোড়া খুলে ফেল, নিশ্চয় তুমি পবিত্র ‘তুওয়া’ উপত্যকায় রয়েছ’।‘আর আমি তোমাকে মনোনীত করেছি, সুতরাং যা ওহীরূপে পাঠানো হচ্ছে তা মনোযোগ দিয়ে শুন’।‘নিশ্চয় আমি আল্লাহ, আমি ছাড়া কোনো (সত্য) ইলাহ নেই; সুতরাং আমার ইবাদাত কর এবং আমার স্মরণার্থে সালাত কায়েম কর’।‘নিশ্চয় কিয়ামত আসবে; আমি তা গোপন রাখতে চাই যাতে প্রত্যেককে স্বীয় চেষ্টা-সাধনা অনুযায়ী প্রতিদান দেওয়া যায়’। অতএব যে ব্যক্তি তার প্রতি ঈমান রাখে না এবং স্বীয় প্রবৃত্তির অনুসরণ করে সে যেন কিছুতেই তাতে ঈমান আনয়নে তোমাকে বাধা দিতে না পারে; অন্যথায় তুমি ধ্বংস হয়ে যাবে। আর ‘হে মূসা, তোমার ডান হাতে ওটা কি’? সে বলল, ‘এটি আমার লাঠি; আমি এর ওপর ভর করি, এটি দিয়ে আমি আমার মেষপালের জন্য গাছের পাতা পাড়ি এবং এটি আমার আরো অনেক কাজে লাগে।’ তিনি বললেন, ‘হে মূসা! ওটা ফেলে দাও।’ অতঃপর সে তা ফেলে দিল; অমনি তা সাপ হয়ে ছুটতে লাগল। তিনি বললেন, ‘ওটা ধর এবং ভয় করো না, আমি ওকে ওর পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে দেব’।‘আর তোমার হাত তোমার বগলের সাথে মিলাও, তাহলে তা উজ্জ্বল হয়ে বেরিয়ে আসবে কোনরূপ ত্রুটি ছাড়া; আরেকটি নিদর্শনরূপে’। এটা এজন্য যে, আমি তোমাকে আমার বড় বড় নিদর্শনসমূহের কিছু দেখাব।‘ফির‘আউনের কাছে যাও; নিশ্চয় সে সীমালঙ্ঘন করেছে’। সে বলল, ‘হে আমার রব, আমার বুক প্রশস্ত করে দিন’‘এবং আমার কাজ সহজ করে দিন, ‘আর আমার জিহবার জড়তা দূর করে দিন- যাতে তারা আমার কথা বুঝতে পারে’।‘আর আমার পরিবার থেকে আমার জন্য একজন সাহায্যকারী নির্ধারণ করে দিন। আমার ভাই হারূনকে’‘তার দ্বারা আমার শক্তি সুদৃঢ় করুন এবং তাকে আমার কাজে শরীক করুন’।‘যাতে আমরা বেশী করে আপনার তাসবীহ পাঠ করতে পারি’, এবং অধিক পরিমাণে আপনাকে স্মরণ করতে পারি।‘আপনিই তো আমাদের সম্যক দ্রষ্টা’। তিনি বললেন, ‘হে মূসা, তুমি যা চেয়েছ তা তোমাকে দেওয়া হল’।‘আর আমি আরো একবার তোমার প্রতি অনুগ্রহ করেছিলাম’। ‘যখন আমি তোমার মাতাকে জানিয়ে দিয়েছিলাম যা জানাবার ছিল, ‘যে, তুমি তাঁকে সিন্ধুকের মধ্যে রেখে দাও। তারপর তা দরিয়ায় ভাসিয়ে দাও। যেন দরিয়া তাকে তীরে ঠেলে দেয়। ফলে তাকে আমার শত্রু ও তার শত্রু নিয়ে নেবে। আর আমি আমার পক্ষ থেকে তোমার প্রতি ভালবাসা ঢেলে দিয়েছিলাম, যাতে তুমি আমার চোখের সামনে প্রতিপালিত হও’। যখন তোমার বোন (সিন্দুকের সাথে সাথে) চলছিল। অতঃপর সে গিয়ে বলল, ‘আমি কি তোমাদেরকে এমন একজনের সন্ধান দেব, যে এর দায়িত্বভার নিতে পারবে’? অতঃপর আমি তোমাকে তোমার মায়ের নিকট ফিরিয়ে দিলাম; যাতে তার চোখ জুড়ায় এবং সে দুঃখ না পায়। আর তুমি এক ব্যক্তিকে হত্যা করেছিলে। তখন আমি তোমাকে মানোবেদনা থেকে মুক্তি দিলাম এবং তোমাকে আমি বিভিন্নভাবে পরীক্ষা করেছি। অতঃপর তুমি কয়েক বছর মাদইয়ানবাসীদের মধ্যে অবস্থান করেছ। হে মূসা, তারপর নির্ধারিত সময়ে তুমি এসে উপস্থিত হলে”। [সূরা তা-হা: ৯-৪০]

আল্লাহ আরো বলেছেন,

﴿ وَلَقَدۡ أَرَيۡنَٰهُ ءَايَٰتِنَا كُلَّهَا فَكَذَّبَ وَأَبَىٰ ٥٦ قَالَ أَجِئۡتَنَا لِتُخۡرِجَنَا مِنۡ أَرۡضِنَا بِسِحۡرِكَ يَٰمُوسَىٰ ٥٧ فَلَنَأۡتِيَنَّكَ بِسِحۡرٖ مِّثۡلِهِۦ فَٱجۡعَلۡ بَيۡنَنَا وَبَيۡنَكَ مَوۡعِدٗا لَّا نُخۡلِفُهُۥ نَحۡنُ وَلَآ أَنتَ مَكَانٗا سُوٗى ٥٨ قَالَ مَوۡعِدُكُمۡ يَوۡمُ ٱلزِّينَةِ وَأَن يُحۡشَرَ ٱلنَّاسُ ضُحٗى ٥٩ فَتَوَلَّىٰ فِرۡعَوۡنُ فَجَمَعَ كَيۡدَهُۥ ثُمَّ أَتَىٰ ٦٠ قَالَ لَهُم مُّوسَىٰ وَيۡلَكُمۡ لَا تَفۡتَرُواْ عَلَى ٱللَّهِ كَذِبٗا فَيُسۡحِتَكُم بِعَذَابٖۖ وَقَدۡ خَابَ مَنِ ٱفۡتَرَىٰ ٦١ فَتَنَٰزَعُوٓاْ أَمۡرَهُم بَيۡنَهُمۡ وَأَسَرُّواْ ٱلنَّجۡوَىٰ ٦٢ قَالُوٓاْ إِنۡ هَٰذَٰنِ لَسَٰحِرَٰنِ يُرِيدَانِ أَن يُخۡرِجَاكُم مِّنۡ أَرۡضِكُم بِسِحۡرِهِمَا وَيَذۡهَبَا بِطَرِيقَتِكُمُ ٱلۡمُثۡلَىٰ ٦٣ فَأَجۡمِعُواْ كَيۡدَكُمۡ ثُمَّ ٱئۡتُواْ صَفّٗاۚ وَقَدۡ أَفۡلَحَ ٱلۡيَوۡمَ مَنِ ٱسۡتَعۡلَىٰ ٦٤ قَالُواْ يَٰمُوسَىٰٓ إِمَّآ أَن تُلۡقِيَ وَإِمَّآ أَن نَّكُونَ أَوَّلَ مَنۡ أَلۡقَىٰ ٦٥ قَالَ بَلۡ أَلۡقُواْۖ فَإِذَا حِبَالُهُمۡ وَعِصِيُّهُمۡ يُخَيَّلُ إِلَيۡهِ مِن سِحۡرِهِمۡ أَنَّهَا تَسۡعَىٰ ٦٦ فَأَوۡجَسَ فِي نَفۡسِهِۦ خِيفَةٗ مُّوسَىٰ ٦٧ قُلۡنَا لَا تَخَفۡ إِنَّكَ أَنتَ ٱلۡأَعۡلَىٰ ٦٨ وَأَلۡقِ مَا فِي يَمِينِكَ تَلۡقَفۡ مَا صَنَعُوٓاْۖ إِنَّمَا صَنَعُواْ كَيۡدُ سَٰحِرٖۖ وَلَا يُفۡلِحُ ٱلسَّاحِرُ حَيۡثُ أَتَىٰ ٦٩ فَأُلۡقِيَ ٱلسَّحَرَةُ سُجَّدٗا قَالُوٓاْ ءَامَنَّا بِرَبِّ هَٰرُونَ وَمُوسَىٰ ٧٠ قَالَ ءَامَنتُمۡ لَهُۥ قَبۡلَ أَنۡ ءَاذَنَ لَكُمۡۖ إِنَّهُۥ لَكَبِيرُكُمُ ٱلَّذِي عَلَّمَكُمُ ٱلسِّحۡرَۖ فَلَأُقَطِّعَنَّ أَيۡدِيَكُمۡ وَأَرۡجُلَكُم مِّنۡ خِلَٰفٖ وَلَأُصَلِّبَنَّكُمۡ فِي جُذُوعِ ٱلنَّخۡلِ وَلَتَعۡلَمُنَّ أَيُّنَآ أَشَدُّ عَذَابٗا وَأَبۡقَىٰ ٧١ قَالُواْ لَن نُّؤۡثِرَكَ عَلَىٰ مَا جَآءَنَا مِنَ ٱلۡبَيِّنَٰتِ وَٱلَّذِي فَطَرَنَاۖ فَٱقۡضِ مَآ أَنتَ قَاضٍۖ إِنَّمَا تَقۡضِي هَٰذِهِ ٱلۡحَيَوٰةَ ٱلدُّنۡيَآ ٧٢ إِنَّآ ءَامَنَّا بِرَبِّنَا لِيَغۡفِرَ لَنَا خَطَٰيَٰنَا وَمَآ أَكۡرَهۡتَنَا عَلَيۡهِ مِنَ ٱلسِّحۡرِۗ وَٱللَّهُ خَيۡرٞ وَأَبۡقَىٰٓ ٧٣ ﴾ [طه: ٥٦، ٧٣]

“আমি তাকে আমার সকল নিদর্শন দেখিয়েছিলাম, কিন্তু সে মিথ্যা আরোপ করেছে এবং অমান্য করেছে। সে বলল, ‘হে মূসা, তুমি কি আমাদের কাছে এজন্য এসেছ যে, তোমার জাদুর দ্বারা আমাদেরকে আমাদের দেশ থেকে বের করে দেবে’? ‘তাহলে আমরা অবশ্যই তোমার নিকট অনুরূপ জাদু নিয়ে আসব। সুতরাং একটা মধ্যবর্তী স্থানে আমাদের ও তোমার মিলিত হওয়ার জন্য একটি সময় নির্ধারণ কর, যা আমরাও লঙ্ঘন করব না, তুমিও করবে না’। মূসা বলল, ‘তোমাদের নির্ধারিত সময় হল উৎসবের দিন। আর সেদিন পূর্বাহ্নেই যেন লোকজনকে সমবেত করা হয়’। অতঃপর ফির‘আউন উঠে গেল। তারপর সে তার কৌশল একত্র করল, তারপর সে আসল। মূসা তাদেরকে বলল, ‘তোমাদের দুর্ভাগ্য! তোমরা আল্লাহর প্রতি মিথ্যা আরোপ করো না। করলে তিনি আযাব দ্বারা তোমাদেরকে সমূলে ধ্বংস করে দেবেন। আর যে ব্যক্তি মিথ্যা আরোপ করে, সে-ই ব্যর্থ হয়। তখন তারা নিজদের মধ্যে তাদের কর্ম সম্বন্ধে বাক-বিতন্ডা করল এবং তারা গোপনে পরামর্শ করল। তারা বলল, ‘এ দু’জন অবশ্যই জাদুকর। তারা চায় তাদের জাদুর মাধ্যমে তোমাদেরকে তোমাদের দেশ থেকে বের করে দিতে এবং তোমাদের উৎকৃষ্ট জীবন পদ্ধতি ধ্বংস করে দিতে’।‘কাজেই তোমরা তোমাদের কলা-কৌশল জমা কর। তারপর তোমরা সবাই সারিবদ্ধভাবে আস। আর আজ যে বিজয়ী হবে, সে-ই সফল হবে’। তারা বলল, হে মূসা, হয় তুমি নিক্ষেপ কর, না হয় আমরাই প্রথমে নিক্ষেপ করি। মূসা বলল, ‘বরং তোমরাই নিক্ষেপ কর। অতঃপর তাদের জাদুর প্রভাবে মূসার কাছে মনে হল যেন তাদের রশি ও লাঠিগুলো ছুটোছুটি করছে। তখন মূসা তার অন্তরে কিছুটা ভীতি অনুভব করল। আমি বললাম, ‘তুমি ভয় পেয়ো না, নিশ্চয় তুমিই বিজয়ী হবে’।‘আর তোমার ডান হাতে যা আছে, তা ফেলে দাও। তারা যা করেছে, এটা সেগুলো গ্রাস করে ফেলবে। তারা যা করেছে, তাতো কেবল জাদুকরের কৌশল। আর জাদুকর যেখানেই আসুক না কেন, সে সফল হবে না’। অতঃপর জাদুকরেরা সিজদায় লুটিয়ে পড়ল। তারা বলল, ‘আমরা হারূন ও মূসার রবের প্রতি ঈমান আনলাম’।ফির‘আউন বলল, ‘কী, আমি তোমাদেরকে অনুমতি দেওয়ার আগেই তোমরা তার প্রতি ঈমান আনলে? নিশ্চয় সে-ই তোমাদের প্রধান, যে তোমাদেরকে জাদু শিখিয়েছে। সুতরাং আমি অবশ্যই তোমাদের হাত ও পা বিপরীত দিক থেকে কেটে ফেলব এবং আমি তোমাদেরকে খেজুর গাছের কান্ডে শূলিবিদ্ধ করবই। আর তোমরা অবশ্যই জানতে পারবে, আমাদের মধ্যে কার আযাব বেশী কঠোর এবং বেশী স্থায়ী।তারা বলল, ‘আমাদের নিকট যে সকল স্পষ্ট নিদর্শন এসেছে এবং যিনি আমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন, তার উপর আমরা তোমাকে কিছুতেই প্রাধান্য দেব না। সুতরাং তুমি যা ফয়সালা করতে চাও, তাই করো। তুমিতো কেবল এ দুনিয়ার জীবনের উপর কর্তৃত্ব করতে পার’।‘নিশ্চয় আমরা আমাদের রবের প্রতি ঈমান এনেছি, যাতে তিনি আমাদের অপরাধসমূহ এবং যে জাদু তুমি আমাদেরকে করতে বাধ্য করেছ, তা ক্ষমা করে দেন। আর আল্লাহ সর্বশ্রেষ্ঠ ও চিরস্থায়ী”। [সূরা তা-হা: ৫৬-৭৩]

﴿ وَلَقَدۡ أَوۡحَيۡنَآ إِلَىٰ مُوسَىٰٓ أَنۡ أَسۡرِ بِعِبَادِي فَٱضۡرِبۡ لَهُمۡ طَرِيقٗا فِي ٱلۡبَحۡرِ يَبَسٗا لَّا تَخَٰفُ دَرَكٗا وَلَا تَخۡشَىٰ ٧٧ فَأَتۡبَعَهُمۡ فِرۡعَوۡنُ بِجُنُودِهِۦ فَغَشِيَهُم مِّنَ ٱلۡيَمِّ مَا غَشِيَهُمۡ ٧٨ وَأَضَلَّ فِرۡعَوۡنُ قَوۡمَهُۥ وَمَا هَدَىٰ ٧٩ يَٰبَنِيٓ إِسۡرَٰٓءِيلَ قَدۡ أَنجَيۡنَٰكُم مِّنۡ عَدُوِّكُمۡ وَوَٰعَدۡنَٰكُمۡ جَانِبَ ٱلطُّورِ ٱلۡأَيۡمَنَ وَنَزَّلۡنَا عَلَيۡكُمُ ٱلۡمَنَّ وَٱلسَّلۡوَىٰ ٨٠ كُلُواْ مِن طَيِّبَٰتِ مَا رَزَقۡنَٰكُمۡ وَلَا تَطۡغَوۡاْ فِيهِ فَيَحِلَّ عَلَيۡكُمۡ غَضَبِيۖ وَمَن يَحۡلِلۡ عَلَيۡهِ غَضَبِي فَقَدۡ هَوَىٰ ٨١ ﴾ [طه: ٧٧، ٨١]

“আর আমি অবশ্যই মূসার কাছে ওহী প্রেরণ করেছিলাম যে, ‘আমার বান্দাদেরকে নিয়ে রাতের বেলায় রওয়ানা হও। অতঃপর সজোরে আঘাত করে তাদের জন্য শুকনো রাস্তা বানাও। পেছন থেকে ধরে ফেলার আশংকা করো না এবং ভয়ও করো না’। তারপর ফির‘আউন তার সেনাবাহিনী সহ তাদের পিছু নিল। অতঃপর সমুদ্র তাদেরকে সম্পূর্ণরূপে নিমজ্জিত করল। আর ফির‘আউন তার কওমকে পথভ্রষ্ট করেছিল এবং সে সঠিক পথ দেখায়নি। হে বনী ইসরাঈল, আমিই তোমাদেরকে তোমাদের শত্রু থেকে নাজাত দিয়েছি। আর তোমাদেরকে ওয়াদা দিয়েছিলাম তূর পাহাড়ের ডান পাশের[321] এবং আমি তোমাদের জন্য অবতরণ করেছিলাম ‘মান্না’ ও ‘সালওয়া’। আমি তোমাদেরকে যে রিযিক দান করেছি তা থেকে ভালগুলো খাও এবং এতে সীমালঙ্ঘন করো না। করলে তোমাদের উপর আমার গযব পতিত হবে। আর যার উপর আমার গযব পতিত হয় সে অবশ্যই ধ্বংস হয়”।[সূরা তা-হা: ৭৭-৮১]

﴿ وَلَقَدۡ أَخَذۡنَآ ءَالَ فِرۡعَوۡنَ بِٱلسِّنِينَ وَنَقۡصٖ مِّنَ ٱلثَّمَرَٰتِ لَعَلَّهُمۡ يَذَّكَّرُونَ ١٣٠ فَإِذَا جَآءَتۡهُمُ ٱلۡحَسَنَةُ قَالُواْ لَنَا هَٰذِهِۦۖ وَإِن تُصِبۡهُمۡ سَيِّئَةٞ يَطَّيَّرُواْ بِمُوسَىٰ وَمَن مَّعَهُۥٓۗ أَلَآ إِنَّمَا طَٰٓئِرُهُمۡ عِندَ ٱللَّهِ وَلَٰكِنَّ أَكۡثَرَهُمۡ لَا يَعۡلَمُونَ ١٣١ وَقَالُواْ مَهۡمَا تَأۡتِنَا بِهِۦ مِنۡ ءَايَةٖ لِّتَسۡحَرَنَا بِهَا فَمَا نَحۡنُ لَكَ بِمُؤۡمِنِينَ ١٣٢ فَأَرۡسَلۡنَا عَلَيۡهِمُ ٱلطُّوفَانَ وَٱلۡجَرَادَ وَٱلۡقُمَّلَ وَٱلضَّفَادِعَ وَٱلدَّمَ ءَايَٰتٖ مُّفَصَّلَٰتٖ فَٱسۡتَكۡبَرُواْ وَكَانُواْ قَوۡمٗا مُّجۡرِمِينَ ١٣٣ وَلَمَّا وَقَعَ عَلَيۡهِمُ ٱلرِّجۡزُ قَالُواْ يَٰمُوسَى ٱدۡعُ لَنَا رَبَّكَ بِمَا عَهِدَ عِندَكَۖ لَئِن كَشَفۡتَ عَنَّا ٱلرِّجۡزَ لَنُؤۡمِنَنَّ لَكَ وَلَنُرۡسِلَنَّ مَعَكَ بَنِيٓ إِسۡرَٰٓءِيلَ ١٣٤ فَلَمَّا كَشَفۡنَا عَنۡهُمُ ٱلرِّجۡزَ إِلَىٰٓ أَجَلٍ هُم بَٰلِغُوهُ إِذَا هُمۡ يَنكُثُونَ ١٣٥ فَٱنتَقَمۡنَا مِنۡهُمۡ فَأَغۡرَقۡنَٰهُمۡ فِي ٱلۡيَمِّ بِأَنَّهُمۡ كَذَّبُواْ بِ‍َٔايَٰتِنَا وَكَانُواْ عَنۡهَا غَٰفِلِينَ ١٣٦ وَأَوۡرَثۡنَا ٱلۡقَوۡمَ ٱلَّذِينَ كَانُواْ يُسۡتَضۡعَفُونَ مَشَٰرِقَ ٱلۡأَرۡضِ وَمَغَٰرِبَهَا ٱلَّتِي بَٰرَكۡنَا فِيهَاۖ وَتَمَّتۡ كَلِمَتُ رَبِّكَ ٱلۡحُسۡنَىٰ عَلَىٰ بَنِيٓ إِسۡرَٰٓءِيلَ بِمَا صَبَرُواْۖ وَدَمَّرۡنَا مَا كَانَ يَصۡنَعُ فِرۡعَوۡنُ وَقَوۡمُهُۥ وَمَا كَانُواْ يَعۡرِشُونَ ١٣٧ ﴾ [الاعراف: ١٣٠، ١٣٧]

“আর আমি পাকড়াও করেছি ফির‘আউনের অনুসারীদেরকে দুর্ভিক্ষ ও ফল- ফলাদির ক্ষয়-ক্ষতির মাধ্যমে, যাতে তারা উপদেশ গ্রহণ করে।অতঃপর যখন তাদের কাছে কল্যাণ আসত, তখন তারা বলত, ‘এটা আমাদের জন্য।’ আর যখন তাদের কাছে অকল্যাণ পৌঁছত তখন তারা মূসা ও তার সঙ্গীদেরকে অশুভলক্ষুণে মনে করত। তাদের কল্যাণ-অকল্যাণ তো আল্লাহর কাছে। কিন্তু তাদের অধিকাংশ জানে না। আর তারা বলল, ‘তুমি আমাদেরকে জাদু করার জন্য যে কোনো নিদর্শন আমাদের কাছে নিয়ে আস না কেন আমরা তো তোমার প্রতি ঈমান আনব না।’ সুতরাং আমি তাদের বিরুদ্ধে বিস্তারিত নিদর্শনাবলী হিসাবে পাঠালাম তুফান, পঙ্গপাল, উকুন, ব্যাঙ ও রক্ত। তার পরেও তারা অহঙ্কার করল। আর তারা ছিল এক অপরাধী কওম। আর যখন তাদের উপর আযাব পতিত হল তখন তারা বলল, ‘হে মূসা আমাদের জন্য তুমি তোমার রবের কাছে দুআ কর তিনি যে ওয়াদা তোমার সাথে করেছেন সে অনুযায়ী। যদি তুমি আমাদের উপর থেকে আযাব সরিয়ে দাও তাহলে অবশ্যই আমরা তোমার প্রতি ঈমান আনব এবং অবশ্যই তোমার সাথে বনী ইসরাঈলকে পাঠিয়ে দেব।’ অতঃপর যখনই আমি তাদের থেকে আযাব সরিয়ে নিতাম কিছু কালের জন্য যা তাদের জন্য নির্ধারিত ছিল, তখনই তারা অঙ্গীকার ভঙ্গ করত। অতঃপর আমি তাদের থেকে প্রতিশোধ নিলাম, ফলে তাদেরকে সমুদ্রে ডুবিয়ে দিলাম। কারণ তারা আমার আয়াতসমূহকে অস্বীকার করেছে এবং এ সম্পর্কে তারা ছিল গাফেল ।আর যে জাতিকে দুর্বল মনে করা হত আমি তাদেরকে যমীনের পূর্ব ও তার পশ্চিমের উত্তরাধিকারী বানালাম, যেখানে আমি বরকত দিয়েছি এবং বনী ইসরাঈলের উপর তোমার রবের উত্তম বাণী পরিপূর্ণ হল। কারণ তারা ধৈর্য ধারণ করেছে। আর ধ্বংস করে দিলাম যা কিছু তৈরি করেছিল ফির‘আউন ও তার কওম এবং তারা যা নির্মাণ করেছিল”। [সূরা আল-আ‘রাফ: ১৩০-১৩৭]

﴿ ۞وَإِذِ ٱسۡتَسۡقَىٰ مُوسَىٰ لِقَوۡمِهِۦ فَقُلۡنَا ٱضۡرِب بِّعَصَاكَ ٱلۡحَجَرَۖ فَٱنفَجَرَتۡ مِنۡهُ ٱثۡنَتَا عَشۡرَةَ عَيۡنٗاۖ قَدۡ عَلِمَ كُلُّ أُنَاسٖ مَّشۡرَبَهُمۡۖ كُلُواْ وَٱشۡرَبُواْ مِن رِّزۡقِ ٱللَّهِ وَلَا تَعۡثَوۡاْ فِي ٱلۡأَرۡضِ مُفۡسِدِينَ ٦٠ ﴾ [البقرة: ٦٠]

“আর স্মরণ কর, যখন মূসা তার কওমর জন্য পানি চাইল, তখন আমি বললাম, ‘তুমি তোমার লাঠি দ্বারা পাথরকে আঘাত কর’। ফলে তা থেকে উৎসারিত হল বারটি ঝরনা। প্রতিটি দল তাদের পানি পানের স্থান জেনে নিল। তোমরা আল্লাহর রিযিক থেকে আহার কর ও পান কর এবং ফাসাদকারী হয়ে যমীনে ঘুরে বেড়িয়ো না”। [সূরা বাকারা: ৬০]

﴿ وَإِذۡ قَتَلۡتُمۡ نَفۡسٗا فَٱدَّٰرَٰٔتُمۡ فِيهَاۖ وَٱللَّهُ مُخۡرِجٞ مَّا كُنتُمۡ تَكۡتُمُونَ ٧٢ فَقُلۡنَا ٱضۡرِبُوهُ بِبَعۡضِهَاۚ كَذَٰلِكَ يُحۡيِ ٱللَّهُ ٱلۡمَوۡتَىٰ وَيُرِيكُمۡ ءَايَٰتِهِۦ لَعَلَّكُمۡ تَعۡقِلُونَ ٧٣ ﴾ [البقرة: ٧٢، ٧٣]

“আর স্মরণ কর, যখন তোমরা একজনকে হত্যা করলে অতঃপর সে ব্যাপারে একে অপরকে দোষারোপ করলে। আর আল্লাহ প্রকাশ করে দিলেন তোমরা যা গোপন করছিলে। অতঃপর আমি বললাম, ‘তোমরা তাকে আঘাত কর গাভীটির (গোশ্তের) কিছু অংশ দিয়ে। এভাবে আল্লাহ জীবিত করেন মৃতদেরকে। আর তিনি তোমাদেরকে তাঁর নিদর্শনসমূহ দেখান, যাতে তোমরা বুঝ”। [সূরা বাকারা: ৭২-৭৩]

﴿ وَإِذۡ قُلۡتُمۡ يَٰمُوسَىٰ لَن نُّؤۡمِنَ لَكَ حَتَّىٰ نَرَى ٱللَّهَ جَهۡرَةٗ فَأَخَذَتۡكُمُ ٱلصَّٰعِقَةُ وَأَنتُمۡ تَنظُرُونَ ٥٥ ثُمَّ بَعَثۡنَٰكُم مِّنۢ بَعۡدِ مَوۡتِكُمۡ لَعَلَّكُمۡ تَشۡكُرُونَ ٥٦ وَظَلَّلۡنَا عَلَيۡكُمُ ٱلۡغَمَامَ وَأَنزَلۡنَا عَلَيۡكُمُ ٱلۡمَنَّ وَٱلسَّلۡوَىٰۖ كُلُواْ مِن طَيِّبَٰتِ مَا رَزَقۡنَٰكُمۡۚ وَمَا ظَلَمُونَا وَلَٰكِن كَانُوٓاْ أَنفُسَهُمۡ يَظۡلِمُونَ ٥٧ ﴾ [البقرة: ٥٥، ٥٧]

“আর যখন তোমরা বললে, ‘হে মূসা, আমরা তোমার প্রতি ঈমান আনব না, যতক্ষণ না আমরা প্রকাশ্যে আল্লাহকে দেখি’। ফলে বজ্র তোমাদেরকে পাকড়াও করল আর তোমরা তা দেখছিলে। অতঃপর আমি তোমাদের মৃত্যুর পর তোমাদেরকে পুনঃজীবন দান করলাম, যাতে তোমরা শোকর আদায় কর।আর আমি তোমাদের উপর মেঘের ছায়া দিলাম এবং তোমাদের প্রতি নাযিল করলাম ‘মান্না’[322] ও ‘সালওয়া’[323]। তোমরা সে পবিত্র বস্তু থেকে আহার কর, যা আমি তোমাদেরকে রিযিক দিয়েছি। আর তারা আমার প্রতি যুলম করেনি, বরং তারা নিজদেরকেই যুলম করত”। [সূরা বাকারা: ৫৫-৫৭]

﴿ وَقَالَ مُوسَىٰ رَبَّنَآ إِنَّكَ ءَاتَيۡتَ فِرۡعَوۡنَ وَمَلَأَهُۥ زِينَةٗ وَأَمۡوَٰلٗا فِي ٱلۡحَيَوٰةِ ٱلدُّنۡيَا رَبَّنَا لِيُضِلُّواْ عَن سَبِيلِكَۖ رَبَّنَا ٱطۡمِسۡ عَلَىٰٓ أَمۡوَٰلِهِمۡ وَٱشۡدُدۡ عَلَىٰ قُلُوبِهِمۡ فَلَا يُؤۡمِنُواْ حَتَّىٰ يَرَوُاْ ٱلۡعَذَابَ ٱلۡأَلِيمَ ٨٨ قَالَ قَدۡ أُجِيبَت دَّعۡوَتُكُمَا فَٱسۡتَقِيمَا وَلَا تَتَّبِعَآنِّ سَبِيلَ ٱلَّذِينَ لَا يَعۡلَمُونَ ٨٩ ﴾ [يونس: ٨٨، ٨٩]

“আর মূসা বলল, ‘হে আমাদের রব, আপনি ফির‘আউন ও তার পারিষদবর্গকে দুনিয়াবী জীবনে সৌন্দর্য ও ধন-সম্পদ দান করেছেন। হে আমাদের রব, যাতে তারা আপনার পথ থেকে গোমরাহ করতে পারে। হে আমাদের রব, তাদের ধন-সম্পদ নিশ্চি‎হ্ন করে দিন, তাদের অন্তরসমূহকে কঠোর করে দিন। ফলে তারা ঈমান আনবে না, যতক্ষণ না যন্ত্রণাদায়ক আযাব দেখে’। তিনি বললেন, ‘তোমাদের দো‘আ কবূল করা হয়েছে। সুতরাং তোমরা দৃঢ় থাক এবং যারা জানে না তাদের পথ অনুসরণ করো না”। [সূরা ইউনুস: ৮৮-৮৯]

قَالَ: سَعِيدُ بْنُ جُبَيْرٍ، قَالَ: قُلْتُ لِابْنِ عَبَّاسٍ: إِنَّ نَوْفًا البَكَالِيَّ يَزْعُمُ أَنَّ مُوسَى لَيْسَ بِمُوسَى بَنِي إِسْرَائِيلَ، إِنَّمَا هُوَ مُوسَى آخَرُ؟ فَقَالَ: كَذَبَ عَدُوُّ اللَّهِ حَدَّثَنَا أُبَيُّ بْنُ كَعْبٍ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: قَامَ مُوسَى النَّبِيُّ خَطِيبًا فِي بَنِي إِسْرَائِيلَ فَسُئِلَ أَيُّ النَّاسِ أَعْلَمُ؟ فَقَالَ: أَنَا أَعْلَمُ، فَعَتَبَ اللَّهُ عَلَيْهِ، إِذْ لَمْ يَرُدَّ العِلْمَ إِلَيْهِ، فَأَوْحَى اللَّهُ إِلَيْهِ: أَنَّ عَبْدًا مِنْ عِبَادِي بِمَجْمَعِ البَحْرَيْنِ، هُوَ أَعْلَمُ مِنْكَ. قَالَ: يَا رَبِّ، وَكَيْفَ بِهِ؟ فَقِيلَ لَهُ: احْمِلْ حُوتًا فِي مِكْتَلٍ، فَإِذَا فَقَدْتَهُ فَهُوَ ثَمَّ، فَانْطَلَقَ وَانْطَلَقَ بِفَتَاهُ يُوشَعَ بْنِ نُونٍ، وَحَمَلاَ حُوتًا فِي مِكْتَلٍ، حَتَّى كَانَا عِنْدَ الصَّخْرَةِ وَضَعَا رُءُوسَهُمَا وَنَامَا، فَانْسَلَّ الحُوتُ مِنَ المِكْتَلِ فَاتَّخَذَ سَبِيلَهُ فِي البَحْرِ سَرَبًا، وَكَانَ لِمُوسَى وَفَتَاهُ عَجَبًا، فَانْطَلَقَا بَقِيَّةَ لَيْلَتِهِمَا وَيَوْمَهُمَا، فَلَمَّا أَصْبَحَ قَالَ مُوسَى لِفَتَاهُ: آتِنَا غَدَاءَنَا، لَقَدْ لَقِينَا مِنْ سَفَرِنَا هَذَا نَصَبًا، وَلَمْ يَجِدْ مُوسَى مَسًّا مِنَ النَّصَبِ حَتَّى جَاوَزَ المَكَانَ الَّذِي أُمِرَ بِهِ، فَقَالَ لَهُ فَتَاهُ: (أَرَأَيْتَ إِذْ أَوَيْنَا إِلَى الصَّخْرَةِ فَإِنِّي نَسِيتُ الحُوتَ وَمَا أَنْسَانِيهِ إِلَّا الشَّيْطَانُ) قَالَ مُوسَى: (ذَلِكَ مَا كُنَّا نَبْغِي فَارْتَدَّا عَلَى آثَارِهِمَا قَصَصًا) فَلَمَّا انْتَهَيَا إِلَى الصَّخْرَةِ، إِذَا رَجُلٌ مُسَجًّى بِثَوْبٍ، أَوْ قَالَ تَسَجَّى بِثَوْبِهِ، فَسَلَّمَ مُوسَى، فَقَالَ الخَضِرُ: وَأَنَّى بِأَرْضِكَ السَّلاَمُ؟ فَقَالَ: أَنَا مُوسَى، فَقَالَ: مُوسَى بَنِي إِسْرَائِيلَ؟ قَالَ: نَعَمْ، قَالَ: هَلْ أَتَّبِعُكَ عَلَى أَنْ تُعَلِّمَنِي مِمَّا عُلِّمْتَ رَشَدًا قَالَ: إِنَّكَ لَنْ تَسْتَطِيعَ مَعِيَ صَبْرًا، يَا مُوسَى إِنِّي عَلَى عِلْمٍ مِنْ عِلْمِ اللَّهِ عَلَّمَنِيهِ لاَ تَعْلَمُهُ أَنْتَ، وَأَنْتَ عَلَى عِلْمٍ عَلَّمَكَهُ لاَ أَعْلَمُهُ، قَالَ: سَتَجِدُنِي إِنْ شَاءَ اللَّهُ صَابِرًا، وَلاَ أَعْصِي لَكَ أَمْرًا، فَانْطَلَقَا يَمْشِيَانِ عَلَى سَاحِلِ البَحْرِ، لَيْسَ لَهُمَا سَفِينَةٌ، فَمَرَّتْ بِهِمَا سَفِينَةٌ، فَكَلَّمُوهُمْ أَنْ يَحْمِلُوهُمَا، فَعُرِفَ الخَضِرُ فَحَمَلُوهُمَا بِغَيْرِ نَوْلٍ، فَجَاءَ عُصْفُورٌ، فَوَقَعَ عَلَى حَرْفِ السَّفِينَةِ، فَنَقَرَ نَقْرَةً أَوْ نَقْرَتَيْنِ فِي البَحْرِ، فَقَالَ الخَضِرُ: يَا مُوسَى مَا نَقَصَ عِلْمِي وَعِلْمُكَ مِنْ عِلْمِ اللَّهِ إِلَّا كَنَقْرَةِ هَذَا العُصْفُورِ فِي البَحْرِ، فَعَمَدَ الخَضِرُ إِلَى لَوْحٍ مِنْ أَلْوَاحِ السَّفِينَةِ، فَنَزَعَهُ، فَقَالَ مُوسَى: قَوْمٌ حَمَلُونَا بِغَيْرِ نَوْلٍ عَمَدْتَ إِلَى سَفِينَتِهِمْ فَخَرَقْتَهَا لِتُغْرِقَ أَهْلَهَا؟ قَالَ: أَلَمْ أَقُلْ إِنَّكَ لَنْ تَسْتَطِيعَ مَعِيَ صَبْرًا؟ قَالَ: لاَ تُؤَاخِذْنِي بِمَا نَسِيتُ وَلاَ تُرْهِقْنِي مِنْ أَمْرِي عُسْرًا - فَكَانَتِ الأُولَى مِنْ مُوسَى نِسْيَانًا -، فَانْطَلَقَا، فَإِذَا غُلاَمٌ يَلْعَبُ مَعَ الغِلْمَانِ، فَأَخَذَ الخَضِرُ بِرَأْسِهِ مِنْ أَعْلاَهُ فَاقْتَلَعَ رَأْسَهُ بِيَدِهِ، فَقَالَ مُوسَى: أَقَتَلْتَ نَفْسًا زَكِيَّةً بِغَيْرِ نَفْسٍ؟ قَالَ: أَلَمْ أَقُلْ لَكَ إِنَّكَ لَنْ تَسْتَطِيعَ مَعِيَ صَبْرًا؟ - قَالَ ابْنُ عُيَيْنَةَ: وَهَذَا أَوْكَدُ - فَانْطَلَقَا، حَتَّى إِذَا أَتَيَا أَهْلَ قَرْيَةٍ اسْتَطْعَمَا أَهْلَهَا، فَأَبَوْا أَنْ يُضَيِّفُوهُمَا، فَوَجَدَا فِيهَا جِدَارًا يُرِيدُ أَنْ يَنْقَضَّ فَأَقَامَهُ، قَالَ الخَضِرُ: بِيَدِهِ فَأَقَامَهُ، فَقَالَ لَهُ مُوسَى: لَوْ شِئْتَ لاَتَّخَذْتَ عَلَيْهِ أَجْرًا، قَالَ: هَذَا فِرَاقُ بَيْنِي وَبَيْنِكَ " قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «يَرْحَمُ اللَّهُ مُوسَى، لَوَدِدْنَا لَوْ صَبَرَ حَتَّى يُقَصَّ عَلَيْنَا مِنْ أَمْرِهِمَا».

সা‘ঈদ ইবন জুবায়র রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি ইবন ‘আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুকে বললাম, নাওফ আল-বাকালী দাবী করে যে, মূসা আলাইহিস সালাম [যিনি খাযির আলাইহিস সালামের সাক্ষাৎ লাভ করেছিলেন] বনী ইসরাঈলের মূসা নন বরং তিনি অন্য এক মূসা। (একথা শুনে তিনি) তিনি বললেন, আল্লাহর দুশমন মিথ্যা বলেছে। উবাঈ ইবন কা‘ব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে আমাদের কাছে বর্ণনা করেছেন যে, তিনি বলেছেন, মূসা আলাইহিস সালাম একবার বনী ইসরাঈলদের মধ্য বক্তৃতা দিতে দাঁড়ালেন। তখন তাঁকে প্রশ্ন করা হয়, সবচাইতে জ্ঞানী কে? তিনি বললেন, ‘আমি সবচাইতে জ্ঞানী।’ মহান আল্লাহ তাঁকে সতর্ক করে দিলেন। কেননা তিনি ইলমকে আল্লাহর উপর ন্যস্ত করেন নি। তারপর আল্লাহ তাঁর নিকট এ ওহী পাঠালেন, দুই সমুদ্রের সংগমস্থলে আমার বান্দাদের মধ্য এক বান্দা রয়েছে, যে তোমার চাইতে বেশী জ্ঞানী। তিনি বলেন, ‘ইয়া রব! কিভাবে তাঁর সাক্ষাৎ পাওয়া যাবে?’ তখন তাঁকে বলা হল, থলের মধ্য একটি মাছ নিয়ে নাও। এরপর যেখানে সেটি হারিয়ে ফেলবে সেখানেই তাঁকে পাবে। তারপর তিনি রওয়ানা হলেন এবং ইউশা‘ ইবন নূন নামক তাঁর একজন খাদিমও তাঁর সাথে চলল। তাঁরা থলের মধ্য একটি মাছ নিলেন। চলার পথে তাঁরা একটি বড় পাথরের কাছে এসে, সেখানে মাথা রেখে শুয়ে পড়লেন। তারপর মাছটি (জীবিত হয়ে) থলে থেকে বেরিয়ে গেল এবং সুড়ঙ্গের মত পথ করে সমুদ্রে চলে গেল। এ ব্যাপারটি মূসা আলাইহিস সালাম ও তাঁর খাদিম-এর জন্য ছিল আশ্চর্যের বিষয়। এরপর তাঁরা তাঁদের বাকী রাতটুকু এবং পরের দিনভর চলতে থাকলেন। পরে ভোরবেলা মূসা আলাইহিস সালাম তাঁর খাদিমকে বললেন, ‘আমাদের নাশতা নিয়ে এস, আমরা আমাদের এ সফরে ক্লান্ত হয়ে পড়েছি, আর মূসা আলাইহিস সালাম কে যে স্থানের নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল, সে স্থান অতিক্রম করার পূর্বে তিনি ক্লান্ত অনুভব করেন নি। তারপর তাঁর খাদিম তাঁকে বলল, ‘আপনি কি লক্ষ্য করেছন, আমরা যখন পাথরের পাশে বিশ্রাম করছিলাম, তখন আমি মাছের কথা ভুলে গিয়েছি? মূসা আলাইহিস সালাম বললেন, ‘আমরা তো সেই স্থানটিই খুঁজছিলাম। তারপর তাঁরা তাঁদের পদচিহ্ন ধরে ফিরে চলল। তাঁরা সেই পাথরের কাছে পোঁছে, কাপড়ে আবৃত (বর্ণনাকারী বলেন) কাপড় মুড়ি দেওয়া এক ব্যক্তিকে দেখতে পেলেন। মূসা আলাইহিস সালাম তাঁকে সালাম দিলেন। তখন খাযির বললেন, এ দেশে সালাম কোথা থেকে এল! তিনি বললেন, ‘আমি মূসা।’ খাযির জিজ্ঞাসা করলেন, ‘বনী ইসরাইলের মূসা আলাইহিস সালাম?’ তিনি বললেন, হ্যাঁ। তিনি আরো বললেন, “আমি কি আপনাকে অনুসরণ করতে পারি এ শর্তে যে, সত্য পথের যে জ্ঞান আপনাকে দান করা হয়েছে, তা থেকে আমাকে শিক্ষা দিবেন? খাযির বললেন, “তুমি কিছুতেই আমার সঙ্গে ধৈর্য ধারণ করতে পারবে না।” ‘মূসা আলাইহিস সালাম বললেন, “আল্লাহ চাইলে আপনি আমাকে ধৈর্যশীল পাবেন এবং আমি আপনার আদেশ অমান্য করব না। তারপর তাঁরা দুজন সমুদ্র তীর দিয়ে চলতে লাগলেন, তাঁদের কোনো নৌকা ছিল না। ইতিমধ্যে তাঁদের কাছ দিয়ে একটি নৌকা যচ্ছিল। তাঁরা নৌকাওয়ালাদের সঙ্গে তাঁদের আরোহণ করিয়ে নেওয়ার কথা বললেন। তারা খাযিরকে চিনতে পারল এবং ভাড়া ব্যতিরেকে তাঁদের নৌকায় তুলে নিল। তখন একটি চড়ুই পাখি এসে নৌকার এক প্রান্তে বসে দুই-একবার সমুদ্রে তার ঠোঁট মারল। খাযির বললেন, ‘হে মূসা আলাইহিস সালাম! আমার ইল্‌ম এবং তোমার ইল্‌ম (সব মিলেও) আল্লাহর ইল্‌ম থেকে সমুদ্র থেকে চড়ুই পাখি্র ঠোঁটে যতটুকু পানি এসেছে ততটুকু পরিমাণও কমাতে পারবে না।’ এরপর খাযির নৌকার তক্তাগুলির মধ্য থেকে একটি খুলে ফেললেন। মূসা আলাইহিস সালাম বললেন, এরা আমাদের ভাড়া ছড়া আরোহণ করিয়েছে, আর আপনি আরোহীদের ডুবিয়ে দেওয়ার জন্য নৌকায় ফাটল সৃষ্টি করলেন?’ খাযির বললেন, “আমি কি বলিনি যে, তুমি কিছুতেই আমার সঙ্গে ধৈর্য ধারণ করতে পারবে না।” মূসা আলাইহিস সালাম বললেন, ‘আমার ভুলের জন্য আমাকে অপরাধী করবেন না এবং আমার ব্যাপারে অধির কঠোরতা অবলম্বন করবেন না।’ বর্ণনাকারী বলেন, ইহা মূসা আলাইহিস সালাম এর প্রথম ভুল। তারপর তাঁরা উভয়ে (নৌকা থেকে নেমে) চলতে লাগলেন। (পথে) একটি বালক অন্যান্য বালকের সাথে খেলছিল। খাযির তার মাথার উপর দিক দিয়ে ধরলেন এবং হাত দিয়ে তার মাথা ছিদ্র করে ফেললেন। মূসা আলাইহিস সালাম বললেন, ‘আপনি কি একটি নিষ্পাপ জীবন নাশ করলেন কোনো হত্যার অপরাধ ছাড়াই?’ খাযির বললেন, “আমি তোমাকে বলিনি যে, তুমি কিছুতেই আমার সঙ্গে ধৈর্য ধারণ করতে পারবে না?” ইবন ‘উয়ায়না (রহ.) বলেন, এটা ছিল পূর্বের চেয়ে বেশী জোরালো। তারপর আবারো চলতে লাগলেন; চলতে চলতে তাঁরা এক গ্রামের অধিবাসীদের কাছে পৌঁছে তাদের কাছে খাবার চাইলেন, কিন্তু তারা তাঁদের মেহমানদারী করতে অস্বীকার করল। তারপর সেখানে তাঁরা এক পতনোন্মুখ প্রাচীর দেখতে পেলেন। খাযির তাঁর হাত দিয়ে সেটি খাড়া করে দিলেন। মূসা আলাইহিস সালাম বললেন, ‘আপনি ইচ্ছে করলে এর জন্য পারিশ্রমিক গ্রগন করতে পারতেন।’ তিনি বললেন, ‘এখানেই তোমার আর আমার সম্পর্কের অবসান।’ রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আল্লাহ তা‘আলা মূসা আলাইহিস সালামের ওপর রহম করুন। আমাদের কতই না মনোবাঞ্ছা পূর্ণ হতো যদি তিনি সবর করতেন, তাহলে আমাদের কাছে তাঁদের আরো ঘটনাবলী বর্ণনা করা হতো।[324]

عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ أَنَّهُ تَمَارَى هُوَ وَالحُرُّ بْنُ قَيْسِ بْنِ حِصْنٍ الفَزَارِيُّ فِي صَاحِبِ مُوسَى، قَالَ ابْنُ عَبَّاسٍ: هُوَ خَضِرٌ، فَمَرَّ بِهِمَا أُبَيُّ بْنُ كَعْبٍ، فَدَعَاهُ ابْنُ عَبَّاسٍ فَقَالَ: إِنِّي تَمَارَيْتُ أَنَا وَصَاحِبِي هَذَا فِي صَاحِبِ مُوسَى، الَّذِي سَأَلَ مُوسَى السَّبِيلَ إِلَى لُقِيِّهِ، هَلْ سَمِعْتَ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَذْكُرُ شَأْنَهُ؟ قَالَ: نَعَمْ، سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: " بَيْنَمَا مُوسَى فِي مَلَإٍ مِنْ بَنِي إِسْرَائِيلَ جَاءَهُ رَجُلٌ فَقَالَ: هَلْ تَعْلَمُ أَحَدًا أَعْلَمَ مِنْكَ؟ " قَالَ مُوسَى: لاَ، فَأَوْحَى اللَّهُ عَزَّ وَجَلَّ إِلَى مُوسَى: بَلَى، عَبْدُنَا خَضِرٌ، فَسَأَلَ مُوسَى السَّبِيلَ إِلَيْهِ، فَجَعَلَ اللَّهُ لَهُ الحُوتَ آيَةً، وَقِيلَ لَهُ: إِذَا فَقَدْتَ الحُوتَ فَارْجِعْ، فَإِنَّكَ سَتَلْقَاهُ، وَكَانَ يَتَّبِعُ أَثَرَ الحُوتِ فِي البَحْرِ، فَقَالَ لِمُوسَى فَتَاهُ: (أَرَأَيْتَ إِذْ أَوَيْنَا إِلَى الصَّخْرَةِ فَإِنِّي نَسِيتُ الحُوتَ وَمَا أَنْسَانِيهِ إِلَّا الشَّيْطَانُ أَنْ أَذْكُرَهُ)، قَالَ: (ذَلِكَ مَا كُنَّا نَبْغِي فَارْتَدَّا عَلَى آثَارِهِمَا قَصَصًا)، فَوَجَدَا خَضِرًا، فَكَانَ مِنْ شَأْنِهِمَا الَّذِي قَصَّ اللَّهُ عَزَّ وَجَلَّ فِي كِتَابِهِ.

ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি এবং হুর ইবন কায়স ইবন হিসন আল ফাযারী মূসা আলাইহিস সালামের সঙ্গী সম্পর্কে বাদানুবাদ করেছিলেন। ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বললেন, তিনি ছিলেন খিযর। ঘটনাক্রমে তখন তাদের পাশ দিয়ে উবাঈ ইবন কা’ব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু যাচ্ছিলেন। ইবন ‘আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু তাঁকে ডেকে বললেন, আমি ও আমার এ ভাই মতবিরোধ পোষণ করছি মূসা আলাইহিস সালামের সেই সঙ্গীর ব্যাপারে যাঁর সাথে সাক্ষাত করার জন্য মূসা আলাইহিস সালাম আল্লাহ্‌র কাছে পথের সন্ধান চেয়েছিলেন—আপনি কি রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে তাঁর সম্পর্কে কিছু বলতে শুনেছেন? তিনি বললেন, হ্যাঁ। আমি রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, একবার মূসা আলাইহিস সালাম বনী ইসরাঈলের কোনো এক মজলিসে হাজির ছিলেন। তখন তাঁর কাছে এক ব্যক্তি এসে বলল, ‘আপনি কাউকে আপনার চেয়ে অধিক জ্ঞানী বলে জানেন কি?’ মূসা আলাইহিস সালাম বললেন, ‘না।’ তখন আল্লাহ্ তা’আলা মূসা আলাইহিস সালামের কাছে অহী পাঠালেন, হ্যাঁ, আমার বান্দা খিযর।’ অতঃপর মূসা আলাইহিস সালাম তাঁর সাথে সাক্ষাত করার রাস্তা জানতে চাইলেন। আল্লাহ্ তা‘আলা মাছকে তার জ্ন্য নিশানা বানিয়ে দিলেন এবং তাঁকে বলা হল, তুমি যখন মাছটি হারিয়ে ফেলবে তখন ফিরে আসবে। কারণ, কিছুক্ষনের মধ্যেই তুমি তাঁর সাক্ষাত পাবে। তখন তিনি সমুদ্রে সে মাছের অনুসরন করতে লাগলেন। মূসা আলাইহিস সালামকে তাঁর সঙ্গী যুবক বললেন, (কুরআনে এসেছে) “আপনি কি লক্ষ্য করেছেন আমরা যখন পাথরের কাছে বিশ্রাম নিচ্ছিলাম তখন আমি মাছের কথা ভুলে গিয়েছিলাম? শয়তান তার কথা আমাকে ভুলিয়ে দিয়েছিল। ........মূসা বললেন, আমরা তো সে স্থানটিরই অনুসন্ধান করছিলাম। এরপর তারা নিজেদের পদচিহ্ন ধরে ফিরে চলল”। [সূরা আল-কাহফ: ৬৪] তাঁরা খিযরকে পেলেন। তাদের ঘটনা তা-ই, যা আল্লাহ্ তা‘আলা তাঁর কিতাবে বর্ণনা করেছেন।[325]

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: " كَانَتْ بَنُو إِسْرَائِيلَ يَغْتَسِلُونَ عُرَاةً، يَنْظُرُ بَعْضُهُمْ إِلَى بَعْضٍ، وَكَانَ مُوسَى صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَغْتَسِلُ وَحْدَهُ، فَقَالُوا: وَاللَّهِ مَا يَمْنَعُ مُوسَى أَنْ يَغْتَسِلَ مَعَنَا إِلَّا أَنَّهُ آدَرُ، فَذَهَبَ مَرَّةً يَغْتَسِلُ، فَوَضَعَ ثَوْبَهُ عَلَى حَجَرٍ، فَفَرَّ الحَجَرُ بِثَوْبِهِ، فَخَرَجَ مُوسَى فِي إِثْرِهِ، يَقُولُ: ثَوْبِي يَا حَجَرُ، حَتَّى نَظَرَتْ بَنُو إِسْرَائِيلَ إِلَى مُوسَى، فَقَالُوا: وَاللَّهِ مَا بِمُوسَى مِنْ بَأْسٍ، وَأَخَذَ ثَوْبَهُ، فَطَفِقَ بِالحَجَرِ ضَرْبًا " فَقَالَ أَبُو هُرَيْرَةَ: وَاللَّهِ إِنَّهُ لَنَدَبٌ بِالحَجَرِ، سِتَّةٌ أَوْ سَبْعَةٌ، ضَرْبًا بِالحَجَرِ.

আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, বনী ইসরাঈলের লোকেরা নগ্ন হয়ে একে অপরকে দেখা অবস্থায় গোসল করত। কিন্তু মূসা আলাইহিস সালাম একাকী গোসল করতেন। এতে বনী ইসরাঈলের লোকেরা বলাবলি করছিল, আল্লাহর কসম! মূসা আলাইহিস সালাম ‘কোষবৃদ্ধি’ রোগের কারনেই আমাদের সাথে গোসল করে না। একবার মূসা আলাইহিস সালাম একটা পাথরের উপর কাপড় রেখে গোসল করছিলেন। পাথরটা তাঁর কাপড় নিয়ে পালাতে লাগল। তখন মূসা আলাইহিস সালাম “পাথর! আমার কাপড় দাও, পাথর! আমার কাপড় দাও” বলে পেছন পেছন ছুটলেন। এদিকে বনী ইসরাঈল মূসার দিকে তাকাল। তখন তারা বলল, আল্লাহ্‌র কসম! মূসার কোনো রোগ নেই। মূসা আলাইহিস সালাম পাথর থেকে কাপড় নিয়ে পরলেন এবং পাথরটাকে পিটাতে লাগলেন। আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, আল্লাহ্‌র কসম! পাথরটিতে ছয় কিংবা সাতটি পিটুনির দাগ পড়ে গেল।[326]

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: " بَيْنَا أَيُّوبُ يَغْتَسِلُ عُرْيَانًا، فَخَرَّ عَلَيْهِ جَرَادٌ مِنْ ذَهَبٍ، فَجَعَلَ أَيُّوبُ يَحْتَثِي فِي ثَوْبِهِ، فَنَادَاهُ رَبُّهُ: يَا أَيُّوبُ، أَلَمْ أَكُنْ أَغْنَيْتُكَ عَمَّا تَرَى؟ قَالَ: بَلَى وَعِزَّتِكَ، وَلَكِنْ لاَ غِنَى بِي عَنْ بَرَكَتِكَ ".

আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু আরো বলেন যে, রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, এক সময় আইয়ূব আলাইহিস সালাম বিবস্ত্রাবস্থায় গোসল করছিলেন। তখন তাঁর উপর সোনার পঙ্গপাল বর্ষিত হচ্ছিল। আইয়ূব আলাইহিস সালাম তাঁর কাপড়ে সেগুলো কুড়িয়ে নিচ্ছিলেন। তখন তাঁর রব তাঁকে বললেন, হে আইয়ূব! আমি কি তোমাকে এগুলো থেকে অমুখাপেক্ষী করিনি? উত্তরে তিনি বললেন, হ্যাঁ, আপনার ইজ্জতের কসম! অবশ্যই করেছেন। তবে আমি আপনার বরকত থেকে বেনিয়ায নেই। এভাবে বর্ণনা করেছেন ইব্রাহীম (রহ.) আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে যে, রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, একবার আইয়ূব আলাইহিস সালাম বিবস্ত্রাবস্থায় গোসল করেছিলেন।[327]

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: " إِنَّ مُوسَى كَانَ رَجُلًا حَيِيًّا سِتِّيرًا، لاَ يُرَى مِنْ جِلْدِهِ شَيْءٌ اسْتِحْيَاءً مِنْهُ، فَآذَاهُ مَنْ آذَاهُ مِنْ بَنِي إِسْرَائِيلَ فَقَالُوا: مَا يَسْتَتِرُ هَذَا التَّسَتُّرَ، إِلَّا مِنْ عَيْبٍ بِجِلْدِهِ: إِمَّا بَرَصٌ وَإِمَّا أُدْرَةٌ: وَإِمَّا آفَةٌ، وَإِنَّ اللَّهَ أَرَادَ أَنْ يُبَرِّئَهُ مِمَّا قَالُوا لِمُوسَى، فَخَلاَ يَوْمًا وَحْدَهُ، فَوَضَعَ ثِيَابَهُ عَلَى الحَجَرِ، ثُمَّ اغْتَسَلَ، فَلَمَّا فَرَغَ أَقْبَلَ إِلَى ثِيَابِهِ لِيَأْخُذَهَا، وَإِنَّ الحَجَرَ عَدَا بِثَوْبِهِ، فَأَخَذَ مُوسَى عَصَاهُ وَطَلَبَ الحَجَرَ، فَجَعَلَ يَقُولُ: ثَوْبِي حَجَرُ، ثَوْبِي حَجَرُ، حَتَّى انْتَهَى إِلَى مَلَإٍ مِنْ بَنِي إِسْرَائِيلَ، فَرَأَوْهُ عُرْيَانًا أَحْسَنَ مَا خَلَقَ اللَّهُ، وَأَبْرَأَهُ مِمَّا يَقُولُونَ، وَقَامَ الحَجَرُ، فَأَخَذَ ثَوْبَهُ فَلَبِسَهُ، وَطَفِقَ بِالحَجَرِ ضَرْبًا بِعَصَاهُ، فَوَاللَّهِ إِنَّ بِالحَجَرِ لَنَدَبًا مِنْ أَثَرِ ضَرْبِهِ، ثَلاَثًا أَوْ أَرْبَعًا أَوْ خَمْسًا، فَذَلِكَ قَوْلُهُ: يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لاَ تَكُونُوا كَالَّذِينَ آذَوْا مُوسَى فَبَرَّأَهُ اللَّهُ مِمَّا قَالُوا وَكَانَ عِنْدَ اللَّهِ وَجِيهًا ".

আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, মূসা আলাইহিস সালাম অত্যন্ত লজ্জাশীল ছিলেন, সব সময় শরীর আবৃত রাখতেন। তাঁর দেহের কোনো অংশ খোলা দেখা যেতনা তা থেকে তিনি লজ্জাবোধ করতেন। বনী ইসরাঈলের কিছু সংখ্যক লোক তাঁকে খুব কষ্ট দিত। তারা বলত, তিনি যে শরীরকে এত বেশী ঢেকে রাখেন, তাঁর একমাত্র কারণ হলো, তাঁর শরীরে কোনো দোষ আছে। হয়ত শ্বেত রোগ অথবা একশিরা বা অন্য কোনো রোগ আছে। আল্লাহ্তা’আলা ইচ্ছা করলেন মূসা আলাইহিস সালাম সম্পর্কে তারা যে অপবাদ রটিয়েছি তা থেকে তাঁকে মুক্ত করবেন। এরপর একদিন নির্জন স্থানে গিয়ে তিনি একাকী হলেন এবং তাঁর পরণের কাপর খুলে একটি পাথরের উপর রাখলেন, তারপর গোসল করলেন, গোসল সেরে যখনই তিনি কাপর নেওয়ার জন্য সেদিকে এগিয়ে গেলেন তাঁর কাপড়সহ পাথরটি ছুটে চলল। এরপর মূসা আলাইহিস সালাম লাঠিটি হাতে নিয়ে পাথরটি পেছনে পেছনে ছুটলেন। তিনি বলতে লাগলেন, আমার কাপড় হে পাথর! হে পাথর! পরিশেষে পাথরটি বনী ইসরাঈলের একটি জন সমাবেশে গিয়ে পৌছল। তখন তারা মূসা আলাইহিস সালামকে বিবস্ত্র অবস্থায় দেখল যে তিনি আল্লাহর সৃষ্টির মধ্যে সবচেয়ে সৌন্দর্যের পরিপূর্ণ এবং তারা তাঁকে যে অপবাদ দিয়েছিল সে সব দোষ থেকে তিনি সম্পূর্ণ মুক্ত। আর পাথরটি থামল, তখন মূসা আলাইহিস সালাম তাঁর কাপড় নিয়ে পরিধান করলেন এবং তাঁর হাতের লাঠি দিয়ে পাথরটিকে জোরে জোরে আঘাত করতে লাগলেন। আল্লাহর কসম! এতে পাথরটিতে তিন, চার, কিংবা পাঁচটি আঘাতের দাগ পড়ে গেল। আর এটিই হলো আল্লাহর এ বাণীর মর্ম, “হে মুমিনগণ! তোমরা তাদের ন্যায় হয়োনা যারা মূসা আলাইহিস সালামকে কষ্ট দিয়েছিল। এরপর আল্লাহ তাকে নির্দোষ প্রমাণিত করেন তা থেকে যা তারা রটনা করেছিল। আর তিনি ছিলেন আল্লাহর কাছে মর্যাদাবান”। [সূরা আল-আহযাব : ৬৯][328]

عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا، أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، لَمَّا قَدِمَ المَدِينَةَ، وَجَدَهُمْ يَصُومُونَ يَوْمًا، يَعْنِي عَاشُورَاءَ، فَقَالُوا: هَذَا يَوْمٌ عَظِيمٌ، وَهُوَ يَوْمٌ نَجَّى اللَّهُ فِيهِ مُوسَى، وَأَغْرَقَ آلَ فِرْعَوْنَ، فَصَامَ مُوسَى شُكْرًا لِلَّهِ، فَقَالَ «أَنَا أَوْلَى بِمُوسَى مِنْهُمْ» فَصَامَهُ وَأَمَرَ بِصِيَامِهِ.

ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন (হিজরত করে) মদীনায় আগমন করেন, তখন তিনি মদিনাবাসীকে এমনভাবে পেলেন যে, তারা একদিন সাওম পালন করে অর্থাৎ সে দিনটি হল আশুরার দিন। (জিজ্ঞাসা করার পর) তারা বলল, এটি একটি মহান দিবস। এ এমন দিন যে দিনে আল্লাহ্‌ মুসা আলাইহিস সালামকে নাজাত দিয়েছেন এবং ফিরাউনের সম্প্রদায়কে ডুবিয়ে দিয়েছেন। এরপর মূ্সা আলাইহিস সালামশুকরিয়া হিসাবে আদিন সাওম পালন করেছেন। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তাদের তুলনায় আমি হলাম মূসা আলাইহিস সালা্মের অধিক ঘনিষ্ঠ। কাজেই তিনি নিজেও এদিন সাওম পালন করেছেন এবং (সবাইকে) এদিন সাওম পালনের আদেশ দিয়েছেন।[329]

عَنْ أَبِي سَعِيدٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قَالَ: «النَّاسُ يَصْعَقُونَ يَوْمَ القِيَامَةِ، فَأَكُونُ أَوَّلَ مَنْ يُفِيقُ، فَإِذَا أَنَا بِمُوسَى آخِذٌ بِقَائِمَةٍ مِنْ قَوَائِمِ العَرْشِ، فَلاَ أَدْرِي أَفَاقَ قَبْلِي أَمْ جُوزِيَ بِصَعْقَةِ الطُّورِ».

আবূ সাঈদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, কিয়ামতের দিন সব মানুষ বেহুশ হয়ে যাবে। এরপর সর্বপ্রথম আমারই হুশ ফিরে আসবে। তখন আমি মূসা আলাইহিস সালামকে দেখতে পাব যে, তিনি আরশের খুঁটিগুলোর একটি খুঁটি ধরে রেখেছেন। আমি জানিনা, আমার আগেই কি তাঁর হুশ আসল, না-কি তূর পাহাড়ে বেহুশ হওয়ার প্রতিদানে তাঁকে দেওয়া হল।[330]

عَنْ أَبِي هُرَيْرَة رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، قَالَ: اسْتَبَّ رَجُلٌ مِنَ المُسْلِمِينَ وَرَجُلٌ مِنَ اليَهُودِ، فَقَالَ المُسْلِمُ: وَالَّذِي اصْطَفَى مُحَمَّدًا صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَلَى العَالَمِينَ، فِي قَسَمٍ يُقْسِمُ بِهِ، فَقَالَ اليَهُودِيُّ: وَالَّذِي اصْطَفَى مُوسَى عَلَى العَالَمِينَ، فَرَفَعَ المُسْلِمُ عِنْدَ ذَلِكَ يَدَهُ فَلَطَمَ اليَهُودِيَّ، فَذَهَبَ اليَهُودِيُّ إِلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَأَخْبَرَهُ الَّذِي كَانَ مِنْ أَمْرِهِ وَأَمْرِ المُسْلِمِ، فَقَالَ «لاَ تُخَيِّرُونِي عَلَى مُوسَى، فَإِنَّ النَّاسَ يَصْعَقُونَ، فَأَكُونُ أَوَّلَ مَنْ يُفِيقُ، فَإِذَا مُوسَى بَاطِشٌ بِجَانِبِ العَرْشِ، فَلاَ أَدْرِي أَكَانَ فِيمَنْ صَعِقَ فَأَفَاقَ قَبْلِي، أَوْ كَانَ مِمَّنِ اسْتَثْنَى اللَّهُ».

আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একজন মুসলিম আর একজন ইয়াহূদী পরস্পরকে গালি দিল। মুসলিম ব্যাক্তি বললেন, সেই সত্তার কসম! যিনি মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সমগ্র জগতের উপর মনোনীত করেছেন। কসম করার তিনি একথাটি বলেছেন। তখন ইয়াহূদী লোকটিও বলল, ঐ সত্তার কসম! যিনি মূসা আলাইহিস সালামকে সমগ্র জাগতের উপর মনোনীত করেছেন। তখন সেই মুসলিম সাহাবী সে সময় তার হাত উঠিয়ে ইয়াহূদী লোকটিকে একটি চড় মারলেন। তখন সে ইয়াহূদী নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট গেল এবং ঐ ঘটনাটি অবহিত করলো যা তার ও মুসলিম সাহাবীর মধ্যে সংঘটিত হয়েছিল। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমরা আমাকে মূসা আলাইহিস সালামের উপর উপর মর্যাদা দেখাতে যেওনা (কেননা কিয়ামতের দিন) সকল মানুষ বেহুশ হয়ে যাবে। আর আমিই সর্বপ্রথম হুশ ফিরে পাব। তখনই আমি মূসা আলাইহিস সালামকে দেখব, তিনি আরশের একপাশ ধরে রয়েছেন। আমি জানিনা, যারা বেহুশ হয়েছিল, তিনিও কি তাদের মধ্যে ছিলেন? তারপর আমার আগে তাঁর হুশ এসে গেসে? অথবা তিনি তাদেরই একজন, যাদেরকে আল্লাহ বেহুশ হওয়া থেকে বাদ দিয়েছিলেন।[331]

عَنْ حُمَيْدِ بْنِ عَبْدِ الرَّحْمَنِ، أَنَّ أَبَا هُرَيْرَةَ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: " احْتَجَّ آدَمُ وَمُوسَى، فَقَالَ لَهُ مُوسَى: أَنْتَ آدَمُ الَّذِي أَخْرَجَتْكَ خَطِيئَتُكَ مِنَ الجَنَّةِ، فَقَالَ لَهُ آدَمُ: أَنْتَ مُوسَى الَّذِي اصْطَفَاكَ اللَّهُ بِرِسَالاَتِهِ وَبِكَلاَمِهِ، ثُمَّ تَلُومُنِي عَلَى أَمْرٍ قُدِّرَ عَلَيَّ قَبْلَ أَنْ أُخْلَقَ " فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «فَحَجَّ آدَمُ مُوسَى مَرَّتَيْنِ».

আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আদম আলাইহিস সালাম ও মূসা আলাইহিস সালাম (রূহানী জগতে) তর্ক-বিতর্ক করছিলেন। তখন মূসা আলাইহিস সালাম তাঁকে বলছিলেন, আপনি সেই আদম যে, আপনার ভুল আপনাকে বেহেশত থেকে বের করে দিয়েছিল। আদম আলাইহিস সালাম তাঁকে বললেন, আপনি সেই মূসা আলাইহিস সালাম যে, আপনাকে আল্লাহ তাঁর রিসালাত দান এবং বাক্যালাপ দ্বারা সম্মানিত করেছিলেন। তারপরও আপনি আমাকে এমন একটি বিষয়ে দোষারোপ করছেন, যা আমার সৃষ্টির আগেই আমার তাকদীরে নির্ধারিত হয়ে গিয়েছিল। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দু’বার বলেছেন, এ বিতর্কে আদম আলাইহিস সালাম মূসা আলাইহিস সালামের উপর জয়ী হন।[332]

عَنْ ابْنِ عُمَرَ، أَنَّهُ قَالَ: إِنَّ الْيَهُودَ جَاءُوا إِلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَذَكَرُوا لَهُ أَنَّ رَجُلًا مِنْهُمْ وَامْرَأَةً زَنَيَا، فَقَالَ لَهُمْ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ «مَا تَجِدُونَ فِي التَّوْرَاةِ فِي شَأْنِ الزِّنَا؟» فَقَالُوا: نَفْضَحُهُمْ وَيُجْلَدُونَ، فَقَالَ عَبْدُ اللَّهِ بْنُ سَلَامٍ: كَذَبْتُمْ، إِنَّ فِيهَا الرَّجْمَ، فَأَتَوْا بِالتَّوْرَاةِ، فَنَشَرُوهَا فَجَعَلَ أَحَدُهُمْ يَدَهُ عَلَى آيَةِ الرَّجْمِ، ثُمَّ جَعَلَ يَقْرَأُ مَا قَبْلَهَا وَمَا بَعْدَهَا، فَقَالَ لَهُ عَبْدُ اللَّهِ بْنُ سَلَامٍ: ارْفَعْ يَدَيْكَ، فَرَفَعَهَا فَإِذَا فِيهَا آيَةُ الرَّجْمِ، فَقَالُوا: صَدَقَ يَا مُحَمَّدُ، فِيهَا آيَةُ الرَّجْمِ،، فَأَمَرَ بِهِمَا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَرُجِمَا، قَالَ عَبْدُ اللَّهِ بْنُ عُمَرَ: فَرَأَيْتُ الرَّجُلَ يَحْنِي عَلَى الْمَرْأَةِ يَقِيهَا الْحِجَارَةَ.

আবদুল্লাহ্ ইবন উমর রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ইয়াহুদীগণ রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট এসে জানাল তাদের একজন পুরুষ ও একজন নারী যিনা করেছে। তখন রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে জিজ্ঞাসা করলেন যে, তোমরা তাওরাতে রজম সম্পর্কে কি পাচ্ছ? তারা বলল, তাদেরকে অপমান ও কশাঘাত করা হয়। আবদুল্লাহ্ ইবন সালাম রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, তোমার মিথ্যে বলেছ। তাওরাতে অবশ্যই রজমের উল্লেখ রয়েছে। তারা তাওরাত নিয়ে এল এবং তা খুলল। আর তাদের একজন রজমের আয়াতের ওপর হাত রেখে দিয়ে তার আগপিছ পাঠ করল। তখন আবদুল্লাহ্ ইবন সালাম রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, তোমার হাত উঠাও। সে তার হাত উঠালে দেখা গেল যে, তাতে রজমের আয়াত বিদ্যমান রয়েছে। তারা বলল, আবদুল্লাহ্ ইবন সালাম সত্যই বলেছেন। হে মুহাম্মদ! তাতে রজমের আয়াত সত্যই বিদ্যমান রয়েছে। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের উভয় সম্বন্ধে নির্দেশ করলেন এবং তাদের উভয়কে রজম করা হল। আমি দেখলাম, পুরুষটি নারীটির ওপর উপুড় হয়ে আছে। সে তাকে পাথরের আঘাত থেকে রক্ষা করছে।[333]

عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ، أَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَرَّ بِوَادِي الْأَزْرَقِ، فَقَالَ: «أَيُّ وَادٍ هَذَا؟» فَقَالُوا: هَذَا وَادِي الْأَزْرَقِ، قَالَ: «كَأَنِّي أَنْظُرُ إِلَى مُوسَى عَلَيْهِ السَّلَامُ هَابِطًا مِنَ الثَّنِيَّةِ، وَلَهُ جُؤَارٌ إِلَى اللهِ بِالتَّلْبِيَةِ»، ثُمَّ أَتَى عَلَى ثَنِيَّةِ هَرْشَى، فَقَالَ: «أَيُّ ثَنِيَّةٍ هَذِهِ؟» قَالُوا: ثَنِيَّةُ هَرْشَى، قَالَ: «كَأَنِّي أَنْظُرُ إِلَى يُونُسَ بْنِ مَتَّى عَلَيْهِ السَّلَامُ عَلَى نَاقَةٍ حَمْرَاءَ جَعْدَةٍ عَلَيْهِ جُبَّةٌ مِنْ صُوفٍ، خِطَامُ نَاقَتِهِ خُلْبَةٌ وَهُوَ يُلَبِّي»، قَالَ ابْنُ حَنْبَلٍ فِي حَدِيثِهِ: قَالَ هُشَيْمٌ: يَعْنِي لِيفًا.

ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন আযরাক উপত্যকা অতিক্রম করে যাচ্ছিলেন, তখন বললেন, এটি কোনো উপত্যকা? সঙ্গীগণ উত্তর দিলেন, আযরাক উপত্যকা। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আমি যেন মূসা আলাইহিস সালামকে গিরিপথ থেকে অবতরণ করতে দেখছি, তিনি উচ্চম্বরে তালবিয়া পাঠ করছিলেন। তারপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হারশা গিরিপথে আসলেন। তিনি বললেন, এটি কোনো গিরিপথ? সঙ্গীগণ বললেন, হারশা গিরিপথ। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আমি যেন ইউনূস ইবন মাত্তা আলাইহিস সালামকে দেখছি। তিনি সুঠামদেহী লাল বর্নের উষ্ট্রের পিঠে আরোহিত; গায়ে একটি পশমী জোব্বা, আর তাঁর উষ্টের রশিটি খেজুরের ছাল দিয়ে তৈরি, তিনি তালবিয়া পাঠ করছিলেন। ইবন হানবাল তার হাদীসে বলেন, হুশায়ম বলেছেন, আরবি এর অর্থ আরবি খেজুর বৃক্ষের ছাল।[334]

عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ، قَالَ: سِرْنَا مَعَ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بَيْنَ مَكَّةَ وَالْمَدِينَةِ، فَمَرَرْنَا بِوَادٍ، فَقَالَ: «أَيُّ وَادٍ هَذَا؟» فَقَالُوا: وَادِي الْأَزْرَقِ، فَقَالَ: «كَأَنِّي أَنْظُرُ إِلَى مُوسَى صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ - فَذَكَرَ مِنْ لَوْنِهِ وَشَعَرِهِ شَيْئًا لَمْ يَحْفَظْهُ دَاوُدُ - وَاضِعًا إِصْبَعَيْهِ فِي أُذُنَيْهِ، لَهُ جُؤَارٌ إِلَى اللهِ بِالتَّلْبِيَةِ، مَارًّا بِهَذَا الْوَادِي» قَالَ: ثُمَّ سِرْنَا حَتَّى أَتَيْنَا عَلَى ثَنِيَّةٍ، فَقَالَ: «أَيُّ ثَنِيَّةٍ هَذِهِ؟» قَالُوا: هَرْشَى - أَوْ لِفْتٌ - فَقَالَ: «كَأَنِّي أَنْظُرُ إِلَى يُونُسَ عَلَى نَاقَةٍ حَمْرَاءَ، عَلَيْهِ جُبَّةُ صُوفٍ، خِطَامُ نَاقَتِهِ لِيفٌ خُلْبَةٌ، مَارًّا بِهَذَا الْوَادِي مُلَبِّيًا».

ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে আমরা মক্কা ও মদীনার মধ্যকার এক স্থানে সফর করছিলাম। আমরা একটি উপত্যকা অতিক্রম করছি, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিজ্ঞেস করলেন, এটি কোনো উপত্যকা? সঙ্গীগণ উত্তর করলেন, আযরাক উপত্যকা। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আমি যেন এখনও মূসা আলাইহিস সালামকে দেখতে পাচ্ছি, তিনি তাঁর কর্ণদ্বয়ের ছিদ্রে আঙ্গূল স্থাপন পূর্বক উচ্চঃস্বরে তালবিয়া পাঠ করে এ উপত্যকা অতিক্রম করে যাচ্ছেন। বর্ণনাকারী বলেন, এখানে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মূসা আলাইহিস সালা্মের দেহের বর্ণ ও চুলের আকৃতি সম্পর্কে উল্লেখ করেছিলেন। কিন্তু রাবী দাউদ তা স্বরণ রাখতে পারেন নি। ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, তারপর আমরা সামনে আরো অগ্রসর হলাম এবং একটি গিরিপথে এসে পৌছলাম। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিজ্ঞেস করলেন, এটি কোনো গিরিপথ? সঙ্গীগণ বললেন, হারশা কিংবা লিফত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আমি যেন এখনও ইউনূস আলাইহিস সালামকে দেখতে পাচ্ছি তালবিয়া পাঠ করা অবস্থায় তিনি গিরিপথ অতিক্রম করে যাচ্ছেন। তাঁর গায়ে একটি পশমী জোব্বা আর তিনি একটি লাল বর্ণের উষ্ট্রির পিঠে আরোহিত। তাঁর উষ্টির রশিটি খেজুর বৃক্ষের ছাল দ্বারা তৈরি।[335]

 

 

আল্লাহর নবী মূসা আলাইহিস সালাম তাঁর রবের কাছে সর্বোচ্চ জান্নাতীর মর্যারা আর সর্বনিম্ন জান্নাতীর মর্যাদা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা।

قَالَ سُفْيَانُ: رَفَعَهُ أَحَدُهُمَا، أُرَاهُ ابْنَ أَبْجَرَ - قَالَ: " سَأَلَ مُوسَى رَبَّهُ، مَا أَدْنَى أَهْلِ الْجَنَّةِ مَنْزِلَةً، قَالَ: هُوَ رَجُلٌ يَجِيءُ بَعْدَ مَا أُدْخِلَ أَهْلُ الْجَنَّةِ الْجَنَّةَ، فَيُقَالُ لَهُ: ادْخُلِ الْجَنَّةَ، فَيَقُولُ: أَيْ رَبِّ، كَيْفَ وَقَدْ نَزَلَ النَّاسُ مَنَازِلَهُمْ، وَأَخَذُوا أَخَذَاتِهِمْ، فَيُقَالُ لَهُ: أَتَرْضَى أَنْ يَكُونَ لَكَ مِثْلُ مُلْكِ مَلِكٍ مِنْ مُلُوكِ الدُّنْيَا؟ فَيَقُولُ: رَضِيتُ رَبِّ، فَيَقُولُ: لَكَ ذَلِكَ، وَمِثْلُهُ وَمِثْلُهُ وَمِثْلُهُ وَمِثْلُهُ، فَقَالَ فِي الْخَامِسَةِ: رَضِيتُ رَبِّ، فَيَقُولُ: هَذَا لَكَ وَعَشَرَةُ أَمْثَالِهِ، وَلَكَ مَا اشْتَهَتْ نَفْسُكَ، وَلَذَّتْ عَيْنُكَ، فَيَقُولُ: رَضِيتُ رَبِّ، قَالَ: رَبِّ، فَأَعْلَاهُمْ مَنْزِلَةً؟ قَالَ: أُولَئِكَ الَّذِينَ أَرَدْتُ غَرَسْتُ كَرَامَتَهُمْ بِيَدِي، وَخَتَمْتُ عَلَيْهَا، فَلَمْ تَرَ عَيْنٌ، وَلَمْ تَسْمَعْ أُذُنٌ، وَلَمْ يَخْطُرْ عَلَى قَلْبِ بَشَرٍ "، قَالَ: وَمِصْدَاقُهُ فِي كِتَابِ اللهِ عَزَّ وَجَلَّ: " {فَلَا تَعْلَمُ نَفْسٌ مَا أُخْفِيَ لَهُمْ مِنْ قُرَّةِ أَعْيُنٍ} [السجدة: 17] الْآيَةَ.

সুফিয়ান রহ. মারফু সূত্রে বর্ণনা করেন, তাদের একজন মনে হয় ইবন আবজার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, মূসা আলাইহিস সালাম তাঁর রবকে জিজ্ঞেস করলেন, একজন নিম্ন শ্রেণীর বেহেশতীর কিরূপ মযার্দা হবে? আল্লাহ তা‘আলা বললেন, সমস্ত জান্নাতবাসীকে জান্নাতে প্রবেশ করানোর পর এক ব্যক্তিকে উপস্থিত করা হবে। তাকে বলা হবে, যাও, জান্নাতে প্রবেশ করো। সে বলবে, হে প্রভু, এখন ওখানে গিয়ে কি করবো? প্রত্যেক ব্যক্তিই তো স্ব স্ব স্থান ও যা যা নেওয়ার তা নিয়ে ফেলেছে। আমি ওখানে গিয়ে কিছুই তো পাবো না। তখন আল্লাহ বলবেন, তুমি কি এতে সন্তুষ্ট হবে যে, দুনিয়ার যেকোন বাদশার রাজ্যের সম পরিমাণ এক রাজত্ব তোমাকে দেওয়া হবে? সে বলবে, আমি সন্তুষ্ট, হে আমার প্রভু, তখন আল্লাহ তা’আলা বলবেন, তোমাকে তা দেওয়া হল এবং তার দ্বিগুণ, তার দ্বিগুণ, তার দ্বিগুণ দেওয়া হল। পঞ্চম বারে সে ব্যক্তি বলবে, আমি সন্তুষ্ট হয়েছি, হে আমার পরওয়ারদিগার। অতঃপর তিনি বলবেন, তোমাকে তা দেওয়া হলো এবং তার দশগুণ পরিমাণ দেওয়া হলো। আর তোমাকে তাও দেওয়া হলো, যা তোমার মন চায় ও চোখে ভাল লাগে। সে ব্যক্তি বলবে, আমি সন্তুষ্ট হয়েছি। মূসা আলাইহিস সালাম বললেন, সবোর্চ্চ শ্রেণী বেহেশতীর মযার্দা কিরূপ হবে? মহান আল্লাহ বললেন, এরা সেই সমস্ত লোক যাদেরকে আমি নিজের হাতে মযার্দার স্থানে উন্নীত করেছি এবং এর ওপর মোহর করে দিয়েছে। তাদেরকে এমন কিছু প্রদান করা হবে যা কোনো চোখে কখনো দেখেনি, কোনো কান কখনো শুনেনি, এমনকি কোনো অন্তর তা কল্পনাও করতে পারেনি। বণর্নাকারী বলেন, এর প্রমাণে মহাপরাক্রমশালী আল্লাহর কিতাবে রয়েছে, “তাদের কাজের প্রতিদানস্বরুপ তাদের জন্য চক্ষুশীতলকারী যে সমগ্রী গোপন রাখা হয়েছে, কোনো প্রাণীরই তার খবর নেই” [সূরা সাজদা: ১৭][336]

 

 

মূসা আলাইহিস সালাম কর্তৃক মালাকুল মাউতকে প্রহার

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، قَالَ: " أُرْسِلَ مَلَكُ المَوْتِ إِلَى مُوسَى عَلَيْهِمَا السَّلاَمُ، فَلَمَّا جَاءَهُ صَكَّهُ، فَرَجَعَ إِلَى رَبِّهِ، فَقَالَ: أَرْسَلْتَنِي إِلَى عَبْدٍ لاَ يُرِيدُ المَوْتَ، قَالَ: ارْجِعْ إِلَيْهِ فَقُلْ لَهُ يَضَعُ يَدَهُ عَلَى مَتْنِ ثَوْرٍ، فَلَهُ بِمَا غَطَّتْ يَدُهُ بِكُلِّ شَعَرَةٍ سَنَةٌ، قَالَ: أَيْ رَبِّ، ثُمَّ مَاذَا؟ قَالَ: ثُمَّ المَوْتُ، قَالَ: فَالْآنَ، قَالَ: فَسَأَلَ اللَّهَ أَنْ يُدْنِيَهُ مِنَ الأَرْضِ المُقَدَّسَةِ رَمْيَةً بِحَجَرٍ، قَالَ أَبُو هُرَيْرَةَ: فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «لَوْ كُنْتُ ثَمَّ لَأَرَيْتُكُمْ قَبْرَهُ، إِلَى جَانِبِ الطَّرِيقِ تَحْتَ الكَثِيبِ الأَحْمَرِ» قَالَ وَأَخْبَرَنَا مَعْمَرٌ، عَنْ هَمَّامٍ، حَدَّثَنَا أَبُو هُرَيْرَةَ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ نَحْوَهُ.

আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, মালাকুল মউত ফিরিশতাকে মূসা আলাইহিস সালামের নিকট তাঁর (জান কবযের) জন্য পাঠান হয়েছিল। ফিরিশতা যখন তাঁর নিকট আসলেন, তিনি তাঁর চোখে থাপ্পর মারলেন। রখন ফিরিশতা তাঁর রবের নিকট ফিরে গেলেন এবং বললেন, আপনি এমন এক বান্দার নিকট পাঠিয়েছেন যে মরতে চায় না। আল্লাহ্ বললেন, তুমি তার কাছে ফিরে যাও এবং তাকে বল সে যেন তার একটি হাত একটি গরুর পিঠে রাখে, তার হাত যতগুলো পশম দাকবে তার প্রতিটি পশমের পরিবরতে তাকে এক বছর করে হায়াত দেওয়া হবে। মূসা আলাইহিস সালাম বললেন, হে রব! তারপর কি হবে? আল্লাহ বললেন, তারপর মৃত্যু। মূসা আলাইহিস সালাম বললেন, এখনই হউক। (রাবী) আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, তখন তিনি আল্লাহর নিকট আরয করলেন, তাঁকে যেন ‘আরদে মুকাদ্দাস’ বা পবিত্র ভুমি থেকে পাথর নিক্ষেপের দূরত্বের সমান স্থানে পৌছে দেওয়া হয়। আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহিস ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আমি যদি সেখানে থাকতাম তাহলে অবশ্যই আমি তোমাদেরকে রাস্তার পার্শ্বে লাল টিলার নীচে কবরটি দেখিয়ে দিতাম। রাবী আব্দুর রায্যাক বলেন, মা’মর (র) আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু সূত্রে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহিস ওয়াসাল্লাম থেকে অনুরূপ বর্ণনা করেছেন। [337]

 

 

আল্লাহর নবী হারুন আলাইহিস সালামের ঘটনা

عَنْ مَالِكِ بْنِ صَعْصَعَةَ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، حَدَّثَهُمْ عَنْ " لَيْلَةَ أُسْرِيَ بِهِ: حَتَّى أَتَى السَّمَاءَ الخَامِسَةَ، فَإِذَا هَارُونُ، قَالَ: هَذَا هَارُونُ فَسَلِّمْ عَلَيْهِ، فَسَلَّمْتُ عَلَيْهِ فَرَدَّ، ثُمَّ قَالَ: مَرْحَبًا بِالأَخِ الصَّالِحِ وَالنَّبِيِّ الصَّالِحِ " تَابَعَهُ ثَابِتٌ، وَعَبَّادُ بْنُ أَبِي عَلِيٍّ، عَنْ أَنَسٍ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ.

মালিক ইবন সা‘সা‘আ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহিস ওয়াসাল্লাম মিরাজ রাত্রির ঘটনা বর্ণনা করতে গিয়ে তাঁদের কাছে এও বলেন, তিনি যখন পঞ্চম আকাশে এসে পৌছলেন, তখন হঠাৎ সেখানে হারূন আলাইহিস সালামের সাথে সাক্ষাৎ হল। জিবরীল আলাইহিস সালাম বললেন, ইনি হলেন, হারূন আলাইহিস সালাম তাঁকে সালাম করুন। তখন আমি তাঁকে সালাম করলাম। তিনি সালামের জবাব দিয়ে বললেন, মারহাবা পুণ্যবান ভাই ও পুণ্যবান নবী। সাবিত এবং আব্বাদ ইবন আবূ আলী (রহ.) আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু সূত্রে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহিস ওয়াসাল্লাম থেকে হাদীস বর্ণনায় কাতাদা (রহ.)-এর অনুসরণ করেছেন।[338]

 

 

আল্লাহর নবী দাউদ ও সুলাইমান আলাইহিমাস সালাম

আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,

﴿ ۞وَلَقَدۡ ءَاتَيۡنَا دَاوُۥدَ مِنَّا فَضۡلٗاۖ يَٰجِبَالُ أَوِّبِي مَعَهُۥ وَٱلطَّيۡرَۖ وَأَلَنَّا لَهُ ٱلۡحَدِيدَ ١٠ أَنِ ٱعۡمَلۡ سَٰبِغَٰتٖ وَقَدِّرۡ فِي ٱلسَّرۡدِۖ وَٱعۡمَلُواْ صَٰلِحًاۖ إِنِّي بِمَا تَعۡمَلُونَ بَصِيرٞ ١١ وَلِسُلَيۡمَٰنَ ٱلرِّيحَ غُدُوُّهَا شَهۡرٞ وَرَوَاحُهَا شَهۡرٞۖ وَأَسَلۡنَا لَهُۥ عَيۡنَ ٱلۡقِطۡرِۖ وَمِنَ ٱلۡجِنِّ مَن يَعۡمَلُ بَيۡنَ يَدَيۡهِ بِإِذۡنِ رَبِّهِۦۖ وَمَن يَزِغۡ مِنۡهُمۡ عَنۡ أَمۡرِنَا نُذِقۡهُ مِنۡ عَذَابِ ٱلسَّعِيرِ ١٢ يَعۡمَلُونَ لَهُۥ مَا يَشَآءُ مِن مَّحَٰرِيبَ وَتَمَٰثِيلَ وَجِفَانٖ كَٱلۡجَوَابِ وَقُدُورٖ رَّاسِيَٰتٍۚ ٱعۡمَلُوٓاْ ءَالَ دَاوُۥدَ شُكۡرٗاۚ وَقَلِيلٞ مِّنۡ عِبَادِيَ ٱلشَّكُورُ ١٣ ﴾ [سبا: ١٠، ١٣]

“আর অবশ্যই আমি আমার পক্ষ থেকে দাঊদের প্রতি অনুগ্রহ করেছিলাম। (আমি আদেশ করলাম) ‘হে পর্বতমালা, তোমরা তার সাথে আমার পবিত্রতা ঘোষণা কর’ এবং পাখিদেরকেও (এ আদেশ দিয়েছিলাম)। আর আমি তার জন্য লোহাকেও নরম করে দিয়েছিলাম, (এ নির্দেশ দিয়ে যে,) ‘তুমি পরিপূর্ণ বর্ম তৈরী কর এবং যথার্থ পরিমাণে প্রস্তুত কর’। আর তোমরা সৎকর্ম কর। তোমরা যা কিছু কর নিশ্চয় আমি তার সম্যক দ্রষ্টা।আর সুলাইমানের জন্য আমি বাতাসকে অনুগত করে দিয়েছিলাম, যা সকালে এক মাসের পথ এবং সন্ধ্যায় এক মাসের পথ অতিক্রম করত। আর আমি তার জন্য গলিত তামার প্রস্রবণ প্রবাহিত করেছিলাম। আর কতিপয় জিন তার রবের অনুমতিক্রমে তার সামনে কাজ করত। তাদের মধ্যে যে আমার নির্দেশ থেকে বিচ্যুত হয় তাকে আমি জ্বলন্ত আগুনের আযাব আস্বাদন করাব। তারা তৈরী করত সুলাইমানের ইচ্ছানুযায়ী তার জন্য প্রাসাদ, ভাস্কর্য, সুবিশাল হাউযের মত বড় পাত্র ও স্থির হাড়ি। ‘হে দাঊদ পরিবার, তোমরা কৃতজ্ঞতাস্বরূপ আমল করে যাও এবং আমার বান্দাদের মধ্যে অল্পই কৃতজ্ঞ”। [সূরা সাবা’ : ১০-১৩]

﴿ وَلَقَدۡ ءَاتَيۡنَا دَاوُۥدَ وَسُلَيۡمَٰنَ عِلۡمٗاۖ وَقَالَا ٱلۡحَمۡدُ لِلَّهِ ٱلَّذِي فَضَّلَنَا عَلَىٰ كَثِيرٖ مِّنۡ عِبَادِهِ ٱلۡمُؤۡمِنِينَ ١٥ وَوَرِثَ سُلَيۡمَٰنُ دَاوُۥدَۖ وَقَالَ يَٰٓأَيُّهَا ٱلنَّاسُ عُلِّمۡنَا مَنطِقَ ٱلطَّيۡرِ وَأُوتِينَا مِن كُلِّ شَيۡءٍۖ إِنَّ هَٰذَا لَهُوَ ٱلۡفَضۡلُ ٱلۡمُبِينُ ١٦ وَحُشِرَ لِسُلَيۡمَٰنَ جُنُودُهُۥ مِنَ ٱلۡجِنِّ وَٱلۡإِنسِ وَٱلطَّيۡرِ فَهُمۡ يُوزَعُونَ ١٧ حَتَّىٰٓ إِذَآ أَتَوۡاْ عَلَىٰ وَادِ ٱلنَّمۡلِ قَالَتۡ نَمۡلَةٞ يَٰٓأَيُّهَا ٱلنَّمۡلُ ٱدۡخُلُواْ مَسَٰكِنَكُمۡ لَا يَحۡطِمَنَّكُمۡ سُلَيۡمَٰنُ وَجُنُودُهُۥ وَهُمۡ لَا يَشۡعُرُونَ ١٨ فَتَبَسَّمَ ضَاحِكٗا مِّن قَوۡلِهَا وَقَالَ رَبِّ أَوۡزِعۡنِيٓ أَنۡ أَشۡكُرَ نِعۡمَتَكَ ٱلَّتِيٓ أَنۡعَمۡتَ عَلَيَّ وَعَلَىٰ وَٰلِدَيَّ وَأَنۡ أَعۡمَلَ صَٰلِحٗا تَرۡضَىٰهُ وَأَدۡخِلۡنِي بِرَحۡمَتِكَ فِي عِبَادِكَ ٱلصَّٰلِحِينَ ١٩ وَتَفَقَّدَ ٱلطَّيۡرَ فَقَالَ مَا لِيَ لَآ أَرَى ٱلۡهُدۡهُدَ أَمۡ كَانَ مِنَ ٱلۡغَآئِبِينَ ٢٠ لَأُعَذِّبَنَّهُۥ عَذَابٗا شَدِيدًا أَوۡ لَأَاْذۡبَحَنَّهُۥٓ أَوۡ لَيَأۡتِيَنِّي بِسُلۡطَٰنٖ مُّبِينٖ ٢١ فَمَكَثَ غَيۡرَ بَعِيدٖ فَقَالَ أَحَطتُ بِمَا لَمۡ تُحِطۡ بِهِۦ وَجِئۡتُكَ مِن سَبَإِۢ بِنَبَإٖ يَقِينٍ ٢٢ إِنِّي وَجَدتُّ ٱمۡرَأَةٗ تَمۡلِكُهُمۡ وَأُوتِيَتۡ مِن كُلِّ شَيۡءٖ وَلَهَا عَرۡشٌ عَظِيمٞ ٢٣ وَجَدتُّهَا وَقَوۡمَهَا يَسۡجُدُونَ لِلشَّمۡسِ مِن دُونِ ٱللَّهِ وَزَيَّنَ لَهُمُ ٱلشَّيۡطَٰنُ أَعۡمَٰلَهُمۡ فَصَدَّهُمۡ عَنِ ٱلسَّبِيلِ فَهُمۡ لَا يَهۡتَدُونَ ٢٤ أَلَّاۤ يَسۡجُدُواْۤ لِلَّهِ ٱلَّذِي يُخۡرِجُ ٱلۡخَبۡءَ فِي ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَٱلۡأَرۡضِ وَيَعۡلَمُ مَا تُخۡفُونَ وَمَا تُعۡلِنُونَ ٢٥ ٱللَّهُ لَآ إِلَٰهَ إِلَّا هُوَ رَبُّ ٱلۡعَرۡشِ ٱلۡعَظِيمِ۩ ٢٦ ۞قَالَ سَنَنظُرُ أَصَدَقۡتَ أَمۡ كُنتَ مِنَ ٱلۡكَٰذِبِينَ ٢٧ ٱذۡهَب بِّكِتَٰبِي هَٰذَا فَأَلۡقِهۡ إِلَيۡهِمۡ ثُمَّ تَوَلَّ عَنۡهُمۡ فَٱنظُرۡ مَاذَا يَرۡجِعُونَ ٢٨ قَالَتۡ يَٰٓأَيُّهَا ٱلۡمَلَؤُاْ إِنِّيٓ أُلۡقِيَ إِلَيَّ كِتَٰبٞ كَرِيمٌ ٢٩ إِنَّهُۥ مِن سُلَيۡمَٰنَ وَإِنَّهُۥ بِسۡمِ ٱللَّهِ ٱلرَّحۡمَٰنِ ٱلرَّحِيمِ ٣٠ أَلَّا تَعۡلُواْ عَلَيَّ وَأۡتُونِي مُسۡلِمِينَ ٣١ قَالَتۡ يَٰٓأَيُّهَا ٱلۡمَلَؤُاْ أَفۡتُونِي فِيٓ أَمۡرِي مَا كُنتُ قَاطِعَةً أَمۡرًا حَتَّىٰ تَشۡهَدُونِ ٣٢ قَالُواْ نَحۡنُ أُوْلُواْ قُوَّةٖ وَأُوْلُواْ بَأۡسٖ شَدِيدٖ وَٱلۡأَمۡرُ إِلَيۡكِ فَٱنظُرِي مَاذَا تَأۡمُرِينَ ٣٣ قَالَتۡ إِنَّ ٱلۡمُلُوكَ إِذَا دَخَلُواْ قَرۡيَةً أَفۡسَدُوهَا وَجَعَلُوٓاْ أَعِزَّةَ أَهۡلِهَآ أَذِلَّةٗۚ وَكَذَٰلِكَ يَفۡعَلُونَ ٣٤ وَإِنِّي مُرۡسِلَةٌ إِلَيۡهِم بِهَدِيَّةٖ فَنَاظِرَةُۢ بِمَ يَرۡجِعُ ٱلۡمُرۡسَلُونَ ٣٥ فَلَمَّا جَآءَ سُلَيۡمَٰنَ قَالَ أَتُمِدُّونَنِ بِمَالٖ فَمَآ ءَاتَىٰنِۦَ ٱللَّهُ خَيۡرٞ مِّمَّآ ءَاتَىٰكُمۚ بَلۡ أَنتُم بِهَدِيَّتِكُمۡ تَفۡرَحُونَ ٣٦ ٱرۡجِعۡ إِلَيۡهِمۡ فَلَنَأۡتِيَنَّهُم بِجُنُودٖ لَّا قِبَلَ لَهُم بِهَا وَلَنُخۡرِجَنَّهُم مِّنۡهَآ أَذِلَّةٗ وَهُمۡ صَٰغِرُونَ ٣٧ قَالَ يَٰٓأَيُّهَا ٱلۡمَلَؤُاْ أَيُّكُمۡ يَأۡتِينِي بِعَرۡشِهَا قَبۡلَ أَن يَأۡتُونِي مُسۡلِمِينَ ٣٨ قَالَ عِفۡرِيتٞ مِّنَ ٱلۡجِنِّ أَنَا۠ ءَاتِيكَ بِهِۦ قَبۡلَ أَن تَقُومَ مِن مَّقَامِكَۖ وَإِنِّي عَلَيۡهِ لَقَوِيٌّ أَمِينٞ ٣٩ قَالَ ٱلَّذِي عِندَهُۥ عِلۡمٞ مِّنَ ٱلۡكِتَٰبِ أَنَا۠ ءَاتِيكَ بِهِۦ قَبۡلَ أَن يَرۡتَدَّ إِلَيۡكَ طَرۡفُكَۚ فَلَمَّا رَءَاهُ مُسۡتَقِرًّا عِندَهُۥ قَالَ هَٰذَا مِن فَضۡلِ رَبِّي لِيَبۡلُوَنِيٓ ءَأَشۡكُرُ أَمۡ أَكۡفُرُۖ وَمَن شَكَرَ فَإِنَّمَا يَشۡكُرُ لِنَفۡسِهِۦۖ وَمَن كَفَرَ فَإِنَّ رَبِّي غَنِيّٞ كَرِيمٞ ٤٠ قَالَ نَكِّرُواْ لَهَا عَرۡشَهَا نَنظُرۡ أَتَهۡتَدِيٓ أَمۡ تَكُونُ مِنَ ٱلَّذِينَ لَا يَهۡتَدُونَ ٤١ فَلَمَّا جَآءَتۡ قِيلَ أَهَٰكَذَا عَرۡشُكِۖ قَالَتۡ كَأَنَّهُۥ هُوَۚ وَأُوتِينَا ٱلۡعِلۡمَ مِن قَبۡلِهَا وَكُنَّا مُسۡلِمِينَ ٤٢ وَصَدَّهَا مَا كَانَت تَّعۡبُدُ مِن دُونِ ٱللَّهِۖ إِنَّهَا كَانَتۡ مِن قَوۡمٖ كَٰفِرِينَ ٤٣ قِيلَ لَهَا ٱدۡخُلِي ٱلصَّرۡحَۖ فَلَمَّا رَأَتۡهُ حَسِبَتۡهُ لُجَّةٗ وَكَشَفَتۡ عَن سَاقَيۡهَاۚ قَالَ إِنَّهُۥ صَرۡحٞ مُّمَرَّدٞ مِّن قَوَارِيرَۗ قَالَتۡ رَبِّ إِنِّي ظَلَمۡتُ نَفۡسِي وَأَسۡلَمۡتُ مَعَ سُلَيۡمَٰنَ لِلَّهِ رَبِّ ٱلۡعَٰلَمِينَ ٤٤ ﴾ [النمل: ١٥، ٤٤]

“আর অবশ্যই আমি দাঊদ ও সুলাইমানকে জ্ঞান দান করেছি এবং তারা উভয়ে বলল, ‘সকল প্রশংসা আল্লাহর জন্যই, যিনি তাঁর অনেক মুমিন বান্দাদের উপর আমাদেরকে মর্যাদা দান করেছেন’। আর সুলাইমান দাঊদের ওয়ারিস হল এবং সে বলল, ‘হে মানুষ, আমাদেরকে পাখির ভাষা শেখানো হয়েছে এবং আমাদেরকে সকল কিছু দেওয়া হয়েছে। নিশ্চয় এটা সুস্পষ্ট অনুগ্রহ’। আর সুলাইমানের জন্য তার সেনাবাহিনী থেকে জিন, মানুষ ও পাখিদের সমবেত করা হল। তারপর এদেরকে বিন্যস্ত করা হল। অবশেষে যখন তারা পিপড়ার উপত্যকায় পৌঁছল তখন এক পিপড়া বলল, ‘ওহে পিপড়ার দল, তোমরা তোমাদের বাসস্থানে প্রবেশ কর। সুলাইমান ও তার বাহিনী তোমাদেরকে যেন অজ্ঞাতসারে পিষ্ট করে মারতে না পারে’।তারপর সুলাইমান তার কথায় মুচকি হাসল এবং বলল, ‘হে আমার রব, তুমি আমার প্রতি ও আমার পিতা-মাতার প্রতি যে অনুগ্রহ করেছ তার জন্য আমাকে তোমার শুকরিয়া আদায় করার তাওফীক দাও। আর আমি যাতে এমন সৎকাজ করতে পারি যা তুমি পছন্দ কর। আর তোমার অনুগ্রহে তুমি আমাকে তোমার সৎকর্মপরায়ণ বান্দাদের অন্তর্ভুক্ত কর’। আর সুলাইমান পাখিদের খোঁজ খবর নিল। তারপর সে বলল, ‘কী ব্যাপার, আমি হুদহুদকে দেখছি না; নাকি সে অনুপস্থিতদের অন্তর্ভুক্ত’? অবশ্যই আমি তাকে কঠিন আযাব দেব অথবা তাকে যবেহ করব। অথবা সে আমার কাছে সুস্পষ্ট প্রমাণ নিয়ে আসবে’। তারপর অনতিবিলম্বে হুদহুদ এসে বলল, ‘আমি যা অবগত হয়েছি আপনি তা অবগত নন, আমি সাবা থেকে আপনার জন্য নিশ্চিত খবর নিয়ে এসেছি’। আমি এক নারীকে দেখতে পেলাম, সে তাদের উপর রাজত্ব করছে। তাকে দেওয়া হয়েছে সব কিছু। আর তার আছে এক বিশাল সিংহাসন’।‘আমি তাকে ও তার কওমকে দেখতে পেলাম তারা আল্লাহর পরিবর্তে সূর্যকে সিজদা করছে। আর শয়তান তাদের কার্যাবলীকে তাদের জন্য সৌন্দর্যমন্ডিত করে দিয়েছে এবং তাদেরকে সৎপথ থেকে নিবৃত করেছে, ফলে তারা হিদায়াত পায় না’। যাতে তারা আল্লাহকে সিজদা না করে, যিনি আসমান ও যমীনের লুকায়িত বস্তুকে বের করেন। আর তোমরা যা গোপন কর এবং তোমরা যা প্রকাশ কর তিনি সবই জানেন। আল্লাহ ছাড়া সত্যিকারের কোনো ইলাহ নেই। তিনি মহা আরশের রব। সুলাইমান বলল, আমরা দেখব, ‘তুমি কি সত্য বলেছ, নাকি তুমি মিথ্যাবাদীদের অন্তর্ভুক্ত’।‘তুমি আমার এ পত্র নিয়ে যাও। অতঃপর এটা তাদের কাছে নিক্ষেপ কর, তারপর তাদের কাছ থেকে সরে থাক এবং দেখ, তারা কী জবাব দেয়’? সে (রাণী) বলল, ‘হে পারিষদবর্গ! নিশ্চয় আমাকে এক সম্মানজনক পত্র দেওয়া হয়েছে’।‘নিশ্চয় এটা সুলাইমানের পক্ষ থেকে। আর নিশ্চয় এটা পরম করুণাময় পরম দয়ালু আল্লাহর নামে’।‘যাতে তোমরা আমার প্রতি উদ্ধত না হও এবং অনুগত হয়ে আমার কাছে আস’। সে (রাণী) বলল, ‘হে পারিষদবর্গ, তোমরা আমার ব্যাপারে আমাকে অভিমত দাও। তোমাদের উপস্থিতি ছাড়া আমি কোনো বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করি না। তারা বলল, ‘আমরা শক্তিশালী ও কঠোর যোদ্ধা, আর সিদ্ধান্ত আপনার কাছেই। অতএব চিন্তা করে দেখুন, আপনি কী নির্দেশ দেবেন’। সে বলল, ‘নিশ্চয় রাজা-বাদশাহরা যখন কোনো জনপদে প্রবেশ করে তখন তাকে বিপর্যস্ত করে এবং সেখানকার সম্মানিত অধিবাসীদেরকে অপদস্থ করে। আর তা-ই তারা করবে’।‘আর নিশ্চয় আমি তাদের কাছে উপঢৌকন পাঠাচ্ছি, তারপর দেখি দূতেরা কী নিয়ে ফিরে আসে’।অতঃপর দূত যখন সুলাইমানের কাছে আসল, তখন সে বলল, ‘তোমরা কি আমাকে সম্পদ দ্বারা সাহায্য করতে চাচ্ছ? সুতরাং আল্লাহ আমাকে যা দিয়েছেন তা তোমাদেরকে যা দিয়েছেন তা থেকে উত্তম। বরং তোমরা তোমাদের উপঢৌকন নিয়ে খুশি হও’।‘তোমরা তাদের কাছে ফিরে যাও। তারপর আমি অবশ্যই তাদের কাছে এমন সৈন্যবাহিনী নিয়ে আসব যার মুকাবিলা করার শক্তি তাদের নেই। আর আমি অবশ্যই তাদেরকে সেখান থেকে লাঞ্ছিত অবস্থায় বের করে দেব আর তারা অপমানিত।’ সুলাইমান বলল, ‘হে পারিষদবর্গ, তারা আমার কাছে আত্মসমর্পণ করে আসার পূর্বে তোমাদের মধ্যে কে তার (রাণীর) সিংহাসন আমার কাছে নিয়ে আসতে পারবে’? এক শক্তিশালী জিন বলল, ‘আপনি আপনার স্থান থেকে উঠার পূর্বেই আমি তা এনে দেব। আমি নিশ্চয়ই এই ব্যাপারে শক্তিমান, বিশ্বস্ত।যার কাছে কিতাবের এক বিশেষ জ্ঞান ছিল সে বলল, ‘আমি চোখের পলক পড়ার পূর্বেই তা আপনার কাছে নিয়ে আসব’। অতঃপর যখন সুলাইমান তা তার সামনে স্থির দেখতে পেল, তখন বলল, ‘এটি আমার রবের অনুগ্রহ, যাতে তিনি আমাকে পরীক্ষা করেন যে, আমি কি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করি না কি অকৃতজ্ঞতা প্রকাশ করি। আর যে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে সে তো তার নিজের কল্যাণেই তা করে, আর যে কেউ অকৃতজ্ঞ হবে, তবে নিশ্চয় আমার রব অভাবমুক্ত, অধিক দাতা’। সুলাইমান বলল, ‘তোমরা তার জন্য তার সিংহাসনের আকার-আকৃতি পরিবর্তন করে দাও। দেখব সে সঠিক দিশা পায় নাকি তাদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে পড়ে, যারা সঠিক দিশা পায় না’। অতঃপর যখন সে আসল, তখন তাকে বলা হল; ‘এরূপই কি তোমার সিংহাসন’? সে বলল, ‘এটি যেন সেটিই’। আর বলল, ‘আমাদেরকে তার পূর্বেই জ্ঞান দান করা হয়েছিল এবং আমরা আত্মসমর্পণ করেছিলাম’। আর আল্লাহকে বাদ দিয়ে যার পূজা সে করত তা তাকে ঈমান থেকে নিবৃত্ত করেছিল। নিশ্চয় সে ছিল কাফির সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্ত।তাকে বলা হল, ‘প্রাসাদটিতে প্রবেশ কর’। অতঃপর যখন সে তা দেখল, সে তাকে এক গভীর জলাশয় ধারণা করল, এবং তার পায়ের গোছাদ্বয় অনাবৃত করল। সুলাইমান বলল, ‘এটি আসলে স্বচ্ছ কাঁচ-নির্মিত প্রাসাদ’। সে বলল, ‘হে আমার রব, নিশ্চয় আমি আমার নিজের প্রতি যুলম করেছি। আমি সুলাইমানের সাথে সৃষ্টিকুলের রব আল্লাহর নিকট আত্মসমর্পণ করলাম”। [সূরা আন্-নামাল: ১৫-৪৪]

﴿ وَدَاوُۥدَ وَسُلَيۡمَٰنَ إِذۡ يَحۡكُمَانِ فِي ٱلۡحَرۡثِ إِذۡ نَفَشَتۡ فِيهِ غَنَمُ ٱلۡقَوۡمِ وَكُنَّا لِحُكۡمِهِمۡ شَٰهِدِينَ ٧٨ فَفَهَّمۡنَٰهَا سُلَيۡمَٰنَۚ وَكُلًّا ءَاتَيۡنَا حُكۡمٗا وَعِلۡمٗاۚ وَسَخَّرۡنَا مَعَ دَاوُۥدَ ٱلۡجِبَالَ يُسَبِّحۡنَ وَٱلطَّيۡرَۚ وَكُنَّا فَٰعِلِينَ ٧٩ وَعَلَّمۡنَٰهُ صَنۡعَةَ لَبُوسٖ لَّكُمۡ لِتُحۡصِنَكُم مِّنۢ بَأۡسِكُمۡۖ فَهَلۡ أَنتُمۡ شَٰكِرُونَ ٨٠ وَلِسُلَيۡمَٰنَ ٱلرِّيحَ عَاصِفَةٗ تَجۡرِي بِأَمۡرِهِۦٓ إِلَى ٱلۡأَرۡضِ ٱلَّتِي بَٰرَكۡنَا فِيهَاۚ وَكُنَّا بِكُلِّ شَيۡءٍ عَٰلِمِينَ ٨١ وَمِنَ ٱلشَّيَٰطِينِ مَن يَغُوصُونَ لَهُۥ وَيَعۡمَلُونَ عَمَلٗا دُونَ ذَٰلِكَۖ وَكُنَّا لَهُمۡ حَٰفِظِينَ ٨٢ ﴾ [الانبياء: ٧٨، ٨٢]

“আর স্মরণ কর দাঊদ ও সুলায়মানের কথা, যখন তারা শস্যক্ষেত সম্পর্কে বিচার করছিল। যাতে রাতের বেলায় কোনো কওমের মেষ ঢুকে পড়েছিল। আর আমি তাদের বিচার কাজ দেখছিলাম।অতঃপর আমি এ বিষয়ের ফয়সালা সুলায়মানকে বুঝিয়ে দিয়েছিলাম। আর আমি তাদের প্রত্যেককেই দিয়েছিলাম প্রজ্ঞা ও জ্ঞান। আর আমি পর্বতমালা ও পাখীদেরকে দাঊদের অধীন করে দিয়েছিলাম, তারা দাঊদের সাথে আমার তাসবীহ পাঠ করত। আর এসবকিছু আমিই করছিলাম। আর আমিই তাকে তোমাদের জন্য বর্ম বানানো শিক্ষা দিয়েছিলাম। যাতে তা যুদ্ধে তোমাদেরকে রক্ষা করতে পারে। সুতরাং তোমরা কি কৃতজ্ঞ হবে? আর আমি সুলায়মানের জন্য অনুগত করে দিয়েছিলাম প্রবল হাওয়াকে, যা তার নির্দেশে প্রবাহিত হত সেই দেশের দিকে, যেখানে আমি বরকত রেখেছি। আর আমি প্রত্যেক বিষয় সম্পর্কেই অবগত ছিলাম। আর শয়তানদের মধ্যে কতক তার জন্য ডুবুরীর কাজ করত, এছাড়া অন্যান্য কাজও করত। আর আমিই তাদের জন্য হিফাযতকারী ছিলাম”। [সূরা আল-আম্বিয়া: ৭৮-৮২]

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قَالَ «خُفِّفَ عَلَى دَاوُدَ عَلَيْهِ السَّلاَمُ القُرْآنُ، فَكَانَ يَأْمُرُ بِدَوَابِّهِ فَتُسْرَجُ، فَيَقْرَأُ القُرْآنَ قَبْلَ أَنْ تُسْرَجَ دَوَابُّهُ، وَلاَ يَأْكُلُ إِلَّا مِنْ عَمَلِ يَدِهِ» رَوَاهُ مُوسَى بْنُ عُقْبَةَ، عَنْ صَفْوَانَ، عَنْ عَطَاءِ بْنِ يَسَارٍ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ.

আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, দাউদ আলাইহিস সালামের পক্ষে কুরআন (যাবুর) তিলাওয়াত সহজ করে দেওয়া হয়েছিল। তিনি তাঁর যানবাহনের পশুর উপর গদি বাঁধার আদেশ করতেন, তখন তার উপর গদি বাধা হতো। তারপর তাঁর যানবাহনের পশুটির উপর গদি বাঁধার পূর্বেই তিনি যাবুর তিলাওয়াত করে শেষ করে ফেলতেন। তিনি নিজ হাতে উপার্জন করেই খেতেন। মূসা ইবন উকবা (রহ.) আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু সূত্রে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে হাদীসটি রেওয়াত করেছেন।[339]

عَنْ عَبْدَ اللَّهِ بْنَ عَمْرٍو رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا، قَالَ: أُخْبِرَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنِّي أَقُولُ: وَاللَّهِ لَأَصُومَنَّ النَّهَارَ، وَلَأَقُومَنَّ اللَّيْلَ مَا عِشْتُ " فَقَالَ لَهُ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «أَنْتَ الَّذِي تَقُولُ وَاللَّهِ لَأَصُومَنَّ النَّهَارَ وَلَأَقُومَنَّ اللَّيْلَ مَا عِشْتُ» قُلْتُ: قَدْ قُلْتُهُ قَالَ: «إِنَّكَ لاَ تَسْتَطِيعُ ذَلِكَ، فَصُمْ وَأَفْطِرْ، وَقُمْ وَنَمْ، وَصُمْ مِنَ الشَّهْرِ ثَلاَثَةَ أَيَّامٍ، فَإِنَّ الحَسَنَةَ بِعَشْرِ أَمْثَالِهَا، وَذَلِكَ مِثْلُ صِيَامِ الدَّهْرِ» فَقُلْتُ: إِنِّي أُطِيقُ أَفْضَلَ مِنْ ذَلِكَ يَا رَسُولَ اللَّهِ، قَالَ: «فَصُمْ يَوْمًا وَأَفْطِرْ يَوْمَيْنِ» قَالَ: قُلْتُ: إِنِّي أُطِيقُ أَفْضَلَ مِنْ ذَلِكَ، قَالَ: فَصُمْ يَوْمًا وَأَفْطِرْ يَوْمًا، وَذَلِكَ صِيَامُ دَاوُدَ وَهُوَ أَعْدَلُ الصِّيَامِ " قُلْتُ إِنِّي أُطِيقُ أَفْضَلَ مِنْهُ يَا رَسُولَ اللَّهِ، قَالَ: «لاَ أَفْضَلَ مِنْ ذَلِكَ».

আবদুল্লাহ ইবন আমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জানান হলো যে, আমি বলছি, আল্লাহ্‌র কসম! আমি যতদিন বেঁচে থাকব ততদিন অবশ্যই আমি বিরামহীনভাবে দিনে সাওম পালন করবো এবং রাতে ইবাদতে রত থাকবো। তখন রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিজ্ঞাসা করলেন, তুমিই কি বলছো, ‘আল্লাহর কসম, আমি যতদিন বাঁচবো, ততদিন দিনে সাওম পালন করবো এবং রাতে ইবাদাত রত থাকবো। আমি আরয করলাম, আমিই তা বলছি। তিনি বললেন, সেই শক্তি তোমার নেই। কাজেই সাওমও পালন কর, ইফ্তারও কর অর্থাৎ বিরতি দাও। রাতে ইবাদাতও কর এবং ঘুম যাও। আর প্রতি মাসে তিন দিন সাওম পালন কর। কেননা প্রতিটি নেক কাজের কমপক্ষে দশগুণ সাওয়াব পাওয়া যায় আর এটা সারা বছর সাওম পালন করার সমান। তখন আরয করলাম, ইয়া রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আমি এর চেয়েও বেশী সাওম পালন করার ক্ষমতা রাখি। তখন তিনি বললেন, তাহলে তুমি একদিন সাওম পালন কর আর দু’দিন ইফতার কর অর্থাৎ বিরতি দাও। তখন আমি আরয করলাম, ইয়া রাসূলুল্লাহ্! আমি এর চেয়েও অধিক পালন করার শক্তি রাখি। তখন তিনি বললেন, তাহলে একদিন সাওম পালন কর আর একদিন বিরতি দাও। এটা দাউদ আলাইহিস সালামের সাওম পালনের পদ্ধতি। আর এটাই সাওম পালনের উত্তম পদ্ধতি। আমি আরয করলাম, ইয়া রাসূলুল্লাহ! আমি এর চেয়েও বেশী শক্তি রাখি। তিনি বললেন, এর চেয়ে অধিক কিছু নেই।[340]

عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَمْرِو بْنِ العَاصِ، قَالَ: قَالَ لِي رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «أَلَمْ أُنَبَّأْ أَنَّكَ تَقُومُ اللَّيْلَ وَتَصُومُ النَّهَارَ» فَقُلْتُ: نَعَمْ، فَقَالَ: «فَإِنَّكَ إِذَا فَعَلْتَ ذَلِكَ هَجَمَتِ العَيْنُ، وَنَفِهَتِ النَّفْسُ، صُمْ مِنْ كُلِّ شَهْرٍ ثَلاَثَةَ أَيَّامٍ، فَذَلِكَ صَوْمُ الدَّهْرِ، أَوْ كَصَوْمِ الدَّهْرِ» قُلْتُ: إِنِّي أَجِدُ بِي، - قَالَ مِسْعَرٌ يَعْنِي قُوَّةً - قَالَ: «فَصُمْ صَوْمَ دَاوُدَ عَلَيْهِ السَّلاَمُ، وَكَانَ يَصُومُ يَوْمًا وَيُفْطِرُ يَوْمًا، وَلاَ يَفِرُّ إِذَا لاَقَى».

আবদুল্লাহ ইবন আমর ইবন ‘আস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন, আমি কি অবহিত হইনি যে, তুমি রাত ভর ইবাদাত কর এবং দিন ভর সাওম পালন কর! আমি বল্ললাম, হ্যাঁ। (খবর সত্য) তিনি বললেন, যদি তুমি এরূপ কর; তবে তোমার দৃষ্টিশক্তি ক্ষীণ হয়ে যাবে এবং দেহ অবসন্ন হয়ে যাবে। কাজেই প্রতি মাসে তিন দিন সাওম পালন কর। তাহলে তা সারা বছরের সাওমের সমতুল্য হয়ে যাবে। আমি বললাম, আমি আমার মধ্যে আরো বেশী পাই। মিসআর (রহ.) বলেন, এখানে শক্তি বুঝানো হয়েছে। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তাহলে তুমি দাউদ আলাইহিস সালামের পদ্ধতিতে সাওম পালন কর। তিনি একদিন সাওম পালন করতেন আর একদিন বিরত থাকতেন। আর শত্রুর সম্মুখীন হলে তিনি কখনও পলায়ন করতেন না।[341]

 

 

আল্লাহর নবী সুলাইমান আলাইহিস সালাম

আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,

﴿ وَلَقَدۡ فَتَنَّا سُلَيۡمَٰنَ وَأَلۡقَيۡنَا عَلَىٰ كُرۡسِيِّهِۦ جَسَدٗا ثُمَّ أَنَابَ ٣٤ قَالَ رَبِّ ٱغۡفِرۡ لِي وَهَبۡ لِي مُلۡكٗا لَّا يَنۢبَغِي لِأَحَدٖ مِّنۢ بَعۡدِيٓۖ إِنَّكَ أَنتَ ٱلۡوَهَّابُ ٣٥ فَسَخَّرۡنَا لَهُ ٱلرِّيحَ تَجۡرِي بِأَمۡرِهِۦ رُخَآءً حَيۡثُ أَصَابَ ٣٦ وَٱلشَّيَٰطِينَ كُلَّ بَنَّآءٖ وَغَوَّاصٖ ٣٧ وَءَاخَرِينَ مُقَرَّنِينَ فِي ٱلۡأَصۡفَادِ ٣٨ هَٰذَا عَطَآؤُنَا فَٱمۡنُنۡ أَوۡ أَمۡسِكۡ بِغَيۡرِ حِسَابٖ ٣٩ وَإِنَّ لَهُۥ عِندَنَا لَزُلۡفَىٰ وَحُسۡنَ مَ‍َٔابٖ ٤٠ ﴾ [ص: ٣٤، ٤٠]

“আর আমি তো সুলাইমানকে পরীক্ষা করেছিলাম এবং তার সিংহাসনের উপর রেখেছিলাম একটি দেহ[342], অতঃপর সে আমার অভিমুখী হল। সুলাইমান বলল, ‘হে আমার রব, আমাকে ক্ষমা করুন এবং আমাকে এমন এক রাজত্ব দান করুন যা আমার পর আর কারও জন্যই প্রযোজ্য হবে না। নিশ্চয়ই আপনি বড়ই দানশীল। ফলে আমি বায়ুকে তার অনুগত করে দিলাম যা তার আদেশে মৃদুমন্দভাবে প্রবাহিত হত, যেখানে সে পৌঁছতে চাইত। আর (অনুগত করে দিলাম) প্রত্যেক প্রাসাদ নির্মাণকারী ও ডুবুরী শয়তান [জিন]সমূহকেও আর শেকলে আবদ্ধ আরও অনেককে। এটি আমার অনুগ্রহ। অতএব তুমি এটি অন্যের জন্য খরচ কর অথবা নিজের জন্য রেখে দাও, এর কোনো হিসাব দিতে হবে না। আর আমার নিকট রয়েছে তার জন্য নৈকট্য ও শুভ পরিণাম”। [সূরা সোয়াদ: ৩৪-৪০]

عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَمْرٍو، عَنْ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: " أَنَّ سُلَيْمَانَ بْنَ دَاوُدَ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَمَّا بَنَى بَيْتَ الْمَقْدِسِ سَأَلَ اللَّهَ عَزَّ وَجَلَّ خِلَالًا ثَلَاثَةً: سَأَلَ اللَّهَ عَزَّ وَجَلَّ حُكْمًا يُصَادِفُ حُكْمَهُ فَأُوتِيَهُ، وَسَأَلَ اللَّهَ عَزَّ وَجَلَّ مُلْكًا لَا يَنْبَغِي لِأَحَدٍ مِنْ بَعْدِهِ فَأُوتِيَهُ، وَسَأَلَ اللَّهَ عَزَّ وَجَلَّ حِينَ فَرَغَ مِنْ بِنَاءِ الْمَسْجِدِ أَنْ لَا يَأْتِيَهُ أَحَدٌ لَا يَنْهَزُهُ إِلَّا الصَّلَاةُ فِيهِ أَنْ يُخْرِجَهُ مِنْ خَطِيئَتِهِ كَيَوْمِ وَلَدَتْهُ أُمُّهُ ".

আবদুল্লাহ ইবন ‘আমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন যে, সুলায়মান ইবন দাঊদ আলাইহিস সালাম যখন বায়তুল মুকাদ্দাস নির্মাণ করলেন, তখন তিনি আল্লাহ তা’আলার কাছে তিনটি বস্তু চাইলেন: তিনি আল্লাহ তা’আলার নিকট প্রার্থনা করলেন এমন ফয়সালা যা তাঁর ফয়সালার মত হয়। তা তাঁকে প্রদান করা হল। আর তিনি আল্লাহ তা’আলার নিকট চাইলেন এমন রাজ্য, যার অধিকারী তারপর আর কেউ হবে না। তাও তাঁকে দেওয়া হল। আর যখন তিনি মসজিদ নির্মাণের কাজ সমাপ্ত করলেন তখন তিনি আল্লাহ তা’আলার নিকট প্রার্থনা করলেন, যে ব্যক্তি তাতে সালাতের জন্য আগমন করবে, তাকে যেন পাপ থেকে ঐদিনের মত মু্ক্ত করে দেন যেদিন সে তার মাতৃগর্ভ থেকে ভূমিষ্ঠ হয়েছিল।[343]

عَنْ أَبِي الدَّرْدَاءِ، قَالَ: قَامَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُصَلِّي فَسَمِعْنَاهُ يَقُولُ: «أَعُوذُ بِاللَّهِ مِنْكَ»، ثُمَّ قَالَ: «أَلْعَنُكَ بِلَعْنَةِ اللَّهِ ثَلَاثًا»، وَبَسَطَ يَدَهُ كَأَنَّهُ يَتَنَاوَلُ شَيْئًا، فَلَمَّا فَرَغَ مِنَ الصَّلَاةِ قُلْنَا: يَا رَسُولَ اللَّهِ، قَدْ سَمِعْنَاكَ تَقُولُ فِي الصَّلَاةِ شَيْئًا لَمْ نَسْمَعْكَ تَقُولُهُ قَبْلَ ذَلِكَ، وَرَأَيْنَاكَ بَسَطْتَ يَدَكَ، قَالَ: " إِنَّ عَدُوَّ اللَّهِ إِبْلِيسَ جَاءَ بِشِهَابٍ مِنْ نَارٍ لِيَجْعَلَهُ فِي وَجْهِي، فَقُلْتُ: أَعُوذُ بِاللَّهِ مِنْكَ ثَلَاثَ مَرَّاتٍ، ثُمَّ قُلْتُ: أَلْعَنُكَ بِلَعْنَةِ اللَّهِ، فَلَمْ يَسْتَأْخِرْ ثَلَاثَ مَرَّاتٍ، ثُمَّ أَرَدْتُ أَنْ آخُذَهُ، وَاللَّهِ لَوْلَا دَعْوَةُ أَخِينَا سُلَيْمَانَ لَأَصْبَحَ مُوثَقًا بِهَا يَلْعَبُ بِهِ وِلْدَانُ أَهْلِ الْمَدِينَةِ ".

আবু দারদা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (একবার) সালাতে দাঁড়ালে আমরা তাকে বলতে শুনলাম, আমি তোর (ইবলীস) থেকে আল্লাহর কাছে পানাহ চাই। তারপর বললেন, আমি আল্লাহর লানত দ্বারা তোকে লানত দিচ্ছি। (এ বাক্যটি তিনি) তিনবার (বললেন) এবং হাত প্রসারিত করলেন যেন কোন কিছু ধরতে চাচ্ছেন। যখন তিনি সালাত শেষ করলেন, আমরা বললাম, ইয়া রাসুলল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! (আজ) আমরা সালাতে আপনাকে এমন কিছু বলতে শুনেছি যা ইতোপূর্বে আর কখনো বলতে শুনিনি, আর (আজ) আপনাকে হাত প্রসারিত করতে দেখেছি। তিনি বললেন, আল্লাহর দুশমন ইবলীস অগ্নিস্ফুলিংগ নিয়ে এসেছিল আমার চেহারায় নিক্ষেপ করার জন্য, তখন আমি তিনবার বললাম, আমি তোর থেকে আল্লাহর কাছে পানাহ চাই। এরপর আমি তিনবার বললাম, আল্লাহর লানত দ্বারা আমি তোকে লানত দিচ্ছি। এতেও সে যখন পেছনে সরে গেল না তখন আমি তাকে ধরতে ইচ্ছা করেছিলাম। আল্লাহর শপথ! যদি আমার ভাই সুলায়মান আলাইহিস সালামের দো‘আ না থাকতো তা হলে সে ভোর পর্যন্ত খৃঁটির সাথে বাঁধা থাকতো। তার সাথে মদীনার শিশু?-কিশোররা খেলা করত।[344]

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِنَّ عِفْرِيتًا مِنَ الجِنِّ تَفَلَّتَ البَارِحَةَ لِيَقْطَعَ عَلَيَّ صَلاَتِي، فَأَمْكَنَنِي اللَّهُ مِنْهُ فَأَخَذْتُهُ، فَأَرَدْتُ أَنْ أَرْبُطَهُ عَلَى سَارِيَةٍ مِنْ سَوَارِي المَسْجِدِ حَتَّى تَنْظُرُوا إِلَيْهِ كُلُّكُمْ، فَذَكَرْتُ دَعْوَةَ أَخِي سُلَيْمَانَ رَبِّ هَبْ لِي مُلْكًا لاَ يَنْبَغِي لِأَحَدٍ مِنْ بَعْدِي فَرَدَدْتُهُ خَاسِئًا» {عِفْرِيتٌ} [النمل: 39] مُتَمَرِّدٌ مِنْ إِنْسٍ أَوْ جَانٍّ، مِثْلُ زِبْنِيَةٍ جَمَاعَتُهَا الزَّبَانِيَةُ".

আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, একটি অবাধ্য জ্বিন এক রাতে আমার সালাতে বিঘ্ন সৃষ্টির উদ্দেশ্যে আমার নিকট আসল। আল্লাহ্ আমাকে তাঁর উপর ক্ষমতা প্রদান করলেন। আমি তাঁকে পাকড়াও করলাম এবং মসজিদের একটি খুটির সঙ্গে বেঁধে রাখার মনস্থ করলাম, যাতে তোমরা সবাই সচক্ষে তাঁকে দেখতে পাও। তখনই আমার ভাই সুলায়মান আলাইহিস সালামের দু‘আটি আমার মনে পড়লো। “হে আমার রব! আমাকে ক্ষমা করুণ এবং আমাকে দান করুন এবং আমাকে দান করুন এমন এক রাজ্য যার অধিকারী আমার পরে আমি ছাড়া কেউ না হয়”। [সূরা নামল : ৩৯] এরপর আমি জ্বিনটিকে ব্যর্থ এবং অপমানিত করে ছেড়ে দিলাম। জিন অথবা ইনসানের অত্যন্ত পিশাচ ব্যক্তিকে ইফ্রীত বলা হয়। ইফ্রীত ও ইফ্রীয়াতুন যিব্নীয়াতুন-এর ন্যায় এক বচন, যার বহু বচন যাবানিয়াতুন।[345]

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قَالَ: قَالَ: سُلَيْمَانُ بْنُ دَاوُدَ لَأَطُوفَنَّ اللَّيْلَةَ عَلَى سَبْعِينَ امْرَأَةً، تَحْمِلُ كُلُّ امْرَأَةٍ فَارِسًا يُجَاهِدُ فِي سَبِيلِ اللَّهِ، فَقَالَ لَهُ صَاحِبُهُ: إِنْ شَاءَ اللَّهُ، فَلَمْ يَقُلْ، وَلَمْ تَحْمِلْ شَيْئًا إِلَّا وَاحِدًا، سَاقِطًا أَحَدُ شِقَّيْهِ، فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: لَوْ قَالَهَا لَجَاهَدُوا فِي سَبِيلِ اللَّهِ " قَالَ شُعَيْبٌ وَابْنُ أَبِي الزِّنَادِ: تِسْعِينَ وَهُوَ أَصَحُّ.

আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, সুলায়মান ইবন দাউদ আলাইহিস সালাম বলেছেন, আজ রাতে আমি আমার সত্তর জন্য স্ত্রীর নিকট যাব। প্রত্যেক স্ত্রী একজন করে আশারোহী যোদ্ধা গর্ভধারণ করবে। এরা আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করবে। তখন তাঁর সাথী বললেন, ইনশাআল্লাহ্ (বলুন)। কিন্তু তিনি মুখে তা বলেন নি। এরপর একজন স্ত্রী ব্যতীত কেউ গর্ভধারণ করলেন, না। সে যাও এক (পুত্র) সন্তান প্রসব করলেন। তাও তার এক অঙ্গ ছিল না। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তিনি যদি ‘ইনশাআল্লাহ্’ মুখে বলতেন, তা হলে (সবগুলো সন্তানই জন্ম নিত এবং) আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করতো। শু‘আয়ব এবং আবূ যিনাদ (রহ.) এখানে নব্বই জন্য স্ত্রীর কথা উল্লেখ করেছেন আর এটাই সঠিক বর্ণনা।[346]

حَدَّثَهُ أَنَّهُ سَمِعَ أَبَا هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، أَنَّهُ سَمِعَ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، يَقُولُ: " مَثَلِي وَمَثَلُ النَّاسِ، كَمَثَلِ رَجُلٍ اسْتَوْقَدَ نَارًا، فَجَعَلَ الفَرَاشُ وَهَذِهِ الدَّوَابُّ تَقَعُ فِي النَّارِ، وَقَالَ: كَانَتِ امْرَأَتَانِ مَعَهُمَا ابْنَاهُمَا، جَاءَ الذِّئْبُ فَذَهَبَ بِابْنِ إِحْدَاهُمَا، فَقَالَتْ صَاحِبَتُهَا: إِنَّمَا ذَهَبَ بِابْنِكِ، وَقَالَتِ الأُخْرَى: إِنَّمَا ذَهَبَ بِابْنِكِ، فَتَحَاكَمَتَا إِلَى دَاوُدَ، فَقَضَى بِهِ لِلْكُبْرَى، فَخَرَجَتَا عَلَى سُلَيْمَانَ بْنِ دَاوُدَ فَأَخْبَرَتَاهُ، فَقَالَ: ائْتُونِي بِالسِّكِّينِ أَشُقُّهُ بَيْنَهُمَا، فَقَالَتِ الصُّغْرَى: لاَ تَفْعَلْ يَرْحَمُكَ اللَّهُ، هُوَ ابْنُهَا، فَقَضَى بِهِ لِلصُّغْرَى " قَالَ أَبُو هُرَيْرَةَ: وَاللَّهِ إِنْ سَمِعْتُ بِالسِّكِّينِ إِلَّا يَوْمَئِذٍ، وَمَا كُنَّا نَقُولُ إِلَّا المُدْيَةُ.

আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছেন যে, আমার ও অন্যান্য মানুষের উপমা হলো এমন যেমন কোনো এক ব্যক্তি আগুন জ্বালাল এবং তাতে পতঙ্গ এবং কীটগুলো ঝাঁকে ঝাঁকে পড়তে লাগল। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, দু’জন মহিলা ছিল। তাদের সঙ্গে দু’টি সন্তানও ছিল। হঠাৎ একটি বাঘ এসে তাদের একজনের ছেলে নিয়ে গেল। সাথের একজন মহিলা বললো, ‘‘না, বাঘে তোমার ছেলেটি নিয়ে গেছে।’’ তারপর উভয় মহিলাই দাউদ আলাইহিস সালামের নিকট এ বিরোধ মীমাংসার জন্য বিচারপ্রার্থী হলো। তখন তিনি ছেলেটির বিষয়ে বয়স্কা মহিলাটির পক্ষে রায় দিলেন। তারপর তারা উভয়ে (বিচারালয় থেকে) বেরিয়ে দাউদ আলাইহিস সালামের পুত্র সুলায়মান আলাইহিস সালামের কাছ দিয়ে যেতে লাগল এবং তারা উভয়ে তাঁকে ঘটনাটি জানালেন। তখন তিনি লোকদেরকে বললেন, তোমরা আমার কাছে ছোরা আনয়ন কর। আমি ছেলেটিকে দু’ টুক্রা করে তাদের উভয়ের মধ্যে ভাগ করে দেই। এ কথা শুনে অল্প বয়স্কা মহিলাটি বলে উঠলো, তা করবেন না, আল্লাহ্ আপনার উপর রহম করুন। ছেলেটি তারই। (এটা আমি মেনে নিচ্ছি) তখন তিনি ছেলেটির ব্যাপারে অল্প বয়স্কা মহিলাটির পক্ষেই রায় দিলেন। আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, আল্লাহর কসম! ছোরা অর্থে শব্দটি আমি ঐ দিনই শুনেছি। আর না হয় আমরা তো ছোরাকেই বলতাম।[347]

 

 

আল্লাহর নবী ইউনূস আলাইহিস সালাম

﴿ وَذَا ٱلنُّونِ إِذ ذَّهَبَ مُغَٰضِبٗا فَظَنَّ أَن لَّن نَّقۡدِرَ عَلَيۡهِ فَنَادَىٰ فِي ٱلظُّلُمَٰتِ أَن لَّآ إِلَٰهَ إِلَّآ أَنتَ سُبۡحَٰنَكَ إِنِّي كُنتُ مِنَ ٱلظَّٰلِمِينَ ٨٧ فَٱسۡتَجَبۡنَا لَهُۥ وَنَجَّيۡنَٰهُ مِنَ ٱلۡغَمِّۚ وَكَذَٰلِكَ نُ‍ۨجِي ٱلۡمُؤۡمِنِينَ ٨٨ ﴾ [الانبياء: ٨٧، ٨٨]

“আর স্মরণ কর যুন-নূন এর কথা, যখন সে রাগান্বিত অবস্থায় চলে গিয়েছিল এবং মনে করেছিল যে, আমি তার উপর ক্ষমতা প্রয়োগ করব না। তারপর সে অন্ধকার থেকে ডেকে বলেছিল, ‘আপনি ছাড়া কোনো (সত্য) ইলাহ নেই’। আপনি পবিত্র মহান। নিশ্চয় আমি ছিলাম যালিম’ । অতঃপর আমি তার ডাকে সাড়া দিয়েছিলাম এবং দুশ্চিন্তা থেকে তাকে উদ্ধার করেছিলাম। আর এভাবেই আমি মুমিনদেরকে উদ্ধার করে থাকি”। [সূরা আল-আম্বিয়া: ৮৭-৮৮]

عَنِ ابْن عَبَّاسٍ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قَالَ: " لاَ يَنْبَغِي لِعَبْدٍ أَنْ يَقُولَ: أَنَا خَيْرٌ مِنْ يُونُسَ بْنِ مَتَّى ". وَنَسَبَهُ إِلَى أَبِيهِ،

وَذَكَرَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَيْلَةَ أُسْرِيَ بِهِ، فَقَالَ: " مُوسَى آدَمُ، طُوَالٌ، كَأَنَّهُ مِنْ رِجَالِ شَنُوءَةَ، وَقَالَ: عِيسَى جَعْدٌ مَرْبُوعٌ " وَذَكَرَ مَالِكًا خَازِنَ النَّارِ، وَذَكَرَ الدَّجَّالَ.

ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, কোনো ব্যাক্তির একথা বলা উচিৎ হবেনা যে, আমি (নবী) ইউনুস ইবন মাত্তার চেয়ে উত্তম। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একথা বলতে গিয়ে ইউনুস আলাইহিস সালামের পিতার নাম উল্লেখ করেছেন। আর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মিরাজের রজনীর কথাও উল্লেখ করেছেন এবং বলেছেন মূসা আলাইহিস সালাম বাদামী রং বিশিষ্ট দীর্ঘদেহী ছিলেন। যেন তিনি শানুআ গোত্রের একজন লোক। তিনি আরো বলেছেন যে, ঈসা আলাইহিস সালাম ছিলেন মধ্যমদেহী, কোঁকড়ানো চুলওয়ালা ব্যক্তি। আর তিনি দোযখের দারোগা মালিক এবং দাজ্জালের কথাও উল্লেখ করেছেন।[348]

 

 

আল্লাহর নবী যাকারিয়া ও ইয়াহইয়া আলাইহিমাস সালাম

আল্লাহ বলেছেন,

﴿ كٓهيعٓصٓ ١ ذِكۡرُ رَحۡمَتِ رَبِّكَ عَبۡدَهُۥ زَكَرِيَّآ ٢ إِذۡ نَادَىٰ رَبَّهُۥ نِدَآءً خَفِيّٗا ٣ قَالَ رَبِّ إِنِّي وَهَنَ ٱلۡعَظۡمُ مِنِّي وَٱشۡتَعَلَ ٱلرَّأۡسُ شَيۡبٗا وَلَمۡ أَكُنۢ بِدُعَآئِكَ رَبِّ شَقِيّٗا ٤ وَإِنِّي خِفۡتُ ٱلۡمَوَٰلِيَ مِن وَرَآءِي وَكَانَتِ ٱمۡرَأَتِي عَاقِرٗا فَهَبۡ لِي مِن لَّدُنكَ وَلِيّٗا ٥ يَرِثُنِي وَيَرِثُ مِنۡ ءَالِ يَعۡقُوبَۖ وَٱجۡعَلۡهُ رَبِّ رَضِيّٗا ٦ يَٰزَكَرِيَّآ إِنَّا نُبَشِّرُكَ بِغُلَٰمٍ ٱسۡمُهُۥ يَحۡيَىٰ لَمۡ نَجۡعَل لَّهُۥ مِن قَبۡلُ سَمِيّٗا ٧ قَالَ رَبِّ أَنَّىٰ يَكُونُ لِي غُلَٰمٞ وَكَانَتِ ٱمۡرَأَتِي عَاقِرٗا وَقَدۡ بَلَغۡتُ مِنَ ٱلۡكِبَرِ عِتِيّٗا ٨ قَالَ كَذَٰلِكَ قَالَ رَبُّكَ هُوَ عَلَيَّ هَيِّنٞ وَقَدۡ خَلَقۡتُكَ مِن قَبۡلُ وَلَمۡ تَكُ شَيۡ‍ٔٗا ٩ قَالَ رَبِّ ٱجۡعَل لِّيٓ ءَايَةٗۖ قَالَ ءَايَتُكَ أَلَّا تُكَلِّمَ ٱلنَّاسَ ثَلَٰثَ لَيَالٖ سَوِيّٗا ١٠ فَخَرَجَ عَلَىٰ قَوۡمِهِۦ مِنَ ٱلۡمِحۡرَابِ فَأَوۡحَىٰٓ إِلَيۡهِمۡ أَن سَبِّحُواْ بُكۡرَةٗ وَعَشِيّٗا ١١ ﴾ [مريم: ١، ١١]

“কাফ-হা-ইয়া-‘আঈন-সোয়াদ। এটা তোমার রবের রহমতের বিবরণ তাঁর বান্দা যাকারিয়্যার প্রতি। যখন সে তার রবকে গোপনে ডেকেছিল। সে বলেছিল, ‘হে আমার রব! আমার হাড়গুলো দুর্বল হয়ে গেছে এবং বার্ধক্যবশতঃ আমার মাথার চুলগুলো সাদা হয়ে গেছে। হে আমার রব, আপনার নিকট দো‘আ করে আমি কখনো ব্যর্থ হইনি’।‘আর আমার পরে স্বগোত্রীয়দের সম্পর্কে আমি আশংকাবোধ করছি। আমার স্ত্রী তো বন্ধ্যা, অতএব আপনি আমাকে আপনার পক্ষ থেকে একজন উত্তরাধিকারী দান করুন’।‘যে আমার উত্তরাধিকারী হবে এবং ইয়াকূবের বংশের উত্তরাধিকারী হবে। হে আমার রব, আপনি তাকে পছন্দনীয় বানিয়ে দিন’।(আল্লাহ বললেন) ‘হে যাকারিয়্যা, আমি তোমাকে একটি পুত্র সন্তানের সুসংবাদ দিচ্ছি, তার নাম ইয়াহইয়া। ইতোপূর্বে কাউকে আমি এ নাম দেইনি’। সে বলল, ‘হে আমার রব, কিভাবে আমার পুত্র সন্তান হবে, আমার স্ত্রী তো বন্ধ্যা, আর আমিও তো বার্ধক্যের শেষ পর্যায়ে পৌঁছে গিয়েছি’। সে (ফেরেশতা) বলল, ‘এভাবেই’। তোমার রব বলেছেন, ‘এটা আমার জন্য সহজ। আমি তো ইতঃপূর্বে তোমাকে সৃষ্টি করেছি, তখন তুমি কিছুই ছিলে না’। সে বলল, ‘হে আমার রব, আমার জন্য একটি নিদর্শন ঠিক করে দিন’। তিনি বললেন, ‘তোমার জন্য এটাই নিদর্শন যে, তুমি সুস্থ থেকেও তিন রাত কারো সাথে কথা বলবে না’। অতঃপর সে মিহরাব হতে বেরিয়ে তার লোকদের সামনে আসল এবং ইশারায় তাদেরকে বলল যে, ‘তোমরা সকাল ও সন্ধ্যায় তাসবীহ পাঠ কর”। [সূরা মারইয়াম: ১-১১]

﴿ هُنَالِكَ دَعَا زَكَرِيَّا رَبَّهُۥۖ قَالَ رَبِّ هَبۡ لِي مِن لَّدُنكَ ذُرِّيَّةٗ طَيِّبَةًۖ إِنَّكَ سَمِيعُ ٱلدُّعَآءِ ٣٨ فَنَادَتۡهُ ٱلۡمَلَٰٓئِكَةُ وَهُوَ قَآئِمٞ يُصَلِّي فِي ٱلۡمِحۡرَابِ أَنَّ ٱللَّهَ يُبَشِّرُكَ بِيَحۡيَىٰ مُصَدِّقَۢا بِكَلِمَةٖ مِّنَ ٱللَّهِ وَسَيِّدٗا وَحَصُورٗا وَنَبِيّٗا مِّنَ ٱلصَّٰلِحِينَ ٣٩ قَالَ رَبِّ أَنَّىٰ يَكُونُ لِي غُلَٰمٞ وَقَدۡ بَلَغَنِيَ ٱلۡكِبَرُ وَٱمۡرَأَتِي عَاقِرٞۖ قَالَ كَذَٰلِكَ ٱللَّهُ يَفۡعَلُ مَا يَشَآءُ ٤٠ قَالَ رَبِّ ٱجۡعَل لِّيٓ ءَايَةٗۖ قَالَ ءَايَتُكَ أَلَّا تُكَلِّمَ ٱلنَّاسَ ثَلَٰثَةَ أَيَّامٍ إِلَّا رَمۡزٗاۗ وَٱذۡكُر رَّبَّكَ كَثِيرٗا وَسَبِّحۡ بِٱلۡعَشِيِّ وَٱلۡإِبۡكَٰرِ ٤١ ﴾ [ال عمران: ٣٨، ٤١]

“সেখানে যাকারিয়্যা তার রবের কাছে প্রার্থনা করেছিল, সে বলল, ‘হে আমর রব, আমাকে আপনার পক্ষ থেকে উত্তম সন্তান দান করুন। নিশ্চয় আপনি প্রার্থনা শ্রবণকারী’।অতঃপর ফেরেশতারা তাকে ডেকে বলল, সে যখন কক্ষে দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করছিল, ‘নিশ্চয় আল্লাহ তোমাকে ইয়াহইয়া সম্পর্কে সুসংবাদ দিচ্ছেন, যে হবে আল্লাহর পক্ষ থেকে বাণীর সত্যায়নকারী, নেতা ও নারী সম্ভোগমুক্ত এবং নেককারদের মধ্য থেকে একজন নবী’। সে বলল, ‘হে আমার রব, কীভাবে আমার পুত্র হবে? অথচ আমার তো বার্ধক্য এসে গিয়েছে, আর আমার স্ত্রী বন্ধা’। তিনি বললেন, ‘এভাবেই আল্লাহ যা ইচ্ছা তা করেন’। সে বলল, ‘হে আমার রব, আমাকে দেন একটি নিদর্শন’। তিনি বললেন, ‘তোমার নিদর্শন হল, তুমি তিন দিন পর্যন্ত মানুষের সাথে ইশারা ছাড়া কথা বলবে না। আর তোমার রবকে অধিক স্মরণ কর এবং সকাল-সন্ধ্যা তার তাসবীহ পাঠ কর”। [আলে ইমরান: ৩৮-৪১]

عَنْ مَالِكِ بْنِ صَعْصَعَةَ: أَنَّ نَبِيَّ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ حَدَّثَهُمْ عَنْ لَيْلَةَ أُسْرِيَ بِهِ " ثُمَّ صَعِدَ حَتَّى أَتَى السَّمَاءَ الثَّانِيَةَ فَاسْتَفْتَحَ، قِيلَ: مَنْ هَذَا؟ قَالَ: جِبْرِيلُ قِيلَ: وَمَنْ مَعَكَ؟ قَالَ: مُحَمَّدٌ قِيلَ: وَقَدْ أُرْسِلَ إِلَيْهِ؟ قَالَ: نَعَمْ، فَلَمَّا خَلَصْتُ فَإِذَا يَحْيَى وَعِيسَى وَهُمَا ابْنَا خَالَةٍ، قَالَ: هَذَا يَحْيَى وَعِيسَى فَسَلِّمْ عَلَيْهِمَا، فَسَلَّمْتُ فَرَدَّا، ثُمَّ قَالاَ: مَرْحَبًا بِالأَخِ الصَّالِحِ وَالنَّبِيِّ الصَّالِحِ ".

মালিক ইবন সা‘সা‘আ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবাগণের কাছে মিরাজের রাত্রি সম্পর্কে বর্ণনা করতে গিয়ে বলেছেন, অনন্তর তিনি (জিবরীল আলাইহিস সালাম) আমাকে নিয়ে উপরে বললেন, এমনকি দ্বিতীয় আকাশে এসে পৌছলেন এবং দরজা খুলতে বললেন, জিজ্ঞাসা করা হলো কে? উত্তর দিলেন, আমি জিবরীল আলাইহিস সালাম। প্রশ্ন করা হলো, আপনার সাথে কে? তিনি বললেন, মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পৌছলাম তখন সেখানে ইয়াহ্ইয়া আলাইহিস সালাম এবং ঈসা আলাইহিস সালাম। তাদেরকে সালাম করুন। তখন আমি সালাম করলাম। তাঁরাও সালামের জবাব দিলেন। তারপর তাঁরা বললেন, নেক ভাই এবং নেক নবীর প্রতি মারহাবা।[349]

عَنْ زَيْدِ بْنِ سَلاَّمٍ، أَنَّ أَبَا سَلاَّمٍ، حَدَّثَهُ أَنَّ الحَارِثَ الأَشْعَرِيَّ، حَدَّثَهُ أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: إِنَّ اللَّهَ أَمَرَ يَحْيَى بْنَ زَكَرِيَّا بِخَمْسِ كَلِمَاتٍ أَنْ يَعْمَلَ بِهَا وَيَأْمُرَ بني إسرائيل أَنْ يَعْمَلُوا بِهَا، وَإِنَّهُ كَادَ أَنْ يُبْطِئَ بِهَا، فَقَالَ عِيسَى: إِنَّ اللَّهَ أَمَرَكَ بِخَمْسِ كَلِمَاتٍ لِتَعْمَلَ بِهَا وَتَأْمُرَ بني إسرائيل أَنْ يَعْمَلُوا بِهَا، فَإِمَّا أَنْ تَأْمُرَهُمْ، وَإِمَّا أَنَا آمُرُهُمْ، فَقَالَ يَحْيَى: أَخْشَى إِنْ سَبَقْتَنِي بِهَا أَنْ يُخْسَفَ بِي أَوْ أُعَذَّبَ، فَجَمَعَ النَّاسَ فِي بَيْتِ الْمَقْدِسِ، فَامْتَلأَ الْمَسْجِدُ وَقَعَدُوا عَلَى الشُّرَفِ، فَقَالَ: إِنَّ اللَّهَ أَمَرَنِي بِخَمْسِ كَلِمَاتٍ أَنْ أَعْمَلَ بِهِنَّ، وَآمُرَكُمْ أَنْ تَعْمَلُوا بِهِنَّ: أَوَّلُهُنَّ أَنْ تَعْبُدُوا اللَّهَ وَلاَ تُشْرِكُوا بِهِ شَيْئًا، وَإِنَّ مَثَلَ مَنْ أَشْرَكَ بِاللَّهِ كَمَثَلِ رَجُلٍ اشْتَرَى عَبْدًا مِنْ خَالِصِ مَالِهِ بِذَهَبٍ أَوْ وَرِقٍ، فَقَالَ: هَذِهِ دَارِي وَهَذَا عَمَلِي فَاعْمَلْ وَأَدِّ إِلَيَّ، فَكَانَ يَعْمَلُ وَيُؤَدِّي إِلَى غَيْرِ سَيِّدِهِ، فَأَيُّكُمْ يَرْضَى أَنْ يَكُونَ عَبْدُهُ كَذَلِكَ؟ وَإِنَّ اللَّهَ أَمَرَكُمْ بِالصَّلاَةِ، فَإِذَا صَلَّيْتُمْ فَلاَ تَلْتَفِتُوا فَإِنَّ اللَّهَ يَنْصِبُ وَجْهَهُ لِوَجْهِ عَبْدِهِ فِي صَلاَتِهِ مَا لَمْ يَلْتَفِتْ، وَآمُرُكُمْ بِالصِّيَامِ، فَإِنَّ مَثَلَ ذَلِكَ كَمَثَلِ رَجُلٍ فِي عِصَابَةٍ مَعَهُ صُرَّةٌ فِيهَا مِسْكٌ، فَكُلُّهُمْ يَعْجَبُ أَوْ يُعْجِبُهُ رِيحُهَا، وَإِنَّ رِيحَ الصَّائِمِ أَطْيَبُ عِنْدَ اللهِ مِنْ رِيحِ الْمِسْكِ، وَآمُرُكُمْ بِالصَّدَقَةِ فَإِنَّ مَثَلَ ذَلِكَ كَمَثَلِ رَجُلٍ أَسَرَهُ العَدُوُّ، فَأَوْثَقُوا يَدَهُ إِلَى عُنُقِهِ وَقَدَّمُوهُ لِيَضْرِبُوا عُنُقَهُ، فَقَالَ: أَنَا أَفْدِيهِ مِنْكُمْ بِالقَلِيلِ وَالكَثِيرِ، فَفَدَى نَفْسَهُ مِنْهُمْ، وَآمُرُكُمْ أَنْ تَذْكُرُوا اللَّهَ فَإِنَّ مَثَلَ ذَلِكَ كَمَثَلِ رَجُلٍ خَرَجَ العَدُوُّ فِي أَثَرِهِ سِرَاعًا حَتَّى إِذَا أَتَى عَلَى حِصْنٍ حَصِينٍ فَأَحْرَزَ نَفْسَهُ مِنْهُمْ، كَذَلِكَ العَبْدُ لاَ يُحْرِزُ نَفْسَهُ مِنَ الشَّيْطَانِ إِلاَّ بِذِكْرِ اللهِ، قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: وَأَنَا آمُرُكُمْ بِخَمْسٍ اللَّهُ أَمَرَنِي بِهِنَّ، السَّمْعُ وَالطَّاعَةُ وَالجِهَادُ وَالهِجْرَةُ وَالجَمَاعَةُ، فَإِنَّهُ مَنْ فَارَقَ الجَمَاعَةَ قِيدَ شِبْرٍ فَقَدْ خَلَعَ رِبْقَةَ الإِسْلاَمِ مِنْ عُنُقِهِ إِلاَّ أَنْ يَرْجِعَ، وَمَنْ ادَّعَى دَعْوَى الجَاهِلِيَّةِ فَإِنَّهُ مِنْ جُثَا جَهَنَّمَ، فَقَالَ رَجُلٌ: يَا رَسُولَ اللهِ وَإِنْ صَلَّى وَصَامَ؟ قَالَ: وَإِنْ صَلَّى وَصَامَ، فَادْعُوا بِدَعْوَى اللهِ الَّذِي سَمَّاكُمُ الْمُسْلِمِينَ الْمُؤْمِنِينَ، عِبَادَ اللَّهِ.

হারিস আল-আশ‘আরী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আল্লাহু তা‘আলা ইয়াহ্ইয়া ইবন যাকারিয়া আলাইহিস সালামকে নিজে আমল করতে এবং বনূ ইসরাঈলকেও আমল করার জন্য বলতে পাঁচটি বিষয়ের নির্দেশ আল্লাহ তা‘আলা আপনাকে দিয়েছিলেন। হয় আপনি লোকদের এগুলো করতে নির্দেশ দিন, না হয় আমিই তাদের সেগুলো করতে নির্দেশ দিব। ইয়াহ্ইয়া আলাইহিস সালাম বললেন, আপনি যদি এই বিষয়ে আমার অগ্রগামী হয়ে যান তবে আমার আশংকা হয় যে আমাকে ভূমিতে ধসিয়ে দেওয়া হবে বা অন্য কোনো আযাব দেওয়া হবে। অনন্তর তিনি বায়তুল মুকাদ্দাসে লোকদের একত্রিত করলেন। মসজিদ লোকে পরিপূর্ণ হয়ে গেল। এমন কি বারান্দাগুলোতে গিয়েও তারা বসল। তিনি বললেন: আল্লাহ তা‘আলা আমাকে পাঁচ বিষয়ের নির্দেশ দিয়েছেন, যেন আমি নিজেও সেগুলোর উপর আমল করি এবং তোমাদেরকেও সেগুলোর উপর আমলের নির্দেশ দিই। প্রথম হল, আল্লাহর ইবাদত করবে তাঁর সঙ্গে কিছুর শরীক করবে না। যে ব্যক্তি আল্লাহর সঙ্গে শরীক করে তার উদাহরণ হল, সেই ব্যক্তির মত যে তার সোনা বা রূপা নির্ভেজাল সম্পদ দিয়ে একটি দাস ক্রয় করল। তাকে বলল, এ হল আমার বাড়ি আর এ হল আমার কাজ। তুমি কাজ কর এবং আমাকে আমার হক দিবে। অনন্তর সে কাজ করতে থাকল কিন্তু তার মালিক ভিন্ন অন্যের হক আদায় করল। তোমাদের মধ্যে কেউ কি এই কথার উপর রাযী আছে যে, তার দাস এ ধরনের হোক? আল্লাহ তা‘আলা তোমাদেরকে সালাতের নির্দেশ দিয়েছেন, সুতরাং তোমরা যখন সালাত আদায় করবে তখন এদিক-সেদিক তাকাবে না। কেননা যতক্ষণ বান্দা এদিক-সেদিক না তাকায় ততক্ষণ সারাতে আল্লাহ তা‘আলা তাঁর নেক দৃষ্টি তাঁর বান্দার চেহারার দিকে নিবিষ্ট করে রাখেন। তোমাদের আমি সিয়ামের নির্দেশ দিচ্ছি। এর উদাহরণ হল সেই ব্যক্তির মত, যে ব্যক্তি একটি দলে অবস্থান করছে। তার সঙ্গে আছে মিশক ভর্তি একটি থলে। দলের প্রত্যেকের কাছেই এ সুগন্ধি ভাল লাগে। আল্লাহ তা‘আলার কাছে মিশকের সুগন্ধি অপেক্ষা সিয়াম পালনকারীর (মুখের) গন্ধ অনেক বেশী সুগন্ধময়। তোমাদের আমি সাদাকা-এর নির্দেশ দিচ্ছি। এর উদাহরণ হল সে ব্যক্তির মত যাকে শক্ররা বন্দী করে তার ঘাড় পেঁচিয়ে তার হাত বেঁধে ফেলেছে এবং গর্দান উড়িয়ে দেওয়ার জন্য বধ্যভূমিতে নিয়ে চলেছে। তখন সে ব্যক্তি বলল: আমার কম বেশী যা কিছু আছে সব কিছু মুক্তিপণ হিসাবে তোমাদের দিচ্ছি। অনন্তর সে এভাবে তাদের থেকে নিজেকে মুক্ত করে নিল। (সাদাকার মাধ্যমেও মানূষ নিজেকে আযাব থেকে মুক্ত করে নেয়।) তোমাদের আমি আল্লাহর যিকরের নির্দেশ দিচ্ছি। এর উদাহরণ হল সে ব্যক্তির মত যাকে তার দুশমণ দ্রম্নত পশ্চাদ্ধাবণ করছে। শেষে সে একটি সুন্দর কেল্লার ভিতরে এসে নিজেকে শক্রদের থেকে হেফাজত করে নিল। এমনি ভাবে বান্দা আল্লাহর যিকরের কেল্লা ছাড়া নিজেকে হেফাযত করতে পারে না। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: আমিও তোমাদের পাঁচটি বিষয়ের নির্দেশ দিচ্ছি যেগুলোর নির্দেশ তিনি আমাকে দিয়েছেন: কথা শুনবে ও ফরমাবরদারী করবে। জিহাদ, হিজরত এবং মুসলিমদের জামা‘আত অবলম্বন করবে। কেননা, যে ব্যক্তি এক বিঘত পরিমাণও জামা‘আত থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ল সে তার গলা থেকে ইসলামের বেড়ী খুলে ফেলে দিল- যতক্ষণ না সে আবার পূর্বাবস্থায় ফিরে এসেছে। যে ব্যক্তি জাহেলী যুগের ডাকে ডাকবে সে হল জাহান্নামীদের দলভুক্ত। জনৈক ব্যক্তি তখন বলল: ইয়া রাসূলুল্লাহ! সে যদি সালাত ও সিয়াম পালন করে তবুও? তিনি বললেন: যদিও সে সালাত আদায় করে এবং সিয়াম পালন করে। সুতরাং মুসলিম, মুমিন, আল্লাহর বান্দা রূপে যে নামে আল্লাহ তা‘আলা তোমাদের নামকরণ করেছেন সেই আল্লাহর ডাকেই তোমরা নিজেদের ডাকবে।[350]

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، أَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «كَانَ زَكَرِيَّاءُ نَجَّارًا».

আবূ হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যাকারিয়া আলাইহিস সালাম কাঠমিস্ত্রি ছিলেন।[351]

 

 

আল্লাহর নবী ঈসা আলাইহিস সালাম ও তাঁর মাতা মারইয়াম আলাইহাস সালাম

আল্লাহ তাদের সম্পর্কে বলেছেন,

﴿ وَٱذۡكُرۡ فِي ٱلۡكِتَٰبِ مَرۡيَمَ إِذِ ٱنتَبَذَتۡ مِنۡ أَهۡلِهَا مَكَانٗا شَرۡقِيّٗا ١٦ فَٱتَّخَذَتۡ مِن دُونِهِمۡ حِجَابٗا فَأَرۡسَلۡنَآ إِلَيۡهَا رُوحَنَا فَتَمَثَّلَ لَهَا بَشَرٗا سَوِيّٗا ١٧ قَالَتۡ إِنِّيٓ أَعُوذُ بِٱلرَّحۡمَٰنِ مِنكَ إِن كُنتَ تَقِيّٗا ١٨ قَالَ إِنَّمَآ أَنَا۠ رَسُولُ رَبِّكِ لِأَهَبَ لَكِ غُلَٰمٗا زَكِيّٗا ١٩ قَالَتۡ أَنَّىٰ يَكُونُ لِي غُلَٰمٞ وَلَمۡ يَمۡسَسۡنِي بَشَرٞ وَلَمۡ أَكُ بَغِيّٗا ٢٠ قَالَ كَذَٰلِكِ قَالَ رَبُّكِ هُوَ عَلَيَّ هَيِّنٞۖ وَلِنَجۡعَلَهُۥٓ ءَايَةٗ لِّلنَّاسِ وَرَحۡمَةٗ مِّنَّاۚ وَكَانَ أَمۡرٗا مَّقۡضِيّٗا ٢١ ۞فَحَمَلَتۡهُ فَٱنتَبَذَتۡ بِهِۦ مَكَانٗا قَصِيّٗا ٢٢ فَأَجَآءَهَا ٱلۡمَخَاضُ إِلَىٰ جِذۡعِ ٱلنَّخۡلَةِ قَالَتۡ يَٰلَيۡتَنِي مِتُّ قَبۡلَ هَٰذَا وَكُنتُ نَسۡيٗا مَّنسِيّٗا ٢٣ فَنَادَىٰهَا مِن تَحۡتِهَآ أَلَّا تَحۡزَنِي قَدۡ جَعَلَ رَبُّكِ تَحۡتَكِ سَرِيّٗا ٢٤ وَهُزِّيٓ إِلَيۡكِ بِجِذۡعِ ٱلنَّخۡلَةِ تُسَٰقِطۡ عَلَيۡكِ رُطَبٗا جَنِيّٗا ٢٥ فَكُلِي وَٱشۡرَبِي وَقَرِّي عَيۡنٗاۖ فَإِمَّا تَرَيِنَّ مِنَ ٱلۡبَشَرِ أَحَدٗا فَقُولِيٓ إِنِّي نَذَرۡتُ لِلرَّحۡمَٰنِ صَوۡمٗا فَلَنۡ أُكَلِّمَ ٱلۡيَوۡمَ إِنسِيّٗا ٢٦ فَأَتَتۡ بِهِۦ قَوۡمَهَا تَحۡمِلُهُۥۖ قَالُواْ يَٰمَرۡيَمُ لَقَدۡ جِئۡتِ شَيۡ‍ٔٗا فَرِيّٗا ٢٧ يَٰٓأُخۡتَ هَٰرُونَ مَا كَانَ أَبُوكِ ٱمۡرَأَ سَوۡءٖ وَمَا كَانَتۡ أُمُّكِ بَغِيّٗا ٢٨ فَأَشَارَتۡ إِلَيۡهِۖ قَالُواْ كَيۡفَ نُكَلِّمُ مَن كَانَ فِي ٱلۡمَهۡدِ صَبِيّٗا ٢٩ قَالَ إِنِّي عَبۡدُ ٱللَّهِ ءَاتَىٰنِيَ ٱلۡكِتَٰبَ وَجَعَلَنِي نَبِيّٗا ٣٠ وَجَعَلَنِي مُبَارَكًا أَيۡنَ مَا كُنتُ وَأَوۡصَٰنِي بِٱلصَّلَوٰةِ وَٱلزَّكَوٰةِ مَا دُمۡتُ حَيّٗا ٣١ وَبَرَّۢا بِوَٰلِدَتِي وَلَمۡ يَجۡعَلۡنِي جَبَّارٗا شَقِيّٗا ٣٢ وَٱلسَّلَٰمُ عَلَيَّ يَوۡمَ وُلِدتُّ وَيَوۡمَ أَمُوتُ وَيَوۡمَ أُبۡعَثُ حَيّٗا ٣٣ ذَٰلِكَ عِيسَى ٱبۡنُ مَرۡيَمَۖ قَوۡلَ ٱلۡحَقِّ ٱلَّذِي فِيهِ يَمۡتَرُونَ ٣٤ مَا كَانَ لِلَّهِ أَن يَتَّخِذَ مِن وَلَدٖۖ سُبۡحَٰنَهُۥٓۚ إِذَا قَضَىٰٓ أَمۡرٗا فَإِنَّمَا يَقُولُ لَهُۥ كُن فَيَكُونُ ٣٥ ﴾ [مريم: ١٦، ٣٥]

“আর স্মরণ কর এই কিতাবে মারইয়ামকে যখন সে তার পরিবারবর্গ থেকে পৃথক হয়ে পূর্ব দিকের কোনো এক স্থানে চলে গেল। আর সে তাদের নিকট থেকে (নিজকে) আড়াল করল। তখন আমি তার নিকট আমার রূহ (জিবরীল) কে প্রেরণ করলাম। অতঃপর সে তার সামনে পূর্ণ মানবের রূপ ধারণ করল। মারইয়াম বলল, ‘আমি তোমার থেকে পরম করুণাময়ের আশ্রয় চাচ্ছি, যদি তুমি মুত্তাকী হও’। সে বলল, ‘আমি তো কেবল তোমার রবের বার্তাবাহক, তোমাকে একজন পবিত্র পুত্রসন্তান দান করার জন্য এসেছি’। মারইয়াম বলল, ‘কিভাবে আমার পুত্র সন্তান হবে? অথচ কোনো মানুষ আমাকে স্পর্শ করেনি। আর আমি তো ব্যভিচারিণীও নই’। সে বলল, ‘এভাবেই। তোমার রব বলেছেন, এটা আমার জন্য সহজ। আর যেন আমি তাকে করে দেই মানুষের জন্য নিদর্শন এবং আমার পক্ষ থেকে রহমত। আর এটি একটি সিদ্ধান্তকৃত বিষয়’। তারপর সে তাকে গর্ভে ধারণ করল এবং তা নিয়ে দূরবর্তী একটি স্থানে চলে গেল। অতঃপর প্রসব-বেদনা তাকে খেজুর গাছের কান্ডের কাছে নিয়ে এলো। সে বলল, ‘হায়! এর আগেই যদি আমি মরে যেতাম এবং সম্পূর্ণরূপে বিস্মৃত হতাম’! তখন তার নিচ থেকে সে তাকে ডেকে বলল যে, ‘তুমি চিন্তা করো না। তোমার রব তোমার নিচে একটি ঝর্ণা সৃষ্টি করেছেন’।‘আর তুমি খেজুর গাছের কান্ড ধরে তোমার দিকে নাড়া দাও, তাহলে তা তোমার উপর তাজা-পাকা খেজুর ফেলবে’।‘অতঃপর তুমি খাও, পান কর এবং চোখ জুড়াও। আর যদি তুমি কোনো লোককে দেখতে পাও তাহলে বলে দিও, ‘আমি পরম করুণাময়ের জন্য চুপ থাকার মানত করেছি। অতএব আজ আমি কোনো মানুষের সাথে কিছুতেই কথা বলব না’। তারপর সে তাকে কোলে নিয়ে নিজ কওমের নিকট আসল। তারা বলল, ‘হে মারইয়াম! তুমি তো এক অদ্ভূত বিষয় নিয়ে এসেছ’! ‘হে হারূনের বোন! তোমার পিতা তো খারাপ লোক ছিল না। আর তোমার মা-ও ছিল না ব্যভিচারিণী’। তখন সে শিশুটির দিকে ইশারা করল। তারা বলল, ‘যে কোলের শিশু আমরা কিভাবে তার সাথে কথা বলব’? শিশুটি বলল, ‘আমি তো আল্লাহর বান্দা; তিনি আমাকে কিতাব দিয়েছেন এবং আমাকে নবী বানিয়েছেন’।‘আর যেখানেই আমি থাকি না কেন তিনি আমাকে বরকতময় করেছেন এবং যতদিন আমি জীবিত থাকি তিনি আমাকে সালাত ও যাকাত আদায় করতে আদেশ করেছেন’।‘আর আমাকে মায়ের প্রতি অনুগত করেছেন এবং তিনি আমাকে অহঙ্কারী, অবাধ্য করেননি’।‘আর আমার উপর শান্তি, যেদিন আমি জন্মেছি এবং যেদিন আমি মারা যাব আর যেদিন আমাকে জীবিত অবস্থায় উঠানো হবে’। এই হচ্ছে মারইয়াম পুত্র ঈসা। এটাই সঠিক বক্তব্য, যে বিষয়ে লোকেরা সন্দেহ পোষণ করছে। সন্তান গ্রহণ করা আল্লাহর কাজ নয়। তিনি পবিত্র-মহান। তিনি যখন কোনো বিষয়ের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন তখন তদুদ্দেশ্যে শুধু বলেন, ‘হও’, অমনি তা হয়ে যায়”। [সূরা মারইয়াম: ১৬-৩৫]

﴿ فَتَقَبَّلَهَا رَبُّهَا بِقَبُولٍ حَسَنٖ وَأَنۢبَتَهَا نَبَاتًا حَسَنٗا وَكَفَّلَهَا زَكَرِيَّاۖ كُلَّمَا دَخَلَ عَلَيۡهَا زَكَرِيَّا ٱلۡمِحۡرَابَ وَجَدَ عِندَهَا رِزۡقٗاۖ قَالَ يَٰمَرۡيَمُ أَنَّىٰ لَكِ هَٰذَاۖ قَالَتۡ هُوَ مِنۡ عِندِ ٱللَّهِۖ إِنَّ ٱللَّهَ يَرۡزُقُ مَن يَشَآءُ بِغَيۡرِ حِسَابٍ ٣٧ ﴾ [ال عمران: ٣٧]

“অতঃপর তার রব তাকে উত্তমভাবে কবুল করলেন এবং তাকে উত্তমভাবে গড়ে তুললেন। আর তাকে যাকারিয়্যার দায়িত্বে দিলেন। যখনই যাকারিয়্যা তার কাছে তার কক্ষে প্রবেশ করত, তখনই তার নিকট খাদ্যসামগ্রী পেত। সে বলত, ‘হে মারইয়াম, কোথা থেকে তোমার জন্য এটি’? সে বলত, ‘এটি আল্লাহর পক্ষ থেকে। নিশ্চয় আল্লাহ যাকে চান বিনা হিসাবে রিযিক দান করেন”। [আলে ইমরান: ৩৭]

﴿ إِذۡ قَالَتِ ٱلۡمَلَٰٓئِكَةُ يَٰمَرۡيَمُ إِنَّ ٱللَّهَ يُبَشِّرُكِ بِكَلِمَةٖ مِّنۡهُ ٱسۡمُهُ ٱلۡمَسِيحُ عِيسَى ٱبۡنُ مَرۡيَمَ وَجِيهٗا فِي ٱلدُّنۡيَا وَٱلۡأٓخِرَةِ وَمِنَ ٱلۡمُقَرَّبِينَ ٤٥ وَيُكَلِّمُ ٱلنَّاسَ فِي ٱلۡمَهۡدِ وَكَهۡلٗا وَمِنَ ٱلصَّٰلِحِينَ ٤٦ قَالَتۡ رَبِّ أَنَّىٰ يَكُونُ لِي وَلَدٞ وَلَمۡ يَمۡسَسۡنِي بَشَرٞۖ قَالَ كَذَٰلِكِ ٱللَّهُ يَخۡلُقُ مَا يَشَآءُۚ إِذَا قَضَىٰٓ أَمۡرٗا فَإِنَّمَا يَقُولُ لَهُۥ كُن فَيَكُونُ ٤٧ وَيُعَلِّمُهُ ٱلۡكِتَٰبَ وَٱلۡحِكۡمَةَ وَٱلتَّوۡرَىٰةَ وَٱلۡإِنجِيلَ ٤٨ وَرَسُولًا إِلَىٰ بَنِيٓ إِسۡرَٰٓءِيلَ أَنِّي قَدۡ جِئۡتُكُم بِ‍َٔايَةٖ مِّن رَّبِّكُمۡ أَنِّيٓ أَخۡلُقُ لَكُم مِّنَ ٱلطِّينِ كَهَيۡ‍َٔةِ ٱلطَّيۡرِ فَأَنفُخُ فِيهِ فَيَكُونُ طَيۡرَۢا بِإِذۡنِ ٱللَّهِۖ وَأُبۡرِئُ ٱلۡأَكۡمَهَ وَٱلۡأَبۡرَصَ وَأُحۡيِ ٱلۡمَوۡتَىٰ بِإِذۡنِ ٱللَّهِۖ وَأُنَبِّئُكُم بِمَا تَأۡكُلُونَ وَمَا تَدَّخِرُونَ فِي بُيُوتِكُمۡۚ إِنَّ فِي ذَٰلِكَ لَأٓيَةٗ لَّكُمۡ إِن كُنتُم مُّؤۡمِنِينَ ٤٩ ﴾ [ال عمران: ٤٥، ٤٩]

“স্মরণ কর, যখন ফেরেশতারা বলল, ‘হে মারইয়াম, নিশ্চয় আল্লাহ তোমাকে তাঁর পক্ষ থেকে একটি কালেমার সুসংবাদ দিচ্ছেন, যার নাম মসীহ ঈসা ইবনে মারইয়াম, যে দুনিয়া ও আখিরাতে সম্মানিত এবং নৈকট্যপ্রাপ্তদের অন্তর্ভুক্ত’। আর সে মানুষের সাথে কথা বলবে দোলনায় ও পরিণত বয়সে এবং সে নেককারদের অন্তর্ভুক্ত।মারইয়াম বলল, ‘হে আমার রব, কিভাবে আমার সন্তান হবে? অথচ কোনো মানুষ আমাকে স্পর্শ করেনি’! আল্লাহ বললেন, ‘এভাবেই’ আল্লাহ যা চান সৃষ্টি করেন। তিনি যখন কোনো বিষয়ের সিদ্ধান্ত নেন, তখন তাকে শুধু বলেন, ‘হও’। ফলে তা হয়ে যায়।‘আর তিনি তাকে কিতাব, হিকমাত, তাওরাত ও ইনজীল শিক্ষা দেবেন’।আর বনী ইসরাঈলদের রাসূল বানাবেন (সে বলবে) ‘নিশ্চয় আমি তোমাদের নিকট তোমাদের রবের পক্ষ থেকে নিদর্শন নিয়ে এসেছি যে, অবশ্যই আমি তোমাদের জন্য কাদামাটি দিয়ে পাখির আকৃতি বানাব, অতঃপর আমি তাতে ফুঁক দেব। ফলে আল্লাহর হুকুমে সেটি পাখি হয়ে যাবে। আর আমি আল্লাহর হুকুমে জন্মান্ধ ও কুষ্ঠ রুগীকে সুস্থ করব এবং মৃতকে জীবিত করব। আর তোমরা যা আহার কর এবং তোমাদের ঘরে যা জমা করে রাখ তা আমি তোমাদেরকে জানিয়ে দেব। নিশ্চয় এতে তোমাদের জন্য নিদর্শন রয়েছে, যদি তোমরা মুমিন হও”। [আলে ইমরান: ৪৫-৪৯]

﴿ إِذۡ قَالَ ٱللَّهُ يَٰعِيسَى ٱبۡنَ مَرۡيَمَ ٱذۡكُرۡ نِعۡمَتِي عَلَيۡكَ وَعَلَىٰ وَٰلِدَتِكَ إِذۡ أَيَّدتُّكَ بِرُوحِ ٱلۡقُدُسِ تُكَلِّمُ ٱلنَّاسَ فِي ٱلۡمَهۡدِ وَكَهۡلٗاۖ وَإِذۡ عَلَّمۡتُكَ ٱلۡكِتَٰبَ وَٱلۡحِكۡمَةَ وَٱلتَّوۡرَىٰةَ وَٱلۡإِنجِيلَۖ وَإِذۡ تَخۡلُقُ مِنَ ٱلطِّينِ كَهَيۡ‍َٔةِ ٱلطَّيۡرِ بِإِذۡنِي فَتَنفُخُ فِيهَا فَتَكُونُ طَيۡرَۢا بِإِذۡنِيۖ وَتُبۡرِئُ ٱلۡأَكۡمَهَ وَٱلۡأَبۡرَصَ بِإِذۡنِيۖ وَإِذۡ تُخۡرِجُ ٱلۡمَوۡتَىٰ بِإِذۡنِيۖ وَإِذۡ كَفَفۡتُ بَنِيٓ إِسۡرَٰٓءِيلَ عَنكَ إِذۡ جِئۡتَهُم بِٱلۡبَيِّنَٰتِ فَقَالَ ٱلَّذِينَ كَفَرُواْ مِنۡهُمۡ إِنۡ هَٰذَآ إِلَّا سِحۡرٞ مُّبِينٞ ١١٠ ﴾ [المائ‍دة: ١١٠]

“যখন আল্লাহ বলবেন, ‘হে মারইয়ামের পুত্র ঈসা, তোমার উপর ও তোমার মাতার উপর আমার নি‘আমত স্মরণ কর, যখন আমি তোমাকে শক্তিশালী করেছিলাম পবিত্র আত্মা[352] দিয়ে, তুমি মানুষের সাথে কথা বলতে দোলনায় ও পরিণত বয়সে। আর যখন আমি তোমাকে শিক্ষা দিয়েছিলাম কিতাব, হিকমাত, তাওরাত ও ইনজীল; আর যখন আমার আদেশে কাদামাটি থেকে পাখির আকৃতির মত গঠন করতে এবং তাতে ফুঁক দিতে, ফলে আমার আদেশে তা পাখি হয়ে যেত। আর তুমি আমার আদেশে জন্মান্ধ ও কুষ্ঠ রোগীকে সুস্থ করতে এবং যখন আমার আদেশে তুমি মৃতকে জীবিত বের করতে। আর যখন তুমি স্পষ্ট প্রমাণাদি নিয়ে এসেছিলে তখন আমি বনী ইসরাঈলকে তোমার থেকে ফিরিয়ে রেখেছিলাম। অতঃপর তাদের মধ্যে যারা কুফরী করেছিল তারা বলেছিল, এতো স্পষ্ট জাদু”। [আল-মায়েদা: ১১০]

﴿ إِذۡ قَالَ ٱلۡحَوَارِيُّونَ يَٰعِيسَى ٱبۡنَ مَرۡيَمَ هَلۡ يَسۡتَطِيعُ رَبُّكَ أَن يُنَزِّلَ عَلَيۡنَا مَآئِدَةٗ مِّنَ ٱلسَّمَآءِۖ قَالَ ٱتَّقُواْ ٱللَّهَ إِن كُنتُم مُّؤۡمِنِينَ ١١٢ قَالُواْ نُرِيدُ أَن نَّأۡكُلَ مِنۡهَا وَتَطۡمَئِنَّ قُلُوبُنَا وَنَعۡلَمَ أَن قَدۡ صَدَقۡتَنَا وَنَكُونَ عَلَيۡهَا مِنَ ٱلشَّٰهِدِينَ ١١٣ قَالَ عِيسَى ٱبۡنُ مَرۡيَمَ ٱللَّهُمَّ رَبَّنَآ أَنزِلۡ عَلَيۡنَا مَآئِدَةٗ مِّنَ ٱلسَّمَآءِ تَكُونُ لَنَا عِيدٗا لِّأَوَّلِنَا وَءَاخِرِنَا وَءَايَةٗ مِّنكَۖ وَٱرۡزُقۡنَا وَأَنتَ خَيۡرُ ٱلرَّٰزِقِينَ ١١٤ قَالَ ٱللَّهُ إِنِّي مُنَزِّلُهَا عَلَيۡكُمۡۖ فَمَن يَكۡفُرۡ بَعۡدُ مِنكُمۡ فَإِنِّيٓ أُعَذِّبُهُۥ عَذَابٗا لَّآ أُعَذِّبُهُۥٓ أَحَدٗا مِّنَ ٱلۡعَٰلَمِينَ ١١٥ ﴾ [المائ‍دة: ١١٢، ١١٥]

“যখন হাওয়ারীগণ বলেছিল, ‘হে মারইয়ামের পুত্র ঈসা, তোমার রব কি পারে আমাদের উপর আসমান থেকে খাবারপূর্ণ দস্তরখান নাযিল করতে?’ সে বলেছিল, ‘আল্লাহর তাকওয়া অবলম্বন কর, যদি তোমরা মুমিন হও’। তারা বলল, ‘আমরা তা থেকে খেতে চাই। আর আমাদের হৃদয় প্রশান্ত হবে এবং আমরা জানব যে, তুমি আমাদেরকে সত্যই বলেছ, আর আমরা এ ব্যাপারে সাক্ষীদের অন্তর্ভুক্ত হব।’মারইয়ামের পুত্র ঈসা বলল, ‘হে আল্লাহ, হে আমাদের রব, আসমান থেকে আমাদের প্রতি খাবারপূর্ণ দস্তরখান নাযিল করুন; এটা আমাদের জন্য ঈদ হবে। আমাদের পূর্ববর্তী ও পরবর্তীদের জন্য। আর আপনার পক্ষ থেকে এক নিদর্শন হবে। আর আমাদেরকে রিযিক দান করুন, আপনিই শ্রেষ্ঠ রিযিকদাতা’। আল্লাহ বললেন, ‘নিশ্চয় আমি তোমাদের প্রতি তা নাযিল করব; কিন্তু এরপর তোমাদের মধ্যে যে কুফরী করবে তাকে নিশ্চয় আমি এমন আযাব দেব, যে আযাব সৃষ্টিকুলের কাউকে দেব না”। [আল-মায়েদা: ১১২-১১৫]

﴿ وَبِكُفۡرِهِمۡ وَقَوۡلِهِمۡ عَلَىٰ مَرۡيَمَ بُهۡتَٰنًا عَظِيمٗا ١٥٦ وَقَوۡلِهِمۡ إِنَّا قَتَلۡنَا ٱلۡمَسِيحَ عِيسَى ٱبۡنَ مَرۡيَمَ رَسُولَ ٱللَّهِ وَمَا قَتَلُوهُ وَمَا صَلَبُوهُ وَلَٰكِن شُبِّهَ لَهُمۡۚ وَإِنَّ ٱلَّذِينَ ٱخۡتَلَفُواْ فِيهِ لَفِي شَكّٖ مِّنۡهُۚ مَا لَهُم بِهِۦ مِنۡ عِلۡمٍ إِلَّا ٱتِّبَاعَ ٱلظَّنِّۚ وَمَا قَتَلُوهُ يَقِينَۢا ١٥٧ بَل رَّفَعَهُ ٱللَّهُ إِلَيۡهِۚ وَكَانَ ٱللَّهُ عَزِيزًا حَكِيمٗا ١٥٨ ﴾ [النساء: ١٥٦، ١٥٨]

“আর তাদের কুফরীর কারণে এবং মারইয়ামের বিরুদ্ধে মারাত্মক অপবাদ দেওয়ার কারণে।এবং তাদের এ কথার কারণে যে, ‘আমরা আল্লাহর রাসূল মারইয়াম পুত্র ঈসা মাসীহকে হত্যা করেছি’। অথচ তারা তাকে হত্যা করেনি এবং তাকে শূলেও চড়ায়নি। বরং তাদেরকে ধাঁধায় ফেলা হয়েছিল। আর নিশ্চয় যারা তাতে মতবিরোধ করেছিল, অবশ্যই তারা তার ব্যাপারে সন্দেহের মধ্যে ছিল। ধারণার অনুসরণ ছাড়া এ ব্যাপারে তাদের কোনো জ্ঞান নেই। আর এটা নিশ্চিত যে, তারা তাকে হত্যা করেনি। বরং আল্লাহ তাঁর কাছে তাকে তুলে নিয়েছেন এবং আল্লাহ মহা পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়”। [সূরা আন্-নিসা: ১৫৬-১৫৮]

قَالَ أَبُو هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، يَقُولُ: «مَا مِنْ بَنِي آدَمَ مَوْلُودٌ إِلَّا يَمَسُّهُ الشَّيْطَانُ حِينَ يُولَدُ، فَيَسْتَهِلُّ صَارِخًا مِنْ مَسِّ الشَّيْطَانِ، غَيْرَ مَرْيَمَ وَابْنِهَا» ثُمَّ يَقُولُ أَبُو هُرَيْرَةَ: {وَإِنِّي أُعِيذُهَا بِكَ وَذُرِّيَّتَهَا مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيمِ} [آل عمران: 36] ".

আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, এমন কোনো আদম সন্তান নেই, যাকে জন্মের সময় শয়তান স্পর্শ করে না। জন্মের সময় শয়তানের স্পর্শের কারণেই সে চিৎকার করে কাঁদে। তবে মারিয়াম এবং তাঁর ছেলে (ঈসা) আলাইহিস সালামের ব্যতিক্রম। তারপর আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, (এর কারণ হলো মারিয়ামের মায়ের এ সালাত ‘‘হে আল্লাহ্! নিশ্চয় আমি আপনার নিকট তাঁর এবং তাঁর বংশধরদের জন্য বিতাড়িত শয়তান থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করছি” [সূরা আলে ইমরান: ৩৬]।[353]

عَنْ هِشَامٍ، قَالَ: أَخْبَرَنِي أَبِي، قَالَ:، سَمِعْتُ عَبْدَ اللَّهِ بْنَ جَعْفَرٍ، قَالَ: سَمِعْتُ عَلِيًّا رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، يَقُولُ سَمِعْتُ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، يَقُولُ: «خَيْرُ نِسَائِهَا مَرْيَمُ ابْنَةُ عِمْرَانَ، وَخَيْرُ نِسَائِهَا خَدِيجَةُ».

আলী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে এ কথা বলতে শুনেছি যে, (ঐ সময়ের) সমগ্র নারীদের মধ্যে ইমরানের কন্যা মারিয়াম আলাইহাস সালাম হলেন সর্বোত্তম আর (এ সময়ে) নারীদের সেরা হলেন খাদীজা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা।[354]

عَنْ أَبِي مُوسَى الأَشْعَرِيِّ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، قَالَ: قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: " فَضْلُ عَائِشَةَ عَلَى النِّسَاءِ كَفَضْلِ الثَّرِيدِ عَلَى سَائِرِ الطَّعَامِ، كَمَلَ مِنَ الرِّجَالِ كَثِيرٌ، وَلَمْ يَكْمُلْ مِنَ النِّسَاءِ: إِلَّا مَرْيَمُ بِنْتُ عِمْرَانَ، وَآسِيَةُ امْرَأَةُ فِرْعَوْنَ ".

আবূ মূসা আশ‘আরী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, সকল নারীর উপর আয়েশার মর্যাদা এমন, যেমন সকল খাদ্য সামগ্রির উপর সারীদের মর্যাদা। পুরুষদের মধ্যে অনেকেই কামালিয়াত অরজন করেছেন। (অতিত যুগে) কিন্তূ নারীদের মধ্যে ইমরানের কন্যা মারিয়াম এবং ফিরাউনের স্ত্রী আছিয়া ব্যতিত কেউ কামালিয়াত অর্জন করতে পারেনি।[355]

عَنْ عُبَادَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قَالَ: «مَنْ شَهِدَ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَحْدَهُ لاَ شَرِيكَ لَهُ، وَأَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُولُهُ، وَأَنَّ عِيسَى عَبْدُ اللَّهِ وَرَسُولُهُ، وَكَلِمَتُهُ أَلْقَاهَا إِلَى مَرْيَمَ وَرُوحٌ مِنْهُ، وَالجَنَّةُ حَقٌّ، وَالنَّارُ حَقٌّ، أَدْخَلَهُ اللَّهُ الجَنَّةَ عَلَى مَا كَانَ مِنَ العَمَلِ».

উবাদা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু সূত্রে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, যে ব্যক্তি সাক্ষ্য দিল, আল্লাহ ছাড়া আর কোনো ইলাহ নেই, তিনি একক, তাঁর কোনো শরীক নেই আর মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর বান্দা ও রাসূল আর নিশ্চয়ই ঈসা আলাইহিস সালাম আল্লাহর বান্দা ও তাঁর রাসূল তাঁর সেই কালিমা যা তিনি মারিয়ামকে পৌছিয়েছেন এবং তাঁর পক্ষ থেকে একটি রূহ মাত্র, আর জান্নাত সত্য ও জাহান্নাম সত্য আল্লাহ্তাকে জান্নাত প্রবেশ করাবেন, তার আমল যাই হোক না কেন।[356]

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قَالَ: " لَمْ يَتَكَلَّمْ فِي المَهْدِ إِلَّا ثَلاَثَةٌ: عِيسَى، وَكَانَ فِي بَنِي إِسْرَائِيلَ رَجُلٌ يُقَالُ لَهُ جُرَيْجٌ، كَانَ يُصَلِّي، جَاءَتْهُ أُمُّهُ فَدَعَتْهُ، فَقَالَ: أُجِيبُهَا أَوْ أُصَلِّي، فَقَالَتْ: اللَّهُمَّ لاَ تُمِتْهُ حَتَّى تُرِيَهُ وُجُوهَ المُومِسَاتِ، وَكَانَ جُرَيْجٌ فِي صَوْمَعَتِهِ، فَتَعَرَّضَتْ لَهُ امْرَأَةٌ وَكَلَّمَتْهُ فَأَبَى، فَأَتَتْ رَاعِيًا فَأَمْكَنَتْهُ مِنْ نَفْسِهَا، فَوَلَدَتْ غُلاَمًا، فَقَالَتْ: مِنْ جُرَيْجٍ فَأَتَوْهُ فَكَسَرُوا صَوْمَعَتَهُ وَأَنْزَلُوهُ وَسَبُّوهُ، فَتَوَضَّأَ وَصَلَّى ثُمَّ أَتَى الغُلاَمَ، فَقَالَ: مَنْ أَبُوكَ يَا غُلاَمُ؟ قَالَ: الرَّاعِي، قَالُوا: نَبْنِي صَوْمَعَتَكَ مِنْ ذَهَبٍ؟ قَالَ: لاَ، إِلَّا مِنْ طِينٍ. وَكَانَتِ امْرَأَةٌ تُرْضِعُ ابْنًا لَهَا مِنْ بَنِي إِسْرَائِيلَ، فَمَرَّ بِهَا رَجُلٌ رَاكِبٌ ذُو شَارَةٍ فَقَالَتْ: اللَّهُمَّ اجْعَلِ ابْنِي مِثْلَهُ، فَتَرَكَ ثَدْيَهَا وَأَقْبَلَ عَلَى الرَّاكِبِ، فَقَالَ: اللَّهُمَّ لاَ تَجْعَلْنِي مِثْلَهُ، ثُمَّ أَقْبَلَ عَلَى ثَدْيِهَا يَمَصُّهُ، - قَالَ: أَبُو هُرَيْرَةَ كَأَنِّي أَنْظُرُ إِلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَمَصُّ إِصْبَعَهُ - ثُمَّ مُرَّ بِأَمَةٍ، فَقَالَتْ: اللَّهُمَّ لاَ تَجْعَلِ ابْنِي مِثْلَ هَذِهِ، فَتَرَكَ ثَدْيَهَا، فَقَالَ: اللَّهُمَّ اجْعَلْنِي مِثْلَهَا، فَقَالَتْ: لِمَ ذَاكَ؟ فَقَالَ: الرَّاكِبُ جَبَّارٌ مِنَ الجَبَابِرَةِ، وَهَذِهِ الأَمَةُ يَقُولُونَ: سَرَقْتِ، زَنَيْتِ، وَلَمْ تَفْعَلْ ".

আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, তিন জন শিশু ব্যতিত আর কেউ দোলনায় থেকে কথা বলেনি। বনী ইসরাঈলের এক ব্যক্তি যাকে ‘জুরাইজ’ বলে ডাকা হতো। একদা ইবাদাতে রত থাকা অবস্থায় তার মা এসে তাকে ডাকল। সে ভাবল আমি কি তার ডাকে সারা দেব, না সালাত আদায় করতে থাকব। (জবাব না পেয়ে) তার মা বলল, ইয়া আল্লাহ্! ব্যভিচারিণীর চেহারা না দেখা পর্যন্ত তুমি তাকে মৃত্যু দিও না। জুরায়জ তার ইবাদাত খানায় থাকত । একবার তার কাছে একটি মহিলা আসল। সে (অসৎ উদ্দেশ্যে সাধনের জন্য) তার সাথে কথা বলল। কিন্তু জুরায়জ তা অস্বীকার করল। তারপর মহিলাটি একজন রাখালের নিকট গেল এবং তাকে দিয়ে মনোবাসনা পূরণ করল। পরে সে একটি পুত্র সন্তান প্রসব করল। তাকে জিজ্ঞাসা করা হলো।এটি কার থেকে? স্ত্রী লোকটি বলল, জুরাইজ থেকে। লোকেরা তার কাছে আসল এবং তার ইবাদাত খানা ভেঙ্গে দিল। আর তাকে নীচে নামিয়ে আনল ও তাকে গালি গালাজ করল। তখন জুরাইজ অযু সেরে ইবাদাত করল। এরপর নবজাত শিশুটির নিকট এসে তাকে জিজ্ঞাসা করল। হে শিশু! তোমার পিতা কে? সে জবাব দিল সেই রাখাল। তারা (বনী ইসরাঈলেরা) বলল, আমরা আপনার ইবাদতখানাটি সোনা দিয়ে তৈরি করে দিচ্ছি। সে বুলল, না। তবে মাটি দিয়ে (করতে পার)। বনী ইসরাঈলের একজন মহিলা তার শিশুকে দুধ পান করাচ্ছিল। তার কাছ দিয়ে দিয়ে একজন সুদর্শন পুরুষ আরোহী চলে গেল। মহিলাটি দো‘আ করল, ইয়া আল্লাহ্! আমার ছেলেটিকে তার মত বানাও। শিশুটি তখনই তার মায়ের স্তন ছেড়ে দিল। এবং আরোহীটির দিকে মুখ ফিরালো। আর বলল, ইয়া আল্লাহ্! আমাকে তার মত করনা। এরপর মুখ ফিরিয়ে দুধ পান করতে লাগল। আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বললেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে দেখতে পাচ্ছি তিনি আঙ্গুল চুষছেন। এরপর সেই মহিলাটির পাশ দিয়ে একটি দাসী চলে গেল। মহিলাটি বলল, ইয়া আল্লাহ্! আমার শিশুকে এর মত করো না। শিশুটি তৎক্ষনাৎ তার মায়ের দুধ ছেড়ে দিল। আর বলল, ইয়া আল্লাহ্! আমাকে তার মত কর। তার মা জিজ্ঞাসা করল, তা কেন? শিশুটি জবাব দিল, সেই আরোহীটি ছিল যালিমদের একজন । আর এ দাসীটি লোকে বলছে তুমি চুরি করেছ, যিনা করেছ। অথচ সে কিছুই করেনি।[357]

عَنِ ابْنِ عُمَرَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا، قَالَ: قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «رَأَيْتُ عِيسَى ومُوسَى وَإِبْرَاهِيمَ، فَأَمَّا عِيسَى فَأَحْمَرُ جَعْدٌ عَرِيضُ الصَّدْرِ، وَأَمَّا مُوسَى، فَآدَمُ جَسِيمٌ سَبْطٌ كَأَنَّهُ مِنْ رِجَالِ الزُّطِّ».

ইবন উমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, (মিরাজের রাতে) আমি ঈসা আলাইহিস সালাম, মূসা আলাইহিস সালাম ও ইব্রাহীম আলাইহিস সালামকে দেখেছি। ঈসা আলাইহিস সালাম গৌর বর্ণ, সোজা চুল এবং প্রশস্ত বক্ষবিশিষ্ট লোক ছিলেন, মূসা আলাইহিস সালাম বাদামি রং বিশিষ্ট ছিলেন, তাঁর দেহ ছিল সুঠাম এবং মাথার চুল ছিল কোকড়ানো যেন ‘যুত’ গোত্রের একজন লোক।[358]

عَنْ نَافِعٍ، قَالَ عَبْدُ اللَّهِ: ذَكَرَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، يَوْمًا بَيْنَ ظَهْرَيِ النَّاسِ المَسِيحَ الدَّجَّالَ، فَقَالَ: " إِنَّ اللَّهَ لَيْسَ بِأَعْوَرَ، أَلاَ إِنَّ المَسِيحَ الدَّجَّالَ أَعْوَرُ العَيْنِ اليُمْنَى، كَأَنَّ عَيْنَهُ عِنَبَةٌ طَافِيَةٌ،

وَأَرَانِي اللَّيْلَةَ عِنْدَ الكَعْبَةِ فِي المَنَامِ، فَإِذَا رَجُلٌ آدَمُ، كَأَحْسَنِ مَا يُرَى مِنْ أُدْمِ الرِّجَالِ تَضْرِبُ لِمَّتُهُ بَيْنَ مَنْكِبَيْهِ، رَجِلُ الشَّعَرِ، يَقْطُرُ رَأْسُهُ مَاءً، وَاضِعًا يَدَيْهِ عَلَى مَنْكِبَيْ رَجُلَيْنِ وَهُوَ يَطُوفُ بِالْبَيْتِ، فَقُلْتُ: مَنْ هَذَا؟ فَقَالُوا: هَذَا المَسِيحُ ابْنُ مَرْيَمَ، ثُمَّ رَأَيْتُ رَجُلًا وَرَاءَهُ جَعْدًا قَطِطًا أَعْوَرَ العَيْنِ اليُمْنَى، كَأَشْبَهِ مَنْ رَأَيْتُ بِابْنِ قَطَنٍ، وَاضِعًا يَدَيْهِ عَلَى مَنْكِبَيْ رَجُلٍ يَطُوفُ بِالْبَيْتِ، فَقُلْتُ: مَنْ هَذَا؟ قَالُوا: المَسِيحُ الدَّجَّالُ " تَابَعَهُ عُبَيْدُ اللَّهِ، عَنْ نَافِعٍ.

আবদুল্লাহ ইবন উমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লোকজনের সামনে মাসীহ দাজ্জালের কথা উল্লেখ করলেন। তিনি বললেন, আল্লাহ্ টেঁড়া নন। সাবধান! মাসীহ দাজ্জালের ডান চোখ টেঁড়া। তার চোখ যেন ফুলে যাওয়া আঙ্গুরের মত। আমি এক রাতে স্বপ্নে নিজেকে কা’বার কাছে দেখলাম। হঠাৎ সেখানে বাদামী রং এর এক ব্যক্তিকে দেখলাম। তোমরা যেমন সুন্দর বাদামী রঙের লোক দেখে থাক তার থেকেও বেশী সুন্দর ছিলেন তিনি। তাঁর মাথার সোজা চুল, তার দু’কাঁধ পর্যন্ত ঝূলছিল। তার মাথা থেকে পানি ফোটা ফোটা করে পরছিল। তিনি দু’জন লোকের কাঁধে হাত রেখে কা’বা শরীফ তাওয়াফ করছিলেন। আমি জিজ্ঞাসা করলাম ইনি কে? তারা জবাব দিলেন, ইনি হলেন, মসীহ ইবন মারিয়াম। তারপর তাঁর পিছনে আর একজন লোককে দেখলাম। তাঁর মাথার চুল ছিল বেশ কোঁকড়ানো, ডান চোখ টেঁড়া, আকৃতিতে সে আমার দেখা মত ইবন কাতানের অধিক সাদৃশ্যপূর্ণ। সে একজন লোকের দু’কাঁধে ভর করে কা’বার চারদিকে ঘুরছিল। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, এ লোকটি কে? তারা বললেন, এ হল মাসীহ দাজ্জাল।[359]

عَنْ سَالِمٍ، عَنْ أَبِيهِ، قَالَ: لاَ وَاللَّهِ مَا قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لِعِيسَى أَحْمَرُ، وَلَكِنْ قَالَ: " بَيْنَمَا أَنَا نَائِمٌ أَطُوفُ بِالكَعْبَةِ، فَإِذَا رَجُلٌ آدَمُ، سَبْطُ الشَّعَرِ، يُهَادَى بَيْنَ رَجُلَيْنِ، يَنْطِفُ رَأْسُهُ مَاءً، أَوْ يُهَرَاقُ رَأْسُهُ مَاءً، فَقُلْتُ: مَنْ هَذَا؟ قَالُوا: ابْنُ مَرْيَمَ، فَذَهَبْتُ أَلْتَفِتُ، فَإِذَا رَجُلٌ أَحْمَرُ جَسِيمٌ، جَعْدُ الرَّأْسِ، أَعْوَرُ عَيْنِهِ اليُمْنَى، كَأَنَّ عَيْنَهُ عِنَبَةٌ طَافِيَةٌ، قُلْتُ: مَنْ هَذَا؟ قَالُوا: هَذَا الدَّجَّالُ، وَأَقْرَبُ النَّاسِ بِهِ، شَبَهًا ابْنُ قَطَنٍ " قَالَ الزُّهْرِيُّ: رَجُلٌ مِنْ خُزَاعَةَ، هَلَكَ فِي الجَاهِلِيَّةِ.

সালিম রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর পিতা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আল্লাহর কসম! নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ কথা বলেননি যে ঈসা আলাইহিস সালাম রক্তিম বর্ণের ছিলেন। বরং বলেছেন, একদা আমি স্বপ্নে কা’বা ঘর তাইয়াফ করছিলাম। হঠাৎ সোজা চুল ও বাদামী রং বিশিষ্ট একজন লোক দেখলাম। তিনি দু’জন লোকের মাঝখানে চলছেন। তাঁর মাথার পানি ঝরে পড়ছে অথবা বলেছেন, তার মাথা থেকে পানি বেয়ে পড়ছে। আমি বললাম, ইনি কে? তারা বললেন, ইনি মারিয়ামের পুত্র। তখন আমি এদিক সেদিক তাকালাম। হঠাৎ দেখলাম, এক ব্যক্তি তার গায়ের রং লালবর্ণ, খুব মোটা, মাথার চুল কোকড়ানো এবং তার ডান চোখ টেঁড়া। তার চোখ যেন ফুলা আঙ্গুরের ন্যায়। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, এ লোকটি কে? তারা বললেন, এ হলো মানুষের মধ্যে ইবন কাতানের সাথে তার অধিক সাদৃশ্য রয়েছ। যুহরী (রহ.) তার বর্ণনায় বলেন, ইবন কাতান খুযা‘আ গোত্রের লোক, সে জাহেলী যুগেই মারা গেছে।[360]

عَنِ الزُّهْرِيِّ، قَالَ: أَخْبَرَنِي أَبُو سَلَمَةَ بْنُ عَبْدِ الرَّحْمَنِ، أَنَّ أَبَا هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، قَالَ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، يَقُولُ: «أَنَا أَوْلَى النَّاسِ بِابْنِ مَرْيَمَ، وَالأَنْبِيَاءُ أَوْلاَدُ عَلَّاتٍ، لَيْسَ بَيْنِي وَبَيْنَهُ نَبِيٌّ».

আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, আমি মারিয়ামের পুত্র ঈসার বেশী নিকটতম। আর নবীগণ পরস্পর আল্লাতী ভাই অর্থাৎ দীনের মূল বিষয়ে এক এবং বিধানে বিভিন্ন। আমার ও তার (ঈসার) মাঝখানে কোনো নবী নেই।[361]

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قَالَ: " رَأَى عِيسَى ابْنُ مَرْيَمَ رَجُلًا يَسْرِقُ، فَقَالَ لَهُ: أَسَرَقْتَ؟ قَالَ: كَلَّا وَاللَّهِ الَّذِي لاَ إِلَهَ إِلَّا هُوَ، فَقَالَ عِيسَى: آمَنْتُ بِاللَّهِ، وَكَذَّبْتُ عَيْنِي ".

আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ঈসা আলাইহিস সালাম এক ব্যাক্তিকে চুরি করতে দেখলেন, তখন তিনি তাকে জিজ্ঞাসা করলেন, তুমি কি চুরি করেছ? সে বলল, কখনও নয়। সেই সত্তার কসম। যিনি ব্যাতীত আর কোনো ইলাহ নেই। তখন ঈসা আলাইহিস সালাম বললেন, আমি আল্লাহ্‌র প্রতি ঈমান এনেছি আর আমি আমার দু’নয়নকে বাহ্যত সমর্থন করলাম না।[362]

عَنْ أَبِي مُوسَى الأَشْعَرِيِّ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِذَا أَدَّبَ الرَّجُلُ أَمَتَهُ فَأَحْسَنَ تَأْدِيبَهَا، وَعَلَّمَهَا فَأَحْسَنَ تَعْلِيمَهَا، ثُمَّ أَعْتَقَهَا فَتَزَوَّجَهَا كَانَ لَهُ أَجْرَانِ، وَإِذَا آمَنَ بِعِيسَى، ثُمَّ آمَنَ بِي فَلَهُ أَجْرَانِ، وَالعَبْدُ إِذَا اتَّقَى رَبَّهُ وَأَطَاعَ مَوَالِيَهُ، فَلَهُ أَجْرَانِ».

আবূ মূসা মাশ‘আরী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যদি কোনো লোক তার দাসীকে আদব-কায়দা শিখায় এবং তা ভালভাবে শিখায় এবং তাকে দীন শিখায় আর তা উত্তমভাবে শিখায় তারপর তাদের আযাদ করে দেয় অতঃপর তাকে বিয়ে করে তবে সে দু’টি করে সওয়াব পাবে। আর যদি কেউ ঈসা আলাইহিস সালামের প্রতি ঈমান আনয়ন করে তারপর আমার প্রতিও ঈমান আনে, তার জন্যও দু’টি করে সওয়াব রয়েছে। আর গোলাম যদি তার প্রতিপালককে ভয় করে এবং তার মনিবদেরকে মেনে চলে তার জন্যও দু’টি করে সওয়াব রয়েছে।[363]

عَنِ ابْنِ شِهَابٍ أَنَّ سَعِيدَ بْنَ المُسَيِّبِ، سَمِعَ أَبَا هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «وَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ، لَيُوشِكَنَّ أَنْ يَنْزِلَ فِيكُمْ ابْنُ مَرْيَمَ حَكَمًا عَدْلًا، فَيَكْسِرَ الصَّلِيبَ، وَيَقْتُلَ الخِنْزِيرَ، وَيَضَعَ الجِزْيَةَ، وَيَفِيضَ المَالُ حَتَّى لاَ يَقْبَلَهُ أَحَدٌ، حَتَّى تَكُونَ السَّجْدَةُ الوَاحِدَةُ خَيْرًا مِنَ الدُّنْيَا وَمَا فِيهَا»، ثُمَّ يَقُولُ أَبُو هُرَيْرَةَ: " وَاقْرَءُوا إِنْ شِئْتُمْ: {وَإِنْ مِنْ أَهْلِ الكِتَابِ إِلَّا لَيُؤْمِنَنَّ بِهِ قَبْلَ مَوْتِهِ، وَيَوْمَ القِيَامَةِ يَكُونُ عَلَيْهِمْ شَهِيدًا} [النساء: 159] ".

আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, কসম সেই সত্তার, যার হাতে আমার প্রান, অচিরেই তোমাদের মাঝে মারিয়ামের পুত্র ঈসা আলাইহিস সালাম শাসক ও ন্যায় বিচারক হিসেবে অবতরণ করবেন। তিনি ‘ক্রুশ’ ভেঙ্গে ফেলবেন, শূকর মেরে ফেলবেন এবং তিনি যুদ্ধের পরিসমাপ্তি ঘটাবেন। তখন সম্পদের স্রোত বয়ে চলবে। এমনকি কেউ তা গ্রহন করতে চাইবে না। তখন আল্লাহকে একটি সিজ্দা করা সমগ্র দুনিয়া এবং তার মধ্যকার সমস্ত সম্পদ থেকে বেশী মূল্যবান বলে গণ্য হবে। এরপর আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, তোমরা ইচ্ছা করলে এর সমর্থনে এ আয়াতটি পড়তে পার, “কিতাবীদের মধ্যে প্রত্যেকে তাঁর [ঈসা আলাইহিস সালামের] মৃত্যুর পূর্বে তাঁকে বিশ্বাস করবেই এবং কিয়ামতের দীন তিনি তাদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিবেন” [সূরা নিসা: ১৫৯]।[364]

 

 

কুরআনের অস্পষ্টভাবে উল্লেখিত নবীগণের আলোচনা

عَنِ أَبِي هُرَيْرَة رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، قَالَ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، يَقُولُ: " قَرَصَتْ نَمْلَةٌ نَبِيًّا مِنَ الأَنْبِيَاءِ، فَأَمَرَ بِقَرْيَةِ النَّمْلِ، فَأُحْرِقَتْ، فَأَوْحَى اللَّهُ إِلَيْهِ: أَنْ قَرَصَتْكَ نَمْلَةٌ أَحْرَقْتَ أُمَّةً مِنَ الأُمَمِ تُسَبِّحُ ".

আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি যেকোন একজন নবীকে পিপিলীকা কামড় দেয়। তিনি পিপিলীকা সহবাসাটি জ্বালিয়ে দেওয়ার আদেশ করেন এবং তা জ্বালিয়ে দেওয়া হয়। আল্লাহ তা‘আলা তার প্রতি অহী অবতীর্ণ করেন, তোমাকে একটি পিপিলীকা কামড় দিয়েছে আর তুমি আল্লাহর তাসবীহ পাঠকারী জাতিকে জ্বালিয়ে দিয়েছ।[365]

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قَالَ: " نَزَلَ نَبِيٌّ مِنَ الأَنْبِيَاءِ تَحْتَ شَجَرَةٍ، فَلَدَغَتْهُ نَمْلَةٌ، فَأَمَرَ بِجَهَازِهِ فَأُخْرِجَ مِنْ تَحْتِهَا، ثُمَّ أَمَرَ بِبَيْتِهَا فَأُحْرِقَ بِالنَّارِ، فَأَوْحَى اللَّهُ إِلَيْهِ: فَهَلَّا نَمْلَةً وَاحِدَةً ".

আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, নবীগণের মধ্যে কোনো এক নবী গাছের নীচে অবতরণ করেন। এরপর তাঁকে একটি পিপড়ায় কামড় দেয়। তিনি তাঁর প্রয়োজনীয় আসবাবসম্বন্ধে নির্দেশ দিলেন। এগুলো গাছের নীচ হতে বের করে দেওয়া হল। তারপর তিনি নির্দেশ দিলে পিপড়ার বাসা আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেওয়া হল। তখন আল্লাহ তাঁর প্রতি অহী নাযিল করলেন, ‘তুমি একটি মাত্র পিপড়াকে কে সাজা দিলে না?।[366]

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: " غَزَا نَبِيٌّ مِنَ الأَنْبِيَاءِ، فَقَالَ لِقَوْمِهِ: لاَ يَتْبَعْنِي رَجُلٌ مَلَكَ بُضْعَ امْرَأَةٍ، وَهُوَ يُرِيدُ أَنْ يَبْنِيَ بِهَا؟ وَلَمَّا يَبْنِ بِهَا، وَلاَ أَحَدٌ بَنَى بُيُوتًا وَلَمْ يَرْفَعْ سُقُوفَهَا، وَلاَ أَحَدٌ اشْتَرَى غَنَمًا أَوْ خَلِفَاتٍ وَهُوَ يَنْتَظِرُ وِلاَدَهَا، فَغَزَا فَدَنَا مِنَ القَرْيَةِ صَلاَةَ العَصْرِ أَوْ قَرِيبًا مِنْ ذَلِكَ، فَقَالَ لِلشَّمْسِ: إِنَّكِ مَأْمُورَةٌ وَأَنَا مَأْمُورٌ اللَّهُمَّ احْبِسْهَا عَلَيْنَا، فَحُبِسَتْ حَتَّى فَتَحَ اللَّهُ عَلَيْهِ، فَجَمَعَ الغَنَائِمَ، فَجَاءَتْ يَعْنِي النَّارَ لِتَأْكُلَهَا، فَلَمْ تَطْعَمْهَا فَقَالَ: إِنَّ فِيكُمْ غُلُولًا، فَلْيُبَايِعْنِي مِنْ كُلِّ قَبِيلَةٍ رَجُلٌ، فَلَزِقَتْ يَدُ رَجُلٍ بِيَدِهِ، فَقَالَ: فِيكُمُ الغُلُولُ، فَلْيُبَايِعْنِي قَبِيلَتُكَ، فَلَزِقَتْ يَدُ رَجُلَيْنِ أَوْ ثَلاَثَةٍ بِيَدِهِ، فَقَالَ: فِيكُمُ الغُلُولُ، فَجَاءُوا بِرَأْسٍ مِثْلِ رَأْسِ بَقَرَةٍ مِنَ الذَّهَبِ، فَوَضَعُوهَا، فَجَاءَتِ النَّارُ، فَأَكَلَتْهَا ثُمَّ أَحَلَّ اللَّهُ لَنَا الغَنَائِمَ رَأَى ضَعْفَنَا، وَعَجْزَنَا فَأَحَلَّهَا لَنَا ".

আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘কোন একজন নবী জিহাদ করেছিলেন। তিনি তাঁর সম্প্রদায়কে বললেন, এমন কোনো ব্যক্তি আমার অনুসরণ করবে না, যে কোনো মহিলাকে বিবাহ করেছে এবং তার সঙ্গে মিলিত হওয়ার ইচ্ছা রাখে, কিন্তু সে এখনো মিলিত হয়নি। এমন ব্যক্তিও না যে ঘর তৈরী করেছে কিন্তু তার ছাদ তোলেনি। আর এমন ব্যক্তিও না যে গর্ভবতী ছাগল বা উটনী কিনেছে এবং সে তার প্রসবের অপেক্ষা করছে। তারপর তিনি জিহাদে গেলেন এবং আসরের সালাতের সময় কিংবা এর কাছাকাছি সময়ের একটি জনপথের নিকটবর্তী হলেন। তখন তিনি সূর্যকে বললেন, তুমিও আদিষ্ট আর আমিও আদিষ্ট। ইয়া আল্লাহ! সূর্যকে থামিয়ে দিন। তখন তাকে থামিয়ে দেওয়া হল। অবশেষে আল্লাহ তাঁকে বিজয় দান করেন। এরপর তিনি গনীমত একত্রিত করলেন। তখন সেগুলি জ্বালিয়ে দিতে আগুন এল কিন্তু আগুন তা জ্বালালো না। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন বললেন, তোমাদের মধ্যে (গনীমতের) আত্মসাৎকারী রয়েছে। প্রত্যেক গোত্র থেকে একজন যেন আমার কাছে বাইয়াত করে। সে সময় একজনের হাত নবীর হাতের সঙ্গে আটকে গেল। তখন তিনি বললেন, তোমাদের মধ্যে আত্মসাৎ রয়েছে। কাজেই তোমার গোত্রের লোকেরা যেন আমার কাছে বাইয়অত করে। এ সময় দু’ব্যক্তির বা তিন ব্যক্তির হাত তাঁর হাতের সঙ্গে আটকে গেল। তখন তিনি বললেন, তোমাদের মধ্যেই আত্মসাৎ রয়েছে। অবশেষে তারা একটি গাভীর সমতুল্য স্বর্ণ উপস্থিত করল এবং তা রেখে দিল। তারপর আগুন এসে তা জ্বালিয়ে ফেলল। এরপর আল্লাহ আমাদর জন্য গনীমত হালাল করে দিলেন এবং আমাদের দুর্বলতা ও অক্ষমতা লক্ষ্য করে তা আমাদের জন্য তা হালাল করে দিলেন।[367]

 

 

চল্লিশতম পরিচ্ছেদ

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কর্তৃক ভবিষ্যৎবাণী

عَنْ حُذَيْفَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، قَالَ: «لَقَدْ خَطَبَنَا النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ خُطْبَةً، مَا تَرَكَ فِيهَا شَيْئًا إِلَى قِيَامِ السَّاعَةِ إِلَّا ذَكَرَهُ»، عَلِمَهُ مَنْ عَلِمَهُ وَجَهِلَهُ مَنْ جَهِلَهُ، إِنْ كُنْتُ لَأَرَى الشَّيْءَ قَدْ نَسِيتُ، فَأَعْرِفُ مَا يَعْرِفُ الرَّجُلُ إِذَا غَابَ عَنْهُ فَرَآهُ فَعَرَفَهُ.

হুযায়ফা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (একদা) আমাদের মাঝে এমন একটি ভাষণ প্রদান করলেন যাতে কিয়ামত পর্যন্ত যা সংঘটিত হবে এমন কোনো কথায় বাদ দেননি। এগুলি স্মরণ রাখা যার সৌভাগ্য সে স্মরণ রেখেছে আর যে ভুলে যাবার সে ভুলে গিয়েছে। আমি ভুলে যাওয়া কোনো কিছু যখন দেখতে পাই তখন তা চিনে নিতে পারি এভাবে যেমন, কোনো ব্যক্তি কাউকে হারিয়ে ফেললে আবার যখন তাকে দেখতে পায় তখন চিনতে পারে।[368]

حَدَّثَنِي أَبُو زَيْدٍ يَعْنِي عَمْرَو بْنَ أَخْطَبَ، قَالَ: «صَلَّى بِنَا رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الْفَجْرَ، وَصَعِدَ الْمِنْبَرَ فَخَطَبَنَا حَتَّى حَضَرَتِ الظُّهْرُ، فَنَزَلَ فَصَلَّى، ثُمَّ صَعِدَ الْمِنْبَرَ، فَخَطَبَنَا حَتَّى حَضَرَتِ الْعَصْرُ، ثُمَّ نَزَلَ فَصَلَّى، ثُمَّ صَعِدَ الْمِنْبَرَ، فَخَطَبَنَا حَتَّى غَرَبَتِ الشَّمْسُ، فَأَخْبَرَنَا بِمَا كَانَ وَبِمَا هُوَ كَائِنٌ» فَأَعْلَمُنَا أَحْفَظُنَا.

আবু যায়িদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে নিয়ে ফজরের সালাত আদায় করলেন। অতঃপর মিম্বরে আরোহণ করে খুতবা দিলেন। অবশেষে যোহরের সালাতের সময় হল। তিনি মিম্বর হতে অবতরণ করতঃ সালাত আদায় করলেন। এরপর আবার মিম্বরে আরোহণ করতঃ তিনি খুতবা দিলেন। এবার আসরের সালাতের সময় হল। তিনি মিম্বর থেকে অবতরণ করে সালাত আদায় করে পুনরায় মিম্বরে আরোহণ করলেন এবং আমাদেরকে লক্ষ্য করে খূৎবা দিলেন। অতঃপর সূর্য অস্তমিত হলে তিনি আমাদেরকে যা হয়েছে এবং যা হবে ইত্যাকার বিষয়ে সংবাদ দিলেন। অতঃপর তিনি বলেন, যে ব্যক্তি এ কথাগুলো সর্বাধিক স্বরন রেখেছেন আমাদের মাঝে এ বিষয়ে তিনি সর্বাধিক জ্ঞাত।[369]

ঘটনাবলী উল্লেখের ক্ষেত্রে ধারাবাহিকতা রক্ষা করা সম্ভব হয়নি। দীর্ঘ হওয়ার আশঙ্কায় অনেক হাদীস ব্যাখ্যা ছাড়া ছেড়ে দিয়েছি।

এমনিভাবে শাহেদের স্থানে সতর্ক করিনি। সেক্ষেত্রে শুধু বাবের তরজমা উল্লেখ করেছি। এভাবে অনেক মুহাদ্দীসগণ করেছেন।

 

আবূ বকর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর খলিফা হওয়ার ইশারা

عَنْ عَائِشَةَ، قَالَتْ: قَالَ لِي رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: فِي مَرَضِهِ " ادْعِي لِي أَبَا بَكْرٍ، أَبَاكِ، وَأَخَاكِ، حَتَّى أَكْتُبَ كِتَابًا، فَإِنِّي أَخَافُ أَنْ يَتَمَنَّى مُتَمَنٍّ وَيَقُولُ قَائِلٌ: أَنَا أَوْلَى، وَيَأْبَى اللهُ وَالْمُؤْمِنُونَ إِلَّا أَبَا بَكْرٍ ".

আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে তাঁর রোগ শয্যায় বললেন, তোমার আব্বা ও ভাইকে ডাক। আমি একটা পত্র লিখে দিই। কেননা আমি ভয় করছি যে, কোনো আশা পোষণকারী আশা করবে, আর কেউ বলবে, আমিই শ্রেষ্ঠ। অথচ আবু বকর ছাড়া অন্য কাউকে আল্লাহ অস্কীকার করেন এবং মুসলিমরাও অস্বীকার করে।[370]

عَنْ مُحَمَّدِ بْنِ جُبَيْرِ بْنِ مُطْعِمٍ، عَنْ أَبِيهِ، قَالَ: أَتَتِ امْرَأَةٌ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَأَمَرَهَا أَنْ تَرْجِعَ إِلَيْهِ، قَالَتْ: أَرَأَيْتَ إِنْ جِئْتُ وَلَمْ أَجِدْكَ؟ كَأَنَّهَا تَقُولُ: المَوْتَ، قَالَ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِنْ لَمْ تَجِدِينِي فَأْتِي أَبَا بَكْرٍ».

জুবায়র ইবন মুতঈম রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একজন মহিলা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের খেদমতে এলো। (আলোচনা শেষে যাওয়ার সময়) তিনি তাঁকে আবার আসার জন্য বললেন। মহিলা বলল, আমি এসে যদি আপনাকে না পাই তবে কি করব? একথা দ্বারা মহিলাটি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওফাতের প্রতি ইঙ্গিত করেছিল। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, যদি আমাকে না পাও তবে আবু বকরের নিকট আসবে। [371]  

عَنْ حَمْزَةَ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ، أَنَّهُ أَخْبَرَهُ، عَنْ أَبِيهِ، قَالَ: لَمَّا اشْتَدَّ بِرَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَجَعُهُ قِيلَ لَهُ فِي الصَّلاَةِ، فَقَالَ: «مُرُوا أَبَا بَكْرٍ فَلْيُصَلِّ بِالنَّاسِ» قَالَتْ عَائِشَةُ: إِنَّ أَبَا بَكْرٍ رَجُلٌ رَقِيقٌ، إِذَا قَرَأَ غَلَبَهُ البُكَاءُ، قَالَ: «مُرُوهُ فَيُصَلِّي» فَعَاوَدَتْهُ، قَالَ: «مُرُوهُ فَيُصَلِّي، إِنَّكُنَّ صَوَاحِبُ يُوسُفَ».

আবু মূসা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অসুস্থ্য হয়ে পড়লেন, ক্রমে তাঁর অসুস্থতা বেড়ে যায়। তখন তিনি বললেন, আবু বকরকে লোকদের নিয়ে সালাত আদায় করতে বল। আয়িশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা বললেন তিনি তো কোমল হৃদয়ের লোক। যখন আপনার স্থানে দাঁড়াবেন, তখন তিনি লোকদের নিয়ে সালাত আদায় করতে পারবেন না। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবারো বললেন, আবু বকরকে বল, সে যেন লোকদের নিয়ে সালাত আদায় করে। আয়িশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা আবার সে কথা বললেন। তখন তিনি আবার বললেন, আবু বকরকে বল, সে যেন লোকদের নিয়ে সালাত আদায় করে। তোমরা ইউসুফ আলাইহিস সালামের সাথী রমণীদেরই মত। [372]

عَنِ الزُّهْرِيِّ، قَالَ: أَخْبَرَنِي أَنَسُ بْنُ مَالِكٍ الأَنْصَارِيُّ - وَكَانَ تَبِعَ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَخَدَمَهُ وَصَحِبَهُ - أَنَّ أَبَا بَكْرٍ كَانَ يُصَلِّي لَهُمْ فِي وَجَعِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الَّذِي تُوُفِّيَ فِيهِ، حَتَّى إِذَا كَانَ يَوْمُ الِاثْنَيْنِ وَهُمْ صُفُوفٌ فِي الصَّلاَةِ، فَكَشَفَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ سِتْرَ الحُجْرَةِ يَنْظُرُ إِلَيْنَا وَهُوَ قَائِمٌ كَأَنَّ وَجْهَهُ وَرَقَةُ مُصْحَفٍ، ثُمَّ تَبَسَّمَ يَضْحَكُ، فَهَمَمْنَا أَنْ نَفْتَتِنَ مِنَ الفَرَحِ بِرُؤْيَةِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَنَكَصَ أَبُو بَكْرٍ عَلَى عَقِبَيْهِ لِيَصِلَ الصَّفَّ، وَظَنَّ أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ خَارِجٌ إِلَى الصَّلاَةِ «فَأَشَارَ إِلَيْنَا النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنْ أَتِمُّوا صَلاَتَكُمْ وَأَرْخَى السِّتْرَ فَتُوُفِّيَ مِنْ يَوْمِهِ».

আনাস ইবন মালিক আনসারী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু যিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অনুসারী, খাদিম ও সাহাবী ছিলেন। তিনি বর্ণনা করেন যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অন্তিম রোগে আক্রান্ত অবস্থায় আবু বকর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু সাহাবীগণকে নিয়ে সালাত আদায় করতেন। অবশেষে যখন সোমবার এবং লোকেরা সালাতের জন্য কাতারে দাঁড়ালো, তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হুজরার পর্দা উঠিয়ে আমাদের দিকে তাকালেন। তিনি দাঁড়িয়ে ছিলেন তাঁর চেহারা যেন কোরআনের পৃষ্ঠা (এর ন্যায় ঝলমল করছিল)। তিনি মুচকি হাসলেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে দেখতে পেয়ে আমরা খুশিতে প্রায় আত্মহারা হয়ে গিয়ে ছিলাম এবং আবু বকর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু কাতারে দাঁড়ানোর জন্য পিছন দিকে সরে আসছিলেন। তিনি ভেবেছিলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হয়তো সালাতে আসবেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে ইশারায় বললেন যে, তোমরা তোমাদের সালাত পূর্ণ করে নাও। এরপর তিনি পর্দা ফেলে দিলেন। সে দিনই তিনি ইনতিকাল করেন।[373]   

عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ، قَالَ: «لَمْ يَخْرُجِ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ثَلاَثًا»، فَأُقِيمَتِ الصَّلاَةُ، فَذَهَبَ أَبُو بَكْرٍ يَتَقَدَّمُ، فَقَالَ نَبِيُّ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «بِالحِجَابِ فَرَفَعَهُ، فَلَمَّا وَضَحَ وَجْهُ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، مَا نَظَرْنَا مَنْظَرًا كَانَ أَعْجَبَ إِلَيْنَا مِنْ وَجْهِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ حِينَ وَضَحَ لَنَا، فَأَوْمَأَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِيَدِهِ إِلَى أَبِي بَكْرٍ أَنْ يَتَقَدَّمَ، وَأَرْخَى النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الحِجَابَ، فَلَمْ يُقْدَرْ عَلَيْهِ حَتَّى مَاتَ».

আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, (রোগশয্যায় থাকার কারণে) তিনি দিন পর্যন্ত নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বাইরে আসেন নি। এ সময় একবার সালাতের ইকামত দেওয়া হল। আবু বকর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু ইমামতি করার জন্য অগ্রসর হচ্ছিলেন। এমন সময় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর ঘরের পর্দা ধরে উঠালেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের চেহারা যখন আমাদের সম্মুখে প্রকাশ পেল, তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাতের ইশারায় আবু বকর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুকে (ইমামতির জন্য) এগিয়ে যেতে বললেন এবং পর্দা ফেলে দেন। তারপর মৃত্যুর পূর্বে তাঁকে আর দেখার সৌভাগ্য হয়নি। [374]

 

 

শাইখাইন তথা আবু বকর ও উমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমার খিলাফাতের ইঙ্গিত

عَنْ عَبْدِ اللَّهِ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قَالَ: «رَأَيْتُ النَّاسَ مُجْتَمِعِينَ فِي صَعِيدٍ، فَقَامَ أَبُو بَكْرٍ فَنَزَعَ ذَنُوبًا أَوْ ذَنُوبَيْنِ، وَفِي بَعْضِ نَزْعِهِ ضَعْفٌ، وَاللَّهُ يَغْفِرُ لَهُ ثُمَّ أَخَذَهَا عُمَرُ فَاسْتَحَالَتْ بِيَدِهِ غَرْبًا، فَلَمْ أَرَ عَبْقَرِيًّا فِي النَّاسِ يَفْرِي فَرِيَّهُ حَتَّى ضَرَبَ النَّاسُ بِعَطَنٍ».

আবদুল্লাহ ইবন উমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, একদা (স্বপ্নে) লোকজনকে একটি মাঠে সমবেত দেখতে পেলাম। তখন আবু বকর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু উঠে দাঁড়ালেন এবং (একটি) কুপ থেকে এক অথবা দুই (রাবির সন্দেহ) বালতি পানি উঠালেন। পানি উঠাতে তিনি দুর্বলতা বোধ করছিলেন। আল্লাহ তাঁকে ক্ষমা করুন। তারপর উমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বালতিটি হাতে নিলেন। বালতিটি তখন বৃহদাকার হয়ে গেল। আমি মানুষের মধ্যে পানি উঠাতে উমরের মত দক্ষ ও শক্তিশালী ব্যক্তি কখনো দেখিনি। অবশেষে উপস্থিত লোকেরা তাদের উটগুলোকে পানি পান করিয়ে উটশালায় নিয়ে গেল।[375]

 

 

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মৃত্যুর পরে যারা মুরতাদ হবে তাদের সম্পর্কে ভবিষ্যৎবাণী

عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: " تُحْشَرُونَ حُفَاةً، عُرَاةً، غُرْلًا، ثُمَّ قَرَأَ: {كَمَا بَدَأْنَا أَوَّلَ خَلْقٍ نُعِيدُهُ وَعْدًا عَلَيْنَا إِنَّا كُنَّا فَاعِلِينَ} [الأنبياء: 104] فَأَوَّلُ مَنْ يُكْسَى إِبْرَاهِيمُ، ثُمَّ يُؤْخَذُ بِرِجَالٍ مِنْ أَصْحَابِي ذَاتَ اليَمِينِ وَذَاتَ الشِّمَالِ، فَأَقُولُ: أَصْحَابِي، فَيُقَالُ: إِنَّهُمْ لَمْ يَزَالُوا مُرْتَدِّينَ عَلَى أَعْقَابِهِمْ مُنْذُ فَارَقْتَهُمْ، فَأَقُولُ كَمَا قَالَ العَبْدُ الصَّالِحُ عِيسَى ابْنُ مَرْيَمَ: {وَكُنْتُ عَلَيْهِمْ شَهِيدًا مَا دُمْتُ فِيهِمْ، فَلَمَّا تَوَفَّيْتَنِي كُنْتَ أَنْتَ الرَّقِيبَ عَلَيْهِمْ، وَأَنْتَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ شَهِيدٌ، إِنْ تُعَذِّبْهُمْ فَإِنَّهُمْ عِبَادُكَ، وَإِنْ تَغْفِرْ لَهُمْ فَإِنَّكَ أَنْتَ العَزِيزُ الحَكِيمُ} [المائدة: 118]، قَالَ: مُحَمَّدُ بْنُ يُوسُفَ الفَرَبْرِيُّ، ذُكِرَ عَنْ أَبِي عَبْدِ اللَّهِ، عَنْ قَبِيصَةَ، قَالَ: " هُمُ المُرْتَدُّونَ الَّذِينَ ارْتَدُّوا عَلَى عَهْدِ أَبِي بَكْرٍ فَقَاتَلَهُمْ أَبُو بَكرٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ.

ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমরা হাশরের মাঠে খালি-পা, খালি-গা এবং খাতনাবিহীন অবস্থায় সমবেত হবে। তারপর তিনি এ আয়াত পাঠ করলেন, “যেভাবে আমি প্রথবার সৃষ্টির সূচনা করেছিলাম সেভাবে পুনরায় সৃষ্টি করবো। এটা আমার ওয়াদা। আমি তা অবশ্যই পুর্ণ করব”। [সূরা আম্বিয়া: ১০৪] এরপর (হাশরে) সর্বপ্রথম যাকে কাপড় পরানো হবে, তিনি হলেন ইব্রাহীম আলাইহিস সালাম। তারপর আমার সাহাবীদের কিছু সংখ্যককে ডান দিকে (জান্নাতে) এবং কিছু সংখ্যককে বাম দিকে (জাহান্নামে) নিয়ে যাওয়া হবে। তখন আমি বলব, এরা তো আমার অনুসারী। তখন বলা হবে আপনি তাদের থেকে বিদায় নেওয়ার পর তারা মুরতাদ হয়ে গেছে। তখন আমি এমন কথা বলব, যেমন বলেছিল, পুণ্যবান বান্দা ঈসা ইবন মারিয়াম আলাইহিস সালাম। তার উক্তিটি হলো এ আয়াত, “আর আমি যতদিন তাদের মধ্যে ছিলাম ততদিন আমি তাদের উপর সাক্ষী ছিলাম। এরপর আপনি যখন আমকে উঠিয়ে নিলেন তখন আপনিই তাদের হেফাযতকারী ছিলেন। আর আপনি তো সবকিছুর উপরই সাক্ষী। যদি আপনি তাদেরকে আযাব দেন, তবে এরা আপনারই বান্দা। আর যদি আপনি তাদেরকে ক্ষমা করে দেন তবে আপনি নিশ্চয়ই পরাক্রমশীল ও প্রজ্ঞাময়। [সূরা মায়েদা: ১১৮] কাবীসা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, এরা হলো ঐ সব মুরতাদ যারা আবূ বকর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর খিলাফতকালে মুরতাদ হয়ে গিয়েছিল। তখন আবু বকর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু তাদের সাথে যুদ্ধ করেছিলেন।[376]

عَنِ ابْنِ أَبِي مُلَيْكَةَ، قَالَ: قَالَتْ أَسْمَاءُ: عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قَالَ: " أَنَا عَلَى حَوْضِي أَنْتَظِرُ مَنْ يَرِدُ عَلَيَّ، فَيُؤْخَذُ بِنَاسٍ مِنْ دُونِي، فَأَقُولُ: أُمَّتِي، فَيُقَالُ: لاَ تَدْرِي، مَشَوْا عَلَى القَهْقَرَى " قَالَ ابْنُ أَبِي مُلَيْكَةَ: «اللَّهُمَّ إِنَّا نَعُوذُ بِكَ أَنْ نَرْجِعَ عَلَى أَعْقَابِنَا، أَوْ نُفْتَنَ».

আসমা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণনা করেছেন যে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: আমি আমার হাউযের পাশে আগমনকারী লোকদের অপেক্ষায় থাকব। তখন আমার সম্মুখ থেকে কতিপয় লোককে ধরে নিয়ে যাওয়া হবে। আমি বলব, এরা তো আমার উম্মত। তখন বলা হবে, আপনি জানেন না, এরা (আপনার পথ ছেড়ে) পিছনে চলে গিয়েছিল। (বর্ণনাকারী) ইবন আবূ মুলায়কা বলেন: হে আল্লাহ! পিছনে ফিরে যাওয়া কিংবা ফিতনায় পতিত হওয়া থেকে আমরা আপনার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করি।[377]

عَنْ أَبِي وَائِلٍ، قَالَ: قَالَ عَبْدُ اللَّهِ: قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: " أَنَا فَرَطُكُمْ عَلَى الحَوْضِ، لَيُرْفَعَنَّ إِلَيَّ رِجَالٌ مِنْكُمْ، حَتَّى إِذَا أَهْوَيْتُ لِأُنَاوِلَهُمْ اخْتُلِجُوا دُونِي، فَأَقُولُ: أَيْ رَبِّ أَصْحَابِي، يَقُولُ: لاَ تَدْرِي مَا أَحْدَثُوا بَعْدَكَ ".

আবদুল্লাহ ইবন মাসউদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: আমি হাউযে কাউসারের নিকট তোমাদের আগেই উপস্থিত থাকব। তোমাদের থেকে কিছু লোককে আমার নিকট পেশ করা হবে।কিন্তু আমি যখন তাদের পান করাতে অগ্রসর হব, তখন তাদেরকে আমার কাছ থেকে ছিনিয়ে নেওয়া হবে। আমি বলব, হে রব! এরা তো আমার সাথী। তখন তিনি বলবেন, আপনার পর তারা নতুন কী ঘটিয়েছে তা আপনি জানেন না।[378]

عَنْ أَبِي حَازِمٍ، قَالَ: سَمِعْتُ سَهْلَ بْنَ سَعْدٍ، يَقُولُ: سَمِعْتُ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، يَقُولُ: «أَنَا فَرَطُكُمْ عَلَى الحَوْضِ، فَمَنْ وَرَدَهُ شَرِبَ مِنْهُ، وَمَنْ شَرِبَ مِنْهُ لَمْ يَظْمَأْ بَعْدَهُ أَبَدًا، لَيَرِدُ عَلَيَّ أَقْوَامٌ أَعْرِفُهُمْ وَيَعْرِفُونِي، ثُمَّ يُحَالُ بَيْنِي وَبَيْنَهُمْ» قَالَ أَبُو حَازِمٍ: فَسَمِعَنِي النُّعْمَانُ بْنُ أَبِي عَيَّاشٍ، - وَأَنَا أُحَدِّثُهُمْ هَذَا، فَقَالَ: هَكَذَا سَمِعْتَ سَهْلًا، فَقُلْتُ: نَعَمْ، قَالَ: وَأَنَا - أَشْهَدُ عَلَى أَبِي سَعِيدٍ الخُدْرِيِّ، لَسَمِعْتُهُ يَزِيدُ فِيهِ قَالَ: " إِنَّهُمْ مِنِّي، فَيُقَالُ: إِنَّكَ لاَ تَدْرِي مَا بَدَّلُوا بَعْدَكَ، فَأَقُولُ: سُحْقًا سُحْقًا لِمَنْ بَدَّلَ بَعْدِي ".

সাহল ইবন সা’দ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি যে, আমি হাউযের পাড়ে তোমাদের আগে উপস্থিত থাকব। যে সেখানে উপস্থিত হবে, সে সেখান থেকে পান করার সুযোগ পাবে। আর যে কেউবার সে হাউয থেকে পান করবে সে কখনই তৃষ্ণার্ত হবে না। অবশ্যই এমন কিছু দল আমার কাছে উপস্থিত হবে যাদেরকে আমি (আমার উম্মত বলে) চিনতে পারব এবং তারাও আমাকে চিনতে পারবে। কিন্তু এর পরই তাদের ও আমার মাঝে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে দেওয়া হবে।

আবূ হাযিম (রহ.) বলেন, আমি হাদীস বর্ণনা করছিলাম, এমতাবস্থায় নু’মান ইবন আয়াস আমার কাছ থেকে এ হাদীসটি শুনে জিজ্ঞাসা করলেন, আপনি কি সাহল থেকে হাদীসটি অনুরূপ শুনেছেন। আমি বললাম, হ্যাঁ। তখন সে বলল, আমি সাক্ষ্য প্রদান করছি যে, আমি আবূ সাঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুকে এ হাদীসে অতিরিক্ত বলতে শুনেছি যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন বলবেন: এরা তো আমারই অনুসারী। তখন বলা হবে, আপনি নিশ্চয়ই অবহিত নন যে, আপনার পরে এরা দীনের মধ্যে কি পরিবর্তন করেছে। এশুনে আমি বলব, যারা আমার পরে পরিবর্তন করেছে, তারা দূর হোক, দূর হোক।[379]

 

 

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ভবিষ্যৎবাণী:

 তাবেঈগণ সাহাবীদের থেকে এবং তাবেতাবেঈনগন তাবেঈদের থেকে ইলম শুনবে ও শিখবে।

عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «تَسْمَعُونَ وَيُسْمَعُ مِنْكُمْ وَيُسْمَعُ مِمَّنْ سَمِعَ مِنْكُمْ».

ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমরা আমার নিকট হতে শ্রবণ কর এবং লোকেরা তোমাদের নিকট হতে শ্রবণ করবে। আর যারা তোমাদের নিকট হতে শোনবে তাদের নিকট হতে অন্য লোকেরা শ্রবণ করবে।[380]

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ভবিষ্যৎবাণী:

অধিক ভূমিকম্প হবে।

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ: قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «لاَ تَقُومُ السَّاعَةُ حَتَّى يُقْبَضَ العِلْمُ، وَتَكْثُرَ الزَّلاَزِلُ، وَيَتَقَارَبَ الزَّمَانُ، وَتَظْهَرَ الفِتَنُ، وَيَكْثُرَ الهَرْجُ - وَهُوَ القَتْلُ القَتْلُ - حَتَّى يَكْثُرَ فِيكُمُ المَالُ فَيَفِيضَ».

আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, কিয়ামত কায়েম হবে না, যে পর্যন্ত না ইলম উঠিয়ে নেওয়া হবে, অধিক পরিমাণে ভুমিকম্প হবে, সময় সংকুচিত হয়ে আসবে, ফিতনা প্রকাশ পাবে এবং হারজ বৃদ্ধি পাবে। (হারজ অর্থ খুনখারাবী) তোমাদের সম্পদ এত বৃদ্ধি পাবে যে, উপচে পড়বে।[381]

 

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ভবিষ্যৎবাণী:

ছোটদের থেকে বাদশাহ হবে, বড়দের মাঝে অশ্লীলতা ছড়িয়ে পড়বে এবং অপাত্রে ইলম হবে।

عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ، قَالَ: قِيلَ: يَا رَسُولَ اللَّهِ مَتَى نَتْرُكُ الْأَمْرَ بِالْمَعْرُوفِ، وَالنَّهْيَ عَنِ الْمُنْكَرِ؟ قَالَ: «إِذَا ظَهَرَ فِيكُمْ مَا ظَهَرَ فِي الْأُمَمِ قَبْلَكُمْ» ، قُلْنَا: يَا رَسُولَ اللَّهِ وَمَا ظَهَرَ فِي الْأُمَمِ قَبْلَنَا؟ قَالَ: «الْمُلْكُ فِي صِغَارِكُمْ، وَالْفَاحِشَةُ فِي كِبَارِكُمْ، وَالْعِلْمُ فِي رُذَالَتِكُمْ» قَالَ زَيْدٌ: " تَفْسِيرُ مَعْنَى قَوْلِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «وَالْعِلْمُ فِي رُذَالَتِكُمْ» ، إِذَا كَانَ الْعِلْمُ فِي الْفُسَّاقِ ".

আনাস ইবনে মালেক রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, জিজ্ঞাসা করা হলো, হে আল্লাহর রাসূল! আমরা সৎকাজের আদেশ ও অসৎ কাজে নিষেধ করা কখন ত্যাগ করবো? তিনি বলেন, যখন তোমাদের মাঝে সেইসব বিষয় প্রকাশ পাবে, যা তোমাদের পুর্ববর্তী উম্মাতদের মাঝে প্রকাশ পেয়েছিলো। আমরা বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আমাদের পূর্বেকার উম্মাতগণের যুগে কি কি বিষয় প্রকাশ পেয়েছিলো? তিনি বলেন, তোমাদের মধ্যকার নিকৃষ্ট তরুণদের হাতে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা চলে যাবে। বয়স্ক লোক অশ্লীল কার্যকলাপে লিপ্ত হবে এবং নিকৃষ্ট লোক জ্ঞানের অধিকারী হবে। রাবী যায়েদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বাণী, ‘‘নিকৃষ্ট ও নীচ ব্যক্তিরা জ্ঞানের অধিকারী হবে’’, এর তাৎপর্য হলো, পাপাচারীরা জ্ঞানের বাহক হবে।[382]

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ভবিষ্যৎবাণী:

মানুষের মাঝে মদপান ও যেনা ব্যভিচার বেড়ে যাবে।

عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: " إِنَّ مِنْ أَشْرَاطِ السَّاعَةِ: أَنْ يُرْفَعَ العِلْمُ وَيَثْبُتَ الجَهْلُ، وَيُشْرَبَ الخَمْرُ، وَيَظْهَرَ الزِّنَا ".

আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন যে, কিয়ামতের কিছু নিদর্শন হল, ইলম লোপ পাবে, অজ্ঞাতার বিস্তৃতি ঘটবে, মদপান ব্যাপক হবে এবং ব্যভিচার ছড়িয়ে পড়বে।[383]

عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ، قَالَ: لَأُحَدِّثَنَّكُمْ حَدِيثًا لاَ يُحَدِّثُكُمْ أَحَدٌ بَعْدِي، سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: " مِنْ أَشْرَاطِ السَّاعَةِ: أَنْ يَقِلَّ العِلْمُ، وَيَظْهَرَ الجَهْلُ، وَيَظْهَرَ الزِّنَا، وَتَكْثُرَ النِّسَاءُ، وَيَقِلَّ الرِّجَالُ، حَتَّى يَكُونَ لِخَمْسِينَ امْرَأَةً القَيِّمُ الوَاحِدُ ".

আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি তোমাদের এমন একটি হাদীস বর্ণনা করব যা আমার পর তোমাদের কাছে আর কেউ বর্ণনা করবেন না। আমি রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি যে, কিয়ামতের কিছু নিদর্শন হল, ইলম কমে যাবে, অজ্ঞতার প্রসার ঘটবে, ব্যভিচার ছড়িয়ে পড়বে, স্ত্রীলোকের সংখ্যা বেড়ে যাবে এবং পুরুষের সংখ্যা কমে যাবে, এমনকি প্রতি পঞ্চাশজন স্ত্রীলোকের জন্য মাত্র একজন পুরুষ হবে তত্ত্বাবধায়ক।[384]

 

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ভবিষ্যৎবাণী:

মুসলমানের বড় দু’টি দলের মধ্যে যুদ্ধ সংঘটিত হবে।

قَالَ: أَخْبَرَنِي أَبُو سَلَمَةَ، أَنَّ أَبَا هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «لاَ تَقُومُ السَّاعَةُ حَتَّى يَقْتَتِلَ فِئَتَانِ دَعْوَاهُمَا وَاحِدَةٌ».

আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, কিয়ামত সংঘটিত হবে না যে পর্যন্ত এমন দুটি দলের মধ্যে যুদ্ধ না হবে যাদের দাবী হবে এক অর্থাৎ উভয় পক্ষ নিজেদেরকে সত্য ও ন্যায়ের উপর প্রতিষ্ঠিত বলে দাবী করবে।[385]

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قَالَ: «لاَ تَقُومُ السَّاعَةُ حَتَّى يَقْتَتِلَ فِئَتَانِ فَيَكُونَ بَيْنَهُمَا مَقْتَلَةٌ عَظِيمَةٌ، دَعْوَاهُمَا وَاحِدَةٌ، وَلاَ تَقُومُ السَّاعَةُ حَتَّى يُبْعَثَ دَجَّالُونَ كَذَّابُونَ، قَرِيبًا مِنْ ثَلاَثِينَ، كُلُّهُمْ يَزْعُمُ أَنَّهُ رَسُولُ اللَّهِ».

আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, কিয়ামতের সংঘটিত হবে না যে পর্যন্ত দুটি দলের মধ্যে যুদ্ধ না হবে। তাদের মধ্যে হবে এক রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ। তাদের দাবী হবে অভিন্ন। আর কিয়ামত কায়েম হবেনা যে পর্যন্ত প্রায় ত্রিশজন মিথ্যাবাদী দাজ্জালের আবির্ভাব না হবে। এরা সবাই নিজ নিজকে আল্লাহ্‌র রাসূল বলে দাবী করবে।[386]

 


 

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ভবিষ্যৎবাণী:

সাহাবীরা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মৃত্যুর পর তাঁকে দেখার আকাঙ্ক্ষা করবে 

عَنْ هَمَّامِ بْنِ مُنَبِّهٍ، قَالَ: هَذَا مَا حَدَّثَنَا أَبُو هُرَيْرَةَ، عَنْ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَذَكَرَ أَحَادِيثَ مِنْهَا: وَقَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «وَالَّذِي نَفْسُ مُحَمَّدٍ فِي يَدِهِ لَيَأْتِيَنَّ عَلَى أَحَدِكُمْ يَوْمٌ وَلَا يَرَانِي، ثُمَّ لَأَنْ يَرَانِي أَحَبُّ إِلَيْهِ مَنْ أَهْلِهِ وَمَالِهِ مَعَهُمْ» قَالَ أَبُو إِسْحَاقَ: الْمَعْنَى فِيهِ عِنْدِي، لَأَنْ يَرَانِي مَعَهُمْ أَحَبُّ إِلَيْهِ مِنْ أَهْلِهِ وَمَالِهِ، وَهُوَ عِنْدِي مُقَدَّمٌ وَمُؤَخَّرٌ.

হাম্মাম ইবন মুনাব্বিহ (রহ.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, এটা আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে আমাদের কাছে বর্ণনা করেছেন, অতঃপর তিনি কতকগুলো হাদীস উল্লেখ করলেন। তার মধ্য থেকে একটি হাদীস হল এই যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, মুহাম্মদের প্রাণ যার হাতে, তাঁর কসম! তোমাদের কারো উপর এমন এক সময় আসবে যখন সে আমাকে দেখতে পাবে না আর আমার দর্শন লাভ তার কাছে তখন তার ধন-ঐশ্বর্য্য ও পরিবার-পরিজনের চেয়েও প্রিয় হবে। আবু ইসহাক বলেন: এর মধ্যে আমার নিকট অর্থ হলো নিশ্চয়ই আমাকে দেখা তাদের কাছে তার পরিবার ও ধন-সম্পদ থেকে অধিকতর প্রিয় হবে এবং ওটা আমার নিকট অগ্র-পশ্চাৎ করা হয়েছে।[387]

 

ওয়াইস করনী সম্পর্কে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ভবিষ্যৎবাণী

عَنْ أُسَيْرِ بْنِ جَابِرٍ، أَنَّ أَهْلَ الْكُوفَةِ وَفَدُوا إِلَى عُمَرَ، وَفِيهِمْ رَجُلٌ مِمَّنْ كَانَ يَسْخَرُ بِأُوَيْسٍ، فَقَالَ عُمَرُ: هَلْ هَاهُنَا أَحَدٌ مِنَ الْقَرَنِيِّينَ؟ فَجَاءَ ذَلِكَ الرَّجُلُ فَقَالَ عُمَرُ: إِنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَدْ قَالَ: «إِنَّ رَجُلًا يَأْتِيكُمْ مِنَ الْيَمَنِ يُقَالُ لَهُ أُوَيْسٌ، لَا يَدَعُ بِالْيَمَنِ غَيْرَ أُمٍّ لَهُ، قَدْ كَانَ بِهِ بَيَاضٌ، فَدَعَا اللهَ فَأَذْهَبَهُ عَنْهُ، إِلَّا مَوْضِعَ الدِّينَارِ أَوِ الدِّرْهَمِ، فَمَنْ لَقِيَهُ مِنْكُمْ فَلْيَسْتَغْفِرْ لَكُمْ».

উসায়র ইবন জাবির রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত যে, কুফার একটি প্রতিনিধি দল উমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর কাছে এলো। তাদের মধ্যে এমন এক ব্যক্তিও ছিল, যে উওয়াস (রহ.)-কে উপহাস করত। তখন উমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বললেন, এখানে করনী গোত্রের কোনো লোক আছে কি? তখন সেই লোকটি এলো। এরপর উমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বললেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমাদের কাছে ইয়ামন থেকে এক ব্যক্তি আসবে, যে উওয়াস নামে পরিচিত। ইয়ামানে তাঁর মা ব্যতীত কেউ থাকবে না। তার শ্বেতরোগ হয়েছিল। সে আল্লাহর কাছে দূ‘আ করার বদৌলতে আল্লাহ তাকে শ্বেত রোগ মুক্ত করে দেন। তবে কেবল মাত্র এক দীনার অথবা এক দিরহাম পরিমাণ স্থান বাকী থাকে। তোমাদের মধ্য থেকে যদি কেউ তাঁর সাক্ষাৎ পায় সে যেন নিজের জন্য তাঁর কাছে মাগফিরাতের দুআ কামনা করে।[388]

عَنْ عُمَرَ بْنِ الْخَطَّابِ، قَالَ: إِنِّي سَمِعْتُ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: «إِنَّ خَيْرَ التَّابِعِينَ رَجُلٌ يُقَالُ لَهُ أُوَيْسٌ، وَلَهُ وَالِدَةٌ وَكَانَ بِهِ بَيَاضٌ فَمُرُوهُ فَلْيَسْتَغْفِرْ لَكُمْ».

উমর ইবনুল খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি যে, অবশ্যই তাবিঈনগণের মধ্যে সেই ব্যক্তি শ্রেষ্ঠ যে উওয়াস নামে পরিচিত। তাঁর একমাত্র মা আছে এবং তার শ্বেত রোগ হয়েছিল। তোমরা তাঁর কাছে অনুরোধ করবে যেন সে তোমাদের মাগফিরাতের জন্য দো‘আ করে।[389]

عَنْ أُسَيْرِ بْنِ جَابِرٍ، قَالَ: كَانَ عُمَرُ بْنُ الْخَطَّابِ إِذَا أَتَى عَلَيْهِ أَمْدَادُ أَهْلِ الْيَمَنِ، سَأَلَهُمْ: أَفِيكُمْ أُوَيْسُ بْنُ عَامِرٍ؟ حَتَّى أَتَى عَلَى أُوَيْسٍ فَقَالَ: أَنْتَ أُوَيْسُ بْنُ عَامِرٍ؟ قَالَ: نَعَمْ، قَالَ: مِنْ مُرَادٍ ثُمَّ مِنْ قَرَنٍ؟ قَالَ: نَعَمْ، قَالَ: فَكَانَ بِكَ بَرَصٌ فَبَرَأْتَ مِنْهُ إِلَّا مَوْضِعَ دِرْهَمٍ؟ قَالَ: نَعَمْ، قَالَ: لَكَ وَالِدَةٌ؟ قَالَ: نَعَمْ، قَالَ سَمِعْتُ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، يَقُولُ: «يَأْتِي عَلَيْكُمْ أُوَيْسُ بْنُ عَامِرٍ مَعَ أَمْدَادِ أَهْلِ الْيَمَنِ، مِنْ مُرَادٍ، ثُمَّ مِنْ قَرَنٍ، كَانَ بِهِ بَرَصٌ فَبَرَأَ مِنْهُ إِلَّا مَوْضِعَ دِرْهَمٍ، لَهُ وَالِدَةٌ هُوَ بِهَا بَرٌّ، لَوْ أَقْسَمَ عَلَى اللهِ لَأَبَرَّهُ، فَإِنِ اسْتَطَعْتَ أَنْ يَسْتَغْفِرَ لَكَ فَافْعَلْ» فَاسْتَغْفِرْ لِي، فَاسْتَغْفَرَ لَهُ، فَقَالَ لَهُ عُمَرُ: أَيْنَ تُرِيدُ؟ قَالَ: الْكُوفَةَ، قَالَ: أَلَا أَكْتُبُ لَكَ إِلَى عَامِلِهَا؟ قَالَ: أَكُونُ فِي غَبْرَاءِ النَّاسِ أَحَبُّ إِلَيَّ. قَالَ: فَلَمَّا كَانَ مِنَ الْعَامِ الْمُقْبِلِ حَجَّ رَجُلٌ مِنْ أَشْرَافِهِمْ، فَوَافَقَ عُمَرَ، فَسَأَلَهُ عَنْ أُوَيْسٍ، قَالَ: تَرَكْتُهُ رَثَّ الْبَيْتِ، قَلِيلَ الْمَتَاعِ، قَالَ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، يَقُولُ: «يَأْتِي عَلَيْكُمْ أُوَيْسُ بْنُ عَامِرٍ مَعَ أَمْدَادِ أَهْلِ الْيَمَنِ مِنْ مُرَادٍ، ثُمَّ مِنْ قَرَنٍ، كَانَ بِهِ بَرَصٌ فَبَرَأَ مِنْهُ، إِلَّا مَوْضِعَ دِرْهَمٍ لَهُ وَالِدَةٌ هُوَ بِهَا بَرٌّ، لَوْ أَقْسَمَ عَلَى اللهِ لَأَبَرَّهُ، فَإِنِ اسْتَطَعْتَ أَنْ يَسْتَغْفِرَ لَكَ فَافْعَلْ» فَأَتَى أُوَيْسًا فَقَالَ: اسْتَغْفِرْ لِي، قَالَ: أَنْتَ أَحْدَثُ عَهْدًا بِسَفَرٍ صَالِحٍ، فَاسْتَغْفِرْ لِي، قَالَ: اسْتَغْفِرْ لِي، قَالَ: أَنْتَ أَحْدَثُ عَهْدًا بِسَفَرٍ صَالِحٍ، فَاسْتَغْفِرْ لِي، قَالَ: لَقِيتَ عُمَرَ؟ قَالَ: نَعَمْ، فَاسْتَغْفَرَ لَهُ، فَفَطِنَ لَهُ النَّاسُ، فَانْطَلَقَ عَلَى وَجْهِهِ، قَالَ أُسَيْرٌ: وَكَسَوْتُهُ بُرْدَةً، فَكَانَ كُلَّمَا رَآهُ إِنْسَانٌ قَالَ: مِنْ أَيْنَ لِأُوَيْسٍ هَذِهِ الْبُرْدَةُ.

উসায়র ইবন জাবির রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত । তিনি বলেন, উমার ইবন খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর অভ্যাস ছিল, যখন ইয়ামনের কোনো সাহায্যকারী দল তার কাছে আসত তখন তিনি তাঁদের জিজ্ঞাসা করতেন, তোমাদের মধ্যে কি উওয়াস ইবন আমির আছে? অবশেষে তিনি উওয়াসকে পান। তখন তিনি বললেন, তুমি কি উওয়াস ইবন আমির? তিনি বললেন, হ্যাঁ। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, মুরাদ গোত্রের কারান বংশের?  বললেন, হ্যাঁ। জিজ্ঞাসা করলেন, তোমার কি শ্বেত রোগ ছিল এবং তা নিরাময় হয়েছে, কেবলমাত্র এক দিরহাম স্থান ব্যতীত? তিনি বললেন, হ্যাঁ। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, তোমার মা কি আছেন? তিনি বললেন, হ্যাঁ। তখন উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বললেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, তিনি বলেছেন, “তোমাদের কাছে মুরাদ গোত্রের কারান বংশের উওয়াস ইবন আমির ইয়ামানের সাহায্যকারী দলের সঙ্গে আসবে। তাঁর ছিল শ্বেত রোগ। পরে তা নিরাময় হয়ে গিয়েছে। কেবলমাত্র এক দিরহাম ব্যতিরেকে। তার মা রয়েছেন। সে তাঁর প্রতি অতি সেবাপরায়ন। এমন ব্যক্তি আল্লাহর উপর কসম করে নিলে আল্লাহ তা পূর্ণ করে দেন। কাজেই যদি তুমি তোমার জন্য তার কাছে মাগফিরাতের দো‘আ কামনার সুযোগ পাও তাহলে তা করবে।” সুতরাং আপনি আমার জন্য মাগফিরাতের দো‘আ করুন। তখন উওয়াস (রহ.) তার মাগফিরাতের জন্য দো‘আ করলেন। এরপর উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু তাকে বললেন, তুমি কোথায় যেতে চাও? তিনি বললেন, কুফা এলাকায়। উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বললেন, আমি কি তোমার জন্য কুফার গভর্ণরের কাছে চিঠি লিখে দেব? তিনি বললেন, আমি অখ্যাত গরীব লোকদের মধ্যে থাকাই পছন্দ করি। বর্ণনাকারী বলেন, পরবর্তী বছরে তাদের অতিজাত লোকদের মধ্যে এক ব্যক্তি হাজ্জ করতে এলো এবং উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর সংগে তার সাক্ষাৎ হল। তখন তিনি তাকে উওয়াস কারানী (রহ.)-এর অবস্থা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলেন। সে বলল, আমি তাঁকে জীর্ণ গৃহে সম্পদহীন অবস্থায় রেখে এসেছি। তিনি বললেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি যে, তিনি বলেছেন, তোমাদের কাছে কারান বংশের মুরাদ গোত্রের উওয়াস ইবন আমির (রহ.) ইয়ামানের একদল সাহায্যকারীর সঙ্গে আসবে। তার শ্বেত রোগ ছিল। সে তা থেকে আরোগ্য লাভ করে, এক দিরহাম পরিমাণ স্থান ব্যতীত। তাঁর মা রয়েছেন, সে তার অতি সেবাপরায়ণ। যদি সে আল্লাহর নামে কসম খায় তবে আল্লাহ তা‘আলা তা পূর্ণ করে দেন। তোমরা নিজের জন্য তাঁর কাছে মাগফিরাতের দো‘আ চাওয়ার সুযোগ পেলে তা করবে। সে ব্যক্তি উওয়াসের কাছে এল এবং বলল, আমার জন্য মাগফিরাত-এর দো‘আ করুন। তিনি বললেন, আপনি তো নেক সফর থেকে। অতএব, আমার জন্য দো‘আ করুন। তিনি বললেন, আপনি আমার অন্য দো‘আ করুন। তিনি বললেন, আপনি তো নেক সফর থেকে। অতএব, আমার জন্য দো‘আ করুন। তিনি বললেন, আপনি আমার অন্য দো‘আ করুন। তিনি বললেন, আপনি কি উমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর সাথে সাক্ষাৎ করেছেন? তিনি বললেন, হ্যাঁ। তাঁর জন্য দো‘আ করেছেন। ফলে মানুষ তাঁকে চিনে ফেলল। অতঃপর তিনি সেখান থেকে চলে গেলেন। উসাইর রহ. বলেন, আমি তাঁকে একখানা চাদর পড়িয়েছি। এরপর মানুষ যখনই তাঁকে দেখত তখন তাঁকে জিজ্ঞেস করত চাদরখানি কোথা থেকে পেলে?[390]

 

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ভবিষ্যৎবাণী

যেসব লোক কুরআনের মুতাশাবিহাতের অনুসরণ করবে তাদের সম্পর্কে সংবাদ দেওয়া।

عَنْ عَائِشَةَ، قَالَتْ: تَلَا رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: {هُوَ الَّذِي أَنْزَلَ عَلَيْكَ الْكِتَابَ مِنْهُ آيَاتٌ مُحْكَمَاتٌ هُنَّ أُمُّ الْكِتَابِ وَأُخَرُ مُتَشَابِهَاتٌ، فَأَمَّا الَّذِينَ فِي قُلُوبِهِمْ زَيْغٌ فَيَتَّبِعُونَ مَا تَشَابَهَ مِنْهُ ابْتِغَاءَ الْفِتْنَةِ وَابْتِغَاءَ تَأْوِيلِهِ، وَمَا يَعْلَمُ تَأْوِيلَهُ إِلَّا اللهُ، وَالرَّاسِخُونَ فِي الْعِلْمِ يَقُولُونَ آمَنَّا بِهِ كُلٌّ مِنْ عِنْدِ رَبِّنَا، وَمَا يَذَّكَّرُ إِلَّا أُولُو الْأَلْبَابِ} قَالَتْ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِذَا رَأَيْتُمُ الَّذِينَ يَتَّبِعُونَ مَا تَشَابَهَ مِنْهُ، فَأُولَئِكَ الَّذِينَ سَمَّى اللهُ فَاحْذَرُوهُمْ».

আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তিলাওয়াত করলেন, “তিনিই তোমার প্রতি এই কিতাব অবতীর্ণ করেছেন, যার কতক আয়াত সুম্পষ্ট দ্যর্থহীন; এইগুলো কিতাবের মূল অংশ আর অন্যগুলো রুপক। যাদের অন্তরে সত্য-লঙ্ঘন প্রবণতা রয়েছে, শুধু উভই ফিতনা এবং ভুল ব্যাখ্যার উদ্দেশ্যে যা রুপক তার অনুসরণ করে। বস্তুতঃ আল্লাহ ব্যতীত অন্য কেউ এর ব্যাখ্যা জানে না; আর যারা জ্ঞানে সুগভীর তারা বলে, আমরা এতে বিশ্বাস করি, সমস্তই আমাদের প্রতিপালকের নিকট থেকে আগত এবং বোধশক্তি সস্পন্নরা ব্যতীত অপর কেউ শিক্ষা “গ্রহণ করে না।” [সূরা আলে ইমরান: ৭] তিনি (আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা) বললেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমরা সে সব লোকদের দেখতে পাবে যারা সাদৃশ্যপূর্ণ আয়াতের অর্থের সন্ধ্যানে ব্যাপৃত, এরাই সে সব ব্যক্তি, যাদের কথা আল্লাহ উল্লেখ করেছেন, তখন আমরা তাদের থেকে দূরে থাকবো।[391]

আবু আব্দুর রহমান বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যেভাবে সংবাদ দিয়েছেন সেভাবেই তা প্রতিফলিত হয়েছে। বিদ‘আতী ও আল্লাহদ্রোহীরা সর্বদা মুতাশাবিহাত আয়াত দ্বারাই দলিল দিয়ে থাকে।

 

 

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ভবিষ্যৎবাণী

প্রথম তিন শতাব্দীর লোকদের ইসতিকামাত তথা দীনের উপর অটল থাকার সংবাদ।

عَنْ عِمْرَان بْن حُصَيْنٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا، قَالَ: قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «خَيْرُكُمْ قَرْنِي، ثُمَّ الَّذِينَ يَلُونَهُمْ، ثُمَّ الَّذِينَ يَلُونَهُمْ» - قَالَ عِمْرَانُ: لاَ أَدْرِي أَذَكَرَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بَعْدُ قَرْنَيْنِ أَوْ ثَلاَثَةً - قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِنَّ بَعْدَكُمْ قَوْمًا يَخُونُونَ وَلاَ يُؤْتَمَنُونَ، وَيَشْهَدُونَ وَلاَ يُسْتَشْهَدُونَ، وَيَنْذِرُونَ وَلاَ يَفُونَ، وَيَظْهَرُ فِيهِمُ السِّمَنُ».

ইমরান ইবন হুসাইন রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আমার যুগের লোকেরাই তোমাদের মধ্যে সর্বোত্তম। তারপর তাদের নিকটবর্তী যুগের লোকেরা, এরপর নিকটবর্তী যুগের লোকেরা। ইমরান রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, আমি বলতে পারছি না, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (তার যুগের) পরে দুই যুগের কথা বলছিলেন, না তিন যুগের কথা। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমাদের পর এমন লোকদের আগমন ঘটবে, যারা খিয়ানত করবে, আমানতদারী রক্ষা করবে না। সাক্ষ্য দিতে না ডাকলেও তারা সাক্ষ্য দিবে। তারা মান্নত করবে কিন্তু তা পূর্ণ করবে, না। তাদের মধ্যে মেদ বৃদ্ধি পাবে।[392]

عَنْ عَبْدِ اللَّهِ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «خَيْرُ النَّاسِ قَرْنِي، ثُمَّ الَّذِينَ يَلُونَهُمْ، ثُمَّ الَّذِينَ يَلُونَهُمْ، ثُمَّ يَجِيءُ أَقْوَامٌ تَسْبِقُ شَهَادَةُ أَحَدِهِمْ يَمِينَهُ، وَيَمِينُهُ شَهَادَتَهُ» قَالَ إِبْرَاهِيمُ: «وَكَانُوا يَضْرِبُونَنَا عَلَى الشَّهَادَةِ، وَالعَهْدِ».

আবদুল্লাহ (ইবন মাস’উদ) রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু সূত্রে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমার যুগের লোকেরাই হচ্ছে সর্বোত্তম লোক, এরপর যারা তাদের নিকটবর্তী, এরপর যারা তাদের নিকটবর্তী যুগের। এরপরে এমন সব লোক আসবে যারা কসম করার আগেই সাক্ষ্য দিবে, আবার সাক্ষ্য দেওয়ার আগে কসম করে বসবে। ইবরাহীম (নাখঈ) (রহ.) বলেন, আমাদেরকে সাক্ষ্য দিলে ও অংগীকার করলে মারতেন।[393]

 

 

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ভবিষ্যৎবাণী

মুসলিমগণ কিছু দেশ জয়লাভ করবে এবং কিছু মানুষ মদিনা থেকে বেরিয়ে যাবে।

عَنْ سُفْيَانَ بْنِ أَبِي زُهَيْرٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، أَنَّهُ قَالَ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، يَقُولُ: «تُفْتَحُ اليَمَنُ، فَيَأْتِي قَوْمٌ يُبِسُّونَ، فَيَتَحَمَّلُونَ بِأَهْلِهِمْ وَمَنْ أَطَاعَهُمْ، وَالمَدِينَةُ خَيْرٌ لَهُمْ لَوْ كَانُوا يَعْلَمُونَ، وَتُفْتَحُ الشَّأْمُ، فَيَأْتِي قَوْمٌ يُبِسُّونَ، فَيَتَحَمَّلُونَ بِأَهْلِيهِمْ وَمَنْ أَطَاعَهُمْ، وَالمَدِينَةُ خَيْرٌ لَهُمْ لَوْ كَانُوا يَعْلَمُونَ، وَتُفْتَحُ العِرَاقُ، فَيَأْتِي قَوْمٌ يُبِسُّونَ، فَيَتَحَمَّلُونَ بِأَهْلِيهِمْ وَمَنْ أَطَاعَهُمْ، وَالمَدِينَةُ خَيْرٌ لَهُمْ لَوْ كَانُوا يَعْلَمُونَ».

সুফিয়ান ইবন আবূ যুহায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, ইয়ামান বিজিত হবে, তখন একদল লোক নিজেদের সওয়ারী হাঁকিয়ে এসে স্বীয় পরিবার-পরিজন এবং অনুগত লোকদের উঠিয়ে নিয়ে যাবে। অথচ মদীনাই তাঁদের জন্য উত্তম ছিল, যদি তাঁরা বুঝত। সিরিয়া বিজিত হবে, তখন একদল লোক নিজেদের সওয়ারী হাঁকিয়ে এসে স্বীয় পরিবার-পরিজন এবং অনুগত লোকদের উঠিয়ে নিয়ে যাবে; অথচ মদীনাই ছিল তাঁদের জন্য কল্যাণকর, যদি তাঁরা জানত। এরপর ইরাক বিজিত হবে তখন, তখন একদল লোক নিজেদের সওয়ারী হাঁকিয়ে এসে স্বীয় পরিবার-পরিজন এবং অনুগত লোকদের উঠিয়ে নিয়ে যাবে; অথচ মদীনাই ছিল তাঁদের জন্য কল্যাণকর, যদি তাঁরা জানত।[394]

 

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ভবিষ্যৎবাণী

উমর ইবন খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর শাহাদাতের সংবাদ

عَنِ الأَعْمَشِ، قَالَ: حَدَّثَنِي شَقِيقٌ، قَالَ: سَمِعْتُ حُذَيْفَةَ، قَالَ: كُنَّا جُلُوسًا عِنْدَ عُمَرَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، فَقَالَ: أَيُّكُمْ يَحْفَظُ قَوْلَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي الفِتْنَةِ، قُلْتُ أَنَا كَمَا قَالَهُ: قَالَ: إِنَّكَ عَلَيْهِ أَوْ عَلَيْهَا لَجَرِيءٌ، قُلْتُ: «فِتْنَةُ الرَّجُلِ فِي أَهْلِهِ وَمَالِهِ وَوَلَدِهِ وَجَارِهِ، تُكَفِّرُهَا الصَّلاَةُ وَالصَّوْمُ وَالصَّدَقَةُ، وَالأَمْرُ وَالنَّهْيُ»، قَالَ: لَيْسَ هَذَا أُرِيدُ، وَلَكِنِ الفِتْنَةُ الَّتِي تَمُوجُ كَمَا يَمُوجُ البَحْرُ، قَالَ: لَيْسَ عَلَيْكَ مِنْهَا بَأْسٌ يَا أَمِيرَ المُؤْمِنِينَ، إِنَّ بَيْنَكَ وَبَيْنَهَا بَابًا مُغْلَقًا، قَالَ: أَيُكْسَرُ أَمْ يُفْتَحُ؟ قَالَ: يُكْسَرُ، قَالَ: إِذًا لاَ يُغْلَقَ أَبَدًا، قُلْنَا: أَكَانَ عُمَرُ يَعْلَمُ البَابَ؟ قَالَ: نَعَمْ، كَمَا أَنَّ دُونَ الغَدِ اللَّيْلَةَ، إِنِّي حَدَّثْتُهُ بِحَدِيثٍ لَيْسَ بِالأَغَالِيطِ فَهِبْنَا أَنْ نَسْأَلَ حُذَيْفَةَ، فَأَمَرْنَا مَسْرُوقًا فَسَأَلَهُ، فَقَالَ: البَابُ عُمَرُ.

হুযাইফা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা আমরা উমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর কাছে বসা ছিলাম। তখন তিনি বললেন, ফিতনা সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বক্তব্য তোমাদের মধ্যে কে স্মরণ রেখেছ? হুযাইফা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বললেন, ‘যেমনি তিনি বলেছিলেন হুবহু তেমনিই আমি মনে রেখেছি’। উমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বললেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বাণী স্মরণ রাখার ব্যপারে তুমি খুব দৃঢ়তার পরিচয় দিচ্ছ। আমি বললাম, (রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছিলেন) মানুষ নিজের পরিবার-পরিজন, ধন-সম্পদ, সন্তান-সন্ততি, পাড়া-প্রতিবেশীদের ব্যাপারে যে ফেতনায় পতিত হয়-সালাত, সিয়াম, সাদাকা, (ন্যায়ের) আদেশ ও (অন্যায়ের) নিষেধ তা দূরীভূত করে দেয়। উমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বললেন, তা আমার উদ্দেশ্যে নয়। বরং আমি সেই ফিতনার কথা বলছি, যা সমুদ্র তরঙ্গের ন্যায় ভয়াল হবে। হুযাইফা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বললেন, হে আমীরুল মু’মিনীন! সে ব্যাপারে আপনার ভয়ের কোনো কারণ নেই। কেননা, আপনার ও সে ফিতনার মাঝখানে একটি বন্ধ দরজা রয়েছে। উমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু জিজ্ঞাসা করলেন, সে দরজাটি ভেঙ্গে ফেলা হবে, না খুলে দওয়া হবে? হুযাইফা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বললেন, ভেঙ্গে ফেলা হবে। উমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বললেন, তাহলে তো আর কোনো দিন তা বন্ধ করা যাবে না। [হুযাইফা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর ছাত্র শাকীক (রহ.) বললেন], আমরা জিজ্ঞাসা করতে আমার ভয় পাছিলাম। তাই, আমরা মাসরূক (রহ.) – কে বললাম এবং তিনি তাঁকে জিজ্ঞাসা করলেন। তিনি বললেন, দরজাটি উমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু নিজেই।[395]

 

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ভবিষ্যৎবাণী

উসমান রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর শাহাদাতের সংবাদ

عَنِ ابْنِ عُمَرَ، قَالَ: ذَكَرَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِتْنَةً، فَقَالَ: يُقْتَلُ هَذَا فِيهَا مَظْلُومًا لِعُثْمَانَ.

ইবন উমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফিতনা সম্পর্কে আলোচনা করেন। তিনি বলেন, এতে উসমান রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু মাজলুম হয়ে নিহত হবে। [396]

 

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ভবিষ্যৎবাণী

ফাতিমা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা সর্বপ্রথম রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে মিলিত হবেন।

عَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا، قَالَتْ: أَقْبَلَتْ فَاطِمَةُ تَمْشِي كَأَنَّ مِشْيَتَهَا مَشْيُ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَرْحَبًا بِابْنَتِي» ثُمَّ أَجْلَسَهَا عَنْ يَمِينِهِ، أَوْ عَنْ شِمَالِهِ، ثُمَّ أَسَرَّ إِلَيْهَا حَدِيثًا فَبَكَتْ، فَقُلْتُ لَهَا: لِمَ تَبْكِينَ؟ ثُمَّ أَسَرَّ إِلَيْهَا حَدِيثًا فَضَحِكَتْ، فَقُلْتُ: مَا رَأَيْتُ كَاليَوْمِ فَرَحًا أَقْرَبَ مِنْ حُزْنٍ، فَسَأَلْتُهَا عَمَّا قَالَ: فَقَالَتْ: مَا كُنْتُ لِأُفْشِيَ سِرَّ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، حَتَّى قُبِضَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَسَأَلْتُهَا.

فَقَالَتْ: أَسَرَّ إِلَيَّ: «إِنَّ جِبْرِيلَ كَانَ يُعَارِضُنِي القُرْآنَ كُلَّ سَنَةٍ مَرَّةً، وَإِنَّهُ عَارَضَنِي العَامَ مَرَّتَيْنِ، وَلاَ أُرَاهُ إِلَّا حَضَرَ أَجَلِي، وَإِنَّكِ أَوَّلُ أَهْلِ بَيْتِي لَحَاقًا بِي». فَبَكَيْتُ، فَقَالَ: «أَمَا تَرْضَيْنَ أَنْ تَكُونِي سَيِّدَةَ نِسَاءِ أَهْلِ الجَنَّةِ، أَوْ نِسَاءِ المُؤْمِنِينَ» فَضَحِكْتُ لِذَلِكَ.

আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের চলার ভঙ্গিতে চলতে চলতে ফাতিমা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা আমাদের নিকট আগমন করলেন। তাঁকে দেখে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আমার স্নেহের কন্যাকে অনেক অনেক মোবারকবাদ। তারপর তাঁকে তাঁর ডানপাশে অথবা বামপাশে (রাবির সন্দেহ) বসালেন এবং তাঁর সাথে চুপিচুপি (কি যেন) কথা বললেন। তখন তিনি (ফাতিমা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা) কেঁদে দিলেন। আমি (আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা) বললাম কাঁদছেন কেন? নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, পুনরায় চুপিচুপি তাঁর সাথে কথা বললেন। তিনি (ফাতিমা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা) এবার হেঁসে উঠলেন। আমি (আয়িশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা) বললাম, আজকের মত দুঃখ ও বেদনার সাথে সাথে আনন্দ ও খুশী আমি আর কখনো দেখিনি। আমি তাঁকে (ফাতিমা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা) কে জিজ্ঞাসা করলাম, তিনি (নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কি বলেছিলেন? তিনি উত্তর দিলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের গোপন কথাকে প্রকাশ করবো না। পরিশেষে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ইন্তেকাল হয়ে যাওয়ার পর আমি তাঁকে আবার জিজ্ঞাসা করলাম, তিনি কি বলেছিলেন? তিনি বললেন, তিনি (নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) প্রথমবার আমাকে বলেছিলেন, জিবরীল আলাইহিস সালাম প্রতিবছর একবার আমার সঙ্গে পরস্পর কোরআন পাঠ করতেন, এ বছর দু’বার এরূপ পড়ে শুনিয়েছেন। আমার মনে হয় আমার বিদায় কাল ঘনিয়ে এসেছে এবং এরপর আমার পরিবারের মধ্যে তুমিই সর্বপ্রথম আমার সাথে মিলিত হবে। তা শুনে আমি কেঁদে দিলাম। দ্বিতীয়বার বলেছিলেন, তুমি কি এতে সন্তুষ্ট নও যে, জান্নাতবাসি মহিলাদের অথবা মু’মিন মহিলাদের তুমি সরদার (নেত্রী) হবে। এ কথা শুনে আমি হেসেছিলাম। [397]

حَدَّثَنِي يَحْيَى بْنُ قَزَعَةَ، حَدَّثَنَا إِبْرَاهِيمُ بْنُ سَعْدٍ، عَنْ أَبِيهِ، عَنْ عُرْوَةَ، عَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا، قَالَتْ: دَعَا النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَاطِمَةَ ابْنَتَهُ فِي شَكْوَاهُ الَّذِي قُبِضَ فِيهِ فَسَارَّهَا بِشَيْءٍ فَبَكَتْ، ثُمَّ دَعَاهَا فَسَارَّهَا فَضَحِكَتْ، قَالَتْ: فَسَأَلْتُهَا عَنْ ذَلِكَ، فَقَالَتْ: «سَارَّنِي النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَأَخْبَرَنِي أَنَّهُ يُقْبَضُ فِي وَجَعِهِ الَّذِي تُوُفِّيَ فِيهِ، فَبَكَيْتُ ثُمَّ سَارَّنِي فَأَخْبَرَنِي أَنِّي أَوَّلُ أَهْلِ بَيْتِهِ أَتْبَعُهُ فَضَحِكْتُ».

আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অন্তিম রোগকালে তাঁর কন্য ফাতিমা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহাকে ডেকে পাঠালেন। এরপর চুপিচাপি কি যেন বললেন। ফাতিমা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা তা শুনে কেঁদে ফেললেন। তারপর আবার ডেকে তাঁকে চুপিচাপি আরো কি যেন বললেন। এতে ফাতিমা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা হেঁসে উঠলেন। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা বলেন, আমি হাঁসি-কান্নার কারণ জিজ্ঞাসা করলে তিনি বললেন, (প্রথম বার) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে চুপে চুপে বলেছিলেন, যে রোগে তিনি আক্রান্ত হয়েছেন এ রোগেই তাঁর ওফাত হবে; তাই আমি কেঁদে দিয়েছিলাম। এরপর তিনি চুপিচাপি আমাকে বলেছিলেন, তার পরিবার পরিজনের মধ্যে আমিই সর্বপ্রথম তাঁর সাথে মিলিত হব, এতে আমি হেঁসে দিয়েছিলেন।[398]

 

 

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ভবিষ্যৎবাণী

প্রথম তিন শতাব্দীতে ইসলামী বিজয় সাধিত হবে।

حَدَّثَنَا أَبُو سَعِيدٍ الخُدْرِيُّ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: " يَأْتِي عَلَى النَّاسِ زَمَانٌ، فَيَغْزُو فِئَامٌ مِنَ النَّاسِ، فَيَقُولُونَ: فِيكُمْ مَنْ صَاحَبَ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ؟ فَيَقُولُونَ: نَعَمْ، فَيُفْتَحُ لَهُمْ، ثُمَّ يَأْتِي عَلَى النَّاسِ زَمَانٌ، فَيَغْزُو فِئَامٌ مِنَ النَّاسِ، فَيُقَالُ: هَلْ فِيكُمْ مَنْ صَاحَبَ أَصْحَابَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ؟ فَيَقُولُونَ: نَعَمْ، فَيُفْتَحُ لَهُمْ، ثُمَّ يَأْتِي عَلَى النَّاسِ زَمَانٌ، فَيَغْزُو فِئَامٌ مِنَ النَّاسِ، فَيُقَالُ: هَلْ فِيكُمْ مَنْ صَاحَبَ مَنْ صَاحَبَ أَصْحَابَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ؟ فَيَقُولُونَ: نَعَمْ، فَيُفْتَحُ لَهُمْ ".

আবু সাঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, জনগনের উপর এমন এক সময় আসবে যখন তাদের বিরাট সৈন্যবাহিনী জিহাদের উদ্দেশ্যে বের হবে। তখন তাদেরকে জিজ্ঞাসা করা হবে, তোমাদের মধ্যে এমন কেউ আছেন কি যিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহচার্য লাভ করেছেন? (অর্থাৎ সাহাবী) তাঁরা বলবেন, হ্যাঁ আছেন। তখন (ঐ সাহাবীর বরকতে) তাদেরকে জয়ী করা হবে। তারপর জনগনের উপর পুনরায় এমন এক সময় আসবে যখন তাদের বিরাট সৈন্যবাহিনী (শত্রুদের বিরুদ্ধে) যুদ্ধে লিপ্ত থাকবে। তখন তাদেরকে জিজ্ঞাসা করা হবে, তোমাদের মধ্যে এমন কেউ আছেন কি যিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহচার্য লাভে ধন্য কিংবা কোনো ব্যক্তির (সাহাবীর) সাহচার্য লাভ করেছেন? (অর্থাৎ তাবেয়ী) তখন তাঁরা বলবেন, হ্যাঁ আছেন। তখন (ঐ তাবেয়ীর বরকতে) তাদেরকে জয়ী করা হবে। এরপর লোকদের উপর এমন এক সময় আসবে, যখন তাদের বিরাট বাহিনী জিহাদে অংশগ্রহণ করবে। তখন তাদেরকে জিজ্ঞাসা করা হবে, তোমাদের মধ্যে এমন কি কেউ আছেন, যিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহাবীগণের সাহচার্য লাভকারী কোনো বক্তির (তাবেয়ীর) সাহচার্য লাভ করেছেন? (অর্থাৎ তাবে-তাবেয়ী) বলা হবে আছেন। তখন তাদেরকে (ঐ তাবে-তাবেয়ীর বরকতে) জয়ী করা হবে। [399] 

 

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ভবিষ্যৎবাণী

যাইনাব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের স্ত্রীদের মধ্যে সর্বপ্রথম তাঁর সাথে মিলিত হবে।

عَنْ عَائِشَةَ أُمِّ الْمُؤْمِنِينَ، قَالَتْ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «أَسْرَعُكُنَّ لَحَاقًا بِي أَطْوَلُكُنَّ يَدًا» قَالَتْ: فَكُنَّ يَتَطَاوَلْنَ أَيَّتُهُنَّ أَطْوَلُ يَدًا، قَالَتْ: فَكَانَتْ أَطْوَلَنَا يَدًا زَيْنَبُ، لِأَنَّهَا كَانَتْ تَعْمَلُ بِيَدِهَا وَتَصَدَّقُ.

উম্মুল মু’মিনীন আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন: রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমাদের মধ্যে সর্বপ্রথম সে-ই আমার সাথে মিলিত হবে যার হাত সর্বাধিক লম্বা। সুতরাং সব বিবিরা নিজ নিজ হাত মেপে দেখতে লাগলেন কার হাত বেশি লম্বা। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা বলেন, অবশেষে আমাদের মধ্যে যয়নবের হাতই সবচেয়ে লম্বা বলে স্হির হল। কারণ তিনি হাত দিয়ে কাজ করতেন এবং দান-খয়রাত করতেন।[400]

 

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ভবিষ্যৎবাণী

আলী ও মু‘আবিয়া রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমার মধ্যকর বিবেদ ও আলী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু মু‘আবিয়া রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর চেয়ে শ্রেষ্ঠ।

عَنِ ابْنِ شِهَابٍ، أَخْبَرَنِي أَبُو سَلَمَةَ بْنُ عَبْدِ الرَّحْمَنِ، وَالضَّحَّاكُ الْهَمْدَانِيُّ، أَنَّ أَبَا سَعِيدٍ الْخُدْرِيَّ، قَالَ: بَيْنَا نَحْنُ عِنْدَ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَهُوَ يَقْسِمُ قَسْمًا، أَتَاهُ ذُو الْخُوَيْصِرَةِ، وَهُوَ رَجُلٌ مِنْ بَنِي تَمِيمٍ، فَقَالَ: يَا رَسُولَ اللهِ، اعْدِلْ، قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «وَيْلَكَ وَمَنْ يَعْدِلُ إِنْ لَمْ أَعْدِلْ؟ قَدْ خِبْتُ وَخَسِرْتُ إِنْ لَمْ أَعْدِلْ» فَقَالَ عُمَرُ بْنُ الْخَطَّابِ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ: يَا رَسُولَ اللهِ، ائْذَنْ لِي فِيهِ أَضْرِبْ عُنُقَهُ، قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «دَعْهُ، فَإِنَّ لَهُ أَصْحَابًا يَحْقِرُ أَحَدُكُمْ صَلَاتَهُ مَعَ صَلَاتِهِمْ، وَصِيَامَهُ مَعَ صِيَامِهِمْ، يَقْرَءُونَ الْقُرْآنَ، لَا يُجَاوِزُ تَرَاقِيَهُمْ، يَمْرُقُونَ مِنَ الْإِسْلَامِ كَمَا يَمْرُقُ السَّهْمُ مِنَ الرَّمِيَّةِ، يُنْظَرُ إِلَى نَصْلِهِ فَلَا يُوجَدُ فِيهِ شَيْءٌ، ثُمَّ يُنْظَرُ إِلَى رِصَافِهِ فَلَا يُوجَدُ فِيهِ شَيْءٌ، ثُمَّ يُنْظَرُ إِلَى نَضِيِّهِ فَلَا يُوجَدُ فِيهِ شَيْءٌ - وَهُوَ الْقِدْحُ - ثُمَّ يُنْظَرُ إِلَى قُذَذِهِ فَلَا يُوجَدُ فِيهِ شَيْءٌ، سَبَقَ الْفَرْثَ وَالدَّمَ، آيَتُهُمْ رَجُلٌ أَسْوَدُ، إِحْدَى عَضُدَيْهِ مِثْلُ ثَدْيِ الْمَرْأَةِ، أَوْ مِثْلُ الْبَضْعَةِ تَتَدَرْدَرُ، يَخْرُجُونَ عَلَى حِينِ فُرْقَةٍ مِنَ النَّاسِ» قَالَ أَبُو سَعِيدٍ: «فَأَشْهَدُ أَنِّي سَمِعْتُ هَذَا مِنْ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، وَأَشْهَدُ أَنَّ عَلِيَّ بْنَ أَبِي طَالِبٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَاتَلَهُمْ وَأَنَا مَعَهُ، فَأَمَرَ بِذَلِكَ الرَّجُلِ فَالْتُمِسَ، فَوُجِدَ، فَأُتِيَ بِهِ، حَتَّى نَظَرْتُ إِلَيْهِ، عَلَى نَعْتِ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الَّذِي نَعَتَ».

আবু সাঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা আমরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট বসা ছিলাম। তখন তিনি কিছু সম্পদ বন্টন করলেন। সে সময় বনী তামীম গোত্রের যুল খুওসায়সিরা নামক এক ব্যক্তি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট এসে বলল, হে আল্লাহর রাসুল ইনসাফ করুন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমার ধবংস হোক কে ইনসাফ করবে যদি আমি ইনসাফ না করি! আমি যদি ইসনাফ না করি তবে তো আমি অকৃতকার্য ও ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে যাব। তখন উমর ইবনুল খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বললেন, হে আল্লাহর রাসুল! আমাকে অনুমতি দিন, আমি তার গর্দান উড়িয়ে দেই। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তাকে ছেড়ে দাও। তার সঙ্গী সাহলরা তো এমন যে, তোমরা তোমাদের সালাতকে তাদের তুলনায় তুচ্ছ মনে করবে এবং তোমরা তোমাদের সিয়ামকে তাদের সিয়ামের তুলনায় নগণ্য মনে করবে। তারা কুরআন পাঠ করবে কিন্তু কুরআন তাদের কন্ঠনালী অতিক্রম করবে না। তারা ইসলাম থেকে বেরিয়ে যাবে- যেমন বেরিয়ে যায় তীর তার লক্ষ্যস্হল অতিক্রম করে। তখন তীর নিক্ষেপকারী ব্যক্তি ধনুকের নাসল পরীক্ষা করে দেখবে এতেও কিছু পাওয়া যাবে না। এরপর সে এর রুসাফ পরীক্ষা করে দেখবে এতেও কিছু পাওয়া যাবে না। তারপর সে এর নায়িইও পরীক্ষা করে দেখবে এতে ও কিছুই পাওয়া যাবে না। কাদাহকেই নাযিই বলা হয়। তারপর সে এর কুযায পরীক্ষা করে দেখবে এতেও পাওয়া যাবে না। তীর এত তীব্র গতিতে বেরিয়ে যায় যে মল বা রক্তের গাদ এতে লাগতেই পারে না। এ সম্প্রদায়ের লোকদের পরিচয় এই যে, এক কাল ব্যক্তি যার উভয় বাহুহ-তে একটি বাবু হবে মহিলাদের স্তনের ন্যায় অথবা এক টূকরা বাড়তি গোশতের ন্যায়। এদের আবির্ভাব তখন হবে যখন লোকদের মধ্যে মতানৈক্য দেখা দেবে। আবু সাঈদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আমি একথা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে শুনেছি। আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আলী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু তাদের সাথে যুদ্ধ করেছেন, তখন আমি তার সাথে ছিলাম। আলী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু এ লোকটিকে খোজ করার নির্দেশ দেওয়ার পর তাকে তালাশ করে পাওয়া গেল। এরপর তাকে আনা হল। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার যে নিদর্শন করেছেন সে বর্ণিত নিদর্শন মুতাবিক আমি তার দিকে তাকালাম।[401]

عَنْ أَبِي سَعِيدٍ، أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ذَكَرَ قَوْمًا يَكُونُونَ فِي أُمَّتِهِ، يَخْرُجُونَ فِي فُرْقَةٍ مِنَ النَّاسِ، سِيمَاهُمْ التَّحَالُقُ قَالَ: «هُمْ شَرُّ الْخَلْقِ - أَوْ مِنْ أَشَرِّ الْخَلْقِ - يَقْتُلُهُمْ أَدْنَى الطَّائِفَتَيْنِ إِلَى الْحَقِّ» قَالَ: فَضَرَبَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَهُمْ مَثَلًا، أَوْ قَالَ قَوْلًا «الرَّجُلُ يَرْمِي الرَّمِيَّةَ - أَوْ قَالَ الْغَرَضَ - فَيَنْظُرُ فِي النَّصْلِ فَلَا يَرَى بَصِيرَةً، وَيَنْظُرُ فِي النَّضِيِّ فَلَا يَرَى بَصِيرَةً، وَيَنْظُرُ فِي الْفُوقِ فَلَا يَرَى بَصِيرَةً» قَالَ: قَالَ أَبُو سَعِيدٍ: «وَأَنْتُمْ قَتَلْتُمُوهُمْ، يَا أَهْلَ الْعِرَاقِ».

আবু সাঈদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদল লোক সম্পর্কে আলোচনা করলেন যারা তাঁর উম্মাতের মাঝেই সৃষ্টি হবে। তারা আবির্ভুত হবে ঐ সময় যখন মানুষের মধ্যে বিরোধ দেখা দিবে। তাদের নিদর্শন এই যে, তাদের মাথা মুন্ডান থাকবে। তারা সৃষ্টির নিকৃষ্ট বা সর্বাধিক নিকৃষ্ট লোক হবে। তা-দেরকে দু’দলের এমন দলটি হত্যা করবে যারা সভ্যের দিকে অধিক নিকটবর্তী এরপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের একটি উপমা বর্ণনা করলেন অথবা করলেন, এক ব্যক্তি লক্ষ্যস্হল নিরুপন করে তীর নিক্ষেপ করে এরপর নাসল পরীক্ষা করে দেখে কিন্তু এতে বিব্দুমাত্র রক্তও সে দেখতে পায় না। এরপর এর নাযিই পরীক্ষা করে দেখে, এতেও বিন্দুমাত্র রক্ত সে দেখে না। তারপর সে এর ফুক পরীক্ষা করে দেখে কিন্তু এতেও সে বিন্দুমাত্র কোনো কিছু দেখতে পায় না। বর্ণনাকারী আবু সাঈদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, হে ইরাকবাসী! তোমরা তাদেরকে হত্যা করেছ।[402]

عَنْ أَبِي سَعِيدٍ الْخُدْرِيِّ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «تَمْرُقُ مَارِقَةٌ عِنْدَ فُرْقَةٍ مِنَ الْمُسْلِمِينَ، يَقْتُلُهَا أَوْلَى الطَّائِفَتَيْنِ بِالْحَقِّ».

আবু সাঈদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, মুসলিমদের মতবিরোধের সময় একটি দল বের হবে, তাদেরকে হত্যা করবে, দু-দলের এমন দলটি যারা হকের অধিক নিকটবর্তী।[403]

عَنْ أَبِي سَعِيدٍ الْخُدْرِيِّ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «تَكُونُ فِي أُمَّتِي فِرْقَتَانِ، فَتَخْرُجُ مِنْ بَيْنِهِمَا مَارِقَةٌ، يَلِي قَتْلَهُمْ أَوْلَاهُمْ بِالْحَقِّ».

আবু সাঈদ খূদরী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আমার উম্মাতে দুটি দল সৃষ্টি হবে। তখন তাদের থেকে অন্য আরেকটি দল সৃষ্টি হবে। এদলকে দুদলের ওই দলহ হত্যা করবে যারা হকের অধীক নিকটবর্তী।[404]

عَنْ أَبِي سَعِيدٍ الْخُدْرِيِّ، أَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قَالَ: «تَمْرُقُ مَارِقَةٌ فِي فُرْقَةٍ مِنَ النَّاسِ، فَيَلِي قَتْلَهُمْ أَوْلَى الطَّائِفَتَيْنِ بِالْحَقِّ».

আবু সাঈদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, মানুষের মধ্যে যখন মত বিরোধ দেখা দিবে তখন একদল লোক বের হবে। তাদেরকে হত্যা করবে দু”দলের যে দলটি হকের অধিক নিকটবর্তী।[405]

 

 

 

 

 

 

 

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ভবিষ্যৎবাণী

মু‘আবিয়া রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর সাথে হাসান রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর সমজোতা 

عَنْ أَبِي مُوسَى، قَالَ: سَمِعْتُ الحَسَنَ، يَقُولُ: اسْتَقْبَلَ وَاللَّهِ الحَسَنُ بْنُ عَلِيٍّ مُعَاوِيَةَ بِكَتَائِبَ أَمْثَالِ الجِبَالِ، فَقَالَ عَمْرُو بْنُ العَاصِ: إِنِّي لَأَرَى كَتَائِبَ لاَ تُوَلِّي حَتَّى تَقْتُلَ أَقْرَانَهَا، فَقَالَ لَهُ مُعَاوِيَةُ وَكَانَ وَاللَّهِ خَيْرَ الرَّجُلَيْنِ: أَيْ عَمْرُو إِنْ قَتَلَ هَؤُلاَءِ هَؤُلاَءِ، وَهَؤُلاَءِ هَؤُلاَءِ مَنْ لِي بِأُمُورِ النَّاسِ مَنْ لِي بِنِسَائِهِمْ مَنْ لِي بِضَيْعَتِهِمْ، فَبَعَثَ إِلَيْهِ رَجُلَيْنِ مِنْ قُرَيْشٍ مِنْ بَنِي عَبْدِ شَمْسٍ: عَبْدَ الرَّحْمَنِ بْنَ سَمُرَةَ، وَعَبْدَ اللَّهِ بْنَ عَامِرِ بْنِ كُرَيْزٍ، فَقَالَ: اذْهَبَا إِلَى هَذَا الرَّجُلِ، فَاعْرِضَا عَلَيْهِ، وَقُولاَ لَهُ: وَاطْلُبَا إِلَيْهِ، فَأَتَيَاهُ، فَدَخَلاَ عَلَيْهِ فَتَكَلَّمَا، وَقَالاَ لَهُ: فَطَلَبَا إِلَيْهِ، فَقَالَ لَهُمَا الحَسَنُ بْنُ عَلِيٍّ: إِنَّا بَنُو عَبْدِ المُطَّلِبِ، قَدْ أَصَبْنَا مِنْ هَذَا المَالِ، وَإِنَّ هَذِهِ الأُمَّةَ قَدْ عَاثَتْ فِي دِمَائِهَا، قَالاَ: فَإِنَّهُ يَعْرِضُ عَلَيْكَ كَذَا وَكَذَا، وَيَطْلُبُ إِلَيْكَ وَيَسْأَلُكَ قَالَ: فَمَنْ لِي بِهَذَا، قَالاَ: نَحْنُ لَكَ بِهِ، فَمَا سَأَلَهُمَا شَيْئًا إِلَّا قَالاَ: نَحْنُ لَكَ بِهِ، فَصَالَحَهُ، فَقَالَ الحَسَنُ: وَلَقَدْ سَمِعْتُ أَبَا بَكْرَةَ يَقُولُ: رَأَيْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَلَى المِنْبَرِ وَالحَسَنُ بْنُ عَلِيٍّ إِلَى جَنْبِهِ، وَهُوَ يُقْبِلُ عَلَى النَّاسِ مَرَّةً، وَعَلَيْهِ أُخْرَى وَيَقُولُ: «إِنَّ ابْنِي هَذَا سَيِّدٌ وَلَعَلَّ اللَّهَ أَنْ يُصْلِحَ بِهِ بَيْنَ فِئَتَيْنِ عَظِيمَتَيْنِ مِنَ المُسْلِمِينَ»، قَالَ أَبُو عَبْدِ اللَّهِ: " قَالَ لِي عَلِيُّ بْنُ عَبْدِ اللَّهِ: إِنَّمَا ثَبَتَ لَنَا سَمَاعُ الحَسَنِ مِنْ أَبِي بَكْرَةَ، بِهَذَا الحَدِيثِ ".

আবু মূসা রহ. হাসান (বসরী) রহ. হতে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, আল্লাহর কসম, হাসান ইবন আলী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু পর্বত সদৃস সেনাদল নিয়ে মু‘আবিয়া রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর মুখোমুখি হলেন। আমার ইবন আস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বললেন, আমি এমন সেনাদল দেখতে পাচ্ছি যারা প্রতিপক্ষকে হত্যা না করে ফির যাবে না। মু‘আবিয়া রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু তখন বললেন, আল্লাহর কসম! (আর মু‘আবিয়া ও আমর ইবনুল ‘আস) রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু উভয়ের মধ্যে মু‘আবিয়া রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু ছিলেন উত্তম ব্যক্তি। ‘হে ‘আমর! এরা ওদের এবং ওরা এদের হত্যা করলে আমি কাকে দিয়ে লোকের সমস্যার সমাধান করব? তাদের নারীদের কে তত্ত্ববধান করবে? তাদের দূর্বল ও শিশুদের রক্ষণাবেক্ষণ করবে? তারপর তিনি কুরায়শের বানূ আবদে শামস শাখার দু’জন আব্দুর রহমান ইবন সামুরাহ ও আব্দুল্লাহ ইবন আমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুকে হাসান রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর কাছে পাঠালেন। তিনি তাদের বললেন, ‘তোমরা উভয়ে এই লোকটির কাছে যাও এবং তার কাছে (সন্ধির) প্রস্তাব পেশ করো, তাঁর সঙ্গে আরোচনা করো ও তার বক্তব্য জানতে চেষ্টা কর।’ তারা তার কাছে গেলেন এবং তার সঙ্গে কখা বললেন, আলাপ-আলোচনা করলেন এবং তার বক্তব্য জানলেন। হাসান ইবন আলী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু তাদের বললেন, ‘আমরা আব্দুল মুত্তালিবের সন্তান, এই সম্পদ (বায়তুল মালের) আমরা পেয়েছি। আর এরা রক্তপাতে লিপ্ত হয়েছে।’ তারা উভয়ে বললেন, (মু‘আবিয়া রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু) আপনার কাছে এরূপ বক্তব্য পেশ করেছেন। আর আপনার বক্তব্যও জানতে চেয়েছেন ও সন্ধি কামনা করেছেন। তিনি বললেন, ‘এ দায়িত্ব কে নেবে? তারা বললেন, আমরা আপনার জন্য এ দায়িত্ব গ্রহণ করছি।’ এরপর তিনি তাদের কাছে যে সব প্রশ্ন করলেন, তারা (তার জওয়াবে) বললেন, ‘আমরা এ দায়িত্ব নিচ্ছি।’ তারপর তিনি তার সাথে সন্ধি করলেন। হাসান (বসরী) (র) বলেন, আমি আবু বাকরা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুকে বলতে শুনেছিঃ রাসূরুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আমি মিম্বরের উপর দেখেছি, হাসান রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু তাঁর পাশে ছিলেন। তিনি একবার লোকদের দিকে আর একবার তাঁর দিকে তাকাচ্ছিলেন আর বলছিলেন, আমার এ সন্তান নেতৃস্থানীয়। সম্ভবত তাঁর মাধ্যমে আল্লাহ তা‘আলা মুসরমানের দু’টি বড় দলের মধ্যে মীমাংশাকরাবেন।’ আবু আব্দুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, আলী ইবন আব্দুল্লাহ আমাকে বলেছেন যে, এ হাদীসের মাধ্যমেই আবু বাকরা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে হাসানের শ্রুতি আমাদের কাছে প্রমাণিত হয়েছে।[406]

 

 

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ভবিষ্যৎবাণী

‘আম্মার ইবন ইয়াসির রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর শাহাদাত

عَنْ عِكْرِمَةَ، قَالَ لِي ابْنُ عَبَّاسٍ وَلِابْنِهِ عَلِيٍّ: انْطَلِقَا إِلَى أَبِي سَعِيدٍ فَاسْمَعَا مِنْ حَدِيثِهِ، فَانْطَلَقْنَا فَإِذَا هُوَ فِي حَائِطٍ يُصْلِحُهُ، فَأَخَذَ رِدَاءَهُ فَاحْتَبَى، ثُمَّ أَنْشَأَ يُحَدِّثُنَا حَتَّى أَتَى ذِكْرُ بِنَاءِ المَسْجِدِ، فَقَالَ: كُنَّا نَحْمِلُ لَبِنَةً لَبِنَةً وَعَمَّارٌ لَبِنَتَيْنِ لَبِنَتَيْنِ، فَرَآهُ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَيَنْفُضُ التُّرَابَ عَنْهُ، وَيَقُولُ: «وَيْحَ عَمَّارٍ، تَقْتُلُهُ الفِئَةُ البَاغِيَةُ، يَدْعُوهُمْ إِلَى الجَنَّةِ، وَيَدْعُونَهُ إِلَى النَّارِ» قَالَ: يَقُولُ عَمَّارٌ: أَعُوذُ بِاللَّهِ مِنَ الفِتَنِ ".

ইকরিমা (রহ.) বর্ণিত, তিনি বলেন: ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু আমাকে ও তার ছেলে আলী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুকে বললেন, তোমরা উভয়ই আবূ সা’ঈদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু কাছে যাও এবং তাঁর থেকে হদীস শুনে আস। আমরা গেলাম। তখন তিনি এক বাগানে কাজ করছেন। তিনি আমাদেরকে দেখে চাদরে হাঁটু মুড়ি দিয়ে বসলেন এবং পরে হাদিস বর্ণনা শুরু করলেন। শেষ পর্যায়ে তিনি মসজিদে নববী নির্মাণ আলোচনায় আসলেন। তিনি বললেন: আমরা একটা একটা করে কাঁচা ইট বহন করছিলাম আর আম্মার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু দুটো দুটো করে কাঁচা ইট বহন করছিলেন। রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা দেখে তাঁর দেহ থেকে মাটি ঝাড়তে লাগলেন এবং বলতে লাগলেন, আম্মারের জন্য আফসোস, তাকে বিদ্রোহী দল হত্যা করবে। সে তাদেরকে আহবান করবে জান্নাতের দিকে আর তারা আহবান করবে জাহান্নামের দিকে। আবূ সা’ঈদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন: তখন আম্মার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বললেন: আমি ফিতনা থেকে আল্লাহর কাছে পানাহ চাই।[407]

عَنْ أُمِّ سَلَمَةَ، أَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قَالَ لِعَمَّارٍ: «تَقْتُلُكَ الْفِئَةُ الْبَاغِيَةُ».

উম্মে সালামা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আম্মার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুকে বলেছেন, তোমাকে রাষ্ট্রদ্রোহী লোকেরা হত্যা করবে।[408]

 

 

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ভবিষ্যৎবাণী

খাইবার থেকে ইয়াহুদীরা বিতাড়িত হবে।

عَنِ ابْنِ عُمَرَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا، قَالَ: لَمَّا فَدَعَ أَهْلُ خَيْبَرَ عَبْدَ اللَّهِ بْنَ عُمَرَ، قَامَ عُمَرُ خَطِيبًا، فَقَالَ: إِنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ عَامَلَ يَهُودَ خَيْبَرَ عَلَى أَمْوَالِهِمْ، وَقَالَ: «نُقِرُّكُمْ مَا أَقَرَّكُمُ اللَّهُ» وَإِنَّ عَبْدَ اللَّهِ بْنَ عُمَرَ خَرَجَ إِلَى مَالِهِ هُنَاكَ، فَعُدِيَ عَلَيْهِ مِنَ اللَّيْلِ، فَفُدِعَتْ يَدَاهُ وَرِجْلاَهُ، وَلَيْسَ لَنَا هُنَاكَ عَدُوٌّ غَيْرَهُمْ، هُمْ عَدُوُّنَا وَتُهْمَتُنَا وَقَدْ رَأَيْتُ إِجْلاَءَهُمْ، فَلَمَّا أَجْمَعَ عُمَرُ عَلَى ذَلِكَ أَتَاهُ أَحَدُ بَنِي أَبِي الحُقَيْقِ، فَقَالَ: يَا أَمِيرَ المُؤْمِنِينَ، أَتُخْرِجُنَا وَقَدْ أَقَرَّنَا مُحَمَّدٌ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، وَعَامَلَنَا عَلَى الأَمْوَالِ وَشَرَطَ ذَلِكَ لَنَا، فَقَالَ عُمَرُ: أَظَنَنْتَ أَنِّي نَسِيتُ قَوْلَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «كَيْفَ بِكَ إِذَا أُخْرِجْتَ مِنْ خَيْبَرَ تَعْدُو بِكَ قَلُوصُكَ لَيْلَةً بَعْدَ لَيْلَةٍ» فَقَالَ: كَانَتْ هَذِهِ هُزَيْلَةً مِنْ أَبِي القَاسِمِ، قَالَ: كَذَبْتَ يَا عَدُوَّ اللَّهِ، فَأَجْلاَهُمْ عُمَرُ، وَأَعْطَاهُمْ قِيمَةَ مَا كَانَ لَهُمْ مِنَ الثَّمَرِ، مَالًا وَإِبِلًا، وَعُرُوضًا مِنْ أَقْتَابٍ وَحِبَالٍ وَغَيْرِ ذَلِكَ رَوَاهُ حَمَّادُ بْنُ سَلَمَةَ، عَنْ عُبَيْدِ اللَّهِ، أَحْسِبُهُ عَنْ نَافِعٍ، عَنْ ابْنِ عُمَرَ، عَنْ عُمَرَ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اخْتَصَرَهُ.

ইবন উমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, যখন খায়বারবাসীরা আব্দুল্লাহ ইবন উমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর হাত, পা ভেঙ্গে দিল, তখন উমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু ভাষণ দিতে দাঁড়ালেন এবং বললেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খায়বারের ইয়াহূদীদের সাথে তাদের বিষয় সম্পত্তি সম্পর্কে চুক্তি করেছিলেন এবং বলেছিলেন, আল্লাহ তাআলা যতদিন তোমাদের রাখেন, ততদিন আমরাও তোমাদের রাকব। এমতাবস্থায় আব্দুল্লাহ ইবন উমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু তাঁর নিজ সম্পত্তি দেখাশুনা করার জন্য খায়বার গমন করলে এক রাতে তাঁর উপর আক্রমন করা হয় এবং তাঁর দুটি হাত পা ভেঙ্গে দেওয়া হয়। সেখানে ইয়াহূদীরা ছাড়া আর কোনো শত্রু নেই। তারাই আমাদের দুশমন। তাদের উপর আমাদের সন্দেহ। অতএব আমি তাদের নির্বাসিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। উমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু যখন এ ব্যাপারে তাঁর দৃঢ় মত প্রকাশ করলেন, তখন আবু হুকায়ক গোত্রের এক ব্যক্তি এসে বলল, ‘হে আমীরুল মুমিনীন, আপনি কি আমাদের খায়বার থেকে বহিস্কার করবেন? অথচ মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে এখানে অবস্থানের অনুমতি দিয়েছিলেন। আর উক্ত সম্পত্তির ব্যাপারে আমাদের সাথে বর্গাচাষের ব্যবস্থা করেন এবং আমাদের এ শর্তে দেন।’ উমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, ‘তুমি কি মনে করেছ যে, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সে উক্তি ভুলে গিয়েছি, তোমার কি অবস্থা হবে, যখন তোমাকে খায়বার থেকে বের করে দেওয়া হবে এবং তোমার উটগুলো রাতের পর রাত তোমাকে নিয়ে ছুটবে।’ সে বলল, ‘এ উক্তি তো আবুল কাসিম এর পক্স থেকে বিদ্রুপ স্বরূপ ছিল।’ উমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বললেন, ‘হে আল্লাহর দুশমন! তুমি মিথ্যা বলছ।’ তারপর উমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু তাদের নির্বাসিত করেন এবং তাদের ফসলাদি, মালপত্র, উট, লাগাম রশি ইত্যাদি সামগ্রীর মূল্য দিয়ে দেন। রিওয়ায়াতটি হাম্মদ ইবন সালামা (রহ.) উমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু সূত্রে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে সংক্ষিপ্তভাবে বর্ণনা করেন।[409]

 

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ভবিষ্যৎবাণী

এক ব্যক্তি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে জিহাদে শরিক হয়েছেন, অথচ সে জাহান্নামে যাবে।

عَنْ سَهْلِ بْنِ سَعْدٍ السَّاعِدِيِّ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ: أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، التَقَى هُوَ وَالمُشْرِكُونَ، فَاقْتَتَلُوا، فَلَمَّا مَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِلَى عَسْكَرِهِ، وَمَالَ الآخَرُونَ إِلَى عَسْكَرِهِمْ، وَفِي أَصْحَابِ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ رَجُلٌ، لاَ يَدَعُ لَهُمْ شَاذَّةً وَلاَ فَاذَّةً إِلَّا اتَّبَعَهَا يَضْرِبُهَا بِسَيْفِهِ، فَقَالَ: مَا أَجْزَأَ مِنَّا اليَوْمَ أَحَدٌ كَمَا أَجْزَأَ فُلاَنٌ، فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «أَمَا إِنَّهُ مِنْ أَهْلِ النَّارِ»، فَقَالَ رَجُلٌ مِنَ القَوْمِ: أَنَا صَاحِبُهُ، قَالَ: فَخَرَجَ مَعَهُ كُلَّمَا وَقَفَ وَقَفَ مَعَهُ، وَإِذَا أَسْرَعَ أَسْرَعَ مَعَهُ، قَالَ: فَجُرِحَ الرَّجُلُ جُرْحًا شَدِيدًا، فَاسْتَعْجَلَ المَوْتَ، فَوَضَعَ نَصْلَ سَيْفِهِ بِالأَرْضِ، وَذُبَابَهُ بَيْنَ ثَدْيَيْهِ، ثُمَّ تَحَامَلَ عَلَى سَيْفِهِ، فَقَتَلَ نَفْسَهُ، فَخَرَجَ الرَّجُلُ إِلَى رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَقَالَ: أَشْهَدُ أَنَّكَ رَسُولُ اللَّهِ، قَالَ: «وَمَا ذَاكَ؟» قَالَ: الرَّجُلُ الَّذِي ذَكَرْتَ آنِفًا أَنَّهُ مِنْ أَهْلِ النَّارِ، فَأَعْظَمَ النَّاسُ ذَلِكَ، فَقُلْتُ: أَنَا لَكُمْ بِهِ، فَخَرَجْتُ فِي طَلَبِهِ، ثُمَّ جُرِحَ جُرْحًا شَدِيدًا، فَاسْتَعْجَلَ المَوْتَ، فَوَضَعَ نَصْلَ سَيْفِهِ فِي الأَرْضِ وَذُبَابَهُ بَيْنَ ثَدْيَيْهِ ثُمَّ تَحَامَلَ عَلَيْهِ فَقَتَلَ نَفْسَهُ، فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عِنْدَ ذَلِكَ: «إِنَّ الرَّجُلَ لَيَعْمَلُ عَمَلَ أَهْلِ الجَنَّةِ، فِيمَا يَبْدُو لِلنَّاسِ، وَهُوَ مِنْ أَهْلِ النَّارِ، وَإِنَّ الرَّجُلَ لَيَعْمَلُ عَمَلَ أَهْلِ النَّارِ، فِيمَا يَبْدُو لِلنَّاسِ، وَهُوَ مِنْ أَهْلِ الجَنَّةِ».

সাহল ইবন সা‘দ সাঈদী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত যে, একবার রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও মুশরিকদের মধ্যে মুকাবিলা হয় এবং উভয় পক্ষ তুমুল যুদ্ধে লিপ্ত হয়। তারপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজ সৈন্যদলের কাছে ফিরে এলেন, মুশরিকরাও নিজ সৈন্যদলে ফিরে গেল। সেই যুদ্ধে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সঙ্গীদের মধ্যে এমন এক ব্যক্তি ছিল, যে কোনো মুশরিককে দেখলেই তার পশ্চাদ্ধবন করত এবং তাকে তলোয়ার দিয়ে আক্রমন করত। বর্ণনাকরী (সাহল ইবন সা‘দ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু) বলেন, আজ আমাদের কেউ অমুকের মত যুদ্ধ করতে পারেনি। তা শুনে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, সে তো জাহান্নামের বাসিন্দা হবে। একজন সাহাবী বলে উঠলেন, আমি তার সঙ্গী হব। তারপর তিনি তার সাথে বেরিয়ে পড়লেন, সে দাঁড়ালে তিনিও দাঁড়াতেন এবং সে দ্রুত চললে সেও দ্রুত চলতেন। তিনি বললেন, এক সময় সে মারাত্মাকভাবে আহত হলো এবং সে দ্রুত মৃত্যু কামনা করতে লাগল। এক সময় তলোয়ারের বাট মাটিতে লাগল এবং এর তীক্ষ্ণ দিক বুকে চেপে ধরে তার উপর ঝাপিয়ে পড়ে আত্মহত্যা করল। অনুসরণকারী লোকটি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে আসলেন এবং বললেন, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আপনি আল্লাহর রাসূল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, কি ব্যাপার? যে লোকটি সম্পর্কে, আপনি কিছুক্ষণ আগেই বলেছিলেন যে, সে জাহান্নামী হবে। তা শুনে সাহাবীগণ বিষয়টিকে অস্বাভাবিক মনে করলেন। আমি তাদের বললাম যে, আমি লোকটির সম্পর্কে খবর তোমাদের জানাবো। তারপর আমি তার পিছু পিছু বের হলাম এবং সে শীঘ্রই মৃত্যু কামনা করতে থাকল। তারপর তার তলোয়ারের বাট মাটিতে রেখে এর তীক্ষ্ণ ধার বুকে চেপে ধরল এবং তার উপরে ঝাপিয়ে পড়ে আত্মহত্যা করল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন বললেন, ‘মানুষের বাহ্যিক বিচারে অনেক সময় কোনো ব্যক্তি জান্নাতবাসীর মত আমল করতে থাকে, প্রকৃতপক্ষে সে জাহান্নামী হয় এবং অনুরফভাবে মানুষের বাহ্যিক বিচারে কোনো ব্যক্তি জাহান্নামীর মতামল করলেও প্রকৃতপক্ষে সে জান্নাতবাসী হয়।[410]

 

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ভবিষ্যৎবাণী

তাঁর উম্মতের কিছু লোক জিহাদের জন্য সমুদ্রযানে আরোহণ করবে।

عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، أَنَّهُ سَمِعَهُ يَقُولُ: كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَدْخُلُ عَلَى أُمِّ حَرَامٍ بِنْتِ مِلْحَانَ فَتُطْعِمُهُ - وَكَانَتْ أُمُّ حَرَامٍ تَحْتَ عُبَادَةَ بْنِ الصَّامِتِ - فَدَخَلَ عَلَيْهَا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَأَطْعَمَتْهُ وَجَعَلَتْ تَفْلِي رَأْسَهُ، فَنَامَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، ثُمَّ اسْتَيْقَظَ وَهُوَ يَضْحَكُ، قَالَتْ: فَقُلْتُ: وَمَا يُضْحِكُكَ يَا رَسُولَ اللَّهِ؟ قَالَ: " نَاسٌ مِنْ أُمَّتِي عُرِضُوا عَلَيَّ غُزَاةً فِي سَبِيلِ اللَّهِ، يَرْكَبُونَ ثَبَجَ هَذَا البَحْرِ مُلُوكًا عَلَى الأَسِرَّةِ، أَوْ: مِثْلَ المُلُوكِ عَلَى الأَسِرَّةِ "، شَكَّ إِسْحَاقُ، قَالَتْ: فَقُلْتُ: يَا رَسُولَ اللَّهِ، ادْعُ اللَّهَ أَنْ يَجْعَلَنِي مِنْهمْ، فَدَعَا لَهَا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، ثُمَّ وَضَعَ رَأْسَهُ، ثُمَّ اسْتَيْقَظَ وَهُوَ يَضْحَكُ، فَقُلْتُ: وَمَا يُضْحِكُكَ يَا رَسُولَ اللَّهِ؟ قَالَ: «نَاسٌ مِنْ أُمَّتِي عُرِضُوا عَلَيَّ غُزَاةً فِي سَبِيلِ اللَّهِ» - كَمَا قَالَ فِي الأَوَّلِ - قَالَتْ: فَقُلْتُ: يَا رَسُولَ اللَّهِ ادْعُ اللَّهَ أَنْ يَجْعَلَنِي مِنْهُمْ، قَالَ: «أَنْتِ مِنَ الأَوَّلِينَ»، فَرَكِبَتِ البَحْرَ فِي زَمَانِ مُعَاوِيَةَ بْنِ أَبِي سُفْيَانَ، فَصُرِعَتْ عَنْ دَابَّتِهَا حِينَ خَرَجَتْ مِنَ البَحْرِ، فَهَلَكَتْ.

 আনাস ইবন মালিক রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উম্মে হারাম বিন্‌ত মিলহান রাদিয়াল্লাহু ‘আনহার কাছে যাতায়াত করতেন এবং তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে খেতে দিতেন। উম্মে হারাম রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা ছিলেন, উবাদা ইবন সামিত রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর স্ত্রী। একদিন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার ঘরে তাশরীফ নিয়ে গেলে তিনি তাঁকোহার করান এবং তাঁর মথার উকুন বাচতে থাকেন। এক সময় রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম গুমিয়ে পড়েন। তিনি হাসতে হাসতে ঘুম থেকে জাগলেন। উম্মে হারাম রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা বলেন, আমি তাঁকে জিজ্ঞাস করলাম, ‘ইয়া রাসূলুল্লাহ! হাসির কারণ কি?’ তিনি বললেন, ‘আমার উম্মাতের কিছু লোককে আল্লাহর পথে জিহাদরত অবস্থায় আমার সামনে পেশ করা হয়। তারা এ সমুদ্রের মঝে এমনভাবে আরোহী যেমন বাদশাহ তখতের উপর অথবা বলেছেন, বাদশাহর মত তখতে উপবিষ্ট।’ এ শব্দ বর্ণনায় ইসহাক (রহ.) সন্দেহ করেছেন। উম্মে হারাম রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা বলেন, আমি বললাম, ইয়া রাসূলুল্লাহ! আল্লাহর কাছে দো‘আ করুন যেন আমাকে তিনি তাদের অন্তর্ভুক্ত করেন।’ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার জন্য দো‘আ করলেন। এরপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবার মাথা রাখেন (ঘুমিয়ে পড়েন)। তারপর হাসতে হাসতে জেগে উঠলেন। আমি তাঁকে জিজ্ঞাসা করলাম, ‘ইয়া রাসূলুল্লাহ! আপনার হাসার কারণ কি?’ তিনি বললেন, আমার উম্মাতের মধ্যে থেকে আল্লাহর পথে জিহাদরত কিছু লোককে আমার সামনে পেম করা হয়।’ পরবর্তী অংশ প্রথম উক্তির মত। উম্মে হারাম রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা বলেন, আমি বললাম, ইয়া রাসূলুল্লাহ! আপনি আল্লাহর কাছে দো‘আ করুন, যেন আমাকে তাদের অন্তর্ভুক্ত করেন। তিনি বললেন, তুমি তো প্রথম দলের মধ্যেই আছ। তারপর মু‘আবিয়া ইবন আবূ সুফিয়ান রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর সময় উম্মে হারাম রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা জিহাদের উদ্দেশ্যে সামদ্রিক সফরে যান এবং সমুদ্র থেকে যখন অবতরণ করেন তখন তিনি তাঁর সওয়ারী থেকে ছিটকে পড়েন। আর এতে তিনি শাহাদত বরণ করেন।[411]

 

 

মিশর বিজয় সম্পর্কে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ভবিষ্যৎবাণী

عَنْ عَبْدِ الرَّحْمَنِ بْنِ شِمَاسَةَ الْمَهْرِيِّ، قَالَ: سَمِعْتُ أَبَا ذَرٍّ، يَقُولُ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِنَّكُمْ سَتَفْتَحُونَ أَرْضًا يُذْكَرُ فِيهَا الْقِيرَاطُ، فَاسْتَوْصُوا بِأَهْلِهَا خَيْرًا، فَإِنَّ لَهُمْ ذِمَّةً وَرَحِمًا، فَإِذَا رَأَيْتُمْ رَجُلَيْنِ يَقْتَتِلَانِ فِي مَوْضِعِ لَبِنَةٍ، فَاخْرُجْ مِنْهَا» قَالَ: فَمَرَّ بِرَبِيعَةَ، وَعَبْدِ الرَّحْمَنِ، ابْنَيْ شُرَحْبِيلَ ابْنِ حَسَنَةَ، يَتَنَازَعَانِ فِي مَوْضِعِ لَبِنَةٍ، فَخَرَجَ مِنْهَا.

আবদুর রাহমান ইবনে শুমাসাতান মিহরী থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি আবু যার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুকে বলতে শুনেছি, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমরা অচিরেই এমন একটি ভূখন্ড জয় করবে যেখানে কীরাতের (দিরহাম বা দীনারের অংশবিশেষ) প্রচলন আছে। সেখানকার লোকদের সাথে সহানুভূতিপূর্ণ ব্যবহার করবে। কেননা তোমাদের ওপর তাদের অধিকার রয়েছে এবং তাদের সাথে তোমাদের আত্মীয়তার সম্পর্ক রয়েছে (অর্থাৎ ইসমাঈল আলাইহিস সালামের মাতা হাজেরার জন্মভূমি ছিল মিসরে। তিনি আরবদের আদি মাতা)। তোমরা যখন দুই ব্যক্তিকে সেখানে একটি ইটের জায়গায় দাঁড়িয়ে পরষ্পর দ্বন্দ্বে লিপ্ত দেখবে তখন সেখান থেকে চলে আসবে।[412]

عَنْ أَبِي ذَرٍّ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِنَّكُمْ سَتَفْتَحُونَ مِصْرَ وَهِيَ أَرْضٌ يُسَمَّى فِيهَا الْقِيرَاطُ، فَإِذَا فَتَحْتُمُوهَا فَأَحْسِنُوا إِلَى أَهْلِهَا، فَإِنَّ لَهُمْ ذِمَّةً وَرَحِمًا» أَوْ قَالَ «ذِمَّةً وَصِهْرًا، فَإِذَا رَأَيْتَ رَجُلَيْنِ يَخْتَصِمَانِ فِيهَا فِي مَوْضِعِ لَبِنَةٍ، فَاخْرُجْ مِنْهَا» قَالَ: فَرَأَيْتُ عَبْدَ الرَّحْمَنِ بْنَ شُرَحْبِيلَ بْنِ حَسَنَةَ، وَأَخَاهُ رَبِيعَةَ يَخْتَصِمَانِ فِي مَوْضِعِ لَبِنَةٍ فَخَرَجْتُ مِنْهَا.

আবু যার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলছেন, তোমরা অচিরেই মিসর জয় করবে। সেখানে কীরাতের প্রচলন রয়েছে। তোমরা যখন সে দেশ জয় করবে তখন সেখানকার অধিবাসীদের সাথে সহানুভূতিপূর্ণ ব্যবহার করবে। কেননা তোমাদের ওপর তাদের ব্যাপারে দায়িত্ব রয়েছে এবং তাদের সাথে তোমাদের রক্তের সম্পর্ক রয়েছে। অথবা তিনি বলেছেন, তাদের ব্যাপারে তোমাদের দায়িত্ব রয়েছে এবং তাদের সাথে তোমাদের শ্বশুর-জামাইয়ের সম্পর্ক রয়েছে [মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্ত্রী এবং তাঁর পুত্র ইবরাহীম রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর মাতা মারিয়ার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহার জন্মভূমি ছিল মিসর]। তুমি যখন সেখানে দুই ব্যক্তিকে একই ইটের উপর পরস্পর বিবাদে লিপ্ত দেখবে তখন সে দেশ পরিত্যাগ করবে। রাবী বলেন, আমি আবদুর রহমান ইবনে শুরাহবিল ইবনে হাসান ও তার ভাই রবী’আকে সেখানে একটি ইটের স্থানে পরস্পর বিবাদে লিপ্ত দেখলাম। ফলে আমি সেখান থেকে প্রস্থান করে চলে আসলাম। [413]

 

 

আনসারগণ যেসব নিদর্শণ পাবে সে সম্পর্কে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ভবিষ্যৎবাণী 

عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ زَيْدِ بْنِ عَاصِمٍ، قَالَ: لَمَّا أَفَاءَ اللَّهُ عَلَى رَسُولِهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَوْمَ حُنَيْنٍ، قَسَمَ فِي النَّاسِ فِي المُؤَلَّفَةِ قُلُوبُهُمْ، وَلَمْ يُعْطِ الأَنْصَارَ شَيْئًا، فَكَأَنَّهُمْ وَجَدُوا إِذْ لَمْ يُصِبْهُمْ مَا أَصَابَ النَّاسَ، فَخَطَبَهُمْ فَقَالَ: «يَا مَعْشَرَ الأَنْصَارِ، أَلَمْ أَجِدْكُمْ ضُلَّالًا فَهَدَاكُمُ اللَّهُ بِي، وَكُنْتُمْ مُتَفَرِّقِينَ فَأَلَّفَكُمُ اللَّهُ بِي، وَعَالَةً فَأَغْنَاكُمُ اللَّهُ بِي» كُلَّمَا قَالَ شَيْئًا قَالُوا: اللَّهُ وَرَسُولُهُ أَمَنُّ، قَالَ: «مَا يَمْنَعُكُمْ أَنْ تُجِيبُوا رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ». قَالَ: كُلَّمَا قَالَ شَيْئًا، قَالُوا: اللَّهُ وَرَسُولُهُ أَمَنُّ، قَالَ: " لَوْ شِئْتُمْ قُلْتُمْ: جِئْتَنَا كَذَا وَكَذَا، أَتَرْضَوْنَ أَنْ يَذْهَبَ النَّاسُ بِالشَّاةِ وَالبَعِيرِ، وَتَذْهَبُونَ بِالنَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِلَى رِحَالِكُمْ، لَوْلاَ الهِجْرَةُ لَكُنْتُ امْرَأً مِنَ الأَنْصَارِ، وَلَوْ سَلَكَ النَّاسُ وَادِيًا وَشِعْبًا لَسَلَكْتُ وَادِيَ الأَنْصَارِ وَشِعْبَهَا، الأَنْصَارُ شِعَارٌ وَالنَّاسُ دِثَارٌ، إِنَّكُمْ سَتَلْقَوْنَ بَعْدِي أُثْرَةً، فَاصْبِرُوا حَتَّى تَلْقَوْنِي عَلَى الحَوْضِ ".

আবদুল্লাহ্ ইবন যায়দ ইবন আসিম রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, হুনায়নের দিবসে আল্লাহ যখন রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে গনীমতের সম্পদ দান করলেন তখন তিনি ঐগুলো সেসব মানুষের মধ্যে বন্টন করে দিলেন যাদের হৃদয়কে ঈমানের উপর সুদৃঢ় করার প্রয়োজন তিনি অনুভব করেছিলেন। আর আনসারগণকে কিছুই তিনি দেননি। ফলে তাঁরা যেন নাখোশ হয়ে গেলেন। কেননা অন্যান্য লোক যা পেয়েছে তাঁরা তা পান নি। অথবা তিনি বলেছেন, তাঁরা যেন দুঃখিত হয়ে গেলেন। কেননা অন্যান্য লোক যা পেয়েছে তারা তা পাননি। কাজেই নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে সম্বোধন করে বললেন, হে আনসারগণ! আমি কি তোমাদেরকে গুমরাহীর মধ্যে লিপ্ত পাইনি, যার পরে আল্লাহ্ আমার দ্বারা তোমাদেরকে হেদায়েত দান করেছেন? তোমরা ছিলে পরস্পর বিচ্ছিন্ন, যার পর আল্লাহ্ আমার মাধ্যমে তোমাদের পরস্পরকে জুড়ে দিয়েছেন। তোমরা ছিলে রিক্তহস্ত, যার পরে আল্লাহ্ আমার মাধ্যমে তোমাদেরকে অভাবমুক্ত করেছেন। এভাবে যখনই তিনি কোনো কথা বলেছেন তখন আনসারগন জবাবে বলতেন, আল্লাহ্ এবং তাঁর রাসূলই আমাদের উপর অধিক ইহ্সানকারী। তিনি বললেন, আল্লাহর রাসূলের জবাব দিতে তোমাদেরক বাধা দিচ্ছে কিসে? তাঁরা তখনও তিনি যা কিছু বলছেন তার উত্তরে বলে গেলেন, আল্লাহ্ এবাং তাঁর রাসূলই আমাদের উপর অধিক ইহ্সানকারী। তিনি বললেন, তোমরা ইচ্ছা করলে বলতে পার যে, আপনি আমাদের কাছে এমন এমন (সংকটময়) সময়ে এসেছিলেন (যেগুলোকে আমরা বিদূরিত করেছি এবং আপনাকে সাহায্য করেছি) কিন্তু তোমরা কি এ কথার সন্তুষ্ট নও যে, অন্যান্য লোক বকরী ও উট নিয়ে ফিরে যাবে আর তোমরা তোমাদের বাড়ি ফিরে যাবে আল্লাহর নবীকে সাথে নিয়ে। যদি আল্লাহর পক্ষ থেকে আমাকে হিজরত করানোর সিদ্ধান্ত গৃহীত না থাকত তা হলে আমি আনসারদের মধ্যকারই একজন থাকতাম। যদি লোকজন কোনো উপত্যকা ও গিরিপথ দিয়ে চলে তা হলে আমি আনসারদের উপত্যকা ও গিরিপথ দিয়েই চলব। আনসারগণ হলো (নববী) দেহ সংযুক্ত গেঞ্জি আর অন্যান্য লোক হল উপরের জামা। আমার বিদায়ের পর অচিরেই তোমরা দেখতে পাবে অন্যদের অগ্রাধিকার। তখন ধৈর্য ধারণ করবে (দীনের উপর টিকে থাকবে) অবশেষে তোমরা হাউজে কাউসারে আমার সঙ্গে সাক্ষাৎ করবে।[414]

عَنِ الزُّهْرِيِّ، قَالَ: أَخْبَرَنِي أَنَسُ بْنُ مَالِكٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، قَالَ: قَالَ نَاسٌ مِنَ الأَنْصَارِ، حِينَ أَفَاءَ اللَّهُ عَلَى رَسُولِهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَا أَفَاءَ مِنْ أَمْوَالِ هَوَازِنَ، فَطَفِقَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُعْطِي رِجَالًا المِائَةَ مِنَ الإِبِلِ، فَقَالُوا: يَغْفِرُ اللَّهُ لِرَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُعْطِي قُرَيْشًا وَيَتْرُكُنَا، وَسُيُوفُنَا تَقْطُرُ مِنْ دِمَائِهِمْ، قَالَ أَنَسٌ: فَحُدِّثَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِمَقَالَتِهِمْ، فَأَرْسَلَ إِلَى الأَنْصَارِ فَجَمَعَهُمْ فِي قُبَّةٍ مِنْ أَدَمٍ، وَلَمْ يَدْعُ مَعَهُمْ غَيْرَهُمْ، فَلَمَّا اجْتَمَعُوا قَامَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ: «مَا حَدِيثٌ بَلَغَنِي عَنْكُمْ»، فَقَالَ فُقَهَاءُ الأَنْصَارِ: أَمَّا رُؤَسَاؤُنَا يَا رَسُولَ اللَّهِ فَلَمْ يَقُولُوا شَيْئًا، وَأَمَّا نَاسٌ مِنَّا حَدِيثَةٌ أَسْنَانُهُمْ فَقَالُوا: يَغْفِرُ اللَّهُ لِرَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُعْطِي قُرَيْشًا وَيَتْرُكُنَا، وَسُيُوفُنَا تَقْطُرُ مِنْ دِمَائِهِمْ، فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «فَإِنِّي أُعْطِي رِجَالًا حَدِيثِي عَهْدٍ بِكُفْرٍ أَتَأَلَّفُهُمْ، أَمَا تَرْضَوْنَ أَنْ يَذْهَبَ النَّاسُ بِالأَمْوَالِ، وَتَذْهَبُونَ بِالنَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِلَى رِحَالِكُمْ، فَوَاللَّهِ لَمَا تَنْقَلِبُونَ بِهِ خَيْرٌ مِمَّا يَنْقَلِبُونَ بِهِ» قَالُوا: يَا رَسُولَ اللَّهِ قَدْ رَضِينَا، فَقَالَ لَهُمُ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «سَتَجِدُونَ أُثْرَةً شَدِيدَةً، فَاصْبِرُوا حَتَّى تَلْقَوُا اللَّهَ وَرَسُولَهُ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَإِنِّي عَلَى الحَوْضِ» قَالَ أَنَسٌ: «فَلَمْ يَصْبِرُوا».

আনাস ইবন মালিক রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, যখন আল্লাহ্ তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে হাওয়াযিন গোত্রের সম্পদ থেকে গনীমত হিসেবে যতটুকু দান করতে চেয়েছেন দান করলেন, তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কতিপয় লোককে এক একশ’ করে উট দান করতে লাগলেন। (এ অবস্থা দেখে) আনসারদের কিছুসংখ্যক লোক বলে ফেললেন, আল্লাহ্ রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে ক্ষমা করুন, তিনি আমাদেরকে বাদ দিয়ে কুরাইশদেরকে (গনীমতের মাল) দিচ্ছেন। অথচ আমাদের তরবারি থেকে এখনো তাদের তাজা রক্ত টপকাচ্ছে। আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, তাঁদের এ কথা রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বর্ণনা করা হলে তিনি আনসারদের কাছে সংবাদ পাঠালেন এবং তাদেরকে একটি চামড়ার তৈরি তাঁবুতে জামায়েত করলেন। এবং তাঁরা ব্যতীত অন্য কাউকে এখানে উপস্থিত থাকতে অনুমতি দেননি। এরপর তাঁরা সবাই জমায়েত হলে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দাঁড়িয়ে বললেন, তোমাদের কাছ থেকে কি কথা আমার নিকট পৌঁছলো? আনসারদের বিজ্ঞ উলামাবৃন্দ বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ্! আমাদের নেতৃস্থানীয় কেউ তো কিছু বলেনি, তবে আমাদের কতিপয় কমবয়সী লোকেরা বলেছে যে, আল্লাহ্ রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে ক্ষমা করুন, তিনি আমাদেরকে বাদ দিয়ে কুরাইশদেরকে (গনীমতের মাল) দিচ্ছেন। অথচ আমাদের তরবারিগুলো থেকে এখনো তাদের তাজা রক্ত টপকাচ্ছে। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আমি অবশ্য এমন কিছু লোককে (গনীমতের মাল) দিচ্ছি যারা সবেমাত্র কুফর ত্যাগ করে ইসলামে প্রবেশ করেছে। আর তা এ জন্যে যেন তাদের মনকে আমি ঈমানের উপর সুদৃঢ় করতে পারি। তোমরা কি এত সন্তুষ্ট নও যে, অন্যান্য লোক ফিরে যাবে ধন-সম্পদ নিয়ে আর তোমরা বাড়ি ফিরে যাবে (আল্লাহর) নবীকে সঙ্গে নিয়ে? আল্লাহর কসম, তোমরা যে জিনিস নিয়ে ফিরে যাবে তা অনেক উত্তম ঐ ধন-সম্পদ অপেক্ষা, যা নিয়ে তারা ফিরে যাচ্ছে। আনসারগন বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ্ আমরা এতে সন্তুষ্ট থাকলাম। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের বললেন, অচিরেই তোমরা (নিজেদের উপর) অন্যদের প্রাধান্য প্রবলভাবে অনুভব করতে থাকবে। অতএব, আমার মৃত্যুর পর আল্লাহ্এবং তাঁর রাসূলের সঙ্গে সাক্ষাৎ করা পর্যন্ত তোমরা সবর করে থাকবে। আমি হাউজে কাউসারের নিকট থাকন। আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, কিন্তু তাঁরা (আনসাররা) সবর করেননি।[415]

 

আনসারগণের সংখ্যা হ্রাস পাওয়া সম্পর্কে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ভবিষ্যৎবাণী

 

عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا، قَالَ: خَرَجَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي مَرَضِهِ الَّذِي مَاتَ فِيهِ، بِمِلْحَفَةٍ قَدْ عَصَّبَ بِعِصَابَةٍ دَسْمَاءَ، حَتَّى جَلَسَ عَلَى المِنْبَرِ، فَحَمِدَ اللَّهَ وَأَثْنَى عَلَيْهِ، ثُمَّ قَالَ: «أَمَّا بَعْدُ، فَإِنَّ النَّاسَ يَكْثُرُونَ وَيَقِلُّ الأَنْصَارُ، حَتَّى يَكُونُوا فِي النَّاسِ بِمَنْزِلَةِ المِلْحِ فِي الطَّعَامِ، فَمَنْ وَلِيَ مِنْكُمْ شَيْئًا يَضُرُّ فِيهِ قَوْمًا وَيَنْفَعُ فِيهِ آخَرِينَ، فَلْيَقْبَلْ مِنْ مُحْسِنِهِمْ وَيَتَجَاوَزْ عَنْ مُسِيئِهِمْ» فَكَانَ آخِرَ مَجْلِسٍ جَلَسَ بِهِ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ.

ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অন্তিম রোগে আক্রান্ত হওয়ার পর (একদিন বৃহস্পতিবার) একটি চাদর পরিধান করে এবং মাথায় একটি কাল কাপড় দিয়ে পট্টি বেঁধে ঘর থেকে বের হয়ে সোজা মিম্বারের উপর গিয়ে বসলেন। আল্লাহ্ তা‘আলার হামদ ও সানা পাঠ করার পর বললেন, আম্মা বাদ। লোক সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে থাকবে, আর আনসারদের সংখ্যা হ্রাস পেতে থাকবে। ক্রমান্বয়ে তাদের অবস্থা লোকের মাঝে এ রকম দাঁড়াবে যেমন খাদ্যের মধ্যে লবণ। তখন তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি মানুষকে উপকার বা ক্ষতি করার মত ক্ষমতা লাভ করবে তখন সে যেন আনসারদের ভাল কার্যাবলি কবুল করে এবং তাদের ভুল-ভ্রান্তি ক্ষমার চোখে দেখে। এটাই ছিল নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লানের সর্বশেষ মজলিস।[416]

 

হাজ্জাজ ইবন ইউসূফের অত্যাচার ও মুখতার ইবন আবী উবাইদ আস-সাকাফীর মিথ্যাচার সম্পর্কে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ভবিষ্যৎবাণী

عَنْ أَبِي نَوْفَلٍ، رَأَيْتُ عَبْدَ اللهِ بْنَ الزُّبَيْرِ عَلَى عَقَبَةِ الْمَدِينَةِ، قَالَ: فَجَعَلَتْ قُرَيْشٌ تَمُرُّ عَلَيْهِ، وَالنَّاسُ حَتَّى مَرَّ عَلَيْهِ عَبْدُ اللهِ بْنُ عُمَرَ، فَوَقَفَ عَلَيْهِ فَقَالَ: السَّلَامُ عَلَيْكَ، أَبَا خُبَيْبٍ السَّلَامُ عَلَيْكَ أَبَا خُبَيْبٍ السَّلَامُ عَلَيْكَ أَبَا خُبَيْبٍ أَمَا وَاللهِ لَقَدْ كُنْتُ أَنْهَاكَ عَنْ هَذَا، أَمَا وَاللهِ لَقَدْ كُنْتُ أَنْهَاكَ عَنْ هَذَا، أَمَا وَاللهِ لَقَدْ كُنْتُ أَنْهَاكَ عَنْ هَذَا، أَمَا وَاللهِ إِنْ كُنْتَ، مَا عَلِمْتُ، صَوَّامًا، قَوَّامًا، وَصُولًا لِلرَّحِمِ، أَمَا وَاللهِ لَأُمَّةٌ أَنْتَ أَشَرُّهَا لَأُمَّةٌ خَيْرٌ، ثُمَّ نَفَذَ عَبْدُ اللهِ بْنُ عُمَرَ، فَبَلَغَ الْحَجَّاجَ مَوْقِفُ عَبْدِ اللهِ وَقَوْلُهُ، فَأَرْسَلَ إِلَيْهِ، فَأُنْزِلَ عَنْ جِذْعِهِ، فَأُلْقِيَ فِي قُبُورِ الْيَهُودِ، ثُمَّ أَرْسَلَ إِلَى أُمِّهِ أَسْمَاءَ بِنْتِ أَبِي بَكْرٍ، فَأَبَتْ أَنْ تَأْتِيَهُ، فَأَعَادَ عَلَيْهَا الرَّسُولَ: لَتَأْتِيَنِّي أَوْ لَأَبْعَثَنَّ إِلَيْكِ مَنْ يَسْحَبُكِ بِقُرُونِكِ، قَالَ: فَأَبَتْ وَقَالَتْ: وَاللهِ لَا آتِيكَ حَتَّى تَبْعَثَ إِلَيَّ مَنْ يَسْحَبُنِي بِقُرُونِي، قَالَ: فَقَالَ: أَرُونِي سِبْتَيَّ فَأَخَذَ نَعْلَيْهِ، ثُمَّ انْطَلَقَ يَتَوَذَّفُ، حَتَّى دَخَلَ عَلَيْهَا، فَقَالَ: كَيْفَ رَأَيْتِنِي صَنَعْتُ بِعَدُوِّ اللهِ؟ قَالَتْ: رَأَيْتُكَ أَفْسَدْتَ عَلَيْهِ دُنْيَاهُ، وَأَفْسَدَ عَلَيْكَ آخِرَتَكَ، بَلَغَنِي أَنَّكَ تَقُولُ لَهُ: يَا ابْنَ ذَاتِ النِّطَاقَيْنِ أَنَا، وَاللهِ ذَاتُ النِّطَاقَيْنِ، أَمَّا أَحَدُهُمَا فَكُنْتُ أَرْفَعُ بِهِ طَعَامَ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، وَطَعَامَ أَبِي بَكْرٍ مِنَ الدَّوَابِّ، وَأَمَّا الْآخَرُ فَنِطَاقُ الْمَرْأَةِ الَّتِي لَا تَسْتَغْنِي عَنْهُ، أَمَا إِنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ حَدَّثَنَا، «أَنَّ فِي ثَقِيفٍ كَذَّابًا وَمُبِيرًا» فَأَمَّا الْكَذَّابُ فَرَأَيْنَاهُ، وَأَمَّا الْمُبِيرُ فَلَا إِخَالُكَ إِلَّا إِيَّاهُ، قَالَ: فَقَامَ عَنْهَا وَلَمْ يُرَاجِعْهَا.

আবু নাওফাল রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি আবদুল্লাহ ইবন যুবাইর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুকে মদীনার উপত্যকায় দেখলাম। কুরাইশ বংশের লোকেরা তাকে অতিক্রম করে যেত এবং অপরাপর লোকও (অভিশপ্ত হাজ্জাজ তাকে ফাঁসী দিয়ে ঝুলিয়ে রেখেছিল)। অবশেষে আবদুল্লাহ ইবন উমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুও তার কাছ দিয়ে যাচ্ছিলেন। তিনি তার পাশে দাঁড়ালেন এবং বললেন, হে খুবাইরের পিতা! আসসালামু আলাইকা, হে খুবাইরের পিতা! আসসালামু আলাইকা! হে আবু খুবাইব। আসসালামু আলাইকা। আল্লাহর শপথ! আমি তোমাকে এ (খিলাফতের দাবীদার হওয়া) থেকে নিষেধ করেছিলাম। আল্লাহর শপথ! আমি তোমাকে এ থেকে বিরত থাকতে বলেছিলাম। আল্লাহর শপথ! আমি তোমাকে এ থেকে বারণ করেছিলাম। আল্লাহর শপথ! আমি যতদূর জানি- তুমি ছিলে সাওম পালনকারী, রাতে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ইবাদকারী এবং আত্মীয়ার সম্পর্ক সম্মিলনকারী। আল্লাহর শপথ! যারা তোমার সাথে দুর্ব্যবহার করেছে তাদের চেয়ে তুমি উত্তম। অতঃপর আবদুল্লাহ ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু চলে গেলেন। তার অবস্থান এবং মন্তব্য (ইবন যুবাইর সম্পর্কে) হাজ্জাজের কানে পৌঁছলো। এই ইতর লোক পাঠিয়ে তার (ইবনে যুবাইরের) লাশ ফাঁসীকাষ্ঠ থেকে নামিয়ে ইহুদীদের কবরে তা নিক্ষেপ করায়। অতঃপর সে তার (আবদুল্লাহ) মা আসমা বিনতে আবু বাক্র রাদিয়াল্লাহু ‘আনহার কাছে তাকে ডেকে আনার জন্য লোক পাঠায়। কিন্তু তিনি হাজ্জাজের কাছে উপস্থিত হয়ে অস্বীকৃতি জানান। সে আবারো তাকে ডেকে নেওয়ার জন্য দূত পাঠায় এবং বলে যে, তুমি স্বেচ্ছায় আসলে আসো অন্যথায় আমি এমন লোক পাঠাবো, যে তোমার চুলের বেনী ধরে টেনে নিয়ে আসবে। রাবী বলেন, এবারও তিনি অস্বীকৃতি জ্ঞাপন করে বললেন, তুমি যতক্ষণ এমন ব্যক্তিকে না পাঠাবে, যে আমার চুলের বেনী ধরে টেনে নিতে পারে- আমি ততক্ষণ তোমার কাছে যাব না। রাবী বলেন, হাজ্জাজ বলল, আমার জুতা আনো, সে জুতা পরল এবং সদর্পে রওনা হল। অবশেষে আসমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা ঘরে এসে পৌঁছলো। সে বলল, তুমি দেখেছ আমি আল্লাহর দুশমনের সাথে কিরূপ ব্যবহার করেছি। তিনি উত্তরে বললেন, আমি দেখেছি, তুমি তার পার্থিব জীবনকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছ আর সে তোমার আখরাতকে বরবাদ করে দিয়েছে। আমি জানতে পেরেছি তুমি তাকে বলেছ, হে দুটি কোমর-বন্ধনীর পুত্র। আল্লাহর শপথ! আমি নিশ্চিতই দুই কোমরবন্ধ ব্যবহারকারিনী। একটি কোমর বন্ধ হচ্ছে- আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং আবু বাকর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু খাদ্যদ্রব্য বেঁধে তুলে রাখাতাম যাতে পশু তা খেয়ে ফেলতে না পারে। আর দ্বিতীয়টি হচ্ছে সেই কোমরবন্ধ যা মহিলাদের প্রয়োজন। সাবধান! রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের কাছে বর্ণনা করেছেন, “সাকীফ গোত্র থেকে এক মিত্যাবাদী এবং এক নরহত্যাকারীর আবির্ভাব হবে”। মিথ্যাবাদীকে আমরা অবশ্যই দেখেছি। আর গণহত্যাকারী তোমাকে ছাড়া আর কাউকে আমি মনে করি না। এ কথা শুনে হাজ্জাজ উঠে পড়ল এবং তার কথার কোনো প্রতিউত্তর করল না। [417]

 

আলী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর হাতে খাইবার বিজয় সম্পর্কে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ভবিষ্যৎবাণী

عَنْ سَلَمَةَ، قَالَ: كَانَ عَلِيٌّ قَدْ تَخَلَّفَ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي خَيْبَرَ، وَكَانَ بِهِ رَمَدٌ، فَقَالَ: أَنَا أَتَخَلَّفُ عَنْ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَخَرَجَ عَلِيٌّ فَلَحِقَ بِالنَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَلَمَّا كَانَ مَسَاءُ اللَّيْلَةِ الَّتِي فَتَحَهَا اللَّهُ فِي صَبَاحِهَا، قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: " لَأُعْطِيَنَّ الرَّايَةَ، أَوْ لَيَأْخُذَنَّ الرَّايَةَ، غَدًا رَجُلًا يُحِبُّهُ اللَّهُ وَرَسُولُهُ، أَوْ قَالَ: يُحِبُّ اللَّهَ وَرَسُولَهُ، يَفْتَحُ اللَّهُ عَلَيْهِ " فَإِذَا نَحْنُ بِعَلِيٍّ وَمَا نَرْجُوهُ، فَقَالُوا: هَذَا عَلِيٌّ فَأَعْطَاهُ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الرَّايَةَ فَفَتَحَ اللَّهُ عَلَيْهِ.

সালামা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আলী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সঙ্গে খায়বার যুদ্ধে যাননি। কেননা তাঁর চোখে অসুখ ছিল। এতে তিনি (মনে মনে) বললেন, আমি কি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সঙ্গে (জিহাদে) যাব না? তারপর তিনি বেড়িয়ে পড়লেন এবং নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে মিলিত হলেন। যেদিন সকালে আল্লাহ বিজয় দান করলেন, তার পূর্ব রাত্রে (সান্ধ্যায়) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আগামী কাল সকালে আমি এমন এক ব্যক্তিকে পতাকা প্রদান করব, অথবা বলেছিলেন যে এমন এক ব্যক্তি ঝান্ডা গ্রহণ করবে যাঁকে আল্লাহ এবং তার রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ভালবাসেন, অথবা বলেছিলেন, সে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে ভালবাসে। তাঁর মাধ্যমে আল্লাহ তা‘আলা বিজয় দান করাবেন। তারপর আমরা দখেতে পেলাম তিনি হলেন আলী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু, অথচ আমরা তাঁর সম্পর্কে এমনটি আশা করি নি। তাই সকলেই বলে উঠলেন, এই যে আলী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দিলেন এবং তাঁর মাধ্যমেই আল্লাহ তা‘আলা বিজয় দিলেন।[418]

عَنْ سَهْلِ بْنِ سَعْدٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قَالَ: «لَأُعْطِيَنَّ الرَّايَةَ غَدًا رَجُلًا يَفْتَحُ اللَّهُ عَلَى يَدَيْهِ»، قَالَ: فَبَاتَ النَّاسُ يَدُوكُونَ لَيْلَتَهُمْ أَيُّهُمْ يُعْطَاهَا، فَلَمَّا أَصْبَحَ النَّاسُ غَدَوْا عَلَى رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، كُلُّهُمْ يَرْجُو أَنْ يُعْطَاهَا، فَقَالَ: «أَيْنَ عَلِيُّ بْنُ أَبِي طَالِبٍ». فَقَالُوا: يَشْتَكِي عَيْنَيْهِ يَا رَسُولَ اللَّهِ، قَالَ: «فَأَرْسِلُوا إِلَيْهِ فَأْتُونِي بِهِ». فَلَمَّا جَاءَ بَصَقَ فِي عَيْنَيْهِ وَدَعَا لَهُ، فَبَرَأَ حَتَّى كَأَنْ لَمْ يَكُنْ بِهِ وَجَعٌ، فَأَعْطَاهُ الرَّايَةَ، فَقَالَ عَلِيٌّ: يَا رَسُولَ اللَّهِ، أُقَاتِلُهُمْ حَتَّى يَكُونُوا مِثْلَنَا؟ فَقَالَ: «انْفُذْ عَلَى رِسْلِكَ حَتَّى تَنْزِلَ بِسَاحَتِهِمْ، ثُمَّ ادْعُهُمْ إِلَى الإِسْلاَمِ، وَأَخْبِرْهُمْ بِمَا يَجِبُ عَلَيْهِمْ مِنْ حَقِّ اللَّهِ فِيهِ، فَوَاللَّهِ لَأَنْ يَهْدِيَ اللَّهُ بِكَ رَجُلًا وَاحِدًا، خَيْرٌ لَكَ مِنْ أَنْ يَكُونَ لَكَ حُمْرُ النَّعَمِ».

সাহল ইবন সা‘দ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আমি আগামীকাল এমন এক ব্যক্তিকে পতাকা দিব যাঁর হাতে আল্লাহ্ বিজয় দান করবেন। রাবী বলেন, তারা এই আগ্রহ ভরে রাত্রি যাপন করলেন যে, কাকে ঐ পতাকা দেওয়া হবে। যখন সকাল হল তখন সকলেই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট গিয়ে হাযির হলেন। তাদের প্রত্যেকেই এ আশা পোষণ করছিলেন যে, পতাকা তাকে দেওয়া হবে। তারপর তিনি বললেন, আলী ইব্ন আবূ তালিব কোথায়? তাঁরা বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তিনি চক্ষু রোগে আক্রান্ত। তিনি বললেন, কাউকে পাঠিয়ে তাঁকে আমার কাছে নিয়ে এস। যখন তিনি এলেন, তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর দু'চোখে থুথু লাগিয়ে দিলেন এবং তাঁর জন্য দু‘আও করলেন। এতে তিনি এমন সুস্থ হয়ে গেলেন যেন তাঁর চোখে কোনো রোগই ছিলনা। রাসূলে করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে পতাকাটি দিলেন। আলী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ, তারা যতক্ষণ পর্যন্ত আমাদের মত না হয়ে যাবে ততক্ষণ পর্যন্ত আমি কি তাদের সাথে যুদ্ধ চালিয়ে যাব। তিনি বললেন, তুমি সোজা অগ্রসর হতে থাক এবং তাদের আঙ্গিনায় উপনীত হয়ে তাদেরকে ইসলাম গ্রহণের দাওয়াত দাও। তাদের উপর আল্লাহর যে দায়িত্ব ও কর্তব্য বর্তাবে তাও তাদেরকে জানিয়ে দাও। আল্লাহর কসম, তোমাদের দ্বারা যদি একটি মানুষও হিদায়েত প্রাপ্ত হয়, তা হবে তোমার জন্য লাল রঙ্গের উট প্রাপ্তির চেয়েও অধিক উত্তম।[419]

 

পারস্য বিজয় সম্পর্কে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ভবিষ্যৎবাণী

عَنْ جُبَيْرِ بْنِ حَيَّةَ، قَالَ: بَعَثَ عُمَرُ النَّاسَ فِي أَفْنَاءِ الأَمْصَارِ، يُقَاتِلُونَ المُشْرِكِينَ، فَأَسْلَمَ الهُرْمُزَانُ، فَقَالَ: إِنِّي مُسْتَشِيرُكَ فِي مَغَازِيَّ هَذِهِ؟ قَالَ: نَعَمْ مَثَلُهَا وَمَثَلُ مَنْ فِيهَا مِنَ النَّاسِ مِنْ عَدُوِّ المُسْلِمِينَ مَثَلُ طَائِرٍ لَهُ رَأْسٌ وَلَهُ جَنَاحَانِ وَلَهُ رِجْلاَنِ، فَإِنْ كُسِرَ أَحَدُ الجَنَاحَيْنِ نَهَضَتِ الرِّجْلاَنِ بِجَنَاحٍ وَالرَّأْسُ، فَإِنْ كُسِرَ الجَنَاحُ الآخَرُ نَهَضَتِ الرِّجْلاَنِ وَالرَّأْسُ، وَإِنْ شُدِخَ الرَّأْسُ ذَهَبَتِ الرِّجْلاَنِ وَالجَنَاحَانِ وَالرَّأْسُ، فَالرَّأْسُ كِسْرَى، وَالجَنَاحُ قَيْصَرُ، وَالجَنَاحُ الآخَرُ فَارِسُ، فَمُرِ المُسْلِمِينَ، فَلْيَنْفِرُوا إِلَى كِسْرَى، - وَقَالَ بَكْرٌ، وَزِيَادٌ جَمِيعًا عَنْ جُبَيْرِ بْنِ حَيَّةَ - قَالَ: فَنَدَبَنَا عُمَرُ، وَاسْتَعْمَلَ عَلَيْنَا النُّعْمَانَ بْنَ مُقَرِّنٍ، حَتَّى إِذَا كُنَّا بِأَرْضِ العَدُوِّ، وَخَرَجَ عَلَيْنَا عَامِلُ كِسْرَى فِي أَرْبَعِينَ أَلْفًا، فَقَامَ تَرْجُمَانٌ، فَقَالَ: لِيُكَلِّمْنِي رَجُلٌ مِنْكُمْ، فَقَالَ المُغِيرَةُ: سَلْ عَمَّا شِئْتَ؟ قَالَ: مَا أَنْتُمْ؟ قَالَ: نَحْنُ أُنَاسٌ مِنَ العَرَبِ، كُنَّا فِي شَقَاءٍ شَدِيدٍ وَبَلاَءٍ شَدِيدٍ، نَمَصُّ الجِلْدَ وَالنَّوَى مِنَ الجُوعِ، وَنَلْبَسُ الوَبَرَ وَالشَّعَرَ، وَنَعْبُدُ الشَّجَرَ وَالحَجَرَ، فَبَيْنَا نَحْنُ كَذَلِكَ إِذْ بَعَثَ رَبُّ السَّمَوَاتِ وَرَبُّ الأَرَضِينَ - تَعَالَى ذِكْرُهُ وَجَلَّتْ عَظَمَتُهُ - إِلَيْنَا نَبِيًّا مِنْ أَنْفُسِنَا نَعْرِفُ أَبَاهُ وَأُمَّهُ، فَأَمَرَنَا نَبِيُّنَا رَسُولُ رَبِّنَا صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ «أَنْ نُقَاتِلَكُمْ حَتَّى تَعْبُدُوا اللَّهَ وَحْدَهُ، أَوْ تُؤَدُّوا الجِزْيَةَ، وَأَخْبَرَنَا نَبِيُّنَا صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَنْ رِسَالَةِ رَبِّنَا، أَنَّهُ مَنْ قُتِلَ مِنَّا صَارَ إِلَى الجَنَّةِ فِي نَعِيمٍ لَمْ يَرَ مِثْلَهَا قَطُّ، وَمَنْ بَقِيَ مِنَّا مَلَكَ رِقَابَكُمْ».

জুবাইর ইবন হাইয়্যাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, উমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু মুশরিকদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য বিভিন্ন বড় বড় শহরে সেনাদল পাঠালেন। সে সময় হুরমযান (মাদায়েনের শাসক) ইসলা গ্রহণ করে। উমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু তাঁকে বললেন, আমি এ সব ব্যাপারে তোমার পরামর্শ গ্রহণ করতে চাই। তিনি বললেন, ঠিক আছে। এ সকল দেশ এবং দেশে মুসলিমদের দুসমন যেসব লোক বাস করছে, তাদের উদাহরণ একটি পাখির ন্যায়, যার একটি মাথা, দু’টি পা রয়েছে। যদি একটি ডানা ভেঙ্গে দেওয়া হয়, তাহলে দু’টি পাও মাথার সাহায্যে উঠে দাঁড়াবে। আর যদি মাথা ভেঙ্গে দেওয়া হয়, তবে উভয় পা, উভয় ডানা ও মাথা সবই অকেজো হয়ে যাবে। কিসরা শত্রুদের হলো মাথা, কায়সার হলো একটি ডানা, আর পারস্য হলো অপর ডানা। কাজেই মুসলিমগণকে এ আদেশ করুন, তারা যেন কিসরার উপর আক্রমন করে। বকর ও যিয়াদ (রহ.) উভয়ে জুবাইর ইবন হাইয়া রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, তারপর উমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু আমাদের ডাকলেন আর আমাদের উপর নু‘মান ইবন মুকাররিনকে আমির নিযুক্ত করেন। আমরা যখন শত্রু দেশে পৌঁছলাম, কিসরা এক সেনাপতি চল্লিম হাজার সৈন্য নিয়ে আমাদের মুকাবিলায় আসল। তখন তার পক্ষ থেকে একজন দোভাষী দাঁড়িয়ে বলল, তোমাদের মধ্য থেকে একজন আমার সঙ্গে আলোচনা করুক। তখন মুগীরা ইবন (শু‘বা) রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বললেন, যা ইচ্ছা প্রশ্ন করতে পার। সে বলল, তোমরা কারা? তিনি বললেন, আমরা আরবের লোক। দীর্ঘ দিন আমরা অতিশয় দুর্ভাগ্য (কুফরীতে) এবং কঠিন বিপদে (দারিদ্রে) ছিলাম। ক্ষুধার তাড়নায় আমরা চামড়া ও খেজুর গুটি চুষতাম। চুল ও পশম পরিধান করতাম বৃক্ষ ও পাথর পূজা করতাম। আমরা যখন এ অবস্থায় পতিত তখন আসমান ও যমীনের প্রতিপালক আমাদের মধ্য থেকে একজন নবী প্রেরণ করেন। তাঁর পিতা-মাতাকে আমরা চিনি। আমাদের নবী ও আমাদের রবের রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার আদেশ করেছেন, যে পর্যন্ত না তোমরা এক আল্লাহ তা‘আলার ইবাদত কর কিংবা জিযিয়া দাও। আর আমাদের নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের রবের পক্ষ থেকে আমাদেরকে জানিয়েছেন যে, আমাদের মধ্য থেকে যে নিহত হবে, সে জান্নাতে এমন নিয়মত লাভ করবে, যা কখনো দেখা যায়নি। আর আমাদের মধ্য থেকে যারা জীবিত থাকবে তোমাদের গর্দানের মালিক হবে।[420]

 

 

হিরা বিজয় সম্পর্কে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ভবিষ্যৎবাণী

عَنْ عَدِيِّ بْنِ حَاتِمٍ، قَالَ: بَيْنَا أَنَا عِنْدَ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذْ أَتَاهُ رَجُلٌ فَشَكَا إِلَيْهِ الفَاقَةَ، ثُمَّ أَتَاهُ آخَرُ فَشَكَا إِلَيْهِ قَطْعَ السَّبِيلِ، فَقَالَ: «يَا عَدِيُّ، هَلْ رَأَيْتَ الحِيرَةَ؟» قُلْتُ: لَمْ أَرَهَا، وَقَدْ أُنْبِئْتُ عَنْهَا، قَالَ «فَإِنْ طَالَتْ بِكَ حَيَاةٌ، لَتَرَيَنَّ الظَّعِينَةَ تَرْتَحِلُ مِنَ الحِيرَةِ، حَتَّى تَطُوفَ بِالكَعْبَةِ لاَ تَخَافُ أَحَدًا إِلَّا اللَّهَ، - قُلْتُ فِيمَا بَيْنِي وَبَيْنَ نَفْسِي فَأَيْنَ دُعَّارُ طَيِّئٍ الَّذِينَ قَدْ سَعَّرُوا البِلاَدَ -، وَلَئِنْ طَالَتْ بِكَ حَيَاةٌ لَتُفْتَحَنَّ كُنُوزُ كِسْرَى»، قُلْتُ: كِسْرَى بْنِ هُرْمُزَ؟ قَالَ: " كِسْرَى بْنِ هُرْمُزَ، وَلَئِنْ طَالَتْ بِكَ حَيَاةٌ، لَتَرَيَنَّ الرَّجُلَ يُخْرِجُ مِلْءَ كَفِّهِ مِنْ ذَهَبٍ أَوْ فِضَّةٍ، يَطْلُبُ مَنْ يَقْبَلُهُ مِنْهُ فَلاَ يَجِدُ أَحَدًا يَقْبَلُهُ مِنْهُ، وَلَيَلْقَيَنَّ اللَّهَ أَحَدُكُمْ يَوْمَ يَلْقَاهُ، وَلَيْسَ بَيْنَهُ وَبَيْنَهُ تَرْجُمَانٌ يُتَرْجِمُ لَهُ، فَلَيَقُولَنَّ لَهُ: أَلَمْ أَبْعَثْ إِلَيْكَ رَسُولًا فَيُبَلِّغَكَ؟ فَيَقُولُ: بَلَى، فَيَقُولُ: أَلَمْ أُعْطِكَ مَالًا وَأُفْضِلْ عَلَيْكَ؟ فَيَقُولُ: بَلَى، فَيَنْظُرُ عَنْ يَمِينِهِ فَلاَ يَرَى إِلَّا جَهَنَّمَ، وَيَنْظُرُ عَنْ يَسَارِهِ فَلاَ يَرَى إِلَّا جَهَنَّمَ " قَالَ عَدِيٌّ: سَمِعْتُ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، يَقُولُ: «اتَّقُوا النَّارَ وَلَوْ بِشِقَّةِ تَمْرَةٍ فَمَنْ لَمْ يَجِدْ شِقَّةَ تَمْرَةٍ فَبِكَلِمَةٍ طَيِّبَةٍ» قَالَ عَدِيٌّ: فَرَأَيْتُ الظَّعِينَةَ تَرْتَحِلُ مِنَ الحِيرَةِ حَتَّى تَطُوفَ بِالكَعْبَةِ لاَ تَخَافُ إِلَّا اللَّهَ، وَكُنْتُ فِيمَنِ افْتَتَحَ كُنُوزَ كِسْرَى بْنِ هُرْمُزَ وَلَئِنْ طَالَتْ بِكُمْ حَيَاةٌ، لَتَرَوُنَّ مَا قَالَ النَّبِيُّ أَبُو القَاسِمِ: صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُخْرِجُ مِلْءَ كَفِّهِ حَدَّثَنِي عَبْدُ اللَّهِ بْنُ مُحَمَّدٍ، حَدَّثَنَا أَبُو عَاصِمٍ، أَخْبَرَنَا سَعِيدُ بْنُ بِشْرٍ، حَدَّثَنَا أَبُو مُجَاهِدٍ، حَدَّثَنَا مُحِلُّ بْنُ خَلِيفَةَ، سَمِعْتُ عَدِيًّا كُنْتُ عِنْدَ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ.

‘আদি ইবন হাতিম রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মজলিসে বসা ছিলাম। তখন এক ব্যক্তি এসে দুর্ভিক্ষের অভিযোগ করল। তারপর আর এক ব্যক্তি এসে ডাকাতের উৎপাতের কথা বলে অনুযোগ করল। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হে ‘আদী, তুমি কি হীরা নামক স্থানটি দেখেছ? আমি বললাম, দেখি নাই, তবে স্থানটি আমার জানা আছে। তিনি বললেন, তুমি যদি দীর্ঘজীবি হও তবে দেখতে পাবে একজন উট সওয়ার হাওদানশীল মহিলা হীরা থেকে রওয়ানা হয়ে বায়তুল্লাহ তাওয়াফ করে যাবে। আল্লাহ ব্যতীত অন্য কাউকেও ভয় করবেন না। আমি মনে মনে বলতে লাগলাম তাঈ গোত্রের ডাকাতগুলো কোথায় থাকবে যারা ফিতনা ফাসাদের আগুন জ্বালিয়ে দেশকে ছারখার করে দিচ্ছে। তিনি বললেন, তুমি যদি দীর্ঘজীবি হও, তবে নিশ্চয়ই দেখতে পাবে যে, কিসরার (পারস্য সম্রাট) ধনভাণ্ডার কবজা করা হয়েছে। আমি বললাম, কিসরা ইবন হুরমুযের? নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হ্যাঁ, কিসরা ইবন হুরমুযের। তোমার আয়ু যদি দীর্ঘ হয় তবে অবশ্যই তুমি দেখতে পাবে, লোকজন মুষ্টিভরা যাকাতের স্বর্ণ-রৌপ্য নিয়ে বের হবে এবং এমন ব্যক্তিকে তালাশ করে বেড়াবে যে তাদের এ মাল গ্রহণ করে। কিন্তু গ্রহণকারী একটি মানুষও পাবেনা। তোমাদের প্রত্যেকটি মানুষ কিয়ামত দিবসে মহান আল্লাহর সাক্ষাৎ লাভ করবে। তখন তার ও আল্লাহর মাঝে অন্য কোনো দোভাষী থাকবেনা যিনি ভাষান্তর করে বলবেন। আল্লাহ্ বলবেন, আমি কি (দুনিয়াতে) তোমার নিকট আমার বাণী পৌঁছানোর জন্য রাসূল প্রেরণ করিনি? সে বলবে, হ্যাঁ। প্রেরণ করেছেন। আল্লাহ বলবেন, আমি কি তোমাকে ধন-সম্পদ, সন্তানসন্ততি দান করিনি এবং দয়া মেহেরবানী করিনি? তখন সে বলবে, হ্যাঁ, দিয়েছেন। তারপর সে ডান দিকে নজর করবে, জাহান্নাম ব্যতীত আর কিছুই দেখতে পাবে না। আবার সে বাম দিকে নজর করবে, তখনো সে জাহান্নাম ব্যতীত কিছুই দেখবে না। ‘আদী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, অর্ধেকটি খেজুর দান করে হলেও জাহান্নামের আগুন থেকে নিজেকে রক্ষা কর আর যদি তাও করার তৌফিক না হয় তবে মানুষের জন্য মঙ্গলজনক সৎ ও ভাল কথা বলে নিজেকে আগুন থেকে রক্ষা কর। ‘আদী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, আমি নিজে দেখেছি, এক উট সাওয়ার মহিলা হীরা থেকে একাকী রওয়ানা হয়ে কা’বাহ শরীফ তাওয়াফ করেছে। সে আল্লাহ ব্যতীত অন্য কাউকেও ভয় করে না। আর পারস্য সম্রাট কিসরা ইবন হুরমুযের ধনভাণ্ডার যারা দখল করেছিল, তাদের মধ্যে আমি একজন ছিলাম। যদি তোমরা দীর্ঘজীবি হও, তবে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যা বলেছেন, তা স্বচক্ষে দেখতে পাবে। (অর্থাৎ মুষ্টিভরা স্বর্ণ দিতে চাইবে কিন্তু কেউ নিতে চাইবে না।)[421]

 

রোম ও পারস্য ধ্বংস ও তা মুসলিমগণের বিজয় সম্পর্কে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ভবিষ্যৎবাণী

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، أَنَّهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِذَا هَلَكَ كِسْرَى، فَلاَ كِسْرَى بَعْدَهُ، وَإِذَا هَلَكَ قَيْصَرُ فَلاَ قَيْصَرَ بَعْدَهُ، وَالَّذِي نَفْسُ مُحَمَّدٍ بِيَدِهِ، لَتُنْفِقُنَّ كُنُوزَهُمَا فِي سَبِيلِ اللَّهِ».

আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যখন কিসরা (পারস্য সম্রাটের উপাধি) ধ্বংস হবে, তারপর অন্য কোনো কিসরার আবির্ভাব হবে না। যখন কায়সার (রোম সম্রাটের উপাধি) ধ্বংস হবে তখন আর কোনো কায়সারের আবির্ভাব হবে না। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একথাও বলেছেন, ঐ সত্তার কসম যার হাতে আমার প্রাণ নিশ্চয়ই এ দুই সাম্রাজ্যের ধনভাণ্ডার তোমরা আল্লাহর পথে ব্যয় করবে।[422]

عَنْ جَابِرِ بْنِ سَمُرَةَ، رَفَعَهُ، قَالَ: " إِذَا هَلَكَ كِسْرَى فَلاَ كِسْرَى بَعْدَهُ، وَذَكَرَ وَقَالَ: لَتُنْفَقَنَّ كُنُوزُهُمَا فِي سَبِيلِ اللَّهِ ".

জাবির ইবন সামুরা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, কিসরা ধ্বংস হয়ে যাওয়ার পর আর কোনো কিসরা আগমন হবে না এবং কায়সার ধ্বংস হয়ে যাওয়ার পর আর কোনো কায়সারের আগমন হবে না। রাবী উল্লেখ করেন যে, (তিনি আরো বলেছেন) নিশ্চয়ই তাদের ধনভাণ্ডার আল্লাহ্‌র রাস্তায় ব্যয় করা হবে। [423] 

 

মদীনায় যেসব ফিতনা সংঘটিত হবে সে সম্পর্কে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ভবিষ্যৎবাণী

عَنْ أُسَامَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، قَالَ: أَشْرَفَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، عَلَى أُطُمٍ مِنَ الآطَامِ، فَقَالَ: «هَلْ تَرَوْنَ مَا أَرَى؟ إِنِّي أَرَى الفِتَنَ تَقَعُ خِلاَلَ بُيُوتِكُمْ مَوَاقِعَ القَطْرِ».

উসামা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদিন মদিনায় একটি উচু টিলায় আরোহণ করলেন, তারপর (সাহাবায়ে কেরামকে লক্ষ করে) বললেন, আমি যা দেখেছি, তোমরা কি তা দেখতে পাচ্ছ? আমি দেখছি বাড়ি ধারার ন্যায় ফাসাদ ঢুকে পড়ছে তোমাদের ঘরে ঘরে।[424]

একদল হকপন্থী বিজয়ী দল ও কিয়ামত পর্যন্ত টিকেথাকার ব্যাপারে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ভবিষ্যৎবাণী

حَدَّثَنَا قَيْسٌ، سَمِعْتُ المُغِيرَةَ بْنَ شُعْبَةَ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قَالَ: «لاَ يَزَالُ نَاسٌ مِنْ أُمَّتِي ظَاهِرِينَ حَتَّى يَأْتِيَهُمْ أَمْرُ اللَّهِ وَهُمْ ظَاهِرُونَ».

মুগীরা ইবন শু’বা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আমার উম্মতের একটি দল সর্বদা বিজয়ী থাকবে। এমনকি কিয়ামত আসবে তখনো তারা বিজয়ী থাকবে।[425]

حَدَّثَنِي عُمَيْرُ بْنُ هَانِئٍ، أَنَّهُ سَمِعَ مُعَاوِيَةَ، يَقُولُ: سَمِعْتُ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، يَقُولُ: «لاَ يَزَالُ مِنْ أُمَّتِي أُمَّةٌ قَائِمَةٌ بِأَمْرِ اللَّهِ، لاَ يَضُرُّهُمْ مَنْ خَذَلَهُمْ، وَلاَ مَنْ خَالَفَهُمْ، حَتَّى يَأْتِيَهُمْ أَمْرُ اللَّهِ وَهُمْ عَلَى ذَلِكَ» قَالَ عُمَيْرٌ: فَقَالَ مَالِكُ بْنُ يُخَامِرَ: قَالَ مُعَاذٌ: وَهُمْ بِالشَّأْمِ، فَقَالَ مُعَاوِيَةُ: هَذَا مَالِكٌ يَزْعُمُ أَنَّهُ سَمِعَ مُعَاذًا يَقُولُ: وَهُمْ بِالشَّأْمِ.

মু’আবিয়া রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, আমার উম্মতের একটি দল সর্বদা আল্লাহর দীনের উপর অটল থাকবে। তাদেরকে যারা সাহায্য না করবে অথবা তাদের বিরোধীতা করবে, তারা তাদের কোনো প্রকার ক্ষতি করতে পারবে না। এমনকি কিয়ামত আসা পর্যন্ত তাঁরা তাদের অবস্থার উপর মজবুত থাকবে। উমাইর ইবন হানী (রহ.) মালিক ইবন ইউখামিরের (রহ.) বরাত দিয়ে বলেন, মু’আয রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেছেন, ঐ দলটি সিরিয়ায় অবস্থান করবে। মু’আবিয়া (রহ.) বলেন, মালিক (রহ.) এর ধারণা যে, ঐ দলটি সিরিয়ায় অবস্থান করবে বলে মু’আয রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেছেন।[426]

 

নবুওয়তের মিথ্যাদাবীদার কিছু দাজ্জাল সম্পর্কে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ভবিষ্যৎবাণী

عَنْ ثَوْبَانَ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: " إِنَّ اللهَ زَوَى لِي الْأَرْضَ، فَرَأَيْتُ مَشَارِقَهَا وَمَغَارِبَهَا، وَإِنَّ أُمَّتِي سَيَبْلُغُ مُلْكُهَا مَا زُوِيَ لِي مِنْهَا، وَأُعْطِيتُ الْكَنْزَيْنِ الْأَحْمَرَ وَالْأَبْيَضَ، وَإِنِّي سَأَلْتُ رَبِّي لِأُمَّتِي أَنْ لَا يُهْلِكَهَا بِسَنَةٍ عَامَّةٍ، وَأَنْ لَا يُسَلِّطَ عَلَيْهِمْ عَدُوًّا مِنْ سِوَى أَنْفُسِهِمْ، فَيَسْتَبِيحَ بَيْضَتَهُمْ، وَإِنَّ رَبِّي قَالَ: يَا مُحَمَّدُ إِنِّي إِذَا قَضَيْتُ قَضَاءً فَإِنَّهُ لَا يُرَدُّ، وَإِنِّي أَعْطَيْتُكَ لِأُمَّتِكَ أَنْ لَا أُهْلِكَهُمْ بِسَنَةٍ عَامَّةٍ، وَأَنْ لَا أُسَلِّطَ عَلَيْهِمْ عَدُوًّا مِنْ سِوَى أَنْفُسِهِمْ، يَسْتَبِيحُ بَيْضَتَهُمْ، وَلَوِ اجْتَمَعَ عَلَيْهِمْ مَنْ بِأَقْطَارِهَا - أَوْ قَالَ مَنْ بَيْنَ أَقْطَارِهَا - حَتَّى يَكُونَ بَعْضُهُمْ يُهْلِكُ بَعْضًا، وَيَسْبِي بَعْضُهُمْ بَعْضًا ".

সাওবান রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আল্লাহ সমন্ত পৃথিবীকে ভাজ করে আমার সামনে রেখে দিয়েছেন। অতঃপর আমি এর পূর্ব দিগন্ত হতে পশ্চিম দিগন্ত পর্যন্ত দেখে নিয়েছি। পৃথিবীর যে পরিমাণ অংশ শুটিয়ে আমার সম্মুখে রাখা হয়েছিল সে পর্যন্ত আমার উম্মাতের রাজত্ব পৌছবে। আমাকে লাল ও সাদা দু-টি ধনাগার দেওয়া হয়েছে। আমি আমার উম্মাতের জন্য আমার প্রতিপালকের নিকট এ দুআ করেছি, যেন তিনি তাদেরকে সাধারণ দুর্ভিক্ষের দ্বারা ধ্বংসনা করেন এবং যেন তিনি তাদের উপর নিজেদের ব্যতীত এমন কোনো শক্রকে চাপিয়ে না দেন যারা তাদের দলকে ভেঙ্গে টুকরা টুকরা করে দিবে। এ কথা শুনে আমার প্রতিপালক বললেন, হে মুহাম্মদ! আমি যা সিদ্ধান্ত করি তা কখনো প্রতিহত হয় না। আমি তোমার দুআ কবুল করেছি। আমি তোমার উম্মাতকে সাধারণ দুর্ভিক্ষের দ্বারা ধ্বংস করবো না এবং তাদের উপর তাদের নিজেদের ব্যতীত অন্য এমন কোন শক্রকে চাপিয়ে দেবো না যারা তাদের সমষ্টিকে বিক্ষিপ্ত ও ধ্বংস করতে সক্ষম হবে। যদিও তিনি বিভিন্ন প্রান্ত হতে লোক সমবেত হয়ে চেষ্টা করে না কেন। তবে মুসলিমগণ পরস্পর একে অপরকে ধ্বংস করবে এবং একে অপরকে বন্দী করবে।[427]

عَنْ ثَوْبَانَ، أَنَّ نَبِيَّ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قَالَ: «إِنَّ اللهَ تَعَالَى زَوَى لِي الْأَرْضَ، حَتَّى رَأَيْتُ مَشَارِقَهَا وَمَغَارِبَهَا، وَأَعْطَانِي الْكَنْزَيْنِ الْأَحْمَرَ وَالْأَبْيَضَ» ثُمَّ ذَكَرَ نَحْوَ حَدِيثِ أَيُّوبَ، عَنْ أَبِي قِلَابَةَ.

সাওবান রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, পৃথিবীকে গুটিয়ে আল্লাহ তায়ালা আমার সামনে পেশ করেছেন। আমি এর পূর্ব দিগন্ত হতে পশ্চিম দিগন্ত পর্যন্ত দেখে নিয়েছি। আল্লাহ তা‘আলা আমাকে লাল ও সাদা দুটি ধন-ভাণ্ডার দান করেছেন। অতঃপর কাতাদা (রহ.) আইউবের সুত্রে আবু কেলাবা (রহ.) হতে বর্ণিত হাদীসের অনুরূপ বর্ণনা করেছেন।[428]

 


 

মানুষ আল্লাহর শুরু সম্পর্কে সন্দেহ করবে এ ব্যাপারে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ভবিষ্যৎবাণী

عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَبْدِ الرَّحْمَنِ، سَمِعْتُ أَنَسَ بْنَ مَالِكٍ، يَقُولُ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: " لَنْ يَبْرَحَ النَّاسُ يَتَسَاءَلُونَ حَتَّى يَقُولُوا: هَذَا اللَّهُ خَالِقُ كُلِّ شَيْءٍ، فَمَنْ خَلَقَ اللَّهَ ".

আনাস ইবন মালিক রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, লোকেরা পরস্পরে প্রশ্ন করতে থাকবে যে, ইনি আল্লাহ সবকিছুরই স্রষ্টা, তবে আল্লাহকে কে সৃষ্টি করলেন?

قَالَ أَبُو هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: " يَأْتِي الشَّيْطَانُ أَحَدَكُمْ فَيَقُولُ: مَنْ خَلَقَ كَذَا، مَنْ خَلَقَ كَذَا، حَتَّى يَقُولَ: مَنْ خَلَقَ رَبَّكَ؟ فَإِذَا بَلَغَهُ فَلْيَسْتَعِذْ بِاللَّهِ وَلْيَنْتَهِ ".

আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমাদের কারো কাছে শংতান আসতে পারে এবং সে বলতে পারে, এ বস্তু সৃষ্টি করেছেন? ঐ বস্তু সৃষ্টি করেছে? এরূপ প্রশ্ন করতে করতে শেস পর্যণ্ত বলে বসবে, তোমার প্রতিপালককে কে সৃষ্টি করেছে? যখন বিষয়টি এ পর্যায়ে পৌঁছে যাবে তখন সে যেন অবশ্যই আল্লাহর কাছে পানাহ চায় এবং বিরত হয়ে যায়।[429]

 

কিছু ফিতনা সম্পর্কে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ভবিষ্যৎবাণী, যা তাঁর ইন্তিকালের পরে সংঘটিত হয়েছিল।

عَنِ ابْنِ المُسَيِّبِ، وَأَبِي سَلَمَةَ بْنِ عَبْدِ الرَّحْمَنِ، أَنَّ أَبَا هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «سَتَكُونُ فِتَنٌ القَاعِدُ فِيهَا خَيْرٌ مِنَ القَائِمِ، وَالقَائِمُ فِيهَا خَيْرٌ مِنَ المَاشِي، وَالمَاشِي فِيهَا خَيْرٌ مِنَ السَّاعِي، وَمَنْ يُشْرِفْ لَهَا تَسْتَشْرِفْهُ، وَمَنْ وَجَدَ مَلْجَأً أَوْ مَعَاذًا فَلْيَعُذْ بِهِ»

عَنْ نَوْفَلِ بْنِ مُعَاوِيَةَ، مِثْلَ حَدِيثِ أَبِي هُرَيْرَةَ، هَذَا إِلَّا أَنَّ أَبَا بَكْرٍ يَزِيدُ «مِنَ الصَّلاَةِ صَلاَةٌ مَنْ فَاتَتْهُ فَكَأَنَّمَا وُتِرَ أَهْلَهُ وَمَالَهُ».

আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বর্ণনা করেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, অচিরেই অসংখ্য সর্বগ্রাসী ফিতনা ফাসাদ আসতে থাকবে। ঐ সময় বসা ব্যক্তি দাঁড়ানো ব্যক্তির চেয়ে উত্তম (নিরাপদ), দাঁড়ানো ব্যক্তি চলমান ব্যক্তি হতে অধিক রক্ষিত আর চলমান ব্যক্তি ধাবমান ব্যক্তির চেয়ে অধিক বিপদমুক্ত। যে ব্যক্তি ফিতনার দিকে চোখ তুলে তাকাবে ফিতনা তাকে গ্রাস করবে। তখন যদি কোনো ব্যক্তি তাঁর দীন রক্ষার জন্য কোনো ঠিকানা ঠিকানা অথবা নিরাপদ আশ্রয় পায়, তবে সেখানে আশ্রয় গ্রহণ করাই উচিৎ হবে। ইবন শিহাব যুহরী (র.) নাওফাল ইবন মু’আবিয়া রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর হাদীসের অনুরূপই বর্ণনা করেছেন। তবে অতিরিক্ত আর একটি কথাও বর্ণনা করেছেন যে এমন একটি সালাত রয়েছে (আসর) যে ব্যক্তির ঐ সালাত কাযা হয়ে গেল, তার পরিবার পরিজন ধন-সম্পদ সবই যেন ধ্বংস হয়ে গেল।[430]

 

মুসলিমগণ যখন সুদ ও দুনিয়াদারীতে পতিত হবে তখন তাদের অধঃপতন সম্পর্কে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ভবিষ্যৎবাণী

عَنْ أَبِي أُمَامَةَ البَاهِلِيِّ، قَالَ: وَرَأَى سِكَّةً وَشَيْئًا مِنْ آلَةِ الحَرْثِ، فَقَالَ: سَمِعْتُ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: «لاَ يَدْخُلُ هَذَا بَيْتَ قَوْمٍ إِلَّا أَدْخَلَهُ اللَّهُ الذُّلَّ».

আবূ উমামা বাহিলী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, লাঙ্গলের হাল এবং কিছু কৃষি যন্ত্রপাতি দেখে বললেন, আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি এটা যে সম্প্রদায়ের ঘরে প্রবেশ করে, আল্লাহ্সেখানে অপমান প্রবেশ করান।[431]

 

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ভবিষ্যৎবাণী

সূদের দ্বারা সম্পদ বাড়ালে পরিণামে তার সম্পদ হ্রাসপ্রাপ্ত হবেই।

عَنِ ابْنِ مَسْعُودٍ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قَالَ: «مَا أَحَدٌ أَكْثَرَ مِنَ الرِّبَا، إِلَّا كَانَ عَاقِبَةُ أَمْرِهِ إِلَى قِلَّةٍ».

ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যে ব্যক্তি সূদের দ্বারা সম্পদ বাড়িয়েছে, পরিণামে তার সম্পদ হ্রাসপ্রাপ্ত হবেই।[432]

জালিম শাসকদের সম্পর্কে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ভবিষ্যৎবাণী

حَدَّثَنَا زَيْدُ بْنُ وَهْبٍ، سَمِعْتُ عَبْدَ اللَّهِ، قَالَ: قَالَ لَنَا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِنَّكُمْ سَتَرَوْنَ بَعْدِي أَثَرَةً وَأُمُورًا تُنْكِرُونَهَا» قَالُوا: فَمَا تَأْمُرُنَا يَا رَسُولَ اللَّهِ؟ قَالَ: «أَدُّوا إِلَيْهِمْ حَقَّهُمْ، وَسَلُوا اللَّهَ حَقَّكُمْ».

আবদুল্লাহ ইবন মাসউদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের বলেছেন: আমার পরে তোমরা অবশ্যই ব্যক্তিস্বার্থকে প্রাধান্য দেওয়ার প্রবণতা লক্ষ্য করবে। এবং এমন কিছু বিষয় দেখতে পাবে, যা তোমরা পছন্দ করবে না। তাঁরা জিজ্ঞাসা করলেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! তাহলে আমাদের জন্য কি হুকুম করছেন? উত্তরে তিনি বললেন: তাদের হক পরিপূর্ণরূপে আদায় করবে, আর তোমাদের প্রাপ্য আল্লাহর কাছে চাইবে।[433]

عَنْ كَعْبِ بْنِ عُجْرَةَ قَالَ: خَرَجَ عَلَيْنَا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَنَحْنُ تِسْعَةٌ، فَقَالَ: «إِنَّهُ سَتَكُونُ بَعْدِي أُمَرَاءُ مَنْ صَدَّقَهُمْ بِكَذِبِهِمْ، وَأَعَانَهُمْ عَلَى ظُلْمِهِمْ، فَلَيْسَ مِنِّي وَلَسْتُ مِنْهُ، وَلَيْسَ بِوَارِدٍ عَلَيَّ الْحَوْضَ، وَمَنْ لَمْ يُصَدِّقْهُمْ بِكَذِبِهِمْ، وَلَمْ يُعِنْهُمْ عَلَى ظُلْمِهِمْ، فَهُوَ مِنِّي وَأَنَا مِنْهُ، وَهُوَ وَارِدٌ عَلَيَّ الْحَوْضَ».

কাব ইবন উজরা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বর্ণিত, তিনি বলেন: রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের নিকট আগমন করলেন, তখন আমরা ছিলাম নয়জন। তিনি বললেন, দেখ, আমার পর শাসক হবে, যে ব্যক্তি তাদের মিথ্যাকে স্বীকার করবে, আর অত্যাচারে তাদের সাহায্য করবে, সে আমার দলভূক্ত নয় এবং আমার সাথে তার কোনো সম্পর্ক থাকবে না। কিয়ামতের দিন সে আমার হাওযে আসবে না, আর যারা এ সকল শাসকের মিথ্যাকে সত্য বলবে না, আর জুলুমেও তাদের সাহায্য করবে না; সে আমার সাথী এবং আমিও তার সাথী আর এ ব্যক্তি আমার হাওযে আগমন করবে।[434]

عَنْ كَعْبِ بْنِ عُجْرَةَ قَالَ: خَرَجَ إِلَيْنَا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَنَحْنُ تِسْعَةٌ خَمْسَةٌ وَأَرْبَعَةٌ، أَحَدُ الْعَدَدَيْنِ مِنَ الْعَرَبِ، وَالْآخَرُ مِنَ الْعَجَمِ، فَقَالَ: «اسْمَعُوا، هَلْ سَمِعْتُمْ أَنَّهُ سَتَكُونُ بَعْدِي أُمَرَاءُ، مَنْ دَخَلَ عَلَيْهِمْ فَصَدَّقَهُمْ بِكَذِبِهِمْ، وَأَعَانَهُمْ عَلَى ظُلْمِهِمْ، فَلَيْسَ مِنِّي وَلَسْتُ مِنْهُ، وَلَيْسَ يَرِدُ عَلَيَّ الْحَوْضَ، وَمَنْ لَمْ يَدْخُلْ عَلَيْهِمْ، وَلَمْ يُصَدِّقْهُمْ بِكَذِبِهِمْ، وَلَمْ يُعِنْهُمْ عَلَى ظُلْمِهِمْ، فَهُوَ مِنِّي وَأَنَا مِنْهُ، وَسَيَرِدُ عَلَيَّ الْحَوْضَ».

কাব ইবন উজরা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা নয় ব্যক্তি ছিলাম, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের নিকট আগমন করলেন। আমাদের পাচ ব্যক্তি আরবী, আর চার ব্যক্তি ছিল অনারব। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, শুন, তোমরা শুনে থাকবে যে, আমার পরে শাসক হবে। যারা তাদের নিকট গিয়ে তাদের মিথ্যাকে সত্য বলে প্রতিপাদন করবে, আর অত্যাচারে তাদের সাহায্য করবে আমি তার নই, আর সেও আমার নয়। সে আমার হাওযে আসতে পারবে না। আর যারা তাদের নিকট যাবে না তাদের মিথ্যাকে সত্য প্রতিপাদন করবে না এবং তাদের অত্যাচারে সাহায্য করবে না সে হবে আমার সাথী এবং আমিও হবো তার সাথী, আর সে আমার হাওযে আগমন করবে।[435]

عَنْ عَمْرِو بْنِ مَيْمُونٍ الْأَوْدِيِّ، قَالَ: قَدِمَ عَلَيْنَا مُعَاذُ بْنُ جَبَلٍ الْيَمَنَ رَسُولُ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِلَيْنَا، قَالَ: فَسَمِعْتُ تَكْبِيرَهُ مَعَ الْفَجْرِ رَجُلٌ أَجَشُّ الصَّوْتِ، قَالَ: فَأُلْقِيَتْ عَلَيْهِ مَحَبَّتِي فَمَا فَارَقْتُهُ حَتَّى دَفَنْتُهُ بِالشَّامِ مَيِّتًا، ثُمَّ نَظَرْتُ إِلَى أَفْقَهِ النَّاسِ بَعْدَهُ فَأَتَيْتُ ابْنَ مَسْعُودٍ فَلَزِمْتُهُ حَتَّى مَاتَ، فَقَالَ: قَالَ لِي رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «كَيْفَ بِكُمْ إِذَا أَتَتْ عَلَيْكُمْ أُمَرَاءُ يُصَلُّونَ الصَّلَاةَ لِغَيْرِ مِيقَاتِهَا»، قُلْتُ: فَمَا تَأْمُرُنِي إِنْ أَدْرَكَنِي ذَلِكَ يَا رَسُولَ اللَّهِ قَالَ: «صَلِّ الصَّلَاةَ لِمِيقَاتِهَا وَاجْعَلْ صَلَاتَكَ مَعَهُمْ سُبْحَةً».

আব্দুর রহমান ইবন ইব্রাহীম আমর ইবন মায়মূন (রহ.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, মু‘আয ইবন জাবাল রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতিনিধি হিসাবে আমাদের নিকট ইয়ামনে আগমন করেন। ফজরেব নামাযে তাঁর কন্ঠস্বর বড় ছিল। এবং তাঁর সাথে আমার প্রগাঢ় মহব্বত সৃষ্টি হওয়ায় আমি তাঁর সাথে অবস্থান করতাম। অতঃপর শামদেশে তিনি ইন্তেকাল করলে আমি তাঁকে সেখানে দাফন করি তাঁর ইন্তেকালের পর আমি অপর একজন জ্ঞান তাপস সাহাবীর অন্বেষণে বের হয়ে ইবন মাসউদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর খিদমতে হাযির হই এবং তাঁর ইন্তেকাল পর্যন্ত তাঁর সাথে অবস্থান করি একদা হযরত ইবন মাসউদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাকে বলেন, যখন শাসকবর্গ বিলম্বে সালাত আদায় করবে তখন তুমি কি করবে? আমি বলি- ইয়া রাসূল্লাল্লাহ্! এমতাবস্থায় আপনি আমাকে কি করার নির্দেশ দেন? তিনি বলেন, তুমি নির্ধারিত সময়ে একাকী সালাত আদায় করবে। অতঃপর তাদের সাথে জামাআতে আদায়কৃত সালাত পুনরায় নফল হিসাবে আদায় করবে।[436]

عَنِ الزُّهْرِيِّ، قَالَ: كَانَ مُحَمَّدُ بْنُ جُبَيْرِ بْنِ مُطْعِمٍ يُحَدِّثُ أَنَّهُ بَلَغَ مُعَاوِيَةَ وَهُوَ عِنْدَهُ فِي وَفْدٍ مِنْ قُرَيْشٍ: أَنَّ عَبْدَ اللَّهِ بْنَ عَمْرِو بْنِ العَاصِ يُحَدِّثُ أَنَّهُ سَيَكُونُ مَلِكٌ مِنْ قَحْطَانَ، فَغَضِبَ مُعَاوِيَةُ، فَقَامَ فَأَثْنَى عَلَى اللَّهِ بِمَا هُوَ أَهْلُهُ، ثُمَّ قَالَ: أَمَّا بَعْدُ، فَإِنَّهُ بَلَغَنِي أَنَّ رِجَالًا مِنْكُمْ يَتَحَدَّثُونَ أَحَادِيثَ لَيْسَتْ فِي كِتَابِ اللَّهِ، وَلاَ تُؤْثَرُ عَنْ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَأُولَئِكَ جُهَّالُكُمْ، فَإِيَّاكُمْ وَالأَمَانِيَّ الَّتِي تُضِلُّ أَهْلَهَا، فَإِنِّي سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ «إِنَّ هَذَا الأَمْرَ فِي قُرَيْشٍ لاَ يُعَادِيهِمْ أَحَدٌ، إِلَّا كَبَّهُ اللَّهُ عَلَى وَجْهِهِ، مَا أَقَامُوا الدِّينَ».

মুহাম্মদ ইবন জুবায়ের ইবন মুত্'ঈম (রহ.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, মু'আবিয়া রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর নিকট কুরাইশ প্রতিনিধিদের সহিত তার উপস্থিতিতে সংবাদ পৌছলো যে, আবদুল্লাহ ইবন আমর ইবনুল আস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বর্ণনা করেন, অচিরেই কাহতান বংশীয় একজন বাদশাহর আবির্ভাব ঘটবে। ইহা শুনে মু'আবীয়া রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু ক্রোধান্বিত হয়ে খুত্বা দেওয়ার জন্য দাঁড়িয়ে আল্লাহর যথাযোগ্য হামদ ও সানার পর তিনি বলেন, আমি জানতে পেরেছি, তোমাদের মধ্য হতে কিছু সংখ্যক লোক এমন সব কথাবার্তা বলতে শুরু করেছ যা আল্লাহর কিতাবে নেই এবং রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকেও বর্ণিত হয়নি। এরাই মূর্খ, এদের থেকে সাবধান থাক এবং এরূপ কাল্পনিক ধারনা হতে সতর্ক থাক যা-এর পোষণকারীকে বিপথগামী করে। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আমি বলতে শুনেছি যে, যতদিন তারা দীন কায়েমে নিয়োজিত থাকবে ততদিন খিলাফত ও শাসন ক্ষমতা কুরাইশদের হাতেই থাকবে। এ বিষয়ে যে-ই তাদের সহিত শত্রুতা করবে আল্লাহ তাকে অধঃমুখে নিক্ষেপ করবেন (অর্থাৎ লাঞ্ছিত ও অপমানিত করবেন)।[437]

 

 

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ভবিষ্যৎবাণী

মানুষ অজ্ঞ লোকদেরকে রাজা বাদশাহ বানাবে 

عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَمْرِو بْنِ العَاصِ قَالَ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: «إِنَّ اللَّهَ لاَ يَقْبِضُ العِلْمَ انْتِزَاعًا يَنْتَزِعُهُ مِنَ العِبَادِ، وَلَكِنْ يَقْبِضُ العِلْمَ بِقَبْضِ العُلَمَاءِ، حَتَّى إِذَا لَمْ يُبْقِ عَالِمًا اتَّخَذَ النَّاسُ رُءُوسًا جُهَّالًا، فَسُئِلُوا فَأَفْتَوْا بِغَيْرِ عِلْمٍ، فَضَلُّوا وَأَضَلُّوا».

আবদুল্লাহ্ ইবন ‘আমর ইবনুল ‘আস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি যে, আল্লাহ্ তা‘আলা বান্দার অন্তর থেকে ইলম বের করে উঠিয়ে নেবেন না; বরং আলিমদের উঠিয়ে নেওয়ার মাধ্যমেই ইলম উঠিয়ে নেবেন। যখন কোনো আলিম বাকী থাকবে না তখন লোকেরা জাহিলদেরই নেতা হিসেবে গ্রহণ করবে। তাদের জিজ্ঞাসা করা হবে, তারা না জেনেই ফতোয়া দিবে। ফলে তারা নিজেরাও গোমরাহ হবে, আর অপরকেও গোমরাহ করবে।[438]

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: بَيْنَمَا النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي مَجْلِسٍ يُحَدِّثُ القَوْمَ، جَاءَهُ أَعْرَابِيٌّ فَقَالَ: مَتَى السَّاعَةُ؟ فَمَضَى رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُحَدِّثُ، فَقَالَ بَعْضُ القَوْمِ: سَمِعَ مَا قَالَ فَكَرِهَ مَا قَالَ. وَقَالَ بَعْضُهُمْ: بَلْ لَمْ يَسْمَعْ، حَتَّى إِذَا قَضَى حَدِيثَهُ قَالَ: «أَيْنَ - أُرَاهُ - السَّائِلُ عَنِ السَّاعَةِ» قَالَ: هَا أَنَا يَا رَسُولَ اللَّهِ، قَالَ: «فَإِذَا ضُيِّعَتِ الأَمَانَةُ فَانْتَظِرِ السَّاعَةَ»، قَالَ: كَيْفَ إِضَاعَتُهَا؟ قَالَ: «إِذَا وُسِّدَ الأَمْرُ إِلَى غَيْرِ أَهْلِهِ فَانْتَظِرِ السَّاعَةَ».

আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ একবার রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মজলিসে লোকদের সামনে কিছু আলোচনা করছিলেন। ইতিমধ্যে তাঁর কাছে একজন বেদু্ঈন এসে প্রশ্ন করলেন, ‘কিয়ামত কবে?’ রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর আলোচনায় রত রইলেন। এতে কেউ কেউ বললেন, লোকটি য বলেছে তিনি তা শুনেছেন কিন্তু তার কথা পছন্দ করেন নি। আর কেউ কেউ বললেন বরং তিনি শুনতেই পান নি। রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আলোচনা শেষ করে বললেন, ‘কিয়ামত সম্পর্কে প্রশ্নকারী লোকটি কোথয়?’ সে বলল, ‘এই যে আমি, ইয়া রাসূলুল্লাহ্!’ তিনি বললেন, ‘যখন আমানত নষ্ট করা হয় তখন কিয়ামতের প্রতীক্ষা করবে।’ সে বলল, ‘কিভাবে আমানত নষ্ট করা হয়?’ তিনি বললেন, ‘যখন কোনো কাজের দায়িত্ব অনুপযুক্ত লোকের প্রতি ন্যস্ত হয়, তখন তুমি কিয়ামতের প্রতীক্ষা করবে।’[439]

 

 

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ভবিষ্যৎবাণী

মহামারী মদীনায় প্রবেশ করতে পারবে না।

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «لاَ يَدْخُلُ المَدِينَةَ المَسِيحُ، وَلاَ الطَّاعُونُ».

আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, মদীনা নগরীতে প্রবেশ করতে পারবে না মাসীহ দাজ্জাল, আর না মহামারী।[440]

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ভবিষ্যৎবাণী

আমার উম্মত তিয়াত্তর দলে বিভক্ত হবে।

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «افْتَرَقَتِ الْيَهُودُ عَلَى إِحْدَى أَوْ ثِنْتَيْنِ وَسَبْعِينَ فِرْقَةً، وَتَفَرَّقَتِ النَّصَارَى عَلَى إِحْدَى أَوْ ثِنْتَيْنِ وَسَبْعِينَ فِرْقَةً، وَتَفْتَرِقُ أُمَّتِي عَلَى ثَلَاثٍ وَسَبْعِينَ فِرْقَةً».

আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ইয়য়াহূদীরা একাত্তর বা বাহাত্তর ফিরকায় (দলে) বিভক্ত হয়েছে; নাসারারাও একাত্তর বা বাহাত্তর দলে বিভক্ত, আর আমার উম্মাত তিয়াত্তর দলে বিভক্ত হবে।[441]

عَنْ مُعَاوِيَةَ بْنِ أَبِي سُفْيَانَ، أَنَّهُ قَامَ فِينَا فَقَالَ: أَلَا إِنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَامَ فِينَا فَقَالَ: " أَلَا إِنَّ مَنْ قَبْلَكُمْ مِنْ أَهْلِ الْكِتَابِ افْتَرَقُوا عَلَى ثِنْتَيْنِ وَسَبْعِينَ مِلَّةً، وَإِنَّ هَذِهِ الْمِلَّةَ سَتَفْتَرِقُ عَلَى ثَلَاثٍ وَسَبْعِينَ: ثِنْتَانِ وَسَبْعُونَ فِي النَّارِ، وَوَاحِدَةٌ فِي الْجَنَّةِ، وَهِيَ الْجَمَاعَةُ «زَادَ ابْنُ يَحْيَى، وَعَمْرٌو فِي حَدِيثَيْهِمَا» وَإِنَّهُ سَيَخْرُجُ مِنْ أُمَّتِي أَقْوَامٌ تَجَارَى بِهِمْ تِلْكَ الْأَهْوَاءُ، كَمَا يَتَجَارَى الْكَلْبُ لِصَاحِبِهِ " وَقَالَ عَمْرٌو: «الْكَلْبُ بِصَاحِبِهِ لَا يَبْقَى مِنْهُ عِرْقٌ وَلَا مَفْصِلٌ إِلَّا دَخَلَهُ».

মু‘আবিয়া ইবন আবূ সুফিয়ান রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের মাঝে দাঁড়িয়ে বলেন, জেনে রাখ! তোমাদের আগের আহলে-কিতাব (ইয়াহূদ ও নাসারা)গণ বাহাত্তর ফিরকায় বিভক্ত হয়েছে, আর এ মিল্লাতের লোকগণ অদূর ভবিষ্যতে তিয়াত্তর ফিরকায় বিভক্ত হবে। এক ফিরকা হবে জান্নাতী; আর তারা ঐ জামাআতভূক্ত, যারা আল্লাহর কিতাব এবং তাঁর রাসূলের সুন্নাতের অনুসারী হবে। রাবী ইবন ইয়াহ্ইয়া এবং আমর (রহ.) তাদের হাদীসে এরূপ অতিরিক্ত বর্ণনা করেছেন যে, আমার উম্মতের মধ্যে অদূর ভবিষ্যতে এমন একদল লোক সৃষ্টি হবে, যাদের মাঝে গুমরাহী এভাবে বিস্তার লাভ করবে, যেমন ক্ষিপ্ত কুকুরের কাঁমড়ানোর ফলে সৃষ্ট রোগ (যা রোগীকে পাগল বানিয়ে দেয়)। রাবী আমার (রহ.) বলেন।, ক্ষিপ্ত কুকুরের দংশন জনিত রোগ - এমন একটা মারাত্নক ব্যাধি যার বিষাক্ত প্রভাব থেকে রোগীর দেহের রগ ও জোড় কিছুই রক্ষা পায় না।[442]

حَدَّثَنِي عَبْدُ الرَّحْمَنِ بْنُ عَمْرٍو السُّلَمِيُّ، وَحُجْرُ بْنُ حُجْرٍ، قَالَا: أَتَيْنَا الْعِرْبَاضَ بْنَ سَارِيَةَ، وَهُوَ مِمَّنْ نَزَلَ فِيهِ {وَلَا عَلَى الَّذِينَ إِذَا مَا أَتَوْكَ لِتَحْمِلَهُمْ قُلْتَ لَا أَجِدُ مَا أَحْمِلُكُمْ عَلَيْهِ} [التوبة: 92] فَسَلَّمْنَا، وَقُلْنَا: أَتَيْنَاكَ زَائِرِينَ وَعَائِدِينَ وَمُقْتَبِسِينَ، فَقَالَ الْعِرْبَاضُ: صَلَّى بِنَا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ذَاتَ يَوْمٍ، ثُمَّ أَقْبَلَ عَلَيْنَا فَوَعَظَنَا مَوْعِظَةً بَلِيغَةً ذَرَفَتْ مِنْهَا الْعُيُونُ وَوَجِلَتْ مِنْهَا الْقُلُوبُ، فَقَالَ قَائِلٌ: يَا رَسُولَ اللَّهِ كَأَنَّ هَذِهِ مَوْعِظَةُ مُوَدِّعٍ، فَمَاذَا تَعْهَدُ إِلَيْنَا؟ فَقَالَ «أُوصِيكُمْ بِتَقْوَى اللَّهِ وَالسَّمْعِ وَالطَّاعَةِ، وَإِنْ عَبْدًا حَبَشِيًّا، فَإِنَّهُ مَنْ يَعِشْ مِنْكُمْ بَعْدِي فَسَيَرَى اخْتِلَافًا كَثِيرًا، فَعَلَيْكُمْ بِسُنَّتِي وَسُنَّةِ الْخُلَفَاءِ الْمَهْدِيِّينَ الرَّاشِدِينَ، تَمَسَّكُوا بِهَا وَعَضُّوا عَلَيْهَا بِالنَّوَاجِذِ، وَإِيَّاكُمْ وَمُحْدَثَاتِ الْأُمُورِ، فَإِنَّ كُلَّ مُحْدَثَةٍ بِدْعَةٌ، وَكُلَّ بِدْعَةٍ ضَلَالَةٌ».

হাজার ইবন হাজার (রহ.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা আমরা ইরবাদ ইবন সারিয়া রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর নিকট গমন করি, যার শানে এ আয়াত নাযিল হয়, “তাদের জন্য কোনো অসুবিধা নেই, যারা আপনার নিকট এ জন্য আসে যে, আপনি তাদের জন্য বাহনের ব্যবস্থা করবেন। আপনি বলেন, আমি তো তোমাদের জন্য কোনো বাহন পাই না”। [সূরা তাওবা: ৯২] রাবী বলেন, আমরা তাঁর কাছে উপস্থিত হয়ে তাঁকে সালাম করি এবং বলি, আমরা আপনাকে দেখার জন্য, আপনার খিদমতের জন্য এবং আপনার কাছ থেকে কিছু সংগ্রহের জন্য এসেছি। তখন তিনি বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের সঙ্গে সালাত আদায়ের পর, আমাদের দিকে ফিরে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভাষণ দেন, যাতে আমাদের চোখ অশ্রু ভারাক্রান্ত হয় এবং অন্তর ভীত-সন্ত্রস্থ হয়। আমাদের মধ্যে একজন বলেনঃ ইয়া রাসূলুল্লাহ! মনে হচ্ছে এ আপনার বিদায়ী ভাষণ, কাজেই আপনি আমাদের আরো কিছু অছীয়ত করুন। তখন তিনি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আমি তোমাদের তাকওয়া অবলম্বনের জন্য বলছি এবং শোনা ও মানার জন্যও, যদিও তোমাদের আমীর হাবশী গোলাম হয়। কেননা, তোমাদের মাঝে যারা আমার পরে জীবিত থাকবে, তারা বহু মতভেদ দেখতে পাবে। এমতাবস্থায় তোমাদের উচিত হবে আমার ও আমার খুলাফায়ে-রাশেদার সুন্নাতের অনুসরণ করা, যারা সত্য ও ন্যায়ের অনুসারী। তোমরা তাদের দৃঢ়ভাবে অনুসরণ করবে। তোমরা বিদ'আতের অনুসরণ ও অনুকরণ করা হতে দূরে থাকবে। কেননা, প্রত্যেক নতুন কথাই বিদ'আত এবং প্রত্যেক বিদ'আতই গুমরাহী।[443]

 

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ভবিষ্যৎবাণী

ইলম উঠে যাবে এবং যিনা ব্যভিচার বৃদ্ধি পাবে।

عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: " إِنَّ مِنْ أَشْرَاطِ السَّاعَةِ: أَنْ يُرْفَعَ العِلْمُ وَيَثْبُتَ الجَهْلُ، وَيُشْرَبَ الخَمْرُ، وَيَظْهَرَ الزِّنَا ".

আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন যে, কিয়ামতের কিছু নিদর্শন হল, ইলম লোপ পাবে, অজ্ঞাতার বিস্তৃতি ঘটবে, মদপান ব্যাপক হবে এবং ব্যভিচার ছড়িয়ে পড়বে।[444]

عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ، قَالَ: لَأُحَدِّثَنَّكُمْ حَدِيثًا لاَ يُحَدِّثُكُمْ أَحَدٌ بَعْدِي، سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: " مِنْ أَشْرَاطِ السَّاعَةِ: أَنْ يَقِلَّ العِلْمُ، وَيَظْهَرَ الجَهْلُ، وَيَظْهَرَ الزِّنَا، وَتَكْثُرَ النِّسَاءُ، وَيَقِلَّ الرِّجَالُ، حَتَّى يَكُونَ لِخَمْسِينَ امْرَأَةً القَيِّمُ الوَاحِدُ ".

আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি তোমাদের এমন একটি হাদীস বর্ণনা করব যা আমার পর তোমাদের কাছে আর কেউ বর্ণনা করবেন না। আমি রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি যে, কিয়ামতের কিছু নিদর্শন হল, ইলম কমে যাবে, অজ্ঞতার প্রসার ঘটবে, ব্যভিচার ছড়িয়ে পড়বে, স্ত্রীলোকের সংখ্যা বেড়ে যাবে এবং পুরুষের সংখ্যা কমে যাবে, এমনকি প্রতি পঞ্চাশজন স্ত্রীলোকের জন্য মাত্র একজন পুরুষ হবে তত্ত্বাবধায়ক।[445]

عَنْ سَالِمٍ، قَالَ: سَمِعْتُ أَبَا هُرَيْرَةَ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «يُقْبَضُ العِلْمُ، وَيَظْهَرُ الجَهْلُ وَالفِتَنُ، وَيَكْثُرُ الهَرْجُ»، قِيلَ يَا رَسُولَ اللَّهِ، وَمَا الهَرْجُ؟ فَقَالَ: «هَكَذَا بِيَدِهِ فَحَرَّفَهَا، كَأَنَّهُ يُرِيدُ القَتْلَ».

আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, (শেষ যামানায়) ‘ইল্‌ম তুলে নেওয়া হবে, অজ্ঞতা ও ফিতনার প্রসার ঘটবে এবং ‘হারাজ’ বেড়ে যাবে। জিজ্ঞাসা করা হল, ইয়া রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! ‘হারাজ’ কি? তিনি হাত দিয়ে ইশারা করে বললেন, ‘এ রকম।’ যেন তিনি এর দ্বারা ‘হত্যা’ বুঝিয়েছিলেন।[446]

 

 

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ভবিষ্যৎবাণী

তুর্কীদের সাথে মুসলিমদের যুদ্ধ হবে।

حَدَّثَنَا عَمْرُو بْنُ تَغْلِبَ، قَالَ: قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِنَّ مِنْ أَشْرَاطِ السَّاعَةِ أَنْ تُقَاتِلُوا قَوْمًا يَنْتَعِلُونَ نِعَالَ الشَّعَرِ، وَإِنَّ مِنْ أَشْرَاطِ السَّاعَةِ أَنْ تُقَاتِلُوا قَوْمًا عِرَاضَ الوُجُوهِ، كَأَنَّ وُجُوهَهُمُ المَجَانُّ المُطْرَقَةُ».

আম্‌র ইবন তাগলিব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন কিয়ামতের আলামতসমূহের একটি এই যে, তোমরা এমন এক জাতির বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে, যারা পশমের জুতা পরিধান করবে। কিয়ামতের আর একটি আলামত এই যে, তোমরা এমন এক জাতির বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে, যাদের মূখ হবে চওড়া, যেন তাদের মুখমন্ডল পিটানো চামড়ার ঢাল।[447]

قَالَ أَبُو هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «لاَ تَقُومُ السَّاعَةُ حَتَّى تُقَاتِلُوا التُّرْكَ، صِغَارَ الأَعْيُنِ، حُمْرَ الوُجُوهِ، ذُلْفَ الأُنُوفِ، كَأَنَّ وُجُوهَهُمُ المَجَانُّ المُطْرَقَةُ، وَلاَ تَقُومُ السَّاعَةُ حَتَّى تُقَاتِلُوا قَوْمًا نِعَالُهُمُ الشَّعَرُ».

আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ততদিন কিয়ামত সংঘটিত হবে না, তোমরা এমন তুর্ক জাতির বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে, যাদের চোখ ছোট, চেহারা লাল, নাক চেপ্‌টা এবং মুখমন্ডল পেটানো চামড়ার ঢালের ন্যায়। আর ততদিন কিয়ামত সংঘটিত হবে না, যতদিন না তোমরা এমন এক জাতির বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে, যাদের জুতা হবে পশমের।[448]

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قَالَ: «لاَ تَقُومُ السَّاعَةُ حَتَّى تُقَاتِلُوا قَوْمًا نِعَالُهُمُ الشَّعَرُ، وَلاَ تَقُومُ السَّاعَةُ حَتَّى تُقَاتِلُوا قَوْمًا كَأَنَّ وُجُوهَهُمُ المَجَانُّ المُطْرَقَةُ»، قَالَ سُفْيَانُ وَزَادَ فِيهِ أَبُو الزِّنَادِ، عَنِ الأَعْرَجِ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رِوَايَةً: «صِغَارَ الأَعْيُنِ، ذُلْفَ الأُنُوفِ، كَأَنَّ وُجُوهَهُمْ، المَجَانُّ المُطْرَقَةُ».

আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, কিয়ামত সংঘটিত হবে না যতক্ষণ না তোমরা এমন জাতির বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে যাদের জুতা হবে পশমের। আর কিয়ামত সংঘটিত হবে না যতক্ষন না তোমরা এমন জাতির বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে, যাদের মুখমন্ডল হবে পিটানো চামড়ার ঢালের ন্যায়। সুফিয়ান (রহ.) বলেন, আ‘রাজ সূত্রে আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে আবুযযিনাদ এই রেওয়ায়তে অতিরিক্ত বর্ণনা করেন; তাদের চোখ হবে ছোট, নাক হবে চেপ্টা, তাদের চেহারা যেন পিটানো ঢালের ন্যায়।[449]

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ভবিষ্যৎবাণী

তাঁর উম্মত দুনিয়ার ব্যাপারে অতিউৎসাহী হবে।

عَنْ أَبِي سَعِيدٍ الخُدْرِيِّ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِنَّ أَكْثَرَ مَا أَخَافُ عَلَيْكُمْ مَا يُخْرِجُ اللَّهُ لَكُمْ مِنْ بَرَكَاتِ الأَرْضِ» قِيلَ: وَمَا بَرَكَاتُ الأَرْضِ؟ قَالَ: «زَهْرَةُ الدُّنْيَا» فَقَالَ لَهُ رَجُلٌ: هَلْ يَأْتِي الخَيْرُ بِالشَّرِّ؟ فَصَمَتَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ حَتَّى ظَنَنَّا أَنَّهُ يُنْزَلُ عَلَيْهِ، ثُمَّ جَعَلَ يَمْسَحُ عَنْ جَبِينِهِ، فَقَالَ: «أَيْنَ السَّائِلُ؟» قَالَ: أَنَا - قَالَ أَبُو سَعِيدٍ: لَقَدْ حَمِدْنَاهُ حِينَ طَلَعَ ذَلِكَ - قَالَ: «لاَ يَأْتِي الخَيْرُ إِلَّا بِالخَيْرِ، إِنَّ هَذَا المَالَ خَضِرَةٌ حُلْوَةٌ، وَإِنَّ كُلَّ مَا أَنْبَتَ الرَّبِيعُ يَقْتُلُ حَبَطًا أَوْ يُلِمُّ، إِلَّا آكِلَةَ الخَضِرَةِ، أَكَلَتْ حَتَّى إِذَا امْتَدَّتْ خَاصِرَتَاهَا، اسْتَقْبَلَتِ الشَّمْسَ، فَاجْتَرَّتْ وَثَلَطَتْ وَبَالَتْ، ثُمَّ عَادَتْ فَأَكَلَتْ. وَإِنَّ هَذَا المَالَ حُلْوَةٌ، مَنْ أَخَذَهُ بِحَقِّهِ، وَوَضَعَهُ فِي حَقِّهِ، فَنِعْمَ المَعُونَةُ هُوَ، وَمَنْ أَخَذَهُ بِغَيْرِ حَقِّهِ كَانَ كَالَّذِي يَأْكُلُ وَلاَ يَشْبَعُ».

আবূ সাঈদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আল্লাহ তা‘আলা তোমাদের জন্যে যমীনের বরকতসমূহ প্রকাশিত করে দেবেন। আমি তোমাদের জন্যে এ ব্যাপারেই সর্বাধিক আশংকা করছি। জিজ্ঞাসা করা হলো, যমীনের বরকতসমূহ কি? তিনি বললেন, দুনিয়ার ঝাঁকজমক। তখন এক ব্যাক্তি তার কাছে বললেন, ভালো কি মন্দ নিয়ে আসবে? তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কিছুক্ষন নীরব থাকলেন, যদ্দরুন আমরা ধারণা করলাম যে, এখন তার উপর অহী নাযিল হচ্ছে। এরপর তিনি তার কপাল থেকে ঘাম মুছে জিজ্ঞাসা করলেন, প্রশ্নকারী কোথায়? সে বলল, আমি, আবূ সাঈদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, যখন এটি প্রকাশ পেল, তখন আমরা প্রশ্নকারীর প্রশংসা করলাম। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ভালো একমাত্র ভালোকেই বয়ে আনে। নিশ্চয়ই এ ধনেদৈালত সবুজ শ্যামল সুমিষ্ট। অবশ্য বসন্ত যে সবজি উৎপাদন করে, তা ভক্ষনকারী পশুকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেয় অথবা নিকটে করে দেয়, তবে প্রানী পেট ভরে খেয়ে সূর্য মুখী হয়ে জাবর কাটে, মল-মূত্র ত্যাগ করে এবং পুনঃখায় (এর অবস্থা ভিন্ন)। এ পৃথিবীর ধনদৈালত তদ্রুপ সুমিষ্ট, যে ব্যক্তি তা সৎভাবে গ্রহণ করবে এবং সৎকাজে ব্যায় করবে, তা তার খুবই সাহায্যকারী হবে। আর যে তা অন্যায়ভাবে গ্রহন করবে, তার অবস্থা হবে ঔ ব্যাক্তির মত যে খেতে থাকে আর পরিতৃপ্ত হয় না।[450]

عَنْ عُقْبَةَ بْنِ عَامِرٍ: أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ خَرَجَ يَوْمًا، فَصَلَّى عَلَى أَهْلِ أُحُدٍ صَلاَتَهُ عَلَى المَيِّتِ، ثُمَّ انْصَرَفَ إِلَى المِنْبَرِ، فَقَالَ: «إِنِّي فَرَطُكُمْ، وَأَنَا شَهِيدٌ عَلَيْكُمْ، وَإِنِّي وَاللَّهِ لَأَنْظُرُ إِلَى حَوْضِي الآنَ، وَإِنِّي قَدْ أُعْطِيتُ مَفَاتِيحَ خَزَائِنِ الأَرْضِ - أَوْ مَفَاتِيحَ الأَرْضِ - وَإِنِّي وَاللَّهِ مَا أَخَافُ عَلَيْكُمْ أَنْ تُشْرِكُوا بَعْدِي، وَلَكِنِّي أَخَافُ عَلَيْكُمْ أَنْ تَنَافَسُوا فِيهَا».

‘উকবা ইবন আমির রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত যে, একদিন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বের হলেন এবং উহুদের শহীদানের উপর সালাত আদায় করলেন, যেমন তিনি মুর্দার উপর সালাত আদায় করে থাকেন। তারপর মিম্বরে আরোহন করে বললেনঃ আমি তোমাদের অগ্রণী, আমি তোমাদের সাক্ষী হব। আল্লাহর কসম! নিশ্চয়ই আমি আমার —হাওয্' কে এখন দেখছি। আমাকে তো জমিনের ধনাগারের চাবিসমূহ অথবা জমিনের চাবিসমূহ দেওয়া হয়েছে। আল্লাহর কসম! আমি তোমাদের উপর এ আশংকা করছি যে, তোমরা দুনিয়ার ধন সম্পদে আসক্ত হয়ে যাবে।[451]

عَنْ مُوسَى بْنِ عُقْبَةَ، قَالَ ابْنُ شِهَابٍ: حَدَّثَنِي عُرْوَةُ بْنُ الزُّبَيْرِ، أَنَّ المِسْوَرَ بْنَ مَخْرَمَةَ، أَخْبَرَهُ: أَنَّ عَمْرَو بْنَ عَوْفٍ، وَهُوَ حَلِيفٌ لِبَنِي عَامِرِ بْنِ لُؤَيٍّ، كَانَ شَهِدَ بَدْرًا مَعَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، أَخْبَرَهُ: أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بَعَثَ أَبَا عُبَيْدَةَ بْنَ الجَرَّاحِ إِلَى البَحْرَيْنِ يَأْتِي بِجِزْيَتِهَا، وَكَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ هُوَ صَالَحَ أَهْلَ البَحْرَيْنِ، وَأَمَّرَ عَلَيْهِمُ العَلاَءَ بْنَ الحَضْرَمِيِّ، فَقَدِمَ أَبُو عُبَيْدَةَ بِمَالٍ مِنَ البَحْرَيْنِ، فَسَمِعَتِ الأَنْصَارُ بِقُدُومِهِ، فَوَافَتْهُ صَلاَةَ الصُّبْحِ مَعَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَلَمَّا انْصَرَفَ تَعَرَّضُوا لَهُ، فَتَبَسَّمَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ حِينَ رَآهُمْ، وَقَالَ: «أَظُنُّكُمْ سَمِعْتُمْ بِقُدُومِ أَبِي عُبَيْدَةَ، وَأَنَّهُ جَاءَ بِشَيْءٍ» قَالُوا: أَجَلْ يَا رَسُولَ اللَّهِ، قَالَ: «فَأَبْشِرُوا وَأَمِّلُوا مَا يَسُرُّكُمْ، فَوَاللَّهِ مَا الفَقْرَ أَخْشَى عَلَيْكُمْ، وَلَكِنْ أَخْشَى عَلَيْكُمْ أَنْ تُبْسَطَ عَلَيْكُمُ الدُّنْيَا، كَمَا بُسِطَتْ عَلَى مَنْ كَانَ قَبْلَكُمْ، فَتَنَافَسُوهَا كَمَا تَنَافَسُوهَا، وَتُلْهِيَكُمْ كَمَا أَلْهَتْهُمْ».

আমর ইবন আওফ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু, তিনি বনী আমর ইবন লুওয়াই- এর সাথে চুক্তিবদ্ধ ছিলেন এবং রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সঙ্গে বদরের যুদ্ধে ও শরীক ছিলেন। তিনি বর্ণনা করেন, একবার রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবূ উবায়দা ইবন জাররাহ্ কে জিজিয়া আদায় করার জন্য বাহরাইন পাঠালেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বাহরাইন বাসীদের সঙ্গে সন্ধি করেছিলেন এবং তাদের উপর আলা ইবন হাযরামী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুকে আমীর নিযুক্ত করেছিলেন। আবূ উবায়দা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বাহরাইন থেকে মালামাল নিয়ে আসেন, আনসারগণ তার আগমনের সংবাদ শুনে ফজরের সালাতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সঙ্গে শরীক হন। সালাত শেষে তারা তার সামনে এলেন। তিনি তাঁদের দেখে হেসে বললেন, আমি মনে করি তোমরা আবূ উবায়দা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর আগমনের এবং তিনি যে মাল নিয়ে এসেছেন সে সুসংবাদ শুনেছ। তাঁরা বললেন ইয়া রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, তিনি বললেন, তোমরা এ সুসংবাদ গ্রহন করো এবং তোমরা আশা রেখো, যা তোমাদেরকে খুশি করবে, তবে, আল্লাহর কসম! আমি তোমাদের উপর দরিদ্রতার আশংকা করছি না বরং আশংকা করছি যে, তোমাদের পূর্ববর্তী উম্মতের উপর যেমন দুনিয়া প্রশস্ত করে দেওয়া হয়েছিল, তেমনি তোমাদের উপরও দুনিয়া প্রশস্ত করে দেওয়া হবে। আর তোমরা যা নয় তা তোমাদের আখিরাত বিমুখ করে ফেলবে, যেমন তাদের জন্যে আখিরাত বিমুখ করেছিল।[452]

 

 

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ভবিষ্যৎবাণী

কিছু লোক কুরাআন বেচে খাবে।  

عَنْ جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ، قَالَ: خَرَجَ عَلَيْنَا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَنَحْنُ نَقْرَأُ الْقُرْآنَ وَفِينَا الْأَعْرَابِيُّ وَالْأَعْجَمِيُّ، فَقَالَ: «اقْرَءُوا فَكُلٌّ حَسَنٌ وَسَيَجِيءُ أَقْوَامٌ يُقِيمُونَهُ كَمَا يُقَامُ الْقِدْحُ يَتَعَجَّلُونَهُ وَلَا يَتَأَجَّلُونَهُ».

জাবের ইবন আব্দুল্লাহ্ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা যখন আমরা কিরা‘আত পাঠে মগ্ন ছিলাম, তখন হঠাৎ সেখানে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আগমন করেন এবং এ সময় আমাদের মধ্যে আরব বেদুইন ও অনারব লোকেরা ছিল। তিনি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, তোমরা পাঠ কর, সকলেই উত্তম। কেননা অদুর ভবিষ্যতে এমন সম্প্রদায় নির্গত হবে, যারা কুরআনকে তীরের মত ঠিক করবে (অর্থাৎ তাজবীদ নিয়ে অত্যন্ত বাড়াবাড়ি করবে), তা দ্রুত গতিতে পাঠ করবে, ধীরস্হিরভাবে পড়বে না।[453]

عَنْ سَهْلِ بْنِ سَعْدٍ السَّاعِدِيِّ، قَالَ: خَرَجَ عَلَيْنَا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَوْمًا وَنَحْنُ نَقْتَرِئُ، فَقَالَ: «الْحَمْدُ لِلَّهِ كِتَابُ اللَّهِ وَاحِدٌ، وَفِيكُمُ الْأَحْمَرُ وَفِيكُمُ الْأَبْيَضُ وَفِيكُمْا لْأَسْوَدُ، اقْرَءُوهُ قَبْلَ أَنْ يَقْرَأَهُ أَقْوَامٌ يُقِيمُونَهُ كَمَا يُقَوَّمُ السَّهْمُ يُتَعَجَّلُ أَجْرُهُ وَلَا يُتَأَجَّلُهُ».

সাহল ইবন সা’দ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক দিন আমরা কিরা‘আত পাঠ করাকালীন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উপস্হিত হয়ে বলেন, আলহামদুলিল্লাহ! আলল্লাহর কিতাব- একই এবং তোমাদের কেউ লাল, কেউ সাদা এবং কেউ কাল রঙের। তোমরা ঐ সম্প্রদায়ের আবির্ভাবের পূর্বে কিরাআত পাঠ কর যারা কুরআনকে তীরের ন্যায় দৃঢ় করবে। তারা কুরআন পাঠের (বিনিময় দুনিয়াতে পেতে) তাড়াহুড়া করবে এবং (আখিরাতের) অপেক্ষা করবে না।[454]

 

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ভবিষ্যৎবাণী

শাসকগোষ্ঠী ও আলেম ও ইসলামী দলের মাঝে পরস্পর শত্রুতা থাকবে।

حَدَّثَنَا عُثْمَانُ بْنُ حَكِيمٍ، أَخْبَرَنِي عَامِرُ بْنُ سَعْدٍ، عَنْ أَبِيهِ، أَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَقْبَلَ ذَاتَ يَوْمٍ مِنَ الْعَالِيَةِ، حَتَّى إِذَا مَرَّ بِمَسْجِدِ بَنِي مُعَاوِيَةَ دَخَلَ فَرَكَعَ فِيهِ رَكْعَتَيْنِ، وَصَلَّيْنَا مَعَهُ، وَدَعَا رَبَّهُ طَوِيلًا، ثُمَّ انْصَرَفَ إِلَيْنَا، فَقَالَ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: " سَأَلْتُ رَبِّي ثَلَاثًا، فَأَعْطَانِي ثِنْتَيْنِ وَمَنَعَنِي وَاحِدَةً، سَأَلْتُ رَبِّي: أَنْ لَا يُهْلِكَ أُمَّتِي بِالسَّنَةِ فَأَعْطَانِيهَا، وَسَأَلْتُهُ أَنْ لَا يُهْلِكَ أُمَّتِي بِالْغَرَقِ فَأَعْطَانِيهَا، وَسَأَلْتُهُ أَنْ لَا يَجْعَلَ بَأْسَهُمْ بَيْنَهُمْ فَمَنَعَنِيهَا ".

‘আমির ইবন সা‘দ তাঁর পিতা থেকে সা‘দ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদা আলিয়া হতে এসে বনূ মু‘আবিয়ায় অবস্হিত মসজিদের নিকট গেলেন। অতঃপর তিনি উক্ত মসজিদে প্রবেশ করে দুরাকআত সালাত আদায় করলেন। আমরাও তার সাথে সালতি আদায় করলাম। এ সময় তিনি তার প্রতিপালকের নিকট দীর্ঘ দুআ করলেন। এবং দো‘আ শেষে আমাদের নিকট ফিরে এলেন। এরপর তিনি বললেন, আমি আমার প্রতিপালকের নিকট তিনটি জিনিস কামনা করেছি। তন্মধ্যে তিনি আমাকে দুটি প্রদান করেছেন এবং একটি প্রদান করেননি। আমি আমার প্রতিপালকের নিকট কামনা করেছিলাম, যেন তিনি আমার উম্মাতকে দুর্ভিক্ষের দারা ধ্বংস না করেন। তিনি আমার এ দো‘আ কবুল করেছেন তাঁর নিকট এও প্রার্থনা করেছিলাম যে, তিনি যেন আমার উম্মাতকে পানিতে ড়ুবিয়ে ধ্বংস না করেন। তিনি আমার এ দু‘আও কবুল করেছেন। আমি তাঁর নিকট এ মর্মেও দো‘আ করেছিলাম যে, যেন মুসলিম পরস্পর একে অন্যের বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত না হয়। তিনি আমার এ দো‘আ কবুল করেননি।[455]

 

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ভবিষ্যৎবাণী

তাঁর উম্মত ইসলামের শত্রুর অনুসরণ করবে।

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قَالَ: «لاَ تَقُومُ السَّاعَةُ حَتَّى تَأْخُذَ أُمَّتِي بِأَخْذِ القُرُونِ قَبْلَهَا، شِبْرًا بِشِبْرٍ وَذِرَاعًا بِذِرَاعٍ»، فَقِيلَ: يَا رَسُولَ اللَّهِ، كَفَارِسَ وَالرُّومِ؟ فَقَالَ: «وَمَنِ النَّاسُ إِلَّا أُولَئِكَ».

আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেছেন, কিয়ামত কায়েম হবে না যতক্ষণ না আমার উম্মাত পূর্বযুগীয়দের আচার-অভ্যাসকে বিঘতে বিঘতে, হাতে হাতে গ্রহণ না করবে। জিজ্ঞাসা করা হল, ইয়া রাসূলাল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! পারস্য ও রোমকদের মত কি? তিনি বললেন: লোকদের মধ্যে আর কারা? এরাই তো![456]

عَنْ أَبِي سَعِيدٍ الخُدْرِيِّ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قَالَ: «لَتَتْبَعُنَّ سَنَنَ مَنْ كَانَ قَبْلَكُمْ، شِبْرًا شِبْرًا وَذِرَاعًا بِذِرَاعٍ، حَتَّى لَوْ دَخَلُوا جُحْرَ ضَبٍّ تَبِعْتُمُوهُمْ»، قُلْنَا: يَا رَسُولَ اللَّهِ، اليَهُودُ وَالنَّصَارَى؟ قَالَ: «فَمَنْ».

আবূ সাঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেছেন: নিশ্চয় তোমরা তোমাদের পূর্ববর্তীদের আচার-আচরণকে বিঘতে বিঘতে, হাতে হাতে অনুকরণ করবে। এমনকি তারা যদি গুঁইসাপের গর্তেও প্রবেশ করে থাকে, তাহলে তোমরাও এতে তাদের অনুকরণ করবে। আমরা বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ্! এরা কি ইহুদী ও নাসারা? তিনি বললেন: আর কারা? [457]

 

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ভবিষ্যৎবাণী

তাঁর উম্মতের কিছু লোক হালাল হারাম উপার্জনের ক্ষেত্রে পরোয়া করবে না।

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قَالَ: «يَأْتِي عَلَى النَّاسِ زَمَانٌ، لاَ يُبَالِي المَرْءُ مَا أَخَذَ مِنْهُ، أَمِنَ الحَلاَلِ أَمْ مِنَ الحَرَامِ».

আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু সূত্রে রাসূলূল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত, এমন এক যুগ আসবে, যখন মানুষ পরোয়া করবেনা যে, সে কোথা থেকে অর্জন করল, হালাল থেকে না হারাম থেকে।[458]

 


 

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ভবিষ্যৎবাণী

পথভ্রষ্ট আহলে কুরআনীদের সম্পর্কে সংবাদ।

عَنِ الْمِقْدَامِ بْنِ مَعْدِي كَرِبَ عَنْ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنَّهُ قَالَ: «أَلَا إِنِّي أُوتِيتُ الْكِتَابَ، وَمِثْلَهُ مَعَهُ أَلَا يُوشِكُ رَجُلٌ شَبْعَانُ عَلَى أَرِيكَتِهِ يَقُولُ عَلَيْكُمْ بِهَذَا الْقُرْآنِ فَمَا وَجَدْتُمْ فِيهِ مِنْ حَلَالٍ فَأَحِلُّوهُ، وَمَا وَجَدْتُمْ فِيهِ مِنْ حَرَامٍ فَحَرِّمُوهُ، أَلَا لَا يَحِلُّ لَكُمْ لَحْمُ الْحِمَارِ الْأَهْلِيِّ، وَلَا كُلُّ ذِي نَابٍ مِنَ السَّبُعِ، وَلَا لُقَطَةُ مُعَاهِدٍ، إِلَّا أَنْ يَسْتَغْنِيَ عَنْهَا صَاحِبُهَا، وَمَنْ نَزَلَ بِقَوْمٍ فَعَلَيْهِمْ أَنْ يَقْرُوهُ فَإِنْ لَمْ يَقْرُوهُ فَلَهُ أَنْ يُعْقِبَهُمْ بِمِثْلِ قِرَاهُ».

মিকদাম ইবন মা'দীকরাব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, জেনে রাখ! আমাকে কুরআন প্রদান করা হয়েছে এবং এর সাথে অনুরূপ (হাদীস) দেওয়া হয়েছ। অদূর ভবিষ্যতে একজন অভাবহীন তৃপ্ত ব্যক্তি তার খাটের উপর অবস্থান করে বলবে, তোমরা এ কুরআনকে গ্রহণ কর এবং এতে যা হালাল বলা হয়েছে, তা হালাল হিসাবে গ্রহণ কর; আর যা হারাম বলা হয়েছে তা হারাম হিসাবে গ্রহণ কর। জেনে রাখ! গৃহ-পালিত গাধার গোশত তোমাদের জন্য হালাল নয়, কোনো হিংস্র জন্তুর গোশত ও হালাল নয়, কোনো যিম্মীর পরিত্যক্ত মাল হালাল নয়, তবে যদি তার মালিক তা থেকে বে-পরওয়া হয়, সে আলাদা ব্যাপার। আর যদি কেউ মেহমান হিসারে কোনো কাওমের কাছে যায়, তবে তাদের উচিত তার মেহমানদারী করা। তারা যদি সে ব্যক্তি মেহমানদারী না করে, তবে তাদের নিকট থেকে মেহমানের হক গ্রহণ করার অধিকার তার থাকবে।[459]

عَنْ عُبَيْدِ اللَّهِ بْنِ أَبِي رَافِعٍ، عَنْ أَبِيهِ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «لَا أُلْفِيَنَّ أَحَدَكُمْ مُتَّكِئًا عَلَى أَرِيكَتِهِ يَأْتِيهِ الْأَمْرُ مِنْ أَمْرِي مِمَّا أَمَرْتُ بِهِ أَوْ نَهَيْتُ عَنْهُ فَيَقُولُ لَا نَدْرِي مَا وَجَدْنَا فِي كِتَابِ اللَّهِ اتَّبَعْنَاهُ».

আবূ রাফি (রহ.) তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আমি তোমাদের মাঝে কাউকে এরূপ পাব না, যে তার খাটের উপর বালিশে হেলান দিয়ে থাকে। যদি তার কাছে আমার কোন আদেশ বা নিষেধ আসে, তখন সে বলেঃ আমি তো এ জানি না। বরং আমি আল্লাহ্র কিতাবে যে নির্দেশ পেয়েছি, তার অনুসরণ করি।[460]

 

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ভবিষ্যৎবাণী

নিঃস্ব দরিদ্র লোকেরা বিরাট বিরাট অট্রালিকার মালিক হওয়ার প্রতিযোগিতায় গর্বিত হবে।

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ: كَانَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَوْمًا بَارِزًا لِلنَّاسِ، فَأَتَاهُ رَجُلٌ، فَقَالَ: يَا رَسُولُ اللهِ، مَا الْإِيمَانُ؟ قَالَ: «أَنْ تُؤْمِنَ بِاللهِ، وَمَلَائِكَتِهِ، وَكِتَابِهِ، وَلِقَائِهِ، وَرُسُلِهِ، وَتُؤْمِنَ بِالْبَعْثِ الْآخِرِ»، قَالَ: يَا رَسُولَ اللهِ، مَا الْإِسْلَامُ؟ قَالَ: «الْإِسْلَامُ أَنْ تَعْبُدَ اللهَ، وَلَا تُشْرِكَ بِهِ شَيْئًا، وَتُقِيمَ الصَّلَاةَ الْمَكْتُوبَةَ، وَتُؤَدِّيَ الزَّكَاةَ الْمَفْرُوضَةَ، وَتَصُومَ رَمَضَانَ» قَالَ: يَا رَسُولَ اللهِ، مَا الْإِحْسَانُ؟ قَالَ: «أَنْ تَعْبُدَ اللهَ كَأَنَّكَ تَرَاهُ، فَإِنَّكَ إِنْ لَا تَرَاهُ فَإِنَّهُ يَرَاكَ»، قَالَ: يَا رَسُولَ اللهَ، مَتَى السَّاعَةُ؟ قَالَ: " مَا الْمَسْئُولُ عَنْهَا بِأَعْلَمَ مِنَ السَّائِلِ، وَلَكِنْ سَأُحَدِّثُكَ عَنْ أَشْرَاطِهَا: إِذَا وَلَدَتِ الْأَمَةُ رَبَّهَا، فَذَاكَ مِنْ أَشْرَاطِهَا، وَإِذَا كَانَتِ الْعُرَاةُ الْحُفَاةُ رُءُوسَ النَّاسِ، فَذَاكَ مِنْ أَشْرَاطِهَا، وَإِذَا تَطَاوَلَ رِعَاءُ الْبَهْمِ فِي الْبُنْيَانِ، فَذَاكَ مِنْ أَشْرَاطِهَا فِي خَمْسٍ لَا يَعْلَمُهُنَّ إِلَّا اللهُ، ثُمَّ تَلَا صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: {إِنَّ اللهِ عِنْدَهُ عِلْمُ السَّاعَةِ وَيُنَزِّلُ الْغَيْثَ وَيَعْلَمُ مَا فِي الْأَرْحَامِ وَمَا تَدْرِي نَفْسٌ مَاذَا تَكْسِبُ غَدًا وَمَا تَدْرِي نَفْسٌ بِأَيِّ أَرْضٍ تَمُوتُ إِنَّ اللهَ عَلِيمٌ خَبِيرٌ} [لقمان: 34] " قَالَ: ثُمَّ أَدْبَرَ الرَّجُلُ، فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «رُدُّوا عَلَيَّ الرَّجُلَ»، فَأَخَذُوا لِيَرُدُّوهُ، فَلَمْ يَرَوْا شَيْئًا، فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «هَذَا جِبْرِيلُ جَاءَ لِيُعَلِّمَ النَّاسَ دِينَهُمْ».

আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমরা আমাকে প্রশ্ন কর। সাহাবা কিরাম তার কাছে প্রশ্ন করতে ভয় পেলেন। (রাবী বলেন) তারপর একজন লোক এলেন এবং তাঁর কাছে বসে বললেন, হে আল্লাহর রাসুল! ইসলাম কী? রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ইসলাম হলো, আল্লাহর সাথে কাউকে শরীক করবে না, সালাত কায়েম করবে, যাকাত দিবে, রমাদানের সাওম পালন করবে। আগন্তুক বললেন, আপনি ঠিকই বলেছেন। তারপর বললেন, হে আল্লাহর রাসুল! ঈমান কী? রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আল্লাহর প্রতি, তাঁর ফেরেশতাদের প্রতি, তাঁর কিতাবসমূহের প্রতি, তাঁর সঙ্গে সাক্ষাতের প্রতি, উখানের বিষয়ে এবং পুরোপুরি তাকদীরে ঈমান রাখবে। আগন্তুক বললেন, আপনি ঠিকই বলেছেন। তারপর বললেন, হে আল্লাহর রাসুল! ইহসান কী? রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আল্লাহকে এমনভাবে ভয় করবে, যেন তাঁকে দেখছ, যদি তাকে নাও দেখ; তাহলে ধারণা করবে যে তিনি তোমাকে দেখছেন। আগন্তুক বললেন, আপনি যথার্থ বলেছেন। তারপর বললেন, হে আল্লাহর রাসুল! কিয়ামত কখন ঘটবে? রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এ বিষয়ে যাকে জিজ্ঞেস করা হয়েছে সে ব্যক্তি প্রশ্নকারীর চাইতে অধিক অবহিত নয়। তবে আমি কিয়ামতের কিছু আলামত বর্ণনা করছি। যখন দেখবে, দাসী তার মুনিবকে জন্ম দেবে, এটা কিয়ামতের একটি আলামত। আর যখন দেখবে নগ্নপদ, বস্ত্রহীন, বধির ও মূকেরা দেশের শাসক হয়েছে, এটিও কিয়ামতের একটি আলামত। আর যখন দেখবে, মেষপালক বিরাট বিরাট অট্রালিকার মালিক হওয়ার প্রতিযোগিতায় গর্বিত, এটিও কিয়ামতের একটি আলামত। পাঁচটি অদৃশ্য বিষয়ে আল্লাহ ব্যতীত কেউ কিছু জানে না। তারপর (তিনি কুরআনুল করীম-এর আয়াত) তিলাওয়াত করলেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ, তাঁর কাছে রয়েছে কিয়ামতের মতের জ্ঞান। তিনি নাযিল করেন বৃষ্টি এবং তিনি জানেন, যা রয়েছে মাতৃগর্ভ জানে না কেউ, কি কামাই করবে সে আগামীকাল। আর জানে না কেউ, কোনো মাটিতে (দেশে) সে মারা যাবে, নিশ্চয়ই আল্লাহ সব জানেন, সব খবর রাখেন। [সূরা লুকমান: ৩৪] তারপর আগন্তুক উঠে চলে গেলেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবীদের বললেন, তাঁকে আমার কাছে ফিরিয়ে আন। তাঁকে তালাশ করা হলো, কিন্তু তাঁকে পাওয়া গেল না। তারপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ইনি জিবরীল আলাইহিস সালাম তোমরা প্রশ্ন না করায়, তিনি চাইলেন যেন তোমরা দীন সম্বন্ধে জ্ঞান লাভ কর।[461]

عَنْ يَحْيَى بْنِ يَعْمَرَ، قَالَ: كَانَ أَوَّلَ مَنْ قَالَ فِي الْقَدَرِ بِالْبَصْرَةِ مَعْبَدٌ الْجُهَنِيُّ، فَانْطَلَقْتُ أَنَا وَحُمَيْدُ بْنُ عَبْدِ الرَّحْمَنِ الْحِمْيَرِيُّ حَاجَّيْنِ - أَوْ مُعْتَمِرَيْنِ - فَقُلْنَا: لَوْ لَقِينَا أَحَدًا مَنْ أَصْحَابِ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَسَأَلْنَاهُ عَمَّا يَقُولُ هَؤُلَاءِ فِي الْقَدَرِ، فَوُفِّقَ لَنَا عَبْدُ اللهِ بْنُ عُمَرَ بْنِ الْخَطَّابِ دَاخِلًا الْمَسْجِدَ، فَاكْتَنَفْتُهُ أَنَا وَصَاحِبِي أَحَدُنَا عَنْ يَمِينِهِ، وَالْآخَرُ عَنْ شِمَالِهِ، فَظَنَنْتُ أَنَّ صَاحِبِي سَيَكِلُ الْكَلَامَ إِلَيَّ، فَقُلْتُ: أَبَا عَبْدِ الرَّحْمَنِ إِنَّهُ قَدْ ظَهَرَ قِبَلَنَا نَاسٌ يَقْرَءُونَ الْقُرْآنَ، وَيَتَقَفَّرُونَ الْعِلْمَ، وَذَكَرَ مِنْ شَأْنِهِمْ، وَأَنَّهُمْ يَزْعُمُونَ أَنْ لَا قَدَرَ، وَأَنَّ الْأَمْرَ أُنُفٌ، قَالَ: «فَإِذَا لَقِيتَ أُولَئِكَ فَأَخْبِرْهُمْ أَنِّي بَرِيءٌ مِنْهُمْ، وَأَنَّهُمْ بُرَآءُ مِنِّي»، وَالَّذِي يَحْلِفُ بِهِ عَبْدُ اللهِ بْنُ عُمَرَ «لَوْ أَنَّ لِأَحَدِهِمْ مِثْلَ أُحُدٍ ذَهَبًا، فَأَنْفَقَهُ مَا قَبِلَ اللهُ مِنْهُ حَتَّى يُؤْمِنَ بِالْقَدَرِ» ثُمَّ قَالَ: حَدَّثَنِي أَبِي عُمَرُ بْنُ الْخَطَّابِ قَالَ: بَيْنَمَا نَحْنُ عِنْدَ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ذَاتَ يَوْمٍ، إِذْ طَلَعَ عَلَيْنَا رَجُلٌ شَدِيدُ بَيَاضِ الثِّيَابِ، شَدِيدُ سَوَادِ الشَّعَرِ، لَا يُرَى عَلَيْهِ أَثَرُ السَّفَرِ، وَلَا يَعْرِفُهُ مِنَّا أَحَدٌ، حَتَّى جَلَسَ إِلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَأَسْنَدَ رُكْبَتَيْهِ إِلَى رُكْبَتَيْهِ، وَوَضَعَ كَفَّيْهِ عَلَى فَخِذَيْهِ، وَقَالَ: يَا مُحَمَّدُ أَخْبِرْنِي عَنِ الْإِسْلَامِ، فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «الْإِسْلَامُ أَنْ تَشْهَدَ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ وَأَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، وَتُقِيمَ الصَّلَاةَ، وَتُؤْتِيَ الزَّكَاةَ، وَتَصُومَ رَمَضَانَ، وَتَحُجَّ الْبَيْتَ إِنِ اسْتَطَعْتَ إِلَيْهِ سَبِيلًا»، قَالَ: صَدَقْتَ، قَالَ: فَعَجِبْنَا لَهُ يَسْأَلُهُ، وَيُصَدِّقُهُ، قَالَ: فَأَخْبِرْنِي عَنِ الْإِيمَانِ، قَالَ: «أَنْ تُؤْمِنَ بِاللهِ، وَمَلَائِكَتِهِ، وَكُتُبِهِ، وَرُسُلِهِ، وَالْيَوْمِ الْآخِرِ، وَتُؤْمِنَ بِالْقَدَرِ خَيْرِهِ وَشَرِّهِ»، قَالَ: صَدَقْتَ، قَالَ: فَأَخْبِرْنِي عَنِ الْإِحْسَانِ، قَالَ: «أَنْ تَعْبُدَ اللهَ كَأَنَّكَ تَرَاهُ، فَإِنْ لَمْ تَكُنْ تَرَاهُ فَإِنَّهُ يَرَاكَ»، قَالَ: فَأَخْبِرْنِي عَنِ السَّاعَةِ، قَالَ: «مَا الْمَسْئُولُ عَنْهَا بِأَعْلَمَ مِنَ السَّائِلِ» قَالَ: فَأَخْبِرْنِي عَنْ أَمَارَتِهَا، قَالَ: «أَنْ تَلِدَ الْأَمَةُ رَبَّتَهَا، وَأَنْ تَرَى الْحُفَاةَ الْعُرَاةَ الْعَالَةَ رِعَاءَ الشَّاءِ يَتَطَاوَلُونَ فِي الْبُنْيَانِ»، قَالَ: ثُمَّ انْطَلَقَ فَلَبِثْتُ مَلِيًّا، ثُمَّ قَالَ لِي: «يَا عُمَرُ أَتَدْرِي مَنِ السَّائِلُ؟» قُلْتُ: اللهُ وَرَسُولُهُ أَعْلَمُ، قَالَ: «فَإِنَّهُ جِبْرِيلُ أَتَاكُمْ يُعَلِّمُكُمْ دِينَكُمْ».

ইয়াহইয়া ইবন ইয়া’মার (রহ.) থেকে বর্ণিত, তিনি (ইয়াহইয়া ইবন ইয়া’মার) বলেন, সর্বপ্রথম ‘কাদর’ সম্পর্কে বসরা শহরে মাবাদ আল জুহানী কথা তোলেন। আমি (ইয়াহইয়া ইবন ইয়া’মার) এবং হুমায়দ ইবন আব্দুর রহমান আল হিমায়রী হজ্জ অথবা উমরা আদায়ের জন্য মক্কায় আসলাম। আমরা নিজেদের মধ্যে আলোচনা করছিলাম যে, যদি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কোনো সাহাবীর সাক্ষাৎ পাই তাহলে তাঁর কাছে এসব লোক তাকদীর সস্পর্কে যা বলে বেড়াচ্ছে, সে বিষয়ে জিজ্ঞেস করতাম। সৌভাগ্যক্রমে মসজিদে নববীতে আমরা আবদুল্লাহ ইবন উমর ইবন খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর দেখা পাই। আমরা তাঁর কাছে গিয়ে একজন তাঁর ডানপাশে এবং আর একজন বামপাশে বসলাম। আমার মনে হলো, আমার সাথী চান যে, আমিই কথা বলি। আমি আরয করলাম, হে আবু আবদুর রহমান! আবদুল্লাহ ইবন উমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর কুনিয়াত ছিল আবু আবদুর রহমান। আমার দেশে এমন কতিপয় লোকের আবির্ভাব হয়েছে যারা কুরআন পাঠ করে এবং ইলমে দীন সম্পর্কে গবেষণা করে। তিনি তাদের অবস্থা সস্পর্কে আরো কিছু উল্লেখ করেন এবং বলেন যে, তারা মনে করে তাকদীর- বলতে কিছু নেই। সবকিছু তাৎক্ষনিকভাবে ঘটে। আবদুল্লাহ ইবন উমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বললেন, তাদের সাথে তোমাদের দেখা হলে বলে দিও যে, তাদের সাথে আমার কোনো সস্পর্ক নেই এবং আমার সঙ্গে তাদেরও কোন সম্পর্ক নেই। আল্লাহর কসম! যদি এদের কেউ উহুদ পাহাড় পরিমাণ সোনার মালিক হয় এবং তা আল্লাহর রাস্তায় খরচ করে, তাকদীরের প্রতি ঈমান না আনা পর্যন্ত আল্লাহ তা কবুল করবেন না। তারপর তিনি বললেন, আমাকে আমার পিতা উমর ইবন খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হাদীস শুনিয়েছেন যে, একদা আমরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের খিদমতে ছিলাম। এমন সময় একজন লোক আমাদের কাছে এসে হাযির হলেন। তাঁর পরিধানের কাপড় ছিল সাদা ধবধবে, মাথার কেশ ছিল কাল কুচকুচে। তাঁর মধ্যে সফরের কোনো চিহ্ন ছিল না। আমরা কেউ তাঁকে চিনি না। তিনি নিজের দুই হাঁটু নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দুই হাঁটুর সাথে লাগিয়ে বসে পড়লেন আর তার দুই হাত নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দুই উরুর উপর রাখলেন। তারপর তিনি বললেন, হে মুহাম্মদ! আমাকে ইসলাম সস্পর্কে অবহিত করুন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ইসলাম হলো, তুমি এ কথার সাক্ষ্য প্রদান করবে যে, আল্লাহ ব্যতীত কোনো ইলাহ নেই এবং নিশ্চয়ই মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর রাসুল, সালাত কায়েম করবে, যাকাত আদায় করবে, রামাদানের সাওম পালন করবে এবং বায়তুল্লাহ পৌছার সামর্থ্য থাকলে হজ্জ পালন করবে। আগন্তুক বললেন, আপনি ঠিকই বলেছেন। তার কথা শুনে আমরা বিষ্মিত হলাম যে, তিনিই প্রশ্ন করেছেন আর তিনিই-তা সত্যায়িত করছেন। আগন্তুক বললেন, আমাকে ঈমান সম্পর্কে অবহিত করুন। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ঈমান হলো আল্লাহর প্রতি, তার ফেরেশতাদের প্রতি, তার কিতাবসমূহের প্রতি, তার রাসুলগণের প্রতি এবং আখিরাতের প্রতি ঈমান আনবে, আর তাকদিরের ভালমন্দের প্রতি ঈমান রাখবে। আগন্তুক বললেন,আপনি ঠিকই বলেছেন। তারপর বললেন, আমাকে ইহসান সম্পর্কে অবহিত করুন। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ইহসান হলো, এমনভাবে ইবাদত-বন্দেগী করবে যেন তুমি আল্লাহকে দেখছ, যদি তুমি তাকে নাও দেখ, তাহলে ভাববে তিনি তোমাকে দেখছেন। আগন্তুক বললেন, আমাকে কিয়ামত সস্পর্কে অবহিত করুন। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এ বিষয়ে প্রশ্নকারীর চাইতে যাকে জিজ্ঞেস করা হয়েছে তিনি অধিক অবহিত নন। আগন্তুক বললেন, আমাকে এর আলামত সস্পর্কে অবহিত করুন। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তা হলো এই যে, দাসী তার প্রভুর জননী হবে; আর নগ্নপদ, বিবস্ত্রদেহ দরিদ্র মেষপালকদের বিরাট বিরাট অট্টালিকার প্রতিযোগিতায় গর্বিত দেখতে পাবে। উমর ইবন খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বললেন যে, পরে আগন্তুক প্রস্থান করলেন। আমি বেশ কিছুক্ষণ অপেক্ষা করলাম। তারপর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বললেন, হে উমর! তুমি জান, এই প্রশ্নকারী কে? আমি আরয করলাম, আল্লাহ ও তাঁর রাসুলই সম্যক জ্ঞাত আছেন। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তিনি জিবরীল আলাইহিস সালাম। তোমাদের তিনি দীন শিক্ষা দিতে এসেছিলেন। [462]

 

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ভবিষ্যৎবাণী

খাওয়ারিজদের আবির্ভাব ঘটবে।

حَدَّثَنَا عَبْدُ الرَّحْمَنِ بْنُ أَبِي نُعْمٍ، قَالَ: سَمِعْتُ أَبَا سَعِيدٍ الْخُدْرِيَّ، يَقُولُ: بَعَثَ عَلِيُّ بْنُ أَبِي طَالِبٍ إِلَى رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مِنَ الْيَمَنِ، بِذَهَبَةٍ فِي أَدِيمٍ مَقْرُوظٍ لَمْ تُحَصَّلْ مِنْ تُرَابِهَا، قَالَ: فَقَسَمَهَا بَيْنَ أَرْبَعَةِ نَفَرٍ: بَيْنَ عُيَيْنَةَ بْنِ حِصْنٍ، وَالْأَقْرَعِ بْنِ حَابِسٍ، وَزَيْدِ الْخَيْلِ، وَالرَّابِعُ إِمَّا عَلْقَمَةُ بْنُ عُلَاثَةَ، وَإِمَّا عَامِرُ بْنُ الطُّفَيْلِ، فَقَالَ رَجُلٌ مِنْ أَصْحَابِهِ: كُنَّا نَحْنُ أَحَقَّ بِهَذَا مِنْ هَؤُلَاءِ، قَالَ: فَبَلَغَ ذَلِكَ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَقَالَ: «أَلَا تَأْمَنُونِي؟ وَأَنَا أَمِينُ مَنْ فِي السَّمَاءِ، يَأْتِينِي خَبَرُ السَّمَاءِ صَبَاحًا وَمَسَاءً» قَالَ: فَقَامَ رَجُلٌ غَائِرُ الْعَيْنَيْنِ، مُشْرِفُ الْوَجْنَتَيْنِ، نَاشِزُ الْجَبْهَةِ، كَثُّ اللِّحْيَةِ، مَحْلُوقُ الرَّأْسِ، مُشَمَّرُ الْإِزَارِ، فَقَالَ: يَا رَسُولَ اللهِ، اتَّقِ اللهَ، فَقَالَ: «وَيْلَكَ أَوَلَسْتُ أَحَقَّ أَهْلِ الْأَرْضِ أَنْ يَتَّقِيَ اللهَ» قَالَ: ثُمَّ وَلَّى الرَّجُلُ، فَقَالَ خَالِدُ بْنُ الْوَلِيدِ: يَا رَسُولَ اللهِ، أَلَا أَضْرِبُ عُنُقَهُ؟ فَقَالَ: «لَا، لَعَلَّهُ أَنْ يَكُونَ يُصَلِّي» قَالَ خَالِدٌ: وَكَمْ مِنْ مُصَلٍّ يَقُولُ بِلِسَانِهِ مَا لَيْسَ فِي قَلْبِهِ، فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِنِّي لَمْ أُومَرْ أَنْ أَنْقُبَ عَنْ قُلُوبِ النَّاسِ، وَلَا أَشُقَّ بُطُونَهُمْ» قَالَ: ثُمَّ نَظَرَ إِلَيْهِ وَهُوَ مُقَفٍّ، فَقَالَ: «إِنَّهُ يَخْرُجُ مِنْ ضِئْضِئِ هَذَا قَوْمٌ يَتْلُونَ كِتَابَ اللهِ، رَطْبًا لَا يُجَاوِزُ حَنَاجِرَهُمْ، يَمْرُقُونَ مِنَ الدِّينِ كَمَا يَمْرُقُ السَّهْمُ مِنَ الرَّمِيَّةِ» قَالَ: أَظُنُّهُ قَالَ: «لَئِنْ أَدْرَكْتُهُمْ لَأَقْتُلَنَّهُمْ قَتْلَ ثَمُودَ».

আবু সাঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ইয়ামান থেকে আলী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু দাবাগাত করা চামড়ার থলিতে করে কিছু সোনা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট পাঠালেন। তখনো স্বর্নগুলো মাটি থেকে পৃথক করা হয়নি। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ গুলো চার ব্যক্তির মাঝে বণ্টন করে দিলেন। উয়ায়না ইবন হিসন, আকরা ইবন হাবিস, যায়িদ জাল-খায়ল, চতুর্থ ব্যক্তি হয় তো আলকামা ইবন উলাসা অথবা আমির ইবন তুফায়ল রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু। তখন সাহাবাদের মধ্য থেকে একজন বললেন, তাদের থেকে আমরাই এ মালের অধিক হকদার ছিলাম। এ খবর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট পৌঁছার পর তিনি বললেন, তোমরা কি আমাকে আমানতদার মনে কর না? অথচ যিনি আসমানে আছেন, তাঁর কাছে আমি আমানতদার। আমার কাছে সকাল সন্ধ্যায় আসমানের খবর আসে। রাবী বলেন, তখন কোটরাগত চোখ, ফোলাগাল, উঁচু ললাট, ঘন দাঁড়ি, মুন্ডিত মস্থক এবং লুঙ্গি কাঁচানো এক ব্যক্তি দাড়িয়ে বলল, ইয়া রাসুলুল্লাহ! আপনি আল্লাহকে ভয় করুন। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমার সর্বনাশ হোক। আল্লাহকে ভয় করার ব্যাপারে পৃথিবীতে আমি কি সর্বাধিক যোগ্য নই? রাবী বলেন, অতঃপর লোকটি ফিরে চলে গেল। এ সময় খালিদ ইবন ওয়ালীদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বললেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ! আমি কি তার গর্দান উড়িয়ে দেব না? তিনি বললেন, না সম্ভবত সে সালাত আদায় করে। খালিদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বললেন, অনেক মুসল্লী আছে যারা মুখ দিয়ে এমন কথা বলে যা তাদের অন্তরে নেই। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, মানুষের হদয় অনুসন্ধানের এবং পেট বির্দিন্ন করার জন্য আমি আদিষ্ট হইনি। তারপর তিনি লোকটির দিকে তাকালেন, সে ঘাড় ফিরিয়ে চলে যাচ্ছে। তখন তিনি বললেন, তার বংশে এমন লোক জন্মগ্রহণ করবে যারা অনায়াসে আল্লাহর কিতাব তিলাওয়াত করবে কিন্তু তা তাদের কণ্ঠনালী অতিক্রম করবে না। তারা দীন থেকে এভাবে বেরিয়ে যাবে যেমন বেরিয়ে যায় তীর তার শিকার ভেদ করে। রাবী বলেন, আমার মনে হয়, তিনি এও বলেছেন যদি আমি তাদের পাই তবে অবশ্যই আমি তাদের সামুদ সম্প্রদায়ের মত হত্যা করব।[463]

عَنْ أَبِي سَعِيدٍ، قَالَ: بَيْنَا النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقْسِمُ، جَاءَ عَبْدُ اللَّهِ بْنُ ذِي الخُوَيْصِرَةِ التَّمِيمِيُّ، فَقَالَ: اعْدِلْ يَا رَسُولَ اللَّهِ، فَقَالَ: «وَيْلَكَ، وَمَنْ يَعْدِلُ إِذَا لَمْ أَعْدِلْ» قَالَ عُمَرُ بْنُ الخَطَّابِ: دَعْنِي أَضْرِبْ عُنُقَهُ، قَالَ: " دَعْهُ، فَإِنَّ لَهُ أَصْحَابًا، يَحْقِرُ أَحَدُكُمْ صَلاَتَهُ مَعَ صَلاَتِهِ، وَصِيَامَهُ مَعَ صِيَامِهِ، يَمْرُقُونَ مِنَ الدِّينِ كَمَا يَمْرُقُ السَّهْمُ مِنَ الرَّمِيَّةِ، يُنْظَرُ فِي قُذَذِهِ فَلاَ يُوجَدُ فِيهِ شَيْءٌ، ثُمَّ يُنْظَرُ فِي نَصْلِهِ فَلاَ يُوجَدُ فِيهِ شَيْءٌ، ثُمَّ يُنْظَرُ فِي رِصَافِهِ فَلاَ يُوجَدُ فِيهِ شَيْءٌ، ثُمَّ يُنْظَرُ فِي نَضِيِّهِ فَلاَ يُوجَدُ فِيهِ شَيْءٌ، قَدْ سَبَقَ الفَرْثَ وَالدَّمَ، آيَتُهُمْ رَجُلٌ إِحْدَى يَدَيْهِ، أَوْقَالَ: ثَدْيَيْهِ، مِثْلُ ثَدْيِ المَرْأَةِ، أَوْقَالَ: مِثْلُ البَضْعَةِ تَدَرْدَرُ، يَخْرُجُونَ عَلَى حِينِ فُرْقَةٍ مِنَ النَّاسِ " قَالَ أَبُو سَعِيدٍ: أَشْهَدُ سَمِعْتُ مِنَ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، وَأَشْهَدُ أَنَّ عَلِيًّا، قَتَلَهُمْ، وَأَنَا مَعَهُ، جِيءَ بِالرَّجُلِ عَلَى النَّعْتِ الَّذِي نَعَتَهُ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قَالَ: فَنَزَلَتْ فِيهِ: {وَمِنْهُمْ مَنْ يَلْمِزُكَ فِي الصَّدَقَاتِ} [التوبة: 58].

আবূ সাঈদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী কোনো কিছু বন্টন করছিলেন। ঘটনাক্রমে আবদুল্লাহ ইবন যুলখুওয়ায়সিরা তামীমী এল এবং বলল, হে আল্লাহর রাসূল! ইনসাফ করুন। তিনি বললেন, আফসোস তোমার জন্য! আমি যদি ইনসাফ না করি তা হলে আর কে ইনসাফ করবে? উমর ইবন খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বললেন, আমাকে অনুমতি দিন। তার গর্দান উড়িয়ে দেই। তিনি বললেন, তাকে ছেড়ে দাও। তার জন্য সাথীবৃন্দ রয়েছে। যাদের সালাতের তুলনায় তোমরা তোমাদের সালাতকে তুচ্ছ মনে করবে। যাদের সিয়ামের তুলনায় তোমরা তোমাদের সিয়ামকে তুচ্ছ মনে করবে। তারা দীন থেকে এরূপ বেরিয়ে যাবে যেমন তীর শিকার ভেদ করে বেরিয়ে যায়। তীরের পরে লক্ষ্য করলে তাতে কিছু পাওয়া যায় না। তীরের মুখের বেষ্টনীর প্রতি লক্ষ্য করলেও কিছু পাওয়া যায় না। তীরের কাঠের অংশের দিকে তাকালেও তাতে কিছু পাওয়া যায় না। বরং তীর তীব্র গতিতে বেরিয়ে যাওয়ার কালে তাতে মল ও রক্তের দাগ পর্যন্ত লাগে না। তাদের পরিচয় এই যে, তাদের একটি লোকের একটি হাত অথবা বলেছেন, একটি স্তন্য হবে মহিলাদের স্তনের ন্যায়। অথবা বলেছেন, বাড়তি গোশতের টুকরার ন্যায়। লোকদের মধ্যে বিরোধের সময় তাদের আবির্ভাব হবে। আবূ সা’ঈদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আমি তা নবী থেকে শুনেছি। এও সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আলী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু তাদেরকে হত্যা করেছেন। আমি তখন তাঁর সাথে ছিলাম। তখন নবী প্রদত্ত বর্ণনার অনুরূপ ব্যক্তিকে আনা হয়েছিল। তিনি বলেন, ওর সম্পর্কেই নাযিল হয়েছে, ওদের মধ্যে এমন লোক আছে যে সাদকা সম্পর্কে তোমাকে দোষারোপ করে। [সূরা তাওবা: ৫৮] [464]

 

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ভবিষ্যৎবাণী

মুশরিকরা বদরের যুদ্ধে পরাজিত হবে।

عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا، قَالَ: قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، وَهُوَ فِي قُبَّةٍ: «اللَّهُمَّ إِنِّي أَنْشُدُكَ عَهْدَكَ وَوَعْدَكَ، اللَّهُمَّ إِنْ شِئْتَ لَمْ تُعْبَدْ بَعْدَ اليَوْمِ» فَأَخَذَ أَبُو بَكْرٍ بِيَدِهِ، فَقَالَ: حَسْبُكَ يَا رَسُولَ اللَّهِ، فَقَدْ أَلْحَحْتَ عَلَى رَبِّكَ وَهُوَ فِي الدِّرْعِ، فَخَرَجَ وَهُوَ يَقُولُ: {سَيُهْزَمُ الجَمْعُ، وَيُوَلُّونَ الدُّبُرَ بَلِ السَّاعَةُ مَوْعِدُهُمْ، وَالسَّاعَةُ أَدْهَى وَأَمَرُّ} [القمر: 46]، وَقَالَ وُهَيْبٌ، حَدَّثَنَا خَالِدٌ، يَوْمَ بَدْرٍ.

ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বদরের দিন একটি গুম্বুরাজি তাঁবুতে অবস্থান কালে দো‘আ করছিলেন, ‘ইয়া আল্লাহ! আমি আপনার প্রতিজ্ঞা ও ওয়াদার দোহাই দিয়ে বলছি, আপনি যদি চান, তাহলে আজকের পরে আর আপনার ইবাদাত করা হবে না’। এ সময় আবূ বকর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু তাঁর হাত ধরে বললেন, ‘ইয়া রাসূলাল্লাহ্, যথেষ্ট হয়েছে। আপনি বার বার মিনতির সঙ্গে আপনার রবের কাছে দো‘আ করেছেন’। সে সময় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বর্ম পরিহিত ছিলেন। এরপর তিনি এই আয়াত পাঠ করতে করতে বেরিয়ে এলেন: “শীঘ্রই দুশমনরা পরাজিত হবে এবং পৃষ্ঠ প্রদর্শন করবে অধিকন্তু কিয়ামত শাস্তির নির্ধারিত কাল এবং কিয়ামত হবে কঠিনতর ও তিক্ততর। [সূরা আল-কামার: ৪৬] ওহাইব (রহ.) বলেন, খালিদ (রহ.) বলেছেন, ‘বদরের দিন’। [465]

 

বাইতুল মুকাদ্দিস বিজয়ের ব্যাপারে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ভবিষ্যৎবাণী

عَنِ عَوْف بْنَ مَالِكٍ، قَالَ: أَتَيْتُ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي غَزْوَةِ تَبُوكَ وَهُوَ فِي قُبَّةٍ مِنْ أَدَمٍ، فَقَالَ: " اعْدُدْ سِتًّا بَيْنَ يَدَيِ السَّاعَةِ: مَوْتِي، ثُمَّ فَتْحُ بَيْتِ المَقْدِسِ، ثُمَّ مُوْتَانٌ يَأْخُذُ فِيكُمْ كَقُعَاصِ الغَنَمِ، ثُمَّ اسْتِفَاضَةُ المَالِ حَتَّى يُعْطَى الرَّجُلُ مِائَةَ دِينَارٍ فَيَظَلُّ سَاخِطًا، ثُمَّ فِتْنَةٌ لاَ يَبْقَى بَيْتٌ مِنَ العَرَبِ إِلَّا دَخَلَتْهُ، ثُمَّ هُدْنَةٌ تَكُونُ بَيْنَكُمْ وَبَيْنَ بَنِي الأَصْفَرِ، فَيَغْدِرُونَ فَيَأْتُونَكُمْ تَحْتَ ثَمَانِينَ غَايَةً، تَحْتَ كُلِّ غَايَةٍ اثْنَا عَشَرَ أَلْفًا ".

আউফ ইবন মালিক রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি তাবুক যুদ্ধে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট এলাম। তিনি তখন একটি চর্ম নির্মিত তাবুতে ছিলেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, কিয়ামতের পূর্বের ছয়টি আলামত গণনা করে রাখো। আমার মৃত্যু, তারপর বায়তুল মুকাদ্দাস বিজয়, তারপরও তোমাদের মাঝে ঘটবে মহামারী, বকরীর পালের মহামারীর মত, সম্পদের প্রাচুর্য, এমনকি এক ব্যক্তিকে একশ’ দীনার দেওয়া সত্ত্বেও সে অসন্তুষ্ট থাকবে। তারপর এমন এক ফিতনা আসবে যা আরবের প্রতি ঘরে প্রবেশ করবে। তারপর যুদ্ধ বিরতির চুক্তি-যা তোমাদের ও রোমকদের (খৃষ্টানদের) মধ্যে সম্পাদিত হবে। এরপর তারা বিশ্বাসঘাতকতা করবে এবং আশিটি পতাকা উত্তোলন করে তোমাদের মোকাবিলায় আসবে; প্রত্যেক পতাকা তলে বার হাজার সৈন্য দল থাকবে।[466]

 

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ভবিষ্যৎবাণী

তাঁর পরে বারোজন আমীরেব আবির্ভাব হবে।

عَنْ عَبْدِ المَلِكِ، سَمِعْتُ جَابِرَ بْنَ سَمُرَةَ، قَالَ: سَمِعْتُ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، يَقُولُ: «يَكُونُ اثْنَا عَشَرَ أَمِيرًا»، فَقَالَ كَلِمَةً لَمْ أَسْمَعْهَا، فَقَالَ أَبِي: إِنَّهُ قَالَ: «كُلُّهُمْ مِنْ قُرَيْشٍ».

জাবির ইবন সামুরা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি যে, বারোজন আমীর হবে। এরপর তিনি একটি কথা বলেছিলেন যা আমি শুনতে পারিনি। তবে আমার পিতা বলেছেন যে, তিনি বলেছিলেন সকলেই কুরাইশ গোত্র থেকে হবে।[467]

 

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পরে কিছু কল্যাণ ফিতনা সম্পর্কে ভবিষ্যৎবাণী

عَنْ أُمِّ سَلَمَةَ، قَالَتْ: اسْتَيْقَظَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ذَاتَ لَيْلَةٍ فَقَالَ: «سُبْحَانَ اللَّهِ، مَاذَا أُنْزِلَ اللَّيْلَةَ مِنَ الفِتَنِ، وَمَاذَا فُتِحَ مِنَ الخَزَائِنِ، أَيْقِظُوا صَوَاحِبَاتِ الحُجَرِ، فَرُبَّ كَاسِيَةٍ فِي الدُّنْيَا عَارِيَةٍ فِي الآخِرَةِ».

উম্মে সালামা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, এক রাতে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘুম থেকে জেগে বলেন, সুবহানআল্লাহ! এ রাতে কতই না বিপদাপদ নেমে আসছে এবং কতই না ভাণ্ডার খুলে দেওয়া হচ্ছে! অন্য সব ঘরের মহিলাগণকেও জানিয়ে দাও, ‘বহু মহিলা যারা দুনিয়ায় বস্ত্র পরিহিতা, তারা আখিরাতে হবে বস্ত্রহীনা।’[468]

 

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পরে যামানা পরিবর্তন হবে সে ব্যাপারে ভবিষ্যৎবাণী

عَنِ الزُّبَيْرِ بْنِ عَدِيٍّ، قَالَ: أَتَيْنَا أَنَسَ بْنَ مَالِكٍ، فَشَكَوْنَا إِلَيْهِ مَا نَلْقَى مِنَ الحَجَّاجِ، فَقَالَ: «اصْبِرُوا، فَإِنَّهُ لاَ يَأْتِي عَلَيْكُمْ زَمَانٌ إِلَّا الَّذِي بَعْدَهُ شَرٌّ مِنْهُ، حَتَّى تَلْقَوْا رَبَّكُمْ» سَمِعْتُهُ مِنْ نَبِيِّكُمْ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ.

যুবায়র ইবন আদী (রহ.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা আনাস ইবন মালিক রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর নিকট গেলাম এবং হাজ্জাজের পক্ষ থেকে মানুষ যে নির্যাতন ভোগ করছে সে সম্পর্কে অভিযোগ পেশ করলাম। তিনি বললেন, ধৈর্য ধারণ কর। কেননা, মহান প্রতিপালকের সহিত মিলিত হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত (মৃত্যুর পূর্বে) তোমাদের উপর এমন কোনো যুগ অতিবাহিত হবে না, যার পরবর্তী যুগ তার চেয়েও নিকৃষ্টতর নয়। তিনি বলেন, এ কথাটি আমি তোমাদের নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে শ্রবণ করেছি।[469]

 

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ভবিষ্যৎবাণী

তাঁর মৃত্যুর একশত বছর পরে তাঁর কোনো সাহাবী জীবিত থাকবেন না

عَنْ سَالِمٍ، وَأَبِي بَكْرِ بْنِ سُلَيْمَانَ بْنِ أَبِي حَثْمَةَ، أَنَّ عَبْدَ اللَّهِ بْنَ عُمَرَ، قَالَ: صَلَّى بِنَا النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ العِشَاءَ فِي آخِرِ حَيَاتِهِ، فَلَمَّا سَلَّمَ قَامَ، فَقَالَ: «أَرَأَيْتَكُمْ لَيْلَتَكُمْ هَذِهِ، فَإِنَّ رَأْسَ مِائَةِ سَنَةٍ مِنْهَا، لاَ يَبْقَى مِمَّنْ هُوَ عَلَى ظَهْرِ الأَرْضِ أَحَدٌ».

‘আবদুল্লাহ ইবন উমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর জীবনের শেষের দিকে আমাদের নিয়ে ‘ইশার সালাত আদায় করলেন। সালাম ফিরাবার পর তিনি দাঁড়িয়ে বললেন, তোমরা কি এ রাতের সম্পর্কে জান? বর্তমানে যারা পৃথিবীতে রয়েছে, একশ বছরের মাথায় তাদের কেউ আর বাকী থাকবে না।[470]

 

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ভবিষ্যৎবাণী

আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর হিফযের ব্যাপারে আল্লাহর বরকত।

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ: قُلْتُ: يَا رَسُولَ اللَّهِ، إِنِّي أَسْمَعُ مِنْكَ حَدِيثًا كَثِيرًا أَنْسَاهُ؟ قَالَ: «ابْسُطْ رِدَاءَكَ» فَبَسَطْتُهُ، قَالَ: فَغَرَفَ بِيَدَيْهِ، ثُمَّ قَالَ: «ضُمَّهُ» فَضَمَمْتُهُ، فَمَا نَسِيتُ شَيْئًا بَعْدَهُ. حَدَّثَنَا إِبْرَاهِيمُ بْنُ المُنْذِرِ قَالَ: حَدَّثَنَا ابْنُ أَبِي فُدَيْكٍ بِهَذَا أَوْ قَالَ: غَرَفَ بِيَدِهِ فِيهِ.

আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি বললাম, ‘ইয়া রাসূলুল্লাহ! আমি আমি আপনার কাছ থেকে বহু হাদীস শুনি কিন্তু ভুলে যাই।’ তিনি বলবেন তোমার চাদর খুলে ধর। আমি খুলে ধরলাম। তিনি দু’হাত অঞ্জলী করে তাতে কিছু ঢেলে দেওয়ার মত করে বললেন, এটা তোমার বুকের সাথে লাগিয়ে ধর। আমি তা বুকের সাথে লাগালাম। এরপর আমি আর কিছুই ভুলিনি। ইবরাহীম ইবনুল মুনযির (রহ.) ইবন আবূ ফুদায়ক (রহ.) সূত্রে অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করেন এবং তাতে বলেন যে, রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর হাত দিয়ে সে চাদরের মধ্য (কিছু) দিলেন।[471]

قَالَ: أَخْبَرَنِي سَعِيدُ بْنُ المُسَيِّبِ، وَأَبُو سَلَمَةَ بْنُ عَبْدِ الرَّحْمَنِ، أَنَّ أَبَا هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، قَالَ: إِنَّكُمْ تَقُولُونَ: إِنَّ أَبَا هُرَيْرَةَ يُكْثِرُ الحَدِيثَ عَنْ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، وَتَقُولُونَ مَا بَالُ المُهَاجِرِينَ، وَالأَنْصَارِ لاَ يُحَدِّثُونَ عَنْ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، بِمِثْلِ حَدِيثِ أَبِي هُرَيْرَةَ، وَإِنَّ إِخْوَتِي مِنَ المُهَاجِرِينَ كَانَ يَشْغَلُهُمْ صَفْقٌ بِالأَسْوَاقِ، وَكُنْتُ أَلْزَمُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَلَى مِلْءِ بَطْنِي، فَأَشْهَدُ إِذَا غَابُوا، وَأَحْفَظُ إِذَا نَسُوا، وَكَانَ يَشْغَلُ إِخْوَتِي مِنَ الأَنْصَارِ عَمَلُ أَمْوَالِهِمْ، وَكُنْتُ امْرَأً مِسْكِينًا مِنْ مَسَاكِينِ الصُّفَّةِ، أَعِي حِينَ يَنْسَوْنَ، وَقَدْ قَالَ: رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي حَدِيثٍ يُحَدِّثُهُ: «إِنَّهُ لَنْ يَبْسُطَ أَحَدٌ ثَوْبَهُ حَتَّى أَقْضِيَ مَقَالَتِي هَذِهِ، ثُمَّ يَجْمَعَ إِلَيْهِ ثَوْبَهُ، إِلَّا وَعَى مَا أَقُولُ»، فَبَسَطْتُ نَمِرَةً عَلَيَّ، حَتَّى إِذَا قَضَى رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَقَالَتَهُ جَمَعْتُهَا إِلَى صَدْرِي، فَمَا نَسِيتُ مِنْ مَقَالَةِ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ تِلْكَ مِنْ شَيْءٍ.

আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আপনারা বলে থাকেন, রাসূলূল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বেশী বেশী হাদীস বর্ণনা করে থাকে এবং আরো বলেন, মুহাজির ও আনসারদের কি হলো যে, তারা তো রাসূলূল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে হাদীস বর্ণনা করেন না? (কিন্তু ব্যাপার হলো এই যে) আমার মুহাজির ভাইগন বাজারে কেনা-বেচায় ব্যাস্ত থাকতেন আর আমি কোনো প্রকারে আমার পেটের চাহিদা মিটিয়ে (খেয়ে না খেয়ে) রাসূলূল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দরবারে পড়ে থাকতাম। তাঁরা যখন (কাজের ব্যাস্ততায়) অনুপস্থিত থাকতেন, আমি তখন উপস্থিত থাকতাম। তাঁরা যা ভুলে যেতেন, আমি তা সংরক্ষন করতাম। আর আমার আনসার ভাইয়েরা নিজেদের খেত-খামারের কাজে ব্যাপৃত থাকতেন। আমি ছিলাম আসহাবে সুফফার মিসকীনদের এক মিসকীন। তাঁরা যা ভুলে যেতেন, আমি তা সংরক্ষন করতাম। রাসূলূল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর এক বর্ণনায় বললেন, আমার এ কথা শেষ না হওয়া পর্যন্ত যে কেউ তার কাপড় বিছিয়ে দিবে এবং পরে নিজের শরীরের সাথে তার কাপড় জড়িয়ে নেবে, আমি যা বলছি সে তা স্মরন রাখতে পারবে। [আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন] আমি আমার গায়ের চাদরখানা বিছিয়ে দিলাম, যতক্ষন না রাসূলূল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর কথা শেষ করলেন, পরে আমি তা আমার বুকের সাথে জড়িয়ে ধরলাম। ফলে আমি রাসূলূল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সে কথার কিছুই ভুলিনি।[472]

 

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ভবিষ্যৎবাণী

বৃষ্টির রাতে লাইলাতুল কদর হবে। 

عَنْ أَبِي سَلَمَةَ، قَالَ: انْطَلَقْتُ إِلَى أَبِي سَعِيدٍ الخُدْرِيِّ فَقُلْتُ: أَلاَ تَخْرُجُ بِنَا إِلَى النَّخْلِ نَتَحَدَّثُ، فَخَرَجَ، فَقَالَ: قُلْتُ: حَدِّثْنِي مَا سَمِعْتَ مِنَ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي لَيْلَةِ القَدْرِ، قَالَ: اعْتَكَفَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَشْرَ الأُوَلِ مِنْ رَمَضَانَ وَاعْتَكَفْنَا مَعَهُ، فَأَتَاهُ جِبْرِيلُ، فَقَالَ: إِنَّ الَّذِي تَطْلُبُ أَمَامَكَ، فَاعْتَكَفَ العَشْرَ الأَوْسَطَ، فَاعْتَكَفْنَا مَعَهُ فَأَتَاهُ جِبْرِيلُ فَقَالَ: إِنَّ الَّذِي تَطْلُبُ أَمَامَكَ، فَقَامَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ خَطِيبًا صَبِيحَةَ عِشْرِينَ مِنْ رَمَضَانَ فَقَالَ: «مَنْ كَانَ اعْتَكَفَ مَعَ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَلْيَرْجِعْ، فَإِنِّي أُرِيتُ لَيْلَةَ القَدْرِ، وَإِنِّي نُسِّيتُهَا، وَإِنَّهَا فِي العَشْرِ الأَوَاخِرِ، فِي وِتْرٍ، وَإِنِّي رَأَيْتُ كَأَنِّي أَسْجُدُ فِي طِينٍ وَمَاءٍ» وَكَانَ سَقْفُ المَسْجِدِ جَرِيدَ النَّخْلِ، وَمَا نَرَى فِي السَّمَاءِ شَيْئًا، فَجَاءَتْ قَزَعَةٌ، فَأُمْطِرْنَا، فَصَلَّى بِنَا النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ حَتَّى رَأَيْتُ أَثَرَ الطِّينِ وَالمَاءِ عَلَى جَبْهَةِ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَأَرْنَبَتِهِ تَصْدِيقَ رُؤْيَاهُ.

আবূ সালামা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি আবূ সায়ীদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর নিকট উপস্থিত হয়ে বললাম, আমাদের খেজুর বাগানে চলুন, (হাদীস সংক্রান্ত) আলাপ আলোচনা করব। তিনি বেরিয়ে আসলেন। আবূ সালাম রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, আমি তাকে বললাম, ‘লাইলাতুল কাদর’ সম্পর্কে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে যা শুনেছেন, তা আমার কাছে বর্ণনা করুন। তিনি বললেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রামযানের প্রথম দশ দিন ই’তিকাফ করলেন। আমারও তাঁর সঙ্গে ই’তিকাফ করলাম। জিবরীল আলাইহিস সালাম এসে বললেন, আপনি যা তালাশ করছেন, তা আপনার সামনে রয়েছে। এরপর তিনি মধ্যবর্তী দশ দিন ই’তিকাফ করলেন, আমরাও তাঁর সঙ্গে ই’তিকাফ করলাম। পুনরায় জিবরীল আলাইহিস সালাম এসে বললেন, আপনি যা তালাশ করছেন, তা আপনার সামনে রয়েছে। এরপর রামযানের বিশ তারিখ সকালে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খুতবা দিতে দাঁড়িয়ে বললেন, যারা আল্লাহ্ নবীর সঙ্গে ই’তিকাফ করেছেন, তারা যেন ফিরে আসেন (আবার ই’তিকাফ করেন) কেননা, আমাকে স্বপ্নে ‘লাইলাতুল কাদর’ অবগত করানো হয়েছে। তবে আমাকে তা (নির্ধারিত তারিখটি) ভুলিয়ে দেওয়া হয়েছে। নিঃসন্দেহে তা শেষ দশ দিনের কোনো এক বেজোড় তারিখে। স্বপ্নে দেখলাম যেন আমি কাদা ও পানির উপর সিজদা করছি। তখন মসজিদের ছাদ খেজুরের ডাল দ্বারা নির্মিত ছিল। আমরা আকাশে কোনো কিছুই (মেঘ) দেখিনি, এক বই হালকা মেঘ আসল এবং আমাদের উপর (বৃষ্টি) বর্ষিত হল। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের নিয়ে সালাত আদায় করলেন। এমন কি আমি রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কপাল ও নাকের অগ্রভাগে পানি ও কাঁদার চিহ্ন দেখতে পেলাম। এভাবেই তাঁর স্বপ্ন সত্যে পরিণত হলো।[473]

 

 

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ভবিষ্যৎবাণী

সালেহীন তথা নেককার লোকেরা ক্রমান্বয়ে চলে যাবেন  

عَنْ مِرْدَاسٍ الأَسْلَمِيِّ، قَالَ: قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «يَذْهَبُ الصَّالِحُونَ، الأَوَّلُ فَالأَوَّلُ، وَيَبْقَى حُفَالَةٌ كَحُفَالَةِ الشَّعِيرِ، أَوِ التَّمْرِ، لاَ يُبَالِيهِمُ اللَّهُ بَالَةً» قَالَ أَبُو عَبْدِ اللَّهِ: «يُقَالُ حُفَالَةٌ وَحُثَالَةٌ».

মিরদাস আসলামী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, নেককার লোকেরা ক্রমান্বয়ে চলে যাবেন। আর থেকে যাবে নিকৃষ্টরা- যব অথবা খেজুরের মত লোকজন। আল্লাহ্ তা‘আলা এদের প্রতি ভ্রুক্ষেপ ও করবেন না।[474]

 

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ভবিষ্যৎবাণী

তিনি তাঁর স্ত্রী আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহার আগে মারা যাবেন।

عَنْ يَحْيَى بْنِ سَعِيدٍ، قَالَ: سَمِعْتُ القَاسِمَ بْنَ مُحَمَّدٍ، قَالَ: قَالَتْ عَائِشَةُ: وَا رَأْسَاهْ، فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «ذَاكِ لَوْ كَانَ وَأَنَا حَيٌّ فَأَسْتَغْفِرَ لَكِ وَأَدْعُوَ لَكِ» فَقَالَتْ عَائِشَةُ: وَا ثُكْلِيَاهْ، وَاللَّهِ إِنِّي لَأَظُنُّكَ تُحِبُّ مَوْتِي، وَلَوْ كَانَ ذَاكَ، لَظَلِلْتَ آخِرَ يَوْمِكَ مُعَرِّسًا بِبَعْضِ أَزْوَاجِكَ، فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: " بَلْ أَنَا وَا رَأْسَاهْ، لَقَدْ هَمَمْتُ - أَوْ أَرَدْتُ - أَنْ أُرْسِلَ إِلَى أَبِي بَكْرٍ وَابْنِهِ وَأَعْهَدَ: أَنْ يَقُولَ القَائِلُونَ - أَوْ يَتَمَنَّى المُتَمَنُّونَ - ثُمَّ قُلْتُ: يَأْبَى اللَّهُ وَيَدْفَعُ المُؤْمِنُونَ، أَوْ يَدْفَعُ اللَّهُ وَيَأْبَى المُؤْمِنُونَ ".

কাসিম ইবন মুহাম্মদ (রহ.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা বলেছিলেন “হায় যন্ত্রনায় আমার মাথা গেল। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, যদি এমনটি হয় আর আমি জীবিত থাকি তাহলে আমি তোমার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করবো, তোমার জন্য দো‘আ করবো। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা বললেন, হায় আফসুস, আল্লাহর কসম। আমার মনে হয় আপনি আমার মৃত্যুকে পছন্দ করেন। আর এমনটি হলে আপনি পরের দিনই আপনার অন্যান্য সহধর্মিনীদের সংগে রাত যাপন করতে পারবেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, বরং আমি আমার মাথা গেল বলার বেশী যোগ্য। আমি তো ইচ্ছা করেছিলাম কিংবা বলেছেন, আমি ঠিক করেছিলাম, আবূ বকর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু ও তার ছেলের নিকট সংবাদ পাঠাবো এবং অসীয়ত করে যাবো, যেন লোকদের কিছু বলার অবকাশ না থাকে কিংবা আকাঙ্খাকারীদের কোনো আকাঙ্খা করার অবকাশ না থাকে। তারপর ভাবলাম। আল্লাহ (আবূ বকর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু ব্যতীত অন্য কেউ খিলাফতের আকাঙ্খা করুক) তা অপছন্দ করবেন, মু’মিনগন তা পরিহার করবেন। কিংবা তিনি বলেছেন, আল্লাহ তা পরিহার করবেন এবং মু’মিনগন তা অপছন্দ করবেন।[475]

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ভবিষ্যৎবাণী

তাঁর উম্মতের কিছু লোক কিছু হারামকে হালাল মনে করবে।

حَدَّثَنَا عَبْدُ الرَّحْمَنِ بْنُ غَنْمٍ الأَشْعَرِيُّ، قَالَ: حَدَّثَنِي أَبُو عَامِرٍ أَوْ أَبُو مَالِكٍ الْأَشْعَرِيُّ، وَاللَّهِ مَا كَذَبَنِي: سَمِعَ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: " لَيَكُونَنَّ مِنْ أُمَّتِي أَقْوَامٌ، يَسْتَحِلُّونَ الحِرَ وَالحَرِيرَ، وَالخَمْرَ وَالمَعَازِفَ، وَلَيَنْزِلَنَّ أَقْوَامٌ إِلَى جَنْبِ عَلَمٍ، يَرُوحُ عَلَيْهِمْ بِسَارِحَةٍ لَهُمْ، يَأْتِيهِمْ - يَعْنِي الفَقِيرَ - لِحَاجَةٍ فَيَقُولُونَ: ارْجِعْ إِلَيْنَا غَدًا، فَيُبَيِّتُهُمُ اللَّهُ، وَيَضَعُ العَلَمَ، وَيَمْسَخُ آخَرِينَ قِرَدَةً وَخَنَازِيرَ إِلَى يَوْمِ القِيَامَةِ ".

আবদুর রহমান ইবন গানাম আশ’আরী (রহ.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমার নিকট আবূ আমের কিংবা আবূ মালেক আশ’আরী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বর্ণনা করেছেন, আল্লাহর কসম! তিনি আমার কাছে মিথ্যে কথা বলেননি। তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছেন: আমার উম্মতের মাঝে অবশ্যই এমন কতগুলো দলের সৃষ্টি হবে, যারা ব্যভিচার, রেশমী কাপড়, মদ ও বাদ্যযন্ত্রকে হালাল জ্ঞান করবে। অনুরূপভাবে এমন অনেক দল হবে, যারা পর্বতের কিনারায় বসবাস করবে, বিকাল বেলায় যখন তারা পশুপাল নিয়ে ফিরবে তখন তাদের কাছ কোনো অভাব নিয়ে ফকীর আসলে তারা উত্তর দেবে, আগামী দিন সকালে তুমি আমাদের নিকট এসো। এদিকে রাতের অন্ধকারেই আল্লাহ তাদের ধ্বংস করে দেবেন। পর্বতটি ধসিয়ে দেবেন, আর অবশিষ্ট লোকদের তিনি কিয়ামত দিবস পর্যন্ত বানর ও শূকর বানিয়ে রাখবেন।[476]

 

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ভবিষ্যৎবাণী

মুশরিকরা খন্দকের যুদ্ধের পরে মদীনায় এসে যুদ্ধ করবে না, বরং মদীনাবাসিরাই তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে।

عَنْ سُلَيْمَانَ بْنِ صُرَدٍ، قَالَ: قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَوْمَ الْأَحْزَابِ: «نَغْزُوهُمْ، وَلاَ يَغْزُونَنَا».

সুলায়মান ইবন সুরাদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, খন্দক যুদ্ধের দিন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন যে, এখন থেকে আমরাই তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করব। তারা আর আমাদের প্রতি আক্রমণ করতে পারবে না।[477]

حَدَّثَنَا إِسْرَائِيلُ، سَمِعْتُ أَبَا إِسْحَاقَ، يَقُولُ: سَمِعْتُ سُلَيْمَانَ بْنَ صُرَدٍ، يَقُولُ: سَمِعْتُ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، يَقُولُ: حِينَ أَجْلَى الأَحْزَابَ عَنْهُ: «الآنَ نَغْزُوهُمْ وَلاَ يَغْزُونَنَا، نَحْنُ نَسِيرُ إِلَيْهِمْ».

সুলায়মান ইব্ন সুরাদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আহযাব যুদ্ধের দিন কাফেরদের সম্মিলিত বাহিনী মদীনা ছেড়ে ফিরে যেতে বাধ্য হলে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আমি বলতে শুনেছি যে, এখন থেকে আমরাই তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করব। তারা আমাদের বিরুদ্ধে আক্রমণ করতে পারবেনা। আর আমরা তাদের এলাকায় গিয়েই আক্রমণ করব।[478]

 রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ভবিষ্যৎবাণী

সা‘দ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর দ্বারা কিছু লোক উপকৃত হবে এবং কিছু লোক ক্ষতিগ্রস্ত হবে। মুসলমানেরা তাঁর দ্বারা উপকৃত হয়েছে এবং পারসিকরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

عَنْ عَامِرِ بْنِ سَعْدِ بْنِ مَالِكٍ، عَنْ أَبِيهِ، قَالَ: عَادَنِي النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَامَ حَجَّةِ الوَدَاعِ مِنْ مَرَضٍ أَشْفَيْتُ مِنْهُ عَلَى المَوْتِ، فَقُلْتُ: يَا رَسُولَ اللَّهِ، بَلَغَ بِي مِنَ الوَجَعِ مَا تَرَى، وَأَنَا ذُو مَالٍ، وَلاَ يَرِثُنِي إِلَّا ابْنَةٌ لِي وَاحِدَةٌ، أَفَأَتَصَدَّقُ بِثُلُثَيْ مَالِي؟ قَالَ: «لاَ»، قَالَ: فَأَتَصَدَّقُ بِشَطْرِهِ؟ قَالَ: «الثُّلُثُ يَا سَعْدُ، وَالثُّلُثُ كَثِيرٌ، إِنَّكَ أَنْ تَذَرَ ذُرِّيَّتَكَ أَغْنِيَاءَ، خَيْرٌ مِنْ أَنْ تَذَرَهُمْ عَالَةً يَتَكَفَّفُونَ النَّاسَ وَلَسْتَ بِنَافِقٍ نَفَقَةً تَبْتَغِي بِهَا وَجْهَ اللَّهِ، إِلَّا آجَرَكَ اللَّهُ بِهَا حَتَّى اللُّقْمَةَ تَجْعَلُهَا فِي فِي امْرَأَتِكَ» قُلْتُ: يَا رَسُولَ اللَّهِ، أُخَلَّفُ بَعْدَ أَصْحَابِي؟ قَالَ: «إِنَّكَ لَنْ تُخَلَّفَ، فَتَعْمَلَ عَمَلًا تَبْتَغِي بِهَا وَجْهَ اللَّهِ إِلَّا ازْدَدْتَ بِهِ دَرَجَةً وَرِفْعَةً، وَلَعَلَّكَ تُخَلَّفُ حَتَّى يَنْتَفِعَ بِكَ أَقْوَامٌ، وَيُضَرَّ بِكَ آخَرُونَ، اللَّهُمَّ أَمْضِ لِأَصْحَابِي هِجْرَتَهُمْ، وَلاَ تَرُدَّهُمْ عَلَى أَعْقَابِهِمْ، لَكِنِ البَائِسُ سَعْدُ ابْنُ خَوْلَةَ». يَرْثِي لَهُ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنْ تُوُفِّيَ بِمَكَّةَ وَقَالَ أَحْمَدُ بْنُ يُونُسَ، وَمُوسَى، عَنْ إِبْرَاهِيمَ، أَنْ تَذَرَ وَرَثَتَكَ.

সা‘দ ইবন আবূ ওয়াক্কাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, বিদায় হজ্জের বছর আমি মারাত্মক রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর নিকটবর্তী হয়ে পড়ি তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে দেখতে আসেন। তখন আমি বললাম, ইয়া রাসূলুল্লাহ! আমার রোগ কি পর্যায়ে পৌঁছেছে তা আপনি দেখতে পাচ্ছেন। আমি একজন বিত্তবান লোক। আমার ওয়ারিশ হচ্ছে একটি মাত্র কন্যা। আমি আমার সম্পদের দুই-তৃতীয়াংশ আল্লাহর রাস্তায় সাদকা দিব? তিনি বললেন না। আমি বললাম, তবে কি অর্ধেক? তিনি বললেন, হে সা‘দ এক-তৃতীয়াংশ দান কর। এ তৃতীয়াংশই অনেক বেশী। তুমি তোমার সন্তান-সন্ততিদেরকে বিত্তবান রেখে যাও ইহাই উত্তম, এর চাইতে যে তুমি তাদেরকে নিঃস্ব রেখে গেলে যে তারা অন্যের নিকট হাত পেতে ভিক্ষা করে। তুমি তোমার উত্তরাধিকারীদের সম্পদশালী রেখে যাবে আর তুমি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য যা ব্যয় করবে, আল্লাহ তার প্রতিদান তোমাকে দেবে। তুমি তোমার স্ত্রীর মুখে যে লোকমাটি তুলে দিবে এর প্রতিদানও আল্লাহ তোমাকে দেবে। আমি বললাম, ইয়া আল্লাহ্! আমি কি আমার সাথী সঙ্গীদের থেকে পিছনে পড়ে থাকব? তিনি বললেন, তুমি কখনই পিছনে পড়ে থাকবেনা আর এ অবস্থায় আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে তুমি যে কোনো নেক ‘আমল করবে তাহলে তোমার সম্মান ও মর্যাদা আরো বেড়ে যাবে। সম্ভবতঃ তুমি পিছনে থেকে যাবে এবং এর ফলে তোমার দ্বারা অনেক মানুষ উপকৃত এবং অনেক মানুষ ক্ষতিগ্রস্থ হবে। হে আল্লাহ্! আমার সাহাবীদের হিজরতকে অক্ষুন্ন রাখুন। তাদেরকে পশ্চাৎমুখি করে ফিরিয়ে নিবেন না। কিন্তু অভাবগ্রস্থ সা‘দ ইবন খওলার মক্কায় মৃত্যুর কারণে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার জন্য দুঃখ প্রকাশ করলেন। আহমদ ইবন ইউনুস (রহ.) ও মূসা (রহ.) ইব্রাহীম সূত্রে বর্ণনা করেছেন, তোমরা উত্তরাধিকারীদের রেখে যাওয়া...।[479]

 


 

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ভবিষ্যৎবাণী

তাঁর হায়াত শেষ হয়ে যাচ্ছে।

عَنْ أَبِي سَعِيدٍ الخُدْرِيِّ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ جَلَسَ عَلَى المِنْبَرِ فَقَالَ: «إِنَّ عَبْدًا خَيَّرَهُ اللَّهُ بَيْنَ أَنْ يُؤْتِيَهُ مِنْ زَهْرَةِ الدُّنْيَا مَا شَاءَ، وَبَيْنَ مَا عِنْدَهُ، فَاخْتَارَ مَا عِنْدَهُ» فَبَكَى أَبُو بَكْرٍ وَقَالَ: فَدَيْنَاكَ بِآبَائِنَا وَأُمَّهَاتِنَا، فَعَجِبْنَا لَهُ، وَقَالَ النَّاسُ: انْظُرُوا إِلَى هَذَا الشَّيْخِ، يُخْبِرُ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَنْ عَبْدٍ خَيَّرَهُ اللَّهُ بَيْنَ أَنْ يُؤْتِيَهُ مِنْ زَهْرَةِ الدُّنْيَا، وَبَيْنَ مَا عِنْدَهُ، وَهُوَ يَقُولُ: فَدَيْنَاكَ بِآبَائِنَا وَأُمَّهَاتِنَا، فَكَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ هُوَ المُخَيَّرَ، وَكَانَ أَبُو بَكْرٍ هُوَ أَعْلَمَنَا بِهِ، وَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِنَّ مِنْ أَمَنِّ النَّاسِ عَلَيَّ فِي صُحْبَتِهِ وَمَالِهِ أَبَا بَكْرٍ، وَلَوْ كُنْتُ مُتَّخِذًا خَلِيلًا مِنْ أُمَّتِي لاَتَّخَذْتُ أَبَا بَكْرٍ، إِلَّا خُلَّةَ الإِسْلاَمِ، لاَ يَبْقَيَنَّ فِي المَسْجِدِ خَوْخَةٌ إِلَّا خَوْخَةُ أَبِي بَكْرٍ».

আবূ সাঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মিম্বরে বসলেন এবং বললেন, আল্লাহ তাঁর এক বান্দাকে দুটি বিষয়ের একটির ইখতিয়ার দিয়েছেন। তাঁর একটি হল- দুনিয়ার ভোগ-সম্পদ আর একটি হল আল্লাহ্‌র নিকট যা রক্ষিত রয়েছে। তখন সে বান্দা আল্লাহর কাছে যা রয়েছে তাই পছন্দ করলেন। একথা শুনে, আবূ বকর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু কেঁদে ফেললেন, এবং বললেন, আমাদের পিতা-মাতাকে আপনার জন্য উৎসর্গ করলাম। তাঁর অবস্থা দেখে আমরা বিস্মিত হলাম। লোকেরা বলতে লাগল, এ বৃদ্ধের অবস্থা দেখ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক বান্দার সম্বন্ধে খবর দিলেন যে, তাকে আল্লাহ পার্থিব ভোগ-সম্পদ দেওয়ার এবং তাঁর কাছে যা হয়েছে, এ দু’য়ের মধ্যে ইখতিয়ার দিলেন আর এই বৃদ্ধ বলছে, আপনার জন্য আমাদের মাতাপিতা উৎসর্গ করলাম। (প্রকৃতপক্ষে) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামই হলেন সেই ইখতিয়ার প্রাপ্ত বান্দা। আর আবূ বকর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুই হলেন আমাদের মধ্যে সবচাইতে বিজ্ঞ ব্যাক্তি। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যে ব্যক্তি তার সহচর্য ও মাল দিয়ে আমার প্রতি সর্বাধিক ইহসান করেছেন তিনি হলেন আবূ বকর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু। যদি আমি আমার উম্মতের কোনো ব্যক্তিকে অন্তরঙ্গ বন্ধুরূপে গ্রহণ করতাম তাহলে আবূ বকরকেই করতাম। তবে তার সঙ্গে আমার ইসলামী ভ্রাতৃত্বের গভীর সম্পর্ক রয়েছে। মসজিদের দিকে আবূ বকর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর দরজা ছাড়া অন্য কারো দরজা খোলা থাকবে না।[480]

 

 


 

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ভবিষ্যৎবাণী

আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা তাঁর স্ত্রী হবেন।

عَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا، قَالَتْ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: " أُرِيتُكِ فِي المَنَامِ مَرَّتَيْنِ، إِذَا رَجُلٌ يَحْمِلُكِ فِي سَرَقَةٍ مِنْ حَرِيرٍ، فَيَقُولُ: هَذِهِ امْرَأَتُكَ، فَأَكْشِفُهَا فَإِذَا هِيَ أَنْتِ، فَأَقُولُ: إِنْ يَكُنْ هَذَا مِنْ عِنْدِ اللَّهِ يُمْضِهِ ".

আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমাকে আমায় দু’বার স্বপ্নে দেখানো হয়েছে। আমি দেখলাম, এক ব্যক্তি তোমাকে রেশমী এক টুকরা কাপড়ে জড়িয়ে বহন করে নিয়ে আসছে এবং বলছে ইনি আপনার স্ত্রী। আমি তার নিকাব উন্মোচন করে দেখতে পাই যে ঐ মহিলাটি তুমিই এবং আমি বলেছি, যদি এটা আল্লাহর পক্ষ থেকে হয়ে থাকে তা হলে তিনি তা বাস্তবায়িত করবেন।[481]

عَنْ عَائِشَةَ، قَالَتْ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: " أُرِيتُكِ قَبْلَ أَنْ أَتَزَوَّجَكِ مَرَّتَيْنِ، رَأَيْتُ المَلَكَ يَحْمِلُكِ فِي سَرَقَةٍ مِنْ حَرِيرٍ، فَقُلْتُ لَهُ: اكْشِفْ، فَكَشَفَ فَإِذَا هِيَ أَنْتِ، فَقُلْتُ: إِنْ يَكُنْ هَذَا مِنْ عِنْدِ اللَّهِ يُمْضِهِ، ثُمَّ أُرِيتُكِ يَحْمِلُكِ فِي سَرَقَةٍ مِنْ حَرِيرٍ، فَقُلْتُ: اكْشِفْ، فَكَشَفَ، فَإِذَا هِيَ أَنْتِ، فَقُلْتُ: إِنْ يَكُ هَذَا مِنْ عِنْدِ اللَّهِ يُمْضِهِ ".

আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমাকে (আয়েশাকে) শাদী করার পূর্বেই দু’বার আমাকে দেখানো হয়েছে। আমি দেখেছি, একজন ফেরেশতা তোমাকে রেশমী এক টুকরা কাপড়ে জড়িয়ে বহন করে নিয়ে আসছে। আমি বললাম, আপনি নিকাব উন্মোচন করুন। যখন সে নিকব উন্মোচন করল তখন আমি দেখতে পেলাম যে, উক্ত মহিলা তুমিই। আমি তখন বললাম, এটা যদি আল্লাহর পক্ষ থেকে হয়ে থাকে তাহলে তিনি তা বাস্তবায়িত করবেন। এরপর আবার আমাকে দেখানো হল যে, ফেরেশতা তোমাকে রেশমী এক টুকরা কাপড়ে জড়িয়ে বহন করে নিয়ে আসছে। আমি বললাম, আপনি (তার নিকাব) উন্মোচন করুন। সে তা উন্মোচন করলে আমি দেখতে পাই যে, উক্ত মহিলা তুমিই। তখন আমি বললাম: এটা যদি আল্লাহর পক্ষ থেকে হয়ে থাকে তাহলে তিনি তা বাস্তবায়িত করবেন।[482]

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ভবিষ্যৎবাণী

তিনি আবু বকর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর আগে ইনতেকাল করবেন।

عَنْ مُحَمَّدِ بْنِ جُبَيْرِ بْنِ مُطْعِمٍ، عَنْ أَبِيهِ، قَالَ: أَتَتِ امْرَأَةٌ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَأَمَرَهَا أَنْ تَرْجِعَ إِلَيْهِ، قَالَتْ: أَرَأَيْتَ إِنْ جِئْتُ وَلَمْ أَجِدْكَ؟ كَأَنَّهَا تَقُولُ: المَوْتَ، قَالَ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِنْ لَمْ تَجِدِينِي فَأْتِي أَبَا بَكْرٍ».

জুবায়র ইবন মুতঈম রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একজন মহিলা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের খেদমতে এলো। (আলোচনা শেষে যাওয়ার সময়) তিনি তাঁকে আবার আসার জন্য বললেন। মহিলা বলল, আমি এসে যদি আপনাকে না পাই তবে কি করব? একথা দ্বারা মহিলাটি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওফাতের প্রতি ইঙ্গিত করেছিল। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, যদি আমাকে না পাও তবে আবু বকরের নিকট আসবে। [483]  

 

খাইবার বিজয় সম্পর্কে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ভবিষ্যৎবাণী

عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ: أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ إِذَا غَزَا بِنَا قَوْمًا، لَمْ يَكُنْ يَغْزُو بِنَا حَتَّى يُصْبِحَ وَيَنْظُرَ، فَإِنْ سَمِعَ أَذَانًا كَفَّ عَنْهُمْ، وَإِنْ لَمْ يَسْمَعْ أَذَانًا أَغَارَ عَلَيْهِمْ، قَالَ: فَخَرَجْنَا إِلَى خَيْبَرَ، فَانْتَهَيْنَا إِلَيْهِمْ لَيْلًا، فَلَمَّا أَصْبَحَ وَلَمْ يَسْمَعْ أَذَانًا رَكِبَ، وَرَكِبْتُ خَلْفَ أَبِي طَلْحَةَ، وَإِنَّ قَدَمِي لَتَمَسُّ قَدَمَ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قَالَ: فَخَرَجُوا إِلَيْنَا بِمَكَاتِلِهِمْ وَمَسَاحِيهِمْ، فَلَمَّا رَأَوُا النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قَالُوا: مُحَمَّدٌ وَاللَّهِ، مُحَمَّدٌ وَالخَمِيسُ، قَالَ: فَلَمَّا رَآهُمْ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: " اللَّهُ أَكْبَرُ، اللَّهُ أَكْبَرُ، خَرِبَتْ خَيْبَرُ، إِنَّا إِذَا نَزَلْنَا بِسَاحَةِ قَوْمٍ {فَسَاءَ صَبَاحُ المُنْذَرِينَ} [الصافات: 177] ".

আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখনই আমাদের নিয়ে কোনো গোত্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে যেতেন, ভোর না হওয়া পর্যন্ত অভিযান পরিচালনা করতেন না বরং লক্ষ্য রাখতেন, যদি তিনি তখন আযান শুনতে পেতেন, তাহলে তাদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করা থেকে বিরত থাকতেন। আর যদি আযান শুনতে না পেতেন, তাহলে অভিযান চালাতেন। আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, আমারা খায়বারের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলাম এবং রাতের বেলায় তাদের সেখানে পৌছলাম। যখন প্রভাত হল এবং তিনি আযান শুনতে পেলেন না; তখন রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাওয়ার হলেন। আমি আবূ তালহা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর পিছনে সাওয়ার হলাম। আমার পা, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কদম মুবারকের সাথে লেগে যাচ্ছিল। আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, তারা তাদের থলে ও কোদাল নিয়ে বেরিয়ে আমাদের দিকে আসল। হঠাৎ তারা যখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে দেখতে পেল, তখন বলে উঠল, ‘এ যে মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, আল্লাহ্‌র শপথ! মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর পঞ্চ বাহিনী সহ!’ আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের দেখে বলে উঠলেন, ‘আল্লাহু আকবর, আল্লাহু আকবর, খায়বার ধ্বংস হোক। আমরা যখন কোনো কাওমের আঙ্গিনায় অবতরণ করি, তখন সতর্কীকৃতদের প্রভাত হবে কত মন্দ![484]

 

 

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ভবিষ্যৎবাণী

উমাইয়্যাহ ইবন খালফ নিহত হবে।

عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ مَسْعُودٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، قَالَ: انْطَلَقَ سَعْدُ بْنُ مُعَاذٍ مُعْتَمِرًا، قَالَ: فَنَزَلَ عَلَى أُمَيَّةَ بْنِ خَلَفٍ أَبِي صَفْوَانَ، وَكَانَ أُمَيَّةُ إِذَا انْطَلَقَ إِلَى الشَّأْمِ، فَمَرَّ بِالْمَدِينَةِ نَزَلَ عَلَى سَعْدٍ، فَقَالَ أُمَيَّةُ، لِسَعْدٍ: انْتَظِرْ حَتَّى إِذَا انْتَصَفَ النَّهَارُ، وَغَفَلَ النَّاسُ انْطَلَقْتُ فَطُفْتُ، فَبَيْنَا سَعْدٌ يَطُوفُ إِذَا أَبُو جَهْلٍ، فَقَالَ: مَنْ هَذَا الَّذِي يَطُوفُ بِالكَعْبَةِ؟ فَقَالَ سَعْدٌ: أَنَا سَعْدٌ، فَقَالَ أَبُو جَهْلٍ: تَطُوفُ بِالكَعْبَةِ آمِنًا، وَقَدْ آوَيْتُمْ مُحَمَّدًا وَأَصْحَابَهُ؟ فَقَالَ: نَعَمْ، فَتَلاَحَيَا بَيْنَهُمَا، فَقَالَ أُمَيَّةُ لسَعْدٍ: لاَ تَرْفَعْ صَوْتَكَ عَلَى أَبِي الحَكَمِ، فَإِنَّهُ سَيِّدُ أَهْلِ الوَادِي، ثُمَّ قَالَ سَعْدٌ: وَاللَّهِ لَئِنْ مَنَعْتَنِي أَنْ أَطُوفَ بِالْبَيْتِ لَأَقْطَعَنَّ مَتْجَرَكَ بِالشَّامِ، قَالَ: فَجَعَلَ أُمَيَّةُ يَقُولُ لِسَعْدٍ: لاَ تَرْفَعْ صَوْتَكَ، وَجَعَلَ يُمْسِكُهُ، فَغَضِبَ سَعْدٌ فَقَالَ: دَعْنَا عَنْكَ «فَإِنِّي سَمِعْتُ مُحَمَّدًا صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَزْعُمُ أَنَّهُ قَاتِلُكَ»، قَالَ: إِيَّايَ؟ قَالَ: نَعَمْ، قَالَ: وَاللَّهِ مَا يَكْذِبُ مُحَمَّدٌ إِذَا حَدَّثَ فَرَجَعَ إِلَى امْرَأَتِهِ، فَقَالَ: أَمَا تَعْلَمِينَ مَا قَالَ لِي أَخِي اليَثْرِبِيُّ، قَالَتْ: وَمَا قَالَ؟ قَالَ: زَعَمَ أَنَّهُ سَمِعَ مُحَمَّدًا يَزْعُمُ أَنَّهُ قَاتِلِي، قَالَتْ: فَوَاللَّهِ مَا يَكْذِبُ مُحَمَّدٌ، قَالَ: فَلَمَّا خَرَجُوا إِلَى بَدْرٍ، وَجَاءَ الصَّرِيخُ، قَالَتْ لَهُ امْرَأَتُهُ: أَمَا ذَكَرْتَ مَا قَالَ لَكَ أَخُوكَ اليَثْرِبِيُّ، قَالَ: فَأَرَادَ أَنْ لاَ يَخْرُجَ، فَقَالَ لَهُ أَبُو جَهْلٍ: إِنَّكَ مِنْ أَشْرَافِ الوَادِي فَسِرْ يَوْمًا أَوْ يَوْمَيْنِ، فَسَارَ مَعَهُمْ، فَقَتَلَهُ اللَّهُ.

আবদুল্লাহ ইবন মাসউদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, সাদ ইবন মু‘আয রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু (আনসারী) ওমরা আদায় করার জন্য (মক্কা) গমন করলেন এবং সাফওয়ানের পিতা উমাইয়া ইবন খালাফ এর বাড়িতে তিনি অতিথি হলেন। উমাইয়াও সিরিয়ায় গমনকালে (মদিনায়) সা‘দ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর বাড়িতে অবস্থান করত। উমাইয়া সা’দ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুকে বলল, অপেক্ষা করুন, যখন দুপুর হবে এবং যখন চলাফেরা কমে যাবে, তখন আপনি যেয়ে তাওয়াফ করে নিবেন। (অবসর মুহূর্তে) সা‘দ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু তাওয়াফ করছিলেন। এমতাবস্থায় আবু জেহেল এসে হাজির হল। সা’‘দ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুকে দেখে জিজ্ঞাসা করল, এ ব্যক্তি কে? যে কা’বার তাওয়াফ করছে? সা‘দ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বললেন, আমি সা‘দ। আবু জেহেল বলল, তুমি নির্বিঘ্নে কা’বার তাওয়াফ করছ? অথচ তোমরাই মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তাঁর সাথীদেরকে আশ্রয় দিয়েছে? সা‘দ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বললেন, হ্যাঁ। এভাবে দু’জনের মধ্যে কথা কাটাকাটি শুরু হয়ে গেল। তখন উমাইয়া সা‘দ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুকে বলল, আবুল হাকামের সাথে উচ্চস্বরে কথা বল না, কেননা সে মক্কাবাসীদের (সর্বজন মান্য) নেতা। এরপর সা‘দ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বললেন, আল্লাহ্‌র কসম! তুমি যদি আমাকে বায়তুল্লাহর তাওয়াফ করতে বাঁধা প্রদান কর, তবে আমিও তোমার সিরিয়ার সাথে ব্যবসা বানিজ্যের রাস্তা বন্ধ করে দিব। উমাইয়া সা‘দ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুকে তখন বলতে লাগল, তোমার স্বর উচু করো না এবং সে তাঁকে বিরত করতে চেষ্টা করতে লাগল। তখন সা‘দ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু ক্রোধান্বিত হয়ে বললেন, আমাকে ছেড়ে দাও। আমি মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, তারা তোমাকে হত্যা করবে। উমাইয়া বলল, আমাকেই? তিনি বলেলন, হ্যাঁ (তোমাকেই)। উমাইয়া বলল, আল্লাহর কসম মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কখনো মিথ্যা কথা বলেন না। এরপর উমাইয়া তাঁর স্ত্রীর কাছে ফিরে এসে বলল, তুমি কি জান, আমার ইয়াসরিবী ভাই (মদীনা) আমাকে কি বলেছে? স্ত্রী জিজ্ঞাসা করল কি বলছে? উমাইয়া বলল, সে মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছে যে, তারা আমাকে হত্যা করবে। তার স্ত্রী বলল, আল্লাহ্‌র কসম, মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তো মিথ্যা বলেন না। যখন মক্কার মুশরিকরা বদরের উদ্দেশ্যে রাওয়ানা হল এবং আহ্বানকারী আহ্বান চালাল। তখন উমাইয়ার স্ত্রী তাঁকে স্মরণ করিয়ে দিল, তোমার ইয়াসরিবী ভাই তোমাকে যে কথা বলছিল সে কথা কি তোমার স্মরণ নেই? তখন উমাইয়া (বদরের যুদ্ধে) না যাওয়াই সিদ্ধান্ত নিল। আবু জেহেল তাকে বলল, তুমি এ অঞ্চলের একজন শীর্ষস্থানীয় নেতা। (তুমি যদি না যাও তবে কেউ-ই যাবে না) আমাদের সাথে দুই একদিনের পথ চলো। (এরপর না হয় ফিরে আসবে।) উমাইয়া তাদের সাথে চলল। আল্লাহ তা‘আলার ইচ্ছায় (বদর প্রান্তে মুসলিমদের হাতে) সে নিহত হল।[485]

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ভবিষ্যৎবাণী

জাবির রাদিয়াল্লাহু আনহু ও তাঁর পরিবারে গালিচার কার্পেট হবে।  

عَنْ جَابِرٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، قَالَ: قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «هَلْ لَكُمْ مِنْ أَنْمَاطٍ» قُلْتُ: وَأَنَّى يَكُونُ لَنَا الأَنْمَاطُ؟ قَالَ: «أَمَا إِنَّهُ سَيَكُونُ لَكُمُ الأَنْمَاطُ» فَأَنَا أَقُولُ لَهَا - يَعْنِي امْرَأَتَهُ - أَخِّرِي عَنِّي أَنْمَاطَكِ، فَتَقُولُ: أَلَمْ يَقُلِ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِنَّهَا سَتَكُونُ لَكُمُ الأَنْمَاطُ» فَأَدَعُهَا.

জাবির রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিজ্ঞাসা করলেন, তোমাদের নিকট আনমাত (গালিচার কার্পেট) আছে কি? আমি বললাম আমরা তা পাব কোথায়? তিনি বললেন, অচিরেই তোমরা আনমাত লাভ করবে।(আমার স্ত্রী যখন শয্যায় তা বিছিয়ে দেয়) তখন আমি তাকে বলি, আমার বিছানা থেকে এটা সরিয়ে নাও। তখন সে বলল, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কি তা বলেন নাই যে, অচিরেই তোমার আনমাত পেয়ে যাবে? তখন আমি তো (বিছান অবস্থায়) থাকতে দেই।[486]

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ভবিষ্যৎবাণী

তাঁর ইনতেকালের পরে মানুষ নিরাপত্তা লাভ করবে এবং বাস্তবে তা হয়েছে।

عَنْ خَبَّابِ بْنِ الأَرَتِّ، قَالَ: شَكَوْنَا إِلَى رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، وَهُوَ مُتَوَسِّدٌ بُرْدَةً لَهُ فِي ظِلِّ الكَعْبَةِ، قُلْنَا لَهُ: أَلاَ تَسْتَنْصِرُ لَنَا، أَلاَ تَدْعُو اللَّهَ لَنَا؟ قَالَ: «كَانَ الرَّجُلُ فِيمَنْ قَبْلَكُمْ يُحْفَرُ لَهُ فِي الأَرْضِ، فَيُجْعَلُ فِيهِ، فَيُجَاءُ بِالْمِنْشَارِ فَيُوضَعُ عَلَى رَأْسِهِ فَيُشَقُّ بِاثْنَتَيْنِ، وَمَا يَصُدُّهُ ذَلِكَ عَنْ دِينِهِ، وَيُمْشَطُ بِأَمْشَاطِ الحَدِيدِ مَا دُونَ لَحْمِهِ مِنْ عَظْمٍ أَوْ عَصَبٍ، وَمَا يَصُدُّهُ ذَلِكَ عَنْ دِينِهِ، وَاللَّهِ لَيُتِمَّنَّ هَذَا الأَمْرَ، حَتَّى يَسِيرَ الرَّاكِبُ مِنْ صَنْعَاءَ إِلَى حَضْرَمَوْتَ، لاَ يَخَافُ إِلَّا اللَّهَ، أَوِ الذِّئْبَ عَلَى غَنَمِهِ، وَلَكِنَّكُمْ تَسْتَعْجِلُونَ».

খাব্বার ইবন আরত রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের খেদমতে (কাফিরদের পক্ষ থেকে যে সব নির্যাতন ভোগ করছিলাম এসবের) অভিযোগ করলাম। তখন তিনি নিজের চাদরকে বালিশ বানিয়ে কা’বা শরীফের ছায়ায় বিশ্রাম করছিলেন। আমরা তাঁকে বললাম, আপনি কি আমাদের জন্য (আল্লাহর নিকট) সাহায্য প্রার্থনা করবেন না? আপনি কি আমাদের (দুঃখ দুর্দশা লাঘবের) জন্য আল্লাহর নিকট দো‘আ করবেন না? তিনি বললেন, তোমাদের পূর্ববর্তী (ঈমানদার) গণের অবস্থা ছিল এই, তাদের জন্য মাটিতে গর্ত খনন করা হত এবং ঐ গর্তে তাকে পুঁতে রেখে করাত দিয়ে তাঁর মস্তক দ্বিখণ্ডিত করা হত। এ (অমানুষিক নির্যাতনেও) তাদেরকে দীন থেকে বিচ্যুত করতে পারত না। লোহার চিরুনী দিয়ে আঁছড়িয়ে শরীরের হাঁড় পর্যন্ত মাংস ও শিরা উপশিরা সব কিছু ছিন্নভিন্ন করে দিত। এ (লোমহর্ষক নির্যাতন) তাদেরকে দীন থেকে বিমুখ করতে পারেনি। আল্লাহর কসম, আল্লাহ এ দীনকে অবশ্যই পূর্ণতা দান করবেন (এবং সর্বত্র নিরাপদ ও শান্তিময় অবস্থা বিরাজ করবে।) তখনকার দিনের একজন উষ্ট্রারোহী সান‘আ থেকে হাযারামাউত পর্যন্ত ভ্রমণ করবে, আল্লাহ ব্যতীত অন্য কাউকেও ভয় করবে না। অথবা তাঁর মেঘপালের জন্য নেকড়ে বাঘের আশঙ্কাও করবে না। কিন্তু তোমরা (ঐ সময়ের অপেক্ষা না করে) তাড়াহুড়া করছ।[487]

 

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ভবিষ্যৎবাণী

তিনি স্বপ্নে দেখেন যে, তিনি এমন এক দেশে হিজরত করবেন সেখানে খেজুর গাছ আছে।

عَنْ أَبِي مُوسَى، أُرَاهُ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قَالَ: «رَأَيْتُ فِي المَنَامِ أَنِّي أُهَاجِرُ مِنْ مَكَّةَ إِلَى أَرْضٍ بِهَا نَخْلٌ، فَذَهَبَ وَهَلِي إِلَى أَنَّهَا اليَمَامَةُ أَوْ هَجَرُ، فَإِذَا هِيَ المَدِينَةُ يَثْرِبُ، وَرَأَيْتُ فِي رُؤْيَايَ هَذِهِ أَنِّي هَزَزْتُ سَيْفًا، فَانْقَطَعَ صَدْرُهُ فَإِذَا هُوَ مَا أُصِيبَ مِنَ المُؤْمِنِينَ يَوْمَ أُحُدٍ، ثُمَّ هَزَزْتُهُ بِأُخْرَى فَعَادَ أَحْسَنَ مَا كَانَ فَإِذَا هُوَ مَا جَاءَ اللَّهُ بِهِ مِنَ الفَتْحِ، وَاجْتِمَاعِ المُؤْمِنِينَ وَرَأَيْتُ فِيهَا بَقَرًا، وَاللَّهُ خَيْرٌ فَإِذَا هُمُ المُؤْمِنُونَ يَوْمَ أُحُدٍ، وَإِذَا الخَيْرُ مَا جَاءَ اللَّهُ بِهِ مِنَ الخَيْرِ وَثَوَابِ الصِّدْقِ، الَّذِي آتَانَا اللَّهُ بَعْدَ يَوْمِ بَدْرٍ».

আবূ মুসা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আমি স্বপ্নে দেখতে পেলাম, আমি মক্কা থেকে হিজরত করে এমন এক স্থানে যাচ্ছি যেখানে প্রচুর খেজুর গাছ রয়েছে। তখন আমার ধারণা হল, এ স্থানটি ইয়ামামা অথবা হাযর হবে। পরে বুঝতে পেলাম, স্থানটি মদীনা ছিল। যার পূর্বনাম ইয়াসরিব। স্বপ্নে আমি আরো দেখতে পেলাম যে আমি একটি তরবারী হাতে নিয়ে নাড়াচাড়া করছি। হঠাৎ তার অগ্রভাগ ভেঙ্গে গেল। উহুদ যুদ্ধে মুসলিমদের যে বিপর্যয় ঘটেছিল এটা তা-ই। তারপর দ্বিতীয় বার তরবারীটি হাতে নিয়ে নাড়াচাড়া করলাম তখন তরবারীটি পূর্বাবস্থার চেয়েও অধিক উত্তম হয়ে গেল। এর তাৎপর্য হল যে, আল্লাহ মুসলিমগনকে বিজয়ী ও একত্রিত করে দেবেন। আমি স্বপ্নে আরো দেখতে পেলাম, একটি গরু (যা জবাই করা হচ্ছে) এবং শুনতে পেলাম আল্লাহ যা করেন সবই ভালো। এটাই হল উহুদ যুদ্ধে মুসলিমদের শাহাদাত বরণ। আর খায়ের হল – আল্লাহ্‌র তরফ হতে আগত ঐ সকল কল্যাণই কল্যাণ এবং সত্যবাদিতার পুরষ্কার যা আল্লাহ্ আমাদেরকে বদর যুদ্ধের পর দান করেছেন।[488]

 

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ভবিষ্যৎবাণী

আল্লাহ তা‘আলা তাঁকে জানিয়ে দিয়েছেন য, তাঁর মৃত্যু সন্নিকটে।

عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ، قَالَ: كَانَ عُمَرُ بْنُ الخَطَّابِ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، يُدْنِي ابْنَ عَبَّاسٍ، فَقَالَ لَهُ عَبْدُ الرَّحْمَنِ بْنُ عَوْفٍ: إِنَّ لَنَا أَبْنَاءً مِثْلَهُ، فَقَالَ: إِنَّهُ مِنْ حَيْثُ تَعْلَمُ، فَسَأَلَ عُمَرُ ابْنَ عَبَّاسٍ عَنْ هَذِهِ الآيَةِ، {إِذَا جَاءَ نَصْرُ اللَّهِ وَالفَتْحُ} [النصر: 1]، فَقَالَ: «أَجَلُ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَعْلَمَهُ إِيَّاهُ» قَالَ: مَا أَعْلَمُ مِنْهَا إِلَّا مَا تَعْلَمُ.

ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, উমর ইবন খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু (তাঁর সভাসদদের মধ্যে) ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুকে বিশেষ মর্যাদা দান করতেন। একদিন আবদুর রহমান ইবন আউফ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু তাঁকে বললেন, তাঁর মত ছেলে তো আমাদেরও রয়েছে। এতে তিনি বললেন, এর কারণ তো আপনি নিজেও জানেন। তখন উমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুকে ডেকে “ইজা যা আ নাসরুল্লহি ওয়াল ফাতহ” আয়াতের ব্যাখ্যা জিজ্ঞাসা করেন। ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু উত্তর দিলেন, এ আয়াতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে তাঁর ওফাত নিকটবর্তী বলে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। উমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বললেন, আমিও এ আয়াতের ব্যাখ্যা জানি, যা তুমি জান।[489]

 

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ভবিষ্যৎবাণী

তাঁর মৃত্যুর পরে তাঁর উম্মতেরা তাঁর দ্বীনি ভাই হবে।  

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، أَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَتَى الْمَقْبُرَةَ، فَقَالَ: «السَّلَامُ عَلَيْكُمْ دَارَ قَوْمٍ مُؤْمِنِينَ، وَإِنَّا إِنْ شَاءَ اللهُ بِكُمْ لَاحِقُونَ، وَدِدْتُ أَنَّا قَدْ رَأَيْنَا إِخْوَانَنَا» قَالُوا: أَوَلَسْنَا إِخْوَانَكَ؟ يَا رَسُولَ اللهِ قَالَ: «أَنْتُمْ أَصْحَابِي وَإِخْوَانُنَا الَّذِينَ لَمْ يَأْتُوا بَعْدُ» فَقَالُوا: كَيْفَ تَعْرِفُ مَنْ لَمْ يَأْتِ بَعْدُ مِنْ أُمَّتِكَ؟ يَا رَسُولَ اللهِ فَقَالَ: «أَرَأَيْتَ لَوْ أَنَّ رَجُلًا لَهُ خَيْلٌ غُرٌّ مُحَجَّلَةٌ بَيْنَ ظَهْرَيْ خَيْلٍ دُهْمٍ بُهْمٍ أَلَا يَعْرِفُ خَيْلَهُ؟» قَالُوا: بَلَى يَا رَسُولَ اللهِ قَالَ: " فَإِنَّهُمْ يَأْتُونَ غُرًّا مُحَجَّلِينَ مِنَ الْوُضُوءِ، وَأَنَا فَرَطُهُمْ عَلَى الْحَوْضِ أَلَا لَيُذَادَنَّ رِجَالٌ عَنْ حَوْضِي كَمَا يُذَادُ الْبَعِيرُ الضَّالُّ أُنَادِيهِمْ أَلَا هَلُمَّ فَيُقَالُ: إِنَّهُمْ قَدْ بَدَّلُوا بَعْدَكَ فَأَقُولُ سُحْقًا سُحْقًا ".

আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, একবার রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটি কবরস্থানে এসে বললেন, তোমাদের ওপর শান্তি বর্ষিত হোক। এটা মুমিনদের ঘর। ইনশা আল্লাহ আমরাও তোমাদের সাথে এসে মিলব। আমার বড় ইচ্ছা হয় আমাদের ভাইদেরকে দেখি। সাহাবায়ে কিরাম আরয করলেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ! আমরা কি আপনার ভাই নই? তিনিবললেন, তোমরা তো আমার সাহাবী। আর যারা এখনো (পৃথিবীতে) আসেনি তারা আমাদের ভাই। সাহাবীরা আরয করলেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ! আপনার উম্মাতের মধ্যে যারা এখনো (পৃথিবীতে) আসেনি তাদেরকে আপনি কিভাবে চিনবেন? তিনি বললেন, “কেন, যদি কোনো ব্যক্তির কপাল ও হাত-পা সাদাযুক্ত ঘোড়া ঘোর কালো ঘোড়ার মধ্যে মিশে যায়তবে সে কি তার ঘোড়াকে চিনে নিতে পারে না? তাঁরা বললেন, হ্যাঁ, ইয়া রাসুলুল্লাহ! তিনি বললেন, তাঁরা (আমারউম্মাত) সেদিন এমন অবস্থায় আসবে যে, উযুর ফলে তাদের মুখমন্ডল হবে নূরানী এবং হাত-পা দীণ্ডিময়। আর হাউযের পাড়ে আমিহব তাদের অগ্রনায়ক। জেনে রাখ, কিছু সংখ্যক লোককে সেদিন আমার হাউয থেকে হটিয়ে দেওয়া হবে যেমনিভাবে পথহারা উটকে হটিয়ে দেওয়া হয়। আমি তাদেরকে ডাকব, এসো এসো। তখন বলা হবে, “এরা আপনার পরে (আপনারদীনকে) পরিবর্তন করে দিয়েছিল। তখন আমি বলব, দূর হও, দূর হও।[490]

 

আরব বিশ্বে যা হবে সে সম্পর্কে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ভবিষ্যৎবাণী

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، أَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «لَا تَقُومُ السَّاعَةُ حَتَّى يَكْثُرَ الْمَالُ وَيَفِيضَ، حَتَّى يَخْرُجَ الرَّجُلُ بِزَكَاةِ مَالِهِ فَلَا يَجِدُ أَحَدًا يَقْبَلُهَا مِنْهُ، وَحَتَّى تَعُودَ أَرْضُ الْعَرَبِ مُرُوجًا وَأَنْهَارًا».

আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, কিয়ামত সংঘটিত হবে নাযতক্ষন না প্রঢ়ুর ধন-সম্পদ ও বিপূল প্রাচুর্য প্রকাশ পায়। এমনকি তখন মানুষ তাঁর মালের যাকাত নিয়ে বের হবে, কিন্তু তা গ্রহণ করার মত কাউকে পাওয়া যাবে না। আরব দেশ চারণভূমি ও নদী-নালায় পরিণত হবে।[491]

 

কুরাইশ নেতাদের নিহত হওয়ার স্থান সম্পর্কে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ভবিষ্যৎবাণী

عَنْ أَنَسٍ، أَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ شَاوَرَ حِينَ بَلَغَهُ إِقْبَالُ أَبِي سُفْيَانَ، قَالَ: فَتَكَلَّمَ أَبُو بَكْرٍ، فَأَعْرَضَ عَنْهُ، ثُمَّ تَكَلَّمَ عُمَرُ، فَأَعْرَضَ عَنْهُ، فَقَامَ سَعْدُ بْنُ عُبَادَةَ، فَقَالَ: إِيَّانَا تُرِيدُ يَا رَسُولَ اللهِ؟ وَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ، لَوْ أَمَرْتَنَا أَنْ نُخِيضَهَا الْبَحْرَ لَأَخَضْنَاهَا، وَلَوْ أَمَرْتَنَا أَنْ نَضْرِبَ أَكْبَادَهَا إِلَى بَرْكِ الْغِمَادِ لَفَعَلْنَا، قَالَ: فَنَدَبَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ النَّاسَ، فَانْطَلَقُوا حَتَّى نَزَلُوا بَدْرًا، وَوَرَدَتْ عَلَيْهِمْ رَوَايَا قُرَيْشٍ، وَفِيهِمْ غُلَامٌ أَسْوَدُ لِبَنِي الْحَجَّاجِ، فَأَخَذُوهُ، فَكَانَ أَصْحَابُ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَسْأَلُونَهُ عَنْ أَبِي سُفْيَانَ، وَأَصْحَابِهِ، فَيَقُولُ: مَا لِي عِلْمٌ بِأَبِي سُفْيَانَ، وَلَكِنْ هَذَا أَبُو جَهْلٍ، وَعُتْبَةُ، وَشَيْبَةُ، وَأُمَيَّةُ بْنُ خَلَفٍ، فَإِذَا قَالَ ذَلِكَ ضَرَبُوهُ، فَقَالَ: نَعَمْ، أَنَا أُخْبِرُكُمْ، هَذَا أَبُو سُفْيَانَ، فَإِذَا تَرَكُوهُ فَسَأَلُوهُ، فَقَالَ مَا لِي بِأَبِي سُفْيَانَ عِلْمٌ، وَلَكِنْ هَذَا أَبُو جَهْلٍ، وَعُتْبَةُ، وَشَيْبَةُ، وَأُمَيَّةُ بْنُ خَلَفٍ، فِي النَّاسِ، فَإِذَا قَالَ هَذَا أَيْضًا ضَرَبُوهُ، وَرَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَائِمٌ يُصَلِّي، فَلَمَّا رَأَى ذَلِكَ انْصَرَفَ، قَالَ: «وَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ، لَتَضْرِبُوهُ إِذَا صَدَقَكُمْ، وَتَتْرُكُوهُ إِذَا كَذَبَكُمْ»، قَالَ، فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «هَذَا مَصْرَعُ فُلَانٍ»، قَالَ: وَيَضَعُ يَدَهُ عَلَى الْأَرْضِ «هَاهُنَا، هَاهُنَا»، قَالَ: فَمَا مَاطَ أَحَدُهُمْ عَنْ مَوْضِعِ يَدِ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ.

আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে যখন আবু সুফিয়ানের (মদীনায়) আগ্রাভিযানের সংবাদ পৌছল। তখন তিনি সাহাবীদের সাথে এ নিয়ে পরামর্শ করলেন। আবু বকর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু এ ব্যাপারে কথা বললেন, কিন্তু  তাঁর কথার উত্তর দিলেন না। এরপর উমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু কথা বললেন। তিনি তার কথারও কোনো উত্তর দিলেন না। পরিশেষে সা‘দ ইবন উবাদা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু দন্ডায়মান হলেন। এরপর বললেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আপনি কি আমাদের জবাব?-প্রত্যাশা করেন? সে আল্লাহর শপথ! যার হাতে আমার জীবন, যদি আপনি আমাদেরকে আমাদের ঘোড়া নিয়ে সমুদ্রে ঝাঁপ দিতে বলেন, তবে-নিশ্চয়ই আমরা যেখানে ঝাপ দিব। আর যদি আপনি আমাদেরকে নির্দেশ দেন, সাওয়ারী হাঁকিয়ে বারকুল গামাদ- পর্যন্ত পৌছার জন্য তবে আমরা তাই করবো। এরপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুসলিমদেরকে আহবান করলেন। তখন সকলে রওয়ানা হলেন এবং বদর নামক স্থানে সম্মিলীত হলেন। আর সাহাবীগণের সামনে সেখান কুরাইশের সাকীগণও উপনীত হল। তাদের মধ্যে বনী হাজ্জাজের একজন কৃষ্ণকায় দাস ছিল। সাহাবীগণ তাকে পাকড়াও করলেন। তারপর তাকে আবু সুফিয়ান এবং তার সাথীদের সম্পর্কে তাঁরা জিজ্ঞাসাবাদ করলেন, তখন সে বলতে লাগলো, আবু সুফিয়ান সম্পর্কে আমার কোনো কিছু জানা নেই। তবে আবু জাহল, উতবা, শায়বা এবং উমাইয়া ইবন খালফ তো-উপাস্থিত আছে। যখন সে এরুপ বললো তখন তাঁরা তাকে প্রহার করতে লাগলেন। এমতাবস্থায় সে বলল, হ্যাঁ, আমি আবু সুফিয়ান সম্পর্কে খবর দিচ্ছি। তখন তাঁরা তাকে ছেড়ে দিলেন। এরপর যখন তারা পুনরায় আবু সুফিয়ান সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করলেন, তখন সে বলল, আবু সুফিয়ান জনগণের মাঝে উপস্তিত আছেন। যখন সে পুনরায় এ একই কথা বলল, তখন তাঁরা আবার তাকে প্রহার করতে লাগলেন। সে সময় রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাতে দন্ডায়মান ছিলেন। অতএব, যখন তিনি এ অবস্থা দেখলেন, তখন সালাত সমাপ্ত করার পর বললেন, সে আল্লাহর শপথ! যার হাতে আমার জান, যখন সে তোমাদের কাছে সত্য কথা বলে তখন তোমরা তাকে ছেড়ে দাও। এরপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ভূমির উপর স্বীয় হাত রেখে বললেন, এ স্থান অমুক বিধর্মীর ধরাশায়ী হওয়ার স্থান বা মৃত্যুস্হল। বর্ণনাকারী বলেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে স্থানে যে বিধর্মীর নাম নিয়ে হাত রেখেছিলেন, সেখানেই তার মৃত্যু হয়েছে, এর বিন্দুমাত্র ব্যতিক্রম হয়নি।[492]

عَنْ ثَابِتٍ، قَالَ: قَالَ أَنَسٌ: كُنْتُ مَعَ عُمَرَ، ح وَحَدَّثَنَا شَيْبَانُ بْنُ فَرُّوخَ - وَاللَّفْظُ لَهُ - حَدَّثَنَا سُلَيْمَانُ بْنُ الْمُغِيرَةِ، عَنْ ثَابِتٍ، عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ، قَالَ: كُنَّا مَعَ عُمَرَ بَيْنَ مَكَّةَ وَالْمَدِينَةِ، فَتَرَاءَيْنَا الْهِلَالَ، وَكُنْتُ رَجُلًا حَدِيدَ الْبَصَرِ، فَرَأَيْتُهُ وَلَيْسَ أَحَدٌ يَزْعُمُ أَنَّهُ رَآهُ غَيْرِي، قَالَ: فَجَعَلْتُ أَقُولُ لِعُمَرَ، أَمَا تَرَاهُ؟ فَجَعَلَ لَا يَرَاهُ، قَالَ: يَقُولُ عُمَرُ: سَأَرَاهُ وَأَنَا مُسْتَلْقٍ عَلَى فِرَاشِي، ثُمَّ أَنْشَأَ يُحَدِّثُنَا عَنْ أَهْلِ بَدْرٍ، فَقَالَ: إِنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، كَانَ يُرِينَا مَصَارِعَ أَهْلِ بَدْرٍ، بِالْأَمْسِ، يَقُولُ: «هَذَا مَصْرَعُ فُلَانٍ غَدًا، إِنْ شَاءَ اللهُ»، قَالَ: فَقَالَ عُمَرُ: فَوَالَّذِي بَعَثَهُ بِالْحَقِّ مَا أَخْطَئُوا الْحُدُودَ الَّتِي حَدَّ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قَالَ: فَجُعِلُوا فِي بِئْرٍ بَعْضُهُمْ عَلَى بَعْضٍ، فَانْطَلَقَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ حَتَّى انْتَهَى إِلَيْهِمْ، فَقَالَ: «يَا فُلَانَ بْنَ فُلَانٍ وَيَا فُلَانَ بْنَ فُلَانٍ هَلْ وَجَدْتُمْ مَا وَعَدَكُمُ اللهُ وَرَسُولُهُ حَقًّا؟ فَإِنِّي قَدْ وَجَدْتُ مَا وَعَدَنِي اللهُ حَقًّا»، قَالَ عُمَرُ: يَا رَسُولَ اللهِ كَيْفَ تُكَلِّمُ أَجْسَادًا لَا أَرْوَاحَ فِيهَا؟ قَالَ: «مَا أَنْتُمْ بِأَسْمَعَ لِمَا أَقُولُ مِنْهُمْ، غَيْرَ أَنَّهُمْ لَا يَسْتَطِيعُونَ أَنْ يَرُدُّوا عَلَيَّ شَيْئًا».

আনাস ইবন মালিক রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর সাথে একদা আমরা মক্কা ও মদীনার মধ্যবর্তী স্থানে ছিলাম। তখন আমরা চাঁদ দেখাছিলাম। আমি তীক্ষ্ণ দৃষ্টিসম্পন্ন ছিলম, তাই আমি চাঁদ দেখে ফেললাম। আমি ব্যতীত কেউ বলেনি যে, সে চাঁদ দেখেছে। তিনি বলেন, আমি উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুকে বলছিলাম, আপনি কি চাঁদ দেখছেন না? এ ই তো চাঁদ। কিন্তু তিনি দেখছিলেন না। বর্ণনাকারী বলেন, তখন উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলছিলেন, অল্পক্ষণের মাঝেই আমি দেখতে পাব। আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, আমি বিছানায় চিত হয়ে শুয়ে ছিলাম, এমতাবস্থায় তিনি আমাদের নিকট বদর যুদ্ধে অংশ গ্রহণকারী কাফিরদের ঘটনা বর্ণনা করতে শুরু করলেন। বললেন, গতকাল বদর যুদ্ধাদের ধরাশায়ী হবার স্থান রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে দেখাচ্ছিলেন। তিনি বলছিলেন, আল্লাহর ইচ্ছায় এটা অমুকের ধরাশায়ী হবার স্থান। বর্ণনাকারী বলেন, উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেছেন, শপথ সে সত্তার, যিনি তাকে সত্য বানী সহ প্রেরণ করেছেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে সীমারেখা বলে দিয়েছেন, তারা সে সীমারেখা একটুও অতিক্রম করেনি। অতঃপর তাদেরকে একটি কুপে এক জনের উপর অপর জনকে নিক্ষেপ করা হল। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের নিকট গিয়ে বললেন, হে অমুকের ছেলে অমুক, হে অমুকের ছেলে অমুক! আল্লাহ ও তাঁর রাসুল যে ওয়াদা তোমাদের সাথে করেছেন তোমরা কি তা সঠিক পেয়েছো? আমার প্রতিপালক আমার সাথে যে ওয়াদা করেছেন? আমি তা সঠিক পেয়েছি। তখন উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বললেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! যে সব দেহে প্রাণ নেই, আপনি তাদের সাথে কিভাবে কথা বলছেন? নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আমি যা বলছি, তা তোমরা তাদের চেয়ে বেশী শুনছনা। তবে তারা এ কথার উত্তর দিতে সক্ষম নয়।[493]

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ভবিষ্যৎবাণী

তিনি গোপনে দাওয়াত দেওয়ার পরে প্রকাশ্যে দাওয়াত দিবেন

عَنْ أَبِي أُمَامَةَ - قَالَ عِكْرِمَةُ، وَلَقِيَ شَدَّادٌ أَبَا أُمَامَةَ، وَوَاثِلَةَ، وَصَحِبَ أَنَسًا إِلَى الشَّامِ وَأَثْنَى عَلَيْهِ فَضْلًا وَخَيْرًا - عَنْ أَبِي أُمَامَةَ، قَالَ: قَالَ عَمْرُو بْنُ عَبَسَةَ السُّلَمِيُّ: كُنْتُ وَأَنَا فِي الْجَاهِلِيَّةِ أَظُنُّ أَنَّ النَّاسَ عَلَى ضَلَالَةٍ، وَأَنَّهُمْ لَيْسُوا عَلَى شَيْءٍ وَهُمْ يَعْبُدُونَ الْأَوْثَانَ، فَسَمِعْتُ بِرَجُلٍ بِمَكَّةَ يُخْبِرُ أَخْبَارًا، فَقَعَدْتُ عَلَى رَاحِلَتِي، فَقَدِمْتُ عَلَيْهِ، فَإِذَا رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مُسْتَخْفِيًا جُرَءَاءُ عَلَيْهِ قَوْمُهُ، فَتَلَطَّفْتُ حَتَّى دَخَلْتُ عَلَيْهِ بِمَكَّةَ، فَقُلْتُ لَهُ: مَا أَنْتَ؟ قَالَ: «أَنَا نَبِيٌّ»، فَقُلْتُ: وَمَا نَبِيٌّ؟ قَالَ: «أَرْسَلَنِي اللهُ»، فَقُلْتُ: وَبِأَيِّ شَيْءٍ أَرْسَلَكَ، قَالَ: «أَرْسَلَنِي بِصِلَةِ الْأَرْحَامِ، وَكَسْرِ الْأَوْثَانِ، وَأَنْ يُوَحَّدَ اللهُ لَا يُشْرَكُ بِهِ شَيْءٌ»، قُلْتُ لَهُ: فَمَنْ مَعَكَ عَلَى هَذَا؟ قَالَ: «حُرٌّ، وَعَبْدٌ»، قَالَ: وَمَعَهُ يَوْمَئِذٍ أَبُو بَكْرٍ، وَبِلَالٌ مِمَّنْ آمَنَ بِهِ، فَقُلْتُ: إِنِّي مُتَّبِعُكَ، قَالَ: «إِنَّكَ لَا تَسْتَطِيعُ ذَلِكَ يَوْمَكَ هَذَا، أَلَا تَرَى حَالِي وَحَالَ النَّاسِ، وَلَكِنِ ارْجِعْ إِلَى أَهْلِكَ فَإِذَا سَمِعْتَ بِي قَدْ ظَهَرْتُ فَأْتِنِي»، قَالَ: فَذَهَبْتُ إِلَى أَهْلِي وَقَدِمَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الْمَدِينَةَ، وَكُنْتُ فِي أَهْلِي فَجَعَلْتُ أَتَخَبَّرُ الْأَخْبَارَ، وَأَسْأَلُ النَّاسَ حِينَ قَدِمَ الْمَدِينَةَ، حَتَّى قَدِمَ عَلَيَّ نَفَرٌ مِنْ أَهْلِ يَثْرِبَ مِنْ أَهْلِ الْمَدِينَةَ، فَقُلْتُ: مَا فَعَلَ هَذَا الرَّجُلُ الَّذِي قَدِمَ الْمَدِينَةَ؟ فَقَالُوا النَّاسُ: إِلَيْهِ سِرَاعٌ وَقَدْ أَرَادَ قَوْمُهُ قَتْلَهُ فَلَمْ يَسْتَطِيعُوا ذَلِكَ، فَقَدِمْتُ الْمَدِينَةَ فَدَخَلْتُ عَلَيْهِ، فَقُلْتُ: يَا رَسُولَ اللهِ أَتَعْرِفُنِي؟ قَالَ: «نَعَمْ، أَنْتَ الَّذِي لَقِيتَنِي بِمَكَّةَ»، قَالَ: فَقُلْتُ: بَلَى

فَقُلْتُ: يَا نَبِيَّ اللهِ أَخْبِرْنِي عَمَّا عَلَّمَكَ اللهُ وَأَجْهَلُهُ، أَخْبِرْنِي عَنِ الصَّلَاةِ، قَالَ: «صَلِّ صَلَاةَ الصُّبْحِ، ثُمَّ أَقْصِرْ عَنِ الصَّلَاةِ حَتَّى تَطْلُعَ الشَّمْسُ حَتَّى تَرْتَفِعَ، فَإِنَّهَا تَطْلُعُ حِينَ تَطْلُعُ بَيْنَ قَرْنَيْ شَيْطَانٍ، وَحِينَئِذٍ يَسْجُدُ لَهَا الْكُفَّارُ، ثُمَّ صَلِّ فَإِنَّ الصَّلَاةَ مَشْهُودَةٌ مَحْضُورَةٌ حَتَّى يَسْتَقِلَّ الظِّلُّ بِالرُّمْحِ، ثُمَّ أَقْصِرْ عَنِ الصَّلَاةِ، فَإِنَّ حِينَئِذٍ تُسْجَرُ جَهَنَّمُ، فَإِذَا أَقْبَلَ الْفَيْءُ فَصَلِّ، فَإِنَّ الصَّلَاةَ مَشْهُودَةٌ مَحْضُورَةٌ حَتَّى تُصَلِّيَ الْعَصْرَ، ثُمَّ أَقْصِرْ عَنِ الصَّلَاةِ حَتَّى تَغْرُبَ الشَّمْسُ، فَإِنَّهَا تَغْرُبُ بَيْنَ قَرْنَيْ شَيْطَانٍ، وَحِينَئِذٍ يَسْجُدُ لَهَا الْكُفَّارُ»

قَالَ: فَقُلْتُ: يَا نَبِيَّ اللهِ فَالْوُضُوءَ حَدِّثْنِي عَنْهُ، قَالَ: «مَا مِنْكُمْ رَجُلٌ يُقَرِّبُ وَضُوءَهُ فَيَتَمَضْمَضُ، وَيَسْتَنْشِقُ فَيَنْتَثِرُ إِلَّا خَرَّتْ خَطَايَا وَجْهِهِ، وَفِيهِ وَخَيَاشِيمِهِ، ثُمَّ إِذَا غَسَلَ وَجْهَهُ كَمَا أَمَرَهُ اللهُ، إِلَّا خَرَّتْ خَطَايَا وَجْهِهِ مِنْ أَطْرَافِ لِحْيَتِهِ مَعَ الْمَاءِ، ثُمَّ يَغْسِلُ يَدَيْهِ إِلَى الْمِرْفَقَيْنِ، إِلَّا خَرَّتْ خَطَايَا يَدَيْهِ مِنْ أَنَامِلِهِ مَعَ الْمَاءِ، ثُمَّ يَمْسَحُ رَأْسَهُ، إِلَّا خَرَّتْ خَطَايَا رَأْسِهِ مِنْ أَطْرَافِ شَعْرِهِ مَعَ الْمَاءِ، ثُمَّ يَغْسِلُ قَدَمَيْهِ إِلَى الْكَعْبَيْنِ، إِلَّا خَرَّتْ خَطَايَا رِجْلَيْهِ مِنْ أَنَامِلِهِ مَعَ الْمَاءِ، فَإِنْ هُوَ قَامَ فَصَلَّى، فَحَمِدَ اللهَ وَأَثْنَى عَلَيْهِ وَمَجَّدَهُ بِالَّذِي هُوَ لَهُ أَهْلٌ، وَفَرَّغَ قَلْبَهُ لِلَّهِ، إِلَّا انْصَرَفَ مِنْ خَطِيئَتِهِ كَهَيْئَتِهِ يَوْمَ وَلَدَتْهُ أُمُّهُ».

فَحَدَّثَ عَمْرُو بْنُ عَبَسَةَ بِهَذَا الْحَدِيثِ أَبَا أُمَامَةَ صَاحِبَ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَقَالَ لَهُ أَبُو أُمَامَةَ: «يَا عَمْرَو بْنَ عَبَسَةَ، انْظُرْ مَا تَقُولُ فِي مَقَامٍ وَاحِدٍ يُعْطَى هَذَا الرَّجُلُ»، فَقَالَ عَمْرٌو: «يَا أَبَا أُمَامَةَ، لَقَدْ كَبِرَتْ سِنِّي، وَرَقَّ عَظْمِي، وَاقْتَرَبَ أَجَلِي، وَمَا بِي حَاجَةٌ أَنْ أَكْذِبَ عَلَى اللهِ وَلَا عَلَى رَسُولِ اللهِ، لَوْ لَمْ أَسْمَعْهُ مِنْ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِلَّا مَرَّةً، أَوْ مَرَّتَيْنِ، أَوْ ثَلَاثًا حَتَّى عَدَّ سَبْعَ مَرَّاتٍ، مَا حَدَّثْتُ بِهِ أَبَدًا، وَلَكِنِّي سَمِعْتُهُ أَكْثَرَ مِنْ ذَلِكَ».

ইকরামা (রহ.) বলেন, শাদ্দাদ, আবু উমামা ও ওয়াসিলার সাথে তার সাক্ষাৎ হয়েছে এবং সিরিয়া ভ্রমণকালেও আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর সহচর ছিলেন এবং তার প্রশংসা ও গুন বর্ণনা করেছেন। আবু উমামা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, আমর ইবন আবাসা সুলামী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, আমি প্রাক ইসলাম যুগে সকল মানুষকে পথভ্রষ্ট বলে ধারণা করতাম। তারা কোনো ধর্মের উপর নেই। তারা সবাই মুর্তি পূঁজা, দেব-দেবীর পূঁজা করত। তিনি বলেন, তখন আমি মক্কায় এমন এক ব্যক্তির কথা শুনলাম যিনি বিভিন্ন সংবাদ বর্ণনা করেন। তখন আমি সাওয়ারীর উপর আরোহণ করে তাঁর নিকট এলাম এবং আমি জানতে পারলাম যে তিনি জনসমাবেশ থেকে নিজকে দুরে রাখেন। তাঁর কাওম তাঁর উপর নির্যাতন করে। আমি কৌশলে মক্কায় তার নিকট পৌছিলাম এবং তাঁকে জিজ্ঞাসা করলাম আপনার পরিচয় কি? তিনি বললেন, আমি নবী। আমি বললাম, নবী কি? তিনি বললেন, আল্লাহ আমাকে প্রেরণ করেছেন। আমি জিজ্ঞাসা করলাম আল্লাহ আপনাকে কি দিয়ে পাঠিয়েছেন? তিনি বললেন, আমাকে আত্মীয়তার বন্ধন সুদূঢ় করা, দেব-দেবী ও মূর্তি ভেঙ্গে দেওয়া, আল্লাহকে এক বলে জানা এবং তাঁর সঙ্গে কোনো কিছু শরীক না করা। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, এ ব্যাপারে আপনার সঙ্গে কারা আছে? তিনি বললেন, একজন স্বাধীন ব্যক্তি ও একজন কৃতদাস। তিনি বলেন যে, তাঁর প্রতি যারা ঈমান এনেছিলেন তাদের মধ্যে আবু বকর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু ও বিলাল রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু ছিলেন। আমি বললাম, আমিও আপনার অনুসারী হাত চাই। তিনি বললেন, বর্তমান অবস্থায় তুমি তা পারবে না। তুমি আমার অবস্থা ও লোকজনের অবস্থা কি দেখছ না? তুমি বরং পরিজনদের কাছে ফিরে যাও। যখন আমি বিজয় লাভ করেছি বলে শুনতে পাবে তখন আমার কাছে এসো। তিনি বললেন, আমি পরিজনদের কাছে চলে গেলাম। ইতিমধ্যে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হিজরত করে মদীনায় গমন করলেন। তখন আমি পরিজনদের মাঝে অবস্থান করছিলাম। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদীনায় গমন করার পর থেকে আমি সর্বদা এ বিষয়ে খোঁজ-খবর এবং মানুষকেও জিজ্ঞাসাবাদ করতে থাকলাম। মদীনাবাসীদের একদল লোক আমার কাছে এলেন। তাদেরকে আমি জিজ্ঞেস করলাম। যে ব্যক্তি মদীনায় আগমন করেছেন তিনি কি করছেন, তাঁর অবস্থা কি? তারা বললেন, লোকজন অতি দ্রুত তাঁর সাহচর্যে যাচ্ছে তাঁর কাওম তাঁকে হত্যা করতে চাচ্ছিল। কিন্তু তারা সফলকাম হয়নি। আমি ও কথা শুলে মদীনায় গেলাম এবং তাঁর কাছে পৌহুলাম। তাঁকে জিজ্ঞেস করলাম ইয়া রাসুলুল্লাহ! আমাকে চিনতে পেরেছেন? তিনি বললেন হ্যাঁ, তুমি সে ব্যক্তি যে আমার সাথে মক্কায় সাক্ষাৎ করেছিলে। (বর্ণনাকারী) বলেন, আমি বললাম, হ্যাঁ। আমি আবার বললাম, ইয়া-নবী আল্লাহ। আমি জানিনা, আল্লাহ পাক আপনাকে যা কিছু শিখিয়েছেন তা আমাকে শিক্ষা দিন। আমাকে সালাত সম্পর্কে বলুন। তিনি বললেন, ফজরের সালাত আদায় কর। এরপর সূর্য উদিত হয়ে পরিষ্কারভাবে উপরে না উঠা পর্যন্ত তুমি সালাত থেকে বিরত থাক। কেননা সূর্য উদিত হয় তবে -সেটা উদয়ের সময় শয়তানের দু-শিং-এর মাঝখান দিয়ে। সে সময়ে কাফির তাকে সিজদা করে। এরপর সালাত আদায় কর, তীরের ছায়া তার সমান না হওয়া পর্যন্ত। এরপর সালাত থেকে বিরত থাকো কেননা এ সময়ে জাহান্নামকে উত্তপ্ত করা হয়। এরপর যখন ছায়ায় পরিবর্তন শুরু হয় তখন সালাত পড়তে থাক। ফিরিশতাগণ সালাতে উপস্থিত থাকেন। অর্থাৎ আসরের সালাত আদায় করা পর্যন্ত, তারপর সালাত হতে বিরত থাক সূর্য অস্তমিত না যাওয়া পর্যন্ত। কেননা সূর্য শয়তানের দু-শিং-এর মধ্যে দিয়ে অস্ত যায়। ঐ সময় কাফিররা তাকে সিজদা করে। রাবী বলেন, আমি বললাম, ইয়া রাসুলাল্লাহ! অযূ সম্পর্কে আমাকে বলে দিন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমাদের কোনো ব্যক্তির (কাছে) অযুর পানি পেশ করা হয়, এরপর সে কুলি করে ও নাকে পানি দেয় ও তা পরিষ্কার করে। তখন তার মুখমন্ডলের মূখ গহব্বর ও নাকের সকল গুনাহ ঝরে যায়। তারপর যখন সে আল্লাহ পাকের নির্দেশ অনুসারে মুখমন্ডল ধোয় তখন মুখমন্ডলের চারিদিক থেকে সকল গুনাহ পানির সাথে ঝরে যায়। এরপর যখন দু- হাত ধোয় কুনূই পর্যন্ত, তখন তার উভয় হাতের গুনাহসমূহ আঙ্গুল দিয়ে পানির সাথে ঝরে পড়ে। এরপর উভয় পা গোড়ালী পর্যন্ত ধৌত করলে উভয় পায়ের গুনাহগুলো আঙ্গুল দিয়ে পানির সাথে ঝরে পড়ে। এরপর যদি সে দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করে আল্লাহর হামদ ও সানা বর্ণনা করে, তাঁর মহিমা বর্ণনা করে যথাযোগ্যভাবে ও তাঁর অন্তরে আল্লাহর জন্য মুক্ত করে নিল, তাহলে সে গুনাহ থেকে মুক্ত হয়ে যাবে সেদিনের মত যে দিন তার মাতা তাকে প্রসব করোছিল। আমর ইবন আবাসা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু ও হাদীসটি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহাবী আবু উমামা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর নিকট বর্ণনা করেন। তখন আবু উমামা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু তাঁকে বললেন, হে আমর ইবন আবাসা! ভেবে দেখ, তুমি কি বলছ! একই স্থানে ঐ ব্যক্তিকে এত মর্যাদা দেওয়া হবে। তখন আমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বললেন, হে আবু উমামা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু! আমি বয়োবৃদ্ধ হয়ে গিয়েছি। আমার হাড়গুলো নরম হয়ে গিয়েছে। আমার মৃত্যু কাল নিকটবর্তী হয়ে পড়েছে। আল্লাহ ও তাঁর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর মিথ্যা আরোপের কোন প্রয়োজন আমার নেই। আমি যদি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে না শুনতাম একবার দু-বার, তিনবার - এমনকি তিনি সাত বার পর্যন্ত গণনা করলেন। তবে আমি কখনো এ হাদীস বর্ণনা করতাম না। আমি হাদীসটি সাত বারের চেয়েও অনেক বেশী বার শুনেছি।[494]

 

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ভবিষ্যৎবাণী

হিজাজ থেকে আগুন বের হবে এবং তাতে বসরার উটের ঘাড় আলোকিত হয়ে যাবে।

 قَالَ سَعِيدُ بْنُ المُسَيِّبِ: أَخْبَرَنِي أَبُو هُرَيْرَةَ: أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قَالَ: «لاَ تَقُومُ السَّاعَةُ حَتَّى تَخْرُجَ نَارٌ مِنْ أَرْضِ الحِجَازِ تُضِيءُ أَعْنَاقَ الإِبِلِ بِبُصْرَى».

আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: কিয়ামত কায়েম হবেনা যতক্ষন না হিজাযের যমীন থেকে আগুন বের হবে, যা বুসরার উটগুলোর গর্দান আলোকিত করে দেবে।[495]

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ভবিষ্যৎবাণী

তাঁর উম্মতেরা মসজিদ কারুকার্য করার ব্যাপারে গর্ব করবে

عَنْ أَنَسٍ، أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «لَا تَقُومُ السَّاعَةُ حَتَّى يَتَبَاهَى النَّاسُ فِي الْمَسَاجِدِ».

আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, লোকেরা মসজিদে পরস্পরের মধ্যে (নির্মাণ ও কারুকার্য নিয়ে) গর্ব না করা পর্যন্ত কিয়ামত কায়েম হবে না।[496]

 

 

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ভবিষ্যৎবাণী

তাঁর পরে মুজাদ্দিদগণের আগমন হবে যারা দীনের সংস্কার করবে।

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، فِيمَا أَعْلَمُ، عَنْ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «إِنَّ اللَّهَ يَبْعَثُ لِهَذِهِ الْأُمَّةِ عَلَى رَأْسِ كُلِّ مِائَةِ سَنَةٍ مَنْ يُجَدِّدُ لَهَا دِينَهَا».

আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আল্লাহ এ উম্মতের জন্য প্রতি একশত বছর অন্তর একজন মুজাদ্দিদ পাঠাবেন, যিনি দীনের সংস্কার করবেন।[497]

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ভবিষ্যৎবাণী

নবুওয়তের খিলাফতের সময়কাল হলো ত্রিশ বছর।

عَنْ سَفِينَةَ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «خِلَافَةُ النُّبُوَّةِ ثَلَاثُونَ سَنَةً، ثُمَّ يُؤْتِي اللَّهُ الْمُلْكَ مَنْ يَشَاءُ، أَوْ مُلْكَهُ مَنْ يَشَاءُ».

সাফিনা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, নবুওয়তের খিলাফতের সময়কাল হলো ত্রিশ বছর। এরপর আল্লাহ যাকে ইচ্ছা করবেন, সুলতানাত (বাদশাহী) দান করবেন।[498]

عَنْ سَفِينَةَ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «خِلَافَةُ النُّبُوَّةِ ثَلَاثُونَ سَنَةً، ثُمَّ يُؤْتِي اللَّهُ الْمُلْكَ أَوْ مُلْكَهُ مَنْ يَشَاءُ» قَالَ سَعِيدٌ قَالَ لِي سَفِينَةُ: «أَمْسِكْ عَلَيْكَ أَبَا بَكْرٍ سَنَتَيْنِ، وَعُمَرُ عَشْرًا، وَعُثْمَانُ اثْنَتَيْ عَشْرَةَ، وَعَلِيٌّ كَذَا» قَالَ سَعِيدٌ، قُلْتُ: لِسَفِينَةَ إِنَّ هَؤُلَاءِ يَزْعُمُونَ أَنَّ عَلِيًّا عَلَيْهِ السَّلَام لَمْ يَكُنْ بِخَلِيفَةٍ قَالَ: «كَذَبَتْ أَسْتَاهُ بَنِي الزَّرْقَاءِ يَعْنِي بَنِي مَرْوَانَ».

সাফীনা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, নবুওয়তের খিলাফতের সময়কাল হলো ত্রিশ বছর। এরপর আল্লাহ্ যাকে ইচ্ছা রাজত্ব বা বাদশাহী দান করবেন। রাবী সাঈদ (রহ.) বলেন, সাফীনা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা আমাকে বলেন, তুমি হিসাব কর। আবূ বকর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর শাসনকাল হবে দু' বছর; উমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর দশ বছর; উসমান রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর বার বছর এবং আলী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর অর্থাৎ ছয় বছর। রাবী সাঈদ (রহ.) বলেন, তখন আমি সাফীনা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহাকে জিজ্ঞাসা করি যে, বনূ-মারওয়ান এরূপ ধারণা করে যে, আলী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু খলীফাদের অন্তর্ভুক্ত নন। তিনি বলেন, বনূ-মারওয়ানরা মিথ্যা বলেছে। [499]

 


 

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ভবিষ্যৎবাণী

কিয়ামতের নিদর্শনাবলী হলো মালের প্রাচুর্য এবং আধিক্য, ব্যবসা বৃদ্ধি পাবে আর বিদ্যা বিলুপ্ত হবে।

عَنْ عَمْرِو بْنِ تَغْلِبَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: " إِنَّ مِنْ أَشْرَاطِ السَّاعَةِ أَنْ يَفْشُوَ الْمَالُ وَيَكْثُرَ، وَتَفْشُوَ التِّجَارَةُ، وَيَظْهَرَ الْعِلْمُ، وَيَبِيعَ الرَّجُلُ الْبَيْعَ فَيَقُولَ: لَا حَتَّى أَسْتَأْمِرَ تَاجِرَ بَنِي فُلَانٍ، وَيُلْتَمَسَ فِي الْحَيِّ الْعَظِيمِ الْكَاتِبُ فَلَا يُوجَدُ ".

‘আমর ইবন তাগলিব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, মালের প্রাচুর্য এবং আধিক্য হলো কিয়ামতের নিদর্শনাবলীর অন্তর্গত এবং ব্যবসা বৃদ্ধি পাবে আর বিদ্যা বিলুপ্ত হবে। কোনো ব্যক্তি মাল বিক্রিদাতা বলবে: না, আমি অমুক গোত্রের ব্যবসায়ীর সাথে পরামর্শ করে নেই। আর বিরাট লোকালয়ে লেখক তালাশ করে পাওয়া যারে না।[500]

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ভবিষ্যৎবাণী

শেষ যমানায় কিছু লোক হবে কালো খিযাব লাগাবে

عَنْ ابْنِ عَبَّاسٍ، رَفَعَهُ أَنَّهُ قَالَ: «قَوْمٌ يَخْضِبُونَ بِهَذَا السَّوَادِ آخِرَ الزَّمَانِ كَحَوَاصِلِ الْحَمَامِ، لَا يَرِيحُونَ رَائِحَةَ الْجَنَّةِ».

ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, শেষ যমানায় কিছু লোক হবে, যারা কালো খিযাব লাগাবে কবুতরের বুকের মত, তারা বেহেশতের সুগন্ধও পাবে না।[501]

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ভবিষ্যৎবাণী

পারস্যের উপর রোমের বিজয় সাধিত হবে।  

عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ، فِي قَوْلِ اللهِ تَعَالَى: {الم غُلِبَتِ الرُّومُ فِي أَدْنَى الأَرْضِ} قَالَ: غُلِبَتْ وَغَلَبَتْ، كَانَ الْمُشْرِكُونَ يُحِبُّونَ أَنْ يَظْهَرَ أَهْلُ فَارِسَ عَلَى الرُّومِ لأَنَّهُمْ وَإِيَّاهُمْ أَهْلُ أَوْثَانٍ، وَكَانَ الْمُسْلِمُونَ يُحِبُّونَ أَنْ يَظْهَرَ الرُّومُ عَلَى فَارِسَ لأَنَّهُمْ أَهْلُ كِتَابٍ، فَذَكَرُوهُ لأَبِي بَكْرٍ فَذَكَرَهُ أَبُو بَكْرٍ لِرَسُولِ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: أَمَا إِنَّهُمْ سَيَغْلِبُونَ، فَذَكَرَهُ أَبُو بَكْرٍ لَهُمْ، فَقَالُوا: اجْعَلْ بَيْنَنَا وَبَيْنَكَ أَجَلاً، فَإِنْ ظَهَرْنَا كَانَ لَنَا كَذَا وَكَذَا، وَإِنْ ظَهَرْتُمْ كَانَ لَكُمْ كَذَا وَكَذَا، فَجَعَلَ أَجَلاً خَمْسَ سِنِينَ، فَلَمْ يَظْهَرُوا، فَذَكَرَ ذَلِكَ لِلنَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قَالَ: أَلاَ جَعَلْتَهُ إِلَى دُونَ، قَالَ: أُرَاهُ العَشْرَ، قَالَ سَعِيدٌ: وَالْبِضْعُ مَا دُونَ العَشْرِ، قَالَ: ثُمَّ ظَهَرَتِ الرُّومُ بَعْدُ. قَالَ: فَذَلِكَ قَوْلُهُ تَعَالَى: {الم غُلِبَتِ الرُّومُ}، إِلَى قَوْلِهِ: {يَفْرَحُ الْمُؤْمِنُونَ بِنَصْرِ اللهِ يَنْصُرُ مَنْ يَشَاءُ} قَالَ سُفْيَانُ: سَمِعْتُ أَنَّهُمْ ظَهَرُوا عَلَيْهِمْ يَوْمَ بَدْرٍ.

ইবন আববাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে

{الم غُلِبَتِ الرُّومُ فِي أَدْنَى الأَرْضِ} প্রসঙ্গে বলেছেন: তিনি غُلِبَتْ وَغَلَبَتْ উভয় পাঠই রয়েছে। তিনি বলেন, মুশরিকরা রোমকদের উপর পারসিকদের বিজয় পছন্দ করতো। কেননা ওরা এবং এরা ছিল মূর্তি পূজারী। আর মুসলিমরা ভালবাসত পারস্যের উপর রোমের বিজয়। কেননা রোমকরা ছিল কিতাবী সম্প্রদায়। তারা আবূ বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু-এর সঙ্গে এই কথা আলোচনা করে। এরপর আবূ আবূ বকর তা রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে উল্লেখ করেন। তখন তিনি বললেন: শুনে রাখ, রোমবাসী অবশ্যই অচিরেই জয়লাভ করবে। আবূ বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু তখন তাদের এই কথা বলেন, তারা বলল, আমাদের এবং তোমার মাঝে এর একটা মেয়াদ নির্ধারণ কর। আমরা যদি জয়ী হই তবে আমাদের হবে অমুক অমুক জিনিস আর তোমরা জয়ী হলে তোমাদের হবে অমুক অমুক জিনিস। তিনি পাঁচ বছরের মেয়াদ নির্ধারণ করেন। কিন্তু এই সময়ে তাদের বিজয় হয়নি। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে বিষয়টি আলোচনা করা হলে তিনি বললেন: তুমি কেন এর চাইতে বেশী মেয়াদ নির্ধারণ করলে না? সাঈদ (র) বলেন: وَالْبِضْعُ مَا دُونَ العَشْرِ হল দশ বছর থেকে কম। পরবর্তীতে রোমকরা বিজয় লাভ করে। এ প্রসঙ্গে হল আল্লাহর এই বাণী : {الم غُلِبَتِ الرُّومُ} সুফইয়ান (রহ.) বলেন, আমি শুনেছি যে, বদর যুদ্ধের দিন রোমকরা পারস্যের উপর বিজয় লাভ করে।[502]

عَنْ نِيَارِ بْنِ مُكْرَمٍ الأَسْلَمِيِّ، قَالَ: لَمَّا نَزَلَتْ {الم غُلِبَتِ الرُّومُ فِي أَدْنَى الأَرْضِ وَهُمْ مِنْ بَعْدِ غَلَبِهِمْ سَيَغْلِبُونَ فِي بِضْعِ سِنِينَ} فَكَانَتْ فَارِسُ يَوْمَ نَزَلَتْ هَذِهِ الآيَةُ قَاهِرِينَ لِلرُّومِ، وَكَانَ الْمُسْلِمُونَ يُحِبُّونَ ظُهُورَ الرُّومِ عَلَيْهِمْ لأَنَّهُمْ وَإِيَّاهُمْ أَهْلُ كِتَابٍ، وَفِي ذَلِكَ قَوْلُ اللهِ تَعَالَى: {وَيَوْمَئِذٍ يَفْرَحُ الْمُؤْمِنُونَ بِنَصْرِ اللهِ يَنْصُرُ مَنْ يَشَاءُ وَهُوَ العَزِيزُ الرَّحِيمُ} فَكَانَتْ قُرَيْشٌ تُحِبُّ ظُهُورَ فَارِسَ لأَنَّهُمْ وَإِيَّاهُمْ لَيْسُوا بِأَهْلِ كِتَابٍ وَلاَ إِيمَانٍ بِبَعْثٍ، فَلَمَّا أَنْزَلَ اللَّهُ تَعَالَى هَذِهِ الآيَةَ، خَرَجَ أَبُو بَكْرٍ الصِّدِّيقُ يَصِيحُ فِي نَوَاحِي مَكَّةَ {الم غُلِبَتِ الرُّومُ فِي أَدْنَى الأَرْضِ وَهُمْ مِنْ بَعْدِ غَلَبِهِمْ سَيَغْلِبُونَ فِي بِضْعِ سِنِينَ} قَالَ نَاسٌ مِنْ قُرَيْشٍ لأَبِي بَكْرٍ: فَذَلِكَ بَيْنَنَا وَبَيْنَكُمْ، زَعَمَ صَاحِبُكَ أَنَّ الرُّومَ سَتَغْلِبُ فَارِسَ فِي بِضْعِ سِنِينَ، أَفَلاَ نُرَاهِنُكَ عَلَى ذَلِكَ، قَالَ: بَلَى، وَذَلِكَ قَبْلَ تَحْرِيمِ الرِّهَانِ، فَارْتَهَنَ أَبُو بَكْرٍ وَالمُشْرِكُونَ وَتَوَاضَعُوا الرِّهَانَ، وَقَالُوا لأَبِي بَكْرٍ: كَمْ تَجْعَلُ البِضْعُ ثَلاَثُ سِنِينَ إِلَى تِسْعِ سِنِينَ، فَسَمِّ بَيْنَنَا وَبَيْنَكَ وَسَطًا تَنْتَهِي إِلَيْهِ، قَالَ: فَسَمَّوْا بَيْنَهُمْ سِتَّ سِنِينَ، قَالَ: فَمَضَتِ السِّتُّ سِنِينَ قَبْلَ أَنْ يَظْهَرُوا، فَأَخَذَ الْمُشْرِكُونَ رَهْنَ أَبِي بَكْرٍ، فَلَمَّا دَخَلَتِ السَّنَةُ السَّابِعَةُ ظَهَرَتِ الرُّومُ عَلَى فَارِسَ، فَعَابَ الْمُسْلِمُونَ عَلَى أَبِي بَكْرٍ تَسْمِيَةَ سِتِّ سِنِينَ، لأَنَّ اللَّهَ تَعَالَى قَالَ فِي بِضْعِ سِنِينَ، قَالَ: وَأَسْلَمَ عِنْدَ ذَلِكَ نَاسٌ كَثِيرٌ.

নিয়ার ইবন মুকাররাম রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন:

 {الم غُلِبَتِ الرُّومُ فِي أَدْنَى الأَرْضِ وَهُمْ مِنْ بَعْدِ غَلَبِهِمْ سَيَغْلِبُونَ فِي بِضْعِ سِنِينَ}

“আলিফ-লাম-মীম। রোমানরা[503] পরাজিত হয়েছে। নিকটবর্তী অঞ্চলে[504], আর তারা তাদের এ পরাজয়ের পর অচিরেই বিজয়ী হবে, কয়েক বছরের মধ্যেই”[505]। [সূরা রূম: ১-৪]

আয়াতগুলো নাযিল হওয়ার সময় পারসিকরা রোমকদের উপর বিজয়ী ছিল আর মুসলিমরা তাদের উপর রোমকদের বিজয় ভালবাসতেন। কেননা মুসলিমরা আর এরা উভয়েই ছিলেন আহলে কিতাব। এই প্রসঙ্গে ছিল আল্লাহ্ তা‘আলার এই বাণী:

{وَيَوْمَئِذٍ يَفْرَحُ الْمُؤْمِنُونَ بِنَصْرِ اللهِ يَنْصُرُ مَنْ يَشَاءُ وَهُوَ العَزِيزُ الرَّحِيمُ}

“আর সেদিন মুমিনরা আনন্দিত হবে, আল্লাহর সাহায্যে। তিনি যাকে ইচ্ছা সাহায্য করেন। আর তিনি মহাপরাক্রমশালী, পরম দয়ালু”। [সূরা রূম: ৪-৫]

আর কুরাইশরা ভালবাসত পারসিকদের বিজয়। কেননা এরা উভয়ই আহলে কিতাব ছিল না এবং (মৃত্যুর পর) উত্থানে বিশ্বাসী ছিল না। যা হোক, আল্লাহ্ তা‘আলা এই আয়াত নাযিল করার পর আবূ বকর সিদ্দীক রাদিয়াল্লাহু আনহু মক্কার গলিতে গলিতে বের হয়ে পড়েছিলেন এবং চিৎকার করে পাঠ করছিলেন:

{الم غُلِبَتِ الرُّومُ فِي أَدْنَى الأَرْضِ وَهُمْ مِنْ بَعْدِ غَلَبِهِمْ سَيَغْلِبُونَ فِي بِضْعِ سِنِينَ}

“আলিফ-লাম-মীম। রোমানরা পরাজিত হয়েছে। নিকটবর্তী অঞ্চলে, আর তারা তাদের এ পরাজয়ের পর অচিরেই বিজয়ী হবে, কয়েক বছরের মধ্যেই”। [সূরা রূম: ১-৪]

কুরাইশদের কতক লোক তখন আবূ বকর রাদিয়াল্লাহু আনহুকে বলল, এ হল আমাদের এবং তোমাদের একটি বিষয়। তোমার নবী তো বলে থাকে যে, কয়েক বছরের মধ্যেই রোম পারস্যের উপর বিজয়ী হবে। আমরা এই বিষয়ে কি একটা বাজি ধরতে পারি না? আবূ বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন: অবশ্যই। তখনও ইসলামে বাজি নিষিদ্ধ হয়নি! আবূ বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু ও মুশরিকগণ পরস্পর বাজি ধরলেন। কুরাইশরা আবূ বকর রাদিয়াল্লাহু আনহুকে বলল, মেয়াদ কতদিন নির্ধারণ করবে? বিদ‘আ শব্দটি তিন থেকে নয় বছর বুঝায় সুতরাং আমাদের এবং তোমার ক্ষেত্রে মাঝামাঝি একটি সময় নির্ধারণ করে নাও, যে সময়ে গিয়ে মেয়াদ শেষ হবে। অনন্তর তারা ছয় বছর সময় নির্ধারণ করেন। কিন্তু ছয় বছর অতিবাহিত হয়ে গেল এ দিকে রোমকদের বিজয় ঘটল না। মুশরিকরা আবূ বকর রাদিয়াল্লাহু আনহুর স্থিরীকৃত বাজির বস্তুটি নিয়ে নিল। সপ্তম বছরে রোমকরা পারসিকদের উপর বিজয় লাভ করে। তখন মুসলিমরা ছয় বছর সময় নির্ধারণের কারণে আবূ বকর রাদিয়াল্লাহু আনহুকে দোষারোপ করেন। কেননা আল্লাহ্ তা‘আলা তো এই বিষয়ে فِي بِضْعِ سِنِينَ (তিন থেকে নয় বছর সময়) বলেছিলেন। নিয়ার ইবন মুকাররাম রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, এই সময় বহু লোক ইসলাম গ্রহণ করে।[506]


 

বস্ত্র পরিহিত হয়েও বিবস্ত্রা স্ত্রীলোক সম্পর্কে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ভবিষ্যৎবাণী

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «صِنْفَانِ مِنْ أَهْلِ النَّارِ لَمْ أَرَهُمَا، قَوْمٌ مَعَهُمْ سِيَاطٌ كَأَذْنَابِ الْبَقَرِ يَضْرِبُونَ بِهَا النَّاسَ، وَنِسَاءٌ كَاسِيَاتٌ عَارِيَاتٌ مُمِيلَاتٌ مَائِلَاتٌ، رُءُوسُهُنَّ كَأَسْنِمَةِ الْبُخْتِ الْمَائِلَةِ، لَا يَدْخُلْنَ الْجَنَّةَ، وَلَا يَجِدْنَ رِيحَهَا، وَإِنَّ رِيحَهَا لَيُوجَدُ مِنْ مَسِيرَةِ كَذَا وَكَذَا».

আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, জাহান্নামবাসী দু-ধরনের লোক, যাদের আমি (এখনো) দেখতে পাইনি। একদল লোক, যাদের সাথে গরুর লেজের ন্যায় চাবুক থাকবে, তা দিয়ে তারা লোকজনকে পিটাবে। আর এক দল স্ত্রীলোক, যারা বস্ত্র পরিহিত হয়েও বিবস্ত্রা, যারা অন্যদের আকর্ষণ কারিনা ও আকৃষ্টা, তাদের- মাথার চুলের অবস্থা উটের হেলে পড়া কূঁজের ন্যায় ওরা জান্নাতে প্রবেশ করবে না, এমনকি তার খুশবুও পাবে না। অথচ এত এত দূর থেকে তার খুশবু পাওয়া যায়।[507]

 

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ভবিষ্যৎবাণী

শেষ জামানায় মানুষের মধ্যে আমানতদারীতা কমে যাবে।

 عَنْ زَيْدِ بْنِ وَهْبٍ، حَدَّثَنَا حُذَيْفَةُ، قَالَ: حَدَّثَنَا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ حَدِيثَيْنِ، رَأَيْتُ أَحَدَهُمَا وَأَنَا أَنْتَظِرُ الآخَرَ: حَدَّثَنَا: «أَنَّ الأَمَانَةَ نَزَلَتْ فِي جَذْرِ قُلُوبِ الرِّجَالِ، ثُمَّ عَلِمُوا مِنَ القُرْآنِ، ثُمَّ عَلِمُوا مِنَ السُّنَّةِ» وَحَدَّثَنَا عَنْ رَفْعِهَا قَالَ: " يَنَامُ الرَّجُلُ النَّوْمَةَ فَتُقْبَضُ الأَمَانَةُ مِنْ قَلْبِهِ، فَيَظَلُّ أَثَرُهَا مِثْلَ أَثَرِ الوَكْتِ، ثُمَّ يَنَامُ النَّوْمَةَ فَتُقْبَضُ فَيَبْقَى فِيهَا أَثَرُهَا مِثْلَ أَثَرِ المَجْلِ، كَجَمْرٍ دَحْرَجْتَهُ عَلَى رِجْلِكَ فَنَفِطَ، فَتَرَاهُ مُنْتَبِرًا وَلَيْسَ فِيهِ شَيْءٌ، وَيُصْبِحُ النَّاسُ يَتَبَايَعُونَ، فَلاَ يَكَادُ أَحَدٌ يُؤَدِّي الأَمَانَةَ، فَيُقَالُ: إِنَّ فِي بَنِي فُلاَنٍ رَجُلًا أَمِينًا، وَيُقَالُ لِلرَّجُلِ: مَا أَعْقَلَهُ وَمَا أَظْرَفَهُ وَمَا أَجْلَدَهُ، وَمَا فِي قَلْبِهِ مِثْقَالُ حَبَّةِ خَرْدَلٍ مِنْ إِيمَانٍ " وَلَقَدْ أَتَى عَلَيَّ زَمَانٌ، وَلاَ أُبَالِي أَيُّكُمْ بَايَعْتُ، لَئِنْ كَانَ مُسْلِمًا رَدَّهُ عَلَيَّ الإِسْلاَمُ، وَإِنْ كَانَ نَصْرَانِيًّا رَدَّهُ عَلَيَّ سَاعِيهِ، وَأَمَّا اليَوْمَ: فَمَا كُنْتُ أُبَايِعُ إِلَّا فُلاَنًا وَفُلاَنًا.

হুযায়ফা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের দুটি হাদীস বর্ণনা করেছিলেন, যার একটি আমি দেখেছি (বাস্তবায়িত হয়েছে) আর অপরটির অপেক্ষায় আছি। তিনি আমাদের বলেন, আমানত মানুষের অন্তর্মূলে প্রবিষ্ট হয়। এরপর তারা কুরআন শিখে, তারপর তারা সুন্নাহর জ্ঞান অর্জন করে। তিনি আমাদের আমানত বিলুপ্তি সম্পর্কেও বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেছেন, মানুষ এক সময় ঘুমাবে। তার অন্তর থেকে আমানত উঠিয়ে নেওয়া হবে। তখন একটি বিন্দুর ন্যায় চিহ্ন অবশিষ্ট থাকবে। এরপর সে আবার ঘুমাবে। তারপর আবার তুলে নেওয়া হবে, তখন ফোসকার ন্যায় তার চিহ্ন অবশিষ্ট থাকবে। যেমন একটা জ্বলন্ত অঙ্গারকে যদি তুমি পায়ের উপর রেখে দাও এতে পায়ে ফোসকা পড়ে, তখন তুমি সেটাকে ফোলা দেখবে। অথচ তার মধ্যে কিছুই নেই। (এ সময়) মানুষ বেচাকেনা করবে বটে কিন্তু কেউ আমানত আদায় করবে না। তখন বলা হবে, অমুক গোত্রে একজন আমানতদার ব্যক্তি আছেন। কোনো কোন লোক সম্পর্কে বলা হবে যে, লোকটি কতই না বুদ্ধিমান, কতই না বিচক্ষণ, কতই না বীর, অথচ তার অন্তরে সরিষার দানা পরিমাণ ঈমান নেই। [এরপর হুযায়ফা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বললেন] আমার উপর দিয়ে এমন একটি যুগ অতিবাহিত হয়েছে তখন আমি তোমাদের কার সাথে লেনদেন করছি এ সম্পর্কে মোটেও চিন্তা-ভাবনা করতাম না। কেননা সে যদি মুসলিম হয় তাহলে তার দীনই (হক আদায়ের জন্য) তাকে আমার কাছে ফিরিয়ে আনবে। আর যদি সে খৃষ্টান হয়, তাহলে তার অভিভাবকরাই (হক আদায়ের জন্য) তাকে আমার কাছে ফিরে আসতে বাধ্য করবে। কিন্তু বর্তমানে আমি অমুক অমুক কে ছাড়া কারো সঙ্গে বেচাকেনা করি না।[508]


 

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ভবিষ্যৎবাণী

তাঁর কিছু সাহাবী পরীক্ষায় পতিত হবেন।

عَنْ حُذَيْفَةَ، قَالَ: كُنَّا مَعَ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَقَالَ: «أَحْصُوا لِي كَمْ يَلْفِظُ الْإِسْلَامَ»، قَالَ: فَقُلْنَا: يَا رَسُولَ اللهِ، أَتَخَافُ عَلَيْنَا وَنَحْنُ مَا بَيْنَ السِّتِّمِائَةٍ إِلَى السَّبْعِمِائةٍ؟ قَالَ: «إِنَّكُمْ لَا تَدْرُونَ لَعَلَّكُمْ أَنْ تُبْتَلَوْا»، قَالَ: «فَابْتُلِيَنَا حَتَّى جَعَلَ الرَّجُلُ مِنَّا لَا يُصَلِّي إِلَّا سِرًّا».

হুযায়ফা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, আমরা একবার রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সঙ্গে ছিলাম। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন আমাদেরকে বললেন, গণনা কর তো, কতজন মানুষ ইসলামের কথা স্বীকার করে। আমরা বললাম, হে আল্লাহর রাসুল! আপনি কি আমাদের ব্যাপারে আশঙ্কা করেছেন? আমরা তো প্রায় ছয়শত থেকে সাতশ” লোক আছি। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন?, তোমরা জান না, অবশ্যই তোমাদেরকে পরীক্ষায় ফেলা হবে। সাহাবী বলেন, পরবর্তীকালে সত্যিই আমরা পরীক্ষার সম্মুখীন হই, এমন কি আমাদের কোনো কোন ব্যক্তিকে গোপনে সালাত আদায় করতে হতো।[509]

 

 

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ভবিষ্যৎবাণী

যে ব্যক্তি মানুষের সম্পদ নষ্ট করার উদ্দেশ্যে গ্রহণ করে তাঁর শাস্তি।

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «مَنْ أَخَذَ أَمْوَالَ النَّاسِ يُرِيدُ أَدَاءَهَا أَدَّى اللَّهُ عَنْهُ، وَمَنْ أَخَذَ يُرِيدُ إِتْلاَفَهَا أَتْلَفَهُ اللَّهُ».

আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি মানুষের মাল (ধার) নেয় পরিশোধ করার উদ্দেশ্যে আল্লাহ তা’আলা তা আদায়ের ব্যবস্থা করে দেন। আর যে তা নেয় বিনষ্ট করার নিয়্যাতে আল্লাহ তা’আলা তাকে ধ্বংস করেন।[510]

 

সিরিয়া বিজয় সম্পর্কে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ভবিষ্যৎবাণী

عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ، قَالَ: «إِنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَقَّتَ لِأَهْلِ المَدِينَةِ ذَا الحُلَيْفَةِ، وَلِأَهْلِ الشَّأْمِ الجُحْفَةَ، وَلِأَهْلِ نَجْدٍ قَرْنَ المَنَازِلِ، وَلِأَهْلِ اليَمَنِ يَلَمْلَمَ، هُنَّ لَهُنَّ، وَلِمَنْ أَتَى عَلَيْهِنَّ مِنْ غَيْرِهِنَّ مِمَّنْ أَرَادَ الحَجَّ وَالعُمْرَةَ، وَمَنْ كَانَ دُونَ ذَلِكَ، فَمِنْ حَيْثُ أَنْشَأَ حَتَّى أَهْلُ مَكَّةَ مِنْ مَكَّةَ».

ইবন ‘আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইহ্‌রাম বাঁধার স্থান নির্ধারণ করে দিয়েছেন, মদীনাবাসীদের জন্য যুল-হুলায়ফা, সিরিয়াবাসীদের জন্য জুহফা, নজদবাসীদের জন্য কারনুল-মানাযিল, ইয়ামানবাসীদের জন্য ইয়ালামলাম। হজ্জ ও ‘উমরা নিয়্যাতকারী সেই অঞ্চলের অধিবাসী এবং ঐ সীমারেখা দিয়ে অতিক্রমকারী অন্যান্য অঞ্চলের অধিবাসী সকলের জন্য উক্ত স্থানগুলো মীকাতরূপে গণ্য এবং যারা এ সব মীকাতের ভিতরে (অর্থাৎ মক্কার নিকটবর্তী) স্থানের অধিবাসী, তারা যেখান হতে হজ্জের নিয়্যাত করে বের হবে (সেখান হতে ইহরাম বাঁধবে)। এমন কি মক্কাবাসী মক্কা থেকেই (হজ্জের) ইহরাম বাঁধবে।[511]

عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عُمَرَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا: أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «يُهِلُّ أَهْلُ المَدِينَةِ مِنْ ذِي الحُلَيْفَةِ، وَيُهِلُّ أَهْلُ الشَّأْمِ مِنَ الجُحْفَةِ، وَأَهْلُ نَجْدٍ مِنْ قَرْنٍ»، قَالَ عَبْدُ اللَّهِ وَبَلَغَنِي أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «وَيُهِلُّ أَهْلُ اليَمَنِ مِنْ يَلَمْلَمَ».

ইবন ‘উমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, মদীনাবাসীগণ যুল-হুলাইফা থেকে, সিরিয়াবাসীগণ জুহফা থেকে ও নজদবাসীগণ কারণ থেকে ইহরাম বাঁধবে। ‘আবদুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, আমি (অন্যের মাধ্যমে) জানতে পেরেছি, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ইয়ামেনবাসীগণ ইয়ালামলাম থেকে ইহ্‌রাম বাঁধবে।[512]

عَنْ سُفْيَانَ بْنِ أَبِي زُهَيْرٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، أَنَّهُ قَالَ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، يَقُولُ: «تُفْتَحُ اليَمَنُ، فَيَأْتِي قَوْمٌ يُبِسُّونَ، فَيَتَحَمَّلُونَ بِأَهْلِهِمْ وَمَنْ أَطَاعَهُمْ، وَالمَدِينَةُ خَيْرٌ لَهُمْ لَوْ كَانُوا يَعْلَمُونَ، وَتُفْتَحُ الشَّأْمُ، فَيَأْتِي قَوْمٌ يُبِسُّونَ، فَيَتَحَمَّلُونَ بِأَهْلِيهِمْ وَمَنْ أَطَاعَهُمْ، وَالمَدِينَةُ خَيْرٌ لَهُمْ لَوْ كَانُوا يَعْلَمُونَ، وَتُفْتَحُ العِرَاقُ، فَيَأْتِي قَوْمٌ يُبِسُّونَ، فَيَتَحَمَّلُونَ بِأَهْلِيهِمْ وَمَنْ أَطَاعَهُمْ، وَالمَدِينَةُ خَيْرٌ لَهُمْ لَوْ كَانُوا يَعْلَمُونَ». 

সুফিয়ান ইবন আবূ যুহায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, ইয়ামেন বিজিত হবে, তখন একদল লোক নিজেদের সওয়ারী হাঁকিয়ে এসে স্বীয় পরিবার-পরিজন এবং অনুগত লোকদের উঠিয়ে নিয়ে যাবে। অথচ মদীনাই তাঁদের জন্য উত্তম ছিল, যদি তাঁরা বুঝত। সিরিয়া বিজিত হবে, তখন একদল লোক নিজেদের সওয়ারী হাঁকিয়ে এসে স্বীয় পরিবার-পরিজন এবং অনুগত লোকদের উঠিয়ে নিয়ে যাবে; অথচ মদীনাই ছিল তাঁদের জন্য কল্যাণকর, যদি তাঁরা জানত। এরপর ইরাক বিজিত হবে তখন, তখন একদল লোক নিজেদের সওয়ারী হাঁকিয়ে এসে স্বীয় পরিবার-পরিজন এবং অনুগত লোকদের উঠিয়ে নিয়ে যাবে; অথচ মদীনাই ছিল তাঁদের জন্য কল্যাণকর, যদি তাঁরা জানত।[513]

 

 

পরিসমাপ্তি

আলহামদুলিল্লাহ

“সহীহ হাদীসের আলোকে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নবুওয়তের প্রমাণ” কিতাবখানা শেষ করলাম। আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করছি তিনি যেন বইখানা দ্বারা ইসলামের উপকার সাধন করেন। তিনি যেন এ কাজকে একমাত্র তাঁর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে কবুল করেন।

        আল্লাহ সুবহানাহু ওতা‘আলার কাছে দো‘আ করছি তিনি যেন যারা এ কিতাবটি প্রকাশে সর্বাত্বক সহযোগীতা করেছেন তাদেরকে জাযা খাইর দান করেন। তাদের মধ্যে অন্যতম হলেন, প্রিয় ভাই, আলী মাগরিবী, যিনি বইটি কম্পিউটারে লেখার কাজটি করেছেন। আরেকজন হলেন, প্রিয় ভাই, আব্দুল্লাহ ইবন ‘আয়েদ, যিনি সন্নিবেশনের কাজে সাহায্য করেছে। আরেকজন হলেন, প্রিয় ভাই, মুহাম্মদ সুরুর, যিনি প্রকাশনার কাজ সম্পন্ন করেছেন।

        “সহীহ হাদীসের আলোকে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নবুওয়তের প্রমাণ” বইটি সহীহ হাদীসের কিতাব থেকে সংকলিত ও সন্নিবেশিত একখানা কিতাব, আল্লাহ তা‘আলা আমাকে জমা করতে যতটুকু সহজ ও সাহায্য করেছেন।

        দাওয়াত ও শিক্ষার কাজে নিয়োজিত অন্যান্য লেখকেরও এ বিষয়ে অনেক গবেষণাপত্র ও বই রয়েছে, যা দাওয়াতের পথের শত্রু কবরপূজারী, স্বজনপ্রিয় ও বাতিলের মোকাবিলা করে। মুসলিমদের এ সব জামা‘আত যা আমরা সঠিক ধারণা করি, কিন্তু তারা আমাদের আহলে সুন্নত ওয়াল জামা‘আতের দাওয়াতের মোকাবিলা করতে সর্বাত্বক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে, মিথ্যার আশ্রয় গ্রহণ করে হলেও। কিন্তু আল্লাহ তা‘আলা আহলে সুন্নত ওয়াল জামা‘আতের দাওয়াতকে বিজয়ী করবেনই যদিও তাদের শত্রুর সংখ্যা অনেক। সব অনুগ্রহ ও দয়া মহান আল্লাহর। সব প্রশংসা আল্লাহর।

وآخر دعوانا أن الحمد لله رب العالمين، وصلى الله على نبينا محمد وآله وصحبه.

 

 

সূচিপত্র

 

বিষয়

পৃষ্ঠা

1       

ভূমিকা

 

2       

অলৌকিক ঘটনার প্রকারভেদ

 

3       

অলৌকিক ঘটনার ব্যাপারে মু‘তাযিলাদের মতামত বিশ্লেষণ

 

4       

নবীগণের মু‘জিযা (আলামত) তাদের সত্যতার প্রমাণ

 

5       

প্রথম পরিচ্ছেদ: আল কুরআনের বিস্ময় মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নবুওয়তের প্রমাণ

 

6       

পরিচ্ছেদ: কুরআনের আরো বিস্ময়

 

7       

পরিচ্ছেদ: নবুওয়তের পূর্বাভাষ

 

8       

পরিচ্ছেদ: অহী নাযিলের ধরণ ও প্রকার

 

9       

পরিচ্ছেদ: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের স্বপ্ন সম্পর্কে এবং নবীগণের স্বপ্ন অহীর অন্তর্ভুক্ত

 

10     

দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দৈহিক ও চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের মধ্যে নবুওয়তের প্রমাণ

 

11     

তৃতীয় পরিচ্ছেদ: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নবুওয়তের ব্যাপারে পূর্ববর্তীদের সুসংবাদের মধ্যে নবুওয়তের প্রমাণ

 

12     

চতুর্থ পরিচ্ছেদ: গনক, জিন ও আহলে কিতাবদের থেকে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নবুওয়তের সাক্ষ্য দেওয়ার মধ্যে নবুওয়তের প্রমাণ

 

13     

কতিপয় জিনের ইসলাম গ্রহণ

 

14     

পঞ্চম পরিচ্ছেদ: গাছ-পালা, পাথর ও পশু-পাখির সাথে কথোপকথন ও সেগুলোর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আনুগত্যের মধ্যে নবুওয়তের প্রমাণ

 

15     

ষষ্ঠ পরিচ্ছেদ: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নবুওয়তের প্রমাণ: তাঁর সাথে জীব জন্তুর আচরণ

 

16     

সপ্তম পরিচ্ছেদ: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নবুওয়তের প্রমাণ: অল্প খাবার বেশী হওয়া

 

17     

অষ্টম পরিচ্ছেদ: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নবুওয়তের প্রমাণ: অল্প পানিতে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বরকত

 

18     

নবম পরিচ্ছেদ: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বরকতে আল্লাহ যাদেরকে শিফা (আরোগ্য) দান করেছেন, যা তার নবুওয়তকে প্রমাণ করে। বরকত মূলত আল্লাহর তরফ থেকে বা আল্লাহ তাতে বরকত দান করেছেন ও সৌন্দর্য করেছেন।

 

19     

শম পরিচ্ছেদ: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নবুওয়তের প্রমাণ: গায়েবী বিষয়ে তাঁর সংবাদ দেওয়া এবং তিনি যেভাবে বলেছেন সেগুলো ঠিক সেভাবেই সংঘটিত হয়েছিল।

 

20     

একাদশ পরিচ্ছেদ: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কর্তৃক আহলে কিতাব ও অন্যান্যদের প্রশ্নের জবাব যা তারা গোপন রাখত। আর তার মধ্যে রয়েছে নবুওয়তের প্রমাণ

 

21     

দ্বাদশ পরিচ্ছেদ: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নবুওয়তের প্রমাণের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে, একদল লোক সম্পর্কে তাঁর সংবাদ দেওয়া যে, তারা জান্নাতী। যাদের সম্পর্কে তিনি সংবাদ দিয়েছেন তাদের কেউ পরিবর্তন বা বেঈমান হয়েছে এমন কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।

 

22     

ত্রয়োদশ পরিচ্ছেদ: খাতমুন নুবুওয়াহ তথা নবুওয়তের সীলমোহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নবুওয়তের প্রমাণ

 

23     

চতুর্দশ পরিচ্ছেদ: জাহেলী যুগের নানা অন্যায় কাজ থেকে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পবিত্র থাকার মধ্যে নবুওয়তের প্রমাণ।

 

24     

পঞ্চদশ পরিচ্ছেদ: চাঁদ দ্বিখন্ডিত হওয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নবুওয়তের প্রমাণ

 

25     

ষোড়শ পরিচ্ছেদ: আল্লাহ তা‘আলা কর্তৃক তার রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে রক্ষা করার মধ্যে নবুওয়তের প্রমাণ

 

26     

সপ্তদশ পরিচ্ছেদ: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নবুওয়তের প্রমাণ: খেজুর কাণ্ডের ক্রন্দন

 

27     

অষ্টাদশ পরিচ্ছেদ: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কর্তৃক কাফিরদের মুখে বালু ও পাথর টুকরা নিক্ষেপের দ্বারা সবার কাছে তা পৌঁছার মধ্যে নবুওয়তের প্রমাণ

 

28     

ঊনবিংশ পরিচ্ছেদ: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে যে ধোঁকা দেয় তাঁর শাস্তি হওয়ার মধ্যে নবুওয়তের প্রমাণ

 

29     

বিংশ পরিচ্ছেদ: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বিরুদ্ধে যে বিদ্রোহ করে তাঁর শাস্তির মধ্যে নবুওয়তের প্রমাণ

 

30     

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বিরূদ্ধে যে বিদ্রোহ করে ও আল্লাহকে নিয়ে যে উপহাস করে তাঁর শাস্তির মধ্যে নবুওয়তের প্রমাণ

 

31     

একবিংশ পরিচ্ছেদ: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যুগে ও পরবর্তী যুগে যারা নবুওয়তের মিথ্যাদাবী করেছিল তাদের মিথ্যাচার উন্মুক্ত করার মধ্যে নবুওয়তের প্রমাণ

 

32     

দ্বাবিংশ পরিচ্ছেদ: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দো‘আ কবুল হওয়া তাঁর নবুওয়তের প্রমাণ

 

33     

ত্রয়োবিংশ পরিচ্ছেদ: ইসরা ও ‘মিরাজের রাত্রিতে আল্লাহ তাঁর নবীকে যা দেখিয়েছেন তা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নবুওয়তের প্রমাণ

 

34     

চতুর্বিংশ পরিচ্ছেদ: মক্কায় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সামনে বাইতুল মুকাদ্দাস পেশ করা ও তা দেখে বাইতুল মুকাদ্দাসের বর্ণনা দেওয়ার মধ্যে নবুওয়তের প্রমাণ

 

35     

পঞ্চবিংশতম পরিচ্ছেদ: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পোশাকের দ্বারা কিছু সাহাবী বরকত গ্রহণ করেছেন, যা তার নবুওয়তের প্রমাণ ।

 

36     

ষড়বিংশতম পরিচ্ছেদ: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে ফিরিশতাগণের জিহাদে শরিক হওয়ার মধ্যে নবুওয়তের প্রমাণ ।

 

37     

সপ্তবিংশতম পরিচ্ছেদ: আল্লাহ তা‘আলা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বিশুদ্ধভাষা ও বাগ্মিতা দান করেছেন। যা তার নবুওয়তের প্রমাণ

 

38     

অষ্টবিংশতম পরিচ্ছেদ: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর যে রহমত নাযিল হয়েছে তার মধ্যে নবুওয়তের প্রমাণ

 

39     

ঊনত্রিশতম পরিচ্ছেদ: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ব্যবহৃত পানি ও চুলের দ্বারা সাহাবীগণের বরকত লাভ। আর তাতে রয়েছে নবুওয়তের প্রমাণ

 

40     

ত্রিশতম পরিচ্ছেদ: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ঘামের সুঘ্রাণের মধ্যে নবুওয়তের প্রমাণ

 

41     

একত্রিশতম পরিচ্ছেদ: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ব্যবহৃত পানি দ্বারা বরকত হাসিল হওয়ার মধ্যে নবুওয়তের প্রমাণ

 

42     

বত্রিশতম পরিচ্ছেদ: আল্লাহ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জন্য মানুষের শ্রবণশক্তি খুলে দেন, ফলে তারা অনেক দূরবর্তী স্থান থেকেও তাঁর কথা শুনতে পান, যা তাঁর নবুওয়তের প্রমাণ।

 

43     

ত্রেত্রিশতম পরিচ্ছেদ: আল্লাহ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দ্বারা আহলে কিতাবদের মুখোশ উম্মোচণ করেছেন, যা তাঁর নবুওয়তের প্রমাণ

 

44     

চৌত্রিশতম পরিচ্ছেদ: আল্লাহ তা‘আলা তাঁর নবীর মধ্যে যে বরকত দান করেছেন তা তাঁর নবুওয়তের প্রমাণ

 

45     

পঁয়ত্রিশতম পরিচ্ছেদ: কা‘ব ইবন মালিক রাদিয়াল্লাহু আনহু ও তাঁর সাথীদ্বয়ের তাওবার ঘটনা এবং এ থেকে শিক্ষা। এটা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নবুওয়তের প্রমাণ।

 

46     

ছত্রিশতম পরিচ্ছেদ: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নবুওয়তের প্রমাণের মধ্যে আরেকটি হলো তিনি সালাতে তাঁর পিছনের দিকের অবস্থা দেখতে পেতেন।

 

47     

সাইত্রিশতম পরিচ্ছেদ: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অনুসারীদের কিছু কারামত তাঁর নবুওয়তের প্রমাণের মধ্যে অন্যতম।

 

48     

হকের উপর কায়েম থাকা সবচেয়ে বড় কারামত এটা অলীদের কারামতের মধ্যে শামিল করার কারণ।

 

49     

আটত্রিশতম পরিচ্ছেদ: সালেহীন তথা নেকবান্দাহদের স্বপ্ন

 

50     

উনচল্লিশতম পরিচ্ছেদ: কাসাসুল আম্বিয়া তথা নবীগণের ঘটনা বর্ণনায় রয়েছে নবুওয়তের প্রমাণ

 

51     

আদম ও হাওয়া আলাইহিমাস সালামের ঘটনা

 

52     

নূহ আলাইহিস সালাম

 

53     

হূদ আলাইহিস সালাম ও তাঁর সম্প্রদায় ‘আদ

 

54     

সালেহ আলাইহিস সালাম ও সামূদ জাতি

 

55     

ইবরাহীম আলাহিস সালামের ঘটনা

 

56     

আল্লাহর নবী শো‘আইব আলাইহিস সালাম ও তাঁর জাতির ঘটনা

 

57     

আল্লাহর নবী লূত আলাইহিস সালাম ও তাঁর জাতির ঘটনা

 

58     

ইসমাঈল আলাইহিস সালাম ও তাঁর মাতা হাজির আলাইহাস সালামের ঘটনা

 

59     

আল্লাহর নবী ইউসুফ আলাইহিস সালামের ঘটনা

 

60     

আল্লাহর নবী আইয়ুব আলাইহিস সালাম

 

61     

আল্লাহর নবী মূসা আলাইহিস সালাম ও তাঁর জাতি

 

62     

আল্লাহর নবী মূসা আলাইহিস সালাম তাঁর রবের কাছে সর্বোচ্চ জান্নাতীর মর্যারা আর সর্বনিম্ন জান্নাতীর মর্যাদা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা।

 

63     

মূসা আলাইহিস সালাম কর্তৃক মালাকুল মাউতকে প্রহার

 

64     

আল্লাহর নবী হারুন আলাইহিস সালামের ঘটনা

 

65     

আল্লাহর নবী দাউদ ও সুলাইমান আলাইহিমাস সালাম

 

66     

আল্লাহর নবী সুলাইমান আলাইহিস সালাম

 

67     

আল্লাহর নবী ইউনূস আলাইহিস সালাম

 

68     

আল্লাহর নবী যাকারিয়া ও ইয়াহইয়া আলাইহিমাস সালাম

 

69     

আল্লাহর নবী ঈসা আলাইহিস সালাম ও তাঁর মাতা মারইয়াম আলাইহাস সালাম

 

70     

কুরআনের অস্পষ্টভাবে উল্লেখিত নবীগণের আলোচনা

 

71     

চল্লিশতম পরিচ্ছেদ: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কর্তৃক ভবিষ্যৎবাণীসমূহ আর তাতে রয়েছে তাঁর নবুওয়তের প্রমাণ

 

72     


আবূ বকর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর খলিফা হওয়ার ইশারা

 

73     

শাইখাইন তথা আবু বকর ও উমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমার খিলাফাতের ইঙ্গিত

 

74     

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মৃত্যুর পরে যারা মুরতাদ হবে তাদের সম্পর্কে ভবিষ্যৎবাণী

 

75     

তাবেঈগণ সাহাবীদের থেকে এবং তাবেতাবেঈনগন তাবেঈদের থেকে ইলম শুনবে ও শিখবে।

 

76     

অধিক ভূমিকম্প হবে।

 

77     

ছোটদের থেকে বাদশাহ হবে, বড়দের মাঝে অশ্লীলতা ছড়িয়ে পড়বে এবং অপাত্রে ইলম হবে।

 

78     

মানুষের মাঝে মদপান ও যেনা ব্যভিচার বেড়ে যাবে।

 

79     

মুসলমানের বড় দু’টি দলের মধ্যে যুদ্ধ সংঘটিত হবে।

 

80     

সাহাবীরা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মৃত্যুর পর তাঁকে দেখার আকাঙ্ক্ষা করবে।

 

81     

ওয়াইস করনী সম্পর্কে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ভবিষ্যৎবাণী

 

82     

যেসব লোক কুরআনের মুতাশাবিহাতের অনুসরণ করবে তাদের সম্পর্কে সংবাদ দেওয়া।

 

83     

প্রথম তিন শতাব্দীর লোকদের ইসতিকামাত তথা দীনের উপর অটল থাকার সংবাদ।

 

84     

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ভবিষ্যৎবাণী

মুসলিমগণ কিছু দেশ জয়লাভ করবে এবং কিছু মানুষ মদিনা থেকে বেরিয়ে যাবে।

 

85     

উমর ইবন খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর শাহাদাতের সংবাদ

 

86     

উসমান রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর শাহাদাতের সংবাদ

 

87     

ফাতিমা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা সর্বপ্রথম রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে মিলিত হবেন।

 

88     

প্রথম তিন শতাব্দীতে ইসলামী বিজয় সাধিত হবে।

 

89     

যাইনাব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের স্ত্রীদের মধ্যে সর্বপ্রথম তাঁর সাথে মিলিত হবে।

 

90     

আলী ও মু‘আবিয়া রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমার মধ্যকর বিবেদ ও আলী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু মু‘আবিয়া রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর চেয়ে শ্রেষ্ঠ।

 

91     

মু‘আবিয়া রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর সাথে হাসান রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর সমজোতা।

 

92     

‘আম্মার ইবন ইয়াসির রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর শাহাদাত

 

93     

খাইবার থেকে ইয়াহুদীরা বিতাড়িত হবে।

 

94     

এক ব্যক্তি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে জিহাদে শরিক হয়েছেন, অথচ সে জাহান্নামে যাবে।

 

95     

তাঁর উম্মতের কিছু লোক জিহাদের জন্য সমুদ্রযানে আরোহণ করবে।

 

96     

মিশর বিজয় সম্পর্কে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ভবিষ্যৎবাণী

 

97     

আনসারগণ যেসব নিদর্শণ পাবে সে সম্পর্কে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ভবিষ্যৎবাণী

 

98     

আনসারগণের সংখ্যা হ্রাস পাওয়া সম্পর্কে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ভবিষ্যৎবাণী

 

99     

হাজ্জাজ ইবন ইউসূফের অত্যাচার ও মুখতার ইবন আবী উবাইদ আস-সাকাফীর মিথ্যাচার।

 

100   

আলী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর হাতে খাইবার বিজয় সম্পর্কে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ভবিষ্যৎবাণী

 

101   


পারস্য বিজয় সম্পর্কে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ভবিষ্যৎবাণী

 

102   

হিরা বিজয় সম্পর্কে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ভবিষ্যৎবাণী

 

103   

রোম ও পারস্য ধ্বংস ও তা মুসলিমগণের বিজয় সম্পর্কে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ভবিষ্যৎবাণী

 

104   

মদীনায় যেসব ফিতনা সংঘটিত হবে সে সম্পর্কে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ভবিষ্যৎবাণী

 

105   

একদল হকপন্থী বিজয়ী দল ও কিয়ামত পর্যন্ত টিকেথাকার ব্যাপারে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ভবিষ্যৎবাণী

 

106   

নবুওয়তের মিথ্যাদাবীদার কিছু দাজ্জাল সম্পর্কে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ভবিষ্যৎবাণী

 

107   

মানুষ আল্লাহর শুরু সম্পর্কে সন্দেহ করবে এ ব্যাপারে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ভবিষ্যৎবাণী

 

108   

কিছু ফিতনা সম্পর্কে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ভবিষ্যৎবাণী, যা তাঁর ইন্তিকালের পরে সংঘটিত হয়েছিল।

 

109   

মুসলিমগণ যখন সুদ ও দুনিয়াদারীতে পতিত হবে তখন তাদের অধঃপতন সম্পর্কে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ভবিষ্যৎবাণী

 

110   

সূদের দ্বারা সম্পদ বাড়ালে পরিণামে তার সম্পদ হ্রাসপ্রাপ্ত হবেই।

 

111   

জালিম শাসকদের সম্পর্কে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ভবিষ্যৎবাণী

 

112   

মানুষ অজ্ঞ লোকদেরকে রাজা বাদশাহ বানাবে।

 

113   

মহামারী মদীনায় প্রবেশ করতে পারবে না।

 

114   

আমার উম্মত তিয়াত্তর দলে বিভক্ত হবে।

 

115   

ইলম উঠে যাবে এবং যিনা ব্যভিচার বৃদ্ধি পাবে।

 

116   

তুর্কীদের সাথে মুসলিমদের যুদ্ধ হবে।

 

117   

তাঁর উম্মত দুনিয়ার ব্যাপারে অতিউৎসাহী হবে।

 

118   

কিছু লোক কুরাআন বেচে খাবে।

 

119   

শাসকগোষ্ঠী ও আলেম ও ইসলামী দলের মাঝে পরস্পর শত্রুতা থাকবে।

 

120   

তাঁর উম্মত ইসলামের শত্রুর অনুসরণ করবে।

 

121   

তাঁর উম্মতের কিছু লোক হালাল হারাম উপার্জনের ক্ষেত্রে পরোয়া করবে না।

 

122   

পথভ্রষ্ট আহলে কুরআনীদের সম্পর্কে সংবাদ।

 

123   

নিঃস্ব দরিদ্র লোকেরা বিরাট বিরাট অট্রালিকার মালিক হওয়ার প্রতিযোগিতায় গর্বিত হবে।

 

124   

খাওয়ারিজদের আবির্ভাব ঘটবে।

 

125   

মুশরিকরা বদরের যুদ্ধে পরাজিত হবে।

 

126   

বাইতুল মুকাদ্দিস বিজয়ের ব্যাপারে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ভবিষ্যৎবাণী

 

127   

তাঁর পরে বারোজন আমীরেব আবির্ভাব হবে।

 

128   

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পরে কিছু কল্যাণ ও ফিতনা সম্পর্কে ভবিষ্যৎবাণী

 

129   

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পরে যামানা পরিবর্তন হবে সে ব্যাপারে ভবিষ্যৎবাণী

 

130   

তাঁর মৃত্যুর একশত বছর পরে তাঁর কোনো সাহাবী জীবিত থাকবেন না

 

131   

আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর হিফযের ব্যাপারে আল্লাহর বরকত।

 

132   

বৃষ্টির রাতে লাইলাতুল কদর হবে।

 

133   

সালেহীন তথা নেককার লোকেরা ক্রমান্বয়ে চলে যাবেন।

 

134   

তিনি তাঁর স্ত্রী আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহার আগে মারা যাবেন।

 

135   

তাঁর উম্মতের কিছু লোক কিছু হারামকে হালাল মনে করবে।

 

136   

মুশরিকরা খন্দকের যুদ্ধের পরে মদীনায় এসে যুদ্ধ করবে না, বরং মদীনাবাসিরাই তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে।

 

137   

সা‘দ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর দ্বারা কিছু লোক উপকৃত হবে এবং কিছু লোক ক্ষতিগ্রস্ত হবে। মুসলমানেরা তাঁর দ্বারা উপকৃত হয়েছে এবং পারসিকরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

 

138   

তাঁর হায়াত শেষ হয়ে যাচ্ছে।

 

139   

আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা তাঁর স্ত্রী হবেন।

 

140   

তিনি আবু বকর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর আগে ইনতেকাল করবেন।

 

141   

খাইবার বিজয় সম্পর্কে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ভবিষ্যৎবাণী

 

142   

উমাইয়্যাহ ইবন খালফ নিহত হবে।

 

143   

জাবির রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু ও তাঁর পরিবারে গালিচার কার্পেট হবে।

 

144   

তাঁর ইনতেকালের পরে মানুষ নিরাপত্তা লাভ করবে এবং বাস্তবে তা হয়েছে।

 

145   

তিনি স্বপ্নে দেখেন যে, তিনি এমন এক দেশে হিজরত করবেন সেখানে খেজুর গাছ আছে।

 

146   

আল্লাহ তা‘আলা তাঁকে জানিয়ে দিয়েছেন য, তাঁর মৃত্যু সন্নিকটে।

 

147   

তাঁর মৃত্যুর পরে তাঁর উম্মতেরা তাঁর দ্বীনি ভাই হবে।

 

148   

আরব বিশ্বে যা হবে সে সম্পর্কে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ভবিষ্যৎবাণী

 

149   

কুরাইশ নেতাদের নিহত হওয়ার স্থান সম্পর্কে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ভবিষ্যৎবাণী

 

150   

তিনি গোপনে দাওয়াত দেওয়ার পরে প্রকাশ্যে দাওয়াত দিবেন

 

151   

হিজাজ থেকে আগুন বের হবে এবং তাতে বসরার উটের ঘাড় আলোকিত হয়ে যাবে।

 

152   

তাঁর উম্মতেরা মসজিদ কারুকার্য করার ব্যাপারে গর্ব করবে।

 

153   

তাঁর পরে মুজাদ্দিদগণের আগমন হবে যারা দীনের সংস্কার করবে।

 

154   

নবুওয়তের খিলাফতের সময়কাল হলো ত্রিশ বছর।

 

155   

কিয়ামতের নিদর্শনাবলী হলো মালের প্রাচুর্য এবং আধিক্য, ব্যবসা বৃদ্ধি পাবে আর বিদ্যা বিলুপ্ত হবে।

 

156   

শেষ যমানায় কিছু লোক হবে কালো খিযাব লাগাবে।

 

157   

পারস্যের উপর রোমের বিজয় সাধিত হবে।

 

158   

বস্ত্র পরিহিত হয়েও বিবস্ত্রা স্ত্রীলোক সম্পর্কে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ভবিষ্যৎবাণী

 

159   

শেষ জামানায় মানুষের মধ্যে আমানতদারীতা কমে যাবে।

 

160   

তাঁর কিছু সাহাবী পরীক্ষায় পতিত হবেন।

 

161   

যে ব্যক্তি মানুষের সম্পদ নষ্ট করার উদ্দেশ্যে গ্রহণ করে তাঁর শাস্তি।

 

162   

সিরিয়া বিজয় সম্পর্কে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ভবিষ্যৎবাণী

 

163   

পরিসমাপ্তি

 

164   

সূচিপত্র

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 



[1] এখানে জীবনের দ্বিগুণ ও মরণের দ্বিগুণ আযাব দ্বারা দুনিয়াবী জীবন ও আখিরাতের জীবনের দ্বিগুণ আযাব উদ্দেশ্য।

[2] এখানে যে সব আলিমদের সম্পর্কে মন্তব্য করা হয়েছে তা শুধুমাত্র লেখকের ব্যক্তিগত মতামত, এর সাথে অনুবাদকের কোনো ধরণের সম্পর্ক নেই।

[3] দেখুন: ‘ইলামুল আনাম বিমুখালিফাতি শাইখুল আযহার শালতুত লিলইসলাম”।

[4] মুসনাদে আহমদ: হাদীস নং ১৪৪।

[5] আবু দাউদ, হাদীস নং ৪২৫২।

[6] তালিবে ইলমদেরকে এদের বই পুস্তক না পড়তে অনুরোধ করছি। আল্লাহ তা‘আলা তালিবে ইলেমদেরকে এসব বই ব্যতীত আহলে সুন্নত ওয়াল জামা‘আতের কিতাবসমূহ দ্বারা অমুখাপেক্ষী করেছেন। আল্লাহ তাদেরকে জাযা খায়ের দান করুন।

[7] এ সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে তাফসীরে ইবন কাসীরের ভূমিকায় আমি আলোচনা করেছি।

[8] এর চেয়েও মারাত্মক হলো আমীন খাওলী ও ত্বোয়া হুসাইন কর্তৃক ‘কাসাসুল আম্বিয়া’ সম্পর্কে যা লিখেছেন।  

[9] সাধারণ মানুষের চাহিদার প্রতি খেয়াল রেখে সংক্ষেপ করা হয়েছে।

[10] তা হল- যাক্কুম বৃক্ষ যার মূল জাহান্নামে।

[11] জিবরীল (আলাইহিস সালাম)।

[12] মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)।

[13] মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)।

[14] জিবরীল (আলাইহিস সালাম)।

[15] বুখারী, হাদীস নং ৪৯৮১, মুসলিম, হাদীস নং ১৫২।

[16] বুখারী, হাদীস নং ৭৭৩, মুসলিম, হাদীস নং ৪৪৯।

[17] মুসতাদরাক লিলহাকিম, হাদীস নং ৩৭০১। তিনি বলেন, সনদটি সহীহ, ইমাম বুখারী ও মুসলিম উল্লেখ করন নি। ইমাম যাহাবী রহ. এটাকে স্বীকৃতি দিয়েছেন। প্রকৃত পক্ষে এটা হাসান হাদীস। কেননা এতে ‘আসিম ইবন আবী নুজুদ আছে, তিনি হাসানুল হাদীস। দেখুন ‘আল-মিজান’ গ্রন্থে।

[18] বুখারী, হাদীস নং ৪৮৫৪।

[19] বু‘আস যুদ্ধ আউস ও খাযরাজ গোত্রদ্বয়ের মধ্যে সংঘঠিত দীর্ঘ একশ বিশ বছর স্থায়ী একটি যুদ্ধ। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদীনায় আগমন করার পূর্বপর্যন্ত এ যুদ্ধ চলছিল। আল্লাহ তা‘আলা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মাধ্যমে তাদের উপর অনুগ্রহ করে এ যুদ্ধের পরিসমাপ্তি ঘটান। সেদিকে ইঙ্গিত দিয়েই আল্লাহ বলেছেন,

﴿وَٱذۡكُرُواْ نِعۡمَتَ ٱللَّهِ عَلَيۡكُمۡ إِذۡ كُنتُمۡ أَعۡدَآءٗ فَأَلَّفَ بَيۡنَ قُلُوبِكُمۡ فَأَصۡبَحۡتُم بِنِعۡمَتِهِۦٓ إِخۡوَٰنٗا وَكُنتُمۡ عَلَىٰ شَفَا حُفۡرَةٖ مِّنَ ٱلنَّارِ فَأَنقَذَكُم مِّنۡهَاۗ ١٠٣ ﴾ [ال عمران: ١٠٣]

“আর তোমরা তোমাদের উপর আল্লাহর নিয়ামতকে স্মরণ কর, যখন তোমরা পরস্পরে শত্রু ছিলে। তারপর আল্লাহ তোমাদের অন্তরে ভালবাসার সঞ্চার করেছেন। অতঃপর তাঁর অনুগ্রহে তোমরা ভাই-ভাই হয়ে গেল। আর তোমরা ছিলে আগুনের গর্তের কিনারায়, অতঃপর তিনি তোমাদেরকে তা থেকে রক্ষা করেছেন”। [আলে-ইমরান: ১০৩]

[20] বুখারী, হাদীস নং ৩৭৭৭।

[21] মুসলিম, হাদীস নং ১৬২।

[22] বুখারী, হাদীস নং ৬৪২৭।

[23] বুখারী, হাদীস নং ২।

[24] বুখারী, হাদীস নং ৩।

[25] বুখারী, হাদীস নং ৫, মুসলিম, হাদীস নং ৪৪৮।

[26] বুখারী, হাদীস নং ৬, মুসলিম, হাদীস নং ২৩০৮।

[27] মুসলিম, হাদীস নং ২৩৩৪।

[28] মুসলিম, হাদীস নং ২৩৩৫।

[29] বুখারী, হাদীস নং ৩৬৩৪, মুসলিম, হাদীস নং ২৪৫১।

[30] বুখারী, হাদীস নং ৪৯৮৩।

[31] বুখারী, হাদীস নং ৪৩২৯, মুসলিম, হাদীস নং ১১৮০।

[32] বুখারী, হাদীস নং ৮১৩, মুসলিম, হাদীস নং ১১৬৭।

[33] মুসলিম, হাদীস নং ১১৬৮।

[34] বুখারী, হাদীস নং ৩৬২২, মুসলিম, হাদীস নং ২২৭২।

[35] বুখারী, হাদীস নং ৩৬২২।

[36] বুখারী, হাদীস নং ৭০৩৬।

[37] বুখারী, হাদীস নং ৪৩৭৪, মুসলিম, হাদীস নং ২২৭৪।

[38] বুখারী, হাদীস নং ৭০৩৮।

[39] মুসলিম, হাদীস নং ২২৭০।

[40] মুসলিম, হাদীস নং ২২৭১।

[41] বুখারী, হাদীস নং ৭০১৩।

[42] বুখারী, হাদীস নং ২৯৭৭, মুসলিম, হাদীস নং ৫২৩।

[43] বুখারী, হাদীস নং ২৭৮৮, মুসলিম, হাদীস নং ১৯১২।

[44] বুখারী, হাদীস নং ৩৫৪৯।

[45] বুখারী, হাদীস নং ৩৫৫১।

[46] বুখারী, হাদীস নং ৩৫৫২।

[47] বুখারী, হাদীস নং ৩৫৫৩।

[48] বুখারী, হাদীস নং ৩৫৬৬।

[49] বুখারী, হাদীস নং ৬, মুসলিম, হাদীস নং ২৩০৮।

[50] বুখারী, হাদীস নং ৩৫৫৫।

[51] বুখারী, হাদীস নং ৩৫৫৬।

[52] বুখারী, হাদীস নং ৩৫৫৯।

[53] বুখারী, হাদীস নং ৩৫৬০।

[54] বুখারী, হাদীস নং ৩৫৬১।

[55] বুখারী, হাদীস নং ৩৫৬১-৩৫৬২।

[56] বুখারী, হাদীস নং ৩৫৬৩।

[57] বুখারী, হাদীস নং ৩৫৬৯।

[58] বুখারী, হাদীস নং ৪১৮।

[59] মুসলিম, হাদীস নং ৪২৫।

[60] বুখারী, হাদীস নং ২৮৬৪, মুসলিম, হাদীস নং ১৭৭৬।

[61] মুসলিম, হাদীস নং ১৭৭৫।

[62] বুখারী, হাদীস নং ৬০৩৩।

[63] বুখারী, হাদীস নং ২৯০৮।

[64] বুখারী, হাদীস নং ২৯১১, মুসলিম, হাদীস নং ১৭৯০।

[65] বুখারী, হাদীস নং ৩৯৫২।

[66] বুখারী, হাদীস নং ৫০৬৩।

[67] বুখারী, হাদীস নং ৩১৪৮।

[68] বুখারী, হাদীস নং ৩১৪৯। এ হাদীসটি ইমাম বুখারী রহ. বাব আদদিহক ওয়াতাবাসসুম অধ্যয়ে উল্লেখ করেছেন, হাদীস নং ৬০৮৮। মুসলিম, হাদীস নং ১০৫৭।

[69] বুখারী, হাদীস নং ৩১৫০, মুসলিম, হাদীস নং ১০৬২।

[70] মুসলিম, হাদীস নং ১০৫৬।

[71] বুখারী, হাদীস নং ১১৩০, মুসলিম, হাদীস নং ২৮১৯।

[72] বুখারী, হাদীস নং ৪০৪২, মুসলিম, হাদীস নং ২২৯৬।

[73] মুসলিম, হাদীস নং ৭৪৬।

[74] মুসনাদে আহমদ, হাদীস নং ১৪৬৫৩। আর হাদীসটি বাইহাকী তার দালায়েলুন নাবুওয়াত গ্রন্থে বর্ণনা করেন, (২/৪৩২)।

[75] বুখারী, হাদীস নং ৩।

[76] বুখারী, হাদীস নং ৭, মুসলিম, হাদীস নং ১৭৭৩।

[77] বুখারী, হাদীস নং ৪৮৩৮।

[78] বুখারী, হাদীস নং ৩৮৬৬।

[79] তিরমিযি, হাদীস নং ৩৬২০।

[80] সিরাতে ইবন হিশাম, ১/২১১, হাদীসের সনদটি হাসান।

[81] বুখারী, হাদীস নং ৪৩৫৯।

[82] ফাতহুল বারী: ৮/৭৬।

[83] মুসনাদে আহমদ, হাদীস নং ১৫৮৪১, হাদীসটি হাসান।

[84] সহীহ ইবন হিব্বান, হাদীস নং ৬৫৮০, হাদীসটি হাসান।

[85] মুসান্নাফ ইবন আবী শাইবাহ, হাদীস নং ৩৬৬৪০। হাদীসটি সহীহ এবং এর রিজাল শাইখাইনের রিজাল।

[86] বুখারী, হাদীস নং ৪৮১১, মুসলিম, হাদীস নং ২৭৮৬।

[87] বুখারী, হাদীস নং ৬৫২০, মুসলিম, হাদীস নং ২৭৯২।

[88] মুসলিম, হাদীস নং ৩০৩০।

[89] মুসলিম, হাদীস নং ৩০৩০।

[90] মুসলিম, হাদীস নং ৩০৩০। হাদীসটি বুখারীতে সংক্ষেপে এসেছে, হাদীস নং ৪৭১৫।

[91] মুসলিম, হাদীস নং ২২৩৬।

[92] মুসলিম, হাদীস নং ২২৩৬।

[93] মুসলিম, হাদীস নং ২২৩৬।

[94] বুখারী, হাদীস নং ৩৮৫৯।

[95] মুসলিম, হাদীস নং ২২৭৭।

[96] ইবন মাজাহ, হাদীস নং ৪০২৮। মাজমা‘উয যাওয়াদেদে ইমাম হাইসামী রহ. বলেছেন, হাদীসের সনদটি সহীহ।

[97] সুনানে দারামী, হাদীস নং ১৬, মুহাক্বকিক হুসাইন সুলাইম বলেছেন, হাদীসটি সহীহ।

[98] মুসনাদ আহমদ, হাদীস নং ১৯৫৪, হাদীসটি সহীহ।

[99] বুখারী, হাদীস নং ২০৯৯, মুসলিম, হাদীস নং ৭১৫।

[100] মুসনাদে আহমদ, হাদীস নং ১৭৪৫। হাদীসটি সহীহ।

[101] বুখারী, হাদীস নং ২১২৭।

[102] বুখারী, হাদীস নং ২৩৯৬।

[103] বুখারী, হাদীস নং ২৬১৮, মুসলিম, হাদীস নং ২০৫৬।

[104] বুখারী, হাদীস নং ৩৫৭৮, মুসলিম, হাদীস নং ২০৪০।

[105] বুখারী, হাদীস নং ৪১০১।

[106] বুখারী, হাদীস নং ৪১০২, মুসলিম, হাদীস নং ২০৩৯।

[107] বুখারী, হাদীস নং ৫১৬৩।

[108] বুখারী, হাদীস নং ৬৪৫২।

[109] মুসলিম, হাদীস নং ২৭।

[110] মুসলিম, হাদীস নং ২৭।

[111] মুসনাদে আহমদ, হাদীস নং ১৫৪৪৯। হাদীসটি সহীহ, এর সনদের বর্ণনাকারীরা সিকাহ।

[112] তিরমিযী, হাদীস নং ৩৬২৫, ইমাম তিরমিযী বলেন, হাদীসটি হাসান সহীহ। আবূ ই‘য়ালার নাম হলো ইয়াযীদ ইবন আব্দুল্লাহ ইবন শিখখীর।

[113] বুখারী, হাদীস নং ৩৫৭৪।

[114] বুখারী, হাদীস নং ৩৫৭২।

[115] বুখারী, হাদীস নং ১৬৯, মুসলিম, হাদীস নং ২২৭৯।

[116] বুখারী, হাদীস নং ১৯৫।

[117] বুখারী, হাদীস নং ২০০।

[118] বুখারী, হাদীস নং ৩৪৪।

[119] বুখারী, হাদীস নং ২৭৩১।

[120] বুখারী, হাদীস নং ৩৫৭৬।

[121] বুখারী, হাদীস নং ৫৬৩৯।

[122] বুখারী, হাদীস নং ৩৫৭৭।

[123] বুখারী, হাদীস নং ৩৫৭৯।

[124] মুসলিম, হাদীস নং ১৮০৭।

[125] মুসলিম, হাদীস নং ৭০৬।

[126] বুখারী, হাদীস নং ৪০৩৯।

[127] বুখারী, হাদীস নং ৪২০৬।

[128] মুসলিম, হাদীস নং ২৪০৪।

[129] বুখারী, হাদীস নং ৩৫৪০।

[130] মুসনাদে আহমদ, হাদীস নং ২০৩১৭। হাদীসটি সহীহ, এর সনদের রিজালেরা সবাই সিকাহ।

[131] বুখারী, হাদীস নং ১২৬৯।

[132] বুখারী, হাদীস নং ১২৭০।

[133] বুখারী, হাদীস নং ১২৪৫।

[134] বুখারী, হাদীস নং ১৩২৭-১৩২৮।

[135] বুখারী, হাদীস নং ৩৮৭৭।

[136] বুখারী, হাদীস নং ৩৮৭৮।

[137] বুখারী, হাদীস নং ৩৮৭৯।

[138] বুখারী, হাদীস নং ১২৪৬।

[139] মুসনাদে আহমদ, হাদীস নং ১৭৫০। হাদীসটি সহীহ্ম এর সনদের রিজাল সবাই সিকাহ।

[140] বুখারী, হাদীস নং ৩০০৭, মুসলিম, হাদীস নং ২৪৯৪।

[141] মুসলিম, হাদীস নং ১৭৮০।

[142] মুসলিম, হাদীস নং ১৭৮০।

[143] মুসলিম, হাদীস নং ১৭৮০।

[144] মুসলিম, হাদীস নং ১৩৯২।

[145] মুসলিম, হাদীস নং ২৯৪২।

[146] মুসলিম, হাদীস নং ১৭৭৯।

[147] আবু দাউদ, হাদীস নং ৩৩৩২। আলবানী রহ. বলেছেন, হাদীসটি সহীহ।

[148] আবু দাউদ, হাদীস নং ২৫০১। আলবানী রহ. বলেছেন, হাদীসটি সহীহ।

[149] মুসনাদে আহমদ, হাদীস নং ১৯১৮০। হাদীসটি সহীহ।

[150] বুখারী, হাদীস নং ১২৫।

[151] মুসনাদে আহমদ, হাদীস নং ২৩০৯। হাদীসের সনদটি সহীহ।

[152] বুখারী, হাদীস নং ৭২৯৪, মুসলিম, হাদীস নং ২৩৫৯।

[153] মুসলিম, হাদীস নং ৩১৫।

[154] বুখারী, হাদীস নং ৩১৬৯।

[155] বুখারী, হাদীস নং ৩৩২৯।

[156] মুসলিম, হাদীস নং ১৭০০।

[157] মুসলিম, হাদীস নং ১২।

[158] বুখারী, হাদীস নং ৪৮৪৬।

[159] বুখারী, হাদীস নং ৩৬৭৪, মুসলিম, হাদীস নং ২৪০৩।

[160] বুখারী, হাদীস নং ৩৬৭৯, মুসলিম, হাদীস নং ২৩৯৫।

[161] মুসলিম, হাদীস নং ২৪৫৬।

[162] মুসলিম, হাদীস নং ২৪৫৭।

[163] বুখারী, হাদীস নং ৩৬৭৫।

[164] বুখারী, হাদীস নং ২৭৭৮।

[165] বুখারী, হাদীস নং ৩৮১২, মুসলিম, হাদীস নং ২৪৮৩।

[166] বুখারী, হাদীস নং ৩৮১৩।

[167] বুখারী, হাদীস নং ৫৭০৫, মুসলিম, হাদীস নং ২২০।

[168] আবু দাউদ, হাদীস নং ৪৬৪৯। হাদীসটি সহীহ।

[169] বুখারী, হাদীস নং ৩৮১৬।

[170] বুখারী, হাদীস নং ৩৮১৭।

[171] বুখারী, হাদীস নং ৩৮২০।

[172] বুখারী, হাদীস নং ৩৫৪১, মুসলিম, হাদীস নং ২৩৪৫।

[173] বুখারী, হাদীস নং ৩০৭১।

[174] মুসলিম, হাদীস নং ২৩৪৪।

[175] মুসলিম, হাদীস নং ২৩৪৬।

[176] মুসনাদে আহমদ, হাদীস নং ২০৭৩২। হাদীসটি সহীহ।

[177] বুখারী, হাদীস নং ৩৬৪, মুসলিম, হাদীস নং ৩৪০।

[178] দালায়েলুন নুবুওয়াহ লিলবাইহাক্বী, ২/৩৪। হাদীসটি হাসান।

[179] বুখারী, হাদীস নং ৩৬৩৬।

[180] বুখারী, হাদীস নং ৩৬৩৭।

[181] বুখারী, হাদীস নং ৩৬৩৮।

[182] বুখারী, হাদীস নং ৫৭৬৩, মুসলিম, হাদীস নং ২১৮৯।

[183] বুখারী, হাদীস নং ৫৭৭৭।

[184] বুখারী, হাদীস নং ২৯১০, মুসলিম, হাদীস নং ৮৪৩।

[185] মুসলিম, হাদীস নং ২৭৯৭।

[186] বুখারী, হাদীস নং ৩৫৩৩।

[187] বুখারী, হাদীস নং ৪০৫৪, মুসলিম, হাদীস নং ২৩০৬।

[188] বুখারী, হাদীস নং ২০৯৫।

[189] বুখারী, হাদীস নং ৩৫৮৫।

[190] বুখারী, হাদীস নং ৩৫৮৩।

[191] মুসলিম, হাদীস নং ১৭৭৫।

[192] মুসলিম, হাদীস নং ১৭৭৭।

[193] বুখারী, হাদীস নং ৩৬১৭।

[194] বুখারী, হাদীস নং ৪০৯১, মুসলিম, হাদীস নং ৬৭৭।

[195] মুসনাদে বাজ্জার, হাদীস নং ৭০০৭, ইমাম বাজ্জার রহ. বলেন, দাইলাম সালিহুল হাদীস। ইমাম হাইসামী রহ. বলেন, (মাজমাউজ্জাওউয়ায়েদ: ৭/৪২) দাইলাম ইবন গাযওয়ান রহ. ব্যতীত হাদীসের সনদের সবাই সহীহ, তিনি সিকাহ।

[196] বুখারী, হাদীস নং ৩০৫৫, মুসলিম, হাদীস নং ২৯৩০।

[197] বুখারী, হাদীস নং ৩৬০৯, মুসলিম, হাদীস নং ১৫৭।

[198] বুখারী, হাদীস নং ৩৬২০-৩৬২১।

[199] আবু দাউদ, হাদীস নং ৪৩৩৩। হাদীসটি সহিহ লিগাইরিহি।

[200] আবু দাউদ, হাদীস নং ৪৩৩৪। হাদীসটি সহিহ লিগাইরিহি।

[201] বুখারী, হাদীস নং ৭৫।

[202] বুখারী, হাদীস নং ১৪৩, মুসলিম, হাদীস নং ২৪৭৭।

[203] বুখারী, হাদীস নং ২৪০।

[204] বুখারী, হাদীস নং ১০০৭। মুসলিম, হাদীস নং ২৭৯৮।

[205] বুখারী, হাদীস নং ১০০৬।

[206] বুখারী, হাদীস নং ১০১৩।

[207] বুখারী, হাদীস নং ১০২৩।

[208] বুখারী, হাদীস নং ১৮৮৯।

[209] বুখারী, হাদীস নং ১৯৮২।

[210] বুখারী, হাদীস নং ২৪৮৪।

[211] মুসলিম, হাদীস নং ২৭।

[212] বুখারী, হাদীস নং ২৫০১।

[213] বুখারী, হাদীস নং ২৯৩৭, মুসলিম, হাদীস নং ২৫২৪।

[214] বুখারী, হাদীস নং ২৯৪২, মুসলিম, হাদীস নং ২৪০৬।

[215] বুখারী, হাদীস নং ২৯৬৭।

[216] বুখারী, হাদীস নং ৩৬১৫, মুসলিম, হাদীস নং ২০০৯।

[217] বুখারী, হাদীস নং ৩৯১১।

[218] মুসনাদে আহমদ, হাদীস নং ২০৭৩৩।

[219] বুখারী, হাদীস নং ৬১৪৮।

[220] বুখারী, হাদীস নং ৪৩৫৭।

[221] মুসলিম, হাদীস নং ২১৪৪।

[222] বুখারী, হাদীস নং ৩০৭১।

[223] বুখারী, হাদীস নং ১০০৬।

[224] মুসলিম, হাদীস নং ২৪৯১।

[225] বুখারী, হাদীস নং ৬৪।

[226] তিরমিযী, হাদীস নং ৩৬৮১। ইমাম তিরমিযী রহ. বলেন, হাদীসটি হাসান সহীহ গরীব।

[227] মুসলিম, হাদীস নং ২০২১।

[228] বুখারী, হাদীস নং ৫৬৫৯।

[229] বুখারী, হাদীস নং ৫১৫৩।

[230] বুখারী, হাদীস নং ৫৭৬৩, মুসলিম, হাদীস নং ২১৮৯।

[231] বুখারী, হাদীস নং ৬৩৯২।

[232] ফিলিস্তীনে অবস্থিত বাইতুল মাকদিস, যা মুসলমানদের প্রথম কিবলা ছিল।

[233] জিবরীলকে।

[234] মিরাজের সময়।

[235] সিদরাতুল মুনতাহা হল সপ্তম আকাশে আরশের ডান দিকে একটি কুল জাতীয় বৃক্ষ, সকল সৃষ্টির জ্ঞানের সীমার শেষ প্রান্ত। তারপর কি আছে, একমাত্র আল্লাহই জানেন।

[236] ফেরেশতা, শহীদদের রূহ ও মুত্তাকীদের অবস্থানস্থল।

[237] বুখারী, হাদীস নং ৩৪৯।

[238] বুখারী, হাদীস নং ৩২০৭।

[239] বুখারী, হাদীস নং ৩৮৮৬, মুসলিম: ১৭০।

[240] মুসলিম, হাদীস নং ১৭২।

[241] বুখারী, হাদীস নং ২০৯৩।

[242] বুখারী, হাদীস নং ৪১১৭।

[243] বুখারী, হাদীস নং ৪১১৮।

[244] মুসলিম, হাদীস নং ৮৬৮।

[245] মুসলিম, হাদীস নং ২০৫৫।

[246] মুসলিম, হাদীস নং ২৩২৪।

[247] মুসলিম, হাদীস নং ২৩২৫।

[248] মুসলিম, হাদীস নং ২৩৩১।

[249] মুসলিম, হাদীস নং ২৩৩১।

[250] মুসলিম, হাদীস নং ২৩৩২।

[251] মুসলিম, হাদীস নং ২৪৯৭।

[252] আবু দাউদ, হাদীস নং ১৯৫৭।

[253] বুখারী, হাদীস নং ৬৮৪১।

[254] বুখারী, হাদীস নং ২৮৪।

[255] বুখারী, হাদীস নং ৪৪১৮, মুসলিম, হাদীস নং ২৭৬৯।

[256] বুখারী, হাদীস নং ৪১৯।

[257] বুখারী, হাদীস নং ৪১৮।

[258] বুখারী, হাদীস নং ৩০৪৫।

[259] বুখারী, হাদীস নং ৩১২৯।

[260] বুখারী, হাদীস নং ৩৬১৪।

[261] বুখারী, হাদীস নং ১৮৯০।

[262] বুখারী, হাদীস নং ৩০৪৩।

[263] বুখারী, হাদীস নং ৪১২২।

[264] বুখারী, হাদীস নং ৪৫০০।

[265] বুখারী, হাদীস নং ১০১০।

[266] বুখারী, হাদীস নং ৬০২।

[267] আবু দাউদ, হাদীস নং ৪৯৯।

[268] বুখারী, হাদীস নং ৩৬৬৫।

[269] বুখারী, হাদীস নং ১২৪১।

[270] মুসলিম, হাদীস নং ১৭৮৮।

[271] বুখারী, হাদীস নং ৬৯৮৭।

[272] বুখারী, হাদীস নং ৬৯৮৮।

[273] বুখারী, হাদীস নং ৬৯৮৯।

[274] বুখারী, হাদীস নং ৬৯৮৩।

[275] বুখারী, হাদীস নং ৬৯৯০।

[276] সুনান ইবন মাজাহ, হাদীস নং ২১১৮। হাদীসটি সহীহ।

[277] সুনানে নাসায়ী, হাদীস নং ১৩৫০। হাদীসটি সহীহ।

[278] বুখারী, হাদীস নং ৭০২৮-৭০২৯।

[279] বুখারী, হাদীস নং ৭০৩০-৭০৩১।

[280] বুখারী, হাদীস নং ৩৩২৬।

[281] বুখারী, হাদীস নং ৩৩৩০।

[282] বুখারী, হাদীস নং ৪৭১২।

[283] মুসলিম, হাদীস নং ১৬৭৭।

[284] মুসলিম, হাদীস নং ২৬১১।

[285] التنور এর আরেকটি অর্থ হল ভূপৃষ্ঠ। প্লাবন শুরু হওয়ার আগে ভূপৃষ্ঠের সবখান দিয়ে পানি উৎসারিত হতে লাগল।

[286] অর্থাৎ প্রত্যেক শ্রেণী থেকে একটি নর ও একটি মাদী।

[287] বুখারী, হাদীস নং ৩৩৩৭।

[288] বুখারী, হাদীস নং ৩৩৩৮।

[289] বুখারী, হাদীস নং ৩৩৪৩।

[290] মুসলিম, হাদীস নং ৮৯৯।

[291] মুসলিম, হাদীস নং ৮৯৯।

[292] বুখারী, হাদীস নং ৩৩৭৭।

[293] বুখারী, হাদীস নং ৪৯৪২।

[294] বুখারী, হাদীস নং ৩৩৭৯।

[295] বুখারী, হাদীস নং ৩৩৮০।

[296] বুখারী, হাদীস নং ৩৩৮১।

[297]. এ বাক্যের অর্থ ‘তারা মনে মনে চিন্তা করল তারা বিবেক বুদ্ধি খাটাল’ ও হতে পারে।

[298] ইসমাঈলকে

[299] তা ছিল একটি জান্নাতী দুম্বা।

[300] বুখারী, হাদীস নং ৩৪৩৭।

[301] বুখারী, হাদীস নং ৩৩৪৯।

[302] বুখারী, হাদীস নং ২২১৭।

[303] বুখারী, হাদীস নং ৫০৮৪।

[304] বুখারী, হাদীস নং ৩৩৫১।

[305] বুখারী, হাদীস নং ৩৩৫২।

[306] বুখারী, হাদীস নং ৩৩৫০।

[307] মুসলিম, হাদীস নং ১৩৭৪।

[308] মুসলিম, ১৩৬২।

[309] মুসলিম, ১৩৭৪।

[310] ‘আমার মেয়ে’ দ্বারা উদ্দেশ্য কওমের মেয়েরা। কারণ, যে কোন কওমের নবী তাদের পিতাতুল্য।

[311] মক্কা থেকে সিরিয়া অভিমুখে যাত্রাপথের পাশেই তা বিদ্যমান।

[312] ‘সুদৃঢ় স্তম্ভ’ বলতে শক্তিশালী সৈন্যসামন্ত কিংবা কওম অথবা গোত্র বুঝানো হয়েছে।

[313] বুখারী, হাদীস নং ৩৩৭৫।

[314] বুখারী, হাদীস নং ৩৩৬৪।

[315] বুখারী, হাদীস নং ৩৩৬৪।

[316] বুখারী, হাদীস নং ৩৩৬২।

[317] বুখারী, হাদীস নং ৩৩৭৩।

[318] برهان অর্থ উজ্জ্বল প্রমাণ এখানে নিদর্শন অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। সে নিদর্শনটি কী ছিল এ সম্পর্কে বিভিন্ন মতামত পাওয়া যায় । তাফসীরে ইবনে কাছীরে এর বিশদ বর্ণনা এসেছে। কেউ কেউ বলেন, তিনি নিজ পিতা ইয়াকূবের মুখচ্ছবি এবং তাঁর পক্ষ থেকে সতর্ক ইঙ্গিত পেয়েছিলেন। আবার কেউ কেউ বলেছেন, আযীয মিসরের মুখচ্ছবি দেখেছিলেন। আর কারো কারো মতে সেই বুরহান হচ্ছে আল্লাহ প্রদত্ত বিবেকের নির্দেশ।

[319] বুখারী, হাদীস নং ৩৩৫৩।

[320] বুখারী, হাদীস নং ৩৩৯১।

[321] তারা তূর পাহাড়ের ডানপার্শ্বে উপস্থিত হলে আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে তাওরাত কিতাব প্রদান করবেন বলে ওয়াদা করেছিলেন।

[322] ‘মান্না’ এক ধরনের সুস্বাদু খাবার, যা শিশিরের মত গাছের পাতায় ও ঘাসের উপর জমে থাকত। আল্লাহ বিশেষভাবে তা বনী ইসরাঈলের জন্য প্রেরণ করেছিলেন।

[323] ‘সালওয়া’ পাখীর গোশ্ত জাতীয় এক প্রকার খাদ্য, যা আল্লাহ বনী ইসরাঈলের জন্য বিশেষভাবে প্রেরণ করেছিলেন।

[324] বুখারী, হাদীস নং ১২২, মুসলিম, হাদীস নং ২৩৮০।

[325] বুখারী, হাদীস নং ৭৪।

[326] বুখারী, হাদীস নং ২৭৮।

[327] বুখারী, হাদীস নং ২৭৯।

[328] বুখারী, হাদীস নং ৩৪০৩।

[329] বুখারী, হাদীস নং ৩৩৯৭।

[330] বুখারী, হাদীস নং ৩৩৯৮।

[331] বুখারী, হাদীস নং ৩৪০৮।

[332] বুখারী, হাদীস নং ৩৪০৯।

[333] বুখারী, হাদীস নং ৬৮৪১।

[334] মুসলিম, হাদীস নং ১৬৬।

[335] মুসলিম, হাদীস নং ১৬৬।

[336] মুসলিম, হাদীস নং ১৮৯।

[337] বুখারী, হাদীস নং ৩৪০৭। মুসলিম, হাদীস নং ২৩৭২।

[338] বুখারী, হাদীস নং ৩৩৯৩।

[339] বুখারী, হাদীস নং ৩৪১৭।

[340] বুখারী, হাদীস নং ৩৪১৮।

[341] বুখারী, হাদীস নং ৩৪১৯।

[342] আবু হুরাইরা সূত্রে বুখারী শরীফের বর্ণনা মতে হযরত সুলাইমান একদা তাঁর সকল স্ত্রীর সাথে সহবাস করার দীপ্ত কামনা ব্যক্ত করে বলেন যে, এর ফলে তাদের গর্ভে যেসব সন্তান আসবে তারা সব আল্লাহর পথে লড়াকু মুজাহিদ হবে। তবে তিনি ইনশাআল্লাহ বলতে ভুলে যান। ফলে একমাত্র এক স্ত্রীর গর্ভেই একটি সন্তান হয়, যে ছিল বিকলাঙ্গ নিষ্প্রাণ প্রায়। ভূমিষ্ট হবার পর এ সন্তানকে সুলাইমানের দরবারে তার সিংহাসনে এনে রাখা হলে তিনি স্বীয় ভুল বুঝতে পেরে অনুতপ্ত হন এবং তওবা করেন।

[343] নাসায়ী, হাদীস নং ৬৯৩।

[344] নাসায়ী, হাদীস নং ১২১৫। হাদীসটি মুসলিমের শর্তে সহীহ।

[345] বুখারী, হাদীস নং ৩৪২৩।

[346] বুখারী, হাদীস নং ৩৪২৪।

[347] বুখারী, হাদীস নং ৩৪২৬-৩৪২৭।

[348] বুখারী, হাদীস নং ৩৩৯৫-৩৩৯৬, মুসলিম, হাদীস নং ১৬৫।

[349] বুখারী, হাদীস নং ৩৪৩০।

[350] তিরমিযী, হাদীস নং ২৮৬৩। হাদীসটি হাসান সহীহ গরীব।

[351] মুসলিম, হাদীস নং ২৩৭৯।

[352] ‘পবিত্র আত্মা’ বলে জিবরীল (আঃ) কে বুঝানো হয়েছে।

[353] বুখারী, হাদীস নং ৩৪৩১।

[354] বুখারী, হাদীস নং ৩৪৩২।

[355] বুখারী, হাদীস নং ৩৪৩৩।

[356] বুখারী, হাদীস নং ৩৪৩৫।

[357] বুখারী, হাদীস নং ৩৪৩৬।

[358] বুখারী, হাদীস নং ৩৪৩৮।

[359] বুখারী, হাদীস নং ৩৪৩৯-৩৪৪০।

[360] বুখারী, হাদীস নং ৩৪৪১।

[361] বুখারী, হাদীস নং ৩৪৪২।

[362] বুখারী, হাদীস নং ৩৪৪৪।

[363] বুখারী, হাদীস নং ৩৪৪৬।

[364] বুখারী, হাদীস নং ৩৪৪৮।

[365] বুখারী, হাদীস নং ৩০১৯।

[366] বুখারী, হাদীস নং ৩৩১৯।

[367] বুখারী, হাদীস নং ৩১২৪।

[368] বুখারী, হাদীস নং ৬৬০৪।

[369] মুসলিম, হাদীস নং ২৮৯২।

[370] মুসলিম, হাদীস নং ২৩৮৭।

[371] বুখারী, হাদীস নং ৩৬৫৯।

[372] বুখারী, হাদীস নং ৬৮২।

[373] বুখারী, হাদীস নং ৬৮০।

[374] বুখারী, হাদীস নং ৬৮১।

[375] বুখারী, হাদীস নং ৩৬৩৩।

[376] বুখারী, হাদীস নং ৩৪৪৭, মুসলিম, হাদীস নং ২৮৬০।

[377] বুখারী, হাদীস নং ৭০৪৮।

[378] বুখারী, হাদীস নং ৭০৪৯।

[379] বুখারী, হাদীস নং ৭০৫০।

[380] আবু দাউদ, হাদীস নং ৩৬৫৯। হাদীসটি সহীহ, এর রিজাল রিজালুস সহীহ, তবে আব্দুল্লাহ ইবন আব্দুল্লাহ আবু জাফর আর-রাযী হলেন সিকাহ। ইমাম আহমদ তাকে সিকাহ বলেছেন।

[381] বুখারী, হাদীস নং ১০৩৬।

[382] ইবন মাজাহ, হাদীস নং ৪০১৫। হাদীসটি হাসান।

[383] বুখারী, হাদীস নং ৮০।

[384] বুখারী, হাদীস নং ৮১।

[385] বুখারী, হাদীস নং ৩৬০৮।

[386] বুখারী, হাদীস নং ৩৬০৯।

[387] মুসলিম, হাদীস নং ২৩৬৪।

[388] মুসলিম, হাদীস নং ২৫৪২।

[389] মুসলিম, হাদীস নং ২৫৪২।

[390] মুসলিম, হাদীস নং ২৫৪২।

[391] মুসলিম, হাদীস নং ২৬৬৫।

[392] বুখারী, হাদীস নং ২৬৫১, মুসলিম, হাদীস নং ২৫৩৫।

[393] বুখারী, হাদীস নং ২৬৫২।

[394] বুখারী, হাদীস নং ১৮৭৫।

[395] বুখারী, হাদীস নং ৫২৫।

[396] তিরমিযী, হাদীস নং ৩৭০৮। হাদীসটি হাসান।

[397] বুখারী, হাদীস নং ৩৬২৩-৩৬২৪।

[398] বুখারী, হাদীস নং ৩৬২৫-৩৬২৬।

[399] বুখারী, হাদীস নং ৩৬৪৯।

[400] মুসলিম, হাদীস নং ২৪৫২।

[401] মুসলিম, হাদীস নং ১০৬৪।

[402] মুসলিম, হাদীস নং ১০৬৪।

[403] মুসলিম, হাদীস নং ১০৬৪।

[404] মুসলিম, হাদীস নং ১০৬৪।

[405] মুসলিম, হাদীস নং ১০৬৪।

[406] বুখারী, হাদীস নং ২৭০৪।

[407] বুখারী, হাদীস নং ৪৪৭।

[408] মুসলিম, হাদীস নং ২৯১৬।

[409] বুখারী, হাদীস নং ২৭৩০।

[410] বুখ, হাদীস নং ২৮৯৮।

[411] বুখারী, হাদীস নং ২৭৮৮।

[412] মুসলিম, হাদীস নং ২৫৪৩।

[413] মুসলিম, হাদীস নং ২৫৪৩।

[414] বুখারী, হাদীস নং ৪৩৩০।

[415] বুখারী, হাদীস নং ৪৩৩১।

[416] বুখারী, হাদীস নং ৩৬২৮।

[417] মুসলিম, হাদীস নং ২৫৪৫।

[418] বুখারী, হাদীস নং ৩৭০২।

[419] বুখারী, হাদীস নং ৩৭০১।

[420] বুখারী, হাদীস নং ৩১৫৯।

[421] বুখারী, হাদীস নং ৩৫৯৫।

[422] বুখারী, হাদীস নং ৩৬১৮।

[423] বুখারী, হাদীস নং ৩৬১৯।

[424] বুখারী, হাদীস নং ৩৫৯৭।

[425] বুখারী, হাদীস নং ৩৬৪০।

[426] বুখারী, হাদীস নং ৩৬৪১।

[427] মুসলিম, হাদীস নং ২৮৮৯।

[428] মুসলিম, হাদীস নং ২৮৮৯।

[429] বুখারী, হাদীস নং ৩২৭৬।

[430] বুখারী, হাদীস নং ৩৬০১-৩৬০২।

[431] বুখারী, হাদীস নং ২৩২১।

[432] ইবন মাজাহ, হাদীস নং ২২৭৯।

[433] বুখারী, হাদীস নং ৭০৫২।

[434] নাসায়ী, হাদীস নং ৪২০৭।

[435] নাসায়ী, হাদীস নং ৪২০৮।

[436] আবু দাউদ, হাদীস নং ৪৩২। হাদীসটি সহীহ।

[437] বুখারী, হাদীস নং ৩৫০০।

[438] বুখারী, হাদীস নং ১০০।

[439] বুখারী, হাদীস নং ৫৯।

[440] বুখারী, হাদীস নং ৫৭৩১।

[441] আবু দাউদ, হাদীস নং ৪৫৯৫।

[442] আবু দাউদ, হাদীস নং ৪৫৯৭।

[443] আবু দাউদ, হাদীস নং ৪৬০৭।

[444] বুখারী, হাদীস নং ৮০।

[445] বুখারী, হাদীস নং ৮১।

[446] বুখারী, হাদীস নং ৮৫।

[447] বুখারী, হাদীস নং ২৯২৭।

[448] বুখারী, হাদীস নং ২৯২৮।

[449] বুখারী, হাদীস নং ২৯২৯।

[450] বুখারী, হাদীস নং ৬৪২৭।

[451] বুখারী, হাদীস নং ৬৪২৬।

[452] বুখারী, হাদীস নং ৬৪২৫।

[453] আবু দাউদ, হাদীস নং ৮৩০। হাদীসটি সহীহ।

[454] আবু দাউদ, হাদীস নং ৮৩১। হাদীসটি হাসান সহীহ।

[455] মুসলিম, হাদীস নং ২৮৯০।

[456] বুখারী, হাদীস নং ৭৩১৯।

[457] বুখারী, হাদীস নং ৭৩২০।

[458] বুখারী, হাদীস নং ২০৫৯।

[459] আবু দাউদ, হাদীস নং ৪৬০৪। হাদীসটি সহীহ।

[460] আবু দাউদ, হাদীস নং ৪৬০৫। হাদীসটি সহীহ।

[461] বুখারী, হাদীস নং ৫০, মুসলিম, হাদীস নং ৯।

[462] মুসলিম, হাদীস নং ৮।

[463] বুখারী, হাদীস নং ৪৩৫১। মুসলিম, হাদীস নং ১০৬৪।

[464] বুখারী, হাদীস নং ৬৯৩৩।

[465] বুখারী, হাদীস নং ২৯১৫।

[466] বুখারী, হাদীস নং ৩১৭৬।

[467] বুখারী, হাদীস নং ৭২২২।

[468] বুখারী, হাদীস নং ১১৫।

[469] বুখারী, হাদীস নং ৭০৬৮।

[470] বুখারী, হাদীস নং ১১৬।

[471] বুখারী, হাদীস নং ১১৯।

[472] বুখারী, হাদীস নং ২০৪৭।

[473] বুখারী, হাদীস নং ৮১৩।

[474] বুখারী, হাদীস নং ৬৪৩৪।

[475] বুখারী, হাদীস নং ৫৬৬৬।

[476] বুখারী, হাদীস নং ৫৫৯০।

[477] বুখারী, হাদীস নং ৪১০৯।

[478] বুখারী, হাদীস নং ৪১১০।

[479] বুখারী, হাদীস নং ৩৯৩৬।

[480] বুখারী, হাদীস নং ৩৯০৪।

[481] বুখারী, হাদীস নং ৭০১১।

[482] বুখারী, হাদীস নং ৭০১২।

[483] বুখারী, হাদীস নং ৩৬৫৯।

[484] বুখারী, হাদীস নং ৬১০।

[485] বুখারী, হাদীস নং ৩৬৩২।

[486] বুখারী, হাদীস নং ৩৬৩১।

[487] বুখারী, হাদীস নং ৩৬১২।

[488] বুখারী, হাদীস নং ৩৬২২।

[489] বুখারী, হাদীস নং ৩৬২৭।

[490] মুসলিম, হাদীস নং ২৪৯।

[491] মুসলিম, হাদীস নং ১৫৭।

[492] মুসলিম, হাদীস নং ১৭৭৯।

[493] মুসলিম, হাদীস নং ২৮৭৩।

[494] মুসলিম, হাদীস নং ৮৩২।

[495] বুখারী, হাদীস নং ৭১১৮।

[496] আবু দাউদ, হাদীস নং ৪৪৯।

[497] আবু দাউদ, হাদীস নং ৪২৯১। হাদীসটি সহীহ।

[498] আবু দাউদ, হাদীস নং ৪৬৪৭। হাদীসটি হাসান সহীহ।

[499] আবু দাউদ, হাদীস নং ৪৬৪৬। হাদীসটি হাসান সহীহ।

[500] নাসায়ী, হাদীস নং ৪৪৫৬। হাদীসটি সহীহ।

[501] নাসায়ী, হাদীস নং ৫০৭৫। হাদীসটি সহীহ।

[502] তিরমিযী, হাদীস নং ৩১৯৩। হাদীসটি হাসান গরীব।

[503] . ৩৯৫ খৃস্টাব্দে রোমক সাম্রাজ্য থেকে পৃথক হয়ে বায়যানটাইন নামে যে সাম্রাজ্যটি পরিচিত হয়েছিল, এখানে الرومবলতে তাকে বুঝানো হয়েছে। সিরিয়া ও প্যালেস্টাইন এ সাম্রাজ্যের অধীন ছিল।

[504] . হিজাযের উত্তর পশ্চিম সীমানা সংলগ্ন আযরুয়াত ও বুসরার মধ্যবর্তী স্থান। সম্রাট হিরাক্লিয়াস ও খসরু পারভেজের মধ্যে এখানে যুদ্ধ হয়। যুদ্ধে খসরু পারভেজ বিজয় লাভ করে। ফলে মক্কার পৌত্তলিকরা খুশি হয়ে বলতে শুরু করে, আমরা মুসলিমদেরকে পরাজিত করব। তখন উক্ত আয়াতগুলো নাযিল হয়।

[505] . بضع سنين তিন থেকে দশ বছর। এ আয়াতে ভবিষ্যদ্বাণী করা হয় যে, অনধিক নয় বছরের মধ্যে রোমানরা পারসিকদের উপর বিজয় লাভ করবে। ৬২৩-২৪ খৃ এ ভবিষ্যদ্বাণী সত্যে পরিণত হয়। আর সে বছরই বদর যুদ্ধে মুসলিমরা মুশরিকদেরকে পরাজিত করে।

[506] তিরমিযী, হাদীস নং ৩১৯৪। হাদীসটি হাসান সহীহ গরীব।

[507] মুসলিম, হাদীস নং ২১২৮।

[508] বুখারী, হাদীস নং ৭০৮৬।

[509] মুসলিম, হাদীস নং ১৪৯।

[510] বুখারী, হাদীস নং ২৩৮৭।

[511] বুখারী, হাদীস নং ১৫২৪।

[512] বুখারী, হাদীস নং ১৫২৫।

[513] বুখারী, হাদীস নং ১৮৭৫। 

 

সহীহ হাদীসের আলোকে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নবুওয়তের প্রমাণ

বই সম্পর্কে

লেখক :

مقبل بن هادي الوادعي

প্রকাশক :

www.islamhouse.com

বিভাগ :

Biographies & Scholars