সহীহ হাদীস সম্বলিত অহী ও ঈমান বিশ্বকোষ

এ বইটিতে অহী ও ঈমান সম্পর্কিত সহীহ হাদীসসমূহ সংকলিত হয়েছে। পাঠক এতে অহী ও ঈমান সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত সহীহ হাদীসসমূহ একই কিতাবে সংকলিত পাবেন ইনশাআল্লাহ।

اسم الكتاب: مختصر الجامع الكامل في الحديث الصحيح الشامل عن الوحي والإيمان


الناشر: المكتب التعاوني للدعوة وتوعية الجاليات بالربوة


نبذة مختصرة: موسوعة مترجمة إلى اللغة البنغالية، تتحدث عن الأحاديث الصحيحة في الوحي والإيمان، يجد فيها القارئ جميع الأحاديث الصحيحة المروية عن رسول الله - صلى الله عليه وسلم - في كتاب الوحي والإيمان.


সহীহ হাদীস সম্বলিত অহী ও ঈমান বিশ্বকোষ
مختصر الجامع الكامل في الحديث الصحيح الشامل عن الوحي والإيمان

< بنغالي- Bengal - বাঙালি>


        
দ্বিয়াউর রহমান আব্দুল্লাহ আল-আ‘যামী



অনুবাদক: আব্দুল্লাহ আল-মামুন আল-আযহারী
সম্পাদক: ড. আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া

 

مختصر الجامع الكامل في الحديث الصحيح الشامل عن الوحي والإيمان

        

محمد ضياء الرحمن عبد الله الأعظمي




ترجمة: عبد الله المأمون الأزهري
مراجعة: د/ أبو بكر محمد زكريا

সূচিপত্র

ক্রম    বিষয়    পৃষ্ঠা
1.        অধ্যয়: অহী    
2.        ১- পরিচ্ছেদ: সব আমল নিয়তের ওপর নির্ভরশীল    
3.        ২- পরিচ্ছেদ: রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি অহী নাযিল শুরু    
4.        ৩- পরিচ্ছেদ: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি আল্লাহ যে ধরণের অহী নাযিল করেছেন     
5.        ৪- পরিচ্ছেদ: রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি কীভাবে অহী নাযিল হতো    
6.        ৫- পরিচ্ছেদ: অহী অতি ভারী হওয়া প্রসঙ্গে    
7.        ৬- পরিচ্ছেদ: অহী কিছুদিন বন্ধ থাকা প্রসঙ্গে    
8.        ৭- পরিচ্ছেদ: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অহী নাযিলের সময় মুখস্থ করতে তাড়াহুড়া করতেন    
9.        ৮- পরিচ্ছেদ: জিন্নদের বক্তব্য যা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি অহীরূপে নাযিল হয়    
10.        ৯- পরিচ্ছেদ: রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওপর নাযিলকৃত সব অহীই তিনি পূর্ণরূপে পৌঁছে দিয়েছেন    
11.        ১০- পরিচ্ছেদ: অহী নাযিলের সময় আসমানবাসীর অবস্থার বিবরণ    
12.        ১১- পরিচ্ছেদ: এক আয়াত দু’বার নাযিল হওয়া    
13.        ১২- পরিচ্ছেদ: রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মৃত্যুর আগ পর্যন্ত অহী নাযিল বন্ধ ছিলো না।    
14.        ১৩- পরিচ্ছেদ: রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মৃত্যুর পরে অহী নাযিল বন্ধ হয়ে যায়    
15.        কিতাবুল ঈমান    
16.        ঈমানের বৈশিষ্ট্য সম্পর্কিত পরিচ্ছেদসমূহ    
17.        ১- পরিচ্ছেদ: ঈমান, ইসলাম ও ইহসান সম্পর্কে জিবরীল আলাইহিস সালামের প্রশ্ন    
18.        ২- পরিচ্ছেদ: ইসলামের রুকনসমূহ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা    
19.        ৩- পরিচ্ছেদ: ঈমানের শাখা-প্রশাখা সম্পর্কে     
20.        ৪- পরিচ্ছেদ: ঈমানের পরিপূর্ণতা প্রসঙ্গে    
21.        ৫- পরিচ্ছেদ: গুনাহের কারণে ঈমানের পরিপূর্ণতা কমে যায়    
22.        ৬- পরিচ্ছেদ: ইবাদত বন্দেগী (সৎকাজ) কম করার কারণে ঈমান অপূর্ণ হওয়া প্রসঙ্গে    
23.        ৭- পরিচ্ছেদ: ঈমানের বাড়তি-কমতি    
24.        ৮- পরিচ্ছেদ: যেসব আমলের দ্বারা মুসলিম জান্নাতে যাবে    
25.        ৯- পরিচ্ছেদ: প্রকৃত ইসলাম না হলে আখিরাতে কোনো উপকারে আসবে না    
26.        ১০- পরিচ্ছেদ: যে ব্যক্তি তাওহীদের ওপর মারা যাবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে    
27.        ১১- পরিচ্ছেদ: কিছু মানুষের অন্তর থেকে আমানত ও ঈমান উঠে যাওয়া    
28.        ১২- পরিচ্ছেদ: মুমিন ব্যতীত কেউ জান্নাতে প্রবেশ করবে না, আল্লাহ (কখনো কখনো) পাপীলোক দ্বারা এ দীনের সহযোগিতা করেন    
29.        ১৩- পরিচ্ছেদ: আল্লাহ তা‘আলা কাফিরদের জন্য জান্নাত হারাম করেছেন    
30.        ১৪- পরিচ্ছেদ: অহংকার হতে সতর্কতা এবং অহংকার পরিপূর্ণ ঈমানের বিপরীত     
31.        ১৫- পরিচ্ছেদ: আল্লাহর রহমত ছাড়া কেউ জান্নাতে যেতে পারবে না    
32.        ১৬- পরিচ্ছেদ: প্রতিবেশীকে কষ্ট দেওয়া থেকে ভীতিপ্রদর্শন এবং তা পূর্ণাঙ্গ ঈমানের পরিপন্থী      
33.        ১৭- পরিচ্ছেদ: ঈমানের মিষ্টতা ও স্বাদ পাওয়া সম্পর্কে     
34.        ১৮- পরিচ্ছেদ: রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে ভালোবাসা ঈমানের অংশ    
35.        ১৯- পরিচ্ছেদ: যে ব্যক্তি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে ভালোবাসবে সে তাদের সাথে জান্নাতে থাকবে    
36.        ২০- পরিচ্ছেদ: নিজের জন্য যা পছন্দনীয় তা অন্য ভাইয়ের জন্যও পছন্দ করা ঈমানের বৈশিষ্ট্য    
37.        ২১- পরিচ্ছেদ: অতিথির আপ্যায়ন ঈমানের পূর্ণতা     
38.        ২২- পরিচ্ছেদ: অসৎ কাজ থেকে নিষেধ করা পূর্ণাঙ্গ ঈমানের অংশ      
39.        ২৩- পরিচ্ছেদ: আনসারগণকে ভালোবাসা পূর্ণাঙ্গ ঈমানের অংশ     
40.        ২৪- পরিচ্ছেদ: লজ্জা ঈমানের অংশ    
41.        ২৫- পরিচ্ছেদ: আলী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুকে ভালোবাসা পূর্ণাঙ্গ ঈমানের অংশ    
42.        ২৬- পরিচ্ছেদ: মুমিনদেরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করা      
43.        ২৭- পরিচ্ছেদ: ফিতনা থেকে পলায়ন পূর্ণাঙ্গ ঈমানের অংশ    
44.        ২৮- পরিচ্ছেদ: ভয়-শঙ্কার কারণে ঈমান গোপন রাখা জায়েয প্রসঙ্গে    
45.        ২৯- পরিচ্ছেদ: ঈমানের ব্যাপারে ইনশা আল্লাহ বলা     
46.        ৩০- পবিত্রতা ঈমানের অর্ধেক    
47.        ৩১- পরিচ্ছেদ: যে ব্যক্তি আল্লাহর ওপর ঈমান আনল অতঃপর তাতে সুদৃঢ় রইল    
48.        ৩২- পরিচ্ছেদ: ঈমানদারদের ঈমানের তারতম্য।    
49.        ৩৩- পরিচ্ছেদ: ডানপন্থীদের ঈমানের অধিক্য    
50.        ৩৪- পরিচ্ছেদ: হিজাযবাসীদের মধ্যে রয়েছে ঈমান    
51.        ৩৫- পরিচ্ছেদ: ব্যক্তির উত্তম ইসলাম সম্পর্কে    
52.        ৩৬- পরিচ্ছেদ: নসিহত দীনের মূলস্তম্ভ ও ভিত্তি     
53.        ৩৭- পরিচ্ছেদ: মৃত্যুর সময় উপস্থিত হলে ইসলাম গ্রহণ করলে সহীহ হওয়ার দলিল, যতক্ষণ মৃত্যুর বড়  নিশ্বাস শুরু না হয়    
54.        ৩৮- পরিচ্ছেদ: ঈমানের স্বাদ অন্তরের সাথে মিশে গেলে কেউ তা অপছন্দ করে না    
55.        ৩৯- পরিচ্ছেদ: এ দীনের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো এটি সহজ-সরল    
56.        ৪০- আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতা‘আলা সাধ্যের বাইরে কিছু চাপিয়ে দেন না     
57.        ৪১- পরিচ্ছেদ: আল্লাহ সম্পর্কে ভালো ধারণা রাখা তাঁর ভীতি ও তাঁর কাছে প্রত্যাশা সম্বলিত    
58.        ৪২- পরিচ্ছেদ: আল্লাহভীতি ও তাকওয়া সম্পর্কে     
59.        ৪৩- পরিচ্ছেদ: আল্লাহর রহমত তাঁর আযাবের চেয়ে প্রশস্ত    
60.        ৪৪- পরিচ্ছেদ: দীনের ব্যাপারে কোনো জবরদস্তি নেই    
61.        ৪৫- পরিচ্ছেদ: আল্লাহর বাণী,
﴿وَإِن طَآئِفَتَانِ مِنَ ٱلۡمُؤۡمِنِينَ ٱقۡتَتَلُواْ فَأَصۡلِحُواْ بَيۡنَهُمَاۖ﴾ [الحجرات: ٩]      
62.        ৪৬- পরিচ্ছেদ: মুসলিমকে গালি দেওয়া ফাসেকী এবং তার সাথে লড়াই করা কুফুরী    
63.        ৪৭- পরিচ্ছেদ: রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বাণীর অর্থ,
«لاَ تَرْجِعُوا بَعْدِي كُفَّارًا» “আমার পরে তোমরা কাফির হয়ে যেও না”      
64.        ৪৮- পরিচ্ছেদ: যে ব্যক্তি বলে, অমুক অমুক নক্ষত্রের প্রভাবে আমাদের উপর বৃষ্টিপাত হয়েছে তার ব্যাপারে কুফুরী নাম ব্যবহার করা    
65.        ৪৯- পরিচ্ছেদ: বংশ তুলে নিন্দাকারী ও মৃতের জন্যে বিলাপকারীর কর্মকাণ্ড কুফুরী নামে আখ্যায়িত     
66.        ৫০- পরিচ্ছেদ: ইসলাম পূর্বের সব কিছু মিটিয়ে দেয়    
67.        ৫১- পরিচ্ছেদ: কুফুরী অবস্থায় ভালো আমল করার পর ইসলাম গ্রহণ করলে    


ভূমিকা

অধ্যয়: অহী
১-পরিচ্ছেদ: সব আমল নিয়তের ওপর নির্ভরশীল
عَنْ عُمَر بْن الخَطَّابِ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: «إِنَّمَا الأَعْمَالُ بِالنِّيَّاتِ، وَإِنَّمَا لِكُلِّ امْرِئٍ مَا نَوَى، فَمَنْ كَانَتْ هِجْرَتُهُ إِلَى دُنْيَا يُصِيبُهَا، أَوْ إِلَى امْرَأَةٍ يَنْكِحُهَا، فَهِجْرَتُهُ إِلَى مَا هَاجَرَ إِلَيْهِ»
“উমার ইবন খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, “প্রত্যেক কাজ নিয়তের উপর নির্ভরশীল। আর মানুষ তার নিয়ত অনুযায়ী ফল পাবে। তাই যার হিজরত হবে দুনিয়া লাভের অথবা নারীকে বিয়ে করার উদ্দেশ্যে, সেই উদ্দেশ্যই হবে তার হিজরতের প্রাপ্য”।
মুত্তাফাকুন ‘আলাইহি। সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৯০৭।

২- পরিচ্ছেদ: রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি অহী নাযিল শুরু
عَنْ عَائِشَةَ أُمِّ المُؤْمِنِينَ أَنَّهَا قَالَتْ: «أَوَّلُ مَا بُدِئَ بِهِ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مِنَ الوَحْيِ الرُّؤْيَا الصَّالِحَةُ فِي النَّوْمِ، فَكَانَ لاَ يَرَى رُؤْيَا إِلَّا جَاءَتْ مِثْلَ فَلَقِ الصُّبْحِ، ثُمَّ حُبِّبَ إِلَيْهِ الخَلاَءُ، وَكَانَ يَخْلُو بِغَارِ حِرَاءٍ فَيَتَحَنَّثُ فِيهِ - وَهُوَ التَّعَبُّدُ - اللَّيَالِيَ ذَوَاتِ العَدَدِ قَبْلَ أَنْ يَنْزِعَ إِلَى أَهْلِهِ، وَيَتَزَوَّدُ لِذَلِكَ، ثُمَّ يَرْجِعُ إِلَى خَدِيجَةَ فَيَتَزَوَّدُ لِمِثْلِهَا، حَتَّى جَاءَهُ الحَقُّ وَهُوَ فِي غَارِ حِرَاءٍ، فَجَاءَهُ المَلَكُ فَقَالَ: اقْرَأْ، قَالَ: «مَا أَنَا بِقَارِئٍ»، قَالَ: " فَأَخَذَنِي فَغَطَّنِي حَتَّى بَلَغَ مِنِّي الجَهْدَ ثُمَّ أَرْسَلَنِي، فَقَالَ: اقْرَأْ، قُلْتُ: مَا أَنَا بِقَارِئٍ، فَأَخَذَنِي فَغَطَّنِي الثَّانِيَةَ حَتَّى بَلَغَ مِنِّي الجَهْدَ ثُمَّ أَرْسَلَنِي، فَقَالَ: اقْرَأْ، فَقُلْتُ: مَا أَنَا بِقَارِئٍ، فَأَخَذَنِي فَغَطَّنِي الثَّالِثَةَ ثُمَّ أَرْسَلَنِي، فَقَالَ: ﴿ ٱقۡرَأۡ بِٱسۡمِ رَبِّكَ ٱلَّذِي خَلَقَ ١ خَلَقَ ٱلۡإِنسَٰنَ مِنۡ عَلَقٍ ٢ ٱقۡرَأۡ وَرَبُّكَ ٱلۡأَكۡرَمُ ٣ ﴾ [العلق: ١،  ٣]  فَرَجَعَ بِهَا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَرْجُفُ فُؤَادُهُ، فَدَخَلَ عَلَى خَدِيجَةَ بِنْتِ خُوَيْلِدٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا، فَقَالَ: «زَمِّلُونِي زَمِّلُونِي» فَزَمَّلُوهُ حَتَّى ذَهَبَ عَنْهُ الرَّوْعُ، فَقَالَ لِخَدِيجَةَ وَأَخْبَرَهَا الخَبَرَ: «لَقَدْ خَشِيتُ عَلَى نَفْسِي» فَقَالَتْ خَدِيجَةُ: كَلَّا وَاللَّهِ مَا يُخْزِيكَ اللَّهُ أَبَدًا، إِنَّكَ لَتَصِلُ الرَّحِمَ، وَتَحْمِلُ الكَلَّ، وَتَكْسِبُ المَعْدُومَ، وَتَقْرِي الضَّيْفَ، وَتُعِينُ عَلَى نَوَائِبِ الحَقِّ، فَانْطَلَقَتْ بِهِ خَدِيجَةُ حَتَّى أَتَتْ بِهِ وَرَقَةَ بْنَ نَوْفَلِ بْنِ أَسَدِ بْنِ عَبْدِ العُزَّى ابْنَ عَمِّ خَدِيجَةَ وَكَانَ امْرَأً تَنَصَّرَ فِي الجَاهِلِيَّةِ، وَكَانَ يَكْتُبُ الكِتَابَ العِبْرَانِيَّ، فَيَكْتُبُ مِنَ الإِنْجِيلِ بِالعِبْرَانِيَّةِ مَا شَاءَ اللَّهُ أَنْ يَكْتُبَ، وَكَانَ شَيْخًا كَبِيرًا قَدْ عَمِيَ، فَقَالَتْ لَهُ خَدِيجَةُ: يَا ابْنَ عَمِّ، اسْمَعْ مِنَ ابْنِ أَخِيكَ، فَقَالَ لَهُ وَرَقَةُ: يَا ابْنَ أَخِي مَاذَا تَرَى؟ فَأَخْبَرَهُ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ خَبَرَ مَا رَأَى، فَقَالَ لَهُ وَرَقَةُ: هَذَا النَّامُوسُ الَّذِي نَزَّلَ اللَّهُ عَلَى مُوسَى، يَا لَيْتَنِي فِيهَا جَذَعًا، لَيْتَنِي أَكُونُ حَيًّا إِذْ يُخْرِجُكَ قَوْمُكَ، فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «أَوَ مُخْرِجِيَّ هُمْ»، قَالَ: نَعَمْ، لَمْ يَأْتِ رَجُلٌ قَطُّ بِمِثْلِ مَا جِئْتَ بِهِ إِلَّا عُودِيَ، وَإِنْ يُدْرِكْنِي يَوْمُكَ أَنْصُرْكَ نَصْرًا مُؤَزَّرًا. ثُمَّ لَمْ يَنْشَبْ وَرَقَةُ أَنْ تُوُفِّيَ، وَفَتَرَ الوَحْي».
আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি সর্বপ্রথম যে অহী আসে, তা ছিল ঘুমের মধ্যে সত্য স্বপ্নরূপে। যে স্বপ্নই তিনি দেখতেন তা একেবারে ভোরের আলোর ন্যায় প্রকাশ পেতো। তারপর তাঁর কাছে নির্জনতা প্রিয় হয়ে পড়ে এবং তিনি ‘হেরা’ গুহায় নির্জনে থাকতেন। আপন পরিবারের কাছে ফিরে আসা এবং কিছু খাদ্যসামগ্রী সঙ্গে নিয়ে যাওয়া, এইভাবে সেখানে তিনি একাধারে বেশ কয়েক রাত ইবাদতে মগ্ন থাকতেন। তারপর খাদীজা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহার কাছে ফিরে এসে আবার অনুরূপ সময়ের জন্য কিছু খাদ্যসামগ্রী নিয়ে যেতেন। এমনিভাবে হেরা গুহায় অবস্থানকালে একদিন তাঁর কাছে অহী এলো। তাঁর কাছে ফিরিশতা এসে বললেন, ‘পড়ুন’। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, “আমি বললাম, আমি পড়ি না। তিনি বললেন, তারপর তিনি আমাকে জড়িয়ে ধরে এমন ভাবে চাপ দিলেন যে, আমার অত্যন্ত কষ্ট হলো। তারপর তিনি আমাকে ছেড়ে দিয়ে বললেন, ‘পড়ুন’। আমি বললাম, আমি তো পড়ি না। তিনি দ্বিতীয়বার আমাকে জড়িয়ে ধরে এমন ভাবে চাপ দিলেন যে, আমার অত্যন্ত কষ্ট হলো। এরপর তিনি আমাকে ছেড়ে দিয়ে বললেন, ‘পড়ুন’। আমি জবাব দিলাম, আমি তো পড়ি না। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তারপর তৃতীয়বার তিনি আমাকে জড়িয়ে ধরে চাপ দিলেন। এরপর ছেড়ে দিয়ে বললেন, “পড়ুন আপনার রবের নামে যিনি সৃষ্টি করেছেন। সৃষ্টি করেছেন মানুষকে ‘আলাক (রক্তপিণ্ড) থেকে। পড়ুন আর আপনার রব মহামহিমান্বিত।” [সূরা আল-আলাক, আয়াত: ১-৩]
তারপর এ আয়াত নিয়ে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফিরে এলেন। তাঁর অন্তর তখন কাঁপছিল। তিনি খাদীজা বিনত খুওয়ালিদের কাছে এসে বললেন, আমাকে চাদর দিয়ে ঢেকে দাও, আমাকে চাদর দিয়ে ঢেকে দাও। তারা তাঁকে চাদর দিয়ে ঢেকে দিলেন। অবশেষে তাঁর ভয় দূর হলো। তখন তিনি খাদীজা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহার কাছে সকল ঘটনা জানিয়ে তাকে বললেন, আমি নিজের উপর আশংকা বোধ করছি। খাদীজা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা বললেন, আল্লাহর কসম, কখনো না। আল্লাহ আপনাকে কখনো অপমানিত করবেন না। আপনি তো আত্মীয়-স্বজনের সাথে সদ্ব্যবহার করেন, অসহায় দুর্বলের দায়িত্ব বহন করেন, নিঃস্বকে সাহায্য করেন, মেহমানের মেহমানদারী করেন এবং দুর্দশাগ্রস্তকে সাহায্য করেন। এরপর তাঁকে নিয়ে খাদীজা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা তার চাচাতো ভাই ওয়ারাকা ইবন নাওফিল ইবন ‘আব্দুল আসাদ ইবন ‘আব্দুল ‘উযযার কাছে গেলেন, যিনি জাহিলী যুগে ‘ঈসা আলাইহিস সালামের’ ধর্ম গ্রহণ করেছিলেন। তিনি ইবরানী ভাষায় লিখতেন এবং আল্লাহর তওফীক অনুযায়ী ইবরানী ভাষায় ইঞ্জিল থেকে অনুবাদ করতেন। তিনি ছিলেন অত্যন্ত বয়োবৃদ্ধ এবং অন্ধ হয়ে গিয়েছিলেন। খাদীজা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা তাকে বললেন, হে চাচাতো ভাই! আপনার ভাতিজার কথা শুনুন। ওয়ারাকা রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞেস করলেন, ভাতিজা! তুমি কী দেখ? রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যা দেখেছিলেন, সবই খুলে বললেন। তখন ওয়ারাকা তাঁকে বললেন, ইনি সে দূত যাকে আল্লাহ মূসা ‘আলাইহিস সালামের কাছে পাঠিয়েছিলেন। আফসোস! আমি যদি সেদিন যুবক থাকতাম। আফসোস! আমি যদি সেদিন জীবিত থাকতাম, যেদিন তোমার জাতি তোমাকে বের করে দিবে। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তারা কি আমাকে বের করে দিবে? তিনি বললেন, হ্যাঁ। অতীতে যিনিই তোমার মত কিছু নিয়ে এসেছেন তার সঙ্গেই শত্রুতা করা হয়েছে। সেদিন যদি আমি থাকি, তবে তোমাকে প্রবলভাবে সাহায্য করব। এর কিছুদিন পর ওয়ারাকা মারা যান। আর অহী কিছুদিন স্থগিত থাকে”।
মুত্তাফাকুন ‘আলাইহি, সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৩; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৬০, হাদীসের শব্দাবলী বুখারীর, মুসলিমের শব্দাবলীও বুখারীর অনুরূপ।

৩- পরিচ্ছেদ: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি আল্লাহ যে ধরণের অহী নাযিল করেছেন
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ: قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَا مِنَ الأَنْبِيَاءِ نَبِيٌّ إِلَّا أُعْطِيَ مَا مِثْلهُ آمَنَ عَلَيْهِ البَشَرُ، وَإِنَّمَا كَانَ الَّذِي أُوتِيتُ وَحْيًا أَوْحَاهُ اللَّهُ إِلَيَّ، فَأَرْجُو أَنْ أَكُونَ أَكْثَرَهُمْ تَابِعًا يَوْمَ القِيَامَةِ».
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “প্রত্যেক নবীকে তার যুগের চাহিদা মোতাবেক কিছু মু‘জিযা দান করতে হয়েছে, যা দেখে লোকেরা তাঁর প্রতি ঈমান এনেছে। আমাকে যে মু‘জিযা দেওয়া হয়েছে তা হচ্ছে, অহী- যা আল্লাহ আমার প্রতি অবতীর্ণ করেছেন। সুতরাং আমি আশা করি, কিয়ামতের দিন তাদের অনুসারীদের তুলনায় আমার অনুসারীদের সংখ্যা অনেক বেশি হবে”।
মুত্তাফাকুন ‘আলাইহি, সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৪৯৮১; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৫২। হাদীসের শব্দাবলী বুখারীর।
আর মুসলিমের শব্দ হচ্ছে,  
«مَا مِنَ الْأَنْبِيَاءِ مِنْ نَبِيٍّ إِلَّا قَدِ اُعْطِيَ مِنَ الْآيَاتِ مَا مِثْلُهُ آمَنَ عَلَيْهِ الْبَشَرُ».
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “প্রত্যেক নবীকে এমন মু‘জিযা দেওয়া হয়েছে, যে মুজিযা অনুযায়ী মানুষ তাঁর প্রতি ঈমান এনেছে।.. তারপর বাকীটা পূর্বের অনুরূপ।
অর্থাৎ পূর্ববর্তী প্রত্যেক নবীকে এমন মু‘জিযা দেওয়া হয়েছে যা দেখে তাদের উম্মতেরা সে অনুযায়ী ঈমান এনেছে। পক্ষান্তরে আমার স্পষ্ট ও বড় মু‘জিযা হলো আল-কুরআন, যার মতো কোনো কিছু কোনো নবী-রাসূল আলাইহিমুস সালামকে দেওয়া হয় নি।
 
৪- পরিচ্ছেদ: রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি কীভাবে অহী নাযিল হতো
عَنْ عَائِشَةَ أُمِّ المُؤْمِنِينَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا، أَنَّ الحَارِثَ بْنَ هِشَامٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ سَأَلَ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ: يَا رَسُولَ اللَّهِ، كَيْفَ يَأْتِيكَ الوَحْيُ؟ فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «أَحْيَانًا يَأْتِينِي مِثْلَ صَلْصَلَةِ الجَرَسِ، وَهُوَ أَشَدُّهُ عَلَيَّ، فَيُفْصَمُ عَنِّي وَقَدْ وَعَيْتُ عَنْهُ مَا قَالَ، وَأَحْيَانًا يَتَمَثَّلُ لِيَ المَلَكُ رَجُلًا فَيُكَلِّمُنِي فَأَعِي مَا يَقُولُ» قَالَتْ عَائِشَةُ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا: وَلَقَدْ رَأَيْتُهُ يَنْزِلُ عَلَيْهِ الوَحْيُ فِي اليَوْمِ الشَّدِيدِ البَرْدِ، فَيَفْصِمُ عَنْهُ وَإِنَّ جَبِينَهُ لَيَتَفَصَّدُ عَرَقًا.
আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা থেকে বর্ণিত, হারিস ইবন হিশাম রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘ইয়া রাসূলাল্লাহ্! আপনার প্রতি অহী কীভাবে আসে? রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, কোনো সময় তা ঘণ্টাধ্বনির ন্যায় আমার নিকট অহী আসে, আর এটিই আমার উপর সবচাইতে কষ্টদায়ক হয় এবং তা সমাপ্ত হতেই ফিরিশতা যা বলেন আমি তা মুখস্থ করে নেই। আবার কখনো ফিরিশতা মানুষের আকৃতিতে আমার সঙ্গে কথা বলে। তিনি যা বলেন আমি তা মুখস্থ করে ফেলি। আয়িশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা বলেন, আমি প্রচণ্ড শীতের দিনে অহী নাযিলরত অবস্থায় তাঁকে দেখেছি। অহী শেষ হলেই তাঁর কপাল থেকে ঘাম ঝরে পড়ত।
মুত্তাফাকুন ‘আলাইহি, ইমাম মালিক ‘কুরআন’ (হাদীস নং ৭) এ বর্ণনা করেছেন। সহীহ বুখারী, হাদীস নং ২; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৩৩৩।
রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বাণী «فَيَفْصِمُ»  ইয়া অক্ষরে ফাতহা, ফা অক্ষরে সুকুন ও এবং সোয়াদ অক্ষরে কাসরা যোগে এর অর্থ হলো, শেষ হওয়া, কোনোকিছু আবৃত করে রাখার পরে ছেড়ে দেওয়া।

عَنْ صَفْوَانَ بْنِ يَعْلَى بْنِ أُمَيَّةَ، عَنْ أَبِيهِ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ، قَالَ: جَاءَ رَجُلٌ إِلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَهُوَ بِالْجِعْرَانَةِ، عَلَيْهِ جُبَّةٌ وَعَلَيْهَا خَلُوقٌ - أَوْ قَالَ أَثَرُ صُفْرَةٍ - فَقَالَ: كَيْفَ تَأْمُرُنِي أَنْ أَصْنَعَ فِي عُمْرَتِي؟ قَالَ: وَأُنْزِلَ عَلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الْوَحْيُ، فَسُتِرَ بِثَوْبٍ، وَكَانَ يَعْلَى يَقُولُ: وَدِدْتُ أَنِّي أَرَى النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَقَدْ نَزَلَ عَلَيْهِ الْوَحْيُ، قَالَ فَقَالَ: أَيَسُرُّكَ أَنْ تَنْظُرَ إِلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَقَدْ أُنْزِلَ عَلَيْهِ الْوَحْيُ؟ قَالَ: فَرَفَعَ عُمَرُ طَرَفَ الثَّوْبِ، فَنَظَرْتُ إِلَيْهِ لَهُ غَطِيطٌ، - قَالَ وَأَحْسَبُهُ قَالَ - كَغَطِيطِ الْبَكْرِ، قَالَ فَلَمَّا سُرِّيَ عَنْهُ قَالَ: «أَيْنَ السَّائِلُ عَنِ الْعُمْرَةِ؟ اغْسِلْ عَنْكَ أَثَرَ الصُّفْرَةِ - أَوْ قَالَ أَثَرَ الْخَلُوقِ - وَاخْلَعْ عَنْكَ جُبَّتَكَ، وَاصْنَعْ فِي عُمْرَتِكَ مَا أَنْتَ صَانِعٌ فِي حَجِّكَ».
সাফওয়ান ইবন ইয়া‘লা ইবন উমাইয়্যাহ্ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে তার পিতার সূত্রে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন জি‘রানা নামক স্থানে অবস্থান করছিলেন, তখন এক ব্যক্তি তাঁর কাছে আসলো, তার পরিধানে জুব্বা ছিল এবং তাতে খোশবু লাগানো ছিল। অথবা (বর্ণনাকারী বলেছেন) তাঁর উপর কিছুটা হলুদ বর্ণের দাগ ছিলো। অতঃপর সে বললো, আপনি আমাকে উমরাহ করার সময় কি কি কাজ করার নির্দেশ দিচ্ছেন? বর্ণনাকারী বলেন, এমতাবস্থায় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর অহী নাযিল হচ্ছিলো এবং তিনি একখানা কাপড় দিয়ে নিজেকে আবৃত করে নিলেন। ইয়া‘লা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলতেন, অহী অবতীর্ণ হওয়া অবস্থায় রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে দেখার আমার শখ ছিলো। তখন উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বললেন, অহী অবতীর্ণ হওয়া অবস্থায় রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে দেখে তুমি কি আনন্দিত হতে চাও? অতঃপর উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু কাপড়ের এক খোঁট তুলে ধরলেন এবং আমি তাঁর দিকে তাকিয়ে দেখলাম, তিনি হাঁপিয়ে হাঁপিয়ে নিঃশ্বাস নিচ্ছেন এবং নাক ডাকছেন। বর্ণনাকারী বলেন, আমার মনে হয় এটা ছিল উঠতি বয়সের উটের নাসিকা ধ্বনির অনুরূপ। অতঃপর অহী নাযিল সমাপ্ত হলে তিনি বললেন, “উমরাহ সম্পর্কে প্রশ্নকারী কোথায়? (লোকটি সাড়া দিলে তিনি বললেন) হলুদ রং ধুয়ে ফেলো। অথবা তিনি বললেন, খোশবু ধুয়ে ফেলো এবং তোমার জুব্বাটিও শরীর থেকে খুলে ফেলো। অতঃপর হজে যা কিছু করে থাক, উমরাহ এ তাই করো”।
মুত্তাফাকুন ‘আলাইহি, সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৪৯৮৫; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং  ১১৮০।
রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বাণী, "غَطِيطِ" এর অর্থ হলো ঘুমন্ত ব্যক্তির নাক ডাকার শব্দ বা গোঙ্গানো। আর "كَغَطِيطِ الْبَكْرِ" অর্থ হলো, উঠতি বয়সের উটের নাসিকা ধ্বনির অনুরূপ।
عَنْ عُبَادَةَ بْنِ الصَّامِتِ، قَالَ: «كَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا أُنْزِلَ عَلَيْهِ الْوَحْيُ نَكَسَ رَأْسَهُ وَنَكَسَ أَصْحَابُهُ رُءُوسَهُمْ، فَلَمَّا أُتْلِيَ عَنْهُ رَفَعَ رَأْسَهُ».
উবাদা ইবন সামিত রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: “নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর যখন অহী নাযিল হতো তখন তিনি মাথা নিচু করে ফেলতেন এবং তাঁর সাহাবীরাও মাথা নিচু করতেন। তারপর যখন অহী শেষ হয়ে যেতো, তিনি তাঁর মাথা তুলতেন”।
সহীহ, সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৩৩৪।
৫- পরিচ্ছেদ: অহী অতি ভারী হওয়া প্রসঙ্গে
আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,  
﴿إِنَّا سَنُلۡقِي عَلَيۡكَ قَوۡلٗا ثَقِيلًا٥﴾ [المزمل: ٥]
“নিশ্চয় আমরা আপনার উপর এক অতি ভারী বাণী নাযিল করছি”।  [সূরা আল-মুয্যাম্মিল, আয়াত: ৫]
রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের স্ত্রী আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা থেকে বর্ণিত দীর্ঘ হাদীসে তিনি বলেছেন,
عَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا،...، وَاللَّهُ يَعْلَمُ أَنِّي بَرِيئَةٌ، وَأَنَّ اللَّهَ مُبَرِّئِي بِبَرَاءَتِي، وَلَكِنْ وَاللَّهِ مَا كُنْتُ أَظُنُّ أَنَّ اللَّهَ مُنْزِلٌ فِي شَأْنِي وَحْيًا يُتْلَى، لَشَأْنِي فِي نَفْسِي كَانَ أَحْقَرَ مِنْ أَنْ يَتَكَلَّمَ اللَّهُ فِيَّ بِأَمْرٍ، وَلَكِنْ كُنْتُ أَرْجُو أَنْ يَرَى رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي النَّوْمِ رُؤْيَا يُبَرِّئُنِي اللَّهُ بِهَا، فَوَاللَّهِ مَا رَامَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَجْلِسَهُ، وَلاَ خَرَجَ أَحَدٌ مِنْ أَهْلِ البَيْتِ، حَتَّى أُنْزِلَ عَلَيْهِ، فَأَخَذَهُ مَا كَانَ يَأْخُذُهُ مِنَ البُرَحَاءِ، حَتَّى إِنَّهُ لَيَتَحَدَّرُ مِنْهُ مِنَ العَرَقِ مِثْلُ الجُمَانِ، وَهُوَ فِي يَوْمٍ شَاتٍ مِنْ ثِقَلِ القَوْلِ الَّذِي أُنْزِلَ عَلَيْهِ.
(ইফকের দীর্ঘ হাদীস থেকে) “আল্লাহ তা‘আলা জানেন যে, আমি পবিত্র। অবশ্যই আল্লাহ আমার পবিত্রতা প্রকাশ করে দেবেন (এ কথার প্রতি আমার বিশ্বাস ছিল) তবে আল্লাহর কসম, আমি কখনো ধারণা করি নি যে, আমার ব্যাপারে আল্লাহ অহী নাযিল করবেন যা পঠিত হবে। আমার ব্যাপারে আল্লাহ কোনো কথা বলবেন আমি নিজেকে এতোখানি যোগ্য মনে করিনি বরং আমি নিজেকে এর চেয়ে অধিক অযোগ্য বলে মনে করতাম। তবে আমি আশা করতাম যে, হয়তো রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে এমন স্বপ্ন দেখানো হবে যার দ্বারা আল্লাহ আমার পবিত্রতা প্রকাশ করে দেবেন। আল্লাহর কসম! রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখনো তাঁর বসার জায়গা ছাড়েন নি এবং ঘরের লোকদের থেকেও কেউ ঘর থেকে বাইরে যান নি। এমতাবস্থায় তাঁর উপর অহী নাযিল হতে শুরু হল। অহী নাযিল হওয়ার সময় তাঁর যে বিশেষ কষ্ট হত তখনও সে অবস্থা তাঁর হলো। এমনকি প্রচণ্ড শীতের দিনেও তাঁর দেহ থেকে মোতির দানার মত বিন্দু বিন্দু ঘাম গড়িয়ে গড়িয়ে পড়ত ঐ বাণীর গুরুভারের কারণে, যা তাঁর প্রতি নাযিল করা হয়েছে”।
মুত্তাফাকুন ‘আলাইহি, সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৪১৪১; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৭৭০।

عَنْ سَهْلِ بْنِ سَعْدٍ السَّاعِدِيِّ، أَنَّهُ قَالَ: رَأَيْتُ مَرْوَانَ بْنَ الحَكَمِ جَالِسًا فِي المَسْجِدِ، فَأَقْبَلْتُ حَتَّى جَلَسْتُ إِلَى جَنْبِهِ، فَأَخْبَرَنَا أَنَّ زَيْدَ بْنَ ثَابِتٍ أَخْبَرَهُ: " أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَمْلَى عَلَيْهِ: ﴿لَّا يَسۡتَوِي ٱلۡقَٰعِدُونَ مِنَ ٱلۡمُؤۡمِنِينَ٩﴾ [النساء : ٩٥]  ﴿وَٱلۡمُجَٰهِدُونَ فِي سَبِيلِ ٱللَّهِ ٩٥﴾ [النساء : ٩٥]  "، قَالَ: فَجَاءَهُ ابْنُ أُمِّ مَكْتُومٍ وَهُوَ يُمِلُّهَا عَلَيَّ، فَقَالَ: يَا رَسُولَ اللَّهِ، لَوْ أَسْتَطِيعُ الجِهَادَ لَجَاهَدْتُ - وَكَانَ رَجُلًا أَعْمَى - فَأَنْزَلَ اللَّهُ تَبَارَكَ وَتَعَالَى عَلَى رَسُولِهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، وَفَخِذُهُ عَلَى فَخِذِي، فَثَقُلَتْ عَلَيَّ حَتَّى خِفْتُ أَنَّ تَرُضَّ فَخِذِي، ثُمَّ سُرِّيَ عَنْهُ، فَأَنْزَلَ اللَّهُ عَزَّ وَجَلَّ: ﴿غَيۡرُ أُوْلِي ٱلضَّرَرِ ٩٥﴾ [النساء : ٩٥].
সাহল ইবন সা‘দ আস-সা‘য়েদী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন যে, আমি মারওয়ান ইবন হাকামকে মসজিদে বসা অবস্থায় দেখলাম। তারপর আমি তাঁর দিকে এগিয়ে গেলাম এবং তাঁর পাশে গিয়ে বসলাম। তিনি আমাকে বর্ণনা করেন যে, যায়েদ ইবন সাবিত রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু তাকে জানিয়েছেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর ওপর অবতীর্ণ আয়াত,
﴿لَّا يَسۡتَوِي ٱلۡقَٰعِدُونَ مِنَ ٱلۡمُؤۡمِنِينَ ٩﴾ [النساء : ٩٥]  ﴿وَٱلۡمُجَٰهِدُونَ فِي سَبِيلِ ٱللَّهِ٩٥﴾ [النساء : ٩٥]  
“মুমিনদের মধ্যে যারা ঘরে বসে থাকে এবং আল্লাহর পথে জিহাদ করে তারা পরস্পর সমান নয়”। [সূরা আন-নিসা, আয়াত: ৯৫] যখন তাকে দিয়ে লিখিয়ে নিচ্ছিলেন, ঠিক সে সময় অন্ধ সাহাবী ইবন উম্মে মাকতুম রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু সেখানে উপস্থিত হয়ে বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ্! আমি যদি জিহাদে যেতে সক্ষম হতাম, তবে অবশ্যই অংশ গ্রহণ করতাম। সে সময় আল্লাহ তা‘আলা তাঁর রাসূলের ওপর অহী নাযিল করেন। তখন রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উরু আমার উরুর উপর রাখা ছিল এবং তা আমার কাছে এতই ভারী মনে হচ্ছিল যে, আমি আমার উরু ভেঙ্গে যাওয়ার আশংকা করছিলাম। এরপর অহী অবতীর্ণ হওয়ার অবস্থা কেটে গেল, এ সময় ﴿غَيۡرُ أُوْلِي ٱلضَّرَرِ﴾ [النساء : ٩٥].“যারা ওযরগ্রস্ত নয়” আয়াতটি নাযিল করেন।
সহীহ, সহীহ বুখারী, হাদীস নং ২৮৩২ ও ৪৫৯২।

عَنْ عُبَادَةَ بْنِ الصَّامِتِ، قَالَ: «كَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا أُنْزِلَ عَلَيْهِ الْوَحْيُ نَكَسَ رَأْسَهُ وَنَكَسَ أَصْحَابُهُ رُءُوسَهُمْ، فَلَمَّا أُتْلِيَ عَنْهُ رَفَعَ رَأْسَهُ».
উবাদা ইবন সামিত রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: “নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওপর যখন অহী নাযিল হতো তখন তিনি মাথা নিচু করে ফেলতেন এবং তাঁর সাহাবীরাও মাথা নিচু করতেন। তারপর যখন অহী শেষ হয়ে যেতো, তিনি তাঁর মাথা তুলতেন”।
সহীহ, সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৩৩৪। অন্য বর্ণয়ায় এসেছে,
«إِذَا أُنْزِلَ عَلَيْهِ الْوَحْيُ كُرِبَ لِذَلِكَ وَتَرَبَّدَ وَجْهُهُ».
“রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওপর যখন অহী নাযিল হতো তখন তাতে তাঁর খুব কষ্ট হতো এবং তার চেহারা মলিন (ধূসর বর্ণ) হয়ে যেতো”।
সহীহ, সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৩৩৫।
 عَنْ عَائِشَةَ، أَنَّهَا قَالَتْ: "إِنْ كَانَ لَيُوحَى إِلَى رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَهُوَ عَلَى رَاحِلَتِهِ، فَتَضْرِبُ بِجِرَانِهَا "
আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওপর যখন আরোহী অবস্থায় অহী নাযিল হতো তখন (অহীর ভারে) উট তার ঘাড়ের সম্মুখভাগ চেপে রাখতো।”
হাসান, মুসনাদ আহমদ, হাদীস নং ২৪৮৬৮; হাকিম ২/৫০৫, তিনি সহীহ বলেছেন।
রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বাণী, فَتَضْرِبُ بِجِرَانِهَا এখানে الجران হলো উটের ঘাড়ের সম্মুখভাগ। উট যখন আরাম করে তখন তাঁর ঘাড় মাটির সাথে মিশে দেয়।

৬- পরিচ্ছেদ: অহী কিছুদিন বন্ধ থাকা প্রসঙ্গে
عَنْ جَابِر بْن عَبْدِ اللَّهِ الأَنْصَارِيَّ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَهُوَ يُحَدِّثُ عَنْ فَتْرَةِ الوَحْيِ، قَالَ فِي حَدِيثِهِ: " بَيْنَا أَنَا أَمْشِي سَمِعْتُ صَوْتًا مِنَ السَّمَاءِ، فَرَفَعْتُ بَصَرِي، فَإِذَا المَلَكُ الَّذِي جَاءَنِي بِحِرَاءٍ جَالِسٌ عَلَى كُرْسِيٍّ بَيْنَ السَّمَاءِ وَالأَرْضِ، فَفَرِقْتُ مِنْهُ، فَرَجَعْتُ، فَقُلْتُ: زَمِّلُونِي زَمِّلُونِي "، فَدَثَّرُوهُ، فَأَنْزَلَ اللَّهُ تَعَالَى: ﴿يَٰٓأَيُّهَا ٱلۡمُدَّثِّرُ ١ قُمۡ فَأَنذِرۡ ٢ وَرَبَّكَ فَكَبِّرۡ ٣ وَثِيَابَكَ فَطَهِّرۡ ٤ وَٱلرُّجۡزَ فَٱهۡجُرۡ ٥﴾ [المدثر: ١،  ٥]  قَالَ أَبُو سَلَمَةَ: وَهِيَ الأَوْثَانُ، قَالَ: «ثُمَّ تَتَابَعَ الوَحْيُ». জাবির ইবন আব্দুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে অহী বন্ধ থাকা সময়কাল সম্পর্কে আলোচনা করতে শুনেছি। তিনি তাঁর আলোচনার মাঝে বলেন, “একবার আমি হাঁটছিলাম, তখন আকাশ থেকে একটি আওয়াজ শুনতে পেলাম। মাথা উপরে তুলেই আমি দেখলাম যে ফিরিশতা হেরা গুহায় আমার কাছে এসেছিল সে ফিরিশতা (জিবরীল) আসমান ও জমিনের মাঝে রক্ষিত একটি আসনে বসে আছে। আমি তার ভয়ে ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে বাড়ি ফিরে এসে বললাম, আমাকে বস্ত্রাবৃত করো, আমাকে বস্ত্রাবৃত করো। তারা আমাকে বস্ত্রাবৃত করল। এরপর আল্লাহ নাযিল করলেন, “হে বস্ত্রাবৃত! উঠুন, অতঃপর সতর্ক করুন। আপনার রবের শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষণা করুন। আপনার পোশাক-পরিচ্ছদ পবিত্র করুন। আর অপবিত্রতা বর্জন করুন”। [সূরা আল-মুদ্দাসসির, আয়াত: ১-৫] আবু সালামা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেছেন, ‘রুজয’ অর্থ হল মূর্তিগুলো। এরপর থেকে ঘনঘন এবং ধারাবাহিকভাবে অহী আসতে লাগল”।
মুত্তাফাকুন ‘আলাইহি, সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৩২৩৮; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৬১।
অন্য বর্ণনায় এসেছে,
«ثم حمي الوحي وتتابعَ»
“অতঃপর অহী আগমনের ধারা বাড়লো এবং ধারাবাহিকভাবে নাযিল হতে লাগল”।   
রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বাণী, فَتْرَة الوَحْيِ অর্থ হলো আটকিয়ে রাখা, বেঁধে রাখা, বন্ধ থাকা, পরপর অহী নাযিল না হওয়া। ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেছেন, চল্লিশ দিন অহী নাযিল বন্ধ ছিলো। কিন্তু সুহাইলী তার "الروض الأنف"  এ ২/৪৩৩ বলেছেন, প্রথম অহী নাযিলের পরে আড়াই বছর অহী নাযিল বন্ধ ছিলো। এ সম্পর্কে বিস্তারিত দেখুন, ইবন হাজার আসকালানী রহ. এর ‘ফাতহুল বারী’ ১/২৭।
عن يَحْيَى بن أبي كثير يَقُولُ: سَأَلْتُ أَبَا سَلَمَةَ أَيُّ الْقُرْآنِ أُنْزِلَ قَبْلُ؟ قَالَ: يَا أَيُّهَا الْمُدَّثِّرُ، فَقُلْتُ: أَوِ اقْرَأْ؟ فَقَالَ: سَأَلْتُ جَابِرَ بْنَ عَبْدِ اللهِ أَيُّ الْقُرْآنِ أُنْزِلَ قَبْلُ؟ قَالَ: يَا أَيُّهَا الْمُدَّثِّرُ، فَقُلْتُ: أَوْ اقْرَأْ؟ قَالَ جَابِرٌ: أُحَدِّثُكُمْ مَا حَدَّثَنَا رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قَالَ: «جَاوَرْتُ بِحِرَاءٍ شَهْرًا، فَلَمَّا قَضَيْتُ جِوَارِي نَزَلْتُ فَاسْتَبْطَنْتُ بَطْنَ الْوَادِي، فَنُودِيتُ فَنَظَرْتُ أَمَامِي وَخَلْفِي، وَعَنْ يَمِينِي، وَعَنْ شِمَالِي، فَلَمْ أَرَ أَحَدًا، ثُمَّ نُودِيتُ فَنَظَرْتُ فَلَمْ أَرَ أَحَدًا، ثُمَّ نُودِيتُ فَرَفَعْتُ رَأْسِي، فَإِذَا هُوَ عَلَى الْعَرْشِ فِي الْهَوَاءِ - يَعْنِي جِبْرِيلَ عَلَيْهِ السَّلَامُ - فَأَخَذَتْنِي رَجْفَةٌ شَدِيدَةٌ، فَأَتَيْتُ خَدِيجَةَ، فَقُلْتُ: دَثِّرُونِي، فَدَثَّرُونِي، فَصَبُّوا عَلَيَّ مَاءً، فَأَنْزَلَ اللهُ عَزَّ وَجَلَّ: ﴿يَٰٓأَيُّهَا ٱلۡمُدَّثِّرُ ١ قُمۡ فَأَنذِرۡ ٢ وَرَبَّكَ فَكَبِّرۡ ٣ وَثِيَابَكَ فَطَهِّرۡ ٤﴾ [المدثر: ١،  ٤]». ইয়াহইয়া ইবন আবী কাসীর রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি আবু সালামাকে জিজ্ঞেস করলাম, কুরআনের কোন আয়াতটি সর্বপ্রথম অবতীর্ণ হয়েছে? তিনি বললেন, أَيُّهَا الْمُدَّثِّرُ আমি বললাম, নাকি اقْرَأْ তিনি বললেন, আমিও জাবির ইবন আব্দুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, কুরআনের কোন আয়াতটি প্রথম অবতীর্ণ হয়েছে। তিনি বলেছেন, يَا أَيُّهَا الْمُدَّثِّرُ আমি বললাম, اقْرَأْ । জাবির রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বললেন, আমি তোমাদের তাই বর্ণনা করছি, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের যা বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেছেন, “আমি একমাস হেরা গুহায় অবস্থান করি। অবস্থান শেষে আমি নিচে নেমে এলাম। উপত্যকার মাঝখানে যখন পৌঁছলাম তখন আমাকে ডাকা হলো। আমি সামনে-পেছনে ও ডানে-বায়ে তাকালাম। কাউকে দেখলাম না। তারপর আমাকে ডাকা হলো, তখনো কাউকে দেখতে পেলাম না। পুনরায় আমাকে ডাকা হলো। আমি তাকালাম, দেখি সে ফিরিশতা (অর্থাৎ জিবরীল আলাইহিস সালাম) শূন্যে একটি কুরসীর উপর উপবিষ্ট। আমার প্রবল কম্পন গুরু হলো। অনন্তর খাদীজার কাছে আসলাম। বললাম তোমরা আমাকে বস্ত্রাচ্ছাদিত করো। তারা আমাকে চাদর দিয়ে ঢেকে দিল। আমার উপর পানি ঢালল। তখন আল্লাহ তা‘আলা এ আয়াত নাযিল করেন, “হে বস্ত্রাবৃত! উঠুন, অতঃপর সতর্ক করুন। আপনার রবের শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষণা করুন। আপনার পোশাক-পরিচ্ছদ পবিত্র করুন”। [সূরা আল-মুদ্দাসির, আয়াত: ১-৪]
মুত্তাফাকুন ‘আলাইহি, সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৪৯২২; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৬১ বা ২৫৭। হাদীসের শব্দাবলী মুসলিমের।
রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বাণী, فَلَمَّا قَضَيْتُ جِوَارِي  এর অর্থ হলো, আমি যখন আমার ই‘তিকাফ কাটালাম।

৭- পরিচ্ছেদ: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অহী নাযিলের সময় মুখস্থ করতে তাড়াহুড়া করতেন
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ فِي قَوْلِهِ تَعَالَى: ﴿لَا تُحَرِّكۡ بِهِۦ لِسَانَكَ لِتَعۡجَلَ بِهِۦٓ ١٦﴾ [القيامة: ١٦]  قَالَ: كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُعَالِجُ مِنَ التَّنْزِيلِ شِدَّةً، وَكَانَ مِمَّا يُحَرِّكُ شَفَتَيْهِ - فَقَالَ ابْنُ عَبَّاسٍ: فَأَنَا أُحَرِّكُهُمَا لَكُمْ كَمَا كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُحَرِّكُهُمَا، وَقَالَ سَعِيدٌ: أَنَا أُحَرِّكُهُمَا كَمَا رَأَيْتُ ابْنَ عَبَّاسٍ يُحَرِّكُهُمَا، فَحَرَّكَ شَفَتَيْهِ - فَأَنْزَلَ اللَّهُ تَعَالَى: ﴿لَا تُحَرِّكۡ بِهِۦ لِسَانَكَ لِتَعۡجَلَ بِهِۦٓ ١٦ إِنَّ عَلَيۡنَا جَمۡعَهُۥ وَقُرۡءَانَهُۥ ١٧﴾ [القيامة: ١٦،  ١٧]  قَالَ: جَمْعُهُ لَكَ فِي صَدْرِكَ وَتَقْرَأَهُ: ﴿فَإِذَا قَرَأۡنَٰهُ فَٱتَّبِعۡ قُرۡءَانَهُۥ ١٨﴾ [القيامة: ١٨]  قَالَ: فَاسْتَمِعْ لَهُ وَأَنْصِتْ: ﴿ثُمَّ إِنَّ عَلَيۡنَا بَيَانَهُۥ ١٩﴾ [القيامة: ١٩]  ثُمَّ إِنَّ عَلَيْنَا أَنْ تَقْرَأَهُ، فَكَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بَعْدَ ذَلِكَ إِذَا أَتَاهُ جِبْرِيلُ اسْتَمَعَ فَإِذَا انْطَلَقَ جِبْرِيلُ قَرَأَهُ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَمَا قَرَأَهُ.
ইবন ‘আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা থেকে বর্ণিত, আল্লাহর বাণী: ‘তাড়াতাড়ি অহী আয়ত্ত করার জন্য আপনার জিহ্বা তা নিয়ে নাড়বেন না’ [সূরা আল-কিয়ামাহ, আয়াত: ১৬] এর ব্যাখ্যায় তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অহী নাযিলের সময় তা আয়ত্ত করতে বেশ কষ্ট স্বীকার করতেন এবং প্রায়ই তিনি তাঁর উভয় ঠোঁট নাড়তেন। ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা বলেন, আমি তোমাকে দেখানোর জন্য ঠোঁট দু’টি নাড়ছি যেভাবে  রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নাড়তেন। সা‘ঈদ রহ. (তার ছাত্রদেরকে) বললেন, আমি ইবন ‘আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমাকে যেভাবে তার ঠোঁট দু’টি নাড়তে দেখেছি, সেভাবেই আমার ঠোঁট দু’টি নাড়াচ্ছি। এই বলে তিনি তাঁর ঠোঁট দুটি নাড়ালেন। এ সম্পর্কে আল্লাহ তা‘আলা নাযিল করলেন, “তাড়াতাড়ি অহী আয়ত্ত করার জন্য আপনি আপনার জিহ্বা তা নিয়ে নাড়বেন না। এর সংরক্ষণ ও পাঠ করানোর দায়িত্ব আমারই”। [সূরা আল-কিয়ামাহ, আয়াত: ১৬-১৭] ইবন ‘আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা বলেন অর্থাৎ মনোযোগ সহকারে শুনুন এবং চুপ থাকুন। এরপর এর বিশদ ব্যাখ্যার দায়িত্ব আমারই” [সূরা আল-কিয়ামাহ, আয়াত: ১৯] অর্থাৎ আপনি তা পাঠ করবেন এটাও আমার দায়িত্ব। তারপর যখন রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে জিবরীল আলাইহিস সালাম আসতেন, তখন তিনি মনোযোগ সহকারে কেবল শুনতেন। জিবরীল আলাইহিস সালাম চলে গেলে তিনি যেমন পড়েছিলেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামও ঠিক তেমনি পড়তেন”।
মুত্তাফাকুন ‘আলাইহি, সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৫; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৪৪৮। হাদীসের শব্দাবলী বুখারীর।

৮- পরিচ্ছেদ: জিন্নদের বক্তব্য যা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি অহীরূপে নাযিল হয়
عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا، قَالَ: «انْطَلَقَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي طَائِفَةٍ مِنْ أَصْحَابِهِ عَامِدِينَ إِلَى سُوقِ عُكَاظٍ، وَقَدْ حِيلَ بَيْنَ الشَّيَاطِينِ وَبَيْنَ خَبَرِ السَّمَاءِ، وَأُرْسِلَتْ عَلَيْهِمُ الشُّهُبُ، فَرَجَعَتِ الشَّيَاطِينُ إِلَى قَوْمِهِمْ، فَقَالُوا: مَا لَكُمْ؟ فَقَالُوا: حِيلَ بَيْنَنَا وَبَيْنَ خَبَرِ السَّمَاءِ، وَأُرْسِلَتْ عَلَيْنَا الشُّهُبُ، قَالُوا: مَا حَالَ بَيْنَكُمْ وَبَيْنَ خَبَرِ السَّمَاءِ إِلَّا شَيْءٌ حَدَثَ، فَاضْرِبُوا مَشَارِقَ الأَرْضِ وَمَغَارِبَهَا، فَانْظُرُوا مَا هَذَا الَّذِي حَالَ بَيْنَكُمْ وَبَيْنَ خَبَرِ السَّمَاءِ، فَانْصَرَفَ أُولَئِكَ الَّذِينَ تَوَجَّهُوا نَحْوَ تِهَامَةَ إِلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَهُوَ بِنَخْلَةَ عَامِدِينَ إِلَى سُوقِ عُكَاظٍ، وَهُوَ يُصَلِّي بِأَصْحَابِهِ صَلاَةَ الفَجْرِ، فَلَمَّا سَمِعُوا القُرْآنَ اسْتَمَعُوا لَهُ، فَقَالُوا: هَذَا وَاللَّهِ الَّذِي حَالَ بَيْنَكُمْ وَبَيْنَ خَبَرِ السَّمَاءِ، فَهُنَالِكَ حِينَ رَجَعُوا إِلَى قَوْمِهِمْ، وَقَالُوا: يَا قَوْمَنَا: ﴿إِنَّا سَمِعۡنَا قُرۡءَانًا عَجَبٗا١ يَهۡدِيٓ إِلَى ٱلرُّشۡدِ فَ‍َٔامَنَّا بِهِۦۖ وَلَن نُّشۡرِكَ بِرَبِّنَآ أَحَدٗا٢﴾ [الجن: ١،  ٢] ، فَأَنْزَلَ اللَّهُ عَلَى نَبِيِّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: ﴿قُلۡ أُوحِيَ إِلَيَّ أَنَّهُ ٱسۡتَمَعَ نَفَرٞ مِّنَ ٱلۡجِنِّ١﴾ [الجن: ١]  وَإِنَّمَا أُوحِيَ إِلَيْهِ قَوْلُ الجِنِّ».
ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, “নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কয়েকজন সাহাবীকে সঙ্গে নিয়ে উকায বাজারের উদ্দেশ্যে রওয়ানা করেন। আর দুষ্ট জিন্নদের ঊর্ধ্বলোকের সংবাদ সংগ্রহের পথে প্রতিবন্ধকতা দেখা দেয় এবং তাদের দিকে অগ্নিপিণ্ড নিক্ষিপ্ত হয়। কাজেই শয়তানরা তাদের সম্প্রদায়ের নিকট ফিরে আসে। তারা জিজ্ঞাসা করল, তোমাদের কী হয়েছে? তারা বলল, আমাদের এবং আকাশের সংবাদ সংগ্রহের মধ্যে প্রতিবন্ধকতা দেখা দিয়েছে এবং আমাদের দিকে অগ্নিপিণ্ড ছুঁড়ে মারা হয়েছে। তখন তারা বলল, নিশ্চয়ই গুরুত্বপূর্ণ একটা কিছু ঘটছে বলেই তোমাদের এবং আকাশের সংবাদ সংগ্রহের মধ্যে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হয়েছে। কাজেই, পৃথিবীর পূর্ব এবং পশ্চিম অঞ্চল পর্যন্ত বিচরণ করে দেখ, কী কারণে তোমাদের ও আকাশের সংবাদ সংগ্রহরে মধ্যে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়েছে? তাই তাদের যে দলটি তিহামার দিকে গিয়েছিল, তারা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দিকে অগ্রসর হলো। তিনি তখন উকায বাজারের পথে ‘নাখলা’ নামক স্থানে সাহাবীগণকে নিয়ে ফজরের সালাত আদায় করছিলেন। তারা যখন কুরআন শুনতে পেল, তখন সেদিকে মনোনিবেশ করল। তারপর তারা বলে উঠল, আল্লাহর শপথ! এটিই তোমাদের ও আকাশের সংবাদ সংগ্রহের মধ্যে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছে। এমন সময় যখন তারা সম্প্রদায়ের নিকট ফিরে আসল এবং বলল যে,
﴿إِنَّا سَمِعۡنَا قُرۡءَانًا عَجَبٗا ١ يَهۡدِيٓ إِلَى ٱلرُّشۡدِ فَ‍َٔامَنَّا بِهِۦۖ وَلَن نُّشۡرِكَ بِرَبِّنَآ أَحَدٗا٢﴾ [الجن: ١،  ٢]
“আমরা তো এক বিস্ময়কর কুরআন শুনেছি, যা সত্যের দিকে হিদায়াত করে; অতঃপর আমরা তাতে ঈমান এনেছি। আর আমরা কখনো আমাদের রবের সাথে কাউকে শরীক করব না”। [সূরা আল-জিন্ন, আয়াত: ১-২] এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তা‘আলা তাঁর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি সূরা নাযিল করেন,
﴿قُلۡ أُوحِيَ إِلَيَّ أَنَّهُ ٱسۡتَمَعَ نَفَرٞ مِّنَ ٱلۡجِنِّ﴾ [الجن: ١]  
“বলুন, আমার প্রতি অহী করা হয়েছে যে, নিশ্চয় জিন্নদের একটি দল মনোযোগ সহকারে শুনেছে”।[সূরা আল-জিন্ন: ১] মূলত তাঁর নিকট জিন্নদের বক্তব্যই অহীরূপে নাযিল করা হয়েছে”।
মুত্তাফাকুন ‘আলাইহি, সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৭৭৩; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৪৪৯। হাদীসের শব্দাবলী বুখারীর।

৯- পরিচ্ছেদ: রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওপর নাযিলকৃত সব অহীই তিনি পূর্ণরূপে পৌঁছে দিয়েছেন
আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,  
﴿يَٰٓأَيُّهَا ٱلرَّسُولُ بَلِّغۡ مَآ أُنزِلَ إِلَيۡكَ مِن رَّبِّكَۖ وَإِن لَّمۡ تَفۡعَلۡ فَمَا بَلَّغۡتَ رِسَالَتَهُۥۚ وَٱللَّهُ يَعۡصِمُكَ مِنَ ٱلنَّاسِۗ إِنَّ ٱللَّهَ لَا يَهۡدِي ٱلۡقَوۡمَ ٱلۡكَٰفِرِينَ٦٧﴾ [المائ‍دة: ٦٧]  
“হে রাসূল, আপনার রবের পক্ষ থেকে আপনার নিকট যা নাযিল করা হয়েছে, তা পৌঁছে দিন। আর যদি আপনি না করেন তবে আপনি তাঁর রিসালাত পৌঁছালেন না। আর আল্লাহ আপনাকে মানুষ থেকে রক্ষা করবেন। নিশ্চয় আল্লাহ কাফির সম্প্রদায়কে হিদায়াত করেন না”। [সূরা আল-মায়েদা, আয়াত: ৬৭]
ইমাম যুহরী রহ. বলেছেন, আল্লাহর পক্ষ থেকে রিসালা তথা অহী, আর রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পক্ষ থেকে তাবলিগ তথা পৌঁছে দেওয়া আর আমাদের পক্ষ থেকে তাসলিম তথা আত্মসমর্পণ করা ও মেনে নেওয়া।  
عَنْ عَائِشَةَ، قَالَتْ: «مَنْ حَدَّثَكَ أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَتَمَ شَيْئًا مِنَ الوَحْيِ فَلاَ تُصَدِّقْهُ، إِنَّ اللَّهَ تَعَالَى يَقُولُ»: ﴿ ۞يَٰٓأَيُّهَا ٱلرَّسُولُ بَلِّغۡ مَآ أُنزِلَ إِلَيۡكَ مِن رَّبِّكَۖ وَإِن لَّمۡ تَفۡعَلۡ فَمَا بَلَّغۡتَ رِسَالَتَهُۥ ٦٧ ﴾ [المائ‍دة: ٦٧]  
আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, তোমাকে যে বলবে, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (অহীর) কিছু জিনিস গোপন করেছেন তাকে তুমি সত্যবাদী মনে করো না। মহান আল্লাহ বলেছেন, “হে রাসূল! আপনার রবের পক্ষ থেকে আপনার কাছে যা অবতীর্ণ হয়েছে, তা প্রচার করুন, আর যদি আপনি না করেন তবে আপনি তাঁর রিসালাত পৌঁছালেন না”। [সূরা আল-মায়েদা, আয়াত: ৬৭]
সহীহ, সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৭৫৩১।

১০- পরিচ্ছেদ: অহী নাযিলের সময় আসমানবাসীর অবস্থার বিবরণ
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، يَبْلُغُ بِهِ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: " إِذَا قَضَى اللَّهُ الأَمْرَ فِي السَّمَاءِ، ضَرَبَتِ المَلاَئِكَةُ بِأَجْنِحَتِهَا خُضْعَانًا لِقَوْلِهِ، كَالسِّلْسِلَةِ عَلَى صَفْوَانٍ - قَالَ عَلِيٌّ: وَقَالَ غَيْرُهُ: صَفْوَانٍ يَنْفُذُهُمْ ذَلِكَ - فَإِذَا فُزِّعَ عَنْ قُلُوبِهِمْ، قَالُوا: مَاذَا قَالَ رَبُّكُمْ، قَالُوا لِلَّذِي قَالَ: الحَقَّ، وَهُوَ العَلِيُّ الكَبِيرُ، فَيَسْمَعُهَا مُسْتَرِقُو السَّمْعِ، وَمُسْتَرِقُو السَّمْعِ هَكَذَا وَاحِدٌ فَوْقَ آخَرَ - وَوَصَفَ سُفْيَانُ بِيَدِهِ، وَفَرَّجَ بَيْنَ أَصَابِعِ يَدِهِ اليُمْنَى، نَصَبَهَا بَعْضَهَا فَوْقَ بَعْضٍ - فَرُبَّمَا أَدْرَكَ الشِّهَابُ المُسْتَمِعَ قَبْلَ أَنْ يَرْمِيَ بِهَا إِلَى صَاحِبِهِ فَيُحْرِقَهُ، وَرُبَّمَا لَمْ يُدْرِكْهُ حَتَّى يَرْمِيَ بِهَا إِلَى الَّذِي يَلِيهِ، إِلَى الَّذِي هُوَ أَسْفَلَ مِنْهُ، حَتَّى يُلْقُوهَا إِلَى الأَرْضِ - وَرُبَّمَا قَالَ سُفْيَانُ: حَتَّى تَنْتَهِيَ إِلَى الأَرْضِ - فَتُلْقَى عَلَى فَمِ السَّاحِرِ، فَيَكْذِبُ مَعَهَا مِائَةَ كَذْبَةٍ، فَيُصَدَّقُ فَيَقُولُونَ: أَلَمْ يُخْبِرْنَا يَوْمَ كَذَا وَكَذَا، يَكُونُ كَذَا وَكَذَا، فَوَجَدْنَاهُ حَقًّا؟ لِلْكَلِمَةِ الَّتِي سُمِعَتْ مِنَ السَّمَاءِ " حَدَّثَنَا عَلِيُّ بْنُ عَبْدِ اللَّهِ، حَدَّثَنَا سُفْيَانُ، حَدَّثَنَا عَمْرٌو، عَنْ عِكْرِمَةَ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ: «إِذَا قَضَى اللَّهُ الأَمْرَ»، وَزَادَ «وَالكَاهِنِ»، وَحَدَّثَنَا عَلِيُّ بْنُ عَبْدِ اللَّهِ، حَدَّثَنَا سُفْيَانُ، فَقَالَ: قَالَ عَمْرٌو: سَمِعْتُ عِكْرِمَةَ، حَدَّثَنَا أَبُو هُرَيْرَةَ، قَالَ: «إِذَا قَضَى اللَّهُ الأَمْرَ»، وَقَالَ: «عَلَى فَمِ السَّاحِرِ» قُلْتُ لِسُفْيَانَ: أَأَنْتَ سَمِعْتَ عَمْرًا؟ قَالَ: سَمِعْتُ عِكْرِمَةَ، قَالَ: سَمِعْتُ أَبَا هُرَيْرَةَ؟ قَالَ: نَعَمْ، قُلْتُ لِسُفْيَانَ: إِنَّ إِنْسَانًا رَوَى عَنْكَ، عَنْ عَمْرٍو، عَنْ عِكْرِمَةَ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ وَيَرْفَعُهُ أَنَّهُ قَرَأَ: «فُرِّغَ»، قَالَ سُفْيَانُ: هَكَذَا قَرَأَ عَمْرٌو، فَلاَ أَدْرِي سَمِعَهُ هَكَذَا أَمْ لاَ، قَالَ سُفْيَانُ: وَهِيَ قِرَاءَتُنَا.
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেছেন, যখন আল্লাহ তা’আলা আকাশের কোনো বিষয়ের সিদ্ধান্ত নেন, তখন ফিরিশতারা তার কথা শোনার জন্য অতি বিনয়ের সাথে নিজ নিজ পালক ঝাড়তে থাকে মসৃণ পাথরের উপর জিঞ্জীরের শব্দের মতো। আলি ইবনুল মাদীনী বলেন,صَفْوَان  এর মধ্যে ফা বর্ণ সাকিন যুক্ত এবং অন্যরা বলেন, ফাতাহ যুক্ত। এভাবে আল্লাহ তা‘আলা তার বাণী ফিরিশতাদের পৌঁছান। যখন ফিরিশতাদের অন্তর থেকে ভয় দূরীভূত হয় তখন তারা পরস্পরকে জিজ্ঞেস করে, তোমাদের প্রভু কী বলেছেন? তখন তারা বলেন, যা সত্য তিনি তাই বলেছেন এবং তিনি সর্বোচ্চ ও সুমহান”। চুরি করে কান লাগিয়ে (শয়তানরা) তা শুনে নেয়। শোনার জন্য শয়তানগুলো একের ওপর এক এভাবে থাকে। সুফিয়ান ডান হাতের আঙ্গুলের উপর অন্য আঙ্গুল রেখে হাতের ইশারায় ব্যপারটা প্রকাশ করলেন। তারপর কখনো আগুনের ফুলকি শ্রবণকারীকে তার সাথীর কাছে এ কথাটি পৌঁছানোর আগেই আঘাত করে এবং তাকে জ্বালিয়ে দেয়। আবার কখনও সে ফুলকি প্রথম শ্রবণকারী শয়তান পর্যন্ত পোঁছার পূর্বেই সে তার নিচের সাথীকে খবরটি জানিয়ে দেয়। এমনি করে এ কথা পৃথিবী পর্যন্ত পৌঁছে দেয়। কখনও সুফিয়ান বলেছেন, এমনি করে পৃথিবী পর্যন্ত পোঁছে যায়। তারপর তা জাদুকরের মুখে ঢেলে দেওয়া হয় এবং সে তার সাথে শত মিথ্যা মিলিয়ে প্রচার করে। তাই তার কথা সত্য হয়ে যায়। তখন লোকেরা বলতে থাকে যে, দেখ এ জাদুকর আমাদের কাছে অমুক অমুক দিন অমুক অমুক কথা বলেছিল, আমরা তা সঠিক পেয়েছি। বস্তুত আসমান থেকে শোনা কথার কারণেই তা সত্যে পরিণত হয়েছে”।
আলী ইবন আব্দুল্লাহ থেকে, তিনি সুফিয়ান থেকে, তিনি ‘আমর থেকে, তিনি ইকরিমা থেকে এবং তিনি আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণনা করেন, “যখন আল্লাহ তা‘আলা কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন”, এ বর্ণনায় জ্যোতির্বিদ «الكَاهِنِ» কথাটি অতিরিক্ত। আর আলী ইবন আব্দুল্লাহ সুফিয়ান থেকে, তিনি ‘আমর থেকে, তিনি ইকরিমা থেকে এবং তিনি আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণনা করেন, এতে “যখন আল্লাহ তা‘আলা কোনো ব্যপারে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। এ বর্ণনায় «عَلَى فَمِ السَّاحِرِ» জাদুকরের মুখের উপর উল্লেখ করেছেন। আলী ইবন আব্দুল্লাহ বলেন, আমি সুফিয়ানকে জিজ্ঞেস করলাম, আপনি কি ‘আমর থেকে শুনেছেন? তিনি বলেছেন, আমি ইকরিমা থেকে শুনেছি। তিনি বলেন, আমি আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে শুনেছি। আমি (আলী ইবন আব্দুল্লাহ) সুফিয়ান রহ. কে বললাম, কেউ কেউ আপনার থেকে, আপনি ‘আমর থেকে, তিনি ইকরিমা থেকে, তিনি আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে এবং তিনি রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে মারফু‘ সূত্রে বর্ণনা করেন এবং এতে «فُرِّغَ» শব্দ রয়েছে। সুফিয়ান রহ. বলেন, ‘আমর রহ. এভাবেই পড়েছেন। তিনি এভাবেই শুনেছেন কী না আমি জানি না। সুফিয়ান রহ. বলেন, এটি আমাদের কিরাআত।
সহীহ, সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৪৭০১।
عَنْ عَبْدِ اللَّهِ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِذَا تَكَلَّمَ اللَّهُ بِالْوَحْيِ، سَمِعَ أَهْلُ السَّمَاءِ لِلسَّمَاءِ صَلْصَلَةً كَجَرِّ السِّلْسِلَةِ عَلَى الصَّفَا، فَيُصْعَقُونَ، فَلَا يَزَالُونَ كَذَلِكَ حَتَّى يَأْتِيَهُمْ جِبْرِيلُ، حَتَّى إِذَا جَاءَهُمْ جِبْرِيلُ فُزِّعَ عَنْ قُلُوبِهِمْ» قَالَ: " فَيَقُولُونَ: يَا جِبْرِيلُ مَاذَا قَالَ رَبُّكَ؟ فَيَقُولُ: الْحَقَّ، فَيَقُولُونَ: الْحَقَّ، الْحَقَّ «.
আব্দুল্লাহ ইবন মাস‘উদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম  বলেছেন, “যখন আল্লাহ তা‘আলা অহী প্রেরণের জন্য কথা বলেন, তখন এক আসমানের অধিবাসী আসমান থেকে এরূপ শব্দ শোনে যে, যেমন পরিষ্কার পাথরের উপর লোহার শিকল টানলে শব্দ হয়। যা শুনে তারা সবাই বেহুশ হয়ে পড়ে এবং জিবরীল আলাইহিস সালাম তাদের কাছে না আসা পর্যন্ত তারা এ অবস্থায় থাকে। এরপর জিবরীল আলাইহিস সালাম যখন তাদের কাছে আসে, তখন তারা জ্ঞানপ্রাপ্ত হয়ে বলে, হে জিবরীল! আপনার রব কী বলেছেন? তিনি বলেন, তিনি সত্য বলেছেন। একথা শুনে সকল ফিরিশতা বলতে থাকে, সত্য বলেছেন, সত্য বলেছেন”।
সহীহ, আবু দাউদ, হাদীস নং ৪৭৩৮; ইবন খুযাইমা, হাদীস নং ২৮০; ইবন হিব্বান, হাদীস নং ৩৭।  

১১- পরিচ্ছেদ: এক আয়াত দু’বারে নাযিল হওয়া
عَنِ البَرَاءِ، قَالَ: لَمَّا نَزَلَتْ: ﴿لَّا يَسۡتَوِي ٱلۡقَٰعِدُونَ مِنَ ٱلۡمُؤۡمِنِينَ٩٥﴾ [النساء : ٩٥]  ﴿وَٱلۡمُجَٰهِدُونَ فِي سَبِيلِ ٱللَّهِ٩٥﴾ [النساء : ٩٥]  ، قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «ادْعُ لِي زَيْدًا وَلْيَجِئْ بِاللَّوْحِ وَالدَّوَاةِ وَالكَتِفِ - أَوِ الكَتِفِ وَالدَّوَاةِ -» ثُمَّ قَالَ: " اكْتُبْ ﴿لَّا يَسۡتَوِي ٱلۡقَٰعِدُونَ٩٥﴾ [النساء : ٩٥]" وَخَلْفَ ظَهْرِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَمْرُو بْنُ أُمِّ مَكْتُومٍ الأَعْمَى، قَالَ: يَا رَسُولَ اللَّهِ فَمَا تَأْمُرُنِي، فَإِنِّي رَجُلٌ ضَرِيرُ البَصَرِ؟ فَنَزَلَتْ مَكَانَهَا: ﴿لَّا يَسۡتَوِي ٱلۡقَٰعِدُونَ مِنَ ٱلۡمُؤۡمِنِينَ ٩٥﴾ [النساء : ٩٥]  ﴿وَٱلۡمُجَٰهِدُونَ فِي سَبِيلِ ٱللَّهِ٩٥﴾ ﴿غَيۡرُ أُوْلِي ٱلضَّرَرِ ٩٥ ﴾ [النساء : ٩٥]  
বারা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
﴿لَّا يَسۡتَوِي ٱلۡقَٰعِدُونَ مِنَ ٱلۡمُؤۡمِنِينَ٩٥﴾ [النساء : ٩٥]  ﴿وَٱلۡمُجَٰهِدُونَ فِي سَبِيلِ ٱللَّهِ٩٥﴾ [النساء : ٩٥]
“মুমিনদের মধ্যে যারা ঘরে বসে থাকে এবং আল্লাহর পথে জিহাদ করে তারা পরস্প সমান নয়”। [সূরা আন-নিসা, আয়াত: ৯৫]
আয়াতটি নাযিল হলে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যায়েদকে আমার কাছে ডেকে আনো এবং তাকে বলো, সে যেন কাষ্ঠখণ্ড, দোয়াত এবং কাঁধের হাড়, বর্ণনাকারী বলেন, অথবা তিনি বলেছেন, কাঁধের হাড় এবং দোয়াত নিয়ে আসে। এরপর তিনি বললেন, লিখো,
 ﴿لَّا يَسۡتَوِي ٱلۡقَٰعِدُونَ٩٥﴾ [النساء : ٩٥]
এ সময় অন্ধ সাহাবী ‘আমর ইবন উম্মে মাকতূম রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পেছনে বসা ছিলেন। তিনি বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ্! আমি তো অন্ধ, আমার ব্যাপারে আপনার কী নির্দেশ? এ কথার প্রেক্ষিতে পূর্বোক্ত আয়াতের পরিবর্তে নাযিল হলো,
﴿لَّا يَسۡتَوِي ٱلۡقَٰعِدُونَ مِنَ ٱلۡمُؤۡمِنِينَ غَيۡرُ أُوْلِي ٱلضَّرَرِ ٩٥ ﴾ [النساء : ٩٥]  
“বসে থাকা মুমিনগণ, যারা ওযরগ্রস্ত নয় তারা এক সমান নয়”। [সূরা আন-নিসা, আয়াত: ৯৫]
মুত্তাফাকুন ‘আলাইহি, সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৪৯৯০।
عَنْ البَرَاءِ بْنِ عَازِبٍ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «ائْتُونِي بِالكَتِفِ، أَوِ اللَّوْحِ»، فَكَتَبَ: ﴿لَّا يَسۡتَوِي ٱلۡقَٰعِدُونَ مِنَ ٱلۡمُؤۡمِنِينَ٩٥﴾ [النساء : ٩٥] ، وَعَمْرُو ابْنُ أُمِّ مَكْتُومٍ خَلْفَ ظَهْرِهِ، فَقَالَ: هَلْ لِي مِنْ رُخْصَةٍ؟ فَنَزَلَتْ: ﴿غَيۡرُ أُوْلِي ٱلضَّرَرِ ٩٥ ﴾ [النساء : ٩٥] .
বারা ইবন আযিব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদিন বললেন, “উটের কাঁধের হাড় বা কাষ্ঠফলক নিয়ে এসো। এরপর তিনি লিখতে বললেন,
﴿لَّا يَسۡتَوِي ٱلۡقَٰعِدُونَ مِنَ ٱلۡمُؤۡمِنِينَ٩٥﴾ [النساء : ٩٥]
“মুমিনদের মধ্যে যারা ঘরে বসে থাকে তারা পরস্পর সমান নয়”। [সূরা আন-নিসা, আয়াত: ৯৫]
‘আমর ইবন উম্মে মাকতূম রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু এ সময় রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পিঠের পিছনে ছিলেন। তিনি বললেন, আমার জন্য কি কোনো অবকাশ আছে? তখন নাযিল হলো,
﴿غَيۡرُ أُوْلِي ٱلضَّرَرِ ٩٥ ﴾ [النساء : ٩٥] .
“যারা অক্ষম তারা ছাড়া”। [সূরা আন-নিসা, আয়াত: ৯৫]
সহীহ, তিরমিযী, হাদীস নং ১৬৭০; নাসায়ী, হাদীস নং ৩০৪২; ইবন হিব্বান, হাদীস নং ৪১। ‬

১২- পরিচ্ছেদ: রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মৃত্যুর আগ পর্যন্ত অহী নাযিল বন্ধ ছিলো না
عَنِ أَنَس بْن مَالِكٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ: «أَنَّ اللَّهَ تَعَالَى تَابَعَ عَلَى رَسُولِهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الوَحْيَ قَبْلَ وَفَاتِهِ، حَتَّى تَوَفَّاهُ أَكْثَرَ مَا كَانَ الوَحْيُ، ثُمَّ تُوُفِّيَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بَعْدُ»
আনাস ইবন মালিক রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, “আল্লাহ তা‘আলা রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি তাঁর মৃত্যুর আগ পর্যন্ত ধারাবাহিকভাবে অহী নাযিল করেন। তাঁর মৃত্যুর পূর্বে অন্যান্য সময়ের চেয়ে বেশি অহী নাযিল হতো। এরপর তিনি মারা যান”।
মুত্তাফাকুন ‘আলাইহি, সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৪৯৮২; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৩০১৬।
হাফিয ইবন হাজার আসকালনী রহ. ‘ফাতহুল বারী’ (৮/৯) এ বলেছেন: “হাদীসে উল্লিখিত, «حَتَّى تَوَفَّاهُ أَكْثَرَ مَا كَانَ الوَحْيُ» এর অর্থ হলো, তাঁর মৃত্যুর পূর্বে অন্যান্য সময়ের চেয়ে বেশি অহী নাযিল হতো। এর হিকমত ছিলো মক্কা বিজয়ের পরে বিভিন্ন অঞ্চল থেকে নানা প্রতিনিধিদল আসতে থাকেন। তারা শরী‘আতের নানা বিষয় জানতে চেয়ে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে অনেক প্রশ্ন করেন। ফলে অধিক হারে অহী নাযিল হয়। এটি রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রথম জীবনের চেয়ে শেষ জীবনে বেশি ঘটেছে। কেননা রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মক্কী জীবনে তেমন কোনো বড় সূরা নাযিল হয় নি। হিজরতের পরে মাদানী জীবনে আহকাম সম্পৃক্ত অনেক বড় সূরা নাযিল হয়। তবে তাঁর শেষ জীবনে উপরোক্ত কারণে বেশি অহী নাযিল হয়”।

১৩- পরিচ্ছেদ: রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মৃত্যুর পরে অহী নাযিল বন্ধ হয়ে যায়
عَنْ أَنَسٍ، قَالَ: قَالَ أَبُو بَكْرٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ، بَعْدَ وَفَاةِ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لِعُمَرَ: »انْطَلِقْ بِنَا إِلَى أُمِّ أَيْمَنَ نَزُورُهَا، كَمَا كَانَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَزُورُهَا، فَلَمَّا انْتَهَيْنَا إِلَيْهَا بَكَتْ، فَقَالَا لَهَا: مَا يُبْكِيكِ؟ مَا عِنْدَ اللهِ خَيْرٌ لِرَسُولِهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ؟ فَقَالَتْ: مَا أَبْكِي أَنْ لَا أَكُونَ أَعْلَمُ أَنَّ مَا عِنْدَ اللهِ خَيْرٌ لِرَسُولِهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، وَلَكِنْ أَبْكِي أَنَّ الْوَحْيَ قَدِ انْقَطَعَ مِنَ السَّمَاءِ، فَهَيَّجَتْهُمَا عَلَى الْبُكَاءِ. فَجَعَلَا يَبْكِيَانِ مَعَهَا«.
আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মারা গেলে আবু বকর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু উমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুকে বললেন, চলো উম্মে আইমান রাদিয়াল্লাহু ‘আনহার কাছে যাই, তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে যাবো যেমন রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার সাক্ষাতে যেতেন। যখন আমরা তার কাছে গেলাম, তখন তিনি কাঁদতে লাগলেন। তারা দুজন বললেন, তুমি কাঁদছ কেন? আল্লাহর কাছে যা কিছু রয়েছে তা তাঁর রাসুলের জন্য বেশি উত্তম। উম্মে আইমান রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা বললেন, এজন্য আমি কাঁদছি না যে, আমি জানি না আল্লাহর কাছে যা কিছু আছে তা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জন্য উত্তম; বরং এ জন্য আমি কাঁদছি যে, আসমান থেকে অহী আসা বন্ধ হয়ে গেলো। উম্মে আইমানের এ কথা তাদের মধ্যেও কান্নার আবেগ সৃষ্টি করল। সুতরাং তারাও তার সাথে কাঁদতে লাগলেন”।
সহীহ, সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৪৫৪।

কিতাবুল ঈমান
ঈমানের বৈশিষ্ট্য সম্পর্কিত পরিচ্ছেদসমূহ
১- পরিচ্ছেদ: ঈমান, ইসলাম ও ইহসান সম্পর্কে জিবরীল আলাইহিস সালামের প্রশ্ন
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ: كَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بَارِزًا يَوْمًا لِلنَّاسِ، فَأَتَاهُ رجلٌ فَقَالَ: مَا الإِيمَانُ؟ قَالَ: «الإِيمَانُ أَنْ تُؤْمِنَ بِاللَّهِ وَمَلاَئِكَتِهِ، وَكُتُبِهِ، وَبِلِقَائِهِ، وَرُسُلِهِ وَتُؤْمِنَ بِالْبَعْثِ». قَالَ: مَا الإِسْلاَمُ؟ قَالَ: " الإِسْلاَمُ: أَنْ تَعْبُدَ اللَّهَ، وَلاَ تُشْرِكَ بِهِ شَيْئًا، وَتُقِيمَ الصَّلاَةَ، وَتُؤَدِّيَ الزَّكَاةَ المَفْرُوضَةَ، وَتَصُومَ رَمَضَانَ ". قَالَ: مَا الإِحْسَانُ؟ قَالَ: «أَنْ تَعْبُدَ اللَّهَ كَأَنَّكَ تَرَاهُ، فَإِنْ لَمْ تَكُنْ تَرَاهُ فَإِنَّهُ يَرَاكَ»، قَالَ: مَتَى السَّاعَةُ؟ قَالَ: " مَا المَسْئُولُ عَنْهَا بِأَعْلَمَ مِنَ السَّائِلِ، وَسَأُخْبِرُكَ عَنْ أَشْرَاطِهَا: إِذَا وَلَدَتِ الأَمَةُ رَبَّهَا، وَإِذَا تَطَاوَلَ رُعَاةُ الإِبِلِ البُهْمُ فِي البُنْيَانِ، فِي خَمْسٍ لاَ يَعْلَمُهُنَّ إِلَّا اللَّهُ " ثُمَّ تَلاَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: ﴿إِنَّ ٱللَّهَ عِندَهُۥ عِلۡمُ ٱلسَّاعَةِ﴾ [لقمان: ٣٤] ، ثُمَّ أَدْبَرَ فَقَالَ: «رُدُّوهُ» فَلَمْ يَرَوْا شَيْئًا، فَقَالَ: «هَذَا جِبْرِيلُ جَاءَ يُعَلِّمُ النَّاسَ دِينَهُمْ».
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদিন রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জনসমক্ষে বসা ছিলেন। এমন সময় তাঁর কাছে এক ব্যক্তি এসে জিজ্ঞাসা করলেন ‘ঈমান কী?’ তিনি বললেন, ‘ঈমান হলো, আপনি বিশ্বাস রাখবেন আল্লাহর প্রতি, তাঁর ফিরিশতাগণের প্রতি, (কিয়ামতের দিন) তাঁর সঙ্গে সাক্ষাতের প্রতি এবং তাঁর রাসূলগণের প্রতি। আপনি আরো বিশ্বাস রাখবেন পুনরুত্থানের প্রতি।’ তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, ‘ইসলাম কী?’ তিনি বললেন, ‘ইসলাম হলো, আপনি আল্লাহর ইবাদত করবেন এবং তাঁর সঙ্গে কাউকে শরীক করবেন না, সালাত কায়েম করবেন, ফরয যাকাত আদায় করবেন এবং রমযানের সাওম পালন করবেন।’ ঐ ব্যক্তি জিজ্ঞাসা করলেন, ‘ইহসান কী?’ তিনি বললেন, ‘আপনি এমন ভাবে আল্লাহর ইবাদত করবেন যেন আপনি তাঁকে দেখছেন, আর যদি আপনি তাঁকে দেখতে না পান তবে (বিশ্বাস রাখবেন যে,) তিনি আপনাকে দেখছেন।’ ঐ ব্যক্তি জিজ্ঞাসা করলেন, ‘কিয়ামত কবে হবে?’ তিনি বললেন, ‘এ ব্যাপারে যাকে জিজ্ঞাসা করা হচ্ছে, তিনি জিজ্ঞাসাকারী অপেক্ষা বেশি জানেন না। তবে আমি আপনাকে কিয়ামতের আলামতসমূহ বলে দিচ্ছি, বাঁদী যখন তার প্রভুকে প্রসব করবে এবং উটের নগণ্য রাখালেরা যখন বড় বড় অট্টালিকা নির্মাণে প্রতিযোগিতা করবে। (কিয়ামতের বিষয়) সেই পাঁচটি জিনিসের অন্তর্ভুক্ত, যা আল্লাহ ছাড়া কেউ জানে না।’ এরপর রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই আয়াতটি শেষ পর্যন্ত তিলাওয়াত করলেন,
﴿إِنَّ ٱللَّهَ عِندَهُۥ عِلۡمُ ٱلسَّاعَةِ﴾ [لقمان: ٣٤]
“কিয়ামতের জ্ঞান কেবল আল্লাহই নিকট।” [সূরা লুকমান, আয়াত: ৩৪]।
এরপর ঐ ব্যক্তি চলে গেলে তিনি বললেন, ‘তোমরা তাকে ফিরিয়ে আনো।’ তারা কিছুই দেখতে পেল না। তখন তিনি বললেন, ‘ইনি জিবরীল আলাইহিস সালাম। লোকদের দীন শেখাতে এসেছিলেন”।
মুত্তাফাকুন ‘আলাইহি, সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৫০; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৯।
عَنْ عُمَر بْن الْخَطَّابِ قَالَ: بَيْنَمَا نَحْنُ عِنْدَ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ذَاتَ يَوْمٍ، إِذْ طَلَعَ عَلَيْنَا رَجُلٌ شَدِيدُ بَيَاضِ الثِّيَابِ، شَدِيدُ سَوَادِ الشَّعَرِ، لَا يُرَى عَلَيْهِ أَثَرُ السَّفَرِ، وَلَا يَعْرِفُهُ مِنَّا أَحَدٌ، حَتَّى جَلَسَ إِلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَأَسْنَدَ رُكْبَتَيْهِ إِلَى رُكْبَتَيْهِ، وَوَضَعَ كَفَّيْهِ عَلَى فَخِذَيْهِ، وَقَالَ: يَا مُحَمَّدُ أَخْبِرْنِي عَنِ الْإِسْلَامِ، فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «الْإِسْلَامُ أَنْ تَشْهَدَ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ وَأَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، وَتُقِيمَ الصَّلَاةَ، وَتُؤْتِيَ الزَّكَاةَ، وَتَصُومَ رَمَضَانَ، وَتَحُجَّ الْبَيْتَ إِنِ اسْتَطَعْتَ إِلَيْهِ سَبِيلًا»، قَالَ: صَدَقْتَ، قَالَ: فَعَجِبْنَا لَهُ يَسْأَلُهُ، وَيُصَدِّقُهُ، قَالَ: فَأَخْبِرْنِي عَنِ الْإِيمَانِ، قَالَ: «أَنْ تُؤْمِنَ بِاللهِ، وَمَلَائِكَتِهِ، وَكُتُبِهِ، وَرُسُلِهِ، وَالْيَوْمِ الْآخِرِ، وَتُؤْمِنَ بِالْقَدَرِ خَيْرِهِ وَشَرِّهِ»، قَالَ: صَدَقْتَ، قَالَ: فَأَخْبِرْنِي عَنِ الْإِحْسَانِ، قَالَ: «أَنْ تَعْبُدَ اللهَ كَأَنَّكَ تَرَاهُ، فَإِنْ لَمْ تَكُنْ تَرَاهُ فَإِنَّهُ يَرَاكَ»، قَالَ: فَأَخْبِرْنِي عَنِ السَّاعَةِ، قَالَ: «مَا الْمَسْئُولُ عَنْهَا بِأَعْلَمَ مِنَ السَّائِلِ» قَالَ: فَأَخْبِرْنِي عَنْ أَمَارَتِهَا، قَالَ: «أَنْ تَلِدَ الْأَمَةُ رَبَّتَهَا، وَأَنْ تَرَى الْحُفَاةَ الْعُرَاةَ الْعَالَةَ رِعَاءَ الشَّاءِ يَتَطَاوَلُونَ فِي الْبُنْيَانِ»، قَالَ: ثُمَّ انْطَلَقَ فَلَبِثْتُ مَلِيًّا، ثُمَّ قَالَ لِي: «يَا عُمَرُ أَتَدْرِي مَنِ السَّائِلُ؟» قُلْتُ: اللهُ وَرَسُولُهُ أَعْلَمُ، قَالَ: «فَإِنَّهُ جِبْرِيلُ أَتَاكُمْ يُعَلِّمُكُمْ دِينَكُمْ».
উমার ইবন খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, “একবার আমরা রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সমীপে অবস্থান করছিলাম। এমন সময় একজন লোক আমাদের কাছে এসে হাযির হলেন। তার পরিধানের কাপড় ছিল সাদা ধবধবে, মাথার কেশ ছিল কালো কুচকুচে। তার মধ্যে সফরের কোনো চিহ্ন ছিল না। আমরা কেউ তাকে চিনি না। তিনি নিজের দুই হাঁটু নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দুই হাঁটুর সাথে লাগিয়ে বসে পড়লেন আর তার দুই হাত নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দুই উরুর উপর রাখলেন। তারপর তিনি বললেন, হে মুহাম্মাদ! আমাকে ইসলাম সস্পর্কে অবহিত করুন। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ইসলাম হলো, তুমি এ কথার সাক্ষ্য প্রদান করবে যে, আল্লাহ ব্যতীত কোনো সত্য ইলাহ নেই এবং নিশ্চয়ই মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর রাসূল, সালাত কায়েম করবে, যাকাত আদায় করবে, রমযানের সাওম পালন করবে এবং বাইতুল্লাহ পৌঁছার সামর্থ্য থাকলে হজ পালন করবে। আগন্তুক বললেন, আপনি ঠিকই বলেছেন। তার কথা শুনে আমরা বিষ্মিত হলাম যে, তিনিই প্রশ্ন করেছেন আর তিনিই-তা সত্যায়িত করছেন। আগন্তুক বললেন, আমাকে ঈমান সম্পর্কে অবহিত করুন। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ঈমান হলো আল্লাহর প্রতি, তার ফিরিশতাদের প্রতি, তার কিতাবসমূহের প্রতি, তার রাসূলগণের প্রতি এবং আখিরাতের প্রতি ঈমান আনবে, আর তাকদিরের ভাল-মন্দের প্রতি ঈমান রাখবে। আগন্তুক বললেন,আপনি ঠিকই বলেছেন। তারপর বললেন, আমাকে ইহসান সম্পর্কে অবহিত করুন। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ইহসান হলো, এমনভাবে ইবাদত-বন্দেগী করবে যেন তুমি আল্লাহকে দেখছ, যদি তুমি তাকে নাও দেখ, তাহলে এ বিশ্বাস রাখবে যে, তিনি তোমাকে দেখছেন। আগন্তুক বললেন, আমাকে কিয়ামত সস্পর্কে অবহিত করুন। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এ বিষয়ে প্রশ্নকারীর চাইতে যাকে জিজ্ঞেস করা হয়েছে তিনি অধিক অবহিত নন। আগন্তুক বললেন, আমাকে এর আলামত সস্পর্কে অবহিত করুন। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তা হলো এই যে, দাসী তার প্রভুর জননী হবে এবং নগ্নপদ, বিবস্ত্রদেহ দরিদ্র মেষপালকদের বিরাট বিরাট অট্টালিকার প্রতিযোগিতায় গর্বিত দেখতে পাবে। উমার ইবন খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বললেন, পরে আগন্তুক প্রস্থান করলেন। আমি বেশ কিছুক্ষণ অপেক্ষা করলাম। তারপর রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বললেন, হে উমার! তুমি জানো, এই প্রশ্নকারী কে? আমি বললাম, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলই সম্যক জ্ঞাত আছেন। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তিনি তো জিবরীল। তোমাদের তিনি দীন শিক্ষা দিতে এসেছিলেন”।
সহীহ, সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৮, কয়েকটি সনদে। যাতে ইয়াহইয়া ইবন ই‘য়ামার রহ. থেকে বর্ণিত,
«أَوَّلَ مَنْ قَالَ فِي الْقَدَرِ بِالْبَصْرَةِ مَعْبَدٌ الْجُهَنِيُّ، فَانْطَلَقْتُ أَنَا وَحُمَيْدُ بْنُ عَبْدِ الرَّحْمَنِ الْحِمْيَرِيُّ حَاجَّيْنِ - أَوْ مُعْتَمِرَيْنِ - فَقُلْنَا: لَوْ لَقِينَا أَحَدًا مَنْ أَصْحَابِ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَسَأَلْنَاهُ عَمَّا يَقُولُ هَؤُلَاءِ فِي الْقَدَرِ، فَوُفِّقَ لَنَا عَبْدُ اللهِ بْنُ عُمَرَ بْنِ الْخَطَّابِ دَاخِلًا الْمَسْجِدَ، فَاكْتَنَفْتُهُ أَنَا وَصَاحِبِي أَحَدُنَا عَنْ يَمِينِهِ، وَالْآخَرُ عَنْ شِمَالِهِ، فَظَنَنْتُ أَنَّ صَاحِبِي سَيَكِلُ الْكَلَامَ إِلَيَّ، فَقُلْتُ: أَبَا عَبْدِ الرَّحْمَنِ إِنَّهُ قَدْ ظَهَرَ قِبَلَنَا نَاسٌ يَقْرَءُونَ الْقُرْآنَ، وَيَتَقَفَّرُونَ الْعِلْمَ، وَذَكَرَ مِنْ شَأْنِهِمْ، وَأَنَّهُمْ يَزْعُمُونَ أَنْ لَا قَدَرَ، وَأَنَّ الْأَمْرَ أُنُفٌ، قَالَ: «فَإِذَا لَقِيتَ أُولَئِكَ فَأَخْبِرْهُمْ أَنِّي بَرِيءٌ مِنْهُمْ، وَأَنَّهُمْ بُرَآءُ مِنِّي»، وَالَّذِي يَحْلِفُ بِهِ عَبْدُ اللهِ بْنُ عُمَرَ «لَوْ أَنَّ لِأَحَدِهِمْ مِثْلَ أُحُدٍ ذَهَبًا، فَأَنْفَقَهُ مَا قَبِلَ اللهُ مِنْهُ حَتَّى يُؤْمِنَ بِالْقَدَرِ» ثُمَّ قَالَ: حدثني أبي عمر بن الخطاب رضي الله عنه. فذكر الحديث.
“সর্বপ্রথম ‘কাদর’ (তাকদীরের ভালো-মন্দ) সম্পর্কে বসরা শহরে ‘মা‘বাদ আল জুহানী কথা তোলেন। আমি (ইয়াহইয়া ইবন ই‘য়ামার) এবং হুমাইদ ইবন আব্দুর রহমান আল হিমইয়ারী হজ অথবা উমরা আদায়ের জন্য মক্কায় আসলাম। আমরা নিজেদের মধ্যে আলোচনা করছিলাম যে, যদি রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কোনো সাহাবীর সাক্ষাৎ পাই তাহলে তার কাছে এসব লোক তাকদীর সস্পর্কে যা বলে বেড়াচ্ছে, সে বিষয়ে জিজ্ঞেস করতাম। সৌভাগ্যক্রমে আমরা আব্দুল্লাহ ইবন উমার ইবন খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুকে মসজিদে প্রবেশরত অবস্থায় দেখা পাই। আমরা তার কাছে গিয়ে একজন তার ডানপাশে এবং আর একজন বামপাশ দিয়ে তাকে ঘিরে ধরলাম। আমার মনে হলো, আমার সাথী চান যে, আমিই কথা বলি। আমি বললাম, হে আবু আব্দুর রহমান! (আব্দুল্লাহ ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর কুনিয়াত ছিল আবু আব্দুর রহমান) আমার দেশে এমন কতিপয় লোকের আবির্ভাব হয়েছে যারা কুরআন পাঠ করে এবং ইলমে দীন সম্পর্কে গবেষণা করে। তিনি তাদের অবস্থা সস্পর্কে আরো কিছু উল্লেখ করেন এবং বলেন যে, তারা মনে করে তাকদীর বলতে কিছু নেই। সবকিছু তাৎক্ষনিকভাবে ঘটে। আব্দুল্লাহ ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বললেন, তাদের সাথে তোমাদের দেখা হলে বলে দিও যে, তাদের সাথে আমার কোনো সস্পর্ক নেই এবং আমার সঙ্গে তাদেরও কোনো সম্পর্ক নেই। আল্লাহর কসম! যার উপর আবদুল্লাহ ইবন উমর শপথ করছে তা হলো, যদি এদের কেউ উহুদ পাহাড় পরিমাণ সোনার মালিক হয় এবং তা আল্লাহর রাস্তায় খরচ করে, তাকদীরের প্রতি ঈমান না আনা পর্যন্ত আল্লাহ তা কবুল করবেন না। তারপর তিনি বললেন, আমাকে আমার পিতা উমার ইবন খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হাদীস শুনিয়েছেন। অতঃপর তিনি পুরো হাদীস বর্ণনা করেন।
হাদীসে উল্লিখিত বাক্য «فَاكْتَنَفْتُهُ أَنَا وَصَاحِبِي» এর অর্থ হলো, আমি ও আমার সাথী তার দুপাশে (একজন ডান পাশে আরেকজন বাম পাশে) ঘিরে ধরলাম।
হাদীসে উল্লিখিত আরেকটি বাক্য «يَتَقَفَّرُونَ الْعِلْمَ» এর অর্থ, তারা ইলমে দীন অনুসরণ করে এবং তা খুঁজে বেড়ায়, تقفر হচ্ছে কোনো কিছুর অনুসরণ করা।
হাদীসে উল্লিখিত আরেকটি বাক্য «أَنَّ الْأَمْرَ أُنُفٌ» এর দ্বারা উদ্দেশ্য হলো সবকিছু তাৎক্ষনিক ভাবে ঘটে। এতে তাকদীর বা কারো ইচ্ছার হাত নেই। যেমন বলা হয়, روضة أنف যেখানে আগের কিছু বিবেচনা করা হয় না,  أنف الشيء কোনো কিছুর আগ্রভাগ।  
ইমাম বাগভী রহ. বলেন, “এ হাদীসে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বাহ্যিক আমলকে ইসলাম এবং অন্তরের বিশ্বাসকে ঈমান বলেছেন। মূলত এ কথা দ্বারা এটা বুঝার সুযোগ নেই যে, আমলসমূহ ঈমানের অংশ নয়। অথবা এটাও বলা যাবে না যে, অন্তরের সত্যায়নকে ইসলাম বলে না। বরং এটা একটি মৌলিক বাক্যের ব্যাখ্যা যে বাক্যটি সবকিছুকেই শামিল করে, আর তা হচ্ছে দীন। আর এ জন্যই রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
«ذلك جِبْرِيلُ أَتَاكُمْ يُعَلِّمُكُمْ أمر دِينَكُمْ».
“তিনি জিবরীল আলাইহিস সালাম। তোমাদেরকে তিনি দীন শিক্ষা দিতে এসেছিলেন”। বস্তুত: ঈমান ও ইসলাম উভয় শব্দ দ্বারাই অন্তরের সত্যায়ন ও আমল বুঝায়। এর প্রমাণ আল্লাহ তা‘আলার বাণী,
﴿إِنَّ ٱلدِّينَ عِندَ ٱللَّهِ ٱلۡإِسۡلَٰمُ﴾ [ال عمران: ١٩]  
“নিশ্চয় আল্লাহর নিকট দীন হচ্ছে ইসলাম”। [সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ১৯]
আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেছেন,
﴿وَرَضِيتُ لَكُمُ ٱلۡإِسۡلَٰمَ دِينٗا﴾ [المائ‍دة: ٣]   “এবং তোমাদের জন্য দীন হিসেবে পছন্দ করলাম ইসলামকে”। [সূরা আল-মায়েদা, আয়াত: ৩]
আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেছেন,
﴿وَمَن يَبۡتَغِ غَيۡرَ ٱلۡإِسۡلَٰمِ دِينٗا فَلَن يُقۡبَلَ مِنۡهُ وَهُوَ فِي ٱلۡأٓخِرَةِ مِنَ ٱلۡخَٰسِرِينَ٨٥﴾ [ال عمران: ٨٥]
“আর যে ইসলাম ছাড়া অন্য কোনো দীন চায়, তবে তার কাছ থেকে তা কখনো গ্রহণ করা হবে না এবং সে আখিরাতে ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে”। [সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ৮৫]
এসব আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন যে, তিনি যে দীনের ওপর রাজি-খুশি ও বান্দাহর থেকে গ্রহণ করবেন তা হলো ইসলাম। আর অন্তরের সত্যায়নের সাথে আমল না থাকলে আল্লাহর কাছে তা গ্রহণযোগ্য ও সন্তুষ্টির পর্যায়ে যাবে না”। শরহে সুন্নাহ, ১/১০-১১।

عَنْ يَحْيَى بْنِ يَعْمرَ، قُلْتُ لِابْنِ عُمَرَ: »إِنَّ عِنْدَنَا رِجَالًا يَزْعُمُونَ أَنَّ الْأَمْرَ بِأَيْدِيهِمْ، فَإِنْ شَاءُوا عَمِلُوا، وَإِنْ شَاءُوا لَمْ يَعْمَلُوا، فَقَالَ: أَخْبِرْهُمْ أَنِّي مِنْهُمْ بَرِيءٌ، وَأَنَّهُمْ مِنِّي بُرَآءُ، ثُمَّ قَالَ: جَاءَ جِبْرِيلُ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَقَالَ: يَا مُحَمَّدُ مَا الْإِسْلَامُ؟ فَقَالَ: "تَعْبُدُ اللهَ لَا تُشْرِكُ بِهِ شَيْئًا، وَتُقِيمُ الصَّلَاةَ، وَتُؤْتِي الزَّكَاةَ، وَتَصُومُ رَمَضَانَ، وَتَحُجُّ الْبَيْتَ " قَالَ: فَإِذَا فَعَلْتُ ذَلِكَ فَأَنَا مُسْلِمٌ؟ قَالَ: " نَعَمْ " قَالَ: صَدَقْتَ، قَالَ: فَمَا الْإِحْسَانُ؟ قَالَ: " تَخْشَى اللهَ تَعَالَى كَأَنَّكَ تَرَاهُ، فَإِنْ لَا تَكُ تَرَاهُ فَإِنَّهُ يَرَاكَ " قَالَ: فَإِذَا فَعَلْتُ ذَلِكَ فَأَنَا مُحْسِنٌ؟ قَالَ: " نَعَمْ " قَالَ: صَدَقْتَ. قَالَ: فَمَا الْإِيمَانُ؟ قَالَ: " تُؤْمِنُ بِاللهِ، وَمَلَائِكَتِهِ، وَكُتُبِهِ، وَرُسُلِهِ، وَالْبَعْثِ مِنْ بَعْدِ الْمَوْتِ، وَالْجَنَّةِ، وَالنَّارِ، وَالْقَدَرِ كُلِّهِ "، قَالَ: فَإِذَا فَعَلْتُ ذَلِكَ فَأَنَا مُؤْمِنٌ؟ قَالَ: " نَعَمْ ". قَالَ: صَدَقْتَ«.
ইয়াহইয়া ইবন ইয়া‘মুর রহ. বলেন, আমি ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমাকে বললাম, আমাদের মধ্যে কিছু লোক আছেন যারা মনে করেন ভালো-মন্দ সবই তাদের হাতে (তাকদীর- বলতে কিছু নেই। সবকিছু তাৎক্ষনিকভাবে ঘটে)। তারা মনে চাইলে আমল করে আর ইচ্ছা করলে আমল ছেড়ে দেয়। ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, তুমি তাদেরকে বলে দাও যে, আমি তাদের দলভুক্ত নই এবং তারাও আমার দলের অন্তর্ভুক্ত নয়। অতঃপর তিনি বলেন, একবার জিবরীল আলাইহিস সালাম রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে এসে বললেন, হে মুহাম্মাদ! ইসলাম কী? তিনি উত্তরে বললেন, ইসলাম হলো, তুমি এ কথার সাক্ষ্য প্রদান করবে যে, আল্লাহ ব্যতীত (সত্য) কোনো ইলাহ নেই এবং নিশ্চয়ই মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর রাসূল, সালাত কায়েম করবে, যাকাত আদায় করবে, রমযানের সাওম পালন করবে এবং বাইতুল্লাহ পৌঁছার সামর্থ্য থাকলে হজ পালন করবে। জিবরীল বললেন, আমি যখন এ কাজগুলো করবো তখন কি আমি মুসলিম? রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হ্যাঁ জিবরীল আলাইহিস সালাম বললেন, আপনি ঠিকই বলেছেন। তারপর বললেন, ইহসান কী? রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ইহসান হলো, এমনভাবে আল্লাহকে ভয় করবে যেন তুমি আল্লাহকে দেখছ। যদি তুমি তাকে নাও দেখো, তাহলে তিনি তোমাকে দেখছেন। জিবরীল বললেন, আমি যখন এ কাজগুলো করবো তখন কি আমি মুহসিন? রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হ্যাঁ জিবরীল আলাইহিস সালাম বললেন, আপনি ঠিকই বলেছেন। তাহলে ঈমান কী? রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ঈমান হলো আল্লাহর প্রতি, তার ফিরিশতাদের প্রতি, তার কিতাবসমূহের প্রতি, তার রাসূলগণের প্রতি এবং মৃত্যুর পরে পুনর্জীবিত হওয়া, জান্নাত, জাহান্নাম আর তাকদীরের ভালো-মন্দের প্রতি ঈমান আনা। জিবরীল বললেন, আমি যখন এ কাজগুলো করবো তখন কি আমি মুমিন? রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হ্যাঁ জিবরীল আলাইহিস সালাম বললেন, আপনি ঠিকই বলেছেন”।
সহীহ, মুসনাদ আহমদ, হাদীস নং ৫৮৫৬।
মুসনাদে আহমদের অন্য বর্ণনায় এসেছে,
عَنِ ابْنِ عُمَرَ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِمِثْلِهِ، قَالَ: وَكَانَ جِبْرِيلُ عَلَيْهِ السَّلَامُ يَأْتِي النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي صُورَةِ دِحْيَةَ. ইনব উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে উপরের হাদীসের ন্যায় অনুরূপ বর্ণনা করেছেন। অতঃপর তিনি বলেন, “জিবরীল আলাইহিস সালাম নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে ‘দেহইয়া কালবী’ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর আকৃতিতে আসতেন”।
সহীহ, মুসনাদ আহমদ, হাদীস নং ৫৮৫৬, ৫৮৫৭।
عَنِ عَبْد اللهِ بْن عَبَّاسٍ قَالَ: جَلَسَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَجْلِسًا لَهُ، فَأَتَاهُ جِبْرِيلُ، فَجَلَسَ بَيْنَ يَدَيْ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، وَاضِعًا كَفَّيْهِ عَلَى رُكْبَتَيْ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَقَالَ: يَا رَسُولَ اللهِ، حَدِّثْنِي مَا الْإِسْلامُ؟ قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: " الْإِسْلامُ أَنْ تُسْلِمَ وَجْهَكَ لِلَّهِ، وَتَشْهَدَ أَنْ لَا إِلَهَ إِلا اللهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيكَ لَهُ، وَأَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُولُهُ " قَالَ: فَإِذَا فَعَلْتُ ذَلِكَ فَقَدْ أَسْلَمْتُ؟ قَالَ: " إِذَا فَعَلْتَ ذَلِكَ، فَقَدْ أَسْلَمْتَ " قَالَ: يَا رَسُولَ اللهِ، فَحَدِّثْنِي مَا الْإِيمَانُ؟ قَالَ: " الْإِيمَانُ أَنْ تُؤْمِنَ بِاللهِ، وَالْيَوْمِ الْآخِرِ، وَالْمَلائِكَةِ، وَالْكِتَابِ، وَالنَّبِيِّينَ، وَتُؤْمِنَ بِالْمَوْتِ، وَبِالْحَيَاةِ بَعْدَ الْمَوْتِ، وَتُؤْمِنَ بِالْجَنَّةِ وَالنَّارِ، وَالْحِسَابِ، وَالْمِيزَانِ، وَتُؤْمِنَ بِالْقَدَرِ كُلِّهِ خَيْرِهِ وَشَرِّهِ "، قَالَ: فَإِذَا فَعَلْتُ ذَلِكَ فَقَدْ آمَنْتُ؟ قَالَ: " إِذَا فَعَلْتَ ذَلِكَ فَقَدْ آمَنْتَ، قَالَ: يَا رَسُولَ اللهِ، حَدِّثْنِي مَا الْإِحْسَانُ؟ قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: " الْإِحْسَانُ أَنْ تَعْمَلَ لِلَّهِ كَأَنَّكَ تَرَاهُ، فَإِنَّكَ إِنْ لَمْ تَرَهُ فَإِنَّهُ يَرَاكَ " قَالَ: يَا رَسُولَ اللهِ، فَحَدِّثْنِي مَتَى السَّاعَةُ؟ قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: " سُبْحَانَ اللهِ فِي خَمْسٍ مِنَ الغَيْبِ لَا يَعْلَمُهُنَّ إِلَّا هُوَ: ﴿إِنَّ ٱللَّهَ عِندَهُۥ عِلۡمُ ٱلسَّاعَةِ وَيُنَزِّلُ ٱلۡغَيۡثَ وَيَعۡلَمُ مَا فِي ٱلۡأَرۡحَامِۖ وَمَا تَدۡرِي نَفۡسٞ مَّاذَا تَكۡسِبُ غَدٗاۖ وَمَا تَدۡرِي نَفۡسُۢ بِأَيِّ أَرۡضٖ تَمُوتُۚ إِنَّ ٱللَّهَ عَلِيمٌ خَبِيرُۢ٣٤﴾ [لقمان: ٣٤]  وَلَكِنْ إِنْ شِئْتَ حَدَّثْتُكَ بِمَعَالِمَ لَهَا دُونَ ذَلِكَ "، قَالَ: أَجَلْ يَا رَسُولَ اللهِ، فَحَدِّثْنِي. قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: »إِذَا رَأَيْتَ الْأَمَةَ وَلَدَتْ رَبَّتَهَا أَوْ رَبَّهَا، وَرَأَيْتَ أَصْحَابَ الشَّاءِ تَطَاوَلُوا بِالْبُنْيَانِ، وَرَأَيْتَ الْحُفَاةَ الْجِيَاعَ الْعَالَةَ كَانُوا رُؤوسَ النَّاسِ، فَذَلِكَ مِنْ مَعَالِمِ السَّاعَةِ وَأَشْرَاطِهَا ". قَالَ: يَا رَسُولَ اللهِ، وَمَنْ أَصْحَابُ الشَّاءِ وَالْحُفَاةُ الْجِيَاعُ الْعَالَةُ؟ قَالَ: الْعَرَبُ«.
আব্দুল্লাহ ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একবার রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মজলিসে বসা ছিলেন। এমন সময় জিবরীল আলাইহিস সালাম আসলেন। তিনি নিজের দুই হাঁটু নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দুই হাঁটুর সাথে লাগিয়ে তাঁর সামনে বসে পড়লেন আর তার দুই হাত নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দুই হাঁটুর উপর রাখলেন। তারপর তিনি বললেন, হে মুহাম্মাদ! আমাকে ইসলাম সস্পর্কে অবহিত করুন। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ইসলাম হলো, তুমি নিজেকে আল্লাহর সামনে সমর্পণ করবে আর এ কথার সাক্ষ্য প্রদান করবে যে, একমাত্র আল্লাহ ব্যতীত কোনো (সত্য) ইলাহ নেই, তাঁর কোনো শরীক নেই এবং নিশ্চয়ই মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর বান্দাহ ও রাসূল। জিবরীল বললেন, আমি যখন এরূপ করবো তখন আমি মুসলিম হবো?। রাসূল বললেন, আপনি যখন এরূপ করবেন তখন আপনি আত্মসমর্পণকারী (মুসলিম) হবেন। জিবরীল আলাইহিস সালাম বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আপনি আমাকে ঈমান সম্পর্কে অবহিত করুন। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ঈমান হলো আল্লাহর প্রতি, আখিরাতের প্রতি, তাঁর ফিরিশতাদের প্রতি, তাঁর কিতাবসমূহের প্রতি, তাঁর রাসূলগণের প্রতি, মৃত্যু হওয়ার প্রতি, মৃত্যুপরবর্তী জীবনের প্রতি, জান্নাত ও জাহান্নামের প্রতি, হিসাব নিকাশ, মিযান ও তাকদীরের ভালো-মন্দের প্রতি ঈমান রাখবে। জিবরীল বললেন, আমি যখন এরূপ করবো তখন আমি কি ঈমান আনয়নকারী (মুমিন) হলাম? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হ্যাঁ, আপনি যখন এরূপ করবেন তখন আপনি মুমিন হবেন। তারপর বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমাকে ইহসান সম্পর্কে অবহিত করুন। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ইহসান হলো, আল্লাহর জন্য এমনভাবে আমল করবে যেন তুমি আল্লাহকে দেখছ, যদি তুমি তাকে নাও দেখ, তাহলে তিনি তো তোমাকে দেখছেন। জিবরীল আলাইহিস সালাম বললেন, আমাকে কিয়ামত কখন হবে তা বিবৃত করুন। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আল্লাহর পবিত্রতা বর্ণনা করছি। এ তো এমন পাঁচটি বিষয়ের অন্তর্ভুক্ত যা আল্লাহ ব্যতীত কেউ (সত্যিকারের জ্ঞান) জানেন না।
﴿ إِنَّ ٱللَّهَ عِندَهُۥ عِلۡمُ ٱلسَّاعَةِ وَيُنَزِّلُ ٱلۡغَيۡثَ وَيَعۡلَمُ مَا فِي ٱلۡأَرۡحَامِۖ وَمَا تَدۡرِي نَفۡسٞ مَّاذَا تَكۡسِبُ غَدٗاۖ وَمَا تَدۡرِي نَفۡسُۢ بِأَيِّ أَرۡضٖ تَمُوتُۚ إِنَّ ٱللَّهَ عَلِيمٌ خَبِيرُۢ ٣٤ ﴾ [لقمان: ٣٤]  
“নিশ্চয় আল্লাহর নিকট কিয়ামতের জ্ঞান রয়েছে। আর তিনি বৃষ্টি বর্ষণ করেন এবং জরায়ূতে যা আছে, তা তিনি জানেন। আর কেউ জানে না আগামীকাল সে কী অর্জন করবে এবং কেউ জানে না কোন স্থানে সে মারা যাবে। নিশ্চয় আল্লাহ সর্বজ্ঞ, সম্যক অবহিত”। [সূরা : লুকমান, আয়াত: ৩৪]
তবে আপনি চাইলে আমি এর চেয়ে ছোট বিষয় কিয়ামতের আলামত সম্পর্কে আপনাকে বলতে পারি। তখন জিবরীল আলাইহিস সালাম বললেন, নিশ্চয়ই হে আল্লাহর রাসূল, আপনি আমাকে এর আলামত সস্পর্কে অবহিত করুন। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, যখন তুমি দেখবে যে, দাসী তার প্রভু- বা পালনকর্তাকে জন্ম দিচ্ছে, আর মেষপালকদের বিরাট বিরাট অট্টালিকার প্রতিযোগিতায় গর্বিত দেখতে পাবে। আর তুমি দেখবে নগ্নপদ, ক্ষুধার্ত, অভাবী লোকেরা মানুষের নেতা হবে। এগুলো কিয়ামতের নিদর্শন ও আলামত। জিবরীল আলাইহিস সালাম জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসূল! মেষপালক, নগ্নপদ, ক্ষুধার্ত (নিঃস্ব), অভাবী লোক কারা? তিনি বললেন, এরা আরব”।
হাসান, মুসনাদ আহমদ, হাদীস নং ২৯২৪, ১৭১৬৭; মুসনাদ বাযযার –কাশফুল আসতার-, হাদীস নং ২৪।

২- পরিচ্ছেদ: ইসলামের রুকনসমূহ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা
عَنْ طَلْحَةَ بْن عُبَيْدِ اللَّهِ، يَقُولُ: جَاءَ رَجُلٌ إِلَى رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مِنْ أَهْلِ نَجْدٍ ثَائِرَ الرَّأْسِ، نَسْمَعُ دَوِيُّ صَوْتِهِ وَلاَ نَفْقَهُ مَا يَقُولُ، حَتَّى دَنَا، فَإِذَا هُوَ يَسْأَلُ عَنِ الإِسْلاَمِ، فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «خَمْسُ صَلَوَاتٍ فِي اليَوْمِ وَاللَّيْلَةِ». فَقَالَ: هَلْ عَلَيَّ غَيْرُهُن؟ قَالَ: «لاَ، إِلَّا أَنْ تَطَوَّعَ». قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «وَصِيَامُ شهرُ رَمَضَانَ». قَالَ: هَلْ عَلَيَّ غَيْرُهُ؟ قَالَ: «لاَ، إِلَّا أَنْ تَطَوَّعَ». قَالَ: وَذَكَرَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الزَّكَاةَ، قَالَ: هَلْ عَلَيَّ غَيْرُهَا؟ قَالَ: «لاَ، إِلَّا أَنْ تَطَوَّعَ». قَالَ: فَأَدْبَرَ الرَّجُلُ وَهُوَ يَقُولُ: وَاللَّهِ لاَ أَزِيدُ عَلَى هَذَا وَلاَ أَنْقُصُ، فقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «أَفْلَحَ الرجلُ إِنْ صَدَقَ».
তালহা ইবন উবায়দুল্লাহ্ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, “নাজদবাসী এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে এলো। তার মাথার চুল ছিল এলোমেলো। আমরা তার কথার মৃদু আওয়াজ শুনতে পাচ্ছিলাম; কিন্তু সে কি বলছিল, আমরা তা বুঝতে পারছিলাম না। এভাবে সে কাছে এসে ইসলাম সম্পর্কে প্রশ্ন করতে লাগল। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘দিন-রাতে পাঁচ ওয়াক্ত সালাত। সে বলল, আমার ওপর এ ছাড়া আরো সালাত আছে?’ তিনি বললেন, না, তবে নফল আদায় করতে পারো। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আর রমযান মাসের সিয়াম। সে বলল, ‘আমার ওপর এ ছাড়া আরো সাওম আছে? তিনি বললেন, না, তবে নফল সাওম পালন করতে পারো। বর্ণনাকারী বলেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার কাছে যাকাতের কথা বললেন। সে বলল, আমার ওপর এ ছাড়া আরো দেওয়ার আছে? তিনি বললেন, না, তবে নফল হিসেবে দিতে পারো। বর্ণনাকারী বলেন, সে ব্যক্তি এই বলে চলে গেলেন, আল্লাহর কসম! আমি এর চেয়ে বেশিও করব না এবং কমও করব না। তখন রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, লোকটি সফলকাম হবে; যদি সত্য বলে থাকে”।
মুত্তাফাকুন ‘আলাইহি, মুয়াত্তা মালিক, হাদীস নং ৯৪; সহীহ বুখারী, হাদীস নং  ৪৬; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং  ১১।
عَنْ أَنَسَ بْنَ مَالِكٍ، يَقُولُ: بَيْنَمَا نَحْنُ جُلُوسٌ مَعَ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي المَسْجِدِ، دَخَلَ رَجُلٌ عَلَى جَمَلٍ، فَأَنَاخَهُ فِي المَسْجِدِ ثُمَّ عَقَلَهُ، ثُمَّ قَالَ لَهُمْ: أَيُّكُمْ مُحَمَّدٌ؟ وَالنَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مُتَّكِئٌ بَيْنَ ظَهْرَانَيْهِمْ، فَقُلْنَا: هَذَا الرَّجُلُ الأَبْيَضُ المُتَّكِئُ. فَقَالَ لَهُ الرَّجُلُ: يَا ابْنَ عَبْدِ المُطَّلِبِ فَقَالَ لَهُ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «قَدْ أَجَبْتُكَ». فَقَالَ الرَّجُلُ لِلنَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: إِنِّي سَائِلُكَ فَمُشَدِّدٌ عَلَيْكَ فِي المَسْأَلَةِ، فَلاَ تَجِدْ عَلَيَّ فِي نَفْسِكَ؟ فَقَالَ: «سَلْ عَمَّا بَدَا لَكَ» فَقَالَ: أَسْأَلُكَ بِرَبِّكَ وَرَبِّ مَنْ قَبْلَكَ، آللَّهُ أَرْسَلَكَ إِلَى النَّاسِ كُلِّهِمْ؟ فَقَالَ: «اللَّهُمَّ نَعَمْ». قَالَ: أَنْشُدُكَ بِاللَّهِ، آللَّهُ أَمَرَكَ أَنْ نُصَلِّيَ الصَّلَوَاتِ الخَمْسَ فِي اليَوْمِ وَاللَّيْلَةِ؟ قَالَ: «اللَّهُمَّ نَعَمْ». قَالَ: أَنْشُدُكَ بِاللَّهِ، آللَّهُ أَمَرَكَ أَنْ نَصُومَ هَذَا الشَّهْرَ مِنَ السَّنَةِ؟ قَالَ: «اللَّهُمَّ نَعَمْ». قَالَ: أَنْشُدُكَ بِاللَّهِ، آللَّهُ أَمَرَكَ أَنْ تَأْخُذَ هَذِهِ الصَّدَقَةَ مِنْ أَغْنِيَائِنَا فَتَقْسِمَهَا عَلَى فُقَرَائِنَا؟ فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «اللَّهُمَّ نَعَمْ». فَقَالَ الرَّجُلُ: آمَنْتُ بِمَا جِئْتَ بِهِ، وَأَنَا رَسُولُ مَنْ وَرَائِي مِنْ قَوْمِي، وَأَنَا ضِمَامُ بْنُ ثَعْلَبَةَ أَخُو بَنِي سَعْدِ بْنِ بَكْرٍ.
আনাস ইবন মালিক রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, “একবার আমরা রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সঙ্গে মসজিদে বসা ছিলাম। তখন এক ব্যক্তি সওয়ার অবস্থায় ঢুকল। মসজিদে (প্রাঙ্গণে) সে তার উটটি বসিয়ে বেঁধে রাখল। এরপর সাহাবীদের লক্ষ্য করে বলল, তোমাদের মধ্যে মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কে?’ রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন সাহাবীগণের সামনেই হেলান দিয়ে বসা ছিলেন। আমরা বললাম, এই হেলান দিয়ে বসা ফর্সা রঙের ব্যক্তিই হলেন তিনি। তারপর লোকটি তাঁকে লক্ষ্য করে বলল, হে আব্দুল মুত্তালিবের পুত্র! রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন, আমি তোমার জওয়াব দিচ্ছি। লোকটি বলল, আমি আপনাকে কিছু প্রশ্ন করব এবং সে প্রশ্ন করার ব্যাপারে কঠোর হবো, এতে আপনি রাগ করবেন না। তিনি বললেন, তোমার যেমন ইচ্ছা প্রশ্ন করো। সে বলল, আমি আপনাকে আপনার রব ও আপনার পূর্ববর্তীদের রবের কসম দিয়ে জিজ্ঞাসা করছি, আল্লাহই কি আপনাকে সকল মানুষের রাসূলরূপে পাঠিয়েছেন? তিনি বললেন, আল্লাহ সাক্ষী, হ্যাঁ। সে বলল, আমি আপনাকে আল্লাহর কসম দিয়ে বলছি, আল্লাহই কি আপনাকে দিনরাতে পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আদায় করতে নির্দেশ দিয়েছেন? তিনি বললেন, আল্লাহ সাক্ষী, হ্যাঁ। সে বলল, আমি আপনাকে আল্লাহর কসম দিয়ে বলছি, আল্লাহই কি আপনাকে বছরের এ মাসে (রমযান) সাওম পালনের নির্দেশ দিয়েছেন? তিনি বললেন, আল্লাহ সাক্ষী, হ্যাঁ। সে বলল, আমি আপনাকে আল্লাহর কসম দিয়ে বলছি, আল্লাহই কি আপনাকে নির্দেশ দিয়েছেন, আমাদের ধনীদের থেকে সদকা (যাকাত) আদায় করে আমাদের গরীবদের মধ্যে তা ভাগ করে দিতে? রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আল্লাহ সাক্ষী, হ্যাঁ। এরপর লোকটি বলল, আমি ঈমান আনলাম আপনি যা (যে শরী‘আত) এনেছেন তার ওপর। আর আমি আমার জাতির রেখে আসা লোকজনের পক্ষ থেকে প্রতিনিধি। আমার নাম দ্বিমাম ইবন সা‘লাবা, বনী সা‘দ ইবন বকর গোত্রের একজন”।
মুত্তাফাকুন ‘আলাইহি, সহীহ বুখারী, হাদীস নং  ৬৩; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং  ১২।
মুসলিমের (হাদীস নং ১২) বর্ণনায় এসেছে,
عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ، قَالَ: نُهِينَا أَنْ نَسْأَلَ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَنْ شَيْءٍ، فَكَانَ يُعْجِبُنَا أَنْ يَجِيءَ الرَّجُلُ مِنْ أَهْلِ الْبَادِيَةِ الْعَاقِلُ، فَيَسْأَلَهُ، وَنَحْنُ نَسْمَعُ، فَجَاءَ رَجُلٌ مِنْ أَهْلِ الْبَادِيَةِ، فَقَالَ: يَا مُحَمَّدُ، أَتَانَا رَسُولُكَ فَزَعَمَ لَنَا أَنَّكَ تَزْعُمُ أَنَّ اللهَ أَرْسَلَكَ، قَالَ: «صَدَقَ»، قَالَ: فَمَنْ خَلَقَ السَّمَاءَ؟ قَالَ: «اللهُ»، قَالَ: فَمَنْ خَلَقَ الْأَرْضَ؟ قَالَ: «اللهُ»، قَالَ: فَمَنْ نَصَبَ هَذِهِ الْجِبَالَ، وَجَعَلَ فِيهَا مَا جَعَلَ؟ قَالَ: «اللهُ»، قَالَ: فَبِالَّذِي خَلَقَ السَّمَاءَ، وَخَلَقَ الْأَرْضَ، وَنَصَبَ هَذِهِ الْجِبَالَ، آللَّهُ أَرْسَلَكَ؟ قَالَ: «نَعَمْ»، قَالَ: وَزَعَمَ رَسُولُكَ أَنَّ عَلَيْنَا خَمْسَ صَلَوَاتٍ فِي يَوْمِنَا، وَلَيْلَتِنَا، قَالَ: «صَدَقَ»، قَالَ: فَبِالَّذِي أَرْسَلَكَ، آللَّهُ أَمَرَكَ بِهَذَا؟ قَالَ: «نَعَمْ»، قَالَ: وَزَعَمَ رَسُولُكَ أَنَّ عَلَيْنَا زَكَاةً فِي أَمْوَالِنَا، قَالَ: «صَدَقَ»، قَالَ: فَبِالَّذِي أَرْسَلَكَ، آللَّهُ أَمَرَكَ بِهَذَا؟ قَالَ: «نَعَمْ»، قَالَ: وَزَعَمَ رَسُولُكَ أَنَّ عَلَيْنَا صَوْمَ شَهْرِ رَمَضَانَ فِي سَنَتِنَا، قَالَ: «صَدَقَ»، قَالَ: فَبِالَّذِي أَرْسَلَكَ، آللَّهُ أَمَرَكَ بِهَذَا؟ قَالَ: «نَعَمْ»، قَالَ: وَزَعَمَ رَسُولُكَ أَنَّ عَلَيْنَا حَجَّ الْبَيْتِ مَنِ اسْتَطَاعَ إِلَيْهِ سَبِيلًا، قَالَ: «صَدَقَ»، قَالَ: ثُمَّ وَلَّى، قَالَ: وَالَّذِي بَعَثَكَ بِالْحَقِّ، لَا أَزِيدُ عَلَيْهِنَّ، وَلَا أَنْقُصُ مِنْهُنَّ، فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «لَئِنْ صَدَقَ لَيَدْخُلَنَّ الْجَنَّةَ».
আনাস ইবন মালিক রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে কোনো বিষয়ে (অতিরিক্ত) প্রশ্ন করার ব্যাপারে আমাদের নিষেধ করা হয়েছিল। তাই আমরা চাইতাম যে, গ্রাম থেকে কোনো বুদ্ধিমান ব্যক্তি এসে তাঁকে প্রশ্ন করুক আর আমরা তা শুনি। তারপর একদিন গ্রাম থেকে এক ব্যক্তি এসে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলল, হে মুহাম্মাদ! আমাদের কাছে আপনার দূত এসে বলেছে, আপনি দাবি করেছেন যে, আল্লাহ আপনাকে রাসূল হিসেবে পাঠিয়েছেন। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, সত্যই বলেছে। আগন্তুক বলল, আসমান কে সৃষ্টি করেছেন? তিনি বললেন,  আল্লাহ। আগন্তুক বলল, জমিন কে সৃষ্টি করেছেন? রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আল্লাহ। আগন্তুক বলল, এসব পর্বতমালা কে স্থাপন করেছেন এবং এর মধ্যে যা কিছু আছে তা কে সৃষ্টি করেছেন? রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন,  আল্লাহ। আগন্তুক বলল, সেই সত্তার কসম! যিনি আসমান ও জমিন সৃষ্টি করেছেন এবং এসব পর্বতমালা স্থাপন করেছেন। আল্লাহই আপনাকে রাসূল হিসেবে পাঠিয়েছেন? রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হ্যাঁ। আগন্তুক বলল, আপনার দূত বলেছে যে, আমাদের ওপর দিনে ও রাতে পাঁচ ওয়াক্ত সালাত ফরয। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, সত্যই বলেছে। আগন্তুক বলল, যিনি আপনাকে রাসূল হিসেবে পাঠিয়েছেন তাঁর কসম, আল্লাহ-ই কি আপনাকে এর নির্দেশ দিয়েছেন? রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হ্যাঁ। আগন্তুক বলল, আপনার দূত বলেছে যে, আমাদের ওপর আমাদের মালের যাকাত দেওয়া ফরয। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ঠিকই বলেছে। আগন্তুক বলল, যিনি আপনাকে রাসূল হিসেবে পাঠিয়েছেন, তাঁর কসম, আল্লাহ-ই কি আপনাকে এর নির্দেশ দিয়েছেন? রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হ্যাঁ। আগন্তুক বলল, আপনার দূত বলেছে যে, প্রতি বছর রমযান মাসের সাওম পালন করা আমাদের ওপর ফরয। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, সত্যই বলেছে। আগন্তুক বলল, যিনি আপনাকে রাসূল হিসেবে পাঠিয়েছেন, তার কসম, আল্লাহ-ই কি আপনাকে এর  নির্দেশ দিয়েছেন? রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হ্যাঁ। আগন্তুক বলল, আপনার দূত বলেছে যে, আমাদের মধ্যে যে  বাইতুল্লায় যেতে সক্ষম তার ওপর হজ ফরয। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, সত্যি বলেছে। বর্ণনাকারী বলেন যে, তারপর আগন্তুক চলে যেতে যেতে বলল, যিনি আপনাকে সত্যসহ প্রেরণ করেছেন তার কসম, আমি এর অতিরিক্তও করব না এবং এর কমও করব না। এ কথা শুনে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, লোকটি সত্য বলে থাকলে অবশ্যই সে জান্নাতে যাবে”।
عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عَبَّاسٍ، قَالَ: بَعَثَتْ بَنُو سَعْدِ بْنِ بَكْرٍ ضِمَامَ بْنَ ثَعْلَبَةَ وَافِدًا إِلَى رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَقَدِمَ عَلَيْهِ، وَأَنَاخَ بَعِيرَهُ عَلَى بَابِ الْمَسْجِدِ، ثُمَّ عَقَلَهُ، ثُمَّ دَخَلَ الْمَسْجِدَ، وَرَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، جَالِسٌ فِي أَصْحَابِهِ، وَكَانَ ضِمَامٌ رَجُلًا جَلْدًا أَشْعَرَ ذَا غَدِيرَتَيْنِ، فَأَقْبَلَ حَتَّى وَقَفَ عَلَى رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فِي أَصْحَابِهِ فَقَالَ: أَيُّكُمُ ابْنُ عَبْدِ الْمُطَّلِبِ، فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: " أَنَا ابْنُ عَبْدِ الْمُطَّلِبِ "، قَالَ مُحَمَّدٌ؟ قَالَ: " نَعَمْ "، فَقَالَ: ابْنَ عَبْدِ الْمُطَّلِبِ، إِنِّي سَائِلُكَ وَمُغَلِّظٌ فِي الْمَسْأَلَةِ، فَلا تَجِدَنَّ فِي نَفْسِكَ، قَالَ: " لَا أَجِدُ فِي نَفْسِي، فَسَلْ عَمَّا بَدَا لَكَ " قَالَ: أَنْشُدُكَ اللهَ إِلَهَكَ، وَإِلَهَ مَنْ كَانَ قَبْلَكَ، وَإِلَهَ مَنْ هُوَ كَائِنٌ بَعْدَكَ، آللَّهُ بَعَثَكَ إِلَيْنَا رَسُولًا؟ فَقَالَ: " اللهُمَّ نَعَمْ " قَالَ: فَأَنْشُدُكَ اللهَ إِلَهَكَ، وَإِلَهَ مَنْ كَانَ قَبْلَكَ، وَإِلَهَ مَنْ هُوَ كَائِنٌ بَعْدَكَ، آللَّهُ أَمَرَكَ أَنْ تَأْمُرَنَا أَنْ نَعْبُدَهُ وَحْدَهُ، لَا نُشْرِكُ بِهِ شَيْئًا، وَأَنْ نَخْلَعَ هَذِهِ الْأَنْدَادَ الَّتِي كَانَتْ آبَاؤُنَا يَعْبُدُونَ مَعَهُ؟ قَالَ: " اللهُمَّ نَعَمْ "، قَالَ: فَأَنْشُدُكَ اللهَ إِلَهَكَ، وَإِلَهَ مَنْ كَانَ قَبْلَكَ، وَإِلَهَ مَنْ هُوَ كَائِنٌ بَعْدَكَ، آللَّهُ أَمَرَكَ أَنْ نُصَلِّيَ هَذِهِ الصَّلَوَاتِ الْخَمْسَ؟ قَالَ: " اللهُمَّ نَعَمْ " قَالَ: ثُمَّ جَعَلَ يَذْكُرُ فَرَائِضَ الْإِسْلامِ فَرِيضَةً فَرِيضَةً: الزَّكَاةَ، وَالصِّيَامَ، وَالْحَجَّ، وَشَرَائِعَ الْإِسْلامِ كُلَّهَا، يُنَاشِدُهُ عِنْدَ كُلِّ فَرِيضَةٍ كَمَا يُنَاشِدُهُ فِي الَّتِي قَبْلَهَا، حَتَّى إِذَا فَرَغَ قَالَ: فَإِنِّي أَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلا اللهُ، وَأَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللهِ، وَسَأُؤَدِّي هَذِهِ الْفَرَائِضَ، وَأَجْتَنِبُ مَا نَهَيْتَنِي عَنْهُ، ثُمَّ لَا أَزِيدُ وَلا أَنْقُصُ، قَالَ: ثُمَّ انْصَرَفَ رَاجِعًا إِلَى بَعِيرِهِ، فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ حِينَ وَلَّى: " إِنْ يَصْدُقْ ذُو الْعَقِيصَتَيْنِ يَدْخُلِ الْجَنَّةَ "
قَالَ: فَأَتَى إِلَى بَعِيرِهِ، فَأَطْلَقَ عِقَالَهُ، ثُمَّ خَرَجَ حَتَّى قَدِمَ عَلَى قَوْمِهِ، فَاجْتَمَعُوا إِلَيْهِ، فَكَانَ أَوَّلَ مَا تَكَلَّمَ بِهِ أَنْ قَالَ: بِئْسَتِ اللاتُ وَالْعُزَّى، قَالُوا: مَهْ يَا ضِمَامُ، اتَّقِ الْبَرَصَ وَالْجُذَامَ، اتَّقِ الْجُنُونَ، قَالَ: وَيْلَكُمْ، إِنَّهُمَا وَاللهِ لَا يَضُرَّانِ وَلا يَنْفَعَانِ، إِنَّ اللهَ عَزَّ وَجَلَّ قَدْ بَعَثَ رَسُولًا، وَأَنْزَلَ عَلَيْهِ كِتَابًا اسْتَنْقَذَكُمْ بِهِ مِمَّا كُنْتُمْ فِيهِ، وَإِنِّي أَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلا اللهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيكَ لَهُ، وَأَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُولُهُ، إِنِّي قَدْ جِئْتُكُمْ مِنْ عِنْدِهِ بِمَا أَمَرَكُمْ بِهِ، وَنَهَاكُمْ عَنْهُ، قَالَ: فَوَاللهِ مَا أَمْسَى مِنْ ذَلِكَ الْيَوْمِ وَفِي حَاضِرِهِ رَجُلٌ وَلا امْرَأَةٌ إِلا مُسْلِمًا قَالَ: يَقُولُ ابْنُ عَبَّاسٍ: " فَمَا سَمِعْنَا بِوَافِدِ قَوْمٍ كَانَ أَفْضَلَ مِنْ ضِمَامِ بْنِ ثَعْلَبَةَ "
আব্দুল্লাহ ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, বনী সা‘দ ইবন বকর দিমাম ইবন সা‘লাবা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুকে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে তাদের প্রতিনিধি হিসেবে প্রেরণ করেন। তিনি রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে আসলেন এবং মসজিদে নববীর আঙ্গিনায় তার উট বসিয়ে তাকে বেঁধে মসজিদে প্রবেশ করলেন। তখন রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবীদের সাথে মজলিসে বসা ছিলেন।  দিমাম রাদিয়াল্লাহু আনহু খুবই শক্তিশালী ও দুবেণী বিশিষ্ট ঘনকেশী ছিলেন। তিনি রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহাবীগণের মাঝে এসে দাঁড়ালেন। উপস্থিত লোকদের জিজ্ঞাসা করলেন: তোমাদের মধ্যে ইবন আব্দুল মুত্তালিব কে? রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আমি ইবন আব্দুল মুত্তালিব। লোকটি বললো: আপনি মুহাম্মাদ? রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হ্যাঁ। তখন রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সে ব্যক্তি বললো: হে ইবন আব্দুল মুত্তালিব! আমি আপনাকে কিছু প্রশ্ন করবো এবং প্রশ্নের ব্যাপারে কঠোরতা অবলম্বন করব। আপনি কিছু মনে করবেন না। তখন তিনি বললেন, আমি কিছু মনে করবো না। তোমার যা মনে চায় প্রশ্ন করো। তখন সে বললো: আমি আপনাকে আপনার ইলাহ, আপনার পূর্ববর্তীদের ইলাহ ও আপনার পরবর্তীদের ইলাহর নামে শপথ দিয়ে বলছি আল্লাহ তা‘আলা কি আপনাকে আমাদের কাছে রাসূল হিসেবে পাঠিয়েছেন? রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হে আল্লাহ আপনি সাক্ষী থাকুন, নিশ্চয়ই। সে বললো, এখন আমি আপনাকে আপনার ইলাহ, আপনার পূর্ববর্তীদের ইলাহ ও আপনার পরবর্তীদের ইলাহর নামে শপথ দিয়ে বলছি আল্লাহ তা‘আলা কি আপনাকে নির্দেশ দিয়েছেন যে, আমরা যেন একমাত্র তার ইবাদত করি, তাঁর সাথে কাউকে শরিক না করি, আমাদের পূর্বপুরুষরা যেসব মূর্তির পূজা করতো এবং তাঁর সাথে শরীক করতো সেগুলো যেনো ছেড়ে দেই? রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হে আল্লাহ আপনি সাক্ষী থাকুন, নিশ্চয়ই। সে বললো, এখন আমি আপনাকে আপনার ইলাহ, আপনার পূর্ববর্তীদের ইলাহ ও আপনার পরবর্তীদের ইলাহর নামে শপথ দিয়ে বলছি আল্লাহ তা‘আলা কি আপনাকে নির্দেশ দিয়েছেন যে, আমরা যেনো এ পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আদায় করি? রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হে আল্লাহ আপনি সাক্ষী থাকুন, নিশ্চয়ই। এভাবে তিনি ইসলামের অন্যান্য ফরয তথা যাকাত, সাওম, হজ ও ইসলামের সমস্ত বিধান সম্পর্কে পূর্বের ন্যায় শপথ করে করে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞেস করেছেন। এগুলো সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা শেষ হলে তিনি বললেন, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি আল্লাহ ব্যতীত কোনো (সত্য) ইলাহ নেই, আমি আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর রাসূল। আমি এসব ফরয যথাযথভাবে আদায় করবো। আর আপনি যা নিষেধ করেছেন তা থেকে বিরত থাকবো। তবে আমি আমলের ক্ষেত্রে এগুলোর বেশিও করবো না আবার কমও করবো না। অতঃপর সে দেশে ফিরে যাওয়ার জন্য তার উটের দিকে গেলো। তিনি যখন ফিরে যাচ্ছিলেন তখন রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, দুবেণী বিশিষ্ট লোকটি যদি সত্য বলে থাকে তবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। বর্ণনাকারী বলেন, অতঃপর লোকটি তার উটের কাছে গেলো, তার বাঁধন খুলে নিজ গোত্রের উদেশ্যে রওয়ানা হলেন। সেখানে পৌঁছে তাদের সাথে মিলিত হলেন। তিনি সর্বপ্রথম যে বাক্যটি বললেন তা হলো: লাত ও ‘উয্যা কতোই না নিকৃষ্ট! গোত্রের লোকেরা বললো, চুপ করো হে দিমাম। এগুলো অভিশাপ লেগে যাবে। কুষ্ঠরোগ ও গোদ রোগের ভয় করো। তুমি পাগল হয়ে যাওয়ার ভয় করো। দিমাম রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বললেন, তোমাদের ধ্বংস হোক। আল্লাহর শপথ এদুটি কোনো উপকার বা ক্ষতি কিছুই করতে পারে না। আল্লাহ তা‘আলা একজন রাসূল প্রেরণ করেছেন, তিনি তাঁর রাসূলের প্রতি কিতাব নাযিল করেছেন, তোমরা যে পথভ্রষ্টতায় ছিলে তা থেকে মুক্তি দিবে এবং তোমাদেরকে উদ্ধার করবেন। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ব্যাতীত কোনো (সত্য) ইলাহ নেই, তিনি এক ও অদ্বিতীয়, তাঁর কোনো শরীক নেই, আর মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর বান্দাহ ও রাসূল। তিনি তোমাদেরকে যা আদেশ ও নিষেধ করেছেন আমি তা নিয়ে তোমাদের কাছ থেকে এসেছি। বর্ণনাকারী বলেন, আল্লাহর শপথ, সেদিন বিকেল হওয়ার পূর্বেই বনী সা‘দ ইবন বকর গোত্রের উপস্থিত এমন কোনো নারী পুরুষ ছিল না যে মুসলিম হয় নি
ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, দিমাম ইবন সা‘লাবা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর চেয়ে উত্তম কোনো প্রতিনিধি দলের প্রধানের কথা আমরা আর শুনি নি”।
হাসান, মুসনাদ আহমদ, হাদীস নং ২৩৮০; আবু দাউদ, হাদীস নং ৪৮৭; হাকিম, ৩/৫৪, তিনি সহীহ বলেছেন।
عَنْ حَكِيمِ بْنِ مُعَاوِيَةَ، عَنْ أَبِيهِ قَالَ: »أَتَيْتُ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقُلْتُ: مَا أَتَيْتُكَ حَتَّى حَلَفْتُ عَدَدَ أَصَابِعِي هَذِهِ أَنْ لَا آتِيَكَ، أَرَانَا عَفَّانُ وَطَبَّقَ كَفَّيْهِ، فَبِالَّذِي بَعَثَكَ بِالْحَقِّ مَا الَّذِي بَعَثَكَ بِهِ ؟ قَالَ: " الْإِسْلَامُ ". قَالَ: وَمَا الْإِسْلَامُ؟ قَالَ: " أَنْ يُسْلِمَ قَلْبُكَ لِلَّهِ، وَأَنْ تُوَجِّهَ وَجْهَكَ إِلَى اللهِ وَتُصَلِّيَ الصَّلَاةَ الْمَكْتُوبَةَ، وَتُؤَدِّيَ الزَّكَاةَ الْمَفْرُوضَةَ، أَخَوَانِ نَصِيرَانِ. لَا يَقْبَلُ اللهُ مِنْ أَحَدٍ تَوْبَةً أَشْرَكَ بَعْدَ إِسْلَامِهِ ". قُلْتُ: مَا حَقُّ زَوْجَةِ أَحَدِنَا عَلَيْهِ؟ قَالَ: " تُطْعِمُهَا إِذَا طَعِمْتَ، وَتَكْسُوهَا إِذَا اكْتَسَيْتَ، وَلَا تَضْرِبِ الْوَجْهَ، وَلَا تُقَبِّحْ، وَلَا تَهْجُرْ إِلَّا فِي الْبَيْتِ ". قَالَ: " تُحْشَرُونَ هَاهُنَا وَأَوْمَأَ بِيَدِهِ إِلَى نَحْوِ الشَّامِ مُشَاةً وَرُكْبَانًا، وَعَلَى وُجُوهِكُمْ تُعْرَضُونَ عَلَى اللهِ وَعَلَى أَفْوَاهِكُمُ الْفِدَامُ، وَأَوَّلُ مَا يُعْرِبُ عَنْ أَحَدِكُمْ فَخِذُهُ «.
হাকিম ইবন মু‘আওয়িয়াহ্‌ তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন, তার পিতা বলেন, “আমি রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দরবারে আসলাম। এসে বললাম: হে আল্লাহর রাসূল! আমি আপনার কাছে আসার পূর্বে এই সংখ্যার (আমার দুই হাতের আঙ্গুলসমূহের সংখ্যার) চেয়েও অধিক সংখ্যক শপথ করেছিলাম যে, আমি আপনার কাছে আসব না (আপনার ধর্মও গ্রহণ করব না)। আমাদেরকে এ সময় আফফান (একজন বর্ণনাকারী) তার হাত দুটি একত্রিত করেন। সে সত্তার কসম করে বলছি যিনি আপনাকে সত্যসহকারে প্রেরণ করেছেন, আল্লাহ আপনাকে আমাদের কাছে কী দিয়ে প্রেরণ করেছেন? রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ইসলাম দিয়ে। মু‘আবিয়া বললেন, ইসলাম কী? তিনি বললেন, তা হচ্ছে এই যে, তুমি বলবে, আমি আমার মুখমণ্ডল (নিজ সত্তা) সমর্পণ করলাম (আল্লাহর নিকট) এবং যাবতীয় শির্ক থেকে নিজেকে মুক্ত করলাম। ফরয সালাত কায়েম করবে, ফরয যাকাত প্রদান করবে এবং (জেনে রেখ) মুসলিমরা পরস্পর সহযোগী ভাই। ইসলাম গ্রহণ করার পর কেউ শির্ক করলে আল্লাহ তার কোনো ভালো আমল গ্রহণ করেন না (যতক্ষণ না সে তওবা করে মুসলিমের দলে ফিরে আসে)। আমি বললাম, আমাদের ওপর আমাদের স্ত্রীর অধিকার কী? তিনি বললেন, তোমরা যা খাবে তাদেরকেও তা খাওয়াবে, তোমরা যা পরিধান করবে তাদেরকেও তা পরিধান করাবে, তাদের চেহারায় আঘাত করবে না (তাদেরকে বেদম প্রহর করবে না) এবং তাদেরকে গালমন্দ করবে না। তাদেরকে গৃহ ব্যতীত অন্য কোথাও পরিত্যাগ করবে না অর্থাৎ তাদেরকে ঘর থেকে বের করে দিবে না।
তিনি বললেন, তোমাদেরকে এখান থেকে – শামের দিকে ইশারা করে- আল্লাহর দরবারে পায়ে হেঁটে, আরোহী অবস্থায় ও মুখের উপর ভর করে উপস্থিত হতে হবে, (সে দিন) তোমাদের মুখে (জিহ্বায়) ছাঁকনি (আঁটি) লাগিয়ে দেওয়া হবে, তোমাদের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ তোমাদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য প্রদান করবে এবং নিশ্চয়ই সর্বপ্রথম যে অঙ্গ তোমাদের সম্বন্ধে সাক্ষ্য দেবে তা হচ্ছে তোমাদের উরু”।
হাসান, মুসনাদ আহমদ, হাদীস নং ২০০২২; আবু দাউদ, হাদীস নং ২১৪২; ইবন হিব্বান, হাদীস নং ১৬০; নাসায়ী, হাদীস নং ২৪৩৬; ইবন মাজাহ, হাদীস নং ২৫৩৬।
وَقَالَ: «مَا مِنْ مَوْلًى يَأْتِي مَوْلًى لَهُ، فَيَسْأَلُهُ مِنْ فَضْلٍ عِنْدَهُ فَيَمْنَعُهُ إِلَّا جَعَلَهُ اللهُ عَلَيْهِ شُجَاعًا يَنْهَشُهُ قَبْلَ الْقَضَاءِ».
রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেছেন, “কোনো দাস যদি তার মনিবের কাছে এসে এমন কোনো অনুগ্রহ চায় যা তার কাছে আছে, কিন্তু সে তাকে সে অনুগ্রহ (সম্পদ) প্রদান করা থেকে বিরত থাকে, তবে সেসব অনুগ্রহকে আল্লাহ তা‘আলা তার ওপর বিষাক্ত সাপ বানিয়ে তাকে দংশন করাতে থাকবে যতক্ষণ না তাদের মধ্যে বিচারকার্য সম্পন্ন হবে।”
হাসান, মুসনাদ আহমদ, হাদীস নং ২০০২৩।
عَنِ ابْنِ عُمَرَ، رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ «بُنِيَ الإِسْلاَمُ عَلَى خَمْسٍ: شَهَادَةِ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَأَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللَّهِ، وَإِقَامِ الصَّلاَةِ، وَإِيتَاءِ الزَّكَاةِ، وَالحَجِّ، وَصَوْمِ رَمَضَانَ».
ইবন ‘উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “ইসলামের ভিত্তি পাঁচটি। আল্লাহ ব্যতীত কোনো (সত্য) ইলাহ নেই এবং মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর রাসূল, এ কথার সাক্ষ্য দান, সালাত কায়েম করা, যাকাত দেওয়া, হজ করা এবং রমযান মাসের সাওম পালন করা”।
মুত্তাফাকুন ‘আলাইহি, সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৮; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৬ বা ২২, হাদীসের শব্দাবলী বুখারীর।

৩- পরিচ্ছেদ: ঈমানের শাখা-প্রশাখা সম্পর্কে
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ «الإِيمَانُ بِضْعٌ وَسِتُّونَ شُعْبَةً، وَالحَيَاءُ شُعْبَةٌ مِنَ الإِيمَانِ».
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “ঈমানের শাখা রয়েছে ষাটের কিছু বেশি। আর লজ্জা ঈমানের একটি শাখা”।
মুত্তাফাকুন ‘আলাইহি, সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৯; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৩৫, হাদীসের শব্দ বুখারীর চয়নকৃত।
মুসলিমের বর্ণনায় এসেছে,
«الْإِيمَانُ بِضْعٌ وَسَبْعُونَ - أَوْ بِضْعٌ وَسِتُّونَ - شُعْبَةً، فَأَفْضَلُهَا قَوْلُ لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ، وَأَدْنَاهَا إِمَاطَةُ الْأَذَى عَنِ الطَّرِيقِ، وَالْحَيَاءُ شُعْبَةٌ مِنَ الْإِيمَانِ»
“ঈমানের শাখা সত্তরটিরও কিছু বেশি অথবা ষাটটিরও কিছু বেশি। এর সর্বোচ্চ শাখা হচ্ছে, ‘আল্লাহ ব্যতীত কোনো ইলাহ নেই’ এ কথা স্বীকার করা আর এর সর্বনিম্ন শাখা হচ্ছে রাস্তা থেকে কষ্টদায়ক বস্তু অপসারণ করা আর লজ্জা ঈমানের বিশিষ্ট একটি শাখা”।

৪- পরিচ্ছেদ: ঈমানের পরিপূর্ণতা প্রসঙ্গে
عَنْ أَبِي أُمَامَةَ، عَنْ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنَّهُ قَالَ: «مَنْ أَحَبَّ لِلَّهِ، وَأَبْغَضَ لِلَّهِ، وَأَعْطَى لِلَّهِ، وَمَنَعَ لِلَّهِ فَقَدِ اسْتَكْمَلَ الْإِيمَانَ».
আবু উমামা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “যে ব্যক্তি আল্লাহর জন্য ভালোবাসবে, আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য দুশমনি করবে; আর দান করবে আল্লাহর জন্য এবং আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য দান করা থেকে বিরত থাকবে, সে ব্যক্তি তার ঈমান পরিপূর্ণ করেছে”।
হাসান, আবু দাউদ, হাদীস নং ৪৬৮১।
عَنْ مُعَاذِ بْنِ أَنَسٍ الجُهَنِيِّ، قال، قَالَ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَنْ أَعْطَى لِلَّهِ، وَمَنَعَ لِلَّهِ، وَأَحَبَّ لِلَّهِ، وَأَبْغَضَ لِلَّهِ، وَأَنْكَحَ لِلَّهِ، فَقَدْ اسْتَكْمَلَ إِيمَانَهُ».
মু‘আয ইবন আনাস আল-জুহানী বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “যে ব্যক্তি আল্লাহর উদ্দেশ্যে দান করে, আল্লাহর উদ্দেশ্যেই মানা করে (দান করা থেকে বিরত থাকে), আল্লাহর উদ্দেশ্যেই ভালোবাসে, আল্লাহর উদ্দেশ্যেই শত্রুতা পোষণ করে এবং আল্লাহর উদ্দেশ্যেই বিয়ে-শাদী করে, সে তার ঈমান পরিপূর্ণ করল”।
হাসান, তিরমিযী, হাদীস নং ২৫২১, তিনি হাদীসটিকে মুনকার বলেছেন। ‬আলবানী রহ. হাদীসটিকে হাসান বলেছেন। মুসনাদ আহমদ, হাদীস নং ১৫৬৩৮; হাকিম, ২/১৬৪।   
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «أَكْمَلُ المُؤْمِنِينَ إِيمَانًا أَحْسَنُهُمْ خُلُقًا، خِيَارُكُمْ خِيَارُكُمْ لِنِسَائِهِمْ خُلُقًا».
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “মুমিনদের মাঝে ঈমানে সেই পরিপূর্ণ, তাদের মাঝে যার চরিত্র সুন্দরতম। তোমাদের মধ্যে উত্তম হলো তারা, যারা তাদের স্ত্রীদের কাছে চারিত্রিকভাবে উত্তম”।
হাসান, তিরমিযী, হাদীস নং ১১৬২; আবু দাউদ, হাদীস নং ৪৬৮২; ইবন হিব্বান, হাদীস নং ৪৭৯, ৪১৭৬। ইমাম তিরমিযী হাদীসটিকে হাসান সহীহ বলেছেন।
عَن أَنَسٍ بن مالك، قَالَ: قَالَ رَسُول اللهِ صَلَّى الله عَلَيه وَسَلَّم: «إن أكمل الناس إيمانا أحسنهم خلقا، وَإن حسن الخلق ليبلغ درجة الصوم والصلاة».
আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “মুমিনদের মাঝে ঈমানে সেই পরিপূর্ণ, তাদের মাঝে যার চরিত্র সুন্দরতম। নিশ্চয়ই উত্তম চরিত্র সালাত ও সাওমের মর্যাদায় পৌঁছায়”।
হাসান, বাযযার –কাশফুল আসতার, হাদীস নং ৩৫; আবু ইয়া‘লা, হাদীস নং ৪১৬৬।

৫- পরিচ্ছেদ: গুনাহের কারণে ঈমানের পরিপূর্ণতা কমে যায়
قَالَ أَبُو هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ: إِنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «لاَ يَزْنِي الزَّانِي حِينَ يَزْنِي وَهُوَ مُؤْمِنٌ، وَلاَ يَشْرَبُ الخَمْرَ حِينَ يَشْرَبُهَا وَهُوَ مُؤْمِنٌ، وَلاَ يَسْرِقُ السَّارِقُ حِينَ يَسْرِقُ وَهُوَ مُؤْمِنٌ»
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “ব্যভিচারী ব্যভিচার করার সময়ে মুমিন থাকে না, মদ পানকারী মদ পান করার সময়ে মুমিন থাকে না। চোর চুরি করার সময়ে মুমিন থাকে না”।
মুত্তাফাকুন ‘আলাইহি, সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৫৫৭৮; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৫৭।
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «لاَ يَزْنِي العَبْدُ حِينَ يَزْنِي وَهُوَ مُؤْمِنٌ، وَلاَ يَسْرِقُ حِينَ يَسْرِقُ وَهُوَ مُؤْمِنٌ، وَلاَ يَشْرَبُ حِينَ يَشْرَبُ وَهُوَ مُؤْمِنٌ، وَلاَ يَقْتُلُ وَهُوَ مُؤْمِنٌ»  قَالَ عِكْرِمَةُ: قُلْتُ لِابْنِ عَبَّاسٍ: كَيْفَ يُنْزَعُ الإِيمَانُ مِنْهُ؟ قَالَ: «هَكَذَا، وَشَبَّكَ بَيْنَ أَصَابِعِهِ، ثُمَّ أَخْرَجَهَا، فَإِنْ تَابَ عَادَ إِلَيْهِ هَكَذَا، وَشَبَّكَ بَيْنَ أَصَابِعِهِ».
ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “মুমিন হিসেবে বহাল থাকা অবস্থায় কোনো বান্দাহ ব্যভিচারে লিপ্ত হয় না। মুমিন থাকা অবস্থায় কোনো ব্যক্তি চুরি করে না। মুমিন থাকা অবস্থায় কেউ মদ পান করে না। মুমিন থাকা অবস্থায় কেউ হত্যা করে না”।
ইকরিমা রহ. বলেন, আমি ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুকে জিজ্ঞেস করলাম, তার থেকে ঈমান কীভাবে ছিনিয়ে নেওয়া হয়? তিনি বললেন, এভাবে; আর আঙ্গুলিগুলো পরস্পর জড়ালেন, এরপর আঙ্গুলিগুলো বের করলেন। যদি সে তওবা করে তবে পূর্ববৎ এভাবে ফিরে আসে। এ বলে আঙ্গুলিগুলো পুনরায় পরস্পর জড়ালেন”।
সহীহ, সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৬৮০৯।
عن عائشة رضي الله عنها قالت: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «لا يزني الزاني حين يزني وهو مؤمن ولا يسرق حين يسرق وهو مؤمن».
আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “ব্যভিচারী ব্যভিচার করার সময়ে মুমিন থাকে না এবং চোর চুরি করার সময়ে মুমিন থাকে না”।
সহীহ, বাযযার- কাশফুল আসতার, হাদীস নং ১১২।
عَنِ ابْنِ أَبِي أَوْفَى، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «لَا يَشْرَبُ الْخَمْرَ حِينَ يَشْرَبُهَا وَهُوَ مُؤْمِنٌ، وَلَا يَزْنِي حِينَ يَزْنِي وَهُوَ مُؤْمِنٌ، وَلَا يَنْتَهِبُ نُهْبَةً ذَاتَ شَرَفٍ أَوْ سَرَفٍ وَهُوَ مُؤْمِنٌ».
ইবন আবু আওফা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “মদ পানকারী মদ পান করার সময়ে মুমিন থাকে না, ব্যভিচারী ব্যভিচার করার সময়ে মুমিন থাকে না এবং মূল্যবান অথবা বেশি সামগ্রী লুটেরা যখন লুট করতে থাকে (এমন জিনিস ছিনতাই করে মানুষ তা দেখার জন্য তাদের চোখ সেদিকে উত্তোলিত করে) তখন সে মুমিন থাকে না”।
হাসান, মুসনাদ আহমদ, হাদীস নং ১৯১০২; বাযযার- কাশফুল আসতার, হাদীস নং ১১১।
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ:قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِذَا زَنَى الرَّجُلُ خَرَجَ مِنْهُ الْإِيمَانُ كَانَ عَلَيْهِ كَالظُّلَّةِ، فَإِذَا انْقَطَعَ رَجَعَ إِلَيْهِ الْإِيمَانُ».
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “যখন কেউ যিনা করে, তখন তার থেকে ঈমান বেরিয়ে যায় এবং তা তার মাথার উপর মেঘের ন্যায় অবস্থান করে। আর যখন সে তা থেকে বিরত হয়, তখন ঈমান তার কাছে পুনরায় ফিরে আসে”।
সহীহ, আবু দাউদ, হাদীস নং ৪৬৯০; হাকেম, ১৮২২, তিনি সহীহ বলেছেন।
عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ قَالَ: مَا خَطَبَنَا نَبِيُّ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِلَّا قَالَ: «لَا إِيمَانَ لِمَنْ لَا أَمَانَةَ لَهُ، وَلَا دِينَ لِمَنْ لَا عَهْدَ لَهُ».
আনাস ইবন মালিক রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, যখনই আল্লাহর নবী আমাদের মাঝে খুতবা দিতেন, তখনই তিনি বলতেন, “যার মধ্যে আমানতদারীতা নেই তার ঈমান নেই এবং যে অঙ্গীকার পালন করে না তার মধ্যে দীন নেই”।
হাসান, মুসনাদ আহমদ, হাদীস নং ১২৩৮৩; আবু ইয়া‘লা, হাদীস নং ২৮৬৩; বাযযার- কাশফুল আসতার, হাদীস নং ১০০।

৬- পরিচ্ছেদ: ইবাদত বন্দেগী (সৎকাজ) কম করার কারণে ঈমান কম হওয়ার বর্ণনা
عَنْ أَبِي سَعِيدٍ الخُدْرِيِّ، قَالَ: خَرَجَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي أَضْحَى أَوْ فِطْرٍ إِلَى المُصَلَّى، فَمَرَّ عَلَى النِّسَاءِ، فَقَالَ: «يَا مَعْشَرَ النِّسَاءِ تَصَدَّقْنَ فَإِنِّي أُرِيتُكُنَّ أَكْثَرَ أَهْلِ النَّارِ» فَقُلْنَ: وَبِمَ يَا رَسُولَ اللَّهِ؟ قَالَ: «تُكْثِرْنَ اللَّعْنَ، وَتَكْفُرْنَ العَشِيرَ، مَا رَأَيْتُ مِنْ نَاقِصَاتِ عَقْلٍ وَدِينٍ أَذْهَبَ لِلُبِّ الرَّجُلِ الحَازِمِ مِنْ إِحْدَاكُنَّ»، قُلْنَ: وَمَا نُقْصَانُ دِينِنَا وَعَقْلِنَا يَا رَسُولَ اللَّهِ؟ قَالَ: «أَلَيْسَ شَهَادَةُ المَرْأَةِ مِثْلَ نِصْفِ شَهَادَةِ الرَّجُلِ» قُلْنَ: بَلَى، قَالَ: «فَذَلِكِ مِنْ نُقْصَانِ عَقْلِهَا، أَلَيْسَ إِذَا حَاضَتْ لَمْ تُصَلِّ وَلَمْ تَصُمْ» قُلْنَ: بَلَى، قَالَ: «فَذَلِكِ مِنْ نُقْصَانِ دِينِهَا».
আবু সাঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, একবার ঈদুল আযহা বা ঈদুল ফিতরের সালাত আদায়ের জন্য রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঈদগাহের দিকে যাচ্ছিলেন। তিনি মহিলাদের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় বললেন, “হে মহিলা সমাজ! তোমরা সদকা করতে থাকো। কারণ আমি দেখেছি জাহান্নামের অধিবাসীদের মধ্যে তোমরাই অধিক। তারা বললেন, কী কারণে, ইয়া রাসূলাল্লাহ্? তিনি বললেন, তোমরা অধিক পরিমাণে অভিশাপ দিয়ে থাকো আর স্বামীর না-শোকরী করে থাকো। বুদ্ধি ও দীনের ব্যাপারে ত্রুটি থাকা সত্ত্বেও একজন সদাসতর্ক ব্যক্তির বুদ্ধি হরণে তোমাদের চাইতে পারদর্শী আমি আর কাউকে দেখি নি। তারা বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ্! আমাদের দীন ও বুদ্ধির ত্রুটি কোথায়? তিনি বললেন, একজন মহিলার সাক্ষ্য কি একজন পুরুষের সাক্ষ্যের অর্ধেক নয়? তারা উত্তর দিলেন, হ্যাঁ। তখন তিনি বললেন, এ হচ্ছে তাদের বুদ্ধির কমতি আর হায়েয অবস্থায় তারা কি সালাত ও সিয়াম থেকে বিরত থাকে না? তারা বললেন, হ্যাঁ। তিনি বললেন: এ হচ্ছে তাদের দীনের কমতি”।
মুত্তাফাকুন ‘আলাইহি, সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৩০৪; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৮০।  
عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عُمَرَ، عَنْ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنَّهُ قَالَ: «يَا مَعْشَرَ النِّسَاءِ، تَصَدَّقْنَ وَأَكْثِرْنَ الِاسْتِغْفَارَ، فَإِنِّي رَأَيْتُكُنَّ أَكْثَرَ أَهْلِ النَّارِ» فَقَالَتِ امْرَأَةٌ مِنْهُنَّ جَزْلَةٌ: وَمَا لَنَا يَا رَسُولَ اللهِ أَكْثَرُ أَهْلِ النَّارِ؟ قَالَ: «تُكْثِرْنَ اللَّعْنَ، وَتَكْفُرْنَ الْعَشِيرَ، وَمَا رَأَيْتُ مِنْ نَاقِصَاتِ عَقْلٍ وَدِينٍ أَغْلَبَ لِذِي لُبٍّ مِنْكُنَّ» قَالَتْ: يَا رَسُولَ اللهِ، وَمَا نُقْصَانُ الْعَقْلِ وَالدِّينِ؟ قَالَ: «أَمَّا نُقْصَانُ الْعَقْلِ: فَشَهَادَةُ امْرَأَتَيْنِ تَعْدِلُ شَهَادَةَ رَجُلٍ فَهَذَا نُقْصَانُ الْعَقْلِ، وَتَمْكُثُ اللَّيَالِيَ مَا تُصَلِّي، وَتُفْطِرُ فِي رَمَضَانَ فَهَذَا نُقْصَانُ الدِّينِ».
আব্দুল্লাহ ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “হে নারীগণ! তোমরা দান-খয়রাত করতে থাকো এবং বেশি করে ইস্তিগফার করো; কেননা আমি দেখেছি, জাহান্নামের অধিবাসীদের অধিকাংশই নারী। জনৈকা বুদ্ধিজীবি মহিলা প্রশ্ন করল, হে আল্লাহর রাসূল! জাহান্নামে আমাদের সংখ্যাগরিষ্ঠতার কারণ কী? বললেন, তোমরা বেশি বেশি অভিসম্পাত করে থাকো এবং স্বামীর প্রতি (অকৃতজ্ঞতা) প্রকাশ করে থাকো। আর দীন ও জ্ঞান-বুদ্ধিতে ত্রুটিপূর্ণ কোনো সম্প্রদায়, জ্ঞানীদের ওপর তোমাদের চেয়ে প্রভাব বিস্তারকারী আর কাউকে আমি দেখি নি। প্রশ্নকারী মহিলা জিজ্ঞেস করল, হে আল্লাহর রাসূল! জ্ঞান-বুদ্ধি ও দীনে আমাদের কমতি কিসে? তিনি বললেন, তোমাদের জ্ঞান-বুদ্ধির ত্রুটি হলো দুজন স্ত্রীলোকের সাক্ষ্য একজন পুরুষের সাক্ষ্যের সমান; এটিই তোমাদের বুদ্ধির ত্রুটির প্রমাণ। স্ত্রীলোক (প্রতিমাসে) কয়েকদিন সালাত থেকে বিরত থাকে আর রমযান মাসে সাওম ভঙ্গ করে (ঋতুমতী হওয়ার কারণে); এটাই দীনের ত্রুটি”।
সহীহ, সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৭৯।
হাদীসে উল্লিখিত «امرأة منهن جزلة» এ জীম অক্ষরে ফাতহা ও যা অক্ষরে সুকুন যোগে অর্থ হলো জ্ঞান-বুদ্ধি সম্পন্ন মহিলা। আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকেও অনুরূপ হাদীস বর্ণিত আছে।
সহীহ, সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৮০।
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، انْصَرَفَ مِنَ الصُّبْحِ يَوْمًا فَأَتَى النِّسَاءَ فِي الْمَسْجِدِ، فَوَقَفَ عَلَيْهِنَّ، فَقَالَ: «يَا مَعْشَرَ النِّسَاءِ، مَا رَأَيْتُ مِنْ نَوَاقِصِ عُقُولٍ وَدِينٍ أَذْهَبَ بِقُلُوبِ ذَوِي الْأَلْبَابِ مِنْكُنَّ، وَإِنِّي قَدْ رَأَيْتُ أَنَّكُنَّ أَكْثَرَ أَهْلِ النَّارِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ، فَتَقَرَّبْنَ إِلَى اللهِ مَا اسْتَطَعْتُنَّ "، وَكَانَ فِي النِّسَاءِ امْرَأَةُ عَبْدِ اللهِ بْنِ مَسْعُودٍ، فَأَتَتْ إِلَى عَبْدِ اللهِ بْنِ مَسْعُودٍ فَأَخْبَرَتْهُ بِمَا سَمِعَتْ مِنْ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، وَأَخَذَتْ حُلِيًّا لَهَا، فَقَالَ ابْنُ مَسْعُودٍ: أَيْنَ تَذْهَبِينَ بِهَذَا الْحُلِيِّ؟ فَقَالَتْ: أَتَقَرَّبُ بِهِ إِلَى اللهِ وَرَسُولِهِ لَعَلَّ اللهَ أَنْ لَا يَجْعَلَنِي مِنْ أَهْلِ النَّارِ، فَقَالَ: وَيْلَكِ، هَلُمَّ تَصَدَّقِي بِهِ عَلَيَّ وَعَلَى وَلَدِي، فَأَنَا لَهُ مَوْضِعٌ، فَقَالَتْ: لَا وَاللهِ، حَتَّى أَذْهَبَ بِهِ إِلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَذَهَبَتْ تَسْتَأْذِنُ عَلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَقَالُوا لِلنَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: هَذِهِ زَيْنَبُ تَسْتَأْذِنُ يَا رَسُولَ اللهِ، فَقَالَ: " أَيُّ الزَّيَانِبِ هِيَ؟ " فَقَالُوا: امْرَأَةُ عَبْدِ اللهِ بْنِ مَسْعُودٍ، فَقَالَ: " ئْذَنُوا لَهَا"، فَدَخَلَتْ عَلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَقَالَتْ: يَا رَسُولَ اللهِ، إِنِّي سَمِعْتُ مِنْكَ مَقَالَةً، فَرَجَعْتُ إِلَى ابْنِ مَسْعُودٍ فَحَدَّثْتُهُ، وَأَخَذْتُ حُلِيًّا أَتَقَرَّبُ بِهِ إِلَى اللهِ وَإِلَيْكَ، رَجَاءَ أَنْ لَا يَجْعَلَنِي اللهُ مِنْ أَهْلِ النَّارِ، فَقَالَ لِي ابْنُ مَسْعُودٍ: تَصَدَّقِي بِهِ عَلَيَّ وَعَلَى وَلَدِي فَإِنَّا لَهُ مَوْضِعٌ، فَقُلْتُ: حَتَّى أَسْتَأْذِنَ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «تَصَدَّقِي بِهِ عَلَيْهِ، وَعَلَى بَنِيهِ فَإِنَّهُمْ لَهُ مَوْضِعٌ». ثُمَّ قَالَتْ: يَا رَسُولَ اللهِ، أَرَأَيْتَ مَا سَمِعْتُ مِنْكَ حِينَ وَقَفْتَ عَلَيْنَا: " مَا رَأَيْتُ مِنْ نَوَاقِصِ عُقُولٍ قَطُّ وَلَا دِينٍ أَذْهَبَ بِقُلُوبِ ذَوِي الْأَلْبَابِ مِنْكُنَّ "، قَالَتْ: يَا رَسُولَ اللهِ، فَمَا نُقْصَانُ دِينِنَا وَعُقُولِنَا؟ فَقَالَ: أَمَّا مَا ذَكَرْتُ مِنْ نُقْصَانِ دِينِكُنَّ فَالْحَيْضَةُ الَّتِي تُصِيبُكُنَّ،  تَمْكُثُ إِحْدَاكُنَّ مَا شَاءَ اللهُ أَنْ تَمْكُثَ لَا تُصَلِّي وَلَا تَصُومُ، فَذَلِكَ مِنْ نُقْصَانِ دِينِكُنَّ، وَأَمَّا مَا ذَكَرْتُ مِنْ نُقْصَانِ عُقُولِكُنَّ، فَشَهَادَتُكُنَّ إِنَّمَا شَهَادَةُ الْمَرْأَةِ نِصْفُ شَهَادَةٍ ».
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সকালের (ফজরের) সালাত শেষে মসজিদে মহিলাদের কাছে আসলেন। তাদের সম্মুখে দাঁড়িয়ে তিনি বললেন, হে নারীগণ! বুদ্ধি ও দীনের ব্যাপারে ত্রুটি থাকা সত্ত্বেও একজন সদাসতর্ক ব্যক্তির বুদ্ধি হরণে তোমাদের চাইতে পারদর্শী আমি আর কাউকে দেখি নি। আমি দেখেছি কিয়ামতের দিনে জাহান্নামের অধিবাসীদের মধ্যে তোমরাই অধিক। সুতরাং তোমরা সাধ্যমত আল্লাহর ইবাদত বন্দেগীতে মনোনিবেশ করো এবং তাঁর নিকটবর্তী হও (অর্থাৎ দান সদকা করতে থাকো)। তাদের মধ্যে আব্দুল্লাহ ইবন মাসউদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর স্ত্রী ছিলেন। তিনি আব্দুল্লাহ ইবন মাসউদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর কাছে এসে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে যা শুনেছেন তা বর্ণনা করলেন। তিনি তার গহনাদি নিলেন। আব্দুল্লাহ ইবন মাসউদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু জিজ্ঞেস করলেন, এসব গহনা নিয়ে কোথায় যাচ্ছো? তিনি বললেন, এগুলো দ্বারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের সন্তুষ্ট অর্জনের উদ্দেশ্যে যাচ্ছি। হয়ত এগুলোর (দানের) কারণে আল্লাহ আমাকে জাহান্নামীদের অন্তর্ভুক্ত করবেন না। তিনি বললেন, এসো, এগুলো আমাকে ও আমার সন্তান সন্ততিদেরকে দান করো। আমি এগুলোর হকদার। তার স্ত্রী বললেন, না, যতক্ষণ আমি এগুলো রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে নিয়ে যাবো (তিনি অনুমতি দিলে আমি তোমাকে দান করতে পারবো)। তিনি রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দরবারে গেলেন এবং নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে যাওয়ার অনুমতি চাইলেন। সাহাবীরা রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বললেন, ইনি যয়নাব, আপনার কাছে প্রবেশের অনুমতি চাচ্ছেন। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, কোন যয়নাব? তারা বললেন, আব্দুল্লাহ ইবন মাসউদের স্ত্রী যয়নাব। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে অনুমতি দিলে তিনি তাঁর কাছে প্রবেশ করলেন। তিনি বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমি আপনার থেকে নসিহত শুনেছি, অতঃপর তা আব্দুল্লাহ ইবন মাসউদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুকে বর্ণনা করেছি। আমি আমার গহনাদি দান করে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের সন্তুষ্টি অর্জন করতে চাই, যাতে আল্লাহ আমাকে জাহান্নামের অধিবাসী না করেন। তখন আব্দুল্লাহ ইবন মাসউদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বললেন, এগুলো আমাকে ও আমার সন্তানদেরকে দান করো; কেননা আমি এগুলোর অধিক হকদার ও দানের উপযুক্ত লোক। তখন আমি তাকে বলেছি, আমি আগে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অনুমতি নিবো। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তুমি এগুলো তাকে ও তার সন্তানদেরকে দান করে দাও, কেননা তারা এগুলো পাওয়ার উপযুক্ত ও হকদার। অতঃপর তিনি বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমি আপনার থেকে শুনেছি যে, বুদ্ধি ও দীনের ব্যাপারে ত্রুটি থাকা সত্ত্বেও একজন সদাসতর্ক ব্যক্তির বুদ্ধি হরণে তোমাদের চাইতে পারদর্শী আমি আর কাউকে দেখি নি। তিনি বললেন, হে আল্লাহর রাসূল!  আমাদের দীন ও বুদ্ধির ত্রুটি কোথায়? রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আমি তোমাদের দীনের ত্রুটি সম্পর্কে ইতোপূর্বে আলোচনা করেছি, তা হলো তোমাদের কেউ হায়েয অবস্থায় যতোদিন আল্লাহ চায় হায়েয থাকে ততোদিন সালাত ও সাওম থেকে বিরত থাকে। এ হচ্ছে তাদের দীনের ত্রুটি। আর বুদ্ধির ত্রুটি সম্পর্কে যা আলোচনা করেছি, তা হলো, একজন মহিলার সাক্ষ্য একজন পুরুষের সাক্ষ্যের অর্ধেক (এ হচ্ছে তোমাদের বুদ্ধির ত্রুটি)”।
হাসান, মুসনাদ আহমদ, হাদীস নং৮৮৬২; ইবন খুযাইমা, হাদীস নং ২৪৬১।
عَنْ عَبْدِ اللهِ، أَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «تَصَدَّقْنَ يَا مَعْشَرَ النِّسَاءِ، وَلَوْ مِنْ حُلِيِّكُنَّ، فَإِنَّكُنَّ أَكْثَرُ أَهْلِ النَّارِ. فَقَامَتِ امْرَأَةٌ لَيْسَتْ مِنْ عِلْيَةِ النِّسَاءِ، فَقَالَتْ: لِمَ يَا رَسُولَ اللهِ؟ قَالَ: لِأَنَّكُنَّ تُكْثِرْنَ اللَّعْنَ، وَتَكْفُرْنَ الْعَشِيرَ ».
وفي رواية: «وَمَا رَأَيْتُ مِنْ نَاقِصَاتِ عَقْلٍ وَدِينٍ أَغْلَبَ لِذِي لُبٍّ مِنْكُنَّ».
আব্দুল্লাহ ইবন মাসউদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “হে নারীগণ! তোমরা দান-খয়রাত করতে থাকো; যদিও তোমাদের গহনাদি থেকে হয়; কেননা আমি দেখেছি যে, জাহান্নামের অধিবাসীদের অধিকাংশই নারী। জনৈকা মহিলা দাঁড়িয়ে গেলো, যিনি মহিলাদের মধ্যে সম্ভ্রান্ত ছিল না, সে প্রশ্ন করল, হে আল্লাহর রাসূল! জাহান্নামে আমাদের সংখ্যাগরিষ্ঠতার কারণ কী? তিনি বললেন, তোমরা বেশি বেশি অভিসম্পাত করে থাকো এবং স্বামীর প্রতি অকৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে থাকো”।
অন্য বর্ণনায় এসেছে, “দীন ও জ্ঞান-বুদ্ধিতে ত্রুটিপূর্ণ কোনো সম্প্রদায়, জ্ঞানীদের ওপর তোমাদের চেয়ে প্রভাব বিস্তারকারী আর কাউকে আমি দেখি নি”।
হাসান, মুসনাদ আহমদ, হাদীস নং ৩৫৬৯, ৪১৫২; আবু ইয়া‘লা, হাদীস নং ৫১১২, ৫১৪৪; হাকিম, হাদীস নং ২/১৯০।  

৭- পরিচ্ছেদ: ঈমানের বাড়তি-কমতি
আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,  
﴿وَمَا زَادَهُمۡ إِلَّآ إِيمَٰنٗا وَتَسۡلِيمٗا﴾ [الاحزاب : ٢٢]
“এতে তাদের ঈমান ও আত্মসমর্পণই বৃদ্ধি পেলো”। [সূরা আল-আহযাব, আয়াত: ২২]  
﴿وَيَزۡدَادَ ٱلَّذِينَ ءَامَنُوٓاْ إِيمَٰنٗا﴾ [المدثر: ٣١]  
“আর মুমিনদের ঈমান বেড়ে যায়”। [সূরা আল-মুদ্দাসসির, আয়াত: ৩১]
﴿فَأَمَّا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ فَزَادَتۡهُمۡ إِيمَٰنٗا﴾ [التوبة: ١٢٤]  
“অতএব, যারা মুমিন নিশ্চয় তা তাদের ঈমান বৃদ্ধি করেছে”। [সূরা আত-তাওবাহ, আয়াত: ১২৪]
﴿فَٱخۡشَوۡهُمۡ فَزَادَهُمۡ إِيمَٰنٗا﴾ [ال عمران: ١٧٣]
“সুতরাং তাদেরকে ভয় করো; কিন্তু তা তাদের ঈমান বাড়িয়ে দিয়েছিল”। [সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ১৭৩]  
﴿لِيَزۡدَادُوٓاْ إِيمَٰنٗا مَّعَ إِيمَٰنِهِمۡ﴾ [الفتح: ٤]  
“যেন তাদের ঈমানের সাথে ঈমান বৃদ্ধি পায়”। [সূরা আল-ফাতহ, আয়াত: ৪]
عَنْ أَبِي سَعِيدٍ الخُدْرِيِّ، قَالَ: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: حَتَّى إِذَا خَلَصَ الْمُؤْمِنُونَ مِنَ النَّارِ، فَوَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ، مَا مِنْكُمْ مِنْ أَحَدٍ بِأَشَدَّ مُنَاشَدَةً لِلَّهِ فِي اسْتِقْصَاءِ الْحَقِّ مِنَ الْمُؤْمِنِينَ لِلَّهِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ لِإِخْوَانِهِمُ الَّذِينَ فِي النَّارِ، يَقُولُونَ: رَبَّنَا كَانُوا يَصُومُونَ مَعَنَا وَيُصَلُّونَ وَيَحُجُّونَ، فَيُقَالُ لَهُمْ: أَخْرِجُوا مَنْ عَرَفْتُمْ، فَتُحَرَّمُ صُوَرُهُمْ عَلَى النَّارِ، فَيُخْرِجُونَ خَلْقًا كَثِيرًا قَدِ أَخَذَتِ النَّارُ إِلَى نِصْفِ سَاقَيْهِ، وَإِلَى رُكْبَتَيْهِ، ثُمَّ يَقُولُونَ: رَبَّنَا مَا بَقِيَ فِيهَا أَحَدٌ مِمَّنْ أَمَرْتَنَا بِهِ، فَيَقُولُ: ارْجِعُوا فَمَنْ وَجَدْتُمْ فِي قَلْبِهِ مِثْقَالَ دِينَارٍ مِنْ خَيْرٍ [ص: فَأَخْرِجُوهُ، فَيُخْرِجُونَ خَلْقًا كَثِيرًا، ثُمَّ يَقُولُونَ: رَبَّنَا لَمْ نَذَرْ فِيهَا أَحَدًا مِمَّنْ أَمَرْتَنَا، ثُمَّ يَقُولُ: ارْجِعُوا فَمَنْ وَجَدْتُمْ فِي قَلْبِهِ مِثْقَالَ نِصْفِ دِينَارٍ مِنْ خَيْرٍ فَأَخْرِجُوهُ، فَيُخْرِجُونَ خَلْقًا كَثِيرًا، ثُمَّ يَقُولُونَ: رَبَّنَا لَمْ نَذَرْ فِيهَا مِمَّنْ أَمَرْتَنَا أَحَدًا، ثُمَّ يَقُولُ: ارْجِعُوا فَمَنْ وَجَدْتُمْ فِي قَلْبِهِ مِثْقَالَ ذَرَّةٍ مِنْ خَيْرٍ فَأَخْرِجُوهُ، فَيُخْرِجُونَ خَلْقًا كَثِيرًا ثُمَّ يَقُولُونَ: رَبَّنَا لَمْ نَذَرْ فِيهَا خَيْرًا "، وَكَانَ أَبُو سَعِيدٍ الْخُدْرِيُّ يَقُولُ: إِنْ لَمْ تُصَدِّقُونِي بِهَذَا الْحَدِيثِ فَاقْرَءُوا إِنْ شِئْتُمْ: ﴿إِنَّ ٱللَّهَ لَا يَظۡلِمُ مِثۡقَالَ ذَرَّةٖۖ وَإِن تَكُ حَسَنَةٗ يُضَٰعِفۡهَا وَيُؤۡتِ مِن لَّدُنۡهُ أَجۡرًا عَظِيمٗا٤﴾ [النساء : ٤٠]  فَيَقُولُ اللهُ عَزَّ وَجَلَّ: شَفَعَتِ الْمَلَائِكَةُ، وَشَفَعَ النَّبِيُّونَ، وَشَفَعَ الْمُؤْمِنُونَ، وَلَمْ يَبْقَ إِلَّا أَرْحَمُ الرَّاحِمِينَ، فَيَقْبِضُ قَبْضَةً مِنَ النَّارِ، فَيُخْرِجُ مِنْهَا قَوْمًا لَمْ يَعْمَلُوا خَيْرًا قَطُّ قَدْ عَادُوا حُمَمًا، فَيُلْقِيهِمْ فِي نَهَرٍ فِي أَفْوَاهِ الْجَنَّةِ يُقَالُ لَهُ: نَهَرُ الْحَيَاةِ، فَيَخْرُجُونَ كَمَا تَخْرُجُ الْحِبَّةُ فِي حَمِيلِ السَّيْلِ».
 “শেষ নাগাদ মুমিনরা জাহান্নাম থেকে নাজাত পেয়ে যাবে। সেই সত্তার শপথ যার হাতে আমার প্রাণ, তোমাদের কেউ নিজের অধিকার আদায়ের দাবীতে, ততোখানি অনমনীয় নও যতোখানি কঠোর হবে কিয়ামতের দিন মুমিনরা আল্লাহর কাছে তাদের সে সব ভাইদের মুক্তির জন্যে যারা জাহান্নামে চলে গেছে। তারা বলবে, হে আমাদের রব! তারা আমাদের সাথে সাওম পালন করতো, সালাত পড়তো এবং হজ করতো। তখন তাদেরকে বলা হবে, যাও, তোমরা যাদেরকে চিনো তাদেরকে বের করে নিয়ে আসো। অতঃপর জাহান্নামের আগুন তাদের চেহারার জন্য হারাম হয়ে যাবে। তারা বহু সংখ্যক লোককে জাহান্নাম থেকে বের করে আনবে। আগুন এদের কারো পায়ের নলা পর্যন্ত এবং কারো পায়ের গোড়ালী পর্যন্ত জ্বালিয়ে ফেলবে। অতঃপর তারা বলবে, হে আমাদের রব, এখন এমন কোনো ব্যক্তি অবশিষ্ট নেই, যাদেরকে বের করার জন্যে আপনি নির্দেশ দিয়েছিলেন। অতঃপর আল্লাহ বলবেন, আবার যাও। যাদের অন্তরে এক দীনার পরিমাণ কল্যাণ (ঈমান) দেখতে পাবে, তাদেরকে বের করে আনো। এবার তারা অনেক লোককে বের করে নিয়ে আসবে। তারা আবার বলাবে, হে আমাদের রব, এমন কোনো ব্যক্তিকে আমরা বাদ দিইনি, যাদেরকে বের করার জন্যে আপনি নির্দেশ করেছিলেন। অতঃপর তিনি তাদেরকে বলবেন, পুনরায় যাও, যাদের অন্তরে অর্ধদীনার পরিমাণ ঈমান পাবে, তাদেরকে বের করে আনো। এবার তারা বহু লোককে বের করে আনবে। তারা ফিরে এসে বলবে, হে আমাদের রব, আপনি যাদেরকে আনার নির্দেশ করেছিলেন, এমন কোনো ব্যক্তিকে আমরা রেখে আসি নি। আল্লাহ বলবেন, পুনরায় যাও, যাদের অন্তরে বিন্দু পরিমাণ ঈমান পাবে তাদেরকে বের করে নিয়ে আসো। এবারও তারা বহু সংখ্যক লোক বের করে নিয়ে আসবে এবং ফিরে এসে বলবে, হে আমাদের রব, সামান্য পরিমাণ ঈমানদার আর একজন লোককেও আমরা জাহান্নামে অবশিষ্ট রেখে আসি নি।
হাদীসের বণর্নাকারী আবু সাঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, যদি তোমরা আমাকে এ হাদীসের ব্যাপারে বিশ্বাস না করো, তা হলে আমার কথার সত্যতা প্রমাণের এ আয়াতটি পাঠ করে নাও:
﴿إِنَّ ٱللَّهَ لَا يَظۡلِمُ مِثۡقَالَ ذَرَّةٖۖ وَإِن تَكُ حَسَنَةٗ يُضَٰعِفۡهَا وَيُؤۡتِ مِن لَّدُنۡهُ أَجۡرًا عَظِيمٗا٤﴾ [النساء : ٤٠]  
“নিশ্চয় আল্লাহ অনু পরিমাণও জুলুম করেন না। আর যদি সেটি ভালো কাজ হয়, তিনি তাকে বহুগুণ করে দেন এবং তাঁর পক্ষ থেকে মহা প্রতিদান প্রদান করেন”। [সূরা আন-নিসা, আয়াত: ৪০] অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা বলবেন, ফিরিশতাগণ, নবীগণ এবং মুমিনরা সবাই শাফা‘আত করে অবসর হয়েছে। এখন (আমি) ‘আরহামুর রাহেমিন’ পরম দয়ালু ব্যতীত আর কেউ অবশিষ্ট নেই। তখন তিনি এক মুষ্টি ভর্তি এক দল লোককে জাহান্নাম থেকে বের করবেন। তিনি এমন সব লোককে বের করে আনবেন, যারা কখনো কোনো নেক আমল করে নি। এরা জ্বলে পুড়ে কয়লার মতো হয়ে গেছে। অতঃপর তাদেরকে জান্নাতের দ্বারদেশে নাহরুল হায়াত’ নামক একটি ঝর্ণায় নামানো হবে। তারা এখান থেকে এমন ভাবে সজীব হয়ে বের হবে যেমন বন্যার আবজর্নাময় ভেজা মাটিতে বীজ অংকুরিত হয়ে বেড়ে ওঠে”।
মুত্তাফাকুন ‘আলাইহি, সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৭৪৩৯; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৮৩।
عَنْ أَبِي سَعِيدٍ الخُدْرِيِّ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «يَدْخُلُ أَهْلُ الجَنَّةِ الجَنَّةَ، وَأَهْلُ النَّارِ النَّارَ»، ثُمَّ يَقُولُ اللَّهُ تَعَالَى: «أَخْرِجُوا مِنَ النَّارِ مَنْ كَانَ فِي قَلْبِهِ مِثْقَالُ حَبَّةٍ مِنْ خَرْدَلٍ مِنْ إِيمَانٍ. فَيُخْرَجُونَ مِنْهَا قَدِ اسْوَدُّوا، فَيُلْقَوْنَ فِي نَهَرِ الحَيَا، أَوِ الحَيَاةِ - شَكَّ مَالِكٌ - فَيَنْبُتُونَ كَمَا تَنْبُتُ الحِبَّةُ فِي جَانِبِ السَّيْلِ، أَلَمْ تَرَ أَنَّهَا تَخْرُجُ صَفْرَاءَ مُلْتَوِيَةً».
আবু সাঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “জান্নাতে জান্নাতীরা এবং জাহান্নামীরা জাহান্নামে প্রবেশ করবেন। পরে আল্লাহ তা‘আলা (ফিরিশতাদের) বলবেন, যার অন্তরে একটি সরিষা পরিমাণও ঈমান রয়েছে, তাকে জাহান্নাম থেকে বের করে নিয়ে আসো। তারপর তাদের জাহান্নাম থেকে বের করা হবে এমন অবস্থায় যে, তারা (পুড়ে) কালো হয়ে গেছে। এরপর তাদের বৃষ্টিতে বা হায়াতের [বর্ণনাকারী মালিক রহ. শব্দ দু’টির কোনটি এ সম্পর্কে সন্দেহ পোষণ করেছেন] নদীতে ফেলা হবে। ফলে তারা সতেজ হয়ে উঠবে, যেমন বন্যার পানির পাশে ঘাসের বীজ গজিয়ে উঠে। তুমি কি দেখতে পাওনা সেগুলো কেমন হলুদ রঙের হয় ও ঘন হয়ে গজায়”?
মুত্তাফাকুন ‘আলাইহি, সহীহ বুখারী, হাদীস নং ২২; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৮৪, হাদীসের শব্দ বুখারীর চয়নকৃত।
عَنْ أَنَسٍ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «يَخْرُجُ مِنَ النَّارِ مَنْ قَالَ لاَ إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ، وَفِي قَلْبِهِ وَزْنُ شَعِيرَةٍ مِنْ خَيْرٍ، وَيَخْرُجُ مِنَ النَّارِ مَنْ قَالَ لاَ إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ، وَفِي قَلْبِهِ وَزْنُ بُرَّةٍ مِنْ خَيْرٍ، وَيَخْرُجُ مِنَ النَّارِ مَنْ قَالَ لاَ إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ، وَفِي قَلْبِهِ وَزْنُ ذَرَّةٍ مِنْ خَيْرٍ»  আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে কেউ ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলবে আর তার অন্তরে একটি যব পরিমাণও নেকী থাকবে, তাকে জাহান্নাম থেকে বের করা হবে এবং যে ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলবে আর তার অন্তরে একটি অনু পরিমাণও নেকী থাকবে তাকে জাহান্নাম থেকে বের করা হবে।
মুত্তাফাকুন ‘আলাইহি, সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৪৪; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৯৩:৩২৫।
عَنْ عَبْدِ اللهِ بن مسعود، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «لَا يَدْخُلُ النَّارَ أَحَدٌ فِي قَلْبِهِ مِثْقَالُ حَبَّةِ خَرْدَلٍ مِنْ إِيمَانٍ، وَلَا يَدْخُلُ الْجَنَّةَ أَحَدٌ فِي قَلْبِهِ مِثْقَالُ حَبَّةِ خَرْدَلٍ مِنْ كِبْرِيَاءَ».
আব্দুল্লাহ ইবন মাসউদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “যার অন্তরে সরিষার দানা পরিমাণ ঈমান থাকবে সে জাহান্নামে প্রবেশ করবে না। আর যে ব্যক্তির অন্তরে এক সরিষার দানা পরিমাণ অহমিকা থাকবে সেও জান্নাতে প্রবেশ করবে না”।
সহীহ, সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৯১:১৪৮।
عَنْ جَابِرٍ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِذَا مُيِّزَ أَهْلُ الْجَنَّةِ، وَأَهْلُ النَّارِ، فَدَخَلَ أَهْلُ الْجَنَّةِ الْجَنَّةَ، وَأَهْلُ النَّارِ النَّارَ، قَامَتِ الرُّسُلُ فَشَفَعُوا، فَيَقُولُ: انْطَلِقُوا - أَوْ اذْهَبُوا - فَمَنْ عَرَفْتُمْ، فَأَخْرِجُوهُ، فَيُخْرِجُونَهُمْ قَدِ امْتُحِشُوا، فَيُلْقُونَهُمْ فِي نَهَرٍ - أَوْ عَلَى نَهَرٍ - يُقَالَ لَهُ: الْحَيَاةُ "، قَالَ: " فَتَسْقُطُ مَحَاشُّهُمْ عَلَى حَافَةِ النَّهَرِ، وَيَخْرُجُونَ بِيضًا مِثْلَ الثَّعَارِيرِ، ثُمَّ يَشْفَعُونَ، فَيَقُولُ: اذْهَبُوا - أَوْ انْطَلِقُوا - فَمَنْ وَجَدْتُمْ فِي قَلْبِهِ مِثْقَالَ قِيرَاطٍ مِنْ إِيمَانٍ فَأَخْرِجُوهُمْ "، قَالَ: " فَيُخْرِجُونَ بَشَرًا، ثُمَّ يَشْفَعُونَ، فَيَقُولُ: اذْهَبُوا أَوْ انْطَلِقُوا، فَمَنْ وَجَدْتُمْ فِي قَلْبِهِ مِثْقَالَ حَبَّةٍ مِنْ خَرْدَلَةٍ مِنْ إِيمَانٍ فَأَخْرِجُوهُ، ثُمَّ يَقُولُ اللهُ: أَنَا الْآنَ أُخْرِجُ بِعِلْمِي وَرَحْمَتِي" قَالَ: "فَيُخْرِجُ أَضْعَافَ مَا أَخْرَجُوا وَأَضْعَافَهُ، فَيُكْتَبُ فِي رِقَابِهِمْ عُتَقَاءُ اللهِ، ثُمَّ يَدْخُلُونَ الْجَنَّةَ فَيُسَمَّوْنَ فِيهَا الْجَهَنَّمِيِّينَ».
জাবির রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “জান্নাতীরা যখন জান্নাতে ও জাহান্নামীরা যখন জাহান্নামের জন্য আলাদা করা হবে এবং জান্নাতীরা যখন জান্নাতে প্রবেশ করবে এবং জাহান্নামীরা যখন জাহান্নামে প্রবেশ করবে তখন রাসূলগণ দাঁড়িয়ে সুপারিশ করতে চাইবেন, তখন তাদের বলা হবে, যাও বা চলো, তোমরা জাহান্নামে গিয়ে দেখো যাদেরকে তোমরা চিনো তাদেরকে জাহান্নাম থেকে বের করে নিয়ে এসো। তাদেরকে জাহান্নাম থেকে বের করে নিয়ে আসা তৎক্ষণাৎ তাদের চেহারা জ্বলে পুড়ে দগ্ধ হয়ে গেছে। তখন তাদেরকে ঝর্ণায় বা ‘হায়াত’ নামক নহরে এ নিক্ষেপ করা হবে। তাদের দগ্ধ শরীর সে নহরের দু‘পার্শ্বে এমন শুভ্রভাবে উদ্ভূত হবে, যেমন কোনো (বন্যার আবর্জনাস্থিত বীজ থেকে) তৃণ উদ্ভূত হয়। অতঃপর আবার শাফা‘আত করা হবে। অতঃপর বলা হবে, চলো বা যাও, তোমরা জাহান্নামে গিয়ে যাদের অন্তরে ‘কিরাত’ (ইঞ্চি) পরিমাণ ঈমান পাবে তাদেরকে জাহান্নাম থেকে বের করে নিয়ে আস ফলে একদলকে বের করে নিয়ে আসা হলো। অতঃপর আবার শাফা‘আত করবে, তাদেরকে বলা হবে চলো বা যাও, যাদের অন্তরে সরিষা পরিমাণ ঈমান পাবে তাদেরকে বের করে নিয়ে আসো। অতঃপর মহান আল্লাহ বলবেন, আমি এখন আমার ইলম ও রহমত অনুযায়ী মুক্ত করে আনবো। বর্ণনাকারী বলেন, ফলে অন্যরা যা বের করে এনেছে আল্লাহ তা‘আলা তার থেকে বহুগুণ বেশি বিশাল একদল জাহান্নামীকে মুক্ত করে নিয়ে আসলেন। তাদের গর্দানে লিখা থাকবে ‘উতাকাউল্লাহ’ «عُتَقَاءُ الله» (আল্লাহর আযাদকৃত)। অতঃপর তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে। তাদেরকে জান্নাতীরা ‘জাহান্নামী’ (জাহান্নাম থেকে মুক্তিপ্রাপ্ত) বলে আখ্যায়িত করবে”।
হাসান, মুসনাদ আহমদ, হাদীস নং ১৪৪৯১, ১৫০৪৮; ইবন হিব্বান, হাদীস নং ১৮৩, তিনি বলেছেন।
عَنْ جُنْدُبِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ، قَالَ: كُنَّا مَعَ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَنَحْنُ فِتْيَانٌ حَزَاوِرَةٌ، «فَتَعَلَّمْنَا الْإِيمَانَ قَبْلَ أَنْ نَتَعَلَّمَ الْقُرْآنَ، ثُمَّ تَعَلَّمْنَا الْقُرْآنَ فَازْدَدْنَا بِهِ إِيمَانًا».
জুনদুব ইবন আব্দুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, “আমরা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে ছিলাম। আমরা ছিলাম শক্তিশালী এবং সক্ষম যুবক। আমরা কুরআন শেখার পূর্বে ঈমান শিখেছি। অতঃপর কুরআন শিখেছি এবং তা দ্বারা আমাদের ঈমান বাড়িয়ে নিয়েছি”।
হাসান, ইবন মাজাহ, হাদীস নং ৬১।
হাদীসে উল্লিখিত «حَزَاوِرَةٌ » এর অর্থ হলো শক্তিশালী ও সক্ষম যুবক।  

৮- পরিচ্ছেদ: সে সব সার্বিক আমল যেগুলোর ব্যাপারে এসেছে যে তার মাধ্যমে মুসলিম জান্নাতে যাবে عَنْ أَبِي أَيُّوبَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ: أَنَّ رَجُلًا قَالَ لِلنَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: أَخْبِرْنِي بِعَمَلٍ يُدْخِلُنِي الجَنَّةَ، قَالَ (أي القوم) : مَا لَهُ مَا لَهُ. وَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «أَرَبٌ مَا لَهُ، تَعْبُدُ اللَّهَ وَلاَ تُشْرِكُ بِهِ شَيْئًا، وَتُقِيمُ الصَّلاَةَ، وَتُؤْتِي الزَّكَاةَ، وَتَصِلُ الرَّحِمَ».
আবু আইউব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, এক সাহাবী রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বললেন, আমাকে এমন আমল বলে দিন যা আমাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবে। (লোকেরা) বলল, তার কী হয়েছে, তার কী হয়েছে। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, “তার কোনো একটি প্রয়োজন নিয়ে সে কথা বলছে তুমি আল্লাহর ইবাদত করবে, তাঁর সাথে কোনো কিছু শরীক করবে না, সালাত কায়েম করবে, যাকাত আদায় করবে ও আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখবে”।
মুত্তাফাকুন ‘আলাইহি, সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৩৯৬; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৩/১৩।
হাদীসে উল্লিখিত «أَرَبٌ» শব্দ পড়ার তিনটি বর্ণনা রয়েছে। প্রথমত:  «أَرِبَ» এটি عَلِمَ  এর ওজনে। অর্থ, তার বিরুদ্ধে দো‘আ করা, সে বিপদে পতিত হয়েছে। এটি এমন কথা যা বাস্তবে সংঘটিত হওয়ার ইচ্চা করা হয় না। মূলত এটি আশ্চর্যের সময় উল্লেখ করা হয়। দ্বিতীয়ত: «أَرَبٌ» এটি جَمَلٌ এর ওজনে। অর্থাৎ তার প্রয়োজন আছে। এখানে ما অক্ষরটি অতিরিক্ত, যা কম বুঝানোর জন্য ব্যবহৃত হয়। অর্থাৎ সামান্য প্রয়োজন রয়েছে। «أرِبٌ» শব্দটি كَتِفٌ এর ওজনে। পূর্ণ বুদ্ধিমান। অর্থাৎ সে বুদ্ধিমান। এখানে মুবতাদাকে হযফ করা হয়েছে। অর্থাৎ সে বুদ্ধিমান। অতঃপর জিজ্ঞাসা করা হলো, ما له؟ অর্থাৎ তার কি অবস্থা? আন-নিহায়া, ১/৩৫।
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ: أَنَّ أَعْرَابِيًّا أَتَى النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَقَالَ: دُلَّنِي عَلَى عَمَلٍ إِذَا عَمِلْتُهُ دَخَلْتُ الجَنَّةَ، قَالَ: «تَعْبُدُ اللَّهَ لاَ تُشْرِكُ بِهِ شَيْئًا، وَتُقِيمُ الصَّلاَةَ المَكْتُوبَةَ، وَتُؤَدِّي الزَّكَاةَ المَفْرُوضَةَ، وَتَصُومُ رَمَضَانَ» قَالَ: وَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ لاَ أَزِيدُ عَلَى هَذَا، فَلَمَّا وَلَّى، قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَنْ سَرَّهُ أَنْ يَنْظُرَ إِلَى رَجُلٍ مِنْ أَهْلِ الجَنَّةِ، فَلْيَنْظُرْ إِلَى هَذَا».
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, এক বেদুইন সাহাবী রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দরবারে উপস্থিত হয়ে বললেন, আমাকে এমন আমলের পথনির্দেশ করুন যা আমল করলে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারব। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তুমি আল্লাহর ইবাদত করবে, তাঁর সাথে কোন কিছু শরীক করবে না, (পাঁচ ওয়াক্ত) ফরয সালাত আদায় করবে, ফরয যাকাত আদায় করবে ও রমযানের সাওম পালন করবে। সাহাবী বললেন, আমার প্রাণ যার হাতে তাঁর কসম, আমি বেশি করবো না। তিনি যখন ফিরে গেলেন তখন রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, কেউ যদি জান্নাতী লোক দেখতে আগ্রহী হয় সে যেন তার দিকে তাকিয়ে দেখে”।
মুত্তাফাকুন ‘আলাইহি, সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৩৯৭; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৪।
عَنْ أَبِي جَمْرَةَ، قَالَ: كُنْتُ أَقْعُدُ مَعَ ابْنِ عَبَّاسٍ يُجْلِسُنِي عَلَى سَرِيرِهِ فَقَالَ: أَقِمْ عِنْدِي حَتَّى أَجْعَلَ لَكَ سَهْمًا مِنْ مَالِي فَأَقَمْتُ مَعَهُ شَهْرَيْنِ، ثُمَّ قَالَ: إِنَّ وَفْدَ عَبْدِ القَيْسِ لَمَّا أَتَوُا النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «مَنِ القَوْمُ؟ - أَوْ مَنِ الوَفْدُ؟ -» قَالُوا: رَبِيعَةُ. قَالَ: «مَرْحَبًا بِالقَوْمِ، أَوْ بِالوَفْدِ، غَيْرَ خَزَايَا وَلاَ نَدَامَى»، فَقَالُوا: يَا رَسُولَ اللَّهِ إِنَّا لاَ نَسْتَطِيعُ أَنْ نَأْتِيكَ إِلَّا فِي الشَّهْرِ الحَرَامِ، وَبَيْنَنَا وَبَيْنَكَ هَذَا الحَيُّ مِنْ كُفَّارِ مُضَرَ، فَمُرْنَا بِأَمْرٍ فَصْلٍ، نُخْبِرْ بِهِ مَنْ وَرَاءَنَا، وَنَدْخُلْ بِهِ الجَنَّةَ، وَسَأَلُوهُ عَنِ الأَشْرِبَةِ: فَأَمَرَهُمْ بِأَرْبَعٍ، وَنَهَاهُمْ عَنْ أَرْبَعٍ، أَمَرَهُمْ: بِالإِيمَانِ بِاللَّهِ وَحْدَهُ، قَالَ: «أَتَدْرُونَ مَا الإِيمَانُ بِاللَّهِ وَحْدَهُ» قَالُوا: اللَّهُ وَرَسُولُهُ أَعْلَمُ، قَالَ: «شَهَادَةُ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَأَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللَّهِ، وَإِقَامُ الصَّلاَةِ، وَإِيتَاءُ الزَّكَاةِ، وَصِيَامُ رَمَضَانَ، وَأَنْ تُعْطُوا مِنَ المَغْنَمِ الخُمُسَ» وَنَهَاهُمْ عَنْ أَرْبَعٍ: عَنِ الحَنْتَمِ وَالدُّبَّاءِ وَالنَّقِيرِ وَالمُزَفَّتِ "، وَرُبَّمَا قَالَ: «المُقَيَّرِ» وَقَالَ: «احْفَظُوهُنَّ وَأَخْبِرُوا بِهِنَّ مَنْ وَرَاءَكُمْ».
আবু জামরা রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর সঙ্গে বসতাম, তিনি আমাকে তার আসনে বসাতেন। একবার তিনি বললেন, তুমি আমার কাছে থেকে যাও, আমি তোমাকে আমার সম্পদ থেকে কিছু অংশ দেবো। আমি দু’মাস তার সঙ্গে অবস্থান করলাম। তারপর একদিন তিনি বললেন, আব্দুল কায়েসের একটি প্রতিনিধি দল রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে আসলে তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, তোমরা কোন গোত্রের? অথবা কোন প্রতিনিধিদলের? তারা বলল, রাবী‘আ গোত্রের। তিনি বললেন, মারহাবা সে গোত্র বা সে প্রতিনিধি দলের প্রতি, যারা অপদস্থ ও লজ্জিত না হয়েই এসেছে। তারা বলল, ইয়া রাসূলাল্লাহ্! নিষিদ্ধ মাসসমূহ ছাড়া অন্য কোনো সময় আমরা আপনার কাছে আসতে পারি না। কারণ আমাদের এবং আপনার মাঝখানে মুদার গোত্রীয় কাফিরদের বাস। তাই আমাদের কিছু স্পষ্ট হুকুম দিন, যাতে আমরা যাদের পিছনে রেখে এসেছি তাদের জানিয়ে দিতে পারি এবং যাতে আমরা জান্নাতে প্রবেশ করতে পারি। তারা পানীয় সম্পর্কেও জিজ্ঞাসা করল। তখন তিনি তাদের চারটি জিনিসের নির্দেশ এবং চারটি জিনিস থেকে নিষেধ করলেন। তাদেরকে এক আল্লাহর প্রতি ঈমান আনার আদেশ দিয়ে বললেন, এক আল্লাহর প্রতি ঈমান আনা কীভাবে হয় তা কি তোমরা জানো? তারা বলল, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলই ভালো জানেন। তিনি বললেন, তা হলো এ সাক্ষ্য দেওয়া যে, আল্লাহ ছাড়া কোনো সত্য ইলাহ নেই এবং মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর রাসূল এবং সালাত কায়েম করা, যাকাত দেওয়া, রমযানের সাওম পালন করা আর তোমরা গণীমতের মাল থেকে এক-পঞ্চমাংশ প্রদান করবে। তিনি তাদেরকে চারটি জিনিস থেকে নিষেধ করলেন। তা হলো, সবুজ কলসি, শুকনো লাউয়ের খোল, খেজুর গাছের গুঁড়ি থেকে তৈরীকৃত পাত্র এবং আলকাতরার পালিশকৃত পাত্র। বর্ণনাকারী বলেন, বর্ণনাকারী وَالمُزَفَّتِ  এর স্থলে কখনও المُقَيَّرِ উল্লেখ করেছেন (উভয় শব্দের অর্থ একই)। তিনি আরো বলেন, তোমরা এগুলো ভালো করে আয়ত্ত করে নাও এবং অন্যদেরকেও এগুলো জানিয়ে দিও”।
মুত্তাফাকুন ‘আলাইহি, সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৫৩; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৭।
হাদীসে উল্লিখিত المُقَيَّرِ শব্দের অর্থ আলকাতরার পালিশকৃত পাত্র। وَالمُزَفَّتِ  এর স্থলে কখনও المُقَيَّرِ উল্লেখ করেছেন (উভয় শব্দের অর্থ একই)। আবার কেউ কেউ বলেছেন, الزفت হলো একপ্রকার আলকাতরা। এখানে এ চারটি জিনিস থেকে নিষেধ করার কারণ হলো এ চারটি জিনিসের মাদক থেকে নিষেধ করা। এ চারটি পানপাত্রকে খাস করার কারণ হলো এতে তাড়াতাড়ি মাদক তৈরি হয়; ফলে এগুলোকে হারাম করা হয়েছে।

عَنْ أَبِي سَعِيدٍ الْخُدْرِيِّ، أَنَّ أُنَاسًا مِنْ عَبْدِ الْقَيْسِ قَدِمُوا عَلَى رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَقَالُوا: يَا نَبِيَّ اللهِ، إِنَّا حَيٌّ مِنْ رَبِيعَةَ، وَبَيْنَنَا وَبَيْنَكَ كُفَّارُ مُضَرَ، وَلَا نَقْدِرُ عَلَيْكَ إِلَّا فِي أَشْهُرِ الْحُرُمِ، فَمُرْنَا بِأَمْرٍ نَأْمُرُ بِهِ مَنْ وَرَاءَنَا، وَنَدْخُلُ بِهِ الْجَنَّةَ إِذَا نَحْنُ أَخَذْنَا بِهِ، فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: " آمُرُكُمْ بِأَرْبَعٍ، وَأَنْهَاكُمْ عَنْ أَرْبَعٍ: اعْبُدُوا اللهَ وَلَا تُشْرِكُوا بِهِ شَيْئًا، وَأَقِيمُوا الصَّلَاةَ، وَآتُوا الزَّكَاةَ، وَصُومُوا رَمَضَانَ، وَأَعْطُوا الْخُمُسَ مِنَ الْغَنَائِمِ، وَأَنْهَاكُمْ عَنْ أَرْبَعٍ: عَنِ الدُّبَّاءِ، وَالْحَنْتَمِ، وَالْمُزَفَّتِ، وَالنَّقِيرِ " قَالُوا: يَا نَبِيَّ اللهِ، مَا عِلْمُكَ بِالنَّقِيرِ؟ قَالَ: " بَلَى، جِذْعٌ تَنْقُرُونَهُ، فَتَقْذِفُونَ فِيهِ مِنَ الْقُطَيْعَاءِ - قَالَ سَعِيدٌ: أَوْ قَالَ: مِنَ التَّمْرِ - ثُمَّ تَصُبُّونَ فِيهِ مِنَ الْمَاءِ حَتَّى إِذَا سَكَنَ غَلَيَانُهُ شَرِبْتُمُوهُ، حَتَّى إِنَّ أَحَدَكُمْ، أَوْ إِنَّ أَحَدَهُمْ لَيَضْرِبُ ابْنَ عَمِّهِ بِالسَّيْفِ " قَالَ: وَفِي الْقَوْمِ رَجُلٌ أَصَابَتْهُ جِرَاحَةٌ كَذَلِكَ قَالَ، وَكُنْتُ أَخْبَؤُهَا حَيَاءً مِنْ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَقُلْتُ: فَفِيمَ نَشْرَبُ يَا رَسُولَ اللهِ؟ قَالَ: «فِي أَسْقِيَةِ الْأَدَمِ الَّتِي يُلَاثُ عَلَى أَفْوَاهِهَا»، قَالُوا: يَا رَسُولَ اللهِ، إِنَّ أَرْضَنَا كَثِيرَةُ الْجِرْذَانِ، وَلَا تَبْقَى بِهَا أَسْقِيَةُ الْأَدَمِ، فَقَالَ نَبِيُّ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «وَإِنْ أَكَلَتْهَا الْجِرْذَانُ، وَإِنْ أَكَلَتْهَا الْجِرْذَانُ، وَإِنْ أَكَلَتْهَا الْجِرْذَانُ» قَالَ: وَقَالَ نَبِيُّ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لِأَشَجِّ عَبْدِ الْقَيْسِ: إِنَّ فِيكَ لَخَصْلَتَيْنِ يُحِبُّهُمَا اللهُ: الْحِلْمُ وَالْأَنَاةُ».
আবু সাঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, আব্দুল কায়েস গোত্রের কয়েকজন লোক রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে উপস্থিত হয়ে আরয করল, হে আল্লাহর নবী! আমরা রাবী‘আ গোত্রের লোক। আপনার ও আমাদের মধ্যবতী যাতায়াত পথে মুদার গোত্রের কাফিররা অবস্থান করায় ‘শাহরুল হারাম’ (নিষিদ্ধ মাস) ছাড়া আমরা আপনার কাছে আসতে পারি না। অতএব, আপনি আমাদের এমন কাজের আদেশ দিন, আমাদের যারা আসে নি তাদের জানাতে পারি এবং যা পালন করে আমরা জান্নাতে প্রবেশ করতে পারি। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমাদের চারটি বিষয় পালনের এবং চারটি বিষয় থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দিচ্ছি। পালনীয় চারটি বিষয় হলো, তোমরা আল্লাহর ইবাদত করবে, তাঁর সাথে অন্য কাউকে শরীক করবে না, সালাত কায়েম করবে, যাকাত দিবে, রমযানের সাওম পালন করবে এবং গনীমতের এক-পঞ্চমাংশ প্রদান করবে। আমি তোমাদের চারটি বিষয়ে নিষেধ করছি, দুব্বা (শুকনো লাউয়ের খোল), হানতাম (সবুজ কলসি), মুযাফফাত (আলকাতরার পালিশকৃত পাত্র) ও নাকীর (খেজুর গাছের গুঁড়ি থেকে তৈরীকৃত পাত্র) এর ব্যবহার। তারা আরয করল, হে আল্লাহর নবী! আপনি নাকীর সস্পর্কে কতটুকু জানেন? তিনি বললেন, এ হলো খেজুর বৃক্ষের মূল খোদাই করে তৈরি পাত্র। এতে কুতাই‘আ নামক খেজুর দিয়ে তাতে পানি ঢেলে, জোশ স্তব্ধ হওয়া পর্যন্ত রেখে তা পান করে থাকো। ফলে তোমাদের কেউ বা তাদের কেউ (নেশাগ্রস্ত হয়ে) আপন চাচাত ভাইকে তলোয়ার দিয়ে আঘাত করে বসো। আবু সাঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, উপস্থিত লোকদের মধ্যে এভাবে আঘাতপ্রাপ্ত এক ব্যক্তি ছিলেন। তিনি বলেন, লজ্জায় আমি রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে আঘাতটি গোপন করছিলাম। আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আমরা কিসে পান করব? রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, রশি দ্বারা মুখবন্ধ চামড়ার পাত্রে। তারা আরয করল, হে আল্লাহর নবী! আমাদের দেশে ইদুরের উপদ্রব বেশি। সেখানে চামড়ার পাত্র অক্ষত রাখা যায় না। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, যদিও তা ইঁদুরে কেটে ফেলে, যদিও তা ইঁদুরে কেটে ফেলে, যদিও তা ইঁদুরে কেটে ফেলে। বর্ণনাকারী বলেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আব্দুল কায়েস গোত্রের আশাজ্জ সম্পর্কে বললেন, তোমার মধ্যে দুটি বিশেষ গুণ রয়েছে যা আল্লাহ পছন্দ করেন, সহিষ্ণুতা ও ধীরস্থিরতা”।
সহীহ, সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৮।
হাদীসে উল্লিখিত ِأشَجّ عَبْد الْقَيْسِ হলেন, মুনযির ইবন ‘আয়েয। ইমাম তিরমিযী রহ. বলেছেন, তিনি মুনযির ইবন ‘আয়েয ইবন মুনযির ইবন হারিস আল-‘আসারী –আইন ও সোয়াদ বর্ণে ফাতহা যোগে- তিনি একজন সাহাবী, বসরায় অবস্থানকারী ছিলেন এবং সেখানেই মারা যান।  
عَنْ جَابِر بن عبد الله، قَالَ: أَتَى النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ النُّعْمَانُ بْنُ قَوْقَلٍ، فَقَالَ: يَا رَسُولَ اللهِ أَرَأَيْتَ إِذَا صَلَّيْتُ الْمَكْتُوبَةَ، وَحَرَّمْتُ الْحَرَامَ، وَأَحْلَلْتُ الْحَلَالَ، أَأَدْخُلُ الْجَنَّةَ؟ فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «نَعَمْ».
وفي رواية: «صَلَّيْتُ الصَّلَوَاتِ الْمَكْتُوبَاتِ، وَصُمْتُ رَمَضَانَ، وَأَحْلَلْتُ الْحَلَالَ، وَحَرَّمْتُ الْحَرَامَ، وَلَمْ أَزِدْ عَلَى ذَلِكَ شَيْئًا، أَأَدْخُلُ الْجَنَّةَ؟ قَالَ: «نَعَمْ»، قَالَ: وَاللهِ لَا أَزِيدُ عَلَى ذَلِكَ شَيْئًا.
জাবির রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, “নু‘মান ইবন কাওকাল রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে হাযির হলেন। তিনি বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমাকে অবহিত করুন, যদি আমি ফরয সালাত আদায় করি, হারামকে হারাম বলে জানি, হালালকে হালাল জ্ঞান করি, তাহলে আমি কি জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবো? রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হ্যাঁ”।
অপর বর্ণনায় তিনি বলেন, “যদি আমি ফরয সালাত আদায় করি, রমযানের সাওম পালন করি, হালালকে হালাল জানি এবং হারামকে হারাম জানি; যদি এর অতিরিক্ত কিছু না করি, তাহলে আমি কি জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবো? রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বললেন, হ্যাঁ। সে ব্যক্তি বললেন, আল্লাহর কসম! আমি এর চেয়ে কিছুমাত্র বাড়াব না”।
সহীহ, সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৫।
عَنْ مُعَاذِ بْنِ جَبَلٍ، قَالَ: كُنْتُ مَعَ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي سَفَرٍ، فَأَصْبَحْتُ يَوْمًا قَرِيبًا مِنْهُ وَنَحْنُ نَسِيرُ، فَقُلْتُ: يَا رَسُولَ اللهِ أَخْبِرْنِي بِعَمَلٍ يُدْخِلُنِي الجَنَّةَ وَيُبَاعِدُنِي عَنِ النَّارِ، قَالَ: لَقَدْ سَأَلْتَنِي عَنْ عَظِيمٍ، وَإِنَّهُ لَيَسِيرٌ عَلَى مَنْ يَسَّرَهُ اللَّهُ عَلَيْهِ، تَعْبُدُ اللَّهَ وَلاَ تُشْرِكْ بِهِ شَيْئًا، وَتُقِيمُ الصَّلاَةَ، وَتُؤْتِي الزَّكَاةَ، وَتَصُومُ رَمَضَانَ، وَتَحُجُّ البَيْتَ, ثُمَّ قَالَ: أَلاَ أَدُلُّكَ عَلَى أَبْوَابِ الخَيْرِ: الصَّوْمُ جُنَّةٌ، وَالصَّدَقَةُ تُطْفِئُ الخَطِيئَةَ كَمَا يُطْفِئُ الْمَاءُ النَّارَ، وَصَلاَةُ الرَّجُلِ مِنْ جَوْفِ اللَّيْلِ قَالَ: ثُمَّ تَلاَ ﴿تَتَجَافَىٰ جُنُوبُهُمۡ عَنِ ٱلۡمَضَاجِعِ﴾ [السجدة : ١٦] ، حَتَّى بَلَغَ {يَعْمَلُونَ} , ثُمَّ قَالَ: أَلاَ أُخْبِرُكَ بِرَأْسِ الأَمْرِ كُلِّهِ وَعَمُودِهِ، وَذِرْوَةِ سَنَامِهِ؟ قُلْتُ: بَلَى يَا رَسُولَ اللهِ، قَالَ: رَأْسُ الأَمْرِ الإِسْلاَمُ، وَعَمُودُهُ الصَّلاَةُ، وَذِرْوَةُ سَنَامِهِ الجِهَادُ, ثُمَّ قَالَ: أَلاَ أُخْبِرُكَ بِمَلاَكِ ذَلِكَ كُلِّهِ؟ قُلْتُ: بَلَى يَا نَبِيَّ اللهِ، فَأَخَذَ بِلِسَانِهِ قَالَ: كُفَّ عَلَيْكَ هَذَا، فَقُلْتُ: يَا نَبِيَّ اللهِ، وَإِنَّا لَمُؤَاخَذُونَ بِمَا نَتَكَلَّمُ بِهِ؟ فَقَالَ: ثَكِلَتْكَ أُمُّكَ يَا مُعَاذُ، وَهَلْ يَكُبُّ النَّاسَ فِي النَّارِ عَلَى وُجُوهِهِمْ أَوْ عَلَى مَنَاخِرِهِمْ إِلاَّ حَصَائِدُ أَلْسِنَتِهِمْ.
মু‘আয ইবন জাবাল রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি একবার রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সঙ্গে এক সফরে ছিলাম। একদিন চলার সময় আমি তাঁর নিকটবর্তী হয়ে গেলাম। আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আমাকে এমন একটি আমল সম্পর্কে অবহিত করুন যা আমাকে জান্নাতে দাখিল করাবে এবং জাহান্নাম থেকে দূরে সরিয়ে দিবে। তিনি বললেন, তুমি তো বিরাট একটা বিষয়ে আমাকে জিজ্ঞাসা করলে। তবে আল্লাহ তা‘আলা যার জন্য তা সহজ করে দেন তার জন্য বিষয়টি অবশ্যই সহজ। আল্লাহর ইবাদত করবে, তার সঙ্গে কোনো কিছু শরীক করবে না, সালাত কায়েম করবে, যাকাত প্রদান করবে, রমযানের সাওম পালন করবে এবং বাইতুল্লাহর হজ করবে। এরপর তিনি বললেন, সব কল্যাণের দ্বারসমূহ সম্পর্কে কি আমি তোমাকে দিক-নির্দেশনা দিবো? সাওম হলো ঢালস্বরূপ, পানি যেমন আগুন নিভিয়ে দেয় তেমনি সদকাও গুনাহমূহকে নিশ্চি‎হ্ন করে দেয়,  আরও রয়েছে রাতের মধ্যভাগের সালাত। এরপর তিনি তিলাওয়াত করলেন:
﴿تَتَجَافَىٰ جُنُوبُهُمۡ عَنِ ٱلۡمَضَاجِعِ يَدۡعُونَ رَبَّهُمۡ خَوۡفٗا وَطَمَعٗا وَمِمَّا رَزَقۡنَٰهُمۡ يُنفِقُونَ١٦ فَلَا تَعۡلَمُ نَفۡسٞ مَّآ أُخۡفِيَ لَهُم مِّن قُرَّةِ أَعۡيُنٖ جَزَآءَۢ بِمَا كَانُواْ يَعۡمَلُونَ١٧﴾ [السجدة : ١٦،  ١٧]  
 তারা (মুমিনরা) গভীর রাতে শয্যা ত্যাগ করে তাদের রবকে ডাকে আশায় ও আশংকায় এবং আমরা তাদের যে রিযিক দান করেছি তা থেকে তারা ব্যয় করে। কেউই জানে না তাদের জন্য নয়ন সুখকর কী লুকিয়ে রাখা হয়েছে তাদের কৃতকর্মের পুরস্কারস্বরূপ”। [সূরা আস-সাজদাহ, আয়াত: ১৬-১৭] তারপর বললেন, তোমাকে এই সব কিছুর মাথা, বুনিয়াদ এবং সর্বোচ্চ শীর্ষদেশ স্বরূপ আমল সম্পর্কে অবহিত করবো কি? এরপর বললেন, অবশ্যই, ইয়া রাসূলাল্লাহ্! তিনি বললেন, সব কিছুর মাথা হলো ইসলাম, বুনিয়াদ হলো সালাত আর সর্বোচ্চ শীর্ষ হলো জিহাদ। এরপর বললেন, এ সব কিছুর মূল পুঁজি সম্পর্কে তোমাকে অবহিত করবো কি? আমি বললাম, অবশ্যই, ইয়া রাসূলাল্লাহ্! তিনি তাঁর জিহ্বা ধরে বললেন, এটিকে সংযত রাখো। আমি বললাম, হে আল্লাহর নবী! আমরা যে কথাবার্তা বলি সে কারণেও কি আমাদের পাকড়াও করা হবে? তিনি বললেন, তোমাদের মা তোমাকে হারিয়ে ফেলুক, হে মু‘আয! লোকদের অধঃমুখে জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হওয়ার জন্য এই জবানের কামাই ছাড়া আর কি কিছু আছে নাকি?”
হাসান, তিরমিযী, হাদীস নং ২৬১৬, হাদীসের শব্দাবলী তিরমিযীর। ইবন মাজাহ, হাদীস নং ৩৯৭৩। ইমাম তিরমিযী রহ. বলেছেন, হাদীসটি হাসান সহীহ।
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «لَا تَدْخُلُونَ الْجَنَّةَ حَتَّى تُؤْمِنُوا، وَلَا تُؤْمِنُوا حَتَّى تَحَابُّوا، أَوَلَا أَدُلُّكُمْ عَلَى شَيْءٍ إِذَا فَعَلْتُمُوهُ تَحَابَبْتُمْ؟ أَفْشُوا السَّلَامَ بَيْنَكُمْ».
আবু হুরায়রা থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “তোমরা জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না যতোক্ষণ না ঈমান আনো আর তোমরা ঈমানদার হতে পারবে না যতোক্ষণ না একে অন্যকে ভালোবাসবে। আমি কি তোমাদের তা বলে দেবো না যা করলে তোমাদের পরস্পর ভালোবাসার সৃষ্টি হবে? তা হলো, তোমরা পরস্পর বেশি সালাম বিনিময় করবে”।
সহীহ, সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৫৪।
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ: قُلْتُ: يَا رَسُولَ اللهِ، إِنِّي إِذَا رَأَيْتُكَ طَابَتْ نَفْسِي وَقَرَّتْ عَيْنِي، فَأَنْبِئْنِي عَنْ كُلِّ شَيْءٍ. فَقَالَ: «كُلُّ شَيْءٍ خُلِقَ مِنْ مَاءٍ " قَالَ: قُلْتُ : أَنْبِئْنِي عَنْ أَمْرٍ إِذَا أَخَذْتُ بِهِ دَخَلْتُ الْجَنَّةَ. قَالَ: " أَفْشِ السَّلَامَ، وَأَطْعِمِ الطَّعَامَ، وَصِلِ الْأَرْحَامَ، وَقُمْ بِاللَّيْلِ وَالنَّاسُ نِيَامٌ، ثُمَّ ادْخُلِ الْجَنَّةَ بِسَلَامٍ».
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল, আমি যখন আপনাকে দেখি তখন আমার অন্তর আনন্দিত হয়, চক্ষু শীতল হয়। সুতরাং আপনি আমাকে সবকিছু সম্পর্কে সংবাদ দিন। তিনি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, “সবকিছু পানি হতে সৃষ্টি হয়েছে। আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বললেন, আমাকে এমন আমল সম্পর্কে বলুন যা আমল করলে আমি জান্নাতে প্রবেশ করবো। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, পরস্পরে সালাম দিবে, লোককে খাদ্য খাওয়াবে, আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখবে এবং মানুষ যখন ঘুমন্ত থাকে তখন সালাতে দাঁড়াবে, তাহলে জান্নাতে প্রবেশ করবে”।
সহীহ, মুসনাদ আহমদ, ৭৯৩২; ইবন হিব্বান, হাদীস নং ৫০৮, তিনি সহীহ বলেছেন; হাকিম, হাদীস নং ৪/১৬০।
عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عَمْرٍو قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «اعْبُدُوا الرَّحْمَنَ، وَأَطْعِمُوا الطَّعَامَ، وَأَفْشُوا السَّلاَمَ، تَدْخُلُوا الجَنَّةَ بِسَلاَمٍ».
আব্দুল্লাহ ইবন ‘আমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “তোমরা আল্লাহর ইবাদত করো, (মানুষকে) খাবার খাওয়াও এবং সালামের অধিক প্রচলন ঘটাও, তবেই নিরাপদে জান্নাতে যেতে পারবে”।
সহীহ, তিরমিযী, হাদীস নং ১৮৫৫; ইবন মাজাহ, হাদীস নং ৩৬৯৪; আহমদ, হাদীস নং ৬৫৮৭, ইমাম তিরমিযী রহ. হাদীসটিকে হাসান সহীহ বলেছেন।
عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ سَلَامٍ، قَالَ: لَمَّا قَدِمَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ المَدِينَةَ انْجَفَلَ النَّاسُ إِلَيْهِ، وَقِيلَ: قَدِمَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَجِئْتُ فِي النَّاسِ لِأَنْظُرَ إِلَيْهِ، فَلَمَّا اسْتَبَنْتُ وَجْهَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَرَفْتُ أَنَّ وَجْهَهُ لَيْسَ بِوَجْهِ كَذَّابٍ وَكَانَ أَوَّلُ شَيْءٍ تَكَلَّمَ بِهِ أَنْ قَالَ: «يَا أَيُّهَا النَّاسُ، أَفْشُوا السَّلَامَ، وَأَطْعِمُوا الطَّعَامَ، وَصَلُّوا وَالنَّاسُ نِيَامٌ تَدْخُلُونَ الجَنَّةَ بِسَلَامٍ».
আব্দুল্লাহ ইবন সালাম রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন মদীনায় এলেন তখন লোকেরা দ্রুত তাঁর দিকে ছুটে গেল। বলাবলি হতে লাগল যে, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এসেছেন। লোকদের মধ্যে আমিও তাঁকে দেখতে গেলাম। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের চেহারা যখন আমার সামনে প্রতিভাত হলো আমি চিনে ফেললাম যে, এ চেহারা কোনো মিথ্যাবাদীর চেহারা নয়। তিনি প্রথম যে কথা উচ্চারণ করলেন তা হলো, হে লোক সকল! তোমরা সালামের প্রসার ঘটাবে, লোকদের খাদ্য দিবে এবং মানুষ যখন ঘুমিয়ে থাকবে (শেষ রাতে) তখন (তাহাজ্জুদের) সালাত আদায় করবে, তাহলে তোমরা শান্তি ও নিরাপদে জান্নাতে দাখিল হতে পারবে”।
সহীহ, তিরিমিযী, হাদীস নং ২৪৮৫, তিনি হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন। ইবন মাজাহ, হাদীস নং ১৩৩৪; হাকিম, হাদীস নং ৩/১৩।
عَنْ هَانِئٍ بن يزيد، أَنَّهُ لَمَّا وَفَدَ إِلَى رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ سَمِعَهُ وَهُمْ يَكْنُونَ هَانِئًا أَبَا الْحَكَمِ، فَدَعَاهُ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ لَهُ: «إِنَّ اللَّهَ هُوَ الْحَكَمُ وَإِلَيْهِ الْحُكْمُ، فَلِمَ تُكَنَّى أَبَا الْحَكَمِ؟» فَقَالَ: إِنَّ قَوْمِي إِذَا اخْتَلَفُوا فِي شَيْءٍ أَتَوْنِي فَحَكَمْتُ بَيْنَهُمْ، فَرَضِيَ كِلَا الْفَرِيقَيْنِ، قَالَ: «مَا أَحْسَنَ مِنْ هَذَا، فَمَا لَكَ مِنَ الْوُلْدِ؟» قَالَ: لِي شُرَيْحٌ، وَعَبْدُ اللَّهِ، وَمُسْلِمٌ، قَالَ: «فَمَنْ أَكْبَرُهُمْ؟» قَالَ: شُرَيْحٌ، قَالَ: «فَأَنْتَ أَبُو شُرَيْحٍ» فَدَعَا لَهُ وَلِوَلَدِهِ. وسمع النبي صلى الله عليه وسلم يُسَمُّونَ رَجُلًا مِنْهُمْ عَبْدَ الْحَجَرِ فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: (مَا اسْمُكَ؟) قَالَ: عبد الحجر قَالَ: (لَا أَنْتَ عَبْدُ اللَّهِ) قَالَ شُرَيْحٌ: وَإِنَّ هَانِئًا لَمَّا حَضَرَ رُجُوعُهُ إِلَى بِلَادِهِ أَتَى النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ: أَخْبِرْنِي بِأَيِّ شَيْءٍ يُوجِبُ لِيَ الْجَنَّةَ؟ قَالَ: «عليك بحسن الكلام وبذل الطعام».
হানী ইবন ইয়াযীদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, যখন তিনি তাঁর জাতির সাথে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট উপস্থিত হলেন। তখন রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শুনতে পেলেন যে লোকেরা তাকে (হানীকে) আবুল হাকাম বলে ডাকছে। তখন রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে ডেকে বললেন, আল্লাহ তা‘আলা বিচারক ও আদেশ দাতা; কিন্তু লোক তোমাকে আবুল হাকাম বলে কেনো? তিনি বললেন, আমার গোত্রের লোক যখন কোনো ব্যাপারে কলহ করে, তখন তারা আমার নিকট বিচারপ্রার্থী হয় আর আমি যে রায় দেই, তারা তা মেনে নেয়। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এরচেয়ে ভালো কাজ আর কী হতে পারে? আচ্ছা তোমার কয়টি সন্তান? তিনি বললেন, আমার ছেলে-শুরাইহ, আব্দুল্লাহ এবং মুসলিম। তিনি বললেন, এদের মধ্যে বড় কে? হানী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বললেন, শুরাইহ। তিনি বললেন, তবে তুমি আবু শুরাইহ। পরে তিনি তার জন্য এবং তার ছেলেদের জন্য দো‘আ করলেন। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কিছু লোকের কাছে শুনলেন, তারা তাদের একজনকে ডাকছিল ‘আব্দুল হাজার’ বলে  রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে জিজ্ঞেস করলেন, তোমার নাম কী? তিনি বললেন, আব্দুল হাজার। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, বরং তোমার নাম ‘আব্দুল্লাহ’। শুরাইহ বলেন, হানী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু যখন দেশে ফিরে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন, তখন রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে এসে বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমাকে এমন কিছু আমলের কথা বলুন যা আমল করলে আমার জন্য জান্নাত ওয়াজিব হয়ে যায় (জান্নাতে যেতে পারি)। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তুমি সুন্দর কথা বলবে ও মানুষকে খাদ্য খাওয়াবে”।
হাসান, বুখারী ফি আদাবুল মুফরাদ, হাদীস নং ৮১১; ইবন হিব্বান, হাদীস নং ৫০৪; আবু দাউদ, হাদীস নং ৪৯৫৫; ইবন হিব্বান, হাদীস নং ৪৯০; হাকিম, হাদীস নং ১/২৩; তাবরানী কাবীর, ২২/১৮০।

৯- পরিচ্ছেদ: প্রকৃত ইসলাম না হলে আখিরাতে কোনো উপকারে আসবে না
আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,  
﴿قَالَتِ ٱلۡأَعۡرَابُ ءَامَنَّاۖ قُل لَّمۡ تُؤۡمِنُواْ وَلَٰكِن قُولُوٓاْ أَسۡلَمۡنَا﴾ [الحجرات: ١٤]
“বেদুঈনরা বলল, আমরা ঈমান আনলাম। বলুন, তোমরা ঈমান আন নি; বরং তোমরা বলো আমরা আত্মসমর্পণ করলাম”। [সূরা আল-হুজুরাত, আয়াত: ১৪]
আর ইসলাম যখন প্রকৃত অর্থে হবে তখন তা আল্লাহ তা‘আলা বাণী অনুযায়ী হবে,  
﴿إِنَّ ٱلدِّينَ عِندَ ٱللَّهِ ٱلۡإِسۡلَٰمُ﴾ [ال عمران: ١٩]
“নিশ্চয় আল্লাহর নিকট মনোনীত দীন হচ্ছে ইসলাম”। [সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ১৯]
عَنْ سَعْدٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَعْطَى رَهْطًا وَسَعْدٌ جَالِسٌ، فَتَرَكَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ رَجُلًا هُوَ أَعْجَبُهُمْ إِلَيَّ، فَقُلْتُ: يَا رَسُولَ اللَّهِ مَا لَكَ عَنْ فُلاَنٍ فَوَاللَّهِ إِنِّي لَأَرَاهُ مُؤْمِنًا، فَقَالَ: «أَوْ مُسْلِمًا» فَسَكَتُّ قَلِيلًا، ثُمَّ غَلَبَنِي مَا أَعْلَمُ مِنْهُ، فَعُدْتُ لِمَقَالَتِي، فَقُلْتُ: مَا لَكَ عَنْ فُلاَنٍ؟ فَوَاللَّهِ إِنِّي لَأَرَاهُ مُؤْمِنًا، فَقَالَ: «أَوْ مُسْلِمًا». ثُمَّ غَلَبَنِي مَا أَعْلَمُ مِنْهُ فَعُدْتُ لِمَقَالَتِي، وَعَادَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، ثُمَّ قَالَ: «يَا سَعْدُ إِنِّي لَأُعْطِي الرَّجُلَ، وَغَيْرُهُ أَحَبُّ إِلَيَّ مِنْهُ، خَشْيَةَ أَنْ يَكُبَّهُ اللَّهُ فِي النَّارِ».
সা‘দ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদল লোককে কিছু দান করলেন। সা‘দ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু  সেখানে বসা ছিলেন। সা‘দ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু  বললেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের এক ব্যক্তিকে কিছু দিলেন না। সে ব্যক্তি আমার কাছে তাদের চেয়ে অধিক পছন্দনীয় ছিল। তাই আমি বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ্! অমুক ব্যক্তিকে আপনি বাদ দিলেন কেন? আল্লাহর কসম! আমিতো তাকে মুমিন বলেই জানি। তিনি বললেন, (মুমিন) নাকি মুসলিম? তখন আমি কিছুক্ষণ চুপ থাকলাম। তারপর আমি তার সম্পর্কে যা জানি, তা প্রবল হয়ে উঠল। তাই আমি আমার বক্তব্য আবার বললাম, আপনি অমুককে দানের ব্যপারে বিরত রইলেন? আল্লাহর কসম! আমিতো তাকে মুমিন বলেই জানি। তিনি বললেন, নাকি মুসলিম? তখন আমি আবার কিছুক্ষণ চুপ থাকলাম। তারপর তার সম্পর্কে যা জানি তা প্রবল হয়ে উঠল। তাই আমি আমার বক্তব্য আবার বললাম। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবারও সেই জবাব দিলেন। তারপর বললেন, সা‘দ! আমি কখনো ব্যক্তি বিশেষকে দান করি, অথচ অন্য লোক আমার কাছে তার চাইতে বেশি প্রিয়। তা এ আশঙ্কায় যে (সে ঈমান থেকে ফিরে যেতে পারে, পরিণামে) আল্লাহ তাকে অধোমুখে জাহান্নামে ফেলে দেবেন”।
মুত্তাফাকুন ‘আলাইহি, সহীহ বুখারী, হাদীস নং ২৭; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৫০।

১০- পরিচ্ছেদ: যে ব্যক্তি তাওহীদের ওপর মারা যাবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে
عَنْ عُبَادَةَ بن الصامت رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قَالَ: «مَنْ شَهِدَ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَحْدَهُ لاَ شَرِيكَ لَهُ، وَأَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُولُهُ، وَأَنَّ عِيسَى عَبْدُ اللَّهِ وَرَسُولُهُ، وَكَلِمَتُهُ أَلْقَاهَا إِلَى مَرْيَمَ وَرُوحٌ مِنْهُ، وَالجَنَّةُ حَقٌّ، وَالنَّارُ حَقٌّ، أَدْخَلَهُ اللَّهُ الجَنَّةَ عَلَى مَا كَانَ مِنَ العَمَلِ».
উবাদা ইবন সামিত রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “যে ব্যক্তি এ কথার সাক্ষ্য দিবে যে, আল্লাহ ছাড়া কোনো (সত্য) ইলাহ নেই, তিনি এক ও তাঁর কোনো শরীক নেই, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর বান্দা ও রাসূল, ঈসা আলাইহিস সালাম আল্লাহর বান্দা ও তাঁর রাসূল, তাঁর কথা দ্বারা সৃষ্টি হয়েছেন, যা তিনি মারইয়ামের মধ্যে ঢেলেছিলেন (অর্থাৎ কালিমায়ে ‘কুন’ দ্বারা মারিয়ামের গর্ভে তাকে সৃষ্টি করেছেন) আর তিনি তাঁর পক্ষ থেকে পাঠানো এক (সৃষ্ট সম্মানিত) আত্মা, আরও সাক্ষ্য দেয় যে, জান্নাত সত্য ও জাহান্নাম সত্য, সে ব্যক্তিকে আল্লাহ জান্নাতে প্রবেশ করাবেন তাতে তার আমল যা-ই হোক”।
মুত্তাফাকুন ‘আলাইহি, সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৩৪৩৫; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৮।
عَنْ مُعَاذِ بْنِ جَبَلٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: بَيْنَا أَنَا رَدِيفُ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَيْسَ بَيْنِي وَبَيْنَهُ إِلَّا أَخِرَةُ الرَّحْلِ، فَقَالَ: «يَا مُعَاذُ بْنَ جَبَلٍ» قُلْتُ: لَبَّيْكَ رَسُولَ اللَّهِ وَسَعْدَيْكَ، ثُمَّ سَارَ سَاعَةً ثُمَّ قَالَ: «يَا مُعَاذُ» قُلْتُ: لَبَّيْكَ رَسُولَ اللَّهِ وَسَعْدَيْكَ، ثُمَّ سَارَ سَاعَةً ثُمَّ قَالَ: «يَا مُعَاذُ» قُلْتُ: لَبَّيْكَ رَسُولَ اللَّهِ وَسَعْدَيْكَ، قَالَ: «هَلْ تَدْرِي مَا حَقُّ اللَّهِ عَلَى عِبَادِهِ» قُلْتُ: اللَّهُ وَرَسُولُهُ أَعْلَمُ، قَالَ: «حَقُّ اللَّهِ عَلَى عِبَادِهِ أَنْ يَعْبُدُوهُ، وَلاَ يُشْرِكُوا بِهِ شَيْئًا» ثُمَّ سَارَ سَاعَةً، ثُمَّ قَالَ: «يَا مُعَاذُ بْنَ جَبَلٍ» قُلْتُ: لَبَّيْكَ رَسُولَ اللَّهِ وَسَعْدَيْكَ، فَقَالَ: «هَلْ تَدْرِي مَا حَقُّ العِبَادِ عَلَى اللَّهِ إِذَا فَعَلُوهُ» قُلْتُ: اللَّهُ وَرَسُولُهُ أَعْلَمُ، قَالَ: «حَقُّ العِبَادِ عَلَى اللَّهِ أَنْ لاَ يُعَذِّبَهُمْ».
মু‘আয ইবন জাবাল রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, “একবার আমি রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পেছনে বসা ছিলাম। আমার ও তাঁর মাঝে লাগামের রশির প্রান্তদেশ ভিন্ন অন্য কিছুই ছিল না। তিনি বললেন, মু‘আয! আমি বললাম, ইয়া রাসূলুল্লাহ্‌! আমি (আনুগত্যের জন্য) সদা উপস্থিত আর আপনার আনুগত্যের মাধ্যমে আমি সৌভাগ্যের পর সৌভাগ্যে উপনীত  তারপর কিছুক্ষণ চললেন। পুনরায় বললেন, হে মু‘আয! আমি বললাম, ইয়া রাসূলুল্লাহ্‌! ইয়া রাসূলুল্লাহ্‌! আমি (আনুগত্যের জন্য) সদা উপস্থিত আর আপনার আনুগত্যের মাধ্যমে আমি সৌভাগ্যের পর সৌভাগ্যে উপনীত। তারপর আরো কিছুক্ষণ চললেন। আবার বললেন, হে মু‘আয! আমি বললাম, ইয়া রাসূলুল্লাহ্‌! ইয়া রাসূলুল্লাহ্‌! আমি (আনুগত্যের জন্য) সদা উপস্থিত আর আপনার আনুগত্যের মাধ্যমে আমি সৌভাগ্যের পর সৌভাগ্যে উপনীত। তিনি বললেন, তুমি জানো বান্দার ওপর আল্লাহর কী হক? আমি বললাম, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলই ভালো জানেন। তিনি বললেন, বান্দার ওপর আল্লাহর হক এই যে, তারা কেবল তাঁরই ইবাদত করবে এবং অন্য কিছুকে তারা শরীক করবে না। এরপর কিছু সময় চললেন। তারপর বললেন, হে মু‘আযা ইবন জাবাল! আমি বললাম, ইয়া রাসূলুল্লাহ্‌! আমি (আনুগত্যের জন্য) সদা উপস্থিত আর আপনার আনুগত্যের মাধ্যমে আমি সৌভাগ্যের পর সৌভাগ্যে উপনীত। তিনি বললেন, বান্দারা যখন দায়িত্ব পালন করে, তখন আল্লাহর প্রতি বান্দার অধিকার কী তা জান কি? আমি বললাম, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলই ভালো জানেন। তিনি বললেন, আল্লাহর ওপর বান্দার অধিকার এই যে, তিনি তাদের আযাব দিবেন না”।
মুত্তাফাকুন ‘আলাইহি, সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৫৯৬৭, ৬৫০০; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৩০।
عَنْ مُعَاذ بن جبلٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، قَالَ: كُنْتُ رِدْفَ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَلَى حِمَارٍ يُقَالُ لَهُ عُفَيْرٌ، فَقَالَ: «يَا مُعَاذُ، هَلْ تَدْرِي حَقَّ اللَّهِ عَلَى عِبَادِهِ، وَمَا حَقُّ العِبَادِ عَلَى اللَّهِ؟»، قُلْتُ: اللَّهُ وَرَسُولُهُ أَعْلَمُ، قَالَ: «فَإِنَّ حَقَّ اللَّهِ عَلَى العِبَادِ أَنْ يَعْبُدُوهُ وَلاَ يُشْرِكُوا بِهِ شَيْئًا، وَحَقَّ العِبَادِ عَلَى اللَّهِ أَنْ لاَ يُعَذِّبَ مَنْ لاَ يُشْرِكُ بِهِ شَيْئًا»، فَقُلْتُ: يَا رَسُولَ اللَّهِ أَفَلاَ أُبَشِّرُ بِهِ النَّاسَ؟ قَالَ: «لاَ تُبَشِّرْهُمْ، فَيَتَّكِلُوا». মু‘আয ইবন জাবাল রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘উফাইর’ নামক একটি গাধার পিঠে আমি রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পেছনে আরোহী ছিলাম। তিনি আমাকে বললেন, হে মু‘আয, তুমি কি জান বান্দার ওপর আল্লাহর হক কী? আমি বললাম, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলই ভালো জানেন। তিনি বলেন, আল্লাহর ওপর বান্দার হক হলো, বান্দা তাঁর ইবাদাত করবে এবং তাঁর সঙ্গে কাউকে শরীক করবে না। আর আল্লাহর উপর বান্দার হক হলো, তাঁর ইবাদাতে কাউকে শরীক না করলে আল্লাহ তাকে শাস্তি দিবেন না। আমি বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ্‌! আমি কি লোকদের এ সুসংবাদ দিবো না? তিনি বললেন, তুমি তাদের সুসংবাদটি দিও না, তাহলে লোকেরা (এর ওপরই) নির্ভর করে বসবে”।
মুত্তাফাকুন ‘আলাইহি, সহীহ বুখারী, হাদীস নং ২৮৫৬; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং  ৩০/৪৯।
عَنْ أَنَس بْن مَالِكٍ أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، وَمُعاذٌ رَدِيفُهُ عَلَى الرَّحْلِ، قَالَ: «يَا مُعَاذَ بْنَ جَبَلٍ»، قَالَ: لَبَّيْكَ يَا رَسُولَ اللَّهِ وَسَعْدَيْكَ، قَالَ: «يَا مُعَاذُ»، قَالَ: لَبَّيْكَ يَا رَسُولَ اللَّهِ وَسَعْدَيْكَ ثَلاَثًا، قَالَ: «مَا مِنْ أَحَدٍ يَشْهَدُ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَأَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللَّهِ، صِدْقًا مِنْ قَلْبِهِ، إِلَّا حَرَّمَهُ اللَّهُ عَلَى النَّارِ»، قَالَ يَا رَسُولَ اللَّهِ: أَفَلاَ أُخْبِرُ بِهِ النَّاسَ فَيَسْتَبْشِرُوا؟ قَالَ: «إِذًا يَتَّكِلُوا» وَأَخْبَرَ بِهَا مُعَاذٌ عِنْدَ مَوْتِهِ تَأَثُّمًا.
আনাস ইবন মালিক রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, একবার মু‘আয রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পিছনে সাওয়ারীতে উপবিষ্ট ছিলেন, তখন তিনি তাঁকে ডাকলেন, হে মু‘আয! তিনি উত্তর দিলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ্‌ ইয়া রাসূলুল্লাহ্‌! আমি (আনুগত্যের জন্য) সদা উপস্থিত আর আপনার আনুগত্যের মাধ্যমে আমি সৌভাগ্যের পর সৌভাগ্যে উপনীত। তিনি আবার ডাকলেন, মু‘আয! তিনি উত্তর দিলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ্‌ ইয়া রাসূলুল্লাহ্‌! আমি (আনুগত্যের জন্য) সদা উপস্থিত আর আপনার আনুগত্যের মাধ্যমে আমি সৌভাগ্যের পর সৌভাগ্যে উপনীত। তিনি আবার ডাকলেন, মু‘আয! তিনি উত্তর দিলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ্‌ ইয়া রাসূলুল্লাহ্‌! আমি (আনুগত্যের জন্য) সদা উপস্থিত আর আপনার আনুগত্যের মাধ্যমে আমি সৌভাগ্যের পর সৌভাগ্যে উপনীত। এরূপ তিনবার করলেন। এরপর বললেন, যে কোনো বান্দা আন্তরিকতার সাথে এ সাক্ষ্য দেবে যে, আল্লাহ ছাড়া সত্য কোনো ইলাহ নেই এবং মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর রাসূল, তার জন্য আল্লাহ তা‘আলা জাহান্নাম হারাম করে দেবেন। মু‘আয রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু  বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ্‌! আমি কি মানুষকে এ খবর দেবো না, যাতে তারা সুসংবাদ পেতে পারে? তিনি বললেন, তাহলে তারা এর ওপর ভরসা করে বসে থাকবে। মু‘আয রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু  (জীবনভর এ হাদিসটি বর্ণনা করেন নি) মৃত্যুর সময় এ হাদিসটি বর্ণনা করে গেছেন যাতে (ইলম গোপন রাখার) গুনাহ না হয়”।
মুত্তাফাকুন ‘আলাইহি, সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১২৮; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৩২।
عَنْ هِصَّان بْن الْكَاهِنِ الْعَدَوِيُّ، قَالَ: جَلَسْتُ مَجْلِسًا فِيهِ عَبْدُ الرَّحْمَنِ بْنُ سَمُرَةَ، وَلَا أَعْرِفُهُ قَالَ: حَدَّثَنَا مُعَاذُ بْنُ جَبَلٍ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: " مَا عَلَى الْأَرْضِ نَفْسٌ تَمُوتُ لَا تُشْرِكُ بِاللهِ شَيْئًا تَشْهَدُ أَنِّي رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، يَرْجِعُ ذَاكُمْ إِلَى قَلْبٍ مُوقِنٍ، إِلَّا غُفِرَ لَهَا "، قَالَ: قُلْتُ: أَنْتَ سَمِعْتَ هَذَا مِنْ مُعَاذِ بْنِ جَبَلٍ؟ قَالَ: فَعَنَّفَنِي الْقَوْمُ، فَقَالَ: دَعُوهُ فَإِنَّهُ لَمْ يُسِئِ الْقَوْلَ، نَعَمْ أَنَا سَمِعْتُهُ مِنْ مُعَاذٍ، زَعَمَ أَنَّهُ سَمِعَهُ مِنْ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ.
হিসসান ইবন কাহিন আল-‘আদাভী রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি এক মসলিসে বসেছিলাম, সেখানে আব্দুর রহমান ইবন সামুরা রাদিয়াল্লাহু আনহু বসা ছিলেন; আমি তাকে চিনতাম না। তিনি বলেন, আমাদেরকে মু‘আয ইবন জাবাল রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেছেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “এ জমিনের বুকে যদি কেউ আল্লাহর সাথে কাউকে শির্ক না করে ও আমাকে আল্লাহর রাসূল হিসেবে সাক্ষ্য দিয়ে মারা যায়, আর তার সে সাক্ষ্য প্রদান দৃঢ় বিশ্বাসী অন্তর থেকে হয়, তবে তাকে ক্ষমা করা হবে। আমি জিজ্ঞেস করলাম, আপনি কি এ কথা মু‘আয ইবন জাবাল রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে শুনেছেন? একথা শুনে উপস্থিত সবাই আমাকে ভর্ৎসনা করলো। তিনি (আব্দুর রহমান ইবন সামুরা) বললেন, তাকে কেউ কিছু বলো না; কেননা সে খারাপ উদ্দেশ্যে (কষ্ট দেওয়ার) একথা বলে নি। তিনি বললেন, হ্যাঁ, আমি মু‘আয ইবন জাবাল রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে একথা শুনেছি। আর তিনি রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে একথা শুনেছেন”।
হাসান, মুসনাদ আহমদ, হাদীস নং ২২০০০; বাযযার, হাদীস নং ২৬২৪; নাসায়ী ফি আলামিল ইয়াওমি ওয়াললাইলাহ, হাদীস নং ১১৩৮; ইবন হিব্বান, হাদীস নং ২০৩।
عَنْ أَنَس بْن مَالِكٍ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «يَخْرُجُ قَوْمٌ مِنَ النَّارِ بَعْدَ مَا مَسَّهُمْ مِنْهَا سَفْعٌ، فَيَدْخُلُونَ الجَنَّةَ، فَيُسَمِّيهِمْ أَهْلُ الجَنَّةِ: الجَهَنَّمِيِّينَ».
আনাস ইবন মালিক রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তিনি বলেছেন, “আযাবে চর্ম বিবর্ণ হয়ে যাওয়ার পর একদল লোককে জাহান্নাম থেকে বের করা হবে এবং তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে। তখন জান্নাতীগণ তাদেরকে জাহান্নামী বলে আখ্যায়িত করবে”।
সহীহ, সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৬৫৫৯।
عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ، أَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «يَخْرُجُ مِنَ النَّارِ أَرْبَعَةٌ فَيُعْرَضُونَ عَلَى اللهِ، فَيَلْتَفِتُ أَحَدُهُمْ، فَيَقُولُ: أَيْ رَبِّ، إِذْ أَخْرَجْتَنِي مِنْهَا فَلَا تُعِدْنِي فِيهَا، فَيُنْجِيهِ اللهُ مِنْهَا».
আনাস ইবন মালিক রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “চার ব্যক্তিকে জাহান্নাম থেকে বের করে আল্লাহ তা‘আলার সম্মুখে উপস্থিত করা হবে। অতঃপর তাদের এক ব্যক্তি ফিরে তাকাবে এবং বলবে, হে আমার রব, আপনি যখন একবার আমাকে তা থেকে বের করেছেন, পুনরায় আমাকে সেখানে নিক্ষেপ করবেন না। ফলে আল্লাহ তা‘আলা তাকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেবেন”।
সহীহ, সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৯২।
এ চার ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের শাফা‘আত পাবেন, যেমন শাফা‘আতের হাদীসে এ সম্পর্কে এসেছে।
عَنْ عِتْبَانَ بْنِ مَالِكٍ، قَالَ: بَعَثْتُ إِلَى رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنِّي أُحِبُّ أَنْ تَأْتِيَنِي فَتُصَلِّيَ فِي مَنْزِلِي، فَأَتَّخِذَهُ مُصَلًّى، قَالَ: فَأَتَى النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، وَمَنْ شَاءَ اللهُ مِنْ أَصْحَابِهِ، فَدَخَلَ وَهُوَ يُصَلِّي فِي مَنْزِلِي وَأَصْحَابُهُ يَتَحَدَّثُونَ بَيْنَهُمْ، ثُمَّ أَسْنَدُوا عُظْمَ ذَلِكَ وَكُبْرَهُ إِلَى مَالِكِ بْنِ دُخْشُمٍ، قَالُوا: وَدُّوا أَنَّهُ دَعَا عَلَيْهِ فَهَلَكَ، وَدُّوا أَنَّهُ أَصَابَهُ شَرٌّ، فَقَضَى رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الصَّلَاةَ، وَقَالَ: «أَلَيْسَ يَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ، وَأَنِّي رَسُولُ اللهِ؟»، قَالُوا: إِنَّهُ يَقُولُ ذَلِكَ، وَمَا هُوَ فِي قَلْبِهِ، قَالَ: «لَا يَشْهَدُ أَحَدٌ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ، وَأَنِّي رَسُولُ اللهِ، فَيَدْخُلَ النَّارَ، أَوْ تَطْعَمَهُ»، قَالَ أَنَسِ: فَأَعْجَبَنِي هَذَا الْحَدِيثَ، فَقُلْتُ لِابْنِي: اكْتُبْهُ فَكَتَبَهُ.
ইতবান ইবন মালেক রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বললেন, “(আমার চোখে কোনো এক রোগ দেখা দিলে) আমি রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে খবর পাঠালাম যে, আমার একান্ত আকাঙ্ক্ষা, আপনি আমার কাছে আগমন করবেন এবং আমার গৃহে দু’রাকা‘আত সালাত আদায় করবেন আপনার সালাত আদায়ের স্থানটিকে আমি নিজের জন্য সালাত আদায়ের স্থান বানিয়ে নেবো। তারপর আল্লাহ যাদের মঞ্জুর করলেন, তাদের সাথে নিয়ে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আগমন করলেন। তিনি ঘরে ঢুকে সালাত আদায় করতে থাকলেন আর তার সাহাবীরা পরস্পর কথাবার্তা বলছিলেন। তারপর মালিক ইবন দুখশুম এর প্রতি তাদের দৃষ্টি আকৃষ্ট হলো। তারা ইচ্ছা পোষণ করছিলেন যে, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মলিক ইবন দুখশুম-এর জন্য বদ দো‘আ করুন যেন সে ধ্বংস হয়। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাত সম্পন্ন করলেন এবং বললেন, সে কি সাক্ষ্য দেয় না যে, আল্লাহ ছাড়া কোনো সত্য ইলাহ নেই এবং আমি আল্লাহর রাসূল? তারা বললেন, সে এ কথা বলে বটে; কিন্তু তার অন্তরে ঈমান নেই। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, যে ব্যক্তিই আল্লাহ ছাড়া কোনো সত্য ইলাহ নেই এবং আমি আল্লাহর রাসূল এ কথার সাক্ষ্য দেবে সে জাহান্নামে প্রবেশ করবে না, অথবা আগুন তাকে গ্রাস করবে না।”
সহীহ, সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৩৩।
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، عن رسول الله صلى الله عليه وسلم قال: «حَتَّى إِذَا فَرَغَ اللَّهُ مِنَ القَضَاءِ بَيْنَ العِبَادِ، وَأَرَادَ أَنْ يُخْرِجَ بِرَحْمَتِهِ مَنْ أَرَادَ مِنْ أَهْلِ النَّارِ، أَمَرَ المَلاَئِكَةَ أَنْ يُخْرِجُوا مِنَ النَّارِ، مَنْ كَانَ لاَ يُشْرِكُ بِاللَّهِ شَيْئًا، مِمَّنْ أَرَادَ اللَّهُ أَنْ يَرْحَمَهُ، مِمَّنْ يَشْهَدُ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ، فَيَعْرِفُونَهُمْ فِي النَّارِ بِأَثَرِ السُّجُودِ، تَأْكُلُ النَّارُ ابْنَ آدَمَ إِلَّا أَثَرَ السُّجُودِ، حَرَّمَ اللَّهُ عَلَى النَّارِ أَنْ تَأْكُلَ أَثَرَ السُّجُودِ، فَيَخْرُجُونَ مِنَ النَّارِ، قَدْ امْتُحِشُوا، فَيُصَبُّ عَلَيْهِمْ مَاءُ الحَيَاةِ، فَيَنْبُتُونَ تَحْتَهُ كَمَا تَنْبُتُ الحِبَّةُ فِي حَمِيلِ السَّيْلِ».
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “আল্লাহ যখন বান্দাদের বিচারকার্য সমাপন করে আপন রহমতে কিছু সংখ্যক জাহান্নামীকে বের করতে চাইবেন, তখন তিনি তাদের মধ্যকার র্শিক মুক্তদেরকে জাহান্নাম থেকে বের করে দেওয়ার জন্য ফিরিশতাদের নির্দেশ দেবেন। তারাই হচ্ছে ওসব বান্দা যাদের উপর আল্লাহ রহমত করবেন, যারা সাক্ষ্য দিয়েছে যে, আল্লাহ ব্যতীত কোনো হক্ব ইলাহ নেই। সাজদার চিহ্ন দ্বারা তাদেরকে ফিরিশতারা চিনতে পারবে সাজদার চিহ্নগুলো ছাড়া সেসব আদম সন্তানের সারা দেহ জাহান্নামের আগুন ভস্মীভূত করে দেবে। আদম সন্তানের সাজদার চিহ্নসমূহ জ্বালিয়ে দেওয়া আল্লাহ জাহান্নামের ওপর হারাম করে দিয়েছেন। অতঃপর তাদেরকে আগুনে বিদগ্ধ অবস্থায় জাহান্নাম থেকে বের করা হবে। তাদের ওপর ঢালা হবে সঞ্জীবনীর পানি। এর ফলে নিম্নদেশ থেকে তারা এমনভাবে সজীব হয়ে ওঠবে, প্লাবনে ভাসমান বীজ মাটি থেকে যেভাবে গজিয়ে ওঠে”।
মুত্তাফাকুন ‘আলাইহি, সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৭৪৩৭; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৮২।
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ: كُنَّا قُعُودًا حَوْلَ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، مَعَنَا أَبُو بَكْرٍ، وَعُمَرُ فِي نَفَرٍ، فَقَامَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مِنْ بَيْنِ أَظْهُرِنَا، فَأَبْطَأَ عَلَيْنَا، وَخَشِينَا أَنْ يُقْتَطَعَ دُونَنَا، وَفَزِعْنَا، فَقُمْنَا، فَكُنْتُ أَوَّلَ مَنْ فَزِعَ، فَخَرَجْتُ أَبْتَغِي رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ حَتَّى أَتَيْتُ حَائِطًا لِلْأَنْصَارِ لِبَنِي النَّجَّارِ، فَدُرْتُ بِهِ هَلْ أَجِدُ لَهُ بَابًا؟ فَلَمْ أَجِدْ، فَإِذَا رَبِيعٌ يَدْخُلُ فِي جَوْفِ حَائِطٍ مِنْ بِئْرٍ خَارِجَةٍ - وَالرَّبِيعُ الْجَدْوَلُ - فَاحْتَفَزْتُ، فَدَخَلْتُ عَلَى رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَقَالَ: «أَبُو هُرَيْرَةَ» فَقُلْتُ: نَعَمْ يَا رَسُولَ اللهِ، قَالَ: «مَا شَأْنُكَ؟» قُلْتُ: كُنْتَ بَيْنَ أَظْهُرِنَا، فَقُمْتَ فَأَبْطَأْتَ عَلَيْنَا، فَخَشِينَا أَنْ تُقْتَطَعَ دُونَنَا، فَفَزِعْنَا، فَكُنْتُ أَوَّلَ مَنْ فَزِعَ، فَأَتَيْتُ هَذَا الْحَائِطَ، فَاحْتَفَزْتُ كَمَا يَحْتَفِزُ الثَّعْلَبُ، وَهَؤُلَاءِ النَّاسُ وَرَائِي، فَقَالَ: «يَا أَبَا هُرَيْرَةَ» وَأَعْطَانِي نَعْلَيْهِ، قَالَ: «اذْهَبْ بِنَعْلَيَّ هَاتَيْنِ، فَمَنْ لَقِيتَ مِنْ وَرَاءِ هَذَا الْحَائِطَ يَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ مُسْتَيْقِنًا بِهَا قَلْبُهُ، فَبَشِّرْهُ بِالْجَنَّةِ»، فَكَانَ أَوَّلَ مَنْ لَقِيتُ عُمَرُ، فَقَالَ: مَا هَاتَانِ النَّعْلَانِ يَا أَبَا هُرَيْرَةَ؟ فَقُلْتُ: هَاتَانِ نَعْلَا رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، بَعَثَنِي بِهِمَا مَنْ لَقِيتُ يَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ مُسْتَيْقِنًا بِهَا قَلْبُهُ، بَشَّرْتُهُ بِالْجَنَّةِ، فَضَرَبَ عُمَرُ بِيَدِهِ بَيْنَ ثَدْيَيَّ فَخَرَرْتُ لِاسْتِي، فَقَالَ: ارْجِعْ يَا أَبَا هُرَيْرَةَ، فَرَجَعْتُ إِلَى رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَأَجْهَشْتُ بُكَاءً، وَرَكِبَنِي عُمَرُ، فَإِذَا هُوَ عَلَى أَثَرِي، فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَا لَكَ يَا أَبَا هُرَيْرَةَ؟» قُلْتُ: لَقِيتُ عُمَرَ، فَأَخْبَرْتُهُ بِالَّذِي بَعَثْتَنِي بِهِ، فَضَرَبَ بَيْنَ ثَدْيَيَّ ضَرْبَةً خَرَرْتُ لِاسْتِي، قَالَ: ارْجِعْ، فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «يَا عُمَرُ، مَا حَمَلَكَ عَلَى مَا فَعَلْتَ؟» قَالَ: يَا رَسُولَ اللهِ، بِأَبِي أَنْتَ، وَأُمِّي، أَبَعَثْتَ أَبَا هُرَيْرَةَ بِنَعْلَيْكَ، مَنْ لَقِيَ يَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ مُسْتَيْقِنًا بِهَا قَلْبُهُ بَشَّرَهُ بِالْجَنَّةِ؟ قَالَ: «نَعَمْ»، قَالَ: فَلَا تَفْعَلْ، فَإِنِّي أَخْشَى أَنْ يَتَّكِلَ النَّاسُ عَلَيْهَا، فَخَلِّهِمْ يَعْمَلُونَ، قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «فَخَلِّهِمْ».
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে বসা ছিলাম। আমাদের মধ্যে আবু বকর ও উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুও ছিলেন। এমন সময় রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের মধ্য থেকে উঠে চলে গেলেন। তিনি আমাদের মাঝে আসতে বিলম্ব করলেন। এতে আমরা ভয় পেয়ে গেলাম যে, আমাদের অনুপস্থিতিতে তিনি কোনো বিপদে পড়লেন কিনা। আমরা শঙ্কিত হয়ে উঠে দাঁড়ালাম। ভীত-সন্ত্রস্তদের মধ্যে আমি ছিলাম প্রথম। তাই আমি রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সন্ধানে বেরিয়ে পড়লাম। তালাশ করতে করতে বনী নাজ্জার গোত্রের আনসারদের বাগানের কাছে পৌঁছলাম। আমি বাগানের চারদিকে ঘুরে কোনো দরজা পেলাম না। হঠাৎ দেখতে পেলাম বাইরের কুয়া থেকে একটি ঝর্ণা প্রণালী (নালা) বাগানের ভিতর প্রবেশ করেছে। আমি নিজেকে শিয়ালের মত সংকুচিত করে প্রণালীর পথে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে প্রবেশ করলাম।  তিনি বললেন, আবু হুরায়রা! আমি বললাম, জি হ্যাঁ, ইয়া রাসুলাল্লাহ্‌! তিনি জিজ্ঞেস করলেন, তোমার অবস্থা কী? আমি বললাম, আপনি আমাদের মধ্যে ছিলেন। তারপর আমাদের মধ্য থেকে উঠে চলে এলেন। আপনার ফিরতে দেরি দেখে আমরা ভয় পেয়ে গেলাম যে, আমাদের অবর্তমানে আপনি বেশি বিপদে পড়লেন কী না? এ আশঙ্কায় আমরা সকলেই ভীত হয়ে পড়লাম। আমি সর্বপ্রথম বেরিয়ে গিয়ে এ বাগানে উপস্থিত হই। আমি শিয়ালের মতো সংকুচিত হয়ে এ বাগানে প্রবেশ করি। আর সেসব লোক আমার পেছনে রয়েছেন। তারপর রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হে আবু হুরায়রা বলে তার পাদুকা জোড়া প্রদান করলেন, আর বললেন, আমার এ পাদুকা জোড়া নিয়ে যাও এবং বাগানের বাইরে যার সাথেই তোমার সাক্ষাৎ হয় তাকে এ সুসংবাদ শুনিয়ে দাও, যে ব্যক্তি আন্তরিক বিশ্বাসের সাথে নাক্ষ্য দেয় যে, আল্লাহ ছাড়া কোনো সত্য ইলাহ নেই, সে-ই জান্নাতী হবে। আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু  বলেন, বাইরে এসে প্রথমেই উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর সঙ্গে আমার সাক্ষাৎ হলো। তিনি বললেন, হে আবু হুরায়রা! এ জুতা জোড়া কী? আমি বললাম, এ তো রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পাদুকা। তিনি আমাকে এ দুটি দিয়ে পাঠিয়েছেন যে, যার সাথে আমার সাক্ষাৎ হয়, সে যদি আন্তরিক বিশ্বাসে সাক্ষ্য দেয় যে, আল্লাহ ছাড়া কোনো ইলাহ নেই, তাকে যেন জান্নাতের সুসংবাদ দেই। একথা শুনে উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু  আমার বুকে এমন জোরে আঘাত করলেন যে, আমি পেছনে পড়ে গেলাম। তখন তিনি বললেন, ফিরে যাও, হে আবু হুরায়রা! আমি কাঁদো কাঁদো অবস্থায় রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের খেদমতে ফিরে এলাম। আর সাথে সাথে উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুও আমার পিছনে পিছনে এলেন। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হে আবু হুরায়রা! তোমার কী হয়েছে? বললাম, উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর সাথে আমার দেখা হয়। আপনি যা বলে আমাকে পাঠিয়েছিলেন আমি তা উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুকে জানাই। এতে তিনি আমার বুকে এমনভাবে আঘাত করলেন যে, আমি পিছনের দিকে পড়ে যাই। তিনি আমাকে ফিরে আসতে বললেন। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হে উমার! কিসে তোমাকে এ কাজে উত্তেজিত করেছে? তিনি উত্তর দিলেন, হে আল্লাহর রাসূল! আপনার জন্য আমার পিতা-মাতা কুরবান হোক। আপনি কি আপনার পাদুকাসহ আবু হুরায়রাকে পাঠিয়েছেন যে, তার সাথে যদি এমন লোকের সাক্ষাৎ হয়, যে আন্তরিকতার সাথে সাক্ষ্য দেয় যে, আল্লাহ ছাড়া কোনো সত্য ইলাহ নেই, তবে তাকে জান্নাতের সুসংবাদ দাও। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হ্যাঁ। উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বললেন, এরূপ করতে যাবেন না। আমি আশঙ্কা করি যে, লোকেরা এর ওপরই ভরসা করে বসে থাকবে। আপনি তাদের ছেড়ে দিন। তারা আমল করুক। তারপর রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আচ্ছা, তাদের ছেড়ে দাও”।
সহীহ, সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৩১।
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ: كُنَّا مَعَ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي مَسِيرٍ، قَالَ: فَنَفِدَتْ أَزْوَادُ الْقَوْمِ، قَالَ: حَتَّى هَمَّ بِنَحْرِ بَعْضِ حَمَائِلِهِمْ، قَالَ: فَقَالَ عُمَرُ: يَا رَسُولَ اللهِ، لَوْ جَمَعْتَ مَا بَقِيَ مِنْ أَزْوَادِ الْقَوْمِ، فَدَعَوْتَ اللهَ عَلَيْهَا، قَالَ: فَفَعَلَ، قَالَ: فَجَاءَ ذُو الْبُرِّ بِبُرِّهِ، وَذُو التَّمْرِ بِتَمْرِهِ، قَالَ: وَقَالَ مُجَاهِدٌ: وَذُو النَّوَاةِ بِنَوَاهُ، قُلْتُ: وَمَا كَانُوا يَصْنَعُونَ بِالنَّوَى؟ قَالَ: كَانُوا يَمُصُّونَهُ وَيَشْرَبُونَ عَلَيْهِ الْمَاءَ، قَالَ: فَدَعَا عَلَيْهَا قَالَ حَتَّى مَلَأَ الْقَوْمُ أَزْوِدَتَهُمْ، قَالَ: فَقَالَ عِنْدَ ذَلِكَ: «أَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ، وَأَنِّي رَسُولُ اللهِ، لَا يَلْقَى اللهَ بِهِمَا عَبْدٌ غَيْرَ شَاكٍّ فِيهِمَا، إِلَّا دَخَلَ الْجَنَّةَ». আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে একটি সফরে ছিলাম। এক পর্যায়ে দলের রসদপত্র নিঃশেষ হয়ে গেলো। পরিশেষে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের কিছু সংখ্যক উট যবেহ করার মনস্থ করলেন। বর্ণনাকারী বলেন যে, এতে উমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু আরয করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ্‌! যদি আপনি সকলের রসদ সামগ্রী একত্র করে আল্লাহর কাছে দো‘আ করতেন, তবে ভালো হতো। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাই করলেন। যার কাছে গম ছিল সে গম এবং যার কাছে খেজুর ছিল সে খেজুর নিয়ে হাযির হলো, (তালহা ইবন মুসাররিফ বলেন) মুজাহিদ আরো বর্ণনা করেন যে, যার কাছে খেজুরের আঁটি ছিল, সে তাই নিয়ে হাযির হলো। আমি (তালহা) বললাম, আটি দিয়ে কী করতেন? তিনি বললেন, তা চুষে পানি পান করতেন  বর্ণনাকারী বললেন, তারপর রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সংগৃহীত খাদ্য সামগ্রীর ওপর দো‘আ করলেন। বর্ণনাকারী বলেন, অবশেষে লোকেরা রসদে নিজেদের পাত্র পূর্ণ করে নিলো। বর্ণনাকারী বলেন, তখন রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি, আল্লাহ ছাড়া কোনো সত্য ইলাহ নেই এবং আমি আল্লাহর রাসূল, যে এ দুটি বিষয়ের প্রতি সন্দেহাতীত বিশ্বাস রেখে আল্লাহর সঙ্গে সাক্ষাৎ করবে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে”।
সহীহ, সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৭।
অন্য বর্ণনায় এসেছে,
لَمَّا كَانَ غَزْوَةُ تَبُوكَ أَصَابَ النَّاسَ مَجَاعَةٌ، قَالُوا: يَا رَسُولَ اللهِ، لَوْ أَذِنْتَ لَنَا فَنَحَرْنَا نَوَاضِحَنَا، فَأَكَلْنَا وَادَّهَنَّا، فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «افْعَلُوا»، قَالَ: فَجَاءَ عُمَرُ، فَقَالَ: يَا رَسُولَ اللهِ، إِنْ فَعَلْتَ قَلَّ الظَّهْرُ، وَلَكِنْ ادْعُهُمْ بِفَضْلِ أَزْوَادِهِمْ، ثُمَّ ادْعُ اللهَ لَهُمْ عَلَيْهَا بِالْبَرَكَةِ، لَعَلَّ اللهَ أَنْ يَجْعَلَ فِي ذَلِكَ، فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «نَعَمْ»، قَالَ: فَدَعَا بِنِطَعٍ، فَبَسَطَهُ، ثُمَّ دَعَا بِفَضْلِ أَزْوَادِهِمْ، قَالَ: فَجَعَلَ الرَّجُلُ يَجِيءُ بِكَفِّ ذُرَةٍ، قَالَ: وَيَجِيءُ الْآخَرُ بِكَفِّ تَمْرٍ، قَالَ: وَيَجِيءُ الْآخَرُ بِكَسْرَةٍ حَتَّى اجْتَمَعَ عَلَى النِّطَعِ مِنْ ذَلِكَ شَيْءٌ يَسِيرٌ، قَالَ: فَدَعَا رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَلَيْهِ بِالْبَرَكَةِ، ثُمَّ قَالَ: «خُذُوا فِي أَوْعِيَتِكُمْ»، قَالَ: فَأَخَذُوا فِي أَوْعِيَتِهِمْ، حَتَّى مَا تَرَكُوا فِي الْعَسْكَرِ وِعَاءً إِلَّا مَلَئُوهُ، قَالَ: فَأَكَلُوا حَتَّى شَبِعُوا، وَفَضَلَتْ فَضْلَةٌ، فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «أَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ، وَأَنِّي رَسُولُ اللهِ، لَا يَلْقَى اللهَ بِهِمَا عَبْدٌ غَيْرَ شَاكٍّ، فَيُحْجَبَ عَنِ الْجَنَّةِ».
তাবুকের যুদ্ধের সময়ে লোকেরা দারুণ খাদ্যাভাবে পতিত হলো। তারা বললো, ইয়া রাসূলাল্লাহ্‌! যদি আপনি অনুমতি দেন, তাহলে আমরা আমাদের উটগুলো যবেহ করে তার গোশত খাই এবং আর চর্বি ব্যবহার করি। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, যবেহ করতে পারো। বর্ণনাকারী বললেন, ইত্যবসরে উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু আসলেন এবং আরয করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ্‌! যদি এরূপ করা হয়, তাহলে বাহন কমে যাবে; বরং আপনি লোকদেরকে তাদের উদ্বৃত্ত রসদ নিয়ে উপস্থিত হতে বলুন, তাতে তাদের জন্য আল্লাহর দরবারে বরকতের দো‘আ করুন। আশা করা যায়, আল্লাহ তাতে বরকত দিবেন। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হ্যাঁ, ঠিক আছে। তিনি একটি দস্তরখান আনতে বললেন এবং তা বিছালেন। এরপর সকলের উদ্বৃত্ত রসদ চেয়ে পাঠালেন। বর্ণনাকারী বলেন, তখন কেউ একমুঠো গম নিয়ে হাযির হলো, কেউ একমুঠো খেজুর নিয়ে হাযির হলো আবার কেউ এক টুকরা রুটি নিয়ে আসল। এভাবে কিছু পরিমাণ রসদ-সামগ্রী দস্তরখানায় জমা হলো। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বরকতের দো‘আ করলেন। তারপর বললেন, তোমরা নিজ নিজ পাত্রে রসদপত্র ভর্তি করে নাও। সকলেই নিজ নিজ পাত্র ভরে নিলো; এমনকি এ বাহিনীর কোনো পাত্রই আর অপূর্ণ রইল না। এরপর সকলে পরিতৃপ্ত হয়ে আহার করলেন। কিছু উদ্বৃত্তও রয়ে গেলো। তখন রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া কোনো সত্য ইলাহ নেই এবং আমি আল্লাহর প্রেরিত রাসূল, যে ব্যক্তি সন্দেহাতীতভাবে এ কথা দু’টির ওপর বিশ্বাস রেখে আল্লাহর কাছে উপস্থিত হবে, সে জান্নাত থেকে বঞ্চিত হবে না”।
সহীহ, সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৭।
عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بن مسعودٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ: قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: " إِنِّي لَأَعْلَمُ آخِرَ أَهْلِ النَّارِ خُرُوجًا مِنْهَا، وَآخِرَ أَهْلِ الجَنَّةِ دُخُولًا، رَجُلٌ يَخْرُجُ مِنَ النَّارِ كَبْوًا، فَيَقُولُ اللَّهُ: اذْهَبْ فَادْخُلِ الجَنَّةَ، فَيَأْتِيهَا، فَيُخَيَّلُ إِلَيْهِ أَنَّهَا مَلْأَى، فَيَرْجِعُ فَيَقُولُ: يَا رَبِّ وَجَدْتُهَا مَلْأَى، فَيَقُولُ: اذْهَبْ فَادْخُلِ الجَنَّةَ، فَيَأْتِيهَا فَيُخَيَّلُ إِلَيْهِ أَنَّهَا مَلْأَى، فَيَرْجِعُ فَيَقُولُ: يَا رَبِّ وَجَدْتُهَا مَلْأَى، فَيَقُولُ: اذْهَبْ فَادْخُلِ الجَنَّةَ، فَإِنَّ لَكَ مِثْلَ الدُّنْيَا وَعَشَرَةَ أَمْثَالِهَا - أَوْ: إِنَّ لَكَ مِثْلَ عَشَرَةِ أَمْثَالِ الدُّنْيَا - فَيَقُولُ: تَسْخَرُ مِنِّي - أَوْ: تَضْحَكُ مِنِّي - وَأَنْتَ المَلِكُ " فَلَقَدْ رَأَيْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ضَحِكَ حَتَّى بَدَتْ نَوَاجِذُهُ، وَكَانَ يَقُولُ: «ذَاكَ أَدْنَى أَهْلِ الجَنَّةِ مَنْزِلَةً».
আব্দুল্লাহ্ ইবন মাসঊদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “সর্বশেষ যে ব্যক্তি জাহান্নাম থেকে বের হবে এবং সর্বশেষ যে ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করবে তার সম্পর্কে আমি জানি। এক ব্যক্তি অধোবদন অবস্থায় জাহান্নাম থেকে বের হবে। তখন আল্লাহ তা‘আলা বলবেন, যাও জান্নাতে প্রবেশ করো। তখন সে জান্নাতের কাছে এলে তার ধারণা হবে যে, জান্নাত পরিপূর্ণ হয়ে গেছে এবং সে ফিরে আসবে ও বলবে, হে রব! জান্নাত তো ভরপুর দেখতে পেলাম। পুনরায় আল্লাহ তা‘আলা বলবেন, যাও জান্নাতে প্রবেশ করো। তখন সে জান্নাতের কাছে এলে তার ধারণা হবে যে, জান্নাত পরিপূর্ণ হয়ে গেছে। তাই সে ফিরে এসে বলবে, হে রব! জান্নাত তো ভরপুর দেখতে পেলাম। তখন আল্লাহ তা‘আলা বলবেন, যাও জান্নাতে প্রবেশ করো। কেননা জান্নাত তোমার জন্য পৃথিবীর সমতুল্য এবং তার দশ গুণ অথবা রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, পৃথিবীর দশ গুণ। তখন লোকটি বলবে, হে রব! আপনি কি আমার সাথে বিদ্রূপ বা হাসি ঠাট্টা করছেন? (বর্ণনাকারী বলেন) আমি তখন রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে এভাবে হাসতে দেখলাম যে, তাঁর দন্তরাজি প্রকাশিত হয়ে গিয়েছিল এবং বলা হচ্ছিল এটি জান্নাতীদের নিম্নতম মর্যাদা”।
মুত্তাফাকুন ‘আলাইহি, সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৬৫৭১; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৮৬।
عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بن مسعود رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَنْ مَاتَ يُشْرِكُ بِاللَّهِ شَيْئًا دَخَلَ النَّارَ» وَقُلْتُ أَنَا: «مَنْ مَاتَ لاَ يُشْرِكُ بِاللَّهِ شَيْئًا دَخَلَ الجَنَّةَ».
আব্দুল্লাহ (ইবন মাসঊদ) রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “যে ব্যক্তি আল্লাহর সঙ্গে শির্ক করা অবস্থায় মারা যায়, সে জাহান্নামে প্রবেশ করবে। আমি বললাম, যে আল্লাহর সঙ্গে কোনো কিছুর শির্ক না করা অবস্থায় মারা যায়, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে”।
মুত্তাফাকুন ‘আলাইহি, সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১২৩৮; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৯২।
عَنْ أَبِي ذَرٍّ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، قَالَ: خَرَجْتُ لَيْلَةً مِنَ اللَّيَالِي، فَإِذَا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَمْشِي وَحْدَهُ، وَلَيْسَ مَعَهُ إِنْسَانٌ، قَالَ: فَظَنَنْتُ أَنَّهُ يَكْرَهُ أَنْ يَمْشِيَ مَعَهُ أَحَدٌ، قَالَ: فَجَعَلْتُ أَمْشِي فِي ظِلِّ القَمَرِ، فَالْتَفَتَ فَرَآنِي، فَقَالَ: «مَنْ هَذَا» قُلْتُ: أَبُو ذَرٍّ، جَعَلَنِي اللَّهُ فِدَاءَكَ، قَالَ: «يَا أَبَا ذَرٍّ تَعَالَهْ» قَالَ: فَمَشَيْتُ مَعَهُ سَاعَةً، فَقَالَ: «إِنَّ المُكْثِرِينَ هُمُ المُقِلُّونَ يَوْمَ القِيَامَةِ، إِلَّا مَنْ أَعْطَاهُ اللَّهُ خَيْرًا، فَنَفَحَ فِيهِ يَمِينَهُ وَشِمَالَهُ وَبَيْنَ يَدَيْهِ وَوَرَاءَهُ، وَعَمِلَ فِيهِ خَيْرًا».
قَالَ: فَمَشَيْتُ مَعَهُ سَاعَةً، فَقَالَ لِي: «اجْلِسْ هَا هُنَا» قَالَ: فَأَجْلَسَنِي فِي قَاعٍ حَوْلَهُ حِجَارَةٌ، فَقَالَ لِي: «اجْلِسْ هَا هُنَا حَتَّى أَرْجِعَ إِلَيْكَ» قَالَ: فَانْطَلَقَ فِي الحَرَّةِ حَتَّى لاَ أَرَاهُ، فَلَبِثَ عَنِّي فَأَطَالَ اللُّبْثَ، ثُمَّ إِنِّي سَمِعْتُهُ وَهُوَ مُقْبِلٌ، وَهُوَ يَقُولُ: «وَإِنْ سَرَقَ، وَإِنْ زَنَى» قَالَ: فَلَمَّا جَاءَ لَمْ أَصْبِرْ حَتَّى قُلْتُ: يَا نَبِيَّ اللَّهِ جَعَلَنِي اللَّهُ فِدَاءَكَ، مَنْ تُكَلِّمُ فِي جَانِبِ الحَرَّةِ، مَا سَمِعْتُ أَحَدًا يَرْجِعُ إِلَيْكَ شَيْئًا؟ قَالَ: " ذَلِكَ جِبْرِيلُ عَلَيْهِ السَّلاَمُ، عَرَضَ لِي فِي جَانِبِ الحَرَّةِ، قَالَ: بَشِّرْ أُمَّتَكَ أَنَّهُ مَنْ مَاتَ لاَ يُشْرِكُ بِاللَّهِ شَيْئًا دَخَلَ الجَنَّةَ، قُلْتُ: يَا جِبْرِيلُ، وَإِنْ سَرَقَ، وَإِنْ زَنَى؟ قَالَ: نَعَمْ " قَالَ: قُلْتُ: وَإِنْ سَرَقَ، وَإِنْ زَنَى؟ قَالَ: «نَعَمْ، وَإِنْ شَرِبَ الخَمْرَ».
আবু যার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একবার রাতে আমি বের হলাম, তখন রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে একাকী চলতে দেখলাম, তার সঙ্গে কোনো লোক ছিলো না। আমি মনে করলাম, তার সঙ্গে কেউ চলুক হয়ত তিনি তা অপছন্দ করবেন। তাই আমি চাঁদের ছায়াতে তার পেছনে পেছনে চলতে লাগলাম। তিনি পেছনের দিকে তাকিয়ে আমাকে দেখে ফেললেন। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, এ কে? আমি বললাম আমি আবু যার। আল্লাহ আমাকে আপনার জন্যে উৎসর্গিত করুন। তিনি বললেন, ওহে আবু যার! এসো। আমি তার সঙ্গে কিছুক্ষণ চললাম। তারপর তিনি বললেন, প্রাচুর্যের অধিকারীরাই কিয়ামতের দিন সল্পাধিকারী হবে। অবশ্য যাদের আল্লাহ সম্পদ দান করেন এবং তারা সম্পদকে তা ডানে, বামে, আগে ও পিছনে ব্যায় করে। আর মঙ্গলজনক কাজে তা লাগায়, (তারা ব্যাতীত)। তারপর আমি আরো কিছুক্ষণ তার সঙ্গে চলার পর তিনি আমাকে বললেন, তুমি এখানে বসে থাকো। (এ কথা বলে) তিনি আমাকে চতুর্দিকে প্রস্তরঘেরা একটা খোলা জায়গায় বসিয়ে দিয়ে বললেন, আমি ফিরে না আসা পর্যন্ত তুমি এখানেই বসে থেকো। তিনি বলেন, এরপর তিনি প্রস্তরময় প্রান্তরের দিকে চলে গেলেন। এমনকি তিনি আমার দৃষ্টির অগোচরে চলে গেলেন এবং বেশ কিছুক্ষণ অতিবাহিত হয়ে গেলো। অতঃপর তিনি ফিরে আসার সময় আমি তাকে বলতে শুনলাম, যদিও সে চুরি করে, যদিও সে যিনা করে। তারপর তিনি যখন ফিরে এলেন, তখন আমি আর ধৈর্য ধারণ করতে না পেরে তাকে জিজ্ঞাসা করতে বাধ্য হলাম যে, ইয়া রাসূলাল্লাহ্‌! আল্লাহ আমাকে আপনার প্রতি কুরবান করুন। আপনি এই প্রস্তর প্রান্তরে কার সাথে কথা বললেন? কাউকে তো আপনার কথার উত্তর দিতে শুনলাম না। তখন তিনি বললেন, তিনি ছিলেন জিবরীল আলাইহিস সালাম। তিনি এই কংকরময় প্রান্তরে আমার কাছে এসেছিলেন। তিনি বললেন, আপনি আপনার উম্মতদের সুসংবাদ দেবেন যে, যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে কাউকে শরীক না করে মারা যাবে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, হে জিবরীল! যদিও সে চুরি করে, আর যদিও সে যিনা করে? তিনি বললেন, হ্যাঁ। আবার আমি বললাম, যদিও সে চুরি করে, আর যিনা করে? তিনি বললেন, হ্যাঁ; যদিও সে মদ পান করে”।
মুত্তাফাকুন ‘আলাইহি, সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৬৪৪৩; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৯৪।
عَنْ أَبِي ذَرٍّ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: كُنْتُ أَمْشِي مَعَ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي حَرَّةِ المَدِينَةِ عِشَاءً، اسْتَقْبَلَنَا أُحُدٌ، فَقَالَ: «يَا أَبَا ذَرٍّ، مَا أُحِبُّ أَنَّ أُحُدًا لِي ذَهَبًا، يَأْتِي عَلَيَّ لَيْلَةٌ أَوْ ثَلاَثٌ، عِنْدِي مِنْهُ دِينَارٌ إِلَّا أَرْصُدُهُ لِدَيْنٍ، إِلَّا أَنْ أَقُولَ بِهِ فِي عِبَادِ اللَّهِ هَكَذَا وَهَكَذَا وَهَكَذَا» وَأَرَانَا بِيَدِهِ، ثُمَّ قَالَ: «يَا أَبَا ذَرٍّ» قُلْتُ: لَبَّيْكَ وَسَعْدَيْكَ يَا رَسُولَ اللَّهِ، قَالَ: «الأَكْثَرُونَ هُمُ الأَقَلُّونَ، إِلَّا مَنْ قَالَ هَكَذَا وَهَكَذَا» ثُمَّ قَالَ لِي: «مَكَانَكَ لاَ تَبْرَحْ يَا أَبَا ذَرٍّ حَتَّى أَرْجِعَ» فَانْطَلَقَ حَتَّى غَابَ عَنِّي، فَسَمِعْتُ صَوْتًا، فَخَشِيتُ أَنْ يَكُونَ عُرِضَ لِرَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَأَرَدْتُ أَنْ أَذْهَبَ، ثُمَّ ذَكَرْتُ قَوْلَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «لَا تَبْرَحْ» فَمَكُثْتُ، قُلْتُ: يَا رَسُولَ اللَّهِ، سَمِعْتُ صَوْتًا، خَشِيتُ أَنْ يَكُونَ عُرِضَ لَكَ، ثُمَّ ذَكَرْتُ قَوْلَكَ فَقُمْتُ، فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «ذَاكَ جِبْرِيلُ، أَتَانِي فَأَخْبَرَنِي أَنَّهُ مَنْ مَاتَ مِنْ أُمَّتِي لاَ يُشْرِكُ بِاللَّهِ شَيْئًا دَخَلَ الجَنَّةَ» قُلْتُ: يَا رَسُولَ اللَّهِ، وَإِنْ زَنَى وَإِنْ سَرَقَ، قَالَ: «وَإِنْ زَنَى وَإِنْ سَرَقَ».
আবু যার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, “একবার আমি রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সঙ্গে এশার সময় মদীনায় ‘হাররা’ নামক স্থান দিয়ে পায়ে হেঁটে যাচ্ছিলাম। তখন আমরা ওহুদ পাহাড়ের সম্মুখীন হলে তিনি আমাকে বললেন, হে আবু যার! আমি এটি পছন্দ করি না যে, আমার নিকট ওহুদ পাহাড় পরিমাণ সোনা আসুক আর ঋণ পরিশোধের পরিমাণ ব্যতীত এক দীনার পরিমাণ সোনাও এক রাত পর্যন্ত আমার হাতে তা থেকে যাক; বরং আমি পছন্দ করি যে, আমি এগুলো আল্লাহর বান্দাদের এভাবে বিলিয়ে দেই। (কীভাবে দেবেন) তা তাঁর হাত দিয়ে তিনি দেখালেন। তারপর বললেন, হে আবু যার! আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল আমি সদা (আনুগত্যে) উপস্থিত, আর (আপনার আনুগত্যের মাধ্যমেই আমি) সব সৌভাগ্যে উপনীত হই  তখন তিনি বললেন, দুনিয়াতে যারা অধিক সম্পদশালী, আখিরাতে তারা হবেন অনেক স্বল্পাধিকারী তবে যারা তাদের সম্পদকে এভাবে, এভাবে বিলিয়ে দিবে, তারা হবেন এর ব্যতিক্রম। তারপর তিনি আমাকে বললেন, হে আবু যার! আমি ফিরে না আসা পর্যন্ত তুমি এ স্থানেই থাকো। এখান থেকে কোথাও যেয়ো না। এরপর তিনি রওয়ানা হয়ে গেলেন। এমন সময় একটা শব্দ শুনলাম। এতে আমি শংকিত হয়ে পড়লাম যে, রাসূলুল্লাহ রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম  কোনো বিপদের সম্মুখীন হয়ে পড়লেন কিনা? তাই আমি সেদিকে অগ্রসর হতে চাইলাম। কিন্তু সাথে সাথেই রাসূলুল্লাহ রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিষেধাজ্ঞা যে কোথাও যেয়ো না মনে পড়লো এবং আমি থেমে গেলাম। এরপর তিনি ফিরে আসলে আমি বললাম, ইয়া রাসূলুল্লাহ্‌! আমি একটা আওয়াজ শুনে শংকিত হয়ে পড়লাম যে, আপনি সেখানে গিয়ে কোনো বিপদে পড়লেন কিনা। কিন্তু আপনার কথা স্মরণ করে থেমে গেলাম। তখন রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তিনি ছিলেন জিবরীল আলাইহিস সালাম। তিনি আমার নিকট এসে সংবাদ দিলেন যে, আমার উম্মতের মধ্যে যে ব্যক্তি আল্লাহর সঙ্গে কোনো কিছুকে শরীক না করে মারা যাবে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। তখন আমি বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ্! যদিও সে ব্যক্তি ব্যভিচার করে? যদি সে ব্যক্তি চুরি করে? তিনি বললেন, সে হ্যাঁ, যদিও সে ব্যভিচার করে, যদিও সে চুরি করে থাকে তবুও”।
মুত্তাফাকুন ‘আলাইহি, সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৬২৬৮; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৯৪।
عَنْ أَبِي ذَرٍّ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قَالَ: «أَتَانِي جِبْرِيلُ فَبَشَّرَنِي أَنَّهُ مَنْ مَاتَ لاَ يُشْرِكُ بِاللَّهِ شَيْئًا دَخَلَ الجَنَّةَ، قُلْتُ: وَإِنْ سَرَقَ، وَإِنْ زَنَى، قَالَ: وَإِنْ سَرَقَ، وَإِنْ زَنَى».
আবু যর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “আমার কাছে জিবরীল আলাইহিস সালাম এসে এ সুসংবাদ দিলেন যে, আল্লাহর সাথে শরীক না করে যদি কেউ মারা যায়, তবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। আমি বললাম, চুরি ও যিনা করলেও কি? রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, চুরি ও যিনা করলেও”।
মুত্তাফাকুন ‘আলাইহি, সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৭৪৮৭; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৯৪।
হাদীসের অর্থ: যে ব্যক্তি তাওহীদের ওপর মারা যাবে এবং গুনাহ থেকে তাওবা করবে সে শুরু থেকেই জান্নাতে প্রবেশ করবে। হাফেয ইবন হাজার রহ. বলেন, অন্যদিকে যে ব্যক্তি গুনাহ করে তাওবা ছাড়া মারা যাবে হাদীসের বাহ্যিক ভাষ্য অনুযায়ী সেও জান্নাতে প্রবেশ করবে। কিন্তু আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আতের আকীদাহ হলো, এটি আল্লাহর ইচ্ছাধীন। এর প্রমাণ উবাদা ইবন সামিত রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর হাদীস,
«وَمَنْ أَصَابَ مِنْ ذَلِكَ شَيْئًا فَعُوقِبَ بِهِ فِي الدُّنْيَا فَهُوَ لَهُ كَفَّارَةٌ، وَمَنْ أَصَابَ مِنْ ذَلِكَ شَيْئًا فَسَتَرَهُ اللَّهُ فَأَمْرُهُ إِلَى اللَّهِ، إِنْ شَاءَ عَاقَبَهُ، وَإِنْ شَاءَ عَفَا عَنْهُ».
“আর যে এসবের কোনো কিছুতে (গুনাহে) লিপ্ত হয় এবং তাকে এ কারণে দুনিয়াতে আইনানুগ শাস্তি দেয়া হবে; তবে এ শাস্তি তার কাফফারা হয়ে যাবে। আর যে ব্যক্তি এ সবের কোনটিতে লিপ্ত হলো আর আল্লাহ তা গোপন রাখেন, তবে তার ব্যাপারটি আল্লাহর ওপর ন্যস্ত। তিনি ইচ্ছা করলে শাস্তি দিবেন আর ইচ্ছে করলে মাফ করবেন”।
সহীহ, সহীহ সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৩৮৯২। হাদীসের শব্দাবলী বুখারীর চয়নকৃত।  
এটি উপরোক্ত মুবহামের (অস্পষ্ট কথার) তাফসীর এবং খারেজী ও ‘মুতাযিলাদের দাঁতভাঙ্গা জবাব; যারা মনে করেন, কবীরা গুনাহে লিপ্ত ব্যক্তি তাওবা ছাড়া মারা গেলে জাহান্নামে চিরস্থায়ী হবে।
অতঃপর, ইবন তীন রহ. দাউদী রহ. থেকে বর্ণনা করেন, ইমাম বুখারী রহ. এর বক্তব্য হাদীসের বাহ্যিক অর্থের বিপরীত; কেননা তাওবা যদি শর্ত হতো তবে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এভাবে বলতেন না যে, যদিও সে যিনা করে ও চুরি করে। হাদীসের উদ্দেশ্য হলো, শুরু থেকেই জান্নাতে প্রবেশ করবে, যদিও যিনা ও চুরি করে অথবা পরে জান্নাতে প্রবেশ করবে।
এ ব্যাখার দিকে ইবন হিব্বান রহ. তার সহীহ ইবন হিব্বানে (১/৪৪৬) এ ইঙ্গিত দিয়ে বলেছেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে কাউকে শরীক না করে মারা যাবে সে অবশ্যই জান্নাতে প্রবেশ করবে; যদিও জান্নাতে যাওয়ার আগে নির্দিষ্ট সময় শাস্তি ভোগ করবে।          
عَنْ عُثْمَانَ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَنْ مَاتَ وَهُوَ يَعْلَمُ أَنَّهُ لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ، دَخَلَ الْجَنَّةَ».
উসমান রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “যে ব্যক্তি ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ এর নিশ্চিত বিশ্বাস নিয়ে মারা যাবে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে”।
সহীহ, সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৬।
عَنْ عُثْمَان بْن عَفَّان قَالَ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: «إِنِّي لَأَعْلَمُ كَلِمَةً لَا يَقُولُهَا عَبْدٌ حَقًّا مِنْ قَلْبِهِ إِلَّا حُرِّمَ عَلَى النَّارِ " فَقَالَ لَهُ عُمَرُ بْنُ الْخَطَّابِ: أَنَا أُحَدِّثُكَ مَا هِيَ؟ هِيَ كَلِمَةُ الْإِخْلاصِ الَّتِي أَلْزَمَهَا اللهُ تَبَارَكَ وَتَعَالَى مُحَمَّدًا صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَأَصْحَابَهُ، وَهِيَ كَلِمَةُ التَّقْوَى الَّتِي أَلَاصَ عَلَيْهَا نَبِيُّ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَمَّهُ أَبَا طَالِبٍ عِنْدَ الْمَوْتِ: شَهَادَةُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ».
উসমান ইবন আফফান রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে শুনেছি, তিনি বলেছেন, “আমি অবশ্যই জানি এমন একটি কালেমা যা বান্দা অন্তর থেকে সত্যিকারে বললে জাহান্নামের আগুন তার জন্য হারাম হয়ে যায়। তখন উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বললেন, আমি আপনাকে বলব এটি কী? এটা হলো ইখলাসের কালেমা যা আল্লাহ তা‘আলা মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তাঁর সাহাবীদেরকে অত্যাবশ্যকীয় করেছেন; এটি তাকওয়ার কালেমা যা আল্লাহর নবী তাঁর চাচার মৃত্যুকালে তাকে পড়ানোর জন্য বারবার চেষ্টা করেছিলেন (তালকীন দিয়েছেন), তাহলো “আল্লাহ ব্যতীত কোনো সত্য ইলাহ নেই এ সাক্ষ্য দেওয়া”।
হাসান, মুসনাদ আহমদ, হাদীস নং ৪৪৭; ইবন হিব্বান, হাদীস নং ২০৪, তিনি সহীহ বলেছেন; হাকিম, ১/৩৫১।
عَنْ جَابِرٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ: أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «يَخْرُجُ مِنَ النَّارِ بِالشَّفَاعَةِ كَأَنَّهُمُ الثَّعَارِيرُ»، قُلْتُ: مَا الثَّعَارِيرُ؟ قَالَ: «الضَّغَابِيسُ، وَكَانَ قَدْ سَقَطَ فَمُهُ» فَقُلْتُ لِعَمْرِو بْنِ دِينَارٍ: أَبَا مُحَمَّدٍ سَمِعْتَ جَابِرَ بْنَ عَبْدِ اللَّهِ، يَقُولُ: سَمِعْتُ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: «يَخْرُجُ بِالشَّفَاعَةِ مِنَ النَّارِ» قَالَ: نَعَمْ.
জাবির রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “শাফা‘আতের মাধ্যমে জাহান্নাম থেকে বের করা হবে। যেন তারা সা‘আরীর। (বর্ণনাকারী জাবীর বলেন) আমি বললাম সা‘আরীর কী? তিনি বললেন, সা‘আরীর মানে দ্বাগাবীস (দগ্ধ-বিকৃত) তাদের মুখ বের হয়ে পড়েছে (সনদের বর্ণনাকারী হাম্মাদ বলেন) আমি আবু মুহাম্মাদ আমর ইবন দীনারকে জিজ্ঞাসা করি যে, আপনি কি জাবির ইবন আব্দুল্লাহকে বর্ণনা করতে শুনেছেন, যে আমি রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি। তিনি বলেছেন, শাফা‘আতের দ্বারা জাহান্নাম থেকে বের করা হবে। তিনি বললেন, হ্যাঁ।
মুত্তাফাকুন ‘আলাইহি, সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৬৫৫৮; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৩১৮।
عَنْ جَابِر، يَقُولُ: سَمِعَت مِنَ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِأُذُني، يَقُولُ: «إِنَّ اللهَ يُخْرِجُ نَاسًا مِنَ النَّارِ فَيُدْخِلَهُمُ الْجَنَّةَ»
জাবির রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, আমি দুই কানে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, “আল্লাহ তা‘আলা স্বয়ং কিছু সংখ্যক লোককে জাহান্নাম থেকে বের করে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন”।
সহীহ, সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৯১/৩১৭।
عَنْ جَابِر بْن عَبْدِ اللهِ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِنَّ قَوْمًا يُخْرَجُونَ مِنَ النَّارِ يَحْتَرِقُونَ فِيهَا، إِلَّا دَارَاتِ وُجُوهِهِمْ حَتَّى يَدْخُلُونَ الْجَنَّةَ».
জাবির ইবন আব্দুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “একদল লোককে জাহান্নাম থেকে বের করে আনা হবে। এদের মুখমণ্ডল ব্যতীত সারা দেহ জ্বলে পুড়ে গেছে। অবশেষে তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে”।
সহীহ, সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৯১/৩১৯।
রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বাণী, «دَارَاتِ» এটি دارة এর বহুবচন। যা চতুর্দিক দিয়ে বেষ্টিত। অর্থাৎ জাহান্নাম চেহারার চারপাশ খাবে না; কেননা এটি সাজদাহর স্থান, যেমন অন্য হাদীসে এসেছে,  «إلا مواضع السجود» তবে সাজদাহর স্থানসমূহ ব্যতীত।
عَنْ يَزِيد الْفَقِير، قَالَ: كُنْتُ قَدْ شَغَفَنِي رَأْيٌ مِنْ رَأْيِ الْخَوَارِجِ، فَخَرَجْنَا فِي عِصَابَةٍ ذَوِي عَدَدٍ نُرِيدُ أَنْ نَحُجَّ، ثُمَّ نَخْرُجَ عَلَى النَّاسِ، قَالَ: فَمَرَرْنَا عَلَى الْمَدِينَةِ، فَإِذَا جَابِرُ بْنُ عَبْدِ اللهِ يُحَدِّثُ الْقَوْمَ، جَالِسٌ إِلَى سَارِيَةٍ، عَنْ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: فَإِذَا هُوَ قَدْ ذَكَرَ الْجَهَنَّمِيِّينَ، قَالَ: فَقُلْتُ لَهُ: يَا صَاحِبَ رَسُولِ اللهِ، مَا هَذَا الَّذِي تُحَدِّثُونَ؟ وَاللهُ يَقُولُ: ﴿رَبَّنَآ إِنَّكَ مَن تُدۡخِلِ ٱلنَّارَ فَقَدۡ أَخۡزَيۡتَهُۥۖ وَمَا لِلظَّٰلِمِينَ مِنۡ أَنصَارٖ﴾ [ال عمران: ١٩٢]، وَ ﴿وَأَمَّا ٱلَّذِينَ فَسَقُواْ فَمَأۡوَىٰهُمُ ٱلنَّارُۖ كُلَّمَآ أَرَادُوٓاْ أَن يَخۡرُجُواْ مِنۡهَآ أُعِيدُواْ فِيهَا وَقِيلَ لَهُمۡ ذُوقُواْ عَذَابَ ٱلنَّارِ ٱلَّذِي كُنتُم بِهِۦ تُكَذِّبُونَ﴾ [السجدة : ٢٠]  ، فَمَا هَذَا الَّذِي تَقُولُونَ؟ قَالَ: فَقَالَ: «أَتَقْرَأُ الْقُرْآنَ؟» قُلْتُ: نَعَمْ، قَالَ: «فَهَلْ سَمِعْتَ بِمَقَامِ مُحَمَّدٍ عَلَيْهِ السَّلَامُ - يَعْنِي الَّذِي يَبْعَثُهُ اللهُ فِيهِ -؟» قُلْتُ: نَعَمْ، قَالَ: «فَإِنَّهُ مَقَامُ مُحَمَّدٍ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الْمَحْمُودُ الَّذِي يُخْرِجُ اللهُ بِهِ مَنْ يُخْرِجُ»، قَالَ: ثُمَّ نَعَتَ وَضْعَ الصِّرَاطِ، وَمَرَّ النَّاسِ عَلَيْهِ، - قَالَ: وَأَخَافُ أَنْ لَا أَكُونَ أَحْفَظُ ذَاكَ - قَالَ: غَيْرَ أَنَّهُ قَدْ زَعَمَ أَنَّ قَوْمًا يَخْرُجُونَ مِنَ النَّارِ بَعْدَ أَنْ يَكُونُوا فِيهَا، قَالَ: - يَعْنِي - فَيَخْرُجُونَ كَأَنَّهُمْ عِيدَانُ السَّمَاسِمِ، قَالَ: «فَيَدْخُلُونَ نَهَرًا مِنْ أَنْهَارِ الْجَنَّةِ، فَيَغْتَسِلُونَ فِيهِ، فَيَخْرُجُونَ كَأَنَّهُمُ الْقَرَاطِيسُ»، فَرَجَعْنَا قُلْنَا: وَيْحَكُمْ أَتُرَوْنَ الشَّيْخَ يَكْذِبُ عَلَى رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ؟ فَرَجَعْنَا فَلَا وَاللهِ مَا خَرَجَ مِنَّا غَيْرُ رَجُلٍ وَاحِدٍ، أَوْ كَمَا قَالَ: أَبُو نُعَيْمٍ.
ইয়াযীদুল ফকীর বলেন, খারেজীদের একটি কথা আমার অন্তরে বদ্ধমূল হয়ে গিয়েছিল। (কবীরা গুণাহকারীরা চিরস্থায়ী জাহান্নামী। আর যে একবার জাহান্নামে যাবে সে আর কখনো তা থেকে বের হতে পারবে না। এ হলো খারেজীদের আকীদা)। আমরা একদল লোক হজের উদ্দেশ্যে রওয়ানা করলাম। ইচ্ছা ছিলো, হজ শেষে উল্লিখিত আকীদা প্রচার করে বেড়াবো। আমরা মদীনায় পৌঁছেই দেখলাম জাবির ইবন আব্দুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু  একটি খুঁটির সাথে হেলান দিয়ে বসে লোকদেরকে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাদীস শুনাচ্ছেন। তিনি (বর্ণনাকারী ইয়াযীদ) বলেন, জাবির রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু তার বর্ণনায় জাহান্নামবাসীদের প্রসঙ্গও আলোচনা করলেন। তাকে বললাম, হে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথী! আপনারা কী ধরনের হাদীস বর্ণনা করছেন? অথচ আল্লাহ তা‘আলার বাণী: “হে আমাদের রব, নিশ্চয় তুমি যাকে আগুনে প্রবেশ করাবে, অবশ্যই তাকে তুমি অপমান করবে। আর যালিমদের জন্য কোনো সাহায্যকারী নেই”। [সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ১৯২] এবং আল্লাহর আরেকটি বাণী, “আর যারা পাপকাজ করে, তাদের বাসস্থান হবে আগুন; যখনই তারা তা থেকে বের হতে চাইবে, তাদেরকে তাতেই ফিরিয়ে দেয়া হবে এবং তাদেরকে বলা হবে, ‘তোমরা আগুনের আযাব আস্বাদন কর, যাকে তোমরা অস্বীকার করতে।”। [সূরা আস-সাজদাহ, আয়াত: ২০] আর আপনি এটা কী কথা বলছেন? জাবির রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বললেন, তুমি কি কুরআন তিলাওয়াত করো? আমি বললাম, হ্যাঁ, তিলাওয়াত করি। তিনি বললেন, তিমি কি মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মাকামে মাহমুদের কথা শুনেছ যেখানে আল্লাহ তাকে (কিয়ামাতের দিন) পৌঁছাবেন? আমি  বললাম, হ্যাঁ, শুনেছি। তিনি বললেন মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মাকামে মাহমূদ হচ্ছে সে স্থান ও মর্যাদা, যার মাধ্যমে আল্লাহ যাকে ইচ্ছা জাহান্নাম থেকে বের করে আনবেন। ইয়াযীদ বলেন, অতঃপর তিনি (জাবির রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু) পুলসিরাত সংস্থাপনের বিবরণ ও তার উপর দিয়ে মানুষের গমনাগমনের বর্ণনা দেন। তিনি (ইয়াযীদ) বলেন, আমার ভয় হচ্ছে যে, হয়ত আমি সেটা যথাযথ সংরক্ষণ করতে পারি নি। তবে তিনি বলেছেন, কিছু সংখ্যক লোক, যাদেরকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হয়েছিল পরে তাদেরকে ওখান থেকে এমন অবস্থায় বের করে আনা হবে যেনো তারা আম্বুস কাঠ। অর্থাৎ তারা জ্বলে-পুড়ে অঙ্গার হয়ে বের হবে। তিনি বলেন, অতঃপর তাদেরকে জান্নাতের কোনো নহরে প্রবেশ করা হবে, তারপর তারা তাতে গোসল করবে, ফলে তারা সেখান থেকে ধবধবে সাদা কাগজের ন্যায় হয়ে বের হবে। ইয়াযীদুল ফকীর রহ. বলেন, আমরা সেখান থেকে ফিরে আসলাম এবং বললাম, তোমরা (খারেজীরা) ধ্বংস হও। তোমরা কী মনে করো এ বৃদ্ধ (বুযর্গ) লোকটি (অর্থাৎ জাবির ইবন আব্দুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু) রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওপর মিথ্যা আরোপ করতে পারেন? অতঃপর আমরা হজ সমাপন করে বাড়ি ফিরে আসলাম; কিন্তু আমাদের মধ্য থেকে শুধুমাত্র এক ব্যক্তি ছাড়া সবাই আমাদের পূর্ব আকীদা (খারেজী মতবাদ) পরিত্যাগ করলাম। অথবা আবু নু‘আইম যেরূপ বর্ণনা করেছেন”।
সহীহ, সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৯১/৩২০।
হাদীসে উল্লিখিত শব্দ «شَغَفَنِي» খারেজীদের একটি কথা আমার অন্তরে বদ্ধমূল হয়ে গিয়েছিল। (কবীরা গুণাহকারীরা চিরস্থায়ী জাহান্নামী। আর যে একবার জাহান্নামে যাবে সে আর কখনো তা থেকে বের হতে পারবে না।
হাদীসে উল্লিখিত আরেকটি শব্দ, ««ثُمَّ نَخْرُجَ عَلَى النَّاس ইচ্ছা ছিলো, হজ শেষে খারেজী মাযহাব প্রচার করে বেড়াবো।
হাদীসে উল্লিখিত শব্দ   «كَأَنَّهُمْ عِيدَانُ السَّمَاسِمِ» এটি سمسم শব্দের বহুবচন। যেনো তারা তিলের তেলের গাছ যখন তা শুকানো হয় কেউ কেউ বলেছেন, এটির অর্থ জ্বলে-পুড়ে যাওয়া কালো কাঠ।
হাদীসে উল্লিখিত আরেকটি শব্দ «َأَنَّهُمُ الْقَرَاطِيسُ» এটি قرطاس এর বহুবচন। এর অর্থ সাদা খাতা যাতে লেখা হয়। তাদেরকে সাদা কাগজের সাথে তুলনা করা হয়েছে, কেননা তাদের কালো চেহারা ধুয়ে মুছে এমনভাবে পরিস্কার করা হবে যেনো ধবধবে সাদা কাগজ। ইমাম নাওয়াওয়ী রহ. এ মত ব্যক্ত করেছেন।
« فَرَجَعْنَا فَلَا وَاللهِ مَا خَرَجَ مِنَّا غَيْرُ رَجُلٍ وَاحِدٍ» অতঃপর আমরা হজ সমাপন করে বাড়ি ফিরে আসলাম; কিন্তু আমাদের মধ্য থেকে শুধুমাত্র এক ব্যক্তি ছাড়া সবাই আমাদের পূর্ব আকীদা (খারেজী মতবাদ) পরিত্যাগ করলাম।
   
عَنْ جَابِرٍ، قَالَ: أَتَى النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ رَجُلٌ فَقَالَ: يَا رَسُولَ اللهِ، مَا الْمُوجِبَتَانِ؟ فَقَالَ: «مَنْ مَاتَ لَا يُشْرِكُ بِاللهِ شَيْئًا دَخَلَ الْجَنَّةَ، وَمَنْ مَاتَ يُشْرِكُ بِاللهِ شَيْئًا دَخَلَ النَّارَ».
জাবির রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে এসে বললো, ইয়া রাসূলাল্লাহ্‌! ওয়াজিবকারী (অবশ্যম্ভাবী) দুটি বিষয় কী? তিনি বললেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে কোনো কিছু শরীক না করা অবস্থায় মারা যাবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। আর যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে কোনো কিছু শরীক করা অবস্থায় মারা যাবে সে জাহান্নামে যাবে।
সহীহ, সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৯৩।
عَنْ جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ، قَالَ: بَعَثَنِي رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَقَالَ:  «نَادِ فِي النَّاسِ: مَنْ قَالَ: لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ دَخَلَ الْجَنَّةَ». فَخَرَجَ فَلَقِيَهُ عُمَرُ فِي الطَّرِيقِ، فَقَالَ: أَيْنَ تُرِيدُ؟ قُلْتُ: بَعَثَنِي رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِكَذَا وَكَذَا، قَالَ: ارْجِعْ، فَأَبَيْتُ، فَلَهَزَنِي لَهْزَةً فِي صَدْرِي أَلَمُهَا، فَرَجَعْتُ وَلَمْ أَجِدْ بُدًّا، قَالَ: يَا رَسُولَ اللَّهِ، بَعَثْتَ هَذَا بِكَذَا وَكَذَا؟ قَالَ: «نَعَمْ»، قَالَ: يَا رَسُولَ اللَّهِ، إِنَّ النَّاسَ قَدْ طَمِعُوا وَخَشُوا، فَقَالَ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «اقْعُدْ».
জাবির ইবন আব্দুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে মানুষের মধ্যে এ ঘোষণা দিয়ে পাঠালেন যে, “যে ব্যক্তি লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ (আল্লাহ ব্যতীত সত্য কোনো ইলাহ নেই) বলবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। ফলে তিনি এ ঘোষণা দিতে বের হলেন। পথিমধ্যে উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর সাথে সাক্ষাৎ হলো। তিনি (উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু) জিজ্ঞেস করলেন, কোথায় যাচ্ছ? আমি বললাম, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে এরূপ এরূপ ঘোষণা দিতে পাঠিয়েছেন। তিনি বললেন, তুমি ফিরে যাও। আমি অস্বীকার করলাম। ফলে তিনি আমাকে বুকে থাপ্পড় দিলেন। যার ব্যথা আমার বুকে রয়েছে। অতঃপর আমি ফিরে আসি; আমার কোনো উপায় ছিল না উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে গিয়ে বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আপনি কি তাকে এরূপ ঘোষণা দিতে পাঠিয়েছেন? রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হ্যাঁ। তখন উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! (আপনি এরূপ করবেন না) মানুষ আশাবাদী এবং ভীত অবস্থায় থাকুক। তখন রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (আমাকে) বললেন, তাহলে তুমি বসে পড় (একথার ঘোষণা দিও না)”।
হাসান, ইবন খুযাইমা, হাদীস নং ৬৯৩; ইবন হিব্বান, হাদীস নং ১৫১।  
عَنْ عَبْد اللَّهِ بْنَ عَمْرِو بْنِ العَاصِ، يَقُولُ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: " إِنَّ اللَّهَ سَيُخَلِّصُ رَجُلًا مِنْ أُمَّتِي عَلَى رُءُوسِ الخَلَائِقِ يَوْمَ القِيَامَةِ فَيَنْشُرُ عَلَيْهِ تِسْعَةً وَتِسْعِينَ سِجِلًّا كُلُّ سِجِلٍّ مِثْلُ مَدِّ البَصَرِ، ثُمَّ يَقُولُ: أَتُنْكِرُ مِنْ هَذَا شَيْئًا؟ أَظَلَمَكَ كَتَبَتِي الحَافِظُونَ؟ فَيَقُولُ: لَا يَا رَبِّ، فَيَقُولُ: أَفَلَكَ عُذْرٌ؟ فَيَقُولُ: لَا يَا رَبِّ، فَيَقُولُ: بَلَى إِنَّ لَكَ عِنْدَنَا حَسَنَةً، فَإِنَّهُ لَا ظُلْمَ عَلَيْكَ اليَوْمَ، فَتَخْرُجُ بِطَاقَةٌ فِيهَا: أَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَأَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُولُهُ، فَيَقُولُ: احْضُرْ وَزْنَكَ، فَيَقُولُ: يَا رَبِّ مَا هَذِهِ البِطَاقَةُ مَعَ هَذِهِ السِّجِلَّاتِ، فَقَالَ: إِنَّكَ لَا تُظْلَمُ "، قَالَ: «فَتُوضَعُ السِّجِلَّاتُ فِي كَفَّةٍ وَالبِطَاقَةُ فِي كَفَّةٍ، فَطَاشَتِ السِّجِلَّاتُ وَثَقُلَتِ البِطَاقَةُ، فَلَا يَثْقُلُ مَعَ اسْمِ اللَّهِ شَيْءٌ».
‘আব্দুল্লাহ ইবন ‘আমর ইবন ‘আস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, “আল্লাহ তা‘আলা কিয়ামতের দিন আমার উম্মতের এক ব্যক্তিকে সমস্ত সৃষ্টির সম্মুখে  আলাদা করে এনে হাযির করবেন। তার সামনে নিরানব্বইটি (আমলের) নিবন্ধন খাতা খুলে দিবেন। এক একটি নিবন্ধন খাতা হবে যতোদূর দৃষ্টি যায় ততোদূর পর্যন্ত বিস্তৃত। এরপর তিনি তাকে বললেন, এর একটি কিছুও কি অস্বীকার করতে পারো? আমার সংরক্ষণকারী লিপিকারগণ (কিরামান কাতিবীন) কি তোমার ওপর কোনো যুলুম করেছে? লোকটি বলবে, না, হে আমার রব। আল্লাহ তা‘আলা বলবেন, তোমার কিছু বলার মত ওযর আছে কি?  লোকটি বলবে, না, হে আমার রব। তিনি বলবেন, হ্যাঁ, আমার কাছে তোমার একটি সাওয়াব আছে। আজ তো তোমার ওপর কোনো যুলুম হবে না। তখন একটি ছোট কাগজের টুকরা বের করা হবে। এতে আছে ‘আশহাদু আন-লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াআশহাদু আন্না মুহাম্মাদান আব্দুহু ওয়ারাসূলুহু’ (আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ব্যতীত কোনো সত্য ইলাহ নেই। আল্লাহ ছাড়া আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার বান্দা ও রাসূল)। আল্লাহ তা‘আলা বলবেন, চলো, তোমার এ বস্তুর ওযনের সম্মুখে হাযির হও। লোকটি বলবে, ওহে আমার রব! এই একটি ছোট টুকরা আর এতোগুলো নিবন্ধন খাতা। কোথায় কী? তিনি বলবেন, তোমার ওপর অবশ্যই কোনো যুলুম করা হবে না। অনন্তর সবগুলো নিবন্ধন খাতা এক পাল্লায় রাখা হবে আর ছোট সেই টুকরাটিকে আরেক পাল্লায় রাখা হবে। (আল্লাহর কী মহিমা) সবগুলো দপ্তর (ওজনে) হালকা হয়ে যাবে আর ছোট টুকরাটিই হয়ে পড়বে ভারি। আল্লাহর নামের মুকাবেলায় কোনো জিনিসই ভারি হবে না”।
সহীহ, তিরমিযী, হাদীস নং ২৬৩৯, হাদীসের শব্দ তিরমিযীর চয়নকৃত। ইবন মাজাহ, হাদীস নং ৪৩০০; আমহমদ, হাদীস নং ৬৯৯৪; ইবন হিব্বান, হাদীস নং ২২৫, তিনি হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন।
রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বাণী, «فَطَاشَتِ السِّجِلَّاتُ»  অর্থ হালকা হলো, البِطَاقَةُ মানে ছোট কাগজের টুকরা। السِّجِلَّاتُ  শব্দটি سجل এর বহুবচন। অর্থ বড় দফতর, বড় খাতা। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বাণী, «مَنْ قَالَ: لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ دَخَلَ الْجَنَّةَ» এর অর্থ হলো, যে ব্যক্তি মুহাম্মাদ রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নবুয়াতের উপর ঈমান এনে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলেছে; যদিও সে শেষ মুহূর্তে মুখে উচ্চারণ করতে পারে নি। কিন্তু কাফির মুখে লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ বললেও জান্নাতে যাবে না। কেননা সে জীবদ্দশায় মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নবুওয়াতকে অস্বীকার করছে। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আরেকটি বাণী এ কথার প্রমাণ, তিনি বলেছেন, لَوْ كَانَ مُوسَى حَيًّا مَا وَسِعَهُ إِلَّا أَنْ يَتَّبِعَنِي ‘যদি মূসা আলাইহিস সালাম জীবিত থাকতেন তাহলে আমাকে অনুসরণ করা ছাড়া তাঁর কোনো গতি থাকতো না’, অর্থাৎ তিনি শুধু লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ বললেই তাঁর ঈমান গ্রহণ করা হতো না, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর ঈমান আনা তাঁর জন্য অত্যাবশ্যকীয় ছিলো।  
    
১১- পরিচ্ছেদ: কিছু মানুষের অন্তর থেকে আমানত ও ঈমান উঠে যাওয়া
عن حُذَيْفَة بن اليمان، قَالَ: حَدَّثَنَا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ حَدِيثَيْنِ، رَأَيْتُ أَحَدَهُمَا وَأَنَا أَنْتَظِرُ الآخَرَ: حَدَّثَنَا: «أَنَّ الأَمَانَةَ نَزَلَتْ فِي جَذْرِ قُلُوبِ الرِّجَالِ، ثُمَّ عَلِمُوا مِنَ القُرْآنِ، ثُمَّ عَلِمُوا مِنَ السُّنَّةِ»
وَحَدَّثَنَا عَنْ رَفْعِهَا قَالَ: «يَنَامُ الرَّجُلُ النَّوْمَةَ، فَتُقْبَضُ الأَمَانَةُ مِنْ قَلْبِهِ، فَيَظَلُّ أَثَرُهَا مِثْلَ أَثَرِ الوَكْتِ، ثُمَّ يَنَامُ النَّوْمَةَ فَتُقْبَضُ فَيَبْقَى أَثَرُهَا مِثْلَ المَجْلِ، كَجَمْرٍ دَحْرَجْتَهُ عَلَى رِجْلِكَ فَنَفِطَ، فَتَرَاهُ مُنْتَبِرًا وَلَيْسَ فِيهِ شَيْءٌ، فَيُصْبِحُ النَّاسُ يَتَبَايَعُونَ، فَلاَ يَكَادُ أَحَدٌ يُؤَدِّي الأَمَانَةَ، فَيُقَالُ: إِنَّ فِي بَنِي فُلاَنٍ رَجُلًا أَمِينًا، وَيُقَالُ لِلرَّجُلِ: مَا أَعْقَلَهُ وَمَا أَظْرَفَهُ وَمَا أَجْلَدَهُ، وَمَا فِي قَلْبِهِ مِثْقَالُ حَبَّةِ خَرْدَلٍ مِنْ إِيمَانٍ».
«وَلَقَدْ أَتَى عَلَيَّ زَمَانٌ وَمَا أُبَالِي أَيَّكُمْ بَايَعْتُ، لَئِنْ كَانَ مُسْلِمًا رَدَّهُ عَلَيَّ الإِسْلاَمُ، وَإِنْ كَانَ نَصْرَانِيًّا رَدَّهُ عَلَيَّ سَاعِيهِ، فَأَمَّا اليَوْمَ: فَمَا كُنْتُ أُبَايِعُ إِلَّا فُلاَنًا وَفُلاَنًا».
‏‏قَالَ الْفِرَبْرِيُّ قَالَ أَبُو جَعْفَرٍ حَدَّثْتُ أَبَا عَبْدِ اللَّهِ فَقَالَ سَمِعْتُ أَحْمَدَ بْنَ عَاصِمٍ يَقُولُ سَمِعْتُ أَبَا عُبَيْدٍ يَقُولُ قَالَ الأَصْمَعِيُّ وَأَبُو عَمْرٍو وَغَيْرُهُمَا جَذْرُ قُلُوبِ الرِّجَالِ الْجَذْرُ الأَصْلُ مِنْ كُلِّ شَىْءٍ، وَالْوَكْتُ أَثَرُ الشَّىْءِ الْيَسِيرُ مِنْهُ، وَالْمَجْلُ أَثَرُ الْعَمَلِ فِي الْكَفِّ إِذَا غَلُظَ‏.
হুযায়ফা ইবনুল ইয়ামান রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের কাছে দু’টি হাদীস বর্ণনা করেছেন। একটি তো আমি প্রত্যক্ষ করেছি এবং দ্বিতীয়টির জন্য অপেক্ষা করছি। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আমাদের কাছে বর্ণনা করেছেন যে, “আমানত মানুষের অন্তর্মূলে নাযিল করা হয়েছিল। তারপর তারা কুরআন থেকে জ্ঞান অর্জন করেছে, এরপর তারা নবীর সুন্নাহ থেকে জ্ঞান অর্জন করেছে”।
আবার রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বর্ণনা করেছেন আমানত তুলে নেওয়া সম্পর্কে, “ব্যক্তিটি (ঈমানদার) এক পর্যায়ে ঘুমানোর পর তার অন্তর থেকে আমানত তুলে নেওয়া হবে, তখন তার সামান্যতম চিহ্ন অবশিষ্ট থাকবে। পুনরায় ঘুমাবে, তখন আবার উঠিয়ে নেওয়া হবে। অতঃপর তার চিহ্ন ফোস্কার মত অবশিষ্ট থাকবে। তা তখন তেমন হবে যেমন কোনো অঙ্গার যাকে তুমি পা দিয়ে মাড়িয়ে মিইয়ে দিলে, যেটিকে তুমি ফোলা মনে করবে, অথচ তার মধ্যে আদৌ কিছু নেই। ফলে মানুষ কারবার করবে বটে, কেউ আমানত আদায় করবে না। অতঃপর লোকেরা বলাবলি করবে যে, অমুক বংশে একজন আমানতদার লোক রয়েছে। আবার কোনো ব্যক্তি সম্পর্কে মন্তব্য করা হবে যে, সে কতোই না বুদ্ধিমান, কতই না বিচক্ষণ, কতই না বাহাদুর? অথচ তার অন্তরে সরিষার দানা পরিমান ঈমানও থাকবে না।
(হুযাইফা রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন) আমার ওপর এমন এক কাল অতিবাহিত হয়েছে যে, আমি তোমাদের কার সাথে বেচা-কেনা করলাম, সেদিকে ভ্রুক্ষেপ করতাম না। কারণ সে মুসলমান হলে ইসলামই আমার হক ফিরিয়ে দেবে। আর সে খৃস্টান হলে তার শাসকই আমার হক ফিরিয়ে দিবে; অথচ বর্তমানে আমি অমুক অমুককে ছাড়া অন্য কারও সাথে বেচা-কেনা করি না”।
মুত্তাফাকুন ‘আলাইহি, সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৬৪৯৭; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৪৩, হাদীসের শব্দ বুখারীর চয়নকৃত।
ফেরাবরী বলেন, আবু জাফর রহ. বলেছেন, আমি এ হাদীস আবু আব্দুল্লাহর কাছে বর্ণনা করি। তিনি বলেন, আমি আবু আহমদ ইবন আসেম থেকে শুনেছি, তিনি বলেছেন, আমি আবু উবাইদ থেকে শুনেছি, তিনি বলেছেন, আসমা‘ঈ, আবু ‘আমর ও অন্যরা বলেছেন, «جَذْرِ قُلُوبِ الرِّجَالِ» এখানে الجذر অর্থ কোনো কিছুর মূল। «الوكتُ» কোনো কিছুর সামান্যতম চিহ্ন আর «المجل» অর্থ ফোস্কার মতো চিহ্ন।
«بايعت» বেচা-কেনা করা। এখানে খিলাফতের ওপর বায়‘আত গ্রহণ করা নয়। « مُنْتَبِرًا» উচু স্থান। যেমন মিম্বার, এটি উচু হওয়ার কারণে এবং খতীব এতে আরোহণ করার কারণে মিম্বার বলে। «فنفط» দুর্বল হওয়া, যেমন বলা হয়, চামড়া ও মাংসের মাঝখানে পানি জমে গেছে, অর্থাৎ দুর্বল হয়ে গেছে।

১২- পরিচ্ছেদ: মুমিন ব্যতীত কেউ জান্নাতে প্রবেশ করবে না, আল্লাহ (কখনো কখনো) পাপীলোক দ্বারা এ দীনের সহযোগিতা করেন
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، قَالَ: شَهِدْنَا مَعَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ خيبر، فَقَالَ لِرَجُلٍ مِمَّنْ يَدَّعِي الإِسْلاَمَ: «هَذَا مِنْ أَهْلِ النَّارِ»، فَلَمَّا حَضَرَ القِتَالُ قَاتَلَ الرَّجُلُ قِتَالًا شَدِيدًا فَأَصَابَتْهُ جِرَاحَةٌ، فَقِيلَ: يَا رَسُولَ اللَّهِ، الَّذِي قُلْتَ لَهُ إِنَّهُ مِنْ أَهْلِ النَّارِ، فَإِنَّهُ قَدْ قَاتَلَ اليَوْمَ قِتَالًا شَدِيدًا وَقَدْ مَاتَ، فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِلَى النَّارِ»، قَالَ: فَكَادَ بَعْضُ النَّاسِ أَنْ يَرْتَابَ، فَبَيْنَمَا هُمْ عَلَى ذَلِكَ، إِذْ قِيلَ: إِنَّهُ لَمْ يَمُتْ، وَلَكِنَّ بِهِ جِرَاحًا شَدِيدًا، فَلَمَّا كَانَ مِنَ اللَّيْلِ لَمْ يَصْبِرْ عَلَى الجِرَاحِ فَقَتَلَ نَفْسَهُ، فَأُخْبِرَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِذَلِكَ، فَقَالَ: «اللَّهُ أَكْبَرُ، أَشْهَدُ أَنِّي عَبْدُ اللَّهِ وَرَسُولُهُ»، ثُمَّ أَمَرَ بِلاَلًا فَنَادَى بِالنَّاسِ: «إِنَّهُ لاَ يَدْخُلُ الجَنَّةَ إِلَّا نَفْسٌ مُسْلِمَةٌ، وَإِنَّ اللَّهَ لَيُؤَيِّدُ هَذَا الدِّينَ بِالرَّجُلِ الفَاجِرِ»
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, “আমরা রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে খাইবার যুদ্ধে উপস্থিত ছিলাম। তখন তিনি ইসলামের দাবিদার এক ব্যক্তিকে লক্ষ্য করে বললেন, এ ব্যক্তি জাহান্নামী অথচ যখন যুদ্ধ শুরু হলো তখন সে লোকটি ভীষণ যুদ্ধ করল এবং আহত হলো। তখন বলা হল, ইয়া রাসূলুল্লাহ্‌! যে লোকটি সম্পর্কে আপনি বলেছিলেন, সে লোকটি জাহান্নামী, আজ সে ভীষণ যুদ্ধ করেছে এবং মারা গেছে। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, সে জাহান্নামে গেছে। বর্ণনাকারী বলেন, একথার ওপর কারো কারো অন্তরে এ বিষয়ে সন্দেহ সৃষ্টির হয় এবং এ সম্পর্কিত কথাবার্তায় ছিলেন। এসময় সংবাদ এলো যে, লোকটি মরে যায় নি বরং মারাত্মকভাবে আহত হয়েছে। যখন রাত্রি হলো, সে আঘাতের কষ্টে ধৈর্যধারণ করতে পারল না এবং আত্মহত্যা করল। তখন রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট এ সংবাদ পৌঁছানো হলো। তিনি বলে উঠলেন, আল্লাহ আকবার! আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আমি অবশ্যই আল্লাহ তা‘আলার বান্দা এবং তাঁর রাসূল। এরপর রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিলাল রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুকে আদেশ করলেন, তিনি যেনো লোকদের মধ্যে ঘোষণা দেন যে, মুসলিম ব্যতীত কেউ জান্নাতে প্রবেশ করবে না। আর আল্লাহ তা‘আলা (কখনো কখনো) এই দীনকে মন্দ (পাপী) লোকের দ্বারা সাহায্য করেন”।
মুত্তাফাকুন ‘আলাইহি, সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৩০৬২; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১১১।
عَنْ عُمَر بْن الْخَطَّابِ، قَالَ: لَمَّا كَانَ يَوْمُ خَيْبَرَ، أَقْبَلَ نَفَرٌ مِنْ صَحَابَةِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَقَالُوا: فُلَانٌ شَهِيدٌ، فُلَانٌ شَهِيدٌ، حَتَّى مَرُّوا عَلَى رَجُلٍ، فَقَالُوا: فُلَانٌ شَهِيدٌ، فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «كَلَّا، إِنِّي رَأَيْتُهُ فِي النَّارِ فِي بُرْدَةٍ غَلَّهَا - أَوْ عَبَاءَةٍ -» ثُمَّ قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «يَا ابْنَ الْخَطَّابِ، اذْهَبْ فَنَادِ فِي النَّاسِ، أَنَّهُ لَا يَدْخُلُ الْجَنَّةَ إِلَّا الْمُؤْمِنُونَ»، قَالَ: فَخَرَجْتُ فَنَادَيْتُ: أَلَا إِنَّهُ لَا يَدْخُلُ الْجَنَّةَ إِلَّا الْمُؤْمِنُونَ.
উমার ইবন খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, খাইবারের দিন একদল সাহাবী রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে এসে বললেন, অমুক শহীদ হয়েছেন। অমুক শহীদ হয়েছেন। এভাবে কথাবার্তা চলছিলো; অবশেষে এক ব্যক্তি প্রসঙ্গে তারা বললেন যে, সেও শহীদ হয়েছে। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন,  কখনই না।  আমি তাকে চাদর বা জোব্বার আত্মসাতের কারণে জাহান্নামে দেখেছি, (যা সে ব্যক্তি গনীমতের মাল থেকে আত্মসাৎ করেছিল)। তারপর রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হে খাত্তাবের পুত্র! যাও লোকদের মাঝে ঘোষণা করে দাও যে, জান্নাতে কেবলমাত্র মুমিন ব্যক্তিরাই প্রবেশ করবে। উমার ইবন খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, তারপর আমি বের হলাম এবং ঘোষণা করে দিলাম, সাবধান! শুধু মুমিনরাই জান্নাতে প্রবেশ করবে”।
সহীহ, সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১১৪।
عَنْ بِشْرِ بْنِ سُحَيْمٍ: أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَمَرَهُ أَنْ يُنَادِيَ أَيَّامَ التَّشْرِيقِ: «أَنَّهُ لَا يَدْخُلُ الْجَنَّةَ إِلَّا مُؤْمِنٌ، وَهِيَ أَيَّامُ أَكْلٍ وَشُرْبٍ».
বিশর ইবন সুহাইম রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে আইয়্যামে তাশরীকে এই কথা ঘোষণা করতে বললেন যে, “জান্নাতে শুধু মুমিনই প্রবেশ করবে। আর আইয়্যামে তাশরীকের দিনগুলো হচ্ছে পানাহারের”।
সহীহ, নাসায়ী, হাদীস নং ৪৯৯৪; ইবন খুযাইমা, হাদীস নং ২৯৬০, তিনি সহীহ বলেছেন; ইবন মাজাহ, হাদীস নং ১৭২০। তবে ইবন মাজাহ এর বর্ণনায় এসেছে,
أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ خَطَبَ أَيَّامَ التَّشْرِيقِ فَقَالَ: «لَا يَدْخُلُ الْجَنَّةَ إِلَّا نَفْسٌ مُسْلِمَةٌ، وَإِنَّ هَذِهِ الْأَيَّامَ أَيَّامُ أَكْلٍ وَشُرْبٍ».
রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আইয়্যামে তাশরীকে খুতবা দিলেন, এতে তিনি বললেন, জান্নাতে শুধু মুসলিম ব্যক্তিই প্রবেশ করবে। আইয়্যামে তাশরীকের এ দিনগুলো হলো পানাহার করা দিনসমূহ”।
ইবন মাজাহ, হাদীস নং ১৭২০। ‬আলবানী রহ. হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন।

১৩- পরিচ্ছেদ: আল্লাহ তা‘আলা কাফিরদের জন্য জান্নাত হারাম করেছেন
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قَالَ: «يَلْقَى إِبْرَاهِيمُ أَبَاهُ آزَرَ يَوْمَ القِيَامَةِ، وَعَلَى وَجْهِ آزَرَ قَتَرَةٌ وَغَبَرَةٌ، فَيَقُولُ لَهُ إِبْرَاهِيمُ: أَلَمْ أَقُلْ لَكَ لاَ تَعْصِنِي، فَيَقُولُ أَبُوهُ: فَاليَوْمَ لاَ أَعْصِيكَ، فَيَقُولُ إِبْرَاهِيمُ: يَا رَبِّ إِنَّكَ وَعَدْتَنِي أَنْ لاَ تُخْزِيَنِي يَوْمَ يُبْعَثُونَ، فَأَيُّ خِزْيٍ أَخْزَى مِنْ أَبِي الأَبْعَدِ؟ فَيَقُولُ اللَّهُ تَعَالَى: " إِنِّي حَرَّمْتُ الجَنَّةَ عَلَى الكَافِرِينَ، ثُمَّ يُقَالُ: يَا إِبْرَاهِيمُ، مَا تَحْتَ رِجْلَيْكَ؟ فَيَنْظُرُ، فَإِذَا هُوَ بِذِيخٍ مُلْتَطِخٍ، فَيُؤْخَذُ بِقَوَائِمِهِ فَيُلْقَى فِي النَّارِ».
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “কিয়ামতের দিন ইবরাহীম আলাইহিস সালাম তাঁর পিতা আযরের দেখা পাবেন। আযরের মুখমণ্ডলে কালিমা এবং ধুলাবালি থাকবে। তখন ইবরাহীম আলাইহিস সালাম তাকে বলবেন, আমি কি পৃথিবীতে আপনাকে বলি নি যে, আমার অবাধ্য হবেন না? তখন তাঁর পিতা বলবে, আজ আর তোমার অবাধ্য হবো না। এরপর ইবরাহীম আলাইহিস সালাম (আল্লাহর কাছে) আবেদন করবেন, হে আমার রব! আপনি আমার সাথে ওয়াদা করেছিলেন যে, হাশরের দিন আপনি আমাকে লজ্জিত করবেন না। আমার পিতা রহমত থেকে বঞ্চিত হওয়ার থেকে অধিক অপমান আমার জন্য আর কি হতে পারে? তখন আল্লাহ বলবেন, আমি কাফিরদের জন্য জান্নাত হারাম করে দিয়েছি। পুনরায় বলা হবে, হে ইবরাহীম! তোমার পদতলে কী? তখন তিনি নিচের দিকে তাকাবেন। হঠাৎ দেখতে পাবেন তাঁর পিতার স্থানে সর্বশরীরে রক্তমাখা একটি জানোয়ার (হায়েনা) পড়ে রয়েছে। তখন এর চার পা ধরে জাহান্নামে ছুঁড়ে ফেলা হবে”।
সহীহ, সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৩৩৫০।
হাদীসে উল্লিখিত ذِيخ শব্দটির যাল বর্ণে কাসরা ও পরবর্তী ইয়া বর্ণে সাকিনযোগে অর্থ হায়েনার (হিংস্র প্রাণী) লিঙ্গ। হাফেয ইবন হাজার আসকালানী রহ. ফাতহুল বারী গ্রন্থে এ ব্যাখ্যা দিয়েছেন।  
عَنْ أَبِي سَعِيدٍ الْخُدْرِيِّ أَنّ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ: لَيَأْخُذَنَّ رَجُلٌ بِيَدِ أَبِيهِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ يُرِيدُ أَنْ يُدْخِلَهُ الْجَنَّةَ فَيُنَادَى إِنَّ الْجَنَّةَ لَا يَدْخُلُهَا مُشْرِكٌ إِنَّ اللَّهَ قَدْ حَرَّمَ الْجَنَّةَ عَلَى كُلِّ مُشْرِكٍ فَيَقُولُ أَيْ رَبِّ أَيْ رَبِّ أَبِي قَالَ: فَيَتَحَوَّلُ فِي صُورَةٍ قَبِيحَةٍ وَرِيحٍ مُنْتِنَةٍ فَيَتْرُكُهُ  قَالَ أَبُو سَعِيدٍ كَانَ أَصْحَابُ مُحَمَّدٍ صلى الله عليه وسلم يَرَوْنَ أَنَّهُ إِبْرَاهِيَمُ وَلَمْ يَزِدْهُمْ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم عَلَى ذَلِكَ.
আবু সাঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “কিয়ামতের দিন এক ব্যক্তি তার পিতার হাত ধরে জান্নাতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা করবেন। তখন ডাক দিয়ে বলা হবে যে, নিশ্চয়ই জান্নাতে কোনো মুশরিক প্রবেশ করবে না। আল্লাহ তা‘আলা সমস্ত মুশরিকের ওপর জান্নাত হারাম করেছেন। তখন তিনি বলবেন, হে রব! হে রব! ইনি তো আমার পিতা। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ফলে তার চেহারা কুৎসিত আকৃতি ও দুর্গন্ধযুক্ত করে দেওয়া হবে। তখন তিনি তার পিতাকে ছেড়ে দিবেন।
আবু সাঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহাবীরা মনে করেন, তিনি ইবরাহীম আলাহিস সালাম। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে এর চেয়ে বেশি কিছু বলেন নি”।
সহীহ, ইবন হিব্বান, হাদীস নং ২৫২ হাদীসের শব্দ ইবন হিব্বানের চয়নকৃত। বাযযার (কাশফুল আসতার), হাদীস নং ৯৪; হাকেম, হাদীস নং ৪/৫৮৭-৫৮৮।

১৪- পরিচ্ছেদ: অহংকার হতে সতর্কতা এবং অহংকার পরিপূর্ণ ঈমানের বিপরীত
عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ مَسْعُودٍ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «لَا يَدْخُلُ الْجَنَّةَ مَنْ كَانَ فِي قَلْبِهِ مِثْقَالُ ذَرَّةٍ مِنْ كِبْرٍ» قَالَ رَجُلٌ: إِنَّ الرَّجُلَ يُحِبُّ أَنْ يَكُونَ ثَوْبُهُ حَسَنًا وَنَعْلُهُ حَسَنَةً، قَالَ: «إِنَّ اللهَ جَمِيلٌ يُحِبُّ الْجَمَالَ، الْكِبْرُ بَطَرُ الْحَقِّ، وَغَمْطُ النَّاسِ»
আব্দুল্লাহ ইবন মাসঊদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “যার অন্তরে অনু পরিমাণ অহংকার থাকবে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে না। এক ব্যক্তি জিজ্ঞেস করল, মানুষ চায় যে, তার পোশাক সুন্দর হোক, তার জুতা সুন্দর হোক, এও কি অহংকার? রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আল্লাহ সুন্দর, তিনি সুন্দরকে ভালোবাসেন। অহমিকা হচ্ছে দম্ভভরে সত্য ও ন্যায় অস্বীকার করা এবং মানুষকে ঘৃণা করা”।
সহীহ, সহীহ, সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৯১।

১৫- পরিচ্ছেদ: আল্লাহর রহমত ছাড়া কেউ জান্নাতে যেতে পারবে না
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «لَنْ يُنَجِّيَ أَحَدًا مِنْكُمْ عَمَلُهُ» قَالُوا: وَلاَ أَنْتَ يَا رَسُولَ اللَّهِ؟ قَالَ: «وَلاَ أَنَا، إِلَّا أَنْ يَتَغَمَّدَنِي اللَّهُ بِرَحْمَةٍ، سَدِّدُوا وَقَارِبُوا، وَاغْدُوا وَرُوحُوا، وَشَيْءٌ مِنَ الدُّلْجَةِ، وَالقَصْدَ القَصْدَ تَبْلُغُوا».
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “কস্মিনকালেও তোমাদের কাউকে নিজের আমল নাজাত দিতে পারবে না। তারা বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ্! আপনাকেও না? তিনি বললেন, আমাকেও না; যদি না আল্লাহ আমাকে তাঁর রহমত দিয়ে ঢেকে রাখেন। তোমরা যথারীতি আমল করো, কাছাকাছি হও, তোমরা সকালে, বিকালে ও রাতের শেষাংশে আল্লাহর কাজ করো, মধ্যম পন্থা অবলম্বন করো এবং মধ্যমপন্থাকে আঁকড়ে ধরো, অবশ্যই সফলকাম হবে”।
মুত্তাফাকুন ‘আলাইহি, সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৬৪৬৩; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৮১৬।

১৬- পরিচ্ছেদ: প্রতিবেশীকে কষ্ট দেওয়া থেকে ভীতিপ্রদর্শন এবং তা পূর্ণাঙ্গ ঈমানের পরিপন্থী  
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، أَنَّ رَسُولَ اللهِ صلَّى الله عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «لَا يَدْخُلُ الْجَنَّةَ مَنْ لَا يَأْمَنُ جَارُهُ بَوَائِقَهُ».
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “যে ব্যক্তির অনিষ্ট থেকে তার প্রতিবেশী নিরাপদ থাকে না, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে না”।
সহীহ, সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৪৬।
হাদীসে উল্লিখিত بَوَائِق শব্দটি بائقة এর বহুবচন। অর্থ শত্রুতা পোষণ, কষ্ট দেওয়া ও ধ্বংস করা।  
১৭- পরিচ্ছেদ: ঈমানের মিষ্টতা ও স্বাদ পাওয়া সম্পর্কে
عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «ثَلاَثٌ مَنْ كُنَّ فِيهِ وَجَدَ حَلاَوَةَ الإِيمَانِ: أَنْ يَكُونَ اللَّهُ وَرَسُولُهُ أَحَبَّ إِلَيْهِ مِمَّا سِوَاهُمَا، وَأَنْ يُحِبَّ المَرْءَ لاَ يُحِبُّهُ إِلَّا لِلَّهِ، وَأَنْ يَكْرَهَ أَنْ يَعُودَ فِي الكُفْرِ كَمَا يَكْرَهُ أَنْ يُقْذَفَ فِي النَّارِ».
আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “তিনটি গুণ যার মধ্যে থাকে, সে ঈমানের স্বাদ পায়। আল্লাহ ও তাঁর রাসূল তার কাছে অন্য সব কিছুর থেকে প্রিয় হওয়া; কাউকে একমাত্র আল্লাহর জন্যই ভালোবাসা এবং কুফুরীতে ফিরে যাওয়াকে আগুনে নিক্ষিপ্ত হওয়ার মত অপছন্দ করা”।
মুত্তাফাকুন ‘আলাইহি, সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৬; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৪৩।
 عَنِ الْعَبَّاسِ بْنِ عَبْدِ الْمُطَّلِبِ، أَنَّهُ سَمِعَ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، يَقُولُ: «ذَاقَ طَعْمَ الْإِيمَانِ مَنْ رَضِيَ بِاللهِ رَبًّا، وَبِالْإِسْلَامِ دِينًا، وَبِمُحَمَّدٍ رَسُولًا».
আব্বাস ইবন আব্দুল মুত্তালিব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছেন, “সে ব্যক্তি ঈমানের স্বাদ পেয়েছে যে আল্লাহকে রব হিসেবে, ইসলামকে দীন হিসাবে এবং মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে রাসূল হিসাবে সন্তুষ্টচিত্তে মেনে নিয়েছে”।
সহীহ, সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৩৪।
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قَالَ: «مَنْ أَحَبَّ أَنْ يَجِدَ طَعْمَ الْإِيمَانِ، فَلْيُحِبَّ الْمَرْءَ، لَا يُحِبُّهُ إِلَّا لِلَّهِ عَزَّ وَجَلَّ».
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “যে ব্যক্তি ঈমানের স্বাদ পেতে পছন্দ করে সে যেনো কাউকে একমাত্র মহান আল্লাহর উদ্দেশ্যেই ভালোবাসে”।
হাসান, মুসনাদ আহমদ, হাদীস নং ৭৯৬৭; বাযযার –কাশফুল আসতার, হাদীস নং ৬৩; হাকেম, হাদীস নং ১/৩-৪।

১৮- পরিচ্ছেদ: রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে ভালোবাসা ঈমানের অংশ
عَنْ أَنَس بن مالكٍ، قَالَ: قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ «لاَ يُؤْمِنُ أَحَدُكُمْ، حَتَّى أَكُونَ أَحَبَّ إِلَيْهِ مِنْ وَالِدِهِ وَوَلَدِهِ وَالنَّاسِ أَجْمَعِينَ».
আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “তোমাদের কেউ মুমিন হতে পারবে না, যতক্ষণ না আমি তার কাছে তার পিতা, সন্তান ও সমস্ত মানুষের চেয়ে বেশি প্রিয় হই”।
মুত্তাফাকুন ‘আলাইহি, সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৫; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৪৪।
সহীহ মুসলিমের বর্ণনায় এসেছে,
«حَتَّى أَكُونَ أَحَبَّ إِلَيْهِ مِنْ أهله وماله والناس أجمعين».
“তোমাদের কেউ প্রকৃত মুমিন হতে পারবে না, যতক্ষণ না আমি তার কাছে তার পরিবার-পরিজন, ধন-সম্পদ ও সকল মানুষের চেয়ে বেশি প্রিয় হই”।
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «فَوَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ، لاَ يُؤْمِنُ أَحَدُكُمْ حَتَّى أَكُونَ أَحَبَّ إِلَيْهِ مِنْ وَالِدِهِ وَوَلَدِهِ».
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “সেই পবিত্র সত্তার কসম, যাঁর হাতে আমার প্রাণ, তোমাদের কেউ প্রকৃত মুমিন হতে পারবে না, যতক্ষণ না আমি তার কাছে তার পিতা (মাতা) ও সন্তানের চেয়ে বেশি প্রিয় হই”।
সহীহ, সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৪।

১৯- পরিচ্ছেদ: যে ব্যক্তি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে ভালোবাসবে সে তাদের সাথে জান্নাতে থাকবে
عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ، أَنَّ أَعْرَابِيًّا، قَالَ لِرَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَتَى السَّاعَةُ؟ قَالَ لَهُ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَا أَعْدَدْتَ لَهَا؟» قَالَ: حُبَّ اللهِ وَرَسُولِهِ، قَالَ: «أَنْتَ مَعَ مَنْ أَحْبَبْتَ».
আনাস ইবন মালিক রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, “এক বেদুঈন রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞাসা করলো, কিয়ামত কবে সংঘটিত হবে? রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন, কিয়ামতের জন্য কী পাথেয় সঞ্চয় করেছ? সে বলল, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের ভালোবাসা। তিনি বললেন, তুমি তারই সঙ্গী হবে যাকে তুমি ভালোবাসো”।
মুত্তাফাকুন ‘আলাইহি, সহীহ মুসলিম, বাব: বিররু ওয়াসসিলাহ, হাদীস নং ২৬৩৯; সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৭১৫৩।
সহীহ মুসলিমে আনাস ইবন মালিক রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
قَالَ: بَيْنَمَا أَنَا وَالنَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ خَارِجَانِ مِنَ المَسْجِدِ، فَلَقِيَنَا رَجُلٌ عِنْدَ سُدَّةِ المَسْجِدِ، فَقَالَ: يَا رَسُولَ اللَّهِ، مَتَى السَّاعَةُ؟ قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَا أَعْدَدْتَ لَهَا؟»، فَكَأَنَّ الرَّجُلَ اسْتَكَانَ، ثُمَّ قَالَ: يَا رَسُولَ اللَّهِ، مَا أَعْدَدْتُ لَهَا كَبِيرَ صِيَامٍ، وَلاَ صَلاَةٍ، وَلاَ صَدَقَةٍ، وَلَكِنِّي أُحِبُّ اللَّهَ وَرَسُولَهُ، قَالَ: «أَنْتَ مَعَ مَنْ أَحْبَبْتَ».
“আমি এবং রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদে নববী থেকে বের হচ্ছিলাম। তখন মসজিদের দরজায় এক ব্যক্তিকে দেখতে পেলাম। সে বলল, ইয়া রাসূলাল্লাহ্! কিয়ামত কবে সংঘটিত হবে? রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তুমি কিয়ামতের জন্য কী পাথেয় সঞ্চয় করেছ? তখন লোকটি চুপ রইল। এরপর সে বলল, ইয়া রাসূলাল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আমি তো সে জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণ সালাত, সিয়াম ও সদাকা সঞ্চয় করি নি; তবে আমি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে ভালোবাসি। তিনি বললেন, তুমি তার সঙ্গেই থাকবে যাকে তুমি ভালোবাসো”।
সহীহ, মুসলিম, বাব: বিররু ওয়াসসিলাহ, হাদীস নং ২৬৩৯।

২০- পরিচ্ছেদ: নিজের জন্য যা পছন্দনীয় তা অন্য ভাইয়ের জন্যও পছন্দ করা ঈমানের বৈশিষ্ট্য
عَنْ أَنَس بن مالكٍ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «لاَ يُؤْمِنُ أَحَدُكُمْ، حَتَّى يُحِبَّ لِأَخِيهِ مَا يُحِبُّ لِنَفْسِهِ».
আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “তোমাদের কেউ প্রকৃত মুমিন হবে না, যতক্ষণ না সে তার ভাইয়ের জন্য তা-ই পছন্দ করবে, যা নিজের জন্য পছন্দ করে”।
মুত্তাফাকুন ‘আলাইহি, সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৩; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৪৫।
সহীহ মুসলিমে অন্য বর্ণনায় এসেছে,
«وَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ، لَا يُؤْمِنُ عَبْدٌ حَتَّى يُحِبَّ لِجَارِهِ - أَوْ قَالَ: لِأَخِيهِ - مَا يُحِبُّ لِنَفْسِهِ».
“সে সত্তার শপথ, যার হাতে আমার প্রাণ, কোনো বান্দা ততক্ষণ পর্যন্ত মুমিন হতে পারবে না, যতক্ষণ সে তার প্রতিবেশী -অন্য বর্ণনায় ভাই- এর জন্য তা পছন্দ করবে, যা সে নিজের জন্য পছন্দ করে”।
সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৪৫।
ইবন হিব্বানের বর্ণনায় এসেছে,
«لَا يَبْلُغُ عَبْدٌ حَقِيقَةَ الْإِيمَانِ حَتَّى يُحِبَّ لِلنَّاسِ مَا يُحِبُّ لنفسه من الخير».
“কোনো বান্দা প্রকৃত ঈমানের স্তরে পৌঁছতে পারবে না, যতক্ষণ সে নিজের জন্য যেসব কল্যাণকর জিনিস পছন্দ করে তা অন্য মানুষের জন্যও পছন্দ করবে”।
ইবন হিব্বান, হাদীস নং ২৩৫।

২১- পরিচ্ছেদ: অতিথির আপ্যায়ন ঈমানের পূর্ণতার অংশ
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَنْ كَانَ يُؤْمِنُ بِاللَّهِ وَاليَوْمِ الآخِرِ فَلاَ يُؤْذِ جَارَهُ، وَمَنْ كَانَ يُؤْمِنُ بِاللَّهِ وَاليَوْمِ الآخِرِ فَلْيُكْرِمْ ضَيْفَهُ، وَمَنْ كَانَ يُؤْمِنُ بِاللَّهِ وَاليَوْمِ الآخِرِ فَلْيَقُلْ خَيْرًا أَوْ لِيَصْمُتْ».
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “যে আল্লাহ ও শেষ দিনে ঈমান রাখে, সে যেন তার প্রতিবেশীকে কষ্ট না দেয়। যে ব্যক্তি আল্লাহ ও আখিরাতের দিনে ঈমান রাখে, সে যেন তার মেহমানকে সম্মান করে। আর যে লোক আল্লাহ ও শেষ দিনে ঈমান আনে, সে যেন ভালো কথা বলে অথবা চুপ করে থাকে”।
মুত্তাফাকুন ‘আলাইহি, সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৬০১৮; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৪৭। হাদীসের শব্দ বুখারীর চয়নকৃত।
সহীহ মুসলিমের বর্ণনায় এসেছে,
«فَلْيَقُلْ خَيْرًا أَوْ لِيسْكُتْ».
“সে যেন ভালো কথা বলে অথবা চুপ করে থাকে”।
عَنْ أَبِي شُرَيْحٍ العَدَوِيِّ، قَالَ: سَمِعَتْ أُذُنَايَ، وَأَبْصَرَتْ عَيْنَايَ، حِينَ تَكَلَّمَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ: «مَنْ كَانَ يُؤْمِنُ بِاللَّهِ وَاليَوْمِ الآخِرِ فَلْيُكْرِمْ جَارَهُ، وَمَنْ كَانَ يُؤْمِنُ بِاللَّهِ وَاليَوْمِ الآخِرِ فَلْيُكْرِمْ ضَيْفَهُ جَائِزَتَهُ» قَالَ: وَمَا جَائِزَتُهُ يَا رَسُولَ اللَّهِ؟ قَالَ: «يَوْمٌ وَلَيْلَةٌ، وَالضِّيَافَةُ ثَلاَثَةُ أَيَّامٍ، فَمَا كَانَ وَرَاءَ ذَلِكَ فَهُوَ صَدَقَةٌ عَلَيْهِ، وَمَنْ كَانَ يُؤْمِنُ بِاللَّهِ وَاليَوْمِ الآخِرِ فَلْيَقُلْ خَيْرًا أَوْ لِيَصْمُتْ».
আবু শুরাইহ আল-‘আদাওয়ী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন কথা বলেছিলেন, তখন আমার দু’কান সে কথা শুনছিলো ও আমার দুচোখ তাঁকে দেখছিলো। তিনি বলেছিলেন, “যে ব্যক্তি আল্লাহ ও শেষ দিনের ওপর বিশ্বাস রাখে, সে যেন তার প্রতিবেশীকে সম্মান করে। যে ব্যক্তি আল্লাহ ও শেষ দিনের ওপর বিশ্বাস করে সে যেন তার মেহমানকে সম্মান করে তার প্রাপ্যের ব্যাপারে। জিজ্ঞাসা করা হলো, ইয়া রাসূলাল্লাহ্! মেহমানের প্রাপ্য কী? তিনি বললেন, তিনি বললেন, একদিন একরাতে ভালোভাবে মেহমানদারী করা, আর তিন দিন হলো (সাধারণ) মেহমানদারী, আর তার চেয়েও বেশী হলে তাহলো তার প্রতি অনুগ্রহ। যে ব্যক্তি আল্লাহ ও আখিরাতের দিনের বিশ্বাস রাখে, সে যেন ভালো কথা বলে অথবা নীরব থাকে”।
মুত্তাফাকুন ‘আলাইহি, সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৬০১৯; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৪৮।

২২- পরিচ্ছেদ: অসৎ কাজ থেকে নিষেধ করা পূর্ণাঙ্গ ঈমানের অংশ  
عن أبي سعيد الخدري قال: سَمِعْتُ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: «مَنْ رَأَى مِنْكُمْ مُنْكَرًا فَلْيُغَيِّرْهُ بِيَدِهِ، فَإِنْ لَمْ يَسْتَطِعْ فَبِلِسَانِهِ، فَإِنْ لَمْ يَسْتَطِعْ فَبِقَلْبِهِ، وَذَلِكَ أَضْعَفُ الْإِيمَانِ».
আবু সা‘ঈদ আল-খুদরী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, “তোমাদের কেউ যদি অন্যায় কাজ দেখে, তাহলে সে যেন হাত দ্বারা এর সংশোধন (পরিবর্তন) করে দেয়। যদি এর ক্ষমতা না থাকে, তাহলে মুখের দ্বারা, যদি তাও সম্ভব না হয়, তাহলে অন্তর দ্বারা (উক্ত কাজকে ঘৃণা করবে ও পরিবর্তনের চেষ্টা করবে), আর এটাই ঈমানের নিম্নতম স্তর”।
সহীহ, সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৪৯।
সহীহ মুসলিমে হাদীসটি এভাবে শুরু হয়েছে,
«أَوَّلُ مَنْ بَدَأَ بِالْخُطْبَةِ يَوْمَ الْعِيدِ قَبْلَ الصَّلَاةِ مَرْوَانُ. فَقَامَ إِلَيْهِ رَجُلٌ، فَقَالَ: الصَّلَاةُ قَبْلَ الْخُطْبَةِ، فَقَالَ: قَدْ تُرِكَ مَا هُنَالِكَ، فَقَالَ أَبُو سَعِيدٍ: أَمَّا هَذَا فَقَدْ قَضَى مَا عَلَيْهِ، سَمِعْتُ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ:» فذكر الحديث.
“ঈদের সালাতের পূর্বে মারওয়ান ইবন হাকাম সর্বপ্রথম খুতবা প্রদান আরম্ভ করেন। তখন এক ব্যক্তি দাঁড়িয়ে বললেন, খুতবার আগে হবে সালাত। মারওয়ান বললেন, এ নিয়ম রহিত করা হয়েছে। এতে আবু সা‘ঈদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বললেন, ‘এ ব্যক্তি তো তার ওপরে থাকা কর্তব্য পালন করেছে’। আমি রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি” এ বলে হাদীস বর্ণনা শুরু করেন।
عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ مَسْعُودٍ، أَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «مَا مِنْ نَبِيٍّ بَعَثَهُ اللهُ فِي أُمَّةٍ قَبْلِي إِلَّا كَانَ لَهُ مِنْ أُمَّتِهِ حَوَارِيُّونَ، وَأَصْحَابٌ يَأْخُذُونَ بِسُنَّتِهِ وَيَقْتَدُونَ بِأَمْرِهِ، ثُمَّ إِنَّهَا تَخْلُفُ مِنْ بَعْدِهِمْ خُلُوفٌ يَقُولُونَ مَا لَا يَفْعَلُونَ، وَيَفْعَلُونَ مَا لَا يُؤْمَرُونَ، فَمَنْ جَاهَدَهُمْ بِيَدِهِ فَهُوَ مُؤْمِنٌ، وَمَنْ جَاهَدَهُمْ بِلِسَانِهِ فَهُوَ مُؤْمِنٌ، وَمَنْ جَاهَدَهُمْ بِقَلْبِهِ فَهُوَ مُؤْمِنٌ، وَلَيْسَ وَرَاءَ ذَلِكَ مِنَ الْإِيمَانِ حَبَّةُ خَرْدَلٍ».
আব্দুল্লাহ ইবন মাস‘ঊদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “আল্লাহ তা‘আলা আমার পূর্বে যখনই কোনো জাতির মাঝে নবী প্রেরণ করেছেন তখনই উম্মাতের মধ্যে তার এমন হাওয়ারী ও সাথী দিয়েছেন, যারা তার পদাংক অনুসরণ করে চলতেন ও তার নির্দেশ অক্ষরে অক্ষরে পালন করতেন। অনন্তর তাদের পরে এমন সব লোক তাদের স্থলাভিষিক্ত হয়েছে, যারা মুখে যা বলে বেড়াত কাজে তা পরিণত করত না, আর সেসব কর্ম সস্পাদন করত যেগুলোর জন্য তারা আদিষ্ট ছিল না। এদের বিরুদ্ধে যারা হাত দ্বারা জিহাদ করবে, তারা মুমিন; যারা এদের বিরুদ্ধে মুখের কথা দ্বারা জিহাদ করবে, তারাও মুমিন এবং যারা এদের বিরুদ্ধে অন্তরে (ঘৃণা পোষণ ও পরিবর্তনের চেষ্টা করার দ্বারা) জিহাদ করবে তারাও মুমিন। এর বাইরে সরিষার দানার পরিমাণও ঈমান নেই”।
সহীহ, সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৫০।

২৩- পরিচ্ছেদ: আনসারগণকে ভালোবাসা পূর্ণাঙ্গ ঈমানের অংশ
عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قَالَ: «آيَةُ الإِيمَانِ حُبُّ الأَنْصَارِ، وَآيَةُ النِّفَاقِ بُغْضُ الأَنْصَارِ».
আনাস ইবন মালেক রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “ঈমানের নিদর্শন হলো আনসারগণকে ভালোবাসা এবং মুনাফিকীর আলামত হলো আনসারদের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করা”।
মুত্তাফাকুন ‘আলাইহি, সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৭; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৭৪।
عَنْ البَرَاء بن عازب رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، قَالَ: سَمِعْتُ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قال: «الأَنْصَارُ لاَ يُحِبُّهُمْ إِلَّا مُؤْمِنٌ، وَلاَ يُبْغِضُهُمْ إِلَّا مُنَافِقٌ، فَمَنْ أَحَبَّهُمْ أَحَبَّهُ اللَّهُ، وَمَنْ أَبْغَضَهُمْ أَبْغَضَهُ اللَّهُ».
বারা ইবন ‘আযিব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, “মুমিন ছাড়া আনসারগণকে কেউ ভালোবাসবে না এবং মুনাফিক ছাড়া কেউ তাদের প্রতি ঘৃণা (বিদ্বেষ পোষণ) প্রকাশ করে না। যে ব্যক্তি তাদেরকে ভালোবাসবে আল্লাহ তাকে ভালোবাসবেন আর যে ব্যক্তি তাদের সাথে হিংসা-বিদ্বেষ পোষণ করবে আল্লাহ তাকে ঘৃণা (অপছন্দ) করবেন”।
মুত্তাফাকুন ‘আলাইহি, সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৩৭৮৩; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৭৫।
عَنْ أَبِي سَعِيدٍ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «لَا يُبْغِضُ الْأَنْصَارَ رَجُلٌ يُؤْمِنُ بِاللهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ».
আবু সাঈদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “যে ব্যক্তি আল্লাহ ও আখিরাতের প্রতি ঈমান রাখে, সে আনসারদের সাথে দুশমনী রাখতে পারে না”।
সহীহ, সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৭৭।
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ أَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «لَا يُبْغِضُ الْأَنْصَارَ رَجُلٌ يُؤْمِنُ بِاللهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ».
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “আল্লাহ ও আখিরাতের প্রতি বিশ্বাসী ব্যক্তি আনসারদের প্রতি হিংসা-বিদ্বেষ পোষণ করতে পারে না”।
সহীহ, সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৭৬।

২৪- পরিচ্ছেদ: লজ্জা ঈমানের অংশ
عَنْ ابن عمر، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَرَّ عَلَى رَجُلٍ، وَهُوَ يَعِظُ أَخَاهُ فِي الحَيَاءِ، فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «دَعْهُ فَإِنَّ الحَيَاءَ مِنَ الإِيمَانِ».
আব্দুল্লাহ ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, একদিন রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক ব্যক্তির পাশ দেয়ে যাচ্ছিলেন। তিনি তার ভাইকে তখন (অধিক) লজ্জার ব্যাপারে (তা ত্যাগের জন্য) নসীহত করছিলেন। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন, “ওকে ছেড়ে দাও। কারণ লজ্জা ঈমানের অঙ্গ”।
মুত্তাফাকুন ‘আলাইহি, মুয়াত্তা মালিক, হাদীস নং ১০; সহীহ বুখারী, হাদীস নং ২৪; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৩৬।
عَنْ عِمْرَان بْن حُصَيْنٍ، قَالَ: قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «الحَيَاءُ لاَ يَأْتِي إِلَّا بِخَيْرٍ».
‘ইমরান ইবন হুসাইন রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “লজ্জা শুধু কল্যাণই বয়ে আনে”।
মুত্তাফাকুন ‘আলাইহি, সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৬১১৭; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৩৭।
সহীহ মুসলিমের অন্য বর্ণনায় এসেছে,  
إنَّ أَبَا قَتَادَةَ حَدَّثَ، قَالَ: كُنَّا عِنْدَ عِمْرَانَ بْنِ حُصَيْنٍ فِي رَهْطٍ، وَفِينَا بُشَيْرُ بْنُ كَعْبٍ، فَحَدَّثَنَا عِمْرَانُ، يَوْمَئِذٍ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «الْحَيَاءُ خَيْرٌ كُلُّهُ» قَالَ: أَوْ قَالَ: «الْحَيَاءُ كُلُّهُ خَيْرٌ» فَقَالَ بُشَيْرُ بْنُ كَعْبٍ: إِنَّا لَنَجِدُ فِي بَعْضِ الْكُتُبِ - أَوِ الْحِكْمَةِ - أَنَّ مِنْهُ سَكِينَةً وَوَقَارًا لِلَّهِ، وَمِنْهُ ضَعْفٌ، قَالَ: فَغَضِبَ عِمْرَانُ حَتَّى احْمَرَّتَا عَيْنَاهُ، وَقَالَ: أَلَا أَرَى أُحَدِّثُكَ عَنْ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، وَتُعَارِضُ فِيهِ، قَالَ: فَأَعَادَ عِمْرَانُ الْحَدِيثَ، قَالَ: فَأَعَادَ بُشَيْرٌ، فَغَضِبَ عِمْرَانُ، قَالَ: فَمَا زِلْنَا نَقُولُ فِيهِ إِنَّهُ مِنَّا يَا أَبَا نُجَيْدٍ، إِنَّهُ لَا بَأْسَ بِهِ.
আবু কাতাদা রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা একদল ইমরান ইবন হুসাইন রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর কাছে উপস্থিত ছিলাম। আমাদের মাঝে বুশাইর ইবন কা‘বও ছিলেন। তখন ‘ইমরান রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু  আমাদের কাছে হাদীস বর্ণনা প্রসঙ্গে বললেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “লজ্জা মঙ্গলজনক সবটাই”। বর্ণনাকারী বলেন, কিংবা রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “লজ্জা সবটাই মঙ্গলজনক”। বুশাইর ইবন কা‘ব রহ. বলেন, কোনো কোনো কিতাবে বা হিকমতের গ্রন্থে আমরা পেয়েছি যে, লজ্জা থেকেই প্রশান্তি ও আল্লাহর জন্য সম্মান এবং তা থেকে দুর্বলতারও উৎপত্তি। বর্ণনাকারী বলেন, একথা শুনে ‘ইমরান রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু  রাগান্বিত হলেন, এমন কি তার দু চোখ লাল হয়ে গেলো। ‘ইমরান রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু  বলেন, সাবধান! আমি রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে হাদীস বর্ণনা করছি; পক্ষান্তরে তুমি তার মুকাবিলায় পুঁথির কথা পেশ করছ। এরপর ‘ইমরান রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু পুনরুক্তি করলেন। আর বুশাইরও তার কথার পুনরাবৃত্তি করলেন। এতে ‘ইমরান রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু  খুবই রাগান্বিত হলেন। বর্ণনাকারী বলেন, আমরা বলতে লাগলাম, হে আবু নুজায়দ! (ইমরান রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর উপনাম) সে আমাদেরই লোক। তার মধ্যে ত্রুটি নেই”।
সহীহ, সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৩৭।
عَنْ أَبِي سَعِيدٍ الخُدْرِيِّ، قَالَ: «كَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَشَدَّ حَيَاءً مِنَ العَذْرَاءِ فِي خِدْرِهَا، فَإِذَا رَأَى شَيْئًا يَكْرَهُهُ عَرَفْنَاهُ فِي وَجْهِهِ».
আবু সা‘ঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, “পর্দার ভেতরে কুমারীদের চেয়েও রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বেশি লাজুক ছিলেন। যখন তিনি তাঁর কাছে অপছন্দনীয় কিছু দেখতেন, তখন আমরা তাঁর চেহারাতেই এর আভাস পেয়ে যেতাম”।
মুত্তাফাকুন ‘আলাইহি, সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৬১০২; ২৩২০।
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «الحَيَاءُ مِنَ الإِيمَانِ، وَالإِيمَانُ فِي الجَنَّةِ، وَالبَذَاءُ مِنَ الجَفَاءِ، وَالجَفَاءُ فِي النَّارِ».
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “লজ্জা ঈমানের অঙ্গ; ঈমানের স্থান হল জান্নাতে। অশ্লীলতা হলো অবাধ্যতা ও অন্যায়াচারের অঙ্গ; অন্যায়াচারণের স্থান হল জাহান্নামে”।
সহীহ, তিরমিযী, হাদীস নং ২০০৯, তিনি হাদীসটিকে হাসান সহীহ বলেছেন। ইবন হিব্বান, হাদীস নং ৬০৮/৬০৯; হাকেম, হাদীস নং ১/৫২।
عَنِ ابْنِ عُمَرَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا، قَالَ: قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «الْحَيَاءُ وَالْإِيمَانُ قُرِنَا جَمِيعًا، فَإِذَا رُفِعَ أَحَدُهُمَا رُفِعَ الْآخَرُ».
ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “লজ্জা ও ঈমান একত্রে থাকে; এর কোনো একটি উঠে গেলে অপরটিও উঠে যায়”।
সহীহ, হাকেম, হাদীস নং ১/২২।

২৫- পরিচ্ছেদ: আলী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুকে ভালোবাসা পূর্ণাঙ্গ ঈমানের অংশ
عَنْ زِرّ بن حُبَيش، قَالَ: قَالَ عَلِيٌّ: وَالَّذِي فَلَقَ الْحَبَّةَ، وَبَرَأَ النَّسَمَةَ، إِنَّهُ لَعَهْدُ النَّبِيِّ الْأُمِّيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِلَيَّ: «أَنْ لَا يُحِبَّنِي إِلَّا مُؤْمِنٌ، وَلَا يُبْغِضَنِي إِلَّا مُنَافِقٌ».
যির ইবন হুবাইশ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, “আলী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেছেন, সে মহান সত্তার শপথ, যিনি বীজ থেকে অঙ্কুরোদগম করেন এবং মানবকুল বা আত্মা সৃষ্টি করেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন যে, মুমিন ব্যক্তিই আমাকে ভালোবাসবে আর মুনাফিক ব্যক্তি আমার সঙ্গে শত্রুতা পোষণ করবে”।
সহীহ, সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৭৮।
রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বাণী, فَلَقَ الْحَبَّةَ এর অর্থ বীজ থেকে অঙ্কুরোদগম হওয়া।
আর بَرَأَ النَّسَمَةَ এর অর্থ মানব সৃষ্টি। কেউ কেউ বলেছেন, মানবাত্মা সৃষ্টি করেছেন।

২৬- পরিচ্ছেদ: মুমিনদেরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করা  
عَنْ عَمْرو بْن العَاصِ، قَالَ: سَمِعْتُ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ جِهَارًا غَيْرَ سِرٍّ يَقُولُ: " إِنَّ آلَ أَبِي - قَالَ عَمْرٌو: فِي كِتَابِ مُحَمَّدِ بْنِ جَعْفَرٍ بَيَاضٌ - لَيْسُوا بِأَوْلِيَائِي، إِنَّمَا وَلِيِّيَ اللَّهُ وَصَالِحُ المُؤْمِنِينَ« .
আমর ইবন ‘আস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, “আমি রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে উচ্চ স্বরে বলতে শুনেছি, আস্তে নয়। তিনি বলেছেন, “অমুকের বংশ আমার ওলী বা বন্ধু নয়। ‘আমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, মুহাম্মাদ ইবন জা‘ফরের কিতাবে বংশের পরে জায়গা খালি রয়েছে (কোন বংশের নাম উল্লেখ নাই)। আমার ওলী বা বন্ধু তো কেবল আল্লাহ ও সৎ মুমিনগণ”।
মুত্তাফাকুন ‘আলাইহি, সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৫৯৯০; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২১৫।
হাদীসের মর্ম হলো, আমার বন্ধু হলো যারা সৎলোক; যদিও তাদের বংশ আমার বংশ থেকে আলাদা। আমার বংশের কাছাকাছি লোক হলেও অসৎ লোক আমার বন্ধু নয়।
 
২৭- পরিচ্ছেদ: ফিতনা থেকে পলায়ন পূর্ণাঙ্গ ঈমানের অংশ
عَنْ أَبِي سَعِيدٍ الخُدْرِيِّ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، أَنَّهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «يُوشِكُ أَنْ يَكُونَ خَيْرَ مَالِ المُسْلِمِ غَنَمٌ يَتْبَعُ بِهَا شَعَفَ الجِبَالِ وَمَوَاقِعَ القَطْرِ، يَفِرُّ بِدِينِهِ مِنَ الفِتَنِ».
আবু সা’ঈদ খুদুরী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “সেদিন দূরে নয়, যেদিন মুসলিমের উত্তম সম্পদ হবে কয়েকটি বকরী, যা নিয়ে সে পাহাড়ের চুড়ায় অথবা বৃষ্টিপাতের স্থানে চলে যাবে। ফিতনা থেকে সে তার দীন নিয়ে পালিয়ে যাবে”।
সহীহ, মুয়াত্তা মালেক, হাদীস নং ১৬; সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৯।
عَنْ أَبِي سَعِيدٍ الخُدْرِيِّ، قَالَ: جَاءَ أَعْرَابِيٌّ إِلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ: يَا رَسُولَ اللَّهِ أَيُّ النَّاسِ خَيْرٌ؟ قَالَ: «رَجُلٌ جَاهَدَ بِنَفْسِهِ وَمَالِهِ، وَرَجُلٌ فِي شِعْبٍ مِنَ الشِّعَابِ: يَعْبُدُ رَبَّهُ، وَيَدَعُ النَّاسَ مِنْ شَرِّهِ».
আবু সাঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, একজন বেদুঈন রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে এসে বললো, ইয়া রাসুলাল্লাহ্! কোন ব্যক্তি সবচাইতে উত্তম? তিনি বললেন, “সে ব্যক্তি যে নিজের জান ও মাল দিয়ে জিহাদ করে, আর সে ব্যক্তি যে ব্যক্তি পাহাড় বেষ্টিত এলাকাসমূহের কোনোটিতে তার রবের ইবাদত  করতে থাকে এবং মানুষকে তার অনিষ্ট থেকে রেহাই দেয়”।
মুত্তাফাকুন ‘আলাইহি, সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৬৪৯৪; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৮৮৮।
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، عَنْ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، أَنَّهُ قَالَ: «مِنْ خَيْرِ مَعَاشِ النَّاسِ لَهُمْ، رَجُلٌ مُمْسِكٌ عِنَانَ فَرَسِهِ فِي سَبِيلِ اللهِ، يَطِيرُ عَلَى مَتْنِهِ، كُلَّمَا سَمِعَ هَيْعَةً، أَوْ فَزْعَةً طَارَ عَلَيْهِ، يَبْتَغِي الْقَتْلَ وَالْمَوْتَ مَظَانَّهُ، أَوْ رَجُلٌ فِي غُنَيْمَةٍ فِي رَأْسِ شَعَفَةٍ مِنْ هَذِهِ الشَّعَفِ، أَوْ بَطْنِ وَادٍ مِنْ هَذِهِ الْأَوْدِيَةِ، يُقِيمُ الصَّلَاةَ، وَيُؤْتِي الزَّكَاةَ، وَيَعْبُدُ رَبَّهُ حَتَّى يَأْتِيَهُ الْيَقِينُ، لَيْسَ مِنَ النَّاسِ إِلَّا فِي خَيْرٍ».
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “সর্বোত্তম জীবন যাপনকারী হচ্ছে, যে ব্যক্তি আল্লাহর পথে (জিহাদের উদ্দেশ্যে) তার ঘোড়ার লাগাম ধরে রাখে, যে দিকেই ভয়ঙ্কর আওয়াজ শুনতে পায় অথবা সাহায্যের আবেদন শুনতে পায় সেদিকেই সে এর পিঠে চড়ে উড়ে চলে। সে এর পিঠে চড়ে প্রয়োজনের ক্ষেত্রে নিহত হয় বা মৃত্যুর দিকে (যুদ্ধক্ষেত্রে) ধাবিত হয় অথবা এমন ব্যক্তি যে তার মেষপাল নিয়ে নির্জনে কোনো পাহাড়ের উচ্চ শৃঙ্গে অথবা উপত্যকায় অবস্থান করে, সালাত কায়েম করে, যাকাত আদায় করে এবং তার রবের ইবাদতে মশগুল থাকে। এ অবস্থায় তার মৃত্যু এসে যায়, এ দুই ব্যক্তি মানুষের মধ্যে কেবল কল্যাণেই রত থাকে”
সহীহ, সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৮৮৯।

২৮- পরিচ্ছেদ: ভয়-শঙ্কার কারণে ঈমান গোপন রাখা জায়েয প্রসঙ্গে
عَنْ حُذَيْفَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، قَالَ: قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «اكْتُبُوا لِي مَنْ تَلَفَّظَ بِالإِسْلاَمِ مِنَ النَّاسِ»، فَكَتَبْنَا لَهُ أَلْفًا وَخَمْسَ مِائَةِ رَجُلٍ، فَقُلْنَا: نَخَافُ وَنَحْنُ أَلْفٌ وَخَمْسُ مِائَةٍ، فَلَقَدْ رَأَيْتُنَا ابْتُلِينَا، حَتَّى إِنَّ الرَّجُلَ لَيُصَلِّي وَحْدَهُ وَهُوَ خَائِفٌ.
হুযাইফা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “মানুষের মধ্যে যারা ইসলামের কালেমা উচ্চারণ করেছে তাদের নাম তালিকাভুক্ত করে আমাকে দাও। হুযাইফা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, তখন আমরা এক হাজার পাঁচশ লোকের নাম তালিকাভুক্ত করে তাঁর নিকট পেশ করি। তখন আমরা বলতে লাগলাম, আমরা একহাজর পাঁচশত লোক এখন আমাদের ভয় কিসের? (বর্ণনাকারী) হুযাইফা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, পরবর্তীকালে আমরা দেখেছি যে, আমরা এমনভাবে ফিতনায় পতিত হয়েছি যাতে লোকেরা ভীত-সন্ত্রস্ত অবস্থায় একা একা সালাত আদায় করছে”।
মুত্তাফাকুন ‘আলাইহি, সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৩০৬০; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৪৯।
সহীহ মুসলিমের বর্ণনায় এসেছে,
«أَحْصُوا لِي كَمْ يَلْفِظُ الْإِسْلَامَ»، قَالَ: فَقُلْنَا: يَا رَسُولَ اللهِ، أَتَخَافُ عَلَيْنَا وَنَحْنُ مَا بَيْنَ السِّتِّمِائَةٍ إِلَى السَّبْعِمِائةٍ؟ قَالَ: «إِنَّكُمْ لَا تَدْرُونَ لَعَلَّكُمْ أَنْ تُبْتَلَوْا»، قَالَ: «فَابْتُلِيَنَا حَتَّى جَعَلَ الرَّجُلُ مِنَّا لَا يُصَلِّي إِلَّا سِرًّا»
“কতোজন মানুষ ইসলামের কথা স্বীকার করেছে তা আমাকে গণনা করে জানাও। আমরা বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আপনি কি আমাদের ব্যাপারে আশঙ্কা করেছেন? আমরা তো প্রায় ছয়শত থেকে সাতশ লোক আছি। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমরা জানো না, সম্ভবত তোমাদেরকে পরীক্ষায় ফেলা হবে। সাহাবী বলেন, পরবর্তীকালে সত্যিই আমরা পরীক্ষার সম্মুখীন হই; এমন কি আমাদের কোনো কোনো ব্যক্তিকে গোপনে সালাত আদায় করতে হতো”।
সহীহ, সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৪৯।

২৯- পরিচ্ছেদ: ঈমানের ব্যাপারে ইন-শাআল্লাহ বলা
আওযা‘ঈ রহ. আল্লাহর নিম্নোক্ত বাণীর ব্যাপারে বলেছেন,
﴿لَتَدۡخُلُنَّ ٱلۡمَسۡجِدَ ٱلۡحَرَامَ إِن شَآءَ ٱللَّهُ ءَامِنِينَ﴾ [الفتح: ٢٧]
“তোমরা ইনশাআল্লাহ নিরাপদে তোমাদের মাথা মুণ্ডন করে এবং চুল ছেঁটে নির্ভয়ে আল-মাসজিদুল হারামে অবশ্যই প্রবেশ করবে”। [সূরা আল-ফাতহ, আয়াত: ২৭]  তিনি বলেন, আল্লাহ অবশ্যই জানেন যে, তারা নিঃসন্দেহে মসজিদে হারামে প্রবেশ করবেন; তারপরেও তিনি ইনশাআল্লাহ বলেছেন। (সুতরাং ইনশাআল্লাহ বললে সন্দেহযুক্ত হয়ে যাবে তা শুদ্ধ নয়)।
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، أَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَتَى الْمَقْبُرَةَ، فَقَالَ: «السَّلَامُ عَلَيْكُمْ دَارَ قَوْمٍ مُؤْمِنِينَ، وَإِنَّا إِنْ شَاءَ اللهُ بِكُمْ لَاحِقُونَ، وَدِدْتُ أَنَّا قَدْ رَأَيْنَا إِخْوَانَنَا» قَالُوا: أَوَلَسْنَا إِخْوَانَكَ؟ يَا رَسُولَ اللهِ قَالَ: «أَنْتُمْ أَصْحَابِي وَإِخْوَانُنَا الَّذِينَ لَمْ يَأْتُوا بَعْدُ» فَقَالُوا: كَيْفَ تَعْرِفُ مَنْ لَمْ يَأْتِ بَعْدُ مِنْ أُمَّتِكَ؟ يَا رَسُولَ اللهِ فَقَالَ: «أَرَأَيْتَ لَوْ أَنَّ رَجُلًا لَهُ خَيْلٌ غُرٌّ مُحَجَّلَةٌ بَيْنَ ظَهْرَيْ خَيْلٍ دُهْمٍ بُهْمٍ أَلَا يَعْرِفُ خَيْلَهُ؟» قَالُوا: بَلَى يَا رَسُولَ اللهِ قَالَ: «فَإِنَّهُمْ يَأْتُونَ غُرًّا مُحَجَّلِينَ مِنَ الْوُضُوءِ، وَأَنَا فَرَطُهُمْ عَلَى الْحَوْضِ أَلَا لَيُذَادَنَّ رِجَالٌ عَنْ حَوْضِي كَمَا يُذَادُ الْبَعِيرُ الضَّالُّ أُنَادِيهِمْ أَلَا هَلُمَّ فَيُقَالُ: إِنَّهُمْ قَدْ بَدَّلُوا بَعْدَكَ فَأَقُولُ سُحْقًا سُحْقًا».
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, “একবার রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটি কবরস্থানে এসে বললেন, তোমাদের ওপর শান্তি বর্ষিত হোক। এটা মুমিনদের ঘর। ইনশাআল্লাহ আমরাও তোমাদের সাথে এসে মিলবো। আমার বড় ইচ্ছা হয় আমাদের ভাইদেরকে দেখি। সাহাবীরা জিজ্ঞেস করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ্! আমরা কি আপনার ভাই নই? তিনি বললেন, তোমরা তো আমার সাহাবী। আর যারা এখনো (পৃথিবীতে) আসে নি তারা আমাদের ভাই। সাহাবীরা জিজ্ঞেস করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ্! আপনার উম্মাতের মধ্যে যারা এখনো (পৃথিবীতে) আসে নি তাদেরকে আপনি কীভাবে চিনবেন? তিনি বললেন, কেন? যদি কোনো ব্যক্তির কপাল ও হাত-পা সাদাযুক্ত ঘোড়া সম্পূর্ণ কালো ঘোড়ার মধ্যে মিশে যায় তবে সে কি তার ঘোড়াকে চিনে নিতে পারে না? তারা বললেন, হ্যাঁ, ইয়া রাসূলাল্লাহ্! তিনি বললেন, তারা (আমার উম্মাত) সেদিন এমন অবস্থায় আসবে যে, অযুর ফলে তাদের মুখ-মণ্ডল হবে নুরানী এবং হাত-পা দীপ্তিময়। আর হাউযের পাড়ে আমি হবো তাদের অগ্রনায়ক। জেনে রাখো, কিছু সংখ্যক লোককে সেদিন আমার হাউয থেকে হটিয়ে দেওয়া হবে যেমনিভাবে পথহারা উটকে হটিয়ে দেওয়া হয়। আমি তাদেরকে ডাকব, এসো এসো। তখন বলা হবে, এরা আপনার পরে (আপনার দীনকে) পরিবর্তন করে দিয়েছিল। তখন আমি বলবো, দূর হও, দূর হও”।
সহীহ, সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৪৯।
সুফিয়ান সাওরী রহ. বলেন, যে ব্যক্তি ‘আমি ইনশাআল্লাহ মুমিন’ একথা বলতে অপছন্দ করে সে আমাদের কাছে মুরজিয়াহ ফের্কার অন্তর্ভুক্ত –একথা বলে তিনি তাঁর কণ্ঠ উঁচু করেন-। অনুরূপ একলোক ‘আলকামা রহ. কে জিজ্ঞেস করলেন, অপনি কি মুমিন? তিনি বললেন, ইনশাআল্লাহ আশা করি আমি মুমিন। ইমাম বায়হাকী রহ. শু‘আবুল ঈমানে (১/৩৮) বলেন, আমরা একথা সাহাবী, তাবেয়ী ও সৎ উত্তরসূরীদের এক বিরাট দল থেকে বর্ণনা করেছি।

৩০- পবিত্রতা ঈমানের অর্ধেক
عَنْ أَبِي مَالِكٍ الْأَشْعَرِيِّ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «الطُّهُورُ شَطْرُ الْإِيمَانِ وَالْحَمْدُ لِلَّهِ تَمْلَأُ الْمِيزَانَ، وَسُبْحَانَ اللهِ وَالْحَمْدُ لِلَّهِ تَمْلَآَنِ - أَوْ تَمْلَأُ - مَا بَيْنَ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ، وَالصَّلَاةُ نُورٌ، وَالصَّدَقَةُ بُرْهَانٌ وَالصَّبْرُ ضِيَاءٌ، وَالْقُرْآنُ حُجَّةٌ لَكَ أَوْ عَلَيْكَ، كُلُّ النَّاسِ يَغْدُو فَبَايِعٌ نَفْسَهُ فَمُعْتِقُهَا أَوْ مُوبِقُهَا».
আবু মালিক আশ‘আরী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “পবিত্রতা ঈমানের অর্ধেক। ‘আল হামদুলিল্লাহ’ (শব্দটি) পাল্লাকে ভরে দেয়। ‘সুবহানাল্লাহ ও আলহামদুলিল্লাহ’ (দু’ পাল্লাকে) ভরে দেয় অথবা (রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন) আকাশ ও পৃথিবীর মধ্যবতী স্থান ভরে দেয়। সালাত হলো আলো, সদাকা হলো প্রমাণ, ধৈর্য হলো জ্যোতি। কুরআন তোমার পক্ষে কিংবা বিপক্ষে দলিল। প্রত্যেক মানুষ প্রত্যহ আপন সত্তাকে বিক্রি করে, তখন কেউ সত্তার উদ্ধারকারী হয় আর কেউ হয় ধ্বংসকারী”।
সহীহ, সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২২৩।

৩১- পরিচ্ছেদ: যে ব্যক্তি আল্লাহর ওপর ঈমান আনল অতঃপর তাতে সুদৃঢ় রইল
عَنْ سُفْيَانَ بْنِ عَبْدِ اللهِ الثَّقَفِيِّ، قَالَ: قُلْتُ: يَا رَسُولَ اللهِ، قُلْ لِي فِي الْإِسْلَامِ قَوْلًا لَا أَسْأَلُ عَنْهُ أَحَدًا بَعْدَكَ. قَالَ: «قُلْ: آمَنْتُ بِاللهِ، فَاسْتَقِمْ».
সুফিয়ান ইবন আব্দুল্লাহ আস-সাকাফী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, “আমি বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ্! আপনি আমাকে ইসলাম সম্বন্ধে এমন কথা বলে দিন, আপনার পরে যেনো তা আমাকে আর কারো কাছে জিজ্ঞেস করতে না হয়। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তুমি বলো, আমি আল্লাহর প্রতি ঈমান এনেছি। তারপর এর ওপর প্রতিষ্ঠিত থাকো”।
সহীহ, সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৩৮।

৩২- পরিচ্ছেদ: ঈমানদারদের ঈমানের তারতম্য
عَنْ أَبِي سَعِيدٍ الخُدْرِيَّ، يَقُولُ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «بَيْنَا أَنَا نَائِمٌ، رَأَيْتُ النَّاسَ يُعْرَضُونَ عَلَيَّ وَعَلَيْهِمْ قُمُصٌ، مِنْهَا مَا يَبْلُغُ الثُّدِيَّ، وَمِنْهَا مَا دُونَ ذَلِكَ، وَعُرِضَ عَلَيَّ عُمَرُ بْنُ الخَطَّابِ وَعَلَيْهِ قَمِيصٌ يَجُرُّهُ». قَالُوا: فَمَا أَوَّلْتَ ذَلِكَ يَا رَسُولَ اللَّهِ؟ قَالَ: «الدِّينَ»
আবু সাঈদ খুদুরী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “একবার আমি ঘুমন্ত অবস্থায় (স্বপ্নে) দেখলাম যে, লোকদেরকে আমার সামনে হাযির করা হচ্ছে। আর তাদের পরিধাণে রয়েছে জামা। কারো জামা বুক পর্যন্ত আর কারো জামা এর নীচ পর্যন্ত। আর উমার ইবন খাত্তাবকে আমার সামনে হাযির করা হলো এমন অবস্থায় যে, তিনি তার জামা (এতো লম্বা যে) টেনে নিয়ে যাচ্ছিলেন। সাহাবীরা বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ্! আপনি এর কী তা‘বীর করেছেন? তিনি বললেন, (এ জামা মানে) দীন”।
মুত্তাফাকুন ‘আলাইহি, সহীহ বুখারী, হাদীস নং ২৩; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৩৯০।
عَنْ هَانِئِ بْنِ هَانِئٍ، قَالَ: دَخَلَ عَمَّارٌ عَلَى عَلِيٍّ، فَقَالَ: مَرْحَبًا بِالطَّيِّبِ الْمُطَيَّبِ، سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: «مُلِئَ عَمَّارٌ إِيمَانًا إِلَى مُشَاشِهِ».
হানী ইবন হানী রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘আম্মার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু ‘আলী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর নিকট প্রবেশ করলে তিনি বলেন, “এই পাক-পবিত্র ব্যক্তিকে স্বাগতম। আমি রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, ‘আম্মার এমন একটি পাত্র যার হাঁড়ের অগ্রভাগ পর্যন্ত ঈমানে ভরপুর”।
হাসান, ইবন মাজাহ, হাদীস নং ১৪৭; ইবন হিব্বান, হাদীস নং ৭০৭৬, তিনি হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন; নাসায়ী, হাদীস নং ৫০০৭।
রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বাণী, مُشَاشِهِ এর অর্থ হাঁড়ের মাথা পর্যন্ত। এখানে ‘আম্মার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর শক্তিশালী ঈমানের কথা বুঝানো হয়েছে।
৩৩- পরিচ্ছেদ: ডানপন্থীদের ঈমানের অধিক্য
عَنْ أَبِي مَسْعُودٍ، قَالَ: أَشَارَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِيَدِهِ نَحْوَ اليَمَنِ فَقَالَ «الإِيمَانُ يَمَانٍ هَا هُنَا، أَلاَ إِنَّ القَسْوَةَ وَغِلَظَ القُلُوبِ فِي الفَدَّادِينَ، عِنْدَ أُصُولِ أَذْنَابِ الإِبِلِ، حَيْثُ يَطْلُعُ قَرْنَا الشَّيْطَانِ فِي رَبِيعَةَ، وَمُضَرَ».
আবু মাস‘উদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, “রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্বীয় হাতের দ্বারা ইয়ামেনের দিকে ইশারা করে বললেন, ঈমান এদিকে। দেখো কঠোরতা এবং অন্তরের কাঠিন্য ঐ সব চিৎকারকারী লোকদের মধ্যে যারা উটের লেজের কাছে অবস্থান করে; যেখান থেকে শয়তানের শিং দু’টি উদয় হবে অর্থাৎ রাবী‘আ ও মুদার গোত্রদ্বয়ের মধ্যে”।
মুত্তাফাকুন ‘আলাইহি, সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৩৩০২; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৫১।
রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বাণী, الفَدَّادِينَ শব্দটি দাল বর্ণে তাশদীদ যোগে فداد এর বহুবচন। অর্থ কঠিন আওয়াজ। অর্থাৎ যারা তাদের উট, ঘোড়া ও শস্যক্ষেতে উচ্চ স্বরে কথা বলে।
রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বাণী, « عِنْدَ أُصُولِ أَذْنَابِ الإِبِلِ» এর অর্থ উট চরানোর সময় তারা চিরাচরিত অভ্যাস মতো চিৎকার করে থাকে; যদিও তারা উটের লেজের কাছেই থাকে।
রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বাণী,
« حَيْثُ يَطْلُعُ قَرْنَا الشَّيْطَانِ فِي رَبِيعَةَ، وَمُضَرَ» এর মধ্যে «فِي رَبِيعَةَ، وَمُضَرَ» অংশ « فِي الفَدَّادِينَ» থেকে বদল হয়েছে। অর্থাৎ কঠোরতা আছে রাবী‘আ ও মুদার গোত্রের রাখালদের মাঝে। আর « قَرْنَا الشَّيْطَانِ» এর অর্থ শয়তানের শিং। এখানে উদ্দেশ্য হলো পূর্বাঞ্চলে শয়তানের ভ্রষ্টতা ও ধোঁকা বেশি। এছাড়াও অন্য হাদীসে এসেছে, «رأس الكفر نحو المشرق» পূর্বাঞ্চল হলো কুফুরীর মূল। আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর হাদীসে সামনে এ ব্যাপারে আলোচনা আসবে। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একথা তাঁর যুগে বলে গেছেন। আর পূর্বদিক থেকেই দাজ্জালের আবির্ভাব ঘটবে। (দেখুন, ইবন সালাহ লিখিত ‘সিয়ানাতু সহীহ মুসলিম’)।
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، قَالَ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، يَقُولُ: «الفَخْرُ، وَالخُيَلاَءُ فِي الفَدَّادِينَ أَهْلِ الوَبَرِ، وَالسَّكِينَةُ فِي أَهْلِ الغَنَمِ، وَالإِيمَانُ يَمَانٍ، وَالحِكْمَةُ يَمَانِيَةٌ».  
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আমি বলতে শুনেছি যে, “গর্ব-অহংকার পশম নির্মিত তাঁবুতে বসবাসকারীর মধ্যে যারা উট-গরু হাঁকাতে¬ চিৎকার করে। আর শান্তভাব বকরী পালকদের মধ্যে রয়েছে। ঈমান ইয়ামেনে আর হিকমাতও ইয়ামানবাসীদের মধ্যে বদ্ধমূল রয়েছে”।
মুত্তাফাকুন ‘আলাইহি, সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৩৪৯৯; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৫২: ৮৮।
সহীহ মুসলিমের অন্য বর্ণনায় এসেছে,
«وَالْفَخْرُ وَالْخُيَلَاءُ فِي أَصْحَابِ الْإِبِلِ، وَالسَّكِينَةُ وَالْوَقَارُ فِي أَصْحَابِ الشَّاءِ».
“গর্ব-অহংকার উটের মালিকের মধ্যে আর শান্ত-শিষ্টতা বকরী পালকদের মধ্যে রয়েছে”।
সহীহ, সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৫২।
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «أَتَاكُمْ أَهْلُ اليَمَنِ، هُمْ أَرَقُّ أَفْئِدَةً وَأَلْيَنُ قُلُوبًا، الإِيمَانُ يَمَانٍ وَالحِكْمَةُ يَمَانِيَةٌ، وَالفَخْرُ وَالخُيَلاَءُ فِي أَصْحَابِ الإِبِلِ، وَالسَّكِينَةُ وَالوَقَارُ فِي أَهْلِ الغَنَمِ».
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “তোমাদের কাছে ইয়ামেনবাসীরা এসেছে। তারা অন্তরের দিক থেকে অত্যন্ত কোমল ও দরদী। ঈমান হলো ইয়ামানীদের, হিকমত হলো ইয়ামানীদের। আর আত্মম্ভরিতা ও অহংকার রয়েছে উট পালনকারীদের মধ্যে, প্রশান্তি ও গাম্ভীর্য আছে বকরী পালকদের মধ্যে”।
মুত্তাফাকুন ‘আলাইহি, সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৪৩৮৮; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৫২।
সহীহ বুখারী ও মুসলিমের বর্ণনায় এসেছে,
«جاءكم أَهْلُ الْيَمَنِ، هُمْ أَرَقُّ أَفْئِدَةً، وأضعف قلوبا»
“তোমাদের কাছে ইয়ামানবাসীরা এসেছে। তারা মনের দিক থেকে অত্যন্ত কোমল ও অন্তরের দিক থেকে খুব দুর্বল”।
সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৪৩৯০; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৫২।
সহীহ বুখারীর বর্ণনায় এসেছে,
«وَالفِتْنَةُ هَا هُنَا، هَا هُنَا يَطْلُعُ قَرْنُ الشَّيْطَانِ»
“আর ফিতনার (বিপর্যয়ের) গোড়া হলো ওখানে, যেখানে উদিত হয় শয়তানের শিং”।
সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৪৩৮৯।

৩৪- পরিচ্ছেদ: হিজাযবাসীদের মধ্যে রয়েছে ঈমান
عَنْ جَابِر بْن عَبْدِ اللهِ يَقُولُ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «غِلَظُ الْقُلُوبِ، وَالْجَفَاءُ فِي الْمَشْرِقِ، وَالْإِيمَانُ فِي أَهْلِ الْحِجَازِ».
জারির ইবন আব্দুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “মনের কঠোরতা ও গোয়ার্তুমি পূর্বাঞ্চলে আর ঈমান হিজাযবাসীদের মধ্যে”।
সহীহ, সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৫৩।

৩৫- পরিচ্ছেদ: ব্যক্তির উত্তম ইসলাম সম্পর্কে
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِذَا أَحْسَنَ أَحَدُكُمْ إِسْلاَمَهُ: فَكُلُّ حَسَنَةٍ يَعْمَلُهَا تُكْتَبُ لَهُ بِعَشْرِ أَمْثَالِهَا إِلَى سَبْعِ مِائَةِ ضِعْفٍ، وَكُلُّ سَيِّئَةٍ يَعْمَلُهَا تُكْتَبُ لَهُ بِمِثْلِهَا».
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “তোমাদের মধ্যে কেউ যখন উত্তমরূপে ইসলামের ওপর কায়েম থাকে তখন সে যে ভালো আমল করে তার প্রত্যেকটির বিনিময়ে সাতশ গুণ পর্যন্ত (সাওয়াব) লেখা হয়। আর সে যে মন্দ কাজ করে তার প্রত্যেকটির বিনিময়ে তার জন্য ঠিক ততটুকুই মন্দ লেখা হয়”।
মুত্তাফাকুন ‘আলাইহি, সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৪২; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১২৯।
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إن مِنْ حُسْنِ إِسْلاَمِ الْمَرْءِ تَرْكُهُ مَا لاَ يَعْنِيهِ».
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “ব্যক্তির ইসলামী সৌন্দর্য ও গুণের অন্যতম হলো অনর্থক বিষয় পরিত্যাগ করা”।
হাসান, তিরমিযী, হাদীস নং ২৩১৭; ইবন মাজাহ, হাদীস নং ৩৯৭৬; ইবন হিব্বান, হাদীস নং ২২৯।
عَنْ أَبِي سَعِيدٍ الْخُدْرِيِّ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِذَا أَسْلَمَ الْعَبْدُ فَحَسُنَ إِسْلَامُهُ، كَتَبَ اللَّهُ لَهُ كُلَّ حَسَنَةٍ كَانَ أَزْلَفَهَا، وَمُحِيَتْ عَنْهُ كُلُّ سَيِّئَةٍ كَانَ أَزْلَفَهَا، ثُمَّ كَانَ بَعْدَ ذَلِكَ الْقِصَاصُ، الْحَسَنَةُ بِعَشْرَةِ أَمْثَالِهَا إِلَى سَبْعِ مِائَةِ ضِعْفٍ، وَالسَّيِّئَةُ بِمِثْلِهَا إِلَّا أَنْ يَتَجَاوَزَ اللَّهُ عَزَّ وَجَلَّ عَنْهَا».
আবু সাঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “যখন কোনো ব্যক্তি উত্তমরূপে ইসলাম গ্রহন করে, তখন আল্লাহ তা‘আলা তার ঐ সকল সৎকর্ম লিখে নেন, যা সে পূর্বে করেছিল, আর সেই সকল পাপ মুছে ফেলেন যাতে অতীতে লিপ্ত হয়েছিল। এরপর তার হিসাব এইভাবে লিখিত হয় যে, তার প্রত্যেক সাওয়াবের পরিবর্তে দশ হতে সাতশত গুণ পর্যন্ত সাওয়াব লেখা হয়। আর প্রত্যেক পাপ শুধু অতটুকুই লেখা হয়, যা সে করে; যদি আল্লাহ ক্ষমা না করেন”।
সহীহ, নাসায়ী, হাদীস নং ৪৯৯৮।

৩৬- পরিচ্ছেদ: নসিহত দীনের মূলস্তম্ভ ও ভিত্তি
عَنْ جَرِيرِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ، قَالَ: «بَايَعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَلَى إِقَامِ الصَّلاَةِ، وَإِيتَاءِ الزَّكَاةِ، وَالنُّصْحِ لِكُلِّ مُسْلِمٍ».
জারীর ইবন আব্দুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, “আমি রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাতে বায়‘আত গ্রহণ করেছি সালাত কায়েম করার, যাকাত দেওয়ার এবং সকল মুসলিমের কল্যাণ কামনা করার ওপর”।
মুত্তাফাকুন ‘আলাইহি, সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৫৭; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৫৬।
عَنْ جَرِيرٍ، قَالَ: «بَايَعْتُ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَلَى السَّمْعِ وَالطَّاعَةِ - فَلَقَّنَنِي - فِيمَا اسْتَطَعْتُ، وَالنُّصْحِ لِكُلِّ مُسْلِمٍ».
জারীর ইবন আব্দুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, “আমি রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে তাঁর কথা শোনা, তাঁর আনুগত্য করা ও প্রত্যেক মুসলিমের জন্য কল্যাণ কামনার ব্যাপারে বায়‘আত গ্রহণ করলাম। তিনি আমাকে এ কথা বলতে শিখিয়ে দিলেন যে, আমার সাধ্যের আওতাভুক্ত বিষয়ে (অর্থাৎ একথাটি যেন বলি)”।
সহীহ বুখারীতে এসেছে,
«عَلَيْكُمْ بِاتِّقَاءِ اللَّهِ وَحْدَهُ لاَ شَرِيكَ لَهُ، وَالوَقَارِ، وَالسَّكِينَةِ، حَتَّى يَأْتِيَكُمْ أَمِيرٌ، فَإِنَّمَا يَأْتِيكُمُ الآنَ. ثُمَّ قَالَ: اسْتَعْفُوا لِأَمِيرِكُمْ، فَإِنَّهُ كَانَ يُحِبُّ العَفْوَ، ثُمَّ قَالَ: أَمَّا بَعْدُ، فَإِنِّي أَتَيْتُ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قُلْتُ: أُبَايِعُكَ عَلَى الإِسْلاَمِ فَشَرَطَ عَلَيَّ: «وَالنُّصْحِ لِكُلِّ مُسْلِمٍ» فَبَايَعْتُهُ عَلَى هَذَا، وَرَبِّ هَذَا المَسْجِدِ إِنِّي لَنَاصِحٌ لَكُمْ، ثُمَّ اسْتَغْفَرَ وَنَزَلَ».
“তোমাদের ওপর কর্তব্য হচ্ছে তাকওয়া অবলম্বন করা এক আল্লাহর ব্যাপারে যাঁর কোনো শরীক নাই এবং নতুন কোনো আমীর না আসা পর্যন্ত শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখা, অনতিবিলম্বে তোমাদের আমীর আসবেন। এরপর জারীর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বললেন, তোমাদের আমীরের জন্য মাগফিরাত কামনা করো; কেননা তিনি ক্ষমা করা ভালোবাসতেন। তারপর বললেন, একবার আমি রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে এসে বললাম, আমি আপনার কাছে ইসলামের বায়‘আত গ্রহণ করতে চাই। তিনি (অন্যান্য বিষয়ের সাথে) আমার উপর শর্ত আরোপ করলেন, আর সকল মুসলিমের কল্যাণ কামনা করবে। তারপর আমি তাঁর কাছে এ শর্তের উপর বায়‘আত গ্রহণ করলাম। এ মসজিদের রবের কসম! আমি তোমাদের কল্যাণকামী। এরপর তিনি আল্লাহর কাছে মাগফিরাত কামনা করলেন এবং (মিম্বার থেকে) নেমে গেলেন”।
সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৫৮।
عَنْ تَمِيمٍ الدَّارِيِّ أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قَالَ: «الدِّينُ النَّصِيحَةُ» قُلْنَا: لِمَنْ؟ قَالَ: «لِلَّهِ وَلِكِتَابِهِ وَلِرَسُولِهِ وَلِأَئِمَّةِ الْمُسْلِمِينَ وَعَامَّتِهِمْ».
তামীম আদ-দারী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “কল্যাণ কামনাই দীন। আমরা বললাম, কার জন্য কল্যাণ কামনা? তিনি বললেন, আল্লাহর, তাঁর কিতাবের, তাঁর রাসূলের, মুসলিম শাসক এবং মুসলিম জনগণের”।
সহীহ, সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৫৫।

৩৭- পরিচ্ছেদ: মৃত্যুর সময় উপস্থিত হলে ইসলাম গ্রহণ করলে সহীহ হওয়ার দলিল, যতক্ষণ মৃত্যুর বড় নিশ্বাস শুরু না হয়
 عَنْ المُسَيِّب بن حزن، قَالَ: لَمَّا حَضَرَتْ أَبَا طَالِبٍ الوَفَاةُ دَخَلَ عَلَيْهِ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، وَعِنْدَهُ أَبُو جَهْلٍ وَعَبْدُ اللَّهِ بْنُ أَبِي أُمَيَّةَ، فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: " أَيْ عَمِّ، قُلْ: لاَ إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ أُحَاجُّ لَكَ بِهَا عِنْدَ اللَّهِ "، فَقَالَ أَبُو جَهْلٍ، وَعَبْدُ اللَّهِ بْنُ أَبِي أُمَيَّةَ: يَا أَبَا طَالِبٍ أَتَرْغَبُ عَنْ مِلَّةِ عَبْدِ المُطَّلِبِ، فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «لَأَسْتَغْفِرَنَّ لَكَ مَا لَمْ أُنْهَ عَنْكَ»، فَنَزَلَتْ: ﴿مَا كَانَ لِلنَّبِيِّ وَٱلَّذِينَ ءَامَنُوٓاْ أَن يَسۡتَغۡفِرُواْ لِلۡمُشۡرِكِينَ وَلَوۡ كَانُوٓاْ أُوْلِي قُرۡبَىٰ مِنۢ بَعۡدِ مَا تَبَيَّنَ لَهُمۡ أَنَّهُمۡ أَصۡحَٰبُ ٱلۡجَحِيمِ١٣﴾ [التوبة: ١١٣]  
মুসাইয়্যিব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, “যখন আবু তালিবের মৃত্যুর আলামত দেখা দিলো তখন রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার কাছে গেলেন। এ সময় আবু জাহাল এবং আব্দুল্লাহ ইবন আবু উমাইয়াও সেখানে বসা ছিলো। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হে চাচা! আপনি পড়ুন ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’। আপনার মুক্তির জন্য আল্লাহর নিকট আবেদন পেশ করবো। এ কথা শুনে আবু জাহাল ও আব্দুল্লাহ ইবন আবু উমাইয়া বলল, হে আবু তালিব! তুমি কি মৃত্যুর সময় (তোমার পিতা) আব্দুল মুত্তালিবের ধর্ম ত্যাগ করতে চাও? রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হে চাচা! আমি আপনার জন্য আল্লাহর তরফ থেকে যতোক্ষণ আমাকে নিষেধ না করা হবে ততোক্ষণ ক্ষমা প্রার্থনা করতে থাকবো। তখন এ আয়াত অবতীর্ণ হয়।
“নবী ও মুমিনদের জন্য উচিত নয় যে, তারা মুশরিকদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করবে। যদিও তারা আত্মীয় হয়। তাদের নিকট এটা স্পষ্ট হয়ে যাওয়ার পর যে, নিশ্চয় তারা প্রজ্বলিত আগুনের অধিবাসী”। [সূরা আত-তাওবাহ, আয়াত: ১১৩]
মুত্তাফাকুন ‘আলাইহি, সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৪৬৭৫; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৪/৪০। হাদীসের শব্দ বুখারীর চয়নকৃত।
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لِعَمِّهِ عِنْدَ الْمَوْتِ: " قُلْ: لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ، أَشْهَدُ لَكَ بِهَا يَوْمَ الْقِيَامَةِ، فَأَبَى، فَأَنْزَلَ اللهُ: ﴿إِنَّكَ لَا تَهۡدِي مَنۡ أَحۡبَبۡتَ﴾ [القصص: ٥٦]
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, “রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার চাচা আবু তালিবের অন্তিমকালে তাকে বলেছিলেন, আপনি ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলুন, কিয়ামত দিবসে আমি আপনার জন্য এর সাক্ষ্য দিবো; কিন্তু তিনি অস্বীকার করলেন। তখন আল্লাহ নাযিল করেন, “নিশ্চয় আপনি যাকে ভালোবাসেন তাকে হিদায়াত দিতে পারবেন না”। [সূরা আল-কাসাস, আয়াত: ৫৬]
সহীহ, সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৫।
সহীহ মুসলিমের অন্য বর্ণনায় এসেছে, আবু তালিব বলল,
«لَوْلَا أَنْ تُعَيِّرَنِي قُرَيْشٌ، يَقُولُونَ: إِنَّمَا حَمَلَهُ عَلَى ذَلِكَ الْجَزَعُ لَأَقْرَرْتُ بِهَا عَيْنَكَ».
আবু তালিব বললেন, “কুরাইশ কর্তৃক এরূপ দোষারোপ করার আশঙ্কা যদি না থাকত, তাহলে আমি কালিমা তাওহীদ পাঠ করে তোমার চোখ জুড়াতাম”।
সহীহ, সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৫।

৩৮- পরিচ্ছেদ: ঈমানের স্বাদ অন্তরের সাথে মিশে গেলে কেউ তা অপছন্দ করে না
عن عَبْد اللَّهِ بْن عَبَّاسٍ أخبر أَنَّ أَبَا سُفْيَانَ أَخْبَرَهُ، «أَنَّ هِرَقْلَ، قَالَ لَهُ: سَأَلْتُكَ هَلْ يَزِيدُونَ أَمْ يَنْقُصُونَ؟ فَزَعَمْتَ أَنَّهُمْ يَزِيدُونَ، وَكَذَلِكَ الإِيمَانُ حَتَّى يَتِمَّ، وَسَأَلْتُكَ هَلْ يَرْتَدُّ أَحَدٌ سَخْطَةً لِدِينِهِ بَعْدَ أَنْ يَدْخُلَ فِيهِ؟ فَزَعَمْتَ أَنْ لاَ، وَكَذَلِكَ الإِيمَانُ، حِينَ تُخَالِطُ بَشَاشَتُهُ القُلُوبَ لاَ يَسْخَطُهُ أَحَدٌ».
আব্দুল্লাহ ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, সুফিয়ান আমার কাছে বর্ণনা করেন যে, “হিরাকল তাকে বলেছিলেন, আমি তোমাকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম তারা (ঈমানদারগণ) সংখ্যায় বাড়ছে না কমছে? তুমি উত্তর দিয়েছিলে, তারা সংখ্যায় বাড়ছে। প্রকৃতপক্ষে ঈমানের ব্যাপার এরূপই থাকে যতক্ষণ তা তা পূর্ণতা লাভ করে। আর আমি তোমাকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম, কেউ তাঁর দীন গ্রহণ করার পর তা অপছন্দ করে মুরতাদ হয়ে যায় কি-না? তুমি জবাব দিয়েছো, ‘না।’ প্রকৃত ঈমান এরূপই, ঈমানের স্বাদ অন্তরের সাথে মিশে গেলে কেউ তা অপছন্দ করে না”।
মুত্তাফাকুন ‘আলাইহি, সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৫১।

৩৯- পরিচ্ছেদ: এ দীনের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো এটি সহজ-সরল
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «إِنَّ الدِّينَ يُسْرٌ، وَلَنْ يُشَادَّ الدِّينَ أَحَدٌ إِلَّا غَلَبَهُ، فَسَدِّدُوا وَقَارِبُوا، وَأَبْشِرُوا، وَاسْتَعِينُوا بِالْغَدْوَةِ وَالرَّوْحَةِ وَشَيْءٍ مِنَ الدُّلْجَةِ»
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “নিশ্চয়ই দীন সহজ-সরল। দীন নিয়ে যে বাড়াবাড়ি করে দীন তার উপর বিজয়ী হয়। কাজেই তোমরা মধ্যপন্থা অবলম্বন করো এবং (মধ্যপন্থার) নিকটবর্তী থাক, আশান্বিত থাক এবং সকাল-সন্ধ্যায় ও রাতের কিছু অংশে (ইবাদতের মাধ্যমে) সাহায্য চাও”।
সহীহ, সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৩৯।
রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বাণী,  وَلَنْ يُشَادَّ الدِّينَ أَحَدٌ إِلَّا غَلَبَهُ এর অর্থ দীনি কাজ নিয়ে যে বাড়াবাড়ি করে এবং নম্রতা বর্জন করে তখন সে অক্ষম হবে এবং দীন তার উপর বিজয়ী হয়।
৪০- আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতা‘আলা সাধ্যের বাইরে কিছু চাপিয়ে দেন না
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: لَمَّا نَزَلَتْ عَلَى رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: ﴿لِّلَّهِ مَا فِي ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَمَا فِي ٱلۡأَرۡضِۗ وَإِن تُبۡدُواْ مَا فِيٓ أَنفُسِكُمۡ أَوۡ تُخۡفُوهُ يُحَاسِبۡكُم بِهِ ٱللَّهُۖ فَيَغۡفِرُ لِمَن يَشَآءُ وَيُعَذِّبُ مَن يَشَآءُۗ وَٱللَّهُ عَلَىٰ كُلِّ شَيۡءٖ قَدِيرٌ ٢٨٤﴾ [البقرة: ٢٨٤]، قَالَ: فَاشْتَدَّ ذَلِكَ عَلَى أَصْحَابِ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَأَتَوْا رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ثُمَّ بَرَكُوا عَلَى الرُّكَبِ، فَقَالُوا: أَيْ رَسُولَ اللهِ، كُلِّفْنَا مِنَ الْأَعْمَالِ مَا نُطِيقُ، الصَّلَاةَ وَالصِّيَامَ وَالْجِهَادَ وَالصَّدَقَةَ، وَقَدِ اُنْزِلَتْ عَلَيْكَ هَذِهِ الْآيَةُ وَلَا نُطِيقُهَا، قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ:  «أَتُرِيدُونَ أَنْ تَقُولُوا كَمَا قَالَ أَهْلُ الْكِتَابَيْنِ مِنْ قَبْلِكُمْ سَمِعْنَا وَعَصَيْنَا؟ بَلْ قُولُوا: سَمِعْنَا وَأَطَعْنَا غُفْرَانَكَ رَبَّنَا وَإِلَيْكَ الْمَصِيرُ »، قَالُوا: سَمِعْنَا وَأَطَعْنَا غُفْرَانَكَ رَبَّنَا وَإِلَيْكَ الْمَصِيرُ، فَلَمَّا اقْتَرَأَهَا الْقَوْمُ، ذَلَّتْ بِهَا أَلْسِنَتُهُمْ، فَأَنْزَلَ اللهُ فِي إِثْرِهَا: ﴿ءَامَنَ ٱلرَّسُولُ بِمَآ أُنزِلَ إِلَيۡهِ مِن رَّبِّهِۦ وَٱلۡمُؤۡمِنُونَۚ كُلٌّ ءَامَنَ بِٱللَّهِ وَمَلَٰٓئِكَتِهِۦ وَكُتُبِهِۦ وَرُسُلِهِۦ لَا نُفَرِّقُ بَيۡنَ أَحَدٖ مِّن رُّسُلِهِۦۚ وَقَالُواْ سَمِعۡنَا وَأَطَعۡنَاۖ غُفۡرَانَكَ رَبَّنَا وَإِلَيۡكَ ٱلۡمَصِيرُ ٢٨٥﴾ [البقرة: ٢٨٥]، فَلَمَّا فَعَلُوا ذَلِكَ نَسَخَهَا اللهُ تَعَالَى، فَأَنْزَلَ اللهُ عَزَّ وَجَلَّ: ﴿لَا يُكَلِّفُ ٱللَّهُ نَفۡسًا إِلَّا وُسۡعَهَاۚ لَهَا مَا كَسَبَتۡ وَعَلَيۡهَا مَا ٱكۡتَسَبَتۡۗ رَبَّنَا لَا تُؤَاخِذۡنَآ إِن نَّسِينَآ أَوۡ أَخۡطَأۡنَاۚ﴾ [البقرة: ٢٨٦] ، "قَالَ: نَعَمْ" ﴿رَبَّنَا وَلَا تَحۡمِلۡ عَلَيۡنَآ إِصۡرٗا كَمَا حَمَلۡتَهُۥ عَلَى ٱلَّذِينَ مِن قَبۡلِنَا﴾ [البقرة: ٢٨٦] " قَالَ: نَعَمْ " ﴿رَبَّنَا وَلَا تُحَمِّلۡنَا مَا لَا طَاقَةَ لَنَا بِهِۦۖ وَٱعۡفُ عَنَّا وَٱغۡفِرۡ لَنَا وَٱرۡحَمۡنَآۚ أَنتَ مَوۡلَىٰنَا فَٱنصُرۡنَا عَلَى ٱلۡقَوۡمِ ٱلۡكَٰفِرِينَ ٢٨٦﴾ [البقرة: ٢٨٦] "قَالَ: نَعَمْ».
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওপর যখন এ আয়াত নাযিল হয়, “আল্লাহর জন্যই যা রয়েছে আসমানসমূহে এবং যা রয়েছে জমিনে। আর তোমরা যদি প্রকাশ কর যা তোমাদের অন্তরে রয়েছে অথবা গোপন কর, আল্লাহ সে বিষয়ে তোমাদের হিসাব নেবেন। অতঃপর তিনি যাকে চান ক্ষমা করবেন, আর যাকে চান আযাব দেবেন। আর আল্লাহ সবকিছুর উপর ক্ষমতাবান”। [সূরা আল-বাকারাহ, আয়াত: ২৮৪], তখন বিষয়টি সাহাবীদের কাছে খুবই কঠিন মনে হলো। তাই সবাই রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে আসলেন এবং হাঁটু গেড়ে বসে বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! সালাত, সাওম, জিহাদ ও সদকা প্রভৃতি যে সমস্ত আমল আমাদের সামর্থ্যানুযায়ী ছিল এ যাবত আমাদেরকে সেগুলোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে এ আয়াত নাযিল হয়েছে। এ বিষয়টি তো আমাদের ক্ষমতার বাইরে। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, “আহলে কিতাব; ইয়াহূদী ও খৃস্টানের মত তোমরাও কি এমন কথা বলবে যে, শুনলাম কিন্তু মাননাম না; বরং তোমরা বলো, শুনলাম ও মানলাম। হে আমাদের রব! আমরা তোমার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করি, আর তুমিই আমাদের শেষ প্রত্যাবর্তন স্থল”। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এ নির্দেশ শুনে সাহাবীরা বললেন, আমরা শুনেছি ও মেনেছি। হে আমাদের রব! আমরা তোমার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করছি, তুমিই আমাদের শেষ প্রত্যাবর্তনস্থল। বর্ণনাকারী বলেন, সাহাবীদের সকলে এ আয়াত পাঠ করলেন এবং বিনয়ী হয়ে মনে-প্রাণে তা গ্রহণ করে নিলেন। অনন্তর আল্লাহ তা‘আলা এ আয়াত নাযিল করেন, “রাসূল তার নিকট তার রবের পক্ষ থেকে নাযিলকৃত বিষয়ের প্রতি ঈমান এনেছে, আর মুমিনগণও। প্রত্যেকে ঈমান এনেছে আল্লাহর উপর, তাঁর ফিরিশতাকুল, কিতাবসমূহ ও তাঁর রাসূলগণের উপর, আমরা তাঁর রাসূলগণের কারও মধ্যে তারতম্য করি না। আর তারা বলে, আমরা শুনলাম এবং মানলাম। হে আমাদের রব! আমরা আপনারই ক্ষমা প্রার্থনা করি, আর আপনার দিকেই প্রত্যাবর্তনস্থল”। [সূরা আল-বাকারাহ, আয়াত: ২৮৫], যখন তারা সর্বতোভাবে আনুগত্য জ্ঞাপন করলেন তখন আল্লাহ উক্ত আয়াতের হুকুম রহিত করে নাযিল করলেন, “আল্লাহ কোনো ব্যক্তিকে তার সামর্থ্যের বাইরে দায়িত্ব দেন না। সে যা অর্জন করে তা তার জন্যই এবং সে যা কামাই করে তা তার উপরই বর্তাবে। হে আমাদের রব! আমরা যদি ভুলে যাই, অথবা ভুল করি তাহলে আপনি আমাদেরকে পাকড়াও করবেন না”। [সূরা আল-বাকারাহ, আয়াত: ২৮৬], আল্লাহ বললেন, হ্যাঁ, মেনে নিলাম। আরো নাযিল হলো, “হে আমাদের রব, আমাদের উপর বোঝা চাপিয়ে দেবেন না, যেমন আমাদের পূর্ববর্তীদের উপর চাপিয়ে দিয়েছেন”। [সূরা আল-বাকারাহ, আয়াত: ২৮৬], আল্লাহ বললেন, হ্যাঁ, মেনে নিলাম। আরো নাযিল হলো, “হে আমাদের রব, আপনি আমাদেরকে এমন কিছু বহন করাবেন না, যার সামর্থ্য আমাদের নেই। আর আপনি আমাদেরকে মার্জনা করুন এবং আমাদেরকে ক্ষমা করুন, আর আমাদের ওপর দয়া করুন। আপনি আমাদের অভিভাবক। অতএব আপনি কাফির সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে আমাদেরকে সাহায্য করুন”। আল্লাহ বললেন, হ্যাঁ, মেনে নিলাম”।
সহীহ, সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১২৫।
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ، قَالَ: لَمَّا نَزَلَتْ هَذِهِ الْآيَةُ: ﴿وَإِن تُبۡدُواْ مَا فِيٓ أَنفُسِكُمۡ أَوۡ تُخۡفُوهُ يُحَاسِبۡكُم بِهِ ٱللَّهُ﴾ [البقرة: ٢٨٤]، قَالَ: دَخَلَ قُلُوبَهُمْ مِنْهَا شَيْءٌ لَمْ يَدْخُلْ قُلُوبَهُمْ مِنْ شَيْءٍ، فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «قُولُوا: سَمِعْنَا وَأَطَعْنَا وَسَلَّمْنَا». قَالَ: فَأَلْقَى اللهُ الْإِيمَانَ فِي قُلُوبِهِمْ، فَأَنْزَلَ اللهُ تَعَالَى: ﴿لَا يُكَلِّفُ ٱللَّهُ نَفۡسًا إِلَّا وُسۡعَهَاۚ لَهَا مَا كَسَبَتۡ وَعَلَيۡهَا مَا ٱكۡتَسَبَتۡۗ رَبَّنَا لَا تُؤَاخِذۡنَآ إِن نَّسِينَآ أَوۡ أَخۡطَأۡنَاۚ﴾ [البقرة: ٢٨٦] ، قَالَ: «قَدْ فَعَلْتُ». ﴿رَبَّنَا وَلَا تَحۡمِلۡ عَلَيۡنَآ إِصۡرٗا كَمَا حَمَلۡتَهُۥ عَلَى ٱلَّذِينَ مِن قَبۡلِنَا﴾ [البقرة: ٢٨٦]  قَالَ: «قَدْ فَعَلْتُ».﴿وَٱغۡفِرۡ لَنَا وَٱرۡحَمۡنَآۚ أَنتَ مَوۡلَىٰنَا﴾ [البقرة: ٢٨٦]  قَالَ: «قَدْ فَعَلْتُ».
ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওপর যখন এ আয়াত নাযিল হয়, “আর তোমরা যদি প্রকাশ করো যা তোমাদের অন্তরে রয়েছে অথবা গোপন করো, আল্লাহ সে বিষয়ে তোমাদের হিসাব নেবেন”। [সূরা আল-বাকারাহ, আয়াত: ২৮৪], এতে সাহাবীগণ খুবই উদ্বিগ্ন হয়ে পড়লেন। আর কোনো বিষয়ে তারা এমন উদ্বিগ্ন হন নি। তখন রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, বরং তোমরা বলো, শুনলাম, আনুগত্য স্বীকার করলাম এবং মেনে নিলাম। ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, আল্লাহ তা‘আলা তাদের অন্তরে ঈমান ঢেলে দিলেন। তিনি নাযিল করলেন, “আল্লাহ কোনো ব্যক্তিকে তার সামর্থ্যের বাইরে দায়িত্ব দেন না। সে যা অর্জন করে তা তার জন্যই এবং সে যা কামাই করে তা তার উপরই বর্তাবে। হে আমাদের রব! আমরা যদি ভুলে যাই, অথবা ভুল করি তাহলে আপনি আমাদেরকে পাকড়াও করবেন না”। [সূরা আল-বাকারাহ, আয়াত: ২৮৬], আল্লাহ বললেন, “অবশ্যই আমি তা করলাম”। আরো নাযিল হলো, “হে আমাদের রব, আমাদের উপর বোঝা চাপিয়ে দেবেন না, যেমন আমাদের পূর্ববর্তীদের উপর চাপিয়ে দিয়েছেন”। [সূরা আল-বাকারাহ, আয়াত: ২৮৬], আল্লাহ্ বললেন, “অবশ্যই তা করলাম”। আল্লাহ আরো ঘোষণা করলেন, আর আপনি আমাদেরকে মার্জনা করুন এবং আমাদেরকে ক্ষমা করুন, “আর আমাদের ওপর দয়া করুন। আপনি আমাদের অভিভাবক”। [সূরা আল-বাকারাহ, আয়াত: ২৮৬], আল্লাহ্ বললেন, “অবশ্যই তা করলাম”।
সহীহ, সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১২৬।
হাদীসের বাণী, دَخَلَ قُلُوبَهُمْ مِنْهَا شَيْءٌ  এখানে شَيْءٌ  এ নসব যোগে অর্থ হবে এ আয়াতের কারণে সাহাবীগণ খুবই উদ্বিগ্ন হয়ে পড়লেন। অথবা شَيْءٌ  এ রফ‘আ হবে। তখন এর অর্থ হবে এ আয়াতের কারণে তাদের অন্তরে অনেক বড় চিন্তা ঢুকল।
আর রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বাণী, لَمْ يَدْخُلْ قُلُوبَهُمْ مِنْ شَيْءٍ বাক্যটি সিফাত। অর্থাৎ এমন আর কোনো উদ্বিগ্ন বিষয় তাদের অন্তরে প্রবেশ করে নি।

৪১- পরিচ্ছেদ: আল্লাহ সম্পর্কে ভালো ধারণা রাখা তাঁর ভীতি ও তাঁর কাছে প্রত্যাশা সম্বলিত
 عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ، أَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «يَخْرُجُ مِنَ النَّارِ أَرْبَعَةٌ فَيُعْرَضُونَ عَلَى اللهِ، فَيَلْتَفِتُ أَحَدُهُمْ، فَيَقُولُ: أَيْ رَبِّ، إِذْ أَخْرَجْتَنِي مِنْهَا فَلَا تُعِدْنِي فِيهَا، فَيُنْجِيهِ اللهُ مِنْهَا».
আনাস ইবন মালিক রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “চার ব্যক্তিকে জাহান্নাম থেকে বের করে আল্লাহর সম্মুখে উপস্থিত করা হবে। অতঃপর তাদের এক ব্যক্তি ফিরে তাকাবে এবং বলবে, হে আমরা রব! আপনি যখন একবার আমাকে তা থেকে বের করেছেন, পুনরায় আমাকে সেখানে নিক্ষেপ করবেন না। ফলে আল্লাহ তাকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেবেন”।
সহীহ, সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৯২।
عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ:  «يَخْرُجُ رَجُلَانِ مِنَ النَّارِ، فَيُعْرَضَانِ عَلَى اللَّهِ، ثُمَّ يُؤْمَرُ بِهِمَا إِلَى النَّارِ، فَيَلْتَفِتُ أَحَدُهُمَا فَيَقُولُ: يَا رَبِّ، مَا كَانَ هَذَا رَجَائِي، قَالَ: وَمَا كَانَ رَجَاؤُكَ؟، قَالَ: كَانَ رَجَائِي إِذْ أَخْرَجْتَنِي مِنْهَا، أَنْ لَا تُعِيدَنِي، فَيَرْحَمُهُ اللَّهُ فَيُدْخِلُهُ الْجَنَّةَ».
আনাস ইবন মালিক রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “দু ব্যক্তিকে জাহান্নাম থেকে বের করে আল্লাহর সম্মুখে উপস্থিত করা হবে। অতঃপর তাদেরকে জাহান্নামে ফিরে যাওয়ার নির্দেশ দেয়া হবে। তাদের এক ব্যক্তি ফিরে চাইবে এবং বলবে, হে আমরা রব! এটি আমার আশা ছিলো না। তখন তাকে জিজ্ঞেস করা হবে, তাহলে তোমার কী আশা ছিলো? সে বলবে, আমার আশা ছিলো আপনি যখন একবার আমাকে তা থেকে বের করেছেন, পুনরায় আমাকে সেখানে নিক্ষেপ করবেন না। ফলে আল্লাহ তাকে রহমত করবেন এবং জান্নাতে প্রবেশ করাবেন”।
সহীহ, ইবন হিব্বান, হাদীস নং ৬৩২।
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، عَنْ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قَالَ: «إِنَّ اللَّهَ جَلَّ وَعَلَا يَقُولُ: أَنَا عِنْدَ ظَنِّ عَبْدِي بِي، إِنْ ظَنَّ خَيْرًا فَلَهُ، وَإِنْ ظَنَّ شَرًّا فَلَهُ».
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “নিশ্চয়ই আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন, “আমি আমার বান্দাহর ধারণা মতো। বান্দা যদি আমার সম্পর্কে ভালো ধারণা করে তবে আমি তার সাথে ভালো (ব্যবহার) করি, আর বান্দা যদি আমার সম্পর্কে মন্দ ধারণা রাখে তাহলে তার জন্য মন্দ ফয়সালা করি”।
সহীহ, ইবন হিব্বান, হাদীস নং ৬৩৯; মুসনাদ আহমদ, হাদীস নং ৯০৭৬।
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَرْوِي عَنْ رَبِّهِ جَلَّ وَعَلَا، قَالَ:  «وَعِزَّتِي لَا أَجْمَعُ عَلَى عَبْدِي خَوْفَيْنِ وَأَمْنَيْنِ، إِذَا خَافَنِي فِي الدُّنْيَا أَمَّنْتُهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ، وَإِذَا أَمِنَنِي فِي الدُّنْيَا أَخَفْتُهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ».
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মহান আল্লাহ তা‘আলা থেকে বর্ণনা করেছেন, আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন, “আমার ইয্যতের কসম! আমি আমার বান্দাহর ওপর (দুনিয়া ও আখিরাতে) ভীতি ও নিরাপদ দুটো একত্রিত করবো না। সে যদি দুনিয়াতে আমাকে ভয় করে আমি তাকে কিয়ামতে নিরাপদ রাখবো। আর সে যদি দুনিয়াতে নিরাপদে থাকে তবে কিয়ামতে তাকে আমি ভয়ে রাখবো”।
হাসান, ইবন হিব্বান, হাদীস নং ৬৪০; বাযযার – কাশফুল আসতার- হাদীস নং ৩২৩৩, ৩২৩২।

৪২- পরিচ্ছেদ: আল্লাহভীতি ও তাকওয়া সম্পর্কে
عَنْ أُمَّ العَلاَءِ، امْرَأَةً مِنَ الأَنْصَارِ بَايَعَتِ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَخْبَرَتْهُ: أَنَّهُ اقْتُسِمَ المُهَاجِرُونَ قُرْعَةً فَطَارَ لَنَا عُثْمَانُ بْنُ مَظْعُونٍ، فَأَنْزَلْنَاهُ فِي أَبْيَاتِنَا، فَوَجِعَ وَجَعَهُ الَّذِي تُوُفِّيَ فِيهِ، فَلَمَّا تُوُفِّيَ وَغُسِّلَ وَكُفِّنَ فِي أَثْوَابِهِ، دَخَلَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَقُلْتُ: رَحْمَةُ اللَّهِ عَلَيْكَ أَبَا السَّائِبِ، فَشَهَادَتِي عَلَيْكَ: لَقَدْ أَكْرَمَكَ اللَّهُ، فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «وَمَا يُدْرِيكِ أَنَّ اللَّهَ قَدْ أَكْرَمَهُ؟» فَقُلْتُ: بِأَبِي أَنْتَ يَا رَسُولَ اللَّهِ، فَمَنْ يُكْرِمُهُ اللَّهُ؟ فَقَالَ: «أَمَّا هُوَ فَقَدْ جَاءَهُ اليَقِينُ، وَاللَّهِ إِنِّي لَأَرْجُو لَهُ الخَيْرَ، وَاللَّهِ مَا أَدْرِي، وَأَنَا رَسُولُ اللَّهِ، مَا يُفْعَلُ بِي» قَالَتْ: فَوَاللَّهِ لاَ أُزَكِّي أَحَدًا بَعْدَهُ أَبَدًا.
রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে বায়‘আতকারী আনসারী মহিলা উম্মে ‘আলা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা থেকে বর্ণিত, (হিজরতের পর) লটারির মাধ্যমে মুহাজিরদের বণ্টন করা হচ্ছিলো। তাতে উসমান ইবন মায‘ঊন রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু আমাদের ভাগে পড়লেন। আমরা (সাদরে) তাকে আমাদের বাড়িতে স্থান দিলাম। এক সময় তিনি সে রোগে আক্রান্ত হলেন, যাতে তার মৃত্যু হলো। তিনি মারা গেলে যখন তাকে গোসল করিয়ে কাফনের কাপড় পরানো হলো, তখন রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রবেশ করলেন। তখন আমি বললাম, হে আবু সায়িব! আপনার ওপর আল্লাহ্‌র রহমত বর্ষিত হোক। আপনার সম্বন্ধে আমার সাক্ষ্য এই যে, আল্লাহ আপনাকে সম্মানিত করেছেন। তখন রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, “তুমি কি করে জানলে যে, আল্লাহ তাকে সম্মানিত করেছেন?” আমি বললাম, আমার পিতা আপনার জন্য কুরবান, ইয়া রাসূলাল্লাহ্! তাহলে আল্লাহ আর কাকে সম্মানিত করবেন? রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, “তার ব্যাপার তো এই যে, নিশ্চয় তার মৃত্যু হয়েছে এবং আল্লাহর কসম! আমি তার জন্য মঙ্গল কামনা করি। আল্লাহর কসম! আমি জানি না আমার সঙ্গে কী ব্যবহার করা হবে; অথচ আমি আল্লাহর রাসূল”। সেই আনসারী মহিলা বললেন, আল্লাহর কসম! এরপর আর কোনো দিন আমি কোনো ব্যক্তি সম্পর্কে পবিত্র বলে মন্তব্য করব না।
সহীহ, সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১২৪৩।

৪৩- পরিচ্ছেদ: আল্লাহর রহমত তাঁর আযাবের চেয়ে প্রশস্ত
عَنْ أَبِي سَعِيدٍ الخدري رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: أ«َنَّ رَجُلًا كَانَ قَبْلَكُمْ، رَغَسَهُ اللَّهُ مَالًا، فَقَالَ لِبَنِيهِ لَمَّا حُضِرَ: أَيَّ أَبٍ كُنْتُ لَكُمْ؟ قَالُوا: خَيْرَ أَبٍ، قَالَ: فَإِنِّي لَمْ أَعْمَلْ خَيْرًا قَطُّ، فَإِذَا مُتُّ فَأَحْرِقُونِي، ثُمَّ اسْحَقُونِي، ثُمَّ ذَرُّونِي فِي يَوْمٍ عَاصِفٍ، فَفَعَلُوا، فَجَمَعَهُ اللَّهُ عَزَّ وَجَلَّ، فَقَالَ: مَا حَمَلَكَ؟ قَالَ: مَخَافَتُكَ، فَتَلَقَّاهُ بِرَحْمَتِهِ».
আবু সা‘ঈদ আল-খুদরী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “তোমাদের পূর্ববর্তী যুগে এক ব্যক্তি - আল্লাহ তাকে প্রচুর ধন-সম্পদ দান করেছিলেন- যখন তার মৃত্যুর সময় ঘনিয়ে এলো তখন সে তার ছেলেদেরকে একত্রিত করে জিজ্ঞাসা করলো, আমি তোমাদের কেমন পিতা ছিলাম? তারা উত্তর দিলো, আপনি আমাদের উত্তম পিতা ছিলেন। সে বললো, আমি জীবনে কখনও কোনো ভালো আমল করতে পারি নি। আমি যখন মারা যাবো তখন তোমরা আমার লাশকে জ্বালিয়ে ভস্ম করে গুঁড়াগুলো রেখে দিও এবং প্রচণ্ড ঝড়ের দিনে ঐ ভস্ম বাতাসে উড়িয়ে দিও। সে মারা গেলে ছেলেরা অসিয়াত অনুযায়ী কাজ করলো। আল্লাহ তার ভস্ম একত্রিত (পুনঃজীবিত) করে জিজ্ঞাসা করলেন, এমন অদ্ভুত অসিয়াত করতে কে তোমাকে উদ্ধুদ্ধ করল? সে জবাব দিলো, হে আল্লাহ! তোমার শাস্তির ভয়। ফলে আল্লাহর রহমত তাকে ঢেকে নিলো”।
মুত্তাফাকুন ‘আলাইহি, সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৩৪৭৮; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৭৫৭।
রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বাণী,رَغَسَهُ  এর অর্থ আল্লাহ তাকে ধন-সম্পদ দান করেছেন এবং তাতে বরকত দিয়েছেন। رَغَس অর্থ বরকত, বৃদ্ধি ও কল্যাণ।
রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বাণী,  اسْحَقُونِيশব্দটি  السحق থেকে নির্গত। এর অর্থ চূর্ণ বিচূর্ণ করা, গুঁড়া করা।
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ: أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «قَالَ رَجُلٌ لَمْ يَعْمَلْ خَيْرًا قَطُّ: فَإِذَا مَاتَ فَحَرِّقُوهُ وَاذْرُوا نِصْفَهُ فِي البَرِّ، وَنِصْفَهُ فِي البَحْرِ، فَوَاللَّهِ لَئِنْ قَدَرَ اللَّهُ عَلَيْهِ لَيُعَذِّبَنَّهُ عَذَابًا لاَ يُعَذِّبُهُ أَحَدًا مِنَ العَالَمِينَ، فَأَمَرَ اللَّهُ البَحْرَ فَجَمَعَ مَا فِيهِ، وَأَمَرَ البَرَّ فَجَمَعَ مَا فِيهِ، ثُمَّ قَالَ: لِمَ فَعَلْتَ؟ قَالَ: مِنْ خَشْيَتِكَ وَأَنْتَ أَعْلَمُ، فَغَفَرَ لَهُ».
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “এক ব্যক্তি (জীবনেও) কোনো ভালো আমল করে নি। মৃত্যুর সময় সে বলল, মারা যাওয়ার পর তোমরা তাকে পুড়িয়ে ফেলো। আর অর্ধেক স্থলে আর অর্ধেক সাগরে ছড়িয়ে দাও। সে আরো বলল, আল্লাহর কসম! আল্লাহ যদি তাকে পেয়ে যান তাহলে অবশ্যই তাকে এমন শাস্তি দেবেন, যা জগতের আর কাউকে দেবেন না। তারপর আল্লাহ সাগরকে হুকুম দিলে সাগর এর মধ্যকার অংশকে একত্রিত করল। স্থলকে হুকুম দিলে সেও তার মধ্যকার অংশ একত্রিত করল। তারপর আল্লাহ বললেন, তুমি কেন এরূপ করলে? সে উত্তর বলল, তোমার ভয়ে। আর তুমি অধিক জ্ঞাত। এর প্রেক্ষিতে আল্লাহ তাকে ক্ষমা করে দিলেন”।
মুত্তাফাকুন ‘আলাইহি, মুয়াত্তা মালিক, হাদীস নং ৫২; সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৭৫০৬; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৭৫৬।
عَنْ عُقْبَة أنه قال لِحُذَيْفَةَ: أَلاَ تُحَدِّثُنَا مَا سَمِعْتَ مِنَ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ؟ قَالَ: سَمِعْتُهُ يَقُولُ: «إِنَّ رَجُلًا حَضَرَهُ المَوْتُ، لَمَّا أَيِسَ مِنَ الحَيَاةِ أَوْصَى أَهْلَهُ: إِذَا مُتُّ فَاجْمَعُوا لِي حَطَبًا كَثِيرًا، ثُمَّ أَوْرُوا نَارًا، حَتَّى إِذَا أَكَلَتْ لَحْمِي، وَخَلَصَتْ إِلَى عَظْمِي، فَخُذُوهَا فَاطْحَنُوهَا فَذَرُّونِي فِي اليَمِّ فِي يَوْمٍ حَارٍّ، أَوْ رَاحٍ، فَجَمَعَهُ اللَّهُ فَقَالَ؟ لِمَ فَعَلْتَ؟ قَالَ: خَشْيَتَكَ، فَغَفَرَ لَهُ»، قَالَ عُقْبَةُ: وَأَنَا سَمِعْتُهُ يَقُولُ.
উকবা ইবন ‘আমের রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি হুযাইফা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুকে বললেন, আপনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে যা শুনেছেন তা থেকে কিছু বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, “এক ব্যক্তির যখন মৃত্যুর সময় ঘনিয়ে এলো এবং সে জীবন থেকে নিরাশ হয়ে গেলো তখন সে তার পরিবার পরিজনকে অসিয়াত করল, যখন আমি মরে যাব তখন তোমরা আমার জন্য অনেক লাকড়ি জমা করে (তার ভিতরে আমাকে রেখে) আগুনে জ্বালিয়ে দিও। আগুন যখন আমার গোশত জ্বালিয়ে পুড়িয়ে হাড় পর্যন্ত পৌঁছে যাবে তখন (অদগ্ধ) হাড়গুলি পিষে ছাই করে নিও। তারপর সেই ছাই গরমের দিন কিংবা প্রচণ্ড বাতাসের দিনে সাগরে ভাসিয়ে দিও (তারা তাই করল)। আল্লাহ তা‘আলা (তার ভস্মীভূত দেহ একত্রিত করে) জিজ্ঞাসা করলেন, তুমি এমন কেন করলে? সে বলল, আপনার ভয়ে। আল্লাহ তাকে ক্ষমা করে দিলেন”। উকবা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, আর আমিও তাকে তা বলতে শুনেছি।
সহীহ, সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৩৪৭৯।

৪৪- পরিচ্ছেদ: দীনের ব্যাপারে কোনো জবরদস্তি নেই
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ، فِي قَوْلِهِ: ﴿لَآ إِكۡرَاهَ فِي ٱلدِّينِ﴾ [البقرة: ٢٥٦]، قَالَ: كَانَتَ الْمَرْأَةُ مِنَ الْأَنْصَارِ لَا يَكَادُ يَعِيشُ لَهَا وَلَدٌ، فَتَحْلِفُ: لَئِنْ عَاشَ لَهَا وَلَدٌ لَتُهَوِّدَنَّهُ، فَلَمَّا أُجْلِيَتْ بَنُو النَّضِيرِ إِذَا فِيهِمْ نَاسٌ مِنْ أَبْنَاءِ الْأَنْصَارِ، فَقَالَتِ الْأَنْصَارُ: يَا رَسُولَ اللَّهِ، أَبْنَاؤُنَا، فَأَنْزَلَ اللَّهُ هَذِهِ الْآيَةَ:  ﴿لَآ إِكۡرَاهَ فِي ٱلدِّينِ﴾ [البقرة: ٢٥٦]، قَالَ سَعِيدُ بْنُ جُبَيْرٍ: فَمَنْ شَاءَ لَحِقَ بِهِمْ، وَمَنْ شَاءَ دَخَلَ فِي الْإِسْلَامِ.
ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি আল্লাহর বাণী, “দীন গ্রহণের ব্যাপারে কোনো জবরদস্তি নেই”। [সূরা আল-বাকারাহ, আয়াত: ২৫৬] সম্পর্কে বলেন, (জাহেলী যুগে) কোনো কোনো আনসার মহিলার সন্তান জীবিত থাকতো না। ফলে সে মানত করতো যে, “যদি তার সন্তান বেঁচে থাকে তবে সে তাকে  ইয়াহূদী  বানাবে। অবশেষে বনূ নাযীরকে যখন দেশান্তর করা হয়, তখন তাদের সাথে আনসারদের ঐরূপ কয়েকটি সন্তান ছিল। তখন তারা বললো, ইয়া রাসূলাল্লাহ এরা তো আমাদের সন্তান তখন আল্লাহ এ আয়াত নাযিল করেন, “দীন গ্রহণের ব্যাপারে কোন জবরদস্তি নেই”। [সূরা আল-বাকারাহ, আয়াত: ২৫৬]। সা‘ঈদ ইবন জুবায়ের রহ. বলেন, যারা চায় তারা ইয়াহূদীদের সাথে যোগ দিবে, আর যাদের ইচ্ছা তারা ইসলামে প্রবেশ করবে”।
সহীহ, ইবন হিব্বান, হাদীস নং ১৪০; আবু দাউদ, হাদীস নং ২৬৮২।
আবু দাউদের বর্ণনায় এসেছে,
«كَانَتِ الْمَرْأَةُ تَكُونُ مِقْلَاتًا فَتَجْعَلُ عَلَى نَفْسِهَا إِنْ عَاشَ لَهَا وَلَدٌ أَنْ تُهَوِّدَهُ».
(জাহেলী যুগে) কোনো  কোনো মহিলার সন্তান  জীবিত থাকতো  না। ফলে সে মানত করতো যে, “যদি তার সন্তান বেঁচে থাকে তবে সে তাকে ইয়াহূদী বানাবে”।
সহীহ, আবু দাউদ, হাদীস নং ২৬৮২।
আবুদাউদরহ.বলেন,مِقْلَاتًاমিকলা ঐ মহিলাকে বলা হয়, যার কোনো সন্তান জীবিত থাকে না  
عَنْ أَنَسٍ، أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ لِرَجُلٍ: «أَسْلِمْ» قَالَ: إِنِّي أَجِدُنِي كَارِهًا، قَالَ: «وَإِنْ كُنْتَ كَارِهًا».
আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক ব্যক্তিকে বললেন, “তুমি ইসলাম গ্রহণ করো”। সে বলল, আমি ইসলামকে অপছন্দ করি। তখন রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন, যদিও এখন তুমি ইসলাম অপছন্দ করো তবুও ইসলাম গ্রহণ করো।
সহীহ, মুসনাদ আহমদ, হাদীস নং ১২৮৬৮, ১২০৬১।
এ হাদীসে জবরদস্তি করে ইসলাম গ্রহণের কথা বলা হয় নি; বরং নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে ইসলামের প্রতি আহ্বান করেছেন। সে তাকে জানালো, তার অন্তর এখনও ইসলাম গ্রহণে আগ্রহী নয়; বরং অপছন্দকারী। তখন রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন, তুমি ইসলাম গ্রহণ করো; যদিও এখন তুমি ইসলামকে অপছন্দ করো; কেননা তোমার সুন্দর নিয়ত ও ইখলাসের বদৌলতে আল্লাহ তোমার অন্তরকে পরিবর্তন করে অচিরেই ইসলাম গ্রহণের তাওফিক দিবেন। ইবন কাসীর তার তাফসীরে তা বলেছেন

৪৫- পরিচ্ছেদ: আল্লাহর বাণী,
﴿وَإِن طَآئِفَتَانِ مِنَ ٱلۡمُؤۡمِنِينَ ٱقۡتَتَلُواْ فَأَصۡلِحُواْ بَيۡنَهُمَاۖ﴾ [الحجرات: ٩]  
“আর যদি মুমিনদের দু’দল যুদ্ধে লিপ্ত হয়, তাহলে তোমরা তাদের মধ্যে মীমাংসা করে দাও”। [সূরা আল-হুজুরাত, আয়াত: ৯] আল্লাহ তাদেরকে মুমিন বলে সম্বোধন করেছেন।
عَنِ الأَحْنَفِ بْنِ قَيْسٍ، قَالَ: ذَهَبْتُ لِأَنْصُرَ هَذَا الرَّجُلَ، فَلَقِيَنِي أَبُو بَكْرَةَ فَقَالَ أَيْنَ تُرِيدُ؟ قُلْتُ: أَنْصُرُ هَذَا الرَّجُلَ، قَالَ: ارْجِعْ فَإِنِّي سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: «إِذَا التَقَى المُسْلِمَانِ بِسَيْفَيْهِمَا فَالقَاتِلُ وَالمَقْتُولُ فِي النَّارِ»، فَقُلْتُ يَا رَسُولَ اللَّهِ هَذَا القَاتِلُ فَمَا بَالُ المَقْتُولِ قَالَ: «إِنَّهُ كَانَ حَرِيصًا عَلَى قَتْلِ صَاحِبِهِ».
আহনাফ ইবন কায়স রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি (সিফফীনের যুদ্ধে) এ ব্যক্তিকে [আলী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুকে] সাহায্য করতে যাচ্ছিলাম। আবু বকরা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর সাথে আমার সাক্ষাৎ হলে তিনি বললেন, তুমি কোথায় যাচ্ছো? আমি বললাম, আমি এ ব্যক্তিকে সাহায্য করতে যাচ্ছি। তিনি বললেন, ফিরে যাও; কারণ আমি রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি যে, “দু’জন মুসলিম তাদের তরবারি নিয়ে মুখোমুখি হলে হত্যাকারী এবং নিহত ব্যক্তি উভয়ে জাহান্নামে যাবে”। আমি বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ্! এ হত্যাকারী (তো অপরাধী); কিন্তু নিহত ব্যক্তির কী অপরাধ? তিনি বললেন, “(নিশ্চয়ই) সে তার সঙ্গীকে হত্যা করার জন্য উদগ্রীব ছিলো”।
মুত্তাফাকুন ‘আলাইহি, সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৩১; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৮৮৮।

৪৬- পরিচ্ছেদ: মুসলিমকে গালি দেওয়া ফাসেকী এবং তার সাথে লড়াই করা কুফুরী
عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ مَسْعُودٍ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «سِبَابُ الْمُسْلِمِ فُسُوقٌ وَقِتَالُهُ كُفْرٌ».
আব্দুল্লাহ ইবন মাস‘উদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “মুসলিমকে গালি দেওয়া ফাসিকী এবং তার সাথে লড়াই করা কুফুরী”।
মুত্তাফাকুন ‘আলাইহি, সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৪৮; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৬৪।
রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বাণী, «وَقِتَالُهُ كُفْرٌ»  এর ব্যাখ্যায় ইমাম বাগভী ‘শরহে সুন্নাহ’ ১৩/১৩০ এ বলেন, “যারা অন্য মুসলিমের রক্ত হালাল মনে করেন। ইসলাম মুসলিমের রক্ত হারাম করেছে। অতএব, যে ব্যক্তি মুসলিমের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে সে মুরতাদ হয়ে যাবে এবং এভাবে সে প্রকৃত কুফুরী করল। তাদের এ ধরণের কাজকে কাফেরদের কাজের সাথে সাদৃশ করা হয়েছে; যদিও আসল কুফুরী নয়। যেহেতু একে অন্যের রক্ত হালাল নয়। যেমন রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
 «لاَ تَرْجِعُوا بَعْدِي كُفَّارًا، يَضْرِبُ بَعْضُكُمْ رِقَابَ بَعْضٍ»
“আমার পরে তোমরা কাফির (এর মতো) হয়ে যেও না যে, একে অপরের গর্দান কাটবে”।
মুত্তাফাকুন ‘আলাইহি, সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১২১; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৬৫।
অর্থাৎ তোমরা তাদের মতো কাজ করো না, যাদের অভ্যাস হলো একে অপরের গর্দান কাটা।
 
৪৭- পরিচ্ছেদ: রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বাণীর অর্থ,
«لاَ تَرْجِعُوا بَعْدِي كُفَّارًا».
“আমার পরে তোমরা কাফির হয়ে যেও না”।
عَنْ جَرِيرٍ أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ لَهُ فِي حَجَّةِ الوَدَاعِ: «اسْتَنْصِتِ النَّاسَ» فَقَالَ: «لاَ تَرْجِعُوا بَعْدِي كُفَّارًا، يَضْرِبُ بَعْضُكُمْ رِقَابَ بَعْضٍ».
জারীর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, বিদায় হজের সময় রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন, “তুমি লোকদেরকে চুপ করিয়ে দাও, তারপর তিনি বললেন, “আমার পরে তোমরা কাফির হয়ে যেও না যে, একে অপরের গর্দান কাটবে”।
মুত্তাফাকুন ‘আলাইহি, সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১২১; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৬৫।
রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বাণী, يَضْرِبُ  শব্দটির বা বর্ণে দম্মা যোগে অর্থ হবে, তোমরা কাফেরদের কাজের মতো কাজ করো না। একে অপরকে হত্যা করার ব্যাপারে তাদেরকে কাফেরদের সাথে সাদৃশ করা হয়েছে। ফাতহুল বারী, ১/২১৭।

৪৮- পরিচ্ছেদ: যে ব্যক্তি বলে, অমুক অমুক নক্ষত্রের প্রভাবে আমাদের উপর বৃষ্টিপাত হয়েছে তার ব্যাপারে কুফুরী নাম ব্যবহার করা   
عَنْ زَيْدِ بْنِ خَالِدٍ الجُهَنِيِّ، أَنَّهُ قَالَ: صَلَّى لَنَا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ صَلاَةَ الصُّبْحِ بِالحُدَيْبِيَةِ عَلَى إِثْرِ سَمَاءٍ كَانَتْ مِنَ اللَّيْلَةِ، فَلَمَّا انْصَرَفَ أَقْبَلَ عَلَى النَّاسِ، فَقَالَ: هَلْ تَدْرُونَ مَاذَا قَالَ رَبُّكُمْ؟ قَالُوا: اللَّهُ وَرَسُولُهُ أَعْلَمُ، قَالَ: «أَصْبَحَ مِنْ عِبَادِي مُؤْمِنٌ بِي وَكَافِرٌ، فَأَمَّا مَنْ قَالَ: مُطِرْنَا بِفَضْلِ اللَّهِ وَرَحْمَتِهِ، فَذَلِكَ مُؤْمِنٌ بِي وَكَافِرٌ بِالكَوْكَبِ، وَأَمَّا مَنْ قَالَ: بِنَوْءِ كَذَا وَكَذَا، فَذَلِكَ كَافِرٌ بِي وَمُؤْمِنٌ بِالكَوْكَبِ».
যায়েদ ইবন খালিদ আল-জুহানী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাতে বৃষ্টি হওয়ার পর হুদায়বিয়াতে আমাদের নিয়ে ফজরের সালাত আদায় করলেন। সালাত শেষে তিনি লোকদের দিকে ফিরে বললেন, “তোমরা কি জানো তোমাদের রব কী বলেছেন? তারা বললেন, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলই উত্তম জানেন। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, (রব) বলেন, আমার বান্দাদের মধ্যে কেউ আমার প্রতি মুমিন হয়ে গেল এবং কেউ কাফির। যে বলেছে, আল্লাহর করুণা ও রহমতে আমরা বৃষ্টি লাভ করেছি, সে হলো আমার প্রতি বিশ্বাসী এবং নক্ষত্রের প্রতি অবিশ্বাসী। আর যে বলেছে, অমুক অমুক নক্ষত্রের প্রভাবে আমাদের উপর বৃষ্টিপাত হয়েছে, সে আমার প্রতি অবিশ্বাসী হয়েছে এবং নক্ষত্রের প্রতি বিশ্বাস স্থাপনকারী হয়েছে”।
মুত্তাফাকুন ‘আলাইহি, মুয়াত্তা মালিক, হাদীস নং ৪; সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৮৪৬; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৭১।
হাদীসে উল্লিখিত النوء শব্দটির ব্যাখ্যায় ইবন সালাহ বলেন, “এটি মূলত নক্ষত্র অর্থে নয়; কেননা এটিناء ينوء  এর মাসদার। অর্থ পড়ে যাওয়া, অদৃশ্য হওয়া। কেউ কেউ বলেছেন, উদিত হওয়া”। অতঃপর তিনি বলেন, “স্বয়ং নক্ষত্রকেنوء  বলে, ফায়েলকে মাসদার হিসেবে ব্যবহার করে। আবু ইসহাক যাজ্জাজ তার কিছু ‘আমালী’ তে বলেছেন, পশ্চিমে পড়ে যাওয়া তারকাকেالأنواء  বলে, আর পূর্বে উদিত হওয়া তারকাকেالبوارح  বলে। সিয়ানাতু সহীহ মুসলিম, পৃ. ২৪৬-২৪৭।
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ:«أَلَمْ تَرَوْا إِلَى مَا قَالَ رَبُّكُمْ؟ قَالَ: مَا أَنْعَمْتُ عَلَى عِبَادِي مِنْ نِعْمَةٍ إِلَّا أَصْبَحَ فَرِيقٌ مِنْهُمْ بِهَا كَافِرِينَ. يَقُولُونَ الْكَوَاكِبُ وَبِالْكَوَاكِبِ»
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “তোমরা কি জানো তোমাদের রব কী বলেছেন? তিনি বলেছেন, আমি যখন আমার বান্দার উপর অনুগ্রহ করি, তখনই তাদের একদল তা অস্বীকার করে এবং বলতে থাকে নক্ষত্র ও নক্ষত্রের প্রভাবে আমাদের কাজ হয়”।
সহীহ, সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৭২।
সহীহ মুসলিমের অন্য বর্ণনায় এসেছে,
«مَا أَنْزَلَ اللهُ مِنَ السَّمَاءِ مِنْ بَرَكَةٍ إِلَّا أَصْبَحَ فَرِيقٌ مِنَ النَّاسِ بِهَا كَافِرِينَ، يُنْزِلُ اللهُ الْغَيْثَ فَيَقُولُونَ: الْكَوْكَبُ كَذَا وَكَذَا».
“আল্লাহ তা‘আলা আসমান থেকে কোনো বরকত (বৃষ্টি) অবতীর্ণ করলে, একদল লোক প্রত্যুষে তা অস্বীকার করে, বৃষ্টিপাত করান আল্লাহ তা‘আলা আর তারা বলতে থাকে যে, অমুক অমুক নক্ষত্র”।
সহীহ, সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৭২।
عَنْ ابْنُ عَبَّاسٍ، قَالَ: مُطِرَ النَّاسُ عَلَى عَهْدِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَقَالَ: النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: " أَصْبَحَ مِنَ النَّاسِ شَاكِرٌ وَمِنْهُمْ كَافِرٌ، قَالُوا: هَذِهِ رَحْمَةُ اللهِ، وَقَالَ بَعْضُهُمْ: لَقَدْ صَدَقَ نَوْءُ كَذَا وَكَذَا " قَالَ: فَنَزَلَتْ هَذِهِ الْآيَةُ: ﴿فَلَآ أُقۡسِمُ بِمَوَٰقِعِ ٱلنُّجُومِ٧٥﴾ [الواقعة: ٧٥]، حَتَّى بَلَغَ: ﴿وَتَجۡعَلُونَ رِزۡقَكُمۡ أَنَّكُمۡ تُكَذِّبُونَ٨٢﴾ [الواقعة: ٨٢].
ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যুগে একবার বৃষ্টিপাত হলে, তিনি বললেন, “লোকদের কেউবা কৃতজ্ঞ রয়েছে আর কেউবা অকৃতজ্ঞ। একদল বলে, এটি আল্লাহর রহমত, অপর দল বলে অমুক অমুক নক্ষত্রের প্রভাবে তা প্রকাশ পেয়েছে। এ বিষয়ে আল্লাহ নাযিল করেন, “আমি নক্ষত্ররাজির অস্তাচলের শপথ করছি”। [সূরা আল-ওয়াক্বি‘আহ, আয়াত: ৭৫], তিনি আয়াত পর্যন্ত পড়েন, “আর মিথ্যাচারকেই তোমরা তোমাদের জীবনের সম্বল করে নিয়েছ?”। [সূরা আল-ওয়াক্বি‘আহ, আয়াত: ৮২]।
সহীহ, মুসলিম, হাদীস নং ৭৩।

৪৯- পরিচ্ছেদ: বংশ তুলে নিন্দাকারী ও মৃতের জন্যে বিলাপকারীর কর্মকাণ্ড কুফুরী নামে আখ্যায়িত
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «اثْنَتَانِ فِي النَّاسِ هُمَا بِهِمْ كُفْرٌ: الطَّعْنُ فِي النَّسَبِ وَالنِّيَاحَةُ عَلَى الْمَيِّتِ».
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “দুটি স্বভাব মানুষের মাঝে রয়েছে, যে দুটি কুফুরী বলে গণ্য: বংশের প্রতি কটাক্ষ করা এবং মৃতের জন্য উচ্চঃস্বরে বিলাপ করা”।
সহীহ, সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৬৭।
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، أَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «ثَلَاثٌ مِنْ عَمَلِ أَهْلِ الْجَاهِلِيَّةِ لَا يَتْرُكُهُنَّ أَهْلُ الْإِسْلَامِ: النِّيَاحَةُ، وَالِاسْتِسْقَاءُ بِالْأَنْوَاءِ» وَكَذَا قُلْتُ لِسَعِيدٍ: وَمَا هُوَ؟ قَالَ: «دَعْوَى الْجَاهِلِيَّةِ: يَا آلَ فُلَانٍ، يَا آلَ فُلَانٍ».
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “তিনটি কাজ জাহেলী যুগের মানুষের, যা ইসলাম যুগের মানুষ এখনও ত্যাগ করে নি। সেগুলো হলো: মৃতের জন্য উচ্চঃস্বরে বিলাপ করা, নক্ষত্রের সাহায্যে বৃষ্টি চাওয়া। এমনিভাবে, আমি সাঈদ রহ. জিজ্ঞেস করলাম তৃতীয়টি কী? তিনি বললেন, জাহেলী যুগের ডাক, তা হলো: হে অমুকের বংশধর! হে অমুকের বংশধর! বলে ডাক দেওয়া”।
হাসান, মুসনাদ আহমদ, হাদীস নং ৭৫৬০; ইবন হিব্বান, হাদীস নং ৩১৪১।

৫০- পরিচ্ছেদ: ইসলাম তার পূর্বের সব কিছু ধ্বংস করে দিয়েছে
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا: أَنَّ نَاسًا، مِنْ أَهْلِ الشِّرْكِ كَانُوا قَدْ قَتَلُوا وَأَكْثَرُوا، وَزَنَوْا وَأَكْثَرُوا، فَأَتَوْا مُحَمَّدًا صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ [ص:126] فَقَالُوا: إِنَّ الَّذِي تَقُولُ وَتَدْعُو إِلَيْهِ لَحَسَنٌ، لَوْ تُخْبِرُنَا أَنَّ لِمَا عَمِلْنَا كَفَّارَةً فَنَزَلَ: ﴿وَٱلَّذِينَ لَا يَدۡعُونَ مَعَ ٱللَّهِ إِلَٰهًا ءَاخَرَ وَلَا يَقۡتُلُونَ ٱلنَّفۡسَ ٱلَّتِي حَرَّمَ ٱللَّهُ إِلَّا بِٱلۡحَقِّ وَلَا يَزۡنُونَ﴾ [الفرقان: ٦٨]  وَنَزَلَتْ: ﴿قُلۡ يَٰعِبَادِيَ ٱلَّذِينَ أَسۡرَفُواْ عَلَىٰٓ أَنفُسِهِمۡ لَا تَقۡنَطُواْ مِن رَّحۡمَةِ ٱللَّهِ﴾ [الزمر: ٥٢].
ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, মুশরিকদের কতিপয় লোক যারা ব্যাপকভাবে হত্যা ও ব্যভিচারে লিপ্ত ছিল। তারা মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দরবারে এসে জিজ্ঞেস করল, আপনি যে দীনের প্রতি মানুষদের আহ্বান জানাচ্ছেন, এ তো অনেক উত্তম বিষয়। তবে আমাদের পূর্বকৃত গুনাহসমূহের কাফফারা সম্পর্কে আপনি যদি আমাদের নিশ্চিতভাবে কিছু অবহিত করতেন। তখন এ আয়াত নাযিল হয়: “আর যারা আল্লাহর সাথে অন্য ইলাহকে ডাকে না এবং যারা আল্লাহ যে নফসকে হত্যা করা নিষেধ করেছেন যথার্থ কারণ ছাড়া তাকে হত্যা করে না। আর যারা ব্যভিচার করে না”। [সূরা আল-ফুরকান, আয়াত: ৬৮]
আরো নাযিল হয়, “বলুন ‘হে আমার বান্দাগণ, যারা নিজদের উপর বাড়াবাড়ি করেছ তোমরা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না”। [সূরা আয-যুমার, আয়াত: ৫২]
মুত্তাফাকুন ‘আলাইহি, সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৪৮১০; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১২২।
عَنِ ابْنِ مَسْعُودٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، قَالَ: قَالَ رَجُلٌ: يَا رَسُولَ اللَّهِ، أَنُؤَاخَذُ بِمَا عَمِلْنَا فِي الجَاهِلِيَّةِ؟ قَالَ: «مَنْ أَحْسَنَ فِي الإِسْلاَمِ لَمْ يُؤَاخَذْ بِمَا عَمِلَ فِي الجَاهِلِيَّةِ، وَمَنْ أَسَاءَ فِي الإِسْلاَمِ أُخِذَ بِالأَوَّلِ وَالآخِرِ».
আব্দুল্লাহ ইবন মাসউদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একলোক আরয করল, হে আল্লাহর রাসূল! আমরা জাহেলী যুগে যা করেছি, এর জন্যও কি আমাদের পাকড়াও করা হবে? তিনি বললেন, “যে ব্যক্তি ইসলাম অবস্থায় ভালো করবে, জাহেলী যুগে সে কী করেছে, তার জন্য পাকড়াও করা হবে না। আর ইসলাম গ্রহণের পর যে মন্দ করবে, তাকে প্রথম ও শেষ সব আমলের জন্য পাকড়াও করা হবে”।
মুত্তাফাকুন ‘আলাইহি, সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৬৯২১; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১২০।
হাদীসে উল্লিখিতالإساءة  শব্দের অর্থ কুফুরী ও শির্কী। যে ব্যক্তি ইসলাম গ্রহণের পরে আল্লাহর সাথে শির্ক ও কুফুরী করবে তাকে জাহেলী ও ইসলাম যুগের সব আমলের জন্য পাকড়াও করা হবে। আর যে ব্যক্তি শির্ক ও কুফুরী করবে না, তাকে জাহেলী যুগের আমলের জন্য পাকড়াও করা হবে না। কেননা আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,  
﴿قُل لِّلَّذِينَ كَفَرُوٓاْ إِن يَنتَهُواْ يُغۡفَرۡ لَهُم مَّا قَدۡ سَلَفَ﴾ [الانفال: ٣٨]  
“যারা কুফুরী করেছে আপনি তাদেরকে বলুন, যদি তারা বিরত হয় তাহলে অতীতে যা হয়েছে তাদেরকে তা ক্ষমা করা হবে”। [সূরা আল-আনফাল, আয়াত: ৩৮]
আমর ইবন ‘আস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বর্ণিত পূর্বের হাদীসে এসেছে,
«إنَّ الْإِسْلَامَ يَهْدِمُ مَا كَانَ قَبْلَهُ»
“ইসলাম পূর্বের সব মন্দ আমল ধ্বংস করে দেয়”।
সহীহ, সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১২১।
عَنِ ابْنِ شِمَاسَةَ الْمَهْرِيِّ، قَالَ: حَضَرْنَا عَمْرَو بْنَ الْعَاصِ، وَهُوَ فِي سِيَاقَةِ الْمَوْتِ، يَبَكِي طَوِيلًا، وَحَوَّلَ وَجْهَهُ إِلَى الْجِدَارِ، فَجَعَلَ ابْنُهُ يَقُولُ: يَا أَبَتَاهُ، أَمَا بَشَّرَكَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِكَذَا؟ أَمَا بَشَّرَكَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِكَذَا؟ قَالَ: فَأَقْبَلَ بِوَجْهِهِ، فَقَالَ: إِنَّ أَفْضَلَ مَا نُعِدُّ شَهَادَةُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ، وَأَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللهِ، إِنِّي قَدْ كُنْتُ عَلَى أَطْبَاقٍ ثَلَاثٍ، لَقَدْ رَأَيْتُنِي وَمَا أَحَدٌ أَشَدَّ بُغْضًا لِرَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مِنِّي، وَلَا أَحَبَّ إِلَيَّ أَنْ أَكُونَ قَدِ اسْتَمْكَنْتُ مِنْهُ، فَقَتَلْتُهُ، فَلَوْ مُتُّ عَلَى تِلْكَ الْحَالِ لَكُنْتُ مِنْ أَهْلِ النَّارِ، فَلَمَّا جَعَلَ اللهُ الْإِسْلَامَ فِي قَلْبِي أَتَيْتُ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَقُلْتُ: ابْسُطْ يَمِينَكَ فَلْأُبَايِعْكَ، فَبَسَطَ يَمِينَهُ، قَالَ: فَقَبَضْتُ يَدِي، قَالَ: «مَا لَكَ يَا عَمْرُو؟» قَالَ: قُلْتُ: أَرَدْتُ أَنْ أَشْتَرِطَ، قَالَ: «تَشْتَرِطُ بِمَاذَا؟» قُلْتُ: أَنْ يُغْفَرَ لِي، قَالَ: «أَمَا عَلِمْتَ أَنَّ الْإِسْلَامَ يَهْدِمُ مَا كَانَ قَبْلَهُ؟ وَأَنَّ الْهِجْرَةَ تَهْدِمُ مَا كَانَ قَبْلَهَا؟ وَأَنَّ الْحَجَّ يَهْدِمُ مَا كَانَ قَبْلَهُ؟» وَمَا كَانَ أَحَدٌ أَحَبَّ إِلَيَّ مِنْ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، وَلَا أَجَلَّ فِي عَيْنِي مِنْهُ، وَمَا كُنْتُ أُطِيقُ أَنْ أَمْلَأَ عَيْنَيَّ مِنْهُ إِجْلَالًا لَهُ، وَلَوْ سُئِلْتُ أَنْ أَصِفَهُ مَا أَطَقْتُ؛ لِأَنِّي لَمْ أَكُنْ أَمْلَأُ عَيْنَيَّ مِنْهُ، وَلَوْ مُتُّ عَلَى تِلْكَ الْحَالِ لَرَجَوْتُ أَنْ أَكُونَ مِنْ أَهْلِ الْجَنَّةِ، ثُمَّ وَلِينَا أَشْيَاءَ مَا أَدْرِي مَا حَالِي فِيهَا، فَإِذَا أَنَا مُتُّ فَلَا تَصْحَبْنِي نَائِحَةٌ، وَلَا نَارٌ، فَإِذَا دَفَنْتُمُونِي فَشُنُّوا عَلَيَّ التُّرَابَ شَنًّا، ثُمَّ أَقِيمُوا حَوْلَ قَبْرِي قَدْرَ مَا تُنْحَرُ جَزُورٌ وَيُقْسَمُ لَحْمُهَا، حَتَّى أَسْتَأْنِسَ بِكُمْ، وَأَنْظُرَ مَاذَا أُرَاجِعُ بِهِ رُسُلَ رَبِّي.
ইবন শিমাসা আল-মাহরী রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা ‘আমর ইবন ‘আস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর মুমূর্ষ অবস্থায় তাকে দেখতে উপস্থিত হলাম।  তখন তিনি দেয়ালের দিকে মুখ করে অনেকক্ষণ কাঁদছিলেন। তার পুত্র তাকে তার সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রদত্ত বিভিন্ন সুসংবাদের উল্লেখ পূর্বক প্রবোধ দিচ্ছেন যে, আব্বা! রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কি আপনাকে অমুক সুসংবাদ দেন নি? রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কি আপনাকে অমুক সুসংবাদ দেন নি? বর্ণনাকারী বলেন, তখন তিনি পুত্রের দিকে মুখ ফিরালেন এবং বললেন, আমার সর্বোৎকৃষ্ট পাথেয় হচ্ছে ‘লা ইলাহা ইল্লালাহু মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ’- এ কালেমার সাক্ষ্য দেওয়া। আর আমি অতিক্রম করেছি আমার জীবনের তিনটি পর্যায়। এক সময় তো আমি এমন ছিলাম যে, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বিরুদ্ধাচরণে আমার চেয়ে কঠোরতর আর কেউই ছিল না। আমি যদি রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে কব্জায় পেতাম আর হত্যা করতে পারতাম, এ ছিল আমার সবচেয়ে প্রিয় ভাবনা। যদি সে অবস্থায় আমার মৃত্যু হতো, তবে নিশ্চিত আমাকে জাহান্নামে যেতে হতো। এরপর আল্লাহ যখন আমার অন্তরে ইসলামের অনুরাগ সৃষ্টি করে দিলেন, তখন আমি রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দরবারে উপস্থিত হয়ে অনুরোধ জানালাম যে, আপনার ডান হাত বাড়িয়ে দিন, আমি বায়‘আত করতে চাই। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর ডান হাত বাড়িয়ে দিলেন, তখন আমি আমার হাত টেনে নিলাম। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘আমর, কী ব্যাপার? আমি বললাম, পূর্বে আমি শর্ত করে নিতে চাই। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিজ্ঞেস করলেন, কী শর্ত করবে? আমি উত্তরে বললাম, আল্লাহ যেন আমার সব গুনাহ মাফ করে দেন। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘আমর! তুমি কী জানো না যে, ইসলাম পূর্ববর্তী সকল অন্যায় মিটিয়ে দেয়। হিজরত পূর্বেকৃত গুনাহসমূহ মিটিয়ে দেয় এবং হজও পূর্বের সকল গুনাহ মিটিয়ে দেয়। ‘আমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বললেন, এ পর্যায়ে আমার অন্তরে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অপেক্ষা বেশি প্রিয় আর কেউ ছিল না। আমার চোখে তিনি অপেক্ষা মহান আর কেউ ছিল না। অপরিসীম শ্রদ্ধার কারণে আমি তার প্রতি চোখ ভরে তাকাতেও পারতাম না। আজ যদি আমাকে তাঁর দেহ আকৃতির বর্ণনা করতে বলা হয়, তবে আমার পক্ষে তা সম্ভব হয়ে উঠবে না। কারণ চোখভরে আমি কখনোই তাঁর প্রতি তাকাতে পারি নি। ঐ অবস্থায় যদি আমার মৃত্যু হতো তবে অবশ্যই আমি জান্নাতী হওয়ার আশাবাদী থাকতাম। পরবর্তীকালে আমরা নানা বিষয়ের সাথে জড়িয়ে পড়েছি। তাই জানি না, এতে আমার অবস্থান কোথায়? সুতরাং আমি যখন মারা যাবো, তখন যেনো কোনো বিলাপকারী অথবা আগুন যেন আমার জানাযার সাথে না থাকে। আমাকে যখন দাফন করবে তখন আমার উপর আস্তে আস্তে মাটি ফেলবে এবং দাফন সেরে একটি উট যবাই করে তার গোশত বণ্টন করতে যে সময় লাগে, ততক্ষণ আমার কবরের পাশে অবস্থান করবে, যেনো তোমাদের উপস্থিতির কারণে আমি আতঙ্ক-মুক্ত অবস্থায় চিন্তা করতে পারি যে, আমার রবের দূতের (ফিরিশতার) কী জবাব দেবো”।
সহীহ, সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১২১।  
হাদীসে উল্লিখিত ‘আমর ইবন ‘আস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর বাণী, «كُنْتُ عَلَى أَطْبَاقٍ ثَلَاثٍ» অর্থ তিন অবস্থায় বা তিনকালে। যেমন আল্লাহ তা‘আলার বাণী,
﴿لَتَرۡكَبُنَّ طَبَقًا عَن طَبَقٖ ١٩﴾ [الانشقاق: ١٩]  
“অবশ্যই তোমরা এক স্তর থেকে অন্য স্তরে আরোহণ করবে”। [সূরা আল-ইনশিকাক, আয়াত: ১৯] অর্থাৎ এক অবস্থা থেকে অন্য অবস্থা, এক স্তর থেকে অন্য স্তর।
কাযী ‘ইয়াদ্ব রহ. ‘আমর ইবন ‘আস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর বাণী, «فَشُنُّوا عَلَيَّ التُّرَابَ شَنًّا» সীন বর্ণে নকতাযোগে বা নকতা ছাড়া, কেউ কেউ বলেছেন, উভয়টির অর্থ একই। এর অর্থ হলো ঢেলে দেওয়া। কেউ কেউ বলেছেন, সীন বর্ণে নকতা ছাড়া অর্থ আস্তে ঢেলে দেওয়া। আর নকতা যোগে অর্থ হলো আলাদা আলাদা করে মাটি ঢালা। এটি মাইয়্যেতের কবরে মাটি দেওয়ার সুন্নাত। আল-মুফহিম, লিলকুরতবী, ১/৩৩০।  

৫১- পরিচ্ছেদ: কুফুরী অবস্থায় ভালো আমল করলে অতঃপর ইসলাম গ্রহণ করলে
عَنْ حَكِيمِ بْنِ حِزَامٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، قَالَ: قُلْتُ: يَا رَسُولَ اللَّهِ، أَرَأَيْتَ أَشْيَاءَ كُنْتُ أَتَحَنَّثُ بِهَا فِي الجَاهِلِيَّةِ مِنْ صَدَقَةٍ أَوْ عَتَاقَةٍ، وَصِلَةِ رَحِمٍ، فَهَلْ فِيهَا مِنْ أَجْرٍ؟ فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «أَسْلَمْتَ عَلَى مَا سَلَفَ مِنْ خَيْرٍ».
হাকীম ইবন হিযাম রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, “আমি বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ্! ঈমান আনয়নের পূর্বে (সাওয়াব লাভের উদ্দেশ্যে) আমি সদকা প্রদান, দাসমুক্ত করা ও আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করার ন্যায় যতো ভালো কাজ করেছি সে গুলোতে সাওয়াব হবে কি? তখন রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তুমি যে সব ভালো কাজ করেছ তা নিয়েই ইসলাম গ্রহন করেছ (তুমি সেসব কাজের সাওয়াব পাবে)”।
মুত্তাফাকুন ‘আলাইহি, সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৪৩৬; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১২৩।
وفي رواية: أَنَّ حَكِيمَ بْنَ حِزَامٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ: أَعْتَقَ فِي الجَاهِلِيَّةِ مِائَةَ رَقَبَةٍ، وَحَمَلَ عَلَى مِائَةِ بَعِيرٍ، فَلَمَّا أَسْلَمَ حَمَلَ عَلَى مِائَةِ بَعِيرٍ، وَأَعْتَقَ مِائَةَ رَقَبَةٍ، ثم أتى النبي صلى الله عليه وسلم، فذكر نحو حديثه.
অন্য বর্ণনায় এসেছে, “হাকীম ইবন হিযাম রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু জাহিলী যুগে একশ গোলাম আযাদ করেছিলেন এবং আরোহণের জন্য একশ উট দিয়েছিলেন। যখন তিনি ইসলাম গ্রহণ করলেন, তখনও একশ উট বাহন হিসাবে দান করেন এবং একশ গোলাম আযাদ করলেন। অতঃপর রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দরবারে আসলেন। অতঃপর পূর্বের হাদীসের ন্যায় ঘটনা বর্ণনা করেন”।
মুত্তাফাকুন ‘আলাইহি, সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৪৩৬; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১২৩।
অন্য বর্ণনায় এসেছে, তিনি বলেছেন,
«فَوَاللهِ، لَا أَدَعُ شَيْئًا صَنَعْتُهُ فِي الْجَاهِلِيَّةِ إِلَّا فَعَلْتُ فِي الْإِسْلَامِ مِثْلَهُ».
“আল্লাহর কসম! আমি জাহেলী যুগে যেসব ভালো কাজ করেছি, ইসলাম গ্রহণের পরেও সেসব ভালো কাজ করবো”।
সহীহ, সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১২৩।
রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বাণী,  «أَسْلَمْتَ عَلَى مَا سَلَفَ مِنْ خَيْرٍ» এর ব্যাখ্যা অধিকাংশ আলেম ব্যাখা করেছেন। ইমাম হারবী রহ. বলেছেন, ইসলাম পূর্বে যেসব ভালো কাজ করেছে ইসলাম গ্রহণের পরে সেসব ভালো আমল তার থেকে যাবে। যেমন কেউ বলে, আমি একশ দিরহামের বিনিময়ে ইসলাম গ্রহণ করেছি। এর অর্থ হলো আমি একশ দিরহাম নিজের জন্য সংরক্ষণ করে রেখেছি। ইমাম কুরতবী রহ. বলেন, ইমাম হারবী রহ. যে ব্যাখ্যা দিয়েছেন তা সবচেয়ে উত্তম ও সুন্দর।
 عَنْ أَبِي سَعِيدٍ الْخُدْرِيِّ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِذَا أَسْلَمَ الْعَبْدُ فَحَسُنَ إِسْلَامُهُ، كَتَبَ اللَّهُ لَهُ كُلَّ حَسَنَةٍ كَانَ أَزْلَفَهَا، وَمُحِيَتْ عَنْهُ كُلُّ سَيِّئَةٍ كَانَ أَزْلَفَهَا، ثُمَّ كَانَ بَعْدَ ذَلِكَ الْقِصَاصُ، الْحَسَنَةُ بِعَشْرَةِ أَمْثَالِهَا إِلَى سَبْعِ مِائَةِ ضِعْفٍ، وَالسَّيِّئَةُ بِمِثْلِهَا إِلَّا أَنْ يَتَجَاوَزَ اللَّهُ عَزَّ وَجَلَّ عَنْهَا».
আবু সাঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “যখন কোনো ব্যক্তি উত্তমরূপে ইসলাম গ্রহণ করে, তখন আল্লাহ তা‘আলা তার ঐ সকল সৎকর্ম লিখে নেন, যা সে পূর্বে করেছিল, আর সেই সকল পাপ মুছে ফেলেন যাতে অতীতে লিপ্ত হয়েছিল। এরপর তার হিসাব এভাবে লিখিত হয় যে, তার প্রত্যেক সাওয়াবের পরিবর্তে দশ হতে সাতশত গুণ পর্যন্ত সাওয়াব লেখা হয়। আর প্রত্যেক পাপ শুধু অতটুকুই লেখা হয়, যা সে করে; যদি আল্লাহ ক্ষমা না করেন”।
সহীহ, নাসায়ী, হাদীস নং ৪৯৯৮; শু‘আবুল ঈমান, লিলবাইহাকী, হাদীস নং ২৪।   
ইমাম বুখারী এ হাদীসটিকে কিতাবুল ঈমানে (৪১) মালিক রহ. থেকে মু‘আল্লাক সূত্রে  বর্ণনা করেছেন। অন্য কোথাও তিনি হাদীসটিকে মুত্তাসিল করেন নি। তবে তিনি «كَتَبَ اللَّهُ لَهُ كُلَّ حَسَنَةٍ كَانَ أَزْلَفَهَا» বাদ দিয়েছেন। কেননা একথাটি কায়েদার সাথে বৈপরীত। কেননা কুফুরী ও শির্কী অবস্থায় একজন কাফের যেসব ভালো কাজ করে তাতে সাওয়াব হয় না। কেননা নৈকট্যের শর্ত হচ্ছে যার নৈকট্য প্রত্যাশী তার সম্পর্কে জানা। আর কাফির ব্যক্তির অবস্থা এরূপ নয়। ইমাম মাযেরী রহ. ও অন্যরা একথা বলেছেন। কাযী ‘ইয়াদ্ব রহ. এ বিপরীতমুখী কথার জবাবে ইমাম মাযেরী রহ. এর অনুসরণ করেছেন। কিন্তু ইমাম নাওয়াওয়ী রহ. এ মতকে প্রত্যাখ্যান করেছেন। তিনি বলেছেন, অধিকাংশ মুহাক্কিকের মত হলো – বরং এ মতের ওপর ইজমা বর্ণিত আছে- “কোনো কাফির ভালো কাজ যেমন, সদকা, আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় ইত্যাদি করলে, অতঃপর ইসলাম গ্রহণ করলে এবং ইসলামের উপর মারা গেলে তার সেসব সাওয়াব লিপিবদ্ধ করা হবে”।
হাফেয ইবন হাজার আসকালানী রহ. বলেছেন, এ কথার অনেকগুলো ব্যাখ্যা হতে পারে। সবচেয়ে শক্তিশালী ব্যাখ্যা হলো: “প্রকৃতপক্ষে মুসলিমের ইসলাম অবস্থায় ভালো আমল আল্লাহর মেহেরবানী ও ইহসানে লিখিত হওয়া মানে কাফির অবস্থায় তার কৃত ভালো আমল কবুল হওয়াকে অত্যাবশ্যকীয় করে না। কেননা হাদীসে সাওয়াব লেখার কথা বলা হয়েছে, কবুল হওয়ার কথা নয়। হতে পারে কাফির ব্যক্তির ভালো আমল ইসলাম গ্রহণের সাথে সম্পৃক্ত। সে ইসলাম গ্রহণ করলে তার ভালো আমল কবুল করা হবে। আর ইসলাম গ্রহণ না করলে কবুল করা হবে না। ফাতহুল বারী, ১/৯৯।
আমি মনে করি- সংকলক- ইতোপূর্বে উল্লিখিত হাকিম ইবন হিযাম রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর হাদীস এ মতকে সমর্থন করে।
রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বাণী, «أَزْلَفَهَا» এর অর্থ বিগত, পূর্বের কৃত  

 

 

সহীহ হাদীস সম্বলিত অহী ও ঈমান বিশ্বকোষ

বই সম্পর্কে

লেখক :

www.islamhouse.com

প্রকাশক :

www.islamhouse.com

বিভাগ :

Doctrine & Sects